banner

রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 4, 2025

 

নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করার নিয়ম-বিধান

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রেই রাহনুমা করে গেছেন। ঘরে ও বাইরে এমন কোন দিক নেই যা রাসূল (সা.) আমাদের সামনে তুলে ধরেননি। তার এই সামগ্রিক শিক্ষার তুলনা পৃথিবীর আর কোনো ধর্মেই ছিল না। তিনি যেভাবে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন এবং পারিবারিক জীবনের প্রতিটি সমস্যার সমাধান আমাদের সামনে খোলাসা করেছেন। আর এটা কেউ আগে কখনো করেনি।

সেই ব্যপকতার একটি অংশ হলো নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার বিধান। কোনো কোনো বর্ণনায় নাভির নিচের লোশ মুণ্ডন করার কথা আবার কোনো কোনো বর্ণনায় লোহার তৈরি ধারলো কোন যন্ত্র দিয়ে পরিষ্কার করার কথা উদ্ধৃত হয়েছে। আর এটাই মুস্তাহাব। এতে উম্মতের কারও কোনো দ্বিমত নেই। (আল ইতহাফ)।

যদি এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে সাহায্য করতে বলে তাহলে স্ত্রীর জন্য এটা ওয়াজিব বলে বিবেচিত হবে। (শরহে মুহায্যাব) এই ক্ষেত্রে ৪০ দিনের চেয়ে বেশি দেরি করা মাকরূহ। সর্বনিম্ন কোনো মেয়াদ নির্ধারিত নেই। বরং ব্যক্তির পশম বড় হওয়ার ওপরই এর বিধান নির্ভরশীল। তাই এই ক্ষেত্রে এক একজনের এক এক ধরনের মেয়াদ হতে পারে। (শরহে মুহায্যাব।

মূল উদ্দেশ্য হলো পরিচ্ছন্নতা- সেটা ক্ষুর দিয়ে হোক বা অন্য কিছু দিয়ে। (ফতওয়ায়ে আলমগিরী) এই ক্ষেত্রে নিজের কাজ নিজে করাই উত্তম। তবে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সাহায্য করতে পারে। তাও মাকরূহ মুক্ত নয় (শরহে মুহায্যাব)। নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করার সময় উপর দিক থেকে শুরু করা উত্তম। (ফতওয়ায়ে আলমগিরী)।

সম্পাদনা: ফকির কামরুল

 

সফলরা যেভাবে সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করেন

সময় একটি পণ্য। অনেকের মতে, এটি জীবনের সবচেয়ে দামি পণ্য। সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত সাফল্য লাভ করা যায়। কিন্তু সময় নিয়ে অনেকের মনেই বিভ্রান্তি আছে।

উদ্যোক্তা ব্রায়ান ডি. ইভান্স বিজনেস ইনসাইডারে এ নিয়ে চমৎকার একটি নিবন্ধ লিখেছেন।

ব্রায়ান ডি. ইভান্স লিখেছেন, সময় নিয়ে সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তিকর ধারণা হচ্ছে, তুমি সময় বাঁচাতে পারো। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, তুমি শুধু সময় ব্যয়ই করতে পারো। একবার সময় চলে গেলে সেটি আর কোনোভাবে ফেরত পাওয়া সম্ভব নয় এবং তুমি কোথাও সেটি জমাও রাখতে পারো না। কিন্তু সময় ‘তৈরি’ করা যায়। কীভাবে, সেটি এ নিবন্ধে দেখানো হবে।

রিচার্ড ব্রানসন, অপরাহ উইনফ্রে, বিল গেটস, মার্ক কুবান, এলন মাস্ক, ওয়ারেন বাফেটের মতো সফল ও বিলয়নিয়াররা এসব নিয়ম মেনে চলেন।

১. লক্ষ্যে অবিচল না থাকাটা হচ্ছে সময়ের অপচয়

আপনার লক্ষ্য যদি নির্দিষ্ট না থাকে, তাহলে ফেসবুকে ঢুকে আপনি উদ্দেশ্যহীনভাবে নিউজ ফিড স্ক্রল করতে থাকবেন। এটা বোঝার আগেই আপনি হয়তো কোনো ভিডিওতে বুঁদ হয়ে যাবেন। আপনি এমন কিছুর পেছনে সময় নষ্ট করবেন, যা আপনার উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ওয়ারেন বাফেটের একটা বিশেষ পদ্ধতি আছে এ ক্ষেত্রে। তিনি মানুষকে তাদের জীবনের ২৫টি প্রধান লক্ষ্যের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেন। এরপর এ ২৫টি লক্ষ্য থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি লক্ষ্য বাছাই করতে বলেন। অনেকে ভাবেন যে, এ পাঁচটি লক্ষ্যের পাশাপাশি অন্যগুলোর দিকেও এক-অাধটু সময় ব্যয় করা যেতে পারে। কিন্তু বাফেট বলেন, যেকোনো মূল্যে বাকি ওই ২০টি লক্ষ্যকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করুন। আগে প্রধান পাঁচটি লক্ষ্য অর্জন করুন। তারপর সময় থাকলে বাকিগুলোর দিকে তাকান।

২. লক্ষ্যগুলো লিখে রাখলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে শতকরা ৪২ ভাগ

লক্ষ্যগুলো আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপনাকে জানতে হবে, আপনি কী লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছেন, আপনার হাতে কী পরিমাণ সময় আছে এবং আপনি ইতোমধ্যে কি পরিমাণ সময় হারিয়ে ফেলেছেন?

’দ্য সিক্রেট’ বইয়ের লেখক জন আশরাফের মতে, লক্ষ্যগুলো অর্জনের সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ বেড়ে যায়, যখন আপনি শুধু সেগুলোকে লিখে রাখবেন। কারণ লিখে রাখলে মনে হবে, আপনার লক্ষ্যগুলো অনেকটাই বাস্তব। উদ্যোক্তারা অন্যতম বড় যে সমস্যাটি মোকাবেলা করেন, সেটি হচ্ছে তারা কোথায় তাদের সময় ও শক্তি ব্যয় করবেন, সেটি বুঝতে পারেন না। নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার পরিবর্তে তারা একসাথে ১০০টি কাজ করতে চান।

তাই আপনি কি করতে চান, সেটি আপনাকে জানতে হবে। যদি আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত থাকেন, তাহলে বিচ্যূত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আপনি যদি সবকিছুই করতে যান, তাহলে দেখবেন আপনার অত সময় নেই, কিংবা কিছুই হচ্ছে না।

৩. দায়িত্ব বণ্টন করে অন্যদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা

এটা অন্যতম কঠিন একটা কাজ, কিন্তু সবচেয়ে লাভজনক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিজে নিজেই একটি কাজ শেষ করে ফেলতে চান, তাহলে আপনার হাতে দিনে সময় আছে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত একজনকে দায়িত্বের অংশীদার করেন, তাহলে আপনার হাতে দিনে সময় আছে ৪৮ ঘণ্টা। মানুষের মধ্যে দায়িত্ব যত বণ্টন করে দিবেন, অাপনার সময়ের পরিমাণও তত বাড়বে, সাফল্যের সম্ভাবনাও বাড়বে।

এখানে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, দায়িত্ব কাদের মধ্যে বণ্টন করব? তাদের কোথায় পাব? রিচার্ড ব্রানসন এ প্রশ্নে সবচেয়ে ভালো জবাবটা দিয়েছেন। তার মতে, ‘কর্মীদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দাও, যাতে তারা যোগ্য হয়ে ওঠে। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করো, যাতে তাদের মধ্যে কোনো শূন্যতাবোধ তৈরি না হয়’।

৪. মানুষের চেয়ে প্রযুক্তিকে বেশি কাজে লাগান

মাঝে মাঝে মানুষের চেয়ে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার বেশি সহজ। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা সব ধরনের কাজই করতে পারে, কিন্তু প্রয়োগের আগে সেটি কার্যকরী হবে কিনা, সেটি নিশ্চিত হতে হবে। কারণ প্রযুক্তির সামান্য সমস্যাও অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

৫. নিয়ম ভাঙতে ভয় পাওয়া যাবে না

সফল ও ধনী মানুষরা নিয়ম ভাঙার জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতিটি নিয়ম ভাঙার জন্যই কেউ না কেউ আছে।

সম্পাদনা: তানজিল রিমন

 

সহজেই তৈরি করুন দুধ চিতই

শীতের পিঠা মানেই চিতই। কখনো ঝাল ঝাল ভর্তার সঙ্গে, কখনো মাংসের ঝোল আবার কখনো রসে ভেজানো চিতই পিঠা। এর বাইরে আরেকটি আইটেম হলো দুধে ভেজানো চিতই। যাকে বলা হয় দুধ চিতই পিঠা। খুব সহজেই ঘরে বসে তৈরি করতে পারেন এই সুস্বাদু পিঠাটি।

উপকরণ : চালের গুঁড়া ২ কাপ, পানি ১ কাপ, দুধ দেড় লিটার, খেজুর গুড় দেড় কাপ, লবণ স্বাদমতো, ডিম ১টি।

প্রণালি : চালের গুঁড়ার সঙ্গে লবণ, ডিম ও ১ কাপ পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে মসৃণ গোলা তৈরি করুন। মাঝারি ঘনত্বের গোলা হবে। গুড় দেড় কাপ পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে ছেঁকে রাখুন। দেড় লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ১ লিটার করে নিন। চুলায় খোলা বসিয়ে তেল মেখে নিন। খোলা খুব গরম হলে ডালের চামচে ২ চামচ গোলা দিয়ে ঢেকে দিন। ঢাকনার চারপাশে পানি ছিটিয়ে দিন। পিঠা হলে ৩-৪ মিনিট পর খোলা থেকে তুলে নিন। খোলা থেকে পিঠা তুলে গুড়ের সিরায় ফেলুন। চুলায় দিয়ে জ্বাল দিন। জ্বাল করা পিঠা ঠাণ্ডা হলে জ্বাল দেয়া ঘন দুধ দিন। পাত্র ঝাঁকিয়ে চারদিকে দুধ মিশিয়ে দিন। ৭-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে পিঠা পরিবেশন করুন।

 

বিশ্বসেরা ৫০ শিক্ষকের একজন তিনি

‘স্কুলে যাতায়াতের পথে প্রায়ই ইভ টিজিংয়ের শিকার হতাম। বখাটেদের ভয়ে টানা ১৫ দিন ঘরে বসে শুধু কেঁদেছি। এরপর আবার স্কুল। বখাটেদের ভয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবা-মা বিয়ে দিলেন। বাল্যবিবাহের কারণে স্বপ্ন ভেঙে গেল। তবে তাতে হাল ছাড়িনি। কষ্ট-সংগ্রাম করে এত দূর এসেছি।’ বগুড়ার শেরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে কথা শুরু হয়েছিল এভাবেই।

শাহনাজ পারভীনের এই ‘এত দূর’ আসা আসলে কত দূর? আর কেনই-বা তিনি এখন পাদপ্রদীপের আলোয়। কারণটা শুধু শাহনাজের নিজের জন্যই নয়, দেশের জন্যই গৌরবের। বিশ্বের সেরা ৫০ শিক্ষকের তালিকায় উঠেছে শাহনাজ পারভীনের নাম। বললেন, ‘শেষ পর্যন্ত গ্লোবাল টিচার পুরস্কার জিতলে আরও ভালো লাগবে।’ ১৮ ডিসেম্বর শেরপুর উপজেলা সদরের টাউন কলোনি-শান্তিনগরে তাঁর বাড়ির পাশে পথশিশু ও প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয়ে বসে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।

শাহনাজ পারভীনবিশ্বের সেরা শিক্ষক নির্বাচনের জন্য ২০১৫ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ভারকি ফাউন্ডেশন ‘গ্লোবাল টিচার পুরস্কার’ প্রবর্তন করেছে। এ বছর বিশ্বের ১৭৯টি দেশের ২০ হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে শীর্ষ ৫০ শিক্ষককে বাছাই করা হয়েছে। এই তালিকায় ১৬ জন নারীর মধ্যে আছে বাংলাদেশের শাহনাজ পারভীনের নাম। মনোনয়ন পাওয়া ৫০ জনের মধ্য থেকে আগামী বছরের ১৯ মার্চ দুবাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। বিজয়ীকে অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে ১০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালে ফিলিস্তিনের সামিহা খলিল সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক হান্নান আল হুরাব এবং ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টিচিং অ্যান্ড লার্নিং সেন্টারের শিক্ষক ন্যানসি অ্যাটওয়েল গ্লোবাল প্রাইজ জেতেন।
ঘড়ির কাঁটা সকাল নয়টায় গড়ানোর আগেই বিদ্যালয়ের পথে পা বাড়ালেন শাহনাজ পারভীন। আমরাও সঙ্গী হলাম। নিজের জীবনের কথা বলতে থাকেন শাহনাজ পারভীন, ‘যৌথ পরিবারের বাড়ির বড় বউ। সব দায়িত্ব কাঁধে এসে চাপল। দিনভর খাটাখাটনির পর রাতে শাশুড়ির পানবাটায় সুপারি কেটে দিয়ে পরদিন কী দিয়ে রান্না হবে, তা বুঝে নিতে হতো। সংসারের রান্না, শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা, ননদ-দেবরের আদর-যত্ন থেকে সবকিছুই সামলাতে হতো। সকালের রান্নাবান্না শেষে ক্লাসে যেতাম। বিকেলে ক্লাস থেকে ফিরে ফের রসুইঘরে। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যখন ঘুমাতে যেত, আমি রাত জেগে পড়তাম।’ এভাবে ১৯৯২ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে আলিম পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সারা দেশে মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় হন শাহনাজ। মেডিকেল কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন। ‘কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্বশুরবাড়ির আপত্তির কারণে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। ভর্তির পর কোল আলো করে কন্যাসন্তান এল। রাতের খাবার শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়ত। মেয়েকে দোলনায় শুয়ে রেখে পায়ের নখের সঙ্গে দড়ি বেঁধে টান দিতাম আর রাতভর পড়াশোনা করতাম। সকালে মায়ের কাছে ওকে রেখে কলেজে যেতাম।’

এভাবেই স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিলেন শাহনাজ পারভীন। স্নাতকে পড়ার সময় বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। ২০০৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিলেন। বিএড, এমএডসহ বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেন এবং প্রশিক্ষণ নেন। শাহনাজ পারভীন বললেন, ‘শৈশবে খেলার সঙ্গীরা মাটির খেলনা দিয়ে “সংসার-সংসার” খেলত। আমি খেলতাম “স্কুল-স্কুল”। ওই বয়সেই ঘর এঁকে শিক্ষার্থী পড়াতাম। তবে বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন শিক্ষক। অল্প বয়সে যাঁর সঙ্গে বিয়ে হলো, তিনিও শিক্ষক।’ এ কারণেই আপাদমস্তক নিজেকে শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা জাগে শাহনাজ পারভীনের মনে।

শেরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর প্রথমে পড়ানো বিষয়টা তেমন বুঝতেন না। প্রধান শিক্ষক নাজির উদ্দিন হাতেকলমে তা শিখিয়ে দেন। ‘এরপর ভালো শিক্ষক হওয়াটাই ছিল আমার ধ্যানজ্ঞান। ঝরে পড়া রোধ করার পাশাপাশি পাঠদানকে আনন্দময় ও কোনো বিষয় সহজভাবে শিশুদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করতাম।’ বললেন শাহনাজ। এর ফলও পেলেন তিনি। ২০০৯-১০ সালে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নারী শিক্ষক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ইউনেসকোর মনোনয়নে ভারকি ফাউন্ডেশনের গ্লোবাল টিচার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন।

গ্লোবাল টিচার পুরস্কারের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ছয়জন শিক্ষকের কাছ থেকে গত ১৩ জুলাই আবেদনপত্র আহ্বান করে। সেই অনুযায়ী আবেদন করেন শাহনাজ পারভীন—জানালেন শেরপুর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসা. নার্গিস পারভিন। ১৩ ডিসেম্বর তাঁদের ওয়েবসাইটে সেরা ৫০ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ানোর পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ও প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়াতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের বাসায় শেরপুর শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন শাহনাজ পারভীন। সেই বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেল, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পড়াশোনার সুযোগের পাশাপাশি বই-খাতা-কলম, স্কুলের পোশাক, ব্যাগ, টিফিন সবই বিনা মূল্যে পাচ্ছে। শাহনাজ বলেন, ‘প্রতিদিন ভোরে আমার দুই মেয়েকে স্কুলবাসে তুলে দিতে শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে আসতাম। ছোট সেলুন, চায়ের দোকান, হোটেলে কাজ করত শিশুরা। তারা ফ্যালফ্যাল করে আমার মেয়ের স্কুলব্যাগের দিকে চেয়ে থাকত। একদিন সেলুন শ্রমিক সাদমান ও লেদযন্ত্রের শ্রমিক শামীমকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা কি লেখাপড়া করবা? তারা রাজি হলো।’ ২০১৩ সালে দু-তিনজন শিশুকে বাড়িতে ডেকে এনে পড়ানো শুরু করলেন শাহনাজ। দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। স্বামী মোহাম্মদ আলীর সহযোগিতায় একটা ঘর ভাড়া নিয়ে শেরপুর শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করলেন। বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলে এ স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম। বর্তমানে এ স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০। শিক্ষার্থীরা সবাই কর্মজীবী।

শাহনাজ পারভীনের দুই মেয়ে। মাসুমা মরিয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক এবং ছোট মেয়ে আমেনা মুমতারিন বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে।

Save

Save

Save

Save

 

নিজের গল্পটা নিজেই বদলে দিলেন তাসলিমা

গল্পটা হতে পারত এমন, স্কুলে পড়া দরিদ্র পরিবারের একটি মেয়ে।  লেখাপড়া আর খেলাধুলার উচ্ছল দিন কাটত তার। মেধাবী ছাত্রী সে। কিন্তু মা-বাবা ভাবলেন অভাবের সংসার, খরচ চালানো যাচ্ছে না। ছোট মেয়েটি বড় হচ্ছে। তাই শিশু বয়সেই মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেওয়া হলো বিয়ে। তারপর যা ঘটল—বিয়ের পর কিশোরী বয়সেই দুই-তিন সন্তানের মা হলো মেয়েটি। অসময়ে সন্তান ধারণের কারণে শরীর ভেঙে যেতে লাগল। অভাবের সংসার। সন্তানেরা অপুষ্টিতে ভুগছে। বিয়ের কয়েক বছর পর মেয়েটির চোখে-মুখে হতাশার ছাপ।
কিন্তু গল্পটা এমন হয়নি। হয়েছে উল্টোটাই। গল্পটা এখন এমন, যে মেয়েকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল সেই মেয়ে ‘দেশ জয়’ করতে চাচ্ছে। আর তাই নিজের জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে মেয়েটি তার কিশোর বয়সে প্রথম জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছে। আজ সে জয়িতা। বাল্যবিবাহ না করায় তার লেখাপড়া ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।মায়ের সঙ্গে তাসলিমা আক্তার
যে মেয়ের কাহিনি নিয়ে গল্প বলা হচ্ছিল তাঁর নাম তাসলিমা আক্তার। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের ফরিদপুর মধ্যপাড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিন শেখের ছোট মেয়ে তিনি। শিক্ষাগ্রহণ ও কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখায় তাসলিমা আক্তারকে এবার ঈশ্বরদী প্রশাসন ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সেরা জয়িতার পুরস্কার দিয়েছে। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা ও সনদপত্র এবং একটি ক্রেস্ট।
১১ ডিসেম্বর দুপুরে যাওয়া হয় তাসলিমার গ্রাম ফরিদপুরে। পাকা সড়ক থেকে অনেক দূরে গ্রামের আঁকাবাঁকা কাঁচা রাস্তা ধরে যেতে হয় তাঁর বাড়িতে। একখণ্ড জমির ওপর তাসলিমাদের বসতভিটা। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তাসলিমা সবার ছোট। বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তিনি ছাড়া বাকি ভাইবোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। সবার আলাদা সংসার। তাসলিমা বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। পশ্চাৎপদ এই গ্রামে প্রায় বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে। কিন্তু গ্রামের সব কুসংস্কার দূরে ঠেলে দিয়ে তাসলিমা লেখাপড়া করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন। মেধাবী হলেও বাড়িতে লেখাপড়ার তেমন পরিবেশ ছিল না। তবুও তাসলিমা ২০১০ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০১২ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এখন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে লেখাপড়া করছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের দুটো পরীক্ষাতেই তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

তাসলিমা বলেন, ‘অভাবের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। ভাবতে পারিনি এত দূর লেখাপড়া করতে পারব। তবুও একটা স্বপ্ন ছিল আমার। স্বপ্নটা হলো নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখা।’ কিন্তু তাসলিমার সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছিল ২০১১ সালের দিকে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৫ বছর।

‘সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। এরই মধ্যে বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করে। পাত্র ঠিক করা ছিল। কিন্তু কিছুতেই রাজি হইনি। আমি জানতাম বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। এখন বিয়ে হয়ে গেলে আমার স্বপ্নটা ভেঙে যাবে। বাল্যবিবাহের পরিণতি আমি জানি। এমন ভাবনা থেকেই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে তখন সংগ্রাম শুরু করলাম। বললাম, কিছুতেই এই বয়সে বিয়ে করব না। আমি লেখাপড়া করতে চাই। বন্ধ হয়ে গেল বিয়ে।’ বললেন তাসলিমা। এরপর নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করলেন লেখাপড়া।

কলেজে ভর্তির পর দেখা দিল আরেক সমস্যা। প্রচণ্ড অর্থসংকট। একে তো পরিবারে অভাব-অনটন। কেউ তাঁর লেখাপড়া ও কলেজে যাতায়াতের খরচ দিতে রাজি হয়নি। তাই লেখাপড়া ও নিজের খরচ জোগাড় করার জন্য শেখেন কিছু কাজ। প্রথম দিকে শার্টের বোতাম লাগানোর কাজ করতেন। পরে গ্রামের শিশুদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। এ থেকে লেখাপড়ার খরচ ও সংসারের জন্য কিছু জোগান দেওয়া সম্ভব হয়। তবুও খরচ চালানো যাচ্ছিল না।

এরপর জমানো কিছু টাকা দিয়ে কয়েকটি ছাগল কিনে লালন-পালন শুরু করেন তাসলিমা। এক বছর পর থেকে ছাগল বিক্রি করে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতেন। তাসলিমা বলেন, ‘এভাবেই আমি এগিয়ে যাচ্ছি। এখন স্বপ্ন দেখি বাল্যবিবাহমুক্ত দেশের।’

কথা হয় তাসলিমার মা ছালমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছোটকালে মাইয়াড্যারে বিয়া দিবার চাইছিলাম। হেঁয় (সে) তো দেখতে সুন্দর। বিয়া ঠিকও করছিলাম। কিন্তু মাইয়াড্যা আমার রাজি হয় নাই। এখন বুঝতাছি, ছোটবেলা   বিয়া দিলে মাইয়াড্যা এত দূর আগাইতে পারত না।’

Save

Save

Save

 

ত্বকের সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক উপাদান

সুন্দর ত্বকের আকাঙ্ক্ষা থাকে সবার। সুস্থ ও সুন্দর ত্বক পেতে হলে প্রয়োজন সঠিক উপায়ে রূপচর্চা। আর রূপচর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত উপাদান হলো প্রাকৃতিক উপাদান। এমনই কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ও তার ব্যবহার জেনে নেয়া যাক-

টমেটো
নিয়মিত সৌন্দর্যচর্চার উপাদান হিসেবে টমেটো আপনাকে দিতে পারে উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন ত্বক। ত্বক পরিষ্কার করতে বেসন বা উপটানের সঙ্গে টমেটোর রস মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। মুখ ভর্তি দাগ বা ব্রণ দূর করতে টমেটোর রস, কাঁচা হলুদ আর মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করুন। ত্বকের পোড়াভাব দূর করতে বাইরে থেকে ফিরে মুখে, গলায় ও হাতে টমেটোর রস লাগান। শুকিয়ে গেলে আরো একবার লাগান। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে রোদে পোড়া দাগ থাকবে না।

লেবু
লেবু রূপচর্চার উপাদান হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। এ ছাড়া লেবু  চুলের খুশকি প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দুধ ও লেবুর মিশ্রণ চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করলে খুশকি দূর হবে। শ্যাম্পু করার পর পানিতে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুলে চুল ঝকঝকে রেশম কোমল ও মনোরম হয়ে ওঠে।

মেহেদি
প্রাচীনকাল থেকেই মেহেদিকে সৌন্দর্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এই মেহেদি পাতা বেটে হেনা ডাই হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই গাছের পাতা, সুগন্ধী ফুল ও মূল লতা গুল্ম সমন্বিত গুণাগুণ চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, ঝলমলে করে তোলে, চুলের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব ও খুশকি দূর করে, মাথাও ঠান্ডা রাখে। মেহেদি পাতা বাটা, টকদই, লেবুর রস ইত্যাদি মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পরে চুল ধুয়ে ফেলুন।

মেথি
মেথির চুল কন্ডিশনিং এবং জীবাণুনাশক গুণাগুণ মাথার চামড়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চুল পড়া বন্ধ করে এবং মাথা ঠান্ডা রাখে। ২ চা চামচ মেথি রাতে অল্প পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন নরম হলে মিহি করে বেটে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। চুল পড়া বন্ধে এটি অব্যর্থ ঔষধ।