banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 15, 2025

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা- ৭

কানিজ ফাতিমা


গত পর্বে আমরা গর্ভকালীন নারীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জেনেছি। এ পর্বে আমি আলোচনা করবো মেনোপজ (Menopause) নিয়ে। তার আগে গত পর্বের রেশ ধরে দু’একটি কথা বলে নেই। আমরা অনেক সময়ই লক্ষ্য করি আমাদের সমাজে স্ত্রীর সেবা করাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। এটা অনেকটা পৌরুষ হানিকর কাজ মনে করা হয়। অনেকে আরও একটু আগ বাড়িয়ে একে অনৈসলামিক কাজও মনে করেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। ইসলামে অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনাকে স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর দৃষ্টান্ত আমরা ইসলামের ইতিহাসে দেখতে পাই। বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানগণ সংখ্যায় কম ছিলেন। সেসময় মদীনাতে মাত্র ৭৭ জন সমর্থ মোহাজির পুরুষ ছিলেন। তিনজন বাদে এদের সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তালহা ও সা’দ (রাঃ) সেই মুহূর্তে সংবাদ সংগ্রহের কাজে মদীনার বাইরে ছিলেন বলে বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। তার তৃতীয় ব্যক্তি যিনি মদীনাতে উপস্থিত থেকেও বাহিনীতে যোগ দেননি তিনি হলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সারির সাহাবী উসমান (রাঃ)। যদিও সে সময় মুসলিম বাহিনীতে বেশী সংখ্যক যোদ্ধার দরকার ছিল তথাপি রাসূল (সাঃ) নিজেই উসমান (রাঃ) কে মদীনায় থাকতে নির্দেশ দেন কারণ তখন তার স্ত্রী রোকাইয়া (রাসূল সাঃ এর কন্যা) অসুস্থ ছিলেন। “The Prophet told his son-in-law ‘Uthman’ to stay at home and tend his sick wife.” (Muhammad his life based on the earliest sources by Martin Lings, পৃষ্ঠা ১৩৮)। আমরা এখানে সুস্পষ্ট দেখতে পাই শুধুমাত্র অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনার জন্য তিনি বদর যুদ্ধের বাহিনীতে যোগদান থেকে বিরত থাকলেন স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশে। অথচ সে সময় মদীনাতে অন্যান্য নারীগণ উপস্থিত ছিলেন যারা সহজেই রোকাইয়ার সেবা করতে পারতেন। সাওদা (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী; ফাতেমা (রাঃ) ও উম্মে কুলসুম (রাঃ)- রোকাইয়া দু’বোন; উম্মে আয়মান ও খাওলাসহ অনেকেই রোকাইয়ার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তদুপরী রাসূল (সাঃ) স্ত্রীর সেবার জন্য স্বামীকেই দায়িত্ব দিলেন।
এবার আসা যাক মেনোপজ সম্পর্কে। অনেক সময় স্ত্রীদের অভিযোগ থাকে তাদের শাশুড়িদের বিরুদ্ধে যে তারা খিটখিটে, ভুলো মনা হয় এবং ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে বকবক করতে থাকে। এই সমস্যাগুলোর পেছনে একটা বড় কারণ সাধারণত মেনোপজ। মেনোপজ হল মহিলাদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত গড়ে ৫০ এর পরে নারীর মেনোপজে যায়। তবে ৪০ থেকে ৫৯ বয়সের মধ্যে যেকোন সময়ে এটা ঘটতে পারে। এ সময়ে মহিলাদের ডিম্বাশয়গুলো (Overies) কম পরিমাণে এসট্রোজেন ও প্রাজেসটেরন (Estrogen and Progesterone) হরমোন তৈরি করে। মূলত: এই হরমোন দু’টিই নারীদেহে মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত নারীরা এই বয়সেই শাশুড়ি হয়ে থাকে। ফলে অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এ কারণটিও তার আচরণকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। একজন স্ত্রীর যদি Menopause-এর লক্ষণগুলো জানা থাকে তবে শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী অনেকটা সহজ হয়। নীচে মেনোপজ এর লণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১. Hot flashes:
গরম ঝাটকা লাগা মেনোপজের একটি সাধারণ লক্ষণ। এসময় বুক-মাথা গরম হয়ে যায়, অনেক সময় চামড়া লাল হয়ে যায় এবং অনেকে ঘামতে শুরু করে। এসময় অস্বস্তি ও অসুস্থ বোধ হয়ে থাকে। অনেক সময় মাথা ঘুরায়, মানসিকভাবে বিহ্বল ও হতবুদ্ধি লাগে। অনেক সময় বুক ধড়ফড় করে।
২. মাথা ব্যথা, রাতে ঘামানো, ঘুমের ব্যাঘাত ও কান্তিবোধঃ
ঘুমের সমস্যা ও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঘেমে গিয়ে উঠে পরা প্রভৃতি কারণে এ সময় মেজাজ খিটখিটে ও সবকিছুতে বিরক্তিভাব তৈরি হয়। যার থেকে অল্পতেই রেগে যাওয়া বা ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
মূলত: মেনোপজের শারীরিক লক্ষণগুলো একেকজনের জন্য একেক রকম ও একেক মাত্রার হয়। যেমন পশ্চিমা দেশগুলোতে ১৪% মহিলা খুব তীব্র শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ে এ সময়ে।
মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলো হয় তাও শারীরিক সমস্যাগুলোর মতই একেক জনের একেক রকম হয়। সব থেকে প্রচলিত যে মানসিক সমস্যার কথা বেশি শোনা যায় তা হলো-
১. Sadness বা দুঃখবোধ/বিষন্নভাব
২. Anxiet বা দুশ্চিন্তা
৩. Mood Swings বা অস্থিরতা
এসব সমস্যাগুলো নারীর কর্মদক্ষতা ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায়।

চলবে…

পর্ব-৬

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা – ৬

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব-৩)

আফরোজা হাসান


ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অভিমানে মনের আকাশ মেঘলা হয়ে উঠলো আলিসবার। বিকেলে ফেরার কথা মঈনের অথচ এখন রাত নয়টা বাজে। গত সপ্তাহেও দুই দিন এমন দেরী করে বাসায় ফিরেছে মঈন। ফিরতে দেরী হবে সেটা ফোন করেও তো জানাতে পারে, তাহলে তো আর এভাবে অস্থির হয়ে প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে হত না তাকে। এসে সরি সরি করবে, একশোটা কারণ দেখাবে কিন্তু একটা ফোন করতে কতটুকু সময়ই বা লাগে? কিছুক্ষণ বইপত্র নাড়া চাড়া করে দেখলো মন বসাতে না পেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো সে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বাগানে বসে গল্প করছে। অজান্তেই এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো আলিসবার মুখে। গত চার মাসে সে এটা খুব ভালো মতো বুঝে গিয়েছে যে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মহা ভাব। একে অন্যেকে ছাড়া কিছুই বোঝে না দু’জন। পর মুহুর্তেই মঈনের কথা মনে পড়লো তার। অভিমানের মেঘ আরো ঘনীভূত হলো মনের মাঝে। মঈন বুঝি এখনো ফেরেনি? প্রশ্ন শুনে ঘুরে বড় জা’কে দেখে আলিসবা বলল, জ্বী না ভাবী।

-অন্তরা হেসে বলল, তাহলে আমার সাথে চলো। রান্না করতে করতে গল্প করবো।

-রাতের রান্না তো হয়ে গিয়েছে ভাবী।

-হুমম…জানি। কিন্তু তোমার ভাইয়া মাত্র ফোন করে বললেন কয়েকজন মেহমান আসবে উনার সাথে।

-রান্নাঘরে ঢুকে আলিসবা বলল, ভাইয়া বুঝি এমন প্রায়ই করেন?

-কি? হঠাৎ মেহমান নিয়ে আসা?

-জ্বী।

-হেসে, হ্যা।

-আমার আব্বুরও এই অভ্যাসটা ছিল। হঠাৎ করে মেহমান নিয়ে হাজির হতেন। আম্মুকে তখন অনেক বিপদে পড়তে হতো। হয়তো সারাদিন পর একটু বিশ্রাম নেবার জন্য ঘরে ঢুকেছেন আর আব্বুর ফোন মেহমান নিয়ে আসছি। ঘরে কি রান্না হয়েছে, বাজার আছে কিনা এইসব নিয়ে কোন কথা নেই। এক কথা মেহমান নিয়ে আসছি। এগুলো খুব অন্যায় মনে হয় আমার কাছে।

-হেসে, সমস্যা কি জানো? এগুলো যে অন্যায় সেটা ছেলেরা বোঝেই না। আমার তো মনেহয় সংসারের এসব টুকিটাকি বিষয় বোঝার ট্যালেন্টই ছেলেদের নেই। বিয়ের প্রথম প্রথম আমিও বেশ বিরক্ত হতাম। পরে দেখলাম যে এটা উনার স্বভাব। উনি মেহমানদারী করতে পছন্দ করেন। আর এটা যেহেতু খারাপ কিছু না বরং ভালো তাই নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি এবং ধীরে ধীরে মানিয়েও নিয়েছি।

-তারপরও ভাবী। কত রকমের সমস্যা থাকতে পারে একটা মেয়ের। হাজবেন্ডের এটা বোঝা উচিত।

-হেসে, আসলে সংসার জায়গাটাই বোঝাপড়ার। দুজনেরই বুঝতে হবে দুজনকে। হঠাৎ মেহমান নিয়ে আসার কাজটি নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট দেবার জন্য করেন না আবির? আবার এমনও না যে রোজ রোজ করেন এটা। হয়তো কোন ফ্রেন্ড বা পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেলো। কখনো আবির অফার করে, কখনো উনারা নিজেরাই আসতে চান বাসায়। এখন এটাকে ইস্যু করলে অশান্তি তো আমাদের দু’জনের জীবনেই আসবে।

-কিন্তু বিষয়টা তো একেবারে ইগনোর করার মতও না।

-আই থিংক ইস্যু করার মতও না। সংসারে সচারচর যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলোর সাথে মানিয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি যেমন মেহমানের জন্য মোটামুটি একটা প্রিপারেশন নিয়েই রাখি সবসময়। আলাদা করে কিছু খাবার রেডি করেই রাখি হঠাৎ আসা মেহনাদের আপ্যায়নের জন্য। তাই তেমন কোন অসুবিধায় পড়তে হয় না কখনোই। এটা না করে যদি আমি রোজ রোজ খিটপিট করতাম আবিরের সাথে, তাহলে আমার জীবনের শান্তিই তো বিঘ্নিত হতো তাই না?

-হেসে, সবসময় কি এত পজেটিভ থাকা সম্ভব ভাবী? কষ্ট হয় না আপনার?

-হয়। কিন্তু আমার কাছে সেই কষ্টের চেয়ে সংসারের শান্তি অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ। সেজন্য স্বামীর দোষ ধরে সময় নষ্ট করার চাইতে, দোষটা আসলেই দোষ কিনা এবং আমার কতটুকু ছাড় আর উনার কতটুকু সংশোধন দরকার, সময়টাকে সেই কাজে ব্যয় করার চেষ্টা করি। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, দোষ খুঁজে আমরা যেই সময়টা ব্যয় করি, সেই সময়টা যদি একে অন্যেকে বোঝার ও সংশোধন করার জন্য ব্যয় করতে পারতাম, তাহলে সংসারটা অনেক সহজ হয়ে যেত আমাদের জন্য।

-হেসে, এত পজেটিভ চিন্তা করার শক্তি কোথায় পান আপনি?

-হেসে, জ্ঞান হবার পর বাবা প্রথম যে জিনিসটা আমাকে শিখিয়েছিলেন তা হচ্ছে, দুনিয়ার জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র স্বরূপ। প্রতি মুহুর্তে তাই জীবন আমাদের কাছ থেকে নানা ধরনের পরীক্ষা নেবে। তাই সম্ভাব্য সবকিছুর জন্য সবসময় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যেমন প্রস্তুতি আমরা স্কুল-কলেজের পরীক্ষার জন্য নিয়ে থাকি অনেকটা সেরকম। অন্যের উপর ভরসা করে কি আমরা পরীক্ষার হলে যাই? কখনোই না। কারণ আমরা জানি যার যার পরীক্ষার তাকেই দিতে হবে। আমার বিয়ের দিন বাবা আমাকে এই কথাটাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।

-জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র এটা?

-হেসে, বাবা বলেছিলেন সবসময় মনে রাখবে স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় মতো সংসারটাও একটা পরীক্ষা তোমার জন্য। কারো সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র আল্লাহর দেয়া মেধা-প্রতিভা ও নিজের পরিশ্রমের জোড়ে জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় যেভাবে তুমি প্রথম হয়েছো, তেমনি সংসার নামক পরীক্ষাতেও প্রথম হবার ইচ্ছা ও চেষ্টা জারি রাখতে হবে তোমাকে। আর যারা জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় টপ করতে চায়, অন্যেরা কি করছে কি করছে না সেসব দেখার সময় তাদের থাকে না। জীবনের ছোট ছোট পরীক্ষাগুলোতে সফল হতে হতে তারা ছুটে চলে আখিরাতের চূড়ান্ত সফলতার পানে।

চলবে…..

পর্ব-২

 

শিশু চুরির ঘটনা

নারী সংবাদ


হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও এবার অন্যভাবে শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে। গত রোববার গভীর রাতে পৌর এলাকার বকচর মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সৌদি প্রবাসী ইমরান খানের স্ত্রী রাইবিনা ১৮ মাসের এক মাত্র শিশুপুত্র ইমার খান রাফিকে নিয়ে তার বাবা এরশাদের বাড়ি বচকর মহল্লায় থাকতেন। প্রতিদিনের মতো ওই দিনই রাতে মা, খালা ও নানীর সাথে রাফি ঘুমিয়েছিল। রাত ৪টার দিকে রাফির মায়ের ঘুম ভেঙে গেলে তাকে বিছানায় না পেয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে শিশুটিকে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তারা ঘরের পেছনের দিকে সিঁধ কাটা দেখতে পান। পরিবারের দাবি, সিঁধ কেটে শিশু রাফিকে চুরি করা হয়েছে। সেই সাথে তাদের পরিবারের ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
চুরি হওয়া শিশুটির মা রাইবিনা বলেন, যেকোনো মূল্যে আমার সন্তানকে জীবিত অবস্থায় ফেরত চাই। এ জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে সিঙ্গাইর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। চুরি হওয়া শিশুটিকে উদ্ধারসহ জড়িতদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। সূূূূত্র: নয়াদিগন্ত।