banner

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

অসাধারণ স্বাদের রসে ভেজা দুধপুলি

 

শীত মানেই পিঠার আয়োজন। আর পিঠার কথা এলে প্রথমেই যে পিঠাগুলোর কথা মনে হয় সেসবের মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে দুধপুলি। আসুন জেনে নেই কীভাবে তৈরি করবেন মজাদার রসে ভেজা দুধপুলি-

যা যা লাগবে
চালের গুঁড়া- দুই কাপ
নারকেল কোরা- এক কাপ
গুড়- আধা কাপ
দুধ- চার কাপ
এলাচ গুঁড়া- এক চা চামচ
পানি- প্রয়োজন অনুযায়ী

যেভাবে তৈরি করবেন
প্রথমে পুর তৈরির জন্য নারকেল কোরা এবং গুড় মিশিয়ে না গলে যাওয়া পর্যন্ত চুলায় নাড়তে থাকুন। মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন।
চালের গুঁড়া এবং পরিমাণমতো পানি দিয়ে ময়ান তৈরি করুন।
ময়ান থেকে ছোট ছোট বল বানিয়ে এবারে রুটি বেলার পিঁড়িতে বেলে নিয়ে গোল কাটার দিয়ে গোল করে কেটে তার ভেতরে পুর দিয়ে পিঠার মুখ মুড়ে নিন।

রস তৈরির জন্য একটি পাত্রে দুধ ফুটিয়ে স্বাদমতো চিনি, এলাচ গুঁড়া দিন এবং দুধ ঘন হওয়া পর্যন্ত নাড়ুন।
রসের মধ্যে প্রস্তুত করা পুলি ছেড়ে দিন এবং মৃদু আঁচে সিদ্ধ করুন যতক্ষণ না পুলি ভালো করে ফুলে ওঠে। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল দুধপুলি।

ঠাণ্ডা অথবা গরম অবস্থায় পরিবেশন করুন। পরিবেশনের সময় উপরে পেশ্তা বাদাম গুড়ো বা নারিকেল ছিটিয়ে দিতে পারেন।

 

শিশুরা মিথ্যা বললে কী করবেন?

অনেক সময় দেখা যায়, বুঝে না বুঝে শিশুরা মিথ্যা কথা বলে। তবে শিশু মিথ্যা বলতে বলতে এমন হয় যে তার অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন সে কারণে অকারণে মিথ্যা বলে।

মনোবিদদের মতে, শিশুদের মিথ্যে কথা বলার প্রবণতাকে প্রশয় দেয়া উচিত নয়। সন্তান কল্পনাপ্রবণ আর কোনো বিশেষ উদ্দেশে মিথ্যে বলছে কিনা বোঝার চেষ্টা করুন।

 

শিশুরা কেন মিথ্যা বলে?

১. শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হলে মিথ্যের আশ্রয় নিতে পারে।

২. অনেক শিশু বিশেষ উদ্দেশে মিথ্যা কথা বলে। যেমন হয়তো তার সেদিন হোমওয়ার্ক হয়নি। সেদিন স্কুল না যাওয়ার জন্য সে পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা বলতেই পারে।

৩. মা-বাবা খুব রাগী হলেও শিশুরা মিথ্যা বলে।

৪. বাড়ির বড়রা যদি মিথ্যা বলে শিশুরাও মিথ্যা বলতে শিখবে।

৫. বড়দের মতোই অপ্রিয় সত্য কথা গোপন করতেও শিশুরা মিথ্যা বলে।

কী করবেন?

১. শিশুরা বড়দের দেখে শেখে। তাই আগে নিজেকে সংশোধন করুন।

২. শিশুরা মিথ্যা বললে মারধর করবেন না। ঠাণ্ডা মাথায় বোঝান। কারণে-অকারণে মিথ্যা বলতে নেই।

৩. মনোবিদদের মতে, ছয় বছর বয়সের পর শিশুদের ‘সুপার ইগো’র বিকাশ ঘটে। তার ফলে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সে বুঝতে শেখে। এই সময় নীতিকথামূলক গল্প শোনান।

৪. শিশুদের সত্যি কথা বলার শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে।

 

আফগান নারীদের জন্য অনলাইন ম্যাগাজিন ‘জান টাইমস’

কানাডায় বসবাসরত আফগান নারী জাহরা নাদের ‘জান টাইমস’ নামের একটি অনলাইন ম্যাগাজিন প্রকাশ করছেন। আফগানিস্তানে বাস করা নারী ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে থাকা আফগান নারীরা এতে কাজ করছেন।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলকরার পর মেয়েদের অনেক অধিকার খর্ব করেছে। এই অবস্থায় সেখানকার নারীদের পরিস্থিতি তুলে ধরতে ২০২২ সালের আগস্টে জান টাইমস চালু করেন জাহরা নাদের।

আফগানিস্তানে থাকার সময় নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন ৩৪ বছর বয়সি জাহরা। এরপর পিএইচডি করতে ক্যানাডা পাড়ি জমান। তিনি যখন দেশ ছাড়েন তখনও তালেবান ক্ষমতা দখল করেনি। ‘আমার মাতৃভূমির মেয়ে ও নারীদের সহায়তা করার দায়িত্ব অনুভব করেছি আমি,’ বলেন জাহরা।

দেশ ও দেশের বাইরে থাকা আফগান নারী সাংবাদিকেরা তার ম্যাগাজিনে কাজ করেন বলে জানান তিনি।

‘আফগানিস্তানের অল্প কয়েকজন নারী সাংবাদিক স্থানীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের জন্য কাজ করা খুব বিপজ্জনক। তালেবান যে ইস্যুগুলো শুনতে চায় না এমন বিষয়ে তারা প্রতিবেদন পাঠান—এলজিবিটি, মানবাধিকার, পারিবারিক সহিংসতা কিংবা বাল্যবিবাহ। প্রতিবেদন করার অনেক কিছু আছে। অনেক অবিচার আছে,’ বলেন জাহরা।

ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় ম্যাগাজিনটি প্রকাশিত হয়ে থাকে।

জাহরা বলেন, তালেবানের প্রোপাগাণ্ডার সঙ্গে মেলে না এমন বিষয়ে প্রতিবেদন করা খুব বিপজ্জনক। ‘আমাদের স্থানীয় সহকর্মীদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। তারা ছদ্মনামে লেখেন আর আমাদের সঙ্গে কথা বলার পর ঘরের বাইরে যান। তারা একে অপরকে চেনেন না। শুধু বিদেশে থাকা সহকর্মীদের সঙ্গে তাদের পরিচয় আছে,’ বলে জানান তিনি।

নিজের কাছে জমা থাকা অর্থ দিয়ে ম্যাগাজিনের কাজ শুরু করেছিলেন জাহরা। সে কারণে শুরুতে তাদের বেতন ছাড়াই কাজ করতে হয়েছে। তবে এখন তারা বৃত্তি ও দান পাচ্ছেন। জাহরা বলেন, ‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে চাই। তাদের চিন্তা করতে শেখাতে চাই।’

আফগানিস্তানের নারীরা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা আফগান নারীরা তার ম্যাগাজিন পড়েন বলে জানান তিনি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ক্র্যানবেরির প্রথম মুসলিম মেয়র ঈমান

 

প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ক্র্যানবেরি টাউনশিপে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এক মুসলিম। শুধু তাই নয়; তিনি একজন মুসলিম নারী।

এ মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ২০২৪ সালের মেয়র হিসেবে তাঁকে শপথ পাঠ করান সাবেক নারী মেয়র সাদাফ জেফার।

মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করা ওই নারীর নাম ঈমান আল-বাদাউই। তিনি মিসরীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

মেয়র নির্বাচিত হয়ে নিজের অনুভূতি জানিয়ে ঈমান বলেন, আমি কিছুতে প্রথম হতে চাইনি। তবে একজন হিজাবি নারী হিসেবে পুরোপুরি নতুন পরিবেশে নিজেকে দেখতে পেয়ে আমি সত্যিই অভিভূত। কারণ অনেক মানুষ নতুন করে আমার কার্যক্রম সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। সবাই আমার সম্পর্কে এভাবে বলা শুরু করছে, ‘ওহ, আপনি প্রথম ‍মিসরী মুসলিম, যিনি হিজাব পরে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।’ আমি মনে করি, তা শুধু আমার জন্য নয়, বরং সবার জন্য গর্বের। সর্বোপরি আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে আমার শহরের জন্য কাজ করব।

এর আগে ২০২১ সালে ঈমান আল-বাদাউই তিন বছরের জন্য টাউনশিপ কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর গত বছর তিনি প্রথম মুসলিম ডেপুটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্র্যানবেরির একজন সফল নেতা ও মেয়র হিসেবে তিনি সবার জন্য কাজ করতে চান।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে নারী ক্রীড়া দলে ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা

রিপাবলিকান শাসিত অঙ্গরাজ্য ওহাইওতে নারী ক্রীড়া দলগুলোতে ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করল রাজ্যটির আইনপ্রণেতারা। ওহাইওর গভর্নর প্রথমে এই প্রস্তাবে ভেটো দিলেও স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, নারী ক্রীড়া দলে ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ওহাইও সিনেট শিশুদের ক্ষেত্রে “জেন্ডার অ্যাফার্মিং কেয়ার” বা লৈঙ্গিক পরিচয় ফুটিয়ে তোলে এমন কোনো সেবা—চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবাও নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে এখন থেকে চাইলেও ট্রান্সজেন্ডার কোনো শিশুর ক্ষেত্রে তার কাঙ্ক্ষিত লিঙ্গ নিশ্চিত করতে সেবা দেওয়া যাবে না।

ওহাইও অঙ্গরাজ্যের গভর্নর মাইক ডেওয়াইন নিজেও রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অনেক বাবা-মায়ের কাছে তিনি শুনেছেন জেন্ডার অ্যাফার্মিং কেয়ার তাদের শিশুদের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু গভর্নরের ভেটো আমলে না নিয়ে গতকাল বুধবার ওহাইও সিনেট বিষয়টিকে আইনে পরিণত করেছে। তার আগে অঙ্গরাজ্যটির হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভসেও বিলটি পাশ হয়। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি গ্যারি ক্লিক বিলটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘ওহাইও সিনেট আজ নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা প্রশংসাযোগ্য।’

আগামী তিন মাস পর, অর্থাৎ ৯০ দিন পর থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর ফলে এখন রাজ্যটির কোনো চিকিৎসক শিশুদের স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্ত লিঙ্গের পরিবর্তনের কোনো অপারেশন করতে পারবেন না। এমনকি, বয়ঃসন্ধিকালের বিকাশ রোধ করে এমন কোনো ওষুধও প্রেস্ক্রাইব করতে পারবেন না। একই সঙ্গে স্কুল, কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে নারীদের দলে ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই আইনে।

ওহাইওর এলজিবিটিকিউ অধিকারগোষ্ঠী ইকুয়ালিটি ওহাইওর নির্বাহী পরিচালক সিওভান বয়েড নেলসন বলেছেন, ‘ওহাইওর ট্রান্সজেন্ডার, তাদের পরিবার ও মিত্ররা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে। কারণ, ওহাইও আমাদের নিজের দেশ।’

 

কুমিল্লায় ছাত্রীর হিজাব কেটে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

 

কুমিল্লার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের তিন শিক্ষার্থীর হিজাব কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মিরন নাহার নামে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে ওই কলেজের ক্যাম্পাসে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, গত ২১ জানুয়ারি নার্সিং কলেজের ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর হিজাব কেটে দেন শিক্ষিকা মিরন নাহার। এসময় শিক্ষার্থীদেরকে হিজাব ছোট করে পড়ার কথা বললে শিক্ষার্থীরা এতে দ্বিমত পোষণ করেন। তবে ওই শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের কোনো কথার তোয়াক্কা না করে বারবার হিজাব কাটার কথা বলেন ও বিভিন্ন হুমকি দেন।

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, এভাবে যদি আমাদের হিজাব কেটে পড়তে বলা হয়, বা কেটে ফেলা হয় তাহলে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? ক্যাম্পাসে আমাদের শালীনতা কীভাবে আমরা বজায় রাখবো?

আরেক শিক্ষার্থী মৌরী রহমান বলেন, আমাদের প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ এবং তৃতীয় বর্ষ শিক্ষার্থীদেরকে বেল্ট দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। তাই আমরা মেয়েরা যারা হিজাব বড় করে পড়ি তাদের বেল্ট দেখা যায় না। তাই আমাদের হিজাব কেটে দেয়া হয়েছে। আমি বলব বেল্ট দ্বারাই কেন চিহ্নিত করতে হবে, অন্য কোন উপায়ও তো এটা করা যায়। আমি আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই। মেয়েরা যাতে শালীনভাবে চলাফেরা করতে পারে এটা চাই।

৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আকতার বলেন, আমাদের এই বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নার্সিং কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা মিরন নাহার বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আমার এটি করা ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে আমি অনুতপ্ত। শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মের মধ্যে আনার জন্য আমি এটি করেছিলাম। তবে হিজাব কেটে দেয়া আমার উচিত হয়নি। আমি আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করব।

এ বিষয়ে কুমিল্লা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের নার্সিং ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ আকবরী খানম এর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার

 

জরায়ুর ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষে গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ। গত ২২ জানুয়ারি গোল টেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য ছয়জন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

তারা হলেন ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের গাইনি অনকোলজি প্যানেলের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন, অধ্যাপক ডা. সাহানা পারভীন এবং অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস, অনকোলজি প্যানেলের ছিলেন অধ্যাপক ডা. পারভীন আক্তার বানু, অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক, বিগ্রে. জেনা. (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. ইউছুফ আলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. সিলভিয়া হোসেন (মিথুন)।

আলোচনায় জানানো হয়, বাংলাদেশের নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার। গ্লোবোকান ২০২০-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর নতুন করে ৮০৬৮ জন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রায় ৫ হাজার নারীই মৃত্যুবরণ করেন।

অথচ এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সার। সারা বিশ্বের মতো তাই জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন করতে লার্ন, প্রিভেন্ট, স্ক্রিন এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই গোল টেবিল বৈঠকের শুরুতে প্রফেসর ডা. সাবেরা খাতুন জানান এইচপিভি ভাইরাস দিয়ে জরায়ু ক্যান্সার হয় কিন্তু এই ভাইরাস দেহের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে ২ বছরের মধ্যেই শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু যাদের ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হয়/ যৌন সংযোগ ঘটে, বহুবিবাহ হয়, অল্প বয়সে প্রথম বাচ্চা হয়, ঘন ঘন বাচ্চা হয়, দীর্ঘদিন একটানা (৫ বছরের বেশি) জন্ম বিরতিকরণ পিল খায়, ধূমপান করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জরায়ুমুখের পরিবর্তন ঘটায় এবং প্রায় ১০-১৫ বছর পর তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তাই যদি সচেতন হওয়া যায়, এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া হয়, ৩০-৬০ বছর বয়সে নিয়মিত ভায়া/প্যাপস/এইচপিভি ডিএনএ ভাইরাস পরীক্ষা করালে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
প্রফেসর জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ৯-১৪ বছর বয়সী কিশোরী কন্যাদের ১ ডোজ এইচপিভি ডিএনএ ভ্যাকসিন দিলে তা শতভাগ কার্যকরী। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। সরকারিভাবে গত বছরের অক্টোবর মাসে ৯-১৪ বছর বয়সী কন্যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে। ইপিআই-এ অচিরেই এই ভ্যাকসিন যুক্ত হবে বলে আশাবাদী চিকিৎসকরা। বর্তমানে বেসরকারিভাবে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের মতো অন্যান্য ভ্যাকসিন সেন্টারে পাওয়া যাচ্ছে এই ভ্যাকসিন।

তবে ভ্যাকসিন নিলেও ৩০ বছর বয়সী নারীদের নিয়মিতভাবে স্ক্রিনিং অবশ্যই করতে হবে।
প্রফেসের ডা. সাহানা পারভীন জানান, ক্যান্সারের পূর্ববর্তী এবং ক্যান্সারের শুরুতে সাধারণত তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। যখন ক্যান্সার ছড়াতে শুরু করে তখনই অনিয়মিত মাসিক, সহবাসের পর রক্তপাত, মেনোপোজের পর রক্তপাত, অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব শুরু হয়। স্ক্রিনিংয়ে যখনই জরায়ুমুখের পরিবর্তন ধরা পড়ে অথবা জরায়ুমুখের টিউমার দেখা দেয় তখন অবশ্যই একজন গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। শুরুতেই ক্যান্সার কোনো পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণ করতে হবে, কারণ স্টেজ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন। অনেক সময় দেখা যায় স্টেজ নির্ধারণ না করে শুধু জরায়ু ফেলে দেওয়া হয়। এটি রোগীর জন্য বিরাট ক্ষতি বয়ে আনে। প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারে শুধুমাত্র অপারেশন করতে হয় এবং এটি একটি জটিল অপারেশন, যা গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের মাধ্যমেই করানো উচিত। এদিকে অ্যাডভান্স স্টেজে অপারেশন করা যায় না, সেক্ষেত্রে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি দিতে হয়।

ডা. পারভীন আক্তার বানু জানান, প্রথমে জরায়ুমুখের ওপর থেকে রেডিওথেরাপী সাথে কেমোথেরাপী দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে জরায়ুমুখের নিচ দিয়ে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। থেরাপী চলাকালীন বা পরবর্তীতে যে সমস্যাগুলো হয় তা খুব সামান্য। থেরাপির জায়গা একটু শক্ত হয়ে যেতে পারে, মাসিকের রাস্তা সরু হয়ে যেতে পারে এবং পায়খানা প্রস্রাবের সাথে হালকা রক্ত যেতে পারে। কিন্তু এখন এতো ভালো আধুনিক রেডিওথেরাপির মেশিন আছে এবং চিকিৎসা আছে তাতে এই সমস্যাগুলো খুব কমই হয়ে থাকে।

ডা. এহতেশামুল হক জানান সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও রেডিও থেরাপী মেশিনের অপ্রতুলতা রয়েছে, তবে বেসরকারিখাতে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। সুখবর হলো রেডিওথেরাপীতে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের মেশিন উন্নত এবং খরচও তুলনামূলক কম। যাদের রেডিও থেরাপী প্রয়োজন তাদের ২ মাসের মধ্যেই সেটি শেষ করতে হয়।

ডা. মো. ইউসুফ আলী জানান, রেডিওথেরাপির আধুনিকরণ এবং অন্যান্য থেরাপি যেমন ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপিসহ বিশ্বমানের ক্যান্সারের অন্যান্য সকল চিকিৎসা ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে।

সবশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়,
১. জরায়ুমূখ ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি
২. কিশোরী কন্যাদের ভ্যাকসিন দেয়া
৩. ৩০-৬০ বছরের নারীদের স্ক্রিনিং করা
৪. বাল্য বিয়েকে না বলা
৫. বহুবিবাহ/একাধিক যৌনসঙ্গী বর্জন করা
৬. ধূমপান পরিহার করা
৭. ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ খেয়াল করা মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক স্থানে চিকিৎসা করানো।

সূত্রঃ যুগান্তর

 

কোকাকোলায় প্রথম বাংলাদেশি নারী এমডি জু-উন নাহার চৌধুরী

দেশের শীর্ষস্থানীয় পানীয় কোম্পানি কোকাকোলা, বাংলাদেশ লিমিটেডের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন জু-উন নাহার চৌধুরী। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি এই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেলেন। একইসঙ্গে তিনি কোকাকোলা, বাংলাদেশের প্রথম নারী এমডি। ২০২১ সালে যোগ দেওয়া সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা জি তুং-এর স্থলাভিষিক্ত হবেন জু-উন নাহার।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জু-উন নাহার ইউনিলিভারের মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ইউনিলিভার বাংলাদেশের বিভিন্ন পদে তিনি কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে দেশব্যাপী ‘লাইফবয় হাত ধোয়া ক্যাম্পেইন বা হ্যান্ড ওয়াশিং ক্যাম্পেইন’ আয়োজন করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নেয়। দেশের ৬০টির বেশি এলাকায় ৮৬ হাজার তরুণ একইসঙ্গে এই ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করে।

২০১৪ সালে রেকিট বেনকিজারে যোগদানের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ায় তার কর্মজীবন শুরু হয়। সেখানে তিনি ডেটলের ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ডানোন ইন্দোনেশিয়ার হেড অফ ইনোভেশন হিসেবে কাজ করার পর তিনি এক মার্স-এর এফএমসিজি ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড ই-কমার্স ফ্যাসিলিটেটর প্রতিষ্ঠানটি আসিয়ানভুক্ত সাতটি দেশে কাজ করে। ইন্দোনেশিয়ায় আট বছর কাটিয়ে ২০২৩ সালে দেশে ফিরে তিনি এপেক্সের মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করেন।

নতুন দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জু-উন নাহার চৌধুরী বলেন, কোকাকোলা সিস্টেম বাংলাদেশে যোগ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। ভোক্তাদের সতেজ রাখতেও আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কোকাকোলার এই যাত্রায় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া আমার জন্য সম্মানের বিষয়। আমাদের ব্র্যান্ড ও ফ্র্যাঞ্চাইজি অপারেশনকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো বলে আশাবাদী।

 

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী কয়েকজন নারী ব্যক্তিত্ব

মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত নারীর কথা জানা যায় যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতার পরিচয় রেখেছেন এবং সাম্রাজ্যে যাদের প্রভাবও ছিল।  রাজকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বা যুদ্ধবিগ্রহে তাদের অনেকের অংশগ্রহণ ছিল, ডিক্রি বা ফরমান জারি, সংকেত দেয়া বা পরোয়ানা প্রদানসহ নানা ধরণের সরকারি নথি জারি করার ক্ষমতাও ছিল কারো কারো।

আসুন জেনে নেই মুঘল সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী কয়েকজন নারী ব্যক্তিত্বের কথা-

মুঘল আমলে, ফার্স্ট লেডি হতেন সাধারণত সম্রাটের মা। সম্রাটের মায়ের মৃত্যুর পর তার জায়গা সম্রাটের স্ত্রী নিতে পারতেন। তবে, এক্ষেত্রে নুরজাহান এবং মমতাজ মহল অবশ্য ব্যতিক্রম ছিলেন। তারা রানী হিসেবেই ফার্স্ট লেডির মর্যাদা পেয়েছিলেন।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর থেকে শুরু করে সব মুঘল সম্রাটেরই মায়ের প্রতি সম্মানের বিষয়টি সুবিদিত ছিল। ইতিহাসবিদ এস এম এডওয়ার্ডস, ‘বাবর, ডায়েরিস্ট অ্যান্ড ডিসপোট’-এ লিখেছেন যে নানী এয়সান দৌলত বেগম এবং মা কুতলুঘ নিগার সম্রাট বাবরের জীবন গঠনে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন। বাবর তার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা তার মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন।

বাবর, নিজের স্মৃতিকথা ‘বাবরনামা’-তে তার নানী এয়সান দৌলত বেগম সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। বাবরনামায় তিনি বলেন,

এয়সান দৌলত বেগম ছিলেন মেজাজি এবং কৌশলী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী ও বুদ্ধিমতী একজন নারী। তার পরামর্শেই বেশির ভাগ কাজ করা হতো।

এ বইয়ের মুখবন্ধে বলা হয়েছে, ১৪৯৪ সালে বাবরের পিতার মৃত্যুর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এয়সান দৌলত বেগম, বাবরের পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে পাশে ছিলেন। প্রকৃত ক্ষমতা এবং কার্য পরিচালনার ভার তাঁর হাতে ছিল।

রাধে শ্যাম তার ‘বাবর’ বইয়ে লিখেছেন যে “জিহাদের সময় মা কুতলুঘ নিগার খানম বাবরের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন।”

তুর্কি এবং ফার্সি ভাষায় শিক্ষিত, খানম তার ছেলে বাবরের বেশিরভাগ অভিযানে এবং রাজত্বকালে তার সাথে ছিলেন।

বাদাখশান এবং ট্রান্সএক্সোনিয়ার মতো দূরবর্তী অভিযানে বাবর তার স্ত্রী অর্থাৎ হুমায়ুনের মা মাহাম বেগমকেও পাশে পেয়েছিলেন।

ইতিহাসবিদ রোমারগুডেনের মতে, মাহাম শক্তিশালী ও প্রাণোচ্ছল নারী ছিলেন, এবং ধারণা করা হয় বাবর তাকে কখনো কোন কিছু করতে নিষেধ করেননি।

বিবি মুবারাকাও ছিলেন বাবরের কাঙ্ক্ষিত স্ত্রীদের একজন। তাকে বিয়ে করার ফলে ইউসুফজাই বংশের সাথে বাবরের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এবং আফগানিস্তানের উপর তার দখল জোরদার হয়।

তবে, মাহাম বেগম উচ্চ পদে আসীন ছিলেন এবং সিংহাসনে তাকে তার স্বামীর সাথে বসতে দেওয়া হতো।

গবেষক এস এ তিরমিজি লিখেছেন,

“হুমায়ূন তার মা মাহাম বেগমের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার কারণে সৌভাগ্যবান ছিলেন। মাহাম বেগম সুশিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী এবং বড় মনের অধিকারী ছিলেন।”

সম্রাট হুমায়ুনের বোন গুলবদন বেগম ‘হুমায়ুন নামা’ লিখেছিলেন, যা ছিল ১৬ শতকের মুঘল ভারতে একজন নারীর লেখা একমাত্র বই

মাহাম বেগম, গুলবদনকে দেখাশোনা করতেন এবং তিনিই তাকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন।

যখন হুমায়ুনকে বাদাখশানের গভর্নর হিসেবে প্রথম দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তার প্রশিক্ষণের সময়ে মাহাম বেগম পুত্রের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

হুমায়ুনকে রাজ সিংহাসনের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তুলতে মাহাম বেগমের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

লেখক রুবি লাল, ব্রিটিশ লেখক এএস বেভারিজকে উদ্ধৃত করে বলেছেন,

“স্ত্রী এবং রানী মা দুটি ভূমিকায়, মাহাম বেগমকে প্রজ্ঞা, মর্যাদা এবং কর্তৃত্বের সমন্বয়ে একজন বিচক্ষণ নারী বলে মনে করা হতো। যিনি তার সন্তানদের নানা ধরণের পরামর্শ এবং নির্দেশনা দিতে পছন্দ করেন। নেতৃত্ব দেওয়া এবং তার পরিবারের নাম ও সম্মান বজায় রাখাকে তিনি তার কর্তব্য বলে মনে করতেন।”

এর বাইরে রাজনৈতিক বিষয়ে হামিদা বানু বেগমের ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যিনি অনেক কষ্টে হুমায়ূনকে বিয়ে করতে রাজি হন।

এই ঘটনাটি ‘হুমায়ুন নামা’-তে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে –

“৪০ দিন ধরে হামিদা বানু বেগম (বিয়ে করতে) অনিচ্ছুক ছিলেন এবং তিনি কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত আমার মা দিলদার বেগম তাকে বলেন যে, তার তো কাউকে না কাউকে বিয়ে করতেই হবে। তাহলে রাজার চেয়ে ভালো আর কে হতে পারে?”

উত্তরে বেগম বলেছিলেন,

“হ্যাঁ, আমি তাকেই বিয়ে করবো যার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারবো। তাকে বিয়ে করবো না যার পা পর্যন্ত আমার হাত পৌঁছাবে না। আমার মা তাকে অনেক উপদেশ দিয়ে অবশেষে রাজি করান।”

তাকে মরিয়ম মাকানি উপাধি দিয়েছিলেন তার ছেলে সম্রাট আকবর।

বিয়ের পর হামিদা বানুকে হুমায়ুনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় প্রবাসে কষ্টকর সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

সিন্ধুর অমরকোটে আকবরের জন্মের এক বছরের মধ্যে, তাকে একজন ধাত্রীর কাছে রেখে, তিনি হুমায়ুনের সাথে কান্দাহার এবং তারপর পারস্যের বিপদজনক যাত্রায় অংশ নেন।

হুমায়ুনের আস্থাভাজন আমির মুনাইম খানের নাতনির সাথে আকবরের বিয়ের ব্যবস্থা করে বৈরাম খানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তারা একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করেন।

হামিদা বানু রাজকীয় হারেমে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং তার ফরমান জারি করার অধিকার ছিল।

‘হুমায়ুন নামা’ অনুসারে, রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের পর, যাকে জশন-ই-জুলুস বলা হয়, সম্রাট প্রথমে তার মা এবং পরে অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে দেখা করতেন।

ইতিহাসবিদ আবুল ফজল লিখেছেন যে, আকবর তার মা মরিয়ম মাকানিকে খুব সম্মান করতেন এবং তাকে স্বাগত জানাতে রাজধানী থেকে বের হয়ে যেতেন।

একবার আকবরের মাকে পালকিতে করে লাহোর থেকে আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আকবর, যিনি তাঁর সাথে ভ্রমণ করছিলেন, তাঁর পালকি কাঁধে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতেন এবং নদীর এক তীর থেকে অন্য তীরে নিয়ে যেতেন।

‘আকবরনামা’-তে লেখা আছে যে একবার শাহজাদা সেলিমকে অতিরিক্ত মদ্যপান ও খারাপ সঙ্গের কারণে সম্রাট আকবর কিছু সময়ের জন্য তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে মায়ের অনুরোধে সেটি প্রত্যাহার করে নেন।জাহাঙ্গীর তার মা যোধাবাইকে (মারিয়াম-উজ-জানি) অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।

যুবরাজ সেলিম একবার বিদ্রোহ করেন এবং এলাহাবাদে রাজকীয় অবস্থান গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আকবর তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত উপদেষ্টা আবুল ফজলের সাহায্য নেন। কিন্তু পথে আবুল ফজলকে হত্যা করেন সেলিম। আকবর খুবই কষ্ট পান এবং ক্ষুব্ধ হন।

মরিয়ম মাকানি এবং গুলবদন বেগম, সেলিমকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য সম্রাটের কাছে অনুরোধ করেন।

আকবর তাদের অনুরোধ মেনে নেন এবং তার ফুফু গুলবদন ও স্ত্রী সালিমা সুলতানা বেগমকে বলেন রাজকুমার যেন তার কাছে ক্ষমা চায় এবং তাকে যেন আদালতে হাজির করা হয়।

পরে স্ত্রী সালিমা ও সৎ মা মাহ চুচাক বেগমের মেয়ে বখতুল-নিসা দুজনের মধ্যে মীমাংসা করেন।

এই সেলিম, সম্রাট জাহাঙ্গীর হন। তুজুক-ই জাহাঙ্গীরীর মতে, জাহাঙ্গীর তার মা যোধাবাইকে যার আনুষ্ঠানিক নাম রাখা হয়েছিল মারিয়াম-উজ-জানি, তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।

তার বাড়িতে সম্রাটের ওজন করা হতো এবং রাজকুমারদের বিয়ে দেয়া হতো।

মাহাম বেগমের মৃত্যুর পর বাবর তার বড় বোন খানজাদা বেগমকে বাদশাহ বেগম উপাধি দিয়ে হারেমের প্রধান করেন। গুলবদন তাকে ‘প্রিয়তম নারী’ বা ‘আকে জনম’ বলে সম্বোধন করতেন।

হুমায়ুনের শাসনামলে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। সেসময় খানজাদা বেগম হুমায়ুন এবং তার ভাই হিন্দাল, কামরান এবং আসকারির মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন।

গুলবদন বেগম ‘হুমায়ুন নামা’য় অনেক উদাহরণ দিয়েছেন যেখানে বোনদের প্রতি বাবর এবং হুমায়ুনের ভালবাসার চিত্র ফুটে ওঠে। বোন বিধবা হলে ভাই তাকে আশ্রয় দিতে সদা প্রস্তুত থাকতেন।

গুল মিশকা বেগম বিধবা হলে হুমায়ুন তাকে আগ্রায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। জাহাঙ্গীর তার স্মৃতিচারণে তার বোন শুকর-উল-নাসা বেগম এবং উরম বানু বেগমের কথা স্নেহের সাথে উল্লেখ করেছেন, যদিও তারা ভিন্ন মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

মুঘল সম্রাটরা তাদের কন্যাদের খুব ভালোবাসতেন। তাদের শিক্ষিত করে তুলতে এবং প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে নানা ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হত।

কিন্তু তাদের অনেকেই, বিশেষ করে আকবরের আমলে তারা অবিবাহিত থাকতেন। মানুচির মতো অনেক লেখক এবং বিদেশে ভ্রমণকারীরা আকবরকে এই ঐতিহ্যের সূচনা করার জন্য দায়ী করেন।

তবে অনেক লেখক এতে একমত হননি। তাদের মতে, আকবর তার বোন ও কন্যাদের যোগ্য পুরুষদের সাথে বিয়ে করাতেন। তবে আকবর নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে পছন্দ করতেন না।

শাহজাহানের সময় পর্যন্ত রাজকন্যাদের বিয়েতে কিছু বিধিনিষেধ ছিল। এটি সম্ভবত সিংহাসনের দাবিদারদের সংখ্যা সীমিত করার জন্য করা হয়েছিল।

কিন্তু আওরঙ্গজেব তার কয়েকজন কন্যা এবং ভাতিজিকে ভাই-বোনের সন্তানদের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।

মুঘল রাজকন্যাদের শিক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হতো।

বাবরের কন্যা, যিনি সাহিত্যকর্মে নিয়োজিত ছিলেন, তিনি ছিলেন গুলবদন বেগম। তিনি ‘হুমায়ুন নামা’ লেখার জন্য ব্যাপক পরিচিত ছিলেন।

আকবরনামা অনুসারে, হুমায়ুনের স্ত্রী বেগা বেগম, যিনি হাজী বেগম নামেও পরিচিত, একজন শিক্ষিত নারী ছিলেন। তিনি লেখালেখি করতে জানতেন এবং ওষুধ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখতেন।

হুমায়ুনের ভাতিজি সালিমা সুলতানা বেগম ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যে পারদর্শী ছিলেন।

সম্রাট আকবরের নিজস্ব আনুষ্ঠানিক শিক্ষা খুবই কম ছিল। তবে তিনি শিক্ষাদীক্ষা বিস্তারে এবং রাজকুমার ও রাজকন্যাদের শিক্ষিত করে তোলার ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন।

কথিত আছে যে তিনি তার ফতেহপুর সিক্রি প্রাসাদে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুঘল রাজকন্যাদের প্রাসাদের অভ্যন্তরে শিক্ষিত নারী বা বয়স্ক পুরুষদের দ্বারা শিক্ষা দেওয়া হত।

আকবরের শাসনামলে জান বেগম নামে এক নারীকে কুরআনের তাফসীর লেখার জন্য সম্রাটের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার দিনার পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।

শাহজাহান এবং রানী মমতাজ বেগমের কন্যা জাহান আরা তার জ্ঞান ও মাধুর্যের জন্য পরিচিত ছিলেন। চিশতী রাজবংশের প্রবীণদের উল্লেখ করে তাঁর লেখা ‘মনুস-উল-আরওয়াহ’ আজও গবেষকদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি বই।

মুঘল রাজকন্যাদের মধ্যে জাইব-উল-নিসা একজন খ্যাতনামা কবি এবং সাহেব দেওয়ান ছিলেন। তাঁর ফারসি গজলগুলো অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছিল।

ইতিাহসবিদ সোমা মুখার্জি লিখেছেন যে, রানী যদি নিঃসন্তান হন তবে তাকে অন্য নারীর সন্তান দত্তক নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো।

হুমায়ুনের মা মাহাম বেগম হুমায়ুনের জন্মের পর চার সন্তানকে হারান। পরে হুমায়ুনকে লালন পালন করেন সম্রাট বাবরের দ্বিতীয় স্ত্রী দিলদার বেগমের সন্তান হিন্দাল এবং গুল বদন।

আকবরের প্রথম স্ত্রী রুকাইয়া সুলতান বেগম নিঃসন্তান ছিলেন। পরে শাহজাদা সেলিমের পুত্র খুররম জন্ম নেয়ার পর তাকে রুকাইয়া সুলতানের হাতে তুলে দেয়া হয়।

আরেক ইতিাহসবিদ ইরা মুখোতির মতে, আকবর বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বিধবা ও বিবাহবিচ্ছেদকে কলঙ্ক হিসেবে বিবেচনা করেননি।

তার সামনে খানজাদা বেগমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল, যিনি দুবার তালাকপ্রাপ্ত ছিলেন। তারপরও উচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

শুরুতে সতীদাহ প্রথা চর্চাকারী নারীদের প্রশংসা করলেও পরে, তিনি প্রথাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন এবং যেসব যারা এর সমর্থন করতেন তাদের সমালোচনা করেন।

আবুল ফজলের মতে, পুত্র সন্তান জন্মের সময় সম্রাট আকবর যেমন বিশাল উদযাপন করতেন ঠিক কন্যা সন্তান জন্মের সময়ও তিন ধুমধাম আয়োজনের আদেশ দিতেন।

সম্রাট আকবর সমাজে প্রচলিত বাল্যবিবাহ প্রথা অপছন্দ করতেন।

আকবর বিবাহ সংক্রান্ত নিয়ম জারি করেন এবং শহরগুলোয় কোতোয়ালদের দায়িত্ব আরোপ করেন যেন যথাসম্ভব এই ধরনের প্রথা বন্ধ করা যায়।

মুঘল সম্রাটদের সম্মান তাদের মা বা বোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।

বাবর যখন রাজা ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করেন, তখন তিনি তার মাকে সম্মান করেছিলেন, তাকে জমি এবং একটি প্রাসাদ দিয়েছিলেন।

বাবর তাকে ‘মা’ বলে ডাকতেন। কিন্তু তারা সম্রাটের খাবারে বিষ মেশানোর ষড়যন্ত্র করেছিল এম তথ্য পাওয়া যায়।

সম্রাট খুব কম খাবার খেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ন। পরে জানা যায়, ইব্রাহিমের মায়ের দেওয়া বিষের কারণে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাবর তার প্রতি নম্র ছিলেন।

ষড়যন্ত্রে জড়িত অন্যদের হত্যা করা হলেও ওই নারীকে কাবুলে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু রক্ষীদের হাত থেকে পালিয়ে তিনি সিন্ধু নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নিজের মা ছাড়াও সম্রাট হারেমের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নারীদেরও সম্মান করতেন।

বাবর নিজে প্রায়ই তাদের কাছে যেতেন। তাদের কেউ এসেছে খবর পেলে তিনি তাদের স্বাগত জানাতে মাঝে মাঝে পায়ে হেঁটে বের হতেন।

‘হুমায়ুন নামা’য় লেখা আছে যে তিনি শুক্রবারে বয়স্ক নারীদের সাথে দেখা করতেন।

“একবার খুব গরম পড়েছিল। রানী বললেন, বাইরে তাপের স্রোত বইছে, ওই এক শুক্রবার সেখানে না গেলে কী হবে? উত্তরে বাবর বললেন, যাদের বাবা-ভাই নেই, তাদের মন যদি খুশি না হয়, তবে আমাকেই তা করতে হবে।”

তার পিতার মতো, হুমায়ুন ব্যক্তিগতভাবে হারেমের বয়স্ক নারীদের সাথে দেখা করতেন এবং তাদের সাথে সদয় হয়ে কথা বলতেন। তার সম্মানে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হতো।

আকবর তার দাদী গুল বদনকেও খুবই ভক্তি করতেন, তার অনুরোধেই গুল বদন ‘হুমায়ুন নামা’ লেখেন।

মুঘল হারেমে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইরানী, তুরানি, পর্তুগিজ এবং অন্যান্য অনেক ইউরোপীয় জাতীয়তা এবং দেশের বিভিন্ন দেশের নারীরা ছিলেন।

বাবর হারেমের নারীদের পরগণা দেওয়ার প্রথা চালু করেন। পরগনা হল কয়েকটি মৌজা নিয়ে গঠিত এলাকা যেখান থেকে রাজস্ব আদায় করা হত।

তিনি ইব্রাহিম লোদির মাকে সাত লাখ টাকার একটি পরগনা দিয়েছিলেন। তিনি হারেমের নারীদের জন্য কিছু বাড়ি এবং জমিও বরাদ্দ করেছিলেন।

হুমায়ুন সুফি ভোজে হারেমের নারীদের আশরাফি ও শাহরাখী আকারে মূল্যবান উপহার দিতেন।

এই অর্থ দিয়ে, তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন ছাড়াও, রাজকীয় নারীরা দাতব্য কাজ এবং ভোজের আয়োজন করতেন।

বাবরের মৃত্যুর পর মাহাম বেগম দিনে দুবেলা মানুষদের খাওয়াতেন।

তিনি ১৫৩০ সালে হুমায়ুনের সিংহাসনে আরোহণের জন্য একটি দুর্দান্ত ভোজের আয়োজন করেন এবং সাত হাজার লোককে খাওয়ান।

হুমায়ুনের স্ত্রী হাজী বেগমও তার ব্যক্তিগত ভাতার একটি বড় অংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করতেন।

তিনি মক্কায় হজে প্রচুর দান-খয়রাত করেন। হারেমের এই রাজকীয় নারীরা প্রিয়জনকে বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোয় মূল্যবান উপহার দিতেন।

প্রকৃত মা ছাড়াও মুঘল পরিবারে পালক মাও ছিলেন। এই পালক মায়েরা, যাকে বলা হয় অঙ্গাস, তারা মুঘলদের অত্যন্ত সম্মানের পাত্র ছিলেন।

আকবরের পালক মা মাহিম অঙ্গাস ছিলেন সম্রাটের পর সবচেয়ে শক্তিশালী নারী।

প্রকৃত মা ছাড়াও মুঘল পরিবারে পালক মাও ছিলেন। জাহাঙ্গীর তার পালিত মায়ের মৃত্যুর কথা তার স্মৃতিকথা ‘তাজক জাহাঙ্গীরী’তে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন –

“কুতুবউদ্দিন খান কোকার মা, যিনি আমাকে লালন-পালন করেছেন এবং আমার কাছে মায়ের মতো ছিলেন।”

“তিনি আমার আপন মায়ের চাইতেও সদয় ছিলের। কিন্তু আল্লাহর রহমত নিয়ে আমার সেই মা চলে গেছেন। তার লাশ বহনকারী খাটিয়ার যেদিকে পা ছিল, সেই অংশটি আমি কাঁধে নিয়েছি, এবং তাকে কবর পর্যন্ত বয়ে নিয়ে গিয়েছি। তীব্র যন্ত্রণায়, কয়েকদিন ধরে কিছু খেতে ইচ্ছে করেনি, জামাকাপড় বদলাতেও মন চায়নি।”

ইতিহাসবিদ ফজল হুসেন লিখেছেন যে, মুঘল হারেমে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইরানী, তুরানি, পর্তুগিজ এবং অনেক ইউরোপীয় জাতীয়তা এবং বিভিন্ন দেশের নারীরা ছিলেন।

এইভাবে, তারা পরোক্ষভাবে তাদের স্বামী এবং অন্যদের বিভিন্ন ভাষা শেখাতেন এবং তাদের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও শিল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজদীপ সিনহা, অন্নপূর্ণা সিংহদাস গবেষণাপত্রে দেখেছেন যে, মুঘল ভারতে রাজবংশের নারীদের অনেক আইনি অধিকার এবং অসাধারণ ক্ষমতা ছিল।

তাদের ডিক্রি বা ফরমান জারি, সংকেত দেয়া বা পরোয়ানা দেয়াসহ নানা ধরণের সরকারি নথি জারি করার ক্ষমতা ছিল।

শাহজাহানের শাসনামলে শাহী সীলমোহরটি রানী মমতাজ মহলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর এটি বেগম সাহেবা অর্থাৎ মেয়ে জাহান আরাকে দেওয়া হয় ।

ঝাড়ুকা দর্শনে সম্রাটের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের রানী নূরজাহানকেও দেখা গিয়েছিল।

এভাবে প্রশাসন কার্যত নূরজাহানের হাতে চলে আসে এবং তার সম্মতি ছাড়া রাষ্ট্র সংক্রান্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হতো না।

জাহাঙ্গীরের রাজকীয় আদেশের সাথে নুরজাহানের সীলমোহর এবং স্বাক্ষরও লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।

জাহাঙ্গীরের সময়কার রৌপ্য ও স্বর্ণমুদ্রায়ও নুরজাহানের নাম খোদাই করা ছিল। জাহাঙ্গীরের নির্দেশে তিনি ১০০টি রত্ন পান। তাকে নুরজাহান বাদশা বেগম বলা হতো।

জার্মান প্রাচ্যবিদ অ্যান মেরি শ্মাল জাহাঙ্গীরের এই কথাগুলো লিখেছেন – “আমি নুরজাহানকে প্রশাসনের দায়িত্ব অর্পণ করেছি; আমি রক্ত মাংসের মানুষ ছাড়া আর কিছুই না।”

কিন্তু ভাষ্যকার আলেকজান্ডার ডাও বলেছেন –

“নুরজাহান সমস্ত বিধিনিষেধ ও প্রথা ভেঙ্গে জাহাঙ্গীরের দুর্বলতার চেয়ে নিজের যোগ্যতায় ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।”

মূলত মুঘল সাম্রাজ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী পুরুষদের একেকজনের দৃঢ় ব্যক্তিত্বের দিগ্বিজয়ী সম্রাট হয়ে ওঠা কিংবা তাদের মানস তৈরি অথবা পেছন থেকে তাদের পরিচালনায় ছিলেন কোন একজন অসামান্য নারী, যারা বুদ্ধিমত্তা এবং বিচক্ষনতার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন অগাধ শ্রদ্ধা আর বিপুল প্রভাব।

 

দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকেই মনে রাখুন পাঁচ কৌশল

মাঝে মাঝে কিছু দমকা হওয়া ছন্দপতন এনে দিতে পারে সুন্দর দাম্পত্য জীবনে। অথবা কোনো ঠুনকো মান অভিমানের পাল্লা ভারী হতে হতে একসময় ভঙ্গুর হয়ে যায় দাম্পত্য জীবন। তাই দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই মনে রাখুন পাঁচ কৌশল-

১। শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে তুলুন

দুটো প্রাণ এক সাথে পথ চলায় জীবনের আঁকাবাঁকা পথে কিছু কাঁটার আঁচড় রক্তাক্ত করে দেয় মাঝে মাঝে। রাগ ক্ষোভ জমতে জমতে একসময় একে অপরের প্রতি খানিক বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। ঠিক এ মুহুর্তে সঙ্গীর ভালো গুণগুলো মনে করুন। ভাবুন তাঁর অকৃত্রিম গুণসমূহের কথা, রাগ ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলে শ্রদ্ধা করুন একে অপরকে। স্বামী হলে স্ত্রীকে যথাযথ মর্যাদা দিন। তাঁর ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে এমন কথা কখনোই বলবেন না । আর স্ত্রী হলে স্বামীর প্রতি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কখনো বিষাক্ত বাণ ছুড়বেন না। কথার আঘাত তীরের চেয়েও ধারালো।

 

২। প্রত্যাশা ছাড়াই ভালবাসুন

কোনোরকম প্রত্যাশা ছাড়াই একে অপরকে ভালবাসুন। পরস্পরকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে হবে। যে কোনো সিদ্ধান্তে পরস্পরের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আপনি হয়তো তাকে বেশী ভালোবাসেন , তাই বলে সবক্ষেত্রে নিজের মতো ভালবাসা প্রত্যাশা করবেন না । মনে রাখুন প্রত্যেকের ভালবাসা প্রকাশের ধরণ ভিন্ন।

৩। বিবাহ পূর্ব জীবন সম্পর্কে অকারণ গোয়েন্দাগিরি বন্ধ করুন

আজকাল কিছু অতি উৎসাহী দম্পতিকে দেখা যায়, সঙ্গীর বিবাহ পূর্ববতী জীবন নিয়ে অতি সজাগ থাকে। এমনও হতে পারে আপনার স্বামী বা স্ত্রী বিবাহ পূর্ব কোন সম্পর্ক বা ভালো লাগায় জড়িত ছিলেন। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে বিয়ের পূর্বে খোঁজ নিন, কিন্তু বিয়ের পরে নয়। স্বামী বা স্ত্রীকে মাফ করে দিন, মন থেকে ভালবাসুন।

৪। সহযোগী হন, প্রতিযোগী নয়

স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার মধ্য দিয়েই দাম্পত্য জীবন সুখী হয়। একে অপরের সাফল্যে নিজের মতোই খুশী হন । পরস্পরের কল্যাণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হন।

৫। আজীবন একে অপরকে আবিষ্কার করুন

স্বামী স্ত্রীকে একে অপরকে আবিষ্কার করুন৷ প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তিগত ভালো মন্দের বিষয় আছে ৷ পরস্পরের প্রিয় বিষয়গুলোকে বিষয়গুলো মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করতে হবে ৷ তার চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারগুলোর প্রতিও একইভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ৷ এগুলো আবিষ্কার করলেই হবেনা বরং ন্যায় সঙ্গত চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে ৷ তাছাড়াও ভালোবাসার কথা জানান দিন নিয়ম করেই।
এছাড়া স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে অবস্থান করলে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়া উচিত ৷ কাজের ফাঁকে অফিস থেকে ফোন করে কথা বললে স্ত্রীর একাকীত্ব বা মন খারাপের ভেলা দূর হয়ে যায়। এছাড়া কোথাও বেড়াতে গেলে একে অপরকে ছোট-খাটো উপহার সামগ্রী দেয়া যেতে পারে। এতে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা প্রকাশ পায়।

 

শীতের সবজি দিয়ে তৈরি করুন মজাদার সবজী খিচুড়ি

 

শীত মানেই বিভিন্ন সবজীর সমাহার এবং মজাদার খাবারের মেলা। শীতে সুস্বাদু সবজি খিচুড়ি হলে জমে বেশ। শীতের সকালে এক প্লেট গরম খিচুড়ি দিয়ে পরিবারের সবার মন ভালো করে দিতে পারেন। আসুন জেনে নেই মজাদার সবজী খিচুড়ির রেসিপি-

যা যা লাগবে-
পেয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ
আদা কুচি দেড় চা-চামচ,
হলুদ গুড়া ১ চা চামচ
মরিচ গুড়া ১ চা চামচ
কাঁচা মরিচ ফালি ৬/৭ টি
তেজপাতা ৩ টি
দারচিনি ৩ টি
লবঙ্গ ৩টি
পোলাওয়ের চাল ২ কাপ
মুগ ডাল ১/২ কাপ
মসুরির ডাল ১/২ কাপ
গাজর, বরবটি, আলু, ফুলকপি, সিম প্রতিটা সবজি ১/২ কাপ করে। তাছাড়া পছন্দ মত যেকোনো সবজি
আলুবোখারা ও কিসমিস পরিমাণ অনুযায়ী
লবণ স্বাদ মত
তেল পরিমান অনুযায়ী
ঘি ১ টেবিল চামচ

যেভাবে তৈরি করবেন-
প্রথমে মুগ ডাল ভেজে চাল ও ডাল এক সঙ্গে ধুয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ভালভাবে পানি ঝরিয়ে নিবেন ।
একটি পাত্রে তেল গরম হলে পেয়াজ বেরেস্তা দিয়ে সবিজিগুলো কিছুটা ভেজে নিন। আদা কুচি, তেজপাতা, দারচিনি, লবঙ্গ, হলুদ ও মরিচ দিয়ে চাল ও ডাল ভেজে নিন। এরপর ৭ কাপ ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে ঢেকে চুলার জ্বাল বাড়িয়ে দিন। ভালো করে ফুটে উঠলে জ্বাল কমিয়ে দিন। কাঁচা মরিচ, আলুবোখারা, কিসমিস ও ঘি দিয়ে দমে রেখে দিন। আচার বা ভর্তা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

একই রকমভাবে হলুদ ও মরিচ ছাড়া অন্যান্য উপরকরণ দিয়েও তৈরি করতে পারেন মজাদার সবজী খিচুড়ী।

 

শীতে যেভাবে চুলের যত্ন নিবেন

 

শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে চুল হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ । আসুন জেনে নেই শীতে কীভাবে চুলের যত্ন নিবেন-

সঠিক উপায়ে চুল আঁচড়ান

শীতকালে চুলের শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ায় সহজেই চুলে জট বেঁধে যায়। চুল ভালো করে আঁচড়ালে এই সমস্যা থাকবে না। তাছাড়া ঘুমানোর আগে, গোসলের আগে এবং তেল দেওয়ার আগে চুল আঁচড়ে নিলে চুল কম পড়ে। চুল নিয়মিত আঁচড়ালে মাথার রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে করে চুল ও চুলের গোড়া সুস্থ থাকে।

 

ভালোভাবে চুল পরিষ্কার করুন

যেহেতু শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাই এ সময় মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। এতে চুল পড়া কিছুটা হলেও কমে। এক মগ পানির সঙ্গে ২ চামচ ভিনেগার মিশিয়ে রেখে শ্যাম্পু করার পর এই ভিনেগার মেশানো পানি মাথায় ঢালতে হবে। এতে করে চুল হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল। চুলের যত্নে শীতকালে কিছু মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। চুল পড়া রোধে নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে ভিটামিন সি ক্যাপসুল ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুলের উপকার হয়। আবার চুলে মসৃণ ও চকচকে ভাব আনার জন্য মধু, টকদই ও ডিমের সাদা অংশ একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

চুলে গরম পানি দেয়া থেকে বিরত থাকুন

শীতকালে কনকনে ঠান্ডায় কষ্ট হবে ভেবে চুলে গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে চুলের গোড়া নরম হয় ও চুলের নানা ক্ষতি হয়। বেশি গরম পানি চুলের গোড়াকে নরম করে দেয়, পাশাপাশি চুলকে অনেক বেশি শুষ্ক করে দেয়। তাই চেষ্টা করবেন বেশি গরম পানি চুলে না ঢেলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে।

চুলের যত্নে তেল ব্যবহার করুন

তেল দিয়ে অনেকটা সময় রেখে দেওয়া উচিত নয়। এতে চুল সহজে ময়লা ও চিটচিটে হয়ে যায়। রাতে ঘুমানোর আগে গরম তেলের ম্যাসেজ করে সকালে বাইরে যাওয়ার আগে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। গরম তেল ম্যাসাজ করে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা তোয়াল মাথায় জড়িয়ে রাখতে পারেন। এতে চুলের গোড়া হবে শক্ত ও মজবুত।

 

মেয়েই হচ্ছেন কিম জং উনের উত্তরসূরি

মেয়ে কিম জু আয়’কে উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী প্রজন্মের শাসক হিসেবে তৈরি করতে চাইছেন কিম জং উন । বর্তমানে তার মেয়ের বয়স  ১০ বছর। বাবার সাথে বেশ কয়েকটি সামরিক কর্মসূচিতে দেখা গেছে তাকে।

এই প্রথম কিমের উত্তরসূরি হিসেবে কিম জু আয়ের নাম সামনে এনেছে  দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস (এনএইএস)। অবশ্য বিষয়টি এখনো পিয়ংইয়ংয়ের বিবেচনাধীন বলে জানিয়েছে এনআইএস।

 

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসেন কিম কন্যা জু আয়ে। প্রথম জনসমক্ষে আসার পর তাকে ‘প্রিয়’ কন্যার পরিবর্তে ‘সম্মানিত’ কন্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আর ‘সম্মানিত’ বিশেষণটি উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির জন্য সংরক্ষিত।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কিম জং উন উত্তরসূরি হিসেবে তার মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা থেকেই জু আয়েকে জনসাধারণের কাছে আগে থেকেই পরিচিত করেন। কঠোরভাবে পিতৃতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়ার জন্য কুসংস্কার কাটিয়ে ওঠার একটি উপায়ও হতে পারে এটি। কারণ দেশটির নেতৃত্ব কখনই কোনো নারীর হাতে আসেনি।