শারমীন আক্তার সেতু
চারপাশের অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখে কিছু উপলব্ধি হল বেশ কিছুদিন ধরে। বিষয়টা যদিও খুব স্পর্শকাতর এবং অনেকেই হয়ত এই বিষয়ে আমার সাথে দ্বিমত পোষন করবেন। করতেই পারেন। কিন্তু এখানে আমি শুধু আমার উপলব্ধি টুকুই লিখেছি এবং সেখান থেকে সবাইকে একটা ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আপনার যদি আপত্তি থাকে বা এই বিষয়ের সাথে একমত না হতে পারেন তবে দয়া করে এড়িয়ে যান। অযথা তর্ক করবেন না।
কারণ প্রথমেই আমি বলে নিয়েছি এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমি এখানে একজন সাধারন মানুষ হিসেবে লিখেছি। তাই আমার এই চিন্তাগুলো কেউ আমার পেশাগত চিন্তাভাবনার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। কারন পেশাগতভাবে আমি এভাবে চিন্তা করব না বা করি না।
বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় ব্যক্তিভেদে পার্থক্য আছে। অর্থাৎ একেকজন মানুষ বন্ধুত্বটাকে একেক রকমভাবে চিহ্নিত করবে, একেক রকমভাবে বর্ননা করবে।
কিন্তু দেশ, কাল বা সমাজ সংস্কৃতিভেদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা যাই হোক না কেন সব দেশেই, সব সংস্কৃতিতেই সাধারনত এটাই ধরে নেয়া হয় যে, মেয়ে মেয়ে, ছেলে ছেলে বন্ধুত্ব হবে ।
এরপরে উদারতা, চিন্তার ভিন্নতা, প্রয়োজন, সহজভাবে গ্রহন করার ক্ষমতা , বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বা কৌতূহল ইত্যাদি সব কিছু বিবেচনায় ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় বা হতে পারে।
কিন্তু ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে লিঙ্গগত পার্থক্য এবং জৈবিক একটা চাহিদা থাকার কারনে যেটা হয় যে, মেয়ে মেয়েতে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেসব আচরণ স্বাভাবিক মনে হয় বা কোন ক্ষতির কারন হয় না সেটা একটি ছেলে এবং মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতির কারন হতে পারে।
যেমন, একজন মেয়ে যদি কোন মেয়ের বাসায় রাত্রিযাপন করে বা প্রতি মিনিটে মিনিটে তার মেয়ে বন্ধুটিকে তার নিজের আপডেট দিতে থাকে বা নিজের ব্যক্তিগত ছবি পাঠাতে থাকে তবে সেটা আমাদের সমাজে দৃষ্টিকটু নয় কিন্তু এই একই কাজই যদি কোন একটি ছেলে এবং
একটি মেয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তবে সাধারনভাবে সাদা চোখে কোন কিছু চিন্তা না করেই এটা ধরে নেয়া হয় যে তাদের মধ্যে শুধু বন্ধুত্ব না আরও গভীর কোন সম্পর্ক আছে। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ছেলে আর মেয়ের মধ্যেকার এত গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে অথবা মেয়েটির মধ্যেকার কেউ একজন আরেকজনের প্রতি আবেগীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বা পড়ে। এতে দুজনেই যদি অবিবাহিত থাকে এবং দুজনেই যদি সম্মত থাকে তবে সেই ছেলে এবং মেয়েটির মধ্যে একটি সুন্দর পরিনতি হয়ত দেখা যায়।
এটা গেল অবিবাহিত ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব। কিন্তু যখন এই ধরনের বন্ধুত্ব কোন বিবাহিত ছেলে মেয়েদের মধ্যে বা অবাহিত মেয়ে বিবাহিত ছেলে বা বিবাহিত মেয়ে অবিবাহিত ছেলের মধ্যে হয় তখন তা পরবর্তীতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক গুনে বেড়ে যায় যখন এই বিবাহিত ছেলে বা মেয়েটি তার সঙ্গিনীর কাছে থেকে তাদের প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা পায় না বা তাদের সঙ্গিনী তাদের পর্যাপ্ত সময় দেয় না বা তাদের শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারে না বা তাদের সঙ্গিনীর সাথে এডজাস্ট হয় না।
তখন তারা তাদের মানসিক শান্তি খুঁজে নেয়ার জন্য বন্ধুত্ব নামক একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে তারপর ধীরে ধীরে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মোড় নেয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় যে, বিবাহিত ছেলে বা মেয়েটি ঘর বর ছাড়তে পারছে না কিন্তু আবার সে নিজের সঙ্গিনীর সাথে সন্তুষ্টও নয় তখন সে তার সঙ্গিনীর কাছে থেকে যা পায়নি তা বন্ধুর কাছে থেকে পূরণ করার চেষ্টা করে ।
এতে করে সে হয়ত নিজেকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রেখে তার বন্ধুর কাছে থেকে তার প্রয়োজন মেটাতে পারে কিন্তু তার বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটি যে তার আবেগীয় নিয়ন্ত্রণ রাখতেই পারবে এমন নাও হতে পারে। আবার দুজনে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হলে দুইটি সম্পর্ককেই সমান তালে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে কোন সম্পর্ককেই নষ্ট না করে। এতে হয়ত সম্পর্ক রক্ষা হয় কিন্তু তা সঙ্গিনীর সাথে প্রতারনা করা হয় কিনা তা আমার জানা নেই। বা সেক্ষেত্রে একে অপরকে নিজের প্রয়োজনে নিজের অজান্তেই ব্যবহার করে কিনা সেটাও আমার জানা নেই ।
যাইহোক, আমি ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বের বিরোধী নই কারন আমারও অনেক ছেলে বন্ধু আছে। কিন্তু চারপাশের অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখে আমি এতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব অবশ্যই হবে কিন্তু তার একটা সীমারেখা থাকবে বা থাকা উচিত। কারন লিংগগত পার্থক্য এবং একে অপরের প্রতি সহজাত একটি আবেগীয় এবং শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করার অপরিবর্তনীয় প্রবৃতি।
বিশেষ করে বিবাহিত ছেলে এবং মেয়েদের এসব বিষয়ে মনোযোগী হওয়াটা জরুরী মনে করি। কারণ বিয়ের পর নিজের পরিবারে সুখী না হয়ে এরকম কোন বন্ধুত্বে জড়ালে তা খুব ভাল কোন ফলাফল বয়ে আনে না। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ।
এখন বলতে পারেন একজন মনোবিজ্ঞানী হয়ে আমি এরকম কথা বলতে পারছি কিভাবে? তাহলে আবারও বলব এই লেখাটা আমি একজন সাধারন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছি। আর মনোবিজ্ঞানে কালচারাল ডিফ্রেন্সটাকে কখনই বাদ দেয়া হয়নি বরং অনেক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় । কারন কালচারভেদে মানুষের চিন্তা এবং আচরণ পরিবর্তিত হয়।
আর বেশীরভাগ কালচারেই এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার্সটাকে খারাপভাবে দেখা হয়।
যাইহোক, বিবাহিতরা যদি কাউকে তার বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেন তবে একটু খেয়াল করুন আপনি আপনার সেই বন্ধুর সাথে সেইরকমই আচরণ করছেন কিনা বা সেইরকমই তথ্য বা নিজের ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করছেন কিনা যা অন্য সবার সাথেই করছেন বা একইরকমভাবে একই সময় সবার সাথেই একইরকম সবকিছু করছেন কিনা।
যদি তা না হয়, যদি এমন হয় যে, আপনার সঙ্গী ব্যতীত বিপরীত লিঙ্গের শুধুমাত্র একজনের সাথেই সারাদিনের সব ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি আদানপ্রদান হচ্ছে, আপনার সুখ দুঃখের আলাপ তার সাথেই বেশি হচ্ছে, সব কাজ করতে গেলেই আপনার তার কথা মনে পড়ছে বা তাকে ছাড়া কোন কাজ করতে পারছেন না তাহলে মনে হয় আপনাদের এখনই সতর্ক হওয়ার সময়।
আর যদি আপনি আপনার সব বন্ধুর সাথেই এরকম আপনার ব্যক্তিগত সবকিছু সবসময় সমানভাবে শেয়ার করেন, সমান কেয়ার নেন, সবাইকেই সমান গুরত্ব দেন তাহলে কিছু বলার নেই। তাহলে বুঝতে হবে আপনার অভিযোজন ক্ষমতা এবং সবকিছু ম্যানেজ করার ক্ষমতা খুব ভাল এবং ছেলে মেয়ে বন্ধুত্বে আপনার চেয়ে উদার কেউ নেই এবং ছেলে মেয়ে উভয়ই আপনার কাছে সমান। এরকম হলে সেখানে অন্যকোন সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে না ।
কিন্তু বিষয়টা যদি এমন হয় যে, আপনি নিজে বিশ্বাস করছেন যে, ছেলে মেয়েতে কখনও বন্ধুত্ব সম্ভব নয় কারন একসময় না একসময় কোন একজন সেখানে দুর্বল হয়ে যেতে পারে কিন্তু আপনার নিজেরই কোন ছেলে বা মেয়ে বন্ধু আছে এবং সেখানে আপনি ভাবছেন আপনার নিজের উপর বা আপনার বন্ধুটির তার নিজের উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আছে তাই আপনাদের বন্ধুত্বে কেউ কারও প্রতি দুর্বল হয়ে যাবেন না। তাহলে কিন্তু বিষয়টি যথেষ্ট হাস্যকর এবং অগ্রহনযোগ্য হবে।
সারমর্ম:
লিঙ্গগত পার্থক্য এবং জৈবিক চাহিদার কারণে ছেলে এবং মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা সীমারেখা থাকা জরুরী । কারন আমরা যথেষ্ট উদার হলেও আমাদের আবেগ আমাদের প্রতি যথেষ্ট উদার নয়। আমাদের আবেগ যেকোন সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।
কাউন্সেলর
সফটকল অ্যাসোসিয়েটেড উইথ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ