banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 488 বার পঠিত

 

এই শীতে যেভাবে নেবেন কাপড়ের যত্ন

বছর ঘুরে আবারও এল শীতকাল। শুরু হয়েছে গরম কাপড় কেনার ধুম। অথবা যারা আর্থিক ভাবে একটু অসচ্ছ্বল, তারা পুরনো কাপড় ধুয়ে পরছেন এই শীতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, শীত চলে গেলে আমরা যেন গরম কাপড়ের কথা ভুলেই যাই। আমরা যে ভুলটা করি তা হল শীতের কাপড়ের যত্ন না নিয়ে হেলাফেলা করে রেখে দিই পরের বছরের জন্য। ওদিকে যত্নের অভাবে আপনার শখের শীতের পোশাক তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এ দেশে তেমন হাড়কাপানো শীত খুব কম সময়ের জন্যই পড়ে। এ সময় ঘাম কম হয় বলে কাপড় খুব একটা ধোয়ার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া এই সময় সূর্যের তাপ কম থাকায় কাপড় সহজে শুকায় না। তাই শীতের পোশাক পরার পরে তা কিছুক্ষণের জন্য বাতাসে মেলে দেওয়া ভালো।

এমন অনেক ব্যাপার আছে, যেগুলো মাথায় রাখলেই আপনার শীতের পোশাক থাকবে পরের বছর পরার উপযোগী। তাই চলুন জেনে নিই কীভাবে যত্ন নিতে হবে শীতের পোশাকগুলোর-

উল
উলের পোশাক ধোয়ার ক্ষেত্রে বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত। ডিটারজেন্ট বা লিকুইড ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা ভালো। ডিটারজেন্ট ভালো করে পানির সাথে মিশিয়ে ২০/৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে উলের কাপড় হালকা হাতে কেঁচে ধুয়ে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে বেশি জোরে কাঁচা বা নিংড়ানো যাবে না। উলের কাপড় ওয়াশিং মেশিনেও ধোয়া যাবে না। উলের কাপড়ে যদি কোনো দাগ পড়লে ধোয়ার আগে ঐ দাগের উপর লেবু ঘষে নিতে হবে। উলের পোশাকের ক্ষেত্রে একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। এই কাপড়ের পোশাকে ধুলা-ময়লা লাগে বেশি। তাই ব্যবহারের পর ভালো মতো ঝেড়ে রাখতে হবে। উলের কাপড় ধোয়ার পর তা না ঝুলিয়ে সমতল স্থানে শুকাতে দিতে হবে। তা নাহলে এর আকৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফ্লানেল ও পশমি
ফ্লানেল কাপড় ধুতে ডিটারজেন্ট বা লিকুইড ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন। ভালো করে পানির সাথে মিশিয়ে ২০/৩০ মিনিট  ভিজিয়ে রেখে কেঁচে ধুয়ে ফেলা যায়। এ কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ধোয়ার আগে কিছুক্ষণ ভিনেগার পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কারণ ফ্লানেল কাপড়ের বাড়তি রং থাকলে তা চলে যাবে।

পশমি কাপড় ধোয়ার জন্য আপনাকে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এই কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া যায় না। শুধু লিকুইড ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হয়। তার জন্য আপনাকে মাত্র ৫/১০ মিনিট ভিজিয়ে নিয়ে কচলে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং পানি চেপে চেপে ফেলতে হবে। পশমি কাপড় গুলোকে কখনো অন্য কাপড়ের সাথে ভিজানো বা ধোয়া যাবে না। তাহলে পশম গুলো অন্যান্য কাপড়ে লেগে যাবে।

চাইলে ড্রাই ওয়াশ করাতে পারেন। কাপড় ধোয়ার পর টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে ভাজ করে পলিথিনে করে বা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। গরম কাপড়ের মধ্যে সাধারণত পশম, ফ্লানেল ইত্যাদির পোশাক তৈরি হয়ে থাকে। এইসব উপাদানের পোশাক খুব সহজে পোকায় ধরতে পারে। তাই অব্যবহৃত বা কম ব্যবহৃত পোশাক রোদে শুকিয়ে ন্যাপথলিনের সাহায্যে সংরক্ষণ করা যায়।

পশম কাপড় শ্যাম্পু দিয়ে ধুলে উজ্জ্বলতা অটুট থাকে। পশমের কাপড়ে ঘামের দাগ লাগলে তা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হয়। পুরনো ঘামের দাগ ও রঙিন কাপড়ের দাগ উঠাতে অ্যামোনিয়া হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং সোডিয়াম হাইপো সালফাইডের দ্রবণে পরপর ভিজিয়ে শুকাতে হবে। অথবা বোরাক্স পাউডার প্রয়োগ করে রোদে শুকাতে হবে।

লেদার
লেদারের জ্যাকেট বারবার ওয়াশ করা যায় না। তাই মাঝে মাঝে অল্প রৌদ্রে দিয়ে ব্রাশ করে ঝেড়ে ফেলতে হবে। বছরে ১/২ বার ড্রাই ওয়াশ করানোই ভালো। অবশ্যই লেদারের জ্যাকেট হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অনেক দিন ব্যবহার না করার ফলে জ্যাকেটের জিপার জ্যাম হতে পারে। জিপারের চেইনে মোম বা নারিকেল তেল দিয়ে ঘষে নিলে সহজ হয়ে যাবে।

কাশ্মিরি
কাশ্মিরি শাল বা সোয়েটার লিকুইড ডিটারজেন্ট দিয়ে ঘরেই ধোয়া যায়। তবে হালকা ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে পানি বের করতে হবে এবং ছায়া যুক্ত স্থানে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে শুকাতে হবে। ইস্ত্রি করার সময় একটি তোয়ালে বা সুতির কাপর বিছিয়ে নিয়ে তার উপর আয়রন করতে হবে। কাশ্মিরি শাল বা সোয়েটার শুকানোর পর হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে বা ভাঁজ করে পলিথিন ব্যাগে করে ন্যাপথলিন দিয়ে রাখুন।

এছাড়া শীতের কাপড় গুলোকে মাঝে মাঝে রোদে দিতে হবে। কিন্ত খেয়াল রাখতে হবে যাতে বেশি রোদ না পায়, তাহলে  পোশাকটির রং জ্বলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই সকালে ১০-১২ মিনিট রোদই যথেষ্ট। দুপুর বেলার কড়া রোদে কাপড় নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে। অবশ্যই আলমারিতে রাখার আগে ন্যাপথলিন দিয়ে রাখুন। কাপড়ে পারফিউম দিয়ে রাখবেন না তাহলে কাপড়ে দাগ পড়ে থাকবে। শীতের কাপড়ের সঠিক যত্ন নিলে তা দীর্ঘদিন উজ্জ্বল ও টেকসই হয়ে থাকে।

Facebook Comments