All posts by Oporajita

 

শিশুর আঘাত লাগলে অস্থির হওয়া সমাধান নয়

ইরা রহমান


প্রায়ই দেখি অনেক বোন পোস্ট দেয় বা আশেপাশেও দেখি অনেককেই তারা বলেন বাচ্চার আঘাত লাগলে বাচ্চার বাবা খারাপ ভাবে রিঅ্যাক্ট করে। অনেককে বলতে শুনেছি বাচ্চার মায়ের গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে। খুব খারাপ লাগে শুনলে বিষয়টি।

একটা বাচ্চার সবচেয়ে আপন হল তার ‘মা’। কোন কোন ক্ষেত্রে বাবাও বাচ্চাদের ছেড়ে চলে যায় কিন্তু মা কোনও ভাবেই ছাড়তে পারেনা। হ্যাঁ ২/১ উদাহরণ আছে মা জাতির কলঙ্ক, তাদের কথা আলাদা। ব্যতিক্রম কখনওই উদাহরন নয়, হতেও পারে না। অনেক বাবা তো এমনও আছে যারা বাচ্চাকে ত্যাগ করতে গিয়ে বলে অমন বাচ্চা আরো পয়দা করতে পারব। ছিঃ, একরাশ ধিক্কার জানাই তাদের।

এখন আসি প্রসঙ্গে। কিছু কিছু বাবা আছেন যারা বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসেন, খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেই হারে বাচ্চার মা কে তোয়াক্কা করেন না।

বাচ্চা তাদের আপন আর বাচ্চার মা পরের মেয়ে (??) তাদের ধারণা বাচ্চার মা সারাদিন বাসায় বসেই কাটিয়ে দেয় তাহলে বাচ্চা পড়ে যাবে কেন বা আঘাত পাবে কেন? হায়রে হাস্যকর ভাবনা। একটা বাচ্চার পিছনে একজন মায়ের যে কি পরিমাণ শ্রম যায় তা যদি এই প্রজাতি বুঝত।

তবে এখানে পুরোপুরি বাচ্চার বাবাকেও দোষ দেয়া যায় না। বাচ্চার মায়েরও কিছু আচরণগত সমস্যা আছে। বাচ্চাকে আঘাত লাগতে দেখলেই মা ভয় পেয়ে যায় আর এটা মনে করে যে এই বুঝি বাচ্চার জন্য সে বকা খেল। তার আচরণ পালটে যায়। তার আচরণে অপরাধবোধ প্রবলভাবে দেখা যায়। যার সুযোগ নেয় বাচ্চার বাবা বা অন্য কেউ।

এই অবস্থা থেকে বের হবার জন্য প্রথমে বাচ্চার মা কে শক্ত হতে হবে। সে যদি নিজে না বদলায় তাহলে পরিস্থিতি বদলাবে না। একটা বাচ্চা যে নতুন হাঁটা বা দৌড়ানো শিখছে তাকে আঘাত লাগবেই। আঘাত লাগলেই কিছু কিছু মা আছে ‘ওরে বাবারে মারে’ শুরু করে দেয়। এটা ঠিক না।

বাচ্চার আঘাত লাগলে পরিচর্যা করতে হবে ঠিকই কিন্তু আপনাকে সেই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। অস্থির হওয়া চলবে না। আপনি যখন আঘাত লাগাটা সহজ ভাবে নিবেন আর পরিবারকে এই বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হবেন, যে বাচ্চার আঘাত লাগাটা স্বাভাবিক ঘটনা তখন দেখবেন আপনাকে আর এর জন্য কথা শুনতে হবে না বা বকাও শুনতে হবেনা।

নিজেকে ভালো রাখতে হবে। অন্যকে ভালো রাখার চেয়েও নিজে ভালো থাকা বেশি জরুরী।

প্রধান শিক্ষিকা
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,বগুড়া।

 

‘ক্যান্সার প্রতিরোধ’ : কোনো উপায় আছে কি?

ডা.মারুফ রায়হান খান


‘ক্যান্সার’ এই একটি শব্দের মাঝে যে লুকানো কতো ভয়-শঙ্কা-আর্তনাদ আর হাহাকার তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। ব্যাপারটা খুব বেদনাদায়ক যে ইদানিং খুব ফ্রিকোয়েন্টলি আমরা প্রিয় মানুষদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সংবাদ পাচ্ছি।
American Cancer Society বলছে এ বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবেন। আমরা সবাই জানি, প্রিভেনশান ইজ বেটার দ্যান কিওর।

এখানে সহজ ভাষায় ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু উপায় লেখার চেষ্টা করছি।

১। যত দ্রুত সম্ভব সিগারেট খাওয়াটা ছেড়ে দিতে হবে। এমনকি প্যাসিভ স্মোকিংও যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই আপনার কাছের মানুষজনদেরও সিগারেট খাওয়াটা বন্ধ করাতে হবে আপনার স্বার্থেই। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে খুব কম অঙ্গই আছে যেখানের ক্যান্সারের সাথে স্মোকিংয়ের সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে পুরুষদের সবচেয়ে বেশি হয় ফুসফুসের ক্যান্সার। যা স্মোকিংয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এছাড়াও স্মোকিং মুখ, ঠোঁট, নাক, সাইনাস, স্বরতন্ত্র, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনী, মূত্রথলী, গর্ভাশয়, জরায়ুমুখ, কোলন, মলাশয়, ডিম্বাশয় ইত্যাদি ক্যান্সারেরও কারণ।

২। মদ্যপান করা যাবে না। মুখ, গলা, লিভারের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৩। যারা বেশি স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী, তাদের ওজন কমাতে হবে। স্তন, বৃহদান্ত্র, মলাশয়ের ক্যান্সারের সাথে সংশ্লিষ্ট।

৪। রোদে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৫। চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে। স্তন, অন্ত্র, মলাশয়, প্রোস্টেট গ্ল্যাণ্ডের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।

৬। প্রচুর পরিমাণে ফ্রেশ ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। এসবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারে প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৭। নিয়মিতভাবে সারভাইকাল স্মিয়ার টেস্ট করতে হবে (জরায়ু মুখের একটা পরীক্ষা)। বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় জরায়ুমুখের ক্যান্সারে। যাদের একের অধিক সেক্সুয়াল পার্টনার থাকে, খুব ঘনঘন বাচ্চা জন্ম দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, জন্মনিরোধক পিল সেবন করে তাদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৮। প্রতিমাসে একবার স্তন পরীক্ষা করতে হবে, যেটা নিজে নিজেও করা সম্ভব। সহজ ৫ টি ধাপ অনুসরণ করে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সাম (BSE) করা যায় নিজে নিজে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি নারী আক্রান্ত হয় স্তন ক্যান্সারে। যাদের পরিবারে অন্য কারও স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হয়, যাদের বাচ্চা নেই, বেশি বয়সে প্রথম বাচ্চা নেয়, বুকের দুধ বাচ্চাকে কম পান করায়, চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খায় তাদের স্তন ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

কেন আমরা অসুখী?

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম


” নিজে যে অবস্থায় থাকি না কেন আমি উৎফুল্ল থাকতে এবং সুখী থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। কেননা আমি জানি আমাদের দুঃখ- কষ্ট বা অসুখী থাকার বেশীর ভাগই নির্ধারিত হয় আমাদের নিজস্ব ” স্বভাব/ প্রবনতার” উপর – পরিস্থিতির উপর নয়।”

কথাগুলো বলেছেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন এর স্ত্রী মার্থার।

এটা নিঃসন্দেহে আমরা সবাই সুখী থাকতে চাই।

মানুষ হিসেবে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে যে,

ক) জীবন হচ্ছে ছোট এবং
খ) অসুখী থাকলে আমাদের এই ছোট জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

আমাদের গুনগত উন্নত জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের স্বভাব বা প্রবনতা। এই স্বভাব গুলো আমাদের অসুখী করে কিংবা সুখী করে। আজকের টিপসে এমন কিছু স্বভাবের কথা বলবো যা আমাদের অসুখী করে। মনে রাখতে হবে ” বিষন্নতা রোগ” বা ডিপ্রেশন ও “অসুখী জীবন- যাপন” এক বিষয় নয়। বিষন্নতা হয়, ব্রেইনের জৈব-রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে। অন্য দিকে, অসুখী বা সুখী থাকা হচ্ছে এমন মানসিক অবস্থা বা প্রবনতা/ স্বভাব- যা অর্জিত হয় ‘কিভাবে আমরা জীবন যাপন করার সিদ্ধান্ত নেই’  তার উপর নির্ভর করে। সুখের কথা বিষন্নতাকে যেমন আমরা ডায়গনসিস ও চিকিৎসা করতে পারি, অসুখী থাকাকে ও তেমনি চিকিৎসা করতে পারি।

আমাদের অসুখী করে তেমন ১২টি স্বভাবের কথা পর্যায়ক্রমে বলবো। আজ উল্লেখ করছি তেমন দুটি স্বভাবের :

যে স্বভাবগুলো আমাদের অসুখী করে অথচ যা চাইলে আমরা এড়িয়ে চলতে পারি:

১। সব সময় অভিযোগ, অনুযোগ, নালিশ করার স্বভাব ( Chronic complaining)

সুখী মানুষ অতিরিক্ত অভিযোগ, নালিশ করে না। অন্য দিকে অসুখী মানুষরা সব সময় কোন না কোন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতেই থাকেন।

মূল কথা হচ্ছে

সারা জীবন আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে থাকবো কিন্তু সবশেষে এ পরিস্থিতিগুলো আমাদের। তা সেগুলো ন্যায্য হোক বা অন্যায্য ; কাঙ্ক্ষিত হোক বা অনাকাঙ্ক্ষিত। তাই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করুন – এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নালিশ করার পরিবর্তে। কেননা নিরন্তর অভিযোগ আপনাকে / আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারে না।

২। নিজের প্রতি বা অন্যের প্রতি সমালোচনাপূর্ণ থাকা (being critical of self and others) 

আমরা নিজেদের সঙ্গে নিজেরা কি ধরনের কথা বলি,সংলাপ করি (self-talk), তা নির্ধারন করে আমাদের আত্ম- ভাবমূর্তি ( সেল্ফ ইমেজ)। এই আত্ম সম্মান বোধ আমাদের সুখী হওয়ার অন্যতম উপাদান এবং নিজকে নিয়ে ভালো লাগা বোধ হচ্ছে সঠিক স্বভাব ও প্রবনতা। যখন ভুল করবেন সেটি বোঝার ও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবেন। কখনোই এ সব নিয়ে নিজের সঙ্গে, মনে মনে নেতিবাচক সংলাপ চালিয়ে যাবেন না। তদুপরি অন্যদের মধ্যে যে ভিন্নতা রয়েছে, পার্থক্য রয়েছে, সেগুলোকে শ্রদ্ধার চোখে দেখুন এবং তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিন। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় না করানো।নিজকে অতিরিক্ত অভিযুক্ত করবেন না। নিজের দোষ- ক্রটি, অযোগ্যতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না।

বরং নিজকে ভালোবাসুন, নিজকে শ্রদ্ধা করুন, নিজকে নিঃশর্ত ভাবে গ্রহন করুন।

এ ভাবে নিজকে ও অন্যদেরকে অনাবশ্যক সমালোচনা করার স্বভাব যদি বদলাতে পারেন। কেবল তাহলেই সুখী হতে পারবেন।

ডা. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

 

বিশ্ব হিজাব দিবস ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার


ফেব্রুয়ারি ১ তারিখ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’। ‘Better Awareness. Greater Understanding. Peaceful World’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে এবার এই দিবসটি পালিত হয়েছে।

‘হিজাব’ মুসলিম নারীর ধর্মীয় বিধিবিধানের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অংশ।

২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো এই দিবস পালন করা শুরু হয় এর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯০টি দেশের নারীরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

বিশ্ব হিজাব দিবসের নেপত্যে আছেন ‘নাজমা খান’ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত । তার উদ্যোগেই এই দিবসের প্রচলন শুরু হয় ২০১৩ সালে।

মুলত বিশ্ব হিজাব দিবস পালনের মুল উদ্দেশ্য ইভেন্ট আয়োজকদের হচ্ছে, হিজাব পরিধানের অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে সব ধর্ম এবং ব্যাকগ্রাউন্ড নারীদের হিজাব পড়তে উৎসাহিত করা। অ-মুসলিম এবং মুসলিম সকল নারীজাতি হিজাব পরিধান করে তার অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুন্দর সুযোগ আছে।

চলমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির ব্যাপারটিকে আরো বেগবান করার অভিপ্রায়ে যারা মুসলমান নন, তাদেরও এদিন হিজাব পরার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আল কুরআনে “হিজাব” শব্দের শাব্দিক অর্থ ‘পর্দার প্রতিনিধিত্ব’। পর্দা শব্দটি দিয়ে মুলত শালীনতা ও গোপনীয়তার প্রতীক রূপে ব্যবহৃত হয়।

ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে অর্গানাইজেশনের এই প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, তারা একদিন আমার মতো করে চললে বুঝতে পারবে- আমার ও তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বরং ওই একদিনের কারণেই তারা হয়তো হিজাবকে অন্য আলোকে দেখতে সক্ষম হবে।

আল জাজিরাকে প্রশ্নে তিনি আরও বলেছেন, আমি যদি মাথায় হ্যাট পড়ি, আমাকে কেউ কিছু বলতে আসছে না, টেনে চুল বাঁধলাম বা খোলা রাখলাম বা বেনী করলাম- কেউ কিছু বলতে আসছে না, তাহলে কেন হিজাব পরার জন্য কোনো মেয়েকে কিছু বলা ঠিক হবে?

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিম মহিলারা সামাজিক মাধ্যমে হিজাব ব্যবহারের উপকারিতা নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।

হিজাব পরিধানের ব্যাপারে একটি কলেজের প্রভাষক আফরীন তাসলিমা (কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট) বলেছেন, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর আদেশ মানার জন্য ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য।

বাংলাদেশ থেকে ফাতিমা মারিয়াম নামে একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট বলেছেন, ‘আল্লাহর হুকুম তাই হিজাব করি। সুরা নুর আর সুরা আহযাবের দুটি আয়াতে উল্লেখ আছে। নারীদের পর্দার বিধান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ (সূরা আহজাব : ৫৩)
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা নূরে বলা হয়,
(হে নবী!) মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আবরণ প্রদর্শন না করে (সূরা নূর : ৩১)।’

সিয়েরালিয়ন থেকে হাওয়া নামে এক মহিলা লিখেছেন,
‘হিজাব’ শুধু মাথা ঢেকে রাখার কাপড় নয়। এটা পর্দা রক্ষা করতে সহায়ক। আমাদের হাতের নখ ও লিপইস্টিকের রঙ দিয়ে মূল্যায়ন করলে চলবে না।’

 

ভাষা হোক শুদ্ধ

ডা.সাকলায়েন রাসেল


বসন্ত নেমেছিল আজ আমার রুমে..নীলার আগমনে..দরজা ঠেলে ধরে মুচকি হাসি..চোখে স্নিগ্ধতা!
ঠোট নড়ে উঠল..স্পষ্ট শোনা গেল না..তবে বোঝা গেল!
ঠোটের তুলিতে লেখাটা বুঝে নিলাম-আসতে পারি?
আমার অভিব্যক্তিতেও একই প্রকাশ..মুচকি হাসিটার আকার বেড়ে গেল..হুম, আসতে পারেন!
নীলার বাসন্তি প্রবেশ..বারবার বাসন্তি বলার কারণ এই একটাই..থ্রি পিসের পুরোটাই বাসন্তি রঙের! ওড়নাটা উলটা ইউ আকারে গলা পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ।জংলি ছাপা। চুলগুলো মোটা হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে পিছনে টেনে রাখা। চোখ কাজলে হাইলাইট করা।
নীলাকে দেখলে হঠাৎ করে মহাসুন্দরী মনে হবেনা..আমারো মনে হয়নি..সময় সেটা ডিমান্ডও করছিল না..তবে আমার এটা সহজাত অভ্যাস..চেম্বারে রোগী কিংবা রোগীর লোক ঢোকামাত্র আমি সেকেন্ডেরও কম সময়ে তার আউটলুক দেখে নেই..বোঝার চেষ্টা করি এ্যাটিচুড কেমন..সামাজিক অবস্থা কেমন..কিংবা মানসিকতা কেমন!
বেশিরভাগ সময় মিলে যায়..এই মিলে যাওয়ায় অনেক সুবিধা..আপনি দ্রুতই রোগীর সাথে একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন..আত্মীক সম্পর্ক! আর চিকিৎসা মানে কাগজ কলম প্রেসক্রিপশন নয়, নয় অপারেশন টেবিলে ছুরি কাঁচির কারসাজি!
চিকিৎসা একটা প্যাকেজ! এই প্যাকেজের নায়ক রোগী, ডিরেক্টর চিকিৎসক। আর রোগীর লোক পার্শ্ব অভিনেতা। কারো পারফরমেন্স একটু খারাপ হওয়া মানেই নায়কের কষ্ট, ডিরেক্টরের ব্যর্থতা! আমি তাই ভাসকুলারের চেয়ারে বসেও সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়ার চেষ্টা করি।
কী আছে রোগীর মনে? মানুষটাই বা কেমন? কতটুকু ধারণক্ষমতা আছে তার-আমাকে বোঝার, আমার চিকিৎসা বোঝার! চিকিৎসা একটা গাইড লাইন, এই গাইড লাইন হওয়া উচিত রোগী নামক ছাত্রের অন্তরের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী! এই ক্যাপাসিটি জানতে হলে খুব দ্রুত রোগীর অনুভুতি পড়ে নিতে হয়। যে অনুভুতি লেখা থাকে তার পোশাকে,চলনে, অভিব্যাক্তিতে, ভাষায়!

আমিও পড়ে নিলাম নীলাকে..একটা সৌন্দর্য আছে তার চোখে মুখে..খুব চেনা সৌন্দর্য! স্নিগ্ধ সুন্দর..পোশাকের পরিপাটি রুপ নজরকে আহত করতে যথেষ্ট! আমি আহত না হলেও আকৃষ্ট হলাম..মুগ্ধ হলাম নীলাতে!
নীলার চোখেও আড়ষ্টতা! টানা টানা ঐ চোখগুলোর ভাষা বোঝা গেল না! অগ্যতা শব্দের কোলে আশ্রয় নিলাম!
-আপনি নীলা?
নীলার শব্দহীন.. মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল সে নীলা। কৈশরের আভা ছড়িয়ে পড়ল তার অভিব্যক্তিতে!
বয়সের দিকে তাকালাম, ১৯!
-কী সমস্যা নিয়ে এসেছেন!
মুখ খুলল নীলা..আমি অস্থির! স্নিগ্ধ সুন্দর এমন মানুষের দেহে কী এমন রোগ লুকিয়ে আছে! যার স্মার্টনেস অলরেডি আঁচড় কেটে মনের আংগিনায় তার কন্ঠটাই বা কেমন! প্রকাশের ভংগিমায় বা কেমন!
আমি নীরব, শান্ত স্থীর শ্রোতা হয়ে গেলাম!
‘ অ স্যার, আমার পায়ের রগগুলা ক্যামন জানি ফুইল্যা ফুইল্যা গেছে! মাঝেমধ্যে জম্মের চুলকায়!’

আমি বাকরুদ্ধ!
নীলার সব স্মার্টনেস যেন পুড়ে গেল ভাষার অনলে!
———
মেকআপ মুখের সৌন্দর্য বাড়ায়! ভাষা পুরো মানুষটার!
‘ভাষা হোক উম্মুক্ত-অভ্র’
অফটপিক-ভাষা হোক শুদ্ধ!

অথচ বেশিরভাগ শিক্ষক ও মা বাবা…শিশুকে স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জনবর্ণ শেখান ভুলভাবে!
——-
আসছে
‘অফটপিক’!
এবারের গ্রন্থমেলার ৪৫১ নং স্টল, আইডিয়া প্রকাশনে!
অফটপিক-যাপিত জীবনের বাঁকে অযত্নে পড়ে থাকা অবহেলিত চিন্তার শব্দরূপ!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

কফিমগ

শুকনো পাতা


সুখের হাসি দেখতে হয় এক ঝলক
দূর থেকে,
হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ ছুঁয়ে
ভালোবাসা জমে থাকে পর্বতের ওপাড়ে!

টেবিলের পাশের জানালা ধরে দৃষ্টির বহুদূরে
ফেলে আসা সময় দেখা যায়,হিম মাঘের দুপুরে,
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় কফির রেশ
শূণ্য মগে রয়ে যায় স্মৃতির আবেশ!

#কফিমগ

 

সমান্তরাল

ফাতিমা মারিয়ম


(এক)

সাত মাস আগে বিয়ে হয়েছে শাহেদার। স্বামী রাশেদ আর শাহেদা গার্মেন্টসে এ কাজ করে। পাশাপাশি দুই রুম ভাড়া নিয়ে একই বাসায় শ্বশুর শাশুড়ি সহ থাকে। সংসারে আরো আছে দুই ননদ। দুজনই স্কুলে পড়ে। শাহেদার শ্বশুর ভ্যান এ করে সবজি বিক্রি করে। মোটামুটি সংসার ভালো চলে। বিয়ের পর যেহেতু এটা প্রথম ঈদ তাই শ্বাশুড়িসহ সবার মনে আশা শাহেদার বাপের বাড়ি থেকে এবার এই পরিবারের সবার জন্য কাপড়চোপড় আসবে!

-অ বউ তুমার বাপের বাড়ির থন কাপড় পাঠাইব কবে? তুমার মায়েরে কইবা শুধু জামা কাপড় দিলেই হইব না; ঈদের লাইগা চিনি, সেমাই আরো জা লাগে সব কিছুই দিতে অইব। নইলে সবার কাছে আমরা মুখ দেখামু ক্যামনে? তুমার মায়েরে মনে রাকতে কইবা এইটা তুমার বিয়ার পরে পরথম ঈদ।

শুধু শাশুড়িই নয় দুই ননদ, শ্বশুর, স্বামী সবার মুখেই প্রতিদিন এসব শুনতে শুনতে শাহেদার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে! অথচ তারা একবারও ভাবছে না যে ওরা বাবা মা কিভাবে এতগুলো মানুষকে খুশি করবে? বাবা রিকশা চালায়, মা বাসাবাড়িতে ছুটা কাজ করে। শাহেদার আরও ছোট তিনটা ভাই বোন আছে। তাদেরকে নিয়ে কত কষ্ট করে চলতে হয়! শাহেদার বিয়ের পর তার আয়টাও এই পরিবারে চলে এসেছে। মায়ের কাছে এসব কথা বলতে তার মন চাইছে না।

সে একা একাই এই যন্ত্রণা বয়ে যাচ্ছে।

(দুই)

তিন ছেলের জন্য ঈদের কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরলো মিনা আর শফিক।

শফিক বলল- যাক! এবার আসল কাজটা শেষ হয়ে গেছে।

মিনা হাসিমুখে মাথা নেড়ে সায় দিল।

– মিনা, কাল তো আমি সময় দিতে পারব না, তুমি মার্কেটে গিয়ে তোমার জন্য যা লাগবে কিনে নিও।

-শুধু আমার জন্য কিনব? তুমি কিছু কিনবে না?

– আমার জন্য আর কি কিনবে? আমি শ্বশুর বাড়ির একমাত্র জামাতা তারাই তো আমাকে দিবে…হাহাহা। শ্বশুর বাড়ি থেকে কবে যে ঈদের গিফট পেয়েছিলাম মনেও নেই। বিয়ের পর দুই তিন বছর দিয়েছিল… এখন তারা তো মনে হয় ভুলেই গেছে এই সব সামাজিকতা।

মিনা পাশের রুমে গিয়ে চোখের পানি মোছে। স্কুল শিক্ষক বাবার কানে এসব কথা তোলার কোন মানেই হয়না। বাবার সংসারে তো আর ঝামেলা কম না। মা অসুস্থ, ছোট ভাই দুইটির পড়ালেখার খরচ, সংসার খরচ সব মিলিয়ে বাবা মায়ের কষ্টের কথা মনে করে সে চুপচাপ সব সময়ই শফিকের এসব কথা সহ্য করে যায়। অথচ শফিক ভালো চাকুরী করে ভালো বেতন পায়। বাচ্চাগুলো এত ছোট সেজন্য সে নিজেও কোন জব করতে পারছে না। দাঁতে দাঁত চেপে সে এসব অপমান সয়ে যায়।

(তিন)

হিমেল বাসায় এসে দেখে মৌ বেশ খুশী!

-এই শোন না! আজকে আম্মু এসে টাকা দিয়ে গেছে। চল দুই একদিনের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলি। আগে আব্বুর দেয়া টাকার ঈদ শপিং শেষ করি!

– বল কি! টাকা দিয়ে গেছে? আমিতো ভাবলাম এবার শ্বশুর শাশুড়ির সাথে দেশের বাইরে গিয়ে ঈদ শপিং করব! বিয়ের পর প্রথম ঈদে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়েছিল! মাত্র একবার!! এতো টাকা দিয়ে তোমার আব্বু করবে টা কি শুনি? মেয়ে আর জামাইকে একটু মনের মত কেনাকাটাও করতে দিতে পারে না?

– দেশের বাইরে যেতে এত ইচ্ছে করে? তোমার নিজের টাকায় যাও না! আমার আব্বুর আশায় থাক কেন? তোমার তো প্রচুর টাকা। এমন তো না যে তোমার নিজের কিছু নেই। লজ্জা করে না পরেরটা আশা করতে? তারা যা দিয়েছে তা যদি তোমার পছন্দ না হয় তা হলে তোমার কিছু কেনা লাগবে না! আমি আমার জন্য আর হৃদিতার জন্য কিনে নেব! যত্তসব!!!

– তুমি দেখি রেগে যাচ্ছ! আমি কোন কথাটা মিথ্যা বললাম!

-রাগব না তো কি করব? সব সময় তুমি এমন সব কথা বল! কত সহ্য হয়! তুমি এসব কথা বন্ধ না করলে আমি হৃদিতাকে নিয়ে আম্মুর কাছে চলে যাব।

-আহা! রাগ করছ কেন? আচ্ছা চল,
আগামীকাল শপিং সেরেই ফেলি।

অনলাইন এক্টিভিটিস

 

রান্নার টুকিটাকি টিপস (রকমারি

রোজকার রান্না এবং রান্নাঘরকে গোছালো রাখতে টুকিটাকি অন্যতম কিছু উপকরণ সম্পর্কে জানি। ধরুন, পেঁয়াজ মত ঝাঁঝালো একটি মসলা উপাদানটি কাঁটার সময় চোখ জ্বালা করে, চোখে পানি চলে আসে। কি করলে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে। এরকম সাতটি বিষয় আলোকপাত করা হল:

ঝাঁঝালো পেঁয়াজ

ঝাঁঝালো এ মসলা উপাদানটি কাটার সময় চোখ জ্বালা করে, চোখে পানি চলে আসে। একারণে না কেঁদে পেঁয়াজ কাটার জন্য চুইংগাম চিবুতে থাকুন।

পিঁপড়া সমাচার

মাঝেমধ্যে ঘরে পিঁপড়া তার সদলবল নিয়ে আয়োজন পাতে। এ সময় ছোট বড় সকলকে পিঁপড়ার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হয়। ছোট্ট একটি কাজ করতে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ঘরে ‘শসার খোসা’ ফেলে রাখুন।

ইঁদুরের যন্ত্রণা

শহরের চেয়ে গ্রামে এ সমস্যাটি বেশ প্রকট। এক্ষেত্রে সহজে ‘গোলমরিচ’ ব্যবহার করে এ সমস্যাটি থেকে সমাধান পাওয়া যায়।

আয়না কাঁচে অস্পষ্ট

নেলপালিশের জন্য ব্যবহৃত স্প্রিড ব্যবহার করে সহজে আয়নাকে ঝকঝকে করা যায়।

মাথার চুলে অথবা কাপড়ে চুইংগাম

মাথার চুলে ভুল করে চুইংগাম লেগে গেলে পমেট(মেরিল অথবা ভেসলিন) লাগিয়ে সহজে ওঠানো যায়। তাছাড়া কাপড়ে লাগলে কাপড়টিকে ফ্রীজে রেখে দিলে ঘন্টাখানেক তাহলে চুইংগাম ছেড়ে যাবে।

ডিম সিদ্ধ খোসা ছাড়ান

ডিমের খোসা ছাড়ানোর আগে যদি পানিতে লেবুর রস চিপে দেওয়া যায় তাহলে সহজে এবং সুন্দরভাবে খোসা ছাড়ানো যায়।

সাদা কাপড়ে বাড়তি উজ্জ্বলতা

সাদা কাপড় পরিষ্কার করে ধুয়ে তা আবার লেবু সহ গরম পানিতে ১০মিনিট রাখলে পানি থেকে উঠাতে দেখা যাবে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।

 

পিতা পুত্রের আত্মকাহিনী

গাজী আনোয়ার শাহ্


পৃথিবীতে নিজের খুশিমত আসিনি, খুশিমতো চলেও যাব না। জীবন হাত ধরে নিয়ে এসেছিল বলেই এসেছি। মৃত্যু
হাত ধরে নিয়ে চলে যাবে, তখন চলে যাব।

সব সময় বৃষ্টির ফোঁটার হাত থেকে বাঁচাত। রাতের বেলা আকাশের তারা গোণা হতো এই বটগাছের ছায়ায় বসে। হঠাৎ বটগাছটা বাতাসে মিলিয়ে যায়, মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝিনি, এর মর্ম কি। আজ বুঝি।

ওহ হ্যাঁ,বাবার কথা বলছিলাম আর কি।

“বাবা”এই চরিত্রটা একটু অদ্ভুত। কখনো হয়ত খুব কাছ থেকে আপনি তাকে পাবেন না। তবে দুরে গেলেই হয়ত বুঝতে পারবেন বাবা নামক এই মানুষটি আপনার কত কাছে ছিলো। প্রত্যেক বাবার কাছেই তার মেয়ে রাজকন্যা এবং তার ছেলে রাজপুত্র । এই বাবা তার সন্তানের জন্য কতটা ছাড় দিয়ে থাকেন তা হয়ত একটা ছেলে বাবা হওয়ার আগে টের পায় না।

জানেন, আমাদের দেশের মায়েরা সন্তানদের সারাদিনই বকাবকি করে, আর সে সময়টাতে সন্তানের আশ্রয়স্থল থাকে বাবা। মায়ের বকাবাদ্য হয়ত বাবার কোল পর্যন্ত শোনা যায় না। তাই পরম শান্তিতে বাবার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া যায়। তবে, বাবারাও হয়ত রাগে। সে সময়টাতে হয়ত মায়ের কোল পর্যন্ত গিয়েও সন্তানের নিস্তার হয় না।

একটা কথা শুনেছিলাম, একটা মেয়ে তখনই মা হয় যখন সে জানতে পারে সে মা হতে চলেছে। আর একটা ছেলে তখনি বাবা হয় যখন সে তার নিজ সন্তানকে কোলে নিয়ে দুচোখ ভরে দেখতে পারে।

আমার বাবাটাও না ঠিক একই রকম ছিলো, শেষ সময়টায় বাবা খুব অসুস্থ ছিলো। সেবার জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে বাবাকে খুশি রাখতে পেরেছি বলে মনে হতো। বাবা সন্তান হিসেবে হয়তো দোয়া করতো। মাঝে মাঝে বাবা হাসতো, খুব অদ্ভুত একটা হাসি। হয়ত বুঝি নি, সেই হাসিটাতে ছিলো শত কষ্টের মাঝেও আমাকে খুশি রাখার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা।

আমার বাবাটা হয়ত খুব স্বার্থপর ছিলো, তাই যখনই কোন ভালো কাজ করতাম তখনই বলে উঠতো:-

আমার ছেলে।
আর খারাপ কাজ করলেই হয়ে যেতাম মায়ের ছেলে।এটাই হয়ত প্রত্যেক বাবার রীতি।

সেই বাবাটা আজ নেই। হারিয়ে গেছে সেই বটগাছটার মত। আজ বুঝি, এই বাবাটা আমার কত কাছে ছিলো।আমার এখনো মনে পড়ে বাবার সাথে আমার শেষ স্মৃতিগুলো। পাশেই বসা ছিলাম শেষ সময়টা পর্যন্ত।

ছয় মাস হতে চললো ক্যাম্পাস, বন্ধু, আড্ডা কোন কিছুতেই কেউ খুঁজে পায়নি আমাকে। আমিতো বাবার মাথার পাশে বসে বাবাকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাতাম। বাবার সাথে গল্প করতাম। বাবার খত মাংসের ড্রেসিং করতাম। মাঝে মাঝে গোস্তের স্তুপ কেটে তার উপর আমাকেই ব্যান্ডেজ করতে হতো। রক্ত, পুঁজ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটা ছেঁড়া আমাকে বিরক্ত করতে পারেনি, আমি বাবাকে ভালোবাসি। বাবার কোলে শিশুবেলা ঘুমাতাম। তাই আমিও গল্প বলে বাবার ঘুম পাড়াতাম।
বাবা নয় কেবল পুরো পরিবারের মধ্যমনি হয়ে উঠেছি। আমার অনুপস্থিতি কেউ মেনে নিতে পারতো না।

শেষ সময়টা বাবাকে কালেমা পড়াচ্ছিলাম আর মুখে হালকা পানি দিলাম। তখনো বুঝতে পারিনি বাবা ঠিক এখনি এতিম করে চলে যাবে। খুব কষ্ট পেতো বাবা, কিন্তু সব সময়ই একটি দোয়া করতাম বাবা তোমার অসুখটা যেন না বেড়ে যায়, যেভাবে আছো, থাকো। আমি এখানেই স্বর্গের সুখ খুঁজে পেয়েছি। সন্ধ্যে বেলা প্রায়শই ঘরে থাকা হয় না। কিন্তু বাবার মৃত্যুর দিন আমি বিকাল থেকেই ঘরে।

বাবা আজ আর নেই। আমি কান্না করিনি। কেনো জানি ভুলে গিয়েছিলাম কান্না করতে। আমি পারি না কাঁদতে। সবাই আকাশ ভারি করে ফেলছে, আমি নিতান্তই চুপ। আমার কান্নাগুলোকে হিমালয়ের স্তুপের নিচে চাপা দিয়ে দিয়েছি।

(মাইকে ভেসে আসছে
“একটি শোক সংবাদ…..।” লইন্নালিল্লাহির………রাজীউন।
মরহুমের জানাযার নামাজের সময়…………. )

পুরোটা রাত ধরেই বাবার নিথর দেহের পাশে নিশ্চুপ বসে আছি। তখনো আমি কান্না করিনি। হয়ত বুঝতে পারছি ঠিক করে নিজের ব্যাথার পাহাড় ভাঙ্গবো। এখনো কান্না করি না, শুধু মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে জ্বলজ্বল করা তারাগুলোর মাঝে বাবাকে খুঁজি। হয়ত একদিন খুঁজে পাবো বাবাকে ওই দূর আকাশে, যে আমায় দেখে হাসছে আর দোয়া করছে।

বাবার দেহকে চার খুঁটির খাটে নিয়ে সকালেই বের হলাম ইদগাহের দিকে। নামায হবে, শেষ নামায। আমিই নামায পড়াই। বাবারও তাই ইচ্ছা ছিলো। শেষ করে নিয়ে চললাম স্থির পায়ে গোরস্তানের ছোট্ট সে ঘরের দিকে। পিছনে মানুষের স্রোত। নির্বাক আমি। বাবাকে রেখে দিলাম সে ঠিকানায়, যে ঠিকানায় যাবে বলে জন্মেছিলো বাবা। আজ তাকে রবের কাছে সমর্পণ করে দিলাম। মাটির পর মাটি পড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেল বাবা।

ফিরে আসছি ঘরের দিকে, বাবাকে একা রেখে অন্ধকারের সে ছোট্ট কুঠিরে। কাল পর্যন্ত আমার সব ছিলো, ঠিক এখন আমি এতিম। গভীর রাত এখন, শুয়ে আছি বাবার স্মৃতিকে বুকে জড়িয়ে। যে খাটে বাবা নির্বাক শুয়ে ছিলেন মাসের পর মাস। আজ একাই শুয়ে আছি আমি।

বাবা এখন আমি তোমার জন্য কাঁদবো। পৃথিবীর সব ঘুমিয়ে পড়েছে, নিশ্চুপ চারিপাশ। নিরব, নিথর, ঘুটঘুটে অন্ধকার। এ সময়ে বাবা ঘুম থেকে উঠে রবের দুয়ারে হাত তুলো কাঁদতো। আজ আমি রবের কাছে কেঁদে বলছি, হে প্রভু তুমি বাবাকে জান্নাতের মেহমান করে নাও। তোমার প্রিয় পাত্র হিসেবে কবুল করো। (আমিন)

ভালো থাকুক সকল বাবারা। এপারের অথবা ওপারে।

পর্ব -১
আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

টিনএজারদের জন্য প্রেমের গল্প

আফরোজা হাসান


গতকাল ক্লাস শেষে যখন সবাই মিলে গল্প করছিলাম এক স্টুডেন্ট তার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প বিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল ক্লাসের সবার সাথে। প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি বোঝার জন্যই সে উপন্যাস হাতে তুলে নিয়েছিল। এবং প্রেম সম্পর্কে ধারণা আরো ঘোলাটে করার মধ্যে দিয়ে তার উপন্যাস শেষ হয়। সে বলছিল টিনএজারদের জন্য স্বচ্ছ, সুন্দর ও সঠিক প্রেমের গল্প লেখা দরকার। যেখানে গল্পে গল্পে তারা জেনে ও বুঝে যাবে প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি এবং শরীয়তে এই বিষয়ে কি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টিনএজে দেহ ও মনে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তার ফলে আবেগের যে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয় এবং যে যে রূপে তা বাইরে বেড়িয়ে আসতে চায় সেই ব্যাপার গুলোও সুন্দর করে বিশ্লেষণ করা থাকবে গল্পের বইতে। যাতে আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যাপারেও একটা ধারণা পেয়ে যায় গল্প পড়ে।

বেশ কিছুদিন আগে এক বোন ফোন করে খুব চিন্তিত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন তার বারো বছর বয়সি মেয়েটি আজকাল খুব প্রেমের গল্প-উপন্যাস পড়তে পছন্দ করে। বারবী কার্টুন গুলোর খুব ভক্ত হয়ে উঠেছে। কার্টুনে যখন প্রিন্স ও প্রিন্সেস রোমান্টিক মুহুর্তে থাকে বা কথা বলে বোনটি খেয়াল করেছেন তার মেয়ের চেহারাতে গোলাপী আভা ছড়িয়ে পড়ে! ঠোঁট টিপে মেয়ে হাসে! মাঝে মাঝে নাকি দীর্ঘশ্বাসও ফেলে মৃদু মৃদু! বোনটি খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন মেয়েকে নিয়ে। চিন্তায় পরাটা অবশ্য স্বাভাবিক। সন্তানের চিন্তায় মায়ের মন সবসময় চিকন একটা দড়ির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। যার নীচে থাকে জ্বলজ্বলে আগুণ কিংবা অথৈ পানি। এখন সার্কাসের দড়কাবাজের ট্রেনিং তো আর সব মায়েদের থাকে না। সুতরাং প্রতি মুহুর্তে ‘কি হয়’ ‘কি হয়’ অর্থাৎ, পড়ে যাবার ভয়।

গতবছর বড় ভাইয়ার কন্যারত্নাটি রোমিও-জুলিয়েট পড়ার আবদার করেছিল। ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না যে, আমার মেয়ে তার জীবনের প্রথম লাভ স্টোরি পড়বে রোমিও-জুলিয়েট! শিক্ষণীয় তো কিছুই নেই এই গল্পে। ধোঁকা, মিথ্যা, আত্মহত্যার মত জঘন্য সব উপাদানে ঘেরা পথে চলে আমার মেয়ে ভালোবাসার ভুবনে প্রবেশ করবে? ভালোবাসার কারণে সবকিছু তুচ্ছ করা কি ঠিক? সম্পর্ক বা ভালোবাসার দাবী কি জীবনের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত? আমার মনেহয় না। কারণ আমাদের জীবন তো প্রকৃত পক্ষে আমাদের নিজের না। আমাদের জীবন আমাদের কাছে আল্লাহর দেয়া আমানত। তাই জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছুই থাকা ঠিক না মানুষের কাছে। জীবন নেই তো কিছুই নেই। জীবনই যদি না থাকে ভালবাসা, স্বপ্ন, বন্ধন সবই তো অর্থহীন।কাউকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দেয়ার মত ইউজলেস আর কিছুই নেই দুনিয়াতে। তাহলে এমন ইউজলেস কাহিনী কেন পড়তে দেবো আমার মেয়েকে?

আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন ভাইয়ার কথা শুনে। এভাবে আমি কখনোই চিন্তা করিনি। গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা-কার্টুন মনকে প্রভাবিত করে সেটা আমিও জানি। কিন্তু কোন মনে যখন সবকিছুর সংজ্ঞা তৈরি হচ্ছে সেই মনকে এইসব ভুল উদাহরণ থেকে বাঁচিয়ে রাখাটা কতটা জরুরি সেটা সেদিন অনুভব করেছিলাম। প্রেম-ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ, রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ, রজকিনী-চণ্ডিদাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্রেম কাহিনীর মধ্যে ভালোবাসা কোথায় সেটাই আমি খুঁজে পাইনা। এসব হচ্ছে মোহ, আবেগ আর পরকিয়ার কাহিনী। একে-অন্যের জন্য আত্মহত্যা মানে হচ্ছে জাহান্নামের কাহিনী। আর এসবকে যদি কেউ ভালোবাসা বলে তাহলে এমন ভালোবাসা থেকে আমি নিজেকে মাহরুম রাখাই পছন্দ করবো। জীবন দেয়া কখনোই ভালোবাসার গভীরতা বোঝায় না। সেটা তো ভালোবাসাই না যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।ভালবাসা তো সেটা যা আমাদেরকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। জীবনকে ফুলে-ফলে গড়তে শেখায়। অনন্ত জীবন একসাথে কাটানোর স্বপ্ন দেখায়। দুনিয়ার ক্ষণিকের জীবনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে শেখায়।

ভাইয়া কাগজ-কলম নিয়ে বসে গিয়েছিলেন প্রেমের গল্প লিখতে। লিখেছিলেন উনার সাংসারিক জীবনের ভালোবাসার গল্প। ভাইয়ার কন্যার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প ছিল ওর বাবা-মার সংসার জীবনের ভালোবাসার গল্প। সেদিন আবারো মনে হয়েছিল বাবা- মা’ই তো সন্তানদেরকে দেখাবে সামনে চলার পথ, পথের দিশা, পথ মাঝের চরাই-উৎড়াই, অতঃপর গন্তব্য। বাবা-মা যদি কোন ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা করে, ব্যর্থ হয়। তাহলে সন্তানদের উপর সেটার প্রভাব পড়বেই। বাবা-মা না শেখালে কিন্তু সন্তানরা অজ্ঞ থেকে যাবে না। তারা হয়তো কোন ভুল মাধ্যম থেকে সেই জ্ঞানটা অর্জন করবে। যারফলে ভুলের পথে চলা সহজ হয়ে যাবে তাদের জন্য। বাবা-মা যেমন আঙ্গুল ধরে সন্তানদেরকে হাঁটতে শেখায়, চলতে চলতে পড়ে গেলে হাত বাড়িয়ে দেয় তাদের সামনে, যাতে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে তারা। সন্তানদের মনোজগতেও বাবা-মার অবস্থান এমনটাই হওয়া উচিত। আঙ্গুল ধরে মনের আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথে বাবা-মাকেই হতে হবে সন্তানদের পথ প্রদর্শক। যতবার হোঁচট খেয়ে পড়বে সামনে বাড়িয়ে দিতে হবে হাত উঠে দাঁড়াবার জন্য।

কনসেপ্টটা অসাধারণ মনে হয়েছিল আমার কাছে। আসলেই কতই না সুন্দর হতো যদি প্রতিটা সন্তান ভালোবাসাকে জানতো বাবা-মাকে দিয়ে! প্রতিটা সন্তানের জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প হত তাদের বাবা-মাদের জীবনের ভালোবাসার উপাখ্যান। তাহলে শুধু যে ভালোবাসার সঠিক জ্ঞান অর্জিত হতো সেটাই না। সাথে সাথে অর্জিত হতো জীবন-যাপনের নানাবিধ শিক্ষা। সন্তানরা জানতে পারতো জীবনে সুখী হবার পথে করণীয়-বর্জনীয়। এবং সেই আলোকে তারা আলোকিত করে নিতে পারতো তাদের জীবনের পথ। বর্তমানে আমরা এমন একটা সময় পার করছি যা সবদিক থেকে বৈরী আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাই এটা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবনের প্রতিটি ধাপের প্রয়োজনীয় শিক্ষা বাবা-মাকেই সকল দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে সন্তানদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

টিনএজারদেরকে যে কোন ব্যাপারে বোঝানোর ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে, ওদের প্রশ্নের জবাবে শরীয়তের বিধান বা কুরআন ও হাদিস থেকে বাছাইকৃত অংশ বলে দেয়াটা আসলে খুব সহজ।

কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স শুনে ওরাও হয়তো বেশির ভাগ সময় চুপচাপ মেনে নেয়। কেননা শরিয়তের বিধানের ব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।কিন্তু এতে প্রায় সময়ই ওদের অনুসন্ধিৎসু মন পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হয় না। কারন সমাধান পেলেও মনের খোঁড়াক পায় না যথাযথ। তাই ইসলামিক ভাবে সমস্যার সমাধান দেবার সময় প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কোন উৎস থেকে এই চিন্তাটা বা প্রশ্নটা ওদের মনে জেগেছে। অতঃপর প্রাসংগিক আলোচনা কোনদিকে প্রভাবিত হবে সেটা নির্ধারিত করে নিয়ে সেই আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে পুরো বিষয়টাকে। এবং সবশেষে মন্তব্যে কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

সখের সাইকেল

ডা.সাকলায়েন রাসেল


একটা মেডিকেলে চান্স পেলেই হলো
–আব্বা-আম্মার চাওয়াটা ঠিক এতোটুকুই ছিল। সে জায়গায় যখন চান্স পেলাম ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজে’ তখন তাদের সে কি আনন্দ !

দু’জনে আমাকে কাছে বসিয়ে বলল, তোমার ফলাফলে আমরা আনন্দিত, গর্বিত। এর বিনিময়ে তুমি কি চাও বলো?

‘একটা’ সাইকেল কিনে দাও!!!

আমার এই সামান্য চাওয়ায় বাবা-মা দু’জন বিস্মিত হলেও খুব দ্রুত একটা সাইকেল কিনে দিলেন। বংশাল থেকে, দাম ৩২০০ টাকা।

ফার্স্ট ইয়ার থেকে থার্ড ইয়ার। সব বিনোদন যেন আমার সাইকেলকে ঘিরেই। সাইকেল চালিয়ে বাসা থেকে সোজা ফজলে রাব্বি হল। এরপর সিড়ির গোঁড়ায় গিয়ে সাইকেল ঘাড়ে নিয়ে এক দৌড়ে তিন তলা। সেখান থেকে আবার সাইকেল চালিয়ে আমার রুমে প্রবেশ।

মন খারাপ লাগলে সাইকেল চালাতাম। বিকাল হলে সাইকেল চালাতাম। জ্বর এলেও সাইকেল। এবারের ১৬ ডিসেম্বর, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিট, শত শত সাইকেল।

রঙ বেরঙের সাইকেল… কত ছেলে মেয়ে একসাথে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে ! মনটা ফিরে গেল মেডিকেল কলেজের সেই ফার্স্ট ইয়ারে!

ইদানিং সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মন চায় আবারও এর হ্যান্ডেল ধরি। পকেটে যা আছে তা দিয়ে ভাল একটা সাইকেলও কেনা যাবে। কিন্তু তা কি আর হবে? বয়স বাড়ছে…। মানুষ থেকে আবার ইতোমধ্যে ডাক্তারে পরিনত হয়েছি!!! পাছে লোকে যদি কিছু বলে? এই ‘পাছের লোকটাকে’ কেন যে এতো ভয়!!!!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

অন্য, এক নীল ব্যাথা- বেবি ব্লুস

ফাতিমা খান


নীল আকাশ, নীল জল, নীল নির্জনতা কিংবা নীল নীল ব্যাথার কথা আমরা গল্প, কবিতা বা গানে অনেক শুনেছি। কিন্তু এমন এক নীল কষ্টের কথা কি কেউ জেনেছেন যা একজন মা সন্তান জন্মদানের পর থেকে ভুগেন? আমরা কজনে জানি তাদের কষ্টের কথা?

তাহলে আসুন একটা গল্প বলি। গল্প না ঠিক, সত্য ঘটনা।

ভদ্রমহিলা আমার ডাক্তার কলিগের স্ত্রী।ঘটনা তাদের তৃতীয় সন্তান জন্মের সময়ের। এমনিতে তিনি অত্যন্ত অমায়িক ও স্বামী সংসারের প্রতি বেশ যত্নশীল । কিন্তু কি যে হল, বাচ্চার জন্মের পর থেকেই তিনি হঠাত করে একদম বদলে গেলেন। সারাক্ষন কাঁদেন, খাওয়া দাওয়া বন্ধ, ঘুম নাই চোখে, বড় দুই বাচ্চাকে শুধু শুধুই বকা ঝকা করছেন, তার জীবনের কিছু বাকী নাই…জাতীয় কথাবার্তা বলেন।
এদিকে নানা জনে নানারকম কথা বলছে, ‘ বাচ্চা সুস্থ হয়েছে তো?’ ‘মেয়ে বাচ্চা বলে কি মন খারাপ?’ ‘মায়ের জন্য মন কাদছে কি? দেশে পাঠিয়ে দেন’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

স্বামী বেচারা টেনশনে পড়ে গেলেন। ডিউটি করবেন নাকি ঘর সামলাবেন। ঘটনা চরমে পৌছালো যখন একদিন ভদ্রলোক বাসায় ফিরে দেখেন তার স্ত্রী চাকু নিয়ে বসে আছেন স্বামীকে খুন করবে বলে !

ডাক্তার সাহেব অবশেষে সব সামাল দিয়েছেন অনেক ধৈর্যের সাথে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান ভাল কাজে লেগেছিল সেদিন। এখন তারা ভালই আছেন।

প্রসুতি মায়ের এই সমস্যার নাম পোস্ট পার্টাম ব্লুস ( Postpertum blues) বা বেবি ব্লুস ( baby blues) অথবা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Postpertum depression)।

আজ দেখা হয়েছে এমন আরেকজন মায়ের সংগে। দাতের চিকিৎসার জন্য আসলেও উনার প্রোফাইলে গাইনোকলজিস্ট এর কমেন্টে দেখলাম উনি পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন। অযথাই কান্নাকাটি করছেন, স্বামীকে সহ্য করতে পারছেন না।

বেবি ব্লুস এ আক্রান্ত মায়েরা কিছুটা বিষন্নতায় ভুগেন। শতকরা প্রায় ১৫ জন মা ই বেবি ব্লুসে আক্রান্ত হন।কিন্তু আমরা অনেকেই কিংবা তার পরিবার ও স্বজনরা ব্যাপারটা বুঝতে পারিনা।সবসময় মন খারাপ থাকা, খাওয়া দাওয়া না করা, অকারণে কান্নাকাটি করা,ঠিকমত না ঘুমানো, কখনো কখনো ভয় পাওয়া এর কিছু লক্ষণ। সাধারনত সপ্তাহ দুয়েক এরকম সমস্যা স্থায়ী হতে পারে। কখনো এর বেশীও হয়।

লক্ষণগুলো যদি তীব্র হয়ে যায় একপর্যায়ে রোগিনীর সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি হতে পারে। কখনো নিজের সন্তান বা স্বামীকেও খুন করার ইচ্ছে জাগতে পারে। এই অবস্থাকে বলা হয় পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস।

জেনে রাখা ভাল যে বেবি ব্লুস এ আক্রান্ত মায়েরা কিন্তু মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত বা পাগল নন। তাদের সমস্যাগুলো সাময়িক। প্রসবের পরপর হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এমনটা হতেই পারে। এসময় দরকার তার অনেক যত্ন আর সাইকোলজিকাল সাপোর্ট।পুষ্টিকর খাবার, রুটিন লাইফ ও রিল্যাক্স থাকলে দ্রুত সেরে ওঠা যায়। কখনও যদি এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।

দশ দশটি মাস একটি ভ্রূনকে গর্ভেধারন, নিজের স্বাস্থ্য, পুষ্টি থেকে প্রতিদিন একটু একটু নিঃশেষ করে একটা পুরা মানব শিশুর বৃদ্ধি অত:পর প্রসব খুব নগন্য কোন ঘটনা নয়। এসময় তাদের দেহ, মন, হরমোন সবকিছুতেই এক বিরাট পরিবর্তন আসে। এমনিতেও একজন প্রসুতি মা পরিবারের সবার যত্ন আত্তির হকদার ও মধ্যমণি হওয়া উচিত। মনে রাখবেন একজন সুস্থ মা ই আপনাকে একজন সুস্থ সন্তান দিতে পারে।

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

এন্ডোমেট্রিওসিস: নারীদের জন্যে এক আতঙ্কের প্রতিশব্দ

ডা.মারুফ রায়হান খান


এন্ডোমেট্রিওসিস বিষয়টাকে একেবারে সহজ ভাষায় বোঝানো অনেকাংশে মুশকিল। জরায়ুতে ৩টি স্তর থাকে। একেবারে ভেতরের স্তরটাকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম। এই এন্ডোমেট্রিয়ামের কোষ যখন জরায়ুর বাইরে অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলে।

কোথায় কোথায় এটা ছড়াতে পারে ?

– ডিম্বাশয়
– গর্ভনালী
– পাউচ অফ ডগলাস
– পেটের ভেতর যে পর্দায় মোড়ানো থাকে সেখানে
– ব্রড লিগামেন্ট
– এপেন্ডিক্স
– আগে অপারেশান হয়েছে সে কাটা জায়গায়
– নাভী
– যোনি
– জরায়ুমুখ
– ফুসফুস
– নাক

কাদের বেশি হয়ে থাকে এ রোগ ?

১. ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারী।
২. সাদাদের বেশি হয়।
৩. যাদের পরিবারে এ রোগের ইতিহাস থাকে।
৪. উচ্চবিত্ত পরিবারে।
৫. বিলম্ব করে বিয়ে করা।
৬. বিলম্ব করে সন্তান নেয়া।
৭. সন্তানহীন।

উপসর্গ কী কী থাকে ?

১. প্রায় ২৫ ভাগ নারীরই কোনো উপসর্গ থাকে না।
২. মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা (৫০%)। মাসিক শুরু হবার কয়েকদিন আগেই ব্যথাটা ধীরে ধীরে শুরু হয় কিন্তু মাসিক চলাকালীন সময় এটা তীব্রতর হয়। মাসিক শেষ হবার পরেও কিছুদিন এ ব্যথা থাকতে পারে।
৩. যৌনমিলনের সময় তীব্র ব্যথা (২০-৪০%)।
৪. বন্ধ্যাত্ব (৪০-৬০%)।
৫. পেটে ব্যথা।
৬. বারবার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে করতে অসুবিধা হওয়া, কখনও কখনও প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
৭. পায়খানা করার সময় ব্যথা, ডায়রিয়া, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।
৮. দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্তি, অবসন্নতা।

চিকিৎসা :

অল্পবয়সী বিবাহিত মেয়েদের বাচ্চা নিতে বলা হয়, এতে দেখে যায় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। এ রোগের চিকিৎসায় নিম্নোক্ত অপশনগুলো আছে।
১. হরমোনের মাধ্যমে চিকিৎসা।
২. অপারেশান
৩. হরমোন এবং অপারেশানের যৌথ চিকিৎসা
৪. রেডিওথেরাপি, ইত্যাদি ।

এন্ডোমেট্রিওসিস প্রতিরোধ করা যায় কী ?

এর প্রতিরোধের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা পাওয়া যায় না। তবে তাড়াতাড়ি সন্তান নিয়ে নেয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়মিত চিকিৎসকের চেক-আপে থাকা উপকার বয়ে আনতে পারে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মাইক্রোটিচ পদ্ধতি

আফরোজা হাসান


মাইক্রোটিচ একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ছোট ছোট কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বল্পসময়ে পাঠদান করা হয়। বাংলায় একে বলে অনুশিক্ষন পদ্ধতি। মাইক্রোটিচিং পদ্ধতির তিনটি অংশ- মাইক্রো লেসন, মাইক্রো ক্লাস এবং মাইক্রো টাইম। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের সব কৌশল একত্রে আয়ত্ত না করে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আয়ত্ত করানো হয়। মাইক্রোটিচিং মূলত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগারে বিকশিত হয়। এটি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল হিসেবে বিবেচিত। এর লক্ষ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা, ব্যক্তিগত সবল দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা, শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার উন্নয়ন সাধন, বিভিন্ন কার্যকর শিখন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং কার্যকর ফলাফল প্রয়োগ ও গ্রহণ ক্ষমতার উন্নয়ন।

১৯৫০ সালের শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডুইট ডব্লিউ অ্যালেন, রবার্ট বুশ এবং কিম রোমনি প্রথম মাইক্রোটিচিংয়ের ধারণা উপস্থাপন করেন। ১৯৬০ সালের দিকে ডুইট ডব্লিউ অ্যালেন ও তাঁর সহকর্মীদের মাধ্যমে এই পদ্ধতি আরো বিকশিত হয়। তাদের উপস্থাপিত টিচিং পদ্ধতি হল টিচ, রিভিউ, রিফ্ল্যাক্ট এন্ড রিটিচিং। ১৯৭০ সালের কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এডুকেশন মিনিস্ট্রি তাদের প্রশিক্ষণ সহায়ক কার্যক্রম হিসেবে এই পদ্ধতি গ্রহন করে। ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে এই পদ্ধতি আরো বাস্তবধর্মী ও কার্যকরী ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনে বিকাশ লাভ করে। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এই পদ্ধতি আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হয়ে নতুন মাত্রা লাভ করে। বর্তমানে এই পদ্ধতি কানাডা আমেরিকা সহ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি।

এটি মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির একটা শিক্ষা পদ্ধতি। আর প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনের জন্য এই পদ্ধতিতে তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে-জ্ঞান আহরণ বা অর্জনের ধাপ, দ্বিতীয় হচ্ছে দক্ষতা অর্জনের ধাপ আর তৃতীয় হচ্ছে স্থানন্তর ধাপ। সাবজেক্টের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে কি শিখছে, পুর্ববর্তী শিক্ষার সাথে এর সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতে এর প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার উদ্দেশ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোটিচ পদ্ধতিতে শিক্ষকদের মধ্যে নয়টি বিষয় প্রত্যক্ষ করা যায়-

১। পাঠ পরিকল্পনা। অর্থাৎ, যে বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ানো হয় তার সুনির্দিস্ট উদ্দেশ্য ও সঠিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে টিচারদের মধ্যে।

২। আরোহী পদ্ধতি অনুসরণ। অর্থাৎ, ক্লাসে শুরুতেই শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষন করা।

৩। উপস্থাপন। মানে হচ্ছে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয় তার ব্যাখ্যা, বর্ননা, সঠিক বিশ্লেষণ ও উদাহরণ প্রদান করা।

৪। উদ্দিপনা পরিবর্তন। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের অবসাদ বা একঘেয়েমি কাটিয়ে তোলার জন্য অঙ্গভঙ্গি, নড়াচড়া, সেন্স অব হিউমারের প্রয়োগের মাধ্যমে নীরবতা ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা।

৫। কণ্ঠস্বরের সঠিক ব্যবহার। সঠিক এবং স্পষ্টভাবে প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টোনের ওঠা-নামা।

৬। শক্তি সঞ্চার। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা সনাক্ত করে তাদের উৎসাহিত করা এবং সাড়া দেয়া।

৭। প্রশ্নোত্তর। মানে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন করা, প্রশ্নের মোকাবেলা করা এবং প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা।

৮। নীরবতা ও ইঙ্গিত। মানে হচ্ছে কথা না বলেও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে বক্তব্য প্রকাশ করা।

৯। মূল্যায়ন। কি পরিমাণ উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে তা দেখা।

( ম্যাগাজিনে বিশাল বড় করে লেখা ছিল মাইক্রোটিচ পদ্ধতি সম্পর্কে। এখানে আমি শুধু মূল অংশটুকু সংক্ষেপে লিখেছি। দাদুর পাঠশালাতে এতো তথ্য ঢোকানোটা জটিল লাগছিলো তাই আলাদা লিখে দিলাম)

 

সৌন্দর্যকে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ

মুশফিকুর রহমান আশিক


“সুন্দর” এর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। ফর্সা মানেই সুন্দর না ফ্রেশ মানেই সুন্দর এই জিনিসগুলা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন !!

তুমি ফর্সা হও, শ্যামলা হও, কালো হও কিংবা তোমার চোখ ছোট হোক, নাক লম্বা হোক আর কান বড় হোক কিংবা চুল কম থাকুক আর বেশি থাকুক। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে এমন কেউ আছে, যার কাছে শুধু তোমাকেই “সুন্দর” লাগবে !

তুমি যেমন আছো, তেমনই “সুন্দর” লাগবে। তোমার ছোট চুলই তার কাছে অসাধারণ লাগবে। তোমার বড় চুলের খোপার মাঝে সে আটকে যাবে। তোমার এলোমেলো চুলের মাঝে তার লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটুকু সে আঙ্গুল ছুঁইয়ে খুঁজে নিবে !!

তোমার ছোট ছোট চোখই তার কাছে মায়াময় লাগবে। তোমার বড় চোখের অতল গভীরতায় সে ডুবে যাবে। তোমার দৃষ্টিতেই সে হারিয়ে যাবে !!

তোমার কন্ঠ যেমনই হোক, সে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে চাইবে। তুমি গান গাইতে পারো আর নাই পারো, তোমার প্রতিটা কথাই তার জন্য গান হবে !!

তুমি উচ্চতা নিয়ে ভেবো না। এমন কেউ আছে, যে তোমার মত খাটো কাউকেই চায়, হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে আগলে ধরে রাখতে চায় সবসময়। তুমি লম্বা বলে একদমই টেনশন করো না একটুখানি মাথা উঁচু করে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে কারো খুব ভালো লাগবে। এমন কেউ আছে। নিশ্চয়ই আছে!

তোমার গায়ের রং যেমনই হোক, সে চোখ বুজলেই তোমাকে দেখবে। সে শিল্পী না হয়েও কল্পনার ক্যানভাসে সবটুকু আবেগ দিয়ে তোমাকে আঁকবে। তোমার রংটাই তার তুলিতে একমাত্র রং হবে!

আয়নার দিকে তাকিয়ে তুমি মন খারাপ করো না। আশেপাশের দশটা মানুষের কথায় তুমি নিজেকে ছোট ভেবো না। তুমি শুধু অপেক্ষা করো। তুমি কালো না, ফর্সা না, খাটো না, মোটা না।
তুমি সুন্দর !!

তুমি মানো আর নাই মানো, তুমি সুন্দর। কারো কাছে তুমি অবশ্যই সুন্দর। তুমি শুধু অপেক্ষা করো। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্ত থেকে কেউ তোমাকেই খুঁজছে। তোমাকেই তার লাগবে। আর কাউকে না।

হুম, তোমাকেই !!”

লেখকের ফেসবুক:
https://www.facebook.com/ash.ashique.

 

গর্ভাবস্থায় আপনার ভ্রুণের সঠিক গঠন ও বৃদ্ধি- আপনার খাদ্যতালিকা

ডা.ফাতিমা খান


গর্ভাবস্থায় একটি ভ্রুণের গঠন ও বৃদ্ধি একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। প্রথম ৪ সপ্তাহ ভ্রূণে একটি দৈহিক কাঠামো তৈরী হয়, অতঃপর পর্যায়ক্রমে হাত, পা, চোখ, নাক, কান সহ অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগ গঠন হয়। ২৪ সপ্তাহের একটি ভ্রূনের স্বাভাবিক ওজন হয় ১.৪ পাউন্ড। এই ওজন ২৮ সপ্তাহ বা সাত মাসে ২.৫ পাউন্ডে বেড়ে যায়।

গর্ভকালীন শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ যে ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তার মধ্যে অন্যতম হল মায়ের শারিরীক অবস্থা ও খাদ্যাভ্যাস।

একজন সুস্থ ও পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্রহণকারী মায়ের সন্তান সাধারনত সুস্থই হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতেও পারে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৬-৭ মাসে বাচ্চার বৃদ্ধি হার তুলনা মুলকভাবে কারও কারও ক্ষেত্রে কম থাকে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। যদি ৭ মাসেও বাচ্চার ওজন ‘যদি একটু কমও হয়’ তবুও চিন্তার কিছু নেই, এ ক্ষেত্রে মায়েদের খাবারের দিকে বিশেষ ভাল করে নজর দিতে হবে। শেষের তিন মাস বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে বাচ্চার ওজন এর চেয়েও কম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ভিটামিন জাতীয় ঔষুধ সেবন করা যেতে পারে।

আসুন দেখে নেই কোন কোন খাবারগুলো খেলে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবেঃ

(১)ভাত, রুটি, অন্যান্য, শর্করাজাতীয় খাবার- ওজন বাড়াতে শর্করাজাতীয় খাবারের জুড়ি নেই। ভাত বা রুটি ছাড়াও সুজি কিংবা ওটস ও গমের দানার স্যুপ খাওয়া যেতে পারে, এর সাথে মেশাতে পারেন পছন্দের মাংস বা সিজনিং বিভিন্ন সবজি ও ডিম বা পছন্দের মাংস দিয়ে নুডুলস প্রতিদিনের তালিকায় থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় রুচির তারতম্য হয় খুব বেশী। সেক্ষেত্রে একই খাবার ভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন ভাত ভাল না লাগলে পায়েশ, চালের গুড়ার রুটি বা পিঠা বা চিড়া দই বিকল্প খাবার হতে পারে।

(২)ফল ও শাকসবজি- রকমারী ফল বা ফ্রুট সালাদ অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। কলাতে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান ভরপুর। ওজন বাড়াতে কলা আর আমের তুলনা নেই।প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় কলা রাখা যেতে পারে। পাচমিশালি শাকসবজি রান্না বা স্যুপ করে দুবেলা খাবারের সাথে খেতে পারেন। ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উচ্চ মাত্রায় থাকে এসব খাদ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন ফল রস করে খাওয়ার চেয়ে এমনিতে ফল চিবিয়ে খাওয়া বেশী ভাল। পালং শাক, লালশাক, কচুশাক, লাউ কুমড়া, ঢেড়শ সহ সব ধরনের মৌসুমী শাকসবজি সবচেয়ে উপকারী। কমলা বা লাল সবজি বিটা ক্যারোটিন ও আয়রনের অন্যতম উৎস। তাই এগুলো নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি আলু ওজন বাড়াতে ও খনিজ এর সরবরাহ করতে খুব সহযোগী।

(৩)ডাল ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার – অম্ল বা এসিডিটির যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ডাল বা ছোলা জাতীয় খাবার আমিষের অন্যতম উৎস। তবে এগুলো কাঁচা বা ভাজা খাওয়ার চেয়ে রান্না করে খাওয়াই উত্তম। মাছ, মাংসের পর এই লিগিউমস গুলো প্রোটিন যুক্ত খাবার যা গর্ভের সন্তানের ওজন বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে আছে মুগ, মসুর, ছোলার ডাল, সীমের বিচি ইত্যাদি। ডালের স্যুপ বা পাতলা ডাল উপাদেয় ও পুষ্টিকরও বটে।

(৪)বাচ্চামুরগী বা কবুতর- অনেকের ধারণা শুধু দুধ বা ডিম বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি করবে। এ ধারণা ঠিক নয়। বাচ্চা মুরগির ঝোল বা কবুতরের মাংস নিয়মিত খেতে পারেন। এটি বাচ্চার ওজন বাড়াবে ও সন্তান জন্মদানের পরও মাকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হবে।

(৫)মাছ ও মাংস- সামুদ্রিক মাছে প্রচুর আয়োডিন থাকে ও প্রোটিনের ভাল উৎস। সামুদ্রিক বা নদীর মাছ বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিতে কার্যকর। তবে তাজা ও কেমিকেলমুক্ত হতে হবে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে যেগুলো হজমে দেরি হয় বা মার্কারীযুক্ত থাকে সেগুলো না খাওয়াই ভাল। ছোটমাছ ক্যালশিয়ামের যোগান দেয় যা বাচ্চার হাড়ের গঠনের জন্য অপরিহার্য। এ সময় যেকোন এলার্জিক মাছ এড়িয়ে যাওয়া ভাল। রেডমিট বা গরু ও খাশির মাংসতে ওজন বৃদ্ধি ও আয়রনের যোগান দিতে খুব সহায়ক। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ ও মাংস অবশ্যই থাকা উচিৎ।

(৬)ড্রাই ফ্রুট ও বাদাম- এর মধ্যে আছে খেজুর, কিসমিস, শুকনো এপ্রিকোট, চিনাবাদাম, এলমোন্ড বা কাঠবাদাম, কাজু ইত্যাদি। পিনাট বাটার বা শুধু চিনাবাদামও দ্রুত ওজন বাড়ায়। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। সুতরাং গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে মায়েদের প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে এসময় খেজুর খেতে মায়ের দুর্বলতা কমবে পাশাপাশি বাচ্চার জন্য উপকারী।

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

বাসে মেয়েদের সিকিউরিটি

মুশফিকুর রহমান আশিক


গত কয়েকদিনে ফেইসবুকে যে ব্যাপারটা খুব বেশি চোখে পড়ছে সেটা হলো, লোকাল বাসে মেয়েদের সিকিউরিটি নিয়ে।  দুজনের লেখা ঘটনা পড়লাম, সকাল ১০-১১ টার মত সময়ে যখন লোকাল বাসে একটা মেয়েকে দরজা আটকে হ্যারাজ করার মত সাহস করা হয়, সেটা ভয়াবহ রকমের অ্যালার্মিং!

সকাল ৯ টায় এলিফ্যান্ট রোডের মত একটা ব্যস্ত এলাকায় শত শত মানুষের সামনে থেকে যেদিন আমার ফোন হাইজ্যাক করা হয়েছিল, সেদিনই বুঝে গেছিলাম এই দেশে আমাকে বা আপনাকে কেউ সিকিউরিটি দিবে না। নিজে সাবধান থেকে যতটুকু পারা যায়, ততটুকুই !

যেহেতু মেয়েদের বেলায় এই ব্যাপারটা বেশি হচ্ছে, যারা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন, কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেনঃ

১) বাসটা খালি কিনা
বাস যদি খালি হয়, অবশ্যই অবশ্যই উঠবেন না

২)অল্প কিছু যাত্রী
বাসে অল্প কিছু যাত্রী থাকলেও না উঠার চেষ্টা করবেন। যদি উঠতেই হয়, যাত্রীদের অবস্থা দেখে নিবেন।

এবার আসি যাত্রীদের অবস্থা দেখার বিষয় নিয়ে। দুটো ঘটনা পড়ে যেটা বুঝলাম, বাসওয়ালারা বেশ চালাক হয়ে গেছে। এরা বাস একদমই খালি না রেখে নিজেদেরই কিছু স্টাফ হেলপারকে যাত্রী সাজিয়ে বসিয়ে রাখে যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তাই বাসে উঠার সময় যদি সন্দেহ হয় যে যাত্রীরা তাদেরই কেউ, দয়া করে উঠবেন না। এখানে নিজের Deduction Skill কাজে লাগান।

৩) গেটের কাছে বসুন
বাসে যদি উঠেই পড়েন, গেটের কাছে বসবেন। পেছনে যাবেন না। পেছনে গেলে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

যদি দেখেন কোন একটা স্টপেজে বাসের সব যাত্রী নেমে যাচ্ছে, এক মুহূর্ত দেরি না করে আপনিও নেমে যান। লাগলে ওখান থেকে অন্য উপায়ে বাসায় যাবেন। কিন্তু বাসে যেন একা পড়ে না থাকেন – এটা খেয়াল রাখবেন।

৪) বিপদে পড়ে গেছেন
কখনো যদি মনেই হয় বাসের ভেতর আটকে গেছেন, বিপদে পড়ে গেছেন, ফোন বের করে কোন বন্ধু বা কাউকে ফোন দিয়ে জোরে জোরে বাসের নাম, লোকেশন এগুলা জানিয়ে দিন। একটু হলেও সেটা বাসের ড্রাইভারকে ভীত করবে।

৫)999 ফোন দিন
আমি জানিনা বাংলাদেশে 999 এ ফোন দিলে ইমারজেন্সি পুলিশের হেল্প পাওয়া যায় কিনা। সেটাও ট্রাই করা যেতে পারে

৬)অ্যাথলেটিক হন
নরম বা দুর্বল হয়ে থাকার দিন এখন আর নাই। পারলে একটু অ্যাথলেটিক হন। আপনার কারাতে শেখার দরকার নাই। কিন্তু লাফিয়ে বাস থেকে নামতে পারার মত ক্যাপাবিলিটি যেন থাকে। এইটা নিশ্চিত করবেন !!

৭)বিকল্প চিন্তা করুন
রাতের দিকে যদি ট্রান্সপোর্ট না-ই পান, চেষ্টা করবেন UBER কিংবা Pathao তে আসার। ফাঁকা লোকাল বাসে উঠার চেয়ে UBER Pathao এর কার বা বাইকে উঠা ভালো। আনইজি লাগতে পারে। কিন্তু ঐখানে আপনার পুরা জার্নিটা ট্র্যাক করা হয়, ড্রাইভার/রাইডার এবং কার/বাইক এর ইনফরমেশনও থাকে। তাই সিকিউর বলা যায়। টাকা বেশি লাগুক। জীবনের মূল্যটা বেশি।

চোখ-কান খোলা রেখে চলবেন। নরমালি আপনি যে রাস্তায় নিয়মিত হাঁটেন, খেয়াল রাখবেন কেউ আপনাকে ফলো করছে কিনা। নিয়মিত এক রাস্তায় না চলে মাঝে মাঝে রুট চেঞ্জ করবেন। নিজের নিরাপত্তাটা নিজেরই নিশ্চিত করতে হবে। কারো ভরসায় থেকে লাভ নেই !

এই লেখাটা পারলে শেয়ার করেন। আমার ফ্রেন্ড আর ফলোয়ার লিস্ট মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের অর্ধেকের কাছেও যদি এটি পৌছায়, হয়তো অনেকের লাইফ সিকিউর হবে। প্রতিদিনই আমার আপনার মা-বোন-বান্ধবী কিংবা আপনজন বাইরে বের হচ্ছে। তাদেরকে সতর্ক করা আমাদের দায়িত্ব !!

আপনার বাসায় যারা আছেন, কাছের মানুষ যারা আছেন, তাদেরকে জানান, সতর্ক করেন। আমরা আসলে নিজেরা বিপদে পড়ার আগ পর্যন্ত টের পাই না যে কতটা সতর্ক থাকা দরকার ছিল !

“আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।”

KUET

 

রেখেছি তোমায় হৃদমাঝারে

ফাতিমা শাহীন


এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে বারোটার ঘর পেরিয়েছে। বাসায় এসে বিশ্রাম নিয়ে দুটো খেতে বসেছি। ডাইনিং টেবিলে রুসাফী বললো, আম্মু , তুমি কি শিওর যে আমরা প্রপারলি কানে শুনতে পাচ্ছি ? আমি ম্লান হেসে বললাম, আমি বোধহয় এখনো ততটা শিওর নই…..।

আসলে ঢাকায় কত শব্দের ভেতরে যে আমরা ছিলাম ! প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি স্থানে নানান ধরণের শব্দ। চেনা অচেনা , বোধগম্য অবোধগম্য শব্দরাজি এ ক’দিনের মধ্যে আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল যেন।

অন্যদিকে, নভেম্বর-জানুয়ারি মাস বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলের মাস। জোহর নামাজের পর থেকেই চতুর্দিক থেকে ভেসে আসতে থাকে ওয়াজের ধ্বনি। মাঝে মাঝে কোন কোন রাতে না ঘুমিয়ে কান পেতে থাকতাম যে কোন একটি ওয়াজের প্রতি মন:সংযোগ করে শুনবো বলে, কিন্তু সে উপায় কি আর আছে ? শত মাইকে , শত কণ্ঠে হিদায়াতের কত না মহান বাণী ধ্বনিত হচ্ছে , কিন্ত কোনটাই শুনে কোন কিছু বোঝার উপায় নেই।

তবুও , বছরের পর বছরভর , নি:শব্দ ও স্তব্ধতায় মোড়া এই আমাকে কি যে নিবিড় মমতার অচ্ছেদ্য এক বাঁধনে বেঁধে রেখেছিল আমার প্রিয় ঢাকা ! ফিরে আসার দিন এয়ারপোর্টে আসার পথে আমার হৃদয়খানি সহস্র টুকরো করে ঢাকার পথে পথে আমি ছড়িয়ে রেখে এসেছি। কান পেতে তৃষ্ণার্তের মত শুনে নিয়েছি শত মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি , রাজপথের ব্যস্তসমস্ত মানুষের উচ্চকণ্ঠ , কারণে অকারণে বেজে ওঠা যানবাহনের হর্ন , ট্রাফিক পুলিশের হুইসেল ….।

মাঝে মাঝে অকারণেই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। মনের আয়নায় ভেসে ওঠে চারতলা একটি বাড়ির বারান্দা , যেখানে বাতাসে উড়ছে আম্মুর শুকোতে দেয়া শাড়ির আঁচল, আব্বুর সবুজ গামছাখানি … আমার পুরো বাংলাদেশ হয়ে ! চোখ ভিজে ওঠে অজান্তেই ….
সেই ভেজা চোখ মুছতে ওই আঁচলখানির ছোঁয়া পেতে মন কেবলি হাহাকার করে ওঠে …. কেবলি …।।

 

এক মায়াবতী, রূপসী কিশোরীর করুণ কাহিনী

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম


আমিরুল -বর্তমানে বয়স ৩২। সে ছোটকাল থেকে অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। তারা এক ভাই ও এক বোন। বোন বিয়ে করে জার্মান চলে যায়। তার খালু ও মা চেয়েছিল তার ঐ বোনের সঙ্গে তার খালাতো ভাইকে বিয়ে দেবে। তার মা ঐ ছেলেকে জামাই বাবা বলে ডাকতো। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্হা খারাপ থাকাতে ঐ মেয়ের এক ইন্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়।

আমিরুল মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও সে মা- বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়াতে, তার খালু চেয়েছিল তার সঙ্গে তার এক মেয়েকে বিয়ে দেবে। ঢাকায় আমিরুলদের একতলা একটি বাড়ী আছে। গ্রামে ও প্রচুর সম্পত্তি। কিন্তু ঐ মেয়ে এরকম হাবাগোবা, কুৎসিত চেহারার, অকর্মন্য ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয় না। এতে ঐ বাবার মনে আফসোস থেকে যায়। এ কারণে সে লোক তার কনিষ্ঠ কন্যাকে আমিরুলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে।

এই মেয়েটির বয়স তখন ১২-১৩ বছর হবে। সে দেখতে শ্যামলা, কিন্তু খুবই সুশ্রী, মিষ্টি চেহারার, মায়াবতী মেয়ে। এ বিয়ে নিয়ে তাদের আত্মীয়দের মধ্যে মতানৈক্য হয়। তবে এ লক্ষি টাইপের, অল্প বয়সী মিষ্টি চেহারা লাজুক মেয়েটি, বাবার কথার অবাধ্য হয় না। সে রাজি হয়ে যায়।

অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে কি, সেক্স কি, ভবিষ্যৎ কি তেমন বুঝতো না। সবাই আশা করেছিল ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও, কিছু করতে বা বুঝতে না পারলে ও তাদের একটি সন্তান হলে, মেয়েটি তাকে নিয়ে কোন ভাবে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।

কিন্তু সে সব দিক থেকেই অপারগ। আমিরুল বউ কি,ভালোবাসা কি,সেক্স কি, দায়িত্ব কি – কিছুই বুঝে না। বরং তাকে খাইয়ে দেওয়া, গোসল করানো থেকে শুরু করে সব কিছু এই মেয়েকে করতে হয়। নিজ মা- বাবা যা করতে হিমসিম খায়, যা করতে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে যায়- এ মেয়ে অবলীলায় তা করে যায়। ২-৩ বছর পরেও যখন আত্মীয়রা দেখলো আমিরুল কোন সন্তান তো দিতে পারছে না,বরং তার তেমন শারিরীক সম্পর্ক করার চিন্তা, চেষ্টা, আগ্রহ, ধারনা কোনটিই নাই- তখন উভয় পক্ষের আত্মীয়রা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমিরুলের বউয়ের বয়স এখনো কম আছে, সে সুন্দরী তাই এভাবে তার জীবন নষ্ট করা ঠিক হবে না।

সবাই তখন ঐ মেয়েকে আমিরুলকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করতে বলে।

কিন্তু এই ২-৩ বছরের মধ্যে মায়াবতী মেয়েটি এক মায়ার জালে জড়িয়ে যায়।সে বলে ওকে ছেড়ে যাবো চিন্তা করলেই আমার বুক ফেটে যেতো, কান্না পেতো।

ভাবলাম আরেকটি বিয়ে করলে সে স্বামী যে ভালো হবে তার গ্যারান্টি কি? এ যদি আবার কোন মেয়েকে বিয়ে করে সে মেয়ে পারলে আমি কেন পারবো না? তাছাড়া আমি তো অন্য সবদিক থেকে ভালো আছি। ভালো খাচ্ছি, ভালো পড়ছি,সবার আদর পাচ্ছি। এমনকি ও আমাকে পছন্দ করে, আমার মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়। আমি একে কিভাবে ছেড়ে যাবো? ও এতো অসহায়, ও আমার উপর নির্ভরশীল – আমি চলে গেলে ওর কি হবে? না পেলাম স্বামীর সোহাগ বা দৈহিক আনন্দ। না পারুক আমার জন্য কিছু করতে, হোক সে দেখতে কুৎসিত। সে তো সরল, অন্য পুরুষের মতন তার তো কোন বদ স্বভাব নেই-

আমার শুধু একটি সন্তান হলেই চলবে।

কিন্তু এরপর আমিরুলের আরো অবনতি হয়, অস্বাভাবিক আচরণ বেড়ে যায়, সারাক্ষণ হা করে থাকে, লালা জড়ে।তাকে সে লালা মুছে দিতে হয়, তার খামখেয়ালি পণা, অবাস্তব আবদার মেটাতে হয়। তার দাম্পত্য জীবন বলে কিছু নেই, সন্তান তো দূর থাক। অনেক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো হয়েছে। সবাই বলে এর উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলে স্যার, আপনার অনেক প্রশংসা শুনে এসেছি। আমি সেক্স চাই না,ভালোবাসা, আদর চাই না, আমাকে শুধু একটি সন্তান পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

একে আমি ছাড়তে পারবো না -ছাড়ার চিন্তা করলেই কান্না আছে, বুক ফেটে যায়। ওকে সুস্হ করে আমার একটি সন্তান হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন স্যার
এ কাহিনী কি বলে:

(১) অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েকে নিয়ে নিজ মা- বাবারাই যেখানে থাকে অতিষ্ঠ। সেখানে একটি রুপসী,কিশোরী কি দেখে মায়ায় জড়ালো?

(২) টাকা পয়সা,সম্পত্তির লোভে অনেক গরীব মা- বাবা তাদের সুন্দরী, গুনবতী মেয়েদেরকে ও আমিরুলের মতন সবদিক থেকে প্রতিবন্ধী ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে থাকে। একদিকে প্রতিবন্ধীদের ও অধিকার রয়েছে ঘর সংসার করার, আবার একটি গরীব ঘরের মেয়ের ও অধিকার, সাধ থাকে -একজন স্বাস্হ্যবান, সুস্হ, উপার্জনক্ষম, স্বাভাবিক স্বামীর ঘর সংসার করার।

এ দুয়ের সহজ ও ভালো সমাধান কি?

(৩) আমিরুলের মিষ্টি, রূপবতী বউ কিন্তু নিজ থেকে তাকে মেনে নিয়েছে। একজন কিশোরী -তরুনী মেয়ে সব ধরনের মানসিক, সামাজিক, দৈহিক চাহিদা থেকে বন্চিত থেকেও সে আমিরুলের সঙ্গে সংসার করতে হাসিমুখে রাজি।শারিরীক আনন্দের জন্য নয়, শুধু ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে তার জীবনের একমাত্র চাওয়া,আকাঙ্ক্ষা তার যেন একটি সন্তান হয়। হোক তা ছেলে বা মেয়ে। এ যুগে এমন ত্যাগী, নিবেদিতা স্ত্রী কতজনের আছে?

৪। কিন্তু এরকম ত্যাগ কি শুধু গরীবরা করবে? বা শুধু নারীরা করবে? কোন পুরুষ কি এমন কোন সবদিক থেকে প্রতিবন্ধী কোন কুৎসিত মেয়েকে এভাবে আপন করে নিবে?

এমন উদাহরণ কি আছে?

সাইকিয়াস্ট্রি, ইন্সটিটিউট অব ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ

 

বিষণ্ন চোখ ও ভুবনজয়ী হাসি

গাজী আনোয়ার শাহ্


শৈশব স্মৃতি মনে হলে ভাবি অনেক ভালোই ছিলাম, জীবন বাগানে কেবল ফুলের চাষ হতো। সুঘ্রাণ ছড়াতো মেশকের মত। হতাশা, দুরাশা, অপ্রাপ্তি, খারাপ লাগা, শূন্যতা, হারানোর ভয় কিছুই ছিলো না। জীবনটা একটা সুখ সম্পদ ছিলো ছোটবেলায়। পাপ, অন্যায়, কদর্য, হিংসা, ঈর্ষা, পরিশ্রীকাতরতা, হীনমন্নতা, নিচুতা এসবের স্থান ছিলো না। এ রাজ্যের একক অধিপতি ছিলাম আমি নিজেই।

আজ এই মুহুর্তে ভাবছি জীবনখানি দুধের সরের মত ভাসছে, এখানে আর স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। একটু তাপ লাগলেই সরটি দুধের সাথেই মিলিয়ে যায়, অর্থাৎ জীবনের কোন মানে খুঁজে পাই না। বৃথা মনে হয় সব।

এ জীবনে ২৭৬ টি পূর্ণিমা দেখেছি, ২৭৫ টি অমাবস্যা দেখেছি, ১৩৮ টি বসন্ত পেয়েছি, ৪৬ টি ইদ উপোভোগ করেছি, ২৩ টি বৈশাখ পেয়েছি। অনেক পাওয়া হয়ে গেছে ন্যাচারালি।

জীবনটা রূপার থালার মতোই উজ্জল হবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্র আমাকে ভিন্ন কিছু বলছে। জীবন জুড়ে আছে কাঁটাসুদ্ধ গোলাপ। ফুলের কাটাই বিঁধছে দেহে। জানিতো ফুলশয্যা সবসময় আনন্দময় নয়। এখন ভয়ে আমার পা কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। জিভ সীসার মত ভারী হয়ে গেছে। জীবনকে নিয়ে আমি শঙ্কিত।

জীবন কোন ম্যাজিক নয়, কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয়। এটি যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে রণ সৈনিকের ভূমিকায় অগ্রগামী হতে হয়। না হলে সর্বনাশ সুনিশ্চিত। অনেক সুখ স্মৃতি মনের অজান্তেই পায়ের নিছে চাপা দিতে হয়। জীবন গদ্যময়। অতিরিক্ত মায়া করলেই মারা পড়তে হয়। বারবার থতমত খেয়ে খেই হারিয়ে আবার সম্বিত ফিরে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সঠিক বাস্তবায়নই জীবন।

অভিমান ভালোবাসার মত, কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই জীবন যদি তোমার সাথে অভিমান করে হতাশ হবার কিছু নেই। এসবই আমার এখন সান্ত্বনা। অথচ বাস্তু হারিয়ে এখন আমি পথের ভিখারি। জনমানব নেই এ দিগন্তে। ঘটে চলে অদ্ভুত কান্ড। যেন নিশুতি রাত। বিষণ্নতা চেয়ে যায় সর্বময়। অশরীরী আত্মারা হঠাৎ হঠাৎ ছুঁয়ে যায় দেহখানা। চোখ মুছতে হয় নিরবে।

আমি হতে চেয়েছিলাম মহাবীর। সর্বত্যাগী ভবঘুরে হতে চাইনি। পরিধেয় বস্ত্রও ছাড়তে চাইনি। কিন্তু হয়েছে এসব। অনিবার্য নিয়তি যে কত বিচিত্র ধরনের হতে পারে তা বুঝতে বাকি নেই। জীবনটা বরাবরই আড়চোখে তাকিয়েছে আমার দিকে।

এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মহৎ এবং সবচেয়ে ভয়ংকর পরিকল্পনা গুলি নাকি রাতে করা হয়। সাধুরা ঈশ্বর চিন্তা করেন রাতে। কুৎসিততম অপরাধগুলি করতে অপরাধীরা রাতে বের হয়। সাধারণ মানুষের জন্য রাত বিশ্রামের কাল। আমার জন্মটাও হয়েছিলো রাতে।
আমার জীবন শিল্পীর তুলিতে আঁকা সহজ সরল কোন কল্পচিত্র ছিলো না। সংগ্রাম আর সংগ্রামই আমার জীবন। আমি নিজেই শিল্পী। আমি চির রহস্য। আমি অজানা। আমি বঞ্চিত। আমি অবহেলিত।

পর্ব -১
আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধু

দ্য স্লেভ


কেস স্টাডি-১

জহীরের ক্লামমেট রুমা।
ওরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ওদের সকলের সাথে সকলের সম্পর্ক দারুন। একে অপরের সাথে তুই সম্বোধনে কথা বলে। তাদের মত এখানে আরও অনেক বন্ধু আছে। ওরা মোটেও প্রেমিক প্রেমিকা নয়,বরং ভাল বন্ধু। একজন আরেক জনের কথা জানে। একে অপরের সাথে সাধারণভাবে মিশে। উভয়ের পরিবারে উভয়ের যাতায়াত আছে। উভয়ের সাথে আরও ডজন ডজন বন্ধু বান্ধবী জড়িত আছে।

জহীর একদিন রুমাকে অন্য একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলল
-ওর সাথে আমাকে একটু ফিট করে দিবি ? হঠাৎ রুমার গা জ্বলে উঠল, যদিও জানেনা সেটা কেন হল।
কিন্তু বন্ধু বলেছে, কিছু তো করতেই হবে। রুমা মেয়েটার সাথে দেখা করল এবং বলল
-জহার তোমাকে পছন্দ করে। মেয়েটা বলল-আমি কারো সাথে প্রেম করতে চাইনা। আর এটা করবও না। তুমি তো জানই আমি একা থাকা পছন্দ করি।

মেয়েটার এই না বোধক কথায় রুমা কেন যেন খুশী হয়ে উঠল। এবার সে জহীরের কাছে এসে বলল-দোস্ত আমি তোমার জন্যে অনেক চেষ্টা করেছি। সেই সকাল থেকে মেয়েটাকে অনেক বুঝালাম তোমার ব্যাপারে কিন্তু বিকেলে এসে জানলাম, সে ইতিমধ্যেই বিয়ের ব্যাপারে অন্যের বগলদাবায় চলে গেছে। বাপ মায়ের পছন্দে বিয়ে করছে। আরে বাবা তুই এংগেইজড তা আগে বলবি তো, আমি শুধু ব্যাটারী পোড়ালাম।

জহীর বলল-হুমম তাইলে আর কি, দেখি আরেকটা ধরা যায় কিনা।

এভাবে সময় চলে যায়। উভয়েই পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। পরীক্ষার পর রুমা জহীরকে বলে, আচ্ছা পরশ ছেলেটা কিন্তু দারুন, কি বলিস? জহির হেসে বলে হ্যা পরশ ভাইকে যতটা চিনি তিনি ভালই। কিরে প্রেমে পড়লি নাকি ?

আরে নাহ, উনাকে ভাল লাগে,এইটুকই।
-উনার সাথে কিন্তু আমার জানাশোনা আছে, বলব নাকি কিছু ?
: নাহ, সময় হলে আমিই বলব।
পরশ জহীরের ১ বছরের সিনিয়র কিন্তু সম্পর্ক বন্ধুত্বের। একদিন পরশের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জহীর রোমার কথা বলে। পরশও খানিক খুশী হয়,কারন বাংলাদেশে মেয়েরা সাধারণত ছেলেদের কাছে নিজের ভাল লাগার বিষয়টি জানায় না। কিছু দিনের মধ্যেই পরশের সাথে রোমার ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়। রোমা এসব কথা আবার জহীরকে বলে। উভয়ে নানান রকমের পরিকল্পনা উভয়কে জানায়।
চলছিল এভাবে…

একদিন পয়সা ওয়ালা এক ছেলের সাথে রুমার পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে। রুমাও রাজি। ছেলেটা দেখতে বেশ। বিয়েতে জহীর অনেক দায়িত্ব পালন করে। জাকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হল। বর রুমাকে নিয়ে চলে গেল।

কিন্তু এরপর জহীরের বুকের ভেতর কেন যেন একটা তোলপাড় শুরু হল। বিয়ের আসরে রুমাকে অত্যন্ত সুন্দর দেখাচ্ছিল। সে ভাবছিল, আহ এতটা দিন ওর পাশে থাকলাম, আজ আরেকজন থাকবে…

পরক্ষণেই আরেক চিন্তা আসে,
নাহ একি ভাবছি…ও তো শুধুই আমার বন্ধু, আমার প্রেমিকা নয়।.. তাহলে এসব চিন্তা কেন মাথায় আসছে? না এসব ভুলিতে চাই।

ভুলতে চাইলেও সারারাত জহীর ঘুমাতে পারল না। বারবার রুমাকেই মনে পড়তে থাকল। ২দিন পর সে রুমার শশুড়বাড়ি ফোন দিল রুমার নাম্বারে। ফোন রিসিভ করল তার স্বামী। জহীর নিজের পরিচয় দেওয়ার পর রুমার স্বামী বলল-সে তো ঘুমাচ্ছে। স্বাভাবিক কথাই হল কিন্তু জহীরের কাছে মনে হল এই ফোন করাটা ভদ্রলোক ভাল চোখে দেখেনি।

জহীর চিন্তা করল না আর ফোন দিবেনা। আর তাকে তো আর সেভাবে পাওয়া যাবে না। কিন্তু জহীরের আরেক মন তাকে আরও যোগাযোগের ইঙ্গিত দিল। জহীর নিরুপায় হয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করল। রুমাও তার সাথে স্বাভাবিক কথা বার্তা বলল। এভাবে পূর্বের মত না হলেও জহীর রুমার সাথে যোগাযোগ ধরে রাখল। সে যখন একা থাকে,তখন তার নানান কথা মনে পড়ে। এমনও মনে হয়, এক সাথে এতদিন কাটালাম
-সে সময় যদি ওকে আটকাতাম, ভালই হত। আবার চিন্তা করে, নাহ সে তো ছিল শুধুই বন্ধু।

এভাবে তাদের যোগাযোগ চলতে চলতেই জহীর একদিন এক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। তারপর কালে ভদ্রে রুমার সাথে কথা হয়। রুমাও তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। একসময় তাদের যোগাযোগ প্রায় শুন্যের কোটায় চলে যায়। জহীর চিন্তা করে এক সময়ের সব থেকে বিশ্বস্ত, চমৎকার বন্ধুটি কিভাবে হারিয়ে গেল।

কেস স্টাডি-২

কামালের বন্ধু আরিফ। তারাও ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। প্রথমে ভাল সম্পর্ক ছিলনা। কিন্তু আরিফের ভাই অসুস্থ্য হলে তাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। নেগেটিভ রক্ত পাওয়া কষ্টকর কিন্তু কামালের রক্তের সাথে মিলে। সে দেয়। এরপর থেকে যেন তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর। চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট,রাস্তার মোড়, নদীর ধার, উভয়ের বাড়ি সকল স্থানেই তারা আড্ডা মারে। এমন কোনো কথা নেই যা শেয়ার করেনা।

কামালের বিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে আরিফের বিয়ে। সবকিছু সেই ঠিকঠাক করে। পুরো অনুষ্ঠান সেই পরিচালনা করে।

বিয়ে হয়ে গেল। কামাল বৌ আনল ঘরে। আগের মত আরিফের সাথে আড্ডা না হলেও কথা হয়। ইতিমধ্যে আরিফও বিয়ে করেছে, সেখানে কামালই বেশী দায়িত্ব পালন করেছে। উভয়ে উভয়ের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু তারা ঠিকই সময় বের করে মাঝে মধ্যে আড্ডাবাজি করে। আবার কখনও কখনও উভয়ের স্ত্রীসহ কোথাও ঘুরতে যায়।

কামাল এবং আরিফ উভয়কে ভুলে যায়নি। সাংসারিক কাজ তাদেরকে পরষ্পরের কাছাকাছি না রাখলেও মানুষিকভাবে তারা এখনও অটুট।



উপরের ঘটনাগুলো খুবই বাস্তব। আপনারা চোখ কান খোলা রেখে দেখবেন, এমনটাই বেশী ঘটে। একজন মেয়ের সাথে ছেলের বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব, মেয়ের সাথে মেয়ের এবং ছেলের সাথে ছেলের বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব বেশী।

একজন মেয়ে কোনো ছেলের বন্ধু হলেও এবং স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও তাদের উভয়ের শারিরীক, মানুসিক অবস্থার কারনে সে সম্পর্ক একই গতিতে চলে না। উভয়ে উভয়ের প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করলেও সেখানে কিছু আকর্ষণ তৈরী হয় যা বিপরীত লিঙ্গগত আকর্ষণ এবং যা সহজাত। মূলত তারা এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করেই নিজেদের সম্পর্কে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে।

একজন ছেলে সাধারণত সেই মেয়েটির সাথে তার এই স্বাভাবিক বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চায় না, যার রূপ, গুন তার কাছে ভাল লাগেনা। অথবা তার চোখে সুন্দর ও অসুন্দর এমন সব মেয়েরাই যদি তার বন্ধু হয়,তবু সে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বা যোগাযোগ রক্ষা করার ক্ষেত্রে সুন্দরীদের প্রাধান্য দেয়। অথচ ছেলেটি অন্য ছেলেদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আমলে আনেনা। সেখানে তার সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি সবথেকে কুৎসিত হতে পারে। বিষয়টি মেয়েদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

আমরা যদি আজকের প্রগতিশীলদের দিকে তাকাই, সহজে দেখতে পাব তারা ছেলে মেয়ের সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে দেখতে বলছে। একটা ছেলে বন্ধু আর মেয়ে বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য নেই, সেটাই তারা বলছে। এবং এভাবেই আচরণ করতে বলছে।

অথচ তারা যে প্রকৃতিকে বিশ্বাস করে, সেই প্রকৃতি অনুযায়ীই তাদের চিন্তা ভুল। এখানে বাস্তবে আমরা নারী,পুরুষের আচরণে অবশ্যই ভিন্নতা দেখী। এবং বাস্তবতা বলে নারীর সাথে পুরুষের বন্ধুত্বের চাইতে, পুরুষের সাথে পুরুষের, নারীর সাথে নারীর বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব বেশী।

আমি এখানে স্বামী-স্ত্রীর বিষয়টি আলোচনায় আনিনি। শুধু নারী পুরুষের অবাধ বন্ধুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছি।

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (বুক রিভিউ-২)

অনবরত বৃক্ষের গান
|| বুক রিভিউ ||


সাহসের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আপনার সন্তানকে কি আপনি সাহস যুগিয়ে থাকেন? সন্তান প্রতিপালনের জন্য বাবা-মায়েদের অবশ্যই সন্তানের কিছু মৌলিক বিষয় অবগত করার মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করাতে হবে, সন্তানকে ঝুঁকি নিতে উদ্ভূত করুন, সম্ভাবনাকে তুলে ধরুন। সন্তানকে ভুল করতে দিন, ভুল থেকে মৌলিক বিষয়টি শিখতে সহযোগিতা করুন। সন্তান সাহায্য করুন তার উৎসাহের বিষয়কে খুঁজে পেতে। কেন না, প্রতিটি আগ্রহই উৎকর্ষের শীর্ষে পৌছে দেয় সন্তানের সম্ভাবনা সমুহকে। সন্তানকে এমনভাবে তৈরি করুন, সে নিজেকে কোথায় পৌছাতে চায়,
খুঁজে পায়,
জিজ্ঞেস করুন জানার চেষ্টা করুন, জানুন।

উল্লেখ্য, বিপুল উপকরণের ভীড়ে,তাঁকে দরকারী বিষয়গুলো দিয়ে সজ্জিত করুন, তার মননশীল চারপাশ।

স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক

পিতামাতাকে তাঁর সন্তানকে জীবনের উদ্দেশ্য কি,তা বোঝাতে হবে,কেন তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে,স্রষ্টা তাকে কেনই বা সৃষ্টি করলেন।জীবনের প্রতিটি কাজ যেন তাঁর সন্তুষ্টিরর জন্য হয়,তেমনি চেতনা গ্রোথিত করে দিতে হবে।

ছোট্ট সোনামনিকে কোলে নিয়ে চাঁদের আলো দেখাতে পারেন, ফুল পাখি,নদী, এমনকি প্রতিটি ক্ষুদ্র জিনিস দেখিয়েও তাঁকে রবের মহিমা শেখাতে পারেন, আল্লাহ চিনতে সাহায্য করতে পারেন।

সুন্দর করে মনীষি, নবী-রাসূলদের জীবনী শুনাতেন পারেন, যা সন্তান তাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে পারে।

বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সালাত আদায় করতে পারেন, বারবার সুন্দর বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারেন, যাতে তারা আস্তে আস্তে বুঝতে শিখে।

তাদের সাথে রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক যেকোন বিষয়ই আলোচনা করে শুনাতে পারেন, এমনকি কবিতাও।

যেটা তাদের চিন্তায় দাগ কেটে যায়। তাতে শৈশব থেকেই চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে,গভীরতা আসবে।

সন্তানের সার্বিক উন্নয়নে ইনভেস্টমেন্টের প্রশ্নপত্র

আপনি কি সন্তানের সার্বিক উন্নয়ন বলতে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা ও খেলাধুলাকেই বুঝে থাকেন? আপনার সন্তানের আত্মিক উন্নয়ন হচ্ছে কি? সন্তান চাওয়া মাত্রই তা পূরণ করেন, নাকি ধৈর্যশীলতার প্রশিক্ষণ দেন?

অনুপ্রেরণা
আপনার সন্তানকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যে লাভে অনুপ্রেরণা দিন, যার প্রতিশ্রুতি পৃথিবীর কোনো বিনিয়োগেই দেওয়া হয়নি।

ত্যাগের মানসিকতা অর্জন
বাচ্চাদের নিজেদের মধ্যে খেলনা ভাগাভাগি করে খেলতে শিখান, এতে সে ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করবে।

মিলেমিশে খাওয়ার অভ্যাস
খাবার খাওয়ানোর বেলায়ও মিলেমিশে খেতে অভ্যস্ত করুন।

ভালো আচরণ
পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ভালো আচরণ করতে অভ্যস্ত করুন। সন্তানের আত্মিক উন্নয়নের দিকে নজর দিন।

শৈশব হচ্ছে চমৎকার সুযোগ,সন্তানকে সুন্দর করে গড়ার। এ সময় আপনি তাঁকে যেভাবে চান, সেভাবেই তৈরি করতে পারেন।

আপনি যদি নিজে স্রষ্টার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেন, গভীর রজনীতে নিভৃতে তাঁকে খুঁজেন, সন্তানও তাঁর সান্নিধ্য চাইবে।বার্ধক্যের সময় রাত জেগে, আপনার সেবা করবে,উদার ও সহনশীল মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে। আপনি যখন কবরে শায়িত থাকবেন, আপনার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করবে।

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জন্ম মরণের ইতিহাস খুঁজি

ডা. মারুফ রায়হান খান


তিনি এই নিয়ে ৪ বার গর্ভধারণ করলেন। গর্ভে ৩ মাস, ৪ মাস, ৬ মাস থেকে তারা ৩ অপূর্ণ সত্ত্বা মরে গেলো। এবারে যে এসেছে গর্ভে তার বয়স ২১ সপ্তাহ। হঠাত করে গতকাল থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে শকে চলে গেলো পেশেন্ট…বাচ্চা তো টেকার আশা নেই-ই, মা-কে শেষ পর্যন্ত আই সি ইউতে পাঠাতে হলো। ৭ বছরের সংসার জীবনে এখনও সন্তানের মুখই দেখা হয়নি তার, ‘মা’ ডাক শুনে অন্তর জুড়ানো তো আরও অনেক দূরের গল্প।

১০ বছর, ১৫ বছর, ২০ বছর, ৩০ বছর পেরিয়ে গেলো দাম্পত্যজীবনের। কতো জায়গায় ঘুরলো, কতো ডাক্তার দেখালো। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর কিছু তো বাদ নেই। শুধু একটা সন্তানের আশায়। জীবনে আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই। শুধু একটা সন্তান চায়। স্রষ্টার কাছে কতো কেঁদেছে, কতো আকুতি-মিনতি করেছে। যতো টাকা লাগুক চিকিৎসায়, জায়গা-জমি সব বিক্রি করে দেবে, যা করতে বলবে করবে–শুধু সন্তানের মুখটা দেখতে চায়। এক মানব জীবন পূর্ণ করতে চায়। পারে না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংসারে আর সন্তান এলো না। কতো শত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার আর কান্নার গল্প।

আমরা প্রায়ই এমন রোগী পাই যারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সন্তান ধারণ করে ফেলেন। এই বাচ্চা রাখতে তারা কিছুতেই চান না। কতো বাচ্চা পূর্ণাঙ্গ শরীর ধারণ করে ফেলে, হৃদয় স্পন্দিত হতে থাকে–তবুও তারা নষ্ট করে ফেলেন। এবোর্টিফেশিয়েন্ট ওষুধ খান। এটা সেটা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করে মেরে ফেলেন। অবৈধভাবে অবৈধ মানুষ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নষ্ট করিয়ে ফেলেন। ওয়ার্ডে একবার দেখেছিলাম মা’টা বাচ্চা নষ্ট হবার ওষুধ খেয়ে এসেছিলেন–হসপিটালে এসে ১৯ সপ্তাহের সেই সত্ত্বাটি যখন বের হলো, এই এতোটুকুন হাত-পা-নাক-কান-গলা-বুক-পেট…ছোট্ট বুকে ছোট্ট হৃদয়টা তখনও স্পন্দন দিয়ে যাচ্ছিলো…।

হায়রে বাচ্চা! কতোজনের পরম আরাধ্য আবার কতোজনকে বিপদে ফেলে দিয়ে, অস্বস্তিতে ফেলে দিয়ে জন্মের আগেই মরে যাবার ইতিহাস…

নদীর এপার আর ওপার…

আমার খুব প্রিয়…রবীন্দ্রনাথ…
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস…।

 

বহে সমান্তরাল

ফাতিমা মারিয়ম


আম্মু, আমার না আব্বু আর তোমার সাথে কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে। আমরা এখন আর একসাথে থাকিনা কেন?

কেয়া চুপ করে সামিরার কথা শুনে যায়।

জানো, স্কুলে আমার বন্ধুদের কাছে গল্প শুনি তারা ছুটির দিনে বাবা মায়ের সাথে কত্ত জায়গায় বেড়াতে যায়! আমরা আবার কবে একসাথে বেড়াতে যাব?

কেয়া একটু হেসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েকে কেয়া কিভাবে বোঝাবে সামিরা যা আশা করছে তা আর কখনো সম্ভব নয়। একসাথে তাদের আর কখনোই বেড়ানো হবেনা।

শুধুমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কী কষ্টই না সে ভোগ করেছে। প্রায় দুইটা বছর অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছে। প্রথম দিকে নির্যাতন ছিল শুধু মানসিক। পরে গায়ে হাত তোলা পর্যন্ত গড়ায়। আর অবজ্ঞা অবহেলা তো ছিলই।

একটা মানুষ আর কত সহ্য করতে পারে? মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, পরিবারের মান সম্মানের কথা ভেবে জাকিরকে বহু বোঝানোর চেষ্টা করেছে। ফেরানোর চেষ্টা করেছে।

পরিবারের পছন্দেই জাকিরকে বিয়ে করেছিল সামিরা। শুরুতে জাকির এমন ছিল না। আর দশটা পরিবারের মতই বেশ সুখ আর আনন্দে জাকির কেয়ার দিন কেটে যাচ্ছিল। কখনো বড় ধরনের কোন ঝামেলা হয় নি। বিয়ের প্রায় দুই বছর পর সামিরার জন্ম হয়। তিনজনের সংসারটা যেন আক্ষরিক অর্থেই ‘সুখের সংসার’ ছিল।

কিন্তু কীভাবে যে কি হয়ে গেল! কেয়া আজো তার হিসেব মেলাতে পারে না।

প্রায় তিন বছর আগের কথা। সামিরার বয়স তখন তিন বছর। কেয়া খেয়াল করে জাকিরের আচরণে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। সময়ের অনেক পরে বাসায় ফেরে। কারণ জানতে চাইলে দুর্ব্যবহার করে। প্রায়ই ছুটির দিনে সকালবেলা বাইরে চলে যায়। ফেরে সেই অনেক রাতে। বাসায় যতক্ষণ থাকে মোবাইল ফোনে কার সাথে যেন কথা বলেই যায়। কেয়াকে দেখলেই আচমকা কথা থামিয়ে দেয়।

ধীরে ধীরে কেয়ার মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। পরে সে সুযোগ মত কল লিস্ট চেক করতে গিয়ে সুমির নাম্বার পায়। কেয়া জাকিরের কাছে সুমির পরিচয় জানতে চায়। কিন্তু জাকির তাকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে দেয়। জাকিরের বিভিন্ন আচরণে কেয়ার মনে সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে।

একদিন সে সুমিকে ফোন করে। তখন সুমি অকপটে তার কাছে সব কথা স্বীকার করে। সুমি একটি এনজিওতে চাকুরী করে। আজ প্রায় এক বছর ধরে তাদের পরিচয়। অবসর সময়ে দুজনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। কেয়া চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল। সে কিভাবে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে?

জাকিরকে সে খুব বোঝাতে থাকে এই পথ থেকে ফিরে আসার জন্য। সে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও জাকিরের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে।

কিছুদিন পরে কেয়া জানতে পারে সুমির সাথে জাকিরের আর কোন যোগাযোগ নেই। সে এতে বেশ খুশিই হয়। কিন্তু এই খুশি বেশিদিন স্থায়ী হয় না। জাকির আবার আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তারপর আবার এই সম্পর্ক শেষ হয়। আবার আরেকজন……।

সুমি থেকে শুরু করে প্রতিটা মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক অনেকদূর পর্যন্ত গড়ায়। প্রায়ই সে কাউকে না কাউকে নিয়ে অফিসের ট্যুরের কথা বলে কয়েকদিনের জন্য ঢাকার বাইরে চলে যায়।
এবার কেয়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সে সামিরাকে নিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসে। মা বাবাকে সব কিছু খুলে বলে। উনারাই কেয়াকে বলেন তোর আর ফিরে যেতে হবেনা। তবুও কেয়া আশায় আশায় ছিল জাকির হয়ত অনুতপ্ত হয়ে তাকে নিতে আসবে! কিন্তু নিতে আসা তো দূরের কথা। একটু যোগাযোগও করেনা। মেয়ের প্রতিও তার বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই! গতমাসে কেয়ার পক্ষ থেকেই ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

কেয়া একটি স্কুলে চাকুরী নিয়েছে। মেয়েকে নিয়ে বাবা মায়ের সাথে দিন কেটে যায়……
কেটে যাচ্ছে।

[এভাবে আমাদের সমাজে অনেক কেয়া জীবন যাপন করছে। এক বা একাধিক বাচ্চার দায়িত্ব মাকেই বহন করে তিল তিল করে বাচ্চাদের মানুষ করে তোলে। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সব সমাজেই কেয়া বা সামিরা আছে। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়ে যেসব নারী দিনাতিপাত করছে তাদের নিয়েই আমার নতুন সিরিজ ‘ঝিনুক নীরবে সহে’।]

 

লজ্জাকর পেশা কি?

মুহাম্মদ হুমায়ন কবীর


কালো করে একটা মেয়ে ছোট একটা জবের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব রেস্টুরেন্টের মালিক সোজা বলে দিচ্ছে, দেখো, আমাদের এখানে কোনো লোক লাগবে না। অন্য কোথাও যাও। কালো মেয়েটা হতাশ হয়ে অন্য রেস্টুরেন্টে যায়।

এভাবে একদিন জব পেয়ে গেলো এক রেস্টুরেন্টে। মালিক প্রথম দিনই তাকে বলে দিলো, কখনও দেরি করে আসা চলবে না। তাহলে চাকরি বাতিল। সবকিছু মাথায় রেখেই মেয়েটা কাজ করে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টে। খাবারের অর্ডার নিচ্ছে, তারপর খাবার পৌঁছে দিচ্ছে টেবিলে টেবিলে। খাওয়া শেষ হওয়ার পর টেবিল পরিস্কার করছে। কাজের কিছু অদক্ষতায় বকাও খাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। কখনও হয়তো কোনো কাস্টমারের সামনে থেকে কফির মগ নিতে গিয়ে গায়ে একটু কফি ফেলে দিয়েছে। কাস্টমার প্রচণ্ড রেগে নালিশ করেছে মালিকের কাছে। মেয়েটি হয়তো কাঁদো কাঁদো গলায় মালিককে সরি বলে কোনো ভাবে পারও পেয়ে গেছে।

গায়ের রঙ কালো বলে সম্ভবত রেস্টুরেন্টের অন্য ছেলেরা তাকে খুব একটা পাত্ত্বাও দেয়নি কিংবা কোনোদিন তার সহকর্মীর জন্মদিনে তার বাসায় গেলো। কেক কাটার পর যে খাবার দেয়া হলো, সহকর্মী লক্ষ্য করে দেখলো কালো মেয়েটি সেটি একদমই খেতে পারছে না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, খাবারে সমস্যা কিনা। কালো মেয়েটি বললো, না, পেট ভরা, তাই খেতে পারছে না।

কোনোদিন হয়তো রেস্টুরেন্টের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে কম দামি গাড়িতে করে কোথাও ঘুরতেও গিয়েছিলো কালো মেয়েটি। কম দামি গাড়িতে বেশ কষ্টও হয়েছে তার। মুখ খুলে কিছু বলেনি কাউকে। সবকিছু চেপে গেছে আর ভেবে নিয়েছে, আমি অন্য দশটি মানুষের মতোই মানুষ। তারা পারলে আমি পারবো না কেনো।

দিন হয়তো এভাবেই যাচ্ছিলো। একদিন তার সহকর্মীর কেউ একজন দেখলো যে, কালো মেয়েটি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার পর আড়াল থেকে ছয়জন বিশালদেহি মানুষ তাকে ঘিরে রাখে। রেস্টুরেন্টে শুরু হলো গুঞ্জন, কানাকানি। এভাবে ঘটনা চলে যায় সাংবাদিকদের কাছে। বেরিয়ে আসে কালো মেয়েটির পরিচয়। সবাই জানতে পারে, কালো মেয়েটি প্রেসিডেন্টের মেয়ে। তারপর দেশে দেশে আলোচনা উঠে, নিউজ হয়।

বিশ্ব জেনে যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ছোট মেয়ে সাশা ওবামা নিজের পরিচয় লুকিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন । গ্রীষ্মকালীন ছুটির ফাঁকে ম্যাসাচুসেটসের মার্থাস ভিনিয়ার্ড নামের একটি দ্বীপের ওই রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছেন তিনি। অনেকদিন পর্যন্ত সাশার সহকর্মীরাও তাকে চিনতে পারেনি। পরে রেস্টুরেন্ট ঘিরে সার্বক্ষণিক ছয়জন গোয়েন্দার অবস্থান বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তোলে।

এদিকে বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা বলেন, -“সন্তানদেরকে একটা বয়সের পরে রাজকীয় বিলাসিতা ছাড়তে বাধ্য করেছি। কারণ তাদের সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে হবে। অন্য দশটা মানুষের মতোই বাঁচতে শিখতে হবে তাদের।”

এবার আপনি বাংলাদেশের রাজনীতিবিদগণ এবং তাঁদের সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনের কথা ভাবুন। নিজেদের অবস্থার কথাও ভাবা যেতে পারে।

 

শীতের পিঠাপুলি (চিতই ও ভাঁপা)

শীতকাল মানে নানান রকম মজাদার পিঠা বানানো ঘরে ঘরে। এ সময়ে ব্যস্ত সবাই রাস্তার ধারেই কিনে খেতে অভ্যস্ত তবুও আসুন দেখি দুটি পরিচিত পিঠা দুধ চিতই এবং ভাঁপা পিঠা বানানো নিয়ম।

ভাঁপা
ভাঁপা পিঠা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা যা প্রধানত শীত মৌসুমে প্রস্তুত ও খাওয়া হয়। এটি প্রধানতঃ চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরী করা হয়।

লাগবে যা যা

  • চালের গুড়া,
  • লবন,
  • পানি,
  • দুধ,
  • দানা খেজুরের গুড় এবং
  • নাড়িকেল কুড়ানো

কিভাবে বানাবেন
প্রথমে তরল খেজুর গুড় চালের গুড়ার মিশিয়ে নিন এতে রং ভাপা পিঠার সুন্দর এবং মজাদার হবে লবন+পানি মিশিয়ে ডাই তৈরী করা। অর্থাৎ একদম শুষ্ক চালের গুড়িতে পরিমান মত লবণ মেশাতে হবে। এরপর দুধ ও অল্প পরিমাণ তরল খেজুর গুড় দিয়ে হালকা ভেজা ভেজা করতে হয়। মাখানোর পরও যেন ঝরঝরে থাকে, একদম ভিজে যেন না যায়। এরপর বাটিতে চালের গুড়ি দিয়ে তার উপর নারকেল কোরানো আর দানা খেজুর গুড় দিতে হবে।

এরপর আপনার পছন্দের সাইজ অনুযায়ী ভাপা পিঠা বানিয়ে ফেলুন জলীয় বাষ্পের আঁচে। পাঁচ-ছয় মিনিট পর পিঠা উঠিয়ে পরিবেশন করুন|

চিতই
ঐতিহ্যবাহী আরেক পিঠার নাম চিতই পিঠা। চালের আটা পানিতে গুলিয়ে গরম তাওয়াতে ভেজে এই পিঠা তৈরি হয়। এই পিঠা গুড় ( বিশেষত ঝোলা গুড়) দিয়ে খাওয়া হয়। এটি শুকনো অথবা দুধ ও গুড়ের তৈরি সিরায় ভিজিয়েও খাওয়া হয়।

লাগবে যা যা 

  • চালের গুড়া তিন কাপ,
  • খেজুরের গুড় ১ কেজি,
  • দুধ ২ লিটার,
  • পানি ১ লিটার,
  • পরিমান মতো লবণ এবং
  • এলাচ ৪/৫ টুকরা

কিভাবে বানাবেন
পরিমাণ মতো পানি চালের গুড়া ও সামান্য লবন মিশিয়ে মাঝারি ঘনত্বের গোলা বানিয়ে নিতে হয়। পিঠা গুলো তৈরি করবার জন্য মাটির খোলা বা লোহার কড়াই ব্যবহার করা হয়। কড়াইটি তেল দিয়ে মুছে মুছে চালের গুড়োর গোলা ঢেলে গোল গোল পিঠা তৈরি করে নিন।
সুবিধা মতো পাত্রে গোল আকারে চিতই বানিয়ে নিন। এবার ১ লিটার দুধে এলাচ, তেজপাতা আর চিনি দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। দুধ আধা লিটার হলে পিঠাগুলো এর মধ্যে ছেড়ে দিন।

সিরা তৈরির উপকরণ: খেজুরের গুড় ২ কাপ, দুধ ৪ লিটার, দারুচিনি ২ টুকরা, এলাচ ২টি, পানি ৪ কাপ। খেজুরের গুড় পানি দিয়ে জ্বাল দিন। এলাচ, দারুচিনি দিয়ে ফুটে উঠলে নামিয়ে গরম পিঠা গুড়ের সিরায় ছাড়ুন। তারপর জ্বাল কমিয়ে দিন। ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর পিঠা পরিবেশন করুন।

পিঠা খেতে ভালোবাসে সব বাঙালি। খুব কম সংখ্যক হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে বলা মুশকিল।

 

বই রিভিউ : পথের পাঁচালী এবং আমার অনুশীলন

গাজী আনোয়ার শাহ্


পথের পাঁচালী
লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ইরানি মুভি “দ্যা চিলড্রেন অফ হ্যাভেন” অসাধারণ খ্যাতি কুড়িয়েছেন তার অনবদ্য সৃষ্টিশীল শিল্প প্রতিভা দ্বারা। যে মুভিটি হিন্দিতেও নকল করা হয়েছে। এক বাক্যে অসাধারণ। ছোট বাচ্চা (ভাই, বোন) দুটির কর্মকুশলতা, ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে আহত পরিবারের এক অনন্য সমাচার।

বাংলা সাহিত্যের টর্চবিয়ারার, মশালবাহি লেখকের “পথের পাঁচালী” এমন একটি বাস্তব, জীবন্ত, সার্বজনীন রচনা যার স্বীকৃতি সর্বশেষ অস্কার পর্যন্ত পৌঁছেছে।

চলচ্চিত্র হিসেবেও এর খ্যাতি রয়েছে
পথের পাঁচালী ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রযোজিত ও সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটিবাংলা চলচ্চিত্র। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরউপন্যাস পথের পাঁচালী অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটিসত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। অপু ত্রয়ীচলচ্চিত্র-সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালীর মুখ্য চরিত্র অপুর শৈশবকে কেন্দ্র করে বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের জীবনধারা চিত্রায়িত করা হয়েছে।

**৯৫৫শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার(স্বর্ণকমল পুরস্কার)
**শ্রেষ্ঠ বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার(রজতকমল পুরস্কার)
**৩য় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) ভারত১৯৫৬পাল্ম দর
**শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল
**ওসিআইসি পুরস্কার – বিশেষ উল্লেখ১৯৫৬
** ৯ম কান চলচ্চিত্র উৎসব ফ্রান্স
১৯৫৬ ভ্যাটিকান পুরস্কার, রোম– ইতালি
১৯৫৬ গোল্ডেন কারবাও, ম্যানিলা– ফিলিপাইন
১৯৫৬ মেধার ডিপ্লোমাএডিনবরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব স্কটল্যান্ড
১৯৫৭ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ‘সাজনিক গোল্ডেন লরেল’বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব জার্মানি
১৯৫৭শ্রেষ্ঠ পরিচালক জন্য গোল্ডেন গেট
শ্রেষ্ঠ ছবি জন্য গোল্ডেন গেটসান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব যুক্তরাষ্ট্র
১৯৫৮শ্রেষ্ঠ ছায়াছবিভ্যানকুভার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কানাডা
১৯৫৮ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড স্ট্র্যাটফোর্ড ফিল্ম ফেস্টিভাল কানাডা
১৯৫৮ সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র, জাতীয় বোর্ড পর্যালোচনা পুরস্কার
১৯৫- যুক্তরাষ্ট্র১৯৫৯সেরা বিদেশী চলচ্চিত্রনিউইয়র্ক চলচ্চিত্র উত্সব যুক্তরাষ্ট্র
১৯৬৬কিনেমা জাম্পু পুরস্কার সেরা বিদেশী চলচ্চিত্র জন্য– জাপান
১৯৬৯শ্রেষ্ঠ অইউরোপীয় ছায়াছবির জন্য বদিল পুরস্কার– ডেনমার্ক হতে পুরুষ্কার লাভ করে।

রবীন্দ্রনাথের অনুগামী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার গ্রামীণ জীবনের ছিন্নমূল প্রান্তিক পর্যায়ের পরিবার গুলোর একটি জীবন বৈচিত্র্য শিল্পীর তুলিতে অঙ্কন করে জনমানুষের হৃদয়ে যায়গা করে নিয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যের জীবননান্দ দাশ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পুতুল নাচের ইতিকথা”, জহির রায়হানের “হাজার বছর ধরে” এর মত অনেক লেখকের মত গ্রাম বাংলার চিত্র জীবন্ত করে উপস্থাপন করেছেন।

উপন্যাসটির প্রাধান চরিত্র দুই ভাইবোন অপু ও দূর্গা।

উপন্যাসটি সাধু ভাষায় বলে সুখপাঠ্য নয়, ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পড়তে হবে। প্রথমে কঠিন মনে হলেও চরিত্রগুলো খুঁজে নিতে পারলে রসালো হবে।



সারসংক্ষেপ

পথের পাঁচালী’ প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লেখা একটি বিখ্যাত সামাজিক বাস্তব উপন্যাস। এটি উপন্যাস হলেও পড়ার সময় একটিবারের জন্যও মনে হয় না যে এটা উপন্যাস। বরং লেখকের স্বচ্ছ -সাবলীল ভাষায় আমাদের সমাজের বাস্তব ও জীবন্ত ছবিটিরই একটি সহজ-স্বাভাবিক রূপ তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসে।

আমরা, থার্ড জেনারেশান, কখনও কী ভেবেছি যে একজন নারীর কিরকম অনুভূতি হয় যখন সে ক্রমাগতভাবে নির্যাতিত, অবহেলিত, নিগৃহীত, নিষ্পেষিত হয়, কারণ তার কোন আয়ের উৎস নেই, ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, গঠনগত দূর্বলতার কারণে?

যখন একজন পরিচারিকা তার জীবনের শেষ দিনে চলে আসে, তখন তার সামাজিক পরিস্থিতি কেমন হয়? যখন কোন নারী অল্পবয়সে স্বামী হারা হয় এবং সমাজ তাকে আবার বিয়ে করবার অনুমতি দেয় না, তখন সেই নারীর সামাজিক অবস্থান কোথায় দাঁড়ায়? এই সব প্রশ্নের উত্তর অত্যান্ত নিখুঁতভাবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী” উপন্যাসে রয়েছে।

এই উপন্যাসের প্রথম অংশে আমরা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি বাল্যবিবাহ ও যৌতুককে দানবীয় আকার ধারণ করতে দেখি। ইন্দির ঠাকুরনের বিয়ে অল্পবয়সে এমনই এক লোকের সাথে লোকের সাথে দেয়া হয়, যে বেশি যৌতুকের লোভে অন্যত্র বিয়ে করেন এবং আর কখনও ফিরে আসে না। তখন আয়হীন ইন্দির ঠাকুরনের আবাসস্থল হয় তার পিতার বাড়িতে, এবং তাদের ও তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হরিহরের বাড়িই তার স্থান হয়।

সেখানে প্রতিমুহূর্তে তাকে মনে করিয়ে দেয়া হত যে সে একজন আশ্রিতা, করুণার পাত্রী ছাড়া আর কেউ নয়। সে প্রায়শই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত, কিন্তু দিন শেষে তার পথ এসে শেষ হত হরিহরের বাড়িতেই। একবার ঘটনাক্রমে বাড়ি থেকে তাকে একেবারে বের করে দেয়া হয় এবং মর্মান্তিকভাবে তার জীবনের ইতি ঘটে। মৃত্যু হয় অসহায়ত্বেরর।

এই উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশ ‘আম আঁটির ভেঁপু’-এ অত্যন্ত সুচারুভাবে হরিহরের সন্তানদ্বয়- বড়মেয়ে দূর্গা ও ছোট ছেলে অপুর টক-মিষ্টি সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।

দূর্গা একপর্যায়ে অপুকে মারে, কারণ সে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চুরি করে আম খাওয়ার ঘটনা বলে দেয়। এই কারণে তাকে প্রতিবেশীর কথাও শুনতে হয়। রাগের মাথায় দুর্গার মা সর্বজায়া ওকে বকাবকি করেন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে ম্যালেরিয়া জ্বরের শেষ পর্যায়ে এসে দুর্গা মারা যায়।

উপন্যাসের শেষ অংশ ‘অক্রুর সংবাদে’ চিরাচরিত বাংলার বড়লোক-গরীবের বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
লেখক সাফল্যের সাথে দেখিয়েছেন, যে একজন ব্রাক্ষ্মণ নারীর(সর্বজয়া) কি অবস্থা হয়, যখন অর্থের জন্য তাকে কাজের লোকের কাজ করতে হয়। দুর্গার মৃত্যুর পর তারা গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে জ্বরে স্বামী হরিহরও মারা যায়। তার চোখের অশ্রু মোছার জন্যও কেউ ছিল না। সবাই তার কষ্টের সুযোগ নিতে চায়। সাহায্যের হাত কেউ বাড়ায় না।

অবশেষে সে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ছেলে অপুকে নিয়ে তার নিজ গ্রাম নিশ্চিন্দি পুরের পথে রওনা হয়। কিন্তু সে তার সঠিক পথ খুঁজে পায় না।

কিন্তু বলাই বাহুল্য যে এই সামাজিক বৈষম্য আজকের একবিংশ শতাব্দিতে এই উন্নত সমাজেও পরিলক্ষিত হয়। বস্তুত এই উপন্যাস আদি ও বর্তমান সামাজিক উত্থান-পতন ও সামাজিক কুসংষ্কারেরই প্রতিচ্ছবি।


লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জন্ম:১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪। তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয়ভারতীয় বাঙ্গালি কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন।

পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও কয়েকটি ভ্রমণকাহিনী এবং দিনলিপিও রচনা করেন।

বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনেসত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কাররবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।

অধুনা ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলাতে, ১ নভেম্বর ১৯৫০ তিনি মারা যান।

আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

ভালো ও মন্দের ব্যাপারে শিশুদের দৃষ্টি উন্মোচন

আফরোজা হাসান


ভাইয়ার পাঁচ বছর বয়সি জমজ দুই পুত্রের চেহারা যেমন একদম আলাদা একে অন্যের থেকে স্বভাবেও দুইজন সম্পূর্ণ ভিন্ন! নুবাঈদ চঞ্চল, ছটফটে, মেজাজি, এলোমেলো এবং খুবই দুষ্টু স্বভাবের! আর নুসাঈব শান্ত, চুপচাপ, গোছানো, কেয়ারিং এবং খুবই পাকা পাকা কথা বলা স্বভাবের! দুই ভাইয়ের পছন্দ-অপছন্দও আলাদা আলাদা! ভাইয়ার গাছপালা ভীষণ পছন্দ। এই স্বভাবটা নুসাঈব পেয়েছে। প্রকৃতির কোলে কোলে থাকলে খুব পছন্দ করে। নুবাঈদ এর উল্টো। সে বাগানে যায়ই গাছপালার শান্তি ভগ্ন করতে। দেখা যায় নুবাঈদ বাগানে খেলার সময় টান দিয়ে একটা ফুল বা গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেলেছে। নুসাঈব ছুটে গিয়ে গাছে হাত বুলিয়ে আদর মেশানো কন্ঠে গাছের নাম ধরে বলবে, তুমি ব্যথা পেয়েছো? আহারে… তোমাকে আদর। নুবাঈদ ছোট মানুষ তো তাই বেশি বেশি দুষ্টুমি করে। তুমি রাগ করো না কেমন! আমি পাপাকে বলে দেব যেন নুবাঈদকে বকে দেয়। তোমাকেও যেন এসে সরি বলে। তুমি পানি খাবে? আচ্ছা তোমাকে পানি এসে দিচ্ছি। এই হচ্ছে আমাদের দুই সোনা পুটুলের অবস্থা!

একে সাথে হলেই দুই ভাই খুটখাট শুরু করে দেয়। আজ নুবাঈদ বসে ড্রইং করছিল। নীল রঙ শেষ হয়ে গেলে নুবাঈদ পাশে বসে থাকা নুসাঈবকে বলল, যাও তো রুম থেকে আমাকে নীল কালারের পেন্সিল এনে দাও। নুসাঈব নিজের ড্রইং নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই যেতে রাজী হলো না! নুবাঈদ তখন তেড়ে এলো নুসাঈবকে মারতে। ভাইকে তার দিকে তেড়ে আসতে দেখে নুসাইব ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে ফু দিতে শুরু করলো নুবাঈদের দিকে। নুবাঈদ চোখ বড় বড় করে বলল, তুমি আমাকে ফু দিচ্ছো কেন? নুসাঈব বলল, শয়তান করায় বলেই মানুষ দুষ্টু কাজ করে। মারামারি অনেক দুষ্টু কাজ। তুমি আমাকে মারতে এসেছো কারণ এখন শয়তান তোমার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। পাপা বলেছে শয়তানের দুষ্টামি থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। সেজন্য আমি ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে তোমাকে ফু দিয়ে দিচ্ছি। যাতে শয়তানের দুষ্টমি থেকে আল্লাহর তোমাকে সাহায্য করেন। তাকে শয়তান বলেছে ভেবে নুবাঈদ ঝাঁপিয়ে পড়লো নুসাঈবের উপর।

ভাইয়া ছুটে এসে দুই পুত্রকে আলাদা করলেন। নুবাঈদ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, আমাকে শয়তান বলেছে। আমি শয়তান না। আমি ফেরেশতা। নুসাঈব প্রবল ভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, আমি তোমাকে শয়তান বলিনি তো। শয়তান তোমার ভিতরে ঢুকে তোমাকে দিয়ে দুষ্টূ কাজ করাতে চাচ্ছিলো। আমি তাই দোয়া পড়ে শয়তানকে তাড়িয়ে দিয়েছি। নুবাঈদ তখন কিছুটা শান্ত হলো। এক মূহুর্ত চুপ থেকে সেও ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে নুসাঈবকে ফু দিয়ে বলল, তুমি আমার কথা শোনোনি। আমাকে রঙ পেন্সিল এতে দাওনি। এটাও দুষ্টু কাজ। শয়তান তোমার মধ্যে ঢুকে ছিল বলে তুমি এই দুষ্টূ কাজটি করেছো। আমি ফু দিয়ে দিয়েছি এখন শয়তান চলে গেছে। যাও আমাকে নীল রঙের পেন্সিল এসে দাও। নুসাঈব এক মূহুর্ত দ্বীধা করলো এরপর রুমে গিয়ে রঙ পেন্সিল এসে দিলো নুবাঈদকে। ভাইয়া দুই পুত্রকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বললেন, মাশাআল্লাহ তোমরা দুইজনই আজ অন্নেক ভালো কাজ করেছো! এভাবে সবসময় নিজের সাথে সাথে একে অন্যের কাছ থেকেও দুষ্টু শয়তানকে তাড়িয়ে দিতে আল্লাহর সাহায্য চাইবে। পাপার মুখ দেখে প্রশংসা শুনে তো দুইজনই একদম গদগদ হয়ে গেলো।

দুই বাবা সোনার ঘটনাটি টাইম মেশিন হয়ে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল তিন বছর অতীতে। ইউরোপের এই বৈরী পরিবেশে শরীয়তের আলোকে সন্তানদেরকে গড়ে তুলতে চান এমন কয়েকটি পরিবারকে নিয়ে একটি ফ্যামেলি প্রোগ্রাম করতাম আমরা নিয়মিত। বাচ্চাদের শরীয়তের আলোকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানান ধরণের ইভেন্ট ছিল আমাদের সেই প্রোগ্রমে। ছোট বাচ্চাদেরকে গল্প আকারে কিংবা ছোট ছোট প্রশ্নাকারে শেখালে ওরা মজা যেমন পায় তেমনি শিখতেও পারে দ্রুত। আমরা এমন অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছিলাম ইসলামের মূল বিষয় সমূহকে ঘিরে। যেমন, তোমার সৃষ্টিকর্তা কে? পৃথিবীর সকল মানুষকে কে সৃষ্টি করেছেন? গাছ গাছালী এবং ফল ফলাদি কে সৃষ্টি করেছেন? সকল কাজ কোন দিক থেকে শুরু করতে হয়?যে কোন কাজ করা,যাওয়া,খাওয়া,পড়া,শোয়া, শুরু করতে হয় কি বলে?কেন সকল কাজের শুরুতে আমরা বিসমিল্লাহ বলবো? ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন প্রশ্নে প্রশ্নে ওদেরকে শয়তান সম্পর্কেও জানিয়েছিলাম। বুঝিয়ে বলেছিলাম শয়তান কিভাবে কুমন্ত্রণা দেয় মনে। কিভাবে মানুষকে দিয়ে দুষ্টু কাজ করায়! কিভাবে ভালো কাজ থেকে বিরত রাখে! সাথে সাথে এটাও বুঝিয়ে বলেছিলাম আমরা, কেন ভালো কাজ করতে হবে, কেন দুষ্টু কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। নিজের সাথে সাথে অন্যদেরকেও ভালো কাজ করার পরামর্শ দিতে হবে, দুষ্টু কাজ করা থেকে বিরত করতে হবে।

শয়তান সম্পর্কে বাচ্চাদের সাথে প্রোগ্রাম করে আসার পর তো সব বোনদের বাসা থেকে ফোন আসতে শুরু করলো। কেউ বলল, আপু কি শেখালেন আমার ছেলে তো সারাদিন ফাইটিংয়ের উপরেই থাকে অদৃশ্য শয়তানের সাথে! আরেকজন বললেন, একটু পরপরই শুনি আমার মেয়ে বিড়বিড় করে ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ পড়ছে। জিজ্ঞেস করলে জবাব দেয়, শয়তান যাতে আমার কাছে আসতে না পারে তাই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছি। অবশ্য আমার নিজের ঘরের অবস্থাও একই রকম ছিল। নাকীব কখনো ছুটে এসে বলতো, আম্মুতা জানো একটু আগে কি হয়েছে? শয়তান এসে আমাকে খুবই দুষ্টু একটা কাজ করতে বলেছিল। আমি শয়তানকে ইচ্ছে মত মেরে গুড়াগুড়া করে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছি। আবারো কখনো ওর রুম থেকে প্রচন্ড ক্যারাটে প্র্যাকটিসের শব্দ ভেসে এলে কি হচ্ছে জানতে চাইলে জবাব দিতো, আম্মুতা শয়তানকে মারছি আমি। বাচ্চারা নতুন কিছু শিখলে প্রথম প্রথম যা হয় আরকি। তবে অন্য আর সব কিছুর চেয়ে এই ব্যাপারটায় খুব জোড়ালো প্রভাব ছিল বাচ্চাদের সবার মধ্যে। তারা অনেক সাবধান হয়ে গিয়েছিল দুষ্টুমির ব্যাপারে। টুকটাক মিথ্যা যা বলতো সেটার পরিমাণ আরো কমে গিয়েছিল। ভালো কাজের আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল।

আবারো অনুভব করেছিলাম যে, বাচ্চারা আসলে অনেক নরম, কোমল ও পবিত্র মনের অধিকারী। ভালোর প্রতি, কল্যাণের প্রতি ওদের মানসিক ও আত্মিক টান সহজাত। ওরা সুন্দর থাকতে, সুন্দর দেখতে এবং সুন্দর কিছু করতে পছন্দ করে। ওদের মনের ভেতরটা আসলে বিশাল বড় সাদা এক ক্যানভাস। যে রঙয়ের আঁচড়ই সেই ক্যানভ্যাসে পড়ে ওরা মুগ্ধ হয়ে সেটাকে অবলোকন করে। তারপর পাশে পড়ে থাকা সেই রঙয়ের তুলিটাই তুলে নেয় নিজে কিছু আঁকার জন্য। তাই বাচ্চাদের সামনে কোন কিছুকে উপস্থাপন করার সময় সতর্কতার প্রয়োজন খুব খুব খুব বেশি। বিশেষ করে শরীয়তের বিধি-নিষেধ, জীবনের চলার পথের কল্যাণকর ও অকল্যাণ বিষয়সমূহ, ভালো কোনটা, মন্দ কোনটা ইত্যাদি সবকিছু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হবে। এবং ছোটবেলা থেকেই নিজের সাথে সাথে অপরকেও ভালো কাজে উৎসাহিত ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও দায়িত্ব পালনের শিক্ষা দিতে হবে। ছোটবেলাতেই যদি ভালো কিছু করার পথের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী এবং মন্দ পথকে আকর্ষনীয় ও সহজ করে সামনে পেশ কারী শয়তান সম্পর্কে সাবধানতার অবলম্বন করতে এবং সেই ব্যাপারে প্রভুর কাছে সাহায্যে প্রার্থনা করার শিক্ষার বীজ বুনে দেয়া যায় শিশুদের মনে! এবং সেই বীজকে বিকশিত করার লক্ষ্যে পরিমিত যত্ন নেয়া হয়, আগাছা দূরীভূত করা হয়! তাহলে ইনশাআল্লাহ ভালো ও মন্দ সম্পর্কে মোটামুটি স্পষ্ট ও সঠিক ধারণা নিয়ে শিশুরা বড় হতে এবং সেই অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে শিখে যাবে ধীরে ধীরে!

 

ঘর সাজানোর কারুকাজ

অল্প খরচে এবং অলস সময়গুল ধরে রাখতে সবচেয়ে আনন্দময় কাজ হল ঘর সাজানো। আজকের আয়োজনে নানান রং এর কাগজ দিয়ে ঘর সাজানোর কৌশল শিখি। চলুন এখনি দেখে ফেলি কিভাবে নিজের প্রসাদকে অপূর্ব করে তোলা সম্ভব কাগজ দিয়ে।

কাগজের প্রজাপতি

আপনার বাসায় মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য তৈরি করা যাবে সামান্য কাগজ দিয়ে। আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। সহজ উপায়ে ঘরের চেহারা পাল্টে দেবার জন্য কাগজের প্রজাপতি হতে পারে একটি সুন্দর উপাদান। এছাড়া আপনি ফুল, লতা পাতা এবং নানান ন্যাচারাল জিনিজও তৈরি করতে পারেন কাগজ দিয়ে।

কাগজের প্রজাপতি বানানোর কৌশলটি ধাপে ধাপে শিখে। আমরা সহজে ঘর সাজাতে পারি।

কি কি লাগবে

আর্ট পেপার পুরু এবং বড় সাইজের এক কালারের কাগজ আপনার বিভিন্ন প্রিন্ট পছন্দ হলে সেটিও রাখুন, পেন্সিল, কাঁচি, আঠা।

ধাপে ধাপে কৌশল

১ম ধাপ
প্রথমেই প্রজাপতি সিলেকশন(রংবাহারি, নাকি এক কালার, নাকি প্রিন্ট)। পেন্সিল দিয়ে প্রজাপতি আঁকতে পারেন অথবা যদি আপনি আর্টে পারদর্শী না হন তাহলে বিভিন্ন সাইজের প্লাস্টিক বা কাগজের প্রজাপতি কিনে নিতে পারেন ছোট থেকে বড় সাইজের দু একটা প্রজাপতি। এবার ছাপ দিয়ে দিয়ে আঁকুন।

২য় ধাপ
আঁকা অংশের পাশ দিয়ে কাঁচি দিয়ে প্রজাপতিগুলো কাটুন। ইচ্ছেমত প্রজাপতি বানাতে পারেন। তবে ছোট থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় করে অনেকগুলো প্রজাপতি বানালে দেখতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় লাগবে। ৩০-৫০ টি বানাতে পারেন। খুব নিখুঁত করে কাঁটার চিন্তা করবেন না তাহলে মন খারাপ হতে পারে।

৩য় ধাপ
কাটা হয়ে গেলে। আঠা লাগানোর পালা। আঠা লাগানোর আগে প্রজাপতিগুলো মাঝখানে হালকা ভাঁজ করে নিন। যাতে দেয়ালে লাগানোর পর দেখতে সুন্দর ও জীবন্ত মনে হয়। কোথায় লাগাবেন এবং কতগুল লাগাবেন তার উপর সুন্দর বিষয় নির্ভর করবে না বরং আপনার পছন্দের উপর সৌন্দর্য নির্ভর করে।

আপনার যে কোন রুমের দেয়ালে বা শুধু ড্রয়িং রুমে অথবা এক পাশে দেয়ালের এই প্রজাপতিগুলো আটকে দিতে পারেন। খুবই সহজ উপায়ে এবং তেমন খরচ ছাড়াই রুমের ডেকোরেশন হয়ে যাবে।

 

বইয়ের সাথে সখ্যতা

বৈশালী রহমান


বাংলা সাহিত্যের একটা শাখা নিয়ে আমার একটু ক্ষোভের মতো আছে। সেটা হলো, ভৌতিক গল্প।

গত এক বছর ধরেই ফেসবুকিং কমিয়ে পড়াশোনা করছি প্রচুর। শুধু রিসার্চের পড়াশোনাই নয়, বাংলা সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নন ফিকশন ইত্যাদিও ঝালাই করে নিচ্ছি খানিকটা।

সাহিত্যের অন্য শাখাগুলো যেমন রোমান্টিক, রহস্য, রম্য, ট্র্যাজেডি ইত্যাদিকে বাংলা সাহিত্য এবং সাহিত্যিকেরা আপন করে নিলেও এই হরর বা ভৌতিক শাখাটা কেন যেন অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ সাহিত্যিকরাই ভূতের গল্প লিখতে গিয়ে সেটাকে করে ফেলেছেন একেবারে ছেলেমানুষি বিষয়, হাস্যকর বস্তু, যেমনটা দেখা যায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের “অদ্ভুতুড়ে সিরিজ” এ, নয়তো বিদেশী পিশাচ বা জম্বি কাহিনির অক্ষম অনুকরণ, যেটা করেছেন রহস্য পত্রিকা বা সেবা প্রকাশনী কেন্দ্রিক লেখকেরা।

বাংলার প্রকৃতি, পরিবেশকে আপন করে নিয়ে তার ভিত্তিতে গা ছমছমে ভূতের গল্প লিখতে দেখেছি খুব কম লেখককেই। তবে ভূতের গল্পে চমৎকার মানবিক প্রলেপ নিয়ে এসেছেন তারাশঙ্কর, মনোজ বসু বা পরশুরাম।

পরশুরামের বিখ্যাত গল্প “ভূষণ্ডীর মাঠে” তে ধর্মীয় কিছু সংস্কার নিয়ে ভূতের সংলাপের মাধ্যমে চমৎকার স্যাটায়ার রয়েছে। আবার “মহেশের মহাযাত্রা” পরশুরাম সুলভ স্যাটায়ার দিয়ে শুরু হলেও শেষ দিকে বেশ গা ছমছম করেই ওঠে। হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় নামে এক স্বল্প পরিচিত লেখকও চমৎকার কিছু ভূতের গল্প লিখেছেন। শরদিন্দু তাঁর বিখ্যাত চরিত্র বরদাচরণের জবানিতে লিখে গেছেন কয়েকটি অসাধারণ ভৌতিক গল্প।

বাংলায় প্রথম সম্পূর্ণ ভৌতিক উপন্যাস লেখেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, যদিও তাঁর লেখার মধ্যেও “শিশুদের জন্য প্রযোজ্য” ছাপই প্রবল। বড়োরা ওইসব লেখা পড়ে ভয় পাবে, এই সম্ভাবনা কম। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারও চমৎকার দুটি পিশাচ উপন্যাস এবং কিছু ভৌতিক ছোটো গল্প লিখেছেন। কিন্তু সেইসব লেখার অধিকাংশের মধ্যেও কিছুটা মৌলিকতার অভাব আছে বলে মনে হয়েছিল আমার কাছে। বিদেশী গল্পের ছাপটা বেশ প্রকট। তবে কিছু কিছু গল্প সত্যিই চমৎকার।

আমার মতে, সার্থক ভৌতিক গল্প সেটাই, যেটা দেশ-কাল-পরিস্থিতি-পরিবেশকে তুলে ধরে এমন একটা ভয়ংকর আবহ এর সৃষ্টি করবে, যাতে করে গল্প পড়ার পর পাঠকের একা একা অন্য রুমে যেতেই ভয় লাগবে। যেখানে বাংলায় সার্থক ভূতের গল্পেরই অভাব, সেখানে ভূতের গল্পের একটা অনবদ্য অনুষঙ্গ, তন্ত্র, তান্ত্রিক সন্ন্যাসী প্রভৃতি সহযোগে বেশ “উপাদেয়” ভৌতিক গল্পের অভাব থাকাটা স্বাভাবিক। এই অভাব খানিকটা পূরণ করেছিল প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাতে সৃষ্ট এবং পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাতে জীবন্ত রূপ পাওয়া চরিত্র তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলো। তারপর হাতে এলো অলাতচক্র। তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর আরেকটি মাস্টারপিস। এরপর তন্ত্র এবং তান্ত্রিক চরিত্র সম্বলিত ভূতের গল্প পড়ার জন্য মনটা আনচান করছিল। কিছু থার্ড ক্লাস গল্প হাতে এসে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

মনে হচ্ছিল, আমি লিখলেও বোধহয় এর চেয়ে ভালো লিখতে পারতাম। ঠিক এ সময়েই খানিকটা রহস্যজনক ভাবেই ঠিক গতকাল রাত দুটোর সময় হাতে চলে এলো গজেন্দ্রকুমার মিত্র মহাশয়ের “অলৌকিক কাহিনি সমগ্র”।

মিত্রমশাইয়ের নাম যারা মনে করতে পারছেন না, তাঁরাও অনেকেই বোধহয় তাঁর রচিত বিখ্যাত উপন্যাস “পৌষ ফাগুনের পালা”র নাম শুনে থাকবেন। এটি মূলত একটি ট্রিলজি, যার প্রথম দুটি হলো “কলকাতার কাছেই” এবং “উপকণ্ঠে”। এই ভদ্রলোক যে এত অসাধারণ ভূতের গল্প লিখতে পারেন এটা জানা ছিল না। কী অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করেন তিনি! অভিজ্ঞতা নিশ্চয় জানেন ভূতের গল্পে ভয় পাওয়ার জন্যে পরিবেশ একটা বিরাট ভূমিকা রাখে। আর মিত্রমশাইয়ের গল্পের আরেকটি অসাধারণ বিষয় হলো প্লট। হাজারবার শোনা বা পড়া ভূতের গল্পের চিরাচরিত প্লটের মতো নয়।

বইটির সব গল্প ভালো লাগেনি। অন্তত দশটি গল্প নিম্নমানের মনে হয়েছে। তবে ছয়শ পৃষ্ঠার একটি সংকলনে এটুকু ছাড় বোধহয় দেওয়াই যেতে পারে।

তারানাথ তান্ত্রিক এবং অলাতচক্র পড়ার পরে যাদের কাছে অন্য সব ভূতের গল্পই পানসে বলে মনে হচ্ছে, তারা এই বইটি পড়ে ফেলতে পারেন। সময়টা বৃথা যাবে না। বিশেষ করে শীতের রাতে কম্বলের তলায় ঢুকে বইটা পড়লে ভয় পাওয়ার গ্যারান্টি ১০০%।

লেখিকা: ডেপুটি ডাইরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রাসঙ্গিক কথা

ডা. সাকলায়েন রাসেল


মাত্র মাসের ব্যবধানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেল..দু’জন মা! না.. গ্রামের কোন এক অজপাড়া গাঁয়ের জরিনা খাতুন না..। আমিও কাউকে ছোট করে বলছি তা ঠিক না।

মারা গেল একেবারে শিক্ষা ও আর জ্ঞানের আলোয় পরিপূর্ণ দুই মা..দু’জনেই পেশায় চিকিৎসক! সবে মাত্র জীবন শুরু করেছিল..দেশকে, পরিবারকে কিছু দেয়ার আগে হারিয়ে গেল একেবারেই অকালে.. একজনতো গেল পেটে ৯ মাসের বাচ্চা সহ!

খবর দু’টো চোখ ভিজিয়ে দেয়..জীবনের সব ছন্দ যেন মুহুর্তেই থামিয়ে দিতে চায়..প্রশ্নরা আঁছড়ে পড়ে মনের কোণে?

চলে যাওয়াটা যদি এতোই স্বাভাবিক.. বেঁচে থাকার তবে কেন এত্তো আয়োজন!!!

কেন এত্তো স্বপ্নকে আলিঙ্গন করা?
প্রেগন্যান্সিটাকে আমার কাছে.. ১০ নং বিপদ সংকেতের মত মনে হয়… চুল থেকে মাথা পর্যন্ত যেন মায়ের শরীরে ঝড় বইতে থাকে.. এ ঝড়কে আড়াল করার প্রবণতা প্রথম চোখে পড়ে গ্রামে..শহরেও কিছুটা!

বউকে ডাক্তার দেখাননি কেন?..এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছু পুরুষের উত্তর থাকে..ওর তো কোন সমস্যা ছিল না তাই দেখাইনি! ভাবখানা এমন যে প্রেগন্যান্ট তো কি হইছে, অসুস্থ তো আর না! অথচ প্রেগনেন্সি নিজেই একটা বড় রোগের নাম!

অন্তত আমার কাছে! যতই তাকে ফিজিওলজিক্যাল কন্ডিশন বলা হোক না কেন…গ্রামের অজ্ঞ স্বামীর চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে শহরের আধুনিক মেয়েরা! গ্রামের মেয়েদের মত শহরের মেয়েরা  আড়াল করে না!..স্মার্টলি শো করে! গ্রামের ‘সাধ’ অনুষ্ঠান তাই শহরের আধুনিকতায় ‘বেবি শোয়ার’ হয়ে যায়!

শুধু তাই না…তারা জানে বর্ধিত দেহ অবয়বকে কিভাবে আড়াল করতে হয়!..জানে কিভাবে দেহের আগলি ভাবকে মেক আপের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে হয়!

প্রেগন্যান্সিতে তাই তারা সৌন্দর্যের আলাদা শিল্পে পরিণত করে! থামতে হয় না তাই শহরের মেয়েদের.. কিংবা থামার সুযোগ পায় না শহরের কর্মজীবী মহিলারা..প্রেগন্যান্সিতে সমভাবে সচল থাকে তারা!

ছুটি মাত্র ৬ মাসের!!

আপনার ইচ্ছায় আপনি তা যেকোন সময় নিতে পারেন! অনেকেই… ঠিক অনেকে না, প্রায় সবাই তাই হিসাব করে..কষ্ট করে প্রেগন্যান্সির সময়টি চালিয়ে নেই ছুটি ছাড়া..বাচ্চা হলে ছুটিটা বেশি কাজে লাগবে…

আর সে কারণে প্রায় সবাই বাচ্চা হওয়ার পর ছুটি নেয়! অনেকে কানাঘুষা করে.. ডাক্তার মেয়েদের বাচ্চাকাচ্চাদের ইদানিং অনেক বেশি সমস্যা হচ্ছে.. বৃহৎ অর্থে কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের মধ্যে সমস্যাযুক্ত সন্তান জন্মদানের হার বেশি!! না এ ব্যাপারে কোন গবেষণা আমার জানা নেই… এসব শুধু বাতাসে শুনি! হতে পারে এর পিছনে,

২ কারণ:

  •  প্রেগন্যান্সিকালীন বিশ্রামহীনতা কিংবা অতিরিক্ত কর্মক্ষম থাকা।
  •  চিকিৎসক কিংবা কর্মজীবী মায়েরা বেশি সচেতন বলে…আগেভাগেই তারা রোগ নির্ণয় করছেন!

অথবা.. আপনি চাইলে আমাকে গালমন্দ করতে পারেন… লোকটা নারী বিদ্বেষী… ইনিয়ে বিনিয়ে চাকরি জীবি মায়ের বিপক্ষে…আর হাউজ ওয়াইফ মায়ের পক্ষে বলছে!

সরি, আমি ঠিক সেভাবে ভাবছিনা! ভাবছি…
কোথাও তো একটা কিছু আছে আছে..না থাকলে চিকিৎসক কিংবা কর্মব্যস্ত “”মায়েদের সন্তানের এতো বেশি শারীরিক ও মানসিক সমস্যা কেন হচ্ছে?””

সমাধান তবে কি?

ছুটিটাই যেহেতু প্রধান সমস্যা..আমি তাই আমি এটা নিয়েই কথা বলতে চাই!

সিউর না…তবে শুনেছিলাম…ইন্ডিয়ায় একজন কর্মজীবী মা মাতৃত্বকালীন ছুটি সব মিলিয়ে ৫ বছর পান..এ ছুটি তিনি এক সাথে নিতে পারবেন না… ভেংগে ভেঙে মোট ৫ বছর নিতে পারবেন!

এতে দুই সুবিধা:

  • বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় লম্বা ছুটি নিয়ে বিশ্রামে থাকতে পারে।
  • ছেলে মেয়েদের পরীক্ষার সময় পাশে থাকতে পারে!

এই দুই সুবিধার পিছনে বড় সুবিধা হল…পরিবারের লোকজন চাকুরীজীবী মা কে স্বাগত জানায়…ধরেই নেয় যে, চাকরী করলেও বাচ্চাকাচ্চা লালনে মা ভাল সময় দিতে পারবেন!

কারণ, এই বাংলাদেশেরই অনেক মা সন্তানের কারণেই এক সময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাচ্চা পালনকেই অধিক শ্রেয় মনে করেন!

জানি এটা অনেক বড় স্বপ্ন.. পুরণ হতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে! কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ কি!!

৫ বছর না হোক…৯ মাস তো পাব!! এর মধ্যে ৩ মাস প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে… বাধ্যতামূলকভাবে! বাকী ৬ মাস…সন্তান লালন পালনে! তাও যদি পাওয়া না যায়…

তবে ৬ মাসের কয়েক মাসেক বরাদ্দ থাকুক প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে! সন্তানরা আসুক সুস্থতা নিয়ে… মায়েরা বাঁচুক সন্তানদের আঁচলে রেখে…ভরসার সবটুকু জায়গা জুড়ে!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

অপেক্ষা

আখতারুজ্জামান সেলিম


অপেক্ষাতে কেটে যায় কতো যে সময়
যেজন প্রতীক্ষা করে সেই শুধু জানে
সময় কেমনে কাটে।
বিমানের প্রতীক্ষায় আছি কুর্মিটোলায়
মহাখালী ভরা থাকে ঈদের সময়
ঘরে ফেরা মানুষের শ্বাসে
বৃষ্টির প্রতীক্ষায় থাকে চাতকচাতকী
ভাটায় নোঙ্গর করে
জোয়ারের পতীক্ষায় থাকে নায়ের মাঝি
প্রেমিকার প্রতীক্ষায় কাটেনা সময়
জন্মের প্রতীক্ষা করে নবদম্পতি
মৃত্যুর পতীক্ষায় থাকে ফাঁসির আসামী,
আমি প্রতীক্ষায় একটি কবিতার
সারাটা জীবন প্রতীক্ষায় থাকে মৃত্যু।

 

কেন হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ?

ফাতেমা শাহরিন


কাজটি অত্যন্ত কঠিন বলা যে, সমাজে অবক্ষয়, নাকি অপসংস্কৃতির প্রভাব, অথবা নারী পুরুষভেদে মারাত্মকভাবে ‘ইগো’ প্রব্লেম। হা, আত্ম অহমিকা বন্ধনকে নাজুক করে দেয় এটা সত্যি কিন্তু আধুনিকতা এবং উচ্চ শিক্ষার হার যে হতে পারে তা বড় বড় পত্রিকায় আসছে শিরোনাম হয়ে। আজকের আধুনিক এবং দ্রুতগতির জীবনে সম্পর্কের বিচ্ছেদ রাষ্ট্রীয় কোন নতুন সমস্যা হয়ে দাড়িয়ে পড়বে কিনা বলা মুশকিল। কেন এই সম্পর্ক গুল ভালবেসে গড়েও ভেঙ্গে পড়ছে?

আসুন দেখি কিছু পয়েন্ট:

১) সেক্সচুয়াল সমস্যা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এক নম্বর সমস্যা হল সেক্সচুয়াল সমস্যা। লোকলজ্জা অথবা অজানা জ্ঞান এব ভুল শিক্ষার জন্য একটি সুমধুর দাম্পত্য জীবন সূচনা লগ্নে অন্ধকার ছায়াতলে ডুবে যেতে পারে। এজন্য সুস্থ যৌন মিলন একটি অপরিহার্য অঙ্গ। যখন স্বামী-স্ত্রী পরিতৃপ্ত যৌন মিলনে ব্যর্থ হয় তখন তাদের মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিশেষে ঘুমের ঘর থেকেই দাম্পত্য জীবন সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়।

২) সম্পর্কের অবনতি

দাম্পত্য জীবনে মতবিরোধ ও মনোমালিন্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে তাকে বেশী বাড়তে দেয়া যাবে না। তা যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কেউ কারো সাথে কথা বলছে না তাহলে সমস্যা জটিলতর হয়ে ক্রমান্বয়ে তা বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়।

৩) নির্যাতন

নির্যাতন তিন প্রকার, কখন শারীরিক, বস মানসিক, সেক্সচুয়াল। যা একটি সম্পর্ককে হত্যা করে। এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বিপদ জনক কারণ হল, দৈহিক ভাবে অত্যাচার, মার-পিট ও রুক্ষ আচরণ অথবা মানসিকভাবে নির্যাতন তথা অপমান, হেয় প্রতিপন্ন, গালাগালি করা। বৈবাহিক বন্ধনে সেক্সচুয়াল নির্যাতন ভয়ংকর রূপে হলেও সমাজে হয়ে অনেক নারী বা পুরুষ নিরবে চুপ থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন যুদ্ধ শেষে সম্পর্ক মরে যায়।

৪) দাম্পত্য জীবনে অনীহা

দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে বিতৃষ্ণা একটি জীবনে এক ঘেয়েমী ও বিরক্ত ছড়িয়ে দেয়। এটি সংসার ভাঙ্গার একটি কারণ। দীর্ঘ দিন ঘর সংসার করার পর যদি দেখা যায়, ভালোবাসার উষ্ণতা শীতল হয়ে পড়েছে। পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। তাহলে পরিণতিতে তা তালাকের দিকে গড়ায়। দীর্ঘদিন গোপন প্রেম, তারপর গোপন বিয়ে, এক সময় সবকিছু ফাঁস। দাম্পত্য জীবনের প্রতি অনীহার জন্ম নেয়।

৫) মাদকাসক্তি

মাদকাসক্তি ব্যক্তির নানান রকম সমস্যা দেখা দেয়, রাগ বেড়ে যায়, সন্দেহ জন্ম নেয়, এমনি প্রচন্ড অত্যাচারী হিসেবে পরস্পর এর প্রতি সহিংস্র হয়ে পরে। দাম্পত্য জীবনকে ধ্বংসের অতল তলে নিয়ে যায়। এর ধ্বংসাত্তক দিক অনেক। ফলে.. প্রচুর অর্থ অপচয়, অপর পক্ষের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন, শারীরিক নির্যাতন, সন্দেহ জনক অবৈধ সম্পর্ক আর পরিশেষে দাম্পত্যে জীবন ধ্বংস ‘তালাক’।

৬) বিয়ের পর অবৈধ সম্পর্ক

স্বামী অথবা স্ত্রীর পক্ষ থেকে যে কেউ যদি পরকীয়ায় লিপ্ত থাকে তাহলে পরবর্তীতে তা বৈবাহিক জীবনের ইতি টানতে বাধ্য করে। তা জীবনে একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাড়িয়ে যায়। পরকীয়া মূলত: দাম্পত্য জীবনে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল।

আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি দম্পতিকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করে তাদেরকে একটি সুস্থ, সুন্দর, মধুময়, ও বরকতময় পরিবার গঠন করার তাওফীক দান করুন। এ জন্য পারষ্পারিক ভালোবাসার উষ্ণতা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা প্রত্যেক জরুরী। রেফারেন্স: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব। সুখী ও সুন্দর পরিবার গঠন করবো।

মনোবিজ্ঞান

 

আলোক কণিকার পিছু পিছু

ডা.ফাতিমা খান


প্রতিদিন রোগী দেখা শেষ করে বাসায় ফিরতাম রাত দশটায়। বাসায় এসে ঠান্ডা পানিতে গোসল সেরে আয়েশ করে ধোঁয়া ওঠা চা/কফি খাওয়া ছিল আমার সে সময় প্রতিদিনের অভ্যাস। হয়তো ভাবছেন, এত রাতে চা-কফি ? ঘুম আসবে তো ?
আসবে…ঘুম আসতে চাইলে আসবেই, আর না আসলে কিছু করার নাই, চা-কফির দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমার ঘুম এমনিতেই খুব কম । সারারাত ‘নির্ঘুম প্রহরী’ হয়ে জেগে থাকার অভ্যাস আমার বহুদিনের।

বাসায় ঢোকা মাত্র প্রায়ই দিনই কারেন্ট চলে যেত। আমাদের এলাকার লোডশেডিং এর সময়-জ্ঞানটা ছিল অসাধারণ! প্রতিদিন একই সময় বিদায় নিত, আবার ঠিক সময়মতই চলে আসত। আমার বুয়া রিমির মা ঝটপট ‘বিকল্প বাতি’র ব্যবস্থা করতে করতে ভেংচি কেটে বলত, ”ভাবী আইছে না, অহনই কারেন্টের যাওন লাগব”।

আমি হাসতাম। রিমির মায়ের এই কথায় একটা অব্যক্ত মমতা ছিল। ব্যাপারটা আমার সয়ে গেলেও রিমির মার কষ্ট হত এই ক্লান্ত আমার জন্য। ঢাকা শহরে দিনশেষে সহি-সালামতে ঘরে ফিরতে পেরেছি এই তো অনেক … প্রতিদিন শুকরিয়া নামাজ পড়া উচিত। কারেন্ট চলে গেলে যাক, আমি আমার মত আমার চা/কফির কাপটা নিয়ে সোজা চলে যেতাম আমার ছোট্ট বারান্দাটায়।

হিজিবিজি দালানের ঢাকা শহরেও উপরতলার ফ্ল্যাটগুলোর খোলা জানালা বা বারান্দা দিয়ে চমৎকার ফুরফুরে বাতাস আসে। আর যদি হয় দক্ষিণমুখী বারান্দা, তাহলে ত আর কথাই নাই ! পূর্ণিমারাতে চাঁদের আলোর একটুখানি হলেও দালানের গা গড়িয়ে তৃষার্ত শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্ষার দিনে ঝিরঝির বৃষ্টি সামান্য হলেও বারান্দাটা ভিজিয়ে দেয়। এই বারান্দায় বসেই আমি ভেজা মাটি, বৃষ্টি আর বাতাসের একটা মিশ্র সুবাস নিতাম।

সেদিন রাত বাজে প্রায় ১ টা । ল্যাম্পের আলোয় বই পড়ছিলাম। এসময় বাসার সবাই দিব্যি ঘুমে তলিয়ে থাকে। সবাই বলতে আমার ছেলে, রিমির মা (ঘরের কাজের জন্যই তাকে রাখা হয়েছিল কিন্তু তাকে সবাই আমার আত্নীয়া মনে করত) আর রুবি, আমার ছেলের খেলার সাথী।
রিমির মা কখন যে এসে আমার সামনে দাড়িয়েছে টের পাইনি। টেবিল ল্যাম্প এর কুসুম আলোতে তাকে কিছুটা উজ্জ্বল লাগছে, রিমির মার চেহারায় অদ্ভুত একটা মায়াবী আর দুখী দুখী ভাব আছে। আজ মনে হচ্ছে এখানে আরও একরাশ মেঘ এসে জড় হয়েছে !

– কিছু বলবে?
_মা ফুন করছিল ভাবী।

– কি বলল ? সব খবর ভাল ? তোমার রিমি কেমন আছে ?
_ভাবী, রিমির বাপ আইছে বাড়িত।
– তো ?

_রিমিরে নেবার চায়। মাও এর হাতে পায়ে ধরে মাফ চাইছে। আমাদের রাখি আর কুনুখানে যাইব না।

এরকম শপথ রিমির বাপ আগেও অনেকবার করেছে, আবার অনেকবার ভেঙ্গেছেও । রিমির জন্মের আগেই এই লোকটা তার বউ আর অনাগত সন্তানকে ফেলে চলে গিয়েছিল অন্য কারো সংসারের অর্ধাংশ পূর্ণ করতে। এরপর ফিরে এসেছিল ঠিক, কিন্তু কিছুদিন পর সেই আবার একি ঘটনা ঘটায়। প্রতিবার সে হাতে পায়ে ধরে মাফ চায়।

যে বারবার কথা রাখবে না তার কথা দেয়ার কোন অধিকার আছে কি ?
রিমির মা রাও যে কি! এত অন্যায় সহ্য করে কেন?
কিন্তু ওদেরই বা কি দোষ!

আমাদের দেশের সমাজটাই তো এমন, যেকোন সাংসারিক বা সামাজিক ক্রন্দলের নন্দঘোষ হল বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা। এদের কাজ হল মুখে ছিপি এঁটে, কানে তুলা দিয়ে, চোখে কালো কাপড় বেঁধে কোমড়ে বাঁধা দড়ি মোতাবেক চলতে থাকা। এই অদৃশ্য দড়ির পরিচালক বদলযোগ্য। দড়ি-চালক ভালো হলে তো ঠিক আছে, কিন্তু খারাপ হলে জীবনটা একেবারেই অসহনীয় করে দেয়।

আদর্শহীন মুর্খ সমাজব্যবস্থার এই একটা বিশাল সমস্যা। কিন্তু এগুলো কে বোঝাবে কাকে ?

– তুমি এখন ঘুমাও তো রিমির মা। কাল ভেবে দেখব।

কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। আমার ছোট্ট সংসারে রিমির মায়ের অবদান ছিল অনেক বেশী। টাকা-পয়সা দিলে যতই কাজের মানুষ পাওয়া যাক না কেন, অন্যের সংসারকে আপন করে সাজিয়ে গুছিয়ে সবটুকু ভালবাসা দিয়ে কাজ করবে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। রিমির মায়ের স্বভাব-চরিত্র আর অভ্যাসগুলো অন্য আর দশজন কাজের মানুষের মত ছিল না। তাছাড়া কোথাও না কোথাও ওদেরকে আমার একাকীত্বের সাথীও মনে হত। জীবনের অতিরিক্ত ব্যস্ততায় আমি মেশিনের মত হয়ে গিয়েছিলাম , মাঝে মাঝেই কোন অনুভূতি কাজ করত না । আমার স্বস্তিময় জগতটা তখন খুব ছোট..শুধু আমার ছোট্ট ঘরটুকু। সারাদিন রোগবিদ্যা, ছাত্র-ছাত্রী, রোগী আর চিকিৎসার পাট চুকিয়ে ছুটে আসতাম আমার ছোট্ট জগতে, যেখানে আমার সোনামণিটা আমার জন্য অপেক্ষা করত সারাদিন, ওর উচ্ছলতা, দূরন্তপনা আর মিষ্টি হাসির আমেজে ভরে থাকত আমার স্বর্গসম নীড়।
আমার অনুপস্থিতিতে রিমির মা-ই ওকে বুকের মাঝে আগলে রেখেছে। রিমির মা চলে গেলে আমার চেয়ে বেশী কষ্ট হবে ওর। ওর অবুঝ চোখ দুটো খুঁজে বেড়াবে অনেক দিনের চেনা কোলটাকে! কিন্তু শুধু নিজের কথা ভাবলে তো আর চলবে না, আমিই বা এত স্বার্থ্পর হই কেমন করে ??…কি করি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

বিদায় বেলায় রিমির মা অনেক কেঁদেছিল। সে কান্নায় কোন শব্দ ছিল না। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল ওখানে অসহায়ত্ব চিরস্থায়ীভাবে বাসা বেধেছে। অনিশ্চয়তার এক আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসতে চাইছে ওর মুখ ফুটে। যে মানুষ বারবার ধোকা খেয়েছে সে জেনে বুঝে আরেকবার ধোকার জালে তখনই পা ফেলে যখন কোথাও না কোথাও তার বাধ্যবাধকতা থাকে।

রিমি ওর দূর্বলতা। ও বড় হয়েছে। তার ভবিষ্যত চিন্তা করে রিমির মা আবার ফিরে যাবে শ্বশুরবাড়ি। পরে কি হবে, আদৌ তার মেয়েটার পিতৃ-ঠিকানায় আশ্রয় দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা এগুলো ভাবার অবসর নাই। ওদের জীবনটা কূলহীন নদীতে ভাসিয়ে দেয়া নৌকাটার মত। ঝড়, ঝঞ্জা, বাতাস, জোয়ার-ভাটায় কখনও নাও টলমান তো আবার কখনো মৃদু গতিতে চলমান। রাত হলে দিনের অপেক্ষা…দিন এলে রাতের আয়োজন। অনেক কিছু না-পাওয়া জীবনেও ওদের সীমাহীন স্বপ্নই একমাত্র সম্বল।

যুক্তি বা বাস্তবতার পেশীবহুল হাতটা ওদের স্বপ্নের সাথে পাঞ্জা লড়ে হার মানে বারবার। বিত্তবান আর বিত্তহীনদের স্বপ্নের মাঝে একটা বিশাল তফাৎ হল বিত্তবানদের স্বপ্নগুলো ওদের ঘুম কেড়ে নেয়… আর বিত্তহীনরা স্বপ্নই দেখে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর। রিমির মায়ের চোখে মুখে এরকম এক স্বপ্ন আমি দেখেছি অনেক বার। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য সে অবিরাম ছুটে চলেছে…… ।

একদিন আফসোস করে বলেছিল, ” পোলা হইলে তো কথাই ছিল না ভাবী, মাইয়া।

লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

শিশুর মৃগীরোগ বা এপিলেপ্সির প্রতিকার এবং চিকিৎসা

ডা.মারুফ রায়হান খান


সারা পৃথিবী জুড়েই সবেচেয়ে বেশি যে স্নায়ুরোগটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন এপিলেপ্সির রোগী আছে, যার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন রোগীই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

এপিলেপ্সি কী?

খুব সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে, বারবার খিঁচুনি হবার প্রবণতা যেখানে কোনো ধরনের প্ররোচনা থাকে না–তাকেই এপিলেপ্সি বলে। এটি সাধারণত ২০ বছরের আগে কিংবা ৬০ বছর বয়সের পর শুরু হয়।

কী কী কারণকে দায়ী করা হয় এ রোগের পেছনে?

১. অনেকক্ষেত্রেই কোনো কারণ জানা যায় না।
২. শিশু মায়ের গর্ভে থাকার সময় কিছু জীবাণু দিয়ে যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন : TORCH, HIV।
৩. জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের গঠনে যদি ত্রুটি থাকে।
৪. হাইপোক্সিক ইশকেমিক এনকেফালোপ্যাথি (সাধারণত নবজাতক জন্মের পর দেরি করে কাঁদলে এ সমস্যা হয়ে থাকে)।
৫. মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের আবরণে কোনো ইনফেকশান, যেমন : মেনিনজাইটিস।
৬. মস্তিষ্কে কোনো আঘাত।
৭. মস্তিষ্কে কোনো টিউমার।
৮. কিছু ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

১. পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের দুটো ভাগের মধ্যে একটি ভাগ আক্রান্ত হয় এবং দেহের যেকোনো একপাশে খিঁচুনি হয়।
২. জেনারেলাইজড সিজার : এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের দুভাগই আক্রান্ত হয় এবং পুরো শরীরেই খিঁচুনি হয়।

পার্শিয়াল সিজার আবার ৩ ধরনের রয়েছে।

ক. সিম্পল পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে দেহের এক অংশে খিঁচুনি হয় এবং খিঁচুনির পর রোগীর জ্ঞান ঠিক থাকে।
খ. কমপ্লেক্স পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে দেহের এক অংশে খিঁচুনি হয় কিন্তু রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।
গ. পার্শিয়াল সিজার উইদ সেকেণ্ডারি জেনারালাইজেশান : খিঁচুনি দেহের যেকোনো একদিকে শুরু হয় এবং তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।

কী কী বিষয় মৃগীরোগের এ খিঁচুনিকে ত্বরান্বিত করতে পারে?

১. কম ঘুম হওয়া
২. যারা মৃগীরোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যদি ওষুধ না খান
৩. মদ্যপান (বিশেষ করে মদ্যপান ছাড়ার সময়)
৪. শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ
৫. ঝিকিমিকি আলোর সংস্পর্শে যেমন : টেলিভিশন এবং কম্পিউটার স্ক্রিন
৬. উচ্চ শব্দ, মিউজিক, পড়া, গরম পানিতে গোসল ইত্যাদিও অনেকের ক্ষেত্রে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।

কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?

১. ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম : এটি অনেকটা ইসিজি পরীক্ষার মতো, তবে এটি মস্তিষ্কের। কখনও কখনও এটা দিয়ে এপিলেপ্সি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে যদি এ পরীক্ষা নরমাল আসে তার মানে এই না যে তার এপিলেপ্সি থাকার সম্ভাবনা নেই।
২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এম.আর.আই করতে হতে পারে।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?

১. প্রথমেই রোগীর মা-বাবাকে রোগের প্রকৃতি, কী কী বিষয় এ রোগকে ত্বরান্বিত করতে পারে, চিকিৎসা কী, নিয়মিত ওষুধ খাবার গুরুত্ব কী এবং এ রোগের আরোগ্যসম্ভাবনা কেমন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলা হয়।
২. মৃগী রোগের নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়, যা এন্টিএপিলেপ্টিক ড্রাগ নামে পরিচিত।

কতোদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?

যদি রোগী খিঁচুনি-বিহীন কমপক্ষে দুই বছর পার করে, মৃগীরোগের ওষুধ ধীরে ধীরে পরবর্তী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করা যায়।

জীবনযাত্রায় কী কী পরিবর্তন আনতে হয়?

১. উজ্জ্বল এবং ঝলকানো আলো পরিহার করতে হবে। যেমন : টিভি, ভিডিও গেইমস।
২. আগুন থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩. পানিতে ঝাঁপ দেওয়া বা সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৪. গাছে চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

এ রোগের ভবিষ্যত কেমন?

১. ৭০% রোগীর ক্ষেত্রেই খিঁচুনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
২. ৫-১০% রোগীর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বারবার হতে পারে এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে।
৩. ৩০% রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরু থেকেই “চিকিৎসা করা/নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মেলবন্ধনেই অপরূপ বিছানাকান্দি

ডা.মনির হোসেন


স্বচ্ছ জলধারা।অনাবিল আনন্দে জলপাথরের বিছানায় শুয়ে বসে গোসল আর হৈ-হুল্লোড়ে সময়ের হিসেব হারিয়ে ফেলার অবস্থা আমাদের। শুধু পা ভিজিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না এখানে আসা মানুষগুলো। শরীর এলিয়ে দিয়ে যখন চোখ বুজে আসে তখন একে পাথরে ভরা বাথটাব বলেই মনে হবে।নীল আকাশ আর থরে থরে বিছানো পাথর। দূরে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। এসব কিছুর মেলবন্ধনেই অপরূপ বিছানাকান্দি।হ্যাঁ, সিলেটের স্বর্গ বিছানাকান্দি। স্রোতধারায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন অন্য এক রাজ্য।

সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা স্বচ্ছ জলধারা আর পাথরের মায়াজালে যেখানে হারিয়ে যাবেন নিমিষেই। যেখানে মেঘ, পাহাড় আর জলধারার মিতালী আপনাকে আপন করবে গভীর মমতায়।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টবড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে তৈরি করতে হবে পথ। চলতে হবে খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। দেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলার বন “রাতারগুল” সিলেটে অবস্থিত। সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন কি? পানিসহিষ্ণু বড় গাছপালা একটা বনের রূপ নিলে তবেই তাকে বলে সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার জঙ্গল। এই বনের আয়তন তিন হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বন ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। বিশাল এ বনে রয়েছে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝেমধ্যে আসে বিশালকায় সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি। এ দৃশ্য আসলেই দূর্লভ!

শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গি নিয়ে ভেতরে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আপনাকে উড়ে সরে গিয়ে পথ করে দিবে।

 

নিভে যায় নক্ষত্রের আলো 

ফাতিমা শাহীন


দরজার যন্ত্র পাখিটি ডেকে উঠলো দুবার ৷ রিডিং রুমের কাউচে বসে একটি বইয়ে ডুবেছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের মত৷ ডোরবেল শুনে মুখ তুললাম,
থাক,
ঘরে তো লোকজন আরো আছে, খুলে দেবে দরজা কেউ না কেউ৷ আবারও ডুবলাম বইয়ের গহীনে ৷

‘আপা , পাও দুইটা একটু তুইল্লা বসেন , নিচটা ঝাড়ু দিয়া যাই …’

হুকুম মত পা তুলে বসলাম৷ তাকালাম রাহেলার দিকে, থমথমে মুখে রাজ্যের কালো মেঘ ভর করে আছে৷ চোখের কোনায় শুকিয়ে থাকা অশ্রুর দাগও কি চোখে পড়ল আমার!

‘দাঁড়াও রাহেলা!’ কি হয়েছে তোমার? শামসু বুঝি আবারও …..

আমার কথা শেষ হবার আগেই দৌড়ে এসে আমার নামিয়ে বসা পা দুটোর উপর যেন ভেঙ্গে পড়ল রাহেলা৷ একটু সহানুভুতির ছোঁয়া যেন ওর বুকের ভেতর জোর করে চেপে রাখা, ঝরনার মুখ খুলে দিয়েছে কেউ৷ জলপ্রপাতের বাঁধভাঙ্গা জলের মত অশ্রুর প্লাবন বয়ে চলেছে ওর চোখে৷

আস্তে করে শুধালাম ,

‘কি হয়েছে রাহেলা? খুলে তো বলবে আমায়, নইলে বুঝব কেমন করে?’

একটু শান্ত হয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বলল,

‘আমার দুইন্যার দিন মনে হয় শ্যাষ গো আপা! কাইলও জরির বাপে আর ফুফায় ফুফু মিল্যা এমুন মাইর মারলো আমারে! আর কইছে, আমারে আর আমার ভাইরে জন্মের মতন শিক্ষা দিয়া দিব!’

বুঝলাম এতক্ষণে! রাহেলার একমাত্র ননদ-নন্দাই ওর ঘরের আশপাশে ঘর ভাড়া নিয়ে এসে উঠেছে ভাই আর মায়ের কাছাকাছি থাকবে বলে৷ আর এসেই শুরু করেছে ভাইয়ের সংসারের উপর খবরদারি৷ সুখের সংসার বলতে যা বোঝায় তা রাহেলার না থাকলেও এতদিন অন্তত নিজে উপার্জন করে খেত বলে স্বস্তিটা ছিল, এখন যেন সেটুকুর ওপরেও শকুনের নজর পড়েছে ! এখন শ্বাশুড়িও যোগ দিয়েছেন তার আদরের মেয়ের সঙ্গে৷ উদ্দেশ্য একটাই, যদি ফাঁকতালে রাহেলার ভাইয়ের কাছ থেকে নগদে কিছু আদায় করা যায়, তবে মন্দ কি!

ওদিকে রাহেলার ভাইয়ের অবস্থা আরো করুণ৷ নিজে করে লোহা লক্করের কারখানায় শ্রমিকের চাকরি, ওদিকে ঘরে রোগে ভোগা বুড়ো বাপ আর ৩/৪ টা অবুঝ বাচ্চার অনাহারক্লিষ্ট মুখ৷ সে ই বা বোনের শ্বশুরবাড়ির খামতি মেটায় কেমন করে!

রাহেলার কান্না আবার বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো আমায়৷

‘ভাইরে কত কইছি, ভাইগো, আমারে এই জাহান্নাম থিকা ছাড়াইয়া লইয়া যাও৷ আমি তোমার ঘাড়ে বইয়া খামুনা, কাম কইরা নিজের ভাত নিজেই জোটামু৷ তাও তুমি আমারে এগো হাত থিকা বাচাও, নাইলে এরা আমারে জানেই মাইরা ফালাইবো৷’

অঝোরে কাঁদতে থাকে রাহেলা, আমারও চোখ দুটো বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে।

প্রায় চার পাঁচ দিন হয়ে গেল


রাহেলার খবর নেই৷ ওকে অনেকবার করে বলা আছে , কোনকারনে আসতে না পারলে আমাকে অন্তত একটা খবর যেন পৌঁছায়৷ কখনো কখনো জরিকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে বটে, কিন্তু এখনকার মত এভাবে না জানিয়ে এতদিন ডুব দিয়ে কখনো তো থাকেনি রাহেলা!

বাজার এসেছে৷ কর্তা পাঁচমিশালী মাছের চচ্চরি পছন্দ করেন, তাই আজ নিজে বাজারে গিয়ে মনের সুখে কেজিখানেক পাঁচমিশালী গুঁড়া মাছ নিয়ে সহাস্যবদনে হাজির হয়েছেন৷ রাহেলা আসেনি আজ৷ কে কুটবে মাছ, কে বাছবে সবজি! সে চিন্তা তো আর কর্তাকে করতে হয়না! তিনি তো বাজার করে দিয়েই নিশ্চিন্ত আর সময়মত টেবিলেও হাজির!

গজ গজ করতে করতে ডালায় মাছ নিয়ে সবে কুটতে বসেছি, হঠাৎ বাইরে চাপা একটা গোলমাল শুনে কান সজাগ করলাম৷ শুনলাম অনেক নারী পুরুষের সম্মিলিত চাপা আতঙ্কভরা ফিসফাস! উঠে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখি দারোয়ান সিদ্দিক ভাইও ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে৷

‘কি হয়েছে সিদ্দিক ভাই? এত মানুষ কেন এখানে? ‘

‘আপা! সর্বনাশ হইছে! আমাগো রাহেলা …..’

আমার হৃদস্পন্দন যেন লহমায় বন্ধ হয়ে এলো৷ কি হয়েছে রাহেলার! দৌড়ে নিচে নামলাম৷ নিচে দাঁড়ানো শোকার্ত নারী পুরুষেরা হাউমাউ করে যা বলল, তাতে আমার ঝলমলে রোদ্দুরঘেরা সকালটাতে যেন মুহুর্তেই অন্ধকার অমাবস্যার রাত নেমে এলো৷ রাহেলা নেই! ওর পাষন্ড স্বামী আর লোভী, ঝগড়াটে আর হিংসুটে ননদ মিলে ওর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে! ওর চিত্কার শুনে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে আগুন নিভিয়েছে বটে, কিন্তু ততক্ষণে শরীরের বেশিরভাগই শেষ হয়ে গেছে চিরতরে৷ হাসপাতালে নিতে নিতেই নিষ্ঠুর এই পৃথিবী ছেড়ে ওপারের দিকে যাত্রা শুরু করেছে রাহেলা!

আমি বজ্রাহত হয়ে বসে পড়লাম৷ আমার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো রাহেলার হাসি ভরা মুখের ছবি৷ কত যে সুখ দুখের কাহিনী উজাড় করে ঢেলেছে আমার কাছে! কখনো হাসিমুখে শুনতাম, কখনো মৃদু বকে আগে হাতের কাজ শেষ করতে তাড়া দিতাম৷ তাতে হয়ত তার মুখের প্রদীপ্ত সুর্যের উপর পাতলা সাদা মেঘ জমত ক্ষণকালের জন্য, পরক্ষনেই আবার সেই মেঘ সরে গিয়ে প্রখর রোদ্দুর খেলা করত শ্যামলা মুখখানিতে৷ আজ সেই রাহেলা নেই! চিরদিনের জন্য চলে গেছে অভিমানিনীর মত, কিভাবে বিশ্বাস করব আমি!

গলায় স্বর ফুট ছিলনা আমার, তবুও এক মহিলাকে জিজ্ঞাস করলাম,

‘ওর ভাই কোথায়? সে জানে তার বোনের খবর?’

‘হ আফা, অর ভাই আছাড়ি খাইয়া কানতাছে আর পুলিশের হাতে পায় ধরতাছে বইনের লাশের লাইগা, নিয়া মাডিডা য্যান দিতে পারে৷’

বোনের লাশ প্রার্থী অসহায় ওই যুবকটির জন্য করুণা হতে লাগলো আমার৷ তার দরিদ্র ঘরে ভাতের দাবিদার একজন বাড়বে বলে বোনের হাজারও আর্তি উপেক্ষা করেছে সে৷ বরং মানিয়ে গুনিয়ে স্বামীর সংসারকেই আপন করে নিতে কত বুঝিয়েছে বোনকে৷ আজ এসেছে বোনের লাশ নিয়ে যেতে! লাশের ভাতের দরকার হয়না, হাজারো চাহিদা মেটানোরও প্রয়োজন পড়েনা৷ বরং বোনটি লাশ হয়ে চিরকালের জন্য তার কাঙ্গাল ভাইটিকে দায়মুক্ত করে দিয়ে গেল!

চোখে আঁচলচাপা দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম ৷ এক রাহেলার চলে যাওয়ায় পৃথিবী তো থেমে নেই৷ অনেক কাজ পড়ে আছে ঘরে৷ ঘড়ি ধরে সেসব তো শেষ করতে হবে আমাকেই!

 

‘ডায়রিয়ার জীবাণু’ থেকে শিশুদের বাঁচার উপায়

ডা. মারুফ রায়হান খান


পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে ডায়রিয়া। প্রতি বছর অনূর্ধ্ব -৫ বছরের শিশুদের ১০ ভাগই মারা যায় ডায়রিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বারবার পাতলা পায়খানা হওয়াই ডায়রিয়া।

কী হয় ডায়রিয়ার ফলে?

১. শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটস (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট) বেরিয়ে যায় পাতলা পায়খানার মাধ্যমে। এর ফলে রোগী পানিশূন্যতায় এবং রক্তে ইলেক্ট্রো- লাইটসের অসামঞ্জস্যতায় ভোগে।

২. পাতলা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক বেরিয়ে যায়। যা হলে রোগীর আরোগ্য দীর্ঘায়িত হয়, আর তা শিশুকে পরবর্তীতেও ভোগায়।

৩. ডায়রিয়াতে শিশুর ওজন কমে যায়। কারণ: খাওয়া কমে যায় – পুষ্টি উপাদান শোষণ হওয়া কমে যায়। – শরীরে পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়।

ডায়রিয়া কয় ধরনের?

৩ ধরনের। যথা :

১. একিউট ওয়াটারি ডায়রিয়া
২. পারসিসটেন্ট ডায়রিয়া
৩. ডিসেন্ট্রি।

এর প্রত্যেকটি নিয়েই আমরা সামনে আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ।

একিউট ওয়াটারি ডায়রিয়া

যখন ডায়রিয়া ১৪ দিনের কম স্থায়ী হয় তখন তাকে একিউট ডায়রিয়া বলে। এক্ষেত্রে রোগী প্রতিদিন অনেকবার (৩ বার বা তারও বেশি) পাতলা পায়খানা করে। – এক্ষেত্রে পায়খানায় রক্ত থাকে না। – কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাথে বমি এবং সামান্য জ্বর থাকতে পারে।

কোন কোন জীবাণু দিয়ে এটি হয়ে থাকে?

১. রোটা ভাইরাস
২. ভিব্রিও কলেরি (ব্যাকটেরিয়া)
৩. ই. কোলাই (ব্যাকটেরিয়া)

শিশুর ডায়রিয়া

পানিশূন্যতার প্রকারভেদ ও মারাত্নক পানিশূন্যতারর চিকিৎসা একটি ডায়রিয়ার রোগীর কী কী যাচাই করা হয়?

১. পাতলা পায়খানা কতোবার হয়েছে?
২. পাতলা পায়খানা কতোদিন ধরে হচ্ছে?
৩. পায়খানার সাথে কি রক্ত যায়?
৪. বমি হয়েছে কি?
৫. প্রস্রাবের পরিমাণ কেমন?
৬. কী খাবার এবং পানীয় খেয়েছিল?
৭. সম্প্রতি কি এন্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ওষুধ খেয়েছিল?
৮. পরিবারে বা প্রতিবেশিদের মধ্যে কারও ডায়রিয়া বা ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু হয়েছে?
৯. চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন : – পানিশূন্যতার কোনো চিহ্ন আছে কিনা – পেট ফুলে গেছে কিনা – মারাত্নক অপুষ্টির কোনো চিহ্ন আছে কিনা।

পানিশূন্যতার চিহ্নগুলো কী কী?

. যদি নিচের ৪টি চিহ্নের মধ্যে শিশুর দুটো বা তার বেশি চিহ্ন উপস্থিত থাকে, তবে শিশুর “মারাত্নক পানিশূন্যতা” দেখা দিয়েছে বলে জানতে হবে।
১. নেতিয়ে পড়া/ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
২. চোখ খুব ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ৩. কোনো কিছু পান না করতে পারা অথবা পান করলেও খুব দুর্বলভাবে পান করা।
৪. ত্বক টান দিয়ে ছেড়ে দিলে তা খুবই ধীরে ধীরে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া (২ সেকেণ্ড বা তারও বেশি সময়)।

. যদি নিচের ৪টি চিহ্নের মধ্যে শিশুর দুটো বা তার বেশি চিহ্ন উপস্থিত থাকে, তবে শিশুর “কিছু পানিশূন্যতা” দেখা দিয়েছে বলে জানতে হবে।
১. অস্থিরতা, অল্পতে বিরক্ত হয়ে যাওয়া। ২. চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া। ৩. খুব আগ্রহসহকারে যদি শিশু পান করে, যদি তৃষ্ণার্ত থাকে।৪. ত্বক টান দিয়ে ছেড়ে দিলে কিছুটা ধীরে ধীরে আগের জায়গায় ফিরে আসে।

. আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত যেসব শিশুর “মারাত্নক পানিশূন্যতা” বা “কিছু পানিশূন্যতা”র ক্যাটাগোরিতে পড়ার পর্যাপ্ত চিহ্ন নেই তাদেরকে “পানিশূন্যতা নেই” ক্যাটাগোরিতে রাখা হয়।

একিউট ডায়রিয়ার চিকিৎসা 

ক. যাদের “মারাত্নক পানিশূন্যতা” আছে

১. শিরাপথে কলেরা স্যালাইন/ রিংগার’স ল্যাকটেট দেওয়া হয়। যদি না থাকে তবে ডেক্সট্রোজ ইন নরমাল স্যালাইন অথবা নরমাল স্যালাইন দেওয়া হয়।
২. স্যালাইন দরকার হয় : ১০০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট।
৩. শিশুর বয়স যদি ১২ মাসের কম হয় তাহলে ৩০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট প্রথম এক ঘণ্টায় দেওয়া হয়। তারপর পরের ৭০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট পরের ৫ ঘণ্টায় দেওয়া হয়। ৪. শিশুর বয়স যদি ১২ মাস বা তার বেশি হয় তাহলে ৩০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট প্রথম আধা ঘণ্টায় দেওয়া হয়। তারপর পরের ৭০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট পরের আড়াই ঘণ্টায় দেওয়া হয়।
৫. স্যালাইন চলার সময় বুকের দুধ ছাড়া বাকি সব খাবার বন্ধ রাখা হয়।

মনিটরিং

১৫-৩০ মিনিট পরপর শিশুকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে যতোক্ষণ না পর্যন্ত শিশুর হাতে জোরালো রেডিয়াল পালস না পাওয়া যায়। – যখন হিসেব অনুযায়ী পুরো পরিমাণের স্যালাইন দেওয়া শেষ হয়ে যাবে, তখন শিশুকে
আবার যাচাই করতে হবে এবং
নিম্নোক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে :

*১. যদি তখনও “মারাত্নক পানিশূন্যতা” থাকে, তবে আবার “মারাত্নক পানিশূন্যতা”র চিকিৎসা পূর্ববর্ণিত উপায়ে দিতে হবে।
*২. যদি “কিছু পানিশূন্যতা” থাকে, তবে শিরাপথে স্যালাইন বন্ধ করে মুখে খাবার স্যালাইন দেওয়া হয় ৪ ঘণ্টার জন্যে।
*৩. যদি কোনো পানিশূন্যতা না থাকে, তবে মা-কে প্রতিবার শিশুর পাতলা পায়খানা হবার পর মুখে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে বলা হয়।

খ. কিছু পানিশূন্যতা ও কিছু পানিশূন্যতা নেই

এমন ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা, ডায়রিয়া পরবর্তী যত্ন যাদের “কিছু পানিশূন্যতা”র চিহ্ন আছে তাদের চিকিৎসা :

১. মুখে খাবার স্যালাইন খেতে দেওয়া হয় হিসেব অনুযায়ী।
২. স্যালাইনের পরিমাণ : ৭৫ মিলিলিটার/ কেজি বডি ওয়েট।
৩. সময় : ৪ ঘণ্টা
৪. এ সময় বুকের দুধ ছাড়া বাকি সব খাবার বন্ধ রাখা হয়।

মনিটরিং

৪ ঘণ্টা পর শিশুকে পুনরায় যাচাই করা হয়।

তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় :

*১. যদি কোনো পানিশূন্যতার চিহ্ন না থাকে, মা-কে প্রতিবার শিশুর পাতলা পায়খানা হবার পর মুখে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে বলা হয়।
*২. যদি “কিছু পানিশূন্যতা”র চিহ্ন থাকে, তবে আবার ৪ ঘণ্টার জন্যে উপরোক্তভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
*৩. যদি “মারাত্নক পানিশূন্যতা” এর চিহ্ন থাকে, তবে শিরা পথে স্যালাইন দেওয়া হয়।

গ. যাদের পানিশূন্যতার চিহ্ন নেই তাদের ক্ষেত্রে

*১. এ চিকিৎসা শিশু বাসায় নিয়ে থাকে, তাই একে “হোম ট্রিটমেন্ট” বলা হয়।
*২. মুখে খাবার স্যালাইন, চিড়া পানি, ভাতের মাড়, লাচ্ছি ইত্যাদি খেতে বলা হয়।
*৩. প্রতিবার পাতলা পায়খানা হবার পর যদি শিশুর বয়স ২ বছরের কম হয় তাহলে ৫০-১০০ মিলিলিটার তরল খাবে। আর যদি শিশুর বয়স ২ বছর বা তার বেশি হয় তবে ১০০-২০০ মিলি তরল খাবে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ

আফরোজা হাসান


অফ ক্লাসে যে কোন এক ক্লাসে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে জ্ঞানার্জন করাটা আমার সবচেয়ে প্রিয় শখগুলোর মধ্যে একটি!

ঘাপটি মেরে বসার জন্য সবসময়ই আমার ফাস্ট চয়েজ থাকে যুক্তিবিদ্যার ক্লাসগুলো!

একদিন যুক্তিবিদ্যার ক্লাসে প্রফ প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তিবিদগণ কাদের কাছ থেকে অতি উন্নত মানের যুক্তির টিউশন নিতে পারে বলো তো?

ক্লাসের সবাই টেনশনে পড়ে গেলেও আমি অনেকটা অজান্তেই বলে উঠেছিলাম, শিশুদের কাছ থেকে।

প্রফ বিকট শব্দে হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, একদম ঠিক বলেছো! আমি বই পড়ে যতটা না যুক্তি শিখেছি তারচেয়ে বেশি শিখেছি আমার তিন ছেলে আর দুই মেয়ের কাছ থেকে! প্রফের সাথে সুর মিলিয়ে বললাম, আমিও পড়াশোনা না করেই যুক্তিবিদ্যার উপর বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করে ফেলেছি আমাদের পরিবারের বিচ্ছুকূল আর আমার শিষ্যকূলদের কারণেই!

শিশুদের সাথে যারা নিয়মিত কথা বলেন, তারা সবাই এই কথাটি এক বাক্যে স্বীকার করে নেন যে, নিজের কর্মের পেছনে যুক্তি প্রদর্শনে শিশুদের কোন তুলনা চলে না! তারা এমন সব অকাট্য যুক্তি দেয় যে বাবা-মাকে গালে হাত দিয়ে চিন্তায় মগ্ন হতে হয়!

ঠিক তেমনি এটাও ঠিক শিশুদেরকে কোন কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে যুক্তির প্রয়োগ করলে সেটা অনেক বেশি কার্যকরি ও ফলপ্রসূ হয়! যেহেতু শিশুরা নিজেরা ওদের কাছে পেছনে যুক্তি দেখায়! সেহেতু কোন কাজের পেছনে ওদেরকেও যুক্তি দেখাতে পারলে বেশ সহজেই মেনে নেয়! আমার পুত্রকে যেমন কোন কিছু করতে বলার সাথে সাথে প্রশ্ন করে, কেন করবো? যদি কারণটা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলি অপছন্দনীয় বা একটু কষ্টকর হলেও যে হেলে দুলে কাজটা করে বা অন্তত চেষ্টা করে!

বাংলা লেখা ও পড়া শিখতে নাকীব ছোটবেলা থেকেই নারাজ। আমিও খুব একটা প্রেশার দেইনি যেহেতু তার যুক্তি ছিল সে তো বাংলাদেশে থাকে না, মাঝে মাঝে শুধু বেড়াতে যাবে! সেজন্য বাংলা কথা বলতে পারাটাই যথেষ্ট। কিন্তু যখন ইসহাক খান ভাইয়ার অফিস থেকে আমার বই বাসায় নিয়ে আসা হলো। নাকীব লাফাতে লাফাতে গিয়ে সবার আগে বই হাতে নিলো। কিন্তু উল্টে পাল্টে দেখার পর যখন কিছুই বুঝতে পারলো না খুবই ব্যথিত হলো! এরপর যখন শুনলো যে আমি বইতে তার কথাই লিখেছি! সে খুবই উৎসাহিত বোধ করছিল জানার জন্য। কিন্তু যেহেতু বাংলা পড়তে পারে না তাই কি লেখা আছে বুঝতে পারলো না কিছুই।

কাঁটা ঘা’য়ে নুনের ছিটা দেবার জন্য আমি দুঃখী কন্ঠে বললাম, কত শখ করে আমি তোমার কথা লিখেছি বাবাসোনা! কিন্তু তুমি কিছুই পড়তে পারবে না! সাথে সাথে নাকীব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো বাংলা শেখার! এখন তো আমি সময়ের অভাবে ফাঁকি দিতে চাইলেও সে খোঁচাতে থাকে বাংলা শেখার জন্য।

যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন,

তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য?

তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য?

তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য?

খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য?

ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য?

প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য?

এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন?

আমার কেন ডানা নেই?

দাদুর কেন দাঁত নেই?

বাবা কেন রোজ অফিসে যায়?

ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না?

আচ্ছা দিদার চামড়াকে আয়রণ করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?

ব্লগে শিশুদের মনোজগত ভ্রমণকারী দু’চার জনই পাবো জানি! তাদেরকে উদ্দেশ্যে করেই বলছি, চলুন কয়েকটা দিনের জন্য ডানা মেলে ঘুরে বেড়াই সেই জগতে…! একসময় আমরাও যার বাসিন্দা ছিলাম! দুনিয়ার নানান ম্লানতায় আমাদের যে মনোজগতের ব্যাপ্তি আজ বড় বেশি সংকীর্ণ! প্রায় নিভু নিভু যার আলো……।

মনোবিজ্ঞান

 

‘চার ধরনের মানুষ আছে’

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


(১) আত্মস্বার্থবাদী

যারা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ-উদ্দেশ্যের বাইরে কোনো কিছুকে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। এদের মধ্যে যারা স্বীয় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কোনো কিছু করতে পারে তাদেরকে আমরা সুবিধাবাদী বলি। আর যারা নিজের সুযোগ-সুবিধা চাইলেও অবৈধ ও অন্যায় পথে অগ্রসর হতে চায় না তাদেরকে আমরা নিরীহ নাগরিক হিসাবে সম্মান করি। তারা হলেন সাধারণ পর্যায়ের ভাল মানুষ।

(২) আদর্শবাদী

কিছু লোক আছে যারা কোনো না কোনো আদর্শের সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করে। তারা নিজেদের আদর্শগত ভাল-মন্দের মাপকাঠি অনুসারে নিজেরা কোনোমতে চলে বটে। কিন্তু বাদবাকীদের ব্যাপারে, বিশেষ করে বিদ্যমান এস্টাবলিশমেন্টের নানা রকমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এরা উচ্চকণ্ঠ। আশেপাশে কার কার কী কী ভুল আছে তা তারা সোৎসাহে বলে বেড়াবে। এরা নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী হিসাবে উপস্থাপন করে। দেখবেন, আদর্শের মেশিগান হাতে ব্রাশ ফায়ার করার জন্য এরা সদা সর্বদা প্রস্তুত।

(৩) নেতৃত্বপ্রিয়

কিছু লোক আছে যারা সব সময়ে গণ মনোভাবের সাথে থাকে। পাবলিক যা বলে তারাও তা বলে। এতে করে তারা সামাজিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব অর্জন করে। ভাল-মন্দের ব্যাপারে এদের নিজস্ব বিবেচনাবোধ খুব দুর্বল। দৃশ্যত জনসেবায় নিয়োজিত হলেও আসলে একটা পক্ষ নিয়ে লিডারশীপ হাসিল করাই এদের লক্ষ্য।

(৪) সমাজকর্মী

এরা গণ চরিত্রসম্পন্ন। নিজের স্বার্থের চেয়ে এরা সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবতার কথা বেশি ভাবে। আদর্শকে চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তারা মানুষের মধ্যে গ্র্যাজুয়েল প্রসেসে সমাজ পরিবর্তনে আগ্রহী। তাই, মানুষের মন জয় করাকে তারা অগ্রাধিকার দেয়। এই ধরনের লোকেরা নেতৃত্বপ্রিয়দের মতো আপোষকামীও হয় না, আদর্শবাদীদের মতো নির্দয় সমালোচকও হয় না। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষের কাছে যায়। মানুষ তাদের কাছে হেদায়েতের জন্য আসবে, তখন তারা হক্ব কথাটা বলবে, মানুষ তাদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাবে তখন তারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে, এজন্য তারা অপেক্ষা করে না।
আমি চতুর্থ ক্যাটাগরিতে নিজেকে দেখতে চাই।
আপনি?

সহযোগী অধ্যাপক,
দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

জলে ভাসা পদ্ম

ফাতিমা মারিয়ম


আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ার সময় আমার মা মারা যায়। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর তার মৃত্যু হয়। মা’র খুব জটিল একটা রোগ হয়েছিল। ধরা পড়ার প্রায় দেড় বছর বেঁচে ছিলেন। ডাক্তাররা আমার মায়ের রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল। কোন চিকিৎসাই মাকে সারিয়ে তুলতে পারছিল না! দিনদিন মা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

আমাদের ছোট্ট সংসার……সুখের একটি রাজ্য। আমি মা আর বাবা। সব কিছুই কেমন যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। আমি আর বাবা ভীষণ একা হয়ে পড়লাম।

মা মারা যাওয়ার তিন মাস পর নানা-নানু, মামা-খালা, চাচা-ফুফুরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাবা আর আমার একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য আমার একজন ‘আম্মু’ নিয়ে আসল। খালামণি, নানু ও ফুফুরা সবাই মিলে নতুন মাকে ‘আম্মু’ বলে ডাকতে শেখাল। আমি তাই প্রথম থেকেই উনাকে আম্মু বলে ডাকি।

ধীরে ধীরে বাবা স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। ছুটির দিনে আমাকে আর আম্মুকে নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়াতে যায়। হঠাৎ কোন একদিন আমাকে এসে বলে, নিশু চল আমরা আজ বাইরে কোথাও খেতে যাব। কোথায় যাওয়া যায় বল তো?’ আমরা তিনজনে মিলে প্ল্যান করে কোথাও যাই। বাইরে অনেকক্ষণ থেকে বাসায় আসি। আমরা সবাই সবাইকে নিয়ে ভালোই ছিলাম।

কিন্তু আমার জন্য এই দিনগুলিও বেশিদিন রইল না।

দিন দিন আমার আম্মু যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে! আমি মনে করতাম আমার সাথে উনার সম্পর্ক বেশ ভালো। আমি মনে প্রাণে উনাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। ভাবতাম উনিও আমাকে সেইভাবেই গ্রহণ করেছেন।

ধীরে ধীরে উনি আমার প্রতি কেমন যেন অনীহা প্রকাশ করা শুরু করলেন। আমি বুঝতাম। কিন্তু কাউকে কিছু বলতাম না। কারণ আমি ভাবতাম আমি নিজেই হয়ত ভুল বুঝছি।

প্রায়ই আমি স্কুলে যাবার সময় টিফিন পেতাম না! বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্কুলে যেতাম। স্কুলের ক্যান্টিনে টিফিন কিনে খেতাম। বাসায় ফেরার পরও দেখতাম যে আমার জন্য কোন খাবার নেই।

দুপুরে বাসায় আম্মু আর আমি থাকি। বাবা সকালে নাস্তা খেয়ে অফিসে যায় আর ফেরে রাতে। তাই দুপুরে কি হয় না হয় তিনি জানেন না।

এ ঘটনা কয়েক দিন ঘটার পর আমি বাবাকে জানাই। বাবা কোন পদক্ষেপ নেয় না! তাই আমার প্রতি আম্মুর অবহেলা দিন দিন আরও বাড়তে থাকে।

এমন দিনও আমার যেত দুপুরবেলা বাসায় ফিরে যখন দেখতাম যে টেবিলে বা ফ্রিজে কোন খাবার নেই তখন পট থেকে মুড়ি নিয়ে শুকনো মুড়ি বা বিস্কিট খেয়ে দিন পার করেছি। রাতে বাবার সাথে বসে যখন ভাত খেতাম তখন আমি বাবাকে বুঝতেই দিতাম না যে আমি দুপুরে ভাত খাইনি।

আম্মুকে খুশি রাখার জন্য আমার বাবার আচরণেও দিন দিন পরিবর্তন আসছিলো। প্রায়ই দেখি আমাকে ছাড়া আম্মু আর বাবা বাইরে ঘুরতে যায়। তারা বাইরে গেলে আমি মন খারাপ করে থাকি। একা একা আমকে বাসায় রেখে যেতে কি আমার বাবার একটুও খারাপ লাগেনা?

বাবার প্রতি ক্ষোভ বাড়তে থাকে। আমার প্রতি বাবা এতটা উদাসী হয়ে গেল কিভাবে? আমিতো বাবার একমাত্র মেয়ে! এভাবে আরও কয়েক মাস কেটে গেল।

আমার বয়স কম। কতটুকুই বা সহ্য করতে পারি!! ফুফুকে সব জানালাম। ফুফু বাবার কাছে জানতে চাইলেন এসব হয় যে তুই কোন পদক্ষেপ নিস না কেন? বাবা ফুফুকে জানালো যে মিতা (আম্মুর নাম) ভীষণ খামখেয়ালী টাইপের! তাই ওকে বেশি কিছু বলি না!

ফুফু আমাকে উনার বাসায় নিয়ে আসল। ফুফুর বাসা থেকে স্কুল অনেক দূরে। বাসে করে আসা যাওয়া করতে হয়! ফুফু এবং আমাদের সবার ধারনা ছিল কিছু দিন গেলে বাবা এবং আম্মু এসে আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেল বাবা আমাকে নিতে আসেনি।

দেড় দুই মাস পর পর আসে! খুব অল্প সময় থাকে। কিছু টাকা হাতে দিয়ে যায় (স্কুল ও কোচিং এর খরচ)। আমি বাসায় যেতে চাই কি না তাও কখনো জানতে চায় না! দেখে মনে হয় বাবা এখন বেশ সুখেই আছে। ফুফু আমাকে সব সময় বলেন-‘তুই নিজ থেকে কখনো যাওয়ার কথা বলবি না। আমরা দেখি তোর বাবা কি বলে?’ কিন্তু ফুফু জানে না, কেউ জানে না আমি সব সময় মনে মনে একটি আহ্বানের অপেক্ষায় থাকি! আমার বাবা একদিন আমাকে এসে বলবে-‘আয় খুকু আয়…!’

অনলাইন এক্টিভিস্ট

 

বিয়ে হোক বাহুল্য ব্যয় বর্জিত

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


বিয়েতে বাহুল্য ব্যয়ের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে লেখাটা গত পরশু শেয়ার করেছি সেটির ফরোয়ার্ডিং হিসাবে দেয়া সংক্ষিপ্ত মন্তব্যগুলো ছিল বেশ কড়া। সুখের বিষয় হলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীসহ ইতোমধ্যে ২৬২ জন এটি লাইক করেছে। তন্মধ্যে ৩২জন এটি শেয়ারও করেছে। এই সামাজিক সমস্যার ব্যাপারে চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ উচ্চকণ্ঠ হচ্ছেন। এটি খুব ভালো লক্ষণ।

আশা করি এক দশকের মধ্যে বাহুল্য ব্যয় বর্জিত সাদামাটা বিয়ে অনুষ্ঠানের সামাজিক রীতি এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্ততপক্ষে অন্যতম ডমিন্যান্ট সোশ্যাল ট্রেন্ড হিসাবে এটি উঠে আসবে বলে আমার ধারণা।

একটা সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার জন্য ক্ষমতা, অর্থ ও বস্তুগত সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার পাশাপাশি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি নিবারণের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা থাকা জরুরী। কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে আপনি জরুরীভিত্তিতে যে কোনো প্রকারে মোকাবিলা করবেন। সম্ভাব্য কম ক্ষতিকে মেনে নিয়ে আমিও বৃহত্তর লক্ষ্যকে অর্জন করার চেষ্টা করবো।

প্রয়োজনে নানা ধরনের আপতকালীন ব্যবস্থা বা compatibility mood এডপ্ট করাতে সমস্যা নাই। সমস্যা হলো, জরুরীভাবে অগত্যা পরিস্থিতিতে গৃহীত সাময়িক ব্যবস্থাকে যখন কোনো সমাজ স্থায়ী ও স্বাভাবিক পন্থা হিসাবে গ্রহণ করে।

এ ধরনের নাজুক বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে কথা বলাই ভালো। দুপুরে খাওয়ার সময়ে ভাত-তরকারী দিয়ে পেটপুরে নরমাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা না হলে কেউ চা-মুড়ি খেয়ে কোনো মতে খিদা মিটাতে ও সময় কাটাতে পারে। তাই বলে কেউ যদি ক্ষুধা পেটে ভাত না খেয়ে হামিশখন চিপস আর চনাচুর খেতে থাকে, তখন সেটা নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তি ও সমাজের গুরুতর সমস্যা।

একটা সমাজে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যা থাকাটা সমস্যা নয়, সমস্যাকে স্বীকার না করাটাই হলো এক নম্বরের গুরুতর সমস্যা। দেরীতে বিয়ে সব দিক থেকে বিরাট সমস্যা। তা অধিকতর ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। আয়-উপার্জনের ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে উপযুক্ত সময়ে ছেলে-মেয়েরা বিয়ে করতে পারে না। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো দেরীতে বিয়ের এই ‘কালা জ্বর’ আরো প্রলম্বিত হয় বিয়েতে বাহুল্য ব্যয়ের কারণে।

যে যাই মনে করেন না কেন, আমার কাছে ব্যাপারটা সিম্পল। প্রাপ্ত বয়স্ক দু’জন নর-নারী মিলিত হবে। পরষ্পর হতে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করবে। একজন আরেকজনকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা দিবে। একই সাথে এই ‘বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্কের’ দায়-দায়িত্বও তারা বহন করবে। এরই নাম বিয়ে। সামাজিক স্বীকৃতি নয়, বরং সমাজের সাধারণ অবগতিই হলো বিয়ের শর্ত।

অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যা অর্জিত হয়। ইসলাম ধর্ম অনুসারে বিয়ের অনুষ্ঠানে শ্রেফ ৭জন লোক থাকাই যথেষ্ট। একজন কাজী, দু’জন অভিভাবক, দু’জন সাক্ষী এবং বর ও কনে। কেন বিয়েতে ৫-৭টা অনুষ্ঠান করতে হবে, কেন দফায় দফায় কয়েক শ’-হাজার লোক খাওয়াতে হবে, কেন সামর্থকে ছাড়িয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হবে, তা আমার বুঝে আসে না। অনাবশ্যক এই সব সামাজিকতা কি কাউকে বেহেশতে নিবে? না করলে কি কেউ দোজখে যাবে? যারা এ’সব ফালতু আনুষ্ঠানিকতা করে নাই তারা কি সমাজচ্যূত হয়েছে?

আমি কোনো দিনই কোনো উপলক্ষ্যে এমন কি ৫০ জন লোককেও কখনো দাওয়াত করে খাওয়াই নাই। তাতে কী হয়েছে? আমি কি কম সামাজিক? দীর্ঘদিন আমি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতাম না। সংশ্লিষ্ট সবাই জানতো, বিয়ের বাহুল্য খরচকে অপছন্দ করার কারণে আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই না।

২০০৯ সালে আম্মা মারা যাওয়ার পরে গ্রামে যাওয়া শুরু করি। আত্মীয় স্বজনদেরকে চেনার জন্য এরপর থেকে বিয়েশাদির অনুষ্ঠানেও নিয়মিতভাবে যাই। অবশ্য গিয়ে যা দেখি তাতে করে ফিরে আসার পরে ভিতরে ভিতরে যথেষ্ট অনুশোচনাতে ভুগি।

১৯৯৪ সালের জানুয়ারীতে আমার বিয়ের সময়ে যদি আমাদের পক্ষ থেকে দাবী করা হতো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্যাণ্ডেল টানিয়ে দশ হাজার মানুষকে ‘বৈরাত’ খাওয়াতে হবে, তাহলে আমার শ্বশুর তা-ই করতেন। তখনকার সময়ে পাত্র হিসাবে আমার ততটা ‘বাজার-মূল্য’ ছিলো।

সংশ্লিষ্টরা জানে, আমার শ্বশুর মাদারীপুর শহরে তখনকার সময়ে ছিলেন যথেষ্ট বিত্তশালী। নিজের অনাড়ম্বর বিয়ের উদাহরণ টানলাম এ জন্য যে, বিয়েতে বাহুল্য খরচ রোধ করার জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক পজিশনে থাকে স্বয়ং পাত্র ও পাত্রী। বিশেষ করে, এ ক্ষেত্রে পাত্রীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার সংসারে শ্বশুড়বাড়ি হতে ‘উপহার’ হিসাবে পাওয়া কিছুই নাই।

কথা আর বেশি না বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আছে কি এমন কোনো সাহসী নারী যে বলবে, “নিজের বিয়েতে আমি এ ধরনের অতিসামাজিকতা ও বাহুল্য ব্যয়কে যথাসাধ্য রোধ করবো”? আছে কি এমন সৎ পুরুষ যে বলবে, “প্রকাশ্য বা গোপন কোনো ধরনের যৌতুক নেয়া ও বাহুল্য ব্যয় ছাড়াই আমি বিয়ে করবো”? এমন কঠিন ওয়াদা করতে তোমরা যারা অনাগ্রহী তারা সারাজীবন আদর্শ-আদর্শ খেলতে পারো, নীতি-নৈতিকতার কথা বলে মানসিক সান্তনা পেতে পারো, আন্দোলন-আন্দোলন জপতে পারো, বাস্তবতা হচ্ছে you are a worthless defender of stagnant status-co. Actually, you are one of them, against whom you are claiming to fight.

সাহসীদের বলছি, জেনে রাখো, এমন ধরনের আদর্শবাদীদের দিয়েই একটা সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব যারা নিজেরা আদর্শের দাবীকে অন্তত নিজেদের ব্যক্তি জীবনে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করে অন্যদের জন্য নিজেদেরকে উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে। লম্বা লম্বা কথা বলা বকোয়াজদের সাথে আমি নাই। বিয়ে হোক বাহুল্য ব্যয় বর্জিত সহজতর স্বাভাবিক সম্পর্কের ব্যাপার।

গোপন ও দায়দায়িত্বহীন সম্পর্ক যেমন অন্যায় ও প্রান্তিকতা, অনর্থক এত ঢাকঢোল পিটানো ব্যয়বহুল এসব বিয়ে অনুষ্ঠানও সম-পরিমাণের অন্যায় ও প্রান্তিকতা। এই দুষ্টচক্র হতে সমাজটাকে বের করে নিয়ে আসার জন্য সমাজকর্মীদের হতে হবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।

সহযোগী অধ্যাপক,
দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

তোমরা যারা ‘সংবাদ পাঠক’ হতে চাও

ডা. সাকলায়েন রাসেল


সবচেয়ে বেশি যে ম্যাসেজটি আসে…ভাই, সংবাদ পাঠক হতে চাই। একটু সাহায্য করবেন, প্লিজ। আজকের লেখা তাঁদেরই জন্যে।

এ পেশায় এসো না যদি
—————————
১। নিউজ পড়লে মানুষ বাহবা দিবে…অনেকে সমীহ করবে…আমি একটু ভাব নিয়ে চলতে পারব…মনে যদি এমন ভাবনা থাকে।
২। আমি নিউজ পড়ি এটা দেখিয়ে…আমার পেশায় স্বার্থ হাসিল করতে পারব!

সংবাদ পাঠক সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা
———————————————-
১। এ পেশায় চেহারা খুব ভাল লাগে…মোটেও না…স্ক্রিনে মোটামুটি ভাল দেখা গেলেই হল।
২। শুধুমাত্র তকদ্বীর করেই সংবাদ পাঠক হওয়া যায়…
না, কারণ এটা এমন এক পেশা যেখানে তোমার যোগ্যতা প্রথম দিন থেকেই স্ক্রিনে দেখা যায়…তকদ্বীর তোমার বাড়তি যোগ্যতা হতে পারে, মূল যোগ্যতা না।
৩। সংবাদ পাঠ করে অনেক টাকা পাওয়া যায়…
না, চ্যানেলগুলোতে যে সম্মানী দেয়া হয় তাতে খুব কম সময়ে সংবাদ পাঠক সম্মানিত বোধ করেন।

সংবাদ পাঠে যোগ্যতা
————————–
১। শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারা।
২। সংবাদ পরিবেশন সুন্দর হওয়া।
৩। ক্যামেরা বান্ধব চেহারা বা স্ক্রিনে সুন্দর দেখায় এমন চেহারা।
৪। সংবাদ মনোস্ক মানসিকতা থাকা।
৫। কমপক্ষে গ্রাজুয়েশন থাকা…অনেক চ্যানেলে এটা শিথিলযোগ্য।

কিভাবে শুরু করবে
———————–
১। যে কোন জায়গা থেকে শর্ট কোর্স করে নিতে পার।
২। ভাল দুটো ফটো তুলে নিও… Side and Front View… প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হলে ভাল।
৩। এবার সিভি তৈরী কর… সিভি হবে সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষনীয়।
৪। কোথায় ট্রেনিং করেছ সেটা বড় কথা নয়… অডিশনে তোমার পারফর্মেন্স গুরুত্বপূর্ণ।
৫। এবার সিভিটা সব টিভি ষ্টেশনে জমা দাও… রেডিও বাদ দিও না আবার…কারণ রেডিও এখন খুব ভাল একটা সংবাদ মাধ্যম… বছরে প্রতিদিনই এসব সিভি জমা নেয়া হয়… সময়মত অডিশনে ডাকা হয়।

অডিশন প্রস্তুতি
——————
১। যে চ্যানেলে যাবে… সে চ্যানেলের পোশাক আশাক আগে থেকেই দেখে নিও… সে রকম পোশাক পরেই অডিশনে যেও… প্লিজ, যেমন খুশী তেমন সেজো না।
২। অডিশনের আগের দিন ঐ চ্যানেলের সব বুলেটিন দেখবে…সেদিনের বা সেদিনের আগের দিনের বুলেটিন সাধারণত পড়তে দেয়া হয়।
৩। আগে থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে হুট করে অডিশন দিবে না…এতে তুমি হতাশ হয়ে যেতে পার।
৪। অডিশনে ভয় থাকবেই…তারপরেও কনফিডেন্স হারাবে না।
৫। প্রতিদিন পত্রিকার খেলার পাতা পড়বে… খেলোয়াড়দের নামগুলো খুব কঠিন হয়… বিশেষ করে টেনিস… সবসময় অডিশনে খেলার অংশটা কঠিন হয়ে থাকে।
৬। সংবাদের মেরিট অনুযায়ী মুড চেঞ্জ করবে…মনে রাখবে, বাংলা শুদ্ধ ভাবে পড়তে পারা… আর সংবাদপাঠক হওয়া এক কথা নয় ।

আচ্ছা, আমি কি পারব
—————————
আমার চেহারা তো তেমন ভাল না… কন্ঠটাও না… তকদ্বীর করারও কেউ নেই… আমি কি পারব সংবাদপাঠক হতে…এমন প্রশ্ন থাকে অনেকের মনে…যারা নিজেকে নিয়ে শংকায় থাকে তাঁরা আসলে কোন কিছুই পারে না… তুমি, যদি মনে প্রাণে চাও…ধৈর্য ধরতে পার… তবে, অবশ্যই তুমি পারবে…তোমার চাওয়ায় তুমি কতটুকু সৎ… কতটুকু আন্তরিক সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
দুটো কারণে এবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি… প্রথমত, নিজের মধ্যে মাস্টারি ভাব আনতে লেখায় ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করার জন্য… দ্বিতীয়ত, সংবাদ পাঠে মাত্র ৬ বছরের শিশু হওয়ার পরও এসব জ্ঞান দেয়ার সাহস দেখানোর জন্য… আশা করি, আমার প্রিয় সংবাদ পাঠকরা আমাকে ইঁচড়ে পাকা ভাববেন না!
—————————
সবার সফলতা কামনায়—
সাকলায়েন রাসেল

সিনিয়র সংবাদ পাঠক, মাইটিভি
সেক্রেটারী, সমাজকল্যাণ, নিউজ ব্রডকাস্টারস` এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

সঙ্গীকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছেন কি?(দাম্পত্য টিপস)

ফাতেমা শাহরিন


বিয়ে মানে অনেক স্বপ্ন, ইচ্ছা, আশা সবকিছুতে বেশি বেশি ভাললাগা টাইপ আমাদের ধ্যানধারণায়। রাইট কিংবা রং কিছু বলছি না। ভাবনা ত ভাবনা। আসলে এমন অনুভূতিকে আমরা ‘বিয়ে’ শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারি না আদৌ। ‘বিয়ে’ মানে বিশাল কিছু। বলা যায়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বা পরিবার গঠন। দুইজন মানুষের সঙ্গে, সঙ্গে দুইটি পরিবার, সব আত্মীয়তার বন্ধন। বিয়ে সমাজের ধারক ও বাহক। একটি নতুন পরিবার। একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের অংশ।

আসুন দেখি, বৈবাহিক জীবনের জন্য সুন্দর বাধন গড়তে কি কি প্রস্তুতি আছে আজকের আর্টিকেলে। দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য দরকার একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং বিশ্বাস। আর ছেলে ও মেয়ে উভয়ের আবেগকে সমান দৃষ্টিকোণে গুরুত্ব দেওয়া।

দাম্পত্য টিপস

প্রশংসা
বিবাহিত সম্পর্ক সুন্দর রাখতে চাইলে ধরে রাখুন সবসময় কৃতজ্ঞতা ও মুগ্ধতাময় প্রশংসামুলক বানী। সঙ্গীকে ধন্যবাদ দিন ছোট খাট কাজেও। সামান্য পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মুছকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিন। ধন্যবাদের গুরুত্ব অনেক। প্রশংসা পেলে মুহূর্তেই মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। প্রশংসাকারীর জন্য ভালো কিছু করতে ইচ্ছা করে।

দুঃখ প্রকাশ
কোন কারণে খারাপ ব্যবহার করে ফেলতে বা কেউ আঘাত হলে কথা, কাজ, বা আচরণে নিজ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা এবং সরি বলা। কোন কারণে বাইরের কার সামনে ধমক দেয়া একে অন্যকে অসম্মান করা ঠিক না। কাউকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।

উচ্ছ্বসিত আবেগ
সঙ্গীর ছোটখাট উচ্ছ্বসিত আবেগকে মূল্যায়িত করুন। ছোট ছোট কাজে এখন প্রত্যাশা অনুযায়ী তা পূরণ করুন অল্প হলেও অভিমানকে প্রকাশ করতে দিন। একে অপরের প্রতি প্রশংসা, মুগ্ধতা আর কৃতজ্ঞতাই কিন্তু সব সময় সম্পর্কে সুন্দর করে।

উপহার
পারস্পরিক কথাবার্তা আর ‘সময়’ হল সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা অল্প দামী ব্যক্তির পছন্দের জিনিস মাঝেমধ্যে পাওয়ার অধিকার রাখে সঙ্গীরা। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

সুন্দর ব্যবহার
সুন্দর বিনয়ের সাথে কথা এবং আচরণ করলেও সঙ্গীরা খুশি হন সবচেয়ে বেশি।ভাল কিছুর জন্য যদি আমরা সুন্দর আচরণ করি তবে সেই ভাল কাজটা তার কাছ থেকে বারে বারে ফিরে বসবে ।

ভরসা ও বিশ্বাস
কখনো সন্দেহ নয় বরং ভরসা এবং বিশ্বাসের সাথে সংশয় দূর করুন। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে তাই কোন বিষয়ে সন্দেহ কাজ করলে দুজনে বসে খোলামেলা আলোচনা করা ভরসা করা।জীবনসঙ্গী আপনার মত মানুষ খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। তাই বিশ্বাস আর ভালবাসাকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলুন।

ক্ষুদ্র আবেগকে গুরুত্ব
ভালোবাসার প্রকাশ থাকাটা খুবই প্রয়োজন। তাই কার অভিমান, আবদার, রাগ, ভাল লাগা, ভালবাসার ক্ষুদ্র আবেগকে মূল্য দেওয়া এবং শ্রদ্ধা করা উচিত। পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা কথাবার্তাকে গোণায় ধরা এবং সন্মান দেয়া। সালাম দিয়ে, উত্তর দেওয়া। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে কিছু বলছে আপনি ব্যস্ত হলে পরে বিশেষভাবে সময় নিয়ে কথাটি শুনুন।

ক্ষমা করা
ক্ষমা হল সংসার জীবনে ভালোবাসাকে প্রাণবন্ত করে রাখবার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ঠিক যেমন সুঘ্রাণময় ফুলকে আপনি পানি দিয়ে আরো বেশি জীবন্ত করে রাখেন। দু’জন দু’জনকে জেনে-বুঝে তবেই তো সঙ্গী করা। দুজনে মানুষ। তাই ভুল ভাবনা, ভুল আচরণ, ভুল কোন ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করে দেওয়া দুইটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জন্য তার সবটুকু নিয়ে সংসার বাঁধা। ঘরে বাইরে যত রকম অভিজ্ঞতা হোক, হৃদয়ের প্রিয়তম কুঠুরিটা আপনার জন্যই তিনি বরাদ্দ রেখেছেন। তাই ক্ষমা করুন। ক্ষমা চান।

অভিমানটুকু যত্ন করে তুলে রেখে বাসুন সঙ্গীকে ভালো। ভালোবাসা আপনাকে বড় করে দিবে। ভালোবাসা তার কাছে আপনার ওজন বহুগুন বাড়িয়ে দিবে।ভালোবেসে, আপনারা নিজেদের কাছে সম্মানিত এবং আরো প্রিয় পাত্র হয়ে উঠুন।
আপনিই পারেন ভালোবাসা পাওয়ার একটি পথ তৈরি করতে… তাই আজকে থেকে ভাল থাকুন।
রেফারেন্স: বই-সুখী ও সুন্দর জীবন।

সাইকোলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (বুক রিভিউ)

অনবরত বৃক্ষের গান
|| বুক রিভিউ ||


সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা
মূল বইটির ইংরেজি নাম:
Raising A Muslim Child
লেখকঃ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
প্রকাশনাঃ সিয়ান পাবলিকেশন লিমিটেড
সম্পাদনাঃ আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক
মোট পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬

বইটির বিষয়বস্তু:
═════════
সন্তান প্রতিপালন ও পরিচর্যা
সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা নিয়ে বাবা-মা, পরিবারের সকলের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগের শেষ নেই।বর্তমানে প্যারেন্টিং বিষয় বেশ জনপ্রিয় হতে চলেছে,কিন্তু সঠিক লক্ষ্যে পানে সে প্রচেষ্ঠা প্রবাহিত হচ্ছে কি না, তাই যাচাই করে দেখব, লেখকের দলীল,যুক্তির কষ্টি পাথরে। সন্তানের পরিচর্যায় বইটি সকলের জন্য হতে পারে মাইলস্টোন।

বইটির বিষয়বিন্যাস:
══════════
বইটিতে “সম্পাদেকর কথা”, “দু’টি কথা” শিরোনামে দু’টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়,মৌলিক বটে। প্রথম পর্বে ভূমিকার সাথে, এদু’টি বিষয় ফোকাস করা হবে।
সম্পূর্ন নতুন আঙ্গিকে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন লেখক,

যা আপনাকে সমৃদ্ধ করবে।

যথা-
১. আপনার কাছে আপনার সন্তানের পরিচয় কি হবে?
২.কার সাথে কেমন হবে সম্পর্কগুল
৩.অফুরন্ত ভান্ডারের সন্ধানের পথে হাটার নাম প্যারেন্টিং
৫.মানবতা বা মানবিকতার প্রতি কি অবদান রাখবে

সম্পাদকের কথা: মানুষ প্রকৃতি গতভাবেই লিগ্যাসি রেখে যাওয়ার বাসনা পোষণ করে, চিন্হ রেখে যেতে চায়। পরকালে বিশ্বাসী হৃদয়ের কাছে বিষয়টি বেশী গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুমিন মৃত্যুর পর তার আখিরাতে অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারে তার একটি হলো ‘নেক সন্তানের ‘ দোয়া। সন্তানকে অক্লান্ত পরিশ্রমে মানুষ করে, পিতা-মাতা এই সুবিধা প্রাপ্ত হতে পারেন। এজন্য বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে আরো বেশী যত্নবান হতে হবে, সন্তান প্রতিপালনে।

দু’টি কথা: লেখক এখানে প্রশ্ন করেছেন, “আপনার আদর্শ ব্যক্তিত্ব হলেন আপনার বাবা কিংবা মা?” আমরা কি আসলেই অনুসরণীয় হতে পারছি সন্তানের কাছে। শুধু পার্থিব নয়, সব জীবনে সাফল্য লাভের উপায় কি তাদের শেখাচ্ছি? পিতা-মাতার ব্যক্তি জীবন বলে কিছু নেই, তারা যা করবে, সন্তান তাই শিখবে।

ভূমিকা: বাবা-মা বড় রকম ভ্রান্ত ধারণ পোষণ করেন, যেটা প্যারেন্টসদের বিশেষ দায়িত্বগুলোকে চাপিয়ে যায়।

✅সন্তানের ভরনপোষন, সুন্দর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করেই,কি দায়িত্ব শেষ?
✅ সন্তানকে বাস্তবতার নিরিখে দায়িত্ব গ্রহনের উপযোগী করে তুলতে হবে।
✅সন্তানকে জনহিত কাজে উৎসাহ দিতে হবে,অন্য দশটা শিশুর চেয়ে তাকে, উপলব্ধি করাতে হবে,মানুষ ধনী না গরীব তা, তার সম্পত্তির উপর নির্ভর করে না।
✅ দরিদ্র মানেই অসম্মানিত নয়।
মানুষের কষ্টে তাকে অশ্রু ঝরাতে দিন।
✅ সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও যত্নবান করে তুলুন, যাতে সে আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিতে পরিণত না হয়।
✅ পরিবার, আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে শিখান।

সবোর্পরি, সন্তানকে শিখান যে,তার সকল লাজ হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, আর কারো নয়।

১.আপনার কাছে আপনার সন্তানের পরিচয় কি হবে:

✅ মানবজাতিকে নেতৃত্ব দিতে যাওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল সুন্দর আদর্শিকভাবে শিশুকে গড়ে তুলতে হবে।
✅সন্তানের সম্পর্ক গড়ে তুলার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রাথমিক দায়িত্ব সঠিকভাবে বোঝা।
✅বাচ্চাকে অবশ্যই চারিত্রিক শিক্ষা দিতে হবে। শিষ্ঠাচার বিষয়টিও বুঝিয়ে দিতে হবে।
✅খাবারের সময়সূচীর ব্যাপারে তাকে ধারনা দিতে হবে,সপরিবারে একত্রে সময় মেইনটেইন করতে শেখান। খাবার সময় টিভি দেখাসহ সব বদভ্যাস ত্যাগ করা।
✅বাবা-মা সন্তানকে সাথে নিয়ে নিজেদের কাজ নিজেরা করে ফেলায় অভ্যস্হ করা।

🔷 সীমা নির্ধারণ করা:
সন্তানের সাথে ভাল বোঝাপরার সম্পর্ক রাখুন, তবে তার একটা সীমারেখা থাকা চাই। বাবা-মা সন্তানের “অভিভাবক”, “বন্ধু ” নয়। কেননা, বন্ধুর উপর বাধন আরোপ করা যায় না। তাকে বোঝাতে হবে শ্রদ্ধা ও যৌক্তিকতার সাথে সে দ্বিমত পোষণ করতে পারে, তবে, আহ্লাদ বা বেয়াদবি নয়।

অর্থবিত্ত সম্পদ বাড়ায় না, বাড়ায় কেবল সম্পত্তি:
সন্তানকে মানুষের জন্য ব্যয় করতে শিখান। তাদের অর্থ-সম্পদের গুরুত্ব সঠিকভাবে বোঝাতে হবে।
‘বিনিয়োগ’ ও ‘ব্যয়’ এ মানদন্ডে বিচার করতে শেখান।

ব্যালান্স শীট:
সন্তানকে চমৎকার ব্যালান্স শীট তৈরি করতে শেখান। তাকে লেনদেনের সুযোগ দিন, পাশাপাশি হিসাব রাখতে বলুন, দেখুন যে, শুধু ব্যয়ই করছে নাকি, বিনিয়োগ করতে শিখছে। সংশোধন শুরু করতে হবে নিজের ঘর থেকেই।

🔹ইঁদুর বনাম বিড়াল: শিরোনাম দেখেই চমকে উঠবেন না, বোঝার স্বার্থে লেখক এ উপমাটি দিয়েছেন। আমরা দেখেছি, ইঁদুর-বিড়াল লড়াই এ, দু’টি প্রাণীকেই লড়তে হয়। দিনশেষে আসলে আমরা কি তেমনই লড়ে চলছি নাকি,
নিজেদের আত্মউন্নয়ন করছি,
সেটাই যাচাই করা যাক-

✅ইঁদুর দৌড়ানোর মতো অনেক মানুষ লোক দেখানোর জন্য কাজ করে, বেশী সম্পদ জড়ো করে। এগুলো জাহির করে তৃপ্তিজনক পায়।
✅অন্যের দুঃখ-দুর্দশায় খুশি হয়। অন্যের উপরে থাকাই, এদের জীবনের লক্ষ্য।
✅আর, বিড়াল হওয়া বলতে, নিজেকে শিকারী অনুসন্ধানী করে গড়ে তোলা। নিজেদের উন্নয়ন ও পারস্পারিক সহযোগিতা করা।

ফলে, দক্ষতা লাভ, ভুল থেকে শিক্ষা লাভ, ঝুঁকি গ্রহনের ক্ষমতা বাড়ে। দিনশেষে, নিজেকে সফল উদ্যোগতার কাতারে খুঁজে পায়, যার আলো কি না গভীর অরণ্যে থেকে ওঠে আসা সিগ্ধ কুয়াশার মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।(চলবে)

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব

শারমীন আক্তার সেতু


চারপাশের অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখে কিছু উপলব্ধি হল বেশ কিছুদিন ধরে। বিষয়টা যদিও খুব স্পর্শকাতর এবং অনেকেই হয়ত এই বিষয়ে আমার সাথে দ্বিমত পোষন করবেন। করতেই পারেন। কিন্তু এখানে আমি শুধু আমার উপলব্ধি টুকুই লিখেছি এবং সেখান থেকে সবাইকে একটা ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছি।

আপনার যদি আপত্তি থাকে বা এই বিষয়ের সাথে একমত না হতে পারেন তবে দয়া করে এড়িয়ে যান। অযথা তর্ক করবেন না।

কারণ প্রথমেই আমি বলে নিয়েছি এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমি এখানে একজন সাধারন মানুষ হিসেবে লিখেছি। তাই আমার এই চিন্তাগুলো কেউ আমার পেশাগত চিন্তাভাবনার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। কারন পেশাগতভাবে আমি এভাবে চিন্তা করব না বা করি না।

বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় ব্যক্তিভেদে পার্থক্য আছে। অর্থাৎ একেকজন মানুষ বন্ধুত্বটাকে একেক রকমভাবে চিহ্নিত করবে, একেক রকমভাবে বর্ননা করবে।
কিন্তু দেশ, কাল বা সমাজ সংস্কৃতিভেদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা যাই হোক না কেন সব দেশেই, সব সংস্কৃতিতেই সাধারনত এটাই ধরে নেয়া হয় যে, মেয়ে মেয়ে, ছেলে ছেলে বন্ধুত্ব হবে ।

এরপরে উদারতা, চিন্তার ভিন্নতা, প্রয়োজন, সহজভাবে গ্রহন করার ক্ষমতা , বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বা কৌতূহল ইত্যাদি সব কিছু বিবেচনায় ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় বা হতে পারে।

কিন্তু ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে লিঙ্গগত পার্থক্য এবং জৈবিক একটা চাহিদা থাকার কারনে যেটা হয় যে, মেয়ে মেয়েতে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেসব আচরণ স্বাভাবিক মনে হয় বা কোন ক্ষতির কারন হয় না সেটা একটি ছেলে এবং মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতির কারন হতে পারে।

যেমন, একজন মেয়ে যদি কোন মেয়ের বাসায় রাত্রিযাপন করে বা প্রতি মিনিটে মিনিটে তার মেয়ে বন্ধুটিকে তার নিজের আপডেট দিতে থাকে বা নিজের ব্যক্তিগত ছবি পাঠাতে থাকে তবে সেটা আমাদের সমাজে দৃষ্টিকটু নয় কিন্তু এই একই কাজই যদি কোন একটি ছেলে এবং
একটি মেয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তবে সাধারনভাবে সাদা চোখে কোন কিছু চিন্তা না করেই এটা ধরে নেয়া হয় যে তাদের মধ্যে শুধু বন্ধুত্ব না আরও গভীর কোন সম্পর্ক আছে। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ছেলে আর মেয়ের মধ্যেকার এত গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে অথবা মেয়েটির মধ্যেকার কেউ একজন আরেকজনের প্রতি আবেগীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বা পড়ে। এতে দুজনেই যদি অবিবাহিত থাকে এবং দুজনেই যদি সম্মত থাকে তবে সেই ছেলে এবং মেয়েটির মধ্যে একটি সুন্দর পরিনতি হয়ত দেখা যায়।

এটা গেল অবিবাহিত ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব। কিন্তু যখন এই ধরনের বন্ধুত্ব কোন বিবাহিত ছেলে মেয়েদের মধ্যে বা অবাহিত মেয়ে বিবাহিত ছেলে বা বিবাহিত মেয়ে অবিবাহিত ছেলের মধ্যে হয় তখন তা পরবর্তীতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক গুনে বেড়ে যায় যখন এই বিবাহিত ছেলে বা মেয়েটি তার সঙ্গিনীর কাছে থেকে তাদের প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা পায় না বা তাদের সঙ্গিনী তাদের পর্যাপ্ত সময় দেয় না বা তাদের শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারে না বা তাদের সঙ্গিনীর সাথে এডজাস্ট হয় না।

তখন তারা তাদের মানসিক শান্তি খুঁজে নেয়ার জন্য বন্ধুত্ব নামক একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে তারপর ধীরে ধীরে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মোড় নেয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় যে, বিবাহিত ছেলে বা মেয়েটি ঘর বর ছাড়তে পারছে না কিন্তু আবার সে নিজের সঙ্গিনীর সাথে সন্তুষ্টও নয় তখন সে তার সঙ্গিনীর কাছে থেকে যা পায়নি তা বন্ধুর কাছে থেকে পূরণ করার চেষ্টা করে ।

এতে করে সে হয়ত নিজেকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রেখে তার বন্ধুর কাছে থেকে তার প্রয়োজন মেটাতে পারে কিন্তু তার বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটি যে তার আবেগীয় নিয়ন্ত্রণ রাখতেই পারবে এমন নাও হতে পারে। আবার দুজনে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হলে দুইটি সম্পর্ককেই সমান তালে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে কোন সম্পর্ককেই নষ্ট না করে। এতে হয়ত সম্পর্ক রক্ষা হয় কিন্তু তা সঙ্গিনীর সাথে প্রতারনা করা হয় কিনা তা আমার জানা নেই। বা সেক্ষেত্রে একে অপরকে নিজের প্রয়োজনে নিজের অজান্তেই ব্যবহার করে কিনা সেটাও আমার জানা নেই ।

যাইহোক, আমি ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বের বিরোধী নই কারন আমারও অনেক ছেলে বন্ধু আছে। কিন্তু চারপাশের অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখে আমি এতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব অবশ্যই হবে কিন্তু তার একটা সীমারেখা থাকবে বা থাকা উচিত। কারন লিংগগত পার্থক্য এবং একে অপরের প্রতি সহজাত একটি আবেগীয় এবং শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করার অপরিবর্তনীয় প্রবৃতি।

বিশেষ করে বিবাহিত ছেলে এবং মেয়েদের এসব বিষয়ে মনোযোগী হওয়াটা জরুরী মনে করি। কারণ বিয়ের পর নিজের পরিবারে সুখী না হয়ে এরকম কোন বন্ধুত্বে জড়ালে তা খুব ভাল কোন ফলাফল বয়ে আনে না। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ।

এখন বলতে পারেন একজন মনোবিজ্ঞানী হয়ে আমি এরকম কথা বলতে পারছি কিভাবে? তাহলে আবারও বলব এই লেখাটা আমি একজন সাধারন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছি। আর মনোবিজ্ঞানে কালচারাল ডিফ্রেন্সটাকে কখনই বাদ দেয়া হয়নি বরং অনেক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় । কারন কালচারভেদে মানুষের চিন্তা এবং আচরণ পরিবর্তিত হয়।

আর বেশীরভাগ কালচারেই এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার্সটাকে খারাপভাবে দেখা হয়।

যাইহোক, বিবাহিতরা যদি কাউকে তার বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেন তবে একটু খেয়াল করুন আপনি আপনার সেই বন্ধুর সাথে সেইরকমই আচরণ করছেন কিনা বা সেইরকমই তথ্য বা নিজের ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করছেন কিনা যা অন্য সবার সাথেই করছেন বা একইরকমভাবে একই সময় সবার সাথেই একইরকম সবকিছু করছেন কিনা।

যদি তা না হয়, যদি এমন হয় যে, আপনার সঙ্গী ব্যতীত বিপরীত লিঙ্গের শুধুমাত্র একজনের সাথেই সারাদিনের সব ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি আদানপ্রদান হচ্ছে, আপনার সুখ দুঃখের আলাপ তার সাথেই বেশি হচ্ছে, সব কাজ করতে গেলেই আপনার তার কথা মনে পড়ছে বা তাকে ছাড়া কোন কাজ করতে পারছেন না তাহলে মনে হয় আপনাদের এখনই সতর্ক হওয়ার সময়।

আর যদি আপনি আপনার সব বন্ধুর সাথেই এরকম আপনার ব্যক্তিগত সবকিছু সবসময় সমানভাবে শেয়ার করেন, সমান কেয়ার নেন, সবাইকেই সমান গুরত্ব দেন তাহলে কিছু বলার নেই। তাহলে বুঝতে হবে আপনার অভিযোজন ক্ষমতা এবং সবকিছু ম্যানেজ করার ক্ষমতা খুব ভাল এবং ছেলে মেয়ে বন্ধুত্বে আপনার চেয়ে উদার কেউ নেই এবং ছেলে মেয়ে উভয়ই আপনার কাছে সমান। এরকম হলে সেখানে অন্যকোন সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে না ।

কিন্তু বিষয়টা যদি এমন হয় যে, আপনি নিজে বিশ্বাস করছেন যে, ছেলে মেয়েতে কখনও বন্ধুত্ব সম্ভব নয় কারন একসময় না একসময় কোন একজন সেখানে দুর্বল হয়ে যেতে পারে কিন্তু আপনার নিজেরই কোন ছেলে বা মেয়ে বন্ধু আছে এবং সেখানে আপনি ভাবছেন আপনার নিজের উপর বা আপনার বন্ধুটির তার নিজের উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আছে তাই আপনাদের বন্ধুত্বে কেউ কারও প্রতি দুর্বল হয়ে যাবেন না। তাহলে কিন্তু বিষয়টি যথেষ্ট হাস্যকর এবং অগ্রহনযোগ্য হবে।

সারমর্ম:
লিঙ্গগত পার্থক্য এবং জৈবিক চাহিদার কারণে ছেলে এবং মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা সীমারেখা থাকা জরুরী । কারন আমরা যথেষ্ট উদার হলেও আমাদের আবেগ আমাদের প্রতি যথেষ্ট উদার নয়। আমাদের আবেগ যেকোন সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।

কাউন্সেলর
সফটকল অ্যাসোসিয়েটেড উইথ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

 

‘মৃত্যুকে’ খুব কাছ থেকে দেখার অনুভূতি

ডা.ফাতিমা খান


যে মানুষটাকে ক্ষয়রোগ কোনভাবেই ছাড়ছে না কিংবা রোগবিদ্যা যার কাছে আত্নসমর্পন করেছে, যার আয়ুটাকে চিকিৎসক একটা সময়ের ফ্রেমে বেধে দিয়েছেন সেই মানুষটার স্বত্তাটা দুনিয়ার আর মানুষদের কি নাসিহা করতে চায় বা জীবনের শেষ কয়টা দিন সে কেমন করে কাটাতে চায় তা জানার অবাধ্য একটা সাধ আমার হয়।

নিশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে এখনো যে পৃথিবীর হাওয়া বাতাস তার বুক পেটে মৃদু আন্দোলন তুলছে, সেটুকুই নিশ্চয়ই এই সময়ের জন্য তার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।

পৃথিবীর আর মানুষদের কাছে এই মানুষটার আপাত অনুরোধ হয়ত এরকম  “এই শুনছ, তোমরা যারা বেঁচে আছ, তোমরা অনেক ভাগ্যবান। অত চাই চাই পাই পাই কইরো না, দোহাই লাগে।”

মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার সবচেয়ে বেশী সুযোগ হয় ডাক্তার আর নার্সদের।

অসুস্থ মানুষটার চলে যাওয়ার নির্মম খবরটাও আপনজনদের কাছে তারাই পৌছান বেশী। একটু দীর্ঘ অবসর আর একটা সুযোগ পেলে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষদের খুব কাছাকাছি সময় কাটাবো ভেবে রেখেছি।

যেখানে জীবন সমাপ্তির দিকে সেখানেই উপলব্ধির সূচনা, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে যাত্রী মানুষটার অনেকগুলো উপলব্ধি হয় যা আগে অনুভূত হলে হয়ত জীবনটা পুরাই বদলে যেত!

– এই যে এলেবেলে ছেলেবেলা, রংধনু কৈশোর, উদ্দাম যৌবন কিংবা মলিন প্রৌঢ়ত্ব গেল, কই এগুলো তো কখনো একবারও মাথায় আসেনি! এখন কেমন বিদ্যূত বেগে চলে আসল দেখ!

তাদের এ ধরনের কথাগুলো শুনতে, ওদের সাথে জীবনের গল্প করতে আমার খুব ইচ্ছে হয় । হুট করে কখন কার জীবনের যতি পড়ে যাবে কে জানে!

আত্নসমালোচনা করার একটা অনেক পুরানো অভ্যাস আমার আছে। দিনশেষে চোখ বুজার আগে এই আমার শেষ কাজ। কয়দিন থেকে যে ব্যাপারটা বারবার মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল নিজের প্রতি আমি অন্যায় করেছি সবচেয়ে বেশী।

আমার জীবন, দেহ মন সব কিছুর মালিক এক আল্লাহ তায়ালা। তিনি সাময়িক কালের জন্য এই সম্পদগুলো আমানত হিসেবে আমাকে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশী অযত্ন অবহেলা হচ্ছে আমার এই নেয়ামত গুলোর সাথে যার হিসাব অবশ্যই দিতে হবে।

আমার মনে হয় আমার মৃত্যুর আগে যদি কিছু বলার সুযোগ পাই তাহলে অনেক কিছুর সাথে গুরুত্বপুর্ণ একটা নাসিহা এটাও হবে যে সবাই নিজের প্রতি যত্নবান হোন। আপনি নিজেও আপনার জীবনের অমূল্য রহমত ও নেয়ামত !

লেখক: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,
জেদ্দা,সৌদি আরব।

 

সব হারিয়ে যাচ্ছে, টিকে আছে শুধু মুখোশ

ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস


সেদিন শুনলাম এক বিয়েতে নাকি ছোটখাটো প্রোগ্রাম। ছোটখাটো বলা হলেও এনগেইজমেন্ট আর আকদ মিলে বেশ বড় মাপের ও জাকজমক করে অনুষ্ঠান হয়েছে মোট ১০টি! ভাবা যায়! আমার তো এক বিয়েতে যেয়ে তারপর বৌভাতে যেতে হলেও মাথার ওপর বাজ পড়ে। কি পরে যাবো, সেই চিন্তাটা খুব মামুলি। কিন্তু দুশ্চিন্তা হলো সময় ও কাজকে ম্যানেজ করা। যানজট নামের মামদো ভূতের দেশে ওরা পারে কি করে এতগুলা অনুষ্ঠান আয়োজন এবং অংশগ্রহণ করতে?

সেই ১০টি প্রোগ্রামের শুরুটা ‘মিলাদ মাহফিল’ দিয়ে। প্রোগ্রামের হিসাব চেয়ে আমাকে বিব্রত করবেন না, দোহাই লাগে! এটা আমার মত বড্ড পুরানো সেকেলে মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে মেলানো সম্ভব নয়। ৯ নম্বরে যেয়ে আটকে গেছি, সান’গীত (সাবধান! ‘সংগীত’ বললে আবারও কিন্ত ‘মিডল ক্লাস’ ‘সেকেলে’ কিংবা ‘খ্যাত’ মানুষের খাতায় নাম লিখাবেন)। ম্যাহেন্দী, ব্রাইডাল শাওয়ার, ব্যাচেলর্স নাইট, হালদী ১, ২ (হলুদ না, হাল’দী), নিকাহ (‘বিয়ে’ বললে আপনি বেজায় হাসির খোরাক যোগাবেন!) তারপর রিসেপশন; মানে বৌভাত। হলো ৯টা। আর শেষটা যে কি! আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন, পান কিনা, পেয়ে যাবেন! হিন্দি সিরিয়াল অনুসরণ শেষ করে আমরা আজকাল নাকি পাকিস্তানি সিরিয়াল চোখ বেঁধে হৃদয়ের কোটরে ভরে নিয়েছি। ১০টার জায়গায় ২০টা হলেও অবাক হবো না। আমরা খুবই উদারমনা, ‘কুল’ জাতি হয়েছি কিনা আজকাল!

যাই হোক,সেতো না হয় গেল এলাহী বড়লোকদের বিয়ে। তাদের পয়সা ফেলার জায়গা নাই; তাই তারা ফেলুক ১০ জায়গায় মানলাম! কিন্ত এই মধ্যবিত্তের কেন এই ‘ঘোড়ারোগ’? শুনলাম মধ্যবিত্তের ঘরেও নাকি আজকাল শুধু একদিনের প্রোগ্রামে ৫/১০ লাখ টাকার ডেকোরেশন হয়! তারপর আছে খাওয়ার খরচ, হল ভাড়া! বুঝি না, একে কি আমাদের অর্থনৈতিক দাসত্ব বলবো, নাকি নৈতিকতার অবক্ষয়? আমি আমার সন্তানের বিয়ে জাকজমকভাবে দেব, সে চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক; কিন্ত এই অহেতুক খরচের বহর যখন আমার পুরা সমাজ, আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের ভেতর অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে শিক্ষক হিসেবে তা মানতে এবং দেখতে আমার কষ্ট হয়।

আপনার বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠানগুলোর বৈভবের এই কুৎসিত ‘নিষ্কলুষ’ লোক দেখানো প্রতিযোগিতায় হয়তো জিতে গেছেন, আজও হয়তো আলোচনা হয় আত্মীয় স্বজনের মুখে মুখে আপনার এলাহী শান শওকতের বাহার নিয়ে, কিন্তু হেরে গেছে, বলতে গেলে অনেকটা মরেই গেছে হাজারও মধ্যবিত্ত পরিবার। এরা আপনারই আত্মীয় স্বজন।
ছেলে-মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে সাধ তো হয় সবার। সবারই বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন থাকে। যে স্বপ্ন বুনি আমরা সবাই সেই ছোট কাল থেকে। স্বপ্ন বুনি সেই একদিনের রাজকন্যা কিংবা রাজপুত্র হবার। স্বপ্ন বুনি সন্তানকে সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে বিয়ে দেবার। কিন্ত আজকাল এই চিরচেনা স্বপ্নকে জাঁকজমকের আর নতুনত্বের নামে যে ‘এলাহী রুপে’ নিয়ে গেছি, তাতে স্বপ্ন পূরণের স্বপ্ন চলে গেছে অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।

বলতে পারেন, সাধ্যে না কুলালে করবেন না। যেমন আয় তেমনি তো ব্যয়টা হওয়া উচিত। পরম আদরের মেয়েকে বিদায় দিচ্ছে বাবা-মা, কলিজাটা তো ওইখানে ভেঙে খান খান। সেই মুহূর্তে মেয়ের শখ, ছেলে মেয়ের ইচ্ছা, কিংবা ‘ছেলে-মেয়ের মুখ’ রাখার জন্য বাবা মা যদি এখনকার দিনের এই অহেতুক খরচের বোঝাটা মাথায় চেপে নেন, তাকে অবাস্তববাদী বলে দেওয়াটা খুব একটা অনুচিত হবে বলে আমি মনে করি না।

আমার অবাক লাগে ভাবতে, এই ছেলে-মেয়েগুলোর বিচার বুদ্ধির মাত্রা নিয়ে। এরাতো জানে তাদের বাবা-মার সামর্থ কতটুকু। কেমন করে পারে একের পর এক বায়না জুড়ে দিতে? অথবা আকারে ইংগিতে বুঝিয়ে দিতে অনুষ্ঠানের চাকচিক্য আমি কতটুকু চাই। আসলে বিবেকের বলিহারি।

আচ্ছা, বিয়ে মানেটা কি? দুটা মানুষের সঙ্গে সঙ্গে দুটো পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন কিংবা বলা যায়, বিয়ে সমাজের ধারক ও বাহক। মানে এক নতুন পরিবার। বিয়ের অনুষ্ঠান মানে তো আনন্দেরই হবার কথা। আগে মা-খালাদের দেখতাম বিয়েতে যাবার আগে আলমারি থেকে কাতান নামাতেন, লকার থেকে গয়না নামিয়ে বেশ সেজে গুজেই যেতেন। বেয়াই বাড়ির আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে পরিচয় হবে তাই পার্লারেও যেতেন কেউ কেউ। অনুষ্ঠানের গতানুগতিক দৃশ্য ছিল, দু’পক্ষের মুরুব্বিরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এর সঙ্গে ওর সঙ্গে। পরিবারের সবাই যেয়ে বর বউকে দোয়া শুভেচ্ছা দিয়ে আসছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে সানাই বাজছে। পোলাও কোরমা খাওয়া হচ্ছে। সবার সাথে দেখা হওয়াওটাই মূখ্য। আর বউ দেখাটা ছিল মহাআকর্ষণ। বউ লাল শাড়ি পরে যেন লাজুক মুখে সাক্ষাৎ পরী।

আর এখন, ওমা একি! বর বউ দেখবো কি? অপেক্ষায় থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে হ্যালির ধুমকেতুও দেখতে পাবেন; কিন্তু অতিথি আসনের সামনের কাতারে বসেও মিলবে না বর বউয়ের দেখা! দেখবেন কিভাবে? স্টেজের সামনে দুই পক্ষ থেকে আসা ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ মানে ডিএসএলআর ক্যামেরা আর ফটোগ্রাফারদের ইয়া বিশাল বিশাল ছাতা দিয়ে সব ঢাকা। এখনকার বিয়ের প্রোগ্রামে কাজীর চেয়ে এই ডিএসএলআর ক্যামেরাওয়ালাদের দাম বেশি। কাজী না এলেও বিয়ে হবে, কিন্ত ফটোগ্রাফার ছাড়া বিয়ে? অসম্ভব।

ফটোগ্রাফারই এখন পুরো অনুষ্ঠানের ডিরেক্টর। তারাই নির্ধারণ করেন বর বউয়ের পাশে বসে কতক্ষণ কথা বলতে পারবেন। স্টেজে উঠে আজকাল বর বউ দেখে আগে-পরে গোছগাছ করে বসে একটা ছবি তোলেন। এরপর ক্যামেরা ওয়ালাদের সহকারী হাতের ইশারায় আপনাকে নেমে যেতে বলবেন, আপনিও নেমে যেতে বাধ্য, কারণ পেছনে লম্বা লাইন।

আবার সবার সামনে বর বউয়ের ছবি তোলার হিড়িক। কাধে হাত মাথায় হাত,সামনে কাত পেছনে কাত, হাতে হাত; কত শত ভঙ্গিমায় কি অবলীলায় যে ছবি তোলা হচ্ছে; ভাবতে পারবেন না! কোথায় যে গেল সেই লাজুক লাজুক মুখের পরীর মতো বউগুলা।

নারী উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলছি একেকে জন। নারীর এগিয়ে চলার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রত্যয় আর দূরদর্শীতা। জেন্ডার ডাইভার্সিটি নিয়ে গবেষণা করা দেখে ভীষণ খুশি হই। যখন দেখি মেয়েরা ফেসবুক টুইটারকে পুঁজি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে, টুকটাক কাজ দিয়ে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে উঠছে, তখনও খুশি হই। আমার মনে হতে থাকে, এইতো শুরু। কিন্তু আমার আশার মুখে কেউ যেন কষে কেউ চড় দেয়, যখন দেখি ব্যবসা সফল সেই মেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়- তার সারা জীবনের লক্ষ্য আজ অর্জিত হলো। কারণ তিনি তার বিয়ের জন্য সব্যসাচির লেহেঙ্গা কিনতে পেরেছেন। সেই লেহেঙ্গা কেনার সময়ক্ষণ, ডিজাইনারের সঙ্গে ছবি এবং তার নিচে ক্যাপশন ‘ফাইনালি আই হ্যাভ এচিভড হোয়াট আই ড্রেমট থ্রু আউট মাই লাইফ’! মানে? তার ব্যবসা, তার আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার গল্প, যা কিনা তাকে গর্বিত করার কথা ছিল, কথা ছিল তার গল্প অনুপ্রেরণা জাগাবে আর দশটা মেয়েকে-সবকিছু ছাপিয়ে তার সফলতা হলো সব্যসাচীর লেহেঙ্গা কিনতে পারা! দূরদর্শীতা হায়, তুমি কাঁদো নিরবে।

যার যা ইচ্ছা করুক, খালি মনে হয়, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সমাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মধ্যবিত্তের বাড়ছে ঋনের বোঝা। উচ্চবিত্তরাও যে সবাই কতটুকু সাদা টাকায় করছেন তাই বা কে জানে! কেমন করে ভুলে যাই এদেশের শতকরা কত ভাগ লোক উচ্চবিত্তের তালিকায় পড়ে আর কতভাগ নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্তের কোটায়। কেমন করে ভুলে যাই এইদেশে আমরা এমনই অনুকরণ প্রিয় সংবেদনশীল জাতি যেখানে ‘পাখি ড্রেস’ না পাওয়ায় অভিমানী কিশোরী আত্মহত্যা করে। বাবা মা ‘বাইক’ দিতে না পারলে চোখের মনি সাত রাজার ধন ছেলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে নির্বিকারভাবে বাবা মায়ের স্বপ্নকে হত্যা করে। সেখানে ‘বিয়ে তো একবারই হয়’ শ্লোগানের মোড়কে মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেবার খেলা কি পরিণাম ফেলতে পারে সে হিসেব কষা কি কঠিন কিছু?

লেখক: অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সুত্র:সমকাল

 

শিশু ধর্ষণের লজ্জা এবং শিশু সোনিয়া লাশ দিয়ে শুরু হল নতুন বছর

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদি ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছিল স্কুলছাত্রী সোনিয়া (১৩)। পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সোনিয়ার।

সোনিয়া চরাদি ইউনিয়নের হলতা গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে ও চরাদি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

সোনিয়ার বাবা দুলাল খান জানান, গত বুধবার সকালে প্রতিবেশী পান্নু খানের বখাটে ছেলে আসাদ খান ডিম ভেজে দেয়ার কথা বলে শিশুটিকে তার নিজের ঘরে নিয়ে যায়। এসময় আসাদের বাবা-মা কেউ বাসায় ছিল না। এ সুযোগে আসাদ সোনিয়াকে ধর্ষণ করে।

পরে নিজ ঘরে গিয়ে ওই দিন বেলা ১২টায় সে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার দুপুরে তাকে ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু সোনিয়ার মৃত্যু হয়।

বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, শিশুটির পরিবার থেকে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।সুত্র:জাগোনিউজ২৪

 

চাইল্ড অ্যাবিউজ (চাইল্ড ইমোশনাল অ্যাবিউজ)

আফরোজা হাসান


আমার ছেলের সাথে নিয়মিত যে কাজগুলো করি তারমধ্যে একটা হচ্ছে কার্টুন দেখা। আমাদের দুজনেরই সবচেয়ে প্রিয় কার্টুনটা শুরু হলেই, চিৎকার করে বলে, আম্মু কার্টুন শুরু হয়েছে আর আমিও ছুটে যাই দেখার জন্য। কোনদিন যদি কোন কারণে একসাথে কার্টুন দেখা না হতো, প্রচণ্ড অভিমান করতো। একবার একটানা প্রায় একসপ্তাহ বিভিন্ন কারণে আমি ওর ডাকে সাড়া দিতে পারিনি। খেয়াল করলাম তিন-চার দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে ওর অভিমান কমছে এবং আমাকে ডাকা ছেড়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। তিন বছরে যে অভ্যাসটা গড়ে উঠেছিল, মাত্র একসপ্তাহে সেটা গতি হারালো। আবার অভ্যাসটা গড়তে অনেকদিন লেগেছিল আমার। কিন্তু এখনো মাঝে মাঝে আমাকে ডাকতে ভুলে যায় আর কোন কারণে ওকে সঙ্গ দিতে না পারলে তেমন অভিমানও করে না।

আমার ব্যালকনি থেকে আমাদের বাড়ির মেইন গেইট দেখা যায়। সকালে যখন ছেলেকে তার বাবা স্কুলে নিয়ে যায় আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতাম। নীচে দাঁড়িয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তারপর সে বাবার হাত ধরে গুটুগুটু পায়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে যেতো। একদিন ব্যস্ততার কারণে আমি ব্যালকনিতে দাঁড়াতে পারিনি। সেদিন স্কুল থেকে বেড়িয়ে সে একদম কান্না করে দিলো অভিমান আর কষ্টের প্রচণ্ডতায়। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলছিল, আমি বার বার উপরে তাকিয়েছি কিন্তু তুমি ছিলে না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একবার বেশ কয়েকদিন ব্যালকনিতে দাঁড়াতে পারিনি। যার ফলাফল প্রথম ঘটনার অনুরূপ। এখনো বেশির ভাগ সময় আমি ডাকলেই উপরের দিকে তাকায় সে, নয়তো না। আর কোনদিন না দাঁড়ালেও কোন অভিমান করে না।

চাইল্ড স্পেশালিস্টের সাথে কথা বলার পর জানলাম যে, শিশুরা যদি তাদের কোন আবেগের যথাযথ মূল্য না পায়, তাহলে একটা সময় সে আবেগের প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। আর নিজের আবেগকে প্রতিনিয়ত অবহেলিত হতে দেখার ফলে অন্যের আবেগকেও মূল্যায়ন করতে শিখতে পারেনা। এটা এক ধরণের ইমোশনাল অ্যাবিউজ যার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় শিশুদের নিজেদের আবেগের প্রকাশ ও অন্যেদের আবেগকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা।

বাবা-মাদের একটা সমস্যা হচ্ছে সন্তানদের ভালোর চিন্তায় বা ভালোবাসার কারণে, নিজেদের পছন্দ বা ভালোলাগা গুলোকে সন্তানদের উপর চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। অনেক বাবা-মা আছেন নিজেদের জীবনের অপুর্ন স্বপ্নকে সন্তানদের দ্বারা পূরণ করতে চান। যার ফলে সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেন নিজেদের প্রত্যাশার ভার। জীবনে কি হতে বা কি পেতে চায় বোঝার আগেই শিশুদের শুনতে হয় তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে কিংবা বিজ্ঞানী হতে হবে। নিজের স্বপ্নকে আবেগের সাথে উপলব্ধি করার আগেই বাবা-মার প্রত্যাশার বোঝা চেপে বসে কচি মন গুলোতে। স্বপ্নের পাখীরা আবেগের ডানার অভাবে হারিয়ে ফেলে উড়ার ক্ষমতা।

কম্পিটিশনের হাওয়া বইছে চারিদিকে। স্কুলের সাথে স্কুলের কম্পিটিশন, বাবা-মার সাথে বাবা-মাদের কম্পিটিশন, কোচিং সেন্টারের কম্পিটিশন, শিক্ষকদের কম্পিটিশন, হায় রে কম্পিটিশন……!!! নাইনটি পারসেন্ট মার্কস পেতে হবে, নাইটি ফাইভ পারসেন্ট মার্কস পেতে হবে……! এই ধরনের ইমোশনাল ব্লাকমেইল আর এক্সপেক্টটেশনের চাপে কোমল প্রাণ শিশুগুলোর শৈশবের আবেগ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আর সেই সাথে হ্রাস পায় আবেগের প্রকাশ, অনুভব, উপলব্ধির ক্ষমতা…….!!!

আমরা যেন ভুলে না যাই যে, সন্তানরা আমাদের সম্পত্তি না, আমাদের স্বপ্ন পূরণের কোন মাধ্যম না। বরং সন্তানরা আমাদের কাছে স্রষ্টার দেয়া আমানত। তাই তাদেরকে এমন করে গড়ে তোলা উচিত যাতে আমানতের খেয়ানত না হয়, বরং আমাদের জন্য হতে পারে সাদাকায়ে জারিয়া।

সাইকোলজি(পিএইচডি)

 

‘অপরাজিতা’ সালতামামি ২০১৭, স্বাগতম ২০১৮

সুখ, স্বপ্নে.. নতুন বছরের আনন্দ হোক অফুরন্ত! জীবনের সব অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণতা পাক… পূরণ হোক সব স্বপ্ন… সবার ভালবাসার পাত্র … হয়ে ওঠুন! যাইহোক, এমন কতকগুল রং ছড়ানো কথা নিয়ে চলে আসছে নতুন বছর।

চলে গেলো একটি বছর। চিরতরে ছুটি ২০১৭। পৃথিবীর ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রবেশ করব আরো একটি নতুন বছরে। পেছনের ভালো কিছুকে আগলে ধরে ও মন্দ সব খবর পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া আবার শুরু হোক মানুষের পথচলা।

নতুন মানেই সম্ভাবনা। নতুন মানেই স্বপ্ন। নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় আজ কুয়াশার চাদর সরিয়ে উঁকি দিলল নতুন বছরের সূর্য।

প্রকৃতির নিয়মে সূর্যকে আরেকবার প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী। সঙ্গে এনেছে একটি নতুন বছর।

নারী সমাজের জন্য কেমন ছিল ২০১৭ সাল?

নারীরা ২০১৭ সালে বিশাল ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশের এ বছর বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে অবস্থান ষষ্ঠ। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ-২০১৭-এর তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে নারী বৈষ্যমের হার সবচেয়ে কম। এ তথ্য অনুসারে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭ নম্বরে। ইনডেক্স তৈরি করা হয় চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে-
১.অর্থনৈতিক কর্মকান্ড,
২.নারীর অংশগ্রহণ ও অংশগ্রহণের সুযোগ,
৩.শিক্ষাবিষয়ক অর্জন, স্বাস্থ্য ও মৃত্যুর হার এবং
৪.রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন।
যা নারীর উত্তরণকেই প্রমাণ করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান দৃঢ়। ২০১৭ সালে সফলতায় দেশ, তথা বহির্বিশ্বে এদেশের নারী তার দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছে।
উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ বছরই টাইস্ অব লন্ডন তাকে দিয়েছে মাদার অব হিউম্যানিটি খেতাব। যা এ দেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় প্রাপ্তি।
  • দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকী। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এ্যান্ড কিলবার্ন আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং ব্রিটিশ সরকারের ছায়ামন্ত্রী হিসেবে আছেন।
  • ব্রিটিশ পার্র্লামেন্টে উত্তর পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল এ্যান্ড এ্যাকটন আসনে লেবার পার্টি থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রুপা হক। এবং
  • তৃতীয়বারের মতো লন্ডনের বেথনান গ্রিন এ্যান্ড বো আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলদেশী বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী।
  • এ বছরের জুন মাসে আর এক মানবতাবাদী বাঙালী নারী, বাংলাদেশ অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারর্সন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অটিজম ডিজঅর্ডার বিষয়ে বিশ্বখ্যাত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অভিহিত হয়েছেন। এবং জুন মাসেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁকে দুই বছরের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়।
  • এ বছর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আবিষ্কারেও এগিয়ে আছে বাঙালী নারী। মহাকাশে সহজে ব্যবহার করা যাবে এমন ছোট ও যুগান্তকারী প্রযুক্তির যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য নাসাতে কর্মরত বাংলদেশী বিজ্ঞানী মাহমুদা সুলতানা জিতে নিয়েছেন ২০১৭ সালের নাসার সেরা উদ্ভাবন পুরস্কার।
  • বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ট্রান্সপোর্ট এয়ার ক্রাফটের ‘নাজিয়া আফরিন’ প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পেয়েছেন ইন্সপায়ারিং উইমেন ইন ডিফেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৭।
  • ইন্সপায়ারিং উইমেন অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন একজন সফল নারী গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ‘ফারজানা চৌধুরী’।
  • বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ডাঃ সায়েবা আক্তার নারীর মৃত্যু এড়াতে তার উদ্ভাবিত ‘সায়েবাস মেথড’ নিয়ে আলোচনায় আসেন এ বছর।
  • বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকার জন্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘ইন্টারন্যাশনাল ওমেন অব কারেজ’ পুরস্কার লাভ করেণ শারমীন আক্তার।
  • হস্তশিল্পে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সোনা রানী রায়ের সেলাইকৃত নকশীকাঁথা স্পেনে আন্তর্জাতিক হস্তশিল্প মেলায় ‘সেরা তালিকায় স্থান পেয়েছে। সোনা রানীর ‘হোয়াইট অন হোয়াইট ময়ূর’ নামে নকশীকাঁথাটি স্পেনের লোয়েভে ক্রাফট প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

নারী নির্যাতন কেমন ছিল দেশে?

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল-‘সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে চলি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করি।’ প্রতিবছর ২৫ নবেম্বর বিশ্বব্যাপী এ দিবস পালিত হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ২২০ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৬ জনকে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৬ জন। পুলিশ সদর দফতরের নথি অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে মোট ৪৩ হাজার ৭০৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার মামলার ১ লাখ আসামি খালাস পেয়েছেন আর ধর্ষণ মামলায় খালাস পেয়েছেন ৮৮.৩৫ শতাংশ আসামি। নারী নির্যাতন মামলায় আসামি খালাসের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। আবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক পরিসংখ্যান বলছে চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে ১ হাজার ৭৩৭টি ধর্ষণসহ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের ২৫ আগস্ট গণধর্ষণ এবং বর্বর খুনের শিকার হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের মেয়ে ‘রূপা’। বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় ময়মনসিংহগামী যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় পৈশাচিক এ ঘটনা ঘটে। নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের এক ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে বগুরার যুবলীগ নেতা আবদুল মতিনের ছোট ভাই শ্রমিকলীগ নেতা, হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মাদকব্যবসা ও চোরাচালান মামলার আসামি তুফান সরকার। এ বছরের ১৭ জুলাই এসএসসি পাস করা এক কিশোরীকে তার বাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে সে। বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনার ১০ দিন পর ২৮ জুলাই তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন কাউন্সিলর রুমকিসহ একদল সন্ত্রাসী মা- মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধরের পর নাপিত দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। কিশোরীর মায়ের দায়ের করা মামলার অভিযোগ অনুসারে তার মেয়েকে ভাল কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৭ জুলাই ও তারপরে কয়েকবার ধর্ষণ করে এ তুফান সরকার। এ ঘটনায় তুফান, তার স্ত্রী, বোনসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ বছর নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দেয়া রায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নরসিংদীর শিবপুরে এক নারীকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে সুলতান মিয়া ওরফে জামাই সুলতান (৩৫), শফিকুল ইসলাম শরীফ (৩২), ও ওসমান গণি (৩৪) কে আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। আসামীদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায় নিহত মাহমুদা আক্তার (২৮) ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার কিসমত আহমদাবাদ (চানপুর) গ্রামের মৃত বেল্লাল হোসেনের মেয়ে। এছাড়া ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী হত্যার আসামি তাঁদেরই সন্তান ঐশি রহমানের মামলার রায় প্রকাশ পায়। এ রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড- সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট। রায়ের কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলো বিবেচিত হয়েছে বলে আদালত জানায় তা হলো ঐশির বর্তমান বয়স ১৯ বছরের কম এবং ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের আদর যত্নের অভাবে সে মানসিক বিকারগ্রস্ত। সে এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। মাদকাসক্ত। হত্যার দুইদিন পরে সে নিজেই আত্মসমর্পণ করে। এবং ঐশির পরিবার পরিজনের মধ্যে কারও ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত বাংলাদেশী নারীদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আলোচনায় ছিল এ বছর।

কালো কলমে অন্যান্য আলোচিত ঘটনা

এক বছরের আলোচিত বিষয় ছিল ‘রোহিঙ্গা’ ইস্যু। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে। নতুন বছরের জন্য যা এক বড় চ্যালেঞ্জ।

হৃদয়স্পর্শী ঘটনা অন্যতম হাওরে পাহাড়ি ঢল, উত্তরের বন্যা, পাহাড় ধসে মৃত্যু, জঙ্গি দমন, এক ঝাঁক গুণী মানুষের প্রয়াণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি।

২০১৭ সালেই ডানা মেলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

প্রত্যাশা করতেই পারি এবার সকল বাধা সরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্র। সাফল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ, মুছে যাবে ব্যর্থতার গ্লানি।

২০১৮ সালকে স্বাগতম

শুভ বিদায় ২০১৭ সালকে। ইংরেজি হ্যাপী নিউ ইয়ার (শুভ নববর্ষ) ২০১৮।
কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে আসল নতুন বছরের নতুন আলো। নতুন করে শুরুর দিন। অতীতের সব হিংসা-বিদ্বেষ পেছনে ফেলে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির সম্মিলনের দিন।

নতুন সালকে স্বাগত জানিয়ে এবং নতুন বছরে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সংগঠন। ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজধানীসহ সারাদেশে নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

বিদায় বছরের সঙ্গে সঙ্গে বিগত দিনের দুঃখ বেদনা ভুলে নতুন দিনে নতুন করে সব শুরু করার তাগিদে মেতে উঠব আমরা। এগিয়ে যাবে দেশ; এমন প্রত্যাশায় শুভ বিদায় ২০১৭।

শুভেচ্ছা ২০১৮। শুভেচ্ছা সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের।

 

চাইল্ড অ্যাবিউজ (চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ)

আফরোজা হাসান


চাইল্ড অ্যাবিউজ:

পৃথিবীর সব বাবা-মা’রাই সন্তানের ভালো চান। সন্তান যাতে ভালো হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।

শিশুদের বৈচিত্র্যতার চেয়েও বেশি দেখেছি বাবা-মাদের বৈচিত্র্যময় আদর-সোহাগ-ভালোবাসা এবং শাসন-শোষণ। জেনে বা না জেনে কিংবা বুঝে বা না বুঝে বাবা-মারা বাচ্চাদের উপর নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।

শারীরিক আঘাত চোখে দেখা যায় তাই পরবর্তীতে বাবা-মা তাতে মলম লাগাতে পারেন বা চেষ্টা করেন।

কিন্তু মানসিক আঘাত………!!!

এই আঘাতের কারণেই হয়তো শিশুদের মানসিকতার সঠিক বিকাশ বাধাঁপ্রাপ্ত হয়। কারণ বিভিন্ন ইন্দ্রীয়ের সাহায্যে শিশুরা বিভিন্ন বস্তুগত গুণাবলী ও ঘটনা সম্পর্কে ধারণা বা উপলব্ধি করতে শেখে।

আর এর উপর নির্ভর করেই শিশুদের মধ্যে জন্ম নেয় স্মৃতিশক্তি, কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা, বিচারবুদ্ধি ইত্যাদি।

আমার পরিচিত একটি বাচ্চা আছে।

১.বাচ্চাটা কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারেনা,
২.স্থির হয়ে বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসতে পারে না,
৩.কোন কিছু করতে বললেও ঠিকমতো করতে পারেনা,
৪.একটুতেই রাগ করে-কান্না করে, ৫.বেখেয়ালি তাই খুব ভুল করে বা ভুলে যায়।

বাচ্চাটির বাবা-মাকে যদি পরামর্শ দেয়া হয় যে, ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান তারা দুজনই ভীষণ বিরক্ত হন বা রাগ করেন। মোটকথা তারা মানতেই রাজী না যে তাদের বাচ্চাটি এডিডি বা এটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডারের শিকার। কেউ বোঝাতে গেলে উল্টো তাদের সাথে মনোমালিন্য হয়। অথচ সন্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসার কোন কমতি নেই। বাচ্চা যা চাইছে বলার সাথে সাথে তা সামনে এনে হাজির করেন। কিন্তু মানুষ বলবে যে তাদের বাচ্চাটা স্বাভাবিক না, সে ভয়তে বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিতে চায় না বা নিজেরাও মানতে চায়না।

প্রতিবেশী একজনকে দেখেছি বাচ্চা কিছু করতে না চাইলে, নানাভাবে ভয় দেখিয়ে সে কাজটি করতে বাধ্য করে। কেউ আছেন সারাক্ষণ টিভি চ্যানেল আর ফোনালাপ নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকেন যে, তখন বাচ্চা কথা বলতে চাইলে ধমক দিয়ে আরেক দিকে পাঠিয়ে দেন।

একজন মাকে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে জালিবেত নিয়ে এসেছেন তার পাঁচ বছর বয়সি মেয়েকে শায়েস্তা করার জন্য। এক মা বুকফাটা কান্নার সাথে জানিয়েছিলেন, সাত বছর বয়সি ছেলেটাকে তাঁর স্বামী সামান্য কারণেই মাথায় তুলে সোফা বা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলেন, কখনো লাথি দেন আর বাকিটা নাহয় নাই বললাম।

যে কোন ধরণের আচার-ব্যবহার-কাজ যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বা ভালো থাকায় বাঁধা দেয়, তাকেই এককথায় চাইল্ড অ্যাবিউজ বলে।

চাইল্ড অ্যাবিউজকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

♠ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ বা যে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণহীন শারীরিক আঘাত।

♠সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বা শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যে কোন রকমের যৌন সংসর্গ।

♠বিহেবিয়ার অ্যাবিউজ বা শিশুর প্রতি অবহেলা-অমনোযোগিতা।

♠ইমোশনাল অ্যাবিউজ বা নানাভাবে শিশুকে বাধ্য করা।

এই প্রত্যেকটি কারণের দ্বারাই শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রত্যেকটি কারণ নিয়েই আলোচনা করবো।

চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ

চাইল্ড অ্যাবিউজ নিয়ে কথা বলছিলাম প্রতিবেশী কয়েকজন ভাবীর সাথে। সবাই চলে যাবার কিছুক্ষণ পর এক ভাবী ফিরে এলেন আবার। চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম কিছু বলতে চান। বেশ সময় নিলেন উনি নিজেকে গুছাতে তারপর বললেন, ভাবী আমি যখন ছোট ছিলাম আমাদের বাসায় আমার দূর সম্পর্কের এক মামা থাকতেন। উনি আমাকে খুব আদর করতেন, জড়িয়ে ধরতেন……….!! এসব কি তাহলে অ্যাবিউজ ছিল? কিন্তু আমি তো তখন অনেক ছোট ছিলাম। মাত্র আট বছর বয়স ছিল আমার। বেশির ভাগ সময় আড়ালে করলেও, মাঝে মাঝে তো আব্বু-আম্মুর সামনেও আমাকে আদর করেছে মামা। উনারা তো কখনো কিছু বলেননি। বলেন না ভাবী আমি কি অ্যাবিউজের স্বীকার তাহলে? সংসার জীবনে খুব সুখী এই মেয়েটিকে সে যে অ্যাবিউজের স্বীকার ছিল, বুঝিয়ে বলতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু এখনো মেয়েটা সেসব ভেবে নীরবে কান্না করে।

ক্লাস টেনে পড়তাম তখনকার ঘটনা। আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীটা ছিল ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে আমুদে স্বভাবের। হঠাৎ করে একদিন ওকে ভীষণ চুপচাপ দেখে কি হয়েছে জানতে চাইলাম। অনেক করে জিজ্ঞেস করার পর বললো, দুই সপ্তাহ ধরে আমার আব্বুর এক বন্ধু আমাকে টিউশন দিচ্ছে। প্রথম থেকেই উনি যেন একটু কেমন। প্রথমে ড্রইংরুমে বসে পড়তাম কিন্তু উনি শুধু বেডরুমে বসে পড়লে পড়ায় মনোযোগ বেশি এমন নানা কথা আম্মুকে বললে, পড়ার সুবিধার কথা চিন্তা করে বেডরুমে পড়ার পারমিশন দিয়ে দিলেন আম্মু। তারপর থেকে উনি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরণের নোংরা জোকস বলা শুরু করলেন। আর গতকাল আমাকে বললেন যে, তুমি এতো ঢেকেঢুকে বসো কেন? আরো একটু খোলামেলা হয়ে বসবে, এতে দেখতে সুবিধা হয়……..!! আমি এখনই কিছু না করলে লোকটা আরো সাহস পাবে। কিন্তু লজ্জার কারণে আব্বু-আম্মুকে বলতে পারছি না এসব কথা। পরে আমরা কয়েক বান্ধবী মিলে ওর আম্মুকে বলেছিলাম।

এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে আমাদের চারপাশে। বাবা-মার চোখের সামনে তাদের আদরের সন্তানটি অ্যাবিউজের স্বীকার হচ্ছে কিন্তু তারা বাঁধা দেয়া তো দূরে থাক টেরই পাচ্ছে না। বুক দিয়ে যাদের কাছ থেকে আগলে রাখার কথা সন্তানকে, অজ্ঞতার কারণে নিজেরাই ঠেলে দিচ্ছে তাদের কাছে। আর এই ধরণের ঘটনাগুলো বেশির ভাগই ঘটে ঘরের একান্ত কাছের আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা। যারা আদরের ছলে এমন সব বিকৃত কাজ করে, শিশুরা অস্বস্তিবোধ করলেও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে এটা আদর নাকি অন্য কিছু। যার ফলে তারা কারো কাছে বিষয়টি জানায় না বা জানাতে যে হবে সেটাও বুঝতে পারে না।

ঘরের মানুষ ছাড়াও যারা শিশুদের কাছে আসার সুযোগ পায়, যেমন বাসার কাজের মানুষ, গৃহশিক্ষক, আশেপাশের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের কেউ, স্কুলের কেউ তাদের সবার ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

শিশু ছেলে হোক বা মেয়ে উভয়ই এই ধরণের অ্যাবিউজের স্বীকার হতে পারে।

আর এসব ঘটনা থেকে তাদের মধ্যে তৈরি হতে পারে নানা ধরণের ছোট-বড় মানসিক সমস্যা, হীনমন্যতা, ব্যক্তিত্বহীনতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রভৃতি।

কেউ কেউ মারাত্মক কিংবা অপূরণীয় শারীরিক ক্ষতির স্বীকার হয় এর ফলে।

শিশুরা যাতে এই ধরণের জঘন্য হয়রানির স্বীকার হতে না পারে, সেজন্য সবার প্রথমে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে।

কে কি মনে করবে ইত্যাদি চিন্তা করে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা লজ্জায় না ভুগে ঘরে অবস্থানরত অন্যান্য সদস্যদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে শিশুদের কতটুকু আদর করা যাবে।

আর শিশুদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে কোন ধরণের আদর গুলো পচা, শরীরের কোন কোন অংশে কাউকে ছুঁতে দেয়া যাবে না।

এবং বাবা-মাকে অবশ্যই সন্তানদের সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা তাদের কোন কথা বাবা-মাকে বলতে দ্বিধা না করে। বাচ্চারা যদি কারো সাথে বাইরে যায় ফিরে আসার পর প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে বাইরে কি হয়েছে, কি দেখেছে, কি করেছে ইত্যাদি।

তার মানে এই নয় যে, আমরা প্রতিটা সম্পর্ককেই সন্দেহের চোখে দেখবো। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন কেস স্টাডি থেকে পাওয়া যায় এই ধরণের বিকৃত মানসিকতার মানুষগুলো চাচা-মামা-খালু-দুলাভাই-কাজিন-এমনকি দাদা-নানা….. পর্যন্ত হতে পারে।

সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য যদি নিজেকেও সতর্কতার চোখে দেখতে হয়, আমার মনেহয় সেটাই করা উচিত। কে কি মনে করলো সেই চিন্তায় যেন আমরা আমাদের সন্তানদেরকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে না দেই।

সাইকোলজি(পিএইচডি)

 

চাইল্ড অ্যাবিউজ (চাইল্ড ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ)

আফরোজা হাসান


চাইল্ড অ্যাবিউজ: পৃথিবীর সব বাবা-মা’রাই সন্তানের ভালো চান। সন্তান যাতে ভালো হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।

শিশুদের বৈচিত্র্যতার চেয়েও বেশি দেখেছি বাবা-মাদের বৈচিত্র্যময় আদর-সোহাগ-ভালোবাসা এবং শাসন-শোষণ। জেনে বা না জেনে কিংবা বুঝে বা না বুঝে বাবা-মারা বাচ্চাদের উপর নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।

শারীরিক আঘাত চোখে দেখা যায় তাই পরবর্তীতে বাবা-মা তাতে মলম লাগাতে পারেন বা চেষ্টা করেন।

কিন্তু মানসিক আঘাত………!!!

এই আঘাতের কারণেই হয়তো শিশুদের মানসিকতার সঠিক বিকাশ বাধাঁপ্রাপ্ত হয়। কারণ বিভিন্ন ইন্দ্রীয়ের সাহায্যে শিশুরা বিভিন্ন বস্তুগত গুণাবলী ও ঘটনা সম্পর্কে ধারণা বা উপলব্ধি করতে শেখে।

আর এর উপর নির্ভর করেই শিশুদের মধ্যে জন্ম নেয় স্মৃতিশক্তি, কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা, বিচারবুদ্ধি ইত্যাদি।

আমার পরিচিত একটি বাচ্চা আছে।

১.বাচ্চাটা কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারেনা, ২.স্থির হয়ে বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসতে পারে না, ৩.কোন কিছু করতে বললেও ঠিকমতো করতে পারেনা,৪.একটুতেই রাগ করে-কান্না করে, ৫.বেখেয়ালি তাই খুব ভুল করে বা ভুলে যায়।

বাচ্চাটির বাবা-মাকে যদি পরামর্শ দেয়া হয় যে, ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান তারা দুজনই ভীষণ বিরক্ত হন বা রাগ করেন। মোটকথা তারা মানতেই রাজী না যে তাদের বাচ্চাটি এডিডি বা এটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডারের শিকার। কেউ বোঝাতে গেলে উল্টো তাদের সাথে মনোমালিন্য হয়। অথচ সন্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসার কোন কমতি নেই। বাচ্চা যা চাইছে বলার সাথে সাথে তা সামনে এনে হাজির করেন। কিন্তু মানুষ বলবে যে তাদের বাচ্চাটা স্বাভাবিক না, সে ভয়তে বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিতে চায় না বা নিজেরাও মানতে চায়না।

প্রতিবেশী একজনকে দেখেছি বাচ্চা কিছু করতে না চাইলে, নানাভাবে ভয় দেখিয়ে সে কাজটি করতে বাধ্য করে। কেউ আছেন সারাক্ষণ টিভি চ্যানেল আর ফোনালাপ নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকেন যে, তখন বাচ্চা কথা বলতে চাইলে ধমক দিয়ে আরেক দিকে পাঠিয়ে দেন।

একজন মাকে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে জালিবেত নিয়ে এসেছেন তার পাঁচ বছর বয়সি মেয়েকে শায়েস্তা করার জন্য। এক মা বুকফাটা কান্নার সাথে জানিয়েছিলেন, সাত বছর বয়সি ছেলেটাকে তাঁর স্বামী সামান্য কারণেই মাথায় তুলে সোফা বা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলেন, কখনো লাথি দেন আর বাকিটা নাহয় নাই বললাম।

যে কোন ধরণের আচার-ব্যবহার-কাজ যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বা ভালো থাকায় বাঁধা দেয়, তাকেই এককথায় চাইল্ড অ্যাবিউজ বলে।

চাইল্ড অ্যাবিউজকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

♠ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ বা যে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণহীন শারীরিক আঘাত।

♠সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বা শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যে কোন রকমের যৌন সংসর্গ।

♠বিহেবিয়ার অ্যাবিউজ বা শিশুর প্রতি অবহেলা-অমনোযোগিতা।

♠ইমোশনাল অ্যাবিউজ বা নানাভাবে শিশুকে বাধ্য করা।

এই প্রত্যেকটি কারণের দ্বারাই শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রত্যেকটি কারণ নিয়েই আলোচনা করবো।

চাইল্ড ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ

সন্তানদের ভালোর জন্যই প্রয়োজনে
বাবা-মাকে দৃঢ় হতে হয়। এটা অবশ্যই ভালো কারণ বাবা-মার দৃঢ়তা সন্তানদের মনে নিরাপত্তা বোধের জন্ম দেয়।

কিন্তু ছেলেমেয়েরা যখন কথা শোনে না বা অবাধ্যতা করে, তখন তাদেরকে সঠিক পথে আনতে বাবা-মারা যে কাজটি করেন, তাঁর নাম ‘শাসন’।

আর শাসন মানে সবাই মনে করেন যে, বকাঝকা করা নয়তো কোন শারীরিক শাস্তি দেয়া কিংবা পছন্দের জিনিস বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি।

আর শাসনের পক্ষে নানা ধরণের যুক্তিও থাকে বাবা-মার কাছে। যেমন- মাঝে মাঝে শাসন না করলে বাচ্চারা মানুষ হয় না, সাহস বেশি বেড়ে যায়, ছোটবেলায় আমাদের বাবা-মা’রাও আমাদেরকে শাসন করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

অথচ শাসন আর গায়ে হাত তোলা কিন্তু এক জিনিস নয়। বাচ্চাদের ভুল বা অন্যায় গুলো অবশ্যই তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে, তবে এরসাথে গায়ে হাত তোলার কোন সম্পর্ক নেই।

আমি দেখেছি আড়াই বছর বয়সি একটি মেয়েকে তার বাবাকে ঘর ভর্তি মানুষের সামনে চড় লাগিয়ে দিতে, মেহমানদের জন্য সাজিয়ে রাখা খাবার ধরার জন্য।

মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল, কারণ চড়টা কেন খেল বুঝতে পারছিলো না।

বাসায় টিচার আসলে পড়তে চায় না তাই চার বছর বয়সি মেয়েকে মা লাঠি পেটা শুরু করলো টিচারের সামনেই।

স্কুল থেকে ডেকে টিচাররা অভিযোগ করলো ক্লাসে বাচ্চা অমনোযোগী থাকে, বাসায় ফিরেই বাবার চড়-থাপ্পড়ের বৃষ্টি বাচ্চার উপর।

ছয় বছর বয়সি ছেলেটা তার তিন বছরের বোনের সাথে খেলনা শেয়ার করতে রাজী না হলেই শারীরিক আঘাতের স্বীকার হয়। ঘরের কোন জিনিসপত্র নষ্ট করলো তো আর রক্ষা নেই। এমন আরো অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে বাচ্চাদের সাথে।

অথচ এই ব্যাপার গুলোর সমাধানের সাথে শারীরিক আঘাতের কোন সম্পর্ক নেই বা শারীরিক আঘাত এর সমাধানও নয়।

পরীক্ষায় নাম্বার কম পেলে, ঘরের কোন জিনিস নষ্ট করলে, ছোট ভাই-বোনের সাথে বনিবনা না হলে, কথা শুনতে না চাইলে, অবাধ্যতা করলে বাচ্চাদের বুঝিয়ে না বলে,

গায়ে হাত তুললে আসলে তেমন কোন লাভ হয় না।

শরীরে ব্যথা পায় কিন্তু কেন ব্যথা পেলো বুঝতে পারে না, ফলে একই কাজ বার বার করে এবং আবারো শাস্তি পায়।

এর ফলে বাচ্চাদের মনে বাবা-মায়ের প্রতি চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ক্রমাগত তা বাড়তে থাকে।

একটা সময় বাচ্চারা বাবা-মার কথাই সহ্য করতে পারে না। ইচ্ছে করে তখন কথা শোনে না বা দুষ্টুমি করে। কারণ চিন্তা থাকে বড়জোর আমাকে ধরে মারবে এই তো!

তাই বাচ্চারা কোন অন্যায় করলে তাদের বোঝাতে হবে। কেন এই কাজটা করা ঠিক না, এর প্রভাব কি হতে পারে ইত্যাদি। আর শারীরিক আঘাতের চেয়ে এই বোঝানোটা অনেক বেশি ফলপ্রসূ।

শাসন আর অ্যাবিউজ কিন্তু এক জিনিস না। শাসন হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিশুর ভুল বা অন্যায় গুলো তাকে ধরিয়ে দিয়ে, তার থেকে বের হবার প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করা।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে শাসনের নামে বাচ্চারা অ্যাবিউজের স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যার ফলে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তাদের সুষ্ঠু বিকাশ।

বাবা-মা যখন শাসন করতে গিয়ে বাচ্চাদের গায়ে হাত তুললেই যে সব ঠিক হয়ে যাবে এর কিন্তু কোন গ্যারান্টি নেই।
বরং বাচ্চারা আরো জেদি হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

যারা বাচ্চাদেরকে বোঝাতে পারেন না বা শেখাতে পারেন না তারাই আসলে শাসনের নামে গায়ে হাত তোলেন। কিন্তু এভাবে সন্তানদের মানুষ করা যায় না।

নিজেদের চরিত্রের অযোগ্যতা, নিয়ন্ত্রণহীনতাকে শাসনের নামে চালিয়ে দেন। যা কিনা প্রকৃত অর্থে চাইল্ড ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ।

আজ যে বাচ্চাটাকে আমি সামান্য কারণে গায়ে হাত তুলছি, শরীরের সাথে সাথে ছোট্ট মনটাকেও করছি আঘাতে আঘাতে জর্জরিত…!!

যখন ওর স্নেহ- মমতা-সহমর্মিতা-ভালোবাসার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন পাচ্ছে শাসনের নামে চড়-থাপ্পড়-বকাঝকা…!!

একটা বয়সে গিয়ে যখন আমার স্নেহ-মমতা-সহমর্মিতা-ভালোবাসার প্রয়োজন পড়বে, তখন কি সন্তানের কাছ থেকে সেটাকে প্রাপ্য মনে করাটা অন্যায় হবে না?

আমার আজকের আচরণটাই যে আমার সন্তানের আগামীর পাথেয় হবে সেটা যেন আমরা কেউ ভুলে না যাই।

সাইকোলজি(পিএইচডি)

 

‘মা’ তোমাকে ভালবাসি

ডা. সাকলায়েন রাসেল


ক্লান্ত শরীরে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম..চোখ খুলে দেখি মা.. মাথায় হাত বুলাচ্ছেন! তাঁর দিকে তাকাতেই বললেন…
ঘেমে গেছিস…ফ্যান ছেড়ে দিব?
কিছু বলার আগে আবারো বললেন,
চুল অনেক বড় হয়ে গেছে,কাটাবি না?

চুল তো চাইলেই ছোট করতে পারি…পারিনা নিজেকে ছোট করতে ! তাহলে হয়ত মায়ের সেই ছোট্ট সাকলায়েনটি হয়ে থাকতাম.. চিরদিন!

সেদিন মাকে বললাম, আজ রোজা রাখব…

-শোয়ার আগে মা বলল, সত্যি সত্যি রাখবি?

_‘হু’

-ভোরে উঠে ভাত গরম করে খেতে পারবি?

_আরে না, কি যে বল, ভাত গরম করতে হবে কেন!… পেটে গেলে দু’মিনিটেই সব ঠান্ডা হয়… ! নিজের অক্ষমতা আড়াল করতে এভাবেই যুক্তির আশ্রয় নিলাম।

-কিছুক্ষণ পর মা এসে বলল, শোন, হটপটে খাবার আছে…খেয়ে নিস…!

_আচ্ছা

-কিছুক্ষণ পর, মা আবার এসে ঠোটে হাসির রেখা টেনে বলল, শোন, হটপট সাবধানে খুলিস !

এমন সাবধান বাণীতে অবাক হলেও কোন প্রশ্ন করলাম না…
ঘড়িতে তখন রাত ৩ টা…
খেতে গিয়ে অবাক হলাম…পুরো হটপট ৩ টা সোয়েটারে ঢাকা…!
‘আহ হারে’ ! …

ছেলের খাবার গরম রাখতে কি প্রাণ পণ চেষ্টা মায়ের…! ভাতটুকু গলধকরণের আগেই তাই বোবা কান্নাটাও গিলে ফেললাম…

শেষ প্রান্তে এসে বুঝলাম… ভাত শেষ কিন্তু পেটে ক্ষুধা তখনো রয়ে গেছে!…তবুও একমুঠো ভাত রেখেই খাবার শেষ করলাম…। ব্যাখ্যাঃ যদি সকালে উঠে মা দেখে সব ভাত শেষ… তবে ভাবতে পারে… আমার হয়ত আরো ভাত লাগত… আমি ক্ষুধা নিয়েই রোজা রেখেছি…
ফলাফল, মা সারাদিন মন খারাপ করবে… আফসোস করবে… আহ হারে! কেন ভাত একটু বেশি দিলাম না..! পেট অপূর্ণ থাকার পরও আমি তাই একটু ভাত ছেড়েই উঠলাম… তাতে মা অন্তত স্বান্তনা পাবে, ভাতের পরিমান ঠিক ছিল।

বন্ধুরা, Love you mom…আমি তেমনটা পারিনা…আমার কাছে LOVE মানে ভাত গরম রাখতে সোয়েটার দিয়ে হটপট ঢেকে রাখা…
LOVE মানে পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও কিছু ভাত ছেড়ে উঠা!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

ঝড়ের দিন -শেষ পর্ব

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


আলতানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়। কদিন আগেও গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কলকাকলিতে স্কুলটার প্রত্যেকটা ঘর মুখর হয়ে উঠতো। অ আ ক খ ধ্বনি উড়ে উড়ে বেড়াতো স্কুলের প্রতিটি ঘরে। আর এখন স্কুলের প্রতিটি ইটে পাক খায় হানাদারদের দ্বারা নির্যাতিত মানুষগুলোর মরণ আর্তনাদ। জানালার কপাটে ঠুকে মরে ধর্ষিতাদের নিস্ফল কান্না। দেয়ালে লেপ্টে যায় হতভাগীদের অসহায় হাতের ছাপ।
দীপককে কখন ওরা স্কুলের একটা ঘরে বেঁধে রেখে গেছে টের পায়নি সে। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলো একটার অন্ধকার রুমে সিলিং থেকে ঝুলে থাকা দুটো দড়িতে হাত বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দীপক প্রথমে ভেবছিলো এ ঘরে সে একা, পরে অন্ধকারে চোখ একটু সয়ে আসতে বুঝতে পারলো তার পাশে আরেক জন একইভাবে বাঁধা। হঠাৎ মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো দীপকের। প্রচন্ড দূর্বল লাগছে। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো দীপকের। তার ভুলের জন্য পুরো মিশনটাই বোধহয় ভেস্তে যেতে যাচ্ছে। এমন সময় পাশের মানুষটা খুব মৃদু গলায় বলে উঠলো, ‘পানি! পানি! কেউ আমাকে একটু পানি খেতে দাও! ‘ কণ্ঠস্বরটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। দীপক ভালো করে কান পাতলো। এ তো তপেশ মাস্টারের গলা!
‘ মাস্টার সাব, ও মাস্টার সাব! ‘
তপেশ মাস্টার প্রথমে বুঝতে পারলেন না কোথা থেকে আসছে কণ্ঠটা। এই পিশাচের দঙ্গলে কে-ই বা তাকে এত সম্মানের সহিত ডাকবে! তবে সাড়া দিলেন!
‘ কে বলছো? তুমি কি এ ঘরেই আছো? ‘
‘ আমি দীপক, মাস্টার সাব! আপনার পাশেই বাঁন্ধা আছি। আপনার এই অবস্থা ক্যান, স্যার? ‘
তপেশ মাস্টার অতি কষ্ট করে একটু হাসলেন। সেই হাসিতে লেগে আছে ব্যথাহত হৃদয়ের উথলে ওঠা আবেগের পরশ। তারপর অসহায় গলায় বললেন, ‘ মিলিটারিরা ধরে নিয়ে এসেছে, নজর আলির নির্দেশে। আমার স্ত্রী, বোন এদের আমি রক্ষা করতে পারিনি। জানিও না এমুহুর্তে কি অবস্থায় আছে ওরা। তোমাকে ধরেছে কেন? ‘ তার চোখ খানিক উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ‘ তুমি মুক্তিবাহিনীর লোক? ‘
দীপক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ জে, মাস্টার সাব। ‘
হঠাৎ করে ভারী কাঠের দরজাটা খুলে গেলো। নজর আলি আর মেজর ওয়াসিমসহ কয়েকজন মিলিটারি ঘরে ঢুকলো। নজর আলির হাতে হারিকেন। সেই আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হয়ে উঠলো। দীপক খেয়াল করলো তপেশ মাস্টারের শরীরের সর্বত্র অত্যাচারের চিহ্ন। বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ছিলে ফেলা হয়েছে। রক্ত ঝরছে সেসব ক্ষত থেকে। আসন্ন অত্যাচারের কথা চিন্তা করে দীপকের পুরো শরীর খানিক কেঁপে উঠলো। মেজর ওয়াসিম খান সোজা এগিয়ে আসলেন দীপকের সামনে। তার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ তুম মুক্তি হ্যায়? ‘
পাশ থেকে তপেশ মাস্টার চিৎকার করে উঠলেন, ‘ কিচ্ছু বলো না, দীপক। একদম কিচ্ছু বলো না। পশুগুলো তোমা…’ কথা শেষ করতে পারলেন না তিনি। নজর আলি সজোরে একটা চড় কষিয়ে দিলেন তিনি। তপেশ মাস্টারের চুলের মুঠি ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, ‘ একদম চুপ, শালা মালাউন। তোর বউটারে তো সৈন্যরা ভোগ কইরা জঙ্গলে ফালায়ে রাইখা আসছে। আর তোর বোইনের মজা লুটসেন আমাগো মেজর। আর একটা কথা যদি কস, তাইলে তোর বউয়ের কাছে তোরে আর তোর বইনরে একলগে পাঠায় দিমু। ‘
নজর আলির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন তপেশ মাস্টার। তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই! তার অনাগত সন্তানও আর বেঁচে নেই। ছোট বোনটার ইজ্জত লুটে নিয়েছে পশুগুলো। আর কি লাভ বেঁচে থেকে! হতভাগিনী বোনটাকে সাথে নিয়ে মরে গেলেই বোধহয় সব জ্বালা জুড়িয়ে যায়! ফিসফিস করে শুধু বললেন, ‘ মেরে ফেল আমাকে। ‘
মেজর আবার জিজ্ঞেস করলেন দীপককে, ‘ তুম মুক্তি হ্যায়? ‘
হ্যাঁ না যা-ই বলুক পরিণতি কি হতে পারে জানা আছে দীপকের। তাই ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো কোনভাবেই সহযোগিতা করবে না। পিশাচদের সাথে কোন আপোস করা যাবে না। মুখ ভর্তি থুতু ছুঁড়ে মারলো সে মেজরের দিকে। মেজর মুখ খারাপ গাল দিয়ে উঠে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে সজোরে চড় মারলেন দীপককে । এমন সময়ে হঠাৎ বাইরে থেকে প্রচন্ড গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে এলো। দুম করে গ্রেনেডও ফুটলো একটা। ঘরে উপস্থিত সকলে চমকে উঠলো। এক পাক সৈন্য ছুটতে ছুটতে এসে জানালো মুক্তিরা এট্যাক করেছে এবং সংখ্যায় মনে হচ্ছে বেশ ভারী ওরা! দীপকের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আসাদ ভাইরা এসে পড়েছেন! দীপক বিজয়ী ভঙ্গিমায় হেসে মেজরকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ এবার কোথায় পালাবি? ‘ মেজর সৈন্যদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন। তারপর দীপকের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে নজর আলিকে সাথে নিয়ে নিজেও বেরিয়ে গেলেন। দীপকের চোখ তখন জ্বলছে। ক্রোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আজ পিশাচ বধ হবে। বহুদিন পর আলতানগরের আকাশে আবার স্বাধীন সূর্য উঠবে।
শিবু আর আসাদ যখন দীপকের বাড়িতে পৌঁছেছিলো তখন দীপকের মা-কে তারা বাড়ির উঠোনে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছিলো। জ্ঞান ফেরানোর পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে তাদের জানান যে মিলিটারিরা দীপককে ধরে নিয়ে গেছে। তারা তারপর সিদ্ধান্ত নেয় যে ওপারে ফিরে গিয়ে কমান্ডারকে জানানো যাবে। তারপর সম্ভব হলে একটা রেসকিউ অপারেশন চালাবে। পরবর্তীতে দীপকের মা-কে শান্ত করে খেয়াঘাটে পৌঁছে তারা দেখতে পায় তাদের পুরো গেরিলা দলটা খেয়াঘাটে অবস্থান নিয়ে আছে। কমান্ডার সাদেকও চলে এসেছেন। আসাদ আর শিবু অবাক হয়ে কমান্ডারের কাছে জানতে চেয়েছিলো – দলের একজন যোদ্ধার জন্য কমান্ডার এতবড় একটা ঝুঁকি নিলেন? কমান্ডার মুচকি হেসে বলেছিলেন, ‘ দেশটারে বাঁচাইতেই তো আমরা বেবাক্কে এক হইসি। ধইরা নাও দীপকই দেশ। কি? বাঁচাইবা না নিজের দেশরে? ‘ আসাদ অবাক তাকিয়ে ছিলো। কমান্ডারকে সবাইকে ডেকে পুরো মিশনটা বুঝিয়ে বললেন। চারদিক থেকে স্কুলটা ঘিরে ধরতে হবে। তারপর একসাথে সব দিক থেকে ফায়ারিং শুরু হবে।
প্ল্যান অনুযায়ী কমান্ডারের সাদেকের নেতৃত্বে গেরিলা দলের সবাই স্কুলের চারদিকে অবস্থান নিয়ে নেয়। আসাদ, শিবু সাথে আরো কয়েকজন অবস্থান নেয় স্কুলের সামনের দিকে। স্কুলের সামনে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকা কোন পাক সৈন্য কিচ্ছুটি টের পায়নি। তারপরই কমান্ডারের নির্দেশে শুরু হয়ে যায় গুলি বর্ষণ। স্টেনগান আর থ্রি নট থ্রি রাইফেলের একটানা গুলিবর্ষণে পুরো আলতানগর কেঁপে উঠলো। স্কুলের ভেতরে তখন মেজর দীপককে ইন্টারোগেট করছেন। পাক সৈন্যরা হামলার প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিতেই বেশ হিমশিম খেয়ে গেলো। তিন জন সৈন্য গোলাগুলি শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই লুটিয়ে পড়লো। বাকি সৈন্যরা ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। কাভার নিয়ে ওরাও পালটা গুলি করতে লাগলো। পুরোদমে শুরু হয়ে গেলো এক মরণপণ লড়াই। গেরিলা দলটা জীবন বাজি রেখে লড়ছে আলতানগরকে হানাদারমুক্ত করবে বলে। আর পাক বাহিনী দাঁতে দাঁতে চেপে লড়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিলিটারি ঘাঁটির দখল রাখবে বলে। দুই পক্ষই সংখ্যায় ভারি। যদিও পাক বাহিনীর হাতে আছে একটা মেশিনগান। স্কুলের বাউন্ডারি ঘেঁষেই বসানো হয়েছে সেটি। অনবরত গুলি বর্ষিত হচ্ছে তা থেকে। ইতিমধ্যেই দুজন গেরিলা সেই মেশিনগানের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। কমান্ডার সাদিক সবাইকে খানিক পিছিয়ে যেতে বললেন। মেশিনগানটা কব্জা করতে না পারলে ক্যাম্পের দিকে আগানো সম্ভব না। বাঁশঝাঁড়ে অবস্থান নিয়ে থাকা কমান্ডারের পাশেই ছিলো শিবু। সে বলে উঠলো, ‘ আমি দখল নিমু মেশিনগানের। ‘ কমান্ডার অবাক হয়ে বললেন, ‘ কি কইরা? ‘
এই প্রথম শিবুকে হাসতে দেখলেন কমান্ডার। দু হাতে দুটো গ্রেনেড নিয়ে শিবু বললো, ‘ এইগুলান দিয়া। আপনেরা শুধু আমারে কাভার দেন। ‘ কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই শিবু বাঁশঝাড় থেকে বেরিয়ে এলো। আঁকাবাঁকা করে দৌড় দিলো স্কুলের দিকে, ঠিক যেখানে মেশিনগানটার অবস্থান। কমান্ডার চিৎকার করে সবাইকে নির্দেশ দিলেন শিবুকে কাভার দিতে। সবাই একযোগে গুলি শুরু করলো। স্টেনগানের কড়কড় আওয়াজে কান পাতা দায়। ওদিক থেকে চাইনিজ এসএসজি দিয়ে পাক বাহিনীও সমানে জবাব দিয়ে যাচ্ছে। আর সেই নরকের ভেতর দিয়ে শিবু এঁকেবেঁকে দৌড়ে যাচ্ছে। গুলির নহর ছুটে যাচ্ছে তার পাশ দিয়ে। তবু একটা গুলিও স্পর্শ করছে না তাকে। যেন অসম সাহসী মৃত্যুভয়হীন এই মানুষটাকে পরম শ্রদ্ধায় পথ করে দিচ্ছে গুলিগুলো। মেশিনগানের সামনে বসে গুলি রিলোড করতে পাক সৈন্যটা অবাক হয়ে দেখলো এক বাঙ্গাল দু হাতে দুটো গ্রেনেড নিয়ে ঠিক তার দিকেই ছুটে আসছে। মেশিনগানের গুলি রিলোডিং ফেলে সে তার রাইফেলটা হাতে তুলে নিলো এবং সাথে সাথেই গুলি করে দিলো। তবে তার আগেই ‘ ও মা, তোর লাইগা ‘ চিৎকার দিয়ে শিবু একটা গ্রেনেড ছুঁড়ে দিয়েছে মেশিনগানের দিকে! বিকট আওয়াজ করে দুটো গ্রেনেড একসাথে ফুটলো। মেশিনগান গানার আর তার মেশিনগান টুকরো টুকরো হয়ে গেলো মুহুর্তে। অসম সাহসী শিবুর শরীরও টুকরো হয়ে মিশে গেলো তার বাংলা মায়ের শরীরের সাথে। সাথে সাথে কমান্ডার সাদেক চিৎকার করে সবাইকে আগে বাড়তে বললেন। ক্যাম্পের চারদিক থেকে যোদ্ধারা গুলি করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগলো। মেশিনগানটা উড়ে যেতে দেখেই পাক সৈন্যদের সাহস উবে যেতে শুরু করেছিলো, চারদিক থেকে গেরিলাদের এভাবে ছুটে আসতে দেখে অবশিষ্ট সাহসটুকুও আর রইলো না। নির্দিষ্ট কোন টার্গেট ভুলে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে লাগলো। ফলস্বরুপ বেশিরভাগ গুলিই যোদ্ধাদের আশপাশ দিয়ে চলে যেতে লাগলো। একটাসময় এসে পাক সৈন্যদের আর কেউই বেঁচে রইলো না ক্যাম্পটার দখল বজায় রাখার জন্যে। ভেতরে যারা ছিলো তারা সবাই মাথার উপরে হাত তুলে বেরিয়ে এলো। কমান্ডার সাদিক এগিয়ে আসলেন সামনে। সাত-আট সিপাহীকে সাথে নিয়ে মেজর ওয়াসিম খান সাদিকের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। তাদেরকে কড়া পাহারায় রেখে কমান্ডার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে স্কুলের ভেতরে ঢুকলেন। একটা ঘরের দরজা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকলেন। তপেশ মাস্টার আর দীপককে এ ঘরেই বেঁধে রাখা হয়েছে। কমান্ডার তাড়াতাড়ি দুজনের বাঁধন খুলে দিলেন। বাঁধন খুলে দিতেই তপেশ মাস্টার মূর্ছা গিয়ে কমান্ডারের শরীরের উপর ঢলে পড়লেন। কমান্ডার আস্তে করে তাকে মেঝেতে শুইয়ে দিলেন। তারপর তিনি দীপকের বাঁধন খুলে তাকে বাইরে নিয়ে এলেন। দীপককে দেখে আসাদসহ অনেকে ছুটে এলো। আসাদ উদ্বিগ্ন স্বরে দীপককে জিজ্ঞাসা করলো, ‘ দীপক, ঠিক আসো তুমি? পশুগুলান মারে নাই তো? ‘ দীপক ক্লান্ত স্বরে বললো, ‘ আমি ভালা আছি, আসাদ ভাই। আপনেরা মাস্টার সাহেবরে দেখেন। ‘ কমান্ডারের মনে পড়লো তিনি মাস্টারকে ঘরে রেখে এসেছেন। সাথে সাথে তিনি একজনকে নির্দেশ দিয়ে দিলেন মাস্টার-কে যেন বাইরে নিয়ে আসা হয়। ততক্ষণে স্কুলের প্রত্যেকটি ঘরের দরজা খুলে বন্দিদের বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। সবই যুবতী মেয়ে। তাদেরকে দিনের পর দিন এখানে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে। গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত ছিলো না কারো। উপস্থিত গেরিলা দলের প্রত্যেকে তাদের নিজেদের শার্ট-গেঞ্জি খুলে তাদেরকে ঢেকে দিয়েছে। মানসিক আর শারীরিক অত্যাচার হাঁটার শক্তি পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছে তাদের। দুজন তাদেরকে নিয়ে গ্রামের দিকে আগালো। আলতানগত যে শত্রুমুক্ত হয়ে গেছে, গ্রামবাসীকে সেকথা তারা-ই জানিয়ে দেবে।
তপেশ মাস্টারকে ধরে ধরে যখন স্কুলঘরের বাইরে নিয়ে আসলো, তিনি তার বোনের খোঁজ জানতে চাইলেন। কমান্ডার সাদিক গম্ভীর মুখে বললেন, ‘ মনডারে শক্ত করেন মাস্টার। ‘ কমান্ডারের কথা শুনে তপেশ মাস্টার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন তার দিকে। এমন সময় ভেতর থেকে দুজন মুক্তিযোদ্ধা একটি মেয়ের লাশ ধরাধরি করে নিয়ে এলো। তারা সেই লাশটা পরম যত্নে শুইয়ে দিলো বারান্দার মেঝেতে। তপেশ মাস্টার এগিয়ে আসলেন। এ যে তার বোনেরই লাশ। তিনি আস্তে করে বসে পড়লেন তার বোনের পাশে। তারপর শান্ত গলায় কমান্ডারের কাছে জানতে চাইলেন, ‘ কিভাবে? ‘ কমান্ডার ধরা গলায় বললেন, ‘ পরনের শাড়ি দিয়া। পশুগুলোর অমানুষিক অত্যাচার আর নিতা পারেনি বেচারি। ‘ কমান্ডারের কথা শোনার পর তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তপেশ মাস্টার শান্তভাবে তার বোনের মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। কমান্ডার আর দাঁড়াতে পারলেন সেখানে। আস্তে করে সরে আসলেন। মাটিতে হাঁটু গেড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসা আত্মসমর্পণকারী পাক সৈন্যদের দিকে এগিয়ে এলেন। মেজর ওয়াসিম খানের সামনে এসে ডাক দিলেন তার এক সহযোদ্ধা-কে। শিক্ষিত লোক তিনি। শহরের কলেজে শিক্ষকতা করতেন, যুদ্ধের দামাম বাজতেই দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র কাঁধে নেমে পড়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। কমান্ডার তার হয়ে মেজরের সাথে কথা বলতে অনুরোধ করলেন তাকে।
তিনি কমান্ডারের কথা মতো মেজরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ ডু ইউ ফিল গিলটি ফর হোয়াট ইউ হ্যাভ ডান, মেজর? ‘
মেজর ঠান্ডা গলায় জবাব দিলেন, ‘ নো। বাট আই রিপেন্ট ওয়ান থিংগ। ‘
ভদ্রলোক তার মাথায় চেপে বসা রাগটা কোনরকমে ঠেলে সরিয়ে রেখে জানতে চাইলেন, ‘ হোয়াট? ‘
মেজর কুৎসিত একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘ ইফ আই কুড ফাক মোর ওব ইওর গার্লস! ‘ আর সহ্য করতে পারলেন সেই শিক্ষক। অন্তরের সব ঘৃণা এক করে হাতের মুঠোয় এনে সজোরে এক ঘুষি মেরে বসলেন মেজরকে। মেজরের নাক দিয়ে রক্তের ফোয়ারা ছুটলো। কমান্ডার তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে সরিয়ে নিয়ে গেলেন ভদ্রলোককে।
ভোর হবার খানিক আগে, কমান্ডার সাদিকের আদেশে মেজর ওয়াসিমকে স্কুলের পেছনে নিয়ে গিয়ে একটা বড় আমগাছের সাথে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাকি সৈন্যদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটকে রাখা হয় স্কুলের একটা ঘরে। পরে সুযোগমতো অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে। পরিবেশ একটু শান্ত হতেই সবার মনে পড়লো নজর আলির কথা! আশেপাশের দশ-বারোটা গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত রাজাকারটা কোন ফাঁকে যেন পালিয়ে গেছে। কমান্ডার সাদিকের নেতৃত্বে গেরিল দলের একাংশ নজর মেম্বারের বাড়িতে পৌঁছুলো। কমান্ডার ঘরের বাইরে থেকে জোরে ডাক দিলেন, ‘ নজর আলি! নজর আলি, তুমি বাইর হয়া আহো। আলতানগরে স্বাধীন মাটিতে আইজ তোমার বিচার হইবো। ‘ খানিকক্ষণ পর সদর দরজা খুলে গেলো। জোহরা বেগম বেরিয়ে এলেন ভেতর থেকে। ঘোমটার আড়াল থেকে আশ্চর্য শান্ত গলায় তিনি বললেন, ‘ তিনি বাড়িতে নাই। ‘ কমান্ডার একটু রেগেই বললেন, ‘ অবশ্যই সে বাড়িতে আছে। বাইর হইতে কন তারে। ‘
জোহরা বেগম বললেন, ‘ তিনি গোয়ালঘরে আছেন। যান। ‘
কমান্ডার কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলেন এই মহিয়সী নারীর দিকে। তারপর তার সহযোদ্ধাদের আদেশ দিলেন নজর আলিকে ধরে আনার জন্যে। কিছুক্ষণ বাদেই তারা নজর আলি-কে টানতে টানতে নিয়ে এলো। নজর আলির দুচোখে মৃত্যুভয় স্পষ্ট। কমান্ডার ঘৃণাভরে কণ্ঠে বললেন, ‘ উপরে বিচার করবেন আল্লাহ, আর নিচে তোমার বিচার করবো এই আলতাগরের মানষে, যাগোর লগে বেঈমানি করসো তুমি। ‘ কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা নজর আলিকে তুলে দেয় ক্রোধের আগুনে জ্বলতে থাকা গ্রামবাসীদের হাতে। দা, বটি, কুড়াল কি দিয়ে তারা আঘাত করেনি নজর আলিকে! শেষপর্যন্ত যখন গ্রামবাসীদের ক্রোধের আগুন নিভলো, তখন নজর আলির শরীরটা একদলা মাংসপিন্ড ছাড়া আর কিছুই না। ততক্ষণে চারপাশ আলো হয়ে গেছে। গেরিলা দলটা স্কুলটাকে তাদের অস্থায়ী ঘাঁটি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মুসেগুল থেকে এসে যদি হানাদাররা আক্রমণ করে, তাই শক্ত অবস্থান নিতে হবে তাদের। অনেক রক্ত ঝরেছে আলতানগর মুক্ত করতে। সেই রক্তের প্রতিটি ফোঁটার সম্মান তাদের বাঁচিয়ে রাখতেই হবে।
আজ অনেকদিন পর আলতানগরের আকাশে মেঘের ভেলা সরে গিয়ে ঝকঝকে লাল সূর্য উঠেছে। সেই চোখ ধাঁধানো আলোয় একজন নিঃসঙ্গ মানুষ একা বসে আছে নদীর ধারে। মানুষটা তপেশ মাস্টার। নদীর ওপারে দৃষ্টি তার। কিংবা শুধু চোখটাই সেখানে ফেরানো, দৃষ্টি নেই তাতে। সূর্য পরম ভালোবাসায় তার পবিত্র আলো বুলিয়ে দিতে লাগলো মানুষটার সারা গায়ে। সব গেছে তার, শুধু প্রাণটা আছে। ঠিক যেন এই অভাগা দেশটার মতো। সব যাচ্ছে তার, শুধু ধুকপুক করা প্রাণটা আছে। একদিন এই প্রাণ থেকে আবার সব হবে। নকূল বাউলরা আবার এই আলতানগরের পথে হেঁটে বেড়াবে। শিবুরা আবার পরম ভালোবাসায় তার দেশমায়ের জন্য জীবন বাজি রাখবে। তপেশ মাস্টারের হতভাগিনী বোনটার মতো ষোড়শীরা আবার আলতানগরের পথে হাসতে হাসতে ছুটে বেড়াবে। ঝড়ের দিন শেষ হয়েছে। এখন প্রতিদিন সূর্য উঠবে, উঠবেই উঠবে।

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

আমার শরীর, আমার অংশ, আমার স্বপ্ন!

ডা.সংগীতা হালদার রায়


ছোট খাট কিছু কম্পলিকেশন ছিল , ছিল মিস ক্যারিজের হিস্টরী, আর বাবুর মাথাও বেকে ছিল । তাই নরম্যাল ডেলিভারির আশা ছেড়ে দিয়ে সিজারিয়ান সেকশনের জন্যে চলে গেলাম CMH এ নির্ধারিত দিনের আগের দিনই।

মস্তিষ্কের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা হল খুব চাপের সময়ে সে অন্য কোন পুরাতন স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় বা অন্য কোন কিছু চিন্তাতে নিউরনগুলোকে কাজে লাগিয়ে ফেলে।

তাই ভর্তির সময়ে যখন আমার চিন্তিত বা আশংকিত হবার কথা ছিল পরদিন কি হবে বা সব কিছু ঠিক ভাবে হবে কিনা তখন আমি প্যালেস্টাইনি এক রোগীনির ভর্তি হবার পুরো প্রক্রিয়াতে মনোনিবেশ করে ফেললাম।

বেচারা ভীনদেশে বাবা হতে গিয়ে প্রচন্ড ভীত, ইন্টার্ন ডাক্তারদের কিছুতেই রোগীনিকে পরীক্ষা করতে দেবেন না , বলছেন ‘ আই ওয়ান্ত অনলি র‌্যাঙ্ক দক্তর’ । হিস্টরী নিয়ে রোগীকে রেডি করে সিনিয়রকে ডাকাই ইন্টার্নদের প্রথম দায়িত্ব, সে বেচারারা ভেবাচেকা খেয়ে একবার উনাকে বুঝাচ্ছিল, একবার রোগীকে বুঝাবার চেষতা করছিল, আরেকবার সিনিয়র নার্সকে জিজ্ঞেস করছিল সিনিয়র ডাক্তারকে ডাকা ঠিক হবে কিনা।

মহিলার প্রতিক্রিয়া দেখতে গিয়ে দেখি ছিপছিপে লম্বা ভদ্রমহিলা কিঞ্চিত দুশ্চিন্তা নিয়ে স্বামীর কান্ড দেখছেন কিন্তু কিছু বলতে চেয়েও পারছেন না। মহিলা এতোই ছিপছিপে ছিলেন যে নিজের বিশাল পেটের দিকে তাকিয়ে মনে হল, ” আরে আমার বাচ্চাটা কি পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে আর ইনারটা এটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাকি? ”

ভেবেই আনমনে ফিক করে হেসে দিয়েছিলাম, মহিলা তো আর জানতেন না যে আমি ঐ অবস্থায় এরকম বিচিত্র কথা ভেবে হাসছিলাম; কাজেই উনি সৌজন্য বিনিময়ের হাসি ফেরত দিলেন আমায়। আমি সংযত হয়ে বসলাম লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে।যাহোক নিজের ক্যাবিনে এলাম। ঘর , বাথ্রুম , বারান্দা দেখে মোটামুটি সন্তুষ্ট হয়ে পরদিন কি পরে ওটিতে যাব , বাচ্চা কি পরবে, কোন কাঁথায় তাকে বরণ করা হবে সব কিছু একবার মা আরেকবার স্বামীকে বুঝিয়ে দিলাম ।

বুঝতে পারছিলাম অস্থিরতা কাজ করছিল ওর মাঝে, ছেড়ে যেতে চাইছিল না আমায়, কারণ আমার মায়ের কোমরে ফ্যাকচার আছে, হঠাত করে হাসপাতালের চিকন বেড থেকে ভারি শরীর নিয়ে ওঠা নামা করা ইত্যাদি কাজে অসুবিধার আশংকা করছিল সে। কিন্তু CMH এর নিয়ম ওটাই, কিছু করার ছিল না। বলে গেল ঘুমাতে আর সাথে দিয়ে গেল গল্পের বই, খুবই পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তের কাজ ছিল সেটা কিন্তু আমার স্নায়ুকে শুধু বই-ই শান্ত রাখতে পারে , অগত্যা!মা কিছুক্ষণ ঘুমাতে বলে ঘুমিয়ে গেল , আমি গল্পের বইতেও মনযোগ দিতে পারছিলাম না আর অস্থিরতায় ঘুমও আসছিলনা। পেটে হাত দিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম অনাগত সন্তানের কথা ভেবে, কথা বললাম বাবুটার সাথে খানিক্ষণ , অতঃপর ঘুমিয়ে গেলাম।

কিন্তু নতুন জায়গায় চিকন বেডে ছাড়া ছাড়া ঘুম হচ্ছিল, বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছিল । বেড়ালের ডাকে, গাড়ির চাকার শব্দে, এমনকি ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকেও । আবার ঘুমাবার চেষ্টা করছিলাম , নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম যে আমার ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক রাখার জন্যে আমার ঘুমাতে হবে। আমার বাবুকে সুস্থ রাখতে আমাকে ঘুমাতে হবে।পরদিন ঘুম ভাংলো অনেক ভোরে সকালে উঠে দেখি মা স্নান সেরে নিজে নিয়ে আসা স্যাভলন দিয়ে ঘর , বারান্দা , এমনকি বাথরুমও মুছে ফেলেছে। আমি উঠতেই সাত তাড়াতাড়ি করে নিজের ফ্যাকচারড কোমর নিয়েই বেড থেকে নেমে এলো আমায় ব্যালান্স করে নামাতে । ধীরে ধীরে নেমে বাথরুমে গিয়ে মুখ ধোবার সময়ে নিজের চিন্তাক্লিস্ট চেহারাটা আয়নায় দেখে নিজেরই কেমন যেন লাগল । মনে হল আমার বাচ্চাটা প্রথমবার এমন ভাবে দেখবে আমায়!
বেড়িয়ে এসে সুন্দর করে নিজের চিল আচড়ে দুইটা বেনি করলাম। হালকা করে বিবি ক্রিম , পাউডার কাজল , হাতে পায়ের নখে নেইল পলিশ লাগালাম। তবুও দেখি সময় কাটেনা, স্বামীও আসেনা। মা তখন গীতা পড়ে যাচ্ছে মন দিয়ে। মাকে খেয়ে নিতে বলে আমার নিজের গীতাটা খুললাম । সাড়ে সাতটার দিকে আয়ারা চলে এলো আমাদের রুম মুছে দিতে আর আমাকে রেডি করে নিয়ে যেতে । আমার চুলের রাবার ব্যান্ড খুলে গজ ফিতা দিয়ে আবার বেঁধে দিল, কেন কে জানে ! আমার মনে হচ্ছিল যে ওদের করার কিছু নেই বলেই হয়তো অমন করেছিল। কারণ ঘর মোছা আর আমায় হালকা সাজুগুজু দেখে ওরা দুজন গা টেপাটেপি করে হেসেছিল।যখন নিয়ে যেতে চাইলো মা তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিল একটু, কারণ বাবা বা তার জামাই কেউই তখনো আসেনি। এদিকে ‘ম্যাডাম বলেছে’ বলে ওরা আমাদের আটকে ফেলেছে । ফ্যামিলি ওয়ার্ড থেকে ওটিতে যাবার জন্যে এম্বুলেন্সে আরো তিন বা চারজন হবু-মা শুকনো মুখে উঠে বসে আছেন , তাড়া দিচ্ছিল ওরা তাই। হেসে মাকে প্রনাম করে যখন গাড়িতে উঠলাম তখন শুকনো চোখেও ঝাপসা দেখছিলাম দুশ্চিন্তায়, সামনের কারো চেহারা দেখি নি আমি । গাড়ির পেছনের কাঁচে মাকে দেখছিলাম ব্যস্ত হয়ে মোবাইল চাপতে।

ওটির কাছে পৌঁছে দেখি মা আর স্বামী দুজনেই এসে গিয়েছে। ওয়েটিং রুমে কিছুক্ষণ বসানো হল আমায়। জানতে পারলাম বাবা নাকি অনেক আগেই পৌঁছে কোন ওটিতে অপারেশন হবে , কে করবেন তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছে।

নিজের প্রাক্তন কাজের জায়গাতে মেয়ের কোন অসুবিধা হবেনা এমনটাই আশা ছিল তার। ফোনে শাশুড়িমা- শশুরের কাছে আশীর্বাদ চেয়ে বিদায় নিলাম ওটিতে ঢুকে যাবার আগে । মা আর স্বামী দুজনেই চিন্তিত মুখে আর ছলছল চোখে বিদায় জানালো আমায়।

হেঁটে যেতে শুরুতেই আমার জুতো খুলে নিতে বললো কিন্তু অন্য কোন জুতো দেয়া হলনা। হাসপাতালের ময়লা জীবাণু কল্পনা করে খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল , ডাস্ট এলার্জির জন্যে খালি পায়ে হাঁটতে আমার ভালোও লাগছিলনা আর ঐ ভারী শরীরে হাঁটতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল । হাঁপাচ্ছিলাম, ঘেমে গিয়েছিলাম আর অনুরোধ করছিলাম একটা ট্রলিতে নিতে। কিন্তু আয়া ‘এইতো আরেকটু’ বলে বলে নিয়ে যাচ্ছিল তো যাচ্ছিলই। দোতলায় উঠে অন্য একটা ওটির বাইরের ট্রলি পাওয়া গেল অবশেষে একটা।ওটিতে নিয়ে ক্যানুলা করিয়ে যখন ক্যাথেটেরাইজড করানো হচ্ছিল , প্রথমবার বুঝতে পারলাম আমার রোগীনিদের কেন অত অস্বস্তি লাগতো । সব সময় রোগীদের কাউকে নরম স্বরে আর কাউকে গরম হয়ে বলতাম “শুনেন আমরা প্রতিদিন ২০/২৫ জনকে এভাবে ক্যাথেটার পরাই, কাজটা ভালোভাবে করার চেষ্টা করি তখন। রোগীর দিকে কেউ অন্য চোখে তাকায় না”।

একই কথা আমার বেলায়ও প্রযোজ্য ছিল, কিন্তু মন মানছিলনা কিছুতেই ।ওটি বেডে শোয়ানোর পরে এনেস্থেটিস্ট আমাকে বলতে শুরু করলেন তিনি আমাকে ছোটবেলায় কবে কখন দেখেছেন, বাড়িয়ে দিলেন আমার অস্বস্তি । বাবাকে নিয়মের দোহাই দিয়ে চলে যেতে বললেন, আমি বাবার দিকে তাকিয়ে হেসে সাহস দিলাম যে আমার অসুবিধে হবেনা । এনেস্থেসিয়া হবার পরে যখন অপারেশন শুরু হল, মনে হচ্ছিল আমি সবই হাল্কা হাল্কা টের পাচ্ছিলাম , নিজের confusion দূর করতে একবার জিজ্ঞাসাও করে ফেললাম ‘ আঙ্গকেল আমি তো সবই বুঝতে পারছি মনে হচ্ছে, এমনই কি হয়?’ , উনি বললেন ‘তোমার মনের ভুল এটা’।

এক পর্যায়ে পাশে তাকিয়ে দেখি ওটি দরজার চৌকো কাঁচে বাবার মুখ দেখা যাচ্ছে। সেই মুখ হঠাত হেসে উঠতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯।৪৫ মিনিট বাজছে । মাথার কাছে এনেস্থেটিস্ট আংকেল হেসে বললেন তোমার মেয়ে হয়েছে, এখুনি মুছিয়ে নিয়ে আসবে।আমি বারবার তাকাচ্ছিলাম যেদিকে মোছাতে নিয়ে গেল সেদিকে , চিন্তা করছিলাম ওরা কি আমার পছন্দের জামাটা মেয়ের পরাবার জন্যে দিতে পেরেছে? কাঁথাটা দিতে পেরেছে তো? তোয়ালে দিয়েছে? আমি তো একটাই কাঁথা রেখে এসেছিলাম, যদি আরো লাগে ওরা সবাই পারবে তো দিতে?

ভাবতে ভাবতেই আমার সবুজ শাড়ির কাঁথায় মোড়ানো লাল টুকটুকে জামা পরা একটা ছোট্ট পুতুলকে পাশে নিয়ে এলো আয়া। শুনেছিলাম হাসপাতালে বাচ্চা বদলে যায় , খুব ভাল করে দেখে চিনে রাখার চেষ্টা করলাম মেয়েকে যেন বদলে না দেয়।

“আপনার ধর্মে আলহামদুলিল্লাহ’র মত যেইটা আছে সেইটা বলেন” বলে আয়া আমার গালে ছুঁইয়ে দিলো আমার সন্তানের গাল । আমার ডান গালে হালকা ঠান্ডা নরম স্পর্শে তখন অনেক বিস্ময় আর অনেক অনেক আনন্দ ! আমার শরীরের অংশ , আমার স্বপ্নের টুকরা আমার আমার চোখের সামনে ।

বিশ্বাস হচ্ছিল না যেন এই বাচ্চাটাই আমার শরীরে ছিল ! সত্যিই এ-ই ছিল তো (যদিও চিকন চোখ আর চাপা নাকে মেয়ের বাবার চেহারার আদলে সন্দেহ করবার মত আদৌ কিছু ছিলনা) । মায়া , ভালোবাসা, প্রতীক্ষা শেষের খুশী নেমে আসছিল চোখ বেয়ে !এরপরেও ঐ ওটিতেই আবারো কাঁদতে হয়েছিল, কাঁদতে কাঁদতে ঘামতে হয়েছিল এনেস্থেশিয়ার ঔষধের কার্যকারীতা শেষ হয়ে যাওয়ায় । কিন্তু সারাক্ষণ ঈশ্বরের কাছে বাঁচিয়ে রাখবার প্রার্থনা করছিলাম শুধু মেয়ের কাছেই ফিরে আসবার আকাংক্ষায়। প্রথম দেখায় কিংবা দেখারও আগে যাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম তাকে এরো একবার দেখবার আকাংক্ষায়।

ফরমাল লেকচারার
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

ঝড়ের দিন: পর্ব-৪

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


গাঁয়ে মিলিটারি ঢোকার পর থেকে সন্ধ্যা হলেই পুরো গ্রাম শ্মশানঘাটের মতো নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু কিছু বাড়ি থেকে মিটিমিটি কূপির আলো দেখা যায়, বাকি বাকিগুলোতে তাও চোখে পড়ে না। জীবিত মানুষগুলো বেঁচে থাকার তাগিদে মৃতের ছদ্মবেশ ধরে। সময়টাই এমন। আলোতেও ভয় কাটে না বরং চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। মিলিটারিরা যদি আলো দেখে বাড়িতে এসে কড়া নাড়ে? তাই পুরো বাড়ি অন্ধকার করে রেখে মানুষগুলো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁপে। প্রার্থনা করে আরেকটা সূর্যোদয়ের।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে। চারদিকে লালচে অন্ধকার। আকাশের দিকে তাকালে একটা দুটো তারা চোখে পড়ছে। খেয়াঘাটে কেউ নেই। শুধু দুটো নৌকা দুলকি চালে ভাসছে। খুঁটির সাথে বাঁধা সেগুলো। ভোর হলে পরে মাঝিরা এসে ভাসাবে। শুধুমাত্র একটা নৌকা খুব ধীরে আলতানগরের দিকে এগিয়ে আসছে। দূর থেকে তাকালে শুধু দাঁড় বাইতে থাকা মাঝিকে দেখা যাবে। ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাবে না যে নৌকার পাটাতনের নিচে আরো তিনটে মানুষ লুকিয়ে আছে। এরা হলো আসাদ, দীপক আর শেবু। একটা সশস্ত্র গেরিলা দলের রেকি টীম তারা। আজ রাতে আলতানগরে একটা গেরিলা এট্যাক হবে। রেকি দলের কাজ হলো শেষবারের মতো সবকিছু দেখে গিয়ে রিপোর্ট করা। নদীর ওপারেই বাকি যোদ্ধারা অপেক্ষা করে আছে। আসাদ আস্তে করে পাটাতন থেকে বেরিয়ে এলো। সুমন মাঝি অভ্যস্ত হাতে দাঁড় বাইছে। এই নদী তার নিজের হাতের তালুর মতো চেনা। রাতের অন্ধকারেও চোখ বন্ধ করে খেয়াঘাটে নৌকা ভেড়াতে পারে সে। আসাদ ছইয়ের ভেতরে ঢুকে পড়লো। পাড় থেকে কেউ লক্ষ রাখলে মাঝি ছাড়া আর কাউকে দেখবে না। তারপর সেখান থেকেই কথা বলতে লাগলো সুমনের সাথে।
‘ সুমন ভাই, গ্রামের অবস্থা কিরাম? ‘
‘ ভালা নারে ভাই। পাকিস্তানি বেজন্মাগুলা মশামাছির মতো মানুষ মারে। বাড়ি থেকে মেয়েদের উঠায়া ক্যাম্পে নিয়া যায়। নজর কুত্তাটায় হেগোরে পথ দেখায়। নজর আর মিলিটারির ভয়ে গেরামের মানুষ ঘর থিইকানই বাইর হয় না। দিনে যাও বা বাইর হয়, রাইতে তো পুরা গেরাম শ্মশান হয়া যায়। এশার ওয়াক্তে মসজিদে এক কাতার মানুষও হয় না! ‘
বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আসাদ। ছমাস আগে যখন ঘর ছেড়েছিলো তখন মুসেগুলেও পরিস্থিতি এমনই ছিলো। বরঞ্চ আরো খারাপ ছিলো। শুক্রবার হাট বেলায় মুসেগুল বাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো পশুগুলো। তখন বাবার সাথে বাজারেই ছিলো আসাদ। হঠাৎ করে ‘ আগুন লাইগা গেসেরে ‘ চিৎকার শুনে আর সবার মতো সেও দৌঁড়েছিলো রুদ্ধশ্বাসে। পেছনে ব্রাশ ফায়ারের আওয়াজ। দাউ দাউ করে জ্বলছে দোকানপাট। মানুষজন চেঁচাতে চেঁচাতে দৌঁড়ুচ্ছে। এদিন যেন নরক নেমে এসেছিলো সেখানে। দৌড়ুতে দৌড়ুতে কখন যে বাজার থেকে বহুদূরে চলে এসেছে খেয়াল করতে পারেনি আসাদ। আব্বা কোথায় গেলেন! সাথে সাথে দৌড়ে বাজারে ফিরেছিলো সে। জন্মদাতা পিতার অর্ধদগ্ধ লাশটা পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠতে গিয়েও থেমে গিয়েছিলো আসাদ। পিতার অর্ধদগ্ধ লাশটা কাঁধে তুলে নিয়ে চুপচাপ হাঁটা দিয়েছিলো সে। যত্রতত্র পড়ে থাকা দগ্ধ, অর্ধদগ্ধ, ব্রাশফায়ারে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া লাশগুলো টলাতে পারেনি তাকে। শত মানুষের হাহাজারিতে ভারি বাতাসে খুব অল্প অল্প করে কিছু দীর্ঘশ্বাস পড়ছিলো তার। সেই দীর্ঘশ্বাসগুলোর সাথে বেরিয়ে যাচ্ছিলো সব আবেগ। শুধু রয়ে গেছিলো বুকভর্তি ঘৃণা। নিজ হাতে বাবাকে দাফন করে বাড়ি ফিরেছিলো আসাদ। শোকে কাতর মা আর ছোট ভাই-বোন দুটোকে নিজে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলো মামাবাড়িতে। তারপর কদিনের ভেতরেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে গিয়েছিলো ইন্ডিয়া। দু সপ্তাহ হলো সেখান থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন প্রশিক্ষিত গেরিলা হিসেবে আবার নিজ জন্মভূমিতে ফিরেছে আসাদ। তার পিতার মতো এমন হাজারো পিতার মৃত্যুর বদলা নিতে হবে তাকে। সন্তানহারা হাজারো মায়ের চোখের পানির বিনিময়ে স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্যটা ছিনিয়ে আনতেই হবে।
সুমন মাঝি অভিজ্ঞ হাতে নৌকা ভিড়ালো ঘাটে। আসাদ আস্তে করে ডাক দিলো বাকি দুজনকে। দীপক আর শিবু তাদের স্টেনগান হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো। মাঝিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে আসাদ তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে সামনের বাঁশঝাড়ে ঢুকে গেলো। ঘন বাঁশঝাড়ে বসে তারা আরেকটু রাত হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো। আসাদ চুপচাপ পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে। শিবু একটা বিড়ি ধরিয়ে অন্য হাতে ধরে রাখা স্টেনগানটার দিকে তাকিয়ে রইলো। নির্লিপ্ত মানুষ সে। কখনো মুখ দেখে তার মনের ভাব ধরতে পারা যায় না। আসাদ বুঝতে পারে না এই মানুষটাকে। নিজের সম্পর্কে কাউকে কিছু বলে না শিবু। শুধু নির্লিপ্ততার মূর্তিমান উদাহরণ হয়ে অস্ত্র কাঁধে হেঁটে বেড়ায় যতদূর শত্রুপক্ষের সীমানা কাঁটাতার দিয়ে আলাদা করে দেওয়া। দীপক কিছুক্ষণ থেকেই কেমন উশখুশ করছে। নৌকায় শিবুর সাথে বসে থাকার দরূণ কথা বলার সুযোগ পায়নি বেচারা। এখন কথা বলার একটা ছুঁতো খুঁজছে। দীপক দলের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সদস্য। তার কৈশোরসুলভ চঞ্চলতায় পুরো মুক্তি ক্যাম্প মাতিয়ে রাখে সে। আসাদ ব্যাপারটা খেয়াল করে জানতে চাইলো, ‘ দীপক, কিছু বলবা? ‘
‘ আমরা রওনা হমু কখন? ‘
‘ আরেকটু অন্ধকার নামুক, তারপর। ‘
দীপক কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো। মায়ের সাথে একবার দেখা করে আসতে মন টানছে তার। মুখ ফুটে সেকথা কি করে বলে! আরেকটু বাদেই তাদের মিশন। আসাদ বুঝতে পারলো। সব আবেগ সেদিন চলে যায়নি তার। দু, আপনজনের অনুপস্থিতির বেদনা সবই পোড়ায় তাকে। আসাদ কোমল স্বরে দীপককে বললো, ‘ মায়ের লাইগা মন টানে? ‘
দীপক মাথা নিচু করে আস্তে করে শুধু ঘাড়টা উপর-নিচ করলো। আসাদ তাকে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলো। তবে শর্ত দিয়ে দিলো যে খুব সাবধানে থাকতে হবে এবং এক ঘণ্টার ভেতরেই চলে আসতে হবে। খুশিতে দীপকের মুখটা চিকচিক করে উঠলো। তারপর স্টেনগানটা শালের ভেতরে রেখে বেরিয়ে এলো বাঁশঝাড় থেকে। সতর্ক পায়ে হাঁটা দিলো বাড়ির দিকে। হতভাগিনী মা তার পথ চেয়ে আছেন।
দীপক যাওয়ার ঘণ্টাদেড়েক হয়ে গেছে। এখনো আসার নামগন্ধ নেই। আসাদ অধৈর্য হয়ে পড়লো। ধরা পড়ে গেলো না তো ছেলেটা? সে শিবুকে জানালো তার আশংকার কথা। শিবু নির্লিপ্ত মুখে বললো, ‘ আমারো তাই মনে হইতেসে। ‘ সদা নির্লিপ্ত শিমুর কণ্ঠে শংকার আওয়াজ পেয়ে আসাদের ভয় লেগে উঠলো। সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে। দীপকের বাড়ি পর্যন্ত যাবে তারা, গিয়ে দেখবে দীপকের আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন। আসাদ প্রথমে সুমন মাঝিকে গিয়ে জানালো যে, যদি ঘণ্টাখাকের মধ্যে তারা কেউ না ফিরে তবে যেন সে ওপারে গিয়ে কমান্ডারকে খবরটা দেয়। তখন তিনি যা ভালো বুঝবেন তা করবেন। তারপর শিবুকে সাথে নিয়ে ঝোঁপঝাড় ঘেষে দীপকের বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো আসাদ। ছেলেটার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না সে।
দীপকের মা তার বুকের মানিককে কাছে পেয়ে আনন্দে একদম আত্মহারা হয়ে গেলেন। একবার হাসতে হাসতে ছেলের সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দেন, তো আরেকবার বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদেন। ছেলে বেঁচে আছে এটাই যেন তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না। দীপক অনেক কষ্টে তার মা-কে শান্ত করলো। বুঝিয়ে বললো যে আজ রাতে তাদের একটা মিশন আছে। তাই হাতে একদমই সময় নেই। বিচলিত মা শান্ত হলেন। ছেলের জন্য গরম গরম ভাত রাঁধতে বসে গেলেন। দীপক মায়ের পাশে বসে তার গেরিলা দলের গল্প করতে লাগলো। এমন সময় বাইরে কে যেন কড়া নাড়লো। সাথে সাথে দীপক স্টেনগান বের করে ফেললো। ফিসফিস করে তার মা কে বললো, ‘ আমি খাটের নিচে লুকাইতেসি। তুমি বাইর হয়া কও কেউ নাই ঘরে। ‘ পুত্রের বিপদের আশংকায় কাতর মা দরজা ঠেলে বাইরে বের হলেন। নজর আলি আর বেশ কজন মিলিটারি দাঁড়িয়ে আছে!
‘ ঘরে কে? ‘
দীপকের মা ঘোমটার আড়াল থেকে জবাব দিলেন, ‘ কেউ নাই। আমি একলা।’
নজর আলির কাছে খবর এসেছে গ্রামে মুক্তি ঢুকেছে। আর গ্রামের যেসব ছেলের নাম মুক্তি সন্দেহে লিস্টে তোলা আছে, সেখানে দীপকের নামও আছে। তাই নজর আলি দীপকের মায়ের কথা বিশ্বাস করলেন। তিনি ইশারা করতেই দুজন সৈন্য সামনে এগিয়ে এলো। তারপর বন্দুকের বাঁট দিয়ে এক বাড়ি মেরে মাটিতে শুইয়ে দিলো। মহিলা আর্তচিৎকার করে উঠলেন। নজর আলি তার বুকে একটা লাথি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ দীপক কুত্তার ছাওটা কই? ‘
মহিলা মুখ ভর্তি থুতু ছুড়ে মারলেন নজর আলির মুখে। ক্ষেপে গিয়ে নজর আলি আরেকটা লাথি মারলেন বৃদ্ধাকে। ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলেন মহিলা। আর সহ্য করতে পারলো না দীপক। স্টেনগান হাতে দৌড়ে চলে আসলো বাইরে। ‘ বেজন্মার বাচ্চা ‘ বলে স্টেনগান দিয়ে বাড়ি মেরে দিলো নজর আলি। নজর আলি বাড়ি খেয়ে পড়ে যেতে যেতে চিৎকার করে উঠলেন, ‘ গোলি মাত করো। জিন্দা পাকড়াও ইসে। ‘ পাক সৈন্যরা ঘিরে ফেললো দীপককে। নজর আলি মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় চিৎকার করে বললেন, ‘ একদম নড়বি না, দীপক। নইলে তোর মা রে মাইরা ফালামু। ‘ কথাটা শুনে দীপক তার হাতের স্টেনগান ফেলে দিলো। সাথে সাথে এক সৈন্য বন্দুকের বাঁট দিয়ে বাড়ি মেরে দিলো দীপকের মাথায়। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো দীপক। তারপর সেই অজ্ঞান দেহকেই মরা কুকুরের মতো টেঁনে হিঁচড়ে ক্যাম্পের দিকে নিয়ে চললো। সবার আগে নজর আলি। স্টেনগানের আঘাতে মাথার চামড়া কেটে রক্ত পড়ছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। গ্রামে মুক্তি ঢুকেছে! তিনি এতদিন শুধু শুনেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিরা গেরিলা হামলা চালাচ্ছে। আলতানগরেও যে মুক্তি ঢুকবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি। এই বেজন্মাটার থেকে সব কথা বের করতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে জোর পদক্ষেপে হাঁটতে লাগলেন নজর আলি। দীপকের বাড়ির সামনে তার বৃদ্ধা মা তখন ফ্যালফ্যাল করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। উপরে বোধহয় ভগবান বলে কেউ নেই। নইলে তার সৃষ্ট মর্ত্যে পিশাচেরা হাসিমুখে হেঁটে বেড়ায় কি করে? বাঁশঝাড়ে শনশন করে বাতাসের ফিসফিসানি উঠে। এক অসহায় মায়ের বোবা কান্না ধীরে ধীরে ঘুরপাক খায় পিশাচের রাজত্বে।(চলবে)

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

প্রসব পরবর্তীকালীন বিষণ্ণতা

ডা.সংগীতা হালদার রায়


কিছুদিন আগে এক দাওয়াতে গিয়ে ‘বেবি ব্লুজ’ বা ‘প্রসব পরবর্তীকালীন বিষণ্নতা’ নিয়ে কথা উঠেছিলো।

টেবিলে বসা পুরুষদের একাংশের ধারণা এটা মর্ডাণ মেয়ে / মায়েদের হয় যেহেতু তারা ক্যারিয়ার / শপিং / স্টাইলিং ইত্যাদিকে জীবনে অত্যাধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকেনন যা আগের যুগের মায়েদের বেলায় হত না।

সেই রাত থেকেই মনে হচ্ছে একজন ডাক্তার ও মা হিসেবে আমার উচিত আমার বন্ধুদের কিছু জানানো যা আমি জানি;

বেবি ব্লুজ : বই অনুযায়ী ৭০% – ৮০% মায়েদেরই হয়। আমার ধারণা আরো বেশি সংখ্যায় হয়ে থাকে কিন্তু ডাক্তারের কাছে ‘কেস’ খুব কম আসে বলেই বই এ ডকুমেন্টারি কম আছে।

হওয়ার কারণ : প্রেগন্যান্সির সময় প্রয়োজনয়ীয় হরমোন ১০০ – ১০০০ গুন (100- 10000 fold decrease) কমে যাওয়া এবং MAO – A হরমোনের হঠাৎ বেড়ে যাওয়া যা ব্রেইন সেলে বিষণ্নতা উৎপন্নকারী হরমোন বাড়িয়ে দেয় ।

সময় : প্রসবের পর থেকে শুরু হয় এবং ২-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয় সাধারণত । দিনে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা হতে পারে এর স্থায়ীত্বকাল ।

স্টেজ: মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।

(লক্ষণ সমূহ হিসেব করলে ডাক্তারী হিসেব মতে মোট ৬ টা স্টেজ , কিন্তু যারা ডাক্তার নন আবার সচেতন থাকতে চান তারা তিনটা জানলেই চলবে )

ক) বেবি ব্লুজ
মন খারাপ হয় কারণ ছাড়া, শুধু শুধুই কান্না পায় ( weeping ), খুব বেশি গুরুতর কারণ ছাড়াই বিরক্তি লাগে , মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে , বাচ্চা ও বাচ্চার যত্ন নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন হয় (বাচ্চার বাবার কোলে বাচ্চা দিতেও টেনশন হয় )

প্রতিকার
শুধু মিষ্টি ব্যবহার , সহানুভূতিসম্পন্ন কথা ও ব্যবহার (তুমি ঠিক পারবে , সবারই এরকম অসুবিধা হয় আর এটাই স্বাভাবিক) বাচ্চা সামলাতে সহানুভূতিশীল সাহায্যই যথেষ্ট’
‘আমরা তো অমুক করেছি’ বা ‘আমরা যেন আর বাচ্চা সামলাই নাই ‘ টাইপ কথা বলা মানুষজনকে ১০০ x ২ = ২০০ হাত দূরে রাখা খুব দরকার।

খ) পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন 
বাচ্চা হবার তিন মাস পরেও যখন লক্ষণসমূহ থেকেই যায় বরং আগের সমস্ত লক্ষণ আরো প্রকট হয় , নিজের ছোট্ট বাচ্চাকে সহ্য করতে না পারা , নিজের উপরে নিজের অসন্তোষ , নিজের ক্যারিয়ার + নিজের রূপ সবকিছু নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা, নিজের জীবনের প্রতি মায়া চলে যাওয়া।

প্রতিকার
কোন এমন মানুষের সাথে মনের কথা বলা যার উপরে মা পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন , বাচ্চা সামলানোর জন্যে সাহায্যকারী যাতে মা অন্য কিছু করেও নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে পারেন, একটু কোথাও ঘুড়ে আসা তা পাশের পার্কেও হতে পারে

গ) পোস্টপারটাম সাইকোসিস 
মা মনে করতে থাকেন শুধু তিনি মরে গেলেই মানুষ বুঝবে যে তিনি তার শিশুকে কত্ত ভালোবাসতেন , আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং শিশুকে মেরে ফেলার ঘটনাও লিপিবদ্ধ আছে ।

পরিশেষে বলবো , এরকম আগেও হত ( ঘরে ছোট ভাইবোন আসার পরে মায়ের পিট্টি খাওয়া বা অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে মায়ের খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা মা- বাবার / মা- দাদীর ঝগড়া বেড়ে যাওয়ার স্মৃতি মনে করে দেখুন ) আর এর সাথে ‘MODERNISM’ কোন সম্পর্ক নেই ।

‘উত্তম ব্যবহারেই উন্নত বংশের পরিচয়’ আর ‘সৃষ্টিকর্তাও একজন প্রসবিনীর প্রসব-পূর্ব সমস্ত পাপ মাফ করে দেন’ এগুলো তো অনেক প্রচলিত জানা কথা ।
কাজেই একটু ধৈর্য ধরে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করুন। কারণ প্রতিটি মা-ই তার সন্তানকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন । তাকে মন ও শরীরে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মা হয়ে ওঠার সময়টুকু দিন প্লিজ।

ফরমাল লেকচারার
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

রাজধানী শহর ঢাকায় দূষণ বেড়েছে ৮০ ভাগ

বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর একটি প্রচেষ্টা স্পষ্টতই সাফল্য পেয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। গত দশ বছর ধরে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা’র একটি স্যাটেলাইটের পর্যালোচনায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

অরা মিশন নামের এই স্যাটেলাইটটি ২০০৪ সালে উৎক্ষেপণ করা হয় বিশ্বজুড়ে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের নিঃসরণ পর্যবেক্ষণ করতে।

পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে এই দূষণের মাত্রা কমেছে। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশ-সহ এশিয়ার কিছু দেশে দূষণের হার বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় এই দূষণের হার গত দশ বছরে বেড়েছে শতকরা আশি ভাগ পর্যন্ত। আর চীনে এই বৃদ্ধির হার শতকরা ২৫ ভাগ।
অপরপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে গত দশ বছরে নাইট্রোজেন দূষণের হার কমে গেছে শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত।

সার্বিক বিচারে গত দশ বছরে বিশ্বে গড়ে এই গ্যাসের দূষণ অবশ্য কমেছে শতকরা ১৪ ভাগ হারে। নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাস মূলত জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে নিঃসারিত হয়।

সংক্ষেপে ‘এনওটু’ নামে পরিচিত এই গ্যাসটির মূল উৎস গাড়ির নির্গমন পাইপ ও কয়লা পোড়ানো হয় এমন শিল্প কারখানা।

হলদে-বাদামী এই গ্যাস মানুষের শ্বাসযন্ত্রে মারাত্মক প্রদাহের কারণ। এটি বায়ুমণ্ডলের নিম্নভাগে ওজোন গ্যাস বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।

অরা মিশন থেকে প্রাপ্ত গত দশ বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এর ফলাফল আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের এক বৈঠকে উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানীরা।
সুত্র: ইন্টারনেট

 

ঝড়ের দিন: পর্ব – ৩

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


যে রাতে মেজর ওয়াসিম খানের নির্দেশে নকূল বাউলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তার পর চার চারটে মাস পেরিয়ে গেছে। আলতানগরের পরিবেশ আর আগের মতো নেই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এখন আর ক্ষেতের আইল জুড়ে ঘুড়ি হাতে উড়ে বেড়ায় না। জমির উদ্দিনের বাড়ির উঠোনে এখন আর মার্বেল খেলার আসর জমে না। রাতের বেলা ছোট বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে গেলে মায়েদের আর বর্গির গল্প করতে হয় না, উড়ে এসে জুড়ে বসা হায়েনার দলকে এখন তারা ভালোভাবেই চেনে। আজকাল মাগরিবের আজান পড়ে গেলে সে-ই যে সবাই ঘরে ঢোকে, বিশেষ কোন প্রয়োজন না পড়লে ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ বের হয় না। মড়ক লাগা গ্রামে যেমন চারদিক সুনসান থাকে, আলতানগরের অবস্থাও এখন তেমনি। মড়ক এখানেও লেগেছে, আতংকের মড়ক।
নজর আলির পরামর্শ মতো গ্রামের স্কুলেই মিলিটারিরা ক্যাম্প বসিয়েছে। আশপাশের দশ-বারোটা গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাম্প এটাই। মুসেগুল থেকে জীপভর্তি সৈন্য এনে এখানে মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের অত্যাচারে গ্রামবাসীর জীবন বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে মশামাছির মতো মেরে ফেলা হয়। মানুষ মারতে তাদের কোন অজুহাতের প্রয়োজন পড়ে না তাদের। দুদিন আগে দুজন মিলিটারি ক্ষেতের আইল দিয়ে হাঁটছিলো। সেখানে তাদের একটা মোটাসোটা ছাগী চোখে পড়ে। ক্ষেতে গাঁড়া খুঁটিতে বাঁধা ছিলো ওটা। মিলিটারি দুজন দড়ি খুলে সেই ছাগল নিয়ে হাঁটা দেয় ক্যাম্পের দিকে। এমন সময় ছাগলের মালিক দৌঁড়ে এসেছিলো। মিলিটারি দুজনের পায়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো ছাগীটা না নিয়ে যেতে, গরীব মানুষ ও। অসহায় মানুষটাকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারতে মারতে ক্যাম্পে নিয়ে গেছিলো ওরা। পরদিন সকালে, গ্রামবাসীরা রাস্তার একধারে খুঁজে পায় হতভাগ্য লোকটার মৃতদেহ। নকূল বাউলের মতোই ফেঁড়ে ফেলা হয়েছে দেহটা। টুঁ শব্দটি করতে পারেনি কেউ। হাতে দা-কাস্তে নিয়েও নিশ্চল দাঁড়িয়ে ছিলো তারা। রাইফেল কাঁধে পিশাচের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর হিম্মত তাদের নেই। দুমাস আগে এই মানুষগুলোই তপেশ মাস্টারের বাড়িতে বসে শেখ সাহেবের কণ্ঠে যখন শুনেছিলো – ” এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ” তখন চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলো। কোদাল আর কাস্তে হাতে মিলিটারির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা ভেবেছিলো। সব স্বপ্নের আগুন নিভে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে একেকটা দিন বেঁচে থাকাটাই যখন সংগ্রাম, স্বাধীনতার স্বপ্ন তখন কুহকিনীর মিথ্যে আশ্বাস।
আজকাল নজর আলির কাজের অন্ত নেই। পিস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তার কাঁধে এখন প্রচুর দায়িত্ব। মেজর সাহেবের খেদমতের দায়িত্ব তিনি নিজ হাতে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। মেজর সাহেবের প্রতিবেলার খানাদানা থেকে শুরু করে অবসর সময়ে বিনোদনের ব্যবস্থা পর্যন্ত সবকিছু তিনি নিজে দেখভাল করেন। মেজর সাহেব বহুদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। জোয়ান মানুষ, শরীরে যে মাঝেমধ্যে বেচাইন করে সে তিনি ভালোভাবেই বোঝেন। তাই অবসর সময়ে একটু আধটু বিনোদনের জন্য মাঝেমধ্যেই ক্যাম্পে মেয়ে পাঠান তিনি। গ্রামে কোন কোন ঘরে সুন্দরী যুবতী আছে সব তার জানা। সেসব ঘর থেকেই যুবতী মেয়েদের জোর করে তুলে আনেন তিনি। সৈন্যরাই টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে, তিনি শুধু প্রয়োজনীয় নির্দেশটুকু দেন। এই তো সেদিনই জামাল নাপিতের বড় মেয়েটাকে তুলে আনতে গেছিলেন। চোখ ধাঁধানো রূপ মেয়ের। মেয়েটাকে কায়দামতো পেলে তিনিই ভোগ করতেন, মেজরের জন্য নিয়ে যেতেন না। সৈন্যরা যখন টেনে হিঁচড়ে বের করছিলো মেয়েটাকে, জামাল নাপিতের বৌটা দা হাতে ছুটে এসেছিলো তার দিকে। আরেকটু হলেই ঘাড় থেকে তার মাথাটা নেমে যেতো যদিনা এক সিপাহী মহিলাকে গুলি না করতো। নজর আলি মেয়েটাকে সেদিন তার মায়ের লাশের উপর দিয়ে টেনে হিঁচড়ে এনে ক্যাম্পের একটি ঘরে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। পরে শুনেছিলেন শুধু মেজর না, ক্যাম্পের প্রায় সব সৈন্যই সেদিন রাতটা সেই ঘরে কাটিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত মেয়েটার পরিণতি কি হয়েছে সেটা জানা নেই তার, জানার ইচ্ছেও নেই। এমন কত গণিমতের মাল আসবে আর যাবে!
শেষ বিকেল। সূর্য বিদায় নেবার আগে তার শেষ রশ্মিটুকু অকাতরে বিলাচ্ছে। বাড়ির উঠোনে সেই রশ্মিগুলো কানামাছি খেলছে। তপেশ মাস্টার জানালা দিয়ে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছেন। বয়স তার চল্লিশের উপর। শান্ত সৌম্য চেহারা। জুলফির গোড়ায় খানিক পাকা চুল ছাড়া বয়সের চিহ্নমাত্র পাওয়া যায় না। তবে এ কদিনে স্বাস্থ্যের বেশ অবনতি ঘটেছে তার। আর হবে নাই বা কেন! মাত্র কয়েক মাসে সবই কেমন ওলটপালট হয়ে গেছে। মূর্খ পশুগুলো তার স্কুলটা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে তারা ক্যাম্প বসিয়েছে। যে ঘরগুলোতে বসে বাচ্চারা অ আ শিখতো, সেই ঘরগুলোতে এখন মানুষ জবাই হয়। মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়। সব দেখে শুনেও কিছু করতে না পারার অক্ষমতার গ্লানিতে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছেন তিনি। কদিন ধরে কানাঘোষা শুনছেন দেশের অনেক জায়গায় নাকি পাক হানাদারদের সাথে খন্ড খন্ড যুদ্ধ হচ্ছে। সর্বস্তরের সাধারণ মানুষরাই এই যুদ্ধে শামিল হয়েছে। আশেপাশের গ্রামের অনেকেই নাকি ইন্ডিয়ায় পালিয়ে গেছে। সেখান থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার দেশে ঢুকবে। তারও ইচ্ছে হয় সেই সংগ্রামীদের সাথে যোগ দিতে কিন্তু সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী আর ছোট বোনটাকে এই নরকে ফেলে রেখে যাবেনই বা কি করে? তিনি কিংবা তাঁর স্ত্রী কারোরই তিনকূলে কেউ নেই যে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠবেন। শেষপর্যন্ত মনে হচ্ছে ইন্ডিয়াতেই পালিয়ে বাঁচতে হবে। এমন সময় একটা ডাকে তপেশ মাস্টারের ভাবনায় ছেদ পড়লো।
‘ মাস্টার! ও মাস্টার! একটু বাইরে আহো।
তপেশ মাস্টার চিনতে পারলেন গলাটা। নজর মেম্বার এসেছে। লোকটা সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত, যখন যেখানে যায় মৃত্যুর দুর্গন্ধ ছড়ায়। তিনি তাড়াতাড়ি তার বোন আর স্ত্রী-কে ডেকে বললেন, ‘ তোমরা কিছুক্ষণ বাড়ির পেছনে খড়ের গাদায় লুকিয়ে থাকো। আমি না বলা পর্যন্ত বের হবা না। ‘ বিনাবাক্য ব্যয়ে তারা তার নির্দেশ মেনে বাড়ির পেছনে চলে গেলো। তপেশ মাস্টার উঠোনে গিয়ে দেখলেন নজর আলি, সবুজ আর পাঁচ-ছজন মিলিটারি দাঁড়িয়ে আছে।
‘ কি ব্যাপার মেম্বার? এসময়ে এখানে? ‘
‘ মেজর সাব তোমারে তলব করসেন,মাস্টার। পুরা পরিবার সহ। ‘
‘ আমি ওদের আগেই অন্য জায়গায় রেখে এসেছি। আর তোমার মেজরকে গিয়ে বলে দিও, আমি তার হুকুমের চাকর নই যে তিনি তলব করলেই সাথে সাথে দৌঁড় দেবো। দরকার পড়লে তিনি নিজে এসে যেন আমার সাথে দেখা করে যান। ‘
‘ তোমার তেজ খুব বাড়সে, মাস্টার। ছুটাইতেসি তেজ ‘, বলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিপাহীকে হাত দিয়ে ইশারা দিলেন। সাথে সাথে সেই সিপাহী তপেশ মাস্টারের তলপেটে সজোরে লাথি মারলো। তপেশ মাস্টার মাটিতে ছিটকে পড়লেন। বাকি সিপাহীরা এবার এগিয়ে আসলো। বন্দুকের বাঁট দিয়ে উপর্যুপরি মারতে লাগলো মাস্টারকে। মাথায় একটা শক্ত বাড়ি খেয়েই তপেশ মাস্টার অজ্ঞান হয়ে গেলেন। নজর আলি তখন দুজন সৈন্যকে নির্দেশ দিলেন তপেশ মাস্টারকে যেন মরা কুকুরের মতো হিঁচড়ে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আর বাকি চর সৈন্যকে নির্দেশ দিলেন পুরো বাড়ি খুঁজে দেখতে। মেয়েমানুষ দুটো যাবে কোথায়! একটু বাদেই নারীকণ্ঠের চিৎকার শোনা গেলো। সৈন্যরা নির্দয় হাতে টেনে হিঁচড়ে তপেশ মাস্টারের ষোড়শী বোন আর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী-কে নিয়ে এলো। তপেশ মাস্টারের বোনকে দেখে নজর আলির ভেতরে আবার কামনার আগুন জ্বলে উঠলো। মেয়েটাকে ঘরে আটকে রেখে এখানেই…! না, নজর আলি নিয়ন্ত্রণ করলেন নিজেকে। ঘটনাটা জানতে পারলে মেজর রেগে যাবেন। নজর আলি তপেশ মাস্টারের বৌকে এখানেই শেষ করে দিতে বলে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাওয়া মেয়েটার হাত ধরে টানতে টানতে ক্যাম্পের দিকে হাঁটা দিলেন। সাথে রইলো আরেক সৈন্য। বাকি তিন সৈন্য চিৎকার করে কাঁদতে থাকা অসহায় প্রসূতি মহিলাটাকে টানতে টানতে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেলো।
তপেশ মাস্টারের স্ত্রী সৈন্যগুলোর পায়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘ আপনারা আমার ভাইয়ের মতো। ছাইড়া দেন আমারে। ভাই হয়া বোনের ইজ্জত নিয়েন না। ‘
সৈন্যরা অট্টহাসি দিয়ে উঠলো। বাঙ্গালি নারী তো বরাবরই তাদের কাছে ভোগের সামগ্রী, ” বেহেন ” হতে যাবে কোন দুঃখে! মানুষের মতো দেখতে সেই হায়েনাগুলো তারপর ঝাঁপিয়ে পড়লো অসহায়ভাবে পড়ে থাকা সেই মহিলার উপর।
একটা নারীকে শারীরিকভাবে যত রকমভাবে অসম্মান করা যায়, সব করলো তারা। উপর্যুপরি কয়েকবার গণধর্ষণ শেষে হতভাগিনী মহিলা যখন তার মৃত্যুর প্রহর গুনছেন, তখন পশুগুলো তার পেট বরাবর বেয়োনেট চার্জ শুরু করলো। অবাক প্রকৃতি নিশ্চুপ শুনে গেলো এক মৃত্যুপথযাত্রী গর্ভবতী মায়ের অসহায় আর্তনাদ। পৃথিবীর প্রতি একরাশ ঘৃণা আর অভিমান নিয়ে তপেশ মাস্টারের হতভাগিনী স্ত্রী অবশেষে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। নরপশুগুলো প্যান্ট পরা শেষ করে বেল্ট পড়তে পড়তে হাঁটা দিলো ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে।
ততক্ষণে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তপেশ মাস্টারের মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রী-র মৃত্যু চিৎকার সহ্য করতে না পেরে যে কাকটা উড়ে চলে গিয়েছিলো, সে-ই কাকটা আবার এসে বসলো বিশাল বড় আমগাছটার মগডালে। তারপর স্থির চেয়ে রইলো হাঁটতে হাঁটতে দূরে সরে যাওয়া মিলিটারিদের গমনপথের দিকে। মানুষ অনেক দেখেছে সেটি। তবে অমানুষ বোধহয় এই প্রথম দেখলো! (চলবে)

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

গল্পে গল্পে বাচ্চাদের শেখানো

আফরোজা হাসান


বাগানে বসে কাজ করছিলো সিহাব। হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখল ভাতিজা আয়াত কান্না করতে করতে আসছে। অতি প্রিয় চাচ্চুকে দেখে আয়াতের কান্নার শব্দ আরো বেড়ে গেলো।কাজ বন্ধ করে ভাতিজাকে ধরে সিহাব বলল, কে ছেড়ে দিলো চোখের নল, ঝরছে অঝোর ধারায় জল।মোর আঁখিও ছলছল, এখনি বুঝি নামবে ঢল। চাচ্চুর ইন্সট্যান্ট কবিতা শুনে আয়াতের চোখে আনন্দের ঝিলিক দিয়ে উঠলেও সে কান্না জারি রাখলো।

-আরে আরে কি হয়েছে আমার সোনা বাবাটার? কেন কান্না করছেন আপনি বাবা? ব্যথা পেয়েছেন নাকি কেউ মেরেছে?

-(ফোঁপাতে ফোঁপাতে) নুবাঈদ আমার খেলনা নিয়ে গিয়েছে। সকালে তামান্না আমার চকলেট নিয়ে গিয়েছিলো। সবাই আমার কাছে থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে যায় সবসময়।

-(হাসি চেপে) সবাই তোমার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে যায়?

-(পুতুলের মত মাথা দুলিয়ে) হ্যা সবকিছু নিয়ে যায়।

-তুমি নিতে দাও কেন? কাউকে কিছু বলো না কেন?

-দাদুভাই আমাকে বলেছে কাউকে কষ্ট দিতে নেই। তা না হলে আল্লাহ রাগ করবেন আমার উপর।

-দাদুভাই তোমাকে কাউকে কষ্ট দিতে মানা করেছেন কিন্তু আত্মরক্ষা করতে তো নিশ্চয়ই মানা করেননি।

-দাদুভাই বলেছেন কারো সাথে রাগ না করতে। কাউকে কষ্ট না দিতে।

-(হেসে) আচ্ছা ঠিকআছে। এখন তুমি কান্না বন্ধ করো। চলো তোমাকে চাচ্চু একটা গল্প শোনাই। শুনবে গল্প?

-(চোখ মুছে হাসি মুখে) হ্যা শুনবো।

-(ভাতিজাকে কোলে বসিয়ে আদর করে দিয়ে) এক গ্রামের রাস্তার ধারে এক সাপ বাস করতো। ভীষণ ছিল তার আকৃতি। সে যখন ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করতো তখন রক্ত হীম হয়ে আসতো।

-সাপটার নাম কি চাচ্চু?

-সাপটার নাম মিস্টার ফোঁস ফোঁস। কারণ রাস্তা দিয়ে মানুষ যেতে দেখলেই সে ফোঁস ফোঁস করে তার দিকে তেড়ে আসতো আর কামড় দিতো। বিনা দোষে পথচারীরা প্রাণ হারাতো। মিস্টার ফোঁস ফোঁসের এই অত্যাচারের কারণে সেই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো। একদিন এক সাধু সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

-দুষ্টু মিস্টার ফোঁস ফোঁস সাধুকেও কামড়ে দিলো তাই না চাচ্চু?

-শোনই না তারপর কি হল। মিস্টার ফোঁস ফোঁস তো অনেকদিন পর মানুষের দেখা পেয়ে ফোঁস ফোঁস করতে করতে ছুটে এলো। কামড়ে দেবার দেবার আগেই সাধু তার মন্ত্রের জোরে তাকে বশ করে ফেললো। সে তখন মাথা নত করে চুপ করে থাকলো। সাধুটি কাছে বসে বললেন, অকারণে মানুষকে কষ্ট দিয়ো না, কারো ক্ষতি করো না, হিংসা পরিত্যাগ করো পুরোপুরি এবং পারলে মানুষের উপকার করবে। উপদেশ দিয়ে তো সাধু চলে গেলেন।

-মিস্টার ফোঁস ফোঁস কি তখন ভালো হয়ে গেলো চাচ্চু?

-বলছি কি হলো। এরপর তো অনেকদিন পার হয়ে গেলো। হঠাৎ একদিন সাধুটি ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন মিস্টার ফোঁস ফোঁস রাস্তার এক কোণে পড়ে আছে। তার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। সাধু তখন এগিয়ে গিয়ে বললেন, তোমার এই অবস্থা কি করে হল? সে জবাব দিলো, আপনার উপদেশ মানতে গিয়ে। সাধু অবাক হয়ে বললেন, সেটা কি করে? বলল, আপনি বলেছিলেন হিংসা ত্যাগ করো, কাউকে কষ্ট দিয়ো না। যখন থেকে আমি তা করছি সবাই আমার উপর অত্যাচার করছে। এখানকার ছেলেরা আমাকে মেরে এক কোনায় ফেলে রেখেছে। আমি তাদেরকে কিছুই বলিনি। তখন সাধু বললেন, আরে বোকা আমি তোমাকে হিংসা পরিত্যাগ করতে বলেছি, কাউকে অকারণে কষ্ট দিতে মানা করেছি কিন্তু আত্মরক্ষা করতে তো নিষেধ করিনি। তুমি অবশ্যই কারো ক্ষতি করবে না এবং সেই সাথে কেউ যাতে তোমার ক্ষতি করতে না পারে তাই ফোঁস ফোঁস করে তাদের ভয় দেখানোতে কোন দোষ নেই। এখন বলো কি বুঝলে গল্প থেকে?

-আত্মরক্ষা করবো কিন্তু কাউকে কষ্ট দেবো না। আমি কারো ক্ষতি করবো না এবং কেউ যাতে আমার ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনে প্রতিবাদ করবো।

-(হেসে) মাশাআল্লাহ! এই তো তুমি বুঝে গিয়েছো। এখন তাহলে কি করতে হবে?

-নুবাইদকে প্রতিবাদ করতে হবে। জাযাকাল্লাহ চাচ্চু আমাকে বুঝিয়ে বলার জন্য। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।

চাচ্চুর কোল থেকে নেমে প্রতিবাদ করতে ছুটল আয়াত। আর সিহাব হেসে কাজে মন দিলো।

@সাইকোলজি (পিএইচডি)

 

ঝড়ের দিন: পর্ব-২

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


নজর আলির বাড়ি গ্রামের আর সকল বাড়ির মতো নয়। বিশাল বড় একটা আড়তের মালিক হওয়ার সুবাদেই হোক কিংবা এটা-সেটা ইলিগ্যাল ব্যবসায় টাকা খাটানোর সুবাদেই হোক গ্রামের সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর বাড়িটাই নজর আলির। তার বাড়ির সামনে দিয়ে যে-ই যায় সে-ই বলে, ‘ নজর আলির নজর বেশ উঁচু। ‘ বাড়ির সামনে আছে বিশাল বড় একটা উঠান। আর পেছনে পেল্লাই এক পুকুর। নজর আলি অবশ্য সেটাকে দিঘী বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। বাড়ির আর সকল ঘরের কথা বাদ, শুধুমাত্র বৈঠকখানাতেই কমপক্ষে দশ জন লোক আয়েস করে বসে যেতে পারে। সেই বৈঠকখানার চেহারাই আজ পাল্টে গেছে। মেহমান আসবে বলে সুন্দর করে সাজানো সবকিছু। নজর আলির মতো মানুষদের স্বভাব সাধারণত পোষা কুকুরের মতো। মালিককে খুশি করে দেয়ার শেষ চেষ্টাটা পর্যন্ত তারা ছাড়তে চায় না।
নজর আলি মেহমানদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বাইরে উঠোনে বসে ঝিমুচ্ছিলেন। হঠাৎ পায়ের শব্দে মুখ তুলে তাকালেন, দেখতে পেলেন সবুজ মিলিটারিদের নিয়ে আসছে। তিনি দৌঁড়ে উঠোনে নামলেন।
‘ আসসালামু আলাইকুম, মেজর সাব। আইয়্যে আইয়্যে। ‘
মেজর সিপাহীদেরকে বাইরে পাহারা দিতে বলে নজর আলি আর সবুজের সাথে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেলেন। নজর আলি তাদেরকে তার সুদৃশ্য বৈঠকখানায় নিয়ে বসালেন।
মেজর সাহেব শুধু উর্দু আর ইংরেজি বোঝেন। এদিকে নজর আলির উর্দু খুব একটা আসে না। তাই সব কথাবার্তা সবুজের মাধমেই হতে লাগলো। প্রথমেই মেজর জানতে চাইলেন গ্রামবাসীদের মধ্যে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কেমন? জবাবে নজর আলি এক গাল হেসে বললেন, ‘ সে আগেই অনেক কম আছিলো। আপনারা স্যার গ্রামে আসতেসেন শুইনা বেবাক্কেই ভাগসে। দুই একটা পরিবার মাটি কামড়ায়া আছে শুধু। ‘ উত্তরটা সবুজ মেজরকে উর্দুতে অনুবাদ করে দিলো।
মেজর তারপর জানতে চাইলেন ক্যাম্প করার জন্য গ্রামের কোন জায়গাটা সবচেয়ে ভালো হবে? নজর আলি প্রথমে তার পুরনো গোলাঘরের কথা বলতে যাচ্ছিলেন। তারপর হঠাৎ করে তার মনে এলো গ্রামের স্কুলের কথা। আজকাল তপেশ মাস্টারের বাড় বড্ড বেড়েছে! সেই শালার স্কুলে মিলিটারি ক্যাম্প বসালে সবদিক দিয়েই ভালো হয়। মেজর সাহেবও ক্যাম্প করার জন্য ভালো একটা জায়গা পেয়ে তার উপর খুশ হবেন, সেই সাথে সেই তপেশ মালাউনটাকেও উচিত শিক্ষা দিয়ে দেয়া যাবে। নজর আলি সবুজকে বলে দিলো মেজর সাহেবকে স্কুলঘরের কথাটা বলতে। সবুজের থেকে স্কুলঘরের কথাটা শুনে মেজর সাহেব বেশ সন্তুষ্ট হলেন। গ্রামে ঢোকার পর স্কুলটা দেখেছেন তিনি। গ্রামের স্কুল হিসেবে বেশ বড়ই বলা যায় সেটাকে। ক্যাম্প বসানোর জন্য একদম আদর্শ জায়গা। নজর আলি দেখলেন মেজর সবুজের সাথে কথা বলছেন। তিনি আস্তে করে উঠে পড়লেন। মেজর সাহেবের নিশ্চয়ই ক্ষিদে পেয়ে গেছে। বড়বিবি টেবিল সাজিয়েছে কিনা কে জানে।
নজর আলির বড়বিবি জোহরা বেগম মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ভালো। ধীর-স্থির স্বভাব তার। তাকে কেউ কখনো উঁচু গলায় কথা বলতে শোনেনি। তাকে কিছু না জানিয়েই নজর আলি যখন ছোটবিবিকে বিয়ে করে ঘরে এনেছিলেন সেদিনও শান্ত ছিলেন তিনি। নজর আলি পান চিবোতে চিবোতে নতুন বউয়ের ঘরে ঢুকে ছিটকিনি লাগানোর আগ পর্যন্ত এক ফোঁটা চোখের পানি পড়েনি তার। তারপর সেই রাতে খুব কেঁদেছিলেন জোহরা বেগম। তার কান্নায় কারো কিছু যায় আসেনি। কেউ ছুটে এসে বলেনি, ‘ সব ঠিক হয়ে যাবে, মা।’ পূর্ণ নারীত্বের স্বাদ কখনোই পাননি তিনি। স্বামীর ভালোবাসা আর সন্তান সুখ এ দুটোই সৃষ্টিকর্তা দেননি তাকে। এখন আর এসব পোড়ায় না তাকে। শুধু আক্ষেপ রয়ে গেছে, ম্লান হয়ে গেছে অনুভূতি।
ছোটবিবিকে কখনোই সতীন হিসেবে ভাবতে পারেননি জোহরা বেগম। বরং ছোট বোনের মতো বুকের ভেতরে আগলে রেখেছেন সবসময়। নজর আলি যখনই শাসন করতে যান তার ছোটবিবিকে, বট বৃক্ষের মতো আড়াল করে রাখেন তিনি মেয়েটিকে। আজো যখন নজর আলির থেকে শুনেছেন রাতে কারা আসবে মেহমান হয়ে, তিনি ছুট্টে এসেছেন ছোটবিবির ঘরে। ঘরের দোরে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন জোহরা বেগম। আস্তে করে ডাক দিলেন, ‘ বইনা, সজাগ আসোস? ‘
‘ হ বুবু, আহো না ঘরে। ‘
জোহরা বেগম ঘরে ঢুকলেন। দেখলেন ছোটবিবি বিছানার উপরে বসে কাঁথা সেলাই করছে। জোহরা বেগম প্রথম যখন ছোটবিবিকে দেখেছিলেন, অবাক হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়েছিলেন। তার কাছে মনে হচ্ছিলো স্বর্গ থেকে কোন হুর ভুল করে পৃথিবীতে নেমে এসেছে। ছোটবিবির গাত্র বর্ণ ধবধবে ফর্সা, চিকন ঠোঁট, সরু নাক। চুল ছেড়ে দিলে একদম কোমরে নেমে আসে। পেটে বাচ্চা আসার পর সেই রূপ যেন আরো খুলেছে। মেয়েটার দিকে তাকালে জোহরা বেগম যেন তার নিজের অতীতকেই দেখতে পান।
‘ কি হইলো বুবু? এমন কইরা চায়া আছো ক্যান? ‘
‘ এমনেই রে বইন। তোরে দেখি। ‘
‘ আমি কি যাত্রাপালার নায়িকা যে আমারে দেখবা? ‘ বলে খিলখিল করে হেসে উঠে ছোটবিবি। তার সেই হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে।
‘ রাইতেবিরেতে মেয়েমানুষরে এত হাসতে নাই। কর্তার অমঙ্গল হয়। ‘
ঠোঁট ওল্টালো ছোটবিবি। জোহরা বিবির হঠাৎ করে মনে পড়লো তার স্বামী সাবধানবাণীর কথা।
‘ বইন, একটু বাদে মেহমানরা আইবো। তুই কিন্তু একদম ঘর থিইকা বের হবি না। ‘
‘ ক্যা বুবু? ‘
‘ হেরা মানুষ ভালা না। সুন্দর মেয়েমানুষ দেখলে হুশ থাকে না। ‘
ছোটবিবি মুখ নিচু করে প্রায় শোনা যায় না এমন স্বরে বললো, ‘ আমাগো স্বামীর মতোন। ‘
জোহরা বিবি চোখ গরম করে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় দরজার কাছে আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলেন। নজর আলি এসে দাঁড়িয়ে আছেন দরজার কাছে!
‘ কি হইলো, বড়বিবি? টেবিল সাজাইসো? ‘
‘ এইতো সাজাইতেসি। ‘
‘ তাড়াতাড়ি করো। মেজর সাহেব কতক্ষণ হইসে বইসা আসেন। হুশ থাকে কই? ‘
জোহরা বেগম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। ছোটবিবির দিকে একদৃষ্টিতে খানিক চেয়ে থেকে নজর আলিও বেরিয়ে গেলেন। ছোটবিবি ঘরে একা হয়ে গেলো, যেমনটা সে বরাবরই থাকে।
খাওয়াদাওয়ার সময় টেবিলে কোন কথা হলো না। জোহরা বেগমের রান্নার হাত ভালো, মেজর সাহেব খুব তৃপ্তি সহাকারেই খেলেন।ল বাকি সিপাহীদের আলাদা ঘরে খেতে দেয়া হলো। খাওয়া শেষ করে নজর আলি মেজর আর সবুজকে নিয়ে উঠোনে চলে এলেন। মেজর উর্দুতে কিসব বললেন নজর আলিকে। বেশিরভাগই বোধগম্য হলো না তার। সবুজ বুঝিয়ে বললো। মেজর বলেছেন কয়েকদিনের ভেতরেই আলতানগরে ক্যাম্প বসিয়ে দেয়া হবে। আর একটা কমিটি গঠন করা হবে, পিস কমিটি। মেজর সাহেব নজর আলির উপর খুশ হয়েছেন, তাকেই বানাবেন সেই কমিটির চেয়ারম্যান। তবে পরেরবার থেকে তার সাথে মালাউনের ভাষা বাংলাতে কথা না বলে উর্দুতে কথা বললেই তিনি খুশি হবেন। সবুজের কথা শুনে নজর আলি খুশিতে একদম গদগদ হয়ে গেলেন। তিনি কথা দিলেন এখন থেকে সাচ্চা পাকিস্তানি নাগরিকের মতোই উর্দুতে কথা বলবেন। রাত বেশি বেড়ে গেলে কুয়াশাও বেড়ে যাবে। তাই মেজররা রওয়ানা হয়ে গেলেন। আগের মতোই টর্চ হাতে সবুজ সামনে। নজর আলি তাদের গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেজর সাহেবের মতো মানুষই হয় না। পাকিস্তানটা যাতে ভেঙ্গে না যায় সেকারণে কত কষ্ট করে ছুটে এসেছেন সেই সুদূর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। আর মালাউনের বাচ্চারা কিনা স্বাধীনতা চায়! এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে গেলেন নজর আলি। আজ রাতে ভালো ঘুম হবে তার।
কুয়াশা বাড়ছে। আলতানগরের পথ-ঘাট অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে দৃশ্যপট থেকে। জোনাকিরা পর্যন্ত পথ হারিয়ে দিগ্বিদিক ঘুরছে। আলতানগরের আকাশে বাতাসে যে অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে সেই অন্ধকারের সীমা ছড়িয়ে গেছে বহুদূর। আলতানগরের মতো এমন হাজারো গ্রাম ডুবে আছে এই অন্ধকারে। এখন অন্ধকারের যুগ। মানুষের মতো দেখতে নিষ্প্রাণ চোখের পিশাচের যুগ। জোনাকিরা এখন মৃত। (চলবে)

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

ঝড়ের দিন: পর্ব – ১

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


আলতানগরে অন্ধকার নেমে এসেছে। শীতের বিকেল, দেখতে না দেখতেই ফুরিয়ে যায়। তারপর বিশ্ব চরাচর আঁধার করে দিয়ে নেমে আসে রাত। নজর আলি তার বাড়ির বারান্দায় বসে সেই রাতেরই অপেক্ষা করছেন। আজ রাতে তার বাড়িতে কিছু মেহমান আসবেন। তাদেরকে ভালোভাবে আপ্যায়ন করতে হবে, নইলে একেবারে জীবন সংশয়। নজর আলি তার বড় বিবিকে ডাক দিলেন। রান্নাবান্নার কদ্দুর কি হলো সেটা জানা দরকার।
‘ বড়বিবি। এ বড়বিবি। ‘
জোহরা বিবি দৌড়ে আসলেন। স্বামী পরিচয়ের এই অমানুষকে ভয় পান তিনি।
‘ দুই ডাক দেয়া লাগলি ক্যান? ‘
জোহরা বিবির চোখ মাটির দিকে। সামনে বসে থাকা এই মানুষটার মুখের উপর টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করার সাহস তার নেই।
‘ রাইতে যে মেহমান আইতেসে হেইডা মনে আছে তো? ”
‘ জে। ‘
‘ যা যা পাক করতে কইসিলাম সব পাক করসো তো? তেনারা কিন্তু গোশত খুব শখ কইরা খান। কি হইলো কথা কও না ক্যান? ‘
‘ জে, সব রান্না শেষ করসি। গোশত আমি নিজে দাঁড়ায়া রান্না করসি। ‘
‘ ঠিক আছে। যাও তাইলে। না না, দাঁড়াও। ‘
জোহরা বিবি ঘুরে চলে যাচ্ছিলেন। স্বামীর ডাকে আবার ফিরলেন।
‘ জে? ‘
‘ ছোটবিবিরে কয়া দিয়ো আইজ রাইতে যাতে ঘর থেইকান না বাইর হয়। ‘
জোহরা বিবির চোখে ভয় ফুটলো। নজর আলির মেহমান কারা সেটা তিনি ভালো করেই জানেন। আর সেই মেহমানদের কুকীর্তির কথা আর সবার মতো তার কানেও এসেছে।
‘ আইচ্ছা ‘, বলে জোহরা বানু দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকে গেলেন। ছোট বিবিরে সাবধান করতে হবে। আইজ রাতে যারা ঘরে আসছে তারা যে নজর আলির থেকেও বড় পিশাচ!
নজর আলি তার বড়বিবির গমনপথের দিকে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে রইলেন। একটাসময় খুব সুন্দরী ছিলো তার বড়বিবি। এখন বার্ধক্যের ঘুণপোকায় শরীর ক্ষয়েছে। নতুন শরীরের নেশায় কদিন আগে আরেকটা বিয়ে করেছেন তিনি। তবু নেশা মিটে না। গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে কোন যুবতীকে হাঁটতে দেখলেই শরীরে কেমন অদ্ভূত শিরশিরানি উঠে। অবশ্য এ কারণেই গাঁয়ের লোকেরা তাকে লুইচ্চা নজর ডাকে। যদিও সবই তার পশ্চাতে।
‘ বাইঞ্চোদের দল ‘, দাঁত কিড়মিড় করেন নজর আলি। মালাউনের বাচ্চাদের কেমন করে সিধা করতে হয় সেটা ভালো করে জানা আছে তার।
রাত বাড়ছে। জোনাকিরা সবে বাসা থেকে বের হচ্ছে। ভালো করে তাকালে বাঁশঝাড়ের কোণায় কোণায় একটা দুটো আলোর ফুটকি চোখে পড়ে। বাঁশঝাড়ের পাশেই হাঁটাপথ। আলতানগরের একদম মধ্যখান দিয়ে সরু ফিতার মতো চলে গেছে সেই মেহেদিগঞ্জ পর্যন্ত। অন্য সকল দিনে এসময়ে কেউ বেরোয় না। সন্ধ্যার একটু পর খেয়েদেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। তাই রাত হলে শেয়ালের পাল আর নকূল বাউল ছাড়া আর কেউ চলাচল করে না এই পথ দিয়ে। নকূল বাউল পাগলাটে মানুষ। তার দিনও যা, রাতও তাই। রাত-বিরেতে গান গেয়ে গেয়ে পথ হাঁটা তার পুরনো অভ্যেস। মেহেদিগঞ্জে আজ একটা আসর ছিলো। সেটা শেষ করে বাড়ি ফিরছে নকূল। আসর জমজমাট ছিলো, তাই মনে তার বড় সুখ। আপনা থেকেই গলা দিয়ে গান বেরুতে লাগলো। নজর মেম্বারের বাড়ি থেকে খানিক দূরে এসে নকূল দাঁড়িয়ে গেলো। ওপাশ থেকে টর্চের আলো এসে তার মুখে পড়েছে। টু সেল ব্যাটারির টর্চ, ওপাশের কিচ্ছু ঠাওর করতে পারলো না নকূল।
‘ নকূল, এত রাইতে এনো কি করো? ‘
টর্চটা নেমে গেলো। নকূলের সামনে ছয়-সাত জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে শুধু একজন তার পরিচিত, সবুজ। টর্চটা সে-ই মেরেছিলো। সবুজের সাথে বাকি যারা আছে তারা মিলিটারি। পাকিস্তানি মিলিটারি।
‘ জলসা ছিলো, এখন ঘরে ফিরতাসি। ‘ নকূল ভালো করে তাকালো মিলিটারিদের দিকে। ছয় জনের মধ্যে পাঁচজনই সাধারণ সৈন্য। খাকি পোশাক, মাথায় সবুজ হ্যালমেট। প্রত্যেকের পিঠে একটা করে করে বন্দুক, ধারালো বেয়নেট সহ। আর একজনকে দেখে মনে হচ্ছে অফিসার। নকূল যদি ইংরেজি পড়তে পারতো তাহলে বুঝতে পারতো সেই অফিসারের বুকের কাছে লেখা আছে – মেজর ওয়াসিম খান। মেজর সবুজকে কিসব যেন বললেন। উর্দু বোঝে না নকূল, তাই হা করে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে। মেজরের কথা শেষ হওয়ার পর সবুজ নকূলের দিকে ফিরে বললো, ‘ মেজর সাব জানতে চাচ্ছেন তুমি মুসলমান নাকি মালাউন? ‘
‘ জে আমি বাউল মানুষ। প্রকৃতি আমারে জন্ম দিসে, মইরা গেলে প্রকৃতিই আবার নিয়া যাবে। সৃষ্টিকর্তা বলতে আমি আমার মাটিরেই চিনি। আলাদা কইরা কোন ধর্মের গান আমি গাই না, সবুজ। তাই মেজর সাব রে কয়া দাও আমি মুসলমানও না, আবার মালাউনও না। আমি মানুষ। ‘
সবুজ মেজরের কানে গিয়ে ফুসুরফুসুর করে কিসব বললো। সাথে সাথে মেজরের মুখের ভাব কেমন বদলে গেলো। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই মেজর সামনে এগিয়ে এসে নকূলের তলপেট বরাবর বুট দিয়ে সজোরে একটা লাথি দিলেন। নকূল দু হাত দূরে ছিটকে পড়লো। মেজর দাঁত কিড়মিড় করে করে বলে উঠলেন, ‘ সব বাঙ্গাল সালে মালাউনকা বাচ্চে। বেয়নেটসে গাঁড়দো ইসে। ‘
সিপাহীরা কাঁধ থেকে বন্দুক নামিয়ে এগিয়ে এলো নকূলের দিকে। তারপর শুরু হলো এলোপাথাড়ি বেয়োনেট চার্জ। আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলো নকূলের আর্তচিৎকারে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাটি। রক্তের স্রোত সবুজের পা পর্যন্ত আসা মাত্র আর সহ্য করতে পারলো না সে। বসে পড়লো পথের তারপর হড়বড় করে বমি করে দিলো। এদিকে সিপাহীরা কাঁটাচামচ দিয়ে মোরব্বা গাঁথার মতো বেয়োনেট দিয়ে গেঁথেই যাচ্ছে নিথর নকূলকে। অবশেষে মেজর থামতে বলার পর থেমে গেলো তারা। ততক্ষণে সবুজ কিছুটা সামলে নিয়েছে নিজেকে। মেজর সবুজকে হুকুম দিলেন নকূলের লাশটা পথের ধারে ফেলে রাখতে। সবুজ সামনে এগিয়ে এসে নকূলের লাশের দিকে তাকাতেই আবার প্রচণ্ডভাবে অসুস্থ বোধ করতে লাগলো। বেয়োনেটের খোঁচায় নকূলের ডান চোখটা বেরিয়ে ঝুলে আছে গালের কাছে। বাম চোখ বলে কিছু নেই। অক্ষিকোটরের ভেতরে চোখ থেঁতলে গেছে। মুখের বাকি অংশে আলাদা করে নাক ঠোঁট কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কণ্ঠনালি ফালা ফালা করে ফেলা হয়েছে। শরীরের নিচের দিকের অবস্থাও বর্ণনাতীত। সবুজ কোনরকমে লাশের পা দুখানা ধরে টানতে টানতে রাস্তার পাশে এনে ফেললো। তারপর বিবর্ণ মুখে মেজরের সামনে গিয়ে বলল,’ হো গায়া, মেজর সাব। ‘ মেজর কিছু বললেন না, শুধু হাত দিয়ে ইশারা করে আবার হাঁটা শুরু করার নির্দেশ দিলেন। এ গ্রামের মেম্বার নজর আলির বাড়িতে আজ তাদের দাওয়াত আছে। গ্রামে ক্যাম্প বসাতে লোকটার সাহায্য দরকার হবে তার। সবুজের দেখানো পথে এগিয়ে চলা মিলিটারির ছোট্ট দলটা আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। আর পেছনে পথের ধারে অবহেলায় তাচ্ছিল্যে গায়ে ধূলো রক্ত মেখে পড়ে রইলো নকূল বাউলের নিথর দেহ। পাশে তার প্রিয় একতারা। আলতানগরের পথেঘাটে আর কেউ কখনো দেখবে না নকূলকে। রাতবিরেতে বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে আর ভাসবে না নকূলের দরাজ গলা। একতারার ঝংকারে আর কেউ কখনো বলবে না, ‘ নকূল, তুমি একখান হীরা আছো বাহে! ‘ ঘুমিয়ে গেছে নকূল। পরম শান্তিতে সে তার প্রকৃতি মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। বাতাসে হঠাৎ মাতম উঠলো। নকূলের শেষকৃত্যে প্রকৃতি তার দূত পাঠিয়েছে। একটু পরই বাতাস থেমে গেলো। শেষ রাতে বোধহয় ঝড় আসবে। ঝড়ের দিন তো কেবল শুরু হলো… (চলবে)

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

রান্নার রেসিপিতে বাহারি ‘ভর্তা’

রোজকার জনপ্রিয় খাবার গুলোর মধ্যে ‘ভর্তা’
অন্যতম। আজকের রেসিপি তে থাকছে হরেক প্রকার ভর্তার রেসিপি যা সহজেই আপনি ঘরে বসে বানাতে পারেন।

আসুন রেসিপি গুলো ধাপে ধাপে দেখি-

টাকি মাছ ভর্তা

উপকরণ: টাকী মাছ ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, গোটা কাচা মরিচ ৪ টি, গোটা রসুন ৭ কোয়া, আদা সামান্য, হলুদ হাফ চা চামচ, সয়াবিন তেল হাফ কাপ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালী: টাকী মাছের আঁশ ছাড়িয়ে নিন। মাথাটা কেটে ফেলুন; মাঝে চিরে নিয়ে কাটা গুলো ফেলে দিন। এভাবে সব গুলো মাছ কেটে ধুয়ে নিন। কড়াই চুলাই দিয়ে গরম হলে অর্ধেক পরিমান তেল দিন। তেল গরম হলে আদা ছাড়া সব উপকরণ সহ মাছ গুলো দিয়ে আন্দাজ মতো পানি দিয়ে মৃদু আঁচে মাছ গুলো ঢাকা দিয়ে ২০ মিনিট রান্না করুন। এবার আঁচ বাড়িয়ে দিয়ে মাছ গুলো ভালকরে ভাজুন। বাকী তেল দিয়ে ভাজা ভাজা করুন। লাল লাল হয়ে নীচে লাগা লাগা হলে নামিয়ে নিন। এবার অল্প কাঁচা আদা দিয়ে পাটায় মিহি করে বেটে নিন। বাটা হয়ে গেলে একটি বাটিতে তুলে পরিবেশন করুন।

আলু ডিম ভর্তা

উপকরণ: ডিম ২টি, আলু ১টি (মাঝারি সাইজের), কাঁচামরিচ কুঁচি ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুঁচি ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুঁচি ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালী: আলু এবং ডিম সেদ্ধ করে নিন। খোসা ছাড়িয়ে আলু এবং ডিম আলাদাভাবে চটকে নিন। এবার পেঁয়াজ কুচি, লবণ এবং আধা চা চামচ সরিষার তেল দিয়ে ডিম ও আলু ভালোভাবে মেখে ভর্তা তৈরি করুন।

থানকুনি পাতার ভর্তা

উপকরণ: থানকুনি পাতা ১ কাপ, কাঁচামরিচ ২টি, রসুনের কোয়া ২টি, লবণ স্বাদ মতো, তিল ২ টেবিল চামচ, কালিজিরা ১ চা চামচ।

প্রণালী: সব একসঙ্গে বেটে (সব পাতা ধুয়ে পানি মুছে নিতে হবে) ভর্তা তৈরি করতে হবে। এরপর গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

কাঁচা করল্লা ভর্তা

উপকরণ: কাঁচা করল্লা ২টি, কাঁচামরিচ কুঁচি ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুঁচি ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুঁচি ১ চা চামচ, লবণ পরিমা মতো।

প্রণালী: করল্লা ধুয়ে খুব মিহি করে কুঁচি করে নিন। এবার করল্লা কুচি চটকে নিয়ে পেঁয়াজ, কাচা মরিচ, লবন এবং তেল দিয়ে ভর্তা তৈরি করুন।

 

মোনালিসার নীল স্মৃতি

ডা. সাকলায়েন রাসেল


মোনালিসা সর্বদা জানালার পাশেই বসে।
আজও তার ব্যতিক্রম হল না। পার্থক্য হল অন্যদিন সিটে বসা মাত্রই নানা কথা বলে। আজ মুখে শব্দ নেই। নিঃশব্দ আমিও। উদ্দেশ্য তার নিরবতাকে সমর্থন করা।
শাপলা চত্ত্বর ঘুরে গাড়ী তখন কলেজ রোডে। এ রোডের এক পাশেই মোনালিসার বাড়ী। যে বাড়ীতে কেটেছে তার শৈশবের সবটুকু। দ্রুত গাড়ীটা সেখানেই চলে এলো। সে রাস্তার ধারেই।
রাস্তাটির পাশে আসতেই মোনালিসা সিটের বাম দিকে ঘুরে বসল…জানালার কাঁচ বরাবর। জানালার পাশে রাস্তাটা বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে…দ্রুতই পার হয়ে যাচ্ছে সে রাস্তা। একটু একটু করে পিছনে সরে গেল সব কিছু।
ঘাড় ঘুরিয়ে রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে রইল সে…
বিরাটাকার এক শূন্য দৃষ্টি নিয়ে…
যতক্ষণ পারা যায়…
ফ্যালফ্যাল করে…
এই রাস্তা ধরেই সোজা পূর্বে চলে গেছে মোনালিসাদের বাড়ী..
আমার স্ত্রীর বাবার বাড়ী…
আমার সন্তানের নানার বাড়ী…
আমার শ্বশুর বাড়ী!
গাড়ী এগিয়ে চলল আপন গতিতে… মোনালিসা বাড়ীর দিকে হাতটা উচু করে একটু নাড়াল…
হাতের ভাষায় বিদায়ের ছাপ…
যেন হাত দিয়ে আলিঙ্গন করল এক শূন্যতাকে…
এক অসীম শূন্যতা…
মুখে কিছু বলল না…
যেন সব কষ্ট গলায় এসে পথ হারিয়ে ফেলেছে…
আমি ঘাড়ে হাত রাখলাম। স্পর্শের ছোঁয়ায় নিরব স্বান্তনা..ও দ্রুত চোখ মুছে নিল।
আমার স্পষ্ট মনে আছে…
বিয়ের পরপরই বিসিএস পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করেছিল সে…
বর্তমান ঠিকানায় যখন রংপুরের এই বাড়ীর ঠিকানা দিচ্ছিল…
আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম…
“তুমি থাকছো আমাদের বাসায় আর বর্তমান ঠিকানা দিচ্ছো রংপুরের!”
সে কোন উত্তর দিল না…পরে একদিন জানাল,
দেখ, বিয়ে হল সবে কয়েক মাস…
ঐ বাড়ীটা যে আমার না সেটা মন থেকে মেনে নিতেও তো কিছু সময় লাগবে, তাই না?
আমার অবুঝ মন সেদিনই প্রথম বুঝতে পারল…
একজন মেয়ের ফেলে আসা নিজ বাড়ী আকড়ে ধরে রাখার এ আকুতি…
আমার মাকেও দেখেছি, যতবারই নানার বাড়ী থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা হতাম ততবারই কাঁদত… জোরে জোরেই কাঁদত!…
আমি অবাক হতাম! কি আছে এই বাড়িতে! এতো বড় হয়েছে তবুও কান্না শুকায় না!
এখন আর কাঁদে না মা…
কি জানি, হয়ত কাঁদে…
আমি সেটা দেখতে পাইনা…
শুনতে পাইনা…
আচ্ছা, কষ্টের কি শেষ আছে? নাকি কষ্ট শুধু রূপান্তরিত হয়? শব্দ কান্না থেকে বোবা কান্নায়? নাকি অশ্রুতেই কস্টের উত্তাপ কমে যায়?
কি আছে এই মেয়েটার বাবার বাড়িতে?
মোনালিসা প্রায়ই বলত, তার বাবার বাড়ীতে খালারা,মামারাসহ সব আত্মীয় স্বজনের সরব উপস্থিতি ছিল প্রায় প্রতিটা দিন, প্রতিটা ক্ষণ। এমন কোন দিন সে পায়নি যেদিন তারা এ বাড়িতে শুধু নিজেরাই থেকেছে !!
কিন্তু যেদিন হটাৎ করেই তার মা এ বাড়ি থেকে বিদায় নিল…
চলে গেল না ফেরার দেশে…
সেদিন থেকেই একে একে শেষ হতে লাগল এ বাড়ীর সব আয়োজন… যেন বিরাটাকার এক বটবৃক্ষ, প্রচন্ড এক ঝড়ে একে একে হারাতে বসেছে সব ডালপালা!…
হারাতে হারাতে আজ সে প্রায় শূন্য!
এখানে আজ আর জীবন নেই…নেই কোন আয়োজন…ছন্দ হারিয়ে থেমে গেছে তাই সব কবিতা!!
ছাদের দিকে তাকিয়ে মোনালিসা সেদিন বলল, দেখ ওই ছাদটার দিকে। এই বিছানায় যখনই শুইয়ে শুইয়ে পড়তাম.. দৃষ্টি পড়ত ঐ ছাদটার উপর..
কত বছর হল!!…
মা চলে গেল…একে একে সবাই চলে যাচ্ছি আপন ঠিকানায়…
আমি শিশু থেকে শিশুর মা হয়ে গেলাম… অথচ ছাদটায় কোন পরিবর্তন নাই… সেই আগের মতই আছে!
অথচ আজ থেকে এই বাড়ীটা কেবলই একটা স্মৃতি হতে বসেছে!! আমি চলে যাচ্ছি ঢাকায়, ভাইয়েরা হোস্টেলে, আর বাবা গ্রামের বাড়ীতে। আজ থেকে এটা কেবলই একটা পরিত্যক্ত স্মৃতি!
মোনালিসা ফ্যালফ্যালে ভেজা দৃষ্টিতে শূন্য পানে তাকিয়ে রইল…
হয়ত অসীম সেই শূন্যতার এক কোণে বসে মা দেখছেন সন্তানের এ স্মৃতিকাতরতা! আচ্ছা, মায়েরা কি সত্যি দেখেন। ওনাকে হারিয়ে প্রথম দিন মনে হয়েছিল জীবন থেকে একজন মানুষকে চিরতরে হারিয়ে ফেললাম। আস্তে আস্তে মনে হল, জীবন থেকে আরেকটা জীবন ঝরে পড়েছে। আমরা সবাই তাই জীবনের ছন্দ হারিয়ে দিনকে দিন দিগ্বিদিক হয়ে যাচ্ছি। সামান্য শূন্যতা আজ তাই অসীমে রূপান্তরিত।
আমার ৯ বছরের বিবাহিত জীবনের নানা স্মৃতির প্রায় পুরোটাই এ বাড়ীটিকে ঘিরে… যদিও মাত্র দু’বছরেই ফিকে হয়ে গেছে স্বপ্নের ক্যানভাসের সব গুলো রং!..
আজ থেকেই হয়ত গল্প হয়ে গেল এ বাড়িটা!… যে গল্প শুধু নোনা জল ঝরাবে দুচোখ দিয়ে!
চাপা স্বভাবটা আর লুকিয়ে রাখতে পারল না মোনালিসা…বিদায়ের আগ মুহুর্তে বলে বসল…
”খুব খারাপ লাগছে, কেন জানি মনে হচ্ছে এটাই শেষ, এ বাড়িতে আর ফিরে আসা হবে না কখনো”
বিদায় বেলা দৃষ্টি দিয়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিল সে পুরো বাড়ীটাতে!..কষ্টের তীব্রতার ঢেউ আছড়ে পড়ল আমার ললাটেও।
আমি শুধু মুখস্ত বুলিগুলো আওড়াতে লাগলাম…এটাই নিয়ম মোনালিসা, এভাবেই মানুষের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়… ভাঙ্গা স্বপ্নের টুকরা গুলো জোড়া লাগিয়ে সব কিছু আবার নতুন করে সাজাতে হয়… নতুন করে সাজানো তোমার এই স্বপ্নের আঙ্গিনায় হয়ত বীজ বুনবে আমাদের আরিবা… তারপর??
তারপর??
তারপর আবারো সেই ভাঙ্গা সুর…ভেঙ্গে যাবে সে মিলন মেলাও…
তখন হয়ত দৃশ্যপটে চলে আসবে নতুন কোন আরিবা!
রাত এখন চারটা…
বৃষ্টি ভেজা রাতে যমুনার বুকে চাঁদের মত বাঁকানো এই ব্রিজটাও কেমন জানি কেঁপে কেঁপে উঠছে। গাড়ি দ্রুতবেগেই ধেয়ে চলছে ঢাকার দিকে। অনেক হারিয়ে অনন্তের পথে ছুটে চলেছি আমরা দু’জন। আমি আর আমার মোনালিসা!
বিদায়..
বাড়ী নং —১৩৪
রোড নং —১/২
C/O মরহুমা নুরান্নাহার বেগম!!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

ঘর সাজিয়ে তুলুন মাটির জিনিসে

শহরে থাকলেও আমরা পারি বাসার কোনো এক জায়গায় একটু গ্রাম্য ছোঁয়ায় সাজাতে। অনায়াশে শহুরে মানুষের জীবনের মধ্যে আজও জীবন্ত হয়ে উঠে গ্রামের মাটি। দামি কার্পেট, ফুলদানি, শো পিসের সাথে মানিয়ে নিয়েছে এখন মাটির জিনিসপত্র স্ব মহিমায়। মাটির তৈরি জিনিস তুলনামূলক সস্তা। আসুন অল্প খরচে নিজের ঘরের সাজকে করে তুলি ছিমছাম ও সুন্দর। সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন রুচিবোধ।

মাটির জিনিস দিয়ে কীভাবে ঘর সাজাবেন আসুন দেখি কিছু কৌশল-

মাটির তৈরি শো পিস

ঘর সাজিয়ে ফেলুন মাটির তৈরি শো পিস দিয়ে। ঘরে রাখতে পারেন সুন্দর কোনো ওয়াল হ্যাঙ্গিং। এটি ঘরের চেহারাই পালটে দেবে।

মাটির কলসি

মাটির কলসি দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন সুন্দর করে। বড় বড় চারটি কলসি চারদিকে রেখে তার উপর কাচ বসিয়ে দিন। তা সেন্টার টেবিল হিসেবে দিব্য ব্যবহার করতে পারবেন।

টেরাকোটা

ঘরের সাজে ভিন্নতা আনতে চাইলে সামর্থ্য অনুযায়ী বসার ঘর, শোবার ঘর অথবা খাবার ঘরে দেয়ালের একপাশে মাটির ফলক অর্থাৎ টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন। আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে মূল দরজার সামনের ফ্রেমে মাটির টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন।

মাটির ফ্রেম

খুব সাধারণ ও সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে চান তাহলে ফুলদানি, পুতুল, শো-পিস ইত্যাদি ব্যবহারের পাশাপাশি ঘরের ভিতরে যে স্থানটি খুব সহজেই সকলের নজরে পরে সেখানে মাটির ফ্রেম ব্যবহার করে তাতে যে কোনো ছবি বাঁধাতে পারেন।

ছোটো জার

মাটির তৈরি ছোটো জার কিনে তার উপর নিজের মতো করে ডিজ়াইন করতে পারেন।

মাটির ফুলদানি

দামি ফুলদানির বদলে মাটির তৈরি ফুলদানি বাড়িতে রাখতে পারেন। সেখানে কিছু সতেজ ফুল রাখার চেষ্টা করুন। তাতে আপনার ঘরের সাজগোজ যেমন ছিমছাম দেখাবে, তেমনই দেখাবে আকর্ষণীয়।

মাটির টব

শহুরে জীবনে এখন মাটির টবের জায়গায় এসেছে আধুনিক ফুলের প্লাস্টিক ও চিনা পাথরের টব। কিন্তু ফুলগাছ মাটির টবে রাখলে তা ভালো থাকে আবার মাটির টবও আপনার ঘর সাজাবে।

কলমদানি-মোমবাতি

মাটির তৈরি কলমদানি, মোমবাতি স্ট্যান্ডের মতো জিনিস আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে।

প্লেট-গ্লাস-ফুল-ফল-বাটি

ঘর সাজানোর জন্য কাজে লাগাতে পারবেন মাটির তৈরি প্লেট, গ্লাস,ফুল-ফল, বাটি। আপনি চাইলে এসব জিনিসের উপর কারুকার্য করতে পারেন। তাতে সামান্য জিনিসও অসাধারণ হয়ে উঠবে।

 

শীতে আপনার সোনামনি ‘গোসল’

ডা. এমডি আব্দুল হাকিম


এখন একটু একটু শীত পড়ছে। বিশেষ করে ভোর বেলা ঠান্ডা একটু বেশী পড়ে। এ সময় আপনার বাচ্চার ঠান্ডা লাগতে পারে। একটু সতর্ক হলেই এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। খুব ছোট বাচ্চকে বুকের সাথে আগলে ধরুন। ওর খালি বুক আপনার খালি বুকে লাগিয়ে দুধ খাওয়ান।

দু’জনের উপর গরম কাপড় ঢেকে দিন। বাচ্চা প্রশ্রাব-পায়খানা করেছে কিনা খেয়াল করুন এবং টিস্যু বা গরম ভেজা নেকড়া দিয়ে পরিষ্কার করে দিন। ডায়াপারও পরাতে পারেন। তবে সেটি ৪-৫ ঘন্টার বেশী না রাখাই ভালো। একটু বড় বাচ্চাকে ভালো করে গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন।

শীতে শিশুর গোসল

জন্মের প্রথম তিন দিন শিশুকে গোসল না করানোই ভালো। কম ওজনের এবং অপরিণত শিশুর ক্ষেত্রে আরো দেরি করা ভালো- বিশেষ করে শীতের দিনে।

শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নাই। ২-৩ দিন পর পর গোসল করালেও চলে। শিশুকে খোলা জায়গায় গোসল না করানোই ভালো।

গোসল করাতে হবে বাথরুম, শোবার ঘর বা এমন জায়গায়-
যেখানে শিশুর শরীরে বাতাস না লাগে। গোসলের সময় ঠান্ডা বাতাস শিশুর শরীর থেকে তাপ টেনে নেয় এবং শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে ।

শিশুকে গোসলের আগে দুধ না খাওয়ানোই ভালো –
এতে গোসলের সময় বাচ্চা বমি করতে পারে।

যিনি শিশুকে গোসল দিবেন, তিনি গোসলের দেওয়ার আগে হাতের অলংকার খুলে ফেলবেন এবং ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন।

একটি গামলায় কুসুম গরম পানি নিতে হবে-যেনো শিশু চামড়ার সাথে সহনীয় তাপমাত্রার হয়।

শিশুকে গোসল করানোর আগে কবজি পর্যন্ত হাত ডুবিয়ে পানির উষ্ণতা পরীক্ষা করাতে হবে।

শিশুর গোসলের পানিতে ডেটল বা স্যাভলন মেশানো যাবে না। এতে শিশুর শরিরে লালচে দানা উঠতে পারে।

শিশুর দেহের ভাঁজগুলো যেমন-গলা,কানের পিছন,কুচকী,বগল, যৌনাঙ্গ ও নিতম্বের ভাঁজগুলো ভালোভাবে পরিস্কার করে দিতে হবে।

পায়খানা করে থাকলে গোসলের আগে পরিস্কার করে নিতে হবে-যাতে গামলার পানি অপরিস্কার না হয়।

বেশী ছোট শিশুর ক্ষেত্রে সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো এবং মাথায় পানি না দিয়ে মাথা মুছিয়ে দেয়া ভালো।

তবে বড় শিশুর ক্ষেত্রে বেবীসোপ বা কোমল সাবান ব্যবহার করা যাবে।

শিশুকে পানিতে ডুবানো যাবে না । গোসল যথাসম্ভব কম সময়ে শেষ করা ভালো।

মেয়ে শিশুদের স্ত্রী অংগে অনেক সময় সাদা ময়লা জমে। গোসলের আগে ঐ স্থানটা পানিতে ভেজানো পরিস্কার তুলা দিয়ে পরিস্কার করে দিতে হবে।

গোসলের পরপরই শুকনো পরিস্কার তোয়ালে দিয়ে শিশুকে জড়িয়ে সর্বত্র আলতো চাপ দিয়ে শিশুর শরীরের সব পানি ভালোভাবে মুছে নিতে হবে।

শরীরে পরিস্কার শুকনা কাপড়, মাথায় টুপি এবং হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে।

গোসলের পরপরই শিশুর মাথা বা শরীরে লোশন, তেল বা পাউডার না লাগানই ভালো।

গোসলের পর শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে। এতে করে মায়ের বুকের গরম, দুধের গরমে সে গরম বোধ করবে এবং ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা কমে যাবে।

 

স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায় দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে

ডা. সঞ্চিতা বর্মণ


জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অফিস বা ব্যবসা ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। অনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে নানা রোগ-ব্যাধি, যা কখনো মারাত্মক রূপও ধারণ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোমরে চর্বিজমা, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, হার্টের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি সমস্যা যারা বসে কাজ করেন তাদের মধ্যে বেশি।

এছাড়াও যারা ডেস্কে বসে বেশিক্ষণ কাজ করেন তারা কোমর ও ঘাড় ব্যথায় বেশি ভোগেন। কিন্তু জীবনের তাগিদে নিত্যদিনের কাজ ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিদিন কাজের ফাঁকে কিছু অভ্যাস তৈরি করা উচিত। যেমন এক ঘণ্টা পর পর চেয়ার থেকে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটা, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠা-নামার অভ্যাস করা, চেয়ারে সোজা হয়ে বসা।

এছাড়াও

১. কিছু ছোট-খাটো ব্যায়াম আছে যা চেয়ারে বসেই করা যায়, কাজের ফাঁকে এই ব্যায়ামগুলো করা।

২.খাবার খাওয়ার সময় নাশতায় ভাজা পোড়া বা ফাস্টফুডের পর্রিবতে মৌসুমী ফল বা বাদাম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

৩.গ্রিন টি আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, তাই চা বা কফির পরিবর্তে গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে।

৪.প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করতে হবে।

এছাড়া কোনো প্রকার স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক : ত্বক, লেজার এন্ড এসথেটিক বিশেষজ্ঞ

 

স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা করার নিয়ম ও প্রতিরোধ

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল


মেয়েদের ক্যান্সারের মধ্যে শতকরা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। আর এ সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ রোগের ৬০ শতাংশ রোগীরই বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এমনকি শতকরা পাঁচ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। অনেক ক্যান্সারের সাথে স্তন ক্যান্সারের একটা বড় পার্থক্য হলো- সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে এ রোগ থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ।

স্তন ক্যান্সার এমন একটি রোগ, যা চিকিৎসকের আগে রোগী নিজেই এই রোগ নির্ণয় ও ডায়াগনোসিস করতে পারে। একজন সচেতন নারী খুব সহজে ও দ্রুত এটি ধরে ফেলতে পারেন।

পরীক্ষা করার নিয়ম

১. মাসিক শেষ হওয়ার পরে স্তন পরীক্ষা করতে হয়। কারণ এ সময় স্তন নরম থাকে। তাই প্রতি মাসের মাসিকের শেষ দিনটিতে স্তন পরীক্ষা করা উচিত।

২. পর্যাপ্ত আলোযুক্ত স্থানে আয়নার সামনে জামাকাপড় খুলে স্তনের আকার, রঙ, বোঁটার রঙ ও অবস্থান, চামড়ার অবস্থা ইত্যাদিতে কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে কি না দেখতে হবে।

৩. হাত দুটো কয়েকবার মাথার ওপরে উঠিয়ে ও নামিয়ে পরীক্ষা করে নিন স্তন দুটো ত্বকের নিচে সহজে নড়াচড়া বা ওঠানামা করে কি না।

৪. এবার বিছানায় শুয়ে প্রথমে ডান হাত মাথার নিচে বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙুল দিয়ে ডান স্তনটি ভালো করে চেপে দেখুন- কোনো চাকা বা গোটা হাতে পাওয়া যায় কি না। এ পরীক্ষা করার সময় স্তান ও এর আশপাশের সম্পূর্ণ জায়গা, বগলের নিচের অংশসহ পরীক্ষা করতে হয়। এবার বাম হাত মাথার নিচে দিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম স্তন ও এর আশপাশে পরীক্ষা করুন।

৫. আরেকবার দাঁড়িয়ে এভাবে ওপরের স্তন চেপে পরীক্ষা করুন। গোসল করার সময় সাবান লাগিয়ে পরীক্ষা করলে যেকোনো চাকা আরো ভালোভাবে হাতে ধরা পড়ে।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ

১. ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করুন।

২. পরিবারের কারো স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে সতর্ক হোন।

৩. দেরিতে মাসিক শুরু হওয়া, অবিবাহিত ও সন্তানহীন নারী এবং দেরিতে মা হওয়া নারীদের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি বলে এদের বেশি সচেতন হতে হয়।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অল্প বয়সে দীর্ঘ সময় ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করা বা মেনোপজের পর দীর্ঘ সময় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট নেয়া থেকে বিরত থাকুন।

৫. প্রতিদিন অন্তত একটি করে ফল খান। প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।

৬. শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৭. ওজন কমান, বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাবারে চর্বিজাতীয় খাদ্য, যেমন গরুর গোশতের পরিমাণ কমিয়ে দিন।

৮. নিজেকে জানুন, চিনুন এবং নিজের সম্পর্কে সচেতন হোন।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

১. ব্রেস্টে চাকা হওয়ার অর্থই ক্যান্সার নয়। ক্যান্সার ছাড়াও স্তনে চাকা হতে পারে। অনেক সময় তা এমনিতেই সেরে যায়।

২. স্তন ক্যান্সার হলেই পুরো স্তন কেটে ফেলে দিতে হবে- এমন কথা নেই। এটা নির্ভর করে ক্যান্সারের স্টেজের ওপর। এমনকি পুরো স্তন কেটে ফেললেও আজকাল রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির মাধ্যমে স্তনের আসল আকার-আকৃতি ফিরে পাওয়া সম্ভব।

৩. কেমো ও রেডিও থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন- চুল পড়ে যাওয়া, বমি, খাবারে অরুচি, দুর্বলতা, গায়ের রঙ কালো হয়ে যেতে পারে। যা পরে আপনা আপনি সেরে যায়।

৪. অকারণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ম্যামোগ্রাফি ঘন ঘন করা উচিত নয়। কারণ রেডিয়েশন স্বাভাবিক কোষকে ক্যান্সারে পরিণত করতে পারে।

লেখক : স্বাস্থ্য নিবন্ধকার, কথা সাহিত্যিক ও সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০১৭১৬২৮৮৮৫৫
(সুত্র:নয়াদিগন্ত)

 

বিজয়


অনবরত বৃক্ষের গান


বিজয় আমার কাছে জ্ঞানের অমিয় সুধা,
আধাঁরের ভাজ কেটে যেন আলোর রেখা।

বিজয় আমার কাছে
নদীর ঢেউ বেয়ে বয়ে চলা
যে থামতে জানে না,
ছুটে যায় নিরবধি।

বিজয় আমার রাসূলের জীবনপটে আঁকা সুন্দর ছবি,
চাঁদের আলোয় মাখা
সুরভিত ফুল।

বিজয় আমার কাছে হাসিমাখা
মমতায় ভরা মুখ,
যে আলোয় গাঁধা যায়
অব্যক্ত সকল দুঃখ।

বিজয় আমায় কাছে কালির আঁচড়ে,
সত্যের গান গাওয়া
মনফুটে সব অকপটে ঝরঝর।

বিজয় আমার কাছে সহজ,চিরবাস্তব,মহানুভব
নেতৃত্বের দৃঢ়তায় ছুঁয়ে যাওয়া।

বিজয় আমার কাছে ধৈয্য,
ওহুদের পাহাড়,শৃঙ্খলা শত-সহস্র,কোটি ঝড়ে যা টলে না শান্ত, অমিশ্র।

বিজয় আমার কাছে বীরের জুলফিকার,
তেজী ঘোড়ায় ছুটে চলা।

বিজয় আমার কাছে বিনীত হৃদয়,রবের ভয়ে সিক্ত চোখ,
কোমলতায় মোড়া ক্ষমা।

বিজয় আমার কাছে পরম আরাধ্য,সুগভীরচাওয়া।
প্রভু সুদীর্ঘ করুন এ বিজয়, বসুন্ধরা থেকে নীল আসমান।

ইসলামিক স্টাডিজ,অনার্স ৩য় বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

পতাকা কেবল এক টুকরো কাপড় নয়

জাজাফী


একটুকরো লাল রঙের কাপড়ের যেমন বলার মত কোন মূল্য নেই তেমনি একটুকরো সবুজ রঙের কাপড়ের ক্ষেত্রেও তাই।আবার ও দুটোকে একসাথে জোড়া লাগানোর পরও খুব বেশি পরিবর্তন হয়না।কিন্তু যখন পরিমাপ করে সবুজ কাপড়ের মাঝে গোল করে লাল একটুকরো কাপড় জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হয় তখন?সেটা হয়ে ওঠে অমূল্য।সেটা তখন আমরা বুকে ধরি। সেই কাপড়টি যখন একটা লাঠির মাথায় বেঁধে আকাশে ওড়াই তখন আমরা অপলোক তার দিকে তাকিয়ে থাকি।পতাকা হলো একটি দেশের পরিচয় বহনকারী এবং নিদর্শন স্বরুপ।অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে একটা কাপড় কতটা মযার্দাপুর্ন হয়ে ওঠে তার দৃষ্টান্ত এটা।যেমন একটুকরো সাদামাটা কাপড় যখন আল কুরআনের গিলাফ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন সেই কাপড়ের টুকরোটি হাত থেকে পড়ে গেলে সাবধানে সেটা উঠিয়ে আমরা চুমু খাই।এটা কিন্তু ওই কাপড়ের প্রতি সম্মান দেখানো নয় বরং কাপড়টি যার ছোয়া পেয়ে ধন্য হয়েছে তাকে সম্মান দেখানো।

শেখ সাদীর জীবনের একটি ঘটনা আমরা জানি।সাধারণ পোষাকে তিনি যখন একটা দাওয়াতে উপস্থিত হয়েছিলেন তখন তাকে কেউ সম্মান দেখায়নি,চিনতেও পারেনি এবং সেখানে ঢুকতে দেয়নি।পরে যখন তিনি ভাল পোষাক পরে উপস্থিত হলেন তখন তাকে যথাযথ সম্মান দেখানো হলো।বাকি ঘটনাটা আমরা এখানে না বললেও চলবে।আমরা বলতে চাইছি একই ভাবে যখন লাল সবুজের কাপড় সাদামাটা ভাবে জোড়া লাগানো হয় তখন তা ততোটা মযার্দা পায়না যতটা পায় পতাকা হিসেবে।লাল সবুজের ওই পতাকায় মিশে আছে আমাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।

কিন্তু আফসোস দিন যতই গড়াচ্ছে ওই পতাকার প্রতি আমাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা ততোই কমে যাচ্ছে।আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে আগের তুলনায় পতাকার প্রতি ভালবাসা বেড়েছে কিন্তু ওটার অধিকাংশই মেকি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।
তবে কি আমরাও আমেরিকার মত পতাকাকে একটুকরো কাপড় ভাবতে শুরু করেছি?একটু খেয়াল করলে দেখবেন আমেরিকানরা পতাকাকে আমাদের মত ভালবাসে না শ্রদ্ধাও করে না।তারা পতাকাকে অন্য আর একটুকরো কাপড়ের মতই মনে করে।তাই তারা পতাকা দিয়ে অর্ন্তবাস তৈরি করে,পতাকা দিয়ে তারা বিকিনি তৈরি করে।তার পর সেটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।এই ঢাকা শহরের দোকানেও আমেরিকান পতাকার অর্ন্তবাস কিনতে পাওয়া যায়।

আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে লাল সবুজের এই পতাকাটি পেয়েছি তাই পতাকার প্রতি আমাদের যে ভালবাসা আছে তা পৃথিবীর আর কারো থাকার কথাও নয়।কিন্তু দিন দিন নানা ভাবে আধুনিকতার নামে আমরা পতাকাকে তুচ্ছজ্ঞান করছি।জেনে কিংবা না জেনে পতাকার মযার্দা ক্ষুন্ন করছি।জাতীয় দিবসে আমরা ভালবেসে পতাকা ওড়াই।কিন্তু একদিন পরই দেখি সেই পতাকা ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে।অনেক সময় দেখি পতাকা একবার আকাশে ওড়ানোর পর তা আর নামানো হচ্ছেনা।পতাকা বাতাসে,ঝড় বৃষ্টিতে একদিন ছিড়ে নষ্ট হচ্ছে।
ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে দশ টাকা দিয়ে যে হাতে ধরা পতাকা আমরা কিনছি তা অনুষ্ঠান শেষে কিংবা পরেরদিনই রাস্তায় লুটোপুটি খাচ্ছে।আমরা গত কাল যে পতাকাকে বুকে ধরেছিলাম পরদিন সেটিই আমাদের গাড়ির চাকার নিচেয়,নিজেদের পায়ের নিচেয় পিষ্ট হচ্ছে।শুধুকি এক টুকরো পতাকাকে পা দিয়ে দলিত করছি?পক্ষান্তরে এটাকি দেশটাকেও পদদলিত করা নয়?

জাতীয় পতাকার প্রতি অবহেলা,অনাদরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লাল সবুজের পতাকা’। যেখানে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকার প্রতি মানুষের অতিরিক্ত আগ্রহ এবং ভালোবাসার যে চিত্রটি দৃশ্যমান, তার বিপরীতে জাতীয় দিবসের বাইরে, অন্যান্য সাধারণ সাদামাটা দিনে সেই একই জাতীয় পতাকার প্রতি মানুষের আগ্রহের যেমন অভাব, তেমনি রয়েছে এক ধরনের অবহেলা ও অজ্ঞতা।

কাগজে লাল সবুজের পতাকা ছাপানো হচ্ছে এবং সেটা জাতীয় দিবসে সুতোয় বেধে রাস্তায় ঝোলানো হচ্ছে নিবার্চনী পোষ্টারের মত। সেটাও রোদ,বৃষ্টি,ঝড়ে নষ্ট হচ্ছে।আমেরিকানদের বিকিনিতে পতাকা ব্যবহার করার মত পযার্য়ে যেতে কি বেশি সময় লাগবে?

লাল সবুজের পতাকা আমাদের অহংকার।এটি পাওয়ার জন্য আমাদের পুবর্পুরুষেরা যে আত্মত্যাগ স্বীকার করেছে তা আমাদের মনে রাখতে হবে।পতাকাকে শুধু মাত্র একটুকরো কাপড় ভাবলে চলবেনা।

হরহামেশা দেখছি গাড়িতে ইচ্ছেমত পতাকা ঝোলানো হচ্ছে।নিজ দেশের পতাকা ব্যবহার করার অধিকার প্রত্যেকেই রাখে তবে সেটার একটা নীতিমালা থাকা উচিত। ব্যক্তিপযার্য়ে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের কোন বিধান আছে কিনা আমার জানা নেই।যদি থাকে তবে সেটিকে কাযর্কর করতে হবে।সবাইকে জানাতে হবে।আর যদি না থাকে তবে এখনি সময় ব্যক্তিপযার্য়ে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নের।তা না হলে একদিন আমাদের দুঃখের সীমা থাকবেনা যেদিন আমেরিকানদের মত হয়ে যাবে।

অন্য দেশ ও জাতি তাদের পতাকাকে সম্মান দেখাক বা না দেখাক তাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা কিন্তু লাল সবুজের পতাকা তুচ্ছ কোন একটুকরো কাপড় নয়।সেটার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে।নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পতাকা নামাতে হবে।
অনেক রক্ত,প্রাণ আর সম্ভ্রমের বিনীময়ে অর্জিত পতাকার সম্মান বজায় রাখা প্রতিটি বাঙ্গালীর কর্তব্য।পতাকার প্রতি অসম্মান দেখানো মানে দেশকেই অপমান করা।নিজের মাকে অপমান করা।অবশ্য অনেক অভাগাই আছেন যারা নিজ মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসেন।তাদের কাছে পতাকাও একটা ফেলনা কাপড় ছাড়া কিছুনা। আর সে জন্যই নীতিমালা করে এটার অসম্মান যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।মনে রাখতে হবে পতাকা কেবল মাত্র এক টুকরো কাপড় নয়।

#জাজাফী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েবসাইটঃ www.zazafee.com

 

সেই ঝড় একটু উঠুক

ফাতিমা শাহীন


– কি হলো , কিছু বলছেননা যে !

রিসিভার কানে লাগিয়ে তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো বিভা , কথা বললনা । আর বলবেই বা কি ! যে গান শুরু করার আগেই তাল লয় কেটে গেছে, ভুলসুরে সে গান কষ্ট করে গেয়ে কি লাভ ! রেশাদ নিজে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভাকে দেখে গেছে, কোনো এক শুভক্ষণে বিভার চম্পাকলি অনামিকা মৃদু কাঁপুনিতে একটি স্বর্ণ বন্ধনে জড়ানোর অপেক্ষায়…. আর সেখানে কিনা একটি উড়ো খবরে বেঁকে বসলো সবাই , কি না , মেয়ের ছোট বেলায় পোলিও হয়েছিল ….এক পায়ে খাটো… একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে…কত কি !

এসব শুনে টুনে তো বিভার বাবা রেগে মেগে সারা । যারা নিজের চোখের চেয়ে পরের কানকে বিশ্বাস করে, তাদের সাথে আর যাই হোক আত্মীয়তা করা চলেনা …..রেশাদ তার পরিবারকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে , কিন্তু মা আর ভাই বোনদেরকে কিছুতেই বোঝাতে পারেনি ।

এখন আর কোনো উপায় দেখতে না পেয়েই অবশেষে বিভাকে ফোন …..

_ হ্যালো বিভা, আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন তো!

_ জ্বি, পাচ্ছি ।

_ আমি কিন্তু এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি । আবার ও জানতে চাইছি , আমি যদি একক সিদ্ধান্তে এসে আপনাকে সাথে নিয়ে আমাদের নতুন জীবন শুরু করি, আপনি কি আমার ডাকে সাড়া দেবেন ?

একটুক্ষণ চুপ থেকে বিভা এবার বলল :

_ দেখুন, আমি বিভা বা আপনি রেশাদ , আমরা জীবনের যে পর্যায়ে আজকে এসে পৌছেছি ..এখানে আমরা কেউ ই একক প্রচেষ্টায় আসতে পারিনি । আমাদের পরিবার , বিশেষ করে বাবা – মা , অনেক ঝড় ঝাপটা , আপদ বিপদ নিজেরা বুক দিয়ে ঠেকিয়েছেন , কিন্তু আমাদের গায়ে একটু আঁচ ও লাগতে দেননি । তাদের আদর , ভালবাসার ছায়ার নিচে থেকে থেকেই আজ আমরা বড় হয়েছি , পায়ের তলায় শক্ত মাটি খুঁজে পেয়েছি । আর আজ যেখানে বিয়ের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি, সেখানে কেমন করে আমরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নেব ? বাবা মায়ের দোয়া ও আশীর্বাদের হাত যদি আমরা আমাদের মাথার উপর না পাই , কেমন করে সফল হবে আমাদের জীবন চলার পথ ? কেমন করে গড়ব আমাদের স্বপ্নের , সাজানো সংসার ? আপনি আমাকে মাফ করবেন । বাবা মায়ের দোয়া আর সন্তুষ্টিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য যা কল্যানকর বলে বিবেচিত হবে, তা ই আমি খুশিমনে মাথা পেতে নেব ।

রিসিভার নামিয়ে রেখে পায়ে পায়ে বারান্দায় এলো বিভা । কাল রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে । কখনো টিপ টিপ , কখনো মুষলধারে । দুটি কাক রাস্তার পাশের রেইন ট্রি টার ডালে বসে চুপচুপে হয়ে ভিজছে । সিডি প্লেয়ারে হেমন্তের গান চালিয়ে দিল বিভা । নিজেই টের পেলনা কখন যেন মনটাও গানের সুরের সাথে সাথে ভিজে উঠতে শুরু করেছে …..

আকাশে বৃষ্টি আসুক , গাছের উঠুক কেঁপে ঝড়ে…

সেই ঝড় একটু উঠুক তোমার মনের ঘরে ..।

 

ভালো মানুষ

সোহা ফারাহ


গাড়িতে উঠতে গিয়ে হঠাৎ করেই আমড়া বিক্রেতা ছোট ছেলেটার আমড়াগুলো মাথা থেকে পড়ে গেলো পাকা রাস্তায়। আশেপাশের সকলেই তাকিয়ে দেখছে, আমিও দেখছি! সে মন খারাপ করে কাঁদোকাঁদো সুরে কি যেন বলছে আর পড়ে যাওয়া আমড়াগুলো উঠাচ্ছে। শেষমেষ কয়টা ভাঙ্গা আমড়া নিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছিলো। এমন সময় একটা লোক তাকে কাছে ডাক দিলো তারপর পকেট থেকে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বললো- মন খারাপ করোনা আবার শুরু করো।
(ভালো মানুষ)

শহর থেকে ফিরছিলাম বাড়িতে। হঠাৎ শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম একটা লেগুনায়। হেল্পার বাচ্চা ছেলেটা বৃষ্টিতে ভিজেই গেটে দাড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ গাড়িতে বসে থাকা এক লোক তাকে ভেতরে বসতে বললো। ছেলেটা রাজি না হলে হাতে টান দিয়ে ভেতরে বাসিয়ে দিলো। আবার বললো, ভেজার কি দরকার অসুস্থ্য হয়ে যাবা। ভেতরে ফাঁকাই তো রয়েছে। আর যারা উঠার এমনিতেই উঠবে ডাকতে হবেনা।
(ভালো মানুষ)

বাসের জানালা দিয়ে বই মেলার সারি সারি স্টলগুলো নজরে পড়া মাত্রই দ্রুত ভাড়া মিটিয়ে নেমে পরছিলাম। হঠাৎ ‘এই যে আপা শুনেন’ বলে হেল্পার দৌড়ে এসে সামনে দাড়ালো। বললো, আপা আপনার টাকা পড়েছে। ড্রাইভারটাও অনেক্ষণ গাড়ি স্লো করে রেখেছিলো! অবাক হয়ে দেখলাম হেল্পার এক হাজার টাকার নোট’টা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরেছে। ভাড়া দিতে গিয়ে কখন যে নোট’টা নিচে পরেছিলো তা খেয়াল করিনি।
(ভালো মানুষ)

বোনের চার মাসের বাচ্চার জ্বর হয়। সন্ধায় জ্বরের মাত্রা ছড়িয়ে যাওয়ায় ডাক্তারের উদ্দেশ্যে দু বোন বাচ্চাটাকে নিয়ে বেরোই। ফেরার পথে রিক্সায় আসতেই রাস্তায় দু’গ্রুপের মারামারি লাগে। চারিদিকে চিৎকার হট্টগোলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। হঠাৎ রিক্সার পেছনে লাঠি দিয়ে জোড়ে বাড়ি দেয় একজন। রিক্সার হুড আধভাঙ্গা হয়ে একপাশে ঝুলে পরে। অসুস্থ্য বাচ্চাটা ভয়ে কান্না শুরু করে। দিশেহারা হয়ে বোন রিক্সা থেকে নেমে যেতে চায়। রিক্সাওয়ালা তাড়াতাড়ি তাকে বাধা দিয়ে বলে, আম্মা এই মারামারিতে বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নামলে আরও বিপদে পরবেন। পাশের ঐ বস্তিতে আমার বাড়ি, আমি কোনও ভাবে রিক্সা একপাশে নেই। আপনারা আমার বাড়িতে কিছু সময় বসেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে বাসায় ফিরেন। তিনি বহু কসরতে ভাঙ্গা রিক্সাটা নিয়ে যান রাস্তার সাইডে। আমরা তার বাসায় গিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাচি। কিছু সময় পর রাস্তা ফাঁকা হলে বেরিয়ে গাড়ি খুজতে থাকি। ঐ রিক্সাওয়ালা তার ভেঙ্গে যাওয়া রিক্সায় আমাদের রেখে আসতে পারবেননা। কিন্তু রিক্সা বা গাড়ি কোন কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না। আবারও এগিয়ে এলেন তিনি। প্রায় এক ঘন্টা সময় রাস্তায় ঘুরাঘুরি করে আমাদের জন্যে রিক্সা আনলেন। দু’বোনকে রিক্সায় তুলে দিয়েই তিনি ঘরমুখো হলেন।
(ভালো মানুষ)

ভালো মানুষে ছেয়ে আছে এ দেশ ও জগৎ তাই হয়তো এখনো পৃথিবী জীবিত। আমাদের নজরে চট করে মানুষের খারাপটা সহজেই পরে যায়। কিন্তু আশেপাশে থাকা অসংখ্য ভাল মানুষদের যেন আমরা দেখতেই পাইনা। তারা দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায় বেশিরভাগ!
হ্যঁ মন্দ মানুষও আছে, কিন্তু আমাদের একটু ভাল ব্যবহারে তারাও ভাল হয়ে যেতে পারে। পৃথিবী তো বাঁচবেই শুধু তাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখাটার দায়িত্বই আমাদের। চারপাশের শুধু মন্দ বিষয়গুলো না দেখে ভাল কিছু যে হচ্ছে সেটাও খেয়াল রাখা জরুরী।
(ভালো মানুষ)

 

‘টাইম আউট’ বাচ্চাদের শৃঙ্খলা শেখানোর একটি পদ্ধতি

 ভাবানুবাদ:ফাতেমা শাহরিন

“শৃঙ্খলা” শেখানোর জন্য সুন্দর প্রক্রিয়া হল ‘টাইম আউট’। দুরন্তপনা বাচ্চাদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি খুব ভাল কার্যকর।

‘টাইম আউট’ হচ্ছে আপনার(৩ থেকে ১০)বছর বয়স সীমার বাচ্চাদেরকে পাঁচ মিনিটের জন্য একটি বিরক্তিকর জায়গায় পাঠানো।

‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়াটি কিভাবে কার্যকর হবে

প্রথমত, সময় নির্ধারণ করুন (দুষ্টুমির মাত্রার উপর এবং বয়সের উপর বিবেচনা করে সময় নির্ধারণ করুন)

দ্বিতীয়ত, স্থান (খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর স্থান যেন না হয়, এমন যায়গায় নির্ধারণ করুন যেন বাচ্চা বুঝতে পারে তাকে ‘টাইম আউট’ টেকনিক মধ্যে ফেলানো হয়েছে)

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

টাইম আউট করার সময় বাচ্চাকে প্রথমে পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে বলতে হবে যদি বাচ্চা বুঝতে না পারে কেন ‘টাইম আউট’ দেওয়া হচ্ছে তাহলে উল্টো কাজের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে। ( এ সময় হয়ত চিৎকার অর্থাৎ কান্না করবে, কিন্তু উত্তর দেওয়া যাবে না- এটা খুব অল্প সময়ের জন্য হতে পারে) সাধারণত এর মধ্যেই বাচ্চা থেমে যায়, আর যদি তাতেও না থামে, অনেক সময় বাচ্চাদের জেদ উঠতে পারে তখন ‘টাইম আউট’ পদ্ধতি নয় বরং বাচ্চাকে শান্ত করা দরকার।

‘টাইম আউট’ বিহ্যাভিয়ার টেকনিকটি সম্পর্কে ৭টি বিষয় জানা দরকার

১. লক্ষ্য আচরণ নির্ধারণ

সন্তানের যে আচরণটি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন তা নির্দিষ্ট জিনিস ব্যবহার করার মাধ্যমে ‘টাইম আউট’ প্রয়োগ করুন। ‘লক্ষ্য আচরণ’ বলতে, ধরুন ‘আপনার সন্তান প্রায় মানুষকে আঘাত’ এই আচরণটি হল ‘লক্ষ্য আচরণ’ যা আপনি পরিবর্তন করতে চান। লক্ষ্য আচরণ একাধিক নয় বরং একটি নির্ধারণ করুন।

২. বিরক্তিকর স্থান

‘টাইম আউট” ঘরটি যেন বিরক্তিকর এবং নিরাপদ হয়। লন্ড্রি রুম, গেস্ট রুম, বাথরুম এবং ঘরের কোণে সাধারণত উপযুক্ত। যখন আপনি রুম নির্বাচন করবেন, নিশ্চিত করুন যে ঘরটি খালি এবং নিশ্চিত হয়ে নিন বাচ্চার জন্য নিরাপদ। এ সময় তাদের অন্যান্য শিশুদের এবং মজাদার কার্যক্রমগুলি থেকে দূরে রাখুন। ওদের বুঝতে দিন আপনি টাইম আউটে ফেলেছেন তাকে।

৩. কত সময় রাখবেন

সময়কাল মুলত নির্ধারণ করা হয় শিশুদের বয়স উপর ভিত্তি করে। ৩-৫ বছরের শিশুর জন্য ৩ মিনিটের জন্য, ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য ৫ মিনিট, ১০ বছরের উপর হলে ১০ মিনিটের চেয়ে দীর্ঘতর সময় যেন না হয়।
‘টাইম আউট’ এর সময় ঐ রুমে একটি ঘড়ি থাকতে ভাল। কারণ আপনি সন্তানকে ঐ ঘড়ি দেখিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারেন এবং বড় ঘড়ি হলে ইশারা করেও বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।

৪. টাইম আউটের প্রভাব

টাইম আউট দেবার ফলে কোন প্রভাব পড়ছে কিনা, লক্ষ্য আচরণটি পরিবর্তন হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। এই ‘সময়’ দেবার আগে বুঝিয়ে বলুন আপনি ‘টাইম আউট’ দিচ্ছেন শুধু নির্ধারিত আচরণটির পরিবর্তনের জন্য। সেরা সময়ে যখন আচরণটি পরিবর্তন হচ্ছে শান্ত এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে তখন বাচ্চাকে ‘ভাল বলুন’।

৫. ব্যাখ্যা করুন

সন্তানদের জন্য ‘টাইম আউট’ সবচেয়ে ভাল কাজ করবে যখন শিশুটিকে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।আপনার সন্তান যখন বুঝতে পারবে মা বাবা ভাল আচরণ করতে তাকে সাহায্য করছে তখন মুলত খুব ভাল ভাবে ‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।

৬. হুমকি বা বার বার ব্যবহার না করা

হুমকি হিসাবে ‘টাইম আউট’ ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে বাচ্চার কাঙ্ক্ষিত আচরণ পরিবর্তন হবে নানা। উদাহরণ দিয়ে বললে, হতে পারে আপনি সন্তানকে হুমকি দিচ্ছেন, তুমি দুষ্টুমি বন্ধ না করলে নিচের ঘরে রেখে আসব, আপনি পরবর্তীতে তা করলেন না এ সময় বাচ্চারা অতিরিক্ত সুযোগ পায় অন্যায় করার। শুধু ‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়া বার বার প্রয়োগ করবেন না বরং অন্যান্য আচরণগত প্রক্রিয়াগুলও ব্যবহার করুন।

৭. ‘টাইম আউট’ কার্যকর হলে পুরস্কার

‘টাইম আউট’ ব্যবহার ফলে যদি সফল হয় নির্ধারিত আচরণের দিকে এগিয়ে যায়। তখন বাবা ময়েরা খেয়াল করবেন পরের দিনটি অনুসরণ করছে কিনা,এ সময় বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সাথে সুন্দর সময় কাটানো এবং পরবর্তীতে তাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া বা পুরস্কার দেবার পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।

সীমাবদ্ধতা: দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘টাইম আউট’ মধ্যেও অনিবার্য কারণে কিছুটা ভুল ধারণা রয়ে গেছে,কেউ কেউ সন্তানকে আউটিং খেলার সময় ‘টাইম আউট’ দেয়। যা বাচ্চাদের আবেগীয় বিকাশে ক্ষতি করে।

টাইম আউটের সময় বাচ্চাদের উপর নিরবে খেয়াল রাখুন অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে। সুত্র:’প্যারেন্টি’ অনলাইন।

ফাতেমা শাহরিন
মনোবিজ্ঞান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
মেইল:zummi093824@gmail.com

 

মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা এবং খাওয়াবার নিয়ম

ডা.মারুফ রায়হান খান

এটা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই একটি শিশুর জন্মের পর কী খাবে তার আগাম ব্যবস্থা করে পাঠান। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ মিলিয়ন নবজাতকের মৃত্যু নিবারণ করা সম্ভব, যদি জীবনের প্রথম ১ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে বুকের দুধ পান করানো যায়। আরও বলা হয় যে, অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুমৃত্যুর হার প্রায় ১৩ ভাগ কমিয়ে আনা যেতো শিশুকে জন্মের প্রথম ৬ মাস শুধু বুকের দুধ দেওয়া হতো। এবার আলোচনা করা যাক বুকের দুধের উপাকারিতা নিয়ে।

শিশুর জন্যে উপকারিতা:

১. এটি একটি পূর্ণাঙ্গ খাবার। সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে এর মাঝে।
২. এটি সহজেই হজম হয়, পরিপাকতন্ত্রে ভালোভাবে শোষণ হয়।
৩. জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে।
৪. মায়ের সাথে শিশুর এক আত্নিক-আবেগিক বন্ধন গড়ে ওঠে।
৫. মস্তিষ্কের গঠন সুসংহত হয়। বুদ্ধিমত্তা শক্তিশালী হয়।
৬. বিভিন্ন ধরনের এলার্জি থেকে প্রতিরোধ করে।
৭. যেসব শিশু নিয়মিত বুকের দুধ পান করে, তাদের শৈশবকালীন ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কম থাকে।

মায়ের জন্যে উপকারিতা:

১. জরায়ু গর্ভকালীন সময়ের আগের স্থানে দ্রুত ফিরে যেতে সহায়তা করে।
২. পরবর্তী গর্ভধারণকে বিলম্বিত করে।
৩. স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

পরিবার এবং সমাজের উপকারিতা:

১. অর্থ বাঁচায়।
২. পরিবার-পরিকল্পনায় সহায়তা করে।
৩. যেসব শিশুকে যথার্থভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, তাদের হাসপাতালে কম ভর্তি করতে হয়।
৪. শিশুকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। আর একজন সুস্থ শিশুই পারে সমাজকে তার সর্বোচ্চটুকু দিতে।

শিশুকে বুকের দুধ কীভাবে খাওয়াতে হয়?

১. মায়ের হাত দিয়ে শিশুর পুরো শরীরটাকেই সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হবে।
২. শিশুর শরীর মায়ের শরীরের সাথে লাগানো থাকবে।
৩. মাথা এবং শরীর সোজা থাকবে।
৪. শিশুর মুখ স্তনের দিকে থাকবে, নাক স্তনবৃন্তের (নিপল) বিপরীতে থাকবে।
৫. শিশুর থুতনি স্তন স্পর্শ করবে।
৬. শিশুর মুখ বড় করে খোলা থাকবে।
৭. নিচের ঠোঁটটা বাইরের দিকে থাকবে।
৮. স্তনের কালো অংশ (এরিওলা) নিচের থেকে উপরের অংশ বেশি দৃশ্যমান হবে।

ডা.মারুফ রায়হান খান
প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

কত ধর্ষিত শিশুর লাশ পেলে কতৃপক্ষ জেগে উঠবে

ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে খুনের সাত ঘন্টা পর উদ্ধার হয় কুমিল্লার চান্দিনায় শিশু কন্যা মীম। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওমর ফারুক (১৯) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।

আটক মোস্তফা কামালের ছেলে ওমর ফারুক চান্দিনা পৌরসভার বেলাশহর গ্রামে বাসিন্দা এবং মীমের প্রতিবেশী। ঘাতক পেশায় গাড়ি চালক।

রবিবার রাতে তাকে আটক করার পর গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় ম্যাজিস্ট্রেট বিপ্লব কুমার দেবনাথ এর আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় সে। তার জবানবন্দিতে জানা যায়, নিহত শিশু সুবর্ণা আক্তার মীমের পাশ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা গাড়ি চালক ওমর ফারুক।

ঘটনার দিন গত ৬ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল থেকে ওমর ফারুক তার প্রাইভেটকারটি ওয়াশ করছিল। গাড়ি দেখে মীম এগিয়ে গেলে তাকে গাড়িতে চড়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে পুকুর থেকে পানি সরবরাহ করিয়ে গাড়ি ওয়াশ করে চালক ওমর ফারুক। দুপুর ১২টার কিছু পর গাড়ি ওয়াশ শেষে ওমর ফারুক তার কথামত মীমকে গাড়িতে উঠিয়ে বেলাশহর আরএনআর ব্রিক্স ফিন্ড সংলগ্ন স্থানে এনে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এসময় মীম চিৎকার করে অচেতন হয়ে পড়লে গাড়ি চালক ওমর ফারুক তাকে ওড়না দিয়ে শ্বাসরূদ্ধ করে হত্যা শেষে গাড়ির পিছনের বক্সে লুকিয়ে রেখে গাড়িটি তার গ্যারেজে রেখে দেয়।

প্রায় সাত ঘন্টা শিশুটির মরদেহ গাড়িতে থাকার পর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টায় গাড়ি যোগে পাশ্ববর্তী থানগাঁও গ্রামের মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন একটি খালপাড়ে শিশু মীম এর মরদেহ ফেলে আসে। বিষয়টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে ওই গাড়ি চালক তার গোপন একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে শিশু মীমের পিতা কোরবান আলীকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে মুহুর্তের মধ্যে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে সীম কার্ডটি ফেলে দেয়।

চান্দিনা থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই কল লিস্টের সুত্র ধরে চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ, উপ-পরিদর্শক (এস.আই) স্বপন কুমার সরকার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এস.আই) ডালিম কুমার মজুমদার সহ ‘টিম চান্দিনা’ অভিযান চালিয়ে উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের বদরপুর-মেহার গ্রাম থেকে তাকে আটক করার পর এ তথ্য উন্মোচিত হয়।

চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, মূলত যৌন তাড়নায় গাড়ি চালক ওমর ফারুক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এর আগে নিহতের মা খাদিজা আক্তার সিমু বাদী হয়ে মীম এর সৎ মা লাভলী আক্তার (৩৫) ও তার ছোট ভাই দেবিদ্বার উপজেলার বাগুর গ্রামের মোস্তফা সরকারের ছেলে সালাউদ্দিন সরকারকে (৩২) আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাদির লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সৎ মা ও মামাকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার পর থেকে শিশু মীমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে পাশ্ববর্তী গ্রামের থানগাঁও ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় শিশু মীমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সুত্র ও ছবি: ইন্টারনেট

 

‘বাচ্চাদের প্রশ্ন করা’—আফরোজা হাসান

গতকাল আমাদের ভলান্টিয়ার টিচারদের আলোচনার বিষয় ছিল বাচ্চাদের প্রশ্ন করা। প্রতিটা ক্লাসেই আমাদের প্রত্যেকজন টিচারকে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় বাচ্চাদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে।

সারাক্ষণ প্রশ্ন করতেই থাকে বাচ্চারা। পড়া বিষয়ক প্রশ্ন, সাধারণ প্রশ্ন, মাঝে মাঝে গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নও। আসলে বাচ্চাদের স্বভাবই হচ্ছে তারা প্রশ্ন করতে ভালোবাসে। অবশ্য প্রশ্ন করাটা খুব ভালো এতে বাচ্চাদের চিন্তাশক্তি প্রসারিত হয়।

সমস্যা হচ্ছে বেশির ভাগ অভিভাবক বাচ্চাদের প্রশ্নের জবাব ঠিকমতো দেন না। আগে আমার ধারণা ছিল যে আমরা বাঙ্গালী বাবা-মায়েরাই মনেহয় বাচ্চাদের বেশি প্রশ্ন শুনলে বিরক্ত হই বা ঠিকমতো জবাব দেই না। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে কথা বলার পর থেকে বুঝলাম যে সব দেশী বাবা-মায়েদের অবস্থাই প্রায় একই রকম। অথচ প্রশ্ন করা আর এর জবাব দেয়ার মাধ্যমে বাচ্চাদেরকে অনেক দরকারি বিষয় খুব সহজেই শিখিয়ে ফেলা যায়।

বাবা-মাদের কখনোই উচিত নয় বাচ্চাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকা। বরং বাচ্চারা যাতে বেশি বেশি প্রশ্ন করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত। স্কুলে যেমন আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নপত্র আছে বাচ্চাদের জন্য। প্রশ্নপত্র গুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে জবাব দিতে গিয়ে বাচ্চারা আত্মসমালোচনা করা শিখতে পারে….হতে পারে অমুখাপেক্ষী ও দায়িত্বশীল। প্রতিটা প্রশ্নের জবাব দিতে বাচ্চাদেরকে আমরা সাহায্য করি এটা ঠিক কিন্তু যখন ওদের চিন্তা আর পথ খুঁজে পায় না সামনে বাড়ার শুধু তখন।

পরিবার বিষয়ক প্রশ্নপত্রে যেমন আছে, তুমি কি তোমার বাবা-মাকে ভালোবাসো? কেন বাসো? তোমার বাবা-মা কি তোমাকে ভালোবাসে? কিভাবে বুঝলে যে তারা তোমাকে ভালোবাসে? বাবা-মার কোন জিনিসটা তোমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে এবং কেন ভালো লাগে? কোন জিনিসটা সবচেয়ে অপছন্দ করো এবং কেন করো অপছন্দ? তুমি কি তোমার ভাইবোনকে হিংসা করো? কি কি কারণে হিংসা করো? ভাইবোনের কোন জিনিসটা সবচেয়ে পছন্দ আর কোনটা সবচেয়ে অপছন্দ এবং কেন? ইত্যাদি এই ধরণের আরো কিছু প্রশ্ন।

এই প্রশ্নগুলো বাচ্চাদেরকে সাহায্য করে নিজেকে বুঝতে, জানতে ও চিনতে। কেন, কি কারণে বা কিসের জন্য একটা জিনিস পছন্দ বা অপছন্দ সেই ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়ে যায় মনে। কারণ ছাড়া কোন কিছু করা যাবে না বা ঠিক না এটা বদ্ধমূল হয়ে যায় বাচ্চাদের মনে। যা তাদের চিন্তাকে যুক্তির পথে পরিচালিত হতে সহায়তা করে। তাই বাচ্চাদেরকে বেশি বেশি প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করতে হবে এবং তারা যাতে নিজের চিন্তাকে কাজে লাগাতে পারে সেই পথ প্রসন্ন করতে হবে।

 

“বন্ধ্যাত্বের জন্য কোনক্রমে কি আপনি দায়ী”—ডা.মারুফ রায়হান খান

১ বছর যাবত অরক্ষিত শারীরিক মিলনের পরেও গর্ভধারণ না করতে পারাটাকেই বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। প্রজননের বয়সের ১০-১৫% দম্পতি এ সমস্যায় ভুগে থাকেন।
img20171210_233801
অনেকগুলো জীবনযাত্রার ব্যাপার আছে যার প্রাকৃতিক জন্মদানক্ষমতার ওপর প্রভাব রয়েছে। সেগুলো হলো :
img20171210_234142
১. বয়স : বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছরের পরে গর্ভধারণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে। পুরুষের বয়সও গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের অক্ষমতাটা শেষ বয়সে পরিলক্ষিত হয়।
img20171210_234109
২. বিগত মাসিকের দশম থেকে আঠারোতম দিনে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে প্রতি ৪৮ ঘণ্টাতেই যৌনমিলন করা প্রয়োজন।
img20171210_234049

৩. সাফল্য পেতে প্রতি ১-২ দিনে একবার যৌনমিলন করা উচিত। তবে মানসিক চাপ থেকে রেহাই পেতে, আরও কম যৌনমিলন করা গ্রহণযোগ্য।
img20171210_234214
৪. কোনো নির্দিষ্ট আসনে যৌনমিলন গর্ভধারণের সম্ভাবনার উন্নতি ঘটায় না।

৫. বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) যদি অনেক বেশি থাকে (>৩৫) বা অনেক কম থাকে (<১৯) তবে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়। img20171210_233931
৬. ধূমপান, মদ্যপান (দিনে ২ বারের বেশি) এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান ( দিনে ৫ কাপের বেশি) বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়।

৭. স্বামীর জন্যে – উষ্ণ, আঁটসাঁট, নাইলনের অন্তর্বাস পরিহার করা উচিত। তাদেরকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে বলা হয়। কারণ শরীরের অভ্যন্তরে যে তাপমাত্রা তারচেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম তাপমাত্রা অণ্ডথলিতে থাকতে হয় কার্যকর শুক্রাণু তৈরির জন্যে।
img20171210_234235
৮। খাবার : মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের কিছু ভূমিকা আছে সন্তান জন্মদান-সক্ষমতার ক্ষেত্রে। ফলিক এসিড এবং জিঙ্কের ঘাটতি থাকলে শুক্রাণু তৈরি কমে যেতে পারে। তাছাড়া খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্ট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন : বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, রেটিনল এবং আলফা টকোফেরোলের ঘাটতি থাকলে জননতন্ত্রের নিঃসরণ কমে যেতে পারে। ফলে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

৯. অনেক দম্পতি যৌনমিলনের সময় শুষ্ক যোনিপথের কারণে পিচ্ছিলকারক পদার্থ ব্যবহার করেন। এসব পদার্থ প্রায়শই অম্লীয় হয়ে থাকে এবং শুক্রাণুকে হত্যা করে।

১০. অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা কমায়।

১১. সামাজিক শ্রেণি : গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহুরে নারীদের বন্ধ্যাত্বের পরিমাণ বেশ বেশি। কারণ উচ্চশ্রেণির নারীরা তাদের ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা না করে সাধারণত সন্তান নিতে চান না। আবার কিছু কিছু রোগ এ শ্রেণির মধ্যে বেশি হয়; যেমন : এন্ডোমেট্রিওসিস, যা নিজেই কিনা বন্ধ্যাত্বের জন্যে দায়ী। যে বয়সে এসে প্রাকৃতিকভাবেই সন্তান জন্মদানের ক্ষমত কমে যায় এবং বিভিন্ন গাইনোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়, তখন সন্তান নেবার চেষ্টা বন্ধ্যাত্বকে প্রভাবিত করে।
img20171210_234125
১২. সন্তান জন্মাদানের সক্ষমতার ওপর কিছু কিছু ওষুধের প্রভাব আছে।

তাই নিঃসন্তান দম্পতির দুজনকেই গাইনী বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়া উচিত।

 

রত্নগর্ভা এক মায়ের গল্প

২০১৭ সালে পেয়েছেন সেরা জয়িতা- রত্নগর্ভা অ্যাওয়ার্ড ‘রত্নগর্ভা মা’ মোছা:হামিদা বেগম। সুন্দর আলোয় উদ্ভাসিত এই মা নিজের দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস ও সততা কারণে গৌরব অর্জন করেছেন।
img20171210_145908
মা তার সন্তানদের রত্ন বানানোর স্বপ্ন থেকে কখনও সরেননি একচুলও।

একজন গ্রাম্য মাতব্বরের খুব সাধারণ স্ত্রী ছিলেন তিনি। এক সংগ্রামী মা। তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। যে সংগ্রামের শুরু তার শৈশব। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন তার বড় পরিচয় তিনি একজন সফল মা।
হামিদা বেগম ছিলেন একান্নবর্তি সংসারের পরিবারের বউ আর তাই দায়িত্বটাও ছিল বেশি। ৩০/ ৩৫ জনের ঢেকি-হেঁসেল-হাড়ী ঠেলে ক্লান্ত। হাজবেন্ড কর্মপাগল সামাজিক ও ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য সন্তানদের শাসন-সোহাগের যে শুন্যতা তৈরী হত তাও তিনি একাই পুষিয়ে দিয়েছেন। সব ক্লান্ত ঠেলে সেই মা রাতের বিছানায় স্বপ্ন বুনতেন রোজ। সংকল্প করেন হামিদা সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তোলার।

হামিদা বেগমের ছেলে মেয়েরা সবাই স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত আছেন। তার সন্তানদের সম্পর্কে জানা যায়,

বড় সন্তান ড. আব্দুস সালাম আযাদী। তিনি লেখাপড়া করেছেন রিয়াদের কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল সহ মাস্টার্স। বৃটেনের অয়েলস এ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

মেজো ছেলে, আর্মি মেডিক্যাল কোরে জয়েন করেছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন।

ছোট ছেলে আব্দুস সামাদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে ইংরেজী বিভাগ থেকে এম এ করেছেন। বর্তমানে ঢাকার তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় অধ্যাপনা করছেন।

বড় মেয়ে তাসলিমা রহমান একটি কুরআন একাডেমি পরিচালনা করছেন। হাজবেন্ড একটি ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল।

মেজো মেয়ে সেলিনা হাবীব কামিল এম এ। একটি ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসায় অধ্যাপনা করছেন। তার হাজবেন্ড একটি মহিলা মাদরাসায় অধ্যাপক।

সেজো মেয়ে নুরুন্নাহার লাভলি কামিল এম এ করেছেন।একটি কুরআন একাডেমির ইনস্টাক্টর হিসাবে আছেন।

এরপর নাজমুন্নাহার স্বপ্না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ করেছেন। তার হাজবেন্ড কর্মরত আছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে।

সবার ছোট শামসুন্নাহার মলি আই আই ইউ সি থেকে ইংরেজীতে অনার্স শেষ করেছেন। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে আছেন ফেমিলী সহ।

মা কে নিয়ে একজন সন্তান লিখেছেন— ‘তার ঘরটি ছিল মাটির কিন্তু তিনি সোনা ফলানোর স্বপ্ন দেখতেন। শীতের রাতে যে বিছানাটাতে ঘুমোতেন সেটার ভিতরে তুলো ছিলো না। যে জায়নামাজে বসে আরশের মালিকের কাছে আমাদের জন্য হাত তুলে বসে থাকতেন সেটা মখমলের ছিল না। এতগুলো ভাইবোনের কত প্রয়োজন মিটাতে হত অথচ তার হাতে দুটো টাকা থাকতো না। অনেক বড় বড় স্বপ্নভরা গল্প শুনাতে শুনাতে আমাদের দুচোখে স্বপ্ন এঁকে দিতেন।’

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত আট সন্তানের এই জননী। তিনি প্রতিটি সন্তানকে শিক্ষায় এবং নৈতিকতায় পরিপূর্ণ আলোয় আলোকিত করে তুলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন।

আট সন্তানকে গর্ভে ধারন করে তিনি যেমন মা হয়েছেন আবার গর্ভে ধারন না করেও অনেকের মা ডাক শুনে যাচ্ছেন। স্বমহিমায় উজ্জ্বল পথের দিশারী অন্যদের কাছেও।

ফাতেমা শাহরিন

 

‘নারীদের মূত্রনালীতে ইনফেকশান বেশি হয়’ এর কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় ও করণীয় —ডা.মারুফ রায়হান খান

খুব অহরহ যে রোগটিতে মানুষ আক্রান্ত হয় সেটি হলো মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ বা Urinary Tract Infection (UTI)। সাধারণত মূত্রথলী এবং মূত্রনালীর প্রদাহকেই UTI বলা হয়।
সবচেয়ে বেশি এ রোগটি হয় যে জীবাণু দিয়ে তা হলো Escherichia coli।
এটি নারীদেরই সাধারণত হয়। পুরুষদের কমই দেখা যায়। তবে জীবনের ১ম ১ বছর এবং ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে হতে পারে।
img20171209_214403
কেন নারীদের বেশি হয়?

-তাদের মূত্রনালী আকারে ছোট হয়।
-এটি মলদ্বারের নিকটবর্তী, তাই সেখান থেকে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।
-প্রোস্টেট গ্লান্ড থেকে পুরুষদের এক ধরনের তরল নিঃসৃত হয় যা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে তার অনুপস্থিতি।

এছাড়া যৌনমিলনের সময় মূত্রনালীতে আঘাত লাগতে পারে তখন পেরিনিয়াম থেকে মূত্রথলীতে জীবাণু প্রবেশ করে এ রোগটি হতে পারে।
img20171209_214533
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ঃ

– যারা বিভিন্ন কারণে মূত্রথলী পরিপূর্ণভাবে খালি করতে পারেন না।
– মূত্রনালীতে যদি ক্যাথেটার করা থাকে। কিডনী, মূত্রথলি কিংবা মূত্রনালীতে যদি পাথর জমা হয়।
– যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমনঃ মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া নারী ও ডায়াবেটিস রোগী।
img20171209_214633
লক্ষণসমূহঃ

১। হঠাত করে ঘনঘন প্রস্রাব পাওয়া।
২। প্রস্রাব করার সময় খুব জ্বালাপোড়া হওয়া।
৩। প্রস্রাব করার সময় অথবা শেষে তলপেটে ব্যথা অনুভব করা।
৪। প্রস্রাব করা শেষে পুরোপুরিভাবে প্রস্রাব হয়নি, কিছু থেকে গিয়েছে এরকম অনুভব করা।
৫। প্রস্রাব কখনও কখনও ধোঁয়াচ্ছন্ন হতে পারে, দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে।
৬। কখনও কখনও প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে।
img20171209_214655
চিকিৎসাঃ

উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক এক্ষেত্রে প্রধান চিকিৎসা। তবে বলে রাখা ভালো, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজেরা কিংবা ফার্মেসিওয়ালাদের কাছ থেকে যেকোনো এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা বিপদজনক হতে পারে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে বলা হয়ে থাকে।

যাদের বারবার এই রোগটি হয় তারা এটি প্রতিরোধের জন্য যা করতে পারেন :

১. দিনে ২-৩ লিটার পানি খাবেন।
২. প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। যখন প্রস্রাবের বেগ আসবে করে ফেলবেন।
৩. যৌন মিলনের আগে ও পরে প্রস্রাব করে নেবেন। (সঙ্গমের পরে প্রস্রাব করে নিলে এসময় যদি কোনো ব্যাক্টেরিয়া মূত্রনালীতে যেয়ে থাকে তাহলে বেরিয়ে যাবে।)
৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবেন। টয়লেট সেরে পরিষ্কার হবার সময় সবসময় সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করবেন।
৫. বেশি করে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। (এটা ইউরিনে অম্লীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে, ফলে ব্যাকটেরিয়া বেশি বৃদ্ধি হতে পারে না।)
৬. মাসিকের সময় পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করবেন। (গ্রামাঞ্চলে হয়তো এখনও অনেকে ন্যাপকিন/প্যাড ব্যবহার করেন না।) নিয়মিত প্যাড চেঞ্জ করবেন। বলা হয়ে থাকে ৬ ঘণ্টার বেশি এক প্যাড না ইউজ করার জন্যে।
৭. কটনের আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করবেন। ( কারণ ব্যাকটেরিয়া আর্দ্র জায়গায় বেশি জন্মায়, কটন আর্দ্রতা ধরে রাখে না।)

 

নারীশিক্ষার অগ্রদূত ‘বেগম রোকেয়া’

“অশিক্ষিত চোখ যেই খানে ধূলি-কর্দম দেখে, শিক্ষিত চোখ সেই খানে দেখে মণি-মাণিক্য”

আপনার ধারণায় ঠিক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের উক্তি এটি। তিনি নারীদের শিক্ষা দিয়ে আলোকিত করার অগ্রদূত। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। খুব অল্প সময়, মাত্র ৫২ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এই অল্প সময়ে এবং হাজার বাধার মধ্যে তিনি এত কাজ করেছেন যে ভাবতে অবাক লাগে। নারীশিক্ষার জন্য যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা তিনি করেছেন, যে সাহস দেখিয়েছে, সেটা তিনি দেখিয়েন আমাদের অনুপ্রেরণাককারী হিসেবে। বেগম রোকেয়া ১৩৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুগলের হোমপেজে বিশেষ একটু ডুডল প্রদর্শন করা হচ্ছে।

প্রতিবছর ডিসেম্বরের ৯ তারিখ বেগম ‘রোকেয়া দিবস’ পালন করেন বিভিন্ন নারী সংগঠন, এনজিও, সরকারের নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ‘রোকেয়া পদক’ দেওয়া হয় বিশিষ্ট নারীদের। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক-২০১৭ প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি থাকবেন।
এ বছর রোকেয়া পদক পেয়েছেন
images(81)
চিত্রশিল্পী ‘সুরাইয়া রহমান’, লেখক ‘শোভা রানী ত্রিপুরা’, সাংবাদিক ‘মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ(মরণোত্তর)’, সংগঠক ‘মাজেদা শওকত আলী’,
সমাজকর্মী ‘মাসুদা ফারুক রত্না’।
আজ তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

বেগম রোকেয়া দিবস থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস—ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস, বাংলাদেশের নারীদের এই অনন্যসুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। সামগ্রিকভাবে সবাই মিলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তুতি আমরা রোকেয়া দিবস থেকেই শুরু করতে পারি। সমাজের সবাইকে মনে করিয়ে দেয়, নারীমুক্তির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখা যায়। রোকেয়া সেই দিকটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ছবিসুত্র:বিডিনিউজ২৪,গুগল

 

মাদকা ও সাইবার আসক্তি নিরাময়ে SBT(Spiritualistic Behaviour Therapy) অধিক কার্যকরী —- ডা.কবীর জুয়েল

রাজধানীর সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ সম্পর্কিত সেমিনার সম্পন্ন হয়েছে। মালয়েশিয়াস্থ AIMST -এর ভিজিটিং সহযোগী অধ্যাপক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কবীর জুয়েল মধ্যপ্রাচ্যে বহুল ব্যবহৃত
SBT(Spiritualistic Behaviour Therapy) -এর মাধ্যমে আসক্তি নিরাময়ের ওপর আলোচনা করেন। সেমিনারে তিনি মাদক ও সাইবার আসক্তি নিরাময়ে নৈতিক শিক্ষাগ্রহণ জরুরী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানমালায় অন্যতম আকর্ষনীয় দিক ছিল প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বলিষ্ঠ সংবাদ পাঠক ও ভাস্কুলার সার্জন ডা. সাকলায়েন রাসেল। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ভি.সি ও প্রফেসর অফ এমিরেটাস অধ্যাপক ড. এম শমসের আলীসহ আরও অনেকে। সভাপতিত্ব করেন সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. এএনএম মেশকাত উদ্দিন।

মাদক একটি মরণব্যাধি। মুলত IDU(Intra Venous Drug Users) অর্থাৎ শিরায় নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণকারীদের নিরাময় প্রকল্পে Psychiatrist ও Vascular Surgeon -এর যুগপৎ ভূমিকা রয়েছে।

সেমিনারে বক্তিতা শেষে, শিরায় ক্রমাগত ইঞ্জেকশান নেওয়ার কারনে তাদের শিরা জনিত রোগ দেখা দেয়, এ বিষয়ে উপর তারা দুজনে পালাক্রমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

এছাড়াও ৫-জন মেধাবী ও প্রাণবন্ত ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে ” South East University Mental Health Club” খোলা হয়।
ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

 

ধূপছায়া -সুমাইয়া তাসনিম

নাশতা করে আয়েশ করে কম্বলের নিচে ঢুকতেই অনু দরজায় এসে দাঁড়ালো। আমি তাকাতেই ঠোঁট প্রসারিত করে একটা মেকি হাসি দিল। আমি মনে মনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। এই সাত সকালে কি অঘটন ঘটিয়েছি বুঝতে পারছিনা। অনু ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। আমি ঢোক গিললাম, কি করেছিস সাজিদ? কি? কি?? মনে কর!
অনু খুব কাছে আসার পর আমার চিন্তার মোড় ঘুরে গেলো। মুখ তুলে ওর চোখের দিকে তাকালাম। আচ্ছা… মেয়েটার মনে আমার জন্যে তাহলে একটু মায়া মোহাব্বত জন্মাচ্ছে কিনা…
অনু আরেকটু এগিয়ে এসে আচ্ছা একটা ঠুয়া দিল কপালে। তাও নিজের কপাল দিয়ে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপসে গিয়ে বললাম, তোমার ওই কপাল দিয়ে বাড়ি দিলে নারিকেলও ফেটে যাবে। কি দরকার ছিল কাছে এসে হার্টবিট বাড়িয়ে দেওয়ার..
-আর কতদিন মাথায় আমাজনের জঙ্গল বানিয়ে রাখবা?
অনু তীর্যক কন্ঠে প্রশ্ন করল।
আমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমাজন যে জঙ্গল না সেটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।
-এত ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলো কেন? আমাকে ভাল্লাগেনা না? তাড়াতাড়ি যাও। এমনিই ছুটির দিন, পরে সিরিয়াল পাবানা।
আমি সন্তর্পণে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। উঠে তৈরি হতে হতে একটু ইতস্ততভাবে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়ে অনু, ওই শরফুদ্দীন আসবে তো.. দুপুরে আমাদের সাথে খেতে বলি?
অনু চুলের খোঁপাটা নতুন করে বেধে আঁচল গুজে নিতে নিতে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, হ্যা বলো, অসুবিধা কি! উনি কি কি খেতে পছন্দ করে সেটা ডায়রীতে লিখে দিয়ে যাও।
খেয়েই বের হবো বলে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আড়চোখে এলোমেলো চুলের অগোছালো খোঁপা বাধা দেখতে দেখতে আমি মৃদু হাসলাম। অনুর এই ব্যাপারটা আমার ভাল লাগে। ওর আপ্যায়নে কেউ খুশি না হয়ে পারেনা। আমার মত কিছুটা অসামাজিক নিরীহ স্বভাবের বিরস কারো জন্য এটা একটা দারুণ ব্যাপার। আমার সামাজিকতার ঘাটতিটা ও পূরণ করে দেয়। ওর ডায়রীতে মোটামুটি সবার পছন্দের খাবারের লিস্ট আছে। সবাইকে এত সহজে কাছের করে নেয়! কেবল আমি বাদে… আমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

আর সবার মতই শরফুদ্দীন খেতে বসে অবাক হল। ছোট্ট সংসার তাই আয়োজন সীমিত কিন্তু সবই ওর পছন্দের। নারকেল দিয়ে ঝোল ঝোল করে রান্না করা ডিমের তরকারি, লইট্যা মাছ ভুনা, ধনেপাতার ভর্তা আর টকদই দিয়ে মাখানো বাহারি রঙের সালাদ।
নিজেই প্লেট টেনে নিতে নিতে বললো, তুই বড় কপালওয়ালারে সাজিদ। আমি মুচকি হাসলাম। শরফুদ্দীন সেই স্কুল লাইফ থেকে এমনই। একটুও বদলায়নি। অসম্ভব চটপটে আর স্মার্ট এই ছেলেকে ম্যানেজ করার সহজ উপায় হলো তার পছন্দের খাবার খাওয়ানো। একে তো তার প্রিয় খাবার, তার উপর অনুর রান্নার হাত অসাধারণ।
সালাদের বাটি শেষ করে বললো, এত স্বাদের সালাদ আমি আর খাইনি।
আমি বউয়ের প্রশংসায় তৃপ্তির হাসি হাসলাম। দেখতে হবেনা কার বউ!
হাটতে হাটতে শরফুদ্দীন বললো, তোদের বিয়ের ব্যাপারে দ্বিমত করেছিলাম বলে কিছু মনে রাখিস না। মনে হচ্ছে তোরা বেশ আছিস। আসলে আমার সাথে ভাবির প্রথম পরিচয়টা যেমন হবার কথা ছিল ঠিক তেমন ছিল না.. এজন্যই আরকি ওরকম বলেছিলাম।
আমি মৃদু কণ্ঠে সায় দিলাম।
অনুকে দেখতে যাওয়ার পরপরই কিছু ফাইনাল হয়নি। আসলে একইসাথে দুটো সমন্ধ ছিল। অনুকে দেখার পর আমার খারাপ লাগেনি। কিন্তু শরফুদ্দীন জোর করেছিলো দ্বিতীয় সমন্ধটার ব্যাপারে। তাই অনুর ব্যাপারে হ্যা-না কিছু বলার আগে বন্ধুর কথা রাখলাম। সত্যি, মেয়েটার কোনো কমতি ছিল না। দেখতেও আকর্ষণীয়। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটেছিল দেখতে গিয়েই।
এই দেখাদেখিটা আমার ঠিক পছন্দ না। মানে আমার খুব অস্বস্তি লাগে কেন যেন। তাই রেস্টুরেন্টের কোনার একটা টেবিলে হাত কোলে মাথা নিচু করে বসেছিলাম। মেয়েটা আসার পর টুকটাক কথা বলছি এমন সময় আচমকা কোথা থেকে যেন উড়ে এলো অনু। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একবার অনু একবার নিগার নামের মেয়েটার দিকে চাইতে লাগলাম। অনু খুবই সাবলীল ভাবে জিজ্ঞেস করল, এই মেয়েটা কে? আমি আরো হতভম্ব হয়ে গেলাম। স্রেফ গতকাল পরিচয় হওয়া একটা মেয়ে আমার সাথে এমন পরিস্থিতিতে এভাবে কথা বলবে তা আমার ভাবনার অতীত। অনু আবার জিজ্ঞেস করল। আমি কিছু বলার আগেই নিগার মৃদু হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, বসুন। অনু বসলে নিগার এক মুহূর্ত তাকে পর্যবেক্ষণ করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই অনু ছো মেরে গ্লাসটা নিয়ে পানিটুকু শেষ করে আমার দিকে চেয়ে রইল। আমি বিস্ময়াভিভূত চোখে অনু নামের মেয়েটার দিকে অপলক চেয়ে রইলাম। অনু একটা বড় শ্বাস নিয়ে একটুপর বলল, আমি বেশ কিছুক্ষণ থেকেই আপনাদের দেখছি। যা বুঝেছি, আপনি মেয়ে দেখতে এসেছেন যেমন করে গতকাল আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন। আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়নি? কিন্তু আমার তো আপনাকে পছন্দ হয়েছে।

আচমকাই এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য নেমে এলো যেন।আমি পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে অনুর চোখে চোখ রাখলাম। দীর্ঘ পল্লবে কাজলের সন্ধ্যা নেমে এসেছে এই ব্যস্ত সকালে। চোখের গাঢ় কালো তারার মাঝে পাপড়ি মেলে আছে আশ্চর্য এক কৃষ্ণ বুনোফুল। নাক ঘামছে এই এসি রুমেও। শিশিরের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু ফুটে আছে ঠোঁটের উপরিভাগে। হালকা বেগুনী আভাযুক্ত ঠোঁটজোড়া চেপে রাখা সত্ত্বেও তা সুক্ষ ছন্দে তিরতির করে কাপছে। থুঁতনির এক কোণে অবছাভাবে ফুটে আছে একটা লালচে তিল।
হঠাৎ মৃদু গলা খাঁকারিতে সম্বিত ফিরে পেয়ে ভীষণ লজ্জিত হয়ে নিগারের দিকে চাইলাম। নিগার একটু বিব্রত হেসে বলল, আমি তাহলে উঠি। আমাকে আর কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে নিগার দ্রুতই প্রস্থান করতেই অনুও উঠে দাঁড়ালো। সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছে কাজটা ঠিক ভাল হলোনা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একবারও আমার দিকে না তাকিয়ে হনহন করে হেটে বেরিয়ে গেল।
স্বাভাবিকভাবেই শরফুদ্দীন ব্যাপারটা জেনে তেতে উঠল। নিগারের ভাই শরফুদ্দীনের কলিগ। সুতরাং সে যথেষ্ট বিব্রত একইসাথে গোটা ব্যাপারটাই তার কাছে সস্তা ড্রামা মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করল। এবং এই সমস্ত হুজুগের পছন্দ টিকেনা বলে মতামত ব্যক্ত করল। আমি চুপ রইলাম। শরফুদ্দীন মাঝে মাঝে তেতে ওঠে সত্যি, কিন্তু ভেবেচিন্তে কাজ করার সুনাম আছে ওর। যদিও স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর তাতে কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। পাঁচ বছরের সংসার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া একদিন হুট করে শেষ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন ও এক বিমূঢ় বিস্ময়ে ডুবে ছিল। কেবল বলতো, আমি ঠিক বুঝলাম নারে, রুবি তো আমাকে ভালোবাসে! আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর কাঁধে হাত রাখতাম। এক সময় শরফুদ্দীন ধাতস্থ হলে তরল কন্ঠে বলতো, আমি ঠিক জানিনা কিভাবে কি হলো, কিন্তু অনুভব করতে পারি। আর সেই অনুভূতি কেন যেন আমারই দিকে আঙ্গুল তাক করে।
জবাবে আমি কাঁধে আলতো করে চাপড় দিয়ে আঙ্গুলের ডগা নাচিয়ে না সূচক মাথা নাড়তাম। মাঝেমাঝে শরফুদ্দীন নিঃশব্দে কাঁদতো। আমি কাঁদতে দিতাম। কিছু সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ করেইবা কি লাভ? সত্য তাতে বদলায় না মোটেই। কিছু সম্পর্ক শেকলের মত, অথচ সে শেকলে মরচে ধরে ভেঙ্গে পড়লে মানুষ হয়ে পড়ে শেকড় কাটা পড়া গাছের মত। শরফুদ্দীন রুবিতে এতটাই অভ্যস্ত ছিল যেমনটা আমরা আলোবাতাসে। পুরুষমানুষ শক্তিমান, বুদ্ধিমান, সূর্যের কান্তি তার শরীর জুড়ে ঝলমল করে। আবার তারা নোংরা ঘরে ইঁদুর মরার গন্ধ সয়ে নিতে পারে, ধুলোয় অন্ধকার হয়ে আসা কক্ষে অবলীলায় নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে যেতে পারে, নোংরা কাপড়ে সপ্তাহ পার করে দিতে পারে, কিন্তু পুরুষের হৃদয় বড় দূর্বল। পুরুষ হয়ে ওঠার পর পুরুষমানুষ সম্ভবত অনাথ হয় বউ হারালে। আচমকা একদিন আবিষ্কার করে টুথব্রাশটাও নিজের জায়গায় থাকেনা, তাকে রাখতে হয়। কাপড়টা আয়রন করা থাকেনা, করে রাখা হয়। জুতোটা, তাকেও চকচকে করা রাখা হয়। গাছে পানি না দিলে ওই ঝুলে থাকা বাহারি গাছটাও প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যায়। ধুলোর আস্তরণে চাপা পড়ে থাকে সহাস্য যুগলছবি। এমনকি দেয়াল ঘড়িটাও একদিন বেকে বসে। সবকিছু পরিমাণ মত না হলে রান্না কিছুতেই সুস্বাদু হয়না, সুঘ্রাণ ছোটেনা পাশের বাড়ি পর্যন্ত। সস্তা বা দামী, কোনো রেস্তোরাঁর খাবারেই সেই আটপৌরে গন্ধটা পাওয়া যায়না কিছুতেই…
আর দিনশেষে চোখ বুজলে পরে কানে বাজতো যে নিঃশ্বাসের শব্দটুকু, তার অনুপস্থিতি সহ্য করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে।
শরফুদ্দীন অন্তর্দাহে অঙ্গার হয়ে যেন অনেকটাই বুড়িয়ে গেল। কাজপাগল ও আগে থেকেই ছিল। সেটা আরো খানিকটা বাড়লো। স্বাভাবিকভাবেই কর্মক্ষেত্রে শরফুদ্দীনের সুনাম ছিল। আর সেই সুবাদেই নিগারের সমন্ধটা আসে আমার বাড়ি পর্যন্ত। কিন্তু রেস্টুরেন্টে ঘটা অঘটনের পর আমার মনে বউ বলতে ওই স্থান কাল পাত্রের বিচার বিবেচনাহীন মেয়েটাই গেঁথে রইলো। কেন, তা নির্দিষ্ট করে বলার মত কিছুই পাইনি। হয়ত তার সহজ স্বীকারোক্তি আমার মধ্যে যে ছন্দপতন ঘটিয়েছিল, যা আর কখনো ঘটেনি, তাই!
শরফুদ্দীন প্রথমে মোটেই রাজি ছিল না। এমন উড়নচণ্ডী স্বভাব মেয়ের সংসার ধর্ম কদ্দিন ভাল লাগবে তা নিয়ে সে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল। কিন্তু আমি তাকে রীতিমত হৃদয়ে স্থান দিয়ে ফেলেছি!

বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পর শরফুদ্দীন একদিন ডাকলো। অনেকক্ষণ চুপ থেকে মানিব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে বললো, তোর ভাবির চিঠি লেখার শখ ছিল। আমার কখনো জবাব লেখা হতোনা ব্যস্ততায়… এটা ওর শেষ চিঠি ছিল।

আমি দ্বিধাগ্রস্ত হাতে কাগজটা খুললাম।

“জগতে ভালোবাসতে জানাটাই বড় কথা নয়। তাতো কতজনেই জানে!
কিন্তু এমন কাউকে ভালোবাসা, যে সেই ভালোবাসাকে তারই মত করে বুঝে কৃতজ্ঞ হয়, সৌভাগ্যবান ভাবে নিজেকে, তাকে মূল্যায়ন করতে জানে, পরম পাওয়া ভেবে বুকের একদম গহীনে আগলে রাখে, এমন সৌভাগ্য ক’জনের হয়! তবেই না ভালোবাসা সার্থক হয়, পূর্ণতা পায়।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
এই কথাটুকু সবাই বলতে পারেনা মুখ ফুটে। বলতে পারলেও বুঝিয়ে বলা বড় শক্ত। কিংবা যে বলে, সে নিজেই কি বুঝে বলে সব সময়?
নাহ…
তোমার কণ্টকপূর্ণ ভালোবাসা আমি সেই শুরুর মুহূর্তেই সমস্তই বুঝেছি। কিন্তু তার গহীন পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে কতটা ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে তা কি তুমি জানতে পেরেছো কোনো কালেই?
ভালোবাসতে তুমি সফল। এক আত্মবিস্মৃত অতীন্দ্রিয় ভালোবাসা তুমি আমাকে দিয়েছো। নিজেকে সমস্ত সমর্পণ করে ভীষণ এক ঘূর্ণির মত লণ্ডভণ্ড করেছো আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। নিজেকে অবধি ভুলেছি তোমার দুর্নিবার আকর্ষণ উপেক্ষা করতে না পেরে। কিন্তু তাতে কেবল নিজেকেই খুঁইয়েছি শেষতক।
তুমি তখন কোথায় ছিলে?
আজ এ জিজ্ঞাসা বড় অর্থহীন শোনায়, নাহ? ভালোবাসলে, অথচ ভালোবাসতে দিলেনা। এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু হয়?”

আমি চিঠিটা ফেরত দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
শরফুদ্দীন বলল, নারীর মন বুঝা শক্ত কিন্তু এটুকু বুঝলেও অনেক হতো যে, অবহেলা জিনিসটা একটা ব্ল্যাকহোলের মতন। নারীর অসীম সহ্য ক্ষমতা ওতে এসে নিঃশেষ হয়ে যায়। কিছু কথা, যা মানুষে মানুষে হয়না, নারীতে আর পুরুষে হয়, সে কথাগুলো বারবার আমার কাছে এসে ফিরে গেছে হৃদয়ের বন্ধ দরজায়। আমি স্বার্থপর পুরুষ, বাহু জড়িয়ে তাকে আগলে রেখেও হৃদস্পন্দন শুনবার জন্য নিজেকে একমূহুর্ত স্থির করতে পারিনি। সেই ব্যস্ততা আমাকে এখন অভিশাপ দেয়। কাজের প্রশংসাকে মনে হয় উপহাস। কতটা শূন্য আর অসম্পূর্ণ আমি, তা এক খোদা জানেন, যিনি হৃদয়সমূহের মালিক।
শরফুদ্দীনের কাছে সেদিন যা শিখেছিলাম তা আমি কখনো ভুলবো না। যে তুষের আগুন ওর ভেতরে জ্বলছে অনির্বাণ, তা নিভিয়ে ওকে একদন্ড সস্তি দিবে কিসে?
আমি বোকা মানুষ। এবং ভীতুও। যাকে আচমকা ভালোবেসে ফেলেছি তাকে হারানোর আগে আমার আরেকটা জীবনের নিশ্চয়তা চাই যে জীবনে তাকে আর হারাতে হবেনা।
বাসায় ফিরে হাসির শব্দ পেলাম। অনু খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে। আমি প্রচণ্ড কৌতুহল নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে দেখলাম একটা ছবির এ্যালবাম অনুর সামনে খোলা। আমার ছোটবেলার ছবির এ্যালবাম। আম্মুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিল গত সপ্তাহে।
অনুর হাসির তরঙ্গ আরো বেগবান হলো আমার উপস্থিতিতে।
আঙ্গুলি নির্দেশ করে একটা ছবি দেখিয়ে বলল, দ্যাখো দ্যাখো! এই পাতিল কাট হেয়ার স্টাইলে তোমাকে কত গুলুগুলু লাগছে দেখতে!
আমি গুণগুণ করে গাইলাম, তোমার হাসির শ্রাবণ ঢলে স্বপ্ন নিয়ে ভাসতে চাই…

“আজকে সুরাইয়ার সতের বছর পূর্ণ হলো। এরকম একটা গল্প ওকে ঠিক উৎসর্গ করা যায় কিনা তা ভাবনার বিষয়। তবু করা হল। আমি জানি,অন্যেরা যেখানে কেবলই প্রেম-ভালবাসা দেখে সেখানে এর চেয়ে বেশিকিছু দেখার চোখ আছে ওর।”

 

রান্নার স্বাদে মজাদার-স্যুপ

বড়দের এবং সোনামণিদের জন্য আজকের রেসিপি “রান্নার স্বাদে মজাদার-স্যুপ”। সোনামণিদের জন্য খুব অল্প সময়ে রান্না করে মানিকদের সামনে হাজির করতে পারবেন। চলুন দেখা যাক দুই প্রকার স্যুপের রেসিপিঃ
♣সবজি স্যুপ
♣নুডলস স্যুপ

img20171208_160759
সবজি স্যুপ

উপকরণঃ
♦–বিভিন্ন রকম সব্জি(ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, মটরশুটি ইত্যাদি মাঝারি সাইজ করে কাটা), ♦–টমেটো কেচাপ= ৩ টেবিল চামচ, ♦– ম্যাগি ভেজিটেবল স্যুপ= ১টা, ♦–ম্যাগি স্বাদের ম্যাজিক= ১/২ টা, ♦–ইন্ডিয়ান পেয়াজ= ২ টা (১ টা পেয়াজ কে ৬ বা ৪ ভাগ করে কাটতে হবে জাতে খোসা গুল বড় বড় হয়), ♦–মরিচ ফালি =৮-১০ টি, ♦–পানি= পরিমান মত
♦–তেল=২ টেবিল চামচ

প্রণালীঃ
১। প্রথমে হাল্কা আচে পেয়াজ নরম ভেজে নিতে হবে। এরপর কড়াই এ পানি দিতে হবে। বলক আসলে লবণ ও সবজি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।কিছুক্ষণ পরে মরিচ ফালি দিয়ে দিতে হবে।
২। সবজি সিদ্ধ হয়ে গেলে টমেটো কেচাপ দিয়ে নাড়তে হবে। সব্জির সাথে মিশে গেলে ম্যাগি স্বাদের ম্যাজিক এর অরধেক টা এবং ম্যাগি স্যুপ ২ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে কড়াইতে ঢেলে দিয়ে একটু নেড়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
সহজ উপায়ে এবং অল্প সময়ে রান্না করা এই সুস্বাদু ভেজিটেবল টি রাইসের সাথে পরিবেশন করা যায়। ভেজিটেবল যারা পছন্দ করেন তারা এম্নিতেও খেতে পারেন।
img20171208_160610
নুডলস স্যুপ

উপকরণঃ
♦– ১ টেবিল চামচ তেল, ♦– ১ টেবিল চামচ মিহি রসুন কুচি, ♦– ১ টেবিল চামচ মিহি আদা কুচি, ♦– ১ মুঠো লেমন গ্রাস বা থাই গ্রাস, ♦– ২ কাপ পানি, ♦– ২ কাপ চিকেন স্টক, ♦– ১ কাপ হাড় ছাড়া মুরগীর মাংস ছোট কিউব করে কাটা, ♦– ২ প্যাকেট ইনস্ট্যান্ট নুডলস পানি দিয়ে সেদ্ধ করা, ♦– ১ টেবিল চামচ তাজা লেবুর রস, ♦– আধা চা চামচ লবণ, ♦– ২ টি মিহি পেঁয়াজ কুচি, ♦– ১ টি লাল কাঁচা মরিচ কুচি

প্রণালীঃ
১.প্রথমে একটি সসপ্যানে তেল গরম করে নিন। এতে রসুন কুচি, আদা কুচি ও লেমনগ্রাস দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে নিন অল্প আঁচে।
২. এরপর চিকেন স্টক ও পানি দিয়ে এতে সেদ্ধ করা মাংস দিয়ে ফুটিয়ে নিন।এরপর ৫ মিনিট এভাবেই রান্না করে নিন মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত।
৩. মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে এতে নুডলস দিয়ে দিন এবং অল্প নেড়ে বাকি উপকরণ গুলো দিয়ে আরও ৫ মিনিট অল্প আঁচে চুলার উপরেই রাখুন।
৪. ব্যস, এরপর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। তবে, পরিবেশনের সময় লেমন গ্রাস তুলে ফেলে দিতে ভুলবেন না।

 

‘আমাদের অপরাধ, সন্তানদের পরিণতি’ -নাঈমা জান্নাত

মা শব্দটি সবার কাছেই অতি প্রিয়। সেই সাথে বাবাও। খুবই অল্প দৈর্ঘ্যের এই শব্দ দু’টির গভীরতা অনেক বেশি। আমাদের মনে ও জীবনে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে শৈশব থেকে কৈশোরে পা ফেলার সময় এমন কী ঘটে, যার খাতিরে আমরা নৈতিক বিষয়গুলো অনেক সময় ভুলতে শুরু করি। যৌবন প্রাপ্তির স্বল্প পথ চলাটুকুতে বাবা-মা বা পরিবারের কী এমন অসতর্কতা থাকে, যার কারণে ছেলেমেয়েরা মানবিকতার নিয়মকানুন ভুলে অপাত্রে পরিণত হয়?

এখন সবারই একটাই জানার আকুতি। সেটা হলো- কেন এই অত্যাচার শিশুদের ওপর, নারীদের ওপর? কখনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, কখনও তিন বছরের শিশু, কখনও গৃহকর্মী, কখনও বিবাহিতা স্ত্রী। শিশু থেকে বৃদ্ধ, রেহাই পাচ্ছে না কেউই। কোথা থেকে এলো এই বর্বরতা, কিভাবে জন্ম নিলো তা। তবে কি গোড়াতেই গলদ রয়েছে আমাদের? তবুও যদি আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন হই, সমস্যা অনেকটা কমে আসতে পারে।

সবার আগে মায়ের সচেতনতা সবচেয়ে কাম্য। একজন মা-ই পারেন, সন্তানকে নতুন করে ভাবাতে, নতুন করে পথ চলা শেখাতে। কারণ আমাদের সমাজে মা-ই শিশুর সার্বিক যত্নের গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকেন। সেক্ষেত্রে মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস থাকা জরুরি যে, নারী বলেই সে দুর্বল নয় এবং তাকে দিয়েই সন্তানের সুন্দর ও নির্মল ভবিষ্যৎ তৈরি করা সম্ভব।

আমরা আমাদের সমস্যাগুলোকে যদি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দেখি, তাহলে আমাদের সামনে বেশ পরিষ্কার চিত্র ফুটে উঠবে।

১. বাবা-মা নিজের অজান্তেই ছেলে মেয়েকে মিথ্যা বলতে আয়ত্ব করাচ্ছি। ছোট বেলায় তাদের কল্পনার গল্পগুলোকে মিথ্যা বলে আখ্যা দিচ্ছি। আবার অনেক সময় তাদের সামনে স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের কাছে মিথ্যা বলছি। অথবা প্রতিবেশির কাছে বা মোবাইল ফোনে। ঘরে বসেই বলছি রাস্তায় আছি। বিশ্রামের সময় বলছি, ব্যস্ত আছি।

২. একদিকে ছেলেমেয়েকে বলছি, ঘুষ নেয়া বা দেয়া একটি সামাজিক ব্যাধি। অন্যদিকে ভালো চাকরির জন্য যত ধরনের তদবির লাগে, তা করছি। জেনে বুঝেই এই অপরাধ করছি।

৩. অপসংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে সন্তানদের দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। আবার বাবা-মা নিজেই হয়তো কর্মক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার চেষ্টায় বা বন্ধু মহলে আনন্দ উদযাপনে অপসংস্কৃতিকে আগলে রাখছি।

৪. একদিকে শ্লোগান দিচ্ছি, যৌতুক একটি সামাজিক অপরাধ। অন্যদিকে উপহারের নামে নতুন বিবাহিত দম্পতিকে যৌতুকের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছি।

৫. একদিকে বলছি, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করো না। অন্যদিকে সন্তানের পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশায় রাত জেগে বসে আছি।

৬. ছেলেমেয়েকে শেখাচ্ছি, বাবা-মায়ের কাছে কিছুই গোপন করতে নেই। অন্যদিকে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে প্রতিনিয়ত নানা বিষয় লুকিয়ে রাখছি।

৭. একদিকে বলছি, বড়দের সম্মান করো, ছোটদের স্নেহ কর। অন্যদিকে বাসার গৃহকর্মীকে সন্তানের সামনেই নানাভাবে অত্যাচার অপমান করছি।

৮. সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে ছেলে মেয়েদের  ধৈর্য্য ধারণ করার কথা বলছি। বাসাকে পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখার কথা বলছি। আবার সেই বাবা-মা-ই বাসের লাইন থেকে শুরু করে ব্যাংক পর্যন্ত যে কোন নিয়ম ভাঙার ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগাচ্ছি।

৯. একদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কথা বললেও অন্যদিকে বাবা মায়েরা রাস্তায় ময়লা ফেলা থেকে শুরু করে কথাবার্তায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখছি না।

১০. ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাকে শেখাচ্ছি, না বলে কারো জিনিস নিও না। অন্যদিকে আমরাই অন্যের সম্পদ লুটপাটের মহোৎসবে ব্যস্ত আছি।

১১. বাসায় একটি শিশু প্রতিনিয়তই দেখছে, তার মাকে বাসায় বয়স্ক, নারী বা পুরুষ যে কেউ নানাভাবে অপদস্থ করছে। তবে আমরা কি আশা রাখতে পারি যে, পরবর্তীতে ঐ শিশুর আচরণে নারীর প্রতি সম্মান প্রতিফলিত হবে?

১২. একদিকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, আরেকদিকে সিগারেটের ধোঁয়ায় অসংখ্য জীবনের ক্ষতি করছি, যত্রতত্র দাঁড়িয়ে বা চলার পথে দেদারসে ধূমপান করছি। নিকোটিনের ধোঁয়া উড়িয়ে নিজেকে স্মার্ট সাজাচ্ছি। আসলে ধোঁয়ায় কি কোন আত্মবিশ্বাস আনে?

আমরা কি রুখতে পারি, আমাদের নিজেদের ছোট ছোট অস্বাভাবিকতাকে? ছোট ছোট অস্বাভাকিতা থেকেই বড় অপরাধের জন্ম। একজন মা যখন নিজেই দুর্বল, সে কি পারবে অপরাধ প্রবণতা রুখতে? এতকিছুর পরও সমাজে অনেক উল্টো চিত্রও আছে। আমাদের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলেই আমরা বুঝতে পারি, সে সংখ্যা কত হতে পারে। একজন মাকে গড়ে উঠতে হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে। সব ধরনের অপরাধ, কুরুচিকে না বলার ক্ষমতা নিয়ে। যে কোন অশোভনীয় আচরণকে একজন মা যখন দৃঢ় কণ্ঠে না বলতে পারবেন, তখনই কেবল শিশুরা অগ্রগামী সৈনিকের মতো একদিন সব অস্বাভাবিকতা নির্মূল করতে পারবে। নেপোলিয়ন ঠিকই বুঝেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত ও সভ্য জাতি দেব’।

তারপরও অনেক শঙ্কা, উৎকণ্ঠা, অনেক প্রশ্ন মনে নাড়া দিয়ে যায়। এ ধরনের সামাজিক অপরাধ ঠেকাতে কি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নাকি আচরণের পরিমিতি আর চিন্তার পরিচ্ছন্নতা একান্ত কাম্য?

লেখক :  ফ্রিল্যান্স সাইকোলজিস্ট ও এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সুত্র:জাগোনিউজ২৪

 

‘সুরাইয়াকে’ গলাটিপে হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে দিলেন স্বামী ‘হিমু’

ঝালকাঠিতে কলেজছাত্রীকে গলাটিপে হত্যার পরে মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যার প্রচারণা চালানোর কথা স্বীকার করেছেন তার স্বামী গ্রেফতারকৃত মাইনুল ইসলাম হিমু আকন (২৫)। মঙ্গলবার বিকালে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম কবীর হোসেন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় মাইনুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে হিমু। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সরোয়ার হোসেন মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় গ্রেফতারকৃত মাইনুল ইসলামকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন করেন। বিকাল ৫টায় স্বীকারোক্তি গ্রহণ শেষে মাইনুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম কবীর হোসেন।

আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে হিমু জানিয়েছে, গত রোববার দুপুর একটার দিকে গলা টিপে স্ত্রীকে হত্যার পর বিষয়টি তার পিতা মিল্টন আকনকে জানান। মিল্টন আকন তার ছেলেকে বিষ খাওয়ার ঘটনা সাজানোর কথা শিখিয়ে দেয়। পিতার পরামর্শে হিমু তার মৃত স্ত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিনের মুখে তুঁতে ঢুকিয়ে দেয় এবং নিজেও তুঁতে খেয়ে অসুস্থ হওয়ার অভিনয় করে।

প্রায় দুই বছর আগে দুই পরিবারের সম্মতি ছাড়াই শহরের কাঠপট্টি সড়কের মিল্টন আকনের ছেলে মাইনুল ইসলাম আকন হিমু একই এলাকার আসলাম ফরাজীর মেয়ে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে হিমুর বাবা মিল্টন আকন এবং সৎ মা আয়শা বেগম এ বিয়ে মেনে নেননি।

এ নিয়ে প্রায়ই পারিবারিক কলহ লেগে থাকত হিমুর পরিবারে। হিমুর স্ত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন বেশিরভাগ সময় তার বাবা মায়ের সাথে থাকতেন। হিমুও মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়ে থাকতেন। কিছু দিন আগে থেকেই হিমু তার বাবা মাকে তাদেরকে মুড়ির মিলের কক্ষে একটু থাকার জায়গা দেয়ার জন্য অনুরোধ করে আসছিল।

রোববার সকালে সুরাইয়াকে ফোন করে হিমু তার বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মুড়ি ও সেমাই তৈরির কারখানার দোতলায় আসতে বলে। বেলা ১২টার দিকে ওই কক্ষে আসে সুরাইয়া। স্ত্রীর সঙ্গে ঘন্টাখানেক অন্তরঙ্গ সময় কাটায় হিমু। দুপুর একটার দিকে বাবার সমালোচনা করায় সুরাইয়ার সাথে হিমুর কথাকাটাকাটি হয়।

একপর্যায় হিমু সুরাইয়াকে চড় মারে এবং সুরাইয়াও হিমুকে পাল্টা ধাক্কা মারে। উত্তেজিত হিমু গলাটিপে শ্বাসরোধে স্ত্রীকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনা হিমু তাঁর বাবাকে জানায়। বাবা মিল্টন আকন মৃত স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে দেয়ার বুদ্ধি দেয় ছেলেকে। এমনকি ছেলেকেও বিষপানের পরামর্শ দেন। বাবার কথামতো হিমু মৃত স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে দেয়। নিজেও বিষপান করে চিৎকার দেয়। মৃত অবস্থায়ই ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সুরাইয়াকে। কিছুটা অসুস্থ অবস্থায় হিমুকে নিয়ে যাওয়া হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে হিমু জানিয়েছে সে আগে নেশা করতো, এখন করে না। তিনি এসএসসি পাস হলেও তার স্ত্রী বিএ পড়েন। বেকারত্ব এবং পরিবার বিয়ে মেনে না নেয়ায় সে কিছুটা হতাশাগ্রস্ত ছিল। বাবাকে নিয়ে কটূক্তি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে হিমু স্ত্রীকে গলা টিপে ধরে। এতেই তার মৃত্যু হয়। লাশ ফেলে রেখে ওপর থেকে নিচে নেমে হিমু তার বাবার কাছে যায়। বাবা তাকে স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে ও ছেলেকে বিষ পানের বুদ্ধি দেয়।
মৃত্যুর পরের সব নাটক সাজিয়েছেন হিমুর বাবা মিল্টন আকন। পুলিশ মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

শূন্যতা উদ্ভাসিত পূর্ণতায়… আফরোজা হাসান 

কেন জানি না কিছুই ভালো লাগছে না মুহিতের। সামনে পরীক্ষার তাই অনেক পড়া জমে আছে কিন্তু বই নিয়ে বসতে ইচ্ছে করছে না। সাধারণত টিভি দেখে না সে আর দেখলেও শুধু জিওগ্রাফী চ্যানেল দেখে। প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য ভীষণ রকম আকর্ষণ করে তাকে। কিন্তু অজানাকে জানার আগ্রহ আজ মনে কোন উচ্ছ্বাস তৈরি করতে পারলো না। কিছু যেন বাঁধা দিচ্ছে তাই ভেতর প্রবেশ করতে পারছে না বিশুদ্ধ বাতাস। কেমন যেন দম বন্ধ করা অনুভূতি হচ্ছে। কেমন যেন হাহাকার জাগানো শূন্যতার অনুভূতি হতে লাগলো মুহিতের। নিজেকে হঠাৎ আবিষ্কার করলো ধূ ধূ এক মরুভূমির মাঝে। চারিদিকে কেউ নেই, কিছু নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু শূন্যতা আর শূন্যতা। অসহায়ত্বের উত্তাল সাগরের ঢেউ ভাসিয়ে দিয়ে গেলো মনের সৈকত। তীব্র স্রোতের ঝাপটা এসে লাগলো চোখে, ছলকে ছলকে বেড়িয়ে আসতে চাইলো পানির ধারা। 

এমন মুহুর্তগুলোতে প্রিয়জনদের সাথে কথা বললে অনেক প্রশান্ত হয় মন শুনেছিল সে। এমন কেউ যার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে, যার কথা শুনতে ভালো লাগে। মনের অজানা ঝড়ের তাণ্ডবে নিভু নিভু আশার প্রদ্বীপ্তিকে যে দুহাতে আগলে ধরে আবার জ্বলে উঠতে সাহায্য করে। যার আশা জাগানিয়া শব্দরা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ ভেদ করে হাজির হয় সূর্য কিরণ রূপে। বাবার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করলো মুহিতের। কিন্তু সে জানে মনের এই অবস্থায় বাবার সাথে কথা বলতে গেলে আরো বেশি দুর্বল হয়ে যাবে। আর তার কণ্ঠ শুনেই বাবা বুঝে ফেলবেন কিছু একটা হয়েছে তার। কিভাবে যেন বাবা তার মনের সব কথা না বলতেই বুঝে ফেলেন। শুধু তাই না প্রয়োজন গুলোও কখনো মুখে বলতে হয় না বাবাকে। যখন যা দরকার বলার আগেই বাবা সবময় সেটা এনে দিয় তাকে। 

বন্ধুদের আড্ডায় সবাই যখন তাদের মাদের কথা বলে, মুহিত মুগ্ধ কণ্ঠে বাবার কথা বলে। অবশ্য মাকে নিয়ে বলার মতো তেমন কিছু নেইও মুহিতের। তার যখন তিন বছর বয়স মা চলে গিয়েছেন কভু না ফেরার দেশে। এরপর থেকে গত পনেরো বছর ধরে তার ভুবন বাবাময়। বাবা-মা-ভাই-বোন-বন্ধু সবকিছুর ভূমিকা বাবা একাই পালন করে যাচ্ছেন তার জীবনে। নিজের কোন কারণে বাবাকে টেনশন দিতে একদম ইচ্ছে করে না মুহিতের। তাই কথা বলার প্রচণ্ড ইচ্ছার পরও বাবাকে ফোন না দিয়ে পছন্দের দুই ক্লাসমেটকে ফোন করলো। কিন্তু একজনের ফোন বন্ধ আর আরেকজনেরটা এনগেজ টোন শুনিয়ে জানিয়ে দিলো সবাই নিজ নিজ জীবনে ব্যস্ত। তোমাকে দেবার মত সময় এখন কারোই নেই। 

মন খারাপের মাত্রাটা হঠাৎ করে আরো বেড়ে গেলো মুহিতের। আগেও দেখেছে যখন প্রয়োজন তখন আপন বা পছন্দের কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না। এমনকি যারা নিজেদের বিরক্তিকর অবসরের কথা বলে তাদেরকেও খুঁজে পাওয়া যায় না এমন সময় গুলোতে। একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো মুহিতের ভেতর থেকে। কেন এমন শূন্যতা ভর করেছে মনে বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শূন্যতার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে পারলো না। মোবাইলের শব্দে চিন্তার জগত থেকে বেড়িয়ে এলো মুহিত। স্ক্রীনে বাবার হাসোজ্জ্বল চেহারা দেখে আনন্দাশ্রুতে ভরে এলো দুচোখ। ছেলে হিসেবে খুব বেশি ইমোশনাল হবার মোহর সবাই মিলে অনেক আগেই লাগিয়েছে তার উপর। মুহিত নিজেও অনুভব করে সত্যি তার বয়সী অন্যান্য অনেক ছেলের চেয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর সে, অনেক বেশি অভিমানী তার মন। 

সালাম বিনিময়ের পর বাবা বললেন, বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর পেলাম তোমাকে। কথা বলছিলে কারো সাথে? 

মুহিত বলল, জ্বী না বাবা। বন্ধুদের ফোন করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পাইনি কাউকেই। 

মন খারাপ তোমার? কণ্ঠস্বর কেমন যেন বিষণ্ণ শোনাচ্ছে। 

বাবার কাছে কখনোই কিছু গোপন করে না মুহিত। অবশ্য চাইলেও পারে না গোপন করতে। তাই বলল, কেন জানি না ভালো লাগছিলো না বাবা। খুব একাকীত্ব বোধ হচ্ছিলো। তাই বন্ধুদের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সবাই ব্যস্ত। 

কিছুক্ষণ নীরবতার পর মুহিতের বাবা হেসে বললেন, হ্যা প্রয়োজনের সময় বেশির ভাগই আমাদের বন্ধুরা ব্যস্ত থাকে। আবার অনেক সময় আমরা নিজেরাই কিছু বন্ধুকে দূরে রাখতে চাই সমস্যা থেকে। 

মুহিত বলল, আমি তোমাকে ফোন করিনি সেজন্য কি তুমি কষ্ট পেয়েছো বাবা? 

বাবা হেসে বললেন, না আমি কষ্ট পাইনি। আমি তোমাকে বুঝতে পারছি। কারণ আমার নিজের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। আমি আমার মন খারাপ বা সমস্যার কথা বলে কোন প্রিয় মানুষের মন খারাপ করতে চাই না। 

তাহলে তোমার মন খারাপ হলে তুমি কি করো বাবা? 

আমি এমন এক বন্ধুর কাছে যাই যে কখনোই ব্যস্ত থাকে না। যে কখনোই আমার কোন সমস্যা শুনে মুষড়ে পরে না। কারণ আমার সব সমস্যার সমাধান তার কাছে আছে। তাই তার কাছ থেকে কখনোই আমাকে নিরাশ বা আশাহত হতে হয় না। তুমি কি আমার সেই বন্ধুর সাথে পরিচিত হতে চাও? 

মুহিত বলল, অবশ্যই বাবা। কে তিনি? 

তিনি হচ্ছেন কালামুল্লাহ। আল্লাহর কালাম। যা লিপিবদ্ধ আছে পবিত্র কুরআনে। জানি খুব অবাক হচ্ছো তুমি আমার কথা শুনে। কিন্তু একথা নিয়ে দ্বিমত বা দ্বীধা পোষণের কোন সুযোগই নেই যে কুরআন আমাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। একজন ব্যক্তি তখনই আমাদের খুব ভালো বন্ধু হয় যখন তাকে আমরা শুভাকাঙ্খী বা কল্যাণকামী হিসেবে আমাদের পাশে পাই সর্বদা। আর কালামুল্লাহ’র চেয়ে শুভাকাঙ্খী বা কল্যাণকামী কে হতে পারে আমাদের জন্য? তুমি যদি খুঁজে দেখো তোমার মনের প্রতিটি অবস্থা ও পরিস্থিতির বর্ণণা ও সমাধান খুঁজে পাবে কুরআনে। করণীয়-বর্জনীয়, পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা খুঁজে পাবে। কুরআনের সুমধুর ধ্বনি তোমার অশান্ত হৃদয়ে প্রশান্তির বারিধারা বইয়ে দেবে। কাঁটা বিছানো পথ রুপান্তরিত হবে ফুল ছড়ানো পথে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা কি জানো? 

কি বাবা? 

কোন মানুষের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব যেমন হুট করে একদিনেই হয়ে যায় না। বরং নিয়মিত যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে ধীরে ধীরে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। কুরআনের ক্ষেত্রেও কিন্তু ঠিক এমনটিই। যত তুমি কুরআনের দিকে এগোবে ততই কুরআনকে তোমার সান্নিধ্যে পাবে। কারণ কুরআনের কাছাকাছি যাওয়া মানে আল্লাহর নিকটাবর্তী হওয়া। আর হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,মহান আল্লাহ বলেছেন,”বান্দাহ যখন আমার দিকে আধ হাত পরিমান এগিয়ে আসে,আমি তার দিকে এক হাত পরিমান এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে,আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে,আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।” সুবহানাআল্লাহ। যদি আল্লাহ কারো আশ্রয় হন তাহলে তার তো একাকীত্ব বোধ করার কোন সুযোগই থাকে না। কারণ আল্লাহ তো সর্বত্র বিরাজমান। 

অনেকটা সময় চুপ থেকে মুহিত বলল, আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না বাবা। 

বাবা বললেন, আমাদের দুর্ভাগ্য কি জানো মুহিত? দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে আমরা আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকেই ভুলে গিয়েছি। মুমিনের জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলা’মীনের ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও তাঁর সান্নিধ্য অর্জন করা। ভেবে দেখো পৃথিবীতে কারো ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব পাওয়ার জন্য কত কিছুই না আমরা করে যাই বিরামহীন ভাবে। অথচ এটা কখনোই আমাদের সম্পূর্নরুপে জানা থাকে না যে,যাকে আমরা ভালোবাসি বা যাকে বন্ধু রূপে পেতে চাইছি তাকে পাওয়ার জন্য কি কি করতে হবে? কোন দিক নির্দেশনা যেহেতু দেয়া থাকে না তাই বিভিন্ন ভাবে আমরা বুঝে নিতে চেষ্টা করি। বুঝে নেয়ার ও বোঝার পরের সফর পারি দিতে অনেক ধরণের কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয় এবং তা করার জন্য প্রস্তুত থাকি আমরা। কারণ সম্পর্ক থেকে কিছু পেতে হলে কিছু দেয়া প্রধান শর্ত। তাই আমরা খুশি মনেই তা করি কারণ লক্ষ্য থাকে প্রিয় মানুষকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে তার ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব অর্জন। জীবন চলার পথে সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার মুহুর্তগুলোতে পাশে পেতে চাই তাই অনেক কদর করি তাদের। অথচ যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যার রহমত ছাড়া একটি মুহুর্ত আমাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয় ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব পেতে আমরা কি ত্যাগ স্বীকার করি? অথচ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তো আমাদের শুধু এই দুনিয়াতেই ভালোবাসেন না বরং পরকালেও দিবেন চির শান্তির জান্নাত। আর তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমাদের কি করতে হবে তাও তিনি বলে দিয়েছেন কুরআনে। শুধু বলেই দেননি রাসুল (সঃ) মাধ্যমে বাস্তবে তাঁর প্রতিফলন করে দেখিয়েছেন। যাতে আমাদের কোন কিছু নিয়ে দ্বীধা-সংকোচে ভুগতে না হয়। ভেবে দেখো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের চেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী ও কল্যাণকামী কি কেউ হতে পারবে আমাদের জন্য? 

মুহিত বলল, ইনশাআল্লাহ বাবা এই মুহুর্ত থেকে আমি কুরআনকে আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলাম। তুমি ঠিক বলেছো বাবা সেই তো শ্রেষ্ঠ বন্ধু যে সর্বাবস্থায় কল্যাণকামী হিসেবে পাশে পাওয়া যায়, যাকে কোন কথা বলতে দ্বীধা-সংকোচ স্পর্শ করতে পারে না। যে সবসময় শুনিয়ে যায় আশার কথা, দিয়ে যায় নিরবধি প্রেরণা, যার সঙ্গ সর্বদা অন্তরকে করে প্রশান্ত। যে স্বপ্ন দেখায় সুন্দর এক জগতের। মনের সকল শূন্যতা যার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হয় পুর্ণতায়। আর একমাত্র কুরআনই এমনটা হতে পারে কারো জন্য। বাবা আজ থেকে তাই তোমার মতো আমারো সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হচ্ছেন কালামুল্লাহ। 

বাবা হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তুমি তোমার বন্ধুর সাথে সময় কাটাও এখন। অফিসের কাজ সেরে বাসায় ফিরে কথা হবে, ইনশাআল্লাহ। 

বাবাকে বিদায় জানিয়ে মুহিত কুরআন ও তাফসীর নিয়ে বসলো।

 

‘মেয়েটিকে নানান অজুহাতে মারধর ও টয়লেটে বন্দি রাখত’

‘আমাকে মারধর করত, কম খাবার দিত। বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে দিত না, বাড়ির বাইরে যেতে দিত না। ওরা মানুষ না, অমানুষ। আল্লাহ ওদের বিচার করবে।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলছিল গৃহপরিচালিকা সুমি খাতুন। সুমি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পাবনার চাটমোহরে গৃহবন্দি অবস্থায় সুমি খাতুনকে (১৫) উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পৌর শহরের ছোট শালিকা মহল্লা (কালীনগর) থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। সুমি পার্শ্ববর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার দড়িহাসমারি গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে।
এ সময় বাড়ির গৃহকর্তা আবদুস সোবহান বিচ্ছু, তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম এবং ছেলে ফজলে রোহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

জানা গেছে, দড়িহাসমারি গ্রামের আলতাব হোসেন সুমিকে পাঁচ বছর আগে আবদুস সোবহান বিচ্ছুর বাসায় কাজ করার জন্য রেখে যান। তুচ্ছ ঘটনায় আবদুস সোবহানের স্ত্রী ফেরদৌসি মেয়েটিকে নানা অজুহাতে মারধর করতেন ও টয়লেটে বন্দি করে রাখতেন। সুমিকে প্রয়োজন মতো খেতে দেওয়া হতো না। বাড়ির বাইরে তাকে বের হতে দেওয়া হতো না। এতে করে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই অবস্থা দেখে প্রতিবেশীরা মানবাধিকারকর্মীদের বিষয়টি খুলে বলেন এবং পুলিশকে অবহিত করেন।
img20171204_235124
রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মানবাধিকারকর্মীরা ওই বাড়িতে গিয়ে সুমিকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ গিয়ে সুমিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তবে ওই সময় সুমির গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর ভয়ে কোনো অভিযোগ না আনায় পুলিশ মুচলেকা নিয়ে তাঁদেরকে ছেড়ে দেয়।

মানবাধিকার কমিশন চাটমোহর উপজেলা শাখার সভাপতি কে এম বেলাল হোসেন স্বপন বলেন, ‘আমরা গত দুদিন আগে এমন অভিযোগ পেয়ে বাড়িটির ওপর নজর রাখছিলাম। রোববার ওই বাড়ির মালিককে কয়েকবার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তাঁরা সুমিকে গৃহবন্দির বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে পুলিশ গিয়ে সেই বাড়ি থেকেই সুমিকে উদ্ধার করে।’ বিষয়টি অমানবিক বলে তিনি জানান, সুমির চিকিৎসা ও আইনী সহায়তার জন্য চাটমোহর উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের কর্মীরা পাশে থেকে সহযোগিতা করবে।

এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আহসান হাবীব জানান, সুমিকে উদ্ধার এবং বাড়ির গৃহকর্তা-গৃহকর্তী ও তাঁদের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। কোন অভিযোগ না থাকায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে মেয়েটির পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: এনটিভি, ছবি:যুগান্তর,এনটিভি।

 

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য “সুন্দর সামাজিক পরিবেশ” -ফাতেমা শাহরিন

শিশুদের সুস্থতার জন্য শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যও।মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সুষ্ঠ স্বাস্থ্যকর সামাজিক পরিবেশ ভূমিকা অপরিসীম। সন্তানদের মা-বাবাসহ এবং সকল কেয়ারগিভারদের (দাদা-দাদীসহ সকল পারিবারিক সদস্য) মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান জানা থাকলে মানসিক বিকাশ সুন্দর হয়।
img20171204_233625
প্রবাদে আছে “একটি মানসিকভাবে অসুস্থ শিশুর পেছনে কাজ করে একটি অসুস্থ পরিবারের প্রভাব।”
শিশুটি পরিবারের সবার সন্তান। মা-বাবার অথবা অন্যান্য পারিবারিক সদস্যদের মাঝে যদি সম্পর্ক ভালো না থাকে তাহলে ছেলেমেয়েদের মনের গঠন প্রক্রিয়ার ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
img20171204_225706
আসুন প্রথমে জানা যাক ‘সামাজিক পরিবেশ’ আসলে কি?
সামাজিক পরিবেশ গড়ে ওঠে মুলত এই তিনটি সেক্টর মাধ্যমে।যেমন-
img20171204_234018
একজন ব্যক্তির চারপাশের পরিবেশ(physical surroundings): একজন বক্তির চারপাশের পরিবেশ বলতে নিরাপদ ঘর, শিক্ষার সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি এবং বিনোদন অন্তর্ভুক্ত।
img20171204_225756
জনসমাজ (community resources):জনসমাজে অন্তর্ভুক্ত আছে হোম পলিটিক্স, গড়ে ওঠা সংগঠন, যেখানে থেকে শিশুরা পায় নানান জ্ঞান, দক্ষতা এবং সামাজিকতা।
img20171204_224508
সামাজিক সম্পর্ক (social relationships): পরস্পরের সাথে সুন্দর সম্পর্ক, একে অপরের সাথে আবার দল বা গ্রুপের সাথে ইতাদি।
শিশুদের সামাজিকভাবে বিকশিত করার জন্য তাই এই তিনটি সেক্টরের গুরুত্বপূণ ভূমিকা আছে। মনে রাখতে হবে, এখানে শিশুদের সামাজিক ক্ষেত্র হল “পরিবার”।

এবার অসুস্থ সামাজিক পরিবেশের কতকগুল বৈশিষ্ট্য দেখি,
img20171204_225308
♦দাম্পত্য কলহ:
মা-বাবার মধ্যে অথবাা অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রকাশ্যে সর্বদাই যদি খিটিমিটি বা দাম্পত্য কলহ লেগে থাকে। তাহলে মা-বাবার স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যেমন ক্ষুণ্ণ হয় তেমনি তাদের ভেতরে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ফলে তার পভাব সন্তানের উপর পড়ে।
img20171204_225356
♦বাবার মেজাজ:
অত্যাধিক কড়া বাবা “বাবার হুকুমই সর্বোচ্চ হুকুম”। বাবা যখন রাগী এবং রুক্ষ স্বভাবের, হুকুমের নড়চড় হলে বাড়িতে অশান্তি বেঁধে যাবে। শিশুদের মনের ভেতরে রাগ ক্ষোভ বা বেদনা ধুমায়িত হয়ে ঘোরাফেরা করে।
img20171204_225442
♦রাগী মা:
খুব ব্যক্তিত্বশালী মায়েরা সংসারে ঠিক উল্টো ছবি আঁকেন। তার রাগারাগির ভয়ে শিশুরা তটস্ত হয়ে থাকে।কখনো প্রতিবাদী হয়ে ওঠে উঠতি বয়সী শিশুরা। মায়ের এতবেশি নিয়মকানুন মানতে রাজি থাকেন না তারা।
img20171204_234602
♦অন্যান্য কেয়ারগিভারের আচরণ:
দাদা দাদীরা যদি বাবা বা মায়ের নামে বিভিন্ন অভিযোগ নাতী নাতনীর কাছে পেশ করে। অথবা কেয়ার গিভারদের সম্পর্কে অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং দুই পরিবারের সদস্য সম্পর্কে বাবা অথবা মা সন্তানদের কাছে বিরূপ এবং বিভিন্ন দোষারোপ করে এক্ষেত্রে বাচ্চাদের সামাজিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
যেহেতু শিশুর সমাজ বলতে তার পরিবার, রাষ্ট্রও তার পরিবার।
img20171204_225212
অসুস্থ সামাজিক বিকাশের ফলে বাচ্চাদের আচরণগত কতকগুল সমস্যা দেখা যায়।
সেগুল হলো-
১.শিশুরা অস্বাভাবিক চালচলন শুরু করে।জেদ, রাগ, মারামারি।
২.ঠিকমতো স্কুলে না যায় না।
৩.পড়াশোনায় ভালোভাবে মনোযোগ দেয় না।
৪.রাতের বেলা না ঘুমানো।
৫.মিথ্যা কথা বলে।
৬কথায় কথায় বাবা-মায়ের সঙ্গে তর্ক করে বা বাবার হুকুম অমান্য করার সাহস দেখায়।
৭.খাওয়ার টেবিলে খাবার ছুড়ে ফেলে।

শিশুটি কি আদৌ সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বড় হচ্ছে নাকি সামাজিক পরিবেশে সমস্যা আছে। খুঁজে দেখুন। আমরা আমাদের শিশুটিকে সুশীল করে গড়ে তুলতে চাই। এই পরিবেশ পরিস্থিতিতে তোলা সম্ভব কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহাতীত প্রশ্ন আছে।

তাহলে শিশুদের ভবিষ্যৎ এর জন্য কি করব আমরা?
img20171204_225016
♥বাবা-মার নিজেদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি:
শিশুরা যেহেতু প্রতিটি মা-বাবাদের খুবই প্রিয় এক অস্তিত্ব। সুতরাং মা-বাবা তাদের জীবনে সুন্দর করার লক্ষ্যে সর্বদাই নিজেদের সুখ ও শান্তির দিকে শুধু নয় বরং সার্বিক সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখবে। নিরাপদ বসবাসের জন্য পৃথিবীটাকে তাদের জন্য সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হলে হতে হবে সচেতন।
img20171204_230130
♥পারিবারিক সুন্দর বন্ধন:
একটি শিশু যদি পরিবারে জন্ম না নেয়, তাহলে সেই পরিবারের মুখ থেকে হাসি হারিয়ে যায়। নিজেদের খুবই দুর্ভাগা বলে মনে করে। শিশুটি জন্মের পর থেকে যেন পুরো পরিবারের বন্ধনগুলর বিশৃঙ্খলার জন্য শিশুর বিকাশে সমস্যা হয়ে না দেখা যায় সে জন্য পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে যেন থাকে সুন্দর বন্ধন।
img20171204_224533
♥শিশুকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিযোগী না হয়ে ওঠা:
আজকাল শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে সীমাহীন এবং অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ঢুকে গেছে যা শিশুদের কোথাও আর ঢিলেঢালা হওয়ার সুযোগ দেয় বা। আজকাল শিশুদের মা-বাবারা অন্য শিশুদের মা-বাবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় করে। ফলে শিশুটি পরীক্ষায় ফল খারাপ করলে মা-বাবা তার সঙ্গে কথা বলে না। স্বামী-স্ত্রীর ভেতর শিশুকে নিয়ে প্রচণ্ড বাগবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। এই নোংরা প্রতিযোগিতা ক্ষতিকর। সুতরাং সচেতনতা প্রয়োজন।
img20171204_231409
শিশুদের জন্য যেমন গভীর ভালবাসা আছে তেমনি দ্বায়িত্ববোধ। আমরা যা কিছু করি না কেন, সব সময়ই থাকে শিশুরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ভাবনায় নিয়ে, তাই আমরা সবসময় তাদের কল্যাণ চাই। আমরা তাদের অনেক ভালোবাসি।

 

‘একজন রাকিবার কথা বলছি’

চমৎকার রৌদ্দজ্জল সকালে বারান্দায় মাদুর পেতে বসে আছে হয়ত ওরা তিন ভাই বোন কল্পনায় সেই চিত্র। ওদের মা রাকিবা আখতারের সাহসিকতা গল্প জানানোই আজকের আর্টিকেলের মুল উদ্দেশ্য। যা মা দের অনুপ্রেরণা যোগাবে। ‘সফলতা’ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একটি কাঙ্ক্ষিত শব্দ। সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠির কাছে তাদের পেশার বৈচিত্র্যতার ধরণ অনুযায়ী সফলতা একেক অর্থ বুঝায়। তবে ধরণ যাই হোক না কেন সফলতার শীর্ষে যারা পৌঁছে যেতে পারেন তারা হয়ে ওঠেন আমাদের প্রিয় ‘হিরো’।

জগতের প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ সামাল দিয়ে টিকে থাকা এই ‘মা’ তাকে নিয়েই আমাদের আয়োজন ‘একজন রাকিবার কথা বলছি’ ।

সেদিন ফেইস বুকের একটি পোষ্টে (https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1541462359251846&id=260876280643800) চোখ আটকে গেল। একজন মায়ের সংগ্রামের কথা , রাকিবা নামের একজন সাহসী মা অপরাজিতার ভাষায়, তুমিও কি রাকিবা হতে চাও? সেই ‘সফলতা’ অনুভূতির কথা বলি।

সফলতার গল্পগুল অনেক মানুষকে স্বপ্ন দেয়। যার জন্য আমরা সবসময় সফল মানুষদের শুরুর দিকের গল্প শুনতে আগ্রহী হই। পরবর্তীকালে আপন যোগ্যতা বলে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম। এদের মধ্যে রাকিবা আক্তার একজন।

বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গ বলেন, নারীকে বেশি বেশি সম্মান করতে হবে। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গেই হয় না।

রাকিবার ভাষায় বলতে গেলে, ‘৬ বছর বয়স ছিল আমার মেয়েটি, আমার বড় ছেলের বয়স তখন ৩ বছর এবং আরেকজন তখন সবেমাত্র ৫মাস, বিশ বছর আগের কথা বলছিলেন তিনি, যখন তিনি ঢাকা থেকে চলে যান।’

কাক ডাকা ভোর থেকে কাজ শুরু হয় তার, শেষ হয় সবার শেষে। বাইরে কাজের পাশাপাশি সংসারেও তাকে সময় দিতে হত।

তিনি বলছিলেন, ‘আমি টাকা উপার্জন করতাম তখন মাইলের পর মাইল হেটে, ছাত্র ছাত্রীদের অংক করাতাম, টিউশনি করাতাম কিন্তু নিজের জন্য অহেতুক টাকা /পয়সা খরচ করেনি কখনও বরং সন্তানদেরকে পড়াশুনা করানোর জন্য সংগ্রহ করতাম। কখনও কখনও দেখা যেত একদিনে ৮ কিলোমিটারের বেশি পথ হাঁটতে হতো। প্রতিদিন আমি সেই সকাল ৭টায় শুরু করি দিন এবং রাত ১১ টায় সময় কাজ শেষ করার পর বাড়িতে ফিরতাম। বেশিরভাগ সময় দেখা যেত আমি কোন যানবাহনই ব্যবহার করিনি।’

সত্যি এটা একজন মায়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আজকের দিনে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছে। আর এই অর্থ সে শুধু নিজের প্রয়োজনেই খরচ করছেন তা কখনও নয়, সন্তানদের কল্যাণেই জন্য ব্যয় করা মুল বিষয় থাকে।

রাকিবা বলছিলেন, ‘আমি আমার বাচ্চাদের পড়াশুনা আর শিক্ষা দান করার জন্য অর্থ সঞ্চয় করতাম। হয়ত এ জন্য পুরো দিন না খেয়ে থাকতে হত পুরোটা দিন, সারাদিন কাজের চাপে আমি শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে নিঃশেষ হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। কিন্তু আমি আমার স্বপ্ন ছেড়ে কখনই চলে আসিনি!’

এক পর্যায়ে রাকিবা তার নিজের ছোট্ট বেলার স্মৃতিচারণ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখন আমি আমার বাবার হারাই এবং আমি আমার পরিবারের বড় মেয়ে ছিলাম, তাই আমার পুরো পরিবারের যত্ন নেবার দায়িত্ব ছিল। আমি তখন কাজ করতাম এবং একই সাথে আমি আমার পড়াশুনাও অব্যাহত রেখেছিলাম। আমি সবসময় আমার সন্তানদেরকে বলি, আমার সম্পর্কে, আমার সংগ্রামের কথা এবং তাদের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাই। আমাকে কতটা কঠোর পরিশ্রম করতে হত সে ব্যাপারে তারাও বুঝত।’

সন্তানদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে তার ভাষ্যমতে, ‘তারা সবসময় আমাকে আসত্ত্ব করেছে, আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তারা সবচেয়ে সেরাটি আমাকে উপহার দিবে, এই আশাটি ওরা দিয়েছিল আমাকে সবসময়। আমার ছেলেমেয়ে সবসময় পড়াশুনার ব্যাপারে প্রচন্ড আগ্রহী।অতিরিক্ত কোন রূপ চাহিদা ছিল না তাদের। না ছিল অতিরিক্ত দাবি দাওয়া এবং আমরা খুব সহজ সাধারণ জীবনযাপন করেছি! হা, এখন আমার বড়মেয়েটি একজন ডাক্তার এবং আমার বড় ছেলে যান্ত্রিক প্রকৌশলী। আমার ছোট ছেলে পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার সম্পূর্ণ স্বপ্ন কেবলমাত্র আমার দৃঢ়সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম। পাশাপাশি অজস্র ত্যাগ তিতিক্ষা। আমি তৈরি করেছি, এটি সত্যি।’

বর্তমানে রাকিবার কি করছেন জানতে চাইলে,তিনি জানান, ‘চার বছর আগেই,আমি আমার নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে ফার্মেসিকে শুরু করেছি; এখন আমি আর পড়াশোনা করি না। আমি এই ফার্মেসি দিয়ে উপার্জন করছি। এই আয় দিয়ে আমি আমার পরিবারের যত্ন নিই।’

প্রত্যেক নারীই যদি কাজ করতে শুরু করে। সত্যি তবে আর কেউ দারিদ্র্য থাকবে না। নারী এগিয়ে এলেই সমগ্র সমাজ এগিয়ে যাবে, এখন পাশাপাশি নিজেদের জীবন মানেরও পরিবর্তন আনতে পারবেন। আমি সবসময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যে আমি যেন কর্মরত অবস্থায় এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে পারি। _ রাকিবা আক্তার(৪৭)

মুলত মায়ের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ। মা সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন। মায়ের জীবনে চাওয়া-পাওয়া একটাই সন্তানের মঙ্গল কামনা করা।

 

“ইয়া রাসূল,ইয়া হাবীব” -জাজাফী

আমি যদি তোমায় নিয়ে না লিখি হে রাসুল (সা:)
যা লিখেছি এক জীবনে জানি আমার সবই ভুল।

কাউকে যদি একটু বেশি ভালোবাসি তোমায় রেখে
মা’বুদ আমার না জানি হায় কতই নারাজ সেটা দেখে।

দুনিয়াবি শানশওকাত সবই বৃথা তুমি বিনে
তোমার দিদার চাই হে রাসুল মউত এবং হাশর দিনে।

সালাম সালাম ইয়া নবী বিশ্বজনের আলোর দিশা
তুমি বিনে চারিদিকে কেবলই ঘোর অমানিশা।

আমায় তুমি দিদার দিও,রেখো তোমার মুহাব্বতে
রোজই তোমায় দুরূদ পাঠায়,গোনাহগার এ উম্মতে।

ইয়া রাসূল,ইয়া হাবীব হে আমাদের বিশ্ব নবী
তোমায় নিয়ে লেখার মত হইনি আমি তেমন কবি।

যা লিখেছি ক্ষমা করো,দিদার দিও রোজ হাশরে
দিদার দিও ইয়া রাসূল মরণ কালে আধার গোরে।

#জাজাফী
১২ রবিউল আউয়াল
২ ডিসেম্বর ২০১৭

 

“পানির বোতল দিয়ে পানি পান করছেন”

প্রায় কম-বেশি সবাই পানি বা এজাতীয় কিছুর ক্ষেত্রে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করি হরহামেশায়।ফ্রিজে পানি জাতীয় কিছু রাখার ক্ষেত্রেও। কিন্তু সব প্লাস্টিকের বোতল যে আপনি ইচ্ছা করলেই যত খুশি তত ব্যবহার করতে পারেন না! কারন এটা আমরা সবাই জানি যে প্লাস্টিক মানব দেহের/পরিবেশের জন্য মোটেও ভাল নয়। এর প্রভাব নিয়ে তাই কিছু লিখলাম না।
img20171202_003605
✈এখন আসি কোন বোতল কিভাবে ব্যবহার করা যাবে!

আমি আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরলাম। আমি নিজেও জানতাম না এর ব্যবহার।যখন আমি ডিপার্টমেন্ট থেকে Partex Beverage ltd. এ Industrial Tour এ যাই তখন বিস্তারিত জানতে পারি+ইন্টারনেট থেকেও।সুতরাং আমারও ভুল থাকতে পারে।
img20171202_003412
প্লাস্টিক বোতল যখন কোম্পানি থেকে সরবরাহ করা হয় তখন বোতলের পানির উপর যে ফাকা অংশ থাকে সেখানে কার্বন -ডাই অক্সাইড (CO2) দেওয়া থাকে যাতে পানির সাথে প্লাস্টিক কোন বিক্রিয়া বা অন্য কোন মাধ্যমে মিশ্রিত হতে না পারে।খেয়াল করলে দেখবেন যেসব পানির বোতল ইন্টেক বা সরকার দ্বারা অথরাইজড করা সেগুলির মুখাটি খোলার পর একধরনের গ্যাস বের হয়ে আসে(কার্বন ডাই অক্সাইড) যা চোরাই বা ২ নাম্বারিং বলে জানি সেগুলিতে পাবেন না। সেজন্য সিল করা বোতলের পানি অনেকদিন ধরে ভাল থাকে।

✈এখন আসি কোন বোতল কতবার ব্যবহার করতে পারব?
img20171202_003206
খেয়াল করলে দেখবেন প্লাস্টিক বোতলের তলায় অথবা প্যাকেটের মোড়কে ত্রিকোণ একটি চিহ্ন থাকে। এই চিহ্নে বর্ণনা করা হয়, বোতলটি কতটা বিধিসম্মতভাবে তৈরি। এই চিহ্নের থাকা সংখ্যা দিয়েই জানা যাবে যে এই বোতল কতদিন ব্যবহার করা যাবে, পরিবেশে ওই বোতলের প্রভাব কতটুকু। এটি কেমন নির্ভরযোগ্য তা এই চিহ্নের মধ্যে থাকা সংখ্যা দ্বারা বোঝা যায়। ন্যাচারাল সোসাইটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, প্লাস্টিক বোতলের ক্রিকোণ তত্ত্ব।
img20171202_004051
ত্রিকোণের মাঝে ১ সংখ্যা থাকলে : এর মানে বোতলটি মাত্র একবার ব্যবহার করা যাবে। বোতলটিতে পলিথিলিন টেরেপথ্যালেট প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের বোতল বহু ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
img20171202_003834
২ থাকলে: এই ধরনের প্লাস্টিক বোতলে ঘন পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত শ্যাম্পু, জুসের বোতল রাখার ক্ষেত্রে এই ধরনের বোতল ব্যবহার হয়। এটি তুলনামূলক নিরাপদ।

৩ থাকলে: এই ধরনের বোতল বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এই বোতল তৈরি হয় ‘পোলিভিনিল ক্লোরাইড’ বা ‘পিভিসি’ থেকে। এতে অস্থিমজ্জার সমস্যা ও লিভারের সমস্যা ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘পিনাট বাটার’ রাখতে এই বোতল ব্যবহার করা হয়।
img20171202_003953
৪ থাকলে: এই ধরনের প্লাস্টিক বহু ব্যবহারের উপযোগী। বিশেষ করে, প্লাস্টিকের প্যাকেটে এই চিহ্ন প্রচুর দেখা যায়। খুব দামি বোতলে এই চিহ্ন থাকে।

৫ থাকলে : একদম নিরাপদ এবং ব্যবহারের যোগ্য। আইক্রিম কাপ বা সিরাপের বোতল অথবা খাবারের কন্টেনারে এই ধরনের চিহ্ন দেখা যায়।

৬ অথবা ৭ থাকলে : প্লাস্টিকের ‘রেড কার্ড’ বলা হয় একে। এই ধরনের প্লাস্টিক মারাত্মক রকমের ক্ষতিকারক। কারণ এই ধরনের প্লাস্টিক তৈরি হয় পলিস্টিরিন এবং পলিকার্বোনেট বিসপেনল-এ। এটা মানুষের মধ্যে হরমোন সমস্যা তৈরি করে। ক্রমাগত এধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ায়।
সুত্র:সংগৃহীত

 

‘প্রেগনেন্সিতে করণীয় যা’ -ডা. মারুফ রায়হান খান

‘প্রেগনেন্সি’বিষয়টা আমার কাছে মিরাকিউলাস লাগে। একটা দেহে দুটো প্রাণ। একসাথে নির্ভর করছে দুটো সত্ত্বার ভালো থাকা-মন্দ থাকা, সুস্থতা-অসুস্থতা–মায়ের সুস্থতার উপর নির্ভর করে সন্তানের বাঁচা-মরা। প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হরমোনের বেশ তারতম্য ঘটে, শারীরিক গঠনের কিছু পরিবর্তন হয়–তাই মায়ের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা নতুন করে দেখা দেয় বা বেড়ে যায়। দেখা যায় যে, ডেলিভারি হয়ে যাবার পরপর সে সমস্যাগুলোও চলে যায়। এগুলোর বেশিরভাগই ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক। প্রেগনেন্সি ইস্যুটা যেহেতু সবার কাছে খুব সেন্সিটিভ তাই অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এসব সমস্যায়। আসলে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলে, কিছু পরামর্শ মেনে চললে যার অধিকাংশই প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়। একেবারেই কমন কিছু সমস্যার সমাধান নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি।

♦বমিবমি ভাব এবং বমি :
দেখা যায় যে প্রতি ১০০ জন গর্ভবতীর প্রায় ৭৫ জনেরই এ সমস্যাটা দেখা দেয়। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই এ সমস্যা হয়।
-সকালে ঘুম থেকে উঠেই, বলা হয়ে থাকে বিছানাতেই
শুকনো খাবার যেমন : টোস্ট, বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খেতে।
-প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে বলা হয়।
-অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হয়।
-একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।

♦কোমর ব্যথা :
প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৫০ জনেরই এ সমস্যা দেখা দেয়।
-অনেক বেশি ওজন বাড়িয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, মোট দশ ঘণ্টা।
-পা কিছুটা উঁচুতে রেখে যেমন : পায়ের নিচে একটা বা দুটো বালিশ রেখে বিশ্রাম নিন।
-শক্ত বিছানায় শোয়া ভালো।
-উঁচু হিলযুক্ত জুতো পরা যাবে না।
– কুঁজো হয়ে বসা বা কোনো জিনিস নিচ থেকে তোলা পরিহার করা শ্রেয়।
– দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।
– ভারী এবং পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
– কোমরে ম্যাসাজ করতে পারেন।
– গরম বা ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে স্যাঁক দিতে পারেন।

♦কোষ্ঠকাঠিন্য :
-প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
– আঁশজাতীয় খাবার যেমন : শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
-ইসপগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।
– চাপ এলে টয়লেটে যেতে বিলম্ব করা যাবে না।
– কিছুটা হাঁটাচলার অভ্যেস করা ভালো, দিনে ২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩ দিন হাঁটা যেতে পারে।

♦পায়ে খিল ধরা :
-পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে।
– গরম স্যাঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সেবন করা যেতে পারে।
পায়ে পানি আসা/ পা ফোলা :
-বিশ্রাম নিন এবং পা দুটো একটা বা দুটো বালিশের ওপর রাখুন।
– একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
-আরামদায়ক জুতো পরুন।
– বেশি করে পানি পান করুন।

♦বুক জ্বালাপোড়া, এসিডিটি :
-একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
– খাবার পরপরই বিছানায় শুতে চলে যাওয়া যাবে না।
– বিছানায় যাবার অনেকক্ষণ আগেই খাবার খেয়ে ফেলুন।
– উঁচু বালিশে শুলে আরাম পাওয়া যায়।
– এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
পায়ে আঁকাবাঁকা শিরা।

♦পাইলস :
-পায়ে আঁকাবাঁকা শিরার জন্যে ক্রেপ ব্যাণ্ডেজ ব্যবহার এবং বিশ্রামের সময় পা উঁচু করে রাখতে বলা হয়।
-পাইলসের জন্যে নিয়মিত টয়লেট সারা জরুরি; কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। টয়লেট সারার সময় বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। বাম কাত হয়ে শোয়া ভালো। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

♦মাসিকের রাস্তায় সাদা স্রাব :
-ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এর প্রধান চিকিৎসা।
-নরম সূতি আন্ডারগার্মেন্টস ব্যবহার করা ভালো।
তবে সবকথার শেষকথা হচ্ছে প্রতিজন গর্ভবতী নারীরই নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে ভিজিটে যেতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে এবং তার প্রেস্ক্রাইব করা ওষুধপত্র নিয়মিত খেতে হবে।

 

‘আজকে আমি নিঃসন্তান, শুধু জিপিএ ফাইভের জন্য’

এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে অভির কথা বলতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা।
ছবি : এনটিভি

‘আমার ছেলের নাম ছিল অভি। অনেক শখ করে তার নামটা রেখেছিলাম। ভাবছেন হয়তো বা ছিলাম কেন বলছি। কারণ আজকে আমার ছেলে আমার সাথে নেই। সে অনেক দূরে চলে গেছে। অনেক দূরে। আমাদের সবার থেকে অনেক অনেক দূরে।’

এভাবেই ক্যামেরার সামনে নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন এক মা। নিজের নাম, পরিচয় বা ছবি কোনো কিছুই প্রকাশ না করার শর্তে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর কথা প্রকাশ করলেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই। যেন তাঁর জীবনের ঘটনা থেকে অন্যরা কিছুটা হলেও শিক্ষা নিতে পারেন।

অনেক আদর করে ছেলেকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন এই মা। ব্যবসায়ী স্বামী পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। পুরো পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। এসবের মধ্যে তিনি চাইতেন, তাঁর ছেলেকেও যেন তাঁর মতো পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করে জীবন পার করতে না হয়। তিনি চাইতেন তাঁর ছেলে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হোক। বাবা চাইতেন ছেলে বড় ব্যারিস্টার হবে।

অভি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন কোনো কারণে তার পরীক্ষার ফল খারাপ হয়। এতে তার বাবা ভীষণ রেগে যান বলে জানান অভির মা। এমনকি অভির দাদাবাড়ির সদস্যরাও পরীক্ষায় খারাপ ফলের জন্য তার মাকে দোষারোপ করতে থাকেন। সবাই বলতে থাকেন যে, মা অভির ঠিকমতো খেয়াল নেননি।

এসব আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ছেলের ওপর চাপ দিতে থাকেন মা। ছেলেকে নিয়েই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন তিনি। সে ঠিকমতো বাড়ির কাজ করছে কি না, অযথা সময় নষ্ট করছে কি না এসব খেয়াল রাখতে শুরু করেন। ছেলেকে সব সময় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে বলতেন বলেও জানালেন এই মা। ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু তিনি একাই করতে শুরু করেন। একসময় তাঁর জগৎই হয়ে যায় অভিকেন্দ্রিক।

এরপর অভি যখন অষ্টম শ্রেণিতে ওঠে, তখন পরিশ্রমের ফল পান এই মা। জানালেন, সে বছর ভালো ফল করে তাঁর ছেলে। কিন্তু এর পর থেকে অভির ওপর তার বাবার নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়। অভিকে যে করেই হোক জিপিএ ফাইভ পেতে হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

এ ছাড়া পরিবারের অন্যরাও বারবার অভিকে মনে করিয়ে দিতে থাকেন যে সামনের মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষায় তাকে সেরা ফলটাই করতে হবে। অভির বাবা বলতেন যে, ছেলে জিপিএ ফাইভ না পেলে তাঁর মান-সম্মান নষ্ট হবে, পরিবারের সম্মান নষ্ট হবে। এ ছাড়া ছেলেকে ব্যারিস্টার বানানোর তাঁর যে স্বপ্ন সেটিও পূরণ হবে না।

ফলে অষ্টম শ্রেণি থেকেই অভির ওপর চাপ দেওয়া শুরু হয়। এই মা বলেন, ‘ও খেলতে পছন্দ করত, ছবি আঁকতে পছন্দ করত, আস্তে আস্তে দেখলাম ওই জিনিসগুলার ভেতরে ছেলেটা কেমন যেন চুপ হয়ে গেল। জিনিসগুলার প্রতিও তার মন উঠে যাচ্ছে। ছবি আঁকা বন্ধ করে দিছে। আমি তারপরেও বলি যে ঠিক আছে, তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে। কারণ আমারও ওর বাবার থেকে যে চাপটা আমি পেতাম, হয়তো বা সেটাই আমি আমার ছেলেকে দিয়ে এসেছি।’

এসএসসি পরীক্ষা যতই এগিয়ে আসছিল, অভির ওপর ততই চাপ বাড়াচ্ছিলেন বলে জানান তার মা। বলেন, ‘ওর বাবা আমাকে প্রতিনিয়ত কী করছে, ছেলে কী করছে, ছেলের দিকে খেয়াল রাখতেছো? ওকে দেখতেছো? ও কী পড়াশোনা করতেছে? কী করতেছে?’

মূল পরীক্ষার আগে বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষায় অভির ফল ভালো হচ্ছিল না উল্লেখ করে মা বলেন, এগুলো দেখে অভির বাবা প্রচণ্ড রেগে যান। সেই রাগের মাত্রা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না বলে জানান তিনি। অভির বাবা বলেছিলেন, অভি জিপিএ ফাইভ না পেলে তিনি ছেলের মুখও দেখবেন না।

এরপর একসময় পরীক্ষা শেষ হয় অভির। সে আরো চুপচাপ হয়ে যায় বলে জানান তার মা। চুপচাপ এক কোণায় পড়ে থাকত। অথচ আগে সে বেশ হইচই করত।

এভাবে রেজাল্টের দিন এসে গেল। সকালে ভয়ে কাতর চেহারা নিয়ে অভি বের হয়। মা বলেন, “আমি বাসায় অপেক্ষা করছি। সকাল পেরিয়ে দুপুর পার হয়ে গেল, তারপরেও তার কোনো খবর নাই। আমি ওর কিছু বন্ধু-বান্ধব যারা, ওর তো তেমন বন্ধুও আমি হতে দেই নাই আসলে, ওর কিছু পরিচিত মানুষ যারা ওর ক্লাসে ছিল, ওর সাথে কোচিংয়ে যেত ওদের থেকে খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কেউ বলতে পারে না আসলে আমার ছেলে কোথায়। আমি ওর বাবাকে জানালাম। ওর বাবা তো আমার সাথে প্রচণ্ড রাগারাগি চেঁচামেচি শুরু করল। ‘কী বলো তুমি, খেয়াল রাখো না, কেমন মা তুমি? কিছুই করতে পারো না। ছেলেটাকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারো নাই’।”

সন্ধ্যায় অভির বাবাসহ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন তাঁরা। এর পরদিনও কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অভি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার দুদিন পর থানা থেকে ফোন আসে। পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, তাঁদের প্রিয় অভি আর বেঁচে নেই। বাড়ির কাছের একটি রেললাইনের ধারে পড়ে ছিল তার লাশ।

পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, অভির শরীরে বিষের নমুনা পাওয়া গেছে। সম্ভবত বিষাক্ত কিছু খেয়ে রেললাইনে আত্মহত্যা করেছে।

জানা যায়, অভি জিপিএ ৫ পায়নি। সে জন্য আর ঘরে ফেরেনি সে। মা বলেন, ‘ফিরতই বা কীভাবে। বলেই তো ফেলেছিলাম যে তোর মুখ আর কোনোদিন দেখব না। তাই আমার ছেলে ঘরেই ফেরে নাই। ফিরল না। আজকে আমি নিঃসন্তান। শুধু কেন? জিপিএ ফাইভের জন্য। আমি তাকে এতটাই চাপ দিছি জিপিএ ফাইভ পেতে হবে সেই ভয়ে আমার ছেলে আজকে আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আজকে আমি বুঝি সে কতটা কষ্ট মনে নিয়ে এরকম একটা কাজ করে ফেলছে।’

ক্যামেরার সামনে কাঁদতে থাকা এই মা বলেন, ‘মা হিসেবে আমি ব্যর্থ। আমি আমার ছেলেকে কখনো বোঝার চেষ্টা করি নাই। কখনো তাঁকে কাছে নিয়ে জিজ্ঞাসা করি নাই, বাবা তোর কী ভালো লাগে, তুই কী করতে চাস? তোর কি কষ্ট হচ্ছে না কি তাও কখনো জিজ্ঞাসা করি নাই। শুধু সারাক্ষণ পড় পড় পড় পড়। পড়তে হবে, পড়তে হবে, জিপিএ ফাইভ পেতে হবে।’

‘আজকে আমার ছেলে নাই আমার কাছে’, দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনেকটা যেন স্বগতোক্তি করেন এই মা।

নিজের জীবন থেকে নেওয়া শিক্ষা থেকে অন্য অভিভাবকদের প্রতি সন্তানদের ওপর চাপ না দিতে অনুরোধ করেন তিনি। বলেন, সবাই যেন সন্তানকে কাছে ডেকে নিয়ে তার ভালো মন্দ, ইচ্ছা অনিচ্ছা জানতে চান। শুধু জিপিএ ফাইভ পাওয়ার আশায় জীবনের মূল্যবান সম্পদ সন্তানকে যেন কেউ হারিয়ে না ফেলেন সেই কথা বলেন তিনি।

তাঁর মতো যেন আর কোনো মাকে কাঁদতে না হয়, আফসোস করতে না হয় সেই কথা বলেন এই মা।
সুত্র:এনটিভি

 

এই শীতে শিশুর যত্ন_’টনসিল’ -ডা.মারুফ রায়হান খান

টনসিলের সমস্যার কারণে গলাব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকেই। যদিও টনসিলের সমস্যা সব বয়সেই হয়ে থাকে তারপরেও শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলের ইনফে কশান একটু বেশি হয়। টনসিলের এই ইনফেকশানকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টনসিলাইটিস বা টনসিলের প্রদাহ।
img20171130_223447
কোথায় থাকে এই টনসিল?
জিহবার পেছনে গলার দেয়ালের দুপাশে গোলাকার পিণ্ডের মতো যা দেখা যায় সেটিই টনসিল। টনসিল দেখতে মাংসপিণ্ডের মতো মনে হলেও এটি লসিকা কলা বা লিম্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি।
img20171130_224603
কী কী উপসর্গ নিয়ে আসেন রোগীরা?
– গলা ব্যথা
– গিলতে অসুবিধা
– জ্বর
– কানে ব্যথা
– মাথা ব্যথা
– গলার স্বর পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া
– নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ
– শিশুর খাবার গ্রহণে অনীহা
– নাক দিয়ে পানি ঝরা
– গলার বাইরে গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
img20171130_223737
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা কী?
কারণের ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হয়ে থাকে তাহলে রোগীকে যথাযথ এন্টিবায়োটিক দিতে হয়। ভাইরাসের জন্যে হলে ৫/৭ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়, সেক্ষেত্রে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসার পর উপসর্গ চলে গেলেও টনসিলের আকৃতি ছোট হতে কিছুটা সময় নেয়। কয়েক মাস পর্যন্ত টনসিল বাড়তি আকৃতিতে থাকতে পারে। অনেকক্ষেত্রে ওষুধে না সারলে রোগের তীব্রতা ও আক্রমণের হার বিবেচনা করে অপারেশানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
img20171130_223639
টনসিলের অপারেশান কখন করতে হয়?
– টনসিল বড় হওয়ার জন্য ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা নাক ডাকলে।
– ঢোক গিলতে বা খেতে অসুবিধা হলে।
– এক বছরে ৭ বা তার বেশি বার হলে।
– টানা ২ বছর ৫ বারের বেশি হলে।
– টানা ৩ বছর ৩ বারের বেশি হলে।
– বছরে এই সমস্যার কারণে ২ সপ্তাহ বা তার বেশি স্কুলে বা কাজে যেতে না পারলে।
টনসিল অপারেশান করলে ভবিষ্যতে কোনো অসুবিধা হবে কি?
img20171130_230018
টনসিলের অসুবিধা দূর করার জন্যেই অপারেশান। আর ভবিষ্যতে যাতে টনসিলের ইনফেকশান থেকে জটিলতা।না হয় তার জন্যেই অপারেশান করা হয়। কাজেই টনসিল ফেলে দেওয়ার জন্যে ভবিষ্যতে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না।

 

কিভাবে নিজের যত্ন নিবেন

যত্ন নেবার জন্য খুব কম সময় কিন্তু সচেতনতা প্রয়োজন। শরীর এবং নিজের মনকে ভালো রাখতে হলে কিছুটা যত্ন দরকার, মনকে ভালো রাখতে, চাই নিয়মিত যত্নের অনুভূতি। নিজের প্রতি ব্যক্তি যত্নশীল হওয়ার অর্থ, যত্নের সাথে উঁকি দেওয়া- শারীরিক, আধ্যাত্মিক, আর মানসিক চাহিদার ব্যাপারে। কোন অজুহাত ছাড়ায় ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ নেওয়া। মনকে ভালো রাখতে হলে প্রিয় কাজগুলো করতে হবে আর শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
img20171129_012134
তাই আসুন কতকগুল টিপস জেনে নেই ‘নিজের মন আর শরীরের’ যত্ন কিভাবে নেওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে হাফিংটন পোস্ট ও উইকিহাউ জানান, ‘মনের যত্নের প্রতি প্রত্যেকের সময় রাখা উচিত, সারাদিনে অল্প হলেও সময় দিন।’ অজস্র কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আমরা নিজেদের ব্যাপারে অসচেতন হয়ে পড়ি। শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে, নিজের অনুভূতিকে সতেজ রাখবে তেমন কয়েকটি টিপস।

টিপস:
img20171129_011249
রাতের আকাশে বসুন
১.মনের সতেজতার নানান গল্প জওআছে, আছে ত তাই না। নিজেকে মধ্যরাতের তারার ঝাঁকে খুঁজুন, বসে পড়ুন রাতের নীলিমায়, আগে হয়ত কখনও দেখা হয়নি নিজের উজ্জল নক্ষত্রের প্রতিবিম্ব রূপকে। মনের ঘরে আসুক প্রশান্তি ঝড়।
img20171129_011723
প্রকৃতিকে স্পর্শ করুন অনুভবে
২.অনুভূতি ত গাছের পাতার ডগায় বসে থাকা বিন্দু কণা জল। প্রতিটি স্পর্শ যেন হয় অনুভবের গল্প। নিজের ঘরের টপে বেড়ে ওঠা গাছটিকে পানি দেবার সময় আলত করে স্পর্শ করুন। নিজের প্রিয় বিষয়গুলকে ধরার সময় খেয়াল। যত্ন নিন নিজের অনুভূতির।
img20171129_011659
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে কিছুটা সময় দূরে থাকুন
৩.নিজের যত্ন নেবার সময় কখন কখন নিজেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস(মোবাইল, ইন্টারনেট, এবং টেলিভিশন) থেকে দূরে রাখুন। ভাবুন নিজেকে নিয়ে।
img20171129_011605
লিখুন নিজের সাফল্য
৪.খাতা-কলম নিয়ে বসুন। আপনমনে কিছু ইতিবাচক দিক লিখুন। সাফল্য পেতে চাইলে আপনাকে আরো কী কী করতে হবে তারও একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। দেখবেন ভালো লাগবে। প্রতিদিন ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবি কি কিছুক্ষণ? নিজের আনমনা অনুভূতিগুলও লিখে রাখতে পারেন ডায়েরির পাতায়।
img20171129_011532
ছুটি দিন চিন্তাকে
৫.যে চিন্তারা আমাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ভাবতে বাধ্য করে, যন্ত্রণার সঙ্গী করে সেটি নিয়ে চিন্তা কিছুক্ষণ ছেড়ে দেই। যেতে দিন সময়। এটা হতে পারে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বা অথবা দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে। ভাল রাখতে নিজেকে প্রথমে ভাল রাখার অনুভূতিকে হাতে রাখা।
img20171129_011454
নদীর ধার বা খোলা মাঠে কিছুক্ষণ
৬.চিন্তা বাড়াতে সাহায্য করুন। ভাবুন কোন খোলা প্রান্তে বসে। নয়ত নদীর পাশে নিজেকে কতক্ষণ ছেড়ে দিন।
img20171129_092642
হাটুন আপন মনে
৭.
মন ভালো রাখতে হাটতে পারেন, পারেন কিছু যোগব্যায়ামও করতে শরীরকে ভাল রাখতে। গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত হাঁটা মানসিক চাপকে কমাতে সাহায্য করে। এতে মন ও শরীর ভালো থাকে।
img20171129_093129
মনের ও শরীরের খোরাক জোগাতে কাজ করুন। ব্যস্ত থাকুন নিজের কাজে। মনকে ভালো রাখবে।

ফাতেমা শাহরিন

 

রান্নার যত কথা

রঙটাও সুন্দর হতে হবে আবার সুন্দর ঘ্রাণও চাই। খাবারের সময় কিছুটা মুখরোচক খাবার কেনা চায়। রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দেবার জন্যই আজকের কিছু নতুন টিপস। যা আপনার রান্নার স্বাদকে আরো বাড়িয়ে দিবে।
img20171128_224257
স্যুপ বা স্যুপি নুডুলস(Soup or Sappy Noodles)
স্যুপ বা স্যুপি নুডলসের সঙ্গে টুকরা করা ব্রেডে রসুন, বাটার, সামান্য চিনি ও গোলমরিচের পেস্ট লাগিয়ে রাখুন কয়েক মিনিট গ্রিল বা সেঁকে মচমচে পরিবেশন করুন, দেখবেন খেতে মুখরোচক হবে।
img20171128_224157
খেজুর গুড়(Date Molasses)
খেজুরের গুড় দিয়ে পায়েস করতে গিয়ে অনেক সময় দুধটা ফেটে যায়। দুধ ঘন হয়ে গেলে নামিয়ে একটু ঠান্ডা করে তারপর গুড় মেশাবেন। ভালো করে নেড়ে আবার কিছুটা ফুটিয়ে নেবেন, দেখবেন রঙটাও সুন্দর হয়েছে আবার সুন্দর ঘ্রাণ বের হচ্ছে। দুধ ফাটার ভয়ও থাকবে না।
img20171128_224116
চিনাবাদাম ও কাজুবাদাম(Peanut and Almonds)
চিনাবাদাম ও কাজুবাদাম তেলে ভেজে পরে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সেমাই বা মিষ্টিজাতীয় খাবারে অনেকে বাদাম ব্যবহার করে থাকেন। বাদামে যদি তেল মেখে পরে তাওয়ায় ভাজেন তাহলে তেল কম লাগবে। নয়তো শুকনো ভাজতে গেলে তেল বেশি লাগবে।
img20171128_224059
তেতুলের ব্যবহার(Use of Tamarindus)
ওল, কচু অথবা কচুশাক রান্না করলে তাতে কিছুটা তেঁতুল ব্যবহার করবেন। খাবারের সময় কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন, তাহলে গলায় আর চুলকানোর কোনো ভয় থাকবে না।
img20171128_224018
সেমাই রান্না(Cook the cottage Cheese)
সেমাই রান্নার আগে দেখে নিন। হালকা ভাজা হলে তেলে বা ঘিতে আবার ভেজে নিন। তাহলে রান্নার সময় সহজে গলে যাবে না।
img20171128_223952
মজাদার কেক(Fun Cake)
কেক বানাতে যদি ডিমের পরিমাণ কম থাকে তাহলে ভয় পাবেন না। কর্ণফ্লাওয়ার ব্যবহার করবেন। দেখবেন ডিমের ঘাটতি পূরণ হয়ে গেছে।
img20171128_223906
তরকারি রকমারি(Tasty Curry)
রান্নাতে খাদ্যমান ঠিক রাখতে যতটুকু সম্ভব তরকারি বড় বড় টুকরা করে কেটে নিন। নানান রং এর সবজি রাখতে পারেন। তাহলে বাচ্চারা পছন্দ করবে।
img20171128_223846
টক বা চিনি( Sour or sugar)
রান্না করতে গিয়ে তরকারিতে লবণ বেশি হলে সামান্য টক অথবা সামান্য চিনি দেবেন, তাতে কিছুটা হলেও লবণাক্ত ভাব কমে আসবে।

 

চলুন ঘুরে আসি মাল্টনোমাহ জলপ্রপাত(প্রচুর ছবি আছে) -দ্য স্লেভ 

মাল্টনোমাহ ফলস
received_1022689287871273
১৮ ঘন্টাব্যপী রোজা আমার জীবনে কখনও রাখিনি,তাও আবার প্রচন্ড গরমের মধ্যে। এবার নরওয়েতে ২২ ঘন্টা রোজা, সে তুলনায় সুখে আছি। তবে যেরকম কষ্ট হবে মনে করেছিলাম সেরকম হচ্ছেনা। রোজার পূর্বে মারাত্মক চিন্তায় ছিলাম যে, এবার রোজায় না জানি কি হয় ! দোয়া করছিলাম যাতে কষ্ট না হয়। অবাক কান্ড হল কর্মব্যস্ত দিনেও বাসায় ফেরার পথে পার্কে স্টিল বার ধরে ৫০ বার শরীর উপরে ওঠা-নামা করিয়েছি এবং আরও কসরত করেছি। একটু কষ্ট হলেও মনে হয়েছে শক্তি তেমন একটা ক্ষয় হয়নি। কার ক্ষেত্রে কি ঘটেছে জানি না,তবে রোজা আমার শারিরীক সুস্থ্যতার ক্ষেত্রে ব্যপক অবদান রেখেছে। রোজার বাইরে আমি ননস্টপ খাই,তাই একটা বিরতী দিয়ে শরীরকে নব উদ্যোমী করার জন্যে রোজার গুরুত্ব অধিক বলে আমার মনে হয়েছে। আর অবশ্যই ফরজ হিসেবে রোজা পালন করতে আমরা বাধ্য। সত্যিই এটাতে দুনিয়া ও আখিরারে ব্যপক কল্যান রয়েছে।

আজ ছুটির দিন, ভাবছিলাম বাসায় শুয়ে বসে কাটাই,কিন্তু ঘোরাঘুরি যার স্বভাব তাকে আটকে রাখে এমন বিছানা পয়দা হয়নি। পরিকল্পনা ঝালাই করলাম। গুগল জানালো ‘মাল্টনোমাহ ফলস’ আজ শুভ। বাসা থেকে ১৬০ কি:মি: দূরে এটি অবস্থিত। হাইওয়ে ৫ এবং ৮৪ ধরে ধাবিত হলাম। আজ ব্যপক গরম। শরীর থেকে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে,তবে পিপাসা তেমন অনুভূত হচ্ছেনা। দেড় ঘন্টা পর কলাম্বিয়া নদীর পাশ ধরে অগ্রসর হতে লাগলাম। কলম্বিয়া নদীর পাশ ধরে যে রাস্তা রয়েছে তা ধরে কেউ যদি গাড়ি চালায় অথবা হাটে,আর যদি সে আস্তিক হয় তবে সে ¯স্রষ্টার প্রশংসা না করে পারবে না। 
received_1022689277871274
এই নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ আর এদিকের এক পাশে উঁচু পাহাড়শ্রেণী,যা আগ্নেয় শীলায় তৈরী। এটির পাশ ধরে এবং ভেতর দিয়ে কলম্বিয়া নদী প্রবাহিত। অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট একটি নদী এটি। পাহাড়ের যে অংশটি খাড়াভাবে উপরে উঠেছে,তার পাদদেশে নদীর অস্তিত্ব সত্যিই পুলকিত করে। এখানে সেটিই ঘটেছে। বামে কলাম্বিয়া নদীকে রেখে অগ্রসর হলাম। ডানেও সুন্দর পর্বতশ্রেণী। সবুজ আর সবুজ। খাড়া পাহাড়ের শরীর জড়িয়ে বিশাল বিশাল গাছগাছালির বসবাস। ভাল না লেগে কতক্ষণ !
received_1022689267871275
ডানে মাল্টনোমাহ ফলস। দূর থেকে দেখে অত্যন্ত খুশী হলাম এবং অবাকও হলাম এ কারনে যে, অনেক আগে নেটে পৃথিবীর বিভিন্ন চমৎকার জলপ্রপাতের খোঁজ খবর করছিলাম। তখন যে কটা জলপ্রপাত আমাকে আকৃষ্ট করেছিল,তার ভেতর এটিও ছিল। অবাক হয়ে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড়টির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বহু উপর থেকে পানির ধারা পাহাড়ের কঠিন শীলার উপর আছড়ে পড়ে খানিকটা বাষ্প সৃষ্টি করে নীচে পতিত হচ্ছে। দৃশ্যটি বার বার দেখতে ভাল লাগবে। এগিয়ে গেলাম। বেশ গরম, শরীর পুড়ে যাওয়ার মত হচ্ছে।

জলপ্রপাত থেকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র নদীর পাশ ধরে সুন্দর রাস্তা হয়ে জলপ্রপাতের দিকে এগিয়ে চললাম। বিশ্বাস করেন, পাহাড়ের সীমার মধ্যে যেতেই এক চমৎকার শীতল আবহাওয়া শরীরে ধাক্কা দিল,আর সঙ্গে সঙ্গে গরমের স্থলে অতি মাত্রায় চমৎকার অনুভূতি কাজ করল। বেশ আরাম অনুভব করলাম। রহমত ব্যাপারটা এরকমই। মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণ পূর্বে যেন আমার গরমই অনুভূত হচ্ছিল না। 
এ এলাকাটি সুন্দর করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। শুরুতেই একটি পর্যটন সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র,তারপর রেস্টুরেন্ট এবং একটি সুন্দর প্রাঙ্গন। আজ প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়দের দেখা পেলাম। সাধারণত আমার এলাকায় ভারতীয় তেমন দেখা যায় না। নীচে দাড়িয়ে জলপ্রপাত দেখতে থাকলাম। পাহাড়টি এখানে একটি সুবিশাল প্রাচীরের মত মনে হয়। কঠিন পাথরে শ্যাওলা কিছুটা জমেছে এবং সময়ের আবর্তে তা ক্ষয়ে গেছে,সে দৃশ্য দেখে মনে হয় এটি মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকস সম্বলিত কোনো দেওয়াল। জলপ্রপাতটি যদি নাও থাকত তবুও এই কঠিন পাথরের আঁিকবুকি দেখতে ভাল লাগত। খাড়া পাহাড়ের মাথায় বড় বড় গাছ শোভা পাচ্ছে আর তার ভেতর থেকে বিরামহীনভাবে জল প্রবাহিত হচ্ছে। পতিত জলরাশি সোজা নীচে পতিত না হয়ে মাঝামাঝি একটি স্থানে পাথরে ধাক্কা খেয়ে তবে নীচে পতিত হচ্ছে। সে দৃশ্যটি অতি মনোরম। গৃষ্মে জলধারা ক্ষিন,তবে ততটা ক্ষিণ নয়। জলধারা যেখানে পতিত হচ্ছে সেখান থেকে আরও নীচে আরেক স্তর রয়েছে এবং এটার উপরে একটি শক্ত পোক্ত সেতু নির্মান করা হয়েছে,যাতে দর্শনার্থীরা দেখতে পারে। সেতুটির নীচ দিয়ে জলধারা আরেক দফায় লাফিয়ে অবশেষে সমতলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জলপ্রপাতটির ধাপে ধাপে শিল্পের চিহ্ন। ডান দিকের রাস্তা ধরে উপরে উঠতে থাকলাম।

প্যাচানো রাস্তা ধরে সেতুর উপর উঠে আসলাম। এখান থেকে দেখতে খুব ভাল লাগে। শীতে যখন তুষারপাত হয়েছিল তখন এই জলপ্রপাতে তুষার মিশ্রিত জলধারা পতিত হওয়ার দৃশ্য ছিল অসাধারণ। এখান থেকে পাহাড়ের খাড়া অংশের কঠিন পাথরের কাঁরুকাজ দেখতে খুব ভাল লাগছিল। বায়ের রাস্তা ধরে উপরের দিকে হাটলাম।
received_1022689417871260
বায়ে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশ আর ডানেও খাড়া,কিন্তু সেখানে বিশালাকৃতির গাছপালা রয়েছে। কঠিন পাথরের কোথাও কোথাও গর্ত তৈরী হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। সরু,স্বর্পিল এবং উর্ধ্বমুখী রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম,উদ্দেশ্য জলপ্রপাতের উৎস্যমূলে পৌঁছানো। ঝিরিঝিরি বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে,ভাল লাগছে,তবে একটু কষ্টও হচ্ছে কিন্তু এসব এখন তুচ্ছ। 

হাতের বায়ে দেখলাম পাহাড়ের খাড়া ঢাল ধরে ঘন বন। সেখানে ছোট বড় সব রকমের গাছগাছালি। পাথুরে মাটির উপর বিশালাকৃতির গাছগুলি স্বমহিমায় দাড়িয়ে আছে। কোনো কোনোটা বয়সের ভারে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। কোনো কোনোটা মরেও সৌন্দর্য প্রদান করছে। 
received_1022689427871259
উপরে ওঠার পথে কয়েকটা লুকআউট আছে,যেখান থেকে খাড়া পর্বতশ্রেণীর পাশদিয়ে প্রবাহিত কলাম্বিয়া নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। ক্রমেই উপরে উঠে আসছি। কোথাও না থেমে একেবারে উপরে উঠে আসলাম,অনেক সময় লাগল এখানে পৌছাতে। এবার কিছুটা নীচের দিকে রাস্তা চলে গেছে। এতক্ষন রাস্তা ছিল নুড়ি পাথরে পূর্ণ এবং পাকা রাস্তাও ছিল,আর এখন মাটির রাস্তা শুরু হল। এর একদিকে কাঠের ছোট ছোট গুড়ি দিয়ে আটকানো। সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। খানিকটা নীচে নেমেই দেখলাম চোখ শীতলকারী দারুন সেই জলধারার উপস্থিতি। খানিক দাড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। এ যেন ছবিতে দেখা কোনো পাহাড়ী ছোট নদী। 

নীচে নামলাম। মধ্যম মানের গতিতে চলমান জলধারার দুপাশে বিশাল বিশাল গাছপালা। সেসব গাছে শ্যাওলা জমে আছে,যা সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। ছোট বড় পাথরের চাক এখানে সেখানে গেথে আছে। এর উপর বিশাল বিশাল গাছ উপড়ে পড়ে আছে। কোনো কোনোটায় শ্যাওলা ধরা আর কোনো কোনোটা ক্ষয়ে গেছে। কিছু গাছের ভেতরে ক্ষয়ে পাইপের মত হয়ে আছে,সেসব মরা গাছ দেখতে বেশী ভাল লাগে। পানির ধারার উপর অবস্থিত বড় কিছু পাথরের চাকের উপর দিয়ে পানির কাছে গেলাম এবং হাত দিয়ে শীতলতা অনুভব করলাম। খুব ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ পানি,মনে হল খেয়ে ফেলি কিন্তু রোজার কারনে হল না। পতিত বিশাল এক গাছের কান্ডের উপর দিয়ে হেটে আরেক ধারে গেলাম। এখানে আরও সুন্দর। স্বশব্দে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে নীচের দিকে। এবার জলধারাকে অনুসরণ করে এর খাড়া পতিত হওয়ার স্থানের দিকে হাটলাম। 
received_1022689424537926
খানিক পর দেখলাম এটি অন্তত দশফুট নীচে পতিত হচ্ছে এবং সামনে বিশ/পচিশ ফুট অগ্রসর হয়ে একেবারে খাড়া পতিত হচ্ছে। ধঃর ১৯১ সরঃবৎ যরমযএখানে একটি মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্যে। আমি সেখানে পৌছলাম। এখান থেকে জলপ্রপাতের খাড়া রূপটি দেখা যায়। সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর ! ছড়ানো ঝিটানো পানির ধারা এখানে একত্রে মিলিত হয়ে নীচে পতিত হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখা সবার ভাগ্যে জোটে না। আজ বেশ লোক সমাগম হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসেছে এটা দেখতে।

চারিদিকে গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। মৃদুমন্দ বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে। বিশুদ্ধ বাতাশ বুক ভরে টেনে নিলাম,ভাল লাগল। এখানে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করা যায়। ডানে দেখলাম বহু নীচে রাস্তা দেখা যাচ্ছে এবং গাড়ি গুলোকে বেশ ছোট লাগছে। খাড়া পাহাড়ের উপরে দাড়িয়ে এভাবে চারিদিকটা দেখতে সত্যিই ভাল লাগে। 
received_1022689284537940
এবার উঠে আসলাম। সোজা পথে না এসে পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উপরে উঠে আসলাম,তাতে কষ্ট হলেও সময় বাচল,সময়ের দাম অনেক,যদিও আজ আমি পুরো অবসরে ! এবার পাহাড়ের ভেতরের দিকে যাবার পালা। এই জলপ্রপাতের আরও গোড়ার দিক দেখার জন্যে বিপরীত দিকে রওনা হলাম। এপাশে শুনশান নিরবতা এবং গাছগাছালির ঘনত্বের কারনে আলোর পরিমান কম কিন্তু এক অপরূপ রূপের সুষ্টি করেছে এই আধারী মাখা জলধারা সমৃদ্ধ বনভূমী। চারিদিকে বড় বড় পাথরের চাক,তার উপর শতবর্ষী গাছপালার উপড়ে পড়া,এখানে সেখানে মরা গাছের কান্ড,ধারালো আগ্নেয় শীলায় তৈরী প্রাকৃতিক রাস্তা, ওহ সত্যিই অসাধারণ। আমি চলতে থাকলাম। আজ বিশেষ কেড্স পরেছি যাতে পা পিছলে না যায়। চলতেই থাকলাম। ডানের খাড়া পাহাড়ের শরীরের কোথাও কোথাও ছোট ছোট পানির প্রবাহ দেখলাম। এ অংশের রাস্তা সুবিধার নয়। সতর্কতার সাথে অগ্রসর হলাম। সরু রাস্তায় ধারালো খাড়া পাথর একটার পাশে একটা। বামে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে। যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছি ততই ভাল লাগছে। উপরের দিকে উঠে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। বিভিন্ন স্থানে জলধারা বিভিন্ন রূপের সৃষ্টি করেছে। অসাধারণ দৃশ্যগুলো ক্যামেরা বন্দী করতে করতে অগ্রসর হলাম। একসময় থামলাম এবং পিছু হটলাম। একা একা চলতে ভাল লাগছিল। মনে হচ্ছিল আরও গেলে ভাল হত। কিন্তু ফিরতি পথ ধরলাম।
received_1022689281204607
ফেরার পথে বুঝলাম অনেক দূর হেটেছি। আবেগে প্রথমটায় বুঝিনি। রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না। ঢালুতে নামছি তারপরও মনে হচ্ছে বিরাট পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। সত্যিই অনেকদূর গিয়েছি। নীচের দিকে নেমে আবারও জলপ্রপাতটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অনেকক্ষন ধরে দেখলাম। এলাকাটি মনের মধ্যে গেথে গেছে। মাল্টনোমাহ ফলস আমার হৃদয় হরণ করেছে। 

ফেরার পথে পোর্টল্যান্ড হালাল স্টোর থেকে বিপূল পরিমানে গরুর মাংস এবং মশলাপাতি কিনলাম। রোজা রেখে বাজার করা ঠিক নয়, আর্থিক ক্ষতিটাই আসল। কিন্তু এত চমৎকার গরুর মাংস আমি আর কোথাও পাইনি। আজ সন্ধ্যায় সাদা ভাত আর গরুর মাংসের ঝোল যদি না ঝেড়েছি,তবে আমার নামে কুকুর পুষবেন !
পুনশ্চ: রান্নাটা হয়েছে দারুন। কথা রেখেছি। 

 

“ভুলেও সন্তানকে অভিশাপ দিবেন না”

মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। আমাদের পাড়ার আব্দুল্লাহ যে কিনা পানিতে ডুবে মারা যায় তাঁর মা পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিশোর সন্তানটিকে বুকে জড়িয়ে পাগলপারা হয়ে কাঁদছেন। মায়ের বাঁধভাঙ্গা কান্না আর বিলাপ শুনে উপস্থিত কারো পক্ষেই চোখের পানি সংবরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
img20171126_231028
♦মায়ের চোখের পানি
তিনি কাঁদছেন আর বিলাপ করে বলছেন,
‘ও বাবুর আব্বু তুমি আমাকে মেরে ফেল। আমিই তোমার সন্তানকে হত্যা করেছি। গতকালই ওর জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমি বলেছি, ‘তুই মরিস না; মরলে দশটা ফকিরকে খাওয়াতাম।’
img20171126_231427
♦দুরন্তপনা বালক
হ্যা, সত্যিই তিনি আগেরদিন ছেলেটির দুরন্তপনায় অস্থির হয়ে এমন বলেছিলেন। তখন একজন পাগলেরও ভাবার অবকাশ ছিল না যে গর্ভধারিণী মা সত্যিই তার সন্তানের অমঙ্গল কামনা করছেন। কিন্তু অসচেতনভাবে কামনা করা দুর্ঘটনাও কখনো সত্য হয়ে দেখা দিতে পারে।
img20171126_225141
♦মায়ের অভিশাপ
আব্দুল্লাহর মা গতকাল রাগের মাথায় যে কথা উচ্চারণ করেছিলেন কে জানত আজই তা বাস্তব হয়ে দেখা দেবে।
ঘটনা হলো, সেদিন দুপুরে ছেলেটি তার মায়ের সঙ্গে শুয়ে ছিল। তিনটার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে একরকম জিদ করেই সে মায়ের কাছ থেকে ছুটে গিয়েছিল বৃষ্টিতে ভিজতে। বাড়ির বাইরে এসে সে আশপাশের সমবয়সী আরও কয়েকটি কিশোরকে পেয়ে যায়। সবাই মিলে কোন বুদ্ধিতে যেন দল বেঁধে যায় পাশের মহল্লার একটি নতুন পুকুরে গোসল করতে। সেখানে গিয়ে সবার আগে সে-ই লাফ দেই পুকুরে।
img20171126_231729
♦পুকুরের টলমল পানি
অবুঝ কিশোর ঠিক বুঝতে পারেনি লাফ দিলে পুকুরের প্রায় গভীরে গিয়ে পৌঁছবে সে। যেখানে সাঁতার না জানা একটি কিশোরের জন্য অপেক্ষা করছে অবধারিত মৃত্যু। ঘটনা যা হবার তাই হল। বাচ্চাগুলোর চোখের সামনেই সে পানিতে ডুবল। ওরা ভাবল সে বুঝি তাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। কিছুক্ষণ পর তারা ওকে না পেয়ে ভয়ে আশপাশের লোকদের ডেকে আনল। ততক্ষণে অবশ্য তার ক্ষুদেকায় দেহ থেকে প্রাণপাখি উড়াল দিয়েছে।
img20171126_224658
♦মায়ের কাছে সন্তান
মা তার সন্তানকে অবর্ণনীয় কষ্টে গর্ভে ধারণ করেন। অমানুষিক কষ্টে পৃথিবীর আলো-বাতাসে আনেন। তারপর নিজের ভালোবাসা আর ত্যাগের সবটুকু উজাড় করে অসহায় একটি শিশুকে যথাক্রমে সুস্থ, সবল, সজ্ঞান ও স্বাবলম্বী করে তোলেন। সন্তান মানুষ করতে গিয়ে বাবা-মাকে যে কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে হয় তা শুধু বাবা-মায়েরাই জানেন। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে এ কষ্ট আরও বেশি। এখানে রোজ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে লড়াই করে মানুষকে টিকে থাকতে হয়।
img20171126_232704
♦মায়ের ভালবাসা
অভাবের কারণে একজন নবীন মাকেও একহাতে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব আর অপরহাতে বুকের ধন সন্তানটিকে আগলাতে হয়। অনেক মা আছেন যারা সময়মত বাচ্চার খাবারটিও যোগাতে পারেন না রুচিমত। বিশেষত যেসব বাচ্চা জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পায় না। দরিদ্র পরিবারে এসব শিশুকে যে কত কষ্টে মা জননী বড় করে তোলেন তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এ সময় মায়েদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন হয়।
img20171126_224736
♦মা’ যখন ধৈর্যহারা
অথচ প্রগলভ চরিত্রের অনেক মা’কে এ সময় ধৈর্যহারাও হতে দেখা যায়। অনেক মা সন্তানের ওপর বিরক্ত হয়ে তাকে অবলীলায় অভিশাপ দিয়ে দিয়ে বসেন। স্নেহময়ী জননী হয়তো তার জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তানের যে কোনো অনিষ্ট রোধ করতে চাইবেন। কিন্তু তিনিই আবার রাগের মাথায় অবচেতনে আদরের সন্তানটির অনিষ্ট কামনা করে বসেন।
গ্রাম-বাংলায় প্রায়ই দেখা যায় সন্তানদের দুরন্তপনা বা দুষ্টুমিতে নাকাল হয়ে অনেক মা সরাসরি বাচ্চার মৃত্যু কামনা করে বসেন। ‘তুই মরিস না’, ‘তুই মরলে ফকিররে একবেলা ভরপেট খাওয়াতাম’, ‘আল্লাহ, আমি আর পারিনে’, ‘এর জ্বালা থেকে আমাকে নিস্তার দাও’- এ জাতীয় বাক্য আমরা অহরহই শুনতে পাই। বিশেষত কৈশোরে এসে গ্রাম-বাংলার শিশুদের দুরন্তপনা কখনো সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে কিশোর সন্তানকে উদ্দেশ করেই সাধারণত মায়েরা এমন অসহিষ্ণু বাক্য উচ্চারণ করে থাকেন। তাই এ সময় মাকে অনেক বেশি ত্যাগ ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।
img20171126_225356
ইসলামের সার্বজনীন আদর্শের ধারাবাহিকতায় এ বিষয়টি সম্পর্কেও আমরা দিকনির্দেশনা পাই তারই কাছে। এ ব্যাপারেও ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়।
ইসলাম কখনো কারো বিরুদ্ধে অভিশাপ দেয়া বা বদ দু‘আ করাকে সমর্থন করে না। আপন সন্তানকে তো দূরের কথা জীবজন্তু এমনকি জড় পদার্থকে অভিশাপ দেয়াও সমর্থন করে না।
img20171126_232146
♦আল হাদীস
জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাতনে বুওয়াত যুদ্ধের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে পথ চলছিলাম। তিনি মাজদী ইবন ‘আমর জুহানীকে খুঁজছিলেন। পানি বহনকারী উটগুলোর পেছনে আমাদের মধ্য থেকে পাঁচজন, ছয়জন ও সাতজন করে পথ চলছিল। উকবা নামক এক আনসারী ব্যক্তি তাঁর উটের পাশ দিয়ে চক্কর দিল এবং তাকে থামাল। তারপর তার পিঠে উঠে আবার তাকে চলতে নির্দেশ দিল। উটটি তখন একেবারে নিশ্চল হয়ে গেল। তিনি তখন বললেন ধুত্তুরি।
‘তোর ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’
এ শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজের উটকে অভিশাপদাতা এই ব্যক্তিটা কে?
তিনি বললেন, আমি হে আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি এর পিঠ থেকে নামো।’ আমাদের কোনো অভিশপ্তের সঙ্গী করো না। তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, তোমাদের সন্তান-সন্তুতির এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে দু‘আ করো না। তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন মুহূর্তের জ্ঞানপ্রাপ্ত নও, যখন যা কিছুই চাওয়া হয় তিনি তোমাদের তা দিয়ে দেবেন।’
[মুসলিম : ৭৭০৫]

♦♦♦হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন, অর্থাৎ তোমরা কোনো মুহূর্তেই নিজের বিরুদ্ধে, নিজের সন্তান বা সম্পদের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করো না। কারণ, হতে পারে যে সময় তুমি দু‘আ করছো, তা দিনের মধ্যে ওই সময় যখন যা-ই দু‘আ করা হোক না কেন তা কবুল করা হয়। তোমরা তো এ সময় সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান প্রাপ্ত নও। (মুবারকপুরী, মিরআতুল মাফাতীহ : ৭/৭০৩)

♦♦♦ হাদীসটি বর্ণনা করে আরেক ব্যাখ্যাকার বলেন, ‘হাদীসটি রাগের মাথায় মানুষের তার পরিবার ও সম্পদের বিরুদ্ধে দু‘আ করার নিষিদ্ধতা প্রমাণ করে। হাদীসটি এর কারণও তুলে ধরে। আর তা হলো, এ দু‘আটি কবুলের বিশেষ মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। ফলে মানুষের সবই কবুল হয়ে যায় চাই তা ভালো হোক বা মন্দ, যা সে তার পরিবার বা সম্পদের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা করে না।’
[আবদুল মুহসিন, শারহু সুনান আবী দাউদ : ৮/২৮৮]
img20171126_232204
♦আল কোরআন
নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে দু‘আ করার অর্থ তো নিজেই নিজেকে হত্যার তথা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ – البقرة: ١٩٥
‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ [ সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫]

অতএব প্রতিটি মাকে ভেবে দেখতে হবে, আমার রাগের মাথায় উচ্চারণ করা বাক্য যদি সত্যে পরিণত হয় তাহলে কেমন লাগবে?
আমি কি তা সহ্য করতে পারব?
img20171125_125224
এ জন্য রাগের মাথায়ও কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করা যাবে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে শুধু মায়েদেরই নয়, আমাদের সবারই উচিত নিজের, নিজের সন্তান ও সম্পদের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করা থেকে সংযত হওয়া। রাগের সময় সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেওয়া।
img20171126_225441
আর মেয়েদের সবিশেষভাবে বলতে চাই, মা, আপনি অনেক ধৈর্য ধরেছেন, অনেক কষ্ট করেছেন, আরেকটু সবর করুন। রাগের মাথায় সন্তানকে অভিশাপ দেয়া থেকে সংযত থাকুন। আল্লাহ আপনার সহায় হোন। আমীন।

#সংগৃহীত

 

কেন বাচ্চারা শিক্ষকদের ভালবাসে?-আফরোজা হাসান

ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে
images(37)
শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা।
ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে।
img20171125_125115
শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।
img20171125_124745
একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে।
img20171125_124845
বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না। বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো?
img20171125_125224
প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।
img20171125_125323
যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম।
প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে।
img20171125_124715
এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।
img20171125_124910
এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা।
img20171125_125000
টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।
এই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।