banner

রবিবার, ১২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 147 বার পঠিত

প্রসূতি সেবায় অনন্য এরা

রেহানা বেগম (বাঁয়ে) ও মমতাজ বেগম

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বরগুনা সদরের গৌরিচন্না ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের জরাজীর্ণ বারান্দায় অনেক নারী সেবার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন প্রসূতিও রয়েছেন। পাশেই একটি কক্ষে দেখা গেল, দুজন পরিবারকল্যাণকর্মী তিন-চারজন নারীর সঙ্গে কথা বলছেন। বোঝা গেল, কর্মীরা নারীদের কাছ থেকে তাঁদের নানা সমস্যার কথা জেনে নিচ্ছেন।
নারী কর্মীদের একজনের নাম রেহানা বেগম (৪৫), অপরজন মমতাজ বেগম (৫০)। তাঁরা দুজনই পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক। ৩০ অক্টোবর সরেজমিনে ওই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে অপেক্ষমাণ নারীদের মধ্যে একজনের কাছে সেখানকার সেবার মান কেমন তা জানতে চাইলে আগ বাড়িয়ে অপর এক নারী বলেন, ‘এই দুই আফার হাতযশ আছে। মনে অয় হ্যাগো হাতে জাদু আছে।’
ওই কেন্দ্রের সূত্রে জানা গেছে, তাঁদের দুজনের প্রচেষ্টা ও পরিচর্যায় এই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে গত এক বছরে ২৪৪ জন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসব করেছেন। আর এরই স্বীকৃতি হিসেবে এই কেন্দ্রটি স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সারা দেশে দ্বিতীয় এবং বরিশাল বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। শুধু তা-ই নয়, মা ও শিশুসেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বরগুনা সদর ও জেলা পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে প্রথম পুরস্কার পাচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া মমতাজ বেগম একই কার্যক্রমের সফলতার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনবার পুরস্কৃত হয়েছেন।
কয়েকজন প্রসূতি জানান, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা প্রসূতিসেবার জন্য উন্মুক্ত এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যখনই প্রয়োজন পড়ে, তখনই জরুরি প্রসূতিসেবা দিতে ছুটে আসেন এই দুই নারী কর্মী। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা নিজেদের বেতনের টাকায় গরিব পরিবারের প্রসূতিদের জন্য অস্ত্রোপচার ও অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার খরচও দেন। কোনো প্রসূতির সন্তান প্রসবে জটিলতা দেখা দিলে তাঁরাই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
রেহানা বেগম বললেন, ‘চাকরিই বড় কথা নয়; বড় হলো একজন মানুষ কতটা দায়িত্বশীল, সেটা। সারা দিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে যদি কোনো রোগীর জটিলতার কথা শুনি, তখন আর ঘরে বসে থাকতে পারি না। ক্লান্তিও আর ঘরে আটকে রাখতে পারে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে আসি। পরিশ্রমের পর যখন ফুটফুটে শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তখন সব ক্লান্তি মুছে যায়।’
মমতাজ বেগম বলেন, ‘চাকরির সময় সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হলেও জীবন কোনো সময়সীমার মধ্যে আটকে থাকে না। একজন প্রসূতি কখন প্রসববেদনায় কাতর হবেন, তার ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। তাই পুরো সময়টাকে দায়িত্ব মনে করে কাজ করছি। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন কেবল গৌরিচন্না ইউনিয়ন নয়, পাশের বদরখালী, ফুলঝুরি ইউনিয়নের প্রসূতিরাও ছুটে আসেন।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিরবণী ঘেঁটে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে এই কেন্দ্রে সেবা নিয়েছেন এক হাজার ৩৭ জন। এর মধ্যে ২৭২ জন প্রসূতির সেবা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২২ জন স্বাভাবিক প্রসব করেছেন। ৪৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রসবোত্তর সেবা নিয়েছেন ১১০ জন। এর মধ্যে ৮৩ জন কিশোরীকে সেবা দেওয়া হয়েছে।
গৌরিচন্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ধারাবাহিক সফলতার পেছনে দুই পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে। সে জন্য এ বছর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা ব্যয় করে একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যান তৈরি করা হচ্ছে। যাতে দরিদ্র প্রসূতিদের দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা যায়।

-প্রথম আলো। 

Facebook Comments