banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 435 বার পঠিত

 

নারীর জন্য এক টুকরো আশ্রয়

তবে এই প্রতিবেদক সেখানে থাকতে থাকতেই আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে উত্তরা থেকে এলেন জেসমিন আক্তার। তিনি এখানে থেকে স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনি সহায়তা চান। এখানকার খোঁজ কীভাবে পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি লেখা পড়ে জেনেছেন। জেসমিন বলেন, হকারের কাছ থেকে ধার করে প্রতিদিন তিনি পত্রিকাটি পড়েন।

আরিফা নাজনীন বললেন, প্রতিদিন কাজের খোঁজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারীরা রাজধানীতে আসেন। তাঁদের অনেকেরই কোনো থাকার জায়গা নেই। এতে অনেক সময় তাঁরা খারাপ মানুষের খপ্পড়ে পড়েন। নানা রকম ঝামেলায় জড়িয়ে যান।

২০১২ সালের জুলাই মাসে মূলত দরিদ্র নারীদের আবাসিক সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রকল্পটি চালু হয়। তবে দরকার হলে যেকোনো অবস্থার নারী এখানে থাকতে পারেন। মায়েদের সঙ্গে শিশুরাও থাকতে পারে।

প্রকল্পের আওতায় প্রথম পাঁচ দিন বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়া যায়। এরপর কিছু ফি নেওয়ার নিয়ম আছে। তবে এখনো কারও কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। এর আগে একজন টানা চার মাস থেকে গেছেন। পুষ্টিহীনতার শিকার অথবা গর্ভবতী কোনো নারী থাকলে তার জন্য বাড়তি পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রকল্পের হিসাব বলছে, শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রায় ১২০০ নারী এখানে আশ্রয় পেয়েছেন। গৃহকর্মী ও নির্যাতিত নারীই বেশি। পারিবারিক কলহের কারণে অনেক বিত্তশালী নারীও এখানে থেকেছেন।

এদের দুটি হেল্পলাইন ফোন নম্বর আছে: ০১৯৫৫৫৯০৬৪৬ এবং ০১৭৯০২২০৯৬৮। ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এখানে ফোন করে নারীরা থাকার সুযোগ চাইতে পারেন। প্রকল্পের আওতায় নারী ও শিশুদের আইনি সহায়তা, মনোসামাজিক কাউন্সেলিং ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়।

খাদিজা বেগম, পাখি আক্তার, আনোয়ারা বেগম ও রিনা আক্তার বিভিন্ন সময়ে এখানে থেকেছেন। প্রকল্পের দপ্তর থেকে নম্বর নিয়ে তাঁদের ফোন করলে তাঁরা বললেন, এমন ব্যবস্থা নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সহায়ক। খাদিজা আক্তার এখানে নিজেও ছিলেন। আবার চিকিৎসার জন্য মাকেও রেখেছিলেন। আনোয়ারা বেগম স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে এখানে এসেছিলেন। পরে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ স্বামীকে ডেকে বিবাদ মিটিয়ে দিয়েছেন। খাদিজা ও আনোয়ারা রাজধানীতে গৃহকর্মীর কাজ করেন।

রাজধানীতে মাঠপর্যায়ে কারিতাসের ২৭ জন কর্মী আছেন। তাঁদের মাধ্যমেই মূলত নারীরা এ আশ্রয়ের খোঁজ পান। সম্পূর্ণ অপরিচিত হলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাঁদের রাখা হয়। তবে পরিচিত কারও মাধ্যমে এলে জিডি লাগে না।

একজন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা রক্ষী এই নিরাপদ নিবাস পাহারা দেন। লিলি হালদার তিন বছর এখানে রান্নার কাজ করছেন। তিনি বললেন, রান্না করতে ভালো লাগে। তবে স্বামীর সঙ্গে যাঁদের সমস্যা, তাঁরা না খেয়ে কান্নাকাটি করেন। তখন তাঁদের বারবার খাবার খেতে বলতে হয়। মাঝেমধ্যে এটা তাঁর ভালো লাগে না।

এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা সাদামাটা। ঘরদোর যথেষ্ট ঝকঝকে তকতকে না। আরিফা নাজনীন বললেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ তাঁরা নতুন ভবনে উঠে যাবেন। তখন এই নিবাসের সুযোগসুবিধাও বাড়বে।

Facebook Comments