banner

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: May 2024

 

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন যেভাবে

কিছুদিন ধরেই চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। রোগটি ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও বেশ পীড়াদায়ক। কারণ জ্বর কমে গেলেও শরীর ব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি দীর্ঘসময় ধরে থেকে যায়। আর এই রোগের বাহক হচ্ছে মশা।

চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ছড়ানো মশা দিনের বেলা কামড়ায়। তাই দিনের বেলা ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। এছাড়া মশা যাতে জন্মাতে না পারে সেজন্য ঘরদোর ও চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।

বাসার ভেতরে ও বাইরে পড়ে থাকা বালতি, ড্রাম, মাটির পাত্র, টিনের কৌটা, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত যানবাহন, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত চৌবাচ্চা, পরিত্যক্ত বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্লাস্টিক বা মাটির পাত্র, ফ্রিজ বা এয়ারকুলারের নিচে এবং বাড়ির ছাদ বা মেঝের নিচু স্থানে তিন দিনের অতিরিক্ত জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। তাই পরিত্যক্ত জিনিস জমতে দেবেন না এবং চারপাশ পরিষ্কার রাখুন।

সম্ভব হলে জানালা এবং দরজায় মশা প্রতিরোধক নেট লাগান, যাতে ঘরে মশা প্রবেশ না করতে পারে।

প্রয়োজনে শরীরের অনাবৃত স্থানে মশা নিবারক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে (মুখমণ্ডল ছাড়া)।

চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। সময়মতো সুচিকিৎসায় চিকুনগুনিয়া ভালো হয়।

 

জল ও জঙ্গলের কাব্য : সবুজে দু’দণ্ড স্বস্তি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন গ্রুপ চ্যাটের মৌসুম বলাই যায়; স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে তেমন একটা আমাদেরও আছে। হঠাৎ সেখানে আওয়াজ উঠল- চল ঘুরতে যাই; শহরের যান্ত্রিকতা থেকে দু’দণ্ড মুক্তির প্রত্যাশায় চল না ঘুরে আসি কোথাও! শুরু হলো গবেষণা: শর্তটা এমন; ভোরে রওনা দিয়ে দিনে দিনে ফেরা; সারাদিন মাটি আর সবুজের কাছাকাছি কোথাও। বেশ কয়েকটা জায়গার চুলচেরা বিশ্লেষণের পর আমাদের সবারই মনে ধরলো ‘জল ও জঙ্গলের কাব্য’।

কেন? বলছি, একে তো পাখ-পাখালি দুরন্তপনা, বাড়ন্ত স্বাধীনতায় নিজেদের মতো করে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য গ্রামীণ ব্যবস্থাপনা। তার ওপর অফুরান সবুজের মাঠ। মাঁচা করা কুটির। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। পাশের খালে কচুরিপানার ইতস্তত ভ্রমণ আর ছোট্ট ডিঙি নৌকার মৃদু দোলুনি। এর ওপর বাড়তি পাওনা গ্রামবাংলার বারোয়াড়ি ভর্তা, পুকুরের টাটকা মাছ থেকে শুরু করে জিভে জ্বল আসা সব মেন্যু। আছে পাটিতে পা লেপ্টে বসে গ্রামীণ লোকশিল্পীদের কণ্ঠে মন উজাড় করা আবহমান বাংলার জারি-সারি-ভাটিয়ালি গান। আর কী চাই বলুন! সুতরাং এককথায় সবাই রাজি, দে ছুট মাটির টানে জল ও জঙ্গলের কাব্যে।

শোনা গেল, ২০০৫ সালে বিমান বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া এক বৈমানিক শখের বসে গড়ে তোলেন শহর থেকে একটু দূরে এই গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি। ইচ্ছে ছিল প্রকৃতির কাব্যে নিজেই ঘুরে বেড়াবেন একা একা, প্রকৃতিচারী হয়ে। আর শুনবেন পাখির মিষ্টি কলতান। পরে অবশ্য তিনিই একদিন ভাবলেন, এর স্বাদ কেন পাবে না আর সবাই? যেই ভাবা সেই কাজ; জীবন হলো আরো সুন্দর সবার আনন্দে।

গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি পুরোটা এলাকাজুড়ে ১০-১২টা শেড; এক একটি শেডের আলাদা আলাদা নাম আর সাইজ: বকুল তলা, বট তলা ইত্যাদি। মাঝে মাঝে তার মেঠো পথ। একপাশে ঢেঁকিতে চাল গুড়ো হচ্ছে; চালের আটা দিয়ে রুটি আর চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে হচ্ছে গরম ধোঁয়া তুলে। আরেক পাশে বিশাল হেসেল- পুরোদমে চলছে খাবারের প্রস্তুতি। একদিকে চা-ঘর, দু’ পা ছড়িয়ে বাশের বেঞ্চিতে বসে চা, আহ! চোখে সবুজ আর হাতে গরম চায়ের মগ, অমৃত এই সুখের অফুরান আস্বাদন একদম ফ্রি।

আবার কারো মন চাইলো একটু নৌকা ভ্রমণে; নো টেনশন, বাঁধা আছে বেশ কয়েকটা ছোট্ট ডিঙি। বিলের শাপলার পথ মাড়িয়ে আসতেও কোনো বাঁধা নেই।

মাত্র ৭৫ বিঘা জমির সঙ্গে বিস্তীর্ণ বিলে সাজানো এই কাব্যের প্রতিটি পরতে পরতে স্বস্তির স্বাদ। আর যদি একটু ঝুম বৃষ্টি থাকে তাহলে তো কথাই নেই!

কিভাবে যাবেন
পুবাইল কলেজ গেট থেকে জল-জঙ্গলের কাব্য মাত্র ৩ কিলোমিটার। জয়দেবপুর রাজবাড়ির পাশ দিয়েও যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে গেলে টঙ্গী স্টেশন রোড বা ৩০০ ফিট দিয়ে যাওয়া যায়। জল-জঙ্গলের কাব্য পুবাইল, ডেমুরপাড়াতে অবস্থিত। এছাড়া মহাখালী থেকে নরসিংদী বা কালীগঞ্জগামী যেকোন বাসে উঠুন। ১ ঘণ্টা পর পুবাইল কলেজ গেট এলাকায় নেমে পড়ুন। ভাড়া নেবে ৪০ টাকা। এরপর একটা ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে পাইলট বাড়ি। তবে অবশ্যই আগে বুকিং থাকতে হবে।
অথবা ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, আজিমপুর, মহাখালী থেকে গাজীপুর পরিবহন, ঢাকা পরিবহন, ভিআইপি পরিবহন ও বলাকা পরিবহনে শিববাড়ী চলে যাবেন। ভাড়া ৭০ টাকা। শিববাড়ী থেকে অটোরিকশায় ভাদুন (ইছালি) জল-জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।

খরচাপাতি
এখানে জনপ্রতি নেওয়া হয় ২,০০০ টাকা। নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবারসহ। খরচটা একটু বেশি মনে হতে পারে। তবে খাবারের বহরা দেখলে তা আর মনে হবে না। সারাদিনের জন্য ১,৫০০ টাকা জনপ্রতি (সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকেলে হালকা নাস্তা)। শিশু (৫-১০ বছর), কাজের লোক ও ড্রাইভার জনপ্রতি ৬০০ টাকা।

যোগাযোগ : কামরুল- ০১৯১৯৭৮২২৪৫

 

যৌথ প্রযোজনার কেমন নীতিমালা চান তারকারা?

ঢাকাই সিনেমাপাড়া এখন উত্তপ্ত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নিয়ে। এ নিয়ে যেন বিতর্কের শেষ নেই। প্রশ্ন উঠেছে শর্ত ও নীতিমালা না মেনেই চলছে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ! যার ফলে এফডিসির ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র পরিবার সোচ্চার হয়েছে। চলচ্চিত্র পরিবারের নেতারা রোববার (৯ জুলাই) তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে জানানো হয়, নতুন নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্পর্কিত কার্যক্রম স্থগিত।

সিনেমাপাড়ায় এখন প্রশ্ন উঠেছে কেমন হওয়া উচিত যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা? ১৯৮৬ সালের নীতিমালায় বলা আছে, যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণে নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী দু’দেশ থেকে সমহারে থাকতে হবে। দু’দেশে শুটিং হতে হবে। কিন্তু ২০১২ সালের পরিবর্তিত নীতিমালায় উল্লেখ আছে দু’দেশের নির্মাতা আলোচনার ভিত্তিতে সব বিষয় চূড়ান্ত করবে। নির্মাতারা বলেন, আসলে এটি শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়। এরপর ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা (২০১২ সংশোধিত) জারি করা হয়।

নতুন নীতিমালা নিয়ে কিংবদন্তি অভিনেত্রী চিত্রনায়িকা সুচন্দা বলেন, ‘দুই দেশের তারকা শিল্পীদের এক মঞ্চে হাজির করতে, নতুন স্বাদ যোগ করতে যৌথ আয়োজনে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতেই পারে। এটি আগেও হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা যদি সঠিক না হয়, তাহলে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে। যারা নীতিমালা নির্ধারণ করবেন তারা যেন অবশ্যই এটা বিবেচনা করেন। নইলে চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। পাশাপাশি সাফটা চুক্তি ও হলের পরিবেশ ইতিবাচক করতে শুনছি তথ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সরকারকে চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে আন্তরিকতা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’

ববিতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যৌথ প্রযোজনার বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছি। এবং প্রযোজনাও করেছি। আমি যৌথ প্রযোজনার পূর্ণাঙ্গ নিয়ম মেনেই করেছি। সমানসংখ্যক শিল্পী-কলাকুশলী, আমার দেশের সঙ্গে মানানসই গল্প, সমান হারে শুটিং করেছি। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি এখন এসবের কিছুই মানা হয় না। উদ্ভট গল্প, পুরো ছবি দেশের বাইরে শুটিং করে এনে বাংলাদেশে একটা গান আর দু-তিনটা দৃশ্যধারণ করে ছবি মুক্তি দেয়া হচ্ছে। এটা স্রেফ জালিয়াতি। যারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন আমিও তাদের একটি অংশ। শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে গিয়েছি। আমার চাওয়া থাকবে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মিত হলে যেন দুদেশের সবকিছুর অনুপাত সমান থাকে। দুই দেশের সম্মানও সমুন্নত থাকে।’

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘যৌথ প্রযোজনার নামে যেটা হচ্ছে সেটা বেদনাদায়ক। নব্বই ভাগ শিল্পী আসছে ইন্ডিয়া থেকে এবং আমাদের দেশ থেকে নামমাত্র দশভাগ শিল্পী কাজ করছে। এটা না হয়ে যেন ফিফটি-ফিফটি থাকে। এছাড়া ইন্ডিয়াতে যখন ছবিটা রিলিজ হচ্ছে সেখানে আমাদের দেশের পরিচালকের নাম থাকে না, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম থাকে না। এটা ঠিক না। এখন নতুন নীতিমালা এমনভাবে তৈরি করা উচিৎ যেন দুদেশের চলচ্চিত্রের স্বার্থরক্ষা করা যায়। যেটাই নীতিমালাতে আসুক না কেন মূল এই বিষয়টি থাকা উচিৎ।

পুরাতন নীতিমালায় এই ফিফটি-ফিফটি হিসেব থাকে তারপরেও যদি না মানা হয়, তবে আমাদের দেশে সেসব ছবি মুক্তি পায় কেন? সেন্সরবোর্ড এটা দেখেই মুক্তি দেয়া উচিৎ। আর নীতিমালা তৈরি বা সংশোধন মূখ্য বিষয় নয়, সেটা মানা হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করতে হবে। আর সাফটা চুক্তি নিয়েও সরকারের নজরদারি খুব প্রয়োজন।’

অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, ‘এখনকার যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় কতটুকু নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে। সমানসংখ্যক কলাকুশলী নিয়ে ছবি নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা কেউ করছেন না। সেন্সর বোর্ডের যৌথ চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালার ৬নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবির জন্য মুখ্য শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যা যৌথ প্রযোজকগণই নির্ধারণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের কলাকুশলীর সংখ্যানুপাত সাধারণভাবে সমান রাখতে হবে। একইভাবে চিত্রায়ণের লোকেশন সমানুপাতিক হারে রাখতে হবে। এই নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক করা হোক।

দুই দেশ মিলে যদি যৌথ প্রযোজনা করা যায় তাহলে খুব ভালো। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতাও আছে। আমরা যেহেতু একটা দেশ, আর কলকাতা ভারতের একটা রিজিয়ন তাই অনেক ফাঁকফোকর থেকে যায়। এটা খুবই দুঃখজনক। সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন। আমাদের এখান থেকে যেসব সিনেমা কলকাতায় যাচ্ছে, ওখানে কেউই সেগুলো দেখছে না। প্রযোজক পর্যায় থেকেও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। শুধু শুধু যৌথ প্রযোজনা আর সাফটা চুক্তি। সরকার আন্তরিক হচ্ছে শুনে খুব ভালো লাগছে।’

চিত্রনায়ক বাপ্পী বলেন, ‘আগে বলতে চাই সাফট চুক্তি নিয়ে। এটা আপাতত বাদ দেয়া উচিৎ। কলকাতার চলচ্চিত্র বাজারের অবস্থা ভালো না। আমাদের ছবির তুলনায় তাদের ছবির বাজেট বেশি হওয়ার পরেও ছবিগুলো সেখানে ভালো চলছে না। সেটা তাদের পত্রিকা ও সিনিয়রদের সাক্ষাতকার পড়লেই বুঝা যায়। কলকাতা রঙচঙ দিয়ে নিজেদের দৈন্যতার বিষয়টি ঢেকে রাখছে। কৌশলী ওরা। তাই তারা সাফটা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজার ধরতে চাচ্ছে।

আর যৌথ প্রযোজনায় ছবি যদি নির্মিত হয়, তাহলে সঠিকভাবে ফিফটি-ফিফটি অনুপাতে হতে হবে। শিল্পী, শুটিং লোকেশন, টেকনিশিয়ান সবকিছুই সমান সংখ্যক হবে। এই নিয়মকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। নীতিমালা এমনভাবে হোক যাতে করে যৌথ প্রযোজনায় উৎসাহ না দেয়া হয়। এতে করে লোকাল প্রডাকশনে বেশি বেশি ছবি নির্মাণ হবে। যে গাছে দু’দিন পরপর পঁচন ধরে সে গাছ রাখার চেয়ে কেটে ফেলা উচিৎ। মানে যে নীতিমালা মানাই হচ্ছে না সেটা রাখার দরকারই নেই। যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ দুই-তিন বছরের জন্য বন্ধ করে দেয়া হোক। আগে আমরা নিজেরা দাঁড়াই। যেহেতু মেঘ কাটতে শুরু করেছে আমার বিশ্বাস সবকিছু ঘুরে দাঁড়াবে।

আর আমি মনে করি আমাদের মূল সমস্যা হলের জিম্মিদশা। প্রযোজকরা ছবি মুক্তি দেয়ার রাজনীতি থেকে রক্ষা পেলে ছবি নির্মাণে উৎসাহী হবে। দেশের মানুষ প্রচুর ছবি দেখে। কিন্তা তারা হলের পরিবেশ না পেয়ে আসেন না। তাই ৬৪ জেলায় ২টি করে সিনেপ্লেক্স চাই আমরা যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের হাতে কিংবা বিশ্বস্ত কারো কাছে।’

সংগীত পরিচালক ইমন সাহা বলেন, ‘আমাদের সরকার আমাদের সবকিছু বিবেচনা করেই নীতিমালা বানাবেন বলে মনে করি। কারণ আমাদের জন্য অমঙ্গলকর কোনোকিছু সরকার করেননি আর করবেনও না বলে আমি বিশ্বাস করি। সরকার যে নীতিমালা নির্ধারণ করবেন সেটা আমাদের বিপক্ষে যায় না, আমরা মানি কি মানি সেটা আমাদের ব্যাপার। বিভিন্ন ফাঁকফোকর বের করে আমরা এখানে অনিয়ম ঢুকাই। আমি ‘চুড়িওয়ালা’ নামের যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করেছি, আমার বাবাও ছিলেন। আমি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছিলাম, বাবা গান করেছিলেন। মিউজিকের টেকনিশিয়ানরা বাংলাদেশের ছিলো, সিঙ্গাররা সেদেশের ছিলো। সমান অনুপাত ছিল। তখন নিয়ম ভাঙার ব্যাপার ছিলো না। আমি যৌথ প্রযোজনার প্রায় ৪০টি ছবির সংগীতের কাজ করেছি। আমি কখনোই এখানে অনিয়ম চাই না।

আর সাফটা চুক্তি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। দেখুন আগেই বলেছি সরকার আপনাদে সুবিধা দেয় ভালোর জন্য। আপনি যদি তাকে অপব্যবহার করেন তার দায় রাষ্ট্রের নয়। চলচ্চিত্র শুধু পণ্য নয়, এটা ব্যবসায়েরও জায়গা।’

অর্থনীতিবিদদের মতে যৌথ প্রযোজনার নামে মূল প্রতারণা হয় আর্থিক খাতে। অর্থ পাচারে এরচেয়ে সহজ মাধ্যম এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। যৌথ প্রযোজনার আড়ালে ভয়াবহ রকম অর্থ পাচার করা হচ্ছে বলেই অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের অভিযোগ। দেশপ্রেম তথা দেশের চলচ্চিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা কিংবা ভালবাসা জলাঞ্জলি দিয়ে এসব প্রযোজক-নির্মাতারা দেশের সংস্কৃতিবিরোধী, সর্বোপরি দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। যতো দ্রুত সম্ভব এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তথ্য, অর্থ, বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।

পাশাপাশি সাফটা চুক্তির সঠিক ব্যবহার, হলের সমস্যা দূরীকরণ রোধ করতে পারলে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও প্রত্যাশা নানা প্রজন্মের চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের।

 

আল্লাহর বন্ধু হওয়ার উপায় ‘ঈমান ও তাকওয়া’

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করবে তাঁর হুকুম পালন এবং নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে। তাঁর একান্ত আপন ও বন্ধু হওয়াই মানুষের দুনিয়ার জীবনের একমাত্র চাওয়া এবং পাওয়া। এ চাওয়া-পাওয়াকে আরবিতে বলা হয় ‘ওলি’ বা বন্ধু’।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়বান্দাদের পরিচয় এবং বন্ধু হওয়ার শর্ত এভাবে তুলে ধরেন- ‘জেনে রেখ! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুগণের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তাগ্রস্তও হবেন না; যারা ঈমান এনেছেন এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলেন বা তাকওয়ার পথ অনুসরণ করেন। তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (সুরা ইউনুছ : আয়াত ৬২-৬৪)

উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার জন্য দু’টি শর্তারোপ করা হয়েছে। একটি হলো- আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা। আর দ্বিতীয়টি হলো- আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও অবাধ্যতা থেকে আত্মরক্ষা করে চলা বা তাকওয়া অবলম্বন করে চলা।

‘ঈমান এবং তাকওয়া’- এ দু’টি গুণের মধ্যেই আল্লাহর ওলি বা বন্ধুর পরিচয় সীমাবদ্ধ। ঈমান ও তাকওয়ার গুণ যার মধ্যে যত বেশি ও যত পরিপূর্ণ হবে; ওই ব্যক্তি বেলায়েতের পথে তত বেশি অগ্রসর ও তত বেশি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ইমাম আবু জাফর তাহাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘সব মুমিন করুণাময় আল্লাহর বন্ধু। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসরণকারী, সে তত বেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত অর্থাৎ তত বেশি বেলায়েতের অধিকারী। (ইবনুল মুবারক, কিতাবুয যুহুদ)

আল্লাহ তাআলার প্রিয়বান্দা হওয়ার জন্য একজন মুমিনের কাজকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন।

প্রথমত, বান্দা আল্লাহর ফরজ বিধানগুলো যথাযথ পালন করবে। দ্বিতীয়ত, ফরজ বিধান পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেলায়েত হাসিল তথা আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভ করবে।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈটক্য অর্জন বা ওলি হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে সে কাজ আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি; যে কাজ আমি ফরজ করেছি।

অর্থাৎ ফরজ কাজ পালন করাই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সর্ব প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় কাজ।

এরপর বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়েতের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালোবাসি।

আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়; আমি তার দর্শনেন্দ্রিয় হয়ে যাই, যা দিয়ে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে হাঁটে।

সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (মুয়াত্তা মালেক)

পরিশেষে…
ওলি বা বন্ধু হতে হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার ও তাকওয়ার অধিকারী হওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হতে হলে তাঁর ফরজ বিধানাবলী পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করাও জরুরি।

যারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জনে সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণে সঠিক ঈমান সংরক্ষণ করেন, দুনিয়ার সব হারাম ও নিষেধ বর্জনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করেন এবং তাঁর ওপর অর্পিত যাবতীয় ফরজ দায়িত্ব যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করেন, তারাই হলেন আল্লাহর ওলি বা বন্ধু।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর নৈকট্য অর্জনে ঈমান ও তাকওয়ার ওপর অটল ও অবিচল থাকার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

ইন্টারভিউয়ের চাপ দূর করুন ১০টি কৌশলে

চাকরি ইন্টারভিউ দিতে চাচ্ছেন, নার্ভাস লাগছে?  অস্বাভাবিক কিছু নয়। একটি ভালো চাকরি আপনার দৈনন্দিন অনেক সমস্যা সমাধান করে দিতে পারে।  কিন্তু যোগ্যতা থাকার  পরও অনেকেই চাকরি পান না শুধুমাত্র নার্ভাসনেসের কারণে। সহজ প্রশ্নের জানা উত্তরটা দিতে পারেন না কিংবা হ্যান্ডশেক করার সময় পড়ে যায় হাতের ফাইলটা। এই সব হয়ে থাকে স্ট্রেসের কারণে।  ভুলগুলো ছোট খাটো কিন্তু চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এইগুলো অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।  ইন্টারভিউ স্ট্রেস বা এংজাইটি কমাতে পারেন কিছু কৌশলে।    

১। হেঁটে আসুন

বাইরের সতেজ বাতাস আপনাকে ফ্রেশ একটি অনুভূতি দেবে। ঘর থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন। দেখবেন নার্ভাসনেস অনেকখানি কমে গেছে।

২। খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকুন

ইন্টারভিউয়ের আগে ক্যাফিন জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন। আপনি মনে করছেন কফি আপনার চিন্তা কমিয়ে দেবে, এটি আপনার ভুল ধারণা। ইন্টারভিউয়ের আগে হালকা কোনো খাবার খান। ভারী খাবার আপনাকে ক্লান্ত করে তুলবে।

৩। নিজেকে জোর করবেন না

নিজেকে শান্ত রাখার জন্য নিজেকে জোর করবেন না। এটি শুধু আপনার স্ট্রেস বৃদ্ধি করবে, চিন্তা কমাবে না একটুও।

৪। “স্টপ” মেথড মেনে চলুন

কার্যনির্বাহী কোচ ক্রিস চ্যারিক যেকোনো স্ট্রেস কমানোর জন্য একটি কৌশল বলে দিয়েছেন, তা হলো “STOP”

S- (স্টপ) আপনি যা চিন্তা করছেন তা বন্ধ করে নিজের লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করুন।

T- (টেক) কয়েকবার চোখ বন্ধ করে শ্বাস গ্রহণ করুন।

O- (ওবজারভ) নিজের দিকে লক্ষ্য রাখুন, নিজের মন, আবেগ, অনুভুতি বোঝার চেষ্টা করুন। 

P-(প্রোসিইড) নিজেকে শান্ত রাখার জন্য চেষ্টা করুন।

এটি আপনার স্ট্রেস কমিয়ে আপনাকে কাজে আরো বেশি ফোকাস করে তুলবে।

৫। খারাপের জন্য প্রস্তুতি নিন

সবচেয়ে বড় ভয় কী? প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না? কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে কী বলবেন, কীভাবে বলবেন সেটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার অনুশীলন করে নিন। হয়তো বা এইরকম কোনো পরিস্থিতির সম্মুখিন পড়তে হবে না আপনাকে। তবুও প্যাকটিস আপনার ভয় কাটাতে সাহায্য করবে।

৬। নিজের সাথে কথা বলুন 

নিজের সাথে কথা বলা অস্বাভাবিকতার লক্ষণ নয়। বরং এটি আপনার ভয় দূর  করতে সাহায্য করবে। আপনি যখন চিন্তিত আপনার মস্তিষ্ক তখন আপনাকে  নানানভাবে ভয় দেখাতে শুরু করবে। সে হয়ত বলবে, ‘আজকে তো নিশ্চিত আমি এলোমেলো বলব।’ আজ কোনভাবেই আমাকে দেখতে ভাল লাগছে না’। নিজেকে পাল্টা প্রশ্ন করুন। কথা বলুন নিজের সাথে। যুক্তি দিয়ে ঠান্ডা মাথায় মনকে বোঝান তেমন কিছুই হবে না, কারণ আপনি এবার যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং এবার ভালো কিছু হবে।

৭। প্রিয় মানুষকে ফোন করুন

স্ট্রেস অনেকখানি কমে যায় প্রিয় কোনো মানুষের সাথে কথা বললে। মা, বোন অথবা প্রিয় বন্ধুর সাথে কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলুন। তাদের ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে সাহস যোগাবে।

৮। গান শুনুন

পছন্দের কোনো গান শুনতে পারেন। এটি আপনার মাথা থেকে দুশ্চিন্তার পরিবর্তে ভালো সুন্দর অনুভূতির যোগান দেবে।

৯। সুপার হিরো অঙ্গভঙ্গি

সুপার হিরো “সুপার ম্যান”,“ব্যাট ম্যান”-কে মনে আছে? সোজা হয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পৃথিবীকে আধিপত্য করার জন্য। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকুন, গভীরভাবে কয়েকবার শ্বাস গ্রহণ করুন। আর নিজেকে বলুন “ আপনি পারবেন পৃথিবী পরিবর্তন করতে, নিজের সাহস এবং যোগ্যতা দিয়ে”।

১০। এটি শুধু কথোপকথন  

আপনি চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছেন না কিংবা করতে যাচ্ছেন না বাঘের  সাথে লড়াই। মনে রাখবেন আপনি কয়েকজনের মানুষের সাথে আপনার ক্যারিয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছেন না, আর কিছুই নয়।আপনি যেমন তাদের জন্য কাজ করতে চাচ্ছেন তেমনি তারাও আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী।

 

জয় করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধিতা

শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করেছেন। পেয়েছেন জেলার শ্রেষ্ঠ সফল নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি। তিনি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কান্দির গ্রামের হামিদা বেগম।

কিছুদিন আগে ভরদুপুরে গন্তব্য ছিল হামিদা বেগমের বাড়ি। গ্রামের পথ ধরে বিকেলবেলায় খুঁজে পাওয়া গেল বাড়িটি। সেলাই মেশিনকে ঘিরে উঠানে ২০ থেকে ২৫ জন নারী। তাঁদের মধ্যে ছাত্রীও আছেন বেশ কজন।  সেলাই মেশিনে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন হামিদা বেগম। দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।

বাড়ির উঠানে চলছে সেলাই প্রশিক্ষণ। আর তারই ফাঁকে কথা এগোয় হামিদা বেগমের সঙ্গে। জানালেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষকে সহায়তা করার ইচ্ছা তাঁর। কিন্তু জন্ম থেকেই তাঁর ডান হাতটি সমস্যা। হাতে তিনি শক্তি পান না। কিন্তু পড়ালেখা চালিয়ে যান। ১৯৯০ সালে ইসলামপুরের সামছুন্নাহার উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৩ সালে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী আমান উল্লাহ একজন কৃষক। ২০১০ সালের দিকে গ্রামের শিশুদের জন্য একটি স্কুলও খুলেছিলেন। কিন্তু বেশি দিন চালাতে পারেননি সেই স্কুল।

টানাপোড়েনের সংসারে নিজেই কিছু আয় করবেন—এটা চাচ্ছিলেন হামিদা বেগম। ২০১৫ সালে প্রতিবন্ধী শিশুশিক্ষা ও পরিচর্যা সমিতি (প্রশিপস) থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নেন। দ্রুতই রপ্ত করেন সেলাই-ফোঁড়াইয়ের কাজ। পরের বছর প্রশিপস থেকে তাঁকে একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। ‘শুধু নিজে নিজে না করে গ্রামের প্রতিবেশীদের নিয়ে পোশাক বানানোর কাজ শুরু করি। কিছু কিছু আয় হতে থাকে।’ বললেন হামিদা বেগম। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। গ্রামের অসহায় নারী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের খুঁজে বের করেন। বিনা মূল্যেই শেখাতে থাকেন সেলাইয়ের কাজ।

প্রথমে পাঁচজন নারী হামিদা বেগমের কাছে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন। এভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন সেলাই শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গত মার্চ মাসে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবন্ধী কোটায় জেলার শ্রেষ্ঠ সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান হামিদা বেগম। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছন একটি সেলাই মেশিন। কান্দির গ্রামের দিপা আক্তার বলেন, ‘দরিদ্র মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তোলায় বড় ভূমিকা পালন করছেন হামিদা আপা। টাকা ছাড়াই তাঁর মেশিন দিয়ে তিন মাসের প্রশিক্ষণ আমি নিজেই নিয়েছি।’

দিপার মতো আরেকজন দেওয়ানগঞ্জ এ কে এম আবদুল খালেক মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্রী সাগরিকা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা কৃষিকাজ করেন। অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। নিজে কিছু করার মতো ব্যবস্থা এই গ্রামে নেই। একদিন হঠাৎ হামিদা আপা বাড়িতে হাজির। লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাইকাজ শেখার পরামর্শ দিলেন। এরপর থেকে আপা নিজের হাতে আমাকে কাজ শেখান। সেলাই মেশিন না থাকায় পরিবারের সবার পোশাক আপার মেশিন  দিয়ে তৈরি করে আনি।’

ঈদের আগের এ সময়টায় হামিদা বেগম এবং তাঁর প্রশিক্ষণার্থীদের যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই। গতকাল সোমবার মুঠোফোনে হামিদা  বলেন, ‘অনেকেই  পোশাক  বানাতে  দিয়েছেন।  এবারে  হয়তো  ২০ হাজার টাকার মতো আয় হবে।’ এই  অর্থ  ভাগ  হবে  যাঁরা  সেলাই  করছেন  তঁাদের সবার মধ্যেই।  নিজেদের  বাড়ির  মানুষ  বা  দরিদ্র  ছেলেমেয়েদের  পোশাক  তৈরিতে  হামিদা  বেগম  কোনো  অর্থই নেন না।

আরও কয়েকটি সেলাই মেশিন থাকলে আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত বলে জানালেন হামিদা বেগম। বললেন, ‘একটি মেশিন দিয়ে এত মানুষের প্রশিক্ষণ সম্ভব হয়ে ওঠে না।’ হামিদা বেগম এখন স্বপ্ন দেখেন একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করার, যাতে গ্রামের সব মানুষের সাক্ষরজ্ঞানটা হয়।

 

চিংড়ির দোপেয়াজা

জিভে জল আনা একটি খাবার চিংড়ির দোপেয়াজা। গরম ভাত, খিচুড়ি কিংবা পোলাওয়ের সঙ্গে খেতে ভীষণ মজা এই চিংড়ির দোপেয়াজা। এটি রান্না করতে সময় খুব কম লাগে এবং কম উপকরণেই রান্না করা যায়। রেসিপি জানা থাকলে আপনিও ঝটপট রান্না করতে পারেন সুস্বাদু চিংড়ির দোপেয়াজা।

উপকরণ : চিংড়ি মাছ আটটি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, কাঁচামরিচ ৪-৫টি, তেল কোয়ার্টার কাপ।

প্রণালি : চিংড়ি মাছ খোসা ফেলে নিন। প্যানে তেল দিন। পেঁয়াজ ভেজে নিন। সামান্য পানি দিয়ে সব মসলা দিন। চিংড়ি মাছ ও কাঁচামরিচ দিন। তেলের ওপর উঠে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

 

ত্বকের উজ্জ্বলতায় ঘরোয়া উপায়ে ব্লিচ

উজ্জ্বল ত্বক কে না চায়! নানা কারণেই আমাদের ত্বক তার উজ্জ্বলতা হারাতে পারে। তবে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে হলে কিংবা বাড়াতে চাইলে দরকার বিশেষ যত্নের। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে অনেকেই ব্লিচ করে থাকেন। পার্লারে গিয়ে ব্লিচ করানো অনেকটা খরচ ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। চাইলে তাই ঘরে বসে খুব সহজ উপায়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে ব্লিচ করে নিতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং ত্বকের উপরের মরা কোষ দূর করতে পারবেন সহজেই। চলুন জেনে নেয়া যাক-

প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ দুধ, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ চিমটি হলুদ গুঁড়ো/বাটা।

যেভাবে ব্যবহার করবেন:  প্রথমে দুধ ও মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর এতে তাজা লেবুর রস ভালো করে মেশান। তারপর হলুদ বাটা/ গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে মাস্কের মতো তৈরি করে নিন। কিছুটা পেস্টের মতো মিশ্রণ তৈরি হবে। এবার এটি পুরো মুখে লাগিয়ে গোল গোল করে পুরো মুখে ম্যাসেজ করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে দিন। ১০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে আলতো ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। মুখ ধুয়ে ভালো করে মুছে নিন। ৬/৭ ঘণ্টা কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না ত্বকে।

খেয়াল রাখুন: লেবুতে অ্যালার্জি হয় ত্বকে যাদের তারা এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করবেন না। দিনের বেলা ব্লিচ করে সরাসরি সূর্যের আলোতে বেরুবেন না, প্রয়োজনে রাতে ব্লিচ করুন।

 

প্রযুক্তির জালে বিপদের ফাঁদ

আমরা ঠিক যে সময়ে এসে মেয়েদের স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠেছি, ঠিক সেই সময়ে খবরের কাগজ ওলটালেই পড়তে হচ্ছে ধর্ষণের খবর। একটি-দুটি নয়, এ সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। পড়াশোনা জানা-না জানা, ধনী-গরিব, শহর থেকে গ্রাম—যে কোনো পরিবারের সন্তানের ক্ষেত্রেই এ ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশ্ন হলো, আমরা কি সামগ্রিকভাবে এগোচ্ছি, নাকি দিন দিন বর্বর যুগে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

কেন এই পরিস্থিতি?

আমরা আমাদের সন্তানদের যথাযথ শিক্ষায় কি শিক্ষিত করতে পারছি না? এখানে আমি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়েও পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সব ঘটনা যেন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে, কিছু মিডিয়ায় খবর প্রকাশ আর আইনি তৎপরতার পর শুধু যে মেয়ের পরিবারে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই পরিবার ছাড়া এটা নিয়ে কথা বলার বা সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় না।

তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, এটা অনস্বীকার্য। সবকিছুরই ভালো ও মন্দ দুটি দিক থাকে। এটি তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও সত্যি। সামাজিক মূল্যবোধ আর পারিবারিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কী করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছেলেমেয়েরা যোগাযোগ করবে—সে জন্য প্রস্তুতি খুবই প্রয়োজন।

আমার মনে হয়, প্রথমে আমরা সচেতনতার অভাবের কথা বলে মেয়েদের তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রাপ্তি—দুই জায়গা থেকেই দূরে রেখে এক অদ্ভুত পরিবেশে মানুষ করার চেষ্টা করি। এ জন্য একজন মেয়ে জীবনের শুরু থেকেই বেড়ে ওঠে খুব রক্ষণশীলভাবে। সে জানে এটা করা যাবে না, ওখানে একা যাওয়া যাবে না। কিন্তু কেন করা যাবে না, যদি করতে হয় কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন অথবা যদি বিপদে পড়েই যায় কী করে নিজেকে রক্ষা করবে—পুরো বিষয় সম্পর্কে সে জানে না। আর কোনো দুর্ঘটনা যদি ঘটেই যায়, আইনি বিচার পেতে কী ধরনের প্রমাণ বা তথ্য উপস্থাপন করতে হবে—এসব নিয়ে যেন জানার কিছু নেই। এ বিষয়ে কখনো বাড়িতে কথা বলা, কারও কাছে জানতে চাওয়ার কালচার থেকে আমরা অনেক দূরে। ছেলেদের সঙ্গেও এই বিষয়গুলো নিয়ে পারিবারিক কোনো  আলোচনা হয় না।

আমার কাছে বিষয়টি এমন যে, আমরা জেনেশুনে চোখ বন্ধ করে রাখাটাকেই নিরাপদ মনে করছি। কিন্তু এই ইন্টারনেটের যুগে কাউকে এর বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। সঠিক জীবনদর্শন আর পথ নির্দেশনা এ জন্য খুবই প্রয়োজন। আমার সন্তানকে জানতে দিতেই হবে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। এর জন্য কথা বলতে হবে, আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে, যেন কিছু জানতে তার ভেতরে কোনো দ্বিধা কাজ না করে। সন্তানদের  জানতে দিন—এসবই জীবনেরই অংশ।  আমরা কতটুকু নেব? আমাদের প্রেক্ষাপট কোনটাকে ভালো বলে, কেন ভালো বলে আলোচনার মাধ্যমে সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং   সমাজের দায়িত্ব।

কোনো একটা জিনিস আমরা যদি অপছন্দ করি, তা কেন খারাপ, কেন আমরা চাই না অথবা কী করে এড়িয়ে চলা যায়—সব দিকের তথ্য জানানো প্রয়োজন। আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মানুষের সঙ্গে সহজেই পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। এখন নিয়মিত কিংবা বলা যায় প্রতি মিনিটেই যোগাযোগ রাখা সম্ভব। নতুন বন্ধু বানানো তো এখন কোনো ব্যাপারই নয়। একটি ছেলে বা মেয়ের বাড়িতে না গিয়ে তার সামাজিক অবস্থান, রুচি, অর্থনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এখন দুই সেকেন্ডের বিষয়। কিন্তু এভাবে ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে তথ্য জানলেই কি একজন মানুষকে চেনা যায়?  সেই তথ্যকে বিশ্লেষণ করে যথাযথ ধারণা বের করার ক্ষমতা তৈরি করাও কিন্তু স্মার্টনেসের  অংশ।

এই ধারণাটা মেয়েদের পরিবার থেকেই দিতে হবে। মেয়েদের অনেক তথ্য জানাতে হবে, জানতে দিতে হবে। আর তাদের সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। এতে করে যেসব বিপদ পায়ে পায়ে রয়েছে, সেসব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত একজনের সঙ্গে কতটুকু তথ্য আদান-প্রদান করা ঠিক কিংবা তার সঙ্গে যোগাযোগ কোন পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারে, একটি অল্প পরিচিত ছেলের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন হলে কোন ধরনের বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার, তা জানা ও আলোচনার দাবিদার। বিশেষ করে, দেখা করার স্থান নির্বাচনের বিষয়ে অবশ্যই জানতে হবে, কথা বলতে হবে। যদিও অপরাধকে অন্য কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে চাপা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবুও নিজের িনরাপত্তার বিষয়ে মেয়েদেরকে সচেতনভাবে গড়ে তোলাও প্রয়োজন। তাহলে প্রতারণা এবং নানা বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে নিজেদের।

ইন্টারনেটে অনেক তথ্য থাকে—কোনটা সঠিক, কী করে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় বা কোন বিষয়টি নিশ্চিত করবে তথ্যের সত্যতা, তা বোঝা ও বের করতে পারতে হবে। অন্যদিকে ছেলেদের ব্যাপারেও পরিবারের ভূমিকা অনেক। মূল্যবোধ ও সামাজিক রীতিনীতি, নৈতিকতা ও তার ব্যবহার কী হবে, তার ধারণা ছেলেকে দিতে হবে।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার একটা প্রবণতা রয়েছে। মিথ্যা তথ্য প্রদান যে বাংলাদেশের আইনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেটা কি সবাই জানে? ইন্টারনেটের মাধ্যমে এমন করলে তা সাইবার আইনেও অপরাধ। এই আইনগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, সঠিক প্রয়োগ—এমন অপরাধপ্রবণতা কমতে সহায়ক বলে আমি মনে করি। আইনের প্রচার আর খোলামেলা আলোচনার সুযোগই পারবে অনেককে ধর্ষণের মতো অপরাধ থেকে বিরত রাখতে।

প্রযুক্তির অপব্যবহার কমানোর জন্য সচেতনতার বিকল্প কিছু নেই। নয়তো প্রযুক্তির জালে আটকে পড়েই আসবে বিপদ।

 

মুনমুনের বাস্তবতা, মুনমুনের স্বপ্ন

‘আমাগো মতো গরিবের স্বপ্ন দেখতে নাই। যে স্বপ্ন পূরণ হইব না, সেই স্বপ্ন না দেখনই ভালো। শুধু কষ্টই বাড়ে।’ সিনেমার সংলাপের মতো কথাগুলো ১৩ বছরের মুনমুন আক্তারের। বেদে সম্প্রদায়ের মেয়েটি হাত-মুখ নেড়ে নেড়ে কথা বলে। কথা বলার ঢঙে বাংলা সিনেমার প্রভাব স্পষ্ট।

গত ২৮ জুন শেষ বিকেলে মুনমুনের সঙ্গে কথা হয় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার হেলিপ্যাডে বসে। মাস তিনেকের জন্য এখানে বসত গেড়েছে মুনমুনের পরিবার। বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। বছরের ছয় মাস বাড়িতে থাকে, বাকি ছয় মাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ সম্প্রদায়ের বহরের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। এই আয়েই মূলত তাদের সংসার চলে।

কিশোরী মুনমুনের কথায় বালখিল্যতা নেই, আছে বিচিত্র অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ পরিণত মানুষের সুর। ১০ বছর বয়স থেকে সে উপার্জন শুরু করেছে। শৈশবকালীন খেলাধুলার সুযোগ মেলেনি। চার ভাই আর বাবার সংসারে উপার্জনকারী সে আর মা।

প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাই নেই মুনমুনের। এর পেছনের কারণ জিজ্ঞেস করার আগেই ঘাস ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলতে থাকে, ‘বছরের ছয় মাস বাড়ির বাইরে থাহি। আর পইড়্যাও কী হইতো। এই বাইদ্যার কামই করতে হইতো।’

গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিঙা লাগিয়ে মানুষের ‘ব্যথা সারানো’, ‘দাঁতের পোকা’ ফেলা, ‘বাতের তেল’ বিক্রি করে উপার্জন করে মেয়েটি। তার রোগী মূলত গ্রামের বয়স্ক নারী-পুরুষ। মুনমুনের ভাষায়, ‘বাতের ব্যথা, চাবানি-কামড়ানি হলে শিঙা লাগাই। ঘা হলে পোকা বাইর করি।’ তবে শিশুদের ‘দাঁতের পোকা’ ফেলা আয়ের অন্যতম উৎস।

নিজেকে ‘চিকিৎসক’ হিসেবেই দাবি মুনমুনের। চিকিৎসার ক্ষেত্রে মন্ত্রই তার প্রধান হাতিয়ার; যদিও আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র তাদের এই চিকিৎসা পদ্ধতি সমর্থন করে না। মন্ত্রগুলো মুনমুন মা আলোমতি বেগমের কাছ থেকে শিখেছে। তার ওই চিকিৎসার কাজে গাছের শিকড়বাকড়, বিভিন্ন পশুপাখির তেল, গরু-মহিষের শিং, নানা জীবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে। আর কাটা-ছেঁড়ার কাজ সারে ব্লেড ও কাকিলা মাছের দাঁত দিয়ে।

মুনমুন সকালে ঝুলি নিয়ে বের হয়, ফেরে পড়ন্ত বিকেলে। দুপুরের খাবারটা রুটি-কলা দিয়েই সেরে নেয়। শরীর খারাপ হলেও বিশ্রাম মেলে না। কারণ, পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস ১৩ বছরের এই মেয়ে। তবে দিনভর পরিশ্রম শেষে আয় মন্দ নয়। দিন শেষে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা কোঁচরে গুঁজে ঘরে ফেরে।

কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় কি না জানতে চাইলে উত্তরে বলে, ‘এত বড় কইলজা কার, আমাগো কিছু কইবে? বিক্রমপুরের নাম শুনলেই ভয় পায়।’

কিছুক্ষণ গল্প করার পর ক্ষীণ স্বরে মেয়েটি জানায়, রাস্তাঘাটে প্রায়শই বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। অনেকে বাজে ইঙ্গিতও করে। খারাপ লাগলে চুপ করে শোনে না, প্রতিবাদও করে। মুনমুনের কথা, ‘কাজ করালে করাবে, না করালে না। খারাপ কতা কইবে ক্যান?’

মাঠের মধ্যে বাঁশের চাটাইয়ে পলিথিন মুড়িয়ে তাদের অস্থায়ী ঘর। সেখানেই কয়েকটি থালাবাসন, কাপড়চোপড় রাখা। সেগুলো গোছগাছ করতে করতেই বলে, ‘এবার ঈদে ৫০০ টাকা দিয়া একটা শাড়ি লইছি। ছায়া-ব্লাউজও লইছি।’

মুনমুনের বিয়ে হয়েছে আট মাস। তবে এখনো বাবার পরিবারের সঙ্গেই থাকছে। দু-দিন ধরে মোবাইল নষ্ট। স্বামী রাহুল সরদারের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় মনটা একটু ভার। ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ভাবি, একদিকে বাল্যবিবাহ ঠেকানোর সাহসী কাহিনি ছাপা হয় সংবাদপত্রের পাতায়, অন্যদিকের বাস্তবতা এই মুনমুনদের জীবন।

আলাপ শেষে মাটির দিকে তাকিয়ে চোখ দুটি নাচিয়ে মেয়েটি বলে, ‘জানেন আফা, আমার না একটা স্বপ্ন আছে। গোপন স্বপ্ন।’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই লজ্জা মেশানো কণ্ঠে বলে, ‘খুইব মডেল হইতে মন চায়। টিভিতে দেইখ্যা নিজে নিজে মডেলিং শিখছিও।’

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে, ‘আমরা গরিব, শিক্ষা নাই। যে স্বপ্ন পূরণ হইবে না, সে স্বপ্ন না দেখাই ভালো। তাই না, আফা?’ এ কথা শেষ হতেই মুনমুনের চোখের দিকে তাকাই। দেখি সেখানে চিকচিক করছে মুনমুনের স্বপ্ন হারানোর কষ্ট।

 

বর্ষায় ইলিশ খিচুড়ি

ঝুম বৃষ্টিতে একটু আধটু বৃষ্টিবিলাস করতে সবারই মন চায়। নাগরিক এই ব্যস্ত জীবনে সেই স্বপ্ন অনেকটাই অধরা থেকে যায়। তবু যেটুকু সুযোগ পাওয়া যায়, খাবার টেবিলে একটু ভিন্নতা এনেও করা যেতে পারে বৃষ্টি বিলাস। তেমনই একটি রেসিপি ইলিশ খিচুড়ি।

উপকরণ : পোলাওর চাল ৫০০ গ্রাম, মসুর এবং মুগডাল মিলিয়ে ৪০ গ্রাম, ইলিশ মাছ ৪ পিস, পেঁয়াজ মিহি করে কাটা ১/২ বাটি, রসুন বাটা ১ চা চামচ, কাঁচামরিচ ৮-১০টি, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, তেজপাতা ২টি, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, আদা কুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ মোটা করে কাটা ১ বাটি, হলুদ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, সরিষার তেল, পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি : প্রথমে চাল এবং ডাল একসঙ্গে ভালো করে ধুয়ে নিন। একটি পাতিলে তেল গরম করে পেঁয়াজ এবং বাকি সব কুচি করা ও গুঁড়া মসলা এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে মসলা ভালো করে কষিয়ে চাল ও ডাল দিয়ে ভালো করে ভেজে তাতে পরিমাণমতো পানি এবং কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে রান্না করুন।

একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে তাতে ইলিশ মাছের টুকরার সঙ্গে অন্যান্য সব বাটা ও গুঁড়া মসলা, কালিজিরা, কাঁচামরিচ এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে মাখা মাখা করে রান্না করে ফেলুন ইলিশ মাছ। তারপর খিচুড়ি রান্না হয়ে এলে অর্ধেক খিচুড়ি তুলে নিয়ে রান্না করা মাছ বিছিয়ে উপরের বাকি রান্না করা খিচুড়ি ঢেকে দিয়ে আর ১০ মিনিট চুলায় রেখে রান্না করে গরম গরম পরিবেশন করুন ইলিশ খিচুড়ি।

 

ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন শেলী

নেশাগ্রস্ত স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রায় দুই বছর আগে স্বামীকে তালাক দিয়েছিলেন শেলী আক্তার। স্বপ্ন দেখেছিলেন, নিজেই রোজগার করে স্বাবলম্বী হবেন। মায়ের সঙ্গে মিলে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। পুঁজি তেমন না থাকলেও কোনোভাবে কেটে যাচ্ছিল তাঁর জীবন। প্রতিহিংসাপরায়ণ সাবেক স্বামীর সেটি সহ্য হয়নি। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন সাবেক স্বামী। তখন ঘুমিয়েছিলেন শেলী।  ছুড়ে দেওয়া ওই অ্যাসিডে দগ্ধ হয়েছিলেন পাশে ঘুমিয়ে থাকা মা হোসনে আরা বেগমও (৫৫)।

অ্যাসিডদগ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল মা-মেয়েকে। অ্যাসিডে শেলীর মুখ, মাথার এক পাশসহ শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে যায়। মায়ের পুড়ে যায় শরীরের ১০ শতাংশ অংশ। হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শেলীর পরিবার। এ সময় শেলীর পাশে দাঁড়ায় ট্রাস্ট। প্রায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা চলে শেলীর। চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে শেলীকে অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য  সহায়ক তহবিল থেকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

সুস্থ হওয়ার পর শেলীর পুনর্বাসনেও এগিয়ে এসেছেট্রাস্ট। অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিল থেকে তাঁকে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ টাকা পেয়ে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্বল পান শেলী। এখন তাঁর স্বপ্ন, মর্যাদা নিয়ে বাঁচার। তিনি বলেন,  ট্রাস্টের কাছ থেকে অর্থসহায়তা পেয়ে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে দোকানের জন্য টুল, চায়ের কাপ ও খাদ্যপণ্য কিনেছি।’ জানালেন, দিন শেষে খেয়ে–পরে বাঁচার মতো আয় করতে পারছেন এখন।

অ্যাসিড ছোড়ার মামলায় পুলিশ ঘটনার তিন দিন পর শেলীর সাবেক স্বামী মো. জাহাঙ্গীরকে ঢাকার রূপনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় জাহাঙ্গীরকে একমাত্র আসামি করে পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন। শেলীদের মূল বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। তাঁরা চট্টগ্রাম নগরে অনেক বছর ধরে থাকছেন। অভাবের কারণে শেলীর পড়াশোনা করা হয়নি। শেলীরা তিন ভাই, তিন বোন। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। তাঁরা কুমিল্লায় থাকেন। বড় দুই ভাই ভ্যান চালান। ছোট ভাই স্কুলে পড়ে। পলোগ্রাউন্ড সিআরবি এলাকায় তাঁরা থাকেন। প্রায় ছয় বছর আগে শেলীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বিয়ে হয়। জাহাঙ্গীরের মূল বাড়ি রংপুরে। তবে তিনিও পলোগ্রাউন্ড এলাকায় থাকতেন। শেলীর একটি ছেলে রয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের পর জাহাঙ্গীর ছেলেকে রংপুরে তাঁদের বাড়িতে রেখে আসেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন—এখন সেই দিনটির অপেক্ষায় আছেন শেলী আক্তার।

 

দমে যাননি আনিলা

আনিলা বলেন, ‘প্রায় প্রত্যেক ধাপে কষ্ট করেছি। আমি কমার্সে পড়ি তখন। আর আমার শ্রুতলেখক দেওয়া হয় বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে এমন একজনকে। তাঁকে কীভাবে বোঝাব উত্তরটা কেমন করে লিখতে হবে। অ্যাকাউন্টিং প্রিয় বিষয় ছিল, তা বাদ দিলাম। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও পড়তে পারিনি। সব মিলে আমার চারপাশের গণ্ডিটা ছোট হয়ে আসছে। বেশির ভাগ জায়গায় র‍্যাম্প নেই। বাবা আর ড্রাইভার চ্যাংদোলা করে আমাকে নিয়ে যান। খারাপ লাগে। অথচ বিভিন্ন জায়গার কর্তৃপক্ষ চাইলেই একটা করে র‍্যাম্প বানাতে পারে। এই তো সেদিন রাস্তায় গর্ত থাকায় বাবা ভারসাম্য রাখতে না পারায় হুইলচেয়ার নিয়ে পড়ে গেলাম। স্বাভাবিকভাবে পড়তে বা বেড়ে উঠতে আমার মতো অন্য শিশুদের যাতে কষ্ট করতে না হয়, তা নিয়ে কাজ করতে চাই।’

জন্মের পরপরই সেরিব্রাল পালসির কারণে শারীরিক সমস্যার বিষয়টি জানতে পারেন আনিলার বাবা ও মা। সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। এখন পর্যন্ত আনিলা দুই হাত ও দুই পা দিয়ে কিছু করতে পারেন না। সব কাজেই মায়ের সাহায্য নিতে হয়। হুইলচেয়ার কেউ টেনে না নিলে তিনি নড়তেও পারেন না। কথা বলতেও অনেক কষ্ট হয়। বই দেখে পড়তে কষ্ট হয় বলে একজন পড়ে শোনান। লিখতে পারেন না বলে শ্রুতলেখক লাগে সব পরীক্ষায়। কিন্তু আনিলার বুদ্ধিমত্তা সব প্রতিবন্ধকতাকে ম্লান করে দিয়েছে। হুইলচেয়ারে জীবনের গণ্ডি আটকে যাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি আনিলার।

আনিলা গান শিখছেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের বর্ষপঞ্জি, বুকলেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনিলার তোলা ছবি জায়গা করে নিয়েছে। আনিলা বললেন, ‘নিজে স্বপ্ন দেখতে ও অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে চাই। পেছনের কথা ভুলে সামনে আগাতে চাই।’

মেয়ে আনিলাকে একটু ভালো রাখার জন্যই মা মারুফা হোসেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন ও তরী ফাউন্ডেশন। বর্তমানে তিনি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা। আর আনিলার বাবা আশফাক-উল কবীর চাকরি ছেড়ে মেয়েকে সময় দিচ্ছেন আর পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন, নিজের মেয়ে এবং এ ধরনের সমস্যায় যারা আছে তাদের জন্য একটি কমপ্লেক্স তৈরির। যেখানে আইনি সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা পাওয়া যাবে।

বেশির ভাগ স্বাভাবিক স্কুল আনিলাকে ভর্তি করতে চায়নি। অজুহাত ছিল, আনিলাকে ভর্তি করলে অন্যান্য অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুল থেকে নিয়ে যাবেন। কোনো কোনো স্কুল ভর্তি করলেও দোতলায় ক্লাস থাকায় পড়া সম্ভব হয়নি। কোনো কোনো স্কুলের চরম অসহযোগিতা আনিলা ও তাঁর বাবা–মায়ের যন্ত্রণাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিত। একটি স্কুল নিচতলায় বসে ক্লাস করতে দিলেও আনিলার ঠাঁই হয়েছিল টয়লেটের পাশে। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো, স্কুলে পড়াশোনা বাদ। যে নামকরা স্কুল ভর্তি নেয়নি, সেই স্কুলই সানন্দে তাদের কোচিংয়ে ভর্তি করে। কোচিং আর বাসায় প্রাইভেট পড়েই আনিলা ‘ও লেভেল’ শেষ করেছেন।

আনিলা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে এ পর্যন্ত লন্ডন, ভারত, মালয়েশিয়া, ব্যাংকক ও ভুটানে ভ্রমণ করেছেন। আর বাবা–মায়ের সঙ্গে দেশের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কক্সবাজারের সমুদ্র খুব টানে। বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় হুইলচেয়ার নিয়ে সমুদ্রের একদম কাছ পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। কক্সবাজারে কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই মন খারাপ হয়। আনিলাকে পাহাড় ততটা টানে না। কেমন যেন শান্ত পরিবেশ।

মা মারুফা হোসেন বললেন, ‘আমি যা দেখব, যা উপভোগ করব, আমি চাই আমার মেয়েও তা দেখবে ও উপভোগ করবে। আমাদের মেয়ে যা দেখতে পারবে না, আমরাও তা দেখব না। একবার মনে হলো, মেয়ে তো নৌকায় ওঠেনি। তারপর মেয়েকে নিয়ে সিলেটের লালাখালে নিয়ে নৌকায় তুললাম। মেয়ে সেন্ট মার্টিন, ছেঁড়া দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করবে না, তা হতেই পারে না।’

কিন্তু তারপরও মায়ের মন খারাপ হয়। তিনি তাঁর ১৯ বছর বয়সে যা যা করতেন, তা তো মেয়ে করতে পারছে না। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে সময়টুকু দেন মেয়েকে। ছোটবেলা থেকেই মেয়ের সঙ্গে নানান গল্প করেন। সব তথ্য জানান। ইচ্ছে করেই বুয়া এলে কী বলতে হবে বা এ ধরনের নানান টুকিটাকি দায়িত্ব দেন মেয়ের ঘাড়ে, যাতে করে মেয়ে ক্ষমতায়িত হতে পারে। কেননা একদিন বাবা-মাকে ছাড়াই এ পৃথিবীতে মেয়েকে টিকে থাকতে হবে। সেই প্রস্তুতি চলছে মেয়ের ছোটবেলা থেকেই।

আনিলার মা বলেন, অনেকে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে হুইলচেয়ার নিয়ে কথা আর হুইলচেয়ার দেখাতে থাকে। মেয়েকে অটিস্টিক বলে। মেয়ের যে অর্জন, তা কেউ জানতে চায় না। মা বললেন, মেয়েকে নিয়ে বের হলে মানুষজনও হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্র না দেখে মেয়েকে ঘুরেফিরে দেখতে থাকে। আনিলা যোগ করলেন, ‘একবার হাসপাতালে ভর্তি হলাম। একজন নার্স বললেন, এই ভাঙা হাতে কেমনে করে ইনজেকশন পুশ করব?’

আনিলা যখন শিশু তখন সেভ দ্য চিলড্রেনের ন্যাশনাল চিলড্রেন প্যানেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে হন গ্লোবাল চিলড্রেন প্যানেলের সদস্য। ২০১১ সালে লন্ডনে এ প্যানেলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তরী ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গ্রামে গিয়ে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে নিয়েছেন ‘সুবর্ণ নাগরিক’–এর কার্ড।

আনিলার বাবা আশফাক-উল কবীর বলেন, ‘হুইলচেয়ার কোনো সমস্যা না, সমস্যা হলো আমাদের সমাজের নানান অব্যবস্থাপনা ও মনমানসিকতা। আনিলা আমাদের জন্য কোনো সমস্যা না। ওর মধ্যে অনেক সম্ভাবনা। আমরা চাই সম্ভাবনাটুকু কাজে লাগাতে।’

মা মারুফা জানালেন, আনিলাকে নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো পারিবারিক বিরোধ তৈরি হয়নি। পরিবারে স্বামী ও অন্যরা সব সময় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।