banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 500 বার পঠিত

 

বাড়ছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড, ‘প্রতিরোধ না করলে মরতে হবে’

দিনের পর দিন স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে যাওয়ায় নারীর শেষ পরিণতি মৃত্যু। নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয় নতুবা আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দেওয়া হয়। নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীরা সময় মতো মুখ না খোলায় কাজে লাগছে না পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন বা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কোনও উদ্যোগ। নির্যাতনের প্রথম পর্যায়ে প্রতিরোধ না করায় পারিবারিক হত্যাকাণ্ড বাড়ছে বলে মনে করছেন নারীনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মীরা।

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১৪৯ জন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। আর শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হাতে খুন হয়েছেন ৩৪ জন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন সার্ভে ২০১৫’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই জীবনে অন্তত একবার স্বামীর হাতে কোনেও না কোনোভাবে মার খেয়েছেন। অন্যদিকে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ কখনোই নির্যাতনের কথা কাউকে জানাননি।

এই না জানানোটাই তার হত্যার অন্যতম অন্তরায় বলে মনে করে নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর। তিনি  বলেন, ‘নারীকে শেখানো হয় স্বামীর ঘর তার শেষ আশ্রয়। হিন্দু পরিবারে স্বামীর ঘর থেকে কেবল চিতা বের হবে প্রচলিত ছিল। সেটা নির্যাতন সহ্য করে হলেও।’

করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। মুখ খুলতে হবে। মুখ খুললে তার যে ভঙ্গুর দশা হবে সেটাকে সামাজিকভাবে মোকাবিলার রাস্তা থাকতে হবে।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকাগুলোর হিসাব অনুযায়ী মাসে ১৬ জন গৃহবধূ হত্যার শিকার হয়েছে। আমরা জানি, এই হিসাবের বাইরেও অনেক হত্যাকাণ্ড রয়ে গেছে। সবকিছু পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এমনটা নয়। নারী তার জায়গা থেকে তখনই প্রতিরোধ করবে যখন সে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করবে। এই সুরক্ষা কাঠামো আমাদের তৈরি করে দিতে হবে।’

এ বিষয়ে আইনজীবী শাহেদুর রহমান  বলেন, ‘সামাজিক অস্থিরতার পাশাপাশি নারীর জীবনের শঙ্কা বাড়ছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারীরা সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য নানা ধরনের সমঝোতা করে। যেগুলোর অনেকক্ষেত্রে পারিবারিক পরিসরেও করা হয়। তার অধিকার বিষয়ে না বুঝে সমঝোতার রাস্তায় যাওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বাড়লে তার করণীয় সে বুঝতে পারে না। এক পর্যায়ে হত্যার শিকার হয়।’

আইনি ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া এতো লম্বা যে বাদীপক্ষের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।’

নারী কিভাবে এই কাঠামোর মধ্যে আসবেন সে বিবেচনায় ২০০৪ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা অক্সফামের সহায়তায় ‘উই ক্যান’ প্রচারাভিযান চালিয়ে আসছে। জানা গেছে, ৪৮টি জেলায় এ প্রচারাভিযানের মধ্য দিয়ে কয়েক লাখ স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হয়েছে। যারা সম্মিলিতভাবে পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলো প্রতিরোধে রাস্তা খুঁজবেন এবং প্রতিরোধ করবেন।

সামাজিক সচেতনতা তৈরি সম্ভব না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রোকেয়া কবীর বলেন, ‘আমরা গ্রামের দিকে কাজ করার কথা ভাবলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের নির্যাতনের দিকে একেবারেই খেয়াল করছি না। এটা হিতে বিপরীত হচ্ছে। আমাদের প্রচারাভিযানগুলো মধ্যবিত্তের মধ্যে কখনই জায়গা পাচ্ছে না। এ কারণে মধ্যবিত্ত তাদের ইমেজ রক্ষায় মুখ বন্ধ করে নির্যাতন সহ্য করছে। এখন বলার সময় এসেছে হয় প্রতিরোধ করো নাহলে মরতে হবে।’

Facebook Comments