banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 600 বার পঠিত

 

‘টাইম আউট’ বাচ্চাদের শৃঙ্খলা শেখানোর একটি পদ্ধতি

 ভাবানুবাদ:ফাতেমা শাহরিন

“শৃঙ্খলা” শেখানোর জন্য সুন্দর প্রক্রিয়া হল ‘টাইম আউট’। দুরন্তপনা বাচ্চাদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি খুব ভাল কার্যকর।

‘টাইম আউট’ হচ্ছে আপনার(৩ থেকে ১০)বছর বয়স সীমার বাচ্চাদেরকে পাঁচ মিনিটের জন্য একটি বিরক্তিকর জায়গায় পাঠানো।

‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়াটি কিভাবে কার্যকর হবে

প্রথমত, সময় নির্ধারণ করুন (দুষ্টুমির মাত্রার উপর এবং বয়সের উপর বিবেচনা করে সময় নির্ধারণ করুন)

দ্বিতীয়ত, স্থান (খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর স্থান যেন না হয়, এমন যায়গায় নির্ধারণ করুন যেন বাচ্চা বুঝতে পারে তাকে ‘টাইম আউট’ টেকনিক মধ্যে ফেলানো হয়েছে)

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

টাইম আউট করার সময় বাচ্চাকে প্রথমে পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে বলতে হবে যদি বাচ্চা বুঝতে না পারে কেন ‘টাইম আউট’ দেওয়া হচ্ছে তাহলে উল্টো কাজের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে। ( এ সময় হয়ত চিৎকার অর্থাৎ কান্না করবে, কিন্তু উত্তর দেওয়া যাবে না- এটা খুব অল্প সময়ের জন্য হতে পারে) সাধারণত এর মধ্যেই বাচ্চা থেমে যায়, আর যদি তাতেও না থামে, অনেক সময় বাচ্চাদের জেদ উঠতে পারে তখন ‘টাইম আউট’ পদ্ধতি নয় বরং বাচ্চাকে শান্ত করা দরকার।

‘টাইম আউট’ বিহ্যাভিয়ার টেকনিকটি সম্পর্কে ৭টি বিষয় জানা দরকার

১. লক্ষ্য আচরণ নির্ধারণ

সন্তানের যে আচরণটি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন তা নির্দিষ্ট জিনিস ব্যবহার করার মাধ্যমে ‘টাইম আউট’ প্রয়োগ করুন। ‘লক্ষ্য আচরণ’ বলতে, ধরুন ‘আপনার সন্তান প্রায় মানুষকে আঘাত’ এই আচরণটি হল ‘লক্ষ্য আচরণ’ যা আপনি পরিবর্তন করতে চান। লক্ষ্য আচরণ একাধিক নয় বরং একটি নির্ধারণ করুন।

২. বিরক্তিকর স্থান

‘টাইম আউট” ঘরটি যেন বিরক্তিকর এবং নিরাপদ হয়। লন্ড্রি রুম, গেস্ট রুম, বাথরুম এবং ঘরের কোণে সাধারণত উপযুক্ত। যখন আপনি রুম নির্বাচন করবেন, নিশ্চিত করুন যে ঘরটি খালি এবং নিশ্চিত হয়ে নিন বাচ্চার জন্য নিরাপদ। এ সময় তাদের অন্যান্য শিশুদের এবং মজাদার কার্যক্রমগুলি থেকে দূরে রাখুন। ওদের বুঝতে দিন আপনি টাইম আউটে ফেলেছেন তাকে।

৩. কত সময় রাখবেন

সময়কাল মুলত নির্ধারণ করা হয় শিশুদের বয়স উপর ভিত্তি করে। ৩-৫ বছরের শিশুর জন্য ৩ মিনিটের জন্য, ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য ৫ মিনিট, ১০ বছরের উপর হলে ১০ মিনিটের চেয়ে দীর্ঘতর সময় যেন না হয়।
‘টাইম আউট’ এর সময় ঐ রুমে একটি ঘড়ি থাকতে ভাল। কারণ আপনি সন্তানকে ঐ ঘড়ি দেখিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারেন এবং বড় ঘড়ি হলে ইশারা করেও বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।

৪. টাইম আউটের প্রভাব

টাইম আউট দেবার ফলে কোন প্রভাব পড়ছে কিনা, লক্ষ্য আচরণটি পরিবর্তন হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। এই ‘সময়’ দেবার আগে বুঝিয়ে বলুন আপনি ‘টাইম আউট’ দিচ্ছেন শুধু নির্ধারিত আচরণটির পরিবর্তনের জন্য। সেরা সময়ে যখন আচরণটি পরিবর্তন হচ্ছে শান্ত এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে তখন বাচ্চাকে ‘ভাল বলুন’।

৫. ব্যাখ্যা করুন

সন্তানদের জন্য ‘টাইম আউট’ সবচেয়ে ভাল কাজ করবে যখন শিশুটিকে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।আপনার সন্তান যখন বুঝতে পারবে মা বাবা ভাল আচরণ করতে তাকে সাহায্য করছে তখন মুলত খুব ভাল ভাবে ‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।

৬. হুমকি বা বার বার ব্যবহার না করা

হুমকি হিসাবে ‘টাইম আউট’ ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে বাচ্চার কাঙ্ক্ষিত আচরণ পরিবর্তন হবে নানা। উদাহরণ দিয়ে বললে, হতে পারে আপনি সন্তানকে হুমকি দিচ্ছেন, তুমি দুষ্টুমি বন্ধ না করলে নিচের ঘরে রেখে আসব, আপনি পরবর্তীতে তা করলেন না এ সময় বাচ্চারা অতিরিক্ত সুযোগ পায় অন্যায় করার। শুধু ‘টাইম আউট’ প্রক্রিয়া বার বার প্রয়োগ করবেন না বরং অন্যান্য আচরণগত প্রক্রিয়াগুলও ব্যবহার করুন।

৭. ‘টাইম আউট’ কার্যকর হলে পুরস্কার

‘টাইম আউট’ ব্যবহার ফলে যদি সফল হয় নির্ধারিত আচরণের দিকে এগিয়ে যায়। তখন বাবা ময়েরা খেয়াল করবেন পরের দিনটি অনুসরণ করছে কিনা,এ সময় বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সাথে সুন্দর সময় কাটানো এবং পরবর্তীতে তাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া বা পুরস্কার দেবার পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।

সীমাবদ্ধতা: দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘টাইম আউট’ মধ্যেও অনিবার্য কারণে কিছুটা ভুল ধারণা রয়ে গেছে,কেউ কেউ সন্তানকে আউটিং খেলার সময় ‘টাইম আউট’ দেয়। যা বাচ্চাদের আবেগীয় বিকাশে ক্ষতি করে।

টাইম আউটের সময় বাচ্চাদের উপর নিরবে খেয়াল রাখুন অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে। সুত্র:’প্যারেন্টি’ অনলাইন।

ফাতেমা শাহরিন
মনোবিজ্ঞান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
মেইল:zummi093824@gmail.com

Facebook Comments