All posts by Oporajita

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৯


তাহনিয়া খান


Bismillahir Rahmanir Rahim

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

দু’এক দিনের মাঝেই হারাম শরীফে নামায পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। প্রতিটা নামাযের পর একটা করে জানাজার নামায থাকতোই। প্রথমবার বুঝিনি সবাই কি নামায পড়ছে। পরে ভাইয়ের কাছে জেনেছিলাম। কীভাবে পড়তে হয় সে নিয়মটাও শিখে নিয়েছিলাম । নীচে ভিড়ের কারণে ছাদে তাওয়াফ করতাম প্রায়ই। পায়ে ব্যথা হতো। আলহামদুলিল্লাহ্‌, তারপরেও থেমে ছিলাম না। আমাদের গ্রুপে এক ভদ্রলোক ছিলেন, উনি প্রতিদিন ৬/৭ বার তাওয়াফ করতেন। আমরা নাম দিয়েছিলাম তাওয়াফ চাচা।

আমরা দু’ভাই বোন কোন ছবি তুলিনি হজ্জে গিয়ে। আমার ভাই বলেছিল ইবাদতের চেয়ে ছবি তোলার দিকে বেশী মনোযোগ চলে যাবে। সব ছবি হৃদয়ে গেথে রেখেছি। তাই হজ্জের কোন ছবি দেখলে খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি। মনে হয় এই জায়গা দিয়ে তো আমিও হেঁটেছিলাম। কিন্তু আমার ভাই অনেক মানুষের ছবি উঠিয়ে দিয়েছিল। কাবা ঘরের সামনে মোনাজাতের ভঙ্গিতে ফটো তোলা সহ বিভন্ন এঙ্গেলের হাস্যকর ছবি মানুষের অনুরোধে সে তুলে দিয়েছিল। মার্কেটে বেশী ঘুরতাম না। আমার ভাইয়ের কথা ছিল দুনিয়ার চাকচিক্য দেখে ইবাদতের যেন কোন ঘাটতি না হয়।

মক্কার মানুষের কিছু জিনিস খুব ভালো লেগেছে। যে কয়টা দোকানে গিয়েছিলাম, বেশীরভাগই ছিল বাংলাদেশীদের দোকান বা সেখানে বাংলাদেশীরা কাজ করতো। তাদের অমায়িক ব্যবহার খুব ভালো লেগেছিল। শুধু বাংলাদেশী না, সব দোকানদারই ছিল অমায়িক। খেজুর কিনতে গিয়েছি, জোর করে খেজুর খাইয়েছে। ভালো লাগলে যেন কিনে নেই। নতুন কোন খাবার দেখলে কিনবো নাকি কিনবো না দ্বিধায় ছিলাম, জোর করে টেস্ট করিয়েছিল সেটা। খেয়ে ভাল লাগেনি, তো কিনিনি। তাতে দোকানী মন খারাপ করেনি।

একদিন রাস্তায় নামায পড়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। ভিড়ের কারণে মসজিদের ভিতর ঢুকতে পারিনি। আমার ভাই বললো, পাশের মার্কেটের চার তালার উপরে নামায পড়ার জায়গা আছে সেখানে গিয়ে জামাত ধরতে পারবো। রাস্তা থেকে মার্কেটের ভিতর ঢুকে গেলাম। পুরো মার্কেট ফাঁকা। দোকানদারও নেই। সবাই দোকান খোলা রেখেই নামাযে চলে গিয়েছে। দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কোন কিছু টুপ করে নিয়ে নেওয়া যাবে সহজেই। কিন্তু কেউ নিবে না বা নেয় না। কারণ ধরা পরলেই হাতের কব্জি কেটে ফেলবে। এই আইন এবং আইনের প্রয়োগ আছে বলেই মানুষ নিশ্চিন্তে থাকে।

আমি প্রায় প্রতিদিনই হারাম শরীফের একদম কাছের এক দোকান থেকে সফট আইসক্রিম কিনে খেতাম। একদিন দোকানীকে বললাম আমি সবগুলো ফ্লেভার একসাথে নিতে চাই। দোকানী আমাকে সব ফ্লেভার একটু একটু করে দিয়ে এত্ত বড় এক কোন আইসক্রিম বানিয়ে দিলেন, কিন্তু আগের দামটাই রাখলেন। এটা শুধু আমার জন্য না। সবার জন্যই এই নিয়ম। আরেকদিন নতুন আরেকটা আইসক্রিমের দোকান আবিষ্কার করলাম আমরা। সেখানে বেশ চড়া দামে আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে। দোকানদার একজন শ্রীলঙ্কান। আমরা দু’জনই দুটো করে ফ্লেভার অর্ডার দিলাম। আমি আগে আমারটা পেলাম। কিন্তু আমার ভাইকে উনি ভুল করে অন্য একটা ফ্লেভার দিয়ে দিয়েছিল। আমার ভাই যখন বললো সে সেটা চায়নি, ভদ্রলোক ‘সরি’ বলে সেই আইসক্রিমের সাথে মিলিয়ে অর্ডার দেওয়া আইসক্রিম দিয়ে দিলেন। আমার ভাই বলেছিল যে লাগবে না, কিন্তু তিনি শুনবেনই না, এতগুলো আইসক্রিম দিয়ে একটা বড় হাসি দিলেন। আমার ভাই মহা খুশী। তার হাতে তিনটা ফ্লেভারের আইসক্রিম। আমিও ভাগ বসিয়েছিলাম তারটায়।

একদিন নামায শেষে এমন ভিড়ের মাঝে পরেছি যে ধাক্কাধাক্কি অবস্থা। আমি ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়া শুরু করলাম। কোথা থেকে তিনজন বাংলাদেশী লোক এসে আমাদের ঘিরে ফেললো। যাতে আমার কোন ধাক্কা না লাগে। আমার ভাইতো এমনিতেই সব সময় পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে ধাক্কার হাত থেকে বাঁচাতো। কিন্তু তখন তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। সেই লোকগুলো ঘিরে ধরে আমাদের ভিড় থেকে বের করে আনলেন। পরে জেনেছি, উনারা অনেকদিন ধরে সেখানে ব্যবসার কারণে বসবাস করেন।

কত বয়স্ক মানুষ এস্কেলেটরে উঠার সময় পরে যেতেন, আমাদের চোখের সামনে প্রায়ই এমন হতো। আমার ভাই দৌড়ে যেত। অনেক বাংলাদেশী ক্লিনারদের দেখেছি বয়স্কদের সাহায্য করতে। ছাদে নামায পড়তাম সবসময়। জমজমের পানি নেওয়ার জন্য ভিড় লেগেই থাকতো সেখানে। এক বাংলাদেশী ক্লিনার আমাকে প্রায়ই পানি এনে দিতেন। এত ভিড়ের মাঝে উঠে গিয়ে পানি আনতে গেলে জায়গা আর পাওয়া যাবে না। তাই উনাকে বলতাম পানি এনে দিতে। বাংলাদেশী টাকা দিয়ে দিলেই খুশী হয়ে যেতেন।

হজ্জের নবম শিক্ষা– ইহসান। মানুষের প্রতি মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, বিনিময়হীন এমন সদয় ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। একদিন, দু’দিন নয়, প্রতিদিন মানুষের এমন ব্যবহার দেখে নিজেকে বিচার করেছি । লজ্জিত হয়েছি । নিজের ক্ষুদ্রতাকে তখন বড় দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে।

পর্ব ৮

 

সামান্য ভুলে শিশু গৃহকর্মীকে বর্বর নির্যাতন


নারী সংবাদ


চার মাস আগে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর ব্যবসায়ী শরীফ চৌধুরীর বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয় ১২ বছরের শিশু হাওয়া। প্রতি মাসে তার পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাওয়ার কথা। কিন্তু বেতন তো দূরের কথা, প্রতিদিন তার কপালে জুটত বেধড়ক পিটুনি। কাজে সামান্য ভুল হলেই চলত অমানবিক নির্যাতন। ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হতো না। এভাবে দিনের পর দিন নির্যাতনের ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। স্বজনের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে বুধবার তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। অভিযানে কথিত মানবাধিকার কর্মী গৃহকর্তা শরীফ চৌধুরী ও তার স্ত্রী নাইমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, অভাবের তাড়নায় কাজ করতে এসেছিল ছোট্ট শিশুটি। কিন্তু এই দম্পতি তার ওপর মারাত্মক নির্যাতন চালিয়েছে। শরীরে চট জড়িয়ে তাকে পেটানো হয়েছে। শিশুটির সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। অমানবিক এ ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালায় পুলিশ। গৃহকর্তা শরীফ চৌধুরী নিজেকে মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের পরিদর্শক বলে দাবি করেন এবং চোটপাট করেন। পরে অবশ্য স্বীকার করেন, তিনি ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন। স্ত্রীসহ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আজ বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করা হবে।

নির্যাতিত শিশুর মামাতো বোন শাহনাজ বেগম ঢামেক হাসপাতালে জানান, হাওয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার নগরকুল গ্রামে। তার বাবার নাম শুনু মিয়া। চার ভাইবোনের মধ্যে হাওয়া সবার বড়। চার মাস আগে তাকে দক্ষিণ বনশ্রীর ই-ব্লকে ৮/২ নম্বর সড়কের ৪৩ নম্বর বাসার ষষ্ঠ তলায় কাজ করতে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপর থেকে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছিলেন না স্বজনরা। ওই বাসায় গেলেও তার সঙ্গে দেখা করতে দেননি শরীফ চৌধুরী ও তার স্ত্রী নাইমা। বারবার এভাবে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে শিশুটি কী অবস্থায় রয়েছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তার ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন চলছে বলে নানাভাবে খবর পেয়ে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গতকাল তারা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন। পুলিশ দুপুরে ওই বাসায় অভিযান চালায়।

খিলগাঁও থানার এসআই সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রথমে তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়। গৃহকর্তা শরীফ চৌধুরী নিজেকে মানবাধিকার কর্মী দাবি করেন এবং শিশুটিকে পুলিশের সামনে আনতে আপত্তি জানান। পরে পুলিশ চাপ দিলে তিনি শিশুকে ঘর থেকে বের করে আনেন। এ সময় দেখা যায়, সে কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে। তার মাথার চুল ছোট করে দেওয়া হয়েছে। তার চোখেমুখে যন্ত্রণা ও ভয়ের ছাপ। প্রথমে সে পুলিশ দেখেও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। পরে তাকে বোঝানো হয়, তাকে উদ্ধারের জন্যই এসেছে পুলিশ। তার স্বজনরাও সঙ্গে আছে। ওই বাসা থেকে বের হওয়ার পর শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে তার ওপর চালানো নিষ্ঠুর নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। পান থেকে চুন খসলেই তাকে মারধর করা হতো। নানা কৌশলে তাকে নির্যাতন করতেন ওই দম্পতি। সুত্র: সমকাল।

 

মোহাম্মদপুরে স্ত্রীকে হত্যার পর ড্রামে লাশ রেখে পলায়ন


নারী সংবাদ


রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ড্রামের ভেতরে রেখে পালিয়েছে তার স্বামী সেলিম। খবর পেয়ে পুলিশ ওই গৃহবধূর গলিত লাশ উদ্ধার করেছে।

মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক অপারেশন শরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা উদ্যানের বি ব্লকের ওই বাড়ির একটি কক্ষে ড্রামের ভেতর থেকে অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, জানুয়ারি মাসে সেলিম নামে এক ব্যক্তি ওই বাসাটি ভাড়া নেয়। ওই বাসায় তারা স্বামী-স্ত্রী থাকতেন। তিন-চার দিন ধরে প্রতিবেশিরা স্বামী-স্ত্রী কাউকেই দেখতে পাননি।

সুত্র: যুগান্তর।

 

প্রতিবেশিনী……২


আফরোজা হাসান


দরজা খোলায় জন্য যেতে যেতে মাহামের মনে পড়লো সুপার মার্কেটে যাবার সময় তারজন্য লেবুপাতা নিয়ে আসার অর্ডার দিয়েছিলো প্রতিবেশিনী। নিশ্চয়ই লেবুপাতা নিতেই এসেছে। কিন্তু লেবুপাতা কথা তো মনেই ছিল না মাহামের। না জানি প্রতিবেশীর হক বিষয়ক কি লেকচার শুনতে হয় এখন আবার। প্রতিবেশীর উপরে কুরআন-হাদীসের সমস্ত তথ্য ঠোঁটের আগায় নিয়ে ঘোরে তার প্রতিবেশিনীর। আট-ঘাঁট বেঁধে মাঠে নেমেছে সে বোঝাই যায়। মাহাম দরজা খুলতেই দেখলো বিশাল এক লাগেজ হাতে প্রতিবেশিনী দাঁড়িয়ে আছে।

দরজা থেকে সরে দাঁড়ান তো একটু। ভেতরে ঢুকতে দেন আমাকে। বলে নিজেই মাহামকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে লাগেজ টানতে টানতে ভেতরে ঢুকে গেলো প্রতিবেশিনী।

মাহামের বিস্ময় ভরা দৃষ্টি সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে বলল, আজ আমি আপনার সাথে থাকবো। শোনেন আমার খুব গড়াগড়ি করার অভ্যাস তাই সোফায় শুতে পারবো না। আমি আপনার সাথে বেডরুমে ঘুমাবো। আপনার স্বামীকে বলবেন ড্রইংরুমের সোফায় ঘুমাতে।

মাহাম বলল, আপনার বাসায় কি গেস্ট এসেছে?

আরে না গেস্ট আসবে কেন? আমি স্বামীর সাথে ঝগড়া করে এসেছি।

কেন কি হয়েছে?

কি হয় নাই সেটা জিজ্ঞেস করেন। আমাকে বলে কি জানেন? বলে চিড়িয়াখানায় অদ্ভুত মানুষের যদি কোন সেল থাকতো তাহলে সে আমাকে সেখানে দিয়ে আসতো। কারণ আমি নাকি টিকিট কেটে দেখার মতো মানুষ।

হাসি পেলেও লেকচার শোনার ভয়ে প্রাণপণে নিজেকে সামলে নিলো মাহাম। যদিও মনে মনে প্রতিবেশিনীর স্বামীর ভাবনার প্রশংসা না করে পারলো না।

গজগজ করতে করতে প্রতিবেশিনী বলল, আমাকে উল্টা পাল্টা কথা বলার মজা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবো। কিন্তু রাগের সময় আমার আবার বুদ্ধি কাজ করে না। স্বামীকে শিক্ষা দেবার কোন বুদ্ধি থাকলে বলেন তো।

আমার স্বামীকে শিক্ষা দেবার তেমন প্রয়োজন পড়েনি কখনোই তাই ঠিক জানি না। তবে আমার মামণিকে কিভাবে বাবাকে শিক্ষা দিতেন সেটা বলতে পারি।

নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। বলেন সেটাই বলেন।

মামণি বলতেন স্বামীকে এমন শিক্ষা দেয়া উচিত যা সে কল্পনার মধ্যেও কল্পনা করেনি কখনো। আর তাই বাবা-মামণির যখনই মনোমালিন্য হতো মামণি সেই সব কাজ করতেন যা বাবা সবচেয়ে বেশি পছন্দ ছিল। যেমন বাবার প্রিয় সব খাবার রান্না করা, বাবার পছন্দের শাড়ি পড়ে, সাজগোজ করে হাসিমুখে কথা বলা, এমন ভাণ করা যে কিছুই হয়নি। এবং মামণির এই পদ্ধতিটা সবসময়ই খুব কাজ দিতো। বাবা নিজের রাগ তো ভুলে যেতেইনি সাথে উল্টো মামণিকে সরি বলতেন।

তারমানে আপনি আমাকেও এমন কিছু করতে বলছেন?

আমি শুধু পরামর্শ দিচ্ছি। কি করবেন সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। ভেবে দেখেন আপনি রাগ করে কথা বন্ধ করে দেবেন, রান্না বন্ধ করে দেবেন, কিংবা বাসা ছেড়ে চলে যাবেন এগুলোই কিন্তু স্বাভাবিক। আপনার স্বামী একটুও অবাক হবেন না আপনার এইসব কর্মকান্ডে। কিন্তু আপনি যদি সংসারের সব কাজ ঠিকমতো করেন, এবং খুব স্বাভাবিক ভাবে কথা ও আচরণ করেন উনার সাথে। উনি শুধু যে অবাক হবেন তাই না যে কথা বলেছেন সেটার জন্যও অনুতপ্ত হবেন।

হাসি ফুটলো প্রতিবেশিনীর মুখে। বাহ দারুণ বুদ্ধি তো। এটাকেই মনেহয় কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা বলে। আচ্ছা তাহলে আমার স্বামী আসার আগেই আমি বাসায় চলে যাই। সবকিছু গোছগাছ করে বসে থাকি। এমন চমক দেবো আজ তাকে চোখে সর্ষে ফুল দেখবে।

দরজার কাছে গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ালো এসে। ফিরে এসে মাহামকে জড়িয়ে ধরে বলল, আপনি অনেক ভালো। জানেন একবার রাসূল সা: সাহাবাদের লক্ষ করে বলেন, “তোমরা কি জানো প্রতিবেশীর হক কী? যদি সে তোমার সাহায্যপ্রার্থী হয় তাকে সাহায্য করবে, যদি সে ধার চায় তাকে ধার দেবে, যদি সে অভাবগ্রস্ত হয় তার অভাব মোচন করবে, যদি সে রোগগ্রস্ত হয় তাকে সেবা দান করবে, যদি তার মৃত্যু হয় জানাজার নামাজে শরিক হবে, যদি তার মঙ্গল হয় তাকে উৎসাহিত করবে, যদি তার বিপদ হয় তার প্রতি সহানুভূতি জানাবে। তার অনুমতি ব্যতীত তোমার ঘর এত উঁচু করবে না, যাতে তার আলো বাতাস বন্ধ হয়ে যায়। যদি তুমি ফলমূল ক্রয় করো, কিছু অংশ প্রতিবেশীর জন্য পাঠাবে। আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে তা গোপনে তোমার সন্তানদের খেতে দেবে, যেন প্রতিবেশীর ছেলেমেয়ে তার বাবা-মাকে বিরক্ত না করে।”

মাহাম হেসে বলল, জ্বী আমি জানি হাদীসের এই বানীটি। আসলে পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণের প্রতি অনেক গুরুত্ব দিয়েছে শরীয়ত। আমরা সবাই যদি তা মেনে চলতাম তাহলে আমাদের সমাজে শান্তির অমৃত ধারা প্রবাহিত হতো। পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝগড়াবিবাদ ও মনোমালিন্য দূরীভূত হতো। এবং সবাই সবার কল্যাণকামী হয়ে একে অন্যের প্রতি দায়িত্ববোধ ও তার অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়ে উঠতে পারতো।

প্রতিবেশিনীকে বিদায় জানিয়ে আবার রান্নাঘরে ঢুকলো মাহাম। আয়ান টেবিলে সব খাবার বেড়ে তার অপেক্ষাতে বসে আছে।

মাহাম বলল, আমি তো আসছিলাম তুমি করতে গেলে কেন? এভাবে কিন্তু তুমি আমার অভ্যাস খারাপ করে দিচ্ছো।

আয়ান বলল, সেটা কিভাবে?

এই যে সারাক্ষণ আমাকে সাহায্য করার জন্য হাত উঁচু করে বসে থাকো। এভাবেই এক্সপেক্টটেশন বেড়ে যায়। সবসময় তো তুমি এমন সাহায্য করতে পারবে না আমাকে তাই না? তখন হয়তো আমার মনেহবে তুমি আমাকে আগের মত কেয়ার করো না, ভালোবাসো না। বাবা সবসময় বলেন দাম্পত্যের শুরুর দিকের অপ্রতিরোধ্য আবেগও অনেক জটিলতার বীজ বুনে দিয়ে যায় সম্পর্কের।

হুমম…বুঝলাম। তা বাবার মেয়ে কি বলে সেটাও বলো শুনি।

সম্পর্কের বন্ধন গুলো রেশমের সুতোর মত হয় অনেকটা। তাই সেই সুতোকে কিছু একটার সাথে সুন্দর করে সবসময় বেঁধে রাখা উঠিত। ঐ যে ঘুড়ির লাটাইয়ে যেভাবে ভাঁজে ভাঁজে জড়ানো থাকে সুতো অনেকটা সেরকম। তা না হলে সুতোর প্যাঁচ লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে। প্যাঁচ লেগে যাওয়া সুতোদের একে অন্যের থেকে ছাড়াতে গেলে একটু অসাবধানটাতেই তা ছিড়ে যায়। ছিড়ে যাওয়া সুতো আবার জোড়া হয়তো লাগানো যায়। কিন্তু তাতে গিট পড়ে যায়। আর সম্পর্কের মাঝে কখনোই গিট পড়তে দেয়া ঠিক না।

সম্পর্কের বন্ধনে যাতে গিট না পরে সেজন্য কি করতে হবে?

সুতোগুলোকে শরীয়তের লাটাইয়ে জড়িয়ে নিতে হবে।

সেটাই তো করছি আমি। শরীয়ত যার মাধ্যমে এসেছে তিনিও তো সাংসারিক কাজে সাহায্য করেছেন স্ত্রীকে।

কিন্তু তিনি সবসময় সবকিছুতেই মধ্যাবস্থা অবলম্বন করেছেন।

হাসলো আয়ান। কিছু না বলে প্লেট এগিয়ে দিলো মাহামের দিকে। বড় বেশি লেকচার দেয় এই মেয়ে। এর লেকচার দেয়া বন্ধ করতে হবে। কঠিন কোন শিক্ষা দিতে হবে। কি শিক্ষা দেয়া যায় খেতে খেতে সেটাই ভাবতে লাগলো সে……..

চলবে….

পর্ব-১

 

‘মাথাব্যথা আর সমস্যা নয়’


প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার


এমন কোন পরিবার খুজে পাওয়া যাবে না, যে পরিবারে মাথা ব্যথা নেই। ইন্টারন্যাশনাল হেডেক সোসাইটি ও সার্ভিকো জেনিক হেডেক সোসাইটির বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ লোক মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। রোগীরা এই মাথা ব্যথা বিভিন্নভাবে চিকিৎসকের কাছে বর্ণনা করে বা উপস্থান করে। তরুন-তরুনী থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। আপনারা অবশ্যই জানেন, যুগ যুগ ধরে মানুষ মাথা ব্যথায় ভুগে আসছেন। মাথা ব্যথা মেডিকেল কন্ডিশনের একটি অন্যতম অসুস্থতা। এই মাথা ব্যথা থেকে আমরা সবাই মুক্তি পেতে চাই। আর সে জন্যেই মাথা ব্যথার উপর আজকের এই ছোট লেখা। সুপ্রিয় পাঠক, লিখতে বসেছি মাথা ব্যথা তার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে।

জনাব আব্দুর রাহিম। বয়স ২৫ বছর। থাকেন ধামরাইতে। গত ৫ বছর যাবৎ মাথার ডান পাশে ব্যথায় ভুগছেন। মাথা ব্যথার সাথে সাথে তার চোখেও ব্যথা হয়। মাঝে মাঝে ভমিটিং এবং ডিজিনেস হয়। তিনি তার মাথা ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাথার এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করেছেন এবং বিভিন্ন প্রকার ল্যাবরেটরী পরীক্ষাও করেছেন। সর্বপ্রকার রিপোর্ট-এ বলা হয়েছে, কোন অসুবিধা নেই। চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ এবং তার উপদেশ অনুযায়ী চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা করেছেন। এই রিপোর্ট-এও বলা হয়েছে কোন অসুবিধা নেই। জনাব রাহিম এখন খুবই হতাশ জীবন-যাপন করছেন। মাথা ব্যথার যন্ত্রণায় অনেক কষ্ট পাচ্ছেন কিন্তু পরীক্ষা-নীরিক্ষায় বলা হয়েছে কোন কষ্ট নেই।

মাথা ব্যথা- বিভিন্ন প্রকার হয়। যেমন- সার্ভিকো জেনিক হেডেক, মাইগ্রেন হেডেক, টেনশন হেডেক এবং সাইনোসাইটিস থেকে মাথা ব্যথা হয়। মাথা ব্যথায় ভুগেন শতকরা ১৮ ভাগ লোক। এই শতকরা ১৮ ভাগ এর মধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ লোক সার্ভিকো জেনিক হেডেক-এ ভুগেন। এছাড়াও প্যাথলজিক্যাল কারণের জন্যে মাথা ব্যথা হতে পারে। আমি যে মাথা ব্যথার চিকিৎসা করি এবং যে মাথা ব্যথার সম্পর্কে এখানে লিখছি- সে মাথা ব্যথার নাম সার্ভিকো জেনিক হেডেক। অর্থাৎ ব্যথা হয় মাথায় কিন্তু ব্যথার উৎপত্তি হয় ঘাড় থেকে। ঘাড়ের উপরিভাগে অর্থাৎ সি-১-২-৩ লেভেলে কষ্ট থাকে কিন্তু রোগী কষ্ট পায় মাথায়। ঘাড়ের এই অংশে যে সমস্ত স্ট্রাকচারে কষ্ট হলে মাথা ব্যথা হয় তা হলো- মাসেল, লিগামেন্ট, জয়েন্ট, ডুরামেটার, ডিস্ক এবং ভার্টিব্রাল আর্টারি। এই সমস্ত স্ট্রাকচার সি-১-২-৩ সার্ভাইক্যাল স্পাইনাল নার্ভ দ্বারা ইনারভেটেড। ঐ সমস্ত স্ট্রাকচারগুলোই সার্ভিকো জেনিক হেডেক তৈরি করে। অস্ট্রেলিয়ান ফিজিওথেরাপি বিজ্ঞানী এন বকডাক বলেছেন, সার্ভিকো জেনিক হেডেক-এর উৎপত্তি ঐ সমস্ত স্ট্রাকচার থেকে যে সমস্ত স্ট্রাকচার ইনারভেটেড বাই সি-১-২-৩। এছাড়াও উইফ্লাস ইঞ্জুরি থেকেও সার্ভিকো জেনিক হেডেক হয়। মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি এই রুগে ভুগে থাকেন।

জনাব রাহিমের ঘাড় পরিক্ষা করে দেখলাম নেকের উপরি ভাগের ডান পাশে ব্যথা এবং টেন্ডার। পাশ থেকে দেখা যায় যে, তার এন্টিরিওর হেড পোশ্চার আছে। তার অক্সিপিটো-নিউকিয়াল রিজিওনে লোকালাইজড পেইন আছে। মাথা ঘুড়াতে কষ্ট হয় অর্থাৎ মুভমেন্ট কমে গেছে। এই সমস্ত উপসর্গ দিক-নির্দেশনা দেয় জনাব রাহিম সার্ভিকো জেনিক হেডেক-এ ভুগছেন। মনে রাখবেন, সার্ভিকো জেনিক হেডেক-এর ক্ষেত্রে মাথার এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআই-তে কোন অসুবিধা থাকবেনা।

জনাব রাহিমের জন্য চিকিৎসা হবে ঘাড়ের সফট টিস্যু মোবালাইজেশন, স্ট্রেসিং ও স্ট্রেন্দেনিং। তার সাথে লো-লেভেল লেজার থেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, হট বা কোল্ড থেরাপি(এ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী) ব্যবহার করতে হবে। জনাব রাহিম এই চিকিৎসায় ভাল হবে। অর্থাৎ তার মাথা ব্যথা চলে যাবে।

প্রিয় পাঠক, আমি আমার এই ছোট লেখার মাধ্যেমে ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি যে, আপনার যদি সার্ভিকো জেনিক হেডেক বা ঘাড়ের উপরি ভাগের কষ্টের জন্য মাথা ব্যথা হয় তাহলে আপনি কি ধরনের চিকিৎসা করবেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মাথা ব্যথা আর সমস্যা নয়। আমার চিকিৎসা অন্যান্যদের চেয়ে সর্বাধুনিক এবং উন্নতর। আপনার সার্ভিকো জেনিক হেডেক বা মাথার জন্য আপনার ঘাড়ের উপরি ভাগের যতœ নিন, মাংস শক্তিশালী রাখুন এবং মাথা ব্যথার কষ্ট দূরীভুত করে সুস্থ জীবন-যাপন করুন।

ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ
লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার
পান্থপথ, ঢাকা।

সুত্রঃ ইবনে সিনা হেলথ ম্যাগাজিন◾বর্ষ ৬◾সংখ্যা ৩

 

নাটোরে গৃহবধূ এসিড দগ্ধ

 নারী সংবাদ

নাটোর সদর উপজেলার হালসা এলাকায় রাশিদা বেগম নামে এক গৃহবধূকে এসিডে ঝলসে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। হালসা ইউনিয়নের আরোইল এলাকায় তিনি এ ঘটনার শিকার হন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
চিকিৎসক ও গৃহবধূর স্বজনেরা জানান, গত শনিবার রাত ১১টায় সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের আরোইল গ্রামের হাসেন আলীর স্ত্রী নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় এসিড জাতীয় ধাতব পদার্থ গৃহবধূকে ছুড়ে মারা হয়। ঘটনার সময় ঘরের দরজা খোলা ছিল। এতে গৃহবধূর বাম হাত এবং পিঠের পুরো অংশ পুড়ে যায়।
নাটোর সদর থানার ওসি (তদন্ত) ফরিদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে তারা অবগত নন। কেউ এখনো থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

গৃহবধুর লাশ নিয়ে ধূম্রজাল


নারী সংবাদ


কুলাউড়ার ভুকশিমইলে বিয়ের সাত মাসের মাথায় লিপি বেগম(১৯) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি, বিয়ের ফার্নিচারের টাকা দেয়াকে কেন্দ্র করে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে গৃহবধু লিপি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

রোববার দুপুর ২ টায় উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কানেহাত গ্রামে গৃহবধুর স্বামীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিকেলে লাশ উদ্ধার করে।

কুলাউড়া থানায় কান্নাজড়িত কন্ঠে নিহতের মা রুশনা বেগম বলেন, সাত মাস আগে তার মেয়ে লংলা আধুনিক মহাবিদ্যালয়ের ডিগ্রী ১ম বর্ষের ছাত্রী লিপি বেগম(১৯)কে কানেহাত গ্রামের কাতার প্রবাসী আব্দুস সামাদের সাথে বিয়ে দেয়া হয়।

বিয়ের পর থেকে তার মেয়ে লিপি বেগমের নির্যাতন করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, তার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসাবে প্রচার করছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

নিহত লিপির পিতা আব্দুল মনাফ বলেন, আমার মেয়েকে ভাসুর-দেবরসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা কুলাউড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করছি।

নিহত গৃহবধু লিপি বেগমের ভাসুর সাইদুর রহমান বলেন, স্বামীর সাথে মোবাইলে কথা বলে লিপি শোবার ঘরে গিয়ে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। হয়তো স্বামীর সাথে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করতে পারে।

নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, নিহত লিপির বাবার বাড়ির এক মেম্বার এসে উসকানী দিয়ে এ মিথ্যে অভিযোগ করাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার এসআই আনোয়ার জানান, ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধুর লাশ উদ্বার করা হয়েছে। তবে মৃত্যুটি হত্যা না আত্মহত্যা- সেটি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর বোঝা যাবে।

নিহত গৃহবধুর পরিবারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ এখনো পাননি বলে জানান তিনি।

কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সুত্র:নয়াদিগন্ত।

 

ইসলাম ধর্মে আইরিশ বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ‘সিনেয়াড ও’কনোর’


নারী সংবাদ


আইরিশ শিল্পী সিনেয়াড ও’কনোর ছিলেন
ক্যাথলিক ধর্মের। সাম্প্রতিক তিনি টুইটারে এক বার্তায় ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। নতুন নাম নিয়েছেন শুহাদা।

মুসলিমদের সমর্থন দেবার বিষয়টিকে তিনি আন্তরিকভাবে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুসলিম উম্মাকে।

শুহাদা তার বার্তায় জানান, ‘ধর্মতত্ত্ব নিয়ে অধ্যয়নের পর তিনি নিরপেক্ষভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন, ‘যেকোনো বুদ্ধিমান ধর্মতত্ববিদ গণ যদি স্বইচ্ছায় অনুসন্ধান নামেন তবে তা স্বাভাবিকভাবেই ইসলামে এসে তার সমাপ্তি ঘটবে’।

সুত্র : দ্যা গার্ডিয়ান।

 

বিচ্ছেদের চূড়ান্ত বার্তায় ফের দেশ ছাড়লেন শ্রাবন্তী


নারী সংবাদ


বিচ্ছেদের চূড়ান্ত বার্তা নিয়ে ফের দেশ ছাড়লেন অভিনেত্রী ইপ্সিতা শবনম শ্রাবন্তী। দুই মেয়ে রাবিয়াহ ও আরিশাকে নিয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি নিউ ইয়র্কে ফিরে যান।
একজন নির্মাতা জানিয়েছেন, স্বামীর সাথে ডিভোর্স ঝামেলা সুরাহা করতে দেশে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু স্বামী খোরশেদ আলম ডিভোর্স প্রত্যাহার না করে চূড়ান্ত বিচ্ছেদে অটল থাকায় সন্তানদের কথা ভেবে শ্রাবন্তী আমেরিকা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর খোরশেদ-শ্রাবন্তী বিয়ে করেন। খোরশেদ আলম এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
বিয়ের আট বছর পর গত ৭ মে বগুড়া সদরের কালীতলার শিববাড়ির শ্রাবন্তীর বাবার বাসার ঠিকানায় তালাকের নোটিশ পাঠান মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
এ খবর পেয়ে শ্রাবন্তী দেশে ফেরেন। এরপর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা করেন। তখন তার অভিযোগ ছিল, খোরশেদ আলম অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছেন। যদিও তার স্বামী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘আমাদের ভেতরে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আস্থার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে; যা এক সাথে থাকলে আরো ধ্বংস হবে। আরো খারাপ দিকে যাবে বলে আমি মনে করছি। পরস্পর সরে আসায় দু’জনের জন্য ভালো হবে।’
জানা যায়, এসব ঝামেলার ভেতরেও শ্রাবন্তীর সাথে স্বামীর তালাকের বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। তার ধারণা ছিল এক সময় খোরশেদ আলম হয়তো সন্তানদের কথা ভেবে হলেও তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু চূড়ান্ত চেষ্টায়ও আর তার সুরাহা হয়নি। খোরশেদ আলম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করবেন না। বিষয়টি কার্যকরে তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
স্বামীর এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানার পর শ্রাবন্তী ফের দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে স্বামীর বিরুদ্ধে করা মামলায় সব দায়িত্ব এক স্বজনকে দিয়ে তিনি আমেরিকায় ফিরে যান। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

জীবন


জুয়াইরিয়া জাহরা হক


তেজপাতার ইংরেজী করলে হয় ‘bay leaf’. সানজিদা আক্তারের জীবনটা হয়ে গেছে একটা গন্ধ ছাড়া bay leaf. কোন এক সময়ে তিনি অসাধারণ অনুবাদ করতেন। নিয়মিত আয়ত্ত্ব করতেন নতুন নতুন ইংরেজী শব্দ। একবার আয়োজন করে রুদ্র মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহর কবিতা অনুবাদ করতে শুরু করেছিলেন! সে সময় এখন স্বর্ণালী অতীত। বর্তমান তিনি জীবন- সংসারের হামানদিস্তার নীচে মোটামুটি পিষ্ট। মাঝেমাঝে তার মনে চায় পঞ্জিকায় তারিখ-টারিখ দেখে কোন এক অমাবস্যা – পূর্ণিমার রাতে গেরুয়া রঙের থ্রি-পিস গায়ে দিয়ে রাস্তায় হাঁটা দিতে!
মহিলা মানুষ সন্যাসব্রত গ্রহণ করতে পারবে না, এমন কোন কথা নাই।
ভদ্রমহিলার জীবন কয়েক বছর আগেও আরেকটু মধুর ছিলো। ছোট মেয়েটা তখন কানে হেডফোন গুজে পা দুলিয়ে গান শুনতো না। বড়টা রাতভর বান্ধবীদের সাথে মোবাইলে কথা বলতো না। হুটহাট দুই মেয়ে দুনিয়ার সাজগোজ করে ঘরময় হাঁটাহাঁটি করতো না। সব ছিলো উনার লাঠির আগায়। বিটিভির রাতের খবর শেষ হওয়ার আগেই সব ঘুমিয়ে পড়তো। কাকরোল-চিচিংগা-মুলা সহ সব রকমের তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে ফেলতো। আসলে রাহবার মালায়শিয়া চলে যাওয়ার পর মেয়েগুলো মারাত্মক লাই পেয়েছে। মেয়ে দুইটা বড় ভাইয়ের ভয়াবহ ভক্ত। কিসব গল্প-টল্প বলে বুঝিয়ে বোন দু’টোর ভাব নজরে রাখতো। ছেলেটাও কাছে নেই। বিচার দিয়ে মনের শান্তি করবে, তারও উপায় নেই। এরা কেউ মাকে বুঝে না। শুধু যন্ত্রনা দেয়!
ছাদ থেকে তুলে আনা শুকনো কাপড় ভাজ করতে করতে রিমি-রিনি-রাহবারদের মা, সানজিদা আক্তার, এসব এলেবেলে চিন্তা করছেন। আজকে একটা ভয়াবহ কিছু হবে। মেয়েরা এখনো বাড়ি ফেরে নি। সূর্য ডোবার আগে ওদের বাসায় ঢোকার কথা। বাংলাদেশের সূর্য ডুবে সে সূর্য আমেরিকায় উঠে বসে আছে! তাদের কোন খবর নেই। কি যেন কি জরুরী নোট না ফোট করবে বলে বেড়িয়েছে। ডাল ঘুটনির আজকে হায়াত শেষ!

একা ঘরে রাগ করে আনন্দ নেই। খালি ঘরের দেয়ালকে রাগ দেখিয়ে ফায়দা কি? তারপরও উনি গজগজ করছেন। বিড়বিড় করে মেয়েদের গুষ্টি উদ্ধার করছেন আর জানালা- দরজা বন্ধ করছেন। ফোন করছেন সমানে। কত বড় কলিজা, বারবার ফোন কেটে দিচ্ছে। আজকে দুই কন্যার রাতের খাওয়া বন্ধ। বাপকে ঢাল বানাবে, ভাইকে ফোন দিবে, কোন লাভ নাই! সকাল হলেই টাকা চাওয়া বন্ধ। আজকে ঠ্যাং ভেঙে দুইটার হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে কর্তার বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। এসে যদি দেখেন মেয়েরা বাসায় নেই, বিশ্বযুদ্ধ অধ্যায় তিন শুরু হয়ে যাবে! সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে দেখে এখন একটু ভয় করতে শুরু করেছে। রিমি-রিনির মা সন্ধ্যা রাতের সব কাজ গুছিয়ে ফেলেছেন। খুব চিন্তা হচ্ছে উনার। এমন তো কখনো হয় না! দোয়া ইউনুস পড়ে ফেলেছেন কয়েক’শ বার!

এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো। টানা কিছুদিন প্রচুর গরম পরার পর ঝুম বৃষ্টির মতন!
দরজাটা খুলে কিছুই দেখতে পেলেন না। সিড়ির বাতিটা জ্বালানো হয় নি। বাতিটা জ্বালিয়ে দিলেন।

‘ সারপ্রাইজ ‘!

সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাহবার! দুই পাশে দুই বোন আর সাথে তাদের বাবা। চারজনের দাঁত সবকয়টা দেখা যাচ্ছে!
রাহবারের সেমিস্টার ব্রেক শুরু হয়েছে। মাকে বলেছিলো এবার আসবে না। থিসিসের কাজ আছে!
একটু আগে যে মহিলা ছেলেমেয়েদের চিন্তায় ত্যাক্ত ছিলেন, সে একই জন এখন মনে মনে ভাবছেন,

‘ আমার ছেলেমেয়েগুলো এতো দুষ্টু ধরনের অসাধারণ কেন! ‘

 

মা তোর নাকফুল বেচতে দিবনা!


মনির মোহাম্মদ


ক,দিন আগে ফেইসবুকে বৃদ্ধাআশ্রমে একজন মায়ের আকুতি পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেই মা বলেছিল ‘ আমি মারা গেলে আমার নাকফুলটা বেচে আমার কাফনের ব্যবস্থ্যা করবে তোমরা’। লেখাটা পড়ে কলিজায় একটা ধাক্কা খেলাম। এ কেমন সন্তান যার মাকে নাক ফুল বিক্রি করে কাফনের ব্যবস্থা করতে হয়! জানিনা এই স্ট্যাটাস টা সেই সন্তান পড়বে কিনা? যে মা এতো কষ্ট করে সন্তানদের গভীর মমতায় আগলে রেখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

সেই সন্তানরা আজ ব্যস্থতার দোহাই দিয়ে মা-বাবাকে ফেলে আসছে বৃদ্ধাআশ্রম নামক আধুনিক সভ্যতার এক নতুন জঘন্য জীবনে।যেই বয়সে সন্তানদের সেবা আর ভালবাসা পাবার কথা, সেই বয়সে বৃদ্ধাআশ্রমে একলা বসে জীবনের শেষ প্রহর ঘুনছে।

ধিক শত ধিক সেই সব সন্তানদের! পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই মা তোর নাকফুল বেচতে দিবনা। বুকের রক্ত বিক্রি করে হলেও তোর মুখে হাসি ফুটাবো, আগলে রাখবো বুকের গভীরে।

ভাল থাকিস মা,
ইতি তোর একজন সন্তান।
——-ম নি র মো হা ম্ম দ!

 

ইথিওপিয়ায় প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট

 


নারী সংবাদ


ইথিওপিয়া বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মত একজন নারী প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেছে।

পেশাদার কূটনীতিক শাহলি-ওয়ার্ক জিওদি আইন প্রণেতাদের সর্বসম্মত ভোটে নির্বাচিত হন। তিনি মুলাতু তেশমের স্থলাভিষিক্ত হলেন। ইতোপূর্বে মুলাতু পদত্যাগ করেন।

শাহলি-ওয়ার্ক ষাটের দশকের শেষ দিকে ফ্রান্স, জিবোতি, সেনেগালে ইথিওপিয়ার দূত হিসেবে কাজ করেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি জাতিসংঘে আফ্রিকান ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। ইংরেজী, ফরাসী ও আমহারিক ভাষায় তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।

ইথিওপিয়ায় প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিচালনা করেন। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা মূলত উৎসব ও অনুষ্ঠানে যোগদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ গত সপ্তাহে ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটি ছোট মন্ত্রীসভা গঠন করেন। এ মন্ত্রীসভার অর্ধেকই নারী। সুত্র: বাসস।

 

দাম্পত্য টিপস

 


দাম্পত্য


আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কৃতজ্ঞতা বোধকে নিজের ভেতর চেপে রাখবেন না। আসুন জেনে নেই কিছু সুন্দর টিপস…

বিশ্বাস বজায় রাখুন
যদি বিশ্বাস ভেঙ্গে গিয়ে থাকে, তাহলে সেই বিশ্বাস জোড়া দেওয়ার সময় এখনও পার হয়ে যায়নি। এজন্য যেকোনো সময়ই উপযুক্ত সময়। বছরের পর বছর ধরে যে বিশ্বাস আপনি গড়ে তুলেছেন, তা এক মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

তর্ক এড়িয়ে যান
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা নিয়ে তর্ক হয় তা আসল বিষয় থাকে না। দাম্পত্য জীবনের অনেক তর্কই হয়ত এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে ক্ষতিকর বিতর্ককে এড়িয়ে যেতেই হবে।

ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
ভালোবাসা কেবল অনুভুতি নয়; বরং আমাদের কাজের মাধ্যমেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মনের হতাশা ও অতৃপ্তিকে বাড়িয়ে দেয়।
অনেক সময় সুখী দম্পতিরাও ভাবেন যে, তারা ভুল মানুষটিকে বিয়ে করেছেন।

গভীর মনোযোগ দিন
জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর প্রতি আপনার গভীর মনোযোগ পরস্পরের জন্য হতে পারে অমূল্য উপহার।

নিশ্চয়তা দিন
আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী আপনাকে সুখী করার শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে না পারলেও তিনি আপনার সুখী হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সাহায্য করতে পারেন।

মিথ্যা বলা বর্জন করুন
মিথ্যা বলে হয়ত সামান্য কিছু সুবিধা পান। কিন্তু পরিমাণে মিথ্যা বলার জন্য সুবিধার চেয়ে অনেক বেশি চড়া মূল্য দিতে হয়। অতএব, মিথ্যা বলা বর্জন করুন।

অনুভূতি নিয়ে খেলা

সঙ্গী বা সঙ্গিনীর অপরাধবোধকে দীর্ঘায়িত করে তার অনুভূতি নিয়ে খেলা করে আপনি যা পেতে চান, তা কখনোই পাবেন না। আপনার যদি মনেি হয়, ‘তুমিই আমার জন্য সঠিক মানুষটি, যাকে আমি বিয়ে করেছি’, তাহলে আপনি ঠিক পথেই আছেন।

প্রলোভনকে দমন করুন
কোনো কিছু প্রমাণ করতে যাওয়ার প্রলোভনকে দমন করতে পারলে, বস্তুত আপনি অনেক কিছুই প্রমাণ করতে পারলেন।

আত্মিক উদারতা
আত্মিক উদারতা একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের প্রধান ভিত্তি।

দাম্পত্য জীবনে সাফল্য পেতে হলে, অতীতে কী হয়েছে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।

সুত্র: ইন্টারনেট

 

শিশু ধর্ষণ ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা


নারী সংবাদ


ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে শিশু আঁখি আক্তারকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তার খালু শাহাদাত হোসেনকে (৩৩) ।ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরের চকমিরপুরে।
গত ১৮ অক্টোবর আঁখিকে তার নানার বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার দিঘলিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে আসেন শাহাদাত। তবে সেখানে না নিয়ে আঁখিকে কৌশলে দৌলতপুরের চকমিরপুর এলাকায় নিয়ে যান ।দুই দিন ওই এলাকায় আঁখিকে রাখার পর ২০ অক্টোবর গভীর রাতে তাকে ধর্ষণ করে শাহাদাত। পরে প্রমাণ নষ্ট করার জন্য আঁখিকে গলাটিপে করে হত্যা করে পেট্রোল ঢেলে লাশের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের ডিআইও-১ মুহম্মদ আশরাফুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপরোক্ত তথ্য জানানো হয়।

পুলিশের ঐ কর্মকর্তা জানান, দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সুনীল কুমার কর্মকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঢাকার ধামরাই থানার বারবারিয়া স্কেল এলাকা থেকে ২৩ অক্টোবর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে শাহাদাতকে গ্রেফতার করে। এর আগে গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে তাকে আদালতে উপস্থিত করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

 

বাস্তবতা

 


রেহনুমা বিনত আনিস


১/ পরশুদিন রিহামের শিক্ষক নোট পাঠালেন, ‘রিহাম আজ ক্লাসে প্রচন্ড আপসেট ছিলো। আজ আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো পোকামাকড় নিধন। ক্লাসে কিছু বাচ্চা পোকামাকড় মারার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলো। রিহামের খুব মন খারাপ হয়ে যায়। আমরা এই বিষয়ে আগামী কয়েকদিন আলোচনা করব। রিহামের ব্যাপারে চিন্তিত বোধ করছি’।

অফিস থেকে ফিরতেই রিহাম দরজা খুলল, গম্ভীর চেহারা, ‘টিচার তোমাকে নোট পাঠিয়েছেন’। এর অর্থ হোল ব্যাপারটা যাই হোক না কেন, সেটা ওর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জুতোটা খুলেই বললাম, ‘নিয়ে এসো’। নোটটা আনতে আনতে ওর গলা বন্ধ হয়ে এলো, চোখ ছলছল করতে লাগল। কিন্তু সে কিছুতেই জনসমক্ষে কাঁদবেনা। আমার ছেলেটা যে কিভাবে আমার মতই হোল! কত জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলে, অথচ মনের কথা মুখে আনতে পারেনা। নোটটা পড়ে আগে ওকে কোলে বসিয়ে, জড়িয়ে ধরে, মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিলাম। বাইরে সে যতই নিজেকে বিজ্ঞানী মনে করুক না কেন, ভেতরে তো সে একজন কোমলপ্রান শিশুই! রিহাম কিছুটা শান্ত হয়ে এলে বললাম, ‘আসলেই তো, যে প্রান মানুষ সৃষ্টি করেনি সে প্রান মানুষের ধ্বংস করার কোন অধিকার নেই’। সে বুঝল আমি ওর মনের কথাটা বুঝেছি। তারপর যুক্তিগ্রাহ্য উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বললাম কেন মাঝে মাঝে কিছু কিছু প্রানীর ক্ষতির সম্ভাবনা হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাদের হত্যা করতে হতে পারে। ওর উদার বিজ্ঞানী মন এই যুক্তিতে খুব একটা খুশি হতে পারলনা, মানুষ সব প্রানীকে বিলুপ্ত করে ফেললে কি করে চলবে? কিন্তু আবার বাস্তবতাও অস্বীকার করতে পারলনা। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। সিনারিওটা ওর পছন্দ না হলেও সত্যটা সে মেনে নিলো।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে ওর শিক্ষকের নোটের জবাব দিলামঃ ‘সুপ্রিয় শিক্ষক, রিহামের প্রতি আপনার সচেতন নজরের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি তো জানেন রিহাম প্রানীদের ভালোবাসে এবং এই ভালোবাসা পোকামাকড়দের প্রতিও বিস্তৃত। একবার ওর বোন একটা মাছি মেরেছিল বলে রিহাম এক ঘন্টা কেঁদেছিলো। আমি কখনোই চাইনা জীবজগতের প্রতি ওর এই মায়া হারিয়ে যাক। আমি চাইনা সে এমন মানুষে পরিণত হোক যে প্রানীহত্যা করে আনন্দ পায়, সেটা হোক পোকামাকড় কিংবা গাছপালা। তবে ওকে এটাও জানতে হবে, মানুষ বড় স্বার্থপর প্রানী, সে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাবেনা, এমনকি অপর কোন মানুষকে নিয়েও না। রিহামকে ধীরে ধীরে এই বেদনাদায়ক বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। আপাতত যতটুকু ওর জানা প্রয়োজন সেটুকু আমি ওকে বুঝিয়েছি। বাকীটার জন্য প্রয়োজন অল্প সময় আর অনেক টিস্যূ পেপার’।

২/ আমার মেয়ের মাশাল্লাহ জন্মগতভাবেই প্রচুর যোগ্যতা। ওর দিকে এক নজর তাকালেই বোঝা যায় ওর কোন কিছুই আমার মত নয়। বরং সে ছোটবেলা থেকেই মনে করে এই বে-গুন মা’টাকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখা ওর নৈতিক দায়িত্ব। সে দেড় দু’বছর বয়স থেকেই স্বাবলম্বী। চার বছর বয়সে সে আমাকে কোলে নিতে পারত। সাত আট বছর বয়স থেকে সে ওর বাপের বয়সী লোকজনকে কার্যকর পরামর্শ দিতে পারত। দশ বারো বছর বয়সে সে একাই একটা সংসারের দায়িত্ব নেয়ার উপযুক্ততা অর্জন করে। ইদানিং সে স্কুলে এবং অন্যান্য জায়গায় বিভিন্নপ্রকার প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করার দায়িত্ব পায় যেখানে ওর চেয়ে বয়সে বড় ছেলেমেয়েরাও ওর নির্দেশ পালন করে। অতিরিক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন লোকজনের সমস্যা হোল ওরা সিদ্ধান্ত দিতে এত অভ্যস্ত হয়ে যায় যে ওরা ভুলে যায় মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নিতেও হয়, অন্যের সিদ্ধান্ত। বরং ওরা অন্যের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করার চেয়ে নিজের ভুল সিদ্ধান্তে ভরসা করাই শ্রেয় মনে করে। রিহামকে যুক্তি দিয়ে বুঝানো যায়। কিন্তু রাদিয়ার জন্য কেবল একটি নিয়ামকই প্রযোজ্য, ‘নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার ত্যাগ, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু কেবলমাত্র এই মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন অংশীদার নেই, আমি এভাবেই নির্দেশপ্রাপ্ত, এবং আমি আত্মসমর্পনকারীদের মাঝে অগ্রনী’ (সূরা আন’আমঃ আয়াত ১৬২-১৬৩)। বাবামা সন্তানকে কতটুকুই বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যদি না এর নিয়ামক হয় আল্লাহর প্রতি আনুগত্য?

৩/ আমি যখন কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরোই তখন বাজে ভোর পৌণে ছ’টা। পৌঁছই তখন ছ’টা বিশ। এই আধঘন্টা আমার দিনের সবচেয়ে প্রিয় সময়। শুধুমাত্র ভরগ্রীষ্ম ব্যাতীত এই সময়টা থাকে অন্ধকার। প্রকৃতি তখনও ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠেনা। আমরা ক’জন ভোরের পাখি ছাড়া কোন বাড়ীতে আলোও দেখা যায়না। কখনো নিঃশব্দ তুষারপাত, কখনো টুপটাপ বৃষ্টি। এছাড়া অধিকাংশ সময় প্রকৃতি থাকে নীরব নিস্তব্ধ। এই সময়টা আমার ভীষণ ভাল লাগে। এই মৌনতা আমার ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। এ’সময় আমি নিত্য নতুন প্রেমে পড়ি। কিন্তু আগের প্রেম তার জৌলুস হারায়না, আবার নতুন প্রেম পুরোনোকে প্রতিস্থাপিত করতে পারেনা। তারা সকলে মিলে আমার মনের ভেতর সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করে। আমার লেটেস্ট প্রেম হোল এই দু’টির দ্বিতীয়টি, আমার পুত্র কিছুক্ষণ পর পর এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদ করে বলে, ‘মি লাভ মাই আম্মু সোওওওওওওও মাচ! মি গিভ মাই আম্মু আ বিইইইইইগ হাগ’। তারপরও সেদিন আমি অফিস থেকে ফেরার পর সে ব্যাস্ত ছিলো বলে আমি অভিমান করে বললাম, ‘আজ কিন্তু তুমি তোমার সবচেয়ে জরুরী কাজটা করনি’। বুদ্ধিমান পুত্র বুঝতে পেরে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরল। ভাবি, আমি কবে আমার প্রভুকে মন খুলে বলেছি, ‘ভালোবাসি!’ তবু তিনি আমাকে দিয়ে যাচ্ছেন, অকাতরে, এত বেশি যে মাঝে মাঝে ভয় হয় ওদিকের জন্য বুঝি আর কিছু বাকী রইলোনা।
আবার ভাবি, শুধু ভালোবাসি বলাই কি যথেষ্ট? যেমন কেউ একজনের কাছে প্রচন্ড কষ্ট পেয়ে একজন মুরুব্বীর কাছে সমাধান চাইলাম। তিনি সমাধান দিলেন, ‘তুমি তো জানোই সে সেরকম। তোমারই ভুল হয়েছে। তুমি ওকে সামলে চলতে পারোনি’। বাহ! সে সেরকম সেটা অন্যায় নয়, আর আমি টুঁ শব্দ করলেই অন্যায়! সরে এলাম। আমি সবসময় এসব জায়গা থেকে সরে আসি। সবাই ভাবে আমি সরে আসি কারণ আমি বোকা। কিন্তু না, আমি সরে আসি কারণ আমি বুদ্ধিমান। মানুষের কাছে অধিকার চেয়ে লাভ কি? আমার প্রভুর কাছে প্রতিদান চাইলে পাব ঢের বেশি।

কিন্তু কথা সেটা নয়। কথা হোল আমি বললাম, ‘ভালোবাসি’। কিন্তু আমার চিন্তাচেতনা তাঁর পছন্দ অপছন্দকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় না, আমার কথায় কাজে তাঁর প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটেনা, আমার সময়ে তাঁর কোন অধিকার চোখে পড়েনা, তবে এই মৌখিক প্রকাশের কতটুকু মূল্য থাকে?
৪/ কিভাবে কিভাবে যেন আমার অফিসেই সবসময় গল্পের আসর বসে। আমি যেহেতু অনেক ভোরে কাজ শুরু করি, যতক্ষণে অন্যরা গল্পের মুডে আসে ততক্ষণে আমার দিনের অর্ধেক পেরিয়ে যায়, সুতরাং আমিও সময় দিতে পারি। মাঝে মাঝে আমাদের গল্পসল্প অদ্ভুত মোড় নেয়। যেমন আজ জিং বাবামা নিয়ে গল্প শুরু করল। কিছুক্ষণ পর তা এসে ঠেকল খাবারে। লোভনীয় সব খাবারের আলোচনার মাঝে আমি বাগড়া দিলাম আমার অদ্ভুত চিন্তা দিয়ে, ‘আচ্ছা, এখন যদি ডাইনোসর পাওয়া যেত এবং সেটা খাওয়া যেত তাহলে কতজন মানুষ কতদিন যাবত একটা ডাইনোসর খেতে পারত’।
ক্যারী বলল, ‘সেটা তো ডাইনোসরের সাইজের ওপর নির্ভর করে, তাইনা? কিছু কিছু ডাইনোসর ছিলো অনেক ছোট। আবার কিছু কিছু ছিলো অনেক বড়। তবে ধর যদি আমরা একটা মাঝারী আকারের ডাইনোসর ধরি, যেমন টি-রেক্স, তাহলে একটা হিসেব করে দেখা যেতে পারে’।

আমার চিন্তাটা ‘টি-রেক্সকে কিভাবে ধরাশায়ী করা সম্ভব তার খাবারে পরিণত না হয়ে’র দিকে ধাবিত হওয়াটাই হয়ত স্বাভাবিক ছিলো, কিন্ত আমি তাৎক্ষণিক উত্তর দিলাম, ‘নাহ, টি-রেক্স খাবনা। সে হিংস্র। ব্রন্টোসরাস পেলে খেতে পারি’।
ক্যারী মুচকি হেসে চলে গেল যার অর্থ হোল, ‘বুঝলে তো, যে হিংস্র তাকে কেউ কিছু বলেনা। হম্বিতম্বি যা চলে সব নীরিহের ওপর। এটাই জগতের নিয়ম’।

হুমম, বুঝলাম। শেষপর্যন্ত আমার যুক্তি, আমার আনুগত্য, আমার বিনয়, আমার ভদ্রতা পরাজিত হোল এই জগতের নিয়মের কাছে যার অযৌক্তিকতা নিয়ে আমরা এতক্ষণ আলাপ করছিলাম।

 

ধর্ষণের পর গৃহবধূকে পতিতা সাজালো ৪ ধর্ষক


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এক গৃহবধুকে পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। রোববার সকালে উপজেলার কাঁচপুর সোনাপুর এলাকায় এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পর ৩ ধর্ষক পালিয়ে যায়।

সোনারগাঁও থানায় দায়ের করা মামলার এজহারে ওই গৃহবধু উল্লেখ করেন, উপজেলার কাঁচপুর সোনাপুর এলাকায় একটি ফ্লাটবাসা ভাড়া নিয়ে স্বামীসহ বসবাস করেন। গত শুক্রবার তার স্বামী গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যান। ওইদিনই তার দেবর ও জ্যা তার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রোববার সকাল ৮টার দিকে কাঁচপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন, হেলাল, রবিন ও দেলেয়ার জোড়পূর্বক তাদের ঘরের প্রবেশ করে। এসময় তার দেবরকে মারধর করে জ্যাসহ তাদের দু’জনকে একটি কক্ষে আটকে রাখে। এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূর গায়ের ওড়না দিয়ে তার মুখ বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণকারীরা তার দেবরের কাছে থাকা নগদ টাকা ও ঘরে থাকা প্রায় ১০ হাজার নগদ টাকা নিয়ে যায়।

সোনারগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক( এসআই) তানভির আহম্মেদ জানান, গত রোববার সকালে ৪ ধর্ষণকারী গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ধর্ষণকারীরা ওই গৃহবধূ ও তার জ্যা’কে পতিতা এবং দেবরকে মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে কৌশলে ৩ ধর্ষক পালিয়ে যায়। কথাবর্তার এক পর্যায়ে আসল রহস্য বেরিয়ে আসলে হেলাল নামের এক ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়। পরে আটক ধর্ষক হেলালকে জিজ্ঞাসায় হেলাল ধর্ষণের কথা স্বীকার করে।বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

 

প্রতিবেশিনী……১


আফরোজা হাসান


দরজায় চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিতেই এতক্ষণের ধরে রাখা উত্তেজনা ক্লান্তির কণিকা রূপে সারা শরীর জুড়ে প্রবাহিত হয়ে গেলো মাহামের। উফ…শুধু শুধুই সে রেসের ঘোড়ার মত ছুটেছে এতক্ষণ। বাইরে থেকে ফিরে তাকে বাসায় না দেখলে ভীষণ বিরক্ত হয় আয়ান। সুপার মার্কেটে এক পরিচিত অ্যান্টির সাথে দেখা হয়ে গেলো হঠাৎ। এমন গল্প জুড়ে দিলেন ভদ্রমহিলা যে থামারই নাম নিচ্ছিলেন না। মাহাম কয়েকবার বলেছেও অ্যান্টি আমার একটু তাড়া আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাড়ার কথা শুনে উনি বরং লাফ দিয়ে দু’কদম এগিয়ে এসে খপ করে মাহামের হাত চেপে ধরলেন।

বাধ্য হয়ে মাহাম জানালো যে তার স্বামীর বাসায় ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। এই কথা শুনে ভদ্রমহিলা একরকম ঝাড়িই দিলেন মাহামকে। বললেন, সেজন্য তুমি এমন দৌড়াবা নাকি? তুমি সারাদিন একা একা অপেক্ষা করো না বাসায় জামাইয়ের জন্য? এখন তারে একটু অপেক্ষা করতে দাও। পুরুষ মানুষেরও বোঝা উচিত সারাদিন বাসায় বসে অপেক্ষা করতে কেমন লাগে। এরপর দেয়া শুরু করলেন সাংসারিক পরামর্শ। যার সারমর্ম হচ্ছে স্বামীদের কখনোই বিড়াল মারতে দেয়া ঠিক না। না বাসর রাতে না অন্য কোন রাতে। সংসারে বিড়ালকে জীবন্ত রাখতে হবে। বিড়ালের মিউ মিউ ছাড়া সংসার পানসা।

ভদ্রমহিলার সাংসারিক ক্লাস থেকে ছুটি পেয়ে একরকম দৌড়েই বাসায় এসেছে মাহাম। কিন্তু দরজার চাবি দিয়ে লক খোলা দেখে বুঝতে পারলো আয়ান চলে এসেছে বাসায়। মনটা অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেলো মাহামের। অল্প যে কয়েকটা আবদার আয়ান তার কাছে করেছে, বাসায় ঢুকেই তার হাসিমুখ দেখা সেগুলোর মধ্যে একটি। কয়েকদিন আগে নাস্তার টেবিলে একটা ব্যাপারে দুইজনের কিছুটা মত পার্থক্য হয়েছিলো। কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বাসা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল আয়ান। কিন্তু বাসায় ফেরার আগে মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠালো জানি যে আমাদের মনোমালিন্য চলছে। সেজন্য কথা বলা আমাদের। দয়া করে বাসায় ঢুকে যেন তোমার হাসি মুখ দেখি। তা না হলে কথা বলতেই ইচ্ছাই করবে না আমার।

ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলো মাহাম। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে তার। আয়ান প্রশ্ন করলে কি জবাব দেবে? এইসময় তো সুপার মার্কেটে না গেলেও হতো তার। পুরো বাসায় চোখ বুলিয়ে বুঝলো আয়ান ওয়াশরুমে। কিনে আনা জিনিসপত্র গুলো গুছিয়ে শোবার ঘরে ঢুকলো মাহাম। ড্রেসিংটেবিলের উপর একটা প্যাকেট দেখে হাতে তুলে নিলো। প্রতিমাসে আয়ান তার জন্য একটা করে লাভস্টোরি নিয়ে আসে। আয়ানের মতে মাহাম হচ্ছে এই নোবেল প্রাইজ পাবার মত আনরোম্যান্টিক মেয়ে। পৃথিবীর বিখ্যাত সব লাভস্টোরি পড়িয়ে তাই মাহামকে রোম্যান্টিক বানানোর চেষ্টা করছে সে।

আয়ানকে রুমে ঢুকতে দেখে সালাম দিয়ে আনিকা বলল, তুমি আবারো আমার জন্য ইয়াকি একটা লাভ স্টোরি নিয়ে এসেছো?

সালামের জবাব দিয়ে হাসতে হাসতে আয়ান বলল, হ্যা বেছে বেছে স্টোরের সবচেয়ে ইয়াকি লাভ স্টোরিটা নিয়ে এসেছি তোমার জন্য।

আয়ানের হাসিমুখ দেখে মাহামের মনের ভুবনে আনন্দধারা বইতে শুরু করলো। যাক তাহলে খুব বেশি বিরক্ত হয়নি আয়ান। আলাহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ্‌! মাহাম কখনোই চায় না আয়ানের আবদারের জিনিস গুলোতে কোন ঘাটতি রাখতে। যে মানুষটা তাকে এত ভালোবাসে এইটুকু দাবী সে অন্তত রাখে যে মাহাম তার ইচ্ছে গুলোকে মূল্য দেবে। আর এভাবেই তো একে অন্যের প্রতি আস্থা বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে।

দেড় মাসের সংসার জীবনের প্রতিটি দিনকেই ভালোবাসার এক একটি মহাকাব্য মনেহয় মাহামের কাছে। সে শুধু পাশে থেকেছে কিন্তু মহাকাব্য রচনার কাজ আয়ানই করেছে, করে। শ্বাশুড়ির প্রতি আবারো কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠলো মাহামের মনটা। তাদের বিয়ের রিসিবশনের পর একরকম জোর করেই দুজনকে এই ফ্ল্যাটে উঠতে বাধ্য করেছেন তিনি। উনার যুক্তি ছিল সারাজীবন পরিবারের সাথেই থাকতে হবে তোমাদেরকে। কিন্তু সংসার শুরুর এই প্রথম দিনগুলি যদি সুযোগ থাকে তাহলে শুধু একাকী নিভৃতে কাটানো উচিত দুজনার। তোমাদের যখন সেই সুযোগ আছে সুতরাং কাজে লাগাও। যদিও পরিবারের সবার জন্য খুব খারাপ লাগে মাহামের। রোজই চলে যায় শ্বশুরবাড়ি আর বাবার বাড়িতে। আয়ান ফিরে আসার আগেই আবার চলে আসে।

খাবার দেবার জন্য মাহাম রান্নাঘরে ঢুকলে আয়ানও এলো পেছন পেছন। বাসায় থাকলে কখনোই কোন কাজ মাহামকে একা করতে দিতে চায় না আয়ান। কিন্তু মাহামই আপত্তি করে আয়ান কাজ করতে এলে। এরও অবশ্য একটা কারণ আছে। গত কয়েকদিন আগে শীল-পাটায় তাকে ভর্তা করতে দেখে, পাটায় বাটতে কেমন লাগে সেটা ট্রাই করে দেখতে চাইলো আয়ান। শীল-পাটার সাথে আয়ানকে যুদ্ধ করতে দেখে খুব হাসছিলো মাহাম। ছোট ননদ বেড়াতে এসেছিল সেদিন তাদের বাসায়। হঠাৎ খেয়াল করলো পর্দার ফাঁক দিয়ে ছোট ননদ দন্ত বিকশিত করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। দুষ্টু প্লাস ফাজিলের চূড়ান্ত একটা মেয়ে তার ননদটি। আর বিবিসি-সিএনএন তো দুধের শিশু ওর কাছে। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবারের সবার ঘরে ঘরে পৌছে গেলো এই সংবাদ।
ছোট খালামণি ফোন দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, শুনলাম আয়ান নাকি তোকে মসলাও বেটে দেয়? হিহিহি…হাহাহা…! মামণি কল দিয়ে বলল, এইসব কি শুনছি জামাইকে দিয়ে তুই মসলা বাটাবি কেন? সবকিছুর তো একটা শোভন অশোভন বলেও কিছু আছে নাকি? বাবা ফোন করে বললেন, কি রে মা জামাইয়ের হাতে আবার ফোসকা পরেনি তো? বাবার কণ্ঠ শুনেই শুনেই মাহাম বুঝতে পারছিলো বহু কষ্টে হাসি চেপে ধরে কথা বলছেন। দেবর ম্যাসেজ পাঠালো, ভাবী প্লিজ মানুষকে গৃহপালিত বানানোর টিপস গুলা দাও তো আমাকে। তোমার দেবরাণীর উপর এপ্লাই করতে চাই। তারও কিছুক্ষণ পর দরজার নীচ দিয়ে ঢুকলো একটা চিরকুট। তাতে লেখা ছিল, এক ছিল বেচারা তাকে নিয়ে লিখছি ছড়া, সিংহ সেজে ঘুরতো সে বিয়ে করেই খাইলো ধরা।

একদিন সকালে উঠে দেখে তাদের পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। কিছুক্ষণ পর ডোর বেল বাজলে মাহাম দরজা খুলে দেখে প্রতিবেশিনী দাঁড়িয়ে আছে। তাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই প্রতিবেশিনী বলল, প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে নিশ্চয়ই জানা আছে আপনার? রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জিবরাঈল (আ.) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এত বেশি অসিয়ত করছিলেন, একপর্যায়ে আমার ধারণা হয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা মনে হয় প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী করে দেবেন।’ তিনি আরো বলেছেন- -‘ যে আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ এবং একথাও বলেছেন- ‘সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট ভরে খায়, অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে’।

সুতরাং আজ দুপুরে আপনাদের বাসায় আমাদের দাওয়াত। তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করে আমার ফ্ল্যাটে আসেন। গোছগাছ করতে সাহায্য করবেন আমাকে। বলেই সে তার ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। সাথে সাথেই আবার খুলে বলল, দুই কাপ চা পাঠিয়ে দেন তো। কাজ করতে করতে মাথা ধরে গিয়েছে। এই প্রতিবেশিনী আসার পর থেকে মাহামের জীবনের শান্তি শেষ। দিনের মধ্যে দশ-বারোবার হানা দেয় সে মাহামের ঘরে। কখনো কাপ নিয়ে এসে বলে একটু চিনি দেন, কখনো বলে চা পাতা দেন, কখনো বলে প্লিজ আপনার ঘর মোছার সময় আমার ঘরটাও একটু মুছে দিয়ে যাবেন। আর প্রতিদিনই তিন বেলার যে কোন একবেলা সে দাওয়াত খায় মাহামের বাসায়।

ডোর বেলের শব্দ কানে যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাহাম। ঐ যে আবারো এসে হাজির তার প্রতিবেশিনী……

চলবে…

 

মেয়েটার সমস্যা কী?


ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস


দিন তিনেক আগে মেয়েটার টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মেয়েটার বয়স ১৬।
২০১৯ এর এসএসসি পরীক্ষার্থী।
টেস্ট পরীক্ষার হলে সে হঠাত মাথা ঘুরে পড়ে গেল। তাড়াতাড়ি তাকে হল থেকে বের করে মাথায় পানি ঢালা হল।

বাসায় আনা হল।

বাসায় আসার পর দুইবার এবং পরবর্তী তিন দিনে আরো ছয়বার খিচুনী হল।

১.হাত পা শক্ত হয়ে যায়,
২.চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
৩.দাঁতে দাত চাপ লেগে যায়।
৪.এরপর বাইরের পরিবেশের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৫.হাত পা শক্ত হয় মাত্র ২-৩ মিনিটের জন্য, কিন্তু চোখ বন্ধ থাকা আর অজ্ঞান হওয়া বজায় থাকে ২০ মিনিট।
৬.জিহ্বায় কামড়, পায়খানা প্রস্রাব করে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেনি।
৭.ঘুমের মধ্যেও এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি।

কিন্তু টেস্ট পরীক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে টানা চারদিনে সাতবার এমন ঘটনায় পুরা পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।

কী করবেন?
মুলত রোগটি হল, Conversion Disorder.

এই পয়েন্টগুলো ভালভাবে মনে রাখতে হবে আমাদেরকে।

১। আসল মৃগী রোগীর খিঁচুনির সময় জিহ্বায় কামড় পড়ে, রক্ত আসে, নকল মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা খুবই কম।

২। আসল মৃগী রোগীর খিঁচুনির সময় প্রস্রাব পায়াখানা হয়ে যায়, নকল মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা খুবই কম। প্রস্রাব হয়ে গেলেও পায়খানা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

৩। আসল মৃগী রোগীর খিঁচুনির সময় চোখ খোলা থাকে, চোখ উলটে যায় আর খোলা চোখ দেখে আশপাশের লোকজন ভয় পেয়ে যায়, নকল রোগীর ক্ষেত্রে এই চোখ খোলা থাকে না, পুরা সময়ই চোখ বন্ধ থাকে। এটি খুব ই গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট।

৪। আসল মৃগী রোগীর খিঁচুনি মানুষের সামনেও হয়, আবার একা একা থাকার সময়ও হয়। আর নকল মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত সব সময়ই খিঁচুনি মানুষের সামনেই হয়, একা অবস্থায় কখনোই হয় না।

৫। আসল মৃগী রোগীর খিঁচুনি ঘুমন্ত জাগ্রত সব অবস্থায় ই হয়। আর নকল মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে খিঁচুনি ঘুমন্ত অবস্থায় সাধারণত কখনোই হয় না।

৬। আসল মৃগী রোগীর খিঁচুনির সময়কার কোন ঘটনাই মনে থাকে না। আসপাশে কে কী বলল সেটা শুনতে পায় না। নকল খিঁচুনির রোগী আশপাশের লোকজনের কথা শুনতে পায় এবং খিঁচুনির সময় কখন কীভাবে কী হল – এগুলি কিছু না কিছু বলতে পারে।

 

চট্টগ্রামে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


নগরের ডবলমুরিং থানার চৌমুহনী আল আমিন হোটেলের গলি থেকে রীনা আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
রীনা আক্তারের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। তার একটি মেয়ে রয়েছে। তার স্বামী গার্মেন্টকর্মী। ঘটনার সময় স্বামী কর্মস্থলে ছিলেন। রীনা ও তার বাবার বাসা পাশাপাশি।
ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে রীনা আক্তার আত্মহত্যা করেছে। লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর চূড়ান্তভাবে বলা যাবে এটি হত্যা না কি আত্মহত্যা।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

শুধু প্রণোদনা নয়, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণও প্রয়োজন


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


একজন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা কহিনুর বেগম। একাগ্রতা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে জীবনে এই সাফল্য বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি তিনি। অনেক নারী উদ্যোক্তার মতো ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনিও নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
বর্তমান সরাকর সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নারীবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি এবং সমাজের মূল ধারায় নারীদের নিয়ে আসতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক বাধা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবে কহিনুর বেগমের মত অনেক নারী উদ্যেক্তা সরকারের সদিচ্ছার সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে তারা তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারছে না। মাঝ পথে যেয়ে তাদেরকে থমকে দাঁড়াতে হচ্ছে। কহিনুর বেগম ১৯৯২ সালে মাত্র তিনশত টাকা মূলধন নিয়ে চালের ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে তিনি এই টাকা দিয়ে তিন মণ ধান কিনে চাল করে গ্রামের বাজারে বিক্রয় করেন। এতে তার ৬০ টাকা লাভ হয়। সেই থেকে তার সংগ্রামী জীবন শুরু। আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। অদম্য সাহস, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম তাকে ব্যবসায়ে সফলতা এনে দিয়েছিল। কোন বাধা তার গতিরোধ করতে পারেনি। সকল ধরনের বাধা পিছনে ফেলে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি একটি অটো রাইস মিল, একটি দুগ্ধ ও মুরগীর খামারের মালিক হয়েছেন। কিন্তÍু বিধিবাম তার সফলতার চাকা হঠাৎ করে থেমে গেছে। তিনিও এখন ব্যাংক ঋণ খেলাপি।
১৯৯২ সালে ছোট দু’টি সন্তান ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে খুব সংকটে পড়েছিলেন তিনি। তার স্বামী এলাকার একটি খাদ্য গুদামের শ্রমিক ছিলেন। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি পা হারান। এ সময়ে তিনি নিজেকে খুব অসহায় ভেবেছিলেন। একদিকে স্বামীর চিকিৎসা খরচ, অপরদিকে সন্তানদের নিয়ে সংসারের ঘানি তার কাঁধে চেপে বসে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কোন উপায়ন্তর না দেখে নিজেই সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরুতে আর্থিক সমস্যা থাকলেও তার মানসিক শক্তির কোন কমতি ছিল না। নারী ব্যবসায়ী হওয়ায় তাকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পুঁজির অভাবে ব্যবসা বাড়াতে পারছিলেন না। নারী হওয়ায় তাকে কেউ ঋণ দিতে চায় না। জামানত দিতে না পারায় ব্যাংকও তাকে কোন সহযোগিতা করছিল না। জামানত দিবার মত তার কিছুই ছিল না। এরপরও তিনি মনোবল হারাননি। এক বছর যেতে না যেতেই ১৯৯৩ সালে কহিনুর বেগম তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ। এই নামে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। তার ব্যবসা সাফল্য দেখে তাকে সহায়তা করতে একটি ব্যাংক এগিয়ে আসে। তিনি ২০০২ সালে প্রথম ব্রাক ব্যাংক হতে দুই লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এটি ছিল তাঁর জীবণে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনা করে। তিনি ব্যাংক ঋণ সুদসহ যথাসময়ে পরিশোধ করেন। তিনি ২০১০ সালে সাউথইস্ট ব্যাংক যশোর শাখা হতে ১০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ টাকা দিয়ে একটি দুগ্ধ ও মুরগীর খামার গড়ে তোলেন। তিনি ব্যবসা করে সাউথইস্ট ব্যাংকের ঋণও যথা সময়ে পরিশোধ করেন। তিনি তাঁর ব্যবসায়ের আয় হতে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটানো ছাড়াও আয়ের একটি অংশ সামাজিক কল্যাণে ব্যয় করতেন। তিনি বিধবাদের সাহায্য, গরীবদের মাঝে কাপড় বিতরণ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যয় করতেন। তিনি ২০১২ সালে তার দুগ্ধ খামারের জন্য বেসিক ব্যাংক থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করলেও পর্যাপ্ত বাজারজাতকরণ জ্ঞানের অভাবে তিনি দুগ্ধ খামারে সফলতার মুখ দেখতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ব্যাংক ঋণ খেলাপি।
ব্যবসায়ের শুরুতে তিনি একাই সব কাজ করতেন। ব্যবসা সম্প্রসারণের সাথে সাথে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ২০১৩ সালে কর্মচারীর সংখ্যা এসে দাড়াঁয় ২৬ জনে। কিন্তু তার ব্যবসায়িক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীর সংখ্যা মাত্র আট জন। এসএমই ফাউন্ডেশানের নারী উদ্যেক্তা উন্নয়ন উইং এর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, বাসস’র সাথে আলাপকালে, নিরাপত্তা ও বাজারজাতকরণ নারী উদ্যেক্তাদের জন্য প্রধান সমস্যা। নারীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তাদের মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজন এবং নারীরা যাতে দক্ষতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে এ জন্য অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে ১২ হাজারের বেশি নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী। নারী-পুরুষ পরিচালিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জগুলো প্রায় একই। তবে সরকার নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করে থাকে। এর মাধ্যমে সরকার নারীদের সম্ভবনাগুলোকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।

সুত্রঃ বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/কেইউসি/অমি/১৭৩২/আহো/-ওজি।

 

ধর্ষণ শিকার চতুর্থ শ্রেণির প্রতিবন্ধী ছাত্রী


নারী সংবাদ


মধ্যদুর্গাপুর (হিন্দুপাড়া) মহল্লার অটোভ্যানচালকের প্রতিবন্ধী মেয়েকে পংকজ কুমার অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী শ্রী অনুকুলের বাড়ির কাছে বসে খেলা করছিল মেয়েটি । মেয়েটিকে ডেকে পংকজ সেখানে গিয়ে কৌশলে অনুকুলের ঘরে নিয়ে যায়। এরপর ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। নওগাঁ শহরের মধ্যদুর্গাপুর মহল্লায় চতুর্থ শ্রেণির এক প্রতিবন্ধী ছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণ করা হয়েছে।

ধর্ষক পংকজ কুমারকে (৩৮) আসামি করে নওগাঁ সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন ধর্ষিতার বাবা বাদী হয়ে। ঘটনার পর থেকে ধর্ষক পংকজ পলাতক।

নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি মো. আব্দুল হাই জানান, ঘটনার পরপরই আসামি পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করা গেছে।

খুব শিগগিরই তাকে ধরা সম্ভব হবে।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মনির উদ্দীন আকন্দ জানান, বর্তমানে মেয়েটি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালট্যান্টের অধীনে চিকিৎসাধীন। তার ডাক্তারি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মেয়েটি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

 

ঘর সাজানোর নানান উপায়


ঘরকন্যা


টুকিটাকি জিনিসপত্র:

ঘরে নানা ধরণের টুকিটাকি জিনিসপত্র থাকে, যদি ঘরকে আরও সুন্দর দেখতে চান তাহলে টুকিটাকি জিনিসপত্র গুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুন সব কিছু। দেখা যাবে অল্প কিছু পরিবর্তনের ফলে ঘর লাগছে আরও সুন্দর।

ঘর সাজাতে গাছের ব্যবহার:

অন্যান্য ঘর সাজানোর জিনিসের তুলনায় ফুল এবং গাছ বেশ সস্তা। এই গাছ দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার ঘর। গাছ ঘরকে রঙিন ও জীবন্ত করে তুলবে। জানালার ধার ঘেঁষে লতানো গাছ লাগানো যেতে পারে আর ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস না থাকলে গাছের বদলে রেখে দিতে পারেন একগুচ্ছ তাজা ফুল। ঘরের এক কোণে কয়েকটি তাজা ফুল রেখে দিলে নিমিষেই ঘর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

সুগন্ধি ব্যবহার করুন :

ঘরকে প্রাণবন্ত করতে এয়ারফ্রেশনার ব্যবহার করুন। এতে মন সতেজ হবে, ঘরও হবে সুগন্ধময়।

আসবাবপত্র ঠিক জায়গায় রাখুন:

ঘরের সঠিক জায়গায় সঠিক আসবাবটি বসান। আর যদি ঘরে শিশু থাকে, তাহলে তাদের জন্য আলাদা ফাঁকা জায়গা রাখার চেষ্টা করুন। এতে দেখবেন, ঘরটি আরো পরিপাটি হয়ে উঠবে।

 

বাংলাদেশে নবজাতককে নিয়ে হাসপাতালের পাঁচতলা থেকে মায়ের লাফ


নারী সংবাদ


আজ (শুক্রবার) সকাল নয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের দি ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড স্পেশালাইজড হসপিটালের ওপর থেকে হঠাৎ একটি নবজাতক শিশুকে রাস্তায় আছড়ে পড়তে দেখে পথচারীরা হতভম্ব হয়ে পড়েন।
পরক্ষণেই তারা লক্ষ্য করেন হাসপাতালের পাঁচ তলা থেকে একজন নারী নিজেও লাফ দেয়ার চেষ্টা করছেন।
সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা শাহাদত হোসেন।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন “আমরা কাছে গিয়ে দেখলাম শিশুটি স্পট ডেড। তখন আমরা নীচ থেকে সবাই জড় হয়ে ঐ মহিলাকে বার বার নিষেধ করছিলাম যাতে সে লাফ না দেয়। কিন্তু সেই কিছুক্ষণের মধ্যেই সে লাফ দিল।”
ঘটনাস্থলেই নারীটিও মারা যান।
হাসপাতাল এবং স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, সাথী আক্তার নামে এই নারী গত ১৬ তারিখে দি ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড স্পেশালাইজড হসপিটালের পাশের একটি হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালে তার সাথে ছিলেন তার মা।

প্রত্যক্ষদর্শী শাহাদত হাসেন জানান বলেন, লাইফ কেয়ার শিশু জেনারেল হাসপাতালে যেখানে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন সেখানে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, গতকাল রাতভর ঐ ঘর থেকে কথা-কাটাকাটির শব্দ শোনা গেছে বলে পাশের কক্ষে থাকা লোকজন তাকে বলেছেন।

তিনি বলছিলেন “৩০২ এবং ৩০৩ এই দুটি রুমের জন্য একটা এসি বরাদ্দ থাকায় কিছুটা গ্যাপ ছিল। ৩০৩ নং রুমে ছিলেন ফরিদা খাতুন নামে এক রোগি। তিনি বলেন বাচ্চাটা সারা রাত কেঁদেছে, তার কান্নার জন্য তারা ঘুমাতে পারেনি। একই সাথে সীমা তার মায়ের সাথে ঝগড়া করছিল। তাকে ফোনেও কথা বলতে শোনা গেছে। তারা ধারণা করছেন সীমা তার স্বামীর সাথে সেই সময় কথা বলছিলেন।”

চিকিৎসকরা বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অনেক নারী মানসিক চাপে ভোগেন।

সীমার স্বামী লেবাননে থাকেন। বছর খানেক আগে তাদের বিয়ে হয়।
কিন্তু নবজাত শিশুকে নিয়ে কি কারণে তিনি এই আত্মহননের পথ বেছে নিলেন সেই সম্পর্কে কেও ধারণা করতে পারছেন না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন বলেন ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা সীমার মাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, কিন্তু সন্দেহজনক কোন কিছু এখনো তারা পাননি।
পুলিশের ঐ কর্মকর্তা বলেন, “মেয়ের মা বলছে গতকাল থেকেই তাকে মেন্টালি ডিজ-অর্ডার লাগছিল। সে কারো কিছু না বলে তার বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেছে এবং পার্শ্ববর্তী আরেকটা হাসপাতাল থেকে বাচ্চাকে ফেলে দিয়ে নিজেও পড়ে গেছে। আসলে এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা তদন্ত করছি, একটা মামলা হয়েছে”।
পুলিশ বলছে, হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজে তারা দেখেছেন বাচ্চাকে কোলে করে মহিলা হাসপাতালে তার নিজের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসছেন। তার মা বলছেন, সেই সময়ে তিনি ঘরে ছিলেন না।
এদিকে অস্বাভাবিক এই মৃত্যুর ঘটনায় শহরে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মি. হোসেন বলেন, পুরো শহর জুড়ে মানুষজন এ নিয়ে কথা বলছে। “আমাদের কাছে খুব রহস্যজনক মনে হচ্ছে।”
পুলিশ বলছে এই ঘটনায় নিহত সাথীর শ্বশুর বাড়ীর লোকজনকে ডাকা হয়েছে কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা এখনো আসেন নি।

সুত্র: ফারহানা পারভীন
বিবিসি বাংলা, ঢাকা

 

কেঁচো সারে উত্তরে নারীর ভাগ্যবদল


মাহবুব আলম


বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। সৃষ্টির শুরু থেকেই দেশের কৃষকদের লক্ষ্য ছিল কিভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষি ক্ষেত্র অনেকটাই দখল করেছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। দেশে ঘটেছে কৃষি বিপ্লব। তথাপি বিলুপ্ত হয়নি প্রাকৃতিক পদ্ধতি। আবার কখনো কখনো প্রকৃতির সঙ্গে বিজ্ঞানের মিশেলে কৃষি পদ্ধতি হয়েছে আরো সমৃদ্ধ। যেমন কেঁচো সার একটি যথার্থ উদাহরণ। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে উৎপাদন করা হচ্ছে কেঁচো সার। আধুনিক যুগে যা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম বাংলায়। বৈজ্ঞানিক উপায়ে কেঁচো সার উৎপাদন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। একজনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এমন পেশায় নিজেকে শামিল করছেন। এতে পরিবারগুলোর মধ্যে ফিরছে স্বচ্ছলতা। তাদেরই একজন মিনতি রাণী সরকার; বয়স ত্রিশের কোটায়। যিনি কেঁচো সার উৎপাদন করে এনেছেন পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা। দিনাজপুর জেলার বিরলে কেঁচো সার উৎপাদনের ধুম পড়েছে। আর এর অনেকটাই করছেন নারীরা। ঘরে ঘরে কেঁচো সার তৈরি করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি তারা সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতাও। কেবলমাত্র মিনতি রাণীই নন। এলাকার অনেকেই এখন নিজেদেরকে কেঁচো সার তৈরিতে নিয়োগ করেছেন।
সম্প্রতি দিনাজপুরের ওই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রথমে উপজেলার দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর গ্রামের পাঁচ নারী কেঁচো সার তৈরিতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নেন। এর মধ্যে গ্রামের বিলপাড়ার পুতুল চন্দ্র দেবশর্মার স্ত্রী লিপা রাণী একজন।
লিপা রাণী জানান, প্রথমে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে ঋণ নিয়ে তারা কেঁচো সার তৈরির কাজ শুরু করেন। সাত মাস আগে ছয়টি রিং, কেঁচোসহ যাবতীয় উপকরণের জন্য খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু এরই মধ্যে পর্যায়ক্রমে তারা ৩০ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করেছেন।
প্রথম ৬টি রিং দিয়ে শুরু করলেও এখন ২২টি রিংয়ে কেঁচো সার তৈরির কাজ চলছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, স্বাবলম্বী হতে বিরল উপজেলার দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর গ্রামের বিলপাড়ার ঘরে ঘরে নারীরা কেঁচো উৎপাদন করছেন। তবে তাদের প্রত্যাশা, সরকারিভাবে এ কাজে বিনাসুদে ঋণ পেলে আরও বড় আকারের খামার তৈরিসহ সারের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এভাবে হতে পারে শত শত নারীর ভাগ্যোন্নয়ন। বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম এই প্রতিবেদককে জানান, বিরলের নারীদের ভাগ্যোন্নয়ন ও কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য কাজ চলছে। এক্ষেত্রে তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও কাজ করছি আমরা।
এদিকে লিপা কিংবা মিনতি নয়, তাদের দেখাদেখি এ কাজে এগিয়ে এসেছেন দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় শতাধিক নারী-পুরুষ। এ কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বাইরেও।
পার্শ্ববর্তী বিজোড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামেও তৈরি হচ্ছে কেঁচো সার। স্থানীয় আবদুল আলীম বলেন, যারা আগে কেঁচো সার তৈরি করেছেন তাদের থেকে আমরা সহযোগিতা নিয়েছি। পারস্পরিক সহযোগিতার কারণে এলাকায় কেঁচো সার তৈরি ছড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসলাম কাদির বলেন, কেঁচো সার তৈরির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এতে শুধু নারীরাই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে না, কৃষিতে কমে যাবে রাসায়নিক সারের চাহিদাও।
এদিকে পরিবেশবান্ধব জৈব কম্পোস্ট সার ও সবজি উৎপাদনে এলাকার নারীদের নিয়ে কাজ করছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের চুহড় গ্রামের মর্জিনা খাতুন।
তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের কম্পোস্ট সার, কেঁচো সার তৈরি করে ধান, ভুট্টা, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, আলু, শিম, শশা উৎপাদনে ব্যবহার করেছেন। এতে তার সাফল্যও এসেছে। গত একবছরে তার সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
মিঠাপুকুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, মর্জিনা বেগম এ এলাকার মডেল চাষী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আমরা তার মতো অন্যদেরও নানা ধরনের সহযোগিতা করছি।

সুত্র: বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/মাআ/স্বব/২২২০/আহো/-ওজি।

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ১ম খন্ড


আফরোজা হাসান


চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠে বসলো অধরা! আরেকবার ভালো করে তাকালো ঘড়ির দিকে। সত্যি সত্যিই এগারোটা বিশ বাজে! এটা কি হলো?! সে এতক্ষণ ঘুমোলো কি করে?! সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মাথা ভার লাগছিল খুব। তাই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে আধঘন্টার জন্য শুয়েছিল আবার। কিন্তু অ্যলার্ম তো দিয়েই শুয়েছিল! তাহলে? সময়মত অ্যলার্ম কেন বাজলো না দেখার জন্য মোবাইল হাতে নিলো। আজ শুক্রবার কিন্তু সে দিয়েছে শনিবার! এই তাহলে ঘটনা! নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হতে লাগলো। এগারোটায় বেশ জরুরি একটা মিটিং ছিল। আরো কিছুক্ষণ গুম ধরে বসে থেকে রাজীব মামাকে ফোন করে আসতে পারবে না জানিয়ে দিলো। বাইরে যেহেতু যাওয়া হচ্ছেই না আরেকটু ঘুমিয়ে নিলে কেমন হয়? এমন অলস চিন্তার জন্য ধিক্কার দিতে দিতে বিছানা থেকে নামলো অধরা। শরীর ও মনের আলসেমী দূর করার জন্য শাওয়ার নেয়া হচ্ছে তার জন্য বেষ্ট অপশন। অবশ্য শুধু আলসেমীই না শাওয়ার মারওয়ার মনের স্যাঁতস্যাঁতে, খিটপিটে, চিড়চিড়ে, ধোঁয়া ধোঁয়া ভাব দূর করতেও বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো, মন বিষয়ক একটা অ্যাড তৈরি করলে কেমন হয় বলো তো অধরা? অ্যাডের জিঙ্গেল হবে “ মনের স্যাঁতস্যাঁতে, খিটপিটে, চিড়চিড়ে, ধোঁয়া ধোঁয়া ভাব দূর করতে চান? হিয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকার কারণে দেখতে না পাবার মতই আপনার হাতের কাছেই লুকিয়ে আছে অবিশ্বাস্য ফর্মূলা। নিজেকে আপাদমস্তক ডুবিয়ে দিন পানিতে, ধীরে ধীরে মন সিক্ত হবে প্রশান্তটিতে!”

আপি আপনি কার সাথে কথা বলছেন?

প্রশ্ন শুনে ঘুরে পেছনে তাকালো অধরা। ছোট ভাইয়ের নববধূ মুনিরা চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করেই তিনমাস আগে মুনিরা আর সাদাতের বিয়ে হয়েছিল। ব্যস্ততার কারণে তখন দুজনকে বাসায় দাওয়াত দিতে পারেনি অধরা। ব্যস্ততা কিছুটা কমে যাবার পর দুজনকে কয়েকদিনের জন্য তার বাসায় নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। গত পরশু হাজির হয়েছে ক্ষুদে দম্পতি। যারা সকালে হুড়মুড় করে তৈরি হয় অফিস যাবার জন্য নয় বরং ইউনিভার্সিটি যাবার জন্য। গতকাল নাস্তার টেবিলে বসে সাদাত যখন বলছিল, মুনিরা তাড়াতাড়ি করো আমার ক্লাস মিস হয়ে যাবে! অনেক মজা পেয়েছিল অধরা। মুনিরার প্রশ্নের জবাবে হেসে বলল, ক্লাসে যাওনি তুমি?

জ্বিনা আপি। আজ যেতে ইচ্ছে করছিল না। তবে সাদাত গিয়েছে। নাস্তা করবেন না আপি? আমি চায়ের পানি চাপিয়েছি অনেকক্ষণ আগেই। চা বানাবো আপনার জন্য?

আধঘন্টা পরে বানাও। আমি শাওয়ার নিতে যাচ্ছি।

নাস্তার টেবিলে বসে মুনিরার দিকে ভালো করে তাকালো অধরা। নাক-চোখ ঈর্ষৎ লালচে, ফোলা ফোলা লাগছে। কান্না করেছে সেটা রুমে যখন দেখেছে তখনই বুঝতে পেরেছিল। কেন কান্না করেছে সেটা হচ্ছে গিয়ে প্রশ্ন! নববধূদের হাসি-কান্না দুটোই বৈচিত্র্যময়তায় টইটুম্বুর! চলতে চলতে হঠাৎ হুমড়ি খেয়ে পড়ার মত, বিয়ে হচ্ছে মেয়েদের জন্য বড় হতে হতে হঠাৎ আবার ছোট্ট হয়ে যাওয়া। এক্কেবারে ইক্টুসখানি একটা পিচ্চি বাবুনি যাকে বলে। যে একটুকেই হাসে, একটুতেই কাঁদে। আদুরে আদুরে আবদার করে, সেসবে হেরফের হলেই অভিমান করে। কিন্তু পরিবারের মানুষগুলো এসব বোঝে না বেশির ভাগ সময়ই। তারা মনেকরে বড় হয়েছে বলেই বিয়ে হয়েছে। আর বিয়ে হয়েছে মানেই তুমি এখন বিশাল সব দায়িত্বের বোঝা মাথায় নেবার জন্য প্রস্তুত। কেউ বুঝতে চায় না একটা মেয়ে হিসেবে সে বড় হয়েছে। কিন্তু একজন বধূ হিসেবে মাত্রই তার জন্ম হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বোঝে না বলেই একটি মেয়ে নতুন সম্পর্কের জন্মলগ্নের আদর কদর থেকেও বঞ্চিত হয় বেশির ভাগ সময়ই। চুপচাপ নাস্তা সেরে নিলো অধরা। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে হেসে বলল, মাশাআল্লাহ তুমি তো বেশ মজা করে চা বানাও। আমি কফি সবার হাতে খেলেও চা সাধারণত নিজের হাতের বানানো ছাড়া খেতে পারি না। মনেহয় আমার চা আমি ছাড়া অন্যকেউই বানাতে পারবে না। কিন্তু তোমার চা সত্যিই মজা হয়েছে।

হাসি ফুটে উঠলো মুনিরার চেহারাতে। থ্যাঙ্কইউ আপি। আমি যে কয়দিন থাকবো রোজ আপনাকে চা করে দেবো।

ইনশাআল্লাহ। এখন বলো কেমন কাটছে তোমাদের সময়? মুনিরাকে চুপ থাকতে দেখে অধরা হেসে বলল, তুমি আমার সাথে মনের সব কথা শেয়ার করতে পারো।

খানিকটা অভিমানী কন্ঠে মুনিরা বলল, আপি কথা দিয়ে কথা না রাখা কি ভালো?

কথা দেয়া মানে হচ্ছে ওয়াদা করা। আর ওয়াদা রক্ষা করা তো মুমিনের শান।

কিন্তু সাদাত কখনোই কথা দিয়ে করা রাখে না। ফোন করার কথা বলে ফোন করে না, বাসায় ফেরার এক সময় বলে কিন্তু কখনোই সেই সময়ের মধ্যে বাসায় ফেরে না। ঘুরতে যাবার প্ল্যান করেও আবার ক্যান্সেল করে দেয়।

সবসময়ই এমন করে নাকি মাঝে মাঝে?

একটু চুপ থেকে মুনিরা বলল, বেশ কয়েকবার করেছে।

অধরা হেসে বলল, খুব অভিমান জমেছে তোমার মনে বুঝতে পারছি। তুমি সাদাতের কাছে জানতে চাওনি কেন এমন করেছে? কেন কথা দিয়েও সেটা রাখেনি।

জানতে তো চেয়েছিই। অজুহাতের তো কোন অভাব নেই ওর কাছে। ঠিকই নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেলে।

সাদাতের যুক্তিগুলোকে তুমি অজুহাত কেন ভাবছো? সত্যিও তো হতে পারে তাই না? হয়তো যা যা বলেছে সেসবই ওর ওয়াদা ভঙ্গের কারণ ছিল। এমনটা কি হতে পারে না? মুনিরাকে চুপ দেখে হাসলো অধরা। বলল, আমি ভাইয়ের সাপোর্টে কথা বলছি এমনটা ভাবছো নাতো আবার?

না আপি এমন ভাবছি না।

আমারো বিয়ে হয়েছিল তোমার মত অনেক ছোট বয়সে। ইনফ্যাক্ট তোমার চেয়েও দুই আড়াই বছর ছোট ছিলাম আমি বিয়ের সময়। তোমাদের ভাইয়া প্রচন্ড রকম ব্যস্ত একজন মানুষ ছিলেন। আমাদের বিয়ের পরপর পারিবারিক কিছু কারণে উনার সেই ব্যস্ততার মাত্রা আরো বেড়ে গিয়েছিল। যখন ফোন করে উনাকে পেতাম না, ম্যাসেজ করার করার কয়েক ঘন্টার পরেও রিপ্লাই আসতো না, বাইরে যাবার জন্য তৈরি হয়ে বসে আছি আমি উনি ফোন করে জানাতেন কাজে আটকে পড়েছেন, আমি কথা বলতে চাইতাম আর উনি ক্লান্তির কারণে ঘুমোতে চাইতেন। তখন আমারো এমন তোমার মত অভিমান হতো খুব। খুব খুব অভিমান। উনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না, আমার কোন গুরুত্বই নেই উনার কাছে ইত্যাদি ভেবে ভেবে ওয়াশরুমে, ছাদের কোনায় বসে কত যে কান্না করেছি। কত শত নেতিবাচক কথা যে চিন্তা করেছি। কেন যে বিয়ে করেছি সেই আপসোসের সীমা থাকতো না।

মুনিরা লাজুক হাসি হেসে বলল, আমারো এমন ভাবনা মনে আসে আপি।

অধরা হাসতে হাসতে বলল, জানি। আমরা মানুষেরা একে অন্যের থেকে যতই আলাদা হই না কেন! কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভাবনারা একাকার! যাইহোক,অভিমান আর জেদের বশে অনেক সময় ইচ্ছে করে ইগনোর করতাম তোমাদের ভাইয়াকে। হয়তো বাইরে যাবার কথা বলেছে আমি শরীর খারাপের বাহানা করতাম। মুখ ফুটে কিছু বলার স্বভাব ছিল না আমার। তাই এভাবে অভিমানের প্রকাশ ঘটাতাম। কিন্তু আমি যে অভিমান করে বাইরে যেতে চাচ্ছি না সেটা উনি বুঝতে না পারার কারণে বলতেন, আচ্ছা তাহলে তুমি বিশ্রাম নাও। আমার অভিমান তখন আরো বেড়ে যেত। মনেহতো উনি আমাকে বুঝতেই চেষ্টা করছেন না। যদি করতেন তাহলে আমাকে জোর করতেন। কিন্তু একবারও আমার মনেহতো না যে, আমি না বললে, না বুঝতে দিলে উনি কিভাবে জানবেন আমার মনের মধ্যে কি চলছে?! কারো মনের ভাবনা তো কেউ দেখতে পায় না। এমন একদিন আমি উনাকে ফোন করেছিলাম রিসিভ করে আমাকে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, একটু পরে তোমাকে ফোন দিচ্ছি বলে উনি লাইন কেটে দিয়েছিলেন। সেদিন আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। একটূ পর যখন উনি ফোন দিয়েছিলেন আমি ধরিনি। একটু পর পর ফোন দিয়েই যাচ্ছিলেন। আমিও ফোন না ধরার পণ করে বসেছিলাম। আমার কিছু হয়েছে এই চিন্তায় অস্থির হয়ে উনি কাজ ফেলে বাসায় ছুটে এসে যখন দেখলেন আমি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছি রেগে গিয়েছিলেন প্রচন্ড। এতদিনের জমিয়ে রাখা ক্ষোভ আমিও চাপা দিয়ে রাখতে না পেরে বিস্ফোরিত হয়েছিলাম।

সেদিন বুঝি অনেক ঝগড়া হয়েছিল আপনার আর ভাইয়ার?

উহু! সেদিন আমরা একে অন্যের তরে ভুল বোঝাবুঝির জানালা রুদ্ধ করে দিয়ে সর্বাবস্থায় একে অপরকে বুঝবো, কখনো বুঝতে না পারলে জিজ্ঞেস করবো, কিন্তু কখনোই ভুল বুঝবো না এই দ্বার খুলে দিয়েছিলাম।

কিভাবে আপি?

তোমার ভাইয়া আমাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন কিভাবে অভিমান আমাদের চিন্তা চেতনাকে আত্মকেন্দ্রিক করে দেয়। আমাদের ভাবনারা তখনো ডালপালা মেলে কিন্তু শুধু নিজেকে ঘিরে। অভিমানি মনের জগত হয় ‘আমিময়’। অথচ চিন্তার কেন্দ্রটিকে আমি থেকে একটু ঘুরিয়ে দিলেই সবকিছু অনেক সহজ হয়ে যায়। আচ্ছা চলো কিচেনে যাই আমরা। সাদাতের সবচেয়ে পছন্দের কিছু খাবার রান্না করা শিখিয়ে দেব তোমাকে। রান্না করতে করতে গল্পও করা হয়ে যাবে।

মুনিরা হেসে বলল, জ্বি আপি চলেন।

চলবে…

 

কিশোরী বয়সেই বিয়ে, তালাক অতঃপর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


স্বামী তালাক দেয়ায় মনের দুঃখে আত্মহত্যা করেছে তাসলিমা আক্তার তানিয়া নামে মাত্র পনের বছর বয়সী এক স্ত্রী। ভাগ্যাহত ওই কিশোরীর বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বুরুঙ্গা গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই গ্রামের ইউনুছ আলীর ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা তানিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে দিনাজপুর জেলার কানিতোলা উপজেলার তাওলিয়াপাড়া গ্রামের মাজেদুল ইসলামের বাউন্ডেলে ছেলে ইসমাইল হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় এক বছরকাল প্রেম করার পর অভিভাবকদের অগোচরে বিয়ে করে দুজনই।

বিয়ের ৮ মাসের মাথায় পারিবারিক কলহ বাঁধে। পরে সংবাদ পাঠিয়ে তানিয়ার মাকে দিনাজপুর নিয়ে যাওয়া হয়। গত সোমবার স্বামী ইসমাইল শাশুড়িকে ঘরে আটকে রেখে কিশোরী স্ত্রী তানিয়াকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং তালাক দেয়।

এরপর তানিয়া রাতের বাসেই মায়ের সাথে নালিতাবাড়ীস্থ পিত্রালয়ে চলে আসে এবং মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে বিষপান করে।

স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তানিয়ার বাবা ইউনুছ আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

১২ হাজার পিস ইয়াবাসহ নারী আটক


নারী সংবাদ


কক্সবাজারের টেকনাফে ইয়াবাসহ লায়লা বেগম (৩২) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সময় তার কাছ থেকে ১২ হাজার পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রির নগদ সাড়ে ২৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার সময় উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ার নিজ বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার লায়লা টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পূব সাতঘড়িয়া পাড়া এলাকার নূরুল আলমের স্ত্রী।

টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, রাতে তারই নেতৃত্বে একদল পুলিশ হোয়াইক্যং পূব সাতঘড়িয়া পাড়ার চিহ্নত ইয়াবা ব্যবসায়ী নূরুল আলমের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ ১২ হাজার পিস ইয়াবা, নগদ ২৯ লাখ ৫৭ হাজার তিনশ টাকাসহ লায়লাকে আটক করে। ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ গ্রেফতার লায়লা বেগম ও বাড়ির মালিক নূরুল আলমকে পলাতক আসামি করে মাদকসহ সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, লায়লা বেগমের স্বামী নুরুল আলম চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নেতৃত্বে রয়েছে শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। কৌশল এসেই দীর্ঘদিন মাদক ব্যবসা করে আসছিল। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও মাদক ব্যবসায়ী নুরুল আলম ও তার স্ত্রী লায়লাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

স্তন ক্যানসার : সচেতনতাই যার প্রতিকার – ২য় পর্ব


নুসাইবা ইয়াসমীন


বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের সঠিক কোন পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিগত পাঁচ বছরে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এলার্মিং হারে। পাশ্চাত্যের স্তন ক্যানসারের তীব্রতা অনেক আগে থেকে থাকলেও আমাদের দেশ তা থেকে ছিল অনেকটাই মুক্ত । বিশেষজ্ঞদের মতে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের খাদ্যাভাস এবং জীবনপদ্ধতির পরিবর্তন এর জন্য দায়ী। বর্তমানে প্রাচ্যের মত আমাদের দেশের নারীদের মধ্যেও জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল বা পিরিয়ড বন্ধকারী পিল খাওয়ার প্রবনতার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
তবে আশার ব্যাপার হলো প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত করা গেলে আপনি মৃত্যু ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত। প্রয়োজন নিয়মিত স্তনের সেল্ফ পর্যবেক্ষণ করা। কখনও যদি স্তনে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণীয় দিক দেখা যায় তা দেখে বিচলিত হবেন না। শরণাপন্ন হন কোন গাইনোকলজিস্টের কাছে। আপনার ডাক্তার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষণ বের করে থাকেন তাহলে আপনাকে কিছু টেস্টের মাধ্যমে ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে হবে। টেস্টের রির্পোটে যদি অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া না যায় তবে নিয়মিত চেকআপে থাকুন আর যদি ক্যান্সারের সেল সনাক্ত হয় তবে চলে যান একজন সাইকোলজিস্ট ও একজন সার্জনের কাছে।

ব্রেসট ক্যানসার সনাক্তকরনে যে সকল টেস্ট করা হয়ে থাকে তা হল

১. ব্রেসটে আলট্রা সাউনড: ব্রেসটে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা লক্ষণ দেখা গেলেই। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাধারনত ত ব্রেসটের কতকগুল টেস্ট করার মাধ্যমে ব্রেসট লাম্বের সাইজ ও ধরন নির্নয় করা যায়।

২। এফ এন এ সি ( ফাইন নিডেল এ্যাসপিরেশন সাইটোলজি): এফ এন এ সির পদ্ধতিতে একটি সুই এর মাধ্যমে ব্রেসট থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীকখা করা হয় স্যাম্পলটি ক্যানসারিয়াস কিনা। এই টেস্টে সুই ব্যবহৃত হলেও এতে কোন ব্যথা অনুভূত হয় না।এ পরীকখাটি সাশ্রয়ী ও রিপোর্ট দ্রুত পাওয়া সম্ভব।

৩. কোর বায়োপসি / ট্রু কাট বায়োপসি: ক্যানসার পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করার জন্য কোর বায়োপসি করা হয়ে থাকে। এ পরীকখাটি সাধারনত লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে করা হয়। এতে ব্রেসটের খুব সামান্য পরিমান (সাধারনত ২ সে. মি) অংশ কেটে স্যাম্পল নেয়া হয়। এ পরীকখা কিছুটা ব্যয়বহুল। সাধারনত টেস্টের রেজাল্ট পেতে সাত দিনের মত সময় লাগে।

৪. ম্যামগ্রাম: বায়োপসিতে যদি ক্যানসার সনাক্ত হয়ে থাকে তবে ম্যামগ্রামের মাধ্যমে ক্যানসার সেলের বৃদ্ধ পাওয়ায় ও ধরন নির্নয় করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ম্যামগ্রাম প্রাথমিক টেস্ট হিসেবে ক্যানসার সনাক্তকরনে ব্যবহৃত হয়। ম্যামগ্রাম এক্সরের মত এক প্রকার ইস্ত্রিনিং পদ্ধতি। এতে রেডিও একটিভ রে ব্যবহৃত হয় বলে গর্ভবতি মহিলাদের এ টেস্ট না করার পরামর্শ দেয়া হয়।

অনেক সময় ক্যানসার সনাক্তকরণে এমআরআই ও করা হয়ে থাকে।

যদি আপনার বা আপনার পরিবারের কোন সদস্যের ক্যানসার সনাক্ত হয় খুব দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। মনে রাখবেন ক্যানসার খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে তাই এক দিন বিলম্ব আপনার জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে অনেকখানি।
এখেএে সর্ব প্রথম যে সমস্যায় অামরা সমুখখিন হই তা হল সঠিক তথ্য ও দিকনিদের্শনার অভাব।তাই চিকিত্সা শুরুর পূর্বেই যে বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারনা থাকার প্রয়োজন তা হলো:

১. ঠিক কি কি ধরণের স্তন ক্যান্সার হতে পারে?

২. ক্যান্সার যদি টিউমারজনিত হয় তাহলে এর সাইজ বর্তমানে কত?

৩. কোথায় বা কোন স্থানে এটা হতে পারে?

৪. স্তন ক্যান্সার কি অন্যান্য লিমপফ নোড এ প্রসারিত হয়েছে কিনা।

৫. ক্যান্সারের স্তর বা স্টেজ কি এবং বর্তমানে কোন স্তর এ অাছে।

৬. চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কি অন্য কোন পরীক্ষার প্রয়োজন অাছে কিনা।

৭. অন্য কোনও ডাক্তার (ফার্টিলিটি, ডেনটিসট,কার্ডিও) অথবা অন্য কোন স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখান দরকার আছে কিনা?

৮. ক্যান্সারের হরমোন রিসেপটর অবস্থা কি? এটার মানে কি? ক্যান্সারের HER2 অবস্থা কী? এটার মানে কি?

৯. কিভাবে এই বিষয়গুলি আমার চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবে এবং চিকিৎসার খেএ্রে কি কি অপশন অাছে।

১০. ক্যান্সারের স্টেজ এর উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু?

১১. আমাদের জিনগত পরীক্ষা সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত কি? টেস্টিং এর বিকল্প কি?

১২. কিভাবে আমরা আমাদের প্যাথলজি রিপোর্টের একটি কপি পেতে পারি?

১৩.রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য সর্বমোট কত খরচ লাগতে পারে।
বেসরকারি পর্যায়ে ক্যানসারের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। তাই চিকিৎসা শুরুর আগেই পরিবারের সাথে বসে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে নেয়া জরুরী।

ব্রেসট ক্যানসারের ঝুঁকি ও এর প্রকপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।সচেতনতা ও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসাই পারে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে একটি সুন্দর জীবন।

 

সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ক্যানসার নিয়ে নতুন ওষুধ আবিষ্কার কলকাতার মেয়ে ফিনাজ খান !


নারী সংবাদ


ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করে কেমােথেরাপির নতুন ওষুধ আবিষ্কার করলেন কলকাতার বেলগাছিয়ার হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফিনাজ খান। ২৩ বছরের বাংলার এই কন্যার সাফল্য সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আমেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিষ্টি নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি করার সময় ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। নিজের গবেষণায় কেমােথেরাপির নতুন ওষুধ আবিস্কার করেন ফিনাজ। তার গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়েছে লন্ডনের রয়াল সোসাইটি অব কেমিষ্টি। শীঘ্রই ফিনাজের তৈরি কেমোথেরাপির নতুন ওষুধ বাজারে ভালো হবে বলেও জানিয়েছে লন্ডনের ওই সংস্থা। হতদরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারের সন্তানের এই অসামান্য কৃতিত্বে খুশির হওয়া বেলগাছিয়া জুড়ে।

বরাবরই মেধাবী ছাত্রী ফিনাজ খান৷ স্কুল জীবন থেকেই আলাদা কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন ছিল তার। বাংলার এই বল্যাশ্রীর আদর্শ মানুষটি হলেন প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম৷ সপ্তম শ্রোণীতে পড়ার সময় স্কুলে একবার প্রোজেক্টারের মাধ্যমে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বক্তব্য শুনেছিলেন ফিনাজ৷ তার কথায়, ‘সেই দিনই মনে হয়েছিল, আমিও চেষ্টা করলে কিছু করতে পারি। তখন থেকেই মনে হয়েছিল এমন একটা কিছু করব যেটা মানুষের বা সমাজের কাজে আসবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেন তিনি। স্কুলের পর গুরুদাস কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে গ্রাজুয়েশন করে আমেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রীতে ভর্তি হন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনাজ খানরাই ছিল প্রথম ব্যাচ।

মাস্টার ডিগ্রিতে তার প্রোজেক্টের বিষয় হল ক্যানসার৷ তখনই নতুন কিছু করার জেদ চেপে গেল ফিনাজের মধ্যে। তিনি বলেন,
কেমােথেরাপিতে দু-ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। এক ধরনের ওষুধ তৎক্ষণাং কাজ শুরু করলেও, আর এক ধরনের ওষুধ কাজ করতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। তবে তার পার্শ্বপ্ৰতিক্রিয়াও রয়েছে। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের কমােথেরাপি দিলে শরীরের কােষগুলি মারা যায়। মাথার চুল উঠে যায়। একইসঙ্গে বেশ ব্যয়বহুল চিকিৎসা। ক্যানসার নিয়ে প্রজেক্ট পাওয়ার পর এই জায়গাটা আমাকে ভাবিয়েছিল৷ পার্শ্বপ্ৰতিক্রিয়া ছাড়া স্বল্প খরচে কীভাবে রোগীদের কেমােথেরাপির ওষুধ তৈরি করা যায়, তা নিয়ে শুরু করলাম গবেষণা ৷ সেই গবেষণায় আমার ম্যাডাম সাহায্য করেন। গবেষণা করতে গিয়ে দেখলাম, সেটা সম্ভব। একটি মাত্র ওষুধের মাধ্যমে শরীরের যে অংশে ক্যানসার হয়েছে, সেখানে কমোথেরাপি দেওয়া সম্ভব। তৎক্ষণাৎ কাজ করবে এটি। একইসঙ্গে এই ওষুধের কাজ দীর্ঘস্থায়ী হবে। এরফলে খরচ অনেক কম হবে। এছাড়াও শরীরের কোষণ্ডলি জীবিত থাকবে ৷ এটিই আমার আবিষ্কার৷ লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিষ্টির মতো সংস্থা স্বীকৃতি দেওয়ার আমার পরিশ্রম সফল হয়েছে।”

এখানেই শেষ নয়, বর্তমানে ক্যানসারের টিকাকরণ নিয়েও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন ফিনাজ।

ফিনাজ খানের বাড়িতে পড়াশোনা করার মতো পরিকাঠামাে নেই। নেই চেয়ার টেবিল ৷ বাবা মা ও তিন বোনের সংসার ফিনাজদের৷ বোনেদের মধ্যে তিনিই বড়৷ আহিকি অনটন প্রতি মুহূর্তে কড়া নাড়ছে ঘরে। বাবা ঘুরে ঘুরে সাবান বিক্রি করেন ৷ মা শারীরিক ভাবে ভিষণ অসুস্থ৷ ঠিক ভাবে চলতে পারেন না। অহেরি অভাবে মায়ের চিকিৎসা হচ্ছে না ঠিক ভাবে। এমন দরিদ্র পরিবার থেকে বিশ্বের দরবারে নাম উঠে আসার খুশি ফিনাজের বাবা যা।

বাবা মায়ের কথা আসতেই আবেগ তারিত হয়ে পড়েন ফিনাজ। এত কষ্টের মধ্যেই পড়াশোনা থেমে নেই তিন বোনের। ফিনাজ নিজে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্যান্সার টিকাকরণ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এড করছেন। দুই বোন, একজন বিএসসি দ্বিতীয়বর্ষ অন্যজন প্ৰথমবর্ষে পড়াশোনা করছে। ফিনাজের বাবা মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন কষ্টের মধ্যে তিন মেয়ের স্বপ্নকে সফল করতে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন৷ তাদের মা শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই তিন মেয়ের জন্য পরিশ্রম করছেন। সংসারের এই পরিস্থিতি দেখে পড়াশোনার মধ্যেই চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছে তাকে! বেনিয়াপকুরের একটি বেসরকরি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তিনি। এখন তার লক্ষ্য, ভালো কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার ৷ কিন্তু হতদরিদ্ৰ পরিবারের এই মেধাবী ছাত্রীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি কেউ৷ বাংলার এই কন্যার আর্জি,রাজ্য সরকার যদি তাকে সহযোগিতা করে, তাহলে ভালোভাবে পিএইচডি করতে পারেন৷

উৎস:- টিডিএন বাংলা

 

‘তিতলি’


ডা.কবীর জুয়েল


দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর হীম শীতল হাওয়ায় এই রাজধানী ঢাকার শাহুরে পরিবেশেও রীতিমতো নিম্নচাপের আভাস পাচ্ছিলাম, সাথে মিডিয়া গুলোর আলাপন ও ক্রমশঃ সতর্ক বার্তায় বার বার ‘তিতলি’ নামটি উচ্চারিত হচ্ছিলো, এবারের আসন্ন দূর্যোগটিকে এমন এক মোহনীয় মিষ্টি নামে ডাকা হচ্ছে , মাঝে মাঝে মনে হয়, কোন আকাশপরি বুঝি শান্তি সুখের বারতা নিয়ে উড়িষ্যা হয়ে বাংলার ভূতলে নেমে আসছে,তবে আবহাওয়া বিভাগের পূনঃপূনঃ
ভয়ংকর পূর্বাভাস আমাকে শংকাজনক নষ্টালজিক করে বছর চারেক আগের স্মৃতিতে টেনে নিয়ে গেলো, ‘তিতলি’-রুপী ঝড়ের কবলে পড়ে আমাকে পরিবারসহ টানা কয়েকদিন ‘নারকেল জিঞ্জিরা-য় আটকে থাকতে হয়েছিলো,শহর থেকে আনা দ্বীপের খাবার যা ছিল,তা প্রায় শেষ;সেলফোন গুলো চার্জের অভাবে নিছক খেলনা মোবাইলে পরিণত হলো,পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে দেখতে মোটেল ও স্থানীয়দের ঘর বাড়ীর অবস্থান মুখস্থ হয়ে গিয়েছিলো,এ কারনে স্থানীয়দের সাথে হৃদ্যতা অনেক বেড়ে যায়,ওদের জীবন জীবিকা ও আচার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি আগুন্তুকদের পীড়া দিচ্ছিলো—তা হলো এ নিম্ন চাপের অবসান কবে হবে,এ ঝড়ো হাওয়া কবে শান্ত সুবাতাস রুপে বইবে?
অধীর আগ্রহ নিয়ে বেড়াতে আশা হয়েছিলো এখানে ,কতো পরিকল্পনা করে ছেঁড়া দ্বীপে সাঝ বেলায় বার-বি-কিউ এর কিউরিসিটি ছিলো,
নিরাপত্তাহীনতা আর অজানা শংকায় সব-ই রাতারাতি এক নৈরাশ্যময় বিভিষিকায় পরিণত হলো ,অনেকে নিজেদের এক মৃত্যুপুরির বাসিন্দা ভাবতে লাগলো,
নিজে সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়ায় চোখের সামনে ‘মাস প্যনিক এটাকস’ গুলো ডায়াগনসিস করতে পারছিলাম,প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং করতেও হয়েছে কারন কিছু কিছু দূর্বল চিত্ত মূর্ছা যাবার উপক্রম হলো। আমাদের শশব্যস্ত চলমান বিরামহীন জীবনটাকে তুচ্ছতায় পর্যবশিত করে দিয়ে,মহান স্রষ্টা কদাচিৎ বুঝিয়ে দেন, তার সৃষ্টিকূল কতোখানি অসহায় ! তিনি স্পষ্ট করে তোলেন তার অসীম ক্ষমতার কিয়দংশ মাত্র যা দেখে সম্বিৎ ফিরে পায় অনেকে,,, জীবনে জুম্মার নামাজটিও পড়েননি,ওরাও দেখলাম নামাজী হয়ে উঠলো। কয়েকজন তথাকথিত সেলিব্রেটিও ছিল,প্রটোকল আর অহমিকা ভেদ করে সবাই কেবল এক আলোচনায় মনোনিবেশ করলো; কবে টেকনাফের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছাড়বে?আদৌ আমরা এ যাত্রায় টেকনাফ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো কিনা? না পারলে আমাদের কি হবে? এ দ্বীপেই কি সলীল সমাধী???
কিছু কিছু ধনীর দুলাল হেলিকপ্টার পাঠাতে অনুরোধ করছিলো,কিন্তু আবহাওয়া এতোটাই প্রতিকূল যে বেশ কয়েকদিন ঢাকা থেকে কোন সিগনাল-ই পাওয়া যায়নি। তবে দ্বীপবাসীর মাঝে আমি বিন্দুমাত্র দ্বীধা,
ভয়, আশংকা দেখিনি, স্থানীয় ভাষায় বলছে ‘আল্লাহু-ই রক্ষা করবে’; ৬৫ বছর ধরে আমাদের পূর্বপুরুষরা থাকে, কোনদিন আমাদের ক্ষতি হয়নি,অদ্ভুত রকমের আত্মবিশবাস,নি:সন্দেহে এতে প্রঘাঢ় স্রষ্টা ভক্তি
রয়েছে, আমি সেই মানুষগুলোকে নিয়ে এসে আমাদের শাহুরে ননীর পুতুলগুলোকে অভয় দিতাম,এদিকে
দ্বীপের সব গুলো হোটেল মোটেল সকল পর্যটকদের
বিল ৭৫% কমিয়ে দিলো, এমন কি জেটিমুখি গরীব ডাব ওয়ালারা ডাব খাওয়ার পর টাকা আছে কিনা জিজ্ঞেস করছে,না থাকলে দিতে হবেনা, মনে মনে ভাবছিলাম এ জন্যই এদের প্রতি করুণাময়ের অবারিত রহমত অব্যাহত থাকে,এরা এখনো মওজুদ্দারী কিংবা সিন্ডিকেটেড ট্রেডিং বোঝেনা, বিপদে ফেলে লোক ঠকানো তো দূরের কথা, তাই আমদের মতো অলীক ভীতি( Phobia/ Panic /Stress) তাদের কক্ষনোই চেপে ধরেনা,আমি জানি আমার টেক্সবুকের ‘Panic Attack’ এদের জন্য মোটেও প্রযোজ্য হবেনা,তবে Psychology -তে পড়া ‘Altruistic Behaviour’ -এর সাথে ওদের আচরণ একেবারেই মিলে যাচ্ছে,ওদের উছিলায় হলেও এই মানুষ গুলো বেঁচে যাবে সে আস্থা আমার পুরোই ছিলো,পাঠক সে যাত্রায় আমরা রক্ষা পেয়েছিলাম তবে শেষ সময়ে দ্বীপে আর খারার ছিলোনা।
যতোটুকু মনে পড়ে কোন এক উপন্যাসে-র নায়িকা ছিলো ‘তিতলি’,এক জনপ্রিয় ধারাবাহিকের একটি চরিএের নাম ‘তিতলি ভাইয়া’ ,আমার পরিচিত কয়েকজন মেয়ের নাম-ও তিতলি,ওরা সবাই অত্যন্ত উদারমনা, আর পেশাগত জীবনে তিতলি নামের প্রতিটি রোগী-ই বেশ ভদ্র হয়ে থাকে, অথচ হঠাৎ ক দিন ধরে
তিতলি’ নিয়ে যে ভীতি ছড়াচ্ছে তা নামটিকে তেতো করে তুলেছে,
ইতিমধ্যেই ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ,ওডিসাসহ আশপাশে ডজনখানেক প্রানহানী ঘটিয়ে জন জীবনের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করে এই তিতলি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে,উল্লেখ্য তিতলির ভয়ে পটুয়াখালী ও বরগুনা-র সাগর সংলগ্ন মানুষগুলোও ঝড়াক্রান্ত তিতির পাখির মতো আশ্রয় খুঁজছে , প্রাকৃতিক দূর্যোগ এমনি ভয়াবহ
হয়ে থাকে, মূহুর্তে-ই সব লন্ডভন্ড,তবে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে মোকাবিলা সহজ হয়ে যায়। বরগুনাস্থ বামনা থানার বিষখালী নদীটি এ সময় ভয়ানক রুপ পরিগ্রহ করে, বামনার ডেউয়া(এক ধরনের ফল)তলা সহ ছোট্ট শহরটি পানিতে তলিয়ে যায়,নদী তীরবর্তী প্রান্তিক মানুষ গুলো এ সবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তবে কোমল মনা অনেকেই সিডর,আইলা ইত্যাদির ভয়াল ছোবল আজো ভূলতে পারেনা। ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও বি,সি,এস -এর সিরিয়ালে প্রথম দিকে থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারনে ২০০১-এ আমার প্রথম পদায়ন হয়েছিল এই বামনায়,তাই আমি খুব কাছ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের এই মানুষগুলোকে প্রত্যক্ষ করেছি,অন্য যে কোন দেশের নাগরিকদের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষগুলোর্প্রাকৃতিক দূর্যোগের চাপ প্রক্ষেপণের ক্ষমতা অনেক অনেক বেশী, মধ্যপ্রাচ্যে মানসিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকাকালীন সময়ে সামান্য মরুঝড়( Desert Storm)-এর কিছু ধূলিক্ণায় আরবদের নেত্রে রাজ্যের ত্রাস & ভীতি দেখতে পেতাম,অনেক আরবকে ভর্তি রেখে ঔষধ ও কাউন্সিলিং করতে হতো,আমাদের ঝড় ঝঞ্জাক্রান্ত মানুষগুলোর কাছে এ ধরনের ধুলিমাখা ঝড় নস্যি মাত্র।
আশা করি আমাদের দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘তিতলি’ নামীয় নিম্নচাপটি আমাদের নাটক, সিনেমার নায়িকাদের মতোই নরম গোছের একটি দমকা হাওয়া হবে,যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকায় প্রাণঘাতি রুপ নেবেনা।আমাদের সমাজ ও ব্যক্তি জীবনেও তিতলি-র প্রভাব পড়তে শুরু করেছে,পরিশেষে একটি আবহাওয়া সংবাদ দিয়ে লেখাটা শেষ করতে চাই,আজ এক রোগীনী অত্যুৎসাহে আমাকে জানালো সে তার সদ্যোজাত শিশু কন্যার নাম রেখেছে ‘তিতলি’, আমিও অনুসন্ধিৎসু হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
বললো “আমি চাই আমার মাইয়া ঝড়ের লাহান শক্তিশালী হউক যাতে জামাইরে হারা জীবন ওর কথায় উঠ বস করাইবার পারে।”
তিতলি নামটি নিয়ে আমার মাঝে যে সুন্দর স্বচ্ছ
ধারণা বাসা বেধেঁছিল, রোগীনী-র কথায় তা মূহুর্তেই কুর্পুরের মতো উবে গেলো।

 

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

 

উত্তরখানে গ্যাসে দগ্ধ দম্পতির মৃত্যু


নারী সংবাদ


রাজধানীর উত্তরখানে গ্যাসলাইনের ছিদ্র থেকে লাগা আগুনে দগ্ধ আটজনের মধ্যে এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন আজিজুল (২৭) ও তার স্ত্রী মোসলেমা (১৮)। গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় আজিজুল ও বিকেল ৫টায় মোসলেমা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। গতকাল শনিবার ভোর ৪টায় উত্তরখান ব্যাপারীপাড়া হেলাল মার্কেটের পাশে ১১০/এ নম্বর বাড়ির নিচতলায় গ্যাসলাইনের ছিদ্র থেকে লাগা আগুনে একই পরিবারের আটজন দগ্ধ হন। নিহত দম্পতির পরিবারের অভিযোগ, গ্যাসলাইন লিকেজ থাকা সত্ত্বেও ঠিক করেননি বাড়িওয়ালা। দগ্ধরা সবাই আত্মীয়স্বজন।
এ ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যালে আহতদের দেখতে এসে স্বজনদের এ সহায়তার টাকা বুঝিয়ে দেন।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা: পার্থ শংকর পাল বলেন, আগুনে আজিজুলের শরীরের ৯৯ শতাংশ এবং তার স্ত্রী মোসলেমার শরীরের ৯৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি পাঁচজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে সুফিয়ার (৫০) শরীরের ৯৯ শতাংশ, তার মেয়ে পূর্ণিমার (৩৫) ৮০ শতাংশ, পূর্ণিমার ছেলে সাগরের (১২) ৬৬ শতাংশ, ডাবলু মোল্লার (৩৩) ৬৫ শতাংশ এবং তার ছেলে সৌরভের (৫) শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
এ ছাড়া শিশু সৌরভের মা আঞ্জুয়ারা বেগমের (২৫) শরীরের ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তার মতে, আগুন খুব দ্রুত সবার গায়ে ধরে গিয়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। শিশু সৌরভ ময়নারটেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণী এবং সাগর উত্তরা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। আগুনে প্রত্যেকের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তারা অধিকাংশই গার্মেন্ট শ্রমিক। তাদের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়ার রামকানায়।
চিকিৎসাধীন আঞ্জুয়ারা বেগম জানান, গ্যাসলাইন থেকে দুই সপ্তাহ ধরে গন্ধ বের হচ্ছিল। বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার বিষয়টি বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি। শুক্রবার রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরে তাদের কেউ একজন চুলার সুইচ দিতেই আগুন ধরে যায়। তার দাবি, গ্যাসলাইন লিকেজ থাকায় সেখান থেকে গ্যাস বের হয়ে পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়ে। চুলার সুইচ দিতেই আগুন ধরে যায়।
বাড়িওয়ালা মেহেদি হাসান বলেন, আগুনের সময় তিনি দ্বিতীয়তলায় ছিলেন। তাই কিভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি নিশ্চিত নন। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর তিনি চুলার সুইচ অন দেখতে পান। এতে তার ধারণা, রাতে সুইচ অফ না করাতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
উত্তরা ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার কামরুল হাসান জানান, ভোরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে দগ্ধ আটজনকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। রান্নার জন্য দিয়াশলাই ধরার সাথে সাথে আগুন ধরে যায় বলে জানতে পেরেছি।
উত্তরখান থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, অসাবধানতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার ধারণা, রাতে বাড়িটির চুলায় গ্যাস ছিল না। অসতর্ক অবস্থায় চুলার সুইচ বন্ধ না করেই তারা ঘুমিয়ে পড়েন। চুলায় গ্যাস আসার পর দরজা জানালা বন্ধ থাকায় গ্যাস বের হতে পারেনি। ভোরে রান্না করতে উঠে আগুন জ্বালানো মাত্র চারপাশে আগুন ধরে সবাই দগ্ধ হয়েছেন।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

দুই স্কুলছাত্রীসহ ৪ জন নিহত


নারী সংবাদ


দৌলতদিয়া, হবিগঞ্জ ও বগুড়ার শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুলছাত্রীসহ চারজন নিহত ও কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নবম শ্রেণীর দুই ছাত্রী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো দৌলতদিয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ড যদু ফকিরপাড়ার আ: ছালাম প্রামাণিকের মেয়ে চাঁদনী আক্তার (১৫) ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড ওমর আলী মোল্লাপাড়ার জামাল মোল্লার মেয়ে কেয়া আক্তার (১৫)। তারা দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের ছাত্রী ছিল। বেলা পৌনে ২টায় সড়কসংলগ্ন মডেল হাইস্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত চাঁদনীর ভাই ফরিদুল ইসলাম জানায়, চাঁদনী ও কেয়া একই অটোরিকশায় বাড়ি থেকে পরীক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলের সামনে নেমে সড়ক পার হচ্ছিল। এমন সময় ঢাকার দিক থেকে আসা খুলনাগামী গোল্ডেন লাইন পরিহনের একটি দ্রুতগতির বাস তাদের পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে তারা গুরুতর আহত হয়। দ্রুত তাদের গোয়ালন্দ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ দিকে সড়ক দুর্ঘনায় দুই ছাত্রী নিহত হওয়ার খবর পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় পুলিশের গাড়িতেও উত্তেজিত জনতা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। মহাসড়কে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার যানবাহনের সিরিয়ালে পাঁচ শতাধিক গাড়ি আটকা পড়ে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। গুরুতর আহত ১০ জনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে পৃথক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া বাজার থেকে একটি ইজিবাইক কালারডোবা এলাকায় পৌঁছলে হবিগঞ্জ থেকে বানিয়াচংগামী একটি পিকআপ সেটাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে সন্ধ্যা রানী সরকার (৫০) নিহত হন। সন্ধ্যা রানী বানিয়াচং উপজেলা মক্রমপুর ইউনিয়নের নতুল্লারপুর গ্রামের মৃত প্রভু সরকারের স্ত্রী।
এ ঘটনায় ইজিবাইকের আরো পাঁচ যাত্রী আহত হন।
অপর দিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবলের ডুবাঐ বাজারে এনা পরিবহনের একটি বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠান। আহতদের মধ্যে কানন (২৫), হৃদয় মিয়া (১৮), রহিদুল ইসলাম (১৩), কামরুর হাসান (২৫), রাইছুল ইসলাম (২৪), জুনায়েদ (২৮) ও সাদিক হোসেনকে (৫০) হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর পৌর শহরের হাজীপুর এলাকায় গত শুক্রবার রাতে দুই কোচের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক আশিকুল আলম আকাশ (৩৫) নিহত এবং ১৫ যাত্রী আহত হয়েছেন।
জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রংপুরগামী যাত্রীবাহী কোচ এনা পরিবহন (ঢাকা-মে-ব-১৫-৩৯১৬) শেরপুর পৌরশহরের হাজীপুর এলাকায় গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি যাত্রীবাহী কোচ মা-মণিকা পরিবহনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে এনা পরিবহন (ঢাকা-মে-ব-১১-১৬৮৭) গাড়িটি মহাসড়কের পশ্চিম পাশে উল্টে যায়। এ ঘটনায় চালক আশিকুল আলম আকাশসহ ১৬ জন যাত্রী অহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই শেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ও পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আশিকুল আলম আকাশ মারা যান। নিহত কোচচালক আকাশ বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার করমবাড়িয়া গ্রামের টুলু মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে।
আহতরা হলেনÑ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর আঞ্জুয়ারা বেগম (৩৫), সুরাইয়া খাতুন (১০), রংপুর সদরের ইমন হাসান (২৮), বিজয় কুমার (২৪), রায়হান ইসলাম (৪০), সেকেন্দার আলী (৪৪), মামনুর রশীদ (২২), গাইবান্ধার আল মামুন (৪০), বিনদি সরকার (৩৪), রংপুরের গঙ্গাচড়ার ফরহাদ হোসেন (৩৩), মিঠাপুকুরের রবিউল (২৯), কুড়িগ্রামের রাজারহাটের শামীম হোসেন (২২), উলিপুরের মাজেদুল ইসলাম (১৮), অজ্ঞাত মহিলা (৩০) ও অজ্ঞাত পুরুষ (১৮)।

 

মায়া


 রায়হান আতাহার


১.
পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করছেন হাসান সাহেব৷ বিয়েও করেছেন৷ তার পুরো নাম জাহিদ হাসান। চাকরিতে ঢোকার আগে সবাই তাকে ‘জাহিদ’ নামে চিনতো। এখন অফিসের সবার মুখে ‘হাসান সাহেব’ শুনতে শুনতে যখন বাসায় বাবা-মা-সহধর্মিণী ‘জাহিদ’ নামে ডাকে তখন তার নিজের কাছেই অবাক লাগে। প্রতি বছর ঈদের মৌসুমে সবাইকে তিনি উপহার দিয়ে থাকেন। তিনি নিজেও উপহার পান। তাকে পেনশনের টাকা থেকে উপহার দেন তার বাবা। উপহার নিতে লজ্জা লাগে হাসান সাহেবের। বলেন, “বাবা, কী দরকার ছিলো? শুধু শুধু টাকা খরচ করলে।” উত্তরে বাবা বলেন, “ও তুই বুঝবি না।”

২.
হাসান সাহেবের বাবা-মা গত হয়েছেন বছর খানেক হল। এখন তিনি নিজের একমাত্র মেয়েকেই ‘মা’ বলে ডাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে মেয়ে বাসায় থাকতে পারে না। যখন ছুটিতে বাসায় আসে তখন এটা-ওটা কিনে মেয়েকে খাওয়াতে পছন্দ করেন মিস্টার এন্ড মিসেস হাসান। মেয়ে খেতে পছন্দ করলেও বাবা-মায়ের এরকম ভালোবাসা পেয়ে সে লজ্জা পায়৷ সে ভাবে- হলে তো সে না খেয়ে থাকে না। টিউশনি করে টুকটাক আয়-রোজগারও করে। বাবা-মা কী মনে করে সে না খেয়ে থাকে? এগুলো নিয়ে কিছু বললে বাবা-মা উত্তর দেন, “ও তুই বুঝবি না।”

সারমর্মঃ ছেলে-মেয়ে যত বড়ই হোক, বাবা-মার কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। সন্তান উপার্জন করলেও বাবা-মা খুশি হয়ে যা দেন, তা গ্রহণ করা উচিত। প্রত্যেক বাবা-মা চান সন্তানকে আগলে রাখতে। সময়ের প্রয়োজনে হয়তো তা সব সময় সম্ভব হয় না। কিন্তু সুযোগ পেলে বাবা-মায়ের দেয়া উপহারগুলো গ্রহণ করতে লজ্জা পাওয়া উচিত নয়। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সকল বাবা-মাকে ভালো রাখুন।

 

যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী ও শাশুড়ি আটক


নারী সংবাদ


খুলনার ডুমুরিয়ার পল্লীতে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে আজ শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার গোনালী গ্রামে। পুলিশ এ ঘটনায় তার স্ত্রী ও শাশুড়িকে আটক করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার নোয়াকাঠি গ্রামের হালিম বরকন্দাজের ছেলে রসুল বরকন্দাজের (২১) সাথে একই উপজেলার গোনালী গ্রামের আমজাদ শেখের মেয়ে ইয়াছমিন বেগমের (১৯) প্রায় এক বছর পূর্বে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে সাংসারিক অশান্তি চলতে থাকে এবং স্ত্রী ইয়াছমিন তার বাপের বাড়িতে থাকে। গত ৫ অক্টোবর রসুল তার স্ত্রীকে আনার জন্য শ্বশুরবাড়িতে যায়। সেখানে ৬ দিন থাকার পর শুক্রবার সকালে থানা পুলিশ রসুলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে নিহতের বাবা হালিম জানান, ৫ তারিখে আমার বেয়াই ফোন করে তার মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য ছেলেকে যেতে বলে। কথা অনুযায়ী রসুল তার শ্বশুরবাড়ি যায়। হঠাৎ শুক্রবার গভীর রাতে ফোন করে আমাদেরকে জানানো হয় সে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছে। আমরা গিয়ে দেখি রসুলের গলায় ওড়না ও গমছা পেচানো অবস্থায় ঝুলে আছে এবং তার পা মাটির সঙ্গে লাগানো আর সারা শরীরে ধুলা বালি মাখা। আমি নিশ্চিত ওরা আমার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে।

ঘটনার তদন্তকারি অফিসার এস আই অনিষ মন্ডল জানান, লাশটি যেভাবে ঝুলে ছিল তাতে মনে হয় না সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। এছাড়া ব্লেড দিয়ে তার হাতের কজ্বি ও পায়ের গোড়ালির ওপরে কাটা চিহ্ন দেখা গেছে। এ ঘটনায় নিহত গোলম রসুলের মা আকলিমা বেগম বাদি হয়ে পুত্রবধু ইয়াসমিন বেগম, বেয়াই আমজাদ শেখ, ও বিয়াইন সুফিয়া বেগমের নাম উল্লেখ করে ডুমুরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ইয়াছমিন ও তার শাশুড়ি সুফিয়া বেগমকে (৫৪) আটক করা হয়েছে এবং লাশের সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়।

সূত্র: নয়াদিগন্ত

 

দাম্পত্য জীবনের কিছু কথা

দাম্পত্য


“দুনিয়ার সব থেকে কঠিন কাজ হচ্ছে নিজেকে সংশোধন করা এবং
সব থেকে সহজ কাজ হচ্ছে অন্যের সমালোচনা করা”।
—— আমীরুল মু’মিনীন আলী (রা)

দাম্পত্য জীবন কি?

দাম্পত্য জীবনের বিষয়টি হচ্ছে পৃথক ব্যক্তিদের মধ্যে একটি ইউনিয়ন। এটি একটি চুক্তি মত। বিয়ের ফলে দুইজন ব্যক্তির মধ্যে একটি সামাজিক ও আইনি চুক্তি হয়ে থাকে, যেখানে অর্থনৈতিক ভাবে এবং মানসিক ভাবে একে অপরের জীবনে সম্পৃক্ত হয়।

ঐতিহ্যগতভাবে, বিয়েকে নৈতিকতা ও সভ্যতার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসেবে দেখা হয়।

দাম্পত্যজীবনে কিছু মৌলিক টিপস:

উৎফুল্ল আচরণ

আপনার উৎফুল্ল আচরণ হতে পারে আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর জন্য খুব দামি একটি উপহার।

অভিযোগ করা থেকে বিরত

কাউকে একইসাথে ভালোবাসা এবং ঘৃণা করা আপনার জন্য অসম্ভব নয়। আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর ব্যাপারে বন্ধুদের কাছে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া আপনার দাম্পত্য সম্পর্কে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

সময় দিন

সুন্দর সম্পর্ক নিজে থেকেই তৈরি হয় না, সেটি তৈরি করতে হয়। তাই আপনাকেও সেটি তৈরি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রেই যদি আপনার সবটুকু কর্মক্ষমতা নিঃশেষ করে ফেলেন, তাহলে আপনার দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চাপা ক্ষোভ বর্জন করুন

সাময়িক ঝগড়া বিবাদের কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় না। মনের মধ্যে জমে থাকা চাপা ক্ষোভ আর যন্ত্রণাই দাম্পত্য জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। দাম্পত্য জীবনে তা-ই নিয়ম যা দুইজনের পছন্দের ভিত্তিতে ঘটে।

নিজেকে যাচাই করুন

“জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী হিসেবে আমি সর্বোত্তম”-এমনটি মনে হওয়া অতি আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। এমনটি মনে হলে নিজেকে যাচাই করুন। সংসারের ক্রমাগত আর্থিক সচ্ছলতা অর্থ এই নয় যে, দাম্পত্য জীবনও সুখের মধ্য দিয়ে কাটছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, দাম্পত্য সম্পর্ক, “কী পেলাম?” –এর হিসেবে মেলানোর জন্য নয়। বরং সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে “কী দিতে পেরেছি,” তা-ই দাম্পত্য সম্পর্কের মূলকথা।

 

নীলফামারীতে ট্রাকের চাকায় প্রাণ গেলো মা-মেয়ের


নারী সংবাদ


নীলফামারীর ডোমারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মা- মেয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। বুধবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার ভাটিয়াপাড়া নামক স্থানে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। চালকসহ ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হয়েছে বলে জানান ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মোকছেদ আলী ব্যাপারী।

নিহতরা হলেন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের মোড় গুচ্ছগ্রামের রুবেল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩০) ও তার পাঁচ বছরের শিশু মেয়ে রুবিনা আক্তার।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওসি জানান, রাত নয়টার দিকে সোনারায় ইউনিয়নস্থ বাবার বাড়ি থেকে বাবা হিমানুর রহমানের রিক্সাভ্যানে চড়ে নাজমা বেগম ও তার মেয়ে রুবিনাকে নিয়ে নিজ বাড়ি যাচ্ছিলেন। এসময় সৈয়দপুর পৌর এলাকার আন্ধারুরমোড় সড়কের ভাটিয়াপাড়া নামক স্থানে একটি মালবাহি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৩২১১) তাদের রিক্সাভ্যানে ধাক্কায় দেয়।

এতে মা নাজমা বেগম ও তার মেয়ে রুবিনা আক্তার রিক্সাভ্যান থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনা স্থলেই নিহত হন। এসময় নাজমার বেগমের বাবা হিমানুরকে (৫৫) গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান এলাকাবাসী।

এসময় এলাকাবাসী ঘাতক চালক ট্রাক চালকসহ ট্রাকটি আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত মা-মেয়ের লাশ উদ্ধারসহ ট্রাক ও চালক মো. ইসলামকে (৫৫) আটক করে থানায় নেয়া হয়। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

সালেহার শূন্যতা


ফাতিমা খান


সালেহার সাথে আমার অনেকদিন পর দেখা, প্রায় ২ বছর। পরিচয় হয়েছিল আমার ডেন্টাল অফিসেই। স্বামীর দাঁতের চিকিৎসার জন্য প্রায়ই আসত এই দম্পতি। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সালেহার সাথে।

তায়েফের মেয়ে সালেহা।
হাসতে হাসতেই একদিন বলছিল, “তায়েফের মানুষ আমাদের নবীজীর সাথে উগ্র আচরণ করেছিল বলেই ভেব না আমরা তায়েফবাসীরা উগ্র, অর্বাচীন। আমাদের মধ্যে ভাল মানুষগুলো কিন্তু সাহাবীদের মতই ভাল। তুমি একবার এসো আমাদের শহরে। পাহাড়ের উপরের ছোট্ট শহরের মানুষ আমরা, যেখানে হাত বাড়িয়েই তুলা তুলা মেঘ ছুঁতে পারা যায়। শীতে কুয়াশা পড়ে। সোনালী ধূসর রঙ এর বালুগুলো দিগন্ত অবধি পাটি বিছিয়ে দিলেও সবুজের মায়া ম্লান হয়না একদম। পাহাড়গুলো সবুজে ঢাকা , মাঝে মাঝে আবার পাহাড়ি ঝর্ণা । স্বাধীন বানর দেখতে হলে এখানে আসতেই হবে তোমাকে, গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়াতে ওদের নেই মানা। পাহাড়ের আড়ালে সূর্যোদয় দেখেছ কখনো? ঝমঝম বৃষ্টির পর রংধনু? এখানে দেখবে! এসো কিন্তু একবার। আমার দাদুর খেজুর বাগান আছে, মাইলের পর মাইল। তোমাকে নিয়ে খুব বেড়াব।”

ওখানকার আর বাকী মানুষগুলো কেমন জানিনা, কিন্তু ‘সালেহা’ হয়ত লাখে একজনই পাওয়া যাবে। সদালাপী, হাসিমুখ আর আন্তরিকতার জন্যই ওর কথা মনে করেছি বেশ কয়েকবার। জেদ্দা থেকে ওরা অন্য শহরে পোস্টিং হয়ে চলে যাওয়ার পর অনেকদিন ওর সাথে দেখা হয়নি।

আজ সালেহাকে দেখে আমি চিনতেই পারলাম না। শুকনো ফুলের মতই রিক্ত হয়ে গেছে একদম। ওর স্বামী মারা গিয়েছে আজ ৪ মাস ১৬ দিন। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হলেও মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন ভদ্রলোক। Bipolar disorder এর জন্য মুড ফ্ল্যাকচুয়েশন হত খুব। আমি নিজে দেখেছি কত যত্ন করে সামলে নিত সে স্বামীকে। মানুষটার প্রচন্ড রোষের মুখেও ওর কষ্টচাপা একটা হাসিমুখ দেখতাম। নিখাদ ভালবাসা না হলে এমন মানুষের সাথে সংসার করা দুঃসাধ্যই বটে!

এত যত্ন, এত ভালবাসা ফেলে রেখে একদিন এই মানুষটা হাঠাতই ঘুমের মধ্যে চলে যাবে, সালেহা একটুও ভাবতে পারেনি।

সালেহা আমার সামনে বসে কাঁদছে, অঝোরে কাঁদছে।। কী গভীর সে কষ্ট, কী অসহ্য তার যন্ত্রণা! আমার ভেতরটা কাঁদছে, কি বলব বুঝতে পারছিনা। ওর অন্তরের কষ্ট মাপার কোন যন্ত্র যে আমার কাছে নেই! ওর শূন্যতা পূরণের রসদ হয়ত পুরো ধরণীতেই নেই!

 

যৌতুকের জন্য বাটখারা দিয়ে পিটিয়ে আহত


নারী সংবাদ


রূপগঞ্জের বরাব গ্রামে সালমা আক্তার নামে এক গৃহবধূকে গতকাল মঙ্গলবার যৌতুকের জন্য লোহার বাটখারা দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে তার মাদকাসক্ত স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ।

জানা যায়, উপজেলার পবনকুল গ্রামের মুসলিম মিয়ার মেয়ে সালমা আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার বরাব এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেনের ২০১১ সালে বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের সংসারে ্‌এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই মোশারফ হোসেন, তার মা হালিমা বেগম ও তার বোন ইয়াসমিন বেগম যৌতুকের জন্য সালমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করতে থাকে। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বরপক্ষের দাবি অনুযায়ী দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এর পরও মোশারফ হোসেন নেশার টাকার জন্য বিভিন্ন অজুহাতে সালমার বাবাকে আরও দুই লাখ টাকা দিতে বাধ্য করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিদেশ যাওয়ার জন্য আরও তিন লাখ টাকা দাবি করলে তাকে ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকার জন্য গতকাল মঙ্গলবার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে লোহার বাটখারা দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেয়। পরে স্থানীয়রা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সালমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের ব্যাপারে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুত্র: সমকাল

 

‘প্রেগনেন্সি’


মারুফ রায়হান খান


‘প্রেগনেন্সি’ বিষয়টা আমার কাছে মিরাকিউলাস লাগে। একটা দেহে দুটো প্রাণ। একসাথে নির্ভর করছে দুটো সত্ত্বার ভালো থাকা-মন্দ থাকা, সুস্থতা-অসুস্থতা–মায়ের সুস্থতার উপর নির্ভর করে সন্তানের বাঁচা-মরা। প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হরমোনের বেশ তারতম্য ঘটে, শারীরিক গঠনের কিছু পরিবর্তন হয়–তাই মায়ের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা নতুন করে দেখা দেয় বা বেড়ে যায়। দেখা যায় যে, ডেলিভারি হয়ে যাবার পরপর সে সমস্যাগুলোও চলে যায়। এগুলোর বেশিরভাগই ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক। প্রেগনেন্সি ইস্যুটা যেহেতু সবার কাছে খুব সেন্সিটিভ তাই অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এসব সমস্যায়। আসলে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলে, কিছু পরামর্শ মেনে চললে যার অধিকাংশই প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়। একেবারেই কমন কিছু সমস্যার সমাধান নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি।

১. বমিবমি ভাব এবং বমি :

দেখা যায় যে প্রতি ১০০ জন গর্ভবতীর প্রায় ৭৫ জনেরই এ সমস্যাটা থাকে। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই এ সমস্যা হয়।
-সকালে ঘুম থেকে উঠেই, বলা হয়ে থাকে বিছানাতেই শুকনো খাবার যেমন : টোস্ট, বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খেতে।
-প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে বলা হয়।
-অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হয়।
-একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।

২. কোমর ব্যথা :

প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৫০ জনেরই এ সমস্যা দেখা দেয়।
-অনেক বেশি ওজন বাড়িয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, মোট দশ ঘণ্টা।
-পা কিছুটা উঁচুতে রেখে যেমন : পায়ের নিচে একটা বা দুটো বালিশ রেখে বিশ্রাম নিন।
-শক্ত বিছানায় শোয়া ভালো।
-উঁচু হিলযুক্ত জুতো পরা যাবে না।
– কুঁজো হয়ে বসা বা কোনো জিনিস নিচ থেকে তোলা পরিহার করা শ্রেয়।
– দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।
– ভারী এবং পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
– কোমরে ম্যাসাজ করতে পারেন।
– গরম বা ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে স্যাঁক দিতে পারেন।

৩. কোষ্ঠকাঠিন্য :

-প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
– আঁশজাতীয় খাবার যেমন : শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
-ইসপগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।
– চাপ এলে টয়লেটে যেতে বিলম্ব করা যাবে না।
– কিছুটা হাঁটাচলার অভ্যেস করা ভালো, দিনে ২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩ দিন হাঁটা যেতে পারে।

৪. পায়ে খিল ধরা :

-পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে।
– গরম স্যাঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সেবন করা যেতে পারে।

৫. পায়ে পানি আসা/ পা ফোলা :

-বিশ্রাম নিন এবং পা দুটো একটা বা দুটো বালিশের ওপর রাখুন।
– একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
-আরামদায়ক জুতো পরুন।
– বেশি করে পানি পান করুন।

৬. বুক জ্বালাপোড়া, এসিডিটি :

-একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
– খাবার পরপরই বিছানায় শুতে চলে যাওয়া যাবে না।
– বিছানায় যাবার অনেকক্ষণ আগেই খাবার খেয়ে ফেলুন।
– উঁচু বালিশে শুলে আরাম পাওয়া যায়।
– এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

৭. পায়ে আঁকাবাঁকা শিরা, পাইলস :

-পায়ে আঁকাবাঁকা শিরার জন্যে ক্রেপ ব্যাণ্ডেজ ব্যবহার এবং বিশ্রামের সময় পা উঁচু করে রাখতে বলা হয়।

-পাইলসের জন্যে নিয়মিত টয়লেট সারা জরুরি; কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। টয়লেট সারার সময় বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। বাম কাত হয়ে শোয়া ভালো। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

৮.মাসিকের রাস্তায় সাদা স্রাব :

-ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এর প্রধান চিকিৎসা।
-নরম সূতি আন্ডারগার্মেন্টস ব্যবহার করা ভালো।

তবে সবকথার শেষকথা হচ্ছে প্রতিজন গর্ভবতী নারীরই নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে ভিজিটে যেতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে এবং তার প্রেস্ক্রাইব করা ওষুধপত্র নিয়মিত খেতে হবে।

 

রামপুরার বাসা থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


রাজধানীর রামপুরা কুঞ্জবন এলাকার একটি বাসা থেকে নার্গিস বেগম (২৯) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ তার স্বামী মুখলেসুর রহমানকে আটক করেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ৩৩৬/১১ নম্বর বাসা থেকে নার্গিসের লাশ উদ্ধার করে। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়।
রামপুরা থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, কুঞ্জবন এলাকার ওই বাসা থেকে নার্গিসের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, নার্গিসের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় তার স্বামী মুখলেসুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। নার্গিসের লাশের ময়নাতদন্ত হওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
সুত্র: নয়া দিগন্ত।

 

ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধান 


নারীর জন্য আইন


সংবিধানের ১৩- ১ এ এই বিধানটি লেখা রয়েছে। যেখানে ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে যদি কোন মেয়ে যদি সন্তানকে জন্ম দেয় তাহলে শিশুর ভরণপোষণ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধান হল-

১[ ১৩৷ (১) অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধর্ষণের কারণে কোন সন্তান জন্মলাভ করিলে-

(ক) উক্ত সন্তানকে তাহার মাতা কিংবা তাহার মাতৃকুলীয় আত্মীয় স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাইবে;

(খ) উক্ত সন্তান তাহার পিতা বা মাতা, কিংবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হইবার অধিকারী হইবে;

(গ) উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহণ করিবে;

(ঘ) উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় তাহার বয়স একুশ বত্সর পূর্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রদেয় হইবে, তবে একুশ বত্সরের অধিক বয়স্ক কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে তাহার বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত এবং পঙ্গু সন্তানের ক্ষেত্রে তিনি স্বীয় ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত প্রদেয় হইবে৷

(২) সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করিবে৷

(৩) এই ধারার অধীন কোন সন্তানকে ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার ধর্ষকের নিকট হইতে আদায় করিতে পারিবে এবং ধর্ষকের বিদ্যমান সম্পদ হইতে উক্ত অর্থ আদায় করা সম্ভব না হইলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হইবেন সেই সম্পদ হইতে উহা আদায়যোগ্য হইবে৷]

সুত্র: বাংলাদেশ সংবিধান।

 

একটি শিশুর আর্তনাদ-১


আফরোজা হাসান


টেবিলে কিছু একটা রাখার শব্দ শুনে তন্দ্রা ছুটে গেলো অধরার। কফির মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে লাগতেই চোখ খুলে তাকালো। ধূমায়িত কফি দেখেই শরীর ও মনকে জাপটে ধরে থাকা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কিছুটা যেন শিথিল হয়ে এলো। মাথা তুলে তাকালো সহকর্মীর দিকে। কফি রেখে ততক্ষণে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে তার দিকেই হাসিমুখে তাকিয়ে আছে শাহরিন।

কফির জন্য এক লক্ষ শুকরিয়া। সেমিনার টক রেডি করতে গিয়ে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। এখন ঘুমে মাথা সোজা করে রাখতে পারছিলাম না। হাসি মুখে বলল অধরা।

শাহরিন হেসে বলল, ‘একটি শিশুর আর্তনাদ’! তোমার বিষয় নির্বাচনটা ঠিক বুঝে আসছে না আমার।

এই আর্তনাদটা আসলে ছোট্ট কোন শিশুর আর্তনাদ নয়।

তাহলে?

আমাদের সবার মনের মাঝেই ছোট্ট একটা শিশু বাস করে সেটা তো জানোই। এই আর্তনাদ আসলে সেই শিশুর। অর্থাৎ, পরিণত মানুষের মনের মাঝে বসে থাকা সেই শিশু যে কোন না কোন ভাবে বঞ্চিত হয়েছে তার শৈশব থেকে। শৈশবের হাসি, আনন্দ, উল্লাস থেকে। যা কিনা প্রতিটি শিশুর অধিকার থাকে। একটু ভেবে দেখো একটা শিশুর চাহিদা কতটুকু থাকে? বাবা-মার সাথে আনন্দঘন সময় কাটানো, মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া, পছন্দের খেলনা, চকলেট, আইসক্রিম, কারণে অকারণে ছোট ছোট উপহার। এই তো তাই না? সবসময় বাবা-মার পক্ষে হয়তো এই চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব হয় না। সেই কারনটা যদি বাবা-মা বুঝিয়ে বলেন সন্তানদেরকে তাহলে ছোটবেলায় কষ্ট বা মনখারাপ করলেও, বড় হবার পর সেটা উপলব্ধি করতে পেরে স্বস্থি খুঁজে পায় মনে। কিন্তু বুঝিয়ে না বলার কারণে মনে তৈরি হয় গোপন কষ্ট ও অভিমান। যখনই বাবা-মার আদর ভালোবাসায় সিক্ত কাউকে দেখে তাদের মনে বেজে ওঠে হাহাকার ঘেরা আর্তনাদ।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে শাহরিন বলল, এমন আর্তনাদ তো আমার মনেও কিছুটা আছে। বাবার আদর কাকে বলে? বাবারা কি সন্তানকে আদর করে? কিভাবে করে? বুকে জড়িয়ে ধরে কখনো? কপালে কি আদর এঁকে দেয়? বাবা মাথায় হাত বুলালে কেমন লাগে? নাহ কিছুই জানি না আমি। এই ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতাই যে নেই আমার। নিজের শৈশব আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও এমন একটি মুহুর্ত আমি খুঁজে পাই না যেখানে বাবা আমাকে আদর করেছেন। আমাকে কোন উপহার দিয়েছেন, কোথাও বেড়াতে নিয়ে গিয়েছেন। কারণ বাবার ছেলের শখ ছিল। কিন্তু আমি মেয়ে। তাও আবার পাঁচ নাম্বার মেয়ে।

সদা হাসিখুশি, প্রাণবন্ত সহকর্মীর মুখ থেকে কথাগুলো শোনার পর কিছুটা থমকে গেলো অধরা। বলার মত কোন শব্দই খুঁজে পেলো না। শুধু মনেহলো ‘জীবন কারো তরেই নয় সাজানো ফুল বাগান! নিজ নিজ পরীক্ষায় সবাইকে হতে হয় পেরেশান! ছোট ছোট দুঃখ-সুখে ঘেরা প্রতিটি মনের ভুবন! আনন্দ-হাসি উল্লাসের ভিড়ে লুকানো থাকে অদেখা কন্দন!’ তাই হয়তো মনের কোণে জমানো কষ্ট নিয়েও অন্যের মনের ক্ষতগুলোতে সহমর্মীতার পরশ বুলিয়ে যেতে চেষ্টা করে শাহরিন।

অনেকটা ক্ষণ নীরবতার পর শাহরিন বলল, সত্যি অনেক দরকারি একটা বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছো তুমি। আমারো মনেহয় যে বাবা-মাকে মানসিকভাবে কাছে পেলে জীবনের অপ্রাপ্তি গুলোও অনেক সহজে মেনে নেয়া সম্ভব হয়। কিন্তু বাবা-মার সাথে মানসিক দুরুত্ব জীবনের প্রাপ্তিগুলোকেও ফিকে করে দেয়।

একদম ঠিক বলেছো। আমার যেমন সবসময় আপ্রাণ চেষ্টা থাকে আমার সন্তানদের মানসিক ও আত্মিক বিকাশের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার। শারিরীক যে কোন সমস্যা চোখে দেখা যায় কিন্তু মানসিক অবস্থা দেখা যায় না বলেই বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজন হয় বেশি। যেমনটা বলা হয় যে, শিশুদের মন কাদা মাটির মত, পানির মত, মোমের মত ইত্যাদি। অর্থাৎ, যে পাত্রে রাখা হবে শিশুরা সেটারই আকার ধারণ করবে। কিংবা এভাবেও বলা যায় যেমন খুশি তেমন আকারে গড়া সম্ভব শিশুদেরকে। তাই সতর্ক থাকি কোন ভাবেই যাতে আমার কোন ভুলের কারণে ব্যহত না হয় সন্তানদের সঠিক আকার গঠন। কিন্তু নানান ধরণের ব্যস্ততার কারণে মাঝে মাঝে খেয়াল করতে পারি না ছোট ছোট অনেক বিষয়। তাই বাচ্চাদের সাথে যাতে কোন রকমের দুরুত্ব তৈরি হয়ে না যায় সেজন্য আমি ডায়েরি বেছে নিয়েছি। মানে হচ্ছে ওদেরকে একটা ডায়েরি কিনে দিয়েছি শুধু সেইসব কথা লেখার জন্য যা বলতে চেয়েও নানা কারণে আমাকে বলতে পারে না সময়, সুযোগ বা পরিস্থিতির কারণে।

শাহরিন হেসে বলল, বাহ বেশ মজার তো!

অধরাও হেসে বলল, হুম! এই পদ্ধতিটার উদ্ভাবক আমার ছোট পুত্র। ওর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন একদিন একটা কারণে একটু বিরক্ত হয়েছিলাম ওর উপরে। দুষ্টুমির জন্য একটু বকে দিয়ে আমি রান্নাঘরে চলে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি সে তার হোয়াইট বোর্ডটা ঠেলতে ঠেলতে রান্নাঘরে নিয়ে আসছে। রান্নাঘরের দরজা দিয়ে বোর্ডটা ঢুকিয়ে দিয়েই চলে গেলো। আমি কাছে গিয়ে দেখলাম বোর্ডে যে তার মনের অভিমানী শব্দমালা লিখেছে ছবি আর শব্দের সংমিশ্রণে। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়েছিল আমার তখন। মনে হয়েছিল বকে দেবার আগে উচিত ছিল দুষ্টুমি করাটা কেন ঠিক হয়নি সেটা বুঝিয়ে বলা। এবং ওকেও নিজের পক্ষে কথা বলতে দেয়া। বেশ কয়েকদিন আগে যেমন একটা ডকুমেন্টরি দেখছিলাম আমি জমজ বাচ্চাদের উপরে। একে অন্যের সাথে জোড়া লাগানো জমজ বাচ্চাদের ছবি দেখে আমার মেয়ে বলল, মামণি কতই না ভালো হতো যদি তুমি আর আমি এমন হতাম। তাহলে তুমি সারাক্ষণ আমার সাথে সাথে থাকতে। ব্যস্ততার সময়ও আমাকে তোমার সাথে রাখতেই হতো। ঐ মুহুর্তে হাসলেও পরে আমি এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছি মেয়ের সাথে। ওকে বুঝিয়ে বলেছি আমার ব্যস্ততার কারণ এবং এরপর থেকে চেষ্টা করি আরো কিছুটা সময় বেশি কাটাতে বাচ্চাদের সাথে।

কেন পৃথিবীর সব বাবা-মায়েরা এমন হয় না বলো তো অধরা? কেন সন্তান জন্ম দেয়া আর ভরণ পোষণেই সীমাবদ্ধ থাকে বাবা-মার চিন্তা ভাবনা। খুব খুব কষ্ট হয় যখন পেশেন্টরা বাবা-মা আর পরিবারের সদস্যদেরকে ঘিরে তার মনের মধ্যে জমে থাকা অভিমানী কথাগুলো বলে অশ্রু ভেজা চোখে। মনে পড়ে যায় নিজের অপ্রাপ্তি আর নিরানন্দে ঘেরা এলোমেলো শৈশবের কথা। তুমি ঠিক বলেছো যখনই বাবা-মার আদর ভালোবাসায় সিক্ত কাউকে দেখি আমার মনে বসে থাকা শিশুটা আর্তনাদ করে উঠে। যখন আমার হাজবেন্ডকে দেখি আমাদের মেয়েকে আদর করতে, ভালোবাসতে। অনুভব করি নিজের জীবনে বাবার আদর-ভালোবাসার অভাব।

আমার দেখা অনেক মানুষের ভেতর থেকেই এই আর্তনাদটা শুনতে পেয়েছি আমি। সেজন্যই এই বিষয়টাকেই বেছে নিয়েছি আমি।

আর কিছু না বলে চুপচাপ নিজের কাজে মনযোগ দিলো শাহরিন। অধরা বুঝতে পারছে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে বলেই শাহরিন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। নিজের ভেতরটাও ভারী হয়ে এলো অধরার।এমন নিরাশার আঁধার কালো পর্দা টেনে নিশ্চুপ বসে থাকা মনগুলোকে যখন দেখে ইচ্ছে করে বিজলীর মতো প্রচন্ড গর্জন করে চারিদিক আলোকিত করে ঝলসে উঠতে। হতাশার ঘোর অমানিশা ছিন্ন ভিন্ন করে ভঙ্গ করে দিতে নিস্তব্ধতা। ধূ ধূ মরুভূমির মত ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ধূলো ধূসরিত পিপাসাক্ত হৃদয়গুলোতে ঝরঝর শ্রাবণও ধারা হয়ে ঝরে যেতে ইচ্ছে করে যে পর্যন্ত না মিটে যায় শুষ্কতার ছাপ। ঘুণপোকার কুড়ে কুড়ে খাওয়া ক্ষতে বুলিয়ে যেতে ইচ্ছে করে আশা জাগানিয়া পরশ।

 

নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের নারীরা


নারী সংবাদ


অবশেষে ভুটানের মাঠে টানা ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে এলে বাংলাদেশের ফুটবল। রোববার সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ মহিলা ফুটবলের ফাইনালে নেপালকে ১-০ তে হারিয়ে প্রথমবার আয়োজিত এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫০ মিনিটে মাসুরা পারভীনের গোলে লাল-সবুজরা এখন সাফ সেরা।

অথচ আগস্টেই থিম্পুর এই চাংলিমিথান স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা ফুটবলের ভারতের কাছে ট্রফি হারায় গোলাম রাব্বানী ছোটনের দল। এবার ফাইনালে ভারতকে না পেলেও নেপাল বধের মাধ্যমে লাল-সবুজের উল্লাস মাঠ ও গ্যালারী জুড়ে। বাংলাদেশ এবার শিরোপার সাথে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও জিতেছে। সিরাত জাহান স্বপ্না ৮ গোল করে এই ট্রফি জয় করেন।

তুমুল লড়াই করার জন্য খ্যাতি আছে নেপালীদের। ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেভাবেই শুরু নেপালের। মারজিয়ার বদলে খেলতে নামা লাল-সবুজদের স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্নাকে কড়া মার্কিংয়ে রাখে তারা। মিডফিল্ডে সুবধিা করতে দিচ্ছিলনা মারিয়া, মনিকাদের। নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না অধিনায়ক মৌসুমী ও সানজিদা। এরপরও ৭ মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পায় বাংলাদেশ। রুপনা চাকমার গোল কিক থেকে মাঝ রেখার কাছে ফাঁকায় বল পান কৃষ্ণা রানী সরকার। তার সামনে শুধুই নেপালী গোলরক্ষক। বল নিয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। এরপর এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠাতে গিয়ে তিনি মারেন বাইরে। অথচ তিনি যতটুকু সময় পেয়েছিলেন তাতে গোলরক্ষককে কাটিয়ে বল জালে পাঠাতে পারতেন।

২২ মিনিটে আরেকটি ভুল করেন অনূর্ধ্ব -১৬ জাতীয় দলের সাবেকই অধিনায়ক কৃষ্ণা । বল ফাঁকায় দাঁড়ানো স্বপ্নাকে না দিয়ে নিজেই মারেন গোলরক্ষক সোজা। এর আগে ১৫ আঁখি খাতুন মিস করেন গোল। এই অর্ধে নেপাল দুটি হায় চান্স পেলেও তা থেকে গোল আদায় করতে পারেনি।

বিরতির পর পরই লিড বাংলাদেশের। মনিকা চাকমার নেয়া ফ্রি-কিকে ডিফেন্স থেকে উঠে আসা মাসুরা পারভীনের হেড গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় জালে। অবশ্য পরের মিনিটেই সমতার খুব কাছে চলে যায় নেপাল। আঁখি খাতুনের দৃঢ়তায রক্ষা। ফ্রি-কিক থেকে আসা বলে গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন। তাতে এক নেপালী ফুটবলারের নেয়া ভলি পোস্টে লাগার পর ক্লিয়ার করেন আঁখি। লিডের পর কিছুটা রক্ষনাত্মক হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এই সুযোগে ৭৪ মিনিটে নেপালের পাওয়া সুযোগ নষ্ট করেন মনীষা। তার শট বার ঘেঁষে চলে যায়। একটু ফাটলও দেখা যায় ছোটন বাহিনীর ডিফেন্স লাইনে। নেপালীরা এই সময়ে অলআউট অ্যাটাকে গেলে বাংলাদেশ কাউন্টার অ্যাটাকে বিপক্ষ রক্ষনভাগ ভাঙার চেষ্ঠা করে। অবশ্য তাতেও ব্যবধান বাড়েনি।

আসরের সব কটি ম্যাচ জিতেই ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছে ২৩ গোল। এই নেপালকে হারিয়েই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। আর ফাইনালেও বাংলাদেশের সামনে দাড়াতে পারেনি হিমালয় কন্যারা। ফলে দেশের ফুটবল সমর্থকদের আরো একবার আনন্দে ভাসাল অনূর্ধ-১৮ নারী ফুটবলাররা।

 

ফতুল্লায় স্ত্রীকে হত্যার পর থানায় স্বামীর আত্মসমর্পণ


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আফরিন আক্তার রানী (২৩) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন তার স্বামী। স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামী মেহেদী হাসান (৩০) নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।
গত শুক্রবার দুপুরে ফতুল্লার চাঁদনী হাউজিং এলাকার ওমর ফারুকের বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসা থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত আফরিন আক্তার রানী নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সরদীয়া এলাকার আবদুর রহিমের মেয়ে।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন আল আবেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইলে চার্জ দেয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে মেহেদী তার স্ত্রী রানীকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর মেহেদী সারা রাত বাসাতেই ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে পাঁচ মাসের শিশু সন্তানকে বাসায় রেখে ফতুল্লা থানায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
এসআই মামুন আল আবেদ আরো জানান, মেহেদী হাসানের আগের সংসারে স্ত্রী-সন্তান রয়েছে এবং আফরিন আক্তার রানীরও স্বামী-সন্তান রয়েছে। তারা উভয়ই আগের সংসার রেখে পরকীয়া সম্পর্কের পর বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করে। তাদের সংসার জীবনে আগের সংসার নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো বলে জানা গেছে।

 

অনলাইন বাণিজ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা


নারী সংবাদ



রুবাইয়াত উর্মি। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ-এমবিএ করে চাকরি না খুঁজে ছোট পরিসরে নিজের ফেসবুকে গ্রুপ খুলে এফ-কমার্সের মাধ্যমে শুরু করেন অনলাইন বাণিজ্য। এর মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন।
উর্মি ছাত্রজীবন থেকেই স্বপ্ন দেখেন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার। তাই প্রথমে ছোট আকারে খুব অল্প পুঁজিতে শুরু করেন। পরে আস্তে আস্তে পরিধি ডালপালা ছড়ায়। উর্মির এফ-কমার্স পেজের নাম ‘ফ্যাশন প্যাশন’। তিনি লোকাল বাজার থেকে কাপড় কিনে ডেভেলপ করেন। যেহেতু আমাদের দেশে অনেকেই দেশীয় পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী নন, তাই দেশীয় বিভিন্ন পোশাক কিভাবে গর্জিয়াস কাজ করে পার্টি ড্রেস বানানো যায় তা নিয়ে কাজ করছেন উর্মি।
আলেয়া আফরিন। একটি অ্যাড ফার্মে চাকরির পাশাপাশা আরেকটু স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যই এই এফ-কমার্সে তার যাত্রা। এইচএসসি পাস করতেই বাবা সমস্যায় পড়ে চাকরি ছাড়েন। ঠিক তখনি বড় মেয়ে হিসেবে সংসারের হাল ধরার দায়িত্ব পড়ে আলেয়ার ঘাড়ে। আলেয়া খুব সামান্য বেতনে ছোট একটি চাকরি শুরু করেন। প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তার পড়ালেখা। সামান্য বেতনে পরিবারে ছোট ভাইসহ অন্যদের দেখভালেই চলে যায়, পড়াশোনার খরচ যোগানোই দায়। তখনি এই এফ-কমার্সে চিন্তা এলো এবং সেভাবেই শুরু তার ‘বিবির আয়না’ নামে এফ-কমার্স পেজের। তারপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স। এখনো চাকরি করছেন ভালো কোম্পানিতে। পাশাপাশি তার সেই এফ-কমার্স ব্যবসাও ধরে রেখেছেন। মাত্র ২৫ হাজার টাকা ধার করে শুরু করেছেন, এখন প্রায় তিন লাখ টাকার প্রোডাক্ট রয়েছে বিবির আয়নায়।
উর্মি আর আলেয়ার মতো শত শত উদ্যোগী মেয়ে অনলাইন বাণিজ্যে এগিয়ে যাচ্ছে ও সফল হচ্ছে। দেশ এখন আলিবাবা, দারাজ, আজকের ডিল, পিকাবোসহ অন্যান্য ই-কমার্স সাইটে সয়লাব। বর্তমান যান্ত্রিক কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই তো প্রযুক্তিনির্ভর। পিছিয়ে নেই ঘরের নারীরাও। বর্তমানে নারীর ঝোঁক বাড়ছে অনলাইন ব্যবসায়। অনলাইন ফ্যাশন হাউজ, জুয়েলারি হাউজসহ নিত্যপণ্যের সম্ভার এখন প্রায়ই চোখে পড়ে। ঘরে বসে কল করে কিংবা মেসেজ পাঠিয়ে পছন্দের পণ্যটি ক্রেতাদের হাতের নাগালে পৌঁছে দিচ্ছেন এ নারী উদ্যোক্তারা। শুধু সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ফেসবুক ব্যবহার করেই তারা এগিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের ব্যবসা।
ফেসবুকের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির এই সম্ভাবনার যুগে নারীর পথচলা আরও সুগম হয়েছে। ঘর-সংসার-সন্তান সব সামলে অনেক নারী এখন অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত এফ-কমার্সে।
বর্তমানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিসের) তালিকাভুক্ত প্রায় তিন হাজার ফেসবুক পেজ আছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০০ পেজ নারী উদ্যোক্তাদের। ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ (এফ-কমার্সের) সুবিধা হলো- অল্প পুঁজিতে এমনকি বিনা পুঁজিতেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াই ব্যবসা করা যায়। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী আট হাজার ফেসবুক পেজ আছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক পেজ চালান নারী উদ্যোক্তারা।
এ প্রসঙ্গে লেখিকা আমেনা খানম মীনা বলেন, খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও আইসিটি বা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে একচেটিয়া বিচরণ ছিল পুরুষদের। মূল কারণ, কম্পিউটার তথা আইসিটি খাতে শিক্ষা, সেবা ও ব্যবসায় যারা নিয়োজিত ছিলেন, তাদের বেশির ভাগই ছিলেন পুরুষ। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। খুব ধীরে হলেও পাল্টেছে এ চিত্র। বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে এসেছেন তথ্যপ্রযুক্তিতে।
তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো ও নারী সচেতনতার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থার একটি প্রকল্প ছিল ‘জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ’।
নানা বাধা পেরিয়েও দেশের আইসিটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা নারীর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়োজিত নারীরা নিজেদের অবস্থা সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলছেন। বাংলাদেশেও গড়ে উঠছে এমন সংগঠন। তেমনি একটি ‘বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি’ বা বিডব্লিউআইটি। সংগঠনটির নারীরা কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সাথে জড়িত। বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে পেশাগতভাবে জড়িত নারীদের এখন পর্যন্ত প্রধান সংগঠন এটি। সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য আইটি খাতের সাথে জড়িত নারীদের একত্রিত করে তাদের পরিচিতির ব্যবস্থা করা। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করা। সংগঠনটি তরুণীদের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে এবং এই শিল্পে উদ্যোগী হতে উৎসাহিত করে থাকে। নারী উদ্যোক্তা এবং পেশাজীবীদের আইসিটিতে সাফল্য অর্জনের জন্য নেতৃত্ব গুণাবলীসহ অন্যান্য দক্ষতা বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টাও করা হয় এই সংগঠনের পক্ষ থেকে। কাজেই যে নারীরা বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সঙ্গে যুক্ত তারা খুব সহজেই বিডব্লিউআইটির সদস্য হতে পারেন।
সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো জোরালো ভূমিকা নেই। এই খাতে নারীরা যে পিছিয়ে পড়ছেন এ জন্য যে পরিমাণ জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন, তা দেখা যাচ্ছে না। দেখা যায়, দেশে কারিগরি জ্ঞান প্রশিক্ষণ দেয় যেসব প্রতিষ্ঠান আছেÑ সেখানে পুরুষের সমানতালে নারীরাও আসছেন না। এর জন্য সরকার পক্ষ কিংবা বিভিন্ন এনজিও যারা নারী উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এমন অনেক সংস্থা বাংলাদেশে আছে। তারা নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে আসার জন্য কাজ একেবারেই কম। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অল্পশিক্ষিত নারীরা স্বল্প কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন কাজে সাফল্য পাচ্ছেন। নারীর পূর্ণ ক্ষমতায়ন প্রযুক্তি জ্ঞান ছাড়া সম্ভব নয়। এ জন্য আইসিটি খাতে নারীদের এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করে হলেও আইসিটিতে নারীদের এগিয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই বিশাল জনশক্তিকে প্রযুক্তির জ্ঞানে দীক্ষিত করতে পারলে তারা আমাদের বোঝা হবে না, হবে দেশের সম্পদ। আমাদের দেশে অনেক নারী ঘর থেকে বের হতে চান না। তাদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে ইন্টারনেটে নিজের ঘরে বসে আউট সোর্সিং ফ্রিল্যান্সিং করে দেশি-বিদেশি প্রচুর মুদ্রা অর্জন করতে পারবেন। স্বল্প শিক্ষিত নারীদের সামান্য প্রশিক্ষণ দিতে পারলে ভালো সফলতা পাওয়া যাবে।
আমাদের দেশের অনেক নারী আছেন, যারা ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি করতে পারছেন না। কিন্তু তারা স্বাবলম্বী হতে চান। সেদিক থেকে ই-কমার্সের মাধ্যমে তারা ঘরে বসে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ই-কমার্সের সুবিধা হলো- অল্প পুঁজিতে এমনকি বিনা পুঁজিতেও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াই ব্যবসা করা যায়। ই-কমার্স মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। বাংলাদেশের নারীদের ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ই-কমার্স। এই সেক্টরে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তা আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।

সুত্র: বাসস।

 

বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে চমক ওবামার


নারী সংবাদ


আগেও বহুবার প্রকাশ্যে স্ত্রীয়ের প্রতি তার অকুণ্ঠ ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এবার বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রী মিশেলকে হৃদয়গ্রাহী বার্তা দিয়ে ফের একবার নিজের রোমান্টিক সত্তা প্রকাশ করলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত বুধবার ছিল বারাক-মিশেলের ২৬তম বিবাহ বার্ষিকী। এই বিশেষ দিনে স্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে ট্যুইটারকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মিশেলের একটি সুন্দর ছবি পোস্ট করে ৫৭ বছরের বারাক লেখেন, ‘বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা। গত ২৬ বছর ধরে তুমি একজন অসাধারণ সঙ্গী হিসেবে আমার সঙ্গে আছো। তুমি এমন একজন, যে আমাকে হাসাতে পারে, যাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমি গোটা পৃথিবী দেখতে চাই।’

সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডিও কম যান না। উত্তরে তিনি স্বামীকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘গত ২৬ বছর ধরে আমাকে অগাধ ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং মর্যাদা দেয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি সেই মানুষটি, যে আমাকে ও আমাদের মেয়েদের সবসময় উৎসাহ এবং সম্মান দিয়ে এসেছে। প্রতিটা দিন আমি তোমাকে সঙ্গে আছি। তুমিই আমাদের আসল সম্পদ।’

১৯৯১ সালে বাগদান সেরে পরের বছরই অক্টোবর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বারাক ও মিশেল। তাদের দুই মেয়ে রয়েছে — মালিয়া অ্যান ওবামা ও সাশা ওবামা।

 

ভারতে ‘পবিত্র’ গঙ্গা নদীর পাশেই নারী ধর্ষিত!


নারী সংবাদ


ভারতের পাটনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত গঙ্গা নদীর পাশে একজন নারীকে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, ওই দুই ব্যক্তি পালাক্রমে ওই নারীকে নির্যাতন করেছে এবং তা ভিডিও করেছে।

জানা যাচ্ছে, রোববার ভোরে গঙ্গা নদীতে গোছল করার সময় ওই দুই ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে যায়।

ভিডিওতে শোনা যায়, গঙ্গা নদীর পবিত্রতার কথা বলে তাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করছেন নির্যাতনের শিকার নারী, যাকে তিনি ‘মা’ বলেও উল্লেখ করেন।

পুলিশ বলছে, যে মোবাইল ফোনে ওই ঘটনা ভিডিও করা হয়, সেটি জব্দ করে ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ কিভাবে এই ঘটনার কথা জানতে পেরেছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ দাবি করেছে, অনলাইনে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরেই তারা এই ঘটনা কথা জানতে পারে।

তবে স্থানীয় খবরে বলা হচ্ছে যে, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থানায় গিয়েছিলেন ওই নারী, কিন্তু মামলা নিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা আনন্দ কুমার বুধবার বলছেন, ‘ওই ভয়াবহ ঘটনার পর থেকে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং সেটা কাউকেই জানাননি।’

ওই নারী এবং তার ওপর হামলাকারীরা একই গ্রামের বাসিন্দা বলে তিনি বলছেন। এখন ওই নারী এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে রাজি হয়েছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ১৩ মিনিটে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়, কিন্তু এ নিয়ে সামাজিক ট্যাবুর কারণে অনেক ঘটনাই চাপা পড়ে থাকে।

২০১২ সালে দিল্লিতে একজন ছাত্রীকে বাসে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা এবং তারপর ব্যাপক বিক্ষোভের পর থেকে দেশটিতে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কড়াকড়ি পদক্ষেপ বেড়েছে।

এরপর মৃত্যুদণ্ডের বিধান থেকে ধর্ষণ বিরোধী শক্ত আইন জারি করে দেশটির সরকার। সুত্র: নয়া দিগন্ত

 

মালয়েশিয়াতে বিবাহবিচ্ছেদ সমস্যা


রেহনুমা বিনত আনিস


সুপ্রিয়া,

আপনি জানতে চেয়েছেন মালয়দের মাঝে বিবাহবিচ্ছেদ এবং পরকীয়া এত বেশি কেন। নারীপুরুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মক্ষেত্রে বিচরণের ক্ষেত্রে এত তারতম্য কেন। আমি ঘরকুনো মানুষ। ঘরের বাইরে দুরে থাক, নিজের রুমের বাইরেই যাই কম। তবে যখন বেরোতে বাধ্য হই, প্রচুর মানুষের সাথে কথা বলি, তাঁদের পর্যবেক্ষণ করি, ফলে কিছু বিষয় জানার সুযোগ হয়। তার ওপর ভিত্তি করে যতটুকু উপলব্ধি হয়েছে সেটা আপনার সাথে শেয়ার করছি।

মালয়শিয়ার ব্যপারে আমাদের মাঝে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এটি মুসলিম দেশ নয়। এমনকি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলাও কঠিন। এখানে মাত্র ৬১% মুসলিমের বসবাস যেখানে বাংলাদেশে এই অনুপাত ৯০%। মালয়রা দেশটিকে মুসলিমদের জন্য অনুকূল বাসস্থান হিসেবে গড়ে নিয়েছে, কিন্তু মূলত এটি ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের অন্তর্ভুক্ত এবং এদের চালচলন তেমনই।

এখানকার মুসলিম বাবামায়েরা ইসলামে প্রদত্ত তিনটি দায়িত্বের মাঝে একটি খুব ভালভাবে পালন করে, একটি আধাআধি পালন করে, আরেকটি করেনা। ওরা সন্তানের সুন্দর নাম রাখে, ইসলামের বেসিকটুকু শেখায়, কিন্তু সন্তানের বিয়ের ব্যপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেনা। মালয় ছেলেমেয়েরা অল্প বয়সে বিয়ে করে থাকে, নিজের পছন্দে। প্যারেন্টাল গাইডেন্স ব্যতীত গৃহীত এই সিদ্ধান্ত কতটুকু বাস্তবতার ওপর প্রতিষ্ঠিত আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়ই। ফলে গোঁড়াতেই গলদ রয়ে যায়।

ওরা সাধারনত সমবয়সী বিয়ে করে। একটি বৈবাহিক সম্পর্কে অন্তত একজন ম্যচিউর চিন্তাভাবনাসম্বৃদ্ধ হলে বিয়েটাকে ফলপ্রসূ করা সহজ হয়। কিন্তু দুজনই যদি অপরিপক্ব হয় তাহলে কেউই বিয়ের তাৎপর্য, দায়বদ্ধতা কিংবা দায়িত্ব সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনা। ফলে বিবাহবিচ্ছেদের বীজ প্রোথিত হয়ে যায়।

ওদের পুরুষরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অলস এবং অকর্মন্য হয়ে থাকে। ফলে নারীদের এগিয়ে আসা ব্যতীত উপায় থাকেনা। লেখাপড়ায় এগিয়ে থাকার ফলে চাকরীর ক্ষেত্রেও স্বাভাবিকভাবেই নারীরা এগিয়ে থাকে। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিগুলোতে বিয়ের ক্ষেত্রে সমযোগ্যতা ফ্যাক্টর নয়। তাই শিক্ষাগত যোগ্যতার পার্থক্য বিয়ের জন্য প্রতিবন্ধক নয়। উপরন্তু পুরুষদের সংখ্যাস্বল্পতা খুব একটা বাছাবাছি করার সুযোগ রাখেনা। ক্যানাডাতেও একই চিত্র দেখেছি।

এখানে বিয়ের সময় থেকেই দুজনে মিলে স্থির করা হয় সংসারের কোন খরচ কে দেবে। ফলে নারীদের কাজ না করে উপায় থাকেনা। নারীরা ঘরে বাইরে সবদিকে কাজে ব্যস্ত থাকে। সে সুযোগে অনেক পুরুষ নতুন নতুন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কয়েকবার ধরা পড়ার পর নারীরা বিরক্ত হয়ে যায়। ফলে পরিস্থিতি দুটি বাজে দিকের মাঝে আবর্তিত হতে থাকে – একটি পরকীয়া, আরেকটি বিবাহবিচ্ছেদ।

পরকীয়ার পেছনে মূলত দুটি ফ্যাক্টর কাজ করে। একটি বিবাহের ক্ষেত্রে অপরিপূর্ণতা, অপরটি বিপরীত জেন্ডারের সাথে মেলামেশার সুযোগের সহজলভ্যতা। পুরুষদের অকর্মন্যতা, উপরন্তু বিশ্বাসঘাতকতার কথা তো বললাম। এখানকার নারীরা ঘরেবাইরে এত কাজ করে যে বাইরে বেরোনো, পুরুষদের সাথে ওঠাবসা ওদের জন্য ডালভাতে পরিণত হয়। আমি দেখে অবাক হয়েছি ওরা নারীপুরুষের মাঝে মিনিমাম ডিস্টেন্স বজায় রাখেনা। পাশে বসা, গা ঘেঁষে চলাফেরা, গায়ে হাত দিয়ে কথা বলা এমন অকল্পনীয় ব্যপারগুলো ওদের কাছে খুব স্বাভাবিক, এমনকি আপাতদৃষ্টে পর্দানশীন মেয়েদের মাঝেও।

অধিকাংশ নারীপুরুষ মিনিমাম লেভেলে ইসলাম মেনে চলে। টাইটফিটিং প্যন্টশার্টের সাথে মাথায় একটা হিজাব বেঁধে খুশি হয়ে যায়। আবার মসজিদে গেলে পর্দার অভাব ঢাকতে আলাদা পোশাক পরে নামাজ পড়ে। এভাবে ছাড় দিতে দিতে আল্লাহর প্রতি দায়বদ্ধতা যে পর্যায়ে পৌঁছয় সেটা তখন আর অন্যায়ের পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যথেষ্ট মজবুত সাপোর্ট দিতে পারেনা।

সাংসারিক দায়িত্বের পরিমাণ যত বাড়তে থাকে গান বাজনা নাটক সিনেমার মোহময় আবেশে নিমজ্জিত মানুষগুলোর কাছে বাস্তবতা বড় কঠিন মনে হতে থাকে। এক পর্যায়ে কেউ কেউ পুরাতন স্বপ্ন ফেলে রেখে নতুন স্বপ্নের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়। ফলে আমি এমন নারী দেখেছি যে প্রাক্তন স্বামীর কাছে থেকে একটি ফুটো পয়সা সাহায্য ব্যতিরেকে সন্তানদের প্রতিপালন করছে। এমন পুরুষও দেখেছি যারা মায়ের কাছ থেকে এক বিন্দু স্নেহ ব্যতিরেকে সন্তানদের মানুষ করছে।

তবে এই অবস্থা মনে হয় এখন মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র। গতকাল একজন গবেষকের সাথে দীর্ঘ আলোচনা হল। তাঁর বাবা মালয়শিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, তিনি নিজে পি এইচ ডি। বর্তমানে ভারতীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে ডিভোর্সের আশঙ্কাজনকভাবে ক্রমবর্ধমান হার নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু ডিভোর্সের কারণগুলো মোটামুটি একই – বৈবাহিক জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি করার ব্যর্থতা, পারস্পরিক সম্মানবোধ এবং বিশ্বস্ততার অভাব, দায়বদ্ধতার অভাব, দায়িত্বানুভূতির অভাব, অর্থনৈতিক চাপ, কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজনদের দ্বারা সৃষ্ট চাপ, চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব এবং সর্বোপরি আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতির অভাব।

আল্লাহ ক্কুরআনে বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর রাহমাত এবং বারাকাহ তাদের জন্যই নির্ধারিত যারা তাঁর পথকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করে, এই পথে অবিচল থাকার সংকল্প রাখে এবং তাঁর জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। সত্যি কথা বলতে আমরা একটি জ্ঞানবিমুখ, আমলবিহীন, গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়া নামসর্বস্ব এবং কেবল বাহ্যিকভাবে মুসলিম জাতিতে পরিণত হয়েছি। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দুর্বলতা আমাদের অন্যান্য সম্পর্কগুলোকেও অস্থায়ী করে ফেলছে। কারণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পাশে থাকা একমাত্র আল্লাহর প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই সম্ভব। নইলে এই কষ্ট মানুষ কাঁধে তুলে নিতে পারেনা। ঝড়ের প্রথম আভাসেই পালিয়ে যায়।

আমার স্বল্প জ্ঞান এবং অল্প অভিজ্ঞতায় এগুলোই কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। আপনার মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।

 

মেয়েটির সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন


নারী সংবাদ


ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্যাহ কায়সার সড়কে মেডিস্ক্যান হাসপাতালের পেছনে একটি বাসায় শিশু গৃহকর্মী অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রী লাভলী আক্তারকে গতকাল সোমবার রাতে আটক করেছে পুলিশ।

নির্যাতিতা মেয়েটি ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত রোজার পর থেকে বৃষ্টি (১২) ইতালি ভবনের ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। সে পরশুরাম উপজেলার ধনিকুন্ডা গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। গৃহকর্ত্রীর অমানুষিক নিযাতন সইতে না পেরে মেয়েটি সোমবার সকালে পালিয়ে যায়। এক ব্যক্তির সহায়তায় বিকালে শহরের মেডিনোভা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। মেয়েটির সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন।

খবর পেয়ে পুলিশ বৃষ্টিকে ওই হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায়।

ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শহীদুল ইসলাম জানান, মেয়েটিকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে । পুলিশ তাৎক্ষণিক গৃহকর্ত্রী লাভলীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে । লাভলী দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের জহির উদ্দিনের স্ত্রী। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান ।

গৃহকর্মী নির্যাতনকারী আফরোজা গ্রেফতার

ফেনী সংবাদদাতা, ১২ জুলাই ২০১৭
ফেনী শহরের বিরিঞ্চি এলাকায় শিশু গৃহকর্মী আমেনার নির্যাতনকারী গৃহকর্ত্রী আফরোজাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনী মডেল থানা পুলিশ আফরোজাকে ধরতে রাজধানীতে অভিযান চালায়। রাজধানীর বাসা থেকে তার মেয়ে ও অপর বাসা থেকে ছেলেকে আটক করে তাদের মাধ্যমে ফাঁদ পেতে আফরোজাকে মঙ্গলবার ভোরে ফেনীর ধলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। ছেলেমেয়ের ফোন পেয়ে আফরোজা সিএনজি অটোরিকশায় ধলিয়ার সাইনবোর্ড নামক স্থানে পৌঁছলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

ফেনী মডেল থানার ওসি রাশেদ খান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আফরোজা গৃহকর্মী আমেনাকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

প্রসঙ্গত, গত ১০ ফেব্রুয়ারি শহরের বিরিঞ্চি এলাকার নুরিয়া মসজিদসংলগ্ন হাজী মঞ্জিলের তৃতীয়তলায় আফরোজার বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় ১০ বছরের আমেনা। সেখানে গৃহকর্র্ত্রী আফরোজার নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে সারা পিঠ ঝলসে যায় আমেনার। গত শনিবার রাতে তাকিয়া রোডে আমেনাকে কান্নারত দেখে জনৈক মিজানুর রহমানসহ আশপাশের লোকজন তাকে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এক কান দুই কান হয়ে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

একপর্যায়ে রোববার রাতে সদর হাসপাতালে ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) উক্য সিং। ততক্ষণে শিশুটির স্বজনেরাও হাসপাতালে পৌঁছে যান। পরিচয় মেলে গৃহকর্ত্রী আফরোজার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) উক্য সিংয়ের নেতৃত্বে আফরোজার বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের টের পেয়ে পালিয়ে যায় গৃহকর্ত্রী আফরোজা ও তার পরিবারের সদস্যরা।

নির্যাতিতা আমেনা পরশুরামের বিলোনীয়া এলাকার আবুল কাশেমের মেয়ে। তাকে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রোববার রাতে আমেনার ফুফু ফুলজান বেগম টুনি বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

‘আজ না হলেও কাল হবেই’


সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- ফাতেমা শাহরিন


শর্মিলী রহমান একজন শিক্ষার্থী একজন উদ্যোক্তাও বটে। এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পড়াশুনার পাশাপাশি দীর্ঘ পথ ধরে যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে হাটছেন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মিলন্তিকা’। BBA চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী প্রথম দিকে স্বল্প পরিসরে গড়ে তোলেন ‘মিলন্তিকা’। কিন্তু বর্তমানে তা ঢাকা-চাঁদপুর সহ সারা দেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিলন্তিকায় মুলত পাওয়া যাবে অরিজিনাল cosmetics প্রোডাক্ট এবং imported প্রোডাক্টস।

অপরাজিতা সাথে কিছু কথা হল ‘মিলন্তিকা’র প্রতিষ্ঠাতা শর্মিলী রহমানের সাথে-

অপরাজিতাঃ মিলন্তিকা শুরুর গল্পটা আমাদেরকে একটু বলুন?
শর্মিলী : ছোটো বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল নিজের মত কিছু করা। নিজের একটা পরিচিতি গড়ে তোলার অদম্য ইচ্ছে। একসময় মনে হলো এখনই উপযুক্ত সময় কিছু না কিছু করার। যেই চিন্তা সেই কাজ, ‘আমি চাঁদপুর শহরে থাকি সেই সুবাদে চাঁদপুর কেন্দ্রিক কিছু করার চিন্তা করি। ভেবে দেখলাম আমাদের এখানে অরিজিনাল cosmetics প্রোডাক্ট এবং imported প্রোডাক্টস এর সুবিধা কম। তখনই আরও ভাল ভাবে চিন্তা টা মাথায় আসে। শুধু চিন্তা আসলেই তো হবে না। লাগবে মূলধন , প্রচার , আর সাহস এবং যোগ্যতা। তাই প্রাথমিক দিকে খুব কাছের বন্ধু মিলে মূলধন জোগাড় করলাম। প্রচার করতে ফেসবুক সাহায্য করেছে, সাথে কাছের বন্ধুরা। যখন সবাই ভালো প্রোডাক্টস পেয়ে বুঝতে পেরেছে। তখন এমনিতেই খুব জলদি প্রচার হয়ে যাচ্ছিলো। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডরা আর আমার বোন এবং আমার মা আমাকে শুরু থেকে অনেক সাহস জুগিয়েছেন এবং এখনও পাশে আছেন। যার কারণে আজ হয়তো এখানে আসতে পেরেছি। আর এখন আলহামদুলিল্লাহ মিলন্তিকা ঢাকা-চাঁদপুর সহ সারা দেশে সুবিধা দিচ্ছে।

অপরাজিতাঃ শুরুতে দিকে ‘মিলন্তিকা’ প্রচার প্রডাক্ট সিলেক্ট কে কে সাহায্য করেছে?
শর্মিলী: শুরু তেই বলে নিচ্ছি যে উদ্যোগটা আমার একার অবশ্যই ছিলো না। বন্ধুদের সাহায্য নিয়েই এই পথ চলা। হা তবে বলতে পারি এর প্রচার থেকে প্রসারের মূল ভূমিকায় আমি ছিলাম। আর cosmetics প্রোডাক্টস সম্পর্কে আমার বেশ ভালো ধারণা থাকায় এই সেক্টর টাকেই গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করি।

অপরাজিতাঃ আপনার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে চাই কেউ যদি আপনার মত উদ্যোক্তা হতে চায় তাহলে আপনার পরামর্শ কি?
শর্মিলী: দেখুন, নিজ উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে খুব সহজেই করা যাবে এই সব বিজনেস। যদি কেউ করতে চান। শুধু মনোবল রাখতে হবে দৃঢ়ভাবে। যে কোনো একটা ভিন্ন ধরণের প্রোডাক্টস যা অরিজিনাল এবং সহজলভ্য নয় তা দিয়ে শুরু করতে হবে। তা সীমিত মূল্যের হলেও চলবে। যেমন প্রথম amader6 ব্যবসাটি অরিজিনাল ইন্ডিয়ান কাভেরি মেহেদি দিয়ে শুরু করেছিলাম আমি।কারণ জানতাম তখন আশে পাশে যেখানেই কাভেরি ছিল maximum নকল। তাই যখন আসল টা এনেছিলাম খুব সাড়া পেয়েছিলো। কম মূল্যে দেওয়ায় সবাই টেস্ট করতে হলেও নিয়েছিলো অরিজিনাল কিনা। পরে বোঝার পর এমন আরো অনেক অর্ডার এসেছিল।

অপরাজিতাঃ এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মসংস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
শর্মিলী: সুযোগ অবশ্যই আছে। আমি আমার ‘মিলন্তিকা’ তে অতিশীঘ্রই কিছু কর্মী নিয়োগ করব। যারা অসহায় কিন্তু মেধাবী তাদের কে বেশি গুরুত্ব দিবো। এখন দেখা যায় বেশির ভাগ কোম্পানি গুলো ৫/৬ বছর যোগ্যতা চায় যার কারণে অনেক শিক্ষিত অসহায় মেয়ে চাকরি না পেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। স্বপ্ন হারিয়ে ফেলে আমি তাদেরকে সুযোগ করে দিতে চাই। যাতে ঘরে বসেও কাজ করতে পারে। এটাই আমার স্বপ্ন।

অপরাজিতাঃ আবার মিলন্তিকা ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
শর্মিলী: একজন নারী হিসেবে পথ চলা মোটেই সহজ ছিলো না। শুরুতেই ফ্যামিলি বাঁধা দিয়েছিল। বড় বোন ছাড়া .. সবাই বলছিলো মেয়েদের ব্যবসা করার দরকার কি ? বিপদ আসবে, পড়ালেখার ক্ষতি হবে ইত্যাদি। সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে আসার দিন গুলো adventurous বলা যায় হাহাহা ..। কিন্তু কঠিন ছিল না মোটেই। কারণ তাদের বিশ্বাস জোগাড় দায়িত্বে লাগতে গিয়েই সব দিক ঠিক রাখতে হয়েছিল। পড়ালেখা , ব্যবসা এবং সব কিছু।

অপরাজিতাঃ নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
শর্মিলী: শুরু টা কখনোই মধুর হয় না। অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রতিবন্ধকতা আসবে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার জন্ম হবে। হাল না ছেড়ে দিয়ে নিজ যোগ্যতা সাথে এগিয়ে যাওয়া টাই বুদ্ধিমানের কাজ। আজ না হলেও কাল কিছু হবেই।

অপরাজিতাঃ মিলন্তিকা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
শর্মিলী: ‘মিলন্তিকা’ আমার স্বপ্ন। ভবিষ্যতে আমি চাঁদপুর, ঢাকা সহ দেশের সব যায়গাতেই মিলন্তিকার ব্রাঞ্চ ওপেন করতে চাই। মিলন্তিকা যেনো একদিন নামকরা ব্র্যান্ড এ পরিচিতি পায়। সবার দোয়া প্রার্থী।

️মিলন্তিকার কিছু পণ্যের ছবি,

২.

 

‘যৌন হয়রানি দায়ে শিক্ষককে গণপিটুনি’


নারী সংবাদ


সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছাত্রীদের প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য ও নানা সময় বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগে ঐ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান ওরফে বাবুলকে শিক্ষার্থীগণ ও অভিভাবকেরা গণপিটুনি দিয়েছেন। পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে অভিভাবকরা।

সবার অভিযোগ, ‘শিক্ষক? সাঈদুর রহমান ওরফে বাবুল প্রায়শ ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানিমূলক প্রস্তাব দিতেন ও অশালীন মন্তব্য করতেন। বিষয়টি একাধিকবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন তালুকদারকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এভাবে চলতে থাকলে রবিবার সকালে এসব অভিযোগ নিয়ে ছাত্রীরা ক্লাসে গেলে প্রধান শিক্ষক উল্টো তাদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় তিনি সাঈদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নিবেন না মর্মে শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল ছাত্রীরা ক্লাস বর্জন এবং ওই শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে অভিভাবক ও ছাত্রীরা সাঈদুর রহমানকে কঠিন গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাসোপর্দ করে।

টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ওসি সায়েদুর রহমান জানান, ওই শিক্ষককে স্কুলের ছাত্রী ও অভিভাবকরা পিটুনি দেওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। পরে ওই শিক্ষককে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহরিয়ার রহমান ওই শিক্ষককে এক বছরের কারাদণ্ড দেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন তালুকদার তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সাঈদুর রহমান ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এ জন্য ছাত্রী ও অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়েছে।

 

‘সুসানে গীতি’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম নারী মেজর


নারী সংবাদ


‘সুসানে গীতি’ ক্যাপ্টেন পদবিতে যোগদান করেন ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী ডাক্তার হিসেবে। সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম নারী মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন ডাঃ সুসানে গীতি।

৩০ সেপ্টেম্বর রবিবার সেনা সদরদপ্তরে তাঁকে মেজর জেনারেল পদবির র্যাং ক ব্যাজ পরিয়ে দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ সামছুল হক।
এই সর্ব প্রথম নারীর ক্ষমতায়নে এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত দেখা গেল সেনাবাহিনীতে মহিলা অফিসারের এ পদোন্নতি।

মেজর জেনারেল ডাঃ সুসানে গীতি ১৯৮৫ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী ডাক্তার হিসেবে ক্যাপ্টেন পদবিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথম নারী হিসেবে হেমাটোলজি’তে এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জন করেন।

এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন এবং বিভিন্ন সামরিক হাসপাতালে প্যাথলজি বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

 

‘ফটোগ্রাফি নারীদের কি ক্যারিয়ার হতে পারে’


মেইক ইউরসেলফ


বর্তমান সময়ে ছবির অনেক ক্ষমতা। মানে ছবি কথা বলে দেশ, সমাজ, এবং পরিবার পাশাপাশি ব্যক্তিগত মুহুর্ত্বের। একটা ছবি দিয়ে অনেক সত্যকে তুলে ধরা যায় কথা ছাড়া। আজকের দুনিয়ায় মিডিয়া থেকে শুরু করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনে, বিয়ে, জন্মদিনসহ নানান উৎসবে ছবি আমাদের জীবনের একটি অংশ। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও ক্যারিয়ার হিসেবে ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন বর্তমান সময়ে। কিন্তু কোথায় তা শিখবেন বা এর হালচাল সম্পর্কে অনেকের কোন ধারণা নেই। সুতরাং আসুন জেনে নেই ফটোগ্রাফি ক্যারিয়ার হিসেবে কতটুকু সম্ভাবনা রাখতে নারীদের জন্যও।

নারী ফটোগ্রাফার ইতিহাস

ফটোগ্রাফিতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক দিন ধরে। প্রাচীনতম নারী আলোকচিত্রীকারীনীদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্রিটেন বা ফ্রান্সের। মুলত পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা প্রাথমিকভাবে নারীরা এই পেশায় আসেন। উত্তর ইউরোপে এটি সর্বাধিক ছিল। পরে ১৮৪০ সালের দিকে নারীগণ প্রথমে ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সুইডেনের স্টুডিওতে ফটোগ্রাফি ব্যবসা শুরু করেন। ব্রিটেনের তাদের পরিবার থেকে নারীরা ফটোগ্রাফিকে একটি শিল্প হিসেবে গড়ে তুলেন। এরি ধারাবাহিতায় বর্তমানে দিনে দিনে নারী ফটোগ্রাফার বেড়ে চলছে বাংলাদেশেও।

কতরকম ক্যারিয়ার

ফ্যাশন ফটোগ্রাফাররা (ফ্যাশন শুট করে)
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফাররা(জীবজন্তুর ছবি তুলে),
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফটোগ্রাফাররা (মেশিনের ছবি তুলে),
আবার ফরেনসিক ফটোগ্রাফাররাদের কাজ (বিভিন্ন অ্যাসপেক্ট থেকে কোন ক্রাইমের ছবি তোলা),
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফাররা, (তাদের কাজ শুধু বিভিন্ন স্থানকে দর্শনীয় স্থানের মত করে ছবি তোলা।)

সুতরাং যেকোনো ফটোগ্রাফিই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া যায়।

নারী ফটোগ্রাফারদের পুরষ্কার গ্রহণ

এমা বার্টন ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পদক লাভ করেছিলেন ১৯০৩ সনে। এটি একটি কার্বন মুদ্রণের জন্য দ্য Awakening এনটাইটেলমেন্ট।

ফটোগ্রাফির জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন ভার্জিনিয়া স্কাউ ১৯৪২ সালে। প্রেস ফটোগ্রাফিতে অসাধারণ কাজ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে পুরস্কার প্রাপ্ত প্রথম মহিলা ছিলেন একজন অপেশাদার যিনি ক্যালিফোর্নিয়ার রেডিংয়ের একটি সেতু থেকে ঝুলন্ত ট্র্যাক্টরের ট্রেলারের ক্যাব থেকে উদ্ধারকৃত দুইজন পুরুষের ছবি তোলেন।

এছাড়া ২০০০ সালে, মার্সিয়া রেড, প্রথম মহিলা ছবির পরিচালক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রগ্রাহক গিল্ডে যোগদান করেন ২০০০ সালে এখনও ছবির জন্য অপারেটিং ক্যামেরাম্যান লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের সোসাইটি জিতেছিলেন তিনিই।

আয়

ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারদের তেমন কোন ফিক্সড বেতন হয় না। ৩০-৩৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে। আর ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ ফটো বিক্রি করে, তাহলে অনেক উপার্জন।

ফটোগ্রাফির পেশায় শুরুতেই কি করবেন?

একটা ক্যামেরা সংগ্রহ করুন তবে বেশিদামি না কমদামি। পাশাপাশি ক্যামেরা লেন্স, ফোকাস এবং শ্যাডো সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা গ্রহণ করুন।

ফটোগ্রাফি নিয়ে বই পড়ুন

ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়ালেখা কোন বিকল্প নেই পড়াশুনার জন্য প্রচুর বই পাওয়া যায় নীলক্ষেতসহ নানান বই এর দোকানে। ফটোগ্রাফি নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক ম্যাগাজিন রয়েছে। সেগুলো পড়ুন এবং মনোযোগ দিয়ে দেখুন।

সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে ধারণা

ছবি তোলার সাথে সাথে ফটোগ্রাফিক সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে ধারণা নিন। অ্যাডোবি ফটোশপ, লাইটরুম প্রভৃতি প্রভৃতি সফটওয়্যারের ব্যবহার ফটোগ্রাফিতে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা 

আমাদের দেশে ফটোগ্রাফি শেখানোর অনেক প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

পাঠশালা: তিন বছরের প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি কোর্সের (ছয় সেমিস্টার) সেমিস্টার ফি বর্তমানে ৩৫ হাজার টাকা। ঠিকানা: পাঠশালা, ১৬, শুক্রাবাদ, ঢাকা। ফোন: ৯১২৯৮৪৭।

কাউন্টার ফটো: তরুণ ফটোগ্রাফারদের জন্য রয়েছে ছয় মাসের ‘মেন্টর প্রোগ্রাম’। এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের ফি ৬৫ হাজার টাকা। ঠিকানা: ১৪ পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুর। ফোন: ৯০১৩০২৬, ০১৬৭৭০৬৮৭৩৫।

বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি: এক বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে টিউশন ফি দুই হাজার টাকা। ঠিকানা: ৮৩ ল্যাবরেটরি রোড (কফি হাউসের গলি), ঢাকা। ফোন: ০১৭১৬৬৬৩৭৫৭।

ঢাকা ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট: এখানে ভিডিও কোর্স ফি ১০ হাজার টাকা এবং ডিপ্লোমা কোর্স ফি ২০ হাজার টাকা। ঠিকানা: সাহেরা ট্রপিক্যাল সেন্টার (ষষ্ঠ তলা), ২১৮ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা। ফোন: ৯০১৪২১৩, ০১৮১৯২৮৫৫৮৪।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (ডিইউপিএস): ডিইউপিএসে ফটোগ্রাফির ওপরে শুধু বেসিক কোর্স করানো হয়। তিন মাসের বেসিক কোর্স ফি তিন হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ কোর্সে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, তাঁরাও অংশ নিতে পারবেন। ঠিকানা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, নিচতলা। ফোন: ০১১৯৭২৬০৫৫২-৫৪।

নিত্য নতুন ফটোগ্রাফিক টার্মগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখুন। তবে পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিকে নিতে চাইলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকা জরুরি।

 

‘মাদকের টাকা না দেওয়ায় ঘুমন্ত অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা’


নারী সংবাদ


সাহেরা বেগম (২৪) নামে একজন অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন তার স্বামী।

নিহত সাহেরা বেগম উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের ধোপারটেক এলাকার আপেল মিয়ার স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে স্বামী আপেল মিয়া পলাতক রয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায়। মাদকের টাকা না দিতে পারায় ঘুমন্ত অবস্থায় সাহেরাকে তার স্বামী আপেল মিয়া বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। শুক্রবার রাতে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের ধোপারটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গতকাল শনিবার সকালে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ।‍

স্থানীয়রা জানান, গত কিছুদিন ধরে আচরণে তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে মনে হয়েছে। রাতে বা সকালে স্ত্রীর সঙ্গে তাকে প্রায় ঝগড়া করতে দেখেছে প্রতিবেশীরা।

বিয়ের পর থেকে মাদকের টাকার জন্য সাহেরাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত আপেল। এর মধ্যে সাহেরা অন্তঃসত্ত্বা হয়। শুক্রবার রাতে মাদকের টাকা না দিতে পারায় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সাহেরা ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে স্বামী আপেল ঘুমন্ত সাহেরাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

শনিবার সকালে পরিবারের সদস্যরা খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এসআই আবুল কাসেম।

 

মাকে সন্তানরা বাঁশবাগানে ফেলে গেল


নারী সংবাদ


ফুজলী বেগম (৮৬)। বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামে।৫ সন্তানের জননী ফুজলী বেগম। ৩০ বছর আগে তার স্বামী ছামাদ শেখ মারা যান। তখন থেকে সংসারের হাল ধরেন তিনি। তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে এই জননী অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে তাদের বড় করেছেন। সবার বিয়েও দিয়েছেন মা। এখন সবারই আলাদা সংসার। কিন্তু বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্ব কেউই নিতে চায় না।

৮৬ বছরের বৃদ্ধা মা ফুজলী বেগমকে
২৬ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যার দিকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশের বাঁশবাগানে ফেলে দিয়ে আসে সন্তানরা কারণ এই বৃদ্ধ মার নড়াচড়া করতে পারেন না ফলে তাকে দেখা শোনা করতে হত।

এর ঘটনার পর প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে ছোট ছেলে রাবু শেখের বাড়ি নিয়ে আসে। পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দায় রাতে থাকার ব্যবস্থা করেন তারা।

বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হলে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। খবর পেয়ে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু বিকেলে বৃদ্ধা মাকে দেখতে ছুটে যান ওই বাড়িতে। তার দায়িত্ব নিতে চান তিনি। চেয়ারম্যান বৃদ্ধা মায়ের প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন।

লোহাগড়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সিদ্দিক জানান, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ সময় সকল বউদেরকে শাশুড়ীর প্রতি নৈতিক দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ছেলেরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়েছে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে তিন ছেলে-মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো- বড় ছেলে ডাহু শেখ, ছোট ছেলে রাবু শেখ ও বড় মেয়ে কুলসুম বেগম।

তবে ঘটনার মূল হোতা মেঝো ছেলে বাবু শেখকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

লোহাগড়া থানা … ৮৬ বছরের অসহায় বৃদ্ধা মাকে রাস্তার পাশে বাঁশবাগানে ফেলে গেলেন তার ছেলে ও পূত্রবধূ এই নির্মম সত্যকে দেখছে গোটা দেশ ও গোটা জাতি।

 

স্কুটি-নারী : নিজের বাহন পেতে আগ্রহ বাড়ছে


নারী সংবাদ


কলেজ পড়ুয়া, চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী- নারীদের পছন্দের বাহনের তালিকায় বেশ আগেই জায়গা করে নিয়েছে দুই চাকার বাহন স্কুটি। আজকাল নগরজুড়ে প্রায়ই চোখে পড়ে নারীদের স্কুটি চালিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার দৃশ্য। শখে নয়, প্রয়োজনের তাগিদেই নারীরা বেছে নিচ্ছেন এ বাহন। বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট।
যানজট সমস্যা, গণপরিবহনের অপর্যাপ্ততা তো আছেই। তার ওপর দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাসে উঠতে পারলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত সিট। লোকাল বাসে নারীদের বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক।
গবেষণা থেকে জানা যায়, গণপরিবহনে ৮৪ ভাগ নারী যৌন হেনস্তার শিকার হন। এসব সমস্যা সমাধানে সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ তৎপরতা চোখে পড়ে না। অগত্যা তারা নিজেরাই বেছে নিচ্ছেন আপন গতিছন্দ, চলার পথ, পথপরিক্রমণের উপায়। কবির ভাষায় বলা যেতে পারে, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রেÑ আতিকা রোমা, আমবারিন খান, মোনালিসা ও স্বপ্না ইসলাম তেমনই স্বনির্ভর, আত্মপ্রত্যয়ী চার নারী।
১৯৯০ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আতিকা রোমার বাইক চালানো শুরু। তবে মাঝে ছিল বিশাল একটা সময়ের ব্যবধান। শিক্ষাজীবনের গ-ি পেরিয়ে ২০০৪ সালে তার কর্মজীবনের শুরু। তখন বাস, সিএনজিই ছিল ভরসা। তবে তা বেশি দিন ভালো লাগেনি তার। ২০০৯ সালে ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল দিয়ে শুরু করলেন যাতায়াত। ওই সূচনা। রোমা এখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজের উদ্যোগে নারীদের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘যাব বহুদূর’ নামে একটি স্কুটি ড্রাইভিং প্রতিষ্ঠান। রোমার দৃঢ় বিশ্বাস, যাত্রাপথে নারীরা স্বাবলম্বী হলে নারী স্বাধীনতার পথে তারা এগিয়ে যাবে আরো একধাপ।
আমবারিন কাজ করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে। চার বছর ধরে স্কুটি চালাচ্ছেন। যখন চালানো শুরু করেন, তখনো তার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়নি। আলাপচারিতায় জানালেন, বাসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা, রিকশা ও সিএনজির অতিরিক্ত ভাড়া আর যানজটের নিত্য ভোগান্তি তাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। তবে তার বেশ ভয় লাগত বাসের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিগুলোকে। বেশ কয়েকবার সেই অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে পড়তেও হয়েছে তাকে। অনেকটা জেদের বশেই স্কুটি চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন শেষতক। তবে ছোটবেলা থেকেই বাইক চালানোর প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তার। বাবাকে বাইক চালাতে দেখে সে আকাক্সক্ষা ক্রমে ক্রমে আরো জোরদার হয় তার।
বাসা থেকে খুব একটা আপত্তি না থাকলেও প্রথম প্রথম তারা বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। তিনি বলেন, স্কুটি ছাড়া একটা দিনও এখন আমি ভাবতে পারি না। স্কুটি আমার জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন মোনালিসা। ২০১২ সাল থেকে স্কুটি চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার কাজের ধরনটা একেবারেই ভিন্ন। অফিসে সময়মতো উপস্থিত হতে হয়। বাস, সিএনজি, রিকশার জন্য অনির্দিষ্ট কাল অপেক্ষা করে থাকলে অফিসে ঠিকমতো যাওয়া যায় না। কাজের প্রয়োজনেই আমি স্কুটি চালানো শুরু করি। এখন তো স্কুটি ছাড়া চলার কথা ভাবতেই পারি না।
বেসরকারি ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা স্বপ্না ইসলাম। অফিসে যাতায়াত এবং দুই সন্তানকে স্কুলে আনা -নেওয়ার দৈনন্দিন কাজটা তিনি স্কুটিতেই করেন। বলেন, বর্তমানে ঢাকায় নারী বাইক চালকের সংখ্যা যে ঠিক কত, তার সঠিক তথ্য নেই। তবে নারী বাইকারদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যানুযায়ী, এ সংখ্যা বর্তমানে পাঁচ-ছয়শ’র কাছাকাছি। দিন দিন বাড়ছে এ সংখ্যা। যাদের বেশিরভাগই চাকরিজীবী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলো বিশেষ করে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো এলাকায় মেয়েদের স্কুটি চালাতে বেশি দেখা যায়।
নারীদের বাইক চালানোর ব্যাপারে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো কি? এ সম্পর্কে জানতে চাইলে নারী বাইক চালকরা জানান, পরিবারের সম্মতি পাওয়াটাই এ ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয়। কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো কোনো নারীকে দুই চাকার যানের চালকের আসনে ভাবতে বা দেখতে ঠিক অভ্যস্ত নন। এ কারণে পরিবারের অনাপত্তি পাওয়াটাই হলো বড় কথা। পরিবারের সম্মতিটা প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বড় সাহসের ব্যাপার হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় অনেকেই কটূক্তি করেন, আড়চোখে তাকান। এসব প্রতিবন্ধকতাকে প্রত্যয় ও সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারলে স্কুটি হবে নারীর জন্য নিজের বৈশিষ্ট্য ও স্বয়ম্ভরতা প্রকাশের বড় এবং বলিষ্ঠ মাধ্যম।ঢাকা,সুত্র: (বাসস)।

 

সুবহে সাদিক


কামরুল হাসান তুহিন


আঁধার রাতের তারা গুলো
ঘুমিয়ে পড়া মেঘ গুলো
মেঘের মাঝে দুঃখ গুলো
কেউ দেখেনি, কেউ দেখেনি।

আকাশ ভরা বৃষ্টি গুলো
বৃষ্টি ভেজা পাখি গুলো
পাখির কন্ঠে গান গুলো
কেউ শোনেনি, কেউ শোনেনি।

সুবহে সাদিকের ক্ষণ গুলো
মুয়াজ্জিনের সুর গুলো
সুরের মাঝে মায়া গুলো
কেউ বোঝেনি, কেউ বোঝেনি।

ভোরে ওঠা নক্ষত্র গুলো
নিবিষ্ট মনের সালাত গুলো
সিজদারত অশ্রু গুলো
কেউ মোছেনি, কেউ মোছেনি।।

© ধ্রুব নীল

 

“সত্যিকারের মা” আবার কি !



তাসলিমা শাম্মী


” তোমার জানাশুনা কেউ যদি মা হতে চায় আমাদের গল্পটা বইলো । গর্ভধারিণী হতে চাইলে না ,মা হতে চাইলে । বুঝছো ? আমার নাম্বারটা রাখো । বাসায় আসো একদিন সময় করে , গল্প হবে অনেক । কর্ণফুলী নদীর ওপাড়ে যেখান থেকে সবুজের শুরু , কয়েক মিনিট গেলেই আমাদের বাড়িটা। একদম রাস্তার পাশেই , সড়ক থেকে দেখা যায় “।

একজন সত্যিকারের মা র সাথে কথা হচ্ছিল। ”সত্যিকারের মা “ আবার কি ! সেই গল্পটাই শুনতে আমার ভীষণ ইচ্ছে করছিল উনার নিজের মুখে। তাই এক ছুটির দিনের বিকেলে আমি শহরের বিচ্ছিরি রকমের কোলাহল আর কালো ধোঁয়া পার হয়ে কর্ণফুলী ব্রিজটার ওপাশে সবুজে মোড়ানো ধান ক্ষেতের মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে থাকা একতলা বাড়িটায় গিয়ে কড়া নাড়লাম।

” আমিতো শুধু মা হতে চেয়েছিলাম। খুব সাধারণ আর দশজন মেয়ের মতই মাতৃত্বের অনুভূতির স্বাদ পেতে চেয়েছিলাম। বান্ধবী আর কলিগদের দেখে দেখে আমার খুব ইচ্ছে করত প্রথম অনুভব করতে কেমন লাগে “আমি মা হতে চলেছি”!
তারপর থেকে প্রতিটা দিন, প্রতিটা সপ্তাহ গুনে গুনে নিজের ভিতরে আরেকটা প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করতে, সুখ সুখ সেই অসুখটাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে নয়মাস ধরে উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। নয়মাস পর একদিন মৃত্যু যন্ত্রণার খুব কাছাকাছি গিয়ে স্বর্গীয় সুখ নিয়ে তীব্র চিৎকারে আকাশ বাতাস ফাটিয়ে জন্ম দিতে চেয়েছিলাম আমার ভিতরের ছোট্ট আরেকটা আমি কে। তারপর তো অবাক হবার পালা আমার , কিভাবে আমার রক্ত মাংস দিয়ে আমারই ভিতরে গড়ে উঠা সেই ‘আমিটা’ ভিন্ন এক নিজস্ব স্বত্বা নিয়ে সম্পূর্ণ একজন মানুষ হয়ে উঠছে আমি সেটা অবাক হয়ে হয়ে দেখব !!

কিন্তু না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে ছিল অন্যরকম। দীর্ঘ দশবছর ধরে ছোটাছুটি করার পর এই দেশের এবং পার্শ্ববর্তি দেশের নামকরা সব স্পেশালিষ্ট রা যখন আমাকে আর আমার স্বামী মাসুমকে গম্ভীর মুখে কনফার্ম করে দিল যে আমি আর কোনদিনই মা হতে পারবো না তখন আমার মনে হয়েছিল এই পৃথিবীতে থেকেই বা আর লাভ কি যদি নিজের নিজস্ব কিছু পৃথিবীটাকে দিয়ে যেতে না পারি!! সেদিন যখন আমি আমার মা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম তখন মা আমাকে স্বান্তনা দিতে দিতে বলেছিল, “গর্ভধারিণী হওয়া কিন্তু সহজ মা হবার চেয়ে!! গর্ভধারিণী অনেকে ইচ্ছে করলেই হতে পারে কিন্তু মা সবাই হতে পারেনা রে “।

আমি মা র কথার ইঙ্গিতটা ধরতে ঠিকই পেরেছিলাম সেদিন। খুব রাগ হয়েছিল মা র উপর আমার। মা কে আমার হিংসা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমার মা তো অনুভব করতে ঠিকই পেরেছিল সেই স্বর্গীয় অনুভুতিটুকু তাই আমার মনের ব্যাথা কিভাবে বুঝবে ?

আমার সেই শুন্যতার দিনগুলোতে আমার স্বামী মাসুম ছিল নির্বিকার! সন্তান নাই বলে যে মানুষের একটা দুঃখ থাকতে পারে সেই জিনিসটা মাসুমের জানা ছিল না! শুধু আমিই একা কেঁদে মরতাম। শুধু মাসুম না , ওর মা , ভাই, বোন কারোই কোন মাথাব্যাথা ছিল না আমার এসব ছোটাছুটি আর কান্নাকাটি নিয়ে!!
আমি এর ওর কাছ থেকে তথ্য যোগাড় করে করে দেশ বিদেশের ডাক্তার খুঁজে বের করছি, এই টেস্ট সেই টেস্ট করছি, অলিগলি খুঁজে ঝাড়ফুঁক করা পানি এনে খাচ্ছি কিন্তু আমার শ্বশুর বাড়ির একটা মানুষও আমাকে বাঁধা না দিলেও এসব ব্যাপারে কোন ধরনের আগ্রহ দেখায়নি।
আমার স্কুল টিচার শাশুড়ি বরং বিভিন্ন ভাবে আমাকে বুঝাতে চাইতেন এটাকে তেমন সিরিয়াস ভাবে নেবার কিছু নাই। কি আশ্চর্য !! মা হতে না পারাটা সিরিয়াস কিছু না !! আমার দেবর পিয়াল দেশী বিদেশী প্রচুর পুরষ্কার পাওয়া একজন মেধাবী ফটোগ্রাফার , সে আমাকে এই ব্যাপারটা নিয়ে বিচ্ছিরি রকমের খেপাত !! একমাত্র ননদ রিমি , যাকে আমি বোনের মত আদর করি সে আমার কান্না দেখে বলত আমি নাকি দুঃখ বিলাস করতে ভালবাসি !! অসহ্য লাগত আমার এই পুরা পরিবারটাকে!!

এমনিতেই বিয়ের পর থেকে আমি অনেক ধরনের অস্বাভাবিক ব্যাপার লক্ষ্য করতাম এই বাড়িতে। ষোল বছর আগে আমার বিয়ের পরপর একদিন মা মানে আমার শাশুড়িকে চুপিচুপি বলেছিলাম, ” মা , আমার পিয়াল কে কেমন জানি অন্যরকম লাগে “। মা একদম স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিল, ‘ অন্যরকম কেন লাগবে বৌমা! সেও তোমার আমার মত মানুষ ‘। আমি মা কে জোর দিয়ে বুঝাতে চাইলাম যে পিয়াল আমার উনার মত বা মাসুমের মত নরমাল নয়। মা আমার কথা পাত্তাই দিলেন না!! খুব স্বাভাবিক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বল্ল, ‘ তুমি নরমাল তো? আমারতো মনে হয় তোমারি মন নরমাল না’!! কি অপমান !! সেদিনের পর থেকে আমি পিয়ালকে নিয়ে কোন ধরনের কথা বলা বাদ দিয়েছিলাম । তারপর আসি রিমির কথায়। রিমি, আমার একমাত্র ননদ। খুব মেধাবী ছাত্রী। একদিন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, রিমির ডান কানের লতিতে একটা গভীর ক্ষত! আমি চুল বেঁধে দিতে দিতে রিমিকে জিজ্ঞেস করলাম, ” রিমি , তোর কান কে খাইছে রে”? রিমি হাত নেড়ে গল্প বলার মত করে আমাকে বলে, ‘ ভাবি জান ! আমার জন্মের পর আমাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়া হয় , তখন কাক এসে মাংসের টুকরা মনে করে ঠুকরে আমার কান খেয়ে ফেলে ‘ !!
কি অসভ্যরে বাবা !! শাঁকচুন্নি একটা ! আমি মনে মনে ভাবলাম !! বেয়াদবের পরিবার !! দূর! আর কোন আগ্রহ নাই এদের নিয়ে আমার , আমি মরছি আমার চিন্তায় তখন। একটা বাচ্চার জন্য আমার মন প্রাণে তখন মরুভূমির হাহাকার !!
দীর্ঘ দশবছর ধরে চিকিৎসা করার পর যেদিন আমি আর মাসুম ভারতের বিখ্যাত এক ডাক্তারের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে দেশে ফিরে আসলাম , ঘরের সবাই সেদিন আমাকে কাউন্সিলিং করা শুরু করল । আমার তখন দুনিয়াদারি অসহ্য লাগছিল। চোখের সামনে আমাকে সহানুভূতি দেখানো মানুষগুলোকে অমানুষের মতোই লাগছিল। ততদিনে পিয়াল দেশের অনেক নামকরা একজন ফটোগ্রাফার , রিমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়, মা রিটায়ার্ড করে একটা এন জি ও তে সময় দিচ্ছিল ।

সেদিন আমি শোবার ঘরের বাতি নিভিয়ে অন্ধকারে কাঁদছিলাম । মাসুম কে বলছিলাম, ” মাসুম আমি কি আল্লাহর কাছে বেশী কিছু চেয়েছিলাম? একটা বাচ্চাইতো চেয়েছিলাম ! মা হতে চেয়েছিলাম “। আমি আঝোরে কাঁদছিলাম।

মাসুম আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল, ‘ তোমাকে আজকে এমন একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যাকে গর্ভবতী হতে না পারার অপরাধে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল । কিন্তু উনি আজকে একজন সত্যিকারের মা , তিন তিনজন সফল সন্তানের গর্বিত মা ‘। আমি অবাক হয়েছিলাম, মাসুম কি শোকে দুক্ষে পাগল হয়ে গেল নাকি! কি বলে এসব!!

আমাকে হাত ধরে টেনে মাসুম বসার ঘরে আনল। ঘরের সবাই তখন সেখানে বসে টিভি দেখছিল । আমি তখন অন্য কাউকে খুঁজছিলাম। মাসুম আমার শাশুড়ি মা কে দেখিয়ে দিয়ে বল্ল, দেখ উনিই সেই মা ।
মাসুম সবার সামনেই আমাকে বলা শুরু করল , ‘ খুব ছোট বেলায় আমার মা বাবা এক্সিডেন্টে মারা যাবার পর আমি চাচা চাচির কাছে অযন্তে অবহেলায় বড় হতে থাকি , আমার এই মা কে তখন উনার স্বামী ত্যাগ করেছেন । মা উনার বাবার দেয়া এই বাড়িটায় উনার বৃদ্ধ মা কে নিয়ে থাকেন আর একটা স্কুলে চাকরি করেন । আমাকে মা দত্তক নিয়ে আমার মা হলেন। আমার বয়স যখন পাঁচ , একদিন মা খবর পেলেন এক পরিবার তাদের সদ্য জন্ম নেয়া একটা বাচ্চাকে হাসপাতালে ফেলে চলে গেছে কারণ বাচ্চাটা তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছে। আমার মা সেদিন সেই বাচ্চার মা হয়ে তাকে বাসায় নিয়ে আসলেন , বাচ্চাটার কি অপরাধ ছিল বল? তারপর এক শীতের ভোরে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে ডাস্টবিনের ময়লার ভিতরে একজন মানবশিশুর কান্না শুনতে পেয়ে মা তাকেও বুকে টেনে নেয়। সেদিন কাঁক ফেলে দেয়া রক্তমাখা নবজাতকটার কান ঠুকরে খাওয়া শুরু করে দিয়েছিল। তুমি নিশ্চয় সবই বুঝতে পারছ! পুরো গল্পটাই এখন তোমার চোখের সামনে ‘।

সেদিন থেকে আমার নতুন করে জন্ম হল। আমি চোখ ভরা অপরাধবোধ নিয়ে ওদের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল। রিমি শয়তানটা চিমটা দিয়ে বলছিল ,” ইশ ! কি ঢং ! আমি কি মিথ্যে গল্প বলেছিলাম “? আমি মা কে জড়িয়ে ধরেছিলাম প্রচন্ড অপরাধবোধ নিয়ে !! এমন একজন মা কিভাবে আমার চোখে পড়ল না এতগুলো বছর !! আমি কাঁদতে কাঁদতে অপূর্ব সুন্দর এই পরিবারটাকে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি। ফটোগ্রাফারটা তখন আমার বোকার মতন কাঁদার ছবি তুলছিল একটার পর একটা।

আমি এখন দুই দুইটা বাচ্চার মা। এত ব্যস্ত থাকি ওদের নিয়ে আর বইলো না । তোমার চেনা জানা যদি কেউ আমার মত মা হতে চায় তাদেরকে আমাদের গল্পটা বইলো। বলবা ,” গর্ভধারন অনেকেই করতে পারে,সত্যিকারের মা হতে সবাই পারেনা।

সন্তানহীন মানুষ যেমন আছে এই পৃথিবীতে , মা বাবাহীন অসংখ্য সন্তানও রয়েছে আমাদের আশেপাশে। তাদের মা বাবা হতে পারাটা আরো আনন্দের , আরো তৃপ্তির। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় ব্যালেন্স করার জন্যই এই ব্যবস্থা করে রেখেছেন ” !!

[Courtesy : Taslima Shammi]

 

আমার রঙে রাঙিয়ে যাব


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘলা আকাশ দেখে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো নুশেরার। বৃষ্টি অসম্ভব পছন্দ করলেও গুমোট ধরা মেঘলা আকাশ সবসময়ই তার মন খারাপ করে দেয়। রুমে এসে ডায়েরী নিয়ে বসলো। গতরাতের লেখাতে চোখ বুলাতেই খুব হাসি পেলো। ভাবলো…ধ্যাত কি সব লিখেছি! ডায়েরী বন্ধ করে আবারো বারান্দায় এসে দাঁড়ালো নুশেরা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ আর সূর্য জমিয়ে লুকোচুরি খেলছে। দুরন্ত দুটি শিশু যেন কেউ কারো চেয়ে কম না। মামণি এসে পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই মনের জগত থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো নুশেরা। মার দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বলল, আমি কিন্তু আজ ক্লাসে যাবো না মামণি। এমন দিনে ক্লাসে গিয়ে কোন মজা নেই। মামণি হেসে বললেন, ঠিক আছে ইচ্ছে না হলে যাবি না। এখন চল নাস্তা করবি। নাস্তা সেরে গতরাতের অর্ধেক করে রাখা ফুলের তোড়াটা শেষ করতে বসলো সে। ছোট ভাইয়া বাইরে যাবার সময় নুশেরাকে দেখে কাছে এসে বসে বলল, কি রে সাত সকালেই ফুল নিয়ে বসেছিস যে?

-তোমার বিয়ের সময় যাতে নিজ হাতে ফুল দিয়ে সবকিছু সাজাতে পারি তাই ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করছি ভাইয়া।

-(হেসে) তাহলে বরং তুই গহনাগাঁটি বানানোর কাজ শেখ। কারণ এখনকার মেয়েরা শরীর ভর্তি গহনা না হলে বিয়ে করতে চায় না। কয়েক বছর পর দেখবি আবদার করবে বাড়িঘর ডেকোরেশনও করতে হবে হিরা-মণি-মুক্তা দিয়ে।

-মেয়েদের চাহিদা সম্পর্কে এমন ধারণার পেছনে কারণ কি তোমার?

-বন্ধুদের অবস্থা দেখে এমন ধারণা হয়েছে। এখন তো বিয়ে করতে চাওয়াটাই বিপদ।

-তুমি তাহলে এইসব বিপদে না গিয়ে মহৎ কিছু করো। শত শত অসহায় কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা আছেন যারা সামর্থ্য নাই তাই মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না, তাদের কাউকে বিয়ে করো। অনেক মেয়ে আছে দেখতে খুব একটা সুন্দর না, কারো গায়ের রঙ কালো, কেউ খুব বেশি খাটো, নাহয় তাদের কাউকে বিয়ে করো। এইসব অসহায় মেয়েরা তোমাদের কাছে কিছুই চাইবেনা একটু ভালোবাসা আর আশ্রয় ছাড়া।

-(হেসে) চাইবে না নিশ্চিত হচ্ছিস কিভাবে?

-নিশ্চিত হচ্ছি না জাস্ট ধারণা করছি। তুমি তোমার ধারণা বলেছো তাই আমি আমারটা বললাম।

-(হেসে) তোর সাথে কথায় পারবো না তাই আগেই সারেন্ডার করলাম। হঠাৎ ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করার কারণ কি তোর?

-সত্যিই তোমাদের বিয়ের সময়ের কথা চিন্তা করে ভর্তি হয়েছি কোর্সে। আমি নিজ হাতে সাজাতে চাই আমার ভাইয়াদের নতুন জীবনের শুভ সূচনার প্রথম অধ্যায়কে।

-তোকে দেখি সারাক্ষণই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নানা ধরণের স্বপ্ন দেখতে। আচ্ছা নিজেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই তোর মনে?

-(হেসে) অবশ্যই আছে। তবে আমার স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে চাই না আমি।

-কেন?

-কারণ আমি আমার স্বপ্নকে ধরে রাখতে চাই ভাইয়া। আর আপনজনদেরকে স্বপ্নের কথা বললে, তারা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করে। এতে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। আর আমার ধারণা স্বপ্ন অপুর্ণ থাকার চেয়ে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়াটা বেশি কষ্টের। যদিও স্বপ্ন মানে আশা। তাই স্বপ্ন অপুর্ণ থাকা মানে আশা পূরণ না হওয়া। কিন্তু অপুর্ণ স্বপ্নের পুর্ণ হবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ভেঙ্গে গেলে তো সেই সম্ভাবনার আশাটুকুও থাকে না।

-(হেসে) তোর চিন্তা-ভাবনাগুলো সত্যিই অন্যরকম। ভালো লাগে যখন তোর মতো মেয়েদের দেখি।

-(অবাক কণ্ঠে) তোর মতো মেয়ে মানে? ভাইয়া শোন আমি দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিস। অনেক সময় তো আমার নিজের কাছেই দুঃসাধ্য মনেহয় আমার মতো মেয়ে হতে পারাটাকে।

-(হেসে বোনের কান টেনে) তোর মতো চিড়িয়া আসলে দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিসই আছে। আর সেটা হচ্ছিস তুই নিজে। আচ্ছা ফ্লাওয়ার ডেকোরেশন কর আমি যাই।

-আমার প্রস্তাবটা কেমন লাগলো বললে নাতো?

-কোন প্রস্তাব?

-অসহায় কাউকে বিয়ে করার।

-(হেসে) অসহায় কাউকে ঝুলাতে চাইছিস মনে হচ্ছে আমার গলায়?

-ভাইয়া আমার এক ক্লাসমেট আছে। এককথায় অসাধারণ একটি মেয়ে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা গিয়েছে। সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছে মেয়েটির জীবনের সব রঙ সব স্বপ্ন-হাসি-আনন্দ। তুমি কি পারো না ওকে বিয়ে করে ওর জীবনটাকে আবারো স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে দিতে?

-তুই কি সিরিয়াস?

-আমার কি ধারণা জানো ভাইয়া? আমাদের সবার মনেই একটি করে রংধনু আছে। আর সেই রংধনুর ক্ষমতা আছে নিজের সাথে সাথে অন্যের জীবনকেও রাঙিয়ে দেয়ার। তাই নিজ নিজ গণ্ডির ভিতরে কারো জীবন থেকে যদি রঙ হারিয়ে যায়, আর আমাদের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে উচিত নিজের রঙয়ে তাকে রাঙানোর চেষ্টা করা। কথা বলছো না কেন?

-তোর কথাটা হজম করতে সময় লাগছে।

-বেশি কষ্ট হলে হজমী খাও।

-(হেসে) হজমী খেতে হবে না। আমার হজম শক্তি খুব ভালো। তবে ভেবে দেখতে চাচ্ছি তোর কথাটা।

-ভাবো। ভাবতে ভাবতে ভাবুক হয়ে যাও। তবে জেনে রাখো যখনই আমার সামনে সুযোগ আসবে নিজের রঙে কাউকে রাঙানোর আমি ভেবে সময় নষ্ট করবো না। বরং আমার রঙে রাঙিয়ে যাবো কারো মন কিংবা জীবন……………

(কাউকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দেবার জন্য আসলে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পরে না বেশির ভাগ সময়। একটু আশার বাণী, উৎসাহমূলক কিছু কথা, কষ্টের সময় একটু পাশে থেকে ভরসা দেয়া, বিপদে পড়লে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা ইত্যাদি দ্বারা সম্ভব অন্যেকে রাঙিয়ে দেয়া।)

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন


নারীর জন্য আইন


‘নারীর অধিকার’ একটি বহুল আলোচিত বিষয় বাংলাদেশে সব মহলে। আমাদের সংবিধানেও এর সমর্থন পাওয়ওয়া যায়। যেমন, সংবিধানে বলা হয়েছে – ‘ রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন ‘ [ অনুচ্ছেদ ২৮ এর ধারা (২)]। ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’ ( অনুচ্ছেদ – ২৭)। ‘ জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করিবার ব্যবস্থা করিতে হইবে’ (অনুচ্ছেদ – ১০)। ‘ প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে’ ( অনুচ্ছেদ – ১১)।

এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল  বালংদের‍্শেরে

২৬৷ (১) এই আইনের অধীন অপরাধ বিচারের জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করিয়া ট্রাইব্যুনাল থাকিবে এবং প্রয়োজনে সরকার উক্ত জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনালও গঠন করিতে পারিবে; এইরূপ ট্রাইব্যুনাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নামে অভিহিত হইবে৷

(২) একজন বিচারক সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হইবে এবং সরকার জেলা ও দায়রা জজগণের মধ্য হইতে উক্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযু্‌ক্ত করিবে৷

(৩) সরকার, প্রয়োজনবোধে, কোন জেলা ও দায়রা জজকে তাহার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করিতে পারিবে৷

(৪) এই ধারায় জেলা জজ ও দায়রা জজ বলিতে যথাক্রমে অতিরিক্ত জেলা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজও অন্তর্ভুক্ত৷

তাহলে দেখা যাচ্ছে অধিকারের প্রশ্নে নারী বা পুরুষ নয়, একজন নাগরিক মানুষ হিসাবে কি অধিকার ভোগ করবে তা উল্লেখিত হয়েছে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে। সংবিধানের এ বলিষ্ঠতা আমাদের আশান্বিত ও অনুপ্রাণিত করে।

 

প্যারেন্টিং এর মূলনীতি


কানিজ ফাতিমা


অনেকেই অভিযোগ করেন যে বাচ্চার পড়ার অভ্যাস নেই। দোষটা সবসময় বাচ্চার না, আসলে বাচ্চার পড়ার অভ্যাস তৈরীতে বাবা-মায়ের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয় এবং সেটা হতে হয় একেবারে ছোট বয়স থেকেই। ছয়মাস বয়স থেকেই বাচ্চাকে (অনেকের মতে আরো আগে থেকে) বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আপনি বই পড়ুন। মনে করছেন এতো ছোট বয়সে বাচ্চা বইয়ের কি বুঝবে? এটাই বাচ্চার সঙ্গে বইয়ের সম্পর্ক তৈরীর সময়। বাচ্চাকে বইয়ের রঙ্গীন ছবি দেখান; বাচ্চা কিছুটা বড় হলে তাকে বইয়ের গল্প পড়ে শোনান; ঘুমানোর আগে বাচ্চার সঙ্গে শুয়ে বই পড়ুন। বইয়ের সাথে এই অল্প বয়সে যে সম্পর্ক তৈরী হয় সেটা সারা জীবন তার থেকে যায়।

অন্যদিকে বাচ্চা ছোট বয়সে যদি বাড়ীতে বই না দেখে, বাবা-মাকে বই পড়তে না দেখে তবে এটা আশা করা যায় না যে সেই বাচ্চা বইকে ভালোবাসতে শিখবে। এর বিপরীতে বাচ্চা ছোট থেকেই যদি বইয়ের চেয়ে ভিডিও (কার্টুন, ভিডিও গেম) বেশী দেখে, বাবা- মাকে টিভি, বা অন্য স্ক্রিনে মগ্ন দেখে, তবে বাচ্চা বইয়ের প্রতি কখনোই আকর্ষণ বোধ করবে না এবং খুব সম্ভাবনা থাকবে বাচ্চার অস্থির প্রকৃতির হবে ।

শুধু স্কুলের কারিকুলামের বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য উপকারী বই বাচ্চাকে নিয়ে পড়বেন। বাসায় বাচ্চার জন্য ও নিজেদের জন্য ছোট করে হলেও লাইব্রেরী রাখুন । মনে করছেন, অনেক জায়গা লাগবে? একটা আলমারী এমনকি আপনার ড্রেসিং টেবিলের এক পাশকেও ব্যবহার করতে পারেন লাইব্রেরী হিসাবে।

– প্যারেন্টিং এর মূলনীতি

 

‘নিজের কাজকে সন্মান করুন’


ফাতেমা শাহরিন


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্যবস্থাপনা’ বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা ব্যানার্জী। তার আরও একটি পরিচয় হল তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বিনিসুঁতো’। ‘বিনিসুঁতো’ মুলত একটি অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রকল্প। তিনি মুলত স্বত্তাধিকারী এবং ডিজাইনার হিসাবে কাজ করছেন।

‘বিনিসুঁতো’ র যাত্রা শুরু হয় তার ভাষ্যমতে, ‘আজ থেকে এক বছর আগে।’ মূলত, হাতে তৈরি গয়না ও ক্রাফটিং এর প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মে বলে তিনি জানান। আর তাই তিনি ক্ষুদ্র জ্ঞান, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের প্রচন্ড উৎসাহ ও নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এই উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

অর্পিতা বলেন, “একটি মানুষ তখনই সফলতা অর্জন করতে পারে যখন সে তার কাজকে ভালোবাসে।”

আর তাই, বিনিসুঁতোর  প্রতিটি কাজ কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে গয়না ক্রেতার হাতে পৌছানো পর্যন্ত সকল কাজ তিনি অত্যন্ত ভালোবাসা ও যত্নের সাথে করার চেষ্টা করেন।

‘যেকোন উদ্যোগ গ্রহনের ক্ষেত্রেই প্রতিটি মানুষকে প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর নারী উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল পারিবারিক ও সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার অভাব।’ বলেও অর্পিতা জানান।

তিনি মনে করেন যে, ‘ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এখনো সম্পূর্ণভাবে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেনি। যার ফলে অনেক নারীই তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবার ও সমাজের সহযোগিতার অভাবে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কাজে এগিয়ে আসতে পারেন না।’

অর্পিতা ব্যানার্জী আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আর নতুন উদ্যোক্তাদেরকেও একটা কথা বলব, ‘আপনার ইচ্ছা শক্তিকেই মূল পুঁজি  করুন,  নিজের কাজকে সন্মান করুন এবং ভালোবাসুন দেখবেন সফলতা আসবেই।”

সকলের জন্য বিনিসুঁতোর পক্ষ থেকে আন্তরিক  শুভকামনা অর্পিতা সবশেষে জানান।

বিনিসুঁতোর দুটো পণ্য:

১.২.

 

রাস্তায় নারী গাড়ি চালকের সংখ্যা বাড়ছে


নারী সংবাদ


ঘনবসতিপূর্ণ এই ঢাকা শহরে রাস্তায় জ্যামের পরিমাণ এতো বেশি যে, চলাচল করাটই প্রায় দুরুহ হয়ে পড়েছে। তারপর রয়েছে গণপরিবহন সংকট। বিশেষ করে নারীর গাড়িতে ওঠা যেন যুদ্ধের শামিল। কিন্তু তাতে তো চলবে না। জীবনের তাগিদে অফিস কিংবা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতেই হবে। কেন না, রুটি-রুজির জন্য আজ মহিলারাও পুরুষের সমান তালে এগিয়ে চলছে। সড়কের এই বিশাল জ্যামের কারণে অনেক নারীই আজ নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিস করছেন কিংবা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। যে কারণে দিন দিন রাস্তায় বাড়ছে নারী গাড়ি চালকের সংখ্যা। অবশ্য এ জন্য পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারীকে অনেক সময়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছেন দিয়া।
বাংলা মোটর সিগন্যালের জ্যামে অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছে দিয়া। কিছুক্ষণ পর তার গাড়ির পাশে একটি মোটর সাইকেল এসে দাঁড়ালো। মোটর সাইকেলের পেছনে বসা ছেলেটি সামনের জনকে দেখিয়ে বলছে, ওই দ্যাখ্, মাইয়া মানুষ গাড়ী চালায়। এমন কথা শুনলে এখন আর মাথা গরম হয় না। বরং তাদের প্রতি করুণা হয়। গত কয়েক মাস ধরে নিজেই ড্রাইভিং করে অফিসে আসা-যাওয়া করছেন দিয়া। আর এ ক’মাসে হাজারবারের বেশি শুনতে হয়েছে এ কথা।
রাস্তায় মানুষের বিদ্রপাত্মক কথা শুনতে হলেও দিয়ার অফিস সতীর্থরা কিন্তু তাকে খুব সাহস যুগিয়েছেন। দিয়া বলেন, প্রথমদিকে রাস্তায় খুব ভয় পেতাম। যতক্ষণ স্টিয়ারিংয়ে থাকতাম, সারাক্ষণ খুব সতর্ক থাকতাম। প্রায় সময়ই মেয়ে ড্রাইভার বলে অনেকেই রাস্তার সাইডে চাপতে চাইতো। বিশেষ করে বাস আর ট্রাকের ড্রাইভাররা তো কখনোই ছাড় দিতে না।
সানজিদা পারুল একজন সংবাদকর্মী। তিনি প্রায় প্রতিদিনই উত্তরা থেকে পুরানা পল্টন অফিসে আসেন স্কুটি চালিয়ে। এ ছাড়াও সপ্তাহের প্রায় তিন থেকে চারদিনই বিভিন্ন এসাইনমেন্ট থাকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে।
পারুল বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাংবাদিকতা করতে এসেছি। কিন্তু বাসা দূরে হওয়ায় আমার অফিসে যাতায়াতে খুব কষ্ট হতো। পরে টাকা জমিয়ে একটা স্কুটি কিনলাম। আজ প্রায় বছরখানেক হলে াআমি স্কুটি চালিয়ে অফিস করছি। শুরুতে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হতো। বিশেষ করে ট্রাক ড্রাইভাররা ফাঁকা রাস্তা পেলে আমাকে রাস্তার একপাশে চাপিয়ে দিতো। যেনো মনে হতো, এই বুঝি আমাকে চাপা দিয়ে দিলো। অনেকবার রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাদের যেতে দিতাম। তবে এখন অনেক আত্মবিশ্বাষ নিয়ে গাড়ী চালাই।
তিনি বলেন, এখনো আমাদের সমাজের চিন্তা-ভাবনা সেই আগের মতো রয়ে গেছে। অনেকের ধারণা, মেয়েদের নির্দিষ্ট কিছু কাজের বাইরে আর অন্য কিছু করার নেই। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। ঘর আর বাচ্চা সামলিয়েও মেয়েরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
পারুলের মতে, ঢাকা শহরে সময়ের কাজ সময়ে করতে চাইলে নিজস্ব একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরি। আর স্কুটি এ ক্ষেত্রে ভালো একটি যোগাযোগ মাধ্যম। তার মতে, অফিস সময়ে ঢাকার পাবলিক বাসে উঠতে পারা মানে যুদ্ধ জয় করা। এ সময় কর্মজীবী মহিলাদের কষ্টের সীমা থাকে না।
মূলত এ দেশে ড্রাইভিংয়ে নারীরা নতুন নয়। তবে সংখ্যাটা এখন আগের তুলনায় বেড়েছে। তারপরও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে অনেক নারীই এখন স্কুটি চালায়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সূত্রমতে, বর্তমানে মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহিতার সংখ্যা হচ্ছে এক শতাংশ।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগে কর্মরত নারী ড্রাইভার সানজিদা খানম বলেন, নারীদের প্রতি আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। আমি যখন প্রথম চাকরিতে যোগদান করি তখন আমার অনেক পুরুষ সহকর্মী আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতো। তাদের একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিলো, মেয়ে মানুষ আবার ড্রাইভিং করে নাকি! কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমি তাদের ধারণা পাল্টে দিয়েছি। এমনকি তাদের অনেকেই এখন আমাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে।
এদিকে, সুমনার গল্পটা কিছুটা ভিন্ন। তার বাবা ছিলেন একজন ড্রাইভার। প্রায় সময়ই তিনি দুপুরে বাসায় খেতে আসার সময় তার বসের গাড়ীটি নিয়ে আসতেন। এ সময় সুমনা খুব বায়না ধরতো সেও গাড়ী চালানো শিখবে। বাবাও তাকে খুব আদর করে গাড়ী চালানো শিখিয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা মারাত্মক আহত হন। সেই থেকে তিনি আর বিছানা থেকে উঠতে পারেন না।
তখন পরিবারের বড় হিসেবে সুমনার কাঁধেই চলে আসে পুরো সংসারের দায়িত্ব। অনেক চেষ্টা করেও কোন চাকরি যোগাড় করতে না পেরে সুমনা সিদ্ধান্ত নেয় সেও তার বাবার মতো গাড়ী চালাবে। চলে যায় তার বাবার অফিসে। তারাও খুব আন্তরিক হয়ে সুমনাকে তার বাবার চাকরিটি দিয়ে দেয়। তারপর থেকে আজ দু’বছর হতে চললো সুমনা ড্রাইভিং করছে।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা আসলে আমাদের সমাজে নারীদের একভাবে দেখতে অভ্যস্ত। আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছেÑ নারীরা স্বামী, সংসার আর বাচ্চা সামলাবে। কিন্তু দিন পাল্টে গেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া কখনোই একটি রাষ্ট্র উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে না। সুত্র: (বাসস)।

 

লাউ শাকের রেসিপি


ঘরকন্যা


লাউ শাক

উপকরন
১.লাউ শাক,
২.আলু ১-২ টি,
৩.কাঁচামরিচ,
৪.রসুন কুচি (পরিমানটা একটু বেশি হতে হবে),
৫.পেঁয়াজ কুচি,
৬.লবণ,
৭ পাঁচ ফোড়ন ও
৮.রান্নার তেল।

প্রনালী
লাউশাক ও কচি ডগাসহ কুচি করে কেটে ভাল করে ধুয়ে নিন। ১-২ টা আলু টুকরা করে কেটে ধুয়ে লাউ শাকের মধ্যে দিন এবং লবণ, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে চুলায় সিদ্ধ করতে দিন। শাকের পানি শুকিয়ে গেলে ও সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। এবার অন্য একটি পাত্রে পরিমাণ মত তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজ ও রসুন বাদামী রঙ এ ভাজা হলে পাঁচ ফোড়ন দিয়ে একটু নেড়ে শাক ঢেলে নাড়তে থাকুন প্রায় ২ মিনিট। যখন শাক কড়াইতে লেগে আসবে তখন চুলার আঁচ কমিয়ে নামিয়ে ফেলুন। গরম গরম ভাতের সাথে লেবু ও কাঁচামরিচ দিয়ে পরিবেশন করুন।

লাউশাকের ভর্তা

উপকরণ
১. লাউয়ের পাতা ৬-৭টা,
২. পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ,
৩. কাঁচামরিচ– ৪/৫ টা (কুচি করা বা সেদ্ধ করা),
৪. সরিষার তেল স্বাদমত,
৫. লবণ স্বাদ মতো।

প্রণালী
লাউশাক ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করুন। শাকের সাথে কাঁচামরিচও সেদ্ধ করুন। শাক সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ ও তেল একসঙ্গে মাখুন। মাখা হলে সেদ্ধ লাউশাক দিয়ে ভালো করে মেখে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

মহিলা মাদরাসার বাথরুমে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ


নারী সংবাদ


রাজধানীর রামপুরার উলন রোডে একটি মহিলা মাদরাসা থেকে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম সানজিদা রশিদ মিম (১৪)। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় মাদরাসার ছাদের ওপরের একটি বাথরুম থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত মিমের মা সিমা আক্তার জানান, তার মেয়ে রামুপরা মহিলা মাদরাসায় বোডিংয়ে থেকে হাফেজি লাইনের নাজেরায় পড়াশুনা করত। গত বৃহস্পতিবার রাতে সে বাসা থেকে মাদরাসায় চলে যায়। প্রতিদিনের মতো শনিবার বেলা ১১টায় মিমের জন্য ভাত নিয়ে মাদরাসায় যান তিনি। তখন মাদরাসা কর্তৃপ তার কাছে জানতে চায়, মিমের সাথে কারুর প্রেমের সম্পর্ক আছে কিনা। হঠাৎ এমন প্রশ্ন করা হলো কেন জানতে চাইলে তারা মিমের মৃত্যুর সংবাদ দেন।
হাতিরঝিল থানার ওসি আবু মো: ফজলুল করিম জানান, মিমের মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ জন্য মাদরাসার এক শিক্ষিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

 

মোগল সম্রাজ্ঞী নূরজাহান কেন নারীবাদীদের ‘আইকন’


নারী সংবাদ


মোগল সম্রাজ্ঞী নূর জাহান ছিলেন আঠারো শতকের ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীদের একজন। তাকে কেন একালের নারীবাদীরা একজন ‘আইকন’ হিসেবে দেখতে চাইছে? ইতিহাসবিদ রুবি লাল বোঝার চেষ্টা করেছেন এই লেখায় :

জন্মের সময় তার নাম দেয়া হয়েছিল মিহরুন নিসা। কিন্ত স্বামী মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর পরে তার নাম পাল্টে রেখেছিলেন নূর জাহান (জগতের আলো)। ইংল্যান্ডে রানি প্রথম এলিজাবেথের জন্মের কয়েক দশক পরে তার জন্ম। কিন্তু রানি এলিজাবেথের চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ এক সাম্রাজ্য শাসন করেছেন নূর জাহান।

ষোড়শ শতকের শুরু হতে পরবর্তী প্রায় তিন শ’ বছর ধরে ভারতবর্ষ শাসন করেছে মোগলরা। তারা ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী রাজবংশ। মোগল সম্রাট এবং মোগল রাজপরিবারের নারীরা ছিলেন শিল্প, সঙ্গীত এবং স্থাপত্যকলার বিরাট সমঝদার। তারা বিশাল সব নগরী, প্রাসাদোপম দূর্গ, মসজিদ এবং সৌধ তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।

কিন্তু পুরো মোগল রাজবংশের একমাত্র নারী শাসক নূর জাহানকে নিয়ে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে এখনো ছড়িয়ে রয়েছে অনেক লোকগাঁথা।

উত্তর ভারতের আগ্রা এবং উত্তর পাকিস্তানের লাহোর, মোগল আমলের দুটি বড় নগরী। এই দুই জায়গাতেই নূর জাহান সম্পর্কে শোনা যাবে অনেক কিংবদন্তী।

প্রবীন নারী এবং পুরুষ, ট্যুর গাইড থেকে শুরু করে ইতিহাসে আগ্রহী মানুষ আপনাকে জানাবে কিভাবে জাহাঙ্গীর এবং নুর জাহান পরস্পরের প্রেমে পড়েন। কিভাবে নূর জাহান একটি মানুষ খেকো বাঘকে মেরে রক্ষা করেছিলেন একটি গ্রামের মানুষকে।

যদিও নূর জাহানের প্রেম, তার সাহসিকতার অনেক কাহিনী ছড়িয়ে আছে, মোগল প্রাসাদের অন্দরমহলে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রতিপত্তি এবং আকাঙ্ক্ষার সম্পর্কে বিস্তারিত খুব কমই জানা যায়।

নূর জাহান ছিলেন কবি, এদক্ষ শিকারি এবং খুবই সৃজনশীল এক স্থপতি। আগ্রায় তার তৈরি করা নকশাতেই নির্মাণ করা হয়েছিল তার বাবা-মার সমাধি সৌধ। পরে এই স্থাপত্য রীতিই নাকি তাজ মহলের স্থাপত্য নকশার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

মোগলদের পুরুষ শাসিত জগতে নূর জাহান ছিলেন এক অসাধারণ নারী। কোনো রাজকীয় পরিবার থেকে তিনি আসেননি। কিন্তু তারপরও সম্রাটের হারেমে তার উত্থান ঘটে এক দূরদর্শী রাজনীতিক হিসেবে। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের সবচেয়ে প্রিয়তম স্ত্রীতে পরিণত হন। বিশাল মোগল সাম্রাজ্য আসলে তিনি এবং সম্রাট জাহাঙ্গীর মিলে একসঙ্গেই শাসন করতেন।

কিন্তু যে যুগে অন্দর মহলের বাইরে নারীর কোনো স্থান ছিল না, সেই যুগে তিনি কিভাবে এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন?

নূর জাহানের জন্ম হয়েছিল ১৫৭৭ সালে কান্দাহারের কাছে (আজকের আফগানিস্তানে)। তার পরিবার ছিল ইরানের এক অভিজাত বংশের। কিন্ত সাফাভিদ রাজবংশের অসহিষ্ণুতার কারণে তাদের সেখান থেকে পালিয়ে মোগল সাম্রাজ্যে এসে আশ্রয় নিতে হয়।

পিতা-মাতার জন্ম স্থানের ঐতিহ্য আর মোগল রীতি-নীতি, এই দুটির আবহে বেড়ে উঠেন তিনি। নুর জাহানের প্রথম বিয়ে হয় এক মোগল রাজকর্মচারীর সঙ্গে। তার স্বামী ছিলেন এক সেনা কর্মকর্তা। স্বামীর সঙ্গে তিনি পূর্ব ভারতের বাংলায় চলে আসেন। সেখানেই তার একমাত্র ছেলের জন্ম হয়।

তবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে নূর জাহানের স্বামীর চাকরি যায়। এক লড়াইয়ে নিহত হন নূর জাহানের স্বামী।

বিধবা নূর জাহানকে পাঠানো হয় মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের হারেমে। সেখানে নূর জাহান অন্য মোগল নারীদের আস্থা এবং বিশ্বাসের পাত্র হয়ে উঠেন। ১৬১১ সালে সম্রাজ জাহাঙ্গীর তাকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের বিশতম পত্নী।

সেই সময়ের মোগল রাজদরবারের রেকর্ডে খুব কম নারীর কথাই উল্লেখ আছে। তবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্মৃতিকথায় ১৬১৪ সালের পর থেকে তার সঙ্গে নূর জাহানের বিশেষ সম্পর্কের উল্লেখ আছে বার পার। তিনি নূর জাহানের এক অনুরাগময় চিত্রই একেঁছেন তাতে। নূর জাহান সেখানে বর্ণিত হয়েছেন একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী, চমৎকার সেবাদাত্রী, বিজ্ঞ পরামর্শদাতা, দক্ষ শিকারি, বিচক্ষণ কূটনীতিক এবং শিল্পবোদ্ধা হিসেবে।

অনেক ইতিহাসবিদের মতে জাহাঙ্গীর ছিলেন এক মদমত্ত সম্রাট, যার সাম্রাজ্য পরিচালনায় কোনো মনোযোগ ছিল না। আর সে কারণেই নাকি তিনি এর ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন স্ত্রীর হাতে। কিন্তু এটি পুরোপুরি সত্য নয়।

এটি সত্য যে জাহাঙ্গীর পানাসক্ত ছিলেন, তিনি আফিমও গ্রহণ করতেন। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে তার স্ত্রী নূর জাহানকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। কিন্তু সেটার কারণেই নুর জাহান মোগল সাম্রাজ্য শাসনের সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যাপারটা তা নয়। কার্যত নূর জাহান এবং জাহাঙ্গীর ছিলেন পরস্পরের পরিপূরক। স্ত্রী যে সাম্রাজ্য শাসনে তার পাশে আসন নিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে জাহাঙ্গীরের কোনো অস্বস্তি ছিল না।

তাদের বিয়ের পরপরই নূর জাহান প্রথম যে রাজকীয় ফরমান জারি করেছিলেন তা ছিল এক রাজকর্মচারীর জমির অধিকার রক্ষায়। সেখানে তিনি স্বাক্ষর করেন নূর জাহান পাদশাহ বেগম নামে, যার অর্থ নূর জাহান, সাম্রাজ্ঞী। তিনি যে সার্বভৌম এবং তার ক্ষমতা যে বাড়ছে, এটি ছিল তারই ইঙ্গিত।

১৬১৭ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তার নাম লেখা মূদ্রা স্বর্ণ এবং রৌপ্য ছাড়া হয়। সে সময়ের মোগল রাজদরবারের লেখক, বিদেশি কূটনীতিক, বণিক এবং পর্যটকরা উপলব্ধি করতে শুরু করেন যে মোগল সাম্রাজ্য পরিচালনায় তার একটা বিরাট প্রভাব আছে।

একজন রাজকর্মচারী একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন তার লেখায়। নূর জাহান একদিন রাজপ্রাসাদের বারান্দায় দেখা দিয়েছিলেন। এটি এর আগে পর্যন্ত কেবল পুরুষদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল।

তবে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নূর জাহানের এটিই একমাত্র বিদ্রোহ ছিল না।

শিকারে বের হওয়া থেকে শুরু করে নিজের নামে রাজকীয় মূদ্রা এবং রাজকীয় ফরমান জারি, বড় বড় রাজকীয় ভবনের নকশা তৈরি, দরিদ্র নারীদের কল্যাণে ব্যবস্থা গ্রহণ, এরকম নানা কাজে নুর জাহান তার স্বাক্ষর রেখেছেন। যা ছিল সেকালের নারীদের মধ্যে ব্যতিক্রম।

তার স্বামীকে যখন জিম্মি করা হয়, তখন নুর জাহান তাকে রক্ষায় সেনাবাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন, যা তাকে ইতিহাসের পাতায় আর জনমানস চিরদিনের জন্য স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে।

রুবি লাল ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক। তার সর্ব সাম্প্রতিক প্রকাশিত গ্রন্থ “দ্য এস্টোনিশিং রেন অব নুর জাহান।” বইটি প্রকাশ করেছে পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডাব্লিউডাব্লিউ নর্টন।

সুত্রঃ বিবিসি।

 

ছাত্রীকে ধর্ষণ, শিক্ষককে নগ্ন করে ঘুরিয়ে থানায় দিল জনতা

নারী সংবাদ


দুই বছর ধরে নিজের ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। অবশেষে ধরা পড়ে যান। তবে প্রচলিত আইনের শাস্তি ছাড়াও তাকে মুখোমুখি হতে হয় জনরোষের। এলাকাবাসীই তাকে গণধোলাইয়ের পর নগ্ন করে সারা শহর ঘুরিয়ে পুলিশে সোপার্দ করে।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের ইলুরু শহরে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, রামবাবু নামের এক ইংরেজির শিক্ষকের বিরুদ্ধে দু’বছর ধরে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি ওই ছাত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। গর্ভপাত করানোর জন্য রামবাবু ওই ছাত্রীকে ওষুধ দেন। তারপরই ওই ছাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে পুরো বিষয়টি নিজের বাড়িতে জানায় ওই ছাত্রী।

তার কাছে এসব কথা জানার পর ওই শিক্ষকের বাড়িতে হানা দেয় ছাত্রীর পরিজনরা। তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। নগ্ন করে হাঁটিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় থানায়। থানায় পৌঁছনোর পর অভিযুক্ত রামবাবুকে জামা-কাপড় দেয় পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্র : এনডিটিভি

 

দাম্পত্য জীবনে অশান্তি

 


দাম্পত্য


যে ৮ টি বিষয় আপনার দাম্পত্য জীবনকে অশান্তিময়, দুর্বল এবং দাম্পত্য জীবনে অশান্তি অকার্যকর করতে পারে।

আসুন জেনে নেই,

খারাপ ব্যবহার করা : তাকে এমন কিছু নিয়ে ঠাট্টা করা যাতে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমন ধমক দেয়া যা অন্যদের সামনে তার অসম্মান হয়ে যায়। তাকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।

উপেক্ষা করা : তার পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা তার কথাবার্তাকে গোণায় না ধরা বা পাত্তা না দেয়া। হয়ত সে সালাম দিয়েছেন আপনাকে, আপনি উত্তর দিলেন না। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে হয়ত সে কিছু বলছে কিন্তু আপনি বিশেষ কারণ ছাড়াই তার কথার পাত্তা দিচ্ছেন না।

মিথ্যা বলা : দুষ্টামি করেও মিথ্যা বলা সঠিক নয়। আল্লাহ মিথ্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের এই ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করুন।

কথা দিয়ে কথা না রাখা : কথা দিয়ে কথা রাখা বা ওয়াদা রক্ষা করা একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। বিষয়টি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এড়িয়ে চলা : অনেকদিন পর দেখা হলে বন্ধুদেরকে বা ভাইদের আমরা জড়িয়ে ধরি, কোলাকুলি করি। আপনার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না? পারবেন, অস্বস্তি লাগলেও তা ভেঙ্গে ফেলুন। ভালোবাসার প্রকাশ থাকা খুবই প্রয়োজন।

সন্দেহ ও গীবত করা : কখনো সন্দেহ করতে যাবেন না। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে। আপনার জীবনসঙ্গী আপনার খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি। কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। আর মনে রাখবেন, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ হিসাব দিবে। তাই সন্দেহ দূর করুন। স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের চাদরস্বরূপ, ছোট-খাটো ভুলত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা নিয়ে অন্যদের কাছে বলে বেড়াবেন না, গীবত করবেন না।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেছেন :
“হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান কর না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমার তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” — [আল হুজুরাত, ৪৯ : ১২]

খুব বেশি ব্যস্ততা : অপরজনের জন্য কিছু সময় রাখবেন। পারস্পরিক কথাবার্তা আর সময়গুলো সম্পর্ককে প্রগাঢ় করে। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা সময় তিনি পাওয়ার অধিকার রাখেন। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদাত না করা : যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত না করে, নামাজ না পড়ে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নন। নিয়মিত নামাজ না পড়া, অশ্লীল কাজ, হারাম উপার্জনগুলো থেকে সরে না আসার কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে গেছে। আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনে অলসতা-উপেক্ষা করার কারণে মুসলিম সংসারে অত্যন্ত দ্রুত ভাঙ্গন ধরে যায়।
আল্লাহ আমাদেরকে ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আমাদের সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমাদের পরিবারগুলোতে রাহমাত এবং বারাকাহ দান করুন। সুত্র: দাম্পত্য | dampotto পেজ।

 

‘গায়ের রঙ এবং আমাদের মানসিকতা’


 সাজেদা হোমায়রা


খুব ছোটবেলা থেকেই আমরা এটা জেনেই বড় হই, সুন্দর হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে তার গায়ের রঙ সাদা। আর যার গায়ের রঙ সাদা নয় সে তথাকথিত সুন্দরের সংজ্ঞার বাইরে।
যার গায়ের রঙ সাদা নয়, কালো বা শ্যামলা সে প্রতিনিয়তই হীনমন্যতায় ভুগছে বা আফসোস করছে।
অবশ্য করবেইবা না কেন?এ আফসোস তো আর একদিনে তৈরি হয়নি।
যখন দিনের পর দিন গায়ের রঙের জন্য সে অবজ্ঞার শিকার হয়….
যখন প্রকৃত মেধা/যোগ্যতার চেয়ে ফর্সা না কালো এটিই মূল্যায়নের মাপকাঠি হয়ে উঠে…..
যখন ভাই বোনদের মধ্যে যার গায়ের রঙ সবচেয়ে অনুজ্জ্বল, সে ছোটবেলা থেকেই এটা মনের ভিতর ধারণ করতে করতে বড় হয়…..
যখন একটা ছোট বাচ্চা যার গায়েব রঙ ফর্সা নয় সে এটা জেনেই বড় হতে থাকে যে কলোত্বের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে তাকে extra ordinary হতে হবে…..
যখন রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের ভীড়ে বাজার সয়লাব হয়ে যায়…..
যখন একটা মেয়ে তার মনের আলোতে চারপাশ দ্যুতিময় করেও শশুর বাড়িতে প্রিয় হতে পারেনা শুধু তার গায়ের রঙের জন্য…..
তখন আসলে নিজের রঙের উপর সন্তুষ্ট থাকাটা কঠিনই হয়ে পড়ে। তখন মনে হয় এই পৃথিবীতে সুন্দর না হওয়াটা ভীষণ অপরাধ।
আশেপাশে আবার সান্ত্বনামূলক কিছু কথাও শোনা যায়।
যেমন: কালো হলেও তার মনটা ভালো বা কালো হলেও সে মেধাবী…. ইত্যাদি।
তার মানে ‘কালো হলেও’ এ কথার মাধ্যমে আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, কালো একটা ঘাটতি।
হ্যাঁ, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় সৌন্দর্যেরই দরকার আছে। তবে তথাকথিত সৌন্দর্যের সংজ্ঞা দিয়ে সুন্দর/অসুন্দর নিরুপন করা কখনোই কাম্য নয়।
আসলে প্রত্যেকটি মানুষের সৌন্দর্যের ধরণ আলাদা।
একেক মানুষ একেক রকম সুন্দর।
একেক মানুষ একেক কারণে সুন্দর।
পরিবর্তন আসুক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে!

 

বর্জ্যজীবী নারী ও শিশুরা ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে


পারভীন সুলতানা কাকন (নারী সংবাদ)


বাংলাদেশে অত্যন্ত দরিদ্র একজনগোষ্ঠী নানা ধরণের গৃহস্থালী বর্জ্য থেকে পুনব্যবহার যোগ্য নানা সামগ্রী সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সারাদেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এই ঝূঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়েজিত রয়েছে। শুধু ঢাকা মহানগরীতেই এই সংখ্যা ১ লাখের ওপর। এদের মধ্যে কেউ রয়েছে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে, কেউ বাছাই করার কাজে, আবার কেউ বা রয়েছে এসব বিক্রি করার কাজে। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সমাজে এদের পরিচয় ময়লা কুড়ানি নামে। যারা রাস্তা, ডাস্টবিন বা ডাম্পসাইট থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদেরই একজন ত্রিশোর্ধ হালিমা। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় স্বামী তালাক দেয়। এরই মধ্যে দু’টি সন্তানের জন্ম দেয় সে। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে তাকে বেছে নিতে হয় এই পেশা। ভোর থেকে সন্ধ্যা সারাদিন চলে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ। বর্জ্য বিক্রি করেই চলে তার সংসার। কখনো খাবার জোটে দু’বেলা কখনো একবেলা।
তিন সন্তানের জননী চল্লিশ উর্ধ্ব রোকসানা বেগমের স্বামী মাদকাসক্ত। সাত সদস্যের সংসারে উপার্জনক্ষম বলতে রোকসানা। দুই ছেলে, এক মেয়েকে এ কাজে লাগিয়ে চলছে তাদের সংসার। একটি শিশু বর্জ্য থেকে দিনে প্রায় ১শ’ থেকে ৩’শটাকা উপার্জন করে থাকে।
হালিমা-রুখসানার মত এই পেশায় নিয়োজিত অনেকেরই গল্প একই রকম। খেয়ে না খেয়ে দুটো টাকা পাওয়ার আশায় নিরন্তর ছুটছে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে। কিন্তু একবারও ভেবে দেখছে না কি অপেক্ষা করছে এসব দরিদ্র মানুষের ভাগ্যে। ডাম্পিং সাইটে ট্রাকে করে বর্জ্য ফেলার পর ক্ষতিকর বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য রাসায়নিক দ্রব্য, পঁচা, বাসী গৃহস্থালীর বর্জ্য, মানুষ ও পশুর মলমুত্র সব মিলিয়ে মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তরা। ডাম্পিং সাইটে কাজ বর্জ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সেখানে ফেলে দেয়া সুঁই, বে¬ড, সিরিঞ্জ দিয়ে প্রতিনিয়ত জখম হচ্ছে তারা। ফেলে দেয়া দূষিত পদার্থের সংস্পর্শে প্রায়শই আক্রান্ত হচ্ছে আমাশয়, ডাইরিয়া, হেপাটাইটিস ভাইরাস ও চমর্রোগসহ বিভিন্ন রোগে।
ডাম্পিং সাইটে দীর্ঘক্ষণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে সেখান থেকে ফেরার পর শিশুরা হাত না ধুয়েই সেরে নিচ্ছে তাদের দুপুরের খাবার। ফলে এসব শিশু ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব ও মাথা ঘুরানোসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রচন্ড দুর্গন্ধের মধ্যে কাজ করে তারা সবসময় ভুগছে গ্যাস্ট্রিকে। ডাম্পিং সাইটে কাজ করার সময় তারা অনেক সময় বর্জ্যবাহী ট্রাক ও লেভেলিং মেশিন দিয়ে বা বুলডুজার দিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। এতে করে অনেক শিশুর অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটছে।
বর্জ্য সংগ্রহের সময় তারা সবসময়ই নুয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করে এতে মেরুদন্ডের ও ঘাড়ের চাপে ভোগে তারা। পঁচা দুর্গন্ধের মধ্যে কাজ করায় শরীরের সবখানে ব্যথা, বমি বমি ভাব মাথা ঘুড়ানোসহ অনেক ধরনের অস্বস্তিতে ভোগে তারা। ফলে, একদিন কাজ করলে তিন দিন বিশ্রাম নিতে হয় তাদের। শুধু তাই নয় খালি পায়ে কাজ করে বলে চর্ম রোগ লেগেই থাকে এসব মানুষের।
চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: এম এন হুদা বলেন, দীর্ঘক্ষণ বর্জ্য সংগ্রহের কাজে যারা নিয়োজিত থাকছে তারা সবসময়ই কোন না কোন চর্ম রোগ যেমনঃ একজিমা, চুলকানি, ফুসকুড়ি, দাউদ ও ফাঙ্গাস জাতীয় চর্মরোগে ভুগছে। তাই দেরি না করে সবাইকে ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন এ বিশেষজ্ঞ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়লাখ দরিদ্র মানুষ ফেলে দেয়া বর্জ্যসামগ্রী পুনঃব্যবহার করে থাকে যার মূল্য বছরে প্রায় এক হাজার ৭১ কোটি টাকা।
আর্ন্তজাতিক সংস্থা উইমেন ইন ইনফরমাল এমপ্লয়মেন্ট গে¬াবালাইজিং এন্ড অর্গানাইজিং-এর মতে, বর্জ্য সংগ্রহকারীরা জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই পরিবেশ উন্নয়নে উল্লে¬খযোগ্য ভূমিকা রেখে থাকে। তবে তারা সর্বদাই নিম্নশ্রেনীর সামাজিক মর্যাদা লাভের পাশাপাশি নিম্ন মানের জীবন যাপন করে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য হচ্ছে শারিরিক, মানসিক, সামাজিক কল্যাণকর পরিস্থিতি, যা শুধু অসুস্থতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা মানব উন্নয়ন সূচকের একটি অন্যতম মাপকাঠি। তাই, প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুস্বাস্থ্যের সুযোগ প্রাপ্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও সবচেয়ে বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন উপেক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-৩ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা বস্তি বা ফুটপাতে বসবাস করে তারা স্বাস্থ্য পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত। এতে প্রতিনিয়তই বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে অনগ্রসর এ জনগোষ্ঠী। এ থেকে পরিত্রাণে শিশুবান্ধব সহায়ক কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ঘোষণা ও চুক্তিনামায় অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ। এর মধ্যে রয়েছে সবার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আলমা আতা ঘোষণা, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ বিষয়ক সনদ, শিশু অধিকার সনদ। বাংলাদেশ এসব চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এছাড়াও বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি বাস্তবায়ন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৬ তে বলা হয়েছে যে, শিশু শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য পুষ্টি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ১৮ বছরের নীচে সকল শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে ও যৌন নির্যাতন থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের ভিশন-২০২১ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি বৃহৎ রূপকল্প। এই রূপকল্পের অধীনে জনগণের তথা দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে যেখানে দেশের খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে শতকরা ৮৫ ভাগ জনগোষ্ঠীর পুষ্টি নিশ্চিত করা হবে। সেইসাথে সংক্রামক রোগ নির্মুল করা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও পয়ঃনিষ্কাষণ সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১-এর অন্যতম মূল নীতি হিসেবে বলা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যসমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সুবিধা বঞ্চিত গরিব, প্রান্তিক, বয়স্ক, শারিরিক, ও মানসিক প্রতিবন্ধী জনগণের অধিক গুরুত্বপূর্র্ণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া।
বর্জজীবীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংবিধান স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ ও জাতীয় নগর স্বাস্থ্য কৌশল ২০১৪-তে উল্লেখিত নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও সেবার অধিকার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বর্জ্যজীবীদের জন্য শিগগিরই সরকারের বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কমর্সূচি প্রনয়ন ও তা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তবেই নিশ্চিত হবে বর্জ্যজীবী শিশুর পরিপূর্ণ শারিরিক, সামাজিক ও মানসিক বিকাশ।
সুত্র: বাসস।

 

স্তন ক্যান্সার : সচেতনতাই যার প্রতিকার


নুসাইবা ইয়াসমীন


ক্যান্সার মূলত একটি অনাকাঙ্ক্ষিত জীবনের গল্প। খুব সাধারন সাজানো জীবনটা মুহুর্ত্বের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বদলে যেতে পারে ক্যান্সার নামক ব্যাধির কারনে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারকে মৃত্যুর দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং চলতি বছর ক্যান্সারজনিত কারনে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৯৬ লাখ।

নারীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি দেখা যায়।
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত দেশের শীর্ষে বেলজিয়াম, নেদারল্যানড, ফ্রান্স ইত্যাদি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও এর প্রকোপ লক্ষণীয়।

অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়।

মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের সঠিক ধারনার অভাব প্রতি মূহুর্তেই হাজারও নারীকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে। একটু সচেতনতা এবং সঠিক সময়ে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হলে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত হলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব ৯০ শতাংশ।

স্তন ক্যান্সারের মৌলিক ধারনার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়গুলো জানা দরকার তা হলো কে বা কারা এই ঝুঁকিতে রয়েছে এবং স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি হতে পারে!

যাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে যাদের:

* যেসব নারীর বয়স ৪০ বছরের বেশি তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
* অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* যেসব মায়েরা সন্তানকে কখনও স্তন্যপান (breast feeding) করাননি।
* ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন।
* যাদের তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় ও দেরিতে মাসিক বন্ধ (menopause) হয় তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* একাধারে অনেকদিন (১০ বছর বা বেশি) জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
* অতিরিক্ত মদ্যপান ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনপদ্ধতি।

যদিও উল্লেখিত বিষয়গুলো ক্যানসারের ঝুঁকির কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তবে বাস্তব চিত্র অনুযায়ী প্রতিটি নারীই এই ঝুঁকির আওতায় রয়েছে।

লক্ষণ বা উপসর্গ

• স্তনের কোন অংশে চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া।
• স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
• স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন।
• স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া।
• স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া।
• বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া।
• স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া।

প্রাথমিক সচেতনতা অনুযায়ী প্রত্যেকেই উচিত নিয়মিত স্তনের স্বাভাবিক আকারকে লক্ষ্য রাখা এবং অন্তত প্রতি দুই সপ্তাহে নিজে নিজে বাসায় পরীক্ষা করা। যাদের বয়স ৪০ উর্ধ্ব তাদের বছরে একবার ম্যামগ্রাম করা প্রয়োজন। একমাত্র সচেতনতাই পারে ক্যান্সারকে জয় করে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে।

ক্যান্সার মরন ব্যাধি হিসেবে পরিচিত হলেও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাতিরে ক্যান্সার রোগীরাও সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করে পরিচালনা করতে পারেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন।

 

মেয়ের পড়াশোনায় ১২ জন সহায়ক


নারী সংবাদ


অর্থের ঝনঝনানি বোধ হয় একেই বলে। মেয়ের পড়াশোনায় যাতে অসুবিধা না হয় তাই ব্রিটেনে ১২ জন সহায়ক কর্মী নিয়োগ করলেন এক ভারতীয় ব্যবসায়ী। আর সেই সুবাদে সবচেয়ে ‘ধনী ছাত্রী’র তকমা জুটেছে ওই ছাত্রীর।

দ্য সান সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীর জন্য একজন ম্যানেজার, ঘরে সাহায্যের জন্য তিনজন কর্মী, একজন মালি, একজন মহিলা পরিচারিকা, একজন প্রধান সহকারী, তিনজন পদচারী, ব্যক্তিগত রাঁধুনি ও একজন গাড়ি চালকের ব্যবস্থা করেছেন ওই ব্যবসায়ী।

সাধারণ ছাত্রীর মতো যাতে তাকে থাকতে না হয়, সেজন্য স্কটল্যান্ডের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন তার মা-বাবা।

ওই ১২ জন কর্মী চার বছর ধরে ওই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটেই থাকবেন। রীতিমতো খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে কর্মী সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপনেই বলা ছিল, অভিজ্ঞ কর্মী পেলে বছরে ৩০ হাজার পাউন্ড দিতেও তারা রাজি।

সুত্র: ইন্টারনেট।

 

স্বামীর দেয়া উপহার স্ত্রীর দেনমোহর নয়


সিরাজ প্রামাণিক


বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীকে অনেক কিছুই দিতে পারে। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে কিছু দেয়, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা থাকতে হবে। যেমন: জমি হস্তান্তর দলিলে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা না থাকলে এরূপ জমি প্রদান দেনমোহর হিসেবে ধরা হবে না।
হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বিয়ের সময় স্বামী তার স্ত্রীকে দেনমোহর হিসেবে পাঁচ বিঘা জমি দিতে চায়। সে মতে স্বামী ওই জমি স্ত্রী বরাবর প্রদানও করেন। পরে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে এ মর্মে মধ্যস্থতা করে যে, ওই পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করে ভালো জায়গায় ১৩ বিঘা জমি ক্রয় করবে। সেখান থেকে স্ত্রীকে পাঁচ বিঘা জমি ফেরত দেবে। কথা দিয়ে কথা না রাখলে স্ত্রী স্বামীর কাছে দেনমোহর চেয়ে মামলা করে। স্বামী ওই মামলায় প্রতিযোগিতা করে। স্বামী এই মর্মে অজুহাত উত্থাপন করে যে, পারিবারিক আদালতে ওই মামলা অচল। কারণ তিনি জমিটি ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং মামলাটি দেওয়ানি আদালতে বিচার্য। মামলাটিতে পারিবারিক আদালত স্ত্রীর পক্ষে ডিক্রি প্রদান করলেও স্বামী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করে। মহামান্য হাইকোর্ট নি¤œ আদালতের আদেশ বহাল রাখে ১৩ বিঘা জমির মধ্যে পাঁচ বিঘা জমি তার স্ত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন। (রওশন আরা বেগম বনাম মাসক আহমেদ ২৩ বিএলডি হাইকোর্ট, পৃষ্ঠা- ৩০২)
তবে মোহরানার পরিবর্তে হিবা বিল অ্যাওয়াজের রীতিও রয়েছে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, মোহরানার পরিবর্তে হিবা-বিল-অ্যাওয়াজ তখনই বৈধ হবে যখন স্ত্রী কোনো প্রতিদান ছাড়াই স্বামীকে মোহরানা দান করে দেয় এবং পরে স্বামী স্ত্রীর দানের ‘অ্যাওয়াজ’ স্বরূপ কোনো সম্পত্তি আলাদাভাবে দান করে। কারণ এটা মুসলিম আইনে একটি বিশুদ্ধ হিবা বিল অ্যাওয়াজ। এমনকি স্বামী যদি স্ত্রীকে কোনো কিছু দান করেন এবং স্ত্রী স্বামীর বরাবরে প্রতিদান স্বরূপ অন্য কোনো দলিল মূল্যে মোহরানার অধিকার ছেড়ে দেয় তবে তা আধুনিক প্রকৃতির একটি হিবা বিল অ্যাওয়াজ বলে গণ্য হবে (পিএলডি ১৯৫৫, ঢাকা. পৃষ্ঠা ৩৯)। দেনমোহরের পরিবর্তে স্ত্রীর বরাবর জমি সম্পত্তি হস্তান্তর এক শত টাকা মূল্যের অধিক হলে অবশ্যই রেজিস্ট্রি দলিল দ্বারা হস্তান্তর করতে হবে (৪ ডিএলআর, পৃষ্ঠা-৫১)।
বিয়ের সময়ে দেয়া শাড়ি, গয়না ইত্যাদি কখনো দেনমোহরের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে না। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের সময় গয়না, শাড়ি ইত্যাদির মূল্য দেনমোহরের একটি অংশ ধরে উসুল লিখে নেয়া হয়। আসলে বিয়েতে দেয়া উপহার বা উপঢৌকন দেনমোহর নয়। এগুলোকে দেনমোহরের অংশ বলে ধরা যাবে না এবং উসুল বলা যাবে না। (আ: কাদের বনাম সালিমা, ১৮৮৬, ৮ অল. পৃষ্ঠা-১৪৯)।
ভরণপোষণ দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে না : দেনমোহরের সাথে ভরণপোষণের কোনো সম্পর্ক নেই। বিবাহিত অবস্থায় স্ত্রীকে ভরণপোষণের জন্য স্বামীর যে খরচ তা কোনোভাবেই দেনমোহরের অংশ বলে বিবেচিত হবে না। আবার বিয়ে-বিচ্ছেদের ফলে স্বামী, স্ত্রীকে যে ভরণপোষণ দেয় তা-ও দেনমোহরের অংশ নয়। দেনমোহর এবং ভরণপোষণ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। একটি পরিশোধ করলে অপরটি মাফ হয়ে যায় না।
জামিনদার : যদি কোনো ব্যক্তি একজনের স্বামী-স্ত্রীর মোহরানার দায়িত্ব নেয় তবে সে তা পরিশোধের জন্য দায়ী হবে। বিবাহোত্তর দেনমোহরের জন্য জামিনদার থাকলে সে ক্ষেত্রেও জামিনদার দায়ী হবে। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। বিধবা স্ত্রী তার দেনমোহরের জন্য মৃত স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলে রাখার অধিকারিণী। (বিবি বাচান বনাম শেখ হামিদ, ১৮৭১, ১৪ এমআইএ পৃষ্ঠা-৩৭৭)। দেনমোহরের দাবিতে কোনো বিধবা স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তি দখল করে থাকলে যদি তাকে ওই সম্পত্তি থেকে অন্যায়ভাবে বেদখল করা হয়, তবে সে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে (মজিদ মিয়া বনাম বিবি সাহেব ১৯১৬, ৪০ বম. পৃষ্ঠা-৩৪)।
যদি স্বামীর উত্তরাধিকারীরা স্বামীর সম্পত্তি থেকে দেনমোহর দিতে অস্বীকার করেন তাহলে স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ওই দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা দেনমোহর পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী,
seraj.prama nik@gmail.com

 

“আমাকে পারতেই হবে”


ফাতেমা শাহরিন


স্টুডেন্ট অবস্থায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে নাম লিখেছে অনামিকা দাশ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম “কন্যে কারিগর”। “কন্যে কারিগর” এ রয়েছে, হাতের তৈরী চুড়ি, বালা, নেকলেস, ব্রেসলেট, কানের দুল ঘর সাজানোর পন্যসহ নানা রকম আইটেম। যার পুরোটাই অনামিকা দাশ নিজ হাতে করে থাকেন। প্রতিটি কাজই স্বপ্ন, স্বপ্নীল মনের বর্ণিল রং, ছবি আঁকে তার প্রতিটি সৃষ্টি।
তিনি একজন স্টুডেন্ট, পড়াশুনা মৃৎশিল্প, মাস্টার্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন।পড়াশুনার ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন এই সাহসী নারী।

ছোট বেলা থেকেই তার আকাঁ-আকিঁ ক্রাফ্টিং এর প্রতি অনেক শখ ছিল। বড় হওয়ার পর তার ইচ্ছাটা স্বপ হয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। আর তা হলো, নিজের কিছু করতে হবে এবং একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হতে হবে। আর তাই উদ্যোগ নেন একাই।

গত বছরের জুনের ৩১ তারিখে ফেইসবুকে “কারিগর…..” গ্রুপটি খুলেন। প্রথমে তিনি কাঠের উপর হ্যান্ড পেইন্ট করা গহনা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ভগবানের কৃপায় বেশ সাড়া পান।এর কিছু দিনপর একটা ফেইসবুক পেইজ খুলেনন তিনি আর নাম দেন “কন্যে কারিগর”। এভাবেই যাত্রাশুরু হয় অনামিকা দাশের “কন্যে কারিগর”।

গয়নার পাশাপাশি ঘর সাজানোর কিছু পন্য হাতে বানানো শুরু করেন,তাছাড়া হ্যান্ড পেইন্ট করা পাঞ্জবীও তৈরী করেন।

কাজের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও ছিল অনামিকার। যেহেতু অনামিকা ভার্সিটির হলে থাকতেন তাই তিনি কাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পেতেন না। তবুও গ্রাহকের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী কাজ করে সঠিক সময়ের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।তাছাড়া পন্য ডেলিভারী দেওয়া নিয়েও অনেক সময় সমস্যার মুখে পরতে হয় তাকে।

যেহেতু তিনি এখনও ছাত্রী তাই পন্যের দাম এমন ভাবে নির্ধারন করার চেষ্টা করেন যাতে সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে।

গহনা ৬০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে।আর পাঞ্জবী ১০০০টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। তার ব্যবসাটি এখন শুধুমাত্র অনলাইন ভিত্তিক। অনামিকার চাকরি করার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। আর তাই নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পুজিঁ বিনিয়োগ ব্যবসাটি শুরু করেন।

অনামিকার মতে, ‘কোন মেয়ে যদি স্বনির্ভর হতে চায় তবে তার নিজ উদ্যোগটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

ভবিষ্যতে একটি সমবায়সমিতির মাধ্যমে গ্রামের অস্বচ্ছ পরিবার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে অনামিকার।

তার ভাষ্য মতে, “একজন নারী হিসেবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, আমাকে পারতেই হবে আর যদি ভয় বা পিছিয়ে পরি তাহলে হেরে যাবো। আমাকে আমার কাঙ্খিত অবস্থান অর্জন করতেই হবে এই মনোভাব টাই সব সময় হৃদয়ে ধারণ করি।”

 

ছবিঘর:

১.

২.

৩.

 

 

মাতৃমৃত্যু রোধে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে : স্পিকার


নারী সংবাদ


মাতৃমৃত্যু রোধে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আজ রোববার সংসদ ভবনের শপথকক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপি)-এর যৌথ উদ্যোগে এসপিসিপিডি প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক পলিসি ডায়লগে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই আহবান জানান।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে মাতৃমৃত্যুহার ১৭৬ জন। ২০৩০ সালের মধ্যে এ হার ৭০ জনে নামিয়ে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দুর্গম এলাকা বিশেষ করে পাহাড়ী এলাকা,হাওরাঞ্চল ও চরাঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের যে সকল অঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার বেশি সে অঞ্চলকে চিহ্নিত করে কারণ অনুসন্ধান করে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সাথে অন্যান্য অঞ্চলে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে পারলে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক একটি সার্বজনীন মানদন্ড এসডিজি এর লক্ষ্যও নির্ধারিত হয়েছে। এ দু’য়ের সমন্বয়ে প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট কাজগুলো বাস্তবায়নের দিকে আমাদের দৃষ্টি স্থির করতে হবে।
মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, এ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যাতে জনগণ আরও বেশি সেবা গ্রহণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাদানকারী জনবলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
স্পিকার বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন সূচকে বাংলাদেশ এশিয়ার আঞ্চলিক অগ্রগতি থেকে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ এমডিজি এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা দেখিয়েছে, সে ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে অবশ্যই এসডিজি এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করবে।
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপি) এর রিপ্রেজেনটেটিভ ড. আসা টরকেলসন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: আবদুর রব হাওলাদার, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এমপি, হুইপ শহিদুজ্জামান এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পলিসি ডায়লগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি।

সুত্র: (বাসস)

 

রান্নার জন্য রান্নাঘর পরিচ্ছন্নতা


ঘরকন্যা


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রান্নাঘর। কারণ এ ঘরে যে রান্না করা হয় তার পরিচ্ছন্নতা ও ভেজালহীনতার ওপর নির্ভর করে পরিবারের সবার স্বাস্থ্য। তাই রান্নাঘরে কাজ করার সময় কিছু বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, তাহলে রান্নাঘরে থাকবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। এমনই কিছু টিপস দেয়া হলো এই প্রতিবেদনে-

ময়লা জমা করা:
কয়েকদিনের ময়লা জমা করবেন না রান্না ঘরে। বরং ময়লা জমা করলে

ঢাকনা দেওয়া আবর্জনা:

রান্নাঘরে ঢাকনা দেয়া আবর্জনা ফেলার বালতি ব্যবহার করুন, এতে দুর্গন্ধ ছড়াবে না।

দেওয়ালে চর্বি দূর করুন:

থালাবাসন এর পাশাপাশি দেওয়ালের তেল-চর্বি পরিষ্কার করতে সাবানের সাথে গরম পানি ব্যবহার করুন। এতে চর্বি ভাব দূর হবে।

মাছির ও পোকামাকড়ের উপদ্রপের জন্য:

প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করুন। যেমন, চিনির কৌটায় কয়েকটি লবঙ্গ রাখলে পিঁপড়া আসে না। মাছি পুদিনা পাতা আর তুলশী পাতার গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

ঝুল পরিষ্কার করুন:

সপ্তাহে একদিন করে রান্নাঘরের ঝুল পরিষ্কার করুন। দিনের অনেকটা সময় কাটে রান্নাঘরে। তাই রান্নাঘরটা হওয়া চাই পরিষ্কার আর জীবাণুমুক্ত।

 

গরু পালনে চরাঞ্চলে নারীর ভাগ্যবদল


তাসলিমা সুলতানা


পৃথিবীতে সব মানুষ সোনার চামচ নিয়ে কিংবা ধনীর ঘরে জন্মগ্রহণ করে না। অর্থাৎ ধনীর দুলাল হয়ে সকলে জন্মগ্রহণ করে না। অনেকেই গরীবের ঘরে জন্মালেও কর্ম দিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা এবং একাগ্রতা। এমনটা যে কেবল সমাজে পুরুষের বেলায় ঘটে তেমনটা নয়। আজকাল দেশের নারী সমাজও নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারে। তাদেরই একজন ফাতেমা বেগম। বাড়ি লালমনিরহাটের তিস্তার চরাঞ্চলে। মহাজনের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে গরু লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
শুধু ফাতেমা-ই নন জেলার আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন দ্বীপচরে বেড়ানো আরো অনেকেরই গরু কেনার সামর্থ্য নই। তাই মহাজনের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে গরু পোষেণ সম্ভাবনাময় চরে। বর্তমানে বর্গা গরুতে ভরে উঠেছে চরাঞ্চল।
সম্প্রতি লালমনিরহাটের তিস্তা চর ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যাওয়া নারী-পুরুষ জেগে ওঠা চরে বাসা গড়েছেন। এখানকার বাড়িগুলোর বেশির ভাগ পুরুষ সদস্য অন্যের জমিতে দিন মজুরির কাজ করেন।
কেউ কেউ পরিবার-পরিজন রেখে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শহরে, যেখানে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সংসার চলে স্বামীর উপার্জনে। আর বাড়িতে অনেকটাই কর্মহীন সময় কাটান নারীরা।
চরের নারীরা এই প্রতিবেদককে জানান, সংসারে বাড়তি আয় করতে তারা স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে ছোট গরু বর্গা নেন। সেই গরু দিনভর চরাঞ্চলের খোলা মাঠে ঘাস ও লতাপাতা খাইয়ে বড় করে বিক্রি করেন। সেখান থেকে পাওনা টাকা মহাজনকে ক্রয় মূল্য দিয়ে বাকি যে টাকা থাকে তার অর্ধেক নিজেরা রাখেন, বাকি অর্ধেক মহাজনকে দেন।
কর্মহীন না থেকে এভাবে গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চরাঞ্চলের নারীরা।
জানা যায়, গোবর্ধন চরে দুই থেকে তিনশ’ পরিবার বাস করে। এর মধ্যে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে ৩ থেকে ৪টি গরু; যার সবগুলোই বর্গা নেওয়া।
চরের বাসিন্দারা বলেন, চুরি-ডাকাতির কোনো ভয় নেই। চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দিনভর চড়ে বেড়ায় এসব গরু। ফলে অল্পতেই বেশ মোটা-তাজা হয়ে ওঠে। এতে দামও মেলে বেশ ভালো।
চরের বাবু মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বলেন, ‘চরে গরু পোষার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের গরু কেনার টাকা নেই। তাই মূল ভূখন্ডে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা নিয়ে দু’টি ছোট গরু কিনে নিয়েছি। এক বছর লালন-পালন করার পর বর্তমানে গরু দু’টির বাজার মূল্য প্রায় লাখ টাকা।’
তিনি আরো বলেন, ‘গরু বিক্রির লভ্যাংশের অর্ধেক দিয়ে জমি বন্ধক নেবো চাষাবাদের জন্য। ঘরে চাল থাকলে পেটের চিন্তা থাকে না।’
সকাল-সকাল পরিবারের সদস্যদের রান্না-বান্না শেষে প্রতিদিন গরু নিয়ে মাঠে যান চরের আছিয়া বেগম (৪০)। দিনভর গরুর পেছনেই কেটে যায় তার। গরু মাঠে নিয়ে যাওয়া এবং দুপুরে ও সন্ধ্যায় বালতি ভরে পানি খাওয়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। জানালেন, নিজেদের গরু কেনার টাকা নাই। তাই চারটি গরু বর্গা নিযেছেন। গত দুই বছরের গরুর লভ্যাংশ দিয়েই এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আগামী দুই বছরের মধ্যে গরু বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে মূল ভূখন্ডে বাড়ি করার মতো দুই-তিন শতাংশ জমি কেনার স্বপ্ন দেখছেন এই চল্লিশোর্ধ নারী।
আছিয়া বলেন, দুই দিকে নদী থাকায় চরে চোর-ডাকাতের ভয় নেই। ভয় শুধু বন্যা আর নদী ভাঙনের কারণে আমরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি।
বাসিন্দারা বলছেন, তিস্তা নদী শাসন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু বার বার আশ্বাস পেলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না দারিদ্র্যের শিকার এসব মানুষ।
চরের বাসিন্দা সালেহা আক্তার বলেন, নদী আমাদের সবই কেড়ে নিয়েছে। ব্যাংক থেকেও কোনো ঋণ পাই না। কারণ, চরের জমি খাস খতিয়ানে হওয়ায় ব্যাংক ঋণ দেয় না।
অন্যদিকে যোগাযোগের সমস্যায় কিস্তি আদায় না হওয়ার আশঙ্কায় চরাঞ্চলের মানুষকে অনেক বেসরকারি সংস্থাও (এনজিও) ঋণ দিতে চায় না বলে জানিয়েছেন চরের বাসিন্দারা।
চরের বাসিন্দা মো. আবদুল আলিম বলেন, আসলে কোনো কোনো এনজিও ঋণ দেয়। তবে এ টাকায় গরু পালন সম্ভব নয়। কারণ, তাদের ঋণের কিস্তি পরের সপ্তাহে শুরু হয়। আর গরুর লাভ আসতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। এতে আরো ঋণের বোঝা বাড়ে। তাই সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন চরাঞ্চলের নারী-পুরুষরা।

সুত্র: (বাসস)

 

টাঙ্গাইলে কন্যাশিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইলে আট বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক যুবককে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনে দেন।
দন্ডিত-প্রাপ্ত আসামি হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ভুটিয়া গ্রামের সাবান আলী ওরফে ফজলুল হকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪)। বর্তমানে সে জেলহাজতে রয়েছে।
টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাছিমুল আক্তার নাছিম বলেন, ২০১৪ সালের ১৯ মে বিকেলে মধুপুর উপজেলার ভুটিয়া গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে বীথি (৮) হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পাশের রাস্তায় গেলে কামরুল ইসলাম তাকে লিচু দেয়ার কথা বলে আকরাচনা খেলার মাঠের পাশের এক জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে কামরুল ওই শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনার ওই দিনই বীথির পিতা আবুল কালাম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। বীথিকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা স্বীকার করে কামরুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়।
এ মামলায় মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক একমাত্র আসামি কামরুলের বিরুদ্ধে মৃত্যুদের আদেশ দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা- ৮


কানিজ ফাতিমা


মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয় তা নারীর কর্মক্ষমতা ও পারস্পরিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে নারীর পরিবারের সদস্যরা ও সহকর্মীরা তার আচরণে আহত ও বিরক্ত বোধ করতে পারে।

গতপর্বে বলেছিলাম এ সময়ের প্রধান তিনটি মানসিক সমস্যা হলঃ
দুঃখবোধ বা বিষন্ন হওয়া, অস্থিরচিত্ত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া। এ পর্বে থাকবে এ নিয়ে আরও কিছু আলোচনা।

সব মহিলা তার জীবনের এই পরিবর্তিত অবস্থাকে সমানভাবে মেনে নিতে পারেনা। যারা আগে থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে এবং পরিবার থেকে সহযোগিতা ও নিশ্চয়তা পায় তারা অন্যদের তুলনায় এই পরিস্থিতি অধিক সহজভাবে মোকাবিলা করে। যেমন কোন মহিলা যদি মনে করে যে, সে তার নারীত্ব হারিয়ে ফেলছে ফলে সে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে, তবে তার মানসিক সমস্যা অন্যদের থেকে বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। যদি সে আশঙ্কা করে যে তার স্বামী আর একটি বিয়ের দিকে আগাতে পারে তবে সে আরও বেশি বিচলিত হতে পারে। এমতাবস্থায় সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও নিজেকে মূল্যবান প্রমাণের জন্য সে স্বামী, পুত্র-কন্যা ও পুত্রবধুর সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। যদি এমনটা হয় তবে পরিবারের অন্যদের দায়িত্ব হল তাকে নিশ্চয়তা দান করা ও তার সঙ্গে এমন আচরণ করা যাতে সে বুঝতে পারে পৃথিবীতে সে মূল্যহীন হয়ে যায়নি। এ সময় মা তার পুত্রের উপর অধিক নিয়ন্ত্রণ চাইতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবেই পুত্রবধুকে তার প্রতিদ্বন্দী মনে করতে পারে। এক্ষেত্রে পুত্রকে সচেতনতার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। একদিকে মা আঘাত পায় এমন কাজ থেকে যেমন তাকে বিরত থাকতে হয় আবার অন্যদিকে মায়ের অযাচিত আবদারকেও সচেতনভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। এ সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য তাকে (মাকে)মেনপজের ওপর বই, আর্টিকেল পড়তে দেয়া যেতে পারে ।
কর্মজীবী মহিলা, যারা তার চাকুরী ও আয় নিয়ে সন্তুষ্ট, তাদের ওপর মেনোপজের প্রভাব তুলনামূলকভাবে গৃহিনী ও যারা কোন প্রকার সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় সেসব নারীদের থেকে সাধারণত কম হয়ে থাকে। ফলে এ সময় তাকে সমাজসেবামূলক কোন কাজে উৎসাহী করা যেতে পারে; বাগান করা বা বাড়ীর অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও তাকে দেয়া যেতে পারে। এতে সে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা শুরু করবে এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। ফলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করার অস্বাভাবিক পন্থাগুলো থেকে নিজে থেকেই সরে আসবে।
মেনোপজ নারীদেহের বার্ধক্যের নির্দেশক। শৈশব থেকে কৈশোর ও যৌবনে পদার্পণ করার সব ক’টি বয়সের ধাপকেই মানুষ স্বাগত জানায়। কিন্তু যৌবনের পরে বার্ধক্য আসাকে মানুষ কখনওই স্বাগত জানায় না। ফলে অধিকাংশ নারীই এ সময়ে জীবনের মানে হারিয়ে ফেলে। সে তার যৌবন ও সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলার শোকে ভোগে। ফলে কখনও সে অসহায় বোধ করে এবং পরমুহূর্তে রাগ অনুভব করে। একারণে সে খেয়ালী ও জেদী আচরণ করে। তাছাড়া মেনোপজে যে শারীরিক সমস্যার তৈরি হয় সেগুলো অনেক সময় নিদ্রাহীনতার জন্ম দেয় এবং নিদ্রাহীনতা থেকে মেজাজ খারাপ ও খিটখিটে ভাবের জন্ম হয়।
মেনোপজের সঙ্গে যে মানসিক অবস্থাগুলো যুক্ত তার বিস্তারিত একটি তালিকা নীচে দেয়া হল-
0 Less energy and drive (শক্তি ও উদ্যম কমে যাওয়া)
0 Irritability (বিরক্তি ভাব)
0 Mood changes (মেজাজের ভারসাম্যহীনতা)
0 Headaches (মাথাব্যথা)
0 Feeling of unworthiness (নিজেকে মূল্যহীন মনে করা)
0 Loss of self-esteem (আত্মসম্মানবোধের অভাব)
0 Loss of self-confidence (আত্মবিশ্বাসের অভাব)
0 Feeling unable to cope (খাপ খাওয়াতে না পারা)
0 Difficulty in concentrating (মনোযোগ দিতে না পারা)
0 Feelings of aggressiveness (ঝগড়াটে বা আক্রমণাত্মক হওয়া)
0 Depression (হতাশ বোধ)
0 Anxiety (দুশ্চিন্তা বোধ)
0 Forgetfulness (ভুলোমনা)
0 Fear of loneliness (একাকীত্বের ভয়)
0 Unusually prove to tears (কারণে অকারণে কান্না পাওয়া)
0 Tired (ক্লান্তিবোধ)
মেনোপজের এই লক্ষণগুলো কার ক্ষেত্রে কতটুকু হবে তার অনেকখানি নির্ভর করে দেশীয় সংস্কৃতি ও পারিবারিক সংস্কৃতির উপর। সাধারণত যেসব দেশে নারীরা নিজেদেরকে অভিজ্ঞতার আসনে দেখতে পছন্দ করে ও সৌন্দর্য সম্পর্কে অত্যধিক সচেতন না, সেসব দেশের নারীরা মেনোপজে কম মানসিক সমস্যা বোধ করে। উপরন্তু অনেক সময়ই বার্ধক্যকে তারা অধিক সম্মান ও যত্ন পাবার সুযোগ হিসাবে মনে করে। তাছাড়া যেসব দেশে সন্তানরা বাবা-মা’র কাছাকাছি থাকে (Collective Society) সেসব দেশেও মেনোপজের সমস্যা নারীরা তুলনামূলকভাবে কম অনুভব করে। অপরপক্ষে, Individualistic Society- যেখানে নারীরা শরীর ও সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রচণ্ড সচেতন এবং যারা সন্তান সন্তুতির থেকে দূরত্ব বজায় রাখে তাদের মধ্যে মেনোপজের সমস্যা তুলনামূলক বেশি হয়। একারণে গবেষণায় দেখা গেছে জাপানের নারীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় এ সম্পর্কিত সমস্যায় কম ভোগে।
এ থেকে সহজেই বোঝা যায় সচেতনতার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারটি মোকাবিলা করলে বা সামলে নিলে নারীদের জন্য মেনোপজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া সহজ হয় এবং এ কারণে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তিগুলো সহজেই কমিয়ে আনা যায়।

পর্ব-৭

 

দক্ষ নারীর কর্মের প্লাটফর্ম ‘টু আওয়ার জব’


মাহবুব আলম


নারী মমতাময়ী মা, কখনো নারী বোন, আবার এই নারী-ই প্রাণের প্রিয়তমা; সেই নারী উদ্যোক্তাও। যিনি স্বাবলম্বী হয়ে হাল ধরেন সংসারের। সে ক্ষেত্রে নারীর কর্মক্ষেত্র হওয়া চাই নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক। তেমনই ঘরে বসে নারীর নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের প্লাটফর্ম ‘দ্য টু আওয়ার জব’। এর মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন নারীরা ঘরে বসে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘণ্টা কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারছেন।
এই উদ্যোগটি গড়ে তুলেছেন নারী উদ্যোক্তা সানজিদা খন্দকার। প্রথমে বহুজাতিক কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করলেও সংসার ও ছেলে-মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে একসময় তা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তার মতো অন্য নারীদের কথা চিন্তা করেই গড়ে তোলেন অনলাইন উদ্যোগ ‘দ্য টু আওয়ার জব.কম।’
অনলাইন এই পোর্টালে ৯টা থেকে ৫টা অফিস নয়, নিজের ঘরে বসেই নারী পছন্দের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখানে নিজ যোগ্যতায় সময় ও সুবিধা মতো কাজ করে পছন্দের ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন নারীরা।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘টু আওয়ার জব’-এর কার্যালয়ে বসেই নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন সানজিদা খন্দকার।
‘টু আওয়ার জব’-এর এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, প্রফেশনাল মেয়েদের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের পর তারা চাকরি ছেড়ে দেন। সন্তান-পরিবারসহ নানা কারণে আর সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এমনকি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরও ক্যারিয়ার হারিয়ে ফেলেন তারা। যোগ্যতাসম্পন্ন এসব নারী যাতে তাদের সুবিধামতো কাজ করতে পারেন ও তার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন সে লক্ষ্য থেকেই ‘দ্য টু আওয়ার জব.কমে’র প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, ‘নিজের পরিস্থিতি থেকেই আমার মতো অন্যদের কথা বিবেচনা করে এই পোর্টাল তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। আমার বিয়ের পরও আমি ট্রান্সকম কোম্পানির একটি শাখার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতাম। সেখানে অফিস ছিল ৯টা থেকে ৬টা। আমার প্রথম সন্তান জন্মের পর তাকে বেশি সময় দিতে হতো। তখন দেখলাম এটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাসায় সন্তানকে দেখার মতোও কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়েই জব ছাড়তে হয় আমাকে।’
সানজিদা বলেন, ‘পরে আমাকে সারাদিন সন্তান ও সংসার নিয়ে থাকতে হতো। মনে হতো আমার ক্যারিয়ার বুঝি শেষ। এই বিষয়টি নিয়ে আমি খুব হতাশায় ভুগতাম। একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে আনন্দের সময় হলো তার মা হওয়া। কিন্তু সেই সন্তান কেনো তার হতাশার কারণ হবে? কোনো নারীর সংসার ও সন্তানকে তার ক্যারিয়ার গড়ার পথে বাধা মনে না করে, তাদের জন্যই এই ‘টু আওয়ার জব’।’
জানালেন, ‘টু আওয়ার জব’র ওয়েবসাইটে পেশাদার লেখা, ব্যবসায় সহায়তা, প্রোগ্রামিং, প্রযুক্তি, গ্রাফিকস, ডিজিটাল মার্কেটিং, অডিও সাপোর্ট, মার্কেট রিসার্চ, বিনোদন, গবেষণা, বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন ধরনের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন করে দেন দক্ষ নারী প্রফেশনালরা।
এসব বিষয়ে কাজ করতে চাইলে প্রথমে ‘টু আওয়ার জব’-এর ওয়েবসাইটে দক্ষ প্রফেশনালদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অর্ডার আসার পর যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের কাজ দেওয়া হবে।
বর্তমানে ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানান সানজিদা খন্দকার।
ওয়েবসাইটে কাজ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ। ওয়েবসাইটটা সেভাবেই তেরি করা হয়েছে। কারণ, আমরা চিন্তা করে দেখেছি যারা এখানে কাজ করবে তারা হয়তো কখনো ফ্রিল্যান্সিং করেনি। কারণ, একজন ডাক্তার কখনোই ফ্রিল্যান্সার হবেন না। তিনি হয়তো অনলাইন কনসালট্যান্ট হবেন। তাই স্টেপ বাই স্টেপ সাজিয়ে এটা তৈরি করা হয়েছে। এখানে শুধু নাম, মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা দিয়েই সাইন ইন করা যাবে। এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অনান্য তথ্য দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এর মাঝ থেকেই বেছে নিই যোগ্যতাসম্পন্নদের।
এ জন্য একটি টিম সব সময় অ্যালার্ট রয়েছে বলেও জানান এই নারী উদ্যোক্তা। তার মতে, এই টিমের কাজ হলো সবসময় ফোনে অ্যাকটিভ থেকে কাজ করা। যাতে যে কোনো সমস্যার সমাধান ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া সম্ভব হয়। অনেক সময় মেয়েরা ছেলে-মেয়ের কারণে বাইরে বের হতে পারেন না। তখন প্রয়োজনে তাদের বাসায় গিয়ে ওই সমস্যার সমাধান করাই হচ্ছে ওই টিমের কাজ।
এ উদ্যোগে এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে জানিয়ে সানজিদা বলেন, প্রথমে ভাবিনি এভাবে এই উদ্যোগ নারীরা গ্রহণ করবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

যেহেতু অন-লাইনে বায়ারদের সঙ্গে কাজ করছি, তাই নারী কর্মীদের তথ্য খুব সতর্কভাবে পরিচালনা করতে হয়। কারণ, কেউ কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ছেন কিনা তাও দেখতে হয়।

সূত্রঃ বাসস।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৮


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জুম্মার নামাযের জন্য হারাম শরীফে চলে আসলাম। এত মানুষ যে হাটার জায়গা পর্যন্ত নেই। বসা তো দুরের কথা। ঠিক করলাম দোতালায় যাব। সেখানেও একি অবস্থা। চলে গেলাম ছাদে। সেখানে গিয়ে বসার জায়গা পেলাম। জীবনের প্রথম জুম্মার নামায পড়বো, তাও আবার হারাম শরীফে। খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। নামাযের অনেক দেরি। অথচ সবাই বসে আছি কখন নামায শুরু হবে তার আশায়। কত ধরনের মানুষ। কালো, মোটা, ফর্সা, চিকন, লম্বা, খাটো। পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষকে যদি কেউ একসাথে দেখতে চায় , তাহলে এই হারাম শরীফে এসে দাড়ালেই হবে। কেউ কাউকে চিনি না, জানি না, তারপরেও মনে হয়েছে কত আপন। নিজের পাশের মানুষটার যাতে সমস্যা না হয়, সবাই এটা খেয়াল রাখে।

বসে থেকে কেউ দোয়া পড়ছে, কেউ একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে। কেউ খাচ্ছে। যখন কেউ কিছু খায় , তখন পাশের মানুষটাকেও তারা আপ্যায়ন করে। খুব ভাল লেগেছিল ব্যাপারটা। সবচেয়ে ভাল লেগেছে ইন্দোনেশিয়ানদের। সব সময় হাসিখুশী অবস্থায় থাকে এবং খুব হেল্পফুল। আমি সবসময় তাদের পাশে বসার চেষ্টা করতাম। একবার আসরের নামাযের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার পাশের এক ইন্দোনেশিয়ান মহিলা দেখি তার হিজাবটা এমন ভাবে টেনে নিল যে, তার চেহারা থেকে শুরু করে সব শরীর ঢেকে ফেললো। একটু পর দেখি ‘পিস পিস’ আওয়াজ। আর তার হিজাবের কিছু অংশ ভিজে যাচ্ছে। আমি বুঝতেই পারছি না কি হচ্ছে। তার পাশের জন আমার অবাক চাহনি দেখে মিট মিট করে হাসছিল। কিছুক্ষন পর মহিলা তার হিজাব ঠিক করে বসলেন এবং দেখলাম যে তার হাতে স্প্রে করার বোতল। সে স্প্রে করে পানি হাতে নিয়ে এতক্ষন ওজু করছিল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমি বড় একটা হাসি দিলাম। সেও প্রতি উত্তরে হাসলো। বেশ ভালো বুদ্ধি তো ! ওজু ভেঙ্গে গেলে জায়গাতে বসেই ওজুর ফরজগুলো পালন করে ওজু করে ফেলা যায়। খেয়াল করলাম সব ইন্দোনেশিয়ানদের সাথে একটা পানি স্প্রে করার বোতল থাকে। তাদের দেখা দেখি আমিও পরে কিনে নিয়েছিলাম। এখনো কোথাও ট্র্যাভেল করার সময় সেটা সাথে রাখি। এটা খুবই ভালো বুদ্ধি, কারণ হারাম শরীফে যে ভিড় থাকে, একবার ওজু করার জন্য উঠে গেলে আর সেখানে জায়গা পাওয়া যাবে না।

একজন বয়স্ক মহিলাকে দেখেছিলাম যার কপালে ছেলেদের যেমন নামায পড়লে দাগ হয়, সেরকম দাগ হয়ে আছে। আমি উনার চেহারা কোনদিন ভুলবো না। কপালের ঐ দাগ দেখলেই বুঝা যায় দাগটা নামাযের কারনেই হয়েছে। চোখে নির্লিপ্ত ভাব। নাইজেরিয়ান ছেলেমেয়েদের দেখতাম কি লম্বা আর গায়ে কি শক্তি। আসলে নাইজেরিয়ান বলা সঠিক হবে না, আফ্রিকান কোন এক কান্ট্রি বলাই মনে হয় শ্রেয়। তারা তাদের জিনিসপত্র মাথায় করে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এত তাড়াতাড়ি হাটে কিন্তু মাথার জিনিস পরে যায় না। আমরা দু’ ভাই বোন খেয়াল করলাম যে, তাদের বডি যতই নড়াচড়া করুক না কেন, ঘাড় সব সময় সোজা থাকে। ডানে বামে তাকালেও ঘাড় সোজা রেখে ঘুরায়। তাদের অনেকের ঘাড়ে, মুখে বিভিন্ন চিহ্ন দেখতাম। এসব চিহ্ন দিয়ে নাকি বুঝা যায় কে কোন গোত্রের।

ইরানীদের দেখতাম সবসময় চুপচাপ। দল বেধে থাকলেও তারা নিজেদের দোয়া দরুদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কিছু ইরানী মহিলাদের কপালে, গালে ট্যাটু আঁকা দেখে অবাক হয়েছি। আর রাশিয়ান বেল্টের দিকের দেশগুলোর মানুষদের দেখতাম ছেলে মেয়ে সব এক কাতারে দাড়িয়ে নামায পড়তে। এক কাতারে কীভাবে ছেলে মেয়দের নামায হয় তা আল্লাহ্‌ই জানেন। ব্যাপারটা শুধু মক্কাতেই ঘটেছে। কারণ মদিনাতে মেয়েদের নামাযের জায়গা একদম আলাদা করা। ছেলেরা চাইলেও ঢুকতে পারবে না। আমার ভাই আর আমি খেয়াল রাখতাম ছেলে মেয়ে মিশানো কাতারে যেন না দাড়াই। অনেক সৌদি পুলিশ তাদের সরিয়ে দিত। পুলিশ চলে গেলেই আবার তারা হাজির হতো।

একবার এক আফ্রিকান মহিলা কাতার ফাঁকা না রাখার জন্য সবাইকে ইশারা করে বলছিল। তারপর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার ডান পায়ের সাথে তার বাম পা ঘষা দিয়ে রাখলো। আর অন্যদিকে আরেক মহিলা এত দূরে দাঁড়িয়েছিল যে তাকেও উনি কাছে ডাকছিল। কাছে না আসায় তার বাম পায়ের সাথে আফ্রিকান মহিলা নিজের ডান পা এমনভাবে রাখলো যে, সে কি নামায পড়বে নাকি জিমন্যাস্টিক খেলবে বুঝতে পারছিলাম না। আমার তো হাসি চলে আসছিল। এমনিতেই আমার একটুতেই হাসির ব্যারাম আছে। এত বড় পা ফাঁকা করে সে যে কীভাবে নামায পড়লো , আল্লাহ্‌ মালুম।

কত বয়স্ক মানুষ যে দেখেছি হজ্জে। হজ্জ করতে গায়ে অনেক অনেক শক্তি লাগে। তারপরেও আল্লাহ্‌ এদেরকে দিয়ে হজ্জ করিয়ে নিয়েছিলেন। একবার আমার পাশে এক কাজাখিস্তানের এক মহিলা বসেছিলেন। তার ব্যাগ দেখে বুঝেছিলাম তিনি কাজাখিস্তানের। মাগরিবের সময় কাছে চলে আসছিল। নামাযের জায়গা সহজে কেউ ছাড়ে না। তাই অনেক আগে থেকেই সবাই জায়নামাজ বিছিয়ে জায়গা দখল করে বসে থাকে। জায়নামাজের এই এক সুবিধা, জায়গা দখল করা যায়। আমার বাম পাশে তখনো ফাঁকাই ছিল।

আমার বাম পাশে তখনো ফাঁকাই ছিল। কোন ফাকে সেই মহিলা এসে বসলেন খেয়াল করিনি। একটু পর আমার খিদা লাগার কারনে ব্যাগ থেকে খেজুর আর বাদাম বের করে খেলাম। পাশের সবাইকেও দিলাম। ঐ মহিলার পোশাক আশাক দেখে মনে হলো উনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না। আমি যেহেতু তাকে খেজুর আর বাদাম দিলাম উনিও তার ব্যাগ থেকে নাড়ু টাইপের একটা জিনিস বের করে দিলেন। দেখে খেতে ইচ্ছা করলো না। আবার ভাবলাম মাত্র দুই তিনিটা নাড়ু উনার কাছে। হয়তো এটাই উনার এক মাত্র খাবার হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। উনার চাহনি দেখে মনে হলো খুব শখ করে দিলেন , না নিলে মনে কষ্ট নিতে পারে। তাই ভেঙ্গে অর্ধেক নিলাম। উনি নিজের ভাষায় আর আকার ইংগিতে বুঝাতে চেষ্টা করলেন কি দিয়ে সেটা বানিয়েছেন। আমার হাতের বাদাম আর খেজুর দেখিয়ে ইশারা করলেন। নাড়ুটা মুখে দিয়েই বুঝলাম ছাতু, খেজুর,বাদাম আর গুড় দিয়ে বানানো। কেন জানি না উনি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। খেয়াল করলাম তার একটা পা স্বাভাবিক, আরেকটাতে গোদ রোগ। এত মোটা আর ফুলে আছে পা টা। ভাবলাম কীভাবে এই পা নিয়ে এত হেঁটে উনি হজ্জ করবেন ? যখন নামায পড়লাম উনার উঠা বসায় কষ্টের চিহ্ন আমি দেখিনি। হয়তো আমার নামায পড়ার মনোযোগের কারণে সেভাবে উনাকে খেয়াল করিনি। সালাম ফেরানোর পর দোয়া পড়তে পড়তে পাশে তাকাতেই দেখি উনি নেই। আশেপাশে তাকালাম , কোথাও নেই। এত তাড়াতাড়ি ঐ পা নিয়ে উনি কীভাবে চলে গেলেন আমি আজও ভাবি সেটা। কত অসুস্থ মানুষকে দেখেছি, কত দরিদ্র মানুষকে দেখেছি। অবাক হয়েছি। অনেকের থাকার জায়গা নেই। মসজিদে থেকেছেন তারা। আল্লাহ্‌ এমন সব মানুষদেরকে দিয়েও হজ্জ করিয়েছেন।

এক চাইনিজ মহিলাকে দেখেছিলাম সবাইকে একটা করে মলম দিতে। প্রায় অনেকেরই ঠাণ্ডা লাগে সেখানে। আমিও একটা পেয়েছিলাম। কেউ কিছু দিলে খুশী মনে নিতাম, যাতে সেই ব্যক্তি কষ্ট না পায়। আমি সহজে কোন মলম লাগাই না। তারপরেও নিয়ে রাখলাম। রাতে রুমমেট ঘুমাতে পারছিল না ঠাণ্ডার জন্য। নিঃশ্বাসই নিতে পারছিল না। আমি সেই মলম বের করে দিলাম তাকে। শান্তিতে ঘুমালো তখন। অবাক লেগেছে আল্লাহ্‌র প্ল্যান দেখে। কোথাকার কোন চাইনিজ এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমার রুমমেটের জন্য মলম পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

শুধু তাওয়াফ করার সময় মানুষের ধাক্কাধাক্কি ভালো লাগেনি।হাজরে আসওয়াদ কে ধরার জন্য, কাবা ঘরকে ধরার জন্য আরেকজন মানুষকে কষ্ট দিয়ে, ব্যথা দিয়ে মানুষ কি পুণ্য অর্জন করতে চায় তা আমার জানা নেই। এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যাদের ৬/৭ টা বাচ্চা। বাবা-মা তাওয়াফ করে, সায়ি করে, বাচ্চাগুলোও সাথে সাথে থাকে। এক বাবাকে দেখেছি দু মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তাওয়াফ করতে।
বিচিত্র সব মানুষ, বিচিত্র তার জীবন যাপন। শুধু এক আল্লাহ্‌র ডাকে সবাই এক সাথে হয়েছে। জুম্মার নামাযের প্রথম রাকআতে সূরা ফাতেহার পর সবাই একসাথে যখন ‘আমিন’ বলে উঠলো , সে সময়ের সেই শিহরণ আজীবন মনে থাকবে।

হজ্জের ৮ম শিক্ষা– জীবনে কখনো আগে জামাতে নামায পড়িনি। খোলা আকাশের নীচে এত মানুষের ‘আমিন’ বলা শুনে মনে হয়েছিল, মুসলিম উম্মাহ যদি আজ ঐক্য বজায় রাখতো , তাহলে আজ পৃথিবীর বুকে মুসলিমদের এত দুঃখ আর বঞ্চনা থাকতো না। কালো, ফর্সা , ধনী, গরীব, লম্বা, বেঁটে, সুস্থ, অসুস্থ, যুবক, বৃদ্ধ যে যেমনই হোক না কেন, হজ্জের সময় সবাই কিন্তু হাসিখুশি অথবা সামান্য মন মালিন্য হলেও এক থাকার চেষ্টা করেছে। অন্যের ভুলগুলো নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করেনি। অনেক কিছুই ছাড় দিয়েছে। শুধু হজ্জের সময় না করে সারা বছর যদি এমন মন মানসিকতা আমাদের থাকতো ! এক  কষ্টে কোটি মুসলিম ভাই এগিয়ে আসতো , যেমন করে আল্লাহ্‌র আনুগত্য স্বীকার করে একসাথে আমরা ‘আমিন’ বলেছিলাম।

পর্ব-৭

 

মানবসেবায় আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাচ্ছেন তুর্কি ফার্স্টলেডি


নারী সংবাদ


মানব সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের সম্মাননা পদক পাচ্ছেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি আমিনা এরদোগান। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার লন্ডনে এই পুরস্কারটি গ্রহণ করার কথা তার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব মুসলিম ফিলানথ্রপিস্ট’ দুই বছর পর পর গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের আয়োজন করে। এবার এই ফোরামে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন আমিনা এরদোগান।

দাতব্য কাজে তুর্কি ফার্স্টলেডির অবদান বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তার ভুমিকা আন্তর্জাতিক মহলে খুবই প্রশংসিত হয়েছে, যার জন্য এই পদক পাচ্ছেন তিনি। ২০১২ সালে প্রাণনাশের হুমকি উপেক্ষা করেও তিনি মিয়ানমার সফর করেন শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানোর জন্য। সে সময় তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের খবর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠিটির জন্য সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে আমিনা এরদোগানই পথপ্রদর্শক।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরে আমিনা এরদোগান(ফাইল ছবি)

এছাড়া গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বাস্তুদের জন্য ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন। কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর সিএনএন ইন্টারন্যাশনালে একটি নিবন্ধ লেখেন আমিনা এরদোগান যার শিরোনাম ছিলো, ‘রোহিঙ্গাদের আকুতি উপেক্ষা করতে পারে না মুসলিম বিশ্ব’। এই লেখার মাধ্যেমে তিনি আরো একবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থা তুলে ধরেন।

এছাড়া জাতিসঙ্ঘে তুর্কি পার্লামেন্ট মিশনের আয়োজনে ‘উদ্বাস্তুদের প্রতি সংহতি: ভূমধ্যসাগর, আফ্রিকা ও মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানেও তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। এখানেই থেমে থাকেননি তুর্কি ফার্স্টলেডি, বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের কাছে তিনি চিঠি লেখেন রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হতে।

এছাড়া ২০০৯ সালে ফিলিস্তিন ও গাজা উপত্যকায় আক্রমণের পর মানবিক দুরাবস্থার বিষয়টি নিয়েও কাজ করেন আমিনা এরদোগান। ওই সময় তিনি ইস্তাম্বুলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন যার শিরোনাম ছিলো, ‘শান্তির পক্ষে ফিলিস্তিনি নারীরা’। ওই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবি জানানো হয় সম্মেলন থেকে।

তুরস্কের অভ্যন্তরেও আমিনা এরদোগান প্রচুর দাতব্য কাজ করেছেন বিভিন্ন সময়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করেছেন তিনি। তুরস্কে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের জন্যও বিভিন্ন দাতব্য রয়েছে তার।

উল্লেখ্য, গ্লোবাল ডোনারস ফোরাম হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব মুসলিম ফিলানথ্রপিস্ট’এর একটি দ্বিবার্ষিক উদ্যোগ। বিভিন্ন দেশের দাতা, ব্যবসায়ী, সামাজিক উদ্যোক্তা ও সরকারের প্রতিনিধিরা অংশ নেবে এই ফোরামে। বিশ্বে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক বিভেদের উর্ধ্বে উঠে অর্থসামাজিক বন্ধন তৈরির এর উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপকরণ বৃদ্ধি এর উদ্দেশ্য। গত ৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপী গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের ৮ম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। ব্রিটিশ মিউজিয়াম, হাউজ অব লর্ডস ও ম্যানসন হাউজের মতো জায়গাগুলোতে আলোচনা হবে মানুষের মর্যাদা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানব কল্যানে অনুদানের বিষয় নিয়ে।

সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

মেয়েকে অপহরণের দায়ে মায়ের জেল


নারী সংবাদ


ব্রিটিশ নারী ইন্ডিয়া ফোর্ড স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর একজন আমেরিকানকে বিয়ে করেন এবং তার সাথে আলাস্কাতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন।

সেইসাথে নিজের দুই সন্তানকেও তিনি আলাস্কায় নিয়ে যাবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু সেজন্য তিনি বেছে নেন নিজ সন্তানদের অপহরণের বুদ্ধি।

এরপর ফোর্ড তাদের নিয়ে যায় সিটকাতে। সেটা ২০১৫ সালের অক্টোবরের কথা।

৩৪ বছর বয়সী ওই নারী স্বীকার করেছেন, তিনি তার দুই শিশু সন্তানকে অপহরণ করেছেন এবং তাদের আলাস্কা নিয়ে গেছেন নিজের নতুন সঙ্গীর সাথে বসবাসের জন্য।

কিন্তু এর কিছুই জানতেন না বাচ্চাদের বাবা, তার অনুমতিও নেয়া হয়নি।

ফোর্ডকে এই অপরাধের জন্য তিনবছর ছয়মাসের কারাদণ্ডের সাজা দেয়া হয়েছে।

প্রায় ১০ বছর আগে বাচ্চাদের বাবার সাথে সাক্ষাত হয়েছিল ইন্ডিয়া ফোর্ডের। তাদের ঘরে দুই কন্যা সন্তান হয়। তবে স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক ভেঙে যায় ২০১২ সালে।

তখন ডার্টফোর্ডের এক পারিবারিক আদালত রায়ে বলেছিল, বায়োলজিক্যাল বাবা-মাকে এই দুই শিশুর দায়িত্ব পালন করতে হবে।

শুনানিতে আদালত বলে, বাবা-মাকে মেয়েদের একজনের পাসপোর্ট সংরক্ষণ করতে হবে। ফোর্ড তখন দ্বিতীয় সন্তানের পাসপোর্ট ‘হারিয়ে গেছে’ উল্লেখ করে একটি নতুন পাসপোর্ট তোলেন।

তিনি এরপর একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেন এবং পরের বছর শিশুদের আলাস্কা নিয়ে যাওয়া হয় । সেটা ছিল পারিবারিক আদালতের রায় এবং ভরণপোষণ সংক্রান্ত আদেশের লঙ্ঘন।

এরপর বাচ্চাদের বাবা আদালতের দ্বারস্থ হন তার সন্তানদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে।

পরবর্তীতে ফোর্ডকে গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়।

বাচ্চারা এখনো তাদের সৎ বাবার সাথে আলাস্কাতে আছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

“মেঘমাল্য” রূপদাতা ফারিয়া


ফাতেমা শাহরিন


ফারিয়া ইসলাম শশী-University of Liberal Arts Bangladesh থেকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় (Human Resource Management) এমবিএ শেষ করেছেন গত বছর। Summerfield International School এর সাথে যুক্ত আছেন প্রায় দুই বছর। বর্তমানে তার ব্যস্ততা নিজেরই প্রতিষ্ঠিত “মেঘমাল্য”র সাথে।

ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত ফারিয়ার মুল আকর্ষণ ছিল দেশীয় সংস্কৃতিতে লালিত গহনা , ছিমছাম হলেও তারা যেন স্বমহিমায় অনিন্দ্য সুন্দর। প্রত্যেকেই যেন নিজে থেকেই গল্প বলে। কিন্তু এমন গহনা মেলা ভার। তাই নিজের জন্য, সবার জন্য  নতুনভাবে কিছু নিয়ে আসা, হারিয়ে যাওয়া সেই হাজার বছরের সংস্কৃতিকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার অদম্য ইচ্ছা থেকেই জন্ম হল “মেঘমাল্য”র ।

ফারিয়ার ভাষ্যমতে,  “প্রায় বছরখানেক আগের কথা শুরুটা ছিল হুট করেই, মূলত চাকরির বাইরে নিজের আলাদা সত্ত্বা বানানোর জন্যই ছিল উদ্যোগটা নেওয়া। গহনা নিয়ে আমার উৎসাহের মূল কারণ ছিল আংটি- নানা ধরণের এন্টিক আংটির প্রতি ছিল আমার আকর্ষণ। সেই থেকে গহনা নিয়ে কাজ করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। নিজের ছোট পুঁজি নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পটা হয়তো সেই থেকেই শুরু। কাউকে না জানিয়েই হুট করে কিনে আনলাম বেশ কিছু গহনা। সেখান থেকেই কিভাবে জানি শুরু হয়ে গেল সবকিছু।”

তবে বর্তমানে তার লক্ষ্য “মেঘমাল্য”কে আরো সম্প্রসারিত করা। এজন্য অতি শীঘ্রই তিনি অলংকার তৈরিতে মন দিচ্ছেন। পাশাপাশি নিজস্ব আউটলেট বানানোর কাজ চলছে।

নারী হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়াটাকে কতোটুকু চ্যালেঞ্জিং বলবেন ?

এ প্রসঙ্গে ফারিয়া বলেন , “যেকোনো নতুন কিছু তৈরিতে , স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কোন কাজ করা কখনই মসৃণ নয়। তবে এর আনন্দ অতুলনীয়। নিজের ভালোবাসার কাজ করতে পারাটাই এর পারিশ্রমিক। তবে কখনই হাল ছাড়া যাবে না। আপনার সময় আসবেই। আসলে সবকিছুর মূলকথা হচ্ছে ইচ্ছা, পরিশ্রম এবং ভালবাসা। যেকোনো কিছুর মূলে থাকে ইচ্ছাশক্তি। সাথে অবশ্যই আপনার নিজের কাজকে ভালবাসা চাই , আর তারপর চাই এগিয়ে যাওয়ার জন্য একনিষ্ঠ একাগ্রতা ও পরিশ্রম। সফল আপনি হবেনই, সফল আপনিই হবেন। সকলের জন্য “মেঘমাল্য”র পক্ষ থেকে একরাশ শুভকামনা।

ফেসবুক লিংক:

https://m.facebook.com/meghmalya/

“মেঘমাল্য”র কিছু সামগ্রীর ছবি ১:

 

নারীর আকাশে উজ্জ্বল ‘শুকতারা’


তাসলিমা সুলতানা


ছোট থেকেই ভাবতেন ভিন্ন কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলা। যার পরিচিতি এখন দেশ ছাড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। নারীরাও যে বিশ্ব দরবারে সমান তালে ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেটবিশ্ব ‘শাসন’ করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছেন শুকতারা। তিনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের আয়শা রহমান শুকতারা।
স্কুল জীবন থেকেই ভলিবল-হ্যান্ডবলে ছিল তার পারঙ্গমতা। স্কুলেরই এক শিক্ষিকার পরামর্শে হাতে তুলে নেন ব্যাট-বল। পরিবারকে রাজি করানোর ভারও নেন ওই শিক্ষক। তবে বাবারও স্বপ্ন ছিল, যদি বাংলাদেশে কখনো নারী ক্রিকেট দল হয়, তার মেয়ে সেখানে খেলবে। বাবার স্বপ্নের পথেই যেনো পা বাড়ালেন মেয়ে শুকতারা। শুরু হলো ক্রিকেটের পানে ছুটে চলা।
ভাগ্য এতটাই পক্ষে ছিল যে, কিছুদিনের মধ্যেই খুলনা বিভাগে নারী ক্রিকেটার হান্ট শুরু হলো। শুকতারার থেকে যেনো তার বাবাই বেশি রোমাঞ্চিত এই খবরে। ফুটবলার বাবার মেয়ে ক্রিকেটার হবেন, এই স্বপ্ন তিনি সফল হতে দেখছিলেন খোলা চোখেই। নিজেই মেয়েকে নিয়ে গেলেন বাছাই পর্বের জন্য। বাছাই পর্ব পার হয়ে গেলেন খুব সহজেই। জাতীয় দলের পথটা গেল সহজ হয়ে।
বাছাই পর্ব পার হওয়ার পর একটি ওপেন টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন শুকতারা। এরপরই এলো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ। ভালোবাসা থেকে যে ক্রিকেটের শুরু সেটিই হয়ে গেল শুকতারার পেশা। অন্য কিছু করার আর চিন্তাই আসেনি মাথায়। হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান শুকতারা ক্রিকেট খেলাটা বেশ উপভোগ করে চলেছেন। বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদেশে জয় নিয়ে ঘরে ফিরছেন তিনি।
বললেন, খুলনাকে অনেকেই ক্রিকেটের আঁতুরঘর বলেন। এখানে জন্ম মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ বাংলাদেশের আরো অনেক তারকা ক্রিকেটারের। পারিবারিক উৎসাহ ও সামাজিক বাধা না থাকায় নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি।
২০০৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে শুরু করলেও পথ যেনো সামনে এগোচ্ছিলো না। খেলছেন ঠিকই কিন্তু বের হতে পারছিলেন না হারের বৃত্ত থেকে। নারী ক্রিকেট নিয়ে নেই তেমন কোনো আলোচনা, নেই কোনো পরিকল্পনাও। তবু দলের প্রতিটি সদস্যের মতোই হাল ছাড়েননি শুকতারাও।
তার ভাষায়, সবার মনেপ্রাণে বিশ্বাস ছিল, এক দিন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এমন কিছু করে দেখাবে যেখান থেকে শুধুই আলোই ছড়াবে, অন্ধকার আর ছুঁতে পারবে না তাদের।
আর সেই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলার ফসল হিসেবেই যেনো পেয়েছেন এশিয়া কাপের শিরোপা, আয়ারল্যান্ড সিরিজ জয়, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে হয়েছে সেরা দল । শুকতারা অন্তত এটাই মনে করেন, দলের প্রতিটি সদস্যের অখ- বিশ্বাস, একাগ্রতা ও পরিশ্রমই আজকের নারী দলের সাফল্যের মূলমন্ত্র।
দলের খারাপ সময়টা যেমন দেখেছেন তেমনি দেখছেন ভালো সময়টাও। নিজের জায়গা নড়বড়ে হওয়াটাও দেখেছেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাদ পড়েন দল থেকে। সে বছর জায়গা হয়নি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও। নিজেকে বুঝিয়েছেন। শক্ত থেকেছেন। পরিশ্রম করেছেন। আবারও ফিরেছেন দলে। নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান।
এখন পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। দল ও ক্রিকেটারদের উন্নতির পাশাপাশি নারী ক্রিকেট দলের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিন্তাধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে সুযোগ-সুবিধা। দেশের ও বিদেশে প্রিয় ক্রিকেটারের নাম জানতে চাইলে যেনো একটু দ্বন্দ্বেই পরে যান শুকতারা।
একটু ভেবে বললেন, ‘আসলে ফলো তেমন কাউকে করা হয় না তবে দেশের মধ্যে তামিম (ইকবাল) ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। দেশের বাইরে শচীন টেন্ডুলকার ও রিকি পন্টিং। দল হিসেবে তেমন কোনো দেশ প্রিয় নেই। আমি আসলে সব দেশের সব ধরনের ক্রিকেট দেখি। সেখান থেকেই অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি।’
মারকুটে এই ব্যাটসম্যান দারুণ একজন ফিল্ডারও। একই সঙ্গে একজন নারী, একজন স্ত্রী। ক্রিকেটার শুকতারার স্বামীও জড়িয়ে আছেন ক্রিকেটেই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রশিক্ষক ইফতেখারুল ইসলাম। দু’জন মানুষ ক্রিকেট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত সময় কাটান যে নিজেদের দেওয়ার মতো সময়টা পান না।
তাই ভবিষ্যতে নিজেদের সময় দিতে চান শুকতারা। ক্যারিয়ার শেষে জীবনটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চান এই সফল নারী।
॥ তাসলিমা সুলতানা ॥
ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ছোট থেকেই ভাবতেন ভিন্ন কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলা। যার পরিচিতি এখন দেশ ছাড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। নারীরাও যে বিশ্ব দরবারে সমান তালে ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেটবিশ্ব ‘শাসন’ করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছেন শুকতারা। তিনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের আয়শা রহমান শুকতারা।
স্কুল জীবন থেকেই ভলিবল-হ্যান্ডবলে ছিল তার পারঙ্গমতা। স্কুলেরই এক শিক্ষিকার পরামর্শে হাতে তুলে নেন ব্যাট-বল। পরিবারকে রাজি করানোর ভারও নেন ওই শিক্ষক। তবে বাবারও স্বপ্ন ছিল, যদি বাংলাদেশে কখনো নারী ক্রিকেট দল হয়, তার মেয়ে সেখানে খেলবে। বাবার স্বপ্নের পথেই যেনো পা বাড়ালেন মেয়ে শুকতারা। শুরু হলো ক্রিকেটের পানে ছুটে চলা।
ভাগ্য এতটাই পক্ষে ছিল যে, কিছুদিনের মধ্যেই খুলনা বিভাগে নারী ক্রিকেটার হান্ট শুরু হলো। শুকতারার থেকে যেনো তার বাবাই বেশি রোমাঞ্চিত এই খবরে। ফুটবলার বাবার মেয়ে ক্রিকেটার হবেন, এই স্বপ্ন তিনি সফল হতে দেখছিলেন খোলা চোখেই। নিজেই মেয়েকে নিয়ে গেলেন বাছাই পর্বের জন্য। বাছাই পর্ব পার হয়ে গেলেন খুব সহজেই। জাতীয় দলের পথটা গেল সহজ হয়ে।
বাছাই পর্ব পার হওয়ার পর একটি ওপেন টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন শুকতারা। এরপরই এলো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ। ভালোবাসা থেকে যে ক্রিকেটের শুরু সেটিই হয়ে গেল শুকতারার পেশা। অন্য কিছু করার আর চিন্তাই আসেনি মাথায়। হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান শুকতারা ক্রিকেট খেলাটা বেশ উপভোগ করে চলেছেন। বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদেশে জয় নিয়ে ঘরে ফিরছেন তিনি।
বললেন, খুলনাকে অনেকেই ক্রিকেটের আঁতুরঘর বলেন। এখানে জন্ম মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ বাংলাদেশের আরো অনেক তারকা ক্রিকেটারের। পারিবারিক উৎসাহ ও সামাজিক বাধা না থাকায় নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি।
২০০৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে শুরু করলেও পথ যেনো সামনে এগোচ্ছিলো না। খেলছেন ঠিকই কিন্তু বের হতে পারছিলেন না হারের বৃত্ত থেকে। নারী ক্রিকেট নিয়ে নেই তেমন কোনো আলোচনা, নেই কোনো পরিকল্পনাও। তবু দলের প্রতিটি সদস্যের মতোই হাল ছাড়েননি শুকতারাও।
তার ভাষায়, সবার মনেপ্রাণে বিশ্বাস ছিল, এক দিন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এমন কিছু করে দেখাবে যেখান থেকে শুধুই আলোই ছড়াবে, অন্ধকার আর ছুঁতে পারবে না তাদের।
আর সেই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলার ফসল হিসেবেই যেনো পেয়েছেন এশিয়া কাপের শিরোপা, আয়ারল্যান্ড সিরিজ জয়, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে হয়েছে সেরা দল । শুকতারা অন্তত এটাই মনে করেন, দলের প্রতিটি সদস্যের অখ- বিশ্বাস, একাগ্রতা ও পরিশ্রমই আজকের নারী দলের সাফল্যের মূলমন্ত্র।
দলের খারাপ সময়টা যেমন দেখেছেন তেমনি দেখছেন ভালো সময়টাও। নিজের জায়গা নড়বড়ে হওয়াটাও দেখেছেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাদ পড়েন দল থেকে। সে বছর জায়গা হয়নি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও। নিজেকে বুঝিয়েছেন। শক্ত থেকেছেন। পরিশ্রম করেছেন। আবারও ফিরেছেন দলে। নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান।
এখন পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। দল ও ক্রিকেটারদের উন্নতির পাশাপাশি নারী ক্রিকেট দলের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিন্তাধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে সুযোগ-সুবিধা। দেশের ও বিদেশে প্রিয় ক্রিকেটারের নাম জানতে চাইলে যেনো একটু দ্বন্দ্বেই পরে যান শুকতারা।
একটু ভেবে বললেন, ‘আসলে ফলো তেমন কাউকে করা হয় না তবে দেশের মধ্যে তামিম (ইকবাল) ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। দেশের বাইরে শচীন টেন্ডুলকার ও রিকি পন্টিং। দল হিসেবে তেমন কোনো দেশ প্রিয় নেই। আমি আসলে সব দেশের সব ধরনের ক্রিকেট দেখি। সেখান থেকেই অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি।’
মারকুটে এই ব্যাটসম্যান দারুণ একজন ফিল্ডারও। একই সঙ্গে একজন নারী, একজন স্ত্রী। ক্রিকেটার শুকতারার স্বামীও জড়িয়ে আছেন ক্রিকেটেই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রশিক্ষক ইফতেখারুল ইসলাম। দু’জন মানুষ ক্রিকেট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত সময় কাটান যে নিজেদের দেওয়ার মতো সময়টা পান না।
তাই ভবিষ্যতে নিজেদের সময় দিতে চান শুকতারা। ক্যারিয়ার শেষে জীবনটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চান এই সফল নারী। সূত্র: বাসস।

 

পানির বোতল, গ্লাস এবং কিছু উপলব্ধি…


আফরোজা হাসান


গতকাল দুপুরের খাবারটা আমাকে একা একাই খেতে হয়েছিল! একা টেবিলে বসে খেতে ভালো লাগে না তাই খাবারের প্লেট নিয়ে নাকীবের কাছে গিয়ে বসেছিলাম! নাকীব কার্টুন দেখছিল আর জাম্পিং জাম্পিং করছিল! খাবার কিছুটা শুকনো ছিল তাই মুখে দেবার পর একটু পানি পান করে নেবার প্রয়োজন অনুভব করলাম! নাকীবকে বললাম যে, বাবা আম্মুতাকে একটু পানি এনে দাও। টেবিলে থাকা পানির বোতলে অল্প একটুখানি পানি ছিল! নাকীবকে বললাম পানি ভরে আনতে! কিন্তু যেহেতু স্পাইডারম্যান কার্টুন চলছিল! যে কার্টুনের এক মূহুর্তও নাকীব মিস করতে নারাজ! তাই যে বোতল উপুড় করে সবটুকু পানি গ্লাসে ঢাললো! কয়েকবার ঝাঁকিও দিলো বোতলে যাতে পানির শেষ বিন্দুটিও গড়িয়ে গ্লাসে এসে পড়ে! এভাবে সবটুকু পানি গ্লাসে ঢেলে আমার কাছে নিয়ে এসে হাসি দিয়ে বলল, দেখেছো গ্লাস প্রায় ভরে গিয়েছে! পানি বড় বোতলে ছিল তো তাই অনেক কম দেখাচ্ছিলো বুঝলে আম্মুতা! কিন্তু দেখো গ্লাসে ঢালার পর কত বেশি দেখাচ্ছে! কথা শেষ করে আমার হাতে গ্লাস দিয়ে নাকীব আবারো নিজের কাজে ফিরে গেলো! কিন্তু আমি একবার বোতল আরেকবার গ্লাসের দিকে তাকালাম! আমার কাছেও মনেহলো বড় বোতলে থাকার কারণেই আসলে মনেহচ্ছিলো খুবই অল্প পানি! অথচ যখন গ্লাসে ঢালা হলো ঠিকই প্রায় পুরো গ্লাসটি ভরিয়ে দিলো সেই অল্প একটু পানিটুকুই।

অনেকগুলো ভাবনা এসে জড়ো হয়েছিল মনের মাঝে! গত পরশু আমার সাথে সংঘটিত আরেকটি ঘটনা মনে পড়লো। নাকীবকে আনতে যাচ্ছিলাম স্কুল থেকে। পথে ছোট্ট একটা বাচ্চাদের পার্ক আছে। প্রায়ই পার্কটির সামনে একজন বয়স্কা মহিলা বসে থাকেন। রাস্তা দিয়ে চলা প্রতিটি পথিকের দিকে তাকিয়ে মুখের কাছে হাত নিয়ে ঈশারায় বলেন, খাওয়ার জন্য তাকে কিছু দিতে। অন্যের দুঃখে দুঃখী এবং অসহায়কে সাহায্য করতে হবে এই বোধ নাকীবের মনে জাগ্রত করার লক্ষ্যে প্রায়ই ঐ মহিলাকে সাহায্য দেয়াই ওকে দিয়ে। তখন দান-সাদাকা বিষয়েও বুঝিয়ে বলি! যাকাতের ব্যাপারে বোঝাতে গিয়ে বলেছিলাম যে, পাঁচ ইউরো আমাদের কাছে হয়তো তেমন একটা ম্যাটার না! কাউকে দিতেও তেমন কষ্ট হয় না যেহেতু আল্লাহ রহমতে আমাদের কাছে আরেকটু বেশি অর্থ আছে! কিন্তু যার কাছে একটি ইউরোও নেই সে এই পাঁচ ইউরো দিয়েই অনেক কিছু করে ফেলতে পারবে ইনশাআল্লাহ! এইজন্যই আল্লাহ যাদের অর্থ আছেন তাদেরকে একদমই অর্থহীন যারা তাদেরকে সাহায্য করতে বলেছেন! যাইহোক, আমাদের বাসা থেকে নাকীবের স্কুলে যাওয়ার পথটুকু বেশ ঢালু। যাবার সময় নীচের দিকে নামতে অনেক সহজ কিন্তু ফেরার পথে উপরের দিকে উঠতে বেশ কষ্ট। গত পরশু আমার শরীরটা সামান্য অসুস্থ্য ছিল। ফেরার পথে তাই বাসে আসার ইচ্ছে ছিল। তাই যাবার পথে সেই মহিলাটি যখন সাহায্য চাইলেন নাকীবকে দিয়ে সাহায্য দেয়ানো সম্ভব হবে না ভেবে আমিই দিতে গেলাম। কিন্তু পার্স খুলে দেখি টাকা না নিয়েই বেড়িয়ে পড়েছি! আর খুচরা পয়সা যা আছে সব মিলিয়ে এক ইউরো পুরো হতেও কয়েক সেন্থ কম। মহিলার দিকে তাকিয়ে, ‘সরি আপনাকে পরে দেব’ বলে পা বাড়াতে যাচ্ছিলাম উনি তখন বলল, তোমার কাছে যা আছে তাই আমাকে দাও।

খুব সংকোচ হচ্ছিলো এত কম সাহায্য দিতে। কিন্তু আবার নাও বলতে পারলাম না। উনাকে তখন পার্স থেকে সবগুলা খুচরা পয়সা বের করে দিলাম। মহিলার চোখে মুখের সেই আনন্দের কথা কোন বাক্যে প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না। কোন কিছু পেয়ে হারিয়ে ফেলার পর, আবারো ফিরে পাবার আনন্দ বোধকরি এমনই হয়। ফেরার পথে বাসের জানালা দিয়ে দেখলাম মহিলাটি বসে রুটি খাচ্ছেন। উনার মুখের কাছে হাত নিয়ে ক্ষুধার অনুভূতি প্রকাশের কথাটি মনে পড়ে গেলো। মনে পড়লো পঞ্চাশ সেন্থ দিয়ে নরম্যল মানের একটি রুটি কিনতে পাওয়া যায়, সত্তর সেন্থ দিয়ে অনেক মজার ডোনাট কেনা সম্ভব, চল্লিশ সেন্থ দিয়ে ছোট এক বোতল জ্যুস পাওয়া যায়। এমন আরো কিছু খাবার আছে যা খুব সহজেই কিনে খাওয়া সম্ভব ঐ পয়সা দিয়ে যা দিতে আমি লজ্জিত ও সংকোচ বোধ করছিলাম। সেদিন সারাটা দিনই আমার মাথায় এই চিন্তাটা ঘুরপাক খেয়েছে যে, কেন আমি একদম কিছু না দেবার চেয়ে কিছু অন্তত দেয়া থেকে বিরত থাকতে চেয়েছিলাম?! আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়েছে দানের পরিমাণ কোন ম্যাটার না। তোমার কাছে যা বিন্দু একজন অসহায়ের কাছে সেটাই হয়তো সিন্ধু হয়ে ধরা দেবে! অথচ তারপরও কেন আমি সংকোচ করেছিলাম এই ভাবনাটা খোঁচাতে লাগলো থেকে থেকে! “অল্প দান করতে লজ্জাবোধ করো না! কেননা বিমুখ করা অপেক্ষায় অল্প দান অনেক ভালো!” আমার সবচেয়ে প্রিয় বাণীর মধ্যে তো হযরত আলী(রা)বলা এই বাণীটাও আছে। তাহলে কেন এই অনুভূতিটা ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল আমার?!

সব মিলিয়ে একসময় মনেহলো দান-সাদাকা বিষয়ে অনেকদিন কোন আলোচনা শোনা হয়নি, নিজেরও করা হয়নি! বেশ কিছুদিন এই বিষয়ে কোন চর্চা হয়নি বলেই কি তবে অল্প কিছু দান করতে আমি লজ্জিত বোধ করেছিলাম?! একটা গল্পের কথা মনে পড়লো তখন। এক যুবক ইসলামী আলোচনার মজলিসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল ঘুরে ফিরে রোজ প্রায় একই ধরণের কথা শুনতে হয় সেজন্য। সেই মজলিস যিনি পরিচালনা করতেন তিনি একদিন যুবকের বাড়ি এলেন। কেন মজলিসে যায় না সেটা শোনার পর উনি মুখে কিছুই বললেন না। শুধু চলে যাওয়ার সময় ফায়ার প্লেস থেকে একটা কয়লার টুকরো লাঠি দিয়ে বের করে আনলেন। কিছুক্ষণ জ্বলে থাকলো ঠিকই কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে কয়লার টুকরোটি উত্তাপহীন হয়ে গেলো। যুবকও উপলব্ধি করলো সে কি ভুল করতে বসেছিল। ইসলামি মজলিস থেকে দূরে থাকার ফলে তার ঈমানের দীপ্ততাও তো এমনি করে মিলিয়ে যেত এক সময়! অথচ নিয়মিত মজলিসে গেলে ঈমানের উজ্জ্বলতা হ্রাস পাবার সম্ভাবনা কম এবং বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক! আমি নিজেও আবারো উপলব্ধি করলাম যে, শরীয়তের বিষয়সমূহকে যত বেশি চর্চা করা হয় ব্যবহারিক জ্ঞান ততই শানিত থাকে। কর্মের আগে নিয়্যাত নির্ধারণ হয়ে যায়, নিয়্যাতে খুলুসিয়াত বৃদ্ধি পায়। অন্তরও অনেক বেশি তৃপ্ত ও প্রফুল্ল থাকে।

ভেবে দেখলাম ঐ মহিলাকে দান করার মূল উদ্দেশ্যেটা আসলে নাকীবকে দান করে দেখানো ও শেখানোতেই পরিণত হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে! একজন অসহায় মানুষকে আমি সাহায্য করতে পারছি! এই যে ক্ষমতাটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে দিয়েছেন সেজন্য শুকরিয়া আদায় করার কথা তাই স্মরণে আসেনি আমার! ঐ মহিলার জায়গায় আজ আমিও থাকতে পারতাম! এই উপলব্ধি থেকে কৃতজ্ঞ হতেও ভুলে গিয়েছিলাম! শুধু ভাবছি আমার এই অকৃতজ্ঞ দান থেকে কি সত্যিই আমার ছেলে কোন শিক্ষা নিতে পেরেছে গত দুই মাসে?! আমলের প্রতিদান দেয়া হবে নিয়্যাতের ভিত্তিতে! আমার নিয়্যাত কি ছিল? যতই ভাবছি, নিজেকে বিবেকের আয়নায় দেখার চেষ্টা করছি, ততই লজ্জিত বোধ করছি! কাজের পেছনে আসলে নিয়্যাতটা কি সেটা চিন্তা করতে অনেক সময় আমরা ভুলেই যাই। অভ্যাস বশত, বা করতে হবে তাই করে ফেলি। এরফলে হয়তো আমাদের অনেক ভালো কাজ প্রকৃত এবং কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনতে ব্যর্থ হয় আমাদের জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের হৃদয়ে লুকায়িত আমলের ভিত্তিতে আমাদেরকে পুরষ্কৃত করবেন! কোন কাজ করার আগে তাই পুনঃপুন নিয়্যাত বিবেচনা করে দেখা উচিত আমাদের। কেননা নিয়্যাতের স্বচ্ছতার অভাবে আমাদের অনেক কল্যাণমূলক কাজ হয়তো বিফলে চলে যাবে! রবের কাছে তাই আজ আকূল হয়ে প্রার্থনা করছি, প্রবাহমান দীনতার স্রোতে অন্তরের আলো মোর নিভু নিভু, তাওফীক দিও নিয়্যাতের খুলুসিয়াত অর্জনে হে দয়াময়, পরম করুণাময় প্রভু……..।

 

বালিয়াকান্দিতে গৃহবধূকে অপহরণের পর গণধর্ষণ


নারী সংবাদ


কিস্তির টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে এক গৃহবধূকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে ঢাকায় নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানায় ধর্ষণ ও সহায়তা করার অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
বালিয়াকান্দি থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, ওই গৃহবধূ গত ৯ আগস্ট উপজেলার নারুয়া বাজার ব্র্যাক অফিস থেকে কিস্তির ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে তেকাঠি গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় তেকাঠি জামে মসজিদের সামনে পৌঁছলে কিছু দুর্বৃত্ত তাকে জোরপূর্বক সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকায় নিয়ে তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে সিরাজ মণ্ডল ও আরো দুইজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে। দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণের ফলে গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ১১ আগস্ট রাত ৯টার দিকে তাকে মোক্তার হোসেনের বাড়িতে আনলে তার অভিভাবকেরা খোঁজা পেয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে ওই গৃহবধূ বাদি হয়ে গত ১৪ আগস্ট রাজবাড়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে উপজেলা খালিয়া মধুপুর গ্রামের তায়জাল মণ্ডলের ছেলে সিরাজ মণ্ডল, সেকেন মণ্ডলের ছেলে মোস্তফা মণ্ডল, তায়জাল মোল্যার ছেলে ইউনুছ মোল্যা, বড়হিজলী গ্রামের মৃত সামাদ মোল্যার ছেলে মোক্তার হোসেনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিচারক বালিয়াকান্দি থানার ওসিকে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। সূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ডিমভাজির নানান রেসিপি


 ঘরকন্যা


স্প্যানিশ অমলেট

উপকরণঃ
» ১ টি চিকেন সসেজ টুকরো করে কাটা
» ১টেবিল চামচ জলপাইয়ের তেল
» ১/২ চা চামচ পাপরিকা
» মোজারেল্লা চীজ হাফ কাপ
» ১ টি বড় পেঁয়াজ পাতলা করে কাটা
» ২ টি রসুন কুঁচি করে কাটা
» ১টি ক্যাপসিকাম স্লাইস করে কাটা
» ১ টি টমেটো স্লাইস করে কাটা
» ৬ টি ডিম
» ১/২ কাপ পানি

প্রস্তুত প্রণালীঃ
মাঝারি তাপে প্রথমে একটি নন স্টিক ফ্রাই প্যান গরম করে নিতে হবে। চিকেন সসেজটি বাদামী রঙ না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে সসেজ উঠিয়ে রেখে প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন ও ক্যাপসিকাম ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। একটি বাটিতে ডিম ফেটে নিয়ে তাতে পানি, লবণ, মরিচ,টমেটো ও পাপরিকা মিক্স করে নিতে হবে। প্যানে তেল গরম করে দিয়ে ডিমের মিক্সার ঢেলে দিতে হবে।এর উপর সসেজের টুকরাগুলো ও চীজ দিয়ে ভাজুন। ভাজা হলে পেঁয়াজ, রসুন ও ক্যাপসিকাম উপরে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ডিম-টমেটো পাকোড়া

উাপকরণঃ
» বড় টমেটো ২টি।
» চালের গুঁড়া ১ কাপ।
» কাঁচামরিচ ৩টি।
» ডিম ২টি।
» পেঁয়াজ বড় ১টি।
» ধনেপাতা-কুচি আধা আটি।
» অল্প হলুদ।
» বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ।
» তেল ও লবণ পরিমাণমতো।

পদ্ধতিঃ
টমেটো ও পেঁয়াজ কুচি করে এতে ২টি ডিম ফেটিয়ে মেশান। চালের গুঁড়া ও ধনেপাতাও এই মিশ্রণে মেশান। হলুদ, লবণ ও বেকিং পাউডার দিন। কড়াইতে তেল গরম করে হাতায় করে গোলা তুলে লাল করে ভেজে নিন। এরপর সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

জিডিপিতে নারীর অবদান বিস্ময়করভাবে বাড়ছে


নারী সংবাদ


নারীদের সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় লিখেছেন ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ তাঁর কবিতার এই মর্মবাণী শতভাগ সত্যি প্রমাণ হলো বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে। নারীরা শুধু সংসারে পারঙ্গম নয়,ঘরে-বাইরে সব খানে তাদের দৃপ্ত ও সাহসী পদচারণায় সমৃদ্ধ হচ্ছে পরিবার,সামাজরাষ্ট্র,সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির গবেষণায়ও এর প্রতিফলন দেখা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলধারার কর্মক্ষেত্র গুলোতে নারীর অবদান বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ি ১ কোটি ৬৮ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে কাজ করছেন। অর্থনীতিতে নারীর আরেকটি বড় সাফল্য হলো, দেশের সামগ্রীক উৎপাদন ব্যবস্থায় নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়েছে। বর্তমানে জিডিপিতে নারীর অবদান ২০ শতাংশের কিছুটা বেশী। কিন্তু বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীর অবদান স্বীকার করলে এই হার দাঁড়ায় ৪০ শতাংশের উর্ধ্বে।
অর্থনীতির অন্যতম রপ্তানীমুখী পোষাক খাতের মোট কর্মীর প্রায় অর্ধেকই এখন নারী। এ খাতে ৫০ লাখ ১৫ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে নারী ২২ লাখ ১৭ হাজার। তাছাড়া, কৃষি, হাস-মুরগি, মৎস্য খামার, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা, আটি সংশ্লিষ্ট খাতে আউট সোর্সিংসহ যাবতীয় কাজে সম্পৃক্ত নারীরা নীরবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বাকিদের মধ্যে কেউ উদ্যোক্তা, কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রশাসনে, প্রকৌশলী, কেউ শিক্ষক, কেউ বৈমানিক, কেউ পুলিশ, কেউ সৈনিক হিসেবে বিভিন্ন স্তরে কর্মরত আছেন।
বর্তমানে কৃষি খাতে নিয়োজিত আছেন ৯০ লাখ ১১ হাজার নারী। এ ছাড়া শিল্প ও সেবা খাতে কাজ করেন যথাক্রমে ৪০ লাখ ৯০ হাজার এবং ৩৭ লাখ নারী। দেশের কলকারখানায় পুরুষের চেয়ে এক লাখ বেশি নারী শ্রমিক কাজ করেন। চলতি বছরের হিসেব অনুযায়ি কারখানায় ২১ লাখ ১ হাজার ৮৩০ জন নারী শ্রমিক রয়েছেন আর পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৭ জন। গত এক যুগে বাংলাদেশে কৃষির নারীকরণ হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মতোই দেশের কৃষি খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন নারীরা। বিবিএসের তথ্য হলো গত ১০ বছরে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। আর পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে দুই শতাংশ। খাদ্যনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৫ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ বাড়িতে মুরগি পালন নিয়ন্ত্রণ করেন নারী। ছাগল ও গরু পালনে নারীদের নিয়ন্ত্রণ ৫৫ শতাংশ।
রপ্তানিমুখী শিল্পে নারী শ্রমিকের চাহিদা ও অংশগ্রহণ সর্বাধিক। তৈরি পোশাক শিল্প, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া, হস্ত শিল্পজাত দ্রব্য, চা ও তামাক শিল্পসহ অন্যান্য পণ্য। মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫ ভাগ অর্জনকারী শিল্পের মূল চালিকাশক্তিই হচ্ছে নারী। পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত চার মিলিয়ন বা ৪০ লাখ কর্মীর মধ্যে ৮০ ভাগই নারী। মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে ১৫.৮ শতাংশ, ২০০২-০৩ সালে ২৬.১ শতাংশ, ২০০৫-০৬ সালে ২৯.২ শতাংশ এবং ২০১১-১২ সালে ৩৯.১ শতাংশ।
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহস্থালিতে নারীর যে কাজ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় না সেই শ্রমের প্রাক্কলিত বার্ষিক মূল্য (২০১৩-১৪ অর্থবছর) জিডিপির ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অবশ্য গৃহস্থালি কাজে দেশের নারীরা বছরে ১৬ হাজার ৬৪১ কোটি ঘণ্টা সময় ব্যয় করছেন, যার আর্থিক মূল্যমান দুই লাখ ৪৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই আর্থিক মূল্য যোগ হলে নারীর হিস্যা বর্তমানের ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের নারীরা। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের জুনে এ দেশে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার। এর ৯০ শতাংশই নারী গ্রাহক। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের মোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৩৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৮৬০ মিলিয়ন ডলার ৫৭ হাজার ৭২২ জন নারীকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাই ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেন। এটি একটি বিরাট সাফল্য।
নারী শ্রমশক্তির ৬৮ শতাংশই কৃষি উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত। দেশের কৃষি আর গৃহে নারীরা দৈনন্দিন যে কাজ করে তার অবদান অসামান্য হলে এর স্বীকৃতি নেই। জিডিপিতেও এই অবদান উল্লেখ করা হয়না। নারীদের এই দুই খাতের অবদানকে স্বীকার করে নিলে দেশের সামগ্রীক উন্নয়নে, অর্থনীতিতে নারীর অবদান আরো উচ্চস্থানে যাবে। সেই হিসেবে জিডিপিতে নারীর আর্থিক অবদান ২০% হলেও বাস্তবে এই পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো নারীদের অবদানকে স্বীকার করে নিয়ে সমাজ বিনির্মাণ ও জাতির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে তাদের আরো বেশী অংশগ্রহণ এবং সম্পৃক্তায় এগিয়ে যাবে উন্নত সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সেই প্রত্যাশা থাকলো।
সুত্র: বাসস: ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

 

আকর্ষণীয় মানুষ হবেন কিভাবে


মেইক ইউরসেলফ


পৃথিবীর সব মানুষই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চান। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা সবারই থাকে।
এক ঘেয়ে হবেন না। নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার খুব সহজ এই কাজগুলো কাজ করবে অবশ্যই।

আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক,

ভাল শ্রোতা

একজন ভলো শ্রোতা সমস্যা সমাধানে অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হন। চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। ভালো শ্রোতা সহজেই অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারেন। ভালো শ্রোতাকে সবাই পছন্দ করে। অজানা অনেক কিছু জানা যায়। অনেক ধৈর্যশীল হন।

অন্যদের বিষয় আগ্রহ

পারস্পারিক পরিচর্যার জন্য উত্তম প্রস্তুতির জন্য অন্যদের প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখানো। যখন আমরা উত্তমভাবে প্রস্তুতি নিই, তখন আমরা আমাদের উপস্থাপনা নিয়ে কম চিন্তা করে থাকি আর এর ফলে গৃহকর্তার প্রতি আমরা বেশি মনোযোগ দিতে পারি। তখন অন্যের আচরণ এর প্রতি আগ্রহ দেখানো উচিত।

বই পড়ুন

আপনি যদি বই পড়ার ভক্ত হন তাহলে যত বই পড়বেন ততই আরও পড়ার ইচ্ছে জাগবে। আর এ অতৃপ্তি থেকেই আপনার বই পড়ার আগ্রহ বাড়তে থাকবে। এতে যেমন জ্ঞানার্জন হবে তেমন আপনি অনাবিল আনন্দও লাভ করবেন।

পরিচ্ছন্ন রাখুন

মানুষকে আকর্ষণ করার অন্যতম একটি উপায় হলো পরিচ্ছন্ন থাকা। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা। সব সময় সুন্দর হালকা কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। পোশাক পরিচ্ছদেও রাখুন পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া।

সূত্র:Health knowledge

 

পাবলিক টয়লেট সমস্যা নারীদের


মৌসুমী ইসমাত আরা (নারী সংবাদ)


স্কুলগুলোতে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। স্কুলের চারপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ রকমই একটি স্কুলের কাছাকাছি রাস্তার পাশে বসে আছেন মায়েরা। কেউ কেউ খবরের কাগজ, আবার কেউ কেউ বিছানার চাদর নিয়ে এসেছেন সাথে, তা বিছিয়ে বসেছেন। এখন ঘর থেকে বাইরে বের হলেই পানির বোতল, ছাতা আর নাস্তার বক্স মহিলাদের অনুষঙ্গ। অনেকে আবার একটু ছায়ার আশায় কাছাকাছি আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনগুলোর ফটকের পাশে গিয়ে বসেছেন। তিন ঘন্টার পরীক্ষা। আসতে হয়েছে হাতে একটু সময় নিয়েই। যানজট এখানে নিত্যনৈমিত্তিক, তাই পরীক্ষার সময় কোন অভিভাবকই ঝুঁকি নিয়ে চান না। তাই বাসা থেকে একটু আগেই বের হতে হয়। আবার পরীক্ষা শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের হল থেকে বের হতেও আধ ঘন্টা সময় লেগে যায়। তারপর বাড়ি ফেরা। সবমিলিয়ে ৬/৭ ঘন্টার ধাক্কা। এই পুরোটা সময় বাথরুমে না গিয়ে থাকাটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। অপেক্ষমান মায়েদের অনেকেই রীতিমত বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এটি স্কুলগুলোর সামনে অপেক্ষমাণ নারীদের টয়লেট সমস্যার নৈমিত্তিক চিত্র।
এটি কেবল সমস্যাই না একই সঙ্গে বিড়ম্বনাও। তাহলে এখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও দেখেন না। আর পাবলিক টয়লেট তো আশেপাশে নেই বললেই চলে।
পাবলিক টয়লেটের সমস্যাটি কোনভাবেই নতুন নয়, অনেক পুরনো একটি বিষয়। ২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় জানা যায়, ঢাকায় ৫০ লাখ পথচারীর জন্য টয়লেট আছে মাত্র ৪৭টি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যবহারের অযোগ্য। কতগুলো আবার বন্ধ থাকে। যেগুলো চালু আছে সেগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বলতে কিছু নেই। প্রায় পৌনে দুই কোটি ঢাকাবাসীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী হলেও তাদের জন্য পৃথক কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। টয়লেটের অভাবে ঢাকার অলিতে-গলিতে মানুষ প্র¯্রাব পায়খানা করে থাকে। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক দূষণ হচ্ছে। টয়লেট নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের শেষ নেই।
ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উন্নতমানের বেশ কয়েকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি চালুও হয়ে গেছে। বাকিগুলোর কাজ শেষ হলে টয়লেট সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাথরুমের ব্যবস্থা থাকে না। আবার মহিলাদের পক্ষে সবসময় দূরে দূরে যাওয়াও সম্ভব নয়। ছয়-সাত ঘন্টা সময় কিন্তু বেশ দীর্ঘ একটি সময়। অভিভাবকরা কেউই নিশ্চিন্তে কোথাও বসতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘসময় টয়লেটে না গেলে রোগ সংক্রমণ হতে পারে এবং ইউরিন ইনফেকশন ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মহিলাদের অনেককেই বয়স অথবা শারীরিক সমস্যার কারণে পড়তে হয় অস্বস্তি আর লজ্জার মুখে। তাই অনেক সময় অনেক নারীকে ভবন মালিকদের কাছে অনুনয়-বিনয় করতে হয় তাদের ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য।
অনেক বয়স্ক মহিলা অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ডায়াপার ব্যবহার করে। কিন্তু এই সমস্যা হাতে গোণা। ডায়াপার সহজলভ্য পণ্য নয় সবার জন্য, আবার এ দেশের মহিলারা এটি ব্যবহারে একেবারেই অভ্যস্ত নয়। শয্যাশায়ী রোগীরা অনেকেই এখন ডায়াপার ব্যবহারে কিছুটা অভ্যস্ত হয়েছেন। কিন্তু অবশ্যই ডায়াপার পাবলিক টয়লেটের কোন বিকল্প নয়। পরিচ্ছন্নতার জন্য পানির ব্যবহার এ দেশের অরিহার্য ।
যেখানে গণসমাবেশের প্রয়োজন থাকে, সেসব স্থানে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করা জরুরি।
ফার্মগেটে এক বিকেলে ঘরমুখী মানুষের প্রচন্ড ভিড়। বাসগুলোও থামার কোন চেষ্টা না করেই শাঁ করে ছুটে চলে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। একটি দুটি লেগুনা যাত্রী নিয়ে আসছে, কিন্তু ভেতর থেকে যাত্রীরা ফার্মগেটে নামার আগেই তাতে লাফিয়ে উঠে পড়ছে। ভিড়ের মধ্যে বিভিন্ন বাসের মহিলা যাত্রীও অনেক। নিরূপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকেই এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে একজন বয়স্ক নারীকে একটু এগিয়ে গিয়ে ইন্দিরা রোডের এক ভবনের দারোয়ানকে অনুরোধ করলেন তাকে একটু ওয়াশরুম ব্যবহারের অনুমতি দিতে। দারোয়ান টেলিফোনে কারো অনুমতি নিয়ে মহিলাকে তাদের জন্য নির্দিষ্ট বাথরুমে নিয়ে গেলেন। দেখাদেখি আরো কয়েকজন মহিলাও এই সুযোগটুকু নিলেন। অপরিচিত কাউকে সবসময় অনুমতি দেয়া সম্ভব হয় না বাড়ির দারোয়ানের পক্ষে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে এসব জায়গায় যথোপোযুক্ত পাবলিক টয়লেট স্থাপন।
পহেলা ফাল্গুনের উৎসব অথবা পহেলা বৈশাখের বিশাল আয়োজন হাজার হাজার মানুষ খোলা জায়গায় অংশ নেন। সেখানেও নারী ও শিশুদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এমন অনেকেই আছেন, যাদের বয়স একটু বেশির দিকে, ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে এবং এসব উৎসবে গাড়ি অনেক দূরে রেখে অনেকখানি পথ হেঁটে যেতে হয় অনুষ্ঠানস্থলে। এসব কারণে তারা এখন ইচ্ছে থাকলেও উৎসবে অংশ নিতে পারেন না। এ সমস্যা সমাধানে সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এসব বিনোদোনে অংশ নিতে চান না। সমস্যাগুলোর সাথে মানসম্মানের বিষয়টিও জড়িত। সেখানে আয়োজকরা ওপেন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করেন, সেখানে অবশ্যই পাবলিক টয়লেট বড় একটা চোখে পড়ে না।
কিছুদিন আগে রাজধানীর একটি রাজনৈতিক সমাবেশে দূর থেকে আসা নারী কর্মীদের এই বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। সমাবেশস্থলের কাছে বেশ কয়েকটি মোবাইল টয়লেট ছিল। কিন্তু এই মোবাইল টয়লেটগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো ছিলো না। চার চাকার বিকশা ভ্যানের ওপরে স্থাপিত মোবাইল টয়লেটগুলোর উচ্চতা একটি বড় রকমের ঝামেলার বিষয় এবং সেখানে ওঠার জন্য ছিল একটি উঁচু প্লাস্টিকের টুল। টুলে পা রেখে সরাসরি ঢুকে পড়তে হয় টয়লেটের ভেতরে। পুরো বিষয়টি অস্বস্তিকর।
গুলিস্তানে এবং ফার্মগেটে স্থায়ী টয়লেট রয়েছে কিন্তু সবাই এগুলোর খবর জানেন না। আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় স্থায়ী ওয়াশরুম থাকলেও সেগুলো ব্যবহার উপযোগী নয়। কোনটার দরজা-জানালা সব ভাঙ্গা, কোনটায় পানির ব্যবস্থা নেই, কোনটায় আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। স্থায়ী ওয়াশরুমগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ছিন্নমূল ভবঘুরে মানুষ আর নেশাখোরদের একটি দল। মহিলাদের অনেকেই, বিশেষ করে যারা জানেন, সেখানে বাথরুম আছে, তারা নেশাখোরদের উপদ্রবের ভয়ে যেতে চান না।
এসব সমস্যার ভালো সমাধান হচ্ছে নাÑ এটা দুর্ভাগ্যজনক। মোবাইল টয়লেটগুলো কেমন হলে তা সবাই ব্যবহার করতে পারবেন এবং স্থায়ী টয়লেটের সংখ্যা আরো বাড়ানো ও এগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে আগ্রহীদের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এতে করে সর্বস্তরের মানুষের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ কমবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যেমন মোবাইল টয়লেট থাকতে পারে, সেভাবে জেলা শহরগুলোতেও একই ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। রেলস্টেশনে ও বাস স্ট্যান্ডগুলোর টয়ালেটগুলোকে পরিচ্ছন্ন ও ব্যববহার উপযোগী রাখার জন্য প্রয়োজন কেবল একটু সজাগ দৃষ্টি।
এসব টয়লেট যাতে প্রয়োজনে ছিণœমূল মানুষও ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে পারে। টয়লেট ব্যবহারের বিনিময়ে অর্থের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। যারা মোবাইল টয়লেট চালুর উদ্যোগ নেবেন বা নিচ্ছেন, তারা যেন অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করেন তার সুষ্ঠু তত্ত্বাবধান থাকতে হবে। আর এতে করেই গড়ে উঠতে পারে একটি পরিচ্ছন্ন এলাকা, পরিচ্ছন্ন দেশ।
পাবলিক টয়লেট পরিচ্ছন্ন ও তাতে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকলে তা একদিকে যেমন সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দেবে, অন্যদিকে পবিত্রতাও নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি মা-বোনেরা রেহাই পাবেন অবশ্যম্ভাবী বিড়ম্বনার হাত থেকে। তাই সুস্থ নাগরিকের সুস্থ জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।

 

রাজধানীতে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন


নারী সংবাদ


রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী এলাকায় স্বামীর মারধরে শাহিনা আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে সেকশন-১ এর ডি-ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর টিনশেড বাড়ি থেকে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, শাহিনার বাড়ি মিরপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কাউন্দিয়া এলাকায় এবং তার স্বামী নিরবের বাড়ি ভোলায়। ওই দম্পতির তিনটি সন্তান রয়েছে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নিহতের স্বামী নিরব কবুতর বেচাকেনা করে। যৌতুকের জন্য সে শাহিনাকে প্রায়ই মারধর করত। যৌতুকের টাকা না পেয়ে নিরব এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
শাহআলী থানার এসআই খন্দকার মনিরুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার রাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে শাহিনা ও নিরবের মধ্যে ঝগড়া বাধে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে নিরব স্ত্রী শাহিনাকে মারধর করে এবং গলায় তার পেঁচিয়ে ধরলে শাহিনা শ্বাসরোধে মারা যান। ঘটনার পর থেকেই নিরব পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাবু মিয়া বাদি হয়ে নিরবকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৭


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

উমরাহ্‌ করার জন্য তাওয়াফ করা শুরু করলাম। সাতবার কাবা ঘরকে ঘড়ির উল্টা দিকের মত করে ঘুরলে একবার তাওয়াফ করা হয়। এত মানুষের ভিড়ে আমরাও আস্তে আস্তে মিশে গেলাম। ঘোরার সময় যা দোয়া মনে আসছিল তাই পড়ছিলাম। সাথে বই ছিল, সেটা দেখেও দোয়া পড়ছিলাম।

আমি যতবার তাওয়াফ করেছি ততবার আমার ভাইয়ের কষ্ট হয়েছে। মানুষের ধাক্কা যেন না লাগে, সেজন্য সে আমাকে আমার পিছন থেকে তার দু’হাত দিয়ে আগলে রেখে চলতো। আল্লাহ্‌র কি রহমত, এত মানুষের ভিতরে আমার এক ফোঁটাও ধাক্কা লাগেনি। যখনি মানুষের ভিড় দেখেছি তখনই আমি ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়া শুরু করে দিতাম। কখনো জোরে , কখনো বা মনে মনে। আর আল্লাহ্‌ যে কীভাবে এত ভিড়ের মাঝে আমাকে রাস্তা তৈরি করে দিতেন, তা আল্লাহ্‌ই জানেন।

নীচে তাওয়াফের সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতো। যতবার নীচে তাওয়াফ করতাম, ততবার ভিড়ের মাঝে হঠাত করে সামনে ফাঁকা হয়ে যেত আর কোথা থেকে যেন ঠাণ্ডা বাতাস আসতো।

যাইহোক, তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে জমজমের পানি খেয়ে শুরু করলাম সায়ী করা। সায়ী করার সময় আমার হাঁটার স্পীড বেড়ে গেলো। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আর দোয়া পড়ছি। ভাবছিলাম আমরা এখন সায়ী করি টাইলস দেওয়া ঠান্ডা রাস্তায়। আর বিবি হাজেরা (র: ) যখন সাতবার দৌড়িয়েছিলেন সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত ঠিক এই রাস্তাতেই, তখন তো এমন টাইলস দেওয়া রাস্তা ছিল না, ফ্যান আর এসিও ছিল না। প্রখর রোদ্রে পানির খোঁজে বাচ্চাকে রেখে দুই পাহাড়ের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। এসব চিন্তা করতে করতে কেমন এক ঘোর লাগা অবস্থায় ছিলাম আমি। আমার মাঝে সেই হাঁটার জোশ চলে আসছিল। একটা সময় দেখলাম আমাকে পিছন থেকে ডাকা হচ্ছে। আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি দলের অনেক আগে চলে এসেছি। আমার ভাইও আমার সাথে নেই। আবার দলের ভিতর এসে একসাথে সায়ী করা শেষ করলাম।

উমরাহ্‌ শেষ, এখন হোটেলে গিয়ে চুল কেটে এহরাম মুক্ত হবার পালা। হোটেলের পথে যেতেই অনেক নাপিতের দোকান। আমার ভাই এক দোকানে ঢুকলো চুল কাটতে। আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। এত পানির পিপাসা পেয়েছিল যে সামনে কিছু দোকানে গিয়ে জুসের খোজ করছিলাম। ফ্রেশ দুই গ্লাস জুস কিনে আবার আসলাম ভাই যেখানে চুল কাটছিল সেখানে। চুল কাঁটা শেষ নাকি দূর থেকে উকি দিলাম। দোকান খালি। শুধু একজন কাস্টমার। আত্মা ধক করে উঠলো । আমার ভাই গেল কই ? আমি কি ঠিক দোকানের সামনেই আসলাম ? ভাইয়ের নতুন ফোন নাম্বারটাও তো নেওয়া হয়নি। এখন কি করবো ? ভাইকে খুজব নাকি হোটেলে ফিরে যাব ? কয়েক সেকেন্ডের মাঝে এত কিছু ভেবে ফেললাম। ভাবতে ভাবতেই দেখি সেই কাস্টমার নাপিতের সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে। গলা তো ভাইয়ের মতই লাগছে দেখি। দোকান থেকে বের হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বড় এক হাসি দিল। ইয়া আল্লাহ্‌ ! এইটা দেখি আমার ভাই। পুরো বেল মাথা। আমি কি বোকা, তাকে চিনতেই পারিনি। সে যে এমন নেড়া হবে ভাবতেই পারিনি। ভেবেছিলাম চুল ছোট করবে। সে বলেছিল নেড়া হবে না। কিন্তু চুল কাটার সময় সে মত পরিবর্তন করে। আমার জানে পানি ফিরে আসলো। আমার অবস্থা শুনে সে হাসছিল।

হোটেলে গিয়ে সে আমার চুল কেটে দিল। গোসল করেই আবার মসজিদের দিকে রওনা দিলাম জুম্মার নামাজের জন্য। অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছিল মনে। এত সহজে উমরাহ্‌ করে ফেলেছি, ভাবতেই অবাক লাগছিল।

হজ্জের সপ্তম শিক্ষা- মানুষ যখন কোন ভাল কাজ করার চেষ্টা করে, আল্লাহতায়ালা সেই চেষ্টার জন্য কাজটাকে সহজ করে দেন। উমরাহ্‌ শেষে মনে হচ্ছিল, এত সহজ উমরাহ্‌ করা ? আসলে আল্লাহ্‌ই সহজ করে দিয়েছিলেন।

পর্ব-৬

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৬

তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

আমাদের বাস চলা শুরু করলো মক্কার দিকে। পথ আর শেষ হয় না। মরুভূমির মাঝখান দিয়ে পিচ ঢালা রাস্তা। হঠাত করে একটা দুটো বাড়ি চোখে পরে। মাঝে মাঝে উট দেখা যায়। পথেই মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়াতে বাসেই নামাজ পড়ে ফেললাম। আমার ভাই নামাজ পড়ে লম্বা এক ঘুম দিল। আমি চলন্ত বাসে বা ট্রেনে ঘুমাতে পারিনা। অন্ধকার ঘন হয়ে আসাতে দূরে তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছিল না। শুধু মক্কার ভিতরে ঢোকার সময় রাস্তায় যে বড় করে রেহালে কোরআন শরীফ রাখার আকৃতি করে গেইট বানানো হয়েছিল সেটা দেখতে পেলাম। ভাইকে ডেকে বললাম মক্কায় ঢুকে গিয়েছি।

মক্কায় ঢুকেও নিয়মের শেষ নেই। কতবার যে বাস থামলো আর আমাদের মাথা গুনলো আর খাবার দিল, হিসাব নেই। খাবারের বাক্সের মাঝে থাকতো বিস্কিট, খেজুর, মধু আর কেক। প্রথমে একবার দু’বার এই খাবার খিদার সময় ভালোই লাগতো। কিন্তু পরবর্তিতে এই খাবারের বক্স এত পেয়েছি যে কেউ সেধে দিলেও নিতাম না।

মক্কায় যখন আমাদের হোটেলের সামনে এনে রাখা হলো, তখনই হারাম শরীফরে থেকে এশার আজান শুনতে পেলাম। মন তো আর মানে না, মনে হচ্ছিল সব ফেলে ছুটে চলে যাই মসজিদে। কিন্তু উপায় নেই। কিছু ফর্মালিটিস শেষ করে আমাদের মোয়াল্লেম সবাইকে বিশ্রাম নিতে বললেন এবং পরেরদিন সকালের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। সকালে তিনি আমাদের উমরাহ্‌ করতে নিয়ে যাবেন। তারপর আমরা নিজেদের ইচ্ছামত চলাফেরা করতে পারবো।

পরের দিন ছিল শুক্রবার। অদ্ভুত এক ঘটনা হয়েছিল আমাদের। মক্কায় প্রথম নামাজ পড়লাম জুম্মার নামাজ। মদিনায় প্রথম ও শেষ নামাজ পড়েছিলাম জুম্মার নামাজ। আমরা হোটেলে এসেই এশার নামাজ পড়ে শুয়ে গেলাম। ঘুম কি আর আসে। ফজরের নামাজ পড়েই সবাই হোটেলের নীচে চলে আসলাম। আমাদের মোয়াল্লেম আমাদের কে একটা করে কমলা রঙের কাপড়ের টুকরো দিলেন, যেখানে এজেন্সির নাম বড় করে লেখা ছিল। যাতে সবাই এক সাথে থাকতে পারি আর হারিয়ে না যাই দল থেকে, সেজন্য এই ব্যবস্থা।

হোটেল থেকে বের হয়েই ইবরাহীম খলিল রোড। একটু হাঁটলেই হারাম শরিফের দুটো মিনার দেখা যায়। হোটেল থেকে হারাম শরীফ যেতে ৫-৬ মিনিট লাগতো। একটু আগালেই দেখলাম কবুতর চত্বর। মক্কা মদিনায় এত কবুতর দেখেছি, তারা মানুষকে এক ফোঁটাও বিরক্ত করতো না, এমনকি কোথাও বাথরুমও করতো না। আশ্চর্য লেগেছে ব্যাপারটা। নামাজের সময় যখন মানুষজন নামাজ পড়তো , তখন কোথায় যেন এসব কবুতর চলে যেত।

যাই হোক, কবুতর চত্বর পার হতেই উত্তেজনায় বুক কাঁপছিল। আমার ভাই তার ডান হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বলছিল, আপু, আল্লাহ্‌ নিয়ে আসছে আমাদের, আল্লাহ্‌ নিয়ে আসছে। সে যতবার এই কথা বলছিল , ততবার আমি আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলছিলাম। ভাবছিলাম, দুনিয়াতে তো কত লোক আছে, সবার মাঝখান থেকে আল্লাহ্‌ আমাদের এখানে উনার মেহমান করে নিয়ে এসেছেন। এত সম্মান তিনি আমাদের দিয়েছেন। সারা জীবন সেজদায় পড়ে থাকলেও তো এর শুকরিয়া আদায় হবে না।

মসজিদের ভিতর ঢুকলাম। দূর থেকেই একটা পিলারের আড়াল থেকে কালো ঘরটা দেখা যাচ্ছে। আমি লিখে প্রকাশ করতে পারবোনা আমার মনের অবস্থা। অনেক কিছু প্ল্যান করে রেখেছিলাম যে আমি এই দোয়া করবো, সেই দোয়া করবো। আমি সব ভুলে গেলাম। শুধু বলে যেতে লাগলাম আল্লাহ্‌ আমার গুনাহ মাফ কর, প্লিজ মাফ কর। যতক্ষন পর্যন্ত না মন স্থির না হলো, আমি এই একই দোয়া পড়েই যাচ্ছিলাম। মন স্থির হওয়ার পর অন্য দোয়া করেছিলাম। দোয়া শেষে পিছনে ফিরে দেখলাম আমার ভাই তখনো দোয়া করছে। আর আমার দলের লোকেরা নেই। একটু এগিয়ে দেখি তারা সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মাঝে আমার ভাই চলে আসলো।

যে কালো ঘরটা প্রায়ই টেলিভিশনে দেখতাম, সেটা এখন চোখের সামনে। এত সুন্দর ! এত বড় ! তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। আমি সারা জীবন এই ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমার চোখ কখনোই ক্লান্ত হবে না, কোন দিন না।

হজ্জের ষষ্ঠ শিক্ষা- আম্মু বলেছিল, আমরা যেই দোয়াই করি না কেন সেটা কবুল হবে। যা চাই আল্লাহ্‌ সেটাই দিবেন। যখন প্রয়োজন তখন দিবেন। যে জিনিস চাই সেটা যদি আমার দরকার না লাগে, তাহলে যেটা আমার দরকার সেটাই দিবেন। আর এই দুনিয়াতে যদি কিছু না পাই তাহলে পরকালে এই দোয়ার বিনিময় পাবো। মানে দোয়া কবুল হবেই হবে। আমার আব্বু আম্মু সবসময় দোয়া করেছেন যেন আমরা তিন ভাই বোন হজ্জ করতে পারি। আমি নিজেও দোয়া করেছি। আল্লাহ্‌র স্পেশাল রহমতে দোয়া তো কবুল হয়ে গিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি যে বয়সে হজ্জ করতে গিয়েছি সেটা আমার জন্য একদম সঠিক সময়। শারীরিক ও মানসিক ভাবে আমি ছিলাম পরিপুর্ন। আল্লাহ্‌র কাছে চেয়েছিলাম কাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। আল্লাহ্‌ আমাকে সেই ঘরের সামনে নিয়ে দাড়া করিয়েছেন। এত বড় স্বপ্ন পূরণের পর আমার হদয়ে ও মস্তিষ্কে গেঁথে গেল দোয়া কখনোই ব্যার্থ হয় না। কখনোই না।

পর্ব-৫

 

জ্ঞানার্জন আমাকে বিনয়ী করছে তো?


আফরোজা হাসান


ছোটবেলা থেকে যদি জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার থাকে তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তেমনি শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যটা জানা থাকলে জ্ঞানার্জন করাটাও অনেক আনন্দদায়ক হতে পারে। কিন্তু এরজন্য শিক্ষায় থাকতে হবে গভীর নিষ্ঠা। কোনমতে দু’চার দিন শিখেই বাজিমাত করে দেয়া কখনোই সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাব হচ্ছে কোন একদিকে মনকে স্থির রাখতে চেষ্টা করেনা। নানা দিকে মনকে ছড়িয়ে দেয়। তাই শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনা। শিক্ষা দ্বারা না পারে নিজেকে গড়তে, না পারে অন্যকে সাহায্য করতে। আমার মতে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য হতে হবে নিজের পা দুটোকে মাটিতে শক্তভাবে স্থাপন করা। জ্ঞান দ্বারা প্রথমে একনিষ্ঠ ভাবে নিজের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে সবার আগে। তাহলেই কেবল সম্ভব হবে জ্ঞানকে যথাযথ কাজে লাগানো।

মানবজীবনের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য আমাদেরকে নম্র ও বিনয়ী হতে হবে। কারন মানুষ যত নম্র ও বিনয়ী হয় ততই তার মর্যাদা উন্নত হয়। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-“ আমি তাদের পরকালে শাস্তি দেবোনা, যারা উদ্ধত স্বভাবের নয়, আর যারা অন্যের অনিষ্ঠ করার ইচ্ছে পোষণ করেনা।” ঔদ্ধত্য মানুষের চরিত্র মাধুর্য নষ্ট করে, অহংকার বাড়িয়ে দেয়। আর অহংকার মানুষকে অধঃপতনের সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যায়। অহংকার মানুষকে আত্মচিন্তায় বিভোর রাখে। কিন্তু কর্তব্যবোধ ও পরমতসহিষ্ণুতা মানুষকে কল্যাণকামী মানুষে পরিণত করে। কৃতজ্ঞতাবোধ যেমন সকল সৎ গুনের জননী, শিক্ষা তেমন বিনয়ের জননী।

শিক্ষা অর্জনে জ্ঞানের প্রসারতা বাড়ে, আর জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী, নম্র ও ভদ্র হতে শেখায়। যিনি অহংকার পরিত্যাগ করে ফলবান বক্ষের ন্যায় গুনভারে নুয়ে পড়ে এবং ছোট বড়, ধনী দরিদ্র সকলকে সমভাবে ভালবাসতে পারেন তিনিই প্রকৃত মানুষ। অহংকার সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। কেননা আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না। রাসুল সঃ বলেছেন-“ যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য বিনয়ী মনোভাব পোষণ করে, আল্লাহ তাদের সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।” তাই সবার আগে লক্ষ্য রাখতে হবে জ্ঞান বিনয়ী হতে ও নম্র হতে সহায়তা করছে কিনা। কারণ বিনয় ও নম্রতা দ্বারা মানুষ পরম শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করতে পারে।আর উদ্ধত বা অহংকারে বন্ধুও পরিণত হয় শত্রুতে। তাই বিনয় ও নম্রতার প্রয়োজনিতা অপরিসীম।

জীবনের সর্বক্ষেত্রে অবশ্যই বিনয়ী আচরণ করতে হবে কিন্তু সাথে সাথে মনে রাখতে হবে বিনয়ী মানে এমন নয় যে অনুচিত কাজ বা ভ্রান্ত কথা শুনেও চুপ করে থাকবে হবে। মানুষের প্রতি মানুষের সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য, সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য বিনয় ও নম্র ব্যবহার যতখানি প্রয়োজন, ঠিক ততখানিই প্রয়োজন অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। একথা স্মরণ রেখেই নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী হতে হবে।

 

মিতু চলে গেলো


জুয়াইরিয়া জাহরা হক


চাচা দুই দিন পরপর বাসায় আসেন ।
বক্স ভরে খাবার আনেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সব শেষে বাসাটা বদলানোর কথা বলে যান। আমি শুনি। চলে গেলে এক কড়াইয়ে ভাত তরকারি গরম বসাই। জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় প্রতিবারই খাবার পুড়িয়ে ফেলি।
বিল্ডিংটার পাশে একটা নর্দমা। প্রচুর মশা আসে রাত্রে। আমি মশারি টাঙাই না। মিতু থাকলে একদিন পর একদিন টাঙাতেই হত। দিন ভাগ করা ছিলো। যেদিন আমি মশারি টাঙাবো, সেদিন কোলবালিশ আমার। পরেরদিন আবার ওর। হাটু ব্যাথা-কোমর ব্যাথার জন্য মাসে দুই দিন বোনাস। সেদিন মশারিও টাঙানো লাগবে না আবার কোলবালিশও পাবো!
রাতে আমার ঘুম হয় না। বাতি নিভিয়ে দিলে সিলিং এ তারা জ্বলে। সাথে অনেকগুলো গ্রহ। নীলক্ষেত থেকে আলো জ্বলা এই স্টিকারগুলো আমিই এনে দিয়েছিলাম মিতুকে। পকেটে চিরকুট দিয়ে দিতো। টিফিন ক্যারিয়ারে চিঠি লিখে দিতো। শেষমেশ যেদিন মনে করে নিয়ে গেলাম, সেদিন তো কেঁদেই দিলো!
‘দরকার নাই। কেন আনলেন? ফেলে দেন সব ‘, এসব বলার পর চোঁখ মুছতে মুছতে চেয়ার – মোড়া দিয়ে উঠে সিলিংটা আমার সৌরমণ্ডল বানিয়ে ফেললো!
শেষরাতে একটু ঘুম হলে খুব ভাল্লাগে! যদি মিতুকে
স্বপ্নে দেখি! গত সপ্তাহে একবার দেখেছিলাম। কালো শাড়ি গায়ে। ছাদে কাপড় নাড়ছে। কি যে সুন্দর লাগছে!

মিতুর সাথে আমার বিয়েটা দেন চাচা। বাপ-মা মরা ছেলে, নীলক্ষেতের ফটোকপির দোকানের কর্মচারীর জন্য এর চাইতে ভালো রিশতা আর হয় না। মেয়েরও বাপ মা নাই। নানির কাছে থাকে। দেখতে ভয়াবহ সুন্দর। সমস্যা সামান্য, কোন এক বখার সাথে দুই একবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো!
প্রথমে একটু খুতখুত লাগলেও মিতুকে দেখার পর বেমালুম সব ভুলে গেলাম। কোন সুস্থ মস্তিষ্ক এতো সুন্দর মানুষ দেখার পর ঠিক থাকতে পারে না। আমিও পারি নি! হকার্স মার্কেট থেকে সুন্দর দেখে শাড়ি কিনলাম। পায়ের মাপ আন্দাজ করে পুতি বসানো একজোড়া জুতা সাথে মায়ের একটা নাকফুল। ট্রাংক ঘেটে একটা ছোট টিকলিও পাওয়া গেলো!
এই বাসায় মিতুকে নিয়ে উঠি। এক রুমের বাসা এখন আlর পাওয়া যায় না। সাবলেট ভালো লাগে না। কার্ডবোর্ড দিয়ে আলাদা করা। একপাশ থেকে আরেকপাশের কথা দিব্যি শোনা যায়! অনেক কষ্টে শনির আখড়ার এই বাসাটা পেয়েছিলাম।
বাসায় উঠার পর মিতু সুন্দর করে ঘর গুছিয়ে ফেললো। একটা আলনা, একটা ছোট কাঠের টেবিল আর ঘুমাবার জন্য একটা তোষক। এই ছিলো সব মিলিয়ে। কিন্তু কি কারনে যেন ঘরটা অসাধারণ সুন্দর লাগতো!
এখন কেমন এলোমেলো করে রাখি। মিতু থাকলে খুব রাগ করতো। মিতু খুব গোছানো মেয়ে। চলে যাওয়ার দিনও ঘরটা গুছিয়ে রেখেছিলো।
পরিষ্কার মনে পড়ে, আমি রাত করে বাড়ি ফিরেছি। দেখি দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে দেখি ফ্যান ঘুরছে। একটু যেন কেমন লাগলো। মিতু বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছে। ডাক দিতে যেয়ে দেখলাম মুঠ করা একটা কাগজ। হাতে ছোঁয়া লাগতেই বুকটা ধক করে উঠলো! এতো ঠান্ডা কেন!
চিরকুটে কিসব আজেবাজে কথা লিখে রেখেছে! মাফ চেয়েছে। বিয়ের আগের সেই ছেলেটাকে ভুলতে পারেনি! বিষ খেয়েছে!
হাসপাতাল নিবো। হাতে একদম টাকা ছিলো না। আলনার পেছনে একটা মাটির ব্যাংকে মিতুর জমানো টাকা ছিলো। প্রতিদিন আমার থেকে নিয়ম করে ও পাঁচ টাকা নিতো। পাঁচ হাজার টাকা হলে একটা পুরান খাট কেনার প্ল্যান ছিলো।
মিতু জানতে পারলো না ও চার হাজার পঁচাত্তর টাকা জমিয়েছিলো!

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৫


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

বোর্ডিং হয়ে গিয়েছে, ইমিগ্রেশন হয়ে গিয়েছে, বসে আছি প্লেনে উঠার অপেক্ষায়। এর মাঝে ফজরের নামাজের সময় হয়ে গেলো। হ্যান্ডব্যাগ থেকে জায়নামাজ বের করে নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজের জন্য একটা পার্টিশন দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অযু করাই ছিল। পালা করে মেয়েরা সব নামাজ পড়ে নিল। ছেলেরা সবাই জামাত করে নামাজ পড়ে নিল। খুব ভালো লাগছিল। সবাই এহরামের কাপড় পরা।

আমার ভাই তাপস একটু পর পর বলছিল, আপু, কাপড় ঠিক আছে তো ? শরীর দেখা যাচ্ছে না তো ? তার অস্বস্থি কাটে না। সে হজ্জে যাওয়ার আগে নতুন কেডস, মুজা কিনে বাসায় আনে। আমি দেখে বলেছিলাম, তুই সেখানে কেডস নিয়ে কি করবি? সে বললো, কেনো হাটতে হবে না অনেক, কেডস পরে স্পীডে হাটতে পারবো। তখনো সে এহরামের নিয়ম কানুন জানে না। আমি তাকে বললাম, তুই কাফনের কাপড়ের মত দুই টুকরা কাপড় আর দুই ফিতার স্যান্ডেল ছাড়া কিছুই পরতে পারবি না। সে আকাশ থেকে পরলো যেনো। বলে, কি বল এসব? নীচে কিছুই পরা যাবে না ? আমি হাসতে হাসতে শেষ। এখন এয়ারপোর্টে এসে সে অস্বস্থিতে ভুগছে। তার শুধু মনে হচ্ছে শরীর দেখা যাচ্ছে। একটু কেমন বিরক্ত। অথচ এই ছেলে, হজ্জের পড়ে বলেছে, এখন থেকে মাঝে মাঝে এহরামের কাপড় পরে বসে থাকবো। সে খুব সুন্দর করে খুব তাড়াতাড়ি এহরামের কাপড় পরতে পারে।

ফজরের নামাজের পরে প্লেনে উঠার জন্য লাইন দিয়ে আমাদের দাঁড়াতে বলা হোল। একদম প্রথমে এক ভদ্রলোক, তারপর আমি, এরপর আমার ভাই। ভদ্রলোক আগে উঠতে যাবেন প্লেনে, হঠাত কি মনে করে পিছন ঘুরে আমাকে বললেন, আপনি উঠুন আগে। আমার এত খুশী লাগলো। বিসমিল্লাহ বলে উঠে পরলাম সবার আগে। সিট খুঁজে বসে গেলাম। জানালার পাশেই সিট। আহ ! আলহামদুলিল্লাহ্‌, যাত্রা শুরু। আমাদের রুট ছিল ঢাকা থেকে কুয়েত, কুয়েত থেকে জেদ্দা। সকালের আলো চারদিকে দেখা যাচ্ছে। ঢাকা শহর আমাদের নীচে। আমার ভাই জোর করে আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়ে বললো, দেখো, কত সুন্দর। আমার আবার এক্রোফোবিয়া আছে। উপর থেকে নীচে তাকাতে পারি না। আমার ভাই দুষ্টমি করে বলছে, এখন যদি প্লেন ধপ্পাস করে নীচে পরে যায়, তখন কি হবে ? আমি শুধু বললাম, বাজে কথা না বলে দোয়া পড়তে থাক। সে হাসে। তার হাসির শব্দে অন্যরা ফিরে তাকালো আমাদের দিকে। আমাদের এই হজ্জ গ্রুপের মাঝে হাতে গোনা কয়েকজন ছিলাম কম বয়সের। আর সবাই ছিল বয়স্ক মানুষ। আমরা দুই ভাই বোন এত মজা করে, হাসি আনন্দ করে হজ্জ করেছিলাম যে, আমাদের সবাই আপন করে নিয়েছিল।

কুয়েত এয়ারপোর্টে নেমে যারা এহরাম পরেননি তারা এহরাম পরে নিলেন। হাজীদের জন্য যাওয়ার রাস্তা আলাদা। হাজীদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সব ফর্মালিটিস তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলা হোল। সেখানেই যোহরের নামাজ পড়ে আবার প্লেনে উঠলাম। জেদ্দা এয়ারপোর্টে এসে শুরু হোল নিয়ম কানুন। বয়স্কদের খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়। কিন্তু কম বয়সি ছেলেদের দুই হাতের ছাপ নেওয়া সহ হাজারটা নিয়ম কানুন শেষ করে ঢুকতে হোল। আমার ভাইকে বার বার বলে দেওয়া হোল আমাকে একা ছাড়া যাবে না। আসলে তাদেরও কোন দোষ নেই। অনেকেই হজ্জ করতে এসে আর দেশে ফিরে যায় না। অবশেষে ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ খুঁজে চলে গেলাম বাংলাদেশের তাঁবুর কাছে। আমাদের সবার কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে মাথা গুনে গুনে বাসে উঠানোর জন্য লাইন করানো হোল। কতবার যে এরা মাথা গুনে আর লাইন ঠিক করে। এখনো অনেক পথ বাকি, তার মাঝে লেগেছে খিদা। এদের নিয়ম কানুন শেষ হয় না। এই ফাঁকে আসরের নামাজ পড়ে ফেললাম। মোবাইলের সিম কার্ড কিনে আনলো আমার ভাই। আর এর মাঝে এজেন্সির সৌদি মোয়াল্লেমের একেকজন লোক আসে আর নতুন লাইন করা হয়, নতুন ভাবে আমাদের মাথা গুনা হয়।

হজ্জের পঞ্চম শিক্ষা- ধৈর্য। যে যত ধৈর্য ধরতে পারবে , তার তত সমস্যা কম হবে, সমস্যা তাড়াতাড়ি মিটবে। যারা বেশী হুড়াহুড়ি করে , আগে আগে প্লেনে আর বাসে উঠতে গিয়েছে, মাথা গুনার জন্য আর নতুন লাইন হওয়ার জন্য বার বার তারা পিছিয়ে গিয়েছে। অযথা মানুষের হুড়াহুড়ি দেখে অবাক লেগেছে। পরবর্তি সময়ে যে আরো ধৈর্য ধরতে হবে আর বিরক্ত হওয়া যাবে না, তখনই বুঝে গিয়েছিলাম।

চলবে….

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৪

 

যে গল্পটি কারো বোনের নয়

কুশল ইশতিয়াক


ঘটনার দিন, মন্টু যখন মাগরিব নামাজের প্রস্তুতি নেয়, তখন বাড়িতে খবরটা আসে। এরপর আর তার কিছু খেয়াল থাকে না। দৌড়াতে দৌড়াতে ধানক্ষেতের ভেতর নেমে পড়লে, কাদাপানিতে মাখামাখি হয়ে যাওয়া বোনের নগ্ন শরীরের ওপর চোখ পড়ে তার।

মন্টু ডুকরে কেঁদে ওঠে। আদালত তাকে জিজ্ঞাসা করলো- এরপর কী হল?
স্যার, শুয়ারের বাচ্চারা আমার বইনের ইজ্জত লুটছে পরথম। হেরপর জবাই দিছে।
সে তো আপনার বোন নয়।

লাশটা তার বোনের নয়? মন্টু কিছুটা বিভ্রান্ত হয়। লাশটা তাহলে কার, লিপি কোথায়? মন্টু কথাটা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। কিন্তু আদালতকে সে অবিশ্বাসও করতে পারে না। যার কাছে বিচার চাইতে এসেছে সে, তাকে অবিশ্বাস সে কীভাবে করে? যদি অবিশ্বাসই করে, তাহলে তার বিচার চাইতে আসাটাই অর্থহীন। কিন্তু মন্টুর এই বিচার চাইতে আসার প্রয়োজনটুকু আছে। কারণ আদালত ছাড়া মন্টুর অন্য কোথাও যাবার আর জায়গা নেই। কারোই নেই। আদালতের কথা বিশ্বাস করা ছাড়া কীই বা করার আছে, সে ভেবে পায় না।

যান, বাড়ি যান। লাশটা লিপির নয়।

মন্টু কিছুটা ইতস্তত বোধ করে। একবার ভাবে জিজ্ঞাসা করবে, লাশটা আসলে কার? কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে যার আপনজন, সে নিশ্চয়ই লাশটা খুঁজে বের করবে। মন্টু তার জন্য অপেক্ষাও করে। এইবার তার লাশটির জন্য মায়া হয়। কিন্তু পরক্ষণেই লিপির নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটি এই ভাবনাকে ঢেকে দেয়। লিপি তাহলে কোথায়?

লাশটা যে তার বোনের নয়, এ কথা অনেকেই বলেছিল তাকে। এমনকি পাজামার আর ওড়নার রঙ মিলে যাবার পরও। লাশটার ক্ষতবিক্ষত মুখ কিছুতেই আলাদা করে বোঝা যাচ্ছিল না। যদিও কাঁদাপানিতে নেমে মন্টুর বারবার মনে হচ্ছিল এই মুখ লিপির। বোনের মুখ ভাই কী করে ভোলে?

তর মাথা আউলাইছে। এই মাইয়া আমাগো লিপি? জীবনেও না।

গ্রামবাসী সকলে সায় দেয়। সায় দেয় তারা যারা লিপিকে চেনে। তারাও, যারা কখনো লিপিকে দেখে নি। মন্টুর কাছ থেকে তারা জানতে পারে, বিকেলে লিপি পেয়ারা পাড়তে ক্ষেতের ধারে এসেছিল। এ কথা তারা মেনে নিলেও ধর্ষিত লাশটি আসলে অন্য কোনো তরুণীর বলে তারা মন্টুকে আশ্বস্ত করতে চায়।

মন্টু, বাড়িত যা। গিয়া দ্যাখ, লিপি বাড়িত আইছে নি।

এই লাশটা তাইলে কার? মন্টু যে প্রশ্ন আদালতে করতে পারে নি, ঘটনার দিন সে সবার কাছেই করেছে।

মিয়া, তোমার এত খোঁজের দরকার কী? হইব পাশের গেরামের কেউ। তোমার বইনের না হইলেই তো হয়। লাশ যার হউক, তোমার তো কিছু না। যাও, বাড়িত যাও।

মন্টু ভাবতে থাকে, আসলেই, লাশটা লিপির না হলেই তো হয়। যারই হোক, তার কী আসে যায়? তার তো কিছু না।

এ কথা ভাবতে ভাবতে মন্টু বাড়ি ফেরে। কিন্তু লিপি বাড়ি ফেরে না। মন্টুর মাগরিবের নামাজ, এশার নামাজ ক্বাজা হয়ে যায়। রাতের বেলা অস্থির হয়ে তার বোনকে খুঁজতে বের হয় সে। তখন তার আযহার মাষ্টারের কথা মনে হয়।

লাশটি ততক্ষণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে থানায়। উলঙ্গ। ওড়না আর পাজামা পড়ে ছিল ধানক্ষেতে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আযহার মাষ্টারকে মন্টু তার সন্দেহের কথা বলতেই মাষ্টার তাকে একটা রামধমক দেয়। মন্টু এবার ঝরঝর করে কাঁদতে শুরু করে।

চাচা, লিপিরে তো পাইতেছি না।
বকাঝকা করছিলি নি? আযহার মাষ্টার জিজ্ঞাসা করে।
কেউই কিছু কয় নাই।
কারো লগে প্রেম পীরিত ছিল? পলাইছে?

আযহার মাষ্টারের এই সব প্রশ্ন মন্টুর কাছে এই সময় খুব বেমানান লাগে। কিন্তু আযহার মাষ্টারকে সে কিছু বলতে পারে না। এরকম করে সে নিজেও একবার ভাবার চেষ্টা করে। তার মনে পড়ে লিপির সাথে গ্রামের ছোটভাই রফিকের হাসাহাসির একটা দৃশ্য। কিন্তু এই ভাবনা বেশিদূর এগোতে পারে না। বারবার অন্য একটি ভয়, প্রেতাত্মার মতো তার সামনে ঘোমটা দিয়ে এসে দাঁড়ায়।

তখন মন্টু বিষয়টা অন্যভাবে সমাধানের চেষ্টা করে। মনে মনে। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে বা অন্য কারো ভাই এসে দাবী করলে সে নিশ্চিন্ত হতো, যে লাশটা মন্টুর বোনের নয়।

চাচা,মাইয়াডার কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে?
কার?

আযহার যদিও পাল্টা প্রশ্ন করে থতমত খায়, অন্ধকারে মন্টুর মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে তার তেমন একটা সমস্যা হয় না। সে তাই বলে, যা সে জানে। সে বলে যে, সে জানে না।

চাচা লন, একবার থানাত যাই।

মন্টুর এই এত রাত বিরাতে থানায় যাবার প্রস্তাব আযহার মাষ্টারের ঠিক পছন্দ হয় না। তবু এমন দুঃসময়ে মন্টুর এই সরাসরি অনুরোধ পুরোপুরিভাবে এড়ানোও তার পক্ষে সম্ভব হয় না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে বলে- ঠিকাছে, চল যাই।

লাশটিকে একটু আগে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখনও মর্গে চালান করা হয় নি। ত্থানার বারান্দায় লাশটাকে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে হোগল পাটিতে। কিছু ধাড়ি ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে বারান্দার কোনায়, এরা কি জেলের ভাত খেয়ে এরকম হয় নাকি অন্য কিছু খেয়ে, কে জানে। এরই মধ্যে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে লাশটা থেকে, একটা মানুষ মারা গেলেই সুগন্ধি ছড়াবার বদলে সাথে সাথে কী করে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এই বিষয়টা মন্টুর ঠিক বোধগম্য হয় না। সে তড়িঘড়ি করে একবার লাশের দিকে তাকায়, তারপর দ্রুত মুড়িয়ে রাখা হোগলা সরিয়ে মুখটা দেখতে উদ্যত হয়।

এই খবরদার, হাত দিবি না।

মন্টুর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ওর মনে হয়, একটা বড়সড় ইটের আঘাতে কনস্টেবলের মাথাটা থেতলে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলায়। লাশটা দেখার জন্য কী বলবে, সে ঠিক মনঃস্থির করতে পারে না।

কতক্ষণ চুপ থেকে সে বলে, একবার দেখতাম চাই।

কনস্টেবল অজ্ঞাত কারণে তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না। অথচ প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক ছিল। সে জিজ্ঞাসা করতেই পারতো, কেন সে লাশটা দেখতে চায়, লাশের সাথে তার সম্পর্ক কী? যেমন আযহার মাস্টারও তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল লিপি কারো সাথে পালিয়ে গেছে কি না। কনস্টেবল তাকে ইশারায় ওসির টেবিলের দিক নির্দেশ করে। মন্টু এবং আযহার পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আর ইঁদুরগুলিও তাদের মুখের দিকে। আযহার মাষ্টার দুই পা এগিয়ে এসে গলা খাঁকারি দেয়।

মন্টুর তখন মনে হয়, সে অনেক বড় একটা বেকুব। থানায় তার মা’কে অথবা ফজলুটাকে নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল। তারা দেখে নিশ্চিত হতে পারতো লাশটা লিপির কি না। এই লাশতো এখানে থাকবে না, রাতের মধ্যেই চালান করা হবে মর্গে।

আবার এও হতে পারে, বাড়ি ফিরে মন্টু দেখবে লিপি ফিরে এসেছে। গতরাতের মতো কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তার কাছে গতরাত, কিংবা তার আগের রাত, বা তার আগের রাত, আরব্য রজনীর রাতের মতোই অপার্থিব সুন্দর মনে হতে থাকে। মনে হতে থাকে কোনো উপায় জানা থাকলে সে গতরাতেই ফিরে যেত।

এ্যাই, দেখা।

মন্টু, আযহার মাষ্টার এবং কনস্টেবল, অনন্তকাল ধরে লাশের দিকে আগায়। লাশের মুখ দেখে। কিন্তু মনে রাখতে পারে না। মন্টুর মনে হয় এটা লিপিরই মুখ। যদিও আযহার মাষ্টার প্রবল অসমর্থন যোগায় কিন্তু মন্টু ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করে, এই মুখ দেখে সে ধর্ষকদের মুখগুলিও খুঁজে বের করতে পারবে। সে আর আগের মতো অস্থির হয়ে ওঠে না, সে খুব ক্লান্ত এবং নির্জীব বোধ করে। ফিরে আসার পথে সে আযহারের সাথে একটি কথাও বলে না।

পরদিন সকালে মন্টু থানায় একটা হত্যা মামলা করে।

লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে পাওয়া যায়, উপর্যুপরি ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা। একটা দুধও কাটা ছিল। মন্টু আগে সেটা খেয়াল করে নি।

এরপর কী হলো? আদালত তাকে জিজ্ঞাসা করে।
ওরা আমার বইনডার ইজ্জত লুটছে পরথম। হেরপর জবাই দিছে।
বাড়ি যান। এই লাশটি আপনার বোনের নয়।
আমার বইনের।
আপনার বোন, লিপি। তিন বছর আগে মারা গেছে।

মন্টুর সবকিছু অদ্ভুত লাগে। সে আদালতকে অবিশ্বাস করতে পারে না, কিন্তু একইসাথে এটাও বিশ্বাস করে যে, তার বোন ঘরে ফেরে না আজ একমাস চারদিন হলো। তাহলে তিন বছর আগে লিপি কীভাবে মারা যায়? আদালত থেকে সে বের হতে হতে ভাবে, আদালত কি তার সাথে মশকরা করে?

কি রে মন্টু। বইনের খোঁজ পাইলি?

ইঁদুরগুলি তখনও মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। মন্টু তাকিয়ে দেখে আদালতের সামনে গাছতলায় শফিক বসা। শফিক পাগলা। মন্টুর সেই বন্ধু শফিক। মন্টুর মনে পড়ে, শফিকের একটা বড় বোন ছিল। রাবু আপা। তিন বছর আগে একদিন লাশ পাটক্ষেতে পাওয়া গেলো। কেউ এগিয়ে এল না। মন্টু তখন কোথায় ছিল? সবাই বলল- রাবু না। শফিক বললো- রাবু।

মন্টুরও মনে হয় রাবু না। ও আসলে লিপি। তিন বছর আগে পাটক্ষেতে মারা গেছে। রাবু আপা হয়তো তারও অনেক আগে। শফিক জানত না।

 

স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে অধ্যাপক গ্রেফতার

নারী সংবাদ



স্ত্রী হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হংকং স্ত্রীকে হত্যার
অধ্যাপককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তার অফিসে রাখা একটি স্যুটকেসের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

ওই নারীর গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচানো অবস্থায় ছিল। ৫৩ বছর বয়সী চেউং কি চাং এর কার্যালয়ে একটি বড় কাঠের বাক্সে স্যুটকেসটি লুকানো ছিল।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী এই অধ্যাপক ২০ আগস্ট থেকে তার স্ত্রী নিখোঁজ বলে জানিয়েছিলেন। তখন জানান, তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে তার স্ত্রী রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

পুলিশ সিসিটিভি থেকে তার স্ত্রীর বাড়ির বাইরে যাওয়ার ফুটেজ পায়নি। অথচ চেউংকে বড় একটি কাঠের বাক্স আঙ্গিনার বাইরে নিতে দেখে। তখন চেউয়েং কে তারা সন্দেহ করতে শুরু করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ চেউংয়ের অফিস তল্লাশি করে। অফিসটি শিক্ষকদের ডর্মেটরি থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে।

চেউং তার স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে থাকতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ঝাং জিয়াং বুধবার বলেছেন, এই হত্যার ঘটনা শুনে তিনি স্তব্ধ ও দুঃখিত।

তিনি একে একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সূত্র: নয়াদিগন্ত

 

পরকীয়া ও ব্যভিচারঃ আইনে কে দায়ী?

সাঈদ আহসান খালিদ


বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘পরকীয়া’ ও ‘ব্যভিচার’- এই দুটো শব্দ আমরা হামেশা গুলিয়ে ফেলি এবং সমার্থক মনে করি যা আদতে বেঠিক। আইনি দায় নির্ধারণের পূর্বে দুটোর তফাৎ জানা জরুরি।

‘পরকীয়া’ বলতে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে বিবাহবহির্ভূত প্রেম বা প্রণয় কে বুঝায়, ইংরেজিতে আমরা বলি- ‘Extra Marital Affair’ । এখন এই প্রেম যৌন সঙ্গম অব্দি গড়াতেও পারে আবার নাও পারে। অর্থাৎ, পরকীয়া ব্যভিচারসহ বা ব্যভিচারহীন দুটোই হতে পারে। পরকীয়া ‘অনৈতিক’ হলেও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যভিচারের পরিণতি না পাওয়া পর্যন্ত ‘অপরাধ’ হিসেবে পরিগণিত হবে না। তার মানে যৌন সঙ্গমহীন বিবাহবহির্ভূত পরকীয়া আইনে অপরাধ নয় এবং এই পরকীয়ার অভিযোগে কাউকে দায়ী করা যায়না।

অপরের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম সংঘটিত হলে তখন সেটি আইনের ভাষায় ‘ব্যভিচার’ বা ‘Adultery’ হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারানুযায়ী ‘ব্যভিচার’ আইনের চোখে অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য। চলুন, দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা পড়ে দেখিঃ

“‘কোনো পুরুষ যদি জেনেশুনে কোনো বিবাহিত নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি না নিয়ে বা তার অজান্তে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, এবং অনুরূপ যৌন সঙ্গম যদি ধর্ষণ না হয় তাহলে তা ব্যভিচারের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং শাস্তিস্বরূপ সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয়ই প্রযোজ্য হতে পারে। এক্ষেত্রে ওই বিবাহিত স্ত্রী অপরাধের সহযোগী রূপে কোন শাস্তি পাবে না”

এই ৪৯৭ ধারায় কাউকে শাস্তি প্রদান করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রমাণ করতে হবেঃ

▷ প্রথমত, আসামি কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেছিল,

▷ দ্বিতীয়ত, ওই নারী বিবাহিত ছিল এবং তার স্বামী বর্তমান,

▷ তৃতীয়ত, অভিযুক্ত বিবাহের বিষয়টি জানত এবং তা বিশ্বাস করার কারণও ছিল,

▷ চতুর্থত, ওই যৌন সঙ্গম নারীর স্বামীর সম্মতি বা সমর্থন ব্যতিরেকে হয়েছিল,

▷ পঞ্চমত, ওই যৌন সঙ্গম নারী ধর্ষণের শামিল ছিল না অর্থাৎ, সঙ্গমে ওই নারীর সম্মতি ছিল।

মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই ধারানুযায়ী ব্যভিচারের অপরাধে দায়ী হবে শুধু ব্যভিচারী পুরুষই, ব্যভিচারে লিপ্ত স্ত্রীলোকটির কোন আইনি দায় নেই এবং দুষ্কর্মের সহযোগী (Abettor) হিসেবে তার কোন শাস্তি হবে না। “ব্যভিচার প্রমাণিত হলেও স্ত্রীলোকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যাবেনা”- ৪৯৭ ধারার‍ এই ব্যাখ্যা ১৯৭৪ সালে লাহোর হাই কোর্টের এক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা পাকিস্তান লিগ্যাল ডিসিশানে (PLD) সন্নিবেশিত আছে।

দেড়শো বছরের পুরনো এই ব্যভিচার আইনে আজ অব্দি কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির এই ৪৯৭ ধারা নিম্নোক্ত কারণে অসম্পূর্ণ, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক, সেকেলে এবং বর্তমান সময়ের উপযোগী নয়ঃ

◾ পুরুষ ব্যভিচারী এবং বিবাহিত নারীটি ঘটনার শিকার- দেড়শো বছরের পুরনো সামাজিক সেই বাস্তবতা বর্তমানে অসার। সম্প্রতি ভারতের সুপ্রীম কোর্ট প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ব্যভিচার সংক্রান্ত এক মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারার এই বিধানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন- ‘যদি কোনো বিবাহিতা নারী পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তার দায়-দায়িত্ব ওই পুরুষের যেমন, তেমনি ওই নারীরও। সেই দায়িত্ব তো নারীটিকে নিতেই হবে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম, তার ফল ভোগ করলাম, কিন্তু দোষী হলো শুধু পুরুষ, সেটা তো ঠিক নয়।”

◾ ব্যভিচারে লিপ্ত নারী-পুরুষের মধ্যে নারীটির অন্যের “বিবাহিত স্ত্রী” হওয়াটা এই ধারায় একটি শর্ত, ব্যভিচারী পুরুষটির বিবাহিত হওয়াটা শর্ত নয়। ৪৯৭ ধারার এই অংশটি অসম্পূর্ণ এবং ধর্মীয় আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের আইনানুযায়ী একজন অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত নারী কিংবা একজন বিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত নারীর মধ্যকার পারষ্পরিক সম্মতিমূলক যৌন সঙ্গম ও একত্র বসবাস আইনসম্মত এবং তা ব্যভিচার বলে গণ্য হয়না।

৪৯৭ ধারার ব্যাখ্যানুযায়ী একজন বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে একজন অবিবাহিত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্ত নারীর মধ্যে যদি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক হয়, তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে না এবং ওই লোকের স্ত্রীটি অভিযুক্ত স্বামী কিংবা পরকীয়ায় লিপ্ত নারীটির বিরুদ্ধে কোন আইনগত প্রতিকার পাবে না।

◾ ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, স্বামীর “সম্মতি” (Consent) নিয়ে বা জ্ঞাতসারে (Connivance) তাঁর বিবাহিত স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষ যৌন সঙ্গম করলে তা ব্যভিচারের সংজ্ঞায় পড়বেনা। স্ত্রীর সম্মতি এখানে অপ্রাসঙ্গিক। ব্যভিচারে বিবাহিতা মহিলার স্বামীর সম্মতি থাকা মানে কী? স্ত্রী কি স্বামীর সম্পত্তি না পণ্য? আবার দৃশ্যের অন্যপিঠও আছে- এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের “আমি সে ও সখা” গল্পটি প্রণিধানযোগ্য যেখানে স্বামী মনে করেছেন বিবাহিত জীবনের স্বাভাবিক সম্পর্ক ধরে রাখতে সে অক্ষম ৷ তাই স্বামী প্রতিবাদহীন মেনে নিয়েছে- অন্য পুরুষের সঙ্গে যদি তাঁর স্ত্রী ভালো থাকে, তো থাকুক৷ এই প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ব্যভিচারের অভিযোগ হালে পানি পাবেনা।

পরকীয়া ও ব্যভিচার একটি সামাজিক অনাচার, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। বিয়ে ও পরিবারের মতো গুরুত্ত্বপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক কে সুরক্ষা দিতেই ১৮৬০ সালে দণ্ডবিধির এই ৪৯৭ ধারার উৎপত্তি। কিন্তু কালক্রমে এই ধারাটি অকেজো এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। দেড়শ বছরের পুরনো এই আইনের সংশোধন এখন সময়ের দাবি।

====================
@ সাঈদ আহসান খালিদ
আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।