All posts by Oporajita

 

গরমে শিশুর যত্ন

ফাতেমা শাহরিন


বৈশাখ নিয়ে আসে ঝড়, রোদ, গরম, এবং ধূলার আয়োজন। তীব্র গরমে অতিষ্ট থাকে শিশুসহ সবাই। কখনোও কখনোও হালকা বৃষ্টি নামে। তবে অধিকাংশ সময় দেখা যায় কোন বাতাসের নাম গন্ধও নেই। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় পরিবারের ছোট্ট সোনা মনি শিশুরা। শিশুদের ঠাণ্ডা লেগে যায় গরমের ঘামে। শরীরে অনেক সময় র্যা শ বের হয়, ঘামাচি হয়। এই গরমে সব শিশুদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য:

পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা
অতিরিক্ত ধূলার ঝড় আর গরমে শিশুরা অতিষ্ট থাকে এ সময় শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করানো দরকার। ফলে সোনামণিদের হঠাৎ ঠান্ডা লাগবে না।

পাউডার ব্যবহার
গোসলের পর শিশুর শরীর ভালো করে মুছে পাউডার দিন। এতে করে শিশু ঘামাচির উপদ্রব থেকে মুক্তি পাবে। খেয়াল রাখতে হবে পাউডার বাংলাদেশি আবহাওয়া সাথে এবং শিশুর ত্বকের সাথে খাপ খায়।

খাবার নির্বাচন
গরমে আপনার শিশুর খাবার নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। শিশুকে পুষ্টিকর এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার দিতে হবে। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে এই গরমে শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলের জুস খাওয়ান।

স্যালাইন রাখুন
দুঃসহ গরমে শিশুর দুর্বলতা কাটাতে মাঝে মাঝে খাওয়ার স্যালাইন খেতে দিন।

পোশাক নির্বাচন
সুঁতি পাতলা কাপড়ের নরম পোশাক পরিধান করতে দিন। যাতে করে গরমের আদ্রতা থেকে অনেকটা উপশম হয়।

ধূলাবালি থেকে সাবধান
বাইরের গরমে শিশুকে যতোটা সম্ভব কম বের করুন। আপনার শিশুকে যতটা সম্ভব ধূলাবালি থেকে দূরে রাখুন।

ঘামে যত্ন
আপনার শিশু ঘেমে গেলে তার ঘাম মুছে দিতে হবে। শরীরে ঘাম শুকিয়ে গেলে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হতে পারে। অনেক সময় এই জ্বর অল্পদিনে এমনিতেই সেরে যায় কিন্তু বেশি দিন গড়ালে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিন। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

বিষয়: শিশুর যত্ন।

 

ইলিশের মজাদার দুটি রেসিপি

ভাপানো ইলিশ

নববর্ষ চলে গেলেও ইলিশ এখন রয়েছে আমাদের মাঝে। ইলিশের নামটা শুনলেই যেন জিভে জল আসে। আজ সুস্বাদু ‘ভাপানো ইলিশ’ রেসিপিটা আসুন দেখি। রেসিপিটা-

উপকরণ
১.ইলিশ মাছ আস্ত বা ৮ টুকরা করা। ২.ফেটানো টক দই ১ কাপ।
৩.পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ।
৪.লবণ স্বাদ মতো।
৫.হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ।
৬.সরিষা (হলুদ ও লাল) বাটা আধা কাপ ( দুটি কাঁচামরিচ মিশিয়ে বেটে নিন)। ৭.কাঁচামরিচ ৫টি।
৮.সরিষা ও সয়াবিন তেল ১/৪ কাপ করে।
৯.পোস্তদানা ১ টেবিল-চামচ।

পদ্ধতি

মাছ ধুয়ে নিন। পছন্দ মতো ওভেন প্রুফ পাত্র নিন। তারপর মাছের টুকরো বা আস্ত তেল ব্রাশ করে বিছিয়ে দিন।
এরপরর টক দই, বেরেস্তা, কাঁচামরিচ, পোস্তদানা ব্লেন্ড করে এর সঙ্গে তেল, সরিষা-বাটা, হলুদ-গুঁড়া, লবণ ও ১ কাপ পানি মিশিয়ে মাছের উপর ঢেলে দিন (মাছ যেহেতু উল্টানো যাবে না তাই সাবধানে দিবেন)।

মসলা মাছে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে খেয়াল করে। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ২০ মিনিট তাপমাত্রায় রান্না করুন। ২০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে আরও ২০ মিনিট রান্না করুন। মোট ৪০মিনিট মত সময় লাগতে পারে।

পরিবেশন, সুন্দর ডিসে ভাপানো ইলিশ পরিবেশন করুন।

ইলিশ পোলাও

আজকের আয়োজন যেহেতু জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে সুতরাং এবার রেসিপিতে রয়েছে ‘ইলিশ পোলাও’।

উপকরণ
১.পোলাও এর চাল ৫০০ গ্রাম,
২.ইলিশ মাছ ৬ টুকরো,
আদা বাটা ১ চা চামচ,
৩.রসুন বাটা ১/২ চা চামচ,
৪.টকদই ১ কাপ,
৫.লবণ স্বাদমত,
৬.দারচিনি ২ টুকরা, এলাচ ৪টি, পেঁয়াজ বাটা ৩/৪ কাপ,
৭.পেঁয়াজ স্লাইস আধা কাপ, পানি ৪ কাপ, কাঁচামরিচ আন্দাজ মত, চিনি ১ চা চামচ, তেল আধা কাপ।

পদ্ধতি

বড় ইলিশ মাছের আঁশ ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন। মাছ টুকরো করে নেই। টুকরোগুলোতে আদা, রসুন, লবণ ও দই মেখে ১৫ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন। পাত্রে তেল গরম করে দারচিনি, এলাচ দিয়ে নেড়ে বাটা পেঁয়াজ দিয়ে মসলা কষান। মসলা ভালো করে কষানো হলে মাছ দিয়ে কম আঁচে ২০ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। মাঝে চিনি ও ৪টি কাঁচামরিচ দিয়ে একবার মাছ উল্টে দিন। পানি শুকিয়ে তেল ওপর উঠলে নামিয়ে নিন। মাছ মশলা থেকে তুলে নিন। পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে বেরেস্তা করে নিন। বেরেস্তা তুলে নিয়ে চাল দিয়ে নাড়ুন। মাছের মশলা দিয়ে চাল ভেজে পানি ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে ঢাকুন। পানি শুকিয়ে এলে মৃদু আঁচে ১৫ মিনিট রাখুন। চুলা থেকে নামান। একটি বড় পাত্রে পোলাও এর ওপর মাছ বিছিয়ে বাকি পোলাও দিয়ে মাছ ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন।

পরিবেশন, ইলিশ পোলাও নিয়ে পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

‘স্কুল অফ হিউমিনিটির’ পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

অপরাজিতা ডেক্স


গত শনিবার, পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা প্রথম মাস বৈশাখ- ১) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা ১৪২৫ বাংলা নববর্ষ। বাংলাদেশীদের জন্য এক অমলিন আনন্দের একটি দিন।

এই উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ সারাদেশ নানান আয়োজনে ব্যস্ত ছিল। পহেলা বৈশাখকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এ উপলক্ষ্যে কিছু সাহসী, প্রাণবন্ত শিক্ষার্থীর দল, ভিন্ন এক আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। এ সময় তারা অনেকগুলো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ভিন্নধর্মী আয়োজনের পদক্ষেপ নেন।

সেই আয়োজনে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশুদের গান, নাচ এবং কবিতা আবৃতি পুরো পরিবেশটিকে সুন্দর, মনোরম এবং প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। পরবর্তীতে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশুদের সাথে সকলের খাবার খাওয়ানো একটি আয়োজনও ছিল। শিশুদেরকে আনন্দ দিতে তাদের সাথে সেলফি তোলেন অনেক শিক্ষার্থীবৃন্দ।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা এই আয়োজনে অনেক মজা করেন এবং দিনটি তাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে তারা জানায়।

এ অনুষ্ঠানে স্কুল অফ হিউম্যানিটির সদস্যরা শিশুদেরকে বিভিন্ন সচেতনমুলক উপদেশ দেন। এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত এবং সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের মধ্যে একটি ‘সচেতনমুলক’, সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছিল বলে, উপস্থিত সকলেই তা মনে করেন। এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সকল শিক্ষার্থী সমাজে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে বলেই ,সকল সদস্য শিক্ষার্থীবৃন্দের বিশ্বাস।

সকল প্রকার উৎসব উপভোগ করার অধিকার রয়েছে সকলের।

সুতরাং এই অনুষ্ঠানগুলো কখনো কখনো সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে করতে হয় তাদের।সুতরাং সহৃদয়বান ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন বলে স্কুল অফ হিউমিনিটির সদস্যরা আশা করেন।পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে উপস্থিত ছিলেন, স্কুল অফ হিউমিনিটির অধিকাংশ সদস্যবৃন্দ।

অপরাজিতার পক্ষ থেকে স্কুল অফ হিউমিনিটির সকল সদস্যবৃন্দ এবং সকল অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশুদের নববর্ষের শুভেচ্ছা ‘শুভ নববর্ষ ১৪২৫’।

 

‘বাংলা নববর্ষ পালনের’ পরবর্তী ভাবনা


কানিজ ফাতিমা


নববর্ষ নিয়ে স্ট্যাটাস গুলো পড়ছিলাম – আবার একই চিত্র। Extremism, একপক্ষ “হারাম ” হারাম ” বলছে আর আরেক পক্ষ “ফরজ ” “ফরজ” (এটা ছাড়া বাঙ্গালীয়ানা হতেই পারেনা) বলছে। ব্রিটিশদের সেই বিভক্তি নীতির কতটা শিকার একটা জাতি হতে পারে তা প্রতিটা ঘটনা এমনকি উৎসব আয়োজনেও আমরা দেখিয়ে দেই। কোনো কিছুই আমাদের একত্র করেনা, সব কিছুতেই আমরা বিভক্ত হই।

আচ্ছা নববর্ষ একটা বর্ষবরণ – এটা হারাম কিভাবে হয় ? কোন কিয়াসের ভিত্তিতে? বলবেন যেভাবে উদযাপন করা হচ্ছে তার ভিত্তিতে।

তাহলে প্রশ্ন দাড়ায় ঈদে যদি কেউ মদ খায় তবে কি ঈদ হারাম হয়ে যায়? বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি ইসলাম অসমর্থিত কিছু করা হয় তবে কি বিয়েটা হারাম হয়ে যায়? ইসলামে হারাম হালালের প্রধান মূলনীতি হলো যাকে হারাম করা হয়েছে তা ব্যতীত সব হালাল (হালাল হারামের বিধান, ইউসুফ আল কারজাভী)। এটা সুস্পষ্ট যে নববর্ষ উদযাপন ইসলামে হারাম নয়।

এবার চিন্তা করা যাক এটা উদযাপনের উপায় নিয়ে –

কেউ হালাল কাজ করে নববর্ষ উদযাপন করলে এটা হালাল আর কেউ হারাম কিছু করলে সেটা অন্যান্য দিনে যেমন হারাম এই দিনেও তেমনি হারাম।

নববর্ষ উদযাপনের নামে হারামটা হালাল হয়ে যাবে না। যেমন, ইসলামে অশালীনতা হারাম; কাজেই কেউ অশালীন ভাবে নববর্ষ উদযাপন করলে সেই অশালীনতাটা অবশ্যই হারাম। আবার শিরক করা কবীরা গুনাহ। কাজেই কেউ পেঁচাকে লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে কল্যাণের মাধ্যম মনে করলে – তা কবীরা গুনাহ। নববর্ষের বা সংস্কৃতির নামে তা হালাল হয়ে যাবে না।

“নববর্ষ উদযাপন হারাম” বা “নববর্ষ উদযাপনের জন্য সব হালাল”- এ দুটাই প্রান্তিকতা। কাজেই প্রান্তিকতা থেকে সরে আসুন।

এবার প্রশ্ন হলো কিভাবে উদযাপন করবেন ?

যারা ইসলামের অনুশাসন পালন করতে ভালবাসেন তাদের দায়িত্ব হলো শালীনতার ও ইসলামের আওতায় কিভাবে এটা করা যায় তার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করা। আমি আমাদের স্কুলে (কানাডিয়ান) বাচ্চদের জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে presentation করেছি , আমাদের নিজেদের কাপড় চোপড় নিয়ে, ভাত-ডাল দিয়ে। এমন হাজারো হালাল ও শিক্ষনীয় উপায়ে পালন করা যায় নববর্ষ।

১.মেকি মূর্তি নিয়ে যাত্রা হতে পারলে, বাংলাদেশী পিঠা পায়েশ নিয়ে মেলা হতে পারবে না কেন?
২.নানী-দাদীদের ঘোমটা পরা ছবির প্রদর্শনী হতে পারবে না কেন ?
৩.গরীব চাষীদের জীবনী নিয়ে শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী হতে পারবে না কেন ?
৪.রমজান মাসে গ্রামের সেই উৎসব মুখর চাঁদ দেখা , ইফতার , সর্গাই (সেহেরী) এগলোর প্রচার করা যাবে না কেন?
৫.ভাটিয়ালী গান, আব্দুল আলীমের গান , পুথিপাঠ নিয়ে শালীন বটতলা করা যাবে না কেন ?

হারাম – হারাম করে দুরে ঠেললে এর সুযোগে যারা অন্য সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে তাদের রাস্তাই শুধু নির্বিঘ্ন করা হবে। টেলিভিশন হারাম বলে যেমন টেলিভিশন বন্ধ করা যায়নি, তেমনি নববর্ষ হারাম বলে এটাও বন্ধ করা যাবে না।

টেলিভিশনকে কিভাবে হালাল উপায়ে ব্যবহার করা যায় প্রথম থেকেই মুসলমানদের সেটা ভাবা উচিত ছিল। অনেক দেরীতে হলেও আমরা সেটা ভাবতে শিখেছি। আশা করি নববর্ষ নিয়েও আমরা সেই বিচক্ষনতার পরিচয় দেব ভবিষ্যতে। সবাইকে পুনরায় নববর্ষের শুভেচ্ছা।

 

আমার অনুধাবন

ডা. মারুফ রায়হান খান


কথাটা রূঢ় সত্যি। তোমার মেনে নিতে কষ্ট হবে। তবে যতো আগে তুমি বুঝবে এবং মেনে নিতে পারবে ততোই তোমার জন্যে ভালো। দেখো, তুমি যে নেইম-ফেইমের জন্যে ছুটছো, খ্যাতির মোহে কখনও নিজের ব্যক্তিত্ব কখনও সততার সাথে আপোষ করছো সেটা ঠিক কাজ না। কোনো মানুষ অপরিহার্য না।

এই যে আজ তোমাকে ছাড়া যেন কিছুই চলছে না, সব জায়গায় তোমাকে খোঁজাখুঁজি, তোমার স্তুতি করার লোকের অভাব নেই–সেই তারা কিন্তু তোমার প্রস্থানে তোমাকে আর মনেও করবে না। সর্বোচ্চ দুএকবার আফসোস করতে পারে কিন্তু তাদের কাজ কিন্তু চলেই যাবে। তোমার যদি কিছু অবদান থেকেও থাকে সময় নামক নিষ্ঠুর পাহাড়ের নিচে কিন্তু চাপা পড়ে যাবে।

তোমার মতো প্রতিভাধর কিংবা পরিশ্রমী কিংবা ডেডিকেটেড লোকের কিন্তু অভাব নেই পৃথিবীতে। তোমার সাম্রাজ্য ভেঙে পড়া কেবল সময়ের ব্যাপার। প্রকৃতি তো শূন্যস্থান পছন্দ করে না। আমার পরামর্শ হলো তুমি খ্যাতির পেছনে ছুটো না অযথা, তুমি নাম-ডাক পেতে হন্যে হয়ো না, তুমি তোমার প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ো না তো, সবাই তোমাকে সম্মান করবে সমীহ করবে এমন ভাবনাটা সুস্থ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ না।

সেলেব্রিটিকে কি মানুষ আসলেই ভালোবাসে? বরঞ্চ তাদের প্রতি জেলাস হবার লোকের অভাব নেই, তাদের পতনে বিকটানন্দ পাবার জন্যে বহু লোক অপেক্ষায় থাকে। তুমি ভালোবাসা পেতে চাইলে সাধারণ কেউ একজন হও, মাটির মানুষ হও, নিরহঙ্কার হও, বোকা বোকা মানুষ হও। তোমার মনের মধ্যে যদি আমাকে দেখে দাঁড়ালো না কেন, আসন ছেড়ে দিলো না কেন, আগে সালাম দিলো না কেন জাতীয় ভাবনা থাকে তবে তুমি সংশোধিত হও। তোমার মাঝে অহঙ্কার আছে, নিজেকে বড় ভাবার প্রবণতা আছে।

হুমায়ূন আহমেদকে ছাড়াও কী অবলীলায় বইমেলা হচ্ছে, এম আর খান স্যারকে ছাড়াও কী অনায়াসে শিশু-চিকিৎসা চলছে…এক এক করে সব বিখ্যাত ও জনপ্রিয় মানুষের কথা চিন্তা করে দেখো…পৃথিবী আপন গতিতে চলছে, কেউ কারও জন্যে থেমে নেই…তাদের তুলনায় তুমি আর কী?

বিষয়: মনের জানালা

 

আত্মোপলব্ধিঃ ‘প্রসঙ্গ পহেলা বৈশাখ’

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ


বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের অনেক আলেমদের মধ্যে বোধদয় হয়েছে যে পহেলা বৈশাখের নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীর স্পষ্ট সাংঘর্ষিক, যা ইসলামে কোনভাবে অনুমোদিত নয়।

ক. মঙ্গল শোভাযাত্রা
খ. রমনা বটমূলে বৈশাখীবরণ যেখানে সূর্য ওঠার জন্য অপেক্ষা করা হয়
গ. শরীরে উল্কি আঁকা
ঘ. অবাধ মেলামেশা করা
ঙ. লাল-সাদা পোষাক পরিধান
চ. অতিরিক্ত মাত্রায় অপচয়
ছ. গরীবের সাথে উপহাস করা।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর ইসলামের ব্যাখ্যা সামাজিক মাধ্যমে আমরা জেনে গেছি। আজকের আলোচনার বিষয় সেটা নয় বরং এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলেমদের ভূমিকা নিয়ে।

আলেম সমাজের অবস্থা হল চোর-মালিকের গল্পের মত। মালিক ভাবে দেখি চোর-বেটা কী করে, ভাবতে ভাবতে চোর সব নিয়ে যায়। তেমনি আলেমরা যখন চৈতন্য ফিরে পান, তখন সব হালাল হয়ে যায়। নিজেদের সমগোত্রীয়দেরকে কাফের, ইহুদীদের দালাল, ফাসেক ইত্যাদি ফতোয়া নিয়ে ব্যস্ত। একজন আর একজনের চোর, মূর্খ, গোবর-গণেশ, ইসলামের দুশমন ইত্যাদি অবিধায় উপস্থাপন করতে থাকে। এর মাঝে যে নিজেদের প্রকৃত শত্রুরা ধাঁই ধাঁই করে নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে যায়, সেই হুঁশ নেই।

ভারতীয় উপমহাদেশ যেমন বীর পুরুষদের জন্মস্থল তেমনি গাদ্দারও কম জন্ম দেয়নি এই ভূমি।

আবুল ফজলের মত দরবারী চাটুকার আলেম যেমন ছিল এ মাটিতে, তেমনি মুজাদ্দিদে আলফেসানীর মত ক্ষণজন্মা পুরুষও এই মাটি জন্ম দিয়েছে। রাজন্যবর্গের অনুকম্পা লাভের জন্য পদলেহী আলেম যেমন ছিল ভরি ভরি, আবার রাজন্যবর্গের রক্ত-চক্ষু উপেক্ষা করে জেলের জিনজিরও স্বহাস্য বদনে অনেকে গলায় পরে নিয়েছেন, কিন্তু ইসলামের কোন বিষয়ে আপোষ করেননি।

এ উপমহাদেশের আলেমরা ফতোয়াবাজীতে যথেষ্ট এগিয়ে আছেন। মুখে আসলে যেমন যে কাউকে কাফের বলতে কার্পণ্য করেননা আবার হালুয়া-রুটি পাওয়ার জন্য শাসকের শরীয়া পরিপন্থী কাজকে জায়েজ করতে বিন্দুমাত্র সময়ও নেন না।

আচ্ছা, সমাজে প্রচলিত একটা বিষয়কে আপনি হারাম ঘোষণা করলেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু সেই হারামে নিবিষ্ট মানুষকে হারাম থেকে ফিরিয়ে আনার আপনার বিকল্প কোন প্রচেষ্টা আছে কী?

মানুষের মুখ থেকে খাবার কেড়ে নিবেন ভাল কথা, কিন্তু তার বিকল্প তাকে কিছু না দিলে তো সে আপনার ইহকালীন জীবন সাঙ্গ করে দিবে। সে ভাবনা কি আছে আপনাদের? আপনি লাই দিয়ে তাকে যে নিয়ন্ত্রণহীন করেছেন সে উপলব্ধি কি আপনার হয়? সাগরের পানি অনেক গড়িয়ে গেছে। অনেক কিছু আপনাদের নিয়ন্ত্রণে আর নেই।

আলেম তথা সমাজসংস্কারকদের হতে হবে প্রবাহমান নদীর মত যেখানে যেকোন অপবিত্র ও দুর্গন্ধযুক্ত কিছু পড়লে ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করে দিবে। বেলায় বেলায় দিন গড়িয়েছে অনেক। আর নয় ভেদাভেদ, অযাচিত ফতোয়াবাজী।

আসুন নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান ছোট-খাট ভুল-ত্রুটি বিনাশ করে অস্তিত্বের স্বার্থে ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচার করি।

নিজেদের হারানো শিরদাঁড়া আবার খাড়া করে দাঁড়াই। শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ ভুলে দরদী মন নিয়ে এগিয়ে আসি সবাই।

যেকোন বিষয়কে শুধু হারাম ঘোষণা করে খতম নয় বরং বৃহৎ জনগোষ্টীকে সঠিক পথে আনার জন্য বিকল্প চিন্তা করি।

একসময় বাঙালী যে সংস্কৃতিকে ইসলাম বিরোধী বলে দুরে ঠেলে দিয়েছিলেন সেটাকে কিভাবে ইসলামীকরণ করা যায় সেই চিন্তা করি। কিভাবে দলাদলি ভুলে একই সাথে কাজ করা যায়, সেই পথ খুঁজি।

আরো দেরি করেছেন তো ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। কি, আপনারা প্রস্তুত তো?

 

মাতৃকথন-৬

ফারিনা মাহমুদ


ঘুম স্বল্পতা :
সদ্যজাত বাচ্চার পিছনে দিন রাত এক হয়ে যায়। বাচ্চা খাওয়ানো, ঘুম পড়ানো, কাঁথা পাল্টানো, কান্না সামলানো এই লুপের মধ্যে পড়ে যায় মা। আমি নিজেই মাথায় চিরুনি দিয়েছিলাম ১৯ দিন পরে, এমনও দিন গেছে যখন ২৪ ঘন্টায় একবার খাবার সময় পেয়েছিলাম! ভোজবাজীর মতো পাল্টে যাওয়া এই নিদ্রাহীন কান্ত জীবন ভীষণ প্রভাব ফেলে বাবা মায়ের উপরে, প্রভাব ফেলে সম্পর্কের উপরেও। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে। বাবাদের জন্য অফিসে কাজে মন বসানো খুব কষ্টকর হয়ে যেতে পারে।

কি করবেন: ঘুমাবেন। সোজা হিসাব হচ্ছে যখনই একটু সুযোগ পাবেন, ঘুমিয়ে নেবেন। প্রথম ৬ সপ্তাহ বাচ্চার রুটিনের সাথে নিজে মানিয়ে নেয়া ছাড়া গতি নেই। বাচ্চা ঘুমালে এই করবো সেই করবো না করে নিজেও শুয়ে পড়বেন। হালকা তন্দ্রা বা বিশ্রামও আপনাকে অনেক ঝরঝরে করে তুলতে পারে। ২৪ ঘন্টায় কয়েকটা ছোট ন্যাপ নিলেও দেখবেন বাকি সময়টা অনেক ভালো কাটবে।

ক্ল্যাশিং প্যারেন্টিং স্টাইল:
ওই যে শুরুতে বললাম,বাবার বাড়ি থেকে বলেছে তেল ডলতে শ্বশুর বাড়ি বলছে না … এই ধরনের ক্ল্যাশ খুব কমন। এক একজনের বাচ্চা পালার তরিকা ও অভিজ্ঞতা এক এক রকম হয়। সবাই ভাবে সে ঠিক। এতে করে তৈরী হয় একটা সংঘাতময় অবস্থা। এর স্বীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা। যেন মা ছাড়া দুনিয়ার সবাই সব জানে!

কি করনীয়: নিজেকে জানতে হবে কি করবো, কেন করবো। কনফিডেন্স রাখতে হবে নিজের উপরে। মানুষের বাচ্চা কোনো নতুন মডেলের গাড়ি না যে ম্যানুয়াল সাথে নিয়ে পৃথিবীতে আসবে। তবে হ্যা, সব গাড়ির কমন মেকানিজম থাকে। সেইটা জেনে রাখলে অন্যের কথা খুব বেশি আমল দেয়ার প্রয়োজন নেই যদি না যুক্তি যুক্ত মনে হয়। সবকিছুতে উদ্বিগ্ন হবেন না। তবে উদ্বিগ্ন কখন হতে হয় সেই বেসিক পয়েন্ট গুলো জানতে হবে।

একান্ত সময় থেকে বঞ্চিত:
বাচ্চা হবার আগে প্রতি সপ্তাহে দুজনে রিক্সার হুড ফেলে ঘুরতে যেতেন? রাত জেগে মুভি দেখতেন? আড্ডা দিতেন বন্ধুদের সাথে? আর এখন? নিজেদের বসে দুটো কথা বলার সময়ও নেই! আর কি কোনদিন জীবন স্বাভাবিক হবে?

কি করনীয়: জীবন স্বাভাবিক হবে আবার, তবে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে দুজনকেই। বাচ্চার কাজগুলো দুজন মিলেই করুন। বাবা যখন বাচ্চার কাজ করতে চাচ্ছেন, মা তখন তাকে খবরদারি করা থেকে বিরত থাকুন, তাকে বুঝিয়ে দেখিয়ে দিন কি করলে ভালো হয়। তিনি একবারে না পারলেই গলা চড়াবেন না। আর একেবারে আপনার মতো করেই তাকে পারতে হবে এমন কথা নেই। একটু উনিশ বিশ হলে দুনিয়া উল্টে যায় না। ধৈর্য রাখুন, বাচ্চাকে একটা রুটিনে আনতে পারলে সব ই সম্ভব হবে। নিজেরা নিজেদের জন্য সময় বের করুন। সমঝোতা শক্ত করুন। একে অপরের পাশে থাকুন। একটু একটু করে প্রিয় জিনিসগুলো ফিরিয়ে আনুন।

এই চাল্যেঞ্জ গুলো প্রথম ৬ সপ্তাহ যদি ভালো মতো হ্যান্ডেল করতে পারেন, বিশ্বাস রাখেন,৬ সপ্তাহের পর থেকে পরিস্থিতি অনেক অনেক ভালো হবে!
ফিরে আসবো পরের পর্বে, নবজাতকের যত্ন নিয়ে!

চলবে..

পর্ব ৫

 

বর্ষবরণ ও প্রাসঙ্গিক কথা

মাহফুজুর রহমান আখন্দ


বর্ষবরণ নিয়ে মিডিয়াতে ঝড় চলছে। ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। কেউ এটাকে বাঙালীয়ানার অপরিহার্য অংশ ধরে নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। যেভাবেই হোক পান্তা-ইলিশে শেকড় রক্ষা করতেই হবে। অন্যদিকে কেউ কেউ এটাকে হারাম ঘোষণা দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগদানকারী সবাইকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাই বিষয়টির ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার বৈকি। বাংলা বর্ষ কবে থেকে? মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বিশিষ্ট জোতির্বিজ্ঞানী ও ইতিহাসচিন্তক ফতেহ উল্লাহ সিরাজী ফসলি সাল হিসেবে বাংলা বছরের সূচনা করেন। শতাব্দ থেকে প্রচলিত মাসগুলো ধার নিয়ে হিজরি সালের সাথে মিল রেখে বছর গণণা শুরু করেন। তখন হিজরি সাল ছিল ৯৬৩। সে মতে যাত্রা শুরু হলেও সৌরমাসের চেয়ে চান্দ্র মাস ১১ দিন কম হওয়ায় বর্তমানে হিজরি সাল ১৪৪০ এবং বাংলা সাল ১৪২৫। যে বিষয়টি খেয়াল করার মতো—

১.বাংলা বছরের সূচনাকারী একজন মুসলিম শাসক। ২. সালের উদ্ভাবনকারী একজন মুসলিম বিজ্ঞানী।
৩. বাংলা সালের সূচনা বছর হিসেবে হিজরি সালকে গ্রহণ।
৪. বাংলা সালকে শুরু করা হয়েছে ফসলি সন হিসেবে মানবতার কল্যাণের জন্য।
৫. বাংলা সনের সর্বশেষ সংস্কার কমিটি করা হয় ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডমি কতৃক এবং সে কমিটির আহবায়ক ছিলেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সে কমিটির সুপারিশ মোতাবেক ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালিত হয়। তাহলে বর্ষবরণ উৎসবের শেকড় কোন বিশ্বাসের সাথে পোতা আছে?

এখন প্রশ্ন হলো— আমরা যারা বর্ষবরণের নাম পরিবর্তন করে মোঙ্গল শোভাযাত্রা করি সেখানে পেঁচাসহ নানা ধরনের মুখোশ কেন? এ কথা সবার জানা যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিষ্ণু দেবতার পত্নী হচ্ছে লক্ষ্মীদেবী। যার পাঁচ কন্যা; পদ্মা, পদ্মালয়া, ইন্দিরা, শোভা, কমলা। লক্ষ্মী দেবীর বাহন হলো পেচা। পেঁচা কেন বর্ষবরণে? সে কি বাংলায় কথা বলে? না পান্তা ইলিশ খায়? পেচার সাথে বাঙালীর কী সম্পর্ক? আসলে সুকৌশলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে শিরকের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে।

এছাড়াও বর্ষবরণের নামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা;.চন্দন টিপ এবং উল্কি আঁকাসহ নানাবিধ অনৈসলামিক কাজ যুক্ত করা হচ্ছে। পান্তা-ইলিশ খাওয়ার নামে গরিব জনগোষ্ঠীর সাথে উপহাস করা হয়। বাংলার কোন মানুষ অতীতে পান্তা-ভাতের সাথে ইলিশ খেয়েছে তার কোন নজীর নেই। এ বিষয়গুলোর মাধ্যমে মজার অনুষ্ঠানটি ভিন্নধারায় প্রবাহিত করতে একগ্রুপ মরিয়া হয়ে উঠেছে। একদিকে বিশ্বাসের সংরক্ষণের নামে বর্ষবরণকে হারাম বলা হচ্ছে, অন্যদিকে একশ্রেণি এটাকে শির্কবাদী অনুষ্ঠানে পরিণত করছে। আমরা দুপক্ষকেই সংযত হতে বলবো।

আসুন আরোপিত কোন ধর্মীয় বিষয় নয়; ইরানসহ পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো সংযত, শালীন এবং ঐতিহ্যের ধারায় জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে শির্কমুক্তভাবে বর্ষবরণ করি।

 

মনের মাঝে স্মৃতি প্রিয়জনের


আফরোজা হাসান


.

.

ছেলে স্কুলে আর ছেলের বাবা কাজে চলে যাবার পর দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার একান্ত বাস আমার। অবশ্য বই পড়ার তীব্র নেশা থাকার কারণে সময় কাটানো নিয়ে কখনোই তেমন সমস্যায় পরতে হয় না আমাকে। উল্টো বরং সময়কে ধরার জন্য ছুটতে হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে দু’একটা দিন এমন আসে যে বই পড়তে ইচ্ছে করে না। সংসারের কাজগুলো পড়ে আছে দেখেও হাত লাগানোর তাগিদা অনুভব করে না মন। বিছানার চাদরে সামান্য ভাঁজ দেখলে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলা এই আমিই, পুরো এলোমেলো বিছানার দেখেও নির্বিকার বসে থাকি। সময়টা তখন কেমন যেন থমকে দাঁড়ায়। ঘড়ির দিকে তাকালে মনেহয় সেই কখন দেখেছি দশটা বাজে, এতক্ষণে মাত্র দশ মিনিট পেরিয়েছে……? আমার জীবনে এমন যতগুলো দিন এসেছে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও এলোমেলো করে দিয়ে গিয়েছে আমার ছোট্ট ভুবনটাকে। খুব খেয়ালি আমাকে করে দিয়েছে ভীষণ রকম বেখেয়ালি। তাই হিসেব কষতে বসলাম কেন হয় এমন? কেন মন হঠাৎ শরতের আকাশ হয়ে যায়? এই মেঘ তো এই রোদ্দুর……? বাঁধ ভাঙ্গা জোছনা ভরা আকাশে কেন আঘাত হানে কালবৈশাখীর ঝড়……? মন বলল তোমার প্রিয়জনরা যে তোমার থেকে দূরে…..বহুদূরে……….

সবার জীবনেই প্রিয় মানুষেরা সবসময় আলাদা স্থান দখল করে থাকে। জীবনে চলার পথে আমরা যত এগোতে থাকি, বাড়তে থাকে প্রিয় মানুষদের সংখ্যা। মনের পাতায় ছাপ ফেলতে থাকে কারো কথা, কারো লেখা, কারো হাসি, কারো সঙ্গ……! ধীরে ধীরে আপন অস্তিত্বের সাথে একাকার হয়ে যেতে থাকে প্রিয় মানুষগুলো। সময়ের স্রোতে ভেসে কিছু প্রিয় মানুষ দূরে চলে যায়, মনে নোঙ্গর গাড়ে নতুন প্রিয়রা। তাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলে জীবনের পথ। কিন্তু যারা দূরে চলে যায় নানা কারণে তারা কি সত্যিই হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে…? আমার উপলব্ধি বলে নিষ্ঠুর নিয়তি মন থেকে কাউকেই একেবারে মুছে যেতে দেয় না। আর ভুলে যে যাবো তারও উপায় নেই, কারণ তারা যে আমাদের প্রিয়জন। প্রি-য়-জ-ন…..! চাইলেই কি তাদেরকে ভুলে যাওয়া যায়…..? লাইব্রেরীতে গেলে আব্বুর সাথে বইমেলাতে ঘুরে ঘুরে বই কেনার স্মৃতি মনেপরে, ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়ানোর সময় মনেপরে আম্মুর কথা, আইসক্রিম মনে করিয়ে দেয় ছোটভাইটার কথা, বেগুনী অর্কিডে বোনের মিষ্টি চেহারাটা দেখতে পাই, শিশুদেরকে যখন দেখি মনের পর্দায় ভেসে ওঠে খেলার সাথীরা। নানু-দাদু-মামা-খালামনি-চাচ্চু-ফুপ্পি…কত প্রিয়জনকে ঘিরে কত শত রঙ-বেরঙের স্মৃতি……

প্রিয়জনরা আনন্দের বারিধারা হয়ে যেমন ঝরে, প্রচণ্ড খরা হয়ে চৌচিরও করে দেয় মনের বনভূমিকে। কিন্তু কেন এমন হয়? কেন প্রিয়জনরা কষ্ট দেয়? যাদের কারণে সুখ-শান্তিকে উপলব্ধি করতে শেখে মন, তারাই আবার দুঃখ-ব্যথাকে বোঝানোর দায়িত্ব পালন করে পারদর্শিতার সাথে। তারপরও তারা যে কতোটা প্রিয় সেটা দূরে না এলে অনুভব করা যায় না সঠিকভাবে। কাছে থাকতে নির্বোধ মন মানতেই চায় না ভালোবাসা দেবার সাথে সাথে কষ্ট দেবার অধিকারও যে প্রিয়জনদের আছে। প্রিয়জনদের কারণেই যেহেতু আমাদের মনে সুখ-শান্তির অনুভূতি আসে, সেহেতু দুঃখ-বেদনা তো তারা দিতেই পারেন কারণে-অকারণে। কিন্তু আমাদের স্বার্থপর মন শুধু ভালোটাই পেতে চায় সবার কাছ থেকে। একবারও ভেবে দেখে না যে আমি কি সর্বক্ষেত্রে সবার সাথে ভালো? আমার দ্বারা কখনোই প্রিয়জনরা কষ্ট-ব্যথা পাননি বা পান না তা কি আমি জোরের সাথে বলতে পারবো………?

মতের অমিল, ঝগড়া-বিবাদ, কথা কাটাকাটি সন্তর্পনে প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে দিতে থাকে। ঘুণপোকার মতো ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে থাকে ভালোবাসার বন্ধনের খুঁটিকে। আর এই ক্ষয় হতে থাকা খুঁটির উপর ভরসা করেই চলতে থাকে জীবনের পথচলা। অথচ মন একবার যাদেরকে আপন করে নেয় তাদেরকে কখনোই ভুলে থাকা যায় না। ভুলে থাকতে চাইলেও সম্ভব হয় না। তবে জীবনের প্রয়োজনে কখনো কখনো ভুলে থাকতে হয়। স্মৃতিরা ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দিয়ে মাঝে মাঝে মনকে ঘিরে ফেললেও, বেশির ভাগ সময়ই আমরা স্মৃতিদের এড়িয়ে চলা রপ্ত করে ফেলি। কারণ স্মৃতির ভাণ্ডারে অসংখ্য মণি-মুক্তা-জহরতের সাথে ধারালো-সূচালো কাঁচের টুকরোও যে আছে। যার সামান্য আঘাত মনকে করে ক্ষত-বিক্ষত…রক্তাক্ত…! আর কেই বা চায় হৃদয় চিড়ে বেদনা কুড়াতে…? তারচেয়ে দূরে সরে থাকা কিংবা ভুলে থাকাটাই উত্তম মনেহয়। কি জানি এটাই হয়তো জীবনের নিয়ম………..।

আমরা সবাই সবসময় আলোকোজ্বল এক জীবন পেতে চাই। কিন্তু এমন জীবন গড়ে তুলতে সম্পর্কের মাঝে প্রয়োজন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ। কিন্তু সুখের মাঝে যেমন অসুখ থাকে, তেমন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ থাকার পরও সম্পর্কের মাঝে ঘটে ছন্দপতন। এই ছন্দপতনের দ্বন্দ্বে পড়ে যাতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে না যাই। প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের আচরণ যেন অসাবধানী হয়ে না যায়। একে-অন্যেকে যাতে দোষারোপ না করি, ঝাঁপিয়ে যেন না পড়ি কারো উপর জিভের তরবারি নিয়ে। ভুলে যাতে না যাই তারা যে আমাদের প্রি.য়…জন.ন…………।

বিষয়: মনের জানালা

 

জননী

সার্জিল খান


হাশরের ময়দান দেখতে কেমন? এটা কি হাশরের ময়দান? চারপাশটা এমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে কেন? কেমন যেন লালচে মাটির দেয়াল, মনে হচ্ছে যেন আগুনের ফুলকি। মাথার উপরে কালো অন্ধকার আকাশ। সেইসাথে বৃষ্টিও হচ্ছে। আশেপাশে অনেক মানুষ আছে মনে হচ্ছে কিন্তু কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। হাশরের ময়দানের সাথে পুল সিরাতের সম্পর্ক আছে। ঐ তো সুতার মতো কি যেন একটা। দূর থেকে কেউ পার হয়ে এদিকটায় আসছে। তারমানে কি শামিয়া পুল সিরাত পার হয়ে এসে পড়েছে কোনমতে, এটাই তাহলে হাশরের ময়দান? চারদিকে কেমন যেন ভয়ংকর অট্টহাসির শব্দ। কে হাসছে হাসিটা? সোহান না? সোহান এভাবে হাসবে কেন? এটাই কি সেই জায়গা, যেখানে বাবা তার সন্তানকে চিনবে না, মা তার সন্তানকে, সন্তান তার বাবা, মা, ভাই, বোন কাউকেই চিনবে না। সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তাহলে শামিয়া সোহানকে নিয়ে ভাবছে কেন? আরে ঐ তো একটা বাচ্চা, হামাগুড়ি দিয়ে কাছে এগিয়ে আসছে। যতই এগিয়ে আসছে ততই যেন মনে হচ্ছে বাচ্চাটা বড় হচ্ছে। এই বাচ্চাটার জন্যও তার মায়া হচ্ছে কেন? কে এই বাচ্চা? তাহলে কি এটা হাশরের ময়দান না? নাকি হাশরের ময়দান?

ঘুম ভেঙ্গে গেল। শামিয়া দপদপ করে ঘামছে। প্রেশার বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। সবুজ রঙয়ের ডিম লাইটের আলোয় চারপাশটা দেখে নিলো সে। সোহান এখনো ঘুমোচ্ছে। শামিয়াকেই উঠে পানি খেতে যেতে হবে। বিছানার পাশের টেবিলে পানি রাখা যায় না, ঘুমের ঘোরে হাত লেগে গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে যায়।

আলতো করে শামিয়া তার পেটে হাত রাখলো। নিদির এখন সাত মাস চলছে। আর অল্প কদিন। লোকে বলে দশমাস দশদিন নাকি বাচ্চাদের পেটে ধরতে হয়। বড় আপার তো নয়মাসের মাথাতেই হয়ে গেল। শামিয়ার কবে হবে কে জানে?

তেষ্টা খুব পেয়েছে। মনে হচ্ছে যেন পানি না খেতে পারলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে জ্ঞান হারাবে। বিছানা থেকে নামতে গিয়ে হঠাৎই চমকে উঠলো শামিয়া। শক্ত একটা হাত শামিয়ার বাম হাতটা চেপে ধরেছে। ওহ! সোহানেরই হাত। ও কি তাহলে ঘুমোয়নি?

-পানি খাবে?
-হু।
-দাঁড়াও এনে দিচ্ছি।
-না থাক, আমি আনতে পারব।
-যা বলছি তা করতে দাও। তুমি ফুল রেস্টে থাকো।

শামিয়া ডিম লাইটের আবছা আলোয় সোহানের মুখটা দেখে নিলো। কি মায়া মায়া ভাব। মনে হয় যেন ধরে গাল দুটো ছুয়ে দেই। মায়াকাড়া চেহারার লোকেদের দেখলে দ্বিধা কাজ করে। তাদের কথার বিপক্ষে কিছু বলার ক্ষমতা কেন যেন ভেতর থেকে আসে না। মনে হয় মানুষটা কি অভিমান করবে না রাগ করবে?

শামিয়া চুপ করে বিছানায় বসে আছে। সোহান পানি আনতে গেলো। অন্ধকারে লোকটা কি এই বাড়ির সবকিছু চিনে উঠতে পারবে? সোহান মাঝে মাঝে শ্বশুড় বাড়িতে আসে।

ঘন ঘন কোন বাড়িতে ঘুমের ঘোরে চলাফেরা করলে রুম, সুইচ বোর্ড, বাথরুম সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায় না। শামিয়ার ছোট ভাই সাইফ একবার ভুল করে গ্রামে মামা বাড়িতে বাথরুমের বদলে রান্নাঘরে টয়লেট সেরে ফেলেছিল। নানী সে কি রাগ?

-হ্যাহ, এত্তবড় বুইড়া ছ্যামড়া, এহনো ঘরে মুতে। ছ্যা ছ্যা ছ্যা! যেই পাতে খাইলি, সেই পাতেই হাগলি?
-বড়টা কোথায় করলাম, ছোটটাই তো করলাম, তাও তো ঘুমের ঘোরে।
-নিশা পানি ধরছস হারামজাদা? টাল হস ক্যা রে?

নানী কথা বলতেন সুর করে। শুনলেই কেমন যেন হাসি পেত শামিয়ার। নানীর ঘরে চার মেয়ে সাত ছেলে ছিল। প্রত্যেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু হায়, নানী কারোরই কিছু দেখে যেতে পারেননি। সেই আমলের লোকেরা একসাথে এত সন্তান নিতো কিভাবে শামিয়া ভাবে। নিদিকে পেটে ধরার পর থেকেই শামিয়ার যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে, সেই সময়ে নানী-দাদীরা কিভাবে এতজনকে বছরের পর বছর পেটে ধরে রাখার মানসিক শক্তি পেত আল্লাহ জানেন।

‘ধরো’ বলে সোহান গ্লাস এগিয়ে দেয়। শামিয়া বাধ্য মেয়ের মতো গ্লাস বাড়িয়ে পানি খেতে লাগলো। সোহান ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহা! কি দরকার ছিলো? শামিয়া ভাবে। সোহান সপ্তাহে একদিনই কেবল আসে। গত সপ্তাহে শামিয়া শ্বশুড় বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছে। বাড়ির প্রথম মেয়ের প্রথম সন্তান নাকি বাবার বাড়িতে থেকেই হওয়া নিয়ম। এসব অদ্ভুত নিয়ম কে বানায় কে জানে? তবে শামিয়ারও শ্বশুড় বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না। কিন্তু কি আর করা, মেয়েদের বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়িই তো আসল বাড়ি। গত শুক্রবার বাবার বাড়িতে আসার সময়েও শ্বাশুড়ী মা বলছিলেন,

-যাচ্ছো কেন? এখানে কি আদর যত্ন কম হচ্ছে?
-ছি! আম্মা কি বলেন? হিয়াও তো আসলো, ওরও তো বাচ্চা হবে। বাবার বাড়িতেই মেয়েদের প্রথম বাচ্চা হওয়ার নিয়ম কি না?

শ্বাশুড়ী মা আর কথা বলেননি। মুখ কালো হয়ে গিয়েছিলো। কোন এক অজানা কারণে তার শ্বাশুড়ী মা তাকে সহ্য করতে পারে না। না সোহান, শামিয়া প্রেম করে বিয়ে করেছিলো, না শামিয়া তার সঙ্গে বেয়াদবি করে। কেন এই অপছন্দ শামিয়া জানে না।

শামিয়ার মনে হয় এসব কথা সারাদিনই সে সোহানের সাথে বলে। ইচ্ছা করে সারারাত জেগে কথা বলতে। কিন্তু কেন যেন সোহানের সামনে গেলেই শামিয়া চুপসে যায়। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। তাদের সন্তান এখন তার পেটে, এতবছর সংসার করলো, তারপরেও শামিয়ার তাকে দেখলে কেন যেন সব কথা হারিয়ে যায়।

কেন এমন হয়? প্রচণ্ড ভালোবাসার মাঝে কি কোন দুর্বলতা আছে? যা মানুষকে বোবা করে দেয়?

গল্পঃ জননী
গ্রন্থঃ পাণ্ডুলিপি
প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০১৬
প্রকাশনীঃ বর্ষাদুপুর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২
গল্প সংখ্যাঃ ২৫
লেখকের পরিচয়:লেখক/প্রকাশক/সম্পাদক/সংগঠক।

 

নারীদের উপর নারী নেত্রীর হামলা

নারী সংবাদ


কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মারধর ও এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অ‌ভি‌যোগ উঠে‌ছে কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান ইশার বিরু‌দ্ধে। এ ঘটনার পরপরই ‌গোটা ক্যাম্পাস উত্তেজনা ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে। মঙ্গলবার দিবাগত রা‌তে ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের (ঢা‌বি) ক‌বি সু‌ফিয়া কামাল হ‌লে এ ঘটনা ঘ‌টে।

আহত মোর‌শেদা আক্তার ‌বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের উ‌দ্ভিদ‌ বিজ্ঞান বিভা‌গের ৪র্থ ব‌র্ষের শিক্ষার্থী। এ সময় আরো পাঁচ শিক্ষার্থী‌কে মারধর করা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে হল সূ‌ত্রে জানা যায়। মারধ‌রের শিকার হওয়া অন্য ছাত্রীরা হ‌লেন ইসলা‌মিক স্টা‌ডিজ বিভা‌গের শার‌মিন সুলতানা তমা, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভা‌গের আ‌ফিফা আক্তার রিভু, ভূতত্ত্ব বিভাগের ঋতু ও স্বর্ণা।

হ‌লের আবা‌সিক ছাত্রীরা জানান, সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা মোরশেদার পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন। তাকে জরুরি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া ছাত্রীদের পাঠানো ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, হলের সিঁড়ি ও রুমের মেঝেতে রক্তের ফোঁটা জমে আছে।

এ ঘটনায় হলের ছাত্রীরা ক্ষিপ্ত হলে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর রুমের দরজা বন্ধ করে আটক থাকলে তাকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার সময় হলের আবাসিক শিক্ষক উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও প‌রি‌স্থি‌তি ক্রমেই অস্বাভা‌বিক অবস্থা ধারণ ক‌রে।

এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোল‌নকারীদের ওপর ছাত্রলীগ নেত্রীদের হামলা খবর ছ‌ড়িয়ে পড়‌লে বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের বি‌ভিন্ন হ‌লের শিক্ষার্থীরাও বি‌ক্ষোভে ফে‌টে প‌ড়ে। প‌রে তারা হল নেতা‌দের প্রতি‌রোধ উপেক্ষা ক‌রে সু‌ফিয়া কামাল হ‌লের সাম‌নে এসে জ‌ড়ো হয়। এ সময় তারা ছাত্রলীগ নেত্রী ইশার কর্মকাণ্ড‌কে ক্রি‌মিনাল অ্যাক্ট আখ্যা দি‌য়ে তা‌কে বিশ্ববিদ্যালয়ে থে‌কে ব‌হিষ্কা‌র এবং ভুক্ত‌ভোগী ছাত্রীর রগকাটার অপরা‌ধে তার শা‌স্তি নি‌শ্চি‌তের দা‌বি জানান।

এরই প্রে‌ক্ষাপটে ইশাকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ বহিষ্কার থে‌কে ব‌হিষ্কান করা হয়।
ইশা‌কে ব‌হিষ্কা‌রের বিষ‌য়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর তার সাথে যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরে ছাত্রলীগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
সুত্র: নয়াদিগন্ত, ছবি:ফেসবুুক

 

মাতৃকথন ‘৫’


ফারিনা মাহমুদ


নিছক নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে লেখা শুরু করেছিলাম মাতৃকথন। খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ধীরে ধীরে বেশ অনেকেই আমাকে ইনবক্সে কমেন্টে প্রশ্ন করা শুরু করেছেন বাচ্চার ব্যাপারে। তাঁরা সবাই জানেন আমি ডাক্তার নই, শিশু বিশেষজ্ঞও নই।

তাহলে আমার কাছে কেন? আমার মনে হয়েছে আমার কথাগুলো হয়ত খুব সাধারণ, আটপৌরে বলেই অনেকের সাথে মিলে গেছে। কাছের মানুষ ভেবেই তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, চাইছেন। এ এক পরম পাওয়া আমার জন্য। শুরু থেকে ব্যাপারগুলো এলোমেলো ছিলো। এখন ভাবছি একটু গুছিয়ে শুরু করবো। যদি একজনেরও একটু উপকার হয়, আমি ধন্য।

###পৃথিবী বদলে গেছে যা দেখি নতুন লাগে!

দীর্ঘ অপেক্ষার পর কোলে যখন শিশুটা আসে,সে একা আসে না। নতুন মা বাবার জন্য নিয়ে আসে একরাশ আনন্দের বিপরীতে কিছু দুশ্চিন্তা, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন, নির্ঘুম রাত আর কি করবো কি করবো না এই দ্বিধার দোলাচল। এই নতুন পরিস্থিতিতে কিভাবে খাপ খাওয়াবেন বাবা মা? কিভাবে কি করবেন দিশা পাওয়ার আগেই আরো কিছু সমস্যা হাজির হয়।

মা আর বোনেরা এই করতে বলছেন তো শ্বাশুড়ি ননদ ঠোঁট উল্টে বললেন – যত্ত সব ঢং! এইভাবে বাচ্চা পালে নাকি? স্বামী বেচারা অটো হয়ে যান দু পক্ষের কথা শুনতে শুনতে। ফলাফল – সম্পর্কের অবনতি, রাগারাগি ঝগড়াঝাটি!
ব্যাপারগুলো কেন ঘটে?

ঘটে মূলত আমাদের অজ্ঞতা ও মানসিক প্রস্তুতির অভাবে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাবা মায়েরা নতুন বাচ্চা এবং প্রসূতি মায়ের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানেন না। ভাবেন নানী দাদী তো আছেই! কিন্তু মনে রাখতে হবে, দিন শেষে বাচ্চাটা যেহেতু আমার, তাই আমারই দায়িত্ব বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া। আমার মতে বাচ্চার জিনিসপত্র, নাম আর ঘর সাজানো নিয়ে মাথা ঘামানোর পাশাপাশি কিছু দরকারী বিষয় জেনে নেয়া জরুরি। এতে করে সন্তান জন্ম পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করা সহজ হয়।

১) মায়ের পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন :
প্রসব পরবর্তী ম্যাসিভ হরমোনাল চেঞ্জের কারণে নিজের ইমোশনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

প্রচন্ড রাগ, জিদ, অকারণে কান্না এই ধরনের কিছু অদ্ভূত উপসর্গ দেখা দেয়। মা নিজেও মোটামুটি তব্দা খেয়ে যায় তার নিজের আচরণে। অসম্ভব অসহায় লাগে নিজেকে। মনে হয় কেউ আমাকে বুঝতে পারছে না।

অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে, একটা সমময় নিজেকে খুব উপেক্ষিত আর বঞ্চিত মনে হয়। মনে হয় সবাই শুধু বাচ্চা বাচ্চা করে যাচ্ছে কেন, আমি কি একটা মানুষ, না মানুষের ছায়া! বিশেষত গর্ভাবস্থায় সবার আদর যত্ন পেয়ে এসে এই নতুন পরিস্থিতিতে হঠাৎ খুব খটকা লাগে! ক্লান্ত, অবসন্ন আপনার মাথায় আবার সারাক্ষণ সেই বাচ্চাকে নিয়েই টেনশন, বাচ্চাটাকে কারো হাতে দিয়ে শান্তি পাওয়া যায় না। মনে হয় চারপাশের সবাই ভুল, আমি ই শুধু ঠিক।

কি করবেন : এই করনীয় এর তালিকাটা মূলত অন্যদের জন্য,

আরো আলাদা করে বললে বাবা দের জন্য।

সাপোর্টিং পার্সন হিসাবে তাদেরকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হবে এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে, এইটা স্বীকার করে নিয়েই বলছি, আপনাদের দায়িত্ব মা কে সময় দেয়া।

কাজ ভাগ করে নিয়ে বিশ্রামে সহায়তা করা ।

তাকে আঘাত করে বা দোষ দিয়ে কথা না বলা এবং কেউ যাতে বলতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া ।

তার রাগ জিদ ধরে আপনিও তার সাথে বাক বিতন্ডায় জড়াবেন না যেনো । তর্ক বাড়ছে বুঝলে ব্রেক নিন ।

কিছুক্ষণ বাইরে থেকে হেঁটে ফিরে আসুন । তাকেও কুল ডাউন টাইম দিন, নিজেও নিন । অবস্থা বেশি খারাপ হলে অবশ্যই চিকিত্সা সেবা নেবেন ।

তবে অবশ্যই আত্মীয়ও স্বজন, শ্বশুর বাড়ি বাপের বাড়ি এক করে বিচার সালিশ বসিয়ে আরো বড় বিপদ ডাকবেন না।

চলবে….

পর্ব-৪

পর্ব-৩

পর্ব-২

পর্ব-১

 

সেলফ হিপনোটিজম


নিভৃত স্বপ্নচারিণী


মুখ আর মুখোশের যে পার্থক্যের কথাটা বলা হয় সেটা মূলত বলা হয় অন্যদের সাথে আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু মুখ ও মুখোশের এই যে আবডাল এটা কিন্তু ব্যক্তির নিজের সাথেও বিদ্যমান থাকে অনেক ক্ষেত্রেই। যেমন নিজের কোন দোষ কিংবা বদভ্যাস জানা থাকার পরেও জোর করে অজ্ঞাত সেজে থাকা। কিছুতেই নিজের কোন ঘাটতিকে স্বীকার করতে না চাওয়া। নিজের সাথে এই যে আড়াল, এই যে লুকোচুরি এর ফলেও মনের ঘরে বাসা বাঁধে নানান ধরণের মানসিক অস্থিরতা, দোটানা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, দোদুল্যমনতার।

মুখ আর মুখোশের ব্যবধান ঘুচিয়ে কিভাবে একজন ব্যক্তি সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে সেই সম্পর্কে জানতে গিয়েই জেনেছিলাম সেলফ হিপনোটিজম পদ্ধতি সম্বন্ধে। বিষণ্ণতার মেঘকে উড়িয়ে মনের বিষাদ কাটিয়ে বিশ্বাসের সূর্য থেকে নিঃসৃত আশার কিরণে কিভাবে নতুন করে সম্মুখে এগিয়ে চলার উৎসাহ পাওয়া যায় সেই ফমূর্লাই হচ্ছে সেলফ হিপনোটিজম।

মূলত আমাদের হতাশা, নিরাশা, দুরাশা, হাল ছেড়ে দেয়া, নিস্তেজ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নেতিবাচক আচরণ সমূহের আসল কারণ আমরা নিজেদের নিয়ে একদমই ভাবি না।

অথচ নিজেকে নিয়ে চিন্তা করাটা খুব বেশি জরুরী। আত্মবিশ্লেষণ, আত্নপর্যালোচনা, আত্নসমালোচনা ব্যক্তিকে শুধু যে উন্নতির দিকে ধাবিত হতেই সহায়তা করে তাই নয়। ব্যক্তির সামনে উন্মোচন করে তার নিজেকে, তার আপনার আমিকে। আমরা প্রায় সময়ই নিজের কোন কথা-কাজ বা আচরণের পেছনে কোন রিজন বা লজিক খুঁজে পাই নাং। অন্যদের সাথে সাথে নিজেরাও হয়রান, পেরেশান হই নিজের কর্মকান্ডে। এর কারণ নিজের সম্পর্কে অজ্ঞতা।

নিজের চিন্তা ও কর্মের উপর নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিজের সম্পর্কে জানা। আবার জানতে হলে নিজেকে বুঝতে হবে এবং বুঝতে হলে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা নিজেকে নিয়ে ভাবলেই নিজের মুখোমুখি হওয়া যায়।
আসলে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু ভালো এবং কিছু মন্দ দিক আছে। নিজের উত্তম গুণাবলী সম্পর্কে ভাবনা মানুষকে আনন্দিত করে, উৎসাহিত করে।

অপরদিকে নিজের মধ্যে বিদ্যমান দোষ-ত্রুটি-ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে ভাবলে নিজেকে সংশোধন করার ইচ্ছে জাগ্রত হয়। প্রতিটা মানুষের মধ্যেই নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার শক্তি আছে।

এক টুকরো আলো আছে মনের কোনে ঘোর আঁধারে পথ প্রদর্শনের জন্য। তেমনি আছে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে যাবার মতো দুর্বলতা, আছে আশার টিমটিমে বাতিটাকে পুরোপুরি নিভিয়ে দেবার মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন বাতাস।

তাই অবশ্যই জানা থাকা উচিত কোথায় নিজের শক্তি আর কোথায় নিজের দুর্বলতা। নিজের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকলে মানুষ থেকে উত্তম মানুষ হবার সফর খুব সহজেই পাড়ি দেয়া সম্ভব হয়। এজন্য দরকার নিজের কাছে নিজের মুখোশ উন্মোচন করে, নিজেই নিজের আয়না হবার।

তবে বিষয়টা খানিকটা কঠিন বৈকি! কেননা আমাদের মনের ভেতরটাকে বলা যায় হাজারো চিন্তা-ভাবনার এক বিশাল কারখানা। যেখানে চেতন, অবচেতন, অচেতন সর্বাবস্থাতেই সর্বক্ষণই উৎপন্ন হতে থাকে নানামুখী চিন্তার স্রোত এবং প্রবাহিত হয় নানান দিকে।

আবেগের মহাবিশৃংখলা, প্রতিকূল অবস্থা-অবস্থান, পরিবেশ-পরিস্থিতি, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবে চারিত্রিক নানান দূর্বলতা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সুন্দর জীবন গড়ার পথে। ইগোর গোলকধাঁধা, স্বার্থপরতার চোরাবালি, প্রতিহিংসার দহন, পরশ্রীকাতরতার গুপ্তঘাতক ইত্যাদি ঘুণপোকার মতে কুড়ে কুড়ে খায় মনের কোমলতা, সরলতা, উচ্ছ্বাস, বিশ্বাস, আশা, ভালোবাসাকে।

মানুষ হয়ে যেতে থাকে সুন্দর আবেগ বিবর্জিত যন্ত্র এবং অসুন্দর আবেগ চালিত অনুভূতিহীন প্রাণী। নিজেই নিজের ধরা ছোঁয়ার বাইরের কেউ। নিজেকে খুঁজে পেতে, ছুঁয়ে দিতে হিপনোটিক সাজেশন পালন করতে পারে সহায়ক ভূমিকা।

 

আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে আল কুরআন পাঠ বাধ্যতামূলক!

জিয়াউল হক


জ্বি পাঠক, আমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটিতে কুরআন পড়া ও তার সুক্ষ্ম বিশ্লেষণধর্মী পাঠ বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। এবং সেটি হয়েছে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া সহ খৃষ্টবাদী সংগঠনের প্রবল বিরোধিতাকে সফলভাবে মোকাবেলা করেই।

আমেরিকার University of North Carolina (UNC) -এ অধ্যয়নরত প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য একটি বই বাধ্যতামুলক ভাবে পাঠ্যসুচীতে (গ্রীষ্মকালীন পাঠ্যবিষয় হিসেবে) অন্তর্ভুক্ত করে ২০০২ সালে।

এর প্রতিবাদে কিছু উগ্রপন্থী খৃষ্টবাদী সংগঠন বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্তিক, দু‘জন মার্কিন নাগরিক, যথাক্রমে; James Yocuvelli ও Terry Moffitt এবং সেই সাথে ঐ একই ইউনিভার্সিটির কয়েকজন ছাত্র মিলে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ করে। এদের সাথে অচিরেই স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বও জুটে যায়। তারা স্থানী রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে স্থানীয় এমপিরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃক কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক এই কোর্সে অর্থায়ন বন্ধ করে দেবার পক্ষে ভোট প্রদান করে এ সিদ্ধান্তটি ইউনিভার্সিটি পরিচালনা পরিষদকে জানিয়ে দেয়।

এর ফলে ইউনিভার্সিটি কর্তৃকপক্ষ তাদের কারিকুলাম ঠিক রেখেই কোর্সে কিছুটা পরিবর্তন আনে। পরিবর্তনটা হলো এই যে, কোনো ছাত্র যদি কুরআন পড়তে না চায় বা ছাত্রের অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের তা পড়তে না দিতে চায়, তবে তারা তা করতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে উক্ত ছাত্রকে তার গ্রীষ্মকালীন কোর্স হিসেবে সে কেন কুরআন পড়তে চায় না, সে বিষয়ের উপরে একটা পেপার জমা দিতে হবে তার ইউনিভার্সিটি বরাবর।

কিন্তু এ সংশোধনিতে কোর্সের বিরোধিতাকারীরা সম্মত হতে পারে নি। তাদের দাবী ছিলো, ইউনিভার্সিটির এ দাবী মেনে নিলেও ছাত্রদের কোনো লাভ হবে না। কারণ, কোনো ছাত্র যদি কোরানের কোর্সটি করতে না চায়, তার পরেও তাকে এই না চাওয়ার পক্ষে সাফাই গেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পেপার জমা দিতে গেলে কোরানের বিরোধিতা করে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রবন্ধ লিখতে হবে আর সে প্রবন্ধ লিখতে গেলে তাকে কুরআন পড়তেই হচ্ছে!

অতএব তারা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের এ স্বিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে না পেরে আদালতের শরণাপন্ন হয়। তারা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কুরআন ও তার ব্যাখা সম্বলিত বইটি পড়ানো সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য আদালতে আবেদন জানান। তবে আদালতের বিচারকরা তাদের এ আবেদনকে নাকচ করে দেন।

যে বইটি নিয়ে এত লংকা কান্ড ঘটে গেলো, সেই বইটির ব্যপারেই এখনও কিছু বলা হয় নি আপনাদের। মার্কিন Michael A Sells গবেষকই নন, তিনি তুলনামুলক ধর্মত্বত্ত বিষয়ে একজন বিদগ্ধ পন্ডিতও বটে। তিনি Haverford University তে Comparative Religion এর একজন Professor, শিক্ষক। ইসলাম, কুরআন ও মুসলমানদের জীবন রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে ইতোমধ্যেই তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লিখেছেন।

অতি সম্প্রতি তিনি আল কুরআনের ৩০তম পারা তথা আমপারার ৩৫টি সুরা বাছাই করে সে সব সুরার শানে নুযুল, আলোচনার বিষয়বস্তু, নাযিল কালীন সময়ের ইতিহাস ঘটনাপ্রবাহ ও প্রাসাঙ্গিকতা ও সুরাসমুহে ব্যবহৃত ভাষা, ছন্দ, কাব্যিক আবেদনসহ এসব সুরার মূল শিক্ষার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে,

‘Approaching The Quran; The Early Years’ শীর্ষক একটা বই লেখেন। বইটি সমাজের বিভিন্ন মহলে অ্যত্যন্ত ব্যপক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বিতর্কেরও জন্ম দেয়। তবে মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সচেতন মহলে বইটি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাও পায়।

কুরআনের তাফসির সম্বলিত এই বইটিকেই University of North Carolina (UNC) তাদের ছাত্রদের জন্য গ্রীষ্মকালীন কোর্সের মূল পাঠ্যসুচী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে। আর এতেই ইসলাম বিদ্বেষী মহলে গাত্রদাহ শুরু হয়। তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়ে এর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে এবং ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে তাদের স্বিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে উঠে পড়ে লাগে। লেখালের্খি বক্তৃতা-বিবৃতি, নিন্দাবাদ প্রচার-প্রচারণা’সহ মামলা, সব কিছুই ঘটে একের পর এক। ঐ চিহ্নিত ইসলাম বিরোধি মহলের সাহায্যে এগিয়ে আসে বাঘা বাঘা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোও।

বিখ্যাত এপি নিউজ মিডিয়া ২০০২ সালের ২রা আগষ্ট বিষয়টি নিয়ে নিউজ কভার করে। এর মাত্র ক‘দিন পরে এসে ৭ই আগষ্ট বিবিসি‘ও সংবাদ প্রচার করে। তারা ইউনিভার্সিটির ভিসি James Moeser এর স্বাক্ষাৎকার প্রচার করে।

এক প্রশ্নের জবাবে ভার্সিটির ভিসি বলেন ‘আমরা কোনো ধর্মকে প্রচার করছি না, বরং আমরা এমন একটা বিষয় পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করেছি যে, এই বিষয়টির চেয়ে ‘সমকালীন’ বলে কোন বিষয় আর নেই।’

আর এর মাত্র একদিন পরে স্থানীয় রেডিও ষ্টেশনে এক উগ্রপন্থী খৃষ্টান পাদ্রী বিষয়টি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে সরাসরি আল কুরআনকেই আক্রমণ করে অশালীন ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়ে বসে। তারই রেশ ধরে ‘ Franklin Graham ’ নামক অন্য এক খৃষ্টান পাদ্রী একইভাবে ইসলাম ও আল কুরআনকে সন্ত্রাসবাদের সমার্থক হিসেবে অভিহিত করে আপত্তিকর বক্তব্য দিতে থাকে। এর ফলে আমেরিকায় মুসলমানদের সবচেয়ে সব সংগঠন ‘Council on American Islamic Relations (CAIR) ’ তাদের এই সব বক্তব্যের বিরোধিতায় এগিয়ে আসে।

সুখের কথা হলো, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কোন রকম চাপের কাছেই নতী স্বীকার না করে তাদের স্বিদ্ধান্তে অটল থাকেন। ফলে আশাতীত সংখ্যায় ছাত্র-ছাত্রী তাদের গ্রীষ্মকালীন পাঠ্যবিষয় হিসেব আল কুরআনের ক্রিটিকাল স্টাডিতে অংশ নেয়। এভাবেই খোদ আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আল কুরআন পাঠ্যসূচীতে ঠাঁই করে নেয়।

 

বিশ্ব অটিজম দিবস( ২রা এপ্রিল) নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা

অপরাজিতা ডেক্স


গত ৫ই এপ্রিল রোজ বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত Crossroads – Restaurant & Lounge -এ এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সফলভাবে সমাপ্ত হল বিশ্ব অটিজম দিবস( ২রা এপ্রিল) উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষজ্ঞ মতামত ও উন্মুক্ত আলোচনা।

এতে মুখ্য বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন  ভিজিটিং কনসালটেন্ট, মনোরোগ বিভাগ, আল জউফ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব; সহযোগী অধ্যাপক ও টেলি-সাইকিয়াট্রি কনসালটেন্ট, এশিয়ান ইন্সিটিউট অফ মেডিসিন সায়েন্স টেকনোলজি (AIMST), কেদাহ, মালয়েশিয়া এবং শেখ কামাল সাইকিয়াট্রি হসপিটাল, বাহরাইন এবং ইউনিট প্রধান, সাইকথেরাপী এন্ড কাউন্সিলিং উইং, মনোরোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হসপিটাল, ঢাকা এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ এম এস কবীর জুয়েল।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগদান করেছিলেন Consultant Psychiatrist (Geriatric Psychiatry) and Post Graduate College Tutor. The Briary Wing Harrogate District Hospital, Lancaster Park Road, Harrogate, North Yorkshire, United Kingdom. এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ সুমন আহমেদ। এবং অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করার জন্য সাথে ছিলেন সমাজের আগ্রহী সচেতন নাগরিকবৃন্দ।

আগ্রহী সচেতন নাগরিকদের নিয়ে শিশু ও কিশোর কিশোরীদের আবেগজাত সমস্যা ও এর প্রতিকার নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত ও উম্মুক্ত আলোচনা, যার  আয়োজক ছিল সানোফি এভেন্টিস।

ডা. কবীর জুয়েল তার আলোচনায় এক পর্যায়ে বলেছেন, “অনিয়ন্ত্রিত ভার্চুয়াল জগত কেন্দ্রীক চিন্তা আমাদের তরুন তরুণীদের মাঝে আবেগজাত সমস্যা বাড়াচ্ছে।”

অনুষ্ঠানটি মূলত  অটিজম, শিশু মনোরোগ এবং কিশোর কিশোরী-দের আবেগজাত সমস্যা ও প্রতিকার নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল এখানে উপস্থিত নাগরিকবৃন্দ বিভিন্ন মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করেন, এবং বিশেষজ্ঞগণ তাদের জবাব প্রদান ও আলোচনার মাধ্যমে প্রাণবন্ত পরিবেশে উপস্থিত অতিথিদের কৌতুহল এবং শঙ্কা দূর করেন।

মুলত এই রূপ প্রোগ্রাম সরাসরি কোন মানুষের উপকারে আসবে কিনা বলা কঠিন, কিন্তু যদি একজন মানুষের মাঝেও সচেতনতা তৈরি হয়, তাহলেই সার্থক এই প্রচেষ্টা।

 

“বিউটি খুন” খুনির হাতে তুলে দিয়েছিল স্বয়ং বাবা ছায়েদ!

বহুল আলোচিত হবিগঞ্জের বিউটি আক্তার হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছে। এ লোমহর্ষক ঘটনার সাথে জড়িত বিউটির বাবা ছায়েদ আলী শনিবার পাঁচ ঘন্টা ধরে অবকাশকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের কাছে বিউটি হত্যার পুরো কাহিনী বর্ণনা করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এ নিয়ে বিউটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিউটির বাবা ছায়েদ মিয়া, ছায়েদ মিয়ার বন্ধু ও কাজিন ময়না মিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর যার ফাঁসির জন্য দেশ উত্তাল ছিল সেই প্রেমিক বাবুল মিয়া শুধু বিউটি আক্তারের সাথে প্রেমের কথা স্বীকার করেন এবং একসাথে বসবাস ও একসাথে চাকরি করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। যার বসতঘর থেকে বিউটি আক্তারকে নিয়ে আসা হয়েছিল বিউটি আক্তারের সেই নানি ফাতেমা আক্তার ১৬৪(১) ধারায় স্বাক্ষী হিসাবে জবানবন্দী দিয়েছেন আদালতে। একইভাবে স্বাক্ষী হিসাবে জবানবন্দী দিয়েছেন ঘাতক ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার। বাড়িতে নেই বিউটি আক্তারের মা হুসনে আরা ও ভাই সাদেক মিয়া। একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা বেশ কয়েক দিন যাবত আইন শৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে আছেন। তবে এ কথা স্বীকার করেননি মামলার আইও শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মানিকুল ইসলাম।

প্রেম থেকে পলায়ন : বাবুল মিয়া ও বিউটি আক্তারের বাড়ি একই গ্রামে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ব্রাহ্মনডুরায়। বাবুল মিয়া বিবাহিত হলেও তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর্থিকভাবে অনেকটা স্বচ্ছল বাবুল মিয়ার সাথে গত ২১ জানুয়ারি পালিয়ে যান বিউটি আক্তার। বিউটি আক্তার পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে ফিরিয়ে আনার তেমন কোনো উদ্যোগও নেননি ছায়েদ মিয়া। সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। বাবুল মিয়ার সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর বিউটি আক্তার চাকরি নেন তাদের গ্রামের পাশেই গড়ে উঠা একটি কোম্পানিতে। প্রতিদিন পরিবারের লোকজনের চোখের সামনেই বিউটি আক্তার বাবুল মিয়ার আলাদা বসতঘর থেকে কোম্পানিতে যাওয়া আসা করে। হঠাৎ করেই কোম্পানি থেকে বিউটি আক্তারকে নিয়ে আসেন তার বাবা মা। বিউটি আক্তারের ভাষায় “আমি আসামি বাবুল মিয়ার সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর একটি কোম্পানীতে চাকুরী শুরু করি। ঐ কোম্পানী হতে আমার আব্বা আম্মা আমাকে নিয়ে আসে। আমি ঘটনার তারিখ হতে নিজের ইচ্ছায় আসামী বাবুল মিয়ার সাথে ১৮ দিন ছিলাম”। পরে মামলা দায়ের করা হয়।

ইউপি নির্বাচনে বন্ধুর স্ত্রীর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে নিজ মেয়েকে হত্যা : বিউটি আক্তারের পিতা ছায়েদ মিয়া এবং একই গ্রামের ময়না মিয়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গত ডিসেম্বর মাসে হবিগঞ্জের ৭৮তম ইউনিয়ন হিসেবে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মনডুরা ইউনিয়নে। সেই নির্বাচনে মহিলা মেম্বার প্রার্থী ছিলেন ছায়েদ মিয়ার বন্ধু ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা খাতুন। তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন। নির্বাচনে বিজয়ী হন বিউটি আক্তার ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়ার মা কলম চান বিবি। সেই থেকে বিরোধ শুরু।

বিউটি আক্তার বাবুল মিয়ার সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর কলম চান বিবির পরিবারকে একটি বড় শিক্ষা দেয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আটতে থাকেন ময়না ও ছায়েদ মিয়া। এরই অংশ হিসাবে প্রথমে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ছায়েদ মিয়া। পরিকল্পিতভাবে সেই মামলার অন্যতম স্বাক্ষী হিসাবে রাখা হয় ময়না মিয়াকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে দায়েরকৃত অপহরণ ও ধর্ষণ মামলাটি তখনো আদালত থেকে থানায় পৌছেনি। এরই মধ্যে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭ ধারায় জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে আরো একটি মামলা দায়ের করেন ছায়েদ মিয়া। এসব মামলা পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য ক্ষেত্র তৈরী করাই উদ্দেশ্যে ছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। ওই ২টি মামলার গুরুত্ব কমিয়ে দেন বিউটি আক্তার নিজেই। তিনি গত ১২ মার্চ তারিখে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে বাবার আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিজ ইচ্ছায় তিনি বাবুল মিয়ার সাথে পালিয়ে যান এবং তারা একসাথে বসবাস করেন। বিউটি আক্তারের জবানবন্দী ফলে বাবা ছায়েদ মিয়া ও বাবার বন্ধু ময়না মিয়ার পরিকল্পনা অনেকটা ভণ্ডুল হয়ে যায়। শুরু হয় নতুন কৌশল। এবার বিউটি আক্তারকে খুন করে বাবুল মিয়া ও কলম চান বিবিকে ফাঁসানোর ষঢ়যন্ত্র করেন তারা।

ঘাতকদের হাতে নিজ মেয়েকে তুলে দেয় ছায়েদ মিয়া : বাবুল মিয়া, তার মা কলম চান এবং প্রতিবেশী সাথী আক্তারকে আসামি করে বাবার মামলা দায়ের করার বিষয়টি পছন্দ ছিল না বিউটি আক্তারের। বাবুল মিয়ার সাথে বিউটি আক্তারের গভীর প্রেমের কারণে বাবা-মার সাথে বিউটি আক্তারের প্রায়ই বচসা হতো বলে জানা গেছে। আবারো বাবুল মিয়ার সাথে বিউটি আক্তার চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই লাখাই উপজেলার গুণই গ্রামে বিউটি আক্তারের নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

অবশেষে সেখান থেকে বিউটি আক্তারকে নিজ বাড়িতে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে আসেন ছায়েদ মিয়া।

বিউটির নানী ফাতেমা আক্তারও স্বীকার করেছেন, তার বাড়ি থেকে ছায়েদ আলীই বিউটিকে নিয়ে আসেন। পথিমধ্যেই অপেক্ষা করছিল ঘাতকরা। ঘাতক ছায়েদ আলীরই বন্ধু ময়না মিয়া। ময়না মিয়াদের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে চলে আসেন ছায়েদ মিয়া। পরের ঘটনা সবুজ শ্যামল ঘাসের উপর বিউটি আক্তারের ক্ষতবিক্ষত লাশ। স্বাধীনতা মাসের ১৭ মার্চ তারিখের সেই লাশের ছবি দেখে হতবাক দেশ। লাল রংয়ের জামা কাপড় পরা বিউটির লাশটি ছিল সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তের মতো। বিষয়টি প্রথমে একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড হিসাবেই দেখা হয়েছিল। মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয় দেশে বিদেশে।

ঢাকায় সাংস্কৃতিক কর্মীরাও মানববন্ধন করেন বিউটি আক্তার হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি বাবুল মিয়ার ফাঁসির দাবিতে। প্রতিদিন টিভি মিডিয়ায় স্বাক্ষাতকার দিতে থাকেন ছায়েদ মিয়া, তার স্ত্রী হুসনে আরা এবং ছায়েদ মিয়ার বন্ধু ময়না মিয়া। তুমুল প্রতিবাদের মুখে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকে। সে বিউটির সাথে প্রেমের কথা স্বীকার করলেও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে কিছু আলামত দেন আইন শৃংখলা বাহিনীকে, যাতে খুব সহজে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ২০ দিনের মাথায় প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিউটি আক্তার হত্যাকাণ্ডের সাথে জন্মদাতা পিতা মাতা ও তাদের বন্ধুরা জড়িত।

কার কাছে কে নিরাপদ :

২০০৩ সালের ঘটনা। হবিগঞ্জের রেললাইনে পাওয়া যায় অষ্টাদশী এক কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত লাশ। সেই লাশ ছিল সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইছাক মিয়ার কন্যার। তখনো ঝড় উঠেছিল সর্বত্র। কয়েক দিনের মাথায় প্রমাণিত হয় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে খুন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ইছাক মিয়া নিজেই। সেই মেয়ে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ইছাক চেয়ারম্যানের। জামিনে মুক্তি পাওয়ার কিছু দিনের মাথায় ইছাক মিয়া খুন হন বাড়ির সীম সীমানা-সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের আঘাতে।

রংপুরের এডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক। নিখোঁজ হওয়ার পর সেই ধরপাকড়। অবশেষে প্রমাণিত হয়েছে স্ত্রীর কাছেই প্রাণ দিতে হয়েছে স্বামী রথীশ ভৌমিককে।

হবিগঞ্জের আলোচিত বিউটি হত্যা। হত্যাকাণ্ডের ২০ দিনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিউটি হত্যাকাণ্ডের সাথে বাবা নিজেই জড়িত। এসব ঘটনার পর সর্বত্র একই প্রশ্ন আসলে কার কাছে কে নিরাপদ? সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

নাইওর

মুক্তারা বেগম নদী


অদ্ভুত বিষণ্ন এক বিকেল, যেন এক একটা কালো চাদরে নিজেকে জড়িয়ে আছে পুরো পৃথিবীটা। বেশ মেঘ করেছে আকাশে, গুমোট বৃষ্টি হবে, যেন এক অভিমানী কিশোরী গাল ফুলিয়ে আছে।

ইশা জানালার দিকে তাকিয়ে অনেক দূরে কোথাও কিছু দেখার চেষ্টা করে কিন্তু কি দেখছে কিংবা দেখতে চায় নিজেও জানে না। জীবনের এই প্রান্তে এসে হালখাতার দিকে তাকিয়ে খরচের তালিকাটা অনেক লম্বা, অনেক। জমার খাতা শূন্য। স্বপ্নগুলো বন্দি নিয়তির কাছে আর ইচ্ছেগুলো পাখা ভেংগে পড়ে আছে বিরান ভূমিতে।

আজকাল ওর খুব ইচ্ছে করে দূরে বহুদূরে, কেউ নিয়ে যাক তাকে কোন সবুজ পাহাড়ে, ছোট সুন্দর সবুজ ঘেরা-নদী ঘেঁষা কোন গাঁয়ে। নিজেকে কেবলই খাঁচায় পোষা বন্দি পাখির মতো মনে হয়। জন্মাবধি একটা শিকড় উপড়ানো গাছের মত জীবন চালিয়ে আসছে। কিন্তু সত্যিকারের বেড়ানো বলতে সে তেমন কোথাও যায়নি। কি অদ্ভুত একটা কষ্ট হয় ইশার, কষ্ট হয় সে আজও সমুদ্র দেখেনি, পাহাড় দেখেনি, ঘন সবুজ বন দেখেনি। আজ কতদিন হল কোথাও যায় না, কেউ আসেও না তেমন। নাক উঁচু স্বভাবী ইশার সব কিছুতেই খুঁতখুঁতে, বন্ধুত্বেও । হাসি খুশি প্রাণবন্ত ইশার খুব বেশি কাছের বন্ধু বেশি ছিলো না কখনোই। আর যারা ছিল বা আছে তারা খুব বিশেষ কেউ না।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে আজকাল হিসেবে খালি গোলমেলে মনে হয়। ইশা ভেবেই পায় না ভুলটা কোথায় ছিল!
পাশের বাসার ভাবি নাইওর গেল, খুশি যেন তার ধরে না। কবে থেকেই গল্প করছে ইশা আমি বাপের বাড়ি যাচ্ছি, মা আমার জন্য অনেক রকম আচার বানিয়ে রেখেছে আর পিঠাপুলি! জানই তো পিঠে পুলি আমার ভীষন পছন্দ। মা আমার অনেক রকম পিঠে পুলি করতে জানেন। আসার সময় তোমার জন্য নিয়ে আসব।
ইশা প্রতি উত্তরে শুধু মিষ্টি হাসে।

ভাবি অনেক সুখী মানুষ, বর ভাল চাকরী করে, নিজের ফ্ল্যাট-গাড়ি সব আছে, পরীর মত দুটো মেয়ে, ইশা আন্টি বলতে পাগল তারা। ভাবির একটাই গোপন দু:খ, ছেলে নেই। তার বাপের বাড়ি, স্বামীর বাড়ির এত সহায় সম্পত্তি কার জন্য, এই নিয়ে দুশ্চিন্তা। তবু এর মধ্যেই নিয়ম করে পার্লারে যান। বলেন ইশা, চেহারা ঠিক না রাখলে কি উপায় আছে! আজকালকার পুরুষ মানুষ গুলো হারামী, কোন দিকে আবার মজে যায় কে জানে। ভাইয়ের অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরী হলেই অস্থির পাগল হয়ে যান। প্রথম প্রথম ইশা ভাবত এটা প্রেম, এখন জানে এটা নিরাপত্তাহীনতা, একজন সাধারনত বাঙালি রমণীর।

ইশাও অপেক্ষা করেছিল অনন্তকাল, অপেক্ষা করেছে, নৈবদ্য সাজিয়েছে, বিরহে কাতর হয়েছে, কালিদাসের বিরহের কাব্যের মত তার অপেক্ষা, বিরহ আর ভালবাসার কথা কেউ জানে না। কেউ জানে না কত খানি অনলে পুড়েছে, কত রক্তক্ষরণ ঝরেছে তার। সেও এমন করে কোন এক সুখী রমণীর মত প্রতিটা সন্ধ্যায় কারো জন্যে অপেক্ষা করতে চেয়েছিল। সেও চেয়েছিল মাঝ দুপুরে কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে, এই তুমি খেয়েছ? আজও কিন্তু মিষ্টি খেতে ভুলো না যেন !

ফেরার পথে সে প্রায়ই নিয়ে আসত ইশার প্রিয় বেলী বা কদম। সূর্য তার সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে যখন শ্রান্ত, প্রিয় মানুষটির জন্য তার পছন্দের রান্না শেষ করে, টেবিল সাজিয়ে ইশা তখন স্নান সেরে শাড়ী পড়ে, পিঠ জুড়ে একরাশ ভেজা চুল নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াত। নিজেকে সাজাতো তার পছন্দের রং এর কাঁচের চুড়ি, টিপ আর নাকফুলে, মাঝে মাঝে হয়ত কাজলও আঁকতো চোখে। ছুটির দিন বিকেলটা কাটত প্রিয় ব্যলকনিতে, ছোট বাগানটায় পাশাপাশি মুখোমুখি চায়ের কাপ হাতে। সেই সাথে শুনত চৌরাশিয়ার বাঁশি, প্রিয় গজল বা কোন প্রিয় কবিতা। কিংবা হঠাৎ কোন দিন কোন ছোট নদীর তীরে, সবুজ বনের ধারে কোন এক পুরোনো পোড়াবাড়ি দেখতে যেত । নাহ ইশার জীবনে কোন প্রেম বা সুখের স্মৃতি নেই। তার প্রেম, অপেক্ষা আর বিরহ অদেখা আর মলিন, রবী ঠাকুরের ছোট গল্পের মতই, শেষ হয়েও হয়নি শেষ।

ইশারও খুব ইচ্ছে করে নাইওর যেতে। ওর কাছে নাইওর শব্দটা অনেক মিষ্টি লাগে। আহ, নাইওর! সে তো বিয়ের পর বাপের বাড়ি যাওয়া। ইশার বাপের বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ি বলে কিছু নেই। কিন্তু নিজের বাড়ি আছে। ক’টা মেয়ের নিজের বাড়ি হয়? ইশার হয়েছে কিন্তু ইশা নিজের বাড়ি চায়নি। সে চেয়েছিল বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি। সেও চেয়েছিল বছরে ২/৪ বার বাপের বাড়ি নাইওর যাবে আর যাবার সময় তার প্রিয় মানুষটি ভীষন রকম মন খারাপ করে থাকবে। যেতে দিতে চাইবে না আবার বলবে আচ্ছা যাও, ২ দিন পরেই কিন্তু আমি তোমায় নিতে আসব। ওইদিকে মা বাবা, ছোট ভাই বোন অস্থির হয়ে থাকবে ইশার জন্য। বাবা লঞ্চ ঘাটে সেই সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকতেন, ইশার মাও ভাবির মায়ের মত আচাড়, পিঠে পুলি, ছোট মাছ, বাগানের নানান রকম সবজি রান্না করতেন। রান্না করতেন ইশার প্রিয় হালুয়া, ওর রুমটা সাজানো থাকত ঠিক বিয়ের আগের মতই।
ইশার কোনদিন নাইওর যাওয়া হয়নি, হবেও না। বাড়িই যায় না কত বছর, শুনেছে এখন ব্রিজ হয়েছে, এখন আর ফেরী পার হতে হয় না। অথচ এই ফেরী পার হবার সময় কত রকমের মানুষ দেখত ও। কেউ আসছে, কেউ যাচ্ছে।

যাত্রীদের মধ্যে দম্পতি থাকলে ও আড়চোখে দেখত, দেখতো বররা তাদের বউকে কত আদর করে এটা সেটা কিনে খাওয়ায়। গ্রামের মিষ্টি লাজুক ঘোমটা পড়া বউগুলোকে লোভীর মত দেখত ইশা। ভাবত একদিন সেও এমন করে নাইওর যাবে, বাপের বাড়ি।

বাপের বাড়ি। বাপই নেই যার তার আবার বাপের বাড়ি। বাবা হারা মেয়েগুলো কি ভীষণ একা হয়। সমস্ত পৃথিবীর দুঃখগুলো যেন পাহাড় ভেংগে পড়ে তাদের জীবনে, যেন এক অসীম প্রতিযোগিতা, কে কত কষ্ট দিতে পারে পিতৃহীনাদের! আজকাল প্রায়ই শরীর খারাপ থাকে ইশার, মাঝরাতে বা ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রচন্ড বুকের ব্যাথায়। নিজের প্রতি উদাসীন বলে খাওয়া দাওয়া তেমন করে না, এ্যাসিডিটি হবার সম্ভাবনা আছে কিন্তু এই ব্যাথা অন্য রকম। মনে হয় কেউ যেন কোন ধারালো ছুরি দিয়ে তার বুকটাকে ঝাঁজরা করে ফেলছে। ভীষণ কষ্ট হয়। প্রতিবারই মনে হয় আজই শেষ কিন্তু তারপরও বেঁচে থাকে, আরও বেশি পুড়বার জন্য। এক জীবনে কত যে কষ্টের রূপ দেখল ইশা!
ক’দিন পরেই পাশের বাসার ভাবি ফিরে এলেন, হাতে নানান রকম পিঠা আর আচার। সেই কখন থেকে ইশার দরজায় নক করে যাচ্ছেন। আজ ছুটির দিন, ইশা তো এত বেলা করে ঘুমায় না, সে ফজরের নামাজ পড়ে একটু ঘুমায়। কিন্তু যেহেতু কাজের দিনগুলিতে সাতটায় ঘুম থেকে উঠতে হয় তাই, ছুটির দিনেও তার একই সময়ে ঘুম ভাংগে। ভাবি ফিরে গিয়ে খাবার গুলো রেখে, নীচে ইন্টারকমে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আজ ইশার বুয়া খালা এসেছিল কি না, দারোয়ান চাচা বলল এসেছিলো, ফিরে গেছে কারণ ইশা আজ দরজা খুলেনি। ভাবির বুকটা হঠাৎ করেই কেমন করে উঠল। পাশের রুমে গিয়ে স্বামীকে সব বললে উনিও অবাক হলেন। ইশার সাথে উনার কোন দিন কথা হয়নি কিন্তু খুবই সম্মান করেন আত্মবিশ্বাসী, স্বাবলম্বী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মেয়েটিকে।

সকাল প্রায় দশটার দিকে সবাই মিলে সিদ্ধান্তে আসলেন ইশার বাসার দরজা ভাঙ্গার। দরজা ভেঙ্গে বাইরে থেকে সবাই ইশার নাম ধরে কিছুক্ষণ ডাকলেন, সাড়া না পেয়ে সবাই ভাবির দিকে তাকালেন। ভাবির পা যেন নড়ছিল না, হঠাৎ করেই ভাবির মেয়ে দুইটা হাউমাউ করে কান্না শুরু করল। ভাইয়া একটু মৃদু ধাক্কা দিলেন ভাবির পিঠে, ভাবি অনেক কষ্টে এক পা এক পা করে ইশার বাসার ভিতরে ঢুকলেন।

ইস কি মিষ্টি গন্ধ বেলী ফুলের, অনেক সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার ইশার। আস্তে আস্তে করে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। ইশার প্রিয় নীল রংয়ের পর্দাগুলো যেন অসহায় ভাবে ঝুলছে। মাথার উপর সিলিং ফ্যানের একঘেয়ে শব্দ ছাড়া ঘরে আর কোন আওয়াজ নেই। বাইরে দরজার কাছে সবাই এক অশুভ আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছেন। ইশা, অভিমানী, একাকী, নিঃসঙ্গ মেয়েটি নিথর হয়ে পড়ে আছে বিছানার এক পাশে। একটা হাত বিছানার বাইরে। যেন কোন কিছু হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার অপেক্ষায়, যেন কাউকে ডাকছে ব্যাকুল হয়ে। সাইড টেবিলের পানির গ্লাসটি নীচে পড়ে ভেংগে আছে। আশেপাশে পানি নেই এক ফোঁটাও। চলে যাবার আগে বুঝি খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল মেয়েটির। আহা শেষ বেলায় এক ফোঁটা পানিও পেল না! ঘাড়টা হেলে আছে বাঁকা হয়ে। ঠোঁটগুলো শুকিয়ে কেমন খটখটে হয়ে আছে। ভাবির খুব ইচ্ছে করে ইশাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাওয়াতে কিন্তু বড্ড দেরী হয়ে গেল যে।

আজ ইশা নাইওর যাচ্ছে, বাপের বাড়ি, বাপ সোহাগী মেয়েটির খুব ইচ্ছে ছিল বাপের পাশে যেন ওকে শুইয়ে দেয়া হয়। ফেরী পার হবার সময় কেবলই বারবার মনে হচ্ছিল পাশের বাসার ভাবির, কথাটি। নাইওর শব্দটা অনেক প্রিয় ছিল মেয়েটার, মেয়েটা শেষ পর্যন্ত নাইওর যাচ্ছে কিন্তু এভাবে কেন? ”

জীবনের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলে না, জানা হয় না, কোন কোন মানুষ এত কষ্ট পায় কেন, কেন এত অপূর্ণতা তাদের জীবনে? কেন কোন কোন তারা তাদের সমস্ত উজ্জ্বলতা দিয়ে অন্যের জীবনে আলো ছড়িয়ে নি:শব্দে ঝরে যায়?
খুব বেশি কিছু চেয়ে ছিল কি, মেয়েটি?

 

-নারী-

মাসুদ খাঁন


নারী তুমি গরিব বাবার
জান্নাতের ঐ মণি,
নারী তুমি দুখী মায়ের
কাঁন্নার আবাস ধ্বনি।

নারী তোমার কোলে দেখি
শিশু হেসে খেলে,
নারী তোমার ছেলে দেখো
স্বপ্নের ডানা মেলে।

নারী তুমি মা জননী
বিশাল বটের ছায়া,
নারী তোমার আঁচল মাঝে
খোঁজি আমি মায়া।

নারী তোমার ভালোবাসায়
স্বামী স্বর্গ খোঁজে,
নারী তোমার অধিকার আজ
সেই স্বামীটাই বোঝে।

নারী তোমার ন্যায্য দাবি
ইসলাম ধর্মে বলে,
নারী তোমার সম্মান-ইজ্জত
দেবে কেন জলে।

নারী তোমার স্বর্গ পাওয়া
সহজ তুমি জানো,
ধর্মে তোমায় যা বলেছে
যদি তুমি মানো।

(সকল চেতনাবাদী নারীদের জন্য উপহার)

 

দাম্পত্য জীবন হলো অন্যতম মৌলিক মানবিক অধিকার

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


চাই, বন্ধ হোক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম এক দশক এক ধরনের ব্যক্তিগত যৌনজীবন যাপনের এই বিরাজমান সামাজিক অপসংস্কৃতি।

হ্যাঁ, যার যৌবন আছে তার কোন না কোন ফরম্যাটে যৌন জীবনও আছে। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক সবারই আছে নিজস্ব প‍্যাটার্নের যৌনজীবন। এটি অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। যত বড় সুফি-দরবেশ-মোহন্ত-সাধু হোন না কেন, কোন মানুষই বেসিক ইন্সটিংক্ট এর ঊর্ধ্বে নয়।

বিপরীত জেন্ডারের কারো সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে আমার নীতি হলো,

Everything or nothing, not so so।

যে পথে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ কিংবা অধিকার আমার নাই সে পথে খানিকটা হাঁটহাঁটি করাকে আমি ছ‍্যাঁচড়ামি মনে করি। এমনকি আমি এক নম্বর পছন্দ হলেও এ ধরনের কোনো কিছু পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানোকে আমি খুব অপছন্দ করি। মেয়েদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে এ ধরনের মনোভাবের কারণে বিয়ের আগে আমার প্রেম করা হয়ে উঠেনি।

(১) প্রেম কিংবা
(২) পরিণয় অথবা
(৩) বিশেষ কোন সামাজিক সম্পর্ক বা
(৪) শুধু পরিচয় –

এই চার ধরণের সম্পর্কের বাইরে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো সম্পর্কে আমি বিশ্বাসী নই। প্রাপ্তবয়স্ক দু’জন নারী ও পুরুষের মধ্যে নিছক বন্ধুত্বের সম্পর্ক অসম্ভব।

তাই এখনকার just friend system হলো আসলে এক ধরণের soft polygamy চর্চা। কথাটা পরিস্কার। polygamy ভালো কি খারাপ, সেটা ভিন্ন আলোচনা। এখানে polygamy বলতে আমি multiple heterosexual relationship-এর টেনডেন্সি বা প্র‍্যাকটিসকে বুঝাচ্ছি।

মানলাম, পাশ্চাত্য প্রভাবিত ক‍্যারিয়ারমুখী আমাদের এ সমাজ, ছেলে-মেয়েদেরকে গড়পড়তা এক দশক এক ধরনের “ব‍্যক্তিগত যৌনজীবন” যাপনে বাধ‍্য করছে, তাই বলে “প্রয়োজন”টা যে নির্দোষ ও বাস্তবসম্মত, তা অকপটে স্বীকার করতে এত দ্বিধা কেন?

স্বাভাবিক দাম্পত্য যৌন জীবনের ব‍্যবস্থা কায়েম করা হলো বিদ‍্যমান অবাধ ফ্রেন্ডশিপ ব‍্যবস্থার টেকসই প্রতিবিধান বা রিমেডি। এ ধরনের কাঙ্ক্ষিত ব‍্যবস্থায় পৌঁছার জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা নিয়ে সমাজকর্মীদের ভাবতে হবে। খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

“তরুণ সমাজ অধঃপতনে গেল। আমরা কত ভাল ছিলাম…।”
– এমন বুদ্ধিজীবীসুলভ পাকনা পাকনা কথা দিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে না। কথায় বলে, পেটে দিলে পিঠে সয়। আগাগোড়া একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কারো কোন বিশেষ ধরনের অস্বাভাবিক আচরণকে মাঝখান থেকে জাজমেন্ট করতে যাওয়া ঠিক না।

তরুণদের এই just friend system এর জন্য তরুণরা যতটা দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী হল তাদের অভিভাবকরা। জীবন ও জগতের সঠিক উপলব্ধি ও মূল্যবোধ নিয়ে বড় হওয়ার চেয়ে তরুণদের মধ্যে যে career hype তৈরি করা হয়েছে তার জন্য তারা নিজেরা ততটা দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী হল এই ভারসাম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এধরনের বিরূপ পরিস্থিতির দায় বড়দের। যারা এই সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার। careerism-এর কারণে বিলম্বে বিয়ে। বিলম্ব বিয়ের কারণে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যক্তিগত যৌনজীবন। কথাটা খোলাসা করে বললাম। যাতে বুঝতে পারেন, এই just friend system কোত্থেকে ও কিভাবে গড়ে উঠলো।

আফসোস, যারা সমাজ পরিবর্তনের কথা বলে তারা আমাদের সামাজিক গঠনের এই বিরাট ফাটল সম্পর্কে তেমন কিছু বলে না। প্রসঙ্গক্রমে এ বিষয়ে যাওবা তারা কিছু বলে তখন একতরফাভাবে তারা তরুণদেরকে অসংযমী হওয়ার জন্য দোষারোপ করে। এরপরে তারা সওয়াবের নিয়তে তরুণদেরকে নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য, একতরফাভাবে নৈতিক হওয়ার জন‍্য self-contradictory হেদায়েত বিতরণ করে।

অপরদিকে তরুণদের একটা বিরাট অংশ, যারা বিশেষ করে আদর্শের কথা বলে, তারাও দেখি আমাদের সমাজে বিদ্যমান এ ধরনের অস্বাভাবিক ও অমানবিক অপব্যবস্থার অস্তিত্ব স্বীকার করতে নারাজ। যেন সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে। আমি এসব কথা বলছি, এতে আশঙ্কা করছি, এদের কেউ কেউ আমাকে উল্টো দোষারোপ করবে। হয়তো বলবে, অথবা অন্ততপক্ষে ভাবতে পারে, বুড়োর যেন ভিমরতি হয়েছে …!

না, আমার অন্ততপক্ষে ভিমরতি হয় নাই। আমাদের সময় প্রায় শেষ। তবে আমরা যে অস্বাভাবিক সময়কে পার করে এসেছি, একই ধরনের যে অস্বাভাবিকতার মধ্য দিয়ে তোমরাও জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছো, তা যে প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও অস্বাভাবিক, এ অবস্থার যে আশু পরিবর্তন প্রয়োজন, তা অন্ততপক্ষে স্বীকার করার কথা বলছি। যত বড় সমস্যাই হোক না কেন, যে কোন সমস্যা সমাধান করার প্রথম শর্ত হলো সমস্যাটা যে আছে তা অকপটে স্বীকার করা।

just friend system এর পরবর্তী ধাপ হলো লিভিং টুগেদার system। লিভিং টুগেদার সিস্টেম এবং family সিস্টেমের তুলনামূলক আলোচনা নিয়ে আমার একটা লেখা আছে। সেটি প্রচারণামূলক লেখা নয়, যুক্তিসঙ্গত লেখা। কিছুটা বিস্তারিত। কমেন্টে সেটার লিংক দেয়া আছে।

এ বিষয়ে এখনকার মত শেষ কথা হল, যেভাবেই হোক না কেন, on an average 15 থেকে 25, এই দীর্ঘ এক দশক এক ধরনের ব্যক্তিগত যৌনজীবন যাপনের এই সামাজিক অপসংস্কৃতিকে রুখতে হবে। জ্বর কেন হচ্ছে তার কারণ হিসেবে শরীরের ভেতরে কোন অংশটা infected হয়েছে তা identify করতে হবে। এরপর সেটার proper treatment করতে হবে। ভিতরের ইনফেকশন সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা না করে উপরে উপরে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করে কোন লাভ হবে না।

সম্ভাব্য সকল উপায়ে বিয়েকে সহজ করা হলে বাদবাকি যা কিছু তা অটোমেটিকেলি কমে যাবে। অনিরুদ্ধ কোন স্রোতকে স্বাভাবিক গতিপথে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ করে না দিলে তা বাঁধ ভেঙে প্লাবন ঘটাবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

ছোটবেলায় মার্শাল আর্টের কলাকৌশল নিয়ে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। তাতে আত্মরক্ষার প্রথম যে টিপসটা দেওয়া হয়েছিল, তা খুব ইন্টারেস্টিং। সেখানে লেখক বলেছিলেন, যখনই আপনি আক্রান্ত হবেন সম্ভব হলে দ্রুততম সময়ে 180 ডিগ্রি উল্টা ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্ভব সর্বোচ্চ গতিতে দৌঁড়ানো লাগাবেন। তার মানে, যে কোন অস্বাভাবিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হতে escape করার চেষ্টা করা হল better option।

নৈতিকতার যতসব নেতিবাচক আইন, কানুন, নিয়ম ও প্রস্তাবনা, তার সবই হলো বিশেষ বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য। কোথাও যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতি বিরাজমান থাকে, সেখানে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োগযোগ্য নেতিবাচক আইনকানুন ও প্রস্তাবনাগুলোকে আপাতত অগ্রাহ্য করে উক্ত অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা জরুরী। তাই, মানুষের ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা ন্যূনতম আদর্শমানের সামাজিক ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য যা যা করা দরকার, তা বাস্তবায়ন করার কাজ, আসুন, এখনই শুরু করি।

মনে রাখবেন, awareness is doing half of the solution।

 

বাসায় “কাজের মানুষ” নেওয়ার ব্যাপারে সর্তকতা

দ্য স্লেভ


আমরা প্রায়ই কাজের লোকের বা গৃহকর্মীদের উপর অত্যাচারের কাহিনী শুনি। তাদের বিষাদময় জীবনের কাহিনী শুনি আবার কাজের লোক কর্তৃক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে প্রচুর। কিন্তু ঘটনাগুলোকে অনেককাংশেই কমিয়ে আনা যায় যদি আমাদের সদিচ্ছা থাকে।

বহু কাজের লোক আছে, যারা গ্রাম থেকে ঢাকা অথবা চিটাগাং শহরে আসে কিন্তু কিছুদিন পর তারা চলে যায় বা পালিয়ে যায়। অথবা বাড়ি ফিরে যাবার জন্যে উদগ্রীব হয়। কখনও পালিয়েও যায়। এর পেছনে কিছু কারন খুঁজে দেখা যাক।

সম্ভবত গ্রামের উম্মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠে, শহরের মুরগীর খাঁচার মত বাসার ভেতরে তাদের ভালো লাগে না। কিন্তু এটা মিনি-মাইস করা যায়। কারন সম্ভবত মানুষ সবসময় সহনশীল প্রানী।

আসুক দেখা যাক কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা যায়,

১.ভাল আচরণ

অত্যন্ত ভাল আচরণের সাথে তাকে গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে তাকে আপনি কিনে নেননি বরং সে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছে। আপনার জবটি আপনার জন্য সন্মানের। ঠিক তাকেও তার কাজটি যে সন্মানের বুঝতে দিন।

২. গৃহকর্মীদের মানসিক অবস্থা বোঝা

কেউ শহরে আসার পর, প্রথম দিনেই কাজের প্রতি আকৃষ্ট করা ঠিক নয়। বরং প্রথম দিন তাদেরকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে হবে। কারন এসব গরিব মানুষেরা ভালো কাপড় পায় না। প্রথম দিন বাজারে নিয়ে গিয়ে বেশ মানসম্মত কাপড় কিনে দিতে হবে, যা সে পছন্দ করে। আর যদি আমরা মুত্তাকী হই, তবে নিজের জন্যে যে মানের কাপড় কিনি এবং যেমন কাপড় নিজের স্ত্রী, বোন, মা ওনাদের জন্যেও পছন্দ করি, ঠিক তেমনই কাপড় সেই মেয়ে বা ছেলেটির জন্যে পছন্দ করব। এটা করলে প্রথম দিনেই সেই মেয়ে বা ছেলেটি (সাধারনত মেয়েরাই কাজ করে বাসায়) উক্ত বাসার কর্তা, কতৃ সম্পর্কে বিশাল একটি ধারণা লাভ করবে এবং তার মন সাই দেবে এই বাসায় কাজ করতে।

৩. আপনার বাসার পরিবেশ গৃহকর্মীকে বুঝিয়ে বলুন

প্রথম দিন শপিং শেষে বাসায় ফিরে তাকে পুরো ঘরবাড়ির সবস্থান দেখাতে হবে। ধীরে ধীরে ওনার বোঝার ক্ষমতা অনুযায়ী বুঝাতে হবে। এরপর তার থাকার স্থানটি দেখাতে হবে এবং তার বাথরুমে নতুন ব্রাশ, পেস্ট, সাবান এসব রাখতে হবে। ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিবেন। এটা পাওয়া তার হক। তার থাকার স্থানটি যেমনই হোক অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হতে হবে। এটা তার মানুসিকতাকে সুন্দর করবে এবং পরিবারের সবার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কথা ভাবতে হবে।

৪. খাবার নিয়ে কখনও শাস্তি দিবেন না

আপনারা যা যা খান, ভালো ও মানসম্মত খাবার তাকেও তাই খাওয়াতে চেষ্টা করুন। যদি নিজেরা বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতল যান(নিজেদের সঙ্গতি অনুসারে কোনো রেস্টুরেন্ট) তাহলে সেই মেয়েটিকে পাশাপাশি একই চেয়ারে বসিয়ে পরিবারের সদস্যের মত করে একই রকম খাবার খাওয়াতে হবে। এটাই সুন্নাহ। এটা করলে সেই মেয়েটি নিজেকে পরিবারের দায়িত্বশীল একজন ভাববে এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিজের উপর কর্তব্য মনে করবে।

৫. গৃহকর্মী সম্পর্কে জানুন

তারসাথে বেশ কিছুক্ষন গল্প করতে হবে। তার পরিবার,পরিবেশ সকল বিষয়ে জানতে হবে। তার ভালোলাগা মন্দলাগা এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে। এতে তার সম্পর্কে যেমন বালো একটি ধারনা তৈরী হবে, তেমনি সেও বাড়িওয়ালা থেকে একটা ধারনা পাবে। আর মনেযোগ নিয়ে তার কথা শোনার কারনে সে নিজেকে ভাগ্যবান ভাববে। আর এভাবে সে খুশী মনে সার্ভিস দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হবে। নিজেই জানতে চাইবে তাকে কি কি করতে হবে।

৬. অবশ্যই করণীয় কিছু বিষয়

ছবি তুলে রাখুন। ফোন নাম্বার মুখস্থ করানোর চেষ্টা করতে পারেন।
এবং তাকে সুন্দর করে বলতে হবে, যে দেশের আইন হল যারা ডমেস্টিক হেলপার বা গৃহকাজে সহায়তাকারী (কাজের মেয়ে শব্দটি একটি খারাপ অর্থ প্রকাশ করে,সুন্দর শ্বদচয়ন করতে হবে) তাদের এক কপি ছবি স্থানীয় থানায় জমা রাখতে হয়,তাই আমরা আইন অনুসরন করছি। এটা তোমার নিরাপত্তার জন্যেই। এতে তার মনের গহীনে কোনো কু-চিন্তা থাকলে সেটা সে নিজেই দমন করবে, এমনটা ধরে নেওয়া যায়। কারন মানুষ সুযোগ পেলে অনেক সময় তার খারাপ স্বভাব চরিতার্থ করে। আগে কেউ পালিয়ে যাবার অভিজ্ঞতা থাকলে জিডি করে রাখতে পারেন।

৭.পর্যাপ্ত বিশ্রাম

গৃহকর্মীদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিতে হবে। সে ভালো করে বিশ্রাম করলেই বরং কাজে ভুল কম করবে। তাকে তার কাজ ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। এক বার না বুঝলে বিরক্ত না হয়ে বার বার বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটি কাজ আমি যেভাবে চাই বা যেভাবে করা উচিৎ সেটা বুঝাতে হবে সুন্দর করে। তাহলে সে কাজটি শিখবে এবং ভুল কম করবে। তাকে খুশী রাখতে হবে।

৮. প্রশংসা করা
প্রতিটি মানুষই প্রশংসা করার বিষয়টি খুবই পছন্দ করে। আমার মন প্রশংসা পছন্দ করলে সেই স্বল্প বেতনের কাজের মানুষটিও আমার চেয়ে বেশিই প্রশংসা পছন্দ করে মনে রাখতে হবে। তাই এই পয়েন্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে যখন কোনো কাজ করবে, সেটা মোটামুটি ভালো হলেই তাকে অনেক প্রশংসা করতে হবে। তার কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। আবার তার উপর অতিরিক্ত বোঝা না চাপিয়ে না দেবার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

৯. গৃহকর্মীদের পরিবারকে অবহিত করা

গৃহকর্মীদের পরিবারের প্রতি ইনসাফ বা যথাযথ তথ্য সবসময় দেওয়া উচিত। তার সুস্থ অসুস্থতা ছাড়াও মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলা এবং দেখতে নিয়ে যাওয়া খুবই দরকার পরিবারের লোকেদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। ঈদের সময় গুলোকে তাদের বখশিশ দিতে হবে এবং বাড়িতে যেতে দিতে হবে। সে সময় তার পিতা-মাতা,ভাইবোনদের জন্যে কিছু উপহার দিলে, সেই মেয়ে খুব কৃতজ্ঞ থাকবে। যদিও আইন অনুযায়ী এটা তার ব্যক্তিগত খরচ, কিন্তু গৃহকর্তা এটাকে সহযোগীতা করলে তার ফলাফল হবে অনেক ভালো।

১০. ঘুরতে নিয়ে যান

পরিবারের সন্তানদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে গেলে তাকেও নিতে হবে। এবং মাঝে মাঝে তাকে বাইরে কোনো পার্কে নিয়ে যেতে হবে। এতে তার একঘেয়েমী ধুর হবে।

মনে রাখতে হবে যে তিনিও, একজন আল্লাহর বান্দা/বান্দী।

রাসূল(সাঃ) বলেছেন,সাবধান..তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, পিতা তার পরিবারে দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককেই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে অধিনস্তদের(গৃহকর্মীদের) ব্যাপারে।

আরেক হাদীসে বলা হয়েছে আখিরাতে দায়িত্বশীলদেরকে শেকল পরিহিত অবস্থায় উঠতে হবে, অনিস্তরা তার ব্যাপারে অভিযোগ প্রত্যাহার করলে বা ভালো রিপোর্ট দিলেই কেবল ছাড়া হবে।

অন্যের দায়িত্ব গ্রহন করা মানে ফাঁসির দড়ি গলায় পরা। ফলে সেই অধিনস্তদের সাথে অবশ্যই ন্যায় বিচার করতে হবে।

“রসূল(সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে ,অন্যের জন্যেও তাই পছন্দ করে” —সম্ভবত বুখারী বর্ণিত

এর ফলাফল দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কল্যানকর। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।

 

ধর্ষণ এবং প্যাভলভ তত্ত্ব

ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস


৬ বছরের শিশু, আপাদমস্তক বোরখাবৃতা কিংবা ৬০ বছরের বৃদ্ধারা ধর্ষিত হওয়ার ১৩৮ বছরের পুরানো মেডিকেলীয় ব্যাখ্যা

অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলেও সত্য ১৩৮ বছর আগে রাশিয়ান বিজ্ঞানী পাভলভ এই ব্যাখ্যাটা দিয়ে গেছেন। বিজ্ঞানী পাভলভের এই কনসেপ্ট প্রত্যেক ডাক্তারকে তাঁর মেডিকেল লাইফের সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে হয়।

সহজভাবে বলার চেষ্টা করি – নন মেডিকেলদের জন্য দেখি বলতে পারি কিনা।

বিজ্ঞানী পাভলভ একদল কুকুরকে ল্যাবে বেঁধে রেখে দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরিক্ষা করেছিলেন। তিনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তাদের খাবার দিতেন। কুকুরের সামনে থাকত খাবারের বাটি এবং আয়না। সেখানে পাভলভ কুকুরের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতেন। প্রতিদিন ঠিক একই সময়গুলিতে কুকুর গুলিকে খাবার দেওয়া হত। পাভলভের সাথে থাকতেন তাঁর ল্যাব সহকারী। খাবার গ্রহণের সময় কুকুরের কী পরিমাণ লালা ঝরত সেটি একটি কন্টেইনারে মাপা হত।
ব্রেইনের স্বাভাবিক রিফ্লেক্স হল খাবার গ্রহণের সময় লালা ঝরা।
কিন্তু পাভলভ দেখলেন যে – খাবার গ্রহণ নয়, খাবার দেখেও এবার কুকুরের লালা ঝরতে শুরু করেছে। পাভলভ খাবার দেখে কুকুরের কী পরিমাণ লালা ঝরত সেটি ও কন্টেইনারে মাপার ব্যবস্থা করলেন।

বেশ কিছু দিন যাওয়ার পর পাভলভ দেখলেন তিনি ল্যাবে ঢুকলেই কুকুরের লালা বের হচ্ছে।
সাথে খাবার থাক আর না থাক।

পাভলভ এবার নিজে ল্যাবে না গিয়ে খাবার বিহীন অবস্থায় তাঁর ল্যাব সহকারীকে ল্যাবে পাঠালেন। ল্যাব সহকারী অবাক হয়ে দেখলেন তাকে দেখে ও (ল্যাব সহকারী) দেখেও কুকুরের লালা ঝরছে।
পাভলভ এবার ভিন্ন কিছু করলেন।

তিনি কুকুরকে খাবার দেওয়ার সাথে সাথে একই সময়ে একটি ঘণ্টি বাজাতে থাকলেন।
খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং ঘন্টি বাজানো হচ্ছে।

এরপর পাভলভ এবং সহকারী একদিন খাবার ছাড়াই ল্যাবে আসলেন এবং ঘন্টি বাজাতে শুরু করলেন।

দেখলেন খাবার না দেওয়া সত্ত্বেও কুকুরগুলোর একই পরিমাণ লালা ক্ষরণ হচ্ছে।

পাভলভ সিদ্ধান্তে আসলেন – খাবারের প্যাকেট, ল্যাব এসিস্টেন্ট, ঘন্টির শব্দ – এগুলি সব নিউট্রাল স্টিমুলেশন। এগুলির সাথে লালা ক্ষরণের সম্পর্ক নেই। কিন্তু কুকুর তার লার্নিং বিহেভিয়ারে খাবারের সাথে খাবারের প্যাকেট, পাভলভ, ল্যাব সহকারী বা ঘণ্টার শব্দকে কো রিলেট করে ফেলেছে। এবং খাবারের সাথে যা যা ঘটে সব কিছুকেই লালা ক্ষরণের উপাদান হিসেবে তার ব্রেইন ডিটেক্ট করছে।

ব্রেইনের এই লার্নিং মেথডকে তিনি “কন্ডিশনিং” এবং ‘কন্ডিশান্ড রিফ্লেক্স’ বলেছেন।

অর্থাৎ ব্রেইন এমন একটি স্টিমুলেশনের প্রতি সাড়া দিচ্ছে, যেটিতে ব্রেইনের আদৌ রেস্পন্স করা উচিত না, কিন্তু করার কারন হচ্ছে ব্রেইন এই স্টিমুলেশনকে আরেকটি স্টিমুলেশানের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেছে।

মানুষ কুকুর নয় যে, মেয়ে দেখলেই তাকে ধর্ষণ করবে।

তবে মানুষের মধ্যে পশুত্ব আছে।

বিখ্যাত নিউরোলোজিস্ট এবং পরবর্তীতে সাইকিয়াট্রিস্ট ফ্রয়েড বলেছিলেন, যাকে আমরা মন বলি সেটি মূলত তিনটি সত্ত্বার সম্নবয়ে গঠিত – ইড, ইগো এবং সুপার ইগো।
অর্থাৎ মানব মন এই তিনটি গাঠনিক উপাদানে তৈরি –

“ইড” মূলত মানুষের জৈবিক সত্ত্বা।

মানব মনের স্বভাবজাত চাহিদা পুরণ করে ইড।

এটিকে “মন যা চায় তাই” এর সাথে তুলনা করা যায়।

“ইড” মানুষ এবং পশু সবার মাঝেই সমানভাবে বিরাজমান। এর কোন মানবিক দিক বা বিকাশ নেই। “ইড” এর পুরোটাই লোভ লালসা ও কাম চিন্তায় ভরপুর। “ইড” এমন ভাবে মানুষ কে প্ররোচিত করে যে, প্ররোচনায় মানুষ যে কোন অসামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে, খুন-ধর্ষণ পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না। এক কথায়, “ইড” হচ্ছে আমাদের ভিতরের সুপ্ত পশু।

সুপার ইগো হচ্ছে মানুষের বিবেক।

ইড যখন জৈবিক কামনা বাসনা পুরণ করতে উদ্দীপ্ত করে, তখন সুপার ইগো একে বাধা দেয়।

সুপার ইগো মানুষকে সব সময় মানবিক দুর্বলতার উর্ধে উঠে ভাল কাজ করার জন্য মানুষকে উদ্দপ্ত করে।

এই বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে ব্যক্তির নৈতিক, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক শিক্ষা এবং মুল্যবোধের উপর।

অন্যদিকে ইগো হচ্ছে এই দুই অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টিকারী একটি অবস্থা।

ইগো এবং সুপার ইগো র মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা ই এর কাজ।

ইড বলবে – I need to get it.

সুপার ইগো বলবে – You have no right to get it

ইগো বলবে – I need some plan to get it. অর্থাৎ ইগো ইডের ইচ্ছাটা বাস্তবায়ন করবে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে।

পশু রা ইড চালিত।

তাই তারা কেবল জৈবিক চাহিদা (খাবার এবং যৌনতা) পুরণেই ব্যস্ত।
আবার মানুষের মধ্যে যখন “ইড” ডমিনেন্ট হয়ে যায়, তখন সে উন্মাদ ও অমানুষ হয়ে যায়।
আর যখন কেবল সুপার ইগো কাজ করে – তখন সে সাধু সন্যাসী পবিত্র হয়ে যায়।
ইগো এই দুই অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

যেমন মানুষের মধ্যে যখন সুপার ইগো ডমিনেন্ট হয়, তখন অনেক সময় তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন চলে আসে। ইগো তখন ব্যালেন্স করে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সুপার ইগোকে মানতে গিয়ে আমরা আমাদের বিভিন্ন চাহিদা পুরণ করতে পারি না। আমাদের এই অপূরণীয় চাহিদায় মন তখন বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তখন বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে ইগো কাজ করে।
জীব হিসেবে মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর তেমন বেশি ডিফারেন্স নেই।
উভয়েরই ইড আছে।
কিন্তু মানুষের এর সাথে দুইটা জিনিস আছে ইগো এবং সুপার ইগো।

কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি

পর্ণ মুভি দেখতে চমৎকার, অতএব পর্ণ দেখ (ইড)

পর্ণ মুভি দেখা নৈতিকতা বিরোধী, মানুষ এটাকে খারাপ বলবে, অতএব দেখা যাবে না (সুপার ইগো)

লুকিয়ে পর্ণ মুভি দেখ, অসুবিধা কী? মানুষ তো জানবে না, আর মনের চাহিদা ও মিটল (ইগো, ব্যালেন্স করতেছে দুই দিক)

মেয়েটি সুন্দরী, অতএব ওকে ইভটিজিং বা রেইপ করো (ইড)

রেইপ, ইভটিজিং অপরাধ, অতএব করা যাবে না (সুপার ইগো)

মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করো, সম্ভব হলে প্রেমের প্রস্তাব দাও, মন পাওয়ার চেষ্টা করো, মন পেলে শরীর কোন এক সময় পাবে (ইগো)

ইড, ইগো এবং সুপার ইগো র আপেক্ষিক তীব্রতা স্থিতিশীল নয়, বরং পারিপার্শিকতার সাথে পরিবর্তনশীল।

যেমন সুপার ইগো তথা বিবেক অসুস্থ হয়ে গেলে তখন সে তার কাজ অর্থাৎ অন্যায় কাজে বাধা দিতে পারে না।

দেহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – খাবার না খেলে/পেটে খাবার না থাকলে ক্ষিদের অনুভূতি সৃষ্টি করে সেটি জানিয়ে দেওয়া। কিন্তু ক্রমাগত না খেয়ে থাকলে, দেহের দাবী অস্বীকার করলে দেহ অসুস্থ হয়ে যায় তখন সে স্বাভাবিক ক্ষিদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না।

তেমনি সুপার ইগো তথা বিবেকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – সে খারাপ কাজে আপনাকে বাধা দিবে, কিন্তু যখন আপনি কন্টিনিউয়াসলি সুপার ইগোকে অস্বীকার করবেন, অমান্য করবেন – তখন এটি দুর্বল হয়ে যাবে এবং অন্যায় কাজে কার্যকর বাধা দিতে পারে না।

একজন মাদকাসক্ত প্রথম যে দিন মাদক সেবন করে, তখন “সুপার ইগো”র জন্য তার মধ্যে কিন্তু প্রচন্ড অনুশোচনাবোধ হয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে মাদক সেবন তার এই অনুশোচনা র তীব্রতা কমিয়ে দেয়।

প্রথম যে ব্যক্তি পর্ণ দেখে, “সুপার ইগো”র জন্য তার মধ্যে কিন্তু প্রচন্ড অনুশোচনাবোধ হয়। কিন্তু সে যখন আসক্ত হয়ে যায়, তখন ধারাবাহিকভাবে অনুশোচনাবোধ কমে আসে।

সুতরাং মানুষ যদিও ইগো এবং সুপার ইগো দিয়ে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা, কিন্তু সুপার ইগো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পশুত্ব জেগে উঠে।

চলবে…

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি) – শেষ পর্ব

আফরোজা হাসান


স্বামীর অনৈতিক কর্মকান্ডের পেছনে আমারো দায় থাকতে পারে এমন চিন্তা নিজ থেকে হয়তো কখনোই মনে আসতো না।

কিন্তু চিন্তাটা মনে ঢোকার পর অনেক ভেবেছি এটা নিয়ে। নিজেকে দেখতে চেষ্টা করেছি বিবেকের আয়নায়। তখন খুঁজে পেয়েছি নিজের মাঝে বিদ্যমান অসংখ্য ভুল ও ত্রুটি সমূহকে।

ভেবে দেখলাম আমাদের জীবনে বাচ্চারা আসার পর থেকে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল ধীরে ধীরে। বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া শুরু করার পর সেই দূরত্ব আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্বামী সাথে তেমন করে সময় কাটানো, গল্প করা হয়ে উঠতো না খুব একটা। বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বললেও বেশির ভাগ সময়ই আপত্তি করেছি। কেননা দুই বাচ্চাকে রেডি করে নিজে রেডি হওয়া। ফিরে এসে আবারো বাচ্চাদের এবং সংসারের সবকিছু গোছানো। অনেক ঝামেলা মনে হতো।

আসলে সংসার আর বাচ্চাদের পিছনেই আমার পুরো মনোযোগ ছিল। স্বামীর দিকে যে খেয়ালই দিচ্ছি না সেই উপলব্ধিটিই কাজ করেনি মনে। এখন বুঝতে পারছি কি ভুল করেছি আমি। আমার এইসব আচরণের কারণেই হয়তো দেরি করে বাসায় ফেরা শুরু করেছিল। এবং একসময় জড়িয়ে পড়েছে অনৈতিক কাজের সাথে। এখন অনুধাবন করতে পারছি যে আসলেই যতটা ভালোবাসা ও কেয়ার সে দাবী করতো ততটা হয়তো আমি প্রকাশ করে দেখাতে পারিনি কথা, কাজ ও আচরণের দ্বারা। আর সেজন্যই হয়তো আজ ভুক্তভোগী আমি।

নুসরাহ বলল, আলহামদুলিল্লাহ! আপনি নিজের ভুলগুলো ধরতে পেরেছেন তাই ভীষণ ভালো লাগছে। এখন আপনাকে সেই ঘাটতিগুলো দূর করার চেষ্টা করতে হবে যার কারণে আপনাদের সম্পর্ক আজ এমন একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।

নিজের ভুল স্বামীর কাছে সুন্দর করে স্বীকার করুন। একে অন্যকে সাহায্য করুন নিজ নিজ ভুল থেকে বের হয়ে আসতে।

দুজন মিলে কাজ করুন সম্পর্কটিতে আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে। উদারতা, ক্ষমা, ধৈর্য্য, অপরকে অগ্রাধিকার দেয়া, ভালোবাসা, ত্যাগ ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পর্কের মাঝে মধুরতা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করুন।

জানি বেশ কঠিন কাজ এটা। তবে সব জটিলতা, কাঠিন্যতা দূরীভূত হয়ে যাবে যদি আপনারা শরীয়তের দেখানো পথে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করার চেষ্টা করেন। দুনিয়ার নানান প্রলোভন, মায়াজাল ইত্যাদি সবকিছুর হাত থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচানোর একমাত্র রক্ষা কবচ হচ্ছে শরীয়ত। তাই দুজন মিলে সর্ব শক্তি দিয়ে শরীয়তকে আঁকড়ে ধরুন।

রামিছা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এটাই আসলে ভুল হয়ে গিয়েছে আমাদের। আমরা শরীয়তের আলোকে নিজেদের জীবনকে সাজাতে চেষ্টা করিনি। তা না হলে আমি কখনই স্বামীর হক আদায়ে গড়িমসি বা অবহেলা করতে পারতাম না। আর উনিও একাকীত্ব বা মনের শান্তি লাভের আশায় যিনার মত গোনাহতে নিমজ্জিত হতেন না।

হুম.. আমরা বেশির ভাগ সময়ই জীবনে এমনি আসা বা পাওয়া নিয়ামত সমূহের কদর করতে পারিনা। একজন প্রেমময় স্বামী বা স্ত্রী এবং তাদের ভালোবাসা যে কত বড় একটা নিয়ামত সেটা জীবনে কোন দুর্ঘটনা সংঘটিত হবার আগে আমরা বেখবর থাকি।

অথচ রাসূল (সঃ) বলে গিয়েছেন, “তোমরা কাউকে ভালোবাসলে সেটা মুখে প্রকাশ করো এতে তোমাদের ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে।”

তিনি আরো বলে গিয়েছেন, “ যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া জানায় না সে আল্লহর শুকরিয়া জানায় না।”

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের মনেই থাকে না এই রাসুল (সঃ) এর বলে যাওয়া এইসব বানীর কথা। তাই তো আমরা একে অন্যেকে শুকরিয়া জানাই না, ভালোবাসা প্রকাশ করি না। মনে করি কি দরকার আছে এসবের?!

ভালোবাসি সেটা তো জানেই। স্বামীকে আবার শুকরিয়া বলার কি আছে? স্বামী সাহায্য করবে এটাই তো স্বাভাবিক। অথচ এই স্বাভাবিক কাজগুলোতে ছোট্ট ছোট্ট স্বীকৃতি আমাদের জীবনে প্রবাহিত করতে পারে জান্নাতি সুবাতাস।

আমি এখন বুঝতে পারছি সবকিছুই। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ইনশাআল্লাহ! আরেকটা খুব বড় ভুল স্বামী-স্ত্রী করেন জীবনে সন্তান আসার পর। সন্তানের অযুহাত দেখিয়ে তারা একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যান ধীরে ধীরে।

অথচ হওয়াতো উচিত ছিল উল্টো তাই না? সন্তান আসার পর আরো মজবুত হবার কথা বন্ধন। স্বামী বাড়িতে থাকেন না সবসময়। সন্তানদের নিত্যনতুন দুষ্টুমি, মজার মজার কান্ড ইত্যাদি উপভোগও করতে পারেন না তেমন করে। এসবই হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধির অসাধারণ একেকটি উপকরণ। সন্তানদের দুষ্টুমিতে আনন্দ পান না এমন বাবা-মা খুব কম আছেন।

কখনো সন্তানদের দুষ্টুমির ফিরিস্তি দিতে গিয়ে কপট রাগ বা অভিমানের স্বরে একে অন্যকে বলা, একদম তোমার মত দুষ্টু বা এখন থেকেই বাচ্চাকে শাসন করতে হবে নয়তো তোমার মতো অবাধ্য হয়ে যাবে, ইত্যাদি। এসব খুনসুটি দাম্পত্যকে আরো মাধুর্যময় করে তুলতে পারে। কিন্তু শুধু আমরা সচেতন নই বলেই এসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবার সাথে সাথে, জীবনেও ডেকে আনি নানান বিপর্যয়।

আসলে আমরা জানিই না জীবনকে কিভাবে উপভোগ করতে হয়।

অথচ দেখুন শরীয়তে কিন্তু সবই বলে দেয়া আছে।

হাদীসে এসেছে, “স্ত্রীদের সাথে রাসুল (সঃ) খুবই উদার, প্রেমময় ও হাসিখুশি ছিলেন। তিনি মুচকি হাসি ছাড়া কথা বলতেন না।”

হাদীসে আরো বলা আছে, “যে ব্যক্তি পরনারীর দিকে নজর পড়লে দৃষ্টি সংবরণ করে নেয় তার জন্য আল্লাহ হৃদয় শীতলকারী ইবাদত সৃষ্টি করেন”।

আমরা কুরআন ও হাদীসের চর্চা করি না বলেই একটা ভুল পরিস্থিতিতে কি আচরণ করতে হবে সেটা জানি না। তাই নিজেকে বিরতও করতে পারি না। আর শয়তান এই সুযোগগুলোকেই কাজে লাগায়।

হুমম…!

যাইহোক, যে ভুল সংঘটিত হয়ে গিয়েছে আপনাদের দ্বারা সেটা আর ঠিক করার কোন উপায় নেই।

সেজন্য একে অন্যেকে দোষারোপ বা পাপী তাপী না ভেবে মন থেকে ক্ষমা করে দিন। এরপর নতুন ভাবে আবারো শুরু করুন জীবন। যখনই কোন সমস্যা আসবে জীবনে সমাধানের জন্য শরীয়তের কাছে যাবেন।

ইনশাআল্লাহ দেখবেন সবকিছু সহজ হয়ে যাচ্ছে। বাসার কুরআন ও হাদীসের চর্চা শুরু করুন। নিজেরা তো করবেনই সাথে সন্তানদেরকেও রাখবেন। আর শরীয়ত স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি যে হক নির্ধারণ করেছেন তা আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রামিছা বলল, জাস্ট জানার জন্য বলতে জিজ্ঞেস করছি। ধরুন এই সবকিছু করার পরও যদি আমার স্বামী ফিরে না আসে বা নিজেকে ফেরাতে না পারে বিপথ থেকে তাহলে আমার কি করণীয়?

আপনার স্বামীর ক্ষেত্রে যদি এমনটা ঘটে তাহলে সর্বশেষ যে সমাধানটি রয়েছে সেটি হচ্ছে উনাকে ঐ মেয়েটিকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়ে দেয়া।

জানি খুব অবাক হচ্ছেন আমার কথা শুনে। কিন্তু আপনি নিজেই ভেবে দেখুন এত কিছুর পরও যদি আপনার স্বামী নিজেকে ঐ মেয়েটির কাছ থেকে নিজেকে ফেরাতে না পারেন। এর অর্থ উনি মেয়েটার সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছেন যে ফিরে আসাটা উনার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার আপনার পক্ষেও সম্ভব নয় এই বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়া। সেক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান আসলে দ্বিতীয় বিয়েই। এতে করে অন্য একটি মেয়ের সাথে আপনার স্বামী নাজায়েজ সম্পর্কে জড়িত এই দহন পীড়া থেকে মুক্তি মিলবে আপনার।

শরীয়ত ও সমাজের চোখেও নিন্দিত হতে হবে না আপনাদের কাউকে। আপনাদের সন্তানদের উপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির সুযোগ কমে যাবে। বাবার নাজায়েজ সম্পর্কের চেয়ে বাবার দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নেয়াটা অনেক বেশি সহজ সন্তানদের জন্য।

আর যেহেতু সন্তানদেরকেও আপনি শরীয়ত দিয়েই বিষয়টা বোঝাতে চেষ্টা করবেন। প্রথমে রাগ, ক্ষোভ থাকলেও একটা সময় বুঝবে ও মেনে নেবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি বোঝাতে পেরেছি আপনাকে।

যাইহোক, কি হবে, কি হবে না এসব ভেবে নিজের কাজকে জটিল করতে যাবেন না। বর্তমানে যা করণীয় সেটি আগে ভালোমতো করার চেষ্টা করুন। যদি ব্যর্থ হন তখন পরের চিন্তা করবেন। ব্যর্থ হবার পর কি করবেন সেই চিন্তা আগে থেকেই করার অর্থ হচ্ছে নিজের সফলতার ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত নন।

আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আপনাকে শতভাগ ইতিবাচক মন নিয়ে নিজের জীবনকে সাজানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করতে হবে। চলার পথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মৌলিক বিষয় সমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন শুধু।

দ্বিতীয় বিয়ের কথাটা শুনে চেহারায় আঁধারে ছেয়ে গিয়েছিল রামিছার। সেখানে সামান্য উজ্জলতা দেখা দিল। হেসে বলল, ঠিক বলেছেন আগে থেকেই কি হবে, না হবে ভাবার কোন মানে নেই। এতে শুধু মন দুর্বল হবে। আর শয়তান সেই দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইবে।

আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমি আজ থেকেই আমার সংসারের সুখ-শান্তি ও পবিত্রতা ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম শুরু করলাম। ইনশাআল্লাহ নিজের শক্তি ও সামর্থ্যের শত ভাগ দিয়ে আমি চেষ্টা ততদিন পর্যন্ত জারি রাখবো যতদিন পর্যন্ত আমার স্বামীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে না পারি।

  1. নুসরাহও হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ।

পর্ব-১

পর্ব-২

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি)- ২য় পর্ব

আফরোজা হাসান


বেশ অবাক হয়েই নুসরাহর দিকে তাকালো রামিছা। অস্ফুট স্বরে বলল, আমার দায়? আমি তো এমনকিছুই করিনি কখনোই। স্বামী ও সংসারের প্রতি আমি সবসময় বিশ্বস্ত ছিলাম, আছি।

নুসরাহ বলল, আপনি আসলে আমার প্রশ্নটি বোঝেননি রামিছা। খুবই চমৎকার ছোট্ট সুখের সংসার ছিল আপনাদের। কোন কিছুর অভাব যেমন ছিল না। তেমনি বন্ধনগুলোও ছিল সুন্দর। স্বামী আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবাসেন সেটা কথা শুনেই বোঝা গিয়েছে। পনেরো বছর কিন্তু অনেক লম্বা সময়। এতটা বছর একসাথে।

মিলেমিশে কাটানোর পর হঠাৎ করে এমন কি ঘটলো যে আপনাদের জীবনে তৃতীয় একজন জায়গা করে নিলো?

এই প্রশ্নটি কি একবারও মনে আসেনি আপনার?

না এভাবে তো ভেবে দেখিনি আমি!

অথচ এ কথাটাই কিন্তু সবার আগে ভেবে দেখা উচিত ছিল। আমার অভিজ্ঞতা বলে যে, একটা সংসার গড়তে যেমন দুজন ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ে। ঠিক তেমনি ভাঙতেও দুজনকেই অংশগ্রহণ করতে হয়। দোষ কম-বেশি হতে পারে এটা ঠিক। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই দোষ দুজনেরই থাকে এই ধরণের কেসে। এমন প্রেমময় একজন স্বামী কেন বদলে গেলো এই প্রশ্নটা আসা উচিত ছিল আপনার মনে।

ভাবা উচিত ছিল এমন কি ঘাটতি সংঘটিত হয়েছে আপনার দ্বারা যার ফলে আপনার স্বামীকে অন্য নারীর দিকে হাত বাড়াতে হয়েছে। দেখুন আমি আপনাকে কষ্ট কিংবা অপ্রস্তুত করতে চাইছি না মোটেও। আপনি যদি বলতেন যে আপনার স্বামী খুবই খারাপ লোক, গায়ে হাত তোলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে এসব প্রশ্ন আমি কখনোই জানতে চাইতাম না। কিন্তু একজন ভালো মানুষ কেন খারাপ পথে চলতে শুরু করলো সেটা অবশ্যই জানা উচিত।

আমি কি উনাকে জিজ্ঞেস করবো?

না আগে আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। শান্ত মনে নিজেকে বিবেকের আয়নায় দেখুন। নিজের কোন দোষ বা ভুলকে ঢাকার চেষ্টা করবেন না। যখন আপনি সমস্যার মূলে পৌছাতে পারবেন তখনই সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হবে।

নিজের দোষ অনুসন্ধানের সাথে সাথে আরেকটি কাজ আপনি করবেন। সেটি হচ্ছে একসাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো স্মরণ করবেন স্বামীর সাথে বসে। তাকে মনে করিয়ে দেবেন কত সুন্দর একটি জীবন আপনারা একসাথে উপভোগ করেছিলেন। বাচ্চাদের বিষয়ে কথা বলবেন বেশি বেশি। ওদের ভবিষ্যৎ, পড়াশোনা, বিয়ে, এমনকি গল্প করতে করতে নিজেদেরকে নানা-নানু পর্যন্ত বানিয়ে ফেলবেন।

যে কাজটি করবেন না সেটি হচ্ছে ঝগড়া, খোঁচা দিয়ে কথা বলা, মুখ গোমড়া করে থাকা, এবং আলাদা বিছানায় ঘুমানো।

এ সব করলে কি ঠিক হয়ে যাবে আমার স্বামী?

আপনি আপনার স্বামীর যে পরিচয় দিয়েছেন তাতে এসব করলে তার মনে প্রভাব পড়বে আশা করি ইনশাআল্লাহ। সে ভুল পথে চলছে এই উপলব্ধিও জাগ্রত হয়ে উঠতে পারে তার মনে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শরীয়তের বিধি-বিধান, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করবেন স্বামীর সাথে, পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে। আপনার পক্ষে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে দেখুন। তারপরও যদি আপনার স্বামী সঠিক পথে ফিরে না আসে তখন অন্য কিছু চিন্তা করা যাবে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রামিছা বলল, নিজের দোষ বলতে ঠিক কি খুঁজে দেখবো আমি? আপনি একটু যদি বুঝিয়ে বলে দিতেন?

মানুষের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে ভালোবাসাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে না পারা। কেউ আমাদেরকে ভালোবাসলে আমরা সেই ভালোবাসাকে স্বীকৃতি ও বদলে তাকে ভালোবাসা দেবার চাইতে বরং সেটাকে দুর্বলতা হিসেবেই ব্যবহার করি বেশির ভাগ সময়। কারো ভালোবাসা পাবার জন্য আমরা যে চেষ্টা ও সাধনা করি। কারো ভালোবাসা অর্জন করে ফেলার পর সেভাবে আর কদর করি না।

আর যে ভালোবাসা না চাইতেই পেয়ে যাই সেটাকে তো নিজের হক বলে ভেবে নেই। এই যেমন ধরুন কেউ আপনাকে এসে বললো যে, তার হাজবেন্ড একটুতেই গায়ে হাত তোলে কারণে অকারণে। আপনি তাকে সান্ত্বনা দেবেন, তার হাজবেন্ডকে বকাঝকা করবেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আপনি যে কত ভালো একজন হাজবেন্ড পেয়েছেন সেটা মনে করতেই ভুলে যাবেন। আমরা মানুষেরা আসলে এমনই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। কেউ হাজার ভালো করলেও তেমন করে তাকে মূল্যায়ন করি না। কিন্তু যদি একটি খারাপ কাজ, কিন্তু এমন কোন কাজ করে যা আমাদের পছন্দ নয়। আমরা কঠোরতা প্রদর্শন করতে এক মুহুর্ত দেরি করি না।

হ্যা, এটা তো আসলেই সত্যি!

নুসরাহ বলল, আবার যে সংসারের স্বামীরা রাগী সেই সংসারের স্ত্রীদের দেখা যায় স্বামী ঘরে ফেরার আগেই চেষ্টা করে সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে ফিটফাট করে রাখতে। কিন্তু যে সংসারের স্বামীরা নরম মনের মানুষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের আসা যাওয়ার ব্যাপারে স্ত্রীরা বাড়তি কোন সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। এমনও হয় স্বামী বাসায় ফিরেছেন আর স্ত্রী হয়তো টিভি নিয়েই বসে আছে। উঠে কোন কিছু লাগবে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন না।

জ্বি আমি বুঝতে পেরেছি আপনার কথা। আমি সবকিছু ভেবে আপনাকে জানাবো।

নুসরাহ হেসে বলল, আপনি এক দিক দিয়ে অনেক ভাগ্যবতী কারণ কোন ধরণের শারীরিক অত্যাচার আপনাকে হতে হয়নি। এবং এখনো আপনার স্বামী আপনার কেয়ার করে। নয়তো বেশির ভাগ সময়ই এমন ভয়ংকর সব সমস্যা নিয়ে মানুষ হাজির হোন! তখন তাদেরকে জীবনের সুখের সময়ের কথা চিন্তা করে দেখতে বলার কোন সুযোগ থাকে না।

আপনার স্বামীর অন্যায়টি মোটেও কম কিছু নয়। কিন্তু যেহেতু আপনি চাইছেন সংসারটা টিকিয়ে রাখতে।

সুতরাং, চেষ্টার পেছনে আপনার হান্ডেড পার্সেন্ট দিতে চেষ্টা করুন। নিজের জন্য, সন্তানদের জন্য এবং আপনার স্বামীর জন্যও।

চলবে….

পর্ব-১

 

আপনার শিশুকে চিনুন ৮ টি উপায়ে’ (শেষ পর্ব)

এ কে এম ওমর ফারুক


দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা :
এই শ্রেণীভুক্ত শিশুরা ছবির বিষয়বস্তু সম্বন্ধে চিন্তা করে। ছবির সাহায্যে মনে রাখে। ছবি আঁকতে ও রং করতে ভালোবাসে। প্রতিকৃতি বানাতে পছন্দ করে। মানচিত্র চার্ট ও নং সহজে বুঝতে পারে। কোন কিছুর চিত্র সহজে কল্পনা করতে পারে। রূপক শব্দ ও বাক্য বেশি ব্যবহার করে।

অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা :
যে শিশুরা খেলাধুলা পছন্দ করে তার অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীর বুদ্ধিমত্তার শ্রেণীভুক্ত। এ ধরনের শিশুরা কোন কিছু সহজে ধরতে চায়। হাতেনাতে কাজ করতে পছন্দ করে। হস্ত শিল্পে দক্ষ হয়। শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে। অংশগ্রহণ করে সহজে শেখে। বস্তু সহজে নিয়ন্ত্রণ করে। শুনে বা দেখে শেখার চেয়ে নিজে করে শেখে এবং মনে রাখে।

ছন্দ ও সঙ্গীতমূলক বুদ্ধিমত্তা :
কিছু শিশুর তাল ও লয়ের প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। সুর ও ছন্দ সহজে এদের মনে প্রভাব বিস্তর করে। এরা গান পছন্দ করে। কবিতা ও ছড়ার তালে তালে আবৃত্তি করতে পছন্দ করে। বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পছন্দ করে। প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দের প্রতি সহজে আকৃষ্ট হয়। এরা ছন্দ ও সঙ্গীতমূলক বুদ্ধিমত্তার আওতাভুক্ত।

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা :
এরা সহজেই অন্যের মনের কথা বুঝতে পারে। অন্যের সঙ্গে সহজেই সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এদের অনেক বন্ধু-বান্ধব থাকে। অন্যের সমস্যা সমাধানে ঝগড়া-বিবাদ মেটাতে এরা পছন্দ করে। এরা দলভুক্ত হয়ে কাজ করতে ভালবাসে। অন্যের কাজে সহযোগিতা করে এবং সামাজিক পরিস্থিতি সহজেই বুঝতে পারে।

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা :
প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি যারা বিশেষভাবে দুর্বল তারা প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। সাধারণত এরা প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করে। তাছাড়া জীব ও জড়োর বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করে। গাছপালা-পশুপাখি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করে। গাছপালার যত্ন করতে ভালবাসে। প্রকৃতির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করতে আনন্দ পায়। সর্বপরি প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করে।

পৃথিবীর সকল শিশুই শুধু নয় সকল মানুষই এই আটটি বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেকটি মানুষের ভেতর এই আটটি বুদ্ধিমত্তার যে কোন একটি প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয় এবং পাশাপাশি অন্য বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এই বিষয়গুলো যে কারও আচরণে লক্ষ করলেই স্পষ্ট পরিলক্ষিত হবে।

একটি শিশুর সফলভাবে বেড়ে ওঠার জন্য তার বুদ্ধিমত্তাকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তার লেখাপড়া ও কাজে-কর্মে উৎসাহ প্রদান করা প্রয়োজন। তাহলে প্রত্যেকটি শিশুই সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।

পর্ব-১

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি)- ১ম পর্ব

আফরোজা হাসান


ছোট্ট সুখের নীড় বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমনটিই ছিল আমার জীবন। আদর, সোহাগ ও ভালোবাসায় আগলে রাখা একজন প্রেমময় অসাধারণ স্বামী। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে ভীষণ আনন্দময় একটা জীবন কাটাচ্ছিলাম। প্রচন্ড ভালোবাসতো আমাকে আমার স্বামী। পিতা হিসেবেও খুবই দায়িত্ব সচেতন ছিলেন সবসময়ই। সুখের সাগরে ভেসে কাটছিল আমাদের দিন।

এরই মধ্যে একদিন জানতে পারলাম আমার স্বামীর অন্য একটি মেয়ের সাথে গোপন সম্পর্কের কথা।

প্রথমে কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায়নি মন। কিন্তু খোঁজ খবর নেবার পর বুঝলাম যা শুনেছি সবই সত্যি। অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রায় দেড় বছর যাবত চলছে তার এই গোপন অনৈতিক সম্পর্ক। পুরো দুনিয়া থমকে গিয়েছিল আমার সামনে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ কোনদিন স্বামীর ব্যবহার থেকে এমন কিছুই আঁচ করতে পারিনি আমি। আমাদের সম্পর্কের মাঝেও কখনোই এমন কোন সমস্যা আসেনি যে সে এমন কিছু করতে পারে। কি করবো কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। কার কাছে বলবো এই ভয়াবহ লজ্জার কথা?!

কয়েকটা দিন গোপনে শুধু কান্না করেছি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি। আমার মানসিক অবস্থা দেখে স্বামী খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিল। বারবার জানতে চাইছিল কি হয়েছে আমার। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করে দিয়েছিল। তখনো আমার ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো এত ভালোবাসা যার চোখে মুখে সে কেমন করে এমন করতে পারলো আমার সাথে? কেমন করে অন্য মেয়ের সাথে জড়ালো?!

শেষপর্যন্ত খুব কাছের এক বান্ধবীর কাছে খুলে বললাম মনের সব কথা। বান্ধবীটি খুবই প্রাক্টিসিং একজন মুসলিমাহ ছিলো। সে আমাকে সাহস দিলো। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিলো। বললো পরিবারকে না জানিয়ে আগে নিজেই স্বামীর সাথে কথা বলতে। যেহেতু আমার আর আমার স্বামীর মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল বিয়ের প্রথম থেকেই। আমি বান্ধবীর পরামর্শ মেনে নিয়েছিলাম। সরাসরি আমার সন্দেহের কথা স্বামীকে বললাম। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও একসময় মেনে নিলো তার অনৈতিক কাজের কথা। খুবই অনুতপ্ত হয়েছিল সেদিন সে। বারবার আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। ভুলের পথ থেকে ফিরে আসবে এই ওয়াদা করলো।

আমি চাইনি আমার সংসারটা ভেঙ্গে যাক।

প্রথমত, আমার সংসার সুখেরই ছিল এই ঘটনা জানার আগে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের তের বছর ও নয় বছর বয়সী দুটি ছেলে-মেয়ে ছিল। সংসার ভাঙ্গা মানে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দেয়া।

তৃতীয়ত, আমি স্বাবলম্বী কোন নারী না। বাবার বাড়িতেও আমার বোঝা তুলে নেবেন হাসিমুখে এমন কেউ নেই। আর সবচেয়ে বড় কারণ দীর্ঘ পনেরো বছরের সংসারের মায়া এত সহজে ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

এরচেয়েও বড় কারণ স্বামীর প্রতি আমার ভালোবাসা নিখাদ ও পবিত্র ছিল। তাই সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু ত্যাগ স্বীকার আমার পক্ষ থেকে করা সম্ভব ছিল আমি করেছি। এরপরের তিন-চার মাস ভালোই কেটেছে আমাদের। তারপর আবারো জানতে পারলাম যে আমার স্বামী ঐ পথ থেকে ফিরে আসেনি। সে এখনো মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করেই চলছে। চলছে তাদের অনৈতিক সমস্ত কাজকর্মও। খুব ভেঙে পড়লাম তখন মানসিক ভাবে। মেয়েটির বয়স তেরো বছর। অনেককিছুই বুঝতে শিখেছিল ততদিনে। আঁচ করে ফেলেছিল কিছু একটা সমস্যা চলছে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। আবারো ছুটলাম সেই বান্ধবীর কাছে। ওর পরামর্শ মতো আপনার কাছে এলাম।

একদম চুপ করে কোন রকমের বাঁধা না দিয়ে ভদ্রমহিলার সব কথা শুনছিল নুসরাহ।

আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আপনার স্বামীর এমন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আপনার নিজের দায় কতটুকু সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

চলবে…

 

শিশু ধর্ষণের আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় শিশুকে ধর্ষণ মামলার এক আসামি র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

শনিবার রাত ১টার দিকে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে র্যাব জানায়।

নিহতের নাম আব্দুর রহিম (২০)। তিনি উলুবনিয়া এলাকারই বাসিন্দা। পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার দিন আগে তার বিরূদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা হয়েছিল।

র্যাব জানায়, রহিমের অবস্থান জানতে পেরে র্যাব অভিযানে যায়। সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা র্যাব সদস্যদের দিকে গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার জন্য র্যাব সদস্যরাও তখন পাল্টা গুলি চালান। কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনের লাশ পাওয়া যায়।

ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি বন্দুক ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ উলুবনিয়া এলাকার এক বাড়িতে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই সময় তার বাবা-মা বাড়ি ছিলেন না।

ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা গত ২৮ মার্চ তাদের প্রতিবেশী যুবক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করেন।

রহিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।শু ধর্ষণের আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় শিশুকে ধর্ষণ মামলার এক আসামি র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

শনিবার রাত ১টার দিকে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে র্যাব জানায়।

নিহতের নাম আব্দুর রহিম (২০)। তিনি উলুবনিয়া এলাকারই বাসিন্দা। পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার দিন আগে তার বিরূদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা হয়েছিল।

র্যাব জানায়, রহিমের অবস্থান জানতে পেরে র্যাব অভিযানে যায়। সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা র্যাব সদস্যদের দিকে গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার জন্য র্যাব সদস্যরাও তখন পাল্টা গুলি চালান। কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনের লাশ পাওয়া যায়।

ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি বন্দুক ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ উলুবনিয়া এলাকার এক বাড়িতে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই সময় তার বাবা-মা বাড়ি ছিলেন না।

ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা গত ২৮ মার্চ তাদের প্রতিবেশী যুবক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করেন।

রহিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুত্র:নয়াদিগন্ত।

 

ঘরের নিত্যকার টুকিটাকি তথ্য

অপরাজিতা ডেক্স


ঘরের নিত্যকার প্রয়োজনীয় তথ্য এখন আর মেঝে বা দেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, সৌন্দর্য ছড়াবে সর্বত্র। রান্নার সময় বা কোন কিছু সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সচেতনায় যথেষ্ট।

পোড়া দুধে পানপাতা

দুধ পড়ে গেলে বা দুধ থেকে পোড়া গন্ধ দূর করতে হলে তাতে পান পাতা ফেলে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। পোড়া গন্ধ কেটে যাবে।

দুূধের সরে গন্ধ

বাড়িতে ঘি তৈরি করার জন্য দুধের সরটা বাটিতে ১/২ চামচ টক দই দিয়ে তার উপর রাখতে হবে। সরটা এমনভাবে রাখতে হবে যাতে পুরো দইটা ঢেকে যায়। এই ভাবে দই এর সাথে সর জমলে সর জমা যে গন্ধ হয় সেটা হবে না।

টাটকা ঘি

এক টুকরো সন্ধক লবণ ঘি এর শিশির মধ্যে রেখে দিন। এতে ঘি বেশি দিন টাটকা থাকবে, স্বাদেরও পরিবর্তন হবে না। ঘিয়ের গন্ধ বজায় রাখতে হলে ঘি রাখার শিশিতে এক টুকরো আখের গুড় রেখে দিন।

গোলমরিচের ব্যবহার

ভোজ্য তৈলে ৮/১০ টা আস্ত গোলমরিচ ফেলে দিন। তেল দীর্ঘদিন অব্যবহৃত হলেও ভাল থাকবে।

ঘন দই

দই পাতবার সময় দুধের সঙ্গে ১ চামচ কর্ণফ্লাওয়ার গুলে দেবেন। দই অনেক বেশি ঘন হবে।

সরিসার তৈল ও সোভা-বাই-কার্ব

গরু বা মোষের দুধ ঠিক সময় মতো গরম না করলে দুধ কেটে যাবার ভয় থাকে। দুধের মধ্যে দু-ফোঁটা সরষের তেল দিয়ে রাখলে দুধ যখনই ফোটান হোক না কেন দুধ কাটবে না। দীর্ঘ সময় বাইরে পড়ে আছে দুধ। ভয় হচ্ছে আঁচে বসালেই কেটে যাবে। আঁচে বসানোর আগে দুধে ১ চিমটি সোভা-বাই-কার্ব মিশিয়ে নিন। দুধ কাটবে না।তুলসীপাতা শুকনো গুঁড়া

তুলসীপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। চা’ তৈরীর সময় দু-চিমটি লিকারে দিয়ে দেবেন। আরো ভাল স্বাদ আসবে। নানা রোগও আটকাবে।

খই সাথে চালের গুঁড়ো

চালের গুঁড়োর পিঠে করলে সাধারণত শক্ত হয়। পিঠে করার আগে যদি চালের গুঁড়োতে কিছুটা খই মাখিয়ে নেওয়া হয় তবে পিঠে নরম হয় এবং খেতেও ভাল লাগে।

 

আপনার শিশুকে চিনুন ৮ টি উপায়ে (পর্ব-১)

এ কে এম ওমর ফারুক


পাঁচ বছরের বর্ণকে নিয়ে বাবা-মার চিন্তার শেষ নেই যেন। বাবা চান মেয়ে হবে পাইলট বা ফ্যাশন ডিজাইনার আর মা চান ডাক্তার। আবার বাবা চান মেয়ে লেখাপড়া করবে ইংরেজী মাধ্যমে কিন্তু মা চান বাংলায় মেয়েকে পড়াতে। শুধু বাবা মা-ই নন, মামা-চাচারাও নেমেছেন এই যুদ্ধে। খালামণি চান বর্ণকে নাচ শেখাবেন, চাচুর ইচ্ছা বর্ণ হবে ক্রিকেটার। এ নিয়ে প্রত্যেকেই যাঁর যাঁর যুক্তি উপস্থাপন করছেন। কখনও বা রীতিমতো ঝগড়া লেগে যায়।

কিন্তু কেউই একবারও চিন্তা করছেন না যে, বর্ণর জন্য কোনটা উপযোগী? বর্ণ কি চায়? কোন বিষয়ের প্রতি বর্ণর আগ্রহ।
এটা শুধু একজন বর্ণর গল্পই নয়, আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রেই ঘটে এমন বিড়ম্বনা।

পরিবারের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে হাজারো শিশুর শৈশব ও কৈশোর হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে চুরি করা হয় শিশুর শৈশব। পর্যাপ্ত মেধাশক্তি থাকা সত্ত্বেও শুধু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শিশু বেড়ে ওঠে অন্তঃসার শূন্যভাবে। তৃতীয় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই দেখা যায় এই একই চিত্র।

পরিবারই শিশুর প্রথম পাঠশালা। এরপরই শিশু যায় স্কুলে। পরিবার যেমন চাপিয়ে দিতে চায় তেমনি নির্দিষ্ট কারিকুলামে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য স্কুল বাধ্য করে ছোট শিশুদের। ফলে গতানুগতিক ধারায় অনেক শিশুই বাধ্য হয়ে এগিয়ে চলে। কিন্তু ভবিষ্যত হয়ে পড়ে দুর্বল। বাধাগ্রস্ত হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা-ছন্দময়তা।

শিশুর স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রথমে বুঝতে হবে শিশুটি কোন মনোবৃত্তির। সে কিভাবে শিখতে চায়। কি জানতে চায় বা কি বলতে চায়।

মানুষের ওপর গবেষণা করে অজানা পৃথিবীকে জানার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কিত এক তত্ত্ব সর্বপ্রথম প্রদান করেন হাওয়ার্ড গার্ডনার। বহু বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বের উদ্ভাবক হাওয়ার্ড গার্ডনার হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
তিনি অসংখ্য মানুষের জীবন পরিক্রমা ও মানসিক অবস্থার ওপর গবেষণা করে এ তত্ত্ব প্রদান করেন।

গার্ডনারের বহুবুদ্ধিমত্তা তত্ত্বের সকল মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে আটটি স্তরে ভাগ করা হয়। তাঁর মতে, পৃথিবীর সকল মানুষই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই আটটি শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন। গার্ডনারের তত্ত্বগুলো নিম্নরূপ।

মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা :
শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষ করলে দেখা যাবে এই শ্রেণীর শিশুরা সাধারণত শুনতে পছন্দ করে, বলতে পছন্দ করে, পড়তে, লিখতে পছন্দ করে। সহজে বানান করে পড়ে। গল্প বলে, গল্প লেখে। স্বাবলিল ভাষায় বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে। শব্দভান্ডার বেশি এবং সেগুলো যথাযথ ব্যবহার করে থাকে, গুছিয়ে কথা বলে। প্রখর স্মরণ শক্তির অধিকারী হয় এবং ভাল বক্তৃতা দিতে পারে।

যৌক্তিক ও গাণিতিক :
এই শ্রেণীর শিশুরা গুনতে আনন্দ পায়। বস্তুর সাহায্য ছাড়াই যে কোন বিষয়ে সহজে ধারণা পায়। সংক্ষিপ্ততা পছন্দ করে। যুক্তি দিয়ে বিচার করে। ধাঁধা ও অঙ্কের খেলা পছন্দ করে। সাজিয়ে ও গুছিয়ে বলতে পছন্দ করে। সমস্যা সমাধান করতে আনন্দ পায়। যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।

চলবে…

 

সন্তানকে আদরের নাম ধরে ডাকুন

আকলিমা ফেরদৌস আখি


আমি সাধারণত প্যারেন্টিং বিষয়ে পড়াশুনা করতে ভয় পাই। কারণ কোন আর্টিকেল বা বই পড়লেই অনুশোচনা আর আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকি-যা কিছু লেখা আছে তার কিছুই তো করছি না, আমি বোধহয় আদর্শ মা হতে পারব না, আমার সন্তানরা মানুষের মত মানুষ হবে তো! অথবা এখানে যে ভাবে লেখা আছে সে রকম তো করে দেখলাম কোন কাজ হচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

আবার মনে মনে এ বলেও সান্তনা দিই যে,একেক সন্তান একেক রকম সবার ক্ষেত্রে একই সূত্র হয়ত কাজ করবে না।

ঠিক সময়ে না খাওয়া,গোসল না করতে চাওয়া,পড়তে না বসা,মোবাইল নিয়ে বসে থাকা এধরনের কমন সমস্যা গুলো আমার জানা মতে সব মায়েরই আছে।আমারও আছে।

রাগ করা ,শাসন করা ,হালকা পিটুনি ,আদর করে বলা কোন কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিলো না ,তখন একদিন প্যারেন্টিং এর থিউরি অনুযায়ী (সন্তানদেরকে আদরের নাম ধরে ডাকুন) আমার মেয়েকে ডাকলাম ‌-”কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি’!

দেখি এক ডাকেই মেয়ে হাজির, যেখানে অনেকবার ডাকলেও তার নিজের কাজ রেখে আসতে চায় না।
মেয়ে এসে বলল’- ‘আচ্ছা মা ,মা কথা শোনা পাখি কি?

আমি ওকে বললাম -মা কথা শোনা পাখি হলো সেই ছোট্টর মেয়ে যে সব সময় মায়ের কথা শোনে।’
ও খুশি হয়ে মাথা নাড়লো।
এরপরে যা হলো তা হলো, আমার মেয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল: ‘মা ওই ম্যাজিক ওর্য়াডটা আবার বলতো’!

আমি আবার বললাম -‘কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি!’

এবং সত্যিই এই ডাকটি জাদুকরী শব্দেই পরিণত হয়ে গেল আমার আর আমার মেয়ের ক্ষেত্রে।

এখন এই একটি ডাক দিয়ে সব করানো যাচ্ছে। যখনই আমি বলি : কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি ” তখনই সাথে সাথে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়,সময় মত খাওয়া, ঘুম, পড়া , মক্তবে যাওয়া সবই হয়ে যায়।

আলহামদুলিল্লাহ।

 

ধর্ষণ প্রতিরোধ

ডা. তাজুল ইসলাম


‘ধর্ষণ’ সুনামি বন্ধ করবে কে?
বিউটি, তনুদের আত্মা। আমাদের ক্ষমা করবে? ক্ষমার অযোগ্য এ কোন সমাজ, জাতি আমরা তৈরি করেছি?

কালের, ইতিহাসের প্রতিশোধ বড় নির্মম
হে রাষ্ট্র, হে সমাজ, তোমাকে এর দায় অবশ্যই নিতে হবে।

ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন ধর্ষণ সাংস্কৃতিকে উচকে দেয়, প্রশ্রয় দেয় তেমন সমাজকে ধর্ষণ বিরোধী, ধর্ষণ প্রতিরোধী সমাজে রূপান্তর করা।

এর জন্য গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা,বিজ্ঞাপনে নারীকে “যৌন পণ্য” হিসেবে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। নারীকে “সেক্সুয়ালাইজড” করার কালচার বদলে ফেলে,তাকে “মানুষ” হিসেবে ভাবার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। অন্য দিকে সমাজে যে সব মিথ্যা, বিশ্বাস ধর্ষণকে প্রশ্রয় দেয়, তেমন মিথ্যাগুলোকে ভেঙ্গে দিতে হবে।

তেমন কিছু প্রচলিত মিথ্যা হচ্ছে:

১। নারীর উগ্র পোশাক, চাল-চলন ধর্ষণকে উৎসাহিত করে
২। নারী ধর্ষিতা হতে চায়
৩। নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না,তাই তাকে বার বার “আহ্বান” জানাতে হবে
৪।পুরুষরা অধিক যৌন-কাতর, তাই তারা নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না
৫। ভূমি দস্যুদের মতন এই যৌন দস্যুদের মানসিকতা এই যে নারীর দেহের উপর সে “অধিকার প্রাপ্ত”( এনটাইটেলমেন্ট)
৬। একবার শারীরিক সম্পর্ক হওয়া মানে পরবর্তীতে ও সে অধিকার থাকবে
৭। রাত- বিরাতে নারীর একাকী চলাফেরা ধর্ষণের অন্যতম কারণ
৮। ধর্ষিতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই, তাই তার নীরব সমর্থন ছিল- ইত্যাদি ভ্রান্ত বিশ্বাস সমাজ থেকে দূর করতে হবে।

এছাড়া ও ধর্ষণ সংস্কৃতি পরিবর্তনে আরো যা যা করতে হবে:
৯। ধর্ষণ প্রতিরোধে শুধু নারীকে সতর্ক থাকতে বললে হবে না,পুরুষকেও “ধর্ষণ করবে না” এই বার্তা বার বার দিতে হবে
১০। পরিবার, সমাজে অন্যের “অনুমতি/ সম্মতি” নেওয়ার (কনসেন্ট)কালচার তৈরী করতে হবে
১১। প্রচার মাধ্যম, ভিডিওতে যৌন সুরসুরি দেওয়া প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হবে
১২।পৌরুষত্বের সনাতনী ধারণায় পরিবর্তন আনতে হবে
১৩। ধর্ষণ “প্রাকৃতিক” ব্যাপার এ ভুল ধারনা ভেঙ্গে একে “অপরাধ” ও নারীর প্রতি “সহিংসতা” হিসেবে দেখতে হবে
১৪। ধর্ষণ মানে ধর্ষণ, প্রেম-বন্ধুত্বের নামে একে “বৈধতা” দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না
১৫। চোখের সামনে ধর্ষণ হচ্ছে অথচ নির্বিকার, নিষ্ক্রিয় থাকার কাপুরুষতা পরিহার করতে হবে
১৬। সামাজিক/আইনগত হয়রানি, অসম্মানের ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা লুকিয়ে রাখা যাবে না।

ডা. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

 

বিষ

ফাতিমা মারিয়াম


-বাবারে, মানুষ যেসব কথা বলে সেগুলো আর শুনতে ভালো লাগে না! তুই এবার বউমার বিষয়টা ভালো করে মিটিয়ে ফেল।

-কি বলছ তুমি মা?

-ঐ যে তোর বন্ধুর ছোট ভাইটা আসে না? ওর সাথে বৌমার মেলামেশা কেউ ভালো নজরে দেখে না! আর বিষয়টা কেমন লাগে? একটা পর পুরুষ প্রতিদিন তোর বাসায় আসে!

-মা তোমরা যা ভাবছ আসলে বিষয়টা তা নয়। পরিচিত মানুষ তাই বাসায় আসে।

-তুই যখন বাসায় থাকিস না তখন আসার দরকার কি? আগেতো এই বিষয়টা শুধু তোর বাসাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন গ্রামের আত্মীয় স্বজনরাও জেনে গেছে আমরা গ্রামে মুখ দেখাতে পারিনা! মানুষের মুখতো আর বন্ধ রাখতে পারিনা!

-বাদ দাও তো মা এসব কথা। তোমার বৌমা সংসারের জন্য কত কষ্ট করে দেখ না? বাচ্চাদের স্কুল, কোচিং এ আনা নেয়া, ওদের দিকে খেয়াল রাখা সবতো ও-ই করে, না?

-এসব তো সব মা-ই তার বাচ্চার জন্য করে, তাই বলে তুই বউকে এইভাবে চলার ব্যাপারে কিছুই বলবি না?

-মা আমি সেই সকালে অফিসে যাই, সন্ধ্যার পরে ফিরি সারাদিন ওকে একা একা কত কাজ করতে হয়, কত জায়গায় যেতে হয়, সাথে একজন কেউ থাকলে ওর জন্যই তো সুবিধা, তাই না? এসব কথায় কান দিও না।।

এইভাবে কিছু মানুষ জেনেও না জানার ভাণ করে, দেখেও না দেখে পরকীয়া নামক বিষবৃক্ষ রোপণ করে যায়।

 

‘ভুল চিকিৎসায় এবার চিকিৎসকের মৃত্যু’ চলুন বিদেশ যাই

ডা. সাকলাইন রাসেল


প্রিয় ডাঃ মুজিবুর রহমান ভুইয়া স্যারও কি তবে চিকিৎসকের অসতর্কতায়(পড়লেন ভুল চিকিৎসায়) অকালেই চলে গেলেন!

কিডনিতে ক্যানসার ধরা পড়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়। অপারেশন করাবেন, সুস্থ হবেন। চলে আসবেন। ২৪ মার্চ এ্যাপোলো হাসপাতালে নিজের সব রোগী দেখেছেন, জরুরী চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন!

একবার ভেবে দেখুন শারিরীকভাবে কতটা ফিট ছিলেন তিনি! ২৫ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ড এ্যালিজাবেথে গেলেন। ২৬ মার্চ অপারেশন টেবিলে ঢুকলেন। ল্যাপারোস্কপিক কিডনি অপসারণ। অপারেশন চলাকালীন সময় শিরায় (Inferior Vena Cava) ইঞ্জুরি হল। ব্লিডিং কেউই আর সে ব্লিডিং থামাতে পারলেন না। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মুহুর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে।

শোকে কাতর আমরা। কিছুতেই মানতে পারছিনা এ চলে যাওয়া! মৃত্যু আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব মৃত্যুরই একটা ব্যাখ্যা থাকে। সে ব্যাখ্যায় যদি গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায় তবে আমরা কিছু বলতে চাই। ঠিক কিছু না, অনেক কিছু।

কারণ, এসব অপারেশন এদেশের ইউরোলজিস্টরা অত্যন্ত সফলভাবে করছেন। আগে থেকে ব্লিডিং এর জটিলতার কথা মাথায় রেখে তারা অনেকসময় আমাদের মত ভাসকুলার সার্জনদের টীমে রাখেন। কারণ, ভাসকুলার সার্জন পাশে থাকলে শিরা ইঞ্জুরিজনিত জটিলতা সহজে ম্যানেজ করা যায়। পুরো এশিয়ার ভাসকুলার সার্জারীর প্রেসিডেন্ট পিটারের চেম্বারও এই মাউন্ড এলিজাবেথই। তবুও কেন এ জটিলতা ম্যানেজ করা গেল না। বলছি না, আমরা করলে জটিলতা হত না কিংবা একেবারেই হয় না। শুধু এতোটুকু বলতে চাই, প্রেশার মাপতেও যেদেশের মানুষ সিঙ্গাপুরে দৌড়ায় সেখানে কেন এমন দূর্ঘটনা ঘটবে? ছেঁড়া কাঁথার নিচে শুয়ে ঠাণ্ডা বাতাসকে আলিঙ্গন করতে আমার সংকোচ নেই। কিন্তু অট্টালিকায় বসে কেন ঠান্ডায় কাঁপব?

শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু নিয়েও আমরা কিছু বলিনি। কোন সাংবাদিককে সেটা নিয়ে হৈচৈ করতেও দেখেনি। কিন্তু আমরা এখনো মনে করি। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল অপারেশন পরবর্তী জটিলতায়।এ জটিলতার জন্য সেখানকার সার্জনদের অতি কনফিডেন্স দায়ী ছিল। কারণ, Large Gut Anastomosis (অন্ত্র কেটে জোড়া লাগা) হয়েছিল সরাসরি। কোন Coverage Colostomy করা হয়নি। ফলাফল, Anasotomosis বা জোড়া লাগানোর জায়গা দিয়ে লিক হয়ে যায় এবং তিনি আমাদের কাঁদিয়ে চির বিদায় নেন।

সেসময়ের পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এদেশের চিকিৎসকরা তাই হুমায়ন আহমেদ এর জন্য অনেক বেশি কেঁদেছেন। আফসোস করেছেন!
কারণ, সেই অপারেশন বাংলাদেশে অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এমন অপারেশন প্রতিদিনই এদেশে হয়।!
ভাবুন তো একবার। হুমায়ুন স্যারের মৃত্যু যদি বাংলাদেশে হত। বাংলাদেশী কোন সার্জনের অপারেশন পরবর্তী জটিলতায় যদি তিনি মারা যেতেন? সেই চিকিৎসক বা হাসপাতালের অবস্থা কি হত একবার, ভাবেন তো?
কিন্তু কিছুই হয়নি। কেন হয়নি?

কারণ, দেশটি আমেরিকা। সার্জনরাও আমেরিকান। এককথায় বিদেশ ও বিদেশী সার্জন, আমরা তাই নিশ্চুপ ছিলাম! তাঁর পরিবারও হয়ত এটাকে নিয়তির লেখা মনে করেই মেনে নিয়েছিলেন! অথচ এখনো আমরা তাঁকে খুঁজি। তাঁর লেখাকে খুঁজি! এ খোঁজা শেষ হবে না কোনদিন!

আজ যেমন খুঁজছি অত্যন্ত বিনয়ী, মেধাবী, মানুষ তৈরীর কারিগর অধ্যাপক ডাঃ মুজিবর রহমান ভুঁইয়া স্যারকে! দেশের একজন সফল খাদ্য ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। ঢাকা মেডিকেলের ক-৩৭ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র। শুধু তাই নয়, ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রদের নিয়ে যেতেন বঙ্গভবনে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরী দরবার হলেই স্টুডেন্টদের ক্লাশ নিতেন। অভিনব এ উদ্যোগের ছাত্র হিসেবে বঙ্গভবনে ক্লাশ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমিসহ অনেকের।

কথা হল, বারডেম হাসপাতালের ইউরোলজির অধ্যাপক ডাঃ এটিএম মাওলাদাদ চৌধুরীর সাথে, তিনি অনেকটা বিলাপের সুরে বললেন,‘সাকলায়েন, একটাবার যদি জানাতেন উনি সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন অপারেশন করাতে তবে আমি ওনাকে বেঁধে রাখতাম…। আহারে, কনফাইন্ড একটা টিউমার। অপারেশন করে ফেলে দিবে। ঝামেলা শেষ। প্রতিদিন কত করছি। ১০ বছর পরও অনেকে আসছেন ফলোআপে। কত ভাল আছেন। আর উনি চলে গেলেন একেবারে বাজে ম্যানেজমেন্টের শিকার হয়ে’।

ফোন দিয়েছিলাম (২৮ মার্চ, দুপুর ১২ টায়) বিদেশে অবস্থানরত সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের কান্ট্রি ম্যানেজারকে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, এখনো সিঙ্গাপুর সরকার মৃত্যুর কারণ ঘোষনা করেননি। ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রিপোর্ট যাই থাক…আমরা উপযুক্ত ব্যখ্যা চাই…পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।
না থাক, কিচ্ছু করার দরকার নাই।
বিদেশতো!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

রোগগল্প

ডা.সাকলায়েন রাসেল


“ডাক্তার মানুষকে বাঁচাতে পারে না
মানুষের বেঁচে থাকাটাকে সুন্দর করতে পারে।”

ভাগ্য কিভাবে মানুষকে নিয়ে খেলে আসেন আজ দেখে নেই। সেদিন একটি ছেলে পড়েছিল ছিনতাইকারীর কবলে। যা ছিল সব তুলে দিয়েছিল তাদের হাতে। প্রতিবাদ করেনি। কারো সাহায্যের জন্য চিৎকারও করেনি। তবুও, ছিনতাইকারী চলে যাওয়ার সময় খুর দিয়ে তার ডান বাহুতে হালকা একটা টান দেয়। মুহূর্তেই কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।

নিকটস্থ একটি ফার্মেসিতে দৌড়ে গিয়ে সে রক্ত বন্ধের চেষ্টা করে। দোকানদার ‘কাম ডাক্তার’ তাঁর হাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়। তবুও রক্ত বন্ধ হয় না।গড়িয়ে গড়িয়ে ব্যান্ডেজ ভিজে যেতে থাকে। অতপর একটা স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয় ব্যাস, রক্ত পড়া বন্ধ। এরপর রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

ঢাকার বাইরের সে হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। সেদিন ভাসকুলার সার্জারী বিভাগে আমার ডিউটি ছিল। প্রথমে আমি সামান্য কাঁটা ভেবেছিলাম ব্যান্ডেজটাকেও খুব একটা খারাপ মনে হয়নি। কিন্তু যখন খুলতে গেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম।ব্যান্ডেজের ঠিক নিচেই স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। স্যালাইনের তার নিচ থেকে হাতটা কালচে হয়ে গেছে। আপনারাও শরীরকে হাতের সাথে মেলালে কালো হয়ে যাওয়া বিষয়টি স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।

ফলাফল রোগীর হাতটিই কেটে ফেলতে হয়েছিল! কেন হাতটি কেটে ফেলতে হয়েছিল?

খুর দিয়ে হালকা গর্ত হয়ে কেটে গিয়েছিল। তাতে শিরা (দেহের উপরিভাগের রক্তনালী) কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছিল। হালকা টাইট করে ব্যান্ডেজের চাপ দিয়ে। কিংবা শিরাটি চিহ্নিত করে বেঁধে দিলে এমনিতেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যেত।

কিন্তু স্থানীয় “কোয়াক চিকিৎসক” স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়ায় তাঁর মূল ধমনীও (দেহের গভীরের রক্তনালী) বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় রক্ত সরবরাহ। এভাবে একটানা প্রায় ৬ ঘন্টা রক্ত সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাতটি মারা যায়। সে কারণে বাহু থেকে পুরো হাত কেটে ফেলা ছাড়া আর উপায় ছিল না!

ক’টি অনুরোধঃ
১। কেটে বা ছিঁড়ে গেলে অতিরিক্ত টাইট ব্যান্ডেজ দেয়া থেকে বিরত থাকুন
২। চিকন ব্যান্ডেজ না দিয়ে চওড়া করে ব্যান্ডেজ দিন। প্রয়োজনে ব্যান্ডেজের নিচে তুলা ব্যবহার করুন।
৩। সাপে কাঁটলে একই কারণে দড়ি জাতিয় জিনিস দিয়ে না বেঁধে হালকা চাপে মোটা কাপড় যেমন মাফলার/ওড়না/গামছা দিয়ে বাধুন এতে প্রত্যাশিত শিরাপথ বন্ধ হয়ে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে।কিন্তু ধমনী বন্ধ হবেনা। ফলে পা হারানোর ঝুঁকিও থাকবে না।

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

প্রিয় স্বদেশ


ডা. ফাতিমা খান


তোমার ৪৭ বছরের প্রৌঢ়ত্বের অবয়বে আমরা এক থুড়থুড়ে, অসহায় বৃদ্ধাকে দেখি।
কিন্তু এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল?
তোমার ষোল কোটি সন্তানের অনেক আশা অনেক ভালবাসার আধার তুমি।
লাল সবুজ পতাকাটা তোমার জন্য ছিনিয়ে আনতে তোমার সবুজ আচল বুকের টকটকে লাল রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছিল তোমার সন্তানরা, দু’বার ভাবেনি!
শুধু এক বুক আশা আর দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল,
তুমি স্বাধীন হবে!
আর একটি ফুলও ঝরবে না!
রোদ ঝলমলে আকাশের নিচে সবুজ মাঠে ছুটে বেড়াবে প্রফুল্ল শিশু কিশোরের দল,
হাড্ডিসার অনাথ শিশুটা থালা হাতে দ্বারেদ্বারে ফিরবে না।
আর একটি মা ও হারাবে না তার নাড়িছেঁড়া ধন!
দুস্বপ্নে ভরা নিকষ কালো রাতগুলোর কথা ভুলে যাবে ভয়ে জবুথবু হয়ে থাকা নিষ্প্রাণ কুমারীরা!
স্বপ্নিল চোখগুলো বিষন্নতায় আর মুদবে না ।
আসবে আলো, ঘুচে যাবে অন্ধকার!
কিন্তু দেখ!
এতগুলো বছর পরও এই আমরা, তোমার সন্তানেরা স্বাধীনতা খুঁজি।
অনেক পরে হলেও বুঝি,
তোমার এই ছোট্ট অবয়ব আজন্ম পরাধীন ছিল, আজো আছে।
ভাল থেকো প্রিয় দেশ!

 

সারপ্রাইজ

আফরোজা হাসান


টিভিতে নতুন একটা কমিকসের অ্যাড দেখার পর থেকে সেটা কেনার জন্য ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে আমার পুত্র। কমিকসের সাথে আবার একটা খেলনা ফ্রি। নাকীবের মূল আগ্রহ কমিকসের সাথে দেয়া সেই খেলনার উপরই ছিল। সেজন্যই কিনে দিতে চাইছিলাম না। কিন্তু রোজই নানান যুক্তি পেশ করতে লাগলো কেন কমিকসটা সে কিনতে চায়। পরীক্ষাতে ভালো করার পুরস্কার হিসেবে কমিকসটা চাইলে শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিলাম। নিয়ে গেলাম ওর বহু আকাঙ্ক্ষার সেই কমিকস কিনে দেবার জন্য।

কিন্তু দোকানে ঢুকতেই নাকিবের চোখ চলে গেলো অন্য একটি প্যাকেটের দিকে। সেটা ছিল একটা সারপ্রাইজ প্যাকেট। মানে খুব সুন্দর করে প্যাকেট করা কিন্তু ভেতরে কি আছে সেটা দেখার কোন উপায় নেই। বহু আকাঙ্ক্ষার কমিকস রেখে তো তখন সেই সারপ্রাইজ প্যাকেট নেবার ইচ্ছে পোষণ করলো পুত্ররত্ন। আমি ওকে ভালো মত চিন্তা করে দেখতে বললাম। কিন্তু পুত্রের মাথায় তখন সারপ্রাইজ ঢুকে গিয়েছে। শেষমেশ সেই সারপ্রাইজ প্যাকেটই কিনে দিলাম ওকে। ভেতরে মহা মুল্যবান কিছু অপেক্ষা করছে এমনই ধারনা মনে নিয়ে খুশিতে টগবগ করতে করতে দোকান থেকে বের হলো।

“চকচক করিলেই সোনা হয় না” এই প্রবাদ পুত্রের জানা না থাকলেও আমার জানা ছিল। কিন্তু সেভাবে করে মনে আসেনি তখন। প্যাকেটের ভেতর কি আছে সেটা নিয়ে আমি নিজেও কিছুটা কৌতুহলি ছিলাম। আর পুত্রের চোখ তো ঝলঝল করছিল না জানি ভিতরে কত সুন্দর সারপ্রাইজ প্রতিক্ষারত। বাসা পর্যন্ত আসার অপেক্ষাও করতে চাইছিল না সেটা চেহারা দেখে বুঝতে পারছিলাম। অনুমতি দেবার সাথে সাথেই বিরাট একটা হাসি দিয়ে খুলতে শুরু করলো প্যাকেট।

প্যাকেটের ভেতর থেকে যা বের হলো তা দেখে বিরাট একটা ঢাক্কা খেলো বাচ্চা আমার। সারপ্রাইজ ছিল একটি প্যাকেটের মধ্যে পেন্সিল, ইরেজার, শার্প্নার, ছোট্ট একটি ডায়েরী আর একটি কমিকস। তাও সেই ব্র্যান্ডের কার্টুনের যেটা একদম ছোট বাচ্চাদের। আর নিজেকে বড় ভাবা আমার আদরের পুত্র যেই কার্টুনটি দেখতে নারাজ। জিনিসগুলো স্পাইডারম্যান, গোরমিটি, স্পঞ্জ বব ইত্যাদি ব্র্যান্ডের হলে হয়তো মনখারাপ একটু কম করতো। সত্যি ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে ভীষণ মায়া লাগছিল।

আমার একটা কিছু ভুল হলেই সেটা নিয়ে আমাকে ঘুরে ঘুরে লেকচার দেয় এই দুষ্টু ছেলে। তাই ওর সাথে একটু দুষ্টুমি করার লোভ সামলাতে পারলাম না। হাসি দিয়ে বললাম, ওয়াও কি সুন্দর সবকিছু। তোমার পছন্দ হয়েছে তো বাবুতা? পারলে চিৎকার করে কান্না করে এমন অবস্থায় আমার কথা শুনে জোড় করে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে দেখে অনুভব করলাম ‘জীবন নামক নাট্যশালায়’ পদার্পন করতে শুরু করেছে আমার পুত্র। অর্থাৎ,পুত্র আমার সত্যিই বড় হচ্ছে। তাই তো হাসির আড়ালে নিজের মনের প্রকৃত অবস্থা গোপন করার চেষ্টা করছে।

কাছে টেনে নিয়ে বললাম, মনখারাপ করো না বাবা আম্মুতা তোমাকে তোমার পছন্দের সেই কমিকসটা কিনে দেব ইনশাআল্লাহ। চেহারাটা তখন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বলল, আম্মুতা এটা ফেরত দেয়া যাবে না? বললাম, তুমি তো প্যাকেট খুলে ফেলেছো তাই এখন আর ফেরত দেয়া যাবে না। এজন্যই তো তোমাকে বলেছিলাম ভালো ভাবে চিন্তা করে নিতে। ভুল বুঝতে পেরেছে এমন স্বরে বলল, হু ভুল হয়ে গিয়েছে। আমার ঐ কমিকটাই কেনা উচিত ছিল। কবে থেকে কিনবো ভাবছি। কেন যে এটা কিনতে গেলাম! হাসি মুখে বললাম, থাক যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। এটা নিয়ে এখন আর মন খারাপ করতে হবে না। এরপর থেকে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিকেল বেলা সুপার মার্কেটে গিয়ে পুত্র কোকো পাউডার কেনার বায়না ধরলো। চকলেট খুব একটা পছন্দ করে না সে। আর চকলেট দুধ তো ওর জানের দুশমন তাই চকলেট দুধ কেনার কথা বলতে দেখে বেশ অবাক হলাম। প্যাকেট হাতে নেবার পর বুঝলাম কিনতে চাইবার রহস্য। প্যাকেটের গায়ে লেখা ভেতরে খেলনা আছে। ওকে তখন দুপুরের সেই সারপ্রাইজের কথা মনে করিয়ে দিলাম। বিনা
তর্কে তাড়াতাড়ি প্যাকেট জায়গায় রেখে দিল। ফেরার পথে ওকে বোঝাতে বোঝাতে এলাম যে “চকচক করলেই সোনা হয় না”। এখন প্রতীক্ষা ভবিষ্যতে আবারো যদি কখনো এমন কোন পরিস্থিতিতে পড়ে তখন কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।

আলহামদুলিল্লাহ আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার সন্তান যাতে মনের এবং দেহের উভয় দৃষ্টি সবসময় খোলা রেখে জীবনের পথে চলে। যাতে একই গর্তে কখনোই দু’বার হোঁচট খেতে না হয় ওকে, একই ভুল যাতে বার বার না করে। তাই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও ওর সাথে কথা বলি, আলোচনা করি। ঐ বিষয়টাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করি।

কারণ আমি চাই আমার সন্তান চিন্তাশীল হয়ে বেড়ে উঠুক। জীবনকে শুধু যাপন করে না যাক, সাথে সাথে উপলব্ধিও করুক। ভুলকে ভুল ভেবে ভুলে না যাক, বরং ভুল থেকে শিক্ষা খুঁজে নিয়ে চলার পথের পাথেয় সংগ্রহ করুক।

 

স্বাধীনতায় ফোটে ফুল জীবনে

আখতারুজ্জামান সেলিম


স্বাধীনতা নয় শুধু বচনে
ফাকা বুলি আর শুধু ভাষণে,
স্বাধীনতা হলো আম জনতার
নিজেদের শাসনের চয়নে।
স্বাধীনতা নয় শুধু শোষণের
গাড়ী বাড়ী আর ভুঁড়ি ভোজনের।
স্বাধীনতা মানে হলো সাম্য
নির্ভয়ে বেচে থাকা কাম্য।
স্বাধীনতা পাখিদের আকাশে
বারুদের ধোঁয়াহীন বাতাসে।
স্বাধীনতা নয় শুধু স্বাধীনে
স্বাধীনতায় ফোটে ফুল জীবনে,
স্বাধীনতা আমাদের মননে
আমি থাকি আমরই অধীনে।
স্বাধীনতা নয় শুধু ইথারে
টিভি আর দৈনিক খবরে,
স্বাধীনতা আলো দিক আঁধারে
কৃষকের শ্রমিকের কুঠিরে।
স্বাধীনতা নয় কারো অধীনে
স্বাধীনতা নয় শুধু স্বাধীনে,
স্বাধীনতা আমাদের মননে
আমি থাকি আমারই অধীনে।

 

ববিতার আহ্বান “সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে আসুন দাঁড়াই”

গত ২৩ মার্চ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায় ও শিশুশ্রম রোধে সচেতনতামূলক কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর চিলড্রেন’র আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ডিসট্রেস চিলড্রেন অ্যা- ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল-ডিসিআইআই।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতা। এই অনুষ্ঠানে ডিসিআইআই’র গুলউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে উৎসাহিত করেন।

ববিতা বলেন, ‘প্রায় দশ বছর যাবত ডিসিআইআই’র গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও ডিসি আই আই’র হয়ে আমি আমার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করে আসছি শুরু থেকেই।

যারা আমাকে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রেখেছেন তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। গত শুক্রবার ডিসিআইআই আয়োজিত অনুষ্ঠানে সবার আন্তরিক অংশগ্রহণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।

আমি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি যে আমরা চাইলেই যার যার অবস্থানে থেকে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারি। সবাই পাশে দাঁড়ালেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠবে। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে তারাও।’

ডিসিআইআই’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড.এহসান হক বলেন, ‘ববিতা আপা শুরু থেকেই ডিসিআইআই’র সাথে আছেন। তিনি সবসময়ই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়েই কাজ করছেন।’ ডিসিআইআই এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা সৃষ্টির করার মধ্য দিয়ে দারিদ্র বিমোচন করা।

ড. এহসান জানান ডিসিআইআই’র নিজস্ব অর্থায়নে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৫০জনেরও বেশি এতিম শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার সুযোগ দেবার পাশাপাশি দেশের সরকারী, বেসরকারী এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে। এটা শুধু ঢাকায়ই নয় ঢাকার বাইরেও এই ধরনের সহযোগিতা করে থাকে ডিসিআইআই।

শুক্রবারের সচেতনতামূলক কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাবিনা ইয়াসমিন’সহ আরো অনেকে।
ছবি: দীপু খান

 

এক স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রহর গুনছি

ফাতিমা শাহীন


অনেকদিন ধরেই মেলবোর্ন বৃষ্টিবিহীন। সামার এখন শেষের পথে। গাছের পাতার সবুজ রঙের পেলবতাও উধাও সেই সঙ্গেই। বাগানের ছিটেফোঁটা শাকসবজির শেকড়ের তৃষ্ণা যেন মিটছিলো না হোস পাইপের মেপে দেয়া পানিতে। একটা বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা তাই ছিল সবার অন্তরে।

আজকের ওয়েদার ফোরকাস্টে বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিলো। চাতক মন তাই ছিল বৃষ্টির, আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ। তবুও ভোর সকালে আকাশের মেঘলা মন দেখে মনেও মেঘ এসে ভর করলো যেন। কি যে হবে! সব ঠিকঠাক থাকবে তো! কারণ আজকে MMC ( Melbourne Multicultural Centre) তে কংক্রিট ঢালাই হবে। পানিতে কোন সমস্যা না হয়ে যায়! একসময় শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। আকাশে মেঘ রাজ্যের কোন শেষ দেখতে পাচ্ছি না। একসময় শেষ হল বৃষ্টি। মেঘ কেটে ঝলমল করে উঠল সূর্য। দেখতে গেলাম কাজ কেমন এগোচ্ছে। বুকের ভেতর দুরু দুরু। একশোটা ঢাক যেন একসঙ্গে বেজে চলেছে অন্তরে।

MMC চত্বরে ঢুকে তাকাতেই চোখ জুড়িয়ে এলো, মন প্রশান্ত হল। ঢালাই শেষে পরবর্তী কাজ করে চলেছেন নির্মাণ কর্মীরা। চারিদিকে কি প্রশান্ত পরিবেশ! ঘুরে ঘুরে বেড়ালাম সবদিকে, মহিলাদের নামাজের স্থানের দিকে এগুতেই কেন যেন অকারণেই বুক হু হু করে উঠল। এই নির্মাণ কাজ শেষে এখানে যখন বোনদের অবনত শির আল্লাহর দিকে সিজদাবনত হবে, তার মধ্যে একজন হিসেবে কি আল্লাহ আমায় কবুল করবেন!

চতুর্দিকে নির্মাণ সামগ্রীর নানারকম শব্দ, কিন্তু তার ভেতরেই সাদা সাদা প্রজাপতিরা যৎসামান্য হয়ে ফুটে থাকা জংলী ফুলগুলোয় উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে। আমার তখন কেবলি মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি ও বাস্তবের এমন নিবিড় মেলবন্ধন আমাদেরকে প্রতি মুহূর্তে যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল, বাস্তবতায় আমরা যতই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকি না কেন, রবের রুবুবিয়াতের কাছে , তার সৃষ্ট প্রকৃতির কাছেই আমাদের আত্মসমর্পণ অবশ্যম্ভাবী।

সকালের বৃষ্টিতে ভেজা পথ , এখানে ওখানে অল্পস্বল্প পানি জমে আছে। ভেজা বালিতে পা ছোঁয়ালাম। আজ এখানে আমার পায়ের চিহ্ন, সেই দিন দূরে নেই , যেদিন আমাদের প্রজন্ম আমাদের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাজের দায়িত্ব বর্তাবে তাদের হাতে। তাদেরকে এখন থেকেই এই কাজের উপযুক্ত করে গড়ে তুলি। এই মসজিদের জন্য আমাদের হৃদয় গহীনে জমে থাকা একসমুদ্র ভালোবাসার উথাল পাথাল ঢেউ এর শব্দ যেন তারাও শুনতে পায়।

তাদের ভেতরে দানের অভ্যাস এখন থেকেই গড়ে তুলি। আমাদের সবরকম নেক পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা , আমাদের সন্তানদের দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা ও আমলে সালেহের প্রতি অকুণ্ঠচিত্তে এগিয়ে যাওয়া আমাদের অন্ধকার কবরে আলো ছড়াতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত, ইনশাআল্লাহ।

 

সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ‘গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা’ বিষয়ক এক বৈজ্ঞানিক আলোচনা

অপরাজিতা ডেক্স


মানসিক সমস্যাগ্রস্থ মায়ের গর্ভকোষে শিশুর সুরক্ষায় ব্যবহৃত নিরাপদ ঔষধসমূহ ও বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা ও রজঃনিবৃত্তি জনিত মানসিক রোগের উপসর্গ সমূহ নিয়ে সম্প্রতি এক বৈজ্ঞানিক আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ২১শে মার্চ (বুধবার) রাজধানীর ২য় বৃহত্তম সরকারী মেডিকেল কলেজ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে,উক্ত কলেজের মানসিক বিভাগের সাইকোথেরাপী ইউনিট এর উদ্দ্যোগে নিম্নোক্ত বিষয়াদির বিষদ বর্ননা করা হয়,
1)Peri-partum disorders & its causes with Management
2)Ethnic Variations in prescription of Lurasidon
3) Interpersonal Psychotherapy VS Couple Therapy,
Which one preferable?

সেই আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে ডা.তৌহিদ মূল প্রবন্ধ পেপার উপস্থাপন করেন এবং সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূতপূর্ব কনসাল্ট্যন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ও মালয়েশিয়ার AIMST -এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. কবীর জুয়েল সকলের নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়া আলোচনার উপসংহারে আরও বক্তব্য রাখেন মনোরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান ডা.শোয়েবুর রেজা চৌধুরী।

সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণে নারীর তিন রূপ
১.কন্যা, ২.জায়া ও ৩.জননী। তবে মানসিক বিশেষজ্ঞ গণের মতে নারীকূলকে আরো কয়েকধাপ বেশী স্তর পার হতে হয়। নারীর শরীরবৃত্তীয়
পরিবর্তনে বেশ কিছু হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে, তার-মধ্যে ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্ট্রন ও কর্টিসল অন্যতম, তাই নারীর বয়ঃসন্ধি হওয়া থেকে শুরু করে রজঃনিবৃত্তি পর্যন্ত তাদের Reproductive Life – এ বিভিন্ন চড়াই উতরাই লক্ষ্য করা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কতোটুকু ভাবি,গর্ভকালীন সময়ে মা-কে সব ধরনের ঔষধ দেয়া যায় না,ভুলক্রমে দিয়ে দিলে নবজাতকের নানাবিধ সমস্যার মাধ্যমে সেই মাশুল গুনতে হয়।

গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত অন্যান্য বয়সের তুলনায় বেশি মানসিক সমস্যা এবং গর্ভধারণ সংক্রান্ত নানান অসুবিধার সম্মুখীন হন। দুটি তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ:

১.গর্ভাবস্থায় মানসিক সমস্যার খুঁটিনাটি তথ্য।
২.কি ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন তারা তা জানাও অবশ্যই জরুরি।

গর্ভাবস্থায় আনন্দের ও সুন্দর সময় তবে, কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত যেভাবেই হোক, গর্ভধারণ সময় শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিকভাবেই নানান পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন বাবা ও মা এর বিশেষ করে ‘মায়ের’ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। নারীর গর্ভকালীন সময়ের মানসিক চাপ ও উদ্বেগের পরিমান যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশী হয়, তবে তা গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা বলতে বোঝায়?

বিষণ্ণতা একধরনের আচরণগত সমস্যা যার ফলে মানুষের মন সার্বক্ষণিক খারাপ থাকে এবং কোন কাজেই আনন্দ খুঁজে পায় না। টানা এক সপ্তাহ বা এর বেশি সময় জুড়ে থাকে।

বিষণ্ণতার লক্ষনগুলো কি কি ?

১.কোন কিছুতে আগ্রহ ও আনন্দ না পাওয়া।
২.খুব পছন্দের কোন কাজ বা ঘটনাতেও আনন্দ অনুভূতি না পাওয়া।
৩.গভীর দুঃখবোধ এবং হতাশা
সবসময় কান্না আসা।
৪.খাবার আগ্রহ কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
৫.অকারণে বেশি অস্থির লাগা। খুব বিরক্ত বোধ ও ক্লান্ত, অল্পতেই রাগ উঠে যাওয়া
৬.কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা।
৭.খুব বেশী ঘুম অথবা সম্পূর্ণ ঘুমহীন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাওয়া।
৮.অপরাধ বোধে ভোগা,গ্লানি বোধ হওয়া, নিজেকে খুব খারাপ মনে হওয়া।
৯.বেঁচে থাকার আগ্রহ কমে যাওয়া বা বার বার মৃত্যুর কথা চিন্তা করা।

উপরোক্ত যেকোনো ৫ টি বা তার বেশি বৈশিষ্ট্য আপনার মধ্যে ২ সপ্তাহের বেশি অপরিবর্তনীয় অবস্থায় থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন এবং আপনার সাহায্য দরকার।

গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভাবস্থায় যে বিষণ্ণতা দেখা দেয় তা কিন্তু প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা (postpartum depression ) থেকে ভিন্ন। postpartum depression সাধারণত বাচ্চা প্রসবের পর দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায়য় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব বিগত ১০ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে বর্তমানে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিষণ্নতা, উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ, মনোদৈহিক মানসিক সমস্যা ইত্যাদি।

উক্ত গবেষণায় আরো দেখা যায় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাগ শহরে ও গ্রামে প্রায় একই রকম এবং মহিলাদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে পুরুষদের তুলনায় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এছাড়াও মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শারীরিক লক্ষণ যেমন- মাথা ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা, জ্বালাপোড়া, ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা, দুর্বলতা, খাবারের অরুচি নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসেন যা বেশিরভাগ সময়ই গুরুত্ত্ব পায় না।”

অনুষ্ঠানটিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন মেডিকেল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও পরিচালক, শিক্ষক ও চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

PMRH (Psychiatric Management for Reproductive Health) – এর মাধ্যমে বেসরকারীভাবে টিমের সদস্যরা তৃনমূল পর্যায়ে ‘মায়ের গর্ভকোষে শিশুর সুরক্ষায় ব্যবহৃত নিরাপদ ঔষধ ও বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা ও রজঃনিবৃত্তি জনিত মানসিক রোগের উপসর্গ’ সমূহ নিয়ে এ সেবা গুলো দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।

পরিবারের আসন্ন নতুন সদস্যটির জন্য সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দিতে গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা উপর গুরুত্ব দিতে এরূপ আয়োজন করে আয়োজকবৃন্দ।

 

মানুষকে বিচার করার ক্ষমতা মানুষের কতটুকু

ডা. ফাতিমা খান


একজন মানুষের কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও অভ্যাসগুলো তার শিশুকালের শিক্ষা, অভ্যাস, পারিপার্শ্বিকতা, তার পারিবারিক কালচার এবং নিজস্ব এলাকার সংস্কৃতি দিয়েই অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। অনেক বড় ডিগ্রীধারী কিংবা অনেক উচ্চস্তরের চাকুরীরত মানুষ গুলোও নিত্য দিনশেষে ঘরে ফিরে তার আদিম অভ্যাস গুলোর চর্চায় মেতে উঠে। তার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা, খাওয়া, পরা, উঠা বসা, রসম রেওয়াজ সবকিছুতেই একটু “হাফ ছেড়ে বাচার” চেষ্টা করে। অনেকে চেষ্টা করেও, ভালটা জেনেও নিজের আদি অকৃত্রিম অভ্যাস বদলাতে পারে না।

এ ক্ষেত্রে আমরা কি সে মানুষটাকে আন- কালচার্ড বা ইনসেইন বলতে পারব? কিংবা বলা কি উচিৎ? বললে কাদের কে বলা যাবে?

লিখতে বসে ময়না খালার গল্প মনে পড়ল। ডেন্টাল কলেজে পড়ার সময় আমাদের হোস্টেলের মেয়েদের দেখাশোনা, ফুট ফরমায়েশ এর কাজ করত ময়না খালা। আমি তখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে গিয়ে একদম নতুন মানুষ। আমার অবস্থা প্রথমবার গ্রাম থেকে গাট্টি বোচকা নিয়ে আসা বেকুব মানুষটার মত যে ঢাকার রাস্তায় ডাবল-ডেকার বাসগুলো দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে। সব কিছুতেই তখন আমার বিস্ময়, পুরা নতুন দুনিয়ায় আমি এক এলিয়েন। তো হোস্টেলে এই ময়না খালাকে দেখতাম গড়ে পড়তা সবাইকে ‘তুই’ করে সম্বোধন করে কথা বলে। ওই সময়ে আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিস্ময় ছিল এই ময়না খালা। ব্যাপক কৌতুহল নিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম।

একদিন শুনি ময়না খালা হাসপাতালের এক ডাক্তারকে স্নেহের স্বরে বলছে, ‘তোর জ্বর কমছে? ওষুধ খাইছিস?’ আর সেই ডাক্তারও অনেক সমীহ করে উত্তর দিল ‘ জ্বী খালা, দোয়া কইর’। আমি তব্দা খেয়ে গেলাম! কিন্তু দিনে দিনে আমার পর্যবেক্ষণের যে ফলাফল পেলাম, তা হল ময়না খালার দেশের বাড়ি পঞ্চগড়, যেখানে সম্বোধনের জন্য তারা ‘তুই’ টাকেই সবচেয়ে আপনজনদের জন্য ব্যবহার করে। ডেন্টাল কলেজের আমার চার বছরের অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে স্নেহপ্রবণ আর মায়াবতী মহিলা ছিল এই ময়না খালা।

এবার হোস্টেলেরই এক সিনিয়র আপুর কথা বলি। তিনি হাসতে হাসতেই বন্ধুদের আদর করে ” বা***ত” বলে ডাকত। আমার কাছে এই ব্যাপারটা এতই অদ্ভুত আর অস্বস্তিকর মনে হত যে আমি তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম, পাছে কবে আমি তার এই আদরের ডাকের শিকার হই! অন্যদের কাছ থেকে জানলাম তার বাবা নাকি তাদের গ্রামের চেয়ারম্যান, অনেক নামডাক আর দাপট তার ওই গ্রামে। সে যার মেয়েই হোক- চেয়ারম্যান, ব্যাটম্যান বা সুপারম্যান, আমার তাতে কিছুই আসে যায় না। আমার শুধু মনে হত, নিশ্চয়ই একদিন রোগীদেরকেও সে বলবে, “মুখ খোল বা***ত”।

এছাড়া আরো কিছু এপিক অভ্যাস দেখি তথাকথিত ভদ্র শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও। যেমন ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়েও হাতের কবজি ডুবিয়ে উইন্ডমিল এর মত বিশাল শব্দ করে খাওয়া, গন্ধওয়ালা মোজা খুলে ঝাড়া দিয়ে খাবার টেবিলের একপাশে লম্বা করে রেখে দেওয়া, খাওয়া শেষে প্লেটেই হাত মুখ ধুয়ে সেই পানিটা চুমুক দিয়ে খেয়ে ফেলা ( খাবার নষ্ট হলে আল্লাহ গুনাহ দিবে বলে শেষ অনু পরমানুটাও শেষ করা লাগবে), জনসমক্ষে নাকের ভেতর আঙুল ঢুকায়ে ঘুটানি মেরে বের করে আবার তাকিয়ে দেখা, যেখানে সেখানে দুনিয়া কাঁপানো হাসি, হাঁচি, কাশীসহ আরো অনেক কিছু ছেড়ে দেওয়া…. এগুলোর ব্যাপারে কি যে বলব! সত্যিই আমি মূক, অভিভূত!

এইবার আসি আমাদের নিত্যদিনের বন্ধু, নোমোফোবিয়া আক্রান্ত এই আমাদের প্রতি মুহুর্তের অক্সিজেন, সোসাল মিডিয়া ফেইসবুকে। এখানে এত ভ্যারাইটিস মানুষ আর তাদের কৃষ্টি কালচার কথাবার্তা উপভোগ করি যা ফেইসবুক ছাড়া একাকি এই জীবনে দেখা কোনদিন সম্ভব হত না। এখানে মোঘল আমলের বাদশাহ বাবর থেকে বাদশাহ আওরঙ্গজেব পর্যন্ত সবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাবেন, তাদের অন্দরমহলের বেগম আর তাদের পরিচারিকা, পাইক পেয়াদা বরকন্দাজ কেউ বাদ যাবে না। তাদের একেক জনের কথাবার্তার ধরণও সেইরকম(?)। আমি তো তাদের রাজকীয় কথাবার্তার রকমফের দেখে ক্ষণে ক্ষণে অফিসে বসেও একাই হো হো করে হাসি আর আমার রোবটের মত নার্সটা ইতস্ততভাবে বলে ফেলে “আর ইউ অল রাইট ডক?”

শেষ গল্পটা বলি।
সেদিন একজন মিশরীয় রোগী এসেছে আমার কাছে। সে সাধারণ কথাই এতো বেশী উচুস্বরে বলছিল যে এডমিন থেকে আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাস করল ” ইজ এভরিথিং অলরাইট ডক্টর? দা সিকিউরিটি ইজ জাস্ট আউটসাইড ইয়র ডোর “। আমি না হেসে পারলাম না। তাকিয়ে দেখি দরজায় আমাদের সুমো পালোয়ান এর মত হাট্টা গাট্টা সিকিউরিটি গার্ড উঁকি মেরে দেখছে। তাকে চলে যেতে বললাম।

রোগীর কথা শেষ হলে তাকে বললাম “আচ্ছা, তুমি এত উচ্চস্বরে কথা বল কেন?” সে কিছুটা লজ্জিত হয়েই বলল, ” আমি দুখিত ডক্টর, ছোটবেলার অভ্যাস। আমার বাবা সমুদ্রে জেলে ছিল। আমি তার কাজে সাহায্য করতাম। অনেক দূর থেকে জোরে জোরে কথা বলা লাগত। তাই অভ্যাস হয়ে গেছে।”

আমার মনে হয় মানুষকে বিচার করার কাজটা একটু সময় নিয়ে করা উচিত। একদম অমার্জনীয় অপরাধ বা অভ্যাসওয়ালা মানুষ ইন্সট্যান্টলি পরিত্যাজ্য। কিন্তু বাকীদের ব্যাপারে মানে যে দোষগুলো খুব সাংঘাতিক না সেগুলো ইগ্নোর করে সময় সুযোগ নিয়ে বুঝিয়ে বলাই ভাল। ক্ষতি তো নেই! এমনো হতে পারে তাকে কেউ কখনো ভালভাবে বুঝিয়ে বলেই নাই।

আল্লাহতায়ালা মানুষের বিচার করবেন তাদের শিক্ষা, সামর্থ্য আর জ্ঞানের গভীরতা অনুযায়ী। আমরা মানুষ হয়ে কেমন করে হুট করেই ফয়সালা শুনিয়ে দেই, বলেন!

লেখক কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

রেসিপি ঘর: সবজি খিচুড়ি ও কয়েক পদের ডাল

টমেটো ডাল

উপকরণ : মসুরের ডাল ২৫০ গ্রাম, টমেটো ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ টুকরো করা আধা কাপ, কাঁচামরিচ ফালি করা ৩-৪টি, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন টুকরো ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী এবং সরিষার তেল পরিমাণ মতো, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, পানি পরিমাণ মতো।

প্রস্তুূত প্রণালি: মসুরের ডাল পানি দিয়ে ধুয়ে রাখুন। একটি কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজের টুকরো ভেজে, মসুরের ডাল, রসুন টুকরো, হলুদগুঁড়া এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে অর্ধেক রান্না করে তাতে টুকরো টমেটো, কাঁচামরিচ ফালি, ধনেপাতাকুচি এবং সামান্য পানি দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে ডাল ঘন হয়ে এলে তা নামিয়ে পরিবেশন করুন।

লাউ ডাল

উপকরণ: একটি মাঝারি লাউয়ের অর্ধেক টুকরো করা, মসুর ডাল ২৫০ গ্রাম, হলুদ গুঁড়া অর্ধেক চা চামচ, মরিচ গুঁড়া অর্ধেক চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, কাঁচামরিচ আস্ত ৪-৫টি, ধনেপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ এবং তেল পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে লাউ ও মসুর ডাল আলাদা করে ধুয়ে রাখুন। একটি পাতিলে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজের টুকরো দিয়ে হালকা ভেজে একে একে তাতে উপকরণ দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে (মসুর ডাল ও লাউ ছাড়া) নিন। মসলা কষানো হয়ে গেলে তাতে মসুর ডাল দিয়ে আবার কষিয়ে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করে তাতে টুকরো করা লাউ দিয়ে আবার ঢেকে রান্না করুন। প্রায় ২০ মিনিট লাউডাল বেশ মাখা মাখা হয়ে এলে তাতে জিরা গুঁড়া, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতাকুচি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

ঝাল মশলায় বুটের ডাল

উপকরণ: বুটের ডাল ২ কাপ -পেয়াজ কুচি এক কাপ -পেয়াজ বাটা ১ চা চামচ -আদা বাটা ১ চা চামচ -রসুন বাটা ১ চ চামচ -জিরা গুড়া ১ চা চামচ -ধনে গুড়া ১ চ চামচ -লাল মরিচ গুড়া ১ চা চামচ -হলুদ গুড়া আধা চা চামচ -টমেটো সস ২ টেবিল চামচ – গরম মশলা আধা চা চামচ -ভাজা জিরা গুড়া ১ চা চামচ -কাঁচা মরিচ ৪/৫ টা -লবন স্বাদ অনুযায়ী -তেল ১/৪ কাপ
-পানি পরিমানমতো

প্রস্তত প্রণালী: ডাল ধুয়ে একটা পাত্রে ভিজিয়ে রাখুন। একটি পাত্রে বা প্রেসার কুকারে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি বেরেস্তা করে অর্ধেক টা তুলে রাখুন রাখুন। এবার বাকি বেরেস্তায় সব বাটা মশলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষানোর পর মরিচ গুড়া, হলুদ গুড়া, ধনে গুড়া ও জিরা গুড়া দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। এবার ডাল দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ কষিয়ে টমেটো সস, গরম মশলা ও লবন দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দেড়/দুই কাপ পানি দিয়ে ঢাকনা দিন। ১৫/২০ মিনিট পর দেখুন ডাল নরম হয়ে গেছে না কি। ভাজা জিরার গুড়া ও কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। তেল উপরে উঠে আসলে বেরেস্তা ছিটিয়ে দিন।

সবজি খিচুড়ি

সময়টা এখন হরেক রকম তাজা সবজির। এসব সবজির মিশেলে সুস্বাদু খিচুড়ি হলে সকালের নাস্তাটা মন্দ হয় না। ছোট বড় সবার কাছে প্রিয় হতে পারে বিশেষ রেসিপিতে রান্না সবজি খিচুড়ি। স্বাদ আর গন্ধে মোহময় এমন খিচুড়ি রান্না হবে সহজে।

উপকরণ: বাসমতি চাল ২ কাপ, সবজি (গাজর, বরবটি, মটরশুঁটি, ফুলকপি) ছোট টুকরো সব মিলিয়ে ২ কাপ, আলু আধা কাপ, ভাজা মুগডাল ১ কাপ, আদা বাটা দেড় চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া দেড় চা চামচ, টক দই দুই টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ ১ চা চামচ, চিনি ১ চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, এলাচ ২টি, দারুচিনি ২টি, তেজপাতা ২টি, গরম পানি ৬ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেল আধা কাপ।

প্রস্তত প্রণালী: মুগডাল ২ ঘণ্টা ও চাল আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে নিন। মটরশুঁটি ছাড়া সব সবজি একসঙ্গে সেদ্ধ করে নিন। কড়াইয়ে অর্ধেক তেল দিয়ে গরম হতে দিন। এবার তাতে গরম মসলা ও পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে টক দই, চিনি ও আধা চা চামচ লবণ দিন। একটু পর মসলা কষিয়ে সবজি দিন। সবজি কষানো হলে আলাদা পাত্রে তুলে রাখুন। এবার ওই কড়াইয়ে চাল দিয়ে ভাজতে থাকুন। ভাজা হয়ে গেলে গরম পানি ও আধা চা চামচ লবণ দিয়ে ঢেকে দিন। চাল পানি সমান সমান হলে রান্না করা সবজি দিয়ে নেড়ে ঢেকে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট রান্না করুন। এবার কাঁচামরিচ ও ঘি দিয়ে আরও ১৫ মিনিট চুলার আঁচে রেখে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

নক্ষত্রের নিজস্ব আলো থাকে, নিজস্ব আলো আছে ফাতিহা

জ্যাকসন হাইটস হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠলো। যেন মনে হচ্ছিল একসাথে অনেক গুলো নক্ষত্র তাদের সমস্ত আলো নিয়ে জ্বলে উঠেছে। সেই সব নক্ষত্রের নিজস্ব আলো আছে যে আলো দিয়ে তারা প্রতিনিয়তই আলোকিত করছে চারপাশ। সব গুলো নক্ষত্রের ভীড়ে একটি ছোট্ট নক্ষত্রও ছিল কিন্তু কে জানতো ছোট্ট নক্ষত্রের আলোর রোশনাই অন্য সব নক্ষত্রকে ছাপিয়ে যাবে। এই নক্ষত্রটির নাম ফাতিহা আয়াত। আমরা যাকে রাজকন্যা বলে ডাকি। ওর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে যে কোন দুঃখ ব্যথা ভুলে থাকা যায় আর ও যখন ওর পুর্ন আলো ছড়িয়ে দেয় তখন চারদিকে যত অন্ধকার যত হতাশা থাকে সব দুর হয়ে যায়।

বাংলার আকাশের সব থেকে বড় সুর্য ডুবে গিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট। যে সুর্যের আলোয় পথ দেখে একটি বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল যিনি এই ছোট্ট সুন্দর দেশটির নাম রেখেছিলেন বাংলাদেশ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার আকাশের সব থেকে উজ্জল এই নক্ষত্রটির জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। আলোর কারিগরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে জ্যাকসন হাইটসে আয়োজন করা হয়েছিল “শিশু কিশোর মেলা-২০১৮”। জাতীয় শিশু দিবসের সেই আয়োজনে বাংলাপ্রেমীদের ভীড় ছিল আর ছিলো অগণিত শিশু কিশোর। যাদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল বাংলা লিখন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা সহ আরো অনেক কিছু। সেই প্রতিযোগিতায় দুটো বিভাগেই সেরাদের সেরা হয়েছে ছোট্ট ফাতিহা।

যারা অলরেডি জানেন এবং যারা জানেন না তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ফাতিহা হলো আমাদের ক্ষুদে বন্ধু সেই রাজকন্যাটি যে স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করে আর মন দিয়ে সব শিখে নেয় তার পর বাসায় বাবাকে সাথে নিয়ে নিজেই শিক্ষক হয়ে গোটা পৃথিবীতে তার জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়। বার বার মুগ্ধ হয়ে শুনি “ওয়েলকাম টু ম্যাথ ম্যাজিক উইথ ফাতিহা” ছোট্ট ফাতিহা নিয়মিত গণিত এবং বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করে এবং গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলিকে খুব সহজে সবাইকে শিখিয়ে দেয়। সে মনে করে “সন্তানকে মুখস্থ করাবেন নাকি আবিস্কারের নেশা ধরিয়ে দেবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার”।জ্যাকসন হাইটসের আকাশ সেদিন ছায়া দিয়েছিল ছোট্ট ফাতিহাকে। বিদেশ বিভুইয়ে থেকেও ব্যরিষ্টার আফতাব আহমেদের কলিজার টুকরা আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা ফাতিহা আয়াত বাংলাকে বুকে ধরেছে এবং সেটির প্রমাণ স্বরুপ শ্রেষ্ট আবৃত্তিশিল্পী এবং শ্রেষ্ঠতম লিখন শৈলী দেখিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছে।আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ফাতিহা একটি নক্ষত্র যার নিজস্ব আলো আছে এবং সেই আলো ক্রমাগত ভাবে বেড়েই চলেছে। ফাতিহার এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত এবং ওকে অভিনন্দন জানাই।

প্রতিটি অভিভাবককে বলতে চাই আসুন আমরা আমাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নানা কিছুতে যুক্ত করি এবং উৎসাহ দেই। তাহলেই আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা রাজপুত্ররা স্বপ্নের মত বেড়ে উঠবে এবং তাদের সাফল্যের খাতার প্রতিটি পাতা কানায় কানায় পুর্ণ হয়ে থাকবে।

সুত্র: ছোটদের বন্ধু

 

শৈশব কথন

সার্জিন খান


ছোটবেলায় আমার এক ধরণের অদ্ভুত খেলা ছিল। ছাদ থেকে লাফ দেওয়া। প্রথম প্র‍্যাক্টিস করতাম বাসার একতলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে। দেখতাম ব্যাথা পাই কি না! প্রথম প্রথম ভুল পজিশনে লাফ দেওয়ায় পা মচকে যেত। এরপর ব্যাথা পেতে পেতে ঠিকমতো লাফ দেওয়াটা শিখে ফেলেছিলাম।
তারপর দোতলা থেকে লাফ দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলাম, এবং যথারীতি সেখানেও প্র‍্যাক্টিসের বদৌলতে সফল হয়েছিলাম।

আমাদের বাসাটা ছিল একতলা। তাই এলাকার বিভিন্ন দোতলা, তিনতলা বাসার ছাদে ভর দুপুরে যখন এলাকা নিশ্চুপ তখন চুপিচুপি উঠে লাফ দিতাম। তিনতলা থেকে মাত্র দুইবারই লাফ দিয়েছিলাম, প্রথম বার লাফ দিয়ে পায়ে সামান্য ব্যাথা পেয়েছিলাম, আর দ্বিতীয়বার ঠিকমতোই লাফ দিয়েছিলাম। তবে সেসময় বাবা দেখে ফেলেছিলেন।
আমি কাজটা করতাম বিকেলে। আমার কিছু বন্ধুরা যেদিন আমার সঙ্গে খেলতো না ঐসময় আমি একা একা এই কাজটা করতাম। বাসায় কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, খেলতে গিয়েছি।

সেদিন বাবা অফিস শেষ করেই বাসায় চলে এসেছিলেন, আমাদের ব্যবসার শো-রুমে যাননি। অফিসের পর শো-রুম বন্ধ করে আসতে আসতে বাবার রাত হয়ে যেত। ঐদিন বাবা অসুস্থ ছিলেন। শরীরে জ্বর নিয়ে রিক্সা দিয়ে যখন এলাকায় ঢুকছেন, তখন দেখেন আমি তিনতলা একটা বাসার ছাদ থেকে লাফ দিচ্ছি। এরপর পরই দেখলেন আমি দৌড়ে জোড়পুকুরের দিকে(আমাদের জয়দেবপুরে শৈশবের বাড়ির ঠিকানা) ছুটে যাচ্ছি। তিনি এমনিতেই প্রেশারের রোগী। আমার এই অবস্থা দেখে তাঁর হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। তিনি যে পুরো ব্যাপারটা দেখেছিলেন এবং আমি যে তাকে দেখিইনি এই ব্যাপারটা আমি জানতাম না। আমাকে কিচ্ছু না বলে তিনি সোজা বাসা চলে আসলেন।

বাসায় এসে সবুজ চিকন কাঁচা বাশের কঞ্চি পেছনে রেখে বসে ছিলেন। আমি অন্যান্য খেলা শেষ করে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে সন্ধ্যা নেমে গেল। তিনি চেয়ারে বসে ছিলেন। কোন কথা না বলেই সমানে শক্ত মার দেওয়া শুরু করলেন। তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। বলা যায় একেবারে বাচ্চা মানুষই। ছাদ থেকে লাফ দিলে যে মানুষ মারা যায় এই সামান্য বোধটাও ছিল না। কেন যেন আমার ভয় লাগতো না। তাই বাবা কেন মারছিলেন সেটা ঠিক বুঝতেই পারিনি। বরং তখন বাবাকে ভিলেনের মতোই লাগছিলো। ছাদ থেকে লাফ দিলে কাউকে মারতে হয় নাকি? আশ্চর্য্য!

তখন দাদী ছুটে এলেন আমাকে বাঁচাতে। আমাকে জড়িয়ে ধরে বাবাকে বকতে শুরু করলেন। বাবা তখনও রাগে ফুঁসছেন। এরপর কিছু না বলে চুপচাপ সরে গেলেন নিজের ঘরে। সে রাতেই তাঁর জ্বর আরো ঝেঁকে এলো। আমারও জ্বর এলো। তাঁর এসেছিল আগে থেকেই, আমার এসেছিলো মার খেয়ে। মা বাবাকে আর আমাকে পাশাপাশি শুইয়ে দুইজনের সেবা করতে থাকলেন।

কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ পরে যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখি বাবা পাশে নেই। আমি অন্য বিছানায়। একটু নড়তেই খেয়াল করলাম পলিথিনের প্যাকেটের কিছু মচমচ শব্দ। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে বুঝতে পারছিলাম চকলেটের কোন প্যাকেট হবে।

বারান্দা দিয়ে লাইটের আলো আসছিলো। আধো আলো আদো আঁধারের মাঝে দেখে নিশ্চিতই হলাম যে এগুলো চকলেটেরই প্যাকেট। কোকোলা চকলেট জেমস আর মিমি চকলেট।
অনেকক্ষণ কারোর আসার শব্দ না পেয়ে আমি চকলেটগুলো খুলে কাঁথার তলে বসে একটার পর একটা খেতে থাকলাম। কিভাবে এগুলো আসলো, কে দিলো এসব কিছুই তখন মাথায় আসেনি।
কিছুক্ষণ পর বাবা-মায়ের গলা আবিষ্কার করলাম। খেতে বসেছিলেন। আমাদের বাসাটা ছিল একদম ছোট, এক রুমের মাঝে আরেক রুমের কথা শুনতে পেতাম।
– ছেলের সাহস দেখছো? কত বড় বিল্ডিং থেকে লাফ দেয়! কত্ত বড় কলিজা!
মা কোন কথা বলছিলেন না। চুপ করে ছিলেন।

এরপর কেটে গেল কতগুলো বছর। দাদী মারা গেলেন, বাবা-মা বৃদ্ধ হলেন। বাসা ভর্তি তাদের নাতি-নাত্নি এলো। আমার ছেলে পৃথিবীতে এলো। যেই আমি আগে এক থেকে দুইতলা, দুই থেকে তিনতলা; ঐদিন ধরা না খেলে হয়তো বা আরো উঁচু বাসার ছাদ থেকে লাফ দিতে পারতাম। সেই আমি জীবনের ট্র‍্যাজেডিতে পরে শরীরের সব অঙ্গকে কোনমতে ওষুধের বদৌলতে টিকিয়ে রেখে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি আমার ছেলের ভবিষ্যৎকে গুছিয়ে রাখার।
তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় আহা রে! কি দিনই না ছিল। আজকাল যখন দুরন্ত কোন শিশুদের দেখি মনের মাঝে উঁকি দেয় অতীতগুলো।

যখন দেখি কোন শিশুকে শাসণ করতে তখন যেন মনে হয় আহা রে! বাচ্চাটার মনে কি ঝড়টাই না যাচ্ছে, বাবা-মাদের বুকটা কতই না ফেটে যাচ্ছে।
অতীত স্মৃতির মাঝেও অনেকেই নিজেকে খুঁজে পায়। কিন্তু সেই অতীতগুলোকে ঘিরে থাকা সেই স্থানগুলোকে বদলে যেতে দেখলে কেন যেন মন চায় না। স্বার্থপরের মতো তখন মনে হয় দুনিয়া বদলে যাক, আমার শৈশবের ঘরবাড়িগুলো আগের মতোই থাকুক।
আজকে হঠাৎ করে আমাদের জোড়পুকুর পাড়ের সেই বাড়িটাকে অসম্ভব মিস করছি। আমার দুরন্ত শৈশবের পুরোটাই কেটেছে সেখানে। আজকে নিজেদের বাড়ি হয়েছে, কিন্তু এরপরেও প্রায়ই স্বপ্নে সেই বাড়িটাকে স্বপ্নে দেখি, আমার শৈশবকে স্বপ্নে দেখি।

লেখক পরিচিতি:
লেখক/প্রকাশক/সম্পাদক/সংগঠক।

 

মাতৃকথন_৪

ফারিনা মাহমুদ


বাবু তোমার কি নাম ?
– আমার পাতা আর পুত্তি (পশ্চাতদেশ, নরমাল ও সেলিম ওসমান ভার্সন )
এ মা, এইটা রেখে দাও … ভেঙ্গে যাবে তো …
– তুই কুতা বাতা (ট্রান্সলেশন নিষ্প্রয়োজন)
সবশেষে গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে – ওই তালা তর (শালা সর ) ..
অথবা বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথির সামনে – গেসি, খাইসি, খেলতাসি, ভাষায় কথা বলে ওঠা ছোট্ট পুতুলের মতো বাচ্চাটা আমার উচ্চশিক্ষিত নিকটাত্মীয় দম্পতির ।

বাবা মা চাকুরিজীবি হওয়ার কারণে বাচ্চা দিনের বড় সময় থাকে দাদী, ফুফু, কাজের বুয়া, ড্রাইভার, দারোয়ান সবার মাঝখানে । বাচ্চার ভাষা শিক্ষায় কোনো এক অজানা কারণে গৃহকর্মী শ্রেনীর অবদান অত্যাধিক । সেই অবদান বাবা মাকে পাবলিক প্লেসে কি পরিমান বিব্রত করে তা আমি প্রথম বুঝতে পারি যখন আমার সেই আত্মীয়া তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন । আমি ততোধিক বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করি, বাচ্চা প্রতিবার একটা করে গালি দেয় আর বাচ্চার বাবা তার মায়ের দিকে এমনভাবে তাকায় যেন মা রোজ সকালে কবিতার মতো করে গালি মুখস্ত করায় বাচ্চাকে !

শুধু ভাষাই না, বাচ্চা আরো অনেক কিছুই পারিপার্শিকতা থেকে আত্মস্থ করে যা আমাদের পছন্দ না । মা চাকরি করলেও করে, না করলেও করে । কিন্তু দুর্ভাগ্য এমনই আমাদের, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দোষের বোঝাটা মায়ের দিকেই যায়, যাচ্ছে , যাবে ই !

উচ্চশিক্ষিতা, ক্যারিয়ারিস্ট মেয়েটা মাতৃত্বকালীন ছুটিতেই দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে যায় – চাকরি করবো না ছেড়ে দিবো ? বাচ্চার যত্ন ঠিক মতো হবে তো ? কার কাছে রেখে যাবো ? নানী দাদীর কাছে কি সারা বছর বাচ্চা রাখা যায় ? বাচ্চাটার যত্ন হবে তো? বাচ্চাটা কি শিখবে ? তার উপরে আছে বুক ভাঙ্গা কষ্ট, অন্যের কাছে বাচ্চা রেখে কাজে মন দেয়া !
এইসব নানান ট্রমা পার হয়ে যদিও বা কাজে ফিরলেন, ঘরে ফিরে যখন শুনবেন বাচ্চার মুখে অশুদ্ধ কথা বার্তা, অপরাধবোধ গিলে খাবে আপনাকে ! আর সেই আগুনে ঘি ঢালতে, সেই দায়ের হিমবাহের নিচে আপনাকে পিষ্ট করতে আশেপাশের মানুষজন তো আছেই ! ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যাবে মূল সমস্যা আপনার বাচ্চা না, আপনার শ্বাশুড়ির বাচ্চাটা, কবুল বলে একদা যাকে জীবনসঙ্গী করেছিলেন ! আপনার তখন মনে হবে – এই লোক কে? একে তো আমি চিনি না !!

এই মারাত্মক দ্বিধা-দ্বন্দের টানা পোড়নে পড়ে সংসারের সুখের জন্য অনেকেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আসেন। কেউ কেউ হয়তো পরিস্থিতির কারণে বা সামগ্রিক বিবেচনায় কাজটা চালিয়ে যান, বা যেতে বাধ্য হন, কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা অপরাধবোধ ঠিক ই থাকে – ভুল করছি না তো?

এই চরম দুঃসময়ে আসলে কি করনীয় ?
আমার মন চায় ফিরিয়ে প্রশ্ন করতে – কার কি করনীয় ? করনীয় কি খালি মায়ের ? মা যদি বাইরে কাজ করেন, তিনি কি শুধু নিজের জন্য করেন ? সংসারের জন্য, সন্তানের জন্য কি করেন না ? খুব নগ্ন ভাবেই বলি, মায়ের আয়ের সুফল তো মা একা ভোগ করেন না, তাহলে সব দোষের দায় মায়ের একার ক্যানো ? করনীয় এর তালিকা যদি থাকে তা শুধু মায়ের না, সুবিধাভোগী সবার জন্যই তালিকা থাকতে হবে । মায়ের উপার্জিত অর্থের ভোগী উপভোগী সবই পাবেন, তবে ভুক্তভুগী শুধুই মা !!

এই কঠিন দুসময়ে মনে রাখবেন,
যেই সিদ্ধান্তেই যান না কেনো –
১. কিছু পাবেন, কিছু হারাবেন
২. সবাইকে খুশি করতে পারবেন না, কাজেই নিজের খুশিকেই ফোকাস করুন
এবং আপনার সিদ্ধান্ত আপনি নেবেন,

১. আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী, কারো কথায় না, কাউকে অনুসরণ করে না । তবে অন্যের অভিজ্ঞতা জেনে নেয়ায় দোষ নেই।
২. রিস্ক বাই বেনিফিটের রেশিওতে পাল্লা কোনদিকে ভারী তা চিন্তা করে ।
নিজের সিদ্ধান্তে কনফিডেন্ট থাকবেন, সিদ্ধান্ত পাল্টানোর প্রয়োজন পড়লে সেটাও কনফিডেন্টলি পাল্টাবেন । হীনমন্যতার দিন শেষ !

উপরের সবকিছু চিন্তা করে যদি আপনার মনে হয় চাকরি করবো না, বাচ্চাটাকে সময় দেবো, সু-স্বাগতম । অবশ্যই এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত, সাহসী সিদ্ধান্ত। এই সাথে আত্মত্যাগ তো যুক্ত আছেই। “এই সময়টা উপভোগ করুন।” আবার একসময় কাজে ফিরবেন এমন ইচ্ছা থাকলে নিজেকে সেভাবে প্রস্তূত করুন। বাসায় থাকেন বলেই আবার সন্তানের ব্যাপারে ওভার প্রটেক্টিভ হতে যাবেন না।

কারণ দু দিন পরে কিন্তু বাচ্চাকে স্কুলে দিতেই হবে । মানসিক ভাবে তৈরী থেকে বাচ্চাকে একটু স্বনির্ভরশীল করুন, কাজ সহজ হবে।

কিন্তু উপরের সবকিছু বিবেচনায় যদি মনে করেন কাজ চালিয়ে যাবেন, তাহলে এটা জেনে রাখুন যে পৃথিবীতে মিলিয়ন চাকুরিজীবি মায়ের সুসন্তান আছে, কুসন্তানও আছে। একইভাবে পৃথিবীর মিলিয়ন স্টে হোম মামের ক্ষেত্রেও এই কথা খাটে। কাজেই দোষ মায়ের আর মায়ের একার চাকরির না।

নিজে পালেন আর নানী দাদী কাজের মানুষ যার কাছেই বাচ্চা রেখে যান না কেন বাচ্চা কিছু উল্টো পাল্টা কথা আচরণ শিখলেই মুষড়ে পড়ার কিছু নেই । বরং “কিভাবে ওকে এই আচরণ থেকে সরিয়ে আনা যায়, সেটার যুক্তিযুক্ত সমাধান খোঁজাই জরুরি”। বাচ্চার কাছে “ভাত খাবো ” যেমন শব্দ, “কু*র বা*” ঠিক তেমনি একটি শব্দ। সে এর মানে বোঝে না। শুধু বোঝে কোন এক্সপ্রেশন দিতে কোন শব্দ কোন টোনে ব্যবহার করতে হয়। সে এটা জীবনে কোনো একদিন শিখবেই। অল্প বয়সে শিখে ফেলেছে দেখে লজ্জায় গ্লানিতে কুঁকড়ে গিয়ে তাকে বকাঝকা করার চেয়ে তাকে তার উপযোগী করে বুঝিয়ে ওখান থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। শব্দটি যেন বারবার তার সামনে ব্যবহার না হয়, সম্ভব হলে তা নিশ্চিত করুন। কিছুই সম্ভব না হলে – ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে !! ভালো খারাপ সব পরিবেশে মিশে মিশে যে ভালো মানুষ হয়, সে ই প্রকৃত ভালো মানুষ । মনে রাখতে হবে দিনশেষে মায়ের সাথে কোয়ালিটি টাইম অনেক বেশি জরুরি কোয়ান্টিটি অফ টাইমের চেয়ে । বাচ্চার সাথে একান্তে কিছু সময় কাটান, তাকে গল্পের বই পড়ে শোনানো, গল্প বলা, গান কবিতা বা খেলার মধ্য দিয়ে তার সাথে আত্তিক যোগাযোগ ঠিক রাখুন । ওকে একটু একটু করে বুঝতে সেখান যে আপনি আর বাবা যে কাজে যাচ্ছেন এতে করে সংসারে কি যোগ হচ্ছে । কাজে যাবার আগে বয়স অনুযায়ী বাচ্চার জন্য সেট অফ একটিভিটি রেখে যান, ছবি আঁকা বা খেলার জিনিস সহ সে যেন ব্যস্ত থাকে সেই আয়োজন করে রাখুন । দিনশেষে তার কাছে জানতে চান, সে সারাদিন কি করেছে । রিওয়ার্ড দিন। তার পরেও কথাও খটকা লাগলে, কোনকিছু ভালো দিকে যাচ্ছে না এমন মনে হলে শিশু বিশেষজ্ঞর সাথে কথা বলতে পারেন ।
সবচেয়ে আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কিন্তু বাবাদের জন্য বরাদ্ধ থাকলো । অযথা মা-কে সবকিছুতে দোষ দেয়া বন্ধ করেন । বিশেষ করে বাচ্চার সামনে । স্টে হোম অথবা ওয়ার্কিং মাম কারো জীবনই খুব সহজ না । সংসারের প্রতি একজন বাবা হিসাবে দায় দায়িত্ব বাড়ানো অনেক জরুরি । জরুরি সংসারে আপনার ইনভলভমেন্ট । এতে করে বাচ্চা দায়িত্ববোধ শেখে । আর উল্টোটা যদি করেন তো বাচ্চা বেয়াদপি আর অসম্মান ছাড়া কিছুই শিখবে না, তাও শিক্ষক হবেন আপনি নিজেই । এরপর সেই অসম্মান যে সে আপনাকেই ফিরিয়ে দেবে না তার কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই !
সংযুক্তি : আমি একজন চাকুরিজীবী মা । আমি যেখানে আমার বাচ্চা রেখে কাজে যাই, সেই জায়গা নিরাপদ, সেখানে প্রশিক্ষিত কেয়ারাররা আমার বাচ্চার দেখাশোনা করেন । এই সবকিছু জানার এবং চোখে দেখার পরেও ঠিক এক বছর আগে (১/৬/২০১৫) মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যেদিন কাজে ফিরেছিলাম, বেশ বড় একটা তোয়ালে-তে মুখ ঢেকে কান্না করতে করতে ট্রেনে এসেছিলাম । আজ এক বছর পার করে দিয়ে আমি একটা কথা আবারও জোর দিয়ে বলি সব মা কে, আপনার সিচুয়েশন আপনি ই বুঝবেন । আপনার সিদ্ধান্ত আপনি ই নেবেন । শুনবেন সবার টাই, কিন্তু করবেন তা-ই যা আপনার ঠিক মনে হয় ।আপনি স্টে হোম মাম হন আর ওয়ার্কিং মাম, আপনার কনফিডেন্সই আপনার বাচ্চাকে কনফিডেন্ট হতে সাহায্য করবে !
স্টে হোম মাম অর ওয়ার্কিং মাম
দে ডোন্ট হ্যাভ টাইম টু রেস্ট
এন্ড বিফোর ইউ ডেয়ার টু ব্লেইম হার
রিমেম্বার, মাদার নো’স দি বেস্ট !!

 

অভিমান ও অহং

আফরোজা হাসান


মাঝে মাঝে মনে হয় প্রত্যেকটি মনই এক একটি সাম্রাজ্য। আর মনটিকে ধারণকারী ব্যক্তি সেই সাম্রাজ্যের সম্রাট। আর মনের অনুভূতিগুলো সেই সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্য। সাম্রাজ্যের সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবার জন্য যেমন সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্যদের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন, মনোজগতের ক্ষেত্রেও কিন্তু ঠিক তাই। অনুভূতিগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিঘ্নিত হয় মন সাম্রাজ্যের কার্যাবলী।

মানবিক অনুভূতিগুলোকে কখনোই ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। ফুলের সৌরভের মত এগুলো শুধুই অনুভবের। কবি সাহিত্যিকরা যদিও উপমা বা রূপকের মাধ্যমে অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছেন। যেমন, ফুলের মত কোমল(কোমলতা), পাহাড়ের মত অনঢ়(অনঢ়তা), চাঁদের মত স্বিগ্ধ(স্বিগ্ধতা), হায়নার মত হিংস্র(হিংস্রতা), শেয়ালের মত ধূর্ত(ধূর্ততা)ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এই উপমা বা রূপকের দ্বারাও আসলে অনুভূতিগুলো ব্যক্ত হয় না বরং অনুভবই করা হয়।

যাইহোক, মন সাম্রাজ্যের সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্যরা হচ্ছে অনুভূতিরা। কিন্তু কোন অনুভূতি কোন পদে আসন সেটা কি জানি? মন্ত্রীর আসনটা চিন্তা করার সাথে সাথেই মনেহলো সম্রাটের পাশে মাথা উঁচু করে বসে আছে ‘অহং’। আর সামনে হাঁটু গেঁড়ে মাথা নিচু করে বসে আছে অভিমান। অহং এর নাক ভীষণ উঁচু তাই মাঝে মাঝেই তর্জনী ঘষে তা দিয়ে যাচ্ছে নাকের ডগায়। আর অভিমান নাক টেনে টেনে রাশ টেনে ধরতে চেষ্টা করছে লাগামহীন অশ্রুর।

অহং আর অভিমানের মধ্যে পার্থক্য কি? যখন ভাবছিলাম মনের অভিধানে উল্লেখিত কথাগুলোর সন্ধান পেলাম। অহং আর অভিমান কখনোই এক না। কারণ এই দুটিই ভিন্ন দুটি মানসিক অনুভূতি। অভিমান হচ্ছে মনের কোনে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট শিশুটি। যে কথায় কথায় গাল ফুলিয়ে বসে যায়। কনিষ্ঠা আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে আড়ি আড়ি আড়ি। আর অহং হচ্ছে সেই স্বৈরাচারী সত্তা যে নিজেকে অন্যের থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে। যে যাই বলুক পা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে প্রদর্শন করে বৃদ্ধাংগুলি।

অভিমানকে আমার মনেহয় ঋতু পরিবর্তনের সময়কার উষ্ণতা ও শীতলতার সংমিশ্রণের আদুরে জ্বর। নাকে সর্দির বন্যা, গলায় খুকখুক ধ্বনি। রেশমি শালে জড়িয়ে, পশমি মাফলার গলায় ঝুলিয়ে, হাতে ধরিয়ে দিতে হয় একমগ মসলা চা। এতোই আহ্লাদী অভিমান। আর অহং মারাত্মক কোন মরণব্যাধি। এইডস, ক্যান্সার নাকি ডায়াবেটিস? হ্যা ডায়াবেটিস। একবার মনে বাসা বেঁধে ফেললে আর মুক্তি নেই। সবসময় তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বেড়ে গেলেও বিপদ আবার কমে গেলেও বিপদ। এ যেন জলে কুমীর আর ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা।

অভিমানের পেছনে লুকায়িত থাকে ভালোবাসা+ অনুযোগ+ অভিযোগ+ প্রত্যাশা-আশা-আকাঙ্ক্ষা, অর্থাৎ প্রাপ্তির আশা+ বিশ্বাস ও ভরসার অবমূল্যায়ন প্রসূত রাগ+ পছন্দ-অপছন্দের বিভেদ জনিত রাগের অভিনয় ইত্যাদি। আর অহং এর পেছনে থাকে নিজের কোন কিছুকে উপরে তুলে ধরে অন্যদের কাছে নিজেকে উপস্থাপন বা পেশ করা। যার উদ্দেশ্য থাকে অন্যকে অবমূল্যায়ন করা বা হেয় করা। এবং নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে আনন্দিত হওয়া।

সুতরাং, অহং ও অভিমান কখনোই একই অনুভূতি নয়। এই দুই অনুভূতিতে যোজন যোজন পার্থক্য বিরাজমান। তবে হ্যা অভিমানের পথ বেয়ে মনে অহং ঢুকে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। অভিমানের উপর যখন অবিরাম তুষার ঝরতে থাকে এবং পরশ পায় না সে রোদের। ধীরে ধীরে একসময় তা বরফের পাহাড়ে রুপান্তরিত হয়ে যায়। তখন সূর্যিমামার প্রখর কিরণও খুব সহজে সেই পাহাড়ের বুকে বইয়ে দিতে পারে না ঝর্ণাধারা।

আসলে মনের অনুভূতিগুলোর সাথে আমাদের স্বার্থ জড়িত। জড়িত আমাদের আত্মতৃপ্তি, বাসনা, সন্তুষ্টি। অহংকার ও আসক্তিমুক্ত, বিবেকবোধ সম্পন্ন, পরমার্থজ্ঞাননিষ্ঠ, জীবনের সুখ-দুঃখের অবস্থানকে ঘিরে নিয়তি প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষের পক্ষেই কেবল সম্ভব স্বার্থ নির্ভর না হওয়া। আর একজন মানুষকে নিজকে স্বার্থহীন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে পথে হাঁটতে হবে তার নাম শরীয়ত। যখন মনে আল্লাহর অবস্থান নির্দিষ্ট হয়ে যায় ব্যক্তি পারিপার্শ্বিক শত প্রতিকূলতার মাঝেও করে যেতে পারে অনুভূতির সঠিক প্রয়োগ।

আমি বিশ্বাস করি যে, শুধু যদি অহং বিসর্জন দেয়া যায় তাহলেই পৌছানো যায় মন সাম্রাজ্যের সেই কুটিরটিতে যার নাম প্রশান্তি। আর অভিমান? উহু সে থাকুক সঙ্গোপনে, মনে মনে, নীরবে-নির্জনে, একান্ত আপনে। অভিমান তো সেই অলংকার যা বন্ধনকে করে আরো রঙিন। কিছুটা বিষণ্ণ, সামান্য অবসন্ন, একবিন্দু বিরক্তি, অজানা আসক্তি, করে নিজের সাথে চুক্তি, এসব থেকে নেয়া যায় যদি মুক্তি। মনে বিরাজ করবে প্রশান্তি, অভিমানের এতটাই এই শক্তি………।

 

মুনতাহা: ‘বাধা আসবেই কিন্তু সাহস হারানো যাবে না’

ফাতেমা শাহরিন


একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মুনতাহা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মনিহারী’। মনিহরীতে রয়েছে, হাতের তৈরী চুড়ি, বালা, নেকলেস, ব্রেসলেট, কানের দুলসহ নানা রকম আইটেম। যার পুরোটাই মুনতাহা নিজ হাতে করে থাকেন। চুমকি, পুথি ইত্যাদি দিয়ে মুনতাহা তার স্বপ্নীল মনের বর্ণিল ছবি আঁকেন তার প্রতিটি সৃষ্টিতে।
তিনি একজন স্টুডেন্ট, পড়াশুনা এইস এস সি শেষ করেছেন। সামনে ভার্সিটিতে ভর্তি হবেন। পড়াশুনার ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন এই সাহসী নারী।

অপরাজিতার পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল তার সঙ্গে:

অপরাজিতা: আপনি ঠিক কখন ভাবলেন হাতের কাজটিকে কন্টিনিউ করবেন?
মুনতাহা: যখন কাজ করে তা অনলাইনে আপলোড করলাম সাথে সাথে বেশ সারা পেতে শুরু করি। তখন থেকে কন্টিনিউ করার কথা ভেবেছি। যদিওবা ছোটবেলা থেকে টুকটাক কাজের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল আমার। যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন ওড়নায় কাজ করেছিলাম, সবাই খুব অবাক হয়ে যায়, এতটুকু মেয়ে কত সুন্দর করে কাজ করেছে। আর যখন আরেকটু বড় হহলাম তখন থেকেই আমার প্রচন্ড আগ্রহ, নেশা, আজ পেশার পরিণত হয়েছিল। পড়াশুনার পাশাপাশি আমি হাতের কাজ শিখেছি সম্পূর্ণ আমার নিজের চেষ্টায়। তবে আমার আম্মু আর নানু আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে এসেছেন।

অপরাজিতা: মনিহারীর শুরুর গল্পটা আমাদেরকে বলুন?
মুনতাহা: মজার ব্যাপার ‘মনিহারী’ কাজ যখন শুরু করি তখন আমার কাছে কোন টাকা ছিল না। আমি এই কাজ একা একায় শিখি। তখন মুলত ফেসবুকে নানান পেজ ঘুরে ঘুরে দেখাটি খুবই আনন্দকর ছিল। একদিন এই গয়নাগুল দেখি। তখন বাবার কাছ থেকে পাওয়া হাত খরচের টাকা জমিয়ে সব মেটারিয়াল কিনি। এককভাবে টুকটাক বানিয়ে বিভিন্ন হাতের নকশা করে নিজেই পড়তাম। এরপর ফেসবুকে, এত সারা পেলাম আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: আমরা বলতে পারি উদ্দ্যোগটা ছিলো আপনার! নিজের! তারপর?
মুনতাহা: মুলত আমি একাই কাজ শুরু করেছি। এখনও একা করছি। তবুও কাজ থেমে থাকে না। থেমে যায়নি ‘মনিহারী’।সেই সময় অনলাইনে পেজ খোলার চিন্তা করি,অনলাইন পেজ ‘মনিহারী’ সফলভাবে যাত্রা শুরু করে। এর পর আলহামদুলিল্লাহ অনেক অর্ডার পাই। আসলে পুরো ব্যাপারটা ছিল অবশ্যই সংগ্রামের। আমি একা একা সিদ্ধান্ত নেই, কাজও শুরু করি এবং তারপর আমি বেশ ভাল সারাও পাই। সবকিছু নিয়ে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। কোন কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত এবং সেই বিষয়ে অবিচল থাকাটি আমার কাছে বড় সংগ্রাম মনে হয়েছে।

অপরাজিতা: নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পরিসরে এই ব্যবসা জানতে চাই আরও অনেক কিছু?
মুনতাহা: মুছকি হাসির সুর শুনা যায় সম্ভবত, আমি আসলে বাসায় একা একা অব্যবহারিত জিনিসপত্র দিয়েই বানানোর কাজটি শুরু করি। অতঃপর আরও মেটারিয়াল এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বড় পরিসরি কাজ করার চেষ্টা করি। বিভিন্নজন তাদের মতামত শেয়ার করে। আগে ঘরে বসে নিজেই ব্যবহার শুরু করি। তারপর অনলাইনে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করি। আত্নতৃপ্তির।

অপরাজিতা: আবার ‘মনিহারী’ ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
মুনতাহা: কোন কাজই খুব সহজ নয়। একজন নারী উদ্দ্যোক্তা হিসেবে বলব, যেকোন কাজে প্রথমে প্রচুর বাধা আসে এবং আসবে কিন্তু কখনও সাহস হারানো যাবে না। যদি সাহসের সাথে বাধা পেরিয়ে উঠা যায় ইনশাআল্লাহ আর কোন ভয় থাকে না।

অপরাজিতা: এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
মুনতাহা: হা অবশ্যই আছে, কেউ যদি হাতের কাজ পারেন তাদের জন্য প্রচুর সুযোগ আছে। অসহায় মেয়ে শুধু কেন আমার মত যারা ঘর থেকে বাইরে কাজ করতে যেতে পারে না তারা ঘরে বসেই তাদের কাজগুল অনলাইনে বিক্রি করতে পারে অনায়াসে। চাইলে এই কাজ করে সংসার চালাইতে পারেন। যে কোন কাজে লেগে থাকা দরকার।

অপরাজিতা: মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগিতা কি আদৌ পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে না বলে আপনি মনে করেন?
মুনতাহা: পাচ্ছে না। এমন বলার কারণ আসলে আমার এই কাজের জন্য আমি কয়েক জায়গায় সাহায্যের জন্য গিয়েছি কিন্তু বিফল হয়েছি। তাই আসলে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

অপরাজিতা: আপনার দৃষ্টিতে সফল নারী কে?
মুনতাহা: সফলতা হচ্ছে কোন একটা কাজ শুরু করে সফলভাবে তা করতে পারা। নারীদের জন্য সফলতাটি ভীষণ কঠিন ও সংগ্রামের। ছেলেরা যত সহজে বেরিয়ে পড়তে পারে বাধা কম, নারীদের প্রচুর বাধা অতিক্রম করতে হয়।

অপরাজিতা: নারী দিবস চলে গেল’ নারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মুনতাহা: নারীদের উদ্দেশ্যে নারী দিবসে বলতে চাই এতটুকুই, ‘যারা বসে আছেন কিন্তু কিছু করতে চান তাদের বলল, হাতের বিভিন্ন কাজ শিখুন এবং আত্ম-সবলম্বী হয়ে উঠুন। বাধা পেরিয়ে হাটতে পারলে আমরা সফল।

অপরাজিতা: নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
মুনতাহা: যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘আপনারা এগিয়ে যান’। সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ। প্রথমে হয়ত আপনাকে কেউ সাপোর্ট করবে না, সবাই বাধাও দিতে পারে। কিন্তু যখন দেখবে আপনি আপনার যোগ্যতা দিয়ে সফলতার পথে হাটবেন তখন সবাই আপনাকে সাপোর্ট করবে।

অপরাজিতা: মনিহারী নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মুনতাহা: ‘মনিহারী’ নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। গ্রুপিং করে কাজ করার আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। অনেক বড় বড় উদ্দ্যোক্তাদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে। আমি হাতের তৈরি জিনিস নিয়েই কাজ করতে চাই। সবাই দোয়া করবেন।

 

সুইসাইড: ‘আমরা অল্পতেই ধৈর্য হারাই’

ডা. মারুফ রায়হান খান


শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রেয়া আত্নহত্যা করেছেন। আমি ৪র্থ বর্ষের স্টুডেন্টদের পড়াই। আমি জানি কী বিশাল পরিমাণ স্ট্রেস, এংজাইটি, ডিপ্রেশানে থাকা সম্ভব তাদের। তবে কোনোভাবেই আত্নহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না। এর মধ্যেই আমাদের ভালো থাকা শেখা প্রয়োজন। আমি যেকোনো ব্যাচে ক্লাস নিতে গেলে ক্লাসটা শুরু করি একটা কমন গল্প দিয়ে। জীবন ভালো না বুঝলে অতো পড়াশোনা দিয়ে আল্টিমেটলি কী হবে? আমি জানি শ্রেয়ার পথের পথিকের অভাব নেই।

২০০৬ সাল, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল তখন। সেই ফুটবল বিশ্বকাপটা আমার জন্য খুব আনন্দের স্মৃতি হতে পারতো, কারণ আমার ফেভারিট টিম ইটালি সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তা ঘিরে আমার আনন্দ নেই, বরং রয়েছে একরাশ বেদনা আর কান্না। কারণ সেই বিশ্বকাপটি চলার সময় আমার একজন বন্ধু আত্নহত্যা করে। হ্যাঁ, এই ১৪/১৫ বছরের মানুষটিই ফ্যানে দড়ি ঝুলিয়ে আত্নহত্যা করে। ও নাকি পড়াশোনা না করে খেলা দেখতো, বাবা-মা সে রাতে নাকি বেশ বকাঝকা করেছিলেন, বন্ধু আমার আর সে জীবন রাখার কোনো মানে খুঁজে পায়নি।

আমাদের এই প্রজন্মের অজস্র দিক আছে যেগুলো বেশ পজিটিভ কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর রকমের অন্ধকার দিক আছে। আমরা বোধহয় খুব অল্পতেই ধৈর্য হারাই, এই অতি মূল্যবান জীবনটিকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি না, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না, জীবনটিকে হয়তো ঠুনকো ভাবি কিছু থেকে কিছু হলেই–কী হবে আর এ জীবন রেখে। তার প্রমাণ পাই যখন আমরা জানতে পারি, কাউকে ‘পাখি ড্রেস’ কিনে দেওয়া হয়নি বলে আত্নহত্যা করে, প্রিয় দল আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল খেলায় হেরেছে বলে ঐ দেশের হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাসরত বাঙালি যুবক যখন তার জীবন বিনষ্ট করে ফেলে, প্রিয় মানুষকে না পেলে আত্নহত্যা করে ফেলে, বাবা-মা একটুখানি বকাঝকা করলে গলায় দড়ি দেয়, পরীক্ষায় একবার কাঙ্খিত সাফল্য না পেলে সে জীবন রাখার আর কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। এসবের কারণ কি এটা হতে পারে যে, আমাদের জীবনের আসলে ব্রড কোনো ভিশন নেই, আমাদের স্পেক্ট্রাম অফ থিঙ্কিংটা ন্যারো?

আমার সাথে এটা প্রায় সবাই হয়তো নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবেন যে, আমাদের প্রজন্মের একটা বিশাল অংশ মারাত্নক রকমের ডিপ্রেশানে ভোগে। জীবনটাতে যেন কোনো শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই। আমাদের ‘নেই’-এর পাল্লাটাই যেন খুব ভারী, ‘আছে’-এর পাল্লাতে যেন কিছুই নেই। বাস্তবতাটা কি আসলেই তাই?

আচ্ছা, এ লেখাটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে এমন একজন মানুষও কি আছেন, যিনি সকালে খেতে পান না, দুপুরে খেতে পান না, রাতে খেতে পাবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই? ডায়েট কন্ট্রোলের জন্যে না, খাওয়ার সামর্থ্য নেই সেজন্যে? মনে হয় না এমন কোনো পাঠক এখানে আছেন। আমি আপনাদের একটা জরিপ শোনাই। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক একটা জরিপ করে, সেখানে দেখা গেছে পৃথিবীতে প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এরকম ‘Chronically hungry’ থাকে। পৃথিবীতে ৬ বিলিয়ন মানুষ আছে তার মধ্যে ১ বিলিয়নই এভাবে ক্রমাগত ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করে–প্রতি ৬ জনে ১ জন! এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর কতো বড় রহমাত যে তিনি আমাদের অন্তত ৩ বেলা ভালোভাবে খাবার মতো তাওফিক দিয়েছেন।

ক্ষুধার কষ্ট যে কত বড় একটা কষ্ট, সেটা আমরা বুঝব না। বুঝেছিল ঐ পরিবারটা, বাংলাদেশেরই একটা পরিবার, দীপালিদের পরিবার। যে পরিবারে দুটো সন্তান; বড় মেয়ে আর ছোট ছেলে। সে পরিবারের নিয়ম ছিল দুপুরবেলা খাবে ছেলেটা আর রাতেরবেলা খাবে মেয়েটা। দুবেলা দুজন খেতে পারবে না, কারণ দুজনকে দুবেলা খাওয়ানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি পরিবারটির ছিল না। একদিন দুপুরবেলা ছেলেটি খেলো, রাত হলে তার আবার ক্ষুধা লেগে গেলো, অসহনীয় ক্ষুধা–ছেলেটি তার বোনের জন্য বরাদ্দকৃত রাতের খাবারটা খেয়ে ফেলে। সারাদিন ক্ষুধায় কষ্ট করেছে বোন, রাতের বেলায় যখন সে দেখলো তার খাবারটুকু নেই, রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে সে রাতে আত্নহত্যা করে বোন।

ক্ষুধার কষ্টটা আমরা বুঝব না। বোঝে ঐ মানুষটা, সোমালিয়ার ঐ মানুষটা, যিনি রমাদানে একজন স্কলারকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমাদের সাহরিতে খাবার মতো কিছু নেই, ইফতারেও খাবার মতো কিছু নেই; আমাদের রোজাটা কি হবে?!

আমার স্মৃতিপটে প্রায়শই গাজার ১১ বছরের এক শিশুর একটা গায়ে শিহরণ জাগিয়ে দেয়া প্রশ্ন ভেসে ওঠে। ২০১৪ সালে লাস্ট এ্যাটাকের সময় ছেলেটি একজন স্কলারকে প্রশ্ন করে, এই যে এতো বোমা হামলা হচ্ছে এর মধ্যকার ডাস্ট পার্টিকলগুলো যে আমাদের নাক দিয়ে মুখ দিয়ে যাচ্ছে –আমাদের রোজাটা কি হবে!?

আচ্ছা এবার এ লেখার পাঠকদের জন্যে আরেকটি প্রশ্ন। আপনাদের মধ্যে এমন একজনও কি আছেন যিনি জন্মগ্রহণের পর তার মা ছিলেন না, বাবা ছিলেন না, এমনকি অন্য কোনো নিকটাত্মীয় ছিলেন না আপনাদের দেখাশোনা করার জন্য? একজনও বোধহয় নেই। আপনি শুনে অবাক হবেন, ইউনিসেফের এক জরিপে উঠে এসেছে পৃথিবীতে ২২০ মিলিয়ন, দুইশত বিশ মিলিয়ন শিশু আছে যারা জন্মের পরে তাদের মা পায়নি, বাবা পায়নি, এমনকি কোনো নিকটাত্নীয় ছিল না তাদের দেখাশোনা করার জন্যে।

তবুও নাকি আমাদের জীবনটাতে কোনো শান্তি নেই, সুখ নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই…।

আমি বছর কয়েক আগে একটা পত্রিকায় সম্পাদনার কাজের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ণ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারের একটা সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেছেন, তার মেয়ের ছোটবেলায় একবার মিজেলস (হাম) রোগ হয়েছিল, তারপর রোগ সারলেও চেহারায় দাগ পড়ে যায়। তার মেয়ের মনে খুব দুঃখ ছিল মুখে এই দাগের জন্য। তো একবার প্রফেসর সামন্ত লাল স্যার তার কাছে আসা আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া একটি মেয়ের ছবি তুলে এনে তার মেয়েকে দেখালেন। মেয়ে এবার অনুধাবন করলেন অন্য অনেকের চাইতে তিনি অনেক ভালো আছেন। তার বাবাকে বললেন, আমার চেহারার দাগ দূর করতে হবে না, তুমি বরং এই মেয়েটিকেই চিকিৎসা করো।

আসলে আমরা যখন আমাদের অবস্থানের চাইতে নিচের কারও দিকে তাকাব, তখন এই জীবনটাই আমাদের কাছে অনেক বেশি সুখের মনে হবে, অনেক মূল্যবান মনে হবে। সত্যি বলতে কী পৃথিবীতে অজস্র মানুষ আছে যারা আমাদের মতো একটা জীবন পেলে বর্তে যেতো, ধন্য হয়ে যেতো।

আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাতকারের জন্য কাজ করেছিলাম, তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ডা. শুভাগত চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক যারা লেখালেখি করেন, তিনিই বোধহয় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন, ৪০ টি বই উনার। তিনি তার সাফল্যের কথা বলছিলেন, তিনি জীবনে যতটুকু পেয়েছেন, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার অন্য বন্ধুরা কে কতো দ্রুত কতোটা এগিয়ে গেলো এসব নিয়ে তিনি কখনও চিন্তিত ছিলেন না। নিজের যতোটুকু আছে, তাই নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। একজন বিখ্যাত স্কলার ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.)-এর একটি চমৎকার বাণী আছে, “Contentment is the paradise of this world.” অর্থাৎ, এই পৃথিবীর জান্নাত হচ্ছে সন্তুষ্টি। আমাদের যতোটুকু যা আছে তাই নিয়ে যদি আমরা পরিতুষ্ট থাকতে পারি, আমাদের জীবন সুখে ভরে উঠবে।

আমাদের মধ্যে একটা ব্যাপার খুব অহরহই দেখা যায়। আমাদের চলার পথে, সামনে এগোবার পথে কোথাও যদি বাধা চলে আসে, তবে আমরা সেখানেই হাল ছেড়ে দিই, নিরাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিন্তু অনেক স্ট্রাগল ছিল। পৃথিবীর বুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, সেই মুহাম্মাদ (স.) এর কথাই ধরা যাক। আমরা সবাই জানি তার মিশনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে কতোটা বাধা-বিপত্তি-অত্যাচার-নিগ্রহ সইতে হয়েছিল। তিনি হাল ছেড়ে নিরাশ হয়ে যাননি, তার মিশন থামিয়ে দেননি–আজ পৃথিবীতে কোটি কোটি অনুসারী তাঁর। এন্ড্রু কার্নেগীর কথা বলতে পারি আমরা, যাকে নোংরা পোষাকের জন্য পার্কে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, ৩০ বছর পর সেই এন্ড্রু কার্নেগীই পুরো পার্কটি কিনে ফেলেন এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন “সবার জন্য উন্মুক্ত “। বহুল জনপ্রিয় স্টিভ জবসের কথা বলা যেতে পারে, ৭ মাইল দূরের এক গির্জাতে প্রতি রবিবার ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল। সারা সপ্তাহ তার ভালো খাওয়া-দাওয়া করার মতো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই প্রতি রবিবার তিনি পায়ে হেঁটে ৭ মাইল দূরের গির্জাতে যেতেন এক বেলা ভালো খাবার জন্য।

আমি বেশ কিছুদিন আগে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্রেশানের উপর একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে যিনি স্পিকার ছিলেন তিনি খুব সুন্দর করে ডিপ্রেশান কাটানোর একটা সহজ বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর তা হচ্ছে অন্য মানুষের জন্য কিছু করা, তাদের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এখন তো আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে –শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যা দুর্গতদের সহায়তা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দুস্থদের খাদ্য বণ্টন, ফ্রি হেলথ ক্যাম্পেইন আরও কত কী। এসবের সাথে যদি আমরা নিজেদেরকে জড়িত করে নিতে পারি তবে জীবন নিয়ে খুব বেশি হতাশামূলক চিন্তাভাবনা করার সময়টা আমরা পাব না।

ওখানে আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম যারা নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট, কৃতজ্ঞ, তাদের কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত) লেভেলটা কম থাকে তুলনামূলকভাবে। তারা বেশি সুখী থাকেন। আসুন না আমরা আমাদের চারপাশের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ হই, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আমাদের স্রষ্টার প্রতি, মা-বাবার প্রতি, আত্নীয়-পরিজনের প্রতি, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। আপনার জীবন সুখী হোক।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

নেকলেস

জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


আমার নানার দুই মেয়ে। আমার মা আর এক খালা। মা থাকে চট্টগ্রামে আর খালা টেকনাফে।
মা বলে, আমরা জমজ দু’ভাই নাকি খালার কলিজার টুকরা। আমাদের কারো জ্বর হলে খালার পরান যায়-যায় অবস্থা। তিনি পড়ি-মরি করে আমাদের বাড়ী ছুটে আসতো। তাছাড়া, আমাদের কাছে খালা মানে অবাধ একখানি স্বাধীনতা আর অসীম আনন্দ।

এখন আমরা শৈশব হারিয়ে কৈশোরের শেষ পথে । খালারও বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের পর খালা আমাদের বাড়ীতে এলেই বাবা “বার্মাইয়ার বৌ” বলে খালাকে খেপাত আর বাসায় রীতিমত আগুন জ্বেলে বাবা হাসতে হাসতে অফিসে চলে যেত।
তারপর খালার চোখের পানি আর নাকের সিন্নিতে বাসায় জলোচ্ছাস বয়ে যেত । খালা ভাত খায় না। কথা বলে না। বাবার কোন শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এক রুমে গিয়ে রুদ্রমুর্তি ধরে বসে থাকত।
বাবার একটা কঠিন শাস্তি হোক, এটা আমরাও চাইতাম। কিন্তু বড়দের বিচার কে করে, জানতাম না। আমরা ছিলাম খালা-অন্ত:প্রান। কথিত আছে, খালার বিয়ের দিন আমরা দু’ভাই খালার বিয়ের শাড়ীর-কোনা ধরে, মা-মা বলে এতো এতো কেঁদেছি যে,খালু পর্যন্ত দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল; শেষ পর্যন্ত দুই সন্তানের মা বৌ হিসাবে তাঁর কপালে জুটলো কিনা।
আমরা খালার রাগ ভাঙানোর জন্য, খাওয়ানোর জন্য এতো টানাটানি করি; খালার রাগ কোনভাবেই কমে না। আমরা ছোটবেলার মতো খালার গালের দুইদিকে দু’ভাই গাল লাগিয়ে ভাব দিই; বিনিময়ে খালা আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, কিন্তু রাগ ছাড়ে না।
মা একদম চুপচাপ। খালাকে কিছু বলছে না।
আমরা দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে আছি।
তারপর, বাবা অফিস ছেড়ে দুপুরে বাসায় খেতে এলো আর দুইবোন মিলে বাবাকে সে কি তুলাধুনা!
-তুমি কি পেয়েছ? আমার বোনকে মুখে যাই আসে, তাই বলবে! তোমাকে অনেক সহ্য করেছি। আর করবো না।
-দেখ বুবু, দুলাভাই তোর বাসায় এলে যখন তখন অপমান করে। সরাসরি আসতে না করে দিলেই তো পারে। তোদের বাড়ী আর আসবো না।
বাবার সামনে দুই বোনের অগ্নিমুর্তি আর বজ্রবর্ষন দেখে আমরা দুইভাই ইঁদুর ছানার মতো কাপঁতে থাকি। একটু আনন্দ যে পাই না, তা কিন্তু নয়। অথচ কি আশ্চায্য! বাবা দাঁত দেখিয়ে হাসতে থাকে।
-দ্যাখ, দোষ সব তোদের। এবার দ্যাখ, কি রকম এক অমানুষের সাথে তোরা আমাকে বিয়ে দিয়েছিস! – খালাকে উদ্দেশ্য করে মা কাঁদো কাদোঁ গলায় বলে।
মনে হলো,মা নাক টেনে একটু সিন্নি ফেলল।
-চল বুবু। তোকে বাড়ী নিয়ে যাবো। এই বদলোকের সাথে আর সংসার করতে হবে না। চল বাড়ী যাই।
-চল, আগে আমরা ভাত খেয়ে নিই। তারপর দুবোন মিলে শলা-পরামর্শ করে ঠিক করবো কিভাবে তোর দুলাভাইকে শায়েস্তা করা যায়?
তারপর ছহি-ছালামতে সকলে মিলে আমাদের দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়।
আমরা রাতে কি হয়, দেখার অপেক্ষায় থাকি।
ওমা! একি! রাতের বেলা দেখি মা-খালা-বাবা ঠাট্টা-মশকরায় মেতে আছে। দুপুরে ঝড়-তুফানের কোন রেশ কোথাও নাই!
এই হলো আমার খালা; বয়স বাড়লেও এখনো শিশুর মতো সহজ-সরল। আমাদের জন্য সর্বদা অন্তরে লালন করা যানকবুল এক ভালোবাসা।
বিগত আট-দশ বছরে আমরা আরো দ্রুত বড় হয়ে গেছি। আমার ছোট জন থিতু হলো আমেরিকা আর আমি দেশে । একটা চাকুরী করি। বিয়েও করেছি।
কিছুদিন পর পর নতুন বৌকে নিয়ে টেকনাফে বেড়াতে যাবার জন্য খালা জোরাজুরি করে। ফোনে কান্নাকাটি করে। আমি সময় পাই না।খালার অনুযোগের শেষ নাই।
-তোরা বড়লোক হয়ে গেছিস। আমি গরীব বলে দেখতে পারিস না। তোর আপন মা নই বলে অবহেলা করছিস!
আরো কত কত কথা!
আমার খালু বড়লোক। দিলদরিয়া মানুষ। বাবার সাথে খুব ভাব। খালুর ১০টি ইলিশের বড় বোট আছে। বাৎসরিক হিসাবে আমাদের বাড়ীতে যত মাছ লাগত, সব মাছ খালু লোক দিয়ে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিতো।
বাবার জন্য রুপচান্দা শুটকি, মা’র জন্য বড় ইলিশ আর আমাদের জন্য রকমারী সামুদ্রিক মাছ।
আর এইসব মাছ খেয়ে-দেয়ে, বাবা সুযোগ পেলেই খালাকে “জাইল্যার বৌ” বলে খোচাঁত। শুনে খালাও হাসে, বাবাও হাসে। আমরাও হাসি।
গত কয়েক সিজন হতে খালার এক ধরনের মন্দা চলছিল। বছর-দুই আগে অপয়া এক ঘুর্নিঝড়ের কবলে পড়ে আমার খালুর ১০টি ইলিশ বোটই সাগরে তলিয়ে গেছে। এখন সকালের রাজা বিকালের ফকির।
এইবার বিয়ের তৃতীয় বার্ষিকীতে খালাকে চমকে দেয়ার প্লান করি। সেই মোতাবেক শুক্রবারের এক সকালে খালার বাসার দরজায় আমরা স্বামী-স্ত্রী হাজির।
খালা-খালু যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। আমাদেরকে খালা অনেকক্ষন বুকের সাথে লেপ্টে রাখে। খুশিতে ঝরঝর করে কেদেঁ দিলো।
আমরা হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে শাহপরীর দ্বীপ সী-বীচে রওয়ানা দিলাম।
বিয়ের পর খালার বাড়ী এইবার আমার প্রথম যাওয়া। সেই হিসাবে নতুন বৌয়ের জমজমাট খাওয়ার বিরাট আয়োজন। দুপুরে আর রাতের খাওয়ার আয়োজনে কি ছিলো না; সেটাই ভাবছি। মাছের মধ্যে সাগরের এক কেজি ওজনের লবস্টার হতে শুরু করে বিরল প্রজাতির দশাসই লাক্ষা মাছের রোস্ট; বন মোরগের মাংস হতে শুরু করে টেকনাফের পাহাড়ী ছাগহরিনের মাংস বাদ যায়নি।
তারপরও খালার আফসোসের শেষ নেই।
রাতে ভাগিনা-বৌ আংটি আর দামী শাড়ী উপহার পেলো।
আমি পেলাম ১সেট কোর্ট-পেন্টের রেমন্ড কাপড়। খালা তাঁর বোন-দুলাভাইয়ের জন্যও নতুন কাপড় চোপড় দিলো। উপহার দিতে পারার খুশিতে খালা-খালুর চোখ-মুখ চিকচিক করছিল।
আমরা খালার বাড়ীতে স্বপ্নের মতো একটি রাত কাটলাম। দুপুরের চট্টগ্রাম ফিরব; তাই একটু সকাল সকাল টেকনাফ পৌরসভা মার্কেটে গেলাম, উদ্দেশ্য মুলত উইন্ডো শপিং। পছন্দ হলে টিকিটীকি কিছু শপিং করবো।
খালার বাড়ী হতে এক কিলোমিটারের মতো দুরত্ব। শপিং শেষে ফেরার পথে এক স্বর্নের দোকানে ঢুকি। দোকানের তালাঝুলা আলমিরার এক কোনে একটা নেকলেসে আমাদের চোখ আটকে গেলো।
যেমন ডিজাইন তেমন মনকাড়া। নেকলস েমুক্তার পুতি আর ছোট ছোট স্বর্নরেনুর ঝুলন্ত মায়াময় দুলুনি।
-ভাবী, এটা খুবই আনকমন নেকলেস; স্বনার্কার বলল।
-দেখে তো পুরানো বলে মনে হয়, আমি বললাম।
-ঠিকই ধরেছেন। আমাদের দোকানের বিরল জিনিস সংগ্রহে গুরুত্ব দেয়। এটা খুব খানদানী ও আনকমন ডিজাইন। আমরা গতকাল সংগ্রহ করেছি। আপনি বললে,একটু ওয়াশ করে দেবো। তখন মনে হবে একদম নতুন- স্বনার্কার বলল।
ডিজাইনটা খুবই বিরলও বটে। মনে হলো আগেকার জমিদার বা সৌখিন লোকজন ব্যবহার করতো। আমাদের খুব পছন্দ হলো। ওজন সোয়া এক ভরি। দরদাম করে নেকলেসটা কিনে ফেললাম।
চট্টগ্রাম ফিরতে বেশ রাত হলো।
পরদিন খালার দেয়া বিভিন্ন উপহার মা’কে দেখাই। আমার স্ত্রী খালার অবিশ্বাস্য আদর-আপ্যায়নের কথা বারবার বলছিল।
-ও ঐরকম, ভাগিনাদের জন্য প্রান দিয়ে ফেলে।
-এমন আদর কোন খালা করতে পারে? আমার তো এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
তারপর মায়ের জন্য কেনা সারপ্রাইজ গিফট নেকলেসটা মা’র হাতে দিলাম। মা নেকলেচটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন আবেগরুদ্ধ হয়ে বসে রইলেন। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন।
-এটা কোত্থেকেকিনেছিস,বাবা?
-কেন মা? তোমার পছন্দ হয়নি?
-না বাবা। ঠিক তা নয়।
আমার স্ত্রী কাপড় পাল্টাতে ওর রুমে চলে গেল।
-বাবা, তোর খালা কি নেকলেসটা দেখেছে?
-না মা, আমরা কেবলমাত্র গাড়ীতে উঠার একটু আগে কিনেছি। দেখানোর সময় পাইনি।
-ও, আচ্ছা।
-কেন মা? কোন সমস্যা ?
মা কেমন জানি আনমনা হয়ে গেলেন। মনে হলো মা কিছু একটা বলতে ইতস্তত করছেন। একবার ডানে-বায়ে তাকালেন।
ফিসফিস করে বললেন, এটা তোর খালার নেকলেস,বাবা।
-কি!!!
এ যেন, প্রচন্ড হাসিখুশির কোন শিশুর মুখে হঠাৎ কালি মেখে দেয়া বিহবলতা…
আমার পুরো পৃথিবীটা দুলছে।
থমকে আছে চারপাশের বাতাস । অদৃশ্য শাসনে যেন স্থির হয়ে আছে, খানিক আগের উড়াউড়ি করা জানালায় পর্দা।
নিষ্ঠুর এক নীরবতা আমাদের গিলতে থাকে।

 

হিন্দি সিরিয়াল ও আমার ভাবনা.. শেষ পর্ব

শুরু করে দিন আজ থেকেই। চলেন এক্ষুনি একটা মেক্সিকান ডিশ রান্না করা শিখিয়ে দিচ্ছি আপনাকে। আপনার ভুলে রাগ করে বেড়িয়েছে আপনার স্বামী। তাই তাকে প্রশান্ত করার দায়িত্বও আপনার। সুন্দর করে রান্না করেন। তাড়াতাড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন মেয়েকে। তারপর সুন্দর করে নিজেকেও সাজিয়ে অপেক্ষা করেন উনার জন্য। পরিবেশকে আরো রোম্যান্টিক করতে পারেন চাইলেই। নিভিয়ে দিন ঘরের সব বাতি। জ্বালিয়ে দিন কয়েকটি ক্যান্ডেল। হয়ে যাক আজ রোম্যান্টিক ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। পাবেন খুঁজে এমন আনন্দময় একটা দৃশ্য আপনার সিরিয়ালে?

হাসলো আমার কথা শুনে বোনটি কিন্তু হাসিতে প্রফুল্লতার ছোঁয়া ছিলো না। বুঝলাম এত কড়া কথা যে শুনিয়ে গিয়েছে তার জন্য আয়োজন করা সত্যি কিছুটা কষ্টেরই বটে।
হেসে বললাম, আপনাকে মেক্সিকান ডিশ কেন রান্না করতে বললাম জানেন? মেক্সিকান খাবারে বেশ ঝাল থাকে। আপনি ইচ্ছানুযায়ী সেই ঝালের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিতে পারেন। উনি আপনার মন জ্বালিয়েছে বদলে আপনি উনার জিভ জ্বালিয়ে দিন। হয়ে যাক শোধ বোধ। বুঝিয়ে না বলে হৈচৈ করার জন্য কিছু তো একটা শাস্তি হওয়া উচিত উনারও। মন খুলে হেসেছিলেন তখন বোনটি। যতদূর জানি উনি এখন সিরিয়াল দেখার বদভ্যাস ত্যাগ করেছেন। আসলে আমরা চাইলেই ইচ্ছা ও চেষ্টার দ্বারা আমাদের জীবনটাকেই করে তুলতে পারি আমাদের জন্য বিনোদনের একটা মাধ্যম।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই পন্থা জানা নেই আমাদের। যারফলে বিনোদনের জন্য আমাদেরকে চোখ রাখতে হয় টিভির পর্দায়। জীবনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে কত শত চমক। সেগুলোকে খুঁজে বের করে উপভোগ করতে করতেই কেটে যেতে পারে আমাদের সমস্ত অবসর। অথচ জানা না থাকার কারণে অবসর কাটানোর জন্য আমাদেরকে এমন জিনিসের কাছে যেতে হয় যা মনকে প্রশান্ত করার বদলে করে আরো অশান্ত। তাই হিন্দি সিরিয়ালের বিরুদ্ধে বিশেধাগার গড়ে তোলার সাথে সাথে এর ক্ষতিকারক দিক গুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে হবে সবার সামনে। পরিচিতজন যারা সিরিয়াল দেখেন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। এবং তাদেরকে জানাতে, বোঝাতে ও শেখাতে হবে কিভাবে নিজের জীবনটাকেই করে তোলা যায় বিনোদন ও অবসর কাটানোর মাধ্যম হিসেবে।

দুনিয়াটা একটা পরীক্ষাক্ষেত্র। মানুষকে তাই জীবন যাপন করতে হয় হাজারো পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। ধন-সম্পদ, পরিজন সবই ফিতনার বস্তু। স্ত্রীরাও স্বামীদের জন্য বিরাট পরীক্ষার বস্তু। সিরিয়াল যেহেতু বোনেরা বেশি দেখেন তাই তাদেরকে বোঝানোর ক্ষেত্রে ভাইদেরকে মনে রাখতে হবে রাসূল (সঃ) কথা। আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন-“ উত্তম পন্থায় মহিলাদের সংশোধন করার চেষ্টা করো। কারণ মহিলাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে একটি বাঁকা হাড় থেকে। সে হাড়ের উপরের অংশ বাঁকা। যদি তাদেরকে বেশী সোজা করতে চাও তারা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি মোটেই সোজা করতে না চাও তাহলে বাঁকাই থেকে যাবে।” এই হাদিসটিতে মহিলাদের স্বভাবের বৈশিষ্ট্যর কথা উল্লেখ করে পুরুষদেরকে সাবধানতা অবলম্বন করার উপদেশ দান করা হয়েছে। সবর ও হিকমাহ অবলম্বন করার নসীহা দেয়া হয়েছে। যদিও নেককার মহিলারা এই উপদেশের কথা স্মরণে রেখে নিজেদেরকে সাধারণ মহিলাদের দোষত্রুটি থেকে উর্দ্ধে রাখার চেষ্টা করে। নিজেদেরকে স্বভাবগত বক্রতা থেকে বের হতে চেষ্টা করে। কিন্তু এরজন্য শরীয়তের যে জ্ঞানের দরকার হয় তা যেহেতু সবার থাকে না। ধীরে ধীরে অর্জিত হয় এই জ্ঞান। তাই ততদিন পর্যন্ত অবশ্যই সবর ও হিকমাহ অবলম্বন করতে হবে।

সংসার জীবনটা আসলে উভয়েরই। তাই একে অন্যকে দোষারোপ না করে, নিন্দা ও সমালোচনা না করে উচিৎ একে অন্যের সহযোগী হওয়া। একে অপরকে সাহায্য করা নিজ নিজ বদভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার। পরিবারের প্রতিটি সদস্য যদি এমন একে অপরের সাহায্য সহযোগী হয়ে উঠে তাহলে জীবনকে সঠিক ও সুন্দরের পথে পরিচালনা করা আসলে মোটেই কঠিন কিছু নয়, ইনশাআল্লাহ।

 

হিন্দী সিরিয়াল ও আমার ভাবনা…১

আফরোজা হাসান


বর্তমান সময়ে খুব শুনি টিভি সিরিয়ালের ক্ষতিকর ও অশান্তিকর দিক নিয়ে অনেককে কথা বলতে। কিন্তু সবাই শুধু নিন্দা ও সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন তাদের কথাবার্তা। সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাধানের কথা এই পর্যন্ত কাউকেই বলতে শুনিনি আমি। মহিলারা সারাদিন ঘরে বসে সিরিয়াল দেখেন আর কুটনামী শেখেন। সুতরাং, এইসব বন্ধ করতে হবে। অবশ্যই বন্ধ করতে হবে কিন্তু কিভাবে? নিন্দা জ্ঞাপন করে কি মানুষকে সেই পথ থেকে ফেরানো সম্ভব যা সে মনের খোঁড়াক হিসেবে গ্রহণ করছে? তাহলে তো ড্রাগ নেয়া বন্ধ হয়ে যেত সেই কবেই। সিরিয়ালটাকে ড্রাগের সাথে তুলনা করলে মনেহয় খুব ভুল হবে না? কারণ ড্রাগের অভাবে যেমন শরীরে তৈরি হয় অস্থিরতা, ঠিক তেমনি গতকালের পর কি হলো জানার জন্য সিরিয়ালের সময় হলেই মন ছটফট করতে থাকে। একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টকে অনেক বোঝানোর পরও নেশার সময় হলে সে ছুটে যায় ড্রাগের কাছে। ঠিক তেমনি একজন সিরিয়াল অ্যাডিক্টও শত নিন্দা শুনে ছুটে যান টিভির কাছে। আসলে নিন্দা ও সমালোচনা কখনোই কোন কিছুর সমাধান হতে পারে না। একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টকে যেমন সে নিজে না চাইলে নেশার জগত থেকে বের করে নেয়া সম্ভব হয় না। ঠিক তেমনি সিরিয়াল অ্যাডিক্টকেও সে নিজে অকল্যাণ বুঝে দেখা বন্ধ না করলে ফেরানো সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাব হচ্ছে সে যখন কোন কিছুতে আনন্দ খুঁজে পায়, অন্যরা যাই বলুক না কেন সেটা ছাড়তে পারে না বা চায় না। বরং নিন্দা ও সমালোচনা অনেক সময় ক্ষেপিয়ে তোলে মানুষকে। যারফলে জেদ করে সেই কাজ আরো বেশি করে মানুষ।

বেশ কিছুদিন আগে পরিচিত এক বোন ফোন করে রাগে গজগজ করতে করতে বললেন, ভাবী কি কি কারণে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না বলেন তো একটু আমাকে। কি হয়েছে জানতে চাইলে উনি জানালেন উনার স্বামী বলেছেন হিন্দী সিরিয়াল দেখলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢোকা ছেড়ে দেয়। জানালেন এই নিয়ে উনার স্বামী খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন। স্বামী কাজ থেকে ফিরে দেখেন উনি হিন্দী সিরিয়াল দেখছে। আর তাতেই প্রচণ্ড ক্ষেপে যান। উনাকে বকাঝকা করতে করতে বলেছেন, এইসব দেখো বলেই আমার ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢুকতে পারে না। অভাব অনটন দূর হয় না আমাদের জীবন থেকে। তুমি আমার সংসারের সকল অশান্তির কারণ। ইত্যাদি ইত্যাদি। বললাম, এর আগেও শুনেছি সিরিয়াল দেখা নিয়ে ভাইয়ের সাথে আপনার ঝগড়ার কথা। সংসারের শান্তি নষ্ট হয় এমন জিনিস দেখতে যান কেন শুধু শুধু? বোনটি জবাবে বললেন, এখন থেকে আরো বেশি করে দেখবো। দেখি কি করে সে। আমি হেসে ফেললে কিছুক্ষণ পর সেই বোনটিও হাসলো এবং বলল, সিরিয়াল না দেখলে সময় কি করে কাটাবো আমি বলেন তো? স্বামী কাজে ও বাচ্চা স্কুলে চলে যাবার পর তো তেমন কোন কাজই থাকে না করার মত। তিনজন মানুষের ছোট্ট সংসার তাই রান্না ও কাজও তেমন থাকে না।

বললাম সময় কাটানোর জন্য টিভিই দেখতে হবে এমন তো কোন নিয়ম নেই। আপনি কোরআন পড়ুন অর্থ সহ, তাফসীর পড়ুন। হাদীস, সাহাবীদের জীবনী, ইসলামী ইতিহাস, ইসলামী সাহিত্য কত কিছু আছে সময় কাটানোর উপকরণ হিসেবে। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের গল্প-উপন্যাস-কবিতা তো আছেই। স্বামী ও বাচ্চা বাইরে খেতে পছন্দ করে এমন নিত্যনতুন রান্না শিখুন। রান্না করে তাদেরকে সারপ্রাইজ দিন। বাইরে থেকে শোপিস না কিনে নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে বের করে নিয়ে আসুন। বেতের ঝুড়ি কিনে এনে প্ল্যাস্টিকের লতা-পাতা-ফুল দিয়ে মনের মতো ডেকোরেশন করেন। তারপর ঝুলিয়ে দিন ঘরের এক কোণে। এভাবে নিজের হাতে বানানো বিভিন্ন ধরণের শোপিস দিয়ে সাজান আপনার ঘর। চাইলে করার মত এমন অনেক কিছু পাবেন। যা করতে গেলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে আপনাকে। তখন সিরিয়াল দেখা তো দূরে থাক টিভির দিকে তাকানোরই ফুরসত মিলবে না। উনি বললেন, এভাবে তো কেউ কখনো বুঝিয়ে বলেনি। হেসে বললাম, এই তো আমি বুঝিয়ে বললাম।

চলবে…′

 

পরীদের জন্য ভালবাসা

ডা.সাকলায়েন রাসেল


পরীটা আজ সারাদিন মনের কোণে ঘুরঘুর করছে।
ক্লাশ ফোরে পড়ে।
মাথায় ক্লিপ দিয়ে চুলগুলো পরিপাটি সাজানো…হাতে মেহেদী! এই মেহেদী নকশাটি তার নিজের করা..।পড়তে ভালোবাসে সে…। ভাল লাগে গান গাইতে! একটুস খানি অনুরোধ করতেই গান গেয়ে শোনাল।

‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’

বাংলা সিনেমার গান…ভালোবাসা পেতে সাধনা লাগে..। অথচ এই পরীটার চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা..একেবারর অজপাড়া গাঁয়ে বাড়ী হলেও কথায় শুদ্ধ বাংলার উপস্থিতি.. অল্পতেই আমার সবটুকু মন জয় করে নিল।
চোখ বন্ধ করেই গান শুনছিলাম ..কিন্তু হঠাৎ থেমে গেল পরী..গানের মাঝে শ্বাসকষ্ট! দম আটকে যাচ্ছে তার! পরী থেমে গেল। কিছুক্ষণ বসে বসে বিশ্রাম নিল! তারপর দম ফিরে এলো তার!
খুব খেলতে ভাল লাগে পরীর। সবাই যখন খেলে সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।
আফসোস হয়…
চোখ জলে ভিজে যায়!
খেলতে পারে না সে…খেলতে গেলেই তীব্র শ্বাসকষ্ট! হাত পা নীল হয়ে যায়…দম আটকে চোখ উল্টে যায়!

হার্টের ডাক্তাররা ইকো করে বলে দিয়েছে…তিনটি ছিদ্র আছে তার হার্টে..TOF! অপারেশনই একমাত্র সমাধান..অনেক ঝুঁকি!

হোক ঝুঁকি তবুও বাঁচতে চায় পরী।
বাবা সবজী বিক্রেতা।

ইতোমধ্যে গরু বিক্রি করেছেন..বাড়ীভিটে বন্দক রেখেছেন! তবুও যোগাড় হয়নি অপারেশনের টাকা!
পরীকে যখন জিজ্ঞেস করলাম…তুমি কি চাও?
পরীর হৃদয় চিরে বের হওয়া উত্তর…আমি সুস্থ হতে চাই!
-সুস্থ হতে অনেক টাকা লাগে…তোমার বাবার কি এত্তো টাকা আছে?
থেমে গেল পরী..মাথা নীচু করে অশ্রু মাখা মুখটা লুকালো!

একটু খানি আশ্বাস দিতেই ফিক করে হেসে উঠল..দাঁতের পিছনে দেখা গেল নীল জিহ্বাটা। হাসতেও যে পরী অক্সিজেনের অভাবে ভোগে!!
কপাল দোষে না হয় অর্থের অভাব হোক। কিন্তু বাতাসে এত্তো অক্সিজেন… তবুও কেন সেই অক্সিজেনের অভাবে ভোগে পরীরা?

শত কোলাহলের মাঝে হয়ত সেকারণেই নীরবতা আঁকড়ে ধরে। পরীদের পিতাদের.. আরিজের পিতাদের!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

ঘরের টুকিটাকি টিপস

অপরাজিতা ডেক্স


ফ্রিজের পঁচাগন্ধ দূর

একটা প্লেটে কিছুটা সর্ষেগুঁড়ো ঢেলে তাতে একটু জল দিয়ে রাতভর ফ্রিজে রাখুন এবং ফ্রিজ খোলাই রাখুন। ফ্রিজের বদগন্ধ দূর করতে সর্ষেগুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন। পরের দিন সকালে দেখবেন সব গন্ধ উধাও।

তেল টেট্রাপ্যাক
ব্যবহারের পর তেলের টেট্রাপ্যাক ফেলে দেবেন না। কেটে ডিপ ফ্রিজে আইস ট্রেতে পেতে দিন। মাছ মাংসের প্যাকেট আটকে যাবে না।

প্রেসার কুকার
প্রেসার কুকারের গ্যাসকেট মাঝে মাঝে ফ্রিজে পুরে রাখবেন। দীর্ঘদিন টিকবে।

ব্যাটারি
টর্চের ফেলে দেওয়া ব্যাটারি কিন্তু কোয়ার্টিজ ঘড়িতে এবং রেডিওতে আরও মাস খানেক চলবে।

নেলপালিশ ব্যবহার
বাড়িতে আঠা ফুরিয়ে গেছে। খামে স্ট্যাম্প লাগাবেন। ন্যাচারাল কালার নেলপালিশ ব্যবহার করুন।

সেলোটেপের রিল
সেলোটেপের মুখ খুঁজে পাচ্ছেন না? মিনিট দশেক ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে দিন। সেলোটেপের রিলটা খুলে আসবে।

চিঠি ঠিকানা
খামের ওপর ঠিকানা লিখে একটু মোমবাতি ঘষে দেবেন। জল পড়ে কালি থেবড়ে ঠিকানা অস্পষ্ট হয়ে যাবে না।

মোম
টেবিল ড্রয়ার অনেক সময় আটকে যায়। স্বচ্ছন্দে খোলা বা বন্ধ করা যায় না। ড্রয়ারের ধারে মোম ঘষে রাখুন। সহজে আটকাবে না।

বাইসাইকেল
ব্যবহারের পর বাইসাইকেলের টায়ার ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে রাখুন। সহজে কাটবে না।

দেশলাই কাঠি
নখের কোন ভেঙে গেছে। কিন্তু এমারি বোর্ড নেই। একটা দেশলাই কাঠি নিয়ে বারুদের দিকটা ভাঙা জায়গায় ঘষুন। নিমেষে নখ সমান হয়ে যাবে।

 

তাচ্ছিল্য

ফাতেমা শাহরিন


মনের অবস্থা ভয়ানক তিক্ত আবিরের। প্রায় কয়েক ঘন্টা হেটেছে, সন্ধ্যা বিকালকে গিলে ফেলেছে। এখন ঝর ঝর করে ঘাম ঝরছে। হবে কি আবার, নিরবতাকে আবার কেন আপমান করল ওরা। আবির ভাবছে, বোনটা ত আমার ভাল ছিল! এই নিয়ে ওদের এত সমস্যা কিসের? বুঝে না আবির।

নিরবতা। আমাদের ভালবাসা ও সন্মানের আরেক টুকর নাম। চুপচাপ শান্ত মেয়েটি।

গত বছর ওর বিয়েটা ভেঙ্গে যায় হবার দু ঘন্টা পর। হঠাৎ। কাবিল নামা হয়ে যাবার পরে, ছেলের বাবা ফোনে কথা শেষ করে, বলে উঠেন, যে পরিবারে এত লোক ড্রাগ এ্যাডিক্টেট। সেই ঘরের মেয়ের চরিত্র স্বভাব কখনও ভাল হতে পারেই না। কেন ওরা সব গোপন রেখেছে। ওরা জঘন্য খারাপ কাজ করেছে। শুরুতে এএ অবস্থা, এই মেয়েকে ঘরে তুললে আমার ছেলেটাও খারাপ হয়ে যাবে।

ছেলেটি, নিরবতার পক্ষে কোন কথা বলেনি।

কত অনুনয়বিনয় করেছে সবাই। কিন্তু নিরবতার পাশে বাবা ছিল। নিরবতা ধীরে বের হয়ে আসে, খুব লজ্জিত কন্ঠে বলে উঠে।

‘আমি খুব লজ্জিত। সত্যি বলতে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র একজন এডাল্ট ছেলের আসক্তির ভয় আছে তা নয়। বরং এ পরিবারে আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মের আনাগোনা হতে পারে, তা আরও ক্ষতিকর। আপনার পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি ভেবেছিলাম, পরিবার বিষয়টিকে আপনাদের কাছে পরিষ্কার করেছে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আর এমন পরিবারে আমিও যেতে চায় না। যেখানে অসন্মান, ঘৃণা, আর সন্দেহের বীজ বুনে গিয়েছে জীবনের সূচনালগ্নে।’

শেষপর্যন্ত ছেলেটির একদম নিরব ছিল। নিরবতার বিয়ে ভেঙ্গে যায় সেদিনই।

আবির, নিরবতার মনের কথা ভেবে অজান্তে কেঁদেছে। আর অভিশাপ দিয়েছে সব নেশাখোরদের। সেই শান্ত, বলিষ্ঠ কন্ঠের নিরবতার আজ চোখে পানি। ঝর ঝর করে পানি নয় কেবল যেন উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ ছুটছে। কেন দরকার হল কেন?

মাঝে মাঝে দূরে জলন্ত আগুনের শিখা দেখলে এত ইচ্ছে যাকে কয়েক টান দেই, দূর হোক বিষণ্ণতা। ঠিক তখনি নিরবতায় হাসি মুখ ভাসে। কি দোষ ছিল ওর? কতগুল নেশাখোরের জন্য কেন ওলটপালট হল ও গোটা জীবন। কেউ বলতে পারে ওর স্বপ্নরা এখন কোথায়?

নিরবতা-ভাইয়া, প্লিজ আমি দেখা করব না। আমার পছন্দ হয়নি। প্লিজ, এ ব্যাপারে আমাকে আর কিছু বলবেন না আপনারা।

ভাবি- কিসের আবার পছন্দ-অপছন্দ এত বয়স হল, আরও বাপের বাড়ি পড়ে থাকমেন।

পাশ থেকে ভাইয়ের ছোট্ট ছেলেটিও বলছে: আধ আধ কন্ঠে, তুমি আমাদের সব খাবার খেয়ে খেলবা।

ভাবি-শোন, এখানে একটা বিশাল কাহিনী আছে। তুমি ছেলে পক্ষের সাথে দেখা করতে বল তোমার বোনকে।

বড় ভাই: দেখা করলে কি বিয়ে হয়ে যায়? দেখা কর।

ছলছল করে উঠে চোখ দুটি নিরবতার। আরও নিরব হয়ে যায়। প্রবল তাচ্ছিল্যতা হুড়মুড় করে ডুকছে। যেন প্রচন্ড শক্তিশালী ঝড় উঠেছে আত্মমর্যাদাবোধকে এবার ভেঙ্গে মুচড়ে তছনছ করে ফেলল বলে।

বাবা হঠাৎ দাড়িয়ে সামনে…..দূরে দরজায় ছোট ভাই আবির। ওই ত ভালবাসার বৃষ্টি নামল। প্রশান্তকণ্ঠে অফুরন্ত দোয়া আসছে। কে আছে এবার বাধা হয়ে দাড়াবে?

 

সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ : ‘নারীকে জীবন্ত বৃক্ষ হতে হবে’

ফাতেমা শাহরিন


সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ একজন ব্যবসায়ী। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শুধুই কুরুশ’। তিনি বগুড়ায় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ‘প্রধান শিক্ষিকা’। পেশাগত ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। অপরাজিতার পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। সেই সব কথোপকথন নিয়ে আজকের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো:

অপরাজিতা: ‘সেলাই কাজ’ কার কাছে হাতে খড়ি হয়েছিল?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার মায়ের কাছে শিখেছি। কুরুশের সেলাই কাজ শেখার পিছনে আমার মায়ের ভুমিকাই বলব পুরোটুকু। আমি আগ্রহ প্রকাশ করেছি, উনি স্কুল সামলে যেহেতু মা ছিলেন হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা। সংসার সামলে, আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন।

অপরাজিতা: এই স্বপ্নের শুরুটা কিভাবে?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমি সেলাই শিখি ১৯৯৭ সালে। তখন মুলত ব্লক, বাটিক, হাজারবুটি, সুচের কাজ, দর্জির কাজ সবই করেছি। সে সময় বিভিন্ন হাতের কাজ করে টুকটাক উপার্জনও করতাম । কখনো বাবা মার কাছে হাত খরচ বা অন্যান্য খরচের জন্য টাকা চাওয়ার দরকার হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। সে সময় অন্যদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কাজ করতাম। এর মধ্যে নানা কারণে নানান সময় বাধ্য হয়েই সেলাই ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু সেলাই আমাকে এমনভাবে গ্রাস করেছে কোনভাবেই সেলাই ছেড়ে থাকতে পারতাম না। এককভাবে আবার কুরুশে ফিরে এসেছি ২০০৭ সালে। সরকারী প্রাইমাারী স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢুকি ২০১০ সালে, কিন্তু জাতীয়করণের  ফলে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল অর্থাৎ আজ পর্যন্ত   বেতন পাই না। এ দিকে আমার বেতনের টাকা পুরোটাই  তখন মেয়ের দুধের খরচের পিছনে যেত। আমার স্বামী যদিও চাকুরীজীবী কিন্তু তার নির্ধারিত আয়ের মাঝে মেয়ের দুধের খরচ প্রায় বন্ধ হয়ে গেল, দিশেহারা না হয়ে সেই খরচ চালানোর জন্যই, ‘শুধুই কুরুশ’ এর যাত্রা শুরু করি। স্কুল করে এসে বাসায় সংসার সামলেছি, বাচ্চা সামলেছি অতঃপর সেলাই করেছি। অর্থাৎ আজও ‘শুধুই কুরুশ’ ব্যবসাটি আমাকে হাটতে সহযোগিতা করছে।

অপরাজিতা: শুরুর গল্পটির শুনলাম, এবার ‘শুধুই কুরুশ’ এর পরবর্তী যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাই? কতজন কাজ করতেন, বর্তমানে কতজন করছেন? কিরূপ সংগ্রাম করতে হয়েছিল?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমাকে ভীষণ পরিশ্রম করেই আগাতে হয়েছিল। ‘শুধুই কুরুশ’ থেমে যায়নি বরং তারপর কিছুদিন একা কাজ করি। এখন একটা মেয়ে আছে আমার সাথে। এক সময় অনলাইনে পেজ খোলার চিন্তা করি, অনলাইন পেজ ‘শুধুই কুরুশ’ এর যাত্রা শুরু ২০১৫ সালের ২৪ জুন। সেই সময় ছিল ১০ জন মেয়ে, মোটামুটি সবাই অবিবাহিত ছিল কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়ে যায় এবং একে একে চলে যায়। তবুও কাজ থেমে থাকেনি। বরং আমার পেজ ‘শুধুই কুরুশ’ বর্তমানে ত্রিশ হাজারের উপর সদস্য। এর পর আলহামদুলিল্লাহ অনেক অর্ডার পাই। অনেক মেয়েদের সন্ধান পেয়েছি, যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকে এবং হাতের কাজ করতে যানে। এর ফলে অনেক মেয়েদের কর্মস্থানেরও ব্যবস্থা হয়। তখন মেয়ে আমার কয়েক মাস বয়সী মাত্র। তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কাছে রেখে গিয়েছি মেয়েদের কাজ বুঝিয়ে, নতুন কাজ দিয়ে সামনে আনার জন্য চেষ্টা করেছি। যানবাহনের সমস্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। যেহেতু ভারী সুতা ভর্তি ব্যাগ একা টেনে নিয়ে যাওয়া আবার কাজ ভর্তি ব্যাগ একা নিয়ে আসা। এমনও হয়েছে বসার জায়গা তো দুরে থাক, বাসে দাঁড়াতেও পারি নাই ঠিক মতো। সময় ম্যানেজ করার জন্য অনেক সময় স্কুলে থেকেই চলে গেছি দুপুরে না খেয়ে। রাতে বাসায় ফিরে একে বারে খেয়েছি। কখনো বাচ্চাকে রাখার মতো কাউকে না পেয়ে ঘুমন্ত বাচ্চাকে কোলে করে গলার সাথে ব্যাগ ঝুলিয়েও হাঁটতে হয়েছে অনেকটা পথ।

অপরাজিতা: নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পরিসরে ‘নারী গ্রুপ’ আবার ব্যবসা জানতে চাই?
রাজিয়া বিল্লাহ: মুলত নারী গ্রুপ করার উদ্দেশ্য, সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন বোন যারা অনেক সময় নানান রকম সমস্যা পড়েন, ভোগেন যেগুলো নিজের পরিবার বা কারো সাথে শেয়ার করা সম্ভব হয় না। ফলে গ্রুপে সবাই নির্দ্বিধায় শেয়ার করেন। বিভিন্নজন তাদের মতামত শেয়ার করে। এতে অনেকে তাদের সমস্যার সমাধান ও খুঁজে পায়। কিছু বোন আছে যারা ঘরে বসে অনলাইনে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করে তাদের জন্য সপ্তাহে তিনদিন সেল পোস্ট দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি জানি পরিবারের খারাপ সময়ে হাল ধরতে পারা কতটা আত্নতৃপ্তির। আমার গ্রুপের বোনদের মধ্যে আমি বাঙ্গালি জাতিসত্ত্বাকে কে জাগ্রত রাখার জন্য, কোন ধরনের বাংলিশ লেখা বা ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার এই জোরের জন্য অনেক বোনেরাই শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে পারে।

অপরাজিতা: আবার ‘শুধুই কুরুশ’ ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
রাজিয়া বিল্লাহ: খুব সহজ ছিল না,  অবশ্যই বলব। এই জন্য যে আমাকে একা একা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হয়েছে, সত্যি অনেক কষ্টকর ছিল দিনগুলো, সেই ছোট্ট বাচ্চাটিকে রেখে। কাস্টমারের বিভিন্ন ধরনের কথা তো আছেই। তবে আমার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট হল, যা আমাকে সাহস যুগিয়েছে, আমার পরিবারের ১০০% সাপোর্ট। যেটা অন্য অনেকের কাছে শুনেছি পায় না। আমি পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
রাজিয়া বিল্লাহ: প্রচুর সুযোগ আছে। অসহায় মেয়েরা চাইলে এই কাজ করে সংসার চালাইতে পারেন। আমি নিজে চালিয়েছি কয়েকমাস। আমার বেতন বন্ধ হবার কিছুদিন পর আমার স্বামী তার চাকুরী ছেড়ে দেয়। তখন কয়েকমাস আমিই সংসার চালিয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু লেগে থাকতে হবে এই কাজে, হাল ছাড়লে চলবে না।

অপরাজিতা: মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগিতা কি আদৌ পাচ্ছে, যদি না পান, কেন পাচ্ছে না বলে আপনি মনে করেন?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার মতে, পাচ্ছে না। এমন বলার কারণ আসলে আমার এই কাজের জন্য আমি কয়েক জায়গায় সাহায্যের জন্য গিয়েছি কিন্তু বিফল হয়েছি। তাই আসলে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

অপরাজিতা: মূলধন সংকটের ফলে কোন সমস্যা হতে পারে কি?
রাজিয়া বিল্লাহ: মূলধন সংকটের জন্য অবশ্যই সমস্যা হয়। তবে আমি যেহেতু আমার কাজের অর্ডার ভিত্তিতে করেছি এবং ৫০% অগ্রিম ক্রেতার কাছ থেকেই নিয়েছি। তাই মূলধনের সমস্যা বুঝতে হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: সফল নারী আসলে কি আপনার মতে?
রাজিয়া বিল্লাহ: সফল নারী আমার একান্ত মতে, সেই যে তার নিজ ধর্মের বিধি-নিষেধ সঠিকভাবে মেনে পরিবারকে খুশী রেখে সমাজের অসহায় গরীব নারীদের, যারা বিভিন্ন ভাবে পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য কিছু করতে চায়।

অপরাজিতা: নারী দিবসে নারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
রাজিয়া বিল্লাহ: নারীদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, ‘নারীকে জীবন্ত বৃক্ষ হতে হবে’ এই অর্থে নয় যে, সবাই এসে তার ছায়া নিয়ে ডাল ভেঙে নিয়ে যাবে বরং এই অর্থে যে, বড় বৃৃৃক্ষ সহজে কাটা যায় না, নোয়ানো যায় না। নরম গাছ যেমন এক টানেই উপরে ফেলা যায়। তেমন হওয়া যাবে না। মা হলে, এমন মা হতে হবে যার সন্তানের দিকে অন্য কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। স্ত্রী হলে এমন স্ত্রী হতে হবে যাকে কখনও স্বামী নিজের বোঝা না ভেবে, জীবনের অপরিহার্য অংশ ভাবতে বাধ্য হবে। কন্যা হলে এমনই কন্যা হতে হবে, যাতে বাবা মা এর ভরসা যায়গায় হতে পারে।

অপরাজিতা: নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমাকে যখনই কেউ ইনবক্স করে বলেন, আপু জব খুঁজছি। তখন আমি বলি, চাকুরী করতেই হবে এমন কি মানে আছে বলুন? বরং ব্যবসা করার প্লান করুন। নিজের মধ্যে যে ক্রিয়েটিভিটি আছে, সেইটা দিয়েই শুরু করতে উৎসাহ দেই। এটাও বলি যে ব্যবসা করতে চায় না বলেই আজ বাঙ্গালি জাতি, অনেক পিছিয়ে আছে।

অপরাজিতা: শুধুই কুরুশ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক বড় বলতে পারেন। যেটা আমি জেগে এবং ঘুমিয়ে দুই-ভাবেই দেখি। তা হল কিছু গরীব অসহায় মেয়েকে নিয়ে আমি আগের মত কাজ করছি। বড় করে শোরুম দেয়ার ইচ্ছে আছে। ইনশাআল্লাহ। এর আগে যে মেয়েরা কাজ করত ওরা ছিল এইস এস সি পরীক্ষার্থী। আমার কাছে পাওয়া সেলাইয়ের টাকা দিয়েই ওরা ফরম ফিলাপ করেছে ও প্রাইভেট পড়েছে। নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই চালিয়েছে। কিছু অভাবী মেয়েকে নিয়ে কাজ করব। তাদের ভবিষ্যত আর বর্তমানের জন্য। একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দেয়ারও ইচ্ছে আছে ভীষণ। বাকীটা আল্লাহর ইচ্ছা।

‘শুধুই কুরুশ’ এর এই গুনি উদ্যোক্তা সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ (ইরা), আপনাকে অপরাজিতার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

নারী

রুবি


বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
আজ আমায় অপয়া বলে তোমরা ডাকো।
বাবার সংসারে বোঝা আমি,
পুত্র সন্তান হলে বেশি দামি।
যতই থাকুক আমার গুন
পান থেকে একটু খসলেই চুন,
হয়ে যায় আমি কলঙ্কিনী,
বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
আজ আমায় অবলা বলে তোমরা ডাকো।
লেখাপড়ায় বিদ্বান হলেও বলে না কেউ বিদুষী
ঘরের কাজ কেমন জানি, রান্নায় কত পটু আমি,
সেই প্রশ্নে হেরে গেলে হয়ে যাই দোষী,
গৃহ ছেড়ে কর্মে গেলে হয়ে যায় নির্লজ্জ,
পুরুষের পাশে একজন নারী বেমান-নিকৃষ্ট।
স্নেহ -মমতা কে দিয়েছে নারীর চেয়ে বেশি?
যুগে যুগে নারীর ত্যাগ হয়েছো তোমরা ঋষি।
আজ বস্ত্র হরণ করে বস্তুর মত দুমড়ে মুচড়ে ফেলো আমায়,
তবুও নও তোমরা দোষী,
চরিত্রহীনা আমি হারিয়ে সম্ভ্রম
সকলের উপরে আমিই বড় পাপী।
আমায় তোমরা মা বলে ডাকো,
তবুও আমার বুকের রক্ত দিয়ে রঙ তোমরা মাখো।
বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
বেশি কিছু না একটু সন্মান ভাবি পাবো।
আর কিছু নাই বা পেলাম,
বাঁচতে শুধু দিও।
নারী আমি,বস্তু নয় এতটুকু জেনে নিও।

 

আমার জীবনের আদর্শ মানুষ ‘আদর্শ নারী’

মুক্তারা বেগম নদী


আমার জীবনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, আমার ধ্রবতারা। নেপলিয়নের সেই বানী “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।” যার জন্য এই বাক্যটি স্বার্থক তিনি আজ আর নেই আমাদের মাঝে আমার পথপ্রদর্শক , আমার প্রিয় মানুষ, প্রিয় ব্যক্তিদের একজন, আমার প্রথম শিক্ষক , যিনি ছিলেন মনে প্রানে আধুনিক, একজন প্রগতিশীল মানুষ, একজন মমতাময়ী মা, সমাজ সেবিকা, দানশীল , অতিথী পরায়ন, হাসী-খুশী ও প্রাণবন্ত, যাকে কোন দিন মলিন মুখে দেখিনি, দেখিনি কখনো রাগ করতে। শুধু নারী নয় ,যিনি আমাকে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট ছিলেন । আমার দাদী যিনি গত ৪ঠা জানুয়ারী , ২০১০ সোমবার ১২টায় আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন।

তার প্রচেষ্টা কতখানি স্বার্থক হয়েছে, কতটা মানুষ হতে পেরেছি, কতটা নারী জানি না । কিন্তু আজম্ম তার সেই প্রচেষ্টা স্বার্থক করবার চেষ্টা করেছি এবং করব।
আমার জম্ম আর দশটা মফস্বল শহরের মতই একটি শহরে । আর আমিও হয়ত বেড়ে উঠতাম আর দশটা মেয়ের মতই। কিন্তু তিনি তা কখোনোই চাননি এবং হতেও দেননি।

সেই ছোটবেলা থেকেই তার অনেকগুলো মন্ত্রের একটা ছিল – “তুমি শুধু নারী নও , মানুষও”।

আমার দাদী , যাকে দাদু বলে সম্বোধন করতাম । যিনি ছিলেন বাহ্যিক ও মানসিক দিক দিয়ে অসম্ভব সুন্দর মানুষ। বুঝতে শেখার আগে থেকেই তিনি আমাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। সব সময় বলতেন, “সব সময় মনে রেখ তুমি আগে মানুষ, তারপর নারী।”
তোমার নারীত্ব তোমার দুর্বলতা নয় , এটা তোমার শক্তি। তিনি চাইতেন প্রত্যেক নারীর কমনীয়তা , রমনীয়তার পাশাপাশি তার মাঝে থাকবে সাহস , শক্তি, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব , আত্মসম্মান। ঘরকন্নার পাশাপাশি তিনি উৎসাহ দিতেন দেশ-বিদেশের খোজ -খবর রাখতে যেমন-রাজনীতি, সমাজনীতি বিভিন্ন বিষয়ে।

তার কাছ থেকে সেই ছোটবেলা থেকেই জেনেছিলাম আমার প্রিয় ব্যক্তিদের সাহস , আত্মত্যাগ, উদারতার কথা যেমন- মাদার তেরেসা, নেলসল ম্যান্ডেলা, প্রীতিলতা। আরও জেনেছিলাম মহাত্তা গান্ধী , ইন্দিরা গান্ধী, মারগারেট থেচার , চন্দিকা কুমারাতাঙ্গার কথা। তারই ধারাবাহিকতায় আস্তে আস্তে জেনেছি জাহানারা ইমাম , পান্না কায়সার , সুফিয়া কামাল, ভেলরি টেলর এবং আরও অনেক সাহসী নারীদের জীবন গাথা।

যাদের কাছ থেকে পেয়েছি বেচে থাকার অনুপ্রেরনা, জীবন যুদ্ধে লড়াই করার সাহস, মানবতা, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ , কর্তব্যবোধ।

তিনি নিজেকে কখনই দুর্বল মনে করতেন না। তার ছিল অপরিসীম প্রানশক্তি। নিজে সুন্দর করে বেচে থাকার পাশাপাশি অন্যের বেচে থাকাকেও তিনি আনন্দময় করে তুলতেন। তার প্রিয় কবি ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম । কারন তার আধ্যিত্বকতা ও প্রতিবাদী মনোভাব দুটোই দাদুর পছন্দের ছিল। বিদ্রোহী কবির সেই বিখ্যাত দুটি লাইন “এই পৃথিবীতে যা কিছু সুন্দর অর্ধেক তার নারী অর্ধেক করিয়াছে নর।” বলতেন এই কথাগুলোর জন্যই সারাজীবন তার কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব।

আমার দাদা ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ করেছেন। দাদু একাই তার আট ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। সহায় সম্পত্তি শুধু রক্ষাই করেননি সেটাকে সমৃদ্ধও করেছেন দাদুর যদিও নিজের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না কিন্তু তিনি খুব গোড়া ধার্মিক ছিলেন না। তার মাঝে আমি কখনই কোন কুসংস্কার দেখিনি। যার প্রতিফলন আমাদের মাঝেও ছড়িয়েছেন। তিনি তার নিজ সন্তান, পরবর্তীতে আমাদের ভাই-বোনদেরকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায়ও অনুপ্রানিত করেছেন। তার উৎসাহে আমি ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই কোরআন তেলওয়াত করতে শিখি।

তিনি তার সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন মানসিকতায় ও চলাফেরা ও পোশাক আশাকে। আমাদের জুবুথুবু হয়ে চলাফেরা পছন্দ করতেন না। বলতেন যাই পড় না কেন সেটা যেন ফিটফাট, রুচিসম্পন্ন , আধুনিক ও একইসাথে মার্জিত ও শালীন হয়। দাদু খুব ম্যাচিং করে পড়তেন। ছোটবেলা থেকেই আমার জন্য নিজে ম্যাচিং করে কাপড় জুতো, গয়না কিনে আনতেন। যার জন্য আমি নিজে এখন খুব ম্যাচিং করে সব কিছু পড়ার অভ্যেস।
বাল্যবিবাহ তার একদম পছন্দ ছিল না, বলতেন আগে লেখাপড়া, তারপর ক্যারিয়ার, তারপর বিয়ে। যার ফলশ্র“তিতে আমার ঢাকায় এসে পড়াশুনা, চাকরী ইত্যাদি। মনে আছে ঢাকায় এসে যখন ভর্তি হলাম দু’মাস একটানা ক্লাস করার পরই ক্লাস বন্ধ হয়ে গেল ছাত্র রাজনীতি সংক্রান্ত ঝামেলায়। বাসায় ফোন করলাম আমাকে এসে নিয়ে যাবার জন্য । ফোনটা দাদুই রিসিভ করেছিলেন। আমি বললাম আব্বাকে পাঠাও আমাকে নেওয়ার জন্য । বললেন তুমি তো মানুষ হবার জন্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে গেছ তাই না , তাহলে মেয়ে মানুষের মত আচরন করছ কেন? তুমি যদি সারাজীবন দুর্বল অবলা নারী হয়ে থাকতে যাও তাহলে তোমার বাবাকে পাঠাব। আর যদি একজন আত্মসম্মান জ্ঞান সম্পন্ন একজন মানুষ হতে চাও তাহলে একা আস। দাদুর কথা শুনে সেই একা ঢাকা থেকে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। তারপর আর কোন দিন কেউ আমাকে নিতে আসেনি। আমি একা একাই সব জায়গায় চলাফেরা করি নির্ভয়ে।
আমার ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, বাড়ী ভর্তি মেহমান, সব সময় লোকজন লেগেই থাকত , কত দূর দূরান্ত থেকে পরিচিত-অপরিচিতরা আসতেন, কেউ বেড়াতে , কেউ সাহায্য চাইতে , কখনোই তিনি কাউকেই ফিরিয়ে দিতেন না।

আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে আমি লিখতে গেলে এক লাইন লিখে চুপ মেরে বসে থাকি সে আমি অকাতরে কেবল লিখেই যাচ্ছি। আমার কথা অফুরন্ত কিন্তু আমার আবেগ অতৃপ্ত, অনেক লিখেও মনে হচ্ছে আমি আরো অনেক কিছুই বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু কিছু ভাষা প্রকাশ করতে পারিনি। ঝড়ের ছবি যেমন অনেক রঙ থেকে মানুষ ঝড় বুঝে নেয় কিন্তু কেবল শিল্পি বুঝেন সে ঝড়ের উদ্দ্যোম তার বুকে বাজে। দাদুকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার সেই রকম কোন ছবি আকার মতই উপলব্ধি হচ্ছে।

দাদু মানুষ হও বলতে তুমি কি বোঝাতে আমি কতটা তা ছুঁতে পেরেছি জানিনা কিন্তু মানুষ বলে কাউকে দেখার সৌভাগ্য আমাকে অন্য দশ জন থেকে আলাদা করে কারন আমি তোমাকে দেখেছি।

[ কেন জানি আমার প্রিয় মানুষগুলো আমার কাছে থেকে বিদায় না নিয়েই চলে যান, দাদা, দাদু, বাবা কাউকেই আমি বিদায় জানাতে পারিনি] আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কেউ না কেউ থাকেন, আলোর দিশারী হয়ে, তারা তাদের সমস্ত জীবনের অভিজ্ঞাত আর শিক্ষা দিয়ে আমাদের পথ দেখান, ছায়া দেন, মানুষ হতে শেখান, হতে পারেন সে আপনার বা আমার, মা, বাবা, পরিবারের কেউ, শিক্ষক কিংবা সমাজের কেউ, তারা হন আমাদের আদর্শ, প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
তো পাঠশালায় আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লিখলে কেমন হয়? আমিই শুরু করলাম।

আমাদের জীবনে যারা আমায় আলোর পথ দেখিয়েছেন, তাদের একজন আমার দাদু, আমার বাবার মা।

 

‘নারী মুক্তি’ সময়ের অপরিহার্য দাবি!

সাজেদা হুমায়রা হিমু


নারী কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং একটি চালিকা শক্তি যাকে ছাড়া পুরো পৃথিবী স্তব্ধ, স্থবির। তবুও নারীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন হচ্ছে না কোনো ভাবেই।

তাই একবিংশ শতাব্দীর আলো ঝলমলে পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও নারী আজ বড় অসহায়! বড়ই পরাধীন!

প্রতিনিয়তই নারী নির্যাতিত শারীরিকভাবে….মানসিক ভাবে।
নারীকে কখনো একজন মা, কখনো একজন স্ত্রী, কখনো ছেলের বউ, কখনো বোন বা কন্যা, কখনোবা একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ নির্যাতন শুধু পুরুষ কর্তৃক হচ্ছে তা নয়, নারী কর্তৃকও হচ্ছে।

সত্যি নারীরা আজ ভালো নেই। নারী কেন্দ্রীক বিভিন্ন সমস্যার বিষবাষ্পে জর্জরিত আমাদের প্রিয় এ জন্মভূমি।

বেশিরভাগ পরিবারেই নেই নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা…নেই তার অবদান আর কষ্টের স্বীকৃতি…
যৌতুক, তালাক নারী নির্যতনের রেকর্ডে যোগ করেছে এক চরম নির্মমতা!
বিগত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা!
নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সম্পত্তি থেকে…..বঞ্চিত করা হচ্ছে উপার্জনের ক্ষেত্রে।
পথে পথে চলছে নারীর শ্লীলতাহানি!
কন্যা শিশু থেকে বৃদ্ধা নারীরা পর্যন্ত প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের….
বাস, অফিস, গৃহ কোন স্থানই আজ নিরাপদ নয়।
বিভিন্ন বয়সের পুরুষের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার নারীরা প্রচণ্ড মানসিক পীড়নে থাকছে।
আর ইতি ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন এমনকি নিজেদের জীবনেরও!

কেন আজ নারীর এই অসহায়ত্ব? কেন হচ্ছে এই নির্যাতন? তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেনা কেউ।

নারীর অবস্থার উন্নয়নে সময়ের সাথে সাথে প্রণিত হচ্ছে বিভিন্ন নীতিমালা, বিভিন্ন পদক্ষেপ… তবুও পরিবর্তিত হচ্ছে না নারীর অবস্থার।

তাই আল্লাহ প্রদত্ত নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা আজ বড় প্রয়োজন…..প্রয়োজন সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন….প্রয়োজন নারী নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনের প্রয়োগ।

অযৌক্তিক সমানিধিকারের দাবীর মাধ্যমে নারীর কাঁধে কয়েক গুন বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নারীমুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।

তাই..
সম অধিকার নয়,
প্রাপ্য অধিকার চাই।
প্রাপ্য স্বাধীনতা চাই।

নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

মনের প্রকৃতি

আফরোজা হাসান


বুঝতে শেখার পর থেকে যখনই অকারণ জেদ করেছি ভাইয়া বলতেন, “মনের যে ইচ্ছা শক্তির দ্বারা মানুষ আত্নসমালোচনা করে আত্নসংশোধনের পথে চলে আত্মোন্নয়ন করার কথা, মনের সেই ইচ্ছা শক্তিরই ভুল প্রয়োগে মানুষ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়।” তখন ভাইয়ার কথা বুঝতে না পারলেও এখন জানি কারো জন্য তার নিজের মনটাই হতে পারে পরম বন্ধু কিংবা চরম শত্রু।

মনের অনেক সংজ্ঞা পড়েছি। কিন্তু মনের যেই সংজ্ঞাটি মনকে ছুঁয়ে দিয়েছিল সেটি হচ্ছে, ” মন মানুষের ভেতরে এক টুকরো প্রকৃতি।” সত্যিই মনের মাঝে দেখা মেলে প্রকৃতির সব রুপ-রঙ-বৈচিত্র্যর। মনের আছে ঋতু চক্র, বদলায় মৌসুম। মন বাগিচায় ফুল ফোটে, পাখি গায়, ভ্রমর তোলে গুঞ্জন, ঝরে পরে পাতা, শুকিয়ে যায় ফুল। মনের আঙিনা কখনো বরষায় হয় স্নাত, কখনো হয় বন্যায় প্লাবিত।

মনের আছে অতলান্ত সাগর, বহতা নদী, বদ্ধ পুকুর, টলটলে দীঘি। আছে বিশাল নীলাকাশ, মেঘমালা, নক্ষত্র, পূর্ণিমা, বিজলীর চমক। গহীন বন, চোরাবালি, নগর-বন্দর, মরুভূমি, আছে মরিচীকাও। আছে হিংস্র বাঘ, চতুর শেয়াল, মায়াবী হরিণ, দুষ্টু বানর, বিষাক্ত সাপ। ফসলের ক্ষেত, মেঠো পথ, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় সব সবকিছু। তাই মনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্যও দরকার যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতির……।

প্রায় এক যুগ আগে প্রচন্ড রকম কালবৈশাখীর ঝড় দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাইয়া পাশে দাঁড়িয়ে অভয় দেয়ার সুরে বলেছিলেন, মানুষের মনে মাঝে মাঝে এমন ঝড় বয় তা যদি প্রকৃতি দেখতো স্তম্ভিত হয়ে যেত তার সর্বগ্রাসী ক্ষমতা দেখে। এমন সর্বগ্রাসী সর্বনাশী ঝড়ের কবলে পতিত কিছু মনকে খুব কাছ থেকে দেখার, জানার, বোঝার ও চেনার সুযোগ হয়েছে পরবর্তীতে।

ঠিক তেমনি দেখেছি ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া মনকে আবারো নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে। বিরান হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেত আবারো সবুজে সবুজে ছেঁয়ে যেতে। তাই হয়তো প্রচন্ড খরায় ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ভূমির বুকে আবারো প্রাণের পরশ বুলিয়ে যায় আকাশ থেকে নেমে আসা অঝোর পানিরাশি।

নদীর এক কূল ভাংগলে যেমন অপর কূল গড়ে। মনের অবস্থাও অনেকটা তাই। তাই আধাঁর দেখে থমকে গিয়ে পা পিছনে টেনে নেবার অবকাশ নেই। আড়াঁলে যে সূর্য প্রতীক্ষমান…….।

 

‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’একটি সম্ভাবনাময় দিন

অপরাজিতা ডেক্স


বিশ্বব্যাপী নারীদের স্বীকৃতি সরূপ তাঁদের অবিশ্বাস্য প্রতিভা, কর্মদক্ষতা, ভূমিকা এবং সৃষ্টিশীল মানবসম্পদে পরিণত হতে যে সংগ্রাম তা তুলে ধরতে এবং পাশাপাশি অন্যদের জন্য পথ তৈরি করার মন-মানসিকতায় সহযোগিতা জন্য ‘নারী দিবস’ একটি সম্ভাবনাময় দিন।

মূলত ১৯৭৫ সালের ৮ই-মার্চ এর দিনটিকে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ‘নারী দিবস’ পালনকারী বিশ্বব্যাপী পুরুষ ও নারী উভয়ই।

জাতিসংঘে এই বছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হল, ‘Press for Progress’. স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা।’ গোটা বিশ্বের নারীদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এ বছর এরূপ প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে।

ইতিহাসের পাতায় নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে গুরুত্ববহন করলেও বর্তমানে নারীদের সার্বিক দিক উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি মানচিত্রে ক্যালেন্ডারে রাখাটি যদিও একটি কৃত্রিম পদ্ধতি, তবুও নারীদের সফলতার গল্প, বিফলতার কারণ এবং নারীদের মতামত, উদ্যোক্তা হিসাবে ভূমিকা, যুগের যুদ্ধে নারী সংগ্রামীদের সামনে আনার চেষ্টা। অধিকার শুধু নয় সচেতনা বাড়ানো মুল উদ্দেশ্য ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসের।

কারণ, আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ২০০৯-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ শতাংশ পারিশ্রমিক কম পায়। অন্য এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে প্রায় শতকরা ৬৫ ভাগ।

নারীর জন্য সচেতনতা:
নারী দিবসকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ভাবে চারটি সেক্টরের উপর নারীদের সচেতনতাকে জোরদার করা হচ্ছে,

১.শিক্ষা অর্জন
২.সহযোগিতা
৩.প্রচারণা
৪.নিজের কর্মে প্রস্ফুটিত হওয়া(সুত্র:VOGUL)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নারী: নারী-পুরুষের মর্যাদা নির্ণয়ে সাধারণ মানুষ মুলত দৃষ্টিপট খুঁজেন ইসলামে অর্থাৎ আল কোরআনে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতা সুস্থ চিন্তা ও সঠিক কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। আদর্শ ও মতবাদ নারীকে শুধু নারী হওয়ার কারণে নিচু ও লাঞ্ছনার যোগ্য মনে করে। ইসলামে মর্যাদা লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব ও হীনতার মাপকাঠি হলো চরিত্র ও নৈতিকতা। সুতরাং চরিত্র ও নৈতিকতা আলোকে নারী ও পুরুষ যার যত বেশি থাকবে সেই ব্যক্তিই সফলকাম।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে কথা হল ক-জন মনোবিজ্ঞানীর সাথে। একজন বলছিলেন, ‘নারী হিসেব একজন মানুষের মৌলিক দিক বললে আমি বলব, ‘আত্মমর্যাদাবোধ’। আত্মনির্ভরশীলতা, পাশাপাশি বিনয়, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস, অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা যা আমার কাছে নারী হিসেবে খুব দরকারি কিছু বৈশিষ্ট্য। আমার কাছে আমার আদর্শ নারী যেমন ‘মা’। আমার সকল সমস্যার আশ্চর্য জনক সমাধান থাকে যেখানে। তিনি একজন নারী, এক-টুকর আমার রাষ্ট্রের নাম। সাইকোলজিস্ট হিসেবে পেশা জীবনটি শুরু হয়েছে। সেই যায়গায় পৌছতে সময়ের সাথে এগিয়ে গিয়েছি, পথে বাধাগুলতে পরিবার আর বন্ধুদের শক্ত হাত আমার নারী শক্তিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ফাহমিদা আফরোজ (এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট)

বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে – আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজানসহ, আরও অনেক দেশ। এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারী ছুটির দিন উপভোগ করেন।

 

মাতৃকথন_৩

ফারিনা মাহমুদ


  • এতবার বললাম বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় লাউ আর কালিজিরা বাদে সব খাওয়া মানা । তারপরেও তুমি মাংস খাও কোন আক্কেলে? মা হওয়া এত্ত সোজা নাকি? এইজন্যই আজকে বাচ্চাটার মাসিপিসি উঠলো!
  • দেখতো, তুমি সরিষার তেল ডলে বাচ্চা রোদে রাখলে আজকে ওর ঠান্ডা লাগতো না !
  • কি গো, রাতে কান্দে ক্যানো ? নিশ্চই পেটে ব্যথা ! কতবার বললাম যে পেটে গরম স্যাক দাও !

বাচ্চা জন্মের পর আশেপাশের মানুষের দেখে মনে হয়, পৃথিবীতে এক মা ছাড়া বাকি সবাই সব জানে ! গোটা প্রেগন্যান্সি তো বটেই, বাচ্চা জন্মের পর সে কাঁদলে, নাভি দেরিতে পড়লে, গায়ে মাসিপিসি উঠলে, হালকা ঠান্ডা লাগলে, একটু বমি করলে, ২ বারের জায়গায় ৩ বার হাগু করলে বা স্বাস্থ্য একটু খারাপ হলে আর রক্ষা নাই । আশপাশ থেকে সমানে শুরু হয় মা-কে দোষারোপ!

এই গ্যাড়াকলে পড়ে পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশনে ভোগা (অল্প বিস্তর সবারই হয় এটা, হরমোনাল চেঞ্জের কারণে) মা টার নিশ্চই ইচ্ছে করে গঙ্গায় ডুবে মরতে ! এক একবার নিজেকে অপরাধী লাগে,মনে হয় আমার ভুলেই বাচ্চাটা কষ্ট পাচ্ছে !

পরো ক্ষণে যখন স্বামীও পাশে না দাঁড়িয়ে দোষারোপ করতে থাকে, তখন মনে হয়, মুগুর দিয়ে মাথায় বাড়ি দেই! কখনো রাগ গিয়ে পড়ে বাচ্চাটার উপর। নিজেকে খুব একা লাগে! অসহায় লাগে! মনে হয়, আমি কি আর কোনদিন ফিরতে পারবো স্বাভাবিক জীবনে ?

বাস্তবতা হচ্ছে আশেপাশের এসব মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেই মাতব্বরি গুলি করেন, সেইগুলি অনেক অভিজ্ঞতার আলোকে হলেও এর যুক্তিযুক্ত ভিত্তি সমসময় থাকে না । উপরন্তু, নতুন মাকে এই নাজুক সময়ে এ ধরনের অযথা দোষারোপ পরিস্থিতি জটিল ও দুর্বোধ্য করে তোলা ছাড়া আর কিছুই করে না !
তার অর্থ এই না যে সাহায্য বা উপদেশ দেয়া যাবে না।

যেটা করা উচিত না তা হচ্ছে আলগা মাতব্বরি, টিটকারী বা এমন কোনভাবে কিছু বলা, যাতে মা টা কষ্ট পায় । যে কোনো সদ্যজাত বাচ্চার মাকে “আলগা” উপদেশ দেবার আগে মাথায় রাখতে হবে

(১)শী ইস দি গড ড্যাম ওয়ান হু ক্যারিড দি চাইল্ড ফর নাইন মান্থস, প্রকৃতি বাচ্চা বহন করার ক্ষমতা যাকে দেয়, বাচ্চা পালার ক্ষমতাও তাকে দিয়ে দেয়। বাচ্চা পেটে থাকতে সে কি আপনার কাছে এসেছিলো আম্লিক্যাল কর্ড ধার করতে? আসে নাই! সে তার শরীরের নির্যাস দিয়ে পরিপূর্ণ একজন মানুষ যেহেতু পৃথিবীতে আনতে পেরেছে, আপনি ছাড়াও তার বাচ্চা বড় হবে, টেনশন নিয়েন না।

(২)একটা নতুন বাচ্চার সাথে মায়ের বন্ডিং টা গড়ে উঠা জরুরি। এই বন্ডিং গড়তে ২ টা জিনিস লাগে “সময়” ও “সহযোগিতা”।

উপদেশ দিয়ে এই বন্ডিং গড়া যায় না । কাজেই আশে পাশের মানুষের উচিত সময় এবং অনুপ্রেরণা দিয়ে সাহায্য করা।

বিজ্ঞান বলে নো টু হিউম্যান আর সেইম। জগতের আর সব মানুষের মতোই বাচ্চার ক্ষেত্রেও কিছু প্যাটার্ন থাকে। রিসার্চের পর রিসার্চ করে এই প্যাটার্ন গুলো তৈরী করেছেন গবেষকরা।
সময়ের প্রবাহে, যা টিকে গেছে, যাচ্ছে, তা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মনে রাখতে হবে, সব বাচ্চার বেলায় সব দাওয়াই খাটে না, পুরো ব্যাপারটি ট্রায়াল এন্ড এরর কেইস। জন্মের পর পর একটা বাচ্চার আনসেটেল্ড থাকা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

যেই বাচ্চা পানির ভিতর ভাসতো, টুপ করে তাকে বাতাসের মধ্যে ছেড়ে দিলে তার চুপ করে থাকার কোনো কারণ নাই। আপনারে যদি আমি আতিক্যা ধাক্কা মেরে ডাঙ্গা থেকে পানিতে ফালায়ে দিয়ে বলি, এইটাই এখন থেকে তোর বাসা, আপনি কি করবেন?

মাত্র জন্মানো বাচ্চার কমিউনিকেশনের একটাই উপায়, চিল্লানো। তার এক্সপ্রেশন বলতে ওই চিল্লানো ছাড়া কিছু থাকে না। সুখ দুঃখ আলাদা এক্সপ্রেস করার ক্ষমতা তার নাই। কাজেই সে ট্যা ট্যা করে উঠলেই মনে করার কোনো কারণ নাই তার সর্বাঙ্গে ব্যাথা অথবা সে ক্ষুধায় কাতর। তারে কোলে উঠায়ে ও ও ও…করে ঝাঁকাঝাঁকি করার ও কোনো মানে নাই । অকারনে ঝাঁকাঝাঁকিতে বাচ্চা শুধু বিরক্তই হয় না, তার ক্ষতিও হতে পারে। কারণ ওদের ব্রেন খুব নরম থাকে এবং এই ঝাঁকি ব্রেনে হিট করে।

নতুন পরিস্থিতি, আলো, বাতাসের সাথে খাপ খাওয়াতে বাচ্চার সময় লাগে। এছাড়া বাচ্চার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অপরিপক্ক থাকে বলে ওদের হিকাপ, গ্যাস ইত্যাদি বেশি হয় । ধীরে ধীরে ওদের বড় হবার সাথে সাথে অর্গ্যানগুলোর ফাংশন স্ট্রং হয়।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বাচ্চা বমি করে, কাঁদে, অস্বস্তিতে ভোগে । আদতে খুব বেশি কিছু করার নাই কারণ এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে জগতের সব মানুষই গেছে। একটু আধটু টামি টাইম দেয়া, খাওয়ার পরে বার্প তোলা ছাড়া তেমন কোনো বিজ্ঞান সম্মত সমাধান নাই এর । তাছাড়া নিউবর্ণ বাচ্চার হাগুর সংখ্যা ২৪ ঘন্টায় শূন্য(০) থেকে (১২) পর্যন্ত যে কোনো নম্বর ই হতে পারে ।

বরং ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেয়া দরকার পানিশূন্যতার সিমটম কি, কারণ এইটা একটা ভয়ংকর জিনিস।

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি:

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মাতৃগর্ভ থেকে নিয়ে আসা অতিরিক্ত হরমোন বাচ্চা বের করে দেয়। এটাও সময়ের সাথে চলে যায় ।

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি হলে কি করণীয়:

শিশুশাস্ত্র মতে, এই সময় তেল জাতীয় কিছু চামড়ায় দেয়া মানা কারণ তেল চামড়ার লোম কূপ বন্ধ করে দেয় এবং বিষয়টা আরো খারাপ হয় । এই সময় বাচ্চাকে পরিচ্ছন্ন রাখা, আরামের কাপড় পরানো, শরীর স্পঞ্জ করে দেয়া আর পারতপক্ষে কোনো লোশন পাউডার না দেয়াই ভালো । খুব প্রয়োজন পড়লে ওয়াটার বেইজ ময়েশ্চারাইজার দেয়া যায় সামান্য, তবে নন ফ্র্যগ্রান্ট হলে ভালো ।

উপরের একটা ব্যাপারের সাথেও মায়ের খাবার দাবারের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই । আমি সিনিয়র পিডিট্রিশিয়নের কাছ থেকে এবং একাধিক সিনিয়র ল্যাকটেশন কনসাল্টেন্ট এর ক্লাসে তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলাম এই ব্যাপারে । উত্তরে তারা বলেছিলেন – নেচার ইস ভেরি ফরগিভিং মাই ডিয়ার। ফ্রম দি রিচেস্ট ওম্যান ইন দি প্যালেস আপটু দি পুওরেস্ট ওম্যান বিসাইড দি স্ট্রিট উইল প্রডিউস মিল্ক অফ সিমিলার নিউট্রিশন! ইউর ডায়েট হ্যাস অলমোস্ট নো কন্ট্রিবিউশন টু ইওর বেবি’স ডিস্কমফোর্ট !

তাহলে ব্যাপারগুলি কি শুধুই মিথ ? না, ব্যাপারগুলি অন্যভাবে কিছুটা সত্য । বলি কিভাবে । বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো মায়ের প্রচুর পানি খাওয়া দরকার । ওই যে লাউ এর ঝোল, বা অন্য ঝোল ওয়ালা তরকারী খাওয়ার ব্যাপারটা ওখান থেকেই আসা । আর আফটার বার্থ কনস্টিপেশন থেকে মুক্তি পেতে ফাইবার সম্বৃদ্ধ খাবার খুব জরুরি । শুধু মাংশ খেয়ে বসে থাকলে সেই অর্থে বিপদ আছে।

কাজেই মা অবশ্যই বুঝে খাবেন, কিন্তু সেটা নিজের রিকভারির জন্য । বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছেন বলে বাড়তি পানি খাওয়া ছাড়া খুব কিছু করার নেই!

আর নতুন বাবা-রা, দয়া করে সব কিছুতে মাকে দোষ দেয়া বন্ধ করুন । যে কোনো বিষয় অথেন্টিক সোর্স থেকে জেনে নিন, পরিবার যখন অকারণে দোষ দিচ্ছে মা কে, আপনিই তখন এগিয়ে এসে তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে যান । মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে বলে ফেলুন – হুদাই মন খারাপ করো না তো ! বাবু তো দিব্যি ভালো আছে । এখন বলো কি খাবা? চটপটি না ফুচকা? মরিচ কি বাড়ায়ে দিতে বলবো মামা রে?

সংযুক্তি: লেখাটির উদ্দেশ্য বাচ্চা পালনে ঠিক ভুলের সবক দেয়া না, বরং সাপোর্টিং পার্সন দের রোল কি হওয়া উচিত তা বোঝানো। আমি ডাক্তার নই। একা বাচ্চা বড় করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমি প্যারেন্টিং ক্লাস, আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টার, ল্যাক্টেশন কনসালটেন্ট, পিডিয়েট্রিশিয়ানের কাছ থেকে এসব জেনেছি। আমার জানা বা বোঝায় ভুল থাকতেই পারে। যে কোনো সমস্যায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষের কাছ থেকে জেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
‘হ্যাপি প্যারেন্ট হুড অল’!

 

চলে গেলেন না ফেরার দেশে একজন নিখাঁদ প্রচারবিমুখ বিজ্ঞানমনস্ক মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক বুদ্ধিগুণ সম্পন্ন চিকিৎসক

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


আড়ালে আবডালে থেকে দেশের জন্য, দশের জন্য যিনি নিরবে নিভৃতে দেশের শিশুদের জন্য এমন এক আবিষ্কার করে তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন, তার অসুস্থতা বিষয়ে জাতির কি সামান্যতম সচেতনতা ছিল? আমরা কজন জানতাম এই গুনি মানুষটি যে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে পড়ে রয়েছিলেন। এমন একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানীকে রাষ্ট্র-ই বা কতোটুকু মূল্যায়ন করেছে? জাতীয় সম্পদ এই মানুষটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কি কেউ একবারের জন্যও দেখতে গেছেন, যে জাতি তার গুনী মানুষগুলোকে অবজ্ঞা করবে সে জাতিকোষে গুণীর বীজ রোপিত হবে না। পক্ষান্তরে, চাটুকার, দলান্ধ ভূয়া চটকদার লেখনীর বুদ্ধিজীবিতে ভরে যাবে সমাজ, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করার মতো আবিষ্কর্তা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা.রফিকুল ইসলাম ছিলেন একজন প্রকৃত বুদ্ধিজীবী (নির্দলীয়, সার্বজনীন, প্রচারবিমুখী,নির-অহংকারী) আবিষ্কারক যার আবিষ্কারে মুক্তি যুদ্ধের সময় শরনার্থী ক্যম্পে কলেরা জনিত মহামারী থেকে লাখ লাখ বাংলাদেশী পরিত্রাণ পায়। আমরা ক-জন ইনাদের কথা জানি, মিডিয়া কেন আমাদের সন্তানদের এগুলো জানায় না।

যে স্যালাইন খেয়ে এ দেশের কোটি কোটি শিশুর জীবন বেঁচে আছে। সেই শিশুরাই এই মানবতাবাদী নিবেদিত প্রাণ মানুষ-টিকে চিনে না কারণ আমাদের Yelow Electronic Media- গুলো ইনাদের জাতির বিবেক মনে করে না। আমাদের পত্রিকাদি এই সকল বিজ্ঞানীর কাহিনী ও জীবনী প্রকাশ করে না,তারা কল্প লেখক চক্রের কাহিনীকার।

কিন্তু ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যান্সেট (The Lancet) ডা.রফিকুল ইসলামের আবিষ্কৃত ‘খাবার স্যালাইন’কে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে আখ্যা দিয়েছিল।

চারিদিকে অলীক বুদ্ধিজীবীদের জয়জয়াকার, আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল

এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

 

আমাদের মায়েরা যেন বিস্ময়!

ডা. মারুফ রায়হান খান


আমাদের মায়েরা একেকজন নিপুণ আর্টিস্ট। কতোটুকু চালের সাথে কতোটুকু ডাল, কতোটুকু তেল, কতোটুকু ঘি, কতোটুকু লবণ, কতোটুকু আদা-রসুন-পেঁয়াজ দিলে সেটা একটা পারফেক্ট খিচুড়ি হয়ে যাবে– এটা নিঃসন্দেহে একটা উচ্চমার্গের শিল্প। একটা দুটো না, এমন কতো কতো আইটেমের সবকটাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন তারা কখন কোনটার পরে কী কতোটুকু দিতে হবে! পরিবারের কে কোনটা কীভাবে পছন্দ করে তা যেন তাদের মস্তিষ্কের একেকটা অঞ্চলে আলাদা করে খোদাইকৃত! অথচ তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এ বিষয়ে, নেই কোনো টেক্সটবুক যা দেখে দেখে প্র‍্যাক্টিস করবে কেবলমাত্র মা-শ্বাশুড়িদের কাছ থেকে দেখে দেখে শিখে ফেলা প্রচণ্ডমাত্রার মেধাবি না হলে সম্ভব নয়।

আমাদের মায়েরা একেকজন আর্কিটেক্ট। বাসা বানানোর সময়ে আমাদের মায়েরাই ডিজাইন করে দেন কোথায় কোথায় বেড রুম, ড্রয়িং-ডাইনিং-কিচেন, কার রুম কোনটা হবে…

আমাদের মায়েরা একেকজন ফ্যাশান ডিজাইনার। আমাদের ছোট বেলার ড্রেসগুলো তার প্রমাণ!

আমাদের মায়েরা একেকজন ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রোজেক্ট ম্যানেজার! ঘরের কোথায় কোন আসবাবপত্র থাকবে, কোন ঘরের সাজসজ্জা কেমন হবে তা তো আমাদের মায়েরাই নির্ধারণ করে দেন! অনবরত ক্লান্তিহীনভাবে কীভাবে তারা ঘরের সাজসজ্জা মেইন্টেইন করেন, গুছিয়ে রাখেন তীব্র মমতায় তা আমার কাছে এক বিস্ময়!

আমাদের মায়েরা একেকজন কুশলী জাজ! আমরা ভাই-বোনেরা মারামারি করলে, কোনো দুষ্টুমি করলে, কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে কাকে কতোটুকু শাস্তি দিতে হবে–কাকে শুধু সতর্কবাণী দিতে হবে, কাকে চোখ রাঙানি, কাকে বকাঝকা, আর কাকে মৃদু প্রহার করতে হবে তা আমাদের মায়েদের চেয়ে বেশি কে জানে!

আমাদের মায়েরা একেকজন সফল ইভেন্ট ম্যানেজার। বাসায় ছোট-বড় যতো প্রোগ্রামই হোক না কেন দায়িত্ব তো তার কাঁধেই এসে পড়ে! কাদের দাওয়াত করতে হবে, কী কী মেন্যু হবে, বাজারের লিস্ট, রান্না করা, পরিবেশন করা, সব সৌজন্যতা বজায় রাখা–কী নিপুণভাবেই না তারা সবগুলো প্রোগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

আমাদের মায়েরা একেকজন কোচ-ট্রেইনার-কাউন্সেলর-সাপোর্টার। তারা আমাদের রুটিন তৈরি করে দেন, আমাদের ডায়েট প্ল্যান করে দেন, আমাদের নৈমিত্তিক কাজগুলো শেখান। কোথায় কেমন আচরণ করতে হবে, কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে, কী কী করা যাবে, কী কী করা যাবে না সব তো প্রাথমিকভাবে তার কাছ থেকেই শেখা। আমাদের যেকোনো সমস্যায়, যেকোনো সংশয়ে আমাদের মায়েরা হয়ে ওঠেন শ্রেষ্ঠ কাউন্সেলর, অকৃত্রিম সাপোর্টার, অতুলনীয় শুভাকাঙ্ক্ষী।

আমাদের মায়েরা একেকজন বিচক্ষণ ডাক্তার। সন্তান যে অসুস্থ সবার আগে তো তার কাছেই ধরা পড়ে। আমাদের মায়েরা একেকজন অন্তঃপ্রাণ নার্স, কী ক্লান্তিবিহীন নিবিড় যত্নে তারা আমাদের সেবা-শুশ্রূষা করে যান। তারা ওষুধও বটে, অসুস্থ সন্তান মায়ের কাছে এলে পরেই অনেকটা ভালোবোধ করেন।

আমাদের মায়েরা আমাদের পরিবারের স্তম্ভ, তাদেরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় আমাদের পরিবারগুলোর সমস্ত কার্যক্রম। তারা যেন খুঁটি, খুঁটিতে এক সূতোয় বাঁধনে বেঁধে রাখেন আমাদের পরিবারের সবাইকে। আমাদের মায়েরা একেকজন অলরাউণ্ডার। আমাদের মায়েরা পৃথিবীর একেকজন বিস্ময়। একেকজন গর্ব। একেকজন সুপারউইম্যান।

আমাদের মায়েরা আসলে কী নন!

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

লিসা (শেষ পর্ব)

দ্য স্লেভ


যে বার লিসা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার জন্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করল সেটা ছিল মুসলিমদের রমজান মাস। এক সন্ধ্যার অবসরে নিজ ঘরে বসে সে টিভি দেখতে থাকে। সেখানে এক চ্যানেলে সে নারীদের মার্জিত পোশাক, এটি কেন করা উচিৎ, নারীর দেহ কেন পণ্য নয়, তাকে কে সৃষ্টি করেছে, কেন সৃষ্টি করেছে, এখানে তার উদ্দেশ্য কি, তার গন্তব্য কোথায়, পৃথিবীতে তাকে কার বিধান মানতে হবে, ইত্যাদি সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার একটি বক্তৃতা শোনে।

ওই সন্ধ্যায়ই তার মাথায় হঠাৎ করেই কিছু প্রশ্ন প্রবেশ করে- আমি কে ? আমি এখানে কেন ? আমার উদ্দেশ্য কি ? আমার গন্তব্য কোথায়?  উক্ত টিভি অনুষ্ঠানে যে ইমেইল এ্যাড্রেস লেখা ছিল সে ঠিকানায় সে মেইল করে দেখা করতে চায়। ঘন্টা খানিকের মধ্যেই শেখান থেকে তাকে ফিরতি মেইল করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং পরের দিন সকালে একটি সময় নির্ধারণ করেন। পরদিন লিসা শেইখের সাথে দেখা করেন এবং তার সারা জীবনের যত মৌলিক প্রশ্ন ছিল তা একে একে করতে থাকে। তার মনে হতে থাকে-সে যেন সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মত অজ্ঞ এবং জীবন সম্পর্কে এতকাল তার কোনো জ্ঞানই ছিল না। লিসার অন্ত:দৃষ্টি খুলে যায়। জীবনের সকল রহস্যের জট খুলতে থাকে।
সে রাতে লিসা তার মস্তিষ্কের পুরো সক্ষমতা নিয়ে গোটা বিশ্ব সৃষ্টি এবং তার মালিককে খুঁজতে থাকে। এখানে তার নিজের অবস্থান কোথায় তা জানার চেষ্টা করতে থাকে। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি সকল বিষয়ে ওয়াকিবহাল, আর নিশ্চয়ই লিসাকেও তিনি অবলোকন করছেন। লিসার মস্তিষ্কে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত দেহাভ্যন্তরে। ঠিক সেসময় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজক এবং স্থানীয় বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে ফোন কল আসে। লিসা ব্যস্ত আছি,পরে কথা বলব বলেই ফোনের লাইন কেটে দেয়। পরদিন সকালে লিসা দুটি ফোন কল করে। দুটিই যুগান্তকরী। সে সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারীদেরকে ফোন করে বলে আমার পক্ষে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় গমন করা সম্ভব নয়। আমি আপনাদের প্রতিষ্ঠান এবং এ সংক্রান্ত সকল বিষয় প্রত্যাখ্যান করলাম। আপনারা অন্য কাউকে নির্বাচিত করুন। আমি আপনাদের ফোনকল পেতে চাই না। আমি মডেলিংকে বিদায় জানালাম।
লিসা শেইখ বা স্কলারকে ফোন করে বলেন-আমি আপনার সাথে এখুনি দেখা করতে চাই। শেইখ তার নিজের একটি জরুরী কাজ বাতিল করে তাকে তৎক্ষণিক আসতে বললেন।

লিসা : আমি আল্লাহকে চিনেছি, কিন্তু তিনি কি আমাকে গ্রহন করবেন ? আমি তো পাপী !
শেখ: তিনি তো এমনই মহা পরাক্রমশালী ও দয়ালু স্রষ্টা, যিনি ক্ষমা করতেই পছন্দ করেন। বান্দা পাহাড় পরিমান পাপ নিয়ে উপস্থিত হলে তিনি পাহাড় পরিমান ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হন।
লিসা: আমি সেই একক স্রষ্টা আল্লাহর উপরই ঈমান আনলাম। আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারিক্কালা, ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু। লিসা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল, যেন তার সারা জীবনের সমস্ত পাপ, ক্ষোভ, ব্যথা,বেদনা সবকিছু গলে দূর হয়ে গেল।
শেখ তাকে ইসলাম শেখানোর জন্যে ভিডিও, বই এবং কয়েকজন উত্তম মুসলিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। লিসা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ইসলাম শিখতে লাগল। তার ছোট পোশাকের স্থলে এখন সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাক শোভা পাচ্ছে। প্রথমবার নিজেকে তার অনেক দামী কিছু মনে হচ্ছে, যার শরীর, চিন্তা চেতনা মোটেও সস্তা নয়। এক মহা পরাক্রমশালী স্রষ্টার অনুগত বান্দা হওয়ার মধ্যে যে অস্বাভাবিক মানুসিক শান্তি রয়েছে তা সে পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করতে থাকল। যার দিন , রাত কাটত সেরা মডেল হওয়ার স্বপ্নে ও শিক্ষায়,অনুশীলনে, তার সমস্ত সময় কাটে ইসলাম চর্চায়। রাতারাতি সে মুসলিমদের জন্যে একটি উত্তম মডেলে পরিনত হয় এবং বহু নওমুসলিমের জন্যে আদর্শ হয়ে ওঠে।

ইসলাম গ্রহনের মাত্র ২ দিন পর, একদিন লিসা ঘরের ফ্লোরে পড়ে যায়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ডাক্তার তার ব্রেইন ক্যান্সার নিশ্চিত করে। ডাক্তার জানায়- তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ, খুব শীঘ্রই সে মারা যাবে, হয়ত কয়েক মাস টিকবে।হাসপাতাল থেকে লিসা শেইখকে চিঠি লিখে:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

প্রিয় শেইখ,

আমি ২২ বছর আল্লাহকে ভুলে ছিলাম, আমি তাকে পেলাম মাত্র দু সপ্তাহ হল। আর যখন আমি তাকে পেলাম, তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। হে শেইখ ! আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমি আল্লাহর সাথে মিলিত হতে উদগ্রীব। শেইখ ! আমি সারাজীবন আমার পিতা-মাতাকে খুঁজেছি। আমি তাদেরকে কোথাও পাইনি। যদি আপনি তাদেরকে খুঁজে পান, তাহলে বলবেন তাদের কন্যা মহা ভাগ্যবান, সে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। আমার পিতা-মাতা যেন আল্লাহকে চিনতে পারে। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করুন ! আমার জন্যে দোয়া করুন। আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন এবং সম্মানিত করেন !

এর কয়েকদিন পর লিসা মৃত্যু বরণ করেন।
***”আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আর তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে”। (বি:দ্র:একটি সত্য ঘটনার উপর নির্ভর করে গল্পটা।)

লিসা-১

লিসা-২

 

 

লিসা-২

দ্য স্লেভ


এই ঘটনায় ডেভিডের সাবেক প্রেমিকা তার আরও কাছাকাছি চলে আসে। যদিও তারা শুধুমাত্র বন্ধুই ছিল কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি তাদেরকে একে অন্যের বেশী কাছাকাছি নিয়ে আসে। ডেভিড পুরোনো প্রেমকে রিনিউ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু সমস্যা বাধে তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে। ডেভিডের প্রেমিকার পছন্দ নয় তার মেয়েকে। সে চায়, তার আর ডেভিডের মধ্যে যেন অন্য কেউ না থাকে। ডেভিড প্রেমিকার প্রতি নিবেদিত প্রাণ। তারা আলাদা হয়ে সময় উপভোগ করতে চায়। ডেভিড তার প্রেমকে একান্তে উপভোগ করাকেই নিজের জন্যে স্থির করে। তাছাড়া তার চাকুরী জীবন ছোট্ট এই মেয়েকে লালন পালন করার পক্ষে যথেষ্ট অন্তরায়। ডেভিড কন্যা লিসাকে আশ্রমে দিয়ে আসা হয়। সেখানে সে লালিত হতে থাকে।

ডেভিড প্রতি রবীবার তার কন্যাকে দেখতে যেত। সেদিন লিসা সকাল থেকেই বিভিন্ন পরিকল্পনা করত তার পিতার সাথে কি কি বিষয়ে গল্প করবে। পূর্বের সপ্তাহে কি কি বলতে ভুলে গেছে সেটাও সে নির্দিষ্ট করে রাখে। বিদায়ের সময় পিতার জন্যে একটি ছোট গিফট বক্স সে প্রস্তুত করে রাখে। সেখানে কিছু চকলেট,পি-নাট,ক্যান্ডী আর একটা হাতে লেখা চিঠি থাকে। সেসব চিঠিতে সে তার বাবাকে কতটা ভালবাসে সেটা জানায়। পিতাও তার জন্যে কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে যায়। ঘন্টা খানেক গল্প করে পিতা বিদায় গ্রহন করে। এই এক ঘন্টা সময়ের জন্যে লিসা সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে এবং পিতাকে নিয়ে নানান পরিকল্পনায় মেতে ওঠে। কখনও কখনও তার ইচ্ছা হয় পিতার হাত ধরে লেকের ধারের সুন্দর রাস্তায় হাটতে। কখনও কল্পনা করে ব্লু মাউন্টেন যাবে,সেখানে সুন্দর সুন্দর পাহাড় আর গাছ গাছালিতে ঘেরা জঙ্গল আছে শুনেছে। আছে চমৎকার ঝর্না ,থ্রি সিস্টার পাহাড় আরও কত কি ! একটা দিন পিতার সাথে সেখানে কাটাতে পারার মত মজা আর কিছুই হতে পারেনা।
তার পিতা খুব একটা মজার নয় কিন্তু বেরসিকও নয়। কথা বলার সময় দু একটি কৌতুককর কথাও বলে। সেসব শুনতে লিসার খুব ভাল লাগে। লিসা তার পিতাকে আরও অনেক সময়ের জন্যে চায়, কিন্তু তার পিতা অনেক ব্যস্ত মানুষ। তাকে প্রত্যেকদিন অফিসে যেতে হয়, আরও কত কি! লিসার বয়স ১১ বছর হলেও তার অনেক জ্ঞান বুদ্ধি।

সে জানে পিতা তার মাকে পছন্দ করে না,তাই পিতার সামনে কখনও মায়ের কথা উচ্চারণ করে না,পাছে পিতা কষ্ট পেয়ে যদি তাকে দেখতে না আসে!

সপ্তাহের ওই এক ঘন্টা সে কোনো ভাবেই হারাতে চায়না। প্রথম দিকে আশ্রমে থাকতে তার কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এভাবেই চলতে থাকে সময়। স্কুলে লিসা অসম্ভব মেধার স্বাক্ষর রাখে। প্রত্যেকটি রেজাল্ট তার ভাল হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি সে ভাল ছবি আঁকতে পারে,সুই সুতো দিয়ে কাপুড়ের উপর নানান নক্সা তৈরী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।তার পিতাও তার প্রশংসা করেছে। সে খুব গোছালো একটি মেয়ে।

লিসার বয়স যখন ১৩ তখন তার পিতার স্ত্রীর(প্রেমিকার) গর্ভ থেকে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এর কিছুদিন পর থেকে তার পিতা প্রতি দুই সপ্তাহে একবার তাকে দেখতে আসে এবং কিছু দিনের মধ্যে সেটা মাসে এক বারে গিয়ে দাড়ায়। লিসার পিতা তাকে বলেছে সে অনেক ব্যস্ত এবং নতুন বাচ্চাকে অনেক সময় দিতে হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে আসা সম্ভব নয়। লিসা কখনও পিতাকে জোর করেনি,
শুধু একবার বলেছিল আগামী রবিবারে আসবে,স্কুলে একটি গানের অনুষ্ঠান আছে ? জবাবে পিতা বলেছিল-আমার অন্য একটি কাজ আছে। ওহ আচ্ছা, বলে লিসা চুপ হয়ে যায়। আবার বলে- আমার ছোট্ট বোনটাকে দেখতে নিয়ে যাবে? জবাবে পিতা বলে,আমার স্ত্রী এটা পছন্দ করেনা। সে রাতে লিসা অনেকক্ষণ কেঁদে ঘুমাতে যায় কিন্তু এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলে না। সে খুব চাপা স্বভাবের।

এক রবিবারে লিসা তার পিতার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু তার পিতা আর আসে না। সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু তার পিতার কোনো খবর নেই। সে রাতে সে ঘুমাতে পারল না। অজানা আশঙ্কায় সে শিউরে উঠতে থাকল। তার পিতার কোনো ক্ষতি হয়নি তো ! পরদিন লিসার নামে একটি চিঠি আসে। সেখানে তার পিতা লিখেছে-আমাকে চাকুরীর প্রয়োজনে নাইজেরিয়া যেতে হচ্ছে। সেখানে অনেক দিন থাকতে হবে। তুমি ভাল থেকো।

লিসার পিতা নতুন স্ত্রী,সন্তান নিয়ে নাইজেরিয়া চলে যায়। এর পর বছরের পর বছর কাটতে থাকে। কিন্তু লিসার জন্যে তার পিতার পক্ষ থেকে একটি চিঠিও আসে না। পিতার ভবিষ্যৎ আগমন উপলক্ষ্যে লিসার গিফটের বাক্স জমতে জমতে স্তুপ হয়ে উঠতে থাকে। মাকে অনেক ছোটবেলায় হারানোর কারনে মায়ের স্মৃতি তার তেমন মনে পড়েনা,কিন্তু পিতাকে সে ভুলতে পারেনা,যদিও তার জীবনে পিতার অবদান মাত্র কিছু ঘন্টার।

কলেজে উঠে লিসা তার মেধার স্বাক্ষর রাখল। সকলের চাইতে ভাল রেজাল্ট করল সে। প্রত্যেকটা শিক্ষক তার প্রশংসা করে। লিসা অসম্ভব সুন্দরী একটি মেয়ে। সহপাঠীদের অনেকে তার পেছনে ঘুরঘুর করে বটে কিন্তু সে কারো দিকে ফিরেও তাকায় না,কাউকে পাত্তা দেয়না। এটা সে অহংকার বশে করে তা নয়,বরং ফ্রি মিক্সিং তার ভাল লাগে না।

একদিন সে তার বান্ধবীর সাথে একটি ফ্যাশন শো দেখতে যায়,আর সেখানে কিছু আয়োজকের নজরে পড়ে যায়। তাদেরই একজন বিখ্যাত মডেল তৈরী ও বিজ্ঞাপণ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ণধর। বিভিন্নভাবে চাপাচাপির পর লিসা র্যাম্প মডেলিং শিখতে রাজি হয়। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই লিসা তার রূপ এবং গুন দিয়ে এ জগৎ মাতিয়ে ফেলে। স্থানীয় প্রতিযোগীতায় প্রথম হবার পর সে কিছু কালের মধ্যেই মিস অস্ট্রেলিয়া এবং মিস নিউজিল্যান্ড খেতাব প্রাপ্ত হয়। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। তার অর্থ বিত্ত, নাম যশ ব্যাপক বাড়তে থাকে।

এতদিন পরও তার পিতার কাছ থেকে কোনো চিঠি আসেনি। তার পিতা তাকে ঠিকানাও জানায়নি। পিতাকে সে খুঁজেছে কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি। তার মাকেও সে অনেক খুঁজেছে কিন্তু তার ব্যাপারে সে সুনির্দিষ্ট কিছু মনে করতে পারেনা,ফলে তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

অর্থ,সম্পদ,মর্যাদা থাকার পরও তার কোথাও যেন একটা বাধা ছিল। সে তার জীবন নিয়ে নানান রকম চিন্তা করত। সমাজ,মানুষের আচরণ,পারিপার্শ্বিকতা সব কিছু নিয়ে সে গভীরভাবে চিন্তাযুক্ত ছিল। এভাবে ২২টি বছর পার হয়।

(একটা সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে গল্পটি। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক গল্প। ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন। )

চলবে….

 

স্বপ্ন পূরনের অদম্য ইচ্ছা

তানিয়া ইসলাম ইতি


গত তিন বছর আগে স্কুল ফেরত এক বাচ্চা মেয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। মেয়েটা বসে বসে কি যেন খুঁজছিল আর কাঁদতে ছিল। তারপরও গল্প আছে অনেক। ওর বাসায় আমি মাঝে মাঝে যাই।

আজকে রাস্তা ধরে হাটছিলাম তখন মেয়েটার সাথে হঠাৎ দেখা হল। আমাকে দেখে সামনে আসল।

বলল: আপু কেমন আছেন?

বললাম : ভালো তবে একটু অসুস্থ। তুমি? আর বাসার সবাই কেমন আছে?

আমার মনে হল, মেয়েটা কিছু একটা বলতে চাইছে। কিন্তু আমাকে খালি পায়ে বা জুতা হাতে দেখে বলতে পারছে না। বুঝতে পারলাম, আমি যে কতটা অসুস্থ তা ও বুঝতে পেরেছে।
যাইহোক, আবার বললাম: তোমার মা কেমন আছে?
তখন বলল: মায়ের অনেক অসুখ ৩ দিন দরে। কি হইছে বুজতাছি না। মা ৩ দিন দরে কাজে যায় না।

আমি  চলো: তোমাদের বাসায় যাই। এটা বলছি আর ভাবছি মনে মনে বস্তিতে এই অসুখ নিয়ে যাবো কিনা বা তাছাড়া বাসায় শুনলে বকবে। তারপরেও গেলাম। যখন আমি ওদের বাসায় উপস্থিত হই ওর মায়ের মুখে একটা শুকনো হাসি দেখলাম। অতিরিক্ত কাজ করার কারণে এ্যাজমা আর হাইপ্রেসার বেড়ে গিয়েছে। তিনটি সন্তানের পড়াশুনার খরচ আবার বস্তির ঘর ভাড়ার বাস্তবতা।

মনে হল যেন আমি ওনাদের অনেক দিনের পরিচিত। ভাল লাগল। তবে যাওয়ার পর আরও একটা দৃশ্য যা মন কেড়ে নিয়েছিল।

দেখলাম: ওর বড় ভাই ওর ছোট বোনকে অংক করাচ্ছে বর্গ মূলের। ওর ভাই এবার এইচ এস সি দিবে। ছোট বোন ক্লাস সেভেনে আর যে মেয়েটার সাথে আসলাম ও এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। ওর বাবা মারা গেছে মা গার্মেন্টসে কাজ করে। ওর একটা মামা আছে যিনি ওদের মাঝে মাঝে পড়ালেখার খরচ দেয়।

আমি নিরবে দেখছি, ওর ভাই ওর বোনকে অংক করাচ্ছে কিন্তু বোন পারছে না। ক্যালকুলেটর নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। বারবার হিসাব করছে উত্তর মিলছে না। ভাই আরো বকছে, আর বলছে প্রশ্ন পড় ভালো করে। এই জন্যই পারস না একটা প্রশ্ন ৪/৫ বার পড়বি। তারপরেও ভাই, বোন কে বলছে না ওদের ক্যালকুলেটর টা ভাল না। আমি সামনে বলে। বার বার ভাই বলছে হাতে হিসাব কর। তখন আমার আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। ভাই কমার্স এর ছাত্র ওর ক্যালকুলেটার টাই সব। ওরা কোন টিচারের এর কাছেও পড়ে না। তারপরেও রেজাল্ট অনেক ভাল ওদের।

প্রায় আধ ঘন্টা আমি এক অনাবিল আত্মসম্মানবোধ সম্পূর্ণ স্বপ্নময় বালক বালিকার সাথে ছিলাম। মানুষ বড় হয় তার স্বপ্নের সমান ছোট ছোট ভাবনা সাথে নিয়ে, ছোট ছোট স্বপ্ন আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন। প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি স্বপ্ন প্রভাবিত করে জীবনকে সুন্দর করতে।

ওদের দেখলে মনে হয় বাচাঁর জন্য কি লাগে? শুধুমাত্র একটা সুন্দর সপ্ন লাগে। আর সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য অদম্য ইচ্ছা শক্তিটাই যথেষ্ট। ছবি:স্কুল অফ হিউম্যানিটি।

 

লিসা (পর্ব-১)

দ্য স্লেভ


একটি বিশাল তেল কোম্পানির ঊর্ধ্ব পদস্থ প্রকৌশলী হিসেবে ডেভিড, ইরাক গমন করেন আশির দশকের মাঝামাঝি। নতুন দেশ, ভিন্ন সাংস্কৃতিতে হঠাৎ মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। আগা-গোড়া ভদ্রলোক ডেভিড ধীরে ধীরে মুসলিমদের সাংস্কৃতি বুঝে ফেলে এবং তাদের সাথে মিশতে তার তেমন সমস্যা হয় না।

কলিগদের অনেকে বিবাহিত এবং স্বপরিবারে বসবাস করছে। তার নিজেরও বয়স হয়েছে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সে। সে সময় ইন্টারনেট না থাকাতে অস্ট্রেলিয়ার গার্লফ্রেন্ডের সাথে তার খুব একটা যোগাযোগ হত না। প্রথম দিকে টেলিফোনে বেশ কথা হত,পরে আস্তে আস্তে কথা বলার সময় সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। এ নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে একদা তারা চুটিয়ে প্রেম করেছে।

একই ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ইরাকী মেয়ে সাবিনা নিজেকে বেশ স্মার্ট হিসেবেই উপস্থাপিত করে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও সে তার পোশাক বা মানুসিকতায় মুসলিমদের আদর্শ লালন না করায় ডেভিড বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠে।

একদিন লাঞ্চে উভয়ে টেবিলে সামনাসামনি বসে টুকটাক দু একটি কথা বলে। কিছুদিন পর উভয়ের লাঞ্চ টাইম বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠল। উভয়ে উভয়ের ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত হল। ডেভিড জানতে পারল সাবিনা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও চিন্তা চেতনায় নাস্তিক। ডেভিড স্রষ্টা সংক্রান্ত বিষয়ে তেমন চিন্তা ভাবনা করেনি তবে পারিবারিকভাবে ক্যাথলিক।

জীবনে কখনই চার্চে গমন করেনি,তবে স্রষ্টা একজন আছে সে ব্যাপারে তার দ্বিমত নেই। আবার কেউ যদি যুক্তি খাটিয়ে স্রষ্টাকে ভ্যানিশ করে দেয় তাতেও তার কিছু এসে যায় না। ফলে সাবিনার নাস্তিকতা তার ভেতর কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না।

দিন যায়,মাস যায় তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বিষয়টি ডেভিড তার প্রেমিকাকে টেলিফোনে জানায় এবং তার প্রেমিকা তাকে শুভকামনা জানায়। ডেভিড অস্ট্রেলিয়ার প্রেমিকাকে ভুলে সাবিনার প্রেমে হাবুডুবু খায় এবং বিয়ের সিদ্ধান্তে উপনিত হয়।

একসময় সাবিনা তার পরিবারের অমতে বিয়ে করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে থাকে। উভয়ের চাকুরী জীবন ও পারিবারিক জীবন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই চলতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের ঘরে আসে একটি সুশ্রী কন্যা সন্তান। সে ইরাকের আবহাওয়া কয়েক বছর লালিত পালিত হওয়ার পর স্ব-পরিবারে তারা অস্ট্রেলিয়া চলে আসে।

এখানেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়াতে ডেভিডের পূর্বের প্রেমিকা তার সাথে নিয়মিত দেখা করতে থাকে এবং তাকে নিয়ে ডেভিড ডিনার করা, ঘুরতে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়া ইত্যাদি করতে থাকে। যেহেতু তাদের সাংস্কৃতি এটাকে সমর্থন করে তাই খুবই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে তারা একাজ গুলি করতে থাকে।

পাশাপাশি ডেভিড পরিবারের সাথেও সুন্দর সময় অতিবাহিত করতে থাকে। পরিবার তার কাছে আগে,তবে সাবেক প্রেমিকাও তার পর নয়। উভয়টিই সে স্বাভাবিকভাবে চালাতে থাকে। কিন্তু বিষয়টি সাবিনার পছন্দ হয়না। যদিও ডেভিড তাকে পছন্দ করে,কিন্তু বিষয়টি সে জানার পর থেকে কেন যেন মনে হতে থাকে তার ভালবাসায় ভাগাভাগি হচ্ছে এবং তাকে কোনো ভাবে ঠকানো হচ্ছে।

ডেভিড তার প্রেমিকার সকল বিষয় স্ত্রীর সাথে শেয়ার করে। তাকে সে প্রেমিকা নয় বরং একজন ভাল বন্ধু ভাবে এমনটাই বলে।

কিন্তু সাবিনার এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। সে নাস্তিক হলেও অন্য একটি সাংস্কৃতির মধ্যে লালিত হয়েছে। ফলে তার পারিবার,সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও ভেতরে এক ধরনের আবেগ রয়ে গেছে। তার পারিবারিক চিন্তা,বিষয় বিশ্লেষনের ধারা সবকিছুর মধ্যেই পূর্বের সমাজের আদর্শিক প্রভাব কিছুটা রয়ে গেছে। এবং সে এটাকে বিলিন করতে পারেনা। ফলে তার স্বামী যতই স্বচ্ছতার সাথে তার সাবেক প্রেমিকার বিষয় উপস্থাপন করতে থাকে,সাবিনা ততই সন্দেহের মধ্যে পড়তে থাকে। এবং এক পর্যায়ে তার ভেতর ক্রোধের জন্ম হয়।

শীঘ্রই বিষয়টি তাদের মানুসিকভাবে অশান্তির কারন হয়ে ওঠে। এক সময় ব্যাপক বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। মামলা কোর্টে চলে যায়। তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সাবিনা তার সন্তানকে ফেলে নিজ দেশ ইরাকে ফিরে যায়।

সেখানে সে কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে করে তার মত জীবন যাপন করতে থাকে। (একটা সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে গল্পটি। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক গল্প। ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন। )

চলবে….

 

চিকিৎসা দিতে ভিনদেশী বিশেষজ্ঞ আসছে, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে,খেলাপি ঋন কমাতে বিদেশী বিশেষজ্ঞ নয় কেন?

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা এক রকম Status Symbol হয়ে গেছে, অনেকেই আবার ইহাকে এক ধরনের বাতিকে পরিণত করেছেন, সাধারণ মানুষের এই প্রবণতাকে আমরা থামাতে পারছি না, ফলে লাখ লাখ ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে, সম্প্রতি নাগরিক পরিষদ নামক একটি সংগঠন মানব বন্ধন করেছে যার বিষয় ছিল- ‘চিকিৎসা নিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ না যাওয়ার দাবি’।

আসুন আলোচনায় আসা যাক, ব্যাপার-টি কতোখানি গুরুত্ববহ, মাহাথীর মোহাম্মদ এ পর্যন্ত কোনদিন বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাননি। তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন, সেই সময় মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক ছিলো, উনি অসুস্থতাজনিত কারণে শয্যাশায়ী হলেন, তাকে সবাই অন্তত পাশের দেশ সিংগাপুর যেতে অনুরোধ করলেন, কিন্তু তিনি নির্বিঘ্নে না করলেন এবং যুক্তি দেখালেন, উনি যদি এ রোগের জন্য বাহিরে যেয়ে চিকিৎসা নেন, মালয়েশিয়ায় ইহার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। তাহলে গরীব মানুষগুলো আর কক্ষনো-ই এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পাবেন না কারন তারা কথায় কথায় সিংগাপুর যেতে পারবেন না।

সুতরাং মালয়েশিয়ায় তিনি সেই সময় থেকেই ‘চিকিৎসা সেবা উন্নতকরণ প্রকল্প’ নিলেন, সফল ও হলেন। আমাদের অনেকেই এখন মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা করতে যান, অন্যান্য দেশের মানুষ ও যান, আমাদের দেশে একবার ভূটানের এক মন্ত্রী চিকিৎসা নিতে এলেন, আমাদের দেশে কি চিকিৎসা ব্যবস্থা খারাপ। মোটেও না। আমাদের চিকিৎসক-রা কি নিম্ন মানের! আমি কক্ষনো-ই তা মনে করি না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি-টাই যতো প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রধান-দের নজীর দেখাতে হবে। দেশাত্মবোধের নজীর, যা মাহাথীর দেখিয়েছেন, ইহাই প্রকৃত দেশপ্রেম। তখনি অন্য দেশের মানুষও আসবে। কথায় কথায় দু-দিন পর পর ভিন দেশে যেয়ে চিকিৎসা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ ও পাশের দেশের রাম-সাম-যদু-মদু ডাক্তারদের এদেশে অবাধে রোগী দেখতে দেয়া কক্ষনো কি দেশপ্রেমিক দেশাচার-এর লক্ষণ।

তাহলে, আমরা কেন তা করছি?

আমদের দেশে তো চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় আরো অনেক বেশী অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কই প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে তো একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনতে দেখলাম না, সুষ্ঠু নির্বাচন সৃষ্টিতে সাহায্য নিতে আমরা ভারতের প্রখ্যাত নির্বাচন কমিশনার ‘টি.এন সেশান’ সাহেবকে তো ডাকতে পারি।

আইনের শাসন আরো সুদৃঢ় করতে মিসেস ‘কিরণ বেদী’-কে ডাকতে পারি।

খেলাপি ঋন কমাতে একজন প্রখ্যাত বিদেশী ব্যাংকার কেন আনছি না। ড.ইউনুস সাহেবকে যদি দায়িত্ব না দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে অমত্য সেনদের এনেও তো চেষ্টা করা যায়।

এ দেশে যা করা আবশ্যক তা না করে অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে অধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাতে কারো কারো ব্যক্তিগত সুবিধে হয়, বেশ কিছু পয়সা পকেটে আসে কিন্তু গরীব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ অধরা-ই থেকে যায়।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

 

ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক শামছুন্নাহার

শওকত আলী রতন


ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন দোহার উপজেলার দোহার পৌরসভার অন্যতম বিদ্যাপীঠ কাটাখালী মিছের খান উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শামছুন্নাহার সীমা।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি এই বিদ্যালয়ে কর্মরত থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন তিনি। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৮ উপলক্ষে জেলাপর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ঢাকার শেরেবাংলানগরে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সহপাঠ কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ফলাফলে ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে তাকে নির্বাচিত করা হয়।

প্রতিযোগিতায় ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধাইমরাই এ পাঁচটি উপজেলার শিক্ষক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এর আগে দোহার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে জেলাপর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

পেশাগত দক্ষতা, সাবলীল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনা ও পাঠদানে মনোযোগী হওয়ায় তাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী জানান, শিক্ষকদের পেশাগত কর্মকাণ্ড মূল্যায়নের ভিত্তিতে সারা দেশে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে একজন করে শিক্ষককে নির্বাচিত করা হয়। শামছুন্নাহার সীমার পারফরম্যান্স সব দিক থেকে ভালো হওয়ায় তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
শামছুন্নাহার সীমা কাটাখালী উচ্চ-বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুল ইসলাম খান অনুর সহধর্মিণী।

শামছুন্নাহার সীমা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে শিক্ষার প্রসার ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে কাজ করার কথা বলেন। সুত্র: নয়া দিগন্ত।

 

দুই বিঘা জমি প্যারোডি ভার্শন

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বাবুরা কহিলেন,বুঝেছ মঈন- এ তল্লাটের লইবো দখল;
তোমাদের সবারে সহিতে হইবে সামান্য একটু ধকল।
মঈন কহিলো – মহাশয় ভূপতি,
আপনারা বিনে, আছে কি মোর গতি?
মঈন কাঁদিতে লাগিলেন হাও মাও, হাও মাও
জ্যো.বাবু কহিলেন, পঞ্চ অশ্ব লইয়া যাও।
প্রহর আসিলে জানিবে সবে,
কোথায় কখন কি করিতে হবে?
মঈন হ্রেষা সম সগতোক্তি করিয়া লইলো বিদায় ,
দেশে আসিয়া কেবলি নিজের আখের গুছায়।
অচিরেই আসিলো দিন ক্ষণ,
মঈন-ও বড্ড বিচক্ষণ;
দফায় দফায় করিলো লম্বা মিটিং সারা দিনভর,
ততক্ষণে পগার পার সকল অজ্ঞাত টার্গেট শুটার
এরপরের কাহিনী সকলের জানা,
বেশী কথা যে কইতে মানা।

 

ছড়ড়া-৬৮

আসাদ বিন হাফিজ


এসেছে ফাগুন লেগেছে আগুন মৌবনে
লাগেনি আগুন চেতনার কোষে, যৌবনে।
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচুড়া হয়েছে রক্তরাল
ছালাম রফিক বরতের ভাই ঘুমে বেহাল।

রক্ত দিলাম মায়ের ভাষায় মনের কথা কইবো
তাতে যদি বাঁধা আসে কেমন করে সইবো।
আমার দেহের রক্তের কিরে নেই রে দাম
রক্ত না দিস আজকে দে তুই একটু ঘাম।

পরাণ খুলে মনের কথা কইতে চাই
এই দাকীতে কোন কালই আপোস নাই।

 

এমন কথা বলার সাহস কার?

জিয়াউল হক


আজ ২৪শে ফেব্রুয়ারি শনিবার,
বইমেলা পরিলেখ স্টলের সামনে হঠাৎ করেই আমি আগামীর বাংলাদেশকে দেখলাম। প্রায় বছর পাঁচেক বয়সের একটা ছেলে ‘নাজমুল’ পথশিশু, স্টলে এসে কচি হাতে ধরা পাঁচটা টাকা এগিয়ে দিয়েছে সেলস্ ম্যানের দিকে, আংকেল আমাকে একটা বই দেন তো!

ঠিক ঐ একই সময়ে ভাগ্যচক্রে আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত। সেলস্ ম্যান অবাক হয়ে ঐ পুঁচকে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো, কি বই নেবে তুমি? তুমি কি বই পড়ো?
ছোট্ট ছেলেটার চটপট জবাব, হ্যাঁ পড়ি।

আগ্রহ নিয়ে এবারে আমিই এগিয়ে গেলাম।

পরিচয় জানতে চাইলাম, নাম ”নাজমুল, পার্কের কোণায় এক জায়গায় থাকে, মা ঝি এর কাজ করে, বাবা নেই। মা’র কাছ থেকে কেঁদে কেঁদে পাঁচটা টাকা নিয়ে এসেছে বই কিনতে। সে পড়তে পারে। সেলস্ ম্যান পরখ করার জন্য জানতে চাইলেন, তুমি কি পড়তে পারবে? জ্বি পারবো ছেলেটার সপ্রতিভ জবাব।

তার সামনে কয়েকটি বই মেলে ধরা হলো, সে ঝর ঝরে রিডিং করে বইগুল পড়ে গেল, বাংলা অক্ষরগুলো যেমন পড়লো তেমনি সে ইংরেজি অক্ষর গুলোও সাবলীলভাবে পড়ে গেল গর গর করে।

জানতে চাইলাম কোথায় পড়া শিখলে? সে জানালো যে, পথশিশু স্কুলের আপুরা এসে তাকে পড়িয়েছে, সেখানেই সে পড়তে শিখেছে।

অবাক হলাম। সেলস্ ম্যানের দিকে বাড়িয়ে দেয়া পাঁচটা টাকা তার হাতে ফেরত দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেয়া হলো একটা শিশুতোষ বই। আহা, ছেলেটার সারাটা মুখ এক বর্ণনাতীত চমৎকার হাসি ফুটে উঠলো।

পাশেই এক ভদ্রমহিলা স্টলের বই নেড়ে চেড়ে দেখা বাদ দিয়ে এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে ছেলেটাকে দেখছিলেন। তিনি এগিয়ে এলেন এবার, তিনিও একটা বই কিনে উপহার দিলেন বাচ্চাটাকে। দেখা দেখি পাশের স্টল থেকে বের হয়ে এলেন ঐ স্টলের সেলস্ ম্যান ভদ্রলোক।
তিনিও এতক্ষণ অবাক বিস্ময়ে বই এর প্রতি বাচ্চাটার তীব্র আকর্ষণ খেয়াল করছিলেন, খেয়াল করছিলেন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর তার সপ্রতিভ উত্তর। তিনিও তার স্টল থেকে দুটো শিশুতোষ বই এনে বাচ্চাটার হাত তুলে দিলেন। ছেলেটার মুখে সে কি হাসি! ভাষায় এ অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো যাবে না।

বইগুলো একটা ব্যাগের মধ্যে ভরে ও যখন পথ ধরলো, আমি তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলাম।

যে জাতির এক ক্ষুদে সদস্য বইকে এতটা ভালোবাসতে শিখেছে, সে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার, এমন কথা বলার সাহস কার?

 

একুশে বই মেলায় নবীন লেখিকা পরিচিতি (পর্ব-২)

অপরাজিতা ডেক্স


‘একটি হলেও নবীন লেখকের বই কিনুন’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে অমর একুশে বইমেলা চলে গিয়েছিল ২০১৭। এ বছর মানে ২০১৮ একুশে বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হল, ‘পড়ব বই, গড়ব দেশ’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১-২৮ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা চলবে।

আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বইমেলায় আরও নবীব দুজন লেখিকার পরিচয় এবং আর অনেক বিষয়। আসুন জানি তাদের সম্পর্কে।

কাজী ফাবিয়া

লেখিকা পরিচিতি:

কাজী ফাবিয়া। পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। সৃষ্টিতেই যেন তার অপার আনন্দ। হোক তা ডিজাইন, হোক তা কোন কবিতা। আপন খেয়াল ছবি আঁকা, সুরের ইন্দ্রাজালে গানে গানে ভূবন গড়া তার শখ। ছেলেবেলায় সংস্কৃতমনা মায়ের লেখা মায়ের লেখা টুকরো টুকরো ছড়া ছড়া তার লেখার অনুপ্রেরণারর জায়গা করে নিয়েছিলো। লেখার অভ্যাস তাই ছোটবেলা থেকেই, ইংরেজি এবং বাংলা। চয়ন প্রকাশন থেকে হতে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অর্পণ’ ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শিরোনামহীন’ এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করতে পের আমরা আনন্দিত।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“শিরোনামহীন”
কবি : কাজী ফাবিয়া
প্রকাশক : লিলি হক
প্রকাশন : চয়ন প্রকাশন
প্রচ্ছদ : কাজী ফাবিয়া
পাওয়া যাচ্ছে : চয়ন প্রকাশন
স্টল নং : ৬৪৮
গায়ের মূল্য :১২৫ টাকা
বইমেলা মূল্য: ৯৫ টাকা মাত্র।

­জাকিয়া জেসমিন যুথী

লেখিকা পরিচিতি:

বাবা মোঃ দিদারুল ইসলাম, মা বেগম লুৎফুন্নেছা। আশির দশকের শুরুর দিকে পদার্পণ হয় পৃথিবীতে। ঢাকায় জন্মগ্রহণ হলেও বাবার কর্মস্থলের কারণে শৈশব কৈশোর কাটে নর্থ বেঙ্গলের মফস্বল শহরে। জন্ম শহরে প্রত্যাবর্তন হয় ১৯৯৮ সালে। তারপর জীবনের উচ্চশিক্ষার সব সমাপ্ত হয় এখানে। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি.কম, ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় এম কম শেষ করার পরে পড়াশুনার অদম্য আগ্রহের কারণে মায়ের উৎসাহে কৃতিত্বের সাথে ঢাকা টিটার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর থেকে এম.এড সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ফিল্যান্সর (গ্রাফিক্স ডিজাইন) পেশায় যুক্ত। ১৯৯৭ সালে ‘চলতিপত্র’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘থমকে থাকা সেদিনের পৃথিবী’। আমার ব্লগে ডটকমের চিঠি সাহিত্যের বই ‘আমার চিঠি’ এর মাধ্যমে ২০১১ সালে বইমেলায় প্রথম আত্মপ্রকাশ।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“অন্ধ স্মৃতির গলি”
লেখিকা: জাকিয়া জেসমিন যুথী
প্রচ্ছদ: হিমেল হক।
প্রকাশক: প্রকৌ. শামিম রহমান আবির
প্রকাশ করছে: কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড।
স্টল নং:১২২

 

নিঃসঙ্গ অনুভূতি

কামরুল হাসান তুহিন


আঁধার রাতের তারা গুলো
ঘুমিয়ে পড়া মেঘ গুলো
মেঘের মাঝে দুঃখ গুলো
কেউ দেখেনি, কেউ দেখেনি।

আকাশ ভরা বৃষ্টি গুলো
বৃষ্টি ভেজা পাখি গুলো
পাখির কন্ঠে গান গুলো
কেউ শোনেনি, কেউ শোনেনি।

সুবহে সাদিকের ক্ষণ গুলো
মুয়াজ্জিনের সুর গুলো
সুরের মাঝে মায়া গুলো
কেউ বোঝেনি, কেউ বোঝেনি।

ভোরে ওঠা নক্ষত্র গুলো
নিবিষ্ট মনের সালাত গুলো
সিজদারত অশ্রু গুলো
কেউ মোছেনি, কেউ মোছেনি।।

 

দীর্ঘায়ু পেতে জাপানি চিকিৎসকের ৬ পরামর্শ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত…


ডা. শিগেয়াকি হিনোহারা২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ১০৫ বছর বয়সে মারা যান জাপানি এই চিকিৎসক। দীর্ঘজীবন ধারণে তাঁকে একজন বিশেষজ্ঞ মানা হয়। তাঁর পরামর্শেই গড় আয়ুর দিক থেকে জাপান বিশ্বে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। বেশি দিন বেঁচে থাকার জন্য তাঁর কিছু পরামর্শ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশেষ করে হিনোহারার ছয়টি পরামর্শ-

প্রথম পরামর্শ: যত দেরিতে সম্ভব কর্মজীবন থেকে অবসর নিন। জাপানি এই চিকিৎসক নিজে মৃত্যুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও কর্মজীবনে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর এই পরামর্শ খুবই কার্যকর। সাধারণত চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অবসর নেওয়ার পর যেন তাঁদের বার্ধক্য হু হু করে বাড়ে। দেখা দিতে থাকে নানা অসুখ-বিসুখ। কাজ মানুষের বার্ধক্য আটকে রাখে।

দ্বিতীয় পরামর্শ: ওজনের দিকে খেয়াল রাখো। দিনে একবার খাও। ডিনারে মাছ ও সবজির ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। মাংস অবশ্যই খেতে হবে। তবে সপ্তাহে দুবারের বেশি নয়। জলপাইয়ের তেল (অলিভ অয়েল) খাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। শরীরের ত্বক ও শিরা-ধমনি ভালো রাখার জন্য জলপাই তেল ভালো কাজ করে।

তৃতীয় পরামর্শ: আনন্দে সময় কাটাও। অতিরিক্ত নিয়মকানুনের চাপে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শৈশবে খাবারদাবারের অনিয়ম সত্ত্বেও শরীর অসুস্থ হয় না। কেন? কারণ, মানসিক চাপ থাকে না। মূলত ঘুমিয়ে বা কিছু না করেই শরীর ক্লান্ত না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

চতুর্থ পরামর্শ: যা জানো, তা অন্যকে জানাও। তিনি বিশ্বাস করতেন, আমরা পৃথিবীতে এসেছিই এই সভ্যতায় কিছু না কিছু অবদান রাখার জন্য, মানুষকে সাহায্য করার জন্য। আজ, আগামীকাল, এমনকি পাঁচ বছর পরের পরিকল্পনা করতেন তিনি।

পঞ্চম পরামর্শ: জাগতিক সম্পদ নিয়ে চিন্তা না করা। ভালো থাকার পেছনে অর্থবহ কাজ করাটাই জরুরি। বস্তুগত চিন্তার তুলনায় আধ্যাত্মিক চিন্তায় শরীর ও মন ভালো থাকে বলে বিশ্বাস করতেন। অর্থবিত্ত মানুষকে আরও বেশি মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে। অল্পতেই তুষ্ট হওয়া তাই জরুরি। তিনি সব সময় এটা মনে রাখতে বলেছেন, শেষ ঠিকানায় এসব কিছুই সঙ্গে যাবে না।

ষষ্ঠ পরামর্শ: সিঁড়ি ব্যবহার করা। হিনোহারা নিজে একবারে সিঁড়ির দুটি ধাপ পার করতেন, যাতে তাঁর পেশি ঠিক থাকে। শারীরিক ব্যায়ামের জন্য দৈনন্দিন কাজকর্মে যান্ত্রিকতা কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কায়িক শ্রম পছন্দ করতেন। ডাক্তারের পরামর্শকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে মানা করতেন তিনি। চিকিৎসকেরা জীবন দিতে পারেন না। তাই অযথা সার্জারি করার বিপক্ষে ছিলেন। সূত্র: বিবিসি।

 

পুরানো দিনের গল্প বলি

ডা. ফাতিমা খান

আমার বড় ছেলের বয়স তখন দুই এর কিছু বেশী। সারাদিন বুলেটের মত কথার গুলি ছোড়ে। কথা শোনার চেয়ে বলে বেশী। সব ব্যাপারে তার কৌতুহল তখন তুঙ্গে। আমি সকালে কলেজে যাই, দুপুরে আসি। বিকালে হাসপাতালে প্র‍্যাক্টিস করি, রাতে ফিরি। রোগী আর রোগবিদ্যা নিয়ে তখন আমার সারাবেলা কাটে।

ছেলেটা বাসায় থাকত কাজের মেয়েটার কাছে, ওর কথাবার্তা তখন ছেলে চুম্বকের মত আত্নস্থ করছিল। (কাজের মেয়েটা কথায় কথায় ইংলিশ ঝাড়ত, মাঝে মাঝেই জিন্স গেঞ্জী কিনে দেয়ার বায়না করত, ছাদে গিয়ে নাকি লুকিয়ে বিড়িতেও দু- এক টান মারত। বাকী কাহিনী আরেকদিন বলব ) আমি অফিস যাওয়ার সময় ছেলেকে যতই বলতাম “আব্বু আল্লাহ হাফেজ”, সে খুব ভাব নিয়ে বলত ” সি ইউ মাম্মি।”
অনেক চেষ্টা করেও যখন ” মাম্মী” র বদলে “আম্মু ” শিখাতে আর ‘সি ইউ’ ছাড়াতে পারলাম না, হাল ছেড়ে দিলাম। ওর বাবা যখন আমার সাথে বিরক্ত মুখ করে বলত ” ছেলেটা আমাকে ‘বাবা’ ডাকে ভাল লাগে না, ‘আব্বা ‘ শিখিও তো “, তখন চুপ করে ভাবতাম, আমি কাকে বলব যে আমাকে ‘আম্মু ‘ বলা শেখাতে! বুঝতাম ছেলেকে সব শেখানোর দায়িত্ব টা মায়েরই বটে! ছেলে আমার ভীষণ জেদী ছিল। শিখালেই শিখবে বা বললেই মেনে নেবে এমনটা না। চাকুরী দুইটাও করতাম অনিচ্ছায়, প্রয়োজনের তাগিদে।

ছেলের বয়স যখন তিন বছর, চলে আসলাম বিদেশ। ততদিনে আমার ছেলে অনেক কথাই শিখে ফেলেছে। বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়ালে গার্মেন্টস কর্মীরা কেমনে ঝগড়া করছে, বা রিক্সাভাইকে সদা ক্ষিপ্ত রাস্তার সার্জেন্টগুলো কিরকম করে গালি দিচ্ছে, সব তার ঠোটস্থ!

এখানে আমার একটা ব্যক্তিগত মতামত বলি। আমি কোন জাতি, ভাষা বা কোন কাজ কে ছোট মনে করতাম না আর এখনো করি না, যতক্ষণ না তা আমার ধর্মীয় আদর্শের বা নৈতিকতার পরিপন্থী হয়। আমার ছেলেদেরকেও এই আদর্শ কে সামনে রেখেই গড়ে তুলছি। ভাষাগত ব্যাপারে বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তাই। বিজাতীয় বা বিধর্মীয় সংস্কৃতি আমি পছন্দ করিনা। অকারণ বা অযৌক্তিক প্রথাগুলোও পছন্দ না। বছরে একদিন মাতৃভাষা দিবস পালন করি কিন্তু সারাবছর টডর মডর ইংরেজী বলার চেষ্টা করি আর বাচ্চাদেরও তাই শেখাই, এতে লাভ কি হল? ভাষার জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন তারা কি শুধু বছরে একটা দিনই সম্মানিত হবেন? জন্মের পর থেকে সন্তানকে ‘মা’ না শিখিয়ে ‘মাম্মা’ শেখাই আর এদিকে বছরে একদিন ভাষা শহীদদের সমাধিতে ফুল দেই…এটা কেমন কথা ?

ছুটিতে দেশে গেলে আমার খুব আজব লাগে যখন দেখি ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর সাথে বাবা মা (হোক শিক্ষিত বা মুর্খ) বাংলা-ইংরেজী শব্দ মিলিয়ে কথা বলে। একদিন তো এক কাজের মহিলাকেও দেখলাম ছেলেটাকে একপাশে সিথি কেটে চুল আচড়ে বলছে “নাইস লাগতাসে”।
কেউ কেউ আবার সকাল বেলা ‘মর্ণিং টি’ খায়, বাচ্চাকে বলে ‘সোপ’ দিয়ে ‘শাওয়ার’ করতে, বাংলা অনুষ্ঠানে পোলাও এর বদলে ‘রাইস’ খায়, খেয়ে আবার বাচ্চাকে ‘ডার্টি হ্যান্ডটা ‘ ‘ওয়াশ’ করে আসতে বলে, সব শুনে আমার কেমন যেন আউলা লাগে। আরে বাবা, বললে ভাল করে হয় বাংলা বল, নয়ত ইংরেজী! খিচুড়ি বানানোর কি আছে!

সব দেখে আমার নিজের ছেলেদের ব্যাপারে একটা প্রশান্তি লাগে। ওরা অন্তত নিজের দেশীদের সাথে খাটি বাংলায় কথা বলে, তাও আবার কখনো বই পত্রের মত বিশুদ্ধ ভাষায়। ইংরেজীতে বাচনভঙ্গি অন্তত আমার চেয়ে ওদেরটাই ভাল! কিন্তু মানুষ ও পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতেও তারা জানে। ‘মাম্মী’ বদলে এখন বড়জন ‘আম্মু’ বলাও শিখেছে বিদেশে এসে। দেশী গালিগালাজ গুলো মনে হয় ভুলে গেছে এতদিনে । দেশীয় সংস্কৃতিগুলো সম্পর্কে তার জ্ঞান অন্তত ওর সমবয়সী দেশী আর দশজন বাচ্চার থেকে কোন অংশে কম না।
আলহামদুলিল্লাহ!

দেশে যাওয়া হয় প্রতি বছরই । সেবার শ্বশুরবাড়ির দিকের এক আত্নীয় জিজ্ঞেস করলেন ” বিদেশে থেকেও তোমার ছেলেরা এত ভাল বাংলা পারে কেমন করে? ”
আমি কিছুই বলিনি। শুধু এক বুক গর্ব হয়েছিল নিজের ভাষার জন্য, আমার পারগতার জন্য !

কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

২১শে ফেব্রুয়ারি ‘মাতৃভাষার শুদ্ধতা’

অপরাজিতা ডেক্স


আজ বুধবার ২০১৮ এর ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ৬৬ বছর পূর্ণ হল মাতৃভাষা আন্দোলনের। আজকের দিনে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে জাতিসংঘের উদ্যোগে ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। রক্তস্নাত গৌরবে সাজানো একুশ আজ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণকে অনুরণিত করে।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদরা জাতিকে সে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন। এই জাতির মায়ের ভাষা ‘বাংলা’। এই ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমা উদ্ভাসিত।

মহান একুশে বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। রফিক, শফিউর, সালাম, বরকত ও জব্বার ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন। রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষাই বরং শুধু নয় স্বাধীনতার বীজটিও সেই সময় রোপিত হয়েছিল।

২০১৮ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে দেশে ও দেশের বাইরে নানান আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিশু কিশোরদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি স্কুলের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কোন কোন স্কুলে বাংলা শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত করেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য বাংলাদেশে শুধুমাত্র ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে তেমন কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি।
এবং বাংলা ভাষার যত্রতত্র ব্যবহার এর জন্য কবিরা তাদের কলমে তুলে ধরেছেন অনেকটা ব্যঙ্গ করে।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার কবিতার লাইন গুল তার শক্ত প্রমাণ,

“শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।”

আজ প্রায় লুপ্ত মাতৃভাষা সম্বন্ধে সচেতনতা। আজ শুদ্ধ বানান ও শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না।

একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন।

আসুন, মাতৃভাষাও শুদ্ধভাবে বলতে ও লিখতে গেলে তা শিখতে হয়, চর্চা করতে হয়—সব জাতিই তা করে। শুদ্ধ বানান ও শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চা খুব জরুরি যার জন্য দরকার নিজের সচেতনতা। তারপর নিজে নিজে ভালো একটি উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবী।

 

একুশে বই মেলায় নবীন লেখিকা পরিচিতি (পর্ব-১)

অপরাজিতা ডেক্স


‘একটি হলেও নবীন লেখকের বই কিনুন’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে অমর একুশে বইমেলা চলে গিয়েছিল ২০১৭। এ বছর মানে ২০১৮ একুশে বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হল, ”পড়ব বই, গড়ব দেশ’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১-২৮ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা চলবে।

আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বইমেলায় নবীব দুজন লেখিকার পরিচয় এবং আর অনেক বিষয়। আসুন জানি তাদের সম্পর্কে।

মুক্তারা বেগম নদী

এসেছে এই বইমেলায় তার একক কবিতার বই “একলা পাখি”।

লেখক পরিচিতি:

মুক্তারা বেগম নদী, জন্ম চায়ের দেশ সিলেট বিভাগের, হবিগঞ্জ জেলায়। বাবার মার বড় সন্তান। পড়াশুনা, ইডেন মহিলা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে এম.এ, ইংল্যান্ডের লন্ডন স্কুল অফ কমার্স থেকে এম.বি.এ.। বর্তমানে দেশের বিখ্যাত আইটি কোম্পানিতে কর্মরত। শখ: বই পড়া, লেখালেখি, মুভি দেখা, ছবি তোলা, গান শোনা, ঘুরে বেড়ানো, বাগান করা, রান্নাবান্না, সবচেয়ে বেশি পছন্দ বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো।প্রিয় লেখক : সৈয়দ মুজতবা আলী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শহিদুল্লাহ কায়সার, জাহানারা ইমাম, আহমেদ ছফা, জীবনানন্দ দাশ, হেলাল হাফিজ রুদ্র মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ,পুর্নেন্দ্র পত্রী, মাওলানা জালাউদ্দিন রুমী, খলীল জিবরান, এরিক মারিয়া রেমার্ক, ও হেনরী, আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে। প্রিয় বই : শবনম, পদ্মা নদীর মাঝি, পথের পাঁচালি, একাত্তরের দিনগুলি, হাজার চুরাশির মা, সংশপ্তক, যদ্যাপী আমার গুরু, যে জলে আগুন জ্বলে, কবি, আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস, ত্রী কমরেডস, দ্যা ওল্ড ম্যান এ্যান্ড সী, অলিভার টুইষ্ট, ল্যা মিজারেবল, মা।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

নাম : মুক্তারা বেগম নদী
একক কবিতার বই ” একলা পাখি”
প্রচ্ছদ – হিমেল হক।
প্রকাশ করছে – কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড।
স্টল নং ১২২
গায়ের মূল্য :২০০ টাকা
কবিতা বিষয় : ভালবাসা প্রেম বিরহ অপেক্ষা আর প্রকৃতি।

লুনা লাবিব

“নীল খামে তোমার নাম” তার একক কবিতার বই প্রথম এসেছে এবারের বই মেলায়।

লেখক পরিচিতি:

লুনা পারভীন। জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৭ অক্টোবর, পিতা মরহুম ডাঃ এস এম আলতাফ হোসেন, মাতা ডাঃ জাহেদা খান ইউসুফ জাই, পৈতৃক নিবাস খুলনার ডুমুরিয়া, ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত! তৎকালীন শিশুদের ম্যাগাজিন নিয়মিত ছড়া লিখতেন। পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন এন্ড কলেজ, উত্তরা থেকে এমবিবিএস পাশ করে বর্তমানে শিশু স্বাস্থ্যের উপর উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন করে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১১ বছর যাবত কর্মরত আছেন। লেখাপড়া ও পেশাগত কারণে লেখালেখি থেকে সাময়িক বিরতির পর আবার নতুন করে গত এক বছর যাবত বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপ ও পত্রিকায় লেখালেখির সাথে জড়িত আছেন। এবারের বই মেলায় তার প্রথম কবিতার বই ‘নীল খামে তোমার নামে প্রকাশিত হলো।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“নীল খামে তোমার নাম”
কবি : লুনা লাবিব
প্রকাশক : শ্রাবনী মজুমদার
প্রকাশনী : আনন্দম
প্রচ্ছদ : জয়ী আলম
পাওয়া যাচ্ছে : ম্যাগনাম ওপাস
স্টল নং : ৩৮৯-৩৯০
বইমেলা মূল্য: ১২০ টাকা মাত্র।

 

 

মাতৃকথন_২

ফারিনা মাহমুদ


এই .. শোনো … শোনো,
আমার ছবি আপলোড করো না কিন্তু খবরদার ! আমাকে বাদ দিয়ে শুধু বাবুর ছবি দাও …।কিংবা গ্রুপ ছবি তোলার সময় নিজের বেখাপ্পা শরীরটাকে দুইজনের মাঝের চিপায় যথাসম্ভব ঢেকে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
কি? কমন পড়ে? মা হবার পরে মুটিয়ে যাওয়া শরীরটা নিয়ে আমাদের আড়ষ্টতা কথা বলছি !

‘মাইক্রোস্কোপিক’ একটা জাইগোট থেকে জ্বলজ্যান্ত একটা মানবসন্তান প্রসব … একটা বিন্দু থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বপ্নের জয়যাত্রা। না, বায়োলজি ক্লাসে পড়া ব্যাঙের জীবনচক্র নয়, মানুষের জীবনচক্রের যাত্রাপথ! সেই যাত্রা কি আর সিরাতুল মুস্তাকিম। মোটেই নয়। একটু একটু করে স্ফীত হয়ে ওঠা শরীরটা কারো কারো ক্ষেত্রে শ্রী হারাতে থাকে নানাভাবে।

জীবনে একটা আঁচড় পড়েনি যে শরীরে, সেই চামড়ায় চিঁড় ধরে। ক্রমশ সেটা রূপ নেয় ফাটলে।
নাকটা কেমন যেন ফুলে ওঠে, ঠোঁটটা কালচে হয়ে যায়। ঘাড়ের কাছে, মুখে, কপালে ছোপ ছোপ কালচে পিগমেন্টেশনের দাগ, ফুলে ঢোল হয়ে যাওয়া পা। আর সর্বশেষ সিজারিয়ানের আড়াআড়ি কাটা কিংবা নরমাল ডেলিভারির থ্রি ডিগ্রি টিয়ারের যন্ত্রনা!!! তবেই না “মা”!

আর যে মুহূর্ত থেকে আদরের ধন বুকে এলো, মায়ের কি আর সময় হয় নিজের দিকে তাকানোর? আমি নিজে ১৯ দিন পরে চুল আঁচড়ানোর সময় পেয়েছিলাম!

কেমন কেমন করে যেন সময় চলে যায়। বাবুটা বড় হয়। একসময় হঠাৎ মায়ের খেয়াল হয়।
একি! আমার এমন হতচ্ছাড়া শ্রী ! হাত পায়ের এ কি দশা? খিদায় তো জান বের হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পেট ভরে খেতে গিয়ে দেখি আরেক বিপদ! জামা কাপড় কিছুই গায়ে লাগে না ! নিজেকে কেমন যেন দুনিয়ার সাথে অচল মনে হয়।

..কুরূপা কুৎসিত মোটা একটা মহিলা মহিলা লাগে ! কেউ কেউ আপ্রাণ চেষ্টা করেন সান্ত্বনা খুঁজে নিতে। মা হয়েছি, মোটা হওয়া জায়েজ এখন। কেউ কেউ ফ্রাস্টেশনে ধুঁকে ধুঁকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় আরো!

সমাধানটা আসলে কি?
বাস্তব হলো, আমরা কেউ কেট মিডলটন না, যে প্রসবের ১২ ঘন্টা পর মেকআপ করে হাই হিল পরে ওটি থেকে বের হবো আর লোকে বলবে – মাইরালা !! বাচ্চা আসলে কই আসিলো আর কইত্তে বাইর হইলো?

কাজেই ওইসব রাজ-পুত্রবধুদের কভার করা ম্যাগাজিন দেখে আক্ষেপ করতে গেলে মা না হওয়াই ভালো। আমরা হলাম প্রজাবধু।
আমরা আমাদের শান্তির জন্য যা করতে পারি তা হলো,
♥স্রেফ নিজেকে ভালোবাসা,
♥নিজের একটু যত্ন নেয়া।

হ্যা, “বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চাই আমার পৃথিবী” – এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে আপনিও আপনার বাচ্চাটার পৃথিবী। দিনের ২০ ঘন্টা ওর যত্ন নিচ্ছেন, কিন্তু আধটা ঘণ্টা নিজেকে দিন। নিজের শরীরটাকে দিন। নিজের দিকে তাকান, নিজের হাত পা গুলো ম্যানিকিউর-পেডিকিউর এর অভাবে খুব অসুন্দর দেখাচ্ছে?

বাবুকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে একটু পানিতে চুবিয়ে ফেলুন, তারপর বাবু ঘুমালে গোসলটা সেরে নিন। পরদিন চুলটাকে একটু তেল দিয়ে বাঁধুন, তার পরের দিন শরীরটা ভালো করে দেখুন, মুটিয়ে যাচ্ছেন? সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কি করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার একটু খোঁজ খবর শুরু করুন।

একদিন, দুদিন … দেখবেন হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে আসছে একটু একটু করে। ফিরে আসছে আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসটা খুব জরুরি আমাদের সবার জন্য।

স্বার্থপর হতে বলছি না মোটেই, মোটেই ছোট করছি না একজন মুটিয়ে যাওয়া মায়ের চির সাবলীল সৌন্দর্যকে। শুধু বলছি, নিজের জন্য একটু সময় বের করতে প্রতিদিন, যাতে আক্ষেপে না ভূগি। দীর্ঘশ্বাস না ফেলি পুরানো এ্যালবাম দেখে অথবা ক্যামেরার সামনে গেলেই আড়ষ্ট হয়ে না যাই।

দিনশেষে … প্রতিটি মা-ই অনন্যা। মাতৃত্বের গুনে সম্পূর্ণা। তাই একটু বাড়তি যত্ন, ভালোবাসা পাবার অধিকার তাঁদের সবার আগে। তো সেই ভালোবাসাটা না হয় সামান্য একটু নার্সিসিজম দিয়েই শুরু হোক !

কি বলেন ?
শুরু হোক, নিজেকে ভালোবাসা দিয়ে … একটু একটু করে !

 

জেগে ওঠো

আফরোজা হাসান


একটি গাছে অনেক পাতা থাকে। অসংখ্য সবুজ পাতা গাছের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। সেই সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়।

তবে অসংখ্য সবুজ পাতার মাঝে অনেক পাতাই মাঝে মাঝে শুকিয়ে যায়।
একসময় সেই শুকনো পাতাগুলো গাছ থেকে ঝরে মাটিতে পড়ে যায়। তখন সেই ঝরা পাতাকে কেউ আর মূল্য দেয় না।

মানুষের জীবনও একটা গাছের মতো। এই গাছেও সবুজ পাতার মতো সৌন্দর্য থাকে, সেই সৌন্দর্য হলো অসংখ্য সাফল্যের পালক।

মানুষের জীবন যখন সাফল্যের পালক দিয়ে ঢাকা থাকে, তখন তাকে সবাই সবুজ পাতার মতো ভাবে। আর যখন সাফল্যের পালক জীবন থেকে একটা একটা করে ছিঁড়ে যায়, তখন সেই মানুষটিকে সবাই ঝরা পাতার মতো মনে করে। তার জীবনে যেন আর কোনো মূল্য নেই!

সত্যিই কি ব্যর্থ হওয়া মানুষগুলোর জীবন গাছের ঝরা পাতার মতোই মূল্যহীন?

বনের ঝরা পাতাও কিন্তু অন্যের উপকার করে। বনের হিংস্র বাঘ যখন নিরীহ হরিণ শিকারের জন্য তীব্র বেগে ধেয়ে আসে, তখন শুকনো পাতাগুলো বাঘের পায়ের নিচে পড়ে মড়মড় আওয়াজ করে। সেই আওয়াজ শুনেই হরিণেরা বুঝতে পারে বিপদ আসন্ন। এভাবেই শুকনো পাতারা নিরীহ হরিণকে বিপদ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে।

আমরা যারা তরুণ মাঝি, তারা জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হই। তাই বলে কি সবসময় বিষণ্ন হয়ে বসে থেকে হাল ছেড়ে দেব?

হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেব?

গাছের ঝরা পাতাগুলোর দেহে প্রাণ থাকে না, তবুও তারা অন্যের উপকারে আসে। আমাদের দেহে তো প্রাণ আছে, তবে আমরা কেন পারব না?

জীবনে চলার পথে কষ্ট আসবেই। অর্থকষ্ট, স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবার কষ্টসহ নানান ডিজাইনের কষ্ট। তারপরও কষ্টের নদী পাড়ি দিতে হবে।

কখনো যদি খুব বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তবে মাঝে মাঝে গাছের ঝরা পাতাগুলোর কাছে যাবেন।

দেখবেন তারা আপনাকে সাহস দিয়ে বলবে, “তোমার জীবনে কিছুই হারিয়ে যায়নি। তোমার দেহে তো এখনো প্রাণ আছে। জেগে ওঠো! জ্বলে ওঠো হে তরুণ!”

 

তাহেরা রহমান প্রথম হিজাব পরা সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের টিভিতে

হলিউড রিপোর্টার


অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিভিশনে প্রথমবারের মতো পূর্ণকালীন রিপোর্টার হিসেবে একজন হিজাব পরিহিত নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা নারীটির নাম তাহেরা রহমান।

ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কোনো টেলিভিশন স্টেশনে তিনি প্রথম সাংবাদিক হিসেবে হিজাব পরে সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি সংবাদ পাঠও করছেন নিয়মিত। ৯ ফেব্রুয়ারি ইলিনয়-আইওয়া সীমান্তবর্তী এলাকা কুয়াড সিটিজে স্থানীয় টিভি স্টেশন ‘লোকাল ফোর নিউজ’-এ হিজাব পরিহিত অবস্থায় সংবাদ পাঠ করেন তাহেরা।

‘লোকাল ফোর নিউজ’ চ্যানেলটি মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিবিএসের আঞ্চলিক শাখা। ইলিনয় ও আইওয়া দুই প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি শহরকে একসঙ্গে কুয়াড সিটিজ বলা হয়।

ওই অঞ্চলে সম্প্রচার হয় ‘লোকাল ফোর নিউজ।’ ওই টিভি স্টেশনে গত দুই বছর ধরে নিউজ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করছিলেন তাহেরা। তবে সব সময়ই তার স্বপ্ন ছিল টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট তুলে ধরার। কিন্তু মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলোর অঘোষিত নীতি হলো- হিজাব পরা কাউকে পর্দায় হাজির না করার। মেধাবী তাহেরা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়েছেন।

আগে কাজ করেছেন সিবিএসের শিকাগো অফিসে। সহকর্মী ও সিনিয়রেরা সব সময় তাকে বলে এসেছেন, পর্দার সামনে আসতে হলে তাকে হিজাব খুলতে হবে!

তাহেরা হিজাব মাথায় ওই টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দিয়েছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য তাহেরা জানান, ‘শিকাগোর একাধিক টিভি স্টেশনে তিনি চেষ্টা করেছেন রিপোর্টার বা সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করার।

কিন্তু সবাই তাকে হিজাবের কথা বলে না করে দিয়েছে। আর টিভিতে কখনো আমার মতো দেখতে কাউকে দেখিনি। তাই একপর্যায়ে মনে হয়েছিল আমি আসলে এই সুযোগ পাব না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।’ এরপরই তাহেরা যোগ দেন লোকাল ফোর নিউজে। শেষ পর্যন্ত কাজে মুগ্ধ হয়ে কর্তৃপ তাকে টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ দেয় ৯ ফেব্রুয়ারি। সুযোগ পেয়ে তাহেরা খুব খুশি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আমি কর্তৃপরে উদারতায় খুশি। আশা করি, আমি আমার কর্মদতায় এগিয়ে যাব।’

শুক্রবার ‘লোকাল ফোর নিউজ’ জানায়, তাহেরা হলেন আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো হিজাবি মুসলিম নারী যিনি অন-এয়ার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করবেন। মেয়ের সাফল্যে খুবই খুশি তাহেরার বাবা-মা। প্রথম টিভি পর্দায় সংবাদ পাঠের দিন পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে তাহেরার অফিসে এসে হাজির হয়েছিলেন তারা।

অনুষ্ঠান দেখতে বসে কান্না থামাতে পারেননি মা। তাহেরার মা দারদুনেহ রহমান জানান, ‘তাহেরা হিজাব মাথায় ওই টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য। আর মা হিসেবে আমি অবশ্যই গর্বিত। ‘টেলিভিশনের পর্দায় মেয়েকে হিজাব মাথায় দেখে উচ্ছ্বসিত তাহেরার বাবা-মা। আর তাহেরাকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে খুশি রিচা টেইলর।

উল্লেখ্য, আমেরিকার পিউ রিচার্স সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী সে দেশের ৬৮ শতাংশ মুসলিম পুরুষ এবং ৮৩ শতাংশ মুসলিম নারী বৈষম্যের স্বীকার। অন্য দিকে মার্কিন সংস্থা রেডিও টেলিভিশন ডিজিটাল নিউজ অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৫ সালের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশটির স্থানীয় টিভি স্টেশনগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের হার মাত্র ২২ শতাংশ। সুত্র:নয়াদিগন্ত,যুগান্তর।

 

বসন্তের শুভেচ্ছা

ফাতিমা মারিয়াম


মালা গ্রামের মেয়ে। মামার পরিচয়ের সূত্রে বিয়ে হয় ঢাকায়।

মালার শ্বশুরবাড়ি আর বাবার বাড়ি একই জেলায়। তবে তার স্বামী আনিস ঢাকাতেই প্রতিষ্ঠিত।

আনিস একজন সরকারী কর্মকর্তা। বেতনের চাইতে উপরি আয়ই বেশি। অনেক অনেক টাকা হাতে আসার কারণেই হোক অথবা গ্রামের মেয়ে হঠাৎ রাজধানীতে রাজরানি হওয়ার কারণেই হোক মালা বেশ বেহিসাবি জীবন যাপন করা শুরু করে।

আনিস কখনো কিছু বলে না। কারণ বলার মত শক্ত মেরুদণ্ড তার নেই।

মালার লাগামহীন ছন্নছাড়া জীবন যাপনের ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে বললেই আনিস বলে- আরে থাক না। এখন তো সবাই এভাবেই জীবন কাটায়। ওকে তাই কিছু বলি না।

আনিসের মা বাবা কেউ কখনো মালার ব্যাপারে কিছু বলেও আনিসের কাছে পাত্তা পায় না। সবাইকে সে বুঝাতে চায় যেভাবেই চলুক না কেন মালা মানুষ হিসেবে ভালো। তার আত্মীয়স্বজন তো বটেই এমন কি মালার আত্মীয়রাও আনিসের স্ত্রৈণ স্বভাবের জন্য আড়ালে আবডালে বিরক্তি প্রকাশ করে।

একে একে দুইটি সন্তান হয় মালা ও আনিসের। তারা দিন দিন বড় হয়। মালার বেহায়াপনা বাড়তে থাকে, বাড়ে আনিসের আয়। আয়ের পুরো টাকা বউয়ের হাতে তুলে না দেয়া পর্যন্ত মায়া আনিসকে শান্তি দেয় না।

এক পর্যায়ে স্বামী স্ত্রী দুজনেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর
জানাজানি…..
কানাকানি।

তারপরও দিন যায়। সংসারে চরম অশান্তি।

ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে। তারা বাবা মা দুজনকেই কড়া কথা শোনায়। আবার তারা নিজেরাও যে ভালো পথে চলে তা নয়। ছেলেও এক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সেই মেয়ের মাকে মালা দু কথা শোনায়। আবার মেয়ের প্রেমিককে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বেশ কায়দা করেই জানায়। ছেলেমেয়ে কোন শাসন মানতে চায় না।

পরিবারে চরম অশান্তি চলে…চলতে থাকে।



পহেলা ফাল্গুনে মা মেয়ে দুজনেই বাসন্তী শাড়ি পরে সাজুগুজু করে ফেসবুকে ছবি দেয়। আর ক্যাপশনে লিখে ‘সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা’। লাইক আর কমেন্টের বন্যায় আপাতত তাদের পরিবারের অশান্তির কথা মা মেয়ে ভুলে যায়। মাতা কন্যা উভয়ে একে অন্যের পোষ্ট চেক করে দেখতে থাকেন কার পোস্ট এ লাইক বা কমেন্ট কত এসেছে![ছোট গল্প]

 

ঘুড়ি

দ্য স্লেভ


শৈশবের এই এক ঘুড়ি নিয়ে বহু পৃষ্ঠা লেখা যায়। আমাদের এলাকায় কিছু ছোট ছোট দোকান ছিলো, যেখানে নানান রঙের ঘুড়ি বিক্রি হত। কারো কারো ঘুড়ি ছিলো বিখ্যাত, কিন্তু দাম সকলের কাছেই এক টাকা। সে সময় ১ টাকা দরের ওই ঘুড়িটা যে কতটা আকাঙ্ক্ষিত ছিলো তা ঠিক ভাবে বুঝানো যাবে না। ওটা যেন এক টাকা মূল্যের কিছু ছিলোনা। ওটা ছিলো বহু মূল্যবান সম্পদের একটি অংশ।

আমার জানামতে আমি ১ টাকা দিয়ে সম্ভবত দু একবার ঘুড়ি কিনেছি। আমি একই দোকান থেকে ৫০ পয়সা দামের ছোট সাইজের ঘুড়ি কিনতাম। এই ঘুড়ি কিনে এর পেছনে লেজ লাগাতাম। সেই লেজ হত আমার অংশ খাতার কাগজ দিয়ে তৈরী। কখনও কখনও এত লম্বা লেজ তৈরী করতাম গরম ভাত দিয়ে টিপে টিপে,যে লেজের ভারে ঘুড়ি উড়তে পারত না। আমি ভাবতাম বাতাসের দোষ। তবে সেই লম্বা লেজওয়ালা ঘুড়ি নিয়ে জোরে দৌড় দিতাম,তখন তীব্র বাতাসে খানিকটা উপরে উঠত।

আমি ঘুড়ি তেমন কিনতাম না, তবে প্রতিদিন বিকেলে নদীর ধারে, রেল লাইনের উপরে তুখোড় ঘুড়িবীদরা কাটাকাটি খেলত। সে সময় আমরা বাচ্চারা দূরে দাড়িয়ে সে খেলা দেখতাম। কি যে মজা সেটা দেখতে। তবে আসল মজা হল ঘুড়ি কাটার পর সেই কাটা ঘুড়ি ধরার জন্যে দৌড় প্রতিযোগীতা। কাটাকাটি হলেই বিশাল লম্বা সূতোসহ ঘুড়ি ধীরে ধীরে নীচে নামত। বহু উপরের সেসব ঘুড়ির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা আরেক গ্রামে পৌছে যেতাম কখনও।

আবার কখনও কখনও নদীতে পড়ত গিয়ে। তবে ঘুড়িটাকে পাবার জন্যে জীবন উৎসর্গ করতাম। কখনও সেটা লম্বা গাছে গিয়ে বেধে থাকত। এমন ক্ষেত্রে আমাদের এলাকার মারাত্মক গেছো আমিনই ঘুড়িটা পেত। আমিন যে কোনো গাছে অনায়াসে উঠে যেত দ্রুত। মাটিতে বা আমাদের আয়ত্বে থাকা স্থানে কখনও ঘুড়ি পড়লে আমি কখনও কখনও সেটা পেতাম। তখন যে কি খুশী লাগত ! তবে কখনও কখনও একাধিক লোকে ঘুড়ি ধরতে গেলে আমরা আমরা কোনো লাঠি,কঞ্চি দিয়ে ঘুড়িতে বাড়ি দিয়ে ছিড়ে ফেলতাম, যাতে কেউ নিতে না পারে। ঘুড়ি ধরা নিয়ে অনেক হাতাহাতিও হত। তবে অনেক ঘুড়িই ধরেছি।

আমার ধরা সেসব ঘুড়ি অনেক যত্ন করে খাটের নীচে অথবা ঘরের সানসাইডের উপর রাখতাম। আমার সুন্দর সুন্দর লাটাই(নাটাই) ছিলো। আমি এক ধরনের চমৎকার লাটাই বানাতাম। পুরোনো হাওয়াই চপ্পল সুন্দর গোল করে ২টা চাকা বানাতাম। এবার বাঁশের সরু কঞ্চী সুন্দর মাপে এর ভেতর প্রবেশ করিয়ে দিতাম। চাকার মাঝ বরাবর একটা ফুটো করতাম আর সেখানে মসৃণ বাঁশের কঞ্চী অথবা সুন্দর করে বানানো বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে লাটাই বানাতাম। আমার হাতের কারুকাজ খুব দারুন ছিলো।

আমরা সূতোয় মাজন দিতাম। বাল্বসহ নানান কাচের জিনিস ভেঙ্গে গুড়ো করতাম হামানদিস্তায়। এটার কাপুড়ে ভরে পাউডার অংশ বের করে নিতাম। এবার গদের আঠা আর কি কি যেন একসাথে জ্বালিয়ে এর ভেতর কাচের পাউডার দিতাম। তারপর এটা সূতোয় লাগিয়ে শুকাতে দিতাম। খুব ধারালো হত সূতো। এই সূতো নিয়ে কাটাকাটি খেলতাম। তবে আমার সূতোয় মজন থাকলেও আমি কাটাকাটি খেলতে চাইতাম না। কারণ ঘুড়ির প্রতি আমার খুব মায়া ছিলো। আমি আকাশে উড়িয়েই মজা পেতাম। তবে অন্যের কেটে যাওয়া ঘুড়ির প্রতি খুব লোভ ছিলো।
আমি,সাবু,ইদু,মাসু,রফি,রমজান, উজ্জল,দোলন,সুমন আরও অনেকে আমাদের মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম। আবার কেউ কেউ অল্প সূতোয় ঘুড়ি বেধে সারা এলাকায় দৌড়ে বেড়াত, ওটাই আনন্দ। মাঠে ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি কত যে আনন্দ করতাম ! তবে সবশেষে মাঠের পুকুরে দল বেধে গোসল করতাম ঘন্টার পর ঘন্টা, সে আনন্দের কোনো তুলনা নেই।

আমি পলিথিন দিয়ে ঘুড়ি তৈরী করতাম। এই ঘুড়ি বেশী টেকসই তাই এইটা বানাতাম। আমি ভাবতাম রঙিন কাগজে এক টাকার তৈরী ওই ঘুড়ি সহজে ছিঁড়ে যায়। যদি এমন কাগজ হত, যা কখনও ছিড়বে না, তাহলে সেটা দিয়ে ঘুড়ি বানালে খুব ভালো হত। ঘুড়ি ছিলো একটা নেশা। এর অনেক কলা কৌশল রয়েছে। ঘুড়িকে বিশেষ কায়দায় বাক খাওয়ানো যায়, এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আনা যায়। আবার পাক খাওয়ানো যায়। কাটাকাটি খেলার সময় এসব করা হয়।

এলাকার বিখ্যাত কাটাকাটিবীদ ছিলো আজিজুল ওরফে আইজুল চা(চাচা)। এছাড়া হাফি,মফিও খুব ভালো ছিলো এই বিষয়ে। ওরা রেল লাইনের উপরে গিয়ে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলত। আমাদের উপর পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা ছিলো রেললাইনের ওদিকে পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষেত্রে, তাই আমরা সর্বোচ্চ নদীর ধার পর্যন্ত যেতাম। তবে বাজারের দিকে না গেলেও পায়রাডাঙ্গা, কুটিপাড়া পর্যন্ত চলে যেতাম, তাতে তেমন সমস্যা ছিলো না। কিন্তু বাজারের দিকে যাওয়া নিষেধ ছিলো। শুনতাম আইজুল চা’র সাথে অন্যরা কাটাকাটি খেলতে ভয় পেত। তবে তার ঘুড়িও কেটে যেত অনেক সময়। অনেক সময় অঅমরা নদীতে গোসলের সময়ও ঘুড়ি ধরেছি। কখনও সূতো করে ঘুড়ি উড়তে থাকা অবস্থায় ডাঙ্গায় তুলে ফেলতাম।

এখনকার বাচ্চারা এসব সাধারণ বিষয়ে মজা পায়না। এদের চিন্তার জগত পাল্টে গেছে। এদের মজার মাত্রাও তেমন মজাদার না। আমরা খুবই সামান্য কারনে মজা করতে পারতাম। সেই ঝরঝরে সুন্দর দিনগুলো এখন নেই। ৫০ পয়সা ১ টাকা দামের ঘুড়ি আমাদেরকে যে আনন্দ দিয়েছে,তা আজ লাখ টাকায়ও পাওয়া যাবে না। সেই মন আর নেই মানুষের, কেমন যেন ফর্মালিনযুক্ত মানসিকতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। সেই সহজ সরল সোনালী দিনগুলোকে মনে পড়ে। বহু কথা,বহু স্মৃতি আছে কেবল এই এক ঘুড়ি নিয়ে!
আজ আর না।…

 

ভালবাসা দিবসে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন ‘সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ভালবাসা বিতরণ’

অপরাজিতার নিজস্ব প্রতিবেদন


ভালোবাসা দিবস, ভিন্ন আয়োজন হিসেবে ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটিয়েছে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন ‘স্কুল অব হিউম্যানিটি’।

গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি রোজ বুধবার কর্মব্যস্ত ঢাকার মোহাম্মদপুর বটতলায় ছিলো উৎসবমুখর এক পরিবেশ। পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী এদিন ছিলো ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে ভালোবাসার উৎসব। তাই সুবিধা বঞ্চিত বাচ্চারা সকাল থেকেই সাজগোছ করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

তাদের ভাষ্যমতে, ভালোবাসা দিবসে তাদের আয়োজনে যা যা ছিল,

★চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ।

★আহারের পূর্বে কিভাবে হাত ধৌত করতে হয় তা ব্যবহারিক ভাবে শিখানো।

★সবার জন্য লাঞ্চ বক্স।

★সবাই একসঙ্গে বেলুন উড়ানো।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক ফখরুল মজুমদার আমাদের আরো জানিয়েছেন যে, ‘আসলে আমরা সবসময় চেয়েছি এই শিশুদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে। সে থেকেই আমাদের সদস্যরা নিয়মিত কাজ করছে। জেনে খুশি হবেন যে, স্কুল অব হিউম্যানিটি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি এ পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যার্তদের সহায়তা ও ঈদ উৎসব সম্পন্ন করেছে। গত একবছর ধরে আমাদের পথচলা। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৮ এর জানুয়ারী থেকে।

বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে শুরু কথার কথা ভাবছে।
শিক্ষা কার্যক্রমে দুটি প্রদক্ষেপ-

১) যারা পড়াশুনা করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে স্পন্সর সংগ্রহের মাধ্যমে নিয়মিত পাঠদান করা।
২) যারা পড়াশুনা করবে নাহ, তাদেরকে অক্ষর জ্ঞান শিখিয়ে কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান।

এছাড়াও স্কুল কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে নিতে স্কুল অব হিউম্যানিটি ক্যাম্পাস ভিত্তিক দুই টাকা প্রকল্প শুরু করেছে। স্লোগান হলো- ‘রোজ দুই টাকা জমাই
পথ শিশুদের পাশে দাড়াই।’ ছবি এবং তথ্য সহযোগী: ফখরুল মজুমদার।

(http://oporajitabd.com)

 

‘প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং’ পর্ব-৩

ফাতিমা খান


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা মানেই আমার ঘরে অন্যরকম একটা আমেজ । বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরলে ওদের ক্লান্ত চেহারাতেও একটা “তাইরে নাইরে না” টাইপ ভাব দেখি। আমার শত ক্লান্তির মাঝেও ওদের আনন্দ আমাকে পেয়ে বসে, বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওদের “যা খুশী তাই কর” দিন, রুটিন-ছাড়া, বাধনহারা সময়। আমার বয়সটা ঠুস করে কমে একদম ওদের সমান সমান হয়ে দাঁড়ায়।

বাচ্চাদের মাঝে মাঝে এই ছাড় দেওয়া ওদের অনেক রিল্যাক্স আর রিফ্রেশ করে। আজকাল স্কুল কলেজের পড়াশোনার চাপ এত বেশী থাকে যে ওরা নিজস্ব সৃজনশীলতা প্রায় হারাতে বসেছে। প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন বিশেষ গুণ নিয়েই পৃথিবীতে আসে।

এই বিশেষ গুনগুলো লালন করার জন্য একটু অবকাশ খুব দরকার যেন পরের ব্যস্ত ওয়ার্কিং ডে গুলোর জন্য ওদের দেহ ও মন-মস্তিষ্ক সতেজ হয়।

সংসার, চাকুরী, ঘর সামলে ক্লান্ত শুধু আমরাই হই না, ওরাও হয়, কিন্তু ধরন আর কারণটা ভিন্ন। একটু শিকল ছাড়া সময় আর বাবা মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার অপেক্ষাতেই মানসিক ভাবে ওরা ক্লান্ত থাকে, যা ওরাও প্রকাশ করে না আর আমরাও বুঝতে পারি না।

প্রায় বছর দুয়েক আগে আমেরিকায় করা একটা জরিপে দেখেছিলাম পনের বছর বয়স পর্যন্ত দৈনিক অন্তত আধা ঘন্টা মায়ের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা বাচ্চাগুলো মেধাবী হয়।

জীবন কতটা জটিল হলে মায়ের কাছে সন্তানের জন্য আধা ঘন্টা সময়ের দাবী করে জরিপ করা হয়েছিল তাই ভেবে কিছুটা হতাশও হয়েছিলাম।

আজ রাত নয়টায় বাসায় ফিরে দেখি আমার বড় ছেলে পপস্টিকাল স্টিক দিয়ে বাড়ি বানায়, ডুপ্লেক্স বাড়ি। আমার ছোটজন তার বাধ্য এসিস্ট্যান্ট। কোলের উপর বিশাল ওজন ওয়ালা ‘Big book of home plans’ বই নিয়ে ভাইকে গাইড করছে। আমার সারা ঘরের মেঝেতে সদ্য কিনে আনা ক্রাইলিক পেইন্টের ছড়াছড়ি। পপস্টিকাল স্টিকের বাড়ির ওয়াল পেইন্ট হচ্ছে।

আমাকে দেখেই বড়জন বলল, ” আম্মু আমাদের ফিউচার বাড়ির মডেল বানাই। ডুপ্লেক্স বাড়ি হবে আমাদের। নিচতলায় একপাশে নানাভাই নানুমণি থাকবে, আরেকপাশে দাদু। আমরা থাকব উপরে। নাইন সিটারের একটা গাড়ী থাকবে আমাদের। যেখানে যাব সবাই একসাথে যাব। ড্রাইভিং সিটে বসব আমি, পাশে নানাভাই। বাকী সবাই পেছনে।” আমার ছেলের চোখ স্বপ্নময়, মুখ হাসি হাসি।

ছোটজন আবার একটু ভাবুক। সে প্ল্যানের বাকীটা বলে ফেলল ” আর বাড়িটা হবে লেকের পাশে। একটা ওয়ালের পুরাটাই গ্লাসের উইন্ডো হবে। আর থাকবে অনেক বড় এয়ার এলার্ম। বাতাস আসবে আর এলার্ম বাজবে…আআআহহহহ ”(তার চোখ অলরেডি বন্ধ হয়ে গেছে)।

আমিও বোধ হয় হারিয়ে গিয়েছিলাম…!

আজ ওদের কান্ড দেখে নতুন কিছু প্যারেন্টিং এর আইডিয়া পেলাম।

♦ আমাদের প্রি-টিনেজার বা টিনেজার কে তাদের স্বপ্নগুলো লালন করার জন্য একটা মুক্ত ক্যাম্পাস দেয়া উচিৎ যেখানে তারা মনের সব কল্পনা আর রঙ মিশিয়ে স্বপ্ন গড়বে। এই চর্চাই একদিন তার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের সোপান হবে।

♦ ওরা নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দিতে পারে অকপটে, যেগুল আমরা বড়রা সাত পাঁচ ভেবে বা ইগো সমস্যার জন্য হয়ত বলতে পারি না। পরিবারের যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ওদের পরামর্শও নেওয়া উচিত। ওদের চিন্তার প্রসারতা ও ভালমন্দ জ্ঞান বাড়ানোর জন্যও এটা খুব ভাল উপায় হবে।(চলবে)

লেখিকা কর্মরত:আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,জেদ্দা,সৌদি আরব।

 

ভালবাসার স্বপ্নরা অশ্রুতে লুকায়

ডা.সাকলায়েন রাসেল


ও বয়স ৩৫! বাড়ী জলঢাকা!
নীরার এই তথ্যগুলো আগেই দেখে নিলাম। পরণে শাড়ী। পরিপাটি গেট আপ। এই বয়সটাকেও আমি সন্ধিকাল বলি। কারণ এই সময়ে মেয়ে থেকে মা হয়ে যায় বেশিরভাগ মেয়ে। দেহে তাই পরিপূর্ণ নারীভাব চলে আসে। ছেলেরাও বাবা হয়। তবে তাদের পুরুষভাব আসতে কমপক্ষে চল্লিশ লাগে!

কথাটা ফানি। তবে সত্য বলে প্রমাণিত হয় অনেক সময়। মেয়েদের বয়স ত্রিশ থেকে চল্লিশ হতে কমপক্ষে ১৫ বছর লাগে!
নীরাকে অবশ্য তেমন মনে হল না। বয়স লুকাইনি সে। তবে ৩৫ এর চেয়ে বেশি বয়স্কা লাগার যথেষ্ট কারণ আছে। এই বয়সে ওর দেহে ডায়াবেটিস, হাই প্রেসারের মত হাই প্রোফাইল রোগ গুলো বাসা বেঁধেছে।

নীরাও আপন করে নিয়েছে তাদের। থাকে না তাই ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ। নিয়ন্ত্রণে আসে না প্রেসারও। না আসলে তাতে কি! পাত্তা দেয় না নীরা।

থাক না। ওতো কন্ট্রোল করে কি হবে?
রোগের কথা জানাচ্ছিল নীরা। পাশে সাথে আসা ভদ্রলোকও দুই একটা সমস্যা ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। ভদ্রলোকের পরিচয় নেয়া হয়নি। তবে কথাবার্তায় স্বামী সুলভ ভাব স্পষ্ট।

নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করে নিলাম, আপনাদের সম্পর্ক?
অবাক হলাম। কারণ লোকটি উত্তর দিতে কয়েক সেকেন্ড পজ নিলেন। অনেকটা ভাইভা বোর্ডের মত। সহজ প্রশ্ন কিন্তু টেনশনে মাথা থেকেই আউট।
হঠাৎ ‘ও হ্যা… মনে পড়েছে’!

লোকটি শুরু করলেও শেষ করলেন নীরা।

‘আমার স্বামী’। লোকটি মুচকি হাসিতে সম্মতি দিলেন। যার শাব্দিক রূপ উত্তর সঠিক হয়েছে। লোকটি হেল্পফুল। স্ত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে নিজের মুখটাও কষ্টে মেখে রেখেছেন।

না নীরা প্রেসার বা ডায়াবেটিসের কথা বলতে আসেনি। তার শরীরে অনেক সমস্যা। ঢাকার বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছে। কাজ হয়নি। ইন্ডিয়া গেছে। লাভ হয়নি।

কোন এক টিভিতে আমার সাক্ষাৎকার দেখেছে। খুব ভাল লেগেছে তার। তাই আসা। অনেক আশা নিয়ে। সাথে আসা ভদ্রলোক সে ভিডিও দেখালো। স্যার, অনেক আশা নিয়ে। এসেছি।

কত জায়গায় দেখালাম। কাজ হয়নি। কেউ ভাল করে বলেও না কি হয়েছে। প্রোগ্রামে আপনার কথা শুনে খুব ভাল লেগেছে। তাই আসলাম। আপনার সিরিয়াল না পেয়ে গত ৫ দিন ঢাকাতেই আছি।

নীরার ব্যথার সমস্যা। এ ব্যথা মূলত পায়ে। হাটতে গেলে ব্যথা। বসে থাকলেও ব্যথা। ব্যথা হয় ঘুমের মাঝেও। তীব্র ব্যথা না। ব্যথার চেয়ে জ্বালাপোড়া বেশি। তার চেয়েও বেশি রগে টান ধরা। জ্বালাপোড়া আছে হাতেও। পিঠেও মাঝেমধ্যে অস্বস্তি লাগে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সকালে। অসহ্য ব্যথা। প্রতিদিন সকাল আসে তাই কান্না হয়ে। নীরা কান্নার শব্দে বাসার সবাই জেগে উঠে।

ডাক্তার দেখিয়েছে অনেক। কাজ হয়নি। ফিজিক্যাল মেডিসিন। রিউম্যাটোলজিস্ট। অর্থোপেডিক্স। ফিজিওথেরাপিস্ট। ঘুরে এসেছে চেন্নাই থেকেও।

স্বামী লোকটাকে বেশ ব্যস্ত মনে হল। এ ব্যস্ততা মোবাইল নিয়ে। ভিডিওটা বের করলেন। স্যার আপনার এই প্রোগ্রামটা ইউ টিউবে দেখেছি। তখন থেকেই ভক্ত। ভাবছি একবার হলেও আপনাকে দেখাব।
আমি কাগজপত্র চেক করলাম। কড়া কড়া ঔষধ ইতোমধ্যে খাওয়া শেষ। আমার প্রেসক্রিপশনে নতুন করে দেয়ার জন্য কিছুই রাখা হয়নি।

নীরাকে দেখলাম। সব পালস নরমাল। ডুপ্লেক্স এর সাহায্য নিলাম। না খারাপ কিছুই ধরা পড়ল না। নীরার উপসর্গ একেবারেই বে-মানান। কোন রোগের সাথে তাই মেলানো গেল না। নীরাকে পরীক্ষা করে নিজ চেয়ার এসে হেলান দিয়ে বসলাম। নীরা ও তার স্বামীর চোখে মুখে উৎকণ্ঠা! অপেক্ষায় আছে আমি কি বলি। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা ভাঙ্গালো স্বামী।

– স্যার, কিছু বোঝা গেল? ও ভাল হবে তো?

নীরার মুখ আঁধারে ঢাকা। স্বামীর প্রশ্নে তার সায় আছে। সেও এর জবাব চায়।

আমি স্বামীর প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। সবটুকু মনোযোগ তখন নীরার দিকে।

নীরা, ভুলে যান আমি আপনার ডাক্তার। ধরেন, আমি আপনার অতি পরিচিত কেউ একজন। গল্প করছি। জানিনা কিছুই। বুঝিনা অনেক কিছু। এমন কেউ। আমার কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন।

-কোন কাজ কি গভীর মনোযোগ দিয়ে করতে পারেন? আই মিন কাজে কনসেন্ট্রেশন কেমন আপনার?
প্রশ্ন কমন পড়েছে। উত্তর দিতে নীরাকে চিন্তাই করতে হল না।
@না পারিনা, কোন কিছুতেই মনোযোগ নেই আমার!

-আপনার কোলাহল খারাপ লাগে? গ্যাদারিং এড়িয়ে চলেন?
@জ্বী, কোলাহল একদম সহ্য করতে পারিনা।

-গান শোনেন? টিভি দেখেন?
@না গান শোনা, টিভি দেখা, সিনেমা দেখা কোন কিছুই ভাল লাগে না আমার!

নীলার চোখে মুখে বিরক্তি রেখাটা স্পষ্ট হল। মনে হল আশেপাশে কোথাও গান বাজছে। নীরার সহ্য হচ্ছেনা।
স্বামীর দিকে তাকালাম।

-একটা মুচকি হাসির ছাপ আমার মুখে। আপনার উপর রাগ টাগ করে নাকি?
স্বামী থতমত খেল। মুখে একটা মরা মরা হাসি আঁকার চেষ্টা করল। তাকে কিছু বলতে দিলাম না। আবারো নীরার দিকে তাকালাম।

-মেজাজ কি খুব খিটমিটে থাকে?
@নীরা সাথে সাথে সায় দিল। জ্বী স্যার, খুব বেশি। সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করি। সব সময় খিটমিট করি।

-ঘুম কেমন হয়?
@নাই বললেই চলে। একটু ঘুম আসলেও গভীর ঘুম কখনোই হয়না।

নীরাকে কিছুটা বিচলিত মনে হল। কারণ যে রোগ নিয়ে এসেছে তার সাথে এসব প্রশ্ন যায় না। আমিও সময় সংক্ষিপ্ত করায় মনোযোগী হলাম। বাইরে রোগীর ভীর। একজনকে বেশি সময় দিলে বাকীদের অপেক্ষার প্রহর বেড়ে যায়।

-আচ্ছা শোনেন। দুজনকে একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ‘সোমাটোফর্ম ডিজওর্ডার’ নামে একটা রোগ আছে। এটা মনের রোগ। কিন্তু প্রকাশ পায় দেহে। অর্থাৎ মনের কিছু দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয় শরীরে। মনে হবে শরীর ব্যথা। এ সমস্যা। ও সমস্যা। তিনি আসলে মানসিক রোগী না। আবার অনেক বড় মানসিক সমস্যাও।

আমি সতর্ক। নীরা যাতে আবার ভেবে না বসে আমি তাকে মানসিক রোগী ভাবছি।
এমনই একটি রোগের নাম ফাইব্রোমায়ালজিয়া। সর্বাঙ্গে ব্যথা। খুব বেশি কষ্ট হয় না। আবার একেবারে সারেও না সহজে। অনেক ডাক্তার দেখিয়ে রোগীরা পরে বিরক্ত হয়ে পড়ে।
চেম্বারের আবহাওয়া ততোক্ষণে অনেকটা স্তব্ধ। গুমোট ভাব। । মনে হল এখনই ঝড় নামবে। কথা শেষ করে আনতে হবে।

-এবার সরাসরি নীরাকে প্রশ্ন করলাম, আপনার মনের মাঝে কি তীব্র কোন কষ্ট আছে?

স্বামী নিশ্চুপ। শব্দহীন নীরাও। সহসাই নীরবতা ভেঙে গেল। নীরার চোখ লাল হয়ে গেল। কন্ঠ আটকানো। ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরল সে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

@স্যার, আমার স্বামী আসলে মারা গেছে আড়াই বছর হল। ওর ক্যান্সার হয়েছিল। শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। আমার একটা মেয়ে আছে। ক্লাস নাইনে পড়ে।
আজ আড়াই বছর হল। অথচ এক সেকেন্ডের জন্যও ভুলতে পারি না তাকে। সব সময় শুধু ওর কথা মনে পড়ে। উঠতে বসতে তার স্মৃতি আমাকে ঘিরে ধরে। আমি কিছুতেই তাকে ভুলতে পারি না। একবারের জন্যও না। আমার সমস্ত অস্তিত্ব ঘিরে শুধু তার স্মৃতি।

তাকালাম পাশে থাকা লোকটির দিকে। নীরা দ্রুতই কান্নার শব্দ কমিয়ে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিল।

@আমি ওকে পরে বিয়ে করি। ও খুব ভাল স্বামী।

নতুন এ পরিস্থিতির বিষয়ে আগে থেকে কিছু আঁচ করতে পারিনি। আমিও তাই বাক্যহীন। নতুন স্বামীর মুখের অভিব্যক্তি দেখতে অস্থির হলাম। অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি তার দিকে। স্বামী অসহায় মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মনে হল তার মাঝেও ঝড়। কান্নাকাটি পুরুষকে মানায় না। তাই সে সেটাকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে।

আমি সত্যিই অবাক হলাম এই লোকটিকে দেখে। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য জিজ্ঞাসা, কেমন লাগছে লোকটির?

যে নারীকে সে বিয়ে করেছে একান্ত আপন করে নিতে। সে কিনা ভালবাসার সবটুকু আঁচল পেতে রেখেছে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া প্রাক্তন স্বামীর জন্য!

লোকটি কি বিব্রত? সে কি লজ্জিত? তার স্ত্রী তার সামনেই আগের স্বামীর ভালোবাসায় ডুবে থাকার গল্প বলছে।
আমার কন্ঠই থেমে গেল। কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম।

নীরাকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম, অনেক স্মৃতির অধ্যায় মিলিয়ে একটা জীবন নামক গল্প তৈরি হয়। দরকার কি সে গল্পের কোন অধ্যায় মুছে ফেলার?
আপনি অনেক হারিয়ে অনন্ত পেয়েছেন। আপনি তাই ভাগ্যবতী। স্বামী হারিয়ে বিয়ে করার গল্পটা এদেশে একেবারে সাধারণ। অসাধারণ শুধু নতুন স্বামীকে পাশে বসিয়ে হারিয়ে ফেলা স্বামীকে ভালবাসার সবটুকু অর্ঘ্য দিয়ে সাজানো।

লোকটির দিকে তাকালাম। মানুষ না। তাকে মহামানুষ মনে হল। সব শেষ। তবুও নীরার শুকনা মরুভূমিতে সবুজের চাষী সে! জীবন থেমে যায়, স্বপ্নরা গিয়ে অশ্রুতে লুকায়! অন্যের আঙিনায় দেহরা মেক আপে সাজে। মন শুধু হাতড়ে বেড়ায়। ফেলে আসা স্মৃতির দরজায়।
সব..সব কিছু একদিন স্মৃতি হয়ে যায়।
নীরারা বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে ভালবাসারা।

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

ষষ্ঠ এশিয়ান ‘কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ কনফারেন্স (বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী)

ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শেষ হল গত ১২ তারিখ সোমবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় (৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি) চারদিন ব্যাপী কনফারেন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী’ সিনেট ভবনে।

‘মেন্টাল হেলথ গ্যাপ ইন এশিয়ান কান্ট্রিজ : স্কোপ অব সিবিটি’ এ প্রতিপাদ্য নিয়েই ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শুরু হয়েছিল।

৯ তারিখ শুক্রবার ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান-এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন— ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

১০ই ফেব্রুয়ারি শনিবার এ সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, “দেশে এতো বেশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, শিশু-কিশোররা পর্যন্ত এত বেশি কম্পিউটার ট্যাব ব্যবহার করছে; এখান থেকে অনেক সময় তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে।”

১১ তারিখ রোববার ঢাবি সিনেট ভবনে সিবিটির কনফারেন্সের কর্মসূচিতে রয়েছিল— ট্রমা, সিবিটি, সাইকিয়াট্রি প্রাকটিসেসসহ সাইকোসিস, নিউরো সাইকোলজি, হেলথ সাইকোলজি, সাইকোথেরাপির বিভিন্ন , কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজ, কম্পিউটারাইজড সিবিটি, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা উপস্থাপন ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে। কনফারেন্সের সেই দিনে উপস্থাপক হিসেবে কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকগণ তাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা ফলাফল তুলে ধরবেন।

গত সোমবার অর্থাৎ ১২ ই ফেব্রুয়ারি সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ আরোও কয়েকটি কর্মশালা।
যুব-সমাজকে মাদক থেকে রক্ষায় মনোবিজ্ঞানীদের করণীয় ও মাদকাসক্ত ব্যক্তির সুস্থতায় কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। কনফারেন্সে মনোবিজ্ঞানীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বাড়ানো এবং সহৃদয় ব্যক্তিত্ব ধারণ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা।

৬ষ্ঠ সিবিটি কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞরা। ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্তদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনসহ মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন কৌশল কনফারেন্স এ অংশগ্রহণকারী বক্তব্যে উঠে আসে।

যুক্তরাজ্যের ক্লিনিক্যাল নিউরো সাইকোলজিস্ট ডেভিড এ কুইন, কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কিথ ডবসন, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াং হেউ কুন, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিয়ান পো ওয়েই, এশিয়ান সিবিটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়ুং-হাই কুন, কানাডা প্রবাসী চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী সায়েদা নাফিসা বানু, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখসহ আর অনেক বিশিষ্ট্য ব্যক্তি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হবে। উঠে আসবে গুরত্বপূর্ণ অজানা তথ্য। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে।

এই কনফারেন্সটি আয়োজন করেছিলেন বাংলাদেশ ক্লিনিকেল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস), নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট (এনপিইউ) ও এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি এসোসিয়েশনের (এসিবিটিএ) সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে কনফারেন্স এর সর্বশেষ অভিব্যপ্তি প্রকাশ করেন,

“সব কটা জানালা খুলে দাও না:
আজ যেন আমাদের বিজয়েরই দিন। এই বিজয় শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির নয়। এটি বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের বিশ্বজয়।

গত চার দিনের কর্মযজ্ঞ এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ এবং অষ্ট্রেলিয়া থেকে আসা ডেলিগেটদের কাছে প্রমান করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী। গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা নিয়মিতভাবেই জাতীয় পর্যায়ে কনফারেন্স করে আসছি এবং সবগুলোই ভীষনভাবে সমাদৃত হয়েছে। তবে এবারের কনফারেন্সের ব্যাপারটা বেশ ভিন্ন।

চমৎকার সব ‘কী-নোট’, ওয়ার্কশপ আর সিম্পোজিয়ামে পরিপূর্ন ছিল চারটি দিন। দেশের মনোবিজ্ঞানীরা বিদেশীদের সাথে সমানতালে গবেষনা পত্র উপস্থাপন করেছে, ‘কী-নোট’ দিয়েছে, আর সিম্পোজিয়াম এবং আন্তর্জাতিক মানের ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা যখন আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষনার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশংসা করছিল ওদের শরীরের ভঙ্গীই বলে দিচ্ছিল যে তারা বানিয়ে বলছে না।

এটি কখনোই সম্ভব হত না যদি সারা বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের সঙ্গে না থাকতেন। আট তারিখের অমন থমথমে পরিস্থিতির চাপে যদিও আমাদের ব্যাবস্থাপনায় বেশ কিছুটা নেতিবাচক ছাপ পড়েছিল, কিন্তু মনোবিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসার শক্তিতে এই ছাপ ওনাদের কারো মনেই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের নানা জায়গা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের চকচকে চোখে যে স্বপ্নের ছোয়া দেখেছি – মনে হচ্ছিল এই স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।

ক্লান্তিহীন স্বেচ্ছা-সেবকের দলের দিকে যতবারই তাকিয়েছি – একগুচ্ছ হাসি ছুটে এসেছে। ঢাকা কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজ, ইডেন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরাও কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসের এই মাইলফলকটি অর্জনের জন্য।
এই বিজয়ে আমাদের সেনাপতি ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক শাহানুর হোসেন আর পদাতিক ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ ২২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা – পাশাপাশি তাদের পুর্বসুরী ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে হেটে গেছে পুরোটা পথ। ওরা প্রমান করেছে ভাল কাজের জন্য ভাল ইচ্ছা আর পরিশ্রমই যথেষ্ট আর যদি সাথে থাকে জহির ভাই আর মাহমুদ স্যারের মত নির্মোহ নেতৃত্ব তাহলে যে কোন অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।

অনেক গুলো নাম নতুন করে মনে করিয়ে দিল তাদের উপস্থিতি কতটা জরুরী, অনেকগুলো নতুন নাম হৃদয়ে গাঁথা হয়ে থাকবে, আর অনেকগুলো নাম না জানা মানুষের মুখচ্ছবি মনের মধ্যে আকা হয়ে থাকবে। হয়তো কখনোই বলা হবে না তাদের ভালবাসা, তাদের অবদান কত দারুনভাবে অনুভব করছি।

মীর ফখরুজ্জামান স্যারকে দেখিনি, রোকেয়া ম্যাডাম আর আনিসুর রাহমান স্যারকে খুব কাছ থেকে জেনেছি। এ কয়েকদিন অনেক বার মনে হয়েছে তাদের কথা। আজ না হয় জানালা গুলো খোলাই থাক ওঁদের জন্যে।

দুইদিনব্যাপী কনফারেন্সে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে এটিএন বাংলা, আমাদের সময়, রেডিও স্বাধীন, জাগোনিউজ ২৪ ডটকম। ইয়ুথ এনগেজমেন্ট পার্টনার হিসেবে রয়েছে ডেইলি স্টার ইয়ুথ ফোরাম। (অপরাজিতা:http://oporajitabd.com)

 

ভালোবাসার জাদুকরী মহিমা

আজহারুল ইসলাম


বিবাহিতরা ভালো সৈনিক হতে পারে না, এই অজুহাতে ২৭০ খৃস্টাব্দের দিকে রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তরুণ-তরুণীদের বিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু ধর্মযাজক ভ্যালেন্টাইন গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের উৎসাহিত ও বিয়ের ব্যবস্থা করতে থাকেন। খবর পেয়ে সম্রাট তাঁকে কারারুদ্ধ করেন। সম্রাট অবশ্য ভ্যালেন্টাইনের প্রত্যয় ও প্রেমের প্রতি অবিচল বিশ্বাসে মোহিত হয়ে শর্তসাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। শর্ত হিসেবে তাঁকে খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে রোমান দেবতার প্রতি অনুরক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। ভ্যালেন্টাইন রাজি হননি বরং সম্রাটকেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানান। পরিণতিতে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপনের রেওয়াজ চালু হয়েছে।

অবশ্য, এই কাহিনী তথা ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, একে জড়িয়ে বিশ্বব্যাপি ব্যবসা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপোযোগিতা নিয়ে রয়েছে ম্যালা বিতর্ক। আমরা সেদিকে যাব না। কীভাবে এলো, কারা আনলো ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও যে বিষয়কে কেন্দ্র করে এই দিবস সেই ‘ভালোবাসা’ কিন্তু সার্বজনিন। স্থান, কাল, পাত্র বা জাত-গোষ্ঠীতে বিভাজন বা পার্থক্য থাকলেও ভালোবাসা উপলব্ধি বা আকাঙ্ক্ষায় কারো আগ্রহের কমতি নেই। সেই ভালোবাসা নিয়েই আজকের আলোচনা।

‘ভালোবাসা কাকে বলে?’ সম্ভবত অতি পুরাতন কিন্তু সবসময়ের আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় প্রশ্ন। যুগে যুগে হাজারো কবি, সাহিত্যক, দার্শনিক আর অধুনাকালে বিজ্ঞান সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। সেই চেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে কোনও সন্দেহ নেই। কোন সাধারণ বা সরল সূত্র দিয়ে ভালোবাসাকে প্রকাশ করা খুবই দুরহ। ভালোবাসার অনুভুতি অনেক বেশি ব্যাক্তি-আপেক্ষিক। এই অনুভুতির সূত্র ধরে বলা যায়, ভালোবাসা একটা আবেগ যেটা ভীষণভাবে অনুভুত হয়। যেমনটা হয়, ঘৃণার বেলায়, দুঃখের সময় অথবা রাগান্বিত হলে। তীব্র অপছন্দ থেকে ঘৃণা তৈরি হয়। আমরা অপছন্দের জিনিস বা ব্যক্তি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। সেটার কোন মঙ্গল চাই না। বরঞ্চ ধ্বংস হলেই ভালো। অন্যদিকে, ভালোবাসা হলো কাছে টানার, একত্রিত হওয়ার, বিকশিত হওয়ার আবেগ। এই আবেগ সামান্য কিছু সময় থেকে অনেক বছরব্যাপি উপলুব্ধ হতে পারে। বিজ্ঞান বলছে এগুলো আমাদের প্রাথমিক আবেগ যা সবার মাঝে থাকে। মস্তিস্কে লিম্বিক সিস্টেম নামে একগুচ্ছ ব্রেইন স্ট্রাকচার রয়েছে যা মুলত এই আবেগগুলোর জন্য দায়ী। আর আবেগগুলো দায়ী সৃষ্টি অথবা ধ্বংসে।

অন্য মানুষের অন্দরমহলে কী ঘটছে, কী চাচ্ছে সে অবচেতনে সেটা বুঝতে সাহায্য করে আমাদের আবেগ। আমরা অন্যের অনুভুতি খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারি এবং সে অনুসারে নিজের চিন্তা, অনুভুতি, অথবা কার্যক্রম সাজিয়ে ফেলি। এই বিষয়টাকে শারীরবিদরা নাম দিয়েছেন ‘লিম্বিক অনুরণন’ (Limbic Reasonace)। অবাচনিকভাবে এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সাথে পরস্পরের আবেগ অনুভুতিগুলো বিনিময় হয়ে খাপ খেয়ে যায়। এই আবেগীয় খাপ খাওয়াটাই আসলে ভালোবাসা। আর এই জন্যই বুঝি দু’জন দু’জনের সান্নিধ্য বা তাকিয়ে থাকার মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা চরমভাবে পুলকিত হন। চোখ যে মনের সদর দরজা। এভাবে একটা গভীর, আন্ত-ব্যাক্তিক সম্পর্ক তৈরি হয়, অনেকটা অবচেতনে। অন্যের আবেগীয় চাহিদাগুলো বোঝার এবং সেই অনুসারে আবেগীয় প্রতি-উত্তর দেয়ার ক্ষমতার মধ্যে একটা ছান্দিক মিলন ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করে। সেটা হতে পারে মায়ের সাথে শিশুর অথবা প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে।

ভালোবাসার ধরনের মধ্যেও ভিন্নতা থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা একটা সাধারণ সূত্র দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যেখানে পরিপূর্ণ ভালোবাসাকে দেখা হচ্ছে চরম আবেগ, প্রতিশ্রুতি আর পারস্পরিক অন্তরঙ্গের সুষম মিশ্রণ হিসেবে। অনেকটা সমবাহু ত্রিভুজের তিন বাহুর মতো। যদি, তিনটা বাহু সমান না হয়? তাহলে, ভালোবাসা হবে তবে অসম্পূর্ণ। যেমন, শুধু অন্তরঙ্গ থাকলে সেটাকে পছন্দ বলা যায়। আবার ভালোবাসায় বিমুগ্ধদের মধ্যে শুধু তীব্র আবেগ থাকে, প্রতিশ্রুতি, অন্তরঙ্গের বালাই নেই।

একজন মানুষ ভালোবাসায় পড়লে বা ভালোবাসা পেলে কী অনুভব করে? লেখক-নির্মাতারা সুচারুভাবে সেই চিত্রায়ন করার প্রয়াস চালিয়েছেন বা যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। আমরা দেখেছি, প্রেমে পড়লে মানুষকে একটু বোকা অথবা সাহসী হতে। অন্যসব চিন্তা বা কাজকর্ম ফেলে শুধু ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে। একটা অদৃশ্য কিন্তু স্পস্টত অনুমেয় ঘোরের মধ্যে থাকতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা ব্রেইন এর পরীক্ষা (এফএমআরআই) করে দেখেছেন এ সময় প্রেমিক-প্রেমিকার মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কডেট অংশ উদ্দীপ্ত হয়ে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটে। অবশ্য অন্য কোনও কারণেও শরীরে ডোপামিন বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, ড্রাগ। আবার এই ঘোর দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় না। হয়তোবা, এই ঘোর রূপান্তরিত হয় সচেতনতায়, সামাজিকতায়।

পরিপূর্ণ ভালোবাসায় মগ্ন একজন মানুষের দেহ ও মন দুটোতেই ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সে তার ভেতরের আবেগ অনুভূতিগুলোর সাক্ষাৎ পায় অন্যের ভালোবাসার মাধ্যমে। বুঝতে পারে ‘আমার আমি’কে। নান্দনিক সৌন্দর্য তাকে যেন শীত কালে গরম চাদরের মতো মুড়িয়ে রাখে। সঙ্গত কারণেই অন্য নেতিবাচক আবেগগুলো দুর্বল হতে থাকে। রাগ, দুঃখ, ঘৃণা, ক্রোধ ব্যপকভাবে হ্রাস পায়। ফলে, নিজের প্রতি আস্থা বেড়ে যায়। নিজেকে মুল্যবান ভাবতে পারে, নিজের গুরুত্ব বুঝতে পারে। একবুক সাহস নিয়ে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে থাকে। এতদিন শুধু অন্যদের রোল মডেল ভাবতো, এখন নিজেকেও তাদের মতো ভাবতে পারে।

পরিপূর্ণ এই ভালোবাসার জন্য উভয়ের মধ্যে সমানভাবে আবেগীয় অনুরণন (Emotional Reasonance) হওয়া আবশ্যক। তার উপস্থিতি, স্পর্শ, চোখ, ঘ্রাণ যদি আমাকে মোহিত না করে, পুলকিত না করে, তাহলে সেই ভালোবাসায় সম্পূর্ণতা আসে না। অনেককে দেখা যায়, ভালোবাসার জন্য বাজারের লিস্টের মতো বিশাল লম্বা একটা ক্রাইটেরিয়ার ফর্দ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। হেলদি, ওয়েলদি এন্ড ওয়াইজ হতে হবে, লাগবে অমুক, থাকতে হবে তমুক। প্রকৃত ভালোবাসায় এসবেই কী মুখ্য? এসব শর্তযুক্ত ভালোবাসায় স্বস্তি থাকে না, থাকে শংকা। যদি শর্ত পূরণ না হয়? নিজেকে না জেনে, নিজের মনের কথা না শুনে, অন্যের আবেগ না বুঝে, শুধু ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ভালোবাসার জন্য হুরুহুরি করলে কোন লাভ হয় না। এতে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ভালোবাসার যাদুকরী মহিমায় জড়িয়ে পড়ার সুযোগ মানুষের জন্য একটি অপরিসীম পাওয়া। বিবর্তনবাদের মতে নিজের প্রজাতি রক্ষার তাগিদেই মানুষ ভালোবাসে, প্রণয় করে। কারণ যাই-ই হোক না কেন, ভালোবাসার অকৃত্রিম স্বাদ থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসাকে নিয়ে ভালোভাবে ভাবার সুযোগ করে দিবে, সবার মনে সঞ্চার করবে প্রেম, এই প্রত্যাশা রইল।

সহকারি অধ্যাপক
এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সুত্র: মনোযোগী মন।

 

মাতৃ কথন ১

ফারিনা মাহমুদ


সন্তানকে যেমন একজন মা জন্ম দেয়, সন্তানও তেমনি একজন “মা” এর জন্ম দেয়। দুটোকেই আমার সমান আনন্দের আর সমান বিষ্ময়ের মনে হয়।

আল্লাহ !! আপনার বাচ্চা এখনো ফিডারে দুধ খায়? আমারটা তো সেই কবে থেকে মুরগির রান নিজে চিবিয়ে খায়, আর কিছুদিনের মধ্যে গরুর রানও পেরে যাবে ইনশাল্লাহ।

অথবা,
এখনো মাত্র আড়াইটা দাঁত উঠেছে ? আমার বাবুর তো আক্কেল দাঁতও উঠলো বলে।

মা মাত্রই এই কথাগুলোর সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। এর ফলাফল, নিজে হীনমন্যতায় ভোগা, এক বাচ্চার সাথে আরেক বাচ্চার তুলনা করে
“আমি কি ভুল করলাম”
জাতীয় মানসিক চাপের মধ্যে ডিপ ফ্রাই হওয়া ।

বাস্তব হলো, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে:
নো টু চাইল্ড আর সেইম । একেকটা বাচ্চা একেক বয়সে একেক রকম ভাবে বড় হয়, শরীর ও মন দুই দিক থেকেই।

যেটা লক্ষ্য রাখা দরকার তা হলো, নির্দিষ্ট বয়স সীমার মধ্যে ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোনের কতোটা কাছাকাছি বা দুরে আপনার বাচ্চা এবং এই সংক্রান্ত সঠিক বৈজ্ঞানিক পরামর্শ আপনি সঠিক মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছেন কিনা।

অনাবশ্যক মানুষজনের অকারণ পাকনামি কানে ঢুকলে তা কান পর্যন্তই থাকতে দিন, মাথায় ঢুকতে দেবেন না । আমি তো আমার বাচ্চাকে কোনদিন সন্ধ্যায় গোসল করাইনি অথবা আমি তো ৩ বছর বয়স পর্যন্ত খাবার ব্লেন্ড করে খাইয়েছি- এইসব থিওরি আসলে যার যার নিজের লাইফ স্টাইলের সাথে যায়।

পৃথিবীর হাজার হাজার মা বাচ্চাকে মাইনাস তাপমাত্রার মধ্যেও রাতে গোসল দিয়ে ঘুম পাড়ায় (আমি নিজেও তাই করি) অথবা ছয় মাস বয়স থেকে ফিঙ্গার ফুড দেয়া শুরু করে (আমি দিতে পারি নাই কারন আমার বাচ্চা চোক করতো এবং আমি ভয় পেতাম ওর গলায় খাবার আটকে গেলে) । কোনটাতেই মহাভারত রামায়ন অশুদ্ধ হয়ে যায় নাই।

কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ব্লেন্ড খাবে না আবার কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ঘড়ি ধরে দুপুর ১২ টায় গোসল করবে না ।
কাজেই – বাচ্চা বড় করার তরিকায় কোনো রাইট এন্ড রং নাই।

শুনতে হবে সবারটাই কিন্তু মানতে হবে বাস্তবে নিজের জীবনের সাথে যা ভালো খাপ খায়। ঠিক সেটায়।

 

ভালবাসা দিবসে ‘বন্ধু নির্বাচন’ (কাছে আসার গল্প)

রায়হান শরীফ


লিমা কলেজে এসেই আজ শরীফকে খুঁজছে। না,আজ শুধু নয় প্রতিদিনই তো খোঁজে। তবে আজ খোঁজার কারণটা আলাদা, অনেকটা পাগলের মত হন্যে হয়ে খুঁজছে।

সহপাঠি একজন বললো তাকে বটগাছের তলায় একা বসে থাকতে দেখেছে। হু একাই তো বসে থাকবে। তার কি অন্য কোনো বন্ধু আছে যে তার সাথে ঘুরবে?

আনমনে এসব ভাবছে, লিমা?

আসসালামু আলাইকুম..
শরীফ চমকে উঠেছে লিমাকে দেখে,,,,
অমাবস্যার রাতে যদি চাঁদ দেখত হয়তো এতটা চমকে উঠত না শরীফ। লিমাকে আজ প্রথম দেখছে তা ত নয়! লিমার আচরণ ও গায়ে পরা জামা কাপড়ের ধরণ দেখেই শরীফ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

যে মেয়ে জিন্সপ্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট ছাড়া কখনো জামা পড়েনি। তার আজ এত পরিবর্তন?

আজ লিমা অতি সাধারণ একটা জামা পড়েছে। ওড়না দিয়ে মুখের চারিপাশ ডেকে রেখেছে। তবে মুখটাই শুধু খোলা। আবার মুখে সালাম? জীবনে কখনো তার মা-বাবাকে সালাম দিয়েছে বলে শরীফের বিশ্বাস হয় না। শরীফ এতক্ষণ পাথরের মত তাকিয়েই ছিল। লিমা তার বাহুতে মৃদু আঘাত করায় তার ঘোর কাটলো।

কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
আমাকে কি নতুন দেখছিস নাকি? গত তিন বছর তো একইসাথে ক্লাস করছি কখনো চোখে চোখ রেখে কথা বলিস না
আজ কি হয়েছে?

নাহ্! কিছু না। বস। কেমন আছিস বলল, শরীফ বললো!
লিমা বলল, আমি তোর গায়ে একটু হেলান দিয়ে বসতে পারি?

অন্যদিন হলে শরীফ না বলে পাঁচ হাত দূরে সরে যেত। কিন্তু আজ কেন জানি লিমাকে দেখতেই মায়া হচ্ছে। লিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড বেশি অসহায় লাগছে। লিমার মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে, মুখে কিছুই বললো না শরীফ, শুধু হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে গেল!

একটু পরে শরীফ জিজ্ঞেস করলো তুই এই দুইদিন কোথায় ছিলি? তোকে দুইদিনব্যাপী ক্যাম্পসে না দেখে কালকে তোর মেসের ওই দিকে গিয়েছিলাম। তোদের মেসের দিকে তো কখনো যায়নি। আর যাবই বা কেন? ছাত্রীদের মেসেতো যাওয়া নিষেধ।

তাহু (সহপাঠি তাহমিনা) বললো তুই ঘুমাচ্ছিস, তাই চলে আসলাম।
আর তোর ফোনটাও বন্ধ। কেন ছিল?

১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টায় যে ফোন দিলি তার পর তো তোর কোন খবর নেই।
প্রতিদিন তো সকাল ৭ টা বাজতে না বাজতেই ফোন না ধরা পর্যন্ত দিতেই থাকিস। তোর জ্বালায় ফজরের পর সকালে একটু ঘুমাতে পারি না। অবশ্যই এই দুই দিন শান্তিতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি। তবে তোর কলকে খুব মিস করেছি! ওই দিন পার্টিতে গিয়েছিস তাই না?

=এই লিমা, আমার কথা তোর কানে যায় না!

আর রায়হান(সহপাঠি) তাকেও ওই দিনের পর এই দুই দিন দেখছি না। বলতে পারিস ও কোথায়? তুই তো বেশির ভাগ সময় ওর সাথেই থাকিস!

=কিরে কথা কস না কেন! লিমা এতক্ষণ কিছু শুনছে নাকি আবার চোখে ঘুম চলে আসছে ওর।

লিমার, রায়হানের নাম শোনা মাত্র বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে মোচড় দিয়ে উঠল। তাৎক্ষণিক শরীফের গা থেকে মাথাটা সরিয়ে নিল।

লিমার মুখটা হঠাৎ কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে গেল, চাঁদের মত মুখটা কেমন অন্ধকারে চেয়ে গেল। চোখ কেমন ছল ছল করে উঠলো, এই বুঝি পানি গড়িয়ে পড়ল কিছুই বলছে না লিমা।

মনে পড়লো ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার কথা। ভালোবাসা দিবসে পার্টিতে গিয়ে ছিলো রায়হানের সাথে।

আনন্দে মেতে উঠেছিলো লিমা,রায়হান সহ হাজারো তরুণ-তরুণী, কিছু ড্রিংক্স না হলে তো পার্টিতে আবার আনন্দ মাটি।

রায়হান-লিমা পার্টি শেষে বাসায় ফিরতে বের হল।

লিমার মাথাটা কেমন যেন ধরেছে বেশ।

রায়হানকে বলতেই সে বললো, চল আমার বাসায়, তা ছাড়া এত রাতে তো তোর মেসের গেটও খুলবে না।

লিমারও মাথা ব্যাথার জন্য বেশি কিছু না বলে রায়হানের গাড়িতে সে উঠে বসল রায়হান পাশে। মাথার ব্যাথাটা এতই বেশি করছে যে, বাসায় কে আছে কি নাই তা দেখার সময়ও ছিল না লিমার।

রায়হান রুম দেখিয়ে দিয়ে অন্য রুমে যেতেই লিমা ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল হল, লিমা তার বিবস্ত্র শরীরটা দেখে বুঝতে বাকী রইলো না ওর কাল রাতে কি ঘটে ছিল তার সাথে? কেনই বা কাল রাতে লিমার মাথা ব্যাথা করলো? সেতো এই প্রথম ড্রিংক্স নেয়নি! কত হাজার বার সে ড্রিংক্স নিয়েছে নিজেরও হিসেব নেই। কাল রাতে রায়হান যে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে তা এখন পরিষ্কার।

লিমা রুম থেকে বেরিয়ে সামনের রুমে এসে এক মহিলার দেখতে পেল। এর আগে কখনো আসেনি তাই কাউকে চিনে না সে।

লিমা বললো, আপনি রায়হানের কে?
মহিলাটি বললো, আমি রায়হানের মা।

সকালে উঠেই কোথায় যেন গেল বললো কি যেন কাজ আছে কয়দিন পর ফিরবে বন্ধুদের সাথে গেল।

আসো নাস্তা করে নাও!!
লিমা বললো না,আমারো কাজ আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

অন্য একদিন, এই বলেই চলে আসলো,
রুমে এসে কত যে কেঁদেছে লিমা। আর ভেবেছে বন্ধুত্বের দাম এইভাবেই দিলো রায়হান? আমার সরলতা নিয়ে খেলা করেছে রায়হান। কেন?

বিষ খেতে চেয়েছিলো লিমা, গলায় ফাঁসিও দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারেনি।সবসময় হাসিখুশি থাকা মেয়েগুলো তা পারে না হয়ত!

=কিরে কথা বলিসনা কেন??

শরীফের কথায় লিমার স্বরণ এলো সে শরীফের পাশে বসে আছে, না কিছুই বললোনা সে।
সে ভাবছে তার সাথে যা ঘটেছে তাকি তার “নিয়তি না পাপের ফল”?

=শরীফের দিকে না তাকিয়ে শুধু বললো, চল!! ভালো লাগছে না আজ। তোর হাতটা ধরে হাটতে পারি?

দুই জনে উঠে ক্যান্টিনের দিকে হাটতে লাগলো হাতে হাত রেখে। লিমার মনে হচ্ছে এটাই বিশ্বাসের হাত, বন্ধুত্বের হাত এটাই। ভুল করেছি, বড্ড বেশি ভুল করেছি জীবনে। বন্ধু নির্বাচনে বড় বেশি ভুল হয়ে গেছে!

যে ভুলের জন্য কোনো দিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না লিমা।

 

হলুদিয়া হাট

আখতারুজ্জামান সেলিম


সে যে আমায় খবর দিলো
আজকে অনেক ফুল ফুটেছে;
বটতলা আর বই মেলাতে
হলুদিয়া হাট বসেছে।
কুঞ্জ বনের কোকিলেরা
ব্যাকুল স্বরে ডাক দিয়াছে।
শাহাবাগের পুষ্পদামে
গাদা ফুলের দর বেড়েছে।
কিন্তু আমি ব্যস্ত অনেক
হয়নি দেখা দিনের আলো
বন্দী পাখি আপন নীড়ে
তা দিতেছে পরের ডিমে।
আমি নাহয় একাই থাকি
বসন্তের এই প্রথম দিনে;
রং এর বাহার সবার মনে
শয্যা ঢাকুক গোলাপ ফুলে।

 

অন্যরকম বসন্ত বরণ

গাজী আনোয়ার শাহ্


আমার বসন্ত আছে, কৃষ্ণচূড়া আর দক্ষিণের সমীরণও আছে।
হলুদ বা লাল পাঞ্জাবী নেই,
বাদামি রঙের হালকা প্রচ্ছদে বই আছে। যেটি স্বর্গের একটি টুকরো বলে মনে হয়।

এই পৃথিবী ভালোবাসা আর ভালো লাগার প্রাণ কেন্দ্র তখনি হবে যখন মানুষ বুঝতে শিখবে আমরা মানুষ!
আমাদের নিজস্বতা আছে, সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে।

আজকের হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আমাদের কোমলতা, হৃদয়ের অনুভব। তাই সে হারিয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরে পেতে আমাদের একমাত্র নির্ভরযোগ্য নিবাস হওয়া চাই লাইব্রেরী।

যেখানে হাজারো লাল কৃষ্ণচূড়া, লাল গোলাপ, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধারা রয়েছে। সে গোলাপের নাম বই”।

বই” যে ফুল কখনো তার সৌরভ হারায় না,
লাইব্রেরী ঐ বসন্ত যেখানে শীতের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।
এখানে সুরের মোহনায় হরিয়ে যাওয়া যায়।
বসন্ত তার রাজসম্মান এখানেই পাবে।

হীরাতে যেমন কোন খাদ থাকে না, তেমনি এই বসন্তে কোন খাদ নেই। ভালোবাসার অতিশয্যটা এখানেই যৌবন পায়।
সব বিষণ্নতাকে অবাঞ্ছিত করে বসন্তের সুখ দেয় পাঠক মনে।
এটি আমি নির্বিবাদে মেনে নেই।
এটি একটি গোলাপী স্বপ্ন।

জীবনের বিক্ষুদ্ধ ঢেউগুলোর আঘাতে একেবারে অবিচলিত হওয়া মানুষটি যখন পাশে কাউকে পায় না একটি উষ্ণ প্রণয়ের অনুভূতি দিবে বলে,
তখন তাকে আমি চির বসন্ত গ্রন্থাগারে আমন্ত্রণ জানাবো।
তার রুদ্ধ দরজাটা সহসা খুলে যাবে। বেশভূষায় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে।

আজ ফুসকার দোকান বা রিক্সায় রাইডিং হবে না,
হবে সব দিনকার মত রিডিং।
বসন্তকে আমি,
আমি বসন্তকে আলিঙ্গন করে নিয়েছি সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে।

জীবন হোক সুন্দর সুশোভিত মনোহর, মনরোমা।
ভালো আর সুন্দরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ুক দক্ষীণা সমিরণে।
প্রতিটি দিন যেন রাঙ্গা থাকে ভালোদের আনাগোনায়।

বিদায়বেলায় লিখে দিবো কেবল……
তোমার অর্থ সম্পদ, দালান-ইমারত আর ঐশ্বর্যের ঈর্ষা করি না আমি,
প্রায়শই নজরুল ফররুখ স্বপ্নে দর্শন দেয় আমায় জানো না তুমি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ

 

ভলান্টিয়ারের চোখে ACBTC কনফারেন্স…

সুমাইয়া তাসনিম


এই শহরে কাকডাকা ভোর আসে কিনা তাও জানার সময় নেই, এমন ছিল ক’টা দিন। কেমন যেন চাপ অনুভব করি ভেতরে.. এর্লাম বাজার আগে ঘুম ভেঙ্গে যায়। যন্ত্রের মত উঠে গিয়ে সময় গুনে ফ্রেশ হয়ে রেডি হওয়া আর বেরিয়ে পড়ার জীবন। ভীষণ জ্যামে নাকাল হতে ভাল্লাগেনা আর। মিরপুরে এই জ্যামের মহামারী লেগে থাকবে অনন্তকাল..

দীর্ঘ জ্যাম পেরিয়ে ছোট্ট মিটিং শেষে ফুড বুথে। এই চারদিনে কতরকম মানুষ দেখলাম। সবাই সাইকোলজির সাথে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত। কাউকে নামে চিনি, কাউকে চেহারায়। বিখ্যাত মানুষজন যারা আছেন তারাও কিছুক্ষণের জন্য এসে ঢুঁ মেরে যান। ২য় দিন এলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তারপর দিন মোহিত কামাল, শেষদিন মেহতাব খানম। কলেজের ম্যামরা এসে বেশ খুশি। নিজেদের ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা কাজ করছে, কিছু লাগলে এগিয়ে আসছে দেখেই তাঁরা আনন্দিত। হাসিনা ম্যামকে এগিয়ে গিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করতেই কাধ চাপড়ে গাল টিপে দিলেন।
ফুডবুথের কাজটা একরকম মজার আবার স্ট্রেসফুলও বটে। খাবার নিয়ে মানুষের কতরকম মন্তব্য, পছন্দ অপছন্দ.. সেই এক মজার ব্যাপার। কফি নিয়েও মানুষের মধ্যে দারুণ উত্তেজনা। কি জানি, আমার চা-কফির নেশা নেই বলেই হয়ত আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে। চারদিনে হাজারখানেক কফি টোকেন হাত দিয়ে গেলেও এক চুমুকের বেশি কফি আমার মুখে রুচলো না।
ফুডবুথের কাজ মানেই মাথা অলওয়েজ ঠাণ্ডা। কারণ খাবার হাতে পেতে দেরী হলেই মানুষের মাথা গরম। :/
সবার খাওয়া শেষ হলে পরে আসে আমাদের পালা। সবার ছোট বলে ঠিকই খেয়াল করে “এই পিচ্চিটার ক্ষুধা লাগছে ওরে আগে দে তাড়াতাড়ি ” ইত্যাদি বলে সিনিয়ররা জোর করে আমাকেই আগে বসিয়ে দেয় খেতে।
কাজের সুবাদে আগে পরে কতজনের সাথেই জানাশোনা হলো। গত চার বছরে সাইকোলজির ফিল্ড রিলেটেড যত মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে প্রায় সবার সাথেই দেখা হলো, কথা হলো। পরিচয় হলো নতুন অনেকের সাথেই। কথায় কথায় ধর্মেন্দ্রদা জানালেন কক্সবাজারে কাজের অভিজ্ঞতা। জানালেন কাজের ভালো সুযোগ আর ঝুঁকির কথাও। রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে APA টিম সেখানে যাচ্ছে আগামীকাল।
চবির বড় আপু জানালেন মন্ত্রনালয়ে কাজের অভিজ্ঞতা। বললাম, সব সময় কাউন্সেলিং করা যায়? বললেন, “যখন মুড ভালো থাকেনা তখন ত ক্লায়েন্ট ফিরিয়ে দিতেই হয়। তবে এটাও মাথায় থাকে, ক্লায়েন্টের দরকারটা জরুরী”।
কাজ করতে করতে বলছিলাম, কতজনকেই চিনি জানি অথচ নাম মনে রাখতে পারিনা বলে কথা বলা হয়না। সাকিব ভাই বললেন, “আমদের সেন্স অর্গান কয়টা?
-৫ টা।
-কোনো জিনিস মনে রাখার ক্ষেত্রে তুমি যত বেশি সংখ্যক সেন্স অর্গান ব্যবহার করবা তত বেশি বিষয়টা মনে থাকবে।

জিনিসটা বইতে পড়ে মাথায় না থাকলেও এখন মাথায় বেশ আছে।
রাহাত স্যারের কথা বলতে ভালো লাগে। চিনতে পেরেই যে কোমল হাসি হাসলেন দেখে ভালো লাগলো খুব।
শেষ দিনে এসে মোখলেস স্যার সিন্সিয়ারিটির ভূয়সী প্রশংসা করে ভাসিয়ে দিলেন আর জোবেদা ম্যাম দিলেন অনেক অনেক ধন্যবাদ। লজ্জায় এতটুকুন অবস্থা।
সেশন এ্যাটেন্ড করলাম কয়েকটাই। তবে কাজের ক্লান্তিতে খুব একটা মাথায় থাকেনি কিছু। তবে আরেকটু ঝালাই করে নিলে আশা করি অর্জন নিতান্তই কম নয়। শেষদিনে ডাঃ জাং হায়ে চই আর সাংইয়ং চইর ডে লং সেশন এ্যাটেন্ড করে স্কিমা থেরাপি অনেকটাই পরিষ্কার হওয়া গেলো। দেখলাম ট্রানজেকশনাল এ্যানালাইসিসের কিছু থিউরির সাথে অনেক সামঞ্জস্যতা। তবে এ্যাপ্রোচটা ভিন্ন। বাইদ্যাওয়ে, সাংইয়ং চই অসাধারণ বক্তা এবং অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট করার ক্ষমতা দারুণ। বলা বাহুল্য, তিনি অত্যন্ত সুদর্শন একজন কোরিয়ান প্রফেসর।
সাং হায়ে ক্বং এর সেল্ফ ইমেজারি কনসেপ্টটা বেশ ইউনিক মনে হলো। বাকেট লিস্টে থাকলো।

৩য় দিন যখন মালয়েশিয়ান প্রফেসর ফেরদৌস মুখতার ঘোষণা এবং একটা ডকুমেন্টারি দেখানোর মাধ্যমে নেক্সট CBT কনফারেন্সের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন, তখন হঠাৎই ভীষণ মন খারাপ হলো। এমনকি চোখেই পানি এসে গেল। কাজ করতে বিরক্তি লাগে। মনে হয় কখন শেষ হবে, কখন অবসর হবো, কিন্তু শেষ হয়ে যাবার পর মনে হচ্ছে যেন ঈদের অপেক্ষায় ছিলাম, সেই ঈদ চলে গেল। খালি খালি লাগছে ভেতরে। মনে হচ্ছে আরো কত অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান নেওয়ার ছিল, নেওয়া হলো না..
শেষ তো হলো, এবার গালা নাইট। ৩য়দিন সন্ধ্যা থেকে আয়োজন ছিল টিএসসিতে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে সবাই মিলে ঝাল ঝাল ফুচকা খেয়ে গিয়ে দেখি অসংখ্য ছবি টানানো হয়েছে। সবাই মহা উৎসাহে সেসব কিনে নিচ্ছে। কালচারাল নাইটে ভীষণ শব্দে গানবাজনা চলছে। সেসব সহ্য হলো না। মাঠে নেমে খালি পায়ে ফুলের পাশে হাঁটতেই বরং ভালো লাগছিলো। খাওয়া শেষে কিছু ছবি তোলাতুলি শেষে টিএসসির সামনে রুহির সাথে বসে রইলাম। রাত দশটায় শাড়ি পরে টিসসিতে বসে থাকা আর অদ্ভুত সব প্রলাপ বকার রাত আমার জীবনে আর আসবে কিনা জানিনা। জীবনটা এত ছোট…

শেষদিনে বিদায়ের পালা। রুইয়াহ জড়িয়ে ধরে বলল, ১০.২০ এর ট্রেনে চলে যাচ্ছি। আর দেখা হবে কিনা জানিনা।
আড্ডা দিতে দিতে হাঁটতে হাঁটতে শিমু হঠাৎ বলল, সুমাইয়ারে একটা হাগ দিই। তারপর জড়িয়ে ধরে বলল, ভুলটুল করলে মাফ করে দিস। আমি খুব অবাক হলাম।
তারপর হেসে ফেললাম। এই মেয়ে এমনই আউলা। পথে যেতে যেতে রুহিকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি মানুষটা কেমন নিজের মত করে বলতো! সে বেচারি যেন লজ্জা পেলো! বললো, তুই সব সময় সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলিস। তারপর বলল, একটু মুডিও আছিস। হাহাহা..
শাহবাগের ফুল দেখতে দেখতে বাস ধরতে যাচ্ছিলাম দু’জনে। এত এত ফুল এসেছে কাল পরশুর চাহিদা মেটাতে… দেখলাম টিউলিপ ফুলের মত সাদা রঙের ফুল। এর আগে কখনো চোখে পড়েনি। অজস্র ফুলে ফুলে দোকান গুলো ভরে আছে।

ফিরতি পথে সিগনালে বসে জানালায় তাকাতেই দেখলাম একটা সাইকেল। হাল্কা গোলাপি রঙের সাইকেলের সামনের ঝুড়িতে রঙ মিলিয়ে কতগুলো গোলাপি প্লাস্টিকের ফুল। অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো দেখতে। লাগোয়া ঘড়ির দোকান পর্যন্ত দৃষ্টি প্রসারিত করতেই চোখে পড়লো ঘড়ি পছন্দ করতে থাকা গোলাপি টিশার্ট আর মাথায় গোলাপি ফুল লাগানো মেয়েটিকে। আমি সাইকেলের ছবি তুলছি দেখে আঢ়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি মনে মনে হাসলাম। কারো সাথে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে বৃষ্টির দিনে শহর ঘোরার চিন্তাটা বাদ দিয়ে নিজেই এমন একটা সাইকেল কিনে নিইনা কেন! আমার সাইকেলে ফুল থাকবে কিনা জানিনা, তবে একটা রঙিন উড়ন্ত বেলুন অবশ্যই বাধা থাকবে। একদিন এই শহর ছেড়ে হারিয়ে গেলে পলকা হাওয়ায় ভাসতে থাকা বেলুনটা আমায় সাহস দেবে…।

 

প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং; পর্ব-২

ফাতিমা খান


Stephen Covey এর লেখা ‘The 7 Habits of Highly Effective Families’ বইটা যখন পড়ি তখন তার প্রত্যেকটা কথা আমাকে যাদুর মত টানে। প্রায় ৩৮০ পাতার বইটার দু পাতা এগোই তো চার পাতা পিছিয়ে আবার পড়ি। ইচ্ছে করে পুরো বইটা এক চুমুকে গিলে ফেলি। অসাধারণ একটা বই!

নয় সন্তানের জনক এই লেখক বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে বাচ্চাদের সাথে কৌশলে “সুঅভ্যাস” গুলো গড়ে তোলার সহজ পথ বলে দিয়েছেন।

লেখকের টিপস এন্ড ট্রিক্স আসলে যে কত কাজে লাগল তা বাস্তবে দেখলাম, আমার ছেলেটাকে যখন সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফজর নামাজ পড়ে স্কুল যাওয়ার অভ্যাস করালাম। যদিও শীতকালে আমার ঘুমকাতুরে ছেলেটার জন্য কাজটা খুব সহজ ছিল না। ভেবেচিন্তে জাওয়াদের সাথে একটা চুক্তি করলাম। দুটো কাজের জন্য প্রতিদিন তার জন্য দুই রিয়াল বরাদ্দ থাকবে, কিন্তু প্রতিদিন সে টাকা হাতে পাবে না। উইকেন্ডে পুরো সপ্তাহের সঞ্চয় তার হাতে আসবে সাথে থাকবে আরো ছয় রিয়াল বাড়তি। কিন্তু যদি সে দিনের টাকা দিনে নিয়ে নেয় তাহলে বাড়তি টাকাটা পাবেনা। প্রথম প্রথম কাজটা কঠিন ছিল কিন্তু এভাবে শুধু দুই সপ্তাহ…। তারপর থেকে ছেলের অভ্যাস হয়ে গেছে। ছুটির দিনেও তার ভোরবেলা গোসল আর নামাজ বাদ যায়না আলহামদুলিল্লাহ।

বোনাস হিসেবে আরেকটি ছোট অভ্যাসও কিন্তু তৈরী হয়ে গেল, তা হল টাকা “সঞ্চয়ের অভ্যাস”। প্রতিদিন তাকে দুই রিয়াল দেওয়া হলে সেদিনই সে হয়ত বিনা প্র‍য়োজনেই খরচ করে ফেলত, কিন্তু উইকেন্ডে অনেকগুলো টাকা একসাথে পাওয়ার পর আমি তাকে বলেছি ওর আর্ট বা পেইন্টিং এর জিনিসগুলো যেন সে ইচ্ছেমত কিনে নেয়। সঞ্চয়ের বা মিতব্যয়ীতার যে বীজটি আপনি এখন বুনে দিলেন তা কিন্তু থাকবে আজীবন।

প্রি-টিনেজারদের মাঝে একটু একটু করে “দায়িত্ববোধ” জাগিয়ে দেওয়া উচিত যা শুনতে বা বলতে খুব সহজ হলেও করাটা বেশ কঠিন। আমার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমি পয়েন্ট কালেক্ট করার সিস্টেম চালু করেছি। যেমন যেকোন একটা কাজের জন্য ১০ পয়েন্ট করে পাবে। যদি ছোট ভাইকে কোন কাজে (যেমন হোময়ার্ক করা, খাওয়া, ড্রেস আপ ইত্যাদি) সাহায্য করে তাহলে আরো ১০ পয়েন্ট যোগ হবে। সপ্তাহ শেষে পয়েন্ট সব যোগ করা হবে, অতঃপর মিনি পার্টি বা ছোট উপহার দেওয়া হবে। তাদের উদ্যমও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে কখনো আবার মুডের উপর ও নির্ভর করে। সব দিন একইরকম হবেনা এটাই স্বাভাবিক।

দায়িত্বের শুরুটা হয় তাদের নিজেদেরকে দিয়েই। যেমন নিজের কাপড়, জুতা, বইখাতা, টেবিল চেয়ার গোছগাছ করা থেকে শুরু করে খাবার পর নিজের প্লেট গ্লাস টা ধুয়ে জায়গামত রেখে দেওয়া। সোজা কথায় “আত্ননির্ভরশীলতা” অভ্যাস করানো। একদিনে বা একবারে সব কাজ করতে না বলে একেক দিন এক একটা কাজের ট্রেনিং দেওয়া হলে ওরা কাজে আনন্দ ও বৈচিত্র খুঁজে পাবে।

আমি অবশ্য ওদের ছোটখাট চেষ্টাগুলোর জন্য মাঝে মাঝে “সারপ্রাইজ গিফট” দেই। এতে আগ্রহ বাড়ে। চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো পুরাপুরি ছেলেকে এই ব্যাপারে পারদর্শী করতে পারিনি।

আমরা বেশীরভাগ বাবা-মারা নিজেদের অজান্তে প্রায়ই একটা ভুল করি, যদিও আমাদের উদ্দেশ্য খারাপ না। বাচ্চাদেরকে কোন কাজে অভ্যস্থ করতে বা আরো বেশী পারদর্শী করতে তার সমবয়সী বা পাড়া পড়শীদের মধ্যে কারো “উদাহরণ দিয়ে কথা” বলি। যেমন – অমুক দেখেছ কত ভাল রেজাল্ট করেছে অথবা দেখেছ অমুক বাবা মাকে কত সাহায্য করে ইত্যাদি। আবার কখনো অন্যদের সামনেই বাচ্চাকে তার ভুলের জন্য “তিরষ্কার করি”। এ ধরনের আচরণগুলো তাদের মন মস্তিষ্কে এত গভীর ক্ষত তৈরী করে যার প্রভাব সারা জীবন থেকে যায়।

প্রত্যেকটি বাচ্চা ইউনিক, আপন গুনাগুনে অদ্বিতীয়। সবাই তারা নিজেদের বাবা মায়ের কাছে ‘ওয়ান এন্ড অনলি’ হতেই পছন্দ করে। তাই ওদের হতাশ হতে দিবেন না। রবিঠাকুরের ওই কবিতার লাইনটা মনে আছে তো ”খোকা বলেই ভালবাসি, ভাল বলেই নয়”! (চলবে)

লেখিকা কর্মরত আছেন: হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

ভালো বাবা মা হতে হলে

ফাতেমা শাহরিন


সন্তানদের লালনপালন করা অত্যন্ত কঠিন এবং একই সাথে আনন্দের কাজ। সুতরাং একথা না বললেই নয় যে, ভাল বাবা-মা হয়ে ওঠার বিষয়টি বিশাল পরিকল্পিত বিষয়।

ছোট্ট একটি ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখি আসুন, যা আমার ভাবনার দোর খুঁলতে সাহায্য করেছে।

“তখন আমার মেয়ে-দুটো অনেক ছোট। একটা বয়স থাকে না, বাচ্চারা কিউট করে অনেক অনেক অনেক কথা বলে। একদিন মেয়ে এসে বলে:

– বাপু তুমি কি করছো?
– লেখাপড়া করছি আম্মু।
– কেনো লেখাপড়া করছো?
– কারণ আমি ভালো বাবা হতে চাই।
– (হাসতে হাসতে) তুমি তো বাবা হয়েই গেছো।
– বাবা হতে লেখাপড়া করতে হয় না, তবে ভালো বাবা-মা হতে হলে কিছু পড়ালেখা করতে হয় আম্মু।
– ও, তুমি ভালো বাবা হতে চাও? তুমি তো ভালো বাবাই.. (মেয়ের হাসি চলতেই থাকে…)।” (শিবলী মেহদী)

অর্থাৎ সন্তানের বাবা-মা হতে হলে শিখতে হয়। পড়তে হয় ‘বই’। তা না হলে, মা-বাবা এবং বাচ্চা, উভয়ের জন্যই বিপদ। প্রথম মত, বাবা-মা একটি চলমান শিক্ষণীয় প্রক্রিয়া। সন্তান জন্মের পর আশেপাশে থেকে অনেক রকম উপদেশ আসে। আজকে সেই সব উপদেশগুল কতটুকু গ্রহণযোগ্য এবং কতটুকু ক্ষতির কারণ হতে পারে?
আসুন দেখি…

সন্তানের কান্না

সন্তান কান্নাকাটি করলে বাচ্চাকে কোলে নিতে নিষেধ করা হয়। বলা হয় কোলে নেওয়া হলে তার অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে। শৃঙ্খলা শেখানোর পদ্ধতি হিসেবে কান্না করতে দিতে বলা হয়। কিন্তু সবসময় এই উপদেশটি গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধারণাটি ভুল এতে বাচ্চার জেদ আর বেড়ে যায় বরং কোলে নিলে বাচ্চা দ্রুত ঠান্ডা হয়। (উপদেশ-১)

ব্যথা পেলে শাসন

বাচ্চা কোন নিষেধ কাজ যেমন-দৌড়ানো।ফলে আঘাত প্রাপ্ত হলে বাবা-মা উল্টো ধমক দিয়ে থাকেন। কখন কখন গায়ে হাত উঠান। এটা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। (উপদেশ-২)

ঠাণ্ডার সময় সর্দি-কাঁশি বা জ্বর হয়

ঠান্ডার সময় শুধু নয় সব ঋতুতে সর্দি কাঁশি জ্বর হতে পারে। সব সময় বাবা-মার সচেতনতা দরকার। ঠান্ডার সময় জ্বর হবে এরূপ ধারণা ভুল। (উপদেশ -৩)

ফলের জুস বাচ্চার জন্য ভীষণ উপকারী

বাজারে বিক্রি হওয়া ফলের জুস গুলে প্রচুর সুগার থাকে। এছাড়া বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে আমসহ অন্যান্য ফলের ফ্লেভার মিশানো হয় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। বেশি মাত্রায় জুস খেলে বাচ্চার দাঁতের ক্ষতি হয়। (উপদেশ -৪)

ভ্যাকসিন

বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেবার ক্ষেত্রে ভুল উপদেশ পেতে পারেন। কোন কোন মানুষের ধারণা ভ্যাকসিন ভীষণ ক্ষতিকর যা অটিজমসহ নানান প্রকারে রোগের জন্য দায়ী। এমনকি একাধিক ধারণা দিয়ে প্রমাণ করাতে চাইতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল নিশ্চিন্তে বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিন। (উপদেশ -৫)

সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
http://oporajitabd.com

 

প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং; পর্ব-১

ফাতিমা খান


চাইনিজ ব্যাম্বু ট্রি বা চীনা বাঁশ গাছের জন্মবৃত্তান্ত পড়ছিলাম। অন্যান্য হ
মত ওদেরও আলো, পানি, মাটি আর সারের প্রয়োজন হয়, দরকার হয় নিয়মিত পরিচর্যার। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বছরে শুধু ছোট্ট চারা গাছটার জন্ম ছাড়া তাদের আর কোন বাড় বৃদ্ধি দেখা যায়না। পঞ্চম বছর হঠাতই বাঁশগাছগুলো বেড়ে লম্বায় প্রায় ৮০ ফুট হয়ে যায়, সময় লাগে শুধু ছ’সপ্তাহ!
ভাবা যায়?

এবার বলি আসল রহস্যটা কোথায়?

প্রথম চারটা বছর ছোট চারাটা না বাড়লেও নিয়মিত যত্ন আর খোরাক পেয়ে মাটির নিচে একটু একটু করে তার শেকড় মজবুত হয়, আশপাশে মাটি টাকে ইতিমধ্যে শক্ত করে সে আঁকড়ে ধরতে শিখে যায়। তারপর ঐ শক্ত শেকড়ের উপর মাত্র ছয় সপ্তাহে পই পই করে বেড়ে উঠে তার ধড়।

মূল যার শক্ত তাকে ঠেকায় সাধ্যি কার!

‘এগার শেষ করে বারো’তে পা দিয়েছে আমার জাওয়াদ। আমার এই প্রি-টিনেজার ছেলেটার সাথে আচরণগত নির্দেশনার জন্য আমি প্রায়ই প্যারেন্টিং নিয়ে স্টাডি করি। যেহেতু প্যারেন্টিং আর চাইল্ড সাইকোলজি বিষয়ে আমার ফ্যাসিনেশন একটু বেশী, সময় পেলেই এই দুই বিস্ময়কর জগতে প্রতিদিন কিছুটা সময় হলেও ঘুরে আসি।

আমার দুই ছেলে শুধু আমার সন্তানই না, রীতিমত তারা আমার সাধনা। ওদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আমার প্যারেন্টিং এর ব্যবহারিক জ্ঞান বাড়ছে প্রতিদিন।

টু বি অনেস্ট, আমার বড় ছেলেকে হ্যান্ডলিং করতে একটা সময় আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়ে ছিল। একে তো প্রথম বাচ্চা, আর তারপর একটু জেদী ও একরোখাও ছিল ছেলেটা। সেই ছোট্টকালে যখন লেবুগাছে লেবু দেখে বলত “লেবু গাছে শুধু লেবুই হবে কেন, তাও আবার একই কালারেরই সব ?” সেই থেকে আজ অবধি তার যাবতীয় গুগলহারা, ভুগোল ছাড়া প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে নিজেও শিখেছি অনেক কিছু।

প্যারেন্টিং, রহস্যময় বটে, ওই চাইনিজ বাঁশগাছের মতই ! যত্নটাও একটু বেশী দরকার হয়।

“টিন এজ” যদিও খুব রেডমার্কড একটা সময় কিন্তু আদতে পনের বছর পর্যন্ত বাচ্চারা কিন্তু একরকম শিশুই থাকে। এসময় বাচ্চাদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হয় বাবা মায়ের সাথে “বন্ধুত্বপূর্ণ” সম্পর্ক।

রিসার্চারদের মতে এই বয়সী বাচ্চারা যখন বাবা মা কে বন্ধুর মত কাছে পায় তখন তারা অন্য কোন অজানা পথে পা বাড়ায় না। তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুধু শোনাই না বরং নিজেকে তার জায়গায় ভেবে এর ঠিকঠাক সাড়া দেয়াটা তাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরির অন্যতম ধাপ।

আমার ব্যক্তিগত মতামত হল সন্তানের সাথে একটা যৌথ “ইমোশনাল ব্যাংক একাউন্ট” তৈরী করে নিন, যেখানে নেতিবাচক অনুভূতির কোন অবকাশই নেই। এখানে শুধু তার ভাল গুনাগুণ গুলো মূলধন করে তার সাথে আপনার লেনদেন হবে। ভুল সবাই করে, তাকে শুধরে দেয়ার সময় ঐ ইমোশনাল একাউন্টের সুন্দর কথাগুলো দিয়েই তাকে শুধরে দিন।

সন্তান এবং বাবা-মা দুজনে মিলে কিছু ক্লিয়ার কাট ‘নিয়মনীতি’ তৈরী করুন যেগুলো আপনার সন্তানকে তার ব্যবহারিক সীমারেখা বলে দেবে।

“বড়দের কথা শুনতেই হবে” না বলে ” আচ্ছা, আমরা না হয় একজন আরেকজনের মতামতগুলো মেনে নেব” কিংবা “এখন বাইরে যাবে না” না বলে “উইকেন্ডে না হয় আমরা একসাথে যাব” জাতীয় কথাগুলো বলা যেতে পারে। আমি নিশ্চিত আজ না হয় কাল ঠিক একই ধরনের কথা মানে আপনার কথার প্রতিধ্বনি আপনি ওদের কথায় শুনতে পাবেন। এখানে আরেকটা টিপস খুব কাজে আসবে। তা হল, আপনার সন্তানের ছোটকালের বা ইদানিং কালের কোন ভাল কাজের কথা মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিবেন। ভাল কাজে তাকে উদ্দীপিত করতে এর চেয়ে বড় টনিক আর নেই।

প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন, তার নিজস্ব গুনে স্বকীয়। এই ‘স্বকীয়তা’ আল্লাহতায়ালার কাছ থেকেই সে সংগে করে নিয়ে আসে। জন্মলগ্ন থেকেই তাদের এই নিজস্বতা কিছু না কিছু প্রকাশ পায়।তাই আমার সন্তান আমার মতই হতে হবে বা তার ভবিষ্যৎ আমার ইচ্ছানুযায়ী তৈরি হবে এমনটা আশা না করাই ভাল। আমার সন্তান তার নিজের পছন্দ, যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী যদি তার ক্যারিয়ার গড়ে তবে তা হবে অসাধারণ। আমি ডাক্তার বলেই যে আমার সন্তানকে ডাক্তার হতে হবে, এমনটা আবশ্যক নয়। তার অবশ্যই নিজের ‘ফ্রিডম_অফ_চয়েস’ আছে। এটা তার ব্যক্তিত্ব গঠনেও সহায়ক । আমার ছেলেদের ক্ষেত্রে তাদের নিজের জিনিসগুলো ওদেরকেই চয়েস করতে দেই, তবে ভালমন্দের একটা ধারণা আগেই দিয়ে দেই যেন ফাইনাল সিলেকশনে ভুল না হয়।

( চলবে)

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

ঘরের সৌন্দর্য রক্ষায় কিভাবে মশা তাড়াবেন

মশা এক প্রকারের ছোট মাছি প্রজাতির পতঙ্গ। অধিকাংশ প্রজাতির স্ত্রীমশা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত পান করে থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীর, যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর প্রাণী এবং এমনকি কিছু মাছ, শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে হাজার রকমের প্রজাতি আছে। যদিও যেসব প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত শোষে নেয় তা তাদের শরীরের তুলনায় খুবই অল্প, কিন্তু কিছু মশা রোগজীবাণু সংক্রামক। মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতি রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে।(উইকিপিডিয়া)

কর্পূর
মশা তাড়াবার একটা সহজ উপায় হল, কয়েক টুকরো কর্পূর আধকাপ জলে ভিজিয়ে খাটের নীচে রেখে দিন। তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমান।

নিমপাতা
কয়লা বা কাঠ-কয়লার আগুনে নিমপাতা পড়লে যে ধোঁয়া হবে তাতে সবংশে মশা পালাবে।

নিশিন্দা গুঁড়া
প্রতিদিন নিশিন্দা গুঁড়ো ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

দেশলাই
অনেকদিন বন্ধ থাকা বা অব্যবহৃত ঘর খুললে একটা ভ্যাপসা গন্ধ বের হয়। দু-তিনটে দেশলাই কাঠি জ্বালালে দু-তিন মিনিটের মধ্যে ঘর থেকে গন্ধ চলে যাবে।

রুমাল
বোতলের ছিপি খুব শক্ত হয়ে আটকে গেলে, একটা রুমাল গরম জলে ভিজিয়ে নিংড়ে বোতলের ছিপির নীচে জড়িয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে ছিপিটি আলগা হয়ে আসবে।

ভিনিগার
রাতের দিকে বেসিনের পাইপের মুখে মাঝে মাঝে আধ কাপ মত ভিনিগার ঢেলে দেবেন। সকালে দু’মগ জল ঢেলে দিলেই বেসিনের পাইপ পরিষ্কার থাকবে।

গোলাপ সার
কাজুবাদাম ব্যবহারের সময় খোসাটা ফেলে দেওয়া হয়। ঐ ফেলে দেওয়া খোসাই গোলাপ গাছের সেরা সার।

চা পাতা
চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ঐ চা’পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা’পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।

হলুদ আলো
ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়।

লবণ
বাচ্চাদের ঘরে মশা, মাছি, পিঁপড়ে হয়। যদি নুন ছিটিয়ে ঘর মোছা যায়, পিঁপড়ে মাছি ও মশাও কম হবে।

বাতিদান জ্বালান
লোডশেডিঙের সময় যদি হ্যারিকেন বা কাঁচ ঢাকা বাতিদান জ্বালান তবে তার ওপর দু-একটা ব্যবহৃত মশা মারার রিপেলেন্ট রেখে দেবেন। আলোর সঙ্গে সঙ্গে মশা তাড়ানোর কাজও হবে।

 

আপনি, তুমি, তুই, এবং আমাদের জাতিগত সৌজন্যতাবোধ

কবীর মনিরুজ্জামান


বাংলা ভাষায় ‘আপনি’, ‘তুমি’, ও ‘তুই’ এর বিস্তৃত ব্যবহার আছে। এই শব্দগুলো ইংরেজীতে এক (you-ইউ) হলেও বাংলায় আলাদা অর্থ বহন করে।

এই শব্দগুলো আমাদের ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় প্রকাশ করে।

তুমি
‘তুমি’ সম্বোধন টি অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কের গভীরতা, নৈকট্য ও আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে। নতুন পরিচিত মেয়েটাকে তুমি বলার পার্মিশন চাওয়ার মাঝে অনেক রকম অর্থ বুঝানো হয়।

তুই
‘তুই’ সম্বোধন তুচ্ছার্থে কিংবা ঘনিষ্ঠতা অর্থে ব্যবহৃত হয়। সহপাঠী বন্ধুদের তুই বলতে পারার মাঝে ঘনিষ্ঠতা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশের একটা স্টেজ অতিক্রম করা বুঝায়। কাউকে তুই-তোকারী করতে পারলে যেন আমাদের অনেক বেশী বড়ত্ব প্রকাশ হয়।

তুমি ও তুই
ক্ষেত্র বিশেষে তুমি বা তুই অনেক আন্তরিক শোনায়। মা-বাবাকে আপনি বা তুমি বলার মাঝে সম্মান ও ঘনিষ্ঠতা প্রকাশে কোন পার্থক্য হয় বলে আমার মনে হয় না। ছোট বাচ্চাকে তুমি বলার মাঝে আদর প্রকাশ পায়। সম্পর্কের ঘনিষ্টতা বা পুর্বানুমতি ছাড়া কাউকে তুমি সম্বোধন অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রতকর হয়ে দাড়ায়।

আপনি
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর বি চৌধুরী একবার একটা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তা হল ‘অপরিচিতকে আপনি বলুন’। জানি না তার এই আন্দোলনের মুলে কোন ধরনের চেতনা কাজ করেছিল। তবে তার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আমার মনে ধরেছিল। কারণ আপনি তুমির যন্ত্রণা কম বেশি আমাদের সবাইকেই সইতে হয়। আমরা অনেক সময়ই বয়সে বা পদমর্যাদায় ছোট হলেই তুমি করে সম্বোধন করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি।

প্রতিপক্ষের মর্যাদা মূলত কি?

পরিচয়ের শুরুতেই আমরা প্রতিপক্ষের মর্যাদা নির্ণয়ে তৎপর হয়ে পড়ি। অন্য অর্থে পরিচয়ের শুরু থেকেই আমরা একে অপরকে সম্মান করব কি করব না বা কতখানি সম্মান করব এর মাপ জোক করতে থাকি। এটাই আমাদের কালচার। আমার ধারনা আমাদের এই কালচারের মধ্যেই উত্তর নিহিত রয়েছে যে, কেন আমরা বাঙ্গালী/বাংলাদেশীরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে, ভালবাসতে বা বিশ্বাস করতে পারিনা। কারন এই শ্রেণীবিন্যাস করার প্রবণতা থেকেই আমাদের মাঝে সুপিরিয়রিটি বা ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্স আমাদের মননে বাসা বেধে ফেলে।

পশ্চিমা এবং আরব কালচার
পশ্চিমা এবং আরবরা এই ‘আপনি-তুমি-তুই’র জটিলতা থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। কিন্তু আমরা বাঙ্গালিরা পারিনি। তাদের একটাই শব্দ- ইউ (you), আমাদের অনেক। বিদেশে গেলে তো বয়সে অনেক ছোটরাও নাম ধরে ডাকে এবং তা স্বাভাবিক লাগে, তুমি শোনা তো ব্যাপারই না। কারন ওটাই ওখানকার কালচার। ওরা তো বাপকেও নাম ধরে ডাকে। ‘আপনি, তুমি, তুই’র জটিলতা না থাকায় মর্যাদা নির্ণয়েরও কোন প্রশ্ন নেই। ফলে ঐ ভাষার জাতিগুলোতে পরিচয়ের প্রথম থেকেই সবাই সমান।

আপনি, তুমি এবং তুই
ইদানিং আমাদের দেশেও নব্য ইউরোপিয়ানরা নাম ধরে ডেকে ইংলিশ ব্যবহার করে আপনি তুমির ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চায়। ভারতীয় বাঙ্গালিরা নাকি অনায়াসে অপরিচতকেও তুমি বলে সম্বোধন করে। যেটা আমরা পারিনা। এটি আসলে আমাদের একটি অন্ত:সারশূন্য জাতিগত ইগো। হায়রে আমাদের অন্তঃসারশূন্য অহম! কাজের কাজ আমরা কিছুই পারি না, খালি অর্থহীন অহমিকা! আমাদের এই অনাহুত সামাজিক hierarchy ভেঙ্গে সাম্যতা আনার প্রথম পদক্ষেপ হল ‘আপনি, তুমি, তুই’ থেকে বেরিয়ে আসা।

কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? আদৌ কি তা সম্ভব?

(সংগৃহিত ও সংকলিত)

 

মিম্ মি রহমান: প্রতিটা মুহুর্তেই সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো, যদি আমি তা চাই

ফাতেমা শাহরিন


মিম্ মি রহমান পেশায় একজন ডাক্তার পাশাপাশি লেখালেখি করছেন। এবার বইমেলায় এসেছে তার একক লেখা, সম্পাদিত এবং গ্রুপ সম্মিলিতভাবে  কয়েকটি বই। এই সাক্ষাৎকারটিতে থাকছে তার একান্ত নিজস্ব কিছু কথা, একুশে বই মেলায় প্রকাশিত ও সম্পাদিত বই সম্পর্কে অজানা অনেক কথা।

‘আনটোল্ড স্টোরি ফর অ্যা স্ট্রাগলার’ বইয়ের লেখিকা মিম্ মি রহমান সাথে আছি আমি ফাতেমা শাহরিন।

অপরাজিতা: আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন আমাদের পাঠকদের?
মিম্ মি রহমান: আমার স্কুল কলেজ ছিল ফরিদপুরে। কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে MBBS শেষ করে বারডেম থেকে CCD এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে MPH করেছি। চাকরি শুরু করি USAID এর সূর্যের হাসি হাসপাতালে আউট ডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে। এরপর কাজ করেছি নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালে ইনডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে। লেকচারার হিসেবে কাজ করেছি ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ট্রমা সেন্টার, অপরাজেয় বাংলাতেও কাজ করার সুযোগ ঘটেছে মেডিকেল অফিসার হিসেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম INTERNATIONAL Baccalaureate বোর্ডিং স্কুলে PHIS এ আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছি।

অপরাজিতা: ডাক্তারি নিয়ে দীর্ঘদিন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন, আছেন এবং পাশাপাশি লেখালেখি। কেমন চলছে বর্তমান কাজ এবং লেখালেখি?
মিম্ মি রহমান: লেখালিখি ছোটবেলা থেকে করতাম টুকটাক। দৈনিক ইত্তেফাকের দাদাভাই রোকনুজ্জামান খানের ‘কচি কাঁচার আসরে, ভোরের আলো, জনকন্ঠ এবং প্রথম আলোর বন্ধুসভাসহ বিভিন্ন পাতায় লেখা পাঠাতাম। ছাপাও হতো। এরপর ২০১৫ থেকে অনলাইনে লেখালেখির শুরু বিভিন্ন পোর্টালে। আর এ বছর বইমেলায় আসছে আমার একক বই ‘আনটোল্ড স্টোরি ফ্রম এ স্ট্রাগলার’ সম্পাদক হিসেবে জড়িত আছি ‘হার না মানা একদল অপরাজিতার জীবনযুদ্ধ’, ডাক্তারদের সাথে সম্মেলিত বই ‘স্টেথোস্কোপ রেখে কীবোর্ডে’ এবং সাহিত্য সংক্রান্ত ফেসবুক গ্রুপ জানালা থেকে আসছে ‘জানালা’তেও একটি লেখা।

অপরাজিতা: তাহলে বোঝা যাচ্ছে আপনার লেখার হাতিখড়ি সেই শৈশব থেকেই ‘সেই সব দিনগুল কেমন কেটেছে’ আমি শৈশবের কথা বলছি? হারানো সেই দিন গুলোতে কি ফিরে যেতে ইচ্ছে করে?
মিম্ মি রহমান: দারুণ আনন্দময় এক শৈশব কাটিয়েছি। পাঁচ বোন মিলে মিশে ছোটবেলা কেটেছে প্রাণের শহর ফরিদপুরে। নাহ ফিরতে চাই না ঐ দিনগুলোতে। আমার কাছে আমার বর্তমান জীবনটা যা আমি নিজে তৈরি করেছি সেই জীবনটাই আমার প্রিয়। এই জীবনটাতেই বারবার ফিরে পেতে চাই।

অপরাজিতা: গল্প, কবিতা, উপন্যাস এই সব ক্ষেত্রে আপনার পদচারণ আছে। যে কোন একটির কথা বললে আপনি কোনটাকে বেছে নিবেন?
মিম্ মি রহমান: গল্প।

অপরাজিতা: প্রথম প্রকাশিত বই ও প্রথম বইমেলা নিয়ে ‘কিছু বলুন’?
মিম্ মি রহমান: এবারের বইমেলায় প্রথম আসছে আমার একক এবং যৌথ বইগুলো। প্রথম ছাপার অক্ষরে হাতে নিয়েছি আমার ফেসবুক গ্রুপ ‘ভালো থাকি-ভালো রাখি’ র মেয়েদের জীবনের গল্প নিয়ে আমার সম্পাদিত বই ‘হার না মানা একদল অপরাজিতার জীবনযুদ্ধ’ বইটি। গ্রুপের সবাইকে নিয়ে খুব আনন্দের সাথে মনের ভেতর ধুকধুকানি নিয়ে কাটিয়েছি দোসরা ফেব্রুয়ারি।

অপরাজিতা: এবারের বই মেলায় প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে জানতে চাই?
মিম্ মি রহমান: একক বইটিতে যে লেখাটি যাচ্ছে তা একজন নারী চিকিৎসকের জীবনের ছোট বড় ঘটনা নিয়ে লেখা। যেখানে একদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং সিঙ্গেল মা হিসেবে জীবনে ব্যালেন্স করে চলছে ডা.মম। আমার সম্পাদিত বইটিতে যাচ্ছে ২৩ জন নারীর জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা জীবনের গল্প। ‘স্টেথোস্কোপ রেখে কীবোর্ডে’ যে লেখাটি যাচ্ছে তাতে কর্মস্থলে একজন নারীর বিড়ম্বনা নিয়ে ছোটগল্প লেখার চেষ্টা করেছি।

অপরাজিতা: লেখার সাথে সম্পর্কিত স্মরণীয় কোন ঘটনা?
মিম্ মি রহমান: স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে এই লেখালেখির বদৌলতে অনলাইনে অনেক মেয়ের সাথে কথা হয় যারা আমাকে কখনো দেখেনি কিন্তু আমার লেখার ভেতর দিয়ে নিজেকে খুঁজে পায়, ভালোবাসে।

অপরাজিতা: আপনার লেখা নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা কী?
মিম্ মি রহমান: লেখালেখি নিয়ে আপাততঃ পরিকল্পনা নিজের ভালো লাগে বলেই লিখছি। যতদিন ভালো লাগবে লিখব। আরো দায়িত্বশীল হতে চাই লেখালেখি নিয়ে। আরো অনেক বই পড়তে চাই লেখালেখির প্রস্তুতি হিসেবে।

অপরাজিতা: আপনার পছন্দ এবং অপছন্দের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাই?
মিম্ মি রহমান: পছন্দ করি নির্জনতা, একাকীত্ব, নির্ঝঞ্ঝাট, সরল জীবন কাটাতে। বই পড়তে, গান শুনতে, মুভি দেখতে এবং আহ্ নাফের সঙ্গ।
অপছন্দ– জটিলতা এবং মিথ্যে কথা।

অপরাজিতা: তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন!
মিম্ মি রহমান: হাহাহা আমি নিজেই তো এখন তরুণ। আমি কি বলব ? যখন প্রবীণ হব তখন নাহয় বলব।

অপরাজিতা: উপরের প্রশ্নগুলো ছাড়াও এমন কোনো বিষয় আছে যা আপনি বলতে চান?
মিম্ মি রহমান: একটা কথা বলতে চাই। মরে না গেলে জীবনে শেষ বলে আসলে কিছু নেই। প্রতিটা মুহুর্তেই সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো, যদি আমি তা চাই। নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং ভরসা করতে শিখলে জীবন মিরাকল ঘটাতে বাধ্য।

ধন্যবাদ, অপরাজিতার সবাইকে আমার মত সামান্য মানুষের সাক্ষাৎকার নেবার জন্য। ভালো থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ অপরাজিতাকে।

ফাতেমা শাহরিন
সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
web:http://oporajitabd.com
facebook: https://www.facebook.com/Oporajitabd/

 

ইতিবাচক স্বীকৃতির গুরুত্ব

মল্লিকা দে


মানুষ হিসেবে আমাদের ভিতর এক ধরনের সংকীর্ণতা আছে। পারিবারিক- ভাবে চর্চার অভাব, হিংসা বা অন্য কোন কারণেই হোক, আমরা অন্যের প্রশংসা করতে কার্পণ্য করি। বরং অন্যের দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা করতেই বেশী পছন্দ করি।

উদাহরণ: মা-বাবা, সন্তান কোন ভাল কাজ করলে তার প্রশংসা খুব কমই করেন কিন্তু খারাপ কাজ করলে তাকে শাস্তি ঠিকই দেন সঙ্গে সঙ্গে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ মা-বাবার ধারনা, বেশী প্রশংসা করলে সন্তান বিগড়ে যেতে পারে।

আবার অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তার অধঃস্তন কর্মচারীকে সহজে প্রশংসা করতে চান না। কারণ তাদের ধারনা এতে করে কর্মচারীর অহমবোধ বেড়ে যেতে পারে।

এমনকি যে মা, সারাদিন ঘরের কাজ করেন, খাবার তৈরী করেন, সন্তানদের মানুষ করার গুরু দায়িত্ব পালন করেন, তাকে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয়া হয় না।

আবার প্রেমের শুরুতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে স্বীকৃতির আদান প্রদান বা প্রশংসা করার প্রবনতা খুব বেশী থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে এগুলো আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে এবং একটা সময় গিয়ে একেবারেই থাকে না। আর এ থেকেই মান-অভিমান এবং ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়। পরিশেষে ব্রেক-আপ বা ডিভোর্স।

সাইকিয়াট্রিস্ট এরিক বার্ণ’ মানুষের ছয় ধরনের মানসিক ক্ষুধার কথা বলেছেন। এদের ভিতর ‘স্বীকৃতির ক্ষুধা’ অন্যতম। কারণ আমরা শুধুমাত্র ব্যক্তি হিসেবেই নয়, আমাদের প্রত্যেক কাজের জন্যও মনে মনে অন্যের ‘স্বীকৃতি’ আশা করি। কাজটি যত ছোটই হোক বা বড়।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ‘স্বীকৃতি’ বলতে আসলে কি বোঝায়?
‘স্বীকৃতি’ বলতে বোঝায় কোন ব্যক্তির তার নিজের প্রতি এবং অন্য কোন ব্যক্তি তার প্রতি বা তার কোন কাজের প্রতি যে মূল্যায়ন করে তাকে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে ‘স্ট্রোক’ বলে। আর এই স্বীকৃতির আদান-প্রদান ঘটে যখন ব্যক্তি নিজেই নিজের সাথে কথা বলে অথবা অন্য ব্যক্তির সাথে কথা বলে।

‘স্বীকৃতি’ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে,

বাচনিক-অবাচনিক,ইতিবাচক-নেতিবাচক,শর্তযুক্ত-শর্তহীন।

আমাদের সমাজে ‘নেতিবাচক স্বীকৃতির’ পরিমানই বেশি। উপরের উদাহরণগুলো থেকে এটাই বোঝা যায়। কিন্তু নেতিবাচক স্বীকৃতির তুলনায় ইতিবাচক স্বীকৃতির গুরুত্ব বেশি।

‘ইতিবাচক স্বীকৃতি’ পেলে আমাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়, কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যায়, মনে সন্তুষ্টি আসে।

অপরদিকে ‘নেতিবাচক স্বীকৃতি’ আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা তৈরী করে, কাজ করার আগ্রহ কমিয়ে দেয়, জীবন সম্পর্কে হতাশা সৃষ্টি হয়।

তবে মানুষ যেহেতু স্বীকৃতির কাঙ্গাল, তাই অনেক সময় স্বীকৃতিহীন জীবনের চেয়ে, নেতিবাচক স্বীকৃতিও ভাল। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, ‘কোন ব্যক্তির নেতিবাচক কাজের জন্যও কি ইতিবাচক স্বীকৃতি দেব?
তবে উত্তর হবে অবশ্যই ‘না’।

কিন্তু আমাদের ভিতর ইতিবাচক স্বীকৃতি দেয়ার প্রবনতা বাড়াতে হবে। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়ার অধিকার রাখেন। এমনকি যে রিক্সাওয়ালা আপনাকে নিজের রিক্সায় বহন করে বাড়ি পৌছিয়ে দেন, তাকেও আপনি একটা ধন্যবাদ দিতে পারেন। এতে করে খুব বেশি সময় নষ্ট হবে না কিন্তু সে তার কাজের স্বীকৃতি পাবে।

মাঝে মাঝে আপনি আপনার সন্তানকেও আলিঙ্গন করতে পারেন, তার ছোট ছোট কাজের প্রশংসা করতে পারেন।

আর আপনি যদি অফিসের বস বা শিক্ষক হন, তবে আপনি আপনার কর্মচারীর বা ছাত্র-ছাত্রীর ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করতে পারেন। এতে করে তাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং যে ছাত্র বা ছাত্রী একসময় ক্লাসে কথাই বলতো না, তারাও আগ্রহ নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবে। শুধুমাত্র প্রশংসাই নয়, অনেক সময় আপনার ছোট্ট একটা হাসিও অন্যের কাছে স্বীকৃতি হতে পারে।

কাজেই মন খুলে অন্যকে ইতিবাচক স্বীকৃতি দিন। তাহলে আপনিও দিনশেষে ইতিবাচক স্বীকৃতির ঝুড়ি নিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুমোতে যেতে পারবেন। পরিবারের ভিতরেও ছোট-বড় সবাইকে যার যার কাজের স্বীকৃতি দিন। সে কাজ যত ছোটই হোক না কেন।

আর কেউ যদি আপনাকে কোন স্বীকৃতি না দেয়, তবে মনে মনে ক্ষোভ না জমিয়ে, নিজেই নিজের কাজের স্বীকৃতি দিন, নিজের প্রশংসা করুন। কারণ, অনেক সময় কেউ ঢ়াক না বাজালে, নিজের ঢ়াক নিজেই বাজাতে হয়।

উপস্থাপনায়
মল্লিকা দে
প্রভাষক
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
আই,ইউ,বি,এ,টি বিশ্ববিদ্যালয়
উত্তরা, ঢাকা।

 

‘একটা কথাই বলতে চাই, চলো, এগিয়ে যাই!’ হাবীবাহ্ নাসরীন

ফাতেমা শাহরিন


হাবীবাহ্ নাসরীন এ প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান একজন কবি ও লেখক। তিনি পেশায় সাংবাদিক হলেও লেখালেখির ক্ষেত্রে বিরামহীন এগিয়ে চলেছেন। তার লেখার সবচেয়ে বড় জাদু হলো, ভাষার সহজ সরল ও সাবলীল উপস্থাপনা। যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে অমর একুশে বইমেলায় আসছে তার কাব্যগ্রন্থ ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এর আগে ও ২০১৬ ও ২০১৭ সালে একুশে বই মেলায় তার তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। অপরাজিতার পক্ষ থেকে আমরা এই গুণী লেখিকার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।

অপরাজিতা: কেমন কেটেছে আপনার শৈশব? হারানো সেই দিন গুলোতে কি ফিরে যেতে ইচ্ছে করে?
হাবীবাহ্ নাসরীন: খুব ছোটবেলায় বিভাগীয় শহরে ছিলাম। সেখানে জীবন ছিল ফ্ল্যাটবন্দী। পরে আব্বুর পোস্টিংয়ের কারণে চাখারে চলে যাই। চাখার গ্রাম হলেও বেশ উন্নত ছিল। কারণ এটি শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের গ্রাম। না গ্রাম, না শহর- আবহের একটি পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা। পুকুরে সাতার কাটা, গাছ থেকে ফল পেড়ে আনা, বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো, সকালে উঠে ফুল কুড়ানো, মধ্যরাতে রাতজাগা ডাহুকের ডাক শুনে ভয়ে ভয়ে জেগে থাকা- আমার মধুময় স্মৃতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। শুধু মধুময় স্মৃতিই বলবো না, আমার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে এর অবদান অনেক। ছেলেবেলায় ওরকম পরিবেশ না পেলে আমার লেখনীয় সত্ত্বা বিকাশিত হতে পারতো কি না কে জানে! ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই না। কারণ তাতে যে আগামীর স্বপ্ন লালন করে আমি এতটা পথ এসেছি তা আবার পিছিয়ে যাবে।

অপরাজিতা: লেখা লেখির শুরুটা কী ভাবে হয়েছে? এ ক্ষেত্রে আপনার পথ চলা সম্পর্কে জানতে চাই!
হাবীবাহ্ নাসরীন: লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল একাকিত্ব থেকে। আমার ছোট ভাইয়ের জন্মের সময়টাতে আম্মু খুব অসুস্থ ছিলেন। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতেন। আগের সেই আদর, আবদার, আহলাদ কিছুই পেতাম না। একা একা অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়াতাম। তখন মনে হলো এইসব নিবিড় দুঃখের কথা লিখে রাখি। লিখে লিখে দুঃখ যদি কিছুটা কমে। লিখতে গিয়ে একটা নেশার মতো হয়ে গেল। মনে হতো, রবী ঠাকুর, কাজী নজরুলের মতো আমিও লিখতে পারি না কেন! ওদের মতো লিখতে চাইতাম। বানিয়ে বানিয়ে কিছু একটা লিখতামও। কিন্তু তখন তো ছোট মানুষ ছিলাম। ছয় বছর বয়স। প্রতিদিন লিখতাম আর ওদের মতো হচ্ছে না বলে মন খারাপ করতাম। এই লিখতে না পারার ক্ষুধাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ১৯৯৭ সাল থেকে লেখার শুরু। প্রথম লেখাটি প্রকাশ হয় ছোটদের পত্রিকা নামের একটি ম্যাগাজিনে। এটি ২০০৪ সালের কথা। সে বছরই ছোটদের মেলা থেকে একটি ছড়ার সংকলন প্রকাশ হয়। ছড়াগুলো লিখেছে ছোটরা নামের বইটিতে আমারও একটি ছড়া প্রকাশ হয়েছিল। পাশাপাশি আমার ছবি আর সাক্ষাৎকারও ছেপে ছিল। এরপর ২০০৮ সালে ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর আয়োজিত ছড়া প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ ছড়াকার নির্বাচিত হয়েছিলাম। ২০১০ সালে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে তৃতীয় ব্যাচে বৃত্তি পেয়েছিলাম। তখন ঢাকায় নতুন। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। বাংলা একাডেমির নেয়া পরীক্ষায় এগারোতম হয়েছিলাম। এর মাঝে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপা হতো। বাংলা একাডেমির কোর্স শেষে আবার কিছুদিন আড়ালে চলে গিয়েছিলাম। ২০১৬ সালে এসে মনে হলো, এবার একটি বই হতে পারে। প্রকাশ হলো আমার প্রথম বই ‘কবিতা আমার মেয়ে’। এরপর ২০১৭ সালে উপন্যাস ‘তুমি আছো, তুমি নেই’, ছোটদের গল্পের বই ‘টুম্পা ও তার বিড়ালছানা’ প্রকাশ হলো। আর এ বছর নিয়ে এসেছি কবিতার বই ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এভাবেই একটু একটু করে আগাচ্ছি। লেখালেখি নিয়ে আমার বেশকিছু স্বপ্ন আছে। পূরণ করার চেষ্টা করে যাবো।

অপরাজিতা: প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত মিলে এ পর্যন্ত আপনার কতগুলি লেখা রয়েছে?
হাবীবাহ্ নাসরীন: লেখার সংখ্যা খুব বেশি নয়। প্রথমদিকের অনেক লেখাই কোথাও প্রকাশ করিনি। সেগুলো তত মানসম্পন্নও নয়। তবে আমি সেগুলোকে অস্বীকারও করি না। ওইসব কবিতা আমার কাছে অনেকটা সিঁড়ির মতো। প্রকাশ করার মতো কবিতা সম্ভবত একশোটির মতো লিখেছি। কমও হতে পারে। আর উপন্যাস তো একটি। গল্প আছে আটটি। এইতো।

অপরাজিতা: প্রথম প্রকাশিত বই ও প্রথম বই মেলা সম্পর্কে জানতে চাই।
হাবীবাহ্ নাসরীন: প্রথম প্রকাশিত একক বই ‘কবিতা আমার মেয়ে’। মূলত এই বইটির মাধ্যমেই আমি আমার পাঠকদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। প্রথম বইমেলায় যাওয়া ২০১০ সালে। তখন নিজে প্রচুর বই কিনতাম আর বন্ধুদেরকেও কিনে দিতাম।

অপরাজিতা: এবারের মেলায় প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে জানতে চাই?
হাবীবাহ্ নাসরীন: এবারের বই মেলায় প্রকাশ হচ্ছে কবিতার বই ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এতে ষাটটির মতো কবিতা রয়েছে। যার বেশির ভাগই প্রকাশিত।

অপরাজিতা: লেখার সাথে সম্পর্কিত স্মরণীয় ঘটনা?
হাবীবাহ্ নাসরীন: আমার জীবনের বেশিরভাগ ঘটনাই লেখার সাথে সম্পর্কিত। যতটা সম্মান, ভালোবাসা পেয়েছি তার প্রায় সবটাই লেখার কারণে। অনেক অচেনা মানুষ ফুল, চকোলেট, রান্না করা খাবার, নানা উপহার নিয়ে দেখা করতে আসেন এটাই আমার কাছে আশ্চার্যজনক মনে হয়। লিখতে না জানলে এমন ভালোবাসা আর কিসে পেতাম!

অপরাজিতা: আপনার লেখা নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা কী?
হাবীবাহ্ নাসরীন: পরিকল্পনা নেই। স্বপ্ন আছে। মৃত্যুর আগে কিছু লেখা সমাপ্ত করে যেতে চাই।

অপরাজিতা: আপনার পছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলো কী কী?
হাবীবাহ্ নাসরীন: পছন্দের বিষয় হচ্ছে সততা, ভালোবাসা। হিংসা, কৃতঘ্নতা খুব অপছন্দ।

অপরাজিতা: তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন!
হাবীবাহ্ নাসরীন: আমি নিজেই তো তরুণ! একটা কথাই বলতে চাই, চলো, এগিয়ে যাই।

ফাতেমা শাহরিন
সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
http://oporajitabd.com