মনের জানালা
পাকিস্তানে আজও যারা ১৯৭১ এ সঙ্ঘটিত যুদ্ধ বিষয়ে হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের ব্যপারে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে আমি তাদের একজন’। বাকহারা হয়ে গেলাম। শুধু বলতে পারলাম, ‘আপনার তো তখনোও জন্ম হয়নি, হলেও হয়ত মায়ের কোলে দোল খাচ্ছিলেন। আপনি কেন নিজেকে দায়ী করছেন?’ কিন্তু আসলে আমি অনেক বেশি আপ্লুত বোধ করছিলাম। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরবর্তী প্রজন্ম, আমাদের দাদাদাদী নানানানীরা আমাদের রূপকথার পরিবর্তে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতেন। আমাদের আত্মীয়স্বজন মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের জন্য প্রশংসিত হতেন, অহংকার করে নিজেদের আহত হবার কাহিনী বলতেন, নিহত বন্ধুজনের গল্প করতেন। আজ ৪৭ বছর পর এই নিয়ে অনেক আলোচনা গবেষণা তর্ক বিতর্ক অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় গণমানুষের মনের অনুভূতিগুলোকে আমাদের মত করে আর কেউ উপলব্ধি করার সুযোগ পায়নি। আমার ছোট ভাইরাও নয়। মনে হল, আমার দাদা দাদী নানা নানী উপস্থিত থাকলে মনে প্রশান্তি অনুভব করতেন। মনে হল, সৎ চিন্তার ধারণকারী বাবামা সৎ চিন্তার বাহক সন্তান গড়ে তুলতে পারেন। তাঁরা যেমন ইসরাইলের অন্যায়ের বিরোধিতা করেছেন, তাদের সন্তান পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরোধিতা করেছেন। আমরা কি আমাদের সন্তানদের এভাবে গড়ে তুলতে পারব?
সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যপার হল, আরব ক্রিশ্চানরা যেমন সালাম বিনিময় করে; ‘ইনশা আল্লাহ’, ‘মাশা আল্লাহ’ ইত্যাদি শব্দাবলী স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করে; তিনিও দেখলাম স্বাভাবিকভাবেই সালাম দিলেন, ‘আবার দেখা হবে ইনশা আল্লাহ’ বলে বিদায় নিলেন। দুঃখ হল তাঁরা সত্যের এতটা কাছাকাছি থেকে কেবলমাত্র আভিজাত্যের অহমিকাবোধের কারণে সত্যকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। তিনি নিজের নামটি পর্যন্ত বলেননি, কিন্তু তাঁর পরিচিতির দ্বিতীয় অংশটিই ছিল তাঁর ধর্মীয় পরিচয়। অথচ ক্যনাডায় প্রচুর বাংলাদেশীদের দেখেছি বাঙ্গালীত্ব এবং ইসলামের সকল চিহ্ন মিলিয়ে দেয়ার জন্য সে কি আপ্রাণ প্রচেষ্টা!
এজন্যই পশ্চিমে অবস্থানরত ইসলামিক স্কলাররা বলেন, ‘যারা এসব দেশে থাকতে আগ্রহী, সেসব মুসলিমদের উচিত এসব দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। তাদেরই এসকল দেশে থাকা উচিত যারা এসকল দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়’। কারণ প্রথম শ্রেণীর লোকজন দুই এক প্রজন্মের পর ইসলাম থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমার এক ঈজিপশিয়ান-ক্যানাডিয়ান সহকর্মী ছিল। আপনারা হয়ত জানেন এদের অনেকেই দেখতে পুরোপুরি শ্বেতাঙ্গদের মত। শুভ্র ত্বক, সোনালী চুল। সে বিয়ে করেছিল এক শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে। সুখে সংসার করছে দুই বাচ্চা নিয়ে। বসের সাথে, বন্ধুদের সাথে নিয়মিত পানশালায় যাতায়াত, মদ্যপান। একদিন কথাটা এক মিটিংয়ে আমার সামনে প্রকাশ হয়ে গেলে সে কেন যেন প্রচণ্ড লজ্জা পেল, লজ্জায় গাল গলা লাল হয়ে গেল। পরে কিচেনে কফি বানাতে গিয়ে দেখা হলে সে হঠাত অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল, ‘আমার মা কিন্তু জুমায় যায়’। আমি বললাম, ‘বেশ, ভাল কথা। তুমি নামাজ পড় কিনা’। সে বেশ লজ্জা লজ্জা চেহারা করে বলল, ‘আমি নামাজ পড়তে জানিনা’। তারপর আর কথা খুঁজে না পেয়ে বলল, ‘তোমাদের তো কদিন আগে ঈদ গেল, হ্যাপি ঈদ’। কোনক্রমে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল কিচেন থেকে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম, ‘আহা, ছেলেটা ঈদে কি বলতে হয় সেটাও শেখেনি। এই দায় কার?’