banner

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর হক

একজন স্ত্রী যেমন স্বামী ছাড়া পরিপূর্ণ নন তেমনি একজন স্বামীও স্ত্রী ছাড়া পরিপূর্ণ নন। সৃষ্টিগতভাবেই আল্লাহ মহান এদের একজনকে অপরজনের সহায়ক এবং মুখাপেক্ষী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। একজন আদম দ্বারা কখনোই পরিপূর্ণতা লাভ করত না এই ধরাধাম। একজন হাওয়ার আগমন ঘটিয়েছিলেন তাই আল্লাহ মহান। একজন স্ত্রীর দায়িত্বে স্বামীর যেমন কিছু হক বা অধিকার রয়েছে, একজন স্বামীর দায়িত্বেও তেমনি স্ত্রীর কিছু হক বা অধিকার রয়েছে।

স্ত্রী স্বামীরই অংশ
সূরা নিসার যে আয়াতটি বিবাহের খোতবায় তেলাওয়াত করা হয়, সে আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, দেখ! তুমি ও তোমার স্ত্রীর মাঝে জন্মগতভাবে কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহ্পাক হাওয়া আলাইহাস সালামকে আদম আলাইহিস সালাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাই মহিলা পুরুষের অংশ। তোমার শরীরের যে কোনো স্থানে আঘাত লাগলে তুমি কষ্ট পাও। আঘাত যেন না লাগে, সে ব্যবস্থা কর। সে কারণে তোমার স্ত্রীর প্রতিও লক্ষ রাখবে, সে-ও তোমার শরীরের একটি অংশ। ইজাব কবুলের মাধ্যমে সে তোমার কাছে এসেছে, তুমি তোমার শরীরের সঙ্গে যেমন ব্যবহার কর, স্ত্রীর সঙ্গেও সেরূপ ব্যবহার কর। তুমি স্ত্রীর কাছ থেকে যেমন মহব্বতপূর্ণ মুলায়েম ও ভক্তিপূর্ণ কথা আশা কর, স্ত্রীর সঙ্গে তুমিও এমন কথা বল যেন তোমার কথা থেকে মহব্বত ও ভালোবাসা টপকে পড়ে। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ইসলামের প্রতিটি হুকুম স্বামী-স্ত্রী উভয়ই মেনে চলবে।

মহব্বত ও ভালোবাসার কারণে সীমা লক্সঘন করতে পারবে না এবং ঘৃণার কারণেও সীমা লক্সঘন করতে পারবে না। মোটকথা স্বামী-স্ত্রী একে অপরের অঙ্গস্বরূপ। সুতরাং একে অপরের হকের প্রতি লক্ষ রাখবে, তাতেই দাম্পত্যজীবন সুখের হবে। পুরুষদেরকে মহিলাদের হক আদায় করতে হবে। মহিলা বলতে শুধু স্ত্রী নয়। স্ত্রীর হক তো আছেই, স্ত্রীর ওপর স্বামীর যেসব হক রয়েছে, তারচেয়ে বেশি হক রয়েছে স্বামীর ওপর স্ত্রীর। স্বামী আগে স্ত্রীর হক আদায় করবে, তারপর স্ত্রী স্বামীর হক আদায় করবে। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, স্বামী স্ত্রীর হক আদায় করলেই স্ত্রী স্বামীর হক আদায় করে। এমনিভাবে পিতা-মাতার ওপরও মেয়েদের হক রয়েছে। কিন্তু পিতা-মাতা তা যথাযথভাবে আদায় করে না। বিশেষ করে মীরাসের ব্যাপারে একেবারেই সীমা লক্সঘন করে থাকে। মৃত্যুর সময় সব অর্থ-সম্পদ ঘরবাড়ি সবই ছেলেদেরকে লিখে দেয়; মেয়েদের কিছুই দেয় না। এটি জঘন্যতম অপরাধ। আল্লাহপাক এটি ক্ষমা করবেন না। জনৈক সাহাবি একদিন তার এক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, হুজুর! আমি দু’টি বিবাহ করেছি, এ হলো আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। আমি এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছি, কোন সময় আল্লাহর ডাক এসে যায় জানা নেই। কাজেই এ ছেলেকে আমি কিছু অতিরিক্ত সম্পদ দিতে চাই। কিন্তু আমার স্ত্রী বলছে, এ ব্যাপারে আপনাকে সাক্ষী বানাতে। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন_ আচ্ছা, তোমার কি আরও সন্তান আছে? সাহাবি বললেন, জী হ্যাঁ। এবার নজীবী বললেন : তাদেরকেও দিয়েছ? সাহাবি জবাব দিলেন, জী না। এ কথা শুনে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা রাগে লাল হয়ে যায়। তারপর সাহাবির প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, তুমি বড় জালেম। আমি জালেমের কাজের জন্য সাক্ষী হতে পারব না। আর বর্তমানে মেয়েদের সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা হয়। অনেক সময় মেয়ে বা বোনকে ভয় দেখিয়ে অথবা সামান্য টাকা-পয়সা দিয়ে তাদের সম্পদ এক প্রকার বল প্রয়োগ করে নিয়ে নেওয়া হয়। এমনিভাবে দেখা যায়, পিতা নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মেয়েকে অথর্বের কাছে বিবাহ দিয়ে দেয়। কিন্তু পিতার ওপর দায়িত্ব ছিল অর্থকড়ি যেমনই হোক, দীনদার ছেলে দেখে বিবাহ দেওয়া।

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য
সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গিনী স্ত্রীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।

১. স্বামীর আনুগত্য :
স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। তবে যে কোন আনুগত্যই নয়, বরং যেসব ক্ষেত্রে আনুগত্যের নিম্ন বর্ণিত তিন শর্ত বিদ্যমান থাকবে।

(ক) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহর বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়।

(খ) স্ত্রীর সাধ্য ও সামর্থ্যরে উপযোগী বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্বারোপ করেন না।

(গ) যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা।

আনুগত্য আবশ্যক করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।’ [বাকারা : ২২৭]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।’ [নিসা : ৩৪] উপরন্তু এ আনুগত্যের দ্বারা বৈবাহিক জীবন স্থায়িত্ব পায়, পরিবার চলে সঠিক পথে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর আনুগত্যকে এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন— যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে,নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে। [আহমাদ : ১৫৭৩]

স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহর বিধানের অনুসরণ করা। স্ত্রীর মননশীলতা ও পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সত্য-কল্যাণ ও উত্তম চরিত্রের উপদেশ প্রদান করা কিংবা হিতাহিত বিবেচনায় বারণ করা।উপদেশ প্রদান ও বারণ করার ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ ও উন্নত মননশীলতার পরিচয় দেয়া । এতে সানন্দ চিত্তে ও স্বাগ্রহে স্ত্রীর আনগত্য পেয়ে যাবে।

২. স্বামী-আলয়ে অবস্থান:
নেহায়েত প্রয়োজন ব্যতীত ও অনুমতি ছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়া অনুচিত।মহান আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নারীদের ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীদের সম্বোধন করে বলেন—সকল নারীই এর অন্তর্ভুক্তঃ ‘তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না। ’ [আহজাব : ৩৩]

ত্রীর উপকার নিহিত এবং যেখানে তারও কোন ক্ষতি নেই, এ ধরনের কাজে স্বামীর বাধা সৃষ্টি না করা। যেমন পর্দার সাথে, সুগন্ধি ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে বারণ না করা। ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর বান্দিদেরকে তোমরা আল্লাহর ঘরে যেতে বাধা দিয়ো না। [বুখারী: ৮৪৯ ]

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা: এর স্ত্রী যয়নব সাকাফী রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলতেন: তোমাদের কেউ মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছে করলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। [মুসলিম : ৬৭৪]

৩. নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা
স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’ [বুখারী: ২৫৪৬]

৪. নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা
পূর্বের কোন এক আলোচনায় আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদিস এ মর্মে উল্লেখ করেছি যে, নিজেকে কখনো পরীক্ষা কিংবা ফেতনার সম্মুখীন না করা।

৫. স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া
হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমন ভাই-বেরাদার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’ [মুসলিম : ২১৩৭]

স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ, রোজা নফল—আনুগত্য ফরজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়। [বুখারী : ৪৭৬৯]

স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।

১. দেন মোহর : নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংবা অন্য কারো নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।’ [নিসা : ৪]

২. ভরন পোষণ : সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর মর্তবার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে।অনুরূপ ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।” [তালাক : ৭]

৩. স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়া-পরবশ থাকা : স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।” [বুখারি]

৪. স্ত্রীর ব্যাপারে আত্মমর্যাদাশীল হওয়া : হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যতœ সহকারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেনঃ ‘আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চে’ বেশি ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে আসিনি।’ [বুখারী:৪৭০৬]

নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ। আমি তার চে’ বেশি আত্মসম্মানবোধ করি,আবার আল্লাহ আমারচে’ বেশি অহমিকা সম্পন্ন।’ [মুসলিম : ২৭৫৫]

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। হাদিসে এসেছেঃ ‘দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ [দারামি : ৩৩৯৭]

মানুষের সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদার বিষয় নিজের পরিবার। এর ভেতর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্বীয় স্ত্রী। অতঃপর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন এবং অধীনস্থগণ। পরিশেষে নির্ঘাত বাস্তবতার কথা স্বীকার করে বলতে হয়, কোন পরিবার সমস্যাহীন কিংবা মতবিরোধ মুক্ত নয়। এটাই মানুষের প্রকৃতি ও মজ্জাগত স্বভাব। এর বিপরীতে কেউ স্বীয় পরিবারকে নিষ্কণ্টক অথবা ঝামেলা মুক্ত কিংবা ফ্রেশ মনে করলে, ভুল করবে। কারণ, এ ধরাতে সর্বোত্তম পরিবার কিংবা সুখী ফ্যামিলির একমাত্র উদাহরণ আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিবার ও ফ্যামিলি। সেখানেও আমরা মানবিক দোষ-ত্রুটির চিত্র দেখতে পাই, অন্য পরিবারের পবিত্রতা কোথায় ?

জ্ঞানী-গুণীজনের স্বভাব ভেবে-চিন্তে কাজ করা, ত্বরা প্রবণতা পরিহার করা, ক্রোধ ও প্রবৃত্তিকে সংযমশীলতার সাথে মোকাবিলা করা।কারণ, তারা জানে যে কোন মুহূর্তে ক্রোধ ও শয়তানের প্ররোচনায় আত্মমর্যাদার ছদ্মাবরণে মারাত্মক ও কঠিন গুনাহ হয়ে যেতে পারে।যার পরিণতি অনুসূচনা বৈকি? আবার এমনও নয় যে, আল্লাহ তাআলা সমস্ত কল্যাণ ও সুপথ বান্দার নখদর্পে করে দিয়েছেন। তবে অবশ্যই তাকে মেধা, কৌশল ও বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে।

একজন স্বামীর ওপর স্ত্রীর হক বা অধিকার
১. সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণ-পোষণ ও খরচাদি দিতে কোনো প্রকার অবহেলা না করা। ২. স্ত্রীকে দ্বীনি মাসআলা-মাসায়িল শিক্ষা প্রদান করা। ৩. ভালো কাজের প্রতি উদ্ভূত করা। ৪. যাদের সঙ্গে দেখা দেয়ার ব্যাপারে ইসলামের অনুমতি রয়েছে, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ প্রদান করা। ৫. আÍীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ প্রদান করা। ৬. কোনো প্রকার ভুল বা অসাবধানতা হলে ধৈর্য ধারণ করা। ৭. শাসন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা। ৭. মহর আদায় করা। ৮. ইসলামি শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে স্ত্রীর মন জয় করা। ৯. একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। ১০. নির্যাতন না করা।

যারা তাদের স্ত্রীর কাছে উৎকৃষ্ট…
নবিজি [সা.] বলেছেন, তোমাদের মধ্যে তারাই উৎকৃষ্ট, যারা তাদের স্ত্রীর কাছে উৎকৃষ্ট এবং আপন পরিবার-পরিজনের প্রতি স্নেনশীল। [তিরমিজি শরিফ] অপর এক হাদিসে রাসুল [সা.] বলেছেন, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর কষ্টদায়ক আচরণে ধৈর্য ধারণ করবে, মহান আল্লাহ তাকে হজরত আইয়ুব (আ.)-এর সমান ‘সওয়াব’ দান করবেন। হজরত আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসুল [সা.] বলেছেন, হে মানব জাতি! স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার ব্যাপারে আমার হুকুম মান্য কর। পাজরের হাড় থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, স্বভাবতই তারা বাঁকা। যদি তুমি বাঁকা হাড়কে শক্তির দ্বারা সোজা করতে যাও, তবে তা ভেঙে যাবে। তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দাও, সব সময় বাঁকাই থাকবে। এজন্য আমার শেষ নির্দেশ হিসেবে কবুল কর, স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। [বোখারী ও মুসলিম] স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের আপন করে নিতে হবে। স্বামীর কাছ থেকে যখন কোনো স্ত্রী ভালোবাসা পাবে, তখন সে তার সবটুকু স্বামীর জন্য উজাড় করে দিবে। রাসুল [সা.] বলেছেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর উভয়ে যখন একে অপরের দিকে ভালোবাসার নজরে তাকাবে, মহান আল্লাহ তাদের দিকে রহমতের নজরে তাকাবেন।’

মাওলানা মিরাজ রহমান

 

সরকার কর্তৃক দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা : কী বলে ইসলাম

অনেক সময় কোনো পণ্যের মূল্য দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে মূল্যের একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে তার অতিরিক্ত মূল্য আদায় করার উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। একে আরবীতে তাসয়ীর এবং বাংলায় মূল্য নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েয কিনা?

অনেক সময় কোনো পণ্যের মূল্য দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে মূল্যের একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে তার অতিরিক্ত মূল্য আদায় করার উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। একে আরবীতে তাসয়ীর এবং বাংলায় মূল্য নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েয কিনা?

শরীয়তের মূল বিধান হচ্ছে, যে কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারটি ক্রেতা ও বিক্রেতার অভিপ্রায়ের উপর ছেড়ে দেয়া হবে। বেশি দাম হোক বা কম দাম হোক, তাদের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। কিছু কিছু পণ্যের কোয়ালিটি তথা গুণগত মানের তারতম্যের কারণেও মূল্যের মধ্যে তারতম্য ঘটে। এজন্য শরীয়ত রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মূল্য নিয়ন্ত্রণের পক্ষে নয়।

কিন্তু কিছু কিছু অবস্থায় বণিকশ্রেণী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যে সীমাতিরিক্ত বৃদ্ধি করে জনগণকে কষ্টে ফেলেন। বরং এখনতো মুনাফাখোরের লোভ পরিস্থিতিকে এতটাই জঘন্য করে ফেলছে যে, রীতিমত জনগণকে লুণ্ঠন করার চক্রান্ত চলছে। হঠাৎ কিছু পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে যাচ্ছে। অগ্নিমূল্যের এ বাজারে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে যৎসামান্য বেতন দিয়ে মাস কাটানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এধরনের পরিস্থিতির কারণে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারের জন্য এ অনুমতি রয়েছে যে, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ, সমাজ-বিজ্ঞান বিশ্লেষক ও দ্বীনদার বোধসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে পরামর্শ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করার উপর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে; যাতে করে জনগণকে কষ্ট থেকে উদ্ধার করা যায়।
তথ্যসূত্র : আবু দাউদ : ২/২৪৪, তিরমিযী : ২/৫৩, হিদায়াহ, কিতাবুল বুয়ূ

মাওলানা আবদুল্লাহ আল ফারুক
লেখক : আলেম, লেখক ও বহু গ্রন্থ অনুবাদক

 

প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ছাড়াই ক্যারিয়ার গড়ুন ৬টি উপায়ে

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এবং ডেভলপমেন্টের গবেষণা অনুযায়ী মাত্র ৪৬% ছাত্র-ছাত্রী তাদের পড়শোনা শেষ করেন। গবেষণায় আরও দেখা যায়, ২৫ থেকে ৩২ বছর বয়সী এইসব গ্রাজুয়েশন শেষ করতে না পারা ছাত্ররা আবার আয়ও করছে। আসলে আপনি যদি কাজ করতে চান তাহলে কাজ পাওয়া অসম্ভব নয়। আপনার ডিগ্রী থাকুক বা না থাকুক, প্রয়োজন মেধা এবং পরিশ্রমের। আসুন, জেনে নিই, ডিগ্রী না থাকলেও কিভাবে ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে পারবেন আপনি।
সেবামূলক ব্যবসা শুরু করুন
এখন অনলাইনে সবাই নিত্য-নতুন ব্যবসা খুলছে। এদের প্রয়োজন কুরিয়ার সেবার। আপনি সেই সেবা নিয়ে হাজির হতে পারেন। আপনার বিশ্বস্ত সেবা শীঘ্রই আপনাকে জনপ্রিয় করে তুলবে। এরকম আরও অনেক আইডিয়া আছে যেখানে আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে খরচ খুবই কম, আপনার কোন ওয়েবসাইট লাগবে না শুরুতেই। শুধু দরকার সততা এবং পরিশ্রমের।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করুন
আপনার যদি পর্যাপ্ত মূলধন থাকে তাহলে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার কথা ভেবে দেখতে পারেন। নিজের প্রপার্টি ভাড়াও দিতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি অভিজ্ঞতা কম থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডেভলপারের সাহায্য নিন। আপনার একান্ত বিশ্বস্ত কেউ হলেই কাজটি করুন। নয়ত বিপুল অংকের টাকা ক্ষতি হতে পারে।
কন্সালটিং সার্ভিস
ছোট ছোট বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে নিজেকে আরেকটু দক্ষ করে নিন। এখন স্বল্প খরচে এমনকি বিনা খরচে অনেক জায়গায় প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। আপনি বিজনেজ ম্যানেজমেন্ট, হাও টু ফাইন্ড ইওর গোল, কি অফ অন্ট্রেপ্রেনরশীপ ইত্যাদি বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন। অতঃপর নিজেই খুলতে পারেন পরামর্শ কনসাল্টিং ফার্ম।
 
ট্রেনিং সেন্টার
কর্মমূখী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারেন আপনি। যেমন পার্লারের কাজ শিখে পার্লার খোলেন অনেকে। ব্লক, বাটিকের কাজ শিখে বুটিক শপ খুলতে পারেন। আবার বিভিন্নরকম প্রশিক্ষণ নিয়ে একবারে খুলতে পারেন একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র। অনেক কম খরচেই প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন আপনি। আবার সার্টিফিকেটও থাকবে, তাই মূল্যায়ণও পাবেন।
নিজের জিনিস ভাড়া দিন
আপনার যদি গাড়ি থাকে ভাড়া দিতে পারেন সেটি। রেন্ট এ কারের আয় কিন্তু বেশ ভাল। আবার আপনার নিজের বাড়ি হলে ভাড়া দিতে কোচিং সেন্টার হিসেবে। ওভাবে বাড়ি যদি নাও থাকে, আপনার ফ্লাটের একটি রুম ভাড়া দিতে পারেন স্টুডিও হিসেবে। আপনার যদি অফিশিয়াল এমন কোন যন্ত্র থাকে যা ভাড়া দেওয়া যায় সেটিও ভাড়া দিতে পারেন।
শিল্পচর্চা
আপনার হয়ত কোন ডিগ্রী নেই। কিন্তু আপনি হয়ত ভাল গান করেন। বা নাচ করেন। গান, নাচের প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলতে পারেন। আপনার শিল্পের চর্চা হতে থাকল,পাশাপাশি দক্ষতা বাড়ল। এরপর আপনি সুযোগমত নিজের প্রতিভাকে আরও বড় পর্যায়ে সামনে নিয়ে আসুন। নিজেকে তুলে ধরুন সবার সামনে। আপনার সখই হতে পারে আপনার পেশা।
লিখেছেন
আফসানা সুমী
ফিচার রাইটার

 

কল্পনা রানী গ্রামের নারীদের ভরসা

কেউ ডাকেন ডাক্তার আপা, কেউ বৌদি, কেউ দিদি, আবার কেউবা মাসি। একটি এলাকার নারীদের জীবনে চলার সঙ্গী এই মানুষ। তাঁকে ছাড়া যেন স্বস্তি পান না গৃহিণীরা। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের পরিচর্যা এবং পরিবার পরিকল্পনার সেবা দিতেন তিনি। হয়ে উঠেছেন সবার আপনজন।
এই সেবাদাতা নারীর নাম কল্পনা রানী সরকার। সরকারের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ‘পরিবার কল্যাণ সহকারী’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ছিল তাঁর কর্মস্থল। ৩৯ বছর ধরে এখানেই চাকরি করেছেন। শ্বশুরবাড়ি একই এলাকায়। গত ২৬ জানুয়ারি তিনি অবসরে গেছেন। তারপরও এলাকার মানুষের ডাকে সাড়া দেন আগের মতো।
এ কাজপাগল মানুষকে ছাড়া যেমন এলাকার মানুষের চলে না। তেমনই পরিবার পরিকল্পনা বিভাগও দিয়েছে তাঁকে ভালো কাজের স্বীকৃতি। ১১ বার হয়েছেন উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কর্মী। জেলায় শ্রেষ্ঠ হয়েছেন দুই বার। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মহাপরিচালক বেশ কয়েকবার তাঁকে সনদ দিয়েছেন। সনদের লেখাগুলো এ রকম: ‘আপনি পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের একজন অগ্রসৈনিক। আপনার এলাকায় মা ও শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে আপনি পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং অনুকরণযোগ্য।’
২০০২ সালের অক্টোবরের এক শুক্রবারের বিকেল। বাচ্চাদের পোলিও টিকা খাওয়াতে হবে। তাই বাড়ি বাড়ি খবর দিচ্ছিলেন টিকা কেন্দ্রে আসার জন্য। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। পা পিছলে পড়ে গিয়ে ডান হাতের কবজি ভেঙে যায়। কিন্তু হাতটি আর ভালো হয়নি। এখন ডান হাতটি অকেজো কল্পনার। লিখেন দুই হাতের সাহায্যে। সমস্যা হয় খাবার খেতে এবং নিজের অন্যান্য কাজে। কিন্তু দমে যাননি। এ অবস্থায় ঘরে বসে থাকেননি। এরপরও তাঁর উপস্থিতি এলাকার ঘরে ঘরে। এ অবস্থায়ও জেলার এবং উপজেলার শ্রেষ্ঠ কর্মী হয়েছেন।
লাহুড়িয়া ইউনিয়নের কচুবাড়িয়া, ছাইমনারচর, পশ্চিমপাড়া, হিন্দুপাড়া ও মোল্লাপাড়া—এই পাঁচটি এলাকায় ছিল তাঁর কাজ। এখানে বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এলাকার নারীরা জানালেন, মেয়েলি রোগের সব কথা নিজের আপনজনকেও বলা যায় না। লজ্জা লাগে। ‘ডাক্তার আপা’-ই তাঁদের ভরসা। তাই দুই-এক দিন তাঁকে না দেখলেই অস্বস্তিতে ভোগেন তাঁরা। ওই এলাকার গৃহিণী দিপালী বেগম, কনক বেগম ও লাভলী জানালেন, গর্ভাবস্থায় এবং শিশুর যত্ন নিতে এলাকার নারীরা তাঁর ওপরই ভরসা করেন। তাঁর পরামর্শে সবাই লাভবান হয়েছেন। তিনি নিজের মায়ের মতো পাশে থাকেন। অনেক পরিবারের স্বামী ও অন্য সদস্যদের অবহেলা সহ্য না করে নিজেই গর্ভবতীকে নিয়ে ছোটেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। উপজেলা বা জেলা শহরের হাসপাতালে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সেখানে পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে নেই। বাচ্চা প্রসব করিয়েছেন নিজ দায়িত্বে।
কল্পনা রানী বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভবতীর পেটে বাচ্চার অবস্থান ভালো নেই। অশিক্ষিত পরিবার। কবিরাজি বা ঝাড়-ফুঁকে নজর তাঁদের। আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো ও অন্যান্য চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার না করালে মা ও শিশু মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ অবস্থায় নিজে দায়িত্ব নিই। পরে সবাই খুশি হয়।’
লাহুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জি এম নজরুল ইসলাম বললেন, কল্পনা রানী এলাকায় ‘গরিবের ডাক্তার আপা’ বলে পরিচিত। চাকরি নয় সেবাই তাঁর ধর্ম।
কল্পনা বলছিলেন, ‘চাকরিজীবনের প্রথম দিকে ৭০-৮০-এর দশকে পরিবার পরিকল্পনার কর্মী শুনে অনেক বাড়িতেই ঢুকতে দেয়নি। “না জায়েজ কাজ” বলে তাড়িয়েছে। দমে যাইনি। এলাকার শিক্ষক ও সচেতন মানুষের সাহায্য নিয়ে সেসব পরিবারে সফল হয়েছি। এখনের পরিবেশ এমন মনে হয়, সবার যেন অভিভাবক হয়ে গেছি।’
এসএসসি পাস কল্পনা রানী ১৯৭৪ সালে বিয়ে করেন। স্বামী ছিলেন বেকার। অর্থাভাবে বাধ্য হয়ে দুই বছর পর তাঁকে এই চাকরি নিতে হয়েছিল। তিন ছেলে তাঁর। সবাই বিয়ে করেছেন। সবাই ব্যবসায়ী। স্বামী ও সংসারের অন্যদের নিয়ে এখন সচ্ছল পরিবার। এখন তাঁর ভাঙা হাতটিতে ব্যথা, উচ্চরক্তচাপ ও হাঁটুতে ব্যথা। কিন্তু বোঝা যায় না। সেবায় রত সর্বক্ষণ। তিনি বললেন, ‘এলাকার পরিবারগুলোর খোঁজ রাখতে না পারলে সুখ পাই না। মনে হয়, অজ্ঞতার কারণে যদি কোনো মা ও শিশু মৃত্যুমুখে পতিত হয়!’
লোহাগড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তানভীর আহমেদের মতে, উপজেলা সদরের শেষ প্রান্ত (২০ কিলোমিটার দূরে) প্রত্যন্ত গ্রামে সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসার পরামর্শে অন্যতম ভরসাস্থল কল্পনা রানী।

 

ঈদের নাস্তায় ডোনাট কাবাব

ঈদে পোলাও, বিরিয়ানির ভিড়ে থাকা চাই বিভিন্ন পদের সুস্বাদু নাস্তা। কারণ, উৎসবের এই দিনে আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা থাকে উল্লেখ করার মতো। কোরবানির ঈদে মাংসের আধিক্য থাকায় নাস্তাতেও তার ছোঁয়া থাকা স্বাভাবিক। ঠিক এমনই একটি সুস্বাদু নাস্তার পদ হতে পারে ডোনাট কাবাব। বিকেলের বা সন্ধ্যার নাস্তায় নান অথবা পরোটার সঙ্গে ডোনাট কাবাব খুবই মানানসই। চাইলে ভাতের সঙ্গেও খেতে পারেন ডোনাট কাবাব। তাই আসুন শিখে নেয়া যাক ডোনাট কাবাবের সহজ রেসিপি।

যা যা লাগবে

গরুর মাংসের কিমা আধা কেজি, ডিম ২টি, আদা বাটা আধা চা চামচ, রসুন বাটা আধা চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা চামচ, টক দই ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণ মতো, কাঁচামরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, কাবাব মসলা ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, টমাটো সস ১ টেবিল চামচ, তেল ভাজার জন্য, বেরেস্তা ১ টেবিল চামচ।

যেভাবে করবেন

প্রথমে পেঁয়াজ কুচি ও কাঁচামরিচ কুচি সামান্য তেলে ভেজে নিতে হবে। এবার কিমার সঙ্গে ডিম ও তেল ছাড়া সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মেখে আধা ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এবার মাখানো কিমা ডোনাটের আকারে তৈরি করতে হবে। এরপর সেকা তেলে ডোনাট গুলো এপিঠ ওপিঠ ভেজে হালকা শক্ত করে নিতে হবে। তারপর গোলানো ডিমে ডোনাট গুলো চুবিয়ে ডুবো তেলে বাদামি করে ভেজে তুলে আনুন। ব্যাস হয়ে গেল ডোনাট কাবাব।

 

সরিষার তেলে ইলিশ তেহারি

বৃষ্টিভেজা দিনেই ইলিশের যেন বেশি খাতির। ভেজা আবহাওয়ায় আমাদের মন মাতাতেও চায় মোহনীয় গন্ধে ভরা ইলিশ আয়োজন। বাড়িতে অতিথি এলে বিশেষ আপ্যায়নে স্বগর্বে যোগ হতে পারে ইলিশ রেসিপি। সেখানে সরিষা তেলে ইলিশ তেহারি হলে তো কোনো কথায় থাকে না। তাই আজ শিখে নেয়া যাক ইলিশ তেহারি রান্নার সহজ রেসিপি।

যা যা লাগবে

ইলিশ মাছ ১০ টুকরো, পোলাও চাল ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, টমেটো সস আধা কাপ, সরিষা তেল ১ কাপ, তেজপাতা ২ টা, দারুচিনি ২ টা, এলাচ ৪ টা, লবণ স্বাদমত, জয়ফল ১টা, জয়ত্রী ২ টা, সাদা গোলমরিচ ১ চা চামচ, আস্ত জিরা আধা চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, জিরা বাটা আধা চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা বাটা ১ চা চামচ, শুকনো মরিচ বাটা ১ চা চামচ, সরিষা বাটা ২ চা চামচ, কাঁচা মরিচ ১০টা, সরিষা তেল ২ টেবিল চামচ।

যেভাবে করতে হবে

গরম মশলার সব উপকরন একসঙ্গে টেলে গুঁড়ো করে নিতে হবে। সমস্ত বাটা মসলা একটু পানি দিয়ে একসঙ্গে একটা পাত্রে ভালো করে মেশান। পোলাও চাল ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে। দুই লিটার পানি চুলায় গরম হতে দিন। অপর একটি হাঁড়ি চুলায় বসিয়ে গরম হলে আধ কাপ সরিষা তেল দিন। এবার বাটা মশলার মিশ্রণ, টমেটো সস ও ২ চা চামচ লবণ দিয়ে নাড়তে থাকুন। সুগন্ধ বেরোলে ধোয়া মাছ কষিয়ে নিন। এবার পরিমাণমত গরম পানি দিয়ে ১০ মিনিট সেদ্ধ করুন। মাছ সেদ্ধ হওয়ার পর যখন তেল বেরোবে এবং সামান্য ঝোল থাকবে, তখন চুলা বন্ধ করে দিন।

এবার পোলাও

অপর একটি বড় হাঁড়িতে বাকি আধ কাপ সরিষা তেল দিন। তেল গরম হলে আস্ত এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা ছেড়ে দিন। অল্প ভেজে পেঁয়াজ কুচি দিন। পেঁয়াজ নরম হলে চাল দিয়ে ১৫ মিনিট নেড়েচেড়ে ভাজুন। এবার ওই গরম ২ লিটার পানি দিন। পরিমাণমতো লবণ দিয়ে হাঁড়ি ঢেকে দিন। চাল ফুটে পানি যখন প্রায় শুকিয়ে আসবে তখন চুলা বন্ধ করে দিন। একটি পুরু তলার বড় হাড়িতে প্রথমে অর্ধেক পোলাও বিছিয়ে দিন। এবার মাছ গুলো সাবধানে তুলে পোলাওয়ের উপর বিছিয়ে কাঁচা মরিচ আর গরম মসলার গুঁড়া ছড়িয়ে বাকি পোলাওয়ে ঢেকে দিন। ওপরে পেঁয়াজ বেরেস্তা আর ২ চামচ সরিষা তেল ছিটিয়ে দিন। এখন চুলার ওপর তাওয়া রেখে তার ওপর হাঁড়ি রেখে চুলা জ্বেলে দিন। হাঁড়ির মুখ ঢাকনা দিয়ে লাগিয়ে নিন। চাইলে নরম আটা দিয়ে ঢাকনার কিনারে সীল করে দিতে পারেন। এভাবে অল্প আঁচে রাখুন ২০ মিনিট। ব্যস, হয়ে গেল মজাদার সরিষার তেলে ইলিশ তেহারি।

 

ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউজগুলোতে চলছে বিশেষ ছাড়

আর মাত্র ১৫ দিন বাকি রোজা শুরু হওয়ার। ত্রিশ দিন রোজা শেষে মুসলিম দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। তাই বলা যায় ঈদকে ঘিরে সারা দেশের শপিং মলগুলোতে চলছে ধোয়া মোছার কাজ। সেই দিক থেকে ফ্যাশন হাউজের গত বছরের সব পোশাকগুলোও বিক্রি করে সবাই তাদের শোরুম সাজাচ্ছে নতুন সব পণ্যে। তাইতো চলছে প্রায় সব ফ্যাশন হাউজেই বিশেষ ছাড়। এসব দিক থেকে কোন ফ্যাশন হাউজই পিছিয়ে নেই। এই সময়ে কেউ কেনাকাটা করতে চাইলে জিতে যাবেন। পোশাক পাবেন একদম কম মূল্যে।

আজকে আমরা জানাচ্ছি এই মূহুর্তে কোথায় কোন ফ্যাশন হাউজে চলছে বিশেষ ছাড়।

ফ্যাশন হাউজ স্মার্টেক্স’য়ে পাবেন ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। বিশেষ বিশেষ পণ্যে এই অফারটি চলবে পুরো মে মাস জুড়ে।

ফ্যাশন হাউজ রিচম্যান’য়ে পাবেন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। তাদের অফারটি শুরু হয়েছে এই দুই মে থেকে চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। তবে অফারটি তারা আরো এক সপ্তাহ পর্যন্ত এক্সটেনশন করতে পারে বলে বসুন্ধরা সিটি শপ ম্যানেজার জানান। কোন ধরনের এক্সেসরিজে অফারটি প্রযোজ্য হবে না।

এছাড়া ফ্যাশন হাউজ রিচম্যান’য়ে এইচএসবিসি, স্টার্ন ব্যাংক ও স্ট্যার্ন্ডাড ব্যাংক, মিউচুয়াল ব্যাংকের কার্ড ইউজ করে পেতে পারেন ৮ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। তাদের নিজস্ব মেম্বারশীপ কার্ড হোল্ডাররা পাবেন ৮ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।

ফ্রিল্যান্ড ফ্যাশন হাউজ দিচ্ছে বিশেষ পোশাকের উপর ৫০ শতাংশ ছাড়। এই অফারটিও চলবে মে মাসের শেষ পর্যন্ত।

দর্জিবাড়ি ফ্যাশন হাউজে গেলে পাবেন মেগা সেল বা সামার সুপার সেল। সেখানে হাফ স্লিভ যে কোন পোশাক পাচ্ছেন শুধুমাত্র ৩১৫ টাকায়। আর ফুল স্লিভ পোশাক ও পাঞ্জাবীর পাচ্ছেন ৫২৫ টাকায়।

দেশের বর্তশান সময়ের আলোচিত ফ্যাশন হাউজ এক্সটেসি ও তানজিম ফ্যাশন হাউজ’য়ে একটি পণ্য পাচ্ছেন এটি ফ্রি। দুটি কিনলে পাচ্ছেন দুটি ফ্রি। তবে সীমিত পণ্যের উপর চলছে এই অফার। এছাড়া ডেনিম জিন্স পাচ্ছেন শুধুমাত্র ১৪৮০ টাকায়। তবে ৭০ শতাংশ পর্যন্তও তারা বিশেষ ছাড় দিচ্ছে রিজেক্ট ও পুরাতন পণ্যের উপর। কোন সমস্যা থাকলে তারা তা দেখিয়ে বিক্রি করছে। ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকায়ও তারা ফ্লাট সেল করছে।

জুতা কিনতে চাইলে চলে যেতে পারেন বে ইম্পেরিয়াম ও এপেক্স জুতার শোরুমে। বে ইম্পেরিয়ামে চলছে ১০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। আর এপেক্স’য়েও পাবেন সমান মূল্য ছাড়। বাটায় পাবেন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।

ইনফিনিটি সুপার শপে পাচ্ছেন ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। সীমিত সংখ্যক পণ্যের উপর চলছে এই ডিসকাউন্ট। মেয়েদের সেলোয়ার কামিজ, ছোটদের পোশাক ও জুতায় পাচ্ছেন এই সুযোগ।

তাই আর দেরি কেন। কম দামে পছন্দের ব্র্যান্ড এর পোশাক কিনতে চাইলে আজই যোগাযোগ করুন এই সব শোরুমগুলোতে। আর উপভোগ করুন সামারের সব পোশাক।

 

ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে মডেল সাবিরার আত্মহত্যা

ঢাকা: আত্মহত্যা করেছেন মডেল সাবিরা হোসাইন। রাজধানীর মিরপুরের বাসায় তার মরদেহ পাওয়া গেছে।আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে একটি সুইসাইড নোট ও ভিডিও বার্তা দিয়ে গেছেন এ মডেল।

মঙ্গলবার (২৪মে) ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে রূপনগরের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রূপনগর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জোহরা খাতুন বিষয়টি বাংলামেইলকে নিশ্চিত করেছেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, নির্ঝর নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের জের ধরেই আত্মহননের পথ বেছে নেন সাবিরা। তাদের দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বিয়ের ব্যাপারে অসম্মতি ছিল নির্ঝরের পরিবারের। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে সাড়ে ৯ মিনিটের ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যা করেন সাবিরা।

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ছুরি হাতে বারবার পেটে ও গলায় চাপ দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু কাজ না হওয়ায় ৯ মিনিটের ওই ভিডিওর শেষে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যর্থ, আপাতত। ওকে নেক্সট অ্যাটেমপ্ট নেব।’

ভিডিও বার্তা যুক্ত করে ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাবিরা লেখেন, ‘আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। এটা তোমার ছোট ভাইকে বলা। সে আমাকে যা ইচ্ছে বলেছে। আর বেস্ট পার্ট হল, সে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আর আমার প্রশ্ন হল, তোমার কি একটুও ফিল হয়নি?’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমাকে ব্যবহার করবে, সেক্স করবে, আর আমি সরে যাবো। এটাতো হতে পারে না। বিয়ের কথা বললে তোমার পরিবার অসুস্থ হয়ে যায় আর সেক্সের কথা বললে সব ঠিকঠাক।’

সবশেষে নির্ঝরকে ট্যাগ করে তিনি লেখেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য সে (নির্ঝর) দায়ী। যদি আমি মারা যাই, তাহলে এর দায় তার।’

জানা যায়, সাবিরার প্রেমিক নির্ঝর একজন আলোকচিত্রী। তার ফেসবুকে প্রোফাইলেওে সাবিরার সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ ছবি পাওয়া গেছে।

সাবিরা বেশ কিছু পণ্যের স্থিরচিত্রে মডেল হয়েছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন। মডেলিং ছাড়াও উপস্থাপনায়ও তাকে দেখা গেছে।মোহনা টিভি ও গানবাংলা টিভিতেও কাজ করতেন তিনি।

 

নজরুলের বিদ্রোহ সাম্যবাদ নারী ও প্রেম

‘বল বীর / চির উন্নত মম শীর’- মন্ত্রে মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহসী উচ্চারণে শোনালেন বিদ্রোহের বাণী। তিনি আর কেউ নন। আমাদের প্রিয় কবি নজরুল ইসলাম। তাঁর বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে সাম্যবাদ, নারীর মর্যাদা ও মানুষে মানুষে গড়ে ওঠা প্রেম। যেহেতু একজন কবির দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর করে তার সমসাময়িক অবস্থা বা প্রেক্ষাপটের ওপর। কোনো সচেতন শিল্পী তার সময় ও সমাজকে কখনো অস্বীকার করতে পারেন না। কাজী নজরুল ইসলাম তার ব্যতিক্রম নন। তিনি দেশের এমন এক সঙ্কটময় মুহূর্তে আবির্ভূত হয়েছেন; যখন মুক্তি সংগ্রামের স্লোগান আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। ফলে এ আন্দোলন-সংগ্রামের প্রভাব পড়েছে তার কাব্যে। দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার নেশায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন উন্মাদ। দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে হয়েছেন মহাবিদ্রোহী। কিন্তু তারপরও মানব মনের চিরন্তন প্রেমের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে তার কাব্যে। কখনো তার বিদ্রোহের মাঝে প্রেম; আবার কখনো প্রেমের মাঝে বিদ্রোহ। সবমিলিয়ে একাকার হয়ে যায় সাম্যবাদে। এসবই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়েছিল প্রিয়তমার মতো।

বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম স্বমহিমায় বাংলাসাহিত্যে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। তাঁর ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘ঘুমভাঙার গান’, ‘ফণিমনসা’, ‘সর্বহারা’, ‘জিঞ্জির’, ‘সন্ধ্যা’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘সাম্যবাদী’ ইত্যাদি কাব্যের মাধ্যমে তিনি জাগরণের গান শুনিয়েছেন মানুষকে। জাতির বন্দিত্ব মোচনের জন্য তার প্রচেষ্টা ছিল অকৃত্রিম। তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন:
‘লাথি মার ভাঙরে তালা,
যতসব বন্দীশালা,
আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা।’
তার এ বিদ্রোহ অনাসৃষ্টির জন্য নয়। পুরাতনকে ভেঙে নতুন করে গড়ার বিদ্রোহ। দেশ-জাতি-সমাজকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তার বিদ্রোহ ছিল শাসক, যাজক ও সমাজপতিদের বিরুদ্ধে। তার এ বিদ্রোহ নিরন্তর। যতদিন না এর কোনো প্রতিকার হবে। তাইতো তিনি বলেছেন:
‘মহাবিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত।
আমি সেই দিন হব শান্ত।’
নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পর কবির এ বিদ্রোহ সমাপ্ত হয়ে যাবে। বাস্তবিক অর্থে মানুষকে কতটা ভালোবাসলে এমন বিদ্রোহী হয়ে ওঠা যায়?

নিঃসন্দেহে কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’ একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্যই তিনি আজ সর্বত্র ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে সমাদৃত। বিদ্রোহী অভিধায় অভিসিক্ত হলেও কাজী নজরুল ইসলাম একজন খাঁটি প্রেমিক। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্য কারাবরণ করলেও প্রেমের মহিমার ক্ষেত্রে আরো বেশি সমুজ্জ্বল তিনি। অন্তরে প্রেম না থাকলে কখনো এমন বিদ্রোহ আসে না। ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য’- এ যেন কবি নজরুলের অন্তরের কথা। এছাড়া নারীর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গানে ও কবিতায়। নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন তিনি। নারীকে যথাযথ মর্যাদা দিতে গিয়ে কবি বলেছেন:
‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ কথা আমরা কখনো অস্বীকার করতে পারি না।

‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’ কিংবা ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল’- এ ধরনের গানে তার অপার্থিব প্রেমের উৎসরণ লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রে তাকে প্রেমিক কবি হিসেবে আখ্যায়িত করলেও অত্যুক্তি করা হবে না। বিদ্রোহী রূপের আড়ালে তার চিরায়ত কামনা-বাসনা-প্রেমকে ঢেকে রাখার সাধ্য আছে কার? কবি এও বলেছেন-
‘নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি প্রাণ,
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।’


মূলত নারীর উৎসাহ-প্রেরণা ও প্রেমের মহিমা তাকে বিদ্রোহী হতে উৎসাহ জুগিয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও তার প্রেম প্রকাশিত হয়েছে। নারী হৃদয়ের ব্যর্থতা, ক্ষোভ ও বাসনাকে কবি নিজের বিদ্রোহের উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেছেন।


কবি কাজী নজরুল ইসলাম একদিকে যেমন বিদ্রোহী; অন্যদিকে আবার রোমান্টিক কবি। দীর্ঘাকৃতির ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মধ্যেও প্রেমের মহিমাকে তিনি উচ্চকিত করে তুলেছেন। কবির ‘মানুষ’, ‘সাম্যবাদী’ ও ‘আমার কৈফিয়ত’ প্রভৃতি কবিতায় বিদ্রোহ ফুটে উঠলেও সেখানে অত্যাচারিত, নিপীড়িত, অবহেলিত, অসহায় মানুষের প্রতি ছিল তার সীমাহীন দরদ স্বার্থহীন ভালোবাসা। ‘সিন্ধু হিন্দোল’ কাব্যগ্রন্থে প্রেমের নিবিড়তা, চিরন্তনতা এবং বিচ্ছেদের তীব্র জ্বালার প্রকাশ দেখা যায়। সিন্ধুর অশান্ত রূপ কবিচিত্তের বিচ্ছেদ জ্বালা পথিকের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কবি বলেছেন:
‘এক জ্বালা, এক ব্যথা নিয়া
তুমি কাঁদ আমি কাঁদি, কাঁদে মোর হিয়া।’

নজরুল ইসলামের কাব্যে প্রেম বা রোমান্টিসিজম সম্পর্কে বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন: “প্রকৃতির মাঝে আত্মভাবের বিস্তার এবং একই সাথে প্রকৃতির উপাদান সান্নিধ্যে অন্তর ভাবনার উন্মোচন রোমান্টিক কবির সহজাত বৈশিষ্ট্য। ‘চক্রবাক’ কাব্যে নজরুলের এই রোমান্টিক সত্তার প্রকাশ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ইতোপূর্বের কাব্যসমূহেও আমরা নজরুলের প্রকৃতি চেতনার পরিচয় পেয়েছি কিন্তু ‘চক্রবাক’-এ এসে লক্ষ্য করছি, এখানে প্রকৃতি নজরুলের প্রজ্ঞাশাসিত ও অভিজ্ঞতালব্ধ মানসতার স্পর্শে এসে হয়ে উঠেছে সংযত, সংহত এবং শূন্যতা তথা বেদনার প্রতীকী ধারক।’

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা ছাড়াও বহুবিচিত্র গান রচনা করেছেন। প্রেম-বিরহ, বিদ্রোহ-বিপ্লবের ওপর তার অসংখ্য গানও রয়েছে। গানে কী কবিতায় মানুষের কল্যাণে কবি পুরাতনকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। ধ্বংসের ভেতর থেকেই তিনি দেখেছেন নব সৃষ্টির উন্মাদনা। কবি সমস্ত অসুন্দরকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। তাইতো বিদ্রোহের পাশাপাশি আবার প্রেম সৌন্দর্যের সমন্বয় করেছেন। বিদ্রোহ করেছেন অন্যায়কে ধ্বংস করার জন্য, আর প্রেমের কথা বলেছেন মানবতাকে মজবুত করার জন্য। শুধু কি বিদ্রোহই ধরা পড়ে তার কবিতায়? না, তিনি প্রেমের কবিও বটে। সর্বোপরি মানুষের কবি। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় লালিত একজন উদারপন্থী মানুষ। নারী তার কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। শুধু কি কল্পনার নারী? না, বাস্তবতার নিরিখেও নারীকে তুলে এনেছেন পরম যত্ন আর মমতায়। নারীকে কন্যা, জায়া ও জননী- সব রূপেই লক্ষ্য করা যায় তার কাব্যে। এমনকি বীর নারী, বেশ্যা নারী, প্রেমিকা নারী, আশাজাগানিয়া নারী, লোভী নারী ও হতাশাদায়িনী নারীও ধরা পড়েছে তার কলমে।

নারী ছাড়া নজরুলের কবিতা কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। তিনি নারী চরিত্রগুলো নিজের দুঃখে, অশ্রুজলে, হাসিতে, কান্নায় সৃজন করেছেন আবার নিজেই ভেঙেছেন, নিজেই গড়েছেন। তিনি ‘নারী’ কবিতায় লিখেছেন:
‘বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা’ করে নারী হেয়-জ্ঞান?
তারে বলো, আদি পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।’
তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও তিনি নারীর প্রসঙ্গ এনেছেন শৈল্পিক ভঙ্গিমায়। বিদ্রোহের প্রেরণা হিসেবে কল্পনা করেছেন নারীকে। কবির উচ্চারণ:
‘আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেণি, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি উন্মন, মন-উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর।’

নারীর বিরহ-মিলন পুরুষের কাছে একটি দুর্বোধ্য প্রেমের পাঠ। সেই নারীর বিরহে-মিলনে কবিপ্রাণও জেগে ওঠে। তাই তো ‘নারী’ কবিতায় কবি বলেছেন:
‘নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি প্রাণ,
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।’
রমণীর ভালোবাসায় নজরুল কবি হয়ে উঠেছেন। এমন স্বীকারোক্তি লক্ষ্য করা যায় তার ‘কবি-রাণী’ কবিতায়। কবিই তো অন্যত্র বলেছিলেন, ‘প্রেমের পরশে প্রত্যেকেই কবি হয়ে ওঠে’। এ কথারই মিল খুঁজে পাওয়া যায় তার কবিতায়। কবি বলেছেন:
‘তুমি আমায় ভালোবাসো তাইতো আমি কবি।
আমার এ রূপ- সে যে তোমার ভালোবাসার ছবি।’

পাশাপাশি নারীর মর্যাদাও উচ্চকিত হয়েছে তার কবিতায়। পুরুষের যাবতীয় কৃতিত্বের অংশীদার করেছেন নারীকে। এমনকি সমাজের অস্পৃশ্য নারীকেও পরম শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখেছেন নজরুল। একজন বেশ্যার জন্মও সতী মায়ের গর্ভে হতে পারে। বেশ্যা বলে তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হবে কেন? ভাগ্যবিড়ম্বিত এ নারীর উদ্দেশ্যে কবির দৃঢ় অভিব্যক্তি:
‘কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থুতু ও-গায়ে?
হয়তো তোমায় স্তন্য দিয়াছে সীতা-সম সতী মায়ে।’
তিনি ‘বারাঙ্গনা’ কবিতায় ‘বারাঙ্গনা’কে মা বলে অভিহিত করেছেন। বারাঙ্গনা মায়ের সন্তানদের স্বীকৃতির জন্য তিনি হিন্দু পুরাণসহ বিভিন্ন শাস্ত্র উল্লেখ করেছেন:
‘স্বর্গবেশ্যা ঘৃতাচী-পুত্র হ’ল মহাবীর দ্রোণ,
কুমারীর ছেলে বিশ্ব-পূজ্য কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন
কানীন-পুত্র কর্ণ হইল দান-বীর মহারথী
স্বর্গ হইতে পতিতা গঙ্গা শিবেরে পেলেন পতি,
বিস্ময়কর জন্ম যাহার-মহাপ্রেমিক সে যিশু!’

সামগ্রিকভাবে নজরুলের নারী এক স্বতন্ত্র স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত তার কাব্যে। তিনি বহুবর্ণ, বহু বিচিত্র নারী চরিত্রের সংস্পর্শে এসেছেন। তাদের ভালোবেসেছেন, ভালোবেসে দুঃখে কাতর হয়েছেন, অশ্রুবিসর্জন করেছেন; কিন্তু ভালোবাসার পাত্রীকে অভিশাপ দেননি। বরং সেই ব্যথাতুর অভিজ্ঞতা দিয়ে রচনা করেছেন একের পর এক কবিতা।
কবি বলেছেন:
‘বিদায় সখি, খেলা-শেষ এই বেলা-শেষের’ খনে!
এখন তুমি নতুন মানুষ নতুন গৃহকোণে।’
নজরুল নিজের অস্থির জীবন, আত্মত্যাগ এবং নারীর প্রতি বিশ্বস্ত থেকে সাহিত্যচর্চা করেছেন। নারীর প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রদর্শনের পরিবর্তে নারীর অন্তর্গত অমিত শক্তিকে উন্মোচিত করে তিনি প্রকান্তরে সময়কেই অতিক্রম করেছেন। কবির ভাষায়:
‘হে মোর রাণী! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।
আমার বিজয় কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।’
কখনো বা নারীকে তিরস্কারও করেছেন প্রচন্ড ক্ষোভে। নারীর অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন কবি। নারীর লোভকেও ধিক্কার জানিয়েছেন কবিতার ভাষায়।
কবির উক্তি:
‘নারী কভূ নাহি চায় একা হতে কারো
এরা দেবী, এরা লোভী, যত পূজা পায়
এরা চায় তত আরো।’
তাই বলে নজরুল ইসলাম নারী বিদ্বেষী নন। নারীর প্রতি ক্ষোভের চেয়ে তার ভালোবাসার দুর্বলতাই বেশি উচ্চকিত হয়ে উঠেছে। তিনি নারীকে সম্মান দেখিয়েছেন। জাগ্রত হওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছেন। যেহেতু বলতে গেলে কবিদের প্রেরণাই হচ্ছে নারী। নজরুলও তাদের চেয়ে ব্যতিক্রম নন। কেননা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষ আকর্ষণ সহজাত প্রবৃত্তি বা সৃষ্টিগত ব্যাপার। সর্বোপরি কাজী নজরুল ইসলাম নারীদের সমানাধিকার, নারীর প্রতি অবিচারের প্রতিবাদ, প্রেয়সীর প্রেমের অনিবার্যতা ও মাতৃভক্তির পদতলে যে পরিপূর্ণতা শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাক্ষর রাখতে পেরেছেন তা-ই নজরুলকে নজরুল করেছে।

তবে বিদ্রোহ-প্রেম-সাম্যবাদের মশাল হাতে আবির্ভূত হয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত পৃথিবীতে যখন মানবতা ধুলায় লুণ্ঠিত তখন তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে সাম্যবাদের গান। একই কণ্ঠে হামদ-নাত এবং শ্যামা সঙ্গীতের সুরের মূর্ছনায় মানবজাতিকে উপহার দিয়েছেন সাম্যবাদের মূলমন্ত্র। মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসায় কবি হয়ে উঠেছেন মানবতাবাদী।

নজরুলের সাম্যবাদের প্রধান ক্ষেত্র মানুষ। কে কুলি-মজুর আর কে সাহেব? সবাই তার দৃষ্টিতে সমান। আশরাফ আর আতরাফের কোনো ভেদাভেদ নেই এখানে। সবাই সৃষ্টির সেরা। সবাইকেই তিনি গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। নজরুলের সাম্যবাদ তার অন্তরের প্রেরণালব্ধ বস্তু। কবি কল্পনার রঙে রঙিন। মানবতাবোধই তার সাম্যবাদের ভিত্তি। তিনি সব ধর্মের উর্ধ্বে উঠে মানবধর্মকেই উচ্চাসনে বসিয়েছেন। মানবের মাঝে তিনি স্রষ্টাকে আবিষ্কার করেছেন। তার সাম্যবাদ স্রষ্টাকে অস্বীকার করে নয়। কাল মার্কসের মতো তার সাম্যবাদ নাস্তিক্য সাম্যবাদ নয়। তার সাম্যবাদ আস্তিক্য সাম্যবাদ। অসাম্প্রদায়িক হলেও তিনি পুরোপুরি আস্তিক ছিলেন।

নজরুলের সাম্যবাদ প্রকাশ পেয়েছে তার ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থে। ১৯৫২ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থে মোট ১১টি কবিতা স্থান পেয়েছে। যেমনথ ‘সাম্যবাদী’, ‘নারী’, ‘মানুষ’, ‘বারাঙ্গনা’, ‘রাজা-প্রজা’, ‘ঈশ্বর’, ‘পাপ’, কুলি-মজুর’, ‘চোর-ডাকাত’, ‘সাম্য’ ও ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’। মূলত ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের কবিতাগুলোয় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রভাব রয়েছে।
তার ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের ‘নারী’ কবিতাটি বহুল প্রশংসিত। ‘নারী’ কবিতায় কবি নারী-পুরুষে সাম্যের বাণী উচ্চারণ করেছেন। কবি নারী-পুরুষের ভেদাভেদ অস্বীকার করেছেন। আর ‘বারাঙ্গনা’ কবিতাটি অধিক সমালোচিত। কবিতায় কবি বলেছেন:
‘কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থুতু ও-গায়ে?
হয়তো তোমায় স্তন্য দিয়াছে সীতা-সম সতী মায়ে।’
তিনি মন্দির-কাবার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে বড় জ্ঞান করেছেন। কবি বলেছেন, ‘এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।’ ‘সাম্য’ কবিতায় কবি স্রষ্টাকে মহিমাময় এবং মানুষের দেহ মনকেই তার ভজনালয় রূপে বিবেচনা করেছেন:
‘হেথা স্রষ্টার ভজন আলয় এই দেহ এই মন,
হেথা মানুষের বেদনায় তার দুঃখের সিংহাসন।
সাড়া দেন তিনি এখানে তাহারে যে নামে যে কেহ ডাকে,
যেমন ডাকিয়া সাড়া পায় শিশু যে নামে ডাকে সে মাকে।’

নজরুল মানুষের কবি। সাম্যের কবি। তার বড় পরিচয় তিনি সাম্যবাদী কবি। নজরুলের সাম্যবাদ সকল মানবের মহামিলন। কবি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। মানুষকে কখনো তিনি ঘৃণার চোখে দেখেননি। তাই কবি বলেছেন:
‘বন্ধু, তোমার বুক ভরা লোভ, দু’চোখে স্বার্থ ঠুলি,
নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হয়েছে কুলি।’
মানুষকে তিনি সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কারো আসল পরিচয় হতে পারে না। আসল পরিচয় হলো, আমরা সবাই মানুষ। ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’ কবিতায় বলেছেন- ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারি! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।’
এছাড়াও তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে:
‘জাতের চাইতে মানুষ সত্য
অধিক সত্য প্রাণের টান
প্রাণ ঘরে সব এক সমান।’

‘ঈশ্বর’ কবিতায় নজরুল ইসলাম ঈশ্বর অন্বেষণের ব্যাপারে বলেছেন, বনে-জঙ্গলে, পর্বত চূড়ায় ঈশ্বর অন্বেষণের কোনে প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর মানব মনেই অধিষ্ঠিত। আর শাস্ত্র অন্বেষণে না গিয়ে সত্যের সন্ধানে অগ্রসর হতে বলেছেন। ঈশ্বর মানুষের মধ্যেই বিরাজিত, তাকে বাইরে না খুঁজে নিজের মধ্যে ডুব দিতে হবে। কবি বলেছেন, ‘স্রষ্টারে খোঁজো আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে।’

সর্বোপরি কবি ‘সাম্য’ কবিতায় স্বপ্নের দেশথ আদর্শ দেশের কথা বলেছেন। এমন দেশ যেখানে রাজা-প্রজা নেই, ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ নেই। ‘সাম্যবাদী’ এ স্থানে বর্ণবৈষম্য নেই, এখানে সাদা ও কালোদের জন্য আলাদা গোরস্তান বা গির্জা নেই। এখানে কোনো ধর্মের বা শাস্ত্রের ভেদ নেই, নেই কোলাহল। সেখানে পাদ্রী পুরুত মোল্লা এক পাত্রে জল খেলেও জাত যাবে না, স্রষ্টা বাতিল হবে না।

সবশেষে বলা যায়, বিদ্রোহ প্রেম নারী ও সাম্যবাদ বাংলা সাহিত্যে নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম যে মমতায় মানবতা মিশ্রিত এ বিষয়গুলো প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন তা একান্তই অভিনব। এখানেই নজরুলের কবি চেতনার নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে।

 

গোপনে বিয়ে করলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি

অনেক নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিয়ে করলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। গণমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে হুট করেই বিয়ে করলেন এ নায়িকা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরাতে মাহির নিজের বাসায় বিয়ে সম্পন্ন হয়।

জানা যায়, পাত্র সিলেটের কদমতলীর ব্যবসায়ী মাহমুদ পারভেজ অপু। গত চার বছর যাবৎ তাদের পরিচয় থাকলেও উভয় পরিবারের সম্মতিতেই মাহি এবং অপুর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে গত ১২ মে খুব গোপনে মাহি ও অপুর বাগদান সম্পন্ন হয়।

মাহি জানান, আগামীকাল বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরায় একটি স্থানীয় রেস্টুরেন্টে মাহি তার স্বামী অপুকে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হবেন।

বিয়ে প্রসঙ্গে মাহি বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে খুব ভালো মনের একজন মানুষকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি। অপু গ্রামের সহজ সরল সাধারণ একজন মানুষ। এমন একজন মানুষই আমার জীবনে আমার পাশে চেয়েছিলাম। আল্লাহ আমার সেই ইচ্ছে পূরণ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি, পাশাপাশি সংসার জীবনটাও নিজের মতো উপভোগ করতে চাই। তাই সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমরা সুখে থাকতে পারি, ভালো থাকি।’

মাহিয়া মাহি আরও জানান, আগামী ২৪ জুলাই সিলেটে তার বৌ-ভাত সম্পন্ন হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে বন্ধুর সঙ্গে বিয়ের গুজব ওঠে মাহির। এছাড়া প্রযোজক আবদুল আজিজের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন ছিল মাহিকে নিয়ে সিনেমা পাড়ায় আলোচিত ঘটনা। সম্প্রতি আবদুল আজিজ মাহির সঙ্গে তার প্রেমের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আজিজের এমন তথ্য ফাঁসই মাহিকে গোপনে ত্বরিৎ বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে।