banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 595 বার পঠিত

 

বিষণ্ন চোখ ও ভুবনজয়ী হাসি

গাজী আনোয়ার শাহ্


শৈশব স্মৃতি মনে হলে ভাবি অনেক ভালোই ছিলাম, জীবন বাগানে কেবল ফুলের চাষ হতো। সুঘ্রাণ ছড়াতো মেশকের মত। হতাশা, দুরাশা, অপ্রাপ্তি, খারাপ লাগা, শূন্যতা, হারানোর ভয় কিছুই ছিলো না। জীবনটা একটা সুখ সম্পদ ছিলো ছোটবেলায়। পাপ, অন্যায়, কদর্য, হিংসা, ঈর্ষা, পরিশ্রীকাতরতা, হীনমন্নতা, নিচুতা এসবের স্থান ছিলো না। এ রাজ্যের একক অধিপতি ছিলাম আমি নিজেই।

আজ এই মুহুর্তে ভাবছি জীবনখানি দুধের সরের মত ভাসছে, এখানে আর স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। একটু তাপ লাগলেই সরটি দুধের সাথেই মিলিয়ে যায়, অর্থাৎ জীবনের কোন মানে খুঁজে পাই না। বৃথা মনে হয় সব।

এ জীবনে ২৭৬ টি পূর্ণিমা দেখেছি, ২৭৫ টি অমাবস্যা দেখেছি, ১৩৮ টি বসন্ত পেয়েছি, ৪৬ টি ইদ উপোভোগ করেছি, ২৩ টি বৈশাখ পেয়েছি। অনেক পাওয়া হয়ে গেছে ন্যাচারালি।

জীবনটা রূপার থালার মতোই উজ্জল হবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্র আমাকে ভিন্ন কিছু বলছে। জীবন জুড়ে আছে কাঁটাসুদ্ধ গোলাপ। ফুলের কাটাই বিঁধছে দেহে। জানিতো ফুলশয্যা সবসময় আনন্দময় নয়। এখন ভয়ে আমার পা কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। জিভ সীসার মত ভারী হয়ে গেছে। জীবনকে নিয়ে আমি শঙ্কিত।

জীবন কোন ম্যাজিক নয়, কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয়। এটি যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে রণ সৈনিকের ভূমিকায় অগ্রগামী হতে হয়। না হলে সর্বনাশ সুনিশ্চিত। অনেক সুখ স্মৃতি মনের অজান্তেই পায়ের নিছে চাপা দিতে হয়। জীবন গদ্যময়। অতিরিক্ত মায়া করলেই মারা পড়তে হয়। বারবার থতমত খেয়ে খেই হারিয়ে আবার সম্বিত ফিরে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সঠিক বাস্তবায়নই জীবন।

অভিমান ভালোবাসার মত, কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই জীবন যদি তোমার সাথে অভিমান করে হতাশ হবার কিছু নেই। এসবই আমার এখন সান্ত্বনা। অথচ বাস্তু হারিয়ে এখন আমি পথের ভিখারি। জনমানব নেই এ দিগন্তে। ঘটে চলে অদ্ভুত কান্ড। যেন নিশুতি রাত। বিষণ্নতা চেয়ে যায় সর্বময়। অশরীরী আত্মারা হঠাৎ হঠাৎ ছুঁয়ে যায় দেহখানা। চোখ মুছতে হয় নিরবে।

আমি হতে চেয়েছিলাম মহাবীর। সর্বত্যাগী ভবঘুরে হতে চাইনি। পরিধেয় বস্ত্রও ছাড়তে চাইনি। কিন্তু হয়েছে এসব। অনিবার্য নিয়তি যে কত বিচিত্র ধরনের হতে পারে তা বুঝতে বাকি নেই। জীবনটা বরাবরই আড়চোখে তাকিয়েছে আমার দিকে।

এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মহৎ এবং সবচেয়ে ভয়ংকর পরিকল্পনা গুলি নাকি রাতে করা হয়। সাধুরা ঈশ্বর চিন্তা করেন রাতে। কুৎসিততম অপরাধগুলি করতে অপরাধীরা রাতে বের হয়। সাধারণ মানুষের জন্য রাত বিশ্রামের কাল। আমার জন্মটাও হয়েছিলো রাতে।
আমার জীবন শিল্পীর তুলিতে আঁকা সহজ সরল কোন কল্পচিত্র ছিলো না। সংগ্রাম আর সংগ্রামই আমার জীবন। আমি নিজেই শিল্পী। আমি চির রহস্য। আমি অজানা। আমি বঞ্চিত। আমি অবহেলিত।

পর্ব -১
আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

Facebook Comments