ডা.ফাতিমা খান
যে মানুষটাকে ক্ষয়রোগ কোনভাবেই ছাড়ছে না কিংবা রোগবিদ্যা যার কাছে আত্নসমর্পন করেছে, যার আয়ুটাকে চিকিৎসক একটা সময়ের ফ্রেমে বেধে দিয়েছেন সেই মানুষটার স্বত্তাটা দুনিয়ার আর মানুষদের কি নাসিহা করতে চায় বা জীবনের শেষ কয়টা দিন সে কেমন করে কাটাতে চায় তা জানার অবাধ্য একটা সাধ আমার হয়।
নিশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে এখনো যে পৃথিবীর হাওয়া বাতাস তার বুক পেটে মৃদু আন্দোলন তুলছে, সেটুকুই নিশ্চয়ই এই সময়ের জন্য তার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।
পৃথিবীর আর মানুষদের কাছে এই মানুষটার আপাত অনুরোধ হয়ত এরকম “এই শুনছ, তোমরা যারা বেঁচে আছ, তোমরা অনেক ভাগ্যবান। অত চাই চাই পাই পাই কইরো না, দোহাই লাগে।”
মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার সবচেয়ে বেশী সুযোগ হয় ডাক্তার আর নার্সদের।
অসুস্থ মানুষটার চলে যাওয়ার নির্মম খবরটাও আপনজনদের কাছে তারাই পৌছান বেশী। একটু দীর্ঘ অবসর আর একটা সুযোগ পেলে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষদের খুব কাছাকাছি সময় কাটাবো ভেবে রেখেছি।
যেখানে জীবন সমাপ্তির দিকে সেখানেই উপলব্ধির সূচনা, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে যাত্রী মানুষটার অনেকগুলো উপলব্ধি হয় যা আগে অনুভূত হলে হয়ত জীবনটা পুরাই বদলে যেত!
– এই যে এলেবেলে ছেলেবেলা, রংধনু কৈশোর, উদ্দাম যৌবন কিংবা মলিন প্রৌঢ়ত্ব গেল, কই এগুলো তো কখনো একবারও মাথায় আসেনি! এখন কেমন বিদ্যূত বেগে চলে আসল দেখ!
তাদের এ ধরনের কথাগুলো শুনতে, ওদের সাথে জীবনের গল্প করতে আমার খুব ইচ্ছে হয় । হুট করে কখন কার জীবনের যতি পড়ে যাবে কে জানে!
আত্নসমালোচনা করার একটা অনেক পুরানো অভ্যাস আমার আছে। দিনশেষে চোখ বুজার আগে এই আমার শেষ কাজ। কয়দিন থেকে যে ব্যাপারটা বারবার মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল নিজের প্রতি আমি অন্যায় করেছি সবচেয়ে বেশী।
আমার জীবন, দেহ মন সব কিছুর মালিক এক আল্লাহ তায়ালা। তিনি সাময়িক কালের জন্য এই সম্পদগুলো আমানত হিসেবে আমাকে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশী অযত্ন অবহেলা হচ্ছে আমার এই নেয়ামত গুলোর সাথে যার হিসাব অবশ্যই দিতে হবে।
আমার মনে হয় আমার মৃত্যুর আগে যদি কিছু বলার সুযোগ পাই তাহলে অনেক কিছুর সাথে গুরুত্বপুর্ণ একটা নাসিহা এটাও হবে যে সবাই নিজের প্রতি যত্নবান হোন। আপনি নিজেও আপনার জীবনের অমূল্য রহমত ও নেয়ামত !
লেখক: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,
জেদ্দা,সৌদি আরব।