banner

রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

‘মাংস’, ‘মাংশ’ নাকি ‘গোশত’ : চলমান বিতর্কের অবসান

মাংস’কে ‘মাংশ’ কিংবা ‘গোশত’ কোনটা বলাই না জায়েয নয়। এক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হলো, “আল-আসলু আল-ইবাহা” অর্থাৎ মূল হলো বৈধতা। মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আকীদা বা ইবাদাত নয় এমন সকল ক্ষেত্রে মূল হলো সবকিছু বৈধ।

কিছুদিন যাবত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ও বিভিন্ন বক্তার বক্তৃতায় মাংস বলা জায়েয কিনা প্রশ্নে তুমুল বিতর্ক চলছে। সেই প্রেক্ষাপটেই কিছু মন্তব্য….

০১. যারা “প্রাণীর দেহের হাড় ও চামড়ার মধ্যবর্তী শরীরের অংশবিশেষ”কে ‘মাংস’ না বলে ‘গোশত’ বলতে চান তাদের উদ্দেশ্য ভালো বলেই মনে হয়। তারা ইসলামী স্বাতন্ত্রিকতাকে বজায় রাখতে ও সম্ভব্য শাব্দিক অপসংস্কৃতির ছোবল থেকে বাঁচতে চাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্য যেহেতু সৎ (ইতিবাচক ধারণা থেকে ধরে নিচ্ছি) সেহেতু তাদের সমালোচনা করা বা তাদেরকে কটাক্ষ করা আমার উদ্দেশ্য নয়।

০২. যারা ‘মাংস’ শব্দ বলা উচিত-অনুচিতের প্রশ্নটিকে জায়েয-না জায়েযের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তারা কোন গ্রহণযোগ্য দলীল, সেটি কুর’আন, হাদীস, ইজমা, ইজতিহাদ থেকে হোক কিংবা আকল অর্থাৎ যুক্তি থেকে হোক, দেননি এবং দিতে আগ্রহ বোধ করছেন না। অথচ ইসলামে কোন কিছু জায়েয-না জায়েয হতে হলে তার পক্ষে-বিপক্ষে প্রমাণ-যুক্তি লাগবে। প্রমাণহীন কোন বক্তব্য গ্রহণ করতে কোন মুসলিম বাধ্য নয়।

০৩. বাংলা ভাষায় ব্যবহারিত শব্দগুলো উৎপত্তিগতভাবে ৫ প্রকার। ১. তদ্ভব, ২. তৎসম, ৩. অর্ধ তৎসম, ৪. দেশি এবং ৫. বিদেশী। ‘মাংস’ শব্দটি উপরোল্লিখিত কোন প্রকার থেকে এসেছে তা জানা এক্ষেত্রে জরুরি। বাংলা অভিধানগুলো ঘেঁটে আমি যতটুকু জেনেছি, তা হলো ‘মাংস’ শব্দটির উৎস হচ্ছে সংস্কৃত (মন + স) থেকে।

০৪. ‘মাংস’ শব্দটি সংস্কৃত থেকে আসলেও এটি কোন কালেই ‘মাংশ’ বানানে ছিলো না। আমার দেখা সকল বাংলা অভিধানেই শব্দটির বানান ‘মাংস’ লেখা হয়েছে। (দেখুনঃ ঢাকার বাংলা একাডেমী (জানুয়ারী, ২০১১) প্রকাশিত ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এর ৯৬৮ পৃ.; কলকাতার সাহিত্য সংসদ (অক্টোবর, ২০০৭) প্রকাশিত ‘সংসদ বাংলা অভিধান’-এর ৬৯৩ পৃ.; কলকাতার এম. সি. সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লি. (ত্রয়োদশ সংস্করণ, ১৩৮৯) প্রকাশিত আধুনিক বঙ্গভাষার অভিধান ‘চলন্তিকা’ -এর ৫৮২ পৃ.।) তাহলে আমরা ‘মাংস’ শব্দের বানান ‘মাংশ’ পেলাম কোথায়?

০৫. ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী ও স্বরোচিষ সরকার সম্পাদিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’, কলকাতার সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত ও শৈলেন্দ্র বিশ্বাস সংকলিত ‘সংসদ বাংলা অভিধান’ ও কলকাতার এম. সি. সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লি. প্রকাশিত ও রাজশেখর বসু সংকলিত ‘চলন্তিকা’, কোথাও ‘মাংশ’ বানানে কোন শব্দ নেই।

০৬. বাংলা একাডেমি ‘মাংস’ শব্দের অর্থ লিখেছে, ‘প্রাণীর দেহের হাড় ও চামড়ার মধ্যবর্তী শরীরের অংশবিশেষ’। (৯৬৮ পৃ.) শৈলেন্দ্র বিশ্বাস ‘মাংস’ শব্দের অর্থ লিখেছেন, ১. ‘জীবদেহের হাড় ও চামড়ার মধ্যবর্তী কোমল অংশবিশেষ’; ২. ‘মানুষের ভোজ্য মনুষ্যেতর প্রাণীর আমিষ বা পলল’। (৬৯৩ পৃ.) রাজশেখর বসু ‘মাংস’ শব্দের অর্থ লিখেছেন, ‘পশু মনুষ্যইঃর দেহের চর্ম ও অস্থির মধ্যবর্তী কোমল অংশ পিশিত’। (৫৮২ পৃ.) উপরোল্লিখিত অর্থসমূহ ছাড়া অন্য কোন অর্থ এসব অভিধানে লেখা হয় নি।

০৭. ‘মাংস’ শব্দের বানান ‘মাংশ’ লিখে যারা ‘মায়ের (গরুর) অংশ’ ব্যাসবাক্যে সন্ধিবিচ্ছেদ (!) করেন তারা বাংলা ব্যকরণের কোন নিয়মে তা করেন তা আমার বুঝে আসে না। আমার জানা মতে বাংলা ব্যকরণের কোনো নিয়মেই এই সন্ধিবিচ্ছেদ ও ব্যাসবাক্য গ্রহণযোগ্য নয়।

০৮. বাংলা ভাষার কোনো বিশেষজ্ঞ (হিন্দু কিংবা মুসলিম) ‘মাংস’কে তথাকথিত ‘মাংশ’ শব্দের অপভ্রংশ বা পরিবর্তিত রূপ বলে আখ্যায়িত করে তাকে হিন্দুদের বিশ্বাসজাত কোন শব্দ বলে উল্লেখ করেন নি, যেমনটা করেছেন কীর্তন বেদী, স্নাতক, আচার্য, উপাচার্য, বিশ্বভ্রম্মাণ্ড ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রে। তাহলে কেন মাংসকে মাংশ ভেবে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে? বিস্তারিত জানতে ও প্রমাণ পেতে বাংলাভাষার যে কোন অভিধানে এই শব্দগুলোর অর্থ ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা দেখুন। সনাতন ধর্মের বিশ্বাসজাত কিন্তু বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দের ‘পোস্টমর্টেম রিপোর্ট’ জানতে পড়তে পারেন সালেহুদ্দীন জহুরী’র লেখা ‘শব্দ সংস্কৃতির ছোবল’ বইটি।

০৯. অনেকেই ‘মাংস’কে ‘গোশত’ বলতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু বাংলা ‘মাংস’ শব্দ বাদ দিয়ে ফার্সী শব্দ ‘গোশত’ (ফার্সী গাফ লিখতে পারছি না।) শব্দের প্রতি এতো আগ্রহের কারণ কী তা আমি জানি না। তবে কেউ যদি ফার্সীকে ইসলামী ভাষা আর বাংলাকে অনৈসলামিক ভাষা বলে ভাবেন এবং মনে করেন, এবং সেই ভেবে ‘গোশত’ বলতে উৎসাহিত করেন তাহলে ভুল করবেন। কারণ আল্লাহর নিকট কোন ভাষাই খারাপ বা পরিত্যাজ্য নয়। ফার্সীর প্রতি এতো আগ্রহ কেনো? বেশি আগ্রহ থাকা উচিত আরবীর প্রতি। এর অনেক কারণ আছে। সে হিসাবে মাংসকে “লাহম” বলা উচিত। আমরা কি সেটি বলবো?

১০. তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে, ‘মাংস’ দ্বারা হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী মা (গরু)-এর অংশ বুঝাচ্ছে, তাহলে শুধু গাভীর মাংসকে গোশত বলতে হবে। অন্যগুলোর যেমন ছাগল, খাসি, মুরগী ইত্যাদির ‘গোশত’কে কি মাংস বলতে দোষ হবে?

মোটকথা, আমার এখন পর্যন্ত স্টাডি অনুযায়ী ‘মাংস’কে ‘মাংশ’ কিংবা ‘গোশত’ কোনটা বলাই না জায়েয নয়। এক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হলো, “আল-আসলু আল-ইবাহা” অর্থাৎ মূল হলো বৈধতা। মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আকীদা বা ইবাদাত নয় এমন সকল ক্ষেত্রে মূল হলো সবকিছু বৈধ। যতক্ষণ না তা হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার দলীল পাওয়া যায়। তবে ‘মাংস’কে ‘মাংশ’ বললে এবং বিশ্বাস করলে সমস্যা হতো। যা কোন মুসলিম তো করেই না এমন কি কোন হিন্দুও করে না। কারণ আসলে বাংলায় ‘মাংশ’ বানানে কোন শব্দই নেই। তাহলে কেন এই আজগুবি ব্যাখ্যা? আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র নই, তাই ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। গঠনমূলক সমালোচনা ও সংশোধনী কাম্য। তবে আবেগ দিয়ে নয়, দলীল ও বিবেক দিয়ে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা জরুরি। নয়তো এই সব সামান্য বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণে আরও বড় গুনাহে আমরা লিপ্ত হয়ে যেতে পারি। ইসলামী আকীদা ও সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক এমন শব্দ, তা বাংলা ভাষার হোক বা অন্য কোন ভাষার হোক, তা বর্জন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল
গবেষক, হায়ার ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ, উত্তরা, ঢাকা।

 

চঞ্চলের আয়নাবাজি দেখার প্রত্যয় সাকিবের

তখন চলছিল আয়নাবাজির শুটিং। হঠাৎ একদিন শুটিং এ গিয়ে উপস্থিত সাকিব আল হাসান। কিছুক্ষণ সেটে বসে শুটিং দেখে তিনি নাকি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে সেট ছেড়ে যাবার আগে তিনি চঞ্চল চৌধুরীর কাছে আয়নাবাজি দেখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি এমনটিই জানিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী।

নিজের ফেসবুক পাতায় চঞ্চল লেখেন, ‘আয়নাবাজির শুটিং এ এসেছিলেন অলরাউন্ডার। অনেকক্ষণ শুটিং দেখে সেদিনই সাকিব আল হাসান আমাকে বলেছিলেন যে চঞ্চল ভাই, অবশ্যই আয়নাবাজি দেখবো।‘

 

১১টি ধাপে আবিষ্কার করুন আপনার প্রতিভা

‘আমার কি প্রতিভা নেই? আমি কি তার মত মেধাবী নই? আমি কি সেই কাজটিই করছি যা আমার করার কথা? এটাই কি আমার জীবনের উদ্দেশ্য?’ – পৃথিবীতে হাজারো মানুষ আছেন যারা প্রতিনিয়ত এইসব প্রশ্ন করে যান নিজেকে। কারণ তারা এখনো পথ খুজে পান নি। পেলেও তারা নিশ্চিত নন এটাই সঠিক পথ কিনা! আপনি যদি হয়ে থাকেন এদের একজন তাহলে এই লেখা আপনারই জন্য।
ধাপে ধাপে আবিষ্কার করুন আপনার প্রতিভা-
ধাপ ১-
পুরোনো স্বপ্নের খোঁজে
প্রথমেই নিজেকে সময় দিন। ফিরে যান অতীতে। ছেলেবেলা থেকে শুরু করুন। কী ছিল আপনার স্বপ্ন? কী হতে চাইতেন আপনি? বড় হতে হতে আর কী কী যোগ হয়েছে আপনার জীবনে? স্কুলে কী ভেবেছিলেন, কলেজে কেমন ছিল স্বপ্ন সব লিখুন।
ধাপ ২
’To have’ এবং ’to be’ ধরনের স্বপ্নকে আলাদা করুন
সব স্বপ্ন তো লিখেই ফেলেছেন। এবার সম্য এর মধ্য থেকে আলাদা করা বা এদেরকে দুই ভাগে ভাগ করুন।
’To have’ dreams:
আপনার কাছে নেই এমন কিছু যা আপনি ভবিষ্যতে পেতে চান।
’To be’ dreams:
এমন স্বপ্ন যা আপনার জীবনে নতুন ভূমিকা যোগ করে।
’To be’ স্বপ্নগুলো নিন শুধু। আমরা সেগুলো নিয়েই পরবর্তী কাজগুলো করব।
ধাপ ৩
কোনটি আপনার মাঝে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে
এমন কোন বিষয় মনে করার চেষ্টা করুন যা অন্যের আছে বলে আপনার ঈর্ষা হয়। কোন বস্তু নয়। কোন স্বপ্ন, যা অন্য কেউ পূরণ করতে পেরেছে। সেটা লিখে রাখুন।
ধাপ ৪
কোন কাজে আপনি আনন্দ পান?
এমন কোন কাজ বা সখের কথা লিখুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়। ছোটবেলায় কী করতে আপনার সবচেয়ে ভাল লাগত, এরপর কিশোর বয়সে কোন কাজটি বেশী করতেন আপনি আর এখন কী করে আনন্দ পান সব লিখে রাখুন।
ধাপ ৫
অপ্রয়োজনীয় স্বপ্ন বাদ দিন
এতক্ষণ লিখে রাখা স্বপ্নগুলোতে আবার চোখ বুলিয়ে দেখুন। খেয়াল করুন কোন স্বপ্নগুলো এখনও আপনাকে নাড়া দেয়। কোনগুলো আপনার মাঝে তৈরি করে কষ্ট, না পাওয়ার বেদনা। সেগুলো আলাদা করে ফেলুন।
ধাপ ৬
মূল্যায়ণ করুন
যে স্বপ্নগুলো বেছে নিলেন তার মাঝে কোনটা বেশী আপনার বর্তমান ইচ্ছার সাথে মিলে যায় সেই হিসেব মত নম্বর দিন। একটি সিরিয়াল তৈরি করুন। অবশ্যই আপনার মনের আকাঙ্ক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিন। বের করুন কোন স্বপ্নটিকে আপনি ১ নম্বরে রাখতে চান!
ধাপ ৭
গ্রুপে নিয়ে আসুন
এবার আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনার আসল স্বপ্ন এবং লক্ষ্য। খেয়াল করলেই দেখবেন আ[পনার অসংখ্য স্বপ্নের মাঝে কিছু আছে যা আসলে একই রকম বা একসাথেই অর্জন করা সম্ভব। এদেরকে একত্রিত করে ফেলুন।
ধাপ ৮
গ্রুপগুলোর একটা নাম দিন।
ধাপ ৯
গ্রুপগুলোর মাঝে কোন সংযোগ আছে কি?
আরও গভীর মনোযোগ দিন। কোন কিছু কি আছে যা আপনার এই ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের স্বপ্নদেরও সংযুক্ত করতে পারে?
ধাপ ১০
কোথায় সবচেয়ে বেশী প্রকাশ পায় মেধা
কোন স্বপ্নের সাথে সবচেয়ে বেশী জড়িয়ে আছে আপনার প্রতিভা? অভিনয়? কথা বলা? গল্প জমানো? গান করা? কাগজের নৌকা তৈরি? আপনার চোখে তা সাধারণ, কিন্তু আপনি সেটাই পারেন ভাল। খেয়াল করুন এত গুলো ধাপ পেরিয়েও সেই দক্ষতা আপনার স্বপ্নের সাথে যুক্ত রয়ে গেছে কিনা।
ধাপ ১১
জীবনের লক্ষ্য
এতক্ষণে নিশ্চয়ই স্বপ্ন আর প্রতিভার সংযোগ পেয়ে গেছেন আপনি। এবার এমন পথ খুঁজে বের করুন যেই পথে হয় স্বপ্ন পূরণ আর একই সাথে আপনার মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
আপনার পৃথিবী আপনিই গড়বেন। শুধু খুঁজে নিন নিজেকে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

সবজি দিয়েই তৈরি করুন জনপ্রিয় টাকো

খাবারের উপাদান হিসেবে বেশ করে সবজি ব্যবহার করা উচিৎ। কিন্তু তা করি আমরা কতোজন? বরং এখনকার ফাস্টফুডগুলোতে সবজির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া ভার। যদি সবজি দিয়েই তৈরি করে ফেলা যায় একটি ফাস্টফুড, তবে কেমন হয় বলুন তো? চলুন আজ দেখে নিই দারুণ জনপ্রিয় টাকোস তৈরির প্রণালী, শুধুই সবজি দিয়ে!
উপকরণ
– ২টি মাঝারি আকারের গাজর, গ্রেট করা
– অর্ধেকটা মাঝারি সবুজ জুকিনি, গ্রেট করা
– অর্ধেকটা হলুদ স্কোয়াশ, গ্রেট করা
– লবণ স্বাদমতো
– আধা কাপ ওটস
– আধা কাপ মোজারেলা চিজ, গ্রেট করা
– ১টা ডিম
– ১৬-২৪টা আরুগুলা পাতা/ কচি পালং শাকের পাতা
– ১টা শসা, খোসা ছাড়িয়ে চিকন টুকরো করা
– ১টা মাঝারি বীট, খোসা ছাড়িয়ে চিকন টুকরো করা
– ১টা পিঁয়াজ, স্লাইস করা
– ওপরে দেওয়ার জন্য সাওয়ার ক্রিম এবং পিকল্ড জালাপেনো
প্রণালী
১) ওভেন প্রিহিট হতে দিন ১৮০ ডিগ্রিতে। একটি বেকিং ট্রেতে সিলিকন ম্যাট বসিয়ে রাখুন।
২) গ্রেট করা গাজর নিন একটি বাটিতে। এতে জুকিনি, স্কোয়াশ, লবণ, ওটস, পনির এবং ডিম দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিন।
৩) একটি বড় গোল কুকি কাটার রাখুন ট্রেতে। এর ভেতরে কিছুটা গাজরের মিশ্রণ দিয়ে দিন। চেপে চেপে সমান করে নিন এবং কাটার সরিয়ে নিন। এভাবে গাজরের মিশ্রণ দিয়ে কয়েকটি গোলক তৈরি করুন।
৪) প্রিহিট করা ওভেনে ট্রে দিয়ে বেক করুন ৫-১০ মিনিট। মুচমুচে হয়ে এলে বের করে নিন এবং রুটি বেলার বেলন দিয়ে টাকোর আকৃতি দিন। ঠাণ্ডা হবার জন্য রেখে দিন।
৫) প্রতিটি টাকোর ভেতরে কয়েকটি আরুগুলা পাতা বা পালং পাতা দিন। ওপরে দিন শসা, বীট, পিঁয়াজ, সাওয়ার ক্রিম এবং পিকল্ড জালাপেনো।

 

পুরনো পোশাক করে তুলুন নতুন

অনেকে আছেন, যারা সারা বছর জুড়ে একই রকম পোশাকে কাটিয়ে দেন। এর কারণ সবসময় নতুন পোশাক কেনা যায় না। তবে পোশাক না কিনেও পোশাকে নতুনত্ব আনার উপায় অবশ্য রয়েছে। এতে খরচও যেমন খুবই কম, আবার ফ্যাশনেও ইন হয় সহজেই। কিন্তু সেটি কিভাবে সম্ভব! উপায় হচ্ছে, পুরনোকে করে তুলুন নতুন।

নিজের পুরনো পোশাকের সঙ্গে খেলতে হবে একটু কাটাকাটি। আর এটি খেলার পর দেখবেন আপনার পুরনো একটি জিন্স প্যান্ট কি করে নতুন হয়ে উঠল। কিন্তু হাঁটুর কাছে ছেঁড়া জিন্স যদি আপনার লুকের সঙ্গে না মানায়, তাহলে জিন্সের পায়ের নিচের দিক থেকে কেটে ফেলুন এক ইঞ্চি। ‘র অ্যাজেস’ জিন্সটি পরুন অ্যাঙ্কেল লেন্থ বুটের সঙ্গে।

জুতোর ক্ষেত্রে কি করবেন? অনেকে ভাবেন, জুতা পুরনো হলে বাতিলের খাতায় নাম না লেখানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। উপায় আছে। পাল্টে ফেলুন আপনার স্যান্ডেলের ফিতা। সামনেই আসছে শীতকাল। স্নিকারস পরার উপযুক্ত সময়। এবার আর নতুন স্নিকারস কেনার জন্য ছুটবেন না দোকানে। গত বছরেরটিই ঘষেমেজে চকচকে করে ফেলুন। পাল্টে ফেলুন স্নিকারসের ফিতা। এতে আপনার স্নিকার পাবে ভিন্ন লুক। সাদা স্নিকারসের ক্ষেত্রে রঙিন শু লেস ট্রাই করুন।

আপনার প্রিয় জ্যাকেটটি একটু ফিকে হয়ে এসেছে কি? খুলে ফেলুন পুরনো বোতাম। আজকাল জ্যাকেট বোতাম ছাড়াই স্টাইলিশ। কিংবা  বদলে ফেলুন এর বোতামগুলো। বাজারে নানা রঙের স্টাইলিশ বোতাম কিনতে পাওয়া যায়। অন্যরকম বোতাম লাগিয়ে পাল্টে ফেলুন পুরনো জ্যাকেট অথবা শার্ট। এছাড়াও এতে ট্রেন্ডি ব্যাজ লাগিয়ে নিলেই বদলে যাবে আপনার ব্যাক্তিত্বও। তাই নতুন পোশাক কিনতে যাওয়ার আগে ভাবুন, পুরনোকেই নতুন করে তোলা যায় কিনা!

 

একা একা ঘুরি

কৈশোরে তিন গোয়েন্দা পড়ার সময় হয়তো মন ছুটে গিয়েছিল পাহাড়ে, সাগরের নীলে আর বনে। বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বনভোজনে যাওয়ার অনুমতিও মেলে না অনেক মেয়ের। একই পরিবারের ছেলেটি যে রাতে মাঝনদীতে নৌকায় বসে জ্যোৎস্না দেখে মুগ্ধ হয়—মেয়েটি হয়তো সেই সময় ঘরের জানালা দিয়ে ইট-সিমেন্টের জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না দেখার চেষ্টা করছে।
আজকাল অনেক নারী পরিবর্তন আনছেন। নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করছেন। তাঁরা ব্যাকপ্যাক নিয়ে একাই বেরিয়ে পড়ছেন ভ্রমণে।
নাজিয়া সরণি পেশায় প্রকৌশলী। শুরুটা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষ থেকে। এরপরে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ-বিদেশের অনেক স্থানে। ছোটবেলায় মানচিত্রে খুঁজে বেড়াতেন নতুন নতুন জায়গার নাম। তবে তাঁর ভ্রমণের নেশা কাগজের মানচিত্রে সীমাবদ্ধ থাকেনি। নাজিয়া পেরেছেন। তবে এখনো আর্থিক সংগতি এবং ভ্রমণের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক নারী পারছেন না। কেন?
নাজিয়ার মতে, এ দেশে বেশির ভাগ বাবা-মা বন্ধুদের সঙ্গেই ঘুরতে যেতে অনুমতি দেন না, সেখানে একলা বেড়ানো তো দূরের কথা। আবার অনেক সময়ই অভিভাবকদের বলতে শোনা যায়, ‘বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যেও, তার আগে না।’ এমন প্রতিকূল পরিবেশে নারীরাও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোথাও বেরিয়ে পড়তে পারেন না।

‘শুরু করাটাই জরুরি। এখন সময় এসেছে অভিভাবকদের বুঝতে হবে তাঁরা মেয়ের নিরাপত্তার খাতিরে যেন তার সহজাত আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়ে এমন কিছু না করেন। আবার মেয়েদেরও নিজেকে রক্ষা করার কৌশল জানতে হবে।’
নারীদের নিরাপত্তা নেই কোথাও—এই নিরাপত্তার অজুহাত নারীদের একলা ভ্রমণের ইচ্ছায় বাদ সাধে। আসলেই কি নিরাপত্তা প্রধান সমস্যা, নাকি আজ অবধি সমাজে নারীদের নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নেওয়া হয় না?
একটি টেলিভিশন চ্যানেলে কর্মরত সাংবাদিক কাজী শাহরীন হক। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন দেশ-বিদেশ ভ্রমণে। কখনো বন্ধুদের সঙ্গে, কখনো একাই। ‘যাত্রা শুরুর পথটা এতটা মসৃণ ছিল না। নারীদের কোনো কিছু আসলে হাতে তুলে দেওয়া হয়নি; বরং অর্জন করে নিতে হয়েছে। আমার এই হুট করে ঘুরতে চলে যাওয়া নিয়ে অনেকেই নেতিবাচক কথা বলেছে। নারীদের স্বাধীন চলাফেরায় বাধা আসবেই। সে বাধার সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।’ ভ্রমণের সময় নিরাপত্তার ব্যাপারটি ছেলে বা মেয়ে উভয়ের জন্যই জরুরি। অথচ এই নিরাপত্তার বিষয়টি কেবল নারীদের বেলায় একটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড় করানো হয়। বাড়ির ছেলেটিকে তো নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে না।
আসিতা সুলতানা চৌধুরী ঘুরেছেন ইতালি, সুইডেন, নেপাল, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর ১৩টি দেশে। প্যারাগ্লাইডিং, হাইকিং, ট্রেকিং—সব রোমাঞ্চের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে যেকোনো ভ্রমণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
হোটেল বুকিং দেওয়ার আগে শুধু ইন্টারনেটের ওপর ভরসা না করে ফোন করে যাচাই করা, পরিচিত কারও মাধ্যমে গাইড ঠিক করা, দেশে কাউকে সব তথ্য দিয়ে যাওয়া, ভ্রমণের সময় ব্যাগে অবশ্যই পরিচিত কারও নাম, ফোন নম্বর আর ঠিকানা রাখা, ঘুরতে যাওয়ার আগে সেই স্থান নিয়ে ইন্টারনেটে ভালোমতো পড়াশোনা করা—এ বিষয়গুলো ঠিকমতো খেয়াল রাখলে বিপত্তির আশঙ্কা অনেক কমে যায়। এমন পরামর্শ দেন আসিতা।
ভ্রমণ শুধু বিলাসিতা নয়। প্রকৃতিসঙ্গ একজন মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। নাজিয়া সরণির জীবনে যেমন হয়েছিল। তিন বছর আগে ভারতের গোয়াহাটি গিয়ে পরিচয় হয় একজন অস্ট্রিয়ার একলা মায়ের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা ট্রেকিং করে দেখতে গিয়েছিলেন পৃথিবীর একমাত্র ‘লিভিং রুট ব্রিজ’। তখন অনেক খারাপ সময় পার করেছিলেন জীবনে, হঠাৎই এভাবে নিজেকে আবার খুঁজে পান নাজিয়া।
ঘুরতে পছন্দ করেন ক্রীড়াবিদ জোবেরা রহমান লিনু। তাঁর মতে, একা একা ঘোরে এমন নারীর সংখ্যা কম। সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক পরিবার থেকে অনুমতি মেলে না। কিন্তু সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে অনেক নারী যখন একা ঘুরতে যাবে, তখন নিশ্চয় নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হবে। কোন বয়সে মেয়েটি ঘুরতে যাচ্ছে সেটা একটা বিষয়। বয়ঃসন্ধিকালের কোনো সন্তানকে অনুমতি হয়তো দেবে না, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটি তো যেতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো, মেয়েটির একা ঘোরার ও নিজের নিরাপত্তা বিষয়ে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। এমনকি পরিবারের আস্থাও থাকতে হবে তার ওপর।
অনেক নারী হয়তো নিয়ম ভাঙবেন। ভ্রমণ অনেক নারীর জীবনের বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে পারে। ভ্রমণের নেশা কেবল বই, টেলিভিশন আর ইন্টারনেটে মেটাবেন না। বেরিয়ে পড়বেন ব্যাকপ্যাক নিয়ে বিশ্বভ্রমণের পথে।

 

বাড়িভাড়াতেও মেয়েদের ঝক্কি

‘বিয়া কইরা ফালান। ঢাকায় একলা মাইয়া মানুষ নিরাপদ না।’ ঢাকার মধ্য বাড্ডায় বাড়িভাড়া খুঁজতে গিয়ে সেই বাড়ির দারোয়ানের বিয়ে করার উপদেশ শুনে গেট থেকেই ফিরে আসতে হয়েছিল দীপিকা সাহাকে। ঢাকায় বাড়ি ভাড়া করে থাকার প্রয়োজন এবং আর্থিক সংগতি থাকা সত্ত্বেও এ রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে অসংখ্য মেয়ের।সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বিভিন্ন জঙ্গি হামলার ঘটনার পরে বাড়িওয়ালারা নড়েচড়ে বসেছেন। অনেক ব্যাচেলরের অভিযোগ, তাঁদের বাড়িভাড়া পেতে ব্যাপক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এ নিয়ে লেখালেখিও হচ্ছে বিস্তর। মেয়েরাও যে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।অতিরিক্ত ভাড়া দাবি, কয়েক মাসের অগ্রিম ভাড়া দাবি, অশ্লীল মন্তব্য, অযাচিত উপদেশ বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে এ রকম নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় সিঙ্গেল মেয়েদের।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী অদিতি ঢাকার ফার্মগেটে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ‘একবার ইন্দিরা রোডের এক বাড়িওয়ালা বলেছিলেন যে মেয়েদের বাড়িভাড়া দিলে ছেলেঘটিত নানা সমস্যা হয়। এ কারণে তিনি মেয়েদের ভাড়া দেন না,’ বলেন অদিতি। একটি টেলিকম কোম্পানিতে খণ্ডকালীন চাকরিরত মাহফুজা কনার কাছ থেকে জানা গেল তাঁর অভিজ্ঞতা। ‘বাড্ডা লিংক রোডের এক বাসায় আমরা কয়েকজন মেয়ে একসঙ্গে থাকতাম। মাসে সাত-আট দিনই পানি পেতাম না। অভিযোগ করলে বলতেন যে আমরা মেয়েরা পানি খরচ করি বেশি। বাড়ির মালিকের নির্দেশ ছিল সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় জুতো খুলে নিঃশব্দে উঠতে হবে।’

একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত   আয়েশা সিদ্দিকা জানান, এক পরিবারের সঙ্গে সাবলেট থাকার এক মাসের মধ্যেই তাঁকে নতুন বাড়ি খুঁজতে হয়েছিল। বাড়িওয়ালা তাঁর দিকে বাজে ইঙ্গিত দিতেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক-সুবিধা না থাকায় অনেক মেয়েদের ক্যাম্পাসের আশপাশে বাড়ি ভাড়া করে থাকতে হয়। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী দিলারা জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমাদের অন্য ফ্ল্যাটের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে হতো। কারণ, জিজ্ঞাসা করায় বাড়িওয়ালা বলেছিলেন, মেয়েদের বাসা ভাড়া দিয়েছেন এই তো বেশি। ভাড়াও তাই বেশি।’

ধানমন্ডির বাসিন্দা শিশিরের মতে, ‘ আমার বাবা-মা ঢাকায় থাকেন। তবুও আমি আমার কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের সুবিধার   কারণে আলাদা বাসা ভাড়া নিয়েছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হকের মতে, আমাদের সমাজে কোনো মেয়ে একা থাকে মানেই ধরে নেওয়া হয়, সেখানে নানা ধরনের বিপদের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে, সমাজে নিজের যোগ্যতাবলে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ঠিকই, তবে এখনো বিয়েকেই মেয়েদের সামাজিক পরিচয় (সোশ্যাল আইডেনটিটি) হিসেবে ধরা হয়। এ কারণেই বাসা ভাড়া নিতে গেলে তার নিজের পরিচয় ছাপিয়ে সে কেন অবিবাহিত, তা মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।  মেয়েদের এগিয়ে নিতে হলে এই শহরে মেয়েরা যেন নিরাপদ থাকে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে যত দিন যাবে, মেয়েদের সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠবে।

 অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, মেয়েদের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, এ কারণে শহরে মেয়েদের বাড়ি ভাড়ার চাহিদা তৈরি হচ্ছে। তবে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা অনেক ক্ষেত্রেই বদলায়নি। একটা মেয়ের যত যোগ্যতাই থাকুক, অনেকেই ভাবেন, শুধু পুরুষ হওয়ার কারণে একটা মেয়েকে জীবনযাপন নিয়ে উপদেশ দেওয়ার অধিকার তাঁর আছে।

 

ময়মনসিংহের মেয়েরা তৈরি হচ্ছে ক্রিকেটের জন্য

সপ্তম শ্রেণির চুমকি আক্তার ও অষ্টম শ্রেণির আফরিন আক্তার মুক্তাগাছা থেকে ময়মনসিংহ শহরে আসে শুধু ক্রিকেট অনুশীলন করার জন্য। বাসে করে সকাল সাতটায় এসে অনুশীলন শেষে আবার বাসে করে বাড়ি ফেরে তারা। আসা-যাওয়া করতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। মুক্তাগাছা ফিরে তারপর তারা স্কুলে যায়। ছয় মাস ধরে তাদের এ রুটিন। পরিবারের সদস্যরা তাদের খেলার বিষয়টি মেনে নিলেও পাড়াপড়শিদের অনেকেই হাসাহাসি করে। তবে চুমকি ও আফরিন সেসব গায়ে মাখে না।

শুধু মুক্তাগাছা নয়, ত্রিশাল এবং অন্যান্য জায়গা থেকেও সকালে মেয়েরা শহরের জয়নুল আবেদিন পার্ক বা সার্কিট হাউস মাঠে জড়ো হয় ক্রিকেট চর্চার জন্য। কোনো কোনো দলে শুধু মেয়েরা, আবার কোনো কোনো দলে ছেলেমেয়ে একসঙ্গেই প্র্যাকটিস করে। শহরের সকালের এই দৃশ্য সবার কাছে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত মেয়ে ক্রিকেটারের সংখ্যা তেমন একটা বাড়েনি।

ময়মনসিংহে বিভিন্ন দলের কোচদের বক্তব্য হচ্ছে, মেয়েদের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক। পরিবারও আগের চেয়ে এ বিষয়ে উৎসাহী। এখন প্রশাসন থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। মেয়েদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।

গত মাসে চুমকি ও আফরিনের সঙ্গে কথা হয় সার্কিট হাউসের মাঠে। প্র্যাকটিস শেষ করে বাড়ির পথে পা বাড়ানোর আগে কথা বলে তারা। অনুপ্রেরণা স্পোর্টস একাডেমির কোচ এস এম মুখলেছুর রহমান চুমকি-আফরিনসহ ২০ জন মেয়েকে নিয়ে একটি নারী ক্রিকেট দল তৈরি করেছেন।

কোচ জানালেন, তাঁর দলের নিগার সুলতানা বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার। শেরপুরের ১৬ জন মেয়ে ঢাকায় খেলছে। বড় বড় দল থেকে মেয়েরা ডাক পাচ্ছে। তবে এই মেয়েদের তৈরি করার জন্য প্র্যাকটিসের কোনো জায়গা পাওয়া যায় না। ড্রেসিং রুম এমনকি কোনো ওয়াশরুমও নেই।

ময়মনসিংহের জয়নুল আবেদিন পার্কে গিয়ে দেখা গেল, মোহামেডান একাডেমির কোচ গোলাম কিবরিয়ার কাছে ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে প্র্যাকটিস করছে। এই একাডেমির খেলোয়াড় জুনায়েদ জাহানের মতে, প্র্যাকটিস করার সময় কে ছেলে আর কে মেয়ে তা মাথায় থাকে না। তবে নতুন কেউ খেলতে এসে প্রথম দিকে খানিকটা বিব্রতবোধ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী খেলোয়াড়ের মতে, ছেলেমেয়ে একসঙ্গে প্র্যাকটিস করলে তুলনামূলকভাবে নারীরা একটু পিছিয়েই থাকে। অনেক সময় মেয়ে ও তার পরিবারও একসঙ্গে প্র্যাকটিস করার বিষয়টি মেনে নিতে পারে না। কোচ গোলাম কিবরিয়া বললেন, ময়মনসিংহে মেয়েদের মধ্যে সম্ভাবনা অনেক। তবে তারা সেভাবে সুযোগ পাচ্ছে না। মেয়েদের জন্য নেই আলাদা কোনো বাজেট। এই একাডেমিতে ছেলে ৬০ জন আর মেয়ে মাত্র ৫ জন।

মোহামেডান একাডেমিতে কামরুন নাহার খেলছেন গত চার বছর ধরে। বর্তমানে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেন। তিনি বলেন, প্র্যাকটিস করার সময় আশপাশ দিয়ে যাঁরা হেঁটে যান, অনেকেই অনেক সময় মন্তব্য করেন। একজন একদিন বললেন, ‘শুধু শুধু খেলতাছে, অ কি আর বড় প্লিয়ার হইব নাকি?’

শামসুন নাহার খান ছোটবেলা থেকে খেলছেন বিষয়টি তেমন নয়। স্নাতক শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি মাঠের মধ্যে ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে প্র্যাকটিস করতে দেখেন। তা  দেখেই চিন্তা করেন অন্য মেয়েরা পারলে তিনি কেন খেলতে পারবেন না।

অভিভাবক মেহেরুল হক, সুপ্রীতি দাস, রোজী আক্তার পার্কে বসে ছেলেমেয়েদের প্র্যাকটিস দেখছিলেন। মেহেরুল হক বললেন, ছেলেমেয়েদের জন্য সকালে আসতে হচ্ছে। এখানে এসে অভিভাবকেরা হাঁটাহাঁটি করেন। তারপর একসঙ্গে বাসায় ফেরেন। মোহামেডান একাডেমিতে শৃঙ্খলাবোধ ভালো। তাই ছেলেমেয়ে একসঙ্গে প্র্যাকটিস করছে, তা আলাদা কিছু মনে হয় না।

ক্রিকেটসহ যেকোনো খেলার ক্ষেত্রেই পুষ্টিকর খাবার দরকার হয়। খেলার উপকরণ কিনতে হয়। এগুলো অনেক ব্যয়বহুল। অনেক পরিবারের ইচ্ছা থাকলেও ছেলে বিশেষ করে মেয়েদের কিনে দিতে চান না বাড়তি খরচ মনে করে। তাই নারী খেলোয়াড়দের বড় ক্ষোভ জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ চাইলেই মেয়েরা সংস্থার মাঠে প্র্যাকটিস করতে পারে। পেতে পারে অন্য সুযোগ-সুবিধা।

অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল লোহার মরচে ধরা সংস্থার গেট খুলে ভেতরে ঢুকে। কমপ্লেক্সের মাঠে বড় বড় গাছ গজিয়েছে। মাঠে গরু-ছাগল ঘাস খাচ্ছে। কমপ্লেক্সে কাজ করছেন এবং সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মচারীরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ভেতরে বাড়িঘর তৈরি করে থাকছেন।

জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, সংস্থার জন্য সরকারের বার্ষিক অনুদানের পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাত্র। এ অনুদানের মধ্য থেকে বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতনসহ সবকিছুই দিতে হয়। মেয়েদের হ্যান্ডবলসহ কিছু খেলায় সংস্থার পক্ষ থেকে সাহায্য-সহায়তা করা সম্ভব হলেও মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য কোনো বাজেট বা সুযোগ-সুবিধা নেই। সংস্থার মাঠে ক্রিকেটের জন্য একটি পিচ তৈরি করে দিতে পারলে মেয়েদের আর বাইরে ছেলেদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করতে হয় না। কিন্তু সে সামর্থ্য নেই।

‘মেয়েদের ঘর থেকে বের করাই এখন পর্যন্ত বড় সমস্যা। সে জায়গায় তারা ক্রিকেটের মতো খেলা খেলছে। তাদের একটু সহযোগিতা করতে পারলে তারা অনেক ভালো করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’ এমনই আশা শামসুন্নাহারের।

 

কৃষি–উপকরণের ব্যবসায় নারীরা

১০ বছর আগে স্বামীর কৃষি–উপকরণের ব্যবসা যখন লোকসানের মুখোমুখি, তখনই যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মিনা পারভীন হাল ধরেন সেটির। উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসাটিকে আবার দাঁড় করানো। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সামাজিক সব বাধা ডিঙিয়ে একটু একটু করে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন। উপার্জন বাড়িয়েছেন সংসারের। ক্রমাগত বেড়েছে তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতাও।
আরেক উদ্যোক্তা স্বপ্না ছয় বছর ধরে কৃষি–উপকরণের ব্যবসায় জড়িত। খুলনার বটিয়াঘাটায় স্বপ্নার কৃষি–উপকরণের দোকানটি ছিল মূলত তাঁর স্বামীর। স্বামীর ব্যস্ততার কারণে দোকানটির দেখাশোনা স্বপ্নাকেই করতে হতো। বছরখানেক হলো স্বপ্না নিজের উদ্যোগে একই বাজারে কৃষি–উপকরণের আরেকটি দোকান খোলেন।
বরিশালের বাকেরগঞ্জে দরজির দোকান ছিল মোসাম্মৎ খাদিজার। সেই দোকানের আয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন তিনি। বেশ পরিশ্রম করলেও দোকান থেকে তাঁর আয় বেশি ছিল না। তাই বছরখানেক আগে দরজি দোকানের পুঁজিটুকু সম্বল করেই একটি দোকান ভাড়া নিয়ে শুরু করেন কৃষি–উপকরণের ব্যবসা। এখন সেই ব্যবসা থেকে তাঁর মোটামুটি ভালোই আয় হয়, এলাকায়ও বেড়েছে মানমর্যাদা।
মিনা, স্বপ্না, খাদিজা—তিনজনই তাঁদের নিজ নিজ এলাকার বাজারে দোকান দিয়ে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিক্রি করেন কৃষি–উপকরণ। যেমন বীজ, সার ও বালাইনাশক। শুধু বেচাকেনার মধ্যেই কিন্তু তাঁদের কাজ শেষ হয়ে যায় না। প্রতিষ্ঠিত বীজ, সার, বালাইনাশক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, কৃষি–উপকরণের সঠিক ব্যবহার ও সচেতনতামূলক পরামর্শও নিয়মিত দিচ্ছেন কৃষকদের। দায়িত্ব এখানেই শেষ নয়; বীজ কিনে রোপণে সমস্যা, সঠিক মাত্রা জানা নেই, বালাইনাশকের ব্যবহার সম্পর্কে জানা দরকার—সব পরামর্শই দিয়ে থাকেন তাঁরা।
মিনা পারভীনের এলাকায় আগে সাধারণত কেউ বালাইনাশক ব্যবহারের সময় ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট, গ্লাভস, মাস্ক ব্যবহার করতেন না। তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করেছেন। মিনা মনে করেন, কৃষকেরা মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার করলে ফলন বাড়বে, উৎপাদনও হবে আশানুরূপ।
স্বপ্না শুধু কৃষি–উপকরণ বিক্রি বা প্রয়োজনীয় পরামর্শই দেন না, ক্রেতাদের পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও ধারণা দিয়ে থাকেন। তিনি এখন তাঁর এলাকায় অনেক কাজেই নেতৃত্ব দেন। তাঁর দোকান দেখে এখন এলাকায় আরও অনেকে এই ব্যবসায় জড়িত হওয়ার সাহস করছেন। মিনার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা দুই শ থেকে বেড়ে এখন পাঁচ শতে দাঁড়িয়েছে। তাঁর ক্রেতাদের একজন স্মৃতি রাণী বলেন, ‘স্বপ্নার এমন সাজানো দোকান দেখে আমরা উৎসাহ পাই। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা এখানে ভালো জিনিস পাই।’ ব্যবসা ভালো হওয়ায়, স্বপ্না ও তাঁর স্বামী এখন প্রতি মাসে ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমান। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়মিত স্কুল যাচ্ছে।
মিনা, স্বপ্না, খাদিজা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২০টি জেলার খুচরা কৃষি–উপকরণ বিক্রেতাদের সংগঠন এআইআরএনের সদস্য। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের© ফিড দ্য ফিউচার ইনিশিয়েটিভের আওতায় ইউএসএআইডির অর্থায়নে এগ্রো-ইন পুটস প্রজেক্টের (এআইপি) সহযোগিতায় গঠিত। এআইআরএন তিন শ নারী কৃষি–উপকরণ বিক্রেতাসহ সব মিলিয়ে তিন হাজার খুচরা কৃষি–উপকরণ ব্যবসায়ীর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে মিনা, স্বপ্না, খাদিজার মতো আরও ১৪৭ জন নারী কৃষি–উপকরণ বিক্রেতা প্রকল্পটির আওতায় এই পেশায় এসেছেন। নারীদের জন্য সমাজের গৎবাঁধা কাজে না গিয়ে তাঁরা বেছে নিয়েছেন একটি প্রতিযোগিতামূলক পেশা।