banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

বাবার ওষুধ কিনতে সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালায় শিশু শম্পা

জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামের শফিকুল ওরফে ভাসানীর শিশু কন্যা শম্পা। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী বাবার চিকিৎসা ও ওষুধের টাকার জন্য দেড় বছর ধরে ভ্যান চালাচ্ছে সে। শম্পা নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। সোমবার সকালে শম্পা, তার বাবা-মা ও স্বজনদের সংখ্যা কথা বলেছেন তিনি। ওই সময় জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানীর চিকিৎসার দায়িত্ব ও পরিবারের ব্যয়-ভার গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানী বলেন, আমি আগে ভ্যান চালাতাম। পাঁচ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আমার এক পা ভেঙে যায়। এরপর পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সবকিছু বিক্রি করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করেছি। তবু পা ভালো না হওয়ায় দেড় বছর ধরে ঘরে পরে আছি। প্রতিদিন আমার ১০০-১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। কোনো উপায় না পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী সবজি বিক্রি করি ও আমার ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। স্ত্রী-মেয়ের জন্যই এখনো বেঁচে আছি।

শম্পার মা নেবুজা বেগম বলেন, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে জানিয়েছে আমার স্বামীর পা ভালো করার জন্য আরো অন্তত তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। এ কারণে ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে শম্পা। ওর হাত-পায়ে ব্যথা হয়। প্রতিরাতেই ওর হাত-পা টিপে দিতে হয়। তবু বাবার জন্য সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালিয়ে টাকা নিয়ে আসে মেয়েটা।

ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হয় জানিয়ে শম্পা বলে, প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। ২০০-৩০০ টাকা কামাই করে বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি।

শরিফুলের প্রতিবেশী হযরত আলী বলেন, দেড় বছর আগে শম্পা একবেলা পড়াশোনা করত, এক বেলা ভ্যান চালাত। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সারাদিন ভ্যান চালায় মেয়েটি।

জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পরিবারটির খোঁজ নিয়েছি। স্থানীয়রা সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করছে। অসহায় পরিবারটির দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে শিশু শম্পা ও তার বাবার খোঁজ নিয়েছি। অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

বাল্যবিয়ের অভিশাপে দুঃসহ জীবন কাটছে বৃষ্টির

বাল্যবিবাহের অভিশাপে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে এখন দুঃসহ জীবনযাপন করছে কিশোরী বৃষ্টি খাতুন। সে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগাড়ি আদর্শ গ্রামের মৃত নুর হোসেন ও মোছা. বাঁচা খাতুনের মেয়ে।

বৃষ্টি খাতুন জানায়, উপজেলার বলদিপাড়া দাখিল মাদরাসায় ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে পার্শ্ববর্তী দেশিগ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে আব্দুল মমিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু কোনোভাবেই সে স্বামী, সংসার ও পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারছিল না। স্বামীকে দেখলেই তার খুব ভয় লাগত। এ বিষয়টা কেউই বুঝতে চাইত না। আবার কেউ মেনেও নিত না। এতো ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কীটনাশক পানে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেক চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দুই পায়ের শক্তি হারিয়ে যায়। সে এখন পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না। ফলে লাঠিতে ভর দিয়ে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।

বৃষ্টির মা বাঁচা খাতুন জানান, দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি যে, মেয়েকে এতো অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া আমার মোটেও ঠিক হয়নি। তাই মেয়েকে আরো কিছুদিন নিজের কাছে নিয়ে এসে রাখতে চেয়েছিলাম। জামাই আবদুল মোমিন ও বেয়াই আবদুল মতিনকে অনুরোধও করেছিলাম। আরো কিছুদিন আমার বাড়িতে রেখে দিতে। তারপর ঠিক হলে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। সপ্তাহ পার না হতেই জামাই চলে আসতো আমার বাড়িতে। এতে মেয়ে আরো ভয়ে পেয়ে যেতো। ফলে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

তিনি আরো জানান, মেয়ের জীবনটা দুঃসহ হয়ে উঠেছে। মমিন আবারো বিয়ে করেছে। তাকে নিয়ে সংসার করছে। আমার মেয়েটা আমার বাড়িতে এভাবে পড়ে আছে। তার কোনো খোঁজ-খবরও নেয় না। মেয়েটা এখন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। দু’জনের বয়স না হওয়ায় বিয়ের নিবন্ধন করাও সম্ভব হয়নি। ফলে আমরা কোথাও কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে বৃষ্টির স্বামী আব্দুল মমিন জানায়, বৃষ্টিকে এক লাখ টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু তার অভিভাবকরা তা নেয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে বৃষ্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সে নিজ বাড়ির উঠানে লাঠিতে ভর দিয়ে বসে আছে।

তাড়াশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, তাড়াশে কন্যা সন্তানের অভিভাবকরা মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার বৃষ্টি।

তাড়াশ ইউএনও মো. মেজবাউল করিম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাল্যবিয়ে সাময়িক বন্ধ করা গেলেও তা শেষ পর্যন্ত আটকে থাকছে না। পরে গোপনে বিয়ে দিয়ে দেয়। মাঝে মধ্যেই এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোষীদের জেল-জরিমানা করা হয়। অভিভাবকরা সচেতন না হওয়ায় গোপনে এ কাজ চলছে। বৃষ্টির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। -ডেইলি বাংলাদেশ

 

ব্যর্থতা থেকে জান্নাতের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ফেসবুকে তিনি ‘অপরাজিতা জান্নাত’ নামেই বেশি পরিচিত। তার উদ্যোগের নাম ‘অপরাজিতা’। দেশি পণ্যকে তুলে ধরার প্রয়াস তার। অপরাজিতা এ নারীর পুরো নাম জান্নাতুল ফিরদাউস। বাবা ব্যবসায়ী আবু জাহির, মা সুলতানা সুফিয়া। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সিলেটের হবিগঞ্জে। পূর্বপুরুষ পারিবারিকভাবে ব্যবসায়ী ছিলেন; তাই ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার সাথে পরিচিত তিনি। পাঁচ বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

জান্নাতুল বলেন, ‘আমার ভাই সবার ছোট। আমাদের বড় ভাই ছিল না। তাই বাবাকে সব কিছু একা সামলাতে হতো। দু’জন কর্মচারী থাকা সত্ত্বেও বাবার একজন বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজন ছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ৮ বছর। একদিন একা একা বাবার দোকান দেখতে গিয়েছিলাম। বাবা আমাকে দেখে অনেক খুশি হন এবং ক্যাশ কাউন্টারে বসিয়ে দেন। তখন টুকটাক হিসাব জানতাম। বাবার কাছ থেকে কী করে পোশাক ভাঁজ করতে হয়, এগুলো শিখতাম। এভাবেই আমার ব্যবসার হাতেখড়ি।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে প্রায় ৮ বছর বাবার সাথে কাজ করি। এমনকি বাবা যখন অসুস্থ; তখন পুরো দোকান সামলেছি। যখন মাধ্যমিকে পড়ি; তখন কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ আমি একজন মেয়ে আর সামনে এসএসসি পরীক্ষা। সবদিক চিন্তা করে আমি ব্যবসার কাজ থেকে সরে আসি। এর একবছর পর আমার বাবা দোকানটি ছেড়ে দেন। দোকানের সম্পূর্ণ মালামাল বিক্রি করে ফেলেন।’

জান্নাত বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর ব্যবসা করার পরও বাবা মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলতেন, আমার মেয়েটা যদি আজ ছেলে হতো, তবে হয়তো আমার ব্যবসাটা আজ টিকে থাকত। বাবার সেই আক্ষেপ আর ব্যবসার প্রতি ভালোবাসা থেকেই মূলত ব্যবসায় কিছু একটা করার চিন্তা-ভাবনা করি। বাবার ইচ্ছে ছিল, আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি। তাই ২০১৬ সালে ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হই।’

দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে অপরাজিতা জান্নাত বলেন, ‘১ম বর্ষের ফরম ফিলাপের আগের দিন পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। স্বামী এমদাদুল হক রুবেল পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তারপর থেকে মূলত উদ্যমী জীবন শুরু। বিয়ের পর হোস্টেল ছেড়ে নতুন জীবন শুরু। ছোট একটা বাসা নিয়ে সংসার আমাদের। এরই মধ্যে ১ম বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়, আমি ফার্স্ট ক্লাস পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে বাসা দূরে হওয়ায় রেগুলার ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। তাই বাসায় বসে না থেকে আমি চিন্তা করি চাকরি করব। স্বামীর মতামত নিয়ে একটি প্রাইভেট অফিসে জয়েন করি। কিন্তু পড়াশোনা, অফিস, সংসার সবকিছু সামলানো চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছিল। তখন ফ্রি টাইমে আমি বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তার গল্প শুনতাম। এরপরই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ব্যবসা করার।’

ব্যবসা শুরুর গল্প জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামীর উৎসাহে বাবা, স্বামী ও নিজের কিছু জমানো টাকা নিয়ে বাসার কাছে একটি দোকান ভাড়া করেন। ডেকোরেশনের কাজ শেষে সেখানে তিনি মেয়েদের ড্রেসসহ অন্যান্য আইটেমের পোশাক তোলেন। যেহেতু এটি মেয়েদের দোকান ছিল এবং সুন্দর সুন্দর কালেকশন ছিল; তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকায় ভালো পরিচিতি পাই।’

জান্নাত বলেন, ‘এভাবে যখন একটু একটু করে দোকানটি বড় হচ্ছিল; তখনই বেবি কনসিভ হয়। আমাদের প্রথম সন্তান যেহেতু; তার প্রতি আমাদের অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। কিন্তু অন্যদিকে আমার স্বপ্ন কেবলমাত্র যাত্রা শুরু করেছে। সেই মূহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর ছিল। স্বামীর কথা ভেবে, সন্তানের কথা চিন্তা করে ব্যবসার পরিকল্পনা স্থগিত করি।’

প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্ন যদি চোখের সামনে ভেঙে যায়; তখন সেই পরিস্থিতিটা যে কতটা কষ্টের, সেটা আমি প্রথমবার উপলব্ধি করি। ডেকোরেশন ও মালামাল মিলিয়ে আমার লস হয়েছিল প্রায় লক্ষাধিক টাকা। মানসিকভাবে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি। নিজেকে তখন শুধু ব্যর্থ মনে হতো। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে আমার ছেলের জন্ম হয়। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটি কথা মনে হতো, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি ব্যর্থ হলেও একজন মা হিসেবে আমি সফল।’

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলতে গিয়ে জান্নাত বলেন, ‘ফ্রেব্রুয়ারিতে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। মার্চ মাসে যখন করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়, তখন চারটি পরীক্ষা স্থগিত রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে স্বামীর অফিস কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। ওই সময়ে আমার স্বামী বলতেন, তুমি ঘরে বসে কাজ করা যায় এমন কিছু একটা চিন্তা করো। কিন্তু সেই সময়ে আমার মন-মানসিকতা এতটাই দুর্বল ছিল যে, আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। তখন আমার একজন শিক্ষকের কথা মনে পড়ে যায়, তিনি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। যিনি সব সময় বলতেন, স্বপ্ন দেখুন, লেগে থাকুন, সফল হবেন। স্যারের এ উক্তি আমার মনোবলকে জাগিয়ে তোলে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু অনলাইনে কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না। সেই মূহূর্তে আরও একজন শিক্ষকের দেখা পাই। তিনি রাজীব আহমেদ স্যার। যিনি বলেন, পার্সোনাল ব্রান্ডিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে। স্যারের কথা অনুযায়ী আমার মনে হলো, আমার আগে নিজেকে ব্রান্ডিং করতে হবে। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডরা সবাই যেহেতু আমার পরিচিত ছিলেন; সেক্ষেত্রে আমি নতুন করে আবার সবার সাথে পরিচিত হওয়া শুরু করলাম। আমার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিলাম।’

স্বপ্নের হাতছানি সম্পর্কে জান্নাত বলেন, ‘তারপর একদিন আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড আমাকে নক করলেন কিছু ড্রেস কেনার জন্য। কারণ তিনি জানতেন আমার নিজের একটা শপ আছে। আমার কাছে যেহেতু ড্রেস কালেকশন ছিল না, তাই আমি আমার একজন ফ্রেন্ডের কিছু ড্রেস কালেকশন তাকে দেখাই। তিনি সেখান থেকে ২ হাজার টাকার ব্লক এবং স্ক্রিন প্রিন্ট ড্রেস অর্ডার করেন। অর্ডারটা আমার ফ্রেন্ডকে কনফার্ম করার পর, সে এগুলো পাঠিয়ে দেয়। ড্রেস হাতে পেয়ে আমার সেই কাস্টমার ফ্রেন্ড অনেক খুশি হন। সেই অর্ডারে আমার লাভ ছিল মাত্র ৮০ টাকা। কিন্তু আনন্দ ছিল এত বেশি যে, আমার মনে হয়েছিল আমি কোটি টাকা হাতে পেয়েছি। কারণ তিনি আমার প্রথম অনলাইন কাস্টমার ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তখন যেহেতু আমি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিলাম। তার পরের দিন আমার একজন প্রিয় বান্ধবীর সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। সে তখন আমার কথা শুনে কালেকশনগুলোর ছবি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি তাকে ছবিগুলো দিলে সে সেখান থেকে ৫ হাজার টাকার পণ্য অর্ডার করে। আমি প্রডাক্ট কনফার্ম করে আমার সেই সেলার ফ্রেন্ডকে অর্ডার দিলে, তিনি সবগুলো প্রডাক্ট তার কাছ থেকে নেন। আমার যেহেতু নতুন ব্যবসা আর ব্যবসায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা যেহেতু বড় বিষয়, তাই আমি প্রথমবার অল্প কিছু টাকার প্রডাক্ট স্টক করি এবং সেই বান্ধবীর চাহিদা অনুযায়ী তার ড্রেসগুলো পাঠিয়ে দেই। সেই বান্ধবী ড্রেসগুলো পেয়ে অনেক খুশি হন এবং তিনি আমাকে পরামর্শ দেন অনলাইনে একটা গ্রুপ খোলার জন্য।’

এরপর তিনি তার বান্ধবীর পরামর্শ অনুযায়ী একটি পার্সোনাল গ্রুপ খোলেন তার শপের নাম অনুযায়ী। গ্রুপের নাম দেন ‘অপরাজিতা’। একই নামে একটি পেইজও খোলেন তিনি। পেজ এবং গ্রুপ খোলার পর পরিচিতদের থেকে ভালো সাড়া পান। গ্রুপ খোলার পর দুই মাসে তার পোশাক বিক্রি হয় ১ লাখ টাকা। অথচ তখন গ্রুপের সদস্য ছিল মাত্র ২৫০ জনের কাছাকাছি। এভাবে গত ৪ মাসে শুধু গ্রুপ এবং পেজ থেকে জান্নাতুলের পণ্য বিক্রি হয় আড়াই লাখ টাকারও বেশি। এর মধ্যে ব্লক এবং স্ক্রিন প্রিন্টের ড্রেস বিক্রি হয়েছে ২ লাখ টাকা। তাই তিনি সিগনেচার প্রোডাক্ট হিসেবে ব্লকের শাড়ি তৈরি করেছেন।

এ ছাড়াও তার উদ্যোগে সামিল হয়েছেন প্রতিবশী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন এবং বিভিন্ন সময়ের বন্ধু-বান্ধব। তার এ সফলতার সবচেয়ে বড় অংশীদার তার স্বামী। বাবা-মায়ের দোয়া এবং ভালোবাসা সব সময় জান্নাতুলকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি এমন দু’জন শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছেন; যাদের প্রতিটি কথা এবং কাজ তার ব্যক্তিগত জীবন ও ব্যবসায়িক জীবনের চিন্তা-ভাবনাকে বদলে দিয়েছে। জাগো নিউজ

 

ভরিতে ১১৬৬ টাকা কমল স্বর্ণের দাম

ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে স্ব‌র্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) বাজুসের সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে স্বর্ণের এ নতুন দর কার্যকর হবে। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর থেকে প্র‌তিভরিতে ২ হাজার ৫০৭ টাকা ক‌মি‌য়ে স্ব‌র্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে এক সপ্তাহে দুই দফায় ভরিতে ৩ হাজার ৬৭৩ টাকা কমল স্বর্ণের দাম।

বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় শঙ্কিত বৈশ্বিক অর্থনীতি, ডলার ও তেলের দরপতন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বর্ণবাজারে দামের উত্থান-পতন সত্ত্বেও এক সপ্তাহের মধ্যে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হলো।

তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন দাম অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর থেকে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৯ হাজার ৫১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬০ হাজার ৭৬৯ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার ৪৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে।

স্ব‌র্ণের দাম কম‌লেও রুপার পূর্বনির্ধা‌রিত দাম বহাল রয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি রুপার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম ৯৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়েছে।

এ‌দি‌কে আজ‌ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দে‌শের বাজা‌রে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণ বি‌ক্রি হ‌য়ে‌ছে ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭০ হাজার ৬৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা ভরি বিক্রি হয়েছে।

এদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হলেও বিশ্ববাজারে আজ দাম বেড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩৫ দশমিক ৮৮ ডলার বা ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮১২ দশমিক ৯০ ডলারে উঠেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেয় যখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কম ছিল। আমরা সবসময় চেষ্টা করছি বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের সমন্বয় রাখতে।

 

মডেলিং ছাড়লেন আলোচিত মডেল হালিমা আদেন

পশ্চিমা বিশ্বের আলোচিত হিজাবী র‌্যাম্প মডেল হালিমা আদেন। সম্প্রতি তিনি ফ্যাশন দুনিয়াকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছেন। তিনি এই খবর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইসলামী মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছিলো এ ইন্ডাস্ট্রি।

ব্রিটিশ ফ্যাশন ম্যাগাজিন- ভোগ, ভোগ অ্যারাবিয়া এবং মার্কিন জনপ্রিয় পত্রিকা- আলুউরের প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছিলেন সোমালিয়ান বংশোদ্ভুত এ মার্কিনী।

প্রথাগত মডেলিং ধারার বাইরে গিয়ে হিজাব পরিহিত অবস্থায় ক্যাটওয়াক করে সবার নজর কাড়েন হালিমা। ধীরে-ধীরে নিজের স্বতন্ত্র স্টাইল নিয়েই হয়ে ওঠেন ফ্যাশন আইকন। আর ক্যারিয়ারের চূড়ায় থাকা অবস্থায়ই হালিমা ঘোষণা দিলেন, আর ফিরবেন না মডেলিংয়ে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করলেন ‘হিজাব স্টোরি’ নামে সিরিজ বার্তা। জানান- এ সিদ্ধান্তের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তার মা।

মার্কিন হিজাবী মডেল হালিমা আদেন বলেন, বহু আগেই মা মডেলিং ছাড়ার কথা বলেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে, সেসময় এতোটা প্রতিবাদী না হলেও পারতাম। কারণ, তিনিই একমাত্র মানুষ যে সবসময় আমার কল্যাণ কামনা করেন। দ্বীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে তার পরামর্শে বরাবর অটল ছিলেন মা।

হালিমার দাবি- চোখ ধাঁধানো ফ্যাশন দুনিয়া ইসলামিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে তাকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়েছিলো। বিশেষ করে চলমান মহামারি পরিস্থিতি ধর্ম সম্পর্কে বেশি প্রভাবিত করেছে তাকে।

হালিমা আদেন বলেন, একজন মুসলিম নারী হিসেবে কী করা উচিৎ- সেটা চিন্তার সুযোগ তৈরি করে দিলো করোনা মহামারি। হিজাব পরে ফ্যাশন দুনিয়ায় টিকে থাকতে বহু চড়াই-উৎড়াই পার করেছি। আর হিজাবের মর্ম বুঝতে পারেন, এমন মুসলিম স্টাইলিস্টেরও বড় অভাব ইন্ডাস্ট্রিতে।

কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করা হালিমা মাত্র ছয় বছর বয়সে পা দেন মার্কিন মুলুকে। ২০১৬ সালে প্রথমবার, মিস মিনেসোটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় হিজাব পড়ে অংশ নেন হালিমা। এর পরে কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। সেটাই ছিলো তার ক্যারিয়ারের শুরু। জায়গা করে নেন ‘ভোগ’ ‘আলুউরে’র মতো জনপ্রিয় ফ্যাশন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। প্রথমবার, বুরকিনি পড়ে পোজ দিয়েছিলেন ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেডের’ জন্যেও।