banner

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 451 বার পঠিত

জানা দরকার আইনের খুঁটিনাটি

law

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম, ঢাকা : কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে তালাক দেওয়ার অধিকার দেওয়া আছে নারীকে। কিন্তু আমাদের দেশের কতজন নারী জানে সেই অধিকারের কথা, কিংবা জানলেও কি স্বাধীনমতো তারা তাদের অধিকার আদায় করতে পারে?

 

পারিবারিক ইচ্ছাতেই বিয়ে করেন রেবা-শরীফ দম্পতি। প্রথম থেকেই নানা বিষয় নিয়ে দুটি পরিবারের মধ্যে বিরোধ লেগেই ছিল। স্বভাবতই দু’জনের দাম্পত্য জীবনও চলছিল নানারকম অশান্তি আর কলহের মধ্য দিয়ে। জীবনে বিয়ে বারবার আসে না। তাই অনেক কিছুই মনের সঙ্গে মেলাতে না পারলেও মেনে নিতে চেষ্টা করছিলেন রেবা। কিন্তু কতটা মেনে নেওয়া যায়? এক সময় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে শরীফের সঙ্গে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় রেবাকে। বিষয়টিতে পরিবার সম্মত হয়। যেহেতু সংসার করবেন রেবা। রেবাই যদি সুখী না হয় তো কিসের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ? বাবাকে সঙ্গে নিয়ে তালাকের ব্যবস্থা করেন রেবা। স্থানীয় কাজী অফিস থেকে তালাকের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে স্বামীর বাড়িতে তালাকনামা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যান বরাবর কোনো কপি পাঠানো হয়নি। রেবা এবং রেবার বাবার বিষয়টি জানা ছিল না। কাজী অফিস থেকেও তাদের এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

 

কাবিননামায় স্বাক্ষর করার পর দেড় মাস পার হয়ে যায়। আরও দেড় মাস পার হলে তালাক কার্যকর হবে এ আশায় অপেক্ষা করতে থাকেন রেবা। এরই মধ্যে রেবার স্বামী পারিবারিক আদালতে রেবার বিরুদ্ধে মামলা করে দেন দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য। মূল মামলাটি করার এক সপ্তাহ পর রেবা যাতে অন্য কোথাও বিয়েও করতে না পারেন এ মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনও করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রেবা ও তার বাবাকে আপত্তি দাখিলের জন্য ১০ দিনের সময় দিয়ে আদালত থেকে সমন পাঠানো হয়।

 

এক মাসের মধ্যে দুটি সমন পান রেবা। একটি লিখিত জবাব মূল মামলার জন্য, অন্যটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য। নিজের ইচ্ছায় তালাক দিতে গিয়ে এ আবার কোন ধরনের ঝামেলা! বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে রেবার পরিবার। মূল মামলার জন্য জবাব দিতে সময় দেওয়া হয় এক মাস আর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য ১০ দিন।

 

মামলায় উল্লেখ করা হয়, রেবাকে তার বাবা-মা জোর করে স্বামীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাচ্ছে। কিন্তু রেবা এখনও স্বামীর সঙ্গেই থাকতে চাচ্ছেন। এ অবস্থায় শরীফ রেবাকে নিয়ে সংসার করতে আদালতের কাছে আরজি পেশ করেছেন। রেবাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, ওই স্বামীর ঘরে তিনি কোনোদিনই ফিরে যাবেন না। স্বেচ্ছায়ই স্বামীকে তালাক দিতে ইচ্ছুক রেবা। তখন রেবাকে বলা হলো, তালাক দিতে চাইলে চেয়ারম্যানের কাছে তালাকনামার কপি পাঠাতে হয়। আপনি সেটা করেননি কেন? রেবা জানালেন, তাদের এ বিষয়টি জানা ছিল না। আর চেয়ারম্যানকে জানানো হয়নি, তাতে তালাক দিতে সমস্যা কোথায়?

 

যারা সংসার করবে ব্যাপারটা তাদের চেয়ে কি চেয়ারম্যান ভালো বোঝেন? চেয়ারম্যানের কাছে কপি পাঠানো হলে চেয়ারম্যান স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ে মীমাংসা করার জন্য সালিশ করেন। অনেকাংশেই তারা মিলিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। কিংবা কোনো এক পক্ষের হয়ে কাজ করেন। রেবার বাবা বলেন, আমার মেয়ে ওই পাষণ্ড স্বামীর ঘর করবে না এটাই শেষ কথা। তার সঙ্গে বসবাস করে দেখেছে একসঙ্গে ওর সঙ্গে জীবনযাপন অসম্ভব।

 

এখন চেয়ারম্যান কী করে তার সালিশ করবেন? তারপরও আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান বরাবর একটি কপি পাঠাতেই হবে। সাধারণ আইন অনুযায়ী তালাকের নোটিশ প্রেরণের ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না। এবং ওই সময়ের মধ্যে অন্যত্র বিয়েও করা যায় না। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিল না রেবার পরিবার। কিন্তু মূল মামলাটি নিয়ে লড়তে হয়েছে অনেকটাই। স্বেচ্ছায় তালাক দিতেও একের পর এক ঝামেলা শেষে অনেক কষ্টে নিষ্কৃতি পান রেবা।

 

নারীর জন্য কোনো কিছুই সহজ নয়। অধিকার এবং আইনের কথা লেখা থাকলেও তারা অনেকাংশেই আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে তাদের অধিকার হারান। আবার ঝামেলার কথা ভেবেও অনেকেই এসব মামলা-মোকদ্দমায় যেতে চান না। নারীকে যেন ঘাটে ঘাটে হয়রানি হতে না হয়, সে রকম নারীবান্ধব আইন এবং আইনের প্রয়োগ কামনা করেন দেশের প্রতিটি সচেতন নারী। তবে নারীকেও জানতে হবে আইনের খুঁটিনাটি।

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/২৮ মে ২০১৪ই.

Facebook Comments