banner

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

যত্ন নিন প্রিয় ফোনের

কথা বলে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, ছবি দেখা, গান শোনা, ইন্টারনেট ব্যবহার, সময় দেখা, সকালে অ্যালার্মে ঘুম থেকে উঠে দিন শুরু করাসহ আমাদের জীবনের প্রতিটি সময়ের সঙ্গী এখন মোবাইল ফোন। আমরা পছন্দের সেট ব্যবহার করি নিজের রুচি সামর্থ অনুযায়ী।

প্রতিমুহূর্ত যে যন্ত্রটি আমাদের সঙ্গে থাকে, সেই প্রিয় এবং প্রয়োজনীয় ফোন সেটটি ব্যবহারে যত্নশীল হতে হবে। কারণ গুরুত্বপূর্ণ এ যন্ত্রটি বিকল হয়ে গেলে ঝামেলার শেষ থাকে না। আমাদের অসচেতনতা এবং যত্নের অভাবে অনেক সময় মোবাইল সেট নষ্ট হয়ে যায়।

ফোন সেট দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে যা করতে হবে:
•    সেটে চার্জ অবশিষ্ট থাকতেই, চার্জ দিন। তবে চার্জ না ফুরালেও ঘন ঘন চার্জ দিলে কিংবা মোবাইলের ব্যাটারির ভোল্টের চেয়ে বেশি ভোল্ট সম্পন্ন চার্জার দিয়ে চার্জ দিলে সেটের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে
•    অনেক সময় প্রিয় সেটটি হাত ফসকে পড়ে যেতে পারে। তাই পড়ে গেলেও যেন সেটটি নিরাপদ থাকে এজন্য পছন্দ মতো কোনো কভার ব্যবহার করুন
•    গরম চলে এসেছে এখন প্রায়ই বৃষ্টি হবে মোবাইলে পানি ঢুকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারি খুলে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন
•    তবে বৃষ্টির দিনে বাইরে বেরুনোর সময় সেটটি ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ কিংবা কাগজের ভেতরে নিয়ে বের হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ
•    বাচ্চারা মোবাইলের ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে থাকে। কিন্তু শিশুদের হাত থেকে পড়ে গিয়ে আপনার প্রিয় সেটটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ফোন সেটটি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন
•    কম্পিউটার থেকে মোবাইলে গান বা অন্যান্য ফাইল নেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন যেন সেটে ভাইরাস আক্রমণ না করে
•    টাচ স্ক্রিন ফোন হলে ব্যবহারে অতিরিক্ত সতর্কতা জরুরি। এ ধরনের সেট কখনও ভেজা হাতে ধরবেন না। জোরে চাপ দিয়ে কমান্ড দেওয়াও ঠিক নয়। অনেক সময় ধুলাবালি কিংবা তেল, পানির সংস্পর্শে এসে পর্দার স্পর্শকাতরতা নষ্ট হয়ে যায়, তাই টাচ স্ক্রিন ফোন ব্যবহার করতে হবে সাবধানে
•    অনেক সময় ধুলাবালি গিয়ে মোবাইলের স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে সাবধানে সেট খুলে স্ক্রিন ও কি প্যাড আলাদা করে পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে নিন
•    পাবলিক বাসে যাতায়াত করার সময় অথবা ভীড়ের মধ্যে ফোন সেট চুরি হওয়ার আশংকা থাকে। এসব স্থানে ফোনটি হাতে রাখতে পারেন
•    ব্যাগে বা পকেটে রাখার সময় সেটের কি প্যাড লক করে রাখুন
•    মোবাইল সেটে বেশি গেমস খেলা ঠিক নয়
•    সেটে কোনো ধরণের সমস্যা দেখা দিলে নিদির্ষ্ট সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে দেখান।

প্রিয় ফোন সেটটি যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করুন। তাহলেই সেটটিও আপনাকে অনেক দিন সঙ্গ দেবে।

 

চাপ-পরোটা

রাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে যখন ক্ষুধা লেগেছে অনেকদিনই হয়তো ছুটে গেছেন পুরান ঢাকার খাবারের দোকানগুলোতে। প্রায়ই অনেকের মুখে এই গল্প শুনি। তাদের কথায়ই বোঝা যায় এখনও সেই আড্ডা আর গরুর মাংসের চাপ আর পরোটা ভীষণ মিস করেন সবাই।

সব সময় তো পুরান ঢাকায় গিয়ে সেই মজার খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না,  কিন্তু মাঝে মাঝে ঘরেই তো তৈরি করা যায়।

উপকরণ:

হাড়ছাড়া গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, কাবাব মসলা ২ চা চামচ, আদা ও রসুনবাটা ২ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ চা চামচ, কাঁচা মরিচবাটা ২ চা চামচ, জিরা ও ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া ১ চামচ, শুকনা মরিচ গুঁড়া ১ চামচ, পেঁপে বাটা এক কাপ, টক দই এক কাপ, লবণ স্বাদমতো, তেজপাতা ২টি, গরম মসলা গুড়াঁ ১ চা চামচ, লেবুর রস ২ চা চামচ, সয়াবিন তেল প্রয়োজনমতো।

প্রণালী:

গরুর মাংস পাতলা করে কেটে নিয়ে ছেঁচে নিতে হবে। এর সঙ্গে পেঁয়াজ-রসুন-আদা-কাঁচা মরিচ বাটা, লবণ, কাবাব মসলা, জিরা, ধনে গুঁড়া, তেজপাতা, গরম মসলা, টক দই ও লেবুর রস দিয়ে মেখে ২ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখুন।

এবার ফ্রাই প্যানে তেল গরম হলে মাংস দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন। মাংস সিদ্ধ হলে আ‍ঁচ বাড়িয়ে ভাজতে থাকুন। মাংসের রঙ কালচে হয়ে এলে নামিয়ে নিন। পরোটার সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

জেনে নিন পরোটা কীভাবে তৈরি করবেন।

উপকরণ:

ময়দা ৪ কাপ, দুধ ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লবণ ১ চা চামচ, পানি পরিমাণমতো, তেল পরিমাণমতো।

প্রণালী:

ময়দা, চিনি, লবণ, অর্ধেক ঘি ও দুধ দিয়ে মেখে পরিমাণমতো পানি দিয়ে পরোটার ডো তৈরি করুন। এবার গোল রুটি বেলে তেলের প্রলেপ দিয়ে তার ওপর ময়দার ছিটিয়ে দিয়ে মাঝ থেকে পেঁচিয়ে পরোটার লেচি করে নিন। এভাবে ২০ মিনিট রেখে দিন। পছন্দের আকারে পরোটা বেলে ডুবো তেল ও ঘি তে সোনালী করে ভেজে তুলুন।

সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

বন্ধুরা একটি টিপস, প্রিয়জনের কাছে আরও প্রিয় হওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে সে যে খাবারটি পছন্দ করে সেটা ঘরে তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে তাকে সারপ্রাইজ দেওয়া।

 

প্রতি ভিজিটে তিনটি রুমে বিশেষ ছাড়

ভ্রমণ রসিকদের জন্য সু-খবর নিয়ে এলো বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। পর্যটন বর্ষে সরকারি এই সংস্থাটির অধীন সব হোটেল-মোটেলে পাওয়া যাবে বিশেষ এই সুবিধা।

মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে একটি প্রিভিলেজ কার্ড করতে হবে। এতে প্রতি ভিজিটে বাংলাদেশের যেকোন প্রান্তে পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলে তিনটি রুমে ২৫ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে। এই সুবিধা শুধুমাত্র পর্যটন বর্ষকে কেন্দ্র করে দেওয়া হচ্ছে।

শুধু নিজে নয় কার্ডটি দিয়ে সুবিধা নিতে পারবেন পরিচিত যে কেউ। একবার ভিজিট করে আসার পর নিজের প্রিয়জন, বন্ধু, বান্ধবের কাছে এই কার্ডটি হস্তান্তর যোগ্য। কার্ডের মেয়াদ এক বছর, পরবর্তীতে কার্ড রিনিউ করার সুযোগও থাকছে।

প্রিভিলেজ কার্ড করতে কোনো বেগ পেতে হবে না ভ্রমণপ্রেমীদের। পর্যটন করপোরেশনের যেকোন মোটেলে গিয়ে ৩০০ টাকা দিলেই নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে মিলে যাবে বিশেষ এই কার্ডটি।

মাত্র একটি কার্ড-ই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দকে আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ২০১৬  সালের পর্যটন বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে পরিদর্শন করে এই সুযোগ গ্রহণ করা যাবে।

ভিজিট বাংলাদেশের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী তিন বছরে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করবে বলে প্রত্যাশা পর্যটন করপোরেশনের।

পর্যটন বর্ষে বাংলাদেশ বিমান ও নভো এয়ারে থাকছে ১০ শতাংশ ছাড়। কোনো বিদেশি পর্যটক এই দুটি বিমানে বাংলাদেশে আসার পর যদি পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলে অবস্থান করেন তাহলে পাবেন ছাড়ের সুবিধা।

পর্যটন করপোরেশনের অপরূপ চৌধুরী (পিএইচ,ডি) বাংলানিউজকে বলেন, এই তিন বছরে ১০ লাখ ট্যুরিস্ট টার্গেট। আমাদের মূল টার্গেট বিদেশে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়ানো, সেই লক্ষে নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর একটি প্রিভিলেজ কার্ড। যদিও এই কার্ডের সুবিধা অন্যান্য সময়ও পাওয়া যাবে।

বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে পরিদর্শনের জন্য এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন তিনি, কেননা এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক ভাল।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বিপনন ব্যবস্থাপক ও ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (এনএইচটিটিআই) অধ্যাপক পারভেজ আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রিভিলেজ কার্ড ভিজিটরদের জন্য বাড়তি সুবিধা। এই কার্ড হস্তান্তরযোগ্য করা হয়েছে, যেন বেশি লোক পরিদর্শন করতে পারে। আমরা চাই এই দেশটাকে মানুষ ভাল করে দেখুক, কত অপার সম্ভাবনাময় আমাদের এই দেশ। আশা করি, দেশি-বিদেশি পর্যটক এ বছর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করবে।

 

কিভাবে পাবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স…?

12020029_623714807732311_6324553752856843460_nড্রাইভিং লাইসেন্স করা দরকার কিন্তু

জানেন না কিভাবে পাবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স…?গাড়ি চালানো জানলেই আপনি কি চাইলেই রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে পারবেন? গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে থাকে।

আজ আপনাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। আমন্ত্রন জানাচ্ছি আপনাদের আমি মাসুদুর রহমান মাসুদ এ আয়োজনে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে বিআরটিএ’র ওয়েবসাইট থেকে লার্নার বা শিক্ষানবিস ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। বিআরটিএ অফিসেও বিনামূল্যে লার্নার ফর্ম দেওয়া হয়। এটি পূরণ করে লার্নার অর্থাৎ শিক্ষানবিস লাইসেন্সের জন্য নির্দিষ্ট ব্যাংকে সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়।

মোটরসাইকেল ও গাড়ির লাইসেন্স ফি একই। তবে মোটরসাইকেলের কোনো পেশাদার লাইসেন্স দেওয়া হয় না।

শিক্ষানবিস ফি
একটি যানের জন্য ৩৪৫ টাকা(১৫% ভ্যাটসহ)।
দু’টি (গাড়ি ও মোটরসাইকেল) যানের জন্য ৫১৮ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।
লার্নার নবায়ন ফি ৮৭ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।
শিক্ষানবিস থেকে পূর্ণমেয়াদের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নির্ধারিত পরীক্ষা দিতে হয়। এর জন্যও রয়েছে আলাদা ফি।

অপেশাদার লাইসেন্স ফি : ২,৩০০ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।
পেশাদার লাইসেন্স ফি : ১,৪৩৮ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।

প্রথমে লার্নার বা, শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে আপনাকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য।

আবেদনকারীর স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভূক্ত তাকে সেই সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। সার্কেল অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে একটি শিক্ষানবিস বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে, যা দিয়ে আবেদনকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন।

প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেটের তত্ত্ববধানে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ঢাকা জেলা সার্কেলের পরীক্ষা দিতে হলে যেতে হবে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায়।

নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টে অংশগ্রহণ করতে হয়। ট্রাফিক আইন, ট্রাফিক সংকেত সম্পর্কিত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর লিখতে হয়। ফিল্ড টেস্টে সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে ও পরীক্ষকের নির্দেশনা মতো গাড়ি চালিয়ে দেখাতে হয়। এ ধাপে পাশ করলে লাইসেন্স দেওয়া হয়।

শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যেসব কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে আপনাকে

১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২. রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ।
৫. সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

তিনটি পরীক্ষায় পাশ করার পর নির্ধারিত ফর্মে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি দিয়ে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

নির্ধারিত দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ) দেওয়ার জন্য উপস্থিত হতে হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষে বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ইস্যু করে। স্মার্ট কার্ড পাওয়ার তারিখ এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করতে হলে আরও কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে আপনাকে।

পেশাদার হালকা (মোটরযানের ওজন ২৫০০ কেজি’র নিচে) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।

পেশাদার মধ্যম (মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে।

পেশাদার ভারী (মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে।

এছাড়া পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীকে প্রথমে হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। এর ন্যূনতম তিন বছর পর তিনি পেশাদার মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আর মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কমপক্ষে তিন বছর পর ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়।

অপেশাদার হলে ১০ বছর, পেশাদার হলে ৫ বছর মেয়াদে লাইসেন্স ইস্যু হয়। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে তা নবায়ন করতে হয়। বিআরটিএ-তে নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।

নবায়নের জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে আপনাকে
১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২. রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সাটিফিকেট।
৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ।
৫. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন।
৬. সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।

প্রয়োজনে আবেদনের মাধ্যমে লাইসেন্স এক এলাকার লাইসেন্স অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা যায়।

প্রথমে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ’র নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র ঠিকভাবে পাওয়া গেলে একইদিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়। স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে পুনরায় ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হয়।

আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ সকলকে। এ বিষয়টি আপনার বন্ধুদের জানাতে পোষ্টটি শেয়ার করতে পারেন। সকলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

 

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প লাইসেন্স পদ্ধতি

শিল্পনীতি ২০১০ এর আলোকে শিল্প নিবন্ধনের জন্য শিল্প উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন দাখিল করেন। অতঃপর সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কর্তৃক কারখানার স্থান পরিদর্শন ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গ্রহণযোগ্য হলে নির্ধারিত ফি গ্রহণসাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। সাধারনত সর্বোচ্চ নয় কার্য দিবসের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।  জেলা কার্যালয় থেকে এ সেবা পাওয়া যাবে।

কার্যদিবস প্রয়োজনীয় ফি

১০০ – ৩০০০ টাকা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অনুমোদিত নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি এর বিবরণ

• কুটির শিল্প নিবন্ধন ফরমের মূল্য: ৫০/=

• ক্ষুদ্র শিল্প নিবন্ধন ফরমের মূল্য: ১০০/-

• কুটির শিল্প নিবন্ধন ফি: সকল শ্রেণি ১৫০/-

• ক্ষুদ্র শিল্প নিবন্ধন ফি: সকল শ্রেণি ১. ১০.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত-১০০০/- শ্রেণি ২. ১০,০০,০০১/- লক্ষ টাকা হতে ২০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২০০০/- শ্রেণি ৩. ২০,০০,০০০/- লক্ষ টাকার উপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০০০/-

• ক্ষুদ্র শিল্প নবায়ন ফি: সকল শ্রেণি ১. ১০.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০০০/- শ্রেণি ২. ১০,০০,০০১/- লক্ষ টাকা হতে ২০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত- ২০০০/- শ্রেণি ৩. ২০,০০,০০০/- লক্ষ টাকার উপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০০০/-

 

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী
সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক/জেলা শিসকে প্রধান

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. আবেদনপত্র ও তার ক্রয়ের রসিদ

২. জমি/দালানকোঠার মালিকানা/ভাড়ার উপযুক্ত প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি।

৩. যন্ত্রপাতির তালিকা, নাম, পরিমাণ, মূল্য (লক্ষ টাকায়) (সাদা কাগজে কিংবা প্যাডে স্বাক্ষরসহ)/বৈদেশিক যন্ত্রপাতি হলে এল সি কপি, প্রফরমা ইনভয়েস কপি ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত।

৪. কারখানার হালসনের ট্রেড লাইসেন্স

৫. উদ্যোক্তার জাতীয়তার সনদপত্র

৬. ঋণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানের বেলায় ঋণ মঞ্জুরীপত্র সত্যায়িত কপি

৭. আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি- ১ কপি

৮. কোম্পানির বা নিজ নামে আপ-টু-ডেট টিন

৯. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিবেশ এবং ফায়ার সনদ আপ-টু-ডেট

১০. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের মান, গুণাগুণ ও ধরন যাচাইয়ের জন্য STI, DRUGS, BSCIR কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে আপ-টু-ডেট সনদ

১১. লি. কোম্পানি হলে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল এবং মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশনের আপ-টু-ডেট সনদ বা অংশীদারি হলে অংশীদারি চুক্তিনামা দলিল

১২. কাঁচামালের বিবরণ, নাম, পরিমাণ, মূল্য (লক্ষ টাকায়) (সাদা কাগজে কিংবা প্যাডে স্বাক্ষরসহ)
সেবা প্রদানে ব্যর্থ হলে প্রতিকারকারী কর্মকর্তা
শিল্প সহায়ক কেন্দ্র প্রধান অথবা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক পরিচালক অথবা পরিচালক (উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ)

 

শুভকামনা রইল সকলের জন্য।  আমাদের সাথে থেকে নিয়মিত আপডেট পেতে ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন। সেই সাথে আপনার মতামত জানাতে ভুল করবেন না।

 

শূন্য হাতে শুরু, এখন সফল উদ্যোক্তা

ঘটনাটা ৩১ বছর আগের। এক তরুণী জীবিকার তাগিদে কাজ নেন পোশাক কারখানায়। মাননিয়ন্ত্রণকর্মী  হিসেবে ৮০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু। কাজে যোগ দিয়ে কিছু সময় যেতেই নিজের ভেতরই যেন পরিবর্তনের ডাক পেলেন—এভাবে হবে না।

এগোতে হলে শিখতে হবে মেশিনের কাজ। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ধরলেন মেশিন। কাজের দক্ষতায় পেতে থাকেন পদোন্নতি। এবার সচল হলো স্বপ্নও। পোক্ত হয়ে একসময় কাজ ছেড়ে নিজেই গড়লেন প্রতিষ্ঠান। শূন্য হাতে শুরু করে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর নাম বেবি হাসান। বিএস অ্যাপারেল নামের একটি বায়িং হাউসের কর্ণধার তিনি।নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সফল উদ্যোক্তাদের একজন হয়েছেন বেবি হাসান। তাঁর অধীনেই কাজ করছেন প্রায় অর্ধশত কর্মী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানির কাজ করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। বছরে লেনদেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।সফল ব্যবসায়ী হবেন, এমন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মজীবন শুরু করেননি বেবি। অনেকের মতো তাঁরও শুরুটা জীবিকার তাগিদেই। এসএসসি পাস করার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে ১৯৮১ সালে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। বিয়ের পরবর্তী বছর জন্ম নেয় কন্যাসন্তান। স্বামীর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তাই সংসারে কিছুটা স্বস্তি আনতে নিজেই চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পরিবারের কেউ উৎসাহ না দেখালেও পরে অবশ্য মেনে নিয়েছেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পোশাক কারখানায় কাজ করেন বেবি। একসময় উৎপাদন পরিচালকের দায়িত্বও পান।

সে সময়গুলোর কথা উঠতেই বেবি হাসানের চেহারায় দৃঢ়তা। বললেন, ‘দিনে ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করতাম। সকাল আটটায় কাজ শুরু হতো, ফিরতাম রাত ১০টার দিকে। কোনো দিন কাজে অবহেলা করিনি। শুরুতে অনেক দূর যেতে হবে এমন লক্ষ্য ছিল না, তবে যখন কাজটাকে ভালোবেসে ফেললাম, তখন স্থির করলাম একটা পর্যায়ে যেতে হবে।’
নব্বইয়ে দশকের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠান বদলে একটি বায়িং হাউসে যোগ দেন বেবি। পাশাপাশি টুকটাক এ–সংক্রান্ত ব্যবসাও শুরু করেন।

২০০০ সালে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের একটি সংগঠনের সদস্য হন তিনি। হাতে তেমন নগদ টাকা ছিল না, তাই দ্বারস্থ হন ব্যাংকের। দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে হালিশহর কে ব্লকে ‘বিতনু’ নামের একটি বুটিকের শোরুম খোলেন। ওই বছরই চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইম্যান এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন (উই)। ওই সংগঠনের সদস্য হন বেবি।

২০০০ সালের শেষের দিকে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ জন অংশ নেন কলকাতার একটি কুটিরশিল্প মেলায়। সেখানে গিয়েই চোখ খুলে যায় তাঁর। তিনি বলেন, ‘ওই মেলায় গিয়েই ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। কী করে জানি সেদিনই ব্যবসার পোকা ঢুকে যায় মাথায়। মনস্থির করি, আমাকে ব্যবসায় সফল হতে হবে।’

২০০২ সালে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একটি বায়িং হাউস দাঁড় করানো শুরু করেন। এরপর ২০০৯ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন বিএস অ্যাপারেল নামের পৃথক বায়িং হাউস। বছর বছর এই প্রতিষ্ঠানের কলেবর বাড়ছে। মা বেবি হাসানের সঙ্গে ছেলে সালাহউদ্দিন চৌধুরীও সম্প্রতি ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন।

প্রায় শূন্য থেকে আজকের অবস্থানে আসার কৃতিত্বের ভাগ বেবি হাসান দিতে চান আরও দুজন নারীকে। একজন তাঁর মা ফরিদা খাতুন, অন্যজন ব্যবসায়ী নেতা মনোয়ারা হাকিম আলী। ১৯৯৮ সালে অসুস্থতায় ভুগে বেবি হাসানের মা মারা যান। মেয়ের চূড়ান্ত সাফল্য মা দেখে যেতে পারেননি, এই কষ্টই এখন তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। বেবি হাসানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে হলেও তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে।

চাকরির পাশাপাশি সংসারের দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিল না। কিন্তু তাতে দুঃখ নেই বেবির। তিনি বলেন, চাকরি বা ব্যবসা মেয়েদের জন্য খুব কঠিন, এমনটি কখনো মনে হয়নি। চেষ্টা থাকলে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন।’ এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন বেবির মুখে সাফল্যর তৃপ্তির হাসি। বললেন, ‘পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাঁদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করো। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করব না, চাকরি দেব।’

লিখাটি প্রথম আলো প্রকাশ করেছে। আশা করছি লিখাটি থেকে আপনারা প্রেরণা পাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে…..

 

 

আপনার শিশু, আপনার ভবিষ্যৎ- শেষ পর্ব

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” হযরত আলী(আঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “নিজেকে, পরিবারকে ও সন্তান-সন্ততিকে উত্তম জ্ঞান শিক্ষা দাও এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দাও-যাতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে পারো।”
সত্যি-সত্যিই বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের জগতে যে বিষয়টি বেশ আলোচিত তা হলো মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী হলো-ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করা। তাই জন্ম পরবর্তী সময়তো বটেই, এমনকি জন্মপূর্বকালেও ইসলাম বিভিন্নভাবে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। জন্ম-পূর্ববর্তীকালের প্রশিক্ষণটি হলো একটি সুশৃঙ্খল পরিবার গড়ে তোলা। আর জন্ম-পরবর্তীকালে নবজাতকের প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও ইসলাম দিয়েছে চমৎকার কালজয়ী দিক-নির্দেশনা।

জন্ম পরবর্তী একটি সন্তানের জীবনকালকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল, মধ্যবয়স বা বয়োপ্রাপ্তকাল এবং বার্ধক্যকাল। আমরা এখানে প্রথম তিনটি পর্যায় নিয়ে আলোচনা করবো। রাসূলে কারীম(সাঃ) মানব সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রাথমিক কালগুলোকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ভাগ করে বলেছেন, “সন্তান তার প্রথম সাত বছরে হলো সাইয়্যেদ বা মহোদয়, দ্বিতীয় সাত বছরে হলো আনুগত্যকারী বা আদেশ মান্যকারী আর তৃতীয় সাত বছরে হলো মন্ত্রী বা দায়িত্বশীল। কী সুন্দর উপমা দিয়ে, পরিভাষা দিয়ে রাসূল শিশুর বেড়ে ওঠার কাল এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে তুলে ধরেছেন। আমরা তাঁর এই পরিভাষাগুলোকে খানিকটা ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করবো
একুশ বছর বয়স পর্যন্ত একটি সন্তানের বেড়ে ওঠার পর্বগুলোকে রাসূল (সাঃ) যেভাবে নির্দেশ করেছেন, তাকে শিশুকাল, কিশোরকাল এবং যৌবনকালের বৃত্তে ফেলা যেতে পারে। শিশুকালটিকে যদি আমরা কর্তৃত্বের অর্থে ধরে নিই, যেমনটি রাসূল বলেছেন, তাহলে তার অর্থ দাঁড়াবে, শিশু এ সময় যা খুশি তা-ই করবে। এ সাত বছর শিশু সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার সকল কর্তৃত্ব মেনে নিতে হবে। এভাবেই শিশু সাত বছর কাটিয়ে দ্বিতীয় সাতে গিয়ে পড়বে। দ্বিতীয় সাত মানে হলো আনুগত্য বা আদেশ পালন করার পর্ব। অর্থাৎ এই পর্বে শিশুকে আর স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব করতে দেয়া যাবে না। বরং তাকেই বাবা-মা বা অন্যান্য মুরুব্বীদের কথা মেনে চলতে হবে। এই দ্বিতীয় সাত অর্থাৎ সাত বছর থেকে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত সময়কাল যদি একটি শিশু যথাযথ নির্দেশনা মেনে বেড়ে ওঠে, তাহলে তৃতীয় সাত বছর অর্থাৎ চৌদ্দ থেকে একুশ বছর বয়সকাল পর্যন্ত শিশুটি হয়ে উঠতে পারে সংসার পরিচালনায় বাবা-মায়ের একজন যথার্থ সহযোগী। রাসূল(সাঃ)এর আরেকটি হাদীসে এ পর্ব তিনটিতে সন্তানদের প্রশিক্ষণ এবং বাবা-মায়ের করণীয় আরো পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর পর্যন্ত খেলাধূলা করতে দাও, পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে সংশোধনীমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দাও এবং পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে তোমাদের পরামর্শদাতা ও সহযাত্রী কর। জীবনের প্রথম সাতটি বছরে একটি শিশুর অনুধাবনশক্তি কিংবা স্মৃতিশক্তি থাকে একেবারেই অপক্ক। তার শারীরিক অবস্থাও থাকে অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে। তাই এ সময়টায় বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল আচরণ করা। তার চাহিদাগুলোকে সাধ্যমতো পূরণ করা এবং তাঁর জিজ্ঞাসাগুলোর ইতিবাচক জবাব দেয়া। শিশু তার প্রথম সাত বছর পর্যন্ত স্বাধীন। তাই স্বাধীনভাবে সে খেলাধূলা করবে, নাচানাচি-দৌড়াদৌড়ি করবে, আদেশের পর আদেশ দেবে-যা খুশি তাই করবে। এসবের মাধ্যমে তার মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠবে। তাই তার ওপর এ সময় কোন নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা অনুচিত। এমনকি তাকে এসময় কোন কিছু সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়াও ঠিক নয়। শিশু তার বাবা-মা তথা পরিবারের সকল মুরব্বী, পাড়া-প্রতিবেশী, আশে-পাশের লোকজন এবং অন্যান্য শিশুদের প্রভাবেই বড়ো হয়ে উঠবে।
নিঃসন্দেহে, জীবনের প্রাথমিক পর্বের বছরগুলোই যে-কোন মানুষের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাব সৃষ্টিকারী। কারণ এ সময়টাই মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার সময়। অতীতে মনে করা হতো যে, শৈশবে একটি শিশুর শারীরিক সুস্থতার প্রতিই কেবল মনযোগী হওয়া দরকার। এর বাইরে শিশুর আবেগ-অনুভূতি, সামাজিকতা, এবং তার মেধাকে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বই দেয়া হতো না। তাদের চিন্তা ছিল এমন যে, শিশু যদি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে টানাপোড়েনে না ভোগে, তাহলে তার শারীরিক, মানসিক এবং মেধার বিকাশ অন্যদের তুলনায় দ্রুত লাভ হবে। কিন্তু আধুনিককালে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, শিশুর বেড়ে ওঠার সকল পর্যায়েই শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশ নয় বরং তার আবেগ-অনুভূতি, বোধ-উপলদ্ধি, তার কল্পনা-স্মরণশক্তি এবং সেই সাথে শিশুর কথা বলার দক্ষতার ব্যাপারেও সচেতন দৃষ্টি রাখা অনিবার্য।
শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় তাদের শারীরিক এবং আচার-আচরণে যেসব অসংলগ্নতা দেখা দেয়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা ঘটে থাকে শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলো সম্পর্কে যথার্থ ধারণার অভাবে এবং পর্যায়ক্রমিক সঠিক ব্যবস্থা ও পদপে গ্রহণ না করার কারণেই। যৌবনে পৌঁছে মানুষ সন্ত্রাসী-মাস্তানী, রাহাজানীসহ যেসব অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ করে থাকে, গবেষণায় দেখা গেছে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়গুলোতে যথার্থ নার্সিং এর অভাবই এ ধরণের ক্রিয়াকলাপের মূল কারণ।
তাই শিশুর প্রতিপালনে বাবা-মায়ের সচেতনতা খুবই জরুরী। রাসূল(সাঃ) যে সূক্ষ্ম দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, আমরা তা ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করবো-শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলোতে তার যথার্থ যত্ম নিতে হবে কীভাবে। বলাবাহুল্য: রাসূলের নির্দেশনা যে অকাট্য, তাঁর পরিচর্যারীতি যে বিজ্ঞানোত্তীর্ণ, তা জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত আধুনিক এ বিশ্বের গবেষকরাও প্রমাণ করতে সম হয়েছেন। তাই আমরা রাসূলের নির্দেশনাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেবো।

 

আপনার শিশু, আপনার ভবিষ্যৎ -1

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” হযরত আলী(আঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “নিজেকে, পরিবারকে ও সন্তান-সন্ততিকে উত্তম জ্ঞান শিক্ষা দাও এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দাও-যাতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে পারো।”
সত্যি-সত্যিই বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের জগতে যে বিষয়টি বেশ আলোচিত তা হলো মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী হলো-ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করা। তাই জন্ম পরবর্তী সময়তো বটেই, এমনকি জন্মপূর্বকালেও ইসলাম বিভিন্নভাবে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। জন্ম-পূর্ববর্তীকালের প্রশিক্ষণটি হলো একটি সুশৃঙ্খল পরিবার গড়ে তোলা। আর জন্ম-পরবর্তীকালে নবজাতকের প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও ইসলাম দিয়েছে চমৎকার কালজয়ী দিক-নির্দেশনা। জন্ম পরবর্তী একটি সন্তানের জীবনকালকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল, মধ্যবয়স বা বয়োপ্রাপ্তকাল এবং বার্ধক্যকাল।

আমরা এখানে প্রথম তিনটি পর্যায় নিয়ে আলোচনা করবো। রাসূলে কারীম(সাঃ) মানব সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রাথমিক কালগুলোকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ভাগ করে বলেছেন, “সন্তান তার প্রথম সাত বছরে হলো সাইয়্যেদ বা মহোদয়, দ্বিতীয় সাত বছরে হলো আনুগত্যকারী বা আদেশ মান্যকারী আর তৃতীয় সাত বছরে হলো মন্ত্রী বা দায়িত্বশীল। কী সুন্দর উপমা দিয়ে, পরিভাষা দিয়ে রাসূল শিশুর বেড়ে ওঠার কাল এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে তুলে ধরেছেন। আমরা তাঁর এই পরিভাষাগুলোকে খানিকটা ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করবো।
একুশ বছর বয়স পর্যন্ত একটি সন্তানের বেড়ে ওঠার পর্বগুলোকে রাসূল (সাঃ) যেভাবে নির্দেশ করেছেন, তাকে শিশুকাল, কিশোরকাল এবং যৌবনকালের বৃত্তে ফেলা যেতে পারে। শিশুকালটিকে যদি আমরা কর্তৃত্বের অর্থে ধরে নিই, যেমনটি রাসূল বলেছেন, তাহলে তার অর্থ দাঁড়াবে, শিশু এ সময় যা খুশি তা-ই করবে। এ সাত বছর শিশু সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার সকল কর্তৃত্ব মেনে নিতে হবে। এভাবেই শিশু সাত বছর কাটিয়ে দ্বিতীয় সাতে গিয়ে পড়বে। দ্বিতীয় সাত মানে হলো আনুগত্য বা আদেশ পালন করার পর্ব। অর্থাৎ এই পর্বে শিশুকে আর স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব করতে দেয়া যাবে না। বরং তাকেই বাবা-মা বা অন্যান্য মুরুব্বীদের কথা মেনে চলতে হবে। এই দ্বিতীয় সাত অর্থাৎ সাত বছর থেকে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত সময়কাল যদি একটি শিশু যথাযথ নির্দেশনা মেনে বেড়ে ওঠে, তাহলে তৃতীয় সাত বছর অর্থাৎ চৌদ্দ থেকে একুশ বছর বয়সকাল পর্যন্ত শিশুটি হয়ে উঠতে পারে সংসার পরিচালনায় বাবা-মায়ের একজন যথার্থ সহযোগী। রাসূল(সাঃ)এর আরেকটি হাদীসে এ পর্ব তিনটিতে সন্তানদের প্রশিক্ষণ এবং বাবা-মায়ের করণীয় আরো পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর পর্যন্ত খেলাধূলা করতে দাও, পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে সংশোধনীমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দাও এবং পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে তোমাদের পরামর্শদাতা ও সহযাত্রী কর। জীবনের প্রথম সাতটি বছরে একটি শিশুর অনুধাবনশক্তি কিংবা স্মৃতিশক্তি থাকে একেবারেই অপক্ক। তার শারীরিক অবস্থাও থাকে অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে। তাই এ সময়টায় বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল আচরণ করা। তার চাহিদাগুলোকে সাধ্যমতো পূরণ করা এবং তাঁর জিজ্ঞাসাগুলোর ইতিবাচক জবাব দেয়া। শিশু তার প্রথম সাত বছর পর্যন্ত স্বাধীন। তাই স্বাধীনভাবে সে খেলাধূলা করবে, নাচানাচি-দৌড়াদৌড়ি করবে, আদেশের পর আদেশ দেবে-যা খুশি তাই করবে। এসবের মাধ্যমে তার মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠবে। তাই তার ওপর এ সময় কোন নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা অনুচিত। এমনকি তাকে এসময় কোন কিছু সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়াও ঠিক নয়। শিশু তার বাবা-মা তথা পরিবারের সকল মুরব্বী, পাড়া-প্রতিবেশী, আশে-পাশের লোকজন এবং অন্যান্য শিশুদের প্রভাবেই বড়ো হয়ে উঠবে।
নিঃসন্দেহে, জীবনের প্রাথমিক পর্বের বছরগুলোই যে-কোন মানুষের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাব সৃষ্টিকারী। কারণ এ সময়টাই মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার সময়। অতীতে মনে করা হতো যে, শৈশবে একটি শিশুর শারীরিক সুস্থতার প্রতিই কেবল মনযোগী হওয়া দরকার। এর বাইরে শিশুর আবেগ-অনুভূতি, সামাজিকতা, এবং তার মেধাকে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বই দেয়া হতো না। তাদের চিন্তা ছিল এমন যে, শিশু যদি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে টানাপোড়েনে না ভোগে, তাহলে তার শারীরিক, মানসিক এবং মেধার বিকাশ অন্যদের তুলনায় দ্রুত লাভ হবে। কিন্তু আধুনিককালে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, শিশুর বেড়ে ওঠার সকল পর্যায়েই শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশ নয় বরং তার আবেগ-অনুভূতি, বোধ-উপলদ্ধি, তার কল্পনা-স্মরণশক্তি এবং সেই সাথে শিশুর কথা বলার দক্ষতার ব্যাপারেও সচেতন দৃষ্টি রাখা অনিবার্য।
শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় তাদের শারীরিক এবং আচার-আচরণে যেসব অসংলগ্নতা দেখা দেয়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা ঘটে থাকে শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলো সম্পর্কে যথার্থ ধারণার অভাবে এবং পর্যায়ক্রমিক সঠিক ব্যবস্থা ও পদপে গ্রহণ না করার কারণেই। যৌবনে পৌঁছে মানুষ সন্ত্রাসী-মাস্তানী, রাহাজানীসহ যেসব অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ করে থাকে, গবেষণায় দেখা গেছে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়গুলোতে যথার্থ নার্সিং এর অভাবই এ ধরণের ক্রিয়াকলাপের মূল কারণ।
তাই শিশুর প্রতিপালনে বাবা-মায়ের সচেতনতা খুবই জরুরী। রাসূল(সাঃ) যে সূক্ষ্ম দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, আমরা তা ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করবো-শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলোতে তার যথার্থ যত্ম নিতে হবে কীভাবে। বলাবাহুল্য: রাসূলের নির্দেশনা যে অকাট্য, তাঁর পরিচর্যারীতি যে বিজ্ঞানোত্তীর্ণ, তা জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত আধুনিক এ বিশ্বের গবেষকরাও প্রমাণ করতে সম হয়েছেন। তাই আমরা রাসূলের নির্দেশনাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেবো। ২য় পর্বভোরের নরম আলোর মতো শিশুর গালে সুপ্রভাতের প্রথম আদরটি দিয়ে, বিকশমান ফুলের মতো অনাবিল হাসিটি দেখতে কার না ভালো লাগে বলুন: কিন্তু শিশুর এই নির্মল হাসিটিকে তার প্রাপ্ত বয়স পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পিতামাতার অনেক করণীয় রয়েছে। বিশেষ করে জীবনের প্রথম সাত বছরের পর্বটি হলো তার মানস বিকাশের সময়। নবীন কিশলয় অর্থাৎ গাছের সুগন্ধিময় নতুন পাতার মতো বয়স তার, নবীন পাতাটির মতোই সে নাজুক এবং স্বচ্ছ। অন্যভাবে বলা যায়, জীবনের প্রথম পর্বটি কাঁচা মাটির মতো। এ মাটি দিয়ে বাবা-মায়ের মতো জীবনশিল্পীরা যা গড়তে চান, তা-ই পারবেন। এ কথা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, বাবা-মা কে শিল্পী হতে হবে, জীবন গড়ার শিল্পী। আর শিল্পী হতে হলে জানতে হবে শিল্পের কলা-কৌশল। এর আগের আলোচনায় এইসব কৌশলগত জ্ঞান নিয়ে খনিকটা আলোচনা করা হয়েছে। এবারও তা অব্যাহত রাখবো।
রাসূল(সাঃ) একটি সন্তানের জীবনকে তিনটি ‘সপ্তবর্ষে‘ ভাগ করেছেন। প্রথম সাত বছরকে শিশুর স্বাধীনতার কাল বলে ঘোষণা করেছেন। এই স্বাধীনতার সময়ে শিশুর সাথে কী ধরণের আচরণ করা উচিত-সে সম্পর্কেই আমরা আলোচনা করছিলাম। প্রথম সাথ বছর একটি শিশুর মেধা যেহেতু পর্যাপ্ত পরিমাণ বিকাশ লাভ করে না, সেহেতু এ বয়সের একটি শিশুর মেধা নিয়ে বিশ্লেষণ না করে বরং তার পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং প্রতিক্রিয়ার প্রতিই মনযোগী হওয়া উচিত। অনুভূতিগত দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে যে, শিশুরা পঞ্চ-ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কাজে এ সময় ব্যাপক তৎপর হয়ে ওঠে। সে দৌড়াতে পছন্দ করে, খেলাধুলা পছন্দ করে ,কোন বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়লে প্রশ্ন করতে পছন্দ করে, সর্বোপরি নতুন নতুন বিষয়কে তার অভিজ্ঞতার ভান্ডারে জমাতে পছন্দ করে। আর এ কারণেই সে তার চারপাশে যা কিছুই দেখে, তা-ই ধরতে চায় এবং একাকী নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে তাকে বুঝতে চায়, শিখতে চায়, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। শিশুর স্বাধীনতা মানে তার অনুভূতির স্বাধীনতা, তার মাংসপেশীর স্বাধীনতা। এ দুয়ের যথেচ্ছা ব্যবহারের ফলে শিশুর চলাফেরা তার সৃজনশীলতা এবং তার ইন্দ্রিয়ের বিকাশের ভিত্তিভূমি রচিত হয়। তাই শিশুর প্রথম সাত বছরে তার সাথে এমন কোন কাজ করা উচিত নয়, যাতে তার স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয় এবং পরিণামে তার ইন্দ্রিয় ও সৃষ্টিশীলতা বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, শিশুর মানসিক তথা সৃজনশীলতার বিকাশ যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে শিশুর মনোবিকার ঘটতে পারে। আর তা যদি একবার ঘটেই যায়, তাহলে তার ভবিষ্যত হবে বাবা-মায়ের একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তাই বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। শিশু যখন তার সঙ্গী-সাথী এবং খেলার সাথিদের সাথে আমোদ-প্রমোদ বা খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকে, তখন তাকে কোন ব্যাপারে আদেশ দেয়া উচিত নয়। এমনও বলা উচিত নয়-এটা করো না, ওটা করো না.. ইত্যাদি। তাকে তার আনন্দের ভূবন থেকে হুট করে ফিরিয়ে নেয়াটাও ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, যেসব পিতামাতা আপন সন্তানের প্রশিক্ষণের জন্যে সময় দেয়, তারাই সন্তান প্রতিপালনে সফল।
একই ভাবে যেসব দেশ শিশুদের খেলাধূলা, আমোদ-প্রমোদ বা বিনোদনের জন্যে প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত জিনিসপত্র সরবরাহ করতে সম, সেসব দেশই মূলত উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশ হিসেবে পরিগণিত।
শিশু যদি তার বেড়ে ওঠার জন্যে একটা মুক্ত পরিবেশ পায় এবং যথার্থ শক্তি বা এ্যানার্জি লাভের জন্যে উপযুক্ত পরিবেশ ও গাইড লাইন পায়, তাহলে তার মানসিক, শারীরিক এবং আচার-আচরণগত বিকাশ বিজ্ঞানসম্মতভাবেই অর্জিত হবে। বাবা-মায়ের এই বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া বাঞ্চনীয়। আগেই বলেছি যে, শিশুদেরকে মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া উচিত। তাদের এই স্বাধীনতায় সামান্যতম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলেও শিশুদের আত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক ও আচার-আচরণগত ভারসাম্য লঙ্ঘিত হয়। স্কুলে অধিকাংশ শিশুর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাই তাদের পারিবারিক পরিবেশের পরিণতি। অর্থাৎ সন্তান প্রতিপালনে বাবা-মায়ের যথাযথ ব্যবস্থা বা গাইডেন্সের অভাবেই ঐসব সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। নবজাতকের সাথে বাবা-মায়ের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিত। অর্থাৎ সন্তানের আরাম-আয়েশ এবং স্বাধীনতার বিষয়টি অনুভব করা উচিত। অত্যন্ত যতেœর সাথে শিশুকে ঘুম পাড়ানো উচিত। ঘুম থেকে জাগার সময় শিশুর প্রতি রুষ্ট হওয়া ঠিক নয়। শিশুকে আদরের সাথে দুধ খাওয়ানো, তার নষ্ট করে দেয়া জামা-কাপড় পরিস্কারের কাজ আন্তরিকতার সাথে আঞ্জাম দেয়া উচিত। এমনকি শিশু যদি কান্নাকাটিও করে, তবুও তার ওপর রেগে যাওয়া ঠিক হবে না বরং কান্নার একটা ইতিবাচক জবাব দিতে হবে। শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে বাবা-মা যদি শিশুর সাথে যথাযথ ব্যবহার করে, তাহলে ভবিষ্যতে শিশুর চারিত্রিক বিকাশ, মানস গঠন এবং তার ব্যক্তিত্বের ওপর বাবা-মায়ের ব্যবহার ও প্রতিক্রিয়ার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর যথার্থ ব্যবহার করা না হলে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে শিশুর ভবিষ্যত জীবনের ওপর।
শিশুর জীবন বিকাশের প্রাথমিক পর্বে তার শরীর-মন-আত্মা সব কিছুই অত্যন্ত কোমল ও নরম প্রকৃতির থাকে। তার কোমল মন তাই আদর-যত্ম , স্নেহ-ভালোবাসাই প্রত্যাশা করে। সে খেলতে চায়, দৌড়াদৌড়ি করতে চায়। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতে চায়। এ সময় তার হাসিতে যেন বংধনু ছড়ায়, পাথরের দিকে তাকালে পাথরও যেন গলে যায়। গাছের দিকে তাকালে যেন ফুল ফোটে, প্রকৃতি যেন তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে ভরিয়ে দেয় তার মন। তাই বাবা-মায়ের মতো তার আশেপাশের সবারই উচিত এমন স্নেহ ও ভালোবাসাপূর্ণ এবং আদরপূর্ণ ব্যবহার করা, যাতে শিশুর মুখে সর্বদা লেগে থাকে অনাবিল হাসি, আর মন পরিপূর্ণ থাকে আদর-আপ্যায়নে। কোনভাবেই তার সাথে এমন আচরণ করা ঠিক নয় যাতে সে মনে কষ্ট পায়। হাদীস অনুযায়ী প্রথম সাত বছর হলো শিশুর স্বাধীনতার পর্যায়, আনুগত্যের পর্যায় নয়। তারপরও কোন কোন বাবা-মা মনে করেন যে, এ সময় শিশুর উচিত বাবা- মায়ের সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা অর্থাৎ বাবা-মায়ের পূর্ণ আনুগত্য করা। তারা ভাবেন যে, সন্তানের কাজ হলো কথা শোনা, অন্য কোন কাজ করা উচিত নয়। নিজের জায়গা থেকে তাদের নড়া ঠিক নয়, লাফালাফি করা উচিত নয়, বেশী কৌতুহলী দেখানো ঠিক নয়। সন্তান কেবল চুপচাপ বসে থাকবে, প্রতিবেশীকে বিরক্ত করবে না-এই হলো সন্তানের করণীয়। কিন্তু ইসলাম এবং আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শিশুর স্বাধীনতার পর্যায়ে বাবা-মায়ের এ ধরনের খবরদারী একদম অনুচিত।  ৩য় পর্বশিশুর বেড়ে ওঠার প্রথম পর্ব অর্থাৎ প্রথম সাত বছরে, শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্যে বৈজ্ঞানিক ও রাসূল(সাঃ) নির্দেশিত প্রতিপালন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। শিশুর জীবনের প্রথম সাত বছর হলো, স্বাধীনতার চর্চার কাল। এ সময়টা শিশুর সুপ্ত প্রতিভার উন্মেষ ও বিকাশ লাভ করে। এ সময়টাতে তাই বাবা-মায়ের সচেতনতা খুবই জরুরী। এ পর্বে আমরা শিশুর প্রতিভার উন্মেষকালে পিতা-মাতার করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব।
যে শিশু তার চারপাশের পরিবেশকে মুক্ত-স্বাধীন ও শান্তিময় মনে করে এবং যা চায় তা-ই পায়, সেই শিশুর ব্রেইন বা মেধার উন্মেষ স্বাভাবিক গতিতেই ঘটবে, সেই সাথে সে তার সাধ্যমতো স্বাভাবিক এই মেধার আত্ম-প্রকাশ ঘটাতে চাইবে। কারণ হলো সে তার ব্যক্তিত্ব ও মেধার বিকাশের পথে কোন রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়নি। ভবিষ্যতেও তার জ্ঞান-বুদ্ধি, মেধা ও সৃষ্টিশীলতায় এই অবাধ পরিবেশের প্রভাব পড়বে। পান্তরে, শিশু যদি তার পরিপার্শ্বকে মুক্ত ও স্বাধীন না পায়, তার শিশুসুলভ চাহিদাগুলো যদি না মেটে, অর্থাৎ তার চাহিদা পূরণের পথে যদি কোন রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তাহলে তার মেধা বিকাশের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এ অবস্থায় শিশুর সুপ্ত প্রতিভাগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার প্রতিভার উন্মেষ বা বিকাশের আর কোন অবকাশই থাকবে না। এ ধরণের শিশুর ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে পড়ে এবং তারমধ্যে আর কোন সৃষ্টিশীলতাই অবশিষ্ট থাকে না।
একটি শিশু তার প্রথম সাত বছর বয়সে ভাবে, বাবা-মায়ের কাছে সে যা চাইবে, তাই পাবে। অর্থাৎ বাবা-মা তার চাহিদাগুলোকে প্রশ্নহীনভাবে বাস্তবায়ন করবে। সেজন্যে এ সময়টায় বাবা-মায়ের প্রতি শিশুর বিশ্বাস থাকে অগাধ। বাবা-মাকে সে তার বন্ধু, সহযোগী এবং তার একান্ত আশ্রয় মনে করে। তাদেরকে সে নিরাপদ মনে করে এবং সেজন্যেই তাদেরকে সে ভীষণ ভালোবাসে। শিশু যখন বড় হয় তখনও সে বাবা-মায়ের ভালোবাসার কথা ভোলে না। বাবা-মা তাকে যে কী পরিমাণ ভালোবাসতো, আদর-যত্ন করত, সে তা উপলদ্ধি করে এবং তাদের ভালোবাসার কাছে যে ঋণী সে তা অনুভব করে। বড়ো হয়ে তাই এই সন্তান বাবা-মায়ের কথা বেশ মনযোগের সাথে শোনে। তাদের দিক-নির্দেশনা, তাদের জীবন অভিজ্ঞতা থেকে সে লাভবান হয়। যে কোন জটিল ও বিরুপ পরিস্থিতিতে বাবা-মাকেই সে আপন ভাবে এবং তাদের সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ করে। তাদেরকেই নিজের একান্ত পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করে।
সন্তান যেহেতু বাবা-মায়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করে, সেহেতু বাবা-মায়ের সকল যুক্তি ও পরামর্শ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করে। তাদের যথাযথ আনুগত্য করে এবং সর্বাবস্থায় তাদের নির্দেশ মেনে চলে। শিশু জীবনের প্রথম পর্বে বাবা-মায়ের আচরণগত ত্রুটিই যুব সমাজের অধিকাংশ সমস্যার জন্য দায়ী। বাবা-মা, সন্তানের আত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলোর প্রতি কোন রকম মনযোগ না দেয়ার কারণে সন্তান ও বাবা-মায়ের প্রতি আস্থাহীনতায় ভোগে। আর বাবা-মায়ের প্রতি সন্তান যদি আস্থা-বিশ্বাস, নির্ভরতা স্থাপন করতে না পারে, তাহলেই বাবা-মায়ের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই দুরত্ব সন্তানকে বিপথগামী করে তোলে। এ আলোচনায় নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে, সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্বে বাবা-মাকে কতোটা সচেতন থাকতে হবে। সন্তানের বিপথগামীতা এবং বাবা-মায়ের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য কিন্তু তারা নিজেরাই দায়ী। ফলে সন্তানকে ভালবাসতে হবে। তার আত্মিক এবং মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলো পূরণের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। তার বেড়ে ওঠার যথার্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি, শিশুর ভবিষ্যত যে পিতা-মাতার ওপরই নির্ভর করে-তা মনে প্রাণে উপলদ্ধি করতে হবে।
আসরের এ পর্যায়ে, শিশুর বিকাশের প্রাথমিক পর্ব অর্থাৎ সাত বছরে বাবা-মায়ের কর্তব্যগুলো সম্পর্কে সংপ্তি আলোচনা করবো। আসলে শিশুদের সমস্যাগুলো বাবা-মায়েরই সৃষ্টি। তাই শিশুর সমস্যা এড়াতে বাবা-মায়ের উচিত-
১) সন্তানের জন্যে একটা সময় নির্দিষ্ট করা। তার সমস্যা, তার জিজ্ঞাসা, তার কৌতূহলের যথাযথ উত্তর দেয়া।
২) তার বেড়ে ওঠার জন্যে যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সন্তানের চাহিদাগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়া।
৩) শিশুর ওপর খবরদারী করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এটা করো না, ওটা ধরো না, এটা করো, সেটা ধরো-এসব করা ঠিক নয়। তারচে বরং এসব কথা যাতে বলতে না হয়, সে ব্যাপারে আগেই সচেতন থাকা উচিত। এসব করা হলে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
৪) শিশুর জন্যে যেসব জিনিসপত্র তিকর ও ভয়াবহ, সেসব জিনিস তার হাতের নাগালে রাখা অনুচিত। অন্যথায় শিশু যদি ঐসব জিনিস দিয়ে কোন জরুরী কিছু নষ্ট করে, তাহলে ঐসব জিনিস নষ্ট করার জন্যে শিশুকে কোনভাবেই দোষারোপ করা যাবে না। অর্থাৎ তার ওপর রাগ দেখানো যাবে না।
৫) বাবা-মায়ের উচিত বাসায় তাদের জরুরী জিনিসগুলো যথাযথ জায়গায় রাখা। ছুরি-চাকু বা এ ধরণের ধারালো জিনিসগুলো, বিষাক্ত ঔষধপত্র, কীট নাশক জাতীয় জিনিস, কাঁচের জিনিসপত্র, দামী তৈজসপত্র, জরুরী কাগজপত্র প্রভৃতি শিশুর হাতের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
৬) শিশু যখন জেগে থাকে, তখন এমন কোন জিনিস বের করা বা মেরামত করার জন্যে খোলা ঠিক নয়, যার ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশ হারালে বা নষ্ট হলে পুরো জিনিসটাই নষ্ট হয়ে যাবে। অন্যকথায় শিশু এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট করলে তার ওপর রেগে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ শিশু এ সময়টায় কৌতূহলী হবে-এটাই স্বাভাবিক। তার কৌতূহল থেকে তাকে নিবৃত্ত করা যাবে না। অর্থাৎ এ দিকে এসো না, এটা ধরো না-এরকম বলা যাবে না। পরিবারে যদি স্কুলগামী কোন সন্তান থাকে, তাহলে তার বই-পুস্তকসহ অন্যান্য শিক্ষা-উপকরণ এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে শিশু সেগুলো ধরতে না পারে, নষ্ট করতে না পারে। মায়ের যদি সেলাই কাজের অভ্যাস থাকে, তাহলে তা করতে হবে শিশু যখন ঘুমোয় তখন, অথবা এমন কোন জায়গায় যেখানে শিশুর উপস্থিতির সম্ভাবনা নেই। আর সুঁই-সূতা-ব্লেড ইত্যাদি রাখতে হবে নিরাপদ দূরত্বে।
ধরা যাক, বহু সতর্কতার পরও শিশু ব্লেড বা ছুরি-চাকু জাতীয় কিছু একটা হাতে নিল। এ অবস্থায় কী করতে হবে? না, কোন অবস্থাতেই চীৎকার চেঁচামেচি করা যাবে না, বরং তার সামনে এমন অন্য একটা জিনিস এনে হাজির করতে হবে, যাতে শিশুর মনযোগ সেদিকে যায় এবং সুযোগমতো ঐ ভয়ানক বস্তুটি তার হাত থেকে সরিয়ে নেয়া যায়। এমন ভাবে নিতে হবে যাতে শিশুটি একদম টের না পায়।
বাবা-মায়ের এতো সতর্কতার কারণ হলো, এ সময়টা শিশুর পরিপূর্ণ স্বাধীনতার পর্ব। তার যা খুশী তা-ই করবে সে। তাকে আদেশ দেয়া যাবেনা, বারণও করা যাবে না। শিশুর মেধা বিকাশের স্বার্থে বাবা-মা ভালোবেসে, আদর করে এটুকু ছাড় দেবেন-এটাই প্রত্যাশা। ৪র্থ পর্ব‘আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে, আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই।‘ কিংবা ‘এ পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি‘-গীতিকার বা কবির এই যে আকুলতা, এই যে প্রতিশ্রুতি, তা শিশুর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা এবং তার সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করারই প্রয়াসমাত্র। সমস্যা হলো, শিশুর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ল সবারই আছে। কিন্তু কিভাবে তা গড়তে হবে, সেটা যথার্থভাবে অনেকেরই জানা নেই। তাই এবারের পর্বে আমরা শিশু জীবনের দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সকালীন তার আচার-আচরণগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো।
শিশু জীবনের দ্বিতীয় পর্বটি হলো সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত। এই বিভাজন রাসূল(সাঃ) নিজেই করে গেছেন। প্রথম সাত বছর হলো শিশুর স্বাধীনতার কাল। আর দ্বিতীয় পর্ব হলো শিশুর আনুগত্যের কাল। এই দ্বিতীয় সাত বছরে শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লংঘনীয় পর্যায়ে যায়। তার শরীর আগের তুলনায় একটু শক্ত-সামর্থ হয়, স্মৃতিশক্তি বিকশিত হয়, তার জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধিও বৃদ্ধি পায়। একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত শিশু ভালো-মন্দও বুঝতে পারে। এ কারণে শিশু তার মুরব্বীদেরকে তার কৌতূহল মেটানোর জন্যে বিভিন্ন প্রশ্ন করে বেড়ায়। তবে তার বুদ্ধির যেহেতু পূর্ণ বিকাশ ঘটেনি, সেহেতু কীসে তার কল্যাণ, আর কীসে অকল্যাণ-তা যথার্থভাবে বুঝে উঠতে পারে না। আর বুঝতে পারে না বলেই বাবা-মা বা মুরব্বীদের উচিত হলো, এ সময় তাকে বোঝানো, শেখানো। অর্থাৎ তার কোন্টা করা উচিত, আর কোন্টা করা উচিত নয়-সে ব্যাপারে তাকে দিক-নির্দেশনা দেয়া এ মুহূর্তে অভিভাবকদের কর্তব্য। শিশু এ সময় বাবা-মায়ের কথাবর্তা শনুবে, আনুগত্য করবে-এটাই স্বাভাবিক। বাবা-মা এসময় শিশুকে ভদ্রতা-শিষ্টাচার এসব শেখাবে। শিশুকে জ্ঞান দান ও প্রশিক্ষণ দানের উপযুক্ত বয়সই হলো এই দ্বিতীয় সাত বছর। এ পর্বের শুরু থেকেই শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের সূচনা ঘটবে। শিশু স্কুলে যেতে শুরু করবে। তার ওপর পাঠ-অনুশীলনসহ সীমিত পর্যায়ের কিছু কিছু দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হবে। শিশু যদি তার জীবনের প্রথম পর্বটি যথার্থ পরিবেশের মধ্যে কাটাতে সম হয়ে থাকে অর্থাৎ যথার্থ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যদি বেড়ে উঠে থাকে, তাহলে আনুগত্যের পর্বে তার একধরণের মানসিক ভারসাম্য সৃষ্টি হবে। তাই অত্যন্ত আন্তরিকতা ও আনন্দের সাথে সে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং আরো বেশী জীবনাভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে শিশু তার বাবা-মা বা মুরব্বীদের আনুগত্য করবে। তারা যা বলেন, তা শুনবে। যা আদেশ করেন তা পালন করবে। একটা শিশু যখন তার দ্বিতীয় সপ্তবর্ষে পা দেয়, তখন সে উপলব্ধি করতে পারে যে, অভিভাবকদের তুলনায় জ্ঞান এবং যোগ্যতায় সে অনেক পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ বাবা-মা যা জানে, সে তা জানে না। তখনই তার মনে নানা রকম প্রশ্ন জাগে। কিন্তু শিশু যেহেতু তার ক্ষুদ্র জ্ঞানের মাধ্যমে সেসব প্রশ্নের সমাধান করতে পারে না, তাই তার প্রয়োজন পড়ে এমন কাউকে-যে তার প্রশ্নগুলোর জবাব দেবে। শিশু চায়, যে তার কৌতূহলগুলোর জবাব দেবে, সে যেন তার প্রতি পরিপূর্ণ মনযোগী হয়, সে যেন কোন রকম দ্বিধা-সংকোচ ছাড়াই তাকে প্রশ্ন করতে পারে এবং জবাব পেতে পারে। সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সে একটা শিশুর মেধা, জ্ঞান-বুদ্ধি কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ফলে তার চাহিদা, তার প্রত্যাশাও আগের তুলনায় কিছুটা উৎকর্ষ লাভ করে। আগের মতো একেবারে শিশুসুলভ আর থাকে না। তাই এ সময়টায় শিশুকে শিক্ষা দেয়া যায়, প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। তাকে আর পুরোপুরি স্বাধীনতা দেয়া যাবে না। বরং তার সকল কর্মসূচী ছকে বেধে দিতে হবে, যেন সে শৃঙ্খলা শিখতে পারে। এ সময় তাকে একটু একটু ইবাদত সম্পর্কে শেখানো যেতে পারে।
শিশু জীবনের দ্বিতীয় সপ্তবর্ষে তার মেধা ও স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটে। তাই এ সময়টাই হলো শিশুকে শেখানোর সময়। বিশেষ করে এই বয়সটাতেই শিশুকে আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার এবং ইসলামী আচার-আচরণ পদ্ধতি শেখাতে হবে। স্কুলে শিকদের কাছ থেকে এবং বাসায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে এই দ্বিতীয় সাত বছর অর্থাৎ ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সকালে শিশু যেসব শিষ্টাচার শিখবে, তা কিশোর ও যৌবনকালে তার চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিশুর জ্ঞান-বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি, মেধার বিকাশ এবং শেখার গতি এ সময় খুব প্রখর থাকে। প্রাপ্ত বয়সে তার মানবিক বোধ, আবেগ-অনুভূতি, আচার-আচরণগত বৈশিষ্ট্য এই দ্বিতীয় সাত বছরের শিক্ষারই ফলাফল। ইসলামের আচরণ পদ্ধতি ও শিষ্টাচার সম্পর্কে হাদীসে যেসব বর্ণনা বা নির্দেশনা এসেছে, শিকদের উচিত কাসে ছাত্রদের সামনে সেই সব আচরণ পদ্ধতি কৌশলে, গল্পাকারে বা অন্য যেকোন আকর্ষণীয় উপায়ে বর্ণনা করা, যাতে কোমলমতী শিশু-ছাত্ররা সে সব শিখে তাদের স্বভাবগত উৎসাহেই নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারে।
দ্বিতীয় সপ্তবর্ষে কোমলমতী ছাত্ররা স্কুলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার শিখতে পারে বা শিকদের যেটা শেখানো উচিত তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। শিশুকে শেখানো যেতে পারে কী ভাবে সালাম করতে হবে, কীভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়, আল্লাহর নামে সকল কাজ শুর করা, খাওয়ার নিয়ম, পানিয় বস্তু গ্রহণ করার নিয়ম, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, বাবা-মা ও মুরব্বীদের সম্মান করা, অন্যদের সাথে চলাফেরা বা মেলামেশার নিয়ম, কথাবার্তা বলার শালীনতা, ঘুমানোর পদ্ধতি, যেকোন কাজে অপরের অধিকার সংরণ করা। এছাড়া অজু করার নিয়ম, গোসল করার নিয়ম, নামায পড়া এবং দোয়া করার পদ্ধতির সাথে পরিচয় করানো যেতে পারে। তাকে রোযা রাখা, কোরআন পড়া, ভ্রমণে যাবার ক্ষেত্রে করণীয় এবং বন্ধুত্বের নিয়ম-শৃঙ্খলার বিষয়েও জ্ঞান দেয়া যেতে পারে। এই সব শিষ্টাচার বা নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখানোর পাশাপাশি চারিত্রিক গুণাবলী ও উত্তম স্বভাব অর্জনের ক্ষেত্রেও শিশুকে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। তাকে সব ধরণের মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে, যাতে তার চরিত্রের ওপর ঐসব মন্দ কাজের প্রভাব পড়তে না পারে। এটাও দ্বিতীয় সপ্তবর্ষের একটি শিশুকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই শিশুকে সুন্দর ও যথার্থভাবে গড়ে তোলার জন্যে প্রথমতঃ নিজেরা প্রশিতি হবেন এবং তারপর শিশুদেরকে প্রশিক্ষণ দেবেন। মনে রাখতে হবে যথার্থ দিক-নির্দেশনার অভাবেই কিন্তু শিশুর ভবিষ্যত হয় বাবা-মায়ের অপ্রত্যাশিত। #  ৫ম পর্বসন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দরভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জন্মের পর থেকেই তাকে কীভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে-সেই দিক-নির্দেশনা দেয়াই এ আলোচনার উদ্দেশ্য। অনেক বাবা-মা আছেন যারা সন্তানকে ভালোবাসেন ঠিকই, কিন্তু জানেন না শিশু প্রতিপালনের যথার্থ পদ্ধতি। মুরব্বীদের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তানের তত্ত্বাবধান করে থাকেন তারা। কিন্তু সমস্যা হলো মুরব্বীদের পরামর্শ যদি বিজ্ঞান সম্মত হয়, তাহলে তো ভালই আর অবৈজ্ঞানিক বা মনগড়া হয়ে থাকলে তা শিশুর বেড়ে ওঠার স্বাভাবিকতায় বিঘ্ন ঘটাবে। তাই বাবা-মায়ের উচিত, শিশুর জীবন বিকাশের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা শিশুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য এবং সে অনুযায়ী বাবা-মায়ের করণীয় সম্পর্কে কথা বলছিলাম। দ্বিতীয় সপ্তবর্ষে শিশুর আচরণগত বৈশিষ্ট্য এবং তাকে কী কী শিষ্টাচার এ বয়সে শেখাতে হবে তা এর আগের পর্বে উল্লেখ করেছিলাম। এবারের পর্বেও সে আলোচনা অব্যাহত রাখবো। সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সে একটি শিশু স্কুলে যেসব আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার শিখবে, সেগুলোকে সাথে সাথেই বাস্তবায়নের পরিবেশ তৈরী করতে হবে। এমনভাবে তাদেরকে শেখাতে হবে, যাতে তারা তাদের বাবা-মা বা অন্যান্য মুরব্বীদের সাথে কথাবার্তা বা আচার-আচরণ করতে গিয়ে সেসব শিক্ষাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে লাগায়। তাদেরকে যেসব শেখানো হয়, সেগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ যদি না থাকে, তাহলে ঐসব শিক্ষা কোন কাজেই আসবে না। ফলে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠনে এই সব শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের কোন প্রভাবই পড়বে না। এ বয়সে শিশুর জীবনে যেসব চারিত্রিক ও নৈতিক গুণ দৃঢ় হওয়া উচিত কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে আচার-আচরণগত ত্রুটির সংশোধন হওয়া উচিত, সেগুলো সম্পর্কে এবার আলোচনা করা যাক।
এ বয়সে শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে যে গুণগুলো থাকা উচিত, সেগুলো হলো সততা ও সত্যকথা বলা, মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা, হিংসা বা ঈর্ষা করা থেকে বিরত থাকা, গীবত বা কারো অনুপস্থিতিতে দোষ বলে বেড়ানোর মতো শয়তানী আচরণ থেকে বিরত থাকা, ভালো কাজ করা এবং অন্যের উপকার করা, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা গুজব রটনা থেকে বিরত থাকা, প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা এবং ফালতু কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। এই যে কতগুলো নৈতিকগুণের কথা আমরা উল্লেখ করলাম এগুলো নিরন্তর অনুশীলনের ব্যাপার। বাবা-মা কে অসম্ভব সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে এবং এগুলোর ব্যতিক্রম নজরে পড়লেই তা সংশোধন করার যুক্তিযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। রেগে-মেগে ভয় দেখিয়ে কিছু করা ঠিক হবে না। এ বয়সে শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে আরো কিছু গুণের সমাবেশ ঘটা উচিত। যেমন, অন্যের প্রতি জুলুম বা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকা এবং অন্যদেরকে বিরক্ত করা বা যন্ত্রণা দেওয়া থেকে বিরত থাকা, অপচয় বা অপব্যয়মূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা, কথা দিয়ে কথা রাখার গুরুত্ব উপলদ্ধি করা, অন্যদের সাথে একগুঁয়েমি বা জেদি মনোভাব পোষণ করা থেকে বিরত থাকা, দান করা, দয়াশীল ও উদার হওয়া, মা ও মহানুভবতা দেখানো, নিজ ও অন্যান্যদের ব্যাপারে যথার্থ বিচারবোধ জাগা, জালিমের শত্রু এবং মজলুমের বন্ধু হওয়া এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ নিজের মধ্যে জাগ্রত রাখা।
এখন কথা হচ্ছে এইসব গুণাবলী কি শিশু প্রাকৃতিকভাবেই অর্জন করবে? না, শিশুকে এসবের ব্যাপারে যথার্থ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যখনি শিশু এইসব গুণাবলীর বিপরীত আচরণ করবে, তখনি বাবা-মায়ের উচিত হবে
মনস্তাত্ত্বিক পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুকে এমনভাবে সেগুলো সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান দেওয়া যাতে শিশু বিরক্ত না হয় কিংবা বাধ্য না হয়। জোর করে কোন কিছু শেখালে শিশুর মনে বাবা-মা ভীতি কাজ করবে। ফলে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মূল ল্যই ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধরা যাক বাবা-মা যদি শিশুকে কোন কথা দিয়ে না রাখে, তাহলে শিশুও তা করতে শিখবে। ফলে শিশুকে শেখানোর আগে গুণগুলো বাবা-মায়ের ভেতরে অর্জিত হওয়া প্রয়োজন। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, তাহলো ৭ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত একটি শিশু আনুগত্যের পর্যায় অতিক্রম করে। অর্থাৎ এ সময় বাবা-মা, মুরব্বী, শিক তথা শ্রদ্ধেয়দের কথা মেনে চলাই হলো শিশুর প্রধান কর্তব্য। এটা একটা কঠিন পর্যায়। শিশুর জন্যেও কঠিন, অভিভাবকদের জন্যেও কঠিন। শিশুর জন্যে কঠিন, কারণ সর্বাবস্থায় শিশুর কাজ হলো আনুগত্য করা। আর বাবা-মা বা অভিভাবকদের জন্যে কঠিন, কারণ শিশু এ সময় বাবা-মা বা মুরব্বীদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে। ফলে বাবা-মা, শিক-অভিভাবকদের অবশ্যই আদর্শস্থানীয় হতে হবে।
এখন কথা হলো, একটি শিশু যদি কোন মুরব্বী সম্পর্কে কিংবা ধরা যাক তার কোন শিক সম্পর্কে বাবা-মায়ের সামনে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করে, আর বাবা-মা যদি তা শুনে মজা নেয়, তাহলে পরিণতিটা কী হবে? পরিণতি দাঁড়াবে এই-শিশুটি ঐ শিককে আর শ্রদ্ধা করবে না। ফলে পড়ালেখা থেকে তার মন উঠে যাবে। অন্যদিকে শিক সম্পর্কে কথা বলার অভ্যাস যেহেতু হয়ে গেছে, তাই ধীরে ধীরে অন্যদের ব্যাপারেও কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে পরিণতিতে এই শিশু ভবিষ্যতে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে যেতে পারে। বাবা-মাকে তাই সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি শিকদেরও উচিত শিশুদের মনস্তত্ত্ব বোঝা এবং নিজেদের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে শিশুদের সাথে আচরণ করা। সর্বোপরি নিজেদের মেধা কাজে লাগিয়ে শিশুদের মন জয় করা।
শিশু জীবনের প্রথম সপ্তবর্ষ হলো স্বাধীনতার পর্যায়। সাত-সাতটি বৎসর স্বাধীনতা ভোগ করার পর একটি শিশু আনুগত্যের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। দ্বিতীয় সাত বছর আনুগত্য করার ফলে শিশুর জীবনের এখন কিছুটা দায়িত্ব জ্ঞান, নৈতিকতাবোধ জেগেছে। শিশু যদি যথার্থভাবে তার আনুগত্যের পর্যায় অতিক্রম করে থাকে, তাহলে শিশুটি এখন এমন কিছু মেধা ও জ্ঞান-বুদ্ধি অর্জন করতে সম হয়েছে যা দিয়ে সে তার মুরব্বীদেরকে কাজে-কর্মে সহযোগিতা করতে পারে । এভাবেই শিশুটি তার জীবনের তৃতীয় সপ্তবর্ষে এসে পৌঁছুবে । এ পর্যায়টি শিশুর দায়িত্বশীলতার পর্যায়, বাবা-মা বা পরিবারকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার পর্যায় । ফ্রান্সের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মৌরীস রব্সের একটি উক্তির মধ্য দিয়ে এ পর্বের আলোচনা শেষ করবো। তিনি বলেছেন প্রতিটি ঘরের দরোজা হয়ে উঠুক শিক উন্মুখ, আর প্রতিটি বিদ্যালয়ের দরজা পরিবারের জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকুক। আমরা চাই এককভাবে কোন স্কুল বা কোন পরিবার যেন একটি শিশুর পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ না করে। অর্থাৎ গৃহ এবং স্কুল পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠুক। এ উক্তির ব্যাখ্যা এভাবেও করা যেতে পারে যে, শিশুকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েই বাবা-মা যেন এরকম মনে না করেন যে তাদের দায়িত্ব শেষ। আবার বাসায় শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েই যেন কেউ এরকম না ভাবেন যে তাকে আর স্কুলে পাঠানোর দরকার নেই। আমরা এসব ব্যাপারে যৌক্তিক হব, সচেতন হব-এ কামনা করছি।

 

চিত্রনায়িকা দিতি আর নেই

কোনো আশাই ছিলো না। তবুও মিরাকেল যদি কিছু হয়! কিন্তু হলো না। চলে গেলেন চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতি। রোববার (২০ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।

হাসপাতালটির চিফ কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট শাগুফা আনোয়ার বাংলানিউজকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন। দিতি বেশ কিছুদিন ধরে এখানে কোমায় ছিলেন। তার মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিনি এক কন্যা (লামিয়া চৌধুরী) ও এক পুত্র দীপ্ত এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ায় গত বছরের ২৬ জুলাই ভারতে চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রামাটোলজিতে (এমআইওটি) ভর্তি হয়েছিলেন দিতি। এরপর ২৯ জুলাই প্রথম অস্ত্রোপচারের পর কেমো নিয়ে ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। কিন্তু কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে ৩০ অক্টোবর তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে।

অবস্থা অপরিবর্তিত থাকার কারণে গত বছরের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় দিতিকে চেন্নাই নেওয়া হয়। এর দু’দিনের মাথায় ৫ নভেম্বর তার মস্তিষ্কে দ্বিতীয়বারের মতো সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মস্তিষ্কে জমে থাকা পানি অপসারণ করা হয়। কিন্তু তখনও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত ছিলেন না। তার অবস্থা এতোই গুরুতর ছিলো যে, মাসখানেক নিজের দুই সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের চিনতে পারছিলেন না তিনি।

১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে জন্মছিলেন দিতি। ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন তিনি। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত ‘আমিই ওস্তাদ’।

জীবদ্দশায় প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন দিতি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হীরামতি’, ‘দুই জীবন’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘উছিলা’, ‘লেডি ইন্সপেক্টর’, ‘খুনের বদলা’, ‘দুর্জয়’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘স্নেহের প্রতিদান’, ‘শেষ উপহার’, ‘চরম আঘাত’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘অপরাধী’, ‘কালিয়া’, ‘কাল সকালে’, ‘মেঘের কোলে রোদ’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘মুক্তি’, ‘কঠিন প্রতিশোধ’, ‘জোনাকীর আলো’, ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’, ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’, ‘মাটির ঠিকানা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’।

সর্বশেষ গত মাসে মুক্তি পায় দিতি অভিনীত ‘সুইটহার্ট’ (রিয়াজ, মিম, বাপ্পি চৌধুরী)। এ ছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘ধূমকেতু’ (শাকিব খান, পরীমনি) ছবিটি। সুভাষ দত্তর ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে দারুণ অভিনয় নৈপুণ্যের জন্য প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

ছোট পর্দায়ও দিতি ছিলেন নিয়মিত আর সপ্রতিভ। অসংখ্য একক নাটক, টেলিছবি ও ধারাবাহিক নাটকে দেখা গেছে তাকে। এ ছাড়া রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন। গায়িকা হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন দিতি। বেরিয়েছে তার একক অ্যালবামও। অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হন তিনি।

ব্যক্তিজীবনে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন দিতি। তাদের সংসার আলো করেছে লামিয়া ও দীপ্ত। সোহেলের মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে ঘর বাঁধেন দিতি। কিন্তু সে বিয়ে টেকেনি।

 

ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব

সাধারণভাবে বাড়ীর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয় । তবে কখনও কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকেও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে মানুষের সবচে‘ নিকট জন , যিনি তার খবরাখবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি জানেন। তাই ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তার অধিকারকে খুব বড় করে দেখা হয়েছে। তো প্রতিবেশীর গুরুত্ব ও মর্যাদা, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা তুলে ধরবো।

আগেই বলেছি যে, বাড়ীর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয়। তবে এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, নিজের বাড়ীর চতুর্দিকে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত হচ্ছে প্রতিবেশীর সীমানা। আবার কেউ বলেন, যে তোমার সাথে ফজর পড়ল সেই তোমার প্রতিবেশী, ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে , নিজের বাড়ীর পাশে যার বাড়ী সেই আসল প্রতিবেশী। সে হিসেবে নিজ বাড়ীর সাথে লাগানো বা কাছাকাছি প্রতিবেশীর প্রতি, দূরের প্রতিবেশীর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে প্রতিবেশীর প্রতি কেন এত গুরুত্ব দিতে হবে ? এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও রাসূল (সাঃ) কি বলেছেন, সে সম্পর্কে খানিকটা আলোচনা করা যাক।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আন নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ”তোমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না । পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার কর । নিকটাত্মীয়, এতীম- মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয়-সম্পর্কীয় প্রতিবেশী, আত্মীয়তা বিহীন প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সহচর, তোমাদের মালিকানাধীন দাসী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো ।
অন্যদিকে রাসুল (স.) বলেছেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকেপ্রতিবেশী সম্পর্কে এতো বেশী অসীয়ত করছিলেন যে, এক পর্যায়ে আমার ধারণাহয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা মনে হয় প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী করে দেবেন।
প্রতিবেশীর ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসের বক্তব্যের পর এবার আমরা প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরবো।
প্রথমত :কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া যাবে না। অর্থাৎ তাকে অভিশাপদেওয়া, গালী দেওয়া, তার গীবত করা, তার বাড়ির সামনে আবর্জনা ফেলা, তাকেবিরক্ত করা, ছেলে মেয়েদেরকে তার ঘরের জিনিস নষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করা বা বাধানা দেওয়া- এসব করা যাবে না। মহানবী (সা) এ সম্পর্কে বলেছেন, যে আল্লাহরপ্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।তিনি আরো বলেছেন, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তারকষ্ট থেকে মুক্ত নয়।

প্রতিবেশীর প্রতি অন্যকর্তব্যগুলো হলো : প্রয়োজনে সাহায্য করা, কোন জিনিস ব্যবহার করতে চাইলে তাদেয়া। প্রতিবেশীকে উপহার দেওয়া, তার বাড়িতে খাবার ইত্যাদি পাঠানো ইত্যাদি।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছেন, যখন তুমি তরকারীরান্না করবে তাতে বেশি করে পানি দেবে এবং তোমার প্রতিবেশীকে তা থেকে কিছুদেবে। এছাড়া প্রতিবেশী ঋণ চাইলে তাকে ঋণ দেয়া, তার প্রয়োজনে তাকে সাহায্যসহযোগিতা করার ব্যাপারেও ইসলামে তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট ভরেখায়, অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।

একজনমুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের অনেক অধিকার রয়েছে। সেসব অধিকার কিন্তুআমরা প্রথমেই প্রতিবেশীর ব্যাপারে আদায় করতে পারি। তাহলে ইসলামের নির্দেশযেমন মানা হবে তেমনি প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে। এসব অধিকারবা কর্তব্যের কয়েকটি হলো, প্রতিবেশীকে সালাম দেওয়া, তার সালামের উত্তরদেয়া, কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা-সুশ্রুষা করা, বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে দাওয়াতদেয়া এবং তার দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করা ইত্যাদি।

প্রতিবেশীর দুঃখ-কষ্টে যেমন সহমর্মিতা দেখাতে হবে তেমনি তার ভাল কোন সংবাদ যেমন-সন্তান জন্ম নিলে, তার সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে,কারো বিয়ে হলে এবং এ জাতীয় উপলক্ষে তাকে মোবারকবাদ জানানো এবং বরকতের দোয়া করতে হবে।
আমরাযদি নবী পরিবারের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তাঁরা নিজের পরিবারের চেয়েপ্রতিবেশীদের প্রতি বেশী লক্ষ্য রাখতেন,তাদের মঙ্গলের জন্য আল্লাহর দরবারেদেয়া করবেন। এ সম্পর্কে এবারে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা শোনাচ্ছি।

“প্রতিদিন শেষ রাতে ছেলেটির ঘুম ভেঙ্গে যায়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করে মা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন। ছেলেটিও অভ্যাসবশত বিছানা থেকে উঠে ওজু করে মায়ের পাশে নামাজে দাঁড়ায়। মায়ের সাথে নামাজ পড়ার সময় সে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে। মা নামাজ শেষে মোনাজাত করছেন, কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন প্রতিবেশীদের মঙ্গলের জন্য,তাদের গোনাহ মাফের জন্য। কিন্তু নিজেদের জন্য কিছুই প্রার্থনা করছেন না!
এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর ছেলেটি তার কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলো না। সে মাকে জিজ্ঞেস করলো, “মা, মোনাজাতের সময় তুমি কেবল পাড়া-প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনা করো। তোমার নিজের জন্য বা আমাদের কারও জন্য তো দোয়া করো না! এর কারণ কি? “

স্নেহময়ী মা এবার ছেলেকে আদর করে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, বাছা আমার! আমি কেন ওরকম করি ? তুমি জেনে রেখো, প্রতিবেশীর হক আগে। প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনা করলে, তাদের খোঁজখবর নিলে আল্লাহ তায়ালা খুব খুশী হন। তাই আমি তাদের জন্য দোয়া করি। তবে তোমাদের জন্যও দোয়া করি। তবে প্রতিবেশীর অধিকার আগে,এটা মনে রাখবে-কেমন ?
পাঠক! আপনারা নিশ্চয়ই এইমহিয়সী মা ও তাঁর ছেলেটির পরিচয় জানতে চাচ্ছেন! হ্যাঁ বলছি, এই মহিয়সী মাছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যা হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ)এবং যে ছেলেটির কথা বলা হলো তিনি হলেন ইমাম হাসান। হযরত ফাতিমারই আদরেরসন্তান।

প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যেরব্যাপারে তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও অনেকেই প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তাদেরকে অযথা কষ্ট দেয়।

একবার একজন আনসার সাহাবী মদীনায় একটি নতুন বাড়ী কিনে সেখানে বসবাস করতে লাগলেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি টের পেলেন যে, তার প্রতিবেশী লোকটি সুবিধার নয়। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ্র কাছে হাজির হয়ে বললেন, ” হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিছুদিন আগে একটি বাড়ী কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেছি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, আমার প্রতিবেশী শুধু একজন অভদ্র লোকই নয়, সে অত্যন্ত ঝগড়াটে। আমি বারবার চেষ্টা করেও তার অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। “
সব শুনে মহানবী হযরত আলী , সালমান, আবু যর ও মেকদাদ (রাঃ) এর মতো চারজন বিশিষ্ট সাহাবীকে বললেন, তোমরা মসজিদে গিয়ে নারী-পুরুষ সকলের মধ্যে উচ্চস্বরে ঘোষণা করবে যে, যে ব্যক্তির ঝগড়াটে চরিত্রের কারণে তার প্রতিবেশী কষ্ট পাবে, সে ঈমানদার নয়।
রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী পর পর তিনবার এ ঘোষনাটি দেয়া হলো। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পবিত্র হাত চারদিকে ঘুরিয়ে বললেন, ” চারদিকের চল্লিশ ঘরের লোক প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য হবে। “

প্রতিবেশীর ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল। এ আলোচনা তখনই স্বার্থক হবে যখন আমরা প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম আচরণ করবো, তাদের দুঃখে দুঃখী হবো এবং তাদের সুখে সুখী হবো।

 

সফল নারী উদ্যোক্তা ফারজানা গাজী

ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি করতে ভীষণ ভালো লাগত মেয়েটির। তখন মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছেন। শখ করে আত্বীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে ডেকোরেশন করতে পছন্দ করতেন। তখন ইন্টেরিয়র সবেমাত্র আমাদের দেশে চালু হয়েছে। কিন্তু একেতো এটা নতুন পেশা তার ওপর মানুষের স্ব”ছ তেমন ধারণাও ছিল না।

ভাল ছাত্রী হওয়ার কারণে বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু মেয়ে যে রক্ত দেখলে প্রচণ্ড ভয় পায় সে কথা বোধ হয় বাবার জানা ছিল না। কি আর করা, মেয়ের আর ডাক্তার হয়ে ওঠা হয়নি। কথা বলছিলাম ফারজানা’স ব্লিস্ এর সত্ত্বাধীকারি ও ডিজাইনার  ফারজানা গাজীকে নিয়ে।

যিনি অন্যের কাজগুলো সানন্দে নিজের কাঁধে তুলে নিতে ভালবাসেন।

ফারজানা গাজী দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর চার বছরের বিএসসি অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস থার্ড পে¬স করাতে ইউনিভার্সিটি থেকে লেকচারের অফার পেলেন। কিন্তু একটু বোরিং লাগাতেই তখন আর ইচ্ছা হলো না নিজেকে সেখানে বেঁধে রাখতে। ভালো লাগবে কী করে, ছোটবেলা থেকেই যে মেয়েটি শৌখিন এবং শিল্পীমনের অধিকারী, সবসময় নেশায় থাকত নানা ধরনের ক্রিয়েটিভ কাজ, তার কী আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন টেকে?

তাই বাইরের একটা অরগানাইজেশন থেকে ১ বছরের ডিপ্লোমা শেষ করেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ওপর। কিš‘ শেখারতো আসলে শেষ নেই। পরবর্তীতে আবার ১ বছরের ডিপ্লোমা করেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন থেকে। এরপর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে তিনি আলকভের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, সারওয়াত ইন্টেরিয়ার এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চিফ কন্সালট্যান্ট, রেডিয়েন্ট ইনিস্টিটিউট অব ডিজাইনের হেড অব এডমিন হিসেবে কাজ করেছেন।

আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে নিজের অনুপ্রেরণার জায়গার কথা জানতে চাইলে ফারজানা বলেন, আমার মা অনেক শৌখিন এবং শৈল্পিক মনের একজন মানুষ তাকে দেখেই এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছি।

ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে ফারজানা বলেন, আসলে আমাদের দেশে ডিজাইনারদের মূল্যায়ন কম। অথচ বিদেশে একজন ডিজাইনারকে অনেক বেশি সম্মান ও মূল্যায়ন করা হয়, যেহেতু আমাদের দেশের মানুষের কাছে এই পেশা সম্পর্কে তেমন স্বচ্ছ ধারণা নেই, তাই আমার মনে হয়েছে কাউকে না কাউকে তো নিতে হবে এর দায়িত্ব, তারই প্রচেষ্টা এটা। আমার কাছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন পেশাটা যথেষ্ট সম্মানজনক একটি পেশা মনে হয় এবং কিছু চ্যালেঞ্জিংও বটে। আর আমাদের দেশে এই পেশার ভবিষ্যত এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এই পেশার গ্রহণযোগ্যতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে এই পেশাটা বেশ জনপ্রিয়। ইন্টেরিয়র ডিজাইন পেশা কেবল আধুনিক নয়, সময়োপযোগী এবং সম্মানজনকও বটে। দরকার শুধু সময়মতো দিক নির্দেশনা।

আর নতুন যারা ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ে আসছে তাদের কাজ অনেক ভালো হচ্ছে। তারা শুধু বিদেশি নয়, আমাদের দেশীয় মেটেরিয়াল ব্যবহার করেও অনেক ভালো এবং নান্দনিক কাজ করছেন। নতুনদের ভালো করার জন্য আমার পরামর্শ একটাই, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি থাকতে হবে আন্তরিকতা দক্ষতা, সৃজনশীলতা, আগ্রহ, ধৈর্য, মনোযোগ, সর্বোপরি অন্যের পছন্দকে বোঝার ক্ষমতা থাকা।

নিজের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে ফারজানা বলেন, নারীদেরকে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ করে দিতে চাই। কারণ আমাদের দেশে নারীরা অসহায় এবং বঞ্চিত। নারীদের উত্সাহিত করার জন্যই আমার এই ছোট্ট উদ্যোগ। দেশকে ভালোবেসেই দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।

ফারজানার স্বর্গ রাজ্যে আছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, জুয়েলারি ডিজাইন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, আইকেবানা, বনসাই প্রভৃতি। সবার মাঝে ঘর সাজানোর সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে ফারজানা বাংলানিউজের লাইফস্টাইল বিভাগে নিয়মিত লেখেন।

 

উপবৃত্তিতে অদম্য গঙ্গাচড়ার রোজিনারা

গ্রামবাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উপবৃত্তি প্রকল্প। উপবৃত্তি শুধু মেয়েদের ক্লাসরুমেই ফেরত আনছে না, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তাদের ক্ষমতায়নেও। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উপবৃত্তি। অনেকটা এই উপবৃত্তির কাঁধে ভর দিয়ে নারী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলগুলোতেও। উত্তরবঙ্গের রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলো ঘুরে চোখে পড়লো এই চিত্র।

অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ এসব এলাকায় একটা সময় মেয়েদের স্কুল কলেজে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখা হতো না। কিংবা স্কুলে গেলেও মা বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতা কিংবা সচেতনতার অভাবে ঝড়ে পড়তে হতো অকালেই। সেই পরিস্থিতির এখন পরিবর্তন হয়েছে ব্যাপক। মেয়েরা শুধু স্কুল-কলেজেই যাচ্ছে না পারিবারিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও মেয়েটির মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে পরিবার।

তাইতো রংপুরের প্রত্যন্ত গঙ্গাচড়ার তিস্তা নদীর তীরের বড় বিলের মাঝখানে কৃষকদের বলতে শোনা যায় “বেটি ছাওয়াল ঘরের খ্যামোতাই এখন বেশি”।

অফিসের অ্যাসাইনমেন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছি উত্তরবঙ্গের মাঠঘাটে। রংপুর থেকে গাইবান্ধার গ্রাম থেকে গ্রামে। ব্রহ্মপুত্রের বালাসী ঘাট থেকে তিস্তার দ্বারকাডোবা ঘাট। উত্তরের পথে প্রান্তরে চলার পথে কথা বলছি নারী থেকে শিশু, কৃষক থেকে শ্রমিক নানা পেশার সাধারণ মানুষের সঙ্গে।

স্মরণে আছে বসের নির্দেশ ‘কথা বলো মানুষের সঙ্গে, তুলে ধরো তাদের কথা’। আরও বলেছিলেন, কোনো এলাকার সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরতে যেতে হবে ওই জেলার সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তিনিই বললেন, গঙ্গাচড়ার তিস্তার চরে যেতে। নদীভাঙ্গন আর মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবেই সারাদেশে পরিচিত এই এলাকা।

গঙ্গাচড়ার উপজেলারই একটি গ্রামের নাম ধামুর। চলার পথে এখানেই কথা হলো গঙ্গাচড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রোজিনা বেগমের সঙ্গে।

রোজিনারা দুই ভাই দুই বোন। পিতা পানের দোকানদার ও বর্গাচাষি। পানের দোকানের আয় দিয়েই সংসার চলে তাদের। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে নিঃস্ব পরিবারটির নিজের জমি নেই। বর্গা নেয়া সামান্য জমিতে কিছু আবাদ হয়।

তবে দরিদ্র পিতার সামর্থ্য না থাকলেও থেমে থাকেনি রোজিনার পড়াশোনা। এ জন্য উপবৃত্তির কথাই কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করলেন রোজিনা। উপবৃত্তির কারণে প্রাথমিক থেকেই তার পড়াশোনার খরচ চালাতে কোনো সমস্যা হয়নি। বই খাতা নোট কেনার পাশাপাশি এমনকি স্কুল কলেজে যাওয়ার জন্য বছরে একটা দুটো পোশাকও বানাতে পেরেছেন তিনি।

উপবৃত্তির কারণে বাল্যবিয়ের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়ার কথা জানালেন রোজিনা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় একবার দাদা দাদীর মাধ্যমে তার বিয়ের কথা হয়। কিন্তু রোজিনার মায়ের দৃঢ়তা এবং উপবৃত্তির কল্যাণে বিয়েটা আর হয়নি। উপবৃত্তি পাওয়ার বেশ কিছু শর্তের মধ্যে একটি হলো এসএসসি পর্যন্ত অবিবাহিত থাকা। তাই যখন বিয়ের কথা এলো তখন রোজিনা ও তার মায়ের অমত দেখে তার বাবাও খুব একটা তোড়জোড় করেননি। ‘মেয়ে যখন পড়ছে তখন পড়ুক। পড়াশোনার খরচ তো আর লাগছে না।’ এই ছিলো রোজিনার পিতার মনোভাব। এভাবেই বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া রোজিনা এখন স্বপ্ন দেখছেন পড়াশোনা শিখে আরও বড় হওয়ার।

কথা হয় গঙ্গাচড়ার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগমের সঙ্গে। জানালেন, আগের থেকে স্কুল কলেজে মেয়েদের উপস্থিতি বেড়েছে। কোন কোনো ক্ষেত্রে উপস্থিতির দিক থেকে ছেলেদের থেকে এখন মেয়েদের সংখ্যাই এখন বেশি। এজন্য তিনি কৃতিত্ব দিলেন সরকারের উপবৃত্তি কার্যক্রমকে।

ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হওয়ায় নারী শিক্ষার্থীদের তো বেতন লাগছেই না উল্টো ডিগ্রি পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছেন অস্বচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা।

আগের থেকে সহজ হয়েছে উপবৃত্তির শর্তও। আগে উপবৃত্তি পেতে কোনো শিক্ষার্থীকে শতকরা ৪৫ শতাংশ নাম্বার পেতে হতো। এখন তা নামিয়ে আনা হয়েছে ৩৩ এ। এছাড়া প্রায় ২৭টি ক্রাইটেরিয়ার আওতায় ‍উপবৃত্তি প্রদান করায় এর আওতা থেকে বাদ যাচ্ছে না দরিদ্র ও অস্বচ্ছল পরিবারগুলোর কোনো মেয়ে। শাহনাজ বেগম জানালেন, এই মুহূর্তে গঙ্গাচড়ার দরিদ্র নারী শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগই উপবৃত্তির আওতায়।

উপবৃত্তির আওতায় এসএসসির ফরম পূরণ পর্যন্ত মাধ্যমিকে একজন নারী শিক্ষার্থী পাচ্ছেন ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। এছাড়া ডিগ্রিতে মেয়েদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ৯শ’ টাকা। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগই উপবৃত্তির আওতায়। অস্বচ্ছল নারী শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই এর আওতায়।

শাহনাজ বেগম জানালেন, উপবৃত্তি রোধ করছে বাল্য বিবাহের প্রসারও। উপবৃত্তি পাওয়ার শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এসএসসি পর্যন্ত অবিবাহিত থাকা। ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর পিতামাতারা আল বাল্যবিবাহে আগ্রহী হচ্ছে না। ধামুর গ্রামের নারী শিক্ষার্থী রোজিনাও ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিলেন।

উপবৃত্তি প্রসার ঘটাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়েরও। উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে উপবৃত্তির টাকা দেয়া হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম গঙ্গাচড়ায় কর্মরত আছেন প্রায় ৫ বছর। নারীর ক্ষমতায়নের তিনি নিজেও একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। জানালেন গঙ্গাচড়ায় আগের থেকে মেয়েদের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বেড়েছে নারীর ক্ষমতায়ন।

বাল্য বিয়ে এখন আর নেই বললেই চলে। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে উপবৃত্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করলেন তিনিও।

সব মিলিয়ে ‘মেয়ে মানুষ’ হিসেবে পিছিয়ে নেই নারীরা। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার পথে কোনো বাধাই আর তাদের থামিয়ে দিতে পারছে না। এমনকি গঙ্গাচড়ার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও জ্বলজ্বল করে জ্বলছে নারী শিক্ষার আলো। শিক্ষা, ক্ষমতায়ন এবং কর্মসংস্থানে গ্রাম বাংলার নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এই এ গতির নৌকায় পালে বাতাস দিচ্ছে উপবৃত্তি প্রকল্প।

 

 

বাবার কবরের পাশে সমাহিত হলেন দিতি

সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অভিনেত্রী দিতির মরদেহ তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় (বিএফডিসি) আনার কথা ছিল সকাল সাড়ে দশটায়। কিন্তু তারও এক ঘণ্টা আগে দিতির মরদেহ পৌঁছে যায় সেখানে। সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ১০টা ২০ মিনিটে দিতির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে জানাজায় দিতির আত্মীয়-স্বজন, চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী এবং শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেন।

জানাজায় অংশ নেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। দিতির অন্য সহকর্মীদের মধ্যে ছিলেন অভিনয়শিল্পী আলমগীর, রুবেল, ওমর সানী, চম্পা, আহমেদ শরীফ, মিজু আহমেদ, জাহিদ হোসাইন শোভন, আজমেরী বাঁধন, আফসানা বিন্দু, খালেদা আকতার কল্পনা, নাসরিন, সাবরিনা নিসা, মুনিয়া, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলীক, ইদ্রিস হায়দার, শাহ আলম কিরণ, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ।

এফডিসিতে জানাজা ও সহকর্মী এবং বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দিতির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ‍গ্রামের বাড়িতে। বাদ জোহর জানাজা শেষে দিতির ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।
গতকাল রোববার বিকেল চারটায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দিতি। এরপর বাদ এশা রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে দিতির মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ সকালে নিয়ে যাওয়া হয় দিতির গুলশানের বাসায়।

শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতি।

সোমবার (২১ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার দত্তরপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এরআগে দত্তরপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে মসজিদের মাঠে তার শেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন দিতির মামা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন।

জানাজায় দিতির ছেলে সাফায়েত হোসেন দীপ্ত চৌধুরী, তার বড় ভাই মনির হোসেন, পারভেজ হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও টিপু ও তার পরিবারের সদস্যরা এবং সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাসের ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সনমান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন সাবু, সোনারগাঁও নাগরিক কমিটির সভাপতি এটিএম কামালসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

এর আগে ঢাকার এফডিসি ও গুলশানে নামাজে জানাজা শেষে লাশবাহী গাড়িতে করে দুপুর সাড়ে ১২টায় দিতির মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। জোহরের নামাজের আগে মরদেহ দত্তরপাড়া জামে মসজিদের মাঠে আনা হয়।

প্রিয় অভিনেত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে তার সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবসহ এলাকার শত অসংখ্য নারী-পুরুষ ভিড় জমান। এ সময়  দিতির পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রোববার (২০ মার্চ) বিকেল ৪টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি।

** সোনারগাঁওয়ের নিজ বাড়িতে দিতির মরদেহ
** সোনারগাঁওয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দিতির দাফনের প্রস্তুতি সম্পন্ন
** দিতির দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন, মরদেহ সোনারগাঁর পথে
** ব্যথাটা বেদনা হবে বুঝিনি ।। ফাহমিদা নবী
** দিতির সঙ্গে রোমান্টিক সিন করতে সমস্যা হতো: আলমগীর
** দিতি নাই কিছু নাই!
** চিরবিদায় দিতি, ফেসবুকে শোক
** দিতির প্রথম জানাজা সম্পন্ন, ১০টায় মরদেহ যাবে এফডিসিতে
** বাবার কবরের পাশে সমাহিত হবেন দিতি
** বাদ এশা দিতির প্রথম জানাজা, সোমবার দুপুরে দাফন
** চিত্রনায়িকা দিতি আর নেই