banner

সোমবার, ০৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 4, 2025

 

লেবুর নানা গুণ

গরম ভাত কিংবা খিচুড়ির সঙ্গে লেবু না হলে অনেকের যেন চলেই না। লেবুর শরবত গরমের সময়টাতে সবার কাছেই প্রিয় একটি পানীয়। আবার আচার তৈরি করেও অনেকে খেয়ে থাকে। ছোট একটা ফল কিন্তু এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে রয়েছে ৬ ভাগ সাইট্রিক অ্যাসিড, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৫, বি৩, বি১, বি২, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, কার্বহাইড্রেট ফ্যাট এবং প্রোটিন । লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ঠান্ডা কাশি প্রতিরোধে খুব কাজ দেয়। এছাড়াও লেবুতে রয়েছে ফ্ল্যাবোনয়েড যা শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে ফিট রাখে। এটি আপনার শরীরের পি এইচ ঠিক রাখে। লেবুর রস ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে অন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ফেলে।

লেবুর ভিটামিন সি আপনার শরীরের রিঙ্কেল কমাতে সাহায্য করবে। লেবু রুটিন অনুযায়ী খেলে চোখের অসুখের দূর হয়। লেবুতে ২২ প্রকার ক্যান্সার বিরোধী যৌগ আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এটি অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে। লেবু রক্তনালীসমূহকে শক্তিশালী করে। এটি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে। লেবু

ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ত্বকের অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে। লেবুর রস একটি  প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক, যদি এটি মুখে মাস্ক হিসেবে নেয়া হয় তবে এটি স্কিনের অতিরিক্ত তেল ময়লা দূর করবে এবং ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে দূরে রাখবে। যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা একটি ছোট তুলার বলে লেবুর রস নিয়ে স্কিন পরিষ্কার করলে ব্রণ কমে যায়। এটি রাতে মুখ ধোয়ার পর ব্রণের দাগে লাগিয়ে রাখলে দাগ তাড়াতাড়ি সেরে যায়।

 লেবু ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। বয়সের কারণে মুখে দাগ পড়লে তাতে লেবুর রস ব্যবহার করলে দাগ হালকা হয়ে যায়। শক্ত ও স্বাস্থ্যবান নখ পেতে একটি বাটিতে লেবুর রস নিয়ে তাতে ১০ মিনিট নখ ভিজিয়ে রাখুন, এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। লেবুর রস, ৩/৪ কাপ অলিভ অয়েল, ১/২ কাপ মধু, দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করুন। এটি আপনার চুলকে ড্যামেজ ফ্রি করবে।

৩-৪ টেবিল চামচ নারিকেল তেল নিয়ে তাতে অর্ধেক পরিমাণ লেবুর রস মিক্স করে সপ্তাহে একদিন চুলে লাগান। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেখুন।

কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং আমলকীর রস মিক্স করে প্রতিদিন রাতে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।৪/১ লেবুর রস, কিছু লবণ এবং লেবুর রসের অর্ধেক পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়ে দাঁতে ঘষুন। এটি আপনার দাঁত আরও সাদা করবে।

 

এখনো বাইসাইকেল চালান বাংলা নানি

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৩ নভেম্বর। সে হিসাবে প্রায় ৭০ বছর বয়স জহিরন বেওয়ার। তবে তাঁর ছেলে তোরাব আলীর মতে, জহিরন বেওয়ার বয়স ৮০ বছর। কথা সেটা নয়। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের এই নারী এখনো সাইকেল চালান। আর সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্বাস্থ্যসচেতনতার কাজ করেন। স্বাস্থ্যসেবাও দিয়ে থাকেন।

কিছুদিন আগে ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের তালুক দুলালী গ্রামে গিয়ে জানা গেল, প্রয়াত ছাহেদ আলীর স্ত্রী জহিরন বেওয়াকে সবাই ‘নানি’ বলে ডেকে থাকেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। ছোট ছেলে তোরাব আলীর বয়স যখন সাত-আট মাস, তখন জহিরন বেওয়ার স্বামী মারা যান। সালটা ১৯৬৯ বা ১৯৭০। সংসারের হাল ধরতে হয় জহিরন বেওয়াকে। আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা আর এবাড়ি-ওবাড়ি টুকটাক কাজ করে সংসার চালাতে থাকেন।

চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা জহিরন বেওয়া ১৯৮০ সালে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে ধাত্রী ও সেবিকা হিসেবে কাজ পান। জহিরন কাজ করতেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী রেহেনা বেগমের অধীনে। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর পুরুষ ও মহিলা বন্ধ্যাকরণ রোগীদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন জহিরন।’

১৯৯৫ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে এখনো বাইসাইকেল চালিয়ে আশপাশের কয়েক গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরি করার কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ সাধারণ রোগের ওষুধ বিক্রি করেন। জহিরন বলেন, ‘এই কাজ এখন একই সঙ্গে শখ ও পেশায় পরিণত হয়েছে।’

গ্রাম্য ডাক্তার বা পল্লিচিকিৎসকেরা যে ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন, জহিরন বেওয়া সেটাই করছেন বলে জানালেন আদিতমারীর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাশেম আলী। দীর্ঘদিন থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে এ কাজ করছেন তিনি।

সরকারি কাজ ছাড়ার পর জহিরন বেওয়া একবার ভেলাবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভোটে পারি নাই, কিন্তু সব সময় মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াই। টাকার বিনিময়ে কিছু ওষুধ বিক্রি করি। রোগীর সমস্যা বেশি হলে হাসপাতালে যেতে বলি। আমি যত দিন বেঁচে আছি, এই কাজ করে যেতে চাই।’

তালুক দুলালী গ্রামেই কথা হয় দুলালী পাগলার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার, সহকারী শিক্ষক জোৎস্না বেগম, সাজেদা বেগম, সুরতন বেগম ও ফজিলা বেগমের সঙ্গে। সবাই জানান, জহিরন বেওয়া স্বল্পশি‌ক্ষত হলেও ধাত্রী ও সেবিকার কাজের অভিজ্ঞতায় ছোটখাটো অসুখে মানুষের পাশে দাঁড়ান। এতে অনেকেরই উপকার হয়।

আর সেই উপকার করতে আজও জহিরন বেওয়া সাইকেল নিয়ে বের হন গ্রামের রাস্তায়। হাজির হন বাড়ি বাড়ি।

 

নূরজাহান বেগম লাখো নারীর স্বপ্নের দূত

‘আমারে তুমি করিবে ত্রাণ,
এ নহে মোর প্রার্থনা’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা দিয়েই নূরজাহান বেগমকে তাঁর জন্মদিনে (৪ জুন) স্মরণ করছি। কেন এই কবিতাটি বেছে নিলাম সেই ঘটনাটিও একটু বলতে চাই। ২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর। সেদিনই নূরজাহান বেগমের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ফোন করতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল নূরজাহান বেগমের কণ্ঠস্বর। গবেষণার কাজে  অফিসে যেতে হবে শুনেই তিনি আমাকে যা বলেছিলেন তা অনেকটা এ রকম—এত দূরে আসতে হয়তো তোমাকে অনেক প্রতিবন্ধকতা এবং সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ তুমি প্রথম আসছ এবং তুমি একজন নারী। মনে রাখবে নতুন পথের যাত্রায় অনেক বাধা আসবে। কিন্তু যাত্রা বন্ধ করা যাবে না। তুমি যখন সেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে, সেখান থেকে ফেরার পথটা তোমার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। আসার পথের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব বলেই যাওয়ার রাস্তাটা এতটা সুগম হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ কথা স্মরণ রেখো।

দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন আত্মপ্রত্যয়ী নূরজাহান বেগমের সঙ্গে এভাবেই প্রথম পরিচয়ের সূত্রপাত। রবিঠাকুরের ‘আত্মত্রাণ’ কবিতার উল্লিখিত লাইন দুটো যেন এই নারীর অন্তর্নিহিত চরিত্রকেই প্রতিফলিত করছে।

২০০৫ সাল থেকে নূরজাহান বেগমকে নিয়ে আমার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে যে সামান্য জীবন ইতিহাস জানা সম্ভব হয়েছে, তাতে নূরজাহান বেগমের সংগ্রামী জীবনের যে ছবি পাওয়া যায় তা সত্যিই বিস্ময়কর।

নূরজাহান বেগম ছিলেন স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই বিষয়ে নূরজাহান বেগম বলেছিলেন, ‘নারী মুক্তির অর্থে আমরা কেউ কেউ অবচেতনভাবে স্বামীকে কিছুটা তোয়াক্কা না করাকেও বুঝে থাকি। কিন্তু আমার জীবনে আমার স্বামী রোকনুজ্জামান খান স্বর্গের দূত হয়েই এসেছিলেন। তাঁর সঠিক সহযোগিতা আমাকে বেগম পত্রিকায় স্থায়িত্ব প্রদান করেছে।’ তাঁর এই কথাই প্রমাণ করে তেজস্বী নূরজাহান বেগম অবচেতন বা সচেতনভাবে স্বামীকে ‘শক্র’ ভাবার মতো মনোভাব কোনো দিন পোষণ করেননি। গবেষণা চলাকালে নূরজাহান বেগম বারবার বলেছেন, ‘একজন উদার পিতা এবং আদর্শ স্বামী—এই দুই পুরুষই আমার জীবনে সফলতা এনে দিয়েছেন।’ তিনি প্রতিটি পরিবারে এমন বাবা ও স্বামীর প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। পিতা ও স্বামী যদি স্বাধীনচেতা হন, তবে নারীর আত্মনির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।

একই সঙ্গে তিনি তাঁর মায়ের অবদানের প্রতি মাথানত করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন প্রতিক্ষণ। নূরজাহান বেগম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার মায়ের সহযোগিতা না পেলে আমার কিংবা বাবার ধীরস্থিরভাবে কাজ করা সম্ভব হতো না। ছোটবেলা থেকে সাহস এবং উদ্দীপনার ভিত রচনাকারী আমার মা আমাকে সর্বদা মাথা উঁচু করে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এবং দুস্থ নারীদের সাহায্য করতে বলেছেন।’

আমি নূরজাহান বেগমকে ‘আপা’ সম্বোধন করতাম। ছিলাম তাঁর নিয়মিত অতিথি। আপা গল্প করতে খুব ভালোবাসতেন। পরিচিত এবং আপনজনদের তিনি কখনো না খাইয়ে ছাড়তেন না। আপার আতিথেয়তা ছিল সর্বজনবিদিত। আলাপচারিতায় তিনি জেনে নিয়েছিলেন আমার প্রিয় খাবারের কথা। যখনই তিনি শুনতেন আমি তাঁর বাসায় যাচ্ছি, হাজির হয়েই দেখতাম কত খাবারের আয়োজন। হরেক রকমের মিষ্টি সাজানো থাকত আমার জন্য। খাবার সামনে রেখে কাজ করলেই তিনি শুধু বকা দিয়ে বলতেন, কিরে তুই খাচ্ছিস না কেন? না খেলে শক্তি পাবি কোথায়? শক্তি না পেলে এগিয়ে যাবি কীভাবে? আমি আপার অন্তরের এত কাছাকাছি চলে এসেছিলাম যে উনি আমাকে ‘তুই’ সম্বোধনে সিক্ত করলেন। আপার বাসায় ১১টা বিড়াল ছিল। মজার বিষয় ওদের প্রত্যেকের আলাদা নামও ছিল। যদিও আপার ডাক্তার হাঁপানির কারণে বিড়ালগুলোকে সরাতে বলেছিলেন। কিন্তু আপা তাঁর মায়ার টানে সেগুলোকে দূরে সরাতে পারেননি।

একদিন হলো কি, টিপু নামে এক বিড়ালকে আপা যত্ন করে খাওয়াচ্ছিলেন, তখন আমি সেই ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত হতেই তিনি বিড়ালটিকে বললেন, দেখ টিপু আমার সঙ্গে তোরও ছবি তোলা হচ্ছে। এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা গল্পে মশগুল হয়ে থাকতাম। গল্পের বিষয় আমাদের লেখার জগৎ, সাংবাদিকতা ও সাহিত্য জগতের বিভিন্ন খবরাখবর। আপার বড় মেয়ে ফ্লোরা, ছোট মেয়ে মিতিসহ অনেকের সঙ্গে আমার দেখা হতো।

২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল আপার বাসায় গেলে ফিরে আসার সময় বলেছিলেন ‘আবার কবে আসবি বল?’ তাঁর এ কথা শুনেই বলি, ‘কেন খাবার তৈরি করে রাখবেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আহা। কী রাজভোগ যেন তোকে খাওয়াই? তুই আসবি এটাই আমার আনন্দ।’ তখন আমি তাঁর নিঃসঙ্গতার কষ্ট টের পাই। বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় আমি ভাবিনি এটাই আপার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।

আপাকে কোনো দিন ক্লান্ত হতে দেখিনি। অফিসে তিনি যতক্ষণ থাকতেন ততক্ষণ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন। বাসায়ও তিনি প্রচুর ব্যস্ত থাকতেন। অফিসে তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক দিলরুবা খান। অফিসে দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন আহম্মদ আলী। আমি যতবার অফিসে গিয়েছি ততবারই আহম্মদ আলী আপার কাজের ধরন সম্পর্কে আমাকে বলেছেন, আপা এত যত্নশীল তাঁর কাজে যে কোনো কিছুই ভোলেন না। সবাইকে নিজের মতো কাজ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং সবাইকে খুব ভালোবাসেন। এ জন্য সুদীর্ঘকাল ধরে কাজ করার পরও তাঁকে ছেড়ে যেতে পারেননি আহম্মদ আলী।

২০০৯ সাল। এক রাতে হঠাৎ আপা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হাঁপানির কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছিল। দ্রুত আপাকে মনোয়ারা হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। আমার বাসা হাসপাতালের কাছে থাকায় আমি তাঁকে দেখতে গেলাম। রুমে ঢুকে আপার হাতে হাত রাখতেই উনি চোখ খুলে তাঁর ছোট মেয়ে মিতিকে বলেছিলেন, ‘এই মেয়েটা আমাকে নিয়ে গবেষণা করার সময় অনেক কষ্ট  করছে। হয়তো আমার জীবনে এইটাই শেষ কোনো কাজ।’ আমার তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমাকে কাছে ডেকে বললেন, ‘তুই আমার অনেক ছবি তুলেছিস। সব সিডি করে আমাকে দিবি।’

কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারিনি আমি। ছোট মেয়ে মিতি খুব কাঁদছিলেন। হঠাৎ ছোট মেয়েকে ডেকে বললেন ছবি তোলার জন্য। ক্যামেরা রেডি করার পর দেখি উনি শোয়া থেকে উঠে বসেছেন, হাতে স্যালাইন লাগানো। আমি তাকে শুতে বলার সঙ্গে সঙ্গে উনি মৃদু হেসে ভারী গলায় বলেছিলেন, ‘এখনো তো শুয়ে পড়িনি। যখন শুয়ে পড়ব তখন আর উঠব না।’ কতটা দৃঢ় ও শক্ত মনোবল থাকলে একজন মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমন আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে নিজের উপলব্ধি ব্যক্ত করতে পারেন! আমি সত্যি এতে বিস্মিত হই।

২০১৬ সালের ২৩ মে আপা অসুস্থতার কারণে ৯১ বছর বয়সে মারা যান। ৩৮ নম্বর শরৎ গুপ্ত রোডের আপার বাড়িটিরও এখন ধীরে ধীরে বয়স বাড়ছে। সময় চলছে তার নিজস্ব গতিতে। রাত কেটে আবারও সকাল হয়। আপা নেই, আছে লয়াল স্ট্রিটের বেগম অফিস। সেখানে জমে আছে কত লাখো মেয়ের স্বপ্ন।

 

চুলের পরিচর্যায় মেহেদী পাতা

চুলের যত্নে মেহেদী পাতার ব্যবহার দীর্ঘদিনের। শুধু হাত আর নখ সাজাতেই নয়, চুল সুন্দর করতেও এর জুড়ি নেই। রূপসচেতন যে কেউই সপ্তাহে অন্তত একদিন মেহেদী পাতা দিয়ে চুলের পরিচর্যা করে থাকেন। নানা উপায়ে নেয়া যায় এই যত্ন। চুল উজ্জ্বল আর ঝলমলে করতে এবং খুশকি তাড়াতে মেহেদী পাতার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। চলুন তবে জেনে নেই। ঘন চুল পেতে চাইলে ১ কাপ পরিমাণ মেহেদী পাতা বাটা, ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ২/৩ টেবিল চামচ টক দই ভালভাবে মেশান। এবার মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা। শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। পরের দিন শ্যাম্পু করে চুল ধুবেন। মাসে মাত্র ২ বার ব্যবহার করুন চুলে মেহেদী পাতা। দেখবেন চুল অনেক ঘন এবং কালো হয়ে গিয়েছে।

চুলের রুক্ষতা এবং আগা ফাটা রোধ করতে চাইলে ১ কাপ মেহেদী পাতা বাটার সাথে ২/৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং ১ টি ভিটামিন ই ট্যাবলেট মিশিয়ে নিয়ে চুলে লাগান। ১ ঘণ্টা পরে চুল ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু করে। সপ্তাহে ১ দিন ব্যাবহারে চুলের রুক্ষতা এবং আগা ফাটা একেবারে বন্ধ হবে। মেহেদী চুলের জন্য কন্ডিশনারের কাজ করে চুলের রুক্ষতা এবং চুলের আগা ফাটা রোধ করে।

মেহেদী সাদা চুলের জন্য অসাধারণ হেয়ার কালারের কাজ করে। অনেকের অল্প বয়েসেই মাথার চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। তারা নিয়মিত মেহেদী পাতা ব্যবহার করলে চুলের সাদাটে ভাব দূর করতে পারবেন। ২ টেবিল চামচ আমলকী গুঁড়ো ১ কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে দিয়ে এতে রঙ চা দিন ১ চা চামচ এবং ২ টি লবঙ্গ। এবার এই পানিতে পরিমাণমতো মেহেদী পাতা বাটা ব্যবহার করে থকথকে পেস্টের মত তৈরি করুন। এই পেস্টটি চুলে লাগিয়ে রাখুন ২ ঘণ্টা। ২ ঘণ্টা পরে চুল সাধারণ ভাবে ধুয়ে ফেলুন। সাদা চুল ঢেকে যাবে সহজেই ।

মাথা থেকে খুশকি তাড়াতে মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন বেটে নিন। পরিমাণমতো সরিষার তেল গরম করে এতে মেহেদী পাতা ফেলে দিন। ঠান্ডা হলে এই তেলে মেথি বাটা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের গোঁড়ায় মাথার ত্বকে লাগান। ২ ঘণ্টা পরে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল খুশকিমুক্ত হবে।