banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 703 বার পঠিত

 

বিশ্বের যেসব নারী নেত্রী লড়ে যাচ্ছেন মানবাধিকার রক্ষার লক্ষ্যে

নেতৃত্বে নারীর অবদান অনেক আগে থেকেই। সেই প্রচীন কালে কৃষিকাজে, এরপর সংসার নামক প্রতিষ্ঠানে। মাঠে-ময়দানে, রাজনীতিতেও সে সমানে পা মিলিয়েছে পুরুষের সাথে। আসলে যারা সব শেকল ভেঙ্গে নিজের অধিকারের জন্য, গোষ্ঠীর অধিকারের জন্য সূর্যের নিচে প্লাকার্ড হাতে আন্দোলনে নেমেছেন তারা আর নিজেকে নারীত্বের গন্ডিতে বেঁধে রাখেন নি। তারা সেই সীমা পেরিয়ে মানুষ হয়ে দাড়িয়েছেন, নিজের মুক্তিই শুধু নয়, মুক্তির পথ করেছেন জাতির। তাই তো তারা নেতা। বিশ্বের এমন সব সাহসী নারীর কথা জানব।
 
শিরিন এবাদি
ইরানের মত একটি দেশে শিরিন এবাদি একজন সফল মানবাধিকার কর্মী। এই মৌলবাদি দেশেই তিনি তাঁর কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। শুরুটা হয় ১৯৭৯ সালে। এবাদি ছিলেন একজন ইরানের প্রথম নারী বিচারক, কিন্তু কোর্টের একজন সাধারণ ক্লার্ক হিসেবে তাঁর ডিমোশন রিয়ে দেওয়া হয়। কারণ? কারণ তিনি একজন নারী। হতাশ হওয়ার বদলে, পিছিয়ে পড়াকে মেনে নেওয়ার বদলে তিনি নিজের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। সেই লড়াই-ই পরবর্তীতে তাঁকে মানবাধীকারের প্রশ্নে সোচ্চার করে। নিজের প্রতি হওয়া অন্যায় তাঁকে সকল অবিচারের প্রতি লড়তে উৎসাহী করে তোলে। একজন লইয়ার হিসেবে তিনি সহযোগিতা করেছেন অসহায় কিন্তু ন্যায়বিচার প্রত্যাশী মানুষদের। তাদের মধ্যে ছিল নারীরা, রাজনৈতিক বিপ্লবীরা। তিনি ইরানের বিবাহ সংক্রান্ত আইন সংশোধনেও অবদান রাখেন, বিশেষ করে তালাকের ক্ষেত্রে, সন্তানের দায়িত্ব কার কাছে যাবে সেসব বিষয়ে। পরিবর্তনের জন্য তাঁর এই লড়াই এর মূল্য তাঁকে দিতে হয় নিজের স্বাধীনতা দিয়ে। ৩ সপ্তাহ জেলে আটকে রাখা হয় তাঁকে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন তাঁকে তাঁর পেশায় ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এতসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও জয় হয় তাঁর। ২০০৩ সালে প্রথম মুসলিম নারী শিরিন এবাদি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। নিজের প্লার্টফর্মকে তিনি এখন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধীকার সচেতনতার কার্যক্রমে ব্যবহার করেন।
 
রানী রানিয়া
রানী রানিয়া আল-আব্দুল্লাহ জর্ডানের রানী হন ২৯ বছর বয়সে, যখন প্রিন্স ২য় আব্দুল্লাহ বিন আল-হুসেইন ১৯৯৯ সালে ক্ষমতায় বসেন। কিন্তু তিনি আর দশ জন ক্ষমতাবান সুন্দরী নারীদের মতই বিলাসী জীবনযাপন করেন নি। তিনি মানবাধীকারের জন্য কাজ করেছেন, সহায়তা দিয়েছেন নারী ও শিশুদের, আইনি পরামর্শ দিয়েছেন তাদের অধিকারের পক্ষে। তিনি জর্ডান মানবাধিকার কমিশনের প্রধান, ফ্যামিলি সেফটি কাউন্সিল এবং ইউনিসেফ গ্লোবাল লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভের মেম্বার। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বৈষম্যমূলক আইন সংশোধনে কাজ করে যাচ্ছেন। মানবাধিকার এবং সাংস্কৃতিক সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আইটি বিভাগকে সামনে নিয়ে আসতেও পছন্দ করেন তিনি। তিনি বিশ্বাস করেন শিক্ষা এবং সুযোগ মানুষের প্রতিভাকে তুলে ধরতে সাহায্য করে। তিনি ২০০২ সালে বিশ্ব ইকনোমিক ফোরামের বোর্ড মেম্বার হন। প্রতিষ্ঠা করেন ‘The Queen Rania Center for Entrepreneurship’। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দেন এবং যাবতীয় অর্থনৈতিক গন্ডি পেরিয়ে আসার জন্য সহায়তা দেন।
 
ওবিয়াগেলি এজেক্বেসিলি
২০১৪ সালে বোকো হারামের অধীনে চরমপন্থীরা মেয়েদের ডর্মে হামলা করে এবং ২০০ জন স্কুলছাত্রীকে অপরণ করে। এই ভয়ংকর ঘটনার প্রেক্ষিতে শুরু হয় #BringBackOurGirls ক্যাম্পেইন। এই ক্যাম্পাইনে মিশেল ওবামা, মালালা ইউসুফজাই, এমা ওয়াটসনের মত ব্যাক্তিত্বরা একই হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইট করে সমর্থন জানান। কিভাবে শুরু হয়েছিল এই আন্দোলনের? ওবিয়াগেলি মানবাধীকার কর্মী হওয়ার পাশাপাশি নাইজেরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রী এবং বিশ্ব ব্যাংক আফিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি যোগাযোগ করেন সরকারি এজেন্সিগুলোর সাথে, টিভি স্টেশনে এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সাথে যাতে তাঁর মেয়েদের ফিরিয়ে আনা যায়। তিনি তাঁর সবরকম ক্ষমতা ব্যবহার করেন, শ্রম দেন এবং আরও ২ জন নাইজেরিয়ান নারীসহ বিশাল আন্দোলনটি দাঁড় করান। তিনি তাঁর ক্যাম্পাইন শুরু করেছিলেন নাইজেরিয়ার রাজধানী আজুবায়। এই টুইটার হ্যাশট্যাগ পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময় এবং সৃষ্টি করে অপ্রতিরোধ্য অনলাইন আন্দোলনের।
 
তাওয়াক্কুল কারমান
তিনি একজন বিস্ময়কর আত্মবিশ্বাসী নারী মানবাধীকারকর্মী। ইয়েমেন তাঁর দেশ, যে দেশ কিনা বিশ্ব ইকনোমিক ফোরাম দ্বারা নারীদের জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্ট দেশ হিসেবে স্বীকৃত। ইয়েমেনে নারীকে থাকতে বলা হয় ঘরে, চাকরী তো দূরের কথা পড়াশোনা থেকেও দূরে রাখা হয় তাদের। ৮ বছর বয়স থেকেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় কন্যা শিশুদের। তালাকের ক্ষেত্রেও তারা হয় বৈষম্যের শিকার। শুধু নারী নয়, মৌলিক অধিকার অনেক ক্ষেত্রে পায় না পুরুষও। এমন একটি দেশে সম্পূর্ণ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণমানুষের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন কারমান। মানবাধীকার এখানে অনেক রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। সাংবাদিকদের লাবচিত করা হয়, তরুণ বিদ্রোহীদের মেরে পর্যন্ত ফেলা হয়। এমনই অন্ধকার সময়ে ‘mother of the revolution’ কারমান কাজ করে গেছেন। তিনি একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম Women Journalists without Chains (WJWC)। প্রতিষ্ঠানটি মিডিয়া কর্মীদের অধিকার এবং তাদের প্রতি হওয়া অবিচার নিয়ে কাজ করে। “Mother of the revolution” এর পাশাপাশি তাঁকে ‘Iron Woman’ ও বলা হয়। তাঁর কন্ঠস্বর তরুণ সমাজ সহ অধীকারের লড়াইয়ে সোচ্চার প্রতিটি মানুষকে। এজন্যে তাঁকে অনেকবার লাঞ্চিত হতে হয়েছে। জেলেও যেতে হয়েছে। ২০১১ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরষ্কার পান।
Facebook Comments