banner

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 280 বার পঠিত

 

খাবেন নাকি এফডিসির কালাভুনা?

শাকিব খান দুপুরে কী খান? কালাভুনা? প্রশ্নটি করা হলো সচীনকে। না, খেলোয়াড় শচীন নন, বাবুর্চি সচীনকে। এই সচীন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) বিভিন্ন শুটিং ফ্লোর ও স্পটে খাবার সরবরাহ করেন। খানিক আগে তাঁর একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়েছেন। নাম-ঠিকানার মাঝে সেখানে লেখা, ‘এখানে নাটক, টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রসহ সকল প্রকার অর্ডারের খাবার সরবরাহ করা হয়’।
শাকিবের বেশি পছন্দ হলুদ ছাড়া দেশি মুরগি রান্না এবং চিংড়ি ও পাবদা মাছ। তবে এখন আর তিনি এখানকার খাবার খান না। বাড়ি থেকেই নাকি খাবার আসে। বলেন সচীন।
শুধু শাকিবই নন, সচীনের সব তারকার পছন্দের খাবারের তালিকাই মুখস্থ। শুধু বলে দিলেই হয় আজ শুটিং স্পটে কোন তারকা আছেন! ঠিকঠাক পছন্দের খাবার গিয়ে হাজির হয় ওই তারকার পাতে।
এসেছি ‘এফডিসির খাবার’ বলে যে খাবার খান রুপালি পর্দার মানুষেরা, তার খোঁজ করতে। কারওয়ান বাজার রেলগেট পার হয়ে এফডিসির আগে যেসব গাড়ির গ্যারেজ আছে, সেগুলোর ভেতর দিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে তিনটি হোটেল। এখান থেকেই খাবার যায় এফডিসিসহ বিভিন্ন শুটিং স্পটে। ৫ ডিসেম্বর বিকেলে কথা হচ্ছিল এখানকার হোটেল মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে। তবে সব কথা ছাপিয়ে সবার আগে চলে এল বিখ্যাত সেই ‘গরুর মাংসের কালাভুনা’ প্রসঙ্গ।
সচীন বলেন, ‘১৮ বছর ধরে এফডিসিতে খাবার সাপ্লাই দিই। এর মধ্যে সবার পছন্দ ওই কালাভুনাই।’ সাধারণ গরুর মাংসকে কালাভুনায় রূপ দেওয়ার রহস্যটা কী?
‘কিছুই না। যেভাবে গরুর মাংস রান্না করা হয়, সেভাবেই রান্না করি আমরা। তবে মাটির চুলায় রান্না হয় বলেই সম্ভবত মাংসগুলো দ্রুত কালো হয়ে যায়।’ কিন্তু চট্টগ্রামের বিখ্যাত কালাভুনার সঙ্গে এর বেশ পার্থক্য রয়েছে বলে জানালেন পাশেই বসা আরেক খাবার সরবরাহকারী আবু সালেহ মুনশি। মসলা দেওয়ার মতো করে তিনি যোগ করলেন আরও এক তথ্য। ‘এটা বাবুর্চির একটা কেরামতি, সব কেরামতি কি আর কওন যায়?’
চলচ্চিত্রের বেশির ভাগ তারকাই কালাভুনা পছন্দ করেন। তালিকা করলে সেটা বেশ লম্বাই হবে। সচীন বলেন, ‘এমন কোনো তারকা নেই, যিনি কালাভুনা পছন্দ করেন না। তবে শরীর ঠিক রাখতে একটু কম খান, এই যা।’
এফডিসির লোক তো বটেই, বিশেষ কেরামতির এই কালাভুনার স্বাদ যে কেউ নিতে পারবেন। যেকোনো দিন দুপুরে কারওয়ান বাজার রেলগেটের কাছে এসে ‘এফডিসির খাবার কোথায় রান্না হয়’ বললেই দেখিয়ে দেবে স্থানীয় যে কেউ। তবে আসতে হবে শুধু দুপুরে। সকাল আর সন্ধ্যায় বন্ধ থাকে এই হোটেল। শুটিং স্পটের রাতের খাবারের অর্ডার থাকলেই খাবার রান্না করা হয় এখানে।
এখানে কালাভুনা, মুরগি, মাছের যেকোনো একটি এবং তিন পদের ভর্তা-ভাজি, পাতলা ডাল, ভাতসহ প্যাকেজ পড়বে ১০০ টাকা। একসঙ্গে বেশি অর্ডার হলে দামটা কমে আসে। তবে বাড়তি কিছু খেতে চাইলে আগাম অর্ডার দিতে হয়।
খাবারের এই তিনটি হোটেলই বেশ জমজমাট। ঢাকাসহ বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় খাবার সরবরাহে এগুলোর বেশ সুনাম আছে। এখানকার ভাই ভাই ক্যাটারিংয়ের (পরিচিতি পেয়েছে কালুর হোটেল নামে) ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন বললেন, ‘সব সময়ই ঢাকার বাইরে আমাদের চার-পাঁচটা দল থাকে, যারা ওখানেই রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে।’
ঢাকার মধ্যে বা বাইরে খাবারের দাম একই। শুধু পরিবহনের খরচটাই বাড়তি দিতে হবে। কথা শেষ করে ফেরার সময়ই অ্যালুমিনিয়ামের কলস, ডেকচি, টিফিন বাটিসহ খাবার বহনের বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ফিরছিলেন কালুর হোটেলের কর্মী রায়হান মিয়া।
তিনি বলেন, শুধু এখানেই নয়, শুটিং স্পটে খাবার সরবরাহের জন্য বেগুনবাড়ী, তেজগাঁও এবং উত্তরার শুটিং বাড়ির আশপাশে বেশ কিছু খাবার সরবরাহকারী রয়েছেন।
তাঁর কথায় বোঝা গেল, যেখানে শুটিং থাকে, সেখানেই পৌঁছে যায় তাঁদের খাবার। চাইলে সেখানে থাকে সবার পছন্দের কালাভুনাও।

Facebook Comments