banner

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

নারীরা জানাজার পিছনে পিছনে যেতে পারবে কি?

সব প্রণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে । মৃত্যুর পরে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে নিজ নিজ আমল নিয়ে । সুতরাং প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে শরীয়তের আমলকেই প্রাধান্য দিতে হবে ।

সব প্রণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে । মৃত্যুর পরে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে নিজ নিজ আমল নিয়ে । সুতরাং প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে শরীয়তের আমলকেই প্রাধান্য দিতে হবে ।

মৃত ব্যক্তির জানাযা নামাজ পড়া হয়ে গেলে তার লাশ নিয়ে যখন গোরস্থানের যাওয়া হয়, তখন নারীরা সে সঙ্গে যেতে পারবে কি না, এ সম্পর্কে উম্মে আতিয়্যাহ [রা] থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- আমাদেরকে জানাযার অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে তবে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয় নি।

হাদীসের বাহ্যিক ভাষা নারীদের জন্য জানাযার পিছনে চলা হারাম বোঝায়। তবে উম্মে আতিয়্যাহ [রা.]-এর কথা “আমাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয় নি”- এ সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ [রহ.] বলেন- “মনে হয় সাহাবয়িার উদ্দেশ্য হলো, নিষেধ করার বিষয়টিতে জোর দেয়া হয় নি”। এ কথা জানাযার অনুসরণ করা হারাম হওয়ার পরিপন্থী নয়। হয়তো তিনি ধারণা করেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা হারাম নয়। এটা তার নিজস্ব বোধ, তার নিজস্ব বোধ শরীয়তের দলীল নয়, নবী [সা]-এর কথাই দলীল”।

সুতরাং মৃত ব্যক্তির জানাযার পিছনে পিছনে নারীদের চলা ইসলামি শরীয়তে নিষিদ্ধ ।

মূল : ড. সালেহ ইবনে ফাওজান
ভাষান্তর : মাওলানা মনযূরুল হক

 

দীর্ঘসময় বসে থাকা যেভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে আপনাকে!

সারা দিন-রাত মিলে ২৪ ঘন্টায় ঠিক কয় ঘন্টা জেগে থাকেন আপনি? কী করেন এই সময়ে? ঘরের কাজ, অফিসের কাজ, বাইরের টুকিটাকি কাজ- নিশ্চয় সবমিলিয়ে এতগুলো কাজের ফিরিস্তি দেবেন এখন? কিন্তু সেটার আগে একবার হিসেব করে দেখুন তো প্রতিদিন মোট কতক্ষণ চেয়ারে বসে থাকা হয় আপনার? যদি পরিমাণটা বেশি হয় তাহলে আপনার জন্যেই রয়েছে একটি মারাত্মক দুঃসংবাদ। আর সেটি হচ্ছে এই যে, চেয়ারে বসে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটানোটা আমাদেরকে কেবল আরামই দেয়না, সাহায্য করে নানারকম শারিরীক ঝামেলা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এগিয়ে যেতেও। কী করে?

দি এক্সপার্টসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, দীর্ঘসময় ধরে বসে থাকলে মানুষের শরীরে বেশকিছু ঝামেলা দেখা যেতে পারে। উদাহরনস্বরুপ-

১. হৃদপিন্ডের অসুখ

দীর্ঘসময় বসে থাকলে মাংসপেশীর নড়াচড়া কম হয় এবং ফ্যাট পোড়েনা। এছাড়াও রক্ত সঞ্চালনেও বেশ ঝামেলা তৈরি করে এটি। ফলে উচ্চ রক্তচাপ আর কোলেস্টরল বৃদ্ধির মতন ব্যাপার ঘটতে পারে এক্ষেত্রে যেটি কিনা কোনভাবেই হৃদপিন্ডের জন্যে ভালো কিছু নয়। দীর্ঘসময় বসে থাকেন এমন মানুষের অন্যদের চাইতে বেশি কার্ডিয়োভাসকুলার সংক্রান্ত রোগ-ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানা যায়।

২. ডায়াবেটিস

আমাদের শরীরের অগ্ন্যাশয় শরীরের যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উত্পন্ন করার চেষ্টা করে। তবে অতিরিক্ত সময় ধরে বসে থাকলে এই অগ্ন্যাশয়ই স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত মাত্রার ইনসুলিন তৈরি করে। ফলে সেটা আমাদেরকে নিয়ে যায় ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে আরো নানারকম জটিল রোগের দিকে।

৩. ক্যান্সার

গবেষকদের মতে, অত্যাধিক সময় বসে থাকলে সেটা আমাদের শরীরে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। আর এক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি এগিয়ে থাকে উদর, বক্ষ আর কোলন ক্যান্সার। অতিরিক্ত ইনসুলিন উত্পন্ন হলে কোষের আকৃতি বেড়ে যায়। ফলে সেখান থেকেও কিছু ঝামেলা সৃষ্টি হয়। যা কিনা ক্যান্সারকে ত্বরান্বিত করে।

৪. মাংসপেশির সমস্যা

অতিরিক্ত সময় বসে থাকলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার শরীরের মাংসপেশী কোন কাজ করবেনা আর ঘন্টার পর ঘন্টা কোনরকম নড়াচড়া ছাড়াই পড়ে থাকবে। এক্ষেত্রে বেম কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমত, এভাবে এক স্থানে অনেকক্ষণ নড়াচড়া ছাড়া বসে থাকার ফলে আপনার পশ্চাত্ অংশে কিছু ত্বক ও চামড়া সংক্রান্ত সমস্যা ও মাংসপেশীর সংকুচিত হয়ে যাওয়ার মতন ঝামেলা ঘটতে পারে। তাছাড়া স্বাভাবিক নড়াচড়া না করার ফলে একটা সময় মাংসপেশী বেশ দূর্বল ও স্বাভাবিক চলত্ শক্তিহীনও হয়ে যেতে পারে।

৫. পায়ের সমস্যা

বেশি সময় কোন গতি ছাড়া পা এক স্থানে রেখে দিলে সারা শরীরের সাথে পায়ের রক্ত সঞ্চালনের বেশ ঝামেলা সৃষ্টি হয়। ফলে একটা সময় প্যারালাইসিস, ঝিঁঝিঁ ধরা সহ নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া এটা সত্যি যে, পায়ের গাড়কে শক্ত ও মজবুত করার জন্যে দরকার পড়ে সেটার অনুশীলনের। কিন্তু বেশিরভাগ সময় স্থিরভাবে কোন কাজ ছাড়া থাকলে পায়ের হাড় নাজুক হয়ে পড়ে।

৬. অন্যান্য…

এসব নানাবিধ সমস্যা ছাড়াও মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে স্থিরভাবে আপনার এই দিনের বেশিরভাগ সময বসে থাকা। ঘাড়ে ব্যাথা, কাঁধে সমস্যা, মেরুদন্ডের হাড়ে সমস্যা- এ ধরনের ব্যাপারগুলো তো অনেক বেশিই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে এই ক্ষেত্রে।

ভাবছেন, তা হলে কি বসাই যাবেনা এখন থেকে আর? না! তা কেন? তবে বসার মাঝে একটু একটু করে নিজেকে সমসয় দিন। একটু উঠে হাঁটাহাঁটি করুন, ব্যায়াম করুন। আর বসতে গেলেও নিজের মেরুদন্ডকে সোজা রেখে, হাতকে কনুই বরাবর সোজা রেখে বসুন। যাতে করে পরবর্তীতে ঝামেলা না হয়।

লিখেছেন-

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

ফিচার রাইটার

 

চিংড়ি মাছের সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের রান্না গার্লিক শ্রিম্প

চিংড়ি মাছটি পছন্দ করেন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। প্রায় সবাই চিংড়ি এবং চিংড়ির তৈরির খাবার খেতে পছন্দ করেন। চিংড়ির মালাইকারি, চিংড়ি দোপেঁয়াজি, চিংড়ি ভুনা খেতে খেতে একোঘেয়েমী চলে এসেছে? নতুন কোন চিংড়ির রেসিপি খুঁজছেন? তাহলে আজকের রেসিপিটি আপনার জন্য। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ভিন্ন স্বাদের রেসিপি গার্লিক শ্রিম্প।

উপকরণ:

  • ১/২ কেজি চিংড়ি মাছ
  • ১/২ কাপ অলিভ অয়েল
    ১/২ কাপ রসুন কুচি
  • ১ চা চামচ লাল শুকনো মরিচ গুঁড়ো
  • ২ চা চামচ পাপরিকা
  • লবণ স্বাদমত
  • ৩-৫ টেবিল চামচ লেবুর রস
  • ১/২ কাপ পার্সলি/ধনেপাতা কুচি

প্রণালী:

১। চিংড়ি মাছে খোসা ছড়িয়ে পরিষ্কার করে মাথা ফেলে দিন।

২। মাঝারি আঁচে প্যানে অলিভ অয়েল গরম করতে দিন।

৩। তেল গরম হয়ে আসলে এতে লাল শুকনো মরিচ গুঁড়ো, রসুন কুচি দিয়ে এক মিনিট ভাজুন।

৪। তারপর এতে চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজুন।

৫। এটি ৩ মিনিট রান্না করুন। খুব বেশি সময় ধরে রান্না করা থেকে বিরত থাকুন। বেশি সময় রান্না করলে চিংড়ি শক্ত রাবারের মত হয়ে যাবে।

৬। এর সাথে পাপরিকা, লবণ এবং গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে দিন।

৭। মাছ সিদ্ধ হয়ে আসলে এতে লেবুর রস , পার্সলি পাতা কুচি দিয় দিন।

৮। সবগুলো উপাদান ভাল করে নেড়ে নামিয়ে ফেলুন।

৯। ভাত অথবা পোলাও এর সাথে পরিবেশন করুন মজাদার গার্লিক শ্রিম্প।

টিপস:

১। রসুনের পরিমাণটি আপনি নিজের স্বাদমতো আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন।

 

বর–কনে প্রস্তুত তো?

বিয়ের অনুষ্ঠান তিন-চার দিনে শেষ হয়ে গেলেও এর প্রস্তুতি কিন্তু চলতে থাকে অনেক দিন থেকেই। বিয়ের মূল কেন্দ্রে থাকেন বর-কনে, তাই তাঁদের প্রস্তুতি নেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। বিয়ের দিনটিতে সবাই চায় তাঁকে সুন্দর দেখাক। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য তাই রূপচর্চার প্রস্তুতিও শুরু করে দেওয়া উচিত অনেক দিন আগে থেকেই।
রূপবিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময় খুঁটিনাটি সব বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে বিয়ের কাজগুলো দায়িত্বশীল কয়েকজনের হাতে ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। মাথায় দুশ্চিন্তা থাকলে তার প্রভাব পড়বে চেহারাতেও। এ জন্য নিজের রূপচর্চা ও শারীরিক পরিচর্যার কাজটি বিয়ের কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু করে দেওয়া প্রয়োজন।
বর ও কনে কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা ও কাজী কামরুল ইসলাম।
কাজী কামরুল ইসলাম মনে করেন, নিজেদের সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিয়ের আগেই বর-কনেকে একজন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে রূপচর্চাবিষয়ক পরামর্শ নিতে হবে। ব্যস্ততার কারণে হয়তো দুই-এক মাস আগে থেকে সময় বের করে নিয়মিত রূপচর্চা করা সম্ভব নয়।
গায়েহলুদের অনুষ্ঠান দিয়েই সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি গায়েহলুদের এক বা দুই দিন আগে থেকেই শুরু করতে হবে। রাহিমা সুলতানাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

চুল
বিয়ের একদম আগে বর বা কনের চুলের কাট বা রং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত নয়। কারণ চেহারার সঙ্গে তা মানিয়ে যাওয়ার একটি বিষয় আছে। তাই অন্তত সাত দিন আগে এই কাজগুলো সেরে ফেলা উচিত।

ওয়্যাক্স ও থ্রেডিং
হলুদের অনুষ্ঠানের আগে এগুলো শেষ করে ফেলতে হবে। তবে অনেকেরই দ্রুত লোম গজানোর প্রবণতা থাকে। তাই দরকার হলে অনুষ্ঠানের আগের দিন ওয়্যাক্স ও থ্রেডিংয়ের কাজ করা উচিত।
ছেলেদের কানের কাছের লোমও ওয়্যাক্স করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন কাজী কামরুল ইসলাম।

ফেশিয়াল
বিয়ের কয়েক দিনে মেয়েদের ত্বকের ওপরে মেকআপের বড় রকমের একটা ধকল যায়। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে নয় বরং পরেই ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন বুঝে ফেিশয়াল করিয়ে নিতে হবে। গায়েহলুদের আগে ত্বক ভালোমতো পরিষ্কার করার জন্য ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস ওঠানোর জন্য একটি ফেস ক্লিনিং করানো যেতে পারে। অবশ্য ছেলেরা ফেশিয়ালের কাজটি হলুদের আগেই সেরে নিতে পারেন।

হেয়ার ট্রিটমেন্ট
এ ক্ষেত্রেও মেয়েরা অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর হেয়ার ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন। ক্লান্তি দূর করার জন্য দুই দিন আগে একটি হট অয়েল ম্যাসাজ নেওয়া যেতে পারে। ছেলেরা হেয়ার ট্রিটমেন্ট বিয়ের আগে করিয়ে ফেললে সমস্যা নেই।

স্পা
বিয়ের আগের ক্লান্তি কাটাতে ফুল বডি স্পা করাতে পারেন। বর-কনে দুজনের জন্যই এটি প্রয়োজনীয়।

হাত ও পায়ের যত্ন
মেহেদি পরতে হবে বিয়ের ঠিক আগের রাতে। এর আগেই পেডিকিওর ম্যানিকিওর ও ওয়্যাক্সিং করে ফেলা ভালো।

পরিচ্ছন্নতা ও মেকআপ তোলা
কাজী কামরুল ইসলাম শরীর দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে এক মাস আগে থেকে রোজ এক বালতি পানিতে এক চামচ ফিটকিরি মিশিয়ে গোসল করার পরামর্শ দেন। দাঁতে স্কেলিংয়ের প্রয়োজন হলে তা বিয়ের ১৫ বা ৩০ দিন আগেই করিয়ে ফেলা উচিত।

অনুষ্ঠানের দিন
ঘুম থেকে উঠে ভালো করে গোসল করতে হবে অনুষ্ঠানের দিনটিতে। চুল শ্যাম্পু করে এরপর কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর ভালোমতো শুকিয়ে নিন। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ত্বক শুষ্ক হলে কাঁচা হলুদ বা কোনো উপটান এদিন ব্যবহার করা উচিত হবে না, এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যাবে।
চুলে জেল লাগালে তা পরদিন ভালোমতো ধুয়ে ফেলতে হবে। আর যতই ক্লান্তি থাকুক, কনেরা যেন ঠিকমতো মেকআপ তুলতে ভুলে না যান। জলপাই তেল ও ক্লেনজার দিয়ে সম্পূর্ণ মেকআপ ভালোমতো তুলে ফেলতে হবে।
দিন শেষে চুলের ক্লিপ ও কাটা আস্তে আস্তে খুলে ফেলতে হবে, সেদিন চুলে আর কিছু করার দরকার নেই। পরদিন সকালে অনেক বেশি পরিমাণ তেল পুরো চুলে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভালোমতো শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগানোর পর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আস্তে আস্তে করে চুলের জট ছাড়াতে হবে। তাড়াহুড়া করে জট ছাড়ানোর চেষ্টা করলে চুল ছিঁড়ে যাবে।

খাওয়া ও ঘুম
বিয়ের আগে উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনায় পাত্রপাত্রীর ঘুম গায়েব হবে, তবে এটি মোটেও কোনো কাজের কথা নয়। বিয়ের আগে নির্ভার থাকতে হবে। দুশ্চিন্তা করে ঘুম আর আহারে অনিয়ম করা যাবে না। বিয়ের দিন বেশির ভাগ মানুষই ঠিকমতো খেতে পারেন না, অনুষ্ঠানের সময় তখন দুর্বল বোধ করতে থাকেন। রাহিমা সুলতানা বিয়ের দিন কনে ও বরকে প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার পানের পরামর্শ দেন। সঙ্গে অবশ্যই কিছু খেতে হবে। ভাত জাতীয় কিছু খেতে না পারলে মিষ্টি, চকলেট, টাটকা ফলের রস, ডাবের পানি একটু পরপর পান করতে হবে। বিয়ের আগে ভাজাপোড়া ও ভারী খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

 

ছাত্রী–কর্মজীবী নারী থাকবেন কোথায়?

নিশাত পারভেজ একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পাট চুকিয়েছেন সম্প্রতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপদ আবাসন হলও ছাড়তে হয়েছে। হল ছাড়ার পর থেকেই শুরু হলো বিড়ম্বনা।
একটি জুতসই আবাসনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঢুঁ দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ার, পলাশীতে সাবলেটে (কোনো পরিবারের সঙ্গে বাসা ভাগাভাগি করে থাকা) থাকার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অন্যদিকে ছোট রুম নিলেও তা তিনজনে নিতে হবে, শুধু এক রুমের জন্য ভাড়া ১০ হাজার টাকা। খাওয়ার পানিও বাইরে থেকে কিনে খেতে হবে। তাই সেখানে থাকার চিন্তা বাদ।
নিশাত বর্তমানে ঢাকা কলেজের বিপরীতে এক গলিতে কয়েকজন মিলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। একটি ছোট পরিবারের থাকার উপযোগী বাসাটি। এখানে চৌকি বসানোর জায়গাসহ আর খানিকটা জায়গা বরাদ্দ একেকজনের জন্য। ভাড়া চার হাজার টাকা। খাওয়ার খরচ নিজের। এই বাসায় অন্য একজন ভাড়া ছিলেন। ওই নারীর বিয়ে হয়ে গেলে তিনি এখন আবার ভাড়া দিয়েছেন। অর্থাৎ মালিক পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে হোস্টেল বা সাবলেটের চেয়ে খরচ একটু বেশি হলেও নিরাপত্তা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয় না।
রাজধানীর ফার্মগেটে একটি নামকরা হোস্টেলের এক বাসিন্দা বললেন, ‘মন চাইলেই মালিক সিটের ভাড়া বাড়ান। ওয়াসার অজুহাত দেখিয়ে প্রায়ই পানি বন্ধ করে দেন। বাজে ব্যবহার তো আছেই। ঘর এতটাই ছোট যেন মনে হয় কবুতরের খাঁচায় বসবাস করছি। নিম্নমানের খাবার দেন, তাই নিজেই রান্না করি। কিন্তু খাবারের পুরো টাকাই দিতে হচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়েও খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারি না। তবে হোস্টেলের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে গেলেই মালিক সিট বাতিলের হুমকি দেন।’ প্রতিবাদ করার কারণে আগামী এক মাসের মধ্যে সিট ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে ওই বাসিন্দাকে।
উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির জন্য রাজধানীতে আসা বিভিন্ন বয়সী নারীদের আবাসনের জন্য এ ধরনের ঝক্কি সামলাতে হচ্ছে। আর ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন হোস্টেল পরিচালিত হচ্ছে কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকেরও বেশি ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি। পাঁচটি আবাসিক হল ও দুটি হোস্টেলে আবাসিক ছাত্রীর সংখ্যা ৬ হাজার ৩৪৪।

রাজধানীর অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছাত্রীদের আবাসনসংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এই শিক্ষার্থীরা বাধ্য হচ্ছেন অলিগলিতে গজিয়ে ওঠা হোস্টেলগুলোতে থাকতে। গণমাধ্যম বা যেসব কর্মক্ষেত্র থেকে কাজ সেরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়, সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের হোস্টেলে সিট পাওয়াই কঠিন ব্যাপার।
হোস্টেলে থাকা নারীদের আবার খানিকটা ভিন্ন চোখেও দেখা হয়। ২০১৪ সালে মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে সাতটি বাড়ি নিয়ে গড়ে তোলা ্একটি ছাত্রী হোস্টেলে বখাটেরা হামলা চালায়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবেদকের সামনেই হোস্টেলটির তত্ত্বাবধায়ক রাবেয়া সুলতানা এক ছাত্রীকে বলেন, ‘হামলা তো হবেই, তোমরা শার্ট-প্যান্ট পরো কেন?’ অর্থাৎ সব দোষ যেন মেয়েদেরই।
ভাড়াটেদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে—এমন ১৩টি সংগঠনের জোট বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া ফেডারেশনের মহাসচিব মো. বাহরানে সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর আগের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে একসঙ্গে কয়েকজন মিলে মেস করে থাকা ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা ১৪ লাখ। এই হিসাবে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার নারী ও পুরুষদেরও ধরা হয়েছে।’ ঢাকা শহরে মেয়েদের জন্য বেসরকারি হোস্টেলের সংখ্যা বা মোট কতজন হোস্টেলে থাকেন, সেই পরিসংখ্যান নেই এই ফেডারেশনের কাছে। বাহরানে সুলতান বলেন, ‘হোস্টেলে থাকা মেয়েদের নানা সমস্যার কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ না করলে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না।’
মেয়েদের হোস্টেল পরিচালনার জন্য আলাদা কোনো নীতিমালা নেই। ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী হোস্টেলের নিবাসীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়ার কথা। তবে তা মানা হচ্ছে না। ভাড়ার ব্যাপারে ফার্মগেটের নিবেদিকা হোস্টেলের একটি শাখার ব্যবস্থাপক সেকেন্দার আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও কোচিং মৌসুমে ছাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি হলো, তিন মাস পরে সিট খালিও থাকতে পারে। যোগ করলেন, ‘আমরা তো আর অন্যদের মতো ছয় মাসের চুক্তি করছি না। চুক্তি করলে তো ছয় মাসেরই ভাড়া দিতে হয়। সেই হিসাবে আমরা তো ভাড়া কমই নিচ্ছি।’
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সারা দেশে মোট সাতটি (ঢাকায় তিনটি) কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালনা করছে। ঢাকার বাইরে পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জাতীয় মহিলা সংস্থা রাজধানীতে কর্মজীবী নারীদের জন্য একটি হোস্টেল পরিচালনা করছে। এসব হোস্টেলে সিট না পাওয়া একাধিক নারী জানালেন, সরকারি হোস্টেলে সিট পেতে হলে সরকারের ওপর মহলের তদবির লাগে। এ ছাড়া মাসের পর মাস কেউ অপেক্ষা করতে পারলে, অর্থাৎ সবুরে মেওয়া ফললে ফলতেও পারে। কিন্তু অপেক্ষা করার তো সময় নেই।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চশিক্ষা এবং কর্মে নারীদের এগিয়ে আনার জন্য সরকারের নীতি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নেই। কিন্তু তার বাস্তবায়ন সেভাবে হচ্ছে না। ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা বা বেসরকারি খাত নারীদের আবাসনসংকট নিরসনের চেষ্টা করছে। তাদেরও একটি নিয়মনীতির আওতায় আনা প্রয়োজন।

 

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাপতুন

হঠাৎ করেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের সহায়তা বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট) থেকে একটি ই-মেইল আসে। ই-মেইলে তাপতুন নাসরীনের জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। কথাও বলতে চায়। তাপতুনের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নেওয়ার কয়েকটি ছবি দিতে বলে। তারপর একদিন দেখা করার তারিখ নির্ধারিত হয়। নির্ধারিত তারিখে গিয়ে জানা গেল, সেদিনই রেকর্ডিং। শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নেওয়া তিনজনের কাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র তৈরি করা হবে। এই ভিডিও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখানো হবে। যাতে করে অন্যরা এ ধরনের মিশনে কাজ করতে উৎসাহী হন। ঘটনাটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের। ইউটিউবে এই বিজ্ঞাপনচিত্র সবাই দেখতে পাচ্ছেন।
তাপতুন নাসরীন অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য ভিডিওতে অংশ নেওয়ার গল্প বলছিলেন। তবে সরাসরি গল্প শোনার অবকাশ নেই। কেননা বছর খানেক হলো তাপতুন নাসরীন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পিসকিপিং অপারেশনস বিভাগে পলিসি অফিসার (পি ৪ লেভেল) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই আলাপচারিতা চালাতে হলো টেলিফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
তাপতুন জানালেন, দ্য রোল অব ল অ্যান্ড সিকিউরিটি ইনস্টিটিউশনে তাঁর বর্তমান পদে শান্তিরক্ষা বিষয়ে নানান নীতি, ম্যানুয়াল তৈরিসহ কাজের অন্ত নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্টারপোল, আমেরিকান পুলিশ কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ। দীর্ঘ দুই বছর নানান প্রক্রিয়া, অনলাইনে লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ শেষেই মিলেছে এ কাজ। লিখিত পরীক্ষায় খুব কম সময়ে পিসকিপিং বিষয়ে একটি সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়, তবে তা হতে হবে জাতিসংঘ যেভাবে চায়। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই তিনি এই পদে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৮ বছর ধরে দেশে ও বিদেশে নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, অপারেশনস এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-বিষয়ক নানান কাজের অভিজ্ঞতা তাঁর। দেশে এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে লেখালেখি ও প্রকাশিত গবেষণার সংখ্যাও অনেক। পুলিশে যোগ দেওয়ার পর থেকেই শুনতেন সবাই জাতিসংঘে কাজ করতে চান। সদর দপ্তরে কাজ করা ভাশুরের কাছ থেকেও নানান গল্প শুনে সেখানে কাজ করার স্বপ্নটা একটু একটু করে বড় হচ্ছিল।জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে
এক ছেলে ও এক মেয়ের মা। স্বামী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে আছেন নিউইয়র্কে। অর্থাৎ পুরো পরিবার একসঙ্গে। শুধু এখানেই নয়, ২০০৫-২০০৬ সালেও স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে লাইবেরিয়া মিশনে যান। তখন দুই ছেলেমেয়েও সঙ্গে ছিল। সেখানে দায়িত্ব পান নির্বাচনের। লাইবেরিয়ার প্রথম নির্বাচন। চারপাশে সংক্ষুব্ধ মানুষ। সেবার আফ্রিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে শেষ বিচারে সেখানে দক্ষতা দেখাতে পেরেছিলেন, যার কারণেই ইউএন মেডেল পান তিনি। দেশে ফেরার পর আবার অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি নিয়ে যান উচ্চতর শিক্ষার জন্য।
২০০০ সালে সাভারে যখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করতেন, তখন ‘মহিলা’ পুলিশ দেখার জন্য রাস্তায় ভিড় জমে যেত। তাপতুন বলেন, সময় কিন্তু পাল্টেছে। মানুষ জানে, নারীরা কাজ করছেন। নারীদের কাজ তাকিয়ে দেখার বিষয় নয়। এখন বাংলাদেশের রাস্তায় নারী সার্জেন্টরা দাপটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষা ও কর্মজীবনে ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল, টেবিল টেনিস, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানান বিষয়েও সব সময় এগিয়ে থাকতেন তিনি। তাপতুন বলেন, সংসার ও ক্যারিয়ার দুটোই জীবনের অংশ। ফলে নারীদের ঘরে-বাইরে দুই জায়গায় সমানতালে কাজ করতে হয়। তবে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে ইচ্ছাকৃত কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। সেগুলো মোকাবিলা করেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন।
তাঁরা সাত বোন ও দুই ভাই। তাপতুনের বাবা এ এস এম নুরুল হোসাইন বেঁচে নেই। মা সৈয়দা রওশন আরার শরীরটা ভালো নেই। তাপতুনের মন ছুটে যায় মায়ের কাছে। তবে বাস্তবতার কাছে হার মানেন।