banner

বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 13, 2025

 

কৈশোর স্মৃতিতে রমজান

হাবিবা মৃধা


রমজান মাস এলেই ছোট্ট প্রানটা নেচে  উঠত খুশিতে!আম্মুর  সাথে তারাবী পড়ার সে কি আনন্দ!যদিও তখন নামাজের নিয়মকানুন কিছুই জানতাম না যতটুকু মনে পড়ে আম্মু কতবার সিজদায় যায় এটা দিয়ে রাকাত পূর্ণ করা হত!

আর এখন দেখি জেনেবুঝেও মানুষ শুধু রাকাত পূর্ণ করতে তারাবী পড়ে অথচ সময় নিয়ে নিষ্ঠার সাথে তারাবীতেই রয়েছে সফলতা রাকাত পূর্ণ এরপরেই গুরুত্বপূর্ণ!

সবচেয়ে প্রিয় সময় ছিল ভোর রাতের সেহরী!ভোর রাতে ইমাম সাহেব কাকার কুরআন তিলাওয়াত আর সেহরী আহব্বানেই আমাদের ঘুম ভাঙত!মনে পড়ে এখনো গ্রামের সেই রমজান মাসের বেহেশতি পরিবেশের কথা!

সবচেয়ে আনন্দের  ছিল দিনে যে আমার দুই তিনটা রোজা হত!কিন্তু সে পনেরো দিনে ত্রিশ রোজা পূর্ণ হওয়ার খুশি আর বেশি দিন টিকেনি ছোটভাইয়ার জন্য!

ভোর রাতে বড়ভাইয়া,মেজোদাদা,মেজোআপু সবাইকে ডেকে ডেকে উঠানো হত আমাদের  দুইভাইবোনের মনে হয় ঘুম পূর্ণ হতনা ভোর রাতে জাগার আশায়!

সবাই সেহরী খেয়ে আমাদের একটু শেষের দিকে খেতে ডাকত এখন মনে হচ্ছে সেটার কারণ ছিল দেরি করে খাবার খেয়ে যাতে দিন বারোটায় একটা রোজা হয়ে গেছে বলে খাবার খাই!

দ্বিতীয়ত আম্মু যাতে একটু শান্তি মত নামাজ পড়ে নিতে পারেন!আম্মু  কাজের ফাঁকেই সবসময় নামাজ তিলাওয়াতের জন্য সময় নিতে চাইতেন!

আমরা দোতলার সিঁড়িতে বসে থাকতাম কখন আম্মু বলবে তোমরা হাতমুখ ধুয়ে খাবার খাও!কিন্তু তাদের খাবার শেষ হতে না হতেই ছোটভাইয়া বলত সেহরীর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে এরপর রোজা হবেনা তুমি কান্না করে দাও।

যেইকথা সেইকাজ! কিন্তু খাবারের জায়গা থেকে আদেশ আসত ঠিক আছে হাত মুখ ধুয়ে এসো কাল ঠিক দশটার পরে ই খাবার খেতে হবে!

একদিন নিয়মের বিপরীত ঘটল,পাশাপাশি  ঘুমিয়ে ছিলাম ছোটভাইয়া কে চুপি করে ডেকে নিয়ে এসেছে মেজো আপু,ঘুম ভেঙ্গে সে কি মনখারাপ!সেদিন সিঁড়িতে বসে কেদেছিল এই অবুঝ প্রাণীটি!

সকালে ছোটভাইয়ার সাথে অভিমান!কোন কথা নেই!অতঃপর তার সুন্দর বাণী ছিল এমন শোন!আমাকে এখন ডেকেই উঠানো হবে আমার পুরো রোজা থাকার বয়স হয়ে গেছে আর তুমি আরেক টু বড় হলে!আর দিনে যে দুইটা রোজা এগুলো কোন সত্যি রোজা নয় দিনে কিছু খেলেই রোজা হবেনা!

আম্মু কে একটু বেশি ই জ্বালিয়েছি এখন মনে পড়ে খুব মন খারাপ হয়!আম্মু চাইতেন ভোর রাত্রে একটু একা নিভৃতে নামাজ পড়তে আমরা ভাই বোন মিলে পুরো ঘরে বাইরে সেহরী আমেজ গড়ে তুলতাম!বড় ভাইয়া খেতে বসে কি মজার মজার ঘটনা ঘটাত আর সেই নিয়ে হাঁসি !!

ছোটভাইয়ার প্লেট থেকে মাছ ভাতের নিচে লুকিয়ে রেখে বলত বিড়াল নিয়ে গেছে আর সে সন্দেহ করতে নীরব চুপচাপ খেয়ে বাঁচতে চাওয়া মেজোদাদাকে!একটু পর প্লেটের ভাতে হাত দিয়ে মাছ পেতেই শুরু হত হাঁসি!

আম্মু বলতেন আশেপাশের মানুষেরা আগেই সেহরী খেয়ে ইবাদত বন্দেগী করছে তোমরা হইহুল্লোর করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলছ!

আম্মু কে সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছি সেহরীর তরকারি নিয়ে!আমার একটা সাথী ছিল যার ঘরে রমজান মাসেও খুব একটা মাছ মাংস হতনা হয়ত বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া!ও রাতে আমার কাছে ঘুমাতে আসত বেশিরভাগ সময় ই আমি জিজ্ঞেস করতাম আজ রাতে ওরা কি খেয়েছে ,ভোর রাত্রে কি খাবে??

কখনো ডিমরান্না,সবজি আর বেশিরভাগই আলুভর্তার কথা বলত!একদিন রাতে ও বলল আজ ওদের শুধু আলুভর্তা কিন্তু ওটা খুব মজা!! পেঁয়াজ তেলে নেড়ে বানিয়েছে ওর মা!আমার শুনে ই খেতে ইচ্ছে করল কিন্তু ওকে বলিনি সম্ভবত!

আমাদের ঘরে সেদিন ইলিশ মাছ কিন্তু একটাই মাছ যাতে ছটুকরো মাছ মাথা লেজ সহ আট পিচ হয়!আম্মুর হয়তো খেয়াল ছিল ওদের ঘরে দুই টুকরো রান্না করা মাছ পাঠিয়ে দিবে যেহেতু আমাদের ঘরে ছয়জন আমরা!

আমার এখনো মনে পড়ে আম্মু ওদের জন্য তরকারি দিতেই আমি বলি আম্মু দুই টুকরো মাছ পাঠালে ওর ছোট ভাইবোনদের জন্য ও খেতে পায়না আমার মাছ টুকরো আমি ওকে দিতে চাই আমাকে শুধু মাছের ডিম দিলেই হবে!আম্মু সহজ করে বললেন আজকে আশেপাশে সবাই মাছ এনেছে ওদের কে দিবে তো!

রাতে আবার সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম কেউ তরকারি দিয়েছে ওর উত্তর নাতো!

আম্মু কে নামাজের ভিতরে গিয়ে আবার বলি আম্মু কেউ তরকারি দেয়নি ওদের ! আমার কথায় আম্মু সেদিন হয়ত বিরক্ত হয়েছেন কিন্তু রাগ করেন নি মোটেও তাছাড়া রাগমুখে আমি আম্মু কে দেখিনি!

এরপরে আম্মু নিজের টুকরো আমার সহ চারটুকরো মাছ দিয়ে আমতা আমতা করে কিছু একটা বলছিলেন শান্তি থাক এবার এমন!ভোর রাতে আম্মু আলুর ঝোল দিয়ে খেয়েছিলেন আর আমার জন্য ডিম রেখেছিলেন!

আজ খুব করে মনে পড়ছে সেই দিনটির কথা !আসলে নিজেরা মাছ গোশত দিয়ে পেটপুরে খেলেই বুঝি রোজা হয়!সমাজের মানুষের সেহরী আমেজ দেখে তাই মনে হয়!

তবে এর বিপরীতে ভালো মানুষ ও থাকেন সবসময় ই কম বেশি!আমাদের ইমাম সাহেব কাকার বাবা যাকে মাষ্টার দাদা ডাকি আমরা!এখনো পর্যন্ত রমজান মাসে তিনি ইফতারী নিয়ে সবার ঘরে ঘরে ঘুড়ে বেড়ান বিশেষ করে যাদের একটু আয়োজন কম হত তাদের জন্য!

প্রথম প্রথম যখন রোজা রাখতে শুরু করেছিলাম সেটাই বেশি মজার ছিল বার বার হাদীসে কুদসীর সেই হাদীস মনে পড়ত আল্লাহ্ নিজেই প্রতিদান দিবেন

তখন ভিতরে শুধু ভাইয়ার কাছে শোনা #বুখারী  শরীফের হাদীসের কথা মনে পড়ে খুশি লাগত:রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর চেয়ে ও উত্তম!রোজাদার দুইবার খুশি হয় একবার ইফতারে দ্বিতীয়বার রবের সাথে সাক্ষাত লাভে!!

!ভাইয়া দুষ্টামি করে বলত তুমি ডুব দিয়ে পানি খেয়েছ গোসলের সময় আর আমি ভাবতাম সত্যি!!আবার আম্মুর কাছে গিয়ে কান্না!

আম্মুর ইফতার বানাতে বানাতে বেশিরভাগ সময় ই আজান দিয়ে দিত আর  আম্মু খুব আফসোস করতেন সময় নিয়ে ইফতারের আগে দোয়া ও করতে পারিনা!! মায়েদের সংসারের সব কাজ সেরেই আবার সবার মুখে খাবার দিতে ইফতার তৈরি রান্নাবান্না আরো কতকাজ!

পাশের ঘরে ইফতার নিয়ে যেতে যেতে প্রায় সময় ই আজান দিয়ে দিত আর আমার ইফতার হত তাদের সাথে অবশ্য তারাও রখুব খুশি হতেন আর ঘরে ফিরে সবার কতরকম কথা শুনতাম!!
পবিত্র ক্বদরের রাত্রিতে সাথীরা মিলে গোসল করতাম প্রতি ফোঁটা পানিতে গুনাহ মাফ হবে তাই বেশি করে সাবান মাখা তবে আজো কোথাও এমন দলীল পাইনি একসাথে তারাবী,একসাথে কদর পড়তাম আমরা সাথীদের খুব মিস করি এসবের জন্য এখনো!

ছোট চাচাতো বোনটা একটু মাঝে মাঝে তারাবীতে আলসেমি দেখালে আম্মু শিখিয়ে দিতেন চার রাকাত পর পর মোনাজাত করতে আর প্রতি বার এটা মনে করতে প্রথমবার তারাবী শুরু করছি!সত্যি ই আম্মুর কথামত আমরা তাই করতাম বিশ রাকাত তারাবী কখন শেষ হত এতটুকু বিরক্তি আসত না!তাই ভাবছি রমজান মাস রোজার সাথে তারাবী আমাদের জন্য বিশেষ এক নেয়ামত সুস্থ মানুষদের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কিসের এত বিরোধ!তাছাড়া প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগন যেহেতু বিশ রাকাত পড়েছেন!

কৈশোরের ইবাদত খুব নির্ভেজাল হয় বার বার ইচ্ছে করে আবার সেই কৈশোরের রমজানে ফিরে যাই আম্মু কে জ্বালানোর মুহূর্ত গুলো ফেরত দিয়ে দেই আম্মু আজ তোমার যতখুশি নামাজ পড় কারণ আব্বুর পরিশ্রম আর আম্মুর দোয়া ই হয়তো আমাদের যতটুকু সফলতা তার পিছনের চাবিকাঠি!!কতদিন আম্মুর সাথে ইফতার হয়না ভোর রাত পেরিয়ে উঠানে হাটতে হাঁটতে  সুবহে সাদিক দেখা

হয়না! আবার কবে সব ভাইবোন মিলে আমেজ পূর্ণ সেহরী ইফতার হবে আম্মুর সাথে!!সবাই অনেক বড় হয়ে গেছি এই শহরে যে যারমত বন্ধু বান্ধবের সাথে ইফতার করি আম্মু হয়তো সেই আগের মতোই ইফতার নিয়ে বসেন আর আমাদের জন্য দোয়া করেন!!

হাবিবা মৃধা!!
শিক্ষার্থী ঢাবি!

 

জুতাচোর

জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


নাহিনের বাসায় এখন তুলকালাম অবস্থা। বিকালে বাবা এসেছে। রাতে খাবার পরেই ঘটনার শুরু। নাহিন ভাবছে, সব দোষ তার একার। কেন যে সে বাবাকে আসতে বলল!
এই নিয়ে এখন আফসোসের শেষ নেই।
নাহিনের মা সরকারী চাকুরে। বাবার বেসরকারি । পোস্টিং বরিশাল। নাহিনরা দুই ভাই, এক বোন। সবার বড় নাহিন, তারপর জাহিন, ক্লাস ফাইভে পড়ে। পিচ্ছি বোন অরিন, পড়ে ক্লাস টু’তে। খুবই বাবার ন্যওটা। ওরা সবাই চট্টগ্রামে মা’র নামে বরাদ্ধকৃত সরকারী কোয়ার্টারে থাকে। ।
নাহিনদের একটা হাসিখুশির সংসার। মা’র যা একটু ঝনঝনে মেজাজ। এইটুকু ছাড়া পুরা ঘরটা যেন শান্তির নহরে ভাসে। মাস শেষে বাবা ছুটিতে বাসায় এলেই পিচ্ছিদের কাছে ঈদের আমেজ। অরিন বাবার কাঁধে, জাহিন পিঠে আর নাহিনের হাত ধরে বাবা বাসার ছাদে চক্কর দেয়। তখন খুব মজা। বাবার দখল নিয়ে অরিনের সাথে জাহিনের খুব ঝগড়া। অরিন বলে,
-এটা আমার বাব্বা, কেউ বাব্বার গায়ে হাত দিবে না। বাব্বা শুধু আমার।
ছোট্ট জাহিন মুখ আধাঁর করে ব্যালকানিতে পালিয়ে যায়। লোহার গ্রীল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভেঁউ ভেঁউ করে কাঁদে। এই নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে।
মা পিছনে গিয়ে জাহিনের চুলে বিলি কেটে কেটে আদর করে। তারপর জাহিনের যা শান্তি। ভাবখানা এমন-
-সবাই দ্যাখো, মা কিন্তু আমার।
বরিশালে গিয়ে নাহিনের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। তখন ছোট অরিনের বয়স মাত্র এক বছর। সবাই বলে মা’টা কি বোকা! বিয়ের দুই বছর পর এই কথা জানতে পারলো! কিন্তু বাবার বিয়ের সাথে মায়ের বোকামীর কি সম্পর্ক, নাহিনের মাথায় আসে না।
দ্বিতীয় বিয়ের পরও বাবা দুই-তিন মাস পর পর চট্টগ্রাম আসতো। সবাইকে খুব আদর করতো। তখন নাহিনের খুব রাগ হতো।, যখন দেখতো মা তুচ্ছ কারনেও বাবার সাথে ঝগড়া করে। একবার এক ফাগুন মাসে মা’র জন্য বাবা একটা লাল টগবগে শাড়ী আনলো। রঙ দেখে মা’র খুব চেছামেছি! সে কি রাগারাগি! তিনি রাগের মাথায় বাবার মুখে শাড়ী ছুড়ে মারে।
ভ্যাগিস, সেদিন কেউ বাবার মুখখানি দেখেনি।
সেদিনের পর হতে বাবা আর কখনো বাসায় আসেননি।
আগামী বিষুধবার নাহিনের জেএসসি পরীক্ষা। তাই ছেলের আবদার রাখতে আজ বাবার এই চলে আসা। রাতে বাবার নতুন কেনা জুতা চুরি হবে, সেই চুরি নিয়ে এতো কিছু ঘটে যাবে, কে জানতো? ঝগড়ার সুত্রপাত এখানে থেকেই। রাতেই বাবা চলে যাবেন তাই জুতা খুলে দরজার বাইরে রেখেছেন। । ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া করলেন। মা খেতে বসলেন ন।
ফেরার সময় বাইরে এসে দেখেন নতুন জুতা নাই।
নাই মানে নাই।
একেবারে তাজ্জ্বব ব্যাপার!
প্রথমে কাজের লোককে জেরা করা হলো। তারপর কোয়ার্টার এর দাড়োয়ান। এমনকি ছোট্ট অরিনকেও জিজ্ঞাসা করা হলো।
কেউ কিছু স্বীকার করছে না।
বাবা রাগে গজ গজ করছেন। বারবার বলছিলেন-
– কদিন আগে ৬৯৯০ টাকায় কেনা নতুন জুতা আমার। মাত্র দুইবার পড়েছি।
বাবার প্লান ছিলো,ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা করে নাইটকোচে রাতে ঢাকা চলে যাবেন। পরদিন অফিসের বার্ষিক সাধারন সভায় যোগ দেবেন। কিন্তু এখন উপায়!
তিনি অরিনকে আদর করে কাছে ডেকে মোলায়েম স্বরে বললেন-
-দেখো মা, জুতাগুলো তুমি নিয়ে থাকলে, দিয়ে দাও। কথা দিচ্ছি, আমি আবার আসবো। তোমাদের সাথে অনেকদিন থাকবো। লক্ষী মা আমার!
-না, বাব্বা আমি জুতা নিই নাই তো!
উপায় না দেখে হঠাৎ চোখ-মুখ গরম করে মেয়েকে ধমক দিতেই, সে হাউমাউ কেদেঁ উঠলো।
আর এই নিয়ে শুরু হলো স্বামী-স্ত্রী মধ্যে তুমুল ঝগড়া। বাবা পইপই করে পুরা বাসা খুঁজে দেখলো। কিন্তু জুতার কোন হদিস নাই।
নাহিন কিছু একটা বলতে চাইলেই ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।
-চুপ! একদম চুপ, হারামজাদা কোথাকার! বলেই থামিয়ে দিলো।
পাশের ফ্লাটের লোকজন বেরিয়ে আসাতেই এই ঝগড়ার ঘুর্নি থামে।
বাবা নাহিনের স্পন্জ সেন্ডেল পা গলিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
এই জুতাচুরি নিয়ে আবাসিক এলাকায় নানা রকম আলোচনা।
কেউ কেউ নিশ্চিত দাঁড়োয়ান নিয়ে গেছে। এগুলো এরাই করে বা করাই।
কেউ বললো, কাজের মেয়ে ময়লার ঝুড়িতে করে বাহিরে নিয়ে গেছে।
তবে বেশীর ভাগের ধারনা, কুকুর নিয়ে গেছে। নতুন জুতার গন্ধে কুকুর মাতাল হয়ে যায়। আগে এভাবে অনেকের জুতা হারিয়েছে। সবার কথা শুনে নাইট গার্ড বলল, নাহিনের বাবার পিছপিছ একটা কুকুর এসেছিল। তবে দোতলা পর্যন্ত উঠেছে কিনা নিশ্চিত নন। কিছু লোক মা’র দিকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে।
জুতা চুরির পর হতে নাহিনের বাবা পরিবারের কোন খোঁজ খবর নেন না।
তিন বছর পর….
নাহিন এসএসসি দিলো। জাহিন জেএসসি। অরিন পিএসসি দিলো।
নাহিনের বাবা এক ছুটির বিকালে বরিশালে নিজের বাসার বারান্দায় বসে আয়েশ করে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় তার তিন বছরের মেয়ে একটি হলুদ খাম দিয়ে বলল,
-বাপ্পা, এইতা মা ডিলো।
ছোট্ট একটি চিঠি। খামের উপর শুধু চট্টগ্রাম লেখা।
বাবা,
সালাম নিও। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। বাবা, সেদিন তোমার জুতা আমিই চুরি করেছি। জানতাম, তুমি চলে যাবে কিন্তু পরদিন আমার যে পরীক্ষা! সবাই বাবাকে সালাম করে পরীক্ষার হলে যাবে। আমি কাকে সালাম করবো? তাই জুতা সরিয়েছি। প্রতিদিন পরীক্ষার হলে যাবার আগে লুকিয়ে তোমার জুতা জোড়া সালাম করতাম।
তুমি কিছুই টের পাওনি, বাবা?
বাবা, তুমি কি কখনো বাবাহীন ছিলে?
তুমি কি জানো, বাবাছাড়া সন্তানেরা কিভাবে বড় হয়?
জানো বাবা, এইবছর আমরা তিনজনেই পরীক্ষার্থী ছিলাম । গোপনে আমরা তোমার জুতা জোড়ায় সালাম করে, তারপর পরীক্ষার হলে যেতাম। আমাদের পরীক্ষার শেষদিন মা ঠিকই ধরে ফেললো।
যত ঝামেলার মুল তোমার মেয়ে ঐ অরিন। সে তোমার জুতা ধরে অনেকক্ষন কাঁদছিল আর বলছিল,
-বাবা, দোয়া করো। অ-নে-ক দোয়া!
-আচ্ছা বাবা, জুতা কি কখনো দোয়া করতে পারে? জুতা কি কখনো বাবা হয়? অথচ দেখো, কি বোকা মেয়ে অরিন! তোমার জুতাকেই বাবা ডাকে।
ইতি,
নাহিন।
চিঠি পড়াশেষে বাবা খানিক চোখ বন্ধ করে করে রইলেন।
ছলছল করে উঠে চোখ।
নিজের উপর প্রবল ঘৃনা আর তাচ্ছিল্যে কুকড়ে রইলেন।
আবার হঠাৎ দাড়িয়ে গেলেন…..
মনে হলো দুনিয়ায় এখনি গজব নাজিল হবে।