banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 342 বার পঠিত

যোগ্যতার বলেই জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে মেয়েরা

1_119287

 

জাহিদ সুলতান লিখন, ঢাকা : গণিত, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জটিল সংকট থেকে শুরু করে পারিবারিক নানা সমস্যাও নারী সুন্দরভাবে সমাধান করার যোগ্যতা রাখেন। এখন নারী বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। নারীর উন্নয়নে এটা একটি ভালো দিক বললেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।

 

রাজধানীর পুরান ঢাকার মেয়ে ড. ফারজানা কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক হিসাবে। কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন চাইতেন না তিনি এত দূরে গিয়ে শিক্ষকতা করেন। কিন্তু তিনি তার মেধা যাতে কাজে লাগাতে পারেন সে সুযোগ করে দিয়েছিলেন তার শ্বশুর। তার শ্বশুর স্থানীয়ভাবে একটি কলেজ চালু করেন। ওই কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার প্রস্তাবও দেন তাকে। তিনি শ্বশুরের প্রস্তাবটি বিনীতভাবে নাকচ করেন। ১৯৮৬ সালের ১৪ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৯ সালে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৯৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৬ সালের ২৮ জানুয়ারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা মানবাধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘নাগরিক উদ্যোগ’-এর চেয়ারপারসন হিসেবে কাজ করছেন। তিনি নগর গবেষণা কেন্দ্রের আজীবন সদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের সদস্য। তিনি বর্তমানে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত। এছাড়া তিনি হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক ড. ফারজানা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য।

 

বরাবর গণিতভীতি ফারজানা ইসলাম এসএসসি পরীক্ষায় গণিতে ৮৫ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। চর্চা-অনুশীলন করলে যে কোনোকিছুই কঠিন নয় তা তিনি গণিতে বেশি নম্বর পেয়ে প্রমাণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে বিএসএস পড়তে গিয়ে আবার পরিসংখ্যানের মুখোমুখি হন। এবারও তিনি সর্বোচ্চ ৭৩ নম্বর পান। নিজের শ্রম, মেধা আর একাগ্রতার মাধ্যমে আজ তিনি সফলতার শীর্ষে। আঠাশ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিরলস শ্রম দিয়েছেন তিনি। এই সেবার মাধ্যমে তিনি একজন ভালো শিক্ষক ও গবেষক হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ প্রশাসকও হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য না হয়েও অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘উপাচার্য প্যানেল’ নির্বাচনে ৪৩ ভোট পেয়ে প্যানেলে প্রথম হন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩-এর ১১(১) ধারা মোতাবেক গত ২ মার্চ তাকে চার বছরের জন্য উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন।
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার আরশিনগর গ্রামের মেয়ে ড. ফারজানা ইসলামের জন্ম ঢাকায় ১৯৫৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর। তার বাবা আবদুল কাদের ও মা ফাতেমা খাতুন। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ১৯৭৩ সালে ধানমন্ডি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি, ১৯৭৫ সালে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএসএস (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, ১৯৮০ সালে এমএসএস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ২০০১ সালে ইংল্যান্ডের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

 

ড. ফারজানা ইসলাম মনে প্রাণে একজন বাঙালি। বাঙালি সংস্কৃতিকে তিনি তার হৃদয়ে লালন করেন। তার পছন্দের পোশাক শাড়ি। শাড়ি পরতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমি। ওই বছরের পহেলা বৈশাখে প্রথম শাড়ি পরি আমি। সেই যে শাড়ি পরা শুরু করলাম, তারপর আর কোনোদিন শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক পরিনি। সময় পেলেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে, ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। কিন্তু উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর অবসর নেই বললেই চলে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর দাফতরিক কাজকর্ম নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয় আমাকে। তবে একটা জিনিস আমাকে প্রেরণা দেয়, আমাদের মেয়েরা জেগেছে, তাই হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। তারা যোগ্যতার বলে নিজের সমতা, সম্ভাবনার জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে। : যুগান্তর

Facebook Comments