banner

রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

আবারো প্রচার হবে আলিফ লায়লা

হয়তো অনেকেই ফিরে যাবেন অতীতে। কেউ দেখতে পাবেন কৈশোর, কেউবা আরো ছোট। সেই সময়টাতে রাত ৮টা খবরের পর বিটিভির সামনে বসার জন্য অধীর অপেক্ষা চলতো প্রতি শুক্রবারের সারা দিনভর। সে কেবল আলিফ লায়লার টানে।

সেই সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো এই সিরিজটি। বাচ্চাদের লেখার খাতাতেও উঠে এসেছিলো আলিফ লায়লার হিরো- সৎ মানুষ সিন্দাবাদ। উঠে এসেছিলো রহস্যময় সব ভিলেনরা।

বিটিভির পর একুশে টেলিভিশনও প্রচার করেছিলো ‘আলিফ লায়লা’। আরব্য রজনীর গল্প অবলম্বনে নির্মিত তুমুল জনপ্রিয় সেই ধারাবাহিকর আবারও দেখা যাবে টিভি পর্দায়! একদম তাই। আরব রূপকথার এ প্রশংসিত সিরিজটি এবার প্রচারে আনছে গাজী স্যাটেলাইট টেলিভিশন লিমিটেড (জিটিভি)। আগামী নভেম্বর থেকে এটি প্রচার করবে বলে নিশ্চিত করেছে টেলিভিশনট কর্তৃপক্ষ।

তারা জানায়, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সাগর ফিল্মস প্রাইভেট লিমিটেডের নির্মিত পুরনো সেই সিরিজটিই প্রচার করবে জিটিভি। সপ্তাহে একাধিক দিন এটি প্রচার হবে।

আলিফ লায়লা ইসলামী সভ্যতার অন্যতম একটি সাহিত্য নিদর্শন। খলিফা হারুন-অর-রশীদের খিলাফতকালে রাজধানী বাগদাদের বিখ্যাত সাহিত্যিকরা লেখেন এই কাহিনি। যা পরবর্তীতে ‘আরব্য রজনী’ নামে সারাবিশ্বে খ্যাতি অর্জন করে।

এই সিরিজের প্রধান গল্প ও চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলাদিনের জাদুর চেরাগ, আলী বাবা ও চল্লিশ চোর, আল্লাহর উপর আস্থাবান সাহসী নাবিক সিন্দবাদের যাত্রা, সাহসী যুবক জালাল তালেবর, অত্যাচারী ডাকাত কেহেরমান এবং মায়াময়ী জাদুকরী মালিকা হামিরার কাহিনি।

 

নামাজে যে কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি

নামাজ মুমিনের জন্য মিরাজস্বরূপ। নামাজের মাধ্যমে মানুষ দৈনিক পাঁচবার আল্লাহ তাআলার দরবারে উপস্থিত হন। এ নামাজে মানুষ না জানার কারণে অথবা অনেকে মনের ভুলে এমন অনেক কাজ করে থাকেন, যা থেকে বিরত থাকা জরুরি। নামাজে মুসল্লির বিরত থাকার কিছু ‍বিষয় তুলে ধরা হলো-

১. নামাজি ব্যক্তির জন্য এদিক-ওদিক তাকানো নিষেধ। তবে বিপদ বা প্রয়োজনে তাকানো যাবে।
২. নামাজ পড়ার সময় দুই চোখ বন্ধ করা ও মখু মণ্ডল ঢেকে রাখা যাবে না।
৩. দুই পায়ের পাতা খাড়া করে উরুর ওপর ভর দিয়ে বসা যাবে না। যা দেখতে অনেকটা কুকুরের বসার মতো দেখা যায়।
৪. প্রয়োজন ছাড়া নামাজে নড়াচড়া ও অনর্থক কাজ করা যাবে না।
৫. কোমরে হাত রাখা বা কোমরে ভর দেয়া যাবে না।
৫. যে জিনিস দৃষ্টিতে আসলে নামাজের বিঘ্ন ঘটে বা অন্যমনষ্ক করে দেয়; নামাজে এমন জিনিসের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে না।
৬. নামাজে সিজদার সময় উভয় হাতকে বিছিয়ে দেয়া যাবে না। অর্থাৎ হাতের তালু থেকে শুরু করে কনুই পর্যন্ত বিছিয়ে সিজদা করা যাবে না।
৭. পেশাব বা পায়খানার বেগ রেখে কিংবা হাওয়া আটকিয়ে রেখে নামাজ আদায় করা যাবে না।
বিশেষ করে নামাজের সময় যদি কারো পেশাব, পায়খানা বা হাওয়া বের হওয়ার বেগ হয়; তাদের জন্য আবশ্যক কর্তব্য হলো অজু নষ্ট করে পেশাব, পায়খানা বা হাওয়া ত্যাগ করে তারপর নতুন করে অজু করে নামাজ আদায় করা। যদি পানি পাওয়া না যায় তবে তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করা। এটাই নামাজ আদায়ের উত্তম পন্থা।
৮. নামাজের পূর্ব মূহুর্তে খানা হাজির হলে,খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে এবং নামাজের পূর্বে খাবার খেয়ে নেয়ার সুযোগ থাকলে তা খেয়ে নামাজ আদায় করা।
৯. লুঙ্গি, পায়জামা অথবা প্যান্ট ইত্যাদি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রেখে নামাজ আদায় করা যাবে না।
১০. মখুমণ্ডল বা নাক ঢেকে রাখা যাবে না। অনুরূপভাবে চুল বা কাপড় জমা করে রাখা যাবে না।
১১. ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজে হাই উঠানো যাবে না।
১২. নামাজের সময় মসজিদে থুথু ফেলা অন্যায় কাজ। তাই এ রকম করা যাবে না।
১৩. নামাজরত অবস্থায় কিবলার দিকে থুথু ফেলা যাবে না। নামাজের বাইরেও ইহা নাজায়েজ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজ আদায়ের সময় এ বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথভাবে খেয়াল রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

৫টি উপায়ে বৃদ্ধি করুন ব্রেইনপাওয়ার

আমরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত এবং কার্যক্ষেত্রে নানান রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি। সফলতা পাবার পথ যেন শেষই হতে চায় না। সারাক্ষণই যেন আমাদের শক্তি আর সামর্থ্যের পরীক্ষা চলতে থাকে। তবে আশার বিষয়, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা আমরা চাইলে বাড়াতে পারি। প্রতিদিন কিছু কাজের চর্চা দিনে দিনে আমাদের মস্তিষ্ককে উন্নত করে, আমাদেরকে করে আরও ব্যক্তিত্ববান।
আসুন জেনে নিই, কী কী কাজ আমাদের ব্রেইন পাওয়ার বাড়িয়ে আমাদেরকে একজন অনন্য মানুষে পরিণত করে-
বই পড়ুন
যত জানবেন তত আপনার বুদ্ধি শাণিত হবে। জানার জন্য পড়ুন। নিজেকে আনন্দ দিতে পড়ুন। যা আপনার ভাল লাগে তাই পড়ুন। শুধু বই নয়, পড়তে পারেন পত্রিকা, ম্যাগাজিন। গোয়েন্দা গল্প পড়ুন। ভ্রমণের গল্প পড়ুন। বই এমন একটি জিনিস যা আপনাকে আনন্দ তো দেবেই একই সাথে বাড়াবে বুদ্ধি।
ব্যায়াম করুন
শরীরচর্চা বা ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। মানসিক এবং শারীরিক উভয় স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখে ব্যায়াম। তবে কাজ শুরু করার আগে যদি স্বল্প সময়ের ছোট একটি ব্যায়াম করে নেন তাহলে সেটি আপনার ব্রেইনপাওয়ারকে বাড়াবে বহুগুণে। তাই একটা ১০/১৫ মিনিটের ছোট্ট ব্যায়াম বেছে নিন। রোজ আপনার কাজ শুরুর আগে এই সময়টুকু দিন নিজেকে। আপনার মস্তিষ্ক পরবর্তী ৮ ঘন্টার কাজ করবে খুব নিখুঁতভাবে এবং দ্রুত।
ধ্যান
ধ্যান মস্তিষ্ককে দেয় শান্তি। সকল প্রকার স্ট্রেস থেকে নিজেক মুক্ত রাখতে চাইলে নিয়মিত ধ্যানের বিকল্প নেই। তবে ধ্যান আছে বিভিন্ন ধরনের এবং আপনি ঠিক করতে পারেন ধ্যানের মাধ্যমে আপনি কি অর্জন করতে চান বা আপনার টার্গেট কী! গবেষণায় দেখা গেছে, ধ্যান আপনার মনোযোগ বাড়ায়, উদ্বিগ্নতা কমায় এবং সর্বোপরি মানসিক বিপুল পরিবর্তন ঘটায়। এতে কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়।
ক্লাসিকাল মিউজিক শুনুন
মজার্ট এবং বিটোভেনের শান্তিময় সঙ্গীতকে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানো এবং রিল্যাক্স করার জন্য কার্যকরি মনে করা হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ‘মজার্ট ইফেক্ট’ মানুষের চিন্তাশক্তিকে আরও গভীর করে, বিমূর্ত ভাবনাকে সংগঠিত করে। সকালবেলা আপনি যখন তৈরি হচ্ছেন তখন এই মিউজিক শুনতে থাকুন। দেখা গেছে, এই অভ্যাস কথা বলার দক্ষতা এবং কাজে ফোকাস করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
যুক্তিভিত্তিক কোন খেলা খেলুন
দাবা খেলা বা এজাতীয় খেলা যা আপনার মস্তিষ্ককে কাজ করতে সাহায্য করে তার চর্চা করুন নিয়মিত। এতে আপনার বুদ্ধির বিকাশ হবে, মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে। নির্দিষ্ট বিষয়ে ফোকাস করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

পুরাতন কাপড়েই ফ্যাশন

পাল্টে ফেলতে চান একঘেয়ে লুক, অথচ সংগ্রহে বেশিরভাগই সাদামাঠা পোশাক! তাদের জন্যই সাধারণ পোশাকে এক্সপেরিমেন্ট করার সহজ টিপস দেয়া হলো।আলমারি খুললেই মনে হয় সব পোশাকই পরা হয়ে গিয়েছে? ঘাবড়াবেন না। ক্রেডিট কার্ড নিয়ে শপিংয়ে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। আরমারিতে যা আছে, তা দিয়েই তৈরি করতে পারেন নতুন লুক। বদলে ফেলতে পারেন স্টাইল স্টেটমেন্ট।

যে একরঙা লম্বা ঝুলের টপের কোমরের অংশটা চাপা, সেগুলোর সঙ্গে শুধু কোমরে একটা ট্রাইবাল স্টাইলের চওড়া বেল্ট লাগিয়ে নিন। অনেক বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করবে আপনার সাজ।
তাড়াহুড়ো করে অফিস বেরতে হবে। একটা শার্ট আর জিন্স গলিয়েই বেরিয়ে পড়লেন। ব্যস, এটাই আপনার রোজকার সাজ হয়ে গেল। কিন্তু খুব সহজেই বদলে ফেলতে পারেন এই বোরিং লুক। ভিতরে স্প্যাগেটি পরে তার উপর চাপিয়ে নিতে পারেন রঙিন শার্ট। অফিস থেকে যদি সোজা কোনও পার্টিতে যাওয়ার থাকে, তাহলে শার্টের নীচের অংশের বোতাম না আটকে বেঁধেও নিতে পারেন। রোজকার সাজে পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
ডেনিমের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন রঙের জেগিংস। এমনকী, একরঙা টপের সঙ্গে প্রিন্টেড জেগিংসও পরতে পারেন। সঙ্গে যদি কালারফুল স্নিকার্স পরে নেন, কেল্লাফতে!
এখন বাজারে হরেক রকমের স্কার্ফ পাওয়া যায়। কয়েকটা রেখে দিতে পারেন সংগ্রহে। রোজকার পোশাকের একঘেয়েমি কাটিয়ে ফেলার জন্য এগুলো উপযুক্ত। লম্বা কুর্তা কিংবা স্কার্টের সঙ্গে নিয়ে নিতে পারবেন ভাইব্র্যান্ট কালারের যে কোনও স্কার্ফ। শুধু বাঁধার কায়দাটা মাঝে মাঝে বদলে ফেলুন। ইউটিউব দেখে শিখে নিন টিপ্স!
একরঙা টি-শার্ট আর জিন্স পরেই বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে? অথচ বাইরে বেরিয়ে অন্তত ১০জনকে দেখবেন একই পোশাকে, সেটাও জানেন! সেক্ষেত্রে পোশাকের বিপরীত রঙের একটা স্টেটমেন্ট নেকপিস ঝুলিয়ে নিন গলায়। ব্যস! লুক পাল্টে যাবে মুহূর্তেই।
জুতোর দিকে একটু নজর দিলেই বদলে যেতে পারে আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট। যে কোনও সাদামাঠা ড্রেসের সঙ্গে গাঢ় রঙের জুতো পরে নিন। প্রিন্টেড জুতোও পরতে পারেন একরঙা জামার সঙ্গে।
যে কোনও জামার সঙ্গে নিতে পারেন একটা বড়সড় হোবো ব্যাগ। কিংবা টোট’ও। আবার ঝোলাও কিন্তু ঘুরেফিরে চলে আসে ট্রেন্ডে। জোগা়ড় করে ফেলতে পারলে আর দেখে কে? খুব সহজেই পেয়ে যাবেন স্মার্ট লুক।
কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ক্যাজুয়াল সাজই রোজ ভাল লাগে। তবে মাঝে মাঝে একটু এক্সপেরিমেন্ট করতেই পারেন। সাধারণ টপের বদলে গ্রাফিক প্রিন্টেড ক্রপ টপ পরতে পারেন কখনও। তবে তার আগে কলেজের ড্রেস কোড থাকলে সেটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন।

 

রেস্টুরেন্টের সিচুয়ান পটেটো তৈরি করে ফেলুন ঘরে

চাইনিজের জনপ্রিয় একটি খাবার হল সিচুয়ান ফ্রাইড রাইস, সিচুয়ান প্রণ। সিচুয়ান প্রণ খাবারটি খেতে কিন্তু দারুন। অ্যালার্জি বা অন্য কোন কারণে অনেকের চিংড়ি মাছ খাওয়া নিষেধ থাকে। তারা কি এই মজাদার খাবারটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন? একদমই না। চিংড়ির পরিবর্তে আলু দিয়ে তৈরি করে নিতে পারবেন এই খাবারটি।

উপকরণ:

১৫টি ছোট আলু সিদ্ধ

১ টেবিল চামচ রসুন কুচি

১ টেবিল চামচ আদা কুচি

২ টেবিল চামচ সিচুয়ান সস

তেল

১ চা চামচ চিনি

১টি ছোট ক্যাপসিকাম কুচি

১টি পেঁয়াজকলি কুচি

১.৫ কাজুবাদাম কুচি

১ চা চামচ সয়াসস

লবণ

প্রণালী:

১। আলুগুলোকে মাঝখানে দুই টুকরো করে কেটে নিন। ভাল করে ধুয়ে সিদ্ধ করে ফেলুন আলু।

২। সিদ্ধ আলুগুলো তেলে ভাল করে ভেজে নিন।

৩। একটি প্যানে তেল গরম হয়ে আসলে এতে কাজুবাদাম কুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, আদা কুচি, রসুন কুচি, সিচুয়ান সস, চিনি দিয়ে নাড়ুন।

৪। এরপর এতে সামান্য পানি, সয়াসস এবং লবণ দিয়ে দিন।

৫। মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসলে এতে ভাজা আলুগুলো মেশান।

৬। কিছুক্ষণ রান্না করার পর পেঁয়াজ কলি কুচি দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।

৭। ফ্রাইড রাইস বা পোলাওয়ের সাথে পরিবেশন করুন মজাদার সিচুয়ান পটেটো।

টিপস:

সিচুয়াস সস তৈরির করতে লাগবে, সয়াবিন তেল, মরিচের পেস্ট, আদা কুচি, রসুন কুচি, লবণ, গোলমরিচের গুঁড়ো, সয়াসস, চিলি সস, চিনি, ভিনেগার।

 

বাসের টিকিট বিক্রি করেন তাঁরা

বাস থামতেই কাউন্টারে টিকিটের জন্য মানুষের ভিড় বেড়ে গেল। আমাদের সঙ্গে কথা বলা থামিয়ে নুসরাত দুহাতে টিকিট বিক্রি শুরু করলেন। এভাবে চলল প্রায় মিনিট পাঁচেক। বাস ছেড়ে দেওয়ার পর কথা শুরু হতেই নুসরাত বলেন, ‘এই কাউন্টারে একটু বেশিই ভিড় থাকে।’ নুসরাত বাসের টিকিট-বিক্রেতা। কাজ করেন রাজধানীর হাতিরঝিলে চলাচল করা ট্যুরিস্ট বাসের কাউন্টারে।

একজন নারী বাসের টিকিট বিক্রি করছেন, এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। আর এই কাজে নুসরাত একা নন, তাঁর মতো রয়েছেন প্রিয়াঙ্কা রানী, মৌসুমী থিগিডি, লিহিনা মাঝি, হেলেনা চিসিম, বৃষ্টি মানকিন, নূপুর ও ববিতা সরকার। তাঁরা সবাই রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এমনিতে তাঁদের আট ঘণ্টা করেই কাজ করতে হয়। তবে পরীক্ষার সময় ছুটি পাওয়া যায় বলে জানালেন তাঁরা। দরকার হলে ক্লাসের সময়ের সঙ্গেও সমন্বয় করে নেন এই শিক্ষার্থীরা।

১০ অক্টোবর টিকিট-বিক্রেতা নারীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় হাতিরঝিল এলাকায়। হাতিরঝিলের এফডিসি মোড় অংশে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন সিদ্ধেশ্বরী কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের নুসরাত। তিনি এক মাস হলো এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। তিনি বললেন, ‘আমি এক সময় টিউশনি করাতাম। কাউন্টারে মেয়েদের কাজ করতে দেখে আমার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজটিই ভালো মনে হলো।’

রাজধানীর হাতিরঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিসে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাঁদের কাছে হয়তো ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। রামপুরা থেকে এফডিসি মোড় হয়ে ফের রামপুরা পর্যন্ত এই বাসগুলো দিনমান চক্রাকার ঘুরতে থাকে। চক্রজুড়ে আটটি কাউন্টার, যার প্রতিটিতে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন এই নারী কর্মীরা।

রামপুরা কাউন্টারে গিয়ে পরিচয় হলো ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের মেয়ে বৃষ্টি মানকিনের সঙ্গে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে যে দুজন নারী প্রথম কাজ শুরু করেন তাঁদের একজন বৃষ্টি মানকিন। উত্তরার আনোয়ারা মডেল কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী বৃষ্টি একসময় টিউশনি করাতেন। পরিচিত একজনের কাছ থেকেই খোঁজ পেয়েছিলেন এই কাজের। বৃষ্টি বলেন, ‘প্রথমে পরিবার রাজি ছিল না। মা কাউন্টারে এসে দেখে গেছেন কীভাবে কাজ করা হয়। তারপর অনুমতি পেয়েছি।’

বিবিএ পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী জানলেন, স্নাতক শেষ হওয়া অবধি তিনি এই পেশা চালিয়ে নিতে চান। তারপর পড়াশোনা করে একটি ভালো চাকরির চেষ্টা করবেন।

আমরা ছেলেমেয়ে কোনো ভেদাভেদ করিনি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর যারা আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে থেকেই এই নারীদের নেওয়া হয়েছে

রাজধানীর হাতিরঝিলের এই চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনা করে এইচ আর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আবু ইউসুফ বলেন, নারী টিকিট-বিক্রেতারা সকাল সাতটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বিকেল থেকে রাতের বেলায় পুরুষ কর্মীরাই কাজ করেন। মুঠোফোনে কথা হয় এইচ আর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ছেলেমেয়ে কোনো ভেদাভেদ করিনি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর যারা আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে থেকেই এই নারীদের নেওয়া হয়েছে।’

টিকিট-বিক্রেতা এই নারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের কিছু সমস্যার কথাও জানা গেল। ইতস্তত ভঙ্গিতে একজন জানালেন, ছোট টিকিটঘরে দুপুরে বেশ গরমের মধ্যে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া শৌচাগার সমস্যাটিও বেশ প্রকট। জরুরি প্রয়োজনে অফিসে জানানোর পর গাড়ি এসে তাঁদের নিয়ে যায়।

তবে এসব সমস্যার কিছুই তাঁদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সুযোগ ও নিরাপত্তা পেলে নারীদের জন্য কোনো পেশাই যে কঠিন নয়, তারই উদাহরণ যেন এই আট নারী টিকিট-বিক্রেতা।

 

বুঝেশুনে সাইবার জগতে

তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রটির সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহারও বাড়ছে প্রতিদিন। ছেলে-বুড়ো সবাই আগ্রহ নিয়ে কাজ করে এমন একটি ক্ষেত্র তথ্যপ্রযুক্তি। এর ব্যাপ্তিও বিশাল। তাই আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি মেয়েরাও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে নানা কাজে। আর এর সুযোগ নিয়ে দুষ্টচক্র বিভিন্নভাবে মেয়েদের হেনস্তা করছে।
ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটার কিংবা ভাইবার যেটাই হোক না কেন—সবকিছুরই কিছু ভালো ও মন্দ দিক আছে। অনেককে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ই-মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কতটা নিরাপদ? বিশেষ করে মে​েয়দের জন্য।

নতুন কোনো কিছু, যা নানাভাবে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে, সেই জায়গা থেকে মেয়েদের দূরে সরিয়ে রাখার কোনো যুক্তি আমি অন্তত খুঁজে পাই না। কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও ঠিক, মেয়েদেরও তৈরি হতে হবে এসব নতুন মাধ্যমের জন্য। তৈরি থাকলে সাইবার জগতে পদচারণ ও নিজেকে নিরাপদ রাখা যাবে।

অনেক সময় আলাপ প্রসঙ্গে অনেকে খুবই ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করেন, যা আমরা ভাবি, শুধু যাঁকে পাঠালাম তিনি দেখবেন। কিন্তু ওই ছবি ফোনে থাকলে যে কারোই দেখে ফেলার আশঙ্কা থাকে। সেটা ব্যবহার করে সামাজিকভাবে হয়রানি করার মতো ঘটনাও আজকাল শোনা যায়

ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মেয়ে আশপাশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু ফেসবুকের সেটিংস অপশন ঠিকমতো জানে বা বোঝে কয়জন? কাকে বন্ধু বানাব, সে আমার কোন পোস্ট দেখবে, কোন পোস্ট আমি সবাইকে দেখাতে চাই বা চাই না, কারা আমাকে বন্ধু বানানোর রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারে—সব এই সেটিংস অপশন থেকে করা সম্ভব। কিন্তু না জানার কারণে একটা অত্যন্ত সময়োপযোগী মাধ্যম বা টুলকে আমরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যবহার করছি। যেকোনো অ্যাপ্লিকেশনের পাসওয়ার্ড সবচেয়ে জরুরি। এটা নিরাপদ রাখার জন্য টু ওয়ে ভেরিফিকেশন বা এসএমএস ভেরিফিকেশনের সুবিধা থাকলে ওটা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ রাখে বহুগুণ।

এবার আসি কী ধরনের ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ঠিক। আমরা না জেনে আমাদের ব্যক্তিগত অনেক অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করি, সেটিংসে ঠিক করে না দিলে যেটা ফেসবুক বন্ধুদের বাইরেও অপরিচিত মানুষ দেখতে পায়। অনেক সময় এসব ছবি দিয়ে অপ্রীতিকর কোলাজ তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। ব্ল্যাকমেলের শিকারও হতে হয়। তাই ফেসবুকে ছবি দেওয়ার আগে ভাবা প্রয়োজন এটা সবার কাছে যেতে পারে কি না। ব্যক্তিগত ও অন্তরঙ্গ এমন কোনো ছবি না দেওয়াই নিরাপদ।

আজকাল ভাইবার বা মেসেঞ্জারে কথা হয় বন্ধুদের সঙ্গে। অপরিচিত বা অল্প পরিচিত মানুষের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত কথা বলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় আলাপ প্রসঙ্গে অনেকে খুবই ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করেন, যা আমরা ভাবি, শুধু যাঁকে পাঠালাম তিনি দেখবেন। কিন্তু ওই ছবি ফোনে থাকলে যে কারোই দেখে ফেলার আশঙ্কা থাকে। সেটা ব্যবহার করে সামাজিকভাবে হয়রানি করার মতো ঘটনাও আজকাল শোনা যায়।

ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে বা এর পাসওয়ার্ড ঠিকমতো সংরক্ষণ করা না হলে, ব্যক্তিগত ই-মেইল অন্য কেউ ব্যবহার করে আজেবাজে মেসেজ পাঠাতে পারে, যা জীবনে জটিলতা তৈরি করে। যাঁরা বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাঁদের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের নিরাপত্তার জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু খুব সাধারণ (কমন) পাসওয়ার্ড বা অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা উচিত। সবার পাসওয়ার্ডের একটা প্যাটার্ন থাকে, ওই প্যাটার্নটা খুব কাছের মানুষকেও জানানো উচিত নয়। এতে কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ও কর্মক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতি করতে পারে।

মেয়েদের তথ্যপ্রযুক্তির যেকোনো টুল ব্যবহারের জন্য কিছু সাধারণ জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যদি বিপদে পড়েই যান, তবে তা গোপন না করে যথাযথ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গিয়ে সাহায্য চান। বাংলাদেশে সাইবার আইন আছে। এর আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধপ্রবণতা ধীরে ধীরে কমে যাবে। কিন্তু আইনের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য মেয়েদের তাদের সমস্যা নিয়ে বের হয়ে আসতে হবে।

লেখক: তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং সহসভাপতি, বেসিস