banner

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 287 বার পঠিত

স্বপ্ন পুরণে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য শোভা

timthumb.php

অপরাজিতবিডি ডটকম, রংপুর : পুরো নাম আম্মিয়া আক্তার শোভা। সবাই তাকে শোভা নামেই চিনে, নামে শোভা হলে কি হবে! সৃষ্টিকর্তা তাকে জন্ম থেকেই দুই পা সম্পুর্ন অকেজো করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লী শ্যামপুর গ্রামে জন্ম নেয় শোভা। যে বয়সে তার খেলাধুলা, হৈ হুল্লোড় করার কথা সেই বয়সে অনেকটা নি:সঙ্গ হয়ে চার দেয়ালের মাঝেই অনেকটা সময় পেরিয়েছে। শারিরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবনে একটুকু সুখের আশায় একটার পর একটা বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

অস্বচ্ছল পরিবারে ২ ভাই ১ বোনের সংসারে বাবা আনিছার রহমানই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।  স্কুলের পিয়ন পদে চাকুরীর সামান্য মাইনে দিয়ে অতিকষ্টে সংসারের ঘানি টেনে চলছে শোভার বাবা আনিছার রহমান। পেশায় গৃহীনি মা দুলালি বেগম মেয়েকে নিয়ে সারাক্ষনই দু:চিন্তায় থাকেন।

শোভার জন্মের পর থেকেই বাবা-মা দুজনেই চিন্তায় পড়েন। পায়ে হেঁটে পথ চলা ব্যাতিত শারিরিক সুস্থ্যতায় ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেন শোভা। পাড়ার অন্যসব ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া দেখে কেঁদে উঠতো শোভার মন। বাবা-মার কাছে পড়াশুনার ইচ্ছা প্রকাশ করলে চলাফেরার সমস্যার প্রসঙ্গ এনে প্রথমে বাধা দিলেও পরে আপত্তি করেননি।

সুযোগ পেয়ে শোভা হাতের উপর ভর করে অর্ধকিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত শুরু করে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রতিবেশিরা শোভার আগ্রহ দেখে উৎসাহ দিতে থাকে। এক সময়ে ৫ম শ্রেণী পাশ করে শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখান থেকে জিপিএ ৩.৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষায় খালাশপীর বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। পড়াশুনা করতে প্রায়ই দুই হাতে সান্ডেল পড়ে হাতের উপর ভর দিয়ে কলেজে যাতায়াতে দেখা যেত শোভাকে। এ নিয়ে কৌতুহল  মানুষের সংখ্যাও কম ছিলনা। সে সময় শোভার চলাফেরায় সাহায্যের হাত বাড়ান কলেজ কর্তৃপক্ষ। এলাকার সমাজসেবক মিজানুর রহমান শাহিন চেয়ারম্যানের সহায়তায় কলেজ কর্তৃপক্ষ শোভার হাতে একটি হুইল চেয়ার তুলে দেন। পরবর্তীতে স্থানীয় আ’লীগের নেতাদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকার একটি অনুদানের চেকও পান। কলেজ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার পাবার কথা থাকলেও শোভা বলেন ভিন্ন কথা।

এ প্রতিবেদককে শোভা জানান, কষ্ট করে জোরগার করা বাবার টাকায় পড়াশুনা চালিয়েছি, কলেজ কর্তৃপক্ষ সবকিছু ফ্রিতে দিতে চাইলেই তাদের কথা রাখেনি, শুধুমাত্র উপবৃত্তি দিয়েছে। দোয়া করবেন আমি যেন সরকারি চাকরি পেয়ে শিক্ষকতা করতে পারি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালাশপীর বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ মোমিনুল ইসলাম রনতু শোভার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শোভাকে পড়াশুনায় সব ধরনের সহযোগীতা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য শোভা। শোভার ভাল ফলাফলের প্রত্যাশায় পীরগঞ্জ উপজেলা বাসি। শুভ কামনা শোভা।

অপরাজিতবিডি ডটকম/আরআই/এ/০৮ এপ্রিল, ২০১৪.

Facebook Comments