banner

সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 229 বার পঠিত

 

বাসের টিকিট বিক্রি করেন তাঁরা

বাস থামতেই কাউন্টারে টিকিটের জন্য মানুষের ভিড় বেড়ে গেল। আমাদের সঙ্গে কথা বলা থামিয়ে নুসরাত দুহাতে টিকিট বিক্রি শুরু করলেন। এভাবে চলল প্রায় মিনিট পাঁচেক। বাস ছেড়ে দেওয়ার পর কথা শুরু হতেই নুসরাত বলেন, ‘এই কাউন্টারে একটু বেশিই ভিড় থাকে।’ নুসরাত বাসের টিকিট-বিক্রেতা। কাজ করেন রাজধানীর হাতিরঝিলে চলাচল করা ট্যুরিস্ট বাসের কাউন্টারে।

একজন নারী বাসের টিকিট বিক্রি করছেন, এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। আর এই কাজে নুসরাত একা নন, তাঁর মতো রয়েছেন প্রিয়াঙ্কা রানী, মৌসুমী থিগিডি, লিহিনা মাঝি, হেলেনা চিসিম, বৃষ্টি মানকিন, নূপুর ও ববিতা সরকার। তাঁরা সবাই রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এমনিতে তাঁদের আট ঘণ্টা করেই কাজ করতে হয়। তবে পরীক্ষার সময় ছুটি পাওয়া যায় বলে জানালেন তাঁরা। দরকার হলে ক্লাসের সময়ের সঙ্গেও সমন্বয় করে নেন এই শিক্ষার্থীরা।

১০ অক্টোবর টিকিট-বিক্রেতা নারীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় হাতিরঝিল এলাকায়। হাতিরঝিলের এফডিসি মোড় অংশে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন সিদ্ধেশ্বরী কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের নুসরাত। তিনি এক মাস হলো এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। তিনি বললেন, ‘আমি এক সময় টিউশনি করাতাম। কাউন্টারে মেয়েদের কাজ করতে দেখে আমার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজটিই ভালো মনে হলো।’

রাজধানীর হাতিরঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিসে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাঁদের কাছে হয়তো ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। রামপুরা থেকে এফডিসি মোড় হয়ে ফের রামপুরা পর্যন্ত এই বাসগুলো দিনমান চক্রাকার ঘুরতে থাকে। চক্রজুড়ে আটটি কাউন্টার, যার প্রতিটিতে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন এই নারী কর্মীরা।

রামপুরা কাউন্টারে গিয়ে পরিচয় হলো ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের মেয়ে বৃষ্টি মানকিনের সঙ্গে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে যে দুজন নারী প্রথম কাজ শুরু করেন তাঁদের একজন বৃষ্টি মানকিন। উত্তরার আনোয়ারা মডেল কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী বৃষ্টি একসময় টিউশনি করাতেন। পরিচিত একজনের কাছ থেকেই খোঁজ পেয়েছিলেন এই কাজের। বৃষ্টি বলেন, ‘প্রথমে পরিবার রাজি ছিল না। মা কাউন্টারে এসে দেখে গেছেন কীভাবে কাজ করা হয়। তারপর অনুমতি পেয়েছি।’

বিবিএ পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী জানলেন, স্নাতক শেষ হওয়া অবধি তিনি এই পেশা চালিয়ে নিতে চান। তারপর পড়াশোনা করে একটি ভালো চাকরির চেষ্টা করবেন।

আমরা ছেলেমেয়ে কোনো ভেদাভেদ করিনি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর যারা আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে থেকেই এই নারীদের নেওয়া হয়েছে

রাজধানীর হাতিরঝিলের এই চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনা করে এইচ আর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আবু ইউসুফ বলেন, নারী টিকিট-বিক্রেতারা সকাল সাতটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বিকেল থেকে রাতের বেলায় পুরুষ কর্মীরাই কাজ করেন। মুঠোফোনে কথা হয় এইচ আর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ছেলেমেয়ে কোনো ভেদাভেদ করিনি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর যারা আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে থেকেই এই নারীদের নেওয়া হয়েছে।’

টিকিট-বিক্রেতা এই নারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের কিছু সমস্যার কথাও জানা গেল। ইতস্তত ভঙ্গিতে একজন জানালেন, ছোট টিকিটঘরে দুপুরে বেশ গরমের মধ্যে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া শৌচাগার সমস্যাটিও বেশ প্রকট। জরুরি প্রয়োজনে অফিসে জানানোর পর গাড়ি এসে তাঁদের নিয়ে যায়।

তবে এসব সমস্যার কিছুই তাঁদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সুযোগ ও নিরাপত্তা পেলে নারীদের জন্য কোনো পেশাই যে কঠিন নয়, তারই উদাহরণ যেন এই আট নারী টিকিট-বিক্রেতা।

Facebook Comments