banner

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 759 বার পঠিত

মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা খানম সাকী

IMG_0819

 

রবিউল ইসলাম আওলাদ : ফরিদা খানম সাকী। বাবা মরহুম আব্দুল আলীম। মা মরহুমা লুৎফুন্নাহার বেগম। তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় মহান স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধা। জন্ম নোয়াখালী জেলা সদরে। বাবার সরকরি চাকুরী সুবাদে শৈশব কেটেছে তৎতকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়া স্কুল জীবন কেটেছে নানার বাড়ি নোয়াখালী শহরে। নানার পরিবার আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জাড়িত থাকায় ইন্টারমিডিয়েট থেকেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। ১৯৬৫ সালে নোয়াখালী কলেজে ভর্তি হন ফরিদা খানম সাকী। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মাস্টার্সে। ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানের আন্দোলনে জড়িত ছিলেন তিনি।

 

১৯৭০-১৯৭১ সালে যুক্ত হন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে। সে সময় থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলে। তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি নুর-এ আলম সিদ্দিকীর এবং সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজের সাথে রাজনীতি করেন তিনি। ৭০’এর নির্বাচনে কাজ করেছেন সক্রিয় ভাবে। এ ভাবেই এই প্রতিবেদকরে কাছে নিজের স্মৃতি চারণ করেন ফরিদা খানম সাকী।

 

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মার্চ  মাসে ১০-১৫ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে অস্ত্র ট্রেনিং শুরু করি । পরে সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন হয়। পুরো মার্চ মাস আমাদের এই ট্রেনিং চলে। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনার জন্য হলের সবাই সকাল থেকেই রেসকোর্স ময়দানের মঞ্চের সামনে বসে থাকি। 

 

ভাষনের পর থেকেই কেন্দ্র থেকে আমাদের বলা হয় যে কোন সময় যুদ্ধের নির্দেশনা আসতে পারে। গোপনে গোপনে সবার সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আমার কাজ ছিল ঢাকা শহরের খিলগাঁও, পুরান ঢাকা, আজিমপুর ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকার মেয়েদের ও তাদের অভিবাকদের স্বাধীনতা সম্পর্কে বুঝাতে এবং সহযোগিতার কথা বলতে। ছাত্রলীগের সদস্য ও সমর্থকদের মাঝে সচেনতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। 

 

২৩ মার্চ পল্টন ময়দান থেকে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে জাতীয় পতাকা নিয়ে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর হতে পতাকা তুলে দেয়া হয়। ২৫ মার্চের আগে সকল ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয় আমরা যেন হল থেকে না চলে যায়। সেই সময় আমি, মমতা আপা আর অনার্স পরীক্ষার্থী পাঁচ জন হলে ছিলাম। ২৫শে মার্চ রাত ৯টায় মিটিং শেষে হলে ফিরে আসি।

এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসতে শুরু করেছে পাক বাহিনীর আক্রমণের। ২৫শে মার্চ রাত ১১টায় হলের ভেতর থেকে গুলির আওয়াজ শুনে বের হয়ে দেখি সার্চলাইটের আলো আর গুলির শব্দ।

 

আমরা ভিতু হয়ে হলের ভেতরের গেট দিয়ে হল প্রোভোস্ট আক্তার ইমাম আপার বাসায় যায়। তাকে না পেয়ে আমরা হাউজ টিউটর সাইমা আপার বাসায় যাই। ততক্ষনে রোকেয়া হলের গেট ভেঙ্গে পাক বাহিনী ঢুকে মেয়েদের খুজতে শুরু করেছে। আমরা সাইমা আপার স্টোর রুমে কোন রকমে রাত পার করি। সকালে আরেক হাউজ টিউটর মেহেরুন্নেছা আপার বাসায় নিয়ে যায় আমাদের। ২৭ মার্চ কিছুক্ষণের জন্য কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়। সেই সুযোগে ওয়ারিতে আমার ফুফা খান বাহাদুর নুরুল হকের বাসায় চলে আসি। বাবাও চিকিৎসার জন্য তার বাসায় এসেছিলেন। ১লা এপ্রিলে আমরা নোয়াখালী রওনা দেই। অনেক কষ্টে ৩ এপ্রিল আমরা নোয়াখালীতে পৌছাই।

 

এসে দেখি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীলা কাজ শুরু করেছে। আমিও তাদেরকে সহযোগিতা করতে শুরু করলাম। ট্রেনিংয়ে পাঠানো জন্য লোকদের সংগঠিত করি। তখনও পাক বাহিনীর ওই এলাকাতে ঢুকেনি। ঠিক এক সপ্তাহ পরে পাক বাহিনী আমাদের এলাকায় ঢুকে পড়ে। প্রথমে পাক বাহিনী আমার নানার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। আমরা নানার গ্রামের বাড়ি চলে যায়। এই বাড়িটা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের যোগাযোগস্থল। আমার মেজো মামা শাহাবুদ্দিন ইস্কান্দার বুলু মুক্তিযোদ্ধাদের সব রকম সহযোগিতা করতেন। একদিন রাতে নানার বাড়ির সামনে পাক বাহিনীরা আমার মামার হাত বেধে গুলি করে মেরে ফেলে।

 

আমরা ওই বাড়ি ছেড়ে বড় মামির বাবার বাড়ি চলে আসি। সেখানে দুই সপ্তাহ থাকার পরে মনি ভাই ও রব ভাইয়ের লেখা একটি চিঠি পাই। চিঠিতে লেখা ছিল আমরা যেন কোন গ্র“পের সাথে ভারতে চলে যাই।

 

তখন কুতুব নামে এক রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারের সহযোগিতায় আমি, আমার ছোট বোন ও ভাই বর্ডার পার হয়ে আগরতালায় চলে যাই। সেখানে চিদোর ভিলা নামের এক বাড়িতে উঠি। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএফএল) এর হয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হকের ভাই আমিনুল হকের নেতৃত্বে মেজর কেবি শিং এবং মেজর শরমার কাছে প্রশিক্ষণ করি। আমি ব্যাকি আর গ্রেনেড ছোড়ার কাজ শিখি। ৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী পাক বাহিনীর মুক্ত হওয়ার পর দেশে ফিরে আসি।

 

ফরিদা খানম সাকী বলেন, যে উদ্দেশ্যে ৪২ বছর আগে দেশ স্বাধীনের আন্দোলন করেছি। আজ স্বাধীনতার ৪২ বছরেও তা পূর্ণ হয়নি। যেদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনৈকিক নেতারা দুর্নীতি মুক্ত হবে। দেশের সৎ আদর্শবান লোকেরা দেশ নেতৃত্বে আসবে সেই দিন বঙ্গবন্ধুর সোনারবাংলা গড়ে উঠবে।

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরআই/এ/২৬ মার্চ,২০১৪

Facebook Comments