banner

বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 437 বার পঠিত

 

জয় করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধিতা

শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করেছেন। পেয়েছেন জেলার শ্রেষ্ঠ সফল নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি। তিনি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কান্দির গ্রামের হামিদা বেগম।

কিছুদিন আগে ভরদুপুরে গন্তব্য ছিল হামিদা বেগমের বাড়ি। গ্রামের পথ ধরে বিকেলবেলায় খুঁজে পাওয়া গেল বাড়িটি। সেলাই মেশিনকে ঘিরে উঠানে ২০ থেকে ২৫ জন নারী। তাঁদের মধ্যে ছাত্রীও আছেন বেশ কজন।  সেলাই মেশিনে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন হামিদা বেগম। দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।

বাড়ির উঠানে চলছে সেলাই প্রশিক্ষণ। আর তারই ফাঁকে কথা এগোয় হামিদা বেগমের সঙ্গে। জানালেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষকে সহায়তা করার ইচ্ছা তাঁর। কিন্তু জন্ম থেকেই তাঁর ডান হাতটি সমস্যা। হাতে তিনি শক্তি পান না। কিন্তু পড়ালেখা চালিয়ে যান। ১৯৯০ সালে ইসলামপুরের সামছুন্নাহার উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৩ সালে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী আমান উল্লাহ একজন কৃষক। ২০১০ সালের দিকে গ্রামের শিশুদের জন্য একটি স্কুলও খুলেছিলেন। কিন্তু বেশি দিন চালাতে পারেননি সেই স্কুল।

টানাপোড়েনের সংসারে নিজেই কিছু আয় করবেন—এটা চাচ্ছিলেন হামিদা বেগম। ২০১৫ সালে প্রতিবন্ধী শিশুশিক্ষা ও পরিচর্যা সমিতি (প্রশিপস) থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নেন। দ্রুতই রপ্ত করেন সেলাই-ফোঁড়াইয়ের কাজ। পরের বছর প্রশিপস থেকে তাঁকে একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। ‘শুধু নিজে নিজে না করে গ্রামের প্রতিবেশীদের নিয়ে পোশাক বানানোর কাজ শুরু করি। কিছু কিছু আয় হতে থাকে।’ বললেন হামিদা বেগম। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। গ্রামের অসহায় নারী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের খুঁজে বের করেন। বিনা মূল্যেই শেখাতে থাকেন সেলাইয়ের কাজ।

প্রথমে পাঁচজন নারী হামিদা বেগমের কাছে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন। এভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন সেলাই শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গত মার্চ মাসে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবন্ধী কোটায় জেলার শ্রেষ্ঠ সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান হামিদা বেগম। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছন একটি সেলাই মেশিন। কান্দির গ্রামের দিপা আক্তার বলেন, ‘দরিদ্র মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তোলায় বড় ভূমিকা পালন করছেন হামিদা আপা। টাকা ছাড়াই তাঁর মেশিন দিয়ে তিন মাসের প্রশিক্ষণ আমি নিজেই নিয়েছি।’

দিপার মতো আরেকজন দেওয়ানগঞ্জ এ কে এম আবদুল খালেক মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্রী সাগরিকা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা কৃষিকাজ করেন। অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। নিজে কিছু করার মতো ব্যবস্থা এই গ্রামে নেই। একদিন হঠাৎ হামিদা আপা বাড়িতে হাজির। লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাইকাজ শেখার পরামর্শ দিলেন। এরপর থেকে আপা নিজের হাতে আমাকে কাজ শেখান। সেলাই মেশিন না থাকায় পরিবারের সবার পোশাক আপার মেশিন  দিয়ে তৈরি করে আনি।’

ঈদের আগের এ সময়টায় হামিদা বেগম এবং তাঁর প্রশিক্ষণার্থীদের যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই। গতকাল সোমবার মুঠোফোনে হামিদা  বলেন, ‘অনেকেই  পোশাক  বানাতে  দিয়েছেন।  এবারে  হয়তো  ২০ হাজার টাকার মতো আয় হবে।’ এই  অর্থ  ভাগ  হবে  যাঁরা  সেলাই  করছেন  তঁাদের সবার মধ্যেই।  নিজেদের  বাড়ির  মানুষ  বা  দরিদ্র  ছেলেমেয়েদের  পোশাক  তৈরিতে  হামিদা  বেগম  কোনো  অর্থই নেন না।

আরও কয়েকটি সেলাই মেশিন থাকলে আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত বলে জানালেন হামিদা বেগম। বললেন, ‘একটি মেশিন দিয়ে এত মানুষের প্রশিক্ষণ সম্ভব হয়ে ওঠে না।’ হামিদা বেগম এখন স্বপ্ন দেখেন একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করার, যাতে গ্রামের সব মানুষের সাক্ষরজ্ঞানটা হয়।

Facebook Comments