banner

শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 15, 2025

 

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান -৪


কানিজ ফাতিমা


‘দরাবা’র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে। ইবনে আব্বাস দরাবার ব্যাখ্যা করেছেন “মিসওয়াক বা মিসওয়াকের ন্যায় কোন কিছুর (যেমন টুথব্রাশ বা পেন্সিলের) হালকা আঘাত”।
অন্যদিকে কিছু ইসলামী আইনবিদ যারা ফতোয়া দিয়েছেন যে “বিশটি বা চল্লিশটির বেশী আঘাত করা (পিটানো) যাবে না”।
অনেকে বলেছেন শুধু মাত্র মেরে ফেলা বা আহত করা ছাড়া সবই সিদ্ধ (wounds and murder)।

যদি আমারা দরাবার ব্যাখ্যা মিসওয়াক বা মিসওয়াকের ন্যায় কোন কিছুর (যেমন টুথব্রাশ বা পেন্সিল) হালকা আঘাত হিসাবে নেই যেমনটি ইবনে আব্বাস নিয়েছেন তবে এই ব্যাখ্যাটি দ্বারা ‘শাস্তি প্রদান’ কে বোঝায় না । বরঞ্চ এরূপ হালকা আঘাত [ যা কোন ব্যাথা বা আতঙ্কের সৃষ্টি করে না ] স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অসন্তোষ ও হতাশা বোঝানোর একটি বাহ্যিক প্রকাশ মাত্র। স্পর্শ বা জড়িয়ে ধরা দ্বারা যেমন সম্পর্কের উষ্ণতার বহিঃপ্রকাশ হয় তেমনি এরূপ হালকা আঘাত দ্বারা অবহেলা ও বিরক্তির বহিঃপ্রাকশ ঘটে। যেহেতু পিটানো বা শাস্তিপ্রদানের সঙ্গে নির্যাতন ও কষ্ট জড়িত আর হালকা মিসওয়াক জাতীয় জিনিসের আঘাতে এসবকিছু অনুপস্থিত তাই এই ব্যাখ্যাটি ইসলামের মূল ¯ দৃষ্টিকোন থেকে অন্য ব্যাখ্য দুটি অপেক্ষা বেশী যুক্তিসঙ্গত ও বেশী গ্রহণযোগ্য।

অন্যদিকে কিছু ইসলামী আইনবিদ যারা ফতোয়া দিয়েছেন যে “বিশটি বা চল্লিশটির বেশী আঘাত করা যাবে না” তারা ইবনে আব্বাসের মত এ বিষয়টিতে গভীর চিন্তার স্বাক্ষর রাখেননি। [দরাবা শাস্তি প্রাদনের মাধ্যম নাকি অসন্তোষ প্রাকাশের মাধ্যম সেটি তারা বিবেচনায় অনেননি, এ আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রী নির্যাতন বা স্ত্রীকে কষ্টদানের অনুমোদন দিয়েছেন নাকি স্বামীর অসন্তোষের সুষ্ঠ বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে স্ত্রীকে সাবধান করার যুক্তিসঙ্গত পন্থা বাতলে দিয়েছেন সেটি তারা খুঁজে দেখেননি]। তারা এমনকি এই আঘাতের সীমা কতটুকু হবে তাও নির্ধারন করেননি। শরীরের কোন কোন অঙ্গে আঘাত করা যাবে বা যাবে না, হাড় ভাঙ্গা যাবে কি যাবে না, এমনকি এ আঘাত সহ্য করার জীবনী শক্তি তার আছে কি না, সে সম্পর্কে তারা কোনই নির্দেশনা দেননি। কাজেই বোঝা যাচ্ছে ইবনে আব্বাসের ব্যাখ্যা অনেক বেশী যুক্তিসঙ্গত ও চিন্তাশীল । কিন্তু তারপরও দেখা গেছে ইবনে আব্বাসের ব্যাখ্যাতেও একটি ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ রয়ে গেছে যার কারনে অতীতে এবং বর্তমানে ও এই ব্যাখ্যার সুযোগ গ্রহন করে অনেক নির্যাতনকারী স্বামী তাদের অন্যায় আচরনের পক্ষে যুক্তি পেশ করে। [ তারা টুথব্রাশ বা এর মত ছোট কিছুর শর্তটিকে গায়েব করে দিয়ে আঘাত করা যাবে এটুকুকেই মাথায় ও মগজে গেথে নেয়।] কাজেই দরাবার ব্যাখ্যায় এমন কোন সুযোগ রাখা ঠিক নয় যাতে দরাবার ভুল অর্থ গ্রহন সম্ভব হয় , এর অপব্যাবহারের সুযোগ থাকে এবং নিজেদের অন্যায় আচরনকে যায়েজ করার পক্ষে এটি ব্যবহৃত হতে পারে। আর এ কারনেই আমি পুরো ব্যাপারটা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করেছি।

বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমি স্পষ্টতঃই দেখতে পেলাম কোরআনে ব্যবহৃত আরবী মূল ক্রিয়া দরাবা কে পূর্ণবয়স্কদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নেরর মাধ্যম হিসাবে বা স্ত্রীকে স্বামীর আনুগত্যে ফিরিয়ে আনার মাধ্যম হিসাবে নেয়ার ক্ষেত্রে যদি এর অর্থ বা ব্যখ্যা ‘কষ্ট, অপমান, বা দৈহিক ব্যথা’ হিসাবে নেয়া হয়Ñ তবে তাতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে সে ব্যথা বা কষ্টের পরিমাণ বেশি বা কম যাই হোক না কেন। যদি ব্যাপরটি এমন হত যে, যেকোন পরিস্থিতিতেই একজন মুসলিম নারী বিবাহ বন্ধন টিকিয়ে রাখতে বাধ্য থাকত, কোন অবস্থাতেই সে স্বামীকে তালাক দিতে পারত না বা স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাইতে পারত না, তবে সেক্ষেত্রে স্বামীর সব আচরণই সে সহ্য করতে বাধ্য থাকতো।

ফলে তাকে স্বামীর সব আদেশই মাথা পেতে নিতে হত। ব্যাপারটা এমন হলেই কেবল ‘কষ্ট, অপমান, বা দৈহিক আঘাত’ হিসাবে দরাবা বৈবাহিক সমস্যা সমাধানে অথবা অন্ততঃ বৈবাহিক সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী পন্থা হত। কিন্তু আমারা জানি যে শরীয়তে ব্যাপারটি এমন নয়। শরীয়ত চাপ প্রয়োগ বা বাধ্য করাকে নয় বরং ভালবাসা ও সহানুভূতিকে পরিবার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার মাধ্যম করেছে। এভাবে ইসলাম পরিবারের সদস্য (স্বামী বা স্ত্রী) হিসাবে থাকা বা না থাকা তাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে; এক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ, অবদমন বা নির্যাতনকে ইসলাম সমর্থন করেনি। স্বামীÑস্ত্রী হিসাবে থাকা যদি দুজন নরÑনারীর জন্য কল্যানকর না হয় তবে ইসলাম দুজনকেই অধিকার দিয়েছে তারা ইচ্ছা করলে এ সম্পর্কের অবসান ঘটাতে পারে। কেননা ঘৃণা, ঝগড়াঝাটি ও তিক্ততার সম্পর্কের থেকে পৃথক বসবাস (separation) অনেক ক্ষেত্রে তাদের জন্য কম ক্ষতিকর। আর এজন্যই শরীয়ত স্বামী ও স্ত্রীকে তালাক ও খোলার অধিকার দান করেছে।

“আর যখন তোমারা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে দেয় তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও, অথবা সহানুভূতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও।

আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্য আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে।” (সূরা বাকারা আয়াত-২৩১)

চাপ প্রয়োগ করা বা শারীরিক আঘাত কখনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি করতে ও বাজায় রাখতে সহায়ক হয় না। এটি তাদের সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধিতে বা পারস্পরিক আস্থা তৈরিতে কোনভাবেই সহায়ক ভূমিকা রাখেনা।

চলবে…

পর্ব-৩

 

নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন


নারী সংবাদ


ঢাকা, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : বর্তমান বিশ্বে একটি অতি পরিচিত রোগের নাম ডায়াবেটিস। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে ক্রমবর্ধমান এই রোগে আক্রান্ত হওয়া লোক নেই। পৃথিবীতে দূরারোগ্য অনেক রোগের ওষুধ আবিস্কার হয়েছে। আবিস্কার হয়েছে ডায়াবেটিসের ওষুধও। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতি ১১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের মধ্যে একজন এ রোগে আক্রান্ত। আক্রান্তদের অনেকেই জানে না তারা এ রোগে আক্রান্ত। পুরুষ মহিলা সবাই আজকাল এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক ধরনের বিশেষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। জোবেদা আক্তার পেশায় একজন চাকরিজীবি। তেত্রিশ বছয় বয়সী এই নারীর প্রথম মেয়ে সন্তানের বয়স এখন পাঁচ। গত সাড়ে চার মাস হল জোবেদা আবার সন্তান সম্ভবা। তাই এখন নিয়মিতই আসছেন ডাক্তারের কাছে। কিন্তু কিছুদিন আগে ডাক্তারের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা করান তিনি। আর সেখানেই ধরা পড়ে জোবেদার ডায়াবেটিস। এখন তিনি চলছেন সম্পূর্ণ ডাক্তারের নির্দেশনায়। যেকোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা।
নগরীর মালিবাগ এলাকায় থাকে নীরু ও হারুন দম্পতি। এক মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা দু’জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন তারা আরো একটি সন্তান নিবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্তান সম্ভাবা হলেন নীরু। কিন্তু বিধিবাম। ছয় মাসের মাথায় ধরা পড়ল নীরুর ডায়াবেটিস। পরে তার মিসক্যারিজ হয়ে যায়।
ডায়বেটিস রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণ ডায়াবেটিসের পাশাপাশি নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। আর এই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পদ্ধতিও বেশ জটিল। মূলত অনেক নারীরই এ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। যখন রোগ নির্ণয় হয়, তখন ডাক্তারদের আর কিছুই করার থাকে না। যার ফলে মৃত্যু হয় অনেক নারীর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের পরিচালিত এক বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা যায়, ডায়াবেটিস হল বাংলাদেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ। ২০৪০ সালে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। আর বাংলাদেশ সরকারের পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট’র প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বৈশ্বিক ওই গবেষণার বরাত দিয়ে জানায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে ৩১ হাজার ৪৬০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এই অসংক্রামক রোগে ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৬৯ হাজার জনে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির এক প্রকাশনায় দেখা যায়, প্রাপ্ত বয়স্কদের ৬.০৪ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও কয়েক লাখ শিশু এই ডায়াবেটিস (টাইপ-১) এ আক্রান্ত।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সাইদুর রহমান বলেন, মূলত ডায়াবেটিসের কারণে মানুষের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এই ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যেমন- কিডনি, স্ট্রোক, হৃদরোগে ভুগতে পারেন।
তিনি বলেন, দেশে অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে এক বা একাধিক ডায়াবেটিসের রোগী আছে। এই রোগ একবার হলে আর ভালো হয় না। তবে রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপন করা সম্ভব।
ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, অনেক নারীই এখন গর্ভকালীন সমেয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। মূলত পরিবারের অন্য কারো ডায়াবেটিসের ইতিহাস, বেশি বয়সে সন্তান ধারন এবং অধিক ওজন এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আর ডায়াবেটিস থাকাকালীন সময়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। এসময় রোগী মারাও যেতে পারেন।
তিনি বলেন, কারো যদি একবার ডায়াবেটিস হয় তবে তাকে তা আজীবন বহন করতে হবে। যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। একমাত্র নিয়মানুবর্তিতাই পারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পাল্টাতে হবে এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, দেশব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীদের চিহ্নিত বা শনাক্ত করার কাজ করছে বর্তমান সরকার। অল্প কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা হাসপাতাল থেকে মানুষ বিনা মূল্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ পাবে।
মূলত সরকারের একার পক্ষে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সব স্তরের মানুষের ভুমিকা পালন করতে হবে।

সুত্র: বাসস।