banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা


ডা. মারুফ রায়হান খান


সারা বিশ্বজুড়ে এই অক্টোবর মাসে পালিত হচ্ছে স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও আশঙ্কাজনক হারে প্রকোপ বাড়ছে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারের। বলা হয়ে থাকে প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে ১ জনের জীবদ্দশায় ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে।

কাদের বেশি হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার?

– ৯৯.৫% ক্ষেত্রে মহিলাদের, ০.৫% ক্ষেত্রে পুরুষদের।

– বয়স : সাধারণত ৩০-৬০ বছর।

– ইউরোপের দেশগুলোর অধিবাসীদের।

– পরিবারে যদি অন্য কারও হয়ে থাকে (মা,খালা ইত্যাদি)।

– যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেন। জন্মনিরোধক ওষুধ খান।

– যাদের মাসিক আগে শুরু হয় এবং দেরিতে মাসিক বন্ধ হয়।

– যারা প্রথম বাচ্চা বেশি বয়সে নেন।

– চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খান।

– সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না।

– যাদের সন্তান নেই।

কী কী উপসর্গ নিয়ে আসেন রোগীরা?

– এক ব্রেস্ট বা দুই ব্রেস্টের আকারে বা গঠনে কোনো পরিবর্তন। চাকা চাকা দেখা যাওয়া।

– নিপল বা স্তনবৃন্ত থেকে রস নিঃসৃত হওয়া। কখনও রক্ত নিঃসৃত হওয়া।

– নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, নিপলে চির ধরা।

– বগলে চাকা চাকা কিছু দেখা যাওয়া।

– অনেক সময় ব্রেস্টের চামড়া গর্ত গর্ত হয়ে যায় (অনেকটা কমলার খোসার মতো)।

– এছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য জায়াগায় ছড়িয়ে যায় তাহলে কাশি, জণ্ডিস, হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে রোগী আসতে পারে।

কীভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়?

১. রোগের যথাযথ ইতিহাস নিয়ে এবং পরীক্ষা করে

২. ইমেজিং :
– আল্ট্রাসনোগ্রাফি
-ম্যামোগ্রাফি

৩. হিস্টোলজি :
– FNAC
– বায়োপসি

৪. টিউমার মার্কার্স : যেমন- BRCA- 1, BRCA-2

তবে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নিরূপণের জন্যে প্রতি মাসে একবার নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা (Self Breast Examination) করে দেখতে বলা হয়ে থাকে।

যেভাবে করা যেতে পারে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশান :

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা :

ক. দুই বাহু মাথার ওপরে বা পেছনে উঁচু করে ধরতে হবে।

খ. লক্ষ্য করতে হবে স্তনের আকার-আকৃতি, উপরের চামড়া বা রঙের কোনো পরিবর্তন আছে কি না। যেমন : চামড়া পুরু হয়ে যাওয়া, লালচে বা কালচে হয়ে যাওয়া, তাপ অনুভব করা।

বিছানায় শুয়ে পরীক্ষা :

ক. ডান কাঁধের ওপর বালিশ রাখতে হবে।

খ. ডান হাত মাথার পেছনে দিতে হবে।

গ. বাম হাতের ৩ আঙুল দিয়ে ডান স্তন চক্রাকারে পরীক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে কোনো তরল বা রক্ত নিঃসৃত হয় কি না।

ঘ. একইভাবে বাম পাশের স্তন পরীক্ষা করতে হবে।

স্নান করার সময় পরীক্ষা :

ক. একটি হাত মাথায় রাখতে হবে।

খ. অন্য হাতের আঙুল দিয়ে কলার বোনের কয়েক ইঞ্চি নিচ থেকে একদম বগল পর্যন্ত চেপে দেখতে হবে কোনো চাকা বা ব্যথা অনুভূত হয় কি না।

আর যাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি (উপরে উল্লেখ করা হয়েছে) তাদের প্রতি ৬ মাসে একবার আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা ম্যামোগ্রাফি করাতে বলা হয়। যাদের বয়স ৩০ বছরের কম তাদের জন্যে আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং যাদের ৩০ বছরের বেশি তাদের জন্যে ম্যামোগ্রাফি অধিক প্রযোজ্য।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয় ব্রেস্ট ক্যান্সারের?

কয়েক প্রকারের চিকিৎসা রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সারের।
যেমন :

১. অপারেশন
২. রেডিওথেরাপি
৩. কেমোথেরাপি
৪. হরমোন থেরাপি
৫. ইমিউন থেরাপি

 

জীবনের নানান রঙে আঁকা বই ‘ইয়াসমীন’

জীবনের নানান রঙে আঁকা বই ‘ইয়াসমীন’


রংধনু


আজ একটা বই পড়া শুরু করেছি। গল্পের বই। বেশ কয়েকটি ছোট গল্পের সমন্বয়ে রচিত বইটি। নাম ইয়াসমীন, প্রথম গল্পের নামে বইটির নামকরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে দুটো গল্প পড়লাম।

যেকোনো বই পড়ে সেখান থেকে কী বুঝলাম, কী শিখলাম এই নিয়ে আলোচনা করা হয়নি কারো সাথে। হবেই বা কিভাবে! তেমন বই পড়ুয়া পাইনি যে। গল্পগুলো পড়ে কেমন কেমন মন খারাপের মেঘ ভর করেছে। আটপৌরে জীবনের গল্প।

প্রথম গল্পটা দুই বান্ধবীর। অনেকটা স্মৃতিচারণমূলক। আজকের দিনে থেকে মারজান চরিত্রটি অতীতের ডানায় ভর করে বান্ধবী ইয়াসমীনের সাথে কাটানো নানান ঘটনা মনে করছে। অতীত ভ্রমণে যাওয়ার মূল কারণ ইয়াসমীনের চিঠি। চিঠির খাম না খুলে মাদ্রাসায় তাদের দেখা হওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে ইয়াসমীনের বাসায় বেড়াতে যাওয়া, সেখানে প্রকৃতির খুব কাছে ঝর্ণা, পাহাড় এসব দেখা, অনেক বছর পর ট্রেনে দেখা হওয়া নানা বিষয় নিয়ে বলেছে। অনেক অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত চিটি পড়েছে। ইয়াসমীনের কঠিন অসুখ হয়েছে, বাঁচবে না বেশিদিন হয়ত। পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে তাকে কবর দিতে বলেছিল।

অনেকদিন পর বই পড়তে পড়তে প্রকৃতির সংস্পর্শে গেলাম। নদী, চাদের আলো, গাছপালা, পাহাড়, ঝর্ণা অবলোকন করেছি। কিন্তু গল্পের বর্ণনা বেশি লম্বা করে ফেলেছে আমার মনে হয়েছে। এক জায়গা থেকে হুট করেই আরেক জায়গায় চলে গিয়েছে লেখিকা। আবার কিছু কিছু জিনিস বোঝা যায়নি, বিশেষ করে কয়েকটা চরিত্র। যেমন ইয়াসমীনের বাবার সাথে মারজানের বাবার কি কিছু নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে কিনা।

দ্বিতীয় গল্পটার নাম সময়। এটা সংগ্রাম করা এক ছেলের গল্প। অভাবের সংসারে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওষুধের দোকানে কাজ করে। অসুস্থ বাবা, মন মরা মা, জীর্ণশীর্ণ ছোট ভাই। এই নিয়ে পরিবার। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভিটে আছে কিন্তু ঘর দুটো ভাঙা, বৃষ্টির পানি পড়ে। ফুফুরাও থাকে সেই ভিটায় ঘর তুলে। একটা আহত কুকুরকে সে পকেটের টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েছিল। সেই থেকে কুকুর ছেলেটার ভক্ত। প্রতি রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় কুকুর তার সাথে দেখা করে। ছেলেটি চায়ের দোকান থেকে রুটি খাওয়ায় প্রতি রাতে। এর মাঝে ফুফুরা তাদের ভাগের জায়গা বিক্রি করে দেয়। ফুফাতো বোনটি ছেলেটিকে জানায় দাদি কিছুটা জমি ছেলেটিকেও লিখে দিয়ে গেছে। যেন ওই জমিটুকু বিক্রি করে বাড়ি ঠিক করে আর ব্যবসা করে। ফুফাতো বোন বিক্রির সব ব্যবস্থা করে দেয়। এরমধ্যে ফুফুরা সবাই গ্রামে চলে যায়। আর ছেলেটিও ধীরে ধীরে ব্যাবসার প্রসার ঘটায়। বাড়ি গাড়ির মালিক হয়। শেষে এক রাতে ড্রাইভে বের হয়। সেই কুকুরটি ছেলেটিকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় এসেছিল। কিন্তু সে গাড়ি দিয়ে তাকে ধাক্কা দেয় কুকুরটাকে। কুকুর মারা যায়। ছেলেটি কুকুরকে গালি দেয়, কারণ রক্ত লেগে গাড়ি নোংরা হয়েছে। আর সেই ফুফাতো বোন বা ফুফুদেরও খবর নেয় না ছেলেটি।

সময়ের বদলে বদলেছে ব্যবহার। একসময়ের দরদী লোক হয়ে উঠেছে দাম্ভিক। বাস্তব জীবনেও অনেকের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়। অতীত ভুলে যায়। কষ্টের সময়ে পাশে থাকা মানুষদের ভুলে যায়। নিজেই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। এটা মোটেও ঠিক না। বরং এর উল্টোটাই হবার কথা। কৃতজ্ঞতা থাকা উচিৎ সবার প্রতি।

আমার কেন যেন একটা গল্পের শেষও ভালো লাগেনি। তাতে কী! নিজের মত করে শেষ ভেবেছি। ইয়াসমীন আর মারজান জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পাহাড়ী ঝর্নাঘেরা সবুজ কোনো অরণ্যে কাটাচ্ছে দিনগুলো সেই আগের মত দূরন্তপনায়। আর দ্বিতীয় গল্পের ছেলেটি আত্মীয়ের হক তো আদায় করেই সাথে সেই কুকুরটির জন্যেও বাড়ির আঙিনায় একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছে। সাথে অন্যদেরও সাহায্য করছে জীবনে বড় হওয়ার জন্য।

গল্প পড়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে করল তাই লেখার চেষ্টা। আমি অবশ্য জানি না কিভাবে আলোচনা করতে হবে। রিভিউও লিখিনি। নিজের মতামত লিখলাম। আরো কয়েকটা গল্প আছে, পড়ে সেগুলো নিয়েও লিখব ইন শা আল্লাহ্‌।

 

সব প্রতিষ্ঠানে ‘মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার’ করতে হাইকোর্টের রুল

সব প্রতিষ্ঠানে ‘মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার’ করতে হাইকোর্টের রুল


নারীর জন্য আইন


দেশের সকল কর্মক্ষেত্র, বিমানবন্দর, বাস, রেলওয়ে স্টেশন ও শপিংমলে মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত।

রোববার (২৭ অক্টোবর) একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব, নারী ও শিশুকল্যাণ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে রুল জারি করেছেন আদালত।

রিট আবেদনটি দায়ের করেন নয় মাসের শিশু উমাইর বিন সাদী ও তার মা আইনজীবী ইসরাত হাসান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মায়েরা উল্লেখিত জনসমাগম স্থানে প্রায় দুধ পান করা শিশুদের নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন। কারণ সেসব স্থানে শিশুকে নির্বিঘ্নে ও আচ্ছাদিত পরিবেশে শিশূকে স্তন্যদান করাতে পারেন না। সেই সুবিধাই করে দেয়া থাকেনা সেসব স্থানে। তাই এসব স্থানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করতে হবে যেন সেখানে কোনো মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে কোনো বিড়ম্বনায় না পড়েন। এ কারণেই রিট করেছি।

রিটে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করেছেন আইনজীবী ইসরাত হাসান।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দর, সুস্থ ও সবলভাবে শিশুকে বেড়ে তুলতে এবং নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সরকারি বেসকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এরপর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নেই।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, কর্মক্ষেত্রে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে যেন একজন কর্মজীবী মা সমর্থ হন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিমা-ব্যাংক, শপিংমল, কল-কারখানা, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালসহ অফিস, ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠান এবং শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়নি।

সুত্রঃ যুগান্তর।

 

গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার

গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজ লিখতে চাই গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার নিয়ে। এটা আসলে সবার জানা প্রয়োজন।
‘প্রেগনেন্সি’ বিষয়টা আমার কাছে মিরাকিউলাস লাগে। একটা দেহে দুটো প্রাণ। একসাথে নির্ভর করছে দুটো সত্ত্বার ভালো থাকা-মন্দ থাকা, সুস্থতা-অসুস্থতা–মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে সন্তানের বাঁচা-মরা। প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হরমোনের বেশ তারতম্য ঘটে, শারীরিক গঠনের কিছু পরিবর্তন হয়–তাই মায়ের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা নতুন করে দেখা দেয় বা বেড়ে যায়। দেখা যায় যে, ডেলিভারি হয়ে যাবার পরপর সে সমস্যাগুলোও চলে যায়। এগুলোর বেশিরভাগই ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক। প্রেগনেন্সি ইস্যুটা যেহেতু সবার কাছে খুব সেন্সিটিভ তাই অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এসব সমস্যায়। আসলে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলে, কিছু পরামর্শ মেনে চললে যার অধিকাংশই প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়। একেবারেই কমন কিছু সমস্যার সমাধান নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় বিষয়গুলো সবারই জানা থাকা প্রয়োজন।

১. বমিবমি ভাব এবং বমি
দেখা যায় যে প্রতি ১০০ জন গর্ভবতীর প্রায় ৭৫ জনেরই এ সমস্যাটা দেখা দেয়। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই এ সমস্যা হয়।
-সকালে ঘুম থেকে উঠেই, বলা হয়ে থাকে বিছানাতেই শুকনো খাবার যেমন : টোস্ট, বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খেতে।
-প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে বলা হয়।
-অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হয়।
-একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।

২. কোমর ব্যথা 
প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৫০ জনেরই এ সমস্যা দেখা দেয়।
-অনেক বেশি ওজন বাড়িয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
-পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, মোট দশ ঘণ্টা।
-পা কিছুটা উঁচুতে রেখে যেমন : পায়ের নিচে একটা বা দুটো বালিশ রেখে বিশ্রাম নিন।
-শক্ত বিছানায় শোয়া ভালো।
-উঁচু হিলযুক্ত জুতো পরা যাবে না।
– কুঁজো হয়ে বসা বা কোনো জিনিস নিচ থেকে তোলা পরিহার করা শ্রেয়।
– দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।
– ভারী এবং পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
– কোমরে ম্যাসাজ করতে পারেন।
– গরম বা ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে সেঁক দিতে পারেন।

৩. কোষ্ঠকাঠিন্য
-প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
– আঁশজাতীয় খাবার যেমন : শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
-ইসপগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।
– চাপ এলে টয়লেটে যেতে বিলম্ব করা যাবে না।
– কিছুটা হাঁটাচলার অভ্যেস করা ভালো, দিনে ২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩ দিন হাঁটা যেতে পারে।

৪. পায়ে খিল ধরা
-পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে।
– গরম সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি-ওয়ান সেবন করা যেতে পারে।

৫. পায়ে পানি আসা/ পা ফোলা 
-বিশ্রাম নিন এবং পা দুটো একটা বা দুটো বালিশের ওপর রাখুন।
– একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
-আরামদায়ক জুতো পরুন।
– বেশি করে পানি পান করুন।

৬. বুক জ্বালাপোড়া, এসিডিটি 
-একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
– খাবার পরপরই বিছানায় শুতে চলে যাওয়া যাবে না।
– বিছানায় যাবার অনেকক্ষণ আগেই খাবার খেয়ে ফেলুন।
– উঁচু বালিশে শুলে আরাম পাওয়া যায়।
– এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

৭. পায়ে আঁকাবাঁকা শিরা, পাইলস 
-পায়ে আঁকাবাঁকা শিরার জন্যে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহার এবং বিশ্রামের সময় পা উঁচু করে রাখতে বলা হয়।
-পাইলসের জন্যে নিয়মিত টয়লেট সারা জরুরি; কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। টয়লেট সারার সময় বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। বাম কাত হয়ে শোয়া ভালো। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

৮. সাদা স্রাব যাওয়া 
-ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এর প্রধান চিকিৎসা।
-নরম সূতি আন্ডারগার্মেন্টস ব্যবহার করা ভালো।
তবে সবকথার শেষকথা হচ্ছে প্রতিজন গর্ভবতী নারীরই নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে ভিজিটে যেতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে এবং তার প্রেস্ক্রাইব করা ওষুধপত্র নিয়মিত খেতে হবে।

 

স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ

স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ


সুমাইয়া তাসনিম


আমার কাছে শেষ বলে আসলে কিছু নেই। যতদিন মানুষ বেঁচে থাকে ততদিন তার জীবনের কোনো গল্পের কোনো অধ্যায়ই একেবারে শেষ হয়না। তবু দিন শেষে কিছু কিছু চেনাপথ শত অভ্যস্ততা মুছে রোজকার রুটিন থেকে বাদ পড়ে যায়। কেবল স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ পুকুরে অবসন্ন দুপুরে টুপ করে ঝরে পড়া পাতার মত হাল্কা ঢেউ তোলে মাঝেমাঝে। এক বছর বেশি সময় লাগার পরও শেষ ক্লাস পাঁচ বছরের সময়টাকে যেন একটা মালায় গেঁথে ফেললো। যেন একটা পুতির মালা গাঁথা অবশেষে শেষ হলো। আর একটি দিনও বাকি নেই ক্লাসের। আর একটি পুতিও হাতে নেই গাঁথবার।

কাল শেষ ক্লাস শেষে অনেকক্ষণ বসে বসে মেয়েদের র‍্যাগডে প্রিপারেশন দেখলাম। তারপর ফুটপাতের হলুদ টাইলসগুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে পলাশি পেরিয়ে রাহির ডিপার্টমেন্টে গেলাম। ওর কাজ শেষে একসাথে বাসায় ফিরলাম। ক্লাস শেষে একসাথে ফেরা আর কবে হবে কে জানে!

আমরা যখন ইডেনে ভর্তি হই তখন ইডেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ন্যাশনালে প্রায় সবাই ভর্তি হয় একটা চাপা কষ্ট নিয়ে। আরেকটু ভালো প্রিপারেশন নিলে আরেকটু ভালো কোথাও থাকতাম এই উপলব্ধি আসে সহসাই। আমি তেমনটা ভেবেছিলাম কিনা মনে নেই। তবে পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারায় আর কোনো কষ্ট ছিলো না।

আমার শুরুটা ছিলো সরকারি কলোনির স্কুলে। তারপর মাদরাসার দোতলা ভবন আর ছোট্ট মাঠের গন্ডি, যেখানকার টিচাররা এখনো দেখলে খুশি হয়ে যান। তারপর জেলখানার মত ঢাকা সিটি কলেজ, অনেক দিন পর্যন্ত ঘুরানো প্যাচানো সিড়ি ডিঙ্গিয়ে নিজের ক্লাস কোনটা তাই খুঁজে পেতে কষ্ট হয়ে যেতো। তারপর আসলাম ইডেনে। সিটি কলেজের মাঠ ছাড়া এসি রুমের বদ্ধ পরিবেশ আমার মত মানুষের জন্য না সেটা বেশি টের পেয়েছিলাম ইডেনের মুক্ত হাওয়ায়। ক্যাম্পাসে পা দিতেই ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে আসবে প্রকৃতির আবহে। এত্ত রকমের গাছ, এত্তরকমের পাখির ডাক, এত্ত রঙের ফুল.. আহ…! বাইরের কোনো মানুষ ছাড়া নিজেদের একটা রাজ্য মনে হয়। এত্ত মেয়ে একসাথে আমি এর আগে দেখিনি। সবাই নিজের মত পড়ছে, খাচ্ছে, কাজ করছে, আনন্দ করছে, নিজের মত সময় কাটাচ্ছে। ভিন্ন একটা জগৎ যেন! কতদিন পুকুরপাড়ের বেঞ্চে শুয়ে শুয়ে জীবনের কত প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি ভাবনায়। বিশাল মাঠের কোণের ছোট ক্লাবটায় তাইকোয়ান্ডো প্র‍্যাকটিস করতে করতে হারানো আত্মবিশ্বাস আবার খুঁজে পেয়েছি নিজের ভেতরে। ধবধবে সাদা ড্রেসটা গায়ে চাপালেই শরীরে একটা অদ্ভুত জোর পেতাম। সব শক্তি দিয়ে একেকটা কিক আর পাঞ্চ মেরে দুইঘন্টার প্র‍্যাকটিস শেষে ক্লান্ত হয়ে হাভাতের মত নাশতা করতাম হলের ক্যান্টিনে। পড়াশোনার মান নিয়ে আমার বরাবরই আপত্তি ছিল কিন্তু একসময় সেটা মেনে নিয়েছিলাম। বুঝে নিয়েছিলাম এখানে প্রেশার করার কেউ নাই। লক্ষ্য ঠিক করে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে৷ একদিকে ভালোই ছিলো, প্রচুর এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিজ তেমন কোনো জটিলতা ছাড়াই করতে পেরেছিলাম।
ইডেনের বিশাল ক্যাম্পাস পুকুরঘাট আর পুকুরের মাছগুলোকে পর্যন্ত এই যাবার কালে আপন মনে হচ্ছে। কলেজ বাসের দিনগুলোতে গল্প করতে করতে কখন পথ ফুরিয়ে যেতো টের পাওয়া যেতোনা। সেই লাল কলেজ বাস “চন্দ্রমল্লিকা” তোরে মিস করবো। সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের করিডর, মিস করবো। ডিপার্টমেন্ট থেকে নামলেই ফুচকা, ভেলপুরি, আঁচার, চাটনি, ফলের জুস, কিমা পরোটা, খিচুড়ি, ফ্রাইড রাইস, শীতের ভাপা পিঠা আর নানাপদের ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেয়ে পেট ভরানোর দিনগুলো মিস করবো। ইডেনের প্রত্যেকটা ফুল গাছ, লাইব্রেরির টেবিল-চেয়ার, ক্লাসরুম আর পুরানো বেঞ্চগুলো, ছাদ আর ল্যাবরুম, সেমিনারের বইগুলো, মিস করবো খুব। টিচারদের আর হাসি, কান্নায় ভরপুর মেয়েগুলোকে মিস করবো।।

*এই ছবিগুলো ইডেনে বিভিন্ন সময়ে তোলা। ছবিগুলোর আসল কপি গুলো হারিয়ে ফেলেছি ত মনে হলো এই পোস্টের সাথে থাকুক।

 

সময়মতো চিকিৎসায় শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ সম্ভব

সময়মতো চিকিৎসায় শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ সম্ভব


স্বাস্থ্যকথা


লাবনীর বয়স মাত্র নয় বছর। এই অল্প বয়সেই মেয়েটি খুব গোছালো। বাবা-মা যাই বলে তাতেই তার সম্মতি। অন্য বাচ্চাদের মত তার তেমন কোন বায়নাও নেই। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যায়। আর স্কুল থেকে ফিরে কিছুক্ষণ টিভিতে কার্টুন দেখে। তারপর গোসল সেরে খেয়ে নেয়। এরপর ঘুম। বিকেলে ঘুম, থেকে উঠে বই নিয়ে পড়তে বসা। এ যেন তার নিয়মিত কাজ।
কিন্তু ক’দিন হলো মেয়েটি মা’কে এসে বলছে শ্রেণী কক্ষে পিছনে বসলে সে ব্ল্যাক বোর্ডে শিক্ষকের লেখা ভালভাবে দেখতে পায় না। মা শুরুতে পাত্তা না দিলেও একদিন লাবনীর শ্রেণী শিক্ষক ফোন করে জানায় বিষয়টি। তারপর দিন লাবনীর মা তাকে নিয়ে যায় নগরীরর ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে চোখের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানা যায়, লাবনীর চোখে ছানি।
মাত্র ছয় মাস সতের দিনে জন্ম হয় মিথিলার। জন্মের পরপরই রাখা হয় ইনকিউবেটরে। জন্মের সময় ওজন ছিল মাত্র ১১২০ গ্রাম। জন্মের একদিন পরই ধরা পড়ে জন্ডিস। এভাবে প্রায় দেড় মাস নগরীরর দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে আসা হয় মিথিলাকে। বাসার আনার সময় একজন সেবিকা বলেছিলেন চোখের এবং কানের ডাক্তার দেখানোর কথা। কোথায় দেখাব জানতে চাইলে সেই নার্স মিথিলার বাবা-মা’র হাতে এক ডাক্তারের ঠিকানা ধরিয়ে দেন। বাসায় আনার পর মিথিলার বাবার আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে সেই মাসে আর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি।
পরের মাসে মিথিলার বাবা বেতন পাওয়ার পরদিনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেদিন অনেক্ষন দেখেন।  এক সপ্তাহ পর সেখানে গেলে বেশ কয়েকজন ডাক্তার মিথিলার চোখ পরীক্ষা করেন। ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ডাক্তার সামান্য দেখেই বুঝে যান । তখন কর্তব্যরত ওই ডাক্তার যত দ্রুত সম্ভব তাকে ভারতে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কারন মিথিলার রেটিওনাপ্যাথী অব প্রি-ম্যাচিউরিটি সংক্ষেপে ‘আরওপি’ বলা হয়। তা সমস্যা হয়েছিল।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ছয় কোটি শিশু। আর মোট জনসংখ্যার মধ্যে অন্ধত্বের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট লাখ। আর এরমধ্যে শিশুর সংখ্যা অর্থাৎ অন্ধ শিশুর সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি।
চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফুর রহমান বলেন, শিশুদের বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনেক শিশু চোখের কাছে নিয়ে বই পড়ে, কাছে গিয়ে টিভি দেখে, পেছনে বসলে ক্লাসের বোর্ড দেখতে পায় না। এসব সমস্যা হলে চশমা ব্যবহার করেই স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও অনেক শিশুর চোখে ছানি হতে পারে। ছানি রোগ হলেও ভয়ের তেমন কিছু নেই। কারণ ছানি সহজেই অপারেশন করা যায়।
তিনি বলেন, অনেক বাচ্চার চোখ টেরা হয়। এতে করে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যেতে থাকে। এসব টেরা চোখের অপারেশন করে যত দ্রুত সম্ভব সোজা করা উচিত। এছাড়াও আঘাতজনিত কারণেও অনেক সময় চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রেটিনা বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুন নাহার বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু অন্ধত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে ভিটামিন-‘এ’ এর অভাব। অনেক বাবা-মা’ই শিশুদের খাবারে ভিটামিন‘এ’ যুক্ত খাবার রাখেন না। এটা তারা করেন অজ্ঞাত এবং অসচেতনতাবসত। মূলত শিশুদের খাবারের মধ্যে সব ধরনের ভিটামিনের খাবার যুক্ত করতে হয়।
তিনি বলেন প্রতিবছর হাজারো শিশু অন্ধ হয়। সময়মতো চিকিৎসা করে এ অন্ধত্বের প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সুত্রঃ বাসস।

 

মহাকাশে হাঁটলেন দুই নারী

মহাকাশে হাঁটলেন দুই নারী


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


এতদিন ঠিকঠাক পোশাকের অভাব ছিল। সেই আকাঙ্খিত স্পেসসুট তৈরির পরই প্রথমবারের মতো মহাকাশে একসঙ্গে হাঁটলেন দুই নারী। এর আগে বেশ কয়েকবার নারীরা মহাকাশে গেলেও একসঙ্গে হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি।

মহাকাশচারী ক্রিস্টিনা কোচ ও জেসিকা মেইর শুক্রবার এই সৌভাগ্য অর্জন করেন বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। কোচ এই নিয়ে চারবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গেলেন। অপরদিকে ১৫তম নারী হিসেবে স্টেশনে গেছেন মেইর।

নাসা জানায়, ১৮ অক্টোবর তারা মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন জানিয়েছে, নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার সকালে তারা স্টেশনের বাইরে হাঁটেন। প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টাব্যাপী এই প্রোগ্রাম সরাসরি সম্প্রচার করে নাসা। প্রায় ৬১ জন ক্রু তাদের এই মহাকাশে পাড়ি দেয়ার বিষয়টি দেখভাল করছেন।

নাসা বলছে, এটি তাদের ২০২৪ সাল নাগাদ চাঁদে মানুষ পাঠানো এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে আরও উৎসাহিত করার পদক্ষেপ।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মাসিক চলাকালে কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে

মাসিক চলাকালে কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে


স্বাস্থ্যকথা


যে কোন মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন। সু-স্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প নেই। তবে তারপরও প্রতিটি মানুষের জন্য বিশেষ সময়ে পুষ্টিকর খাদ্য পরিমাণমত না পেলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে পুষ্টিকর খাদ্য অবশ্যই দরকার। যেমন চৌদ্দ বছর বয়সী মারিয়া গত কয়েক মাস ধরে প্রায় সময় অসুস্থ থাকছে। আজ জ্বর তো কাল পেট ব্যাথা এমন অসুখ যেন তার নিত্যদিনের সঙ্গী। অসুখের কারণে প্রতি মাসে প্রায় দিনই স্কুল কামাই যায় তার। একেবারে কিছুই খেতে চায় না মেয়ে। না খেয়ে শরীর হয়ে গেছে শুকনো কাঠ। মুখেও ব্রণ হয়েছে বেশ।
এ রকম কয়েকদিন পরপর অসুস্থ থাকায় মা একদিন নিয়ে গেলেন এক গাইনী ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার রোগের ধরন আর মারিয়ার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন, সে আসলে অপুষ্টিতে ভুগছে।
ডাক্তার জানান, মূলত মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে তার এ ধরনের সমস্যা। এই বয়:সন্ধিকালে তার যে ধরনের খাবার দরকার তা সে খায়নি। সে কারণেই শরীর বারবার খারাপ হয়ে যায়।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্য বেশ পরিবর্তন হয়। এ সময় তাদের মনের অবস্থার যেমন পরিবর্তন হয় তেমনি শারীরিক পরিবর্তনও হয়। মূলত ১১ বছর থেকে ১৮ বছর সময়কালকে বয়:সন্ধিকাল বলে। এসময় তাদের হরমোন নি:সরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, কিশোরীদের মাসিক শুরু হওয়ার সময় স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পায়। আর মাসিকের সময় প্রায় কিশোরীদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ এবং বেশী সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। আর এজন্যই এ সময় কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। অন্যথায় কিশোরী অপুষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগতে থাকে।
এ সময় কিশোরীদের মুখে বেশ ব্রণও দেখা যায়। আর তাই ব্রণ যাতে না হয় সেজন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ শাকসব্জি এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে কিশোরীদের।
ডা. মনোয়ারা বলেন, এই বয়ঃসন্ধিকালে বিশেষ করে অনেক কিশোরীই অতিরিক্ত ডায়েট করতে চায়। কিন্তু এই অতিরিক্ত ডায়েটিং এর ফলে মেয়েরা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে। অনেক মায়েরাও তাদের সন্তানদের এই অতিরিক্ত ডায়েটিং’ এ সমর্থন দিয়ে থাকে। যার ফলে ওই কিশোরী বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ভিটামিনের অভাব, রক্তশূন্যতায় ভুগতে থাকে। এজন্য প্রত্যেকের উচিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টিসম্মত খাবার খাওয়া।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের গাইনী এন্ড অবস্ বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, বয়:সন্ধিকালে সবার শরীর এবং মনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। আর এ কারণেই অভিভাবকদের এ সময় খুব সচেতন থাকতে হয়। এ সময় কিশোরীদের কী কী খাবার দিতে হয় তা অনেক বাবা-মা’ই জানেন না। মূলত অসচেতনতার কারণেই এমন হয়। এই সময়কালে কিশোরীদের খাবারের তালিকায় কী কী রাখতে হবে তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সে অনুযায়ী চলাই উত্তম।
তিনি বলেন, একটা বয়সে বিশেষ করে ১৮ বছর থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে মানব দেহের হাড় বৃদ্ধি পায়। পরে এই হাড় সাধারণত আর বাড়ে না। তাই এই সময় প্রচুর ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার থেতে হবে। শাক-সব্জি, ছোট মাছ, ডিম, দুধ, দই, বাটারজাতীয় খাবার খেলে হাড় বৃদ্ধি পায়। আর কিশোরীদের খাবারের তালিকায় এসব খাবারই রাখতে হবে।
ডা. রোকেয়া বলেন এই বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা খুবই দরকার। কিন্তু দেখা যায়, কৈশোরেই খাদ্যে অনিয়ম, অপুষ্টি বা অতিপুষ্টি, ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয় বেশি। এর প্রতিক্রিয়া পড়ে পরবর্তী সময়ে, দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। এ ছাড়া বয়ঃসন্ধিতে কিশোরীদের কিছু পরিচিত সমস্যার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, যখন কিশোরীদের নিয়মিত মাসিক শুরু হয় তখন প্রচুর পরিমাণে ও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। প্রয়োজনীয় খাবার না খেলে দেখা দেয় এনিমিয়ি বা রক্তশূন্যতা। কিশোরীদের প্রতি মাসে লৌহ বা আয়রনের চাহিদা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মাংস, কলিজা, শাক, মাছ, ডিম বেশি করে খেতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ ফল যেমন কলা, আনার, পেঁয়ারা, খেজুর থেতে হবে।

 

শুকনোপাতার কাব্য-১৩

শুকনোপাতার কাব্য-১৩


শুকনো পাতা


সকাল গড়ায়,দুপুর গড়ায়
বিকেল কাছাকাছি,
সাঁঝের আঁধার ঢাকবে কখন
সেই প্রতিক্ষায় আছি।

সন্ধ্যে নামার খানিক বাদে
আকাশ দেখার ফাঁকে,
বেলা ফুরোনোর গল্প বলি
নীড়ে ফেরা পাখিটাকে।

বিকেল গড়ায় সাঁঝের পানে
রাত্রি আসে ফিরি,
দিন দুয়ারে দাঁড়িয়ে তবু
দিনের হিসেব গুনি।

অল্প সময় অল্প ক্ষনেই
দিন গড়িয়ে রাত,
মন খারাপের গল্পে তবু
আসে না প্রভাত।

হাসি আছে কান্না আছে
আছে ভাঙ্গার কষ্ট
হারিয়ে স্বপ্ন,দিন কেটে যায়
তবু থাকে মন তুষ্ট।

মন খারাপের গল্প লিখি
লিখি দুঃখের কাব্য,
মন খারাপেই হাসতে থাকি
লুকিয়ে নিজের যুদ্ধ!

ফুরোবে গল্প,ফুরোবে পদ্য
প্রতিক্ষায় দিন পাড়,
মন খারাপের গল্প তবু
শেষ হয় না আর…!

 

সাভারে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১২ বছরের কিশোর আটক

সাভারে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১২ বছরের কিশোর আটক


নারী সংবাদ


সাভারে বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়ায় পাঁচ বছরের এক মেয়েশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১২ বছর বয়সী সাকিব হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। সাকিব হোসেন স্থানীয় আল-আমিনের ছেলে।

মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকায় একটি বাড়ির ছাদে ওই মেয়েশিশুকে ধর্ষণ করে সাকিব। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপারটি জানাজানি হলে শিশুটির বাবা রাতেই সাভার মডেল থানায় ধর্ষক সাকিব হোসেনকে প্রধান আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ সাকিবকে আটক করে।

সাভার মডেল থানা ও বিরুলিয়া ফাঁড়ি ইনচার্জ (এসআই) মো: আজগর আলী জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শুনি নব জীবনের প্রতিধ্বনি…১

শুনি নব জীবনের প্রতিধ্বনি…১


আফরোজা হাসান


ছোট ননদের রুমে কয়েকবার নক করার পরও ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো রুহিনা। রুমের ভেতর কোথাও না দেখে বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলো রেলিঙয়ে পা তুলে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে স্বাতি। ননদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, নাস্তা নিয়ে এসেছি তোর জন্য। খেয়ে নে।

স্বাতি সোজা হয়ে বসে ভাবীকে বসার জায়গা করে দিয়ে বলল, একদম খেতে ইচ্ছে করছে না ভাবী। খাবার কথা মনে করলেই কেমন যেন বমি ভাব হচ্ছে।

গতকাল রাতেও কিছু খাসনি তুই। এমন করলে শেষে অসুস্থ হয়ে যাবি। সোনা বুবু না আমার খেয়ে নে। আচ্ছা চল আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। দেখ সব তোর পছন্দের খাবার বানিয়েছে মামণি।

মামণি কি করছে ভাবী?

তোকে নিয়ে টেনশন করা ছাড়া আর কি করবে এই সময়। তারউপর তুই খাওয়া দাওয়া না করে, অনিয়ম করে আরো বেশি টেনশন দিচ্ছিস সবাইকে।

আমি কি করবো খাবার ভেতরে ঢুকতেই চাইছে না।

তুই একটু শান্ত হবার চেষ্টা করতো স্বাতি।

বললেই কি শান্ত হওয়া যায় নাকি? তুমি কি শান্ত ছিলে তোমার বিয়ের এক সপ্তাহ আগে?

হেসে ফেললো রুহিনা। উহু.. আমিও ভয়াবহ রকমের অশান্ত ছিলাম। মনের মধ্যে তুফান, সুনামী, সাইক্লোন সব একসাথে বইতে শুরু করেছিল। এমন সব অদ্ভুত চিন্তা-ভাবনা মনে আসতো যা রূপকথার গল্পেরও স্থান পাবে কিনা সন্দেহ। তবে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করেনি তোর মত। আমার আবার উল্টো স্বভাব জানিসই তো। টেনশনের সময় বেশি বেশি ক্ষুধা লাগে। ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ ঘুরতাম আর চকলেট, আইসক্রিম, পেস্ট্রি এসব খেতাম। আম্মু সেটা দেখে সমানে চিৎকার করতো আর বলতো, দুদিন পর বিয়ে কই জীমে যাবি তা না তুই আরো মোটা হবার জিনিস খাচ্ছিস।

স্বাতি হাসতে হাসতে বলল, আমিও খেয়াল করেছি কোন কারণে যেদিন তুমি টেনশনে থাকো ঘুরে ঘুরে শুধু এটা সেটা খাও।

প্লেট থেকে পরোটা নিয়ে একটু করে ছিঁড়ে স্বাতির মুখে দিয়ে রুহিনা হেসে বলল, সবকিছুরই সাইট অ্যাফেক্ট আছে বুঝলি। আমার এই স্বভাবের সাইট অ্যাফেক্টের কারণেও বেশ কয়েকবার লজ্জিত হতে হয়েছে তোর ভাইয়া সামনে।

যেমন?

যেমন তোর ভাইয়া যখন কোন কারণে টেনশনে থাকে তোর মত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। আর আমার তখন ক্ষুধা বেড়ে যায়। বারবার খেতে ডাকি তোর ভাইয়াকে। সে তখন বিরক্ত স্বরে বলে, তোমার সমস্যা কি এত খাই খাই করছো কেন? তবে সবচেয়ে বেশি লজ্জায় পড়েছিলাম আমাদের বিয়ের দিন। বাসর ঘরে।

সেটা কিভাবে?

আমাকে রুমে রেখে যখন তোরা সবাই বেড়িয়ে গিয়েছিলি প্রথমে তো কিছুক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো রুমের মধ্যে এক ফোটাও অক্সিজেন নেই। তোর ভাইয়া রুমে ঢোকার সময় অক্সিজেনের সাথে সাথে আমার জন্য রাজ্যের ক্ষুধাও নিয়ে এলো। এত ক্ষুধা মনেহয় জীবনে আর কোনদিন লাগেনি আমার। খাবার না পেলে এই মূহুর্তে মারা যাব এমন লাগছিল। আমার চোখ মুখ দেখে উনি প্রশ্ন করলেন, কোন সমস্যা হচ্ছে তোমার? ক্ষুধার কাছে নতি স্বীকার করে আমাকে তখন বলতেই হয়েছিল, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।

স্বাতি খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, ও আচ্ছা এজন্যই ভাইয়া আমাকে ডেকে খাবার চেয়েছিলেন? আমি তো ভেবেছিলাম সারাদিন ব্যস্ততায় ঠিকমতো খেতে পারেনি তাই মনেহয় ভাইয়ার ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু সব ছেলে তো আর আমার ভাইয়ার মত সুইট না। বলতে বলতেই আবারো বিয়ের কথা মনে পড়তেই হাসি মুছে গেলো স্বাতির চেহারা থেকে।

আরে একি হাসতে হাসতে আবার মুখ গোমড়া করলি কেন? সব ছেলে যেমন তোর ভাইয়ার মত না। সব মেয়েও তো আমার মত না। তুই কি আমার মতো? তাহলে আমার স্বামীর মত স্বামী হতেই বা যাবে কেন তোর? প্রবাদ শুনিসনি, “যথার সাথে তথা মেলে, রাজার সাথে রাণী মেলে”। তুই আমাদের সবার আদরের ছোট্ট রাজকন্যা। এজন্যই তো আল্লাহ তোর জন্য আরভ ভাইয়ার মতো রাজপুত্র পাঠিয়েছেন। আমি অবাক না হয়ে পারছি না স্বাতি। তুই আরভ ভাইয়াকে নিয়ে এত টেনশন করছিস? তুই তো ছোটবেলা থেকেই ভাইয়াকে দেখছিস। তারপরও এত দুশ্চিন্তা কেন? ইস্তিখারা করতে বলেছিলাম তোকে। করেছিলি?

স্বাতি লাজুক হেসে বলল, হুম! করেছি। সব ঠিক আছে কিন্তু তারপরও কেন জানি না খুব বেশি ভয় লাগছে। আমার জীবনসাথীকে ঘিরে তেমন কোন এক্সপেক্টটেশন নেই। এইসব বিষয় বুঝতে শেখার পর থেকেই মামণি মনের চাওয়ার লাগাম টেনে ধরতে শিখিয়েছেন আমাকে। বুঝিয়েছেন নিজ ভাবনার রঙে মনে কারো ছবি গড়ে তোলা ঠিক নয় বিয়ের আগে। বিয়ের আগে শুধু আল্লাহর কাছে একজন উত্তম জীবনসাথী চাইতে হবে। আল্লাহ যাকে জীবনসাথী করে পাঠাবেন। তাকে সামনে বসিয়েই আঁকতে হয় মনের মাঝে জীবনসাথীর ছবি।

তুই তো আমার চেয়েও ভালো বুঝিস। তাহলে আবার এত ভয় কিসের?

কেমন হবে আমাদের জীবনের প্রথম দিনের শুরুটা। উনি কি বলবেন, আমি কি বলবো এসব ভেবে খুব বেশি টেনশন কাজ করছে।

চলবে…

 

আপন আলাপ

আপন আলাপ


রাহনুমা সিদ্দিকা


টি এস সি-র পাশে ছাউনিতে বসে আছি, বাসের অপেক্ষায়। পাশে দুটি মেয়ের কথোপকথন কানে এলো। কথাবার্তায় বোঝা গেলো এরা একই কলেজে পড়েছে, ভর্তিসংক্রান্ত কাজে এসেছে, দুজনেই বিজনেস ফ্যাকাল্টির, নিউ ফার্স্ট ইয়ারের।
এক পর্যায়ে একজন বলছে,
-তোমাকে না আমি চিনতেই পারি নি! আগে না হিজাব পরতে?
-হ্যাঁ
-ছাড়লে কেনো?
-আরে! ‘ও’ একদম পছন্দ করে না!
তারপর বাস চলে এসেছিলো। ব্যাপারটা ভাবালো! ‘ও’ পছন্দ করে না- তাই মেয়েটা হিজাব ছাড়লো? এমনও মেয়ে আছে -‘ও’ ধার্মিক হলে আপনাকে আবার ‘রিলেশন’ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কিংবা ভালোবাসার দাবীতেই হোক না কেন হিজাব পরতে হচ্ছে! প্রহসন আর কাহাকে বলে!!!!
প্রসঙ্গক্রমে, পারস্যের মহিলাদের তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে বেগম রোকেয়ার কথাটি স্মরণ করুন ,
“ওই যে পর্দা ছাড়িয়াছেন তাহা দ্বারা তাহাদের স্বকীয় বুদ্ধিবিবেচনার ত কোন পরিচয় পাওয়া যায় না! পার্সি পুরুষগণ কেবল অন্ধভাবে বিলাতী সভ্যতার অনুকরণ করিতে যাইয়া স্ত্রীদিগকে পর্দার বাহিরে আনিয়াছেন। ইহাতে অবলাদের জীবনীশক্তির ত কিছু পরিচয় পাওয়া যায় না। তাহারা যে জড়পদার্থ ,সেই জড়পদার্থই আছেন। পুরুষ যখন তাহাদিগকে অন্তঃপুরে রাখিতেন, তাহারা সেখানেই থাকিতেন। আবার পুরুষ যখন তাহাদিগকে ‘নাকের দড়ী’ ধরিয়া টানিয়া মাঠে বাহির করিয়াছেন, তখনই তাহারা পর্দার বাহির হইয়াছেন।”
হিজাব এখানে একটা উদাহরণমাত্র। অমন উদাহরণ হাজারটা দেয়া যায়। আপুরা ভাবুন, আপনার বিশ্বাস, আপনার দর্শন, আপনার জীবনাচরণ নিয়ন্ত্রিত হবে আরেকজনের দ্বারা? আপনার বিশ্বাসের এত তারল্য? তবে যে আপনি কলার উঁচিয়ে ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’ নামে একটি সফিস্টিকেটেড শব্দ উচ্চারণ করছেন আবার?
আপনি যদি একটি মেয়ে হন, আপনি খুব ভালো করেই জানেন মেয়েরা (সাধারণত ) কেন সাজে! খুব ভালো করেই জানেন পত্রিকার ফ্যাশন পাতায় মডেল কন্যাটির পোশাকে বিশেষ ধরণের ডিজাইনটি কেন করা হয়েছে।
কিছু প্রশ্ন সামনে আসে-
অতীতে যেসব মহীয়সীরা নারীমুক্তির জন্য নিজেদের সমস্ত জীবনভর সংগ্রাম করে গেছেন, যেসবঅন্তঃপুরবাসিনীরা একটুকরো জ্ঞানের আলোর জন্য নরক প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করে গেছেন- কালক্রমে যাঁদের ত্যাগের সুফল আমরা ভোগ করছি- তাঁরা আজকে থাকলে কী বলতেন? এই স্বাধীনতাই কি তাঁরা চেয়েছিলেন? স্বাধীনতা কি বিপরীত লিঙ্গের মনোরঞ্জনের স্বাধীনতা? স্বাধীনতা কি চ্যানেল আইয়ের পর্দা কাঁপানো সুন্দরীদের মেলা? সেলফিম্যানিয়ার কথা নাহয় না-ই বললাম!
আজ ত নারীরা নিজ যোগ্যতায় সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে, আজ শিক্ষাঙ্গনে নারী-পুরুষ অনুপাত সমান। কর্মক্ষেত্রে লৈঙ্গিক বৈষম্য প্রায় নেই বললেই চলে। আলোকপ্রাপ্ত এই সমাজের পরিপূর্ণ চিত্র কেবল এটুকই নয়, সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই তা জানেন।
ভাবুন তো,
আদৌ কি নারীরা স্বাধীন হয়েছেন নাকি এক ছদ্ম (Pseudo) স্বাধীনতার নামে আরেক মানসিক দাসত্বে জড়াচ্ছেন? স্বাধীনতা তো চাকুরিতে, কাপড়ে সীমাবদ্ধ না- চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, যুক্তির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের স্বাধীনতাই স্বাধীনতা!
খানিক উড়ার সুযোগ পেয়ে নাটাইবাঁধা ঘুড়িরও নিজেকে মুক্ত পাখি ভেবে ভ্রম হতে পারে!

 

স্ত্রীকে হত্যা করে ডাকাতির গল্প সাজিয়েছেন স্বামী

স্ত্রীকে হত্যা করে ডাকাতির গল্প সাজিয়েছেন স্বামী


নারী সংবাদ


নওগাঁর সাপাহারে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ডাকাতির ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছে চতুর স্বামী নজরুল ইসলাম। শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার বিদ্যানন্দী বাহাপুর গ্রামে নিশৃংস ঘটনাটি ঘটেছে। চতুর নজরুল ওই গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে।

ঘটনা স্থলে গিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে তার বাবা-মা বাড়ীতে ছিল না। নজরুল বাড়ীতে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে একই থাকত। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে উক্ত গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে নজরুল(৩২) বাড়ী থেকে বের হয়ে গ্রামের অন্যলোকের দরজায় আঘাত করলে, কয়েকজন বেরিয়ে আসে এবং তাকে তার মুখে কসটেপ আটানো ও হাত দু’টি পিছনের দিকে গামছা দিয়ে বাধাঁনো অবস্থায় দেখতে পায়। তার মুখের টেপ ও বাধঁন খুললে সে বলে, আমার বাড়ীতে ডাকাত দল প্রবেশ করেছে, তারা আমার ছেলেকে কুপের মধ্যে ফেলে দিতে চায়, আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচান বলে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

গ্রামের লোকজন তার বাসায় ছুটে এসে দেখতে পায়, বিছানায় তার স্ত্রী (রুমী) (২৫) অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে ও সন্তান রাফি (২) ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। লোকজন তৎক্ষনাত তাকে ও তার স্বামী নজরুল ইসলামকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক রুমীকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত রুমীর গলায় শ্বাস রোধ করে হত্যাকরার স্পষ্ট চিহৃ রয়েছে।

মৃত গৃহবধু রুমীর স্বামী নজরুল ইসলামের সাথে হাসপাতালে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, রাত দেড়টার দিকে সে বাড়ীর বাথরুম থেকে বেরুনোর সময় তাকে অপরিচিত ৩জন লোক ঝাপটে ধরে এবং তাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বাইরের দরজার চাবি আদায় করে।

বাড়ীর দরজায় তালা ছিল, তারা কি করে বাসায় প্রবেশ করল? এ প্রশ্নের জবাবে সে কিছুই বলতে পারেনা। এর পর ডাকাতরা চাবি দিয়ে বাড়ীর সদর দরজা খুললে আরো ৬জন লোক বাহির থেকে বাসায় প্রবেশ করে এবং তাকে তার শয়ন ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে গামছা দিয়ে দু;হাত বেধেঁ ফেলে ও মুখে কসটেপ এঁটে দেয়। এর পর আবারো তাকে ঘর হতে বের করে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় যায়। ওই সময় সে ডাকাত দলের হাত থেকে ফসকে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে প্রতিবেশীদের ডাক দেয়। এর মধ্যে ঘরে ডাকাতদল কি করল এবং কি সম্পদ লুট করল তা স্বামী নজরুলের জানা নেই বলে জানান এবং এ পর্যন্ত তার স্ত্রী ও সন্তান ঘুমেই ছিল বলে তিনি জানান।

বিষয়টি নিয়ে বড় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে, কোনো পরকীয়া কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট কোনো মন মালিন্যের কারণে সে তার স্ত্রীকে ঘুমের ঘোরে শ্বাস রোধ করে হত্যা করতে পারে এ নিয়ে এলাকায় খুব জোরালো গুঞ্জন চলছে। পুলিশ ও বলছে এটি কোনো চুরি কিংবা ডাকাতির ঘটনা নয়, চুরি বা ডাকাতি হলে তারা ঘরের মধ্যে থাকা নগদ টাকা পয়সা, গহনা কিছুই নেয়নি সবই ঠিক মত অবস্থায় রয়েছে।

একটি জিনিসপত্র ও খোয়া যায়নি কিংবা কোনো দরজা জানালাতেও কোনো চিহৃ নেই সবই অক্ষত রয়েছে। তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো ঘনটা থাকতে পারে বলেও পুলিশ ধারণা করছে। নিহত গৃহবধুর পিতা রমজান আলী ও বড় আব্বা নুরমোহাম্মাদ দাবী করে বলেছেন, তাদের মেয়েকে জামাই নজরুল হত্যা করে ডাকাতির নাটক সাজিয়েছে। তাদের বাড়ী ধামইর হাট উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। ঘটনার পর রাত সাড়ে ৩টা হতে সাপাহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই এক দল পুলিশ নিয়ে ঘটনা স্থলে রয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, কোনো মামলা দায়ের না হলেও হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, এটি চুরি কিংবা ডাকাতির কোন ঘটনা নয়। স্বামীর দ্বারাই ঘটনাটি ঘটতে পারে, তবে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উম্মোচিত হবে বলে তিনি মনে করেন। নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মো: রাশেদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

গাজীপুরে কিশোরী গার্মেন্টস শ্রমিক খুন, মামী-মামাতো ভাই আটক

গাজীপুরে কিশোরী গার্মেন্টস শ্রমিক খুন, মামী-মামাতো ভাই আটক


নারী সংবাদ


গাজীপুরে পারিবারিক কলহের জেরে কারখানার শ্রমিক এক কিশোরীকে হত্যা করেছে। শুক্রবার নিহতের লাশ এক বন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ নিহতের মামী ও মামাতো ভাইকে আটক করেছে। নিহতের নাম লুনা আক্তার (১৫)। সে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার কুলশীবাড়ি এলাকার নবীর উদ্দিনের মেয়ে।

জিএমপি’র সদর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাহাদুরপুর হাজী মার্কেট এলাকায় মামী ও মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে মুজিবের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় পারটেক্স গ্রুপের আরসি কোলা কারখানায় কাজ করতো লুনা। পারিবারিক কলহের জেরে বৃহষ্পতিবার গভীর রাতে লুনাকে তার মামী ও মামাতো ভাই বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এ ঘটনার পর অসুস্থ্যতার কথা বলে রিক্সায় করে নিহতের লাশ পার্শ্ববর্তী রাজেন্দ্রপুরের বিকেবাড়ি এলাকার এক বনে নিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরদিন শুক্রবার স্থানীয়রা ওই বনে নিহতের লাশ দেখতে পায়।

খবর পেয়ে পুলিশ বন থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ নিহতের মামী ও মামাতো ভাইকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো- লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার কুশলীবাড়ি এলাকার মৃত জামিরুল ইসলামের স্ত্রী আকলিমা বেগম (৪৮) ও তাদের ছেলে রবিউল ইসলাম (২০)। এদের মধ্যে আকলিমা এলাকায় রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে এবং রবিউল স্থানীয় এক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতো।

এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

প্রসবপূর্ব ও পরবর্তী সেবায় অবদান রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রসবপূর্ব ও পরবর্তী সেবায় অবদান রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক


স্বাস্থ্যকথা


মাত্র পাঁচ মাস আগেই মা হয়েছেন সুলতানা। উচ্চশিক্ষিত সুলতানা নিজেই এ ব্যাপারে অনেক সচেতন। কিন্তু ডেলিভারির সময় একেবারে মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিলেন তিনি। সুলতানা জানান, ডেলিভারির সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তার। ডাক্তার কোনভাবেই বন্ধ করতে পারছিলেন না। আর তাই প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। শুরুতে ডাক্তার সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা বের করে নেয়। না হলে বাচ্চাও অসুস্থ হয়ে যেত। কিন্তু এরপর থেকে আর ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছিল না। ভাগ্য সহায় ছিল দশজন ব্লাড ডোনার রেডি ছিল। একের পর এক রক্ত দেয়া হচ্ছিল আমাকে। সাত ব্যাগ রক্ত দেয়ার পাশাপাশি ডাক্তার এবং নার্সদের অক্লান্ত চেষ্টার ফলে বেঁচে যাই।
কিন্তু সব মায়ের ভাগ্য সুলতানার মত নয়। অনেক মা’ই সন্তান জন্মদানের সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। তবে পরিসংখ্যান বলছে আগের চেয়ে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে এসেছে। আর যেসব মায়েরা সন্তান জন্মদানের সময় অথবা শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে তার প্রধান এবং অন্যতম কারন হচ্ছে সচেতনতার অভাব। একটু সচেতন হলেই সম্ভব পুরোপুরি মাতৃ মৃত্যু হার একেবারে কমিয়ে আনা এবং এ বিষয়ে সাফল্য অর্জন করা।
বিশিষ্ট গাইনোলজিস্ট ডা. রোকেয়া হক বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের মাতৃ মৃত্যুর হার ৭০ এ নামিয়ে আনতে হবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশুর মধ্যে ১৭২ জন মৃত্যুবরণ করে। ৩৭ শতাংশ মা প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি হয় ৪৭ শতাংশ। আর প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণ করেন ৭৩ শতাংশ নারী। প্রসবজনিত জটিলতার কারণে দেশে এখনও প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার।
তিনি বলেন, দেশে মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারণ রক্তক্ষরণ এবং খিঁচুনি। খুব স্বল্প মূল্যের ওষুধ দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমাদের অবশ্যই নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি সেসব সেবা গ্রহণ করতে না চায় এবং সচেতন না হয় তবে একা সরকারের পক্ষে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো সত্যিই কঠিন।
তিনি বলেন, এখন দেশে প্রায় ১৩ হাজারের বেশী কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে বিনা মূল্যে প্রসবপূর্ব এবং প্রসব পরবর্তী সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়াও অনেক ক্লিনিকে প্রসুতি সেবাও দেয়া হচ্ছে। রাখা হয়েছে ডেলিভারির ব্যবস্থা। কিন্তু এসব জানার পরও অনেক পরিবার বাড়িতেই সন্তান প্রসব করায়। আর এরফলে মারা যাচ্ছে মা।
তিনি বলেন, এসব বিষয়ে একটি পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। যাতে করে একজন মা’ও যেন অকালে মৃত্যুবরণ না করে।
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার চিউবতলী বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা নেয়া সন্তান সম্ভবা মা শান্তি চাকমা বলেন, আমি প্রতিনিয়ত এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করি। এখানে বিনামূল্যে ওষুধও দেয়া হয়। সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমাদের দিচ্ছে। কিন্তু আমরা সেটা গ্রহণ করতে পারছি না। এর পেছনে মূলত দুটি বিষয় কাজ করে। একটি হচ্ছে সচেতনতার অভাব আর অন্যটি কুসংস্কার।
তিনি বলেন, আমাদের পাড়ায় এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা কখনোই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না। এমনকি তাদের বাড়িতে এখনো পর্যন্ত সন্তান প্রসব করানো হয় এলাকার এক বয়স্ক ধাই মাকে দিয়ে। আমাকেও অনেকে পরামর্শ দিচ্ছে যাতে করে আমিও ওনার কাছে সেবা নিই।
কিন্তু আমি আর আমার স্বামী বলে দিয়েছি সন্তান প্রসবের আগে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হব। সেখানেই আমার সন্তান জন্ম নিবে।

সুত্রঃ বাসস।

 

ঘরের ভেতরে শিশুর লাশ, সন্দেহের তীর সৎ মায়ের দিকে

ঘরের ভেতরে শিশুর লাশ, সন্দেহের তীর সৎ মায়ের দিকে


নারী সংবাদ


সাভারে দক্ষিণ দরিয়াপুরের তালবাগ এলাকায় ঘরের ভিতর থেকে বৃহস্পতিবার বাদশা(৭) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত বাদশা সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার ঘোষার গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি স্থানীয় ইউসুফ মাস্টারের ভাড়াটে বাড়ির একটি কক্ষে সৎ মা ও বাবার সাথে থাকতেন।

সৎ মা ময়না খাতুন সাভারের উলাইলের আল-মুসলিম গামের্ন্টস কারখানায় কাজ করেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সৎ মা ময়না খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ৬টার সময় শিশু বাদশা মিয়াকে বাসায় রেখে তার বাবা মাছ বিক্রি করতে সাভারের ব্যাংক কলোনীতে এলাকায় যান। শিশুটির বাবা চলে যাওয়ার পর সৎ মা সাড়ে ৭টার সময় যান তার কর্মস্থল আল-মুসলিম গামের্ন্টেসে। দুপুরে বাবা আনোয়ার হোসেন বাসায় খাওয়ার জন্য এসে ছেলেকে ঘরের ভিতরে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

স্থানীয়দের অভিযোগ নিহত শিশুটির সৎ মা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে থাকতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক প্রতিবেশী জানান, শিশুটির গলায় আঘাতের চিহৃ ছিল। এ ঘটনায় পুলিশ তার সৎ মা ময়না খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

সাভার মডেল থানার (এসআই) সবুর জানান, শিশুটির বাবা খবর দিলে আমরা ঘর থেকে লাশটি উদ্ধার করি।

তিনি আরো জানান, ৭ বছরের শিশু আত্নহত্যা করতে পারেন না। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

অ্যাভোকাডো, শশা ,আর টমেটোর সালাদ

অ্যাভোকাডো, শশা ,আর টমেটোর সালাদ


ঘরকন্যা


সালাদ মানেই শশা টমেটো এবার মিশে গেলো অ্যাভোকাডো। শীতের সময়ে সালাদের নানান উপকরণ অনেক সহজলভ্য। তাই আসুন এই সময়ে আপনার খাবারে সালাদের ছোট রেসিপি। সহজে আর ঝটপট করে ফেলতে পারেন।

ছবিঃ অ্যাভোকাডো, শশা & টমেটো

উপকরণঃ

শশা – ২ টি (মাঝারি)
টমেটো -৩ টি (মাঝারি)
অ্যাভোকাডো -১ টি
পেয়াঁজ কুচি -১ টেবিল চামচ
ধনেপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ
কাঁচামরিচ কুচি – ১ চা চামচ
লবন – স্বাদমতো
সরিষার তেল – সামান্য
লেবু- কেউ পছন্দ করলে ছোট ছোট লেবুও কেটে নিন।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

শশা, টমেটো এবং অ্যাভোকাডো কেটে নিন একই মত সাইজে। সালাদের সাইজ সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। এর সাথে পেয়াঁজ, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা কুচি দিন। উপাদানগুলো ওল্টে-পাল্টে মিশিয়ে নিন। স্বাদমতো লবন ও সামান্য সরিষার তেল দিন।

পরিবেশন
সুন্দর বাটিতে, মাখিয়ে খাবারের আগে পরিবেশন করুন।

 

‘অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অপমান!’

‘অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অপমান!’


আফরোজা হাসান


“ভালোবাসা সেটা গোপন হোক কিংবা প্রকাশ্য।
স্পষ্ট হোক কিংবা অস্পষ্ট। ভালো লাগার স্বীকৃতি দেয়াটা কঠিন হোক কিংবা সহজ। পরিস্থিতি অনুকূলে থাক কিংবা প্রতিকূলে।
সর্বাবস্থাতেই ভালোবাসা কল্ল্যাণকামী থাকে অপর জনের তরে।
তবে এটাও ঠিক যে ভালোবাসার মতোই ভালোবাসার ভাঁজে ভাঁজে, খাঁজে খাঁজে রাগ, অভিমান, অধিকারের অস্তিত্বও বিদ্যমান।
রাগ অভিমানের সংমিশ্রণে ভালোবাসার মানুষকে আঘাত করাটা তাই খুব স্বাভাবিক।
কষ্ট দেবার বদলে নিজেকেও কষ্ট অনুভব করতে হবে জানার পরেও ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্ট দিয়ে বিমলানন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করাটাও খুব স্বাভাবিক।
কারো প্রতি ভালোবাসা আসলে সাথে করে তাকে ঘিরে সীমাহীন অধিকারও নিয়ে আসে।
সেই অধিকারের দাবীতেই আপনজনকে আনন্দ যেমন দেয়া যায়, বেদনাও দেয়া যায়। তার জন্য ত্যাগ যেমন করা যায়, কোন কিছু জোর করে আদায় করেও নেয়া যায়।
তাকে ঘিরে পছন্দ যেমন থাকে, অপছন্দও থাকে।
তাকে প্রশান্তি দিতে যেমন আকুল থাকে মন, অশান্তি দেবার সুযোগও হাতছাড়া করতে চায় না। তারজন্য বিনিদ্র রজনী কাটানোতেও সুখের দেখা মেলে, তাকে জেগে থাকতে বাধ্য করার মাঝেও মেলে সুখানন্দ।
যাকে ভালোবাসি তারসাথে আবার এত কিসের হিসেব নিকেষ?
যখন ইচ্ছে হয় হাসাবো, যখন ইচ্ছে হয় রাগাবো। কখনো তাকে নিয়ে মাইলের পর মাইল স্বপ্নের মহল গড়বো। কখনো পাথর ছুড়ে মেরে তার স্বপ্নের মহলকে ভেঙে গুঁড়া গুঁড়া করে দেবো। যা ইচ্ছে হয় তাই করবো। যখন ইচ্ছে হবে তখনই করবো। কারণ সব আবেগের প্রবেশাধিকার আছে ভালোবাসার জগতে। তবে হ্যা শুধু মাত্র একটি আবেগ ছাড়া।

”অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অপমান! শব্দ তিনটি হলেও সমার্থক। ক্ষেত্র বিশেষে আমরা ভালোবাসার মানুষকে ঘৃণাও করতে পারি। কিন্তু যাকে ভালোবাসি তাকে কখনোই অসম্মান, অশ্রদ্ধা কিংবা অপমান করতে পারিনা।

না নিজে, না অন্যের দ্বারা।

ভালোবাসা কষ্ট দিতে পারে কিন্তু কখনোই অসম্মান করতে পারে না। ভালোবাসা অশান্ত করতে পারে কিন্তু কখনোই অশ্রদ্ধা করতে পারে না। ভালোবাসা অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোনো কিছুই করতে পারে কিন্তু অপমান নয়। কখনোই নয়, কোন অবস্থাতেই নয়। ভালোবাসার মানুষের প্রতি সর্বপ্রথম হক সম্মানের। যে সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়, সে যোগ্যতাই রাখে না ভালোবাসার দাবী করার।

নিঃসংকোচে, দ্বিধাহীন ভাবে, আত্মবিশ্বাসের সাথে এমন কারো ভালোবাসাকেই সত্য বলা যায় যে ভালোবাসার মানুষের সম্মান রক্ষার তরে নিজে অন্যদের সম্মুখে অপমানিত হতেও প্রস্তুত থাকে। কিন্তু কেউ তার ভালোবাসার মানুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এই সুযোগ দেয় না। কখনোই না। যে বা যারা দেয় তাদের সাথে ভালোবাসার কোনই যোগসূত্র নেই”…..।

মুল গল্পঃ  ভালোবাসার সুতোয় গাঁথি সম্পর্কের মোতি…শেষ পর্বের একটি অংশ।

 

শিশুদের হাঁপানি : চাই সযত্ন সতর্কতা

শিশুদের হাঁপানি : চাই সযত্ন সতর্কতা


স্বাস্থ্যকথা


মাত্র সাত মাস বয়স রাইফার। কয়েকদিন ধরেই সর্দি লেগে আছে। প্রায় সময়ই কান্নাকাটি করছে ছোট্ট মেয়েটি। কাঁদতে কাঁদতে অনেক সময় বমিও করছে। রাতে ঘুমানোর পর নাক ঘড়ঘড় করছে। বারবার নাকে নেজাল ড্রপ দিয়ে চলেছেন রাইফার মা। এভাবেই চলছিল। কয়েকদিন পর আর থাকতে না পেরে ডাক্তারের কাছে নিতে হলো রাইফাকে। ডাক্তার শিশুটিকে দেখেই বুঝতে পারলেন, তার অবস্থা ভালো না। তিনি কয়েকটি টেস্ট আর রাতের জন্য অল্প কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। বললেন টেস্ট গুলো করানোর পর কাল যেন অবশ্যই রিপোর্ট দেখিয়ে নিয়ে যান।
পরদিন রিপোর্ট দেখেই ডাক্তারের সন্দেহ সত্যি হয়ে গেল। রাইফা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। বেশি ঠান্ডা লাগার কারণে নিউমোনিয়াও হয়েছে। দ্রুত রাইফাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিলেন ডাক্তার।
রাইফার মতই ঠা-া লেগেছিল দুই বছর বয়সী শিশু আজাদের। কয়েকদিন পরপরই ঠা-া লেগে থাকে তার। প্রতিবারই নাকের ড্রপ আর ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হয় ওকে। এভাবেই চলছিল। কিন্তু এবারের সর্দি আর কাশি কিছুতেই যেন ভালোই হচ্ছে না আজাদের। শেষ পর্যন্ত মায়ের পীড়াপীড়িতে বাবা ওকে নিয়ে যান এক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, আজাদের হাঁপানি হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের মত নয়। যার ফলে অল্পতেই তাদের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হয়। এজন্য দরকার বাড়তি যত্ন।
তিনি বলেন, শীতকালে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এরমধ্যে শিশুরা হাঁপানি রোগে কষ্ট পায় বেশি। তাপমাত্রা কমে গেলে তা শিশুদের শ্বাসতন্ত্র সহ্য করতে পারে না। এতে তাদের সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয়। এছাড়াও ঘুমানোর পর তাদের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠে। এমনকি ঘড়ঘড় করে আওয়াজও হয়। শিশুদের শ্বাসনালি খুবই সংবেদনশীল। একটু ঠান্ডা লাগলেই তাদের সর্দি বা কাশি হয়ে যেতে পারে। এরপর আস্তে আস্তে তা হাঁপানিতে রূপ নেয়।
এছাড়াও বাইরের ধুলো-বালিও এই হাঁপানি রোগের আরেকটি অন্যতম কারণ। অনেক শিশুই ধুলো-বালি সহ্য করতে পারে না তাদের সংবেদনশীল শ্বাসনালির কারণে। তাই দেখা যায়, সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা ধুলা-বালিতে খেলাধুলা করতে পারলেও হাঁপানি আক্রান্ত শিশুরা সেটা করতে পারে না। কিছুক্ষণ বাইরে থাকার পরই তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
ডা. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, এই হাঁপানি আবার বংশগতও হতে পারে। তবে হাঁপানি হলে বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে সচেতনভাবে চলার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, এলার্জি হয় এমন বিষয় যেমন ধুলো-বালি যত সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ঠা-া, সর্দি এবং কাশি হলেই সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে ধূমপান একেবারেই করা যাবে না। কারণ সিগারেটের ধোঁয়া বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত শিশুদের সামনে ধূমপান করলে তা ওদের শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়।
বাসা-বাড়ি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন এই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, বাসা-বাড়ি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে করে কোথাও ধুলো-বালি না জমে। এছাড়াও ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শীতকালে শিশুদের জন্য লোমযুক্ত কোনো কাপড়চোপড় বিশেষ করে কম্বল ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া এলার্জিযুক্ত খাবার বিশেষ করে যেসব খাবারে শিশুর এলার্জি হয় সেসব খাবার তাকে দেয়া যাবে না। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত শিশুদেরকে সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লালন পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা.রহমত উল্ল্যাহ।

 

বুটিক হাউজে সবার নয়নমনি আঁখি

বুটিক হাউজে সবার নয়নমনি আঁখি


মাহবুব আলম


পিছিয়ে থাকার দিন শেষ। নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলেছেন তারা। ঘরকন্যার পাশাপাশি সাধারণ চাকরি থেকে শুরু করে প্লেনও চালাচ্ছেন তারা। এর মাঝে কেউ কেউ শূন্য থেকে শুরু করে সফল উদ্যোক্তাও হয়ে অন্যের অনুকরণীয়ও হয়েছেন। তাদেরই একজন ফারজানা আঁখি।
‘আখি’স’এর স্বত্বাধিকারী ফারজানা আঁখি শুনিয়েছেন তার আজকের সফলতার পেছনে থাকা শ্রম ও আনন্দ সুখের কাহিনী।
সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আঁখি জানান, শখ নিয়ে সময় কাটানো থেকেই তার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুরু। সেটি ১৯৯৯ সালের কথা। মাত্র আড়াই হাজার টাকা নিয়ে আঁখি ঘরে বসেই নিজ হাতে হরেক ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ সেলাই করতে লাগলেন। বাজার থেকে শাড়ি কিনে তাতে হাতের কাজ করতেন।
মূলত তার গ্রাহক ছিলেন স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দোকানি ও পরিচিতজনেরা। তাদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসাও পেতেন তিনি। ফারজানা আঁখির ভাষায়, কাপড় বিক্রির পর ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা টনিকের মতো কাজ করে। মনোবল আরো বাড়িয়ে দেয়। অর্ডারও বাড়তে শুরু করে।
তবে, পুঁজি না থাকায় আটকে যান ওই সময়ের কিশোরী আঁখি। কিন্তু থেমে থাকেননি। বন্ধুদের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেড়ে ওঠা এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, আমার আগ্রহ দেখে বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এরপর অল্প অল্প করে পরিচিতিও বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে আমার তৈরি বাটিক ও নকশার কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, থ্রিপিস, শাড়ি, বিছানার চাদর, কুশন কভার, শাল চাদরের ব্যাপক চাহিদা বাড়তে লাগলো। ফলে, পরিস্থিতিই বলে দেয় একটি শোরুম নেবার। কিন্তু তখনও সমস্যা সেই পুঁজি। এই সময় তিনি দ্বারস্থ হন ব্যাংকের। সেখানে থেকে প্রথমে মাত্র আড়াই লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি।
উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে যো ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যান আঁখি। বলতে থাকেন, ‘ব্যাংক ঋণের ওই টাকা দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি শোরুম চালু করি। নাম দিই আখি’স।’ এরপর আর পেছন তাকাতে হয়নি ফারজানা আঁখির। যেন আলাদীনের চেরাগের যাদুর মতো দ্রুতই বদলে গেলো তার জীবন।
গল্পের ছলে তিনি বলেন, একটা সময় আসে যে আমার ডিজাইন করা কাপড়ের চাহিদা খুবই বেড়ে যায়। তখন ডেলিভারি দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হতো। শোরুম চালুর পর এ অবস্থা আরও বেড়ে গেলো। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আঁখি’স এর সুনাম।
আঁখি বলেন, আমি যখন এই ব্যবসা শুরু করি তখন নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা হাতেগোনা। এখানকার মতো ফেসবুকে কিংবা অনলাইনে নারী উদ্যোক্তা ছিল না। ‘শুরুতে নিজেই শোরুমে বসতাম। অবশ্য মানুষের কটু বাক্যও কম শুনতে হয়নি। তবে পাত্তা দিইনি। একমনে কাজটা করে গেছি। তবে, এখন টাকা-পয়সা হয়েছে, দোকানেরও সুনাম হয়েছে। এখন সবাই প্রশংসা করে।’ নিজের উৎসাহের কথা উল্লেখ করে আঁখি বলেন, আশপাশের মানুষ নানা কথা বলতো। কিন্তু সব সময়ই পরিবারে মা-বাবার সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছি। ‘তখন নিজেই কাঁচামাল কিনতাম। নিজেই ব্যাংকে যেতাম, পাইকারি অর্ডার নিতাম। সব নিজেকেই করতে হতো। এখন অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এটা ভাবতেই ভালো লাগে,’ যোগ করেন তিনি।
শুধু ব্যবসা নিয়েই থাকতে পারেননি ফারজানা আঁখি। ব্যবসা দেখভালের পাশাপাশি সংসারও সামলেছেন তিনি। ফলে, অবসর বলে কিছু ছিল না। ‘অনেকেই অনেক কথা বলেছে। বলতো মেয়ে মানুষ দোকানে বসে। কিন্তু আমি কখনও দমে যাইনি। চেষ্টা আর একাগ্রতা থাকলে যে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারেন সেটা আমি বুঝেছি,’ সাফল্যর তৃপ্তির হাসি হেসে বলছিলেন এই উদ্যোক্তা।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ, পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করতে। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করবো না, চাকরি দেবো।
এক্ষেত্রে ব্যবসা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা যেসব সমস্যায় পড়েন সেগুলো মসৃণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান এই নারী। তিনি বলেন, এখনও ব্যাংক লোন পাওয়া অতটা সহজ হয়ে ওঠেনি। এসব বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

সুত্রঃ বাসস

 

অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুকন্যাকে গলা কেটে হত্যা

অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুকন্যাকে গলা কেটে হত্যা


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইল শহরের ভাল্লুককান্দী এলাকায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার চার বছরের একমাত্র কন্যাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, টাঙ্গাইল শহরের ব্যবসায়ী আলামিনের স্ত্রী লাকী বেগম (২২) ও তার কন্যা আলিফা (৪)। এ ঘটনায় নিহত লাকীর বাবা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি মীর মোশাররফ হোসেন জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে ও গলা কেটে অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার শিশুকন্যাকে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দু’টি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিচিতরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

এই হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ জোর তৎপর চালাচ্ছে। এ ঘটনায় নিহত লাকীর বাবা হাসমত আলী রোববার টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত লাকীর স্বামী আলামিন জানান, তিনি টাঙ্গাইল শহরের আসাদ মার্কেটে মোবাইল ফোন ফ্যাক্স ও বিকাশের দোকান করেন। এজন্য বাড়ি ফিরতে তার প্রায়ই মাঝরাত হতো। বাড়িতে যাওয়ার পথে তিনি স্ত্রীকে ফোন করতেন। স্ত্রী বাড়ির গেট খুলে দিতেন। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর তিনি বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার পর স্ত্রীকে ফোন করলে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেন গেট খোলা। ঘরের ভিতরে উচ্চ শব্দে টেলিভিশন চলছে। তিনি বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই রক্তাক্ত অবস্থায় তার স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে থানায় খবর দেয়া হয়।

নিহতের স্বজনেরা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর ঘরের একটি ড্রয়ার খুলে প্রায় আট লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। অন্য কোন ড্রয়ার খোলা হয়নি। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

প্রসঙ্গ; শিক্ষা

প্রসঙ্গ; শিক্ষা


জিয়াউল হক


সমাজেই তিন তিন জন বিশ্বখ্যাত দর্শনিক জন্ম নিয়েছিলেন। গ্রিক গ্যাং অব থ্রী নামে তাদেরকে এক নামে সবাই চেনে। সক্রেটিস, তার চুয়াল্লিশ বৎসর পরে প্লেটো এবং তারও একচল্লিশ বৎসর পরে এ্যরিস্টেটলের জন্ম। এই তিন দার্শনিকের দর্শন গ্রিক সমাজে ব্যাপকভাবে চর্চিত হতো। শাসক শ্রেণীর সাথে সক্রেটিসের চিন্তার অনৈক্য তাকে শেষ পর্যন্ত হেমলক পানে আত্মহত্যায় বাধ্য করার ঘটনা আমরা জানি।

সক্রেটিসের একটা উক্তি Know Thyself ’ ( নিজেকে জানো) অমর হয়ে আছে। নিজেকে জানলে কি হবে? সেই জানার পথ ও পদ্ধতিই কি? সে বিষয়ে সক্রেটিস নিশ্চুপ।

সক্রেটিসের অনেক পরে এসে ইসলাম সোজাসাপ্টা বলেছে; নিজেকে জানো, তা হলে তুমি তোমার স্রষ্টাকে জানবে। বলেছে; ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফ রাব্বাহু অর্থাৎ যে নিজেকে চিনেছে, সে তার স্রষ্টাকে চিনেছে।

এই যে স্রষ্টাকে চিনতে পারার সহজ ও সোজা পথ, এই পথটাই সক্রেটিস, প্লেটো এবং এ্যরিষ্টেটল কেউই বলতে পারেন নি।

গ্রিক দর্শনের এই ব্যার্থতার অন্যতম কারণ গ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, যার মৌলিক ভিত্তি দুটো; এক-ইনটুইশন – Intuition, দুই- লজিক – Logic অর্থাৎ বোধ ও যুক্তি।

এই বোধ আর যুক্তির উপরে ভিত্তি করেই তারা টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। সক্রেটিস থেকে শুরু করে এ্যরিস্টেটল পর্যন্ত সকলেই তাদের ‘বোধ কে যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন।

মানুষের বোধে বা উপলব্ধীতেই যদি ভূল হয়, অপূর্ণতা থাকে, তা হলে কি সে অপূর্ণতাকে যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা যায়? এ প্রশ্নটি কেউ তুলেননি গ্রিক ঐ তিন দার্শনিকের কাছে। সর্বপ্রথম তাদের সেই দর্শন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে ইসলামের সান্নিধ্যে এসে।

গ্রিক সমাজে শিক্ষা দুটি মৌলিক ভিত্তির বিপরিতে ইসলাম তিনটি মৌলিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে, বোধ ও যুক্তির সাথে এক্সপেরিমেন্টের তথা পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলেছে। তার মানে, ইসলাম বলেছে, জ্ঞানের উৎস হলো তিনটি; ইনটুইশন (Intuition), লজিক – (Logic), এক্সপেরিমেন্ট (Experiment) অর্থাৎ বোধ-যুক্তি আর নীরিক্ষণ।

এর মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ ইনটুইশন তথা বোধটার উৎস গ্রিক সমাজে মানুষে নিজের মনের উদিত চিন্তা ও বিশ্বাস । ইসলামে এই বোধের উৎস আল্লাহ প্রদত্ত অহি (নবী রাসুল গণের ক্ষেত্রে) অথবা ইলহাম (সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে)। এই ইলহামটিই অহির মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান, যুক্তি ও বাস্তবতার আলোকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে বিশ্বাস করা বা না করাটাই হলো ইসলামি শিক্ষার মৌলিক ভিত্তিমূল।

এই ভিত্তিমূলের সন্ধানটাই সক্রেটিস ও তার অপর দুই শিষ্য দিতে পারেন নি। এটা হলো সক্রেটিসের শিক্ষা ও দর্শনের দূর্বলতা। এটা বলতে আমরা ভয় পাই, সংকোচ বোধ করি, কারণ, সক্রেটিস হলেন বিশ্বের কাছে এতো বড় দার্শনিক যে, তাকে পশ্চিমা বিশ্বে চিন্তা ও দর্শনের ইশ্বর ভাবা হয়। ইশ্বরের কি সমালোচনা করা যায়?

এই যে মনস্তত্ব, চিন্তা ও দর্শনের ক্ষেত্রে কিংবা ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠত্ব থাকার কারণে প্রশ্নাতীতভাবে দাসত্ব করে যাওয়ার মত মানসিক অবস্থাটা ছিলো গ্রিক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিষ্ঠিত। সেখানে আল্লাহর পরিচিতি কিছুই ছিল না। মানুষের বাইরে আরও উচ্চক্ষমতাশালী কর্তৃত্বপরায়ন কোন শক্তি যদি থেকে থাকে, তারা হলো; ভেনাস, এ্যাপেলো, জুপিটার এসব। আল্লাহ নয়।

সময় গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে গ্রিকো-ল্যাটিন সেই দর্শনের মধ্যেও পরিবর্তণ এসেছে। মানুষের বোধ বুদ্ধি ও উপলব্ধীর মধ্যে এক বিরাট অপূর্ণতা রয়েছে এবং তাকে শিক্ষার একমাত্র ও চুড়ান্ত উৎস হিসেবে মেনে নেওয়াটা নিরাপদ নয়, সে বোধ তাদের মধ্যে এসেছে। কিন্তু তা তথা পশ্চিমা সভ্যতা ইনটুইশন এবং লজিক বা উপলব্ধী ও যুক্তি, এ দুটোকে বিজ্ঞানের অধিনস্থ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যদি ইনটুইশন ও লজিক উৎরে যায়, তা হলে সেটাই সত্য!

মানবতার জন্য এ এক আত্মবিধ্বংসী বিশ্বাস। নিত্য পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানকেই সত্যের উৎস হিসেবে মেনে নেয়াটা এক মারাত্মক ভ্রম। এই ভুলের মধ্যেই পড়ে আছে আজকের বিশ্ব; আধুনিক বিশ্ব।
আমরা আধুনিক যুগের অধিকাংশ মুসলমানরা ইসলামি শিক্ষা ও সাংস্কৃতির ধারক বাহক হবার বা তেমনটা হবার দাবীদার হওয়া সত্তেও কিন্তু সেই হাজার বসর প্রাচিন গ্রিকদের মানসিকতা ছাড়তে পারি নি।

আমাদের সমাজেও এখন শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় সমস্যা হলো, ওস্তাদ বা শিক্ষকের কথার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। ওস্তাদ বা শিক্ষকের বাণীকেই শীরোধার্য হিসেবে মানতে হবে! অথবা যারা একটু স্বাধীন চিন্তা পোষণ করেন তারা ওস্তাদ বা শিক্ষকের মতের বিপরিতে আরও একজনের মতামতকে অন্ধের মত প্রাধান্য দেন; Science বা বিজ্ঞানের !

হয় আমার শিক্ষক, না হয় হয় বিজ্ঞান, দুটোর যে কোন একটা অবশ্যই সত্য ও চুড়ান্ত। এসবের কোনটিকেই শিক্ষার্থী তার নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে পরখ করছে না। অথচ ইসলামের নির্দেশই হলো প্রতিটি জ্ঞান, তথ্য উপাত্ত ও শিক্ষা যাচাই করতে হবে, তারপরেই কেবল তা সত্য বলে গ্রহণ করতে হবে। কারোরই অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না (আল কুরআন ১৭ : ৩৬)।

তার মানে হলো ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার তৃতিয় যে বৈশিষ্ঠ, সেই বৈশিষ্ঠের কোন চর্চা হচ্ছে না আমাদের মুসলিম সমাজের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে।

এ মানসিকতার কারণে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে স্বাধীন চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটছে না যেমনি, তেমনি শিক্ষাও রয়ে যাচ্ছে অপূর্ণাঙ্গ ও অর্থহীন। ছাত্ররা পড়ছে তবে শিখছে না। এরকম পরিস্থিতি থেকে যত দ্রুত বের হয়ে আসা যায়, ততোই মঙ্গল।

 

এক বছর ধরে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া চাচাতো বোনকে ধর্ষণ, এরপর….

এক বছর ধরে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া চাচাতো বোনকে ধর্ষণ, এরপর….


নারী সংবাদ


মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানে বিভিন্ন প্রকার ভয় ভীতি দেখিয়ে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মো. আবুল বাশার শেখ (২৩) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আবুল বাশার শেখ উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নে অবস্থিত দক্ষিণহাটী গ্রামের মোঃ হেলাল উদ্দিন শেখের ছেলে।

ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মুন্সীগঞ্জ সদর হসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সিরাজদিখান থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ফরিদউদ্দিন জানান, ধর্ষক মোঃ আবুল বাশার শেখ সম্পর্কে ধর্ষিত ছাত্রীর প্রতিবেশি চাচাতো ভাই। সেই সুবাদে বিবাদী ধর্ষক ওই ছাত্রীর বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। পরে ভয় দেখিয়ে গত এক বছর ধরে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আসছিল মোঃ আবুল বাশার।

সর্বশেষ গত শুক্রবার বিকাল ৪টায় বাড়িতে অন্য কেউ না থাকায় ওই ছাত্রীর বাসায় তখন একা পাইয়া জোড়পূর্বক ধর্ষণ করতে চাইলে ছাত্রীর চিৎকার করিলে ঘটনাটি কাউকে কিছু না বলার জন্য বিভিন্ন প্রকার হুমুকি দিযে কৌশলে ওই বাড়ি হতে চলে যায়। এর পরে বাড়িতে লোকজন আসলে বিষয়টি ওই ছাত্রীর ভাই, বোন ও তার মাকে জানায়। এরপর গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় ছাত্রীর বোন মোসাঃ আমেনা বেগম বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ওইদিনই রাতেই উপজেলার শেখরনগর দক্ষিণহাটী এরাকা থেকে মোঃ আবুল বাশারকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার আইও এস আই মোঃ আসাদুজ্জামান তালুকদার জানান, আসামিকে শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে জিজ্ঞাসাবাদে একাধিকবার ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে মোঃ আবুল বাশার শেখ।
-নয়া দিগন্ত

 

নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে করণীয়


সৈয়দ মুহম্মদ জুলকারনাইন


আমরা পারিবারিক অশান্তি বা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ যেখানে- সেখানে সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব নিয়ে ভাবার সুযোগ কোথায়? তবে কিছু মানুষ অবশ্যই ভাবছেন সীমিত বিষয় নিয়ে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা তাই বলে। অথচ তাকালেই দেখি ধ্বংস, ক্ষয় আর নির্মমতার ঘটনাবহুল দিন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতিও রক্ষা করতে পারছে না মানুষ নামের প্রাণী ও তার আবাসভূমিকে ধ্বংস, ক্ষয় আর চরম নির্মমতার হাত থেকে। আমরা প্রতিনিয়ত পৈশাচিক আর হৃদয়বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। সমাজ অভ্যন্তরে চলছে গভীর সঙ্কট। নীতি আদর্শ এবং মূল্যবোধ হারিয়ে মানুষ হয়ে উঠেছে জাহেলিয়া যুগের পশুবৃত্তি ও জিঘাংসাপ্রবন। খুন, গুম, অনৈতিক কর্মকাণ্ড মানবতাকে পদদলিত করে চলেছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুর প্রতি নৃশংসতা ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে।

মানুষকে বলা হয় ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই মানুষের আচরণ হওয়া উচিত অন্যান্য জীবের চেয়ে স্বতন্ত্র। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, ‘আমি মানব জাতিকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছি’। অথচ সে মানুষই আজ দানবের মতো আচরণ করছে। দেশের কোথাও না কোথাও হত্যা, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও আত্মহননের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হারে ঘটে চলেছে। তুচ্ছ ঘটনায়ও মানুষ খুন হচ্ছে, খুন হচ্ছে আদালত কক্ষে বিচারকের সামনে। অর্থাৎ কে, কখন, কোথায় হত্যার শিকার হবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। হত্যার পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণ। ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ছয়-সাত বছরের মেয়েশিশু কিংবা ছয় মাসের কোলের শিশু। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে মোট ৪৯৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আইন ও সালিস কেন্দ্রের নিয়মিত মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৬৩০টি। ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টায় শিশু হত্যার ঘটনা ঘটে ২১টি। ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশুর বয়স সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালে সারা দেশে ৪৩৩টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের কারণে একই বছর প্রাণ হারায় ২২ শিশু। এ ছাড়াও ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয় ৫৩ শিশুর ওপর। যৌন নির্যাতনে একটি শিশু মারা যায়। ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, হত্যা ও শারীরিক নির্যাতনে মারা গেছে ২৭১ শিশু। বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরো এক হাজার ছয়জন।

যে বয়সে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে তাদের দেখা যায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) জরিপ মতে, কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫ ধরনের কাজের মধ্যে ৪১ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা কর্মরত। পেটের দায়ে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে থাকলেও ছোটখাটো ভুলের জন্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বিশ্ব বরেণ্য বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘সমাজ কিভাবে শিশুদের প্রতি আচরণ করে তার মধ্য দিয়ে সমাজের চেহারা ফুটে উঠে’। বর্তমানে আমাদের সমাজে যে ধরনের নিষ্ঠুরতা ও যৌন উন্মাদনা চলছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নারী ও শিশুদের ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। যেভাবেই ধর্ষণ হোক না কেন, তা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী কারো ইচছার বিরুদ্ধে, সম্মতি ছাড়া, ভয় প্রদর্শন করে, প্রতারণার মাধ্যমে এবং ১৪ বছরের কম বয়সী বালিকার সাথে সহবাস করলে (ব্যক্তি বা দল) ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯ ধারা মোতাবেক, ধর্ষণের ফলে যদি কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হয়, তাহলে ধর্ষণকারীর জন্য রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। উপরন্তু কমপক্ষে এক লাখ টাকার অর্থদণ্ড। দলগতভাবে নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষণকালে কিংবা ধর্ষণের পর মৃত্যু হলে তবে ওই দলের সবাইকে উল্লিখিত শাস্তি ভোগ করতে হবে। কেউ ধর্ষণের চেষ্টা করলে তার জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের কারাদণ্ডসহ অতিরিক্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবুও দুর্বৃত্তরা ক্ষান্ত হচ্ছে না। আইন ও সালিস কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে তিন হাজার ৫৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। একই সময়ে পুলিশ সদর দফতরে মামলা হয়েছে ১৯ হাজারের অধিক। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১১টি ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। তবে আসামিদের মাত্র তিন শতাংশের সাজা হয়েছে। শাস্তির আওতায় আসা আসামিদের এ সামান্য হারেই ধর্ষকদের বেপরোয়া করে তুলছে বলে বিজ্ঞজনদের অভিমত।

গত ১২ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘অনেক ঘটনাই নতুন আরেক জঘন্য ঘটনার চাদরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। কেবল সেই সব জঘন্য ঘটনার বিচার হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে যেগুলোর ব্যাপারে একযোগে মিডিয়া, সরকার ও সুশীলসমাজ সমানভাবে সোচ্চার হচ্ছে। গণমাধ্যম সোচ্চার হলে প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ দৌড়ঝাঁপ করে, কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনা ওভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না। এ ধরনের ঘটনার সাথে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও ক্ষমতার রাজনীতির সংযোগ রয়েছে। আজ অত্যন্ত বেদনাদায়ক এক ভয়াবহ সময়ে আমরা উপনীত হয়েছি। ঢাকাসহ দেশের সব শহরের অলিতে গলিতে বিশেষত রেললাইনের আশপাশে হতাশা, বেকারত্ব, অসৎ সঙ্গ ও পারিবারিক অশান্তির কারণে মানুষ নেশায় আচ্ছন্ন। ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য টেকনাফ এবং পার্বত্যাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঢুকে পড়ছে। যার ফলে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী খুন-গুমের মতো অন্যান্য অপরাধ বেড়ে চলেছে।

সূরা আল কেয়ামায় মহান আল্লাহ সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি বেহিসাব ছেড়ে দেয়া হবে’? ‘আহকামুল হাকেমিন’ সর্বাবস্থায় শ্রেষ্ঠ বিচারক। এ বোধ, জ্ঞান ও অনুভূতি যার অন্তরে সে ধর্ষণ, খুন, গুম, অন্যায়, অবিচার করতে পারে না। পারে না নীতিশূন্য হতে। অন্য দিকে আল্লাহ ভীতি যার অন্তরে নেই, পরকালে জবাবদিহিতার ভয় নেই তার কাছে তো সুনীতি-দুর্নীতি, ন্যায়-অন্যায় কিংবা ভালো-মন্দ সমান। ওই যে পরকালের জবাবদিহিতার ভয়ে মানুষ অপকর্ম পরিহার করে, তাই ধর্ম। কেন না, কোনো ব্যক্তি যদি চিন্তা-চেতনা, বোধ-বিশ্বাস, আচার-আচরণে পরকালের সংশ্লিষ্টতা রাখেন, তাহলে সে ধর্মহীন হতে পারে না। ধর্ম মানুষের আদিমতম আইন, ধর্মই মানুষকে নীতিশূন্য হতে বাধা দেয়। সুতরাং সময় থাকতে আমাদের পাঠশালা, বিদ্যানিকেতন সর্বত্র নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর তালিম বা শিক্ষাদান করলে শিশু ও নারীর ওপর পাশবিকতা বা নির্যাতন অবসানের আশা করা যায়।

 

দাম্পত্যে ধৈর্য, পারস্পারিক সহানূভূতি


দাম্পত্য


স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মতদ্বৈততা একটি স্বাভাবিক বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মতভেদ ঘটতেই পারে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল, ধৈর্য, পারস্পারিক সহানূভূতি ও সুধারণা এ সকল সমস্যা অনেকাংশে দূর করতে সক্ষম।

ঘনিষ্ঠতায় 
সুখী দাম্পত্য জীবন সবাই চায়। কিন্তু শুধু চাইলেই তো আর জীবনে সুখ আটকে রবে? সুখী দাম্পত্য জীবন পেতে গেলে তার কতগুলো শর্ত আছে, ঘনিষ্ঠতায় একটি। আপনাকে ভালবাসেন তিনি আপনার ঘনিষ্ঠতায় সান্নিধ্যও উপভোগ করবেন।

আলাদা ব্যক্তিত্ব থাকা সম্পর্কের ভালো
ব্যক্তিত্ব ভিন্ন হলেও একে অপরের সঙ্গে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটান, নিজেদের পছন্দের কাজগুলো করুন। বিয়ের আগে বাড়ির লোকের সঙ্গে রাগ দেখিয়েছেন বলে বিয়ের পরেও সেটা করবেন তা কিন্তু ঠিক নয়। ধীরে ধীরে স্বভাবে পরিবর্তন আনুন। সম্মান দিন একে অপরকে। একে অপরকে নিয়েও আগ্রহটা বাঁচিয়ে রাখুন।

পাশে থাকুন
পরস্পরের অভ্যেস তৈরি করে, পাশে থাকুন। কেউই পারফেক্ট হয় না, আপনিও নন। আপনারা ক্ষমাশীল এবং সম্পর্কটাকে সুস্থ রাখতে আগ্রহী। বড়ো কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করুন। বিপদে পরস্পরের পাশে থাকুন।

আর্থিকভাবে ভারসাম্য রাখুন
সুখী দম্পতিরা আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখেন। সাধারণত উপার্জন, টাকা জমা ও খরচ বিষয়ে তাঁদের ধ্যানধারণা একইরকম হয়। টাকাপয়সা খরচের অভ্যেসে ফারাক থাকার দরুন বহু বিয়ে ভেঙে যায়। তাই আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। বড়ো কোনও খরচ করার আগে পরস্পরকে জানিয়ে রাখুন।

 

আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে!

আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে!


সাজেদা হোমায়রা


বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে!
আবরারের মায়ের বিলাপ! বাবার কান্না ভেজা চেহারা! একজন মেধাবীর তিল তিল করে দেখা স্বপ্নগুলো নিমিষেই নিঃশ্বেষ হয়ে গেল!

নির্মমতার স্বাক্ষী আবরারের গোটা শরীর। ৬ ঘন্টা ধরে একটু একটু করে জীবনের আলো নিভে গেছে ছেলেটার…
কেমন ছিলো সেই মুহূর্তটা যখন সে আর শ্বাস নিতে পারছিলো না?
কেমন ছিলো তার সেই চাহনিটা যাতে ছিলো প্রচণ্ড বাঁচার আকুতি?

রাজনীতি মানেই এতোটা নির্মমতা, এতোটা বর্বরতা, এতোটাই সহিংসতা?

ফেসবুকে আবরারের হাত, পা, পিঠের ছবি দেখে আঁতকে উঠেছি। কি হিংস্র! কি নৃশংস!
কি নির্মমভাবে তাকে পিটিয়েছে!
এই পিঠেই কতো রাত তার মা হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে ! কতো যত্নে তাকে আগলে রেখেছে!

ভাবতেই খুব অবাক লাগছে…যারা আবরারকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, তারা রাস্তার নষ্ট হয়ে যাওয়া কোনো ছেলে না। এরাও মেধাবী ছাত্র।
কিন্তু এতো মেধাবী, আউটস্ট্যান্ডিং হওয়ার পরও তারা কিভাবে এমন বর্বর আচরণ করতে পারলো?

দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানে পড়লেই মানুষ হওয়া যায় না। এখানেও পশুদের অবাধ বিচরণ!
মানুষ হওয়ার শিক্ষাটা আলাদা।
শিক্ষার সাথে নৈতিকতার যোগসূত্রটা খুব প্রয়োজন। নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা শুধু বর্বরতাই উপহার দিতে পারে।

যে শিক্ষা মানুষকে স্বার্থপর করে….
উগ্র ইন্দ্রিয় সুখের জন্য খুনকে উৎসাহিত করে…
যে শিক্ষায় থাকে ক্ষমতার দাপট…
যে শিক্ষায় ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্মূল করা হয় নির্মমভাবে…
যে শিক্ষায় সহপাঠীকে পিটিয়ে হত্যা করতে কোনো দ্বিধা হয় না…
কি লাভ সে শিক্ষায়? এ শিক্ষায় মেধাবী সন্তান শুধু কুলাঙ্গারই হয়।

নৈতিক শিক্ষা আর ইতিবাচক মনোভাব ছাড়া সত্যিকারের মানুষ হওয়া কখনোই সম্ভব না! কখনোই না!

সব সন্তানই তো বাবা মার অনেক প্রিয়… অনেক ভালোবাসার! কখনো আমরা সন্তানদের এতোটাই ভালোবাসি যে তাদের ছোট ছোট ভুলগুলোও শুধরে দেই না। অথচ একসময় এই ভুলগুলোই বড় আকার ধারণ করে। তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয় তাকে।
ছোট ছোট ভুলগুলো শুধরে দিয়ে সন্তানকে সঠিক পথ দেখানো আমাদের দায়িত্ব। আমরা যতোটা সচেতন থাকি সে পরীক্ষার খাতায় ১০০% মার্কস পেয়েছে কিনা, ততোটা কি সচেতন থাকছি তার আচরণ, মানসিকতা আর নৈতিকতার ব্যাপারে? এসব সন্তান পরবর্তীতে সো কল্ড মেধাবী হলেও মানুষ কখনোই হতে পারে না।

আমার স্বপ্ন… আমার দোয়া…আমার চাওয়া….
আমাদের প্রত্যেকটা সন্তান হোক বাবা মায়ের চোখ শীতলকারী!
প্রত্যেকটা সন্তান মানুষ হোক!
বেঁচে থাকুক নিজে!
বাঁচতে দিক অন্যকে!

 

কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে গার্মেন্টস কর্মীকে গণধর্ষণ

কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে গার্মেন্টস কর্মীকে গণধর্ষণ


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এক গার্মেন্টস কর্মীকে রাতভর গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মনবাওগা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে । ঘটনার পর ওই গার্মেন্টস কর্মীকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই আসামী পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন তালতলা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আহসানউল্লা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে ৭ জনকে আসামি করে ওই গার্মেন্ট কর্মী বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

সোনারগাঁও থানায় দায়ের করা মামলার এজহারে বাদি উল্লেখ করেন, গার্মেন্ট কর্মী রূপগঞ্জের রবিন গার্মেন্টে তিনি কর্মরত। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে গার্মেন্ট ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার জন্য গার্মেন্টের সামনে থেকে গাউছিয়া যাওয়ার জন্য একটি সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন। ওই সময়ে জাহাঙ্গীর নামের এক অভিযুক্ত ধর্ষক পেছনের সিটে বসা ছিল। গাউছিয়া যাওয়ার পর ওই গার্মেন্ট কর্মী সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামতে চাইলে পেছনের সিটে বসা জাহাঙ্গীর তাকে বাঁধা দেয়। পরে সিএনজি চালককে সিএনজিটি দ্রুত গতিতে সোনারগাঁওয়ের তালতলার দিকে চালিয়ে যেতে বলে। ধর্ষক জাহাঙ্গীরের কথা মতো চালক গাড়িটি চালিয়ে যায়। এসময় ওই গার্মেন্ট কর্মীর মুখে সাদা রঙের কসটেপ লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তালতলা এলাকায় হালিম মিয়ার ঘরে নিয়ে আটকে রাখে তাকে। ওই সময় হালিম মিয়া বাড়িতে ছিলেন না। পরে গভীর রাতে ব্রাহ্মনবাওগা গ্রামের মুজিবুর রহমানের বখাটে ছেলে আবু সাইদ, রেহাজউদ্দিনের ছেলে ইমরান, নবি হোসেনের ছেলে রনি, আবু সিদ্দিকের ছেলে আবুল হোসেন, ভট্টু মিয়ার ছেলে মাসুদ, আমির হোসেনের ছেলে আরিফ ও সামসুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর ওই গার্মেন্ট কর্মীকে রাতভর পালাক্রমে ধষর্ণ করে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে হালিম মিয়া বাড়িতে এসে এ ঘটনা দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫ ধর্ষককে গ্রেফতার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষক আরিফ ও জাহাঙ্গীর পালিয়ে যায়।

পুলিশ অসুস্থ ওই গার্মেন্ট কর্মীকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনায় ওই গার্মেন্ট কর্মী বাদি হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

তালতলা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো.আহসানউল্লাহ জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জন পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভিকটিম উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, গণধর্ষণের ঘটনার মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মা হওয়ার ছয় মাস পর নিয়মিত ব্যায়াম করে ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব


স্বাস্থ্যকথা


চার মাস আগেই প্রথম মা হয়েছেন মন্টি দে। একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করেন মন্টি। আর মাত্র এক মাস পরেই মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যোগ দিতে হবে চাকরিতে। কিন্তু এই কদিনেই বেশ মুটিয়ে গেছে মন্টি। আয়নাতে নিজের চেহারা যেন নিজেই চিনতে পারছেনা। মূলত মা হওয়ার পর থেকে বেশ শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে তার। বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন মন্টি। কারন চাকরীতে তাকে বেশ দৌঁড়াতে হয়। আর শরীর ফিট না থাকলে কি করে হয়। অনেক ভেবেও কী করা যায় বুঝতে পারছেন না মন্টি। শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হলেন তারই স্কুল বান্ধবী ডা. শর্মিলার। সব শুনে ডাক্তার পরামর্শ দিলেন আবার ব্যায়াম শুরু করার।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, মা হওয়ার পর আমরা ধরেই নিই যে আমাদের শারীরিক ফিটনেস শেষ। আমরা আর আগের মত সুন্দর হতে পারব না। পাব না চেহারার সেই সৌন্দর্য্য। কিন্তু আগের সেই শারীরিক সৌন্দর্য্য ফিরে পাওয়া খুব কষ্টের কিছু না। এজন্য দরকার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাস।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে যেকোন মা’ই শারীরিকভাব্ওে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। মা হওয়ার পরবর্তী শারীরিক নাজুক অবস্থা থেকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। মূলত বড় হওয়া জরায়ু ও দুর্বল হয়ে পড়া পেলভিক মাংসপেশিগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। শুরু থেকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা বা তলপেটের পেশির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে পুরোদমে ব্যায়াম শুরু করা উচিত ছয় মাস পর থেকে। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে প্রথম ছয় মাস খুব বেশি ডায়েট না করাই ভালো।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন পিটিআরসি রিহ্যাব অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরামর্শক শায়লা। তাঁর সেন্টারে আজকাল অনেক মা হারিয়ে ফেলা ফিটনেস ও ফিগার ফিরে পেতে নানান সেশনে আসছেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টেছে। তবে মা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করলেও ছয় মাস পর্যন্ত কোনো ভারী ব্যায়াম না করাই উচিত, বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান হয়ে থাকে। ছয় মাস পর থেকে বিশেষজ্ঞের অধীন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আগের ওজন ও ফিগার পাওয়া সম্ভব। কেবল ওজন কমানোটাই মুখ্য নয়, মা হওয়ার পর পেট ও পেলভিসের পেশিগুলো শিথিল বা লুজ হয়ে পড়ে, এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম লাগে। ফিট থাকার জন্য মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে হাঁটা ভালো।
ফিট থাকতে খাবারের ভূমিকা আছে। ফিটনেস বা স্ট্রেংথ কেবল শরীরের ব্যাপার নয়, এটা মনেরও। অনেক মেয়েই মা হওয়ার পর মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফিরে যান বটে, কিন্তু সেই এনার্জি যেন হারিয়ে ফেলেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সিফাত ই সাঈদ বলেন, বেশির ভাগ নতুন মায়েরই পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন হয়। মনে হয় যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ হলো, শরীর ও মন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসতে ৬ থেকে ৯ মাস লাগবে, রাতারাতি আগের মতো হওয়া যাবে না। এটা আগেই মেনে নিতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। নিজের জন্য সামান্য হলেও আলাদা একটু সময় বের করতে হবে। যে সময় আপনি নিজের যতœ নেবেন, ব্যায়াম করবেন বা হাঁটবেন, চাইলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেবেন, একটা ভালো ছবি দেখবেন বা গান শুনবেন। পরিবারের অন্যরা নবজাতকের দায়িত্ব দিনে দু–একবার না নিলে এটা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্বামী সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন।

সুত্রঃ (বাসস)

 

ছোট্ট শিশু “মাসানকে (৪)” নিতে চান না বাবা-মা

ছোট্ট শিশু “মাসানকে (৪)” নিতে চান না বাবা-মা


অন্যান্য সংবাদ


সৃষ্টিকর্তার পর মানুষের সবচেয়ে আপনজন বলা হয় মাকে। আমরা বলি মা-বাবা। কিন্তু চার বছরের ছোট্ট শিশু মাসান আরদিতের আপন যে কে? দুপক্ষের আইনজীবীসহ বিস্মিত পুরো আদালত।

মানবাধিকারকর্মীরা মতে, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা বিপর্যস্ত করে তুলছে শিশুদের জীবনকে প্রতিনিহিত।

ঢাকার সিএমএম আদালতে তার মা-বাবা জানিয়েছেন, মাসানকে তারা রাখতে চান না। বিবাহ বিচ্ছেদের পর, বাবা উঠেছেন একটি মেসে। সেখানে শিশুটিকে রাখার পরিবেশ নেই। আর সন্তানের খরচ চালানোর অক্ষমতার কথা বলছেন মা।

জানা যায় যে, ২০১৩ সালে দিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন এ দম্পতি। তবে, নানান কারণে বিভেদ সৃষ্টি হয় দুজনের মধ্যে। দাম্পত্য কলহের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ডিভোর্সের যান তারা।
তবে সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হলো সন্তানকে কেউ কারো কাছে রাখতে চাচ্ছেন না। এমন ঘটনা অবাক করে দেয় উপস্থিত সবাইকে।

এ সময় আদালত প্রশ্ন রাখেন, বাবা-মা না দেখলে ছোট্ট শিশুটির দায়িত্ব নেবে কে?

সানজিদা শারমিন (মাসানের মা) ভাষ্য মতে, বাচ্চার বাবা তার কোনই খোজ নেই না, একবার দেখতে আসে না। ভরণপোষণ ও দিচ্ছে না। তাহলে বাচ্চাটাকে আমি কিভাবে রাখবো?

তবে, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি বাবা মাহফুজ ইসলাম।

মাসানের বাবার আইনজীবী ইকবাল আহাম্মেদ খান বলেন, বাচ্চা নাবালক হলে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত আইন অনুযায়ী মার কাছেই থাকবে। অপর দিকে মাসানের মায়ের আইনজীবী আকলিমা ইসলাম বলছেন, বাচ্চার মা রাখতে পারবে কিন্তু বাচ্চার খরচ অবশ্যই বাবাকে দিতে হবে, না দিলে ভিন্নপথ অবলম্বন করতে হবে আমাদের।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ফাওজিয়া কর্মী ফিরোজ বলছেন, বিচ্ছেদের মামলা বিষাক্ত করে তুলছে এখন শিশুদের জীবনকে। তিনি বলছেন, আমাদের আদালত নারী ও শিশু বান্ধব নয়। আদালত দেখতে চান বলে অনেকেই ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আসেন, কিন্তু সেখানে বাচ্চা নিয়ে ঢোকার মত পরিবেশ থাকে না।

 

ঘরের কাজে পুরুষরা নারীদের পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন বলেই বিশ্বাস মানবাধিকার কর্মীদের

ঘরের কাজে পুরুষরা নারীদের পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন বলেই বিশ্বাস মানবাধিকার কর্মীদের


নারী সংবাদ


ইট ভাঙ্গার কাজ করেন ২৯ বছর বয়সী সালমা। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার মধ্যে নগরীর মাতুয়াইল এলাকার ইট ভাঙ্গার কাজের জায়গায় হাজির হতে হয়। সঙ্গে নিয়ে আসতে হয় মাত্র সাড়ে সাত-মাস বয়সী বাচ্চাকেও। কারণ, সেছাড়া বাচ্চাটাকে দেখাশোনা করার মত কেউ নেই। থাকেন যাত্রাবাড়ীর এক বস্তিতে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয় তাকে। শুধু দুপুরে খাওয়ার জন্য ৪৫ মিনিট ছুটি পান কাজ থেকে। আর বাচ্চা সঙ্গে থাকায় কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে বাচ্চার দেখাশোনা করার সুযোগ পান সালমা।
সারাদিন কাজ শেষে বাসায় পৌঁছে কিন্তু তার শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেওয়ার কোন সুযোগ নেই তার। গোসল করেই ঢুকতে হয় রান্না ঘরে। সবার জন্য রান্না শেষ করে, সবার খাওয়া শেষে তারপর নিজে খেয়ে যখন বিছানায় যান তখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। পরদিন আবার ভোর ৫টা মধ্যে উঠে সবার জন্য খাবার তৈরী করতে হয় তাকে। প্রায় সময়ই ভোর বেলা নিজে কোন কিছু না খেয়েই ছেলেকে নিয়ে চলে যান মাতুয়াইলে।
ফাহমিদা পেশায় ব্যাংকার। বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেন আরেক ব্যাংকারকে। বছর ঘুরতেই তাদের কোল জুড়ে আসে এক মেয়ে সস্তান। তার নিত্যদিনের জীবনটাও অনেকটা সালমার মতোই।
ফাহমিদা বলেন, সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যে গুলাশন-১-এ আমার অফিসে পৌঁছাতে হয়। বাসা নগরীর মধ্য বাড্ডা এলাকায়। সকাল সাড়ে ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা রেডি করি। তারপর নিজে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসের গাড়ীর জন্য যখন রাস্তায় পৌঁছাই তখন ঘড়ির কাঁটা ৮ টা ২০-এ। অফিস শেষ করে বাসায় পৌঁছাই সাড়ে সাতটার সময়। আসার সময় আমার বাবার বাড়ী থেকে বাবুকে নিয়ে তারপর বাসায় ফিরি। এরপর বাবুর খাবার রেডি করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিই। তারপর আমাদের রান্না-বান্না শেষ করে খেতে খেতে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বেজে যায়।
এভাবেই দিনের পর দিন চলছে সালমা, ফাহমিদাসহ লাখো নারীর কর্মজীবন আর সংসার। তারা দু’হাতে একই সঙ্গে সামলাচ্ছেন সংসার ও কর্মস্থল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, একজন কর্মজীবী নারী, পুরুষের দ্বিগুণ কাজ করেন। তবে, কর্মজীবী নারীর গৃহস্থালি কাজের কোন আর্থিক মূল্যায়ন করা হয় না বলেই এর গুরুত্ব দৃশ্যমান হয় না। বিবিএস পরিচালিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপে কর্মজীবী নারীর ঘরের কাজকে দ্বিগুণ বোঝা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জরিপ মতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই কর্মজীবী এমন পরিবারে শতকরা ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রান্নার কাজ করেন নারী। অন্যদিকে কর্মজীবী পুরুষ যারা রান্না করেন তাদের সংখ্যা মাত্র আড়াই শতাংশ।
এছাড়াও ১০০ জন কর্মজীবী নারীর মধ্যে ৮৯ জনই কাপড় ধোয়ার কাজ নিজেরা করে থাকেন। অন্যদিকে মাত্র ১২ শতাংশ পুরুষ তাদের নিজেদের কাপড় নিজেরা ধুয়ে থাকেন। অন্য পরুষদের কাপড় ধোয়ার কাজ করেন মূলত বাড়ির অন্য নারী অথবা গৃহকর্মীরা।
কর্মজীবী নারীর মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী পরিবারের অন্যান্য সদস্য যেমন-শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন। আর মাত্র ২১ শতাংশ কর্মজীবী পুরুষ এ দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে, ২৬ শতাংশ কর্মজীবী নারী চাকরির পাশাপাশি সংসারের জন্য কেনাকাটার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন।
জরিপ মতে, এসব কাজের বাইরেও সংসারের অন্যান্য কাজগুলোতে কর্মজীবী নারীর অংশগ্রহণ কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। জরিপে বলা হয়, কর্মজীবী নারীরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মানোয়ারা হক বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই মূলত নারীদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। এর ফলে নারীরা যেমন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে অন্যদিকে দেশও এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, নারীদের শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ বাড়লেও তাদের ঘরের কাজ নিয়মিতই করতে হচ্ছে। এখান থেকে এখনো পর্যন্ত নিস্তার নেই। অন্যদিকে অনেক পুরুষ সদস্য তার সঙ্গীনীর চেয়ে কম সময় অফিস করেও ঘরের কোন কাজ করছেন না অথবা তাকে সহযোগিতাও করেন না। আবার অনেক পরিবার শর্তই দিয়ে রাখেন যে, আগে সংসার, স্বামী আর বাচ্চা সামলাতে হবে। তারপর বাইরে চাকরি করা যাবে। অধিকাংশ নারী তা মেনেই বাইরে যাচ্ছেন এবং কাজ করছেন।
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, বাংলাদেশে এখন অনেক নারী শ্রম বাজারের সাথে যুক্ত হচ্ছেন, এটা সত্যিই আশার কথা। এর ফলে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা আরো জোরদার হচ্ছে। তবে, সমাজ নারীদের ওপর অতিরিক্ত শ্রমের বোঝা চাপিয়ে দেয়ায় এই ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার স্বাদ থেকে তারা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমন তাদের মানসিক প্রশান্তিও নষ্ট হচ্ছে। তারা বিশ্বাস করেন, দেশ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের ওপর থেকে অতিরিক্ত শ্রমের বোঝা লাঘব হবে এবং ঘরের কাজে পুরুষরাও নারীদের পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন এবং নারীর ক্ষমতায়নে তাদের জীবনসঙ্গীরা পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন।
জরিপের অবশ্য একটা আশা জাগানিয়া বিষয় দেখা যায়, আর তা হল আনুষ্ঠানিক ভাবে শ্রমবাজারের পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। জরিপ মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্ত নারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এর আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ। এছাড়াও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৩৫ লাখ। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩১ লাখ।

সুত্রঃ বাসস।

 

মুরগির মাংসের টিক্কা

মুরগির মাংসের টিক্কা


ঘরকন্যা


উপকরণ

মুরগির মাংসের কিমা ২ কাপ,
পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ,
কাঁচা মরিচ ৩টি,
রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
আদা বাটা ২ টেবিল চামচ,
সয়াবিন তেল ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ,
ঘি ৩ টেবিল চামচ,

টকদই আধা কাপ,
পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ,
গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ,
কাজু ও পোস্ত বাটা একসঙ্গে মিলিয়ে ৩ টেবিল চামচ,
লবণ পরিমাণমতো।

রান্নার প্রক্রিয়া

১. মুরগির কিমা, লবণ, আদা বাটা দিয়ে একসঙ্গে মেখে ছোট ছোট মার্বেলের মতো বল করে ২০ মিনিট রেখে দিন।
২. এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, কাজু ও পোস্ত বাটা দিয়ে মসলা ভুনে বলগুলো দিন। সঙ্গে দই দিয়ে কষান। পানি দেওয়া যাবে না।
৩. ঘন হয়ে এলে কাঁচা মরিচ, ঘি, গরম মসলা গুঁড়া ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

 

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইন পর্ব-১

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইন পর্ব-১


নারীর জন্য আইন


নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।

নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সংঘটিত কয়েকটি অপরাধ চিহ্নিত করে তার দ্রুত বিচার ও শাস্তি বিধান নিশ্চিত করার জন্য এই সব আইন। সাধারণভাবে সংঘটিত কয়েকটি অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো দহনকারী পদার্থ দ্বারা কোনো নারী বা শিশুকে আহত বা মৃত্যু ঘটানো। দহনকারী পদার্থের মধ্যে এসিড নিক্ষেপের অপরাধও অর্ন্তভূক্ত। বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতন মানবাধিকারের সর্বাধিক লঙ্ঘন। এই নির্যাতন সূক্ষ্ম এবং প্রকট উভয় ধরনেরই হতে পারে। বাংলাদেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া বিশাল।

সংজ্ঞা

বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকলে,

এই আইন,

(ক) “অপরাধ” অর্থ এই আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ

(খ) “অপহরণ” অর্থ বলপ্রয়োগ বা প্রলুব্ধ করিয়া বা ফুসলাইয়া বা ভুল বুঝাইয়া বা ভীতি প্রদর্শন করিয়া কোন স্থান হইতে কোন ব্যক্তিকে অন্যত্র যাইতে বাধ্য করা

(গ) “আটক” অর্থ কোন ব্যক্তিকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন স্থানে আটকাইয়া রাখা

(ঘ) “ট্রাইব্যুনাল” অর্থ এই আইনের অধীন গঠিত কোন ট্রাইব্যুনাল

(ঙ) “ধর্ষণ” অর্থ ধারা ৯ এর বিধান সাপেক্ষে, Penal Code, 1860 (Act XLV of 1860) এর Section 375 এ সংজ্ঞায়িত ærape”

(চ) “নবজাতক শিশু” অর্থ অনূর্ধ্ব চল্লিশ দিন বয়সের কোন শিশু

(ছ) “নারী” অর্থ যে কোন বয়সের নারী

(জ) “মুক্তিপণ” অর্থ আর্থিক সুবিধা বা অন্য যে কোন প্রকারের সুবিধা

(ঝ) “ফৌজদারী কার্যবিধি” অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act V of 1898);

(ঞ) “যৌতুক” অর্থ-

(অ) কোন বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সহিত জড়িত বর পক্ষের অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত বিবাহের সময় বা তত্পূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসাবে বিবাহের কনে পক্ষের নিকট দাবীকৃত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ; অথবা

(আ) কোন বিবাহের কনে পক্ষ কর্তৃক বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সহিত জড়িত বর পক্ষের অন্য কোন ব্যক্তিকে উক্ত বিবাহের সময় বা তত্পূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসাবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ;

(ট) “শিশু” অর্থ অনধিক ষোল বত্সর বয়সের কোন ব্যক্তি;

(ঠ) “হাইকোর্ট বিভাগ” অর্থ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগ৷

নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে নির্যাতন উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি সাংঘাতিক বড় সমস্যা যার শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া আগামী প্রজন্ম ও সাধারণভাবে সমাজের ওপর পড়ছে। বাংলাদেশে মানব নিরাপত্তার উদাহরণ রচনার ক্ষেত্রে এই সহিংসতা ও নির্যাতনের অবসান ঘটানো একান্ত আবশ্যক।

সুত্রঃ http://bdlaws.minlaw.gov.bd

 

জুস পান করে মারা যাওয়া সুস্মিতার বোনের আবেগঘন স্ট্যাটাস

নারী সংবাদ

হকারের নিকট থেকে কেনা জুস পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মেধাবী কলেজ শিক্ষার্থী সুস্মিতা হোম চৌধুরী মন্টির মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার বোন সুমনা বাসু। ‘বোধনের আগেই বিসর্জন’ শিরোনামে সুম্মিতাকে নিয়ে বোন সুমনা বাসুর দেয়া আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাসে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।

‘মৃত্যু নয় হত্যা- বিচার চাই’ লিখে সুম্মিতার মৃত্যুর বিচার দাবি করে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রথম হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী সুস্মিতার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। আবার অনেকেই ময়মনসিংহ ব্রিজের মোড়কে চুরি-ছিনতাইমুক্ত করার দাবিতেও প্রতিবাদ করছেন।

অপরদিকে সুস্মিতার বাবা কাঞ্চন কুমার হোম শনিবার সকালে মেয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি আকুতি করে বলেন, তার মেয়ের মতো আর কোনো মেয়ের যেন এভাবে মৃত্যু না হয়।

সুস্মিতা হোম চৌধুরী মন্টির জন্য শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য কেনা নতুন কাপড়ও শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তার বোন সুমনা বসু ‘বোধনের আগেই বিসর্জন’ শিরোনামে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘যাকে নিয়ে আজ লিখতে বসেছি কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি ওকে নিয়ে এভাবে লিখবো। কতো মজা করলাম বোনরা মিলে রুমার বিয়েতে এটাই শেষ মজা ছিল? সেদিনও বাসায় আসলি এটাই কি শেষ দেখা ছিল? কত গল্প করলাম ভাবলাম পূজায় বাড়ি যাব। দেখা হবে। কিন্তু কাজটা ঠিক হলো না মন্টি। বোধনের আগেই বিসর্জন।’

উল্লেখ্য, হকারের কাছ থেকে কেনা জুস পান করে মৃত্যুবরণ করেন মুমিনুন্নেছা সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি)। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা গ্রামের কাঞ্চন কুমার হোম চৌধূরীর কন্যা। ১৩দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সুস্মিতা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

পারিবারিক সূত্র ও সাবেক ইউপি সদস্য নিতাই কুমার চন্দ জানান, সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি) গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে ময়মনসিংহ ব্রীজের মোড়ে দুই শিশু হকারের নিকট থেকে একটি কোম্পানির জুস কেনেন। কিন্তু জুসটি তখন না খেয়ে বোতলটি ব্যাগে রেখে দেন পরে খাবেন কিংবা তার ছোট ভাগ্নেকে দেবেন বলে। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে জুসের কথা ভুলে যান তিনি। জুসটি ভাগ্নেকে আর খাওয়ানো হলো না।

এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে ব্যাগের কাপড় সরাতে গিয়ে জুসের বোতলটি চোখে পড়ে। এরপর তিনি মাকে বলেন, আজ রাতে ভাত খাব না, শুধু একটু দুধ আর এই জুস খেয়ে নেব। তার মা আর জোর না করলে জুস খেয়েই ঘুমাতে যান তিনি। পরদিন সকালে আর ঘুম ভাঙেনি সুম্মিতার। যে মেয়েটি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, কিন্তু সেদিন সকাল ১০টায়ও ঘুম না ভাঙায় পরিবারের লোকজন জোর করে তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে কোনোরকমে ঘুম ভাঙলেও তিনি আর মাথা তুলে বসতে পারছিলেন না।

এরপর স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চারদিন চিকিৎসা শেষে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার পর সেদিন রাত থেকেই আবারো ডায়রিয়া শুরু হয় সুস্মিতার। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে পুনরায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এরপর টানা ৮দিন চিকিৎসার পর সুম্মিতার অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার বিকেলে ডাক্তর তাকে ঢাকায় রেফার করেন। ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সুম্মিতাকে নিয়ে ত্রিশাল থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিরে আসেন তারা। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সুস্মিতা আর বেঁচে নেই।

নিহত সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি) মুমিনুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে গণিতে অনার্স ও সদ্য মাস্টার্স পরীক্ষায় দুটোতেই প্রথম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

 

স্বাস্থ্যে ভাল রাখতে খেয়াল রাখুন


স্বাস্থ্যকথা


বাইরে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বাসায় ফিরে বসুন নিঃশ্বাস নিন  তরতাজা মনকে প্রফুল্ল রাখাবে বিশ্বাস যদি না হলে আজ থেকে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন এর বিশেষ সুফল।ঐতিহ্যবাহী খাবারের অভ্যাস থেকে সরে আসতে হবে। প্রয়োজনীয় শারীরিক কসরতের অভাব, হতাশা, দুশ্চিন্তা  ছুড়ে ফেলুন।

আর কি কি করতে পারেনঃ

  • টমেটোর রস ও দুধ একসঙ্গ মিশিয়ে মুখে লাগান 
  •  কনুইতে কালো ছোপ দূর করতে লেবুর খোসায় চিনি দিয়ে ভালো করে ঘষে নিন। এতে দাগ চলে গিয়ে কনুই নরম হবে।
  •  রসুনের কোয়া ঘষে নিন ব্রণের উপর। ব্রণ তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যাবে।
  •  চুল পড়া বন্ধ করতে মাথায় আমলা, শিকাকাই যুক্ত তেল লাগান।
  • হাত খুব ঘামে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লাউয়ের খোসা হাতে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।
  • মাথাব্যথা হলে প্রচুর মাছ খান। 
  •  মধু কার্যকর  ত্বকের জন্য।
  • পেটের পীড়ায় খেতে পারেন কলা, আদা।
  • স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে গমজাত খাদ্য, বাঁধাকপি কার্যকর।
  • মুখের বাদামী দাগ উঠাতে পাকা পেঁপে চটকে মুখে লাগান, পরে ধুয়ে ফেলুন।
  • শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে মধু, দুধ ও বেসনের পেষ্ট মুখে লাগান নিয়মিত। এতে ত্বকের বলিরেখা ও দূর হয়ে যাবে।
  • পায়ের গোড়ালি ফাটলে পেঁয়াজ বেটে প্রলেপ দিন এ জায়গায়।
  • ফলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া গেলেও পড়ে  আপনাকে আরো বেশি দুর্বল করে দেয় এবং দ্রুতই ঘুম পায়, গা ছেড়ে দিয়ে থাকে। যা শরীরের জন্য উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমান বেশি হয়ে থাকে।

 

দেশ খুলনা বিয়ের ৩ দিনের মাথায় কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই বিয়ের মাত্র তিন দিনের মাথায় কুষ্টিয়ায় কলেজছাত্রী এক নববধূ আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার পর থেকে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে গেছেন। নববধূ পাপিয়া খাতুন তার বাবার বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যরা ফ্যানের সাথে লাশ ঝুলতে দেখে থানায় খবর দিলে পুলিশ তা উদ্ধার করে।

স্বজনরা জানান, খোকসা সরকারি ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী পাপিয়ার সাথে একই কলেজের শামীম রেজার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রীর বাবার বাড়ি উপজেলার হিলালপুর গ্রামে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু এ বিয়ে ওই ছাত্রের পরিবার মেনে নিতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার বিকালে নববধূকে রেখে শামীম নিজের বাড়ি যান। পরে তিনি না ফিরলে নব দম্পতির মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রাতেই নববধূ আত্মহত্যা করেন। নিহতের বাবা ওমর আলী জানান, শামীম পালিয়ে যাওয়ায় পাপিয়া অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন।

এ ব্যাপারে শামীমকে ফোনে পাওয়া যায়নি। সেই সাথে তার বাবা রাজ্জাক বিশ্বাসের বাড়ি উপজেলার মির্জাপুরের গিয়েও কারও দেখা মেলেনি। খোকসা থানার এসআই বুলবুল আহমেদ বলেন, এ ব্যাপারে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সুত্রঃনয়াদিগন্ত।

 

ছাত্রীকক্ষে গিয়ে উত্যক্ত : বখাটের দুই মাসের কারাদণ্ড

ছাত্রীকক্ষে গিয়ে উত্যক্ত : বখাটের দুই মাসের কারাদণ্ড


নারী সংবাদ


কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে স্কুল শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করার দায়ে রাজন মিয়া (১৯) নামে এক বখাটেকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম লুৎফর রহমান এ দণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত রাজন মিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে বহিরাগত ৪-৫ জন বখাটে পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কক্ষে প্রবেশ করে। এ সময় তারা ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। কয়েকজন শিক্ষার্থী বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আফছর উদ্দিন আহম্মদ মানিককে জানান।

পরে প্রধান শিক্ষক অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে বখাটেদের ঘেরাও করেন। এ সময় ৩-৪ জন বখাটে বিদ্যালয়ের দেয়াল টপকে পালিয়ে গেলেও রাজন নামে এক বখাটেকে আটক করে। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম লুৎফর রহমানকে এ বিষয়টি অবগত করেন প্রধান শিক্ষক। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পরে ছাত্রীদের অভিযোগ শোনেন এবং বখাটে রাজন অপরাধ স্বীকার করায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ সময় পাকুন্দিয়া থানার এসআই বিষ্ণুপদ দাশ ও প্রধান শিক্ষক আফছর উদ্দিন আহম্মদ মানিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)একেএম লুৎফর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মনোজাগতিক অভিযাত্রা (২)

মনোজাগতিক অভিযাত্রা (২)


আফরোজা হাসান


হতাশার চোরাবালিতে আকন্ঠ ডুবে থাকা মানুষ প্রায়ই ছুটে আসে একটু আশার আলোর সন্ধানে। কিন্তু তাদের মনের হতাশার গভীরতা এত বেশি থাকে আমার আশা জাগানিয়া শব্দরা সেখানে পৌছা মাত্রই টুপ করে ডুবে যায়। এমন মানুষদের সঠিক পথের দিশা দেখাতে যেয়ে নিজেই দিশেহারা হয়ে যেতাম। কয়েকজন এসেই আকুতি জানাতো ঘুমের ঔষধের। ঘুমিয়ে কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু ভুলে যেতে চায়। কাউকেই এমন সমাধান দিতে ইচ্ছে হতো না। ইচ্ছে হতো এমন কোন সমাধান দিতে যাতে অশান্ত প্রাণগুলো প্রশান্তির সন্ধান পাবে আত্মিক ভাবেই। কোন ড্রাগের প্রভাবে কিছুটা সময় ভুলে থাকবে না নিজের সমস্যার কথা। বরং নিজের সমস্যাকে মেনে নিয়ে সেটার সমাধানের চেষ্টা করবে। সমস্যায় দ্বিগিদিক ছোটার একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে মানুষ আগত সমস্যাকে মেনে নিতেই নারাজ থাকে। যারফলে সমাধান হাতের কাছে থাকা স্বর্ত্বেও নিজ সাধ্যের বাইরে কিছু ভেবে নিয়ে আহাজারি করে, ভীত হয়। মনে পড়লো একটা সময়ে আমি নিজেও এমনটাই ছিলাম। কিন্তু যেদিন মন থেকে সত্যিকার অর্থে মেনে নিয়েছিলাম, দুনিয়াতে এসেছিই পরীক্ষা দিতে। এবং ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়, বিপদআপদ ইত্যাদির দ্বারা আল্লাহ পরীক্ষা করবেন। কিন্তু কখনোই আমার সাধ্যের বাইরের কোন বোঝা আমার উপর চাপাবেন না। সেদিন থেকে যে কোন সমস্যাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গীটাই বদলে গিয়েছিল আমার। এতই অধৈর্য্য স্বভাবের একজন মানুষ ছিলাম আমি সুপার মার্কেটে লম্বা লাইন দেখলে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে খুঁজে বের করা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখেই চলে আসতাম। কারণ অতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য্য আমার ছিল না। কিন্তু দুনিয়া পরীক্ষা ক্ষেত্র মেনে নেবার পর থেকে এমন পরিস্থিতিতে পড়লেই মনেহতো ধৈর্য্যশক্তি বৃদ্ধির পরীক্ষা চলছে আমার। এমন ছোট ছোট পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই নিজেকে ধৈর্য্যশীল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে আমাকে।

তারমানে আপনার অপরিসীম ধৈর্য্যশীলতার গোপন রহস্য এখানে লুকায়িত?

এই প্রথম হাসি ফুটে উঠলো সিনিয়র সহকর্মীর চেহারাতে। ব্যক্তি হিসেবে উনি যথেষ্ট হাসিখুশি। উনার রসবোধও চমৎকার। এটা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। তবে নিজের ব্যক্তি জীবনের আলোচনা বিশেষ করে অতীতের প্রসঙ্গ উঠলেই কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে যান। উনার ব্যক্তিত্বের এই অংশটা প্রায় সময়ই চিন্তার খোরাক জোগায় আমার। কর্মজীবনের দীর্ঘ পথে অসংখ্য মানুষকে উনি তাদের অতীতের নিকষ অন্ধকার থেকে মুক্ত সহায়তা করেছেন। অথচ নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি মন্দ অতীতের বাহুডোর থেকে। অবশ্য একজন ক্যান্সার স্পেশালিষ্ট যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে একজন মনোচিকিৎসকও ভুগতে পারেন মনোরোগে। যাইহোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই।

আমার প্রশ্নের জবাবে হাসি মুখে বললেন, তা বলতে পারো। তবে মূল কথা কিন্তু একটাই। যে কোন পরিস্থিতিকে মেনে নিতে পারাটা। কারণ একটি পরিস্থিতিকে মেনে নিতে পারাটাই হচ্ছে সেই পরিস্থিতি থেকে বেরোবার বদ্ধ তালার চাবি। এই কথাটা বোঝার পর থেকে কোন পরিস্থিতিই আর আমার সামনে এগিয়ে যাবার পথ রোধ করে দাঁড়াতে পারেনি। তাই আমার একটাই চিন্তা ছিল পেশেন্টদের মনে এই একই আত্মপোলব্ধি জাগানো। সমস্যা থেকে পালানোর চেষ্টা না করে ফেস করতে শেখানো। সমস্যার স্বভাবই যত পিছু ছাড়ানোর চেষ্টা করা হয় পেছন পেছন ধাওয়া করে। কিন্তু যখনই মুখোমুখি দাঁড়ানো হয় একপা, দু’পা করে পিছাতে পিছাতে একসময় ঝেড়ে দৌড় লাগায় এবং হারিয়ে যায় দৃষ্টিসীমার বাইরে।

এই পদ্ধতিটা সত্যিই ফলপ্রসূ। আমার অভিজ্ঞতাও বলে যে কোন সমস্যাকে মেনে নিতে পারাটাই আসলে জয়ের পথের প্রথম কদম। তারপর বলুন..

আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি নানারকমের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, ছন্দ-দ্বন্দ্ব নিয়েই আমাদের জীবন। আর এসব তাই পালা ক্রমে আমাদের জীবনে আসতেই থাকবে। সুখ হোক বা দুঃখ কোন অবস্থায় মধ্যেই স্থির থাকা সম্ভব নয় জীবনে। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে বিষণ্ণতা ঘিরে ধরে মনকে। তখন মনের অন্ধকার কোনে কুরআনের একটি আয়াত জাগিয়ে যায় প্রশান্তির প্রদ্বীপ শিখা। সূরা রা’দ এর ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “যারা ঈমান আনে ও আল্লাহর স্মরণে যারা প্রশান্তি লাভ করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্তি খুঁজে পায়।” আল্লাহর স্মরণের মাঝে প্রশান্তি খুঁজে নিতে পারাটা জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি একবার যদি কেউ হাসিল করে নিতে পারে দুনিয়ার কোন অপ্রাপ্তি আর সেই মনকে স্পর্শ করতে পারে না। এই প্রাপ্তি অর্জন কিন্তু খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। এই প্রাপ্তির জন্য শুধু প্রয়োজন নিজ অবস্থানে সর্বাবস্থায় সন্তোষ। যে কোন পরিস্থিতিতেই আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারাটা। এটাও কিন্তু বেশ সহজ। আমাদের জন্য একটা পরিস্থিতি যতই নাজুক হোক না কেন দৃষ্টি নীচের দিকে করলেই তারচেয়েও নাজুক পরিস্থিতির মোকাবিলায় রত অসংখ্য মানুষের দেখা মেলে। তাই নিজ অবস্থানকে সন্তোষ ভরা মেনে নেবার কথাটাই প্রথম বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম পেশেন্টদের। সেই চেষ্টাটাকে জয়ের মুখ দেখানোটা অবশ্য বেশ কঠিন ছিল।

হুম, যখন কোন পরীক্ষা আসে তখন নিচের দিকে তাকানোর সেন্সটাই কাজ করা ছেড়ে দেয় যেন। নিজেকেই তখন জগতের সবচেয়ে অভাগা মনেহয়। আপনার কখনো নিজেকে এমন মনে হয়েছে? কখনো কি ভেতর থেকে কেউ বলেছে তোমার মতো দুর্ভাগা জগতে কেউ নেই? যদি বলে থাকে ঐ পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে বুঝিয়েছিলেন?

হেসে বললেন, যখন থেকে শরীয়তের আলোকে চিন্তা করতে শিখেছিলাম তখন থেকে আর কখনোই নিজেকে দুর্ভাগা মনেহয়নি। যখনই কোন সমস্যা এসেছে, আমি কোনকিছু চেয়েছি কিন্তু পাইনি। এমন পরিস্থিতি গুলোকে নিজের জন্য পরীক্ষা ভেবে নিয়েছি। যদিও ভাবাটা সহজ হতো না বেশির ভাগ সময়ই। লক্ষ্য থেকে বারবার ফসকে যেতো চাইতো মন। দুঃখবিলাসে মগ্ন হতে চাইতো। কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতাম কিছুতেই হাল ছেড়ে না দেবার। আসলে যে কোন পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ে দেবার অসংখ্য কারণ থাকে আমাদের কাছে। কিন্তু হাল ছেড়ে না দেবার জন্য একটা কারণই যথেষ্ট হয়। যেটা হচ্ছে রব্বের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি। জীবনের লক্ষ্যটাকে যদি রব্বের সন্তোষ অর্জনে স্থির করা যায়, তাহলে কঠিন থেকে কঠিন পরিস্থিতিতেও আশায় দিয়া নিভু নিভু করে হলেও প্রজ্জলিত থাকে অন্তরে……।

 

প্রেমিকার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করলেন ছাত্রলীগনেতা


নারী সংবাদ


দেড় বছরের প্রেমের সম্পর্ক। প্রেমিকার বাবা জানার পর প্রেমের প্রস্তাবে সম্মতি না দেয়ায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন প্রেমিক।

সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আলমপুর গ্রামের মৃত ইসলামের পুত্র আমিনুল ইসলাম (৩০) দুবলাই গ্রামের মৃত কোরবান আলী মন্ডলের পুত্র আব্দুর রউফ সাইদ (৩৫) এর কন্যা সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষে পড়ুয়া ছাত্রী সোনিয়ার সাথে প্রেমের সর্ম্পক। সোনিয়ার পিতা প্রেমের সম্মতি না দেয়ায় বুধবার দুপুরে আরআইএম ডিগ্রি কলেজের পাশে এলাপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। সাইদকে কাজিপুর হাসপাতালে ভর্তি করার পর বিকাল ৫টায় তিনি মারা যান।

পুলিশ কাজিপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে আটক করেছে। পুলিশ লাশ উদ্বার করে পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানান নিহতর পরিবারের সদস্যরা।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ফেনীতে ‘কিশোর গ্যাং’, উদ্বিগ্ন অভিভাবক


নারী সংবাদ


ফেনী শহরের পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং হিসেবে পরিচিত উঠতি বয়সী সংঘবদ্ধ বখাটেদের নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে অভিভাবকরা। তাদের দমনে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য শহরে বেশ কিছুদিন ধরে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে জেলায় সংগঠিত খুন, ছিনতাইসহ বেশ কিছু অপরাধ ঘটনায় উঠতি কিশোরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।

একাধিক লোহর্ষক হত্যার তদন্তে দেখা গেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব অপরাধের সূত্রপাত। পাড়া-মহল্লার অলি-গলি এমনকি স্কুল-কলেজের সামনে তারা পথচারীদের উত্ত্যক্তও করে। ইতোমধ্যে এসব অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ক’দিন আগে শহরের শাহীন একাডেমী সড়ক, ফনেী সরকারি কলেজ গেইটসহ তিনটি স্থান থেকে ১১ কিশোরকে আটক করা হয়। দৃষ্টিকটু হওয়ায় তাদের চুল কেটে দেয়া হয়। আটককৃতদের অভিভাবকদের থানায় ডেকে নেয়া হয়। পরে তাদের সন্তানদের খোঁজ-খবর রাখা এবং তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া। পরে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

সূত্র আরো জানায়, এসব অপরাধ দমনে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম শহর সহ বিভিন্ন স্থানে টহল অব্যাহত রেখেছে। একজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রতিটি টিমে ৭ জন সদস্য রয়েছেন।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া বলেন, কোন অবস্থায় কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবেনা। উশৃঙ্খল চলাফেরা, আড্ডারত এমনকি মোটর সাইকেলে তিনজন চললেই আটক করা হবে।

ফেনী পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহতাব উদ্দিন মুন্না বলেন, কিশোর অপরাধ বাড়ার পেছনে চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকা অন্যতম কারণ। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই নয়, অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই। সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ ও যত্নশীল হওয়া খুবই জরুরী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক জানান, স্কুল পর্যায়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে কথিত বড় ভাইদের অনুসরণ করতে গিয়ে শিশু-কিশোররা বিপথগামী হচ্ছে। অনেকে দলভারী করার জন্য শিশু-কিশোরদের তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে জেলায় সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধে এমন সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে এসেছে।

একজন গণমাধ্যম কর্মী জানান, ফেনীর বহুল আলোচিত একরাম হত্যাকাণ্ড, মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত রাফি হত্যাকাণ্ড, স্কুল ছাত্র আরাফাত হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কিছু লোহহর্ষক ঘটনায় কিশোররা জড়িত রয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাং কালচার খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সর্বাগ্রে অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানে এসব ব্যাপারে শিশু-কিশোরদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। তিনি তার প্রতিষ্ঠানে (ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুল) শিক্ষার্থীদেরকে এসকল বিষয়ে নিয়মিত নজরদারী করেন। ওই স্কুলে কোন ছাত্র অর্ধ ইঞ্চির উপর চুল রাখতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে তিনি জানান।

ফেনী মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন জানান, এ ধরনের ঘটনায় ১২ জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, দেশব্যাপী কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। তারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনোখুনি করেছে। ফেনীতে কিশোর গ্যাং যেন গড়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বেশ কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়ছে।

তিনি আরো বলেন, দুই-তিন কিংবা চারজন মোটর সাইকেলে মহড়া, রাতে আড্ডা, মাদকাসক্ত, স্কুল পালিয়ে ইভটিজিং করলে তাদের আটক করা হচ্ছে।