banner

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 550 বার পঠিত

রাজশাহীর মোটর মেকানিক খাদিজার হার না মানা গল্প

প্রতিবেদক, অপরাজিতাবিডি ডটকম

rajshahiরাজশাহী: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোরাশাল গ্রামে নদীর পাড়ে ছোট্ট এক কুঁড়েঘরে খাদিজার পরিবারের বসবাস। খাদিজার বাবা আব্দুল খালেক এক ট্রাক গ্যারেজে হেল্পারের কাজ করেন, কিন্তু তার উপার্জনে পরিবারের মাস পার করা অত্যন্ত কঠিন। চাষাবাদের কোনো জমি বা সম্পদ না থাকায় বাঁচার তাগিদে একসময়ে তারা বাধ্য হন শহরে স্থানান্তরিত হতে। সম্প্রতি তারা রাজশাহীর পবা উপজেলার মাথুরা গ্রামে বসবাস করছেন।

 

খাদিজার মা নাসিমা বেগম। তিনি একজন গৃহিনী। দারিদ্র্যতার কারণে একটি এনজিও থেকে পাওয়া গরু লালন-পালন করছেন তিনি। খাদিজার ছোটভাই লেখাপড়া করছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

 

পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে পঞ্চম শ্রেণীর পর খাদিজার আর লেখাপড়া হয়নি। এরপর তাকে পারিবারিক কাজে হাত লাগাতে হয়। কিন্তু এর কিছুদিন পরই খাদিজা ব্র্যাক-এর ‘স্টার’ প্রকল্পে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। সুযোগ হাতছাড়া না করে মোটর সাইকেল ঠিক করার কাজে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি।

প্রথমদিকে অনেক কটাক্ষের শিকার হতে হয় খাদিজাকে। অনেকেই প্রশ্ন তোলে, ‘একটা মেয়ে কী করে বাজার এলাকায় কাজ করবে? সে কী পারবে কোনো সাফল্য আনতে?’ যখন আশেপাশের সকল মানুষ তাকে রুখে দিতে সরব, খাদিজা তখন কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে এক মনে এগিয়ে চলেছে তার লক্ষ্যের পথে। এই পথে এগিয়ে যেতে বাবাই সবচেয়ে বেশি সাহায্য এবং প্রেরণা জুগিয়েছেন, জানালেন খাদিজা।

 

খুব দ্রুতই সকল কটাক্ষ-সন্দেহকে মিথ্যা প্রমাণ করে খাদিজা মোটার সাইকেল ঠিক করার কাজে নিজ দক্ষতা অর্জন করে নেন। বর্তমানে যারাই তার গ্যারেজে আসে, সবাই খাদিজাকেই খোঁজে। কারণ সবারই জানা, সে খুব ভালো একজন মোটর মেকানিক।

 

তার সাফল্যে অবশ্য খাদিজা কৃতজ্ঞতা জানান তার প্রশিক্ষককেই। প্রশিক্ষক মোহাম্মদ রায়হান রাজা ব্র্যাক থেকেই পাশ করে নিজ বাবার গ্যারেজে কাজ করতে শুরু করেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, খাদিজার মতো এমন অনেক অনেক মেয়েকে মোটর মেকানিকের কাজ প্রশিক্ষণ দিয়ে তিনি স্বনির্ভর করে তুলবেন।

 

খাদিজা এখন স্বপ্ন দেখে, তার পরিবার দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে। প্রশিক্ষণের সময় ব্র্যাক থেকে প্রাপ্ত ভাতা সে তার ব্যাংকে রেখে দিয়েছে। নিজ গ্যারেজ থেকে উপার্জিত অর্থ সে বাবামা’র হাতে তুলে দেয়।

 

গত ঈদে সে পরিবারের জন্য নিজ উপার্জন থেকে উপহার কিনেছে। পরিবার এখন স্বপ্ন দেখে, কোনো একদিন নিজ কাজের মাধ্যমে খাদিজা একজন স্বাধীন-স্বনির্ভর নারীতে পরিণত হবে।

 

অপরাজিতাবিডিডটকম/আরএ/এ/১৭২৩ঘন্টা২০ফেব্রুয়ারি২০১৪

Facebook Comments