banner

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 420 বার পঠিত

 

যেন মিনি কক্সবাজার

ঢাকার একেবারে কাছে। দোহারের কার্তিকপুরের যে জায়গাটি পদ্মাপাড়ে গিয়ে মিশেছে তার নাম মৈনটঘাট। এখানে ডানে-বাঁয়ে বালু চিকচিক করা স্থলভূমি থাকলেও সামনে শুধু রুপোর মতো চকচকে পানি। এটা পদ্মা, আমাদের প্রিয় পদ্মা নদী। মৈনট পদ্মাপাড়ের একটি খেয়াঘাট। এখান থেকে প্রতিদিন ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। খেয়া পারাপারের জন্য জায়গাটির পরিচিতি আগে থেকেই ছিল। তবে এখন সেটা জনপ্রিয় বেড়ানোর জায়গা হিসেবেও। এত দিন অনেকটা আড়ালে থাকলেও ঢাকার কাছে বেড়ানোর ‘হটস্পট’ এখন এই মৈনটঘাট। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া মৈনটঘাটের নতুন নাম হলো—মিনি কক্সবাজার!
প্রমত্তা পদ্মার হাঁকডাক আগের মতো না থাকলেও যা আছে সেটাই বা কম কী! বিশাল পদ্মার রূপ মৈনটঘাট এলাকায় বিস্ময়-জাগানিয়া। একটু পরপর পদ্মার ঢেউ কূলে আঁছড়ে পড়ছে। খানিক পরপর মাছ ধরার ট্রলার ছুটে চলে যাচ্ছে। তীরে সব ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়। তাঁদের কেউ কেউ মাছ ধরার নৌকা দেখে মাছ কেনার জন্য এগোচ্ছেন। দরদাম ঠিক থাকলে অনেক পর্যটক মাছ কিনে নিচ্ছেন। পুরো নদীর তীর ও তার আশপাশের এলাকা সমুদ্রসৈকতের মতো করে সাজানো। এখানে সকালবেলাটা খুব ভালো কাটে, দুপুর কিছুটা মন্থর, তবে বিকেলবেলা অনেক বেশি জমজমাট। সোনা রোদের গোধূলিবেলার তো কোনো তুলনাই চলে না।
মৈনটপাড়ের দোকানপাটে বেচাকেনা আর পদ্মার জলে ঘুরে বেড়ানো। পদ্মার দুপাশের বিস্তীর্ণ ভূমি আর পদ্মার ঢেউ আছড়ে পড়ার দৃশ্যে আপনার সমুদ্র ঊর্মিমালার কথাই মনে হবে। আপনি হেঁটে হেঁটে চলে যাবেন বহুদূর। এখানে পদ্মার জলে পা ভিজিয়ে গল্প করার মজাই আলাদা!
সরাসরি বাস মৈনটঘাট চলে আসে। যাদের নিজস্ব বাহন আছে, তাদের তো কথাই নেই। বাস বা নিজস্ব বাহন থেকে নেমেই চোখে পড়বে নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসা অনেক দোকানপাট। খাবারের দোকান তো আছেই। এসব পেছন ফেলে সামনে গেলেই পাবেন বিশাল পদ্মা। এতটা বিশাল যে ওপারের কিছুই দেখা যায় না, দেখা যায় না ডান-বাঁয়ের কোনো বসতি। এখানে ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। চাইলে ট্রলারে চেপে ওপারের চরভদ্রাসন থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। আবার ঘণ্টা চুক্তিতে ট্রলার বা স্পিডবোট ভাড়া করে পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াতে পারেন। যা-ই করেন এখানে সময়টা কিন্তু বেশ কাটবে!

.দরকারি কথা
মৈনটঘাট সারা দিনের ট্যুর। দিনে গিয়ে দিনেই ফেরত আসতে পারবেন। ঢাকার গুলিস্তানের মাজারের সামনে থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। যমুনা নামের এই বাসটি আপনাকে ঠিক দেড় ঘণ্টায় মৈনটঘাট পৌঁছে দেবে। ভাড়া ৯০ টাকা। তবে দলবেঁধে মাইক্রোবাস নিয়ে গেলে দারুণ একটা পিকনিক পিকনিক ভাব পাবেন। মৈনটঘাট তো অবশ্যই যাবেন। দেখে আসতে পারবেন কোলাকোপা বান্দুরার সব ঐতিহাসিক স্থাপনা, আলালপুর তাঁতপল্লি ও হাছনাবাদ জপমালা রানির গির্জা! খাবার নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। মৈনটঘাটেই রয়েছে ছাপরাঘরের মতো কিছু ভালো রেস্তোরাঁ। একেবারে ঘরের খাবারের স্বাদই পাবেন। বাচা মাছ, চিংড়ি আর পদ্মার ইলিশে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
সচেতনতা
বলা হয় প্রমত্তা পদ্মা। তার আগের সে রূপ না থাকলেও হালকাভাবে নেবেন না। এখন নদীতে গোসল করা নিষেধ। কেউ গার্ডের অবাধ্য হয়ে কিছু করবেন না। পানিপথে যাতায়াতে বা ট্রলারে ঘুরে বেড়ানোর সময় একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সম্ভব হলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখবেন। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, আপনার বা আপনার ভ্রমণসঙ্গীদের দ্বারা পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কোনো কিছু অবশ্যই করা চলবে না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় এমন কিছু ফেলে আসবেন না।

Save

Save

Save

Facebook Comments