banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 885 বার পঠিত

 

“স্বাতীর রঙধনু” (শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ) পর্ব-৩

আফরোজা হাসান


এই পর্যন্ত লিখে থামলো স্বাতী। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হলো ভ্রু দ্বয়। রাত পনে একটা বাজে। বারোটার মধ্যেই চলে আসার কথা ছিল আরভের। ফিরতে কখনো দেরি হলে সবসময়ই ফোন করে জানিয়ে দেয়। আজ সেটাও করেনি।

নিজেই ফোন করার জন্য সেলফোনের সন্ধানে আশেপাশে খোঁজ করতেই মনে পড়লো নুবাইদ, উমায়ের আর নাযীব কে ঘুম পাড়ানোর সময় একবার এক ফ্রেন্ডের, আরেকবার ছোটমামার ফোন এসেছিল। তিন পুত্র মিলে তখন স্বাতীর কাছ থেকেও সেলফোন ছিনিয়ে নিয়ে বন্ধ করে রেখে দিয়েছিল ওদের টেবিলের ড্রয়ারে। মাকে কিছু সময় ওরা কারো সাথে শেয়ার করতে চায়না। ঘুমের সময়টা তারমধ্যে অন্যতম।

নাযীবের কথা মনে পড়তেই হেসে ফেললো স্বাতী। বয়স ছয় বছর হয়ে গেলেও এখনো কিছু কিছু শব্দ সঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারে না নাযীব। এই যেমন “র” কে সবসময়ই “ল” উচ্চারণ করে। পরাপর দু’বার ফোন আসাতে ভয় দেখানো সূচক কন্ঠে বড় বড় চোখ করে স্বাতীকে উদ্দেশ্যে করে নাযীব বলেছিল, এক্ষুণি তোমাল মোবাইল বন্ধ কলে আমাল কাছে দাও। নয়তো কিন্তু তোমাল মোবাইল কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ কলে দেবো। স্বাতী সাথে সাথে বাধ্য মাতার মতো সেলফোন বন্ধ করে দিয়ে দিয়েছিল পুত্রদের কাছে। কিন্তু ওদেরকে ঘুম পাড়িয়ে রুমে আসার সময় সেলফোনের কথা মনেই ছিল না। আরভ নিশ্চয়ই ফোন করেছে। সেলফোন বন্ধ থাকার কারণে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত আছে ভেবে হয়তো ল্যান্ড লাইনেও কল দেয়নি। আজকের মতো লেখাতে সমাপ্তি টেনে ল্যাপটপ বন্ধ করে বাচ্চাদের রুমে রওনা দিলো স্বাতী।

দূর থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো স্বাতী। এতরাতে শ্বশুর সাহেবের এমন প্রাণখোলা হাসির কারণ একটাই হতে পারে। শ্বশুর সাহেব তাঁর প্রাণপ্রিয় বড় পুত্রের সাথে গল্প করছেন। তারমানে আরভ বাড়িতে ফিরে বাবার সাথে গল্পে মশগুল হয়েছে। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। একবার নাতী-নাতনীদের আসরে পৌঁছে গেলে পুত্রকে যে আর কাছে পাওয়া যাবে না এতদিনে খুব ভালো করেই বোঝা হয়ে গিয়েছে রায়হান সাহেবের। তাই গল্পের ইচ্ছে থাকলে আরভ বাড়িতে ফেরার সময় হলেই বাগানে গিয়ে বসে থাকেন। তা না হলে ছেলের সাথে কথা বলতে চাইলেও নাতীদের হাজারটা প্রশ্নের জবাব দিতে হয় তাকে। বিশেষ করে নাযীবের। চোখ বড় বড় করে ব্যারিস্টার সাহেব স্টাইলে নাযীব একের পর প্রশ্ন করতেই থাকে। কেন তুমি আমাল পাপাল সাথে কথা বলবে? তুমি দেখছো না পাপা আমাদেল সাথে খেলা কলছে? কেন আমাদেল কে বিলক্ত কলছো? আমাল পাপাল সাথে তোমালে কথা বলতে দেবো না। কথা বললে তোমালে কামল দেবো। দুইটা কামল দেবো। কামড় দেবার হুমকিটা নাযীবের একমাত্র অস্ত্র। এই অস্ত্রবলে নিজের মরজি প্রতিষ্ঠিত করে বাড়ির সবার উপরে। বাড়ির সবাই তাই সম্মিলিত ভাবে নাযীবের নাম রেখেছে “কামল বাবা”। কামল বাবার দুষ্টু-মিষ্টি কথা ও কর্মের স্মরণে অন্য আর সব ভাবনা বিস্মৃত হয়ে গেলো স্বাতীর মন থেকে। ঘুমন্ত বাব্বুটাকে দেখার ও আদর করার জন্য বাচ্চাদের রুমের দিকে ছুটলো।

চলবে…

পর্ব-২

Facebook Comments