banner

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 401 বার পঠিত

মেয়েদের জন্য পেশা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

 1525404_1448245098730288_1597213802_n
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং! শোনা মাত্রই গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ভারী ভারী যন্ত্রের কথা মাথায় চলে আসতে পারে অনেকেরই। আর অ্যাডমিশন টেস্টের সময়টাতে এই ইউনিভার্সিটি-সেই ইউনিভার্সিটি-এই সাবজেক্ট-সেই সাবজেক্টের হাতছানিতে দ্বিধায় পড়ে যায় ছেলেমেয়েরা। মেয়েদের মধ্যে যারা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-কে ক্যারিয়ার সূচনার মূলমন্ত্র হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী তাদের চোখেমুখে যেন কনফিউশনের ছাপটা একটু বেশিই লেগে থাকে! সত্যি কথা বলতে কি, সব ইঞ্জিনিয়ারিং-ই মেয়েদের জন্য একটু টাফতো বটেই। তাই বলে কি মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়বে না? নাকি পড়ছেনা?? মেয়ে বলে পিছিয়ে পড়লে চলবে কেন?

অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং যদি পড়তে পারো তবে নির্দ্বিধায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংও পড়তে পারবে। তোমার মেধা আর মনোবলটাই আসল, আর কিছুনা। তাছাড়া আগের তুলনায় এখন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মেয়েদের সংখ্যা চোখে পড়ার মত। টেক্সটাইলে পড়তে আসবে কিন্তু মেয়ে বলে ভয় পাচ্ছো? জেনে নাও টেক্সটাইল সেক্টরে সফল মেয়েদের কিছু কথা।
 
আজিজা রহমান। বাংলাদেশের প্রথম মেয়ে টেক্সটাইল প্রযুক্তিবিদ। তিনি ছিলেন বগুড়ার মেয়ে। ১৯৮১-৮২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কলেজ অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি হতে টেক্সটাইল প্রযুক্তিতে ৪ বছর মেয়াদী ডিগ্রী কোর্সে শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন।
 
ড. হোসনে আরা বেগম। বুটেক্সের একজন সহকারী অধ্যাপিকা এবং ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের প্রধান। কলেজ অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে পড়াশুনা করেছেন।  ITETএর একজন নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি।
 
তারান্নুম আফরীন। বুটেক্সের গর্ব। শৈশবের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন ঢাকার মগবাজারে। পেশা হিসেবে তার প্রিয় কাজটি হচ্ছে গবেষণা। গান এবং বিতর্ক করতে পছন্দ করেন। ১৬তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কে প্রথম হয়েছিলেন টেক্সটাইল কলেজে পড়ার সময়। বর্তমানে পি.এইচ.ডি. করছেন অস্ট্রেলিয়ার Deakin বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার গবেষণার বিষয় ”বাঁশের আঁশের প্রস্তুতির পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি উদ্ভাবন ও এর বহুমুখী ব্যবহার”। টেক্সটাইল বিশ্বে তার এই গবেষণা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং প্রকাশ পেয়েছে বেশ কয়েকটি প্রচার মাধ্যমে।
 
আরো উদাহরণের কি দরকার আছে? মনে হয় না। টেক্সটাইল থেকে পড়াশুনা করে যে মিল-ফ্যাক্টরিতেই কাজ করতে হবে এমন কোন কথা নেই। ইউনিভার্সিটি লেকচারার হতে পারো, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করতে পারো, কর্পোরেট জব করতে পারো, এমনকি নিজেই হয়ে যেতে পারো একজন উদ্যোক্তা! আর একটা কথা মাথায় রেখো, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়লে কর্মক্ষেত্র হিসেবে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্ব রয়েছে তোমার সামনে।
 
 
টেক্সটাইল সেক্টরকে বলা হয় বাংলাদেশের ”সোনার ডিম পাড়া হাঁস”। বিগত সময়ের রাজনৈতিক ডামাডোল আর একটার পর একটা দূর্ঘটনার কারণে আমাদের টেক্সটাইল সেক্টর কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ঠিকই তবে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা মোটেই অসম্ভব কিছুনা। আর টেক্সটাইল শিল্প এমন একটি শিল্প যার ধ্বংস নেই। এখানে ধ্বংস হলে তা অন্য জায়গায় গড়ে উঠবে, উঠবেই। ইতোমধ্যে মায়ানমার, ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া সহ আরো অনেক দেশ টেক্সটাইল শিল্প নিয়ে জোরেসোরেই কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
 
সুতরাং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়বে কি না তা নিয়ে দ্বিধায় থাকলে এখনি তা ঝেড়ে ফেলো আর হয়ে যাও টেক্সটাইল বিশ্বের একজন গর্বিত সদস্য। আমাদের জগতে স্বাগতম, অনেক শুভকামনা রইলো ।
 
লিখেছেন- তনিমা রহমান,৩৯তম ব্যাচ,বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
Facebook Comments