banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 475 বার পঠিত

 

হিজড়ারা কী মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারবে?

হিজড়া- মানব সমাজে বসবাসকারী একটি মানব সম্প্রদায়। যারা নারী নয় আবার পুরুষও নয়। তবে কী তারা? তারা হিজড়া। মানব সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণিই হিজড়া নামে পরিচিত। স্বাভাবিক দশটা নারী বা দশটা পুরুষের মতো হিজড়া সম্প্রদায় স্বাভাবিক জীবন ধারণ করতে পারে না। কারণ তারা নাকি স্বাভাবিক মানুষ নয়। এটা একান্তই এই সমাজের চাপিয়ে দেয়া নিয়ম। প্রচলিত রীতি।

ইসলাম অন্য দশজন নারী ও পুরুষের মতো হিজড়াদের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। মহান আল্লাহ তাদের জন্য দিয়েছেন মানবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ বিধান। একজন স্বাভাবিক নারী ও পুরুষের মতো তারাও আল্লাহ মহানের সৃষ্টি। তারা স্বাভাবিক নিয়মে ইবাদাত করতে এবং মহান স্রষ্ঠার হুকুম-আহকাম মান্য করবে। অন্যান্য মুসলিমদের মতো মুসলিম হিজড়ারা রীতিমত নামাজ আদায় করতে, রোজা রাখবে এবং জাকাত ফরজ হলে তা আদায় করবে। এসব ইবাদতের মাধ্যমে অন্য মুসলিমরা যেমন পূণ্য বা সাওয়াব লাভ করে তারাও সেভাবে লাভ করবে। তারাও সমানভাবে অংশীদার হবেন কল্যাণে-অকল্যাণের।

হিজড়া কারা কিংবা কীভাবে নির্ধারিত হবে? এটা নিয়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাখ্যা ও গবেষণা রয়েছে। তবে ইসলাম এক্ষেত্রে সবচেয়ে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কথা বর্ণনা করেছে। হাদিসে এসেছে। হজরত আলি (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রসূত বাচ্চা পুরুষ-নারী নির্ধারণ করতে না পারলে তার বিধান কি-তা জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, ‘সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে।’ [সুনানে বায়হাকি কুবরা, হাদিস ১২৯৪;  কানজুল উম্মাল, হাদিস ৩০৪০৩;  মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস ১৯২০৪]

ইবাদত ও আরাধনার ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে, নামাজ আদয় করার জন্য হিজড়ারা কী মসজিদে যেতে পারবে, নাকি ঘরে বসেই নামাজ আদায় করবে? প্রথম কথা হলো, হিজড়াদের ওপর জামাতের সাথে বা মসজিদে গিয়ে জামাতে উপস্তিত হয়ে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব নয়। তাই তারা ঘরেই নামাজ আদায় করবে বা করতে পারবে এবং এতে কোনো সমস্যা হবে না। নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। [আশ–শরহুল মুমতি ৪/১৪০] তবে যদি কোনো হিজড়া মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে তাহলে তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে। [মওসুআতুল ফিকহ ২৫/২০]

এক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় হলো- যদি মসজিদে পড়তেই হয় তাহলে পুরুষ ও শিশুদের পেছন কাতার করে দাঁড়াবে। সামনের কাতারে দাঁড়াবে না। [মাওসুআতুল ফিকহ ২০/২৩]

কোনো হিজড়া নামাজের ইমাম হতে পারবে না। এমনকি শুধুমাত্র হিজড়াদের জামাতেও তারা ইমামতি করতে পারবে না। ইমাম হবেন অন্য পুরুষ। [মওসুআতুল ফিকহ, ৬/২০৪] সর্বোপরি কথা হলো, একজন সাধারণ নারীর মতো হিজড়াদের জন্য ঘরে নামাজ পড়া উত্তম। তবে নামাজ আদায় করতে হবে। বিনা কারণে নামাজ ত্যাগ করা যাবে না বা উচিত হবে না।

মাওলানা মিরাজ রহমান

Facebook Comments