All posts by Oporajita

 

ঝড়ের দিন: পর্ব-২

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


নজর আলির বাড়ি গ্রামের আর সকল বাড়ির মতো নয়। বিশাল বড় একটা আড়তের মালিক হওয়ার সুবাদেই হোক কিংবা এটা-সেটা ইলিগ্যাল ব্যবসায় টাকা খাটানোর সুবাদেই হোক গ্রামের সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর বাড়িটাই নজর আলির। তার বাড়ির সামনে দিয়ে যে-ই যায় সে-ই বলে, ‘ নজর আলির নজর বেশ উঁচু। ‘ বাড়ির সামনে আছে বিশাল বড় একটা উঠান। আর পেছনে পেল্লাই এক পুকুর। নজর আলি অবশ্য সেটাকে দিঘী বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। বাড়ির আর সকল ঘরের কথা বাদ, শুধুমাত্র বৈঠকখানাতেই কমপক্ষে দশ জন লোক আয়েস করে বসে যেতে পারে। সেই বৈঠকখানার চেহারাই আজ পাল্টে গেছে। মেহমান আসবে বলে সুন্দর করে সাজানো সবকিছু। নজর আলির মতো মানুষদের স্বভাব সাধারণত পোষা কুকুরের মতো। মালিককে খুশি করে দেয়ার শেষ চেষ্টাটা পর্যন্ত তারা ছাড়তে চায় না।
নজর আলি মেহমানদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বাইরে উঠোনে বসে ঝিমুচ্ছিলেন। হঠাৎ পায়ের শব্দে মুখ তুলে তাকালেন, দেখতে পেলেন সবুজ মিলিটারিদের নিয়ে আসছে। তিনি দৌঁড়ে উঠোনে নামলেন।
‘ আসসালামু আলাইকুম, মেজর সাব। আইয়্যে আইয়্যে। ‘
মেজর সিপাহীদেরকে বাইরে পাহারা দিতে বলে নজর আলি আর সবুজের সাথে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেলেন। নজর আলি তাদেরকে তার সুদৃশ্য বৈঠকখানায় নিয়ে বসালেন।
মেজর সাহেব শুধু উর্দু আর ইংরেজি বোঝেন। এদিকে নজর আলির উর্দু খুব একটা আসে না। তাই সব কথাবার্তা সবুজের মাধমেই হতে লাগলো। প্রথমেই মেজর জানতে চাইলেন গ্রামবাসীদের মধ্যে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কেমন? জবাবে নজর আলি এক গাল হেসে বললেন, ‘ সে আগেই অনেক কম আছিলো। আপনারা স্যার গ্রামে আসতেসেন শুইনা বেবাক্কেই ভাগসে। দুই একটা পরিবার মাটি কামড়ায়া আছে শুধু। ‘ উত্তরটা সবুজ মেজরকে উর্দুতে অনুবাদ করে দিলো।
মেজর তারপর জানতে চাইলেন ক্যাম্প করার জন্য গ্রামের কোন জায়গাটা সবচেয়ে ভালো হবে? নজর আলি প্রথমে তার পুরনো গোলাঘরের কথা বলতে যাচ্ছিলেন। তারপর হঠাৎ করে তার মনে এলো গ্রামের স্কুলের কথা। আজকাল তপেশ মাস্টারের বাড় বড্ড বেড়েছে! সেই শালার স্কুলে মিলিটারি ক্যাম্প বসালে সবদিক দিয়েই ভালো হয়। মেজর সাহেবও ক্যাম্প করার জন্য ভালো একটা জায়গা পেয়ে তার উপর খুশ হবেন, সেই সাথে সেই তপেশ মালাউনটাকেও উচিত শিক্ষা দিয়ে দেয়া যাবে। নজর আলি সবুজকে বলে দিলো মেজর সাহেবকে স্কুলঘরের কথাটা বলতে। সবুজের থেকে স্কুলঘরের কথাটা শুনে মেজর সাহেব বেশ সন্তুষ্ট হলেন। গ্রামে ঢোকার পর স্কুলটা দেখেছেন তিনি। গ্রামের স্কুল হিসেবে বেশ বড়ই বলা যায় সেটাকে। ক্যাম্প বসানোর জন্য একদম আদর্শ জায়গা। নজর আলি দেখলেন মেজর সবুজের সাথে কথা বলছেন। তিনি আস্তে করে উঠে পড়লেন। মেজর সাহেবের নিশ্চয়ই ক্ষিদে পেয়ে গেছে। বড়বিবি টেবিল সাজিয়েছে কিনা কে জানে।
নজর আলির বড়বিবি জোহরা বেগম মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ভালো। ধীর-স্থির স্বভাব তার। তাকে কেউ কখনো উঁচু গলায় কথা বলতে শোনেনি। তাকে কিছু না জানিয়েই নজর আলি যখন ছোটবিবিকে বিয়ে করে ঘরে এনেছিলেন সেদিনও শান্ত ছিলেন তিনি। নজর আলি পান চিবোতে চিবোতে নতুন বউয়ের ঘরে ঢুকে ছিটকিনি লাগানোর আগ পর্যন্ত এক ফোঁটা চোখের পানি পড়েনি তার। তারপর সেই রাতে খুব কেঁদেছিলেন জোহরা বেগম। তার কান্নায় কারো কিছু যায় আসেনি। কেউ ছুটে এসে বলেনি, ‘ সব ঠিক হয়ে যাবে, মা।’ পূর্ণ নারীত্বের স্বাদ কখনোই পাননি তিনি। স্বামীর ভালোবাসা আর সন্তান সুখ এ দুটোই সৃষ্টিকর্তা দেননি তাকে। এখন আর এসব পোড়ায় না তাকে। শুধু আক্ষেপ রয়ে গেছে, ম্লান হয়ে গেছে অনুভূতি।
ছোটবিবিকে কখনোই সতীন হিসেবে ভাবতে পারেননি জোহরা বেগম। বরং ছোট বোনের মতো বুকের ভেতরে আগলে রেখেছেন সবসময়। নজর আলি যখনই শাসন করতে যান তার ছোটবিবিকে, বট বৃক্ষের মতো আড়াল করে রাখেন তিনি মেয়েটিকে। আজো যখন নজর আলির থেকে শুনেছেন রাতে কারা আসবে মেহমান হয়ে, তিনি ছুট্টে এসেছেন ছোটবিবির ঘরে। ঘরের দোরে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন জোহরা বেগম। আস্তে করে ডাক দিলেন, ‘ বইনা, সজাগ আসোস? ‘
‘ হ বুবু, আহো না ঘরে। ‘
জোহরা বেগম ঘরে ঢুকলেন। দেখলেন ছোটবিবি বিছানার উপরে বসে কাঁথা সেলাই করছে। জোহরা বেগম প্রথম যখন ছোটবিবিকে দেখেছিলেন, অবাক হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়েছিলেন। তার কাছে মনে হচ্ছিলো স্বর্গ থেকে কোন হুর ভুল করে পৃথিবীতে নেমে এসেছে। ছোটবিবির গাত্র বর্ণ ধবধবে ফর্সা, চিকন ঠোঁট, সরু নাক। চুল ছেড়ে দিলে একদম কোমরে নেমে আসে। পেটে বাচ্চা আসার পর সেই রূপ যেন আরো খুলেছে। মেয়েটার দিকে তাকালে জোহরা বেগম যেন তার নিজের অতীতকেই দেখতে পান।
‘ কি হইলো বুবু? এমন কইরা চায়া আছো ক্যান? ‘
‘ এমনেই রে বইন। তোরে দেখি। ‘
‘ আমি কি যাত্রাপালার নায়িকা যে আমারে দেখবা? ‘ বলে খিলখিল করে হেসে উঠে ছোটবিবি। তার সেই হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে।
‘ রাইতেবিরেতে মেয়েমানুষরে এত হাসতে নাই। কর্তার অমঙ্গল হয়। ‘
ঠোঁট ওল্টালো ছোটবিবি। জোহরা বিবির হঠাৎ করে মনে পড়লো তার স্বামী সাবধানবাণীর কথা।
‘ বইন, একটু বাদে মেহমানরা আইবো। তুই কিন্তু একদম ঘর থিইকা বের হবি না। ‘
‘ ক্যা বুবু? ‘
‘ হেরা মানুষ ভালা না। সুন্দর মেয়েমানুষ দেখলে হুশ থাকে না। ‘
ছোটবিবি মুখ নিচু করে প্রায় শোনা যায় না এমন স্বরে বললো, ‘ আমাগো স্বামীর মতোন। ‘
জোহরা বিবি চোখ গরম করে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় দরজার কাছে আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলেন। নজর আলি এসে দাঁড়িয়ে আছেন দরজার কাছে!
‘ কি হইলো, বড়বিবি? টেবিল সাজাইসো? ‘
‘ এইতো সাজাইতেসি। ‘
‘ তাড়াতাড়ি করো। মেজর সাহেব কতক্ষণ হইসে বইসা আসেন। হুশ থাকে কই? ‘
জোহরা বেগম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। ছোটবিবির দিকে একদৃষ্টিতে খানিক চেয়ে থেকে নজর আলিও বেরিয়ে গেলেন। ছোটবিবি ঘরে একা হয়ে গেলো, যেমনটা সে বরাবরই থাকে।
খাওয়াদাওয়ার সময় টেবিলে কোন কথা হলো না। জোহরা বেগমের রান্নার হাত ভালো, মেজর সাহেব খুব তৃপ্তি সহাকারেই খেলেন।ল বাকি সিপাহীদের আলাদা ঘরে খেতে দেয়া হলো। খাওয়া শেষ করে নজর আলি মেজর আর সবুজকে নিয়ে উঠোনে চলে এলেন। মেজর উর্দুতে কিসব বললেন নজর আলিকে। বেশিরভাগই বোধগম্য হলো না তার। সবুজ বুঝিয়ে বললো। মেজর বলেছেন কয়েকদিনের ভেতরেই আলতানগরে ক্যাম্প বসিয়ে দেয়া হবে। আর একটা কমিটি গঠন করা হবে, পিস কমিটি। মেজর সাহেব নজর আলির উপর খুশ হয়েছেন, তাকেই বানাবেন সেই কমিটির চেয়ারম্যান। তবে পরেরবার থেকে তার সাথে মালাউনের ভাষা বাংলাতে কথা না বলে উর্দুতে কথা বললেই তিনি খুশি হবেন। সবুজের কথা শুনে নজর আলি খুশিতে একদম গদগদ হয়ে গেলেন। তিনি কথা দিলেন এখন থেকে সাচ্চা পাকিস্তানি নাগরিকের মতোই উর্দুতে কথা বলবেন। রাত বেশি বেড়ে গেলে কুয়াশাও বেড়ে যাবে। তাই মেজররা রওয়ানা হয়ে গেলেন। আগের মতোই টর্চ হাতে সবুজ সামনে। নজর আলি তাদের গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেজর সাহেবের মতো মানুষই হয় না। পাকিস্তানটা যাতে ভেঙ্গে না যায় সেকারণে কত কষ্ট করে ছুটে এসেছেন সেই সুদূর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। আর মালাউনের বাচ্চারা কিনা স্বাধীনতা চায়! এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে গেলেন নজর আলি। আজ রাতে ভালো ঘুম হবে তার।
কুয়াশা বাড়ছে। আলতানগরের পথ-ঘাট অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে দৃশ্যপট থেকে। জোনাকিরা পর্যন্ত পথ হারিয়ে দিগ্বিদিক ঘুরছে। আলতানগরের আকাশে বাতাসে যে অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে সেই অন্ধকারের সীমা ছড়িয়ে গেছে বহুদূর। আলতানগরের মতো এমন হাজারো গ্রাম ডুবে আছে এই অন্ধকারে। এখন অন্ধকারের যুগ। মানুষের মতো দেখতে নিষ্প্রাণ চোখের পিশাচের যুগ। জোনাকিরা এখন মৃত। (চলবে)

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

ঝড়ের দিন: পর্ব – ১

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


আলতানগরে অন্ধকার নেমে এসেছে। শীতের বিকেল, দেখতে না দেখতেই ফুরিয়ে যায়। তারপর বিশ্ব চরাচর আঁধার করে দিয়ে নেমে আসে রাত। নজর আলি তার বাড়ির বারান্দায় বসে সেই রাতেরই অপেক্ষা করছেন। আজ রাতে তার বাড়িতে কিছু মেহমান আসবেন। তাদেরকে ভালোভাবে আপ্যায়ন করতে হবে, নইলে একেবারে জীবন সংশয়। নজর আলি তার বড় বিবিকে ডাক দিলেন। রান্নাবান্নার কদ্দুর কি হলো সেটা জানা দরকার।
‘ বড়বিবি। এ বড়বিবি। ‘
জোহরা বিবি দৌড়ে আসলেন। স্বামী পরিচয়ের এই অমানুষকে ভয় পান তিনি।
‘ দুই ডাক দেয়া লাগলি ক্যান? ‘
জোহরা বিবির চোখ মাটির দিকে। সামনে বসে থাকা এই মানুষটার মুখের উপর টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করার সাহস তার নেই।
‘ রাইতে যে মেহমান আইতেসে হেইডা মনে আছে তো? ”
‘ জে। ‘
‘ যা যা পাক করতে কইসিলাম সব পাক করসো তো? তেনারা কিন্তু গোশত খুব শখ কইরা খান। কি হইলো কথা কও না ক্যান? ‘
‘ জে, সব রান্না শেষ করসি। গোশত আমি নিজে দাঁড়ায়া রান্না করসি। ‘
‘ ঠিক আছে। যাও তাইলে। না না, দাঁড়াও। ‘
জোহরা বিবি ঘুরে চলে যাচ্ছিলেন। স্বামীর ডাকে আবার ফিরলেন।
‘ জে? ‘
‘ ছোটবিবিরে কয়া দিয়ো আইজ রাইতে যাতে ঘর থেইকান না বাইর হয়। ‘
জোহরা বিবির চোখে ভয় ফুটলো। নজর আলির মেহমান কারা সেটা তিনি ভালো করেই জানেন। আর সেই মেহমানদের কুকীর্তির কথা আর সবার মতো তার কানেও এসেছে।
‘ আইচ্ছা ‘, বলে জোহরা বানু দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকে গেলেন। ছোট বিবিরে সাবধান করতে হবে। আইজ রাতে যারা ঘরে আসছে তারা যে নজর আলির থেকেও বড় পিশাচ!
নজর আলি তার বড়বিবির গমনপথের দিকে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে রইলেন। একটাসময় খুব সুন্দরী ছিলো তার বড়বিবি। এখন বার্ধক্যের ঘুণপোকায় শরীর ক্ষয়েছে। নতুন শরীরের নেশায় কদিন আগে আরেকটা বিয়ে করেছেন তিনি। তবু নেশা মিটে না। গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে কোন যুবতীকে হাঁটতে দেখলেই শরীরে কেমন অদ্ভূত শিরশিরানি উঠে। অবশ্য এ কারণেই গাঁয়ের লোকেরা তাকে লুইচ্চা নজর ডাকে। যদিও সবই তার পশ্চাতে।
‘ বাইঞ্চোদের দল ‘, দাঁত কিড়মিড় করেন নজর আলি। মালাউনের বাচ্চাদের কেমন করে সিধা করতে হয় সেটা ভালো করে জানা আছে তার।
রাত বাড়ছে। জোনাকিরা সবে বাসা থেকে বের হচ্ছে। ভালো করে তাকালে বাঁশঝাড়ের কোণায় কোণায় একটা দুটো আলোর ফুটকি চোখে পড়ে। বাঁশঝাড়ের পাশেই হাঁটাপথ। আলতানগরের একদম মধ্যখান দিয়ে সরু ফিতার মতো চলে গেছে সেই মেহেদিগঞ্জ পর্যন্ত। অন্য সকল দিনে এসময়ে কেউ বেরোয় না। সন্ধ্যার একটু পর খেয়েদেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। তাই রাত হলে শেয়ালের পাল আর নকূল বাউল ছাড়া আর কেউ চলাচল করে না এই পথ দিয়ে। নকূল বাউল পাগলাটে মানুষ। তার দিনও যা, রাতও তাই। রাত-বিরেতে গান গেয়ে গেয়ে পথ হাঁটা তার পুরনো অভ্যেস। মেহেদিগঞ্জে আজ একটা আসর ছিলো। সেটা শেষ করে বাড়ি ফিরছে নকূল। আসর জমজমাট ছিলো, তাই মনে তার বড় সুখ। আপনা থেকেই গলা দিয়ে গান বেরুতে লাগলো। নজর মেম্বারের বাড়ি থেকে খানিক দূরে এসে নকূল দাঁড়িয়ে গেলো। ওপাশ থেকে টর্চের আলো এসে তার মুখে পড়েছে। টু সেল ব্যাটারির টর্চ, ওপাশের কিচ্ছু ঠাওর করতে পারলো না নকূল।
‘ নকূল, এত রাইতে এনো কি করো? ‘
টর্চটা নেমে গেলো। নকূলের সামনে ছয়-সাত জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে শুধু একজন তার পরিচিত, সবুজ। টর্চটা সে-ই মেরেছিলো। সবুজের সাথে বাকি যারা আছে তারা মিলিটারি। পাকিস্তানি মিলিটারি।
‘ জলসা ছিলো, এখন ঘরে ফিরতাসি। ‘ নকূল ভালো করে তাকালো মিলিটারিদের দিকে। ছয় জনের মধ্যে পাঁচজনই সাধারণ সৈন্য। খাকি পোশাক, মাথায় সবুজ হ্যালমেট। প্রত্যেকের পিঠে একটা করে করে বন্দুক, ধারালো বেয়নেট সহ। আর একজনকে দেখে মনে হচ্ছে অফিসার। নকূল যদি ইংরেজি পড়তে পারতো তাহলে বুঝতে পারতো সেই অফিসারের বুকের কাছে লেখা আছে – মেজর ওয়াসিম খান। মেজর সবুজকে কিসব যেন বললেন। উর্দু বোঝে না নকূল, তাই হা করে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে। মেজরের কথা শেষ হওয়ার পর সবুজ নকূলের দিকে ফিরে বললো, ‘ মেজর সাব জানতে চাচ্ছেন তুমি মুসলমান নাকি মালাউন? ‘
‘ জে আমি বাউল মানুষ। প্রকৃতি আমারে জন্ম দিসে, মইরা গেলে প্রকৃতিই আবার নিয়া যাবে। সৃষ্টিকর্তা বলতে আমি আমার মাটিরেই চিনি। আলাদা কইরা কোন ধর্মের গান আমি গাই না, সবুজ। তাই মেজর সাব রে কয়া দাও আমি মুসলমানও না, আবার মালাউনও না। আমি মানুষ। ‘
সবুজ মেজরের কানে গিয়ে ফুসুরফুসুর করে কিসব বললো। সাথে সাথে মেজরের মুখের ভাব কেমন বদলে গেলো। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই মেজর সামনে এগিয়ে এসে নকূলের তলপেট বরাবর বুট দিয়ে সজোরে একটা লাথি দিলেন। নকূল দু হাত দূরে ছিটকে পড়লো। মেজর দাঁত কিড়মিড় করে করে বলে উঠলেন, ‘ সব বাঙ্গাল সালে মালাউনকা বাচ্চে। বেয়নেটসে গাঁড়দো ইসে। ‘
সিপাহীরা কাঁধ থেকে বন্দুক নামিয়ে এগিয়ে এলো নকূলের দিকে। তারপর শুরু হলো এলোপাথাড়ি বেয়োনেট চার্জ। আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলো নকূলের আর্তচিৎকারে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাটি। রক্তের স্রোত সবুজের পা পর্যন্ত আসা মাত্র আর সহ্য করতে পারলো না সে। বসে পড়লো পথের তারপর হড়বড় করে বমি করে দিলো। এদিকে সিপাহীরা কাঁটাচামচ দিয়ে মোরব্বা গাঁথার মতো বেয়োনেট দিয়ে গেঁথেই যাচ্ছে নিথর নকূলকে। অবশেষে মেজর থামতে বলার পর থেমে গেলো তারা। ততক্ষণে সবুজ কিছুটা সামলে নিয়েছে নিজেকে। মেজর সবুজকে হুকুম দিলেন নকূলের লাশটা পথের ধারে ফেলে রাখতে। সবুজ সামনে এগিয়ে এসে নকূলের লাশের দিকে তাকাতেই আবার প্রচণ্ডভাবে অসুস্থ বোধ করতে লাগলো। বেয়োনেটের খোঁচায় নকূলের ডান চোখটা বেরিয়ে ঝুলে আছে গালের কাছে। বাম চোখ বলে কিছু নেই। অক্ষিকোটরের ভেতরে চোখ থেঁতলে গেছে। মুখের বাকি অংশে আলাদা করে নাক ঠোঁট কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কণ্ঠনালি ফালা ফালা করে ফেলা হয়েছে। শরীরের নিচের দিকের অবস্থাও বর্ণনাতীত। সবুজ কোনরকমে লাশের পা দুখানা ধরে টানতে টানতে রাস্তার পাশে এনে ফেললো। তারপর বিবর্ণ মুখে মেজরের সামনে গিয়ে বলল,’ হো গায়া, মেজর সাব। ‘ মেজর কিছু বললেন না, শুধু হাত দিয়ে ইশারা করে আবার হাঁটা শুরু করার নির্দেশ দিলেন। এ গ্রামের মেম্বার নজর আলির বাড়িতে আজ তাদের দাওয়াত আছে। গ্রামে ক্যাম্প বসাতে লোকটার সাহায্য দরকার হবে তার। সবুজের দেখানো পথে এগিয়ে চলা মিলিটারির ছোট্ট দলটা আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। আর পেছনে পথের ধারে অবহেলায় তাচ্ছিল্যে গায়ে ধূলো রক্ত মেখে পড়ে রইলো নকূল বাউলের নিথর দেহ। পাশে তার প্রিয় একতারা। আলতানগরের পথেঘাটে আর কেউ কখনো দেখবে না নকূলকে। রাতবিরেতে বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে আর ভাসবে না নকূলের দরাজ গলা। একতারার ঝংকারে আর কেউ কখনো বলবে না, ‘ নকূল, তুমি একখান হীরা আছো বাহে! ‘ ঘুমিয়ে গেছে নকূল। পরম শান্তিতে সে তার প্রকৃতি মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। বাতাসে হঠাৎ মাতম উঠলো। নকূলের শেষকৃত্যে প্রকৃতি তার দূত পাঠিয়েছে। একটু পরই বাতাস থেমে গেলো। শেষ রাতে বোধহয় ঝড় আসবে। ঝড়ের দিন তো কেবল শুরু হলো… (চলবে)

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

রান্নার রেসিপিতে বাহারি ‘ভর্তা’

রোজকার জনপ্রিয় খাবার গুলোর মধ্যে ‘ভর্তা’
অন্যতম। আজকের রেসিপি তে থাকছে হরেক প্রকার ভর্তার রেসিপি যা সহজেই আপনি ঘরে বসে বানাতে পারেন।

আসুন রেসিপি গুলো ধাপে ধাপে দেখি-

টাকি মাছ ভর্তা

উপকরণ: টাকী মাছ ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, গোটা কাচা মরিচ ৪ টি, গোটা রসুন ৭ কোয়া, আদা সামান্য, হলুদ হাফ চা চামচ, সয়াবিন তেল হাফ কাপ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালী: টাকী মাছের আঁশ ছাড়িয়ে নিন। মাথাটা কেটে ফেলুন; মাঝে চিরে নিয়ে কাটা গুলো ফেলে দিন। এভাবে সব গুলো মাছ কেটে ধুয়ে নিন। কড়াই চুলাই দিয়ে গরম হলে অর্ধেক পরিমান তেল দিন। তেল গরম হলে আদা ছাড়া সব উপকরণ সহ মাছ গুলো দিয়ে আন্দাজ মতো পানি দিয়ে মৃদু আঁচে মাছ গুলো ঢাকা দিয়ে ২০ মিনিট রান্না করুন। এবার আঁচ বাড়িয়ে দিয়ে মাছ গুলো ভালকরে ভাজুন। বাকী তেল দিয়ে ভাজা ভাজা করুন। লাল লাল হয়ে নীচে লাগা লাগা হলে নামিয়ে নিন। এবার অল্প কাঁচা আদা দিয়ে পাটায় মিহি করে বেটে নিন। বাটা হয়ে গেলে একটি বাটিতে তুলে পরিবেশন করুন।

আলু ডিম ভর্তা

উপকরণ: ডিম ২টি, আলু ১টি (মাঝারি সাইজের), কাঁচামরিচ কুঁচি ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুঁচি ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুঁচি ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালী: আলু এবং ডিম সেদ্ধ করে নিন। খোসা ছাড়িয়ে আলু এবং ডিম আলাদাভাবে চটকে নিন। এবার পেঁয়াজ কুচি, লবণ এবং আধা চা চামচ সরিষার তেল দিয়ে ডিম ও আলু ভালোভাবে মেখে ভর্তা তৈরি করুন।

থানকুনি পাতার ভর্তা

উপকরণ: থানকুনি পাতা ১ কাপ, কাঁচামরিচ ২টি, রসুনের কোয়া ২টি, লবণ স্বাদ মতো, তিল ২ টেবিল চামচ, কালিজিরা ১ চা চামচ।

প্রণালী: সব একসঙ্গে বেটে (সব পাতা ধুয়ে পানি মুছে নিতে হবে) ভর্তা তৈরি করতে হবে। এরপর গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

কাঁচা করল্লা ভর্তা

উপকরণ: কাঁচা করল্লা ২টি, কাঁচামরিচ কুঁচি ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুঁচি ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুঁচি ১ চা চামচ, লবণ পরিমা মতো।

প্রণালী: করল্লা ধুয়ে খুব মিহি করে কুঁচি করে নিন। এবার করল্লা কুচি চটকে নিয়ে পেঁয়াজ, কাচা মরিচ, লবন এবং তেল দিয়ে ভর্তা তৈরি করুন।

 

মোনালিসার নীল স্মৃতি

ডা. সাকলায়েন রাসেল


মোনালিসা সর্বদা জানালার পাশেই বসে।
আজও তার ব্যতিক্রম হল না। পার্থক্য হল অন্যদিন সিটে বসা মাত্রই নানা কথা বলে। আজ মুখে শব্দ নেই। নিঃশব্দ আমিও। উদ্দেশ্য তার নিরবতাকে সমর্থন করা।
শাপলা চত্ত্বর ঘুরে গাড়ী তখন কলেজ রোডে। এ রোডের এক পাশেই মোনালিসার বাড়ী। যে বাড়ীতে কেটেছে তার শৈশবের সবটুকু। দ্রুত গাড়ীটা সেখানেই চলে এলো। সে রাস্তার ধারেই।
রাস্তাটির পাশে আসতেই মোনালিসা সিটের বাম দিকে ঘুরে বসল…জানালার কাঁচ বরাবর। জানালার পাশে রাস্তাটা বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে…দ্রুতই পার হয়ে যাচ্ছে সে রাস্তা। একটু একটু করে পিছনে সরে গেল সব কিছু।
ঘাড় ঘুরিয়ে রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে রইল সে…
বিরাটাকার এক শূন্য দৃষ্টি নিয়ে…
যতক্ষণ পারা যায়…
ফ্যালফ্যাল করে…
এই রাস্তা ধরেই সোজা পূর্বে চলে গেছে মোনালিসাদের বাড়ী..
আমার স্ত্রীর বাবার বাড়ী…
আমার সন্তানের নানার বাড়ী…
আমার শ্বশুর বাড়ী!
গাড়ী এগিয়ে চলল আপন গতিতে… মোনালিসা বাড়ীর দিকে হাতটা উচু করে একটু নাড়াল…
হাতের ভাষায় বিদায়ের ছাপ…
যেন হাত দিয়ে আলিঙ্গন করল এক শূন্যতাকে…
এক অসীম শূন্যতা…
মুখে কিছু বলল না…
যেন সব কষ্ট গলায় এসে পথ হারিয়ে ফেলেছে…
আমি ঘাড়ে হাত রাখলাম। স্পর্শের ছোঁয়ায় নিরব স্বান্তনা..ও দ্রুত চোখ মুছে নিল।
আমার স্পষ্ট মনে আছে…
বিয়ের পরপরই বিসিএস পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করেছিল সে…
বর্তমান ঠিকানায় যখন রংপুরের এই বাড়ীর ঠিকানা দিচ্ছিল…
আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম…
“তুমি থাকছো আমাদের বাসায় আর বর্তমান ঠিকানা দিচ্ছো রংপুরের!”
সে কোন উত্তর দিল না…পরে একদিন জানাল,
দেখ, বিয়ে হল সবে কয়েক মাস…
ঐ বাড়ীটা যে আমার না সেটা মন থেকে মেনে নিতেও তো কিছু সময় লাগবে, তাই না?
আমার অবুঝ মন সেদিনই প্রথম বুঝতে পারল…
একজন মেয়ের ফেলে আসা নিজ বাড়ী আকড়ে ধরে রাখার এ আকুতি…
আমার মাকেও দেখেছি, যতবারই নানার বাড়ী থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা হতাম ততবারই কাঁদত… জোরে জোরেই কাঁদত!…
আমি অবাক হতাম! কি আছে এই বাড়িতে! এতো বড় হয়েছে তবুও কান্না শুকায় না!
এখন আর কাঁদে না মা…
কি জানি, হয়ত কাঁদে…
আমি সেটা দেখতে পাইনা…
শুনতে পাইনা…
আচ্ছা, কষ্টের কি শেষ আছে? নাকি কষ্ট শুধু রূপান্তরিত হয়? শব্দ কান্না থেকে বোবা কান্নায়? নাকি অশ্রুতেই কস্টের উত্তাপ কমে যায়?
কি আছে এই মেয়েটার বাবার বাড়িতে?
মোনালিসা প্রায়ই বলত, তার বাবার বাড়ীতে খালারা,মামারাসহ সব আত্মীয় স্বজনের সরব উপস্থিতি ছিল প্রায় প্রতিটা দিন, প্রতিটা ক্ষণ। এমন কোন দিন সে পায়নি যেদিন তারা এ বাড়িতে শুধু নিজেরাই থেকেছে !!
কিন্তু যেদিন হটাৎ করেই তার মা এ বাড়ি থেকে বিদায় নিল…
চলে গেল না ফেরার দেশে…
সেদিন থেকেই একে একে শেষ হতে লাগল এ বাড়ীর সব আয়োজন… যেন বিরাটাকার এক বটবৃক্ষ, প্রচন্ড এক ঝড়ে একে একে হারাতে বসেছে সব ডালপালা!…
হারাতে হারাতে আজ সে প্রায় শূন্য!
এখানে আজ আর জীবন নেই…নেই কোন আয়োজন…ছন্দ হারিয়ে থেমে গেছে তাই সব কবিতা!!
ছাদের দিকে তাকিয়ে মোনালিসা সেদিন বলল, দেখ ওই ছাদটার দিকে। এই বিছানায় যখনই শুইয়ে শুইয়ে পড়তাম.. দৃষ্টি পড়ত ঐ ছাদটার উপর..
কত বছর হল!!…
মা চলে গেল…একে একে সবাই চলে যাচ্ছি আপন ঠিকানায়…
আমি শিশু থেকে শিশুর মা হয়ে গেলাম… অথচ ছাদটায় কোন পরিবর্তন নাই… সেই আগের মতই আছে!
অথচ আজ থেকে এই বাড়ীটা কেবলই একটা স্মৃতি হতে বসেছে!! আমি চলে যাচ্ছি ঢাকায়, ভাইয়েরা হোস্টেলে, আর বাবা গ্রামের বাড়ীতে। আজ থেকে এটা কেবলই একটা পরিত্যক্ত স্মৃতি!
মোনালিসা ফ্যালফ্যালে ভেজা দৃষ্টিতে শূন্য পানে তাকিয়ে রইল…
হয়ত অসীম সেই শূন্যতার এক কোণে বসে মা দেখছেন সন্তানের এ স্মৃতিকাতরতা! আচ্ছা, মায়েরা কি সত্যি দেখেন। ওনাকে হারিয়ে প্রথম দিন মনে হয়েছিল জীবন থেকে একজন মানুষকে চিরতরে হারিয়ে ফেললাম। আস্তে আস্তে মনে হল, জীবন থেকে আরেকটা জীবন ঝরে পড়েছে। আমরা সবাই তাই জীবনের ছন্দ হারিয়ে দিনকে দিন দিগ্বিদিক হয়ে যাচ্ছি। সামান্য শূন্যতা আজ তাই অসীমে রূপান্তরিত।
আমার ৯ বছরের বিবাহিত জীবনের নানা স্মৃতির প্রায় পুরোটাই এ বাড়ীটিকে ঘিরে… যদিও মাত্র দু’বছরেই ফিকে হয়ে গেছে স্বপ্নের ক্যানভাসের সব গুলো রং!..
আজ থেকেই হয়ত গল্প হয়ে গেল এ বাড়িটা!… যে গল্প শুধু নোনা জল ঝরাবে দুচোখ দিয়ে!
চাপা স্বভাবটা আর লুকিয়ে রাখতে পারল না মোনালিসা…বিদায়ের আগ মুহুর্তে বলে বসল…
”খুব খারাপ লাগছে, কেন জানি মনে হচ্ছে এটাই শেষ, এ বাড়িতে আর ফিরে আসা হবে না কখনো”
বিদায় বেলা দৃষ্টি দিয়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিল সে পুরো বাড়ীটাতে!..কষ্টের তীব্রতার ঢেউ আছড়ে পড়ল আমার ললাটেও।
আমি শুধু মুখস্ত বুলিগুলো আওড়াতে লাগলাম…এটাই নিয়ম মোনালিসা, এভাবেই মানুষের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়… ভাঙ্গা স্বপ্নের টুকরা গুলো জোড়া লাগিয়ে সব কিছু আবার নতুন করে সাজাতে হয়… নতুন করে সাজানো তোমার এই স্বপ্নের আঙ্গিনায় হয়ত বীজ বুনবে আমাদের আরিবা… তারপর??
তারপর??
তারপর আবারো সেই ভাঙ্গা সুর…ভেঙ্গে যাবে সে মিলন মেলাও…
তখন হয়ত দৃশ্যপটে চলে আসবে নতুন কোন আরিবা!
রাত এখন চারটা…
বৃষ্টি ভেজা রাতে যমুনার বুকে চাঁদের মত বাঁকানো এই ব্রিজটাও কেমন জানি কেঁপে কেঁপে উঠছে। গাড়ি দ্রুতবেগেই ধেয়ে চলছে ঢাকার দিকে। অনেক হারিয়ে অনন্তের পথে ছুটে চলেছি আমরা দু’জন। আমি আর আমার মোনালিসা!
বিদায়..
বাড়ী নং —১৩৪
রোড নং —১/২
C/O মরহুমা নুরান্নাহার বেগম!!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

ঘর সাজিয়ে তুলুন মাটির জিনিসে

শহরে থাকলেও আমরা পারি বাসার কোনো এক জায়গায় একটু গ্রাম্য ছোঁয়ায় সাজাতে। অনায়াশে শহুরে মানুষের জীবনের মধ্যে আজও জীবন্ত হয়ে উঠে গ্রামের মাটি। দামি কার্পেট, ফুলদানি, শো পিসের সাথে মানিয়ে নিয়েছে এখন মাটির জিনিসপত্র স্ব মহিমায়। মাটির তৈরি জিনিস তুলনামূলক সস্তা। আসুন অল্প খরচে নিজের ঘরের সাজকে করে তুলি ছিমছাম ও সুন্দর। সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন রুচিবোধ।

মাটির জিনিস দিয়ে কীভাবে ঘর সাজাবেন আসুন দেখি কিছু কৌশল-

মাটির তৈরি শো পিস

ঘর সাজিয়ে ফেলুন মাটির তৈরি শো পিস দিয়ে। ঘরে রাখতে পারেন সুন্দর কোনো ওয়াল হ্যাঙ্গিং। এটি ঘরের চেহারাই পালটে দেবে।

মাটির কলসি

মাটির কলসি দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন সুন্দর করে। বড় বড় চারটি কলসি চারদিকে রেখে তার উপর কাচ বসিয়ে দিন। তা সেন্টার টেবিল হিসেবে দিব্য ব্যবহার করতে পারবেন।

টেরাকোটা

ঘরের সাজে ভিন্নতা আনতে চাইলে সামর্থ্য অনুযায়ী বসার ঘর, শোবার ঘর অথবা খাবার ঘরে দেয়ালের একপাশে মাটির ফলক অর্থাৎ টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন। আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে মূল দরজার সামনের ফ্রেমে মাটির টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন।

মাটির ফ্রেম

খুব সাধারণ ও সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে চান তাহলে ফুলদানি, পুতুল, শো-পিস ইত্যাদি ব্যবহারের পাশাপাশি ঘরের ভিতরে যে স্থানটি খুব সহজেই সকলের নজরে পরে সেখানে মাটির ফ্রেম ব্যবহার করে তাতে যে কোনো ছবি বাঁধাতে পারেন।

ছোটো জার

মাটির তৈরি ছোটো জার কিনে তার উপর নিজের মতো করে ডিজ়াইন করতে পারেন।

মাটির ফুলদানি

দামি ফুলদানির বদলে মাটির তৈরি ফুলদানি বাড়িতে রাখতে পারেন। সেখানে কিছু সতেজ ফুল রাখার চেষ্টা করুন। তাতে আপনার ঘরের সাজগোজ যেমন ছিমছাম দেখাবে, তেমনই দেখাবে আকর্ষণীয়।

মাটির টব

শহুরে জীবনে এখন মাটির টবের জায়গায় এসেছে আধুনিক ফুলের প্লাস্টিক ও চিনা পাথরের টব। কিন্তু ফুলগাছ মাটির টবে রাখলে তা ভালো থাকে আবার মাটির টবও আপনার ঘর সাজাবে।

কলমদানি-মোমবাতি

মাটির তৈরি কলমদানি, মোমবাতি স্ট্যান্ডের মতো জিনিস আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে।

প্লেট-গ্লাস-ফুল-ফল-বাটি

ঘর সাজানোর জন্য কাজে লাগাতে পারবেন মাটির তৈরি প্লেট, গ্লাস,ফুল-ফল, বাটি। আপনি চাইলে এসব জিনিসের উপর কারুকার্য করতে পারেন। তাতে সামান্য জিনিসও অসাধারণ হয়ে উঠবে।

 

শীতে আপনার সোনামনি ‘গোসল’

ডা. এমডি আব্দুল হাকিম


এখন একটু একটু শীত পড়ছে। বিশেষ করে ভোর বেলা ঠান্ডা একটু বেশী পড়ে। এ সময় আপনার বাচ্চার ঠান্ডা লাগতে পারে। একটু সতর্ক হলেই এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। খুব ছোট বাচ্চকে বুকের সাথে আগলে ধরুন। ওর খালি বুক আপনার খালি বুকে লাগিয়ে দুধ খাওয়ান।

দু’জনের উপর গরম কাপড় ঢেকে দিন। বাচ্চা প্রশ্রাব-পায়খানা করেছে কিনা খেয়াল করুন এবং টিস্যু বা গরম ভেজা নেকড়া দিয়ে পরিষ্কার করে দিন। ডায়াপারও পরাতে পারেন। তবে সেটি ৪-৫ ঘন্টার বেশী না রাখাই ভালো। একটু বড় বাচ্চাকে ভালো করে গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন।

শীতে শিশুর গোসল

জন্মের প্রথম তিন দিন শিশুকে গোসল না করানোই ভালো। কম ওজনের এবং অপরিণত শিশুর ক্ষেত্রে আরো দেরি করা ভালো- বিশেষ করে শীতের দিনে।

শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নাই। ২-৩ দিন পর পর গোসল করালেও চলে। শিশুকে খোলা জায়গায় গোসল না করানোই ভালো।

গোসল করাতে হবে বাথরুম, শোবার ঘর বা এমন জায়গায়-
যেখানে শিশুর শরীরে বাতাস না লাগে। গোসলের সময় ঠান্ডা বাতাস শিশুর শরীর থেকে তাপ টেনে নেয় এবং শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে ।

শিশুকে গোসলের আগে দুধ না খাওয়ানোই ভালো –
এতে গোসলের সময় বাচ্চা বমি করতে পারে।

যিনি শিশুকে গোসল দিবেন, তিনি গোসলের দেওয়ার আগে হাতের অলংকার খুলে ফেলবেন এবং ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন।

একটি গামলায় কুসুম গরম পানি নিতে হবে-যেনো শিশু চামড়ার সাথে সহনীয় তাপমাত্রার হয়।

শিশুকে গোসল করানোর আগে কবজি পর্যন্ত হাত ডুবিয়ে পানির উষ্ণতা পরীক্ষা করাতে হবে।

শিশুর গোসলের পানিতে ডেটল বা স্যাভলন মেশানো যাবে না। এতে শিশুর শরিরে লালচে দানা উঠতে পারে।

শিশুর দেহের ভাঁজগুলো যেমন-গলা,কানের পিছন,কুচকী,বগল, যৌনাঙ্গ ও নিতম্বের ভাঁজগুলো ভালোভাবে পরিস্কার করে দিতে হবে।

পায়খানা করে থাকলে গোসলের আগে পরিস্কার করে নিতে হবে-যাতে গামলার পানি অপরিস্কার না হয়।

বেশী ছোট শিশুর ক্ষেত্রে সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো এবং মাথায় পানি না দিয়ে মাথা মুছিয়ে দেয়া ভালো।

তবে বড় শিশুর ক্ষেত্রে বেবীসোপ বা কোমল সাবান ব্যবহার করা যাবে।

শিশুকে পানিতে ডুবানো যাবে না । গোসল যথাসম্ভব কম সময়ে শেষ করা ভালো।

মেয়ে শিশুদের স্ত্রী অংগে অনেক সময় সাদা ময়লা জমে। গোসলের আগে ঐ স্থানটা পানিতে ভেজানো পরিস্কার তুলা দিয়ে পরিস্কার করে দিতে হবে।

গোসলের পরপরই শুকনো পরিস্কার তোয়ালে দিয়ে শিশুকে জড়িয়ে সর্বত্র আলতো চাপ দিয়ে শিশুর শরীরের সব পানি ভালোভাবে মুছে নিতে হবে।

শরীরে পরিস্কার শুকনা কাপড়, মাথায় টুপি এবং হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে।

গোসলের পরপরই শিশুর মাথা বা শরীরে লোশন, তেল বা পাউডার না লাগানই ভালো।

গোসলের পর শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে। এতে করে মায়ের বুকের গরম, দুধের গরমে সে গরম বোধ করবে এবং ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা কমে যাবে।

 

স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায় দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে

ডা. সঞ্চিতা বর্মণ


জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অফিস বা ব্যবসা ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। অনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে নানা রোগ-ব্যাধি, যা কখনো মারাত্মক রূপও ধারণ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোমরে চর্বিজমা, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, হার্টের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি সমস্যা যারা বসে কাজ করেন তাদের মধ্যে বেশি।

এছাড়াও যারা ডেস্কে বসে বেশিক্ষণ কাজ করেন তারা কোমর ও ঘাড় ব্যথায় বেশি ভোগেন। কিন্তু জীবনের তাগিদে নিত্যদিনের কাজ ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিদিন কাজের ফাঁকে কিছু অভ্যাস তৈরি করা উচিত। যেমন এক ঘণ্টা পর পর চেয়ার থেকে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটা, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠা-নামার অভ্যাস করা, চেয়ারে সোজা হয়ে বসা।

এছাড়াও

১. কিছু ছোট-খাটো ব্যায়াম আছে যা চেয়ারে বসেই করা যায়, কাজের ফাঁকে এই ব্যায়ামগুলো করা।

২.খাবার খাওয়ার সময় নাশতায় ভাজা পোড়া বা ফাস্টফুডের পর্রিবতে মৌসুমী ফল বা বাদাম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

৩.গ্রিন টি আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, তাই চা বা কফির পরিবর্তে গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে।

৪.প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করতে হবে।

এছাড়া কোনো প্রকার স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক : ত্বক, লেজার এন্ড এসথেটিক বিশেষজ্ঞ

 

স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা করার নিয়ম ও প্রতিরোধ

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল


মেয়েদের ক্যান্সারের মধ্যে শতকরা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। আর এ সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ রোগের ৬০ শতাংশ রোগীরই বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এমনকি শতকরা পাঁচ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। অনেক ক্যান্সারের সাথে স্তন ক্যান্সারের একটা বড় পার্থক্য হলো- সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে এ রোগ থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ।

স্তন ক্যান্সার এমন একটি রোগ, যা চিকিৎসকের আগে রোগী নিজেই এই রোগ নির্ণয় ও ডায়াগনোসিস করতে পারে। একজন সচেতন নারী খুব সহজে ও দ্রুত এটি ধরে ফেলতে পারেন।

পরীক্ষা করার নিয়ম

১. মাসিক শেষ হওয়ার পরে স্তন পরীক্ষা করতে হয়। কারণ এ সময় স্তন নরম থাকে। তাই প্রতি মাসের মাসিকের শেষ দিনটিতে স্তন পরীক্ষা করা উচিত।

২. পর্যাপ্ত আলোযুক্ত স্থানে আয়নার সামনে জামাকাপড় খুলে স্তনের আকার, রঙ, বোঁটার রঙ ও অবস্থান, চামড়ার অবস্থা ইত্যাদিতে কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে কি না দেখতে হবে।

৩. হাত দুটো কয়েকবার মাথার ওপরে উঠিয়ে ও নামিয়ে পরীক্ষা করে নিন স্তন দুটো ত্বকের নিচে সহজে নড়াচড়া বা ওঠানামা করে কি না।

৪. এবার বিছানায় শুয়ে প্রথমে ডান হাত মাথার নিচে বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙুল দিয়ে ডান স্তনটি ভালো করে চেপে দেখুন- কোনো চাকা বা গোটা হাতে পাওয়া যায় কি না। এ পরীক্ষা করার সময় স্তান ও এর আশপাশের সম্পূর্ণ জায়গা, বগলের নিচের অংশসহ পরীক্ষা করতে হয়। এবার বাম হাত মাথার নিচে দিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম স্তন ও এর আশপাশে পরীক্ষা করুন।

৫. আরেকবার দাঁড়িয়ে এভাবে ওপরের স্তন চেপে পরীক্ষা করুন। গোসল করার সময় সাবান লাগিয়ে পরীক্ষা করলে যেকোনো চাকা আরো ভালোভাবে হাতে ধরা পড়ে।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ

১. ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করুন।

২. পরিবারের কারো স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে সতর্ক হোন।

৩. দেরিতে মাসিক শুরু হওয়া, অবিবাহিত ও সন্তানহীন নারী এবং দেরিতে মা হওয়া নারীদের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি বলে এদের বেশি সচেতন হতে হয়।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অল্প বয়সে দীর্ঘ সময় ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করা বা মেনোপজের পর দীর্ঘ সময় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট নেয়া থেকে বিরত থাকুন।

৫. প্রতিদিন অন্তত একটি করে ফল খান। প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।

৬. শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৭. ওজন কমান, বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাবারে চর্বিজাতীয় খাদ্য, যেমন গরুর গোশতের পরিমাণ কমিয়ে দিন।

৮. নিজেকে জানুন, চিনুন এবং নিজের সম্পর্কে সচেতন হোন।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

১. ব্রেস্টে চাকা হওয়ার অর্থই ক্যান্সার নয়। ক্যান্সার ছাড়াও স্তনে চাকা হতে পারে। অনেক সময় তা এমনিতেই সেরে যায়।

২. স্তন ক্যান্সার হলেই পুরো স্তন কেটে ফেলে দিতে হবে- এমন কথা নেই। এটা নির্ভর করে ক্যান্সারের স্টেজের ওপর। এমনকি পুরো স্তন কেটে ফেললেও আজকাল রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির মাধ্যমে স্তনের আসল আকার-আকৃতি ফিরে পাওয়া সম্ভব।

৩. কেমো ও রেডিও থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন- চুল পড়ে যাওয়া, বমি, খাবারে অরুচি, দুর্বলতা, গায়ের রঙ কালো হয়ে যেতে পারে। যা পরে আপনা আপনি সেরে যায়।

৪. অকারণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ম্যামোগ্রাফি ঘন ঘন করা উচিত নয়। কারণ রেডিয়েশন স্বাভাবিক কোষকে ক্যান্সারে পরিণত করতে পারে।

লেখক : স্বাস্থ্য নিবন্ধকার, কথা সাহিত্যিক ও সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০১৭১৬২৮৮৮৫৫
(সুত্র:নয়াদিগন্ত)

 

বিজয়


অনবরত বৃক্ষের গান


বিজয় আমার কাছে জ্ঞানের অমিয় সুধা,
আধাঁরের ভাজ কেটে যেন আলোর রেখা।

বিজয় আমার কাছে
নদীর ঢেউ বেয়ে বয়ে চলা
যে থামতে জানে না,
ছুটে যায় নিরবধি।

বিজয় আমার রাসূলের জীবনপটে আঁকা সুন্দর ছবি,
চাঁদের আলোয় মাখা
সুরভিত ফুল।

বিজয় আমার কাছে হাসিমাখা
মমতায় ভরা মুখ,
যে আলোয় গাঁধা যায়
অব্যক্ত সকল দুঃখ।

বিজয় আমায় কাছে কালির আঁচড়ে,
সত্যের গান গাওয়া
মনফুটে সব অকপটে ঝরঝর।

বিজয় আমার কাছে সহজ,চিরবাস্তব,মহানুভব
নেতৃত্বের দৃঢ়তায় ছুঁয়ে যাওয়া।

বিজয় আমার কাছে ধৈয্য,
ওহুদের পাহাড়,শৃঙ্খলা শত-সহস্র,কোটি ঝড়ে যা টলে না শান্ত, অমিশ্র।

বিজয় আমার কাছে বীরের জুলফিকার,
তেজী ঘোড়ায় ছুটে চলা।

বিজয় আমার কাছে বিনীত হৃদয়,রবের ভয়ে সিক্ত চোখ,
কোমলতায় মোড়া ক্ষমা।

বিজয় আমার কাছে পরম আরাধ্য,সুগভীরচাওয়া।
প্রভু সুদীর্ঘ করুন এ বিজয়, বসুন্ধরা থেকে নীল আসমান।

ইসলামিক স্টাডিজ,অনার্স ৩য় বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

পতাকা কেবল এক টুকরো কাপড় নয়

জাজাফী


একটুকরো লাল রঙের কাপড়ের যেমন বলার মত কোন মূল্য নেই তেমনি একটুকরো সবুজ রঙের কাপড়ের ক্ষেত্রেও তাই।আবার ও দুটোকে একসাথে জোড়া লাগানোর পরও খুব বেশি পরিবর্তন হয়না।কিন্তু যখন পরিমাপ করে সবুজ কাপড়ের মাঝে গোল করে লাল একটুকরো কাপড় জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হয় তখন?সেটা হয়ে ওঠে অমূল্য।সেটা তখন আমরা বুকে ধরি। সেই কাপড়টি যখন একটা লাঠির মাথায় বেঁধে আকাশে ওড়াই তখন আমরা অপলোক তার দিকে তাকিয়ে থাকি।পতাকা হলো একটি দেশের পরিচয় বহনকারী এবং নিদর্শন স্বরুপ।অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে একটা কাপড় কতটা মযার্দাপুর্ন হয়ে ওঠে তার দৃষ্টান্ত এটা।যেমন একটুকরো সাদামাটা কাপড় যখন আল কুরআনের গিলাফ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন সেই কাপড়ের টুকরোটি হাত থেকে পড়ে গেলে সাবধানে সেটা উঠিয়ে আমরা চুমু খাই।এটা কিন্তু ওই কাপড়ের প্রতি সম্মান দেখানো নয় বরং কাপড়টি যার ছোয়া পেয়ে ধন্য হয়েছে তাকে সম্মান দেখানো।

শেখ সাদীর জীবনের একটি ঘটনা আমরা জানি।সাধারণ পোষাকে তিনি যখন একটা দাওয়াতে উপস্থিত হয়েছিলেন তখন তাকে কেউ সম্মান দেখায়নি,চিনতেও পারেনি এবং সেখানে ঢুকতে দেয়নি।পরে যখন তিনি ভাল পোষাক পরে উপস্থিত হলেন তখন তাকে যথাযথ সম্মান দেখানো হলো।বাকি ঘটনাটা আমরা এখানে না বললেও চলবে।আমরা বলতে চাইছি একই ভাবে যখন লাল সবুজের কাপড় সাদামাটা ভাবে জোড়া লাগানো হয় তখন তা ততোটা মযার্দা পায়না যতটা পায় পতাকা হিসেবে।লাল সবুজের ওই পতাকায় মিশে আছে আমাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।

কিন্তু আফসোস দিন যতই গড়াচ্ছে ওই পতাকার প্রতি আমাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা ততোই কমে যাচ্ছে।আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে আগের তুলনায় পতাকার প্রতি ভালবাসা বেড়েছে কিন্তু ওটার অধিকাংশই মেকি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।
তবে কি আমরাও আমেরিকার মত পতাকাকে একটুকরো কাপড় ভাবতে শুরু করেছি?একটু খেয়াল করলে দেখবেন আমেরিকানরা পতাকাকে আমাদের মত ভালবাসে না শ্রদ্ধাও করে না।তারা পতাকাকে অন্য আর একটুকরো কাপড়ের মতই মনে করে।তাই তারা পতাকা দিয়ে অর্ন্তবাস তৈরি করে,পতাকা দিয়ে তারা বিকিনি তৈরি করে।তার পর সেটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।এই ঢাকা শহরের দোকানেও আমেরিকান পতাকার অর্ন্তবাস কিনতে পাওয়া যায়।

আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে লাল সবুজের এই পতাকাটি পেয়েছি তাই পতাকার প্রতি আমাদের যে ভালবাসা আছে তা পৃথিবীর আর কারো থাকার কথাও নয়।কিন্তু দিন দিন নানা ভাবে আধুনিকতার নামে আমরা পতাকাকে তুচ্ছজ্ঞান করছি।জেনে কিংবা না জেনে পতাকার মযার্দা ক্ষুন্ন করছি।জাতীয় দিবসে আমরা ভালবেসে পতাকা ওড়াই।কিন্তু একদিন পরই দেখি সেই পতাকা ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে।অনেক সময় দেখি পতাকা একবার আকাশে ওড়ানোর পর তা আর নামানো হচ্ছেনা।পতাকা বাতাসে,ঝড় বৃষ্টিতে একদিন ছিড়ে নষ্ট হচ্ছে।
ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে দশ টাকা দিয়ে যে হাতে ধরা পতাকা আমরা কিনছি তা অনুষ্ঠান শেষে কিংবা পরেরদিনই রাস্তায় লুটোপুটি খাচ্ছে।আমরা গত কাল যে পতাকাকে বুকে ধরেছিলাম পরদিন সেটিই আমাদের গাড়ির চাকার নিচেয়,নিজেদের পায়ের নিচেয় পিষ্ট হচ্ছে।শুধুকি এক টুকরো পতাকাকে পা দিয়ে দলিত করছি?পক্ষান্তরে এটাকি দেশটাকেও পদদলিত করা নয়?

জাতীয় পতাকার প্রতি অবহেলা,অনাদরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লাল সবুজের পতাকা’। যেখানে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকার প্রতি মানুষের অতিরিক্ত আগ্রহ এবং ভালোবাসার যে চিত্রটি দৃশ্যমান, তার বিপরীতে জাতীয় দিবসের বাইরে, অন্যান্য সাধারণ সাদামাটা দিনে সেই একই জাতীয় পতাকার প্রতি মানুষের আগ্রহের যেমন অভাব, তেমনি রয়েছে এক ধরনের অবহেলা ও অজ্ঞতা।

কাগজে লাল সবুজের পতাকা ছাপানো হচ্ছে এবং সেটা জাতীয় দিবসে সুতোয় বেধে রাস্তায় ঝোলানো হচ্ছে নিবার্চনী পোষ্টারের মত। সেটাও রোদ,বৃষ্টি,ঝড়ে নষ্ট হচ্ছে।আমেরিকানদের বিকিনিতে পতাকা ব্যবহার করার মত পযার্য়ে যেতে কি বেশি সময় লাগবে?

লাল সবুজের পতাকা আমাদের অহংকার।এটি পাওয়ার জন্য আমাদের পুবর্পুরুষেরা যে আত্মত্যাগ স্বীকার করেছে তা আমাদের মনে রাখতে হবে।পতাকাকে শুধু মাত্র একটুকরো কাপড় ভাবলে চলবেনা।

হরহামেশা দেখছি গাড়িতে ইচ্ছেমত পতাকা ঝোলানো হচ্ছে।নিজ দেশের পতাকা ব্যবহার করার অধিকার প্রত্যেকেই রাখে তবে সেটার একটা নীতিমালা থাকা উচিত। ব্যক্তিপযার্য়ে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের কোন বিধান আছে কিনা আমার জানা নেই।যদি থাকে তবে সেটিকে কাযর্কর করতে হবে।সবাইকে জানাতে হবে।আর যদি না থাকে তবে এখনি সময় ব্যক্তিপযার্য়ে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নের।তা না হলে একদিন আমাদের দুঃখের সীমা থাকবেনা যেদিন আমেরিকানদের মত হয়ে যাবে।

অন্য দেশ ও জাতি তাদের পতাকাকে সম্মান দেখাক বা না দেখাক তাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা কিন্তু লাল সবুজের পতাকা তুচ্ছ কোন একটুকরো কাপড় নয়।সেটার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে।নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পতাকা নামাতে হবে।
অনেক রক্ত,প্রাণ আর সম্ভ্রমের বিনীময়ে অর্জিত পতাকার সম্মান বজায় রাখা প্রতিটি বাঙ্গালীর কর্তব্য।পতাকার প্রতি অসম্মান দেখানো মানে দেশকেই অপমান করা।নিজের মাকে অপমান করা।অবশ্য অনেক অভাগাই আছেন যারা নিজ মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসেন।তাদের কাছে পতাকাও একটা ফেলনা কাপড় ছাড়া কিছুনা। আর সে জন্যই নীতিমালা করে এটার অসম্মান যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।মনে রাখতে হবে পতাকা কেবল মাত্র এক টুকরো কাপড় নয়।

#জাজাফী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েবসাইটঃ www.zazafee.com

 

সেই ঝড় একটু উঠুক

ফাতিমা শাহীন


– কি হলো , কিছু বলছেননা যে !

রিসিভার কানে লাগিয়ে তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো বিভা , কথা বললনা । আর বলবেই বা কি ! যে গান শুরু করার আগেই তাল লয় কেটে গেছে, ভুলসুরে সে গান কষ্ট করে গেয়ে কি লাভ ! রেশাদ নিজে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভাকে দেখে গেছে, কোনো এক শুভক্ষণে বিভার চম্পাকলি অনামিকা মৃদু কাঁপুনিতে একটি স্বর্ণ বন্ধনে জড়ানোর অপেক্ষায়…. আর সেখানে কিনা একটি উড়ো খবরে বেঁকে বসলো সবাই , কি না , মেয়ের ছোট বেলায় পোলিও হয়েছিল ….এক পায়ে খাটো… একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে…কত কি !

এসব শুনে টুনে তো বিভার বাবা রেগে মেগে সারা । যারা নিজের চোখের চেয়ে পরের কানকে বিশ্বাস করে, তাদের সাথে আর যাই হোক আত্মীয়তা করা চলেনা …..রেশাদ তার পরিবারকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে , কিন্তু মা আর ভাই বোনদেরকে কিছুতেই বোঝাতে পারেনি ।

এখন আর কোনো উপায় দেখতে না পেয়েই অবশেষে বিভাকে ফোন …..

_ হ্যালো বিভা, আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন তো!

_ জ্বি, পাচ্ছি ।

_ আমি কিন্তু এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি । আবার ও জানতে চাইছি , আমি যদি একক সিদ্ধান্তে এসে আপনাকে সাথে নিয়ে আমাদের নতুন জীবন শুরু করি, আপনি কি আমার ডাকে সাড়া দেবেন ?

একটুক্ষণ চুপ থেকে বিভা এবার বলল :

_ দেখুন, আমি বিভা বা আপনি রেশাদ , আমরা জীবনের যে পর্যায়ে আজকে এসে পৌছেছি ..এখানে আমরা কেউ ই একক প্রচেষ্টায় আসতে পারিনি । আমাদের পরিবার , বিশেষ করে বাবা – মা , অনেক ঝড় ঝাপটা , আপদ বিপদ নিজেরা বুক দিয়ে ঠেকিয়েছেন , কিন্তু আমাদের গায়ে একটু আঁচ ও লাগতে দেননি । তাদের আদর , ভালবাসার ছায়ার নিচে থেকে থেকেই আজ আমরা বড় হয়েছি , পায়ের তলায় শক্ত মাটি খুঁজে পেয়েছি । আর আজ যেখানে বিয়ের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি, সেখানে কেমন করে আমরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নেব ? বাবা মায়ের দোয়া ও আশীর্বাদের হাত যদি আমরা আমাদের মাথার উপর না পাই , কেমন করে সফল হবে আমাদের জীবন চলার পথ ? কেমন করে গড়ব আমাদের স্বপ্নের , সাজানো সংসার ? আপনি আমাকে মাফ করবেন । বাবা মায়ের দোয়া আর সন্তুষ্টিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য যা কল্যানকর বলে বিবেচিত হবে, তা ই আমি খুশিমনে মাথা পেতে নেব ।

রিসিভার নামিয়ে রেখে পায়ে পায়ে বারান্দায় এলো বিভা । কাল রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে । কখনো টিপ টিপ , কখনো মুষলধারে । দুটি কাক রাস্তার পাশের রেইন ট্রি টার ডালে বসে চুপচুপে হয়ে ভিজছে । সিডি প্লেয়ারে হেমন্তের গান চালিয়ে দিল বিভা । নিজেই টের পেলনা কখন যেন মনটাও গানের সুরের সাথে সাথে ভিজে উঠতে শুরু করেছে …..

আকাশে বৃষ্টি আসুক , গাছের উঠুক কেঁপে ঝড়ে…

সেই ঝড় একটু উঠুক তোমার মনের ঘরে ..।

 

ভালো মানুষ

সোহা ফারাহ


গাড়িতে উঠতে গিয়ে হঠাৎ করেই আমড়া বিক্রেতা ছোট ছেলেটার আমড়াগুলো মাথা থেকে পড়ে গেলো পাকা রাস্তায়। আশেপাশের সকলেই তাকিয়ে দেখছে, আমিও দেখছি! সে মন খারাপ করে কাঁদোকাঁদো সুরে কি যেন বলছে আর পড়ে যাওয়া আমড়াগুলো উঠাচ্ছে। শেষমেষ কয়টা ভাঙ্গা আমড়া নিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছিলো। এমন সময় একটা লোক তাকে কাছে ডাক দিলো তারপর পকেট থেকে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বললো- মন খারাপ করোনা আবার শুরু করো।
(ভালো মানুষ)

শহর থেকে ফিরছিলাম বাড়িতে। হঠাৎ শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম একটা লেগুনায়। হেল্পার বাচ্চা ছেলেটা বৃষ্টিতে ভিজেই গেটে দাড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ গাড়িতে বসে থাকা এক লোক তাকে ভেতরে বসতে বললো। ছেলেটা রাজি না হলে হাতে টান দিয়ে ভেতরে বাসিয়ে দিলো। আবার বললো, ভেজার কি দরকার অসুস্থ্য হয়ে যাবা। ভেতরে ফাঁকাই তো রয়েছে। আর যারা উঠার এমনিতেই উঠবে ডাকতে হবেনা।
(ভালো মানুষ)

বাসের জানালা দিয়ে বই মেলার সারি সারি স্টলগুলো নজরে পড়া মাত্রই দ্রুত ভাড়া মিটিয়ে নেমে পরছিলাম। হঠাৎ ‘এই যে আপা শুনেন’ বলে হেল্পার দৌড়ে এসে সামনে দাড়ালো। বললো, আপা আপনার টাকা পড়েছে। ড্রাইভারটাও অনেক্ষণ গাড়ি স্লো করে রেখেছিলো! অবাক হয়ে দেখলাম হেল্পার এক হাজার টাকার নোট’টা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরেছে। ভাড়া দিতে গিয়ে কখন যে নোট’টা নিচে পরেছিলো তা খেয়াল করিনি।
(ভালো মানুষ)

বোনের চার মাসের বাচ্চার জ্বর হয়। সন্ধায় জ্বরের মাত্রা ছড়িয়ে যাওয়ায় ডাক্তারের উদ্দেশ্যে দু বোন বাচ্চাটাকে নিয়ে বেরোই। ফেরার পথে রিক্সায় আসতেই রাস্তায় দু’গ্রুপের মারামারি লাগে। চারিদিকে চিৎকার হট্টগোলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। হঠাৎ রিক্সার পেছনে লাঠি দিয়ে জোড়ে বাড়ি দেয় একজন। রিক্সার হুড আধভাঙ্গা হয়ে একপাশে ঝুলে পরে। অসুস্থ্য বাচ্চাটা ভয়ে কান্না শুরু করে। দিশেহারা হয়ে বোন রিক্সা থেকে নেমে যেতে চায়। রিক্সাওয়ালা তাড়াতাড়ি তাকে বাধা দিয়ে বলে, আম্মা এই মারামারিতে বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নামলে আরও বিপদে পরবেন। পাশের ঐ বস্তিতে আমার বাড়ি, আমি কোনও ভাবে রিক্সা একপাশে নেই। আপনারা আমার বাড়িতে কিছু সময় বসেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে বাসায় ফিরেন। তিনি বহু কসরতে ভাঙ্গা রিক্সাটা নিয়ে যান রাস্তার সাইডে। আমরা তার বাসায় গিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাচি। কিছু সময় পর রাস্তা ফাঁকা হলে বেরিয়ে গাড়ি খুজতে থাকি। ঐ রিক্সাওয়ালা তার ভেঙ্গে যাওয়া রিক্সায় আমাদের রেখে আসতে পারবেননা। কিন্তু রিক্সা বা গাড়ি কোন কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না। আবারও এগিয়ে এলেন তিনি। প্রায় এক ঘন্টা সময় রাস্তায় ঘুরাঘুরি করে আমাদের জন্যে রিক্সা আনলেন। দু’বোনকে রিক্সায় তুলে দিয়েই তিনি ঘরমুখো হলেন।
(ভালো মানুষ)

ভালো মানুষে ছেয়ে আছে এ দেশ ও জগৎ তাই হয়তো এখনো পৃথিবী জীবিত। আমাদের নজরে চট করে মানুষের খারাপটা সহজেই পরে যায়। কিন্তু আশেপাশে থাকা অসংখ্য ভাল মানুষদের যেন আমরা দেখতেই পাইনা। তারা দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায় বেশিরভাগ!
হ্যঁ মন্দ মানুষও আছে, কিন্তু আমাদের একটু ভাল ব্যবহারে তারাও ভাল হয়ে যেতে পারে। পৃথিবী তো বাঁচবেই শুধু তাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখাটার দায়িত্বই আমাদের। চারপাশের শুধু মন্দ বিষয়গুলো না দেখে ভাল কিছু যে হচ্ছে সেটাও খেয়াল রাখা জরুরী।
(ভালো মানুষ)

 

‘টাইম আউট’ বাচ্চাদের শৃঙ্খলা শেখানোর একটি পদ্ধতি

 ভাবানুবাদ:ফাতেমা শাহরিন

“শৃঙ্খলা” শেখানোর জন্য সুন্দর প্রক্রিয়া হল ‘টাইম আউট’। দুরন্তপনা বাচ্চাদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি খুব ভাল কার্যকর।

‘টাইম আউট’ হচ্ছে আপনার(৩ থেকে ১০)বছর বয়স সীমার বাচ্চাদেরকে পাঁচ মিনিটের জন্য একটি বিরক্তিকর জায়গায় পাঠানো।

‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়াটি কিভাবে কার্যকর হবে

প্রথমত, সময় নির্ধারণ করুন (দুষ্টুমির মাত্রার উপর এবং বয়সের উপর বিবেচনা করে সময় নির্ধারণ করুন)

দ্বিতীয়ত, স্থান (খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর স্থান যেন না হয়, এমন যায়গায় নির্ধারণ করুন যেন বাচ্চা বুঝতে পারে তাকে ‘টাইম আউট’ টেকনিক মধ্যে ফেলানো হয়েছে)

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

টাইম আউট করার সময় বাচ্চাকে প্রথমে পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে বলতে হবে যদি বাচ্চা বুঝতে না পারে কেন ‘টাইম আউট’ দেওয়া হচ্ছে তাহলে উল্টো কাজের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে। ( এ সময় হয়ত চিৎকার অর্থাৎ কান্না করবে, কিন্তু উত্তর দেওয়া যাবে না- এটা খুব অল্প সময়ের জন্য হতে পারে) সাধারণত এর মধ্যেই বাচ্চা থেমে যায়, আর যদি তাতেও না থামে, অনেক সময় বাচ্চাদের জেদ উঠতে পারে তখন ‘টাইম আউট’ পদ্ধতি নয় বরং বাচ্চাকে শান্ত করা দরকার।

‘টাইম আউট’ বিহ্যাভিয়ার টেকনিকটি সম্পর্কে ৭টি বিষয় জানা দরকার

১. লক্ষ্য আচরণ নির্ধারণ

সন্তানের যে আচরণটি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন তা নির্দিষ্ট জিনিস ব্যবহার করার মাধ্যমে ‘টাইম আউট’ প্রয়োগ করুন। ‘লক্ষ্য আচরণ’ বলতে, ধরুন ‘আপনার সন্তান প্রায় মানুষকে আঘাত’ এই আচরণটি হল ‘লক্ষ্য আচরণ’ যা আপনি পরিবর্তন করতে চান। লক্ষ্য আচরণ একাধিক নয় বরং একটি নির্ধারণ করুন।

২. বিরক্তিকর স্থান

‘টাইম আউট” ঘরটি যেন বিরক্তিকর এবং নিরাপদ হয়। লন্ড্রি রুম, গেস্ট রুম, বাথরুম এবং ঘরের কোণে সাধারণত উপযুক্ত। যখন আপনি রুম নির্বাচন করবেন, নিশ্চিত করুন যে ঘরটি খালি এবং নিশ্চিত হয়ে নিন বাচ্চার জন্য নিরাপদ। এ সময় তাদের অন্যান্য শিশুদের এবং মজাদার কার্যক্রমগুলি থেকে দূরে রাখুন। ওদের বুঝতে দিন আপনি টাইম আউটে ফেলেছেন তাকে।

৩. কত সময় রাখবেন

সময়কাল মুলত নির্ধারণ করা হয় শিশুদের বয়স উপর ভিত্তি করে। ৩-৫ বছরের শিশুর জন্য ৩ মিনিটের জন্য, ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য ৫ মিনিট, ১০ বছরের উপর হলে ১০ মিনিটের চেয়ে দীর্ঘতর সময় যেন না হয়।
‘টাইম আউট’ এর সময় ঐ রুমে একটি ঘড়ি থাকতে ভাল। কারণ আপনি সন্তানকে ঐ ঘড়ি দেখিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারেন এবং বড় ঘড়ি হলে ইশারা করেও বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।

৪. টাইম আউটের প্রভাব

টাইম আউট দেবার ফলে কোন প্রভাব পড়ছে কিনা, লক্ষ্য আচরণটি পরিবর্তন হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। এই ‘সময়’ দেবার আগে বুঝিয়ে বলুন আপনি ‘টাইম আউট’ দিচ্ছেন শুধু নির্ধারিত আচরণটির পরিবর্তনের জন্য। সেরা সময়ে যখন আচরণটি পরিবর্তন হচ্ছে শান্ত এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে তখন বাচ্চাকে ‘ভাল বলুন’।

৫. ব্যাখ্যা করুন

সন্তানদের জন্য ‘টাইম আউট’ সবচেয়ে ভাল কাজ করবে যখন শিশুটিকে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।আপনার সন্তান যখন বুঝতে পারবে মা বাবা ভাল আচরণ করতে তাকে সাহায্য করছে তখন মুলত খুব ভাল ভাবে ‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।

৬. হুমকি বা বার বার ব্যবহার না করা

হুমকি হিসাবে ‘টাইম আউট’ ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে বাচ্চার কাঙ্ক্ষিত আচরণ পরিবর্তন হবে নানা। উদাহরণ দিয়ে বললে, হতে পারে আপনি সন্তানকে হুমকি দিচ্ছেন, তুমি দুষ্টুমি বন্ধ না করলে নিচের ঘরে রেখে আসব, আপনি পরবর্তীতে তা করলেন না এ সময় বাচ্চারা অতিরিক্ত সুযোগ পায় অন্যায় করার। শুধু ‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়া বার বার প্রয়োগ করবেন না বরং অন্যান্য আচরণগত প্রক্রিয়াগুলও ব্যবহার করুন।

৭. ‘টাইম আউট’ কার্যকর হলে পুরস্কার

‘টাইম আউট’ ব্যবহার ফলে যদি সফল হয় নির্ধারিত আচরণের দিকে এগিয়ে যায়। তখন বাবা ময়েরা খেয়াল করবেন পরের দিনটি অনুসরণ করছে কিনা,এ সময় বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সাথে সুন্দর সময় কাটানো এবং পরবর্তীতে তাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া বা পুরস্কার দেবার পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।

সীমাবদ্ধতা: দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘টাইম আউট’ মধ্যেও অনিবার্য কারণে কিছুটা ভুল ধারণা রয়ে গেছে,কেউ কেউ সন্তানকে আউটিং খেলার সময় ‘টাইম আউট’ দেয়। যা বাচ্চাদের আবেগীয় বিকাশে ক্ষতি করে।

টাইম আউটের সময় বাচ্চাদের উপর নিরবে খেয়াল রাখুন অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে। সুত্র:’প্যারেন্টি’ অনলাইন।

ফাতেমা শাহরিন
মনোবিজ্ঞান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
মেইল:zummi093824@gmail.com

 

মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা এবং খাওয়াবার নিয়ম

ডা.মারুফ রায়হান খান

এটা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই একটি শিশুর জন্মের পর কী খাবে তার আগাম ব্যবস্থা করে পাঠান। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ মিলিয়ন নবজাতকের মৃত্যু নিবারণ করা সম্ভব, যদি জীবনের প্রথম ১ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে বুকের দুধ পান করানো যায়। আরও বলা হয় যে, অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুমৃত্যুর হার প্রায় ১৩ ভাগ কমিয়ে আনা যেতো শিশুকে জন্মের প্রথম ৬ মাস শুধু বুকের দুধ দেওয়া হতো। এবার আলোচনা করা যাক বুকের দুধের উপাকারিতা নিয়ে।

শিশুর জন্যে উপকারিতা:

১. এটি একটি পূর্ণাঙ্গ খাবার। সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে এর মাঝে।
২. এটি সহজেই হজম হয়, পরিপাকতন্ত্রে ভালোভাবে শোষণ হয়।
৩. জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে।
৪. মায়ের সাথে শিশুর এক আত্নিক-আবেগিক বন্ধন গড়ে ওঠে।
৫. মস্তিষ্কের গঠন সুসংহত হয়। বুদ্ধিমত্তা শক্তিশালী হয়।
৬. বিভিন্ন ধরনের এলার্জি থেকে প্রতিরোধ করে।
৭. যেসব শিশু নিয়মিত বুকের দুধ পান করে, তাদের শৈশবকালীন ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কম থাকে।

মায়ের জন্যে উপকারিতা:

১. জরায়ু গর্ভকালীন সময়ের আগের স্থানে দ্রুত ফিরে যেতে সহায়তা করে।
২. পরবর্তী গর্ভধারণকে বিলম্বিত করে।
৩. স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

পরিবার এবং সমাজের উপকারিতা:

১. অর্থ বাঁচায়।
২. পরিবার-পরিকল্পনায় সহায়তা করে।
৩. যেসব শিশুকে যথার্থভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, তাদের হাসপাতালে কম ভর্তি করতে হয়।
৪. শিশুকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। আর একজন সুস্থ শিশুই পারে সমাজকে তার সর্বোচ্চটুকু দিতে।

শিশুকে বুকের দুধ কীভাবে খাওয়াতে হয়?

১. মায়ের হাত দিয়ে শিশুর পুরো শরীরটাকেই সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হবে।
২. শিশুর শরীর মায়ের শরীরের সাথে লাগানো থাকবে।
৩. মাথা এবং শরীর সোজা থাকবে।
৪. শিশুর মুখ স্তনের দিকে থাকবে, নাক স্তনবৃন্তের (নিপল) বিপরীতে থাকবে।
৫. শিশুর থুতনি স্তন স্পর্শ করবে।
৬. শিশুর মুখ বড় করে খোলা থাকবে।
৭. নিচের ঠোঁটটা বাইরের দিকে থাকবে।
৮. স্তনের কালো অংশ (এরিওলা) নিচের থেকে উপরের অংশ বেশি দৃশ্যমান হবে।

ডা.মারুফ রায়হান খান
প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

কত ধর্ষিত শিশুর লাশ পেলে কতৃপক্ষ জেগে উঠবে

ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে খুনের সাত ঘন্টা পর উদ্ধার হয় কুমিল্লার চান্দিনায় শিশু কন্যা মীম। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওমর ফারুক (১৯) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।

আটক মোস্তফা কামালের ছেলে ওমর ফারুক চান্দিনা পৌরসভার বেলাশহর গ্রামে বাসিন্দা এবং মীমের প্রতিবেশী। ঘাতক পেশায় গাড়ি চালক।

রবিবার রাতে তাকে আটক করার পর গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় ম্যাজিস্ট্রেট বিপ্লব কুমার দেবনাথ এর আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় সে। তার জবানবন্দিতে জানা যায়, নিহত শিশু সুবর্ণা আক্তার মীমের পাশ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা গাড়ি চালক ওমর ফারুক।

ঘটনার দিন গত ৬ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল থেকে ওমর ফারুক তার প্রাইভেটকারটি ওয়াশ করছিল। গাড়ি দেখে মীম এগিয়ে গেলে তাকে গাড়িতে চড়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে পুকুর থেকে পানি সরবরাহ করিয়ে গাড়ি ওয়াশ করে চালক ওমর ফারুক। দুপুর ১২টার কিছু পর গাড়ি ওয়াশ শেষে ওমর ফারুক তার কথামত মীমকে গাড়িতে উঠিয়ে বেলাশহর আরএনআর ব্রিক্স ফিন্ড সংলগ্ন স্থানে এনে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এসময় মীম চিৎকার করে অচেতন হয়ে পড়লে গাড়ি চালক ওমর ফারুক তাকে ওড়না দিয়ে শ্বাসরূদ্ধ করে হত্যা শেষে গাড়ির পিছনের বক্সে লুকিয়ে রেখে গাড়িটি তার গ্যারেজে রেখে দেয়।

প্রায় সাত ঘন্টা শিশুটির মরদেহ গাড়িতে থাকার পর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টায় গাড়ি যোগে পাশ্ববর্তী থানগাঁও গ্রামের মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন একটি খালপাড়ে শিশু মীম এর মরদেহ ফেলে আসে। বিষয়টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে ওই গাড়ি চালক তার গোপন একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে শিশু মীমের পিতা কোরবান আলীকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে মুহুর্তের মধ্যে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে সীম কার্ডটি ফেলে দেয়।

চান্দিনা থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই কল লিস্টের সুত্র ধরে চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ, উপ-পরিদর্শক (এস.আই) স্বপন কুমার সরকার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এস.আই) ডালিম কুমার মজুমদার সহ ‘টিম চান্দিনা’ অভিযান চালিয়ে উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের বদরপুর-মেহার গ্রাম থেকে তাকে আটক করার পর এ তথ্য উন্মোচিত হয়।

চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, মূলত যৌন তাড়নায় গাড়ি চালক ওমর ফারুক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এর আগে নিহতের মা খাদিজা আক্তার সিমু বাদী হয়ে মীম এর সৎ মা লাভলী আক্তার (৩৫) ও তার ছোট ভাই দেবিদ্বার উপজেলার বাগুর গ্রামের মোস্তফা সরকারের ছেলে সালাউদ্দিন সরকারকে (৩২) আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাদির লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সৎ মা ও মামাকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার পর থেকে শিশু মীমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে পাশ্ববর্তী গ্রামের থানগাঁও ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় শিশু মীমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সুত্র ও ছবি: ইন্টারনেট

 

‘বাচ্চাদের প্রশ্ন করা’—আফরোজা হাসান

গতকাল আমাদের ভলান্টিয়ার টিচারদের আলোচনার বিষয় ছিল বাচ্চাদের প্রশ্ন করা। প্রতিটা ক্লাসেই আমাদের প্রত্যেকজন টিচারকে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় বাচ্চাদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে।

সারাক্ষণ প্রশ্ন করতেই থাকে বাচ্চারা। পড়া বিষয়ক প্রশ্ন, সাধারণ প্রশ্ন, মাঝে মাঝে গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নও। আসলে বাচ্চাদের স্বভাবই হচ্ছে তারা প্রশ্ন করতে ভালোবাসে। অবশ্য প্রশ্ন করাটা খুব ভালো এতে বাচ্চাদের চিন্তাশক্তি প্রসারিত হয়।

সমস্যা হচ্ছে বেশির ভাগ অভিভাবক বাচ্চাদের প্রশ্নের জবাব ঠিকমতো দেন না। আগে আমার ধারণা ছিল যে আমরা বাঙ্গালী বাবা-মায়েরাই মনেহয় বাচ্চাদের বেশি প্রশ্ন শুনলে বিরক্ত হই বা ঠিকমতো জবাব দেই না। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে কথা বলার পর থেকে বুঝলাম যে সব দেশী বাবা-মায়েদের অবস্থাই প্রায় একই রকম। অথচ প্রশ্ন করা আর এর জবাব দেয়ার মাধ্যমে বাচ্চাদেরকে অনেক দরকারি বিষয় খুব সহজেই শিখিয়ে ফেলা যায়।

বাবা-মাদের কখনোই উচিত নয় বাচ্চাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকা। বরং বাচ্চারা যাতে বেশি বেশি প্রশ্ন করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত। স্কুলে যেমন আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নপত্র আছে বাচ্চাদের জন্য। প্রশ্নপত্র গুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে জবাব দিতে গিয়ে বাচ্চারা আত্মসমালোচনা করা শিখতে পারে….হতে পারে অমুখাপেক্ষী ও দায়িত্বশীল। প্রতিটা প্রশ্নের জবাব দিতে বাচ্চাদেরকে আমরা সাহায্য করি এটা ঠিক কিন্তু যখন ওদের চিন্তা আর পথ খুঁজে পায় না সামনে বাড়ার শুধু তখন।

পরিবার বিষয়ক প্রশ্নপত্রে যেমন আছে, তুমি কি তোমার বাবা-মাকে ভালোবাসো? কেন বাসো? তোমার বাবা-মা কি তোমাকে ভালোবাসে? কিভাবে বুঝলে যে তারা তোমাকে ভালোবাসে? বাবা-মার কোন জিনিসটা তোমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে এবং কেন ভালো লাগে? কোন জিনিসটা সবচেয়ে অপছন্দ করো এবং কেন করো অপছন্দ? তুমি কি তোমার ভাইবোনকে হিংসা করো? কি কি কারণে হিংসা করো? ভাইবোনের কোন জিনিসটা সবচেয়ে পছন্দ আর কোনটা সবচেয়ে অপছন্দ এবং কেন? ইত্যাদি এই ধরণের আরো কিছু প্রশ্ন।

এই প্রশ্নগুলো বাচ্চাদেরকে সাহায্য করে নিজেকে বুঝতে, জানতে ও চিনতে। কেন, কি কারণে বা কিসের জন্য একটা জিনিস পছন্দ বা অপছন্দ সেই ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়ে যায় মনে। কারণ ছাড়া কোন কিছু করা যাবে না বা ঠিক না এটা বদ্ধমূল হয়ে যায় বাচ্চাদের মনে। যা তাদের চিন্তাকে যুক্তির পথে পরিচালিত হতে সহায়তা করে। তাই বাচ্চাদেরকে বেশি বেশি প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করতে হবে এবং তারা যাতে নিজের চিন্তাকে কাজে লাগাতে পারে সেই পথ প্রসন্ন করতে হবে।

 

“বন্ধ্যাত্বের জন্য কোনক্রমে কি আপনি দায়ী”—ডা.মারুফ রায়হান খান

১ বছর যাবত অরক্ষিত শারীরিক মিলনের পরেও গর্ভধারণ না করতে পারাটাকেই বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। প্রজননের বয়সের ১০-১৫% দম্পতি এ সমস্যায় ভুগে থাকেন।
img20171210_233801
অনেকগুলো জীবনযাত্রার ব্যাপার আছে যার প্রাকৃতিক জন্মদানক্ষমতার ওপর প্রভাব রয়েছে। সেগুলো হলো :
img20171210_234142
১. বয়স : বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছরের পরে গর্ভধারণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে। পুরুষের বয়সও গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের অক্ষমতাটা শেষ বয়সে পরিলক্ষিত হয়।
img20171210_234109
২. বিগত মাসিকের দশম থেকে আঠারোতম দিনে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে প্রতি ৪৮ ঘণ্টাতেই যৌনমিলন করা প্রয়োজন।
img20171210_234049

৩. সাফল্য পেতে প্রতি ১-২ দিনে একবার যৌনমিলন করা উচিত। তবে মানসিক চাপ থেকে রেহাই পেতে, আরও কম যৌনমিলন করা গ্রহণযোগ্য।
img20171210_234214
৪. কোনো নির্দিষ্ট আসনে যৌনমিলন গর্ভধারণের সম্ভাবনার উন্নতি ঘটায় না।

৫. বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) যদি অনেক বেশি থাকে (>৩৫) বা অনেক কম থাকে (<১৯) তবে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়। img20171210_233931
৬. ধূমপান, মদ্যপান (দিনে ২ বারের বেশি) এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান ( দিনে ৫ কাপের বেশি) বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়।

৭. স্বামীর জন্যে – উষ্ণ, আঁটসাঁট, নাইলনের অন্তর্বাস পরিহার করা উচিত। তাদেরকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে বলা হয়। কারণ শরীরের অভ্যন্তরে যে তাপমাত্রা তারচেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম তাপমাত্রা অণ্ডথলিতে থাকতে হয় কার্যকর শুক্রাণু তৈরির জন্যে।
img20171210_234235
৮। খাবার : মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের কিছু ভূমিকা আছে সন্তান জন্মদান-সক্ষমতার ক্ষেত্রে। ফলিক এসিড এবং জিঙ্কের ঘাটতি থাকলে শুক্রাণু তৈরি কমে যেতে পারে। তাছাড়া খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্ট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন : বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, রেটিনল এবং আলফা টকোফেরোলের ঘাটতি থাকলে জননতন্ত্রের নিঃসরণ কমে যেতে পারে। ফলে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

৯. অনেক দম্পতি যৌনমিলনের সময় শুষ্ক যোনিপথের কারণে পিচ্ছিলকারক পদার্থ ব্যবহার করেন। এসব পদার্থ প্রায়শই অম্লীয় হয়ে থাকে এবং শুক্রাণুকে হত্যা করে।

১০. অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা কমায়।

১১. সামাজিক শ্রেণি : গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহুরে নারীদের বন্ধ্যাত্বের পরিমাণ বেশ বেশি। কারণ উচ্চশ্রেণির নারীরা তাদের ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা না করে সাধারণত সন্তান নিতে চান না। আবার কিছু কিছু রোগ এ শ্রেণির মধ্যে বেশি হয়; যেমন : এন্ডোমেট্রিওসিস, যা নিজেই কিনা বন্ধ্যাত্বের জন্যে দায়ী। যে বয়সে এসে প্রাকৃতিকভাবেই সন্তান জন্মদানের ক্ষমত কমে যায় এবং বিভিন্ন গাইনোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়, তখন সন্তান নেবার চেষ্টা বন্ধ্যাত্বকে প্রভাবিত করে।
img20171210_234125
১২. সন্তান জন্মাদানের সক্ষমতার ওপর কিছু কিছু ওষুধের প্রভাব আছে।

তাই নিঃসন্তান দম্পতির দুজনকেই গাইনী বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়া উচিত।

 

রত্নগর্ভা এক মায়ের গল্প

২০১৭ সালে পেয়েছেন সেরা জয়িতা- রত্নগর্ভা অ্যাওয়ার্ড ‘রত্নগর্ভা মা’ মোছা:হামিদা বেগম। সুন্দর আলোয় উদ্ভাসিত এই মা নিজের দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস ও সততা কারণে গৌরব অর্জন করেছেন।
img20171210_145908
মা তার সন্তানদের রত্ন বানানোর স্বপ্ন থেকে কখনও সরেননি একচুলও।

একজন গ্রাম্য মাতব্বরের খুব সাধারণ স্ত্রী ছিলেন তিনি। এক সংগ্রামী মা। তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। যে সংগ্রামের শুরু তার শৈশব। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন তার বড় পরিচয় তিনি একজন সফল মা।
হামিদা বেগম ছিলেন একান্নবর্তি সংসারের পরিবারের বউ আর তাই দায়িত্বটাও ছিল বেশি। ৩০/ ৩৫ জনের ঢেকি-হেঁসেল-হাড়ী ঠেলে ক্লান্ত। হাজবেন্ড কর্মপাগল সামাজিক ও ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য সন্তানদের শাসন-সোহাগের যে শুন্যতা তৈরী হত তাও তিনি একাই পুষিয়ে দিয়েছেন। সব ক্লান্ত ঠেলে সেই মা রাতের বিছানায় স্বপ্ন বুনতেন রোজ। সংকল্প করেন হামিদা সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তোলার।

হামিদা বেগমের ছেলে মেয়েরা সবাই স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত আছেন। তার সন্তানদের সম্পর্কে জানা যায়,

বড় সন্তান ড. আব্দুস সালাম আযাদী। তিনি লেখাপড়া করেছেন রিয়াদের কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল সহ মাস্টার্স। বৃটেনের অয়েলস এ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

মেজো ছেলে, আর্মি মেডিক্যাল কোরে জয়েন করেছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন।

ছোট ছেলে আব্দুস সামাদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে ইংরেজী বিভাগ থেকে এম এ করেছেন। বর্তমানে ঢাকার তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় অধ্যাপনা করছেন।

বড় মেয়ে তাসলিমা রহমান একটি কুরআন একাডেমি পরিচালনা করছেন। হাজবেন্ড একটি ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল।

মেজো মেয়ে সেলিনা হাবীব কামিল এম এ। একটি ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসায় অধ্যাপনা করছেন। তার হাজবেন্ড একটি মহিলা মাদরাসায় অধ্যাপক।

সেজো মেয়ে নুরুন্নাহার লাভলি কামিল এম এ করেছেন।একটি কুরআন একাডেমির ইনস্টাক্টর হিসাবে আছেন।

এরপর নাজমুন্নাহার স্বপ্না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ করেছেন। তার হাজবেন্ড কর্মরত আছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে।

সবার ছোট শামসুন্নাহার মলি আই আই ইউ সি থেকে ইংরেজীতে অনার্স শেষ করেছেন। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে আছেন ফেমিলী সহ।

মা কে নিয়ে একজন সন্তান লিখেছেন— ‘তার ঘরটি ছিল মাটির কিন্তু তিনি সোনা ফলানোর স্বপ্ন দেখতেন। শীতের রাতে যে বিছানাটাতে ঘুমোতেন সেটার ভিতরে তুলো ছিলো না। যে জায়নামাজে বসে আরশের মালিকের কাছে আমাদের জন্য হাত তুলে বসে থাকতেন সেটা মখমলের ছিল না। এতগুলো ভাইবোনের কত প্রয়োজন মিটাতে হত অথচ তার হাতে দুটো টাকা থাকতো না। অনেক বড় বড় স্বপ্নভরা গল্প শুনাতে শুনাতে আমাদের দুচোখে স্বপ্ন এঁকে দিতেন।’

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত আট সন্তানের এই জননী। তিনি প্রতিটি সন্তানকে শিক্ষায় এবং নৈতিকতায় পরিপূর্ণ আলোয় আলোকিত করে তুলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন।

আট সন্তানকে গর্ভে ধারন করে তিনি যেমন মা হয়েছেন আবার গর্ভে ধারন না করেও অনেকের মা ডাক শুনে যাচ্ছেন। স্বমহিমায় উজ্জ্বল পথের দিশারী অন্যদের কাছেও।

ফাতেমা শাহরিন

 

‘নারীদের মূত্রনালীতে ইনফেকশান বেশি হয়’ এর কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় ও করণীয় —ডা.মারুফ রায়হান খান

খুব অহরহ যে রোগটিতে মানুষ আক্রান্ত হয় সেটি হলো মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ বা Urinary Tract Infection (UTI)। সাধারণত মূত্রথলী এবং মূত্রনালীর প্রদাহকেই UTI বলা হয়।
সবচেয়ে বেশি এ রোগটি হয় যে জীবাণু দিয়ে তা হলো Escherichia coli।
এটি নারীদেরই সাধারণত হয়। পুরুষদের কমই দেখা যায়। তবে জীবনের ১ম ১ বছর এবং ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে হতে পারে।
img20171209_214403
কেন নারীদের বেশি হয়?

-তাদের মূত্রনালী আকারে ছোট হয়।
-এটি মলদ্বারের নিকটবর্তী, তাই সেখান থেকে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।
-প্রোস্টেট গ্লান্ড থেকে পুরুষদের এক ধরনের তরল নিঃসৃত হয় যা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে তার অনুপস্থিতি।

এছাড়া যৌনমিলনের সময় মূত্রনালীতে আঘাত লাগতে পারে তখন পেরিনিয়াম থেকে মূত্রথলীতে জীবাণু প্রবেশ করে এ রোগটি হতে পারে।
img20171209_214533
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ঃ

– যারা বিভিন্ন কারণে মূত্রথলী পরিপূর্ণভাবে খালি করতে পারেন না।
– মূত্রনালীতে যদি ক্যাথেটার করা থাকে। কিডনী, মূত্রথলি কিংবা মূত্রনালীতে যদি পাথর জমা হয়।
– যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমনঃ মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া নারী ও ডায়াবেটিস রোগী।
img20171209_214633
লক্ষণসমূহঃ

১। হঠাত করে ঘনঘন প্রস্রাব পাওয়া।
২। প্রস্রাব করার সময় খুব জ্বালাপোড়া হওয়া।
৩। প্রস্রাব করার সময় অথবা শেষে তলপেটে ব্যথা অনুভব করা।
৪। প্রস্রাব করা শেষে পুরোপুরিভাবে প্রস্রাব হয়নি, কিছু থেকে গিয়েছে এরকম অনুভব করা।
৫। প্রস্রাব কখনও কখনও ধোঁয়াচ্ছন্ন হতে পারে, দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে।
৬। কখনও কখনও প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে।
img20171209_214655
চিকিৎসাঃ

উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক এক্ষেত্রে প্রধান চিকিৎসা। তবে বলে রাখা ভালো, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজেরা কিংবা ফার্মেসিওয়ালাদের কাছ থেকে যেকোনো এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা বিপদজনক হতে পারে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে বলা হয়ে থাকে।

যাদের বারবার এই রোগটি হয় তারা এটি প্রতিরোধের জন্য যা করতে পারেন :

১. দিনে ২-৩ লিটার পানি খাবেন।
২. প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। যখন প্রস্রাবের বেগ আসবে করে ফেলবেন।
৩. যৌন মিলনের আগে ও পরে প্রস্রাব করে নেবেন। (সঙ্গমের পরে প্রস্রাব করে নিলে এসময় যদি কোনো ব্যাক্টেরিয়া মূত্রনালীতে যেয়ে থাকে তাহলে বেরিয়ে যাবে।)
৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবেন। টয়লেট সেরে পরিষ্কার হবার সময় সবসময় সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করবেন।
৫. বেশি করে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। (এটা ইউরিনে অম্লীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে, ফলে ব্যাকটেরিয়া বেশি বৃদ্ধি হতে পারে না।)
৬. মাসিকের সময় পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করবেন। (গ্রামাঞ্চলে হয়তো এখনও অনেকে ন্যাপকিন/প্যাড ব্যবহার করেন না।) নিয়মিত প্যাড চেঞ্জ করবেন। বলা হয়ে থাকে ৬ ঘণ্টার বেশি এক প্যাড না ইউজ করার জন্যে।
৭. কটনের আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করবেন। ( কারণ ব্যাকটেরিয়া আর্দ্র জায়গায় বেশি জন্মায়, কটন আর্দ্রতা ধরে রাখে না।)

 

নারীশিক্ষার অগ্রদূত ‘বেগম রোকেয়া’

“অশিক্ষিত চোখ যেই খানে ধূলি-কর্দম দেখে, শিক্ষিত চোখ সেই খানে দেখে মণি-মাণিক্য”

আপনার ধারণায় ঠিক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের উক্তি এটি। তিনি নারীদের শিক্ষা দিয়ে আলোকিত করার অগ্রদূত। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। খুব অল্প সময়, মাত্র ৫২ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এই অল্প সময়ে এবং হাজার বাধার মধ্যে তিনি এত কাজ করেছেন যে ভাবতে অবাক লাগে। নারীশিক্ষার জন্য যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা তিনি করেছেন, যে সাহস দেখিয়েছে, সেটা তিনি দেখিয়েন আমাদের অনুপ্রেরণাককারী হিসেবে। বেগম রোকেয়া ১৩৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুগলের হোমপেজে বিশেষ একটু ডুডল প্রদর্শন করা হচ্ছে।

প্রতিবছর ডিসেম্বরের ৯ তারিখ বেগম ‘রোকেয়া দিবস’ পালন করেন বিভিন্ন নারী সংগঠন, এনজিও, সরকারের নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ‘রোকেয়া পদক’ দেওয়া হয় বিশিষ্ট নারীদের। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক-২০১৭ প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি থাকবেন।
এ বছর রোকেয়া পদক পেয়েছেন
images(81)
চিত্রশিল্পী ‘সুরাইয়া রহমান’, লেখক ‘শোভা রানী ত্রিপুরা’, সাংবাদিক ‘মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ(মরণোত্তর)’, সংগঠক ‘মাজেদা শওকত আলী’,
সমাজকর্মী ‘মাসুদা ফারুক রত্না’।
আজ তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

বেগম রোকেয়া দিবস থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস—ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস, বাংলাদেশের নারীদের এই অনন্যসুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। সামগ্রিকভাবে সবাই মিলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তুতি আমরা রোকেয়া দিবস থেকেই শুরু করতে পারি। সমাজের সবাইকে মনে করিয়ে দেয়, নারীমুক্তির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখা যায়। রোকেয়া সেই দিকটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ছবিসুত্র:বিডিনিউজ২৪,গুগল

 

মাদকা ও সাইবার আসক্তি নিরাময়ে SBT(Spiritualistic Behaviour Therapy) অধিক কার্যকরী —- ডা.কবীর জুয়েল

রাজধানীর সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ সম্পর্কিত সেমিনার সম্পন্ন হয়েছে। মালয়েশিয়াস্থ AIMST -এর ভিজিটিং সহযোগী অধ্যাপক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কবীর জুয়েল মধ্যপ্রাচ্যে বহুল ব্যবহৃত
SBT(Spiritualistic Behaviour Therapy) -এর মাধ্যমে আসক্তি নিরাময়ের ওপর আলোচনা করেন। সেমিনারে তিনি মাদক ও সাইবার আসক্তি নিরাময়ে নৈতিক শিক্ষাগ্রহণ জরুরী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানমালায় অন্যতম আকর্ষনীয় দিক ছিল প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বলিষ্ঠ সংবাদ পাঠক ও ভাস্কুলার সার্জন ডা. সাকলায়েন রাসেল। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ভি.সি ও প্রফেসর অফ এমিরেটাস অধ্যাপক ড. এম শমসের আলীসহ আরও অনেকে। সভাপতিত্ব করেন সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. এএনএম মেশকাত উদ্দিন।

মাদক একটি মরণব্যাধি। মুলত IDU(Intra Venous Drug Users) অর্থাৎ শিরায় নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণকারীদের নিরাময় প্রকল্পে Psychiatrist ও Vascular Surgeon -এর যুগপৎ ভূমিকা রয়েছে।

সেমিনারে বক্তিতা শেষে, শিরায় ক্রমাগত ইঞ্জেকশান নেওয়ার কারনে তাদের শিরা জনিত রোগ দেখা দেয়, এ বিষয়ে উপর তারা দুজনে পালাক্রমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

এছাড়াও ৫-জন মেধাবী ও প্রাণবন্ত ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে ” South East University Mental Health Club” খোলা হয়।
ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

 

ধূপছায়া -সুমাইয়া তাসনিম

নাশতা করে আয়েশ করে কম্বলের নিচে ঢুকতেই অনু দরজায় এসে দাঁড়ালো। আমি তাকাতেই ঠোঁট প্রসারিত করে একটা মেকি হাসি দিল। আমি মনে মনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। এই সাত সকালে কি অঘটন ঘটিয়েছি বুঝতে পারছিনা। অনু ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। আমি ঢোক গিললাম, কি করেছিস সাজিদ? কি? কি?? মনে কর!
অনু খুব কাছে আসার পর আমার চিন্তার মোড় ঘুরে গেলো। মুখ তুলে ওর চোখের দিকে তাকালাম। আচ্ছা… মেয়েটার মনে আমার জন্যে তাহলে একটু মায়া মোহাব্বত জন্মাচ্ছে কিনা…
অনু আরেকটু এগিয়ে এসে আচ্ছা একটা ঠুয়া দিল কপালে। তাও নিজের কপাল দিয়ে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপসে গিয়ে বললাম, তোমার ওই কপাল দিয়ে বাড়ি দিলে নারিকেলও ফেটে যাবে। কি দরকার ছিল কাছে এসে হার্টবিট বাড়িয়ে দেওয়ার..
-আর কতদিন মাথায় আমাজনের জঙ্গল বানিয়ে রাখবা?
অনু তীর্যক কন্ঠে প্রশ্ন করল।
আমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমাজন যে জঙ্গল না সেটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।
-এত ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলো কেন? আমাকে ভাল্লাগেনা না? তাড়াতাড়ি যাও। এমনিই ছুটির দিন, পরে সিরিয়াল পাবানা।
আমি সন্তর্পণে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। উঠে তৈরি হতে হতে একটু ইতস্ততভাবে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়ে অনু, ওই শরফুদ্দীন আসবে তো.. দুপুরে আমাদের সাথে খেতে বলি?
অনু চুলের খোঁপাটা নতুন করে বেধে আঁচল গুজে নিতে নিতে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, হ্যা বলো, অসুবিধা কি! উনি কি কি খেতে পছন্দ করে সেটা ডায়রীতে লিখে দিয়ে যাও।
খেয়েই বের হবো বলে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আড়চোখে এলোমেলো চুলের অগোছালো খোঁপা বাধা দেখতে দেখতে আমি মৃদু হাসলাম। অনুর এই ব্যাপারটা আমার ভাল লাগে। ওর আপ্যায়নে কেউ খুশি না হয়ে পারেনা। আমার মত কিছুটা অসামাজিক নিরীহ স্বভাবের বিরস কারো জন্য এটা একটা দারুণ ব্যাপার। আমার সামাজিকতার ঘাটতিটা ও পূরণ করে দেয়। ওর ডায়রীতে মোটামুটি সবার পছন্দের খাবারের লিস্ট আছে। সবাইকে এত সহজে কাছের করে নেয়! কেবল আমি বাদে… আমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

আর সবার মতই শরফুদ্দীন খেতে বসে অবাক হল। ছোট্ট সংসার তাই আয়োজন সীমিত কিন্তু সবই ওর পছন্দের। নারকেল দিয়ে ঝোল ঝোল করে রান্না করা ডিমের তরকারি, লইট্যা মাছ ভুনা, ধনেপাতার ভর্তা আর টকদই দিয়ে মাখানো বাহারি রঙের সালাদ।
নিজেই প্লেট টেনে নিতে নিতে বললো, তুই বড় কপালওয়ালারে সাজিদ। আমি মুচকি হাসলাম। শরফুদ্দীন সেই স্কুল লাইফ থেকে এমনই। একটুও বদলায়নি। অসম্ভব চটপটে আর স্মার্ট এই ছেলেকে ম্যানেজ করার সহজ উপায় হলো তার পছন্দের খাবার খাওয়ানো। একে তো তার প্রিয় খাবার, তার উপর অনুর রান্নার হাত অসাধারণ।
সালাদের বাটি শেষ করে বললো, এত স্বাদের সালাদ আমি আর খাইনি।
আমি বউয়ের প্রশংসায় তৃপ্তির হাসি হাসলাম। দেখতে হবেনা কার বউ!
হাটতে হাটতে শরফুদ্দীন বললো, তোদের বিয়ের ব্যাপারে দ্বিমত করেছিলাম বলে কিছু মনে রাখিস না। মনে হচ্ছে তোরা বেশ আছিস। আসলে আমার সাথে ভাবির প্রথম পরিচয়টা যেমন হবার কথা ছিল ঠিক তেমন ছিল না.. এজন্যই আরকি ওরকম বলেছিলাম।
আমি মৃদু কণ্ঠে সায় দিলাম।
অনুকে দেখতে যাওয়ার পরপরই কিছু ফাইনাল হয়নি। আসলে একইসাথে দুটো সমন্ধ ছিল। অনুকে দেখার পর আমার খারাপ লাগেনি। কিন্তু শরফুদ্দীন জোর করেছিলো দ্বিতীয় সমন্ধটার ব্যাপারে। তাই অনুর ব্যাপারে হ্যা-না কিছু বলার আগে বন্ধুর কথা রাখলাম। সত্যি, মেয়েটার কোনো কমতি ছিল না। দেখতেও আকর্ষণীয়। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটেছিল দেখতে গিয়েই।
এই দেখাদেখিটা আমার ঠিক পছন্দ না। মানে আমার খুব অস্বস্তি লাগে কেন যেন। তাই রেস্টুরেন্টের কোনার একটা টেবিলে হাত কোলে মাথা নিচু করে বসেছিলাম। মেয়েটা আসার পর টুকটাক কথা বলছি এমন সময় আচমকা কোথা থেকে যেন উড়ে এলো অনু। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একবার অনু একবার নিগার নামের মেয়েটার দিকে চাইতে লাগলাম। অনু খুবই সাবলীল ভাবে জিজ্ঞেস করল, এই মেয়েটা কে? আমি আরো হতভম্ব হয়ে গেলাম। স্রেফ গতকাল পরিচয় হওয়া একটা মেয়ে আমার সাথে এমন পরিস্থিতিতে এভাবে কথা বলবে তা আমার ভাবনার অতীত। অনু আবার জিজ্ঞেস করল। আমি কিছু বলার আগেই নিগার মৃদু হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, বসুন। অনু বসলে নিগার এক মুহূর্ত তাকে পর্যবেক্ষণ করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই অনু ছো মেরে গ্লাসটা নিয়ে পানিটুকু শেষ করে আমার দিকে চেয়ে রইল। আমি বিস্ময়াভিভূত চোখে অনু নামের মেয়েটার দিকে অপলক চেয়ে রইলাম। অনু একটা বড় শ্বাস নিয়ে একটুপর বলল, আমি বেশ কিছুক্ষণ থেকেই আপনাদের দেখছি। যা বুঝেছি, আপনি মেয়ে দেখতে এসেছেন যেমন করে গতকাল আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন। আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়নি? কিন্তু আমার তো আপনাকে পছন্দ হয়েছে।

আচমকাই এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য নেমে এলো যেন।আমি পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে অনুর চোখে চোখ রাখলাম। দীর্ঘ পল্লবে কাজলের সন্ধ্যা নেমে এসেছে এই ব্যস্ত সকালে। চোখের গাঢ় কালো তারার মাঝে পাপড়ি মেলে আছে আশ্চর্য এক কৃষ্ণ বুনোফুল। নাক ঘামছে এই এসি রুমেও। শিশিরের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু ফুটে আছে ঠোঁটের উপরিভাগে। হালকা বেগুনী আভাযুক্ত ঠোঁটজোড়া চেপে রাখা সত্ত্বেও তা সুক্ষ ছন্দে তিরতির করে কাপছে। থুঁতনির এক কোণে অবছাভাবে ফুটে আছে একটা লালচে তিল।
হঠাৎ মৃদু গলা খাঁকারিতে সম্বিত ফিরে পেয়ে ভীষণ লজ্জিত হয়ে নিগারের দিকে চাইলাম। নিগার একটু বিব্রত হেসে বলল, আমি তাহলে উঠি। আমাকে আর কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে নিগার দ্রুতই প্রস্থান করতেই অনুও উঠে দাঁড়ালো। সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছে কাজটা ঠিক ভাল হলোনা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একবারও আমার দিকে না তাকিয়ে হনহন করে হেটে বেরিয়ে গেল।
স্বাভাবিকভাবেই শরফুদ্দীন ব্যাপারটা জেনে তেতে উঠল। নিগারের ভাই শরফুদ্দীনের কলিগ। সুতরাং সে যথেষ্ট বিব্রত একইসাথে গোটা ব্যাপারটাই তার কাছে সস্তা ড্রামা মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করল। এবং এই সমস্ত হুজুগের পছন্দ টিকেনা বলে মতামত ব্যক্ত করল। আমি চুপ রইলাম। শরফুদ্দীন মাঝে মাঝে তেতে ওঠে সত্যি, কিন্তু ভেবেচিন্তে কাজ করার সুনাম আছে ওর। যদিও স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর তাতে কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। পাঁচ বছরের সংসার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া একদিন হুট করে শেষ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন ও এক বিমূঢ় বিস্ময়ে ডুবে ছিল। কেবল বলতো, আমি ঠিক বুঝলাম নারে, রুবি তো আমাকে ভালোবাসে! আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর কাঁধে হাত রাখতাম। এক সময় শরফুদ্দীন ধাতস্থ হলে তরল কন্ঠে বলতো, আমি ঠিক জানিনা কিভাবে কি হলো, কিন্তু অনুভব করতে পারি। আর সেই অনুভূতি কেন যেন আমারই দিকে আঙ্গুল তাক করে।
জবাবে আমি কাঁধে আলতো করে চাপড় দিয়ে আঙ্গুলের ডগা নাচিয়ে না সূচক মাথা নাড়তাম। মাঝেমাঝে শরফুদ্দীন নিঃশব্দে কাঁদতো। আমি কাঁদতে দিতাম। কিছু সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ করেইবা কি লাভ? সত্য তাতে বদলায় না মোটেই। কিছু সম্পর্ক শেকলের মত, অথচ সে শেকলে মরচে ধরে ভেঙ্গে পড়লে মানুষ হয়ে পড়ে শেকড় কাটা পড়া গাছের মত। শরফুদ্দীন রুবিতে এতটাই অভ্যস্ত ছিল যেমনটা আমরা আলোবাতাসে। পুরুষমানুষ শক্তিমান, বুদ্ধিমান, সূর্যের কান্তি তার শরীর জুড়ে ঝলমল করে। আবার তারা নোংরা ঘরে ইঁদুর মরার গন্ধ সয়ে নিতে পারে, ধুলোয় অন্ধকার হয়ে আসা কক্ষে অবলীলায় নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে যেতে পারে, নোংরা কাপড়ে সপ্তাহ পার করে দিতে পারে, কিন্তু পুরুষের হৃদয় বড় দূর্বল। পুরুষ হয়ে ওঠার পর পুরুষমানুষ সম্ভবত অনাথ হয় বউ হারালে। আচমকা একদিন আবিষ্কার করে টুথব্রাশটাও নিজের জায়গায় থাকেনা, তাকে রাখতে হয়। কাপড়টা আয়রন করা থাকেনা, করে রাখা হয়। জুতোটা, তাকেও চকচকে করা রাখা হয়। গাছে পানি না দিলে ওই ঝুলে থাকা বাহারি গাছটাও প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যায়। ধুলোর আস্তরণে চাপা পড়ে থাকে সহাস্য যুগলছবি। এমনকি দেয়াল ঘড়িটাও একদিন বেকে বসে। সবকিছু পরিমাণ মত না হলে রান্না কিছুতেই সুস্বাদু হয়না, সুঘ্রাণ ছোটেনা পাশের বাড়ি পর্যন্ত। সস্তা বা দামী, কোনো রেস্তোরাঁর খাবারেই সেই আটপৌরে গন্ধটা পাওয়া যায়না কিছুতেই…
আর দিনশেষে চোখ বুজলে পরে কানে বাজতো যে নিঃশ্বাসের শব্দটুকু, তার অনুপস্থিতি সহ্য করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে।
শরফুদ্দীন অন্তর্দাহে অঙ্গার হয়ে যেন অনেকটাই বুড়িয়ে গেল। কাজপাগল ও আগে থেকেই ছিল। সেটা আরো খানিকটা বাড়লো। স্বাভাবিকভাবেই কর্মক্ষেত্রে শরফুদ্দীনের সুনাম ছিল। আর সেই সুবাদেই নিগারের সমন্ধটা আসে আমার বাড়ি পর্যন্ত। কিন্তু রেস্টুরেন্টে ঘটা অঘটনের পর আমার মনে বউ বলতে ওই স্থান কাল পাত্রের বিচার বিবেচনাহীন মেয়েটাই গেঁথে রইলো। কেন, তা নির্দিষ্ট করে বলার মত কিছুই পাইনি। হয়ত তার সহজ স্বীকারোক্তি আমার মধ্যে যে ছন্দপতন ঘটিয়েছিল, যা আর কখনো ঘটেনি, তাই!
শরফুদ্দীন প্রথমে মোটেই রাজি ছিল না। এমন উড়নচণ্ডী স্বভাব মেয়ের সংসার ধর্ম কদ্দিন ভাল লাগবে তা নিয়ে সে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল। কিন্তু আমি তাকে রীতিমত হৃদয়ে স্থান দিয়ে ফেলেছি!

বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পর শরফুদ্দীন একদিন ডাকলো। অনেকক্ষণ চুপ থেকে মানিব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে বললো, তোর ভাবির চিঠি লেখার শখ ছিল। আমার কখনো জবাব লেখা হতোনা ব্যস্ততায়… এটা ওর শেষ চিঠি ছিল।

আমি দ্বিধাগ্রস্ত হাতে কাগজটা খুললাম।

“জগতে ভালোবাসতে জানাটাই বড় কথা নয়। তাতো কতজনেই জানে!
কিন্তু এমন কাউকে ভালোবাসা, যে সেই ভালোবাসাকে তারই মত করে বুঝে কৃতজ্ঞ হয়, সৌভাগ্যবান ভাবে নিজেকে, তাকে মূল্যায়ন করতে জানে, পরম পাওয়া ভেবে বুকের একদম গহীনে আগলে রাখে, এমন সৌভাগ্য ক’জনের হয়! তবেই না ভালোবাসা সার্থক হয়, পূর্ণতা পায়।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
এই কথাটুকু সবাই বলতে পারেনা মুখ ফুটে। বলতে পারলেও বুঝিয়ে বলা বড় শক্ত। কিংবা যে বলে, সে নিজেই কি বুঝে বলে সব সময়?
নাহ…
তোমার কণ্টকপূর্ণ ভালোবাসা আমি সেই শুরুর মুহূর্তেই সমস্তই বুঝেছি। কিন্তু তার গহীন পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে কতটা ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে তা কি তুমি জানতে পেরেছো কোনো কালেই?
ভালোবাসতে তুমি সফল। এক আত্মবিস্মৃত অতীন্দ্রিয় ভালোবাসা তুমি আমাকে দিয়েছো। নিজেকে সমস্ত সমর্পণ করে ভীষণ এক ঘূর্ণির মত লণ্ডভণ্ড করেছো আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। নিজেকে অবধি ভুলেছি তোমার দুর্নিবার আকর্ষণ উপেক্ষা করতে না পেরে। কিন্তু তাতে কেবল নিজেকেই খুঁইয়েছি শেষতক।
তুমি তখন কোথায় ছিলে?
আজ এ জিজ্ঞাসা বড় অর্থহীন শোনায়, নাহ? ভালোবাসলে, অথচ ভালোবাসতে দিলেনা। এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু হয়?”

আমি চিঠিটা ফেরত দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
শরফুদ্দীন বলল, নারীর মন বুঝা শক্ত কিন্তু এটুকু বুঝলেও অনেক হতো যে, অবহেলা জিনিসটা একটা ব্ল্যাকহোলের মতন। নারীর অসীম সহ্য ক্ষমতা ওতে এসে নিঃশেষ হয়ে যায়। কিছু কথা, যা মানুষে মানুষে হয়না, নারীতে আর পুরুষে হয়, সে কথাগুলো বারবার আমার কাছে এসে ফিরে গেছে হৃদয়ের বন্ধ দরজায়। আমি স্বার্থপর পুরুষ, বাহু জড়িয়ে তাকে আগলে রেখেও হৃদস্পন্দন শুনবার জন্য নিজেকে একমূহুর্ত স্থির করতে পারিনি। সেই ব্যস্ততা আমাকে এখন অভিশাপ দেয়। কাজের প্রশংসাকে মনে হয় উপহাস। কতটা শূন্য আর অসম্পূর্ণ আমি, তা এক খোদা জানেন, যিনি হৃদয়সমূহের মালিক।
শরফুদ্দীনের কাছে সেদিন যা শিখেছিলাম তা আমি কখনো ভুলবো না। যে তুষের আগুন ওর ভেতরে জ্বলছে অনির্বাণ, তা নিভিয়ে ওকে একদন্ড সস্তি দিবে কিসে?
আমি বোকা মানুষ। এবং ভীতুও। যাকে আচমকা ভালোবেসে ফেলেছি তাকে হারানোর আগে আমার আরেকটা জীবনের নিশ্চয়তা চাই যে জীবনে তাকে আর হারাতে হবেনা।
বাসায় ফিরে হাসির শব্দ পেলাম। অনু খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে। আমি প্রচণ্ড কৌতুহল নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে দেখলাম একটা ছবির এ্যালবাম অনুর সামনে খোলা। আমার ছোটবেলার ছবির এ্যালবাম। আম্মুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিল গত সপ্তাহে।
অনুর হাসির তরঙ্গ আরো বেগবান হলো আমার উপস্থিতিতে।
আঙ্গুলি নির্দেশ করে একটা ছবি দেখিয়ে বলল, দ্যাখো দ্যাখো! এই পাতিল কাট হেয়ার স্টাইলে তোমাকে কত গুলুগুলু লাগছে দেখতে!
আমি গুণগুণ করে গাইলাম, তোমার হাসির শ্রাবণ ঢলে স্বপ্ন নিয়ে ভাসতে চাই…

“আজকে সুরাইয়ার সতের বছর পূর্ণ হলো। এরকম একটা গল্প ওকে ঠিক উৎসর্গ করা যায় কিনা তা ভাবনার বিষয়। তবু করা হল। আমি জানি,অন্যেরা যেখানে কেবলই প্রেম-ভালবাসা দেখে সেখানে এর চেয়ে বেশিকিছু দেখার চোখ আছে ওর।”

 

রান্নার স্বাদে মজাদার-স্যুপ

বড়দের এবং সোনামণিদের জন্য আজকের রেসিপি “রান্নার স্বাদে মজাদার-স্যুপ”। সোনামণিদের জন্য খুব অল্প সময়ে রান্না করে মানিকদের সামনে হাজির করতে পারবেন। চলুন দেখা যাক দুই প্রকার স্যুপের রেসিপিঃ
♣সবজি স্যুপ
♣নুডলস স্যুপ

img20171208_160759
সবজি স্যুপ

উপকরণঃ
♦–বিভিন্ন রকম সব্জি(ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, মটরশুটি ইত্যাদি মাঝারি সাইজ করে কাটা), ♦–টমেটো কেচাপ= ৩ টেবিল চামচ, ♦– ম্যাগি ভেজিটেবল স্যুপ= ১টা, ♦–ম্যাগি স্বাদের ম্যাজিক= ১/২ টা, ♦–ইন্ডিয়ান পেয়াজ= ২ টা (১ টা পেয়াজ কে ৬ বা ৪ ভাগ করে কাটতে হবে জাতে খোসা গুল বড় বড় হয়), ♦–মরিচ ফালি =৮-১০ টি, ♦–পানি= পরিমান মত
♦–তেল=২ টেবিল চামচ

প্রণালীঃ
১। প্রথমে হাল্কা আচে পেয়াজ নরম ভেজে নিতে হবে। এরপর কড়াই এ পানি দিতে হবে। বলক আসলে লবণ ও সবজি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।কিছুক্ষণ পরে মরিচ ফালি দিয়ে দিতে হবে।
২। সবজি সিদ্ধ হয়ে গেলে টমেটো কেচাপ দিয়ে নাড়তে হবে। সব্জির সাথে মিশে গেলে ম্যাগি স্বাদের ম্যাজিক এর অরধেক টা এবং ম্যাগি স্যুপ ২ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে কড়াইতে ঢেলে দিয়ে একটু নেড়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
সহজ উপায়ে এবং অল্প সময়ে রান্না করা এই সুস্বাদু ভেজিটেবল টি রাইসের সাথে পরিবেশন করা যায়। ভেজিটেবল যারা পছন্দ করেন তারা এম্নিতেও খেতে পারেন।
img20171208_160610
নুডলস স্যুপ

উপকরণঃ
♦– ১ টেবিল চামচ তেল, ♦– ১ টেবিল চামচ মিহি রসুন কুচি, ♦– ১ টেবিল চামচ মিহি আদা কুচি, ♦– ১ মুঠো লেমন গ্রাস বা থাই গ্রাস, ♦– ২ কাপ পানি, ♦– ২ কাপ চিকেন স্টক, ♦– ১ কাপ হাড় ছাড়া মুরগীর মাংস ছোট কিউব করে কাটা, ♦– ২ প্যাকেট ইনস্ট্যান্ট নুডলস পানি দিয়ে সেদ্ধ করা, ♦– ১ টেবিল চামচ তাজা লেবুর রস, ♦– আধা চা চামচ লবণ, ♦– ২ টি মিহি পেঁয়াজ কুচি, ♦– ১ টি লাল কাঁচা মরিচ কুচি

প্রণালীঃ
১.প্রথমে একটি সসপ্যানে তেল গরম করে নিন। এতে রসুন কুচি, আদা কুচি ও লেমনগ্রাস দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে নিন অল্প আঁচে।
২. এরপর চিকেন স্টক ও পানি দিয়ে এতে সেদ্ধ করা মাংস দিয়ে ফুটিয়ে নিন।এরপর ৫ মিনিট এভাবেই রান্না করে নিন মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত।
৩. মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে এতে নুডলস দিয়ে দিন এবং অল্প নেড়ে বাকি উপকরণ গুলো দিয়ে আরও ৫ মিনিট অল্প আঁচে চুলার উপরেই রাখুন।
৪. ব্যস, এরপর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। তবে, পরিবেশনের সময় লেমন গ্রাস তুলে ফেলে দিতে ভুলবেন না।

 

‘আমাদের অপরাধ, সন্তানদের পরিণতি’ -নাঈমা জান্নাত

মা শব্দটি সবার কাছেই অতি প্রিয়। সেই সাথে বাবাও। খুবই অল্প দৈর্ঘ্যের এই শব্দ দু’টির গভীরতা অনেক বেশি। আমাদের মনে ও জীবনে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে শৈশব থেকে কৈশোরে পা ফেলার সময় এমন কী ঘটে, যার খাতিরে আমরা নৈতিক বিষয়গুলো অনেক সময় ভুলতে শুরু করি। যৌবন প্রাপ্তির স্বল্প পথ চলাটুকুতে বাবা-মা বা পরিবারের কী এমন অসতর্কতা থাকে, যার কারণে ছেলেমেয়েরা মানবিকতার নিয়মকানুন ভুলে অপাত্রে পরিণত হয়?

এখন সবারই একটাই জানার আকুতি। সেটা হলো- কেন এই অত্যাচার শিশুদের ওপর, নারীদের ওপর? কখনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, কখনও তিন বছরের শিশু, কখনও গৃহকর্মী, কখনও বিবাহিতা স্ত্রী। শিশু থেকে বৃদ্ধ, রেহাই পাচ্ছে না কেউই। কোথা থেকে এলো এই বর্বরতা, কিভাবে জন্ম নিলো তা। তবে কি গোড়াতেই গলদ রয়েছে আমাদের? তবুও যদি আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন হই, সমস্যা অনেকটা কমে আসতে পারে।

সবার আগে মায়ের সচেতনতা সবচেয়ে কাম্য। একজন মা-ই পারেন, সন্তানকে নতুন করে ভাবাতে, নতুন করে পথ চলা শেখাতে। কারণ আমাদের সমাজে মা-ই শিশুর সার্বিক যত্নের গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকেন। সেক্ষেত্রে মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস থাকা জরুরি যে, নারী বলেই সে দুর্বল নয় এবং তাকে দিয়েই সন্তানের সুন্দর ও নির্মল ভবিষ্যৎ তৈরি করা সম্ভব।

আমরা আমাদের সমস্যাগুলোকে যদি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দেখি, তাহলে আমাদের সামনে বেশ পরিষ্কার চিত্র ফুটে উঠবে।

১. বাবা-মা নিজের অজান্তেই ছেলে মেয়েকে মিথ্যা বলতে আয়ত্ব করাচ্ছি। ছোট বেলায় তাদের কল্পনার গল্পগুলোকে মিথ্যা বলে আখ্যা দিচ্ছি। আবার অনেক সময় তাদের সামনে স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের কাছে মিথ্যা বলছি। অথবা প্রতিবেশির কাছে বা মোবাইল ফোনে। ঘরে বসেই বলছি রাস্তায় আছি। বিশ্রামের সময় বলছি, ব্যস্ত আছি।

২. একদিকে ছেলেমেয়েকে বলছি, ঘুষ নেয়া বা দেয়া একটি সামাজিক ব্যাধি। অন্যদিকে ভালো চাকরির জন্য যত ধরনের তদবির লাগে, তা করছি। জেনে বুঝেই এই অপরাধ করছি।

৩. অপসংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে সন্তানদের দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। আবার বাবা-মা নিজেই হয়তো কর্মক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার চেষ্টায় বা বন্ধু মহলে আনন্দ উদযাপনে অপসংস্কৃতিকে আগলে রাখছি।

৪. একদিকে শ্লোগান দিচ্ছি, যৌতুক একটি সামাজিক অপরাধ। অন্যদিকে উপহারের নামে নতুন বিবাহিত দম্পতিকে যৌতুকের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছি।

৫. একদিকে বলছি, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করো না। অন্যদিকে সন্তানের পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশায় রাত জেগে বসে আছি।

৬. ছেলেমেয়েকে শেখাচ্ছি, বাবা-মায়ের কাছে কিছুই গোপন করতে নেই। অন্যদিকে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে প্রতিনিয়ত নানা বিষয় লুকিয়ে রাখছি।

৭. একদিকে বলছি, বড়দের সম্মান করো, ছোটদের স্নেহ কর। অন্যদিকে বাসার গৃহকর্মীকে সন্তানের সামনেই নানাভাবে অত্যাচার অপমান করছি।

৮. সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে ছেলে মেয়েদের  ধৈর্য্য ধারণ করার কথা বলছি। বাসাকে পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখার কথা বলছি। আবার সেই বাবা-মা-ই বাসের লাইন থেকে শুরু করে ব্যাংক পর্যন্ত যে কোন নিয়ম ভাঙার ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগাচ্ছি।

৯. একদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কথা বললেও অন্যদিকে বাবা মায়েরা রাস্তায় ময়লা ফেলা থেকে শুরু করে কথাবার্তায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখছি না।

১০. ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাকে শেখাচ্ছি, না বলে কারো জিনিস নিও না। অন্যদিকে আমরাই অন্যের সম্পদ লুটপাটের মহোৎসবে ব্যস্ত আছি।

১১. বাসায় একটি শিশু প্রতিনিয়তই দেখছে, তার মাকে বাসায় বয়স্ক, নারী বা পুরুষ যে কেউ নানাভাবে অপদস্থ করছে। তবে আমরা কি আশা রাখতে পারি যে, পরবর্তীতে ঐ শিশুর আচরণে নারীর প্রতি সম্মান প্রতিফলিত হবে?

১২. একদিকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, আরেকদিকে সিগারেটের ধোঁয়ায় অসংখ্য জীবনের ক্ষতি করছি, যত্রতত্র দাঁড়িয়ে বা চলার পথে দেদারসে ধূমপান করছি। নিকোটিনের ধোঁয়া উড়িয়ে নিজেকে স্মার্ট সাজাচ্ছি। আসলে ধোঁয়ায় কি কোন আত্মবিশ্বাস আনে?

আমরা কি রুখতে পারি, আমাদের নিজেদের ছোট ছোট অস্বাভাবিকতাকে? ছোট ছোট অস্বাভাকিতা থেকেই বড় অপরাধের জন্ম। একজন মা যখন নিজেই দুর্বল, সে কি পারবে অপরাধ প্রবণতা রুখতে? এতকিছুর পরও সমাজে অনেক উল্টো চিত্রও আছে। আমাদের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলেই আমরা বুঝতে পারি, সে সংখ্যা কত হতে পারে। একজন মাকে গড়ে উঠতে হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে। সব ধরনের অপরাধ, কুরুচিকে না বলার ক্ষমতা নিয়ে। যে কোন অশোভনীয় আচরণকে একজন মা যখন দৃঢ় কণ্ঠে না বলতে পারবেন, তখনই কেবল শিশুরা অগ্রগামী সৈনিকের মতো একদিন সব অস্বাভাবিকতা নির্মূল করতে পারবে। নেপোলিয়ন ঠিকই বুঝেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত ও সভ্য জাতি দেব’।

তারপরও অনেক শঙ্কা, উৎকণ্ঠা, অনেক প্রশ্ন মনে নাড়া দিয়ে যায়। এ ধরনের সামাজিক অপরাধ ঠেকাতে কি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নাকি আচরণের পরিমিতি আর চিন্তার পরিচ্ছন্নতা একান্ত কাম্য?

লেখক :  ফ্রিল্যান্স সাইকোলজিস্ট ও এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সুত্র:জাগোনিউজ২৪

 

‘সুরাইয়াকে’ গলাটিপে হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে দিলেন স্বামী ‘হিমু’

ঝালকাঠিতে কলেজছাত্রীকে গলাটিপে হত্যার পরে মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যার প্রচারণা চালানোর কথা স্বীকার করেছেন তার স্বামী গ্রেফতারকৃত মাইনুল ইসলাম হিমু আকন (২৫)। মঙ্গলবার বিকালে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম কবীর হোসেন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় মাইনুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে হিমু। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সরোয়ার হোসেন মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় গ্রেফতারকৃত মাইনুল ইসলামকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন করেন। বিকাল ৫টায় স্বীকারোক্তি গ্রহণ শেষে মাইনুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম কবীর হোসেন।

আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে হিমু জানিয়েছে, গত রোববার দুপুর একটার দিকে গলা টিপে স্ত্রীকে হত্যার পর বিষয়টি তার পিতা মিল্টন আকনকে জানান। মিল্টন আকন তার ছেলেকে বিষ খাওয়ার ঘটনা সাজানোর কথা শিখিয়ে দেয়। পিতার পরামর্শে হিমু তার মৃত স্ত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিনের মুখে তুঁতে ঢুকিয়ে দেয় এবং নিজেও তুঁতে খেয়ে অসুস্থ হওয়ার অভিনয় করে।

প্রায় দুই বছর আগে দুই পরিবারের সম্মতি ছাড়াই শহরের কাঠপট্টি সড়কের মিল্টন আকনের ছেলে মাইনুল ইসলাম আকন হিমু একই এলাকার আসলাম ফরাজীর মেয়ে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে হিমুর বাবা মিল্টন আকন এবং সৎ মা আয়শা বেগম এ বিয়ে মেনে নেননি।

এ নিয়ে প্রায়ই পারিবারিক কলহ লেগে থাকত হিমুর পরিবারে। হিমুর স্ত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন বেশিরভাগ সময় তার বাবা মায়ের সাথে থাকতেন। হিমুও মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়ে থাকতেন। কিছু দিন আগে থেকেই হিমু তার বাবা মাকে তাদেরকে মুড়ির মিলের কক্ষে একটু থাকার জায়গা দেয়ার জন্য অনুরোধ করে আসছিল।

রোববার সকালে সুরাইয়াকে ফোন করে হিমু তার বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মুড়ি ও সেমাই তৈরির কারখানার দোতলায় আসতে বলে। বেলা ১২টার দিকে ওই কক্ষে আসে সুরাইয়া। স্ত্রীর সঙ্গে ঘন্টাখানেক অন্তরঙ্গ সময় কাটায় হিমু। দুপুর একটার দিকে বাবার সমালোচনা করায় সুরাইয়ার সাথে হিমুর কথাকাটাকাটি হয়।

একপর্যায় হিমু সুরাইয়াকে চড় মারে এবং সুরাইয়াও হিমুকে পাল্টা ধাক্কা মারে। উত্তেজিত হিমু গলাটিপে শ্বাসরোধে স্ত্রীকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনা হিমু তাঁর বাবাকে জানায়। বাবা মিল্টন আকন মৃত স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে দেয়ার বুদ্ধি দেয় ছেলেকে। এমনকি ছেলেকেও বিষপানের পরামর্শ দেন। বাবার কথামতো হিমু মৃত স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে দেয়। নিজেও বিষপান করে চিৎকার দেয়। মৃত অবস্থায়ই ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সুরাইয়াকে। কিছুটা অসুস্থ অবস্থায় হিমুকে নিয়ে যাওয়া হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে হিমু জানিয়েছে সে আগে নেশা করতো, এখন করে না। তিনি এসএসসি পাস হলেও তার স্ত্রী বিএ পড়েন। বেকারত্ব এবং পরিবার বিয়ে মেনে না নেয়ায় সে কিছুটা হতাশাগ্রস্ত ছিল। বাবাকে নিয়ে কটূক্তি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে হিমু স্ত্রীকে গলা টিপে ধরে। এতেই তার মৃত্যু হয়। লাশ ফেলে রেখে ওপর থেকে নিচে নেমে হিমু তার বাবার কাছে যায়। বাবা তাকে স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে ও ছেলেকে বিষ পানের বুদ্ধি দেয়।
মৃত্যুর পরের সব নাটক সাজিয়েছেন হিমুর বাবা মিল্টন আকন। পুলিশ মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

শূন্যতা উদ্ভাসিত পূর্ণতায়… আফরোজা হাসান 

কেন জানি না কিছুই ভালো লাগছে না মুহিতের। সামনে পরীক্ষার তাই অনেক পড়া জমে আছে কিন্তু বই নিয়ে বসতে ইচ্ছে করছে না। সাধারণত টিভি দেখে না সে আর দেখলেও শুধু জিওগ্রাফী চ্যানেল দেখে। প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য ভীষণ রকম আকর্ষণ করে তাকে। কিন্তু অজানাকে জানার আগ্রহ আজ মনে কোন উচ্ছ্বাস তৈরি করতে পারলো না। কিছু যেন বাঁধা দিচ্ছে তাই ভেতর প্রবেশ করতে পারছে না বিশুদ্ধ বাতাস। কেমন যেন দম বন্ধ করা অনুভূতি হচ্ছে। কেমন যেন হাহাকার জাগানো শূন্যতার অনুভূতি হতে লাগলো মুহিতের। নিজেকে হঠাৎ আবিষ্কার করলো ধূ ধূ এক মরুভূমির মাঝে। চারিদিকে কেউ নেই, কিছু নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু শূন্যতা আর শূন্যতা। অসহায়ত্বের উত্তাল সাগরের ঢেউ ভাসিয়ে দিয়ে গেলো মনের সৈকত। তীব্র স্রোতের ঝাপটা এসে লাগলো চোখে, ছলকে ছলকে বেড়িয়ে আসতে চাইলো পানির ধারা। 

এমন মুহুর্তগুলোতে প্রিয়জনদের সাথে কথা বললে অনেক প্রশান্ত হয় মন শুনেছিল সে। এমন কেউ যার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে, যার কথা শুনতে ভালো লাগে। মনের অজানা ঝড়ের তাণ্ডবে নিভু নিভু আশার প্রদ্বীপ্তিকে যে দুহাতে আগলে ধরে আবার জ্বলে উঠতে সাহায্য করে। যার আশা জাগানিয়া শব্দরা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ ভেদ করে হাজির হয় সূর্য কিরণ রূপে। বাবার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করলো মুহিতের। কিন্তু সে জানে মনের এই অবস্থায় বাবার সাথে কথা বলতে গেলে আরো বেশি দুর্বল হয়ে যাবে। আর তার কণ্ঠ শুনেই বাবা বুঝে ফেলবেন কিছু একটা হয়েছে তার। কিভাবে যেন বাবা তার মনের সব কথা না বলতেই বুঝে ফেলেন। শুধু তাই না প্রয়োজন গুলোও কখনো মুখে বলতে হয় না বাবাকে। যখন যা দরকার বলার আগেই বাবা সবময় সেটা এনে দিয় তাকে। 

বন্ধুদের আড্ডায় সবাই যখন তাদের মাদের কথা বলে, মুহিত মুগ্ধ কণ্ঠে বাবার কথা বলে। অবশ্য মাকে নিয়ে বলার মতো তেমন কিছু নেইও মুহিতের। তার যখন তিন বছর বয়স মা চলে গিয়েছেন কভু না ফেরার দেশে। এরপর থেকে গত পনেরো বছর ধরে তার ভুবন বাবাময়। বাবা-মা-ভাই-বোন-বন্ধু সবকিছুর ভূমিকা বাবা একাই পালন করে যাচ্ছেন তার জীবনে। নিজের কোন কারণে বাবাকে টেনশন দিতে একদম ইচ্ছে করে না মুহিতের। তাই কথা বলার প্রচণ্ড ইচ্ছার পরও বাবাকে ফোন না দিয়ে পছন্দের দুই ক্লাসমেটকে ফোন করলো। কিন্তু একজনের ফোন বন্ধ আর আরেকজনেরটা এনগেজ টোন শুনিয়ে জানিয়ে দিলো সবাই নিজ নিজ জীবনে ব্যস্ত। তোমাকে দেবার মত সময় এখন কারোই নেই। 

মন খারাপের মাত্রাটা হঠাৎ করে আরো বেড়ে গেলো মুহিতের। আগেও দেখেছে যখন প্রয়োজন তখন আপন বা পছন্দের কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না। এমনকি যারা নিজেদের বিরক্তিকর অবসরের কথা বলে তাদেরকেও খুঁজে পাওয়া যায় না এমন সময় গুলোতে। একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো মুহিতের ভেতর থেকে। কেন এমন শূন্যতা ভর করেছে মনে বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শূন্যতার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে পারলো না। মোবাইলের শব্দে চিন্তার জগত থেকে বেড়িয়ে এলো মুহিত। স্ক্রীনে বাবার হাসোজ্জ্বল চেহারা দেখে আনন্দাশ্রুতে ভরে এলো দুচোখ। ছেলে হিসেবে খুব বেশি ইমোশনাল হবার মোহর সবাই মিলে অনেক আগেই লাগিয়েছে তার উপর। মুহিত নিজেও অনুভব করে সত্যি তার বয়সী অন্যান্য অনেক ছেলের চেয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর সে, অনেক বেশি অভিমানী তার মন। 

সালাম বিনিময়ের পর বাবা বললেন, বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর পেলাম তোমাকে। কথা বলছিলে কারো সাথে? 

মুহিত বলল, জ্বী না বাবা। বন্ধুদের ফোন করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পাইনি কাউকেই। 

মন খারাপ তোমার? কণ্ঠস্বর কেমন যেন বিষণ্ণ শোনাচ্ছে। 

বাবার কাছে কখনোই কিছু গোপন করে না মুহিত। অবশ্য চাইলেও পারে না গোপন করতে। তাই বলল, কেন জানি না ভালো লাগছিলো না বাবা। খুব একাকীত্ব বোধ হচ্ছিলো। তাই বন্ধুদের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সবাই ব্যস্ত। 

কিছুক্ষণ নীরবতার পর মুহিতের বাবা হেসে বললেন, হ্যা প্রয়োজনের সময় বেশির ভাগই আমাদের বন্ধুরা ব্যস্ত থাকে। আবার অনেক সময় আমরা নিজেরাই কিছু বন্ধুকে দূরে রাখতে চাই সমস্যা থেকে। 

মুহিত বলল, আমি তোমাকে ফোন করিনি সেজন্য কি তুমি কষ্ট পেয়েছো বাবা? 

বাবা হেসে বললেন, না আমি কষ্ট পাইনি। আমি তোমাকে বুঝতে পারছি। কারণ আমার নিজের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। আমি আমার মন খারাপ বা সমস্যার কথা বলে কোন প্রিয় মানুষের মন খারাপ করতে চাই না। 

তাহলে তোমার মন খারাপ হলে তুমি কি করো বাবা? 

আমি এমন এক বন্ধুর কাছে যাই যে কখনোই ব্যস্ত থাকে না। যে কখনোই আমার কোন সমস্যা শুনে মুষড়ে পরে না। কারণ আমার সব সমস্যার সমাধান তার কাছে আছে। তাই তার কাছ থেকে কখনোই আমাকে নিরাশ বা আশাহত হতে হয় না। তুমি কি আমার সেই বন্ধুর সাথে পরিচিত হতে চাও? 

মুহিত বলল, অবশ্যই বাবা। কে তিনি? 

তিনি হচ্ছেন কালামুল্লাহ। আল্লাহর কালাম। যা লিপিবদ্ধ আছে পবিত্র কুরআনে। জানি খুব অবাক হচ্ছো তুমি আমার কথা শুনে। কিন্তু একথা নিয়ে দ্বিমত বা দ্বীধা পোষণের কোন সুযোগই নেই যে কুরআন আমাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। একজন ব্যক্তি তখনই আমাদের খুব ভালো বন্ধু হয় যখন তাকে আমরা শুভাকাঙ্খী বা কল্যাণকামী হিসেবে আমাদের পাশে পাই সর্বদা। আর কালামুল্লাহ’র চেয়ে শুভাকাঙ্খী বা কল্যাণকামী কে হতে পারে আমাদের জন্য? তুমি যদি খুঁজে দেখো তোমার মনের প্রতিটি অবস্থা ও পরিস্থিতির বর্ণণা ও সমাধান খুঁজে পাবে কুরআনে। করণীয়-বর্জনীয়, পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা খুঁজে পাবে। কুরআনের সুমধুর ধ্বনি তোমার অশান্ত হৃদয়ে প্রশান্তির বারিধারা বইয়ে দেবে। কাঁটা বিছানো পথ রুপান্তরিত হবে ফুল ছড়ানো পথে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা কি জানো? 

কি বাবা? 

কোন মানুষের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব যেমন হুট করে একদিনেই হয়ে যায় না। বরং নিয়মিত যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে ধীরে ধীরে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। কুরআনের ক্ষেত্রেও কিন্তু ঠিক এমনটিই। যত তুমি কুরআনের দিকে এগোবে ততই কুরআনকে তোমার সান্নিধ্যে পাবে। কারণ কুরআনের কাছাকাছি যাওয়া মানে আল্লাহর নিকটাবর্তী হওয়া। আর হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,মহান আল্লাহ বলেছেন,”বান্দাহ যখন আমার দিকে আধ হাত পরিমান এগিয়ে আসে,আমি তার দিকে এক হাত পরিমান এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে,আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে,আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।” সুবহানাআল্লাহ। যদি আল্লাহ কারো আশ্রয় হন তাহলে তার তো একাকীত্ব বোধ করার কোন সুযোগই থাকে না। কারণ আল্লাহ তো সর্বত্র বিরাজমান। 

অনেকটা সময় চুপ থেকে মুহিত বলল, আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না বাবা। 

বাবা বললেন, আমাদের দুর্ভাগ্য কি জানো মুহিত? দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে আমরা আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকেই ভুলে গিয়েছি। মুমিনের জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলা’মীনের ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও তাঁর সান্নিধ্য অর্জন করা। ভেবে দেখো পৃথিবীতে কারো ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব পাওয়ার জন্য কত কিছুই না আমরা করে যাই বিরামহীন ভাবে। অথচ এটা কখনোই আমাদের সম্পূর্নরুপে জানা থাকে না যে,যাকে আমরা ভালোবাসি বা যাকে বন্ধু রূপে পেতে চাইছি তাকে পাওয়ার জন্য কি কি করতে হবে? কোন দিক নির্দেশনা যেহেতু দেয়া থাকে না তাই বিভিন্ন ভাবে আমরা বুঝে নিতে চেষ্টা করি। বুঝে নেয়ার ও বোঝার পরের সফর পারি দিতে অনেক ধরণের কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয় এবং তা করার জন্য প্রস্তুত থাকি আমরা। কারণ সম্পর্ক থেকে কিছু পেতে হলে কিছু দেয়া প্রধান শর্ত। তাই আমরা খুশি মনেই তা করি কারণ লক্ষ্য থাকে প্রিয় মানুষকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে তার ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব অর্জন। জীবন চলার পথে সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার মুহুর্তগুলোতে পাশে পেতে চাই তাই অনেক কদর করি তাদের। অথচ যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যার রহমত ছাড়া একটি মুহুর্ত আমাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয় ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব পেতে আমরা কি ত্যাগ স্বীকার করি? অথচ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তো আমাদের শুধু এই দুনিয়াতেই ভালোবাসেন না বরং পরকালেও দিবেন চির শান্তির জান্নাত। আর তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমাদের কি করতে হবে তাও তিনি বলে দিয়েছেন কুরআনে। শুধু বলেই দেননি রাসুল (সঃ) মাধ্যমে বাস্তবে তাঁর প্রতিফলন করে দেখিয়েছেন। যাতে আমাদের কোন কিছু নিয়ে দ্বীধা-সংকোচে ভুগতে না হয়। ভেবে দেখো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের চেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী ও কল্যাণকামী কি কেউ হতে পারবে আমাদের জন্য? 

মুহিত বলল, ইনশাআল্লাহ বাবা এই মুহুর্ত থেকে আমি কুরআনকে আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলাম। তুমি ঠিক বলেছো বাবা সেই তো শ্রেষ্ঠ বন্ধু যে সর্বাবস্থায় কল্যাণকামী হিসেবে পাশে পাওয়া যায়, যাকে কোন কথা বলতে দ্বীধা-সংকোচ স্পর্শ করতে পারে না। যে সবসময় শুনিয়ে যায় আশার কথা, দিয়ে যায় নিরবধি প্রেরণা, যার সঙ্গ সর্বদা অন্তরকে করে প্রশান্ত। যে স্বপ্ন দেখায় সুন্দর এক জগতের। মনের সকল শূন্যতা যার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হয় পুর্ণতায়। আর একমাত্র কুরআনই এমনটা হতে পারে কারো জন্য। বাবা আজ থেকে তাই তোমার মতো আমারো সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হচ্ছেন কালামুল্লাহ। 

বাবা হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তুমি তোমার বন্ধুর সাথে সময় কাটাও এখন। অফিসের কাজ সেরে বাসায় ফিরে কথা হবে, ইনশাআল্লাহ। 

বাবাকে বিদায় জানিয়ে মুহিত কুরআন ও তাফসীর নিয়ে বসলো।

 

‘মেয়েটিকে নানান অজুহাতে মারধর ও টয়লেটে বন্দি রাখত’

‘আমাকে মারধর করত, কম খাবার দিত। বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে দিত না, বাড়ির বাইরে যেতে দিত না। ওরা মানুষ না, অমানুষ। আল্লাহ ওদের বিচার করবে।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলছিল গৃহপরিচালিকা সুমি খাতুন। সুমি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পাবনার চাটমোহরে গৃহবন্দি অবস্থায় সুমি খাতুনকে (১৫) উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পৌর শহরের ছোট শালিকা মহল্লা (কালীনগর) থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। সুমি পার্শ্ববর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার দড়িহাসমারি গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে।
এ সময় বাড়ির গৃহকর্তা আবদুস সোবহান বিচ্ছু, তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম এবং ছেলে ফজলে রোহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

জানা গেছে, দড়িহাসমারি গ্রামের আলতাব হোসেন সুমিকে পাঁচ বছর আগে আবদুস সোবহান বিচ্ছুর বাসায় কাজ করার জন্য রেখে যান। তুচ্ছ ঘটনায় আবদুস সোবহানের স্ত্রী ফেরদৌসি মেয়েটিকে নানা অজুহাতে মারধর করতেন ও টয়লেটে বন্দি করে রাখতেন। সুমিকে প্রয়োজন মতো খেতে দেওয়া হতো না। বাড়ির বাইরে তাকে বের হতে দেওয়া হতো না। এতে করে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই অবস্থা দেখে প্রতিবেশীরা মানবাধিকারকর্মীদের বিষয়টি খুলে বলেন এবং পুলিশকে অবহিত করেন।
img20171204_235124
রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মানবাধিকারকর্মীরা ওই বাড়িতে গিয়ে সুমিকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ গিয়ে সুমিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তবে ওই সময় সুমির গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর ভয়ে কোনো অভিযোগ না আনায় পুলিশ মুচলেকা নিয়ে তাঁদেরকে ছেড়ে দেয়।

মানবাধিকার কমিশন চাটমোহর উপজেলা শাখার সভাপতি কে এম বেলাল হোসেন স্বপন বলেন, ‘আমরা গত দুদিন আগে এমন অভিযোগ পেয়ে বাড়িটির ওপর নজর রাখছিলাম। রোববার ওই বাড়ির মালিককে কয়েকবার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তাঁরা সুমিকে গৃহবন্দির বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে পুলিশ গিয়ে সেই বাড়ি থেকেই সুমিকে উদ্ধার করে।’ বিষয়টি অমানবিক বলে তিনি জানান, সুমির চিকিৎসা ও আইনী সহায়তার জন্য চাটমোহর উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের কর্মীরা পাশে থেকে সহযোগিতা করবে।

এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আহসান হাবীব জানান, সুমিকে উদ্ধার এবং বাড়ির গৃহকর্তা-গৃহকর্তী ও তাঁদের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। কোন অভিযোগ না থাকায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে মেয়েটির পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: এনটিভি, ছবি:যুগান্তর,এনটিভি।

 

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য “সুন্দর সামাজিক পরিবেশ” -ফাতেমা শাহরিন

শিশুদের সুস্থতার জন্য শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যও।মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সুষ্ঠ স্বাস্থ্যকর সামাজিক পরিবেশ ভূমিকা অপরিসীম। সন্তানদের মা-বাবাসহ এবং সকল কেয়ারগিভারদের (দাদা-দাদীসহ সকল পারিবারিক সদস্য) মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান জানা থাকলে মানসিক বিকাশ সুন্দর হয়।
img20171204_233625
প্রবাদে আছে “একটি মানসিকভাবে অসুস্থ শিশুর পেছনে কাজ করে একটি অসুস্থ পরিবারের প্রভাব।”
শিশুটি পরিবারের সবার সন্তান। মা-বাবার অথবা অন্যান্য পারিবারিক সদস্যদের মাঝে যদি সম্পর্ক ভালো না থাকে তাহলে ছেলেমেয়েদের মনের গঠন প্রক্রিয়ার ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
img20171204_225706
আসুন প্রথমে জানা যাক ‘সামাজিক পরিবেশ’ আসলে কি?
সামাজিক পরিবেশ গড়ে ওঠে মুলত এই তিনটি সেক্টর মাধ্যমে।যেমন-
img20171204_234018
একজন ব্যক্তির চারপাশের পরিবেশ(physical surroundings): একজন বক্তির চারপাশের পরিবেশ বলতে নিরাপদ ঘর, শিক্ষার সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি এবং বিনোদন অন্তর্ভুক্ত।
img20171204_225756
জনসমাজ (community resources):জনসমাজে অন্তর্ভুক্ত আছে হোম পলিটিক্স, গড়ে ওঠা সংগঠন, যেখানে থেকে শিশুরা পায় নানান জ্ঞান, দক্ষতা এবং সামাজিকতা।
img20171204_224508
সামাজিক সম্পর্ক (social relationships): পরস্পরের সাথে সুন্দর সম্পর্ক, একে অপরের সাথে আবার দল বা গ্রুপের সাথে ইতাদি।
শিশুদের সামাজিকভাবে বিকশিত করার জন্য তাই এই তিনটি সেক্টরের গুরুত্বপূণ ভূমিকা আছে। মনে রাখতে হবে, এখানে শিশুদের সামাজিক ক্ষেত্র হল “পরিবার”।

এবার অসুস্থ সামাজিক পরিবেশের কতকগুল বৈশিষ্ট্য দেখি,
img20171204_225308
♦দাম্পত্য কলহ:
মা-বাবার মধ্যে অথবাা অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রকাশ্যে সর্বদাই যদি খিটিমিটি বা দাম্পত্য কলহ লেগে থাকে। তাহলে মা-বাবার স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যেমন ক্ষুণ্ণ হয় তেমনি তাদের ভেতরে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ফলে তার পভাব সন্তানের উপর পড়ে।
img20171204_225356
♦বাবার মেজাজ:
অত্যাধিক কড়া বাবা “বাবার হুকুমই সর্বোচ্চ হুকুম”। বাবা যখন রাগী এবং রুক্ষ স্বভাবের, হুকুমের নড়চড় হলে বাড়িতে অশান্তি বেঁধে যাবে। শিশুদের মনের ভেতরে রাগ ক্ষোভ বা বেদনা ধুমায়িত হয়ে ঘোরাফেরা করে।
img20171204_225442
♦রাগী মা:
খুব ব্যক্তিত্বশালী মায়েরা সংসারে ঠিক উল্টো ছবি আঁকেন। তার রাগারাগির ভয়ে শিশুরা তটস্ত হয়ে থাকে।কখনো প্রতিবাদী হয়ে ওঠে উঠতি বয়সী শিশুরা। মায়ের এতবেশি নিয়মকানুন মানতে রাজি থাকেন না তারা।
img20171204_234602
♦অন্যান্য কেয়ারগিভারের আচরণ:
দাদা দাদীরা যদি বাবা বা মায়ের নামে বিভিন্ন অভিযোগ নাতী নাতনীর কাছে পেশ করে। অথবা কেয়ার গিভারদের সম্পর্কে অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং দুই পরিবারের সদস্য সম্পর্কে বাবা অথবা মা সন্তানদের কাছে বিরূপ এবং বিভিন্ন দোষারোপ করে এক্ষেত্রে বাচ্চাদের সামাজিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
যেহেতু শিশুর সমাজ বলতে তার পরিবার, রাষ্ট্রও তার পরিবার।
img20171204_225212
অসুস্থ সামাজিক বিকাশের ফলে বাচ্চাদের আচরণগত কতকগুল সমস্যা দেখা যায়।
সেগুল হলো-
১.শিশুরা অস্বাভাবিক চালচলন শুরু করে।জেদ, রাগ, মারামারি।
২.ঠিকমতো স্কুলে না যায় না।
৩.পড়াশোনায় ভালোভাবে মনোযোগ দেয় না।
৪.রাতের বেলা না ঘুমানো।
৫.মিথ্যা কথা বলে।
৬কথায় কথায় বাবা-মায়ের সঙ্গে তর্ক করে বা বাবার হুকুম অমান্য করার সাহস দেখায়।
৭.খাওয়ার টেবিলে খাবার ছুড়ে ফেলে।

শিশুটি কি আদৌ সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বড় হচ্ছে নাকি সামাজিক পরিবেশে সমস্যা আছে। খুঁজে দেখুন। আমরা আমাদের শিশুটিকে সুশীল করে গড়ে তুলতে চাই। এই পরিবেশ পরিস্থিতিতে তোলা সম্ভব কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহাতীত প্রশ্ন আছে।

তাহলে শিশুদের ভবিষ্যৎ এর জন্য কি করব আমরা?
img20171204_225016
♥বাবা-মার নিজেদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি:
শিশুরা যেহেতু প্রতিটি মা-বাবাদের খুবই প্রিয় এক অস্তিত্ব। সুতরাং মা-বাবা তাদের জীবনে সুন্দর করার লক্ষ্যে সর্বদাই নিজেদের সুখ ও শান্তির দিকে শুধু নয় বরং সার্বিক সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখবে। নিরাপদ বসবাসের জন্য পৃথিবীটাকে তাদের জন্য সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হলে হতে হবে সচেতন।
img20171204_230130
♥পারিবারিক সুন্দর বন্ধন:
একটি শিশু যদি পরিবারে জন্ম না নেয়, তাহলে সেই পরিবারের মুখ থেকে হাসি হারিয়ে যায়। নিজেদের খুবই দুর্ভাগা বলে মনে করে। শিশুটি জন্মের পর থেকে যেন পুরো পরিবারের বন্ধনগুলর বিশৃঙ্খলার জন্য শিশুর বিকাশে সমস্যা হয়ে না দেখা যায় সে জন্য পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে যেন থাকে সুন্দর বন্ধন।
img20171204_224533
♥শিশুকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিযোগী না হয়ে ওঠা:
আজকাল শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে সীমাহীন এবং অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ঢুকে গেছে যা শিশুদের কোথাও আর ঢিলেঢালা হওয়ার সুযোগ দেয় বা। আজকাল শিশুদের মা-বাবারা অন্য শিশুদের মা-বাবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় করে। ফলে শিশুটি পরীক্ষায় ফল খারাপ করলে মা-বাবা তার সঙ্গে কথা বলে না। স্বামী-স্ত্রীর ভেতর শিশুকে নিয়ে প্রচণ্ড বাগবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। এই নোংরা প্রতিযোগিতা ক্ষতিকর। সুতরাং সচেতনতা প্রয়োজন।
img20171204_231409
শিশুদের জন্য যেমন গভীর ভালবাসা আছে তেমনি দ্বায়িত্ববোধ। আমরা যা কিছু করি না কেন, সব সময়ই থাকে শিশুরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ভাবনায় নিয়ে, তাই আমরা সবসময় তাদের কল্যাণ চাই। আমরা তাদের অনেক ভালোবাসি।

 

‘একজন রাকিবার কথা বলছি’

চমৎকার রৌদ্দজ্জল সকালে বারান্দায় মাদুর পেতে বসে আছে হয়ত ওরা তিন ভাই বোন কল্পনায় সেই চিত্র। ওদের মা রাকিবা আখতারের সাহসিকতা গল্প জানানোই আজকের আর্টিকেলের মুল উদ্দেশ্য। যা মা দের অনুপ্রেরণা যোগাবে। ‘সফলতা’ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একটি কাঙ্ক্ষিত শব্দ। সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠির কাছে তাদের পেশার বৈচিত্র্যতার ধরণ অনুযায়ী সফলতা একেক অর্থ বুঝায়। তবে ধরণ যাই হোক না কেন সফলতার শীর্ষে যারা পৌঁছে যেতে পারেন তারা হয়ে ওঠেন আমাদের প্রিয় ‘হিরো’।

জগতের প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ সামাল দিয়ে টিকে থাকা এই ‘মা’ তাকে নিয়েই আমাদের আয়োজন ‘একজন রাকিবার কথা বলছি’ ।

সেদিন ফেইস বুকের একটি পোষ্টে (https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1541462359251846&id=260876280643800) চোখ আটকে গেল। একজন মায়ের সংগ্রামের কথা , রাকিবা নামের একজন সাহসী মা অপরাজিতার ভাষায়, তুমিও কি রাকিবা হতে চাও? সেই ‘সফলতা’ অনুভূতির কথা বলি।

সফলতার গল্পগুল অনেক মানুষকে স্বপ্ন দেয়। যার জন্য আমরা সবসময় সফল মানুষদের শুরুর দিকের গল্প শুনতে আগ্রহী হই। পরবর্তীকালে আপন যোগ্যতা বলে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম। এদের মধ্যে রাকিবা আক্তার একজন।

বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গ বলেন, নারীকে বেশি বেশি সম্মান করতে হবে। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গেই হয় না।

রাকিবার ভাষায় বলতে গেলে, ‘৬ বছর বয়স ছিল আমার মেয়েটি, আমার বড় ছেলের বয়স তখন ৩ বছর এবং আরেকজন তখন সবেমাত্র ৫মাস, বিশ বছর আগের কথা বলছিলেন তিনি, যখন তিনি ঢাকা থেকে চলে যান।’

কাক ডাকা ভোর থেকে কাজ শুরু হয় তার, শেষ হয় সবার শেষে। বাইরে কাজের পাশাপাশি সংসারেও তাকে সময় দিতে হত।

তিনি বলছিলেন, ‘আমি টাকা উপার্জন করতাম তখন মাইলের পর মাইল হেটে, ছাত্র ছাত্রীদের অংক করাতাম, টিউশনি করাতাম কিন্তু নিজের জন্য অহেতুক টাকা /পয়সা খরচ করেনি কখনও বরং সন্তানদেরকে পড়াশুনা করানোর জন্য সংগ্রহ করতাম। কখনও কখনও দেখা যেত একদিনে ৮ কিলোমিটারের বেশি পথ হাঁটতে হতো। প্রতিদিন আমি সেই সকাল ৭টায় শুরু করি দিন এবং রাত ১১ টায় সময় কাজ শেষ করার পর বাড়িতে ফিরতাম। বেশিরভাগ সময় দেখা যেত আমি কোন যানবাহনই ব্যবহার করিনি।’

সত্যি এটা একজন মায়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আজকের দিনে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছে। আর এই অর্থ সে শুধু নিজের প্রয়োজনেই খরচ করছেন তা কখনও নয়, সন্তানদের কল্যাণেই জন্য ব্যয় করা মুল বিষয় থাকে।

রাকিবা বলছিলেন, ‘আমি আমার বাচ্চাদের পড়াশুনা আর শিক্ষা দান করার জন্য অর্থ সঞ্চয় করতাম। হয়ত এ জন্য পুরো দিন না খেয়ে থাকতে হত পুরোটা দিন, সারাদিন কাজের চাপে আমি শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে নিঃশেষ হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। কিন্তু আমি আমার স্বপ্ন ছেড়ে কখনই চলে আসিনি!’

এক পর্যায়ে রাকিবা তার নিজের ছোট্ট বেলার স্মৃতিচারণ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখন আমি আমার বাবার হারাই এবং আমি আমার পরিবারের বড় মেয়ে ছিলাম, তাই আমার পুরো পরিবারের যত্ন নেবার দায়িত্ব ছিল। আমি তখন কাজ করতাম এবং একই সাথে আমি আমার পড়াশুনাও অব্যাহত রেখেছিলাম। আমি সবসময় আমার সন্তানদেরকে বলি, আমার সম্পর্কে, আমার সংগ্রামের কথা এবং তাদের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাই। আমাকে কতটা কঠোর পরিশ্রম করতে হত সে ব্যাপারে তারাও বুঝত।’

সন্তানদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে তার ভাষ্যমতে, ‘তারা সবসময় আমাকে আসত্ত্ব করেছে, আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তারা সবচেয়ে সেরাটি আমাকে উপহার দিবে, এই আশাটি ওরা দিয়েছিল আমাকে সবসময়। আমার ছেলেমেয়ে সবসময় পড়াশুনার ব্যাপারে প্রচন্ড আগ্রহী।অতিরিক্ত কোন রূপ চাহিদা ছিল না তাদের। না ছিল অতিরিক্ত দাবি দাওয়া এবং আমরা খুব সহজ সাধারণ জীবনযাপন করেছি! হা, এখন আমার বড়মেয়েটি একজন ডাক্তার এবং আমার বড় ছেলে যান্ত্রিক প্রকৌশলী। আমার ছোট ছেলে পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার সম্পূর্ণ স্বপ্ন কেবলমাত্র আমার দৃঢ়সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম। পাশাপাশি অজস্র ত্যাগ তিতিক্ষা। আমি তৈরি করেছি, এটি সত্যি।’

বর্তমানে রাকিবার কি করছেন জানতে চাইলে,তিনি জানান, ‘চার বছর আগেই,আমি আমার নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে ফার্মেসিকে শুরু করেছি; এখন আমি আর পড়াশোনা করি না। আমি এই ফার্মেসি দিয়ে উপার্জন করছি। এই আয় দিয়ে আমি আমার পরিবারের যত্ন নিই।’

প্রত্যেক নারীই যদি কাজ করতে শুরু করে। সত্যি তবে আর কেউ দারিদ্র্য থাকবে না। নারী এগিয়ে এলেই সমগ্র সমাজ এগিয়ে যাবে, এখন পাশাপাশি নিজেদের জীবন মানেরও পরিবর্তন আনতে পারবেন। আমি সবসময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যে আমি যেন কর্মরত অবস্থায় এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে পারি। _ রাকিবা আক্তার(৪৭)

মুলত মায়ের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ। মা সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন। মায়ের জীবনে চাওয়া-পাওয়া একটাই সন্তানের মঙ্গল কামনা করা।

 

“ইয়া রাসূল,ইয়া হাবীব” -জাজাফী

আমি যদি তোমায় নিয়ে না লিখি হে রাসুল (সা:)
যা লিখেছি এক জীবনে জানি আমার সবই ভুল।

কাউকে যদি একটু বেশি ভালোবাসি তোমায় রেখে
মা’বুদ আমার না জানি হায় কতই নারাজ সেটা দেখে।

দুনিয়াবি শানশওকাত সবই বৃথা তুমি বিনে
তোমার দিদার চাই হে রাসুল মউত এবং হাশর দিনে।

সালাম সালাম ইয়া নবী বিশ্বজনের আলোর দিশা
তুমি বিনে চারিদিকে কেবলই ঘোর অমানিশা।

আমায় তুমি দিদার দিও,রেখো তোমার মুহাব্বতে
রোজই তোমায় দুরূদ পাঠায়,গোনাহগার এ উম্মতে।

ইয়া রাসূল,ইয়া হাবীব হে আমাদের বিশ্ব নবী
তোমায় নিয়ে লেখার মত হইনি আমি তেমন কবি।

যা লিখেছি ক্ষমা করো,দিদার দিও রোজ হাশরে
দিদার দিও ইয়া রাসূল মরণ কালে আধার গোরে।

#জাজাফী
১২ রবিউল আউয়াল
২ ডিসেম্বর ২০১৭

 

“পানির বোতল দিয়ে পানি পান করছেন”

প্রায় কম-বেশি সবাই পানি বা এজাতীয় কিছুর ক্ষেত্রে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করি হরহামেশায়।ফ্রিজে পানি জাতীয় কিছু রাখার ক্ষেত্রেও। কিন্তু সব প্লাস্টিকের বোতল যে আপনি ইচ্ছা করলেই যত খুশি তত ব্যবহার করতে পারেন না! কারন এটা আমরা সবাই জানি যে প্লাস্টিক মানব দেহের/পরিবেশের জন্য মোটেও ভাল নয়। এর প্রভাব নিয়ে তাই কিছু লিখলাম না।
img20171202_003605
✈এখন আসি কোন বোতল কিভাবে ব্যবহার করা যাবে!

আমি আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরলাম। আমি নিজেও জানতাম না এর ব্যবহার।যখন আমি ডিপার্টমেন্ট থেকে Partex Beverage ltd. এ Industrial Tour এ যাই তখন বিস্তারিত জানতে পারি+ইন্টারনেট থেকেও।সুতরাং আমারও ভুল থাকতে পারে।
img20171202_003412
প্লাস্টিক বোতল যখন কোম্পানি থেকে সরবরাহ করা হয় তখন বোতলের পানির উপর যে ফাকা অংশ থাকে সেখানে কার্বন -ডাই অক্সাইড (CO2) দেওয়া থাকে যাতে পানির সাথে প্লাস্টিক কোন বিক্রিয়া বা অন্য কোন মাধ্যমে মিশ্রিত হতে না পারে।খেয়াল করলে দেখবেন যেসব পানির বোতল ইন্টেক বা সরকার দ্বারা অথরাইজড করা সেগুলির মুখাটি খোলার পর একধরনের গ্যাস বের হয়ে আসে(কার্বন ডাই অক্সাইড) যা চোরাই বা ২ নাম্বারিং বলে জানি সেগুলিতে পাবেন না। সেজন্য সিল করা বোতলের পানি অনেকদিন ধরে ভাল থাকে।

✈এখন আসি কোন বোতল কতবার ব্যবহার করতে পারব?
img20171202_003206
খেয়াল করলে দেখবেন প্লাস্টিক বোতলের তলায় অথবা প্যাকেটের মোড়কে ত্রিকোণ একটি চিহ্ন থাকে। এই চিহ্নে বর্ণনা করা হয়, বোতলটি কতটা বিধিসম্মতভাবে তৈরি। এই চিহ্নের থাকা সংখ্যা দিয়েই জানা যাবে যে এই বোতল কতদিন ব্যবহার করা যাবে, পরিবেশে ওই বোতলের প্রভাব কতটুকু। এটি কেমন নির্ভরযোগ্য তা এই চিহ্নের মধ্যে থাকা সংখ্যা দ্বারা বোঝা যায়। ন্যাচারাল সোসাইটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, প্লাস্টিক বোতলের ক্রিকোণ তত্ত্ব।
img20171202_004051
ত্রিকোণের মাঝে ১ সংখ্যা থাকলে : এর মানে বোতলটি মাত্র একবার ব্যবহার করা যাবে। বোতলটিতে পলিথিলিন টেরেপথ্যালেট প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের বোতল বহু ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
img20171202_003834
২ থাকলে: এই ধরনের প্লাস্টিক বোতলে ঘন পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত শ্যাম্পু, জুসের বোতল রাখার ক্ষেত্রে এই ধরনের বোতল ব্যবহার হয়। এটি তুলনামূলক নিরাপদ।

৩ থাকলে: এই ধরনের বোতল বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এই বোতল তৈরি হয় ‘পোলিভিনিল ক্লোরাইড’ বা ‘পিভিসি’ থেকে। এতে অস্থিমজ্জার সমস্যা ও লিভারের সমস্যা ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘পিনাট বাটার’ রাখতে এই বোতল ব্যবহার করা হয়।
img20171202_003953
৪ থাকলে: এই ধরনের প্লাস্টিক বহু ব্যবহারের উপযোগী। বিশেষ করে, প্লাস্টিকের প্যাকেটে এই চিহ্ন প্রচুর দেখা যায়। খুব দামি বোতলে এই চিহ্ন থাকে।

৫ থাকলে : একদম নিরাপদ এবং ব্যবহারের যোগ্য। আইক্রিম কাপ বা সিরাপের বোতল অথবা খাবারের কন্টেনারে এই ধরনের চিহ্ন দেখা যায়।

৬ অথবা ৭ থাকলে : প্লাস্টিকের ‘রেড কার্ড’ বলা হয় একে। এই ধরনের প্লাস্টিক মারাত্মক রকমের ক্ষতিকারক। কারণ এই ধরনের প্লাস্টিক তৈরি হয় পলিস্টিরিন এবং পলিকার্বোনেট বিসপেনল-এ। এটা মানুষের মধ্যে হরমোন সমস্যা তৈরি করে। ক্রমাগত এধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ায়।
সুত্র:সংগৃহীত

 

‘প্রেগনেন্সিতে করণীয় যা’ -ডা. মারুফ রায়হান খান

‘প্রেগনেন্সি’বিষয়টা আমার কাছে মিরাকিউলাস লাগে। একটা দেহে দুটো প্রাণ। একসাথে নির্ভর করছে দুটো সত্ত্বার ভালো থাকা-মন্দ থাকা, সুস্থতা-অসুস্থতা–মায়ের সুস্থতার উপর নির্ভর করে সন্তানের বাঁচা-মরা। প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হরমোনের বেশ তারতম্য ঘটে, শারীরিক গঠনের কিছু পরিবর্তন হয়–তাই মায়ের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা নতুন করে দেখা দেয় বা বেড়ে যায়। দেখা যায় যে, ডেলিভারি হয়ে যাবার পরপর সে সমস্যাগুলোও চলে যায়। এগুলোর বেশিরভাগই ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক। প্রেগনেন্সি ইস্যুটা যেহেতু সবার কাছে খুব সেন্সিটিভ তাই অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এসব সমস্যায়। আসলে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলে, কিছু পরামর্শ মেনে চললে যার অধিকাংশই প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়। একেবারেই কমন কিছু সমস্যার সমাধান নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি।

♦বমিবমি ভাব এবং বমি :
দেখা যায় যে প্রতি ১০০ জন গর্ভবতীর প্রায় ৭৫ জনেরই এ সমস্যাটা দেখা দেয়। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই এ সমস্যা হয়।
-সকালে ঘুম থেকে উঠেই, বলা হয়ে থাকে বিছানাতেই
শুকনো খাবার যেমন : টোস্ট, বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খেতে।
-প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে বলা হয়।
-অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হয়।
-একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।

♦কোমর ব্যথা :
প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৫০ জনেরই এ সমস্যা দেখা দেয়।
-অনেক বেশি ওজন বাড়িয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, মোট দশ ঘণ্টা।
-পা কিছুটা উঁচুতে রেখে যেমন : পায়ের নিচে একটা বা দুটো বালিশ রেখে বিশ্রাম নিন।
-শক্ত বিছানায় শোয়া ভালো।
-উঁচু হিলযুক্ত জুতো পরা যাবে না।
– কুঁজো হয়ে বসা বা কোনো জিনিস নিচ থেকে তোলা পরিহার করা শ্রেয়।
– দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।
– ভারী এবং পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
– কোমরে ম্যাসাজ করতে পারেন।
– গরম বা ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে স্যাঁক দিতে পারেন।

♦কোষ্ঠকাঠিন্য :
-প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
– আঁশজাতীয় খাবার যেমন : শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
-ইসপগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।
– চাপ এলে টয়লেটে যেতে বিলম্ব করা যাবে না।
– কিছুটা হাঁটাচলার অভ্যেস করা ভালো, দিনে ২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩ দিন হাঁটা যেতে পারে।

♦পায়ে খিল ধরা :
-পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে।
– গরম স্যাঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সেবন করা যেতে পারে।
পায়ে পানি আসা/ পা ফোলা :
-বিশ্রাম নিন এবং পা দুটো একটা বা দুটো বালিশের ওপর রাখুন।
– একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
-আরামদায়ক জুতো পরুন।
– বেশি করে পানি পান করুন।

♦বুক জ্বালাপোড়া, এসিডিটি :
-একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
– খাবার পরপরই বিছানায় শুতে চলে যাওয়া যাবে না।
– বিছানায় যাবার অনেকক্ষণ আগেই খাবার খেয়ে ফেলুন।
– উঁচু বালিশে শুলে আরাম পাওয়া যায়।
– এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
পায়ে আঁকাবাঁকা শিরা।

♦পাইলস :
-পায়ে আঁকাবাঁকা শিরার জন্যে ক্রেপ ব্যাণ্ডেজ ব্যবহার এবং বিশ্রামের সময় পা উঁচু করে রাখতে বলা হয়।
-পাইলসের জন্যে নিয়মিত টয়লেট সারা জরুরি; কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। টয়লেট সারার সময় বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। বাম কাত হয়ে শোয়া ভালো। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

♦মাসিকের রাস্তায় সাদা স্রাব :
-ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এর প্রধান চিকিৎসা।
-নরম সূতি আন্ডারগার্মেন্টস ব্যবহার করা ভালো।
তবে সবকথার শেষকথা হচ্ছে প্রতিজন গর্ভবতী নারীরই নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে ভিজিটে যেতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে এবং তার প্রেস্ক্রাইব করা ওষুধপত্র নিয়মিত খেতে হবে।

 

‘আজকে আমি নিঃসন্তান, শুধু জিপিএ ফাইভের জন্য’

এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে অভির কথা বলতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা।
ছবি : এনটিভি

‘আমার ছেলের নাম ছিল অভি। অনেক শখ করে তার নামটা রেখেছিলাম। ভাবছেন হয়তো বা ছিলাম কেন বলছি। কারণ আজকে আমার ছেলে আমার সাথে নেই। সে অনেক দূরে চলে গেছে। অনেক দূরে। আমাদের সবার থেকে অনেক অনেক দূরে।’

এভাবেই ক্যামেরার সামনে নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন এক মা। নিজের নাম, পরিচয় বা ছবি কোনো কিছুই প্রকাশ না করার শর্তে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর কথা প্রকাশ করলেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই। যেন তাঁর জীবনের ঘটনা থেকে অন্যরা কিছুটা হলেও শিক্ষা নিতে পারেন।

অনেক আদর করে ছেলেকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন এই মা। ব্যবসায়ী স্বামী পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। পুরো পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। এসবের মধ্যে তিনি চাইতেন, তাঁর ছেলেকেও যেন তাঁর মতো পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করে জীবন পার করতে না হয়। তিনি চাইতেন তাঁর ছেলে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হোক। বাবা চাইতেন ছেলে বড় ব্যারিস্টার হবে।

অভি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন কোনো কারণে তার পরীক্ষার ফল খারাপ হয়। এতে তার বাবা ভীষণ রেগে যান বলে জানান অভির মা। এমনকি অভির দাদাবাড়ির সদস্যরাও পরীক্ষায় খারাপ ফলের জন্য তার মাকে দোষারোপ করতে থাকেন। সবাই বলতে থাকেন যে, মা অভির ঠিকমতো খেয়াল নেননি।

এসব আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ছেলের ওপর চাপ দিতে থাকেন মা। ছেলেকে নিয়েই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন তিনি। সে ঠিকমতো বাড়ির কাজ করছে কি না, অযথা সময় নষ্ট করছে কি না এসব খেয়াল রাখতে শুরু করেন। ছেলেকে সব সময় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে বলতেন বলেও জানালেন এই মা। ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু তিনি একাই করতে শুরু করেন। একসময় তাঁর জগৎই হয়ে যায় অভিকেন্দ্রিক।

এরপর অভি যখন অষ্টম শ্রেণিতে ওঠে, তখন পরিশ্রমের ফল পান এই মা। জানালেন, সে বছর ভালো ফল করে তাঁর ছেলে। কিন্তু এর পর থেকে অভির ওপর তার বাবার নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়। অভিকে যে করেই হোক জিপিএ ফাইভ পেতে হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

এ ছাড়া পরিবারের অন্যরাও বারবার অভিকে মনে করিয়ে দিতে থাকেন যে সামনের মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষায় তাকে সেরা ফলটাই করতে হবে। অভির বাবা বলতেন যে, ছেলে জিপিএ ফাইভ না পেলে তাঁর মান-সম্মান নষ্ট হবে, পরিবারের সম্মান নষ্ট হবে। এ ছাড়া ছেলেকে ব্যারিস্টার বানানোর তাঁর যে স্বপ্ন সেটিও পূরণ হবে না।

ফলে অষ্টম শ্রেণি থেকেই অভির ওপর চাপ দেওয়া শুরু হয়। এই মা বলেন, ‘ও খেলতে পছন্দ করত, ছবি আঁকতে পছন্দ করত, আস্তে আস্তে দেখলাম ওই জিনিসগুলার ভেতরে ছেলেটা কেমন যেন চুপ হয়ে গেল। জিনিসগুলার প্রতিও তার মন উঠে যাচ্ছে। ছবি আঁকা বন্ধ করে দিছে। আমি তারপরেও বলি যে ঠিক আছে, তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে। কারণ আমারও ওর বাবার থেকে যে চাপটা আমি পেতাম, হয়তো বা সেটাই আমি আমার ছেলেকে দিয়ে এসেছি।’

এসএসসি পরীক্ষা যতই এগিয়ে আসছিল, অভির ওপর ততই চাপ বাড়াচ্ছিলেন বলে জানান তার মা। বলেন, ‘ওর বাবা আমাকে প্রতিনিয়ত কী করছে, ছেলে কী করছে, ছেলের দিকে খেয়াল রাখতেছো? ওকে দেখতেছো? ও কী পড়াশোনা করতেছে? কী করতেছে?’

মূল পরীক্ষার আগে বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষায় অভির ফল ভালো হচ্ছিল না উল্লেখ করে মা বলেন, এগুলো দেখে অভির বাবা প্রচণ্ড রেগে যান। সেই রাগের মাত্রা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না বলে জানান তিনি। অভির বাবা বলেছিলেন, অভি জিপিএ ফাইভ না পেলে তিনি ছেলের মুখও দেখবেন না।

এরপর একসময় পরীক্ষা শেষ হয় অভির। সে আরো চুপচাপ হয়ে যায় বলে জানান তার মা। চুপচাপ এক কোণায় পড়ে থাকত। অথচ আগে সে বেশ হইচই করত।

এভাবে রেজাল্টের দিন এসে গেল। সকালে ভয়ে কাতর চেহারা নিয়ে অভি বের হয়। মা বলেন, “আমি বাসায় অপেক্ষা করছি। সকাল পেরিয়ে দুপুর পার হয়ে গেল, তারপরেও তার কোনো খবর নাই। আমি ওর কিছু বন্ধু-বান্ধব যারা, ওর তো তেমন বন্ধুও আমি হতে দেই নাই আসলে, ওর কিছু পরিচিত মানুষ যারা ওর ক্লাসে ছিল, ওর সাথে কোচিংয়ে যেত ওদের থেকে খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কেউ বলতে পারে না আসলে আমার ছেলে কোথায়। আমি ওর বাবাকে জানালাম। ওর বাবা তো আমার সাথে প্রচণ্ড রাগারাগি চেঁচামেচি শুরু করল। ‘কী বলো তুমি, খেয়াল রাখো না, কেমন মা তুমি? কিছুই করতে পারো না। ছেলেটাকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারো নাই’।”

সন্ধ্যায় অভির বাবাসহ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন তাঁরা। এর পরদিনও কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অভি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার দুদিন পর থানা থেকে ফোন আসে। পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, তাঁদের প্রিয় অভি আর বেঁচে নেই। বাড়ির কাছের একটি রেললাইনের ধারে পড়ে ছিল তার লাশ।

পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, অভির শরীরে বিষের নমুনা পাওয়া গেছে। সম্ভবত বিষাক্ত কিছু খেয়ে রেললাইনে আত্মহত্যা করেছে।

জানা যায়, অভি জিপিএ ৫ পায়নি। সে জন্য আর ঘরে ফেরেনি সে। মা বলেন, ‘ফিরতই বা কীভাবে। বলেই তো ফেলেছিলাম যে তোর মুখ আর কোনোদিন দেখব না। তাই আমার ছেলে ঘরেই ফেরে নাই। ফিরল না। আজকে আমি নিঃসন্তান। শুধু কেন? জিপিএ ফাইভের জন্য। আমি তাকে এতটাই চাপ দিছি জিপিএ ফাইভ পেতে হবে সেই ভয়ে আমার ছেলে আজকে আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আজকে আমি বুঝি সে কতটা কষ্ট মনে নিয়ে এরকম একটা কাজ করে ফেলছে।’

ক্যামেরার সামনে কাঁদতে থাকা এই মা বলেন, ‘মা হিসেবে আমি ব্যর্থ। আমি আমার ছেলেকে কখনো বোঝার চেষ্টা করি নাই। কখনো তাঁকে কাছে নিয়ে জিজ্ঞাসা করি নাই, বাবা তোর কী ভালো লাগে, তুই কী করতে চাস? তোর কি কষ্ট হচ্ছে না কি তাও কখনো জিজ্ঞাসা করি নাই। শুধু সারাক্ষণ পড় পড় পড় পড়। পড়তে হবে, পড়তে হবে, জিপিএ ফাইভ পেতে হবে।’

‘আজকে আমার ছেলে নাই আমার কাছে’, দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনেকটা যেন স্বগতোক্তি করেন এই মা।

নিজের জীবন থেকে নেওয়া শিক্ষা থেকে অন্য অভিভাবকদের প্রতি সন্তানদের ওপর চাপ না দিতে অনুরোধ করেন তিনি। বলেন, সবাই যেন সন্তানকে কাছে ডেকে নিয়ে তার ভালো মন্দ, ইচ্ছা অনিচ্ছা জানতে চান। শুধু জিপিএ ফাইভ পাওয়ার আশায় জীবনের মূল্যবান সম্পদ সন্তানকে যেন কেউ হারিয়ে না ফেলেন সেই কথা বলেন তিনি।

তাঁর মতো যেন আর কোনো মাকে কাঁদতে না হয়, আফসোস করতে না হয় সেই কথা বলেন এই মা।
সুত্র:এনটিভি

 

এই শীতে শিশুর যত্ন_’টনসিল’ -ডা.মারুফ রায়হান খান

টনসিলের সমস্যার কারণে গলাব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকেই। যদিও টনসিলের সমস্যা সব বয়সেই হয়ে থাকে তারপরেও শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলের ইনফে কশান একটু বেশি হয়। টনসিলের এই ইনফেকশানকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টনসিলাইটিস বা টনসিলের প্রদাহ।
img20171130_223447
কোথায় থাকে এই টনসিল?
জিহবার পেছনে গলার দেয়ালের দুপাশে গোলাকার পিণ্ডের মতো যা দেখা যায় সেটিই টনসিল। টনসিল দেখতে মাংসপিণ্ডের মতো মনে হলেও এটি লসিকা কলা বা লিম্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি।
img20171130_224603
কী কী উপসর্গ নিয়ে আসেন রোগীরা?
– গলা ব্যথা
– গিলতে অসুবিধা
– জ্বর
– কানে ব্যথা
– মাথা ব্যথা
– গলার স্বর পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া
– নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ
– শিশুর খাবার গ্রহণে অনীহা
– নাক দিয়ে পানি ঝরা
– গলার বাইরে গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
img20171130_223737
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা কী?
কারণের ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হয়ে থাকে তাহলে রোগীকে যথাযথ এন্টিবায়োটিক দিতে হয়। ভাইরাসের জন্যে হলে ৫/৭ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়, সেক্ষেত্রে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসার পর উপসর্গ চলে গেলেও টনসিলের আকৃতি ছোট হতে কিছুটা সময় নেয়। কয়েক মাস পর্যন্ত টনসিল বাড়তি আকৃতিতে থাকতে পারে। অনেকক্ষেত্রে ওষুধে না সারলে রোগের তীব্রতা ও আক্রমণের হার বিবেচনা করে অপারেশানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
img20171130_223639
টনসিলের অপারেশান কখন করতে হয়?
– টনসিল বড় হওয়ার জন্য ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা নাক ডাকলে।
– ঢোক গিলতে বা খেতে অসুবিধা হলে।
– এক বছরে ৭ বা তার বেশি বার হলে।
– টানা ২ বছর ৫ বারের বেশি হলে।
– টানা ৩ বছর ৩ বারের বেশি হলে।
– বছরে এই সমস্যার কারণে ২ সপ্তাহ বা তার বেশি স্কুলে বা কাজে যেতে না পারলে।
টনসিল অপারেশান করলে ভবিষ্যতে কোনো অসুবিধা হবে কি?
img20171130_230018
টনসিলের অসুবিধা দূর করার জন্যেই অপারেশান। আর ভবিষ্যতে যাতে টনসিলের ইনফেকশান থেকে জটিলতা।না হয় তার জন্যেই অপারেশান করা হয়। কাজেই টনসিল ফেলে দেওয়ার জন্যে ভবিষ্যতে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না।

 

কিভাবে নিজের যত্ন নিবেন

যত্ন নেবার জন্য খুব কম সময় কিন্তু সচেতনতা প্রয়োজন। শরীর এবং নিজের মনকে ভালো রাখতে হলে কিছুটা যত্ন দরকার, মনকে ভালো রাখতে, চাই নিয়মিত যত্নের অনুভূতি। নিজের প্রতি ব্যক্তি যত্নশীল হওয়ার অর্থ, যত্নের সাথে উঁকি দেওয়া- শারীরিক, আধ্যাত্মিক, আর মানসিক চাহিদার ব্যাপারে। কোন অজুহাত ছাড়ায় ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ নেওয়া। মনকে ভালো রাখতে হলে প্রিয় কাজগুলো করতে হবে আর শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
img20171129_012134
তাই আসুন কতকগুল টিপস জেনে নেই ‘নিজের মন আর শরীরের’ যত্ন কিভাবে নেওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে হাফিংটন পোস্ট ও উইকিহাউ জানান, ‘মনের যত্নের প্রতি প্রত্যেকের সময় রাখা উচিত, সারাদিনে অল্প হলেও সময় দিন।’ অজস্র কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আমরা নিজেদের ব্যাপারে অসচেতন হয়ে পড়ি। শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে, নিজের অনুভূতিকে সতেজ রাখবে তেমন কয়েকটি টিপস।

টিপস:
img20171129_011249
রাতের আকাশে বসুন
১.মনের সতেজতার নানান গল্প জওআছে, আছে ত তাই না। নিজেকে মধ্যরাতের তারার ঝাঁকে খুঁজুন, বসে পড়ুন রাতের নীলিমায়, আগে হয়ত কখনও দেখা হয়নি নিজের উজ্জল নক্ষত্রের প্রতিবিম্ব রূপকে। মনের ঘরে আসুক প্রশান্তি ঝড়।
img20171129_011723
প্রকৃতিকে স্পর্শ করুন অনুভবে
২.অনুভূতি ত গাছের পাতার ডগায় বসে থাকা বিন্দু কণা জল। প্রতিটি স্পর্শ যেন হয় অনুভবের গল্প। নিজের ঘরের টপে বেড়ে ওঠা গাছটিকে পানি দেবার সময় আলত করে স্পর্শ করুন। নিজের প্রিয় বিষয়গুলকে ধরার সময় খেয়াল। যত্ন নিন নিজের অনুভূতির।
img20171129_011659
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে কিছুটা সময় দূরে থাকুন
৩.নিজের যত্ন নেবার সময় কখন কখন নিজেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস(মোবাইল, ইন্টারনেট, এবং টেলিভিশন) থেকে দূরে রাখুন। ভাবুন নিজেকে নিয়ে।
img20171129_011605
লিখুন নিজের সাফল্য
৪.খাতা-কলম নিয়ে বসুন। আপনমনে কিছু ইতিবাচক দিক লিখুন। সাফল্য পেতে চাইলে আপনাকে আরো কী কী করতে হবে তারও একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। দেখবেন ভালো লাগবে। প্রতিদিন ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবি কি কিছুক্ষণ? নিজের আনমনা অনুভূতিগুলও লিখে রাখতে পারেন ডায়েরির পাতায়।
img20171129_011532
ছুটি দিন চিন্তাকে
৫.যে চিন্তারা আমাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ভাবতে বাধ্য করে, যন্ত্রণার সঙ্গী করে সেটি নিয়ে চিন্তা কিছুক্ষণ ছেড়ে দেই। যেতে দিন সময়। এটা হতে পারে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বা অথবা দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে। ভাল রাখতে নিজেকে প্রথমে ভাল রাখার অনুভূতিকে হাতে রাখা।
img20171129_011454
নদীর ধার বা খোলা মাঠে কিছুক্ষণ
৬.চিন্তা বাড়াতে সাহায্য করুন। ভাবুন কোন খোলা প্রান্তে বসে। নয়ত নদীর পাশে নিজেকে কতক্ষণ ছেড়ে দিন।
img20171129_092642
হাটুন আপন মনে
৭.
মন ভালো রাখতে হাটতে পারেন, পারেন কিছু যোগব্যায়ামও করতে শরীরকে ভাল রাখতে। গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত হাঁটা মানসিক চাপকে কমাতে সাহায্য করে। এতে মন ও শরীর ভালো থাকে।
img20171129_093129
মনের ও শরীরের খোরাক জোগাতে কাজ করুন। ব্যস্ত থাকুন নিজের কাজে। মনকে ভালো রাখবে।

ফাতেমা শাহরিন

 

রান্নার যত কথা

রঙটাও সুন্দর হতে হবে আবার সুন্দর ঘ্রাণও চাই। খাবারের সময় কিছুটা মুখরোচক খাবার কেনা চায়। রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দেবার জন্যই আজকের কিছু নতুন টিপস। যা আপনার রান্নার স্বাদকে আরো বাড়িয়ে দিবে।
img20171128_224257
স্যুপ বা স্যুপি নুডুলস(Soup or Sappy Noodles)
স্যুপ বা স্যুপি নুডলসের সঙ্গে টুকরা করা ব্রেডে রসুন, বাটার, সামান্য চিনি ও গোলমরিচের পেস্ট লাগিয়ে রাখুন কয়েক মিনিট গ্রিল বা সেঁকে মচমচে পরিবেশন করুন, দেখবেন খেতে মুখরোচক হবে।
img20171128_224157
খেজুর গুড়(Date Molasses)
খেজুরের গুড় দিয়ে পায়েস করতে গিয়ে অনেক সময় দুধটা ফেটে যায়। দুধ ঘন হয়ে গেলে নামিয়ে একটু ঠান্ডা করে তারপর গুড় মেশাবেন। ভালো করে নেড়ে আবার কিছুটা ফুটিয়ে নেবেন, দেখবেন রঙটাও সুন্দর হয়েছে আবার সুন্দর ঘ্রাণ বের হচ্ছে। দুধ ফাটার ভয়ও থাকবে না।
img20171128_224116
চিনাবাদাম ও কাজুবাদাম(Peanut and Almonds)
চিনাবাদাম ও কাজুবাদাম তেলে ভেজে পরে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সেমাই বা মিষ্টিজাতীয় খাবারে অনেকে বাদাম ব্যবহার করে থাকেন। বাদামে যদি তেল মেখে পরে তাওয়ায় ভাজেন তাহলে তেল কম লাগবে। নয়তো শুকনো ভাজতে গেলে তেল বেশি লাগবে।
img20171128_224059
তেতুলের ব্যবহার(Use of Tamarindus)
ওল, কচু অথবা কচুশাক রান্না করলে তাতে কিছুটা তেঁতুল ব্যবহার করবেন। খাবারের সময় কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন, তাহলে গলায় আর চুলকানোর কোনো ভয় থাকবে না।
img20171128_224018
সেমাই রান্না(Cook the cottage Cheese)
সেমাই রান্নার আগে দেখে নিন। হালকা ভাজা হলে তেলে বা ঘিতে আবার ভেজে নিন। তাহলে রান্নার সময় সহজে গলে যাবে না।
img20171128_223952
মজাদার কেক(Fun Cake)
কেক বানাতে যদি ডিমের পরিমাণ কম থাকে তাহলে ভয় পাবেন না। কর্ণফ্লাওয়ার ব্যবহার করবেন। দেখবেন ডিমের ঘাটতি পূরণ হয়ে গেছে।
img20171128_223906
তরকারি রকমারি(Tasty Curry)
রান্নাতে খাদ্যমান ঠিক রাখতে যতটুকু সম্ভব তরকারি বড় বড় টুকরা করে কেটে নিন। নানান রং এর সবজি রাখতে পারেন। তাহলে বাচ্চারা পছন্দ করবে।
img20171128_223846
টক বা চিনি( Sour or sugar)
রান্না করতে গিয়ে তরকারিতে লবণ বেশি হলে সামান্য টক অথবা সামান্য চিনি দেবেন, তাতে কিছুটা হলেও লবণাক্ত ভাব কমে আসবে।

 

চলুন ঘুরে আসি মাল্টনোমাহ জলপ্রপাত(প্রচুর ছবি আছে) -দ্য স্লেভ 

মাল্টনোমাহ ফলস
received_1022689287871273
১৮ ঘন্টাব্যপী রোজা আমার জীবনে কখনও রাখিনি,তাও আবার প্রচন্ড গরমের মধ্যে। এবার নরওয়েতে ২২ ঘন্টা রোজা, সে তুলনায় সুখে আছি। তবে যেরকম কষ্ট হবে মনে করেছিলাম সেরকম হচ্ছেনা। রোজার পূর্বে মারাত্মক চিন্তায় ছিলাম যে, এবার রোজায় না জানি কি হয় ! দোয়া করছিলাম যাতে কষ্ট না হয়। অবাক কান্ড হল কর্মব্যস্ত দিনেও বাসায় ফেরার পথে পার্কে স্টিল বার ধরে ৫০ বার শরীর উপরে ওঠা-নামা করিয়েছি এবং আরও কসরত করেছি। একটু কষ্ট হলেও মনে হয়েছে শক্তি তেমন একটা ক্ষয় হয়নি। কার ক্ষেত্রে কি ঘটেছে জানি না,তবে রোজা আমার শারিরীক সুস্থ্যতার ক্ষেত্রে ব্যপক অবদান রেখেছে। রোজার বাইরে আমি ননস্টপ খাই,তাই একটা বিরতী দিয়ে শরীরকে নব উদ্যোমী করার জন্যে রোজার গুরুত্ব অধিক বলে আমার মনে হয়েছে। আর অবশ্যই ফরজ হিসেবে রোজা পালন করতে আমরা বাধ্য। সত্যিই এটাতে দুনিয়া ও আখিরারে ব্যপক কল্যান রয়েছে।

আজ ছুটির দিন, ভাবছিলাম বাসায় শুয়ে বসে কাটাই,কিন্তু ঘোরাঘুরি যার স্বভাব তাকে আটকে রাখে এমন বিছানা পয়দা হয়নি। পরিকল্পনা ঝালাই করলাম। গুগল জানালো ‘মাল্টনোমাহ ফলস’ আজ শুভ। বাসা থেকে ১৬০ কি:মি: দূরে এটি অবস্থিত। হাইওয়ে ৫ এবং ৮৪ ধরে ধাবিত হলাম। আজ ব্যপক গরম। শরীর থেকে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে,তবে পিপাসা তেমন অনুভূত হচ্ছেনা। দেড় ঘন্টা পর কলাম্বিয়া নদীর পাশ ধরে অগ্রসর হতে লাগলাম। কলম্বিয়া নদীর পাশ ধরে যে রাস্তা রয়েছে তা ধরে কেউ যদি গাড়ি চালায় অথবা হাটে,আর যদি সে আস্তিক হয় তবে সে ¯স্রষ্টার প্রশংসা না করে পারবে না। 
received_1022689277871274
এই নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ আর এদিকের এক পাশে উঁচু পাহাড়শ্রেণী,যা আগ্নেয় শীলায় তৈরী। এটির পাশ ধরে এবং ভেতর দিয়ে কলম্বিয়া নদী প্রবাহিত। অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট একটি নদী এটি। পাহাড়ের যে অংশটি খাড়াভাবে উপরে উঠেছে,তার পাদদেশে নদীর অস্তিত্ব সত্যিই পুলকিত করে। এখানে সেটিই ঘটেছে। বামে কলাম্বিয়া নদীকে রেখে অগ্রসর হলাম। ডানেও সুন্দর পর্বতশ্রেণী। সবুজ আর সবুজ। খাড়া পাহাড়ের শরীর জড়িয়ে বিশাল বিশাল গাছগাছালির বসবাস। ভাল না লেগে কতক্ষণ !
received_1022689267871275
ডানে মাল্টনোমাহ ফলস। দূর থেকে দেখে অত্যন্ত খুশী হলাম এবং অবাকও হলাম এ কারনে যে, অনেক আগে নেটে পৃথিবীর বিভিন্ন চমৎকার জলপ্রপাতের খোঁজ খবর করছিলাম। তখন যে কটা জলপ্রপাত আমাকে আকৃষ্ট করেছিল,তার ভেতর এটিও ছিল। অবাক হয়ে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড়টির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বহু উপর থেকে পানির ধারা পাহাড়ের কঠিন শীলার উপর আছড়ে পড়ে খানিকটা বাষ্প সৃষ্টি করে নীচে পতিত হচ্ছে। দৃশ্যটি বার বার দেখতে ভাল লাগবে। এগিয়ে গেলাম। বেশ গরম, শরীর পুড়ে যাওয়ার মত হচ্ছে।

জলপ্রপাত থেকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র নদীর পাশ ধরে সুন্দর রাস্তা হয়ে জলপ্রপাতের দিকে এগিয়ে চললাম। বিশ্বাস করেন, পাহাড়ের সীমার মধ্যে যেতেই এক চমৎকার শীতল আবহাওয়া শরীরে ধাক্কা দিল,আর সঙ্গে সঙ্গে গরমের স্থলে অতি মাত্রায় চমৎকার অনুভূতি কাজ করল। বেশ আরাম অনুভব করলাম। রহমত ব্যাপারটা এরকমই। মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণ পূর্বে যেন আমার গরমই অনুভূত হচ্ছিল না। 
এ এলাকাটি সুন্দর করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। শুরুতেই একটি পর্যটন সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র,তারপর রেস্টুরেন্ট এবং একটি সুন্দর প্রাঙ্গন। আজ প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়দের দেখা পেলাম। সাধারণত আমার এলাকায় ভারতীয় তেমন দেখা যায় না। নীচে দাড়িয়ে জলপ্রপাত দেখতে থাকলাম। পাহাড়টি এখানে একটি সুবিশাল প্রাচীরের মত মনে হয়। কঠিন পাথরে শ্যাওলা কিছুটা জমেছে এবং সময়ের আবর্তে তা ক্ষয়ে গেছে,সে দৃশ্য দেখে মনে হয় এটি মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকস সম্বলিত কোনো দেওয়াল। জলপ্রপাতটি যদি নাও থাকত তবুও এই কঠিন পাথরের আঁিকবুকি দেখতে ভাল লাগত। খাড়া পাহাড়ের মাথায় বড় বড় গাছ শোভা পাচ্ছে আর তার ভেতর থেকে বিরামহীনভাবে জল প্রবাহিত হচ্ছে। পতিত জলরাশি সোজা নীচে পতিত না হয়ে মাঝামাঝি একটি স্থানে পাথরে ধাক্কা খেয়ে তবে নীচে পতিত হচ্ছে। সে দৃশ্যটি অতি মনোরম। গৃষ্মে জলধারা ক্ষিন,তবে ততটা ক্ষিণ নয়। জলধারা যেখানে পতিত হচ্ছে সেখান থেকে আরও নীচে আরেক স্তর রয়েছে এবং এটার উপরে একটি শক্ত পোক্ত সেতু নির্মান করা হয়েছে,যাতে দর্শনার্থীরা দেখতে পারে। সেতুটির নীচ দিয়ে জলধারা আরেক দফায় লাফিয়ে অবশেষে সমতলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জলপ্রপাতটির ধাপে ধাপে শিল্পের চিহ্ন। ডান দিকের রাস্তা ধরে উপরে উঠতে থাকলাম।

প্যাচানো রাস্তা ধরে সেতুর উপর উঠে আসলাম। এখান থেকে দেখতে খুব ভাল লাগে। শীতে যখন তুষারপাত হয়েছিল তখন এই জলপ্রপাতে তুষার মিশ্রিত জলধারা পতিত হওয়ার দৃশ্য ছিল অসাধারণ। এখান থেকে পাহাড়ের খাড়া অংশের কঠিন পাথরের কাঁরুকাজ দেখতে খুব ভাল লাগছিল। বায়ের রাস্তা ধরে উপরের দিকে হাটলাম।
received_1022689417871260
বায়ে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশ আর ডানেও খাড়া,কিন্তু সেখানে বিশালাকৃতির গাছপালা রয়েছে। কঠিন পাথরের কোথাও কোথাও গর্ত তৈরী হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। সরু,স্বর্পিল এবং উর্ধ্বমুখী রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম,উদ্দেশ্য জলপ্রপাতের উৎস্যমূলে পৌঁছানো। ঝিরিঝিরি বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে,ভাল লাগছে,তবে একটু কষ্টও হচ্ছে কিন্তু এসব এখন তুচ্ছ। 

হাতের বায়ে দেখলাম পাহাড়ের খাড়া ঢাল ধরে ঘন বন। সেখানে ছোট বড় সব রকমের গাছগাছালি। পাথুরে মাটির উপর বিশালাকৃতির গাছগুলি স্বমহিমায় দাড়িয়ে আছে। কোনো কোনোটা বয়সের ভারে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। কোনো কোনোটা মরেও সৌন্দর্য প্রদান করছে। 
received_1022689427871259
উপরে ওঠার পথে কয়েকটা লুকআউট আছে,যেখান থেকে খাড়া পর্বতশ্রেণীর পাশদিয়ে প্রবাহিত কলাম্বিয়া নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। ক্রমেই উপরে উঠে আসছি। কোথাও না থেমে একেবারে উপরে উঠে আসলাম,অনেক সময় লাগল এখানে পৌছাতে। এবার কিছুটা নীচের দিকে রাস্তা চলে গেছে। এতক্ষন রাস্তা ছিল নুড়ি পাথরে পূর্ণ এবং পাকা রাস্তাও ছিল,আর এখন মাটির রাস্তা শুরু হল। এর একদিকে কাঠের ছোট ছোট গুড়ি দিয়ে আটকানো। সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। খানিকটা নীচে নেমেই দেখলাম চোখ শীতলকারী দারুন সেই জলধারার উপস্থিতি। খানিক দাড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। এ যেন ছবিতে দেখা কোনো পাহাড়ী ছোট নদী। 

নীচে নামলাম। মধ্যম মানের গতিতে চলমান জলধারার দুপাশে বিশাল বিশাল গাছপালা। সেসব গাছে শ্যাওলা জমে আছে,যা সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। ছোট বড় পাথরের চাক এখানে সেখানে গেথে আছে। এর উপর বিশাল বিশাল গাছ উপড়ে পড়ে আছে। কোনো কোনোটায় শ্যাওলা ধরা আর কোনো কোনোটা ক্ষয়ে গেছে। কিছু গাছের ভেতরে ক্ষয়ে পাইপের মত হয়ে আছে,সেসব মরা গাছ দেখতে বেশী ভাল লাগে। পানির ধারার উপর অবস্থিত বড় কিছু পাথরের চাকের উপর দিয়ে পানির কাছে গেলাম এবং হাত দিয়ে শীতলতা অনুভব করলাম। খুব ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ পানি,মনে হল খেয়ে ফেলি কিন্তু রোজার কারনে হল না। পতিত বিশাল এক গাছের কান্ডের উপর দিয়ে হেটে আরেক ধারে গেলাম। এখানে আরও সুন্দর। স্বশব্দে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে নীচের দিকে। এবার জলধারাকে অনুসরণ করে এর খাড়া পতিত হওয়ার স্থানের দিকে হাটলাম। 
received_1022689424537926
খানিক পর দেখলাম এটি অন্তত দশফুট নীচে পতিত হচ্ছে এবং সামনে বিশ/পচিশ ফুট অগ্রসর হয়ে একেবারে খাড়া পতিত হচ্ছে। ধঃর ১৯১ সরঃবৎ যরমযএখানে একটি মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্যে। আমি সেখানে পৌছলাম। এখান থেকে জলপ্রপাতের খাড়া রূপটি দেখা যায়। সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর ! ছড়ানো ঝিটানো পানির ধারা এখানে একত্রে মিলিত হয়ে নীচে পতিত হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখা সবার ভাগ্যে জোটে না। আজ বেশ লোক সমাগম হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসেছে এটা দেখতে।

চারিদিকে গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। মৃদুমন্দ বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে। বিশুদ্ধ বাতাশ বুক ভরে টেনে নিলাম,ভাল লাগল। এখানে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করা যায়। ডানে দেখলাম বহু নীচে রাস্তা দেখা যাচ্ছে এবং গাড়ি গুলোকে বেশ ছোট লাগছে। খাড়া পাহাড়ের উপরে দাড়িয়ে এভাবে চারিদিকটা দেখতে সত্যিই ভাল লাগে। 
received_1022689284537940
এবার উঠে আসলাম। সোজা পথে না এসে পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উপরে উঠে আসলাম,তাতে কষ্ট হলেও সময় বাচল,সময়ের দাম অনেক,যদিও আজ আমি পুরো অবসরে ! এবার পাহাড়ের ভেতরের দিকে যাবার পালা। এই জলপ্রপাতের আরও গোড়ার দিক দেখার জন্যে বিপরীত দিকে রওনা হলাম। এপাশে শুনশান নিরবতা এবং গাছগাছালির ঘনত্বের কারনে আলোর পরিমান কম কিন্তু এক অপরূপ রূপের সুষ্টি করেছে এই আধারী মাখা জলধারা সমৃদ্ধ বনভূমী। চারিদিকে বড় বড় পাথরের চাক,তার উপর শতবর্ষী গাছপালার উপড়ে পড়া,এখানে সেখানে মরা গাছের কান্ড,ধারালো আগ্নেয় শীলায় তৈরী প্রাকৃতিক রাস্তা, ওহ সত্যিই অসাধারণ। আমি চলতে থাকলাম। আজ বিশেষ কেড্স পরেছি যাতে পা পিছলে না যায়। চলতেই থাকলাম। ডানের খাড়া পাহাড়ের শরীরের কোথাও কোথাও ছোট ছোট পানির প্রবাহ দেখলাম। এ অংশের রাস্তা সুবিধার নয়। সতর্কতার সাথে অগ্রসর হলাম। সরু রাস্তায় ধারালো খাড়া পাথর একটার পাশে একটা। বামে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে। যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছি ততই ভাল লাগছে। উপরের দিকে উঠে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। বিভিন্ন স্থানে জলধারা বিভিন্ন রূপের সৃষ্টি করেছে। অসাধারণ দৃশ্যগুলো ক্যামেরা বন্দী করতে করতে অগ্রসর হলাম। একসময় থামলাম এবং পিছু হটলাম। একা একা চলতে ভাল লাগছিল। মনে হচ্ছিল আরও গেলে ভাল হত। কিন্তু ফিরতি পথ ধরলাম।
received_1022689281204607
ফেরার পথে বুঝলাম অনেক দূর হেটেছি। আবেগে প্রথমটায় বুঝিনি। রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না। ঢালুতে নামছি তারপরও মনে হচ্ছে বিরাট পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। সত্যিই অনেকদূর গিয়েছি। নীচের দিকে নেমে আবারও জলপ্রপাতটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অনেকক্ষন ধরে দেখলাম। এলাকাটি মনের মধ্যে গেথে গেছে। মাল্টনোমাহ ফলস আমার হৃদয় হরণ করেছে। 

ফেরার পথে পোর্টল্যান্ড হালাল স্টোর থেকে বিপূল পরিমানে গরুর মাংস এবং মশলাপাতি কিনলাম। রোজা রেখে বাজার করা ঠিক নয়, আর্থিক ক্ষতিটাই আসল। কিন্তু এত চমৎকার গরুর মাংস আমি আর কোথাও পাইনি। আজ সন্ধ্যায় সাদা ভাত আর গরুর মাংসের ঝোল যদি না ঝেড়েছি,তবে আমার নামে কুকুর পুষবেন !
পুনশ্চ: রান্নাটা হয়েছে দারুন। কথা রেখেছি। 

 

“ভুলেও সন্তানকে অভিশাপ দিবেন না”

মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। আমাদের পাড়ার আব্দুল্লাহ যে কিনা পানিতে ডুবে মারা যায় তাঁর মা পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিশোর সন্তানটিকে বুকে জড়িয়ে পাগলপারা হয়ে কাঁদছেন। মায়ের বাঁধভাঙ্গা কান্না আর বিলাপ শুনে উপস্থিত কারো পক্ষেই চোখের পানি সংবরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
img20171126_231028
♦মায়ের চোখের পানি
তিনি কাঁদছেন আর বিলাপ করে বলছেন,
‘ও বাবুর আব্বু তুমি আমাকে মেরে ফেল। আমিই তোমার সন্তানকে হত্যা করেছি। গতকালই ওর জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমি বলেছি, ‘তুই মরিস না; মরলে দশটা ফকিরকে খাওয়াতাম।’
img20171126_231427
♦দুরন্তপনা বালক
হ্যা, সত্যিই তিনি আগেরদিন ছেলেটির দুরন্তপনায় অস্থির হয়ে এমন বলেছিলেন। তখন একজন পাগলেরও ভাবার অবকাশ ছিল না যে গর্ভধারিণী মা সত্যিই তার সন্তানের অমঙ্গল কামনা করছেন। কিন্তু অসচেতনভাবে কামনা করা দুর্ঘটনাও কখনো সত্য হয়ে দেখা দিতে পারে।
img20171126_225141
♦মায়ের অভিশাপ
আব্দুল্লাহর মা গতকাল রাগের মাথায় যে কথা উচ্চারণ করেছিলেন কে জানত আজই তা বাস্তব হয়ে দেখা দেবে।
ঘটনা হলো, সেদিন দুপুরে ছেলেটি তার মায়ের সঙ্গে শুয়ে ছিল। তিনটার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে একরকম জিদ করেই সে মায়ের কাছ থেকে ছুটে গিয়েছিল বৃষ্টিতে ভিজতে। বাড়ির বাইরে এসে সে আশপাশের সমবয়সী আরও কয়েকটি কিশোরকে পেয়ে যায়। সবাই মিলে কোন বুদ্ধিতে যেন দল বেঁধে যায় পাশের মহল্লার একটি নতুন পুকুরে গোসল করতে। সেখানে গিয়ে সবার আগে সে-ই লাফ দেই পুকুরে।
img20171126_231729
♦পুকুরের টলমল পানি
অবুঝ কিশোর ঠিক বুঝতে পারেনি লাফ দিলে পুকুরের প্রায় গভীরে গিয়ে পৌঁছবে সে। যেখানে সাঁতার না জানা একটি কিশোরের জন্য অপেক্ষা করছে অবধারিত মৃত্যু। ঘটনা যা হবার তাই হল। বাচ্চাগুলোর চোখের সামনেই সে পানিতে ডুবল। ওরা ভাবল সে বুঝি তাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। কিছুক্ষণ পর তারা ওকে না পেয়ে ভয়ে আশপাশের লোকদের ডেকে আনল। ততক্ষণে অবশ্য তার ক্ষুদেকায় দেহ থেকে প্রাণপাখি উড়াল দিয়েছে।
img20171126_224658
♦মায়ের কাছে সন্তান
মা তার সন্তানকে অবর্ণনীয় কষ্টে গর্ভে ধারণ করেন। অমানুষিক কষ্টে পৃথিবীর আলো-বাতাসে আনেন। তারপর নিজের ভালোবাসা আর ত্যাগের সবটুকু উজাড় করে অসহায় একটি শিশুকে যথাক্রমে সুস্থ, সবল, সজ্ঞান ও স্বাবলম্বী করে তোলেন। সন্তান মানুষ করতে গিয়ে বাবা-মাকে যে কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে হয় তা শুধু বাবা-মায়েরাই জানেন। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে এ কষ্ট আরও বেশি। এখানে রোজ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে লড়াই করে মানুষকে টিকে থাকতে হয়।
img20171126_232704
♦মায়ের ভালবাসা
অভাবের কারণে একজন নবীন মাকেও একহাতে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব আর অপরহাতে বুকের ধন সন্তানটিকে আগলাতে হয়। অনেক মা আছেন যারা সময়মত বাচ্চার খাবারটিও যোগাতে পারেন না রুচিমত। বিশেষত যেসব বাচ্চা জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পায় না। দরিদ্র পরিবারে এসব শিশুকে যে কত কষ্টে মা জননী বড় করে তোলেন তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এ সময় মায়েদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন হয়।
img20171126_224736
♦মা’ যখন ধৈর্যহারা
অথচ প্রগলভ চরিত্রের অনেক মা’কে এ সময় ধৈর্যহারাও হতে দেখা যায়। অনেক মা সন্তানের ওপর বিরক্ত হয়ে তাকে অবলীলায় অভিশাপ দিয়ে দিয়ে বসেন। স্নেহময়ী জননী হয়তো তার জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তানের যে কোনো অনিষ্ট রোধ করতে চাইবেন। কিন্তু তিনিই আবার রাগের মাথায় অবচেতনে আদরের সন্তানটির অনিষ্ট কামনা করে বসেন।
গ্রাম-বাংলায় প্রায়ই দেখা যায় সন্তানদের দুরন্তপনা বা দুষ্টুমিতে নাকাল হয়ে অনেক মা সরাসরি বাচ্চার মৃত্যু কামনা করে বসেন। ‘তুই মরিস না’, ‘তুই মরলে ফকিররে একবেলা ভরপেট খাওয়াতাম’, ‘আল্লাহ, আমি আর পারিনে’, ‘এর জ্বালা থেকে আমাকে নিস্তার দাও’- এ জাতীয় বাক্য আমরা অহরহই শুনতে পাই। বিশেষত কৈশোরে এসে গ্রাম-বাংলার শিশুদের দুরন্তপনা কখনো সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে কিশোর সন্তানকে উদ্দেশ করেই সাধারণত মায়েরা এমন অসহিষ্ণু বাক্য উচ্চারণ করে থাকেন। তাই এ সময় মাকে অনেক বেশি ত্যাগ ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।
img20171126_225356
ইসলামের সার্বজনীন আদর্শের ধারাবাহিকতায় এ বিষয়টি সম্পর্কেও আমরা দিকনির্দেশনা পাই তারই কাছে। এ ব্যাপারেও ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়।
ইসলাম কখনো কারো বিরুদ্ধে অভিশাপ দেয়া বা বদ দু‘আ করাকে সমর্থন করে না। আপন সন্তানকে তো দূরের কথা জীবজন্তু এমনকি জড় পদার্থকে অভিশাপ দেয়াও সমর্থন করে না।
img20171126_232146
♦আল হাদীস
জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাতনে বুওয়াত যুদ্ধের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে পথ চলছিলাম। তিনি মাজদী ইবন ‘আমর জুহানীকে খুঁজছিলেন। পানি বহনকারী উটগুলোর পেছনে আমাদের মধ্য থেকে পাঁচজন, ছয়জন ও সাতজন করে পথ চলছিল। উকবা নামক এক আনসারী ব্যক্তি তাঁর উটের পাশ দিয়ে চক্কর দিল এবং তাকে থামাল। তারপর তার পিঠে উঠে আবার তাকে চলতে নির্দেশ দিল। উটটি তখন একেবারে নিশ্চল হয়ে গেল। তিনি তখন বললেন ধুত্তুরি।
‘তোর ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’
এ শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজের উটকে অভিশাপদাতা এই ব্যক্তিটা কে?
তিনি বললেন, আমি হে আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি এর পিঠ থেকে নামো।’ আমাদের কোনো অভিশপ্তের সঙ্গী করো না। তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, তোমাদের সন্তান-সন্তুতির এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে দু‘আ করো না। তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন মুহূর্তের জ্ঞানপ্রাপ্ত নও, যখন যা কিছুই চাওয়া হয় তিনি তোমাদের তা দিয়ে দেবেন।’
[মুসলিম : ৭৭০৫]

♦♦♦হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন, অর্থাৎ তোমরা কোনো মুহূর্তেই নিজের বিরুদ্ধে, নিজের সন্তান বা সম্পদের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করো না। কারণ, হতে পারে যে সময় তুমি দু‘আ করছো, তা দিনের মধ্যে ওই সময় যখন যা-ই দু‘আ করা হোক না কেন তা কবুল করা হয়। তোমরা তো এ সময় সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান প্রাপ্ত নও। (মুবারকপুরী, মিরআতুল মাফাতীহ : ৭/৭০৩)

♦♦♦ হাদীসটি বর্ণনা করে আরেক ব্যাখ্যাকার বলেন, ‘হাদীসটি রাগের মাথায় মানুষের তার পরিবার ও সম্পদের বিরুদ্ধে দু‘আ করার নিষিদ্ধতা প্রমাণ করে। হাদীসটি এর কারণও তুলে ধরে। আর তা হলো, এ দু‘আটি কবুলের বিশেষ মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। ফলে মানুষের সবই কবুল হয়ে যায় চাই তা ভালো হোক বা মন্দ, যা সে তার পরিবার বা সম্পদের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা করে না।’
[আবদুল মুহসিন, শারহু সুনান আবী দাউদ : ৮/২৮৮]
img20171126_232204
♦আল কোরআন
নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে দু‘আ করার অর্থ তো নিজেই নিজেকে হত্যার তথা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ – البقرة: ١٩٥
‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ [ সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫]

অতএব প্রতিটি মাকে ভেবে দেখতে হবে, আমার রাগের মাথায় উচ্চারণ করা বাক্য যদি সত্যে পরিণত হয় তাহলে কেমন লাগবে?
আমি কি তা সহ্য করতে পারব?
img20171125_125224
এ জন্য রাগের মাথায়ও কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করা যাবে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে শুধু মায়েদেরই নয়, আমাদের সবারই উচিত নিজের, নিজের সন্তান ও সম্পদের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করা থেকে সংযত হওয়া। রাগের সময় সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেওয়া।
img20171126_225441
আর মেয়েদের সবিশেষভাবে বলতে চাই, মা, আপনি অনেক ধৈর্য ধরেছেন, অনেক কষ্ট করেছেন, আরেকটু সবর করুন। রাগের মাথায় সন্তানকে অভিশাপ দেয়া থেকে সংযত থাকুন। আল্লাহ আপনার সহায় হোন। আমীন।

#সংগৃহীত

 

কেন বাচ্চারা শিক্ষকদের ভালবাসে?-আফরোজা হাসান

ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে
images(37)
শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা।
ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে।
img20171125_125115
শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।
img20171125_124745
একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে।
img20171125_124845
বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না। বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো?
img20171125_125224
প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।
img20171125_125323
যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম।
প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে।
img20171125_124715
এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।
img20171125_124910
এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা।
img20171125_125000
টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।
এই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

নাতীর সাথে পিইসি পরীক্ষা দিলেন নানী -নাজমুস সাকিব

শিক্ষার কোনো বয়স নেই, সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় নাতির সাথে অংশগ্রহণ করে একথা বাস্তবে প্রমাণ করলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগম।
এ বছর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দরী বেগমও অংশগ্রহণ করেছেন। হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রামের বর্গাচাষি আবুল হোসেনের স্ত্রী সুন্দরী বেগম। ওই দম্পতির চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে একজন সৌদি প্রবাসী, দু’জন ভ্যানচালক ও তৃতীয় ছেলে সাইদুল ইসলামকে কষ্ট করে এইচএসসি পাস করিয়েছেন। ছয় বছর আগে সুন্দরী বেগমের ছেলেদের উপার্জনের টাকা জমা রাখতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাশিগঞ্জ শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলতে যান। নিরক্ষর সুন্দরী বেগম কোনো রকম স্বাক্ষর শিখেছিলেন। তিনটি স্বাক্ষরের মধ্যে একটি স্বাক্ষর ভুল হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ফাইলটি সুন্দরী বেগমের মুখে ছুড়ে মারেন। কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরে তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যেকোনো মূল্যে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে তিনি বেড়িয়ে আসবেন।
পরের দিন একমাত্র মেয়ে রহিমার তৃতীয় সন্তান জিহাদকে নিয়ে সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ভর্তি হন প্রথম শ্রেণীতে। ধাইয়ের কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন স্কুলে কাস করতেন। ছয় বছর পরিশ্রমের পর এ বছর তিনি নাতি জায়েদ ও দেবরের ছেলে মুহিবের সাথে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন।
সোমবার বাংলা পরীক্ষা চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৩৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগমও মনযোগ সহকারে লেখায় ব্যস্ত রয়েছেন। পরীক্ষা শেষে সুন্দরী বেগম প্রতিবেদককে জানান, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের দুর্ব্যবহারে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিজ্ঞা করে আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি। জন্মেছিলাম দরিদ্র পরিবারে, লেখাপড়া তো দূরের কথা ভরণ-পোষণ ঠিকভাবে দিতে পারেনি পরিবার। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয় আরেক দরিদ্র পরিবারে। দরিদ্র হওয়ায় সন্তানদেরও পড়াশুনা করাতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, গত ছয় বছরে সব কাস পরীক্ষায় নাতির বয়সী সব শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনেক উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছি। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খুব ভালো লাগছে।
সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম জানান, এ বয়সে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে সুন্দরী বেগম নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বেড়িয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই, এটাই প্রমাণ করলেন সুন্দরী বেগম। তাকে আমি স্যালুট জানাই। অজ্ঞতা থেকে ফিরে আসুক সবাই।
চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব বদর উদ্দিন জানান, আমার শিক্ষকতা জীবনে এমন বিরল দৃষ্টান্ত আর দেখিনি।

সুত্রঃ নাজমুস সাকিব ত্রিশাল (ময়মনসিংহ), নয়াদিগন্ত

 

কেন বাচ্চারা শিক্ষকদের ভালবাসে?-আফরোজা হাসান

ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা।
ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে।

শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।

একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে।

বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না।

বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো?

প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।

যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম।

প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে।

এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।

এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা।

টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।

এই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হুদা দম্পতি

সম্পত্তি হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের অন্যতম সুন্দর উপায় হল ‘দান’। ভূ-সম্পত্তির মালিকরা তাঁদের স্নেহধন্য মানুষকে বা ভালোবাসার ব্যক্তিকে সাধারণত দিয়ে থাকেন। কিন্তু ডা.দম্পতির দানের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন কাজ করে সবার কাছে স্বরণীয় ও সম্মানিত হয়ে গেলেন।

১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি স্বেচ্ছায় কোনো মূল্য বা বিনিময় ব্যতিরেকে ব্যক্তিকে অথবা কোন প্রতিষ্ঠানকে ‘দান’ করা যায়। আবার মুসলিম আইন অনুযায়ী সম্পত্তি নিস্বার্থভাবে কাউকে বা কোন প্রতিষ্ঠানের নামেও দেওয়াকে ‘দান’ বুঝায়। দানের ক্ষেত্রে আটটি ক্ষেত্র রয়েছে। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইল বা ভবিষ্যৎ দানেরও বিধান রয়েছে। কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বা প্রতিষ্ঠানকে কোনো বিনিময় ব্যতিরেকে সম্পত্তি হস্তান্তর করলে তা ধরা হয় ‘দান’।
FB_IMG_1511450666163
৫ তালা বাড়িটি দানের এই সিদ্ধান্ত শুধু ডা.হুদা ওনার একার নয়, সাথে রয়েছেন তার স্ত্রী ডা.রোকসানা হুদা। দুজনে মিলে “আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” হস্তান্তর করেছেন।
FB_IMG_1511450649585
ডা.হুদা ও ডা.রোকসানা হুদা আজ ২৩শে নভেম্বর তাদের তেজস্তুরি বাজারের ৫ তালা বাড়ি টি “আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” কে দান করলেন। ডা:দম্পতির ইচ্ছানুযায়ী এই বাড়িতে একটি মেয়েদের অনাথালয় যাকে আমরা “হোম” বলি, স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দান সম্পন্ন করার জন্য তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-দানের প্রস্তাব, গ্রহীতার সম্মতি এবং দখল হস্তান্তর। স্থাবর বা অস্থাবর সব ধরনের সম্পত্তি যে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দান করা যায়।
FB_IMG_1511450655291
“আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” কতৃপক্ষ তাদের এ দান যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করে নেন সে জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সমাজের অন্যান্য বিওবানরাও অনুসরন করবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

 

একটি জাতীয় দৈনিকের মোটা দাগের শিরোনাম “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর খেলাপী ঋন সোয়া লাখ টাকা” -ডা.কবীর জুয়েল

আমাদের বহির্বিভাগে প্রায়শঃই নিজেকে বড় মনে করা, বেশী কথা বলা, মাত্রাতিরিক্ত খোশ মেজাজী রোগীর দেখা মেলে, আজও এমন এক ম্যনীক-(অসুস্থতাজনিত ভয়ানক রকমের উচ্চাকাঙ্ক্ষী)রোগী এলো’, ইতিপূর্বে সে কক্ষনোই আমাদের এখানে আসে নাই কিন্তু তার শারিরীক ভাষা ও বাচন ভঙ্গীতে মনে হচ্ছে এই হাসপাতালের-ই উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা বুঝি পরিদর্শনে ঢুকলেন, সাথের মানুষগুলো ইতস্ততভাবে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলেন, টেবিলে একটি জাতীয় দৈনিক রয়েছে যার ‘মোটা দাগের শিরোনাম’ ছিল “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর খেলাপী ঋন সোয়া লাখ টাকা”, রোগীটি কোন রকম সৌজন্যতার তোয়াক্কা না করে পত্রিকাটি নিয়ে পড়তে লাগলো, আমরা রোগের তীব্রতা বুঝতে সাধারণতঃ এ ধরনের রোগী-কে প্রশ্ন করে থাকি, কি করেন, কি করতে পারেন,কি হতে ইচ্ছা করে, কি হতে চান? মজার ব্যাপার হলো এরা এদের কাছেপিঠে যা আছে তা নিয়েই কল্পনাপটু হয়ে ওঠে, তাই প্রশ্ন করা মাত্রই রোগী-টি নির্বিঘ্নে উত্তর দিলো
–“আমি ঋনখেলাপী হবো; এমন মজার পেশা আর নাই, আমি হবোই।
কেন হতে চান, জিজ্ঞেস করতেই তার কথার তুড়ি ছুটতে লাগলো…
–“বড় বড় কোম্পানি খুলবো,ব্যবসাসফল ব্যক্তিত্ব হবো, দেশ বিদেশ ঘুরতে থাকবো, ক্রিকেট টিম বানাবো, আমার এলাকায় দাতব্য চিকিৎসালয়ে আপনাদের মতো দুই ডজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পুষবো, লোকের বাহাবা পাবো, নির্বাচন করে নেতা হবো, বেশী সমালোচনা হলে ঋন অবলোপন করাবো, বার্ধক্যকালে হজ্জ করে একটি বিশাল মসজিদ তৈরী করবো,,,”
তার কথা থামছেই না, আমরাও অনেকাংশে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ওর সাথে কল্পজগতে পাড়ি দিয়েছিলাম,
এ ধরনের ম্যনীক রোগকে Infectious Manic Episode বলা হয়।
আমার junior Colleague বললো – ওনাকে Injection দিতে হবে, অন্তঃবিভাগে ভর্তি করতে হবে, সে ওয়াড বয় ডেকে ওকে তড়িঘড়ি করে Injection দিচ্ছে, কিন্তু রোগী-টি তখনো চেঁচিয়ে যাচ্ছে আর বলছে…
–“আমাকে কেন Injection দিচ্ছেন, আমি কি ভুল বলেছি, আমি অনেক বড় হতে চাই, অনেক অনেক বড়,,,, তাইতো ঋনখেলাপী হতে চাই —-অন্যায় কি বললাম, আমি রোগী না, আপনারাই রোগী।”
এই প্রথম আমার সত্যি নিজেকে রোগী মনে হলো,মনে হলো চিকিৎসক, সেবিকা,ওয়াড বয়কে বলি, ওকে Injection দিয়োনা,ও-তো সত্য বলেছে,পারলে Injection গুলো তাদের দাও যারা কক্ষনো সত্য বলেনা, যারা পরের টাকায় পোদ্দারি করতে করতে পগার পার হয়ে যায়, কক্ষনো ধরা পড়েনা, ধরা পড়লেও জামাই আদরে থেকে দ্রুততম সময়ে জামিন নিয়ে নেয়, কিন্তু জামিনের শর্ত পালন করেনা, পুনরায় ভয়ানক রকমের উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে নতুন উদ্যোমে শুরু করে,,,,,, কিন্তু মুখে থাকে জনদরদ, কক্ষনোই ঋনখেলাপি হওয়ার প্রকৃত কারন মেনে নেয়না, মিথ্যাচারণ করে সব ঢেকে দেয়।

 

‘স্বার্থলোভী মানুষের দল’ -জিনাত তাসনিম

অগোচরে অন্তরালের রক্ত ক্ষর বুঝিবা
অমাবশ্যার মধ্যরাতে নিস্তব্দ কোন বাড়ির কলঘরে
জল গড়িয়ে যায়

টপ টপ টপ…

সব শূণ্যতার ধোয়ায় দম আটকে যায়
সময়,বিশ্বাসের বেলীতলে শীতের শুস্কতায় ভাসে,
আজকাল স্বপ্নের অনাগোনা নাই
দুঃস্বপ্নের দল মশকের মতন করে গুনগুন।

পদ্মের জল দেখিনা
সাগরের জলেও ভাসিনা
কেবল কুয়াশা মাখা ভোরে
কাকের শব্দ শুনে জেগে উঠি
স্বার্থলোভী মানুষের দল।

 

পিতামাতা ও সন্তানের সম্পর্ক শক্তিশালী করার ১০টি উপায়

সন্তানকে রোজ জড়িয়ে রাখুন বুঝতে দিন আপনার লক্ষ্য তার সাথে থাকা[Aim for 12 hugs (or physical connections) every day]সন্তানকে অত্যন্ত ভালবাসেন তা যেন আপনার প্রতিটি স্পর্শে অনুভূত হয়। সন্তানের বয়স যাই হোক এমনি সম্পর্কের অবনতি কোন ক্রমে তবুও সন্তানকে ভালবাসা বুঝতে দিন। হাতটি আলত করে ধরুণ বলুন আপনি তার সাথেই আছেন।
img20171121_152510
সন্তানদের সাথে খেলুন(Play)
একসঙ্গে খেলাধুলা করুন যে কোন খেলা হতে পারে দৌড়াদৌড়ি বা ওদের পছন্দমত কোন খেলা। খেলছেন এটা বড় কথা। আনন্দমুখর পরিবেশ বজায় রাখুন।
img20171121_152544
সন্তানকে সময় দেবার সময় সকল প্রযুক্তি বন্ধ রাখুন(Turn off technology when you interact)
যতটুকু সময় থাকুন না কেন সন্তানের সাথে মোবাইল, লেপটপ, কম্পিউটার যে কোন ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
img20171121_152643
বন্ধনকে মজবুত করুন সন্তানের ভুল সংশোধন করার আগে(Connect before transitions)
ভুল সংশোধনের সময় সন্তানের পছন্দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করুন। যদি সন্তানদের কোন বিষয় আপনার অপছন্দ হয় তবে তাদের বুঝিয়ে বলার আগে তাদের সাথে একান্তভাবে বসুন মত বদলানোর চেষ্টায় আগে বন্ধনকে মজবুত করুন । জোর করবেন না।
img20171121_152430
প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্বাচন করুন( Make time for one-on-one time)
প্রতিটি কাজের জন্য থাকে মৌলিক কিছু সময়। প্রতিটি সন্তানের সুন্দর জীবন অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে চাইলে প্রতিটি সময়কেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সন্তানদের জন্য একটি বিশেষ সময় নির্ধারণ করুন। সন্তানদের সমস্যা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ওয়ান টু ওয়ান শেয়ারিং খুব প্রয়োজন।
img20171121_162922
সন্তানকে ক্ষুদ্র আবেগকে মূল্যায়ন করুন(Welcome emotion)
সন্তানকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে সন্তানদের প্রতিটি আবেগ বুঝা, গুরুত্ব দেওয়া এবং ক্লান্তি বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক সময় সন্তানের চাহিদা ও বিশ্বাসের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
img20171121_163127
কথাগুল মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং উপলব্ধি করুন(Listen, and Empathize)
প্রতি দিন অন্তত ১০ বা ১৫ মিনিট সময় সন্তানকে দিন এবং ঐ সময় সন্তানদের প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদের আনন্দ, বেদনা অনুভূতিগুল ঠিক বাচ্চাসুলভ ভাবেই বুঝার চেষ্টা করুন।
img20171121_201157
ধীরে ধীরে বন্ধনের গভীরে ঢুকে পড়ুন যাতে চারপাশটি প্রশান্তিময় হয়(Slow down and savor the moment)
সন্তানরা সব সময় বুঝতে পারে কখন আপনি তাদের প্রতি যথেষ্ট মনযোগী। আপনার গভীর মনোযোগ ধীরে ধীরে মজবুত বন্ধনের দিকে এগিয়ে যাবে আর বাবা-মার সাথে প্রতিটি মুহুর্ত্বই সন্তানরা উপলব্ধি করবে আনন্দ অনুভূতির সাথে।
img20171121_201240
ঘুমতে যাওয়ার সময় গল্পের রাজ্যের মজাদার আবেশে জড়িয়ে ফেলুন(Bedtime snuggle and chat)
সন্তানকে রোজ ঘুমানোর সময় তাদের সাথে শিক্ষণীয় আর মজার মজার গল্প করুন যাতে আবেশে তাদের চোখ বুঁজে আসে।
img20171121_211354
সন্তানের সাথে উপস্থিত থাকুন বুঝতে দিন(Show up)
দৈনন্দিন কাজে সন্তানদের সাহায্য নিন পাশাপাশি তাদের কাজে আপনিও সাহায্য করুন এবং তারা যেন বুঝতে পারে যে, তাদের বাবা-মা তাদের সাহায্য, মতামতকে বেশ গুরুত্ব দেন।
img20171121_201353

 

‘শিশু পেলে অধিকার, খুলবে নতুন বিশ্বদ্বার’- ডা.কবীর জুয়েল

‘শিশু পেলে অধিকার, খুলবে নতুন বিশ্বদ্বার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস-২০১৭।
received_1774602615884743
১৯৫৪ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব শিশু দিবস প্রবর্তন করে বিশ্বের লাখো শিশুর মাঝে একাত্মবোধ, জাগ্রতবোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। লাখো শিশুর অব্যক্ত কথাগুলো শোনার জন্য। কিন্তু আমরা কি শুনতে পাই আমাদের শিশুদের না বলা কথাগুলো? তাদের মনের মাঝে বয়ে চলা কত শত অভিব্যক্তি, কষ্ট, ভয়, একাকীত্ব, প্রশ্নের ঝড়?

আমাদের শিশুদের সাহায্য করার জন্য, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুদের মাঝে যে মনরোগের লক্ষণসমূহ দেখা যায় তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করছি—–
>> অটিজম বা ভাবের আদান-প্রদানে সমস্যা
>> অতি চঞ্চলতা ও মনোযোগহীনতা
>> অতিরিক্ত রাগ, জিদ, ভাংচুর করা
>> তোতলামী ও পঠনে সমস্যা
>> লিখাপড়ায় অনীহা বা অমনোযোগহীনতা
>> স্কুল পালানো, স্কুলভীতি
>> লিখাপড়ায় ক্রমাবনতি
>> স্কুলের বন্ধুদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ করা
>> নিরীহ মানুষ, পশু-পাখির সাথে রুঢ় আচরণ করা
>> অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা বলা
>> ক্রমাগত হুমকি প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন করা
>> আগুন লাগিয়ে আনন্দ করা
>> বিছানায় প্রস্রাব করা
>> আত্মঘাত বা নিজেই নিজেকে আঘাত ও কষ্ট দেওয়া।

আপনার শিশুর মাঝে যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো হতে একাধিক লক্ষণ দেখতে পান, তবে দেরী না করে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। উপযোগী কাউন্সিলিং এবং অল্প কিছু ঔষধ আপনার শিশুকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে উদ্ধার করতে পারে। মনোরোগ অন্য সব রোগের মতো একটি রোগ যা সময়মতো চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ সুস্থতা পাওয়া সম্ভব। লোকলজ্জা, ভয়, সামাজিক গোঁড়ামি বা অজ্ঞতায় থেকে নিজের সন্তানের বিপদ বৃদ্ধি করবেন না। প্রতিটি শিশুর জীবন হোক সুন্দর, নিরাপদ ও আনন্দদায়ক, এই প্রত্যাশা আজকের বিশ্ব শিশু দিবসে।
received_1774602985884706

 

ঘরের সৌন্দর্য (ছোট্টশিশুর ঘর)

ছোট্ট শিশুর ঘর সাজাতে গেলে আপনাকে একটু ভাবতে হবে কারণ একটি শিশু আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রুচি বা পছন্দ একরকম নাও হতে পারে। শিশুর ঘর সাজানোর সময় মনে রাখতে হবে ঘরটা কোন বয়সী শিশুর জন্য সাজানো হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত শিশুর নিজস্ব মতামত আছে কিনা। শিশুটি হাসিখুশি থাকলে আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে তাই শিশুর মত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুন্দর সাজানো-গুছানো ঘর শিশুর মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে। শিশুর ঘরটি আকর্ষণীয় হতে হলে সর্বপ্রথম রং এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
img20171120_095041
ঘরের রঙ(The color of the house)
উজ্জ্বল রঙের প্রতি শিশদের ঝোঁক থাকে যেমন গোলাপি, বেগুনী, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট্ট শিশুর মতামতের উপর কখন কখন গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখুন সেই রঙের ছোয়া যেন জিনিসপত্রেও থাকে।
img20171120_095349
দেয়ালের সাজ(Wall decoration)
ঘরের রঙের সাথে মিল রেখে দেয়ালকে সাজিয়ে তুলতে হবে। বয়স অনুযায়ী শিশুর পছন্দের কার্টুন, ফুল, পেইন্টিং দিয়ে ফুটিয়ে তুলা যায় ঘরের দেয়ালটি। নানান নকশা আর রঙের ওয়াল পেপার শিশুদের ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলুন।
img20171120_190308
ঘরের পর্দা নির্ধারণ(Define the screen of the house)
গাঢ় রং এর দেয়ালের সাথে মিলিয়ে হাল্কা রঙ ব্যবহার করতে পারেন। সুতি বা কটন কাপড়ের পর্দা নির্বাচন করা যেতে পারে।
img20171120_095148
আলো-বাতাস(Light-air)
বাচ্চাদের ঘরে জোড়ালো আলো হলেই ভালো হয়, কারন কম আলোয় ওদের পড়াশোনা করতে অসুবিধে হবে৷
img20171120_095623
শিশুর ঘরের আসবাবপত্র(Baby furniture)
সাধারণত আসবাব পত্রের রঙ উজ্জ্বল হওয়া দরকার। আসবাবপত্রের সাইজ আর রং যেন শিশুর পছন্দসই হয় নজর রাখুন।
img20171120_095738
বিছানাপত্র(Bedding)
চাদর যেন আরামদায়ক হয়। রঙের ক্ষেত্রে রঙ যেমন লালসে বর্ণের, হাল্কা সবুজ, গোলাপি, নীল রঙ যাতে বাচ্চারা ময়লা করলে সহজে বোঝা না যায়। খুব গাঢ় রঙের চাদর পরিহার করায় ভাল।
img20171120_184427
মেঝের উপর খেলা(Play on the floor)
শিশুর ঘরের মেঝের এক পাশে খেলার জিনিসপত্র দিয়ে আপনি সাজিয়ে দিতে পারেন। একটি সুন্দর রঙের মাদুর বা কার্পেট বিছিয়ে রাখা যেতে পারে যাতে বাচ্চারা সেটার ওপর বসে খেলে।
img20171120_184307
গাছ ঘর(Plant the trees)
শিশুর ঘরের ভেতর জানালা বা দেয়ালে অর্কিড বা আকর্ষণীয় কিছু গাছ লাগান। শিশুটির ঘরটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠবে।
img20171120_190336
পড়াশুনার রাজ্য(State of Education)
দেওয়ালে বই রাখার ব্যবস্থা করে যেতে পারে তাছাড়া বিছানার পাশে টেবিল রাখতে পারেন৷ খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চারা যেন নাগালের মধ্যে পায়৷

 

“মুঠোফোনে পর্ণগ্রাফী” ১৪ বছরের কিশোর দ্বারা ৭ বছরের শিশু ফারজানা ধর্ষণের পর হত্যা

১৭ সেপ্টেম্বর চাচা রহমত আলীর বাড়ির পেছনে পাওয়া যায় ফারজানার হাত-পা বাঁধা লাশ। ফারজানার বাবা ঢাকার কেরানীগঞ্জের সিরাজনগর এলাকায় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয় তার মেয়ে ফারজানা আক্তার (৭)। নিহত শিশু ফারজানের বাবা কবির হোসেনের (৩৫) দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
কবিরের সঙ্গে চাচা রহমত ও তাঁর সন্তানদের অনেক দিনের জমি নিয়ে বিরোধ। তাঁরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন।
ফারজানাকে হত্যার অভিযোগ এনে চাচাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কবির (৩৫)। সেখানে তিনি সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন, এঁরাই তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছেন। পরে কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ চাচাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে।
হত্যার এজাহারভুক্ত আসামিদের অস্বীকারের মুখে ১৫ দিন পর মামলার তদন্তভার আসে ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে। ডিবির কাছেও কবির একই অভিযোগ করেন। কিন্তু নিবিড় তদন্তে জেলা ডিবির এসআই মো. মনিরুজ্জামান দেখেন, ফারজানাকে খুন করেছেন অন্য আরেকজন। সেই খুনি? তাঁর পরিচয় কি?
তার তদারক কর্মকর্তা হলেন জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ওসি) দীপক কুমার সাহা।
দীপক কুমার বলেন, ফারজানাকে খুনের অভিযোগে পাঁচজন গ্রেপ্তার হলেও তারা যখন অস্বীকার করে আসছিলেন, তখন তারা নিবিড়ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। ফারজানার লাশ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল সেই স্থান টানা তিন দিন পরিদর্শন করেন। ফারজানার বাবা কবিরের কাছ থেকে জানতে পারেন, মুক্তিপণের জন্য ৫ লাখ টাকা চেয়েছিল কথিত অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। টুকে নেন সেই মুঠোফোন নম্বর। বের করেন মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর)। দেখা যায়, কথিত অপহরণকারীরা কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ফোন করেছেন।
কবিরের দেওয়া তথ্যমতে, কে বা কারা মুক্তিপণের টাকা চেয়েছিল কবিরের কাছে, এর রহস্য খুঁজতে শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, তদারক কর্মকর্তা দীপক কুমার। কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেই মুক্তিপণের টাকা চাওয়া হয়েছে, এমনটা নিশ্চিত হয়ে আবার কবিরের বাড়িতে আসেন তারা।
পরিবারের সদস্য, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী সবার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা দেখেন, কবিরের অন্য এক চাচার ছেলে বাড়িতে নেই।
দীপক কুমার বলেন, ‘কিশোর ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল তাকে ঘিরে? যে ছেলে সব সময় বাড়িতে থাকে, সে কেন হঠাৎ বাড়ি ছাড়া হলো? কৌশলে তাকে আমরা নজরদারি করতে থাকি। তার গতিবিধি অনুসরণ করা হয়। তার বন্ধুবান্ধব কারা, এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে থাকি। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ও চালাক। সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলতে পারে। কিন্তু তার আচরণের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। সারাক্ষণ চিন্তামগ্ন থাকত।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ফারজানা মারা যাওয়ায় একা একা ঘরে থাকতে তার ভয় লাগে। এ জন্য সে সেখানে থাকে না।
কবির এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে একই কথা বলেন কিশোরের মা। আরো জানা যায়, ওই কিশোর পিইসি ও জেএসসিতে এ প্লাস পেয়ে সেখানকার একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। বিজ্ঞান বিভাগের এই কিশোর এলাকায় মেধাবী ও ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া এই কিশোর ফারজানাকে খুব আদর করত। ফারজানা নিখোঁজ হওয়ার পর ওই কিশোর তাকে খুঁজতে বের হয়েছিল। সবার সামনে অনেক কান্নাকাটিও করেছে। মারা যাওয়ার পর বাড়িতেও সে ছিল।
৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার করার পর ওই কিশোর ফারজানাকে খুন করার কথা অস্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে স্বীকার করে, ফারজানাকে সে মেরে ফেলতে চায়নি, অসাবধানতায় মারা গেছে।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বললেন, ‘যখন কিশোর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তখনো হাতে পৌঁছায়নি। যখন হাতে আসে, তখন দেখি, সাত বছরের ফারজানাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছে। ওই কিশোর তার জবানবন্দিতে ধর্ষণ করার কথা অস্বীকার করেছে।’ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারজানাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। যৌনাঙ্গে রক্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।’
ফারজানা খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর এখন সংশোধন কেন্দ্রে আছে। তার বাবা মারা যান বিদেশে। দাদা আর মাকে নিয়ে সে থাকত। ফারজানার বাবা কবির এই কিশোরের ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। দেখা হলে সে সালাম দিত। তার সঙ্গে বা তার পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ ছিল না। ভালো ছাত্র হিসেবে তাকে স্নেহ করতেন। ওই কিশোর কেরানীগঞ্জের যে স্কুলে পড়ত, সেখানকার প্রধান শিক্ষক বললেন, ওই কিশোর আগে এলাকার একটি দাখিল মাদ্রাসায় পড়ত। সেখান থেকে খুব ভালো ফলাফল করে। কিন্তু ওই মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ না থাকার কারণে তার দাদা তাকে তার স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু ছেলেটি গত কয়েক মাসে স্কুলে আসেনি। দেয়নি কোনো পরীক্ষা। আর নিহত ফারজানার বাবা কবির দেখেছেন, প্রায় সময় কিশোরের হাতে মুঠোফোন থাকত। কার সঙ্গে যেন কথা বলত। কারও সঙ্গে তেমন মিশত না। তার মুঠোফোনটি বেশ দামি ছিল।
দীপক কুমার বলেন, কিশোর তাদের বলেছে যে মুঠোফোনটি সে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছে। খুব শিগগিরই তার বিরুদ্ধে ফারজানাকে হত্যার অভিযোগে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। অন্যদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। গ্রেপ্তার করা আসামিরা এখন জামিনে আছেন।
দীপক কুমারের ধারণা, কিশোরটি মুঠোফোনের মাধ্যমে নিয়মিত এমন কিছু দেখত, যা তার মধ্যে যৌন–আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। আর আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই শিশুটিকে ধর্ষণ করে থাকতে পারে।
ফারজানার কথা বলার সময় হাউমাউ করে কাঁদেন বাবা কবির। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে যে খুন করেছে, তার ফাঁসি চাই। ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি চাই না।’

সমাজের অধঃপতনের চিত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে ১৪ বা ১৫ বছরের কিশোরটি হাতে মুঠোফোন। যার মাধ্যমে নিয়মিত পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখত, যা তার মধ্যে যৌন–আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই শিশুটিকে ধর্ষণ। ধর্ষণের অপরাধ ধামাচাপা দিতেই হত্যা করা হয় শিশুটিকে।
তথ্যসুত্রঃ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা।

আমার বাচ্চা খায় না! -ডা. মারুফ রায়হান খান

আমার-আপনার পরিচিত যতো মানুষ আছে সম্ভবত তাদের অধিকাংশের বাচ্চাই খায় না! ডাক্তার হোন বা না হোন এই অভিযোগ শোনেননি এমন মানুষের সংখ্যা বেদম কম।

আমি একটু কঠিন সত্যি কথা বলে ফেলি। আসলে শিশু তার প্রয়োজনমতোই খায়–ঝামেলা যা করে থাকেন তা করেন অতি সেন্সিটিভ মায়েরা! মা প্রথম দিকে মনে করেন তার বাবুটি বুঝি পেট ভরে খেলো না; তাই তিনি জোর করে আরও খাওয়াতে চেষ্টা করেন। এতে হয় কী বাবুটা মনে করে খাওয়া-দাওয়া ব্যাপারটা তার কাজ না, বরং এটা তার আম্মুর কাজ। তো আমি কেন খাব! ফলে ও খেতে চায় না।

মনোবিজ্ঞানী এম ই ল্যাম্ব একবার একটা মজার পরীক্ষা করলেন। তিনি একটা ঘরে বিভিন্ন বয়সী শিশুর জন্যে প্রয়োজনীয় খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখলেন। কিছুক্ষণ না খাইয়ে রেখে বাচ্চাগুলোকে ঐ ঘরে ছেড়ে দিলেন। দেখা গেলো, যে বয়সী বাচ্চার যে ধরনের খাবার প্রয়োজন তা তারা খুঁজে খেতে থাকলো। অর্থাৎ শিশুরা তাদের চাহিদা ও পছন্দমাফিক খাবার নিজ থেকেই খায়।

আরেকটা ব্যাপার আছে। শিশুটির খাওয়া নিয়ে যে মা দুশ্চিন্তা করেন এটি তারা বুঝে ফেলে। ফলে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে শিশুটি এমন করতে পারে। যদি সে বলে ‘খাব না’–তাহলে মা তার সাথে অনেকক্ষণ সময় ব্যয় করবে। মা-কে কাছে রাখার একটা ট্রিক হতে পারে এটা!

তো চিকিৎসা কী!

মায়ের জন্যে কষ্টসাধ্য হলেও শিশু খেতে না চাইলে কিছুক্ষণ না খাইয়ে রাখা উচিত। ক্ষুধা লাগলে বাচ্চা শেষ পর্যন্ত খাবেই।

আরেকটা ব্যাপার। বাচ্চা খেলে তাকে এমনভাবে পুরস্কৃত করা শুরু করবেন না যেন সে অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল নিয়ে এসেছে! যদি একটু খাওয়াতেই তাকে এটা-সেটা গিফট দিয়ে ভরে ফেলেন, আখেরে কিন্তু বিপদে পড়তে যাচ্ছেন এই বলে দিলুম কিন্তু!

ও হ্যাঁ, আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার। শিশুর মা-বাবার মাঝে যদি প্রকাশ্য ঝুটঝামেলা চলতে থাকে, তাহলে কিন্তু বাচ্চার মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে–এ কারণেও ক্ষুধাহীনতা প্রকাশ করতে পারে। নিজেদের ঝামেলা দূর করুন, বাচ্চাকে নির্বিঘ্নে খেতে দিন!

 

সুখের মুহুর্তগুলো(ইটালি সফরের) -আফরোজা হাসান

img20171117_231842
ভিক্সিনের একটি পার্ক 
জীবনটা যে কতো সুন্দর সেটা নাকি ফেলে আসার পরই বোঝে মানুষ। আমিও অবশ্য এমনটাই মনেকরি। তাই তো জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনার স্মৃতি আমার কাছে খুব বেশি মূল্যবান। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, আনন্দ-বেদনা এবং পাওয়া-না পাওয়ায় ভরা আমাদের জীবন…জীবনের প্রতিটা দিন…প্রতিটা ক্ষণ। জীবন থেকে না পাওয়া, অপুর্নতা, কষ্ট এসব কিছুই কাম্য নয় আমাদের কারোই। কিন্তু যেহেতু এগুলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাই সেগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে, মুছে ফেলার চিন্তা না করে কিভাবে সেগুলো থেকে শিক্ষা নেয়া যায় এবং সেই শিক্ষার দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসমূহ থেকে দূরে থাকা যায় এমন চেষ্টাই থাকে আমার। আরেকটা চেষ্টা থাকে আমার সেটা হচ্ছে আনন্দময় মুহুর্তগুলো নাগালের মধ্যে রেখে একই আনন্দ বার বার উপভোগ করে জীবন ভাণ্ডারে আনন্দের মাত্রা বাড়ানো। ইটালি সফরও আমার জীবন ভাণ্ডারে এনে দিয়েছে অমূল্য কিছু স্মৃতি নামক রত্ন। 
নাকিব বড় হবার পর ওকে নিয়ে এই প্রথম ট্রেন জার্নি ও প্লেন জার্নি করলাম। ইমগ্রেশন, চেকিং কোন জায়গাতে নাকিবের পাসপোর্ট শো করা লাগছিলো না যেহেতু সে জন্মসূত্রে ইউরোপিয়ান কিন্তু আমাদেরটা শো করতে হচ্ছিলো। বাচ্চাদের সতর্ক ও কৌতূহলী দৃষ্টি ও মন সেটা এড়াতে পারলো না। কেন তার পাসপোর্ট কোথাও দেখাচ্ছে না জানতে চাইলো বাবার কাছে। আমরা এশিয়ান আর ও ইউরোপিয়ান জানার পর তো শুরু করলো প্রশ্নের বাণ ছোড়া। আমার আর ওর বাবার জন্ম, বিয়ে, স্পেন আসা পুরো ইতিহাস জেনে তবেই শান্ত হলো। জবাব দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন হাসান। উনার সেই প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়েও হাসি মুখে ছেলের ননস্টপ প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাওয়ার মুহুর্তটা মনে পড়লে অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। 
img20171117_231150
প্লেনের জানালার কাছে বসে বাইরে মেঘ থেকে মোটে চোখই সরাচ্ছিলো না নাকিব। খুবই সিরিয়াস মুড। চোখে সতর্ক দৃষ্টি। কারণ কি জানতে চাইলে বলল, যে কোন সময় মেঘদের মধ্যে এঞ্জেল দেখা যেতে পারে সেটা সে মিস করতে চায় না। একঘণ্টা পর ক্লান্ত হয়ে বলল, বাবা এঞ্জেল কখন আসবে? বাবা বুঝিয়ে বলার পর তো এঞ্জেল দেখতে পারবে না জেনে প্রচণ্ড আশাহত হয়ে বিরাট বিরাট দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিছুক্ষণ নাকিব। ইশশ…এখনো ভাবতে মজা লাগে সেই মুহুর্তটা। 
স্কাইপে আফনান-সারা ওদের সাথে নিয়মিত দেখা হলেও সামনাসামনি প্রথম দেখার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। সাদিয়া আপুকে দেখার পর ভালোবাসাময় সেই আলিঙ্গন। একদিন ভোরে উঠে নাস্তা বানিয়ে রেখে আমি আর আপু বেড়িয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। সেই দিনটার কথা খুব মনেপড়ে। সারাপথ দুজন ননস্টপ বকবক করেছি। কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা এমন একটা মুহুর্ত ছিল কিন্তু মনে মনেও না আবার একা একাও না। সাথে ছিল সাথী হয়ে মনের মতো বোন…বান্ধবী। আলহামদুলিল্লাহ্‌…
img20171117_231308
এই পথ ধরেই হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গিয়েছিলাম
img20171117_231354
ভিক্সিন গিয়ে একদিন বিকেলে ঘুরতে বের হয়ে গল্প করতে করতে নদীর পাড় ধরে হাঁটছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে এতো দূর চলে গিয়েছিলাম যে ফেরার পথে আর পা চলছিলো না কারো। পাহাড়ি এলাকা উঁচু-নীচু, আঁকা-বাঁকা পথ কিন্তু যখন হাঁটছিলাম তখন টেরই পাইনি। হাসান বললেন, পাশে যখন নির্ভরযোগ্য সাথী থাকে তখন পথ যতই এবড়ো থেবড়ো হোক না কেন মানুষ নিশ্চিন্তে আর নির্ভিঘ্নে পথ পারি দিতে পারে। কি প্রমাণ পেলে তো আমি যে তোমার নির্ভরযোগ্য সাথী? উনার হাসি আর দুষ্টুমিতে ভরা এই বাক্যটিও অনেক বড় প্রাপ্তি আমার জন্য। 
img20171117_231442
ট্রেন থেকে তোলা পাহাড়ের ছবি 
পুরো ইউরোপ জুড়েই বইছে মন্দা হাওয়া। বাঙ্গালী ভাইয়েরা নানান ধরনের জটিলতা ফেস করছেন। ট্রেন ষ্টেশনে পরিচয় হলো এমন একজনের সাথে। বললেন উনার কষ্টের কথা, অভিমান ঝরে পড়লো ভাগ্যর উপর। যদি সামর্থ্যে কুলায় পৃথিবীর সবাইকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আমরা। তবে সেটা যে শুধু জাগতিক হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। একটু পাশে থেকে, দুঃসময়ে কিছুক্ষণ সময় দিয়ে, মনের কোনে জমে থাকা অভিমানের মেঘকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেতে, উৎসাহমূলক কয়েকটা বাক্য দিয়েও মানুষকে সাহায্য করা যায়। ট্রেনে উঠার সময় সেই ভাইয়ের প্রশান্ত চেহারাটা দেখে আবারো এটা অনুভব করেছিলাম। 
img20171117_231544
পাহাড় 
সফরের কোন এক বাসার পরিবেশ ঢুকেই অনুকূল মনেহয়নি আমার কাছে। সম্পুর্ন ভিন্ন লাইফ স্টাইল আমাদের থেকে। হাসান বললেন, তুমি তো সারাক্ষণ সবাইকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে সবকিছু দেখার পরামর্শ দাও। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর অর্থ হচ্ছে, ভালোটা খুঁজে বের করা। কল্যাণটা যে করে হোক উপলব্ধি করা। মনে নেই রাসুল (সঃ) কি বলেছেন, “কারো কোন একটা খারাপ দিকের কারণে তাকে সাথে সাথে অপছন্দ করো না। তার অপর কোন একটা ভালো দিক থাকতেও পারে যার জন্য তুমি তাকে পছন্দ করতেও পারো।” সত্যিই উনাদের আতিথিয়তা আর আন্তরিকতা মুগ্ধ করেছে আমাকে। 
img20171117_231604
পাহাড়ি নদী
কাস্তেল ফ্রাঙ্কোতে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি সবজী বাগান। একদিন বেড়িয়ে ছিলাম আইসক্রিম খেতে। তিনজন মিলে আইসক্রিম হাতে গল্প করতে করতে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সেই স্মৃতিটা খুব নাড়া দেয় মনকে। পুরো সফরে ছেলে আর ছেলের বাবাকে এনজয় করতে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিমাসে একবার করে বের হবো উনাদের সাথে ঘুরতে। আশেপাশের গ্রামগুলোকে ইচ্ছে হলেই ঘুরতে যাওয়া যায়। নিজের ঘরকুনো স্বভাবের কারণে স্বামী-সন্তানকে যে অনেক আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছি সেই জিনিসটা খুব ভালো মতো উপলব্ধি করেছি। 
img20171117_231643
বলোনিয়ার মাছের পার্ক
জীবনের অপ্রাপ্তিগুলোর হিসাব এতো বেশি করি আমরা যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুখগুলো দেখেও যেন দেখি না। অথচ ইচ্ছে করলেই জীবন থেকে খুঁজে নেয়া যায় আনন্দময় মুহুর্ত। আর যদি একটু নীচে তাকানো যায়। আমরা তো সুখী শুধুমাত্র আল্লাহ যে অবস্থানটা দিয়েছেন সেটার কারণে। কোন কারণে যদি অবস্থানটা বদলে যেতো তাহলে এতটা সুখী নাও হতে পারতাম। নিজেকে নিয়ে সুখী হবার জন্য মনেহয় এই উপলব্ধিটুকুই যথেষ্ট। 
(ছবি সংগৃহীত)

 

“বই কাব্য” -আফরোজা হাসান

“ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা।” কথাটা কে বলেছেন মনে করতে পারছি না! কিন্তু বই বিশেষ করে জীবনী পড়ার সময় আমার সত্যিই মনে হয় যেন কথা বলছি সেই বইয়ের লেখকের সাথে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনিষীদের
চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-কল্পনার মাঝে অবগাহন করে তুলে নিতে চেষ্টা করি মূল্যবান সব মোতি।
img20171117_134600
ছোটবেলায় ভাইয়ার কাছ থেকে জেনেছিলাম, পৃথিবীর শুরু থেকে যুগে যুগে কত শত জ্ঞানী-গুণীরা এসেছেন। আমাদের মতো তারাও কাটিয়েছেন নানারঙের দিন, তাদেরও ছিল জীবনকে ঘিরে আনন্দ-বেদনার কাব্য। তাদের সবার সান্নিধ্য পাওয়া তো সম্ভব নয়। তবে তাদের সেই সব মূল্যবান অভিজ্ঞতার কথা আমরা জানতে পারি তাদের লিখে যাওয়া বইয়ের মাধ্যমে।
img20171117_134333
আসলেই বই এক অদ্ভুত মিরাকল। বইয়ের আছে পাখীর মত ডানা। আমাদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে যেখানে যেতে চাই সেখানেই। বইতে সওয়ার হয়ে আমরা ঘুরে বেড়াতে পারি পৃথিবীর আনাচে, কানাচে, গহীন আমাজন জঙ্গলে, গভীর সমুদ্রে, বহু আলোকবর্ষ দূরের কোন গ্রহে, চন্দ্রে এমনকি ব্ল্যাকহোলের ভেতরেও।
img20171117_134455
এমন মানুষ যারা কোনদিনও নিজ দেশের বাইরে যেতে পারবে না তারাও বইয়ের আয়নাতে চোখ রেখে দেখতে পারে পৃথিবীর সুউচ্চ শৃঙ্গ হিমালয়, পিরামিড, নীলনদ, মরুভূমির সেই পথ। সেই গুহা যা এক সময় আলোকিত ছিল আমাদের প্রিয় রাসূল (সঃ) এর স্পর্শ আলোতে। যেখানে রচিত হয়েছিল মুসলিমদের প্রথম বিজয়ের উপাখ্যান।
img20171117_134427
স্পেনের সেই উপকূল যেখানে ইউরোপের ঘুম ভাঙ্গানিয়া গান গেয়েছিলেন তারিক বিন যিয়াদ। মুসলিম সৈন্য ও তাদের সেনাপতির শৌর্যবীর্য ও সাহস দেখে সেনাপতি থিওডোমির বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে রাজা রডারিককে পাঠানো সেই বার্তা “সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও অদ্ভুত শৌর্যবীর্যের অধিকারী মুসলিম বাহিনীর অগ্রগতি আমি রুখতে পারলাম না।” ইতিহাস কি? ইতিহাস হচ্ছে যে কোন জাতির দর্পন। যে দর্পনের আলোতে জাতি আত্মপরিচয়ের সৌভাগ্য লাভ করে, এবং পায় চলার পথের সন্ধান, প্রেরণা, দিক নির্দেশনা। বইয়ের কল্যাণে আমরা জানতে পারি আমাদের সেই অতীত ইতিহাস। যেই ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়ানো রয়েছে আগামীর জন্য শত সহস্র শিক্ষা।
img20171117_134648
মুসলিম বিশ্বের বিপর্যয়ের কারণ সমূহ পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম যে, এই বিপর্যয়ের মূলে বড় তিনটি কারণ হচ্ছে আদর্শ বিমুখতা, বিজ্ঞান বিমুখতা ও ইতিহাস বিমুখতা। আর মুসলিমদের আদর্শ চেতনা ততদিন পর্যন্ত ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে উঠতে পারবে না, যতদিন পর্যন্ত না তাদের মধ্যে গভীর ইতিহাস চেতনা সঞ্চারিত হয়। কেননা ইতিহাস জানা না থাকলে মুসলিমরা তাদের প্রকৃত শত্রু-মিত্রকে চিনতে পারবে না! জানতে পারবে না ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কত ছদ্মবেশে, কত কৌশলে, কত রঙে, কত রূপে শত্রুরা মুসলিম জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে, ধোঁকা দিয়েছে, বিপর্যস্ত করেছে। আমাদেরকে তাই আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। পড়তে হবে বেশি বেশি বই……………।

 

নিজেদের বাচ্চাদের ফার্মের মুরগী বানাবেন না -ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা

ফাইয়াজ হবার পর প্রথম প্রথম আমার সবকিছুতে খুব বেশি চিন্তা হত। ঠিক মত ফাইয়াজের কাথা পরিষ্কার হল কিনা,বার বার নিজের হাত সাবান দিয়ে ধুতাম যেন আমার থেকে ফাইয়াজের ইনফেকশান না হয়। এমনকি বাইরে থেকে কেউ আসলেও তাদের সহজে ফাইয়াজকে কোলে নিতে দিতাম না। তাদের হেক্সিসল দিয়ে হাত এন্টিসেপটিক করে নিয়ে ফাইয়াজ কে আদর করতে দিতাম।
প্রথম মা বলে সবকিছুতে অতিরিক্ত চিন্তা। এমনকি ফাইয়াজের স্বাভাবিক সর্দি,কাশিতেও আমার চিন্তায় ঘুম আসতনা। সাথে সাথে স্টেথো দিয়ে ওর ফুসফুস চেক করতাম, শ্বাস প্রশ্বাস এর গতি মাপতাম, হার্ট বিট দেখতাম। যখন দেখতাম সবকিছুই নরমাল রেইঞ্জের মধ্যে তখন একটু স্বস্তিতে থাকতাম।
দুইদিন পরপরই বেড শিট চেইঞ্জ করতাম, স্যাভলন দিয়ে সবকিছু ওয়াশ করতে দিতাম। আর কেউ যদি আমার সামনে ফাইয়াজ কে চট করে হাত না ধুয়ে আদর করত সাথে সাথে বিভিন্ন ছুতায় ফাইয়াজকে নিজের কাছে নিয়ে নিতাম।
একদিন দেখি ফাইয়াজের হাতে মশার কামড়ে জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। সেটা দেখেই তো ভয় পেয়ে গেলাম। অজানা আশংকায় রোগ পূর্ববর্তি ইনকিউবেশান পিরিয়ড কাউন্ট করতে লাগলাম,যখন দেখলাম দশ-বার দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু ফাইয়াজের কিছুই হয়নি তখন মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলতাম।
এরকম মোটামুটি দুই থেকে আড়াই মাস পর আমার অতিরিক্ত সচেতনতা কিছুটা কমল।
ছয় মাসের সময় থেকে যখন ওকে বাইরের খাবার দেয়া শুরু করলাম তখন ওর পেট খারাপ হল একবার, প্রচুর পাতলা পায়খানা।সাথে বমি। হাসপাতালে ডিউটি সত্বেও যেতাম না, ফোনে সি.এর কাছে ছুটি চেয়ে নিতাম।ভাবতাম ফাইয়াজের প্রতি কেউ খেয়াল করছেনা তাই নিজেই সারাদিন ফাইয়াজের টেইক কেয়ার করতাম।
ফাইয়াজের ফিডার দিনে চৌদ্দবার গরম পানিতে ফুটাতাম। আমার অবস্থা তখন এমন ছিল পারলে সব কিছু অটোক্লেভ করতাম।
এরপর যখন পেডিয়াট্রিকসে ডিউটি পড়ল তখন হাসপাতালে বাচ্চাদের অবস্থা দেখে রীতিমত শিউরে উঠতাম। সরকারি হাসপাতাল। খুব গরীব গরীব রোগীদের আবাস।
একটা ছয় মাসের বাচ্চার নিউমোনিয়া,সাথে মায়ের কোলে দেড় বছরের বাচ্চা। সেই মা একইসাথে দুইটারেই সামলাচ্ছে। রোগ জীবানুর মধ্যেই বাচ্চাগুলা থাকছে। ঠিকমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন হচ্ছেনা। যে হাতে মা একজনের ভেজা কাথা ধরছে, আবার সেই একই হাত দিয়ে অন্যজনকে দুধ খাওয়াচ্ছে।
এরকম দৃশ্য দেখে সি.এ কে বলতাম, ভাইয়া এসবের মধ্যে বাচ্চারা কেমন করে চিকিৎসা পায়? ভাইয়া হেসে বলত, এসব বাচ্চাদেরই ইমিউনিটি বেশি। ওরা এখনের ধকল গুলা সামলালেই পরে একেবারে সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে।
ততদিনে নিজের বাচ্চার প্রতি আমার আদিখ্যেতা কিছুটা হলেও কমেছে। আর এখন তো পুরাই ছেড়ে দিয়েছি।
আমার আম্মা সবসময় বলে যে বাচ্চাদের ছেড়ে দিলে ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। এখন বুঝি সেটার মর্ম।
যদিও আগেই জানতাম, কিন্তু ইদানিং ব্যাপারটা খুব লিটারেলি পালন করছি।
হাইজিন হাইপোথিসিস বলে, যেসব বাচ্চারা ছোটবেলা থেকে জীবানুর সাথে যুদ্ধ করে বড় হয় তাদের অটোইমিউন রোগ,ক্যান্সার এসব হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
এখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম,রোগ বালাই নিয়ে যত পড়াশুনা করি তত ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়।
আমাদের বাসায় ফাইয়াজের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হল ঘরের চিপা চাপা জায়গা গুলা। দরজার পিছনে, খাটের নিচে, টেবিলের তলে।সেদিন দেখলাম ওর পুরা জামা তে ধুলা বালি, ঝুল ময়লা লেগে আছে, আর সে সেগুলা চেটে চেটে খাচ্ছে। এমনকি জানালার গ্রিল ধরেও সে জিহবা দিয়ে চাটতে থাকে। এসব দেখে এখন আর ভয় পাইনা। খুব স্বাভাবিক ভাবে জামা কাপড় চেইঞ্জ করে, হাত পা সাবান দিয়ে ধুয়ে আবার খেলার জন্য ছেড়ে দেই। সে আবার পূর্ণ উদ্যমে ধুলা বালির সাথে খেলায় মেতে উঠে।
সাদিয়া আপুর ওয়ালে দেখলাম যায়নাব কে কাদার মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে, আর সে ইচ্ছা মত কাদাতে লাফালাফি করছে। অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে আপু যে তাকে এত ইউনিক ভাবে ইমিউন সিস্টেম ম্যাচিউর করতে পারছে এটা তো বিশাল ব্যাপার।
আমি নিজে দেখেছি স্পুন ফিডিং কিছু বাচ্চার মায়েরা আছে তারা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে এতই চিন্তিত থাকে যে দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে আসলে বিদেশ থেকেই বাচ্চার খাবার দাবার এমনকি পানি পর্যন্ত প্রিসার্ভ করে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের খাবার,পানি খেলে নাকি তাদের বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাবে।
আমি দেশে ও দেশের বাইরে থাকা এসব মেন্টালিটির মাদের বলব, প্লিজ আপনারা বাচ্চার ভাল চিন্তা করতে গিয়ে ওদের লং টার্ম ক্ষতির মধ্যে ফেলবেন না। ফার্মের মুরগি কিন্তু অনেক যত্নে পালিত হয় কিন্তু তাদের আয়ু খুবই কম। নিজেদের বাচ্চাকে এরকম ফার্মের মুরগি বানাবেন না।
জীবন যুদ্ধে যাবার পূর্বে ওদের নিজের ইমিউন সিস্টেমের সাথে যুদ্ধ করে ম্যাচিউর হতে দিন, প্লিজ।

বি.দ্র. বাচ্চার প্রথম ছয়মাসে ওদের ইমিউন সিস্টেম খুব নাজুক থাকে। এসময় সচেতন থাকা আদিখ্যেতা না। সচেতন থাকাটা বরং জরুরি।

 

ডায়াবেটিক রোগীদের এক্সারসাইজ – ডা. মারুফ রায়হান খান

গতকাল ১৪ নভেম্বর ছিল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ বছর জরিপে দেখা যায় নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বেশি। ডায়াবেটিসে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, খাওয়ার ক্ষেত্রেও জারি হয় অনেক বিধি নিষেধ। বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি নারী এই রোগের শিকার।

♦ডায়াবেটিক কি?
ডায়াবেটিস মেলিটাস(ইংরেজি: Diabetes mellitus) একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।

♦কখন বুঝবেন ডায়াবেটিস হয়েছে
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায় কন্টিনিউয়াস, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

♦ডায়াবেটিক রোগীদের এক্সারসাইজ
ডায়াবেটিক রোগীদেরকে যে এক্সারসাইজ করতে বলা হয়, তা হচ্ছে “মডারেট ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ “। এর মানে হচ্ছে একজন মানুষের হার্ট রেট সর্বোচ্চ যতো হতে পারে তার যেন ৫০-৭০% হার্ট রেট হয় এক্সারসাইজের মাধ্যমে। আমাদের দেশে সাধারণত হাঁটার মাধ্যমেই এক্সারসাইজ করা হয়। সহজে বোঝানোর জন্য বলা হয়ে থাকে স্বাভাবিক হাঁটার চেয়ে দ্রুত হাঁটতে হবে। শরীর যেন ঘেমে যায় সেভাবে হাঁটতে হবে।

-এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে।
-তার মানে হচ্ছে কেউ যদি ৩০ মিনিট করে হাঁটে, তবে সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটতে হবে।
-১ দিন পরপর হাঁটলে ৫০ মিনিট করে হাঁটতে হবে।
-একসাথে টানা দুদিন বা ৪৮ ঘণ্টা হাঁটা বন্ধ করে দেওয়া যাবে না।
– একনাগাড়ে কমপক্ষে ১০ মিনিট না হাঁটলে সাধারণত সেটাতে কোনো উপকার হয় না।

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, হাঁটা শুরু করার সাথে সাথেই খুব জোরে হাঁটা শুরু না করতে বলা হয়ে থাকে। কেউ যদি ৩০ মিনিট হাঁটে, তাহলে প্রথম ৫-৭ মিনিট ওয়ার্ম আপ করে নেবে, তারপরের ১৫-২০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটবে, আবার তারপরের ৫-৭ মিনিট ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে নিয়ে আসবে।

#বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৭

 

ঘরের সৌন্দর্য…

গাছ দিয়ে রূপকথার নগরী সাজাব আজ। রংয়ের বৈপরীত্য ফুটিয়ে তুলার দিকে নজর দিন গাছ বাছায় করার সময়। লাল, বেগুনী, অরেঞ্জ কালার, সানসেট অরেঞ্জ, মাড রেড, ইয়োলো, ল্যাভেন্ডার প্রভৃতি রঙ বৈচিত্র্য আনতে পারে আপনার ঘরকে। ঘরে গাছের উপস্থিতি বাতাসকে বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে। আর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গাছপালা তুলনামূলক সস্তাও বটে।
img20171114_161453
বেলকুনীতে গাছ
বেলকুনীতে আড়াআড়ি ভাবে একটি লোহার রড বা ষ্টীলের তার দিয়ে লাইন বানিয়ে নিন। এরপর টব নির্বাচন করুন, প্লাটিকের টব বা বিভিন্ন সাইজের বোতলের অথবা বাড়ির পেইন্টিঙের জন্য আনা প্লাস্টিকের বালতিটিও ব্যবহার করতে পারেন। 
img20171114_160608
গাছ যখন জানালায়
জানালায় উজ্জ্বল রঙের ফুল বা অর্কিডের গাছ, ছোট্ট ঝুলন্ত পাতাবাহারের গাছ রাখতে পারেন। টবটি জানালায় ঝুলিয়ে দিন। এ সময় সবার আগে মনে রাখতে হবে তা হল বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে যেন জানালাটি পুরো গাছপালা দিয়ে ভরে না যায়। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি না জমে  যেন।
img20171114_161611
বড় বারান্দায় গাছের বাগান
গুল্ম, ফুলগাছ, ক্যাকটাস এসবই বারান্দায় জায়গা পেতে পারে। বড় বারান্দার গ্রিলে খোপার মত ঝুলে রাখা যেতে পারে মানিপ্ল্যান্ট।
img20171114_161010
ড্রয়িংরুমের সাজসজ্জায় গাছ
বাসার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও রুচিপূর্ণ ঘর। তাই দরজার পাশে ফুলের বা সুন্দর একটি গাছ রাখা যেতে পারে। ঘরের কোণায় কোণায় বিভিন্ন পাতাবাহার, বা ফুল গাছের টব জায়গাগুলর চেহারা পালটে দিবে।
img20171114_160657
ঘরের দেয়ালে ঝুলন্ত গাছ
পুরো ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে বদলে দিতে পারে দেয়ালে থাকা গাছের পাতা আর ফুল। রঙ বেরঙের গাছ আর পাতা ব্যতিক্রম করে তুলবে পুরো রূপনগরী। দেয়াল সজ্জায় স্মরণীয় আলোকচিত্র ঝুলাতে পারেন, সাথে থাকতে পারে পেইন্টিং কিন্তু অল্প খরচে গাছপালাও সেই সৌন্দর্য ডেকে আনতে পারে।
img20171114_160824
উঠোনে গাছের সমারোহ
বাসার বাইরে উঠোনে গাছের সমারোহ পুরো বাসার সৌন্দর্যকে আরোও বাড়িয়ে তোলে।সবুজ উঠোন হতে পারে আপনার ভাললাগার জায়গা অনায়াসে।

 

‘ছায়া সঙ্গী…’ ফাতিমা শাহীন

আমি প্রায় প্রতিদিনই রোদ কিংবা বৃষ্টিতে নারীটিকে ম্যাপল গাছটির নিচে বসে থাকতে দেখতাম!

আমার ছেলেমেয়ে দুটি খুবই দুষ্টু হয়েছে। একটি বছরও হয়নি ওদেরকে এই স্কুলটিতে ভর্তি করিয়েছি , এরই মধ্যে এ দুটো চঞ্চলমতি হিসেবে স্কুলে নাম করে ফেলেছে। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর এ দুটো আমার কাছে আসতে আসতে নালিশের তুফান তুলে ফেলে। ওদের সামলাতে সামলাতে যখন পার্কিংয়ে রাখা গাড়ির দিকে এগোই, তখনও নারীটিকে স্থির ও অচঞ্চল ভাবে একই জায়গাতেই বসে থাকতে দেখি। মাঝে মাঝে কৌতুহলে ফেটে পড়তে চাইতাম, ইচ্ছে হত তার পাশে গিয়ে বসি, কথা বলি। কিন্তু কখনই কাউকে তার সাথে কথা বলতে ও মিশতে না দেখে ইচ্ছেটাকে আবার নিজের মাঝেই দমিয়ে ফেলতাম। 

আমার বাচ্চা দুটো ছুটির ঘন্টা বাজলেই বুলেট গতিতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ত, তাই নারীটির সন্তানকে তার কাছে ফেরার দৃশ্য কখনই আমার দেখা হতনা। মাঝে মাঝে হয় এরকম, ক্লাস শেষ হবার পর বই ব্যাগ গুছিয়ে শান্ত সুবোধ বাচ্চারা ধীরে সুস্থে অপেক্ষায় থাকা বাবা মায়ের হাত ধরে বাড়ীর পথ ধরে। সবাই তো আর আমার দুটোর মত অস্থিরমতি চঞ্চল চড়ুই পাখিটি নয়!

তবে, সন্তানের জন্য অপেক্ষায় থাকা মায়ের চোখ যেমন সন্তানের আগমন পথের দিকে তাকিয়ে প্রতীক্ষার ক্ষণ গুনে চলে, তাঁর চোখে কি আমি কখনো তেমন প্রতীক্ষা দেখেছি? দেখেছি হয়তবা, অথবা দেখিনি! তার দৃষ্টি যেন পথ হারিয়ে যাওয়া পাখির মত সুদুর পানেই বিদ্ধ থাকত সারাক্ষণ। বয়স তাঁর কপালে গভীর কয়েকটি বলিরেখা এঁকে দিয়েছিল, যা হয়ত সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছিল তার ফেলে আসা অতীতের, সুখে দুখে মেশানো বিপুল অভিজ্ঞতার! 

সময় কেটে যেতে লাগলো সময়ের নিয়মেই। ম্যাপল গাছটির পাতাগুলো তাদের তারুণ্য হারিয়ে সময়ের সাথে সাথে জীর্ণ হতে লাগলো। উষ্ণ বাতাসে একসময়ে লাগলো শীতল স্পর্শ। কিন্তু নারীটির অবস্থান বদলায়নি কখনই। এমনকি অন্যরাও ওই বেঞ্চটি বাদ রেখে অন্য কোথাও বসত বা জায়গা না পেলে দাঁড়িয়ে থাকত। কিন্তু বেঞ্চটি খালি থাকলেও কাউকে কখনো ওখানে বসতে দেখিনি। ভেততে ভেতরে আমি ভীষণভাবে তাঁর ব্যাপারে কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু তাঁর কাছে গিয়ে, তাঁর পাশে বসে সেই কৌতুহল নিবৃত্ত করার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছিলাম না কিছুতেই!

এমনি সময়ে ঘটনাটি ঘটল। তখনও স্কুল ছুটি হয়নি, একটি ছোট বাচ্চা লাফাতে লাফাতে এগিয়ে আসতে গিয়ে হঠাত জুতার ফিতায় পা বেঁধে হাঁটু মুড়ে আছড়ে পড়ল সিমেন্টের বাঁধাই করা চত্বরটিতে, ওই নারীটির ঠিক সামনেই! ছোট্ট শিশুটির এই আকস্মিক আঘাতপ্রাপ্তি যেন পাথরের একটি প্রতিমাকে জাগিয়ে তুলল নিমেষে! নারীটি ছুটে গিয়ে বাচ্চাটিকে তুলে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমি তো ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়ে বিমূঢ়! আমার মত অনেকেই ভেতরে ভেতরে নারীটিকে নিয়ে কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলেন হয়ত! আমাদের এতদিনের কৌতুহলের নিবৃত্তি ঘটল অবশেষে। স্কুল অফিসের রিসেপশনিস্ট মাঝবয়েসী মিসেস গিলবার্ট আমাদেরকে যা বললেন তা শুধু বিস্ময়ের ই নয়, বরং করুণ, মর্মন্তুদ ও হৃদয়স্পর্শীও বটে!

নারীটির ছেলে এই স্কুলেই পড়ত। বছর পাঁচেক আগে ক্যাম্পিং এ গিয়ে সবার চোখের আড়ালে বন্ধুদের সাথে বাজী ধরে সাঁতার কাটতে গিয়ে খরস্রোতা নদীতে ভেসে গিয়েছিল। ব্যাপক অনুসন্ধান করে দুদিন পর তার নিরব নিস্পন্দ দেহ পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকেও প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরের একটি জায়গায়। সেই থেকে নারীটি হারিয়ে ফেলেছেন তার জীবনের স্বাভাবিকতা। আগে তিনি তাঁর নাড়ীছেঁড়া ধনকে পরম মমতায় সঙ্গে নিয়ে ঘরে ফিরতেন, আর গত পাঁচটি বছর ধরে তিনি প্রতিদিনই এসে ম্যাপল গাছের নিচে পাতা বেঞ্চটিতে আগের মতই এসে বসে থাকেন, কিন্তু ঘরে ফেরার সময়টিতে তিনি ফেরেন একাকী, এক বুক যন্ত্রণা ও নি:সঙ্গতাকে সাথী করে! আর এতগুলো বছর ধরে তার অকূল অসীম বেদনার মূক সাক্ষী হয়ে ম্যাপল গাছটি পরম মমতায় তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে! এ যেন ‘ মাদার অফ ম্যানভিল ‘ এর উল্টো প্রতিরূপ! 

আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম অসম এই দুই সঙ্গীর দিকে। আমার ভাবনায় সাড়া দিতেই যেন পাতা ঝরার এই শেষ লগ্নেও যে কয়টি শুকনো নির্জীব পাতা প্রাণপনে পরম আশ্লেষে আঁকড়ে ধরে ছিল গাছের শাখা, আজ সেই পাতা কটিও যেন তাদের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হাহাকার ভরা হৃদয়ের ওই শোকাতুরা মায়ের গায়ে ঝরে পড়ল হালকা হিমেল হাওয়ায়, যেন বা সান্ত্বনাই পরশ বুলিয়ে দিল তাঁকে, আর সব নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল যে কত স্বল্পস্থায়ী আমাদের জীবন, কতইনা ক্ষীন আমাদের আয়ুষ্কাল! হায়, সময় থাকতেই যদি আমরা বুঝতাম ……..! 

 

“মন ও আমি”- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর “মন ও আমি” কবিতাটি থেকে কিছু লাইন খুঁজে দেখা
রং বেরঙ্গের ছবির আলোকে…

মন ও আমি
img20171112_141810
মন! তুমি কোথায় কোথায়?
দিবানিশি খুঁজে, বেরায় পাইনা তোমায়।
আত্মহারা মন! তুমি কোথায় কোথায়?
ঘুরিয়া বেড়াও তুমি কিসের আশায় ?
img20171112_140357
কোন শ্মশানের ঘাটে, কোন নির্জন মাঠে ;
কোন তটিনীর স্রোতে ভাসায়েছ কায়?
তাই কি খুঁজিতে গিয়ে পাই না তোমায়?
img20171112_140015
যথেষ্ট হয়েছে মন! যেয়ো নাক আর
ভ্রমিতে কল্পনা রাজ্যে ছাড়িয়ে সংসার|
এস শান্ত হও ভাই, আর ঘুরে কাজ নাই,
জান তুমি চিরবন্দী সংসার-রাজার ?
অলসের বেড়ী পায়, কত দূরে যাবে, হায়!
তব অপেক্ষায় আছে গৃহকারাগার|
ভুলিয়ে আপন পর ত্যজি এ মায়ার ঘর,
যেযো না স্বপনরাজ্যে খেলিতে আবার!
img20171112_140232
“মনের উক্তি”
সোনার পিঞ্জরে ধরে রেখো না আমায়
আমারে উড়িতে দাও দূর নীলিমায়!
img20171112_140138
খুঁজিব তারার দলে কোন্ গগনের তলে,
আমার সে নিরমাতা রয়েছে রয়েছে কোথায়,
যেজন স্বপন ঘোরে পাগল করেছে মোরে,
এমন উদাসী যেই করেছে আমায়;
img20171112_135930
যাহার বাঁশীর স্বরে থাকিতে পারি না ঘরে,
যাহার যশের গান জগত শুনায়;
img20171112_135827
সে অনন্ত প্রেমময় কেন চাহে এ হৃদয়
অলক্ষিত আকর্ষণে কোথা লয়ে যায়?
দেখা দাও জগদীশ! রয়েছ কোথায়?
শীতল প্রলেপরূপে বিরাজ তথায়?
দেখা দাও প্রেমময়! রয়েছ কোথায়?
কোথা আছ প্রেম-সিন্ধু জগত-ঈশ্বর?
img20171112_140809
আমি যদি হইতাম চারু সুধাকর,
শূন্য পথে ঘুরিতাম নীলাকাশে ভাসিতাম,
আমার আলোকে ধরা হ’ত মনোহর|
img20171112_140620
জলদ পবন ভরে উড়িয়ে গগন পরে
আসিয়া পড়িত কভু আমার উপর|
ধূসর মেঘের তলে লুকাতাম কুতুহলে
বিস্ময়ে দেখিত চেয়ে তারকা নিকর!
দেখা দাও প্রেমসিন্ধু জগৎ ঈশ্বর!
img20171112_140452
অথবা হতেম যদি আকাশের তারা
তোমারি বিধান মতে ভ্রমিয়া অনন্ত পথে,
নীলাকাশে ছড়াতেম কনকের ধারা!
ঘুরিতে ফিরিতে কভু
আপনা ভুলিয়া প্রভু,
ছুটিতাম তব পানে হয়ে আত্মহারা!
হায় ! কেন হই নাই আমি ক্ষুদ্রতারা!
img20171112_135429
সুস্নিগ্ধ জলদ প্রায় ঢাল বারি এ ধরায়
ভাস কি তটিনী-স্রোতে লহরীমালায়?
করি প্রীতি বরিষণ জুড়াও তাপিত জন,
চাহিলে তোমার পানে শান্তির আশায়?

 

ভ্যাকসিন/টিকা ও ধর্মীয় বিরোধ- ডা. মারুফুর রহমান অপু

শিরোনামে অবাক হবার কিছু নেই। জেনে অবাক হবেন আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন কোন না কোন সময় আপনার সেই একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী কেউ না কেউ ধর্মীয় কারন দেখিয়েই ভ্যাকসিনেশন এর বিরোধিতা করেছে। হোক সে খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদী বা হিন্দু! আজকে এই পোস্টটি লেখার কারন হলো আমি ইদানিং বিভিন্ন ফোরামে লক্ষ্য করছি এক শ্রেনীর মানুষ টিকার বিরোধীতা করছেন এবং নিজের সন্তান বা বংশধরদের টিকা গ্রহন থেকে বিরত রাখার মত ভয়ংকর কাজ করছেন কিছু ধর্মীয় ভুল ধারনা কিংবা অপব্যাখ্যার কারনে! কি কি কারনে তারা বিরত থাকছেন তার কয়েকটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যেমন:
১) এগুলো ইহুদী বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র
– আসলে তা নয়, বহু মুসলিম বিজ্ঞানীই বিভিন্ন সময়ে দলগত বা ব্যক্তিগতভাবে ভ্যাকসিন তৈরিতে অবদান রেখেছেন। আর ভ্যাকসিন ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকল দেশেই ব্যবহার করা হয়। এটি শিশুদের জন্মগত অধিকার, সুস্থ থাকার জন্য।
২) ভাকসিন শুধুমাত্র গরীব আর মুসলিম দেশেই দেয়া হয় তাও বিনাপয়সায়, ধনী দেশেরা নেয়না
– কথাটি মোটেও সত্য নয়। সারা পৃথিবী শিশুদের মৃত্যুহার কমানোর ব্যাপারে সচেতন তাই বরং উন্নত দেশে ভ্যাকসিন গ্রহনের হার আরো বেশি। পৃথিবীর সকল শিশু যেন সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেচে থাকতে পারে তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে দরিদ্র দেশে ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে দেয়া হয়। এটি আপনার শিশুর অধিকার।
৩) রোগ সৃষ্টি ও সুস্থ করার মালিক আল্লাহ তাই রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করার চেস্টা অনৈসলামিক
– বরং উলটো, বেশ কিছু সহীহ হাদিস অনুসারে নবী (স:) বলেছেন রোগ প্রতিরোধ এর কথা, তা হবার আগেই। ইসলামিক ফতোয়া প্রদানকারী বিভিন সংস্থার আলেমগণ তাই ভ্যাকসিন গ্রহনের পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং পৃথিবীর কোন মুসলিম দেশেই টিকা নিষিদ্ধ নয় কেননা ভ্যাকসিন গ্রহনের কারনে যদি কেউ সুস্থ থাকে তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে কেননা তিনিই এটিকে কবুল করেছেন।
৪) ভ্যাকসিন নিলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে কারন এতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে
– এটি একটি ভুল ধারনা। ভ্যাকসিন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে বা বাড়ায়। এ প্রক্রিয়ায় জৈবনিক বিক্রিয়ার অংশ হিসেবেই অনেক সময় কোন কোন শিশু (সবাই নয়) কিছুটা অসুস্থ বোধ করতে পারে যেমন জ্বর হওয়া। এটি একটি সাধারন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা দ্রুতই চলে যায়। তবে অনেক সময় অন্যান্য আরো কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে এমনকি মারা গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে যেগুলোর কারন খতিয়ে দেখা গেছে ভ্যাকসিন এর সাথে অসম্পর্কিত। সুতরাং ভ্যাকসিন নেবার পর শিশু অসুস্থ বোধ করলে ভয়ের কিছু নেই, শিশুকে নিকটস্থ চিকিতসকের কাছে নিয়ে পরামর্শ গ্রহন করুন।
৫) ভ্যাকসিনে মূল জীবানুই শরীরে ঢোকানো হয় যা ক্ষতিকর এবং উলটো রোগ তৈরি করে।
– ভুল ধারনা। এটি সত্য যে ভ্যাকসিনে মূল জীবানুকেই বা তার অংশ বিশেষকে ব্যবহার করা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত জীবানু বা তার অংশ বিশেষ ব্যবহার করা হয় যার রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা নেই কিন্তু প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা আছে। অনেকটা এমন যে বাচ্চাদের চোর বা ডাকাতের ছবি দেখিয়ে বলা তারা দেখতে এরকম, এদের থেকে দূরে থাকো। তাই পরে আসল চোর ডাকাত (রোগ) এলে আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকায় ক্ষতি হয়না। কিছু ক্ষেত্রে জীবিত জীবানূ ব্যবহার করা হয় তবে সেসব ক্ষেত্রে জীবানুগুলো ইনএকটিভেটেড অর্থাৎ রোগ সৃষ্টিতে অক্ষম করে ফেলা হয় জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়। তাই ভ্যাকসিনে কোন দূষিত বা ভয়ংকর কিছু নেই যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
৬) ভ্যাকসিনের কারনে শরীরে ক্যান্সারের মত রোগ সৃষ্টি হতে পারে
– একেবারেই বিপরীত ধারনা বরং অনেক ক্যান্সারেই প্রতিরোধ করে ভ্যাকসিন যেমন হেপাটাইটিস এর ভ্যাকসিন লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, জরায়ূমুখ ক্যান্সার ভ্যাকসিন জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এসব ভ্রান্ত ধারনা সাধারনত অস্বীকৃত কোয়াক ডাক্তার বআ হোমিও আয়ুর্বেদ প্র‍্যাকটিশনার যাদের স্বীকৃত যোগ্যতা নেই এমন লোকেরাই নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে প্রচারনা করেন।
৭) ভ্যাকসিন ক্ষতিকর এ কারনে হোমিওপ্যাথিতে কোন ভ্যাকসিন নেই।
– আসলে হোমিওপ্যাথিতেও ভ্যাকসিন আছে! তবে পৃথিবীর বহু দেশেই এটিকে বন্ধ করা হয়েছে এমনকি খোদ ইউরোপেই।
নাগরিকের সুস্থতা নিশ্চিত করা রাস্ট্রের দ্বায়িত্ব, সন্তানকে সুস্থ রাখাও বাবা মায়ের দ্বায়িত্ব। তাই আপনি যদি ভ্রান্ত ধারনায় পড়ে আপনার বাচ্চাকে টীকা না দিয়ে ঝুকিতে রাখেন তাহলে আপনি তার অধিকার নস্ট করলেন, বাবা-মা হিসেবে আপনার দ্বায়িত্বের অবহেলা করলেন এবং রাস্ট্রকেও ব্যার্থ করলেন এমনকি ইসলাম কিংবা আপনার ধর্মের দৃষ্টিতেও রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ থাকার চেস্টার বিরোধিতাও করলেন। সুতরাং এসব ভ্রান্ত ধারনা থেকে বেরিয়ে আসুন। মনে কোন প্রশ্ন থাকলে নিকটস্থ চিকিতসক, ইসলামিক স্কলার এর নিকট জিজ্ঞেস করুন, কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আধুনিক জ্ঞানভান্ডার থেকে তথ্য নিন।
একসময় গুটি বসন্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরেছে, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়েছে, প্লেগ রোগে মহামারীতে মরেছে, আগে ৮-১০টি বাচ্চা হতো তার মাঝে ২-১ মারা যেত অধিকাংশ পরিবারেই এখন এসব কিছুই নেই। পৃথিবীতে গুটি বসন্ত আজ বিলুপ্ত, প্লেগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে, বাংলাদেশ আজ পোলিওমুক্ত এই সবই ভ্যাকসিনের কল্যানে। তাই আধুনিক চিকিতসা বিজ্ঞানের আশির্বাদ গ্রহন করুন, নিজে সুস্থ থাকুন আপনার পরিবারকেও সুস্থ রাখুন।
FB_IMG_1510419749452

 

এক টুকরো সুখের গল্প -ফাতিমা শাহীন

বইগুলো বক্স থেকে বের করে ধুলো ঝেড়ে বুক শেলফে তুলে রাখছিল সেমন্তি। নতুন বাসায় উঠে এসে এখন অবধি আর ফুরসত মেলেনি বইগুলো গোছাবার। এই হলের হাউস টিউটর কোয়ার্টার এ নতুন উঠেছে ওরা , ওরা বলতে ও আর সাদমান। অনেক চেষ্টা চরিত্র করে তবে এই কোয়ার্টারটি মিলেছে। হলটি অনেক পুরনো, প্রচুর গাছ গাছালি আর তার চেয়েও প্রচুর আছে পাখি। খুব ভোরে পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে সেমন্তির, তখন এত ভালো লাগে ওর!

বইগুলো গুছিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায় ও। পুরনো একটা সাহিত্য ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে বেডরুমে ঢুকতে গিয়েও না ঢুকে বেরিয়ে পড়ল। সাদমান টক শো দেখছে বেডরুমের টিভিতে, এই সময় ওর হাতে ম্যাগাজিন দেখলেই খেপে যাবে, দরকার কি ঝামেলা বাড়িয়ে! কিন্তু এত সাবধানতা অবলম্বন করেও শেষ রক্ষা হলনা, দেখেই ফেলল সাদমান:

আবার ও ওসব ছাইপাশ নিয়ে বসেছ তুমি? শুধু শুধু এগুলো পড়ে কেন যে সময় নষ্ট কর, বুঝিনা! পড়াশুনার পাশাপাশি মুসলিম সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা কর, লেখালেখি কর! ইসলামী সাহিত্য, মুসলিম ঐতিহ্য , সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা, জ্ঞানার্জন তো করতেই হবে , কারণ এগুলোই ত আমার আত্মার তৃপ্তির রসদ জোগায়। কিন্তু সমকালীন সাহিত্য না পড়েও যে থাকতে পারিনা আমি! বাস্তবের যাপিত জীবনের অনুসঙ্গগুলো এত নিবিড় আর সুক্ষ্মভাবে এই সাহিত্যের প্রতিটি লাইনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে, যা আমাকে বর্তমান সমাজ ও জীবনবোধ নিয়ে ভাবনার খোরাক জোগায়। আর সাহিত্যের একজন ছাত্রী হিসেবে এটি নিশ্চয়ই আমার চিন্তাধারার কোনো গুরুতর ভুল হিসেবে নেবেনা তুমি!

( একটুখানি হেসে ) না, এটি কোনো ভুল বা অপরাধ কিছুই নয়। কোনো উপন্যাসে তুমি একবার ডুবে গেলে তোমার আর নাগাল পাওয়া যায়না, এজন্যই বলছিলাম!

বলতে বলতে সাদমান উঠে দাঁড়ালো, এগোলো দরজার দিকে।

একি, তুমি এখন আবার বেরোচ্ছ নাকি?

(জুতা পড়তে পড়তে) হ্যা, একটু ডিপার্টমেন্টে যাব, বেশ কিছু

এসাইনমেন্ট জমেছে, দেখে দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি … কেন, কিছু বলবে?

একটু দ্বিধা করলো সেমন্তি, এবারের পত্রিকার ঈদ সংখ্যাগুলো ভিন্ন স্বাদে, ভিন্ন বৈচিত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তারই একটা যে দারুন পছন্দ হয়েছে, তা কেমন করে এই ক্ষণে মুখ ফুটে বলবে ও!

কি হলো, বলবে কিছু? মনে হচ্ছে কিছু চাচ্ছ মনে মনে?

কিছু একটা চাচ্ছি, সেটা ঠিক। কিন্তু তোমার কাছে অনুমতি চাচ্ছি বলে ভেবোনা যে ওটি নিজে অর্জন করার যোগ্যতা আমার নেই। আমি এজন্যই চাচ্ছি যে, আমার প্রতিটি কাজে তোমার উতসাহ ও সমর্থন থাকলে প্রতিটি কাজ ও প্রতিটি প্রাপ্তিই আমার কাছে অন্যরকম আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে।

তো, কি এমন চাও যাতে আমার সমর্থন দরকার হয়ে পড়ল?

(একটু দ্বিধা করে) একটা ঈদসংখ্যা কিনব কিনা ভাবছি , না….না…কোনো জ্ঞান বিতরনমূলক কোনো কথা বোলোনা কিন্তু আবার! ….. কি হলো, অমন করে দুষ্টু হাসি হাসলে যে…!

সাদমান একটুখানি এগিয়ে এসে সেমন্তির নাকটা একটু নেড়ে দিল। দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে মুখ ঘুরিয়ে একটু হেসে ছোট্ট করে বলল:

নো!

রাগে গা জ্বলে গেল সেমন্তির। এমন বদ স্বামী পৃথিবীতে আর কোনো মেয়ে পেয়েছে কিনা সন্দেহ! দরজাটা বন্ধ করে ফ্যান চালিয়ে সোফায় বসতে যাবে, এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো। তাড়াতাড়ি মুখে নেকাব জড়িয়ে দরজা খুলে দেখল হলের দারোয়ান রশিদ মিয়া দাড়িয়ে আছে। সালাম দিয়ে একটা ব্রাউন পেপার প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল:

আপা, স্যার যাওয়ার সময় এই প্যাকেটটা আপনাকে দিতে বলে গেছেন।

আচ্ছা, ঠিক আছে, অনেক শুকরিয়া।

অবাক হয়ে প্যাকেটখানি খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একখানি নয়….দুখানি নয় ….তিনখানা ঈদ সংখ্যা! তাও আবার মোটা, ঢাউস সাইজের একেকটি ভলিউম! আলাদা করে একটি হাতে নিতেই গড়িয়ে পড়ল একটি চিরকুট, তাতে লেখা:

“পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি মেয়েটির জন্য তার ‘বদ জামাইয়ের’ পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার! কি, রাগ কি কমাতে পেরেছি একটুও?”

বিস্ময়ে, আনন্দে, অদ্ভুত এক ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল সেমন্তি। মনে মনেই এক ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সাদমানের বুকে। মনে হলো কোথাও যেন সেতারে সংগীতের সব কটি রাগ রাগিনী এক সুরে বেজে উঠলো, পাখিরা গেয়ে উঠলো মিলনের গান। আর অজস্র ভালবাসা আর সুখের অনুভূতিরা নানা রঙের ফুল হয়ে ঝরে ঝরে পড়তে লাগলো মিষ্টি এই স্বপ্নালু দম্পতির উপর!

 

“রান্না ঘরের টিপস”

রান্নার জন্যে অতি প্রয়োজনীয় সহজ ও মজার কিছু টিপস। যা কাজে লাগবে প্রতিদিনের রান্নায়।
img20171111_142758
রসুনের খোসা(Garlic peel)
একসাথে অনেক রসুন ছাড়াতে সময় বেশি লাগে। আস্ত রসুন ফুটন্ত জলে মিনিট দুয়েক ভিজিয়ে হাতে ঘষলে ওপরের খোসা ছেড়ে যায়।
img20171111_142858
দেশলাই বাক্স(Boarding box)
দেশলাই বাক্সে কয়েকটা শুকনো চাল রেখে দিলে বর্ষাকলেও দেশলাই কাঠির বারুদ ভাল থাকে।
img20171111_143308
আচারে ভিনেগার(Seasoning Vinegar)
আচার তৈরি করার সময় তেলে একটু ভিনিগার মিশিয়ে নিলে আচার অনেকদিন ভালো থাকে।তেলে আচার ডুবিয়ে রাখলে আচারে ফাঙ্গাস পড়ে না।
img20171111_143418
ব্লটিং পেপার(Blotting paper)
বিস্কুটের টিনের ভেতরে ব্লটিং পেপার রেখে দিলে বর্ষাকালেও বিস্কুট মছমছে থাকে।
img20171111_143533
হাতের যত্ন(Hand care)
তরকারি কাটার সময় আঙ্গুলে দাগ পড়লে ভিনিগার অথবা লাবুর রসে লবণ মিশিয়ে আঙ্গুলে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিলে দাগ উঠে যায়। যে সব সবজি বা আনাজ কাটলে হাতে কালচে দাগ হয় তা কাটার আগে হাতে সরষের তল মাখলে কালচে দাগ আর হবে না।
img20171111_143058
বেগুন ভাজা(Fried eggplant)
ভাজার জন্য কেটে রাকা বেগুন বেশ কিছুক্ষণ আগে লবণ-হলুদ মাখিয়ে রাখলে ভাজতে তেল কম লাগে।
img20171111_143020
মসলা সংরক্ষণ(Spice conservation)
বাড়তি বাটা মসলা সামান্য তেল ও লবণ মাখিয়ে রেখে দিলে কয়েকদিন পরও ব্যবহার করা যায়।
img20171111_143607
কেরোসিনের ব্যবহার(Use of kerosene)
পানিতে সামান্য কেরোসিন মিশিয়ে রান্নাঘর মুছলে মাশা-মাছি ও পিঁপড়ের উৎপাত কমে যায়।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (১) -আফরোজা হাসান

রান্নাঘরের দরজায় এসে শাশুড়িকে ভেতরে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো আলিসবা। ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো সে। বিয়ের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে। বাবা-মা আর দুই ভাইবোনকে নিয়ে ছোট পরিবার ছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর এসে পড়েছে বিশাল বড় যৌথ পরিবারে। যদিও শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুব ভালোই মনে হয়েছে তার কাছে কিন্তু সবাই যেন কেমন নিজের মত থাকতে পছন্দ করে। তাই কি করবে, কি করণীয় ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আলিসবা। বড় জা অন্তরাকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে হেসে সালাম দিলো সে। সালামের জবাব দিয়ে জা হেসে বলল, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?

-মা নাস্তা বানাচ্ছেন সাহায্য করতে যাবো ভাবছিলাম।

-হেসে, সকালের নাস্তা মা নিজ হাতে বানান ছেলেদের জন্য। এই বাড়ির মা ভক্ত ছেলেরা সবাই দিনের শুরু মায়ের হাতের খাবার খেয়ে করতে চায় তো সেজন্য। আমি বাগানে যাচ্ছি গাছে পানি দেবো, চলো তুমিও। জা’য়ের পেছন পেছন আলিসবাও বাগানে গেলো।

-কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা হেসে বলল, কিছু বলছো না যে? তোমাদের ভ্রমণ কেমন হল সেটাই তো জানা হয়নি।

-জ্বী ভাবী ভালো হয়েছে। এই বাগানের সব ফুল বেগুনী কেন?

-হেসে, কারণ এটা তোমাদের বড় ভাইয়ার ব্যক্তিগত বাগান।

-ভাইয়ার বুঝি বেগুনী রং খুব পছন্দ?

-হেসে, উহু আমার বেগুনী রং খুব পছন্দ। বাগানের আদর-যত্ন উনিই করেন সাধারণত। উনি শহরের বাইরে গিয়েছেন তাই আমি করছি। তোমার কথা বলো কেমন লাগছে বাড়ির সবাইকে?

-জ্বী ভালো।

-হেসে, তোমাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে। অবশ্য প্রথম প্রথম সবারই এমন হয়। পুরোপুরি নতুন একটা পরিবেশ, নতুন লোকজন, নতুন সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারাটাই স্বাভাবিক।

-আপনারও হয়েছিলো এমন?

-হুম…তবে আমাকে মা খুব সাপোর্ট করেছেন পরিবারের প্রতিটা বিষয়ে। ইনশাআল্লাহ! দেখবে তোমাকেও করবেন। শাশুড়ি বৌয়ের সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কমুনিকেশন গ্যাপ। একে অন্যের সাথে কথা তো বলে কিন্তু একে অন্যেকে বোঝানোর বা বোঝার চেষ্টা করে না। আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমাদের শাশুড়ি তেমন নন। উনি উনার সব কথা যেমন বুঝিয়ে বলেন, ঠিক তেমনি আমাদের সবার কথাও মন দিয়ে শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন।

-হ্যা মার সাথে আমার যখনই কথা হয়েছে খুব ভালো লেগেছে। আমাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলেন মা সেদিন বলেছিলেন, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি ও বুঝেছি যে, বিয়ে কোন রূপকথার কাহিনী না। আর যদি হয়ও বা সেই কাহিনীতে একটা হলেও জ্বীন থাকে। আর সেই জ্বীনের সাথে লড়াই করে চলতে হয় সংসারের পথে। কথাটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছিলো।

-হেসে, মা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা বলেন। সংসারের মূলমন্ত্র গুলো আমি মার কাছেই শিখেছি। আমার কি মনে হয় জানো? একজন শাশুড়ি যদি তার দীর্ঘ জীবনের সাংসারিক অভিজ্ঞতা গুলো তুলে দেন পুত্রবধূর হাতে, এরচেয়ে বড় দোয়া আর কিছুই হতে পারে না সেই পুত্রবধূর জন্য।

-সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যেতো তাহলে সংসারের সবকিছু জানা ও বোঝা।

-হুম…ভেবে দেখো কত চমৎকার হতো যদি বিয়েতে অন্যান্য সবকিছুর সাথে প্রতিটা মেয়ের জন্য তার শাশুড়ির সাংসারিক অভিজ্ঞতার একটা প্যাকেজ দেবারও প্রচলন থাকতো। তাতে পরিবারের প্রতিটা সদস্য সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিয়ে জীবনের নতুন সফর শুরু করতে পারতো প্রতিটা মেয়ে। চলার পথের খাঁদা-খন্দ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা থাকতো, চারিদিক অনিশ্চিত অন্ধকারে ঢাকা থাকতো না।

-হেসে, আপনিও অনেক সুন্দর করে কথা বলেন ভাবী। সত্যি অনেক ভালো হত এমন হলে।

-হেসে, এই কথাগুলো মা আমাকে বলেছিলেন আমার বিয়ের পর। কারণ মার বিয়ের পর মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মা নাকি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কষ্ট উনি করছেন উনার ছেলের বৌদেরকে কখনোই এমন কষ্ট সহ্য করতে দেবেন না। যাইহোক, আমি চাই আমার মত তুমিও এসব কথা মার কাছ থেকেই জানো। তবে কি জানো?

-কি ভাবী?

-মার সংসার জীবনের অভিজ্ঞতাকে উপহার স্বরূপ না পেলে আমিও হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে বুঝতাম যে, ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল। শুধুমাত্র জানা না থাকার কারণে ত্যাগ গুলো আমরা করতে পারি না, যার ফলে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নিল করে সাজাতে ব্যর্থ জীবনটাকে।

-আপনার কথা শুনে আমার মনে আশার প্রদ্বীপ জ্বলে উঠেছে ভাবী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছোট ছোট ত্যাগের মাধ্যমে জীবনকে স্বপ্নিল করে গড়ে তোলার প্যাকেজ আমি পেয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।

-হেসে, ইনশাআল্লাহ। তুমি যাও সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকো। আমি মার কাছে যাচ্ছি।

 

কিভাবে “আবেগ” পরিচালনা করতে হয় আপনার শিশুকে শেখান

শিশুদের ‘আবেগ’ দক্ষতার সাথে বুঝতে শেখানো হচ্ছে প্যারেন্টিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। আবেগ এক ধরনের ভালোবাসা, ঘৃণা, সুখ, দুঃখ, দুশ্চিন্তা, রাগ, বিশ্বাস আর ভয়ের সম্মিলিত রূপ। শিশুদের আবেগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে।আবেগ শূন্য মানুষ নাই। মানুষের আবেগ বিকশিত হয় ছোটবেলায়। তাই ছোটবেলা থেকে ইতিবাচক আবেগ গড়ে তোলা দরকার। আর মা বাবা সন্তানের জন্য, সুখী এবং সুস্থ ভবিষ্যত সাজাতে সাহায্য করেন।
তাই আসুন শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌ।শল শিখে নেই।
img20171110_114139
প্রচুর ইতিবাচক শব্দ শেখান(Use feeling words when speaking to your child)
কথা বলার সময় কোন শব্দ দিয়ে কিরূপ মনের ভাব প্রকাশ পায় তা শিশুদের শেখান। কোনো পরিস্থিতিকে কোন আবেগীয় শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায়। এছাড়া শিশুদের উদাহরণ দিয়ে শেখান ‘দুঃখ’ আসলে কিরূপ অনুভূতি ‘হতাশ’ বলতে আমরা কি বুঝায়। মনে রাখবেন শিশুদের শেখানোর সময় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে ইতিবাচক কথা বেশি বলুন।
img20171110_113857
শিক্ষিত নয় বরং কৌতূহলী মনের বিকাশ ঘটান (Be more curious and less educating)
আপনার শিশুর অস্বস্তিকর যে কোন অনুভূতি সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাস করুন, মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদের অনুভূতিগুল প্রকাশ করার জন্য কৌতূহলী করে তুলুন। সন্তানের যে কোন অনুভূতি দুঃখ বা ভুল দেখে সে সম্পর্কে কৌশলে জানতে চান। কিন্তু কোনো ক্রমে সন্তানকে শেখাবেন না যে, দুঃখ পাওয়া ঠিক না। ছেলেদের কাঁদতে হয় না অথবা তাদেরকে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করার সময় লজ্জা দিবেন না। ছি ছি এত বাচ্চা এমন কাজ করে না।
img20171110_113948
গণনা করে রাখবেন না(Don’t keep score)
সন্তানরা যে সমস্ত ভুল করে সেগুল হিসাব করে ধরে রাখবেন না এবং পরবর্তীতে সেগুল নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা যাবেন না। যদি আপনি তার ভুলগুল বার বার ধরিয়ে দিতে থাকেন তার মধ্যে হীনমন্যতা জন্ম নিবে। তাই আপনি যদি বুঝতে পারেন বা নাও বুঝতে পারেন তবুও সন্তান ‘কেন’ ভুল করল এই প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যান।
img20171110_113419
বিরূপ অনুভূতি নিয়ে কথা বলুন (Talk about negative emotions)
যে সব বিষয় আপনার সন্তানের মনে বিরূপভাবে আবেগপ্রবণ করে তোলে, সে বিষয়ে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। কারো মাধ্যমে কষ্ট পেলে, কেউ অপমান করতে, কেউ দোষারোপ করলে সেই বিষয়গুল নিয়ে সরাসরি কথা বলে সমাধান খুঁজতে আপনার সন্তানকে উৎসাহ দিন। Respect the uncomfortable feeling and remember it will change. অস্বস্তিকর অনুভূতিগুলোও খন্ড জীবনের অংশ, সেই সব অনুভূতি গুলকে সন্মান করা এবং বিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন এগুলও পরিবর্তন হবে।
img20171110_113654
আবেগের সাথে পরিচিত করুন(Get a poster of emojis)
ছোট থেকে দুঃখ, কষ্ট, রাগ, হতাশা আর আনন্দ অনুভূতি প্রকাশিত ছবি, ইমেজিং রূপ এর সাথে সন্তানের সাথে পরিচিত করিয়ে দিন।
প্রতিটি ছবির নিচে অনুভূতির নাম লিখতে উৎসাহ দিন।
img20171110_113529
রোজ খুশি আর কষ্টের অনুভূতিগুল নিয়ে আলোচনা করে একটি লিস্ট তৈরি করুন(Talking about the pleasant and unpleasant feelings)
রোজ কিছুটা সময় সন্তানকে নিয়ে বসুন তার অনুভূতি জানার চেষ্টা করুন। কি ঘটনার কারণে আনন্দ বা কষ্টের সৃষ্টি হয়েছে তার উপর গুরুত্ব না দিয়ে বরং অনুভূতিকে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে আলোচনা বসুন।

 

“সায়াহ্নের দ্বীপশিখা” -ফাতিমা খান

বাড়ীওয়ালার ছেলের বউ আজও বাখুর জ্বালিয়েছে। বিশেষ কিছু সুগন্ধী পাথর বা স্যান্ডেল কাঠের গুড়োর সাথে আরো কি সব তেল টেল মিশিয়ে যেন বাখুর তৈরি হয়। এগুলোকে জ্বলন্ত কয়লার টুকরার উপর রেখে জ্বালানো হলে খুশবুওয়ালা ধোয়া বের হয়। আরবদের আভিজাত্যের অংশ এই বাখুর। আমি নিজেও মাঝে মাঝে জ্বালাই। সুগন্ধী বাখুরের চেয়ে আমার ভাল লাগে ওদের বাখুরদানী গুলো। স্বর্ণ, রূপা বা অন্যান্য ধাতু বা চীনামাটিতে খোদাই করে ডিজাইন করা শৌখিন জিনিস, সেইরকম গর্জিয়াস! রাত গভীর হলে বাড়ী ওয়ালার ঘরে এই বাখুর জ্বলে। তাদের অন্দরমহল ছাপিয়ে বাখুরের খুশবু প্রায়ই আমার ঘরে চলে আসে। আমি চোখ বন্ধ করে থাকি। ভদ্রমহিলাকে এই স্বর্গীয় সুগন্ধীর ট্রেড নেইমটা জিগেস করতে হবে। পুরাই মাতাল করা খুশবু!

ধোয়া ওঠা চা নিয়ে বসেছি। “সোনালি ফয়সালা” বইটা সাথে, চমৎকার শিক্ষনীয় বই। রাত বাজে একটা সাঁইত্রিশ। চায়ের পানিতে বলগ আসার আগে একটু খানি এলাচ গুড়া মিশিয়েছিলাম। আধো রাতে এই লা-জাওয়াব স্বাদের এলাচ চা আমার খুব পছন্দের। “You can never get a cup of tea large enough or a book long enough to suit me “-কথাটা কে বলেছেন মনে নেই, কিন্তু আমার জন্য একশ ভাগ সত্যি ।

আজ সারাদিন শুধু সত্তর বছর বয়সী Alzheimer এ আক্রান্ত রোগীটার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভদ্রমহিলা আমার কাছে এসেছিলেন হুইল চেয়ারে করে।মিষ্টি গোলগাল চেহারা। মায়াবী চোখ দুটোতে উদাস চাহনী। দাঁতের কোন কমপ্লেইন তিনি বলতে পারেন নাই। উনার এ্যটেন্ডেন্ট ছিল ছেলের বউ। তিনিই বলতে শুরু করলেন ঠিক এভাবেই…

“ডক্টর, আমার শ্বাশুড়ী ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন প্রায় দশ বছর। অবস্থার অবনতিই কেবল হচ্ছে দিনকে দিন। এখন তেমন কিছুই তিনি মনে রাখতে পারেন না। এমনকি কখনও কখনও আমাদেরকেও চিনতে পারেন না। আজ দুদিন ধরে দেখছি রাতের বেলা মুখের ভেতর একটু পরপর আংগুল দেন। কি হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, কই কিছুই তো হয়নি। কাল রাতে তাই আমি উনার পাশেই বসেছিলাম, শুধু এটুকু বোঝার জন্য যে উনার ঠিক কোথায় সমস্যা হচ্ছে। টু এক্সক্লুড দা ডেন্টাল প্রব্লেম, আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। ”

রোগী দেখতে দেখতে ছেলের বউ এর সাথে অনেক কথাই হল। ত্রিশোর্ধ এই ভদ্রমহিলা মক্কার বাসিন্দা। জেনেটিক্স এ রিসার্চ করছেন। স্বামী ফরেন মিনস্ট্রি তে কর্মকর্তা, অফিসের খাতিরে আমেরিকা গিয়েছেন সফরে। বিয়ের পর থেকে শ্বাশুড়ির দেখাশোনা নিজেই করেন। ডিমেনশিয়ার কারণে দ্রুত সব কিছু ভুলে বসেন বলে একসময় পরিবারের সদস্যদের সাথে মায়ের ঝামেলা হয়ে যেত বেশ। শেষ পর্যন্ত এই ছেলের বউ তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। শ্বাশুড়ীর প্রতি নিজের এই যত্নশীলতাকে তিনি খুব সহজ অথচ ভারী একটা ইবাদত বলেই মনে করেন। খুব সাবলীল ভাবেই বললেন, ” তিনি আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা ইবাদত। হয়ত আমি প্রতিদিন কাবাঘরে যেতে পারিনা, কিন্তু আমি আমার মালিকের একজন অসুস্থ বান্দার সেবা করতে তো পারছি, বিনিময়টা আল্লাহর কাছেই চেয়ে নেব। ”

আমি মুগ্ধ!
এত সুন্দর মানসিকতা শুধু জ্ঞানীদেরই কি হয়?

সোনালী ফয়সালা বইটায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাখুরের খুশবু এতক্ষণে বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছে। বইটা দ্রুত শেষ করতে হবে.. একটানে পড়ে যাওয়ার মতই একটা বই। শেষ না করে আজ ঘুমও আসবে না!

 

“তোমার জন্য মা”- ফাতিমা খান

” আমার বয়স কতই বা হবে তখন, বড়জোর পাচ কি ছয়। আমার মায়ের জন্মদিনে ‘সাম্পাগিতা’ (বেলী ফুল) ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে ছিলাম। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন। আমি নিশ্চুপ হয়ে মায়ের চোখে তাকিয়ে ছিলাম।স্বপ্নহীন, আশাহীন এক শূন্যতা ছিল তার দুই চোখে, এখনো ভুলিনি।”

লোরেন আমার নার্স। একটানা বলেই যাচ্ছে মায়ের কথা। ওর চোখ দুটো ছলছলে। মানুষের চোখে একই সাথে আনন্দ আর কষ্টের অশ্রু বড় মায়াবী দেখায়!

“আমার মায়ের খুব পছন্দের ফুল সাম্পাগিতা, ইংরেজীতে যাকে আমরা বলি জেসমিন। আমাদের বাড়ির ছোট্ট বাগানটায় জেসমিন ফুলের গাছটা মা ই লাগিয়ে ছিলেন। গাছটা বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের স্বপ্ন গুলোও বড় হচ্ছিল প্রতিদিন। বাবা মার বিয়ের সময় আমার মায়ের গহনা বলতে ছিল শুধু এই ফুলের মালা। সাদা গাউন আর সাদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো মাকে ব্রাইডাল ফটো গুলোতে এঞ্জেল এর মত লাগছিল! আমার সেই রুপবতী মায়ের সাথে আজকের মায়ের চেহারার সামান্যই মিল খুঁজে পাই।

সাম্পাগিতা আমাদের ন্যাশনাল ফ্লাওয়ার, ডক। তাগালোগ ভাষায় “সাম্পা- কিতা ” অর্থ হল ”আই প্রমিস ইউ”। আমার মাকে বাবা সাম্পাগিতার মালা পরিয়েছিলেন ঠিক বাট হি ডিড নট কিপ হিস প্রমিস।

বাবার নেশা ছিল মদ আর বার বণিতায়। বাবা নেশায় বুদ হয়ে মাকে গালিগালাজ করতেন, খুব মারতেন। আধা রাতে বাড়ি এসে “লোরেনা……” বলে আমাকে ডাক দিতেন দরজা খুলে দিতে। বাবার স্মৃতি বলতে আমার এটুকুই মনে আছে। মা অনেক কষ্ট পেলেও হাসি হাসি মুখ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। মায়ের এই গুণটা আমি পেয়েছি। আমিও সূক্ষভাবে এই কাজটা করতে পারি। ভেবে দেখেন দিনের একটানা আটঘন্টা আপনি আমার সাথে কাটান। বাট কুড ইউ এভার প্রেডিক্ট মাই মাইন্ড ডক?..আই বেট, নো। হাহাহা। ”

শুনছি আর ভাবছি সত্যিই তো! আমি তো এই লোরেন কে চিনতাম না। আমি যে লোরেন কে চিনি সে এক জন টিপিকাল হাসিখুশী প্রফেশনাল নার্স।

“মা রাত জেগে ব্র‍্যান্ড বেকারীর অর্ডার গুলো রেডি করতেন। আলো না ফোটা ভোরে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতে বানানো কেক আর বান রুটিগুলো নিয়ে যেতাম ব্র‍্যান্ড বেকারি তে। আমার দুই বছরের ছোট ভাইটা আমার সাথে ছুটে চলত তার ছোট ছোট পায়ে। আমার সাথে আসার তাড়াহুড়োতে তার জুতা পরা হত না। মা চলে যেতেন সাহেব দের বাড়ির লণ্ড্রীর কাজ করতে, বড় পাচ ভাইবোন চলে যেত স্কুলে। মায়ের বানিয়ে রেখে যাওয়া গরম গরম বান এক হাতে আর অন্য হাতে ছোট ভাইটার হাত ধরে আমি চলে যেতাম পাহাড়ের কাছে।

ইউ নোউ ডক, আমাদের প্রভিন্সটা নীল আর সবুজে সাজানো একটা হেভেনলি প্লেস। সৃষ্টিকর্তা আমাদের দুটো চমৎকার উপহার দিয়েছিলেন। একতো আমাদের মা আর দ্বিতীয় হল পাহাড় আর সাগর ঘেরা আমাদের এই প্রভিন্স। উইকেন্ডে মা আমাদের নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতেন। মায়ের হাতের লেমন গার্লিক ফিশ গ্রীল…. উফফ! পাহাড়ের পাদদেশে রক্তজবার বাগানের (Gumamela garden) পাশে বসেই আমরা লাঞ্চ শেষ করতাম।
..সেই দিনগুলো আর তো ফিরে আসবে না। কষ্টের সময়গুলো একা একাই পার করেছেন মা,সবটুকু একাই সয়ে নিতেন, শুধু সুখের পুরোটুকু দিতেন আমাদের।

আমি বড় হয়েছি পাহাড়ের গায়ে ছিটকে পড়া সূর্যকিরণ আর সমুদ্রজল লাল করা সুর্যাস্ত দেখে দেখে। সমুদ্র পাড়ের একটা বড়সড় কালো রকে বসে থাকতাম যখন ইচ্ছে। নোনা পানির জোয়ার ভাটা দেখতাম। মুখে ফেনা তোলা ঢেউগুলো দৌড়ে এসে আছড়ে পড়ত পাড়ের বুকে। নীল আকাশে গোল গোল মেঘগুলো দাদুর জটলাপাকানো সাদা চুলের খোপার মত মনে হত।

Have patience, do sacrifice. Bad times will fly like an arrow- মা বলতেন। শুধু যুগের ব্যবধান, আমরা সত্যি সত্যি মায়ের জন্য সাত রত্ন হয়ে গেলাম একদিন। আমার বড় ভাইটা যেদিন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করল সেদিন মা আনন্দে কেঁদেছিলেন। এরপর একে একে আমরা সব ভাইবোন প্রফেশনাল হয়ে গেলাম।

মাকে নিয়ে আমরা ম্যানিলায় চলে আসি। মা আমাদের নতুন বাড়ির নাম দিলেন Heaven of Seven.
ম্যানিলার পশ সোসাইটির মা রাও আমার মাকে আজ ঈর্ষা করে এ‍্যন্ড উই আর প্রাউড অফ হার। “

 

যে সাতটি নিয়ম মেনে বাড়তি মেদকে গুডবাই বলবেন

অতিরিক্ত ওজনের জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই আমরা চাই বা খুঁজি খুব দ্রুত ওজন কমানোর নানান কৌশল। অনেকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।
এটা সঠিক সমাধান নয়। কিছু কৌশল আর ব্যায়াম আছে যা বেশ দ্রুতই ওজন কমিয়ে দিতে সহায়তা করে।
আসুন জেনে নেই কৌশল সমুহ:
img20171107_234749
১.রাতের খাবারের ৪ ঘন্টা পর ঘুম
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে খাবার খাবেন রাতে, এতে খাবারের অতিরিক্ত চর্বি ক্ষতি করবে না। রাতে জেগে থাকলে অল্প অল্প খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন না। এই অভ্যাসটি শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়। ফলে শরীরে মেদ জমে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে খাবার খাবেন।তাহলে ঘুমানোর আগেই হজম হয়ে যায়।
img20171107_235139
২.পাচঁফোড়ন সম্মিলিত মশলা
রান্নায় আমরা নানান রকম মশলা খেয়ে থাকি। তার মধ্যে বেশ কিছু পাঁচ ফোড়ন মশলা ওজন কমাতে সহায়ক। তারমধ্যে গোল মরিচ, আদা, দারচিনি ইত্যাদি মশলা ওজন কমাতে বেশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। ওজন কমাতে ও হার্ট ভালো রাখে।
img20171108_000224
৩.গ্রিন টি
গ্রিন টি ওজন কমাতে উপকারী। প্রতিটি দানায় রয়েছে মানুষের শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক পলিফেনল ও কোরোজেনিক এসিড। তাই দৈনিক ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি পান করতে পারলে বছরে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যেতে পারে। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটিসান দিয়েগোতে একটি সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে যে গ্রিন টি ওজন কমায়।
img20171108_000552
৪.ফজরের পর পরই ঘুম থেকে উঠুন
ওজন কমাতে হলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারলে তা শরীরকে অনেক বেশি কর্মক্ষম করে, শরীরে বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হয় ফলে ওজন কমে। এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে থেকে কিছুক্ষণ হাঁটা যেতে পারে।
img20171108_000741
৫.পানি পান করুন পর্যাপ্ত
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা ওজন কমানো অন্যতম সহায়ক। পানি পানে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সহজে পুষ্টিগ্রহণ করতে পারে। পানি পান করলে শরীর থেকে দূষিত চর্বি জাতীয় পদার্থ বের হয়ে যায়। তাই ওজন কমাতে হলে পানি পানের কোন বিকল্প নেই।
img20171108_001046
৬.সরবত (লেবু-মধু):
ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানির সাথে দুই চা চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। লেবু-মধু পানীয় ওজন কমাতে দারুণ পদ্ধতি।

এছাড়া ওজন কমানোর জন্য কিছু ব্যায়াম বা খেলাধূলা

গ্রীষ্মকালের লম্বা দিন ও আবহাওয়ার উষ্ণতা – ওজন কমাবার যথার্থ সময়।
img20171108_001701
সাঁতার :
সাঁতার হল পুরো শরীরের জন্য একটি সুন্দর ব্যায়াম। নিয়মিত সাঁতার কাটলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আরো কর্মক্ষম হয়।সাঁতারের ফলে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ থেকে ৫৫০ পর্যন্ত ক্যালরি ক্ষয় হয় ।
img20171108_001540
শিখুন সাইকেল চালানো:
সাইকেল চালানোর ফলে পায়ের পেশির সংকোচন প্রসারণ হয় যা খুব ভাল ভূমিকা রাখে ওজন কমাতে। নিয়মিত সাইকেল চালালে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে, ওজন বাড়ানোর প্রবণতাও তেমনও কমে যায়।
img20171108_001627
ভলিবল :
খেলার মধ্যে সব ধরনের খেলা গুরুত্বপূর্ণ তবে
ওজন কমাতে চাইলে ভলিবল খেলতে পারেন। ভলিবল একটি মজার এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ ওজন কমানোর কৌশল। ভলিবল খেলা ক্যালরি ক্ষয়ের সাথে সাথে হাত ও চোখের জন্য উপকারী।

 

টুকিটাকি টিপস রান্নাবান্নার

রান্না-বান্না করতে গিয়ে মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলায় হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক রান্না-বান্নার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস।
img20171107_185756
মুগডালের উজ্জ্বলতা
কাঁচা মুগডাল ভেজে পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন, তাহলে ডালের রঙ আর কালো হবে না। ধুয়ে রান্না করলে ডালটাকে দেখতে উজ্জ্বল দেখাবে।
এছাড়া ডালে বাগার দিবার সময়, রসুন কুচি তেলে ভেজে ডালে দিয়ে দিতে হবে।
img20171107_185550
দ্বিগুণ স্বাদে মাছ রান্না
মাছ রান্না করে হাতের কাছে কাঁচা ধনিয়া পাতা থাকলে তা কুচি করে কেটে বিছিয়ে দিন, স্বাদ দুইশত গুন বেড়ে যাবে।
img20171107_191645
বেরেস্তা স্বাদ
গোস্ত জাতীয় রান্না করে শেষে বেরেস্তা (পেঁয়াজ কুচি ভাজি) দিয়ে দিন। স্বাদ বেড়ে যাবে।
img20171107_185526
সুস্বাদু ডিম
ডিম সিদ্ব করতে পানিতে সামান্য লবন দিন। ডিম খেতে সুস্বাদু হবে। গরমাবস্থায় ডিম ছিলবেন না, ঠান্ডা করে ছিলুন এতে খোসায় লেগে ডিম নষ্ট হবে না।
img20171107_185609
তৈলের ব্যবহার
কিছু ভাজিতে কড়াইতে তেল গরম হলে যা দেবেন তার সাথে সামান্য লবণ দিয়ে দিন, তেলের ছিটকা উঠবে না।
img20171107_185423
রান্নায় সাবধানতা
চুলায় হাড়ি পাতিলে ঢাকনা থাকলে তা খালি হাতে ধরবেন না। গরম থাকলে হাত পুড়ে যেতে পারে। ভর্তা বানাতে মরিচ খালি হাতে ঢলবেন না, হাত জ্বলে আপনি কষ্ট পেতে পারেন। যে কোন মাছ ভাঁজতে কড়াই থেকে একটা নিদিষ্ট দূরে থাকুন। মাছে পানি থাকলে কিংবা ফুটে আপনার গায়ে/চোখে তৈলের চিটকা পড়তে পারে। সাবধানে কাজ করবেন।
img20171107_185123
শুকনো মরিচের ঝাঁজ
শুকনা মরিচ ভাজলে বা পুড়লে বাতাসে একটা ঝাঁজ তৈরী হয় এতে হাচি, কাঁচি এসে নাস্তা নাবুদ হয়ে যেতে পারেন। ভাজার সময় রান্নাঘরের দরজা জানালা ভাল করে খুলে দিন। প্রয়োজনে এডজাষ্টার ফ্যান থাকলে তা চালিয়ে দিন।
img20171107_185008
সুন্দর সবজীর রং
সবজীর রং ঠিক রাখতে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল না দেয়াই ভাল। আর কিছু সব্জী আছে যাদের সামান্য সিদ্ব করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা বরফ কুঁচিতে রাখলে রান্নার পরও রং ঠিক থাকে।

 

সন্তানদের মাঝে পজেটিভ থটস তৈরী করুন (পর্ব-২)- ফাতিমা খান

আমার বাচ্চাদের সাথে ডিলিংস এর ব্যাপারে যেটুকু জ্ঞান জন্মেছে তার থেকে কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্স শেয়ার করছি। হয়ত সময়ে অসময়ে আপনাদেরও কাজে লাগতে পারে।
img20171107_104806
♥ছোট হোক বা বড়, সন্তানের যেকোন সাফল্য বা ভাল কাজের জন্য প্রশংসা করুন। বাচ্চাদের জন্য প্রশংসার চেয়ে বড় টনিক হয়ত দুটো নেই।
img20171107_112231
♥অসফলতা বা কোন বিরূপ পরিস্থিতিতে সন্তান উদ্বিগ্ন হলে তাচ্ছিল্য না করে সাহস দিন। ” আমি জানি তুমি পারবে, না পারলেও চেষ্টা করে দেখো ” জাতীয় উতসাহমূলক কথাগুলো আজ না হলেও পরবর্তীতে তাদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরী করবে।
img20171107_111310
♥তাদের শখের কাজগুলোকে মূল্যায়ন করুন। সম্ভব হলে এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুন। মাঝে মাঝে নিজেদের হাতে গড়া পুরানো শিল্পগুলোর দিকে তাকিয়ে তারা অনেক উদ্দীপিত হবে।
img20171107_112045
♥অবসরে প্রাকৃতিক পরিবেশে একসাথে ঘুরে বেড়ানো বা সময় কাটানো যেতে পারে। এতে করে পারিবারিক বন্ধন শক্ত হওয়ার সাথে সাথে মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটবে।
img20171107_111439
♥ঘরে বসেও অবসরে মজার কোন মুভি দেখা, গান শোনা, ছবি আকা বা গল্প বলার প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে। বাচ্চাদের সৃজনশক্তি বাড়াতে এর জুড়ি নেই।
img20171107_111847
♥পারিবারিক অশান্তি বা মনোমালিন্যের মাঝে বেড়ে ওঠা শিশুগুলো সাধারনত বুজদিল হয়ে থাকে। ইতিবাচক চিন্তা করার মত সাহস তারা হারিয়ে ফেলে।
img20171107_104855
♥সন্তানদের রাগ, দুঃখ বা ক্ষোভকে প্রকাশ করতে দিন। এতে তার মন ভারমুক্ত হবে। বাচ্চা জেদ করে কান্নাকাটি করা কালীন ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া মারাত্নক খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। সারাজীবন তার মনে এর নেগেটিভ প্রভাব রয়ে যায়।
img20171107_111340
♥সারাদিনে কি কি ভাল কাজ করল তার একটা ডায়রী মেইন্টেইন করতে দিন। সপ্তাহ বা মাস শেষে এগুলোর জন্য পুরষ্কার দিন। দেখবেন ওই ভাল কাজগুলো একদিন না একদিন তার অভ্যাসে পরিণত হবে।
img20171107_104634
ছোটবেলা থেকে পজিটিভ থিংকিং বা ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখালে বয়সের সাথে সাথে এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। পজিটিভ এনার্জি সঞ্চিত বাচ্চাগুলো অনেক বিরূপ পরিস্থিতেও সহজে বিচলিত হয়না, বিষন্নতায় ভুগে না। ইতিবাচক চিন্তা তাদের মনোবলকে বলিষ্ঠ করে, জীবনীশক্তিকে বাড়িয়ে দেয় অনেক বেশী। শারিরীক সুস্থতা তো বটেই, মানসিকভাবে সুস্থ সন্তান আমাদের কার না কাম্য!

 

দাম্পত্য (১১) – নুসরাত রহমান

আজকের বিষয়টি একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে। দাম্পত্যের একটি পর্যায়ে আপনার সত্যিই জানা দরকার মেনে নেয়া কাকে বলে।
যদি একই বিষয় নিয়ে অসংখ্যবার ঝগড়া হয়ে যায়, এর পরেও কোন পরিবর্তন না আসে, একটু ভেবে দেখার দরকার আছে, এই অবস্থা মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব কি না। কিছু বাস্তব উদাহরণ দেই –


নাবিলা প্রকৃতি অসম্ভব ভালোবাসে। বৃষ্টি হলে সব এলোমেলো হয়ে যেতে চায় তার। ওর বর ঘরের বাইরে যেতেই চায়না। অফিস এর পর বাকি সময় ল্যাপটপে নাক গুঁজে থাকতেই তার যত আনন্দ। একেকটা দিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ওর খুব ইচ্ছে হয় নুপুর পায়ে রাস্তায় হাঁটতে। কিন্তু কার সাথে? একা? একটুও ভালো লাগে না ওর। পূর্ণিমা কত অজস্র বার সমস্ত পৃথিবীতে স্বপ্নের তুলি বুলিয়ে গেল – কিন্তু পার্থ কোনদিনই তাই নিয়ে উচ্ছ্বসিত হল না।
এ নিয়ে ঝগড়া হয়েছে, কান্নাকাটি, অভিযোগ, বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া – এমনকি কাকুতি মিনতিও করেছে। ভদ্রতা করে পার্থ সময় দেয়, কিন্তু তাকে যে একটুও ছোঁয় না এসব বুঝতে পেরে নাবিলাই হাল ছেড়ে দিয়েছে।


আরিফ চটপটে স্মার্ট একটা ছেলে। সংসার, ক্যারিয়ার সবই সময় মত গুছিয়ে নিয়েছে। এখন থেকে আগামি দশ বছরের প্ল্যান মাথায় আঁকা আছে তার। পঁচিশে নিজের খরচে বিয়ে, ঊনত্রিশে নিজ এপার্টমেন্টে প্রথম সন্তান – এগুলো কোনটিই তার পরিকল্পনার বাইরে ছিল না। শুধু, শুধু … ভাবতে ভাবতে ভুরূ কুঁচকে যায় ওর। শুধু এই মিথিলাকে নিয়েই হয়েছে যত বিপদ। চার বছরেও একটু সংসারি হল না মেয়েটা। মানুষের চিন্তায় ঘুম নেই, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নেই, চাকুরিতে মন নেই – কেবল কীভাবে কার কী হল না হল – কাকে কীভাবে সাহায্য করা যায় – আরে বাবা! নিজের উন্নতি হলেই না দেশের উন্নতি। এত বলে, একটু টাকা পয়সার হিসাব কর, নিজেকে সেটল করার চেষ্টা কর – কীসের কী! মিথিলা ডুবে আছে দশের চিন্তায়।


মুনা ও ইশতিয়াকের বিয়ের বারো বছর হতে চলল। ওদের ঘর টিপটপ সাজানো গোছান। এক কণা ধুলোও পড়তে পারেনা। মুনার মাত্রাতিরিক্ত শুচিবাই এর যন্ত্রণায় ঘরের মানুষগুলি তটস্থ হয়ে থাকে একেবারে। একটু এদিক থেকে ওদিক হলে খণ্ডপ্রলয় হয়ে যায়। ইশতিয়াকের পরিবার কেবল না, মুনার বাবা মাও অনেক চেষ্টা করেছে। একসময় ইশতিয়াক ভেবেছিল সন্তান আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়নি। সন্তানের যত্নআত্তি সব করেও মুনা কী করে যেন ঠিকই সময় বের করে নেয়।


জামান সাহেব পলিটিক্স এর পোকা। রাতভর টিভি তে টক শো, দিনে সবগুলো পেপার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া – লং ডিস্টেন্স কলে লম্বা লম্বা আলাপ জমানো – উনার আর কিছু নেই, পলিটিক্সই ধ্যান জ্ঞান। উনার স্ত্রী চাকুরি, সন্তান বড় করা, ঘরকন্না সব করেও ভদ্রলোকের মনের থই পান না। স্বাভাবিক ভাবেই উনার মনে জমে আছে অসংখ্য অভিযোগ। যাকে পান তার কাছেই বলে মনের বোঝা হালকা করেন। না, জামান সাহেব পরিবার কে অর্থকষ্টে রাখেন নি কোন দিন, কিন্তু অর্থ সরবরাহের বাইরে সত্যিকার অর্থে তেমন কিছু আর করেনও নি।

এই গল্পগুলো একটাও কি আজগুবি মনে হচ্ছে? নিশ্চয় না। অমন জমে থাকা পুরনো ক্ষোভ কোন্‌ দম্পতির না থাকে? স্বামীটা মনের মত হয়নি, বা স্ত্রী তার নিজের জগতে থাকে – এমন অভিযোগ ছাড়া দম্পতি পাওয়াই ভার। অভিযোগের বৈশিষ্ট্যই এই, একের পর এক প্রলেপ পড়তে পড়তে গাঢ় বর্ণের হয়ে যায়। যেহেতু অনেকবার চেষ্টা করেও বদলানো যায়নি – তাই যতবার ব্যর্থ হয়েছে ততবার এক পোঁচ করে তিক্ততার রঙ লেগেছে। এরপর যত সময় যাবে, একেকটা অভিযোগ পুরনো সবগুলো স্মৃতির বোঝা সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। তখন ঐ ছোট্ট ঘটনাটাও ক্রমাগত অভ্যাসের কারণে বড় হয়ে দাঁড়াবে। বলে না – ছোট পাপও বার বার করলে বড় পাপ হয়ে যায় – ছোট দুঃখও বার বার ছাপ ফেলতে ফেলতে গভীর দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এখানেই ছাড় দেয়ার প্রশ্ন আসে। যখন অপরজনের একটা অভ্যাস বা স্বভাব আপনার মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করে, কিন্তু সবরকমের চেষ্টা করেও বদলাতে পারেন নি – আপনার পক্ষে কি সম্ভব তাকে মেনে নেয়া? নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন –
এই অভ্যাস কি তার মজ্জাগত?
আমি কি আমার পক্ষে যত ধরণের চেষ্টা সম্ভব সব ভাবে চেষ্টা করেছি?
ঐ বিরক্তিকর অভ্যাস/স্বভাবটার বাইরে বাকি সময়টা কি আমাদের সুন্দর কাটে?
ঐ স্বভাবের কারণে আমি যা হারাচ্ছি তাকে মেনে নিয়ে কি আমি সুখে থাকতে পারবো?

উপরের উদাহরণগুলোতে দেখুন, মিথিলা স্বভাবগত ভাবেই পরোপকারী। ওর চিন্তাগুলো এমনভাবেই বিকশিত হয়েছে। ওর পক্ষে আরিফের মত করে চিন্তা করা প্রায় অসম্ভব, যেমন অসম্ভব আরিফের পক্ষে নিজের জীবনের প্ল্যানের উপরে অন্যের জন্য উপকার করাকে স্থান দেয়া। মুনার ভয়ানক শুচিতার স্বভাবটা না থাকলে ওদের পরিবারে আরও অনেক বেশি আনন্দ থাকত হয়তো, কিন্তু এতে করে ইশতিয়াককে ঘরকন্না সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা প্রায় করতেই হয়না। উপরন্তু ও একটা টিপটপ সাজানো গোছান সংসার পেয়ে যাচ্ছে কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে চলে!

একইভাবে, বৃষ্টিভেজা পথে নাবিলা পার্থকে না পেলেও বৃষ্টির সৌন্দর্য মিথ্যে হয়ে যায়নি। নূপুরের শব্দের প্রতি কোন মোহ না থাকলেও পার্থ তার নিজের মত করে নাবিলাকে ভালবেসেছে। হ্যাঁ, নাবিলার স্বপ্নের মত হয় নি, কিন্তু বাস্তবটাও সুন্দর, অন্যরকম। ঠিক তেমনি করে, মিসেস জামানের এই মানুষটার প্রতি অনেক ক্ষোভ থাকলেও তিনি বুঝে গেছেন, এর বাইরে আর কিছু হবার নয়। যদি জামান সাহেব অন্য রকম হতেন, উনিও অন্য রকমের এক স্ত্রী হতেন। লতায় পাতায় শান্তি অশান্তি সুখ অসুখের মধ্য দিয়েই কেমন করে যেন জীবনটা কেটে যাচ্ছে। উনার চাওয়ার ১০০ ভাগ উনি কোনদিন পান নি, কিন্তু যে পঞ্চাশ ভাগ পেয়েছেন, তার চারপাশেই বৃত্ত রচনা করে আশার পরিধি ছোট করে এনেছেন। দিন শেষে সুখের পূর্ণতার খোঁজে সবাই যে কেবল দিকভ্রান্ত হয়ে ফেরে, তা বুঝতে উনার ভুল হয়নি।

ছাড় দেয়া ক্ষেত্র বিশেষে মহৎ, আবার ক্ষেত্র বিশেষে অন্যায়ও। ইবাদতে ফরজ আর নফলের মাঝে যেমন পার্থক্য স্পষ্ট, সহনশীলতার বেলায়ও তেমনি বিভাজনরেখাটা স্পষ্ট থাকা উচিৎ। অনেক সময় ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার নারী/পুরুষটিকে উপদেশ দেয়া হয় সংসারের স্বার্থে মেনে নিতে। বা স্ত্রীর বা স্বামীর অবশ্যকর্তব্যগুলি পালন করেন না এমন মানুষের বেলায় বলা হয় “তারপরেও তো তোমার সাথে একজন আছে। না থাকলে কী করবা?” উল্লেখ্য, ছাড় দেয়ার বোধ নিজের ভেতর থেকেই আসতে হবে, অন্যে যেন জোর করে রাজি না করায়। আর অন্যায়ের প্রশ্রয় দিয়ে নিজের ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করাকে ছাড় দেয়া বলে না, অন্যায় বলে। আমরা যখন বুঝব অদূর ও সুদূর ভবিষ্যতের কল্যাণের জন্য দাম্পত্যে কোন বিষয়গুলি অপরিহার্য, তখন ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটাও সহজ হয়ে আসবে।

 

বই বৃক্ষের চারা- আফরোজা হাসান

জ্ঞানার্জনের পথে চলতে গিয়েই আমার সাক্ষাৎ ঘটে বইয়ের সাথে। তারপর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম বই পড়ার আনন্দ। একটা সময় সেই আনন্দকে উপভোগ করতে শুরু করলাম। মনেহল বই পড়ার আনন্দ যারা উপভোগ করতে জানে না, তারা এক অর্থে সব আনন্দ থেকেই বঞ্চিত। মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার জন্য বইয়ের মতো উৎকৃষ্ট জিনিস আর কিছুই নেই। কারণ বই সেই মানুষ তৈরি করে যারা ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নিগৃহীত হতে পছন্দ করে না। তাই আমরা যদি স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চাই, তাহলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই।
img20171104_224846
মনের নরম মাটিতে ছোট্ট একটা বইবৃক্ষের চারা রোপণ করেছিলাম, আজ চেয়ে দেখি মহীরুহতে রূপান্তরিত হয়েছে আমার মনের সেই বইবৃক্ষ…………
img20171104_224411
বৃক্ষে ধরেছে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনী নানা ধরণের বই………..
মাতাল হাওয়ায় পরশে মাঝে মাঝেই ঝরে পড়ে যার কিছু পাতা……….
তারপরও তাদের স্পর্শে চিরসবুজ-চিরসজীব থাকে মনের বনভূমি…..
জেগেছে যে নেশা প্রাণে মৃত্যু অবধি ছেড়ে যেন না যায় কভু মোরে………
img20171104_224637
বই সম্পর্কিত আমার প্রিয় কিছু বাণী-

গ্যেটে বলেছেন- কতকগুলো বই সৃষ্টি হয় আমাদের শিক্ষা দেবার জন্য নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হলো আমাদের এই কথা জানানো যে, বইগুলোর স্রষ্টারা কিছু জানতেন।

@ ভিক্টর হুগো বলেছেন- বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব, বই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষা কবজ।

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন- পৃথিবী আর সভ্যজাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো ঘোঁত ঘোঁত করি, আর চোখ বাড়াবার কথা তুলতেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত, বই পড়া এবং তারজন্য দরকার বই পড়ার প্রবৃত্তি।

ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন- আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি।

প্রতিভা বসু বলেছেন- বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না, কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।

-ওমর খৈয়াম বলেছেন- সুর্যের আলোতে যেরূপ পৃথিবীর সবকিছু ভাস্কর হয়ে ওঠে তেমনি জ্ঞানের আলোতে জীবনের সকল অন্ধকার দিক আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

-কবি জসিমুদ্দিন বলেছেন- বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। সৃষ্টির আদিকাল হইতে মানুষ আসিয়াছেন আর চলিয়া গিয়াছেন। খ্যাতি-মান-অর্থ-শক্তি কিছুই কেহ রাখিয়া যাইতে পারে নাই। কিন্তু বইয়ের পাতা ভরিয়া তাহারা তাহাদের তপস্যা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাহাদের নৈরাজ্য, কি হইতে চাহিয়া কি তাহারা হইতে পারেন নাই সবকিছু তাহারা লিখিয়া গিয়াছেন। বই আপনাকে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সকল কালে নিয়া যাইতে পারে। যে দেশে আপনার কোনদিন যাওয়ার সম্ভাবনা নাই, বইয়ের রথে চেপে আপনি অনায়াসে সেই দেশে যাইতে পারিবেন।”
img20171104_223247
আমারো ম্যাক্সিম গোর্কী’র মত বলতে ইচ্ছে করে-আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী।
আলহামদুলিল্লাহ!

 

সন্তানের মাঝে পজেটিভ থটস তৈরী করুন (১ম পর্ব) -ফাতিমা খান

মার ছেলে দুজন গল্প শুনতে খুব ভালবাসে। গল্প বলার কথা বললে যেকোন কাজ ছেড়ে আমার পাশে এসে বসে যায়। বড়জন শোয়া অবস্থায় থাকলে বসে পড়ে। গল্প শোনার সময় তার চোখের পলক পড়ে না, মাথাটা কাঁধের আরো কাছে নামিয়ে গাল-গলা ফুলিয়ে গল্প শোনে। তখন দেখতে শান্তশিষ্ট গাদুম গুদুম বিড়ালের মত দেখা যায়। ছোটজন সোজা কোলের মধ্যেই এসে বসে পড়ে, একদম মাথাটা আমার থুঁতনির সাথে লাগিয়েই বসে, যেন এখানে এ্যন্টিনা জাতীয় কোন সরাসরি সংযোগের ব্যবস্থা আছে। ওদের এই আগ্রহ দেখে আমারও ভাল লাগে কিন্তু সমস্যা হল এভাবে ওদের নিয়ে গল্প বলার সময় পাই খুব কম।
img20171103_231344
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, বাচ্চারা ইতিবাচক গল্প পছন্দ করে। যদি কোন গল্পের সমাপ্তি নেতিবাচক হয়, যেমন- শেয়াল কুমিরের বাচ্চাগুলোকে খেয়ে ফেলল, বা বাচ্চা ডাইনোসর টা পানিতে লাফ দিয়ে পড়ে গেল, তাহলে আমার দুজনই মন খারাপ করে। বড়জন বলেই ফেলে “গল্পটা এভাবে শেষ হয়েছে তো কি হয়েছে, আপনি বাকিটা বানিয়ে বলেন”। এই ”বাকিটা বানিয়ে বলেন” এর অর্থ হল “একটা শুভ সমাপ্তি” তারা শুনতে চায়। আমি বানিয়ে টানিয়ে গল্পের একটা খুশী খুশী সমাপ্তি টেনে দেই ( অভ্যাসবশত এই কাজটা মনে হয় আমি ভালই পারি)। ছোটজন গল্প শুরু করার আগেই বলে রাখবে ” আম্মু গল্পটা কিন্তু মজার হতে হবে, আমি স্যাড গল্প পছন্দ করিনা।” তো আমিও ওদের জন্য মজার মজার গল্প জোগাড় করি, না পেলে বানিয়ে বানিয়ে বলি। ওরা তন্ময় হয়ে শোনে।
img20171103_231213
ইদানিং ছোটু আমার অজান্তেই আমার ফোনে “স্টোরিয অফ প্রফেটস” নামের একটা এ্যপ ডাউনলোড করেছে। সেদিন দেখি বসে বসে নবীদের গল্প রিডিং করছে। খুব ভাল কথা, কিন্তু সমস্যা হল গল্পগুলো ঠিক শিশুতোষ ছিল না। হয়ত দশ বারো বছর বয়সের বাচ্চাদের জন্য ওটা একদম পারফেক্ট এ্যপ কিন্তু ওর বয়সোপযোগি মোটেও না। তাই নবীদের এই গল্পগুলো পড়ার পর তার মনে অনেক প্রশ্ন। যেমন- “আম্মু, আদম (আ) কেন ফরবিডেন ট্রি থেকে ফ্রুট খেয়েছিল? উনি কেন আল্লাহর কথা না শুনে ডেভিল এর কথা শুনেছিল?” কিংবা, “নুহ (আ) কেন ছেলে কেনানকে রেখে বিগ উডেন বোট এ করে চলে গিয়েছিল?” এরকম হরেক প্রশ্ন। তার উত্তরগুলো দিতে আমাকে ভাবতে হয়েছিল। উত্তরগুলো এমনভাবে সাজাতে হয়েছে যেন তার মনে ধর্মের প্রতি অভক্তি না আসে আবার উত্তরগুলো সঠিক ও তার কাছে গ্রহনীয় হয়। ধর্ম শিক্ষার ব্যাপারেও সাধারনত আট নয় বছর বয়সের আগে পাপের শাস্তি কিংবা বিয়োগাত্নক ব্যাপারগুলো না বলাটাই ভাল। তাতে ওদের কোমল মনে ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
img20171103_231059
দেশে গিয়ে দেখলাম,ছোট ছোট বাচ্চা গুলো একাকি বা আর সদস্যদের সাথে বসে স্যাটেলাইটের চ্যানেল গুলোতে দেশী বিদেশী ড্রামা সিরিয়ালগুলো নেশার মত দেখছে। নাটকের ক্লাইমেক্স এ তাদের উত্তেজনা থাকে টানটান, plচোখ মুখের ইম্প্রেশনে এটা স্পষ্ট যে তারা মন মস্তিষ্কের সবটুকু দিয়েই ব্যাপারগুলো গ্রহণ করছে। সময়ে অসময়ে ঠিক নাটকের মত সাজ, কথা বা কাজ করতে তারা একটুও পিছপা হয় না।
ছোটকালের শোনা গল্প, দেখা নাটক, ছবি বা পারিপার্শ্বিকতা থেকে পাওয়া শিক্ষা কিংবা ওদের সাথে ঘটে যাওয়া উভয় ইতিবাচক বা নেতিবাচক আচরণগুলো ওদের জন্য শিক্ষার অনেক বড় অংশ হয়ে যায়, বড় হওয়ার পরও এর বিপরীতে কোন কথা বা উপদেশ সহজে গ্রহন করতে চায় না, হোক ভাল বা মন্দ। আজকের পৃথিবীর বেশীরভাগ কিশোর কিশোরী বা যুবক যুবতিদের প্রধান সমস্যা ডিপ্রেশন,যার অংকুর তৈরী হয়ে যায় শিশুকালে।
img20171103_231301
ছেলেদের মাঝে পজিটিভ থটস বা ইতিবাচক চিন্তা আর আদর্শিক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য আমি সময় পেলেই চাইল্ড সাইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ি। কখনো একই বিষয় বারবার পড়ি। এই ব্যাপারে আমার একটা ফ্যান্সি আছে। “বড় হয়ে কি হবে?” জাতীয় একটা কমন প্রশ্ন যদি আমার বাচ্চাদের করা হয়, তাহলে আমি চাই ওরা বলুক “একজন ভাল ও সুখী মানুষ হতে চাই”।

 

ওজন কমাতে জেনে নিন কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে

পৃথিবীতে সবচেয়ে মোটা মানুষ কে?
মিসরীয় এক নারী, পৃথিবীর সবচেয়ে মোটা মানুষ সম্ভবত, যার ওজন ৫০০ কেজি।আবদেল আতির নামে সেই নারীর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গত ২৫ বছর ধরে তাদের মেয়ে ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। বর্তমানে তার ওজন ৫০০ কেজি।

মানুষ কেন মোটা হয়?
প্রতি ৩৫০০ ক্যালরি খাবার খেলে শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত, তাদের অন্তত আধা কেজি চর্বি শরীরে জমা হবে।
img20171102_142037
মানুষের দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন?
একজন মানুষের দেহে দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন তা একেক জনের জন্য একেক রকম হলেও একজন সুস্থ-সবল পরিপূর্ণ বয়স্ক মানুষের দিনে প্রায় ১৮০০ ক্যালরি পরিমান খাদ্য দরকার হয়। অন্য আরেক জরিপে দেখা যায়, একজন সুস্থ ও কর্মক্ষম ১১০ পাউন্ড ওজনের ছেলের (২৫ বছর) দৈনিক প্রয়োজন ২৫০০ ক্যালোরির খাবার। একই ওজনের একজন প্রৌঢ়ের প্রয়োজন ২৩৫০ ক্যালোরির খাবার এবং একজন বৃদ্ধের প্রয়োজন ১৯৫০
ক্যালোরির খাবার। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১০ পাউন্ড ওজনের একজন যুবতীর (২৫ বছর) দৈনিক প্রয়োজন ২০৫০ ক্যালোরির খাবার।
img20171102_143121
কোন খাবারে কি পরিমাণ ক্যালরি?
ক্যালরিযুক্ত খাবার ও ক্যালরির পরিমাণঃ
কোন খাবারে কত ক্যালরি

সিদ্ধ ডিম (১টি) : ৮০
ভাজা কিংবা ওমলেট ডিম (১টি) : ১২০
মাখন লাগানো পাউরুটি (১ পিস) : ৯০
আটার রুটি (১টি) : ৬০
পুরি (১টি) : ৭৫
১টা পরোটা + ১ বাটি সবজি : ৩০০
১টা সিঙ্গারা :১০০
১ কাপ ভাত : ১৫০
১টা নান + ১ বাটি ডাল : ৩০০
রান্না মাংস (১ কাপ) : ১৭৫
রান্না সবজি (১ কাপ) : ১৫০
১ কাপ সালাদ : ১০০
১ বাটি ক্লিয়ার স্যুপ : ৭৫
১ বাটি থিক স্যুপ : ১৫০
চিনি ছাড়া রং চা / ব্ল্যাক কফি : ১০
দুধ চা / কফি : ৪৫
দুধ (১ কাপ) : ৭৫
ফলের রস : গড় ১২০
মাখন (১ চা চামচ) : ৫০
ঘি (১ চা চামচ) : ৫০
চিনি (১ চা চামচ) : ৩০
বিস্কুট (১ পিস) : ৩০
বাদাম ভাজা (১ কাপ) : ৩০০
আইসক্রিম (১ স্কুপ) : ২০০
কাবাব (১ প্লেট) : ১৫০
১ বোতল কোমল পানীয় : ২০০

সুতরাং আজকে থেকেই আপনার খাবারের প্রপার ক্যালরি মেন্যু তৈরি করুন।

 

সম্পর্কের অ্যালফাবেট -২

আধুনিক যুগে ‘দীর্ঘমেয়াদি বিবাহিত জীবন’ যেন কল্পনা হয়ে গেছে। প্রথম ধাক্কাতেই সব বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তবে অধিকাংশরাই দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ দিতে প্রস্তুত থাকেন।অন্যান্য সম্পর্কের মতোই বিবাহিত সম্পর্ক টেকাতেও সহায়তার প্রয়োজন হয়।
আজকের পর্বে E থেকে O পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সম্পর্কের টিপস,

Equal(ন্যায়সঙ্গত বা সমতা): সমতা মানে সমান। প্রতিটি মানুষ নাকি আলাদা, কথাটি কিন্তু একদম সত্য। তেমনি সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে। সেক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সীমা হিনগোরানি মনে করেন, দুজন দুজনের হয়ে গেছেন এটায় সমতা। প্রত্যেকেরই সমান গুরুত্ব রয়েছে সুন্দর বন্ধনেরর জন্য। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে নিজস্ব ইচ্ছা ও চাহিদা ব্যক্ত করে একটা বন্ধনকে করে তুলতে পারে সুন্দর ।
Flexible(কোমল বা নম্রতা): কোমল আচরণ সবাই পছন্দ করে। এর ঠিক বিপরীতে একগুয়েমীতা আর জেদ। আর এ কারণে দাম্ভিকতা সম্পর্কে যখন পরস্পর পরস্পরের প্রতি নম্রতা দেয়ায় তখনই বন্ধনে মজবুতি বাড়ে। ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে সব সম্পর্ককে সুন্দর পরিনতি দিকে নিয়ে যেতে হয়।
Generous(উদার): উদারতা হল দাম্পত্য জীবনের মুল কথা। ভোর বেলা উঠে বউ ঘুম নষ্ট করে অনেক কাজ করে। এটা বিস্তৃত একটি উদারতা। কেউ কেউ মনে করেন শুধুমাত্র উপহার দিতে পারাটা উদারতা। কেউ মনে করে ঘুরতে যাওয়া আর রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোটা উদারতা। আবার অনেক অর্থে কার মূল্যবান সময়, শক্তি, এবং প্রচেষ্টা দিয়ে সম্পর্কটিকে জাগিয়ে তোলা হল সবচেয়ে বড় উদারতা!
Honest(সততা বা সচ্চরিত্র): বিয়ে বেশ কিছু দিন পর নাকি রোমান্স মরে যায়। এর কারণে হিসেবে কেউ কেউ সততা দ্বায় দেয়।প্রয়োজনের সময় যে কোন বিষয়ে যতটা সম্ভব মন খুলে, কোনরকম রাখডাক না রেখে, সচেতনভাবে নিজের চিন্তা ও অনুভুতি প্রকাশ করতে পারলে রোমান্স টিকে থাকবে, টিকে থাকবে সততা।
Interested(কৌতূহলী): নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উর্ধে উঠে পাশের মানুষটির পছন্দের কাজটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ। কিছু অন্তরঙ্গ সময় কাটান। একজন আরেকজনের প্রতি মনোযোগ। এটা সম্পর্কে নতুন মাত্রা দিবে।দুজন মিলে কিছু চমৎকার সময় অতিবাহিত করুন।
Just(ন্যায়পরায়নতা বা সমদর্শী): কাছের মানুষটির খারাপ এবং ভালো সবকিছু মেনে নিয়েই ত জীবন। এমন সময় কাটান যেনো একজন অপরজনের কাছে স্পেশাল হয়ে ওঠেন সব ভালো বা খারাপ চিন্তার বাইরে। পুরো মানুষটি যেমন,তেমন ভাবেই তাকে সম্মান করে তার প্রতি সুবিচার করুন।
Kind(অমায়িক দয়া বা যত্নশীল): এটা আসল বলার চেয়ে করা অনেক কঠিন। দয়া বিষয়টা আসলে অনেকটা নিজের কথা বলে ত অন্যের দিকে তাকানো হয় না, সাধারণ মানুষের সাথে অনুশীলন করা দরকার পরে। সবারই উচিত অন্যের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা এবং কষ্ট টা ঠিক বোঝা, বিশেষ করে সেই সময়গুলতে যখন আপনি জানেন না বা বুঝতেই পারেন না, যে সে ঠিক কিসের সম্মুখীন হয়েছে, আর তার মোকাবেলা করাটা তার জন্য কত কঠিন। এ সময় বুঝতে পারলে দুজনের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
Loving(স্নেহশীল বা ভালবাসা): অযথা বিতর্ক টেনে নিয়ে যাবেন না। ছাড় দেন ভালবাসার মানুষটাকে। ভালোবাসা আসলে কি তা বুঝতে দিন? ভালোবাসা হল কাপেলদের উত্তর মতে, ঘনিষ্ট হওয়া, যত্নশীল আর পরস্পরের প্রতি জড়িয়ে থাকা মায়া।
Mature(পূর্ণবিকশিত বা পরিপক্কতা): দুজনের বা সংসারে,পরিপক্বতার স্বচ্ছতা অতি জরুরি বিষয়। সম্পর্কের পরিপক্কতা, যা সামনের দিনগুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখাবে। সুবিস্তৃত রাস্তা বা পথ, আমি জানি না ঠিক সামনে কি আছে? তবুও সেই পথকে মেনে নিয়েছি একসাথে হাটার জন্য। দাম্পত্য জীবনে পরস্পরকে বুঝা, দেখাশুনা, একসাথে কাজ করার সময় একজন অপর জনের দৃষ্টিকোণ বুঝতে চেষ্টা করা (বিশেষ করে যখন পরস্পরের দৃষ্টিকোণ সম্পূর্ণ ভিন্ন)।
Nurturing(সুশাসিত বা লালন): অনেকেই মনে করেন, একজনই যত্ম নেওয়া হলে তা দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এটা বড় ধরনের ভুল ধারণা। পরস্পরের প্রতি উৎসাহ প্রদানকারী, যত্নবান, এবং সহযোগী বিষয়টি হল ঠিক এমনই। এক সাথে চলার পথে জীবন পরিচালনের জন্য সহযোগী বা সার্পোটার দুজন ব্যক্তি। প্রতিটি যৌক্তিক কাজে উৎসাহ প্রদান করে যত্নশীলভাবে একজন সঙ্গী অপরজনকে।
Open(মুক্ত বা অবারিত): জীবনের বিভিন্ন সময় নিজেদেরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে মুক্ত মনে। এসব ক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে মধ্যমপন্থ অবলম্বন করতে হবে। সহজ উপায়ে অনুভূতি প্রকাশ, অনায়াসে বুঝা যায় এমন কথা বলতে হবে। হাসি কান্নার রহস্য নাই। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, সততা অনুরূপ কিছু এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারে উন্মুক্ত সচেতনতা বুঝিয়েছেন। নিজেদের সম্পর্কে নতুন ধারণা এবং দৃষ্টিকোণ খুঁজে তা সন্মান করার পক্ষে সবাই একমত।
সমস্যা থাকলে কথা বলার মাধ্যমে সমাধান করা খুব দরকার। পরস্পরের কথা ও কাজ মনোযোগ সহকারে শুনা এবং দেখা, তা উপলব্ধি করার পর এ ব্যাপারে একমত পোষণ করার মনোভাব গড়ে তুলুন।

 

ঘরের সৌন্দর্য্য রক্ষায় কি করবেন

ঘর পরিষ্কার করা কঠিন কাজ। পরিষ্কার ও পরিপাটি ঘরে থাকতে ভালো লাগে। পরিষ্কার করার কাজটি সময়সাপেক্ষ হলেও প্রশান্তিকর। সহজ কিছু কৌশল জানা থাকলে এই কাজটি খুব সহজে ও কম সময়ে করা যায়।
সামনে তুলে ধরছি কয়েকটি মজার উপায় যা আপনার ঘরকে পরিষ্কার ঝকঝকে করে তুলতে সহায়তা করবে।
img20171102_122504
ভিনেগার & অলিভ অয়েল(পুরনো টেবিল)
আধা কাপ ভিনেগার এবং আধা কাপ অলিভ অয়েল (জলপাই তেল) মিস্ক করে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পুরোনো টেবিলটিকে ভাল করে ঘষুন। দাগ উঠে যাবে এবং টেবিল অনেক মসৃণ হবে।
img20171101_221515
ওয়াশিং পাউডার, হুইটেনার & বোরাক্স পাউডার(কাপড়)
এক কাপ ওয়াশিং পাউডার, এক কাপ কাপড় সাদা করার পাউডার (হুইটেনার) এবং আধা কাপ বোরাক্স পাউডার এর সাথে গরম পানি মিক্স করে বালিশ আর বিছানার চাদর ধবধবে পরিষ্কার করে তুলুন।
img20171102_070548
অয়েল & বেকিং পাউডার(কাঠের আসবাবপত্র)
এক চামচ ভেজিটেবল অয়েল এবং ২ চামচ বেকিং পাউডার মিস্ক করে ব্রাশ অথবা কাপড় দিয়ে ভাল করে দরজার হাতল ঘষুন দাগ পরিষ্কার হবে।
img20171101_221100
ভিনেগার(পানির কল)
পানির কলের মুখ পরিষ্কার এর জন্য কলটি ভিনেগার এর মধ্যে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করুন। যদি ময়লা অনেক ভিতরে থাকে, তাহলে একটি ব্যাগ দিয়ে মোড়িয়ে আরও ১ ঘণ্টা ভিনেগার এর মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরিষ্কার করুন।
img20171101_221415
লবন(লোহার জিনিস)
কাগজের মধ্যে কিছুটা লবন ছিটিয়ে আয়রন মেশিনটি রাখুন। এবার মেশিনটি চালু করে সর্বোচ্চ হিট সেট করুন এবং লবণের মধ্যে ঘষুন। ঘষার সময় পানি স্প্রে (যদি থাকে) বন্ধ রাখতে ভুলবেন না। দেখবেন খুব সহজেই ময়লা উঠে আসবে। ঢালাই লোহার কড়াই এবং অন্যান্য লোহার জিনিসপাতি এভাবে পরিষ্কার করা যায়।
img20171101_221300
উলের তুলো সাথে পাউডার (হুইটেনার) & টুথব্রাশ(গোসলখানা)
গোসলখানায় প্রথমে কিছু উলের তুলো নিয়ে ঠিক ১ সেন্টিমিটার আকারের ছোট ছোট বল বানান। পাউডার (হুইটেনার) এর মধ্যে চুবিয়ে নিয়ে দাগ ওয়ালা জায়গা গুলোর উপর সারা রাত ফেলে রাখুন। সকাল বেলা টুথব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন।
img20171101_221149
এমোনিয়া ক্লিনার(রান্না ঘরের চুলা)
রান্না ঘরের চুলোর লোহার অংশ থেকে তেল পরিষ্কার করার জন্য এমোনিয়া ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। একটি প্লাস্টিক ব্যাগ এর মধ্যে চুলোর অংশটি নিয়ে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ এমোনিয়া ক্লিনার ছিটিয়ে ১২ ঘন্টার জন্য ফেলে রাখুন। এরপর পরিষ্কার করুন।
img20171101_221338
স্পিরিট(সোফা পরিষ্কার)
সোফা থেকে ময়লা দাগ দূর করতে একটি পরিষ্কার সাদা ব্রাশ নিয়ে অল্প পরিমান স্পিরিট মিশিয়ে পরিষ্কার করুন। অস্বস্তিকর গন্ধ দূর করার জন্য কিছুটা বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন।

 

রান্নার টুকিটাকি টিপস

আপনাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা আপনাদের রান্নাকে মজাদার করে তুলবে।
img20171101_014904
ডাল(Pulses): ডালের মজা জ্বালে! অর্থাৎ যত বেশি সময় জ্বালানো হবে স্বাদ বেড়ে যাবে ততই।
যে তরকারীতে লবন বেশি হবে।
img20171101_014753
লবণের স্বাদ(Taste of salt): পরিমিত লবণ তরকারীর আরো স্বাদ বাড়িয়ে দেয়, তাই কিছু উপকরন দিয়ে দেয়া যেতে পারে। যেমন, আলু, টমেটো, শাক ইত্যাদি। আর অন্যক্ষেত্রে (তরকারী বা তরকারী না হলে) যদি ঘরে কয়লা থাকে তবে তার ছোট এক টুকরা পাতিলে দিয়ে দিলে লবন শুষে নিয়ে নিবে।
img20171101_014644
হলুদ বিড়ম্বনা(Yellow spit): হলুদ বেশী হয়ে যায় তবে ছোট একটা কাপড়ের টুকরা চুবিয়ে দিলে কাপড় কিছু হলুদ টেনে নিয়ে নিবে।
img20171101_014538
চিনির যত্ন (Sugar care): চিনিতে পিঁপড়া ধরলে চিনির পাত্রে কয়েকটি লবঙ্গ রাখুন চিনির পিঁপড়া ছেড়ে যাবে।
img20171101_014445
ডিম ভাঁজি(Fold the eggs): ডিম ভাঁজির সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন , ড়িমের খোসার টুকরা যেন না পড়ে … আর ড়িম অবশ্যই কালো কড়াইয়ে ভাজবেন , তাহলে ভাজাটা ভাল হবে । এছাড়া যখন ডিম সেদ্ধ করা হয়, সে সময় পানিতে আধা চা চামচ লবণ দিন। তাতে ডিম তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হবে এবং ডিম ফাটবে না।
img20171101_014721
লবণ বিড়ম্বনা(Salt fermentation): যে তরকারীতে বা অন্য কিছুতে লবন বেশি হবে তাতে আটা বা ময়দার একটা গোল্লা (রুটি বানাতে যে কাই করা হয়) বানিয়ে এক পাশে রেখে দিতে হবে। উক্ত আটা বা ময়দার গোলা বেশ কিছু লবন শুষে নেবে। তবে তিনি আরো জানালেন যে, আলু বা টমেটো দিয়ে ঝোল বাড়িয়ে নিলেও লবন কমে যায়। এছাড়া যে তরকারীতে লবন বেশি হবে তাতে কিছু আলু কিংবা কুমড়ার শাক দিলে লবন কমে যাবে। তবে তিনি ছোট বেলায় উনার মায়ের কাছ থেকে দেখেছেন, তরকারীতে লবন বেশি হলে কয়লার টুকরা দেয়া হত।
img20171101_014351
কর্ণ ফ্লাওয়ার(Corn Flowers): তরকারির ঝোল ঘন করতে চাইলে কিছু কর্ণ ফ্লাওয়ার পানিতে গুলিয়ে নিয়ে ঢেলে দিন। লক্ষ্য রাখবেন কর্ণ ফ্লাওয়ারের দ্রবণটি যেন ভালমত তরকারির সাথে মিশে যায়।

 

আজ চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা -২০১৭ এর প্রিলিমিনারির ফলাফল দিয়েছে

চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা – ২০১৭ এর নির্বাচিতদের ফলাফল এর রেজাল্ট বিজ্ঞপ্তি

আজ মঙ্গলবার ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি রেজাল্ট প্রকাশ করবেন। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতা থাকা সত্ত্বেও ১৪ তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা স্কুল, স্কুল -২ এবং কলেজ পর্যায়ের প্রিলিমিনারী শেষ হয়েছে গত মাসের আগস্ট মাসের ২৫ তারিখে, লিখিতপরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ডিসেম্বরের ১ তারিখ।
১৪ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পাসের হার গতবারের তুলনায় অনেক কম মাত্র ৩৮%.

সূত্র জানায়, ফলাফল জানতে ভিজিট করুন- http://ntrca.teletalk.com.bd/result/ঠিকানায়।

নিউজ:https://www.facebook.com/Oporajitabd/

 

৯৮ বছর বয়সী মা দেখাশোনা করছেন ৮০ বছর বয়সী ছেলেকে

সময়ের প্রয়োজনে, ভালোবাসার ফেরিওয়ালা ৯৮ বছরের মার দায়িত্ব এসেছেন তার ৮০ বছরের ছেলে টম। এমন একটি চমৎকার ঘটনা ঘটেছে লিভারপুলের মোস ভিউ কেয়ার হোমে।
ছেলের প্রতি ভালবাসা নাকি মায়ের প্রতি তীব্র হৃদয়ের টান। কতখানি ভালোবাসা লুকায়িত? নিজের জীবনের থেকেও বেশি। বয়স যেখানে মুখ্য বিষয় না।
৮০ বছর বয়সী ছেলেটির এখন দেখাশোনা করার জন্য ৯৮ বছর বয়সী মা।
এই সর্বোচ্চ সন্মানিত মা অ্যাড কেটিং। অ্যাড কেটিং এবং তার ছেলে টম লিভারপুলের মোস ভিউ কেয়ার হোমে থাকেন।
৯৮ বছর বয়েসী মা কাছে চলে আসেন ৮০ বছর বয়েসী ছেলে তার আরও ভাল দেখাশোনা করার জন্য একটি কেয়ার হোমে।
টম ২০১৬ সালে লিভারপুলের মোস ভিউ কেয়ার হোমে আসেন কারণ তিনি আরও শারীরিক এবং মানসিক যত্ন এবং সমর্থন প্রয়োজন অনুভব করেন এবং এক বছর পর তার মা তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের দেখাশোনা করার দায়িত্ব পালন করছেন।
“আমি প্রতিটি রাতে আমার সন্তান টমকে শুভকামনা ব্যক্ত করি এবং আমি শুভ কামনা প্রকাশ করি সকালকেই।” কিটিং এ কথা বলেন।
টম বলেন, “যখন আমি আবার আমার মামের বাহু দ্বারে ফিরে আসি তার বাহু প্রসারিত হয় এবং আমাকে ভালবাসার টানে আলিঙ্গন করেন কাছে রেখে দেন যত্নে। You never stop being a mum”। তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে মা ছেলে ভাল আছি। এবং আনন্দে দিন কাটছে আমাদের।
কেয়ার হোমের ম্যানেজার ফিলিপ ড্যানিয়েলস বলেন যে, অবিচ্ছেদ্য জোড়া। তিনি বলেন, “একদম বাড়ির মত এরূপ যত্ন মায়ের তার সন্তানের প্রতি, একসঙ্গে দেখতে খুব কমই দেখা যায়।”

সুত্র: The Independent.

 

বিবেকের পাল্লা

কোরবানির গোস্ত মাপা দেখছি
আর ভাবছি ভিন্ন প্রেক্ষাপট,
এক পাল্লায় মানবতা আর
অন্য পাল্লায় জাতীয় স্থায়ী সংকট
রোহিঙ্গাদের বাংলার মাটিতে
দিতে চাই স্থান।
মানবতা যখন ডুকরে কাঁদে
বধির বিশ্ব বিবেকের কান।

ঠিক তার বিপরীতে শংকিত জাতি
ঠাঁই দিলে এরাই হবে জাতির ক্যান্সার
বাংলার ভূমি দখল করে-
বানাবে হয়ত মাদকের ভান্ডার।

এক পাল্লায় মানবতা বিবেক
অন্য পাল্লায় সংশয়
দোদুল্যমান পাল্লাটা যে
স্থির করা দ্বায়।
কোরবানি দিব কাকে?
জাতীয় বিবেক?
নাকি জাতির ভবিষ্যত?
পারছিনা আর মেনে নিতে
দোদুল্যমান প্রেক্ষাপট।

বিবেক যদি দেই কোরবানি
জীবনটাই তো বৃথা
সব ভাবনা বাদ দিয়ে
এসোনা দেখাই মানবতা।

লিখেছেনঃ শরীফা সীমা

 

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা – “রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ এখন সময়ের দাবী “

মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি,অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট। এই সংকট মোকাবিলায় আর্ন্তজাতিক ভাবে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের কুটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করা দরকার। সেই সাথে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা যাতে এদেশে কোন ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে না পরেন, সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

গত ২৮ অক্টোবর সকাল এগারটায় বাংলাদেশ সেন্টার ফর উইমেন সলিডারিটির উদ্যোগে, ঢাকায় অবস্থিত , মহিলা সমিতির আইভি রহমান হলে, “নির্মম গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের প্রতি করনীয় এবং পবিত্র হজ্বব্রত পালনের স্মৃতি অভিজ্ঞতা” শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত , মুক্ত আলোচনা সভায়, অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হেল্প এজ ইন্টারন্যাশনাল এর বোর্ড মেম্বার(জাতিসংঘের সাবেক সিডো সদস্য ও বিটিভির সাবেক ডিজি) ফেরদৌস আরা বেগম, বার্ড-এর সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর নুরুন্নাহার কবীর, বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক রোজী ফেরদৌস , বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দৈনিক দিনকালের সাবেক কুটনৈতিক প্রতিবেদক মাহমুদা চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মরিয়ম মানসুর,সমাজসেবা মূলক কাজের সাথে যুক্ত লুৎফুন্নেসা ও বিভিন্ন অঙ্গনের এবং পেশার সাথে যুক্ত নারীরা।

আলোচনা সভায় হেল্প এজ ইন্টারন্যাশনাল এর বোর্ড মেম্বার (জাতিসংঘের সাবেক সিডো সদস্য ও বিটিভির সাবেক ডিজি) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, “রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যে ভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা ইতিহাসে বিরল। মিয়ানমার সরকারের এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। সারা বিশ্বের সকল মানুষ এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের এই মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমার এর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করে সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। আমার প্রস্তাবনা হলো, ১. মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি। সেখানে সসম্মানে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, তাদের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। এর বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা। ২.যতদিন তারা এদেশে আছে, সরকার মানবিক দায়িত্ব নিয়ে জায়গা দিলেও, আমাদের সব বাংলাদেশীর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আমরা ১৬ কোটি মানুষ। ১ টাকা করে দিলেও ১৬ কোটি টাকা হয়ে যাবে। ৩.রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে নাকি অনেক শিশু ওতরুণীরা হারিয়ে যাচ্ছে। এখানে নারী ও শিশু পাচারকারীরা যাতে তাদের উদ্দেশ্য সফল না করতে পারে, তাই সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যতদিন তারা নিজেদের দেশে ফিরে যেতে না পারে, ততদিন পর্যন্ত।”

বার্ড-এর সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর নুরুন্নাহার কবীর বলেন, “নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়া কতটা কষ্টের তা আমরা ‘৭১ সাল থেকেই জানি। আরাকানে রোহিঙ্গাদের উপর হত্যা, ধর্ষণসহ যে নৃশংসতা চালানো হচ্ছে তা যে কোন দেশে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলে , সেখানেও এত নৃশংসতা দেখা যায় না। তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বসবাসের স্থানগুলো যেন নিরাপদ হয় এবং এখানে কোন নারী ও শিশুরা যেন বঞ্চনার শিকার না হয় , তাদের সম্পদ, অর্থ যেন কেউ হাতিয়ে নিতে না পারে , সে দিকে সরকার কে লক্ষ্য রাখতে হবে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজী ফেরদৌস বলেন, “রোহিঙ্গা নারী, শিশুসহ সকলের মানবিক বিপর্যয়ের খবরে আমাদের অন্তরে প্রতিনিয়ত রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি নানাভাবে চাপ প্রদান সহ প্রয়োজনে তাদের শাস্তি প্রদানের জন্য বিশ্বের সকল দেশকে এগিয়ে আসতে হবে। শত শত নারী গর্ভবতী দেখা যাচ্ছে। এত নারী কেন গর্ভবতী তা নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন ছিল। জানা গেল ধর্ষণের ভয়ে তারা গর্ভধারণ করে। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ আসছে সে জন্য আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর হজ্জ্বের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে বলবো, এটা আমার স্বপ্ন পূরণের অভিজ্ঞতা। ঐ পবিত্র ভূমিতে গেলে মন অন্যরকম হয়ে যায়। ঈমানের মজবুতি আসে। প্রত্যেক সামর্থ্যবানের হজ্জ্ব করা উচিত। ”

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মরিয়াম মানসুর বলেন, “আমি এখন খবর পড়তে পারি না, খবর দেখতে পারি না আমার কষ্ট হয়। সকল ধর্মে মানবহত্যা নিষিদ্ধ এবং মহাপাপ তাহলে কেন এই হত্যাকাণ্ড? শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে তাদের তো কোনো দোষ নেই। এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।”

বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদা চৌধুরী বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে আরো মজবুত করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যামে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বলা হচ্ছে ১০ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। এখনও আসছে। আমাদের দরিদ্র এই দেশ এত মানুষের ভার কীভাবে সহ্য করবে? এর একটা স্থায়ী সমাধান করতে হবে। আজ সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেক দেশ আবার বাংলাদেশের উপর রোহিঙ্গা ইস্যুকে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য অনেক মুসলিম দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরব ভূমিকা পালন করছে। তাই, আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির বিকল্প নেই ।”

সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট সংঙ্গীত শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ” হেমন্তের এই সুন্দর সকালে, আমাদের কিছু অসুন্দর কথা বলতে হচ্ছে। ১৯৭১ সালে আমরা ছিলাম শরণার্থী। আমাদেরটা ছিল মুক্তিযুদ্ধ। আর রোহিঙ্গাদের এটা হচ্ছে মৃত্যুযুদ্ধ। এখানে কোন যুদ্ধ নেই। আছে শুধু মৃত্যুর খবর। বর্তমান বিশ্ব কী করবে তা জানি না, তবে আমাদের নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এই দুটি হাত খুব দুর্বল। এই হাত দুটো দিয়ে কিছু করতে পারছি না। আমাদের আন্তর্জাতিক সমর্থন দরকার। তা না হলে তো আমাদের পক্ষে একা কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের মনটা অনেক বড়। কিন্তু, সামর্থ্য ছোট । রোহিঙ্গাদের প্রতি সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তাদের দায়িত্ব নেয়াটা খুব সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু, এর শেষ কোথায়? তাদের তো নিজেদের বাড়িতে নিরাপদে, সসম্মানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হজ্জ্বের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, হজ্জ্ব করতে পারা আল্লাহ্‌র এক বিশেষ নেয়ামত প্রাপ্তি। আমার রাসুল যে পথে হেঁটেছেন, আমি সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি, যে ধূলো বালিতে তার স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তার উপর দিয়ে আমি হাঁটছি এ এক বিস্ময়কর আনন্দ। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
received_10208823477658840
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারীর গান পরিবেশনায় এক অন্যরকম আবহ তৈরী হয়। উপস্থিত সবাই অনুরোধ করলে, সভাপতি নিজের লেখা একটি নাতে রাসুল ও একটি নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সব শেষে একটি কেক কাটা হয়। এতে বাংলাদেশ সেন্টার ফর উইমেন সলিডারিটির মুক্ত মত প্রকাশ অনুষ্ঠানে আনন্দ এক ভিন্ন মাত্রা পায়। আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীফ কো অর্ডিনেটর শাহিন আখতার আঁখি , উইমেন জার্নালিষ্টস ফোরামের প্রচার -প্রকাশনা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও অনুষ্ঠানের কো অর্ডিনেটর খাতুনে জান্নাত কণা, সাব কো অর্ডিনেটর আকলিমা ফেরদৌসী ও মুশফিকা সাদিয়া। উপস্থাপনায় ছিলেন-টিভি সংবাদ উপস্থাপক ফারজানা মাহবুবা।

 

নৈঃশব্দ্য

চলো ডুব দেই নৈঃশব্দ্যে,
চুষে নেই স্থির মুহূর্তগুলো।

পৃথিবীর বুকে অন্তত একবার
সবকটি ভাষার গলা টিপে ধরে
চলো নীরব হই, একটু দাড়াই।

দেখো, মুহূর্তটা কেমন অচেনা হয়ে উঠবে,
কোন তাড়া নেই, ইঞ্জিনের শব্দ নেই,
একটা আকস্মিক বিস্ময়ে একত্রিত হবো সবাই
আমি, তুমি, সে।

তিমিদের গায়ে আঘাত করা
থামিয়ে দিবে শীতল সাগরের মাঝিরা,
লবণ জমানো সেই লোকটা থেমে গিয়ে
চোখ রাখবে তাঁর আহত হাতের উপর।

যারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল যুদ্ধের,
বিষাক্ত গ্যাস, আর আগুনের যোগান দিচ্ছিল যারা,
আচমকা জিতে যাবে তাঁরা কোন মৃতপ্রায় উত্তরজীবী ছাড়াই।
পরিষ্কার জামা গায়ে জড়িয়ে
এরা হেঁটে বেড়াবে ভাইদের সাথে,
ছায়ার নিচে, চুপচাপ।

চলো লেনদেন সেরে ফেলি
মৃত্যুর সাথে।

চলো একবার — না করি কিছুই,
হয়তো এই বিশাল নীরবতা
ব্যঘাত ঘটাবে আমাদের বিষণ্ণতায়।
হয়তো পৃথিবী আমাদের শেখাবে—
যখন নৈঃশব্দ্যে থেমে যায় সবকিছু,
পর মুহূর্তেই জেগে উঠে জীবন।

Shariful Islam
অক্টোবর ২৫, ২০১৭, ঢাকা ।
[উৎসাহ, নেরুদা’র কিপিং কোয়াইট]

 

“ডুব” বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের স্ট্যাটাস

ডুব হচ্ছে ২০১৭ সালের একটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। ধারণা করা হচ্ছে এটি জীবনী সম্পর্কিত একটি নাট্য চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা করবেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজ, এসকে মুভিজ এবং ইরফান খান ফিল্মসের ইরফান খান। চলচ্চিত্রটির শিল্পীগন হলেন ইরফান খান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, রোকেয়া প্রাচী এবং পার্ণো মিত্র। গল্পটি তৈরি হয়েছে পরিবারের প্রধান সদস্যের মৃত্যুর পরে দুইটি পরিবারের অটুট বন্ধনের কাহিনী নিয়ে। যেখানে একজন মধ্যবয়স্ক লেখক এক তরুনীর প্রেমে পড়েন যিনি তার মেয়ের বন্ধু। চলচ্চিত্রটির প্রধান ভাষ্য হচ্ছে যে,”মৃত্যু সবসময় সব কিছু নিয়ে যায় না,অনেক সময় কিছু দিয়েও যায়।”
ডুব মুভি নিয়ে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে ফারুকী আইএনএসকে জানায়, “ডুব: নো বেড অফ রোজেস’ সিনেমাটি তৈরি করা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিলো না। সিনেমার নামের মতই এটি ছিলো কষ্টসাধ্য, অর্থাৎ ‘নো বেড অফ রোজেস’। তবে দেশের বাইরে সিনেমাটি প্রশংসিত হয়েছে দেখে খুবই ভালো লাগছে।”

এ সময় তিনি আরও বলেন, “ডুব’য়ের মুক্তি নিয়ে এ পর্যন্ত যত বাধা ও সমস্যার মুখে পড়েছি আজকের আয়োজনে দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আমি সব ভুলে গিয়েছি। দেশের বাইরে অগণিত দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসায় সিক্ত হয়ে খুবই ভালো লাগছে। এখন অপেক্ষায় আছি কবে বাংলাদেশের দর্শক ছবিটি দেখতে পাবে।”

ডুব নিয়ে বিশিষ্ট্য ব্যক্তিরা,

ইরফান খান বলেছেন, ” ‘ডুব’ করার একমাত্র কারণ ফারুকী ”

Nusrat Imrose Tisha…পেজ থেকে,
“ডুব চলছে…..।

Anisul Hoque স্যারে পেজ থেকে,
“দেশের চাইতে বিদেশেই তো হলের সংখ্যা বেশি। আগামীকাল বাংলাদেশের সিনেমার বিশ্বযাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। অভিনন্দন,
সংশ্লিষ্ট সবাইকে।”

গায়ক লুৎফর হাসান তার ফেসবুক পেজে লেখেছেন,
“Mostofa Sarwar Farooki ভাই, কিছু মন খারাপের সংবাদেও আনন্দ আছে। খোঁজ নিলাম, দৌড়ঝাঁপ করলাম। ডুবের টিকেট শেষ। দমবন্ধ অবস্থায় আছি। হয়তো ম্যানেজ হবে, তবে এই টিকেট ফুরিয়ে যাওয়ার খবরে আনন্দিতই। শুভকামনা ভাই ”

কবি হাসনাউল রেজা ফিরোজ ফেসবুক স্ট্যাটাস,
“জাভেদের জীবনে এই দুই নারীর প্রভাব সবচেয়ে বেশী।একজন নুসরাত ইমরোজ তিশা, যিনি জাভেদের বড় মেয়ে।আরেকজন পার্নো মিত্র, যিনি জাভেদের দ্বিতীয় স্ত্রী।
বলার অপেক্ষা রাখেনা,দুজনেই অত্যন্ত অত্যন্ত সু অভিনেত্রী।
তাদের অভিনয় দেখার জন্য হলেও হলে গিয়ে দেখতে হবে “ডুব”…
#ডুব চলছে আপনার পাশের প্রেক্ষাগৃহে”

আহারে জীবন, আহা জীবন, জলে ভাসা পদ্ম জীবন।’
ডুব…..

 

নামে কি আসে যায়,কর্মই নামকে বড় করে -২

বর্তমানে আর একটি নাম অত্যন্ত জনপ্রিয় সেটি আনিসুল হক। হুমায়ুন নামধারীদের নামের শেষ অংশ মিল ছিলনা কিন্তু আনিসুল হক নামে যে তিনজন আছেন তাদের নামের কোথাও কোন বেমিল নেই।

১। আনিসুল হক (সাহিত্যিক)। (Anisul Hoque) । আজ যাকে আমরা সাহিত্যিক হিসেবে দেখছি তিনিও হুমায়ুন আহমেদের মতই অনেক গুলো প্রতিভার অধিকারী। বুয়েট থেকে পাশ করা এই অসাধারণ মানুষটি ইঞ্জিনিয়ারতো বটেই তার সাথে সাংবাদিক,সাহিত্যিক,নাট্যকার এবং বেশ ভাল মানের আর্টিস্টও বটে।
মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বদেশ প্রেম নিয়ে লেখা তার রচনা গুলো আমাদেরকে দেশ প্রেম শেখায় নিয়ে যায় উত্তাল সেই দিনগুলোতে। মনের মধ্যে বীরত্ব জন্ম দেয়।
প্রেমের উপন্যাস গুলোতে আমাদের জীবনের চতুর্থপর্বে এসেও প্রেম জাগায়,মনে হয় যেন এই বৃদ্ধ বয়সেও আমি এক তরুন কলেজ স্টুডেন্ট।

নিছক ছোটদের আনন্দ দেয়ার জন্য তিনি যখন গুড্ডু বুড়োকে নিয়ে নানা কান্ড ঘটাতে লাগলেন আমরা অবাক হয়ে দেখলাম সেটা কেবল ছোটরাই নয় সেই সাথে বড়রাও গো গ্রাসে গিলছে।

তার লেখা গদ্য কার্টুন কার না ভাল লাগে।

আচ্ছা ধরুন সব কিছু বাদ। এই আনিসুল হক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের যে মানের ভক্ত তার বিনিময়ে তার স্থান আমার দৃষ্টিতে এক নাম্বার হবে এটাইতো স্বাভাবিক। তিনি বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশ দলকে যেভাবে সাপোর্ট করেন তার মুগ্ধকর।

২। আনিসুল হক (মেয়র)। এই আনিসুল হক সাহিত্যিক আনিসুল হকের থেকে বয়সে প্রবীন।তিনি আগে লাইম লাইটে ছিলেন না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি তাকে চিনতাম এবং তার সাথে কয়েকবার আমার দেখাও হয়েছে। তখন তাকে আমার ঠিক সেরকম লাগেনি। বরং তিনি যখন মেয়র পদে দাড়ালেন আমার মনে হলো এই লোকটা নির্বাচিত হলে কিছুই করবেন না।

আহ আমার ধারণা ভুল প্রমান করে দিয়ে তিনি নির্বাচিত হওয়ার সামান্য এ কয়দিনের ব্যবধানে যা করেছেন আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে যে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ থেকে সাদেক হোসেন খোকাও তা করেন নি। হ্যা আমি দেখেছি একই সাথে এলাকার সব রাস্তা খুড়ে কাজ শুরু করেছেন। ভোগান্তি হচ্ছে কিন্তু তিনি কোন কাজ ফেলে রাখেন নি। তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচিত হওয়ার পর তার সাথে দেখা হলো। আমার মত সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়ে তিনি হাসিমুখে কথা বললেন। এবং আমার মনে হলো নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি যতটা বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন নির্বাচিত হওয়ার পর তা বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুন। এবং দেখবেন অবধারিত ভাবেই তিনি আপনার মনেও জায়গা দখল করে নেবে। যদিনা আপনি ঘোর বিরোধী না হন।

৩। আনিসুল হক (আইন মন্ত্রী)। তিন আনিসুল হকের মধ্যে শেষ জন হলেন বয়সে সব থেকে প্রবীন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি আইনমন্ত্রী হওয়ার পর অনেক কিছু হয়েছে। অনেকের চোখ ভিজে উঠেছে আনন্দ অশ্রুতে এবং কারো কারো হয়তো বেদনায়।

তাই দেখা যাচ্ছে বাংলার আকাশে হুমায়ুন আর আনিসুল হক নাম দুটোতে একাধিক ব্যক্তি খ্যাতিমান হয়েছেন মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

তাহলে আসুন আমি আপনি আমাদের সন্তানদের নামও ওরকম কারো সাথে মিলিয়ে রাখলে সন্তান তার মত হবে এই ধারনা থেকে বেরিয়ে আসি এবং তাদের মেধা বিকাশে আন্তরিক সহযোগিতা দেখাই। হয়তো সহযোগিতা পেলে সেই ছেলেটিই একদিন নাম কামাবে।
কুসুম কুমারী দাশের সেই কবিতার মত
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”

হ্যা হুমায়ুন আর আনিসুল হক নামধারী মানুষ গুলো শুধু কথায় নয় কাজে বড় হয়েছেন। তাদের জন্য স্যালুট।
………………………..
#জাজাফী
উত্তরা

 

নামে কি আসে যায়,কর্মই নামকে বড় করে-১

ধরুন, শখ করে আমার ছেলেটির নাম রাখা হল আইনস্টাইন কিংবা মুশফিকুর রহিম! তাই বলে আমার ছেলেটাও ওই নাম পেয়ে তর তর করে বেড়ে উঠবে আর হয়ে যাবে আইনস্টাইন কিংবা মুশফিকুর রহিম এটা ভাবার কোন কারণ নেই। তবে হ্যা তার যদি চেষ্টা থাকে এবং ভাগ্য থাকে তবে সে হয়তো তার নামটাকে বড় করতে পারবে,মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারবে।

অতীতে এবং বর্তমানে একই নাম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মে জন্ম নিয়ে কিংবা একই প্রজন্মে জন্মনিয়ে কেউ কেউ একে অন্যকে খ্যাতির দিক থেকে পেরিয়ে গেছে। কখনো কখনো বা তাদের একজনকে অন্যজনের সাথে তুলনা করা বোকামী বলে মনে হবে কারণ এক একজনের ক্ষেত্র এক এক রকম। কিন্তু জগতে কাউকে না কাউকেতো বড় করে দেখতেই হয়।

একদিন যেমন শাহীদ আফ্রিদির রেকর্ডকে মনে হত কেউ ভাংগেই পারবেনা কিন্তু সেটাও ভুল প্রমান করে দিয়ে আরো অনেকেই সেই রেকর্ড ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক একই ভাবে কারো কারো খ্যাতিকে ছাড়িয়ে গেছে তারই নামে নামধারি অন্য কেউ।

বাংলাদেশে এমন অন্তত বেশ কয়েকটি নাম আছে যে নাম নিয়ে একই সাথে বেশ কয়েকজন খ্যাতির শীর্ষে আরহোন করেছেন।

প্রথমে আসি হুমায়ুন নামটা নিয়ে। না তাই বলে আমি ইতিহাসের পাতা থেকে সম্রাট হুমায়ুনকে আমার এই ক্ষুদ্র লেখাতে টেনে আনতে চাইছিনা। তিনি বরং ইতিহাসের পাতাতে বসেই আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখুন যে তাকে রেখেও আমরা অন্য হুমায়ুনদের নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

বাংলার আকাশে সম্রাট হুমায়ুন নয় আরো কয়েকজন হুমায়ুন চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন তারা হলেন ১। হুমায়ুন আহমেদ ২। হুমায়ুন ফরিদী ৩। হুমায়ুন আজাদ ৪। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী।

সিরিয়াল অনুযায়ি হুমায়ুন আহমেদকে এক নাম্বার স্থান দিয়েছি এটা একান্তই আমার মতামত। চাইলে আপনি তাকে দুই নাম্বার বা চার নাম্বারেও নিয়ে যেতে পারেন। কারণ জানেনতো আকাশে চাদ একটাই। সেই চাদকেই হুমায়ুন আহমেদ দেখলেন অসম্ভব সুন্দর রুপে আবার সুকান্ত দেখলেন ঝলসানো রুটি রুপে আবার প্রেমিক তার প্রেমিকাকে চাদের সাথে তুলনা করতে চায়না কারণ চাদের কলঙ্ক আছে।

তাই প্রত্যেকেরই নিজের চিন্তাকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা আছে।

আমি হুমায়ুন আহমেদকে এক নাম্বারে রেখেছি কারণ তিনি কেবল মাত্র একজন সাহিত্যিক ছিলেন না। তিনি প্রথমে বিজ্ঞানে পিএইচডি ধারি ছাত্র তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেখান থেকে সাহিত্যিক,নাট্যকার,এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা রুপে আবির্ভূত হলেন। বাকিদের মধ্যে এক সাথে এতো গুলো প্রতিভা আমি দেখিনি। ও হ্যা তিনি অসাধারণ ম্যাজিক পারতেন এবং আমাদের প্রিয় জুয়েল আইচকে আমি নিজে বলতে শুনেছি “হুমায়ুন আহমেদ পামিং এ আমার থেকেও ভাল এবং বাংলাদেশে এক নাম্বার!}–(জুয়েল আইচ)।

পামিং হচ্ছে কয়েন হাতে নিয়ে পুর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই দেখানো যায় এমন এক ম্যাজিক যা দিয়ে চোখের নিমিষে কয়েন অদৃশ্য করে ফেলা হয়।
হুমায়ুন আহমেদের ম্যাজিক মুনশি এবং কালো যাদুকর বই দুটিতে ম্যাজিকের অনেক কিছু বলা হয়েছে আর হ্যা তিনি আর্ন্তজাতিক ম্যাজিশিয়ান সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
একই সাথে তিনি বেশ ভাল ছবিও আকতেন। এই হুমায়ুন আহমেদকে তাই এক নাম্বার হুমায়ুন বলেই চিনতে চেয়েছি।

* হুমায়ুন ফরিদী একজন কোন মানের অভিনেতা ছিলেন সেটা আমি না লিখলেও অন্যরা নিশ্চই সেটা জানেন। তার অভিনয় শৈলি তার ব্যক্তিত্ব এবং তার আবৃত্তি নিয়ে কারো কোন দ্বিমত আমি কখনোই দেখিনি। ব্যক্তি হুমায়ুন ফরিদিও ছিলেন অসম্ভব সদালাপি।

* হুমায়ুন আজাদকে অনেকেই পছন্দ করেন না। আবার অনেকে শুদ্ধপুরুষ রুপে তাকে দেখেন।
আমি হুমায়ুন আজাদকে দুই তিনটা বই দিয়েই বিবেচনা করতে চাই। “আব্বুকে মনে পড়ে” বইটা পড়ে দেখুন। আমার মনে হয় আপনি না খেয়ে মরে গেলেও কোন দিন বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার কথা চিন্তাও করতে পারবেন না। এবং যারা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছেন তাদেরকে ওই বইটা জোর করে পড়িয়ে দিন। দেখবেন কাদতে কাদতে গিয়ে সেই দিনই বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাসায় নিয়ে আসবে। তার স্ত্রী পুত্র যদি সেটা পছন্দ না করেন তবে হয়তো তাদেরকে এক হাত দেখে নিতেও দ্বিধা করবেনা। আর হ্যা “লাল নীল দিপাবলী” পড়ুন। বাংলা সাহিত্যের জন্মকথা এমন ভাবে লিখেছেন যে আপনি মুগ্ধ না হয়ে যাবেন না। অথচ আপনি কেবল পড়ে আছেন তার “পাক সার জমিন সাদ বাদ” নিয়ে।

* হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী জাতীয় সংসদের স্পিকার ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে তিনিও সফল একজন মানুষ।

এই চার হুমায়ুন বাংলার আকাশে উজ্জল করে রেখে গেছেন তাদের নাম।”

#জাজাফী
উত্তরা,ঢাকা-১২৩০

 

রূপচর্চায় বরফ-লেবু এবং হাটা

ত্বক এবং শরীর যতবেশি সতেজ থাকে তাকে ততবেশি আকর্ষণীয় দেখায়। তাই লেবু ও বরফের পাশাপাশি হাটার কোন বিকল্প নেই। অপরূপ সতেজ ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক পদ্ধতি জানা দরকার।

♥দীর্ঘ সময় মেকআপ ধরে রাখতে: মেকআপ শুরু করার আগে এক টুকরো বরফ নিয়ে ভাল করে মুখে ঘষে নিন। যখন দেখবেন জলটা একেবারে শুকিয়ে গেছে, তখন মেকআপ শুরু করুন। এমনটা করলে ফাউন্ডেশন খুব ভাল ভাবে ত্বকে শোষিত হয়।

♥সাধারণভাবে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সমপরিমাণ শশার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে নিন। কটন বলের সাহায্যে পুরো মুখে লাগাতে থাকুন। মিশ্রণটি মুখে লাগানোর সাথে সাথে যদি জ্বালা করে, তবে দ্রুত ধুয়ে ফেলুন। তারপর বরফ লাগান।

♥ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করার ক্ষেত্রে লেবুর রস ও দুধের মিশ্রণও বেশ কার্যকরী। একটি বড় লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে তার রস বের করে নিন। এবার তার সাথে ১০ টেবিল চামচ তরল দুধ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। ধীরে ধীরে পুরো মুখে ম্যাসাজ করুন, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরো মিশ্রণটা ত্বক শোষণ করে। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

♥ত্বককে টানটান করে: একটা কাপড়ের টুকরো নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো বরফ নিয়ে নিন। এবার সেটি ভাল করে মুখে ঘষুন কিছুক্ষণ। প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়ার কারণে বরফ ঘষা মাত্র মুখে রক্ত চলাচল খুব বেড়ে যায়, ফলে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে।

♥চোখের ফোলাভাব কমায়: একটা কাপড়ে পরিমাণ মতো বরফের টুকরো নিয়ে নিন। এমনটা করলে চোখের ফোলা ভাব যেমন কমে যাবে, তেমনি ডার্ক সার্কেলের সমস্যাও দূর হবে।

♥পুড়ে যাওয়া ত্বককে স্বাভাবিক করে: বরফের প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়ার কারণে এটি ত্বকে ঘষলে সে জায়গার তাপমাত্রা নিমেষে কমে যায়। তারপর ডিমের সাদা অংশের সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস ও এক টেবিল চামচ কমলালেবুর রস, কুসুম গরম পানি দিয়ে পেস্টের মতো করে মিশিয়ে নিন।

♥হাঁটা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। শরীরের রক্তচাপের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

♥প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটা শরীরের ক্যালোরি ঝড়াতে সাহায্য করে। এতে ওজন কমে। তাই ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই হাঁটুন।

♥নিয়মিতা হাঁটা হাড় ও পেশির শক্তি বাড়ায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাঁটা হাড়কে ভালো রাখে। বিশেষ করে পায়ের স্বাস্থ্য ভালো করে।

♥হাঁটা এনড্রফিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এনড্রোফিন মস্তিষ্কের এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান। এটি মেজাজকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

আজকের রান্নার স্বাদ -২

গৃহিনীদের সারাদিনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটাতে হয় রান্নাঘরে। আপনাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা আপনাদের রান্নাকে আরও মজাদার করে তুলবে।

♠মাছ রান্না
মাছ রান্না করে হাতের কাছে কাঁচা ধনিয়া পাতা থাকলে তা কুচি করে কেটে বিছিয়ে দিন, স্বাদ দুইশত গুন বেড়ে যাবে। যদি তেলাপিয়া মাছে কোন গন্ধ থাকে তবে তেলাপিয়া মাছ হলুদ ও ভিনিগার/লেবুর রস মাখিয়ে মিনিট ১৫ রেখে ধুয়ে নিলে গন্ধ থাকেনা।

♠ডাল রান্না
ডালে বাগার দিতেই হবে, রসুন কুচি তেলে ভেজে ডালে দিয়ে দিতে হবে। ডালের মজা জ্বালে! অর্থাৎ যত বেশি সময় জ্বালানো হবে স্বাদ বেড়ে যাবে ততই।

♠সবজী রান্না
রং ঠিক রাখতে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল না দেয়াই ভাল। আর কিছু সব্জী আছে যাদের সামান্য সিদ্ব করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা বরফ কুঁচিতে রাখলে রান্নার পরও রং ঠিক থাকে।

♠ভাজি রান্না
কিছু ভাজিতে কড়াইতে তেল গরম হলে যা দেবেন তার সাথে সামান্য লবণ দিয়ে দিন, তেলের ছিটকা উঠবে না।

♠রান্নায় সর্ষের স্বাদ
লাল সর্ষে তিতা বা ঝাজ বেশী হয়। হলুদ সর্ষে ব্যাবহার করলে তিতা হয়না। আরেকটি কথাঃ সর্ষে বাটার সময় লবন আর কাচামরিচ এক সাথে বাটলে তিতা হয়না।

♠লেবুর ভূমিকা রান্নায়
বর্ষাকালে লবণ গলে যায়। এক মুঠো পরিষ্কার চাল পুটলি করে বেঁধে লবণের পাত্রে রেখে দিলে লবণ গলবে না।

♠কাঁচের গ্লাস
কাঁচের গ্লাসে গরম কিছু নিতে গেলে অনেক সময় ফেটে যায়। গরম কিছু ঢালবার আগে গ্লাসে একটি ধাতু নির্মিত চামচ রেখে ঢাললে গ্লাস ফাটবে না।

♠রান্নায় আলু
আলু এবং আদা বালির মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে অনেক দিন টাটকা থাকে।

 

অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল “সুবোধ” কে!!

গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের পাশেই থাকতেন পারভীন আক্তার নাম এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। স্বামী তাকে ছেড়ে গেছে অনেক আগেই। সোমবার রাতে তার প্রসব বেদনা ওঠে। পরিচিত একজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন তার গর্ভের সন্তানের অবস্থা ভালো নয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তির জন্য জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারকে লেখেন।

এরই মধ্যে একজন জানান, রোগীর সিজার করতে হবে। বেশ কিছু টাকা খরচপাতি লাগবে। কিন্তু হাতে টাকা নেই শোনার পর তিনি পারভীন আক্তারকে নিয়ে দ্রুত অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দেন।

পরে তাকে নিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানে তার কাছে ১৫শ’ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেয়ায় সেখান থেকে পারভীন আক্তারকে অন্য কোথাও যেতে বলা হয়।

সকাল ৮টার দিকে পারভীনকে আজিমপুর মাতৃসদনে নেয়া হয়। সেখানে তার নামে কোনো কার্ড কিংবা রেজিস্ট্রেশন না থাকায় কর্তৃপক্ষ ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। বারবার অনুরোধের পর তাকে দ্বিতীয় তলার লেবার রুমে নিয়ে যান এক নারী চিকিৎসক। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বের হয়ে যেতেই আয়া শাহিদা সেখানে যান।

এ হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না বলেই শাহিদা তাকে টেনে দোতলা থেকে নিচে নামান। পারভীন তখন ব্যথায় ছটফট করছিলেন। অন্য একটি হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে আয়া তাকে বের করে দেন।

ম্যাটারনিটি হাসপাতাল থেকে বের হতেই প্রসব বেদনায় রাস্তার ওপর বসে পড়েন পারভীন। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। প্রথমে নড়াচড়া করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই নবজাতক নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

… এবং সন্ধ্যার পর নবজাতককে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তবুও ভালো শিশুটার দাফনটা অন্তত করা গেছে। যাবেই তো।

মধ্যম আয়ের এই দেশ রাস্তায় নবজাতকের জন্ম দেবার দৃশ্য সহ্য করতে পারে – কিন্তু রাস্তায় পড়ে থাকা লাশের গন্ধ সহ্য করতে পারে না যে।

কিছুই বলার নেই- শুধু একটা কথা ছাড়া।

শুনলাম গোয়েন্দারা নাকি সুবোধ সিরিজের সেই গ্রাফিতিগুলোর স্রষ্টাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

গোয়েন্দাদের বলছি আজিমপুর গোরস্থানে যান – দেখবেন একজন সদ্যজাত শিশু গোরস্থানের দেওয়ালে বসে হাসতে হাসতে বলছে –

“আমিই সুবোধ – পালিয়ে এসেছি – মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে!”

shomoy marma
(সৌজন্যে: bdflow24.com)

 

দাম্পত্য -১০

বর্তমান সময়কার দম্পতির মাঝে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ থাকা খুব স্বাভাবিক। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট – শুনতে খুব ভারিক্কি মনে হলেও, শেষ পর্যন্ত এর প্রয়োগ দেখা যায় একদম চাল চুলো, গম আলু তে। টিভির রিমোট কাড়ার মত ছোট বিষয় থেকে শুরু করে জীবনের প্রতি দর্শন – যে কোন কিছুই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের আওতায় পড়তে পারে।

কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট কী? এটা কি কেবলই ভিন্নমত? না! বরং ভিন্নমতের/ভিন্ন পছন্দের দু’জন আলাপ আলোচনা করে অন্যের যুক্তিটাকে মেনে নিয়ে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই যখন জানায়, এই অভ্যাসটা/দর্শনটা/প্রিয় বস্তুটা আমি ছাড়তে পারব না – তখন তাকে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট এর আওতায় ফেলা যায়।

কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হতে পারে খুব ছোট কোন বিষয় নিয়ে। হয়ত পার্সোনাল স্পেসের মাত্রাটা ভিন্ন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে খুঁতখুঁতেপনা একজনের বেশি। আবার হতে পারে অনেক বড় – হয়তবা জীবনের সার্থকতার মাত্রাটাই। আপনার ইচ্ছে করে আয়েশ করে জীবন কাটাতে। আপনার জীবনসঙ্গীর ভীষণ ইচ্ছে পুরো বাংলাদেশটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখার।

মনে হচ্ছে এমন আর কী? থাকলোই নাহয় ভিন্নতা, অসুবিধা কী? অসুবিধা আছে। প্রতিদিনের কাজে বারবার করে খটিমটি বাঁধবে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে। আপনার জীবনসঙ্গী হয়ত যেভাবে ভুল সংশোধন করে সেটা আপনার পছন্দ না। শোধরাতে চাইবেন, দেখবেন তার ভেতরে গেড়ে আছে এই বোধ – ভুল শোধরাতে হলে শক্ত না হয়ে উপায় নেই। এর ফলাফল পড়বে সন্তানদের বড় করায়।

আপনার জীবনসঙ্গী বন্ধুদের জন্য খরচের ব্যাপারে বেশ উদারহস্ত। আর আপনি মনে করেন জীবনের জন্য এত খরচের প্রয়োজনটা কী? বিলাসিতা আপনার চক্ষুশূল। কী হবে? প্রতিবার এ ধরণের আয়োজনে আপনি গোমড়া হয়ে থাকবেন।

আরো উদাহরণ দিতে হবে? ঠিক আছে। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কথাই বলি। দু’জনেই ধার্মিক। একজন উদারমনা ধার্মিক, একজন কট্টর ধার্মিক। একজন দান সদকা ও সামান্য আয়ে সাধারণ জীবনযাপনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে আগ্রহী, অন্যজন জ্ঞানচর্চা, জীবিকায় উন্নতির শিখরে চড়ে মুসলিমদের এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। ভাবছেন সমস্যাটা কী? ধরুন একটা ভালো চাকরির সুযোগ আছে, কিন্তু এতে করে পরিবারে সময় দেয়া কমে যাবে অনেকটাই। দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে একজন উৎসাহ দেবেন, অপরজন আপত্তি জানাবেন।

এই বিষয়গুলোকে মতদ্বৈততা না বলে ইন্টারেস্টে কনফ্লিক্ট বলছি কেন? কারণ মতের এই ভিন্নতা তৈরি হয়েছে জীবনদর্শনের ভিন্নতা থেকে। আপনি মত বদলাতে পারবেন, জীবনদর্শন বদলাতে পারবেন না। ফলস্বরূপ আপনার উৎসাহে আপনার সঙ্গী সাময়িকভাবে কাজটাতে সম্মতি দিলেও আপনি যে পর্যায়ের আন্তরিকতা আশা করছেন, সেটা পাবেন না কখনোই।

তো কী করা যায়? আপনাদের প্রায়ই ঘুরেফিরে যে জিনিসগুলো নিয়ে খিটিমিটি লাগে, বোঝার চেষ্টা করুন সেটা চিন্তাধারা/জীবনাদর্শের ভিন্নতা থেকে হচ্ছে কি না। যদি তা হয়, তবে বৃথাই একই তর্কবৃত্তে ঘুরে ঘুরে না মরে, বৃত্তের বাইরে এসে দাঁড়ান। চিন্তা করে দেখুন নিজের বা তার এই দর্শনটা বদলানো সম্ভব কি না। যদি না হয়, মেনে নিন।

মেনে নেয়া বলতে কি বোঝায় যত খারাপই লাগুক, হাসিমুখে মেনে নেয়া? মোটেও না। সঙ্গীকে জানিয়ে দিন, তোমার এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আমি সমর্থন করিনা। আমি নিজে এভাবে জীবন কাটাতে চাইনা। এমনকি সেটা যদি হয় স্বচ্ছলতা-কৃচ্ছ্রতার দ্বন্দ্ব, নিজের জীবনে আপনারটা মেনে চলুন, আর তাকেও তারটা মানতে দিন।

আগেই বলেছি, জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকলে প্যারেন্টিং ইস্যুতে এসে খুব সমস্যা হয়ে যায়। একজন হয়ত দামি দামি খেলনা, কাপড় কিনে দিচ্ছে, অন্যজন সহজ জীবনের কথা বলেই যাচ্ছেন – এতে করে ছেলেমেয়েরা বাবামায়ের অন্তর্দ্বন্দ্বটা বুঝতে পারে খুব সহজে, আর তারা জীবন সম্পর্কে নির্দেশনাটাও ঠিকমত পায়না।

সমাধান কী? সমাধান হচ্ছে আগে থেকেই এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে জীবনসঙ্গীর সাথে কথা বলা। তাকে জানানো আমি এভাবে জীবনকে সাজাতে চাই, তুমি কী মনে কর? আমার সন্তানদের এভাবে বড় করতে চাই, তোমার আপত্তি থাকলে আগে থেকেই কথা বলে নেয়া ভালো। অন্তত সন্তানদের সামনে যেন দ্বন্দ্বটা প্রকট হয়ে না ওঠে। এমনকি চাইলে এটাও সম্ভব, সন্তানদের বোঝানো, ‘তোর বাবা/মা এমন মনে করে, কিন্তু আমি এমন মনে করি। দুইজনেই ঠিক, তুই তোর পথটা পছন্দ করে নিবি।’ অথবা, ‘তোর বাবা/মা জিনিসটাকে এভাবে দেখে। আমার মনে হয় এভাবে হলে ব্যাপারটা আরো ভালো হত।’ এভাবে প্রকাশ করলে সন্তানেরা ভিন্নমত সহ্য করেও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার একটা বাস্তব শিক্ষা পাবে।

পরমত-অসহনশীলতার যে মাত্রাতিরিক্ত প্রকাশ দেখা যাচ্ছে আজকাল – ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার থেকে রক্ষা করতে পরিবারের মধ্যে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টগুলো আগেই চিহ্নিত করে নেয়া ভালো।

পরিশেষে, রেহনুমা আপুর প্রিয় এক উক্তি শরৎচন্দ্রের রচনা থেকে –

অভিমানের যেখানে মূল্য নাই, সেখানে অভিমান প্রকাশের ন্যায় বিড়ম্বনা আর নাই।

প্রতিটা বিষয় মতে মিলতেই হবে এমন কোন কথা নেই। আর না মিললেই অভিমান, দুঃখ নিয়ে জীবনটাকে ব্যর্থ মনে করতে হবে, এমনও কোন কথা নেই। কোন কোন পথ একলা চলেও উপভোগ করা যায়, যদি জানেন সমান্তরাল আরও একটি পথের শেষে আবারও তার সাথে দেখা হবে।

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

সন্তানকে “ভালবাসুন” ভালবাসা জাগ্রত করে

ভালবাসা জাগিয়ে সন্তানকে ভালবাসুন।
সন্তানদের ব্যক্তিত্বের প্রতি আস্থাশীল হওয়া প্রয়োজন। কারণ সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে
img20171022_233914
প্রথমত,
তার উপর মাত্রাতিরিক্ত অভিভাবকত্বের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া উচিৎ নয়।
দ্বিতীয়ত,
সন্তানদের রাজ্যে অনাধিকার প্রবেশ নয়, বরং নিজের অধিকার আদায় করার মত সুস্থ মানসিকতার তৈরির জন্য আজকে থেকেই কাজ শুরু করুন।
img20171021_025347
♥মিষ্টি নামে ডাকুন:

সন্তানকে একটি মিষ্টি ডাক নাম দিন। ছোট্ট বেলায় বাবা মা আদর করে যে নামে ডাকেন তা বাচ্চারা খুব পছন্দ করে।
img20171018_015058
♥ছোট্ট একটা কাগজ লিখুন:

প্রতিদিন টিফিনে না হলেও সপ্তাহে তাদের লাঞ্চবক্সে/lunchbox নোট রাখুন। মনে রাখবেন সেখানে আপনার অনুভূতি লুকিয়ে থাকবে। নোট, কার্ড, বা অক্ষর লিখুন।
img20171022_233654
♥ আই লাভ ইউ বলুন:

“আমি তোমাকে ভালোবাসি” শব্দগুল শক্তিশালী সুতরাং সন্তানদের নিয়মিত বলার অভ্যাসে পরিনত করুন।
img20171022_233836
♥আপনার পছন্দ প্রকাশ করুন:

আপনি চান আপনার সন্তান আপনাকে একবার হলেও হাসিমুখে অনুভূতি জানতে চান। আপনি কেন তাদের পছন্দ করেন তা তাদেরকে জানিয়ে দিন।
img20171021_025142
♥সন্তানের পজেটিভ দিক তুলে ধরুণ:

দেখুন ছোট্ট বেলা থেকে একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। সুতরাং বিশ্বব্যাপী সন্তানদের ইতিবাচক কাজগুলোকে দৃঢ়ভাবে বলুন। বাচ্চাদের বলুন, you’re proud of them ।
img20171022_233753
♥আন্তরিক শব্দ ব্যবহার করুন:

আন্তরিক,রোজই সন্তানদের জন্য সুন্দর কিছু আন্তরিক শব্দ জমা করুন। সেই শব্দ তাদেরকে বলুন।
sincere, heartfelt compliments.
img20171022_233720
♥ভুল আচরণকে না বলুন:

সংশোধনের পর আপনার ভালবাসাকে প্রকাশ করুন কিন্তু ভুল আচরণ মেনে নিবেন না। অন্যায় দেখলে না বলুন।

img20171022_233957
সন্তানের ভিতর ভালবাসার বীজ বপন করার মূলমন্ত্র হল
সন্তানকে বুঝতে দেওয়া,তাকে আপনি ভালবাসেন।

 

শিক্ষকের সাথে ফোনালাপ এবং ফেসবুকিং

অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা। আমি আমার একজন শিক্ষককে মোবাইলে কল বা ফেসবুকে যোগাযোগ করার পূর্বে যে “১০টি বিষয়” মেনে চলি:

১/ অন্তত তিনবার চিন্তা করি যে কল করাটি আদৌ কতটুকু প্রয়োজনীয়। কল না করে অন্য কোন ব্যক্তি বা সহজলভ্য মাধ্যম কিংবা গুগলসার্চ করে দরকারি তথ্যটি পাওয়া কিংবা প্রয়োজন পূরণ কি সম্ভব? উত্তর যদি “হ্যা” হয়- তাহলে আর কল করিনা, বিকল্প মাধ্যমের সাহায্য নিই। উত্তর যদি “না” হয়, তাহলে শিক্ষককে কল করার সিদ্ধান্ত নিই।

২/ চিন্তা করে দেখি এখন ঠিক কয়টা বাজে। রাত ১০ টা থেকে সকাল ১০ টার মধ্যে হলে কল না করার সিদ্ধান্ত নিই। এই সময়ে সাধারণত একজন শিক্ষক ব্যক্তিগত সময় কাটান, বিশ্রাম নেন, পরিবারকে সময় দেন, ডিনার সারেন, ঘুমের প্রস্তুতি নেন, ঘুমান, আর সকালে অফিসে বেরুনোর তাড়ায় থাকেন। কল করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় মনে করি সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০ টার মধ্যে।

৩/ নিশ্চিত হয়ে নিই মোবাইল একাউন্টে কথা বলার মত পর্যাপ্ত টাকা আছে কিনা, মোবাইলে কথা বলার মতো যথেষ্ট চার্জ আছে কিনা। ব্যালেন্স বা চার্জের অভাবে অর্ধ- কথায় ডিজকানেক্টেড হয়ে যাওয়াটা অসুন্দর মনে করি

৪/ একবার কল দিয়ে শিক্ষক রিসিভ না করলে তৎক্ষণাৎ ২য় বার কল দিইনা। রিসিভ না করার একটাই অর্থ- হয় শিক্ষক এই সময়ে ব্যস্ত আছেন- কথা বলার অবস্থায় নাই অথবা তিনি মোবাইল থেকে দূরে আছেন অথবা এই মুহূর্তে তিনি কথা বলতে চাচ্ছেন না অথবা অপরিচিত নাম্বার শিক্ষক রিসিভ করছেন না।

৫/ সেক্ষেত্রে শিক্ষকের মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠাই- পূর্ণ সালাম দিয়ে নিজের নাম, পরিচয়, যোগাযোগের উদ্দেশ্য লিখি এবং শিক্ষক কোন সময় কথা বলার জন্য ফ্রি থাকবেন সেটি জানতে চাই। ফেসবুকে/ইমেইলে মেসেজ পাঠাতে চাইলে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় কথাটি উপস্থাপন করি।

৬/ hi, hello, r u there? how r u? Busy Sir? Free Sir?, ki koren Sir?, kheyechen Sir? ইত্যাদি লিখে মেসেজ আরম্ভ করিনা। আর কল করলে শিক্ষককে ‘আপনি কে বলছেন?’, ‘স্যার আমাকে চিনছেন?’, ‘আমাকে ভুলে গেলেন?’ ইত্যাদি বাক্য দিয়ে কথোপকথন শুরু করিনা। শিক্ষকের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় থাকলেও, এমনকি শিক্ষকের মোবাইলে আমার মোবাইল নাম্বার সেইভড করা থাকলেও শুরুতেই সালাম দিই, নিজের পূর্ণ পরিচয় প্রদান করি, অত:পর জানতে চাই- ‘স্যার/ম্যাম, আপনি কি ফ্রি আছেন? কথা বলা যাবে?’।

৭/ শিক্ষকের এবং আমার দু’জনেরই ভিডিও কলিং এপস্ থাকলেও কখনোই শিক্ষককে ভিডিও কল প্রদান করিনা। পরিবারের সদস্য, স্বামী- স্ত্রী, প্রেমিক- প্রেমিকা, খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া অন্য কাউকে পূর্বানুমতি ব্যতীত ভিডিও কলিং চরম অভদ্রতা বলে মনে করি।

৮/ শিক্ষকের সাথে ফেসবুকে যুক্ত থাকলে শিক্ষকের পরিবারের পূর্ব অপরিচিত সদস্যদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইনা, তাদের ইনবক্সে নক করিনা। শিক্ষকের সাথেই আমার সম্পর্ক, উনার ফ্যামিলির সাথে নয়- এটি মনে রাখি।

৯/ নিজের টাইমলাইনের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ছবিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে শিক্ষককে ট্যাগ বা মেনশন দেইনা।

১০/ শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ প্রত্যাশী হলে পূর্ব এপয়েনমেন্ট নিয়ে শিক্ষকের অফিসে বা শিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে দেখা করি। শিক্ষক আর আমি একই বিল্ডিং এমনকি পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বাস করলেও শিক্ষকের বাসায় বিনানুমতিতে যাইনা এবং বাসায় সাক্ষাৎ করার আগ্রহ বা অনুরোধ জ্ঞাপন করিনা।

এভাবে আমি ভালো থাকি, আশা করি আমার শিক্ষকগণও ভালো থাকেন।
লেখক: সাঈদ আহসান খালিদ
আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
Courtesy:Taken from facebook wall of Mahadi Ul Morshed

 

“প্যারেন্টিং” আব্রাহাম লিংকনের সেই ঐতিহাসিক চিঠি (ছবিঘর)

img20171021_030936
সুখ
“মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, সে ততটাই হতে পারে । সুখের কোনো পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমরা আকাশ অভিসারী করে তুলতে পারি ।”
হ্যা এই উক্তিটি আব্রাহাম লিংকনের।

আব্রাহাম লিংকন ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯ সালে তার জন্ম। তিনি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি। বিশাল ভুমিকা রাখেন ১৮৬৩ সালে। সেই সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটান এবং মুক্তি ঘোষণার মাধ্যমে দাসদের মুক্ত করে দেন।
তার অন্যতম চমৎকার উক্তি হল,
img20171021_033231
বোকা
“তুমি সবসময় কিছু লোককে বোকা বানাতে পারো, কিছু সময় সব লোককে বোকা বানাতে পারো, কিন্তু সব সময় সব লোককে বোকা বানাতে পারবে না ”
তিনি ১৮৬৫ খ্রীস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
রাজনীতি বিজ্ঞান এমনি গবেষকরা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন আব্রাহাম লিংকনকে।
img20171021_024225
আব্রাহাম লিংকনের চিঠি
আব্রাহাম লিংকন তাঁর পুত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। যা পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক মর্যাদা লাভ করে। আজও অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে আছে আব্রাহাম লিংকনের সেই চিঠি।
img20171021_030137
জ্ঞান

মাননীয় মহোদয়,

আমার পুত্রকে জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই আপনার কাছে আমার প্রত্যাশা।
img20171021_025618
সত্যনিষ্ঠ
আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়।
♦তাকে এ বিষয়টিও শেখাবেন;
img20171021_030545
নিঃস্বার্থ নেতা
প্রত্যেক খারাপের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে, প্রত্যেক স্বার্থপর রাজনীতিবিদের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকতে পারেন।
♦তাকে শেখাবেন,
img20171021_034930
মূল্যবান
পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চাইতে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান।
♦আরও বুঝাবেন,
img20171021_031019
উপভোগ
কীভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কীভাবে বিজয় উল্লাস উপভোগ করতে হয়।
img20171021_024647
দূরে
হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দেবেন।
♦যদি পারেন,
img20171021_031217
সৌন্দর
নিরব হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন একথা বুঝতে শেখে, যারা অত্যাচারী তাদেরকে নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য দিয়ে সহজেই কাবু করা যায়।
img20171021_030319
রহস্য
বইয়ের মাঝে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, তাও তাকে শেখাবেন।
♦আমার পুত্রকে শেখাবেন,
img20171021_030226
সম্মানজনক
বিদ্যালয়ে নকল করে পাস করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক।
img20171021_031108
পূর্ণ আস্থা
নিজের ওপর তার যেন পূর্ণ আস্থা থাকে, এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভুলও মনে করে।
♦তাকে শেখাবেন,
img20171021_035946
ভদ্র
ভালো মানুষের প্রতি ভদ্র আচরণ করতে, কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে।
img20171021_030056
পথ
আমার পুত্র যেন হুজুগে মাতাল জনতার পথ অনুসরণ না করে এ শিক্ষাও তাকে দেবেন।
img20171021_040034
সাফল্য
সে যেন সবার কথা শোনে এবং সত্যটা ছেঁকে যেন শুধু ভালোটাই শুধু গ্রহণ করে এ শিক্ষাও তাকে দেবেন।
img20171021_040109
হাসি
সে যেন শেখে দুখের মাঝেও কীভাবে হাসতে হয়।
img20171021_033305
কান্না
আবার কান্নার মাঝে লজ্জা নেই, সে কথাও তাকে বুঝতে শেখাবেন।
img20171021_030010
ঘৃণা
যারা নির্দয়, নির্মম তাদেরকে সে যেন ঘৃণা করতে শেখে।
img20171021_033340
আরাম-আয়েশ
আর অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে সাবধান থাকে।
img20171021_030504
ইস্পাত
আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না, কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়।
img20171021_024722
ধৈর্য
আমার সন্তান যেন বিপদে ধৈর্যহারা না হয়, থাকে যেন তার সাহসী হবার ধৈর্য।
img20171021_025542
ভালবাসা
তাকে এ শিক্ষাও দেবেন, নিজের প্রতি তার যেন পূর্ণ আস্থা থাকে আর তখনই তার সুমহান আস্থা থাকবে মানব জাতির প্রতি।

ইতি
আপনার বিশ্বস্ত;
আব্রাহাম লিংকন।

 

শিশুদের জন্মগত হৃদ্‌রোগ

img20171019_190418
শিশুরাও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন যদি শিশুর হৃদ্‌যন্ত্রটি বিভিন্ন গঠনগত বা কার্যগত সমস্যা নিয়ে তৈরি হয়, তবে তাকে জন্মগত হৃদ্‌রোগ বলা হয়।

কিন্তু কীভাবে বুঝবেন শিশুর হার্টে কোনো সমস্যা আছে? সব শিশুরই তো জন্মের পর আর হার্টের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না।
img20171019_190659i
সাধারণত এ ধরনের শিশুদের যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে:

* মায়ের দুধ খাওয়ার সময় শিশু হাঁপিয়ে যায়, ক্লান্ত হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, শরীর অতিরিক্ত ঘেমে যায়

* ঘন ঘন ঠান্ডা-কাশি হয় বা নিউমোনিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়

* ঘুম কম হয়, যার কারণে মেজাজ খিটখিটে থাকে

* শিশুর স্বাভাবিক ওজন বাড়ে না

* হৃদ্‌স্পন্দন খুব দ্রুত হয়

* জন্মের সময় ভীষণ রকমের কালচে বা নীলাভাব তার ঠোঁটে বা ত্বকে লক্ষ্য করা যায়

* জন্মের সময় স্বাভাবিক রকমের গায়ের বর্ণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও দুই মাস থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে ধীরে ধীরে শিশুটির ঠোঁট বা চামড়ার রং গাড় নীল হতে থাকে এবং কান্নার সময় একই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হয়

এই উপসর্গগুলো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনে দু-তিনবারও হতে পারে। ওই মুহূর্তে তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিলে তার আরাম হয়। বড় বাচ্চারা হাঁটু গেড়ে বসলেও তাদের স্বস্তি আসে।

* একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বুকে ধড়ফড় করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বাতজ্বর—এসব বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
img20171019_190551
প্রধানত দুইভাবে চিকিৎসা করা হয়: বিনা অপারেশনে ও সার্জারির মাধ্যমে।

সঠিক ওষুধ, ডিভাইস বা বোতাম দিয়ে হৃদ্‌যন্ত্রের ছিদ্র বন্ধ করা, চিকন ভাল্ব বেলুনের মাধ্যমে খুলে দেওয়া, জরুরি ভিত্তিতে হার্টের ওপরের চেম্বার দুটির মধ্যে ছিদ্র তৈরি করা ও সাময়িক বা স্থায়ী পেসমেকার প্রতিস্থাপন।

এ ছাড়া সঠিক সময়ে সঠিক সার্জারি শিশুকে সুস্থ করে তুলতে পারে সম্পূর্ণভাবে।
img20171019_190515
শিশুর জন্মগত ত্রুটি যাতে না হয়, সে জন্য প্রত্যেক মা গর্ভবতী হওয়ার তিন মাস আগে এমএমআর টিকা নেবেন। এ ছাড়া মায়ের গর্ভকালীন উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখিকা:ডা. তাহেরা নাজরিন
কনসালট্যান্ট, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা
Courtesy: Md Jahirul Islam, Registered Homeopath
E-mail:jahir63@hotmail.com

 

চাকরি ক্ষেত্রে বিষয় বৈষম্য কেন?

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন অনেক বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মোটেই যুগোপযোগী নয়। যে দেশে চাকরির বিজ্ঞাপন মানেই বিবিএ-এমবিএ চাওয়া, সে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাপর বিষয়গুলোর মূল্য কি? শেখার জন্য আমরা বা আমাদের সমাজের কয়জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই? সবাই যাই সার্টিফিকেট অর্জন করে ভাল চাকরি করার স্বপ্ন নিয়ে। আর চাকরি মানেই যেখানে বিবিএ-এমবিএ এবং নামে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয় সেখানে আরবি, ফার্সি, উর্দু কিংবা ওরকম আরো বিষয়গুলিতে পড়ে কতটা কাজে আসবে তা আমাদের জানা নেই। বরং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই সব বিষয়ে ভাল রেজাল্ট করার পরও আমাদের ভাই-বোনেরা হতাশ হচ্ছে চাকরির বিজ্ঞাপনগুলো দেখে।

আমরা কোনো বিষয়কেই ছোট চোখে দেখি না বা কাউকে কারো চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই না বলে যারা বড় বড় কথা বলে তারাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উঁচু স্তরে বসে বিজ্ঞাপন সাজায় বিশেষ কিছু বিষয় ছাড়া যেখানে অন্যরা আবেদনই করতে পারে না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওই সব বিষয় পড়িয়ে লাভ কি? বন্ধ করে দেওয়াই কি যুক্তিযুক্ত নয়? চাকরি পাওয়ার প্রাথমিক শর্তই যদি হয় বিবিএ-এমবিএ—তাহলে গোড়া থেকেই কেন আমরা সেসব বিষয় নিয়ে পড়ছি না, পড়াচ্ছি না। যে সব বিষয়ের আপাত দৃষ্টিতে কর্মজীবনে না কোনো চাহিদা আছে, না কোনো মূল্য আছে, সেসব বিষয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতাশাই শুধু বাড়বে। আমরা মনে করি না যে, শুধু বিশেষ কিছু বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই ওই সব চাকরি পাওয়ার যোগ্য আর বাকিরা লবডঙ্কা। চাকরির বাজারে কে কার থেকে এগিয়ে সেটা বুঝতে হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সব বিষয়ধারীকে আবেদনের সুযোগ দিয়ে দেখুন। কে কার থেকে ভাল তা তখনই বুঝা যাবে। যোগ্যতার বিচার আপনারা যখন সার্টিফিকেট দিয়ে করেন তখন বাকি বিষয়ধারীদের আর কিইবা করার থাকে।

যারা ২০০৪ সালে এইচএসসি পাস করেছিল তারা এখন অন্যদের তুলনায় আরো ভীষণ রকম বিপদে আছে। সরকার নির্ধারণ করেছিল গ্রেড পয়েন্ট ৫-এর মধ্যে ৩ পেলেই প্রথম শ্রেণি ধরা হবে। সেই দিক বিবেচনা করেই সব চলছিল। ইদানীং দেখা যাচ্ছে- বিজ্ঞাপনগুলোতে গ্রেড পয়েন্ট ৫-এর মধ্যে ৪ থেকে ৪.৫ চাওয়া হচ্ছে। ২০০৪ সালে বা তার আগে পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের কতজন ওরকম গ্রেড পয়েন্ট নিয়ে পাস করেছিল? তাদের বয়স শেষের পথে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই বেকার। যাওবা স্বপ্ন ছিল, এখন গ্রেড পয়েন্টের খড়গের নিচে তারা মরিমরি করছে।

চাকরির বিজ্ঞাপনগুলোতে হাতে গোনা কয়েকটা বিষয় ছাড়া বাকি বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন করার সুযোগটুকুও পাচ্ছে না। এটা সম্ভবত বেকারত্বকে মাথায় পেতে নেওয়া অগণিত ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া এ দেশের কারো চোখে পড়ে না, কারো মাথায় ঢোকে না। হাতে গোনা বিষয়গুলো ছাড়া বাকিরা যদি আবেদন করার সুযোগই না পাবে তবে বন্ধ করে দিন ওই সব বিষয় যার কোনো বাজার মূল্য নেই। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার একবার বলেছিলেন- এ দেশে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে দুটো বিষয়ে পড়তে সুযোগ দেওয়া উচিত। একটা হলো—বিবিএ-এমবিএ যা দিয়ে সে চাকরি করে খাবে, আরেকটা হলো—সে অন্তর থেকে যে বিষয়ে পড়তে ইচ্ছা করে সেটা।

বিসিএস এবং সরকারি কিছু কিছু চাকরি ছাড়া কর্ম জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। সেগুলো বাদেও পণ্য বাজারজাত করে এমন সব কোম্পানিতে মার্কেটিং-এর চাকরির ক্ষেত্রেও বাকি সব বিষয়কে মূল্যায়নও করা হয় না। গুঁড়ো দুধ বিক্রি করুন আর সয়াবিন তেল বিক্রি করুন- সব ক্ষেত্রেই হাতে গোনা কয়েকটি বিষয় ছাড়া বাকিরা যেন যোগ্যই নয়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন জেনে শুনে ওসব বিষয়ে ভর্তি করিয়ে পড়ানো হচ্ছে? এটাকি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানে না? জানার পরও কেন ওসব বিষয় চালু রয়েছে?

হয় চাকরি ক্ষেত্রে এই সব বিষয় বৈষম্য দূর করুন নয়তো চাকরির বাজারে হাতে গোনা যে বিষয়গুলো সবাই মূল্যায়ন করছে সেগুলোর বাইরের সব বিষয় বন্ধ করে দিন। কথায় বলে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। যে বিষয়ে পড়ে কর্ম জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় সেই সব বিষয়ে পড়ার চেয়ে না পড়াই কি ভাল নয়?

ঢালাওভাবে এ প্লাসের বন্যা শুরু হওয়ার আগে যারা এইসএসসি পাস করেছিল তাদের কথা বিবেচনা করে সর্বক্ষেত্রে গ্রেড পয়েন্ট ৩ প্রাপ্তদের আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে। যে কোনো চাকরির ক্ষেত্রে (ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ক্ষেত্র বিশেষ বাদে) প্রাথমিক আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ের বেড়াজাল রাখা চলবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশে ওগুলো এক একটা এনালগ সিস্টেম ছাড়া আর কিছু নয়। প্রাথমিক আবেদনের সুযোগ সবারই থাকা উচিত। তারপর ধাপে ধাপে কেউ মেধার বলে টিকে গেলে সে যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। চাই সে আরবিতেই পড়ুক আর সংস্কৃতিতেই পড়ুক। আর না টিকলে সে বিবিএ-এমবিএ হলেও বাতিল বলে বিবেচিত হোক এটাই সবার কাম্য।

মূলত আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষার বড়ই অভাব। কারিগরি শিক্ষাই বলি আর অন্যান্য বিষয় বলি- কোনোটাই মূলত এদেশের অধিকাংশ কাজের সঙ্গে খাপ খায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার পর এ দেশ যেদিন উন্নত দেশে পরিণত হবে সেদিন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছা মতো যে কোনো বিষয় নিয়ে পড়লেও কোনো সমস্যা থাকবে না। কারণ তখন কর্মসংস্থানের কোনো অভাব থাকবে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলে নীতিনির্ধারকদের আরো কড়া হতে হবে। চাকরিদাতারা কেন অন্য সব বিষয়কে আবেদনের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করছে তার জবাব চাইতে হবে। সেই সঙ্গে সরকার নির্ধারিত গ্রেড পয়েন্ট তিনের বদলে কেন ৪ বা ৪.৫ চাওয়া হচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। পাঁচটা বিষয়কে প্রধান্য দিয়ে বাকি ত্রিশটা বিষয়কে পায়ে মাড়িয়ে গেলে দেশে একদিন বেকারত্ব এতো বেড়ে যাবে যে জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তখন বেকার হয়ে বসে থাকবে। এদেশের আকাশ সেদিন বেকারের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠবে। সে ভার সইবার মতো শক্তি তো আমাদের নেই।

জাজাফী
www.zazafee.com
লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সংগৃহীত

 

আজকের রান্নার স্বাদ-১

বাড়ির অন্যতম প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো রান্নাঘর। গৃহিনীদের সারাদিনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটাতে হয় এখানে। আপনাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা আপনাদের রান্নাকে মজাদার করে তুলবে।
img20171019_184414
♦মাংসে পিঁয়াজ কুচি
মাংশ জাতীয় যে কোন খাবারর রান্না করারর সময় শেষে বেরেস্তা (পেঁয়াজ কুচি ভাজি) দিয়ে দিন। স্বাদ বেড়ে যাবে।
img20171019_184438
♦ডিম সিদ্ধ
ডিম সিদ্ধ করতে পানিতে সামান্য লবন দিন। ডিম খেতে সুস্বাদু হবে। গরমাবস্থায় ডিম ছিলবেন না, ঠান্ডা করে ছিলুন এতে খোসায় লেগে ডিম নষ্ট হবে না। আর লেবুর রস দিতে ভুলবেন না, তাহলে খোসা ছিলতে সুবিধা হবে।
img20171019_183023
♦হাড়ির ঢাকনা
চুলায় হাড়ি পাতিলে ঢাকনা থাকলে তা খালি হাতে ধরবেন না। গরম থাকলে হাত পুড়ে যেতে পারে। ঢাকনা ধরার ব্যপারে অধিকাংশ সময় আমরা সাবধান থাকি না।
img20171019_183114
♦ভর্তা
মরিচটা ভাল করে গুড়ো করুন। তারপর ভর্তার উপকরণ দিয়ে চামুচ ব্যবহার করুন।কারণ ভর্তা বানাতে মরিচ খালি হাতে ঢলবেন না, হাত জ্বলে আপনি কষ্ট পেতে পারেন।
img20171019_183147
♦মাছ ভাজি
মাছ ভাঁজতে কড়াই থেকে একটা নিদিষ্ট দূরে থাকুন। অথবা চুলা কমিয়ে দিন। মাছে পানি থাকলে কিংবা ফুটে আপনার গায়ে/চোখে তৈলের চিটকা পড়তে পারে। সাবধানে কাজ করবেন। দূর থেকে নাড়ুন।
img20171019_183225
♦শুকনো মরিচ ভাজা
শুকনা মরিচ ভাজলে বা পুড়লে বাতাসে একটা ঝাঁজ তৈরী হয় এতে হাচি, কাচি এসে নাস্তা নাবুদ হয়ে যেতে পারেন। ভাজার সময় রান্নাঘরের দরজা জানালা ভাল করে খুলে দিন। প্রয়োজনে এডজাষ্টার ফ্যান থাকলে তা চালিয়ে দিন। ছিমের পাতা মুড়িয়ে ভাজলে হাচি হয় না।
img20171019_183320
♦ভাজিতে অতিরিক্ত তেল
ভাজিতে তেল বেশী পড়ে গেলে ভাজি কড়াই, প্যানের এক দিকে সরিয়ে কড়াই/প্যান কাত করে রেখে দিবেন ১৫/২০ মিনিট। তারপর ঐ কাত করা অবস্থাতেই ভাজিগুলো বাটিতে নিয়ে নিবেন। আর ঐ বাড়তি তেল পরে অন্য ভাজিতে ব্যাবহার করতে পারবেন। মাংসের তরকারীতেও যদি তেল বেশী হয়, উপর থেকে চামচ দিয়ে তেল উঠিয়ে পরে ভাজিতে ব্যাবহার করলে ভালো লাগে।
img20171019_183354
♦রান্নার স্বাদ বাড়াতে এলাচ গুড়ো
এলাচ সম্পুর্ণ গুড়ো করে ব্যবহার করা ভাল। গোটা এলাচ কামড়ে পড়লে খাওয়ার মজাই নষ্ট হয়ে যায়। আবার এলাচ ভালো করে না ফাটালে তো সুগন্ধই হবেনা।

 

দাম্পত্য -৯

আজকে দাম্পত্যের সবচাইতে স্পর্শকাতর বিষয়টা নিয়ে লিখব, যেটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। যা নিয়ে অভিযোগ মনে আনাও পাপ, মুখে আনলে ত শেষ! এ বিষয়টা বাদ দিয়ে দাম্পত্য নিয়ে বুলি কপচানো রীতিমত হঠকারিতা, কারণ বিয়ের আগ পর্যন্ত এ নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ থাকে না।

অন্তরঙ্গতা। সোজা ভাষায় শারীরিক সান্নিধ্য। যা নিয়ে বিয়ের আগে মেয়েদের উদ্বেগ, শংকা, লজ্জা মেশানো আকাঙ্ক্ষা, আর ছেলেদের কল্পনা, পরিকল্পনা – কোন কিছুই বাধা মানতে চায়না – তা নিয়েও যে বিয়ের পরে দ্বন্দ্ব অভিযোগের অবকাশ থাকতে পারে, তা বিশ্বাস করা অবিবাহিতদের জন্য কঠিন বৈকি। বিবাহিতদের মধ্যেও অভিযোগগুলো দানা বাঁধলে তারা একরকম ধামা চাপা দিয়েই রাখতে চান। এর মূল কারণ, এসব বিষয়ে লজ্জার বাঁধ ভেঙে কথা বলা রীতিমত অসম্ভব, কারণ নিজের স্বামী/স্ত্রীর সম্পর্কে এতটা খোলামেলা আলোচনা করা তাঁকে অসম্মান করারই সামিল। তাছাড়া এমন মানুষ আশপাশে পাওয়াও বেশ কঠিন যে একই সাথে উদার মনের, সমাধান জানে, গোপনীয়তা বজায় রাখবে এবং যার সম্পর্কে বলা তাকে আগের মতই সম্মান করবে।

শারীরিক অন্তরঙ্গতা দম্পতির মাঝে এক নিগূঢ় যোগাযোগের মাধ্যম। এ যেন ছোটবেলার ‘কোড ওয়ার্ড’ দিয়ে কথা বলার মত। আশপাশে আরো অনেকে থাকলেও তাদের নিজস্ব হাসি, ঠাট্টা, ছেলেমানুষি আনন্দের ভাগ দিতে হবে না কাউকেই। শরীরি আনন্দের মূর্ছনাকে তুলনা করা যায় অনন্য সাধারণ সঙ্গীতের সাথে – যার বোদ্ধা সমঝদার পুরো পৃথিবীতে মাত্র দু’জন। শরীরের সান্নিধ্য তাই অনেক সময় মনকে আরো কাছাকাছি এনে দেয়।

কিন্তু, আর সব পার্থিব সৌন্দর্যের মতই এতেও কদাকার কুচ্ছিত বেসুরো তান ঢুকে যেতে পারে। বিয়ের আগে মিডিয়ার কল্যাণে ভালবাসার যে রূপটি আমাদের মধ্যে গাঁথা হয়ে যায়, তা ভীষণ রোমান্টিক, ভীষণ সুন্দর। সত্যিকারের জীবনে দৈহিক ভালবাসা সবসময় তেমনি করে নাও আসতে পারে। বইয়ের পাতায় বা রূপালি পর্দায় অন্তরঙ্গতা যেভাবে আসে ভালবাসার চিত্ররূপ হয়ে – বাস্তব সবসময় তেমন নাও হতে পারে। দৈহিক মিলন শুধুই কাছে আসার আকুতির প্রকাশ না, এটি একটি জৈবিক চাহিদাও। আর সব সাইকেল এর মত নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এই চাহিদাও পূরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা এখানে না। সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন স্বামী/স্ত্রী বিয়ের আগের ধরে রাখা এক মাইন্ডসেট নিয়ে আশা করে থাকেন প্রতিবারই ভালবাসা তার পূর্ণরূপ নিয়ে মহাকাব্য রচনা করবে। চাহিদা কিন্তু তার প্রয়োজন পূরণের দিকেই নিবদ্ধ থাকে, আর তার কারণে উপক্রমণিকার অংশটুকু খুব অল্প, বা অনুপস্থিত থাকতে পারে কখনও কখনও। যে মানুষটি স্বপ্নে এই সময়টুকু কে নিয়ে অনেক কাব্যগাঁথা রচনা করেছে, সে বাস্তবতার এই ধাক্কায় বিমূঢ় হয়ে যেতে পারে।

ফলাফল, ‘আমি কেবলই তার প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম, আমার প্রতি তার কোন আকর্ষণ নেই…’ এ ধরণের উপসংহার টানা। এমনকি, হীনম্মন্যতা, অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতা, তুচ্ছ কারণে অভিযোগ – এধরণের ব্যাখ্যাতীত আচরণের অনেকটাও এ ধরণের অতৃপ্তি থেকে আসে।

এখানে উভয়পক্ষকেই বুঝতে হবে, শারীরিক সান্নিধ্যের উৎস দুইটি। ভালবাসা/ কাছে আসার আকুলতা, এবং পিওর বায়োলজিক্যাল নিড। সম্পর্ক যত পুরনো হয়, প্রতিটা আবেগ প্রকাশের পেছনে মূল কারণটা বোঝা সহজ হয়ে যায়। অনেক দম্পতিই করেন কি, শরীরের প্রয়োজনে কাছে আসার আহ্বান কে শ্রদ্ধা করেন না। ভেতরে জমে থাকা রাগের ঝাল মেটান অপরজনের প্রয়োজন কে উপেক্ষা করে। ক্লান্তি, ব্যস্ততার অজুহাত দেখান। এই প্রয়োজনটুকু পূরণ করতে যেহেতু অপরজনের সহযোগিতা অপরিহার্য, তাই উপেক্ষা অনুরোধকারীকে একই সাথে আহত ও অপমানিত করে।

আমাদের দম্পতিরা অনেক সময়ই জানেন না, সাড়া না দেয়াটা কি আদৌ অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কিনা। একজন হয়ত ব্যাপারটাকে গুরূত্বই দিচ্ছেনা, আর অন্যজন আহত অহংবোধ নিয়ে মনে মনে দূরে সরে যাচ্ছে। আজকালকার দিনে অহর্নিশ মানুষকে ব্যস্ত রাখার অনেক উপকরণ আছে, তাই সঙ্গ না থাকলেও অনেক কিছুর মাঝে ডুবে থাকা যায়, সঙ্গী হয়ত টেরও পাবে না কবে সে অনেক দূরে চলে গেছে। তার মানে এই না যে, নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন দাম থাকবে না। উপেক্ষাকে একটু বদলে ‘সম্মান ও কারণ দর্শনপূর্বক অসম্মতি’ তে বদলে দিলেই দূরত্বের ভয়টা ঘুচে যাবে।

বিবাহিত মেয়েদের কমন অভিযোগ, ও আমার প্রতি আগের মত আকর্ষণ বোধ করেনা। ছেলেদের অভিযোগ ও গৃহিণী হতে গিয়ে প্রেমিকা হতে ভুলে গেছে। ভাল কাপড় পরে না, সুগন্ধি মাখে না… কিছু বললে ঘরকন্নার দশটা অজুহাত দেখায়।

এসব সমস্যার সমাধান বাইরের কারো কাছ থেকে আশা করা বোকামি। প্রতিটা দম্পতির যোগাযোগের ধরণ স্বতন্ত্র। তাই স্ত্রীকে নিজে নিজেই বুঝতে হবে, তার দাম্পত্যের জন্য কোনটা বেশি প্রয়োজন, পরিচ্ছন্ন ঘরদোর, না পরিচ্ছন্ন পোশাক আশাক। স্বামীর ও তেমনি বুঝতে হবে, একজন লেখক কেবল নিজের খেয়াল খুশিমত লিখে গেলেই পাঠকের কাছে গ্রহণীয় হয়না, পাঠকের চাহিদারও মূল্যায়ন করতে হয়। তাছাড়া সাহিত্যে ছোটগল্পের প্রয়োজন যেমন আছে, তেমনি উপন্যাসের ও আছে। একটি সার্থক উপন্যাস অনেক ছোটগল্পের প্লট তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

বাংলা মুভি- “ঢাকা অ্যাটাক”

অনেকগুল মুভি অক্টোবর মাস জুড়ে মুক্তি পাচ্ছে। প্রতিটি সিনেমাই গল্প, নির্মাণ বা স্টার কাস্ট আলাদা আলাদা। একঝাঁক সিনেমার মুক্তি কাছাকাছি সময়ে খুব কমই হয়।

মুক্তির হল ইতিমধ্যে দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’।

ঢাকায় একাধিক খুন ও বোমা বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অবস্থান চিত্রিত হয়েছে।

এই ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, এবিএম সুমন এবং কাজী নওশাবা আহমেদ।

ঢাকা অ্যাটাক হল ২০১৭ সালের বাংলাদেশি রোমাঞ্চকর নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন দীপংকর দীপন এবং রচনা করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানী সানোয়ার। ছবিটি প্রযোজনা করে থ্রি হুইলারস ফিল্মস, স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়া ও কিউ-প্লেক্স কমিউনিকেশন এবং পরিবেশনা করে টাইগার মিডিয়া লিমিটেড।

৬ অক্টোবর মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এ সপ্তাহের শেষে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দর্শকদের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে। ক্রমান্বয়ে দর্শক সংখ্যা বাড়ছে। নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন,

প্রথমটি হলো, ১৩ অক্টোবর থেকে রাজধানীর অন্যতম সিনেপ্লেক্স ব্লকবাস্টার সিনেমাস (যমুনা ফিউচার পার্ক)-এ ছবিটি প্রতিদিন পাঁচটি করে শো চলবে। যা গেল সপ্তাহে তিনটি ছিল। দীপন জানান, দর্শক চাহিদা ও চাপ সামলানোর কথা ভেবেই সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং এমন খবরে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ টিম বেজায় খুশি।
অন্যদিকে প্রথম সপ্তাহে ছবিটি সারা দেশের ১২২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও নতুন সপ্তাহে (১৩ অক্টোবর) সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০-এ। এটিও একটি সিনেমা আকাশছোঁয়া সফলতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম সিঁড়ি বলে মনে করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

দু দিনে টিকিট সেল ৭ কোটি ৪ লাখ টাকার হয়েছে ।

৭ কোটি টাকার ওপর টিকিট বিক্রি অর্থাৎ ছবিটি দুই দিনে বেশ ভালোই আয় করেছে এবং সমান্তরালভাবে ভালো আয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
সুত্র: ইন্টারনেট।

 

সম্পর্কের অ্যালফাবেট -১

IMG_20171018_022332
এই লেখাটি psychiatrist এর লেখা যার নাম Abigail Brenner। তিনি ছুটি কাটাচ্ছিলেন এমন একটা সময়ে কয়েকজন , “বৃদ্ধ বয়স্ক” কাপেলদের তিনি ইন্টার্ভিউ নেন। যারা একসঙ্গে এত বছর দাম্পত্যজীবন কাটিয়েছেন ।তাদের দাম্পত্যজীবনের রহস্য খুঁজতে গিয়েই লিখে ফেলেন এই আর্টিকেলটি—-সর্ম্পকের অ্যালফাবেট (A to Z)।
img20171018_022917
A থেকে Z পর্যন্ত প্রতিটি অ্যালফাবেটককে খুঁজে পাওয়া যাবে এই আর্টিকেলে।

সম্পর্কের অ্যালফাবেট (A to Z):

IMG_20171018_021214
♦Adaptable
(সব পরিস্থিতিতে মানানসই)

‘নিজেকে সব রকম পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলার যোগ্যতা। জীবনযাপনের জন্য এই বৈশিষ্ট্য খুব অপরিহার্য। কারণ সময়ের সাথে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে তা মেনে নেওয়ার ক্ষমতা। জীবনের ছোট বড় পরিবর্তন সহ্য করার জন্য প্রয়োজন শক্তি, দৃঢ়তা এবং মেনে নেওয়ার অদম্য ক্ষমতা।’
img20171018_015518
♦Benevolent
(শুভাকাঙ্ক্ষী বা সবার কল্যাণ প্রত্যাশা)

‘একজন আন্তরিক কল্যাণকামী মানুষই ভালবাসা শব্দটা বুঝেন সঠিকভাবে। সত্যিকার অর্থে মানুষের প্রতি মানুষের দরদমাখা ভালবাসার প্রকাশ, মানুষকে অনন্য করে তোলে। সব জীবনসঙ্গী চান তার পাশে থাকা মানুষটি প্রতিটি মুহুর্ত্বেই তার প্রতি আন্তরিক এবং সহানুভূতিশীল থাকুক।’
img20171018_015335
♦Conscientious
(কর্তব্যবোধ বা বিবেকবান)

‘সম্পর্কে হেটে নিয়ে যেতে হলে, অবিরত বা অপরিবর্তনশীল দুজনের মনোযোগ প্রয়োজন। কাজ বা দায়িত্ব, এবং কৃপনতা করা বন্ধনকে আকর্ষণীয় করার জন্য। কৃপনতা বলতে ‘আমি আমার সঙ্গীকে ভালবাসি, যা অন্য খাতে ব্যয় করার ব্যাপারে আমি ভীষণ কৃপণ।’ ভালবাসার অর্জন হল, তা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এবং সবচেয়ে পছন্দসই উপায়ে হাটতে দেওয়া।’
img20171018_015207
♦Dedicated
(নিবেদিত বা উত্সর্গীকৃত বলতে উজাড় করে দেওয়া)

‘এই গুণটি আপনার নিজের এবং আপনার একান্ত নিজের, যা হয়ত জন্মের পর পর পাওয়া গুন। আপনার প্রতিশ্রুতি, সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকার এবং নিজেকে শেয়ার করা যেখানে থাকবে পুরো শক্তি, বাসনা, এবং প্রেম যা আপনি অনুভব করবেন পাশাপাশি অন্যরা। হ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর পিছনেই রয়েছে ভবিষ্যত।’

img20171018_015058
ভালো লাগার স্বীকৃতি দেয়াটা কঠিন হোক কিংবা সহজ, পরিস্থিতি অনুকূলে থাক কিংবা প্রতিকূলে, গোপন কিংবা প্রকাশ্য, স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্ট ভালোবাসা হোক না কেন? প্রতিটি সম্পর্ক হবে প্রাণবন্ত। সর্বাবস্থাতেই ভালোবাসা হবে কল্ল্যাণকামী। ভালোবাসার মতোই ভালোবাসার ভাঁজে ভাঁজে, খাঁজে খাঁজে রাগ, অভিমান, অধিকারের অস্তিত্বও বিদ্যমান থাকবে। সম্পর্কে একটু যত্ন নিলে প্রতিটি সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।

(“সম্পর্কের অ্যালফাবেট -২” পরবর্তী পর্বের জন্য অপরাজিতার সাথেই থাকুন)
img20171018_015653
মুলে: Abigail Brenner
ফাতেমা শাহরিন

 

বউয়ের ভয়

বউ দোষারোপ করতেন, বউয়ের বিরক্তিকর খুঁতখুঁতে আচরণের জন্য দশ বছর ধরে পালিয়ে ছিলেন ৬২ বয়সের ব্রিটেনের বাসিন্দা ম্যালকম অ্যাপলগেট। বিয়ের পরে স্ত্রী বিভিন্ন উপায়ে তার জীবনকে একেবারে নাজেহাল করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিন বছর ধরে সেই খিটখিটে আর রগচটা নারীর সাথে আর কোন ভাবে থাকতে না পেরে, কোনো পথ খোলা না পেয়ে পালিয়ে যান বনে। বন বাসে জীবনকে উপভোগ করতে থাকেন তাই কাটিয়ে দেন পাক্কা ১০ বছর।

লন্ডনের ‘ইমাউস গ্রিনউইচ’ নামে একটি বাস্তুহীনদের আশ্রয়দাতা সংস্থাকে জানিয়েছেন সম্প্রতি তার জীবনের গল্পটি এভাবেই ষাটোর্ধ্ব এই বয়স্ক ভদ্রলোক।
img20171017_233906
তিনি তার বাড়ি থেকে হেটে হেটে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন কারণ তার সাইকেলটি চুরি হয়ে যায় পথে।
১০ বছর সুতরাং অ্যাপলগেটের পরিবারের সবাই ভেবেছেন তিনি মারা গেছেন। হঠাৎ ভাইয়ের কাছ থেকে এত বছর পর ফোন পেয়ে চমকে যান অ্যাপলগেটের ভাই।

অ্যাপলগেটের গল্পটি তার মুখের ভাষাতেই তুলে ধরা হয়েছে ‘ইমাউস গ্রিনউইচ’-এর ওয়েবসাইটে। সেখানে ডেইলি মেইল ​​রিপোর্টাদেরকে অ্যাপলগেট বলেন, ‘বিয়ের পর আমার জীবন দিন দিন বিশৃঙ্খল হতে থাকে। আমি যতই কাজ করতাম, আমার স্ত্রী ততই রেগে যেত। আমি বেশিক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকি, এটি সে পছন্দ করত না।’

‘তার এই কর্তৃত্বপরায়ণ ভাব দিন দিন মাত্রাধিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। আমার বউ চাচ্ছিলেন,আমি যেন কাজ কমিয়ে দেই। তিন বছর তার সঙ্গে এক ছাদের নিচে কাটানোর পর সিদ্ধান্ত নিই,নিজের ভালোর জন্যই চলে যেতে হবে। এরপর কাউকে,এমনকি আমার পরিবারকেও না জানিয়ে,আমি সবকিছু গুছিয়ে বের হয়ে যাই… একেবারে ১০ বছরের জন্য হারিয়ে যাই।’

অ্যাপলগেট আরো বলেন, ‘পালানোর পর কিংসটনের কাছে একটি জঙ্গলে আস্তানা গাড়ি। এ সময় স্থানীয় বৃদ্ধদের জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টারের বাগানে কাজ করেছি।’

‘ভালোই কাটছিল দিনগুলো। কিন্তু পরে ইমাউস গ্রিনউইচের কথা শোনার পর ভেবে দেখি, সেটিই আমার জন্য উপযুক্ত স্থান। সেখানে গিয়ে আমি একটি সাক্ষাৎকার দিই এবং থাকা শুরু করি।’

কিন্তু পরিবার ছাড়া থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে বোনকে চিঠি দেন এবং তার পরিবার তাকে খুঁজে বের করেন।
img20171017_233720
বর্তমানে তার ভাষ্যমতে,
“We now have a great relationship again.”

সুত্র: Fox News.

 

দাম্পত্য -৮

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের কোন না কোন সময়ে একটা জটিলতা সামনে আসেই, তা হচ্ছে আর্থিক দ্বন্দ্ব। হয় স্বামী যথেষ্ট খোরপোস দেয়না, অথবা স্ত্রী প্রয়োজন ও বিলাসিতার মধ্যে পার্থক্য বোঝে না, অথবা বাবার বাড়িতে টাকা পাঠানো নিয়ে সমস্যা হয়, অথবা দেনমোহর এখনও কেন দেয়নি – তা নিয়ে অসন্তুষ্টি… টাকাপয়সাজনিত দ্বন্দ্বের উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। এই বিষয়টার সবচেয়ে কঠিন দিক হচ্ছে, আলোচনাটা খুব দ্রুত উত্তপ্ত রূপ নেয়, এবং এক পর্যায়ে স্বামী/স্ত্রী এমন কোন মন্তব্য করে বসে যে অপরজন প্রায় বাকি জীবন সে দগদগে ঘা বয়ে বেড়ায়। আমার এক বন্ধু খুব সুন্দর একটা কথা বলে, (যদিও আমি তার সাথে একমত না,) সম্পর্ক হচ্ছে একটা ভাস্কর্যের মত, প্রতিটা ঘটনা একটা একটা ছাপ রেখে দেয়, এবং তা ভাস্কর্যটাকে নতুন রূপ দেয়। ওর কথা মত ধরলে আমি বলব, টাকাপয়সাজনিত উত্তপ্ত এই মন্তব্যগুলো হচ্ছে হাতুড়ির এক ঘায়ে নাক মুখ খসিয়ে দেয়ার মত। একবার মেরে ফেললে পরে গড়ে তুলতে অনেক বেগ পেতে হয়।

এই সমস্যা নিয়ে লেখা খুব কঠিন ব্যাপার, কারণ এত ডালপালা ছড়ানো যে, কাকে দিয়ে কোথা থেকে শুরু করব, সেটা বোঝাই দায়। মোটা দাগে কয়েকটা দিক আলোচনা করি, বাকিগুলো আশা করি একই ছাঁচে ফেলা যাবে।

১. মাসিক খরচের সাথে বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবধান: যে কোন কারণেই হোক, মাস শেষে আয় ও ব্যয়ের হিসাব মেলেনা। এ অবস্থায় একজন অপরজনকে অতিরিক্ত খরুচেপনা বা অতিরিক্ত কিপ্টেমির জন্য দোষারোপ করতে পারে।

২. আয়ের উপর একচেটিয়া অধিকার: স্বামী স্ত্রী দু’জনেই চাকুরিজীবি হলে নিজের আয়ের উপর কতটুকু কর্তৃত্ব থাকবে – এটা নিয়েও চলতে পারে মনোমালিন্য। এমন দেখেছি, স্ত্রী এর চাকুরির বিশ ত্রিশ বছর পরেও বেতনের টাকাটা নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়না, স্বামী প্রবর হিসেব মত ব্যাংক থেকে তুলে আনেন, এবং তাঁর বিচার বিবেচনায় খরচ করেন। আবার এমনও দেখেছি, একজনের ব্যাংক ব্যালেন্স অপরজন জানেন না, সংসারের খরচের কতভাগ কে দেবে তা নির্ধারিত হয় আয়ের উপর নির্ভর করে… এ ছাড়া কার টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে – এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার অধিকারটাও অপরজন রাখেন না।

৩. আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য বা দান খয়রাত করার ব্যাপারে উভয়পক্ষের সমর্থন না থাকা: হিংসা হোক, স্বার্থপরতাবশতঃ হোক, ক্ষোভ হোক, যথাযথ হোক – যে কোন কারণেই স্ত্রী বা স্বামী অপরপক্ষের আত্মীয় স্বজনের জন্য যে টুকু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা নিয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন না।

৪. অনেক আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে ধার নেয়া টাকা আর কখনও পরিশোধ করেন নি, বা বিয়ের দেনমোহর এখনও শোধ করেন নি, এবং এ অভিযোগগুলো উঠে আসছে জীবনের বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতে, কেবলই প্রতারণার অভিযোগ হয়ে।

বিষয়গুলো লেখার সময় আমি যেন চোখের সামনে অনেক উদাহরণ দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু লেখার ভাষায় যখন প্রকাশ করছি, নিজের কাছেই ছোট লাগছে, মনে হচ্ছে, দাম্পত্যের মধ্যে এমন সংকীর্ণতা চিন্তা করাই পাপ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্যি, সংসারের প্রথম দিকে না হলেও, কোন না কোন সময় এমন অনেক দুঃখজনক ঘটনাই ঘটে, যা কিনা হৃদয় কে স্তব্ধ করে দেয়, অপরজনের প্রতি সম্মান নামিয়ে দেয় শূন্যের কোঠায়, এর রেশ চলে বছরের পর বছর, প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে, শ্লেষাত্মক কথায় বা নির্লিপ্ত উদাসীনতায়।

সমাধান? আমি আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বলার যোগ্যতা তেমন রাখিনা। যখন সমাধান বলতে যাব তা হয়ত জটিলতার তুলনায় হাস্যকরই শোনাবে। তবু লিখছি, কারণ দাম্পত্য সিরিজের পুরোটুকুই নতুন দম্পতিদের জন্য, যারা এখনও এসব সমস্যার তুঙ্গে ওঠেন নি। তবে সচেতন না হলে একদিন যে উঠবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বর্তমান সময়ে চাহিদার সাথে সঙ্গতির সামঞ্জস্য রাখা প্রতিটা পরিবারের জন্যই খুব কঠিন। এ জন্য যেটা করা যেতে পারে, স্বামী স্ত্রী একটা সময় করে বসে নিজেদের মাসিক আয় কতটুকু সেটার সাথে সাথে কোন খাতে আয়ের কতটুকু খরচ করবেন এমন একটা বাজেট করতে পারেন। সেখানে মুদি খরচ, কাপড়, বাসা ভাড়া, চিকিৎসা – এমন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর হিসেব করে, বাকি যে টাকাটা থাকে তার কত পার্সেন্ট উপহার, বিনোদন ইত্যাদিতে খরচ করবেন সেটা দু’জনে মিলে ঠিক করতে পারেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই, এসব বিভিন্ন খাতে দু’জনের চাওয়ার পার্থক্য থাকতে পারে। স্বামী হয়ত চাইছেন আধুনিকতম ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রটা কিনবেনই, যত টাকাই লাগুক। স্ত্রী হয়ত ভাবছেন, আর যাই হোক, ফেসিয়ালের খরচটা বাদ দেয়ার কোন উপায়ই নেই। সুতরাং, প্রথমবার বাজেট তৈরি করতে গেলে এরকম খুঁটিনাটি প্রায় সবকিছু নিয়েই তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যটা স্পষ্ট হবে। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেনাকাটা বা খরচের ব্যাপারে বড়রাও ছেলেমানুষের মতই গোঁ ধরেন। ত, সেক্ষেত্রে উষ্ণ বাক্ বিতন্ডায় না জড়িয়ে অন্যজনকে তখন খুবই ঠান্ডামাথায় বোঝাতে হবে। কথোপকথনটা চাই কি এমনও হতে পারে –

‘বুঝলাম, এই মুহুর্তে একটা এস এল আর না থাকলেই নয়। কিন্তু তুমি চিন্তা কর, আমরা প্রতি মাসে সঞ্চয় করি আয়ের মাত্র বিশ শতাংশ। একটা এসএলআর প্রায় আমাদের পাঁচ মাসের সঞ্চয়ের সমান। আর সঞ্চয়ে তোমার খরচের জন্য বরাদ্দ আছে অর্ধেক, তার মানে, তুমি এখন একটা এস এল আর কিনলে আগামী দশ মাস আর কিছু কিনতে পারছ না। তুমি যদি মনে কর, এস এল আরটা দশ মাসের আর সব কিছুর ছাড়ের সমান, তাহলে কিনতে পার।

বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে কাজিনের বিয়ের দাওয়াত উপলক্ষে পার্লারে তিন হাজার টাকা খরচ করা যদি সত্যিই প্রয়োজনীয় মনে হয়, তিনি স্বচ্ছন্দে করতে পারেন, যদি তাঁর জন্য বরাদ্দ খরচের মধ্যেই থাকে। বরাদ্দের বাইরে গিয়ে করতে হলে কান্নাকাটি বা রাগারাগি নয়, যুক্তিপূর্ণভাবে আয়ের উৎসটা দেখিয়ে তারপরই করতে হবে।

শুধু বাজেট করেই ক্ষান্ত হওয়া যাবে না, প্রতিমাসের নির্দিষ্ট দিনে বসতে হবে হিসাব নিয়ে, এ মাসে লক্ষ্যের কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি। যে খাতে পারিনি, সেখানে আর কী কী পরিবর্তন আনতে হবে। এ পর্যায়ে চলবে আরেক দফা দোষারোপ.. কিন্তু তার পরেও, শেষ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্তটা নেয়া হবে, সেটা নিয়ে বাকি মাস আর কোন অভিযোগ থাকবে না। একই ভাবে, তিন চার মাস পর আবারো বিশদভাবে রিভিউ করা যেতে পারে, আদৌ আমাদের বাজেট টা বাস্তবসম্মত ছিল কি না। যদি না হয়, আনা যেতে পারে আরো বড় পরিবর্তন, চাই কি কোন মাসে সব রকমের বিনোদন কাট ছাঁট করে দিলেন, অন্য মাসগুলোর সাথে ব্যালেন্স করার জন্য। এরকম অনেক আইডিয়াই আসবে, যদি প্রতি মাসে নিয়ম করে স্বামী স্ত্রী খরচের বিষয়টা আলাপ করেন।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নিজের আয়ের উপর কতটুকু অধিকার থাকবে সেটাও অনেক সময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে স্পষ্ট থাকে না। নতুন দম্পতিদের মধ্যে অনেকে এটাই বুঝে উঠতে পারেন না, জয়েন্ট একাউন্ট না রেখে আলাদা একাউন্ট করতে চাওয়াটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কি না। আবার ‘আমি রোজগার করি, আমি খরচ করি – এখানে তুমি বলার কে?’ এমন ভাবভঙ্গিও থাকে অনেকের। আমি বলছি না, এর কোনটাতেই কোন সমস্যা আছে। যদি স্বামী স্ত্রী উভয়েই কোন একটা নির্দিষ্ট সেটিং এ স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তাহলে এখানে বলার কিছু নেই। তবে আমার মনে হয়, সংসারের গোড়ার দিকেই এ বিষয়ে কার দৃষ্টিভঙ্গি কী – সেটা স্পষ্ট জেনে নেওয়া ভাল, তা না হলে অকারণে দুঃখ পেতে হবে।

শেষ যে ব্যাপারটায় জোর না দিলেই নয় – স্বামীর বা স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল অনেক আত্মীয় থাকতে পারেন, বিশেষ করে বাবা মা ভাই বোন – এদের জন্য খরচ করাটা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এই ন্যায়সঙ্গত কাজটাকেও রীতিমত জুলুমের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন অনেকে, যদি আগে থেকেই এখানে সীমারেখা টানা না হয়। কীভাবে এই ভাল কাজটি জুলুম হয়ে যেতে পারে? যদি আপনি এ কাজগুলোতে আপনার জীবনসঙ্গীকে অংশীদার না করেন, তবে একটা সময় তার মনে অভিমান হতে পারে, ‘আমি কি এতই খারাপ, যে আমাকে জানিয়ে করলে আমি বাধা দিতাম?’ তারপর এই অভিমান থেকেই শুরু হবে মুখ গোমড়া করা, অকারণে কঠোর বাক্য বিনিময় – ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাল কাজ মিলে মিশে করার মধ্যে খুব বড় রকমের আনন্দ আছে, এবং তা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তাই বলি, রোজগার আপনার নিজের হলেও, আত্মীয় আপনার রক্তের সম্পর্কের হলেও, জীবনসঙ্গীর অনুমতি চান, এতে করে সে সম্মানিত বোধ করবে। আর আপত্তি করলে, আপত্তির কারণ জেনে তা নিয়ে কথা বলতে পারেন, বা আপনার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে না হলে পাত্তা না দিতে পারেন, তবু যে আপনি অনুমতি চাইলেন, এটাই অনেক বড় প্রভাব রাখবে আশা করি।

সত্যি বলতে কী, দাম্পত্যের আনন্দগুলোর অনে…ক রকমের রং, রস, রূপ রয়েছে। কেন জানি আমরা অস্বচ্ছলতাকে অজুহাত বানিয়ে এরকম সব আনন্দের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে চাই। মানি, অর্থ না থাকলে অনেক স্বপ্নই পূরণ হয়না, অভিযোগের ঝুলিটাও ভারি হতে থাকে। কিন্তু সরবরাহ যেখানে সীমিত, ব্যবস্থাপনার ত সেখানেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সফল ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হচ্ছে ম্যাচিউর কমিউনিকেশন। আর্থিক ব্যাপারস্যাপারগুলো নিয়ে বসলেই এ জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়। তাই বলি, এধরণের আলোচনার প্রয়োজনীয়তাটা শুধু টাকাকড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না, পরস্পরকে বুঝতেও অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

‘নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি’- অভিনয় ছেড়ে ইসলামের পথে হাটব

নূর বুখারী (৩৫) পাকিস্তানের শোবিজ অঙ্গন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী এবং টিভি হোস্ট। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছেন।

মূলত তার হিজাব পড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তিনি তার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেন।

কে এই নূর বুখারী:

নূর বুখারী (লাহোর, পাঞ্জাবী, উর্দু) একজন পাকিস্তানি অভিনেত্রী, পরিচালক এবং মডেল। তিনি উর্দু এবং পাঞ্জাবি লোলিউড চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন সম্প্রচারে কাজ করে আসছেন দীর্ঘ দিন। তিনি মুলত তার ছবি “ইসক পজেটিভ” মধ্যে “রাজ্য” চরিত্রের জন্য বিখ্যাত।

নূর বুখারী ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানী চলচ্চিত্রে একটি শিশু তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে তার অভিনয় কর্মজীবন শুরু করেন। ইদানীং তাকে ঘিরে সাংবাদিক মহলে গুন্জন শোনা যাচ্ছে। কারণ তিনি হিজাব পরিধান অবস্থায় কয়েকটি ছবি প্রকাশ করনে।

জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী বলছেন যে, তিনি ভবিষ্যতে কোনো সিনেমা বা টিভি শো না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।

চতুর্থ বারের মত, কয়েক সপ্তাহ আগে তার বর্তমান জীবনসঙ্গীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ভাবা হচ্ছে।

জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’কে বলেন, ‘আমি এমন একটি সময় অতিক্রম করছি; যেটি আমাকে মানসিক আঘাত এবং অন্যান্য কষ্টের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছে। এ সম্পর্কে আর ভাবতে চাই না আমি।’

সাক্ষাৎকারে তিনি তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। ইসলাম সম্পর্কে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন। নূর বুখারী বলেছেন, ‘ইসলামের পথে আসতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়ার বিষয়টি ব্যক্তি চাইলেই বাছাই কৃত হতে পারেন না, বরং আল্লাহই আপনাকে যদি পছন্দ করেন তবেই সম্ভব। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে পছন্দ করেন।’

পাকিস্তানি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ‘ললিউডে’ নূর বুখারী তার ক্যারিয়ারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি যে কোনো পেশার মাধ্যমেই খ্যাতি ও শ্রদ্ধা অর্জন করা যায় এবং আমি আমার কঠোর পরিশ্রম ও সততার কারণেই ললিউডে এই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছি।’

তবে, দর্শক নন্দিত এই তারকা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে চলচ্চিত্রে সাফল্য উপভোগ সত্ত্বেও তিনি আর শোবিজ জীবনে ফিরছেন না।

তিনি বলেন, ‘আমি চলমান সকল প্রকল্প থেকে ইতিমধ্যে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি এবং এতে আর অংশ নিচ্ছি না।’

তিনি জানান, তিনি এখন নিয়মিত হিজাব পরছেন এবং হিজাব ছাড়া কখনো ঘর থেকে বাইরে বের হবেন না। এটায় তার সিদ্ধান্ত।

নূর বুখারী এখন থেকে কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমূহ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন পরিবর্তিত নারী। আমার দর্শনসমূহও পরিবর্তিত হয়েছে। আমার পরিশ্রম আমাকে আল্লাহ’র কাছাকাছি নিয়ে এসেছে এবং আমি আমার এই রূপান্তর সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার পাশাপাশি, এই পথ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুষ্ঠান করবো। বিশেষত ইসলামিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে শিখব।’

সূত্র: উইকিপিডিয়া, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এবং
নিয়ো।

 

প্রতিটি সন্তানকে ভালবাসুন সমানভাবে….

শিশুর আগমনী বারতা অবশ্যই সবাইকে করে আনন্দে উদ্বেলিত। কিন্তু, যদি তা হয়,দ্বিতীয় /তৃতীয় সন্তান,তবে আনন্দের পাশাপাশি তা কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে আমাদের।প্রথম সন্তান দ্বিতীয় সন্তানকে কিভাবে নেবে,
তা নিয়ে বাবা মাদের চিন্তার শেষ নেই। এটা খুব কমন যে,

প্রথম সন্তান-
প্রচন্ড রেগে যাচ্ছে,বলছে,ওকে রেখে আসো/ফেলে দিয়ে আসো /তোমরা আমাকে একটুও ভালোবাসো না।
আবার,বাবামার অগোচরে,বড় সন্তান অনেক সময় ছোট সন্তানকে মার দিয়ে বসে।
কিছু ক্ষেত্রে,এমনও হয়,বড় সন্তানের (বয়স ৩-৬) খাওয়া,ঘুম,টয়লেট ট্রেনিং সব অভ্যাস এলোমেলো হয়ে যায়।
বাবা মায়েরা হয়ে পড়েন দিশেহারা।কি করবেন।একদিকে নতুন শিশুর জন্য মায়ের শরীরও থাকে ক্লান্ত।বাবাও দৌড়াদৌড়ি করে হয়ে থাকেন বিধ্বস্ত।
এসময়,বাবা মায়ের একটু চতুর সিদ্ধান্তই দুই সন্তান লালন পালনে করতে পারে বেশ সাহায্য।কিছু টিপস

ছোট সন্তানের আগমনী বারতা শুরু থেকেই আপনার বড় সন্তানকে দিন।হতে পারে গল্পের ছলে/রোল প্লেয়িং খেলার মাধ্যমে/পুতুল খেলার ছলে।ওকে তৈরি করুন,হুট করে যেন কিছু না হয়।

বড় সন্তান রেগে গেলে,তার রাগ প্রকাশ করতে চাইলে,তার কথা শুনুন।যেমন,সে যদি,বলে,আমার কোন ভাই বোন না থাকলেই ভালো হত।আপনি বলুন,আসলেই,আমারো ছোট বেলায়,এমন মনে হত।মাঝে মাঝে,বাবা মা শুধু আমারো একা পেতে ইচ্ছে করত। – আপনার এটুকু কথা,এটকু আশ্বাস আপনার সন্তানের মন ভালো করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

কখনওই বড় সন্তানকে জোড় করবেন না,ছোট সন্তানকে ভালোবাসার জন্য।ওকে নিজে বুঝতে দিন।একা থাকলে/কিছু না করার মত সময়ে,ওরা দুজন খেলার সংগি হবে, এটা উপলব্ধি করতে দিন।

প্রতিটা শিশুরই ইমোশনাল ব্যাগটা ভালোবাসায় পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। এটা কঠিন,যে,একে তো নতুন শিশুর ঝক্কি,তার উপর,আরেকজনের রাগ জেদ সহ্য করা।কিন্তু,আমাদের বাবা মায়েদের নিজেদের সন্তানদের ভালোর জন্য আমাদের সহ্য শক্তি বাড়াতে হবে।প্রতিদিন বড় সন্তানকে আপনার একান্ত কমপক্ষে দশ মিনিট সময় দিন।শুধু আপনি আর সে। তাকে বলুন আপনি তাকে ভালোবাসেন।তাকে জড়িয়ে ধরুন।আদর করুন।তার কথা,গান,কবিতা শুনুন,ঠিক আগের মত করে।

দু’সন্তান এক সাথে কান্না জেদ করলে,আপনি নিজে আগে,বড় করে একটু শ্বাস নিন।তারপর, বড় সন্তানকে আদর করুন,এবং,তাকে বলুন,ছোট্ট বাবু কষ্ট পাচ্ছে,ওকেও আদর করতে হবে।দু জনকে এক সাথেই আদর করতে চেষ্টা করুন।

মূলত,ছোট শিশুটি বুঝবেনা/মনে রাখবে না,আপনি কাকে আগে কোলে নিয়েছেন, আদর দিয়েছেন। কিন্তু,আপনার বড় সন্তানটি মনে রাখবে।এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।আপনার প্রতি আস্থা বাড়বে।আর একবার,সে তার আস্থা ফিরে পেলে,ছোট ভাই/বোনটিকেও সে আপন করে নিবে।

ছোট সন্তানের কাজে বড় সন্তানকে নিয়োজিত করুন/হতে দিন।এবং তার প্রশংসা করুন এ জন্য।তাকে আরো উৎসাহ দিন।আর বড় সন্তান যদি,তার সব কাজে খুব বেশি আপনার সাহায্য চায়,নিজেকে অনবরত বলতে থাকুন,এ সময় খুব দ্রুতই পার হয়ে যাবে।আর সন্তানকে সাহায্য করতে চেষ্টা করুন।

দুই সন্তানকে কাছাকাছি রাখতে চেষ্টা করুন।ধরুন, বড় জনকে,গল্পের বই/খেলনা দিয়ে ছোট জনের কাছেই রাখুন।আপনি দুজনকে দেখতে থাকুন।

বড় সন্তান,ছোট সন্তানকে চিমটি/খামচি দিতে চাইলে/মারতে চাইলে,আপনি নিজে দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে দৃঢ় স্বরে বলুন,তুমি ওকে মারবে না।পরে আদর করে,বুঝিয়ে বলবেন।
বড় সন্তানকে শাস্তি /মার দিয়ে কোন লাভ হয় না।এতে তার মনের ক্ষোভ বাড়বে।সে আরো অবাধ্য হয়ে উঠবে।

দুই সন্তানের মাঝে বন্ধুত্ব স্থাপনে আপনার ভূমিকাই প্রধান।বড় সন্তানটির একটিই ভয়,বাবা মা তাকে আর আগের মত ভালোবাসবে না।এর মূল মন্ত্র একটিই,ভালোবাসুন।আদর করুন। গুরুত্ব দিন।

পজেটিভ প্যারেন্টিং
ট্রেইনার গ্রুপ,
লাইফস্প্রিং(মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট),ঢাকা
https://www.facebook.com/lifespringinstitute/

 

রূপের জন্য রূপচর্চা…

ত্বক
2017-10-14_14.41.22
♣♣♣সমপরিমান তুলসী পাতার রস ও লেবুর রস
একসঙ্গে মিশিয়ে দুই বেলা নিয়মিত দিতে পারেন।
দাগ কমে যাবে।
2017-10-14_14.44.26
♣♣♣অতিরক্ত শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে মধু,
দুধ ও বেসনের পেষ্ট মুখে লাগান নিয়মিত।
এতে ত্বকের বলিরেখা ও দূর হয়ে যাবে।
2017-10-14_14.47.56
♣♣♣টমেটোর রস ও দুধ একসঙ্গ মিশিয়ে মুখে লাগালে রোদে জ্বলা কমে যাবে।
img20171014_145457
♣♣♣মুখের ব্রণ আপনার সুন্দর্য নষ্ট করে। এক্ষেত্রে রসুনের কোয়া ঘষে নিন ব্রণের উপর। ব্রণ তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যাবে।

ঠোট
img20171014_145554
♣♣♣ঠোটেঁ কালো ছোপ পড়লে কাঁচা দুধে তুলো ভিজিয়ে ঠোটেঁ মুছবে এটি নিয়মিত করলে ঠোটেঁর কালো দাগ উঠে যাবে।

হাত
images(132)
♣♣♣হাড়িঁ-বাসন ধোয়ার পরে হাত খুব রুক্ষ হয়ে যায়। এজন্য বাসন মাজার পরে দুধে কয়েক ফোঁটা লেবু মিশিয়ে হাতে লাগান। এতে আপনার হাত মোলায়েম হবে।
2017-10-14_15.11.42
♣♣♣কনুইতে কালো ছোপ দূর করতে লেবুর খোসায় চিনি দিয়ে ভালো করে ঘষে নিন। এতে দাগ চলে গিয়ে কনুই নরম হবে।
images(137)
♣♣♣যাদের হাত খুব ঘামে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লাউয়ের খোসা হাতে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।

পা
img20171014_145437
♣♣♣পায়ের গোড়ালি ফাটলে পেঁয়াজ বেটে প্রলেপ দিন এ জায়গায়।
img20171014_145355
♣♣♣হাত পায়ের সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখতে হাতে ও পায়ে আপেলের খোসা ঘষে নিন। এতে হাত ও পা অনেক বেশী সতেজ দেখাবে।

সাবিরা নাজনীন রুমী

 

Confidence বা আত্মবিশ্বাস -১

Confidence শব্দটা কিন্তু বেশ জটিল।
আসুন আগে জানি কত ধরণের অর্থ বহন করতে পারেন তিনি,
img20171012_185145

♦নিজেকে এবং নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে বিন্দু মাত্র সন্দেহ পোষণ না করে, নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করা

♦নিজের অস্তিত্ব বা অনুভূতিকে বিশ্বাস করা

♦খুব সুন্দর আস্থাবান সম্পর্ক গড়ে তোলা

♦Confidence হচ্ছে কোন ব্যক্তির মাঝে থাকা একটি সুপ্ত প্রতিভা যার বিনিময়ে অন্যান্যরা সেই ব্যক্তিকে ভালবাসে।
img20171014_022829
বর্তমান সমাজে Confident হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আর এ কারণে Confidence এর উপর কয়েকটি পর্ব লিখার চিন্তা চলছে।
আসুন জানি
img20171012_185734What Is Confidence”
খুব সাধারণ একজন ব্যক্তির সফল হবার যোগ্যতার প্রতি নিজের প্রতি নিজের যে বিশ্বাস তাই হচ্ছে Confidence. Confidence কেউ কাওকে দিতে পারে না, নিজে নিজেই অর্জন করতে হয়। যেকোনো কাজে সফল হতে হলে Believe in Yourself হওয়া কোন বিকল্প নেই।

Believe in Yourself
আজকের পর্বটাতে নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
img20171014_023206
Confidence অর্জন করা কোন এক বা একাধিক আর্টিকেল এর ব্যাপার নয়। ব্যাপার হচ্ছে দীর্ঘদিনের চর্চা এবং অভ্যাস।

♦♦আপনি বিশ্বাস করুন, কাজটি আপনি সবচেয়ে সুন্দরভাবে করতে পারবেন
img20171014_022956
সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হচ্ছে Confidence। সুতরাং নিজেকে আগে বিশ্বাস করতে হবে। অনেকে আছেন যারা Confidence অন্যের মাঝেই দেখতে ভালবাসেন। নিজের ভিতরের অভাবকে না দেখে। নিজেই নিজেকে তুলে ধরতে পারেন হবে।

img20171010_080942
♦♦নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন

♦পোষাক,
পরিচ্ছন্নতা, হালকা সুগন্ধী আপনার স্মার্টনেস কেবল অন্যের চোখেই না আপনার নিজের চোখেও নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

♦হাটা
মেরুদণ্ড সোজা ও মাথা উচু করে হাঁটুন। মাথা নিচু করে কুজো হয়ে হাঁটবেন না।

♦কথা বলুন চোখের দিকে তাকিয়ে
যখনই কারো সাথে কথা বলবেন তার চোখে চোখ রেখে কথা বলা।

মানুষজনের সাথে মিশুন ও নেটওয়ার্ক বাড়ান।
img20171014_022905

(Confidence এর সাথে প্রতিটি পর্ব পড়ুন।যে কোন একটা পর্ব আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতা” সাথে থাকুন)
রেফারেন্স:Psychology Today, Google, Wikipedia.

Fatema Shahrin
psychology