আপনি নিজেই নিজের জীবন ধ্বংস করছেন না তো? স্বার্থপর শব্দটা আমাদের সমাজে এত প্রচলিত যে, নিজের কথা ভাবা মানেই যেন অপরাধ। আশপাশের মানুষকে মনোযোগ দিতে দিতে আমরা ভুলে নিজের দিকে মনোযোগ দিতে। আমাদের মন সারাক্ষণ এই চিন্তায় ব্যাস্ত থেকে যে, কে কী ভাবলো, কে কী বলবে! আমরা চিন্তা করতে ভুলে যাই, আমরা কি চাই। জীবনের বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো চোখ বন্ধ করে সবাই যেভাবে নেয় সেভাবে নিয়ে ফেলি। ভাবি না, আমাদের সুখ-দুঃখগুলো আমাদের স্বপ্নকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খায়। একটা ভুল সিদ্ধান্ত সারাজীবনের আনন্দ কেড়ে নিতে পারে! আসুন জেনে নিই, আপনার অজান্তেই হয়ত এই বিষয়গুলো ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে আপনার জীবনকে।
ভুল মানুষ পছন্দ করা
আপনার জীবনসঙ্গী যদি একজন ভুল মানুষ হয় তাহলে জীবনটাই ভুলে ভরে যায় যেন! সঠিক মানুষ কে? ভুল মানুষ মানে কি? সম্পর্কের কিছু শর্ত থাকে। যে মানুষটি সেই শর্তগুলো পূরণ করতে পারেন তিনিই আপনার জীবনের সঠিক মানুষ। এই শর্তগুলো আলাদা হয় মানুষ ভেদে। ভাল বোঝাপড়া, অর্থ-কড়ি, বন্ধুত্ব মিলে গেলেও অনেক সময় দাম্পত্য সুখের হয় না। কখনো কখনো জীবনের হতাশা গ্রাস করে বেঁচে থাকের সৌন্দর্য্যকে। কখনো আবার জন্ম নেয় অশ্রদ্ধা, ঈর্ষা! সম্পর্কের টানাপোড়েন মানসিক ক্ষয় ঘটায় সবচেয়ে বেশী। কারণ মানুষ আর যা কিছু ত্যাগ করেই বেঁচে থাকুক না কেন ভালবাসার সম্পর্কগুলো তার জীবনে থাকে অক্সিজেনের মত। এই অক্সিজেন ছাড়া জীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে।
নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার করা
আমরা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতে ইতস্তত বোধ করি সবসময়। এজন্য যেমন অনেক সময় আমাদের অনুরোধে ঢেকি গিলতে হয় তেমনি অন্য দিকে হয়ত সময় পেরিয়ে যায় আর প্রিয়জনকে বলা হয় না, তিনি কতটা বিশেষ আমাদের জীবনে। এই ভুল করবেন না। প্রতিদিন যে মেয়েটাকে নিয়ে স্বপন সাজিয়ে চলেছেন, তাকে বলুন তাকে ছাড়া আর ভাবা যায় না সামনের দিনগুলির কথা। মাকে জড়িয়ে ধরে বলুন, তাকে কতটা ভালোবাসেন! আমরা খেয়াল করি না, কিন্তু মুখ ফুটে না বলা সম্পর্কে তৈরি করে শূন্যতা। কখনো কখনো এই শূন্যতায় হারিয়ে যায় মানুষটা। আর আমরা ডুবে যাই হতাশায়।
অতিরিক্ত প্রত্যাশা
জীবনের কাছে অতিরিক্ত প্রত্যাশাও জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের স্বপন হওয়া উচিত আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী। স্বপন দেখার পাশাপাশি বাস্তবতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। সফলতা আর ব্যর্থতা চলে পাশাপাশি। মেনে নিতে হবে ব্যার্থ হলেও। বেশীর ভাগ মানুষের জীবনে হতাশা নেমে আসে প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশার হিসেব মেলে না বলে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশাকে পাড়ি দিতে হয় বন্ধুর পথ, মানিয়ে চলতে হয় অনেক পারিপার্শ্বিকতা। তার সাথে যোগ হয় নিজেদের ছোট ছোট ভুল পদক্ষেপ। ফলে সবসময় মেলে না সফলতার সুখপাখি। বাস্তবতা বোধের ঘাটতি জীবনকে ঠেলে দেয় ধ্বংসের দিকে।
অতীত দিয়ে বর্তমানকে বিচার করা
ফেলে আসা সময় দুই ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে আমাদের জীবনে। এক, অতীতের ভয়ংকর কোন স্মৃতি কেড়ে নিতে পারে বর্তমানের প্রতি ভরসা। দুই, সুন্দর অতীতকে মনে করে বর্তমানের টানাপোড়েন মেনে নিতে কষ্ট হতে পারে আমাদের। দুইটাই খুব বড় ভুল, যা ক্ষমতা রাখে জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার। ভাল থাকতে হলে জীবনে থাকা চাই সন্তুষ্টি। আর সেজন্য বর্তমানকে বর্তমান দিয়েই বিবেচনা করতে হবে। উপভোগ করতে হবে সবটা আনন্দ আজই, কারণ যা চলে গেছে তা ফিরে আসে না। যা আছে তা অমূল্য, তাকেই সাজাতে হয়। এভাবেই ভাল থাকা যায়।
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা
আপনার বন্ধুরা আপনার চেয়ে বেশী সফল? আপনার ভাই বোনেরা আপনার চেয়ে অনেক ভাল আছে? সব সময় নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে আপনি নিজেই হয়ত নিজেকে হিনমন্য করছেন। হিনমন্যতা রূপ নিতে পারে মানসিক ব্যাধিতে। এই ব্যাধি তিলে তিলে শেষ করে দেয় মানুষকে। নিজেকে ভালবাসুন, আপনার যা কিছু আছে তাই নিয়ে আরও ভাল জীবনযাপনের জন্য পরিশ্রম করুন। নিজের সফলতাকে শুধু নিজের দেওয়া শ্রমের সাথেই তুলনা করুন। অন্যের সাথে নয়।
লিখেছেন
আফসানা সুমী
ফিচার রাইটার
Facebook Comments