banner

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

ব্যাংকে নারী কর্মী কমছে

ব্যাংক খাতে এমনিতেই নারী কর্মী কম। তার মধ্যে করোনার সময়ে গত ছয় মাসে সেই সংখ্যা আরও কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ৪০২ জন নারী ব্যাংকার কমে গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার কারণে নিয়োগ বন্ধ। এর মধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন। আবার কোনো কোনো ব্যাংকে ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’ হয়েছে। আবার করোনার এ সময়ে অনেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন। এর ফলে বছরের প্রথম ছয় মাসে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা কমে গেছে। আবার করোনার কারণে খুব শিগগির নতুন নিয়োগও হবে না। তাই ব্যাংকে নারী কর্মী শিগগির বৃদ্ধির পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না ব্যাংকাররা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লৈঙ্গিক সমতাভিত্তিক সূচক পর্যালোচনা করে জানুয়ারি-জুনভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখান থেকেই নারী কর্মী কমে যাওয়ার তথ্য মিলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুনে ব্যাংক খাতে কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৫। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ছিলেন ২৫ হাজার ৭৭১ ও পুরুষ কর্মকর্তা ১ লাখ ৪৪ হাজার ১০৪ জন। গত ডিসেম্বর ব্যাংক কর্মী বেড়ে হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৪৮০ জন ও পুরুষ কর্মী ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ জন। আর জুন শেষে ব্যাংকে মোট কর্মী ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৭৮ ও পুরুষ ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩২ জন।

গত ডিসেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী ছিল ১৭ হাজার ৭৯১ জন, জুনে তা কমে হয়েছে ১৭ হাজার ৬০৩ জন। বিদেশি ব্যাংকে নারী কর্মী ১ হাজার ৯৪ থেকে কমে হয়েছে ৯৭৮ জন। সব মিলিয়ে গত ৬ মাসে নারী কর্মী কমেছে ৪০২ জন।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, কেন এত নারী কর্মী কমে গেল, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোতে ৩০ বছরের বেশি বয়সের নারী কর্মী প্রায় ২১ শতাংশ হলেও পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মী মাত্র ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২৯টি ব্যাংক নারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে। ৪৪ ব্যাংক লৈঙ্গিক হয়রানি রোধে নীতিমালা করেছে।

 

সরকারি নারী কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার

রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে আজ বুধবার বিকেলে পুলিশ সুব্রতা অধিকারী (৩৩) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে। তিনি ডেপুটি ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস অফিসার ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, সুব্রতা অধিকারী ধানমন্ডি ১-এর ২১ নম্বর বাড়ির ৪ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন। আজ বিকেলে পুলিশ ওই বাসা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। সুব্রতার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন

তবে মর্গে স্বজনেরা সুব্রতার মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুব্রতার স্বামী সঞ্জীব কর্মকার বরিশালে চাকরি করেন। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সুব্রতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

 

নারী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে কোভিড-১৯

একটা সময় নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি ভাবাই যায়নি। বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসে নারীকে সম্পত্তি হিসেবে উপস্থাপনের ঘটনাও কম দেখা যায়নি। অনেক দেশেই নারীরা তাদের পুরুষ অভিভাবকের কথার বাইরে এক চুলও নড়তে পারেন না। এসব দেশে জন্মের পর থেকেই বাবার কথামত চলতে হয়। আর বিয়ের পর স্বামীই যেন সব ধ্যান-জ্ঞান। খুব কম মানুষই নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারে। একজন নারী যে জার্মানির মতো দেশের সরকার প্রধান বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান হতে পারেন অথবা কোনো নারী ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেন এটা প্রাচীন ধ্যান-ধারণার খুব কম মানুষই বিশ্বাস করবেন হয়তো।

তবে আগের এই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। অনেক দেশেই নারীকে এখন নারী বলে ছোট করা বা ছেলে সন্তানের চেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিতে সেকেলে ধারণা বা কল্পনার বাইরেই মনে করা হয়। এখন বিশ্বের বেশিরভাগ ধনী দেশেই বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে সন্তানের মতোই মেয়েদেরও একই রকমভাবে গুরুত্ব দিয়ে বড় করছেন। এমনকি তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রচুর অর্থও ব্যয় করছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পুরুষদের তুলনায় এগিয়ে আছেন নারীরা। পাঁচ দশক আগে নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৯ শতাংশ। সে সময় ছেলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ৭১ শতাংশ। বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে ছেলে-মেয়ের উপস্থিতি ৯০ শতাংশ। মাধ্যমিক স্তরেও মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

এক সময় মেয়ে সন্তানের জন্মে বাবা-মা খুশি হতে পারতেন না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। এখন ছেলে সন্তানের তুলনায় অনেক বাবা-মা একটি
মেয়ে সন্তানের আশা করেন। চীনের মতো দেশেও এই চিত্র পাল্টেছে। সেখানে লিঙ্গের ভিত্তিতে ভ্রূণ হত্যার প্রচলন অনেক আগে থেকেই আছে।

অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মেয়েদের বাল্যবিয়ের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ১৯৯৫ সালের দিকে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জন মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। এই সংখ্যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

মেয়েদের সার্বিক উন্নতির বিষয়টি অনেকাংশে সমাজের ওপর নির্ভর করে। নারীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলে তারাও পুরুষের মতোই সমান অবদান রাখতে পারবে এটা ভুলে গেলে চলবে না। যে মেয়েটি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে সে অল্প বয়সেই বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করতে চাইবে না বা অল্প বয়সেই মা হয়ে সন্তান পালনের মতো কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইবে না। শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মানুষ নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবতে শেখে এবং তার পছন্দের পরিধি বাড়ে। ফলে শিক্ষিত একজন নারী নিজেকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রেখে দরিদ্র জীবন-যাপন করতে চাইবেন না। বরং তিনি সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবেন। একজন অশিক্ষিত নারীর চেয়ে তিনি দ্বিগুণ উপার্জন করতে সক্ষম।

সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বেই ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি করে রেখেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র দেশগুলোতে করোনার কারণে নারীদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আগের সময়গুলোতেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যে কোনো বিপর্যয়ে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় যখন ইবোলার প্রাদুর্ভাব ঘটে সে সময় প্রচুর মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই আর স্কুলে ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে তাদের হয় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে অথবা তারা শিশু শ্রমিক হিসেবে উপার্জনে নামতে বাধ্য হয়েছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, করোনা মহামারির কারণেও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি হবে। কারণ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। আর অল্প কিছু দেশ ছাড়া বাকি সব দেশেই করোনার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, আগামী দশকে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। প্রায় দেড় কোটি মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের বলি হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দরিদ্র দেশগুলো শিক্ষা এবং নারীদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিলেও বিভিন্ন দাতা সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে নারীদের স্কুলে ধরে রাখতে পারলেই তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা অর্জিত হয়ে যাবে না। বরং তাদের ভ্যাকসিন প্রদান, জন্মনিয়ন্ত্রণ, যে কোনো বিষয়ে তাদের সম্মতির বিষয়গুলো শেখানোর সুযোগও এটি। একই সঙ্গে বাবা-মাকেও সন্তানের বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া যায়।

বয়ঃসন্ধিকাল নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ই নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা। মস্তিষ্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়কে কাজে লাগাতে পারলেই কয়েক লাখ নারী তাদের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবেন। কিন্তু যদি এক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে তাদের জীবন দরিদ্রের ছকেই আটকে থাকবে এবং তারা নিজেদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবেন না। তাই সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত সময়েই নিতে হবে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

 

ভারতে দুই বছর কারাভোগ শেষে ফিরলেন ১৭ বাংলাদেশি নারী

ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে দুই বছর কারাভোগ করে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন ১৭ বাংলাদেশি নারী।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে তাদেরকে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে রাত ৮টার দিকে থানা থেকে দুইটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য ওই ১৭ জনকে যশোর শেল্টার হোমে নিয়ে যায়।

ফেরত আসা নারীরা হলেন- বাগেরহাট জেলার আব্দুর রশিদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন, মুজিবুর রহমানের মেয়ে তানিয়া খাতুন, যশোরের আব্দুল লতিফের মেয়ে ফাতেমা খাতুন, কাশেম আলী খার মেয়ে আফরোজা খাতুন, মুক্ত ফকিরের মেয়ে সনিয়া বেগম, নড়াইলের শওকত শেখের মেয়ে খাদিজা খাতুন, পারভেজ মোল্লার মেয়ে পলি খাতুন, তরফু মোল্লার মেয়ে বিউটি খাতুন, তোতা মোল্লার মেয়ে রুনা বেগম, বখতিয়ার রহমানের মেয়ে রুমানা খাতুন, সালমান মোল্লার মেয়ে সেফালি বেগম, আমির আলীর মেয়ে তহমিনা খাতুন, চাঁদপুরের সফিক মোল্লার মেয়ে রুমা বেগম, চুয়াডাঙ্গার মহিন আলীর মেয়ে রহিমা খাতুন, পটুয়াখালীর নাসির সিকদারের মেয়ে নাসরিন বেগম, সুনামগঞ্জের মোকারম আলীর মেয়ে শিল্পী বেগম ও খুলনার ছলেমান হোসাইন এর মেয়ে আসমা খাতুন।
তাদের সবার বয়স ২০ থেকে ২৮ বছর এর মধ্যে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, এই নারীরা পাসপোর্ট ছাড়াই বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতের পুনে শহরে গিয়ে কাজ করার সময় সেদেশের পুলিশের হাতে আটক হয়। এরপর আদালতের মাধ্যেমে তারা জেল হাজতে যায়। পরে ভারতের রেসকিউ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা তাদের জেল থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের শেল্টার হোমে রাখে। ভারত সরকারের বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরেছে। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বেনাপোল পোর্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব নারীরা সীমান্তের অবৈধ পথে দালালদের খপ্পরে পড়ে ভালো কাজের আসায় ভারত যায়। এরপর তারা সেদেশের পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে দুদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় চিঠি চালাচালির এক পর্যায় বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে রবিবার তারা দেশে ফেরেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে জাস্টিস কেয়ার ও যশোর রাইটস নামে দুটি এনজিওর হাতে তুলে দেয়া হবে।

যশোর রাইটস এর এরিয়া কোয়ার্ডিনেটর আব্দুল মুহিত জানান, থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে এই নারীদের যশোর নেয়া হবে। পরে যোগাযোগ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

 

টানা ৩ বার ব্যর্থ, চতুর্থবারে সহকারী জজ পরীক্ষায় অষ্টম আরিফা

‘মারে, পড়াশোনার ভাগ কাউকে দিতে হবে না। আর কেউ তোমাকে পড়া করেও দিতে পারবে না। তাই নিজের মতো করে পড়াশোনা করো আর মানুষের মতো মানুষ হও’-কথাটি বাবা আমাকে প্রায়ই বলতেন। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। বাবার পুঁজি বলতে শুধু তার ছেলেমেয়েই এবং এ পুঁজি তাদের পেছনেই বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাননি। তাই তার সর্বশেষ ভরসার জায়গা হলাম আমি। তিনি আমাকে দিয়ে বাকি ছেলেমেয়েদের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। আজ তার স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ দিতে পারলেও তিনি আমাকে ছেড়ে সেই ১৮ বছর বয়সেই বহুদূর চলে গেছেন। আমার এ বিজয়ের ভাগিদার তিনি হতে পারলেন না।

অনেকটা ভেজা ভেজা কণ্ঠে নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা এভাবে ব্যক্ত করছিলেন ১৩তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সহকারী জজ) পরীক্ষায় অষ্টম মেধাতালিকায় মনোনীত কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার।

আরিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কুষ্টিয়ার মিরপুরের সন্তান আরিফা ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা-দূরন্তপনা সবকিছুতেই তিনি প্রথম স্থানে থাকতেন।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন পার করেছেন গ্রামের স্কুল থেকেই। শিক্ষকদের প্রতি তার অন্যরকম আকর্ষণ কাজ করত। তাদের সান্নিধ্য পেতে সবসময় উৎসুক থাকতেন, কারণ তারাই তাকে মোটিভেট করতেন। তাই ষষ্ঠ শ্রেণি ব্যতীত তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন আরিফা।

অনেকটা আবেগের স্বরে আরিফা আক্তার বললেন, ‘প্রত্যেক নতুন ক্লাসে ওঠার সময় স্কুল পরিবর্তনের জন্য জিদ করতাম কিন্তু আমি বুঝতাম না যে ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। আমার ভাইয়েরা বলত ক্লাসে প্রথম হলে স্কুল পরিবর্তন করাবে। আমিও প্রচুর পড়াশোনা করে প্রথম হতাম কিন্তু স্কুল আর পরিবর্তন হতো না। এভাবে প্রথম হতে হতে একসময় স্কুলজীবন শেষ হয়ে গেল।’
২০০৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৫০ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ে চিকিৎসক হওয়ার। তাই ভালো কলেজে পড়তে হবে। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতা ও আর্থিক অনটনের কারণে এবারো উপজেলা শহরের মিরপুর মাহমুদ চৌধুরী কলেজে ভর্তি হতে হলো তাকে।

‘কলেজজীবন ছিল আমার সবথেকে কষ্টের। সবসময় ডিপ্রেশন কাজ করত, তাই রেজাল্টও খারাপ হলো। জিপিএ ৩.৮০ নিয়ে আমি এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হলাম। এবার মেডিকেলের স্বপ্ন একেবারই ভেস্তে গেল’-যোগ করলেন আরিফা।

প্রথম বছরে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে না পারায় আর পরীক্ষা দেননি আরিফা। দ্বিতীয়বার বন্ধুদের উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ওই বছরে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চান্স পান। ইবিতে ‘ছ’ ইউনিট তথা আইনে ৬১তম মেধাতালিকায় স্থান পান। আইনে চান্স পাওয়ায় আর কোনোদিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। জজ হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ইবিতে ভর্তি হন।

তিনি বলেন, ‘আইনে ভর্তি হলে বাবা সবাইকে বলে বেড়াতেন যে, আমি জজ হবোই এবং তিনি আমাকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। আমিও প্রথম থেকেই জুডিশিয়ারির প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। এরমাঝে আমার জীবনে নেমে আসল বড় বিপর্যয়। জীবনের বড় অনুপ্রেরণাদাতা (বাবা) আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। বাবার মৃত্যুতে আমি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়ি এবং একা হয়ে যায়।’
‘তখন থেকে আমার আপুই আমাকে দেখাশোনা করেন এবং ভাইয়েরা পরিবারে খরচ জোগান। দ্বিতীয়বার আমার রুমমেট শারমিন নাহার আপু থেকে অনুপ্রাণিত হয় যখন তিনি ১০তম সহকারী জজ পরীক্ষায় মনোনীত হন। তখন থেকেই আমি সিরিয়াস হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। টানা তিনবছর সেশনজটে থেকে এলএলবিতে (স্নাতক) ৩.৪২ এবং এলএলএমে (স্নাতকোত্তর) ৩.৩৩ সিজিপিএ পেয়ে গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করি। বাবার স্বপ্ন পূরণে ২০১৬ সালের জুনে ঢাকায় পাড়ি জমাই। ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসে অংশ নিলেও কোনো রেজাল্ট আসেনি। পরে একমাত্র জুডিশিয়ারির জন্যই পড়ালেখা চালিয়ে যাই এবং জুডিশিয়ারি পরীক্ষার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হক ল’ একাডেমিতে ভর্তি হই।’

‘১০ম বিজেএস পরীক্ষায় নামমাত্র অংশগ্রহণ করি। ১১তম-তে অংশ নিলেও প্রিলিতে ফেল আসে। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। নিজের অবস্থানে অটল থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। অবশেষে ১২তম-তে প্রিলি-রিটেনে পাস করলেও ভাইভা বোর্ডে বাদ পড়ি। তখন মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। চারটি বছর জীবন থেকে এমনিতেই চলে গেছে। প্রচণ্ড মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে তখন বেকার অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছিলাম। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে বার কাউন্সিলের সনদ পাই এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করি। কিন্তু জজ সাহেবদের সামনে দেখলে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠত। মনে মনে ভাবতাম আমিও তো ওই চেয়ারে বসতে পারি। আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। মনে অনেকটা জেদ-সাহস নিয়ে দিনরাত অধ্যবসায় চালিয়ে যাই। অবশেষে বিজয়ের হাসি।’

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে কুষ্টিয়ার মেয়ে আরিফা আক্তার বলেন, ‘মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা যিনি আমাকে সম্মানিত করেছেন। কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি আমার পরিবারের প্রতি, বিশেষ করে আপুর প্রতি। পরিবারের বাইরে শিক্ষকমণ্ডলী, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি শারমিন নাহার আপু (সহকারী জজ), নুরুল হক ভাই (হক ল’ একাডেমি) ও শরিফুল ভাইয়ের প্রতি। যারা আমাকে সর্বদা সাহস জুগিয়েছেন। আমি তাদের অবদান কখনো ভুলতে পারব না।’

স্বপ্নজয়ের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি খুব মেধাবী সেটা কখনোই দাবি করি না। আমার মনে হয় যেকোনো প্রাপ্তির পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টি, চেষ্টা ও বাবা-মায়ের দোয়া কাজ করে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চাকরি এখন মেধার চেয়ে ধৈর্যের ওপর বেশি নির্ভর করে। তাই ধৈর্য ধরে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নিজের সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই।’

‘সমস্যা থাকবেই। এগুলো উপেক্ষা করতে পারলে জীবনযাত্রা সহজ হবে। বাধাবিহীন সফলতার আনন্দ কম তাই বাধাটা থাকাই ভালো। দুঃখগুলোকে পুঁজিতে রূপ দিতে পারলে সুখ আসতে সময় লাগে না’-বলেন সাহস না হারানো এই নারী।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে আরিফা আক্তার বলেন, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে চাই। সামর্থ্যের মধ্যে নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। নিজ গ্রামকে একটি আদর্শ গ্রামে পরিণত করা। সর্বশেষ আমার স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মেধার ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান করতে চাই।’

 

ভারতে কৃষক আন্দোলনের ‘পাওয়ারহাউস’ নারীরা

জীবনের বেশিরভাগ সময় কৃষিকাজে কাটিয়েছেন বলজিৎ কৌর। ৫০ বছর বয়সী এ নারীর কাছে শস্য উৎপাদন আর জমির যত্নআত্তি যেন আশীর্বাদ। কৃষিকাজ শুধু পেশাই নয়, এটি তার রক্তে মিশে গেছে। আর দশটা সাধারণ দিনে হয়তো মাঠে কাজ করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন বলজিৎ, কিন্তু আজ দিল্লির প্রবেশদ্বার তিকরি সীমান্তে ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছেন তিনি। শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাজারও কৃষকের সঙ্গে নেমেছেন ‘কালো আইন’ বাতিলের আন্দোলনে।

বয়স্ক এ নারী আল জাজিরাকে বলেন, নরেন্দ্র মোদি যে কালো আইন করেছেন তার বিরুদ্ধে আমরা আমাদের জমির জন্য আন্দোলন করছি। বলজিতের ভয়, ভারতে পাস হওয়া নতুন কৃষি আইনে তাদের জমির মালিকানা ঝুঁকিতে পড়বে। কিন্তু দেহে প্রাণ থাকতে এটি তিনি কিছুতেই হতে দিতে পারেন না।

ভারতীয় কৃষকদের মতে, দেশটিতে পাস হওয়া নতুন আইনগুলোতে শস্যের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। তাদের শঙ্কা, এর কারণে কৃষকদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে বাধ্য করা হতে পারে, প্রতিষ্ঠানগুলোর কথামতোই তাদের শস্য উৎপাদন করতে হতে পারে। নতুন আইনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কৃষিজমি কেনা ও পণ্য মজুতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব আইনকে কৃষিখাত আধুনিকায়নের জন্য বলে দাবি করেছেন। তবে কৃষকদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে সংকটাপন্ন খাতটিতে চুক্তিভিত্তিক কাজের বিস্তার এবং ব্যাপক বেসরকারিকরণের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতে চলছে কৃষকদের এই আন্দোলন। দেশটির তিন কৃষিপ্রধান রাজ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে লাখ লাখ কৃষক এসে জড়ো হয়েছেন ভারতীয় রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথ সিংহু ও কিতরি সীমান্তে। সরকারপক্ষ আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করলেও কৃষকদের এক কথা, এক দাবি, ‘ক্ষতিকর আইন বাতিল চাই’।

‘পুরুষের চেয়ে নারীর কাজ বেশি’

সারা ভারতেই পুরুষরা কৃষিকাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠলেও এক্ষেত্রে নারীদের অবদানও কম নয়। বরং, কাজের ক্ষেত্রে তো বটেই, নতুন আইনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে নারীদের। ভারতীয় সংগঠন মহিলা কিষাণ অধিকার মঞ্চের (মাকাম) হিসাবে, দেশটির ৭৫ শতাংশ কৃষিকাজ নারীরা করলেও ভূমির মালিকানায় তাদের অংশ মাত্র ১২ শতাংশ।

পাঞ্জাবের জালান্দর থেকে প্রায় ৬৪৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তিকরি সীমান্তে এসেছেন কুলবিন্দর কৌর ও পরমিন্দর কৌর। আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে রাত কাটাচ্ছেন একটি ট্রাকের ওপর। সেখনেই তাদের সঙ্গে কথা হয় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার।

সরকারের নতুন কৃষি আইনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কুলবিন্দর বলেন, যদি নির্ধারিত মূল্য বা বাজার না থাকে, আমরা সন্তানদের রুটি খাওয়াব কী করে? শস্য বিক্রি করব বা কী করে?

পরমিন্দর বলেন, কোনও কাজই সহজ নয়। খাবার জোগাতে আপনাকে কাজ করতে হবে। কিন্তু কাজ করার পরেও যদি আমরা খাবার না পাই, সেটাই হবে সমস্যা।

৬০ বছরের জীবনে প্রায় ৩০ বছরই কৃষিকাজে কাটিয়েছেন মুলকিৎ কৌর। তার দাবি, পাঞ্জাবে তার গ্রামে অনেক নারীই পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করেন। এমনকি এই আন্দোলনের মধ্যেও অনেক নারী কৃষককে পরিবারের দেখাশোনার জন্য বাড়িতে থেকে যেতে হয়েছে। তবে পুরোপুরি নিবৃত্ত হননি, সেখান থেকেই আন্দোলনে মূল্যবান সমর্থন দিচ্ছেন তারা।

আন্দোলনরত মুলকিৎ পরের দিন বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও এ বৃদ্ধা জানান, তিনি যাওয়ার পর পরিবারের কোনও সদস্য এসে তার জায়গা নেবেন। তিনি বলেন, আমরা এত দূর এসেছি। আশা করি, ঈশ্বর আমাদের ডাক শুনবেন।

‘শিশুরা কষ্ট পেলে বেঁচে থেকে লাভ কী?’

ভারতের অনেক বয়স্ক নারী কৃষকের কাছেই এই আন্দোলন শুধু জমির মালিকানা বা অর্থের ইস্যু নয়। তাদের কাছে কয়েক প্রজন্ম ধরে থাকা জমি পূর্বপুরুষদের চিহ্ন, তাদের সংস্কৃতির অংশ, সন্তানদের ভবিষ্যৎ।

বলজিৎ বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী বলবে, আমরা আওয়াজ তুলিনি? এর জন্যই রাস্তায় বসে রয়েছি, আমাদের নাতি-নাতনিদের জমি রক্ষা করতে।

তিকরি সীমান্তে আরও দুই নারীর সঙ্গে মাটিতে বসে ছিলেন জসপাল কৌর। তার কথায়, নাতি-নাতনিদের সম্পদ চুরি ঠেকাতে এসেছেন তারা। ৫৮ বছর বয়সী এ নারী বলেন, আমাদের সন্তানরা যদি কষ্ট পায় তাহলে জীবনের আর কী দাম থাকল?

অবশ্য তার এই কথা শুধু মুখের বুলি নয়, এর গুরুত্ব অনেক। দরিদ্র্যতা আর ঋণে জর্জরিত হয়ে ২০১৯ সালে ভারতে ১০ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।

জসপাল বলেন, আমরা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাব। তার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, এধরনের মানুষগুলো এত সহজে পিছপা হওয়ার পাত্র নয়।

যৌথ রান্নাঘর আর নিঃস্বার্থ সেবা
সরকারের নতুন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনস্থলে একসঙ্গে নেচে, গেয়ে, অভিনয়ের মাধ্যমে চলছে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আন্দোলনকারীরা থাকছেন দলবেঁধে, রান্না-খাওয়া সবই করছেন একসঙ্গে।

স্বঘোষিত কৃষককন্যা জাসসি সাংহা বলেন, আন্দোলনের একাধিক স্থানে লঙ্গর (সাম্প্রদায়িক রান্নাঘর) খোলা হয়েছে। সেগুলো চলছে শিখদের স্বপ্রণোদিত সেবায়। বিক্ষোভকারীরা কয়েক সপ্তাহের খাবার নিয়ে এসেছেন। তারা এত খাবার এনেছেন যে স্থানীয়রাও তাদের সঙ্গে খাচ্ছেন।

পাঞ্জাবের অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী সোনিয়া মানও যোগ দিয়েছেন কৃষকদের আন্দোলনে। তিনি বলেন, হরিয়ানা, রাজস্থানসহ অন্য রাজ্যের কৃষকরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তারা সবাই একসঙ্গে এসেছেন এবং একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তারা সবাইকে সমম্মান করেন। হিন্দু, মুসলিম, শিখ- সবাই এখানে এসেছেন।

নিজে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণ প্রসঙ্গে সোনিয়া বলেন, আমি কৃষকের মেয়ে। আমার বাবা ছিলেন কৃষক ইউনিয়নের নেতা। তিনি কৃষকদের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এজন্য আমিও এখানে এসেছি।

টিয়ারগ্যাস ও জলকামান
ভারতে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আন্দোলনরত কৃষকদের ‘দেশবিরোধী’ বলে উল্লেখ করছে। এমনকি তাদের কিছু নেতা কৃষকদের ‘সন্ত্রাসী’ পর্যন্ত বলেছেন।

সোনিয়া বলেন, তারা (বিজেপি) আমাদের আন্দোলন নষ্ট করতে চায়। তার বিশ্বাস, সরকার ও গণমাধ্যম কৃষকদের আন্দোলনকে ধর্মীয় ও দেশবিরোধী প্রমাণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এজন্য আন্দোলনরত কৃষকরা ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হলেও একইসঙ্গে তারা যথেষ্ট ধৈর্য ও সতকর্তা অবলম্বন করছেন। কৃষকদের পক্ষে কে কী বলছেন, তা খুব সাবধানতার সঙ্গে খেয়াল রাখা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের কথায়, মাত্র একটিবার ‘খালিস্তান’ (শিখ বিদ্রোহীদের দাবি করা স্বাধীন রাষ্ট্র) শব্দের উচ্চারণ গণমাধ্যম ও সরকারের জন্য কৃষক আন্দোলন ধ্বংসের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

আন্দোলনস্থলে দায়িত্বরত সাংবাদিক নিকিতা জেইন বলেন, মতামত থাকা মানেই সে দেশবিরোধী নয়। যে কৃষকরা সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক, তাদেরই কীভাবে আপনারা দেশবিরোধী বলতে পারেন?

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে জাসসি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারত। কিন্তু সেখানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যা হয়েছে, তা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।

‘সরকারের ঘাড়ে পা আমাদের’
ভারতীয় পুলিশের তথ্যমতে, দেশটিতে কৃষক আন্দোলনে এপর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, হাইপোথারমিয়া ও সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

আন্দোলনকারী কৃষকদের অনেকেই রাতে তীব্র শীতের মধ্যে মাটিতে ঘুমাচ্ছেন, কেউ ঘুমাচ্ছেন ট্রাকের ওপর। টয়লেট ব্যবহার করছেন স্থানীয়দের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও সনোবল হারাননি নারী কৃষকরা।

গত সপ্তাহে কৃষক ইউনিয়নের নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ষষ্ঠ আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। দুই পক্ষই নিজ নিজ দাবিতে অনড়। কিন্তু কৃষকদের ইচ্ছাশক্তি প্রবল এবং তাদের পক্ষে ক্রমাগত জনসমর্থন বাড়ছে।

পরবিমন্দর ও কুলবিন্দর বলেন, আমরা যেখানে শুরু করেছিলাম, সেখানেই রয়েছি। আমরা এখানেই থাকব। কোনও সমস্যা নেই, আমাদের বাড়ির কথা মনে হচ্ছে না।

পরিবারের সদস্যরাও আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন জানিয়ে কুলবিন্দর বলেন, তারা আমাদের ফোন করে বলছে, শক্ত থাকো, হাল ছেড়ো না।

আন্দোলনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে পরমিন্দর ও কুলমিন্দর দু’জনই জোর গলায় বলেন, আমরা যখন তাদের ঘাড়ে পা দিয়ে রেখেছি, তারা এটা (নতুন আইন) ফেরাবে না কেন?

জাসসির কথায়, জমি মায়ের মতো। আর ভারতের মা, মেয়ে, কন্যারাই এই আন্দোলনের মেরুদণ্ড।

দৃঢ়কণ্ঠে বলজিৎ বলেন, আমরা আওয়াজ তুলেছি। আমরা আমাদের অধিকার নেবোই।

 

শীতে ত্বকের যত্নে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ

শীতে ত্বককে দুটি জিনিসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। সেটি হল- তাপমাত্রা ও আদ্রতা। দুটোই কমে যায়। যার কারণে স্বাভাবিক ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক এবং শুষ্ক ত্বক হয়ে ওঠে সংবেদনশীল। তাই নিতে হবে বিশেষ যত্ন।

ক্লিনজার: ঠাণ্ডার ভয়ে অনেকেই গোসল করতে চান না। প্রতিদিন না করলেও অন্তত একদিন অন্তর গোসল করতে হবে। এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। তবে মনে রাখবেন, খুব ঠাণ্ডা বা বেশি গরম পানি দুটোই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বেশি গরম পানি ত্বক থেকে অয়েল বা ময়েশ্চারকে ধুয়ে ফেলে। ত্বকের প্রোটিন ও ফ্যাটের জন্যও গরম পানি ক্ষতিকর। ফলে ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে ওঠে। দশ মিনিট বা তার কম সময় ধরে গোসল করুন। গোসলে সুগন্ধিবিহীন সাবান অথবা কোনো ক্লিনজার ব্যবহার করলে ভালো হয়।

ময়েশ্চারাইজার: গোসলের পর যত দ্রুত সম্ভব ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। সেটি হতে পারে লোশন, ক্রিম বা কোনো অয়েল। কিন্তু এ জিনিসগুলো হতে হবে কোনো ধরনের সুগন্ধিবিহীন ও রঙবিহীন। অন্তত দিনে একবার ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার ব্যবহার করতে হবে।

সানব্লক: শীতে স্বভাবতই সবাই রোদে বসতে পছন্দ করেন। তাই ত্বকে রোদে পোড়া একটা ভাব কিন্তু অনেকেরই আসে। তাই সঠিক নিয়মে সানব্লক ব্যবহার খুবই প্রয়োজন। বাসা থেকে বের হওয়ার দশ মিনিট আগে এক চা চামচ আন্দাজ করে মুখে লাগাতে হবে। সানব্লক ব্যবহার করুন, যেটি SPF 50+ অথবা ন্যূনতম SPF 30+ হতে পারে।SPF containing moisturizer ব্যবহার করতে পারেন। একবার লাগালে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাজ করে। পরবর্তীতে যদি রোদে থাকা হয় পুনরায় লাগাতে পারলে ভালো হয়। ক্রিম, লোশনসহ বিভিন্ন রকমের সানব্লক পাওয়া যায়। তাই যাদের স্কিন শুষ্ক এবং শীতে আরও শুষ্ক হয়ে যায়, তারা ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।

মেকআপ ক্লিনজার: মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে খুব সচেতন হতে হবে। কোনো ধরনের অ্যালকোহলযুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করা যাবে না। সেটি স্কিনকে অনেক বেশি শুষ্ক করে তুলে। এজন্য নারিকেলের তেল ব্যবহার করুন।

শুষ্ক ঠোঁট: ঠোঁট শুষ্ক হবে বলে বারবার জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভেজানো যাবে না। তাতে ঠোঁট আরও শুষ্ক হবে। রাতে মোটা করে ভ্যাসলিন লাগান। সকালে মুখ ধোয়ার সময় আলতো করে ঘষে শুকনো চামড়া তুলে ফেললেই ঠোঁট থাকবে সুন্দর। পাশাপাশি লিপ বাম অথবা ভ্যাসলিন লাগান; যা হবে কোনো রঙ ও সুগন্ধিবিহীন।

শুষ্ক হাত: একদিকে শীত অন্যদিকে করোনা। এ মহামারী পরিস্থিতিতে হাতে বারবার লাগাতে হয় স্যানিটাইজার বা হ্যাক্সিসল কিংবা হাত ধুতে হয়। সুতরাং যতবার এগুলো ব্যবহার করবেন ততবার ময়েশ্চারাইজার লোশন লাগান।

শুষ্ক পা: শক্ত কোনো কিছু দিয়ে পা ঘষা যাবে না। খুব হালকাভাবে ঘষতে হবে। মরা কোষগুলোকে তুলে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে নিয়ে হালকা করে ঘষে পরিষ্কার করুন এবং নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগান। অন্তত দিনে ও রাতে দুইবার ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। যাদের খুব বেশি পা ফাটে তারা রাতে ভ্যাসলিন লাগিয়ে মোজা ব্যবহার করুন। যুগান্তর

লেখক: ডা. তাসনীম খান, অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিস্ট ও লেজার স্পেশালিস্ট

 

নিউজিল্যান্ডে যৌন হয়রানি মামলা জিতে ক্ষতিপূরণ পেলেন যৌনকর্মী

নিউজিল্যান্ডে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা জিতে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেলেন এক যৌনকর্মী। আইনি লড়াইয়ে তার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করা এক মানবাধিকার সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) আদালতের এ সিদ্ধান্তকে যৌনকর্মীদের অধিকারের পক্ষে এক বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে গোপনীয়তার কারণে মামলার সঙ্গে জড়িতদের নাম ও অন্যান্য বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। খবর বিবিসি।

নিউজিল্যান্ড-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানসিক ক্ষতির পাশাপাশি আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যৌনকর্মীর যে ক্ষতি হয়েছে— তারই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগকারী যৌনকর্মী ছয় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেতে যাচ্ছেন। তবে তিনি ঠিক কত টাকা পেতে যাচ্ছেন তা জানানো হয়নি।

সোমবার নিউজিল্যান্ডের হিউম্যান রাইটস প্রসেডিংস-এর পরিচালক মাইকেল টিমিনস বলেন, “যে কোনো পেশার কর্মী, তিনি যে ধরনের কাজই করুণ, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করার অধিকার তার আছে। আমরা সব মালিক ও কর্মীদের উৎসাহিত করছি, তারা যেন এই অধিকারের বিষয়টি বুঝেন ও সম্মান করেন”।
বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডে যৌন পেশা আইনত বৈধ। যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষায় ২০০৩ সালে আইন পাশ হয়েছিল। ওই আইনে নিউজিল্যান্ডে যৌন পেশাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল।

নিউজিল্যান্ড সেক্স ওয়ার্কার্স কালেক্টিভের জাতীয় সমন্বয়কারী ডেম ক্যাথরিন হিলি বলেন, “যৌন পেশার ক্ষেত্রে এরকম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে, এটি অনেক বড় ব্যাপার। যে কোনো কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস প্রয়োজন”।

 

৫ সূচকে কর্মজীবী নারীর ওপর মহামারির অভিঘাতের চিত্র

মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে এক সময়কার সবল চাকরি-বাজার লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। মহামারির অভিঘাতে চাকরিক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন নারীরা। যুক্তরাষ্ট্রে গত মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর পরের এই সাত মাসে হারানো এসব চাকরির অর্ধেক অবশ্য আবার ফিরে এসেছে। তবে নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— চাকরিক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে ব্যবধান বড় হয়েছে। মহামারির ফলে ৫৩ লাখ নারী চাকরিহারা হয়েছেন, যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৪৬ লাখ।
বিজ্ঞাপন

মহামারিটি চাকরি-বাজারে সবার আগে সেবা খাতে আঘাত হানে— বিশেষত যেসব চাকরিতে গ্রাহকের সঙ্গে সামনাসামনি সংযোগ প্রয়োজন— যেমন: রেস্টুরেন্ট, হোটেল, চিকিৎসা, সুপারশপ ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রে এসব চাকরির বেশিরভাগই নারীদের দখলে। তবে মহামারির শুরুতেই এসব শাখার কর্মী ছাটাই শুরু হয়, যার ধকল এখনও কাটেনি। এসব শাখায় হাজার হাজার পুরুষও চাকরি হারিয়েছেন— তবে নারীদের তুলনায় কম।

এই মহামারিকালেও যেসব নারীদের চাকরি টিকে আছে তাদের অবস্থাও এখন আর আগের মতো নেই। লক্ষ লক্ষ নারী করোনাভাইরাস দুর্যোগে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন। উদাহরণস্বরূপ— আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে কর্মীদের শতকরা ৭৭ ভাগ নারী, এবং কিন্ডারগার্টেনের ৭৪ ভাগ কর্মীও নারী। তারা প্রবল মানসিক চাপ ও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও রোগীদের সেবা ও বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন।

কর্মজীবী মায়েদের জন্য সমস্যা আরও বাড়িয়েছে চাইল্ড কেয়ারের স্বল্পতা। যাদের বাচ্চা রয়েছে— এমন কর্মীরা বড় সমস্যায় পড়েছেন। মহামারি শুরুর প্রথম দুই মাসের মধ্যেই আমেরিকার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারগুলো তাদের ৩৫ ভাগ স্টাফকে চাকরিচ্যুত করে। (উল্লেখ্য, এই চাইল্ড কেয়ার সেক্টরর সিংহভাগ কর্মী নারী: আমেরিকার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে ৯৩ শতাংশ চাকরি নারীদের দখলে)। তবে সম্প্রতি এ সেক্টরে আবার কর্মী নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু গত নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ সেক্টরে এখন পর্যন্ত ১৭ ভাগ হারানো চাকরি ফিরে আসেনি। এর অর্থ হলো— কর্মজীবী মা-বাবার জন্য বাচ্চার লালন-পালনের বিকল্প আগের চেয়ে কমে এসেছে। দীর্ঘদিন চাকরিহারা থাকার পর এখন যারা চাকরি পাচ্ছেন তাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। এর উপর আরেক সমস্যা হলো— চাইল্ড কেয়ারে বাচ্চা ভর্তি করানোর খরচও বেড়ে গেছে।

মহামারির কারণে স্কুল ও চাইল্ড কেয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসায় বাচ্চাদের যত্ন ও লেখাপড়ার কাজে নারীদেরকেই বেশি সময় দিতে হচ্ছে। শুরুর দিকে করা কিছু সমীক্ষায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। বাড়িতে বাচ্চাদের পড়ানো, লালন-পালন ইত্যাদি কাজে পুরুষের চেয়ে নারীদেরকেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে— ফলে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে পুরুষের চেয়ে নারীর দূরত্ব বাড়ছে।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব ডালাসের অর্থনীতিবিদরা আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, মহামারিকালে শিশুদের যত্ন-আত্তি বনাম চাকরিতে মনোযোগের ব্যাপারে মা ও বাবার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ১৩ বছরের কম বয়েসি বাচ্চার মায়েরা, বাচ্চা ছাড়া নারীদের চেয়ে বেশি চাকরি হারিয়েছেন। বিপরীতে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও কম। বাচ্চার মায়েরা সর্বোচ্চ ৩ পার্সেন্টিজ পয়েন্টে হারে চাকরি হারালেও বাচ্চা ছাড়া নারীরা চাকরি হারিয়েছেন ১.৮ পার্সেন্টিজ পয়েন্ট হারে। এদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা যথাক্রমে ১.৪ ও ১.২।

ডালাস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা তাদের বিশ্লেষণে দেখান, কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাকরি হারানোর হার কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনা নারীদের— সে তুলনায় শ্বেতাঙ্গ নারীদের চাকরি হারানোর হার কম। করোনা মহামারিতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ কর্মজীবী মায়েরা। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা চাকরি হারিয়েছেন ৬.৪ পার্সেন্টিজ পয়েন্ট হারে।

বর্তমানে চাকরির বাজার কিছুটা চাঙা হতে শুরু করেছে। তবে অগ্রগতির বর্তমান হার অনুযায়ী— চাকরির বাজার পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে অন্তত ৪০ মাস সময় লাগবে। অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যে হুশিয়ার করেছেন— চাকরি থেকে দূরে থাকার সময় যত লম্বা হবে, তাদের চাকরিতে ফেরাও ততো কঠিন হবে। স্থায়ী চাকরি হারানো বা আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে লিঙ্গসমতার অগ্রগতির ধারায় বড় ছেদ পড়বে।
-সিএনএন অবলম্বনে

 

ভারি ঝুমকা পরে কান ব্যথা হলে করণীয়

যেকোনো অনুষ্ঠানে বেশিরভাগ নারী শাড়ি, চুড়িদার, শালোয়ারের সাথে একটু ভারি ঝুমকা বা কানের দুল পরতে পছন্দ করেন। যা দেখতে খুবই সুন্দর। তবে এ কথাও সত্য যে, ভারি ঝুমকা বেশিক্ষণ পরে থাকলে কানে ব্যথা হতে পারে।

ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে ভারি ঝুমকা পরতে চান না। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এমন কিছু উপায় রয়েছে, যা সঠিকভাবে মেনে চললে কানের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাহলে আসুন জেনে নেই সেসব উপায় সম্পর্কে-

ক্রিম বা তেল: ভারি ঝুমকা পরার আগে কানে ক্রিম বা তেল লাগাতে পারেন। এতে কানের ত্বক নরম হবে। ঝুমকা পরার কারণে কানে জ্বালা বা ব্যথা হবে না।

সব সময় পরবেন না: এখন বিয়ের মৌসুম চলছে। এক্ষেত্রে যদি পরপর সব অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা পরেন, তাহলে কানের ব্যথা বাড়তে পারে। তাই সব অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা না পরে হালকা কানের দুলও পরতে পারেন।

বেশিক্ষণ পরে থাকবেন না: পুরো অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা পরে থাকবেন না। ছবি তোলার পর বা অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি হালকা কানের দুল পরতে পারেন। এতে কানে খুব বেশি ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ভারি দুলের সঙ্গে চেন: ভারি কানের দুলের ওজন কমাতে দুলের সঙ্গে চেন ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার কানে ব্যথা হবে না। কারণ ওজনের কিছু অংশ চেনও বহন করতে পারবে।

 

‘ভোগ বাই প্রিন্স’ এখন কুমিল্লায়

‘দেশের টাকা দেশে রাখুন’ স্লোগান নিয়ে বিজয়ের মাসে কুমিল্লায় উদ্বোধন হলো ‘ভোগ বাই প্রিন্স’- এর ১৩ তম শাখার। ১৫ ডিসেম্বর কুমিল্লার বাদুরতলায় প্রতিষ্ঠানটির ১৩তম শাখাটির উদ্বোধন করেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহারউদ্দিন বাহার, এম পি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল গ্রুপ ও আরটিভির পরিচালক ফিরোজ আলম, ভোগ বাই প্রিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিম আক্তার, জাগ্রত মানবিকতার প্রতিষ্ঠাতা তাহসিন বাহার সূচনা ও সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রাবণ্য তৌহিদা।

প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং শাকিল ইবনে সুলতান বলেন, ‘বাজারে বিদেশি পণ্যের রাজত্ব ঠেকিয়ে দেশের টাকা দেশে রাখতে সম্পূর্ণ দেশীয় নিজস্ব পণ্য নিয়ে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ইতিমধ্যে ঢাকার ১০টি শাখাসহ সারাদেশে মোট ১৩টি শাখায় ক্রেতা সাধারণের ব্যাপক সাড়া মেলেছে। কুমিল্লার এই শাখাটিও ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা করি।’

জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাতে দেশের মানুষকে দেশীয় তৈরি পণ্য ব্যবহার করার আহ্বান জানান প্রধান অতিথি।

এদিকে উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ক্রেতা সাধারণকে ৪০% ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। এই শোরুমটিতে ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, প্যান্ট, জুতা এবং মেয়েদের জন্য ব্যাগ, জুয়েলারি, থ্রি পিসসহ বাহারি পোশাকের সমাহার রয়েছে।

 

গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া ক্ষতিকর

লাইফস্টাইল ডেস্ক

গর্ভাবস্থায় অন্তঃসত্ত্বার চাই বাড়তি যত্ন। এ সময়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া এড়ানো উচিত। কারণ মা যা কিছু খায়, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। তাই কোনো কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাবেন না-

১. গর্ভাবস্থায় জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয়। জাঙ্ক ফুড খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওষুধ খেতে হবে, যার প্রভাব পড়বে গর্ভের শিশুর ওপর। তাই স্ট্রিট ফুড, জাঙ্ক ফুড খাবেন না।

২. যদি প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করেন, তবে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধূমপান বা অ্যালকোহল কোনোটাই এ সময় নেয়া উচিত না। অতিরিক্ত ডোপামিন হরমোন ক্ষরণ এই সময় শিশুর ক্ষতি করে।

৩. গর্ভবতী মায়েদের হাঙর, সওয়ার্ডফিশ, টুনা, কিং ম্যাকেরেল এবং টাইল ফিশ খাওয়া উচিত নয়।

৪. কাঁচা স্প্রাউটস খুব স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। তবে রান্না না করা স্প্রাউটস গর্ভবতী নারীদের পক্ষে ভালো নয়। কাঁচা স্প্রাউটসে ব্যাক্টেরিয়া থাকতে পারে। রান্না করার পর এটি দূর হতে পারে।

৫. তৈলাক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে উচ্চ পরিমাণে লবণ, চিনি থাকে ও প্রচুর প্রিজারভেটিভ কেমিক্যালও উপস্থিত থাকে, যা গর্ভবতী নারী ও শিশুকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই টাটকা খাবার খাওয়া উচিত এবং ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

ঠোঁট ফাটা সারানোর ঘরোয়া উপায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

শীতে ঠোঁট ফাটা একটি কমন সমস্যা। সবাই কমবেশি এই সমস্যায় ভোগেন। কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই আপনি এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

আসুন জেনে নিই ঠোঁট ফাটা সারানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে-

১. আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ার সঙ্গে মধু, অলিভ অয়েল ও চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষুণ। ঠোঁট ধুয়ে লিপবাম লাগান।

২. ১ চা চামচ নারিকেল তেল আর ১ চা চামচ চিনি দিয়ে বানিয়ে নিন লিপ স্ক্রাব। কয়েকবার ঠোঁট স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন।

৩. নারিকেল দুধ আর গোলাপজল মিশিয়ে লিপ ক্লিনজার বানিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এটি ব্যবহার করুন।

৪. কয়েকটি গোলাপের পাপড়ি কাঁচা দুধে ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টা তিনেক। পাপড়িগুলোর পেস্ট বানিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৫. ২ চা চামচ দই আর ১ চা চামচ লেবুর রস দিয়ে লিপ মাস্ক বানাতে পারেন।

 

ত্বক ভালো রাখবে যেসব খাবার

ত্বক ভালো রাখতে চাই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। কিছু ভিটামিনও ত্বক ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে, যা আপনি পাবেন খাবার থেকে।

আসুন জেনে নিই ত্বক ভালো রাখতে কী খাবেন-

১. শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন ‘সি’ খুবই প্রয়োজন। এতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বককে সূর্যালোকের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে বাঁচায়। এ ছাড়া ত্বক উজ্জ্বল করে ও রোদ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।

পালংশাক, টমেটো, লেবু, আঙুর, কমলা, ক্যাপসিকাম, পেঁপে ও লেবুতে পাবেন ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক উজ্জ্বল করে, রঙের ভারসাম্য বজায় রাখে।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমায়, অকাল বলিরেখা ও মৃত কোষের সমস্যার সমাধান করে।

শক্তিশালী কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো– ক্যারোটিনয়েড যেমন- বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপিন, আইসোফ্লেভোন্স, রেসভারাট্রোল, আলফা লিপোইক অ্যাসিড, গ্লুটাথিওন ইত্যাদি।

ক্যারোটিনয়েড’য়ের ভালো উৎস হচ্ছে– গাজর, মিষ্টি আলু, হলুদ ক্যাপসিকাম, পালংশাক, কুমড়া ও ব্রকলি।

৩. ভিটামিন ‘ই’ খুব ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বককে উন্মুক্ত রেডিকেল থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। এ ভিটামিন ত্বককে রোদ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে, কোলাজেনের ভাঙন রোধেও ভূমিকা রাখে।

বীজ ও বাদাম– আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ ও তিসির বীজে পাবেন ভিটামিন ই। এই ভিটামিন সূর্যালোক থেকে রক্ষা, আর্দ্রতা রক্ষা ও ত্বক মসৃণ রাখে।

৪. জিংক ত্বকের ক্ষত দূর করে ও নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। জিংকসমৃদ্ধ খাবার ত্বককে ব্রণ ও দাগ মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ ও ব্রকলিতে পাবেন জিংক।

৫. ত্বক ভালো রাখে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে আর্দ্র রাখে ও ত্বকের সুরক্ষার স্তর নিশ্চিত করে। এর প্রদাহনাশক উপাদান ব্রণ, লালচেভাব ও এরিথিমা কমাতে সাহায্য করে।

ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন- স্যামন। এ ছাড়া তিসির বীজ ও অ্যাভোকাডো।

এসব খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন। ফলে ত্বক দীর্ঘদিন সুস্থ ও সুন্দর থাকবে।

ডা. লুবনা খন্দকার
সহযোগী অধ্যাপক
চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

শীতে জিভে জল আনা দুধ খেজুর পিঠা

শীতকালে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। সেটি যদি হয় দুধ খেজুর পিঠা, তবে তো কথাই নেই। নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়।

খুব সহজে ঘরেই তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু এ পিঠা।

উপকরণ

খামির জন্য, ময়দা ১ কাপ, নারিকেলের দুধ ১ কাপ, লবণ ১/৪ চা চামচ, ডিম ১টি ও ঘি ২ টেবিল চামচ।

দুধের সিরার জন্য

দুধ ২ কাপ, চিনি ২ টেবিল চামচ, এলাচ ২টি।

প্রণালি

পাত্রে নারিকেলের দুধ গরম করে চুলায় দুধের ভেতর ময়দা ও লবণ দিয়ে খামির বানাতে হবে। এবার চুলা বন্ধ করে খামির একটু ঠাণ্ডা হলে ঘি ও ফেটানো ডিম মিশিয়ে মথতে হবে।

ছোট ছোট বল বানিয়ে পিঁড়িতে রেখে বেলুন দিয়ে বেলে একটু লম্বা করে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে মুখ চেপে লাগিয়ে দিন।

এবার অল্প তাপে ডুব তেলে লাল করে ভেজে নিন পিঠাগুলো। ২ কাপ দুধ জ্বাল দিয়ে ১ কাপ করে নিন।

এতে চিনি ও এলাচ দিয়ে নাড়ুন। চুলা বন্ধ করে এবার পিঠাগুলো দুধে দিয়ে ঢেকে রাখুন কমপক্ষে চার ঘণ্টা। পরিবেশনের সময় পিঠার ওপর দুধের সর দিয়ে পরিবেশন করুন।

লেখক: নাজমা নাহার, শিক্ষক ও গৃহিণী।

 

ঘুরে আসুন সবুজে ঢাকা হেরিটেজ রিসোর্টে

সবুজে শ্যামল ছায়া ঢাকা প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে বিনোদন পার্ক ‘হেরিটেজ রিসোর্ট লিমিটেড’। রাজধানী ঢাকা থেকে অল্প দূরে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার নওপাড়ায় আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা নিয়ে ভ্রমণ বিলাসী ও বিনোদন পিয়াসী মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করেছে এই রিসোর্টটি।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৩০০ ফুট রাস্তা ধরে কাঞ্চন ব্রিজ অতিক্রম করে ভুলতা গাউছিয়া হয়ে এই রিসোর্টটিতে পৌঁছা যাবে। এছাড়া সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে হয়েও এ রিসোর্টটিতে পৌঁছা যাবে।

এখানে অবকাশ যাপনের আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ৫০ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। পানির ওপরে ভাসমান কটেজগুলো এ রিসোর্টটির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিয়ে, জন্মদিন কিংবা অফিসিয়াল কাজের জন্য একাধিক সুপরিসর কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে এখানে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে ডিজিটাল স্টেজ।

খেলার মাঠের পাশাপাশি আছে শিশুদের জন্য আলাদা প্লে-গ্রাউন্ড। সুপরিসর সুইমিং পুলে একসঙ্গে অনেক মানুষের গোসলের ব্যবস্থা আছে। স্পিড বোটে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ঢেউ তৈরি করা ওয়েববিচ আছে রিসোর্টে। অত্যাধুনিক জিমনেশিয়ামের পাশাপাশি এ রিসোর্টটিতে রয়েছে কম্পিউটারাইজড গেমস খেলার সুবিধা। আধুনিক সুবিধা নিয়ে বিনোদনের চাহিদা পূরণ করার জন্য রয়েছে সিনেপ্লেক্স।

এছাড়া ক্লাব কারে চড়ার সুযোগ পাবেন রিসোর্টে আসা অতিথিরা। রয়েছে বারবিকিউ জোন। অত্যাধুনিক জিমনেশিয়ামে আগত অতিথিরা ফিটনেস প্রাকটিস করতে পারবেন। এছাড়া রয়েছে নিরাপদ হ্যালিপ্যাড। যেখানে অতিথিরা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রিসোর্টে আসতে পারবেন। আর অতিথিদের বিনোদনের চাহিদা পূরনের জন্য রয়েছে বিশ্বমানের প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি করা সিনেপ্লেক্স।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় বিষয় করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে রিসোর্টটিতে।

রিসোর্টের কর্ণধার মিনহাজুল রহমান রাজু ভুঁইয়া বলেন, ‘আসলে মানুষ প্রতিনিয়ত বিনোদন কিংবা অবকাশ যাপনের জন্য ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সংখ্যা। আমরা সেই মানুষের বিনোদনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এ রিসোর্টটি প্রতিষ্ঠা করেছি।

তিনি বলেন, রাজধানীর কোলাহল থেকে বেরিয়ে শান্ত নিবিড় পরিবেশে অতিথিরা আমাদের এ রিসোর্টে এলে নির্মল প্রশান্তি পাবেন। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

শীতে সোনামুনিকে উষ্ণ রাখতে কী করবেন

শীতে শিশুর জন্য চাই বাড়তি যত্ন। এ সময় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে ঠাণ্ডা, জ্বর ও সর্দি-কাশি লেগেই থাকে সোনামুনিদের।

শিশুদের শরীর গরম রাখা, ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং শীতের বাতাস থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের শীতের পোশাক পরাতে হবে।

আসুন জেনে নিই শীতে শিশুর শরীর গরম রাখতে কী করবেন-

মাথা ঢেকে রাখা জরুরি

শীতের সময়ে শিশুর মাথা ঢেকে রাখা উচিত। যদি মাথার তাপমাত্রা কম থাকে তা হলে এর প্রভাব পুরো শরীরে পড়ে। তাই শিশুকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করতে টুপি পরান বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। এ ছাড়া খেয়াল রাখবেন যে, শিশুর টুপিটি যাতে খুব আঁটসাঁট না হয় এবং নরম কাপড়ের হয়।

নাক উষ্ণ রাখুন

জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকারক ধোঁয়া নাক দিয়েই শরীরে প্রবেশ করে। তাই শিশুর নাক সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হালকা গরম তেল দিয়ে শিশুর নাক মালিশ করতে পারেন। ঘরের তাপমাত্রা যাতে খুব কম না থাকে সেদিকেও নজর দিতে পারেন।

পা ঢেকে রাখুন

শিশুর শরীরের নিচের দিকেও ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাপমাত্রা তার পায়ের দিকটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিশুরা বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে থাকে, মাটিতে পা রাখে না, তা হলেও তাদের দেহের নিচের দিকে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাই শিশুকে মোজা পরানো বা পায়ের দিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা প্রয়োজন।

ম্যাসাজ করুন
শিশুর শরীর উষ্ণ রাখতে ম্যাসাজ করতে পারেন। শরীর উষ্ণ রাখার জন্য সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন।

হাত ঠাণ্ডা

শিশুর হাত ঠাণ্ডা হয়ে গেলে নরম গ্লাভস পরান এবং ফুল হাতা পোশাক পরান। তবে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুর মুখ কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখবেন না এবং গ্লাভস পরাবেন না।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

করোনাকালে বিয়ে: সুরক্ষিত থাকতে যা করবেন

শীত এলেই সামাজিক অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো এ সময়েই বেশি হয়ে থাকে। তবে কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেয়ায় বহু সামাজিক অনুষ্ঠানে কড়াকড়ি চলছে। তবে এসব কড়াকড়ির মধ্যেও থেমে নেই বিয়েশাদি।

করোনার মধ্যেই যদি কারও বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে, তা হলে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। কারণ শীতে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলছে।

আসুন জেনে নিই সংক্রমণ এড়াতে কী করবেন-

১. বিয়ের অনুষ্ঠানে অবশ্যই মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রত্যেকের মুখেই যাতে মাস্ক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

২. যত্নসহ অতিথিদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাটারিংয়ের জন্য এমন কাউকে ঠিক করতে হবে, যিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখবেন।

৩. মহামারীর সময়ে বিয়ের পরিকল্পনা থাকলে অতিথিদের সংখ্যায় কাটছাঁট করুন। নিমন্ত্রিতদের তালিকায় শুধু কাছের লোকদেরই রাখুন।

৪. করোনার এ সময়ে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে কতজন লোককে অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে সেটিও মানার চেষ্টা করুন।

 

করোনাভাইরাস: অন্তঃসত্ত্বা মাকে সুরক্ষিত রাখার ৭ উপায়

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের নিতে হবে বিশেষ যত্ন। সংক্রমণ রোধে নিয়মিত মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

আসুন জেনে নিই অন্তঃসত্ত্বা মাকে সুরক্ষিত রাখার ৭ উপায়-

১. খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে স্যানিটাইজার।

২. সন্তান পেটে আসার পর নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। চিকিৎসকের কাছে গেলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ২ ফুট দূরত্ব মানতেই হবে, ভালো হয় ৬ ফুট দূরত্ব মেনে চললে। বাইরে বেরিয়ে চোখ, নাকে হাত দেয়া যাবে না।

৩. বাইরে থেকে ঘরে এসে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। যে জামাকাপড় পরে গিয়েছিলেন সেগুলো ধুয়ে ফেলুন।

৪. গর্ভাবস্থায় খাবারের বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি। হবু মা যা খাবেন সেখান থেকেই পুষ্টি পাবে গর্ভস্থ শিশু। প্রোটিন, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ সব যেন থাকে খাদ্যতালিকায়।

৫. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। ফলে আপনার শরীর যেমন ভালো থাকবে, তেমন মনও।

৬. খাওয়ার আগে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। এতে হাতে থাকা জীবাণু আপনার পেটে পৌঁছতে পারবে না।

৭. পরিবারের কারও জ্বর, সর্দি, কাশি বা হাঁচি হলে তার থেকে দূরে থাকুন। আলাদা ঘরে থাকলে খুব ভালো হয়।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সরকার অত্যন্ত কঠোর : প্রতিমন্ত্রী

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সভাকক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার নারী নির্যাতন বন্ধ, নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি “যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’-এর বদলে “মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের” বিধান রাখা হয়েছে। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডিএনএ প্রোফাইলিং ও স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হয়েছে।’

নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা নারীর মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, ‘এই নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে সরকারের সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তবেই সবার সম্মিলিত উদ্যোগে আমরা নারী ও শিশুর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতামুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’

ইউএন উইমেন প্রকাশিত তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে ৩৫ শতাংশ নারী বা প্রায় প্রতি তিনজনে একজন নারী তার জীবন পরিক্রমায় শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ঘটে আপনজনের দ্বারা। সহিংসতার স্বীকার ৪০ শতাংশের কম নারী সহায়তা পেয়ে থাকে। বিশ্বে মোট মানব পাচারের ৭২ শতাংশ নারী ও শিশু। তাই নারীর প্রতি সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতন ও অপরাধ নির্মূল করার জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা রাখেন বাংলাদেশে ইউএন রেসিডেন্ট কোর্ডিনেটর মিয়া সেপ্পো ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কমনওয়েলথ উন্নয়ন পরিচালক জুডিথ হারবার্টসন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টোরাল প্রোগ্রামের পরিচালক ড. আবুল হোসেন।

 

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

ইয়ামিন আকন্দ

বাঙালি মুসলমান সমাজ যখন সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ ছিল; তৎকালীন নারী সমাজের শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে।

আজ বাঙালি লেখক, শিক্ষাবিদ, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তার কর্ম ও আদর্শকে উদযাপনের লক্ষ্যে জন্ম ও মৃত্যুদিন ৯ ডিসেম্বরকে ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি হয়েছিলেন বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত। তার বাবা আবু আলী হায়দার সাবের বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন রক্ষণশীল। বড় দুই ভাই-বোনের সহযোগিতায় তিনি গোপনে শিক্ষালাভ ও সাহিত্যচর্চা করেন।

১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরের সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি। স্বামীর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কারণেই তার জ্ঞানচর্চার পরিধি বিস্তৃত হয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের লেখকদের রচনার সাথে পরিচিতি ঘটতে থাকে। ১৯০৯ সালে স্বামী মারা গেলে বেগম রোকেয়া নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন।

১৯০২ সালে নভপ্রভা পত্রিকায় ‘পিপাসা’ প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি পান। ১৯৫০ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনা ‘সুলতানাস ড্রিম’ যার অনূদিত রূপ ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রকাশের মাধ্যমে সর্বজন পরিচিত হয়ে ওঠেন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থ হলো- পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্যদিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তোলেন।

২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা একটি জরিপের আয়োজন করে। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০ জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। সেই শ্রেষ্ঠ কুড়ি জনের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন আমাদের বেগম রোকেয়া।

বিবিসি বাংলার প্রথম তথ্যচিত্র নির্মাতা বাণী দত্ত জানান, কিভাবে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে তিনি নারীদের শিক্ষাদানে ব্রতী হয়েছিলেন, কিভাবে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল। যেটি আজ কলকাতার লর্ড সিনহা রোডের প্রথম সারির স্কুল। বেগম রোকেয়ার সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯১৬ সালে তিনি আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম নামে একটি মহিলা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করতো।

বেগম রোকেয়ার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি এখনো সর্বজন স্মরণীয় হয়ে আছেন। বেগম রোকেয়া ১৩৭তম জন্মদিনে গুগল তার নামে একটি ডুডল তৈরি করে। ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা ২০০৯ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নামকরণ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল বেগম রোকেয়ার নামে নির্মাণ করে। বাংলাদেশ সরকার বেগম রোকেয়া স্মরণে গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে স্থাপন করা হয় বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। যা বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি প্রথম নারীদের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কথা ভেবেছিলেন। বেগম রোকেয়া ছিলেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান। অনেক দুঃখের বোঝা মাথায় নিয়েও নিজেকে কখনো অসহায় ভাবেননি। নারী শিক্ষার গুরুত্ব তিনি তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছিলেন। তিনি কখনোই নারীতান্ত্রিক কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে চাননি।

তিনি চেয়েছিলেন, নারী ও পুরুষ উভয়ই যেন সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচেন। তিনি নারী-পুরুষকে একটি গাড়ির দুটি চাকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। নারীকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, নারীর পরাধীনতায় হয়েছিলেন সোচ্চার। বর্তমানে নারীদের ভোটাধিকার, শিক্ষার অধিকার, কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো না। যদি কেউ নিজ থেকে উদ্যোগ না নিতেন। অথবা নারীশিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারতেন।

বেগম রোকেয়া তার লেখনীর মাধ্যমে, সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দকে বিসর্জন দিয়ে হাজার নারীর মাঝে তার চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার অনুপ্রেরণামূলক কাজ বর্তমান নারীদের এতদূর নিয়ে এসেছে। নারীদের কাছে একজন অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তিত্ব।

তাই তো ৯ ডিসেম্বরকে বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। নারীদের শিক্ষা অর্জনের পথের কাঁটা সরাতে পেরেছিলেন বলেই আজ নারীদের সর্বক্ষেত্রে বিচরণ রয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

বাবার ওষুধ কিনতে সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালায় শিশু শম্পা

জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামের শফিকুল ওরফে ভাসানীর শিশু কন্যা শম্পা। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী বাবার চিকিৎসা ও ওষুধের টাকার জন্য দেড় বছর ধরে ভ্যান চালাচ্ছে সে। শম্পা নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। সোমবার সকালে শম্পা, তার বাবা-মা ও স্বজনদের সংখ্যা কথা বলেছেন তিনি। ওই সময় জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানীর চিকিৎসার দায়িত্ব ও পরিবারের ব্যয়-ভার গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানী বলেন, আমি আগে ভ্যান চালাতাম। পাঁচ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আমার এক পা ভেঙে যায়। এরপর পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সবকিছু বিক্রি করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করেছি। তবু পা ভালো না হওয়ায় দেড় বছর ধরে ঘরে পরে আছি। প্রতিদিন আমার ১০০-১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। কোনো উপায় না পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী সবজি বিক্রি করি ও আমার ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। স্ত্রী-মেয়ের জন্যই এখনো বেঁচে আছি।

শম্পার মা নেবুজা বেগম বলেন, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে জানিয়েছে আমার স্বামীর পা ভালো করার জন্য আরো অন্তত তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। এ কারণে ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে শম্পা। ওর হাত-পায়ে ব্যথা হয়। প্রতিরাতেই ওর হাত-পা টিপে দিতে হয়। তবু বাবার জন্য সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালিয়ে টাকা নিয়ে আসে মেয়েটা।

ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হয় জানিয়ে শম্পা বলে, প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। ২০০-৩০০ টাকা কামাই করে বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি।

শরিফুলের প্রতিবেশী হযরত আলী বলেন, দেড় বছর আগে শম্পা একবেলা পড়াশোনা করত, এক বেলা ভ্যান চালাত। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সারাদিন ভ্যান চালায় মেয়েটি।

জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পরিবারটির খোঁজ নিয়েছি। স্থানীয়রা সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করছে। অসহায় পরিবারটির দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে শিশু শম্পা ও তার বাবার খোঁজ নিয়েছি। অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

বাল্যবিয়ের অভিশাপে দুঃসহ জীবন কাটছে বৃষ্টির

বাল্যবিবাহের অভিশাপে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে এখন দুঃসহ জীবনযাপন করছে কিশোরী বৃষ্টি খাতুন। সে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগাড়ি আদর্শ গ্রামের মৃত নুর হোসেন ও মোছা. বাঁচা খাতুনের মেয়ে।

বৃষ্টি খাতুন জানায়, উপজেলার বলদিপাড়া দাখিল মাদরাসায় ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে পার্শ্ববর্তী দেশিগ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে আব্দুল মমিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু কোনোভাবেই সে স্বামী, সংসার ও পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারছিল না। স্বামীকে দেখলেই তার খুব ভয় লাগত। এ বিষয়টা কেউই বুঝতে চাইত না। আবার কেউ মেনেও নিত না। এতো ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কীটনাশক পানে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেক চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দুই পায়ের শক্তি হারিয়ে যায়। সে এখন পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না। ফলে লাঠিতে ভর দিয়ে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।

বৃষ্টির মা বাঁচা খাতুন জানান, দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি যে, মেয়েকে এতো অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া আমার মোটেও ঠিক হয়নি। তাই মেয়েকে আরো কিছুদিন নিজের কাছে নিয়ে এসে রাখতে চেয়েছিলাম। জামাই আবদুল মোমিন ও বেয়াই আবদুল মতিনকে অনুরোধও করেছিলাম। আরো কিছুদিন আমার বাড়িতে রেখে দিতে। তারপর ঠিক হলে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। সপ্তাহ পার না হতেই জামাই চলে আসতো আমার বাড়িতে। এতে মেয়ে আরো ভয়ে পেয়ে যেতো। ফলে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

তিনি আরো জানান, মেয়ের জীবনটা দুঃসহ হয়ে উঠেছে। মমিন আবারো বিয়ে করেছে। তাকে নিয়ে সংসার করছে। আমার মেয়েটা আমার বাড়িতে এভাবে পড়ে আছে। তার কোনো খোঁজ-খবরও নেয় না। মেয়েটা এখন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। দু’জনের বয়স না হওয়ায় বিয়ের নিবন্ধন করাও সম্ভব হয়নি। ফলে আমরা কোথাও কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে বৃষ্টির স্বামী আব্দুল মমিন জানায়, বৃষ্টিকে এক লাখ টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু তার অভিভাবকরা তা নেয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে বৃষ্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সে নিজ বাড়ির উঠানে লাঠিতে ভর দিয়ে বসে আছে।

তাড়াশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, তাড়াশে কন্যা সন্তানের অভিভাবকরা মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার বৃষ্টি।

তাড়াশ ইউএনও মো. মেজবাউল করিম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাল্যবিয়ে সাময়িক বন্ধ করা গেলেও তা শেষ পর্যন্ত আটকে থাকছে না। পরে গোপনে বিয়ে দিয়ে দেয়। মাঝে মধ্যেই এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোষীদের জেল-জরিমানা করা হয়। অভিভাবকরা সচেতন না হওয়ায় গোপনে এ কাজ চলছে। বৃষ্টির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। -ডেইলি বাংলাদেশ

 

ব্যর্থতা থেকে জান্নাতের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ফেসবুকে তিনি ‘অপরাজিতা জান্নাত’ নামেই বেশি পরিচিত। তার উদ্যোগের নাম ‘অপরাজিতা’। দেশি পণ্যকে তুলে ধরার প্রয়াস তার। অপরাজিতা এ নারীর পুরো নাম জান্নাতুল ফিরদাউস। বাবা ব্যবসায়ী আবু জাহির, মা সুলতানা সুফিয়া। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সিলেটের হবিগঞ্জে। পূর্বপুরুষ পারিবারিকভাবে ব্যবসায়ী ছিলেন; তাই ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার সাথে পরিচিত তিনি। পাঁচ বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

জান্নাতুল বলেন, ‘আমার ভাই সবার ছোট। আমাদের বড় ভাই ছিল না। তাই বাবাকে সব কিছু একা সামলাতে হতো। দু’জন কর্মচারী থাকা সত্ত্বেও বাবার একজন বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজন ছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ৮ বছর। একদিন একা একা বাবার দোকান দেখতে গিয়েছিলাম। বাবা আমাকে দেখে অনেক খুশি হন এবং ক্যাশ কাউন্টারে বসিয়ে দেন। তখন টুকটাক হিসাব জানতাম। বাবার কাছ থেকে কী করে পোশাক ভাঁজ করতে হয়, এগুলো শিখতাম। এভাবেই আমার ব্যবসার হাতেখড়ি।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে প্রায় ৮ বছর বাবার সাথে কাজ করি। এমনকি বাবা যখন অসুস্থ; তখন পুরো দোকান সামলেছি। যখন মাধ্যমিকে পড়ি; তখন কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ আমি একজন মেয়ে আর সামনে এসএসসি পরীক্ষা। সবদিক চিন্তা করে আমি ব্যবসার কাজ থেকে সরে আসি। এর একবছর পর আমার বাবা দোকানটি ছেড়ে দেন। দোকানের সম্পূর্ণ মালামাল বিক্রি করে ফেলেন।’

জান্নাত বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর ব্যবসা করার পরও বাবা মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলতেন, আমার মেয়েটা যদি আজ ছেলে হতো, তবে হয়তো আমার ব্যবসাটা আজ টিকে থাকত। বাবার সেই আক্ষেপ আর ব্যবসার প্রতি ভালোবাসা থেকেই মূলত ব্যবসায় কিছু একটা করার চিন্তা-ভাবনা করি। বাবার ইচ্ছে ছিল, আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি। তাই ২০১৬ সালে ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হই।’

দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে অপরাজিতা জান্নাত বলেন, ‘১ম বর্ষের ফরম ফিলাপের আগের দিন পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। স্বামী এমদাদুল হক রুবেল পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তারপর থেকে মূলত উদ্যমী জীবন শুরু। বিয়ের পর হোস্টেল ছেড়ে নতুন জীবন শুরু। ছোট একটা বাসা নিয়ে সংসার আমাদের। এরই মধ্যে ১ম বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়, আমি ফার্স্ট ক্লাস পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে বাসা দূরে হওয়ায় রেগুলার ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। তাই বাসায় বসে না থেকে আমি চিন্তা করি চাকরি করব। স্বামীর মতামত নিয়ে একটি প্রাইভেট অফিসে জয়েন করি। কিন্তু পড়াশোনা, অফিস, সংসার সবকিছু সামলানো চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছিল। তখন ফ্রি টাইমে আমি বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তার গল্প শুনতাম। এরপরই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ব্যবসা করার।’

ব্যবসা শুরুর গল্প জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামীর উৎসাহে বাবা, স্বামী ও নিজের কিছু জমানো টাকা নিয়ে বাসার কাছে একটি দোকান ভাড়া করেন। ডেকোরেশনের কাজ শেষে সেখানে তিনি মেয়েদের ড্রেসসহ অন্যান্য আইটেমের পোশাক তোলেন। যেহেতু এটি মেয়েদের দোকান ছিল এবং সুন্দর সুন্দর কালেকশন ছিল; তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকায় ভালো পরিচিতি পাই।’

জান্নাত বলেন, ‘এভাবে যখন একটু একটু করে দোকানটি বড় হচ্ছিল; তখনই বেবি কনসিভ হয়। আমাদের প্রথম সন্তান যেহেতু; তার প্রতি আমাদের অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। কিন্তু অন্যদিকে আমার স্বপ্ন কেবলমাত্র যাত্রা শুরু করেছে। সেই মূহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর ছিল। স্বামীর কথা ভেবে, সন্তানের কথা চিন্তা করে ব্যবসার পরিকল্পনা স্থগিত করি।’

প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্ন যদি চোখের সামনে ভেঙে যায়; তখন সেই পরিস্থিতিটা যে কতটা কষ্টের, সেটা আমি প্রথমবার উপলব্ধি করি। ডেকোরেশন ও মালামাল মিলিয়ে আমার লস হয়েছিল প্রায় লক্ষাধিক টাকা। মানসিকভাবে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি। নিজেকে তখন শুধু ব্যর্থ মনে হতো। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে আমার ছেলের জন্ম হয়। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটি কথা মনে হতো, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি ব্যর্থ হলেও একজন মা হিসেবে আমি সফল।’

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলতে গিয়ে জান্নাত বলেন, ‘ফ্রেব্রুয়ারিতে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। মার্চ মাসে যখন করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়, তখন চারটি পরীক্ষা স্থগিত রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে স্বামীর অফিস কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। ওই সময়ে আমার স্বামী বলতেন, তুমি ঘরে বসে কাজ করা যায় এমন কিছু একটা চিন্তা করো। কিন্তু সেই সময়ে আমার মন-মানসিকতা এতটাই দুর্বল ছিল যে, আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। তখন আমার একজন শিক্ষকের কথা মনে পড়ে যায়, তিনি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। যিনি সব সময় বলতেন, স্বপ্ন দেখুন, লেগে থাকুন, সফল হবেন। স্যারের এ উক্তি আমার মনোবলকে জাগিয়ে তোলে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু অনলাইনে কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না। সেই মূহূর্তে আরও একজন শিক্ষকের দেখা পাই। তিনি রাজীব আহমেদ স্যার। যিনি বলেন, পার্সোনাল ব্রান্ডিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে। স্যারের কথা অনুযায়ী আমার মনে হলো, আমার আগে নিজেকে ব্রান্ডিং করতে হবে। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডরা সবাই যেহেতু আমার পরিচিত ছিলেন; সেক্ষেত্রে আমি নতুন করে আবার সবার সাথে পরিচিত হওয়া শুরু করলাম। আমার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিলাম।’

স্বপ্নের হাতছানি সম্পর্কে জান্নাত বলেন, ‘তারপর একদিন আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড আমাকে নক করলেন কিছু ড্রেস কেনার জন্য। কারণ তিনি জানতেন আমার নিজের একটা শপ আছে। আমার কাছে যেহেতু ড্রেস কালেকশন ছিল না, তাই আমি আমার একজন ফ্রেন্ডের কিছু ড্রেস কালেকশন তাকে দেখাই। তিনি সেখান থেকে ২ হাজার টাকার ব্লক এবং স্ক্রিন প্রিন্ট ড্রেস অর্ডার করেন। অর্ডারটা আমার ফ্রেন্ডকে কনফার্ম করার পর, সে এগুলো পাঠিয়ে দেয়। ড্রেস হাতে পেয়ে আমার সেই কাস্টমার ফ্রেন্ড অনেক খুশি হন। সেই অর্ডারে আমার লাভ ছিল মাত্র ৮০ টাকা। কিন্তু আনন্দ ছিল এত বেশি যে, আমার মনে হয়েছিল আমি কোটি টাকা হাতে পেয়েছি। কারণ তিনি আমার প্রথম অনলাইন কাস্টমার ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তখন যেহেতু আমি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিলাম। তার পরের দিন আমার একজন প্রিয় বান্ধবীর সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। সে তখন আমার কথা শুনে কালেকশনগুলোর ছবি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি তাকে ছবিগুলো দিলে সে সেখান থেকে ৫ হাজার টাকার পণ্য অর্ডার করে। আমি প্রডাক্ট কনফার্ম করে আমার সেই সেলার ফ্রেন্ডকে অর্ডার দিলে, তিনি সবগুলো প্রডাক্ট তার কাছ থেকে নেন। আমার যেহেতু নতুন ব্যবসা আর ব্যবসায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা যেহেতু বড় বিষয়, তাই আমি প্রথমবার অল্প কিছু টাকার প্রডাক্ট স্টক করি এবং সেই বান্ধবীর চাহিদা অনুযায়ী তার ড্রেসগুলো পাঠিয়ে দেই। সেই বান্ধবী ড্রেসগুলো পেয়ে অনেক খুশি হন এবং তিনি আমাকে পরামর্শ দেন অনলাইনে একটা গ্রুপ খোলার জন্য।’

এরপর তিনি তার বান্ধবীর পরামর্শ অনুযায়ী একটি পার্সোনাল গ্রুপ খোলেন তার শপের নাম অনুযায়ী। গ্রুপের নাম দেন ‘অপরাজিতা’। একই নামে একটি পেইজও খোলেন তিনি। পেজ এবং গ্রুপ খোলার পর পরিচিতদের থেকে ভালো সাড়া পান। গ্রুপ খোলার পর দুই মাসে তার পোশাক বিক্রি হয় ১ লাখ টাকা। অথচ তখন গ্রুপের সদস্য ছিল মাত্র ২৫০ জনের কাছাকাছি। এভাবে গত ৪ মাসে শুধু গ্রুপ এবং পেজ থেকে জান্নাতুলের পণ্য বিক্রি হয় আড়াই লাখ টাকারও বেশি। এর মধ্যে ব্লক এবং স্ক্রিন প্রিন্টের ড্রেস বিক্রি হয়েছে ২ লাখ টাকা। তাই তিনি সিগনেচার প্রোডাক্ট হিসেবে ব্লকের শাড়ি তৈরি করেছেন।

এ ছাড়াও তার উদ্যোগে সামিল হয়েছেন প্রতিবশী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন এবং বিভিন্ন সময়ের বন্ধু-বান্ধব। তার এ সফলতার সবচেয়ে বড় অংশীদার তার স্বামী। বাবা-মায়ের দোয়া এবং ভালোবাসা সব সময় জান্নাতুলকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি এমন দু’জন শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছেন; যাদের প্রতিটি কথা এবং কাজ তার ব্যক্তিগত জীবন ও ব্যবসায়িক জীবনের চিন্তা-ভাবনাকে বদলে দিয়েছে। জাগো নিউজ

 

ভরিতে ১১৬৬ টাকা কমল স্বর্ণের দাম

ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে স্ব‌র্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) বাজুসের সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে স্বর্ণের এ নতুন দর কার্যকর হবে। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর থেকে প্র‌তিভরিতে ২ হাজার ৫০৭ টাকা ক‌মি‌য়ে স্ব‌র্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে এক সপ্তাহে দুই দফায় ভরিতে ৩ হাজার ৬৭৩ টাকা কমল স্বর্ণের দাম।

বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় শঙ্কিত বৈশ্বিক অর্থনীতি, ডলার ও তেলের দরপতন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বর্ণবাজারে দামের উত্থান-পতন সত্ত্বেও এক সপ্তাহের মধ্যে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হলো।

তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন দাম অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর থেকে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৯ হাজার ৫১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬০ হাজার ৭৬৯ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার ৪৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে।

স্ব‌র্ণের দাম কম‌লেও রুপার পূর্বনির্ধা‌রিত দাম বহাল রয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি রুপার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম ৯৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়েছে।

এ‌দি‌কে আজ‌ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দে‌শের বাজা‌রে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণ বি‌ক্রি হ‌য়ে‌ছে ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭০ হাজার ৬৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা ভরি বিক্রি হয়েছে।

এদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হলেও বিশ্ববাজারে আজ দাম বেড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩৫ দশমিক ৮৮ ডলার বা ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮১২ দশমিক ৯০ ডলারে উঠেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেয় যখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কম ছিল। আমরা সবসময় চেষ্টা করছি বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের সমন্বয় রাখতে।

 

মডেলিং ছাড়লেন আলোচিত মডেল হালিমা আদেন

পশ্চিমা বিশ্বের আলোচিত হিজাবী র‌্যাম্প মডেল হালিমা আদেন। সম্প্রতি তিনি ফ্যাশন দুনিয়াকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছেন। তিনি এই খবর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইসলামী মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছিলো এ ইন্ডাস্ট্রি।

ব্রিটিশ ফ্যাশন ম্যাগাজিন- ভোগ, ভোগ অ্যারাবিয়া এবং মার্কিন জনপ্রিয় পত্রিকা- আলুউরের প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছিলেন সোমালিয়ান বংশোদ্ভুত এ মার্কিনী।

প্রথাগত মডেলিং ধারার বাইরে গিয়ে হিজাব পরিহিত অবস্থায় ক্যাটওয়াক করে সবার নজর কাড়েন হালিমা। ধীরে-ধীরে নিজের স্বতন্ত্র স্টাইল নিয়েই হয়ে ওঠেন ফ্যাশন আইকন। আর ক্যারিয়ারের চূড়ায় থাকা অবস্থায়ই হালিমা ঘোষণা দিলেন, আর ফিরবেন না মডেলিংয়ে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করলেন ‘হিজাব স্টোরি’ নামে সিরিজ বার্তা। জানান- এ সিদ্ধান্তের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তার মা।

মার্কিন হিজাবী মডেল হালিমা আদেন বলেন, বহু আগেই মা মডেলিং ছাড়ার কথা বলেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে, সেসময় এতোটা প্রতিবাদী না হলেও পারতাম। কারণ, তিনিই একমাত্র মানুষ যে সবসময় আমার কল্যাণ কামনা করেন। দ্বীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে তার পরামর্শে বরাবর অটল ছিলেন মা।

হালিমার দাবি- চোখ ধাঁধানো ফ্যাশন দুনিয়া ইসলামিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে তাকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়েছিলো। বিশেষ করে চলমান মহামারি পরিস্থিতি ধর্ম সম্পর্কে বেশি প্রভাবিত করেছে তাকে।

হালিমা আদেন বলেন, একজন মুসলিম নারী হিসেবে কী করা উচিৎ- সেটা চিন্তার সুযোগ তৈরি করে দিলো করোনা মহামারি। হিজাব পরে ফ্যাশন দুনিয়ায় টিকে থাকতে বহু চড়াই-উৎড়াই পার করেছি। আর হিজাবের মর্ম বুঝতে পারেন, এমন মুসলিম স্টাইলিস্টেরও বড় অভাব ইন্ডাস্ট্রিতে।

কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করা হালিমা মাত্র ছয় বছর বয়সে পা দেন মার্কিন মুলুকে। ২০১৬ সালে প্রথমবার, মিস মিনেসোটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় হিজাব পড়ে অংশ নেন হালিমা। এর পরে কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। সেটাই ছিলো তার ক্যারিয়ারের শুরু। জায়গা করে নেন ‘ভোগ’ ‘আলুউরে’র মতো জনপ্রিয় ফ্যাশন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। প্রথমবার, বুরকিনি পড়ে পোজ দিয়েছিলেন ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেডের’ জন্যেও।