All posts by Oporajita

 

সবুজ প্রাণে হিন্দোল

অনবরত বৃক্ষের গান


পড়ার টেবিলে মুনিবা,পাশে ডেস্কে বসে পড়ছে ওর ভাইয়া। দুষ্টোমিতে সেরা মুনিবা, তবে ভাইয়া যখন পড়তে বলে, মন দিয়ে পড়ে। ছাত্র সে, আর মুনিবা ক্লাস ফোর এ। ছোট্ট বাটিতে আমলকি, জলপাই নিয়ে এসে রাখলেন আম্মা।

বললেন, “জুবায়ের, মুনিবা, তোমাদের দাদুভাই পাঠিয়েছেন সকালে, গ্রাম থেকে। “ভাইয়া টিপ্পনী কেটে বলে,”মুনিবার মাথায় যা দুষ্ট বুদ্ধি, ওর টক খাওয়া ঠিক হবে না,বরং আমি খেয়ে ফেলি।” এ নিয়ে একদফা অভিমান,খুনশুটি। মুনিবা তো পড়বেই না,ভাইয়ার সাথে রাগ। অনেক বুঝিয়ে ঠিক হলো, ভাইয়া বেড়াতে নিয়ে যাবে।

রাতে খাওয়ার টেবিলে, আব্বুর কাছে নালিশ করলো মুনিবা। শাস্তি হিসেবে যে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে, সেটাও জানালো। তাদের বাবা বললেন, তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো, গল্প শুনাবো তোমাদের। গল্পের কথা শুনে, দুই-ভাই বোন নড়েচড়ে বসলো।

সবাই এসে বারান্দায় বসলে, মুনিবার আব্বু গল্প শুরু করলেন। আজকে তোমাদের দাদুভাই কতো কি পাঠিয়েছেন বলতো, মুনিবা। মুনিবা হাতের কড় গুনে বলতে শুরু করল, বাতাবি লেবু, চালতা, আমলকি, জলপাই, নারকেল, কতো সবজি। ও থামলে, মাহবুব সাহেব বললেন, এই যে বাতাবী লেবু গাছ, যখন বুনেছি, তখন জুবায়ের অনেক ছোট। মুনিবা নড়েচড়ে বসে, আমার জন্য কোন গাছ বুনোনি! তিনি বললেন,হ্যা আম্মু,বলছি শোন। তোমার আম্মা গাছ লাগাতে ভালোবাসেন, খুব। রাসূল (সা) এর প্রিয় হাদীসটি ভাইয়া শোনায়নি তোমাকে?

‘যখন কোনো মুসলমান একটি ফলবান বৃক্ষের চারা রোপণ করে, আর এতে ফল আসার পর সে নিজে অথবা অন্য কোনো মানুষ তা থেকে যা ভক্ষণ করে তা তার জন্য সাদকা (দানস্বরূপ), যা চুরি হয়, যা কিছু (খোসা, আঁটি ইত্যাদি) গৃহপালিত পশু খাবে এবং বিভিন্ন পাখপাখালি যা খাবে, সবগুলো তার জন্য সাদকা।’ (বুখারি ও মুসলিম) মুনিবা বলে,তাহলে তো পাখি পেপে খেতে আসলে,তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না।ওর আব্বু হাসেন,আবার বলতে শুরু করেন।
আমি বাড়িতে গেলে, প্রতিমাসে গাছের চারা নিয়ে যেতে হতো। বাড়ির সামনে যে শিউলী গাছটা,আর পশ্চিমে দাড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াটা, তোমার জন্য বুনেছিলেন। মুনিবা খুশিতে বাক-বাকুম করে ওঠে।আম্মুকে আহ্লাদে জড়িয়ে ধরে সে। সেদিনকার মতো গল্প শেষ করে ঘুমাতে যায় সবাই।

সকালে স্কুলে সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাসে ফাতিমা ম্যাম পড়াচ্ছিলেন। জলবায়ু কনফারেন্স নিয়ে অডিও, ভিজ্যুয়াল দেখালেন, কিভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। আটলান্টিক এ পানির উচ্চতা বেড়ে, নিম্নভূমির দেশগুলো তলিয়ে যেতে পারে। মুনিবার ছোট্ট মন চিন্তায় ভরে গেলো, সে ম্যামকে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের বাংলাদেশটার কি হবে?”  ম্যাম হাসলেন,আমাদের পরিবেশকে অনেক সুন্দর রাখতে পারি, বেশী করে গাছ লাগাতে পারি। টেবিলের উপর কিছু ফুল, আর ফল। তার ছাত্র -ছাত্রীদের জন্য এনেছেন, বাসার ছাদে করা বাগান থেকে। সকলে খুব উৎসাহ পেলো। পরের সপ্তাহে সবাই মিলে ফাতিমা ম্যামের বাগান দেখতে গেলো।

সেদিন রাতে আবার মুনিবারা গল্প করতে বসল। ফাতিমা মিসের করা বাগান দেখে, খুব আগ্রহ ছোট্ট বাগান করার। ভাইয়ের শাস্তি আরো বেড়ে গেছে, বাগান করায় সহকারী হতে হবে। চারা কিনে এনে , মাটি-সার দিয়ে টব তৈরি করে দিতে হবে। ভাইয়া হাসিমুখে রাজি হলো। পরেরদিন থেকে শুরু হলো, মুনিবার বাগান করা। প্রথমে, স্ট্রবেরী চারা বুনেছে, আর আম্মুর জন্য বেলী ফুলের চারা। প্রতিদিন ক্লাস থেকে ফিরে বারান্দায় চলে যায়। একটু করে গাছগুলো বড়ো হয়, কুড়ি আসে। একদিন সাদা বেলী ফুলে গাছটা ভরে আসে,সুগন্ধে মনটা ভরে আসে। নিজের হাতে বোনা গাছে ফুল, খুশিতে সে উদ্বেল হয়ে উঠে। (এতোটা আনন্দ সে কখনোই পায়নি)।আর,যেদিন মুনিবার স্ট্রবেরী গাছ পাকা পাকা ফল ভরে যায়-দাদাভাই, আম্মু আর ভাইয়াকে নিয়ে খেতে কি যে আনন্দ পায় সে। দাদাভাই খুশিতে নাতনিকে নার্সারি থেকে দশটি ফলের চারা গিফট করেন।মুনিবার বাগান এখন বেশ বড়, বাসার সামনে ফুলেফলে ভরে আছে। বান্ধবীদের সে ফুলের চারা গিফট করে, তাদের হাসিমুখ দেখে প্রান ভরে ওঠে। #বৃক্ষরোপণ

 

মালয়েশিয়ার বৈচিত্রময় ঈদ

তাহেরা সুলতানা


মালয় ভাষায় ‘ঈদ মুবারাক’ কে বলে ‘সালামাত হারি রাইয়া’ যার অর্থ ‘রোজা ভাংগার শুভ উৎযাপন’ অথবা ‘রোজা ভাংগার উৎসব’।
আমি প্রায় ৬ বছর যাবত মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে ঈদকে ঘিরে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতির কিছুটা অংশ আমি এখানে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। যেহেতু আমার বিদেশে ঈদ উৎযাপন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটি থেকেই শুরু হয়েছিল, তাই আমি সেখান থেকেই শুরু করছি।
মালয়েশিয়াতে আমার প্রথম ঈদ উৎযাপন ২০১১ সালে। তখন আমার স্বামী ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটিতে মাস্টার্স করছিল। আমি কোনদিন ঈদের নামাজ পড়তে মসজিদে যাইনি। এমনকি দেশে থাকতে জুম্মার নামাজ পড়তেও কখনো যাওয়া হয়নি। আসলে মেয়েরা মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারে, এরকম কোন ধারনাই আমার ছিল না! সে যাই হোক, সেবার ইসলামিক ইউনিভারসিটির মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে আসলাম। অনেকটা দ্যোদুল্যমান মনেই আসলাম। এখানে বলে রাখি, এই ইউনিভারসিটিতে প্রায় ১৩৫ টি দেশের মুসলিম ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে। মসজিদের প্রতিটি ফ্লোরে ২ টি ইউনিট। একটি ছেলেদের, আর একটি মেয়েদের। ঈদের নামাজ পড়তে এসে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবার দিকে তাকিয়েছিলাম! নানান দেশের ছেলেমেয়েরা নানান রঙে আর ডিজাইনে সুসজ্জিত হয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণকে আলোকিত করে রেখেছে। অপরূপ সে দৃশ্য! নামাজ শেষে আমরা মেয়েরা একে অপরের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে, হাতে চুমু খেয়ে অথবা কারো কারো সাথে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। একবারের জন্যও মনে হয়নি, আমি এদের চিনি না! যেন আত্মার গভীর থেকে টান অনুভব করেছিলাম! অনেক নতুন নতুন বাংলাদেশী মেয়ে, আপু এবং ভাবীর সাথেও সেদিন পরিচয় হয়েছিল। দেশে ফেলে আসা বাবা-মা, ভাই-বোন আর আত্নীয় স্বজনদের বাদ দিয়ে বিদেশের মাটিতে ঈদ করার কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছিল।
ইসলামিক ইউনিভারসিটি হলেও এখানকার রেক্টর (এখানে ভিসিকে রেক্টর বলে) কিন্তু একজন মহিলা, যার নাম ড. জালেহা কামারুদ্দিন। ঈদের দিন ইউনিভারসিটি ক্যাম্পাসে উনি নিজে হাতে সৌজন্যমূলকভাবে স্টুডেন্ট দের খাবার সার্ভ করেন এবং সবার সাথে একসাথে বসে, খেয়ে, ঈদ উৎযাপন করেন। ইউনিভারসিটি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সারাদিন ব্যাপী নানান পদের মুখরোচক খাবার সরবরাহ করা হয়। বাংলা কমিউনিটি থেকেও আলাদাভাবে ঈদ উৎযাপন করা হয়।
মালয়েশিয়ায় সংস্কৃতির একটা বিশেষ অংশ হলো, ঈদের দিন সব বাচ্চাদের হাতে ‘ডুয়েট রাইয়া’ (একই মানের ২ টি রিংগিটের ২ টি মূদ্রা একটি খামে ভরে প্রতিটি বাচ্চাকে দেয়া) একটি তুলে দেয়া। এমনকি প্রতিটি মালয় স্কুল থেকেও বাচ্চাদের এই ‘ডুয়েট রাইয়া’ দেয়া হয়। এখানে ছেলেরা ঈদের দিন যে ড্রেস পরে, তাকে বলে ‘বাজু মেলাউ’ (উপরের অংশটা ফতুয়া আর নিচেরটা পায়জামা আর তার উপরে লুঙ্গীর মতো) এবং মেয়েরা যে ড্রেস পরে, তাকে বলে ‘বাজু কুরুং’ (উপরের অংশটা কামিজ আর নিচেরটা স্কার্ট)। প্রায় সব মুসলিম মালয় মেয়েরা মাথায় হিজাব ব্যবহার করে। ঈদের দিনও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না।
অধিকাংশ মালয় ঈদের দিন খাবার সার্ভ করার ক্ষেত্রে পরিবার, আত্নীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আর প্রতিবেশীর জন্য ‘ওপেন হাউস’ প্রোগ্রাম করে। এইদিন সবাই ইচ্ছেমতো সবার বাড়িতে গিয়ে খেতে পারে। ঈদের দিন মালয়েশিয়ানদের সবচেয়ে পরিচিত এবং সবচেয়ে পছন্দনীয় খাবার হচ্ছে ‘কেতুপাত’ (Ketupat)। এক ধরনের আঠালো ভাতের ভর্তা পরিমস একটা কলাপাতা বর্গাকারে কেটে এর মধ্যে রেখে চারপাশ থেকে মুড়িয়ে দেয়া হয়। এই ‘কেতুপাত’ ২/৩ ধরনের সস আর তরকারীর সাথে সার্ভ করা হয়। আর একটি বিখ্যাত খাবার হলো ‘নাসি পান্দাং’ ( Nasi Pandang)। এই রেসিপিতে ভাতের সাথে নানান ধরনের তরকারী পরিবেশন করা হয়। এছাড়া নানা ধরনের কেক, পেস্ট্রি আর স্নাক্সও সার্ভ করা হয়। সেইসাথে থাকে বিভিন্ন রংগ আর বিভিন্ন ফ্লেভারের সিরাপ, যেটাকে মালায় ভাষায় ‘মিনুম’ বলে, যার অর্থ হচ্ছে পানীয়। মালয়েশিয়ানরা ‘তেও পানাস’ (গরম চা) বা ‘কপি পানাস’ (গরম কফি) এর পরিবর্তে ‘তেও আইস’ (ঠান্ডা চা) কিংবা ‘আইস কপি’ (ঠান্ডা কফি) বেশী পছন্দ করে, যেটার চল ঈদের দিনও দেখা যায়।
বাংলাদেশীদের মতো মালয়েশিয়ারাও ‘কাম্পুং’ (গ্রাম) এগিয়ে আত্নীয় স্বজনদের সাথে ঈদ উৎযাপন করতেই বেশী পছন্দ করে। সবার সাথে একত্রিত হয়ে বার বি কিউ পার্টি করা আর ‘হারি রাইয়া’ গান শোনা এদের সংস্কৃতিরই অংশ।
যেহেতু মালয়েশিয়ানরা জাতিগতভাবেই খাদ্যপ্রেমী, তাই তারা যেকোন উৎসবে খাবারে ভিন্নতা আনতে এতোটুকু কার্পণ্য করে না। তাছাড়া এখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী এবং নানান সংস্কৃতির লোকের বসবাস। তাই এখানে সবসময় একটা মিশ্র সংস্কৃতি বিরাজ করে, যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব খাবারে গিয়ে পড়ে।

সালামাত হারি রাইয়া!

 

আব্বার ঈদ

মনির মোহাম্মদ


আমার পিতা শিক্ষক মানুষ। একজন আদর্শ শিক্ষক বলতে আমরা যা বুঝি উনি ঠিক তাই। সুযোগ পেলেই সন্তানদের বই কিনে দিতেন। আর কিছুদিন পর পর বলতেন ঐ গল্পের সেই কথাটা মনে আছে। আমরা মনে না থাকলেও বলতাম হ্যা হ্যা হ্যা মনে আছে। আব্বা সব সময় বলেন শুধু পড়লে হবে না, বুঝে পড়তে হবে। তবেই দেশ আলোকিত হবে। মুখস্ততো ময়না পাখিও করে।
আমরা ভাই বোনরা বই পড়া শিখেছি পিতার কাছ থেকে। আমার পিতা একজন বোদ্ধা পাঠক। আমার প্রথম গল্পের বই নীলাদ্রির সবচেয়ে বড় সমালোচক আব্বা । আব্বা নাকি আমার বই পড়ে মুগ্ধ হয়েছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর নেই আমার জীবনে। এবার আসুন মূল গল্পে যাই।
প্রতি ঈদেই আব্বাকে কিছু দিলে কেন জানি তার সাইজ মিলেনা, সাইজ মিললে আম্মা বোনদের কাররই পছন্দ্র হয়না। অবশেষে ঈদের শপিং এর দায়িত্ব নিল আম্মা আর আমার বোনরা এবং আমারটা সহ, আমি এখন চিন্তা মুক্ত সাইজ আর পছন্দ্র নিয়ে ঝামেলা নেই ,আমি আমার শব্দ খুঁজায় ব্যাস্থ থাকতে পারি।
গতকাল রাত্রে একটা মেসেজ দিল আব্বা আমার মোবাইলে, তখন প্রায় দু’টো বাজে। মেসেজে একটা লিস্ট। লিস্ট দেখে আমি অবাক, একটা বিরাট বইয়ের লিস্ট। এত বই একদিনে কোথায় পাব? তার উপর কিছু উপহার এর বইও আছে। হাতে সময়ও কম। বিকালেই ছুটলাম বই এর খুঁজে। অবশেষে সারা ঢাকা শহর তন্নতন্ন করে খুঁজে অবশেষে সবগুলো বই কিনে আব্বাকে মেসেঞ্জারে ছবি পাঠালাম। আব্বা খুশি এবং বিরাট খুশি! এবার ঈদ কাটবে আমাদের বাপ-বেটার বই পড়ে ইনশাআল্লাহ্‌!
সবাই ভাল থাকবেন,
ধন্যবাদ,

ম নি র মো হা ম্ম দ
তরুন কথা সাহিত্যিক।

 

“আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়”

দিবা রুমি


★ সকালে উঠেই মনে পড়ে গেল চিরচেনা এবং ভীষণ প্রিয় এ গানটার কথা। কেন মনে পড়লো? হঠাৎ নিউজ পেলাম আজ বাবা দিবস, সেজন্যই কি গানটা মনে পড়লো? কিন্তু একটি নির্দিষ্ট দিনেই শুধু বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে কেন? যিনি জন্মদাতা তার প্রতি ভালোবাসা যদি প্রদর্শন করতেই হয় তাতো প্রতিটা ক্ষণ প্রতিটা দিন করতে হবে।

★ এই যে এতো বড় হলাম কার আদর্শে, ভালোবাসায়, সহযোগীতায়, আত্মবলিদানে? অবশ্যই বাবা- মা এর যৌথ উদ্যোগ আর রব্বুল আলামিন এর অপার করুণায়।

এবার লেখার একটু ভিতরে ঢুকি

★ আদর্শ সন্তান গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন বাবা-মা উভয়ের যৌথ উদ্যোগ।

★ কিন্তু “আদর্শ কি” এই বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান যদি বাবা- মা এর না থাকে বা জানার আগ্রহ না থাকে বরং নিজের চিন্তাধারা ও কর্মপন্থাকে সঠিক বলে বিবেচনা করে তাহলে সেই সন্তান কখনোই আদর্শবান হবেনা।

★ খুব কম ক্ষেত্রেই আছে যারা মায়ের ছায়াতলে থাকলেও গড়ে ওঠে বাবার আদর্শ নিয়ে। তবে বেশির ভাগ সন্তানই মাকে অনুসরণ করতে পছন্দ করে। মায়ের আচরন যেমন হবে সন্তান তেমনটাই শিখবে। তেমনি বাবার আচরনেরও প্রতিফলন ঘটবে সন্তানের আচরনে। তাই সন্তানের মন্দ আচরনের জন্য সন্তানকে দায়ী করা যায়না।

যেহেতু বাবা দিবসে লেখতে বসলাম তাই বাবাকেই একটু হাইলাইট করি

★ আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনের জ্যামঘটিত টানা হেঁচড়ায় বাবা মানুষটা কতটুকু সময়ইবা পায় সন্তানকে সময় দেবার? যেহেতু অধিকাংশ পরিবারই চলে বাবার উপার্জনে। আর এই সময় না দেয়ার কারনে সন্তানের মূল্যবোধ সঠিকভাবে গড়ে উঠে না।

★ একটা মজার ঘটনা না বলে পারছিনা। এক ব্যাক্তি তার কলিগকে জিজ্ঞেস করলেন-
৩ বছরতো হয়ে গেলো আপনার বাচ্চা কত বড় হলো?
– তিনি দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে বললেন ‘এইটুকু।’
– তিন বছর আগেওতো এটুকুই দেখালেন।
– কি ভাবে বলব? আমি যখন বাসায় যাই তখন বাবু ঘুমায়, আবার যখন অফিসে আসি তখনো বাবু ঘুমায়।

★ এই হচ্ছে আমাদের বাবাদের দায়িত্ব! হাজার কষ্ট হলেও বাবাদের উচিত বাবা হওয়ার চেষ্টা করা, প্রয়োজনে বাবা হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ কারণ শুধু জন্মদান এ অংশগ্রহনই সমাপ্তি নয়। তেমনি- যে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত সেই মায়েরও আদর্শ মা হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যেহেতু মায়ের ভূমিকাই মুখ্য।

(আমার এই পোস্ট এর কথাগুলো পারিপার্শ্বিক সমাজ জীবন থেকে নেয়া কিছু যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির সামান্য বহিঃপ্রকাশ মাত্র।)

★ আজ মহান বাবা দিবস; আমার নিজের বাবা এবং সব বাবাদের প্রতি রইলো অকৃত্রিম ভালোবাসা।

 

একটি অসমাপ্ত ঈদগল্প

রায়হান আতাহার


১.
সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিল জাহিদ। ওয়াইফাই চালু করতেই একগাদা ম্যাসেজ আসলো। ঘুমের রেশ কেটে গেলো। কারণ সাধারণত তাকে কেউ প্রয়োজন অথবা শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া ম্যাসেজ করে না। আজ এতগুলো ম্যাসেজ এসেছে, কারণ আজ ঈদ।

ঈদের দিন মানুষের মাঝে এক ধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করে। কিন্তু জাহিদের মাঝে কোন উচ্ছ্বাস নেই। পরিবার ছাড়া দেশের বাইরে প্রথম ঈদ জাহিদের। মাস ছয়েক হলো স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে সে।

বাংলাদেশের সাথে সময় ব্যবধানের কারণে বলতে গেলে একদিন আগেই তার ঈদ চলে গেছে। গত রাতেই অনেকের ‘ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা’ পেয়েছে। বাসায় বাবা-মায়ের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় হয়ে গেছে। নামেই শুধু কুশল বিনিময়, ভৌগোলিক দূরত্ব ঈদের দিনটিতে জাহিদ ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি। ম্যাসেজগুলো পড়তে ইচ্ছে করলো না জাহিদের। ইচ্ছে করলেও লাভ হতো না। নাস্তা করে ক্যাম্পাসে চলে যেতে হবে তাকে। হাতে সময় কম।

২.
বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে জাহিদ। আসমানি ফোন দেয়ার কথা এ সময়ে। হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসের আসমানি চরিত্রটি জাহিদের খুব ভালো লেগেছিলো। তাই প্রিয় মানুষটিকে ‘আসমানি’ বলে ডাকে সে।

ফোন আসার সময় পার হয়ে যায়নি। কিন্তু অপেক্ষার সময়গুলো কেন যেন কাটতে চায় না। নিজেই ফোন দেবে কি? না, ঠিক হবে না। ঈদের দিন ব্যস্ততা থাকে সবারই। ভাবতে ভাবতেই মোবাইল বেজে উঠলো। হ্যাঁ, ফোনটা আসমানিরই। মোবাইল কানে দিয়ে অন্য দশটা দিনের মতই বের হয়ে গেল জাহিদ। (অণুগল্প)

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

ঈদের শুভেচ্ছা

অপরাজিতা


“আকাশের বাঁক ঘুরে চাঁদ এল ছবির মতন
নতুন কিশ্তী বুঝি এল ঘুরে অজানা সাগর
আজ এ স্বপ্নের মাঠে রাঙা মেঘ হল ঘন।

আতরের ঘন গন্ধে মাটি চায় হাওয়ার বাঁধন
ঈদের আনন্দ, স্বপ্ন রেখায়িত গোধূলি আকাশ।”

ফররুখ আহমেদ

‘ঈদের শুভেচ্ছা’ বাংলায় মনের জানালা, গদ্য, কবিতা ও অপরাজিতা নিয়ে লেখক, পাঠক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখা যায় নানা আয়োজন। প্রবন্ধ, গান, ছড়া-কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান কোন কিছুই বাদ যায় না। ঈদকে কেন্দ্র করে কবি- সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, অভিনেতাদের ব্যস্ত সময় কাটে। সত্যি বলতে কী, এমন কোন মুসলিম কবি-সাহিত্যিক কিংবা লেখককে হয়তো পাওয়া যাবে না যিনি ঈদ নিয়ে কোন লেখা লিখেননি। বাংলা ভাষাভাষী কবি-সাহিত্যিকরাও এগিয়ে আছেন।

ঈদকে নিয়ে কবি কায়কোবাদ ‘ঈদ আবাহন’ নামে একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি কয়েকটি লাইন-

“ এই ঈদ বিধাতার কি যে শুভ উদ্দেশ্য মহান,
হয় সিদ্ধ, বুঝে না তা স্বার্থপর মানব সন্তান।
এ ত নহে শুধু ভবে আনন্দ উৎসব ধুলা খেলা।
এ শুধু জাতীয় পুণ্যমিলনের এক মহামেলা। ”

কবি কায়কোবাদ ঈদকে পুণ্যমিলনের মহামেলা হিসেবে অভিহিত করলেও ইসলামের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ না করার কারণে ঈদের দিনেও গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের কষ্টের যেন শেষ থাকে না।

এ দিকটি ফুটে ওঠেছে শাহাদাত হোসেনের ‘বাংলার ঈদ’ কবিতায়। কবি লিখেছেন,

“বাংলার মুসলমান
শুধু চেয়ে রয়-
মৌন ম্লান ক্লিষ্ট মুখ নির্বাক নিশ্চল।
ফিত্রার খুশী কোথা তার?
কি দান সে দিবে ক্ষুধিতেরে?
নিজেই কাঙাল রিক্ত-
ভিক্ষা মাগি ফিরে দ্বারে দ্বারে।”
এ কবিতায় কবি ফিতরা আদায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

কবি গোলাম মোস্তফা ঈদকে মানবতার বিরাট প্লাটফর্ম হিসেবে কল্পনা করেছেন। ঈদ উৎসব কবিতায় তিনি লিখেছেন-

“ কণ্ঠে মিলনের ধ্বনিছে প্রেম-বাণী, বক্ষে ভরা তার শান্তি,
চক্ষে করুণার স্নিগ্ধ জ্যোতি ভার,বিশ্ব-বিমোহন কান্তি
প্রীতি ও মিলনের মধুর দৃশ্যে
এসেছে নামিয়া যে নিখিল বিশ্বে
দরশে সবাকার মুছেছে হাহাকার বিয়োগ-বেদনার শ্রান্তি।”

ঈদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা ও গান লিখেছেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার লেখা – ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাকিদ।’ এ গানটি ছাড়া ঈদের আনন্দ যেন পূর্ণতা পায় না। সুত্র: Subornolota-সুবর্ণলতা

 

ফিতরা

দ্য স্লেভ


আমরা যাকাতের বিষয়ে জানি কিন্তু ফিতরার বিষয়ে অবগত নই বললেই চলে। যাকাত অবশ্য সঠিকভাবে প্রদান করিনা আমরা। আর রমজানেই কেবল যাকাত নিয়ে আলোচনা করাই তার প্রমান। অথচ বিষয়টা রমজান কেন্দ্রীক নয়। এটা নিসাব পরিমান অর্থ সংক্রান্ত এবং তা এক বছর অতিবাহিত হতে হবে।

জাকাতের ২টা পরিমাপক আছে, একটা স্বর্ণ অন্যটা রৌপ্য। যেটার সাথে মিলে, সেটায় নিয়মানুযায়ী জাকাত দিতে হবে। যদি রুপার তুলা(প্রায় ১০ গ্রাম) ৫০০ টাকা হয় তাহলে সাড়ে ৫২ তুলার দাম ২৬২৫০(রুপার বর্তমান দাম সম্ভবত আরেকটু বেশী) হয় । আর এই পরিমান টাকা কারো ব্যাংকে বা ঘরে ১ বছর পড়ে থাকলে তার উপর ২.৫% জাকাত দিতে হবে। জাকাত সর্ব প্রথম আপন লোকদেরকে দিতে হবে, এতে জাকাতও আদায় হবে আবার আত্মীয়তাও রক্ষিত হবে। এমনকি স্ত্রী তার গরিব স্বামীকেও জাকাত দিতে পারে।

কিন্তু ফিতরার ব্যাপারে আমরা প্রায় জানিনা বললেই চলে। এটা রমজানে প্রদান করতে হয় শেষের দিকে এবং ঈদের নামাজের পূর্বে। ভালো হয় যদি ঈদের আগের দিন প্রদান করা হয়। রসূল(সাঃ) খেজুর,কিসমিস,বার্লি ইত্যাদীর এক সা(আনুমানিক আড়াই কেজী বা ৩ কেজী বা কিছু কম বেশী পরিমান) পরিমান ফিতরা দিতেন। তবে আলেমরা বলেন এটা প্রচলিত প্রধান খাদ্য দ্বারাও আদায় করা যাবে। তবে কেউ খেজুর বা উক্ত দামী খাদ্য দ্বারাও করতে পারে। বিশেষ করে ধনীরা ফিতরা দিবে দামী খাবারের পরিমানে। সেটাই উত্তম।

ফিতরা খাদ্য দ্বারা দিতে হবে এটাই সুন্নাহ কিন্তু অনেকে উক্ত পরিমান টাকা দ্বারাও ফিতরা দেওয়া যাবে বলেছেন। তবে খাদ্য দ্বারা দেওয়াই উত্তম। যারা বিদেশে আছে এবং আশপাশে গরিব মানুষ নেই, তারা দেশে টাকা পাঠালে সেটা দিয়ে অন্যরা খাদ্য কিনে খেতে পারে। এটা প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তি আদায় করবে যার মোটামুটি খেয়ে পরে চলে যায়। ফিতরার জন্যে যাকাতের নিসাব পরিমান সম্পদ হওয়া জরুরী নয়।

আমি ভাবছিলাম খেজুর কিনে দেব, কিন্তু মসজিদ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা টাকা সংগ্রহ করছে এবং এটা দ্বারা তারা খাদ্য কিনে এখানে বসবাসকারী গরিবদেরকে প্রদান করবে। ইমাম বললেন খাদ্য দিয়েই ফিতরা দিতে হবে,, তাদের হাতে টাকা দিলে হবেনা। এর একটা আলাদা অর্থ আছে। ঈদে গরিব লোকেরা যাবে ভালো খাবার খেতে পারে তার জন্যেই ফিতরা। বাস্তবে দেখা গেছে গরিবদেরকে টাকা দিলে তারা সেটা দিয়ে পরিবারের জন্যে খাবার না কিনে গরিবি হালে ঈদ করে, এতে তাদের পরিবার ভালো খাবার খেতে পারেনা। ফিতরা আসলে তাদের ঈদের দিন উত্তম খাবার নিশ্চিত করে।

সুন্নাহ থেকে আমার মনে হয়েছে যেই লোক যেই মানের খাবার ঈদের দিন খায়,তিনি সেই মানের খাবার ফিতরা হিসেবে প্রদান করবেন। এ কারনেই তৎকালীন আরবের বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত খাদ্যের উপর রসূল(সাঃ) ফিতরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার লেখা পড়ে যারা ভাবছেন ফিতরা তার উপর কর্তব্যরূপে আরোপিত হয়েছে কিনা,,, তারা এত না ভেবে ফিতরা দিয়েই ঈদের নামাজ পড়তে যাবেন দয়া করে

আল্লাহ আমাদের সকল ইবাদতকে কবুল করুন এবং সম্মান বৃদ্ধি করুন।

 

ভালো থাকাটাও একটি শিল্প

আফরোজা হাসান


খুব ছোটবেলায় শখ করে গান (হামদ, নাত, গজল) শিখেছিলাম। মামণির এক বান্ধবী বাসায় এসে গান শিখাতেন। উনার কাছেই প্রথম জেনেছিলাম যে, গান হচ্ছে একটা শিল্প। আর শিল্পর প্রয়োগে শিল্পী হতে প্রয়োজন অনেক সাধনার। সত্যি অনেক সাধনা করেছিলাম। সেই সময় আইসক্রিম খুব পছন্দ করতাম কিন্তু কণ্ঠস্বর খারাপ হয়ে যাবে সেই ভয়তে আইসক্রিম খেতাম না। কুসুম গরম পানি, আদা, লেবু, মধু, যষ্টিমধু আরো কত কি খেতাম সুন্দর কণ্ঠস্বরের জন্য। আর সকালে উঠে খালি গলার আ-আ-আ-আ- সেতো ছিলোই। এইসব কষ্ট খুব মনের আনন্দ নিয়ে করতাম কারণ আমার শখ ছিলো শিল্পী হবার। আর মানুষ যখন মন থেকে কোন কিছু হতে চায়, তখন তারজন্য নিরলস পরিশ্রম করে যেতে পারে। আমিও পেরেছিলাম। আর সেই কষ্ট ও ত্যাগের ফল স্বরূপ কিছু পুরষ্কার, আপনজনদের প্রশংসা, স্পেশ্যাল মূল্যায়ন যোগ হয়েছিলো জীবন ঝুলিতে।

ছোটবেলা থেকেই রান্নার ভীষণ শখ ছিল। স্বপ্ন দেখতাম সবাই আমার রান্না খেয়ে পরিতৃপ্তির ধ্বনি তুলছে। সবচেয়ে পছন্দ করতাম যেই মানুষটির রান্না তাকে গিয়ে ধরেছিলাম আমাকেও তার মত রাঁধুনী বানিয়ে দেবার জন্য। উনি হেসে বলেছিলেন, আমার রান্না মজা হবার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমি রান্না করতে ভালোবাসি। উপভোগ করি রান্না করাটাকে। আসলে উপভোগ না করলে মানুষের কোন গুণ বিকশিত হয় না পরিপুর্ণ ভাবে। কারণ কোন কিছুকে উপভোগ না করলে মানুষ সেই কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। আর মন যেখানে অস্থির বা অমনোযোগী সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করাটাই আসলে ঠিক না। তাই কোন কিছুতে পারদর্শী হতে সেই জিনিসকে ঘিরে মনে সুখ সুখ আবেশ থাকাটা খুব জরুরি। তাই ভালো রান্না করতে হলে তোমাকে সবার আগে ভালবাসতে হবে রান্নাকে। কেননা রান্না একটি সাংঘাতিক আর্ট। একদম ছবি আঁকার মতো। মনের মাধুরী মিশিয়ে যে শিল্পকে রূপদান করতে হয়। রান্নাকে আমি ছবি আঁকার মতই বহু যতনে আয়ত্ত্ব করতে চেষ্টা করেছি এরপর থেকে।

মানুষের মন নিয়ে স্টাডি করতে করতে আজ হঠাৎ একটা উপলব্ধি হলো। মনে হলো শিল্পর প্রয়োগে শিল্পী হতে হলে সেই সম্পর্কে জ্ঞানের প্রয়োজন। প্রয়োজন যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের। এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন চেষ্টার। নিরলস ভাবে লেগে থাকার ইচ্ছার। শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যার প্রচেষ্টা যত বেশি থাকে, সে তত বেশি সফল হয়। ঠিক তেমনি ভালো থাকতে জানাটাও মনে হয় এক ধরনের শিল্প। কেননা এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যারা ভালো থাকার জীবনাপোকরণে ভরপুর থাকা স্বত্ত্বেও হতাশা-নিরাশায় দিনযাপন করছে। জীবনকে ঘিরে শুধুই হাহাকার ধ্বনি তোলে তারা। আবার কিছু মানুষ দেখেছি যারা জীবনাপোকণেরর সন্ধানে ছুটে চলছে একরাশ তৃপ্ততা নিয়ে। তাদের কণ্ঠে সর্বদা ধ্বনিত হয় “আলহামদুলিল্লাহ”।

আসলে ভালো যে আছি সেটা বুঝে নিতে জানতে হয়, শিখতে হয়। আর সেজন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞানের। প্রয়োজন হয় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের। দরকার হয় প্রচণ্ড চেষ্টা ও নিরলস লেগে থাকার ইচ্ছার। ত্যাগ করতে হয় অনেক অ-নে-ক কিছুকে। তা না হলে কখনোই অর্জন করা যায় না মনের আরাধ্য প্রশান্তিকে।

 

নতুন ভোরের গল্প

ডা. ফাতিমা খান


অফিসের পাশে সুপার শপে বাজার করছি, হঠাতই সাওসান এর সাথে দেখা। আমি খেয়াল না করলেও সে ঠিকই আমার কাছে অনেকটা ছুটে এসেই সালাম দিল। এখানকার রেওয়াজ অনুযায়ী পরিচিত কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময়ের পর কোলাকুলি করা হয়, যেমনটা আমরা ঈদের দিনে করে থাকি।
– কেমন আছ তুমি ডক্টর? কত্তদিন পর!
– সাওসান! কেমন আছ তুমি?
– খুব ভাল আছি আমি, আল্লাহ আমাকে অনেক ভাল রেখেছেন। তোমাকে একটা ভাল খবর দিতে চাই ডিয়ার; guess what?… আচ্ছা বলেই ফেলি। আমি সিগারেট, সিসা আর ওই যে বাকী ওইসব… সব ছেড়ে দিয়েছি। তোমার কথা গুলো আমার বারবার মনে পড়ে, সম্ভবত এজন্যই নিজেকে বদলাতে পেরেছি। ঐ যে বলেছিলে না Almighty created you with divine beauty and strength not to chase for the empty things that harm you, but to find your ownself and realize that you belong to Him only! “.
হুম, একবার বলেছিলাম বটে, অনেক কথাই তো বলতাম। ওকে কাউন্সিলিং করতাম মাঝে মাঝে। ওরাল থেরাপি হল সর্বোত্তম থেরাপি। আমার উদ্দেশ্য ছিল ফুলের মত মেয়েটা যেন অকালে ঝরে না পড়ে। বললাম,
– আচ্ছা, বেশতো! আজকে আমার সারাদিনের সবচেয়ে ভাল খবরটা তুমি আমাকে দিলে সাওসান। হ্যাপি টু হিয়ার দা বেস্ট নিউজ অফ দা ডে!
মেয়েটা কথায় কথায় অনেক কথাই মনে করিয়ে দিল। আমার খুব সাধারন উপদেশগুলোকে সে যে কত দামী উক্তি ভেবে যত্ন করে মনে রেখেছে তা ও না বললে হয়ত জানতাম না।
সাওসান ফিলিস্তিনি মেয়ে। “ফিলিস্তিন” নাম শুনলে যেমন একটা বিদ্ধস্ত দেশ, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত পরিবার আর গোলা বারুদের ধোয়ায় ঝাপসা একটা ছবি ভেসে ওঠে, এখানে ফিলিস্তিনিদের অবস্থা কিন্তু সেরকম নয়। সৌদিআরবে প্রচুর ফিলিস্তিনিদের বসবাস, তাদের বাপ দাদাদের আমল থেকে। বেশীরভাগই ব্যবসায়ী। স্বভাবগত ভাবে তাদের মধ্যে একতা অনেক বেশী। সম্ভবত ‘একতার বল’ এর জন্যই তারা এদেশে অর্থনৈতিক আর সামাজিক খুটি মজবুত করে নিয়েছে। ফিলিস্তিনি মেয়েরা দেখতে সুন্দর আর তুলনামূলক ভাবে সৌদি মেয়েদের থেকে নমনীয় বলে পাত্রী হিসেবে এখানে তাদের চাহিদা আছে বেশ।
একুশ কি বাইশ বছরের উচ্ছল, চপল তরুণী সাওসান। খুব সাধারণ কিন্তু শিক্ষিত মেয়ে সে। এখনো তার মাঝে শিশুসুলভ কিছু স্বভাব রয়ে গিয়েছে। বছর পাচেক আগে বিয়ে হয়েছে এক ফিলিস্তিনি ধনকুবেরের ছেলের সাথে। যৌথ পরিবার, লোকজনে জমজমাট শ্বশুরবাড়ি। বাসায় বড় থেকে ছোট মোটামুটি সবাই ধুমপায়ী, অবসরে মজলিশে বসে সবাই একসাথে ধোয়া ছাড়ে, সিসা টানে। এমনকি ষাটোর্ধ শাশুড়িও তার কুঞ্চিত চামড়ার সরু দুই ঠোঁটের মাঝখানে সিগারেট সেটে লম্বা টান দেয়। শ্বশুরমশাই দেখতে কিছুটা Anthony Bardain এর মত, আমি যখন দেখেছি তখন তিনি তার টোবাকো পাইপ খানা দুই ঠোটের মাঝ খানটায় ধরে ছিলেন। মাথায় কাওবয় হ্যাট, ব্ল্যাক স্যুটে নিজেই তার হলুদ ‘হামার’ হাকিয়ে পুত্রবধূকে নিয়ে ক্লিনিকে এসেছিলেন। আমার ক্লিনিক থেকে মাইল খানেক দূরেই তদের ডুপ্লেক্স বাসা। অনেকবার তার বাসায় আমন্ত্রণ জানালেও সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। তার সাথে আমার দেখা হত আমার ডেন্টাল অফিসে। যেদিন আমার ব্যস্ততা কম থাকত সেদিন তার রাজ্যের গল্প শুনতাম ।
অনেকদিন মেয়েটার চিকিৎসা করেছি। অতিরিক্ত ধুমপান আর অবহেলার জন্য তার সব দাঁতই প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ট্রিটমেন্ট চলাকালে সে তার জীবনের ভাল মন্দ অনেক গল্পই শেয়ার করত। আমি তার ধূসর নীল চোখের স্ফূর্ত চাহনীর দিকে তাকিয়ে শুনতাম আর ভাবতাম.. পরিবার বা পারিপার্শ্বিকতা মানুষের অভ্যাসকে কি ভীষণভাবেই না প্রভাবিত করে! কে বলবে এই মেয়ে টুয়েন্টি স্টিকস পার ডে স্মোক করে বা সিসাতে কয়েক টান না দিয়ে ঘুমুতে যেতে পারেনা! অথচ সতের বছর বয়সে হিশামের সাথে বিয়ের আগে পর্যন্ত কখনো নাকি সে সিগারেট ছুঁয়েও দেখেনি! প্রথমবার মদে চুমুক দিয়েছিল দুবাইয়ের এক হোটেলে হিশামের সাথে বসেই, শ্বশুরের এক বিজনেস পার্টনারের ডিনার পার্টিতে। তারপর ধীরে ধীরে সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। হুইস্কি, বিয়ার, ভোদকার প্রথম স্বাদ গ্রহনের অভিজ্ঞতার গল্পগুলোও সে আমাকে শোনাতে বাদ দেয়নি। তবে আসক্তি ছিল শুধু সিগারেট আর সিসাতে। প্রেগ্ন্যান্সিতে অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে তার একমাত্র ছেলেটা ক্রনিক লাং ইনফেকশনে ভুগছিল।
ডেন্টাল চেয়ারে তার সাথে শেষ সিটিং এর পর তাকে কিছু নাসীহা করেছিলাম।
– বুঝলে সাওসান, তোমার নামটা যেমন সুন্দর ( সাওসান অর্থ ফুল) , তুমি দেখতেও সেরকম অপরূপা। আচ্ছা বলতো কি লাভ এসব ছাইপাঁশ খেয়ে? মন্দ ছাড়া ভাল কি কিছু পেয়েছ এই ধোয়া ফুঁকে? তোমার বাবা মা যদি বেচে থাকতেন তাহলে তাদের ফুলের মত মেয়েটাকে আসক্ত দেখলে কি খুশী হতেন? আমি জানি তোমার একটা নিষ্পাপ অন্তর আছে। আমি চাই তুমি ভেতরে ও বাইরে অপরূপা হও, অদ্বিতীয়া হও। আমি তোমাকে আজই স্মোকিং ছেড়ে দিতে বলছিনা, বরং তুমি প্রতি সপ্তাহে একটা করে স্টিক কমিয়ে দাও। আগামী একবছর পর তোমার সাথে যদি আমার দেখা হয় তখন আমি তোমার মুখে শুনতে চাই.. বাহান্ন সপ্তাহে তুমি তোমার সব বাজে অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছ। পারবে না ?
সাওসান কথা দিয়েছিল, কথা রেখেছেও। গত রমজান থেকে এই রমজান মাস, প্রায় একবছর পরই তার সাথে আমার এই সুপারশপে দেখা হল। সাওসান চলে যাচ্ছে জর্ডানে, তার চাচার কাছে যিনি ছোটকাল থেকে তার লালন পালন করেছেন। ” আই ওয়ান্ট টু টেইক আ টার্ন ইন মাই লাইফ । আই নিড আ চেইঞ্জ” – এরকম কিছু একটা বলল। ঠিক কি বোঝালো জানতে চাইনি। যেখানেই যাক ভাল থাকুক সওসান। নিজেকে গড়ে নিক। জীবনের পুরোটাই ওর এখনো বাকী প্রায়। শুদ্ধি আছে বলেই মানুষ ভুল করে, উপলব্ধি আত্নসংস্কারের মূল।
আলো, অন্ধকার , মেঘ, বৃষ্টি, রোদ, ছায়া, রংধনু – সবকিছুই মানুষের জীবনে একটু একটু চাই। পেইন্টিং এর প্যালেট এর মত জীবনটা, একেক খাপে একেক রঙ থাকতেই হয়। দুই তিন রঙ মিশে নতুন আরেকটা রঙ তৈরী না করলে যেমন ক্যানভাসের কিছু অংশ সাদাই থেকে যায়, আবার ভুল বাছাই করা রংগুলোর মিশ্রণে বেমানান রংটা ক্যানভাসের পুরো সৌন্দর্যটা নাশ করে ফেলে।। সবার জীবন রঙিন হোক, না হয় শুভ্রই থাকুক।

 

রাজশাহীতে গৃহবধূর আত্মহত্যা স্বামী শাশুড়ি গ্রেফতার

নারী সংবাদ


রাজশাহীতে গলায় ফাঁস দিয়ে শিউলী খাতুন (১৬) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে শোয়ার ঘর থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিউলী নগরীর শালবাগান এলাকার সামিউল বাশিরের স্ত্রী। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় থানায় একটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের হয়েছে। শিউলীর বাবা মোখলেসুর রহমান বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতেই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় শিউলীর স্বামী সামিউল বাশির (২৩) ও শাশুড়ি তানিয়া সানজিদাকে (৪৩) আসামি করা হয়। মামলার পর ওই রাতেই তারা গ্রেফতার হন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় আট মাস আগে শালবাগানের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে সামিউলের সাথে নওদাপাড়া এলাকার মোখলেসুর রহমানের মেয়ে শিউলীর বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্য কলহ ছিল। এরই জের ধরে শিউলী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে শিউলীর লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হলে দুই আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনানুগ পদপে গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

টিনএজারদের জন্য প্রেমের গল্প

আফরোজা হাসান


গতকাল ক্লাস শেষে যখন সবাই মিলে গল্প করছিলাম এক স্টুডেন্ট তার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প বিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল ক্লাসের সবার সাথে। প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি বোঝার জন্যই সে উপন্যাস হাতে তুলে নিয়েছিল। এবং প্রেম সম্পর্কে ধারণা আরো ঘোলাটে করার মধ্যে দিয়ে তার উপন্যাস শেষ হয়। সে বলছিল টিনএজারদের জন্য স্বচ্ছ, সুন্দর ও সঠিক প্রেমের গল্প লেখা দরকার। যেখানে গল্পে গল্পে তারা জেনে ও বুঝে যাবে প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি এবং শরীয়তে এই বিষয়ে কি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টিনএজে দেহ ও মনে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তার ফলে আবেগের যে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয় এবং যে যে রূপে তা বাইরে বেড়িয়ে আসতে চায় সেই ব্যাপার গুলোও সুন্দর করে বিশ্লেষণ করা থাকবে গল্পের বইতে। যাতে আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যাপারেও একটা ধারণা পেয়ে যায় গল্প পড়ে।

বেশ কিছুদিন আগে এক বোন ফোন করে খুব চিন্তিত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন তার বারো বছর বয়সি মেয়েটি আজকাল খুব প্রেমের গল্প-উপন্যাস পড়তে পছন্দ করে। বারবী কার্টুন গুলোর খুব ভক্ত হয়ে উঠেছে। কার্টুনে যখন প্রিন্স ও প্রিন্সেস রোমান্টিক মুহুর্তে থাকে বা কথা বলে বোনটি খেয়াল করেছেন তার মেয়ের চেহারাতে গোলাপী আভা ছড়িয়ে পড়ে! ঠোঁট টিপে মেয়ে হাসে! মাঝে মাঝে নাকি দীর্ঘশ্বাসও ফেলে মৃদু মৃদু! বোনটি খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন মেয়েকে নিয়ে। চিন্তায় পরাটা অবশ্য স্বাভাবিক। সন্তানের চিন্তায় মায়ের মন সবসময় চিকন একটা দড়ির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। যার নীচে থাকে জ্বলজ্বলে আগুণ কিংবা অথৈ পানি। এখন সার্কাসের দড়কাবাজের ট্রেনিং তো আর সব মায়েদের থাকে না। সুতরাং প্রতি মুহুর্তে ‘কি হয়’ ‘কি হয়’ অর্থাৎ, পড়ে যাবার ভয়।

গতবছর বড় ভাইয়ার কন্যারত্নাটি রোমিও-জুলিয়েট পড়ার আবদার করেছিল। ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না যে, আমার মেয়ে তার জীবনের প্রথম লাভ স্টোরি পড়বে রোমিও-জুলিয়েট! শিক্ষণীয় তো কিছুই নেই এই গল্পে। ধোঁকা, মিথ্যা, আত্মহত্যার মত জঘন্য সব উপাদানে ঘেরা পথে চলে আমার মেয়ে ভালোবাসার ভুবনে প্রবেশ করবে? ভালোবাসার কারণে সবকিছু তুচ্ছ করা কি ঠিক? সম্পর্ক বা ভালোবাসার দাবী কি জীবনের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত? আমার মনেহয় না। কারণ আমাদের জীবন তো প্রকৃত পক্ষে আমাদের নিজের না। আমাদের জীবন আমাদের কাছে আল্লাহর দেয়া আমানত। তাই জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছুই থাকা ঠিক না মানুষের কাছে। জীবন নেই তো কিছুই নেই। জীবনই যদি না থাকে ভালবাসা, স্বপ্ন, বন্ধন সবই তো অর্থহীন।কাউকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দেয়ার মত ইউজলেস আর কিছুই নেই দুনিয়াতে। তাহলে এমন ইউজলেস কাহিনী কেন পড়তে দেবো আমার মেয়েকে?

আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন ভাইয়ার কথা শুনে। এভাবে আমি কখনোই চিন্তা করিনি। গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা-কার্টুন মনকে প্রভাবিত করে সেটা আমিও জানি। কিন্তু কোন মনে যখন সবকিছুর সংজ্ঞা তৈরি হচ্ছে সেই মনকে এইসব ভুল উদাহরণ থেকে বাঁচিয়ে রাখাটা কতটা জরুরি সেটা সেদিন অনুভব করেছিলাম। প্রেম-ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ, রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ, রজকিনী-চণ্ডিদাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্রেম কাহিনীর মধ্যে ভালোবাসা কোথায় সেটাই আমি খুঁজে পাইনা। এসব হচ্ছে মোহ, আবেগ আর পরকিয়ার কাহিনী। একে-অন্যের জন্য আত্মহত্যা মানে হচ্ছে জাহান্নামের কাহিনী। আর এসবকে যদি কেউ ভালোবাসা বলে তাহলে এমন ভালোবাসা থেকে আমি নিজেকে মাহরুম রাখাই পছন্দ করবো। জীবন দেয়া কখনোই ভালোবাসার গভীরতা বোঝায় না। সেটা তো ভালোবাসাই না যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।ভালবাসা তো সেটা যা আমাদেরকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। জীবনকে ফুলে-ফলে গড়তে শেখায়। অনন্ত জীবন একসাথে কাটানোর স্বপ্ন দেখায়। দুনিয়ার ক্ষণিকের জীবনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে শেখায়।

ভাইয়া কাগজ-কলম নিয়ে বসে গিয়েছিলেন প্রেমের গল্প লিখতে। লিখেছিলেন উনার সাংসারিক জীবনের ভালোবাসার গল্প। ভাইয়ার কন্যার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প ছিল ওর বাবা-মার সংসার জীবনের ভালোবাসার গল্প। সেদিন আবারো মনে হয়েছিল বাবা- মা’ই তো সন্তানদেরকে দেখাবে সামনে চলার পথ, পথের দিশা, পথ মাঝের চরাই-উৎড়াই, অতঃপর গন্তব্য। বাবা-মা যদি কোন ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা করে, ব্যর্থ হয়। তাহলে সন্তানদের উপর সেটার প্রভাব পড়বেই। বাবা-মা না শেখালে কিন্তু সন্তানরা অজ্ঞ থেকে যাবে না। তারা হয়তো কোন ভুল মাধ্যম থেকে সেই জ্ঞানটা অর্জন করবে। যারফলে ভুলের পথে চলা সহজ হয়ে যাবে তাদের জন্য। বাবা-মা যেমন আঙ্গুল ধরে সন্তানদেরকে হাঁটতে শেখায়, চলতে চলতে পড়ে গেলে হাত বাড়িয়ে দেয় তাদের সামনে, যাতে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে তারা। সন্তানদের মনোজগতেও বাবা-মার অবস্থান এমনটাই হওয়া উচিত। আঙ্গুল ধরে মনের আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথে বাবা-মাকেই হতে হবে সন্তানদের পথ প্রদর্শক। যতবার হোঁচট খেয়ে পড়বে সামনে বাড়িয়ে দিতে হবে হাত উঠে দাঁড়াবার জন্য।

কনসেপ্টটা অসাধারণ মনে হয়েছিল আমার কাছে। আসলেই কতই না সুন্দর হতো যদি প্রতিটা সন্তান ভালোবাসাকে জানতো বাবা-মাকে দিয়ে! প্রতিটা সন্তানের জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প হত তাদের বাবা-মাদের জীবনের ভালোবাসার উপাখ্যান। তাহলে শুধু যে ভালোবাসার সঠিক জ্ঞান অর্জিত হতো সেটাই না। সাথে সাথে অর্জিত হতো জীবন-যাপনের নানাবিধ শিক্ষা। সন্তানরা জানতে পারতো জীবনে সুখী হবার পথে করণীয়-বর্জনীয়। এবং সেই আলোকে তারা আলোকিত করে নিতে পারতো তাদের জীবনের পথ। বর্তমানে আমরা এমন একটা সময় পার করছি যা সবদিক থেকে বৈরী আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাই এটা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবনের প্রতিটি ধাপের প্রয়োজনীয় শিক্ষা বাবা-মাকেই সকল দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে সন্তানদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

টিনএজারদেরকে যে কোন ব্যাপারে বোঝানোর ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে, ওদের প্রশ্নের জবাবে শরীয়তের বিধান বা কুরআন ও হাদিস থেকে বাছাইকৃত অংশ বলে দেয়াটা আসলে খুব সহজ। কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স শুনে ওরাও হয়তো বেশির ভাগ সময় চুপচাপ মেনে নেয়। কেননা শরিয়তের বিধানের ব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।কিন্তু এতে প্রায় সময়ই ওদের অনুসন্ধিৎসু মন পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হয় না। কারন সমাধান পেলেও মনের খোঁড়াক পায় না যথাযথ। তাই ইসলামিক ভাবে সমস্যার সমাধান দেবার সময় প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কোন উৎস থেকে এই চিন্তাটা বা প্রশ্নটা ওদের মনে জেগেছে। অতঃপর প্রাসংগিক আলোচনা কোনদিকে প্রভাবিত হবে সেটা নির্ধারিত করে নিয়ে সেই আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে পুরো বিষয়টাকে। এবং সবশেষে মন্তব্যে কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

যে সব মেয়েরা রোজা রাখতে পারেনা তারা কিভাবে লাইলাতুল কদর পালন করবে?

বিশেষ সংখ্যা 


উমর সুলায়মানঃ

আমরা একটা প্রশ্ন পেয়েছি যে, যদি কোন মেয়ে রোজা করতে না পারে তবে সে কিভাবে রমজান মাসের সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারে? এমন অনেক বোনেরা আছেন যারা আমার সামনে এসে এই বলে কেঁদে ফেলেছেন যে, রমজানের শেষ ১০ রাত এসে গেছে কিন্তু আমি রোজা করতে পারবো না, নামাজ পড়তে পারবো না। শেষ ১০ রাতের মধ্যে লায়লাতুল কদর, কিন্তু আমি রোজা করতে পারবোনা, নামায পড়তে পারবো না। একটা হাদীস আছে যেটা আপনাকে অনেক আশাবাদী করে তুলতে পারে। প্রথমটি হল, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পরে। কিয়াসের মাধ্যমে উলামারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোন মেয়ে যে রোজা করতে পারছে না তাকে সাময়িকভাবে অসুস্থ্য মানুষের সমতুল্য মনে করা যাবে। মহানবী (সাঃ)বলেছেন, “কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পরে বা সফরে থাকে এবং একারণে তারা সাধারণত যেই ইবাদত করত সেটা মিস করে ফেলে। সেক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা তাদের নামে এই ইবাদতের সওয়াব পুরোপুরি লিখে দেন”। আল বুখারীতে এই হাদিসটি এসেছে। আল্লাহর কি রহমত! আল্লাহ যদি জানেন যে, আপনি নামায পড়তেন এবং আপনার সেই আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজন আছে তবে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা সেটা লিখে দিবেন। তবে সেটা আপনার স্ট্যান্ডার্ডে নয়, তাঁর স্ট্যান্ডার্ডে। যাই ঘটুক না কেন আপনি পুরো পুরস্কারই পাবেন। এটা হল এক নাম্বার কথা।

দুই নাম্বার হল, তখনো কুর’আন পাঠ করা। এই অবস্থায় কুর’আন পাঠ করা ফিক্‌হের এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) একদা জানাবাহ অবস্থায় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বলেছিলেন যে, সুবহানাল্লাহ! “মু’মিন, যে বিশ্বাসী, সে কখনো সত্যিকারের অপবিত্র হয় না”। ঠিক আছে? সে কখনো অপবিত্র হয় না। সহীহ মুসলিমে দীর্ঘ হাদীস আছে, সেখানে ইহুদীদের, বিশেষত গোঁড়া ইহুদীদের কথা বলা হয়েছে। হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, তারা ছিলেন বনু কুরায়দার কিছু গোঁড়া ইহুদী। তাদের মধ্যকার কোন মেয়ের মাসিকের সময়টাতে তারা সেই মেয়েকে পুরোপুরি পরিত্যক্ত করতো। তাকে বাসাতে ঘুমাতে পর্যন্ত দেয়া হত না। সুবহানাল্লাহ! তার সাথে এমন ব্যবহার করা হত যেন সে ভুল কিছু করছে। আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা নাযিল করলেন- فَاعْتَزِلُواْ النِّسَا “রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করবে”(সূরা বাকারাহঃ ২২২)। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, এটা দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে যে, সে সময় স্ত্রীদের সাথে পুরোপুরি ঘনিষ্ট না হতে। মহানবী (সাঃ)আমাদের উদাহরণ দেখিয়েছেন সেই অবস্থায় কিভাবে আয়েশা (রাঃ) এর সাথে মেলামেশা করতেন সেটার মাধ্যমে । মদীনার ইহুদীরা মহানবী (সাঃ) এর সমালোচনা করে বলতো যে, “তিঁনি এক্ষেত্রেও আমাদের থেকে আলাদা”। এর অর্থ হল, আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে দেখিনা যে একজন মু’মিন সেসময় অপবিত্র হয়ে যায়। এসময় তাদের যে কাজটি করতে পুরোপুরি মানা সেটা হল মুসহাফ স্পর্শ করা। একারণে নয় যে সে অপবিত্র। একারণে যে মুসহাফ (কুরআন) ধরতে অজু করা প্রয়োজন। মুসহাফ ধরার জন্য, কুর’আনের শব্দগুলোকে ধরার জন্য গৌণ ধরণের পবিত্রতার প্রয়োজন হয়। আর একজন মেয়ে এই অবস্থায় এটা করতে পারে না। আধ্যাত্মিকভাবে সে পবিত্র থাকে। একজন মু’মিন কখনও অপবিত্র হয় না। যতটুকু যিকির, দু’আ করা সম্ভব তারা সেটা করতে পারবে। আইপ্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঊলামারা বলেছেন, আপনি যখন আইপ্যাড ধরে আছেন তখন আপনি একটা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ধরে আছেন। সেই মুহূর্তে একটা মুসহাফের ক্ষেত্রে যে নিয়ম এটার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।এ্যাপে এমন উপায় থাকে যে শব্দকে স্পর্শ না করে পাতা উল্টানো যায়। ফিক্‌হ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সেই মুহূর্তে আইপ্যাডটা মুসহাফের কাজ করে। সেই মুহূর্তে এটা মুসহাফ। তারপরেও, মেয়েরা সেটাকে ধরতে পারে এবং পড়তে পারে। খেয়াল রাখতে হবে শব্দগুলোকে না ধরার ব্যাপারে। সেটার জন্য পবিত্রতার দরকার হয়। এটা ধরার জন্য এক ধরণের পবিত্রতা দরকার হয়। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, বিভিন্ন ধরণের মতামত আছে। ফিক্‌হ দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা আলোচনা করতে গেলে অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে।

তবুও এটা বলা যায় যে, যিকির করা, দু’আ, কুর’আন পাঠ করা যাবে। আল্লাহর কাছে “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুওউন তু’হিব্বুল ‘আফ্‌ওয়া ফা’ফু ‘আন্নী” এই দু’আ করা যাবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দু’আ করা। এই সব করলেও কিন্তু কম নয়। এটা করলেও আল্লাহ লিখে রাখবেন যে আপনি সেই রাতে ইবাদত করেছেন কারণ আপনি অন্তত এতটুকু করেছেন।

নুমান আলী খানঃ

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি একবার দারুস সালামে গিয়েছিলাম এবং সেখানকার ইমামকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিঁনি বোনদেরকে খুব সুন্দর একটা উত্তর দিয়েছিলেন। আমি আপনাদেকে আজ সেটা উত্তরটাই জানাতে চাই। তিঁনি বলেছিলেন, “এই অবস্থায় মেয়েরা নামায পড়তে পারেনা এবং বিশেষ কিছু কাজ করতে পারে না। তাদেরকে কিছু কাজ করতে মানা করা আছে। তার সেই কাজগুলো না করাই আসলে এক ধরণের ইবাদত। এই পুরো সময়ে মেয়েটা যখন ঘুমাচ্ছে এবং জেগে আছে পুরোটাই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। অন্যসময়ে সাধারণত যে ইবাদত সে করত, এই সময়ে তার সেই ইবাদত না করাই আসলে সারাক্ষণ, সবসময় ইবাদতের সমতুল্য।

সুবহানাল্লাহ! উপরন্ত সে সুস্থ্য থাকলে, পুরোপুরি পবিত্র থাকলে ইবাদত করত তাই সেটা তো লেখা হবেই”। সুবহানাল্লাহ! (মজা করে বললেন) মনে হয় যেন মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। হা, হা, হা।

সংগ্রহ: nouman ali khan collection in bangla থেকে।

 

‘আম্মু বলেই ডাকি’

ডা. সাকলায়েন রাসেল


এই নারী বয়সে আমার প্রায় ১৭ বছর বড়! প্রথম যেদিন তিনি মা হন। সেদিন আমি প্রথম পৃথিবীতে আসি। সেদিন ছিল সোমবার, ৯ নভেম্বর…।

আমার প্রথম জন্মদিন, তাঁর প্রথম মা হওয়ার দিন! বছর ঘুরে ৯ নভেম্বর আসে…।
মা মুচকি হাসে, চোখে আনন্দ নাচে, বয়স হয়ে গেছে আমার…।বয়স হয়েছে তাঁরও…।

কিন্তু পার্থক্যটা রয়ে গেছে সেই ১৭ তেই! আমি তাই আটকে আছি সেই কৈশোরে..আম্মু বলেই ডাকি…অনেকে মুচকি হাসে…বুড়া ছেলে মা কে এখনো আম্মু ডাকে!!
ক্যামনে বোঝাই তাদের…পার্থক্যটা যে এখনো সেই ১৭ তে! তাই থাকবে শেষ দিন পর্যন্ত! জন্মদিন এলে তাই আগের মত কম বয়সী উচ্ছ্বাস দেখায় না মা। বলতে পারে না হালের সুরে…হ্যাপি বার্ডে বাবা!

জন্মদিন এলে তাই যেনতেন ভাবে বলে…আরে! তোর না আজ জন্মদিন!
ভাবখানা এমন যেন ভুলেই গিয়েছিল। একটু আগে মনে পড়ল!
অথচ টেবিলে বসলে…মিস নাই…। ছেলের জন্য ভালোমন্দ কত আয়োজন! উপলক্ষ জন্মদিন!

মিস হয়ে গেল শুধু এবার…৯ নভেম্বর!
ভাইরাল ইনফেকশন ও এর নানা জটিলতায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শয্যাশায়ী মা। বিকালের দিকে শুধু চোখ মেলে ফ্যালফ্যাল করে বললেন, ‘তোর জন্মদিনে এবার কিছুই করতে পারলাম না বাবা!’
আমিও চাইনি আম্মু কিছু করুক। শুধু চেয়েছি তাঁর রিপোর্টগুলো ভাল আসুক। চোখ মেলে তাকালে, এলোমেলো কথাগুলো সাজিয়ে উঠুক। আমার বুকের ধড়পড় ভাবটা একটু স্বাভাবিক হোক!
সেদিন থেকেই অপেক্ষায় আছি…মা সুস্থ হয়ে একবার হাসিমুখে তাকাবে! আজো সেই ক্ষণটা এলো না!

গত ৪৮ ঘন্টা হাসপাতালেই আছি…। এমন অপেক্ষায় থাকে অনেক সন্তানেরা।
প্রতিদিনই দেখি…কাল ছিলে তুমি, আজ আমি…কাল হয়ত সে!

পার্থক্য শুধু…মা আছেন আমারই আঙ্গিনায়…কিংবা আমি আছি তাঁর আঁচলে! ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে!

আজ এন্ডোক্রাইন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, মেডিসিন, নেফ্রোলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট সবাই মাকে দেখেছেন..ভাল আশ্বাস শুনিয়েছেন।

তবুও মন অস্থির…কতোক্ষণে বাসায় যাব! মাকে নিয়ে…সেখানে যে আরেক মা আছে! মা ডাকতে ডাকতে অনেক সময় মনেই হয় না-নাম তার আরিবা!
আরিবা…আমার ৫ বছরের বুড়িমা…আমার সবটুকু কোলাহল!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

দাম্পত্য জীবন: স্বামী-স্ত্রীর রাগারাগি এবং স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

দাম্পত্য জীবন:
স্বামী-স্ত্রীর রাগারাগি এবং স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন

শাশুর-শাশুড়ির সেবা করতে বললে, বেশী দিন বাপের বাড়িতে থাকতে নিষেধ করলে, পকেট থেকে চাহিবামাত্র অর্থ বের করে দিতে না পারলে, সেজেগুজে বেপর্দা হয়ে ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে নিষেধ করলে, মা-বাবার অনুমতি ছাড়া বাসার বাইরে যেতে নিষেধ করলে, স্ত্রীর কথামতো ও শাশুরবাড়ির পরামর্শ মত না চললে, হিন্দী চ্যানেল দেখা থেকে বিরত থাকতে বললে, ছোট ভাইকে চাকরী ব্যবস্থা করে দিতে না পারলে, বেশী রাত করে বাসায় ফিরলে, সিগারেট খেতে দেখলে, অসৎ পথে হলেও বেশী অর্থ উপার্জনের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে দেখলে, নিজের মা-বাবার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা কথা বললে, বোনেরা বেড়াতে আসলে স্ত্রী মুখ কালো করে থাকলে, ভাই-বোন-ভাবীদের সাথে ঝগড়া করলে, বাসায় অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন করে রাখলে, বাবা-মায়ের সামনে সন্তানদেরকে মারপিট করতে দেখলে, পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করতে চাইলে। যৌথ পরিবারের সুখের সংসার থেকে বের হয়ে আলাদা হয়ে বসবাস করার জন্য বাধ্য করলে।

আরো অনেক কারণে স্বামী-স্ত্রী রাগ করে থাকে। এই রাগারাগি থেকে অনেক সময় দীর্ঘদিন পর্যন্ত দুজন কথা বলা থেকে বিরত থাকে। রাগারাগির কারনে স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কে ফাটল ধরে। রাগারাগি চরম পর্যায়ে পৌছে গেলে অনেক সময় ছাড়াছাড়িও হয়ে থাকে। তাই বলি কি, দুই দিনের এই দুনিয়ায় বেশী রাগারাগি না করে সবকিছু হাসি-মুখে মেনে নিয়ে একটু ত্যাগ স্বীকার করে সংসার করলে সেই সংসার সুখের হয়, শান্তির হয়।

আরও একটি বিষয়,

দাম্পত্য জীবনঃ স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েই থাকে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাগ করে স্বামী-স্ত্রী দুজনে কিছু কিছু বাক্য বিনিময় করে।

এই যেমন,

“আমি তোমাকে আর ক্ষমা করবো না”, বা
“আমার পক্ষে তোমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব না”, বা “জীবনেও আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না”, বা “এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না”…ইত্যাদি, ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে যখনই আপনি “পারবো না”, “করবো না”, “মানবো না”, “মানা সম্ভব না”, “ক্ষমা করবো না”— এই জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার করেন, তখন এক অর্থে আপনার অক্ষমতাই প্রকাশ পায়। অর্থাৎ আপনার আর ক্ষমতা নেই মাপ করার বা মেনে নেওয়ার।

কিন্তু মহান আল্লাহর এক অন্যতম গুণ হচ্ছে ক্ষমা। এই ক্ষমা যদি আমরা করতে পারি তাহলে কিন্তু ক্ষমতা আবার প্রথম থেকে শুরু হয়ে যায় এবং ক্রমাগত ক্ষমা ক্রমাগত ক্ষমতার আধার। এটাই মহান আল্লাহর রীতি। তাই আসুন হে বিবাহিত ভাই-বোন, দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর সংসার সাজান। দুজনের ছোট-খাট ভুলগুলি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন। কোন বড় ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই পরিবারের মুরব্বীদের পরামর্শ নিয়ে সমাধান করুন। (সুত্রঃ সিটিজি৪বিডি এর ব্লগ)

 

‘কদর রাত’

আমিনুল ইসলাম


মাহে রমজান যাচ্ছে চলে
কদর খুঁজি শুধু,
না পেলে হায় জীবন হবে
শুকনো মরু ধূ ধূ।
ভাগ্য আমার বদলে যাবে
পেলে কদর রাত,
জীবন হবে রঙিন রঙিন
থাকবে না জুলমাত।

 

গল্পে গল্পে বাবুদের শেখানো

কানিজ ফাতিমা


বাচ্চারা উপদেশ অপছন্দ করে, আর গল্প শুনতে ভালোবাসে। গল্প ব্যবহার করে আপনার শিশুকে দিতে পারেন প্রয়োজনীয় উপদেশ –

লিমার প্রতিজ্ঞা

লিমার ক্লাসে একটা মজার ইভেন্ট হতে যাচ্ছে। শুক্রবার সবাই তাদের প্রিয় খেলনা ক্লাসের সবাইকে দেখতে পারবে। লিমা গত মাসেই খালামনির কাছ থেকে একটা মজার খেলনা উপহার পেয়েছে – পেট ক্যাট। ক্যাটটা খুবই মজার, মজার সব কান্ড করে। কেউ হাতে তালি দিলে সে তার দিকে এগিয়ে যায়, কখনো খেতে চায়. কখনো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে। আনন্দ পেলে তার চোখ হলুদ হয়ে জ্বলতে থাকে, আর দুঃখ পেলে চোখ নীল হয়ে যায়। লিমা একটুও অপেক্ষা করতে পারছে না, শুক্রবার আর কতদিন পরে আসবে? উহ – এতো দিন লাগছে কেন? সে জানে সবাই তার খেলনা টা পছন্দ করবেই আর সেটা হবে ক্লাসে সবার সেরা খেলনা। লিমা তার খেলনা একটা সুন্দর ব্যাগে যত্ন করে গুছিয়ে রাখলো যাতে শুক্রবার সে সেটা নিতে ভুলে না যায়।

বৃহস্পতিবার লিমার প্রিয় কাজিন ফারিহা বেড়াতে এসেছে তাদের বাসায়। লিমা খুবই খুশী। সারা বিকাল ওরা দুজন খেলা করে কাটিয়ে দিলো।

সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে ওরা গল্প করতে বসলো। লিমা ওর স্কুলে কাল যে ইভেন্ট আছে সেটা ফারিহাকে বললো।
লিমা: জানো, কাল আমাদের ক্লাসে শেয়ার এন্ড টেল হবে। টিচার বলেছে আমরা আমাদের প্রিয় খেলনা নিয়ে যেতে পারবো। যার খেলনা বেশী ছেলে-মেয়েরা পছন্দ করবে তার খেলনা সেরা হবে। আমি আমার পেট ক্যাট নিয়ে যাবো।
ফারিহা : দেখিতো তোমার পেট ক্যাট?

ফারিহা আর লিমা পেট ক্যাট টা নিয়ে অনেক্ষন খেললো।

মামনি পাশের রুম থেকে বললেন, ” তোমরা এশার নামাজ পরে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে উঠতে হবে, নামাজ পড়তে হবে আর স্কুলের জন্য রেডী হতে হবে”

“ঠিক আছে, মামনি” লিমা বললো।
কিন্তু তারা ভাবলো আর একটু খেললে কোনো ক্ষত নেই। তাই তারা আবার খেলা করতে লাগলো।

খেলতে খেলতে কখন যে রাট দশটা বেজে গেলো খেয়ালি করেনি ওরা। মামনি বিছানায় যাবার আগে প্রতিদিন লিমার ঘর চেক করে যায়। আজ এসে সে দেখলো লিমা আর ফারিহা এখনো খেলছে।

মামনি অসন্তুষ্ট হলেন, কিন্তু খুব রাগ করলেননা। ” তোমাদের কথা ছিল এক ঘন্টা আগে বিছনায় যাবার। আমি দেখতে পাচ্ছি এখনো তোমরা খেলছো। তোমরা কি নামাজ শেষ করেছো ?”

লিমা আর ফারিহা লজ্জা পেলো। কিন্তু মায়ের কাছে সেটা না বলে বললো ” এইতো পড়ছি”

মামনি এবার সত্যি রাগ হলেন। “তোমরা এখনই নামাজ পড়বে ও ঘুমাতে যাবে। আমি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছি ” – বলে মামনি বেরিয়ে গেলেন।

ফারিহা আর লিমা নামাজ সেরে বিছানায় আসলো। কিন্তু না ধুমিয়ে তারা গল্প শুরু করে দিলো।

লিমা – মামনি, মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত করে, সব কিছু সময় মতো করতে বলে। সবসময় এসব ভালো লাগে না। ”
ফারিহা – আমার আম্মুও এরকম। সব মায়েরাই একই রকম।
লিমা – ‘এখন খাবার সময় খেতে আসো, এখন পড়ার সময়, এখন ঘুমানোর সময়
ফারিহা’ – একটু রাত করে ঘুমালে কি হয় ?
লিমা – আম্মু বলে রাত করে ঘুমালে সকালে ওঠা যায় না। আর সকালে না উঠতে পারলে দিন সুন্দর করে শুরু করা যায় না, পুরো দিনটাই এলোমেলো হয়ে যায়।
ফারিহা – আমার মনে হয়না একটু রাত জাগলে এত সমস্যা হবে –

লিমা, ফারিহা এভাবে কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেলো ঘুমাতে।

পরের দিন সকালে লিমার মনে হলো মামনি তাকে অনেক দূর থেকে ডাকছে।
– লিমা, তুমি এখনো উঠোনি, স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে, তুমি ফজরের নামাজও পড়োনি। লিমা ওঠো , চোখ খোলো

লিমার মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে। লিমা চোখ খুলে দেখলো মা তার ওপরে ঝুকে আছেন, ওকে জাগানোর চেষ্টা করছেন।
‘সেই কখন থেকে ডাকছি, তাড়াতাড়ি ওঠো – স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে -‘

লিমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক বেজে গেছে –
বাথরুমের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে বললো ” আমাকে আগে ডাকোনি কেন ”
” আমি তোমাকে ডেকে দিয়ে রান্না ঘরে গিয়েছি নাস্তা রেডি করতে, এসে দেখি তুমি তখনও ওঠোনি – তাড়াতাড়ি নামাজ পরে রেডি হয়ে নাও ”

লিমা কোনো রকম বাথরুম সেরে নামাজ পরে রেডি হয়েই বেরিয়ে গেলো। ওর নাস্তা খাওয়ার সময় আর হলোনা।

স্কুলে গিয়ে লিমার শরীর খারাপ লাগলে শুরু করলো। খুব ঘুম পাচ্ছিলো। টিচার কি পড়ালো সে কিছুই বুঝলো না। সেকেন্ড পিরিয়ডে ওর মাথা ঘুরাতে লাগলো আর বমি লাগলো।

টিচার জিজ্ঞাসা করলেন , ” লিমা, তুমি কি অসুস্থ?”
“না, টিচার ”
পরের পিরিয়ডে লিমার পেটে ব্যাথা শুরু হলো। টিচার তাকে ক্লাসের পাশে নিয়ে সিক বেড়ে শুইয়ে দিলেন।
” আজ সকালে কি দিয়ে নাস্তা করেছো লিমা?- টিচার জিজ্ঞাসা করলেন।
” নাস্তা করিনি”
“কাল রাতে ভালো ঘুম হয়েছে ? তোমাদের বয়সে ৮ ঘন্টা ঘুম হয় জরুরী”
লিমা কিছু বললো না, সে তার ভুল বুজতে পারলো। তার নিজের কার্যকারিতার জন্য তার লজ্জা লাগছিলো।
টিচার তার লাঞ্চপ্যাক থেকে স্নাকস বেরকরে ওকে খেতে বললেন।
“কম ঘুম আর সকালে নাস্তা না খাওয়ার জন্য এমনটা হয়েছে। ইটা খেয়ে নাও আর একটু শুয়ে থাকো , দেখবে ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ। ”

সত্যিই কিছুক্ষনের মধ্যেই লিমার ভালো লাগতে শুরু করলো। লিমা উঠে গিয়ে তার ক্লাসে বসলো।
লিমার ভাগ্য খুব ভালো, সে শেয়ার এন্ড টেল শুরু হবার আগেই ক্লাসে এসেছে।
“তোমার তোমাদের পছন্দের খেলনা নিয়ে রেডি হও। আমরা এখন শেয়ার এন্ড টেল শুরু করবো ”

সবাই তাদের ব্যাকপ্যাক থেকে নিজ নিজ খেলনা বের করে ডেস্কে রাখলো। লিমাও তার ব্যাকপ্যাকের দিকে এগিয়ে গেলো – তার প্রিয় পেট ক্যাট বের করে আনতে।
লিমা ব্যাগ খুলে খেলনাটা দেখতে পেলোনা।
নিশ্চয়ই বইয়ের পেছনে আছে – লিমা ভাবলো
নাহ – ওখানেও নেই
লিমার দুশ্চিন্তা হতে শুরু করলো – তবে কি ?

লিমার এবার মনে পড়লো – কাল রাতে সে ফারিহার সঙ্গে খেলার পর ব্যাগে ওটা ঢুকাতে ভুলে গেছে। গল্প করতে করতে সে ভুলেই গিয়েছিলো যে তাকে স্কুলের ব্যাগ আগের রাতে গুছিয়ে রাখতে হবে। সকালে দেরী করে ওঠার জন্য সে ঠিকভাবে সব কিছু চেক করতে পারেনি – তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে।

লিমার চোখে পানি চলে আসলো, সে উঠে গিয়ে ধীরে ধীরে নিজে ডেস্কে গিয়ে বসলো –
আম্মু ঠিকই বলেছে, রাত জেগে থাকলে পরের দিনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে যায়। ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর স্কুলে আসার আগে সময় নিয়ে প্রিপারেশন নেয়া খুবই জরুরী। লিমার খুব মন খারাপ লাগছে – আর কোনোদিন সে এমনটা করবেনা।

গল্প শেষে:
গল্প শেষে আপনি আলোচনা করতে পারেন গল্পের শিক্ষা নিয়ে। প্রশ্ন করুন –
১. লিমা কেন সকালে উঠতে দেরী করলো ?
২. এতে তার কি কি সমস্যা হয়েছিল?
৩. তোমার কোনো বন্ধু বেড়াতে এলে তুমি কি কি করতে চাও?
৪. বন্ধুর সঙ্গে মজা করার সময় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার?
৫. প্রস্তুতি বলতে কি বুঝায়? কি কি ভাবে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি? কয়েকটা উদাহরণ দাও –
৬. স্কুলে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া দরকার? সেজন্য কত সময় প্রয়োজন ?
৭. রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া জরুরী?

 

মাহে রমজানে সবাইকে স্বাগতম!

প্রবাসী মজুমদার


এসেছে রমজান সাজিয়ে গগন
নেমেছে ধরায় আষাঢ় ও শ্রাবণ,
ধুয়ে মুছে যেতে জীবনের গ্লানি
সিয়াম সাধনায় গড়িতে জীবন।

ভেঙ্গে দিয়ে সব জটের অনিয়ম
শৃঙ্খলে আবার বাঁধিব নিজেকে
সকাল বিকেল নিশীথে জেগে
সেজদায় লুটাব প্রভুর বিধিতে।

খুলে দাও তোমার আকাশ দ্বার
ভরে দাও ধরার পাতাল জমিন,
শুধিতে তোমার করে নাও মোকে
রোজায় যেন পাই পরপারে জামিন।

রাহমাত,মাগফেরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে নিজেকে পরিশুদ্ধি করার মাসিক কর্মশালা – মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার এক কঠিন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেকে আবারও প্রস্তুত করার এ শুভ যাত্রায় সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

ফেলে আসা জীবনে ‘মাহে রমজানের’ এ প্রশিক্ষণ অসংখ্যবার পেলেও এর শিক্ষা, উদ্দেশ্য এবং অভিষ্ট লক্ষ্য যেন বরাবরের মতই ‘তাঁকে বন্দী কোরানের’ মত অনাদর আর অবহেলার গেলাপে যতন করে রেখে দিয়েছি । রমজানের পুর্বে রেখে আসা কু-অভ্যাস গুলোই বার বার লালন করা যেন জাতিগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা বিমুখ মানুষের মতই নিজেকে মিছে উপোস রেখে যেন আল্লাহর কাছে নিজেকেই তামাশায় পরিণত করেছি।

নীতি নৈতিকতাহীন স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুব্ধ আজ আমরা যেন ধেয়ে আসা উলঙ্গ সভ্যতার সংস্কৃতির হিংস্র স্রোতে ভেসে চলেছি কোন এক অজানার দিকে। তীর হারা জাহেলিয়াতের এ ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যেন নিজেদের গন্তব্যকে হারিয়ে ফেলেছি জনমের মত।

সৌর্য বীর্য আর খ্যাতিতে কালজয়ী ইতিহাস সৃষ্টিকারী স্রষ্টার অকুতভয় সেই দুঃসাহসী মানুষগুলোর ঈর্ষণীয় কৃতিত্বের দাবীদার এ ‘রমজান’ হোক আমাদের সীসা ঢালা প্রাচীর সম চরিত্র গড়ার অঙ্গীকার। সত্যর পতাকা উড্ডয়নে প্রতিটি নির্যাতিত মুসলমান হোক হিমালয় পাহাড় সম ঈমানের মুর্ত প্রতীক। বরফ গলা সমুদ্রের নোনা পানিতে ধূয়ে মুছে যাক সব অতীতের গ্লানি। আল্লাহর দ্বীনকে বুকে ধারণ করার মাধ্যমে প্রতিটি হৃদয় হোক প্রশান্ত মহাসাগরের মত উদার। আখেরাতে জান্নাতের প্লট এবং ফ্লাট পাওয়ার প্রত্যাশায় দুনিয়ার প্রতিটি জনপদ হোক দায়ীদের একচ্ছত্র বিচরণ ভূমি। কাবার মিনার থেকে ভেসে আসা আজান ইথারে ভেসে ভেসে আঘাত হানুক প্রতিটি ঘুমন্ত নামধারী আর অবিশ্বাসীর কর্ণকুহরে। আকাশ বাসীদের পদচারণায় বছরের প্রতি মাস হোক মাহে রমজানের মত বরকতময়।

কলমের কালিতে উগলে দেয়া প্রতিটি শব্দ হিরোশিমা আর নাগাসাকির মত অবিশ্বাসীদের বিদ্রোহী মনকে জ্বালিয়ে দিয়ে তৈরী হোক ভ্রাতৃত্ব বোধ আর সহমর্মিতায় ভরা এক নতুন বিশ্ব –
এ প্রত্যাশায়।

প্রবাসী মজুমদার
জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

মাক্সিম গোর্কির ‘মা’: শ্রমিকের অধিকার

নাজমুল হক


‘হ্যাঁরে, এমনি করে যদি মদ খাস, আমায় খাওয়াবী কী করে বল তো?
চোখ সেঁটে বন্ধ করে জবাব দেয় পাভেল:
‘সব্বাই তো মদ খায়….
মায়ের দীর্ঘশ্বাস পড়ে। ঠিকই তো বলছে। ও নিজে তো জানে, এক ওই শুড়িখানায়ই যা হোক ছিটেফোটা সুখের সোয়াদ পায় মানুষগুলো।

তবু বলে, ‘তাই বলে তুই মদ ধরিস নি, বাবা। তোর বাপ তো অনেক খেয়ে গিয়েছে। তার হাতে আমার দশাটা দেখেছিস তো…. তুইও আমার মুখের দিকে চাইবি না?’

গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে মায়ের।
ছেলে আস্তে আস্তে বলল, ‘কেঁদো না মা। একটু জল দাও।’
‘দাঁড়া, বরফ দিয়ে জল নিয়ে আসি…..’

বই নিয়ে আসতে লাগলো পাভেল্ বাড়িতে। লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে। পড়া শেষ হলে লুকিয়ে রেখে দেয়। মাঝে মাঝে কি সব যেন টোকে বই থেকে। তাও লুকিয়ে রাখে।…….

‘এই শুধোচ্ছিলাম, মুখ গুঁজে এ সব কী পড়িস তুই!’ আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করে।
বই বন্ধ করে পাভেল্ বলে, ‘বস মা।….’
‘এই যেসব বই পড়ছি দেখছ, এসব পড়া নিষেধ। আমরা যারা খেটেখুটে খাই তাদের সম্বন্ধে সব সত্যি কথা লেখা আছে কিনা, তাই পড়া নিষেধ এসব বই।… এগুলো গোপনে ছাপা হয়। এসবের খবর পেলেই আমাকে টেনে নিয়ে জেলে পুরবে।
হাঠাৎ যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে মায়ের। জিজ্ঞাসা করে, ‘আচ্ছা খোকা, তা হলে এসব পড়িস কেন?’
‘ভাব তো মা’, পাভেল্ বলে চলল, ‘কী জীবন আমাদের এখানে? তোমর বয়স চল্লিশ, তুমি কি সত্যি করে বেঁচেছ? বাবার মার খেয়েছ-এখন আমি বুঝি কেন তোমায় বাবা মারত। নিজে নরক ভোগ করেছে, তার শোধ তুলেছে তোমার উপর। কষ্ট পেয়েছে, অসহ্য মনে হয়েছে; কিন্তু কখনও বোঝেছে কেন এমন হয়। বাবা এই কারখানায় কাজ করেছে ত্রিশ বছর। শুরু করেছিল সেই যখন মোটে দুটো বাড়ি নিয়ে। সেই জায়গায় এখন সাতটা।’
‘কোন দিন একটুকু আনন্দ পেয়েছ, মা? মনে করে রাখার মত কী ছিল তোমার জীবনে?’
মা- ‘কী করতে চাস এখন?’
পাভেল্ বলে- ‘প্রথমে নিজের পড়াশোনা। তারপর অন্যদের। আমাদের শ্রমিকদের পড়তে হবে, জানতে হবে আমাদের জীবনে এতো কষ্ট কেন?’
মা ভাবে ছেলের মাঝে কত পরিবর্তন! কি বুদ্ধিদীপ্ত।

মায়ের চোখের সামনে সব অন্ধকার…. বোঁ-বোঁ করে ঘুরছে সব। সকল অবসাদ ঝেড়ে ফেলে যেটুকু শক্তি বাকি ছিল, তাই দিয়ে চিৎকার করে জড় হওয়া হাজার হাজার মানুষের উদ্যেশে বলে:
‘এক হও, এক হও, সব মানুষ এক হয়ে এক বিরাট শক্তি গড়ে তোল!’
একজন পুলিশ থাবা দিয়ে কলার ধরে মাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে- ‘চোপরাও!’
মা বলে- ‘কিছুতেই ভয় পেও না।
আর বেশি কী ভয়ঙ্কর আছে বলতো?
যে জীবন তোমরা কাটাচ্ছ তার চাইতে?’
‘মুখ বন্ধ করলি’ এই বলে হ্যাঁচকা টানে মাকে নিয়ে চলে পুলিশ।

এটি ছিল মাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের কিছু অংশ।

কত টুকু অধিকার শ্রমিক পেয়েছে জানিনা। তবে মে দিবস ও শ্রমিককে পুজি করে আনেক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার উদাহারন আমাদের আশেপাশে অনেক।

আমি তখন ছোট। ১৯৯৩ সালে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশ শেষে আমাদের কাপড়ের দোকানের কারিগর মালেক ভাই দুপুর ৩টায় দোকানে এলে বললাম কি খবর ভাই- মুখ শুকনা কেন? মন খারাপ কেন?

আর বলো না একটা বাজে গালি দিয়ে বলল- ‘কেউ খাবে, কউ খাবে না’ এই শ্লোগান দিয়ে নেতারা ৪/৫টা করে খাবার প্যাকেট নিলো আর আমরা সারা দিন না খেয়ে রোদে মিছিল করে এক প্যাকেটও পেলাম না। আর জীবনে এই সব সমাবেশে যাব না।

মালেক ভাই না গেলেও অনেকেই এখন যায়। শ্লোগান দেয় দুনিয়ার মজদুর এক হও। এলাকার অনেকেই শ্রমিক মালেকদের সমনেই আজ অনেক সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক এই মে দিবস ও মালেকদের পুঁজি করে। কত মে দিবস আসে যায় ভাগ্য বদলায় না শুধু মালেকদের।

 

ফলের খোসা দিয়ে রূপচর্চা

লাইফস্টাইল


ফলে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ তেমনি ফলের পাশাপাশি ফলের খোসাতেও রয়েছে পুষ্টি। সুতরাং রূপচর্চায় ফলের খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে।

কি উপকার হবে
দাগ দূর করে,
ত্বকের উজ্জ্বলতা ও
মসৃণ ও সুন্দর করে তোলে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন
কিছু ফলের খোসা সরাসরিই ব্যবহার করা যায়। যেমন, লেবু। কিছু আবার গুঁড়া করে সংরক্ষণ করেও ব্যবহার করা হয়। যেমন, কমলার খোসা।

কি কি ফলের খোসা ব্যবহার করবেন ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য

কলার খোসা
সরাসরি ত্বকে ঘষুন। সপ্তাহ দুয়েক নিয়মিত ঘষলে ত্বকের জৌলুস বাড়বে।

কমলার খোসা
ত্বক উজ্জ্বল করতে কমলার খোসার গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ফেসপ্যাকে।

পেঁপের খোসা
ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে পেঁপের খোসা অতুলনীয়। সরাসরি ত্বকে ঘষে লাগান পেঁপের খোসা।

আপেলের খোসা
আপেলের খোসা পানিতে ফুটিয়ে নরম করে মুখ ও গলার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এটি বাড়াবে ত্বকের জৌলুস।

লেবুর খোসা
লেবুর খোসাও ব্যবহার করতে পারেন রূপচর্চায়। এজন্য লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন।

বিভিন্ন ফেসপ্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন ফলের খোসা। হাতের কাছে পাওয়া যায় এসব ফল সহজে সুতরাং ঘরে বসেই তৈরি করুণ ফলের খোসা দিয়ে রূপচর্চার উপকরণ।

 

অবশ্যই তোমাকে পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে

ডা. তাজুল ইসলাম


মসজিদে গেলে সেখানে সামাজিক যুদ্ধ চলে কার ছেলে/মেয়ে কত ভালো করছে, কোথায় চান্স পেয়েছে, যখন ক্লাশে ফার্স্ট হতে শুরু করলাম বাবাসহ সবাই বলতে লাগলো অন্য ছেলেরা কম পড়েছে তাই তুমি ফার্স্ট হয়েছ।

কাহিনী সংক্ষেপ :রোগীর মা বলেন স্যার দিনাজপুর থেকে এসেছি –

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নিউরোলজিস্ট দ্বীন মোহাম্মদ স্যার আমার সব কথা শুনে তাৎক্ষনিভাবে আপনার ঠিকানা দিয়ে বলেন এখনি ওনার কাছে চলে যান।

মা,খালা ও রোগী আজমি যা বললেন :

বাবা একটি সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মা প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। আজমির বাবা গ্রাম থেকে উঠে আসা ব্রিলিয়্যান্ট ছাত্র। বোর্ডে স্টান্ড করা। দারিদ্র ও পারিপার্শ্বিকতা কারনে তিনি পরবর্তীতে তত ভালো করতে পারেননি।

তাই তিনি এখন তার অপূর্ণ স্বপ্ন একমাত্র ছেলেকে দিয়ে পূরণ করতে চান। ছেলেকে সব সময় কন্ট্রোল করা ও আগলে রাখার চেষ্টা করেন। প্রতিদিন ভোরে উঠার জন্য ১ বার, দুপুরে খাবার ব্রেকে ১ বার ও বিকেলে হাটতে গেলে ১ বার ফোন করবেনই।

যদি ফোন রিসিভ না করে তাহলে ১৫-১৬ বার ফোন করতে থাকে( বলে তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না)।
পড়ার সময় আত্মীয় স্বজন এলে বলে ওর কাছে যেও না ওর পড়ার ডিস্টার্ব হবে, কিন্তু নিজে ছেলের পাশে বসে স্কুলের নানাবিধ সমস্যার কথা ছেলের কাছে শেয়ার করে।

বন্ধুদের বার বার ফোন করে জানতে চায় আজমি ক্লাশে আছে কিনা, কোথায় খাচ্ছে, কি খাচ্ছে। এতে বন্ধুরা মজা পেয়ে তারা বলে আঙ্কেল ও তো ক্লাশ করে না, বাজে হোটেলে খায় ইত্যাদি।

এভাবে ওনার টেনশন আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ছুটির দিনও হল থেকে বাসায় আসতে মানা করে কেন না এতে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। সারাক্ষণ খবরদারি করতো টিভি দেখো কেন, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না ইত্যাদি।

বানান ভুল করলে মারধর করতো। বলতো ওমুকের ছেলের রোল ১ বা ২ আর তুমি সবসময় ৮-৯ এ থাকো।

আজমি বলে ক্লাশ সিক্স এ উঠার পর আমার রেজাল্ট ভালো হতে থাকে। আমি ফার্স্ট হতে শুরু করি। কিন্তু বাবাসহ অন্যরা বলে বাকী সবাই তেমন পড়াশুনা করে নাই, তাই তুমি ফার্স্ট হয়েছো। সন্ধ্যার পর কোন আড্ডায় যাওয়া নিষিদ্ধ। তুলনা করে বলে পাশের বাড়ীর মেয়েটি স্কলারশিপ পেয়েছে, ওমুকে তেমন করেছে। এরকম তুলনা করলে মন খারাপ হতো।

আজমি আরো বলে, স্যার মসজিদে নামাজ পড়ার পর এক সামাজিক যুদ্ধ বাঁধে- সবাই বড় গলায় বলতে থাকে কার ছেলে/ মেয়ে কত ভালো রেজাল্ট করেছে বা কত ভালো জায়গায় ভর্তি হতে পেরেছে। এগুলো বাবার মনে জিদ তৈরি করে, আমার ছেলে পিছিয়ে থাকবে কেন?

আজমির সমস্যা শুরু ৫ বছর আগ থেকে যখন সে ক্লাশ টেনে পড়ে। এক সময় সে লক্ষ করে লিখতে গেলে তার আঙ্গুল শক্ত হয়ে যায়, লিখতে অসুবিধা হয়। তবে নিজেই মনের জোরে চেষ্টা করে ভালো হই। আড়াই বছর পর আবার এ সমস্যা দেখা দেয় যখন এইচএসসি পরীক্ষার ২ মাস বাকী। একই সঙ্গে অতিরিক্ত স্বপ্ন দোষ হতে থাকে।ডাক্তার বলে এগুলো নরমাল।

আরো সমস্যা যোগ হয়- ঘাড় ভার হয়ে আসে, যেন কেউ একজন ঘাড়ে বসে আছে। এই ভারে হাটতে গেলে মাথা নিচু হয়ে যেতো। পড়তে গেলে মাথা জ্বলে।

একদিন দেখি পুরো ঘরে ধোয়ায় ভরা,একটি লোকের লম্বা আঙ্গুল আমার গলা চেপে ধরতে আসছে। আমি পা দিয়ে খাটে আঘাত করি যাতে শব্দ শুনে কেউ আসে। তারা আমার পা ও চোখ চেপে ধরে। আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকি।কিছুক্ষণ পর সব পরিষ্কার। এর সঙ্গে আরেক সমস্যা শুরু হয়, কে যেন বলে আমি জানালার পাশে আছি, তোকে মেরে ফেলবো।

মনে হয় কে যেন পা ধরে টানে,মনে হয় বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছি। এসব কারনে পড়া শুনা বন্ধ হয়ে যায়। খালাতো ভাই হুজুর আনে। তিনি অন্য একজনের উপর জ্বীন ঢেকে আনেন। সে বলে তাবিজ আছে, জ্বীন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব বলে হুজুর বলে ওকে আর ঝামেলা করবেন না। এরপর হাত ঠিক হয়ে যায়। পরীক্ষার আর মাত্র ৩ দিন বাকি। তবু ও পড়া শুরু করি। পরীক্ষার আগের দিন কাউকে চিনি না, উদভ্রান্ত হয়ে পড়ি। সকালে ৪ জনে ধরে নিয়ে হলে বসিয়ে দেয়( বাবা চান না ইয়ার লস হোক)। ম্যাডাম বলে যা পারো লেখো।

৫ বার উঠি,ম্যাডাম প্রতিবার বসিয়ে দেয়( যেহেতু বাবা বলে গেছে)। সে পরীক্ষায় ৮৬% এন্সার করে ৮২% মার্ক পেয়েছিলাম।

পরের দিন পরীক্ষা দেবো না। তখন নিউরোলজিস্ট দেখানো হয়। তিনি সিটি স্ক্যান করে বলেন কোন সমস্যা নাই। তবু পরীক্ষা দেই। বন্ধুরা, বিশেষ করে মেয়েগুলো বলতে থাকে বেশী বেশী পড়তো বলে আজ এ অবস্থা।

প্রতিটি পরীক্ষা দেই আর হাতের সমস্যা তত বাড়তে থাকে। শেষ দিন হাতের আঙ্গুল একেবারে বেকে যায়, কোন রকমে টেনে টেনে লিখা শেষ করি। এরপর খালার বাসায় নিয়ে অন্য হুজুর দেখানো হয়। তিনিও একই কথা বলেন। এরপর হাতের সমস্যা কমে যায়।

খালা বলে স্যার ওর সমস্যা দেখা দিলেই হুজুরকে ফোন করে, আর হুজুর টাকা চায়। এভাবে অনেক টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। এরপর ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট। সেখানেও কষ্ট করে পরীক্ষা দেই।তবু বি- ইউনিটে ৩৪ তম হয়ে ঢাকা ভার্সিটিতে’ল সাবজেক্টে ভর্তি হই( জগন্নাথে ২১ তম হই)।

এরপর হাতের সমস্যার জন্য অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখাই। একজন বলেন ট্রিগার আঙ্গুলে সমস্যা কিন্তু পিজিতে বলে কোন সমস্যা নেই। কোনভাবে ফার্স্ট টার্ম দেই। সেকেন্ড টার্মের আগে আব্বুকে বলি দ্বীন মোহাম্মদ স্যারকে দেখাতে। ভালো হইনি। তখন ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে ” রাইটার” নিয়ে ৬টি পরীক্ষা দিলাম।

এরপর অন্য সমস্যা দেখা দেয় ঘুমাতে যাই কে যেন পা টেনে অন্য দিকে নেয়, আঙ্গুল শক্ত করে দেয়, হাত- পায়ের রগ দিয়ে বাতাস ঢুকে আমাকে অস্হির করে তুলে, মনে হয় সবাইকে মেরে ফেলবো,ভাংচুর করবো। এবার দ্বীন মোহাম্মদ স্যারের কাছে গেলে সরাসরি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেয়।

এ কাহিনী থেকে যা শিক্ষনীয়:

১। লিখতে গেলে আঙ্গুল শক্ত হয়ে গিয়ে লিখতে না পারার রোগের নাম ” writer’s cramp”।

২। এটি একটি উদ্বেগ জনিত রোগ হলেও মূলত যারা পারফেক্টশনিস্ট( অতিরিক্ত নিখুত হতে চায় ) তাদের এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

৩। শিশু লালন পালন পদ্ধতি : মূলত ৪ ধরনের।তবে এখানে বাবা কে একাধারে অতি নিয়ন্ত্রণ ও অতি আগলে রাখার প্রব্ণতা দেখতে পাচ্ছি ( over control and over possessiveness)। এটি একটি মিশ্র পদ্ধতি। উভয় প্রবণতাই ক্ষতিকর।

৪। নিজেদের অপূর্ন স্বপ্ন সন্তানদের দ্বারা পূরণ করার অবাস্তব চেষ্টা তাদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।

৫। সারাক্ষণ অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে আমরা সন্তানদের মনোবল ভেঙ্গে দেই,তাদের মনে হীনমন্যতা ঢুকিয়ে দেই।

৬। সামাজিক যুদ্ধ – কার ছেলে/মেয়ে কত ভালো করেছে- এটি আমাদের সমাজে একটি ব্যাধি হয়ে দাড়িয়েছে।জিপিএ-৫ এর নেশায় অভিভাবকরা মরিয়া হয়ে সন্তানদের পিছে লাগছে

৭। বাবার অতি নিখুত হওয়ার প্রবনতা আজমি পেয়েছে,অতি নিয়ন্ত্রণ, আগলে রাখার কারনে আত্মবিশ্বাস দুর্বল হয়েছে, অতি সামাজিক তুলনা ও সমালোচনায় হীনমন্যতা তৈরি হয়েছে,অতি প্রত্যাশা মনে আশঙ্কা তৈরি করেছে।

সব মিলিয়ে পরীক্ষা তার কাছে মূর্তিমান দৈত্য হিসেবে হাজির হয়- তার অবচেতন মন শঙ্কা ও উদ্বেগে ভারাক্রান্ত হয়।ফলে পরীক্ষার সামনে লিখতে গেলে তার ” রাইটারস ক্রাম্প” শুরু হয়।

৮। একই মানসিক দ্বন্দ্ব, সংঘাতের কারনে তার অবচেতন মনে অনেক চাপ পরে, যা তার ধারন ক্ষমতার বাইরে।

ফলে”dissociative- conversion”- রোগের লক্ষণ দেখা দেয়-

যার বেশীরভাগ লক্ষণকে আমাদের দেশে ” জ্বীন-ভুতে” ধরার লক্ষণ মনে করা হয়।
৯। মনে রাখতে হবে শুধু মেধা থাকলে হবে না,মানসিক জোর,আত্মবিশ্বাস ও থাকতে হবে।তানাহলে মেধা কোন কাজে আসবে না।

১০। যেহেতু মানসিক রোগ – তাই হুজুর ও ধর্ম বিশ্বাস -রোগীর মনে এই বিশ্বাস ও আস্হা তৈরি করে যে এবার সে জ্বীনের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে,তাই সাময়িকভাবে সে লক্ষণ মুক্ত হয়( আমরা একে বলি ” placebo effect “।

১১। কিন্তু রোগের মূল যে কারন তার অবচেতন মনের চাপ,দ্বন্দ্ব সেটির নিরসন না হওয়ার কারনে এবং মানসিক সক্ষমতা না বাড়ানোর কারনে, যখনি পরীক্ষা বা কোন চাপের মুখে পড়ে তখনি তার পূর্বের সমস্যা আবার দেখা দেয়।

১২। তাই জ্বীন- ভূত তাড়ানো নয়,তাদের দরকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা

লিখেছেন- প্রফেসর তাজুল ইসলাম

 

দৈনিক ১৮ মা ও ঘন্টায় ৮ শিশুর মৃত্যু হয়

নারী সংবাদ


দক্ষ হাতে প্রসব না হওয়ায় বাংলাদেশে দৈনিক ১৮ মা ও ৮ নবজাতক মারা যাচ্ছে। এভাবে বছরে মৃত্যু হয় ছয় হাজার ৫৬৯ জন মায়ের ও ৭৪ হাজারটি নবজাতকের। মা ও শিশু মৃত্যুর বেশি ঘটনা ঘটে বাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও অদক্ষ দাইয়ের হাতে সন্তান প্রসবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষ দাই অথবা চিকিৎসকের হাতে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা নেয়া হলে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায়। গ্রামের মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক ওষুধ-পত্র পেয়ে থাকলেও প্রসবসেবা সেখান থেকে পান না। কাছের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সেবা প্রদানকারী থাকলেও পরিবেশ নেই। আবার পরিবেশ থাকলেও সেবা প্রদানকারীরা থাকেন না। সরকারি সহযোগিতায় ইউএস এআইডি’র প্রকল্প ‘মামণি এইচএসএস’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট করে কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সন্তান প্রসবের সংখ্যা বেড়েছে। এতে করে মা ও শিশু মৃত্যুও রোধ করা গেছে। নোয়াখালী, লক্ষীপুর, হবিগঞ্জ, ঝালোকাঠি জেলায় আগের ১১টি থেকে ‘মামণি এইচএসএস’ এখন ১০০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রসব পূর্ববতি ও প্রসব পরবর্তি সেবাদানে প্রস্তুত করে গত চার বছরে সাড়ে ১৫ হাজার নিরাপদ প্রসব সম্পন্ন করেছে।

২০১৪ সালে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেখানে ১ শতাংশ ডেলিভারি হতো ২০১৭ সালে সেখানে ৭ শতাংশ প্রসব হচ্ছে। এই চার উপজেলায় আগে যেখানে বাড়িতে ৭০ শতাংশ প্রসব হতো ২০১৭ সালে হয়েছে ৫৬ শতাংশ। গতকাল সোমবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র শক্তিশালী করে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বৃদ্ধি করা’ শীর্ষক সেমিনারে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উপরের চিত্রটি তুলে ধরেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সেবা মেডিক্যাল অ্যাডুকেশন সচিব সিরাজুল হক খান, মেডিক্যাল অ্যাডুকেশন সচিব ফয়েজ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পণা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. কাজী মুস্তাফা সারোয়ার, সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ইশতিয়াক মান্নান প্রমুখ।

তারা বলেছেন, সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহকে শক্তিশালী করারমাধ্যমে দূর্গম ও সুবিধা বঞ্চিত জনপদে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটানো সম্ভব। পরিবার পরিকল্পণা অধিদপ্তর এই সেমিনারের আয়োজন করে।

মা মণি এইচএসএস’র সাথে স্থানীয় সরকার, পরিবার পরিকল্পণা বিভাগ ও স্থানীয় কমিউনিটি সম্মিলিতভাবে স্ব স্ব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উন্নয়নে এগিয়ে আসে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নানা ঘাটতি (যেমন আয়া নিয়োগ, ওষুধ, আসবাপত্র ক্রয় করা) মেটাতে স্থানীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করে এবং নিবিড় তদারকির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চত করে। অন্যদিকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ প্রয়োজন মাফিক লোকবল নিয়োগ দিয়ে,কখনো বা অবকাঠামো সারিয়ে তুলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে সেবা প্রদানের জন্য তৈরি করেছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।
ছবি:ইন্টারনেট।

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি

রেসিপি


উপকরণ :
ময়দা ১-১/২সোয়া কাপ,
পানি ১ কাপ,
ছোলার ডালের বেসন (১ কাপ),
বেকিং পাউডার (আধা চা চামচ),
চিনি (দুই কাপ),
তেল,
লাল ফুড কালার (ন্যাচারাল ফুড কালার ব্যবহার করুন)…. ,
তেল-ভাজার জন্য হালকা ঘি ব্যবহার করতে পারেন,
পরিবেশনের জন্য ফল ও
খেজুর৷

সিরার জন্য :
চিনি আধা কেজি,
পানি ২ কাপ,
এলাচ ৪টি৷

প্রণালী :
১.প্রথমে বেসন ও ময়দা একসঙ্গে পানি দিয়ে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন৷ ভালো করে ফেটা হলে ডিশে বেসন ঢেলে নিন৷

২.এবার গোলা অর্ধেক ভাগ করে অন্য একটি পাত্রে রং মিশিয়ে নিন৷

৩.এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে ঝাঁঝরি মধ্যে গোলা রেখে কড়াইয়ের উপর রেখে হাতা দিয়ে ঘষে ঘষে তেলের উপর ছোট ছোট গোলা ফেলুন৷ ডুবো তেলে মচমচে করে ভেজে তুলুন৷

৪.অন্য একটি পাত্রে আগেই সিরা করে রাখুন ভাজা মাত্রই সিরায় ছেড়ে দিন৷ সব বুন্দিয়া ভাজা হয়ে গেলে সিরাসহ বুন্দিয়া চুলায় দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে ভাজুন৷

৫.হাত দিয়ে চেপে দেখুন নরম হলে নামিয়ে নিন৷

পরিবেশন:
সুন্দর একটি প্লেটে খেজুর এবং ফল
দিয়ে মাঝে কালার ফুল বুরিন্দা গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

চক্ষু অবনমিত জাতি

শামছুন নাহার মলি


এই প্রথম বারের মত প্রবাসে বেশি দিন থাকা। মানুষে বলে প্রবাস জীবন দুনিয়ার জান্নাত। বলার কারণ আছে। তবে কষ্ট ও যে নেই তা না।

ইউরোপ কে দুনিয়ার জান্নাত মনে করে,মনে মনে তাদের খুব রাগ প্রবাসিদের উপর। “আরামে আছো তো,তাই টের পাওনা” টাইপের কথা শুনতে হয়। সেজন্য এখানে এত সুখের জীবন কাউকে বলতেও ভয় হয়, ভয় হয় দেশের কোন সমস্যা বলতে। আমরা দেশে থাকিনা বলে দেশের বদনাম করতে পারবো না। যাইহোক।

ফিনল্যান্ড খুব ছিমছাম, গোছালো, শান্তিময় একটা দেশ। আয়তনে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক অনেক গুন বড় হওয়া সত্বেও জনসংখ্যা এখনো
৫৫লাখের মত। যেখানে আমাদের শ্যামনগর থানাতেই এদেশের ডাবল হবে মানুষ।

ঠান্ডার দেশ, বিশ্বস্ত দেশ, খুন, ধর্ষন, চুরি ডাকাতি নাই। সিকোরিটি খুব স্ট্রং।বোরখা, হিজাব, নিকাব করে চলতে ফিরতে কখনো সমস্যা হয়নি আজ পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ্‌। শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা অনেক উন্নত।

সব মিলিয়ে আরাম প্রিয়, শান্তি প্রিয়দের জন্য এদেশ ভালো। সবচে ভালো লাগে সবাই সবাইকে এত রেসপেক্ট করে, হেল্প করে। বাচ্চার স্ট্রলার সহ মা যেখানে খুশি যাতায়াত করতে পারবে ফ্রিতে।
কখনো গৃহবন্দী লাগেনি এজন্য।

ধর্মীয় প্রোগ্রামে কখনো বাঁধা আসেনি আলহামদুলিল্লাহ্‌। সেজন্য ঈমান আমল বেঁচে দিতে হয়নি এই অমুসলিমদের কাছে। প্রতিবেশি গুলোর সাথে মিশেও মনে হয়নি মুসলিম বলে আমাদের ভিন্ন চোখে দেখে।

পথে, বাসে, ট্রেনে সব খানে নিশ্চিতায় চলা ফেরা করা যায়, আজ পর্যন্ত দেখিনি কোন ইভটিজিং। বা খারাপ দৃশ্য। অবশ্য আমার চোখ সব সময় বেবি স্ট্রলার আর রাস্তার দিকে থাকায় হয়তো আমি এখনো চেহারা দেখেই বলে দিতে পারবো না কে কোন দেশের।

এদের একটা ভালো গুন হলো এরা কারো নিয়ে নাক গলায় না, কাপড় এত কম পরে বের হয় তবুও গিলে খাওয়ার চাহনি দেখা যায় না। যেটা দেশে বেশি ফেইস করে প্রত্যেকটা মেয়ে, হোক হিজাবি, হোক নন-হিজাবি।

বাসে, মেট্রোতে বসা অবস্থায় আগে দেখতাম বই পড়তে, এখন মোবাইল নিয়ে নত মস্তকে থাকতে দেখি। কেউ কাউকে নিয়ে গবেষণা চালায় না। অথচ বাঙালীরা যদি একজন হিজাবিকেও দেখে তার উপর চালায় গবেষণা কোন দেশের, পরিচিত কিনা হাবিজাবি। এক ভাবি বলেন, বাইরে সে নেকাব দেন না কিন্তু বাংলাদেশি কমিউনিটির কোন অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে মুখ ঢেকে যান।
আমার বান্ধবীর অভিযোগ, প্লেনে বাঙালীরা এত ছ্যাচড়ামি করছে যে ছোট বাবুটাকে খাওয়াতেও পারেনি।

দেশে গিয়ে আমার কিছু দিন বোরখা পরেও পা চলে না। এত মানুষের দৃষ্টি ভয় লাগে। কিন্তু কেন? এত বেশি নির্লজ্জ হয়ে গেছে কেনো মানুষ?
কোথায় চোখের পর্দা? হযরত সালাবার (রা) গল্প গল্পটা সাম্মানকে শুনিয়েছি। যদিও অথেনটিক কিনা সিওর না। কিন্তু তবুও চেয়েছি অন্তত চোখটা নত রাখা শিখুক।

সামারে বাইরে গেলে গল্প করে ওর মুখ ঘুরিয়ে রাখি। মাঝে মাঝে বলে আম্মু ওরা তোমার মত বোরখা পরে না কেন? আমি বলি ওরা কোরআন পড়ে না, মুসলিম না তাই। অনেক মুসলিমদের কে দেখেও বলে এরা কেন তোমার মত হিজাব, নেকাব পরে না? বলেছি ওরা কোরআন আরো পড়লে জানতে পারবে কিভাবে হিজাব করতে হয়।

কি বলবো বুঝিনা। শুধু শিখিয়েছি বেশি মানুষের দিকে তাকাবা না, পথ চলতে এদিক ওদিক তাকালে পড়ে যেতে হয়।আর মানুষের দিকে তাকালেও বেশিক্ষণ না দেখতে, কারণ শয়তান দ্বিতীয় দৃষ্টিতে তোমার সঙ্গী হয়ে যাবে। বেচারা ছোট মানুষ, আর কিই বা বলা যায়। এই ছোট দেশে যে এত মহিলা, পুরুষ কম। হসপিটাল, মার্কেট, স্কুল সবখানে মেয়ে বেশি।

আল্লাহ যেন আমাদের কে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তিতে রাখেন। শকুনি চোখ থেকে রক্ষা করেন।

 

একটি শিশুর নামাজ শেখার গল্প

আফরোজা হাসান


বিভিন্ন সময় বোনদের সাথে যেসব হালাকাতে অংশগ্রহণ করি তাতে প্রায় সবাই যে প্রশ্নটা করেন তা হচ্ছে, সন্তানদের কিভাবে নামাজে অভ্যস্ত করাবেন! আমি সবসময় যে পরামর্শ দিতাম তা হচ্ছে, শিশুদেরকে মুখে বলে করানোর চাইতে, করে দেখিয়ে শেখানোটা অনেক বেশি সহজ। সুতরাং, বাবা-মা যদি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন শিশুরা দেখে দেখে সেটা রপ্ত করে ফেলবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং বাবা-মাকে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হবে। এবং সন্তানদেরকেও উৎসাহিত করতে হবে নামাজের ব্যাপারে। ছোটদের ভাষায় ওদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে নামাজ কেন পড়তে হবে, নামাজ পড়লে আল্লাহ অনেক খুশি হবেন ইত্যাদি। তবে এখন কিন্তু আমি এই পরামর্শ ঠিক এমন করে বলি না কাউকেই। কেন?! কারণ আমার পুত্র সেই উপায় রাখেনি। ছোটবেলায় নাকীবও অন্য আর সব বাচ্চাদের মত আমরা যখন নামাজ পড়তাম পাশে এসে দাঁড়িয়ে যেত। আমাদের সাথে রুকু, সিজদাহ দিতো, কখনো ওর বাবার পিঠে উঠে বসে থাকতো, কখনো বা গলা ধরে ঝুলতো নামাজের সময়। এসব কর্মকান্ড করে কিছুক্ষণ পর আবার নিজের খেলায় ফিরে যেত। ছয় বছর পর্যন্ত এমনই চলছে। এরপর হাসানজ্বি বললেন, এখন থেকে আমাদের নামাজের ব্যাপারে সিরিয়াসলি একটু একটু করে তৈরি করানো উচিত নাকীবকে।

আমরা দুজন মিলে ঠিক করলাম যে, বাকি সব ওয়াক্ত নাকীব ওর ইচ্ছে মত নামাজ আদায় করবে শুধু যোহর ছাড়া। যোহরের চার রাকআত ফরজ ওকে পুরোটাই আদায় করাবো আমরা। আগের মত আর দু’এক রাকাত আদায় করেই দৌড় দিতে দেয়া যাবে না। আমরা দুজন মিলে বসে খুব সুন্দর করে নাকীবকে বুঝিয়ে বললাম, নামাজের মাঝখান থেকে ইচ্ছে মত উঠে যাওয়া ঠিক নয়। পুরো নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে এরপর তুমি আবার খেলা করবে। সে নিজে যেহেতু জ্ঞান হবার পর থেকেই যুক্তিবাদী(মাশাআল্লাহ) তাই যুক্তি বোঝে এবং মেনেও নয়। সপ্তাহ খানেক খুবই সোনা বাচ্চা হয়ে আমাদের সাথে যোহরের চার রাকআত ফরজ নামাজ আদায় করলো। এক সপ্তাহ পর থেকে তার উসখুস শুরু হয়ে গেলো। সে হচ্ছে জাম্পিং বেবী। এক মূহুর্ত স্থির থাকে না। সেখানে সাত-আট মিনিট চুপচাপ দাড়িঁয়ে থাকাটা কষ্টসাধ্যই তার জন্য। তো একদিন ঠিক নামাজের আগ মূহুর্তে সে ওয়াশরুমে যেতে চাইলো। দুপুরে তাড়া থাকে আমাদের দুজনেরই। নাকীব দেরি করবে বের হতে তাই ওকে ছাড়াই নামাজ আদায় করে নিলাম। দ্বিতীয় দিনও সে একই সময়ে ওয়াশরুমে যেতে চাইলো। তৃতীয়দিনও যখন একই কথা বললো নামাজের আগে আমাদের দুজনের বুঝতে বাকি রইলো না যে, আমাদের সুপুত্র কেন ওয়াশরুমে গিয়ে বসে থাকেন। সে আসলে নামাজে ফাঁকি দিতে চায়। আমরা দুজন সেদিন নামাজ না পড়ে বসে রইলাম। নাকীব বেড়িয়ে যখন দেখলো আমরা ওর জন্য বসে আসি। সে খুবই আহত (মানসিকভাবে) হয়ে চুপচাপ আমাদের সাথে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।

প্রথম প্রথম আমরা নাকীবকে নামাদের ভেতরের সূরা, তাসবীহ কিছুই পড়াইনি। ও শুধু আমাদের সাথে উঠ-বোস করতো। বেশ কিছু সূরা তার মুখস্ত ছিল। আর আমি প্রতিদিন ঘুমোতে যাবার সময় দু’তিন বার নামাজের ভেতরের সব দোয়া সমূহ ওকে পড়াতাম। আমরা চাইনি নামাজের ব্যাপারে বাড়তি কোন চাপ দিতে ওর উপর। কিংবা এভাবে বললে ভালো যে, ওকে বুঝতে দিতে চাইনি বাড়তি কিছু করানো হচ্ছে ওকে দিয়ে। ওয়াশরুমের আইডিয়া ফেল করার পর তিন-চার দিন পুত্র আমাদের চুপচাপই রইলো। এরপর একদিন ঠিক নামাজের আগে প্রচন্ড পেটব্যথা শুরু হলো তার। নড়তেই পারে না ব্যথার প্রচন্ডতায়। ওকে শুইয়ে দিয়ে আমরা দুজন নামাজ আদায় করে নিলাম। আমাদের নামাজ শেষ আর পুত্রের ব্যথা ভালো হয়ে জাম্পিং জাম্পিং শুরু। পরদিন যখন আবারো পেটব্যথা শুরু হলো হাসানজ্বি ছেলেকে আদর করে হেসে বললেন, কোন সমস্যা নেই বাবা তুমি শুয়ে থাকো। বাবা আর আম্মুতা নামাজ শেষ করে তোমাকে শিখিয়ে দেব শুয়ে শুয়ে কিভাবে নামাজ আদায় করতে হয়। নাকীব চোখ বড় বড় করে বলল, শুয়ে শুয়েও নামাজ পড়া যায়? হাসানজ্বি হেসে বলল, হুম যায় তো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এত বেশি ভালোবাসেন যে, যদি আমাদের কষ্ট হয় তাহলে যাতে বসে বা শুয়েও নামাজ পড়তে পারি সেই সুযোগও দিয়ে দিয়েছেন। নাকীব তখন উঠে বসে বলল, বাবা ব্যথা কমে গিয়েছে তোমাদের সাথেই নামাজ পড়বো। আলহামদুলিল্লাহ এরপর আর কোনদিনও নামাজ ফাঁকি দেবার নতুন কোন বুদ্ধি বের করেনি নাকীব।

আমরা যখন দেখলাম যোহরের চার রাকআত ফরজ নামাজ পড়াতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে নাকীব। তখন আসরের নামাজেও ওকে সাথে নিতে শুরু করলাম। যোহর ও আসর নামাজ বেশ কিছুদিন নিয়মিত আদায় করার পর মাগবীবের সময় ওকে সাথে রাখলাম। যখন দেখলাম যে নামাজের সময় হবার পর ডাকলেই নাকীব চলে আসছে। তখন আমরা ওকে বোঝালাম নামাজের সময় শুধু উঠ বোস করলেই হবে না। সূরা ও দোয়াও পড়তে হবে। ততদিনে সবকিছু ওর মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা তখন ওকে আমাদের সাথে নামাজ না পড়িয়ে একা একা পড়ালাম কয়েকদিন। জোড়ে জোড়ে পড়তো নাকীব সবকিছু তাই ভুল হলে ধরিয়ে দিতাম।

এর মাস খানেক পর আমরা ওকে ঈশার ফরজ নামাজ পড়ানো শুরু করেছিলাম। ছয় বছর বয়স থেকে নাকীবকে নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে শুরু করেছিলাম আমরা। মোটামুটি পুরো এক বছর লেগেছিল নাকীবকে খুশি মনে নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করতে। এর মাঝে আমরা কখনোই ওর সাথে রাগ করিনি। ফাঁকি দেয়ার যেসব পন্থা বের করেছিল সেসব যে আমরা বুঝতে পেরেছি সেটাও ওকে বুঝতে দেইনি। পেট ব্যথার মিথ্যা বাহানা করছে সেজন্য কোন ভৎর্সনাও দেইনি। আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় ছিল ধীরে সুস্থে নাকীবের মধ্যে নামাজের অভ্যাস তৈরি করার। তাই হুট করে কোন কিছু চাপিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়েনি।

আর প্রথম মাসখানেক ছাড়া নাকীবও কখনোই বিরক্ত বা দুঃখী মন নিয়ে নামাজ আদায় করেনি। আমরা খেয়াল রেখেছি ওর ইচ্ছার দিকে। হয়তো বা আমাদের তাড়া ছিল বাইরে যাবার। কিন্তু তখন নাকীবের পছন্দের কার্টুন চলছিল টিভিতে। আমরা ওকে বলেছি ঠিক আছে তুমি এখন কার্টুন দেখো পরে একা নামাজ আদায় করে নিয়ো। কার্টুন শেষ হবার সাথে সাথে নিজেই জায়নামাজ বিছিয়ে খুশি মনে নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আমাকে বলতেও হয়নি। কোথাও বেড়াতে গিয়ে দু’একদিন যদি নামাজ পড়বে না এমন বলেছে, আমরা জোড় করে বাধ্য করিনি যেহেতু ওর উপর নামাজ ফরজ নয়। কিন্তু পড়ে অন্য সময় আদর করে বুঝিয়ে বলেছি কখনোই নামাজ ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। হিসাব করে দেখেছি পুরো আড়াই বছর লেগেছে আমাদের নাকীবকে মোটামুটি নামাজের বিষয়ে শেখাতে এবং খুশি মনে আদায় করতে অভ্যস্ত করতে।
এখন আলহামদুলিল্লাহ বলাও লাগে না। সে নিজেই নামাজের ব্যাপারে অনেক সতর্ক ও আগ্রহী। গত বছর প্রচন্ড জ্বর করেছিল নাকীবের। এত অসুস্থ্য বাচ্চাকে উঠিয়ে নামাজে ডাকতে ইচ্ছে করেনি তাই একাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম নাকীব বিছানা থেকে উঠে এসে পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। সেদিন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আনন্দ ও প্রাপ্তির অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল চোখ দিয়ে। যখন নাকীবকে বসে থাকতে দেখি কখন তার বাবা বাসায় ফিরবে এবং সে বাবার সাথে জামায়াতে নামাজ আদায় করবে! কিংবা বার বার ফোন করে ওর বাবাকে তাগাদা দেয় যখন যে, বাসায় এসো একসাথে নামাজ আদায় করবো! আলহামদুলিল্লাহ প্রশান্তিতে ভরে যায় মন।
আসলে আমরা চেষ্টা করলেই বিন্দু বিন্দু করে শরীয়তের ভালোবাসার সিন্ধু গড়ে তুলতে পারি আমাদের সন্তানদের মনের ভেতরে। সেজন্য আমাদেরকে শুধু একটু কৌশলী এবং কিছুটা ধৈর্য্যশীল হতে হবে। তাড়াহুড়া করা চলবে না একদমই। শরীয়তের বিধান সারাজীবন মেনে চলতে হবে আমাদের সন্তানদেরকে। তাই সতর্ক থাকতে হবে গোড়ায় যেন গলদ থেকে না যায়। ভিত্তি যেন মজবুত হয়। সন্তানদের উপর শরীয়তের বিধান কখনোই চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। কেননা চাপিয়ে দিলে সেটা বোঝাতে পরিণত হবে, কখনোই ভালোবাসাতে নয়। সুযোগ পাওয়া মাত্রই নিজের উপর থেকে সেই বোঝা সরিয়ে দিতে সচেষ্ট থাকবে। তাই শরীয়তের প্রতিটা বিধান নিজেরা মেনে চলতে হবে, কেন মেনে চলছি সেটা সন্তানদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এবং সন্তানরাও যাতে মেনে চলতে পারে সেজন্য ধীরে ধীরে ওদেরকে সেই ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। ফজরের নামাজ আমরা নাকীবকে পড়াতে শুরু করেছিলাম ওর আট বছর হবার পর। তাও ঘুম থেকে উঠার পর পড়ে নিতো। এখনো ঘুম থেকে উঠার পরই ফজরের নামাজ পড়ে। কেননা এখন আমাদের এখানে সূর্যোদয় হয় সাড়ে আটটায়। নাকীব আটটায় ঘুম থেকে উঠে ওয়াক্ত থাকতে থাকতেই নামাজ আদায় করে নিতে পারে। যেহেতু খুব শিঘ্রীই নাকীবের দশ বছর হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ ইচ্ছে আছে এখন থেকেই ছুটির দিনগুলোতে ওকে উঠিয়ে ধীরে ধীরে ফজরের আযানের পরপরই নামাজ আদায়ের অভ্যস্ত করে তোলার।

 

আমার বই পড়া (দ্বিতীয় পর্ব)

রায়হান আতাহার


“হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা-
আমি কিশোর পাশা বলছি অ্যামিরিকার রকি বীচ থেকে। জায়গাটা লস অ্যাঞ্জেলসে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে, হলিউড থেকে মাত্র কয়েকমাইল দূরে। যারা এখনও আমাদের পরিচয় জানো না, তাদের বলছি, আমরা তিন বন্ধু একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছি। নাম- তিন গোয়েন্দা।

আমি, বাঙালী। থাকি চাচা-চাচীর কাছে। দুই বন্ধুর একজনের নাম মুসা আমান, ব্যায়ামবীর, অ্যামিরিকার নিগ্রো। আরেকজন রবিন মিলফোর্ড, আইরিশ অ্যামিরিকান, বইয়ের পোকা। একই ক্লাসে পড়ি আমরা। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে লোহা-লক্কড়ের জঞ্জালের নিচে পুরোন এক মোবাইল হোম-এ আমাদের হেডকোয়ার্টার। তিনটি রহস্যের সমাধান করতে চলেছি, এসো না , চলে এসো আমাদের দলে…”

আমার সবচেয়ে প্রিয় লাইনগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে থাকবে এই লাইনগুলো। ক্লাস সিক্সে উঠার পর এক বন্ধুর কল্যাণে “তিন গোয়েন্দা”-র সাথে পরিচয় হয়। এরপর আমাকে আর পায় কে! এক নাগাড়ে পড়তে থাকলাম। ঐ সময়টাতে “তিন গোয়েন্দা” ছাড়া কিছু ভাল লাগতো না।

কিশোর-মুসা-রবিনের পাশাপাশি রাশেদ পাশা, মেরি চাচী, জর্জিনা পারকার, রাফিয়ান, টেরিয়ার ডয়েল, ওমর শরীফ, ডেভিস ক্রিস্টোফার, ভিক্টর সাইমন, ফগ র‍্যাম্পারকট, হ্যানসন সবাইকে বাস্তবে খুঁজে ফিরতাম। এখনো ভালোলাগা অনুভূতিটুকু একটুও কমেনি।

তিন গোয়েন্দার সবগুলো ভলিউম সংগ্রহ করা আমার জীবনের অন্যতম একটি লক্ষ্য। কৈশোরের যে এডভেঞ্চার প্রীতি “তিন গোয়েন্দা” দিয়ে শুরু হয়েছিলো তা পূর্ণতা পায় “শার্লক হোমস” দিয়ে। একুশে বইমেলায় “শার্লক হোমস রচনাসমগ্র” কিনেছিলাম, যা আজ অবধি আমার সংগ্রহকৃত অন্যতম সেরা বই।

বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনী লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের অনবদ্য কীর্তি “শার্লক হোমস”। শার্লক হোমস, ডাক্তার ওয়াটসন, মাইক্রফট হোমস, প্রফেসর জেমস মরিয়ার্টি, মিসেস হাডসন- প্রতিটি চরিত্র যেন একেকটি মুগ্ধতার নাম। রচনাসমগ্র পড়তে যেয়ে “দ্য ফাইনাল প্রব্লেম” গল্পে শার্লক হোমসের মৃত্যুর ঘটনা পেলাম। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম গল্পটি পড়ে। আবার অবাকও হলাম, কারণ রচনাসমগ্র শেষ হতে তখনো বাকি ছিলো। পরে জানতে পেরেছি, শার্লক হোমসকে পাঠকের চাপে ফিরিয়ে এনেছিলেন ডয়েল। কী যে ভালো লেগেছিলো!

শার্লক হোমসের গোয়েন্দাগিরি তখন আমাকে পেয়ে বসেছিলো। নিজের মাঝে “গোয়েন্দা গোয়েন্দা” ভাব! তবে সেটি স্বাভাবিকভাবেই বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু বইয়ের পাতায় শার্লককে খুঁজেছি বারবার। আমার মত অলস প্রকৃতির পাঠক, যে কিনা এক বই সহজে দ্বিতীয়বার পড়ে না, সেই আমি রচনা সমগ্রটি কতবার পড়েছি তার কোন হিসেব নেই। “২২১/বি, বেকার স্ট্রীট, লন্ডন”- এখনো আমাকে ঠিক আগের মতই টানে। টিভি সিরিজ কিংবা মুভিতে যখনই শার্লককে দেখার সুযোগ পেয়েছি, হাতছাড়া করিনি।
অগণিত এডভেঞ্চারপ্রেমীদের মতো শার্লক হোমস আমার স্মৃতিতে বেঁচে থাকবেন আজীবন।

…..চলবে

১ম পর্ব

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

একই দিনে তিনটা নারী নির্যাতন কেস!

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


প্রথম কেস: মা মেয়েকে নিয়ে আসছে,স্বামী মেরেছে। ইনজুরি গুরুতর না। সারা শরীরে মারের চিহ্ন। চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলাম, তারা যাচ্ছেনা সার্টিফিকেট চায়। এই কাজ আমি সাধারণত এভোয়েড করি তাই ইমার্জেনসীতে যেতে বললাম। যদি উপকার হয় কিছু।

দ্বিতীয় কেস: স্বামী স্ত্রী দুইজন একসাথেই এসেছে। মেয়েটার থুতনীতে কাট ইনজুরি।দেখেই বোঝা যায় কেউ মেরেছে। পুরুষটি এসেই বলে।
: সেলাই করে দেন।
: কখন কেটেছে?
: ৫/৬ঘন্টা হবে।

এই পর্যায়ে মহিলা বলে,
: শেষ রাতে।
হিসাব করে দেখলাম প্রায় ৮/৯ ঘন্টা। ৬ ঘন্টার মধ্যে হলে স্টিচ দেয়া যেতো।
: এখন আর সেলাই দেয়া যাবেনা, চিকিৎসা দিচ্ছি, আর ড্রেসিং করে নিয়ে যান।ভাল হয়ে যাবে। খুব ডিপ ক্ষত না।
পুরুষ টি ক্ষিপ্ত
: ডাঃ বলেছে, সেলাই দিতে।
: আমি কি তাহলে?
: ছেলে ডাঃ বলেছে।
: কেনো,মেয়ে ডাঃ কি চিকিৎসা জানে
না?
: আপনি সেলাইয়ের ব্যবস্থা করেন।
: কিভাবে হইছে?
: স্বামী স্ত্রীর কথা কাটাকাটি।
মনে মনে ভাবলাম, কথা কাটাকাটিতে স্বামীর কিছুই হইলো না!!
বুঝলাম, অশিক্ষিত শ্রেণী, নারীর প্রতি অবজ্ঞা, এরে বুঝায় লাভ নাই। ছেলে ডাক্তারের কাছে পাঠায় দিলাম।

তৃতীয় কেস: মোটামুটি অবস্থাপন্ন ঘরের, শিক্ষিতই মনে হলো। মেয়েটা দুই চোখ ফুলে কালো হয়ে গেছে, মেয়েটা টলতেছে। মাথায় ব্যথা পেয়েছে।
টিকিট নিয়েই হেড ইনজুরী কেস লিখে, নিউরো সার্জারি ডিপার্টমেন্ট এ পাঠায় দিলাম। ডিপার্টমেন্ট এর ওপিডি বন্ধ। তারা ফিরে আসছে।

এই ছেলের মধ্যেও উদ্ধত ভাব।
: আপনি চিকিৎসা দেন। এইটা নরমাল কেস।মাথার বাইরে ব্যথা পাইছে।
বুঝলাম নিউরোর পিওন, এইটা বুঝায় পাঠায় দিছে, ঝামেলা কমানোর জন্যে।বললাম,

: আমি নিউরোসার্জারিতে ট্রেনিং করে আসছি, কোনটা ভিতরের ব্যথা আর কোনটা বাইরের আমি বুঝি। আমরা যেকোন সময় জ্ঞান হারাতে পারে, তখন বিপদে পরতে পারেন।

ছেলেটা ভর্তি করবেনা, এখানে আইনত কিছু সমস্যা আছে তাই কোনমতে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি নিয়ে যাবে। আমি আরও বুঝলাম, ছেলেটা কাপুরুষ শ্রেণীর, মেয়েদের সাথে এই শ্রেণীর পুরুষরা খারাপ ব্যবহার করে বিকৃত আনন্দ পায়। যেহেতু হাসপাতাল আমাদের সিকিউরিটি দেয় না। তাই আমিও বললাম,
: পাশের রুমে ভাল ডাক্তার আছে দেখান।

শিক্ষিত অশিক্ষিত সব শ্রেণীতে কিছু ছেলেমানুষ আছে যারা মেয়েদের নিম্ন চোখে দেখে, বউ পিটানো বীর পুরুষ এরা।এরা পিওন বা কোয়াককেও গুরুত্ব দিবে, কিন্তু শিক্ষিত মেয়ে ডাক্তার হোক, ব্যাংকার হোক, টিচার হোক পারলে তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করবেই।এইটাই তাদের বীরত্ব। এইটাকেই তারা পুরষত্ব মনে করে। অসভ্য ইতর নিম্নশ্রেনীর এই সব পুরুষ মানুষ,যত উচু বা নীচু পরিবার থেকেই আসুক, মেয়েদের সবসময় নিম্নজাতের মনে করে, কারন হয়তো পরিবারে নিজের মাকেও এমন অপমানিত হতে দেখেছে। এরা শিক্ষিত হলেও তাই এদের মানসিকতার পরিবর্তন আসে না।

এর আগের পোস্টে নারী শিক্ষা তথা আমাদের সার্বিক শিক্ষা নিয়েই বলেছি।আজ এইসব কাপুরুষদের জেনেটিক্স নিয়ে বললাম। কিছু অমানুষ বীর পুরুষ যুগে যুগে বুঝবেনা, নারীদের সম্মান করাই প্রকৃত শিক্ষা।

নারী নির্যাতনে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। যেভাবেই হোক শীর্ষে তো আছি তাইনা?

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
বিসিএস স্বাস্থ্য
সাবেক শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

 

বিয়ে ও সমাজ (পর্ব-৪)

কানিজ ফাতিমা


পরিবারে দ্বন্দ নিরসন এর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম গত সংখ্যায়। আমরা জেনেছি যে, Conflict Management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার উপায়গুলো হল-

1. Forcing
2. Accommodating
3. Avoiding
4. Compromising
5. Collaborating

Forcing (চাপ প্রয়োগ), ও Accommodating (মেনে নেয়া) পদ্ধতি দু’টি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এবার বাকী তিনটি পদ্ধতি জানা যাক-

Avoiding বা সরে যাওয়া
দ্বন্দ সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকা, কোনরূপ মনোযোগ না দেয়া এবং দ্বন্দ নিরসনে কোন ভূমিকা পালন না করা ও নিস্ক্রিয় থাকা। এটি Non-assertive ও non co-operative অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে কোন চাপ প্রয়োগ নেই আবার কোন সহযোগিতাও নেই। যদি দ্বন্দের বিষয়টি খুবই নগণ্য হয় অথবা যদি আপনি মনে করেন যে কিছু সময় পরে প্রতিপক্ষ নিজে থেকেই চুপ হয়ে যাবে তবে এই Avoidance বা অগ্রাহ্য পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা উত্তম। অনেক ছোট-খাট দ্বন্দ পারিবারিক জীবনে ঘটে যা সময়ের ব্যবধানে আপনা থেকেই সমাধান হয়ে যায়। এই সব টুকিটাকি ব্যাপারে Avoiding খুবই কার্যকরী পন্থা। যেমন ধরুন যদি আপনার স্ত্রীর উপরে কোন কারণে Stress বা চাপ বেড়ে যায় (যেমন সন্তান অসুস্থ, বাসায় অতিরিক্ত মেহমানের চাপ ইত্যাদি), এবং এ কারণে তার মেজাজ কিছুটা খিটখিটে হয় এবং আপনার সঙ্গে দ্বন্দে লিপ্ত হয় হবে এক্ষেত্রে Avoiding সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। তবে অন্যপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ বা মৌলিক দাবীর মুখে লাগাতার নিশ্চুপ থাকা বা Avoiding পদ্ধতির ব্যবহার একটি অকার্যকরী পন্থা।

Collaborationবা সংযোগিতামূলক:
এটি সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। দ্বন্দ নিরসনের এ পদ্ধতিতে অন্যপক্ষের মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয় সাথে সাথে নিজ মতামতকেও সুদৃঢ়ভাবে উত্থাপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে দু’পক্ষকেই মনে রাখতে হয় যে মতামতের ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব মত পোষণের অধিকার আছে। এ পদ্ধতিতে দু’পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে এমন একটি পথ খুঁজে বের করা হয় যাতে দুপক্ষের দাবীই পরিপূর্ণরূপে পূরণ হয়। এজন্য একে Win-Win পদ্ধতি বলা হয়।
যেমন ধরুন, স্বামী বললো আজ আমরা পার্কে বেড়াতে যাবো। স্ত্রী বললো আমি আজ চায়নিজ (ফুড) খেতে চাই। তারা যদি পার্কে বেড়িয়ে ফেরার পথে চায়নিজ খেয়ে আসে তবে তারা Collaboration পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করলো। এই পদ্ধতিটি বিরোধ নিরসনের সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। কিন্তু সমস্যা হল সব সমস্যায় এমন উপায় খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন যাতে দু’পক্ষের দাবী পূর্ণরূপে পূরণ হয়।

Compromise বা আপোসমূলক পদ্ধতি হল সম্ভবত:
সর্বাপেক্ষা বেশী ব্যবহৃত বিরোধ নিরসন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দু’পক্ষের দাবীর কিছু অংশ মেনে নেয়া হয় এবং দু’পক্ষই তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে মাঝামাঝি কোন স্থানে আপোস রফা করে। যদি Collaborating সম্ভব না হয় তখন স্বামী-স্ত্রীর উচিত Compromise-এর মাধ্যমে বিরোধ নিরসনের প্রচেষ্টা চালানো। যেমন ধরুন স্বামী চাইলো তার অফিসের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া করতে। স্ত্রী চাইলো তার অফিসের কাছাকাছি বাসা নিতে। তারা যদি দু’জনের অফিসের মাঝামাঝি কোন স্থানে বাসা নেয় তবে তারা Compromise পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করলো।

উপরোক্ত পাঁচটি পদ্ধতি জানার পর আপনি প্রশ্ন করতে পারেন কোন পদ্ধতিটি সর্বাপেক্ষা উত্তম? মূলত: প্রত্যেকটি পদ্ধতিরই কিছু ভাল ও কিছু দুর্বল দিক রয়েছে। তাছাড়া অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একেক সময় একেকটি পদ্ধতি বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হয়। তবে সাধারণভাবে বলা যায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে Forcing পদ্ধতি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। এবং Collaborating ও Compromising পদ্ধতি দু’ টি সর্বাপেক্ষা বেশী অনুসরণ করার চেষ্টা করা উচিত।

(চলবে)

পর্ব-৩

 

মাহে রমজানে ইফতারির রেসিপি

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ

উপকরণ
– ছোলা পৌনে ১ কাপ,
– যেকোনো সবজি টুকরা আধা কাপ,
– বিটলবণ আধা চা চামচ,
– শসা ১ টেবিল চামচ,
– আনারস আধা কাপ,
– কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ,
– খেজুর আধা কাপ,
– ধনিয়াপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
আলু সিদ্ধ ৩টি,
-ডালিম পরিমাণমতো,
-নাশপাতি ১টি,
-লেবুর রস ১ টেবিল চামচ,
-লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি
১. ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে অল্প সিদ্ধ করে নিন।

২. আনারস, খেজুর, আলু সিদ্ধ, নাশপাতি চারকোনা করে কাটুন।

৩. সবজি হালকা লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন।

পরিবেশন: এরপর ছোলা, সবজি ও ফলের সঙ্গে বিটলবণ, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনিয়াপাতা কুচি, লবণ, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন। রেসিপি : কালের কন্ঠ

গোলাপ পিঠা

প্রয়োজনীয় উপকরন
ডো তৈরির জন্যঃ
– চালের গুড়া ২ কাপ
– চিনি আধা কাপ
– ডিম ১ টি
– তেল ২ টেবিল চামচ
– দুধ ১ কাপ
– ঘি ১ টেবিল চামচ
– তেল ডুবো তেলে ভাজার জন্য পরিমান মত ।

সিরা তৈরির জন্যঃ
– চিনি ২ কাপ
– পানি ২ কাপ
– সাদা এলাচ ২ টি
– লং ১ টি

প্রস্তুত প্রনালী
( ১ ) প্রথমে চিনি, পানি, এলাচ ও লং একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে সিরা তৈরি করে রাখতে হবে ।

( ২ ) এরপর একটি পাত্রে দুধের সাথে চিনি দিয়ে ফুটতে দিতে হবে । দুধ ফুটতে শুরু করলে চালের গুঁড়া দিয়ে সিদ্ধ শক্ত কাই বানাতে হবে ।

( ৩ ) এবার শক্ত সিদ্ধ কাই একটু ঠান্ডা করে নিয়ে এর সাথে ডিম ভেঙে দিয়ে এর মধ্যে ঘি দিয়ে খুব ভালোভাবে ময়ান করতে হবে । এভাবে সুন্দর ভাবে ময়ান করে মসৃন ডো বানাতে হবে ।

( ৪ ) এখন মসৃন ডো থেকে অল্প করে আটা নিয়ে ছোট ছোট গোল পাতলা রুটি বানাতে হবে। এরপর ৬ টা ছোট রুটি নিয়ে একটার উপর আরেকটা রেখে ছবির মত করে সাজাতে হবে । তারপর রুটি গুলোকে গোল করে ভাঁজ করে রোল বানিয়ে চাকু দিয়ে কেটে দুই টুকরো করলেই দুইটা গোলাপ হবে । কমেন্টে ছবি দেয়া আছে, দেখুন ।

( ৫ ) ভালো ভাবে বুঝার জন্য ছবিতে দেখুন । তারপর গোলাপ গুলোর নিচের দিকে হাত দিয়ে একটু চেপে দিলে খুলে যাবে না ।

( ৬ ) এভাবে একই পদ্ধতিতে সব টুকু আটা দিয়ে অনেক গুলো গোলাপ তৈরী করতে হবে। এরপর গোলাপ গুলো ডুবো তেলে বাদামী করে ভেজে সিরায় ছাড়ুন ।

( ৭ ) এটা সিরায় ভেজানো গোলাপ পিঠা । তাই সিরাতেই ভিজিয়ে রাখতে হবে । সিরায় ভেজানোর পর ঢেকে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন । তৈরী হয়ে গেল মজাদার গোলাপ পিঠা ।

পরিবেশন: গোলাপ পিঠা সিরায় ভিজে নরম হলে পরিবেশন করতে হবে । এই উপকরনে ৫-৬ জনকে পরিবেশন করা যাবে । রেসিপি- আফরুজা শিল্পী।

 

‘সত্যি বলছি পবিত্র হব’

তামান্না সাদিকা


এই সময় তীব্র কড়া রোদের মাঝে হুট করে যে বৃষ্টি চলে আসে ছোটবেলায় আমি এই বৃষ্টিটাকে কান্না মনে করতাম। নিঃসঙ্গতার কান্না। এই বৃষ্টিটাই গাছে গাছে নতুন পাতা এনে দেয়। আমার জানালার সামনে গাছের কচি কচি পাতা গুলো দেখতে কি পবিত্র লাগছে…! বৃষ্টি যেন সব অপবিত্রতা মুছে নিয়ে গেছে…। কেমন যেন একা লাগছে … খুব একা ।। নিঃসঙ্গ… গাছের পাতা গুলোর মতো পবিত্র হতে ইচ্ছে করছে।

একটা সময় খুব চেষ্টা করেছিলাম পবিত্র হবার … কে জানে হয়তবা হয়েছিলাম কিছুটা।
ইদানিং ফেসবুকে জঘন্য সব ধর্ষণের ঘটনা পড়ে বুক ভরতি করে বমি করে এসে ক্লান্ত লাগে। পাশে শুয়ে থাকা বেবিদের দিকে তাকিয়ে অজানা আতঙ্ক আচ্ছন্ন করে ফেলে …। নামাজের সাথে সংমিশ্রিত পরের অনিষ্ঠ, পশুত্ব, মানসিক যৌন চর্চা। আমার পাশের প্রিয় গুড বয়টি দিনের আড়ালে দ্বিধাহীন মাতাল। একাকীত্বের মুহূর্তগুলোতে চেনা যায় আমার আমি কে …। রোজার সাথে মিথ্যা, ভ্রান্তি …। ছোট ছোট ভাল কাজ গুলো না করতে পারলে বড় বড় ভালো কাজ কিভাবে করবো …।
যারা পৃথিবী বদলে দেবার স্বপ্ন দেখে তাদের তর্জনীর আঙ্গুলটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে রেখে পথ চলতে হয় …। সত্যিই বলছি পবিত্র হব ।
এসবের সাথে নিজের জীবন আচরণ মিলে গেলে, কেমন অপবিত্র অপবিত্র লাগে …। সহজ, সাবলীল সুন্দর কাজে যেগুলো বাঁধা হয়। গতিকে slow করে দেয়, আর হয় spritual অন্তরে বোধের বিনাশ…। বোধের উদয় না হলে কি ধর্ষণ আইন দিয়ে ঠেকানো যাবে …। ভয় লাগে এখন আমার বোধের সাথে আমার সন্তানের বোধ তৈরি হচ্ছে …। সব ভুলতে চাই।
সব …সব ভুলে পবিত্র হতে চাই…
আমরা কেউ পরিপূর্ণ না কাছের মানুষ গুলো একজন আরেকজনের gap গুলো পূর্ণ করে করবে …। তাহলেই সহজ হবে … …।
আহা, আমার এলোমেলো অগোছালো চুলগুলোতে উষ্ণ ছোঁয়ায় যদি সে বলে “এসো পবিত্র হই” … এর চেয়ে প্রশান্তির আর কিইবা হতো …।

‘ হে প্রভু পবিত্র এই মাসে আমাকে একটু পবিত্র করো পবিত্রতার রূপে যেন সব অনিষ্ঠ গুলো ঝলসে যায় … অপার্থিব ঘ্রাণে সুরভিত হোক প্রত্যেক অন্তর ….।”
Inspired by : ( sura all mayeda 100)
قُل لاَّ يَسْتَوِي الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ فَاتَّقُواْ اللّهَ يَا أُوْلِي الأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমাকে মুক্তি পাও।

Say: “Not equal are things that are bad and things that are good, even though the abundance of the bad may dazzle thee; so fear Allah, O ye that understand; that (so) ye may prosper.”

 

সম্মানের মৃত্যুর সন্ধানে

ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস


মৃত্যু একদিন প্রমাণ করে দিবে, আমরা এই পৃথিবীর কেউই নই, আহামরি কোন গুরুত্বপূর্ণ কেউই নই। এরপর আমরা হারিয়ে যাব বিস্মৃতির অতল তলে। বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরা এক দিন দুদিন, এক মাস, এক বছর এক যুগ কাঁদবে এর বেশি নয়।

সত্যি করে বুকে হাত দিলে বলেন তো, পাঁচ বছর আগে মারা যাওয়া আপনার কোন ফ্যামিলি মেম্বারের জন্য আপনি কি এখনো নিয়মিত কান্না করেন?

– অবশ্যই না।

– তাহলে?

– মৃত্যুর পরেও কীভাবে বেঁচে থাকব?

– হুম, উপায় আছে।

উপায় হচ্ছে বিশ্ববাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কিছু করে যাওয়া, জীবনকে পরার্থে বিলিয়ে দেওয়া, নিজের চিন্তা এবং কর্মের উত্তরসূরি রেখে যাওয়া।

বেঁচে থাকার এটিই সহজতম পথ।

আসুন মানুষের জন্য স্বচ্ছ এবং পবিত্র নিয়তে কিছু করি।

এই মৃত্যু আমাদের আরও শিখিয়ে গেল যে, সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি অর্জন জীবনের মূল লক্ষ্য হতে পারে না, ডিগ্রির ফল ভোগ করার সুযোগ স্রষ্টা নাও দিতে পারেন। কাজেই জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ একজন ভাল মানুষ হওয়া, মানুষের মত মানুষ হওয়া।

আজ আমাদের কিছু কলিগ মারা গেল। কাল এই মৃত্যু আমার আপনার ও হতে পারে। গতকাল এই সময়ও মানুষ গুলো জানত না যে তারা আজ এই সময়ে বেঁচে থাকবে না। আমরাও জানি না, কাল আমরা সবাই এই সময় বেঁচে থাকব কিনা।

যারা মারা গেছে তারা অনেক অনেক ভাগ্যবান। আল্লাহ হয়ত এই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় তাদের মাফ করবেন।

আমার আপনার কী হবে, কীভাবে সম্মানজনক মৃত্যু হবে সেই চিন্তা ই করা উচিৎ আমাদের।

বিশ্বনবী বলেছেন “কেউ যদি সুস্থ বরকত পূর্ণ হায়াত এবং সম্মানের মৃত্যু কামনা করে – সে যেন মানুষের উপকার করে আর আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করে”

সম্মানের_মৃত্যুর_সন্ধানে
Dr. Mohammad Ilias
Phase B Resident
Department of Neuromedicine
BSMMU

 

রাত জাগার ভয়াবহ কুফল

লাইফ স্টাইল


রাত হল অন্ধকার, অস্পষ্টতা যখন সূর্যের আলো অস্ত যায় তখন নেমে আসে রাত। আর চার্লস সিজিলার এর মতে, সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরপরেই মানুষের ঘুমের হরমোনগুলো কাজ করতে শুরু করে। মানুষ যদি রাতের প্রথম অংশ না ঘুমায়, তাহলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও বিষণ্ণতা সহ অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। রাতের প্রথমাংশে ঘুমালে খুব সহজে এসব অসুখগুলো শরীরে দানা বাঁধতে পারে না।

রাত জাগার ভয়াবহ কুফল

ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক না কেন, ইদানিং রাত জাগাটা এক ধরনের ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। আমরা এখন রাত জেগে কাজ করি আর ভোর হলে ঘুমাতে যাই। আমরা অনেকেই এখন রাত জেগে কাজ করতে পছন্দ করি ।

বিশাল কর্মব্যস্ততার এই ব্যস্ত নগরীতে আমরা এখন ভুলে যাই নিজেদের যত্ন নিতে। যার পরিণতি অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়া সহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া। চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতের বেলা না ঘুমালে কিংবা কম ঘুমালে আমরা কী ধরনের অসুবিধার
সম্মুখীন হই।

১) ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং আপনি বেশি খেতে শুরু করেন। যার পরিণতি হচ্ছে অবেসিটি বা স্থুলতা।
২) স্ট্রোক করার ঝুঁকি চারগুণ বেড়ে যায়।
এছাড়াও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায় ।
৩) টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪) মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হওয়া শুরু হয়।
৫) ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে।
৬) অ্যাসিডটি যেটা পরবর্তীতে পাকস্থলীতে আলসারে রূপ নেয় ।
৭) কর্মের ধারাবাহিকতা বিপর্যস্ত হয় এবং
কর্মচঞ্চলতা হ্রাস পায় ।
৮) কোন ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ দেয়াটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যায় ।
৯) সারাদিন একটা ক্লান্তি অনুভুতি হয় ।
১০) গ্যামিট কম তৈরি হয়। ফলে রিপ্রোডাকশন সিস্টেমের ফার্টিলিটি কমে যায় ।
১১) উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায় ।
১২) চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে ।
১৩) ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং ত্বকের রঙ নষ্ট হয়ে যায় ।
১৪) চামড়া দ্রুত কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ।
১৫) মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ।
১৬) সারকোপেনিয়া হবার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। সারকোপেনিয়া হলো এমন এক জটিলতা যাতে রোগি ধীরে ধীরে পেশী হারাতে থাকেন ।
১৭) নারীদের মাঝে মেদবহুল পেট এবং মেটাবলিক সিনড্রোম হতে দেখা যায় বেশি।
১৮) স্তন ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের
মতো ক্যান্সারের কোষ দেহে গঠন হয়ে থাকে অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে !
অনেকদিন তারুণ্য ধরে রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। নিয়ম মেনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুব সহজেই সুস্থ্য থাকা যায়। সুত্র & ছবি: ইন্টারনেট

 

রূপনগরে ইসলামী ব্যাংকের প্রথম মহিলা শাখা উদ্বোধন

নারী সংবাদ


ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩৩৩তম ও প্রথম মহিলা শাখা হিসেবে মিরপুর মহিলা শাখা গতকাল ঢাকার মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো: আসলামুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে এ শাখা উদ্বোধন করেন। ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী মো: মাহবুব উল আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড: এ কে এম আব্দুল মোমেন ও ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আবু রেজা মো: ইয়াহিয়া। স্বাগত বক্তৃতা দেন ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা সেন্ট্রাল জোনপ্রধান মো: শফিকুর রহমান।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখাপ্রধান হাসনে আরা বেগম। গ্রাহক ও সুধীবৃন্দের পক্ষে বক্তব্য রাখেন লন্ডনের লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল বাশার ও নারী উদ্যোক্তা কানিজ শারমিন মুক্তা। ব্যাংকের নির্বাহী-কর্মকর্তা, স্থানীয় ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মো: আসলামুল হক প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। ইসলামী ব্যাংকে উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের চলমান উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক আরো বেশি ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের তরুণ সমাজকে মাদকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমুখী সেবা গ্রহণ করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
মো: মাহবুব উল আলম সভাপতির বক্তৃতায় বলেন, ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম সুদমুক্ত ও শরিয়াহর ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংক। এ ব্যাংক দেশের উন্নয়ন নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সব নিয়মনীতি পরিপালন করে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিক সেবা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। জনগণের আস্থার ফলেই ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের সেরা এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম। বিজ্ঞপ্তি। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

কৈশোর স্মৃতিতে রমজান

হাবিবা মৃধা


রমজান মাস এলেই ছোট্ট প্রানটা নেচে  উঠত খুশিতে!আম্মুর  সাথে তারাবী পড়ার সে কি আনন্দ!যদিও তখন নামাজের নিয়মকানুন কিছুই জানতাম না যতটুকু মনে পড়ে আম্মু কতবার সিজদায় যায় এটা দিয়ে রাকাত পূর্ণ করা হত!

আর এখন দেখি জেনেবুঝেও মানুষ শুধু রাকাত পূর্ণ করতে তারাবী পড়ে অথচ সময় নিয়ে নিষ্ঠার সাথে তারাবীতেই রয়েছে সফলতা রাকাত পূর্ণ এরপরেই গুরুত্বপূর্ণ!

সবচেয়ে প্রিয় সময় ছিল ভোর রাতের সেহরী!ভোর রাতে ইমাম সাহেব কাকার কুরআন তিলাওয়াত আর সেহরী আহব্বানেই আমাদের ঘুম ভাঙত!মনে পড়ে এখনো গ্রামের সেই রমজান মাসের বেহেশতি পরিবেশের কথা!

সবচেয়ে আনন্দের  ছিল দিনে যে আমার দুই তিনটা রোজা হত!কিন্তু সে পনেরো দিনে ত্রিশ রোজা পূর্ণ হওয়ার খুশি আর বেশি দিন টিকেনি ছোটভাইয়ার জন্য!

ভোর রাতে বড়ভাইয়া,মেজোদাদা,মেজোআপু সবাইকে ডেকে ডেকে উঠানো হত আমাদের  দুইভাইবোনের মনে হয় ঘুম পূর্ণ হতনা ভোর রাতে জাগার আশায়!

সবাই সেহরী খেয়ে আমাদের একটু শেষের দিকে খেতে ডাকত এখন মনে হচ্ছে সেটার কারণ ছিল দেরি করে খাবার খেয়ে যাতে দিন বারোটায় একটা রোজা হয়ে গেছে বলে খাবার খাই!

দ্বিতীয়ত আম্মু যাতে একটু শান্তি মত নামাজ পড়ে নিতে পারেন!আম্মু  কাজের ফাঁকেই সবসময় নামাজ তিলাওয়াতের জন্য সময় নিতে চাইতেন!

আমরা দোতলার সিঁড়িতে বসে থাকতাম কখন আম্মু বলবে তোমরা হাতমুখ ধুয়ে খাবার খাও!কিন্তু তাদের খাবার শেষ হতে না হতেই ছোটভাইয়া বলত সেহরীর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে এরপর রোজা হবেনা তুমি কান্না করে দাও।

যেইকথা সেইকাজ! কিন্তু খাবারের জায়গা থেকে আদেশ আসত ঠিক আছে হাত মুখ ধুয়ে এসো কাল ঠিক দশটার পরে ই খাবার খেতে হবে!

একদিন নিয়মের বিপরীত ঘটল,পাশাপাশি  ঘুমিয়ে ছিলাম ছোটভাইয়া কে চুপি করে ডেকে নিয়ে এসেছে মেজো আপু,ঘুম ভেঙ্গে সে কি মনখারাপ!সেদিন সিঁড়িতে বসে কেদেছিল এই অবুঝ প্রাণীটি!

সকালে ছোটভাইয়ার সাথে অভিমান!কোন কথা নেই!অতঃপর তার সুন্দর বাণী ছিল এমন শোন!আমাকে এখন ডেকেই উঠানো হবে আমার পুরো রোজা থাকার বয়স হয়ে গেছে আর তুমি আরেক টু বড় হলে!আর দিনে যে দুইটা রোজা এগুলো কোন সত্যি রোজা নয় দিনে কিছু খেলেই রোজা হবেনা!

আম্মু কে একটু বেশি ই জ্বালিয়েছি এখন মনে পড়ে খুব মন খারাপ হয়!আম্মু চাইতেন ভোর রাত্রে একটু একা নিভৃতে নামাজ পড়তে আমরা ভাই বোন মিলে পুরো ঘরে বাইরে সেহরী আমেজ গড়ে তুলতাম!বড় ভাইয়া খেতে বসে কি মজার মজার ঘটনা ঘটাত আর সেই নিয়ে হাঁসি !!

ছোটভাইয়ার প্লেট থেকে মাছ ভাতের নিচে লুকিয়ে রেখে বলত বিড়াল নিয়ে গেছে আর সে সন্দেহ করতে নীরব চুপচাপ খেয়ে বাঁচতে চাওয়া মেজোদাদাকে!একটু পর প্লেটের ভাতে হাত দিয়ে মাছ পেতেই শুরু হত হাঁসি!

আম্মু বলতেন আশেপাশের মানুষেরা আগেই সেহরী খেয়ে ইবাদত বন্দেগী করছে তোমরা হইহুল্লোর করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলছ!

আম্মু কে সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছি সেহরীর তরকারি নিয়ে!আমার একটা সাথী ছিল যার ঘরে রমজান মাসেও খুব একটা মাছ মাংস হতনা হয়ত বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া!ও রাতে আমার কাছে ঘুমাতে আসত বেশিরভাগ সময় ই আমি জিজ্ঞেস করতাম আজ রাতে ওরা কি খেয়েছে ,ভোর রাত্রে কি খাবে??

কখনো ডিমরান্না,সবজি আর বেশিরভাগই আলুভর্তার কথা বলত!একদিন রাতে ও বলল আজ ওদের শুধু আলুভর্তা কিন্তু ওটা খুব মজা!! পেঁয়াজ তেলে নেড়ে বানিয়েছে ওর মা!আমার শুনে ই খেতে ইচ্ছে করল কিন্তু ওকে বলিনি সম্ভবত!

আমাদের ঘরে সেদিন ইলিশ মাছ কিন্তু একটাই মাছ যাতে ছটুকরো মাছ মাথা লেজ সহ আট পিচ হয়!আম্মুর হয়তো খেয়াল ছিল ওদের ঘরে দুই টুকরো রান্না করা মাছ পাঠিয়ে দিবে যেহেতু আমাদের ঘরে ছয়জন আমরা!

আমার এখনো মনে পড়ে আম্মু ওদের জন্য তরকারি দিতেই আমি বলি আম্মু দুই টুকরো মাছ পাঠালে ওর ছোট ভাইবোনদের জন্য ও খেতে পায়না আমার মাছ টুকরো আমি ওকে দিতে চাই আমাকে শুধু মাছের ডিম দিলেই হবে!আম্মু সহজ করে বললেন আজকে আশেপাশে সবাই মাছ এনেছে ওদের কে দিবে তো!

রাতে আবার সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম কেউ তরকারি দিয়েছে ওর উত্তর নাতো!

আম্মু কে নামাজের ভিতরে গিয়ে আবার বলি আম্মু কেউ তরকারি দেয়নি ওদের ! আমার কথায় আম্মু সেদিন হয়ত বিরক্ত হয়েছেন কিন্তু রাগ করেন নি মোটেও তাছাড়া রাগমুখে আমি আম্মু কে দেখিনি!

এরপরে আম্মু নিজের টুকরো আমার সহ চারটুকরো মাছ দিয়ে আমতা আমতা করে কিছু একটা বলছিলেন শান্তি থাক এবার এমন!ভোর রাতে আম্মু আলুর ঝোল দিয়ে খেয়েছিলেন আর আমার জন্য ডিম রেখেছিলেন!

আজ খুব করে মনে পড়ছে সেই দিনটির কথা !আসলে নিজেরা মাছ গোশত দিয়ে পেটপুরে খেলেই বুঝি রোজা হয়!সমাজের মানুষের সেহরী আমেজ দেখে তাই মনে হয়!

তবে এর বিপরীতে ভালো মানুষ ও থাকেন সবসময় ই কম বেশি!আমাদের ইমাম সাহেব কাকার বাবা যাকে মাষ্টার দাদা ডাকি আমরা!এখনো পর্যন্ত রমজান মাসে তিনি ইফতারী নিয়ে সবার ঘরে ঘরে ঘুড়ে বেড়ান বিশেষ করে যাদের একটু আয়োজন কম হত তাদের জন্য!

প্রথম প্রথম যখন রোজা রাখতে শুরু করেছিলাম সেটাই বেশি মজার ছিল বার বার হাদীসে কুদসীর সেই হাদীস মনে পড়ত আল্লাহ্ নিজেই প্রতিদান দিবেন

তখন ভিতরে শুধু ভাইয়ার কাছে শোনা #বুখারী  শরীফের হাদীসের কথা মনে পড়ে খুশি লাগত:রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর চেয়ে ও উত্তম!রোজাদার দুইবার খুশি হয় একবার ইফতারে দ্বিতীয়বার রবের সাথে সাক্ষাত লাভে!!

!ভাইয়া দুষ্টামি করে বলত তুমি ডুব দিয়ে পানি খেয়েছ গোসলের সময় আর আমি ভাবতাম সত্যি!!আবার আম্মুর কাছে গিয়ে কান্না!

আম্মুর ইফতার বানাতে বানাতে বেশিরভাগ সময় ই আজান দিয়ে দিত আর  আম্মু খুব আফসোস করতেন সময় নিয়ে ইফতারের আগে দোয়া ও করতে পারিনা!! মায়েদের সংসারের সব কাজ সেরেই আবার সবার মুখে খাবার দিতে ইফতার তৈরি রান্নাবান্না আরো কতকাজ!

পাশের ঘরে ইফতার নিয়ে যেতে যেতে প্রায় সময় ই আজান দিয়ে দিত আর আমার ইফতার হত তাদের সাথে অবশ্য তারাও রখুব খুশি হতেন আর ঘরে ফিরে সবার কতরকম কথা শুনতাম!!
পবিত্র ক্বদরের রাত্রিতে সাথীরা মিলে গোসল করতাম প্রতি ফোঁটা পানিতে গুনাহ মাফ হবে তাই বেশি করে সাবান মাখা তবে আজো কোথাও এমন দলীল পাইনি একসাথে তারাবী,একসাথে কদর পড়তাম আমরা সাথীদের খুব মিস করি এসবের জন্য এখনো!

ছোট চাচাতো বোনটা একটু মাঝে মাঝে তারাবীতে আলসেমি দেখালে আম্মু শিখিয়ে দিতেন চার রাকাত পর পর মোনাজাত করতে আর প্রতি বার এটা মনে করতে প্রথমবার তারাবী শুরু করছি!সত্যি ই আম্মুর কথামত আমরা তাই করতাম বিশ রাকাত তারাবী কখন শেষ হত এতটুকু বিরক্তি আসত না!তাই ভাবছি রমজান মাস রোজার সাথে তারাবী আমাদের জন্য বিশেষ এক নেয়ামত সুস্থ মানুষদের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কিসের এত বিরোধ!তাছাড়া প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগন যেহেতু বিশ রাকাত পড়েছেন!

কৈশোরের ইবাদত খুব নির্ভেজাল হয় বার বার ইচ্ছে করে আবার সেই কৈশোরের রমজানে ফিরে যাই আম্মু কে জ্বালানোর মুহূর্ত গুলো ফেরত দিয়ে দেই আম্মু আজ তোমার যতখুশি নামাজ পড় কারণ আব্বুর পরিশ্রম আর আম্মুর দোয়া ই হয়তো আমাদের যতটুকু সফলতা তার পিছনের চাবিকাঠি!!কতদিন আম্মুর সাথে ইফতার হয়না ভোর রাত পেরিয়ে উঠানে হাটতে হাঁটতে  সুবহে সাদিক দেখা

হয়না! আবার কবে সব ভাইবোন মিলে আমেজ পূর্ণ সেহরী ইফতার হবে আম্মুর সাথে!!সবাই অনেক বড় হয়ে গেছি এই শহরে যে যারমত বন্ধু বান্ধবের সাথে ইফতার করি আম্মু হয়তো সেই আগের মতোই ইফতার নিয়ে বসেন আর আমাদের জন্য দোয়া করেন!!

হাবিবা মৃধা!!
শিক্ষার্থী ঢাবি!

 

জুতাচোর

জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


নাহিনের বাসায় এখন তুলকালাম অবস্থা। বিকালে বাবা এসেছে। রাতে খাবার পরেই ঘটনার শুরু। নাহিন ভাবছে, সব দোষ তার একার। কেন যে সে বাবাকে আসতে বলল!
এই নিয়ে এখন আফসোসের শেষ নেই।
নাহিনের মা সরকারী চাকুরে। বাবার বেসরকারি । পোস্টিং বরিশাল। নাহিনরা দুই ভাই, এক বোন। সবার বড় নাহিন, তারপর জাহিন, ক্লাস ফাইভে পড়ে। পিচ্ছি বোন অরিন, পড়ে ক্লাস টু’তে। খুবই বাবার ন্যওটা। ওরা সবাই চট্টগ্রামে মা’র নামে বরাদ্ধকৃত সরকারী কোয়ার্টারে থাকে। ।
নাহিনদের একটা হাসিখুশির সংসার। মা’র যা একটু ঝনঝনে মেজাজ। এইটুকু ছাড়া পুরা ঘরটা যেন শান্তির নহরে ভাসে। মাস শেষে বাবা ছুটিতে বাসায় এলেই পিচ্ছিদের কাছে ঈদের আমেজ। অরিন বাবার কাঁধে, জাহিন পিঠে আর নাহিনের হাত ধরে বাবা বাসার ছাদে চক্কর দেয়। তখন খুব মজা। বাবার দখল নিয়ে অরিনের সাথে জাহিনের খুব ঝগড়া। অরিন বলে,
-এটা আমার বাব্বা, কেউ বাব্বার গায়ে হাত দিবে না। বাব্বা শুধু আমার।
ছোট্ট জাহিন মুখ আধাঁর করে ব্যালকানিতে পালিয়ে যায়। লোহার গ্রীল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভেঁউ ভেঁউ করে কাঁদে। এই নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে।
মা পিছনে গিয়ে জাহিনের চুলে বিলি কেটে কেটে আদর করে। তারপর জাহিনের যা শান্তি। ভাবখানা এমন-
-সবাই দ্যাখো, মা কিন্তু আমার।
বরিশালে গিয়ে নাহিনের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। তখন ছোট অরিনের বয়স মাত্র এক বছর। সবাই বলে মা’টা কি বোকা! বিয়ের দুই বছর পর এই কথা জানতে পারলো! কিন্তু বাবার বিয়ের সাথে মায়ের বোকামীর কি সম্পর্ক, নাহিনের মাথায় আসে না।
দ্বিতীয় বিয়ের পরও বাবা দুই-তিন মাস পর পর চট্টগ্রাম আসতো। সবাইকে খুব আদর করতো। তখন নাহিনের খুব রাগ হতো।, যখন দেখতো মা তুচ্ছ কারনেও বাবার সাথে ঝগড়া করে। একবার এক ফাগুন মাসে মা’র জন্য বাবা একটা লাল টগবগে শাড়ী আনলো। রঙ দেখে মা’র খুব চেছামেছি! সে কি রাগারাগি! তিনি রাগের মাথায় বাবার মুখে শাড়ী ছুড়ে মারে।
ভ্যাগিস, সেদিন কেউ বাবার মুখখানি দেখেনি।
সেদিনের পর হতে বাবা আর কখনো বাসায় আসেননি।
আগামী বিষুধবার নাহিনের জেএসসি পরীক্ষা। তাই ছেলের আবদার রাখতে আজ বাবার এই চলে আসা। রাতে বাবার নতুন কেনা জুতা চুরি হবে, সেই চুরি নিয়ে এতো কিছু ঘটে যাবে, কে জানতো? ঝগড়ার সুত্রপাত এখানে থেকেই। রাতেই বাবা চলে যাবেন তাই জুতা খুলে দরজার বাইরে রেখেছেন। । ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া করলেন। মা খেতে বসলেন ন।
ফেরার সময় বাইরে এসে দেখেন নতুন জুতা নাই।
নাই মানে নাই।
একেবারে তাজ্জ্বব ব্যাপার!
প্রথমে কাজের লোককে জেরা করা হলো। তারপর কোয়ার্টার এর দাড়োয়ান। এমনকি ছোট্ট অরিনকেও জিজ্ঞাসা করা হলো।
কেউ কিছু স্বীকার করছে না।
বাবা রাগে গজ গজ করছেন। বারবার বলছিলেন-
– কদিন আগে ৬৯৯০ টাকায় কেনা নতুন জুতা আমার। মাত্র দুইবার পড়েছি।
বাবার প্লান ছিলো,ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা করে নাইটকোচে রাতে ঢাকা চলে যাবেন। পরদিন অফিসের বার্ষিক সাধারন সভায় যোগ দেবেন। কিন্তু এখন উপায়!
তিনি অরিনকে আদর করে কাছে ডেকে মোলায়েম স্বরে বললেন-
-দেখো মা, জুতাগুলো তুমি নিয়ে থাকলে, দিয়ে দাও। কথা দিচ্ছি, আমি আবার আসবো। তোমাদের সাথে অনেকদিন থাকবো। লক্ষী মা আমার!
-না, বাব্বা আমি জুতা নিই নাই তো!
উপায় না দেখে হঠাৎ চোখ-মুখ গরম করে মেয়েকে ধমক দিতেই, সে হাউমাউ কেদেঁ উঠলো।
আর এই নিয়ে শুরু হলো স্বামী-স্ত্রী মধ্যে তুমুল ঝগড়া। বাবা পইপই করে পুরা বাসা খুঁজে দেখলো। কিন্তু জুতার কোন হদিস নাই।
নাহিন কিছু একটা বলতে চাইলেই ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।
-চুপ! একদম চুপ, হারামজাদা কোথাকার! বলেই থামিয়ে দিলো।
পাশের ফ্লাটের লোকজন বেরিয়ে আসাতেই এই ঝগড়ার ঘুর্নি থামে।
বাবা নাহিনের স্পন্জ সেন্ডেল পা গলিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
এই জুতাচুরি নিয়ে আবাসিক এলাকায় নানা রকম আলোচনা।
কেউ কেউ নিশ্চিত দাঁড়োয়ান নিয়ে গেছে। এগুলো এরাই করে বা করাই।
কেউ বললো, কাজের মেয়ে ময়লার ঝুড়িতে করে বাহিরে নিয়ে গেছে।
তবে বেশীর ভাগের ধারনা, কুকুর নিয়ে গেছে। নতুন জুতার গন্ধে কুকুর মাতাল হয়ে যায়। আগে এভাবে অনেকের জুতা হারিয়েছে। সবার কথা শুনে নাইট গার্ড বলল, নাহিনের বাবার পিছপিছ একটা কুকুর এসেছিল। তবে দোতলা পর্যন্ত উঠেছে কিনা নিশ্চিত নন। কিছু লোক মা’র দিকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে।
জুতা চুরির পর হতে নাহিনের বাবা পরিবারের কোন খোঁজ খবর নেন না।
তিন বছর পর….
নাহিন এসএসসি দিলো। জাহিন জেএসসি। অরিন পিএসসি দিলো।
নাহিনের বাবা এক ছুটির বিকালে বরিশালে নিজের বাসার বারান্দায় বসে আয়েশ করে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় তার তিন বছরের মেয়ে একটি হলুদ খাম দিয়ে বলল,
-বাপ্পা, এইতা মা ডিলো।
ছোট্ট একটি চিঠি। খামের উপর শুধু চট্টগ্রাম লেখা।
বাবা,
সালাম নিও। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। বাবা, সেদিন তোমার জুতা আমিই চুরি করেছি। জানতাম, তুমি চলে যাবে কিন্তু পরদিন আমার যে পরীক্ষা! সবাই বাবাকে সালাম করে পরীক্ষার হলে যাবে। আমি কাকে সালাম করবো? তাই জুতা সরিয়েছি। প্রতিদিন পরীক্ষার হলে যাবার আগে লুকিয়ে তোমার জুতা জোড়া সালাম করতাম।
তুমি কিছুই টের পাওনি, বাবা?
বাবা, তুমি কি কখনো বাবাহীন ছিলে?
তুমি কি জানো, বাবাছাড়া সন্তানেরা কিভাবে বড় হয়?
জানো বাবা, এইবছর আমরা তিনজনেই পরীক্ষার্থী ছিলাম । গোপনে আমরা তোমার জুতা জোড়ায় সালাম করে, তারপর পরীক্ষার হলে যেতাম। আমাদের পরীক্ষার শেষদিন মা ঠিকই ধরে ফেললো।
যত ঝামেলার মুল তোমার মেয়ে ঐ অরিন। সে তোমার জুতা ধরে অনেকক্ষন কাঁদছিল আর বলছিল,
-বাবা, দোয়া করো। অ-নে-ক দোয়া!
-আচ্ছা বাবা, জুতা কি কখনো দোয়া করতে পারে? জুতা কি কখনো বাবা হয়? অথচ দেখো, কি বোকা মেয়ে অরিন! তোমার জুতাকেই বাবা ডাকে।
ইতি,
নাহিন।
চিঠি পড়াশেষে বাবা খানিক চোখ বন্ধ করে করে রইলেন।
ছলছল করে উঠে চোখ।
নিজের উপর প্রবল ঘৃনা আর তাচ্ছিল্যে কুকড়ে রইলেন।
আবার হঠাৎ দাড়িয়ে গেলেন…..
মনে হলো দুনিয়ায় এখনি গজব নাজিল হবে।

 

আমার বই পড়া (প্রথম পর্ব)

রায়হান আতাহার 


ছোটবেলায় রিডিং পড়তে শেখার আগে আমার মায়ের মুখে ছড়া শুনে ওগুলো মুখস্ত করে ফেলতাম। এরপর যখন রিডিং পড়তে শিখলাম, তখন থেকে কোন লেখা রিডিং করে পড়তে পারার মাঝে অদ্ভুত আনন্দ পেতাম। রাস্তায় বের হলেই আম্মুকে বিরক্ত করে ফেলতাম। বিভিন্ন পোস্টার, বিলবোর্ড রিডিং পড়তাম আর আম্মু ঠিক হয়েছে কিনা বলে দিত। ভুল হলে শুদ্ধ করে দিত।

আমার মনে আছে, একবার রাগ করে ছিলাম। আব্বু বাসায় ফেরার পথে একটা ভূতের গল্পের বই নিয়ে আসলো। আমার রাগ নিমেষেই গায়েব। ঐ বইটাই পাঠ্য বইয়ের বাইরে আমার পড়া প্রথম বই।

যে স্কুলে পড়তাম, সে স্কুলে একবার ছোটখাটো একটা বইমেলা হচ্ছিলো। নিজের পছন্দ অনুযায়ী সেবারই প্রথম বই কিনলাম। কিনেছিলাম “ছোটদের আরব্য রজনী”। কিনে আনার ঘন্টা খানেকের মধ্যে বই পড়া শেষ। খুব মন খারাপ হয়েছিল কেন যে এত তাড়াতাড়ি বই শেষ হয়ে গেল। ঐ বই ফেরত দিয়ে অন্য বই আনার চিন্তাও মাথায় এসেছিল, যদিও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বাসায় এক হুজুর আরবি পড়াতেন। উনি একবার গিফট করলেন সুকুমার রায়ের “পাগলা দাশু”। খুব ভাল লেগেছিল। ভাল লাগার পরিমাণ এতটাই ছিল যে, গত বছরেও সুকুমার রায়ের সব গল্পগুলো আবার পড়েছিলাম।

ছোটবেলায় একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত একেক ধরনের বই পড়ার অভ্যাস ছিল। (এখন অবশ্য সর্বভুক)

প্রথম যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করি, তখন কমিকস বইয়ের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। বিশেষত চাচা চৌধুরীর কমিকস। চাচা চৌধুরী, সাবু, রকেট, পিংকি, বিল্লু, এমনকি চাচাজির গাড়ি ডগডগ- এগুলোর জন্য পাগল ছিলাম বলা যায়। প্রতিটি কমিকস কম করে হলেও একশ বার করে পড়া ছিল।

চাচা চৌধুরী চরিত্রের নির্মাতা হলেন কার্টুনিস্ট প্রাণ। মজার ব্যাপার হল, আমি ভাবতাম কার্টুনিস্ট প্রাণ হলেন বাংলাদেশের প্রাণ কোম্পানির মালিক। তাই ঐ সময় প্রাণের জুস ছাড়া অন্য কোন কোম্পানির জুস খেতে চাইতাম না।

একটু বড় হয়ে যাওয়ার পর কমিকসগুলো ছোট এক কাজিনকে দিয়েছিলাম পড়তে। আর ফেরত পাই নাই।

(চলবে)

লেখক পরিচিতি:

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ

আফরোজা হাসান


কয়েকদিন আগে এক বাসায় দাওয়াত থেকে ফিরে এসেই আমার কাজিন ঘোষণা দিলো ঐ বাসায় জীবনে আর কোনদিন যাবে না। কারণ জানতে চাইলে বলল, বাচ্চারা মিলে দুষ্টুমি করার সময় একটা শোপিস পড়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে মেজবান ভাবী খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। বিভিন্ন কথার ফাঁকে কৌশলে মেজবান ভাবীটি বাচ্চাদের ভদ্রতা শেখানোর ব্যাপারে ছোটখাট কিছু পরামর্শও দিয়ে দিয়েছেন উপস্থিত অন্যান্য ভাবীদেরকে। এতে করে সবাই কম-বেশি অপমানিত বোধ করেছেন। সামাজিকতা রক্ষার্থে অনেক সময়ই আমাদেরকে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের স্বীকার হতে হয়। বিশেষ করে যখন বাচ্চাদেরকে সাথে করে কোন বাসায় দাওয়াতে যাওয়া হয় তখন অনেক সময় না চাইতেও মেহমান ও মেজবানদের মধ্যে সূক্ষ্ম ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়ে যায়। শিশুরা স্বভাবতই দুরন্ত, ছটফটে, চঞ্চল। আর কিছু কিছু শিশু তো আছে যারা মাত্রাতিরিক্ত ছটফটে ও চঞ্চল। এক মুহুর্ত এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না, সবকিছুতেই দুষ্টুমি করা চাই। সব বাসাতেই মুল্যবান কিংবা গুরুত্বপুর্ণ নানা জিনিসপত্র থাকে। শিশুরা না বুঝে সেসব ধরে এবং অনেকসময় না চাইতেও নষ্ট করে ফেলে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে যদি শিশুদেরকে দিয়েই শিশুদের বোঝানোর কাজটা করিয়ে নেয়া যায়।

আমার বাসায় সবচেয়ে মূল্যবান বলতে যা আছে তা হচ্ছে বই। আমার ছেলে যখন হাঁটতে শিখলো তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল সেলফ থেকে বই নামানো আর উঠানো এবং আমি খেয়াল না করলেই বই থেকে পৃষ্ঠা ছিড়ে সেটা খেয়ে ফেলা।

কি করা যায় ছেলেকে নিয়ে জানতে চাইলে ছেলের বাবা হেসে বললেন, এক কাজ করো ভক্ষককে রক্ষক বানিয়ে ফেলো। রাজকন্যা আর রাক্ষসের গল্প জানা থাকার কারণে আমার ছেলে জানতো যে রাক্ষসের প্রাণ থাকে সাগরের গভীর নীচে এক নীল ভোমরার ভিতর। ওকে বললাম রাক্ষসের প্রাণ যেমন ভোমরার ভেতর থাকে আম্মুর মন তেমন এই বইয়ের ভেতর। চোখ বড় বড় করে বলল, বইয়ের পাতা ছিঁড়লে কি তোমার হাত ছিড়ে পড়ে যাবে আম্মু? বললাম, আম্মুর হাত ছিড়ে যাবে না, আম্মু মারাও যাবো না কিন্তু আম্মুর মনে অনেক কষ্ট হবে। আম্মুর চোখ কান্নাও করতে পারে। করুণ স্বরে বলল, আমি চাই না তোমার মন কষ্ট পাক, তোমার চোখ কান্না করুক। এরপর থেকে আর কোনদিন সে আমার বই ধরে না আর ধরলেও ছিড়ে না। বাসার যখনি ওর বন্ধুরা আসে আগেই বলে দেয় যাতে বইয়ের সেলফের কাছে না যায়। এবং বইয়ের যতটুকু যত্ন তার পক্ষে করা সম্ভব করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

আমার বাসায় যেহেতু অনেক বাচ্চা আসে তাই ওদেরকে বোঝানোর দায়িত্ব আমি আমার ছেলেকেই দিয়েছি। বন্ধুরা আসার পর নিজেই বুঝিয়ে বলে যে, কিচেনে যাওয়া যাবে না, কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করলে আম্মুর কাছে চাইতে হবে, ওয়াশরুম গিয়ে কোনকিছু নোংরা করা যাবে না, খেলনা ছাড়া অন্য কোন কিছু অনুমতি ছাড়া ধরা যাবে না ইত্যাদি। এতে আরেকটা সুবিধা হচ্ছে এই কাজগুলো সে অন্য কারো বাসায় বেড়াতে গেলেও করে না। আসলে বাচ্চাদেরকে যদি প্রত্যেকটা জিনিসের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলা যায় তাহলে তারা বোঝে এবং মেনে চলতে চেষ্টা করে।

বন্ধুরা বাসায় আসলে তাদের সাথে কোন কোন খেলনা দিয়ে, কোথায় বসে খেলতে হবে, কোন কোন জিনিস ধরা যাবে না, কোন কোন কাজ করা যাবে না ইত্যাদি বাচ্চাকে সুন্দর মতো বুঝিয়ে বলে দিতে হবে। যাতে বাচ্চারাই করণীয় বর্জনীয় বুঝে সেইমতো চলতে পারে। বিষয়টা একটু কঠিন তবে বাবা-মা ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা করলে ধীরে ধীরে বাচ্চারা এসব রপ্ত করে ফেলতে পারে। আর বাবা-মা মুক্ত থাকতে পারেন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের স্বীকার হওয়া থেকে।

 

দূরে বহুদূরে হেরার রাজতোরণ

ফাতিমা শাহীন


কবি ফররুখ আহমেদ এর কবিতার সাথে আমাদের পরিচয় শৈশব থেকেই। দেশের শিশু কিশোর পাঠ্যক্রমে আগে সেসব বিষয়ই নির্বাচিত করা হত যেসব রচনায় থাকত নিষ্পাপ কচিপ্রাণ শিশু কিশোরদের মন ও মননকে বিকশিত করার সমৃদ্ধ উপাদান। ছোট্ট বেলা থেকেই যেন মনুষ্যত্বের পূর্ণ রূপটি শিশুদের নিষ্পাপ অন্তরে স্থায়ী আসন গড়ে নিতে পারে , শিক্ষা কার্যক্রমে থাকত সেই প্রচেষ্টা। এরই অংশ হিসেবে আমরা পড়েছি কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সাহিত্য সম্ভার , কবি গোলাম মোস্তফার অসাধারণ বিনির্মানগুলো , কবি ফররুখ আহমেদের উদ্দীপনাময় কাব্যসৃষ্টি সমূহ। এভাবে পড়তে পড়তে কবে থেকেই যেন ফররুখ আহমেদের পাঞ্জেরীর সাথে আমি হয়ে গেছি একাত্ম , অভিন্ন হৃদয় :

“রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী ,

এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে

সেতারা , হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে ?

তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে

অসীম কুয়াশা জাগে শুন্যতা ঘেরি। ”

তাইতো , ফররুখ আহমেদ আমার প্রানের কবি , আত্ম জাগরণের কবি , প্রিয় কবি !

ফররুখ আহমেদ বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী প্রতিভার নাম। তিনি মুসলিম রেনেসাঁর কবি নামেই বেশি পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের যে ক’জন স্বপ্নমুগ্ধ কবি ইসলামী মূল্যবোধ ও ভাবধারার মধ্যে থেকে পাঠকের চোখে ও অন্তরে তাদের স্বপ্ন ও মুগ্ধতাকে সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে পারঙ্গম হয়েছিলেন , নি:সন্দেহে কবি ফররুখ আহমেদ তাঁদের মধ্যে একজন। ঘুনে ধরা , পাপ দগ্ধ এক সমাজের অন্ধকারের পর্দা সরিয়ে সুবেহ সাদিকের পবিত্র আভায় উদ্ভাসিত এক ভোরের পরম আকাঙ্খী ছিলেন তিনি , যা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ‘ সাত সাগরের মাঝি ‘ কবিতার বহু ছত্রে :

” কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হ’ল জানিনা তা’

নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতা

দুয়ারে তোমার সাত সাগরে জোয়ার এনেছে ফেনা ,

তবু জাগলেনা ? তবু তুমি জাগলেনা ? ”

যে সুন্দরতম আদর্শকে আশ্রয় করে মানবতা হয়ে ওঠে মহীয়ান , গরীয়ান … তাকে তিনি বাঙ্ময় কাব্যজ্যোতির প্রদীপ্ততায় উদ্ভাসিত করে ফুঁটিয়ে তুলেছেন তাঁর ‘ সিরাজুম মুনীরা ‘ কবিতা নিজস্ব মহিমায় :

” কে আসে , কে আসে সাড়া পড়ে যায়

কে আসে , কে আসে নতুন সাড়া !

জাগে সুষুপ্ত মৃত জনপদ , জাগে শতাব্দী ঘুমের পাড়া।

হারা সম্বিত ফিরে দিতে বুকে তুমি আনো প্রিয় আবহায়াত ,

জানি সিরাজাম-মুনীর তোমার রশ্মিতে জাগে কোটি প্রভাত ,

তব বিদ্যুত্কনা – স্ফুলিঙ্গে লুকানো রয়েছে লক্ষ দিন

তোমার আলোয় জাগে সিদ্দিক , জিন্নুরাইন , আলী নবীন। ”

তাঁর অসাধারণ রচনাসমূহের মধ্যে একটি তাত্পর্যপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে দিগন্ত ছোঁয়া নীল সমুদ্র , উত্তাল উর্মীমালার বিক্ষুব্ধ সন্তরণ। এর মাধ্যমে তিনি কবিতার ছত্রে ছত্রে ফুঁটিয়ে তুলতে চেয়েছেন সৃষ্টি লগ্ন থেকে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনাচারে নিরন্তন সংগ্রাম ও আন্দোলনকেই :

” এ ঘুমে তোমার মাঝি মাল্লার ধৈর্য্য নেইকো আর

সাত সমুদ্র নীল আক্রোশে তোলে বিষ ফেনভার ,

এদিকে অচেনা যাত্রী চলেছে আকাশের পথ ধ’রে

বেসাতী তোমার পূর্ণ করে কে মারজানে মর্মরে ? ”

আজ এ যুগে , এ ক্ষয়রোগে ধরা মুমূর্ষ সমাজে , যেখানে পাপ পঙ্কিলতা ও অশুভ আচার নির্বিবাদে বাড়িয়ে চলেছে তাদের অশুভ কালো বাহু , যেখানে অনৈতিকতার বিষবাষ্প সমাজকে পতনের শেষ সীমায় ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে , সেখানে আজ ফররুখ আহমেদের মত ভোরের নকীবদের আজ বড় প্রয়োজন! যিনি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের অশান্ত তরঙ্গমালা সামাল দিয়ে সাত সাগরের মাঝিদেরকে হেরার রাজ তোরণের দিক নির্দেশনা দিতে পারেন , পাঞ্জেরীকে দিতে পারেন ধ্রুব তারার খোঁজ , এমন কবি ও লেখকদেরকেই এ সমাজে আজ বড় বেশি দরকার।

আর তাই , কবিকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে খ্যাতিমান কবি জাহানারা আরজু লিখেছিলেন ,

” এক মঞ্জিল , এক নিশানা হেরার রাজতোরণ

জীবন বোররাখ ছুটে চলেছে ঊর্ধ্বে গতিময়

তৌহিদের বাণী বয়ে , বুকে যার অসীম বিস্ময় ,

কলমের পুষ্পিত পরাগে জাগে অনন্য ভুবন ! ”

প্রানপ্রিয় এ কবির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন এর দরবারে মাগফিরাত কামনা করি।

 

মায়ের প্রতিবিম্ব

তাহেরা সুলতানা


কোন এক চৈত্রসংক্রান্তিতে যখন তোমায় বলতে গেলাম, “মা, এবার আমায় দাও গো বিদায়।”
তুমি অশ্রুভেজা চোখে হাতটা ধরে বলেছিলে, “মারে!
বছরের প্রথম দিনটি কি আমার সাথে কাটানো যায়!”
আমি মনে মনে বলেছিলাম,
“মা, তোমাকে কি করে বোঝাই!
এ সংসারে আমার ইচ্ছে অনিচ্ছের আছে কি দায়!
কেন আমায় চোখের জলে দিচ্ছো মা বিদায়!”

চোখের পানি লুকিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলাম, “মা, তোমার মেয়ের যে অন্য দেশে সংসার!
আমায় যে ফিরতেই হবে মা!
লক্ষ্মী মা আমার! আর করোনা মুখটা ভার!
অনলাইন আছে তো!
কেনো এতো ভাবছো?”

মা যেন কিছুতেই পারছে না মানতে!
আমিও কি পারছি মা, সহজে, তোমায় ছাড়তে!
যেদিন তোমায় ছেড়ে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি গিয়েছি,
সেদিনই সব আনন্দগুলো তোমারি শেখা পথে,
ও বাড়ির সবার সাথে ভাগ করে নিয়েছি।
শুধু বুকের বাম পাশটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা আজও সাথী করে রেখেছি।
সে ব্যথার কথা তুমি ছাড়া কেই বা জানে বলো! কেই বা দেখে আমার সে দু’চোখ ছলোছলো!

তোমার মনে আছে? ছোটবেলায় বৈশাখ এলে, সারারাত জেগে সাদা জামায়,
পাইপেন আর সুতোর ছোয়ায়,
তোমার হাতের পরশ ফুটিয়ে তুলতে লালে!
কি যে মায়া! কি যে ভালোলাগা!
সেই দিনগুলো আজও আমায় স্মৃতিকাতর করে তোলে!

আমিও একদিন মেয়ের মা হবো, যদি জানতাম!
সেই জামাগুলো বড় যত্ন করে তুলে রাখতাম,
বড় যতনে সাজাতাম তাকে,
ঠিক তুমি যেমন চাইতে আমাকে,
আমি হয়তো ওর মধ্যেই তোমায় খুঁজে পেতাম!

আলমারীতে সাজানো অনেক শাড়ীর ভিড়ে,
আমি সেই জামাগুলোই খুঁজেছি বহুবার,
হয়তো জামা নয়, তোমারই পরশ খুঁজেছি। তোমাকেই খুঁজে ফিরেছি বারংবার।
প্রযুক্তি আমাদের দেখার সুযোগটা করে দিয়েছে।
তাই বলে হয়তো তোমায় চোখের দেখাটা দেখতে পাই।
কিন্তু মনের তৃষ্ণা কি করে মেটাই?
তোমার হাতের পরশ কি করে পাই?

আজ বৈশাখের প্রথম দিন।
এক আগত বৈশাখে তোমায় ছেড়ে আসার দিন।
মা, তুমি কেমন আছো?
আমার পাঠানো শাড়ীটা কি পড়েছো?
সেদিন বলেছিলে, আজকাল তোমার নাকি,
চশমা পড়েও সব কিছু বড্ড বেশি দূরের মনে হয়!
আমাকেও নাকি ঝাপসা দেখতে পাও!
চশমার গ্লাসের পাওয়ারটা কি বাড়িয়েছো?

মা, তোমাকে বলতে ভুলেই গেছি,
আমার চোখেও চশমা উঠেছে।
একটি করে বছর বিদায় জানাচ্ছি!
আজকাল ভিডিওকলে তোমাকেও বড্ড ঝাপসা দেখছি!
কি জানি, চশমার অভাব!
নাকি চোখের জলরেখার প্রভাব!

তুমি জানো, আমার মেয়ে এখন পুরোদস্তুর আমার মা হয়ে উঠেছে!
আমার জীবনে ও হয়তো তোমার ছায়া ধরেই এসেছে!
আমায় শাসন করে রীতিমতো!
ঠিক যেন তোমারই মতো!
সে যে কতো কাজের মেয়ে হয়েছে এই ক’দিন!
সে ফিরিস্তি না হয় শুনো আরেকদিন!

 

রমজানের ইফতারিতে মরক্কান বাগরির

মুনিম সিদ্দিকী


আসুন এই রমজানের ইফতারিতে মরক্কান বাগরির তৈরি করি।

মরক্কান বাগরির রেসিপি

শীত আর গ্রীষ্মে বাগরির বানিয়ে খেতে পারেন। একবার বানালে টাওয়াল দিয়ে ঢেকে রেখে তিন দিন পর্যন্ত খেতে পারবেন, আমাদের দেশের চালের গুড়ির চিতুই পিঠার মত শক্ত হবে না, নরম তুলতুলেই থাকবে।

আমাদের দেশে চিতুই পিঠা চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। আমাদের চিতুই পিঠা গরম গরম খেতে হয়। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে শক্ত হয়ে পড়ে। আমি আজ যে চিতুই পিঠার রেসিপি দিচ্ছি তা নরম তুলতুলে হবে ঠাণ্ডা হলেও শক্ত হবেনা। সকল বয়সের মানুষের কাছে সুস্বাদু লাগবে বিশেষ করে শিশু এবং বয়ঃবৃদ্ধের জন্য হবে অনন্য খাবার।

দোহাই মরক্কান বাগরিরকে চিতুই পীঠা বলবেন না। চিতুই কে চিতুই আর বাগরিরকে বাগরির বলে উল্লেখ করুন। মরক্কান বাগরিরই বলে যেন অন্যদেরকে আপ্যায়ন করেন। ধন্যবাদ।

যা লাগবে

১- ময়দা দেড় কাপ বা ১৬৫ গ্রাম।
২-সুজি দেড় কাপ বা ১৬৫ গ্রাম।
৩- চিনি ১ টেবিল চামচ বা ১৫ গ্রাম।
৪- লবণ ১ চা চামচ বা ৫গ্রাম।
৫- বেকিং পাউডার ১ চা চামচ বা ৫ গ্রাম।
৬- ইস্ট ২ চা চামচ বা ১০ গ্রাম।
৭- পানি উষ্ণ তবে গরম নয় সাড়ে চার কাপ বা ৪৯৫ গ্রাম।

প্রস্তুতি

১- প্রথমে পানি বাদে সকল উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ময়দা আর সুচির পরিমাণ কম বেশি করা যায়। তবে সুজির সাথে অবশ্য ময়দা থাকতে হবে, কিন্তু ময়দার সাথে সুজি না থাকলেও বাগরির করা যাবে। ডুরুম গমের ময়দা আর সুজি হলে রঙ হলুদাভাব দেখাবে। শুধু ময়দা হলে সাদাভাব দেখাবে। আমাদের দেশের সুজির পরিমাপ বেশি হলে কালচে ভাব দেখাবে।

২-অল্প অল্প করে ঐ মিশ্রণে উষ্ণ পানি ঢেলে মিশ্রণকে নরম থকথকে করে নিতে হবে।

৩- মেশিন থাকলে ৩০ সেকেন্ড ঐ মিশ্রণ ঘুটে নিন। না থাকলে কাঠে চামচ বা অন্য কিছু দিয়ে ভালো ভাবে ঘুটে মসৃণ করে নিন। মনে রাখবেন এই মিশ্রণ পানির মত পাতলা যেন না হয় আবার যেন ঘনও না হয়।

৪- ঘুটাঘুটির পর পরিষ্কার টাওয়াল দিয়ে ঢেকে গরম কোন স্থানে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেস্টে রাখুন।

৫- ২০ /৩০ মিনিট পর লক্ষ্য করুন যে ঐ মিশ্রণের উপর বুদবুদ দেখা যায় কিনা? যদি বুদবুদ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মিশ্রণ ঠিক হয়েছে। যদি বুদ বুদ না হয় তাহলে আরো অল্প পানি মিশিয়ে নিন এবং অপেক্ষা করুন। বুদবুদ আসা পর্যন্ত।

৬- এবার চুলার মধ্যে মৃদু তাপে ননস্টিক ফ্রাই পেন গরম করুন।

৭- গরম হলে ডাবু হাতার চামচ দিয়ে এক চামচ মিশ্রণ ননস্টিক প্যানের মধ্যখানে গোল করে ছড়িয়ে দিন।

৮- কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। যখন দেখবেন পিঠার মধ্যে অসংখ্য ছিদ্র দেখা যাচ্ছে এবং কাচা ভাব চলে গেছে তখন খন্তা দিয়ে আলতো করে ফ্রাইপ্যান থেকে নামিয়ে নিন।

৯- নামিয়ে নিয়ে পরিষ্কার টাওয়ালের মধ্যে একটি একটি করে রাখুন। গরম অবস্থায় একটির উপর আরেকটি রাখবেন না। ঠাণ্ডা হবার পর একটির উপরে আরেকটি রাখতে পারবেন।

১০- এবার ফ্রাই প্যানকে উলটো করে ট্যাপের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন।

এর পর ৭ নং নির্দেশের মত করতে থাকুন।

এই গুলো ঘরে রেখে তিন দিন পর্যন্ত খাওয়া যাবে। সকাল বিকালের নাস্তায় চায়ের সাথে খেতে পারেন। বাগরির তাওয়া থেকে নামিয়ে গরম থাকতে থাকতে বাটার দিয়ে গ্লেজিং করলে বাগরির সুন্দর দেখাবে খেতেও ভালো লাগবে। গরম থাকা অবস্থায় বাটার (মাখন) লাগিয়ে বা বাটার মধু লাগিয়ে খেতে পারেন। ঠাণ্ডা হলে শুধু মধু বা জালিগুড় মিশিয়ে খেতে পারবেন। আবার রান্না করা গোস্তের তরকারী দিয়েও খেতে পারবেন। আবার জ্যাম জেলি বা কন্ডেন্সমিল্ক দিয়ে বা কাচমরিচ/পুদিনা পাতার চাটনি দিয়েও খেতে পারবেন।

 

 

‘পুরুষের একাধিক বিয়ে’ -শেষ পর্ব

ডা. ফাতিমা খান


ইসলামে একাধিক বিয়ে কখন বৈধ হবে :

ওহুদের যুদ্ধের পর বহু সংখ্যক মুসলমান যখন শহীদ হলেন তখন যারা বেঁচে ছিলেন তাদের উপর ইয়াতীম ও বিধবাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তখনই একাধিক বিয়ের বৈধতা ঘোষণা করে কুরআন মজীদে আয়াত নাযিল হয়।

وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّتَعُولُوا

অর্থাৎ,” তোমরা যদি ইয়াতীমদের প্রতি অবিচার করতে আশঙ্কা কর, তবে যেসব স্ত্রীলোক তোমাদের পছন্দ তাদের মধ্য থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে কর।কিন্তু তোমাদের মনে যদি আশঙ্কা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে একজন স্ত্রীই গ্রহণ কর।” (সূরা-নিসা, আয়াত-৩)

এ আয়াতটি থেকে নিম্নোক্ত সত্য গুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায়ঃ

১।একাধিক বিয়ে অবশ্য পালনীয় কোন কর্তব্য নয়। এ ব্যাপারে পুরুষদেরকে উৎসাহিতও করা হয়নি। শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
২।যে পরিস্থিতিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে শুধুমাত্র জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, বরং বিধবা ও ইয়াতীমদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর জন্য একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
৩।যে সময় আরব দেশে এবং এর আশে-পাশের দেশগুলোতে দশজন কিংবা তারও অধিক সংখ্যক স্ত্রী গ্রহণের প্রচলন ছিল, সে সময় এই আইন অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত আইন হিসেবে বিবেচ্য।
৪।এই বহুবিবাহ আইনে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে ন্যায় সংগত আচরণ করা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্ত্রীর বাসস্থান, খাবার, পোশাক-পরিচ্ছেদ, সদয় ব্যবহার ইত্যাদির দায়িত্ব পূর্ণভাবে স্বামীর উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। যদি কেউ এ ব্যপারে অপারগ হয় তাহলে কুরআন মজিদে তার ব্যাপারে বলা হয়েছে ”তাহলে তোমরা একজনকেই বিয়ে কর”।

একই সূরায় অন্য একটি আয়াতে একাধিক বিয়েকে নিরুৎসাহিতও করা হয়েছে।

وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ ۚ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا

অর্থাৎ ”স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা তোমাদের সাধ্যের অতীত। তোমরা অন্তর দিয়ে চাইলেও তা করতে সমর্থ হবে না। অতএব, একজন স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অপরজনের প্রতি একেবারে ঝুঁকে পড়বে না। (সূরা-নিসা, আয়াত ১২৯)

কুরআন একমাত্র কিতাব যেখানে ‘একজনকেই বিয়ে কর ‘ একথাটি বলা হয়েছে। অন্যান্য কোন ধর্ম গ্রন্থে এরকম কোন আদেশ দেয়া হয়নি। ইসলামে সময় ও পরিস্থিতিভেদে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে বটে কিন্তু তাও চারটির বেশী কখনই নয়। সুতরাং পুরুষেরা যত ইচ্ছা ততজন স্ত্রী গ্রহণ করবে এবং স্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে সে বেশী মর্যাদা দিবে, কাউকে কম, এমনটি হতে পারবে না। ইসলামী আইনের দাবী হল, কোন পুরুষ তার স্ত্রী কিংবা স্ত্রীদের দায়িত্ব যথাযথভাবে ও সমভাবে পালন করতে ব্যর্থ হলে কিংবা স্বামী তার উপর অন্যায় অত্যাচার করলে স্ত্রী আদালতে গিয়ে বিয়ে- বিচ্ছেদের দাবী করতে পারবে।

একাধিক বিয়ের ব্যাপারে এরকম কঠিন কিছু নির্দেশাবলী থাকার পরও প্রয়োজনের তাগিদে যদি এর অনুমতি না দেয়া হত ও এ ব্যাপারে বেশ কিছু বাধ্য বাধকতা জারি করা হত তাহলে সমস্যাগুলোর সমাধান না হয়ে বেশ কিছু সামাজিক ও পারিবারিক বিশৃংখলা ও অশান্তি দেখা দিত। মহান আল্লাহ তায়ালা এ সার্বিক অবস্থা কে সামনে রেখেই মানুষের জন্য যথাযথ বিধান দিয়ে দিয়েছেন।

একাধিক বিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হতে পারে :

ক) ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে 

১. কোন পুরুষের স্ত্রী যদি বন্ধ্যা হয় এবং সে তার সন্তান বা উত্তরাধিকারীর জন্য উদগ্রীব হয়, তবে আরেকটি বিয়ে না করলে তাকে নিম্নের ২টি পন্থার যে কোন একটি কে গ্রহণ করতে হবে-

– আজীবন তাকে পিতৃত্বের সুখ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।

– তার বন্ধ্যা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এ ২টির কোনটিকেই সঠিক সমাধান হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। এরকম পরিস্থিতিতে আরেকটি বিয়েই সমাধান হতে পারে… এক্ষেত্রে ১ম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখেই পিতৃত্বের সুখ পাওয়া সম্ভব হবে।

অনুরূপভাবে, কোন পুরুষ যদি বন্ধ্যা হয় আর তার স্ত্রী সন্তানের জন্য উদগ্রীব হয় তাহলে সে চাইলে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ২য় স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। ( মেয়েদের জন্য একাধিক স্বামী গ্রহণ বৈধ নয় কেন, সে আলোচনায় আসছি কিছুক্ষণ পর )

২. কোন পুরুষের স্ত্রী যদি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকে তাহলেও তাকে নিম্নোক্ত ৩টি পন্থার যে কোন একটি অবলম্বন করতে হবে-

– আজীবন তাকে জৈবিক চাহিদাকে সংবরণ করতে হবে।

– অসুস্থ স্ত্রীর সাথে আপোষ করে গোপনে তাকে কোন যৌনসঙ্গী বেছে নিতে হবে।

– অসুস্থ স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে হবে।

প্রথম সমাধানটি মানুষের মানবিক প্রবৃত্তির পরিপন্থি। ইসলাম মানুষকে তার জৈবিক চাহিদা পুরণের জন্য বৈধ পন্থা অবলম্বনের আদেশ দিয়েছে। দ্বিতীয় সমাধানটি সম্পূর্ণভাবে ইসলামী আইন বিরোধী। তৃতীয় সমাধানটি অত্যন্ত অমানবিক ! বিশেষতঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন খুব ভালো সম্পর্ক থাকে।

সুতরাং এ আলোচনা থেকে বুঝা যায়, এসব অবস্থায় আরেকটি বিয়েই এই সমস্যাগুলোর একমাত্র বৈধ সমাধান হতে পারে। এটি একটি ঐচ্ছিক সমাধানও বটে। এখানে অন্য কারো জোর-জবরদস্তিও চলবে না। (নিজের মা -বাবার মন রক্ষা করতে গিয়ে বা গোত্র কিংবা সমাজের চাপে পড়ে নয়।)

খ) সামাজিক ক্ষেত্রে 

১.নৃতত্ববিদদের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, প্রাচীন বহু গোত্র ও সমাজ তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে করত। সে সময় কিছু দরিদ্র এলাকায় শিশু মৃত্যুর হার ছিল বেশী, আবার কেউ কেউ সন্তানদেরকে তাদের উপার্জনের উৎস মনে করত। এসব কারনে বেশী সন্তানের আশায় তারা একাধিক বিয়ে করত। প্রাচীন আফ্রিকার খ্রীষ্টান মিশনারী সমাজ বহু আগেই একাধিক বিয়েকে সমর্থন করেছে এবং ঐ সমাজের মেয়েরা তাদের স্বামীদের একাধিক বিয়ে শুধু মেনেই নিত না বরং তা সমর্থন করত।

২. কোন দেশ বা সমাজ়ে যদি পুরুষের তুলনায় মহিলারা সংখ্যায় অধিক হয় ( কাশ্মীর, আফগানিস্তান ও ইরাকে বিবাহোপযোগী মেয়েরা পাত্র সঙ্গকটে ভুগছে) সেখানেও অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের একাধিক বিয়ে করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আমরা যদি অতীতের যুদ্ধগুলোর কথা ভাবি তাহলে দেখা যায় ধ্বংসাত্মক এ যুদ্ধগুলোতে পুরুষেরাই অধিকাংশ মৃত্যুবরণ করেছিল। এর ফলে শুধু যে বিয়ের জন্য পাত্রের অভাব হয়েছিল তা নয়, বরং যারা বিধবা হয়েছিল এবং একটি সম্মানজনক জীবন যাপনে আগ্রহী ছিল, তাদের জীবনও কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। এই সব দিক বিবেচনা করে ঐ পরিস্থিতিতে ঐ সমাজে পুরুষের একাধিক বিয়েই ছিল উত্তম সমাধান।

একজন বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত ব্যক্তি উভয়ই মানুষ। তাদের স্বভাবজাত চাহিদাগুলো যদি বৈধ উপায়ে পূর্ণ করা না হয় তবে বিকৃত ও অসাধু উপায়ে পূর্ণ করার জন্য সে প্রলুব্ধ হয়।এক্ষেত্রে নৈতিকতার দিক থেকে মেয়েরাই সবচেয়ে বেশী অপব্যবহৃত হয়। তাদের জীবনের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা, আবেগ কোন কিছুরই কোন মূল্য থাকেনা। আর যদি তারা অবিবাহিত অবস্থায় গর্ভবতী হয়ে পড়ে তাহলে পিতৃ-পরিচয়হীন এই সন্তানের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব মায়ের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় (কিছু অমুসলিম দেশে এমন নিয়ম চালু আছে)। আবার একাকী এসব দায়িত্ব্ পালন করতে গেলেও সমাজে মা ও সন্তান উভয়েরই ভোগান্তির অন্ত থাকে না। সমাজ তাদেরকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করে না , আর পাঁচটি মানুষের মত পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করাও সম্ভবপর হয় না।

মেয়েদের জন্য একই সাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ বৈধ নয় কেন ’

আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষকে দৈহিক ও মানসিকভাবে পৃথক ধাচে সৃষ্টি করছেন। পুরুষদের চরিত্রে বহুগামীতার ইচ্ছা লক্ষ্য করা যায়। তারপরও ধরা যাক, কোন মেয়ে একাধিক স্বামী গ্রহণ করছে। সম্ভাব্য সমস্যা গুলো আমরা একটু ভেবে দেখি।

১) তার যে সন্তানগুলো জন্ম নেবে তাদের কার পিতা কে হবে? কে, কোন সন্তানের পরিচয় বহন করবে?
২) একাধিক স্বামীর এই একমাত্র স্ত্রীর দায়ভার কার উপর ন্যস্ত হবে? সমাজে তার পরিচয় কার নামে হবে?
৩) ইসলাম ধর্মে পরিবারের কর্তা হলেন স্বামী। এই multi-husband এর পরিবারে কর্তা হবেন কে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে আমরা এই সহজ সমাধানটি পেয়ে যাই যে মেয়েদের জন্য একই সাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ কখনও যুক্তি সঙ্গত হতে পারে না। তাই ইসলাম এর বৈধতা ঘোষণা করে না।

ইসলামের সকল বিধান, এর নমনীয়তা, কঠোরতা, দূরদর্শীতা ও বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত গুলোর কৃতিত্ব কোন বিশেষ গোষ্ঠী, ব্যক্তি এমন কি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর ও নয়। এর গোপন কৃতিত্বের দাবীদার একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি তার সৃষ্ট প্রতিটি জীবের চাহিদা ও সমস্যাবলী সম্পর্কে অবহিত আছেন।

সহায়ক বই ও লিংক:
1) Quranul Majid
2) Hadith
3) Women Under the shade of Islam – Dr. Jamal Badawi
4) ইসলামী সমাজে নারীর মর্যাদা- ডঃ মুস্তাফা আস- সিবায়ী
5) Lectures of Dr. Zakir Naik
6) মরিয়ম জামিলার লেখা বইসমূহ।

ডা. ফাতিমা খান
লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

পর্ব -১

 

‘পুরুষের একাধিক বিয়ে’ পর্ব-১

ডা. ফাতিমা খান


ইসলাম ধর্মে একাধিক বিয়ের অনুমোদনকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মাঝে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারনা বিরাজ করছে। বিশেষত: আরব সমাজে এই অনুমোদনের অপচর্চা লক্ষ্য করা যায়। কোন কোন ইসলাম বিদ্বেষী ধর্মাবলম্বীরা ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমোদনের কিছু ভুল ব্যাখ্যা মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। যার ফলে সীমিত জ্ঞানের অধিকারী সাধারণ মুসলিমরাও কখনও কখনও বিভ্রান্ত হয়ে যায়।

ইহুদী ও খ্রীষ্টান ধর্মেও বহুবিবাহের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। কিন্তু ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের অনুকরণে নয় বরং সম্পূর্ণ স্বকীয়ভাবে ইসলাম একাধিক বিয়ে সম্পর্কে এমন কতগুলো বিধি-বিধান প্রদান করে ও মানুষকে আত্ন-সংযমের শিক্ষা দেয় যা তাদেরকে একাধিক বিয়েতে অনুৎসাহিত করে। এ আইনের উপর ইসলামের পুরোপুরি কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করার কারন হল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা যায় একাধিক বিয়ের মাধ্যমে।

সময় ও পরিস্থিতি ভেদে বিয়ের এই নিয়ন্ত্রিত আইন অনেকগুলো অনৈসলামিক কাজ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। তাই ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমোদন দেয়ার সাথে সাথে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও প্রদান করেছে, একে মানবতাবাদী পন্থা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সব স্ত্রীদের সমান অধিকারের আদেশ দিয়েছে, আবার প্রয়োজন ছাড়া একের অধিক বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে।

বহুবিবাহ নয়, বরং একটি বিয়েই ইসলামের সাধারণ রীতি। কিন্তু নারী ও পুরুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানাবিধ সমস্যা ও সংস্কৃতির কথা বিবেচনা করে সীমাবদ্ধ আইনের মধ্যে থেকে একাধিক বিয়ের অনুমোদন ইসলামের অত্যন্ত বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। একটি উদাহরণ দিয়ে যদি বলতে চাই, তাহলে বলতে হয় যে একটি সমুদ্রে একটি ডুবন্ত জাহাজের যাত্রীদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যেমন ক্যাপ্টেনকে জাহাজের মালপত্র গুলো সমুদ্রে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়…ঠিক তেমন বড় গুনাহ ও সামাজিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য দুটো খারাপের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম খারাপটিকে অনুমোদন দিয়েছেন।

চলবে…

ডা. ফাতিমা খান
লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

শেষ পর্ব

 

ভুল করা কন্যার লাগি মন আনচান করে

ফাতিমা মারিয়াম


সামিনার বাবা দেশের বাইরে থাকেন। দুই বা তিন বছর পরপর দেশে আসেন। ফলে ওর আম্মাই সংসারের সবকিছু দেখাশুনা করেন। সামিনার আরও তিনটি ভাইবোন আছে। সবাই পিঠাপিঠি। ওরা সব ভাইবোনই বেশ সুন্দর। তবে সামিনা সবার চাইতে বেশিই সুন্দর……… বেশ রূপবতী।

সামিনা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন তাকে এবং তার ছোট ভাইবোনদেরকে পড়ানোর জন্য উনার আম্মা একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন। একসময় উনি উনার পছন্দমত একজনকে পেয়েও গেলেন।

ছেলেটির নাম সবুজ। জগন্নাথ কলেজে অনার্স পড়ে। ওর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভাল না। ফলে ঢাকায় থাকা, খাওয়া এবং পড়াশুনার খরচ তাকেই চালাতে হয়। তাই সে কয়েকটি টিউশনি করে।

সামিনা এবং তার ভাইবোনদেরকে সবুজ পড়ানো শুরু করল। সবুজ বেশ ভাল পড়ায়। সামিনাদের সব ভাইবোনকে সে বেশ যত্ন করেই পড়াত। ফলে সবাই বেশ খুশি।

দিন যেতে থাকে…… সবুজ ও সামিনা উভয়ে উভয়ের প্রতি এক ধরণের আকর্ষণ অনুভব করে। আকর্ষণ থেকে দুর্বলতা, আর দুর্বলতা থেকে প্রেম। মা ও ভাইবোনদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সামিনা সবুজের সাথে প্রায় দুই বছর প্রেম চালিয়ে যায়।

ইতিমধ্যে সামিনা এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।

এক পর্যায়ে সামিনা ও সবুজ সামিনার মায়ের কাছে ধরা পড়ে যায়। সামিনার মা সবুজকে উনার বাসায় আসতে নিষেধ করে দেন।

সামিনার জন্য এখন আর বাসায় শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। তাই ছোটদের জন্য নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেন। সবুজ সামিনাদের বাসায় আর আসেনা। কিন্তু ওদের যোগাযোগ বন্ধ হয় না। বান্ধবীদের মাধ্যমে সামিনা সবুজের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যায়।

ইতিমধ্যে সবুজ অনার্স কমপ্লিট করেছে। এবার সে তার পরিবারের হাল ধরার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমায়।সামিনার সাথে তার যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। সামিনার বান্ধবীদের মাধ্যমে এই যোগাযোগ চলতে থাকে। এটা যেই সময়ের কথা তখন বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আসেনি। বাসার ল্যান্ডফোন সামিনার জন্য নিষিদ্ধ ছিল।

তাই সে চিঠির মাধ্যমেই সব সময় সবুজের সাথে যোগাযোগ রাখত। আর এই চিঠিগুলো আসত বান্ধবীদের ঠিকানায়। মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে তার প্রেম চালিয়ে যায়।

এর মধ্যে সামিনার এইচএসসি পরীক্ষা কাছাকাছি এসে যায়। সামিনার মা কোনভাবেই সবুজের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হননি। কারণ এই ছেলের পরিবারের অবস্থা ভালো না। সবুজকেই সব দেখতে হবে। কবে সে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে আর কবে তিনি মেয়েকে বিয়ে দেবেন! এইসব সাতপাঁচ ভেবে মেয়ের তীব্র অমত স্বত্বেও টেস্ট পরীক্ষার কিছুদিন আগে ওর মা ওকে এক ব্যবসায়ী পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেন। পাত্রের পরিবার বেশ ধনি। উভয় পক্ষই মহা ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সামিনার স্বামীর নাম কামাল।

যথা সময়ে সবুজের কানে বিয়ের খবরটা যায়। তখন সে এক ভয়ানক পরিকল্পনা করে। তার এখনো দেশে আসতে দুই/তিন বছর বাকি। সে সামিনাকে জানায়- তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কর। আমি এসেই তোমাকে বিয়ে করব। ততদিন তুমি কামাল ও তার পরিবারের সাথে বসবাস করে যাও। কাউকে কিছু বুঝতে দিও না।

সামিনা মনে মনে স্বপ্ন দেখে একদিন সে আর সবুজ মিলে একটি ছোট সংসারে বাস করবে। এই ভাবনায় তার দিন কাটে…..।

এমন সময় সে অনুভব করে যে সে মা হতে চলেছে। শারীরিক অসুস্থতার ফলে সে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নি। সুতরাং তার শিক্ষাজীবন ওখানেই শেষ হয়ে যায়।

দুই পরিবারের সবাই তার এই নতুন খবরে বেশ খুশি। কিন্তু সামিনা কোনভাবেই সবুজের কথা ভুলতে পারছেনা। সে শুধু সবুজের আসার অপেক্ষায় দিন গোনে।

যথা সময়ে তার একটি পুত্রসন্তান হয়। এমন কি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েও সে সবুজকে ভুলতে পারেনা।

ছেলে বড় হতে থাকে। সে মনে মনে ফন্দি করতে থাকে সবুজ দেশে এলে সে এই সংসার ছেড়ে সবুজের কাছে চলে যাবে। তবে তার মনে একান্ত ইচ্ছা সে তার ছেলেকে এদের পরিবারে রেখে যাবে না। তাকে সে সাথে করেই নিয়ে যাবে।

এদিকে সবুজের দেশে আসার দিনও প্রায় এসে গেল। এখন আর সবুজের সাথে তার যোগাযোগ করতে কোন অসুবিধা হয়না। সামিনা যখন তার মায়ের বাসায় বেড়াতে আসে তখন সে সুযোগ বুঝে সবুজকে ফোন করে। আর ওর মা বা অন্য কেউ ওকে এখন আর ফোন ব্যবহার করতে বাধা দেয়না। কারণ সবাই ভাবে বাচ্চা হয়ে গেছে, এখন কি আর ও কোন অঘটন ঘটাবে? কিন্তু ও যে নিয়মিত গোপনে সবুজের সাথে এই কয় বছর যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারেনি।

সবুজ দেশে আসে। এসেই সে সামিনার সাথে যোগাযোগ করে। সবুজ সামিনাকে তার সাথে দেখা করতে বলে। সুযোগ বুঝে একদিন সামিনা সবুজের সাথে দেখা করে। তারা দুজনে প্ল্যান করে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। সবুজের প্ল্যান অনুযায়ী সামিনা বাবার বাসায় বেড়াতে আসে।

এর কয়েকদিন পরের ঘটনা…… সে তার বাচ্চাকে মায়ের বাসায় রেখে সবুজের কাছে চলে যায়। কিভাবে যেন সামিনার শ্বশুরবাড়ির সবাই এই দুঃসংবাদ জেনে যায়। তারা এসে তাদের বাচ্চাটিকে সামিনার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে চলে গেল।

সব কথাই সামিনা জানতে পারে। কিন্তু বাচ্চার জন্য তার আর কিছুই করার থাকে না।

কয়েকদিন কেটে গেছে। কিন্তু সামিনার কাছে সবুজের আচরণ কেমন জানি মনে হয়! সামিনা সবুজকে বলে-চল আমরা বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু সবুজ টালবাহানা করে সময় কাটাতে থাকে।

কয়েকদিন পরে সবুজ সামিনাকে বলে যে -‘আমি তোমাকে মোটেও বিশ্বাস করিনা। একবার তুমি আমার সাথে প্রতারণা করে কামালকে বিয়ে করেছ। আবার এখন কামালের সাথে প্রতারণা করে আমার কাছে চলে এসেছ। তোমার একটি সন্তান থাকা সত্ত্বেও তুমি সংসার ত্যাগ করেছ। আবার হয়ত তুমি নতুন কাউকে পেলে আমাকে ছেড়েও চলে যাবে। এ ছাড়া আমার মনে তোমার প্রতি বেশ অনেকটা ক্ষোভ ছিল। তুমি আমার ভালবাসাকে অপমান করে কামালকে বিয়ে করেছ শুনেই আমি মনে মনে পরিকল্পনা করেছিলাম যে আমি তোমাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দেব। সেই জন্যই আমি তোমার সাথে এই আচরণ করেছি। আমি এখন বাড়ি যাব। ওখানে আমার পরিবারের পছন্দ করা পাত্রীকে বিয়ে করব। তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে চলে যাও। আমার সাথে আর কোনোদিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। এখানেই তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।’

সবুজের কাছে চরমভাবে অপমানিত হয়ে সামিনা বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসে।

দিন যায়…..।

সামিনা এবং তার বাবা-মা মিটমাটের জন্য কামাল ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। কামাল ও তার পরিবার জানিয়ে দেয় এই বউকে তারা কোনদিন তাদের বাড়িতে স্থান দেবে না। বাচ্চাটিকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য সামিনা অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু কামাল ও তার পরিবার তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। তারা বাচ্চাকেও ফেরত দেয় নি।

আরও কিছু দিন কেটে যায়।

এবার কিভাবে যেন সামিনার সাথে পুরনো ঢাকার এক ধনী ব্যবসায়ীর সাথে পরিচয় হয়। এই ভদ্রলোকের স্ত্রী আছে, ছেলেমেয়ে আছে। এক পর্যায়ে সামিনাকে সেই ভদ্রলোক বিয়ে করে। তবে তার নতুন স্বামী তাকে এই শর্তে বিয়ে করেছে যে,কোনদিনও সামিনা বা তার পরিবার এই বিয়ের কথা উনার পরিবারের নিকট প্রকাশ করতে পারবে না। যেদিন প্রকাশ করবে সেদিন থেকে তিনি আর সামিনার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন না।

সামিনা এই শর্ত মেনে নিয়ে জীবন যাপন করতে থাকে।

তার এই স্বামী তাকে তার মায়ের বাসার কাছে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছে। এই এলাকাতেই ওকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। টাকা-পয়সা, শাড়ি-গয়না কোন কিছুরই অভাব নেই।

একে একে সামিনার দুইটি বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা দুইটাও এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। বাচ্চাগুলো সামাজিকভাবে একটু কোণঠাসা হয়েই দিন কাটায়।

নিজের জীবনের কিছু বোকামির মাশুল আজ সামিনা এভাবেই দিয়ে যাচ্ছে………।

 

অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ আর নেই

নারী সংবাদ


ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে তিনি ইনতিকাল করেন।
গতকাল সকালে তাজিনের হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন চিকিৎসকেরা। তিনি সেখানে ডা: নূর হোসেনের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বেলা ৪টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাজিনের অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান তার সহকর্মীরা। অভিনয় শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম, রওনক হাসান, জাকিয়া বারী মম, হুমায়রা হিমু ও আরো অনেকে তার অসুস্থতার খবরে ছুটে যান হাসপাতালে। দুপুরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিনয়শিল্পী সঙ্ঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান লিখেছেন, ‘অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সবাই তার জন্য দোয়া করুন।’ রওনক হাসান পরবর্তীতে বলেন, আমরা খবর পেয়েই ছুটে এসেছি। এখন হাসপাতালেই আছি। তার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না।
আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘আমরা ৩টার দিকে খবরটি পেয়েছি। যখন তাজিনের হার্ট অ্যাটাক হয় তখন বাসায় কেবলমাত্র একজন মেকাপ আর্টিস্ট ছিলেন। উনি তাজিনের সাথেই থাকতেন। তিনিই তাজিনকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আরণ্যক নাট্যদলের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে টেলিভিশন নাটকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিটিভির সোনালি দিনগুলোতে তিনি ছিলেন প্রথমসারির তারকাদের একজন। জাহিদ হাসান, আজিজুল হাকিম, তৌকীর আহমেদ, টনি ডায়েসদের সাথে জুটি বেঁধে নিয়মিতই তিনি হাজির হতেন টিভি দর্শকদের সামনে। অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিংও করেছেন বেশ কিছু। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

বিয়ে ও পরিবার – ৩

কানিজ ফাতিমা


বিয়ে দু’জন মানুষের মধ্যে জীবনকে ভাগাভাগি করে নেয়ার চুক্তি। জীবনে এক সাথে চলার পথে বহু বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাস্তবতার অন্যতম বাস্তবতা হল Conflict বা দ্বন্দ, সংঘাত, বিরোধ ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বে এ ব্যাপারটি নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করা হয় না। বিয়ের পূর্বে সম্পর্কের মধুর (Romantic) দিকটি নিয়েই বেশি জল্পনা-কল্পনা হয়। ফলে বিয়ের পরে যখন এই দ্বন্দ বা Conflict দেখা দেয় তখন অনেকেই এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অনেকে হতাশা বোধ করে, অনেকে নানা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। এজন্য বিরোধ ব্যবস্থাপনা বা Conflict management সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরী। Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার প্রথম কথা হল সমাজে, সংগঠনে বা পরিবারে বিরোধ থাকা একটি বাস্তবতা। কেউ যদি মনে করে দু’জন মানুষ একত্রে বসবাস করবে আর তাদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকবে না তবে তা একমাত্র রূপকথাতেই সম্ভব। বাস্তবতা হল দু’জন মানুষ একত্রে থাকলে বিরোধ বাঞ্ছনীয় তাতে দু’জনের সম্পর্ক যাই হোক না কেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-পুত্র সবার মধ্যেই বিরোধ থাকবে।
তবে প্রশ্ন হল সেই বিরোধের মাত্রা কতটুকু? যেমন ধরা যাক বাবা জমি কিনতে চাচ্ছেন আর পুত্র ব্যবসার টাকা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। মা মেয়ের জন্য সালোয়ার কামিজ কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু মেয়ে প্রসাধন সামগ্রী চাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিরোধ না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিরোধ, মতের পার্থক্য, চিন্তার ভিন্নতা এ পৃথিবীর অপরিহার্য একটি বৈশিষ্ট্য। Conflict সম্পর্কে দ্বিতীয় কথা হল সব Conflict বা বিরোধই খারাপ নয়। Conflict বা বিরোধ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে বিরূপ চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন Conflict বা বিরোধের ফলে অনেক ভাল জিনিসের তৈরী হয়। যেমন Conflict সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। যেমন ধরুন বাবা বললেন আমরা অমুক এলাকায় বাসা ভাড়া নিবো, মা বললেন না, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। আমরা অমুক এলাকায় যাব। ছেলে বললো না, এখান থেকে আমার কলেজ অনেক দূরে, আমাদের কলেজের কাছাকাছি এলাকায় থাকা উচিত। এভাবে ভিন্ন মতামতের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব তথ্য বের হয়ে আসবে এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। অপর পক্ষে অতিমাত্রায় বিরোধ, হিংসা ও সংঘর্ষ জীবনে অশান্তির কারণ। কাজেই আমরা বলতে পারি সহনশীল মাত্রার বিরোধ পরিবারের জন্য উপকারী। একজন স্বামী বা স্ত্রীকে এটি মেনে নিতে হবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ ঘটবেই। তবে তাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করাই হচ্ছে Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনা। দ্বন্দ বা বিরোধ পুরোপুরি নিরসন বা নির্মূলকরণ অসম্ভব বা অবাস্তব। মূলতঃ দ্বন্দ বা বিরোধ ব্যবস্থাপনাই সঠিক পন্থা। তাই স্বামী ও স্ত্রীকে Conflict management বা দ্বন্দ ও বিরোধ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। স্কলারগণ Conflict management এর নিম্নরূপ মডেল প্রদান করেছেন-

১. Forcing- বিরোধের সময়ে আপনি অন্যপক্ষের মতামত বা স্বার্থকে আমলে না এনে যদি শুধুমাত্র নিজের অবস্থানে অটল থাকেন, নিজের স্বার্থ ও মতামতকেই প্রাধান্য দেন তবে একে বলা হয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ নিরসন করা। আপনি যদি অন্য পক্ষের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হন তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইবেন। এতে অন্যপক্ষ মন থেকে নয় বরং বাধ্য হয়ে আপনার কথা মেনে নেবে। এ পদ্ধতি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জন্য বিরোধ নিরসনের সঠিক পন্থা নয়। হুমকি, ধমকীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকে স্থাপন করার চেষ্টা নির্যাতনের আওতায় পড়ে।

২. Accommodating বা আত্মসমর্পন করা- এটি Forcing এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনি যদি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং অপর পক্ষের মতামত পুরোপুরি মেনে নেন তবে তাকে Accommodating পদ্ধতি বলে।

দুই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ এটা করে থাকে।
ক. আপনি যদি দুর্বল হন এবং আপনার প্রতিপক্ষ যদি শক্তিশালী হয় তবে আপনি বাধ্য হবেন এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে।

খ. আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার অবস্থান ভুল এবং আপনার প্রতিপক্ষ সঠিক তখন আপনি স্বেচ্ছায় নিজ অবস্থান থেকে সরে আসবেন। স্বামী বা স্ত্রী যদি নিরপেক্ষ চিন্তায় নিজের ভুল বুঝতে পারে সেক্ষেত্রে ঐ ভুলটি আঁকড়ে ধরে না থেকে এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিরোধ নিরসন করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ।

চলবে…

পর্ব-২

 

বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ মা, চিকিৎসক ছেলে লন্ডনে!

নারী সংবাদ


রাফসান আরা (৬৩)। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরশনের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা। ২৬ বছরের চাকরি জীবন শেষে ২০০৭ সালে অবসরে যান। জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাতে দুই বছর ধরে আছেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের প্রবীণ নিবাসে।

রাফসান আরার বড় ছেলে ফাহাদ হোসেন (৩৯) লন্ডনের একটি হাসপাতালে অর্থপেডিকস অ্যান্ড সার্জারি বিভাগের প্রধান। দুই মাস আগে লন্ডন থেকে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন আরো বড় ডিগ্রি নিতে। ২০১০ সালে স্ট্রোক করেন রাফসান আরা। ডায়াবেটিকস ও উচ্চরক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি।

নীলফামারী জেলার ডিমলার মেয়ে রাফসান আরার স্বামী এয়ারলাইন্স কার্গো সেকশনে চাকরি করতেন। মেয়ে নাজিয়া হোসেন (৩৭) লন্ডনে অর্থনীতিতে উচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। এখন তিনি সোশ্যাল ওয়েলফারের ওপর একটি এনজিওতে চাকরি করেন সেখানেই।

অবসরের পর কিছুদিন সন্তানদের সঙ্গে লন্ডনে ছিলেন রাফসান আরা। তবে সেখানে তার থাকা হয়নি বেশিদিন। এখন প্রবীণ নিবাসে একাই দিন কাটান নীরবে। বিগত দিনের স্মৃতি ভুলে থাকার চেষ্টা করেন সব হারানো রাফসানা।

সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য ২৬ বছর চাকরি করে গেছেন। নিজে টাকা জমাননি। পড়ালেখা শেষে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় পাঠিয়েছেন লন্ডনে। সেখানে উচ্চশিক্ষা শেষে বড় ছেলে ১১ বছর ধরে ডাক্তারি করছেন। মেয়েও লন্ডনে ৭ বছর চাকরি করছেন। স্বামীকে নিয়ে দুই বছর আগে লন্ডনে গিয়েছিলেন রাফসান আরা। সেখান থেকে বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমে।

নিজের বেদনা ঢেকে রাফসান আরা বলেন, আমি কেমন আছি সেটা দেখার বিষয় না, আমি কেমন আছি এটাও বড় ব্যাপার না। আমি সব সময় দোয়া করবো আমার সন্তানেরা যেন দুধে-ভাতে থাকে। আল্লাহ সব সময় তাদের ভালো রাখুক। মায়ের ভালোবাসা চিরন্তন। সন্তানরা যাই করুম মায়ের দোয়া সবসময় তাদের প্রতি থাকবে।

লন্ডনে পরিবারের কাছে থাকলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে চোখের লোনা জল ফেলতে থাকেন মা রাফসান। ফেলে আসা দিনের কথা মনে করতে চান না তিনি। সবকিছু ভুলে

জীবনের শেষ দিনগুলি প্রবীণ নিবাসে নির্বিঘ্নে কাটাতে চান রাফসান আরা। সুত্র: বাংলানিউজ২৪.

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি-২

রেসিপি


মাছের চপ

উপকরণ: ১. যেকোনো মাছ (ভেটকি, রুই বা ইলিশ) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

পরিবেশন: গরম গরম মাছের চপ হাফ বাটিতে নিয়ে তাতে লেবু ও পুটিনা পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।

চিকেন মোমো

উপকরণ : ১. ময়দা ২ কাপ,
২. তেল ২ টেবিল চামচ,
৩. মুরগির কিমা দেড় কাপ,
৪. রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৫. আদা কুচি ৩ চা-চামচ,
৬. পেঁয়াজপাতা কুচি ২টি,
৭. লবণ স্বাদমতো,
৮. সয়াসস ২ চা-চামচ,
৯. গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১০. লেবুর খোসা কুচি আধা টেবিল চামচ,
১১. মাখন ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি: ময়দার সঙ্গে আধা চা-চামচ লবণ, তেল ও পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে ময়ান দিতে হবে। কিমার সঙ্গে পেঁয়াজ, আদা-রসুন কুচি, সয়াসস, লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে মেখে রাখতে হবে। ফ্রাইপ্যানে মাখন গলিয়ে কিমার মিশ্রণ অল্প আঁচে রান্না করুন। কিমার পানি শুকিয়ে গেলে পেঁয়াজপাতার কুচি দিয়ে নেড়ে আরও ২ থেকে ৩ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার ঢাকনা খুলে কাঁচা মরিচ কুচি ও লেবুর খোসার কুচি দিয়ে নেড়ে আবার ঢেকে দিয়ে মৃদু আঁচে দুই মিনিট রাখুন। এদিকে ময়দার খামি থেকে ছোট আকৃতির রুটি বেলুন। রুটির কিনার বেশি পাতলা থাকবে। রুটির মাঝখানে ১ টেবিল চামচ করে কিমার পুর দিয়ে অর্ধেকটা মুড়ে দিয়ে ও পেঁচিয়ে এনে বাকি অর্ধেক চেপে দিন, যেন মুখ খোলা না থাকে। সব গুলো মোমো তৈরি হয়ে গেলে মাইক্রোওয়েভ কুকারে বা পানি ভর্তি বড় পাতিলের মুখে কাপড় বেধেও ভাপ দিয়ে নিতে পারেন। পাতিলের মুখে ভাপ দিতে হলে মিনিট দশেকই যথেষ্ট।

পরিবেশন: ভালোভাবে ভাপ দেয়া হলে নামিয়ে তারপর সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার মোমো।
সুত্র রেসিপি: বাংলাদেশ রেসিপি

রমজানে ইফতারির রেসিপি-১

 

বাতিঘর

রেহনুমা বিনতে আনিস


কোণাচোখে তারিককে পাশের টেবিলে আরাম করে বসতে দেখে জামিল দ্রুত গলা নামিয়ে বলে, ‘শুনুন, আপনি কিন্তু কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেননা’।

ঘটনার আকস্মিকতায় থতমত খেয়ে যায় ফারজানা। সে লোকটাকে চেনেনা, জানেনা, কোন সালাম নেই, সম্ভাষন নেই, হুট করে এই আচমকা অনুরোধ! তারিকের দিকে জামিলের চোরা চাহনি, ফিসফিস কথা বলার ভঙ্গি আর এই অদ্ভুত প্রস্তাব- সব মিলিয়ে কিম্ভুত এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ হাসি পেয়ে যায় ওর। হাসি চাপার চেষ্টা করতে করতে সে স্মিত হেসে বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম’।

এবার নিজের অভদ্র আচরন স্মরন করে জামিল নিজেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, লজ্জা লজ্জা চেহারায় টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।
– ‘আমার নাম ফারজানা’।
– ‘জ্বি, তারিক ভাই এইমাত্র বললেন। আমি জামিল’।
– ‘আপনার মত আমিও আসলে এখন বিয়ে করতে উৎসাহী নই। কিন্তু আমি যদি এই মূহূর্তে উঠে চলে যাই তাহলে বিয়ে করবনা বললে ভাইয়া কিছুতেই কনভিন্সড হবেনা। সুতরাং, আমাদের মনে হয় কিছুক্ষণ অন্তত কথা বলার অভিনয় করা উচিত’।
জামিল বুঝতে পারল কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু সে কি বলবে? ওর তো এটুকুই শুধু বলার ছিল!
ফারজানাই এগিয়ে এলো, ‘আচ্ছা, আপনি বিয়ে করতে না চাইলে দেখা করতে চাইলেন কেন? আপনি তো মেয়ে না যে কেউ আপনাকে জোর করে বাধ্য করতে পারবে!’

জামিল ওর দিকে তাকালে দেখতে পেত ওর চোখের তারায় কৌতুক, কিন্তু টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকায় সে ফারজানার কথায় দুষ্টুমির ভাবটা ধরতে পারলনা। খুব অপরাধী, মাটির সাথে মিশে যেতে পারলে বাঁচে এমন চেহারা করে আমতা আমতা করে বলতে লাগল, ‘আসলে আমার বাবামা ভাইবোন কেউ নেই। চাচা চাচীর কাছে মানুষ। এখন শহরে থাকি বলে তাঁদের সাথেও তেমন যোগাযোগ হয়না। একা থাকি বলে তাঁদের চিন্তার অন্ত নেই। চাচা তাঁর এক বন্ধুকে বললেন আমার জন্য মেয়ে দেখতে। আমার নিজের কোন কুলকিনারা নেই, সাধারন একটা পেটেভাতে চাকরী করি, ছোট্ট একটা দু’কামরার ঘরে ভাড়া থাকি- এই জীবনে কাউকে জড়িয়ে কষ্টে ফেলে লাভ আছে? কিন্তু চাচা চাচী কিছুতেই বুঝতে চান না। চাচার এক বন্ধু আপনার ভাইকে চেনেন। ওঁরা আমাকে এমনভাবে ধরলেন যে মেয়ে না দেখে কোন সিদ্ধান্তই তারা শুনবেন না। তাই আপনাকে কষ্ট দিতে হোল। আপনাকে এখানে আসতে বাধ্য করা হয়ে থাকলে সেজন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। প্লীজ আমাকে মাফ করে দেবেন’।

জামিলের হাবভাবে এবার ফারজানা কিছুতেই হাসি চেপে রাখতে পারলনা, খিক করে একটু হাসি দিয়েই মুখে হাত চেপে ধরল। এবার জামিল থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি কি এমন কিছু বলেছি যা আপনার অস্বাভাবিক মনে হয়েছে?’

ফারজানা হাসি সংযত করার চেষ্টা করে বলে, ‘নাহ, তবে আপনার চেহারায় কেমন যেন একটা চোর চোর মার্কা দুঃখী দুঃখী ভাব আছে, হি হি…’
-‘চোর চোর?’, কনফিউজড হয়ে যায় জামিল।
-‘জ্বি, আদিব, আমার ভাইয়ের ছেলেটা বিস্কিট চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে যেমন চেহারা বানায় আপনার চেহারাটা ঠিক তেমন লাগছে, হি হি হি…’
এবার জামিলও হেসে ফেলে।
-‘আচ্ছা, আপনি কি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন?’
অপ্রত্যাশিত প্রসঙ্গ পরিবর্তনে আবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় জামিল, শুধু উত্তর দিতে পারে, ‘জ্বি’।
-‘আপনি কি লেখাপড়া করতে পছন্দ করেন? যেমন কুর’আন হাদিস পড়া, গল্পের বই পড়া, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ইত্যাদি?’
– ‘জ্বি, নিয়মিত পড়ি’।
– ‘আপনি কি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন?’
– ‘জ্বি’, কথাবার্তা যে কোনদিকে যাচ্ছে কিছুই ঠাহর করতে পারেনা জামিল।
– ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন যে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আপনাকে সেই উদ্দেশ্যের কাছে পৌঁছে দেবেন?’
– ‘জ্বি’।
– ‘তাহলে আপনার কি মনে হয় আপনার কথায় এই বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়? নাকি আপনার মন বিশ্বাসের কথা বললেও মুখ অবিশ্বাসের সাক্ষ্য দেয়?’

বাক্যালাপ এখানে এসে ঠেকবে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি জামিল। কিন্তু এই অপরিচিত মেয়েটি তাকে এমন এক রূঢ় সত্যের সম্মুখীন করে দিয়েছে যা সে কখনো ভেবেও দেখেনি। সময় তাকে এমন এক ব্যাক্তিতে রূপান্তরিত করে দিয়েছে যে বিশ্বাসের কথা বলে অথচ নিরাশায় ভোগে, যে আত্মীয়তার জন্য হাহাকার করে অথচ আত্মীয়তার বন্ধনের মূল্যায়ন করতে পারেনা, যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার কথা বলে অথচ কারো দায়িত্ব নেয়ার জন্য নিজেকে নির্ভরযোগ্য মনে করেনা। হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন জবাব দিতে পারেনা সে।

ওদিকে তারিক উঠে দাঁড়ায়, ফারজানাও সালাম দিয়ে ভাইকে অনুসরন করে। তারিক আর ফারজানাকে বিদায় দিয়ে আবার রেস্টুরেন্টের বে-আরাম চেয়ারটাতে বসে ভাবতে থাকে জামিল, মেয়েটা তাকে কি বলে গেল?

দু’ঘন্টা পর, ফারজানার বাসায়ঃ

‘অ্যাই বলনা ছেলেটা দেখতে কেমন ছিল?’
‘সত্যি ভাবী, আমি খেয়াল করিনি। খুব বেশি খারাপ হলে হয়ত খেয়াল করতাম’।
‘তাহলে আমার যে ননদিনি এতদিন বিয়ে করতে রাজী হয়নি সে কি দেখে একঘণ্টায় বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেল?’
‘ওহ, তুমি এটা জানতে চাও? বললেই তো হত!’, চোখ টিপে হেসে ফেলে ফারজানা।
‘জ্বি ফারজু বিবি, এটাই জানতে চাই’, গালে হাত দিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করেন ভাবী।
‘শোন তাহলে- লোকটাকে দেখে মনে হোল আমি এই লোকটার জীবনে কিছু একটা অবদান রাখতে পারব, তার বিশ্বাসকে পূর্ণতা দান করতে সাহায্য করতে পারব, তার সাথী হতে পারব। অধিকাংশ পুরুষ বিয়ে করার সময় কাজের মেয়ে খোঁজে। ভাবী, আমার ঘরের কাজ আমি করব, তাতে আপত্তির কি আছে? কিন্তু সেটাই যদি বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় সেটা আমি মেনে নিতে পারিনা’।
‘তা তো ঠিক আছে ফারজু বিবি। কিন্তু তোমার ভাইয়া বলল ছেলেটাকে দেখে বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী মনে হয়নি, আমি ভাবছি তুমি তার জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে তা সে মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা’, চিন্তিত মনে হয় ভাবীকে।
‘ভাবী, লোকটাকে দেখে মনে হোল খুব সরল আর লাজুক প্রকৃতির কিন্তু বোকা না। উনি নানা কারণে জীবনের প্রতি আশাহত কিন্ত এই আশা জাগিয়ে তোলার মত বিশ্বাস ওনার মনের কোণে কোথাও অবশিষ্ট আছে’।
‘তাহলে আশা করি তুমি তার সেই ভঙ্গুর আশালতায় কোথাও দোলা দিতে পেরেছ’, ফারজানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকান ভাবী। বাপমা মরা এই মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মত করেই বড় করেছে তিনি। কোনদিন ওর বিশ্বাসে এতটুকু চির ধরতে দেননি। এই আশার উজ্জ্বল প্রদীপ, এই বাতিঘর যদি সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া কোন নাবিককে পথ দেখাতে পারে, পারে আরেকটি ঘরকে আলোকিত করতে, তবে এর চেয়ে বেশি আর কি সাফল্য আশা করতে পারেন তিনি?

তিনদিন পর, নদীর ধারেঃ

‘মেয়েটা যে তোর জন্য perfect তা কি এখন তোর মাথায় ঢুকেছে না আরো সময় লাগবে?’, রোদের জন্য ভ্রূ কুঁচকে জামিলের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে কামাল। জামিলের মুখটা ভারী উজ্জ্বল দেখাচ্ছে, ওটা কি রোদের আলো না আশার?
‘হিসেব করছি রে দোস্ত। কথায় কথায় ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবে, বাচ্চাদের মত আবদার করে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে এমন বৌয়ের ভীতি থেকেই বিয়ে করতে অনীহা বোধ করতাম। কিন্তু এই মেয়েটা প্র্যাক্টিকাল, সেন্সিবল, স্মার্ট, বুদ্ধিমতি এবং ঠিক আমার মত পরিস্থিতিতে বড় হয়েও ওর বিশ্বাসটা অত্যন্ত মজবুত। আমার জীবনের এক বিরাট সত্য সে আমাকে কি অবলীলায় বুঝিয়ে দিল মনে একটুও কষ্ট না দিয়ে! এই সাহচর্য আমার প্রয়োজন, ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস দিয়ে দুঃখগুলোকে দেখা বন্ধ করার জন্য ওর হাসির জোয়ার আমার জীবনে দরকার, সবচেয়ে বড় কথা ওর বিশ্বাসের শক্ত খুঁটিটা হতে পারে আমার জীবনের সে অবলম্বন যা আমি এতদিন খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছি’।
‘তাহলে তুই দেরি করছিস কিসের জন্য?’
‘মেয়েটা যে বলল সে বিয়ে করতে আগ্রহী না!’
‘তুই জিজ্ঞেস করেছিলি, কেন?’
‘নাহ’।
‘গাধা কোথাকার! জিজ্ঞেস করবিনা?’, ঈষৎ বিরক্ত হয় কামাল, পরক্ষণেই আবার আশাবাদী হয়ে ওঠে, ‘যাক, সে বুদ্ধিমতি মেয়ে, ঠিকই বুঝতে পারবে তোর জীবনে সে ফ্রেন্ড, গাইড অ্যান্ড ফিলোসফার হয়ে বিরাজ করতে পারবে। একজন বুদ্ধিমতি মেয়ের জন্য এটাই বড় প্রাপ্তি’।
‘কিন্তু ওর আমাকে পছন্দ হোল কি’না কিভাবে জানব?’
‘ওরে দোস্ত, ওর পরিবারের সাথে কথা বল, নাহলে জানবি কি করে?’
‘ওঁরা যদি না করে দেয়?’
‘হ্যাঁও তো বলতে পারে। তুই আগেই নিরাশ হলে মেয়েটা তোকে শেখালটা কি?’
মাথা নাড়ে জামিল, আজই কথা বলতে হবে।
‘তা মেয়েটা দেখতে কেমন রে?’
‘খেয়াল করিনি তো!’, নিজেই অবাক হয় জামিল, ‘কিন্তু খুব বেশি খারাপ না মনে হয়, তাহলে হয়ত খেয়াল করতাম’।
খুশি হয় কামাল, ‘যারা মানুষের অন্তর দেখে পছন্দ করে তারাই মেয়ে দেখে এসে বলতে পারে চেহারা খেয়াল করেনি। এই বিয়ে হলে তুই ঠকবি না দোস্ত’।
উঠে দাঁড়ায় দু’জনে, আনন্দের আতিশয্যে হঠাৎ স্লোগান ছাড়ে কামাল, ‘জামিল তুই এগিয়ে চল, আমরা আছি তোর সাথে’।
হো হো করে হেসে ফেলে দু’জনে।

ছয়মাস পরঃ

‘আজকে তোমার নতুন চাকরী, এত সুন্দর জামাকাপড় পরেছ অথচ চুলটা আঁচড়াওনি। একটু গেলাম রান্নাঘরে আর ব্যাস, তোমার ফাঁকিঝুঁকি শুরু! তোমাকে নিয়ে আমি কি করি বলত?’, ব্যাস্তসমস্ত হয়ে পাশের রুম থেকে চিরুনী হাতে দৌড়ে আসে ফারজানা।
টেবিলে ঠান্ডা হতে দিয়ে যাওয়া খাবারগুলো টিফিন ক্যারিয়ারে ভরতে ভরতে জামিল বলে, ‘আমি চুল আঁচড়ালে সকাবেলা আমার মাথায় তোমার হাতের স্পর্শ নিয়ে বেরোব কি করে বলত? তুমি সকালে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলে আমার সারাদিন মাথা ঠান্ডা থাকে, একদম যেন তিব্বত কদুর তেলের বিজ্ঞাপনের মত!’
‘হি হি হি’, ওকে হাসতে দেখে জামিলের হাসিটাও ঠোঁটের একপাশ থেকে পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ে। জামিলকে শেষপর্যন্ত হাসতে শেখাতে পেরেছে ফারজানা, ওর দুষ্টুমিগুলো এখন সে কিছু কিছু বোঝে, নিজেও দুষ্টুমি করতে শুরু করেছে দেখে বেশ উৎফুল্ল হয় সে।
‘যাবার পথে চাচা চাচীকে ফোন করে জানিয়ো নতুন চাকরিতে যাচ্ছ’।
‘ওঁরা জানেন তো’।
‘তাতে কি হয়েছে? ফোন করে জানাও, খুশি হবেন। আর বিকালে ফিরলে চাচীর জন্য শাড়ি কিনব যেন আগামী বৃহস্পতিবার নিয়ে যেতে পারি। আগামী মাসে বেতন পেলে চাচাকে পাঞ্জাবী কিনে দেব’।
‘আর তুমি কি কিনবে?’
‘বাহ, তোমার মতন এমন একটা চমৎকার গিফট থাকতে আমার আর কি লাগবে?’
মনে মনে একই কথা ভাবে জামিল, কিন্তু ওর মত সাবলীলভাবে বলতে পারেনা। বেহেস্তের টুকরোর মত বৌটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।
‘তুমি কি চাও তোমার নতুন অফিসে প্রথম দিন লেট হোক?’
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জুতো পায়ে দিতে দিতে আবার ফারজানার দিকে তাকায় জামিল।
‘যাআআআও’, বলে হাতে টিফিন ক্যারিয়ারটা হাতে গুঁজে দিয়ে দরজা খুলে ওকে প্রায় ঠেলে বের করে দেয় ফারজানা।
শেষ একবার পেছন ফিরে তাকালে ফারজানা মিষ্টি হেসে বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম’।
এই স্বর্গীয় সম্ভাষন কানে নিয়েই প্রতিদিন পৃথিবীর বন্ধুর পথে যাত্রা শুরু হয় জামিলের, সে স্মিত হেসে জবাব দেয়, ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।

এখনো রিক্সা পেতে দেরী হয়, বাসে ভিড় ঠেলে উঠতে কষ্ট হয়, অফিসে ঝামেলা হয়, দোকানে দরদাম নিয়ে মন কষাকষি হয়, দু’কামরার ঘরটাতে চাপাচাপি হয়, কোন কোনদিন ভাল তরকারীও থাকেনা। তবু কেন যেন পৃথিবীটাকে আর আগের মত জটিল মনে হয়না। দিনের শেষে ওর জীবনে আছে এমন এক সাথী যে ওর সুখদুঃখ সব সমানভাবে ভাগাভাগি করে নেয়, যে ওর কষ্টগুলোকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে, যে ওর বিশ্বাসকে এক আলোর তৈরী মিনারের মত উচ্চকিত করে তোলে। হাসি পায় এই ভেবে যে এই দুই শ্রেষ্ঠ বন্ধুর প্রথম বাক্যালাপ ছিল, ‘আপনি কিন্তু কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেননা’!

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি

নুডলস পাকোড়া

উপকরণ
১. ১ কাপ বেসন,
২. ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া,
৩. ১ কাপ সেদ্ধ নুডলস,
৪. ১ কাপ পরিমাণে সবজি (আলু, গাজর, ক্যাপসিকাম, মাশরুম বা আপনার পছন্দের যে কোনো সবজি),
৫. ৩/৪ টি কাঁচা মরিচ কুচি,
৬. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৭. ১ ইঞ্চি আদা কুচি,
৮. ২ টেবিল চামচ টমেটো সস,
৯. ২ টেবিল চামচ ধনিয়া পাতা কুচি,
১০. লবণ স্বাদমতো,
১১. পানি পরিমাণমতো,
১২. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি
১. প্রথমে পানি দিয়ে বেসন ও চালের গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে ঘন থকথকে ব্যাটারের মতো তৈরি করে নিন। ভালো করে মিশিয়ে নেবেন যেনো বেসনে দলা না থাকে।

২. এরপর একে এঁকে বাকি সব উপকরণ (তেল ছাড়া) বেসনের মিশ্রনে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে আরও খানিকটা পানি দিয়ে বড়া ভাজার মতো মিশ্রন তৈরি করে ফেলুন।

৩. এরপর চুলায় কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে নিন। অল্প একটু মিশ্রন হাতে নিজে বড়ার মতো গোল চ্যাপ্টা আকার দেয়ার চেষ্টা করুন এবং তেলে দিয়ে লালচে করে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিন।

পরিবেশন

একটি কিচেন টিস্যুতে রেখে তেল শুষে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ইফতারে।

জিলাপি

উপকরণ
১. ১ কাপ ময়দা,
২. আধা কাপ টকমিষ্টি দই,
৩. ১ চা চামচের সামান্য বেশি বেকিং পাউডার,
৪. কয়েক ফোঁটা কমলা ফুড কালার,
৫. ঘি বা ডালডা ভাজার জন্য,
৬. ২ কাপ চিনি,
৭. ১ কাপ পানি।

প্রণালি

১. প্রথমেই চিনি ও পানি একসাথে দিয়ে প্যান চুলায় বসিয়ে জ্বাল করতে থাকুন শিরা তৈরির জন্য। মাঝারি আচে জ্বাল দিয়ে মাঝারি ঘন শিরা তৈরি করে নিন। শিরা ঠিকমতো হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য ঠাণ্ডা পানিতে কয়েক ফোঁটা শিরা ফেলে দেখুন। শিরা ছড়িয়ে না পড়ে যদি গোল বলের মতো হয় তাহলে বুঝবেন শিরা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাহলে নামিয়ে রাখবেন।

২. শিরা জ্বাল করতে করতেই ময়দা ও বেকিং পাউডার একসাথে ভালো করে মিশিয়ে ফেলবেন। এবং এতে মেশাবেন দই ও ফুড কালার। ভালো করে মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঘন মসৃণ ব্যটার তৈরি করে নিন।

৩. ব্যাটার খুব ঘন হবে না বা পাতলাও হবে না। বেগুনী বা আলুর চপ ভাজার জন্য যেমন অল্প ঘন ধরণের বেসনের ব্যটার তৈরি করেন ঠিক তেমনটা।

৪. কেকের উপরে ক্রিম সাজানোর যে পাইপিং ব্যাগ পাওয়া যায় তাতে নিন এই ব্যটারগুলো। যদি না থাকে একটি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিন এই ব্যটার এবং ব্যাগের এক কিনারে একটু গোল ফুটো করে দিন।

৫. একটি তলা ভারী কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য ঘি বা ডালডা দিয়ে গরম করুন। যদি ঘি বা ডালডা ব্যবহার করতে না চান তাহলে সাধারন তেলেও চলবে। তেল অতিরিক্ত গরম করবেন না। মাঝারি ধরণের গরম করে নিন।

৬. ব্যাগ চেপে হাত ঘুরিয়ে জিলাপির প্যাঁচ তৈরি করে জিলাপি ফেলুন তেল বা ঘি তে। সোনালি বাদামী রঙের করে ভেজে নিন দুপাশ এবং তুলে হালকা গরম শিরার মধ্যে ফেলুন।

পরিবেশন

৩-৪ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন শিরাতে তারপর তুলে নিন। ব্যস, এবার পরিবেশন করুন ইফতারে। ১৫ মিনিট শিরা তৈরি এবং পাশাপাশি ব্যটার তৈরি এবং ভেজে ৩-৪ মিনিট শিরায় ডুবিয়ে পরিবেশন। দেখলেন তো ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে তৈরি করে ফেলতে পারবেন সুস্বাদু জিলাপি। সুত্র: বাংলাদেশি রেসিপি

 

শিশুদের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থান

আফরোজা হাসান


নাকীবের যখন ছয় বছর বয়স তখন একদিন ওকে গেমস খেলতে দিয়ে আমি রান্না করতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনলাম জোড়ে জোড়ে বলছে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। কিছুক্ষণ পর শুনি আবারো বলছে একই কথা। আরো দু’বার শুনে আমি রান্নাঘর থেকে ওর রুমে গিয়ে বললাম, কি হয়েছে বাবা তুমি বার বার ‘বিসমিল্লাহ’ বলছো কেন? নাকীব বলল, আম্মু তুমি না বলেছে আল্লাহর নামে কিছু শুরু করলে তাতে বরকত হয়। আমি গেমসের প্রতিটা লেবেল পার করার সময় সেজন্য বিসমিল্লাহ পড়ে নিচ্ছি। দেখো সব লেভেলে সেজন্য হাই স্কোর হচ্ছে আমার। আমি হেসে ওকে খেলতে বলে আমার কাজে ফিরে গিয়েছিলাম।

এর কিছুদিন পরের কথা। তখন নাকীবকে আমি যা কিছু চাওয়ার আল্লাহর কাছে চাইতে হবে এই বিষয়টা মাত্র বোঝাতে শুরু করেছি। একদিন ওর প্রিয় একটা খেলনা খুঁজে পাচ্ছিলো না আমাকে এসে বললে আমি বললাম আগে নিজে খুঁজে দেবো একান্তই না পেলে আম্মু সাহায্য করবো খুঁজতে। সে মুখটা বাদলা আকাশের মত করে চলে গেলো। একটু পর শুনি চিৎকার করছে ‘গ্রাসিয়াস আল্লাহ’ ‘গ্রাসিয়াস আল্লাহ’ (ধন্যবাদ আল্লাহ)। জানতে চাইলাম কি হয়েছে? বেশ একটা মুড নিয়ে বলল, তুমি তো আমাকে খেলনা খুঁজে দিলে না। আমি আল্লাহকে বলেছি, হে আল্লাহ আমার খেলনাটা খুঁজে দাও। আল্লাহ তখন আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন আমি তো বন্ধুদের দেখানোর জন্য স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম খেলনাটা। তাই খেলনাটা আমার স্কুল ব্যাগের মধ্যে।

নাকীবের স্কুলে এই মাসে প্রথম সপ্তাহে বেশ বাজে একটা ঘটনা ঘটেছে। যখন রিলিজিয়ন ক্লাস হয় তখন মুসলিম বাচ্চাদের জন্য এডুকেশনাল গেমসের একটা আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা আছে স্কুলে। নাকীবদের ক্লাসে যে ছয়জন মুসলিম বাচ্চা আছে ওরা রিলিজিয়ন ক্লাসের সময় ওদের জন্য নির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে খেলা করছিলো। ওদের প্রফ এসে কথা প্রসঙ্গে ওদেরকে বললো যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আসলে কিছুই নেই। এসব মানুষের বানানো ধারণা। এসব বিশ্বাস করা বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়। বাচ্চারা সবাই প্রফের এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করলো। নাকীব বলেছে, তুমি সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস না করতে পারো কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের আল্লাহ আছেন। এই কথা শেষ করেই নাকীব সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতে শুরু করে দিয়েছিলো প্রফের সামনেই।

ঘটনাটা নিয়ে মুসলিম অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। স্কুলের টিচার কখনোই বাচ্চাদেরকে এই কথা বলার রাইট রাখেন না যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আসলে কিছুই নেই। এই ধরণের কথা টিচারদের বলারও কথা নয় বাচ্চাদেরকে। উনি কেন বলেছেন সেটা নিয়ে আলোচনা করার জন্য গতকাল আমরা অভিভাবকরা একসাথে হয়েছিলাম। আলোচনার সময় আমাদের সাথে বাচ্চারাও ছিলো। আমার এই পোস্টি লিখতে বসার কারণ আসলে বাচ্চারাই। ‘আল্লাহ নেই’ প্রফ কেন এই কথা বলেছে সেজন্য বাচ্চারা ভয়ংকর রকম রাগান্বিত প্রফের উপর। একটা ছেলে আছে নাম নোমান। মরক্কোর অধিবাসী। নোমানের সেই ক্ষোভ ভরা কণ্ঠ, রাগে জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখ, প্রতিবাদী অঙ্গভঙ্গি থেকেই আমার এই লেখার সূত্রপাত।

আমি অবাক হয়েছি নোমানের আল্লাহর অস্তিত্বের উপর দৃঢ় বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসের প্রকাশ দেখে। আট বছর বয়সী একটা বাচ্চা, যুক্তির প্রয়োগ সে জানে না। কিন্তু প্রতিবাদী কণ্ঠে বলছিল, এটা কি কখনো সম্ভব নাকি যে আল্লাহ নেই? আল্লাহ না থাকলে আমরা এলাম কি করে? পৃথিবী সৃষ্টি হলো কি করে? প্রফ একটা বোকা তাই এমন কথা বলেছে। অভিভাবকদের মধ্যেও নোমানের আম্মুই সবচেয়ে বেশি রাগান্বিত ছিলো। তিনিই সব গার্জিয়ানদের সাথে কথা বলে সবাইকে একত্রিত করার পুরো উদ্যোগটি নিয়েছিলেন। রাগে লাল হয়ে গিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা। বলছিলেন, কোন সাহসে এই কথা প্রফ বললেন আমাদের বাচ্চাকে। আমরা স্কুলে পড়াশোনা শিখাতে পাঠিয়েছি তাদের কাজ শুধু সেটা শিখানো। আল্লাহ আছেন কি নাই সেটা আমরা শিখাবো আমাদের বাচ্চাকে। আমরা সবাই অভিযোগ করলে স্কুল কতৃপক্ষ ঐ প্রফকে জব থেকে বের করে দিতে বাধ্য। ইত্যাদি ইত্যাদি!

মা-ছেলের প্রতিবাদে গমগম করছিলো মাহফিল। একজন গার্জিয়ান বললেন, ভুল করে হয়তো বলে ফেলছে এটাকে এত বড় ইস্যু করার কোন প্রয়োজন দেখছি না। লক্ষ্য করলাম উনার বাচ্চাটাও বেশ নির্লিপ্ত এই ব্যাপারে। ওর কাছে ঘটনাটা জানতে চাওয়া হলে ঠিকমতো বলতেও পারলো না। কারণ বিষয়টা ওর মনে তেমন কোন প্রভাব রাখেনি। নাকীব বলল, প্রফ বলেছে তো কি হয়েছে? প্রফের বলাতে কি এসে যায়? আমি তো জানি যে আল্লাহ আছেন। (নাকীবের বাবা-মা দুজনই আসলে একটু ড্যাম কেয়ার স্বভাবের। মানুষের অপ্রয়োজনীয় বা অযৌক্তিক কথা যে কান দিয়ে শোনে সেই কান দিয়েই বের করে দেয় দু’জন ) দেখা গেলো পুত্রও বাবা-মার রঙে রঙিন।

আমি আরেকবার অনুভব করলাম কোন ঘটনাতে একটি শিশু কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে সেটা আসলে নির্ভর করে বাবা-মা তথা বেড়ে উঠার পরিবেশের উপর। চাইল্ড সাইকোলজিস্টরা যেমন বলেন যে, মা-বাবা হয়তো বুঝতে পারেন না কিন্তু এটা সত্যি সন্তানরা সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার মতো তাদের অবলোকন করে এবং তাদের দেখে শিখতে থাকে। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু আচরণ বাচ্চারা কপি করে নেয় এবং মা-বাবার রোল মডেল হয়ে অভিনয় করে দেখায়। তাই আমরা যদি চাই আমাদের সন্তান একজন আদর্শ মুসলিম হোক এর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে নিজেরা চর্চার মাধ্যমে তাদের সামনে আদর্শ মুসলিমের গুণাবলী তুলে ধরা।

বেড়ে উঠার পরিবেশ থেকে জেনেছিলাম ইসলামের বিধান মেনে চলাটা জীবন ধারণের অন্যান্য জিনিসের মতোই। ক্ষুধা লাগলে যেমন আমরা খাবার খাই, ঘুম পেলে ঘুমোতে যাই, ঠিক তেমনি আযান শুনলে নামাজ পড়তে যেতে হবে। কারণ জীবন ধারণের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে নামাজও একটি। এটা মোটেই বাড়তি কোন দায়িত্ব না বরং জীবন যাপনের অংশ। দেহকে যেমন আমরা পোশাক ও বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী দিয়ে সাজাই, মনেরও তেমন প্রসাধনী প্রয়োজন। আর মনের প্রসাধনী হচ্ছে কুরআন ও হাদীসের চর্চা। শরীর যেমন খাদ্যর দ্বারা সুস্থ্য থেকে, মন সুস্থ্য থাকে কুরআন তেলাওয়াত দ্বারা। ভিন্ন ভাষা ইংরেজির অর্থ না জানলে বা বুঝলে যেমন পরীক্ষার খাতায় সঠিক উত্তর লিখতে পারবো না। ঠিক তেমনি কুরআনের অর্থ না জানলে আখিরাতের পরীক্ষায় পাশ করা সুকঠিন হয়ে যাবে।

আমার মধ্যে এই চিন্তাগুলোই বদ্ধমূল এখনো পর্যন্ত। আমি যখন কাউকে দেখি নামাজ পড়ে না মেনে নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। একজন মুসলিম নামাজ পড়বে না চিন্তাই করতে পারি না আমি! অনেক অনেক কষ্ট পাই তাই পরিচিত কাউকে নামাজ ছেড়ে দিতে দেখলে। এর কারণ বাবা-মামণিকে দেখে এভাবেই চিন্তা করতে শিখেছি আমি। আসলে আমাদের সন্তানদের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থান কেমন হবে সেটা নির্ভর করে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে কিভাবে পেশ করছি তাদের সামনে তার উপর।

সুতরাং সন্তানের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থানকে নিশ্চিত করতে হলে আগে আমাদের মনের সৃষ্টিকর্তার অবস্থান কোথায় ও কেমন সেটা যাচাই করে দেখতে হবে। তাই চলুন আমরা নিজেরা সৃষ্টিকর্তাকে আমাদের মনে দৃঢ় ভাবে স্থাপন করি, তাহলে আমাদের সন্তানদের মনেও সৃষ্টিকর্তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে যাবে (ইনশাআল্লাহ)।

 

মাতৃকথন ৭

ফারিনা মাহমুদ


শুরু করি সত্য ঘটনা দিয়ে । আমার ছেলের বয়স যখন ১৬ মাস, ওকে নিয়ে গেলাম আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টারে। বাচ্চা জন্মের পর থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই সেন্টারে শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সংক্রান্ত রুটিন চেকাপ করানো যায়, প্রয়োজনে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নার্সদের সাথে বিশেষ সমস্যা নিয়ে কথা বলা যায় মা ও বাচ্চা উভয়ের ব্যাপারে। ওরা পরামর্শ দেবার পাশাপাশি অন্যান্য ক্লিনিকে রেফার করে দিতে পারে। এখানে যেকোনো সমস্যা নিয়েই যাওয়া যায়। যেমন ধরেন বাচ্চার ঘুমের রুটিন ঠিক করতে পারছি না, রাতে কান্না করে, খেতে চায় না, খুব ভয় পায়, সারাক্ষণ মা আঁকড়ে থাকে, বুকের দুধ ছাড়াতে পারছি না … যে কিছু ।
ওরা কিছু ট্রিক্স আর টিপস দেয়, সচরাচর খুব ত্যাঁদড় বাচ্চা না হলে ঐসব ট্রিক্স কাজ করে যদি ঠিকমতো ফলো করা যায় । আর এতে কাজ না হলে ফিডিং ক্লিনিক বা স্লিপ ক্লিনিক এর মতো স্পেশালাইজড জায়গায় পাঠানো হয় ।
আমার সমস্যা ছিলো বাংলাদেশী মায়েদের জাতীয় সমস্যা, বাচ্চা খায় না। আসলে ব্যাপারটা যতটা হালকাভাবে বলছি, ততটা হালকা না । এই ভয়ঙ্কর কষ্ট যেই মা ভোগ করেন, তিনিই শুধু জানেন এটা কতটা পীড়া দায়ক । যে বেলা বাচ্চাটা পেট ভরে খায়, মায়ের যেনো মাথাটা একটু ঠান্ডা থাকে। বাচ্চা খেলো না, ব্যাস, দুনিয়ার কিছুই আর ভালো লাগে না। ঠিক এই অবস্থায় বিদেশ বিভূঁইয়ে কর্মজীবি একজন মায়ের বাচ্চা যখন রীতিমতো খাবার সামনে দেখলে মুখে যমদুয়ারের খিল এঁটে বসে থাকে, তখন লাগে টা ক্যামন?

চোখের সামনে আমার ব্যর্থ মাতৃত্বের স্বাক্ষ্য দিতে তার জামা কাপড় সাইড দিয়ে ঢল ঢল করছে। অফিস থেকে ফিরে আমি বাচ্চার খাবার নিয়ে বসি এমনভাবে যেনো গাজা উপত্যকা নিয়ে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে চলমান সংকটের একটা সমাধান করার মরণপণ নিয়ে জাতিসংঘ শান্তি চুক্তিতে জেনেভায় বসছে। প্রতিরাতে সেই চুক্তি ব্যর্থ হয়, ডিপ্লোম্যাট হিসাবে আমি ফেল মারি এবং সংকট প্রকটতর হতে থাকে! বাচ্চার ঘাউড়ামি বাড়ে পাল্লা দিয়ে।

শেষ চেষ্টা হিসাবে পেন্টাগনে এপয়েন্টমেন্ট নিলাম, অর্থাৎ আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টারে নিয়ে গেলাম ওকে। নার্স আমার সব কথা শুনলো, ওর ওজন উচ্চতা মাপলো। ওর বয়স অনুযায়ী ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোন গুলো কতটুকু ও এচিভ করেছে সেই ব্যাপারে আমাকে ধারাবাহিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হলো । বাসায় যতক্ষণ থাকে ওকে কয়বার এবং কি ধরণের খাবার দেয়া হয় তার একটা বিবরণ দিতে হলো। এরপর আমাকে যেই প্রশ্নটা মহিলা করলো, তা শুনে আমি ভিমরি খেলাম!

– ফারিনা, তুমি কি ওভারওয়েট?
আমি আমতা আমতা করে বললাম হ্যাঁ আইডিয়াল বডি ওয়েটের চেয়ে বেশ অনেকটাই বেশী ওজন আমার ।
– ডু ইউ নো হোয়াই?
মানে কি? তুই কি কইতে চাস ছেলের খাওয়া আমি খাই? আমার ওজন ক্যানো বেশী এইটা তোর কাছ থেকে আমার জানা লাগবো? আল্লাহ গো তুমি দড়ি ফালাও, তোমার দোহাই লাগে! আমার রাগ তখন চরমে, তারপরেও মুখে হাসি ধরে বললাম – হোয়াই ?
– বিকজ ইউ ডোন্ট নো হোয়েন টু স্টপ ইটিং !
আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি!
মহিলা বলে যাচ্ছে – সুস্থ স্বাভাবিক জীব মাত্রই তার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খাবার খাবে। যেখানে থামা প্রয়োজন সেখানে থামবে। মানুষই সম্ভবত একমাত্র জীব যে চোখের ক্ষুধায় খায়। পেট ভরা একটা বাঘের সামনে দিয়ে একটা হরিণ হেঁটে গেলে বাঘ লোভে পড়ে লাফ দিয়ে হরিনের পশ্চাৎদেশ থেকে এক খাবলা মাংস খেয়ে নেয় না। কিন্তু পেট ভরা অবস্থায় লোভনীয় একটা ডেজার্ট দেখলে আমরা মানুষরা হামলে পড়ি! বিপত্তিটা ঘটে তখনি, ওজন বেড়ে যায় ওভার ইটিং এর জন্য বাচ্চার এই স্টার্ট স্টপ সিগন্যালকে ইগ্নোর করে তুমি যদি ওকে জোর করে বা ট্রিক্স করে বাড়তি খাবার খাওয়াও, ওর ব্রেইন স্টার্ট স্টপ সিগন্যাল দেয়ায় গোলমাল করবে, ওর স্টমাক ক্যাপাসিটি প্রয়োজনের চেয়ে বেড়ে যাবে এবং আর্লি এইজে এটা সমস্যা না হলেও একটা বয়সে গিয়ে ও সাফার করবে – ঠিক তোমার মতো! নিজের পয়সায় খাবার খাবে আবার নিজেই পয়সা খরচ করে জিমে গিয়ে ওজন ঝরাতে স্ট্রাগল করবে! বর্তমানে তোমার ছেলের ব্রেইন জানে কখন থামতে হয়, তোমার ব্রেইন জানে না, আর এজন্যই তুমি ওভারওয়েট আর ও পারফেক্ট। ইউ শুড প্রবাব্লি লার্ন ফ্রম হিম হোয়েন টু স্টপ!

ডাহা বেইজ্জতি কারে বলে !! আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার মায়ের দ্বারা অতি ভালোবাসা মাখা শৈশব ! অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে ২ ঘন্টা ধরে আমাকে একটা ডিম্ খাওয়ানো, চোখের জলে মাখামাখি হয়ে নাক চেপে ধরে গ্লাস ভরা দুধ শেষ করা, ভাতের কথা নাই বা বললাম ! আহারে ! ওই যে ব্রেইনের সিগন্যাল ম্যান ইন্তেকাল করলো, এখন তার কবরে ফুল দেই আর জামাকাপড় ফেলি, গায়ে লাগেনা তাই!

আমি প্রশ্ন করলাম, ওর ব্যাপারে তাহলে তোমার সাজেশন কি ? বাচ্চা আমার প্রপারলি একটা ডিনার করে না, ওজনের পার্সেন্টাইল বলছে ওর গ্রাফ ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে, তুমি বলছো আমি ওর ব্রেইনের সিগন্যালকে রেস্পেক্ট করে ওরে না খাওয়ায়ে ঘুম পড়াবো ?

মহিলা উত্তর দিলো –

এক নম্বর– তুমি যা করবে তা হচ্ছে ও “কম খায়” এই জাজমেন্ট বন্ধ করবে। তুমি ঠিক কিসের ভিত্তিতে বলছো ও কম খায়? তোমার বয়সী কেউ হয়তো এক বসায় ৪০০ গ্রামের দুইটা স্টেক শেষ করে ফেলতে পারবে, আর কেউ হয়তো আড়াইশ গ্রামের একটা স্টেক শেষ না করেই বলবে আই এম ডান! এখন দ্বিতীয়জনকে যদি আমরা ৪০০ গ্রামের দুই স্টেক দিয়ে বলি, এইটাই তোমার সঠিক পরিমান এবং এইটাই তোমাকে শেষ করতে হবে, ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়? অত্যাচার হয় কি হয় না? সুতরাং ওর খাওয়ার পরিমান তুমি নির্ধারণ করতে পারো না, ও কম খায় এই স্টেটমেন্ট তুমি দিতে পারো না। ওর বয়সী একটা বাচ্চার স্টমাক ক্যাপাসিটির একটা উদাহরণ হচ্ছে ওর নিজের এক হাতের এক মুঠি খাবার হবে ওর বিকালের স্ন্যাক্স? মানে বুঝতে পারছো? এক টুকরো পনির ই কিন্তু যথেষ্ট, অথবা অর্ধেকটা গাঁজর বা একটা ক্র্যাকার !

দুই নম্বর– ওর গ্রোথ গ্রাফ কি বলছে তা খুব ইম্পরট্যান্ট। এই যে তুমি বললে ওর ওজনের গ্রাফে ওর অবস্থান ১৮ থেকে ২৫ পার্সেন্টাইলে, ও তো জন্মের সময় থেকেই তাই! আমরা যেইটা দেখবো সেটা হচ্ছে কার্ভটা লিনিয়ার (সরলরেখায় ও মোটামুটি সমানুপাতে ) যাচ্ছে কিনা বয়সের সাথে। আমি তো দেখছি ওর ওজন ১৮ থেকে ২৫ পার্সেন্টাইলের মধ্যেই এগুচ্ছে, যদি ১৮ এর নীচে নেমে যেতো, আমরা হায়ার লেভেলে এক্সামিন করতাম। একই ভাবে এই রেঞ্জ থেকে হটাৎ বেড়ে বেশি উপরে গেলেও আমরা ওভারওয়েট নিয়ে কনসার্ন হতাম এবং দুই ক্ষেত্রেই ডায়েটিশিয়ানের সাথে বসতে হতো তোমাকে। হাইটওয়াইজ ওর পার্সেন্টাইল হাই, ৮০ এর উপরে, জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত ঐটাও সরলরেখায়ই আছে। কাজেই তোমার বাচ্চা বড় হচ্ছে কোনো সন্দেহ নেই !

তিন নম্বর– ওর মানসিক বিকাশ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো বলে দিচ্ছে ওর বিকাশ স্বাভাবিক।

চার নম্বর– ও যথেষ্ট একটিভ, আমি দেখতেই পাচ্ছি, এটাও একটা পজিটিভ দিক।

পাঁচ নম্বরে – তোমাকে তোমার বাচ্চার হেলদি ফুড হ্যাবিটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, এমফাসাইজ মোর অন কোয়ালিটি, কোয়ান্টিটি কামস লেটার । খায়না বলে অতিরিক্ত চিনি, চর্বিজাতীয় খাবার, জাঙ্ক ফুড, সস ড্রিঙ্কস এসবের লোভ দেখানো যাবেনা।

ছয় নম্বর – তোমাকে তোমার নিজের জাজমেন্ট দিয়ে ওর ইচ্ছা অনিচ্ছাকে ওভার পাওয়ার করা বন্ধ করতে হবে। এইটুকু তোমাকে শেষ করতেই হবে, খাও , হা করো .. এইসব ধমক বাচ্চাকে খাবার নিয়ে একটা ট্রমার মধ্যে ফেলে। মিল টাইম কখনোই ব্যাটেল টাইম হওয়া উচিত না। মিল টাইম হওয়া উচিত আনন্দময় ।

চলবে…

মাতৃকথন ৬

 

মেজাজ খারাপ হবার কারণ

লাইফস্টাইল


এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, মানুষের ‘দেহ ঘড়ির’ ছন্দে কোন উল্টোপাল্টা হলেই তার ‘মুড ডিজঅর্ডার’ বা মেজাজ খারাপ হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর গবেষকরা ৯১ হাজার লোকের ওপর এক জরিপ চালানোর পর বলছেন, বিষণ্ণতা, হঠাৎ ভীষণ রেগে যাওয়া, একাকীত্ব, অসুখী মনোভাব, আরো অনেক মানসিক সমস্যার সাথে মানবদেহের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত হবার সম্পর্ক আছে।

দিনে জেগে থাকা আর রাতে ঘুম’ – এই হচ্ছে মানবদেহের স্বাভাবিক ছন্দ – যা অনুযায়ী দেহের প্রতিটি কোষ, শারীরিক প্রক্রিয়া এবং স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষকরা বলছেন, কেউ যদি রাত জেগে বেশি কাজকর্ম করে বা সক্রিয় থাকে, বা দিনে নিষ্ক্রিয় থাকে তাদেরকেই দেহঘড়ির বিঘ্নের আওতায় ফেলা হয়েছে।

এদের মানসিক নানা সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা স্বাভাবিক জীবনযাপনকারীদের চেয়ে ৬ থেকে ১০ শতাংশ বেশি।

গবেষকরা বলছেন, অনেক সমাজেই এই স্বাভাবিক মানুষের জীবনযাপনে এই স্বাভাবিক দিনরাতের চক্র বদলে যাচ্ছে এবং তাদের জন্য এই জরিপের ফলাফল একটি সতর্কবাণী।

তবে দেহঘড়ির এই ছন্দ-বিভ্রাটই কি মানসিক রোগের কারণ, নাকি এটা তার লক্ষণ মাত্র? জরিপটিএ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নি। এ জন্য আরো গবেষণা দরকার হবে।

দেহঘড়ির এই ছন্দকে বলে সার্কেডিয়ান রিদম। মানুষের মনমেজাজ, হর্মোনের স্তর, শরীরের তাপমাত্রা, এবং দেহের বিপাক ক্রিয়া – এই সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব ব্যাপক।

দিনের শুরুতে সকালবেলা যখন মানবদেহ জেগে ওঠার পর জোরেশোরে কাজ করতে শুরু হরে – ঠিক যেমন একটা গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার মতো – তখন এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। যা দেহঘড়ির গুরুত্বের আরো একটি দৃষ্টান্ত।

বিবিসিকে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল স্মিথ বলেন, এই জরিপে দেহঘড়ির সমস্যায় আক্রান্ত এমন যারা অংশ নিয়েছেন – তাদের কেউ কেউ হয়তো রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেছেন – এটা হতে পারে।

তবে আমার জন্য কড়া নিয়ম – আমি রাত ১০টা বাজলেই আমার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেই – বলেন ড. স্মিথ।

‘কারণ, বিবর্তন অনুযায়ী মানুষ এমন ভাবে তৈরি হয়নি যে যখন তার ঘুমিয়ে থাকার কথা, তখন সে মোবাইলের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকবে’ – বলেন তিনি।

সুত্র: বিবিসি বাংলা

 

একজন রোজাদারের সারাবেলা

আকলিমা ফেরদৌস আখি


রোজার প্রকৃত হক আদায় করার জন্য আমরা আমাদের সময়গুলোকে এ ভাবে ভাগ করে নিতে পারি (এটি একটি নমুনা মাত্র)।

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৪৫-৩:১৫
(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন।এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)

সেহেরী গ্রহণ- (৩:১৫ থেকে ৩:৪৪মি:)
সালাতুল ফজর ও সকাল বেলার
আযকার পাঠ- (৩:৪৫মি: থেকে ৫:০০মি:) (হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)

কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ
(চার পৃষ্ঠা)- (৫:০০ থেকে ৬:০০)
সালাতুল দুহা বা ইশরাক- (৬:০০ থেকে ৬:১৫মি)

বিশ্রাম ও ঘুম- (৬:২০ থেকে ৮:৩০)

সকাল বেলা

ঘুম থেকে ওঠা- (৮:৩০ থেকে ৯:০০)
দৈনন্দিন কাজ শেষ করা-
(৯:০০টা থেকে-১০:৩০টা)
(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা,ইফতার কি হবে , রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা। মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)

কোরআন অধ্যায়ন অর্থসহ, ইসলামী বই পড়া, হাদীস ইত্যাদি-(১০:৩০ থেকে ১২:০০)

দুপুর বেলা

বিশ্রাম ও সালাতুল যোহরের প্রস্তুতি সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ-(১২:০০ থেকে ১:০০)
কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ(চার পৃষ্ঠা)-(১:০০ থেকে ১:৩০মি)
সন্তানদের (প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে)
কোরআন পড়ানো, হাদিসের গল্প বলা, ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো, স্কুলের পড়া ইত্যাদি-(১:৩০ থেকে ৩:০০)

ইস্তেগফার পাঠ (আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ ১০০বার তওবার অনুভুতি নিয়ে)
-(৩:০০ থেকে ৩:১৫)
বিশ্রাম-(৩:১৫ থেকে ৩:৩০)
কোরআনের সূরা মুখস্ত
(এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন সূরা গুলো মুখস্ত করা হবে।)
প্রতিদিন অন্তত: একটি দোয়া মুখস্ত করা (রাসূল সা: যে গুলো দৈনন্দিন জীবনে পড়েছেন)- (৩:৩০ থেকে ৪:৩০)

বিকেল বেলা

সালাতুল আসর,সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির এবং কোরআন পাঠ অর্থসহ-(৪:৩০ থেকে ৫:০০)

রাতের খাবার, ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা- (৫:০০ থেকে ৬:১৫)

এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।

গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্র্যাকটিস করানো, টিভিতে ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো, আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো , সৃজনশীল লেখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যাবেলা

ইফতারের প্রস্তুতি নিয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসা:(৬:২০ থেকে সময় হওয়ার আগ পযর্ন্ত)

(এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ অর্থসহ কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা)।

ইফতার গ্রহণ- {৭:০০- (ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলিয়ে নিতে হবে।)}

সালাতুল মাগরিব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ (৭:০০ থেকে ৭:৩০)

(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)

বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় কাজ (৭:৩০ থেকে ৮:০০)

রাতের বেলা

সালাতুল এশা , তারাবীহ ও কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ(চার পৃষ্ঠা)- (৮:০০ থেকে ৯:৩০)

রাতের খাবার- (৯:৩০ থেকে ১০:০০)
সূরা মূলক তেলওয়াত ও এক আয়াত মুখস্ত-(৯:৩০ থেকে ১০:০০)
ঘুমের প্রস্তুতি-(১০:০০ থেকে ১০:৩০)
ঘুম-(১০:৩০ থেকে ২:৩০)

মহান আল্লাহ আমাদের রোজার যথাযথ হক আদায়ের তৌফিক দিন।
আমীন।

(বি:দ্র- এটা একটা নমুনা মাত্র যে যার সুবিধামত নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারেন)

 

রমজানে নারীর সাথে যেমন আচরণ করা দরকার

অন্যান্য


চিত্র ১:

তামিমার বিয়ে হয়েছে আজ বেশ কয়েক বছর। বউ বউ ভাবটা চলে গেছে। এখন সে নিছক একজন রাঁধুনি। স্বামী কাস্টমসে জব করে। কাজ করে ফিরতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়। এটা তাদের ৩য় রমজান মাস।তামিমা মনোযোগ দিয়ে স্বামীর জন্য বাহারী ইফতারি রেডি করলেন। স্বামী কোন রকম ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছলেন, তামিমা সাথে সাথে ঠান্ডা পানির গ্লাসটা নিয়ে দৌঁড়ে আসলেন। মুখে দিতে রুচির মানসম্মত না হওয়ায় সাথে সাথে গ্লাস মাটিতে ছুঁড়ে মারলেন। তামিমার পরিবার ধরে ১৪ গোষ্ঠীকে কিছুক্ষণ গালিগালাজ করে ধুয়ে দিলেন।একবারও জিজ্ঞেস করলেন না, মেয়েটি সারাদিন রোজা রেখে কষ্ট করে স্বামীর জন্য ইফতার তৈরি করলেন, নিজের মুখে পানি তুলে দেয়ার আগে স্বামীকে তুলে দিলেন।

চিত্র ২:

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মাহমুদা। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে জীবনের ২য় পর্বটির বাস্তবচিত্র দেখতে পেলেন। স্বামী থেকে শুরু করে পরিবারের সকলের সন্তুষ্ট অর্জন করা যেন তার নিয়ম মাফিক দায়িত্ব। রমজানে ভোরে সেহেরি প্রস্তুত করে সবাইকে খাবার পরিবেশন করেন।সবার শেষে নিজের খাবারটা খান। কিন্তু আজ দুর্ভাগ্যক্রমে গরুর মাংসে মরিচের পরিমাণটা বেশি পরে গিয়েছিল। এ নিয়ে ভোরবেলায় তার পরিবারে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল। অবশেষে স্বামী রাগ সামলাতে না পেরে মাহমুদার চুলের মুঠি ধরে কিল ঘুসি আচ্ছামত দিলেন। আর অসহায় মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বাকি দিনটা উপবাসে রোজার নিয়তে কাটিয়ে দিলেন।

আজকের কলামের অবতারণায় সমাজের ২ টি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।এগুলো নিছক কোন কল্পনা নয়। সমাজে হরহামেশা ঘটমান দৃশ্যাবলি। এগুলোর শিকার কেবল নারীরা।

কিন্তু ইসলাম কী বলে? ইসলামে এসব ব্যাপারে কী বলা আছে?

আমরা যদি মহানবী সাঃ এর জীবনী পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো তিনি তার পরিবারের নারীকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন।

এমনকি ভোরে তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন এমনভাবে যাতে তাঁর উঠার শব্দ শুনে স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে না যায়। তিনি কখনো খাবারের দোষ ধরেননি। অনেক সময় রান্না ভালো না হলেও এমন ভাব নিতেন যাতে রাঁধুনী বুঝতে না পারে খাবারের মান খারাপ হয়েছে।

আমরা স্বীকার করি বা না করি মানুষ ধর্ম মানা থেকে যত দূরে যাচ্ছে তার ভেতর থেকে মানবিকতা তত হারিয়ে যাচ্ছে।সবাই সবখানে কর্পোরেট চিন্তাভাবনা শুরু করছে। কিন্তু পবিত্র রমজান আমাদের সেখান থেকে বের হওয়ার শিক্ষাদান করেন।

প্রথমে নারীদেরকে আমাদের খুব আপন ভাবতে হবে। নিজের বোন ভুল করলে যেমন ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে শুধরিয়ে দিতেন ঠিক তেমনি স্ত্রী বা অন্য সম্পর্কের নারীর ভুলগুলো ভালোবাসা দিয়ে শুধরাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যখন ভোরে নাক ডেকে ঘুমাতে থাকি সে সময়ে এই নারীরাই আমাদের জন্য মুখরোচক সেহরী তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ কাজ একজনের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তারকাজে সাহায্য করা।সবাই একসাথে খাবার খেতে বসা।
আমরা যখন সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ি ঠিক সে সময়ে নারীরা আমাদের জন্য ইফতার তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন।একবারও কী ভেবেছেন পেটে ক্ষুধা রেখে খাবার তৈরী করা কত কষ্টের?
তবুও তারা আমাদের জন্য খাবার তৈরী করেন।
তাই আমাদের উচিৎ তাদের কাজে সহযোগিতা করা।
ইফতারে সবাই একসাথে বসা।
ইফতার যিনি তৈরি করেছেন তার প্রশংসা করা। আর মেয়েরা এই ভালোবাসাটার বিনিময়ে জগতের সব কষ্ট মেনে নিতে পারেন।

পুরুষদের মনে রাখা উচিৎ , বাজার করার উদ্দেশ্যে এদিক সেদিক অযথা সময় নষ্ট না করে খুব তাড়াতাড়ি বাজার করে নিয়ে আসবেন।

যাতে মেয়েদের শক্তি এবং সময় থাকা অবস্থায় কাজটা করতে পারেন। সবসময় মনে রাখবেন,আপনার জন্য যা কষ্টকর তা অন্যের জন্যও কষ্টকর।

লজ্জার কিছু নাই, মেয়েরা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কিছু দিন অসুস্থ থাকেন। আল্লাহ তাইতো সে সময়টাতে তাদের শরীয়তের বিধানগুলো পালন করা থেকে অবকাশ দিয়েছেন। তাহলে আমরা কেন তাদের প্রতি অনুগ্রহ করব না?

তাই সবার মাথায় রাখা উচিৎ, কোন মেয়ে রোজা না রাখলে তাকে প্রশ্ন না করা এ বিষয়ে। বরং তার জন্য দিনের বেলায় খাবারের ব্যবস্থা রাখবেন। যাতে তাকে রোজাদারের ন্যায় উপবাসে দিন যাপন করতে না হয়।

অনেক পরিবার এমন আছে, যেখানে বউদের দিয়ে পরিবারের সবার কাপড় ধুয়ানো হয় যা জঘন্যতম এবং নিন্দনীয়।হ্যা, মানুষ অসুস্থ হলে সেবা করা যায়, কিন্তু সুস্থ থেকেও কাজের বুয়ার মত আচরণ করা চরম অন্যায়।
বিশেষ করে এ স্বভাবটা আমাদের মডার্ণ ভাইদের মাঝে বেশি।

আমরা পুরুষরা যেমন রমজানে ইবাদত করি, কোরআন তেলোয়াত করি, সেভাবে তাদেরও সুযোগ করে দিন।

সারাদিন তাদেরকে কাজের উপর রাখবেন না। তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করুন। কাজের চাপ যত পারেন কমাবেন। নারীদের সহায়তা করাও ইবাদত।

নারীরা আমাদের মা,তারা আমাদের বোন,তারা আমাদের নিসঙ্গতার পরম বন্ধু। তাদের কে সেভাবে সম্মান করা উচিৎ যেভাবে ইসলাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। মুখে মুসলিম দাবী করলাম আর কাজকর্ম সব জালেমি মার্কা, তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা ইসলামের গন্ডি থেকে অনেক দূরে চলে গেছি।

কুরআন হাদিসে বর্ণিত রুলস অনুযায়ী পারস্পারিক মর্যাদা, সম্মান এবং সহযোগিতা পারিবারিক বন্ধনকে করে তুলবে সুদৃঢ় এবং সুখকর।

গৃহিণী শুধু নারী নয় একজন মানুষ। আর মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য মর্যাদা পেলেই দূর হয়ে যাবে নারীর প্রতি সকল প্রকার অসম্মান, নির্যাতন ও সহিংসতা।

আল্লাহ আমাদের মাহে রমজানের তাৎপর্য উপলদ্ধি করে, নারীদের সাথে সদাচারণ করার তাওফিক দান করুন।

সুত্র: (ফেসবুক পাতা থেকে সংগৃহীত। যেখান থেকে নেওয়া হয়েছে তিনিও সংগৃহীত লিখেছেন। তথ্য খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে লেখকের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।)

 

জীবনের সার্থকতা

আফরোজা হাসান


মানুষের মধ্যে রয়েছে বিবেক ও বুদ্ধি। এই বিবেক ও বুদ্ধির সাহায্যে মানুষ জ্ঞান ও মনুষ্যতের বিকাশ ঘটাতে পারে। জীবনে বয়ে আনতে পারে কল্যাণ। তবে জীবনে কোন কিছুই হঠাৎ অর্জন করা যায়না। বিবেক ও বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগের জন্য ধীর ও কঠোর অনুশীলন ও চর্চার প্রয়োজন। আর এরজন্য দরকার গভীর আত্মিক সাধনা। মানুষের মন যখন স্থবির, নিশ্চল ও গতিহীন থাকে তখন নানা সঙ্কীর্নতা-কুসংস্কার তার মধ্যে বাসা বাঁধে। তাদের মন হয়ে পড়ে ক্ষুদ্র ও জরাগ্রস্ত। এই অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে হলে মনকে গতিশীল ও সচল করতে হবে। আর মনকে সচল ও গতিশীল করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে বই পড়া। কারন বইয়ের মধ্যে জ্ঞানী-গুনীদের ভাবনা-চিন্তা নিহিত আছে। সমুদ্রের ঢেউ রাশির মতোই এসব চিন্তা প্রবাহিত হয় বইয়ের মধ্যে। কেউ যদি একনিষ্ঠ মনে চায় তাহলে অনুভব করতে পারে সেইসব চিন্তার গর্জন।

বিভিন্ন কারণে আমদের মনে সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে নানা ধরণের নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আসতে থাকে। অনেক চেষ্টা করেও সেটা যখন থামানো যায় না তখন আমরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং প্রতিদিনের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। নানারকম মানসিক কষ্ট, হতাশা, দুরাশা, ক্লান্তি মনকে তখন ঘিরে ধরে। আমরা ভীষণ অসহায় বোধ করতে থাকি। চরমভাবে বিঘ্নিত হয় মনের শান্তি। নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে মন অনেক সময়। আসলে আমাদের সবার মনেরই দুটো দিক রয়েছে।
একটি হচ্ছে আবেগপুর্ন, অন্যটি হচ্ছে যুক্তিনির্ভর। এই দুটি দিকের ভারসাম্যপুর্ন সহাবস্থানই পারে মনের শান্তিকে অক্ষুন্ন রাখতে। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা চিন্তার দ্বারা আমাদের আবেগগুলোকে চিহ্নিত করে যুক্তির দ্বারা সেগুলোকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। নিজেকে চেনা-জানা-বোঝা এবং নিজের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস-শ্রদ্ধা বোধ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের জীবনকে তখনই সার্থক করে তুলতে পারবো যখন সার্থকতা কোথায় সেটা জানা থাকবে।

আমার কাছে জীবনের সার্থকতা মানে হচ্ছে নিজের বিবেকের কাছে দায়ী না থাকা। আমরা অনেক সময় দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগি কোন একটা কাজ করবো কি করবো না। মানুষ যতগুলো মানসিক দ্বিধায় ভোগে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে আবেগ এবং বাস্তবতার দ্বন্দ্ব। বাস্তবতা বলছে কাজটি করোনা, আবেগ হয়তো বলছে করো। এরফলে আমরা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। কিন্তু তখন আমাদের উচিত স্থির হয়ে বসা এবং ঠাণ্ডা মাথায় বিবেকের সাথে কথা বলা। বিবেক যে কাজ করতে নিষেধ করে, সে কাজ কখনোই করা উচিত নয়।
সব মানুষের জীবনদর্শন যেহেতু একরকম নয় তাই একেক জন জীবনের সার্থকতাকে একেক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিবেকের কাছে দায়ী না থাকাটাকে কেউ অনৈতিক বলতে পারবে না। বরং বিবেককের কাছে যদি স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলা যায় তাহলে প্রতিটি মানুষই তার মূল্য বুঝতে পারে।

মানুষের মূল্য তার চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মে। মানুষের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে ছোট ছোট কাজের মধ্যে দিয়ে। সুশৃঙ্খল জীবন, সুন্দর আচার-ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে একজন মানুষের চরিত্রমাধুর্য ফুটে ওঠে। পৃথিবীতে কোন কিছুই ক্ষুদ্র বা সামান্য নয়।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহুর্ত যেমন যুগ-যুগান্তরের জন্ম দেয় তেমনি ক্ষুদ্রের মধ্যেই বৃহৎ এর অবস্থান। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ ও সাহায্যের দ্বারা মানুষের উপকার করতে পারি। স্নেহপুর্ন ছোট ছোট সান্ত্বনার বাণী ও আন্তরিকতাপুর্ন দান পৃথিবীতে এনে দিতে পারে সুখ। আমরা একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়ে অন্যের মনে আশা জাগাতে পারি। করে তুলতে পারি নিজেদের জীবনকে সার্থক।

 

‘আকর্ষণীয় কিছু খাবার’ যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে

ফাতেমা শাহরিন


পেস্ত বাদাম

পেস্ত বা কাজু বাদামের বাইরের আবরণে সাইটিক এসিড থাকে। এই সাইটিক এসিড বাদামের উপকার করে, তবে মানুষের ক্ষতি হয়, সাইটিক এসিডের গ্রহণ মানবশরীরে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা তৈরি করে। তাই খাওয়ার আগে বাদাম ভিজিয়ে রাখলে এই সাইটিক এসিড চলে যায়। পেস্তাবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬, মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী এবং পেস্তা বাদাম মানসিক চাপও কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া দাঁতের রোগ, মাংসপেশির দুর্বলতা, চোখের ছানির সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমান বাদাম খেলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়।

সবুজ শাক-সবজি

মানসিক সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য সবুজ শাক-সবজি খাওয়া খুবই উপকারী। সম্প্রতি ক্যারেন তার ‘The Calendar Diet’ বইতে উল্লেখ করেছেন , ‘প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবুজ তাজা শাক-সবজি রাখলে তা ‘মানসিক চাপ’ কমাতে সাহায্য করে এবং নানান রকম হৃদরোগেট ঝুঁকিও কমাতে পারে।’

গাজর

গাজর আছে ভিটামিন ‘এ’, বেটা ক্যারোটিন, এন্টিওক্সিডেন্ট যা শরীর ও মনের নানান সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ও ত্বক সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, সপ্তাহে ৬টির বেশি গাজর খাচ্ছেন যারা তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অর্থাৎ মানসিক চাপ তুলনামূলক হারে কম যারা এর থেকে কম পরিমানে গাজর খাচ্ছেন তাদের তুলনায়।

শিমের বীজ

শিমের বীজে থাকে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে।

চকলেট

চকোলেটের মূল উপাদান কোকো যাতে ফ্ল্যাভানল & ম্যাগনেশিয়াম নামে উপকারী পদার্থ থাকে যা শরীরে যথাযথ রক্ত সঞ্চালন, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং রিল্যাক্স থাকতে সাহায্য করে। নিউট্রিশিওনাল নিউরোসায়েন্স নামের বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুযায়ী, চকোলেট খেলে মন ভাল হয়ে যায়। অবসাদ কমে।

মাখন

মাখন সাধারণত দুধ দিয়ে তৈরি হয়। মাখনে থাকে ভিটামিন, অ্যাক্টিভেটর এক্স নামের যৌগ উপাদান এবং আয়োডিন, সেলেনিয়াম, লেসিথিন ও লরিক এসিডের মতো কার্যকরী খনিজ উপাদান পাশাপাশি এরাকিডোনিক্স এসিডও থাকে। চোখের ছানির গতিরোধ, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃষ্টি, ত্বক মসৃণ ও সুন্দর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাখন খেলে নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আইসক্রিম

আইসক্রিম একটি জনপ্রিয় খাবার যাতে থাকে ‘টোনড মিল্ক’। আইসক্রিমের জন্মস্থান চীনে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং কিডনির পাথর হওয়ার মাত্রা কমাতে আইসক্রিমের ভূমিকা রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ভালো কোম্পানির আইসক্রিমে প্রচুর পরিমাণে ভেজিটেবল ওয়েল থাকে। যা শরীরের জন্য উপকারী। তাই এতে ওজন বাড়ে না।

তথ্যসুত্র: Karen Ansel, R.D. লেখকের বই The Calendar Diet মত অনুসারে লেখা এবং ইন্টারনেট।

 

বিয়ে ও পরিবার – ২

কানিজ ফাতিমা


ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজ কর্মের জন্য দায়ী হবে। নিজের প্রতিটি কাজের হিসাব নিজেকে দিতে হবে, অন্যের কর্মের জন্য সে দায়ী থাকবে না। অন্যের জন্য তাকে পাকড়াও করা হবে না। কাজেই একজন মুসলিমকে সর্বদা সচেতন থাকতে হয় নিজের সম্পর্কে, নিজের দোষ খুঁজে বের করে তা শুধরানোর জন্যই তাকে সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়।

অন্যের দোষ খোঁজার সময় তার হাতে কমই থাকে। একান্তই অন্যের দোষ-ত্রুটি যখন প্রকাশ্য ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখনই সে তা দেখতে পায় এবং সঠিক নিয়তে শুধরানোর উদ্দেশ্যে সহানুভূতি সহকারে ঐ দোষ সম্পর্কে কর্তাকে অবগত করে।

অপরপক্ষ একদল ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বের করে তার কঠোর সমালোচনায় এত বেশী মনোযোগী হয় যে তার নিজের দোষ দেখার সময়ই তার হয় না। তারা ভুলে যায় ইসলাম অন্যের সমালোচনার আগে নিজের দোষ শুধরানোর বেশী পক্ষপাতী। ‘জিহাদ’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে। কিন্তু সব থেকে বড় ও মুখ্য জিহাদ হল নিজের অহংবোধ (Ego)এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সঠিক কাজটি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
নিজের দোষ স্বীকার করা কঠিন একটি কাজ, নিজের অহংবোধে আঘাত লাগে। অন্যপক্ষে অন্যের দোষ ধরে সমালোচনা করে তাকে ছোট প্রমাণ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করা সহজ ও সুখকর।

কিন্তু ইসলাম চায় মুসলমানগণ নিজের এই অহংবোধের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাক। প্রতিটি মুসলিম স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।

সর্বক্ষণ স্বামী বা স্ত্রীর দোষের পেছনে না লেগে থেকে নিজের উন্নয়নে চেষ্টা করা অনেক বেশী কল্যাণকর।

ধরুন, আপনার উন্নতির জন্য (চারিত্রিক, অর্থনৈতিক বা পেশাগত) আপনাকে একজন সঙ্গী দেয়া হবে। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কি একজন কড়া সমালোচককে সঙ্গী হিসেবে চান যে আপনার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে আর
ছোট-বড় সব ত্রুটির সমালোচনা করবে।

নাকি এমন একজন সাহায্যকারী চান যিনি আপনাকে বিভিন্ন সমস্যায় সাহায্যের হাত (Co-operative) প্রসারিত করবে?

নিঃসন্দেহে বলা যায়, আপনি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বেছে নেবেন, একইভাবে আপনার উদ্দেশ্য যত মহৎ হোক না কেন আপনার স্ত্রী বা স্বামী আপনাকে ‘সমালোচক’ না, ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে পেতে চায়।

বিবাহ ও পরিবারে যোগাযোগের (Communication) ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তার দায়িত্ব নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা করলাম, এবার আসা যাক শ্রোতার দায়িত্বে। যদিও যোগাযোগে বক্তার দায়িত্ব অনেক বেশী তবুও এতে শ্রোতারও কিছু দায়িত্ব রয়েছে।

শ্রোতার প্রথম দায়িত্ব হল মনোযোগ দিয়ে শোনা ও আগ্রহ প্রকাশ করা (showing interest)। শ্রোতার উচিত বক্তার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করা। বুঝতে চেষ্টা করা যে সে শ্রোতাকে কী বলছে। শ্রোতার বক্তব্যের কোন অংশ পরিষ্কার না হলে প্রশ্ন করে বুঝে নেয়া। অনেক সময় শ্রোতা তাড়াহুড়া করে, বক্তার পুরো কথা না শুনেই ধরে নেয় যে বক্তা এটা বলতে চাচ্ছে। শ্রোতাকে বক্তার পুরো কথা শুনতে হবে, কথা অর্ধেক থাকতেই ‘আমি বুঝে ফেলেছি’ মনোভাব দুর্বল যোগাযোগ এর লক্ষণ। আবার অনেক সময় বক্তা যা বলেছে তা সম্পূর্ণ তথ্য দেয় না। শ্রোতা পাল্টা প্রশ্ন করে তথ্য সম্পূর্ণ করার পরিবর্তে কিছু একটা ধারণা করে নেয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে শ্রোতার ধারণা সঠিক হয় না এবং ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

যেমন স্বামী স্ত্রীকে বললো ‘কাল রেডি হয়ে থেকো, আমরা বেড়াতে যাবো’ স্ত্রী ধরে নিলো কাল স্বামী অফিসে যাবে না। আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে। স্বামী হয়তো ভেবেছে অফিস থেকে ফিরে সে বেড়াতে যাবে। এক্ষেত্রে বক্তাও বলেনি কখন বেড়াতে যাবে আর শ্রোতাও জিজ্ঞাসা না করে ধারণা করে নিয়েছে। অনেক সময় শ্রোতা বক্তার কথায় প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে না। এতে বক্তা কথার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ব্যাপারটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রতি নিয়ত ঘটতে থাকলে তা তাদের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে।

যেমন একবার এক কানাডিয়ান মহিলা তার স্বামীর সঙ্গে কেন ডিভোর্স হয়েছে বলতে গিয়ে বললো যে, তার স্বামী তাকে কোন গুরুত্বই দিতো না, সে যখন তার স্বামীকে কোন কিছু বলতে চাইতো হয়তো স্বামী কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখেই বলতো ‘আমি শুনছি’ অথবা অন্য রুমের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলতো – ‘বলো, শুনছি’। মূলত: একজন বক্তার দায়িত্ব হল শ্রোতার দিকে তাকানো এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি (facial expression) দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যে সে শ্রোতার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শুনছে।

স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক উন্নয়নের একটি বড় শর্ত হল যে দু’জন দু’ জনের কথা আগ্রহ নিয়ে শুনবে।

(চলবে)

পর্ব-১

 

রোযায় খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য ২

ডা.ফাতিমা খান


রোযার মাসে খাওয়া দাওয়া ও সাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কম বেশী অভিযোগ নেই এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। এসিডিটি, পেটের গোলযোগ আর দুর্বলতা নিয়ে তাদের অভিযোগ লেগেই থাকে। তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে রোযার উপর। অসুখে পড়বেন বলে রোযা রাখেন না এমন মানুষও একদম কম নেই। আসলে দোষ কিন্তু রোযা বা খাবার কোনটিরই না… সমস্যা আমাদের নিজেদের অভ্যাসের। রোযার সময় যদি আমরা প্রচলিত ভাজাভুজি বা বেশী মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে খাবারের মেনুতে ও রান্নার প্রণালীতে একটু পরিবর্তন আনি, তাহলে কিন্তু পুরো রোযার মাসটাই সুস্থভাবে কাটানো যাবে।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

সাহরীতে চা পান না করাই উত্তম। চায়ে থাকে মুত্র-বর্ধক উপাদান। সাহরীতে চা পান করলে এই মুত্র-বর্ধকের প্রভাবে দেহের পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে দ্রুত বের হয়ে যায়।

ইফতারে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

ভাজা-পোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার শরীরের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। বিশেষ করে শরীরের তাৎক্ষণিক ঘাটতি পূরণ ও শক্তি যোগানের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এসব খাবারের উপরিভাগে তেলের আবরণ (Oily coating) থাকার কারনে এরা পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না এবং পাকস্থলী অতিক্রম করতে অনেক সময় নেয়; তারপর অন্ত্রে গিয়ে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে। ফলে এ ধরনের খাবার দেহে দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে না।

রোযার সময় দাঁতের যত্নের ব্যাপারে আমরা অনেকেই বেখেয়াল হয়ে যাই। রমজান মাসে সাহরীর পর অবশ্যই টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিৎ। সম্ভব হলে একটু কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করে নেয়া যেতে পারে। ইফতারের পর আরেকবার ব্রাশ করে নেয়া ভাল। এর মাঝে রোযা রাখা অবস্থায় মেসওয়াক অথবা শুধু ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন । তাতে মুখে দূর্গন্ধ কম হবে এবং দাঁত ও মাড়ির রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

অনেক অসুখ-বিসুখের সমাধান কিন্তু রোযা রাখা বা কম খাওয়া।

 

ডা.ওয়ান আজিজাহ মালয়েশিয়ার প্রথম মহিলা উপ-প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে আসুন ৭টি বিষয় জেনে নেই


অপরাজিতা


মালয়েশিয়ার ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে যার কারণ একজন নারী।

মালয়েশিয়ার পরবর্তী উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ‘ডা.ওয়ান আজিজাহ, দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে। এর ফলে নারীর ক্ষমতায়নে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। প্রথম নারী ডা.ওয়ান আজিজাহ উপ-প্রধানমন্ত্রীর হলে নতুন এক পদচিহ্নকে স্বাগত জানাবে মালয়েশিয়ার ইতিহাস।

অনুপ্রেরণা সৃষ্টকারী নারী ডা.ওয়ান আজিজাহ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরা হল,

১. শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড

একটি শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে পাওয়া যায় ডা.ওয়ান আজিজাহ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালে পয়লা ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে কিন্তু বড় হয়েছেন কেদা শহরে। আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ থেকে সার্জন মেডিসিনে পড়াশুনার পাশাপাশি সেরেবান কুশিয়াহ কলেজ থেকে তিনি তাত্ত্বিক শিক্ষাও অর্জন করেন। তিনি সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক ও গাইনোকোলজির উপর বিশেষ অবদান রাখার কারণে স্বর্ণ পদক পান। পরবর্তীতে ডা.ওয়ান আজিজাহ একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। ১৪ বছর ধরে একটি সরকারী হাসপাতালে কর্মরত থাকার পর ১৯৯৩ সালে তার হাজবেন্ড আনোয়ার ইব্রাহিমকে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়া হলে পরবর্তীতে ডা.ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল ক্যান্সার হসপিটালে কাউন্সিলরে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।

২. মা ও গ্রান্ডমাদার

ডা.ওয়ান আজিজাহ ছয় সন্তানের জননী এবং রয়েছে নয়জন নাতি-নাতনি
যদিওবা ওনার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিশিষ্ট্য ব্যক্তি হয়ে ওঠার কারণে অনেকেই তা জানে না। একটি সাক্ষাৎকারে, তার বড় মেয়ে নুরুল ইজাহা আনোয়ার জানান, ‘ডা.ওয়ান আজিজাহ তার ব্যস্ত রাজনৈতিক কর্মজীবন থাকা সত্ত্বেও তার পরিবারকে অবহেলা করেননি।’

৩. দৃঢ় প্রত্যয় এবং একনিষ্ঠ

ডা.ওয়ান আজিজাহ একজন সুদৃঢ় মনোবল সম্পূর্ণা নারী। ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমকে অন্যায়ভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলে তখন আনোয়ার ইব্রাহীমের অনুপস্থিতিতে তার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার লক্ষ্যে মাঠে নামেন তিনি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ডা.ওয়ান আজিজাহ রিফর্মসি আন্দোলন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন, এনজিও সামাজিক ন্যায়বিচার আন্দোলন (এডিআইএল) এর নেতৃত্ব দেন এবং তারপর সেই বছরেই কাদিলান নাশিয়াল (পিকেএন)পাটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে ডা.ওয়ান আজিজাহকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

৪. রাজনীতিতে তার যাত্রা

ডা.ওয়ান আজিজাহ ভাষ্যমতে, “আমি একজন রাজনীতিবিদের স্ত্রী। আমি রাজনীতিবিদ নই। কিন্তু ঘটনাক্রমে, আমাদের পরিবারকে সেই সময় অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন একটি সংগ্রামে অংশ নিই। সংগ্রাম বা যুদ্ধটি আমাদের দুজনকে নীতিগত ভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজ করার একটি সম্ভাবনার জন্ম দেয়”।

১৯৯৯ সালে প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, তখন তিনি সংসদে পাঁচটি আসনে জয় লাভ করেন। নেতৃত্ব তিনি ২০০২ ও ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনেও আসন লাভ করেন। সেই বছরের মধ্যে, পুনরায় আনোয়ার ইব্রাহীম ফিরে এলে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে, পুনরায় আনোয়ার ইব্রাহীমকে পাঁচ বছরের জন্য কারাগারে পাঠানো হলে, ২০১৪ সালে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসেন। ২০১৫ সালে তিনি আবার সংসদীয় আসনটি পান।

৫. সুন্দর মানবিক গুনসম্পন্ন

‘মানবিকতা’ তার স্বভারর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। শান্ত, স্বভাবের হওয়ায় জানা যায় যে, নির্বাচনের মত সময়ও ডা. ওয়ান আজিজাহ ধীর স্থিরভাবে কাজ করতে পারেন। তার মেয়ের মতে, “তিনি হাসিখুশির অনুভূতি ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে।” সত্যিকার অর্থে, তিনি একজন অনুপ্রেরণাকারী অসাধারণ নারী।

৬. দৃঢ় সংকল্প

ডা.ওয়ান আজিজাহ একটি দলের সভাপতি এবং আনোয়ার ইব্রাহীমের স্ত্রী হিসেবে কাজ করা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। তিনি তার নিজস্ব মতামত ভিত্তিতে এবং দৃঢ়তার সাথে সবসময় কাজ করে গিয়েছেন। অনেকে মন্তব্য করেন যে, তিনি তার হাজবেন্ডের জন্য পদটি আগলে রাখবেন। কিন্তু ডা.ওয়ান আজিজাহ বলেছেন, আমি তার জন্য কোন সিট আগলে রাখার ক্ষমতা রাখি না। আমি দৃঢ়তার সাথে মনে করি, একজন নারী হিসেবে যে কেউ ভাল ভাবে যে কোন কাজ উপস্থাপনা করতে সক্ষম।

৭. নারীদের ক্ষমতায় প্রতি তার বিশ্বাস
নারীদের ক্ষমতার প্রতি তার রয়েছে অগাধ বিশ্বাস।একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন-“আমাদের অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী রয়েছে যারা প্রধানমন্ত্রী হবার মত।” তার মতে, “সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা, বিশেষ করে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে, আমরা নারীরাও একটি শক্তি হতে পারি।”

একজন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার এই পুরো যুদ্ধটাই তিনি করেছিলেন তার ছোট ছোট সন্তানদের সাথে নিয়ে।

সুত্র: buro 247.my থেকে অনুবাদ

 

বিয়ে ও পরিবার -১

কানিজ ফাতিমা


সুরা নিসার ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- “তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। কোন কারণে যদি তাদের কিছু তোমাদের কাছে ভাল নাও লাগে, তাহলে তোমরা হয়ত এমন একটি বস্তুকে খারাপ মনে করছ যার মধ্যে আল্লাহ তোমাদের জন্য মহাকল্যাণ নিহিত রেখেছেন।”

“Treat them with kindness; for even if you dislike them, it may well be that you dislike something which God has invested with abundant goodness.” (19)

এখানে দেখা যাচ্ছে স্ত্রীর কিছু দিক স্বামীর পছন্দ না হলেও স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে স্বামীকে স্পষ্ট নির্দেশ করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে স্ত্রীর কোন দোষ চোখে পড়লে শুধু সেটার কারণেই তাকে অপছন্দ না করে বরং তার ভাল দিকগুলো সামনে রেখে তাকে বিচার করতে হবে। একই কথা একজন স্ত্রীর জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য।

অনেক সময় এমনটা দেখা যায় যে, একজন ব্যক্তি খুবই ধার্মিক, দানশীল, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি যত্নশীল কিন্তু স্ত্রীর প্রতি নির্দয়, কঠিন, রুক্ষ এবং তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে না। এটি খুবই দুঃখজনক। অনেকে এ জন্য স্ত্রীকেই দোষারোপ করে এবং স্বামীর এরূপ ব্যবহারের জন্য স্ত্রীকেই দায়ী করে। অভিযোগটা এরকম যে, “লোকটি খারাপ হলে সবার সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করত। নিশ্চয়ই স্ত্রী ভাল না বলেই সে শুধু স্ত্রীর সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করে।”

এরূপ অজুহাতে স্বামীর খারাপ ব্যবহারকে সমর্থন দেয়া ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা দেখেছি সুরা নিসায় (১৯) আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন, স্ত্রীদের কিছু ব্যাপার অপছন্দ হলেও স্বামীকে ভাল ব্যবহার করতে হবে। এটা নির্দেশ আকারে এসেছে।

সুরা বাকারায় (২৩১) বলা হয়েছে- “তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও, ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী রেখে দাও অথবা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে ভাল ভাবে মুক্ত করে দাও। তাদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য এবং জুলুম করার উদ্দেশ্যে আটকিয়ে রেখ না।” (বাকারা ২৩১)

আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, Believers with the most excellent faith are those with the best manners and those who are kindest to their wives.
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন, The best among you are those who are kindest towards their wives and I am the kindest among you towards mine. (তিরমিযি)(The thematic commentary on the Qur’an, Shaykh Muhammad al-Ghazali, p

58)কাজেই দেখা যাচ্ছে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশ হল স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা। সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ইসলামে গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়। এরূপ ব্যক্তিকে আপাত দৃষ্টিতে ধার্মিক মনে হলেও প্রকৃতপে তার আচরণ ইসলাম সমর্থিত নয়। হাদিসে এসেছে আদদিনু মুআ’মিলা।

এবং স্বামী বা স্ত্রীই প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের সত্যিকার আচরণ ও ব্যবহার দেখতে পায়। ঘরের বাইরে মানুষ যতটুকু সময় থাকে ততক্ষণ নিজেকে ঘষে মেজে ভদ্রভাবে উপস্থাপন করাটা খুবই স্বাভাবিক। মূলত: ঘরে ফিরেই মানুষ তার সত্যিকার আচরণটা প্রকাশ করে এবং ইসলাম মানুষের সেই সত্যিকার ভেতরকার আচরণকেই সুন্দর করতে চায়। ভেতরটা যাচ্ছে তাই রেখে উপরে সুন্দর একটা প্রলেপ দেয়া ইসলামের উদ্দেশ্য নয়।

স্বামী বা স্ত্রীর পারস্পরিক সমালোচনা নিয়ে আলোচনা করছিলাম না। আলোচনা করেছি সমালোচনার বাক্য গঠন নিয়ে। এ সম্পর্কিত আরও কিছু নীচে দেয়া হল-

১. সাধারণ কথার সময় আমরা Active Voice (কর্তৃবাচ্য) ব্যবহার করি। সমালোচনার সময় Passive Voice ব্যবহার করলে (কর্মবাচ্য) শ্রোতা মনে আঘাত পায় না। কারণ Passive Voice এ কাজটাকে গুরুত্ব দেয়া হয়, যে কাজটা করেছে তাকে (কর্তাকে) নয়।
যেমন-তুমি ঘর পরিষ্কার করনি। (এখানে ব্যক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে) ঘরটা পরিষ্কার নয়। (এখানে কাউকে দায়ী করা হয়নি) কাজেই ‘তুমি ঘর পরিষ্কার করনি’ না বলে ‘ঘরটা পরিষ্কার না’ বলা উচিত।

২. নেগেটিভ কথাগুলো পজিটিভ করে বলা। মানুষ নেগেটিভ কথা শুনতে পছন্দ করে না। তাই প্রতিটি নেগেটিভ কথাকে পজিটিভে রূপান্তর করে বলুন।
যেমন- তুমি অলস, একটুও পরিশ্রম কর না। এর পরিবর্তে বলুন- তোমার একটু বেশী পরিশ্রম করা দরকার।

নীচে আরও কিছু উদাহরণ দেয়া হল-নেগেটিভ কথা পজিটিভ কথা

ক. তুমি ঠিক বলনি।
ক.আমি ভিন্নমত পোষণ করি।
খ. তুমি কাপড়টা ভাল কেননি।
খ. কাপড়টার রঙ নীল হলে বেশি ভাল হত।
গ. তুমি আজকে শফিকের বাসায় যেতে পারবে না।
গ.আজ বাসায় থেকে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সময় দেয়া জরুরী।
ঘ.তুমি টমেটো কিনেছো কেন?
ঘ.টমেটোর বদলে আলু কিনলে খরচ অনেক কম হত ইত্যাদি।

৩. ‘আমরা’ শব্দের ব্যবহার বাড়ানো।

নীচের বাক্যগুলো খেয়াল করুন-

ক. তুমি আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাও না। ক. আমরা অনেকদিন বেড়াতে যাচ্ছি না।

খ. তুমি বেশি খরচ করছো।
খ. আমরা এখন থেকে বাজেট করে খরচ করবো। এতে আমরা প্রতিমাসে কিছু সঞ্চয় করতে পারবো।

এভাবে সচেতনতার সাথে বাক্য গঠন করলে অন্যকে আঘাত না করেও তাকে শুধরানো সম্ভব। সমালোচনার বাক্যে যদি ঐ ব্যক্তিকে দায়ী করা হয় তবে তার মনে আপনার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। তখন সে আপনার সমালোচনা গ্রহণের পরিবর্তে ঘৃণা ভরে বর্জন করে। ফলে সে শুধরাবে তো নয়ই বরং আপনার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

 

মা-ছেলের খুনসুটি

আফরোজা হাসান


এক.

ফজরের পর বিছানাতে শোবার পর প্রচন্ড পিপাসা লাগলো কিন্তু ঠাণ্ডার মধ্যে কম্বলের নীচ থেকে আবার বেড়োতে ইচ্ছে করছিলো না কিছুতেই। পুত্রকে বললাম, বাবা যাও তো আম্মুর জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো। কিন্তু সে উঠলো তো না-ই উল্টো আরো আমার কোল ঘেঁষে এলো। পিপাসা মেটানোর ইচ্ছা পরিত্যাগ করেই দিচ্ছিলাম ঠিক তখন দেখি পুত্রের পিতা পানি নিয়ে হাজির। আমার জাযাকাল্লাহ এর জবাবে উনি খোঁচা দিয়ে বললেন, ছেলেকে কি বায়েজীদ বোস্তামী মনে করেন নাকি? খালি আহ্লাদ না দিয়ে বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব পালন বিষয়ক কিছু কথাও শেখান আপনার ছেলেকে।
এক গ্লাস পানির বদলে এত বড় কথা ছোট্ট একটা শিশু বাচ্চাকে মিন করে? মা হয়ে পুত্রের বিরুদ্ধে এত বড় অপবাদ সহ্য করা অসম্ভব। নাকীবকে তখনি বায়েজীদ বোস্তামীর মাকে পানি পান করানোর সেই ঘটনা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে বললাম, দেখেছো মাকে কত ভালবাসতেন। এমন হলে তুমি কি করতে? জবাবে বলল, আম্মু আমি পানি নিয়ে এসে তোমাকে ডেকে তুলতাম। তুমি উঠতে না চাইলে যন্ত্রণা দিয়ে জোর করে উঠাতাম। পিপাসা নিয়ে তোমাকে ঘুমাতে দিতাম না। পিপাসায় তুমি যদি ঘুমের মধ্যে মারা যাও তাহলে আমার কি হবে? আমি তো স্তম্ভিত! হায় আল্লাহ আমি কি বুঝালাম আর আমার পুত্র কি বুঝলো। কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা স্বরূপ পাশের ঘর থেকে ভেসে এলো পুত্রের পিতার অট্টহাসি।

দুই.

বাসায় থাকলে আমরা মা-ছেলে সবসময় একসাথে জামায়াতে নামাজ আদায় করি। গতকাল মাগরিবের সময় ওকে ডেকে নামাজে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পরই নাকীবের মনে পড়লো তার ওজু নেই। জায়নামাজ থেকে নেমে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, আম্মু কাজটা ঠিক করেনি। নামাজে দাঁড়ানোর আগে আমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল, নাকীব ওজু করেছো? আমি বলতাম, না। আম্মু বলত, তাহলে অজু করে আসো। আমি তখন ওজু করে আসতাম, তারপর দুজন নামাজ পড়তাম। এটা আমার ভুল না কিন্তু আম্মু নামাজ শেষ করেই বলবে, এটা কি হল? কাজটা কি তুমি ঠিক করলে? অথচ ভুল আম্মুর। এমন ননস্টপ বিড়বিড় করতে করতে সে ওজু করে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। নামাজ শেষ করার সাথে সাথে বলল, আমার কিন্তু কোন দোষ নেই। তুমি জিজ্ঞেস না করে ভুল করেছো। বললাম, হ্যা আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি খুব স্যরি। ব্যাস শুরু করলো আমাকে জ্ঞানদান করা। যার সারমর্ম হচ্ছে সবসময় যাতে নামাজে দাঁড়ানোর আগে জিজ্ঞেস করে নেই ওর ওজু আছে কিনা। আমি বাধ্য মায়ের মত সব কথা মেনে নিলাম চুপচাপ।

তিন.

স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার যুক্তিবাদী পুত্রের সাথে একচোট যুক্তি-তর্ক হয়ে গেলো। বিষয় ছিল একা একা স্কুলে যাওয়া। আমাদের বাসার গেট থেকে নাকীবের স্কুল দেখা যায় কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই পথটুকু যেতে তিনটা সিগন্যাল পেড়োতে হয়। সুতরাং ওকে একা ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু নাকীবের যুক্তি হচ্ছে, সে যথেষ্ট বড় হয়েছে এবং সিগন্যাল কিভাবে পেড়োতে হয় সেটা খুব ভালো মতো জানা আছে তার। আমি বললাম, তুমি এখনো অনেক ছোট তাই একা একা রাস্তা পেড়োতে পারবে না। জবাবে বলল, আম্মু তুমি আমাকে একদিন একা একা স্কুলে যেতে তো দাও। তখন না বুঝবে যে আমি কত বড় হয়েছি। তুমি যদি আমাকে না ছাড় তাহলে জানবে কি করে আমি কি পারি আর কি পারি না। এই যুক্তির পর আর কি বলবো খুঁজে না পেয়ে চুপ করে রইলাম। কিন্তু এত সহজে দমে যাবার পাত্র আমার পুত্রটি নয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আম্মু আমার কত বছর বয়স হলে তুমি আমাকে একা একা স্কুলে যেতে দিবে? বললাম, আঠারো বছর হলে। চোখ বড় বড় করে বলল, আঠারো বছর? আমার তো মাত্র আট বছর বয়স। তারমানে তো আরো দশ বছর বাকি। উহু এটা হবে না। বারো বছর হলেই আমি একা একা স্কুলে যাবো। বললাম, আচ্ছা তোমার আগে বারো বছর হোক তখন দেখা যাবে। সন্তুষ্ট না হলেও আর কথা বাড়াল না। আমিও স্বস্থির শ্বাস ছাড়লাম। যাক আগামী চার বছরের জন্য যুক্তি-তর্কের একটা বিষয় অন্তত কমলো।

চার.

কেমন যোগ করা শিখেছে সেটা পরীক্ষা করার জন্য পুত্রকে সুপার মার্কেটে নিয়ে গিয়ে দশ ইউরো দিয়ে বললাম, দশ ইউরোর মধ্যে তোমার পছন্দনীয় খাবার কিনো। খেয়াল রাখবে যেন সব মিলিয়ে দশ ইউরোর বেশি না হয় কিছুতেই। এটা কোন ব্যাপার হল এমন ভঙ্গী করে হাত থেকে টাকা নিয়ে সে ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর বিশ্ব জয় করেছে এমন ভাব নিয়ে ফিরে এলো। কাউন্টারে গিয়ে টাকা দিতে গিয়ে দেখা গেলো কাটায় কাটায় দশ ইউরোর বাজার করেছে। আমি তো মহা আনন্দিত হলাম। আদরে আদরে লাল করে দিলাম বাবা সোনাটাকে। কিন্তু ওর ঠোঁট টিপে হাসিটা একটু কেমন কেমন লাগাতে হাসির রহস্য কি জানতে চাইলাম। জবাবে বিচ্ছু ফিক ফিক করতে করতে বলল, আমি কি করেছি জানো? কঠিন যোগ করতে হবে এমন কোন খাবারই কিনিনি। আমি তিন ইউরো দিয়ে কেক কিনেছি, বিস্কিট কিনেছি দুই ইউরো দিয়ে, ব্রেড কিনেছি আড়াই ইউরো দিয়ে আর বাকি আড়াই ইউরো দিয়ে কিনেছি চকলেট। হিহিহি…! বললাম, হিহিহি…বন্ধ। তুমি একটা দুষ্টু বাচ্চা। বলল, আম্মু তুমি শুধু ভুল কথা বলো। আমি দুষ্টু না অনেক বুদ্ধিমান বাচ্চা। তোমার উচিত আমাকে নিয়ে গর্ব করা। মনে মনে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ্‌! গর্ব তো করিই তোমাকে নিয়ে বাপজান কিন্তু পাগলকে সাঁকো নাড়াতে বলার মত পাগল তোমার আম্মু না।

পাঁচ.

আমাদের গেটের বাইরেই নতুন একটা আইসক্রিমের দোকান হয়েছে। আমার পুত্র একা একা সেই দোকান থেকে গিয়ে আইসক্রিম কিনে নিয়ে এলো। মাত্র একমিনিট সময় লেগেছিল আমার চোখের আড়াল হয়ে আইসক্রিম কিনে ফিরে আসতে। জীবনে এই প্রথম নাকীব একা মেইনগেটের বাইরে গেলো। ছেলের চিন্তায় একমিনিটের জন্য আমার মনের সব শান্তি বনবাসে চলে গিয়েছিলো। গেটের গ্লাসে ওর চেহারাটা দেখার পর আনন্দাশ্রু চোখের কোনে ঝিলমিল করে উঠেছিলো। আর একা একা আইসক্রিম কিনে এনে বিশ্বজয়ী বীরের বেশ ধারণ করলো নাকীব। একা কিছু করতে পারার আনন্দে আত্মহারা যাকে বলে। আমাকে শুনিয়ে দিল ছোট একটা লেকচার, এখন আর সে ছোট নেই। আমাকে ছাড়াও অনেক কিছু করতে পারে। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে আবার ছোট্ট বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ। সব মায়েরাই চায় তাদের সন্তান অনেক বড় হোক কিন্তু সাথে সাথে মায়েরা তাদের মনের কোণে সন্তানের গুড্ডু গুড্ডু বেবী ইমেজটাও লালন করে বহু যতনে।

 

ফ্যাশন শো’তে আবায়ার ইউনিক কালেকশন

নারী সংবাদ


বদলে যাচ্ছে ফ্যাশন শো এর অঙ্গন। আর এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে নানামুখী পোশাকেও। মুসলমানদের দুটি উৎসব সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ উপলক্ষ্যে
‘Online women Enterpreneur welfere Association (OWEA)’ এর উদ্দ্যোগে ৫-ই মে প্রথম প্রোগ্রামটি অংশ নেন প্রথম বারের মত অভিজাত ফ্যাশন হাউজ “R i v a J Fashion Bar”।

“R i v a J Fashion Bar”  নিয়ে এসেছেন এক্সক্লুসিভ সব আবায়া, বোরকা, কোটি/ স্রাগের বিশেষ কালেকশন। তাদের বিশাল কালেকশন নিয়ে উত্তরা ক্লাবে সেই দিনে ৫-ই মে ফ্যাশন শো’ এর আয়োজনও করা হয়।

একদিন ব্যাপী এই শো-তে  ঈদ ও পার্টির জন্য জাঁকজমক ও এক্সক্লুসিভ সব আবায়া, বোরকা এবং কোটি/ স্রাগের প্রদর্শিত হয়। দেশের বিশিষ্ট মডেলরা শো তে অংশ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে নাট্যকার আজিজুল হাকিম, নাট্য লেখক জিনাত হাকিম এবং গায়িকা আঁখি আলমগীর সহ বেশ কিছু মডেল, গায়ক এবং অভিনেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এই আয়োজনের মধ্যে “R i v a J Fashion Bar” এর ছিল সব নতুন নতুন এবং বিভিন্ন ডিজাইনের আবায়া, বোরখা, স্কার্ফ, কোটি/স্রাগের এবং গাউন।

“R i v a J Fashion Bar” থেকে অনলাইনে যে কেউ অর্ডার করতে পারবেন, https://www.facebook.com/rivajbar/ । মুল শাখা নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা।

মুলত ‘R i v a J Fashion Bar’ রিভা মাহমুদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। তার পুরো এই যাত্রা পথে তার সার্বিক সহযোগিতা করছেন তার হাজবেন্ট মোহাম্মদ মাহমুদ। তার ভাষ্যমতে, তার সহযোগিতায় তিনি এতদূর পথ এগিয়ে আসতে পেরেছেন।

ভবিষ্যতে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও ফ্যাশন শো তে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে এবং তাদের নিজস্ব ব্রান্ড ‘R i v a J Fashion Bar’ বের করা আশা ব্যক্ত করেছেন রিভা মাহমুদ।

 

 

‘একটি আদর্শ প্রি-স্কুল, নারীই মূল চালিকাশক্তি’

তাহেরা সুলতানা


কোন স্কুল যদি বাচ্চার মানসিক এবং শারীরিক দুই সেক্টর বিকাশে সহায়ক হয়, আর শিক্ষক যদি হন মায়ের মতো, তাহলে কি কোন বাবা-মায়ের চিন্তা থাকে? নিশ্চয় নয়। মালয়েশিয়াতে বাচ্চাদের স্কুলগুলোতে পুরুষ শিক্ষক নেই বললেই চলে। আমি মূলত প্রি-স্কুলের কথা বলছি। আমার ছেলে এখানকার খুব নরমাল একটা স্কুলে পড়ে। অনেকটা সরকারি স্কুলের মতই, কিন্তু ইসলামিক স্কুল। তবে এ রকম অমুসলিম স্কুলগুলোতেও ব্যাসিক নিয়ম এক। আমি উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি, যা আমাদের দেশের নামি-দামি স্কুলগুলোতেও অনুপস্থিত।

১। এখানে বাচ্চাদের স্কুলে ঢুকানোর পরপরই ১৫-২০ মিনিটের জন্য খেলতে দেয়া হয়, এরপর এসেম্বলি হয়, নাস্তা দেয়া হয়। বাসা থেকে স্কুলে খাবার আনা একদম নিষেধ। আর যদি কেউ আনতে চায়, পুরো ক্লাসের জন্য আনতে হবে। স্কুলের খাবার অত্যন্ত ভালো আর এক সপ্তাহের মধ্যে একই খাবার রিপিট করা হয় না। যারা সারাদিন থাকে, তাদের লাঞ্চও দেয়া হয়। এর জন্য এডমিশন এর সময় খুব সামান্য পরিমাণ টাকা নিয়ে নেয়। নাস্তার পর ক্লাস শুরু হয়। আর ক্লাস বলতে অইভাবে পড়াশুনা না, ছবি আঁকা, কিছু বানানো, এর মাঝে টুকটাক পড়াশুনা। হাতে কলমে শিক্ষার দিকেই এরা বেশি জোড় দেয়। ৪-৭ বছর বয়সী সব বাচ্চার জন্য একই নিয়ম। আর এখানে বাসায় বই আনা অথবা বাসা থেকে বই বা অন্য কিছু নেয়াও নিষেধ।
২। মেডিকেল ইন্সুরেন্স কার্ড স্কুল থেকেই বিনা খরচে করে দেয়।
৩। প্রতিদিন নাস্তার করানোর পর ৫ বছর থেকে সব বাচ্চাদের নিয়ে শিক্ষিকারা ‘সালাতুল দুহা’ পড়েন।
৪। বাচ্চাদের সব কাজ শিক্ষিকারা নিজ হাতে করেন। কোন আয়া এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত নেই। তবে প্রায় সব বাচ্চাই নিজের কাজ নিজে করতে শিখে যায়। কারন এভাবেই তাদের গাইড করা হয়।
৫। মালয়েশিয়ান স্কুল হলেও ৭০% কনভারসেশন এবং পড়াশুনা ইংরেজিতে হয়, আর ৩০% বাহাসা মালয় ভাষায় হয়। আর ফরেন বাচ্চাদের ক্লাসেই ভালোভাবে মালয় ভাষা শেখানো হয়।
৬। টিচার-স্টুডেন্ট র‍্যাশিও ১:২০ এর বেশি নয়। আমি এখানে যে ক্যাটাগরির স্কুলের উদাহরণ দিলাম, এটা সবচেয়ে কম খরচের স্কুল। কিন্তু এদের সার্ভিস আমাদের দেশের খুব নামকরা স্কুলের চেয়ে বেশি। দেশে অনেকদিন শিক্ষকতা পেশায় থাকার কারনে বাস্তবচিত্র নিজের চোখেই দেখার সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য দুটোই হয়েছে।
৭। এখানকার সরকারি, বেসরকারি এবং প্রাইভেট সব স্কুলগুলোতেই কোন বাচ্চার বাবা-মা কত ধনী, সেইটা কখনওই বিচার করা হয় না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্কুলে বাচ্চাদের জন্মদিন উৎযাপনের পদ্ধতি। একটি মাসে যতগুলো বাচ্চার জন্মদিন পড়ে, সবার একসাথে একটি দিনে উৎযাপন করা হয়। অভিভাবকদের আগের থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়, তারা চাইলে কেকসহ অন্যান্য খাবার বাচ্চার জন্য সরবরাহ করতে পারেন এবং বাচ্চার সাথে থেকে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এই প্রোগ্রামের আর একটি উদেশ্য হলো, সবার সাথে আলাদা করে পরিচিতি, যাতে সব বাচ্চাই নিজেদের চিনে এবং জানে। এক বছরে ১২ টি মাসে যদি এভাবে জন্মদিন পালন করা হয়, তাহলে কেউ আর কারো কাছেই অচেনা থাকবে না, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসায় স্কুল প্রাজ্ঞন ভরে উঠবে, সবার মধ্যে খুব ভালোভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরী হবে। আর বাচ্চাদের যদি জড়তা থাকে, সেটাও আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
৮। কোন দেশের কোন সাধারণ প্রি-স্কুলের পক্ষ থেকে যদি বাচ্চার সাথে সাথে বাবা-মাকেও গাইড করা হয়, সে দেশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন জায়গাই কিন্তু থাকেনা। কিভাবে বাচ্চাকে ভাষা চর্চা করাতে হবে, কিভাবে পড়ার দক্ষতা বাড়াতে হবে, নতুন ভাষার সাথে বাচ্চাকে কি করে অতি সহজে পরিচিত করানো যাবে, কিভাবে একটি বাচ্চা একই সাথে ২/৩ টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, এই সবকিছু এই ট্রেইনিং গুলোর বৈশিষ্ঠ্য। বাচ্চা যাতে শিক্ষক আর বাবা-মায়ের শিখানোর মধ্যে সমতা খুঁজে পায়, এটাই এই ট্রেইনিং এর প্রধান উদ্দেশ্য।
৯। প্রতি মাসেই প্রতিটা বাচ্চাকে ক্লাসে ইংরেজিতে কোন না কোন বিষয়ের উপর উপস্থিত বক্তৃতা দিতে হয়। এটি হতে পারে কোন একটা খেলনা গাড়ী নিয়ে, কিংবা কোন ছবি নিয়ে অথবা কোন প্রিয় খাবার নিয়ে। এতে করে একটা বাচ্চা কেবল একজন ভালো স্পিকারই হয়ে উঠে না, তেমনি কথা বলার জড়তাও কাটিয়ে উঠতে পারে।
১০। স্কুলে বাচ্চাদের আলাদা করে কোন পরীক্ষা নেয়ার কোন সিস্টেম নেই। সারাবছর ধরেই এ্যাসেসমেন্ট চলতে থাকে। প্রতি সেমিস্টারে রেজাল্ট কার্ডে তার প্রতিফলন দেখা যায় এবং বাচ্চার সর্বনিম্ন এ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে ‘সন্তোষজনক’।
১১। যেকোন ধরনের প্রতিযোগিতা বা খেলাধুলায় শিক্ষকরা সব বাচ্চাদের ১০০% অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন এবং সবার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকে। এখানে হার জিতের থেকে অংশ গ্রহণটাকেই বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়, যাতে একটা বাচ্চার মনের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।

আমরা চাইলেই কিন্তু আমাদের দেশের স্কুলগুলোতেও বাচ্চাদের জন্য এরকম ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে পারি। আর যারা নিজেরাই স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন, তারাও কিন্তু এরকম একটা স্কুলের খসড়া এঁকে ফেলতে পারেন। আমাদের সবার ইচ্ছা, উদ্যোগ আর সাহসই কিন্তু আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট! এর জন্য সত্যিই অনেক টাকার প্রয়োজন নেই!

 

গাছা ও গাছি

কানিজ ফাতিমা


নদীর ধারে একটু নির্জন বাঁকে আপনা থেকেই জন্ম নিয়েছে দু’টি গাছ। পাশাপাশি, কাছাকাছি। তাদের পাতার সতেজ নবীন আভাই বলে দেয় খুব বেশী দিন হয়নি ওরা জন্মেছে। কতইবা বয়স হতে পারে? গাছার হয়তো পনের আর গাছির দশ-বারো। শাখায়-পাতায় জড়াজড়ি করেই বেড়ে উঠেছে ওরা।

একই বাতাসে দোল খায় তারা। একই সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজে, রোদে পুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে পখিরা এসে বসে ওদের ডালে। একটু জিরোয়, ফুরুৎ করে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে, নাচানাচি করে, আপন মনে ডাকে আর তারপর পাখনা মেলে পাড়ি জমায় নিজ ঠিকানায়। কখনও কখনও একঝাঁক পাখি এসে কিচির মিচির মেলা বসায়। এ সবই উপভোগ করতে করতে দিনে দিনে ওরা বেড়ে উঠেছে।

জন্মের পর প্রথম ক’টি বছর গাছা খুবই নিঃসঙ্গ ছিল। নির্জন বাঁকে মাঝে মাঝে পাখিদের গান অথবা দূর নদীতে দু’ একটি নৌকার ছলাৎ শব্দ এই ছিল তার সারা দিনের বৈচিত্র। তাই গাছি যখন মাটির উপরে মাথা তুলে প্রথম পৃথিবীর আলোতে পাতা মেলেছিল, বাতাসে থির থির কেঁপেছিল তখন গাছার মনেও আনন্দের বন্যা বয়েছিল। সে পরম যত্নে গাছির মাথার উপরে নিজের পাতা মেলে দিয়েছিল। গাছিও গাছার পাতার কোমল ছায়ায় ধীরে ধীরে বাড়ালো। সেদিন থেকেই ওদের এ শখ্যতা।

কয়েক বছরের মধ্যেই গাছা তার ডাল পালা মেলে মাটির নীচে শেকড়ের জাল বুনে মোটামুটি এক বিশাল দেহে আবির্ভূত হল, যেন শক্ত সমর্থ এক বীর মূর্তি।

গাছি বললো,
– আমিও ডাল মেলি?
– কি দরকার? আমি তো আছি। আমার ডালপালাই তোমাকে ঝড় থেকে বাচাঁবে।

গাছি বললো,
– শেকড় মেলে একটু শক্ত হই
– কি দরকার? আমার শেকড়ের জালই মাটি শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমাদের দু’জনের জন্য এই যথেষ্ট। বুক পেতে আমি তোমায় ঝড় থেকে বাঁচাবো।

গাছা তার ডাল সরিয়ে গাছিকে ডালপালা মেলার জাগয়া করে দিল না। গাছার শেকড়ের ফাঁকে গাছি তার শেকড় ছড়ানোর সুযোগ পেলনা। ফলে গাছি দুর্বল আর গাছা-নির্ভর হয়ে রইলো।

একদিন হঠাৎ দশদিক দাপিয়ে ঝড় শুরু হল। ঝড়ের সেকি তান্ডব – বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নদী পানিও যেন দুকূল ছাপাতে চাইছে। উপরে বাতাস আর নীচে নদীর জোয়ারের তোড়-গাছা একা আর সামলে উঠতে পারলোনা। বাতাস গাছার শক্ত ডাল এক এক করে ভেঙ্গে ফেলল। নদীর জোয়াড়ে গাছার শেকড়ের বুণনকে আলগা আলাদা করে দিল।

গাছি তার দুর্বল শরীর দিয়ে গাছাকে সাহায্য করতে চাইলো। চাইলেই কি আর সব হয়? সামর্থ থাকা তো চাই।

ঝড়ের সাথে ঝুলতে ঝুলতে দুর্বল গাছা বললো – “গাছি, যদি তোমার শাখাকে বাড়তে দিতাম তবে আজ ‘আমরা একসাথে’ পাগলা হাওয়া রুখতে পারতাম, তোমার শেকড় যদি মজবুত হতে দিতাম তবে আজ দু’জনে মিলে মাটি আঁকড়ে রাখতে পারতাম। হায়! তোমার বশ্যতা পাবার লোভের আজ এ পরিনতি। শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার আর বশ্যতার নিস্ক্রিয়তায় ভালবাসা নেই; পারস্পারিক সম্মানের ভারসাম্যেই ভালবাসা।”

বাতাসের শোঁ শোঁ গোঙ্গানী ছাপিয়ে মড়-মড়াৎ শব্দ হল। পরের দিন পাখির ঝাঁক এসে তাদের চিরপরিচিত বসার জায়গা আর খুঁজে পেলনা। তারা দেখল নদীর চরে শিকড় উপড়ে পাশা পাশি পড়ে আছে দু’টি গাছ।

কানিজ ফাতিমা
লেখিকা, ট্রেইনার, শিক্ষিকা এবং গণসচেতন কর্মী

 

নিয়মিত ফাস্টফুডে নারীদের গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে

নারী সংবাদ


যে নারীরা নিয়মিত ফাস্টফুড খান কিন্তু ফলমূল কম খান, তারা গর্ভধারণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন বলে নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।

৫৫৯৮ জন নারীর ওপর একটি গবেষণার পর দেখা গেছে, যারা ফাস্টফুড খান না, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে চার বা আরো বেশিবার ফাস্টফুড খান, তাদের গর্ভধারণে অন্তত একমাস সময় বেশি লাগে।
তাদের সন্তান ধারণ করতেও বেশি সময় লাগে বলে ওই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এটা প্রমাণ করছে যে, ভালো খাবার খেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়’।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য আর আয়ারল্যান্ডের নারীদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, প্রথম সন্তান ধারণের কয়েক মাস আগে তারা কোন ধরণের খাবার খেয়েছিলেন। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, ‘যে নারীরা মাসে তিনটার কম ফল খেয়েছেন, তাদের গর্ভধারণে নিয়মিত ফলাহারীদের তুলনায় দেড় মাস সময় বেশি লাগে’।

তারা দেখেছেন, ‘যারা ফল কম খায় বা ফাস্টফুড বেশি খাচ্ছেন, তাদের অনেকে পুরো বছর জুড়ে চেষ্টা করেও গর্ভধারণ করতে পারেননি’।

তবে কোন যুগলের পুরুষ সঙ্গী যদি ফাটিলিটি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, তাদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

গবেষণা দলের প্রধান, ইউনিভার্সিটি অব এডিলেডের অধ্যাপক ক্লারি রবার্টস বলছেন, ‘এই পর্যবেক্ষণ বলছে যে, ভালো মানের খাবার খাওয়া আর ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে পারলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি গর্ভধারণ করা যায়’।

তবে অনেকে এর সমালোচনা করে বলছেন, এই গবেষণায় অল্প কিছু খাবারকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু গর্ভধারণে হয়তো আরো অনেক বিষয়ের প্রভাব থাকতে পারে। এমনকি বাবাদের খাবারের বিষয়ে এখানে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।

তারপরেও এই গবেষণাটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন, ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের অধ্যাপক জিনো পেকোরারো বলছেন, ‘সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা মনে করেন, এই গবেষণা সেটিকেই সমর্থন করেছে যে, যে যুগলরা সন্তান নিতে চান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে।’
সূত্র: বিবিসি

 

একজন ডাক্তার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার গল্প

ফাতেমা শাহরিন


তানজিলা জলিল অমি। হলি ফ্যামিলি মেডিক্যাল কলেজ এবং হসপিটাল থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন। একাধারে ‘কণ্ঠী’ এর ওয়নার,  ডিজাইনার দুটোই।

এক বছর আগের কথা,  নিজের ভেতরই পরিবর্তনের ডাক পেলেন অমি এভাবেই শুরু হল তার ‘কণ্ঠী’ র যাত্রা। ‘কন্ঠী’ মূলত হাতে বানানো গয়না এর অনলাইন দোকান। কন্ঠীর শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে অমি বলেন,  আমার প্রথম অনলাইন শপ আবোলতাবোল ক্রাফটস থেকে। মূলত ক্রাফটিং ম্যাটেরিয়াল সেল করতাম। ম্যাটেরিয়াল নিয়ে কাজ করতে করতেই এক সময় অল্পকিছু গয়না বানানো হয়। সবার ভালোলাগা আর উৎসাহতেই কন্ঠী চালু।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অমি বলছিলেন, ‘কণ্ঠী’ তে মূলত আমি একাই কাজ করি। এছাড়া আমার একজন ওয়ার্কার আছেন যিনি হাতের কাজ করেন। আমি কাজ কারো কাছে শিখিনি। নিজে নিজেই শেখা। ছোটবেলা থেকেই ক্রাফটিং এ উৎসাহ ছিলো আমার।
ম্যাটেরিয়াল সেল এর কারনে কাজ করা আরো সুবিধাজনক হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, সবচাইতে বেশি সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন মা এবং কাছের দুই একজন বন্ধুর কাছ থেকে।

নারী হিসেবে কাজটি তার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল?
এ প্রসংগে অমি বলেন, নারী হিসাবে সবচাইতে সমস্যা হল, গয়না বানানোর কাঁচামাল জোগাড় করা। কারণ আমাদের দেশে এখনো হাতের কাজ জনপ্রিয় না। এবং এসবের পরিসর অনেক কম। সেগুলো খুঁজে বের করা এবং কাজ করা কিছুটা কঠিন। এছাড়া বড় চ্যালেঞ্জ মুলধন। নিজ উদ্যোগ কাজ শুরু করা আবার নারী হিসাবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে কোনো কাজেই সাফলতা পাওয়া কিছুটা কষ্টকর। বড় সমস্যা হল, মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগীতা কম পায়। বাধা প্রধানত, পরিবার থেকে আসে। দ্বিতীয়ত, মূলধনের অভাব তো আছেই।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা  অমি বলেন,’মেয়েদের সাবলম্বী হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট ভালো সুযোগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করা। কারন ঘরে থেকেই এই কাজ করা যায়। সীমিত মুলধন হাতে থাকলেও শুরু করা যায়।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অমির মতে, ‘নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটা কথাই হল, ‘কোনোভাবেই হার মানা যাবেনা।’ অনেক বাঁধা আসবে। অনেক কষ্ট করতে হবে। কিন্তু তবুও সামনে এগোনোর চেষ্টা করতে হবে। কণ্ঠী নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান অমি। তিনি অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও কন্ঠীকে নিয়ে যাবেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষমতাই আসলে অমির কাছে বড় সফলতা।’

পরিশেষে একটাই কথা বলা যায়, যে কোন পেশার হতে পারেন সেটায় জীবনের মুল লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হওয়া চাই ‘সফলতা’। আর সফলতার জন্য কেবল মাত্র চাকুরিই মাধ্যম নয় বরং পরিশ্রমী, আত্মবিশ্বাসী, বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোক্তা হতে পারাটাই বড় সফলতা নিশ্চিত করে।

 

রোযায় খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য (পর্ব- ১)

ডা. ফাতিমা খান


রহমত, বরকত ও মাগফিরাত এর পয়গাম নিয়ে আসে মাহে রমজান। আমাদের দেহযন্ত্রটি সার্ভিসিং করার জন্যই এ মাসের আগমন ; শুধু দেহই নয়, আত্নার পরিশুদ্ধিরও এক বিশাল সুযোগ দেয়া হয়েছে এ মাসে। ইসলাম ধর্ম ছাড়া আরও কিছু ধর্মে উপবাসের প্রথা চালু আছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের মত এত সহজ ও স্বাস্থসম্মত নিয়ম-নীতি অন্য কোন ধর্মে নেই। তাই রোযা অনেকগুলো রোগ-ব্যাধির চিকিৎসাও বটে। এসময় সাহরী ও ইফতারের খাদ্যতালিকার ব্যাপারে আমাদের একটু মনোযোগি হওয়া উচিৎ। অনেক সময় রোযার মাসে খাবার নির্বাচনে ভুল করায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ে রোযা রাখা থেকে বিরত থাকেন। আসলে একটু খেয়াল করে স্বাস্থ্যসম্মত মেনু নির্বাচন করা হলেই আর স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়না।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত :

সাহরীর খাবার এমন হওয়া উচিত যা দীর্ঘক্ষন পেটে থাকে অর্থাৎ হজম হতে বেশি সময় লাগে। কেউ কেউ মনে করেন, সাহরীতে প্রচুর পরিমান আমিষ ( Protien) জাতীয় খাবার খেলে সারাদিন একটু সবল থাকা যাবে। কেউ কেউ আবার ভাত (Carbohydrate) বেশী খাওয়ার পক্ষপাতি। আসলে এর কোনটিই ঠিক নয়। সাহরীতে খাবারের প্রত্যেকটি উপাদান যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ে হয়ত আমরা এভাবে সুষম খাবার খাওয়ার কথা ভাবি না, কিন্তু অন্যান্য সময় ত বটেই, রোযার মাসে এ দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবারের কোনটিই যেমন খাদ্যতালিকায় বাদ পড়া উচিত নয়, তেমনি কোনটি পরিমানে বেশী খাওয়া ঠিক নয়। শর্করা জাতীয় খাবার বেশী খাওয়ার ফলে pancreas থেকে ইনসুলিন এর নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্লুকোজ কে রক্ত থেকে দ্রুত দেহকোষে প্রবেশ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ইনসুলিন এর কারনে রক্তে গ্লুকোজ বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণের কারণে দেহের স্থুলতা বেড়ে যায়। আবার,আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে দৈনিক যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষ-হজমকারী এঞ্জাইম আমাদের পাকস্থলি থেকে নিসৃত হয় , তা দিয়ে অতিরিক্ত আমিষ হজম করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অতিরিক্ত আমিষ গ্রহনের ফলে শরীরে ঝিমুনি আসে ও রক্তে ইউরিয়ার পরিমান বেড়ে যায়, যা দেহের জন্য একটি ক্ষতিকারক বর্জ্য পদাথ। অনুরূপভাবে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার দেহকোষ ও রক্তে অনাকাংখিত মেদ তৈরী ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। যাদের পিত্তথলি বা লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত চর্বি অত্যন্ত ক্ষতিকর !তাই রোযার মাসে সাহরীতে অন্য মাস গুলোর মত স্বভাবিক খাবার খাওয়াই শ্রেয়ঃ। তবে জটিল শর্করা জাতীয় খাবার খুব ধীরে হজম হয় বলে এ ধরনের খাবার সাহরীতে খাওয়া ভালো। যেমন- ঢেঁকিছাটা চালের ভাত, লালরুটি, পাউরুটি, বার্লি, সব রকমের আলু, oatmeal, pasta, macaroni, spaggetti ইত্যাদি। এই খাবারগুলো পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ স্থিত থাকে ,হজম হয় ধীরে ধীরে। তাই রোযাদারের ক্ষুধাভাব কম অনুভব হয়। এর সাথে পছন্দ অনুযায়ী পরিমিত মাছ/ মাংস ও প্রচুর শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে। একজন রোযাদারের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন যথেষ্ঠ পানি ( দৈনিক অন্তত ২ লিটার ) ও তাজা ফলের রস পান করা । অনেকেই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। পানি দেহকে সতেজ রাখে। শরীর নামের কারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক কার্যকলাপের মূল উপাদান এই পানি। পানি কম খেলে দেহের বর্জ্য পদাথগুলো বের হয় না, দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা। স্বাস্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সাহরীতে খাওয়ার বেলায় আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াই উত্তম – অর্থাৎ পাকস্থলীর তিন ভাগের একভাগ খাবার ও তিন ভাগের একভাগ পানি দিয়ে পূরণ হবে এবং বাকী এক ভাগ খালি রাখতে হবে শ্বাস নেয়ার জন্য। অনেকেই হয়ত ভাববেন, আমরা তো পাকস্থলী দিয়ে শ্বাস নেই না, তাহলে পাকসথলীর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস নিতে সাহায্য করে কেমন করে ? উত্তরটা খুবই সহজ। পাকস্থলীর উপরে আছে ‘ডায়াফ্রাম’ নামের একটি বড় মাংসল পর্দা। আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি, তখন ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং ফুসফুস স্ফীত হয়। খাদ্য দিয়ে পাকস্থলী পুর্ণ থাকলে শ্বাস গ্রহণের সময় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের এই মূল পেশী – ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নামতে পারেনা, ফুসফুস পর্যাপ্ত স্ফীত হয় না ও পরিমাণমত অক্সিজেন দেহে প্রবেশ করতে পারে না। তাই খাবার গ্রহণের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর Golden theory of one third মেনে চলা আবশ্যক।

ইফতারে যা খাওয়া উচিত :

সারাদিন রোযা থাকার পর পাকস্থলীতে এমন কিছু খাবার দেয়া উচিৎ যা দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায় ও বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে। ইফতার হিসেবে সরল শর্করা উত্তম। কেননা এটি দ্রুত হজম হয় ও শক্তি যোগায়। দেহের শরীরবৃত্তীয় চাহিদা পূরনের জন্য কিছু Essential elements গ্রহণ করা জরুরী। যেমন- মস্তিষ্কের খাদ্য হল গ্লুকোজ । গ্লুকোজের অভাবে মস্তিষ্কের কাজ ব্যাহত হয়। সৃষ্টিকর্তা মস্তিষ্ককে এভাবে তৈরী করেছেন যে, ইন্সুলিনের সাহায্য ছাড়াই গ্লুকোজ মস্তিষ্ক কোষে ঢুকে যায়।

শরীরের আরেকটি গুরুত্বপূরণ অঙ্গ হল কিডনি, যা পানির অভাবে মারাত্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ১২ ঘন্টায় ৩০০ মিলি র কম প্রস্রাব উৎপন্ন হলে kidney failure এর সম্ভবনা থাকে।
দেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন- সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি অত্যাবশ্যক। ইফতারে এমন সব খাবার খাওয়া উচিত যে খাবারে প্রয়োজনীয় পরিমান পানি, গ্লুকোজ ও খনিজ উপাদান থাকে। তাতে মস্তিষ্ক, কিডনি ও ত্বকের কার্যক্রম ঠিক থাকে।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ” যদি তোমাদের কেউ রোযা রাখে তাহলে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যদি সে তা না পায় তাহলে পানি দিয়ে। নিশ্চয়ই পানি হল পরিশোধক ( Purifiyer)।” [সূত্র-বুখারী ও বায়হাকী]

এদিক থেকে চিন্তা করলে পানি, শরবত ও ফলের রস ইফতার হিসেবে অতি উত্তম। খেজুরে আছে গ্লুকোজ ও নানা ধরনের খনিজ উপাদান। এতে রয়েছে সরল শর্করা যা দ্রুত শোষন হয় এবং মস্তিষ্ক ও দেহে শক্তি জোগায়। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বিভিন্ন হৃদরোগ প্রতিরোধে খেজুরের অবদান অপরিসীম। হাড়ের সুস্থতা ও রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রেও।

 

সৌন্দর্য্য সচেতনতা নাকি স্বাস্থ্য

মিথিলা ফেরদৌস


জীবনে প্রথম বিউটি পার্লার গিয়েছিলাম, ডাক্তার হবার পর, আমার দুই কাজিনের সঙ্গে , যারা আমার হাঁটুর বয়সি, তাদের কাজে, আমার কাজে না।

সেই বয়সেই তারা সৌন্দর্য সচেতন। বাসার কাছেই পার্লার। গিয়ে অপেক্ষা করছি, সোফায় দুই বোন আমার দুই পাশে বসে, কিছুক্ষন পর আরও দুইটা মেয়ে ঢুকলো, আমাদের সামনের সোফায় বসলো। আমার দুইবোন সঙ্গে সঙ্গেই , আমার দুই পাশে দুই হাত ধরে টেনে পার্লার থেকে বের করে আনলো, বুঝলাম না কি হইছে। একজন বললো, পরে আসা ওই দুই মেয়ের মধ্যে একজন তাদের কাজের বুয়ার মেয়ে।

আমি একটু অবাক, তাতে কি? তাদের কথায় বুঝলাম শ্রেণী সচেতনতা। তারা ডিক্লেয়ার করলো, এই পার্লারে তারা জীবনেও আসবে না।

রংপুর শহরে এক রাস্তার দুই কিমি. এর মধ্যে ১৩ টা পার্লার আছে। মানুষ দিন দিন সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে। খারাপ না। চাকুরী সুবাদে অনেক রিমোট অঞ্চলে আমার পোস্টিং ছিলো, সেইসব জায়গায়ও বিউটি সেলুন দেখেছি অনেক।

আমার বাসার কাছে একটি পার্লারের নতুন একটি ব্রাঞ্চ খুলবে ব্যাপক প্রচার। মসজিদে পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে, জুম্মার নামাজের দিন আমার ছেলে হাতে করে লিফলেট আনলো, এছাড়া নেটে মোবাইলে প্রতিদিন ম্যাসেজ আসে।

একটু উৎসুক হইলাম। হইতেই পারি।মেয়ে তো। উদ্বোধনের দুইদিন পর গেলাম।১০% ছাড় চলতেছে। তিন তলায় পার্লার,শুধু পার্লারের জন্যে আলাদা লিফট। ভিতরে ঢুকেই আমার মাথা নষ্ট। এত্তো সুন্দর ইন্টিরিয়র ডিজাইন। সুন্দর সুন্দর মেয়েরা ঘুরছে চারিদিকে, সবাই দেখে সুন্দর হাসি দিচ্ছে, গুডমর্নিং ম্যাম,ওয়েলকাম, জটিল অবস্থা, কারে কি উত্তর দিবো।

যেখানে চাকরী করি সেখানে তো এইসবের কারবার নাই, তাই অভ্যস্ত ও নই। যাইহোক ঢুকার পর আমাকে একগাদা ফর্ম ফিল আপ করতে দেয়া হলো। এই একটা কাজ আমার বিষের মত লাগে, ফর্ম ফিল আপ। মনে হচ্ছে বিসিএস এর ফর্ম ফিল আপ করতেছি।ভাগ্য ভালো গোল্লা পুরন নাই। এককপি ছবিও দিতে হইলো। আটাস্টেড লাগে নাই।যথারীতি কাটাকুটি করে ফর্ম ফিল আপ করে দিলাম। একটা পয়েন্ট কার্ড দিলো।

এরপর বিশাল লাইনের পিছনে কাউন্টারে দাড়ালাম, আমার সামনে যারা, তারা বেশির ভাগ মধ্যবয়সি, অথবা কম বয়সি মেয়ে। বেশির ভাগ দেখলাম, ৫০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকার কাজ, মনে মনে ভাবলাম, এরা কি সারাদিন এখানেই থাকবে?!

আমার পালা আসলো,
–কি করবেন ম্যাম??
কি করবো বুঝতে পারছিনা,বললাম
–চুল কাটাবো
মেনু বের করে দিলো, মেনু দেখে চুল কাটার নাম না পড়ে দাম দেখা শুরু করলাম ১২০০ টাকা থেকে শুরু, আমার মুখ দেখে ওরা বুঝেছে, বললো
–ম্যাম আপনি কি রেগুলার হ্যান্ডে(আনএক্সপার্ট হ্যান্ড)
কাটতে চান তাহলে খরচ একটু কম পড়বে।
— হুম।
সেই মেনুর ও দাম শুরু ৬৫০ টাকা দিয়ে।মনে মনে ভাবলাম, আমার চার টা চুল, আমার রেগুলার হ্যান্ড, জামাই কেটে দিতে পারবে।
বললাম
–চুল কাটবো না। ফেসিয়াল করবো।
ফেসিয়ালের লিস্ট বের করলো, কি কি সব নাম, আবার দাম দেখা শুরু করলাম, সবচেয়ে কম দাম ৩০০০টাকা। বললাম
–আর কিছু নাই?
–ম্যাম এইটা স্পা,রেগুলারে কম খরচ পড়বে।
ওরা আমারে বুঝে গেছে। বললাম দেখি।আবার মেনুতে নাম না দেখে দাম দেখা শুরু করলাম, সবচেয়ে কম দাম ৯৫০ টাকা, নাম টাও চেনা। অরেঞ্জ ফেসিয়াল।কি আর করা। কাউন্টারে বিল দিয়ে স্লিপ নিয়ে অপেক্ষার পালা। তখন পুরাটা খুটে খুটে দেখা শুরু করলাম।

চারিদেকে সুরুচির চিহ্ন। একটা দেয়ালে দুই প্বার্শে গ্লাসের মধ্যে ফোয়ারা, সুন্দর লাইটিং তার মধ্যে, চারিদিকে দেয়ালে সুন্দর সুন্দর ছবি ঝুলানো, প্রতিটা কর্নারে দামী দামী ক্রিস্টালের শো পিস। এমন কি ওয়েটিং কর্নার গুলো এতো সুন্দর সুন্দর চেয়ার। কোথাও ইংলিশ গান, কোথাও হিন্দি গান, কোথাও শুধু মিউজিক। ক্লিনার রা পরিষ্কার করে যাচ্ছে, কিছুক্ষন পর পর পারসোনা লোগো এর কাপে চা দিয়ে যাচ্ছে। একগাদা পত্রিকা। এর মধ্যে মাইকে আমার নাম শুনে চমকে উঠলাম, যাইহোক আমার পালা।গেলাম,সেখানে আমাকে একেবারে নতুন একটা ড্রেস দেয়া হলো।

আমি তীব্র ভাবে বললাম,আমি অন্য ড্রেস পরতে পারবোনা,আমার শুধু মুখ পরিষ্কার করে দেয়া হোক।যাই হোক ফেসিয়াল শুরু।আমার মত একটা রেস্টলেস মেয়ের জন্যে যা বিভিষিকা।চোখ বন্ধ করে থাকা। আমি বার বার বলছিলাম,
–কখন শেষ হবে?
বাসায় আসার পর আমার জামাই অফিস থেকে এসে বলে
—তোমাকে এত কালো লাগতেছে কেনো? কি হইছে?তোমার না আজ পার্লার যাবার কথা!!
—গেছিলামতো।
—-তাহলে এই অবস্থা কেন?
—–তোমার কি ধারণা,পার্লার গেলে একদিনে বাজিগরের কাজল,কাভি খুশি কাভি গমের কাজল হয়ে যায়?অসহ্য।

আমার ছেলে যে সেলুনে চুল কাটে,ঢাকা শহরে,সব বড় মার্কেটে তার ব্রাঞ্চ আছে।কয়দিন পর পর দাম বাড়ায়,আর আমার জামাই বলে আর জীবনেও আসবোনা।কিন্তু ছেলে জিদের কাছে পরাজিত বাবা বার বার যেতে হয়।কারণ সেখানে গাড়ীতে বসে চুল, কাটতে কাটতে কার্টুন দেখে, চুল কাটার পর খেলনা পাওয়া যায়।

আমার আজকে লেখা মুল উদ্দেশ্য,মানুষ দিনে দিনে যতটা সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে, ততটা স্বাস্থ্য সচেতন হতো যদি। একজন ডাক্তারকে ৫০০ টাকা ভিজিট দিতে তাদের যে কষ্ট, অবলীলায় পার্লারে হাজার হাজার টাকা দিতে তাদের তেমন কোনো কষ্টই হয়না। অথচ এইসব পার্লার থেকে কত কত স্কিন ডিজিস এনে ডাক্তারদের ৫০০ টাকা দিতে তাদের এত পরান কান্দে কেনো?

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ
______________________________
মিথিলা ফেরদৌস

 

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে (শেষ পর্ব)

আফরোজা হাসান


বেশ কয়েকমাস আগে একজন ব্যক্তির কিছু কথা ও কাজের কারণে তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধে চিড় ধরে গিয়েছিল। প্রফ বোঝাতে চেষ্টা করছিলেন কারো একটা বা দুটা ভুল আচরণের জন্য তার উপর নেতিবাচকতার সাইনবোর্ডই লাগিয়ে দেয়াটা অন্যায়। কেউ ভুল ত্রুটির উর্দ্ধে নয় এটা সবসময় মনে রাখা উচিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা যাদেরকে পছন্দ করি তাদেরকে মনের সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা দিয়ে ফেলি। তাই তাদের সামান্য চ্যুতিও আমাদেরকে মুষড়ে দেয়। আর চ্যুতি যখন ক্রমাগত হতে থাকে তখন শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। অবশ্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরও সচেতন থাকা অবশ্যক। কেননা একটা আচরণের দ্বারা যদি আমি কারো মনে শ্রদ্ধার বীজ বপন করি। তখন সেই বীজটা যাতে অক্ষত থাকতে পারে, বীজ থেকে চারা বের হতে পারে, চারা গাছে রূপান্তরিত হতে পারে সেই দায়িত্বটাও আমারই পালন উচিত। সবসময় শুনেছি শ্রদ্ধা অর্জন করার চেয়ে টিকিয়ে রাখাটাই বেশি কঠিন। প্রফের কাছ থেকে জেনেছিলাম নিজ আচরণ দ্বারা কারো মনে যদি শ্রদ্ধার জন্ম দেই তাহলে সেটাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমারই।

এমন ছোট-বড় আরো কতই কিছুই না শিখিয়ে গিয়েছেন উনি আমাদেরকে। যা যা মনে পড়েছে এক এক করে সব লিখে মেইল পাঠিয়ে দিয়েছি প্রফকে। জানি সেই মেইল উনি হয়তো দেখবেন না কোনদিন। তবুও আমি এমনটা করেছি নিজের মনের স্বস্থির জন্য। কেননা মনে স্বস্থি না থাকলে জীবনে সব থাকতেও কোথাও শান্তি মিলে না এটা আমার খুব ভালো মতই জানা আছে। তাই সদা সতর্ক থাকতে চেষ্টা করি যাতে কিছুতেই মনের স্বস্থি বিঘ্নিত না হয়। কিন্তু সবসময় পারিনা। প্রফ যেহেতু আমার কলিগও ছিলেন এমন বেশ কয়েকবার হয়েছে উনার উপর রেগে গিয়েছি, যা বলেছেন তার উল্টো বলেছি, আমার যুক্তির সাথে মেলেনি তাই কেয়ার করিনি উনার কথা। সব বার হয়তো তেমন করে সরি বলাও হয়নি। গত তিন-চার মাস থেকে খুব কথা বলতে চাইতেন আমার সাথে। আমারো নানান ঝামেলা যাচ্ছে তাই নিজে তো ফোন দিতামই না উনি করলেও তেমন করে কথা বলা হয়ে ওঠেনি যেমনটা করে উনি বলতে চাইতেন।

আজ এসব স্মৃতি মনেকরে অপরাধবোধে ভোগা, দুঃখিত হওয়া আসলে অর্থহীন। কেননা আমার কোন অনুভূতিই উনার কাছে পৌছোবে না। কথায় বলে জীবনে সুযোগ, সম্ভাবনা একবারই আসে। হেলায় হারিয়ে ফেললে তাকে আর পাওয়া যায় না জীবনে। কিন্তু আপনজন, প্রিয়জন, পছন্দের মানুষদের ঘিরে স্মৃতিগুলোকে সুন্দর করার সুযোগ বার বার আসে, আর আসতেই থাকে আমাদের জীবনে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আমরা সেই সুযোগকে কাজে লাগানো তো দূরে থাক, সেটা যে একটা সুযোগ এটাই অনুভব করতে পারি না।

সমস্ত অনুভব, উপলব্ধি একসাথে মনে এসে ভিড় করে যখন সেই মানুষগুলো আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায় অনেক দূরে। অথচ এই মানুষগুলোই জীবন যখন তপ্ত দাহ নিয়ে হাজির হয়, এরা হয় প্রশান্তিকর ঘন ছায়া! পিপাসাক্ত পথিকের মত মন এদের মাঝে খুঁজে পায় মিঠা পানির সরোবর! হতাশার ঘোর অমানিশায় এরাই জ্বালিয়ে যায় আশার প্রদ্বীপ! অসহায়ত্বের প্রহরগুলোতে জাগায় নির্ভরতার আশ্বাস। পথহারা মুহুর্তেকে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয় গন্তব্যের দিশা!

ভালোবাসার রেণু ঝরিয়ে যায় এরা শব্দে শব্দে! ধূসর গোধূলি বেলা এদের ছোঁয়ায় পরিণত হয় মাহেন্দ্র ক্ষণে! ধূ ধূ মুরুভূমিকে মনেহয় চন্দ্রালো ছড়ানো শালবন! মেঘলা আকাশকে করে দেয় রোদেলা দুপুর। এরা সবসময়ই অবস্থান করে মনের অনুভূতির বিপরীতে।

যাতে জীবন বীণা যখন বেদনার ঝঙ্কার তোলে ছড়িয়ে দিতে পারে আনন্দের বাণী। এরা আসলে ঠিক কেমন সেটা প্রকাশ যোগ্য না। তবে যারাই জীবনে এমন কারো সন্ধান পায়, আল্লাহর রহমা স্বরূপই পায়। সবসময় যে পরিবারের সদস্যই হয় এমন মানুষগুলো এমনটা ঠিক না।

রক্তের বন্ধনের বাইরেও কেউ হয়ে উঠতে পারে আপনার আপন। বন্ধন রক্তের হোক কিংবা মনের এটা আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বন্ধনের হক আদায় করা, তাদের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি দেয়া। যাতে তারা জীবন থেকে অতীত হয়ে গেলে মনের কোণে ভিড় জমাতে না পারে তাদের প্রতি আমাদের দ্বারা সংঘটিত অভিমান, অবহেলা, অনুযোগ, অভিযোগ…।

এমন মানুষ গুলো আসলে আমাদেরকে জীবনকে চিনতে, জানতে ও বুঝতে শেখায়! যাদের কথা এই উপলব্ধি জাগায় যে জীবন যদি নিস্তব্ধতার আঁধারে ঢেকে যায়, তবুও সেটা আমাদের জন্য আল্লাহর দেয়া আমানত। দুঃখের অমানিশায় তাই জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে টেনে নিতে হবে।

আগাছায় ছেয়ে গিয়েছে বলে ত্যাগ না করে মমতার চোখে তাকাতে হবে জীবনের দিকে। তাহলেই চোখে পড়বে আগাছার ফাঁকে ফাঁকে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়া ঘাসফুলদের। এই প্রিয় মানুষগুলো যদি কখনো হারিয়ে যায়, তবুও সবসময় বেঁচে থাকে মন মাঝারে। কেননা উৎসাহ-প্রেরণা-স্নেহ-মায়া-মমতা-আদর-শাসন ও ভালোবাসার আদলে এরাই গড়ে দিয়ে যায় জীবনের ভিত্তি। হারিয়ে গিয়েও তাই এরা বেঁচে থাকে যাপিত জীবনের প্রতিটি কথা, কাজ ও দর্শনে।

 

চট্টগ্রামে নবম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা

নারী সংবাদ


নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী তাসফিয়া আমিন বয়স ১৬ বছর। চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম ছাত্রী। বন্ধুর আদনান মির্জার সাথে সৈকতে বেড়াতে গিয়ে লাশ হলেন। পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ সৈকতে ফেলে দেয়া হয়।

গতকাল (বুধবার) নগরীর পতেঙ্গা থানার নেভাল বিচ এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে চোখ, নাক-মুখ থেঁতলে যাওয়া ওই স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বেলা ১১টায় স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নেভাল একাডেমির ১৮ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

তাসফিয়া আমিন নগরীর নাসিরাবাদ ইংলিশ মিডিয়াম সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার পিতার নাম মোঃ আমিন। তাদের বাসা নগরীর ও আর নিজাম রোড আবাসিক এলাকায়। তাদের বাড়ি কক্সবাজার শহরের ডেইলপাড়া এলাকায়। লাশটি অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধারের পর দুপুরে তার বাবা আমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

পরিবারের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে আদনান মির্জা নামে এক বন্ধুর সঙ্গে তাসফিয়া বেড়াতে বের হন। দুজন কিশোর কিশোরী। তারা দুইজনেই ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সানশাইন এ পরেছে। সেখানেই তাদের পরিচয়। আর সম্পর্ক ১ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ঘুরতে বের হয়। এরপর রাতে আর বাসায় ফেরেনি। আদনান মির্জার সন্ধানে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, ফেইসবুকের মাধ্যমে ওই যুবকের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে দুইজন।

পতেঙ্গা থানার পরিদর্শক ফৌজুল বলেন, পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ফেইসবুকে পরিচয়ের পর আদনান মির্জা নামে এক যুবকের সঙ্গে এক বছর আগে থেকে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাসফিয়া। আদনানের সঙ্গেই তাসফিয়া পতেঙ্গা সৈকতে এসেছিল বলে পরিবারের ধারণা। আদনানকে আমরা আটকের চেষ্টা করছি। তার ধারণা, তাসফিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীর তীরে ফেলা হয়েছে।

ফৌজুল আজিম চৌধুরী জানান, তার দুই চোখ, নাক ও মুখ থ্যাঁতলানো ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মুখে ফেনা ও রক্ত আছে। তার পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। স্থানীয়রা দেখে তাকে প্রথমে বিদেশি বলে ধারণা করে। নদীর তীরের উঁচু স্থান থেকে আনুমানিক ৮-১০ ফুট নিচে পাথরের ওপর লাশটি পড়ে ছিল। তার ধারণা আগের রাতের যেকোন সময় তাকে খুন করে লাশ সেখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি। সুত্র: ইন্টারনেট এবং ফেসবুক।

 

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে……১ম পর্ব

আফরোজা হাসান


“আমাদের জীবনের সবচেয়ে অবধারিত ঘটনা হচ্ছে মৃত্যু। তাই একটি মুহুর্তকেও এলোমেলো, অগোছালো, উদ্দেশ্যহীন ভাবে কাটানোর কোন সুযোগ নেই। তাই কোন ভাবনা যদি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিঘ্নিত করে তবে সেটা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। কেননা কোন কিছুর বিনিময় জীবনের স্বাভাবিকত্বের সাথে হতে পারে না।” কথাটি আমাদের নিউরো সাইকোলজির প্রফ বলেছিলেন আমাদের এক ক্লাসমেটকে। ক্লাসমেটটি তার পারিবারিক কিছু জটিলতার ভাবনাতে এতোই এলোমেলো হয়ে পড়েছিল যে তার প্রভাব পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো। প্রফের কথাটি শোনার পর শুধু সেই ক্লাসমেটই নয় আমরা সবাই’ই সতর্ক হয়েছিলাম আমাদের সেইসব ভাবনার ব্যাপারে যা অকারণ জটিলতার বীজ বুনে চলছিল আমাদের জীবনে।

আমার সবচেয়ে প্রিয় টিচারদের একজন ছিলেন উনি। শুধু তাই নয় যাদেরকে দেখে শিখেছিলাম জীবনকে জীবনের মত করে যাপন করতে, যাদের কাছে জেনেছিলাম জীবনে সুখী হবার সবচেয়ে শর্টকার্ট ও ফলপ্রসূ টিপস হচ্ছে,সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা উনি তাদেরও একজন ছিলেন। কিছু মানুষ বুঝিয়েছিলেন জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেসব ঘটনার জন্য কাউকে দায়ী না করে নিয়তি লিখন হিসেবে তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়াতেই কল্যাণ নিহিত থাকে।কেননা তাহলেই কেবল মানুষ সবকিছুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারে। সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারে জীবনের প্রতিটা চড়াই-উৎরাইকে। উনাদেরকে দেখেই উপলব্ধি করেছিলাম নিজের সমস্যা ও কষ্টকে কখনোই বড় করে দেখা ঠিক নয়। আর সেজন্য সবসময় মনে রাখতে হবে যা ঘটার কথা ছিল তাইঘটেছে, আর যা ঘটেছে তার মধ্যেই নিহিত আছে কল্যাণ।

বাবা সেই ছোটবেলা থেকেই বার বার বলতেন, ´´কখন যে জীবন বৃক্ষ থেকে হঠাৎ কে ঝরে যাবে সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তাই আপনজন, প্রিয়জন, পছন্দের মানুষদেরকে কখনোই যথাযথ মূল্যায়ন করতে অবহেলা করবে না। ´´ কিন্তু তারপরও অবহেলা যে হয়েই যায় সেটা আবারো অনুভব করলাম আমাদের নিউরো সাইকোলজির প্রফের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর। মনের পর্দায় ভেসে এসেছিল ‘খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাতের মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী আর গাজরের লাড্ডু খেতে’। শেষ যেদিন কথা হয়েছিল আমার হাতের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে এই আবদার করেছিলেন প্রফ। একবার কোলকাতায় গিয়ে “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন…” এই রবীন্দ্র সঙ্গীতটি শুনেছিলেন প্রফ। ফিরে এসে ক্লাসে জানতে চাইলে অর্থ বুঝিয়ে বলার পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেছিলেন, আচ্ছা ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ তোমরা কি আমাকে মনে রাখবে? তোমরা আমাকে মনে রাখতে পারো এমন কিছু তোমাদেরকে শেখাতে পেরেছি? এরপর থেকে প্রতি ক্লাসের পরই উনি আমাদের সবার কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় জানতে চাইতেই, আমাকে তোমরা মনে রাখবে এমন কিছু আজ শেখাতে পেরেছি?!

আমরা কখনোই খুব একটা সিরিয়াসলি নেইনি প্রফের প্রশ্নটিকে। বেশির ভাগ সময়ই হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। উনার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর প্রথমেই কানে বেজে উঠেছিল ‘খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাতের মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী আর গাজরের লাড্ডু খেতে’। চোখ থেকে ঝরঝর অশ্রু নেমে এসেছিল। এমনটা আমার দ্বারা কখনোই হয় না সাধারণত। কেউ কিছু খেতে চাইলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি তাকে সেটা রান্না করে খাওয়াতে চেষ্টা করি। জানি না কেন প্রফের ক্ষেত্রে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে আজ করবো কাল করবো করে করে শেষপর্যন্ত আর উনার জন্য রান্না করাই হলো না। ‘আমাকে তোমরা মনে রাখবে এমন কিছু আজ শেখাতে পেরেছি’? এই প্রশ্নটার কথা মনে পড়ার পর বেদনার আরেকটি তীব্র স্রোত বয়ে গিয়েছিল অন্তর জুড়ে। কেন এই ছোট ও সহজ প্রশ্নটির জবাব নিয়ে এত হেয়ালি করেছিলাম? বেদনার সাথে যুক্ত হয়েছিল অপরাধবোধও।

অবুঝের মতো ছুটে গিয়েছিলাম রান্নাঘরে। মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী, গাজরের লাড্ডুর সাথে চমচম আর বোরহানিও তৈরি করলাম। প্রফ আমার হাতের চমচম আর বোরহানিও অনেক পছন্দ করতেন। রান্না শেষ করে মেইল লিখতে বসলাম। কত কিছু শিখেছি গত বারো বছরে প্রফের কাছে। এক এক করে সব লিখলাম। প্রফকে দেখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটা শিখেছিলাম সেটা হচ্ছে মানুষের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখা। দীর্ঘ এত বছরে এমন একবারও হয়নি উনি কারো ব্যাপারে সামান্য নেতিবাচক কিছু বলেছেন। কিংবা উনার কাছে কেউ কারো সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলতে চাইলে সেটাকে প্রশয় দিয়েছেন। আমাদের এক ক্লাসমেট যখন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির সবার সম্পর্কে ওর নেতিবাচক ধারণার কথা বলছিল প্রফ বলেছিলেন, সারাজীবন যাদের সাথে কাটাতে হবে তাদের ব্যাপারে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়।

 

মে দিবসে শ্রমজীবি নারী

অপরাজিতা ডেক্স


মে দিবস, ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই সোনার বাংলা গড়তে চাই।’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০১৮ সালের মে দিবস পালিত হচ্ছে। শোষণ, বঞ্চনা আর অক্লান্ত পরিশ্রম থেকে মুক্তির দাবীতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

শ্রমজীবী নারী

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নারী শিক্ষা আনুপাতিক হারে কম আমাদের দেশে। ফলে নারীর স্বীকৃতি মিলছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমজীবী হিসেবে। বর্তমান সময়ে চায়ের দোকান, দিনমজুর থেকে সব ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যায়।

কি কি কাজে নিয়োজিত

নারী শ্রমিকরা মুলত নানানমুখী কাজ করছে।
১.গৃহকর্মী হিসেবে।
২.গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিকদের বিশাল ভূমিকা। গার্মেন্টসে কাজ করা শ্রমিকদের শতকরা ৮০/৯০% ভাগই নারী। ৩.কৃষিকাজেও অংশগ্রহণ।
৪. ইটভাটায়ও কাজ ।
সর্বস্তরেই কোন কাজেই নারীরা পিছিয়ে নেই। নারী শ্রমিকদের প্রতি সম আচরণ ও সমান সুযোগের ঘোষণা গৃহীত হলেও নারী শ্রমিকরা কার্যত সেই সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।

শ্রমজীবী নারীদের বেতন বৈষম্য

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের যৌথ এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, “নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা’ থেকে জানা যায়, শতকরা ৬১ জন নারী শ্রমিক দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন এবং শতকরা ৩২ জন দৈনিক ১০০ টাকার কম মজুরি পান”। অন্যদিকে, শতকরা ৫৬ জন পুরুষ শ্রমিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।

শ্রমজীবি নারীদের আইনগত সচেতনতা

মূলত চারটি আইন সম্পর্কে শ্রমজীবী নারীদের প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। এগুলো হলো :
১. মুসলিম পারিবারিক আইন
২. নাগরিক অধিকার রক্ষা আইন।
এর দু’টো ধারা রয়েছে :
ক. সাংবিধানিক ও খ. ফৌজদারি আইন
৩. মুসলিম উত্তরাধিকার আইন এবং
৪. ভূমি আইন।
একজনকে শ্রমজীবিকে লিখিত সহায়িকা, ছবি সম্বলিত চার্ট, ক্লাস নোট প্রভৃতির মাধ্যমে সহজভাবে ক্লাসে করে করে বিভিন্ন আইনের ধারাগুলো বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।

শ্রমজীবি নারী বা সাধারণ সকলের প্রতি সংবেদনশীল আইনও নারীদেরকে আশ্রয় দিতে হবে, ছায়া দিতে হবে, রক্ষা করতে হবে কিন্তু আদৌ কি পারছে এই সমাজ? মুলত সমাজে পুরুষ এবং নারীর অবস্থা ও অবস্থান যে সম পর্যায়ের নয় এবং তার নাম ঠিকানা পত্রিকায় প্রকাশ যে তার জন্য আজীবন অভিশাপ বয়ে আনে এ বোধ সাংবাদিকদেরকেও ভাবতে হবে। জাতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এসব নারী শ্রমিকদের অবদান অনেক।

 

নবজাতকের যত্ন

ডা. মারুফ রায়হান খান


সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু! এই সারা ধরায় এর চেয়ে সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় বুঝি আর কিছু নেই। নবজাতকের প্রতি আমরা সবাই খুব বেশি যত্নবান হতে চাই, কিন্তু আমরা ঠিকঠাক জানি তো কী কী বিষয় এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত? কোনো বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো? কয়েকটা কথা আমাদের একেবারে সবারই মনে রাখা উচিত। আর সদ্য/ হবু মা-বাবা হলে তো কথাই নেই!

সুস্থ নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি আসলে?

  • মায়ের গর্ভ থেকে যদি ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, এর আগে বা পরে না।
  • জন্মের সময় ওজন যদি ২.৫-৪ কেজি হয়।
  • জন্মের পরপরই যদি স্বাভাবিক কান্নাকাটি করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার।
  • কান্না করার সাথে সাথে বাচ্চার রঙ গোলাপী বর্ণ ধারণ করবে।
  • বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
  • কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকবে না।

বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া 

জন্ম হবার আধাঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বাচ্চাকে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্রই বুকের দুধ খাওয়ান। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক আশ্চর্য রকমের বিশেষ নিয়ামত। বাচ্চাকে এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আর কান পাকা রোগ থেকে রক্ষা পাবেন। বাচ্চা হবে অনেক অনেক বেশি বুদ্ধিমান।

বুকের দুধ কতো বার খাওয়াতে হবে 

বাচ্চাকে আসলে ডিমাণ্ড ফিডিং করাতে হয়। অর্থাৎ বাচ্চা কাঁদলেই খাওয়াতে হবে। রাতের বেলাতেও খাওয়াতে হবে। নিদেনপক্ষে বাচ্চাকে ৮ বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

নবজাতকের প্রস্রাব -পায়খানা

মায়েদের এবং সেই সাথে বাচ্চার নানী-দাদীদের খুব কমন অভিযোগ বাচ্চা দুধ পায় না। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার প্রস্রাব করে, তাহলে ধরে নিতে হবে সে পর্যাপ্ত খাচ্ছে। আর যেসব বাচ্চারা বুকের দুধ খাচ্ছে, তারা দিনে ১০-১৫ বার পায়খানা করতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই।

বাচ্চার ডায়াপার 

একবার প্রস্রাব/পায়খানা করা মাত্রই ডায়াপার বদলে ফেলতে হবে। আমাদের দেশের মায়েরা দেখা যায় ওজন করতে থাকেন যে কখন ডায়াপারটা ভারী হয়। দেখা যাচ্ছে বাচ্চা দীর্ঘ সময় পায়খানা/প্রস্রাবের মধ্যেই আছে, যা খুব অস্বস্তিকর বাচ্চার জন্যে।

নবজাতকের গোসল 

গোসলটা ২-৩ দিন পর দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। জন্মের সাথে সাথে গোসল করালে নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। ২-৩ দিন পর থেকে প্রতিদিনই গোসল করাবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হালকা গরম পানিতে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে মাথাটা ধোবে, তারপর মাথা মুছে ফেলবে। তারপর শরীরে পানি দিয়ে গোসল সম্পন্ন করবে। পানিতে কোনো জীবাণুনাশক মেশানোর দরকার নেই।

ঋতুভেদে বিশেষ খেয়াল 

শীতকালে একটু বেশি কাপড় চোপড় দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ, হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে। বাচ্চা যেন ঠাণ্ডা না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চা যেন ঘেমে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

দুটো অনুরোধ 

দাদী-নানীদের উদ্দেশ্যে একটা কথা! বাচ্চা একটু কান্নাকাটি করলেই মা-কে ফিডার/কৌটার দুধ দেওয়ার জন্যে জোর করবেন না।

সিনিয়রদের প্রতি অনুরোধ! বাচ্চা বুকের দুধ খেলে বারবার পায়খানা করতেই পারে। এ কারণে বুকের দুধ বন্ধ করে আপনারা কৌটোর দুধ লিখবেন না কাইন্ডলি।

ডা. মারুফ রায়হান খান
প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

অবশেষে অভিনেত্রী বাঁধন তার মেয়ের অভিভাবকত্ব পেলেন

নারী সংবাদ


লাক্স তারকা ও অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অবশেষে আদালতের নির্দেশে মেয়ে সায়রার অভিভাবকত্ব পেলেন । ৩০ এপ্রিল রোজ সোমবার ঢাকার ১২তম সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক ইসরাত জাহান মেয়েকে বাঁধনের অভিভাবকত্বে দেওয়ার আদেশ দেন।

বাঁধনের ভাষ্যমতে, ‘আজ ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ইং তারিখ, দ্বাদশ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালত, (ঢাকা) যে আদেশ আমার মামলায় দিলেন, তা একটি যুগান্তকারী রায় এবং আদালত পাড়ায় মাইলফলক। আইনজীবীরা বললেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, এই উপমহাদেশ এটি বিরল উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

বিচারক তার আদেশে বলেন, কন্যা শিশুর অভিভাবক হচ্ছেন মা। কন্যার সর্বোত্তম মঙ্গলের জন্য মায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বাবা মাসে কেবল দুই দিন মায়ের বাড়িতে গিয়ে মায়ের উপস্থিতিতে মেয়েকে দেখে আসবেন। কন্যা শিশুকে নিয়ে মা দেশের ভেতরে এবং বাইরে যেতে পারবেন, যেহেতু মা-ই কন্যাশিশুর অভিভাবক।

রায়ের পর বাঁধন বলেন, মেয়ের অভিভাবকত্ব পাওয়ার জন্য গত নয় মাস আমি অনেক সংগ্রাম করেছি। মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছি। কিন্তু আজ আমি নিশ্চিন্ত। আদালত মেয়ের সম্পূর্ণ গার্ডিয়ানশিপ আমাকে দিয়েছেন।

মুলত ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মাশরুর সিদ্দিকীর সঙ্গে বাঁধনের বিয়ে হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। তাদের একটি কন্যা সন্তান আছে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাঁধন আদালতে অভিযোগ করেন, ‘মেয়ে সায়রাকে তার প্রাক্তন স্বামী জোর করে নিয়ে যান। এরপর একরকম জোর করে তাকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
মা হিসেবে মেয়ের অভিভাবকত্ব চেয়ে গত বছর ৩ আগস্ট মামলা করেছিলেন বাঁধন। আদালত সেই মামলার রায় দেন সোমবার (৩০ এপ্রিল)।

অভিনেত্রী বাঁধন তার অভিব্যপ্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন ‘সততাই যে সর্বোত্তম পন্থা সেটা আবারও প্রমাণ হলো। নিশ্চিত ছিলাম, সঠিকভাবে আইনকে উপস্থাপন করতে পারলে আইনের সুশাসন যে দেশে এখন আছে, সেটা প্রমাণ পাওয়া যায়’

বাঁধন আরও লিখেছেন, আমার জীবনের এই অংশটায় যারা যারা সমর্থন দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। আপনাদের নাম নিতে চাই না, শুধু অনুরোধ করবো মেয়েকে যেন এভাবেই, আমার নিজের সামর্থ্যে, মানুষ হিসেবে বড় করতে পারি, সেই দোয়া করবেন।

 

হাজারীবাগে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা স্বামী গ্রেফতার

নারী সংবাদ


রাজধানীর হাজারীবাগে যৌতুকের দাবিতে মারুফা বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী। গত রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী মোহাম্মদ সুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নিহত মারুফার বড় ভাই মোহাম্মদ রুবেল জানান, প্রায় ১১ বছর আগে সুজন-মারুফা প্রেম করে বিয়ে করেন। এই পর্যন্ত সুজনকে যৌতুক বাবদ দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তবে সুজন একটি প্রাইভেটকার কেনার জন্য তাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এর জের ধরেই গত শুক্রবার সকালে মারুফাকে লোহার পাইপ দিয়ে পেটান সুজন। এতে মারুফা অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত
আড়াইটায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে চিকিৎসকেরা তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাকে নিউরো সার্জারি বিভাগের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চিকিৎসক মারুফাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গতকাল সকালে মারুফার বড় ভাই বাদি হয়ে হাজারীবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন ও যৌতুক আইনে একটি মামলা করেন। পুলিশ ওই সময় স্বামী সুজনকে আটক করে।

নিহত মারুফা স্মৃতি আক্তার নামে ৯ বছর বয়সী এবং রাইসা মনি নামে তিন বছর বয়সী দুই মেয়ের মা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। মারুফা হাজারীবাগের টালি অফিসের চরঘাটার মসজিদ গলির (চুন্নু মিয়ার ১৬/১ নম্বর বাড়িতে) ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। তার স্বামী সুজন পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক।

হাজারীবাগ থানার ডিউটি অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

জন্মই যখন মানুষ না নারী হয়ে

তানজিনা সুলতানা


“শুনেছি মা-বাবার চতুর্থ কন্যা সন্তান হিসেবে জন্ম নেওয়ার পর আমার মা এক সপ্তাহ আমার মুখের দিকে তাকাননি”। আমার এক বান্ধবী বলেছিলো।

হসপিটালে দেখেছিলাম, এক ভদ্রলোকের নাতনী হয়েছে শুনার সাথে সাথেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন।
নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না আমার!!

এক আপুর কন্যাসন্তান হওয়ার পর দ্বিতীয়বার যখন পুত্র সন্তান হয় তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কেমন আছেন আপু??”

জবাবে বলেছিলেন, “ভালো আছি রে, এইবার যদি আবারও মেয়ে হতো তাহলে আমার জামাই আমাকে ঘর থেকে বের করে দিত”

এক মা তার ছেলে সন্তান হওয়ার পর পাশের এক মহিলাকে বলছিলেন, “ভাবী আমার যদি এইবারও মেয়ে হতো আমি স্ট্রোক করে মরে যেতাম!!”

খুব কাছের একজন মানুষ তার ভাইয়ের ছেলে হওয়ার খবর শুনে কান্না করছিলো। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছিলন, “খুশির কান্না.. আজ যদি আমার ভাইয়ের মেয়ে হতো আমার রুহ থাকতো না”। তাকে বলেছিলাম, “তাহলে তো আমার জন্মের খবর শুনার পর তোমার রুহ ছিলো না”।

“ছিলো না”
এইতো জীবন!!!

আমার পাশের ছেলেটি যখন স্কুলে যায় তখন পরিবার, সমাজ তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, ছেলেটি অনেক বড় হবে। আমি যখন স্কুলে যাই তখন সবাই বলাবলি করে, কোনমতে মেট্রিকটা পাশ করাতে পারলেই হয়।

আমার পাশের ছেলেটি যখন উচ্চতর ডিগ্রী নিতে যায় তখন সমাজ বলে, মেধাবী ছেলে। আমি যখন উচ্চতর ডিগ্রী নিতে যাই সমাজ বলে, “উপযুক্ত ছেলে পাবে তো??”

আমার পাশের ছেলেটি রোজগার করে এনে যখন মা-বাবাকে দেয় তখন সমাজ বলে, “ছেলেটি তোমার বড় ভালো”। আমি যখন রোজগার করে এনে মা-বাবাকে দিই সমাজ বলে, “মেয়ের কামায় খাওয়ার জন্য তো মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছো না”

“আহারে জীবন…
আহা জীবন…
জলে ভাসা পদ্ম জীবন!!!”

দিনশেষে আমার বস্তাবন্দি লাশটা পাওয়া যায় রেলস্টেশনের পাশে…ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় আমার লাশ পড়ে থাকে ঝোঁপে-ঝাঁড়ে…। আমার ঘাড় মটকানো লাশটা খুঁজে পাওয়া যায় বাসের ভিতরে!!

মাঝে মাঝে মনে হয়, ছেলে হয়ে জন্ম নেওয়াটা সৌভাগ্যের!!!

তানজিনা সুলতানা
অ্যাপ্রেন্টিস অ্যাডভোকেট
জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।

 

নারী রাইডার নিয়ে এলো ‘ও বোন’

২৮ এপ্রিল শনিবার থেকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘ও ভাই’ এর উদ্দ্যোগে নারী যাত্রীদের জন্য অ্যাপটিতে এবার চালু করা হয়েছে ‘ও বোন’ সেবা। মুলত এমজিএইচ গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘ও ভাই’।

নারীদের জন্য থাকছে আলাদা নারী বাইক রাইডার। ‘ও ভাই’ অ্যাপের অন্তুর্ভুক্ত ‘ও বোন’ অপশনে গিয়ে শুধুমাত্র নারীরাই এ রাইড শেয়ারিং সেবা গ্রহণ করতে পারবে।

ইতিমধ্যে নিবন্ধিত বেশ কিছু নারী রাইডারসহ আরও ৫০ জন নারী রাইডারকে এ সেবাদানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

এছাড়াও, অপেশাদার নারীদের জন্য ‘ও ভাই’ তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করছে।

ঢাকার নারীদের সড়কপথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সাচ্ছন্দ্য চলাচলের জন্য ‘ও ভাই’ এ সেবা নিয়ে এসেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালাচ্ছে।

‘ও ভাই’ প্রাথমিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারী রাইডারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। এই অ্যাপে একটি ‘ইন-অ্যাপ’ এসওএস ফিচার রয়েছে যার মাধ্যমে নারীরা যেকোন সময় ‘ও ভাই’ মূল সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারবেন।

সুতরাং নারীদের যাতায়াত আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবার লক্ষ্যে বিশেষ সেবার প্ল্যাটফর্মটির `ও ভাই` প্রতিষ্ঠানের ৫০ জন্য নারী রাইডার বিশেষ সহযোগিতাপূর্ণ হবে বলে সাধারণরা মনে করেন।

 

জীবনের বাকচক্র (শেষ পর্ব)

তাহেরা সুলতানা


শেষ পর্যন্ত সামান্য জমানো টাকা আর কিছু ধার-দেনা করে চাঁদনীকে নিয়ে রাফিয়া আর বাশার ঢাকার পথে রওয়ানা হলো। ততদিনে চাঁদনীর ছোট্ট শরীরটা শুকিয়ে একটা পুটলির মতো হয়ে গেছে। কোন প্রাণ নেই যেন! সারাক্ষণ অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে রাখতে হচ্ছে।

ঢাকায় এসে ওরা প্রথমেই ঢাকা মেডিকেলের শিশু বিভাগে গেল। সেখানে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ পেসেন্ট এর এই অবস্থা দেখে দ্রুত ভর্তি করিয়ে নিলো।

ডাঃ এর সব রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন দেখে উনার মুখটা থমথমে হয়ে গেলো। আরও কিছু টেস্ট এর কথা বলে ভিতরে চলে গেলো। বাশার ডাঃ এর মুখ দেখে বেশ খারাপ কিছুই আঁচ করলো, কিন্তু রাফিয়াকে কিছু বুঝতে দিলো না। কিন্ত বুকের ভিতরটা যেন ধক করে উঠলো।

অনেকক্ষণ ডাঃ, নার্স কাউকে দেখতে না পেয়ে রাফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাশারকে
জিজ্ঞেস করলো, -আচ্ছা, রুমের মদ্যি এতোক্ষণ ধইরে কি করছে? মেয়ে ডারে দেখতিও তো দেচ্চে না। আমার কিন্তু কিছুই ভালো ঠ্যাকছে না! তুমি এট্টু দেকনা গো!

বাশার এক ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বললো, তুমি চুপ কইরে বসি থাকো। ডাঃ তো দেখতিসে। তুমি কি ডাঃ এতো কতা কচ্চ? মাইয়ে ভালো হইয়ে যাবিনে। তুমি বসি বসি খালি দুয়া পড়।

লাস্টের কথাগুলো বলার সময় বাশারের গলাটা যে ধরে আসছিল, সেটা কিন্তু রাফিয়ার চোখ এড়ালো না।

এভাবে ৭ দিন কেটে গেল। হাতে যা টাকা ছিল, তাও শেষ। কিন্তু চাঁদনীর অবস্থার কোন উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি হলো। এখানকার ডাঃ ও ফিরিয়ে দিলো। বললো,

-দ্রুত ইন্ডিয়া নিয়ে যান। এখানে আর সম্ভব না। আপনারা আগে যে ডাঃ দেখিয়ে ছিলেন, উনারা ভুল চিকিৎসা করেছে। বাচ্চার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে। অনেকটা জায়গায় ইফেক্ট করেছে।

বাশার ধপাশ করে চেয়ারে বসে পড়লো। ভাগ্য ভালো, রাফিয়া তখন রুমের বাইরে ছিল, বাশার মনে মনে ভাবলো।

বাড়ি পৌছানো পর্যন্ত বাশার রাফিয়াকে কিচ্ছু বললো না। কি বা বলবে! ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো ক্ষমতা তো তার নাই।

সারাটা রাস্তায় বাশার থমথমে মুখ করে থাকলো। কয়েকবার জিজ্ঞেসও করেছে, ডাঃ কি বললো। অন্য কথা বলে এড়িয়ে গেছে। সঠিক কোন উত্তর পায়নি। উত্তরটা জানতে পারলো পরদিন সকালে, ফুফুর চিৎকার চেঁচামেচিতে।

-আমাগেইরে এতো তালুক নেই যে, ভারতে লিয়ে গিয়ে চিকিৎসে করাতি হবি! বাপের বাড়ি থেইকে আনতি ক! নয়তে যা হবার তাই হবি! আমরা আর পারছিনে! বিয়ের সময় আমার ভাই খালি মেয়েডারেই গছিয়ে দেল! কিছু দিয়েছে নাকি? কি কুলক্ষণেই যে এই অপয়া মাইয়েডারে ঘরের বউ কইরে আনতি গিলাম!

ওর মা একডা….
বাকি কথা আর রাফিয়ার কান পর্যন্ত পৌছালো না। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো।

রাফিয়া চোখ খুলে দেখলো, বাশার মাথার পাশে বসা। হঠাৎ মেয়ের কথা মনে পড়ায় লাফিয়ে উঠে বসলো। বাশার বুঝতে পেরে বললো,

-চাঁদনীক খুজতিছো? মার ঘরে রেকে আইছি। তুমি মাথা ঘুইরে পইড়ে গেলা। আমি তখন তুমারে লিয়া বেস্ত। অক্সিজেন মাস্ক এট্টু পর পর খুলতি হচ্ছে, তাই ভাইবলেম, মার কাছি ভালো থাকপেনে। আমি ভালো কইরে শিখিয়ে দিয়ে এইসেছি। একন সবারি মাতা গরম। তুমি মার কতায়….
বাকি কথা রাফিয়ার কানে আর গেলল না। সে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়লো, এরপর ফুফুর ঘরের দিকে ছুটলো। আজকাল তার কাউকে বিশ্বাস হয় না।
ঘরে ফুফুকে পেলো না। ডাঃ ১০ মিনিট পর পর বিরতি দিয়ে মাস্ক পরাতে বলেছে। শ্বাস-প্রশ্বাস অবজার্ভ করতে বলছে, কিছুই তো হয়নি। ওইভাবে ছুটতে দেখে বাশারও পিছন পিছন চলে আসছে। রাগে গজগজ করে বললো,

-তুমি আমার মারে সন্দেহ করতিচো? আমার মায়ে মাইয়েরে মাইরে ফেলবি, এই ভাবতিছ? ছি! ছি! ছি!

রাফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাশারের পায়ে ধরে বললো,

-আস্তে কতা কও। মা শুইনে ফেললি লংকাকান্ড বেধে যাবিনে। আমি সেকতা কচ্চিনা গো। মেয়েডারে না দেকতি পেয়ে ছুটি চলি আইচি। তোমার পায়ে ধরি কচ্চি, তুমি চুপ করো। চুপ করো।

বাবার সাথে ফুফুর সম্পর্কে চরম টানাপোড়ন চলছে। তাও রাফিয়ার আর নাতনীর কথা ভেবে বাবা-মা ২জনই চলে আসলো। রাফিয়ার মুখে সব কথা শুনে বাবা যেটুকু জমি ছিল, তা বেচে দিয়ে টাকাটা বাশারকে দিয়ে দিলো। আর বললো,

– বাবা, আমার নাতনীর চিকিৎসে বাবদ যা লাগবি, আমিই দেব, তুমি যাওয়ার ব্যবস্থা করো। লাগলি, ভিটেবাড়িও বেইচে দেব। তাও আমার নাতনী যেন সুস্থ্য হইয়ে আসে।

রাফিয়া বাবার পায়ের কাছে বসে অনবরত কাঁদতে লাগলো।
বাশার ইন্টারনেট ঘেটে ভারতের ভেলরে একজন নামকরা শিশু বিশেষজ্ঞ এর খোজ পেল। কিন্তু সিরিয়াল পেল এক মাস পর। এরপর ঢাকার ডাঃ এর মাধ্যমে সেটা এক সপ্তাহ কমিয়ে আনতে পারলো।
এর ওর মাধ্যমে টাকা খাইয়ে যথাসময়ে ভিসা আর ট্রেইনের টিকেটও করে ফেললো। বেনাপোল কাছে হওয়ায় ট্রেইনেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

ভেলর হাসপাতালের প্রধান শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীনেশ পান্ডে (ছদ্মনাম) পুরো একদিন ধরে সমস্ত রিপোর্ট আর

প্রেসক্রিপশনগুলো নিয়ে গবেষণা করলো। বাশার আর রাফিয়া কাজিন শুনে ওদের ব্লাডগ্রুপের রিপোর্ট চাইল। বাশার শুধু রাফিয়ার টা বলতে পারলো। কারন ওর নিজের ব্লাডগ্রুপ কি, সে নিজেও জানে না। বাশারের ব্লাডটেস্ট রিপোর্ট এ আসলো, ওর ব্লাডগ্রুপ O(+) আর রাফিয়ার O(-)।

রাফিয়ার ডেলিভারির সময় Anti D ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে কিনা, সেটা সম্পর্কে জানতে চাইলো। বাশার মাথা নেড়ে জানালো, দেয়া হয়েছে। কতক্ষণ পর দেয়া হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে, বাশার সঠিক উত্তর দিতে পারলো না। তবে ডাঃ কনফার্ম হয়ে গেলো, নির্দিষ্ট সময়ের থেকে কিছুটা পার হয়ে গিয়েছিল।

চাঁদনীকে ২৪ ঘন্টা অবজারভেশনে রেখে এবং টোটাল কেস হিস্টরী গবেষণা করে ডাঃ বাশার আর রাফিয়াকে ইচ্ছেমত কতক্ষণ বকলো। এরপর যে রেজাল্ট দিলো, তা হলো,
১। Anti D ইঞ্জেকশন ৭২ ঘন্টার মধ্যে দেয়া হয়নি বলে
পেসেন্ট এর Antibody তৈরি বাধাগ্রস্থ হয়েছে। কারণ তার ব্লাডগ্রুপ O(+)। মায়ের উল্টো।

২। নিয়মোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার পর এতোটুকু বাচ্চাকে যে এন্টিবায়োটিক আর যে ওষুধ পুশ করা হয়েছে, তাতে পেসেন্ট এর ফুসফুস ৭০% ড্যামেজ হয়ে গেছে।
৩। একদিকে পেসেন্টের Antibody তৈরি বাধাগ্রস্থ হওয়া এবং অনেক বেশি হাই পাওয়ার ইঞ্জেকশন পুশ করার কারনে পেসেন্ট পুরোই এবনরমালিটির দিকে যাচ্ছে। ডাঃ দের হাতে আর কিচ্ছু করার নেই।

বাশার ইচ্ছে করেই রাফিয়াকে ডাঃ এর চেম্বারে আনেনি। সব শুনে সে ডাঃ এর পায়ে ধরতে গেল। ডাঃ “কি করছেন? কি করছেন?” বলে পা ছাড়িয়ে নিলেন।এরপর বাশার হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-প্লিজ ডাঃ, আমার মেয়েটাকে ভালো করে দিন। আমার মেয়েটাকে বাচান। যতটাকা লাগে দিবো।

ডাঃ আস্তে করে ঘাড়ে হাত দিয়ে বললেন,
-আমার কাছে আসতে অনেক দেরী করে ফেলেছেন। উপরওয়ালাকে ডাকুন, তিনি যদি কিছু করতে পারেন।

একদম শুন্য হাতে ওরা মেয়েটাকে নিয়ে দেশে ফিরে আসলো। ভেলর থেকে আসার পর থেকেই রাফিয়া কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। খায় না, ঘুমায় না, পাথর হয়ে মেয়ের শিয়রে বসে থাকে। বাশার আবার অফিস শুরু করেছে। অনেক কাজের চাপ! এ অবস্থা দেখে রাফিয়ার বাবা মা তাদের কাছে নিয়ে গেলো। প্রথম প্রথম বাশার প্রতি বৃহঃস্পতি আসতো। আবার রবিবার গিয়ে অফিস করতো। আজকাল আসা কমিয়ে দিয়েছে। রাফিয়ার মধ্যে আজকাল কোন অনুভুতিই কাজ করে না। প্রয়োজন না হলে মেয়ের কাছ থেকে উঠেই না। যদি একবার চোখ মেলে দেখে! যদি একবার মা বলে ডাকে!

দিন যায়। মাস যায়। বছরও চলে যায়। কবিরাজি, হোমিওপ্যাথিও বাদ দেয় না। তাতেও যদি মেয়েটা ভালো হয়! যে যা বলে, তাই করে। আজকাল বাশার তেমন একটা আসেও না। মাঝে মাঝে ফোন করে দায়শারা গোসে খোঁজ নেয়।

চাঁদনীর বয়স যেদিন ২ বছর হয়ে ৩ মাসে পড়ে, সেদিন সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়। চাঁদনীকে শেষ দেখা দেখতে বাশার আর ওর মা এসেছিল। কিন্তু সেদিন রাফিয়া মেয়েকে কারও কাছে দেয়নি। পাথরের মতো কোলে নিয়ে বসেছিল। এক ফোঁটা চোখের পানিও ফেলেনি। মেয়েকে কবরই দিতে দিচ্ছিল না। পরে সবাই জোড় করে নিয়ে যায়। সবাই মিলে ওকে কাঁদানোর অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু কোন লাভ হয় না। কিভাবে কাঁদবে? চোখে আর পানি থাকলে তো বের হবে?

এর এক মাস পর কেউ এসে খবর দিলো, বাশারের মা মাশারের আবার বিয়ে ঠিক করেছে। রাফিয়া এক দৃষ্টিতে বার্তা বাহকের দিকে তাকিয়ে থাকলো। হাত দুটো খাটের ডাসার সাথে বাধা। সুযোগ পেলেই নাকি কবর খুড়তে যাচ্ছে। মেয়েকে তুলে আনবে। তাই এই ব্যবস্থা। হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠলো। হাসি যেন আর থামছেই না। কতকাল হাসেনি, না! আজ তাই অনেক হাসি পাচ্ছে। প্রাণখুলে হেসেই যাচ্ছে। হা হা হা! হি হি হি! হো হো হো!

পুনঃশ্চ: বন্ধুরা, ইহাকে নিতান্তই একটা গল্প মনে করিয়া ভুল করিবেন না। ইহা একটি অতীব সত্য ঘটনা। যাহা আমার চোখের সামনে ঘটিয়াছে।

 

লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল (শেষ পর্ব)

জাজাফী


আগে কখনো বাংলাদেশে আসেনি ও। হঠাৎই বাংলাদেশ নিয়ে এতো আগ্রহ কেন সেটা প্রশ্ন উঠতে পারে তবে গ্রেড ফোরে থাকতে আমি যখন ওকে বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম এবং বলেছিলাম আমার মম বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে তখন ও খুবই উৎসাহী ছিল জানার জন্য। বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই উত্তাল দিনের কথা ও কখনো ভুলতে পারেনি। বাচ্চারা যেমন দাদু দিদার কাছে রোজ রুপকথার গল্প শোনার জন্য বায়না করে ও ঠিক তেমন করতো। রোজই স্কুলে আমাকে চেপে ধরতো গল্প বলার জন্য যেন আমি নিজে ভাষা আন্দোলন করেছি আর মুক্তিযুদ্ধের একজন সৈনিক! বলতে বলতে এমন হয়ে গেল যে ওর সব মুখস্থ।কিন্তু তারপরও ও শুনতে চাইতো। তখন বুঝিনি তবে এখন মনে হয় ও আসলে মুক্তিযুদ্ধ,ভাষা আন্দোলনের গল্প শোনার নাম করে আমার কন্ঠ শুনতে ভালোবাসতো।যেহেতু আমি মুক্তিযুদ্ধ,ভাষাআন্দোলনের স্মৃতি খুব ভালোবাসি তাই ও চাইতো আমার প্রিয় বিষয় নিয়েই যেন আমি বলতে পারি। সন্ধ্যায় মম আমাকে রেডি হতে বললেন মার্কেটে যেতে হবে। আমি ভীষণ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম মম একটু আগেই না তুমি মার্কেট থেকে আসলে এখন আবার কেন মার্কেটে যেতে হবে? মুখে একরাশ হাসি টেনে বললেন লিন্ডা আসছে ওর জন্য ঘর গোছাতে হবে না? তাই কিছু কেনা কাটা করতে হবে। আমি দুষ্টুমীর সুরে বললাম মম তুমি এমন করছো যেন লিন্ডা নামে যে আসছে সে আসলে তোমার এখানে চিরদিন থেকে যাবার জন্য আসছে। মনে হচ্ছে সে তোমার খুব কাছের কেউ। আমার কথাটি খপ করে টেনে নিয়ে মম আমার কাধে হাত রেখে বললো তুইতো বেশ দারুণ একটি কথা বলেছিস। এটা আমার মাথায় আসেনি কেন?লিন্ডাকেতো আজীবনের জন্যই রেখে দেওয়া যায়!
আমি আরো খানিকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম কিভাবে রেখে দিবে? আর সেইবা কেন থাকবে? মম আমাকে বললেন কেন তুইকি আজীবন একাই থাকবি নাকি?তোর সাথে লিন্ডাকে বেশ মানাবে। মমের কথা শুনে আমি হাসিতে ফেটে পড়লাম। যদিও কথাটি খুব একটা খারাপ বলেনি। মমের সাথে মার্কেট থেকে অনেক কিছু কেনা কাটা করলাম।
রাতে লিন্ডাকে ফেসবুকে মেসেজ দিলাম সে বাংলাদেশে কি এমনিতেই ঘুরতে আসবে নাকি অন্য কোন কারণ? সাথে সাথে ওর উত্তর পাইনি। ঘুমোতে যাবার আগে আরেকবার চক করতেই দেখলাম ওর রিপ্লাই এসেছে।সেখানে সে লিখেছে আমি বাংলাদেশে আসবো একটি বিশেষ কারণে। শুনেছি বাংলাদেশ আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে,ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে গেছে,নেতা নেত্রীরা এখন নিয়মিত শপিং করতে আমেরিকা কানাডাতে আসছে। কারো কারো পুরো পরিবার দেশের বাইরে রাজার মত বাস করছে কিন্তু টাকা পয়সার কোন অভাব হচ্ছে না। এর বাইরে আরো কয়েকটা কারণ আছে এই যেমন বাংলাদেশে ঘুরতে গিয়ে অনেক পযর্টক সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেছে সেগুলি আমাকে আগ্রহী করে তুলেছে। তাছাড়া তুই চলে যাবার পরতো তোর সাথে কখনো দেখা করার সুযোগ হয়নি এটাও একটা কারণ বলতে পারিস। তবে প্রধান কারণ যেটি তা আমি এখনি বলতে চাইনা।এসে তার পর বলবো। প্রধান কারণ আর জানা হলো না এবং সেটা জানার জন্য মনটা বেশ উদগ্রীব হয়ে থাকলো।সেদিন চোখে আর ঘুম এলো না।দুটো কথা বেশ বার বার ঘুরে ফিরে আসছিল মাথার মধ্যে। প্রথমটি লিন্ডা নিজে বলেছে আর দ্বিতীয়টি মম বলেছে। লিন্ডা বলেছিল ও যাকে পছন্দ করে সে হলো চাঁদের মত যাকে দূর থেকে দেখতে হয়,কল্পনায় ছুতে হয়। চাঁদকে যেমন ছোয়া যায় না ঠিক তেমন। তার মানে সে এমন কারো কথা বলেছে যে তার থেকে অনেক দূরে থাকে তাই ইচ্ছে হলেও তাকে কাছে পাওয়া যায়না,ছোয়া যায়না বরং দূর থেকে দেখতে হয়। আমিওতো অনেক দূরে থাকে যাকে দুর থেকেই দেখতে হয় এবং কল্পনাতেই ছুতে হয়। তবে কি লিন্ডা আমার কথাই বলেছে!নিজেই নিজের মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললাম যাহ এসব কেন ভাবছি। আবার মমের কথাটাও মাথায় ঘুরছে। লিন্ডাকেতো সারা জীবনের জন্যও রেখে দেওয়া যায়! তুইকি সারা জীবন একা থাকবি নাকি? তার মানে মম বলতে চাইছে লিন্ডা আর আমার মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি হলে সে আমার হয়ে থাকবে।
নিজেকে বেশ পাগল বলে মনে হচ্ছে। আমি যে লিন্ডাকে নিয়ে এসব কথা ভাবছি ও জানতে পারলে কি মনে করবে! তবে চাইলেইতো আর মনের মধ্যে গড়ে ওঠা কল্পনার জাল ছিড়ে ফেলা যায় না। আমিও সেটা ছেড়ার চেষ্টা করিনি। যথারীতি সাটারডে ইভিনিংএ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসের যাত্রী হয়ে বাংলাদেশের আলোবাতাসে বেরিয়ে এলো লিন্ডা ওয়াটসন।আমি আর মম আগে থেকেও প্লাকার্ড হাতে রিসিভিং জোনে হাজির ছিলাম। বোর্ডিং পাস হয়ে গেলে লিন্ডা বেরিয়ে এলো। আমাদের কেউ কাউকে চিনতে কোন বেগ পেতে হয়নি কারণ প্রতিনিয়তই আমরা একে অন্যকে ছবিতে দেখি। লিন্ডা আমাকে হাগ করে মমকে জড়িয়ে ধরলো। মমও ওকে এমন ভাবে আগলে নিলো যেন জনম জনমের পরিচয় দুজনের মধ্যে। যেন ওরা দুজন একসাথে বেড়ে উঠেছে,খেলেছে,স্কুলে গিয়েছে। ওর লাগেজ গুলো ভাগাভাগি করে টেনে নিয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম। আমি সামনে বসলাম আর মম ওকে নিয়ে পিছনে বসলো। বাসায় যেতে যেতে কত যে কথা হলো। লিন্ডা বাংলাদেশে এসেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ থাকবে বলে। তবে ভালো না লাগলে একসপ্তাহ থেকেও চলে যেতে পারে।কথাটা বলতেই মম বললো আর যদি ভালো লেগে যায় তবেকি তুমি সারা জীবনের জন্য থেকে যাবে? মমের কথাটা ওর মনে ভাবাবেগ তৈরি করলো।লিন্ডা বললো তেমন কিছু হলেতো বেশ মজাই হবে।
সামনের লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে একবার ওকে দেখে নিলাম। আগের সব দেখার সাথে এই দেখার কেন যেন কোন মিল নেই!! আশ্চর্য আমি বোধহয় ওকে বেশি করে ফিল করতে শুরু করেছি। বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে লিন্ডা ওর লাগেজ নিয়ে বসলো। আমেরিকা থেকে আসার সময় কত কিছু যে নিয়ে এসেছে তার কোন হিসেব নেই। আমাদের জন্য এবং আমাদের পরিচিতদের মধ্যে লিন্ডা যাদেরকে চেনে সবার জন্য কিছু না কিছুতো এনেছেই। বাদ পড়েনি জাহিন জামিল ফীহা নোভা মুনা মিফরা কেউ। কারো জন্য চকলেট এনেছে কারো জন্য পুতুল আবার কারো জন্য স্মার্টওয়াচ। যার যেমনটি পছন্দ তাকে তেমন উপহার।মমের জন্য এনেছে দামী কসমেটিক্স আর আমার জন্য কিছু টিশার্ট আর পারফিউম। সবার জন্য আনা উপহার বের করার পরও ওর লাগেজে একটা প্যাকেট ছিল। কাগজ দিয়ে মোড়ানো।আমি বললাম ওটা কি? ও বললো ওটা একটা শাড়ী!

আমেরিকানরাতো শাড়ী পরেই না বলা চলে!! তাহলে শাড়ী কার জন্য? মম বললেন তবেকি তুমি বাংলাদেশের কালচারের সাথে মিশতে চাও বলেই শাড়ী কিনেছ ওটা নিজে পরবে বলে?
মমের কথা শুনে লিন্ডা মাথা নেড়ে জানালো নিজে পরার জন্য সে শাড়ীটা কেনেনি!! মমের চেয়েও বেশি অবাক হলাম আমি। তার পর জানতে চাইলাম তাহলে তুমি শাড়ী কেন কিনেছ? কাকে দিবে বলে কিনেছ? এবার ওর মূখটা বেশ মলিন হয়ে গেল।চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো যেনবা তখনি সে কেঁদে ফেলবে। একটা মেয়ে একাকী আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ দেখবে বলে ছুটে এসেছে আর দীর্ঘ ক্লান্তিকর জার্নির পর তাকে বিশ্রান নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে আমরা তার সাথে আড্ডা শুরু করে দিয়েছি এটা বেশ অমানবিক। তবে লিন্ডা নিজে বললো সে ক্লান্ত নয় এবং এখনি তার বিশ্রামের দরকার হচ্ছেনা। তার পর একটু শান্ত হয়ে সে বললো শাড়ীটা সে একজনকে দিবে বলে কিনেছে এবং এই শাড়ীটা দেওয়াটাই বাংলাদেশে আসার প্রধান উদ্দেশ্য!
কেউ একজনকে একটা শাড়ী দেওয়ার জন্য আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসতে পারে তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল।
তাও যদি এমন হতো যে লিন্ডা নিজে একটি ছেলে এবং সে শাড়ীটা এমন একজন মেয়েকে দিতে চায় যাকে সে ভালোবাসে তাহলেও একটা কথা ছিল কিন্তু লিন্ডা নিজে মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে একটা শাড়ী দেওয়ার জন্য হাজার হাজার ডলার হাতে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে এটা সত্যিই বিস্ময়কর। মম জানতে চাইলো কাকে দেবে শাড়ীটা? লিন্ডা জানালো সে যাকে শাড়ীটা দেবে তাকে সে চেনে না বরং তাকে খুজে নিতে হবে আর এ জন্যই সে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। ওর কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। যাকে সে একটা শাড়ী দিবে বলে সুদুর আমেরিকা থেকে এসেছে তাকে সে চেনেই না এমনকি তার কোন ঠিকানাও সে জানে না!তাহলে কি করে দেবে সে? কোথায় পাবে তাকে?লিন্ডার সরল জবাব সে তাকে দেশের অলিতে গলিতে খুঁজবে তার পরও সে তাকে খুঁজে বের করবেই।
তখনকার মত আড্ডা শেষ করে লিন্ডাকে ওর রুম দেখিয়ে দেওয়া হলো। মম ওকে সব বুঝিয়ে দিলো।রুমের সাজ সজ্জা দেখে লিন্ডা খুবই অবাক হলো। মম ওটাকে এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে যেন মনে হয় স্বপ্নলোক! ডিনার শেষে লিন্ডা সবাইকে ওর রুমে ডাকলো। তার পর ব্যাগ থেকে একটি অ্যালবাম বের করলো এবং সেটা থেকে একটি ছবি বের করলো। সেটি দেখিয়ে বললো এই মানুষটিকে আমি শাড়ী দেব বলে এসেছি। ছবিটার অনেক গুলো কপি করেছে লিন্ডা। একটি ছবি আমার হাতে দিয়ে একটি মমকেও দিলো।মিফরা,ফীহা,ফারহানা ওরাও একটা করে ছবি নিলো। সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে মনের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো। আমি যখন নিজের চোখের পানি আড়াল করতে চেষ্টা করছি তখন লক্ষ্য করলাম অন্য সবার চোখেও পানি এবং সেটা কিছুক্ষণের মধ্যে প্রায় কান্নায় রূপ নিলো। ছবিটি একজন বয়স্ক মহিলার। একটি খোলা মাঠে বাশের বেড়ায় যিনি ভেজা শাড়ী শুকাতে দিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছেন। শাড়ীটা শুকাতে দিয়ে তার যে চলে যাবার কোন উপায় নেই কারণ শাড়ীর অন্য প্রান্ত তখন তার পরণে! তার যে একটি মাত্র শাড়ী যেটি গোসলের পর ভেজা থাকায় রোদে দাড়িয়ে শুকাতে হচ্ছে। একপাশ শুকিয়ে গেলে সে পাশ শরীরে জড়িয়ে নিয়ে অন্য পাশটাও শুকাতে হবে।
এই ছবির মানুষটির কথা ভেবে লিন্ডা সুদুর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছে শাড়ী নিয়ে। আফসোস আমি কেন গেলাম না? আমি কেন অতটা মায়া দেখালাম না? রাতে ঘুমানোর সময় চিন্তা করলাম যে দেশের রাস্তায় কয়েক কোটি টাকা দামের ব্যক্তিগত গাড়ী চলে সে দেশে এমনও মানুষ আছে যাদের ভেজা শাড়ী শুকাতে রোদে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়। একটা শাড়ীর কতইবা দাম?পাঁচশো? এক হাজার? দুই হাজার? বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যে শাড়ী পরে তার দামতো পাঁচশোটাকাও না। পরদিন সকালে আমি লিন্ডাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সেই মহিলাকে খুঁজতে। ঢাকার অলিতে গলিতে,বস্তিতে বস্তিতে খুজলাম,মানুষকে ছবি দেখালাম কিন্তু কেউ বলতে পারলো না। এক সপ্তাহ ঘুরে পুরো ঢাকা দেখা শেষ হলে গেলাম ঢাকার বাইরে। সাভারে গিয়ে ছবিটা দেখাতেই অনেকেই চিনলো। তারা আমাদেরকে এলাকার নাম বলতেই আমরা ছুটে চললাম সেদিকে। পথে একটি দোকান থেকে আরো বেশ কয়েকটি শাড়ী কিনলো লিন্ডা।একসাথে অনেক গুলো শাড়ী হলে সেই মানুষটি আগামী কয়েক বছর নিশ্চিন্তে পরতে পারবে এটাই ছিল লিন্ডার চিন্তা। ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অবশেষে পাওয়া যাচ্ছে সেই মহিলাকে যাকে সে শাড়ী দিতে ছুটে এসেছে সুদুর আমেরিকা থেকে।
পথে একটি মাঠ পেরোতে হয়। যে মাঠের ছবি ছিল সেই ছবিটাতে যেখানে মহিলা শাড়ী শুকাচ্ছিল। দূর থেকে সেই বাশের বেড়াটিও দেখা গেল। তবে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সেই বেড়ার উপর কি যেন লাগানো। আমাদের গাড়ীটা যতই কাছে আসছিল ততো স্পষ্ট হচ্ছিল। এবং একসময় দেখলাম ওটা একটি শাড়ী! লিন্ডার চোখটা ছলছল করে উঠলো।
ব্যাগ থেকে ছবিটা বের করে মেলে ধরতেই চোখটা প্রায় ঝাপসা হয়ে এলো পানিতে। এই শাড়ীটাতো সেই শাড়ী যেটা মহিলাম পরে ছিলেন এবং একটা পাশ রোদে শুকাতে দিয়েছিলেন। হঠাৎই লিন্ডার মনটা খারা হয়ে গেল। সে যাকে শাড়ী দিতে এসেছে তার বোধহয় এখন আর শাড়ীর প্রয়োজন নেই। নিশ্চই তাকে কেউ নতুন কাপড় কিনে দিয়েছে তা না হলে এই শাড়ীটা এখানে থাকতো না। আমি বললাম সেটা হলেতো ভালো হয়। তুমি যার দুঃখ দূর করতে ছুটে এসেছো তাকে সুখী দেখলে তোমারতো আনন্দিত হওয়া উচিত।
আমার কথাটা লিন্ডার কাছে বেশ যুক্তিযু্ক্ত মনে হওয়ায় চোখের পানি মুছে ফেললো। তবে ড্রাইভারকে বলে গাড়ী থামিয়ে সে নেমে পড়লো। তার পর বাশের বেড়ার উপর রাখা শাড়ীটাতে সে হাত বুলাতে লাগলো। এভাবে কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর আমরা আবার রওনা হলাম।লিন্ডার চেহারায় আগের মত দুশ্চিন্তার ছাপ নেই। সে বোধহয় মহিলার সুখী হওয়াতে খুবই আনন্দিত হয়েছে।সেই আবাসিক এলাকাতে প্রবেশ করতেই একজনের সাথে দেখা। গাড়ী থামিয়ে তাকে ছবিটা দেখাতেই তিনি যা বললেন তাতে লিন্ডার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। লাস্ট সাটারডেতে যখন লিন্ডা আমেরিকা থেকে রওনা দিয়েছে তারও এক সপ্তাহ আগে মহিলা মারা গেছেন!লিন্ডার হাতে ধরে রাখা শাড়ীটা ছুটে পড়ে গেল। আমি সেটা উঠিয়ে ওর হাতে দিয়ে ওকে শক্ত করে ধরলাম।বুঝলাম কেন আসার সময় মহিলার সেই শাড়ীটাকে বেড়াতে লাগানো দেখেছিলাম।
সত্যিইতো তার আর ওই শাড়ীর কোন দরকার নেই।তাকে সবাই মিলে নতুন কাপড় কিনে দিয়েছে। সে এখন অনেক সুখে আছে। তারতো আর ওই পুরোনো শাড়ীর কোন দরকার নেই। লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল সেই শাড়ীটা যার জন্য কিনেছিল তাকে দেওয়া হলো না।ফেরার পথে সে শাড়ীটাকে আগে নেড়ে দেওয়া শাড়ীটার উপর ঝুলিয়ে দিলো।ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হলো।আকাশে তখন ভরা পুর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে পড়লো লিন্ডার সেই কথাটি। চাঁদের মতও কোন কোন মানুষ হয় যাদেরকে ধরা যায়না,ছোয়া যায়না বরং সরে যেতে থাকে। দুদিন পর ফিরতি ফ্লাইটে লিন্ডা ফিরে গেল আমেরিকাতে। জীবনে আর কোন দিন লিন্ডা শাড়ী কেনেনি। এমনকি আমাদের বিয়ের দিনেও সে শাড়ী পরেনি।

 

স্পর্শ: শিশুর সাথে যেন আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে

ফাতেমা শাহরিন


‘তুমি’ আছো, তেমনই তুমি “সুন্দর ” সবসময়। তোমার ছোট ছোট  চুল, হাত, পা সব কিছু অসাধারণ। তোমার মাঝে আটকে যায় যেন সব অনুভূতিরা। লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা টুকু আঙ্গুল ছুঁইয়ে খুঁজে নেয় যেন প্রশান্তির অঙ্গন।

মনে রাখবেন, শিশুর জন্ম হয় প্রচুর সম্ভাবনা নিয়ে, প্রতিভাগুলো ঢাকা থাকে ভালবাসার চাদর দিয়ে। ভালবাসার সুন্দর বর্হিঃপ্রকাশ তাদেরকে উড়তে সাহায্য করে।

শিশুকে শারীরিক স্নেহ, আবেগ, ভালোলাগা এবং ভালবাসাময় অঙ্গন  তৈরির লক্ষ্যে আমাদের শিশুদের প্রতি ভালবাসা বা অনুভূতি প্রকাশ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ‘স্পর্শ ‘ একটি সহজ ভাষা, ভালাবাসার। অধিকাংশ শিশু এই ভাষা আগ্রহের সাথে গ্রহন করে, এবং কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে, এটি প্রবল আকর্ষণীয় ভালবাসার শক্তি রূপে কাজ করে।

সহজ আবার অজানাও নয়। আসুন এমন কয়েকটি উপায় শিশুদের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য।

হাত ধরা
আলতো করে শিশুর হাত ধরুণ যখন আপনি পাশাপাশি হাটছেন বা গল্পগুলি বলছেন একান্ত শিশুকে বুঝতে দিন, পাশেই রয়েছেন আপনি।

শিশুকে জড়িয়ে ধরা
প্রতিটি বাবা মা সন্তানকে প্রচন্ড ভালবাসে ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে ছোট্ট শিশুকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখুন। তার কাছে প্রকাশ করুণ আপনার অনুভূতি।

সন্তানকে চুমু দিন
সন্তানকে আদর করার ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হয়ত কারই নেই কিন্তু ছোট্ট শিশুকে আপনার প্রকাশ ভঙ্গিমার মাধ্যমে কাছাকাছি আগলে রাখা উচিত। সুতরাং বুঝুন, বুঝতে দিন আপনিও তাকে প্রচুর ভালবাসেন। রোজ কপালে চুমু দিন। সন্তান বড় হলেও মা উচিত কন্যাকে বুঝানো তার পাশেই আছেন এবং বাবাদের ছেলেদের কাছে থেকে ভালবাসা প্রকাশ করা খুব খুব জরুরী।

এক সাথে পাশাপাশি বসুন
আপনার কম্বলের মধ্যে শিশুকে পাশে নিয়ে গল্প করুন। বৃষ্টি, শীতের সকাল বা হঠাৎ বিকেলের আবেশে পাশাপাশি বসুন, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শিশুর মত হয়ে যান।

সন্তানকে বিরক্ত করুন
ছোট্ট শিশুমনিরা বিরক্ত করা খুব পছন্দ করে। মাঝে মাঝে ছোট্ট হাত পাগুলো
ম্যাসেজ করুন। মাঝে মধ্যেই বিরক্ত করুন কারণ বিষয়টি তারা খুবই মজা পায়।

আন্তরিকভাবে কাঁধে হাত রাখুন
কথা বলার সময় বা সুন্দর কোন প্রকৃতির দেখার সময় অথবা অনুরোধ করার সময় শিশুদের কাঁধ স্পর্শ করুন। প্রায়ই যদি শিশুদের আলিঙ্গন অথবা আদর প্রকাশ করা হয় শিশুরা খুশি হয়।

সংশোধনের ক্ষেত্রে কৌশলী
শিশু শুধু নয় বড়রাও ভুল করে। ভুল বিষয়টিকে সংশোধন করার সময় সম্পর্ক গুলো নড়বড়ে হয়ে যায়। সুতরাং শিশুর ভুল পাওয়া গেলে, কৌশলপূর্ণ সংশোধন করা। পরবর্তীতে মৌখিক প্রশংসা পাশাপাশি আলিঙ্গন করুন, শিশুকে পুরষ্কার দিবেন বলে অফার করুন ভাল কাজের জন্য।

আপনিও খেলুন
একইসঙ্গে মজার নানান রকম খেলা খেলুন, ছোঁয়াছুয়ি, দৌড়াদৌড়ি হইহুল্লা একেবারে সে রকম খেলাধূলা করুন।

আপনাদের দুজনের মধ্যে একটি  “বিশেষ বন্ধন” জাগ্রত  থাকে কিনা খেয়াল করলে দেখবেন, ওর  প্রতিদিনের বন্ধনটি  গড়ে উঠুক সুন্দর আর সাবলিল  ভাষাাা বুঝুন এবং শিশুকে সর্বদায় বুঝতে সহযোগিতা করুন। আপনার শিশুর শারীরিক এবং মানসিক সুন্দর বিকাশ হলে আপনিও ভাল থাকবেন।

 

এটা প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতন

সৈয়দ আবুল


সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী নির্যাতনকে অত্যন্ত বেদনায়ক উল্লেখ করে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এটা প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতনের ঘটনা।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষকবৃন্দ’র ব্যানারে এই মানবন্ধনঅনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারী নির্যাতিত হলো। সেটা হলো বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটা আমাদের সকলের জন্যলজ্জার।

তিনি বলেন, আমি শুধু বলবো প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতনের ঘটনা এটাই যেন সর্বশেষ হয়।
অতীতে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহমর্মিতা স্মরণ করে তিনি বলেন, আজকে কয়েক দিন কয়েকজন শিক্ষকের নাম অব্যাহতভাবে মনে আসছে। স্যার পি জে হার্টগ, অধ্যাপক আহমেদ ফয়জুর রহমান, অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তারা কী করতেন। হয়তো তাদের আত্মা দেখছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ও ছিলেন। এই অধ্যাপকরা কোনো শিক্ষার্থীর সামান্য ইনফুয়েঞ্জা হলেও ছাত্রদের কাছে ছুটে যেতেন। এমনও হয়েছে রাত ২/৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে

তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি ভিসি তিনি শিক্ষার্থীদের যেমন শিক্ষক তেমন অভিভাবকও। ভিসি বলেছেন, ছাত্রীদের তাদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে।

অধ্যাপক ড. এম এম আকাশের সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় মানবন্ধনে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন ওয়াদুদ, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ব্যাপরী, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সংগীতা আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খানসহ অর্ধ্বশত শিক্ষক।

সুত্র: নয়া দিগন্ত।

 

জীবনের বাকচক্র (পর্ব-১)

তাহেরা সুলতানা


রাফিয়া ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় যথেষ্ট ভালো। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি সবগুলোতেই ভালো সিজিপিও নিয়ে পাস করেছে। সবে সে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যেই বাড়িতে বিয়ের কথা শুরু হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছে, বড়ফুফু নাকি তাকে ছেলের বউ করতে চায়। বাবাও রাজী। রাফিয়ার যেদিন জন্ম হয়, সে দিন নাকি বাবা ফুফুকে কথা দিয়ে ফেলেছে।

ফুফু নাকি বাবাকে বলেছিল,

-তোর কি মানানের মেয়ে হয়েছে! এ মেয়ে আমি কাওরে দেব না। আমার ছেলের বউ কইরে নিয়ে যাব। মেয়ের মতোই রাকপো। কোন কষ্ট বুছতি দেব না।

মা একটু অমত করলেও বাবা মায়ের কথাকে অগ্রায্যই করছে না। বাবা মাকে এ কথাও বলেছে,

– মেয়ে মানুষ। এতো পড়াশুনা দিয়া কি করবি? বুবু আদর করি লিয়ে যাতি চাচ্ছে। ছেলেডা কত ভালো চাকরী করে! ব্যাংকে! তুমি মোটেও এর মদ্দ্যি কতা কতি আসপা না, এই বইলে দিলাম। আমরা ২ ভাই বইন মিলা যা বোঝব, তাই করবো।

রাফিয়ার আজকাল কলেজ থেকে বাড়িতে আসতেই ইচ্ছা করে না। কত সাধ ছিল! ডাক্তারি পড়বে! সব শেষ হতে বসেছে।

রাফিয়া আর তার মায়ের শত আপত্তি সত্ত্বেও ফুফাতো ভাই বাশারের সাথে রাফিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে একটা বাচ্চাও হলো। ফুটফুটে একটা মেয়ে। বিয়ের পরদিনি ফুফু বলে দিল।

– বউমা, আমার বয়স হয়েছে, কখন চলি যাই, ঠিক নাই। তাই তাড়াতাড়ি আমারি নাতির মুখ দেকাবা।

রাফিয়া ছোটবেলা থেকেই ফুফুরে খুব ভয় পেতো। বিয়ের পর ভয়টা আরও বেড়েছে। কলেজে যাওয়ার কথা বললেই কোন না কোন কাজ ধরিয়ে দেয়। মা কয়েকবার এসে হাতে পায়ে ধরে বলেও গেছে, যেন পরীক্ষাটা দিতে দেয়।

রাফিয়ার আর পরীক্ষাটা দেয়া হলো না। কোল আলো করে আসলো একটা ফুটফুটে মেয়ে। মেয়েকে নিয়েই এখন তার দিন কাটে। ফুফু প্রথমদিকে নাতি হয়নি বলে মুখ কালো করে থাকতো। কোলেও নিতো না। কিন্তু নাতনীর মায়াবী মুখটা দেখে এখন আর তার নাতির সাধ নেই। নামটা ফুফুই রাখলো, চাঁদনী।

এভাবে দিন গেল, মাস গেল। বছরও গেলো। চাঁদনী এখন উঠে দাঁড়ায়। একটু একটু হাটতে পারে। যেদিন প্রথম মা বলে ডাকলো, সেদিন রাফিয়া আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল। রাফিয়া এখন তার ডাক্তার হওয়ার সাধটা মেয়েকে দিয়ে মেটাতে চায়।

একবার চাঁদনী খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়ার মত হয়ে যায়। বাড়ির সবাই অস্থির হয়ে পড়ে। শহরের সবচেয়ে বড় শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। ডাঃ বাচ্চাকে দেখার পর সরাসরি ভর্তি করিয়ে নেয়। এরপর চলতে থাকে একের পর এক ওষুধ আর হাইয়ার এন্টিবায়োটিক। এতো ওষুধ দেখে রাফিয়ার আতংক লাগে। একটা অজানা ভয় ওকে আস্টে পিস্টে বাঁধতে থাকে। বাশারকে বারবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে, কিন্তু মায়ের বিরুদ্ধে বাশারের একটা কথাও বলার সাহস নাই।

(চলবে)

পুনঃশ্চ: বন্ধুরা, ইহাকে নিতান্তই একটা গল্প মনে করিয়া ভুল করিবেন না। ইহা একটি অতীব সত্য ঘটনা। যাহা আমার চোখের সামনে ঘটিয়াছে।

 

নিষিদ্ধ হল “টু ফিঙ্গার টেস্ট”

তানজিনা সুলতানা


বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ব্যবহ্ত টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করেছে মহামান্য হাইকোর্ট। ধর্ষিত নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষা এবং বিচারের ক্ষেত্রে তাকে যাতে আবারও লাঞ্চিত হতে না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানি শেষে প্রশংসনীয় এই রায় দেয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই টেস্টের কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। হাতে গ্লাভস পড়ে নারীর একান্ত প্রত্যঙ্গে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে তার “টেণ্ডারনেস” পরীক্ষার নামই টু ফিঙ্গার টেস্ট।

২০১০ সালে দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে এই ধর্ষণ পরীক্ষা পদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যাণ্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাকসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা একটি রিট আবেদন করে। নারী অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন, ধর্ষণ প্রমাণে টু ফিঙ্গার টেস্ট একটি অযৌক্তিক এবং অমানবিক পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ভিকটিমকে আরেকবার ধর্ষণের শিকার হবার মত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

রিট দায়েরের পাঁচ বছর পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সংশ্লিস্ট জনের মতামত গ্রহণের পর গত ১৩/৪/২০১৮-ইং তারিখে টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করে আদালত এই রায় দেয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, মামলা চলাকালে ধর্ষণের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে সাবধান হতে হবে আইনজীবীদের। নারীর প্রতি অমর্যাদাকর কোনও প্রশ্ন করা যাবে না বলেও আদেশ দিয়েছে আদালত। সেক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নিশ্চত করতে হবে যে, কোন পক্ষের আইনজীবী যেন ভিকটিমকে মর্যাদাহানির কোনও প্রশ্ন না করে।

ধর্ষণের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখন থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার গত বছর যে হেলথ কেয়ার প্রটোকল করেছে সেটি দেশের সকল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং হাসপাতালে পাঠিয়ে তা অনুসরণ করার নির্দেশনা দিয়েছে মহামান্য হাইকোর্ট।

ধর্ষিতা নারীর শারীরিক পরীক্ষার নামে যুগ

যুগ ধরে যে টু ফিঙ্গার টেস্ট চালু ছিল তা প্রকারান্তরে ধর্ষণের শিকার নারীর সম্মানহানির কারণ ঘটাত। বিচার প্রক্রিয়ার সময় অবাঞ্চিত প্রশ্ন তুলে অসম্মানের অপচেষ্টাও চলত। আদালতের যুগান্তকারী এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা অন্যায়ের কবল থেকে রক্ষা পাবে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুরা।

তানজিনা সুলতানা
অ্যাপ্রেন্টিস অ্যাডভোকেট
জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।

 

‘লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল’ পর্ব-১

জাজাফী


বুধবার বিকেলে লিন্ডার ফোন পেলাম।আমি তখন বাইরে বের হবো বলে প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় ফোন এলো। অপরিচিত নাম্বার। কান্ট্রিকোড দেখে বুঝলাম ফোন কোথা থেকে এসেছে। তবে বুঝতে পারিনি কে ফোন করতে পারে। রিসিভার তুলে কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে লিন্ডার কন্ঠ ভেসে এলো। কন্ঠ শুনে বুঝিনি যে ওটা লিন্ডা কারণ ওর সাথে আমার দেখা হয়নি বিশ বছর।

আর কথা হয়েছে কালেভদ্রে মাসে দু মাসে। ম্যানহাটন জুনিয়র হাইস্কুলে আমি আর লিন্ডা একসাথে পড়তাম। গ্রেড ফোরে পড়াকালীন যখন আমি আর মম এদেশে চলে এলাম তখন থেকে একটু একটু করে লিন্ডার সাথে আমার যোগাযোগ কমতে থাকলো।

ইমেইলে কথা হতো মাঝে মাঝে তবে ফেসবুক যুগে প্রবেশের পর বেশ যোগাযোগ হয়।আমি যখন মমের সাথে ম্যানহাটনে থাকতাম তখন লিন্ডা ওর সিঙ্গেল মাদারের সাথে ম্যানহাটনেই থাকতো। ও বলেছিল ওর সিঙ্গেল মাদার তবে আমার তখনই মনে হতো আসলে কথাটি ঠিক নয়। কোন এক অজ্ঞাত কারণে ওরা বাবার কথা চেপে যেতে চায়। আমিও তাই কখনো তোড়জোড় করিনি।

লিন্ডার পুরো নাম লিন্ডা ওয়াটসন। ওর গ্রান্ডফাদার জেমস ওয়াটসন আমেরিকার প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন। বাংলাদেশে চলে আসার পর লিন্ডার সাথে যোগাযোগ কমে গেলেও কখনো বিচ্ছিন্ন হইনি আমরা। স্কুল কলেজ পেরিয়ে দুজন দুই দেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজেদের মত করে দিন কাটাচ্ছি ঠিকই তবে ফেসবুকে দুজন দুজনের অম্ল মধুর স্মৃতিগুলি ফ্রেমে ধরে রেখে শেয়ার করছি একে অন্যের সাথে। এর ফলে কখনো মনেই হয়নি আমরা আর আগের মত একসাথে নেই।কোন এক বিচিত্র কারণে লিন্ডার কোন বয়ফ্রেন্ড জোটেনি অথচ ও এতো সুন্দর যে একবার তাকালে সহজে চোখ ফেরানো যায় না। আমি একবার জানতে চেয়েছিলাম তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই?ও বলেছিল না নেই তবে আছে একজন কিন্তু সে আসলেই আমার বয়ফ্রেন্ড কিনা তা আমি নিজেও জানি না কারণ তাকে কখনো কথাটি বলা হয়নি। আমি ওকে নিজ থেকে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলাম তুমি তাহলে অপেক্ষা করছো কেন? বলে দাও তার পর দেখো সে তোমাকে নিশ্চই এড়িয়ে যেতে পারবে না। তুমি হলে সেই লাল শিখা যার আকর্ষণ এড়ানোর ক্ষমতা নেই কোন পোকার। পোকারা যেমন জ্বলন্ত শিখার দিকে মোহগ্রস্থের মত ছুটে যায় তেমনি সেও তোমার দিকে ছুটে আসবে।লিন্ডা অন্যমনস্ক হয়ে যায়।

তবে কথা না ঘুরিয়েই বলে সে তো আর পোকা নয় আর আমিও জ্বলন্ত শিখা নই।তাছাড়া সে হলো আকাশের চাঁদের মত যাকে চাইলেই ধরা যায় না ছোঁয়া যায়না। তাকে দেখতে হয় দূর থেকে ছুতে হয় কল্পনায় আর আঁকতে হয় নিজের মনের সাতরঙে।

লিন্ডার কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগে। কি মিষ্টি করে কথা বলে। তার চেয়েও অদ্ভুত লাগে সেই মানুষটির কথা চিন্তা করে যাকে লিন্ডা পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারেনা ছুতে পারে না। লিন্ডাকে উপেক্ষা করার মত মানুষও যে থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না। বিকেলে লিন্ডার ফোন পেয়ে আমি বেশ পুলকিত হলাম। বেশ অনেক দিন পর ফোন করেছে এটা আনন্দের একটি কারণ তার চেয়ে বড় কারণ হলো লিন্ডা এই সামার ভ্যাকেশানে বাংলাদেশে ঘুরতে আসতে চায়। আমার বেশ আনন্দ হলো।

আমি লিন্ডাকে ফোনে রেখেই মমকে বললাম যে জানো মম লিন্ডা বাংলাদেশে আসছে! আমার মুখ থেকে কথাটি শোনার সাথে সাথে মমের মুখটা যেন একশো ওয়াট বাল্বের মত আলোকিত হয়ে উঠলো। মমের দিকে তাকিয়ে আমি খুবই অবাক হলাম। যেন মনে হলো লিন্ডা মমের খুব আপন কেউ অথচ মমের সাথে তার তেমন কোন সম্পর্কই ছিলনা। সেই ছোট্ট লিন্ডাকে মম খুব কমই দেখেছে। তাছাড়া আমাদের ম্যানহাটনের বাসাতেও সে একবারের বেশি দুবার আসেনি। মম আমার হাত থেকে রিসিভারটা নিয়ে কানে লাগিয়ে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো যে লিন্ডা নিজে পারলে তখনি উড়ে চলে আসে। ও কেন বাংলাদেশে আসতে চায় তা জানি না তবে তখন মনে হচ্ছিল মমের ভালোবাসাটুকু পাওয়ার জন্য হলেও সে বাংলাদেশে আসবেই।

মম খুটিয়ে খুটিয়ে অনেক কথা জানতে চাইলেন তার পর আমার হাতে দিলেন ফোনটা। আমি আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। ও অলরেডি ভিসা পেয়ে গেছে আগামী সাটারডেতে ওর ফ্লাইট। হাতের কর গুনে দেখলাম সময় বেশি দেরি নেই।

চলবে….

 

বাবা ও বই

তাহেরা সুলতানা


বিশ্ব বই দিবস। তাই বইয়ের সাথে সখ্যতা আর আমার বাবার সাথে কাটানো শৈশবের কিছু স্মৃতি আজকে তুলে ধরবো।
আমার আব্বা একজন কলেজ শিক্ষক ছিলেন। একটা গ্রামের কলেজে রসায়ন পড়াতেন। আমিও সে কলেজেরই ছাত্রী ছিলাম। রসায়ন অনেকের কাছেই হয়তো বেশ খটমটে সাবজেক্ট! আব্বা ছাত্র-ছাত্রীদের রসায়নের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সাহিত্যের বিভিন্ন অংশ সংযুক্তি করে খুব মজা করে পড়াতেন।

এরপরও কোন বিষয় কারো বুঝতে অসুবিধা হলে বলতেন, “গল্প-উপন্যাস যেমন করে পড়, সেভাবেই বুঝে বুঝে পড়। রসায়নের রস এমনিতেই টুপ টুপ করে পড়বে।”

আব্বার কাছে বই ছিল অনেকটা সন্তানের মতোই। ১৯৮৮ সালের বন্যায় আমাদের বাসায় ২ আলমারী ভর্তি বই নস্ট হয়ে যায়। আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আব্বা হাউ মাউ করে কেঁদেছিলেন।

এরপর আব্বা একটু একটু করে আবার গোছাতে শুরু করলেন। আমি আর আমার ইমিডিয়েট ছোট বোন তখন আব্বাকে সহযোগিতা করতাম। ১৯৯৮ সালের বন্যাতেও অনেক বই নস্ট হয়ে যায়।
তখনো আব্বাকে কাঁদতে দেখেছি।
আমাদের ৬ ভাইবোনেরই বই পড়ার নেশা ছিল চরম। আব্বার উৎসাহ-ই কারণে নেশাটা তৈরী হয়েছিল।

পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বই পড়ার জন্য আব্বা নিজেই টাইম বেধে দিতেন, যাতে রেজাল্ট খারাপ না হয়ে যায়। তারপরও পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে গল্প উপন্যাস পড়া ছিল একটা নেশার মতো!

ঈদের ছুটি অথবা স্কুল থেকে বড় কোন ছুটি পেলে আমরা আনন্দে লাফাতাম। কারণ তখন বই পড়া নিয়ে কোন টাইমটেবিল থাকতো না। বিশেষ করে ঈদের সময় আমরা নতুন জামার সাথে নতুন কিছু বই পেতাম, যেগুলো ঈদের দিন পড়তাম। আমাদের বাইরে ঘুরে বেড়ানোর থেকে বই পড়ে সময় কাটানোই বেশি পছন্দনীয় ছিল।

স্কুল পাঠাগারের প্রতিটা বই যে কতবার রিভিশন দিয়েছি, তার হিসাব নেই! গ্রামের বাজারে একটা পাঠাগার ছিল, সেখানকার প্রতিটা বইও প্রায় ২/৩ বার করে পড়া হয়ে যেতো। আমার এক বান্ধবী ছিল, জাকিয়া জেসমিন, ওর সাথে আমার সবচেয়ে বেশী বই আদান-প্রদান হতো। ও অবশ্য অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করতো। বইয়ে কোন দাগ দেয়া যাবে না! বইয়ের কোনা ভাঁজ করা যাবে না! আরো কতো কি!

সব শর্ত মেনেই বই ধার নিতাম।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিভূতিভূষণসহ ওপার বাংলার বহু লেখকের বই তখন সংগ্রহ করে পড়তাম। তবে পরবর্তীতে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহে থাকতো হুমায়ন আহমেদের বই। আব্বার পছন্দের লেখকদের মধ্যে শরৎচন্দ্রের নাম না নিলেই নয়। এছাড়া তিন গোয়ান্দা সিরিজ, শার্লক হোমস, মাসুদ রানা সিরিজ, সাইমুম সিরিজ আর নবী রাসূলদের জীবনকাহিনীর উপর লেখা বইগুলো তালিকার প্রথমদিকে থাকতো।

বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আব্বার বিধিনিষেধ খুব একটা ছিল না। বয়সানুযায়ী আমাদের সব ধরনের বই পড়তে উৎসাহ দিতেন, যাতে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারি। তবে কুরআন হাদিস আর ইসলামিক বইপুস্তক পড়ার প্রতি বেশী উৎসাহ দেখাতেন।

বলতেন, “ওগুলো হচ্ছে বেস। তাহলে যাই পড় না কেন, ভুলটা শিখবে না।”

নিজেও আমাদের সাথে পড়তেন আর বিভিন্ন বই নিয়ে আলোচনা করতেন। পারিবারিক বৈঠক করতেন। সেখানেও আদবকায়দা শেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বইয়ের আলোচনা গুরুত্ব পেতো।
জন্মদিন পালন করার কোন রেওয়াজ আমাদের বাসায় ছিল না। কিন্তু কোনভাবে যদি একটা বই উপহার পেতাম, সেদিন আর আনন্দের সীমা থাকতো না! স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা বা যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের জন্য আব্বাই উৎসাহ দিতেন। আবৃত্তির প্রথম হাতেখড়ি আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া। লেখালেখির ব্যাপারেও উনার উৎসাহের অভাব ছিল না। আমার সবগুলো বোন এখনো টুকটাক লেখালেখির সাথে জড়িত। কেউ ‘পাঠশালা’য় লিখে। কেউ ‘জানালা’য় লিখে। বাস্তবতার বেড়াজালে কারোরি বড় লেখক হয়ে উঠা হয়নি। তবে সবারই হাতেখড়ি সেই ছোটবেলায় আব্বার হাতে।

আব্বাই প্রুফ দেখে দিতেন, লেখা ঠিক করে দিতেন। আমার ৪ নং বোনের নাম সুমি। ও ক্লাস সিক্স এ থাকতে একবার ‘পেসমেকার’ নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে একটা লেখা লিখেছিল। ওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কত চিঠি যে এসেছিলো! প্রতিটা চিঠি আব্বাকে পড়ে শুনাতে হতো।
বইপড়া যে কি নেশা ছিল, তার একটা ছোট্ট উদাহরণ হলো, ইউনিভারসিটি ভর্তি কোচিং করতে এসেও বান্ধবীরা মিলে মোটা মোটা কয়েকটা উপন্যাস শেষ করেছিলাম। এরমধ্যে বিশেষভাবে ২টার কথা মনে পড়ে। ‘পার্থিব’ আর
‘সাতকাহন’।

আব্বা যখন রিটায়ার্ড করলেন, তখন আমরা উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“আব্বা, এখন কি কিছু করতে চান? না শুধুই রেস্ট নেবেন?” কোনকিছুতে ইনভল্ভ না থাকলে যদি অসুস্থ হয়ে যান, এই ভয়টা তখন কাজ করতো!
আব্বা হেসে উত্তর দিয়েছিলেন,
“তোমরা আমাকে নিয়ে কেনো এতো ভাবছো? আমার তিন বন্ধু তো আছেই। কলেজের ব্যস্ততার কারনে তাদেরকে সময় অনেক কম দেয়া হয়েছে। এখন ইনশাআল্লাহ সময় দিবো।”

আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“কারা তারা? আমরা কি চিনি আব্বা?”
তিনি বললেন, “অবশ্যই চিনো। কুরআন, হাদীস আর বই।”

আব্বার উত্তরটা শুনে যেমন খুব অবাক হয়েছিলাম, তেমনি খুব ভালোও লেগেছিল। আর এমন একজন মানুষের সন্তান হতে পেরে খুব গর্ববোধ হচ্ছিল। এখনো সবাই যখন কনফারেন্স কলে থাকি, আব্বার কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি। আমার কাছে সাদা মনের মানুষের উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে আমার আব্বা।
আল্লাহ্‌পাক আমাদের সবার বাবামাকে ভালো রাখুন। সুস্থ্য রাখুন। আমিন।

রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগীরা।

 

আজ বিশ্ব বই-দিবস

অপরাজিতা


বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে জনসচেতনতা বাড়ানোর মৌলিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর
২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস পালিত হয়ে আসছে।

বই দিবস উপলক্ষ্যে প্রিয় লেখিকা আফরোজা হাসানের ‘বই বৃক্ষের চারা’ নামে একটি প্রবন্ধ আর্টিকেল পুনরায় দেওয়া হল।

জ্ঞানার্জনের পথে চলতে গিয়েই আমার সাক্ষাৎ ঘটে বইয়ের সাথে। তারপর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম বই পড়ার আনন্দ। একটা সময় সেই আনন্দকে উপভোগ করতে শুরু করলাম। মনেহল বই পড়ার আনন্দ যারা উপভোগ করতে জানে না, তারা এক অর্থে সব আনন্দ থেকেই বঞ্চিত। মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার জন্য বইয়ের মতো উৎকৃষ্ট জিনিস আর কিছুই নেই। কারণ বই সেই মানুষ তৈরি করে যারা ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নিগৃহীত হতে পছন্দ করে না। তাই আমরা যদি স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চাই, তাহলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। মনের নরম মাটিতে ছোট্ট একটা বইবৃক্ষের চারা রোপণ করেছিলাম, আজ চেয়ে দেখি মহীরুহতে রূপান্তরিত হয়েছে আমার মনের সেই বইবৃক্ষ।

‘বৃক্ষে ধরেছে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনী নানা ধরণের বই
মাতাল হাওয়ায় পরশে মাঝে মাঝেই ঝরে পড়ে যার কিছু পাতা
তারপরও তাদের স্পর্শে চিরসবুজ-চিরসজীব থাকে মনের বনভূমি
জেগেছে যে নেশা প্রাণে মৃত্যু অবধি ছেড়ে যেন না যায় কভু মোরে।’

বই সম্পর্কিত আমার প্রিয় কিছু বাণী

গ্যেটে বলেছেন,
কতকগুলো বই সৃষ্টি হয় আমাদের শিক্ষা দেবার জন্য নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হলো আমাদের এই কথা জানানো যে, বইগুলোর স্রষ্টারা কিছু জানতেন।

ভিক্টর হুগো বলেছেন,
বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব, বই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষা কবজ।

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন,
পৃথিবী আর সভ্যজাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো ঘোঁত ঘোঁত করি, আর চোখ বাড়াবার কথা তুলতেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত, বই পড়া এবং তারজন্য দরকার বই পড়ার প্রবৃত্তি।

ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন,
আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি।

প্রতিভা বসু বলেছেন,
বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না, কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।

ওমর খৈয়াম বলেছেন,
সুর্যের আলোতে যেরূপ পৃথিবীর সবকিছু ভাস্কর হয়ে ওঠে তেমনি জ্ঞানের আলোতে জীবনের সকল অন্ধকার দিক আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

কবি জসিমুদ্দিন বলেছেন,
বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। সৃষ্টির আদিকাল হইতে মানুষ আসিয়াছেন আর চলিয়া গিয়াছেন। খ্যাতি-মান-অর্থ-শক্তি কিছুই কেহ রাখিয়া যাইতে পারে নাই। কিন্তু বইয়ের পাতা ভরিয়া তাহারা তাহাদের তপস্যা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাহাদের নৈরাজ্য, কি হইতে চাহিয়া কি তাহারা হইতে পারেন নাই সবকিছু তাহারা লিখিয়া গিয়াছেন। বই আপনাকে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সকল কালে নিয়া যাইতে পারে। যে দেশে আপনার কোনদিন যাওয়ার সম্ভাবনা নাই, বইয়ের রথে চেপে আপনি অনায়াসে সেই দেশে যাইতে পারিবেন।”

আমারো ম্যাক্সিম গোর্কী’র মত বলতে ইচ্ছে করে,
আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী। আলহামদুলিল্লাহ!

মনে রাখতে হবে, ২৩ এপ্রিল শুধুমাত্র বিশ্ব বই দিবসই নয়, কবি নজরুল, কবি জসিমুদ্দিন, কবি ফররুখ আহমদ, ওমর খৈয়াম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়, প্রতিভা বসু, ইনকা গার্সিলাসো, ডে লা ভেগাসহ প্রমুখ বিশ্ব খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের জন্মকেও স্বরণের দিন।

 

চলুন ঘুরে আসি মাল্টনোমাহ জলপ্রপাত(ছবি) 


মাল্টনোমাহ ফলস

১৮ ঘন্টাব্যপী রোজা আমার জীবনে কখনও রাখিনি,তাও আবার প্রচন্ড গরমের মধ্যে। এবার নরওয়েতে ২২ ঘন্টা রোজা, সে তুলনায় সুখে আছি। তবে যেরকম কষ্ট হবে মনে করেছিলাম সেরকম হচ্ছেনা। রোজার পূর্বে মারাত্মক চিন্তায় ছিলাম যে, এবার রোজায় না জানি কি হয় ! দোয়া করছিলাম যাতে কষ্ট না হয়। অবাক কান্ড হল কর্মব্যস্ত দিনেও বাসায় ফেরার পথে পার্কে স্টিল বার ধরে ৫০ বার শরীর উপরে ওঠা-নামা করিয়েছি এবং আরও কসরত করেছি। একটু কষ্ট হলেও মনে হয়েছে শক্তি তেমন একটা ক্ষয় হয়নি। কার ক্ষেত্রে কি ঘটেছে জানি না,তবে রোজা আমার শারিরীক সুস্থ্যতার ক্ষেত্রে ব্যপক অবদান রেখেছে। রোজার বাইরে আমি ননস্টপ খাই,তাই একটা বিরতী দিয়ে শরীরকে নব উদ্যোমী করার জন্যে রোজার গুরুত্ব অধিক বলে আমার মনে হয়েছে। আর অবশ্যই ফরজ হিসেবে রোজা পালন করতে আমরা বাধ্য। সত্যিই এটাতে দুনিয়া ও আখিরারে ব্যপক কল্যান রয়েছে।

আজ ছুটির দিন, ভাবছিলাম বাসায় শুয়ে বসে কাটাই,কিন্তু ঘোরাঘুরি যার স্বভাব তাকে আটকে রাখে এমন বিছানা পয়দা হয়নি। পরিকল্পনা ঝালাই করলাম। গুগল জানালো ‘মাল্টনোমাহ ফলস’ আজ শুভ। বাসা থেকে ১৬০ কি:মি: দূরে এটি অবস্থিত। হাইওয়ে ৫ এবং ৮৪ ধরে ধাবিত হলাম। আজ ব্যপক গরম। শরীর থেকে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে,তবে পিপাসা তেমন অনুভূত হচ্ছেনা। দেড় ঘন্টা পর কলাম্বিয়া নদীর পাশ ধরে অগ্রসর হতে লাগলাম। কলম্বিয়া নদীর পাশ ধরে যে রাস্তা রয়েছে তা ধরে কেউ যদি গাড়ি চালায় অথবা হাটে,আর যদি সে আস্তিক হয় তবে সে ¯স্রষ্টার প্রশংসা না করে পারবে না।

এই নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ আর এদিকের এক পাশে উঁচু পাহাড়শ্রেণী,যা আগ্নেয় শীলায় তৈরী। এটির পাশ ধরে এবং ভেতর দিয়ে কলম্বিয়া নদী প্রবাহিত। অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট একটি নদী এটি। পাহাড়ের যে অংশটি খাড়াভাবে উপরে উঠেছে,তার পাদদেশে নদীর অস্তিত্ব সত্যিই পুলকিত করে। এখানে সেটিই ঘটেছে। বামে কলাম্বিয়া নদীকে রেখে অগ্রসর হলাম। ডানেও সুন্দর পর্বতশ্রেণী। সবুজ আর সবুজ। খাড়া পাহাড়ের শরীর জড়িয়ে বিশাল বিশাল গাছগাছালির বসবাস। ভাল না লেগে কতক্ষণ !

ডানে মাল্টনোমাহ ফলস। দূর থেকে দেখে অত্যন্ত খুশী হলাম এবং অবাকও হলাম এ কারনে যে, অনেক আগে নেটে পৃথিবীর বিভিন্ন চমৎকার জলপ্রপাতের খোঁজ খবর করছিলাম। তখন যে কটা জলপ্রপাত আমাকে আকৃষ্ট করেছিল,তার ভেতর এটিও ছিল। অবাক হয়ে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড়টির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বহু উপর থেকে পানির ধারা পাহাড়ের কঠিন শীলার উপর আছড়ে পড়ে খানিকটা বাষ্প সৃষ্টি করে নীচে পতিত হচ্ছে। দৃশ্যটি বার বার দেখতে ভাল লাগবে। এগিয়ে গেলাম। বেশ গরম, শরীর পুড়ে যাওয়ার মত হচ্ছে।

জলপ্রপাত থেকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র নদীর পাশ ধরে সুন্দর রাস্তা হয়ে জলপ্রপাতের দিকে এগিয়ে চললাম। বিশ্বাস করেন, পাহাড়ের সীমার মধ্যে যেতেই এক চমৎকার শীতল আবহাওয়া শরীরে ধাক্কা দিল,আর সঙ্গে সঙ্গে গরমের স্থলে অতি মাত্রায় চমৎকার অনুভূতি কাজ করল। বেশ আরাম অনুভব করলাম। রহমত ব্যাপারটা এরকমই। মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণ পূর্বে যেন আমার গরমই অনুভূত হচ্ছিল না।
এ এলাকাটি সুন্দর করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। শুরুতেই একটি পর্যটন সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র,তারপর রেস্টুরেন্ট এবং একটি সুন্দর প্রাঙ্গন। আজ প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়দের দেখা পেলাম। সাধারণত আমার এলাকায় ভারতীয় তেমন দেখা যায় না। নীচে দাড়িয়ে জলপ্রপাত দেখতে থাকলাম। পাহাড়টি এখানে একটি সুবিশাল প্রাচীরের মত মনে হয়। কঠিন পাথরে শ্যাওলা কিছুটা জমেছে এবং সময়ের আবর্তে তা ক্ষয়ে গেছে,সে দৃশ্য দেখে মনে হয় এটি মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকস সম্বলিত কোনো দেওয়াল। জলপ্রপাতটি যদি নাও থাকত তবুও এই কঠিন পাথরের আঁিকবুকি দেখতে ভাল লাগত। খাড়া পাহাড়ের মাথায় বড় বড় গাছ শোভা পাচ্ছে আর তার ভেতর থেকে বিরামহীনভাবে জল প্রবাহিত হচ্ছে। পতিত জলরাশি সোজা নীচে পতিত না হয়ে মাঝামাঝি একটি স্থানে পাথরে ধাক্কা খেয়ে তবে নীচে পতিত হচ্ছে। সে দৃশ্যটি অতি মনোরম। গৃষ্মে জলধারা ক্ষিন,তবে ততটা ক্ষিণ নয়। জলধারা যেখানে পতিত হচ্ছে সেখান থেকে আরও নীচে আরেক স্তর রয়েছে এবং এটার উপরে একটি শক্ত পোক্ত সেতু নির্মান করা হয়েছে,যাতে দর্শনার্থীরা দেখতে পারে। সেতুটির নীচ দিয়ে জলধারা আরেক দফায় লাফিয়ে অবশেষে সমতলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জলপ্রপাতটির ধাপে ধাপে শিল্পের চিহ্ন। ডান দিকের রাস্তা ধরে উপরে উঠতে থাকলাম।

প্যাচানো রাস্তা ধরে সেতুর উপর উঠে আসলাম। এখান থেকে দেখতে খুব ভাল লাগে। শীতে যখন তুষারপাত হয়েছিল তখন এই জলপ্রপাতে তুষার মিশ্রিত জলধারা পতিত হওয়ার দৃশ্য ছিল অসাধারণ। এখান থেকে পাহাড়ের খাড়া অংশের কঠিন পাথরের কাঁরুকাজ দেখতে খুব ভাল লাগছিল। বায়ের রাস্তা ধরে উপরের দিকে হাটলাম।

বায়ে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশ আর ডানেও খাড়া,কিন্তু সেখানে বিশালাকৃতির গাছপালা রয়েছে। কঠিন পাথরের কোথাও কোথাও গর্ত তৈরী হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। সরু,স্বর্পিল এবং উর্ধ্বমুখী রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম,উদ্দেশ্য জলপ্রপাতের উৎস্যমূলে পৌঁছানো। ঝিরিঝিরি বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে,ভাল লাগছে,তবে একটু কষ্টও হচ্ছে কিন্তু এসব এখন তুচ্ছ।

হাতের বায়ে দেখলাম পাহাড়ের খাড়া ঢাল ধরে ঘন বন। সেখানে ছোট বড় সব রকমের গাছগাছালি। পাথুরে মাটির উপর বিশালাকৃতির গাছগুলি স্বমহিমায় দাড়িয়ে আছে। কোনো কোনোটা বয়সের ভারে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। কোনো কোনোটা মরেও সৌন্দর্য প্রদান করছে।

উপরে ওঠার পথে কয়েকটা লুকআউট আছে,যেখান থেকে খাড়া পর্বতশ্রেণীর পাশদিয়ে প্রবাহিত কলাম্বিয়া নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। ক্রমেই উপরে উঠে আসছি। কোথাও না থেমে একেবারে উপরে উঠে আসলাম,অনেক সময় লাগল এখানে পৌছাতে। এবার কিছুটা নীচের দিকে রাস্তা চলে গেছে। এতক্ষন রাস্তা ছিল নুড়ি পাথরে পূর্ণ এবং পাকা রাস্তাও ছিল,আর এখন মাটির রাস্তা শুরু হল। এর একদিকে কাঠের ছোট ছোট গুড়ি দিয়ে আটকানো। সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। খানিকটা নীচে নেমেই দেখলাম চোখ শীতলকারী দারুন সেই জলধারার উপস্থিতি। খানিক দাড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। এ যেন ছবিতে দেখা কোনো পাহাড়ী ছোট নদী।

নীচে নামলাম। মধ্যম মানের গতিতে চলমান জলধারার দুপাশে বিশাল বিশাল গাছপালা। সেসব গাছে শ্যাওলা জমে আছে,যা সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। ছোট বড় পাথরের চাক এখানে সেখানে গেথে আছে। এর উপর বিশাল বিশাল গাছ উপড়ে পড়ে আছে। কোনো কোনোটায় শ্যাওলা ধরা আর কোনো কোনোটা ক্ষয়ে গেছে। কিছু গাছের ভেতরে ক্ষয়ে পাইপের মত হয়ে আছে,সেসব মরা গাছ দেখতে বেশী ভাল লাগে। পানির ধারার উপর অবস্থিত বড় কিছু পাথরের চাকের উপর দিয়ে পানির কাছে গেলাম এবং হাত দিয়ে শীতলতা অনুভব করলাম। খুব ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ পানি,মনে হল খেয়ে ফেলি কিন্তু রোজার কারনে হল না। পতিত বিশাল এক গাছের কান্ডের উপর দিয়ে হেটে আরেক ধারে গেলাম। এখানে আরও সুন্দর। স্বশব্দে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে নীচের দিকে। এবার জলধারাকে অনুসরণ করে এর খাড়া পতিত হওয়ার স্থানের দিকে হাটলাম।

খানিক পর দেখলাম এটি অন্তত দশফুট নীচে পতিত হচ্ছে এবং সামনে বিশ/পচিশ ফুট অগ্রসর হয়ে একেবারে খাড়া পতিত হচ্ছে। ধঃর ১৯১ সরঃবৎ যরমযএখানে একটি মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্যে। আমি সেখানে পৌছলাম। এখান থেকে জলপ্রপাতের খাড়া রূপটি দেখা যায়। সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর ! ছড়ানো ঝিটানো পানির ধারা এখানে একত্রে মিলিত হয়ে নীচে পতিত হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখা সবার ভাগ্যে জোটে না। আজ বেশ লোক সমাগম হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসেছে এটা দেখতে।

চারিদিকে গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। মৃদুমন্দ বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে। বিশুদ্ধ বাতাশ বুক ভরে টেনে নিলাম,ভাল লাগল। এখানে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করা যায়। ডানে দেখলাম বহু নীচে রাস্তা দেখা যাচ্ছে এবং গাড়ি গুলোকে বেশ ছোট লাগছে। খাড়া পাহাড়ের উপরে দাড়িয়ে এভাবে চারিদিকটা দেখতে সত্যিই ভাল লাগে।

এবার উঠে আসলাম। সোজা পথে না এসে পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উপরে উঠে আসলাম,তাতে কষ্ট হলেও সময় বাচল,সময়ের দাম অনেক,যদিও আজ আমি পুরো অবসরে ! এবার পাহাড়ের ভেতরের দিকে যাবার পালা। এই জলপ্রপাতের আরও গোড়ার দিক দেখার জন্যে বিপরীত দিকে রওনা হলাম। এপাশে শুনশান নিরবতা এবং গাছগাছালির ঘনত্বের কারনে আলোর পরিমান কম কিন্তু এক অপরূপ রূপের সুষ্টি করেছে এই আধারী মাখা জলধারা সমৃদ্ধ বনভূমী। চারিদিকে বড় বড় পাথরের চাক,তার উপর শতবর্ষী গাছপালার উপড়ে পড়া,এখানে সেখানে মরা গাছের কান্ড,ধারালো আগ্নেয় শীলায় তৈরী প্রাকৃতিক রাস্তা, ওহ সত্যিই অসাধারণ। আমি চলতে থাকলাম। আজ বিশেষ কেড্স পরেছি যাতে পা পিছলে না যায়। চলতেই থাকলাম। ডানের খাড়া পাহাড়ের শরীরের কোথাও কোথাও ছোট ছোট পানির প্রবাহ দেখলাম। এ অংশের রাস্তা সুবিধার নয়। সতর্কতার সাথে অগ্রসর হলাম। সরু রাস্তায় ধারালো খাড়া পাথর একটার পাশে একটা। বামে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে। যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছি ততই ভাল লাগছে। উপরের দিকে উঠে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। বিভিন্ন স্থানে জলধারা বিভিন্ন রূপের সৃষ্টি করেছে। অসাধারণ দৃশ্যগুলো ক্যামেরা বন্দী করতে করতে অগ্রসর হলাম। একসময় থামলাম এবং পিছু হটলাম। একা একা চলতে ভাল লাগছিল। মনে হচ্ছিল আরও গেলে ভাল হত। কিন্তু ফিরতি পথ ধরলাম।

ফেরার পথে বুঝলাম অনেক দূর হেটেছি। আবেগে প্রথমটায় বুঝিনি। রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না। ঢালুতে নামছি তারপরও মনে হচ্ছে বিরাট পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। সত্যিই অনেকদূর গিয়েছি। নীচের দিকে নেমে আবারও জলপ্রপাতটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অনেকক্ষন ধরে দেখলাম। এলাকাটি মনের মধ্যে গেথে গেছে। মাল্টনোমাহ ফলস আমার হৃদয় হরণ করেছে।

ফেরার পথে পোর্টল্যান্ড হালাল স্টোর থেকে বিপূল পরিমানে গরুর মাংস এবং মশলাপাতি কিনলাম। রোজা রেখে বাজার করা ঠিক নয়, আর্থিক ক্ষতিটাই আসল। কিন্তু এত চমৎকার গরুর মাংস আমি আর কোথাও পাইনি। আজ সন্ধ্যায় সাদা ভাত আর গরুর মাংসের ঝোল যদি না ঝেড়েছি,তবে আমার নামে কুকুর পুষবেন !
পুনশ্চ: রান্নাটা হয়েছে দারুন। কথা রেখেছি।

 

ঘর সাজিয়ে তুলুন মাটির জিনিসে

অপরাজিতা


শহরে থাকলেও আমরা পারি বাসার কোনো এক জায়গায় একটু গ্রাম্য ছোঁয়ায় সাজাতে। অনায়াশে শহুরে মানুষের জীবনের মধ্যে আজও জীবন্ত হয়ে উঠে গ্রামের মাটি। দামি কার্পেট, ফুলদানি, শো পিসের সাথে মানিয়ে নিয়েছে এখন মাটির জিনিসপত্র স্ব মহিমায়। মাটির তৈরি জিনিস তুলনামূলক সস্তা। আসুন অল্প খরচে নিজের ঘরের সাজকে করে তুলি ছিমছাম ও সুন্দর। সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন রুচিবোধ।

মাটির জিনিস দিয়ে কীভাবে ঘর সাজাবেন আসুন দেখি কিছু কৌশল-

মাটির তৈরি শো পিস

ঘর সাজিয়ে ফেলুন মাটির তৈরি শো পিস দিয়ে। ঘরে রাখতে পারেন সুন্দর কোনো ওয়াল হ্যাঙ্গিং। এটি ঘরের চেহারাই পালটে দেবে।

মাটির কলসি

মাটির কলসি দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন সুন্দর করে। বড় বড় চারটি কলসি চারদিকে রেখে তার উপর কাচ বসিয়ে দিন। তা সেন্টার টেবিল হিসেবে দিব্য ব্যবহার করতে পারবেন।

টেরাকোটা

ঘরের সাজে ভিন্নতা আনতে চাইলে সামর্থ্য অনুযায়ী বসার ঘর, শোবার ঘর অথবা খাবার ঘরে দেয়ালের একপাশে মাটির ফলক অর্থাৎ টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন। আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে মূল দরজার সামনের ফ্রেমে মাটির টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন।

মাটির ফ্রেম

খুব সাধারণ ও সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে চান তাহলে ফুলদানি, পুতুল, শো-পিস ইত্যাদি ব্যবহারের পাশাপাশি ঘরের ভিতরে যে স্থানটি খুব সহজেই সকলের নজরে পরে সেখানে মাটির ফ্রেম ব্যবহার করে তাতে যে কোনো ছবি বাঁধাতে পারেন।

ছোটো জার

মাটির তৈরি ছোটো জার কিনে তার উপর নিজের মতো করে ডিজ়াইন করতে পারেন।

মাটির ফুলদানি

দামি ফুলদানির বদলে মাটির তৈরি ফুলদানি বাড়িতে রাখতে পারেন। সেখানে কিছু সতেজ ফুল রাখার চেষ্টা করুন। তাতে আপনার ঘরের সাজগোজ যেমন ছিমছাম দেখাবে, তেমনই দেখাবে আকর্ষণীয়।

মাটির টব

শহুরে জীবনে এখন মাটির টবের জায়গায় এসেছে আধুনিক ফুলের প্লাস্টিক ও চিনা পাথরের টব। কিন্তু ফুলগাছ মাটির টবে রাখলে তা ভালো থাকে আবার মাটির টবও আপনার ঘর সাজাবে।

কলমদানি-মোমবাতি

মাটির তৈরি কলমদানি, মোমবাতি স্ট্যান্ডের মতো জিনিস আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে।

প্লেট-গ্লাস-ফুল-ফল-বাটি

ঘর সাজানোর জন্য কাজে লাগাতে পারবেন মাটির তৈরি প্লেট, গ্লাস,ফুল-ফল, বাটি। আপনি চাইলে এসব জিনিসের উপর কারুকার্য করতে পারেন। তাতে সামান্য জিনিসও অসাধারণ হয়ে উঠবে।

 

আলো আঁধারের ছায় -১

আফরোজা হাসান


আমার পড়াশোনার বিষয়টিই এমন যে ভালো কথার চেয়ে মন্দ কথাই বেশি শুনতে হয় আমাকে। সুখের চেয়ে জীবনে বিরাজমান দুঃখের কথাই বেশি জানতে হয়। আনন্দময়তার চেয়ে বেদনাক্ত গল্পগুলোই আগে কড়া নাড়ে আমার দ্বারে এসে।

মানুষের ভেতরের আলোকময়তার চেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্নতাই বেশি উন্মোচিত হয় আমার সামনে।

বলা হয়, “কোন জিনিস যখন সচারচর সংঘটিত হয় মানুষ সেটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। একসময় সেই জিনিসটা মানুষের মনের আর তেমন করে প্রভাব ফেলতে পারে না।” কিন্তু এই ক্ষেত্রে কেন জানি না আমার সাথে এমন হয়নি। এখনো কারো কষ্টের কথা শুনলে, দুঃখের কথা জানলে, বেদনাক্ত চেহারা দেখতে, অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে অনুভব করলে খুব বেশি কষ্ট হয়।

এমন মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে! তাদের পানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে! যে গোলক-ধাঁধায় তারা ঘুরপাক খাচ্ছে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে।

অন্ধকারে নিমজ্জিত মনগুলোকে অভয় দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, এই তো আরেকটু এগোলেই পেয়ে যাবে আলোর সন্ধান। ধৈর্য্য ধরে রেখে কদম সামনে বাড়াও। উঁচু নীচু পথ দেখে ভয় পেয়ো না। দূর থেকে দেখছো তো তাই এমন মনে হচ্ছে। যখন চলতে শুরু করবে নিজের অজান্তেই দেখবে পথের সাথে তাল মিলিয়ে, সব বাঁক পেড়িয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছো গন্তব্য পানে ইনশাআল্লাহ।

‘নানান প্রতিকূলতায় জীবনের পথ যখনই লাগবে খুব দুর্বোধ্য, রাখবে মনে আলো আঁধারের মাঝে আলো সর্বদা অপ্রতিরোধ্য’।

এই কথাটা চলার আমি সবসময় মনে রাখতে চেষ্টা করি। তাই যখনই কোন কারণে চোখের সামনে হঠাৎ আঁধারের পর্দা নেমে আসে। নিজেই নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করি এই আঁধার ক্ষণস্থায়ী রূপে এসেছে। কেননা আলোকে বেশীক্ষণ আড়াল করে রাখার ক্ষমতা আঁধারের নেই।

আমার কাছে যখনই কেউ কোন সমস্যা নিয়ে আসে একথাটাই বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় কেউ কেউ এত বেশি বেদনাহত থাকেন তাদেরকে বোঝাতে গেলে বোঝেন তো নাই, উল্টো ভয়াবহ রকম উত্তেজিত হয়ে যান। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মনের সব রাগ ঝেড়ে গটগট করে উঠে চলে যান। ও হ্যা যাবার সময় স্বশব্দে দরজা বন্ধ করতে ভুলেন না।

আমার সাথে এমন যে ক’বারই হয়েছে দরজা বন্ধের শব্দে চমকে উঠেছি ভীষণ ভাবে। মনে হয়েছে ঠিক এতটাই প্রচন্ডতার সাথেই সেই ব্যক্তি তার মনের দরজাটাও বন্ধ করে দিলেন। এর ফলে না তার ভেতর থেকে বদ্ধ বাতাস বেড়িয়ে আসতে পারবে, না বাইরে থেকে বিশুদ্ধ বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। যার ফলে গুমোট পরিবেশে দমবন্ধ করা এক অস্বস্থিতে কাটবে তার সময়। যা তাকে আরো নাজুক ও দুবর্ল করে তুলবে সমস্যার মোকাবিলায়।

এমন মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করলেও, তাদের কষ্টগুলোকে মমতার পরশ বোলাতে চেষ্টা করলেও তারা কাউকে সেই সুযোগ দিতেই নারাজ থাকেন। বিদ্বেষে তাদের মনের পেয়ালা এতটাই টইটুম্বুর থাকে সেখানে মমতা মাখা শব্দরা পড়া মাত্র গড়িয়ে বাইরে বেড়িয়ে যায়। জায়গা করে নিতে পারে না কোমল ভালোবাসা।

ঘৃণার আগুনের তাপে গলে যায়। ঘৃণার এমন দহন ক্ষমতা দেখে বুক কেঁপে ওঠে। কাছে যেতে চাইলে আমাকেই না জ্বলসে দেয় ঐ আগুন সেই আতঙ্ক ঘিরে ধরে মনকে। বাবা বলেছিলেন, ক্ষেতে কৃষক যে বীজ বোনে সেই ফসলই ঘরে তোলে। ঠিক তেমনি মানুষের মনেও তুমি যা বুনবে তাই ফিরে পাবে। আমার নিজ অভিজ্ঞতায় মনের ব্যাপারে বাবার কথাটা অবশ্য সবসময় সত্য বলে প্রমানিত হয়নি।

ভালো কিছু বোনার পরেও অনেক সময় একদম বিপরীত কিছু ফিরে পেতে হয়েছে অনেক মনের কাছ থেকেই। এক সময় ব্যথিত হতাম খুব এটা নিয়ে। মনে হতো আমি এত ভালো ব্যবহার করছি তাহলে মানুষ কেন আমাকে কষ্ট দেয়? কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি যে, অনাবাদী জমির মত কিছু কিছু অনাবাদী মনও আছে। সেইসব মনে যত ভালো কিছুই বোনা হোক না কেন অনুর্বরতার কারণে অবিকশিতই থেকে যায়। যার ফলে উত্তম কিছু ফিরে আসার কোন সুযোগই থাকে না।

আবার কত সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারণে উর্বর জমিরও তো ব্যর্থ হয় ফসল ফলাতে। তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বীকার তো মানুষের মনকেও হতে হয় অনেক সময়। তাই দোষ-গুণ যাচাই বাছাই ইত্যাদি ঝামেলাতে এখন আর যেতে চাই না। ভালোটা দিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করি। কারণ উত্তম প্রতিদান দেবার একমাত্র মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। প্রতিদান একমাত্র তাঁর কাছেই আশা করা উচিত।

কিন্তু মনখারাপের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি না। এমন মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা মনকে খুব ব্যথিত করে। এমন মানুষদের প্রতি আমার কখনোই ঘৃণা বা রাগ হয় না। দয়া বা করুনাও হয় না। আমার মায়া হয়। খুব খুব বেশি মায়া।

কারণ নিজের স্বল্প জ্ঞান থেকে এইটুকু অন্তত জানি ও বুঝি যে, ব্যক্তি জীবনের তিক্ততা এই মানুষগুলোকে এমন তিক্ত বানিয়ে দিয়েছে। তাদের মনের তিক্তরার বিষ এমন ভাবে ছড়িয়ে গিয়েছে যে তারা না চাইলেও তাদের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে বিষবাষ্প।

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (‘বই রিভিউ’ পর্ব-২)

অনবরত বৃক্ষের গান


সাহসের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আপনার সন্তানকে কি আপনি সাহস যুগিয়ে থাকেন? সন্তান প্রতিপালনের জন্য বাবা-মায়েদের অবশ্যই সন্তানের কিছু মৌলিক বিষয় অবগত করার মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করাতে হবে, সন্তানকে ঝুঁকি নিতে উদ্ভূত করুন, সম্ভাবনাকে তুলে ধরুন। সন্তানকে ভুল করতে দিন, ভুল থেকে মৌলিক বিষয়টি শিখতে সহযোগিতা করুন। সন্তান সাহায্য করুন তার উৎসাহের বিষয়কে খুঁজে পেতে। কেন না, প্রতিটি আগ্রহই উৎকর্ষের শীর্ষে পৌছে দেয় সন্তানের সম্ভাবনা সমুহকে। সন্তানকে এমনভাবে তৈরি করুন, সে নিজেকে কোথায় পৌছাতে চায়,
খুঁজে পায়,
জিজ্ঞেস করুন জানার চেষ্টা করুন, জানুন।

উল্লেখ্য, বিপুল উপকরণের ভীড়ে,তাঁকে দরকারী বিষয়গুলো দিয়ে সজ্জিত করুন, তার মননশীল চারপাশ।

স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক

পিতামাতাকে তাঁর সন্তানকে জীবনের উদ্দেশ্য কি,তা বোঝাতে হবে,কেন তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে,স্রষ্টা তাকে কেনই বা সৃষ্টি করলেন।জীবনের প্রতিটি কাজ যেন তাঁর সন্তুষ্টিরর জন্য হয়,তেমনি চেতনা গ্রোথিত করে দিতে হবে।

ছোট্ট সোনামনিকে কোলে নিয়ে চাঁদের আলো দেখাতে পারেন, ফুল পাখি,নদী, এমনকি প্রতিটি ক্ষুদ্র জিনিস দেখিয়েও তাঁকে রবের মহিমা শেখাতে পারেন, আল্লাহ চিনতে সাহায্য করতে পারেন।

সুন্দর করে মনীষি, নবী-রাসূলদের জীবনী শুনাতেন পারেন, যা সন্তান তাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে পারে।

বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সালাত আদায় করতে পারেন, বারবার সুন্দর বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারেন, যাতে তারা আস্তে আস্তে বুঝতে শিখে।

তাদের সাথে রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক যেকোন বিষয়ই আলোচনা করে শুনাতে পারেন, এমনকি কবিতাও।

যেটা তাদের চিন্তায় দাগ কেটে যায়। তাতে শৈশব থেকেই চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে,গভীরতা আসবে।

সন্তানের সার্বিক উন্নয়নে ইনভেস্টমেন্টের প্রশ্নপত্র

আপনি কি সন্তানের সার্বিক উন্নয়ন বলতে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা ও খেলাধুলাকেই বুঝে থাকেন? আপনার সন্তানের আত্মিক উন্নয়ন হচ্ছে কি? সন্তান চাওয়া মাত্রই তা পূরণ করেন, নাকি ধৈর্যশীলতার প্রশিক্ষণ দেন?

অনুপ্রেরণা
আপনার সন্তানকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যে লাভে অনুপ্রেরণা দিন, যার প্রতিশ্রুতি পৃথিবীর কোনো বিনিয়োগেই দেওয়া হয়নি।

ত্যাগের মানসিকতা অর্জন
বাচ্চাদের নিজেদের মধ্যে খেলনা ভাগাভাগি করে খেলতে শিখান, এতে সে ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করবে।

মিলেমিশে খাওয়ার অভ্যাস
খাবার খাওয়ানোর বেলায়ও মিলেমিশে খেতে অভ্যস্ত করুন।

ভালো আচরণ
পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ভালো আচরণ করতে অভ্যস্ত করুন। সন্তানের আত্মিক উন্নয়নের দিকে নজর দিন।

শৈশব হচ্ছে চমৎকার সুযোগ,সন্তানকে সুন্দর করে গড়ার। এ সময় আপনি তাঁকে যেভাবে চান, সেভাবেই তৈরি করতে পারেন।

আপনি যদি নিজে স্রষ্টার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেন, গভীর রজনীতে নিভৃতে তাঁকে খুঁজেন, সন্তানও তাঁর সান্নিধ্য চাইবে।বার্ধক্যের সময় রাত জেগে, আপনার সেবা করবে,উদার ও সহনশীল মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে। আপনি যখন কবরে শায়িত থাকবেন, আপনার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করবে।

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

আমি না হয় নদীই হলাম

ডা. ফাতিমা খান


আঁকতে বসলে আমার নীল আর আকাশী রঙ টা কম পড়ে যায় সবসময়ই। আকাশের পরিধি মাপতে মাপতেই আমার রঙ শেষ, হাত ক্লান্ত! আজকাল লিখতে বসলেও শ্রান্ত মনে শব্দের ঘাটতি পড়ে , হাতিয়ে পাতিয়ে কোন রকমে অল্প কিছু শব্দই খুঁজে পাই।
“নাতি-খাতি বেলা গেল শুতি পারলাম না” জাতীয় দিনকাল যায় রোজ। “শুতি পারলাম না” অংশটুকু ঠিক থাকলেও “নাতি- খাতি” র ব্যাখ্যা দিতে গেলে এক বিশাল হ্যাভ টু-ডু আর ইউসড টু-ডু লিস্টের মেলা খুলে বসতে হবে। কর্তব্যের খাতিরে চব্বিশ ঘন্টায় অন্তত বারো বার নিজের স্বরূপ বদলাই। মা, রাধুনী, শিক্ষক,কাজের বুয়া, বন্ধু, খেলার সাথী, শাসক, চিকিৎসক… আরো কত কি! কাজের ফাঁকেফাঁকে ইউ টিউবে গল্প শুনি। রিল্যাক্সড হই।

আজ আমার প্রিয় গল্পগুলোর মধ্যে একটা গল্প আপনাদের শোনাব।

এক শতবর্ষী নদী গেল পাহাড়ের কাছে, তার অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে।

বলল, ”কি গম্ভীর, কি বলিষ্ঠ তুমি! বয়সে তুমি হাজারবর্ষী। আচ্ছা তুমিই আমায় একটা কথা বলে দাও দেখি! এই যে দেখছ শত বছর ধরে আমি অবিরাম বয়েই চলেছি, কখনো শান্ত, কখনো বা চঞ্চল পায়ে, সবাই আমার উপর নেয়ে পিয়ে চলে যায়, নৌকা আর জাহাজ গুলো দেখ কেমন নির্দয় ভাবে আমার উপর ছুটে চলে, ক্লান্ত পথিক আমার তীরে বসে জিরায় আর পাথর ছুড়ে আমার গায়ে, বাড়ির বউ ঝিরা ধোঁয়া কাঁচা সেরে আবার কলসি কাঁধে খানিকটা পানি তুলে নিয়ে যায়…কেউ একবারও তো ডেকে বলে না, ভাল আছ নদী?

..এইটা কি ঠিক হল? আমি বড় ক্লান্ত, ভাবছি অনেক হয়েছে, এবার আমি ক্ষান্ত হব!”

পাহাড় সব শুনে হো হো করে হেসে উঠে। তার হাসিতে যে কম্পন, যে অনুরণন তা ভূতল কাঁপিয়ে দেয়! আর যা হোক, পাহাড়ের হাসি তো!

”থামো থামো বন্ধু, দোহাই লাগে আর হেসো না ! তোমার হাসি প্রলয় ডেকে আনবে!” – ভীত নদী বলে ওঠে।

”তুমি শুধু নিজের কথাই ভাবলে, এটা কি ঠিক হল নদী?” – পাহাড়ের গম্ভীর জবাব।

”আচ্ছা একবার ভেবে দেখ, এই যে আমি হাজার বছর ধরে এক জায়গায় ঠায় দাড়িয়ে আছি, একটু নড়ে চড়ে বসার তো কোন উপায় নাই! আর এই তুমি, দেখলে, তুমিও তো আমাকে হাসতে বারণ করলে। আমি হাসলেও বিপদ! অথচ তোমার মত অসংখ্য নদীর জন্ম হয়েছে আমার বুক চিরে! ঝড় ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি বাদলা, ভূকম্পন কেউ আমাকে ছাড় দেয়নি, সব কিছুই নিরবে সয়ে আসছি। প্রকৃতি ক্ষেপলে অকারণেই আমার খানিকটা খেয়ে ফেলে। শৌখিন মানুষগুলো আমায় কেটে কুটে ঘর বাড়ি বানায়… এই বলিষ্ঠ আমি চুপ করেই থাকি! ‘তোমার গতি আছে, ছন্দ আছে। তুমি নাচতে,গাইতে পার, যখন যেখানে খুশী বইতে পার, তোমার পানি পান করে তোমার তীরে বসে পথিক তোমায় দোয়া দেয়…. তারপরও??? তারপরও তোমার এত অভিযোগ?”

নদী বুঝতে পারে। নদী বুঝতে পারে তার অভিযোগ গুলো অন্য কারো আকুল আরজি! এরপর সে আর অভিযোগ করেনি, সেই যে চলছে আর কোনদিন থামেনি…। ছবি: সাঙ্গু নদী,বাংলাদেশ।

লেখক কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

‘নারী মুক্তি’ সময়ের অপরিহার্য দাবি!

সাজেদা হুমায়রা হিমু


নারী কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং একটি চালিকা শক্তি যাকে ছাড়া পুরো পৃথিবী স্তব্ধ, স্থবির। তবুও নারীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন হচ্ছে না কোনো ভাবেই।

তাই একবিংশ শতাব্দীর আলো ঝলমলে পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও নারী আজ বড় অসহায়! বড়ই পরাধীন!

প্রতিনিয়তই নারী নির্যাতিত শারীরিকভাবে….মানসিক ভাবে।
নারীকে কখনো একজন মা, কখনো একজন স্ত্রী, কখনো ছেলের বউ, কখনো বোন বা কন্যা, কখনোবা একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ নির্যাতন শুধু পুরুষ কর্তৃক হচ্ছে তা নয়, নারী কর্তৃকও হচ্ছে।

সত্যি নারীরা আজ ভালো নেই। নারী কেন্দ্রীক বিভিন্ন সমস্যার বিষবাষ্পে জর্জরিত আমাদের প্রিয় এ জন্মভূমি।

বেশিরভাগ পরিবারেই নেই নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা…নেই তার অবদান আর কষ্টের স্বীকৃতি…
যৌতুক, তালাক নারী নির্যতনের রেকর্ডে যোগ করেছে এক চরম নির্মমতা!
বিগত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা!
নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সম্পত্তি থেকে…..বঞ্চিত করা হচ্ছে উপার্জনের ক্ষেত্রে।
পথে পথে চলছে নারীর শ্লীলতাহানি!
কন্যা শিশু থেকে বৃদ্ধা নারীরা পর্যন্ত প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের….
বাস, অফিস, গৃহ কোন স্থানই আজ নিরাপদ নয়।
বিভিন্ন বয়সের পুরুষের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার নারীরা প্রচণ্ড মানসিক পীড়নে থাকছে।
আর ইতি ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন এমনকি নিজেদের জীবনেরও!

কেন আজ নারীর এই অসহায়ত্ব? কেন হচ্ছে এই নির্যাতন? তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেনা কেউ।

নারীর অবস্থার উন্নয়নে সময়ের সাথে সাথে প্রণিত হচ্ছে বিভিন্ন নীতিমালা, বিভিন্ন পদক্ষেপ… তবুও পরিবর্তিত হচ্ছে না নারীর অবস্থার।

তাই আল্লাহ প্রদত্ত নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা আজ বড় প্রয়োজন…..প্রয়োজন সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন….প্রয়োজন নারী নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনের প্রয়োগ।

অযৌক্তিক সমানিধিকারের দাবীর মাধ্যমে নারীর কাঁধে কয়েক গুন বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নারীমুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।

তাই..
সম অধিকার নয়,
প্রাপ্য অধিকার চাই।
প্রাপ্য স্বাধীনতা চাই।

নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

সবজি বিক্রি করে গরীবের জন্যে হাসপাতাল বানিয়েছেন যিনি!

মুহাম্মদ সাইদুজ্জামান আহা


স্ত্রী মমতাজ বেগমের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন তাজমহল, লোকে সেটাকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেই জানে। সুভাষিণী মিস্ত্রি বিশাল কোন সাম্রাজ্যের অধিপতি নন, অনেক টাকাপয়সাও নেই তার। কিন্ত যে কাজটা তিনি করেছেন, সেটা হয়তো ছাড়িয়ে গেছে শাহজাহানের ভালোবাসা কিংবা তাজমহলের কীর্তিকেও। বিনা চিকিৎসায় স্বামীকে হারানো এই ভদ্রমহিলা মানুষের বাড়িতে কাজ করে আর সবজি বিক্রি করেই গড়ে তুলেছেন হাসপাতাল, যাতে গরীব মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে না হয়!

বারো বছর বয়সে একটা মেয়ের স্কুলে যাওয়ার কথা, বান্ধবীদের সঙ্গে পুতুল খেলার কথা। সেই বয়সে সুভাষিণীকে দাঁড়াতে হয়েছিল ছাদনাতলায়। পুতুলের বিয়ে দেয়ার বয়সে তার নিজেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, সংসার নামের কঠিণ একটা জগতে প্রবেশ করতে হয়েছিল সেই অল্প বয়সে। স্বামীর ভালোবাসায় সেই সংসারজীবনে অভ্যস্তও হয়ে গিয়েছিলেন সুভাষিণী। কিন্ত যখন তার বয়স মাত্র তেইশ, তখনই জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা পেলেন তিনি। ১৯৭১ সালে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান সুভাষিণীর স্বামী। হাসপাতালের বারান্দায় বড় অবহেলা পড়েছিল তার দেহটা, টাকার অভাবে ঔষধ কিনতে পারেননি, ডাক্তারদের দেয়া টেস্টগুলোও করানো সম্ভব হয়নি। তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীর কষ্টটা দেখেছেন সুভাষিণী।

স্বামীর মৃত্যুর পরে চার সন্তানকে নিয়ে পথে নেমে আসতে হয়েছিল তাকে। সংসারে একটা পয়সা আয় নেই, সঞ্চয় বলতে কিছুই রেখে যেতে পারেননি তার দিনমজুর স্বামী। দুমুঠো অন্নের জন্য পরের বাড়িতে ঝি-গিরি থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে কাজ, রাজমিস্ত্রির ঢালাইয়ের কাজ, ছাদ পেটানোর কাজ, ধাপায় কয়লা কুড়ানোর কাজ, মাছের ভেড়িতে পানা পরিষ্কার করার কাজ, জমিতে চারা বসানোর কাজ, ধান চাষ—আরও কত কী করেছেন তিনি! তবুও পাঁচজনের সংসার চলছিল না। সারাদিন কাজ করে চালডাল কিনে এনে হাড়িতে চড়াতেন সুভাষিণী, তাতেও পেট ভরতো না সবার। বাধ্য হয়ে এক ছেলেকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিলেন, তাতে যদি কিছুটা সাশ্রয় হয় সবার!

এতকিছু করেও যখন পোষাচ্ছিল না, তখন একজনের পরামর্শে কিছু টাকা ধার করে নেমে পড়লেন সবজির ব্যবসায়। কলকাতার বাইরের হাঁসপুকুর থেকে অল্প দামে সবজী কিনতেন সুভাষিণী, তারপর সেগুলো মাথায় করে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে ঢুকতেন শহরে, পার্ক সার্কাসের চার নম্বর ব্রীজ লাগোয়া অস্থায়ী বাজারে বিক্রি করতেন সেসব। প্রতিদিন সেই একই কাজ, বিশাল একটা তরকারীর ঝাঁকা মাথায় করে নিয়ে আসছেন এক মহিলা, নিত্যদিনের দৃশ্য হয়ে উঠেছিল সেটা।

সবজি বিক্রি করে খানিকটা স্বচ্ছ্বলতা এলো, মানে অন্তত খেয়েপরে বাঁচাটা নিশ্চিত হলো। কিন্ত সুভাষিণী তো এতেই থেমে যাওয়ার মানুষ নন। মনের ভেতরে অদম্য একটা স্বপ্নকে লালন করে এসেছেন স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে, গরীব অসহায় লোকজন, যারা টাকার অভাবে দামী ডাক্তার বা হাসপাতালে যেতে পারেনা, সরকারী হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে যাদের মৃত্যু হয়, সেই মানুষগুলোকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেয়া যাবে না কোনভাবেই। সেজন্যেই তো নিজে না খেয়ে টাকা জমিয়েছেন এতগুলো বছর ধরে, ছেলেদের ডাক্তারী পড়িয়েছেন, মেয়েদের নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেছেন।

জমানো টাকা ভেঙে চব্বিশ পরগণার হাঁসপুকুরে এক টুকরো জমি কিনলেন সুভাষিণী। লোকে জমি কেনে বাড়ি করবে বলে, সুভাষিণী কিনলেন হাসপাতাল বানাবেন বলে, তাও গরীব মানুষের জন্যে! বড় ছেলে অজয় ততদিনে ডাক্তার হয়েছে, তাকে ডেকে নিজের ইচ্ছের কথা জানালেন সুভাষিণী। শুরু হয়ে গেল এতদিনের স্বপ্নপূরণের মিশন।

১৯৯৩ সালে ছোট্ট একটা টিনের ছাউনি দেয়া ঘরে শুরু হয়ে গেল হাসপাতালের কার্যক্রম, গ্রামের মানুষজনের সহায়তায় গঠিত হলো ট্রাস্টি বোর্ড। প্রথম দিনেই আড়াইশোর বেশী গরীব রোগীকে বিনেপয়সায় চিকিৎসা দেয়া হলো, নিজেদের উদ্যোগেই মেডিকেল ক্যাম্প করলেন অজয় আর তার ডাক্তার বন্ধুরা। রোগীদের ভীড় দেখে অজান্তেই সেদিন নিজের চোখে জল এসেছিল সুভাষিণী মিস্ত্রির।

টিনশেড সেই ঘরটা এখন আর নেই। এক কাঠার ছোট্ট জায়গাটা এখন ছড়িয়ে কত বড় হয়ে গেছে! তিন একরের বিশাল এলাকা জুড়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ, তার মাঝখানে বিশাল বিল্ডিংটা, নাম রাখা হয়েছে ‘হিউম্যানিটি হসপিটাল’। সুভাষিণীর ছেলে অজয়ই সবকিছু দেখাশোনা করে, আছে অভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স; আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা, এখানে রোগীদের বিনাপয়সায় চিকিৎসা দেয়া হয়। ঔষধপত্রও সরবরাহ করা হয় হাসপাতালের তরফ থেকেই।

অর্থোপেডিক, গাইনো, ইউরোলজি সহ অন্যান্য বিভাগ ও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও চালু হয়েছে এখানে। হিউম্যানিটি হসপিটাল এখন পশ্চিমবঙ্গের গরীব অসহায় রোগীদের সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল, দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসেন এখানে, এখানকার ডাক্তার-নার্সেরাও চেষ্টা করেন নিজেদের পক্ষে সর্বোচ্চটা করার।

সুভাষিণী মিস্ত্রির বয়স এখন আশি’র ওপরে। তেইশ বছর বয়সে স্বামীকে হারানোর পরে যে সংগ্রামটায় লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি, সেটার ফল এখন পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের গরীব মানুষেরা। পুরো চব্বিশ পরগণা কিংবা গোটা রাজ্যেই সবাই তাকে একনামে চেনে, হিউম্যানিটি হসপিটালের কথা জানে সবাই।

শুধু হিউম্যানিটি হসপিটালই নয়, ঘুর্ণিঝড় সিডরের পরে সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যে পঁচিশ শয্যার আরো একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছেন সুভাষিণী, এখানেও গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। সুভাষিণীর এই মহৎ কীর্তিকে সম্মান জানিয়েছে তার রাষ্ট্রও, এবছর তাকে প্রদান করা হয়েছে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা।

বাস্তবতা কখনও কখনও কল্পনাকেও হার মানায়। মানুষের বাড়িতে কাজ করে, দিনমজুরি করে, সবজি বিক্রি করে এক-দুই-পাঁচ টাকা করে জমিয়েছিলেন সুভাষিণী। অভাবের তাড়নায় না খেয়ে থেকেছেন, তবু সেই সঞ্চয়ে হাত দেননি কখনও; সেটাকে ‘গরীব মানুষের অধিকার’ হিসেবে আগলে রেখেছেন বছরের পর বছর।

অবশেষে হাসপাতাল নির্মাণের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নটা পূরণ করেছেন তিনি। অমানবিকতার অন্ধকারে মানবতার ডাকে অসাধ্য সাধন করা সুভাষিণী মিস্ত্রি তো অনন্য একজন, যাকে নিয়ে পুরো মানবসভ্যতাই গর্ব করতে পারে। সুত্র: ইনসাইড বাংলাদেশ।

 

প্রসব পরবর্তীকালীন বিষণ্ণতা

ডা.সংগীতা হালদার রায়


কিছুদিন আগে এক দাওয়াতে গিয়ে ‘বেবি ব্লুজ’ বা ‘প্রসব পরবর্তীকালীন বিষণ্নতা’ নিয়ে কথা উঠেছিলো।

টেবিলে বসা পুরুষদের একাংশের ধারণা এটা মর্ডাণ মেয়ে / মায়েদের হয় যেহেতু তারা ক্যারিয়ার / শপিং / স্টাইলিং ইত্যাদিকে জীবনে অত্যাধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকেনন যা আগের যুগের মায়েদের বেলায় হত না।

সেই রাত থেকেই মনে হচ্ছে একজন ডাক্তার ও মা হিসেবে আমার উচিত আমার বন্ধুদের কিছু জানানো যা আমি জানি;

বেবি ব্লুজ : বই অনুযায়ী ৭০% – ৮০% মায়েদেরই হয়। আমার ধারণা আরো বেশি সংখ্যায় হয়ে থাকে কিন্তু ডাক্তারের কাছে ‘কেস’ খুব কম আসে বলেই বই এ ডকুমেন্টারি কম আছে।

হওয়ার কারণ : প্রেগন্যান্সির সময় প্রয়োজনয়ীয় হরমোন ১০০ – ১০০০ গুন (100- 10000 fold decrease) কমে যাওয়া এবং MAO – A হরমোনের হঠাৎ বেড়ে যাওয়া যা ব্রেইন সেলে বিষণ্নতা উৎপন্নকারী হরমোন বাড়িয়ে দেয় ।

সময় : প্রসবের পর থেকে শুরু হয় এবং ২-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয় সাধারণত । দিনে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা হতে পারে এর স্থায়ীত্বকাল ।

স্টেজ: মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।

(লক্ষণ সমূহ হিসেব করলে ডাক্তারী হিসেব মতে মোট ৬ টা স্টেজ , কিন্তু যারা ডাক্তার নন আবার সচেতন থাকতে চান তারা তিনটা জানলেই চলবে )

ক) বেবি ব্লুজ
মন খারাপ হয় কারণ ছাড়া, শুধু শুধুই কান্না পায় ( weeping ), খুব বেশি গুরুতর কারণ ছাড়াই বিরক্তি লাগে , মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে , বাচ্চা ও বাচ্চার যত্ন নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন হয় (বাচ্চার বাবার কোলে বাচ্চা দিতেও টেনশন হয় )

প্রতিকার
শুধু মিষ্টি ব্যবহার , সহানুভূতিসম্পন্ন কথা ও ব্যবহার (তুমি ঠিক পারবে , সবারই এরকম অসুবিধা হয় আর এটাই স্বাভাবিক) বাচ্চা সামলাতে সহানুভূতিশীল সাহায্যই যথেষ্ট’
‘আমরা তো অমুক করেছি’ বা ‘আমরা যেন আর বাচ্চা সামলাই নাই ‘ টাইপ কথা বলা মানুষজনকে ১০০ x ২ = ২০০ হাত দূরে রাখা খুব দরকার।

খ) পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন
বাচ্চা হবার তিন মাস পরেও যখন লক্ষণসমূহ থেকেই যায় বরং আগের সমস্ত লক্ষণ আরো প্রকট হয় , নিজের ছোট্ট বাচ্চাকে সহ্য করতে না পারা , নিজের উপরে নিজের অসন্তোষ , নিজের ক্যারিয়ার + নিজের রূপ সবকিছু নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা, নিজের জীবনের প্রতি মায়া চলে যাওয়া।

প্রতিকার
কোন এমন মানুষের সাথে মনের কথা বলা যার উপরে মা পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন , বাচ্চা সামলানোর জন্যে সাহায্যকারী যাতে মা অন্য কিছু করেও নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে পারেন, একটু কোথাও ঘুড়ে আসা তা পাশের পার্কেও হতে পারে

গ) পোস্টপারটাম সাইকোসিস
মা মনে করতে থাকেন শুধু তিনি মরে গেলেই মানুষ বুঝবে যে তিনি তার শিশুকে কত্ত ভালোবাসতেন , আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং শিশুকে মেরে ফেলার ঘটনাও লিপিবদ্ধ আছে ।

পরিশেষে বলবো , এরকম আগেও হত ( ঘরে ছোট ভাইবোন আসার পরে মায়ের পিট্টি খাওয়া বা অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে মায়ের খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা মা- বাবার / মা- দাদীর ঝগড়া বেড়ে যাওয়ার স্মৃতি মনে করে দেখুন ) আর এর সাথে ‘MODERNISM’ কোন সম্পর্ক নেই ।

‘উত্তম ব্যবহারেই উন্নত বংশের পরিচয়’ আর ‘সৃষ্টিকর্তাও একজন প্রসবিনীর প্রসব-পূর্ব সমস্ত পাপ মাফ করে দেন’ এগুলো তো অনেক প্রচলিত জানা কথা ।
কাজেই একটু ধৈর্য ধরে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করুন। কারণ প্রতিটি মা-ই তার সন্তানকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন । তাকে মন ও শরীরে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মা হয়ে ওঠার সময়টুকু দিন প্লিজ।

ফরমাল লেকচারার
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

‘প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং’ পর্ব-৩

ফাতিমা খান


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা মানেই আমার ঘরে অন্যরকম একটা আমেজ । বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরলে ওদের ক্লান্ত চেহারাতেও একটা “তাইরে নাইরে না” টাইপ ভাব দেখি। আমার শত ক্লান্তির মাঝেও ওদের আনন্দ আমাকে পেয়ে বসে, বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওদের “যা খুশী তাই কর” দিন, রুটিন-ছাড়া, বাধনহারা সময়। আমার বয়সটা ঠুস করে কমে একদম ওদের সমান সমান হয়ে দাঁড়ায়।

বাচ্চাদের মাঝে মাঝে এই ছাড় দেওয়া ওদের অনেক রিল্যাক্স আর রিফ্রেশ করে। আজকাল স্কুল কলেজের পড়াশোনার চাপ এত বেশী থাকে যে ওরা নিজস্ব সৃজনশীলতা প্রায় হারাতে বসেছে। প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন বিশেষ গুণ নিয়েই পৃথিবীতে আসে।

এই বিশেষ গুনগুলো লালন করার জন্য একটু অবকাশ খুব দরকার যেন পরের ব্যস্ত ওয়ার্কিং ডে গুলোর জন্য ওদের দেহ ও মন-মস্তিষ্ক সতেজ হয়।

সংসার, চাকুরী, ঘর সামলে ক্লান্ত শুধু আমরাই হই না, ওরাও হয়, কিন্তু ধরন আর কারণটা ভিন্ন। একটু শিকল ছাড়া সময় আর বাবা মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার অপেক্ষাতেই মানসিক ভাবে ওরা ক্লান্ত থাকে, যা ওরাও প্রকাশ করে না আর আমরাও বুঝতে পারি না।

প্রায় বছর দুয়েক আগে আমেরিকায় করা একটা জরিপে দেখেছিলাম পনের বছর বয়স পর্যন্ত দৈনিক অন্তত আধা ঘন্টা মায়ের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা বাচ্চাগুলো মেধাবী হয়।

জীবন কতটা জটিল হলে মায়ের কাছে সন্তানের জন্য আধা ঘন্টা সময়ের দাবী করে জরিপ করা হয়েছিল তাই ভেবে কিছুটা হতাশও হয়েছিলাম।

আজ রাত নয়টায় বাসায় ফিরে দেখি আমার বড় ছেলে পপস্টিকাল স্টিক দিয়ে বাড়ি বানায়, ডুপ্লেক্স বাড়ি। আমার ছোটজন তার বাধ্য এসিস্ট্যান্ট। কোলের উপর বিশাল ওজন ওয়ালা ‘Big book of home plans’ বই নিয়ে ভাইকে গাইড করছে। আমার সারা ঘরের মেঝেতে সদ্য কিনে আনা ক্রাইলিক পেইন্টের ছড়াছড়ি। পপস্টিকাল স্টিকের বাড়ির ওয়াল পেইন্ট হচ্ছে।

আমাকে দেখেই বড়জন বলল, ” আম্মু আমাদের ফিউচার বাড়ির মডেল বানাই। ডুপ্লেক্স বাড়ি হবে আমাদের। নিচতলায় একপাশে নানাভাই নানুমণি থাকবে, আরেকপাশে দাদু। আমরা থাকব উপরে। নাইন সিটারের একটা গাড়ী থাকবে আমাদের। যেখানে যাব সবাই একসাথে যাব। ড্রাইভিং সিটে বসব আমি, পাশে নানাভাই। বাকী সবাই পেছনে।” আমার ছেলের চোখ স্বপ্নময়, মুখ হাসি হাসি।

ছোটজন আবার একটু ভাবুক। সে প্ল্যানের বাকীটা বলে ফেলল ” আর বাড়িটা হবে লেকের পাশে। একটা ওয়ালের পুরাটাই গ্লাসের উইন্ডো হবে। আর থাকবে অনেক বড় এয়ার এলার্ম। বাতাস আসবে আর এলার্ম বাজবে…আআআহহহহ ”(তার চোখ অলরেডি বন্ধ হয়ে গেছে)।

আমিও বোধ হয় হারিয়ে গিয়েছিলাম…!

আজ ওদের কান্ড দেখে নতুন কিছু প্যারেন্টিং এর আইডিয়া পেলাম।

♦ আমাদের প্রি-টিনেজার বা টিনেজার কে তাদের স্বপ্নগুলো লালন করার জন্য একটা মুক্ত ক্যাম্পাস দেয়া উচিৎ যেখানে তারা মনের সব কল্পনা আর রঙ মিশিয়ে স্বপ্ন গড়বে। এই চর্চাই একদিন তার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের সোপান হবে।

♦ ওরা নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দিতে পারে অকপটে, যেগুল আমরা বড়রা সাত পাঁচ ভেবে বা ইগো সমস্যার জন্য হয়ত বলতে পারি না। পরিবারের যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ওদের পরামর্শও নেওয়া উচিত। ওদের চিন্তার প্রসারতা ও ভালমন্দ জ্ঞান বাড়ানোর জন্যও এটা খুব ভাল উপায় হবে।(চলবে)

লেখিকা কর্মরত:আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,জেদ্দা,সৌদি আরব।

 

মনের মাঝে স্মৃতি প্রিয়জনের

আফরোজা হাসান


ছেলে স্কুলে আর ছেলের বাবা কাজে চলে যাবার পর দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার একান্ত বাস আমার। অবশ্য বই পড়ার তীব্র নেশা থাকার কারণে সময় কাটানো নিয়ে কখনোই তেমন সমস্যায় পরতে হয় না আমাকে। উল্টো বরং সময়কে ধরার জন্য ছুটতে হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে দু’একটা দিন এমন আসে যে বই পড়তে ইচ্ছে করে না। সংসারের কাজগুলো পড়ে আছে দেখেও হাত লাগানোর তাগিদা অনুভব করে না মন। বিছানার চাদরে সামান্য ভাঁজ দেখলে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলা এই আমিই, পুরো এলোমেলো বিছানার দেখেও নির্বিকার বসে থাকি। সময়টা তখন কেমন যেন থমকে দাঁড়ায়। ঘড়ির দিকে তাকালে মনেহয় সেই কখন দেখেছি দশটা বাজে, এতক্ষণে মাত্র দশ মিনিট পেরিয়েছে……? আমার জীবনে এমন যতগুলো দিন এসেছে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও এলোমেলো করে দিয়ে গিয়েছে আমার ছোট্ট ভুবনটাকে। খুব খেয়ালি আমাকে করে দিয়েছে ভীষণ রকম বেখেয়ালি। তাই হিসেব কষতে বসলাম কেন হয় এমন? কেন মন হঠাৎ শরতের আকাশ হয়ে যায়? এই মেঘ তো এই রোদ্দুর……? বাঁধ ভাঙ্গা জোছনা ভরা আকাশে কেন আঘাত হানে কালবৈশাখীর ঝড়……? মন বলল তোমার প্রিয়জনরা যে তোমার থেকে দূরে…..বহুদূরে……….

সবার জীবনেই প্রিয় মানুষেরা সবসময় আলাদা স্থান দখল করে থাকে। জীবনে চলার পথে আমরা যত এগোতে থাকি, বাড়তে থাকে প্রিয় মানুষদের সংখ্যা। মনের পাতায় ছাপ ফেলতে থাকে কারো কথা, কারো লেখা, কারো হাসি, কারো সঙ্গ……! ধীরে ধীরে আপন অস্তিত্বের সাথে একাকার হয়ে যেতে থাকে প্রিয় মানুষগুলো। সময়ের স্রোতে ভেসে কিছু প্রিয় মানুষ দূরে চলে যায়, মনে নোঙ্গর গাড়ে নতুন প্রিয়রা। তাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলে জীবনের পথ। কিন্তু যারা দূরে চলে যায় নানা কারণে তারা কি সত্যিই হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে…? আমার উপলব্ধি বলে নিষ্ঠুর নিয়তি মন থেকে কাউকেই একেবারে মুছে যেতে দেয় না। আর ভুলে যে যাবো তারও উপায় নেই, কারণ তারা যে আমাদের প্রিয়জন। প্রি-য়-জ-ন…..! চাইলেই কি তাদেরকে ভুলে যাওয়া যায়…..? লাইব্রেরীতে গেলে আব্বুর সাথে বইমেলাতে ঘুরে ঘুরে বই কেনার স্মৃতি মনেপরে, ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়ানোর সময় মনেপরে আম্মুর কথা, আইসক্রিম মনে করিয়ে দেয় ছোটভাইটার কথা, বেগুনী অর্কিডে বোনের মিষ্টি চেহারাটা দেখতে পাই, শিশুদেরকে যখন দেখি মনের পর্দায় ভেসে ওঠে খেলার সাথীরা। নানু-দাদু-মামা-খালামনি-চাচ্চু-ফুপ্পি…কত প্রিয়জনকে ঘিরে কত শত রঙ-বেরঙের স্মৃতি……

প্রিয়জনরা আনন্দের বারিধারা হয়ে যেমন ঝরে, প্রচণ্ড খরা হয়ে চৌচিরও করে দেয় মনের বনভূমিকে। কিন্তু কেন এমন হয়? কেন প্রিয়জনরা কষ্ট দেয়? যাদের কারণে সুখ-শান্তিকে উপলব্ধি করতে শেখে মন, তারাই আবার দুঃখ-ব্যথাকে বোঝানোর দায়িত্ব পালন করে পারদর্শিতার সাথে। তারপরও তারা যে কতোটা প্রিয় সেটা দূরে না এলে অনুভব করা যায় না সঠিকভাবে। কাছে থাকতে নির্বোধ মন মানতেই চায় না ভালোবাসা দেবার সাথে সাথে কষ্ট দেবার অধিকারও যে প্রিয়জনদের আছে। প্রিয়জনদের কারণেই যেহেতু আমাদের মনে সুখ-শান্তির অনুভূতি আসে, সেহেতু দুঃখ-বেদনা তো তারা দিতেই পারেন কারণে-অকারণে। কিন্তু আমাদের স্বার্থপর মন শুধু ভালোটাই পেতে চায় সবার কাছ থেকে। একবারও ভেবে দেখে না যে আমি কি সর্বক্ষেত্রে সবার সাথে ভালো? আমার দ্বারা কখনোই প্রিয়জনরা কষ্ট-ব্যথা পাননি বা পান না তা কি আমি জোরের সাথে বলতে পারবো………?

মতের অমিল, ঝগড়া-বিবাদ, কথা কাটাকাটি সন্তর্পনে প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে দিতে থাকে। ঘুণপোকার মতো ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে থাকে ভালোবাসার বন্ধনের খুঁটিকে। আর এই ক্ষয় হতে থাকা খুঁটির উপর ভরসা করেই চলতে থাকে জীবনের পথচলা। অথচ মন একবার যাদেরকে আপন করে নেয় তাদেরকে কখনোই ভুলে থাকা যায় না। ভুলে থাকতে চাইলেও সম্ভব হয় না। তবে জীবনের প্রয়োজনে কখনো কখনো ভুলে থাকতে হয়। স্মৃতিরা ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দিয়ে মাঝে মাঝে মনকে ঘিরে ফেললেও, বেশির ভাগ সময়ই আমরা স্মৃতিদের এড়িয়ে চলা রপ্ত করে ফেলি। কারণ স্মৃতির ভাণ্ডারে অসংখ্য মণি-মুক্তা-জহরতের সাথে ধারালো-সূচালো কাঁচের টুকরোও যে আছে। যার সামান্য আঘাত মনকে করে ক্ষত-বিক্ষত…রক্তাক্ত…! আর কেই বা চায় হৃদয় চিড়ে বেদনা কুড়াতে…? তারচেয়ে দূরে সরে থাকা কিংবা ভুলে থাকাটাই উত্তম মনেহয়। কি জানি এটাই হয়তো জীবনের নিয়ম………..।

আমরা সবাই সবসময় আলোকোজ্বল এক জীবন পেতে চাই। কিন্তু এমন জীবন গড়ে তুলতে সম্পর্কের মাঝে প্রয়োজন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ। কিন্তু সুখের মাঝে যেমন অসুখ থাকে, তেমন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ থাকার পরও সম্পর্কের মাঝে ঘটে ছন্দপতন। এই ছন্দপতনের দ্বন্দ্বে পড়ে যাতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে না যাই। প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের আচরণ যেন অসাবধানী হয়ে না যায়। একে-অন্যেকে যাতে দোষারোপ না করি, ঝাঁপিয়ে যেন না পড়ি কারো উপর জিভের তরবারি নিয়ে। ভুলে যাতে না যাই তারা যে আমাদের প্রি.য়…জন.ন…………।

বিষয়: মনের জানালা

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি)- ১ম পর্ব

আফরোজা হাসান


ছোট্ট সুখের নীড় বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমনটিই ছিল আমার জীবন। আদর, সোহাগ ও ভালোবাসায় আগলে রাখা একজন প্রেমময় অসাধারণ স্বামী। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে ভীষণ আনন্দময় একটা জীবন কাটাচ্ছিলাম। প্রচন্ড ভালোবাসতো আমাকে আমার স্বামী। পিতা হিসেবেও খুবই দায়িত্ব সচেতন ছিলেন সবসময়ই। সুখের সাগরে ভেসে কাটছিল আমাদের দিন।

এরই মধ্যে একদিন জানতে পারলাম আমার স্বামীর অন্য একটি মেয়ের সাথে গোপন সম্পর্কের কথা।

প্রথমে কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায়নি মন। কিন্তু খোঁজ খবর নেবার পর বুঝলাম যা শুনেছি সবই সত্যি। অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রায় দেড় বছর যাবত চলছে তার এই গোপন অনৈতিক সম্পর্ক। পুরো দুনিয়া থমকে গিয়েছিল আমার সামনে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ কোনদিন স্বামীর ব্যবহার থেকে এমন কিছুই আঁচ করতে পারিনি আমি। আমাদের সম্পর্কের মাঝেও কখনোই এমন কোন সমস্যা আসেনি যে সে এমন কিছু করতে পারে। কি করবো কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। কার কাছে বলবো এই ভয়াবহ লজ্জার কথা?!

কয়েকটা দিন গোপনে শুধু কান্না করেছি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি। আমার মানসিক অবস্থা দেখে স্বামী খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিল। বারবার জানতে চাইছিল কি হয়েছে আমার। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করে দিয়েছিল। তখনো আমার ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো এত ভালোবাসা যার চোখে মুখে সে কেমন করে এমন করতে পারলো আমার সাথে? কেমন করে অন্য মেয়ের সাথে জড়ালো?!

শেষপর্যন্ত খুব কাছের এক বান্ধবীর কাছে খুলে বললাম মনের সব কথা। বান্ধবীটি খুবই প্রাক্টিসিং একজন মুসলিমাহ ছিলো। সে আমাকে সাহস দিলো। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিলো। বললো পরিবারকে না জানিয়ে আগে নিজেই স্বামীর সাথে কথা বলতে। যেহেতু আমার আর আমার স্বামীর মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল বিয়ের প্রথম থেকেই। আমি বান্ধবীর পরামর্শ মেনে নিয়েছিলাম। সরাসরি আমার সন্দেহের কথা স্বামীকে বললাম। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও একসময় মেনে নিলো তার অনৈতিক কাজের কথা। খুবই অনুতপ্ত হয়েছিল সেদিন সে। বারবার আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। ভুলের পথ থেকে ফিরে আসবে এই ওয়াদা করলো।

আমি চাইনি আমার সংসারটা ভেঙ্গে যাক।

প্রথমত, আমার সংসার সুখেরই ছিল এই ঘটনা জানার আগে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের তের বছর ও নয় বছর বয়সী দুটি ছেলে-মেয়ে ছিল। সংসার ভাঙ্গা মানে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দেয়া।

তৃতীয়ত, আমি স্বাবলম্বী কোন নারী না। বাবার বাড়িতেও আমার বোঝা তুলে নেবেন হাসিমুখে এমন কেউ নেই। আর সবচেয়ে বড় কারণ দীর্ঘ পনেরো বছরের সংসারের মায়া এত সহজে ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

এরচেয়েও বড় কারণ স্বামীর প্রতি আমার ভালোবাসা নিখাদ ও পবিত্র ছিল। তাই সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু ত্যাগ স্বীকার আমার পক্ষ থেকে করা সম্ভব ছিল আমি করেছি। এরপরের তিন-চার মাস ভালোই কেটেছে আমাদের। তারপর আবারো জানতে পারলাম যে আমার স্বামী ঐ পথ থেকে ফিরে আসেনি। সে এখনো মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করেই চলছে। চলছে তাদের অনৈতিক সমস্ত কাজকর্মও। খুব ভেঙে পড়লাম তখন মানসিক ভাবে। মেয়েটির বয়স তেরো বছর। অনেককিছুই বুঝতে শিখেছিল ততদিনে। আঁচ করে ফেলেছিল কিছু একটা সমস্যা চলছে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। আবারো ছুটলাম সেই বান্ধবীর কাছে। ওর পরামর্শ মতো আপনার কাছে এলাম।

একদম চুপ করে কোন রকমের বাঁধা না দিয়ে ভদ্রমহিলার সব কথা শুনছিল নুসরাহ।

আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আপনার স্বামীর এমন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আপনার নিজের দায় কতটুকু সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

চলবে…

পর্ব-৩

 

শিশুদেরকে ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচাতে সচেতনতা


সিরাজুম মুনিরা


মানবতা মুখ লুকিয়ে কাঁদছে নাকি প্রহসন করছে বোঝা দায়। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মত ঘটনা এতোটা সরল ভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে অথচ সবকিছু কতো স্বাভাবিক।

আইন এতো টাই বিবশ যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এমন ঘৃণিত অপরাধ ঠেকাতে পারছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে সেই অন্যায়। যুবতী, কিশোরী তো ছিলোই এখন এই অন্যায় কর্মের তালিকায় প্রধান আসামি কোমলমতি শিশুরা।

নারীরা এখন বেশ সচেতন তাই হয়তো শিশু ও বালিকাকে টার্গেট করা হচ্ছে। বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষ এতোটাই নির্মম আর হৃদয়হীন, যার ফল ভোগ করছে উচ্চ, মধ্য এবং নিম্নবিত্ত সমাজের নারী ও শিশুরা। ধর্ষিতার চেহারা বার বার পর্দার সম্মুখে আসছে পত্রিকায়, টেলিভিশনে এবং আধুনিক মুঠোফোনের মাধ্যমে। অপর পক্ষে ধর্ষককে দেখা যা কদাচিৎ।

প্রভাবশালীরা ক্ষমতার হাত বাড়িয়ে অপরাধীকে সাহস যোগাচ্ছে। অপর দিকে নিরব, দায়হীন মানবতা গুড়িয়ে চলেছে ধর্ষণের প্রতিবাদের আওয়াজ।

হবে নাই বা কেন? এক জন অপরাধী পার পেলে অপর জনের জন্য তো এটা সুখের অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে।

চিৎকার করে ভুক্তভোগি পরিবারকে বলতে ইচ্ছে করে, হে নির্যাতিত কন্যার পিতা-মাতা-ভাই-বোন নির্যাতিতার সম্মান যদি না বাঁচলো তবে আপোষ কিসের? আপনাদের আপোষী মনোভাব অন্যের সাহসী আগুনে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কত কিছুর জন্য মিটিং, মিছিল, আন্দোলন হচ্ছে। ধর্ষণ অপরাধের বিরুদ্ধে কোন জোরালো প্রতিবাদ নাই।

কিছু ব্যতিক্রমধর্মী অভিভাবকদের দায় ও এড়ানো যায় না। নীতি নৈতিকতার কতটুকু শিক্ষা তারা বহন করছেন ? যে সংসারের স্বামী বা পুত্র সন্তান স্বয়ং ধর্ষণের সাথে জড়িত, তারাই পরিবারের কু-সন্মান বাঁচাতে নিন্দিত প্রতিবাদের আশ্রয় নিচ্ছে।

বাহ্… মহান সেই পরিবার যারা ছেলে,বাবা,ভাইদের অন্যায়কে উসকে দিতে ভুক্তভোগী পরিবারকে জান নেবার হুমকি দিচ্ছেন। নারী সন্মান কত সস্তা হয়ে গেছে যে ভুক্তভোগি পরিবার হাত পেতে টাকা নিয়ে আপোষে চলে আসছে।

খুব কষ্ট লাগে যখন প্রকাশ্যে কোন মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় নোংরা ইংগিত দিতে দেখা যায় আর চারপাশের মানুষ তা উপভোগ করে। হয়তো ভাবে এমন বিষয়ের প্রতিবাদ করে কি লাভ?

কিছুই কি করার নেই। কিছু করার না থাকলেও থাকুক সাবধানতার প্রস্তুতি। আসুন সতর্ক হই। তাতে যদি সামান্য লাভ হয়।

১। পরিবারের কন্যাদের প্রতি সর্বদা নজর রাখুন। কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, তার সঙ্গ কেমন, তার কোন পরিবর্তন হচ্ছে কি না, হঠাৎ করে কোন কারণে ভয় পাচ্ছে কি না এসব খেয়াল করুন।

২। বাচ্চারা সচরাচর মিথ্যা বলে না। তাই স্কুল, কোচিং থেকে ফিরেই নানা বিষয় সম্পর্কে মা-বাবা কে বলতে চায়। ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনুন ও বোঝার চেষ্টা করুন তার চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে।

৩। খেয়াল করুন, আপনার কন্যাটি নিকট বা দূরের কোন পুরুষ আত্নীয় সম্পর্কে অনিহা বা বিরক্তি প্রকাশ করছে কি না। যদি করে তবে তার কারন জানার চেষ্টা করুন।

৪। যে দেশে এক- দেড় বছর বয়সী শিশু রেহায় পায় না,সেখানে আপনার কন্যা সন্তানকে অত্যন্ত ভরসাবান ব্যক্তির দায়িত্বে রেখে কাজে বের হন।

৫। বুঝতে শিখলেই সন্তান কে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করুন এবং উপস্থিত বুদ্ধির প্রয়োগ শেখান।

৭। যদিও কামুক দৃষ্টি পোশাকের ধরণ মানেনা তবুও বলবো শালিনতা বজায় থাকে এমন পোশাক পরিধানে অভ্যাস করান। বোরখা ই পরতে হবে এমন কোন কথা নাই। আমরা ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে বাস করি না যেখানে সবাই নারীদের খোলামেলা রূপ দেখে অভ্যস্ত। আমরা বাস করি সমালোচনায় মুখর এক সমাজে। যেখানে পোশাকের জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়।

৮। মেয়ে সন্তানকে প্রয়োজনীয় প্রতিবাদের শিক্ষা দিন। কুংফু-কেরাত শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে যাতে প্রয়োজনে নিজের সুরক্ষার ভার সামান্য হলেও নিতে পারে। কেননা সর্বদা মেয়েকে সঙ্গ দেওয়া অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

৯। ছেলে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিন। তার সঙ্গ সম্পর্কে সজাগ থাকুন। আচরণবিধি খেয়াল রাখুন এবং সন্দেহজনক আচরণের প্রতি কঠোর হোন।

১০। আমাদের গৃহে যে মেয়েটি কাজ করে, আসুন তার সম্মানের নিরাপত্তা রক্ষা করি। নেহায়েত পেটের দায়ে সে আমাদের গৃহে কর্মরত।

আসিফার নির্মম মৃত্যু উচ্চ আদালতের কড়া নেড়ে গেছে। হয়তো নির্যাতনকারীদের সাথে সহজে পেরে ওঠা যাবেনা তবে সঠিক বিচার হবে বিশ্বাস রাখি। এমন নর-পিশাচদের শান্তি এতোটা নির্মম হওয়া উচিত যা দেখে ভবিষ্যত ধর্ষণ পরিকল্পনাকারীর কলিজা কেঁপে ওঠে। শুধু মৃত্যুদণ্ডই পর্যাপ্ত নয়। আসুন সবাই মিলে সতর্ক হই। নারীর সন্মান রক্ষার ভার গোটা জাতির উপর বর্তায়।

 

যে কথা বাবাকে বলা হয়ে উঠেনি মেয়ের!


রিজিয়া


হাসপাতালে ইমার্জেন্সীতে নিয়ে ভর্তি করার পর ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষটি তার মেয়েকে দেখে রাখার জন্য অনুরোধ করছেন মেয়ের অধঃস্তন সহকর্মীদের কাছে।

” আমার একটা মাত্র মেয়ে! আপনারা তাকে দেখবেন!”

মেয়ে কেবল সামনে তাকিয়ে থাকে ! দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসার কারণে বেশিদূর তাকানোও যায়না। বাবার মাথাটাই গেছে!মাথার দোষ দিয়েও লাভ কি! চোখের সামনে আত্মীয় পরিজন কাউকেতো পাননা মেয়েকে দেখে রাখার কথা বলার জন্য।সামনে আছে কেবলতো তারাই।এমন কষ্টেও হাসি আসে! দেখার মালিকতো একমাত্র আল্লাহ! সহকর্মীরা বিব্রত বুঝতে পেরে কথা বলে উঠে সে।
– বাবা, তুমি শান্ত হও। আল্লাহ আছেন।

অতঃপর মেয়েটার ভাবনার জগতে যে বিষয়গুলো খেলে যায় তার কোন উত্তর নেই এই পৃথিবীর কাছে।

হায় আল্লাহ! জীবনে পড়াশোনা শেষ করার সময় এত স্ট্রাগল করার সময়ে কাউকে কাছে না পেয়েও যখন আল্লাহ টিকিয়ে রেখেছেন,সেখানে অন্তত জীবন চালানোর মতো অবস্থায় এনে আল্লাহ কি ফেলে রাখবেন!তার ভরসা যে কেবল সেই মহান সৃষ্টিকর্তার উপর।চোখ বন্ধ করে তাঁর ভরসায় থাকতে পারে মেয়েটি এই বলে “তোমার কাছেই আমার জীবনের সবকিছু সমর্পিত।ধৈর্য্য দাও, কেবলই ধৈর্য্য দাও! ”

সেই ছোটবেলায় মায়ের কাছ হতে এই বিষয় বুঝে নেয়া মেয়েটি ” পৃথিবীতে মানুষ হয়ে বাঁচতে হলে আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে হবে”, তাকে আবার দেখে রাখার জন্য মানুষের কাছে অনুনয় করছেন তার পিতা!কেন!! মাথার উপর একটা পুরুষ নেই বলে!

অতঃপর যে কথা মুখ দিয়ে ফোটেনা, কেবল মনে মনেই বলে যায় তার বাবাকে।
পায়ের নিচে নিজের ভীততো আছে, বাবা! সেই ভীত যদি ভেঙ্গেও পড়ে আল্লাহ যে জ্ঞান দিয়েছেন তাতো রইলোই। এরপর তাও যদি না থাকে সেটাতো নিয়তি।নিয়তির কাছে মাথা নত করে পড়ে থাকবো। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগতো নেই!

বাবা!কেমন করে বলি, মাথার উপর পুরুষের ছায়া নয়;একটা ভালবাসার ছায়াই লাগে।যার কাছে গিয়ে মাথায় মমতার পরশ পাওয়া যায়।পৃথিবীর সবকষ্ট, জরাভোগশেষে তার কাছে ফিরে আবার সাহসী হওয়া যায় আগামী দিনের পথ চলতে। আর সেই আশ্রয়টা দেয়ার জন্য কেবল পুরুষ হলেই হয়না, মানুষের হৃদয়ও যে থাকতে হয়!

জীবনে কত অসহায় সময় পার করেছি!
তোমার কি মনে আছে বাবা? সেবছর তোমার মেয়ের ইন্টার পরীক্ষা চলাকালীন তোমার বউ – বাচ্চার চেয়ে অধিক প্রিয় তোমার ভাইয়েরা তোমাকে যৌথ পরিবার হতে আলাদা করে দিয়েছিল একটা পয়সা, একমুটো চালও না দিয়ে। অথচ তুমি মানুষটি কত বোকা ছিলে! তোমার ভাইয়েরা তোমাকে নাকি কোনদিন পর করবেনা।সবসময় ভাই, ভাইপোদের বেশি মায়া করেছিলে, এমনকি নিজের স্ত্রী সন্তানদেরও বেশি। সেদিন তোমার চেহারায় যে অসহায়ত্ব দেখেছি তখন না বুঝলেও পরে আমি ঠিকই বুঝেছি তোমার মানসিক অবস্থা। তুমি একদম চুপ হয়ে গিয়েছিলে।এক পয়সাও ছিলনা তোমার হাতে।আর তোমার পাশে মা – ই এসেছিল, সন্তানদের আগলে জীবনটা পার করতে। কিন্তু বাবা, সেই ছোটবেলা থেকে মিস করেছি তোমার স্নেহ, তোমার ভালবাসা। তুমি আমাদের কাছে ছিলে, কিন্তু আমরা যেন থাকতাম অনেক দূরে। সময়তো চলেই যায়, আল্লাহ চালিয়ে নেন। নিজেকে তবুও কত অসহায় লাগতো তখন!মনে হতো আমাদের মা ছাড়া আর কেউ নেই পৃথিবীতে !তখনও জীবন চলে গেছে!
এরপর যখন আত্মীয় পরিজন বিহীন উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে গেলাম তখনোত কোন আশ্রয় ছিলনা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। আটবছরে কেউতো এসে বলেনি, কেমন করে আমি পড়ালেখা করছি!আমার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা!আল্লাহতো জীবন থামিয়ে রাখেননি। আমি কেবল যুদ্ধ করেছি একটা সুন্দর কিছু পাওয়ার আশায়!আমার বিশ্বাস সবসময় ছিল, আল্লাহ মানুষের সুন্দর ইচ্ছেকে অপূর্ণতায় রাখেননা। শত বাধা,বিপত্তিতেও আল্লাহ আমায় পথ দেখিয়েছেন, এটা কি কম পাওয়া!সবচেয়ে বড় কথা আমি আল্লাহর উপর আস্থা নিয়ে চলি। আমার ভাগ্যে তিনি যতটা রেখেছেন তাতো আমাকে পেতেই হবে। আমি কেবল চেষ্টা করতে পারি সুন্দর কিছু অর্জন করার!বাকীটা তাঁর হাতে।

আল্লাহ আমাকে কম কিছুতো দেননি! পৃথিবীতে কত মানুষ কত কষ্টেই জীবন পার করে!আমিতো আমার অবস্থানে ভাল আছি।একজন মিথ্যাবাদী,প্রতারক জীবনের কিছু সময় কেড়ে নিয়েছে বলেই আমাকে এত অসহায় ভাবতে হবে বাবা?! তোমারতো খুশি হওয়া উচিত তোমার মেয়ে প্রতারকের অনিরাপদ ছায়াতে নেই। তুমি বুঝি আমার মাথার উপর ভন্ডের ছায়া দেখলেই খুশি হতে? অন্তত মাথার উপর একটা পুরুষের ছায়াতো থাকলো,তেমন?!

না বাবা! এমন পুরুষের ছায়া আমি চাইনা।মা আমাদের সারাজীন মিথ্যার চর্চা থেকে দূরে থাকা শিক্ষা দিয়েছেন।সেটা আমার জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে প্রয়োগ করতে চেয়েছি। অন্তত যেটাকে আত্মার সম্পর্ক ধরে এগিয়েছি তাতেতো এতটুকু মিথ্যার ছোঁয়াও রাখিনি।অতঃপর তোমার মেয়ে যেটা জানলো, সেই আস্ত মিথ্যার ছায়ায় থাকার কোন অর্থ যে নেই তা আমার চেয়ে আর কে ভাল অনুভব করতে পারে! যদিও মাঝেমাঝে আমি শংকিত থাকি তোমার শেষ সময়ে আমাকে এমন কোন শর্ত দিয়ে না বসো তোমার মনের শেষ ইচ্ছে বলে! কিন্তু আমার প্রাণ গেলেও তোমার সেই ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারবোনা, বাবা! তুমি তোমার ইচ্ছে প্রকাশ করবে শত বছর ধরে লালন করা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কথা ভেবে। কিন্তু আমিতো তা ভাবিনা বাবা! সেই স্ট্রাগল করার সময়গুলোতে সমাজ চেয়েছে আমাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। আমি নিজের মনোবলে সামনে এগিয়েছি। যখন কিছুটা সফল হলাম তখন এই সমাজই আবার আমার প্রশংসাই পঞ্চমুখ হয়েছে। আত্মীয় পরিজন, যারা কোনদিন খোঁজ নেয়নি পড়ালেখার বিষয়ে প্রমাণের চেষ্টায় থেকেছে ;তারাই যেন আমার জীবনে ত্রাতার ভূমিকায় অধিষ্ঠিত ছিল । আমি কেবল তাদের কাণ্ড শুনি আর হাসি। এদের জন্য করুণার হাসি ছাড়া আর কিইবা করার আছে! তো আমি করবো এমন সমাজকে কেয়ার? আমি আমার মনকেই শুনবো।আমার অন্তত নিজেকে ভাল রাখতে হবে। অসুস্থ সম্পর্কে ফিরে ধুকে ধুকে মরার কোন মানে হয়না।
অযথা ভয় পেয়োনা বাবা! জীবনটা এমনই।এখানে যুদ্ধ করতে হয়, টিকে থাকতে হয় আল্লাহর উপর ভরসা করেই।একশ দিন অশান্তিতে বেঁচে থাকার চেয়ে একঘণ্টা শান্তিতে বাঁচতে চাই আমি।আমার মাথার উপর তোমাদের দোওয়াতো থাকবে, এটাই আমার ছায়া! অন্য কোন ছায়া নাইবা থাকলো মাথার উপর!

লেখক: বান্দরবান থেকে

 

আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচার শুরু

জম্মু ও কাশ্মিরের কাঠুয়ায় আট বছরের শিশু আসিফা বানুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আট জনের বিচার শুরু হয়েছে।

সোমবার মামলার প্রথম শুনানিতে শ্রীনগরের একটি আদালতে তাদেরকে হাজির করা হয়।

তবে আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে অভিযুক্তরা। বিচারক আগামী ২৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

গত ১০ জানুয়ারি ভারত শাসিত কাশ্মিরের কাঠুয়া শহরের কাছে মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়ের আট বছরের মেয়ে আসিফা বানু নিখোঁজ হওয়ার ৭ দিন পর কাছের একটি জঙ্গলে তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। মুলত কাঠুরায়া রেপ কেস এর চার্জশিট থেকে জানা যায় যে,

১) মূল অভিযুক্ত তার ছেলে এবং ভাগ্নে একসাথে বাচ্চাটিকে রেপ করে, অর্থাৎ বাপ ছেলে ভাগ্নে একসাথে! ২) মূল অভিযুক্তের ভাগ্নে তার বন্ধুকে UP থেকে ফোন করে ডেকে বলে সে যদি “কামের জ্বালা মেটাতে চায়” তবে যেন যলদি চলে আসে! ৩) FIR করা হয় পুলিশের কাছে এবং জঙ্গলে searchparty বেরোয় মেয়েটিকে খুঁজতে, এই searchparty র নেতৃত্ত্ব দেন সেই পুলিশ অফিসার যিনি নিজে বাচ্চাটিকে রেপ করছেন already!!
৪) প্রতিদিন মন্দির খোলা হত, পূজা আচ্ছা করার পর বাচ্চাটিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পালা করে রেপ করা হত।
৫) রেপ রেপ খেলা হয়ে যাবার পর মূল অভিযুক্ত তার ছেলে ও ভাগ্নেকে বলে বডিটা জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পাথর দিয়ে থেঁতলে মেরে দিতে। ৬) সেইমতো ছেলে জঙ্গলে বাচ্চাটিকে নিয়ে গেলে এক অভিযূক্ত পুলিশ অফিসার গিয়ে আবদার করেন মেরে ফেলার আগে তাকে শেষ বারের মতো রেপ করতে দিতে হবে!
৭) অভিযূক্তের ছেলে অনেক উদারতা দেখিয়ে , মোটে আর একবার রেপ করতে দিয়েই বাচ্চাটিকে গলায় ওড়না পেচিয়ে মারে, মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়।

প্রথম দিকে আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ প্রথমে ১৯ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই তরুণ আসিফাকে এক সপ্তাহ ধরে একটি মন্দিরে আটকে রেখে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করার কথা জানায়।

তার জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ ওই মন্দিরের পরিচালক সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

ঘটনা তদন্তের পর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার দিন একদল আইনজীবী তাদের বাধা দিয়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও ওই অভিযোগপত্রে জানানো হয়।

এছাড়া ধর্ষণের আলামত নষ্টে দুই পুলিশ শিশুটির জামা ধুয়ে ফেলে এবং রফা করতে পুলিশকে বড় অংকের ঘুষে প্রস্তাব দেওয়া হয় বলেও ওই অভিযোগপত্রে জানানো হয়।

অভিযুক্তরা হিন্দু হওয়ার তাদের মুক্তির দাবিতে হিন্দু অধিকার রক্ষাকারী কয়েকটি সংগঠন সপ্তাহখানেক আগে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাটি আবারো সংবাদের শিরোনাম হয়। এ বিক্ষোভ মিছিলে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র দুই মন্ত্রী অংশ নেওয়ায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে।
জাতিসংঘসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনার নিন্দা জানায়। দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে বিজেপির ওই দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

জানুয়ারিতে আসিফার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পর থেকে আদালতে ঘটনার সঠিক তদন্তের আবেদন জানিয়ে আসছেন এই আইনজীবী।

সোমবার তিনি বলেন, “গতকাল আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘আমরা তোমাকে ‍কখনো ক্ষমা করব না’। এ হুমকি পাওয়ার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং নিজের জীবনের নিরাপত্তা চাইতে আমি সুপ্রিম কোর্টে যাব।

ওদিকে, আসিফার পরিবারের পক্ষে এই মামলায় আইনজীবী দীপিকা সিং রাওয়াত তাকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে দাবি করে উচ্চ আদালতে মামলার বিচারকাজ অন্য কোথাও স্থানান্তর করার আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

“এ মামলার বিচারকাজ চলার মত পরিস্থিতি কাঠুয়ায় আছে বলে আমার মনে হয় না।”

আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানী দিল্লিতে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে, যেখানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধী, তার মা সোনিয়া গান্ধী এবং বোন প্রিয়াংকা ভদ্র গান্ধী অংশ নেন।

গণরোষ ও নিরাপত্তা আশঙ্কায় সোমবার সকালে আসিফার বাবা সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই মামলার বিচারকাজ চন্ডিগড় আদালতে স্থানান্তর করার আবেদন করেছেন বলে জানায় এনডিটিভি। (source INDIANEXPRESS)