banner

শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

এই গরমে রোজার কষ্ট এড়ানোর উপায়

পবিত্রতা আর সাধনার সঙ্গে পালিত হয় রোজা। রোজা শেষে ইফতারির উৎসব মুখর পরিবেশে আয়োজন থাকে হাজার পদের খাবার। স্বাস্থ্যের জন্য ভালো-মন্দ বিচার না করেই খাওয়া চলে ভাজা পোড়া মুখরোচক খাবার। স্বাস্থ্য সম্মত খাবার হলেও অনেকে আবার অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। এতো সব খাবারের ভিড়ে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে ভুলে যায়। তাই এসব খাবার আমাদের পেটে গিয়ে সৃষ্টি করে নানা অনাসৃষ্টি। হতে পারে হজমের সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া এবং পানিশূন্যতা। পরে দেখা যায় ইচ্ছা থাকলেও রোজা রাখা সম্ভব হয় না। অথচ এই গরমে কষ্ট এড়িয়ে সুস্থতার সঙ্গে রোজা পালন করা সম্ভব। সেজন্য..

– রোজা রাখলে সারাদিন আপনাকে সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। ইফতারির খাবারকে মুখরোচক করতে টেস্টিং সল্ট বা সাধারণ লবণের ব্যবহার বেশি চলে। খাবারে ব্যবহৃত অতিরিক্ত লবণ আপনার পানির তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রোজা রাখা আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। তাই খাবারের লবণ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা ভালো।

– এই গরমে রোজার কষ্ট মূলত পানি তৃষ্ণায়। সেই তৃষ্ণাকে একদমই ভুলিয়ে দিতে খেতে পারেন ইসুপগুল-মিছরি শরবত, আখের গুড়ের শরবত অথবা ঘৃতকুমারির-তোকমারির শরবত। সেহরিতে একগ্লাস শরবত আপনাকে সারাদিনে পানি পিপাসার কথা একবারও মনে করতে দেবে না।

– ইফতারিতে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। সারাদিন অভুক্ত পেটে এসব খারার গিয়ে হজমের সমস্যা করে। তাই যতদুর সম্ভব তেলচর্বি ও ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলা ভালো। হালকা মিষ্টি বা ঝাল জাতীয় রান্না খাবার হতে পারে আপনার আদর্শ ইফতারি।

– পানিশূন্যতা দুর করতে বেশি চিনির শরবত অথবা সফট ড্রিঙ্কসের ওপর নির্ভর না করাই ভালো। ঘরে তৈরি লেবু, বেল অথবা অন্য কোনো শরবত খেতে পারেন। আম, তরমুজ, শশা, আনারসের জুস খাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় লেবুর শরবত একদম খালি পেটে খাওয়া উচিৎ নয়। সামান্য কিছু খেয়ে তবেই খেয়ে নিন প্রাণ চাঙা করা একগ্লাস লেবুর শরবত।

– ইফতার এবং সেহরিতে যথেষ্ট ফল ও শাক সবজি খেতে হবে। তাজা শাক-সবজি, মাছ ও ফল আপনার স্বাভাবিক হজমে দারুণভাবে সহায়তা করবে। দেহের পানিশূন্যতা দূর করে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেবে।

– ইফতারি বা সেহরিতে যতটা সম্ভব মাংস এড়িয়ে চলা ভালো। মাংস যদি খেতেই হয় তবে লাল মাংস বাদ দেয়া উচিৎ।

 

সব নবিদের যুগেই রোজা প্রচলিত ছিল

রোজা সব যুগেই প্রচলিত ছিল। পূর্ববর্তী বিভিন্ন ধর্মে রোজা পালনের নিয়ম ছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আদিমানব সর্বপ্রথম নবী হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবী-রাসুলই রোজা পালন করেছেন। রোজা শুধু নবী করিম (সা.)-এর প্রতি ফরজ করা হয়নি, পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের প্রতিও ফরজ করা হয়েছিল।

বছর ঘুরে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে আবারও হাজির রমজানুল মোবারক। পুরো একমাস রোজা রাখার সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ব্যাকুল হয়ে উঠবে বিশ্বের সকল মুসলমান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘ওহে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পার।’ (সুরা আল-বাকারা : আয়াত-১৮৩)

রোজা সব যুগেই প্রচলিত ছিল। পূর্ববর্তী বিভিন্ন ধর্মে রোজা পালনের নিয়ম ছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আদিমানব সর্বপ্রথম নবী হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবী-রাসুলই রোজা পালন করেছেন। রোজা শুধু নবী করিম (সা.)-এর প্রতি ফরজ করা হয়নি, পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের প্রতিও ফরজ করা হয়েছিল।

হজরত নূহ (আ.)-কে ‘দ্বিতীয় আদম’ বলা হয়। তাঁর যুগেও সিয়াম পালন করা হয়েছিল। হজরত আদম (আ.) থেকে হজরত নূহ (আ.) পর্যন্ত চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিজ’-এর রোজা ফরজ ছিল। তাফসিরে ইবনে কাসিরে বর্ণিত আছে, হজরত নূহ (আ.)-এর যুগে প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা পালনের বিধান ছিল। তাফসিরবিদ হজরত কাতাদাহ (র.) বলেন, ‘মাসে তিন দিন রোজা রাখার বিধান হজরত নূহ (আ.)-এর যুগ থেকে শুরু করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।’

কেউ কেউ লিখেছেন, মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর যুগে ৩০টি রোজা ছিল। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পর আসমানি কিতাব ‘তাওরাত’প্রাপ্ত প্রসিদ্ধ নবী হজরত মুসা (আ.)-এর যুগেও সিয়াম ছিল। হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর কাছ থেকে তাওরাতপ্রাপ্তির আগে ৪০ দিন পানাহার ত্যাগ করেছিলেন। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বর্ণিত আছে, হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে ৪০ দিন পানাহার না করে কাটিয়েছিলেন। তাই ইহুদিরা সাধারণভাবে হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসরণে ৪০টি রোজা রাখা ভালো মনে করত। হজরত দাউদ (আ.)-এর যুগেও রোজার প্রচলন ছিল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হজরত দাউদ (আ.)-এর রোজা। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন এবং এক দিন বিনা রোজায় থাকতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) অর্থাৎ হজরত দাউদ (আ.) অর্ধেক বছর রোজা রাখতেন এবং অর্ধেক বছর বিনা রোজা থাকতেন। প্রাচীন খ্রীস্টানরা বুধবার, শুক্রবার ও শনিবারে রোজা রাখত। তারা তাদের ওপর আপতিত বিপদ মুক্তির জন্য রোজা রাখত। চতুর্থ খ্রীষ্টাব্দের শুরুতে খ্রীস্টানদের ওপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। সে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য নবী মুসা (আ.)-এর অনুকরণে তারা ৪০ দিনব্যাপী বড় রোজা রাখত।

ইসলামের সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের আগে আরবের মুশরিকদের মধ্যেও সিয়ামের প্রচলন ছিল। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা অবস্থায় পেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজকে তোমরা কিসের রোজা করছ?’ তারা বলল, ‘এটা সেই মহান দিন যেদিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর কওমকে (বনী ইসরাইল) মুক্ত করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে নীল দরিয়ায় ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ফলে শুকরিয়াস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) ওই দিনে রোজা রেখেছিলেন, তাই আমরা আজকে রোজা করছি।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাদের অপেক্ষা হজরত মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিন সওম পালন করেন এবং সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) পরিশেষে মাহে রমজানের সিয়াম যখন ফরজ হয় তখন তিনি আশুরার রোজা ছেড়ে দেন। (বুখারি ও মুসলিম) ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিন দিন রোজা রাখার বিধান ছিল। পরে দ্বিতীয় হিজরি সালে উম্মতে মুহাম্মদির ওপর মাহে রমজানের রোজা ফরজ হলে তা রহিত হয়ে যায়।

ফয়জুল আল আমীন

 

ইফতারিতে মজাদার খাসির হালিম

ইফতারিতে মিষ্টি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি ঝাল খাবারের গুরুত্ব থাকে সমান হারে। আর তাইতো ইফতারিতে নিয়মিত স্থান করে নেয় সুস্বাদু হালিম। রুটি, পরোটার সঙ্গে বা শুধু খেতে হালিমের জুড়ি নেই। মজাদার হালিম খেতে রোজ রোজ খাবারের দোকানের ওপর নির্ভর করতে হয়। অথচ, চাইলে খুব সহজে নিজেই রান্না করে নিতে পারেন। দেখে নিতে পারেন মজাদার খাসির হালিম রান্নার উপায়।

যা যা লাগবে

খাসির মাংস ১ কেজি, মুগ ডাল আধা কাপ, মসুর ডাল আধা কাপ, বুটের ডাল আধা কাপ, খেসারি ডাল আধা কাপ, মাষ কলাই ডাল আধা কাপ, আদারসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, দারুচিনি-এলাচ ৮টি, তেজপাতা ২টি, পোলাও চাল আধা কাপ, গমের গুঁড়া আধা কাপ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, আদা কুচি ২ টেবিল চামচ, ধনে পাতা ও কাঁচামরিচ কুচি ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস পরিমাণমতো।

যেভাবে করবেন

প্রথমে খাসির মাংস আদা, রসুন, দারুচিনি, এলাচ, হলুদ, মরিচ ও অন্যান্য মসলা দিয়ে ভালো করে রান্না করতে হবে। সব ডাল একসঙ্গে আলাদা পাত্রে সেদ্ধ করে রান্না করা মাংসের মধ্যে দিয়ে আবার কিছুক্ষণ রান্না করুন। এবার পোলাও চাল ও গমের গুঁড়া দিয়ে আবার কিছুক্ষণ রান্না করুন। পরিবেশনের সময় আদা কুচি, লেবুর রস, পেঁয়াজ ওপরে ছড়িয়ে দিলেই হল

 

বিশ্বের ৩৬ নম্বর ক্ষমতাধর নারী শেখ হাসিনা

ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৩৬ নম্বর ক্ষমতাধর নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ গতবছর এ তালিকায় শেখ হাসিনার স্থান ছিল ৫৯ নম্বরে। সোমবার এ তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ব্যবসাভিত্তিক এ ম্যাগাজিনটি।

ওই তালিকায় এবারো জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলেই বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর নারী। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।

তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছেন গতবার চতুর্থ স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জ্যানেট ইয়েলেন। আর চতুর্থ স্থানে চলে গেছেন গতবছর তৃতীয় স্থানে থাকা মাইক্রোসফটের মালিক বিল গেইটসের স্ত্রী মেলিন্ডা গেইটস।

আরো মজার বিষয় হচ্ছে এবার শীর্ষ দশে ঠাঁই হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। তিনি এক ধাক্কায় ১৩ নম্বরে নেমে গেছেন। অবশ্য আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিনা লগার্ড এবারও ষষ্ঠ স্থানেই আছেন।

ফোর্বস জানিয়েছে, এই ১০০ নারী এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্বের অর্ধেক মানুষকে প্রভাবিত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে ফোর্বস বলেছে, ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই নারী।

রাজনীতি, ব্যবসা, প্রযুক্তি ও সেবা খাতে প্রতিনিধিত্বকারী ২৯ দেশের নারীরা আছেন ১০০ জনের এ তালিকায়। যার ৫১ জনই যুক্তরাষ্ট্রের, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নয়জন চীনের। এছাড়া তালিকায় ৩২ জন প্রধান নির্বাহী, ১২ জন বিশ্বনেতা ও ১১ জন বিলিয়নিয়ার রয়েছেন।

 

ওরা নারী অগ্রযাত্রার প্রতীক

দিনাজপুর অঞ্চলের গ্রাম বাংলার সড়কে এটা কোনো শোভাযাত্রা বা সাইকেল র‌্যালি নয়। কোনো এনজিওর কর্মসূচিও নয়। এটা নারী অগ্রযাত্রার এক মূর্ত প্রতীক। এ দৃশ্যই বলে দিচ্ছে নারীরা আর পিছিয়ে নাই। তারাও আজ পারবে নিজেরাই সামনে এগিয়ে যেতে।

এটা প্রতিনিয়তই স্কুল ছুটির পর ফিরে যাওয়া বাংলার গ্রামীণ পথের দৃশ্য। দিনাজপুরের সদর, বিরল, বীরগঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কেই এভাবেই স্কুল যেতে দেখা যায় মেয়েদের। দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা দলবেঁধে নিজেরাই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসছে।

স্কুল ছুটির সময় একসঙ্গে বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় মনে হতে পরে এটা হয়তো সাইকেল র‌্যালি। সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ প্রত্যয় নিয়ে তারা প্রতিনিয়তই এগিয়ে যাচ্ছে।

এ অদম্য শিক্ষার্থীরা কেউ ১ থেকে ৯ কিলোমিটার পর্যন্ত সাইকেলেই স্কুলে যাওয়া আসা করে। যদিও বৃষ্টি এলে স্কুলে আসতে সমস্যা হয়। সাইকেল না হলে পায়ে হেঁটেই আসতে হতো অথবা কিছুটা পথ হেঁটে এসে হয়তো রিকশা-অটোভ্যানে আসতে হতো। কিন্তু স্বাধীনভাবে নিজে সাইকেল চালিয়ে এলে সময় ও সুবিধা দুটোই পাওয়া যায়।

বিরলের অকড়া গ্রাম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী কামরুন নাহার প্রায় ৮কিলোসিমটার পথ সাইকেল চালিয়ে বিরল পাইলট হাইস্কুলে আসে। এই স্কুলে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরের মহেশপুর গ্রাম থেকে আসে ৫ জন, পুড়িয়া গ্রাম থেকে ৬ জন। এভাবে দূরের গ্রাম থেকে বিভিন্ন শ্রেণির ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রী আসে একইভাবে।

এ ব্যাপারে কামরুজ্জামানের কন্যা কামরুন নাহার জানায়, আমাদের আসতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে বৃষ্টি-ঝড়ে সমস্যাই পড়তে হয়।

এ ব্যাপারে বিরলের রঘুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হোসেন আলী বলেন, ‘বর্তমানে এ স্কুলে শতকরা ৩৫ ভাগ মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। যখন শতকরা ৮০ ভাগ মেয়েরা সাইকেলিং করে স্কুলে যাতায়াত করবে তখন মনে করবো মেয়েরা লেখাপড়া থেকে সকল দিকে এগিয়ে গেছে তারই প্রতিফলন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি যে সকল মেয়েরা সাইকেলিং করে স্কুলে যাতায়াত করে তাদের মাঝে কোনো প্রকার জড়তা থাকে না। তারা অনেকটা অগ্রগামী হয়। তাই আমি সকল ছাত্রীদের সাইকেল নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কেননা বাইরে সামাজিকভাবে মেয়েদের সাইকেলিংয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।  তবে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্তেও সাইকেল নিয়ে আসতে পারে না। এছাড়াও রাস্তায় কোনো প্রকার সমস্যা হলে কিংবা কেউ বিরক্ত করলে জানার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিব বলে তাদের জানিয়েছি।’

দেশের সার্বিক উন্নতি হলেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও নারীরা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। এখনও অনেক গ্রামে ভালো রাস্তা-ঘাট নেই, শিশুরাও স্কুলে যেতে পারছেন না। কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে হচ্ছে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে। ধর্মীয় বাধা বা মোল্লাদের ভয়-ভীতির কমে গেছে। আজ দিন পাল্টেছে নারীরা নিজেদের জীবনের উন্নতি করতে চায়। চায় পুরুষদের পাশাপাশি সকল ক্ষেত্রে অবদান রাখতে। আর ঘরে থাকতে তারা চায় না।
তাই তারা বেরিয়ে পড়েছে শিক্ষার আলো নিতে, বিশ্বকে জানতে। সমাজের পরিবর্তন ঘটিয়ে নারীদের ন্যায্য সম্মানসহ সকল পেশায় দক্ষতার ছাপ রাখতে।

 

দুর্যোগ মোকাবিলায় নারীরা পিছিয়ে

বরগুনা সদরের পাথরঘাটা ইউনিয়নের পাখি বেগম ফিরে গেলেন ২০০৭ সালের সিডরের দিনে। এত বড় বন্যা হবে তিনি বুঝতে পারেননি। টেলিভিশনে খবর দেখে পাখি বেগমের ভাই চট্টগ্রাম থেকে বোনকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু স্বামী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করেননি সেদিন কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার কথা বললে চৌকিতে শুয়ে থাকা স্বামী গালাগালও করেন। তবে একসময় পানির তোড়ে পাখি বেগম ছোট মেয়ের হাত ধরে সাঁতরে বের হন। স্বামী ও অন্য ছেলেমেয়েরাও বের হতে পেরেছিলেন। তবে পানির তোড়ে ঘর, ১৪টি ছাগল, পুকুরের মাছ—সবই ভেসে যায়।
পাখি বেগম শুধু অচেনা ভিটেতে ফিরে আসেন, তবে দমে যাননি। স্থানীয় এক সংগঠনের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সেলাই মেশিন পান। বাজার থেকে টুকরা কাপড় কিনে শুরু করেন ব্যবসা। পাথরঘাটার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের এই নারীর অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হলেও তিনি তাঁর বড় মেয়েকে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন। আরেক মেয়ে স্নাতক পড়ছেন। ছেলেকে পড়িয়েছেন এসএসসি পর্যন্ত। শুধু তা-ই নয়, পাখি বেগম বর্তমানে সুন্দরবন নারী দলের সভাপতি। তিনি গ্রামের নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে দুর্যোগ মোকাবিলার কথা বলেন।
এ ধরনের প্রশিক্ষণে আসলেই কোনো লাভ হয় কি না জানতে চাইলে পাখি বেগম দৃঢ়ভাবেই বললেন, ২০০৭ সালের পর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ও পরে তিনি যে বিষয়গুলো শিখেছেন, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। অন্য ব্যক্তিরাও এখন অনেক সচেতন। আর পাখি বেগমের ভাষায় বড় পরিবর্তন হচ্ছে, ‘স্বামীও এখন আমার কথা শোনে। আগে বাড়ির বাইরে যাইতে পারতাম না, আর এখন ঢাকা পর্যন্ত আসতে পারছি।’
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘মিজারিং রেসিলিয়েন্স: উইমেনস পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কথা হয় পাখি বেগমের সঙ্গে। এই সভায় শুধু পাখি বেগম নন, পাথরঘাটার পদ্মা নদী নারী দলের সভাপতি শাহিদা, ফরিদপুরের নর্থ চ্যানেল চরের দক্ষ ধাই হিসেবে কাজ করা সূর্য বেগম, ফরিদপুরেরই রাশেদা বেগম, পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে আসা লাইলী বেগমসহ কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হয়। অ্যাকশনএইডের সহায়তায় স্থানীয় বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে তাঁরা এখন জানেন, কীভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। এই নারীরাই অ্যাকশনএইড পরিচালিত ‘উইমেন রেসিলিয়েন্স ইনডেক্স: কমিউনিটি সিচুয়েশন’ বিষয়ক পরিচালিত নতুন জরিপেও অংশ নেন।
গতকাল এই জরিপের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। জরিপ অনুযায়ী, নারীদের যাতায়াতসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে দুর্যোগ মোকাবিলায় নারীরা পুরুষের তুলনায় ২৪ শতাংশ কম সক্ষমতাসম্পন্ন। অর্থনৈতিক, সামাজিক, অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সূচকে নারীর স্কোর ৪০ আর পুরুষের স্কোর ৫৫।
সভার বক্তাদের মতে, দুর্যোগের সময় নারীরা নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তা আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অ্যাকশনএইড এর আগে ‘সাউথ এশিয়ান উইমেনস রেসিলিয়েন্স ইনডেক্স’ শীর্ষক আরেকটি জরিপ চালায়, সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার (আফগানিস্তান ছাড়া) দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। দক্ষিণ এশিয়ায় পরিচালিত জরিপকে সামনে রেখেই বাংলাদেশে পটুয়াখালী, বরগুনা ও ফরিদপুর জেলার চারটি ইউনিয়নে বর্তমান জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নেন ২৬১ জন, যাঁদের মধ্যে ১৩২ জন ছিলেন নারী। ৩৬টি প্রশ্নের ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এতে উঠে এসেছে, ৫৩ শতাংশ নারী দুর্যোগের সংকেত পাওয়ার পরও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেন না।
গতকাল সভায় জাতিসংঘের নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন সালমা খান বলেন, নির্যাতনের শিকার নারীকে তথ্য দেওয়া হলেও তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন কি না, তা-ও একটি বড় প্রশ্ন।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ফারাহ্ কবির বলেন, দুর্যোগের সময় নারীর চিন্তা থাকে পরিবার ও সন্তানকে নিয়ে। নিজের জন্য আলাদা করে চিন্তা করার অবকাশ নেই। তবে নারীর এ অবস্থান স্বীকৃতি পায়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক সলিমুল হক, অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাশ্বতী বিপ্লব আলোচনায় অংশ নেন।

 

দেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি

স্বামী ও দুই সন্তানসহ সেলিনা বেগম রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় বাস করতেন। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে স্বামীর ইচ্ছায় তাঁকে গ্রামের বাড়ি ফিরে যেতে হয়। বাধ্য হয়ে গ্রামে এই ফিরে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি ২৭ বছরের এই গৃহবধূ। তাই বেছে নেন আত্মহননের পথ। এক সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করে নিজে ঝুলে পড়েন ঘরের আড়ার সঙ্গে। ঘটনাটি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ভান্ডারদহ গ্রামে ঘটেছে। (সূত্র: প্রথম আলো)।
প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো নারী আত্মহত্যা করছেন। শিশুকন্যা থেকে বাদ যাচ্ছে না ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাও। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘প্রিভেনটিং সুইসাইড: আ গ্লোবাল ইমপেরাটিভ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই নারীদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি আত্মহত্যা করে থাকে। অথচ বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি আত্মহত্যা করে থাকে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও নারীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পুরুষ আত্মহত্যা করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১২ সালে ১০ হাজার ১৬৭ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে, যার মধ্যে ৫ হাজার ৭৭৩ জন নারী। অন্যদিকে ৪ হাজার ৩৯৪ জন পুরুষ আত্মহত্যা করেছে। বিশ্বে আত্মহত্যায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। ২০১৪ সালে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিবছর বিশ্বে আট লাখের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। আর প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষ যে কয়টি কারণে মারা যায়, তার মধ্যে আত্মহত্যা দ্বিতীয়। বিশ্বে নারীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ পুরুষ আত্মহত্যা করে। তবে এই হার অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশে তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশে নারীদের বেশি মাত্রায় আত্মহত্যার কারণ হিসেবে নির্যাতন, সহিংসতা, নিরাপত্তাহীনতা, অবহেলাকেই চিহ্নিত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে যত নারী আত্মহত্যা করেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৮৬ ভাগই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল হোসেন ঢালী বলেন, ‘আমাদের সামাজিক কাঠামোটি এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে নারীকে সবকিছুর জন্য “দোষারোপ” করা হয়। নারীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও থাকে না অধিকাংশ সময়। পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশের কারণে নারীর কষ্ট, অপমান বা মানসিক চাপ কমানোর তেমন কোনো সুযোগ নেই।’
তবে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা চাপ সামলানোর কৌশল না জানা অথবা এ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে আত্মহত্যা হয় বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন কাউসার। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীকে স্বাভাবিকভাবেই বেশি মাত্রায় অবদমন করাসহ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয়।’ আত্মহত্যা অবশ্যই প্রতিরোধ করা সম্ভব, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘স্কুল পর্যায় থেকেই একটি বাচ্চাকে শেখাতে হবে, কী করে বিভিন্ন রকম চাপ সামলাতে হবে, নিজের রাগ বা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বুঝতে হবে জীবনের থেকে কোনো কিছুই মূল্যবান নয়। নিজেকে ভালোবাসাতে হবে।’
আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবারের পাশাপাশি ভিকটিমের নিজের সচেতনতাও খুব জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নারীনেত্রী মালেকা বানু। কাউন্সেলিংই এর অন্যতম সমাধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেসব নারী আত্মহত্যা করে, তারা কোনো না কোনো ট্রমায় ভুগে থাকে। অথচ পরিবার সে বিষয়টি আমলে নেয় না। তাদের কাউন্সেলিং করানো হয় না। আত্মহত্যা বন্ধ করতে সরকারসহ সবাইকে কাজ করতে হবে।’