Daily Archives: May 1, 2025
তিতা যখন গুণে মিঠা
করলা তেতো হলেও অনেকের প্রিয় সবজি। ভাজি, ভর্তা আর ব্যঞ্জনে করলার কদর অনেক। মানবস্বাস্থ্যের জন্য এই সবজির উপকারী গুণও কম নয়। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত করলা রাখুন। এবার জেনে নিন, করলা কেন খাবেন।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা হাসিনা আকতারের তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত করলা খেলে রোগবালাই থাকে ১০০ হাত দূরে। প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় আছে ২৮ কিলোক্যালরি, ৯২ দশমিক ২ গ্রাম জলীয় অংশ, ৪ দশমিক ৩ গ্রাম শর্করা, ২ দশমিক ৫ গ্রাম আমিষ, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম লোহা ও ৬৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
তারুণ্য ধরে রাখে
করলা উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এর তেতো রস কৃমিনাশক। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এ ছাড়া এটি ভাইরাসনাশকও। রক্তশূন্যতায় ভুগছেন—এমন রোগীর উত্তম পথ্য করলা। করলা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে শরীরে রক্তের উপাদান বাড়ায়। করলার ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখে এবং ম্যালেরিয়া জ্বরে স্বস্তি দেয়। মাথাব্যথারও উপশম করে করলা। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্ত পরিষ্কার করে। স্ক্যাভিজের মতো রক্তরোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। করলার সবচেয়ে বড় গুণ এটি বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই করলা খেয়ে ধরে রাখুন তারুণ্য।
শ্বাসরোগ দূর করে
করলার রসে আছে অনেক গুণ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। হজমপ্রক্রিয়ায় গতি বাড়ায়। পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।
শক্তিবর্ধক
করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। এটি স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো ঘুমে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়
করলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। কোনো ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়তে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
করলায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রক্তের চিনি কমানোর উপাদান। ডায়াবেটিসের রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
হজমে স্বস্তি আনে
করলার বড় গুণ হচ্ছে এটি হজমের জন্য উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর ভূমিকা আছে। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা দূর করতে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
চুল যখন অবাধ্য
পরিপাটি সাজপোশাক, কিন্তু তারপরও দেখতে ভালো লাগছে না। চুলের বেহাল আজ। শ্যাম্পু করার সুযোগ হয়নি। ফলে তেলতেলে হয়ে আছে অথবা উষ্কখুষ্ক। এতে পুরো সাজই শেষ। মনটাও খুঁতখুঁত করছে। সারা দিন থেকে থেকে মনটা খুঁতখুঁত করছে এই চুলের জন্য। রইল কিছু চটজলদি টিপস। সহজেই অবাধ্য চুলকে বাধ্য করতে পারবেন আপনার মনমতো স্টাইলে।
১. এ রকম দিনে চুল খোলা রাখবেন না। উল্টিয়ে খোঁপা করে রাখলেও চুলে তেলতেলে ভাব ফুটে ওঠে। ফ্রেঞ্চ বেণি করে রাখতে পারেন ক্যাজুয়াল লুকের জন্য। সারা দিন শেষে দাওয়াত থাকলে চুল খুলে ফেলুন। ঢেউখেলানো ভাব চলে আসবে।
২. মাথার সামনের দিকে ব্যান্ডানা পরে নিন অথবা স্কার্ফ বেঁধে নিন। অবশ্যই একটু স্টাইল করে বাঁধবেন। দেখে যেন মনে হয়, এটাই করতে চেয়েছিলেন আজকে। চাইলে হালকা ঝুঁটি বেঁধে রাখতে পারেন।
৩. চুল বেশি উষ্কখুষ্ক হয়ে থাকলে লিভ ইন কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
৪. হেয়ার ড্রায়ারের ঠান্ডা বাতাস ব্যবহার করুন। গরম বাতাস ব্যবহার করে চুল সেট করতে চাইলে চুল আরও প্রাণহীন হয়ে পড়বে।
৫. হাতে একটু সময় থাকলে চুল ভিজিয়ে নিতে পারেন। আর্দ্রতা ফিরে আসবে চুলে। এরপর ব্লো ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।
৬. চুলে ফোলানো ভাব আনতে চাইলে সিঁথি পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। এ ছাড়া মাথা নিচু করে চুল পুরো উল্টে আঁচড়ে নিন। এতে করেও খানিকটা ফোলানো ভাব চলে আসবে।
৭. চুলের তেলতেলে জায়গায় পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভালো করে চুল ঝেড়ে বা আঁচড়ে নিতে হবে। এতে করে তেল খানিকটা শুষে নেবে পাউডার। চুল বাঁধার পরে হেয়ার স্প্রে করে নিন। স্প্রেতে থাকা রাসায়নিক পদার্থ বাকি তেলটুকুও শুষে নেবে।
৮. বাজারে এখন নানা নকশার হ্যাট কিনতে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্য পোশাক পরলে সঙ্গে মিলিয়ে হ্যাট পরে নিতে পারেন।
৯. মেসি বান করে ফেলতে পারেন। এলোমেলো খোঁপায় বরং আরও স্টাইলিশ লাগবে।
১০. নানা ধরনের হেয়ার ক্লিপ ব্যবহার করতে পারেন। চুল তেলতেলে ভাব বা উষ্কখুষ্ক যেটাই হোক না কেন সিঁথি পাল্টে সুন্দর করে ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখুন।
১১. সময়-সুযোগ পেলে চুলের নিচের দিকটা হালকা কোঁকড়া করে নিন।
১২. ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সমস্যা কমে যাবে অনেকখানি।
স্বচ্ছ জল আর সাদা পাথরের গল্প
অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভা ভোলাগঞ্জের। সঙ্গে বাড়তি পাওনা ধলাই নদের সৌন্দর্য। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে সিলেটের মৌলভিবাজার জেলার কমলগঞ্জ দিয়ে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। সিলেটের ভোলাগঞ্জের কাছে এসে আবার সে ভারতের মেঘালয় পর্বতমালার কোলঘেঁষে বয়ে গেছে। এই অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ বেড়াতে যাওয়ার সেরা সময়। এখানে ধলাই নদের অসাধারণ রূপ, সারি সারি পাথর তোলার দৃশ্য, সবুজ পাহাড়ে বন্দী সাদা পাথর আর পাহাড় থেকে পাথরছুঁয়ে গড়িয়ে পড়া স্ফটিক-স্বচ্ছ জল যে দেখবে সে-ই মুগ্ধ হবে। সেই সাদা পাথরের স্বচ্ছ জলে গোসল করে কাটিয়ে দিন দারুণ একটি দিন।
বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল সিলেটের বাদাঘাট থেকে। চলা শুরুর একটু পরই বিশাল সুরমা নদী সরু হয়ে গেল। এরপর সুরমার শাখা নদী দিয়ে চলা শুরু করলাম। স্বচ্ছ দেখে এক আঁজলা জল মুখে মাখলাম, পা ঝুলিয়ে দিলাম নদীর জলে। এভাবেই একসময় আমাদের বজরাটি গিয়ে পড়ল বিশাল এক বিলে। বিলের দুপাশ অসাধারণ সবুজ। বিল থেকে আমরা ছোট্ট এক খালে এসে পড়ি। স্থানীয় লোকজন যাকে চেনেন কাটা গাঙ হিসেবে। একসময় ছোট্ট নালার মতো ছিল, মাঝখানে দিয়ে রাস্তা। নালা বড় করে পানির ব্যবস্থা করতেই খালটি কাটা হয়। সেই থেকে এর নাম কাটা খাল, কেউ কেউ বলেন কাটা গাঙ। কাটা গাঙের পাশের গ্রাম উমরগাঁওয়ে প্রথম যাত্রাবিরতি। চা পান করে আবার আমাদের যাত্রা শুরু, এখনো অনেকটা পথ যেতে হবে।
ট্রলারের গতি বেড়ে যায়। আমরা বাঁ দিকে পাহাড় আর ডান দিকে সবুজ গ্রাম দেখে দেখে ভোলাগঞ্জর দিকে চলতে থাকি। আবার যাত্রাবিরতি, কোম্পানীগঞ্জ বাজারে। বাজার ঘুরে দেখি। চলে আসি বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের চত্বরে। ২০০২ সালে স্থাপিত এই স্কুলটির শহীদ মিনারটি দেখার মতো। আবার চলা। কোম্পানীগঞ্জ যতই পেছনে পড়ছিল, ততই চোখের সামনে স্পষ্ট হচ্ছিল ভোলাগঞ্জ। ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে আর মেঘালয় রাজ্য। এটি দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি এলাকা। ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দূরত্বের রোপওয়ে বা রজ্জুপথ। যদিও ১২ বছর ধরে রোপওয়েটি অব্যবহৃত। আমাদের সামনে এখন খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়। এই পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কিছুটা ছন্দপতন ঘটায় পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিকট আওয়াজ। যন্ত্রের গর্জন-তর্জনে ধলাই নদ পেরিয়ে এরই মধ্যে আমরা চলে আসি ভোলাগঞ্জ বাজার। এখানে ট্রলার পরিবর্তন। এরপরের গন্তব্য সাদা পাথর এলাকা।
শান্ত পাহাড়, সঙ্গে মিশেছে আকাশের নীল। আকাশে ছোপ ছোপ শুভ্র মেঘ। আমরা জিরো পয়েন্টে দৃষ্টি ফেলি। চারদিকে পাথর আর পাথর—সব পাথর সাদা রঙা। পাথর তোলার প্রচুর নৌকা চোখে পড়ল, তবে এখানে দর্শনার্থী নেই। সাদা পাথরের অসাধারণ এক এলাকায় আমরা পা রাখি। সামনে সবুজ পাহাড়; পাশেই পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া প্রচণ্ড স্রোতের স্বচ্ছ শীতল জল আর সে জল থেকে গড়িয়ে নামা সাদা পাথর—কী অপরূপ দৃশ্য, তা বলে বোঝানোর নয়! আমরা পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া শীতল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ি, আহা কী ঠান্ডা! একসঙ্গে এত এত সাদা পাথর জীবনে কখনো দেখিনি, ভাবতে ভাবতে আর সাদা পাথর দেখে দেখে, সেই সঙ্গে পাথর জলে গোসল করে সময় এগিয়ে যায়। এভাবে কখন যে পাহাড়ি রোদ তার কোলে আশ্রয় নিয়েছে টেরই পাইনি। অন্ধকার জেঁকে বসার আগেই তাই সেই অসম্ভব সুন্দরকে বিদায় জানাই!
কীভাবে যাবেন?
অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় যাওয়ার মোক্ষম সময়। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটারের মতো। এই পথে কোনো বাস চলাচল নেই, কোনো লেগুনা চলে না। যাতায়াতের একমাত্র বাহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা। রাস্তাটা বেশ খারাপ। তাই নদীপথ বেছে নেওয়াই ভালো। জনপ্রতি খরচ হবে ২০০ টাকা করে। ভোলাগঞ্জ থেকে সিলেট বাদাঘাটের শেষ ট্রলার ছেড়ে আসে বিকেল চারটায়। সে ক্ষেত্রে সময়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। নদীপথে যাতায়াতে একটু বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। সম্ভব হলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখবেন। শুকনা খাবার ও প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ সঙ্গে রাখবেন।