banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

ব্যাংকে নারী কর্মী কমছে

ব্যাংক খাতে এমনিতেই নারী কর্মী কম। তার মধ্যে করোনার সময়ে গত ছয় মাসে সেই সংখ্যা আরও কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ৪০২ জন নারী ব্যাংকার কমে গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার কারণে নিয়োগ বন্ধ। এর মধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন। আবার কোনো কোনো ব্যাংকে ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’ হয়েছে। আবার করোনার এ সময়ে অনেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন। এর ফলে বছরের প্রথম ছয় মাসে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা কমে গেছে। আবার করোনার কারণে খুব শিগগির নতুন নিয়োগও হবে না। তাই ব্যাংকে নারী কর্মী শিগগির বৃদ্ধির পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না ব্যাংকাররা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লৈঙ্গিক সমতাভিত্তিক সূচক পর্যালোচনা করে জানুয়ারি-জুনভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখান থেকেই নারী কর্মী কমে যাওয়ার তথ্য মিলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুনে ব্যাংক খাতে কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৫। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ছিলেন ২৫ হাজার ৭৭১ ও পুরুষ কর্মকর্তা ১ লাখ ৪৪ হাজার ১০৪ জন। গত ডিসেম্বর ব্যাংক কর্মী বেড়ে হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৪৮০ জন ও পুরুষ কর্মী ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ জন। আর জুন শেষে ব্যাংকে মোট কর্মী ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৭৮ ও পুরুষ ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩২ জন।

গত ডিসেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী ছিল ১৭ হাজার ৭৯১ জন, জুনে তা কমে হয়েছে ১৭ হাজার ৬০৩ জন। বিদেশি ব্যাংকে নারী কর্মী ১ হাজার ৯৪ থেকে কমে হয়েছে ৯৭৮ জন। সব মিলিয়ে গত ৬ মাসে নারী কর্মী কমেছে ৪০২ জন।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, কেন এত নারী কর্মী কমে গেল, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোতে ৩০ বছরের বেশি বয়সের নারী কর্মী প্রায় ২১ শতাংশ হলেও পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মী মাত্র ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২৯টি ব্যাংক নারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে। ৪৪ ব্যাংক লৈঙ্গিক হয়রানি রোধে নীতিমালা করেছে।

 

সরকারি নারী কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার

রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে আজ বুধবার বিকেলে পুলিশ সুব্রতা অধিকারী (৩৩) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে। তিনি ডেপুটি ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস অফিসার ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, সুব্রতা অধিকারী ধানমন্ডি ১-এর ২১ নম্বর বাড়ির ৪ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন। আজ বিকেলে পুলিশ ওই বাসা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। সুব্রতার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন

তবে মর্গে স্বজনেরা সুব্রতার মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুব্রতার স্বামী সঞ্জীব কর্মকার বরিশালে চাকরি করেন। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সুব্রতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

 

নারী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে কোভিড-১৯

একটা সময় নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি ভাবাই যায়নি। বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসে নারীকে সম্পত্তি হিসেবে উপস্থাপনের ঘটনাও কম দেখা যায়নি। অনেক দেশেই নারীরা তাদের পুরুষ অভিভাবকের কথার বাইরে এক চুলও নড়তে পারেন না। এসব দেশে জন্মের পর থেকেই বাবার কথামত চলতে হয়। আর বিয়ের পর স্বামীই যেন সব ধ্যান-জ্ঞান। খুব কম মানুষই নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারে। একজন নারী যে জার্মানির মতো দেশের সরকার প্রধান বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান হতে পারেন অথবা কোনো নারী ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেন এটা প্রাচীন ধ্যান-ধারণার খুব কম মানুষই বিশ্বাস করবেন হয়তো।

তবে আগের এই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। অনেক দেশেই নারীকে এখন নারী বলে ছোট করা বা ছেলে সন্তানের চেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিতে সেকেলে ধারণা বা কল্পনার বাইরেই মনে করা হয়। এখন বিশ্বের বেশিরভাগ ধনী দেশেই বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে সন্তানের মতোই মেয়েদেরও একই রকমভাবে গুরুত্ব দিয়ে বড় করছেন। এমনকি তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রচুর অর্থও ব্যয় করছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পুরুষদের তুলনায় এগিয়ে আছেন নারীরা। পাঁচ দশক আগে নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৯ শতাংশ। সে সময় ছেলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ৭১ শতাংশ। বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে ছেলে-মেয়ের উপস্থিতি ৯০ শতাংশ। মাধ্যমিক স্তরেও মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

এক সময় মেয়ে সন্তানের জন্মে বাবা-মা খুশি হতে পারতেন না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। এখন ছেলে সন্তানের তুলনায় অনেক বাবা-মা একটি
মেয়ে সন্তানের আশা করেন। চীনের মতো দেশেও এই চিত্র পাল্টেছে। সেখানে লিঙ্গের ভিত্তিতে ভ্রূণ হত্যার প্রচলন অনেক আগে থেকেই আছে।

অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মেয়েদের বাল্যবিয়ের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ১৯৯৫ সালের দিকে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জন মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। এই সংখ্যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

মেয়েদের সার্বিক উন্নতির বিষয়টি অনেকাংশে সমাজের ওপর নির্ভর করে। নারীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলে তারাও পুরুষের মতোই সমান অবদান রাখতে পারবে এটা ভুলে গেলে চলবে না। যে মেয়েটি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে সে অল্প বয়সেই বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করতে চাইবে না বা অল্প বয়সেই মা হয়ে সন্তান পালনের মতো কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইবে না। শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মানুষ নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবতে শেখে এবং তার পছন্দের পরিধি বাড়ে। ফলে শিক্ষিত একজন নারী নিজেকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রেখে দরিদ্র জীবন-যাপন করতে চাইবেন না। বরং তিনি সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবেন। একজন অশিক্ষিত নারীর চেয়ে তিনি দ্বিগুণ উপার্জন করতে সক্ষম।

সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বেই ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি করে রেখেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র দেশগুলোতে করোনার কারণে নারীদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আগের সময়গুলোতেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যে কোনো বিপর্যয়ে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় যখন ইবোলার প্রাদুর্ভাব ঘটে সে সময় প্রচুর মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই আর স্কুলে ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে তাদের হয় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে অথবা তারা শিশু শ্রমিক হিসেবে উপার্জনে নামতে বাধ্য হয়েছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, করোনা মহামারির কারণেও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি হবে। কারণ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। আর অল্প কিছু দেশ ছাড়া বাকি সব দেশেই করোনার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, আগামী দশকে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। প্রায় দেড় কোটি মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের বলি হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দরিদ্র দেশগুলো শিক্ষা এবং নারীদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিলেও বিভিন্ন দাতা সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে নারীদের স্কুলে ধরে রাখতে পারলেই তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা অর্জিত হয়ে যাবে না। বরং তাদের ভ্যাকসিন প্রদান, জন্মনিয়ন্ত্রণ, যে কোনো বিষয়ে তাদের সম্মতির বিষয়গুলো শেখানোর সুযোগও এটি। একই সঙ্গে বাবা-মাকেও সন্তানের বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া যায়।

বয়ঃসন্ধিকাল নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ই নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা। মস্তিষ্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়কে কাজে লাগাতে পারলেই কয়েক লাখ নারী তাদের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবেন। কিন্তু যদি এক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে তাদের জীবন দরিদ্রের ছকেই আটকে থাকবে এবং তারা নিজেদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবেন না। তাই সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত সময়েই নিতে হবে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

 

ভারতে দুই বছর কারাভোগ শেষে ফিরলেন ১৭ বাংলাদেশি নারী

ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে দুই বছর কারাভোগ করে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন ১৭ বাংলাদেশি নারী।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে তাদেরকে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে রাত ৮টার দিকে থানা থেকে দুইটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য ওই ১৭ জনকে যশোর শেল্টার হোমে নিয়ে যায়।

ফেরত আসা নারীরা হলেন- বাগেরহাট জেলার আব্দুর রশিদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন, মুজিবুর রহমানের মেয়ে তানিয়া খাতুন, যশোরের আব্দুল লতিফের মেয়ে ফাতেমা খাতুন, কাশেম আলী খার মেয়ে আফরোজা খাতুন, মুক্ত ফকিরের মেয়ে সনিয়া বেগম, নড়াইলের শওকত শেখের মেয়ে খাদিজা খাতুন, পারভেজ মোল্লার মেয়ে পলি খাতুন, তরফু মোল্লার মেয়ে বিউটি খাতুন, তোতা মোল্লার মেয়ে রুনা বেগম, বখতিয়ার রহমানের মেয়ে রুমানা খাতুন, সালমান মোল্লার মেয়ে সেফালি বেগম, আমির আলীর মেয়ে তহমিনা খাতুন, চাঁদপুরের সফিক মোল্লার মেয়ে রুমা বেগম, চুয়াডাঙ্গার মহিন আলীর মেয়ে রহিমা খাতুন, পটুয়াখালীর নাসির সিকদারের মেয়ে নাসরিন বেগম, সুনামগঞ্জের মোকারম আলীর মেয়ে শিল্পী বেগম ও খুলনার ছলেমান হোসাইন এর মেয়ে আসমা খাতুন।
তাদের সবার বয়স ২০ থেকে ২৮ বছর এর মধ্যে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, এই নারীরা পাসপোর্ট ছাড়াই বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতের পুনে শহরে গিয়ে কাজ করার সময় সেদেশের পুলিশের হাতে আটক হয়। এরপর আদালতের মাধ্যেমে তারা জেল হাজতে যায়। পরে ভারতের রেসকিউ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা তাদের জেল থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের শেল্টার হোমে রাখে। ভারত সরকারের বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরেছে। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বেনাপোল পোর্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব নারীরা সীমান্তের অবৈধ পথে দালালদের খপ্পরে পড়ে ভালো কাজের আসায় ভারত যায়। এরপর তারা সেদেশের পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে দুদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় চিঠি চালাচালির এক পর্যায় বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে রবিবার তারা দেশে ফেরেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে জাস্টিস কেয়ার ও যশোর রাইটস নামে দুটি এনজিওর হাতে তুলে দেয়া হবে।

যশোর রাইটস এর এরিয়া কোয়ার্ডিনেটর আব্দুল মুহিত জানান, থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে এই নারীদের যশোর নেয়া হবে। পরে যোগাযোগ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

 

টানা ৩ বার ব্যর্থ, চতুর্থবারে সহকারী জজ পরীক্ষায় অষ্টম আরিফা

‘মারে, পড়াশোনার ভাগ কাউকে দিতে হবে না। আর কেউ তোমাকে পড়া করেও দিতে পারবে না। তাই নিজের মতো করে পড়াশোনা করো আর মানুষের মতো মানুষ হও’-কথাটি বাবা আমাকে প্রায়ই বলতেন। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। বাবার পুঁজি বলতে শুধু তার ছেলেমেয়েই এবং এ পুঁজি তাদের পেছনেই বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাননি। তাই তার সর্বশেষ ভরসার জায়গা হলাম আমি। তিনি আমাকে দিয়ে বাকি ছেলেমেয়েদের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। আজ তার স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ দিতে পারলেও তিনি আমাকে ছেড়ে সেই ১৮ বছর বয়সেই বহুদূর চলে গেছেন। আমার এ বিজয়ের ভাগিদার তিনি হতে পারলেন না।

অনেকটা ভেজা ভেজা কণ্ঠে নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা এভাবে ব্যক্ত করছিলেন ১৩তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সহকারী জজ) পরীক্ষায় অষ্টম মেধাতালিকায় মনোনীত কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার।

আরিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কুষ্টিয়ার মিরপুরের সন্তান আরিফা ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা-দূরন্তপনা সবকিছুতেই তিনি প্রথম স্থানে থাকতেন।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন পার করেছেন গ্রামের স্কুল থেকেই। শিক্ষকদের প্রতি তার অন্যরকম আকর্ষণ কাজ করত। তাদের সান্নিধ্য পেতে সবসময় উৎসুক থাকতেন, কারণ তারাই তাকে মোটিভেট করতেন। তাই ষষ্ঠ শ্রেণি ব্যতীত তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন আরিফা।

অনেকটা আবেগের স্বরে আরিফা আক্তার বললেন, ‘প্রত্যেক নতুন ক্লাসে ওঠার সময় স্কুল পরিবর্তনের জন্য জিদ করতাম কিন্তু আমি বুঝতাম না যে ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। আমার ভাইয়েরা বলত ক্লাসে প্রথম হলে স্কুল পরিবর্তন করাবে। আমিও প্রচুর পড়াশোনা করে প্রথম হতাম কিন্তু স্কুল আর পরিবর্তন হতো না। এভাবে প্রথম হতে হতে একসময় স্কুলজীবন শেষ হয়ে গেল।’
২০০৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৫০ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ে চিকিৎসক হওয়ার। তাই ভালো কলেজে পড়তে হবে। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতা ও আর্থিক অনটনের কারণে এবারো উপজেলা শহরের মিরপুর মাহমুদ চৌধুরী কলেজে ভর্তি হতে হলো তাকে।

‘কলেজজীবন ছিল আমার সবথেকে কষ্টের। সবসময় ডিপ্রেশন কাজ করত, তাই রেজাল্টও খারাপ হলো। জিপিএ ৩.৮০ নিয়ে আমি এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হলাম। এবার মেডিকেলের স্বপ্ন একেবারই ভেস্তে গেল’-যোগ করলেন আরিফা।

প্রথম বছরে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে না পারায় আর পরীক্ষা দেননি আরিফা। দ্বিতীয়বার বন্ধুদের উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ওই বছরে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চান্স পান। ইবিতে ‘ছ’ ইউনিট তথা আইনে ৬১তম মেধাতালিকায় স্থান পান। আইনে চান্স পাওয়ায় আর কোনোদিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। জজ হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ইবিতে ভর্তি হন।

তিনি বলেন, ‘আইনে ভর্তি হলে বাবা সবাইকে বলে বেড়াতেন যে, আমি জজ হবোই এবং তিনি আমাকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। আমিও প্রথম থেকেই জুডিশিয়ারির প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। এরমাঝে আমার জীবনে নেমে আসল বড় বিপর্যয়। জীবনের বড় অনুপ্রেরণাদাতা (বাবা) আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। বাবার মৃত্যুতে আমি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়ি এবং একা হয়ে যায়।’
‘তখন থেকে আমার আপুই আমাকে দেখাশোনা করেন এবং ভাইয়েরা পরিবারে খরচ জোগান। দ্বিতীয়বার আমার রুমমেট শারমিন নাহার আপু থেকে অনুপ্রাণিত হয় যখন তিনি ১০তম সহকারী জজ পরীক্ষায় মনোনীত হন। তখন থেকেই আমি সিরিয়াস হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। টানা তিনবছর সেশনজটে থেকে এলএলবিতে (স্নাতক) ৩.৪২ এবং এলএলএমে (স্নাতকোত্তর) ৩.৩৩ সিজিপিএ পেয়ে গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করি। বাবার স্বপ্ন পূরণে ২০১৬ সালের জুনে ঢাকায় পাড়ি জমাই। ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসে অংশ নিলেও কোনো রেজাল্ট আসেনি। পরে একমাত্র জুডিশিয়ারির জন্যই পড়ালেখা চালিয়ে যাই এবং জুডিশিয়ারি পরীক্ষার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হক ল’ একাডেমিতে ভর্তি হই।’

‘১০ম বিজেএস পরীক্ষায় নামমাত্র অংশগ্রহণ করি। ১১তম-তে অংশ নিলেও প্রিলিতে ফেল আসে। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। নিজের অবস্থানে অটল থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। অবশেষে ১২তম-তে প্রিলি-রিটেনে পাস করলেও ভাইভা বোর্ডে বাদ পড়ি। তখন মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। চারটি বছর জীবন থেকে এমনিতেই চলে গেছে। প্রচণ্ড মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে তখন বেকার অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছিলাম। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে বার কাউন্সিলের সনদ পাই এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করি। কিন্তু জজ সাহেবদের সামনে দেখলে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠত। মনে মনে ভাবতাম আমিও তো ওই চেয়ারে বসতে পারি। আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। মনে অনেকটা জেদ-সাহস নিয়ে দিনরাত অধ্যবসায় চালিয়ে যাই। অবশেষে বিজয়ের হাসি।’

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে কুষ্টিয়ার মেয়ে আরিফা আক্তার বলেন, ‘মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা যিনি আমাকে সম্মানিত করেছেন। কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি আমার পরিবারের প্রতি, বিশেষ করে আপুর প্রতি। পরিবারের বাইরে শিক্ষকমণ্ডলী, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি শারমিন নাহার আপু (সহকারী জজ), নুরুল হক ভাই (হক ল’ একাডেমি) ও শরিফুল ভাইয়ের প্রতি। যারা আমাকে সর্বদা সাহস জুগিয়েছেন। আমি তাদের অবদান কখনো ভুলতে পারব না।’

স্বপ্নজয়ের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি খুব মেধাবী সেটা কখনোই দাবি করি না। আমার মনে হয় যেকোনো প্রাপ্তির পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টি, চেষ্টা ও বাবা-মায়ের দোয়া কাজ করে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চাকরি এখন মেধার চেয়ে ধৈর্যের ওপর বেশি নির্ভর করে। তাই ধৈর্য ধরে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নিজের সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই।’

‘সমস্যা থাকবেই। এগুলো উপেক্ষা করতে পারলে জীবনযাত্রা সহজ হবে। বাধাবিহীন সফলতার আনন্দ কম তাই বাধাটা থাকাই ভালো। দুঃখগুলোকে পুঁজিতে রূপ দিতে পারলে সুখ আসতে সময় লাগে না’-বলেন সাহস না হারানো এই নারী।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে আরিফা আক্তার বলেন, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে চাই। সামর্থ্যের মধ্যে নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। নিজ গ্রামকে একটি আদর্শ গ্রামে পরিণত করা। সর্বশেষ আমার স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মেধার ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান করতে চাই।’

 

ভারতে কৃষক আন্দোলনের ‘পাওয়ারহাউস’ নারীরা

জীবনের বেশিরভাগ সময় কৃষিকাজে কাটিয়েছেন বলজিৎ কৌর। ৫০ বছর বয়সী এ নারীর কাছে শস্য উৎপাদন আর জমির যত্নআত্তি যেন আশীর্বাদ। কৃষিকাজ শুধু পেশাই নয়, এটি তার রক্তে মিশে গেছে। আর দশটা সাধারণ দিনে হয়তো মাঠে কাজ করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন বলজিৎ, কিন্তু আজ দিল্লির প্রবেশদ্বার তিকরি সীমান্তে ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছেন তিনি। শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাজারও কৃষকের সঙ্গে নেমেছেন ‘কালো আইন’ বাতিলের আন্দোলনে।

বয়স্ক এ নারী আল জাজিরাকে বলেন, নরেন্দ্র মোদি যে কালো আইন করেছেন তার বিরুদ্ধে আমরা আমাদের জমির জন্য আন্দোলন করছি। বলজিতের ভয়, ভারতে পাস হওয়া নতুন কৃষি আইনে তাদের জমির মালিকানা ঝুঁকিতে পড়বে। কিন্তু দেহে প্রাণ থাকতে এটি তিনি কিছুতেই হতে দিতে পারেন না।

ভারতীয় কৃষকদের মতে, দেশটিতে পাস হওয়া নতুন আইনগুলোতে শস্যের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। তাদের শঙ্কা, এর কারণে কৃষকদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে বাধ্য করা হতে পারে, প্রতিষ্ঠানগুলোর কথামতোই তাদের শস্য উৎপাদন করতে হতে পারে। নতুন আইনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কৃষিজমি কেনা ও পণ্য মজুতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব আইনকে কৃষিখাত আধুনিকায়নের জন্য বলে দাবি করেছেন। তবে কৃষকদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে সংকটাপন্ন খাতটিতে চুক্তিভিত্তিক কাজের বিস্তার এবং ব্যাপক বেসরকারিকরণের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতে চলছে কৃষকদের এই আন্দোলন। দেশটির তিন কৃষিপ্রধান রাজ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে লাখ লাখ কৃষক এসে জড়ো হয়েছেন ভারতীয় রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথ সিংহু ও কিতরি সীমান্তে। সরকারপক্ষ আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করলেও কৃষকদের এক কথা, এক দাবি, ‘ক্ষতিকর আইন বাতিল চাই’।

‘পুরুষের চেয়ে নারীর কাজ বেশি’

সারা ভারতেই পুরুষরা কৃষিকাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠলেও এক্ষেত্রে নারীদের অবদানও কম নয়। বরং, কাজের ক্ষেত্রে তো বটেই, নতুন আইনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে নারীদের। ভারতীয় সংগঠন মহিলা কিষাণ অধিকার মঞ্চের (মাকাম) হিসাবে, দেশটির ৭৫ শতাংশ কৃষিকাজ নারীরা করলেও ভূমির মালিকানায় তাদের অংশ মাত্র ১২ শতাংশ।

পাঞ্জাবের জালান্দর থেকে প্রায় ৬৪৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তিকরি সীমান্তে এসেছেন কুলবিন্দর কৌর ও পরমিন্দর কৌর। আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে রাত কাটাচ্ছেন একটি ট্রাকের ওপর। সেখনেই তাদের সঙ্গে কথা হয় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার।

সরকারের নতুন কৃষি আইনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কুলবিন্দর বলেন, যদি নির্ধারিত মূল্য বা বাজার না থাকে, আমরা সন্তানদের রুটি খাওয়াব কী করে? শস্য বিক্রি করব বা কী করে?

পরমিন্দর বলেন, কোনও কাজই সহজ নয়। খাবার জোগাতে আপনাকে কাজ করতে হবে। কিন্তু কাজ করার পরেও যদি আমরা খাবার না পাই, সেটাই হবে সমস্যা।

৬০ বছরের জীবনে প্রায় ৩০ বছরই কৃষিকাজে কাটিয়েছেন মুলকিৎ কৌর। তার দাবি, পাঞ্জাবে তার গ্রামে অনেক নারীই পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করেন। এমনকি এই আন্দোলনের মধ্যেও অনেক নারী কৃষককে পরিবারের দেখাশোনার জন্য বাড়িতে থেকে যেতে হয়েছে। তবে পুরোপুরি নিবৃত্ত হননি, সেখান থেকেই আন্দোলনে মূল্যবান সমর্থন দিচ্ছেন তারা।

আন্দোলনরত মুলকিৎ পরের দিন বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও এ বৃদ্ধা জানান, তিনি যাওয়ার পর পরিবারের কোনও সদস্য এসে তার জায়গা নেবেন। তিনি বলেন, আমরা এত দূর এসেছি। আশা করি, ঈশ্বর আমাদের ডাক শুনবেন।

‘শিশুরা কষ্ট পেলে বেঁচে থেকে লাভ কী?’

ভারতের অনেক বয়স্ক নারী কৃষকের কাছেই এই আন্দোলন শুধু জমির মালিকানা বা অর্থের ইস্যু নয়। তাদের কাছে কয়েক প্রজন্ম ধরে থাকা জমি পূর্বপুরুষদের চিহ্ন, তাদের সংস্কৃতির অংশ, সন্তানদের ভবিষ্যৎ।

বলজিৎ বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী বলবে, আমরা আওয়াজ তুলিনি? এর জন্যই রাস্তায় বসে রয়েছি, আমাদের নাতি-নাতনিদের জমি রক্ষা করতে।

তিকরি সীমান্তে আরও দুই নারীর সঙ্গে মাটিতে বসে ছিলেন জসপাল কৌর। তার কথায়, নাতি-নাতনিদের সম্পদ চুরি ঠেকাতে এসেছেন তারা। ৫৮ বছর বয়সী এ নারী বলেন, আমাদের সন্তানরা যদি কষ্ট পায় তাহলে জীবনের আর কী দাম থাকল?

অবশ্য তার এই কথা শুধু মুখের বুলি নয়, এর গুরুত্ব অনেক। দরিদ্র্যতা আর ঋণে জর্জরিত হয়ে ২০১৯ সালে ভারতে ১০ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।

জসপাল বলেন, আমরা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাব। তার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, এধরনের মানুষগুলো এত সহজে পিছপা হওয়ার পাত্র নয়।

যৌথ রান্নাঘর আর নিঃস্বার্থ সেবা
সরকারের নতুন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনস্থলে একসঙ্গে নেচে, গেয়ে, অভিনয়ের মাধ্যমে চলছে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আন্দোলনকারীরা থাকছেন দলবেঁধে, রান্না-খাওয়া সবই করছেন একসঙ্গে।

স্বঘোষিত কৃষককন্যা জাসসি সাংহা বলেন, আন্দোলনের একাধিক স্থানে লঙ্গর (সাম্প্রদায়িক রান্নাঘর) খোলা হয়েছে। সেগুলো চলছে শিখদের স্বপ্রণোদিত সেবায়। বিক্ষোভকারীরা কয়েক সপ্তাহের খাবার নিয়ে এসেছেন। তারা এত খাবার এনেছেন যে স্থানীয়রাও তাদের সঙ্গে খাচ্ছেন।

পাঞ্জাবের অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী সোনিয়া মানও যোগ দিয়েছেন কৃষকদের আন্দোলনে। তিনি বলেন, হরিয়ানা, রাজস্থানসহ অন্য রাজ্যের কৃষকরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তারা সবাই একসঙ্গে এসেছেন এবং একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তারা সবাইকে সমম্মান করেন। হিন্দু, মুসলিম, শিখ- সবাই এখানে এসেছেন।

নিজে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণ প্রসঙ্গে সোনিয়া বলেন, আমি কৃষকের মেয়ে। আমার বাবা ছিলেন কৃষক ইউনিয়নের নেতা। তিনি কৃষকদের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এজন্য আমিও এখানে এসেছি।

টিয়ারগ্যাস ও জলকামান
ভারতে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আন্দোলনরত কৃষকদের ‘দেশবিরোধী’ বলে উল্লেখ করছে। এমনকি তাদের কিছু নেতা কৃষকদের ‘সন্ত্রাসী’ পর্যন্ত বলেছেন।

সোনিয়া বলেন, তারা (বিজেপি) আমাদের আন্দোলন নষ্ট করতে চায়। তার বিশ্বাস, সরকার ও গণমাধ্যম কৃষকদের আন্দোলনকে ধর্মীয় ও দেশবিরোধী প্রমাণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এজন্য আন্দোলনরত কৃষকরা ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হলেও একইসঙ্গে তারা যথেষ্ট ধৈর্য ও সতকর্তা অবলম্বন করছেন। কৃষকদের পক্ষে কে কী বলছেন, তা খুব সাবধানতার সঙ্গে খেয়াল রাখা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের কথায়, মাত্র একটিবার ‘খালিস্তান’ (শিখ বিদ্রোহীদের দাবি করা স্বাধীন রাষ্ট্র) শব্দের উচ্চারণ গণমাধ্যম ও সরকারের জন্য কৃষক আন্দোলন ধ্বংসের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

আন্দোলনস্থলে দায়িত্বরত সাংবাদিক নিকিতা জেইন বলেন, মতামত থাকা মানেই সে দেশবিরোধী নয়। যে কৃষকরা সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক, তাদেরই কীভাবে আপনারা দেশবিরোধী বলতে পারেন?

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে জাসসি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারত। কিন্তু সেখানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যা হয়েছে, তা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।

‘সরকারের ঘাড়ে পা আমাদের’
ভারতীয় পুলিশের তথ্যমতে, দেশটিতে কৃষক আন্দোলনে এপর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, হাইপোথারমিয়া ও সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

আন্দোলনকারী কৃষকদের অনেকেই রাতে তীব্র শীতের মধ্যে মাটিতে ঘুমাচ্ছেন, কেউ ঘুমাচ্ছেন ট্রাকের ওপর। টয়লেট ব্যবহার করছেন স্থানীয়দের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও সনোবল হারাননি নারী কৃষকরা।

গত সপ্তাহে কৃষক ইউনিয়নের নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ষষ্ঠ আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। দুই পক্ষই নিজ নিজ দাবিতে অনড়। কিন্তু কৃষকদের ইচ্ছাশক্তি প্রবল এবং তাদের পক্ষে ক্রমাগত জনসমর্থন বাড়ছে।

পরবিমন্দর ও কুলবিন্দর বলেন, আমরা যেখানে শুরু করেছিলাম, সেখানেই রয়েছি। আমরা এখানেই থাকব। কোনও সমস্যা নেই, আমাদের বাড়ির কথা মনে হচ্ছে না।

পরিবারের সদস্যরাও আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন জানিয়ে কুলবিন্দর বলেন, তারা আমাদের ফোন করে বলছে, শক্ত থাকো, হাল ছেড়ো না।

আন্দোলনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে পরমিন্দর ও কুলমিন্দর দু’জনই জোর গলায় বলেন, আমরা যখন তাদের ঘাড়ে পা দিয়ে রেখেছি, তারা এটা (নতুন আইন) ফেরাবে না কেন?

জাসসির কথায়, জমি মায়ের মতো। আর ভারতের মা, মেয়ে, কন্যারাই এই আন্দোলনের মেরুদণ্ড।

দৃঢ়কণ্ঠে বলজিৎ বলেন, আমরা আওয়াজ তুলেছি। আমরা আমাদের অধিকার নেবোই।