banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 534 বার পঠিত

 

স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা করার নিয়ম ও প্রতিরোধ

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল


মেয়েদের ক্যান্সারের মধ্যে শতকরা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। আর এ সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ রোগের ৬০ শতাংশ রোগীরই বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এমনকি শতকরা পাঁচ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। অনেক ক্যান্সারের সাথে স্তন ক্যান্সারের একটা বড় পার্থক্য হলো- সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে এ রোগ থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ।

স্তন ক্যান্সার এমন একটি রোগ, যা চিকিৎসকের আগে রোগী নিজেই এই রোগ নির্ণয় ও ডায়াগনোসিস করতে পারে। একজন সচেতন নারী খুব সহজে ও দ্রুত এটি ধরে ফেলতে পারেন।

পরীক্ষা করার নিয়ম

১. মাসিক শেষ হওয়ার পরে স্তন পরীক্ষা করতে হয়। কারণ এ সময় স্তন নরম থাকে। তাই প্রতি মাসের মাসিকের শেষ দিনটিতে স্তন পরীক্ষা করা উচিত।

২. পর্যাপ্ত আলোযুক্ত স্থানে আয়নার সামনে জামাকাপড় খুলে স্তনের আকার, রঙ, বোঁটার রঙ ও অবস্থান, চামড়ার অবস্থা ইত্যাদিতে কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে কি না দেখতে হবে।

৩. হাত দুটো কয়েকবার মাথার ওপরে উঠিয়ে ও নামিয়ে পরীক্ষা করে নিন স্তন দুটো ত্বকের নিচে সহজে নড়াচড়া বা ওঠানামা করে কি না।

৪. এবার বিছানায় শুয়ে প্রথমে ডান হাত মাথার নিচে বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙুল দিয়ে ডান স্তনটি ভালো করে চেপে দেখুন- কোনো চাকা বা গোটা হাতে পাওয়া যায় কি না। এ পরীক্ষা করার সময় স্তান ও এর আশপাশের সম্পূর্ণ জায়গা, বগলের নিচের অংশসহ পরীক্ষা করতে হয়। এবার বাম হাত মাথার নিচে দিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম স্তন ও এর আশপাশে পরীক্ষা করুন।

৫. আরেকবার দাঁড়িয়ে এভাবে ওপরের স্তন চেপে পরীক্ষা করুন। গোসল করার সময় সাবান লাগিয়ে পরীক্ষা করলে যেকোনো চাকা আরো ভালোভাবে হাতে ধরা পড়ে।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ

১. ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করুন।

২. পরিবারের কারো স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে সতর্ক হোন।

৩. দেরিতে মাসিক শুরু হওয়া, অবিবাহিত ও সন্তানহীন নারী এবং দেরিতে মা হওয়া নারীদের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি বলে এদের বেশি সচেতন হতে হয়।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অল্প বয়সে দীর্ঘ সময় ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করা বা মেনোপজের পর দীর্ঘ সময় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট নেয়া থেকে বিরত থাকুন।

৫. প্রতিদিন অন্তত একটি করে ফল খান। প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।

৬. শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৭. ওজন কমান, বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাবারে চর্বিজাতীয় খাদ্য, যেমন গরুর গোশতের পরিমাণ কমিয়ে দিন।

৮. নিজেকে জানুন, চিনুন এবং নিজের সম্পর্কে সচেতন হোন।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

১. ব্রেস্টে চাকা হওয়ার অর্থই ক্যান্সার নয়। ক্যান্সার ছাড়াও স্তনে চাকা হতে পারে। অনেক সময় তা এমনিতেই সেরে যায়।

২. স্তন ক্যান্সার হলেই পুরো স্তন কেটে ফেলে দিতে হবে- এমন কথা নেই। এটা নির্ভর করে ক্যান্সারের স্টেজের ওপর। এমনকি পুরো স্তন কেটে ফেললেও আজকাল রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির মাধ্যমে স্তনের আসল আকার-আকৃতি ফিরে পাওয়া সম্ভব।

৩. কেমো ও রেডিও থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন- চুল পড়ে যাওয়া, বমি, খাবারে অরুচি, দুর্বলতা, গায়ের রঙ কালো হয়ে যেতে পারে। যা পরে আপনা আপনি সেরে যায়।

৪. অকারণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ম্যামোগ্রাফি ঘন ঘন করা উচিত নয়। কারণ রেডিয়েশন স্বাভাবিক কোষকে ক্যান্সারে পরিণত করতে পারে।

লেখক : স্বাস্থ্য নিবন্ধকার, কথা সাহিত্যিক ও সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০১৭১৬২৮৮৮৫৫
(সুত্র:নয়াদিগন্ত)

Facebook Comments