banner

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 605 বার পঠিত

জেনে নিন নারী সংক্রান্ত আইন পর্ব – ৩

huhe marage

 

বহুবিবাহ

অপরাজিতাবিডি ডটকম : এক স্ত্রীর বর্তমানে আরও স্ত্রী গ্রহণকেই বহুবিবাহ বলে। আমাদের সমাজে এখনও বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত আছে। বহুবিবাহ পরিবারে অশান্তি ও অসম্মান বয়ে আনে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করে। অনেক সন্তানের জন্ম হলে সংসারে অভাব দেখা দিতে পারে, ফলে পরিবারে আসে দারিদ্র।

 

একজন পুরুষ একাধিক বিযে করতে পারে কি?

একজন পুরুষ মুসলিম ধর্মীয় বিধান অনুসারে একই সাথে চারজনের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না। তবে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে কোন মুসলিম পুরুষ যদি একজন স্ত্রী বর্তমান থাকতে আরও বিয়ে করতে চায় তবে সেক্ষেত্রে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের সম্মতি সাপেক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন সালিশি পরিষদের পূর্ব অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু আইনে বহুবিবাহ বিষয়ে কোনো বিধান নেই। ফলে দ্বিতীয় স্ত্রীর গ্রহণে কোনো বাধা নেই। তবে সামাজিক কারণে এক সঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ হিন্দু পরিবারের খুব কমই দেখা যায়।
খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের ক্ষেত্রে এক স্ত্রীর বর্তমানে আর এক স্ত্রী গ্রহণ আইনগত বৈধ নয়। আইনে মহিলাদের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ। তাই কোন মহিলার স্বামী বর্তমানে থাকলে তাকে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক না দিয়ে আরেকটি বিয়ে করতে পারবে না।

 

দ্বিতীয় বিয়ের প্রক্রিয়া

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ বিধান অনুসারে কোনো পুরুষ যদি এক স্ত্রী বর্তমানে থাকা অবস্থায় অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চায় তবে সেক্ষেত্রে তাকে সালিশি পরিষদের মাধ্যমে স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সালিশি পরিষদের লিখিত অনুমতি ছাড়া সম্পাদিত কোনো বিয়ে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪-এর অধীনে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। অনুমতির জন্য আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করতে হবে। ঐ আবেদনপত্রের প্রস্তাবিত বিয়ের কারণ উল্লেখ করতে হবে এবং ঐ আবেদনপত্রের প্রস্তাবিত বিয়ের কারণ উল্লেখ করতে হবে। বিয়েতে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের সম্মতি নেয়া হয়েছে কিনা তাও উল্লেখ থাকতে হবে।
আবেদনপত্র গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান আবেদনকারী এবং তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের প্রত্যেককে একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারবেন এবং ওইভাবে গঠিত সালিশি পরিষদ প্রস্তাবিত বিয়েকে প্রয়োজনীয় এবং ন্যায়সম্মত মনে করলে প্রার্থীকে অনুমতি দিতে পারেন। হিন্দু আইনে এ ধরনের কোনো বিধান নেই।

 

আইনগত ফলাফল

সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া বিযে করলে সে বিয়ে ১৯৭৪ সনের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রিকরণ) আইনের অধীনে রেজিস্ট্রি করা যাবে না।
সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া বিয়ে আদালতে প্রমাণিত হলে এক বছর পর্যন্ত করাদ- বা দশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে স্বামী দ-িত হবে। তবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ হবে না।
বর্তমান স্ত্রী এই কারণ দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।

 

চেয়ারম্যানের দায়িত্ব

কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বিয়ের আবেদন করার পর চেয়ারম্যান দেখবেন, তিনি স্ত্রীর অনুমতি নিয়েছেন কিনা। তিনি আরো দেখবেন, স্ত্রী স্বেচ্ছায় অনুমতি দিয়েছেন কিনা। চেয়ারম্যান এবং সালিশি পরিষদ অযৌক্তিক মনে করলে স্বামীকে দ্বিতীয় বা বহুবিবাহের অনুমতি নাও দিতে পারেন।

 

কাজীর দায়িত্ব

বহুবিবাহের ক্ষেত্রে কাজীর দায়িত্ব হচ্ছে বিয়েটি বরের বহু বিবাহ কিনা তা দেখা এবং সালিশি পরিষদের লিখিত অনুমতি আছে কিনা তা দেখা।
আমাদের সমাজে বহুবিবাহ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহুবিবাহের ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার নিয়মকানুন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পালন করা হয় না। এই আইনের দু:খজনক দিক হলো বহু বিবাহতে ইচ্ছুক স্বামী সালিশী পরিষদের অনুমতি না পেলে একতরফা তালাক দিয়ে বিয়ে করত পারে। অর্থাৎ ঘুরে ফিরে এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্ত্রীই।

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরআই/এ/৩০এপ্রিল,২০১৪

Facebook Comments