banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

বিয়ে ভাঙার হার বাড়ছে নারী-পুরুষ পরস্পরের সহমর্মী হতে হবে

বিয়ে ভাঙার হার বাড়ছে
নারী-পুরুষ পরস্পরের সহমর্মী হতে হবে


দাম্পত্য


বিয়ে বা সংসার ভেঙে যাওয়ার ঘটনা রাজধানীসহ সারা দেশেই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০০৬ সালে যেখানে প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল মাত্র দশমিক ছয় জন, সেটি বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১-এ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাত বছরে রাজধানীতে তালাক বেড়েছে অন্তত ৩৪ শতাংশ। তালাকের আবেদনকারীদের বেশির ভাগই নারী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিয়ে ভাঙার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক পটপরিবর্তন, ধর্মীয় অনুশাসনে শৈথিল্য ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করছেন। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়াকেও বিচ্ছেদের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, সারা দেশে গত সাত বছরে তালাকের প্রবণতা বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তালাক হয়েছে বরিশালে। প্রতি হাজারে ২ দশমিক সাত জন। সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম ও সিলেটেÑ প্রতি হাজারে শূন্য দশমিক ছয় জন। শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাকের ঘটনা বেশি ঘটছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে তালাক দেয়ার আবেদন বেড়েছে। তালাকের আবেদনের প্রায় ৭০ শতাংশই স্ত্রীর পক্ষ থেকে এসেছে। গুলশান ও বনানীর অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও বিত্তবান নারীরা তালাকের জন্য আবেদন করছেন বেশি। স্ত্রীর করা আবেদনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বামীর সন্দেহবাতিক মানসিকতা, পরকীয়া, স্বামী প্রবাসে থাকা, যৌতুক, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত ইত্যাদি। স্বামীর পক্ষে আবেদনের ক্ষেত্রেÑ স্বামীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে স্ত্রী নিজের ইচ্ছায় চলা, তার বদমেজাজ, সংসারের প্রতি কম মনোযোগ দেয়া, ধর্ম-কর্মে উদাসীনতা, বন্ধ্যত্বসহ বিভিন্ন কারণ প্রাধান্য পেয়েছে।
জানা যায়, এখন সামাজিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা বাড়ায় মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে তার পরিবার এগিয়ে আসছে। মেয়েরা আগে তালাকপ্রাপ্ত হলে পরিবারে আশ্রয় তো পেতেনই না, বরং তাদের হেয় করা হতো। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। নারীর পেশাগত উন্নয়ন হয়েছে, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে এবং সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। সেই সাথে তারা হয়ে উঠেছেন অধিকার সচেতন। তারা আর লোকলজ্জার ভয়ে পুরুষের কর্তৃত্ব ও আধিপত্যবাদী মনোভাবের সাথে সহজে আপস করছেন না, বরং অশান্তি এড়াতে বিয়ে ভাঙার ঝুঁকি নিচ্ছেন। এতে করে ভেঙে যাওয়া সংসারের স্বামী-স্ত্রীর মানসিক শান্তি বিঘিœত হচ্ছে। একধরনের বোবাকান্না অহরহ বুকে চেপে তাদেরকে নানা ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হচ্ছে ভেঙে যাওয়া পরিবারের শিশুরা। চরম অনিশ্চয়তার বোধে আক্রান্ত এসব শিশুর মানসিক স্থিতি নষ্ট হচ্ছে। সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে তাদের বেড়ে ওঠা হয়ে পড়ছে সুদূরপরাহত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল করিম বলেছেন, আমাদের দেশের স্কুলগুলোতে যদি মূল্যবোধ চর্চার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এটা কিছুটা কমবে। দাম্পত্য বিচ্ছেদের বিষয়ে বিশিষ্ট নারী সংগঠক ও মানবাধিকার প্রবক্তা ফরিদা আখতার মনে করেন, এ রকম ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে নৈতিকতার দিকটির প্রতিও নজর দেয়া দরকার। তা ছাড়া, এ রকম ভাঙা সংসারের শিশুদের বা সিঙ্গেল প্যারেন্ট শিশুদের লালন-পালন ও শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব পালন করা উচিত। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, যে কারণেই তালাক বা বিচ্ছেদ হোক না কেন, এর কুফল পড়ে প্রধানত সন্তানের ওপর। একটি ভাঙা সংসারের শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় না; এক রকম প্রতিকূলতার মধ্যে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বেড়ে ওঠে। ফলে পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে নানা জটিলতা দেখা দেয়।
আমরা বলতে চাই, এক শ্রেণীর উগ্র নারীবাদীর প্রচারণার কারণে আমাদের অনেক সাধারণ নারী-পুরুষ পরস্পরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবার গঠন করার জন্য নারী ও পুরুষকে যুদ্ধংদেহী অবস্থানে না গিয়ে সহমর্মী, সহযোগী বা বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্যে আসতে হবে। এ ছাড়া, পারিবারিক সুখের আর কোনো বিকল্প নেই।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।