banner

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 210 বার পঠিত

রসনায় পয়লা বৈশাখ

 

সা বি রা সু ল তা না : কয়েক দশক আগ থেকে পয়লা বৈশাখে পান্তাভাত, ইলিশ ভাজা ও বিভিন্ন ভর্তাসহযোগে খাওয়ার প্রচলন ব্যাপকভাবে শুরু হয়। এর আগেও বিভিন্ন ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো।

 

সব খাবারের মধ্যে মূলত মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া ও আপ্যায়নে ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন জায়গার নামকরা মিষ্টি অনেকেই আনাতেন অতিথি আপ্যায়নের জন্য। যেমন জামতলার রসগোল্লা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, মুক্তাগাছার মণ্ডা এরকমের দেশের বিভিন্ন জায়গার প্রসিদ্ধ মিষ্টি অনেকেই ব্যবস্থা করতেন। মূলত হালখাতা অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের জন্য ব্যবসায়ীরা এসব মিষ্টির ব্যবস্থা করতেন। অতিথি আপ্যায়ন ছাড়াও আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের মধ্যেও মিষ্টি বিতরণ করার রীতি ছিল।

 

এ ছাড়া বাড়িতে রান্না করা হতো বিভিন্ন ধরনের পায়েস, পিঠা, নাড়–, হালুয়া প্রভৃতি।

 

 

বৈশাখের প্রথম দিনে মেলা বসত। সেই মেলায় মাটির তৈরি অনেক খেলনা বিক্রি হতো। তার সাথে দেশীয় খাবার, খই, মুড়ি, মুড়কি, জিলেপি, তিলের খাজা, মুরালি, চিঁড়ার মোয়া, মুড়ির মোয়া থেকে শুরু করে আরো অনেক ধরনের খাবার বিক্রয় হতো, যেগুলো একেবারে আমাদের গ্রামবাংলার নিজস্ব খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল।

 

এই মেলায় আরো একটি খাবার বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল। সেটি হলো চিনির খেলনা। অর্থাৎ চিনি দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বানানো হতো হাতি, ঘোড়া, ময়ূর, পাখি, শাপলা প্রভৃতি। এগুলো এ মেলার একটা বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিচিত ছিল।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলা নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছে নতুন উদ্যোমে। পান্তাভাত আর ইলিশ ভাজার প্রচলনও শুরু হয়েছে তখন থেকেই। সময়ের সাথে সাথে এই রেওয়াজ এখন বেশ পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। এখন পয়লা বৈশাখ মানেই পান্তাভাত আর ইলিশ ভাজা থাকতে হবে। সেই সাথে যোগ হয়েছে নানা রকম ভর্তা। শুঁটকি ভর্তা, মরিচ ভর্তা, কাঁচকলা ভর্তা, লাউপাতা ভর্তা, টমেটো ভর্তা, বেগুন, সর্ষে ভর্তা, কালোজিরার ভর্তার এভাবে ভর্তার একটা দীর্ঘ তালিকা তৈরি করাই যায়। বছরের অন্য সময়গুলোতে ভর্তা তেমন খাওয়া না হলেও এ দিনটিতে বাঙালি বেশ উৎসাহ নিয়েই ভর্তা খেয়ে থাকে।

 

তবে পয়লা বৈশাখে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ইলিশ মাছ। ইলিশ ছাড়া যেন এখন আর পয়লা বৈশাখ উদযাপন ভাবাই যায় না। সময়ের সাথে সাথে ইলিশ খাওয়ায়ও এসেছে বৈচিত্র্য। শুধু ভাজা দিয়ে এখন আর না। সেই সাথে যোগ হয়েছে সর্ষে ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পোলাও আরো কত কী। ইলিশের এত পদ বাঙালির রসনাকে নতুনা করে পরিতৃপ্ত করে।

 

আধুনিক সময়ে পয়লা বৈশাখে খাবারের তালিকা বেশ দীর্ঘ হয়েছে। বাঙালির প্রাচীন রান্নার অনেক খাবার নতুন করে এখন বেশ প্রচলিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আমডাল, আম-তেঁতুলের শরবত, আমের ভর্তা, চিঁড়ার নাড়–, তিলের নাড়–, গুড়ের সন্দেশ, পায়েস, তরমুজের ঠাণ্ডা, সবজি নিরামিষ, সর্ষে ইলিশ, আমের লাচ্ছি, কাঁচা আমের সালাদ, লাউপাতার ভর্তা, কাঁচা আম, বাতাসি চচ্চড়ি, চালের চচ্চড়ি, সজনে ডাল, লাউয়ের খাট্টা আরো অনেক কিছু। পয়লা বৈশাখ আরেক আকর্ষণ কাঁচা আম। কাঁচা আম দিয়ে নানা রকমের খাবার খাওয়া হয় বৈশাখের প্রথম দিনটিতে।

 

সেই সাথে নানা রকম মিষ্টি ও মিষ্টি খাবারও যোগ হয় নববর্ষে উদযাপনের খাবারের তালিকায়। বাংলার প্রাচীন খাবারের ঐতিহ্য নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়েই উদযাপিত হয় আমাদের বাংলা নববর্ষ, পয়লা বৈশাখ।

 

অপরাজিতিবিডি ডটকম/আরএ/এ/১৮এপ্রিল,২০১৪

Facebook Comments